HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলাম
লেখকঃ শাইখ আব্দুর রাজ্জাক ইবন আব্দুল মুহসিন আল-বদর
১২
বিশেষ সতর্কতাবর্তমানে যারা আল্লাহর দেওয়া বিধি-বিধান (যাতে নারীদের জন্য রয়েছে শুধুই কল্যাণ, ইজ্জত-সম্মান রক্ষার পুরোপুরি গ্যারান্টি ও সুখী সমৃদ্ধ জীবনের সম্পূর্ণ নিশ্চয়তা) তার কোনো তওয়াক্কা না করে, ষড়যন্ত্রকারীরা নারীদের কোমলতা, সরলতা ও জ্ঞান-বুদ্ধির দুর্বলতাকে পুঁজি করে, তাদের ঘর থেকে বের করে আনছে, তাদের রাস্তায় নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং তাদের ক্ষমতার বাইরে কিছু দায়িত্ব তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাদের এমন বিপর্যয়ের দিকে টেনে আনা হচ্ছে, যার ভয়াবহতা, করুণ পরিণতি ও ক্ষতি সম্পর্কে তারা আদৌ অবগত নয়।
বর্তমানে আলিম-উলামা, সত্যিকার দা‘ঈ ও সত্যবাদীরা নারীদের এ সব বিপর্যয় ও মহামারি হতে রক্ষা করার জন্য তাদের কোমর চেপে ধরছে এবং তাদের বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নারীরা যাতে তাদের স্বকীয়তা ও ঐতিহ্য বজায় রাখতে পারে এবং মারাত্মক অবনতি হতে নিরাপদ থাকে, সে জন্য তারা নিরলস-ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ বিষয়ে সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদের গবেষণা ও ফতওয়া বিভাগ থেকে ২৫/১/১৪২০ হিজরীতে নারীদের উদ্দেশ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা প্রকাশ করা হয়েছে। নারীদের প্রবন্ধটির বিষয়বস্তুটি জানা থাকাটা খুবই জরুরি। তাই তাদের ফতওয়াটিকে এখানে উল্লেখ করা উপযুক্ত মনে করছি:
“সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য এবং সালাত ও সালাম আল্লাহর প্রেরিত রাসূলের ওপর ও তার পরিবারবর্গ, সাহাবীদের ওপর যারা ছিল তার নির্দেশিত পথের পথিক ও এ দীনের ধারক বাহক।
“এ কথা আমাদের কারোই অজানা নয় যে, নারীরা ইসলামের ছায়াতলে কী-রকম জীবন যাপন করছে এবং তারা যে কতটা নিরাপদে আছে। বিশেষ করে আমাদের এ-দেশে (সৌদি আরবে) নারীদের যথেষ্ট সম্মান দেওয়া হয়ে থাকে, আমাদের এখানে তাদের জন্য উপযুক্ত কাজের ব্যবস্থা আছে এবং শরী‘আত অনুমোদিত সব ধরনের অধিকার তারা ভোগ করতে থাকে। পক্ষান্তরে নারীরা জাহেলি যুগে যে কতটা অমানবিক ও অসহনীয় নির্যাতনের স্বীকার হত, তা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। বর্তমান অমুসলিম রাষ্ট্রেও নারীরা অত্যন্ত নির্মম, অমানবিক ও অসহায় অবস্থায় জীবন যাপন করে।
“এটি আল্লাহ তা‘আলার বড় একটি নি‘আমত যার ওপর আমাদের শুকরিয়া আদায় করা উচিত। আমাদের কর্তব্য হলো, আল্লাহর দেওয়া নি‘আমতের যথার্থ মূল্যায়ন করা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, বর্তমানে এক শ্রেণির লোক আছে, যাদের চিন্তা চেতনা পশ্চিমাদের চিন্তা চেতনারই ধারক-বাহক এবং তাদের সভ্যতা-সংস্কৃতির অন্ধ-অনুসারী। তারা আমাদের দেশের নারীরা যেভাবে পর্দাশীল, লজ্জাবতী, ও নিরাপদে থাকে তার ওপর তারা সন্তুষ্ট নয়। তারা চায় যে, আমাদের দেশের নারীরাও যেন পশ্চিমা, ধর্মহীন ও বিধর্মী দেশের নারীদের মতো রাস্তায় বের হোক, বেপর্দা হয়ে ঘুরে বেড়াক এবং পুরুষদের সাথে অবাধে চলাফেরা করুক। ফলে তারা বিভিন্ন পেপার-পত্রিকায় নারীদের নিয়ে অশালীন লেখালেখি করে এবং নারীদের নামে তারা বিভিন্ন ধরনের দাবি দাওয়া উত্থাপন করে। নিম্নে এর কয়েকটি বিষয় আলোচনা করা হলো,
“এক. পর্দার বিরোধিতা করা: আল্লাহ নারীদের পর্দা করার যে নির্দেশ দিয়েছে তারা তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। পর্দা যা নারীদের সম্ভ্রম ও ইজ্জতের গ্যারান্টি তার বিরুদ্ধে তারা অব্যাহত অপপ্রচার চালায় এবং পর্দা করা যাতে মুসলিম সমাজে না থাকে তার বিরুদ্ধে তারা নানাবিধ শ্লোগান আবিষ্কার করছে। পর্দা করা যে, ফরয তা কুরআন ও হাদীস দ্বারাই প্রমাণিত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ قُل لِّأَزۡوَٰجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ يُدۡنِينَ عَلَيۡهِنَّ مِن جَلَٰبِيبِهِنَّۚ ذَٰلِكَ أَدۡنَىٰٓ أَن يُعۡرَفۡنَ فَلَا يُؤۡذَيۡنَۗ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ٥٩﴾ [ الاحزاب : ٥٩ ]
“হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে কন্যাদেরকে ও মুমিনদেরকে বল, তারা যেন তাদের জিলবাবের কিছু অংশ নিজদের উপর ঝুলিয়ে দেয়, তাদেরকে চেনার ব্যাপারে এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা হবে।ফলে তাদেরকে কষ্ট দেওয়া হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৯]
﴿وَإِذَا سَأَلۡتُمُوهُنَّ مَتَٰعٗا فَسَۡٔلُوهُنَّ مِن وَرَآءِ حِجَابٖۚ ذَٰلِكُمۡ أَطۡهَرُ لِقُلُوبِكُمۡ وَقُلُوبِهِنَّۚ وَمَا كَانَ لَكُمۡ أَن تُؤۡذُواْ رَسُولَ ٱللَّهِ وَلَآ أَن تَنكِحُوٓاْ أَزۡوَٰجَهُۥ مِنۢ بَعۡدِهِۦٓ أَبَدًاۚ إِنَّ ذَٰلِكُمۡ كَانَ عِندَ ٱللَّهِ عَظِيمًا﴾ [ الاحزاب : ٥٣ ]
“আর যখন নবী পত্নীদের কাছে তোমরা কোনো সামগ্রী চাইবে তখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবে; এটি তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র। আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেওয়া এবং তার (মৃত্যুর) পর তার স্ত্রীদেরকে বিয়ে করা কখনো তোমাদের জন্য সঙ্গত নয়। নিশ্চয় এটি আল্লাহর কাছে গুরুতর পাপ।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৩]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কথা, বনী মুস্তালাকের যুদ্ধে যখন তিনি সৈন্যদের থেকে পিছু হটলেন এবং সাফওয়ান ইবন মুয়াত্তাল তার পাশ দিয়ে অতিক্রম করছে, তা জানতে পেরে, সাথে সাথে চেহারা ডেকে ফেলেন। তারপর তিনি বলেন, সে আমাকে পর্দা ফরয ওয়ার পূর্বে দেখেছিল। তার এ কথা দ্বারা বুঝা যায় যে, পর্দা করা ফরয এবং চেহারাও পর্দার অন্তর্ভুক্ত।
“তার অপর একটি বাক্য দ্বারাও পর্দা যে ফরয তা প্রমাণিত হয়, তিনি বলেন আমরা নারীরা নবী করীম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলাম, আর যখন আমাদের সাথে পুরুষরা অতিক্রম করত তখন আমরা আমাদের ওড়না দিয়ে চেহারা ডেকে রাখতাম আর যখন আমরা তাদের অতিক্রম করে ফেলতাম তখন আবার চেহারা খুলে ফেলতাম। এ ধরনের আরও অনেক হাদীস কুরআন রয়েছে, যা দ্বারা মুসলিম নারীদের জন্য পর্দা করা যে ফরয তা প্রমাণিত হয়।
“তা সত্ত্বেও ষড়যন্ত্রকারীরা আল্লাহর কিতাব ও নবীর সুন্নাতের বিরোধিতা করে আল্লাহর বিধান পর্দার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়। যার ফলে নারীরা যখন ঘর থেকে বের হয়, তখন যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে বা যারা দুশ্চরিত্র তারা তাদের দিকে তাকিয়ে উপভোগ করতে থাকে।
“দুই. নারীদের জন্য গাড়ী চালানোর অনুমতি দাবি: নারীদের জন্য গাড়ী চালানোর ক্ষমতা দেয়ার দাবি করে। অথচ নারীরা যখন গাড়ী চালানোর জন্য রাস্তায় বের হবে, তখন তাদের জন্য অনেক ক্ষতি ও বিপদের আশঙ্কা রয়েছে, যা একজন জ্ঞানী বলতেই অনুভব করতে পারে। যেমনি ভাবে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে অনুরূপভাবে যখন একজন নারী একাকার হবে তখন সে অবশ্যই বিপদে পড়তে পারে।
“তিন. নারীদের ছবি তোলা: এ বিরুদ্ধবাদীরা নারীদের ছবি বিভিন্ন ধরনের কার্ড ইত্যাদিতে লাগিয়ে রাখার দাবি তোলে। অথচ যখন তার ছবিটি কার্ডে লাগানো হয় তখন তার এ কার্ডটি অনেক লোকজনরে হাতে যাবে। তখন যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে বা দুশ্চরিত্র তারা সুযোগ পেয়ে যাবে। আর এতে যে, নারীরা বেপর্দা হবে এবং সংকটে পড়বে তাতে সন্দেহ করার কোনো অবকাশ নেই।
“চার. নারী-পুরুষের অবাধ মেলা-মেশার দাবি: তারা নারী ও পুরুষের অবাধ মেলা-মেশার দাবি করে এবং যে সব কাজ পুরুষদের জন্য প্রযোজ্য তা নারীদেরও করতে দেয়ার জন্য সুযোগ দেয়ার দাবি করে। অথচ, তাদের জন্য যে সব কাজ প্রযোজ্য এবং তাদের স্বভাবের সাথে যে কাজের সম্পর্ক রয়েছে, সে কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকাকে তারা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা বলে দাবি করে।
“এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, তাদের এ দাবি সম্পূর্ণ বাস্তবতার পরিপন্থী ও অবান্তর। কারণ, তাদের জন্য যে কাজ উপযুক্ত নয়, তাদের সে কাজের দায়িত্ব দেয়াই হলো, প্রকৃত পক্ষে তাদের বেকার বানিয়ে দেওয়া। ইসলামী শরী‘আত নারী পুরুষদের অবাধ মেলা-মেশা, অপরিচিত পুরুষদের সাথে একজন নারীর একান্ত হওয়া এবং নারীদের একাকী সফর করা ইত্যাদিকে যে, হারাম করেছে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া। কারণ, এর ফলে যে সব ক্ষতি বা বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে তা কখনই প্রশংসনীয় হতে পারে না। অথচ আল্লাহ তা‘আলা ইবাদতের স্থানেও নারীদের পুরুষের সাথে একসাথে ইবাদত করতে নিষেধ করছে। ফলে ইসলামের বিধান হলো, সালাতে নারীদের কাতার পুরুষদের কাতারের পিছনে হবে এবং নারীদেরকে তাদের ঘরে সালাত আদায়ের জন্য উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لا تمنعوا إماء الله مساجد الله وبيوتهن خير لهن»
“তোমরা আল্লাহর বান্দিদের মসজিদে গমন করতে বাধা দিও না। আর তাদের ঘরসমূহ তাদের জন্য অতি উত্তম।”
“এখানে একটি কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, যদি নারীরা মসজিদের গমন করে সালাত আদায় করতে চায়, তাতে তাদের নিষেধ করা যাবে না। কিন্তু তাদের জন্য ঘরে সালাত আদায় করাই উত্তম। কারণ, বর্তমান ফিতনা-ফাসাদের যুগে নারীদের ঘর থেকে বের হতে না দেওয়ার মধ্যেই নিরাপত্তা।
“আর ইসলাম এসব আদেশ এ জন্য দিয়েছে যাতে নারীদের সম্মান-হানি না ঘটে এবং তাদের যাবতীয় ফিতনার কারণ হতে দূরে রাখা যায়। সুতরাং মুসলিমদের ওপর কর্তব্য হলো, তারা যেন তাদের নারীদের সম্মান রক্ষায় মনোযোগী হয় এবং ষড়যন্ত্রকারীদের অবান্তর দাবীগুলোর প্রতি কোনো প্রকার ভ্রূক্ষেপ না করে। আর তাদের অবশ্যই উপদেশে গ্রহণ করতে হবে, সে সব দেশের নারীদের করুণ পরিণতি হতে, যারা এ সব অবান্তর, মিথ্যা ও ভ্রান্ত দাবিগুলোকে গ্রহণ করে বিপদে পড়ছে এবং ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্রের বেড়া ঝালে পা দিয়ে, চরম অশান্তিতে কালাতিপাত করছে। পশ্চিমা দেশের নারীদের অবস্থা দেখে আমাদের দেশের নারীরা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে। তাদের যে কি করুণ পরিণতি তার বাস্তব চিত্র দেখলে আমরা অতি সহজে অনুমান করতে পারি যে আমাদের দেশের নারীরা তাদের তুলনায় কত যে শান্তিতে আছে। সৌভাগ্যবান সেই যে অন্যের থেকে উপদেশ গ্রহণ করে। আমাদের দেশের ক্ষমতাশীলদের উচিত হলো, তারা যেন এ সব আহমকদের দাবি দাওয়া গ্রহণ করা হতে বিরত থাকে। সমাজকে তাদের মন্দ প্রভাব ও ভয়ানক পরিণতি হতে রক্ষা করার জন্য ষড়যন্ত্রকারীদের চিন্তাধারা যাতে সমাজে প্রচার না পায় সে ব্যবস্থা করতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ما تركت بعدي فتنة أضرّ على الرجال من النساء»
“আমি পুরুষদের জন্য নারীদের ফিতনার চেয়ে অধিক ক্ষতিকর আর কোনো ফিতনা রেখে আসি নি।”
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলো বলেন,
«واستوصوا بالنساء خيراً»
“তোমরা নারীদের কল্যাণকর উপদেশ দাও।”
“নারীদের কল্যাণ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, তাদের সম্মান, সম্ভ্রম ও ইজ্জতের সংরক্ষণ করা এবং তাদের ফিতনার কারণ সমূহ হতে দূরে রাখা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সে সব কাজ করার তাওফীক দিন যাতে রয়েছে তাদের জন্য দুনিয়াও আখিরাতের কল্যাণ”।
ঘোষণাটিতে শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায রহ. শাইখ আব্দুল আযীয আল-শাইখ, শাইখ আব্দুল্লাহ আল-গুদাইয়ান, শাইখ বকর আবু যায়েদ ও শাইখ সালেহ আল-ফাওযান সবাই স্বাক্ষর করেন। আল্লাহ তা‘আলা তাদের সবাইকে উত্তম প্রতিদান দিন।
বর্তমানে আলিম-উলামা, সত্যিকার দা‘ঈ ও সত্যবাদীরা নারীদের এ সব বিপর্যয় ও মহামারি হতে রক্ষা করার জন্য তাদের কোমর চেপে ধরছে এবং তাদের বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নারীরা যাতে তাদের স্বকীয়তা ও ঐতিহ্য বজায় রাখতে পারে এবং মারাত্মক অবনতি হতে নিরাপদ থাকে, সে জন্য তারা নিরলস-ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ বিষয়ে সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদের গবেষণা ও ফতওয়া বিভাগ থেকে ২৫/১/১৪২০ হিজরীতে নারীদের উদ্দেশ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা প্রকাশ করা হয়েছে। নারীদের প্রবন্ধটির বিষয়বস্তুটি জানা থাকাটা খুবই জরুরি। তাই তাদের ফতওয়াটিকে এখানে উল্লেখ করা উপযুক্ত মনে করছি:
“সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য এবং সালাত ও সালাম আল্লাহর প্রেরিত রাসূলের ওপর ও তার পরিবারবর্গ, সাহাবীদের ওপর যারা ছিল তার নির্দেশিত পথের পথিক ও এ দীনের ধারক বাহক।
“এ কথা আমাদের কারোই অজানা নয় যে, নারীরা ইসলামের ছায়াতলে কী-রকম জীবন যাপন করছে এবং তারা যে কতটা নিরাপদে আছে। বিশেষ করে আমাদের এ-দেশে (সৌদি আরবে) নারীদের যথেষ্ট সম্মান দেওয়া হয়ে থাকে, আমাদের এখানে তাদের জন্য উপযুক্ত কাজের ব্যবস্থা আছে এবং শরী‘আত অনুমোদিত সব ধরনের অধিকার তারা ভোগ করতে থাকে। পক্ষান্তরে নারীরা জাহেলি যুগে যে কতটা অমানবিক ও অসহনীয় নির্যাতনের স্বীকার হত, তা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। বর্তমান অমুসলিম রাষ্ট্রেও নারীরা অত্যন্ত নির্মম, অমানবিক ও অসহায় অবস্থায় জীবন যাপন করে।
“এটি আল্লাহ তা‘আলার বড় একটি নি‘আমত যার ওপর আমাদের শুকরিয়া আদায় করা উচিত। আমাদের কর্তব্য হলো, আল্লাহর দেওয়া নি‘আমতের যথার্থ মূল্যায়ন করা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, বর্তমানে এক শ্রেণির লোক আছে, যাদের চিন্তা চেতনা পশ্চিমাদের চিন্তা চেতনারই ধারক-বাহক এবং তাদের সভ্যতা-সংস্কৃতির অন্ধ-অনুসারী। তারা আমাদের দেশের নারীরা যেভাবে পর্দাশীল, লজ্জাবতী, ও নিরাপদে থাকে তার ওপর তারা সন্তুষ্ট নয়। তারা চায় যে, আমাদের দেশের নারীরাও যেন পশ্চিমা, ধর্মহীন ও বিধর্মী দেশের নারীদের মতো রাস্তায় বের হোক, বেপর্দা হয়ে ঘুরে বেড়াক এবং পুরুষদের সাথে অবাধে চলাফেরা করুক। ফলে তারা বিভিন্ন পেপার-পত্রিকায় নারীদের নিয়ে অশালীন লেখালেখি করে এবং নারীদের নামে তারা বিভিন্ন ধরনের দাবি দাওয়া উত্থাপন করে। নিম্নে এর কয়েকটি বিষয় আলোচনা করা হলো,
“এক. পর্দার বিরোধিতা করা: আল্লাহ নারীদের পর্দা করার যে নির্দেশ দিয়েছে তারা তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। পর্দা যা নারীদের সম্ভ্রম ও ইজ্জতের গ্যারান্টি তার বিরুদ্ধে তারা অব্যাহত অপপ্রচার চালায় এবং পর্দা করা যাতে মুসলিম সমাজে না থাকে তার বিরুদ্ধে তারা নানাবিধ শ্লোগান আবিষ্কার করছে। পর্দা করা যে, ফরয তা কুরআন ও হাদীস দ্বারাই প্রমাণিত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ قُل لِّأَزۡوَٰجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ يُدۡنِينَ عَلَيۡهِنَّ مِن جَلَٰبِيبِهِنَّۚ ذَٰلِكَ أَدۡنَىٰٓ أَن يُعۡرَفۡنَ فَلَا يُؤۡذَيۡنَۗ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ٥٩﴾ [ الاحزاب : ٥٩ ]
“হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে কন্যাদেরকে ও মুমিনদেরকে বল, তারা যেন তাদের জিলবাবের কিছু অংশ নিজদের উপর ঝুলিয়ে দেয়, তাদেরকে চেনার ব্যাপারে এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা হবে।ফলে তাদেরকে কষ্ট দেওয়া হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৯]
﴿وَإِذَا سَأَلۡتُمُوهُنَّ مَتَٰعٗا فَسَۡٔلُوهُنَّ مِن وَرَآءِ حِجَابٖۚ ذَٰلِكُمۡ أَطۡهَرُ لِقُلُوبِكُمۡ وَقُلُوبِهِنَّۚ وَمَا كَانَ لَكُمۡ أَن تُؤۡذُواْ رَسُولَ ٱللَّهِ وَلَآ أَن تَنكِحُوٓاْ أَزۡوَٰجَهُۥ مِنۢ بَعۡدِهِۦٓ أَبَدًاۚ إِنَّ ذَٰلِكُمۡ كَانَ عِندَ ٱللَّهِ عَظِيمًا﴾ [ الاحزاب : ٥٣ ]
“আর যখন নবী পত্নীদের কাছে তোমরা কোনো সামগ্রী চাইবে তখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবে; এটি তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র। আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেওয়া এবং তার (মৃত্যুর) পর তার স্ত্রীদেরকে বিয়ে করা কখনো তোমাদের জন্য সঙ্গত নয়। নিশ্চয় এটি আল্লাহর কাছে গুরুতর পাপ।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৩]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কথা, বনী মুস্তালাকের যুদ্ধে যখন তিনি সৈন্যদের থেকে পিছু হটলেন এবং সাফওয়ান ইবন মুয়াত্তাল তার পাশ দিয়ে অতিক্রম করছে, তা জানতে পেরে, সাথে সাথে চেহারা ডেকে ফেলেন। তারপর তিনি বলেন, সে আমাকে পর্দা ফরয ওয়ার পূর্বে দেখেছিল। তার এ কথা দ্বারা বুঝা যায় যে, পর্দা করা ফরয এবং চেহারাও পর্দার অন্তর্ভুক্ত।
“তার অপর একটি বাক্য দ্বারাও পর্দা যে ফরয তা প্রমাণিত হয়, তিনি বলেন আমরা নারীরা নবী করীম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলাম, আর যখন আমাদের সাথে পুরুষরা অতিক্রম করত তখন আমরা আমাদের ওড়না দিয়ে চেহারা ডেকে রাখতাম আর যখন আমরা তাদের অতিক্রম করে ফেলতাম তখন আবার চেহারা খুলে ফেলতাম। এ ধরনের আরও অনেক হাদীস কুরআন রয়েছে, যা দ্বারা মুসলিম নারীদের জন্য পর্দা করা যে ফরয তা প্রমাণিত হয়।
“তা সত্ত্বেও ষড়যন্ত্রকারীরা আল্লাহর কিতাব ও নবীর সুন্নাতের বিরোধিতা করে আল্লাহর বিধান পর্দার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়। যার ফলে নারীরা যখন ঘর থেকে বের হয়, তখন যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে বা যারা দুশ্চরিত্র তারা তাদের দিকে তাকিয়ে উপভোগ করতে থাকে।
“দুই. নারীদের জন্য গাড়ী চালানোর অনুমতি দাবি: নারীদের জন্য গাড়ী চালানোর ক্ষমতা দেয়ার দাবি করে। অথচ নারীরা যখন গাড়ী চালানোর জন্য রাস্তায় বের হবে, তখন তাদের জন্য অনেক ক্ষতি ও বিপদের আশঙ্কা রয়েছে, যা একজন জ্ঞানী বলতেই অনুভব করতে পারে। যেমনি ভাবে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে অনুরূপভাবে যখন একজন নারী একাকার হবে তখন সে অবশ্যই বিপদে পড়তে পারে।
“তিন. নারীদের ছবি তোলা: এ বিরুদ্ধবাদীরা নারীদের ছবি বিভিন্ন ধরনের কার্ড ইত্যাদিতে লাগিয়ে রাখার দাবি তোলে। অথচ যখন তার ছবিটি কার্ডে লাগানো হয় তখন তার এ কার্ডটি অনেক লোকজনরে হাতে যাবে। তখন যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে বা দুশ্চরিত্র তারা সুযোগ পেয়ে যাবে। আর এতে যে, নারীরা বেপর্দা হবে এবং সংকটে পড়বে তাতে সন্দেহ করার কোনো অবকাশ নেই।
“চার. নারী-পুরুষের অবাধ মেলা-মেশার দাবি: তারা নারী ও পুরুষের অবাধ মেলা-মেশার দাবি করে এবং যে সব কাজ পুরুষদের জন্য প্রযোজ্য তা নারীদেরও করতে দেয়ার জন্য সুযোগ দেয়ার দাবি করে। অথচ, তাদের জন্য যে সব কাজ প্রযোজ্য এবং তাদের স্বভাবের সাথে যে কাজের সম্পর্ক রয়েছে, সে কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকাকে তারা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা বলে দাবি করে।
“এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, তাদের এ দাবি সম্পূর্ণ বাস্তবতার পরিপন্থী ও অবান্তর। কারণ, তাদের জন্য যে কাজ উপযুক্ত নয়, তাদের সে কাজের দায়িত্ব দেয়াই হলো, প্রকৃত পক্ষে তাদের বেকার বানিয়ে দেওয়া। ইসলামী শরী‘আত নারী পুরুষদের অবাধ মেলা-মেশা, অপরিচিত পুরুষদের সাথে একজন নারীর একান্ত হওয়া এবং নারীদের একাকী সফর করা ইত্যাদিকে যে, হারাম করেছে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া। কারণ, এর ফলে যে সব ক্ষতি বা বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে তা কখনই প্রশংসনীয় হতে পারে না। অথচ আল্লাহ তা‘আলা ইবাদতের স্থানেও নারীদের পুরুষের সাথে একসাথে ইবাদত করতে নিষেধ করছে। ফলে ইসলামের বিধান হলো, সালাতে নারীদের কাতার পুরুষদের কাতারের পিছনে হবে এবং নারীদেরকে তাদের ঘরে সালাত আদায়ের জন্য উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لا تمنعوا إماء الله مساجد الله وبيوتهن خير لهن»
“তোমরা আল্লাহর বান্দিদের মসজিদে গমন করতে বাধা দিও না। আর তাদের ঘরসমূহ তাদের জন্য অতি উত্তম।”
“এখানে একটি কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, যদি নারীরা মসজিদের গমন করে সালাত আদায় করতে চায়, তাতে তাদের নিষেধ করা যাবে না। কিন্তু তাদের জন্য ঘরে সালাত আদায় করাই উত্তম। কারণ, বর্তমান ফিতনা-ফাসাদের যুগে নারীদের ঘর থেকে বের হতে না দেওয়ার মধ্যেই নিরাপত্তা।
“আর ইসলাম এসব আদেশ এ জন্য দিয়েছে যাতে নারীদের সম্মান-হানি না ঘটে এবং তাদের যাবতীয় ফিতনার কারণ হতে দূরে রাখা যায়। সুতরাং মুসলিমদের ওপর কর্তব্য হলো, তারা যেন তাদের নারীদের সম্মান রক্ষায় মনোযোগী হয় এবং ষড়যন্ত্রকারীদের অবান্তর দাবীগুলোর প্রতি কোনো প্রকার ভ্রূক্ষেপ না করে। আর তাদের অবশ্যই উপদেশে গ্রহণ করতে হবে, সে সব দেশের নারীদের করুণ পরিণতি হতে, যারা এ সব অবান্তর, মিথ্যা ও ভ্রান্ত দাবিগুলোকে গ্রহণ করে বিপদে পড়ছে এবং ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্রের বেড়া ঝালে পা দিয়ে, চরম অশান্তিতে কালাতিপাত করছে। পশ্চিমা দেশের নারীদের অবস্থা দেখে আমাদের দেশের নারীরা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে। তাদের যে কি করুণ পরিণতি তার বাস্তব চিত্র দেখলে আমরা অতি সহজে অনুমান করতে পারি যে আমাদের দেশের নারীরা তাদের তুলনায় কত যে শান্তিতে আছে। সৌভাগ্যবান সেই যে অন্যের থেকে উপদেশ গ্রহণ করে। আমাদের দেশের ক্ষমতাশীলদের উচিত হলো, তারা যেন এ সব আহমকদের দাবি দাওয়া গ্রহণ করা হতে বিরত থাকে। সমাজকে তাদের মন্দ প্রভাব ও ভয়ানক পরিণতি হতে রক্ষা করার জন্য ষড়যন্ত্রকারীদের চিন্তাধারা যাতে সমাজে প্রচার না পায় সে ব্যবস্থা করতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ما تركت بعدي فتنة أضرّ على الرجال من النساء»
“আমি পুরুষদের জন্য নারীদের ফিতনার চেয়ে অধিক ক্ষতিকর আর কোনো ফিতনা রেখে আসি নি।”
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলো বলেন,
«واستوصوا بالنساء خيراً»
“তোমরা নারীদের কল্যাণকর উপদেশ দাও।”
“নারীদের কল্যাণ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, তাদের সম্মান, সম্ভ্রম ও ইজ্জতের সংরক্ষণ করা এবং তাদের ফিতনার কারণ সমূহ হতে দূরে রাখা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সে সব কাজ করার তাওফীক দিন যাতে রয়েছে তাদের জন্য দুনিয়াও আখিরাতের কল্যাণ”।
ঘোষণাটিতে শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায রহ. শাইখ আব্দুল আযীয আল-শাইখ, শাইখ আব্দুল্লাহ আল-গুদাইয়ান, শাইখ বকর আবু যায়েদ ও শাইখ সালেহ আল-ফাওযান সবাই স্বাক্ষর করেন। আল্লাহ তা‘আলা তাদের সবাইকে উত্তম প্রতিদান দিন।
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন