HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলাম
লেখকঃ শাইখ আব্দুর রাজ্জাক ইবন আব্দুল মুহসিন আল-বদর
৭
ইসলামে নারীর সম্মানএকমাত্র ইসলামই মুসলিম নারীদেরকে ইসলামের নির্ভুল দিক-নির্দেশনা ও বাস্তবধর্মী নীতি মালার মাধ্যমে তাদের যাবতীয় অসম্মান ও অবমাননা থেকে রক্ষা করেছে। ইসলাম তাদের নিরাপত্তা বিধান করেছে, তাদের সম্ভ্রম রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছে, তাদের যাবতীয় কল্যাণের নিশ্চয়তা দিয়েছে। দুনিয়াও আখিরাতের সফলতা লাভের জন্য সব ধরনের পথ তাদের জন্য উন্মুক্ত করেছে। ইসলামই তাদের জন্য সুন্দর ও আনন্দদায়ক জীবন নিশ্চিত করেছে। সব ধরনের ফিতনা, ফ্যাসাদ, অন্যায় ও অনাচার থেকে ইসলাম নারীদের হিফাযত করেছে। ইসলাম তাদের প্রতি কোনো প্রকার বৈষম্য, যুলুম ও নির্যাতন করার সব পথকে রুদ্ধ করেছে। আর এগুলো সবই হলো, তার বান্দাদের প্রতি আল্লাহ তা‘আলা অপার অনুগ্রহ, বিশেষ করে নারী জাতির প্রতি। কারণ, তিনি তাদের জন্য এমন এক শরী‘আত নাযিল করেছেন, যা তাদের কল্যাণকে নিশ্চিত করে, ফিতনা- ফ্যাসাদ থেকে তাদের হিফাযত করে, তাদের হঠকারিতা দূর ও তাদের যাবতীয় কল্যাণ নিশ্চিত করে। আল্লাহ তা‘আলা ইসলামকে আমাদের জন্য এক বিশাল নি‘আমত হিসেবে দিয়েছেন। বিশেষ করে, ইসলামই আমাদের- এক কথায় আমাদের নারীদের জন্য নিরাপত্তা-স্থল ও আশ্রয় কেন্দ্র। যারা ইসলামের সুশীতল ছায়া তলে আশ্রয় নেবে, তারাই নিরাপদে জীবন যাপন করতে পারবে। বরং ইসলাম সমাজকে সব ধরনের অন্যায়-অনাচার হতে রক্ষা করে। সমাজে যাতে কোনো প্রকার বিপদ-আপদ, ঝগড়া-বিবাদ, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়, তার জন্য ইসলামই একমাত্র গ্যারান্টি। ইসলাম এ সব থেকে সমাজকে রক্ষা করে এবং একটি উন্নত সমাজ জাতির জন্য নিশ্চিত করে।
আর যখন সমাজ থেকে নারীদের সাথে সম্পৃক্ত বিধানগুলো বিলুপ্ত হয়ে যায়, তখন সমাজে অন্যায়, অনাচার, ঝগড়া, বিবাদ ও বিশৃঙ্খলা বৃদ্ধি পায়। নারীদের কোনো নিরাপত্তা সে সমাজে অবশিষ্ট থাকে না।
আর মানবজাতির ইতিহাস হলো এর জ্বলন্ত ও উৎকৃষ্ট প্রমাণ, কারণ, যে ব্যক্তি পৃথিবীর ইতিহাসের দিকে নজর দেবে, সে অবশ্যই দেখতে পাবে, পৃথিবীতে বড় বড় বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হলো, সামাজিক বিশৃঙ্খলা, নৈতিক পতন, বেহায়াপনা ও বেলাল্লাপনার বিস্তার, অবাধে অন্যায়-অত্যাচার সংঘটিত হওয়া ইত্যাদি। আর সমাজে এ গুলো বিস্তারের পিছনে মূল কারণ হলো, নারীদের অবাধ চলা ফেরা, নারীরা পুরুষের সাথে অবাধ মেলামেশা করা, সাজ-সজ্জা অবলম্বন, বেপর্দা হয়ে ঘর থেকে বের হওয়া, অপরিচিত লোকদের সাথে তাদের ওঠবস, লোক সমাজে তারা অত্যন্ত সুন্দর কাপড় পরিধান করে কোনো প্রকার লজ্জা-শরম ছাড়াই বের হওয়া।
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেন, এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে যে, সব ধরনের অনিষ্ট ও বিপদ-আপদের মূল কারণ হলো, নারীদের পুরুষদের সাথে অবাধ চলা ফেরা করতে সুযোগ পাওয়া। আর এটাই হলো বড় কারণ, দুনিয়াতে ব্যাপক হারে আযাব নাযিল হওয়ার জন্য। অনুরূপভাবে নারীদের কারণেই সর্বসাধারণ হোক কিংবা বিশেষ লোক, সবার ওপর বিপর্যয় নেমে আসে, সবাইকে আল্লাহর আযাবে আক্রান্ত হতে হয়।
মনে রাখতে হবে, নারীদের অবাধ মেলামেশার কারণেই সমাজে অন্যায়, অনাচার, অশ্লীলতা, যেনা ব্যভিচার বৃদ্ধি পায়, সমাজের সুনাম সুখ্যাতি বিনষ্ট হয়। আর এ সব হলো, সমাজের জন্য বড় ধরনের মহামারি ও আযাবের কারণ। মুসা আলাইহিস সালামের সৈন্যদের মধ্যে যখন নারীরা প্রবেশ করল, তখন তাদের মধ্যে ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়ল এবং তারা অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়ল। যার ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের ওপর এমন আযাব পাঠালেন, একদিনেই তাদের সত্তর হাজার লোক একসাথে মারা গেল। এ ঘটনা তাফসীরের কিতাবসমূহে বিখ্যাত।
ইসলামের আগমন হয়েছে মানব জাতিকে আপদ-বিপদ হতে রক্ষা করা এবং মানবতাকে চিকিৎসা ও সংশোধন করার জন্য, যাতে সমাজে যে সব ফিতনা-ফ্যাসাদ দেখা দেয় এবং বিপর্যয় নেমে আসে তা থেকে মানবতাকে মুক্ত করা যায়। ইসলাম হলো মূলতঃ এমন একটি পবিত্র শিক্ষা, যা মানুষকে ধ্বংস ও অশ্লীল কার্যকলাপ হতে রক্ষা করে। এ জন্য বলাবাহুল্য যে, ইসলাম হলো আল্লাহর পক্ষ হতে মানব জাতির জন্য বিশেষ রহমত, যা দ্বারা বান্দাদের আত্ম মর্যাদার সংরক্ষণ হয় এবং তাদেরকে দুনিয়াতে অপমান অপদস্থ হওয়া ও আখিরাতের আযাব হতে রক্ষা করে।
হাদীস-কুরআন পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই, নারীদের ফিতনার কারণেই দেশ ও সমাজে ফিতনা ফাসাদ, অনিষ্টতা ও এমন এমন বিপর্যয় দেখা দেয়, যার পরিণতি ও শাস্তি যে কত ভয়াবহ, তা আয়ত্ত করা কারোর পক্ষেই সম্ভব নয়।
সহীহ বুখারী ও মুসলিমে উসামা ইবন যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ما تركتُ بعدي فتنةً أضرَّ على الرجال من النساء»
“আমার পর পুরুষদের জন্য নারীদের ফিতনার চেয়ে মারাত্মক ও ক্ষতিকর আর কোনো ফিতনা আমি রেখে যাই নি।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫০৯৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৪।]
এ কারণেই আল্লাহ তা‘আলা নারী ও পুরুষদের জন্য আলাদা আলাদা নীতিমালা আরোপ করেছেন, যেগুলো মেনে চললে এবং সমাজে বাস্তবায়ন করলে যাবতীয় কল্যাণ ও দুনিয়া আখিরাতের সম্মান লাভ করা যাবে। সমাজ বা দেশে কোনো প্রকার ফিতনা, ফাসাদ আর অবশিষ্ট থাকবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قُل لِّلۡمُؤۡمِنِينَ يَغُضُّواْ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِمۡ وَيَحۡفَظُواْ فُرُوجَهُمۡۚ ذَٰلِكَ أَزۡكَىٰ لَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرُۢ بِمَا يَصۡنَعُونَ ٣٠ وَقُل لِّلۡمُؤۡمِنَٰتِ يَغۡضُضۡنَ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِنَّ وَيَحۡفَظۡنَ فُرُوجَهُنَّ ٣١ ﴾ [ النور : ٣٠، ٣١ ]
“মুমিন পুরুষদের বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জা-স্থানের হিফাজত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত। আর মুমিন নারীদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩০-৩১]
﴿يَٰنِسَآءَ ٱلنَّبِيِّ لَسۡتُنَّ كَأَحَدٖ مِّنَ ٱلنِّسَآءِ إِنِ ٱتَّقَيۡتُنَّۚ فَلَا تَخۡضَعۡنَ بِٱلۡقَوۡلِ فَيَطۡمَعَ ٱلَّذِي فِي قَلۡبِهِۦ مَرَضٞ وَقُلۡنَ قَوۡلٗا مَّعۡرُوفٗا ٣٢ وَقَرۡنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ ٱلۡأُولَىٰۖ٣٣ ﴾ [ الاحزاب : ٣٢، ٣٣ ]
“হে নবী-পত্নীগণ, তোমরা অন্য কোনো নারীর মতো নও। যদি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে (পরপুরুষের সাথে) কোমল কণ্ঠে কথা বলো না। তাহলে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, সে প্রলুব্ধ হয়। আর তোমরা ন্যায় সংগত কথা বলবে। আর তোমরা তোমাদের নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক-জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩২-৩৩]
এ বিষয়ে কুরআন ও সুন্নাহের বর্ণনা অনেক। ইসলাম নারীদের বিষয়ে যে সব বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে, তা মানুষের অকল্যাণ বা তাদের স্বাধীনতা হরণ করার জন্য করে নি, বরং তা করা হয়েছে সমাজকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা, সামাজিক আত্ম-মর্যাদাবোধ ও সমাজের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার লক্ষে।
ইসলাম নারীদের জন্য যে সব বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে, তা তাদের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়ার জন্য করেনি, বরং তারা যাতে কোনো প্রকার অন্যায় ও অশ্লীল কাজে জড়িয়ে না পড়ে, নিরাপত্তা-হীনতায় না পড়ে, সে জন্যই তাদের ওপর এ সব বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। আল্লাহ তাদের ওপর বিধি নিষেধ আরোপ করার মাধ্যমে, নারীদের অশ্লীল কাজের দিকে নিয়ে যায়, এমন সব ধরনের উপায় উপকরণ বন্ধ করে দিয়েছেন। আর এটিই হলো নারীদের জন্য সত্যিকার সম্মান ও মর্যাদা।
নারীদের অধিকার বিষয়ে কুরআনের দিক নির্দেশনা
পবিত্র কুরআন, যাকে আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দাদের জন্য বিশেষ রহমত ও অনুপম আদর্শ হিসেবে দুনিয়াতে নাযিল করেছেন, যদি কোনো ব্যক্তি তার আয়াতসমূহে গভীরভাবে চিন্তা করে, সে অবশ্যই দেখতে পাবে, আল্লাহ তা‘আলা নারীদের বিষয়ে কতই না সুন্দর ব্যবস্থা রেখেছেন এবং নারীদের অধিকারকে তিনি কতই না গুরুত্ব দিয়েছেন এবং সমুন্নত রেখেছেন। আল্লাহ তা‘আলা নারীদের অধিকারকে সংরক্ষণ করার বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। আর যারা নারীদের অধিকার নষ্ট করে এবং তাদের ওপর যুলুম, অত্যাচার ও তাদের সাথে বিমাতা-সুলভ আচরণ করে, তাদের বিষয়ে তিনি কঠিন হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। নারীদের অধিকার বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে অনেক আয়াত নাযিল করেছেন। এমনকি নারীদের নামে একটি সূরাও নাযিল তিনি নাযিল করেন, যার নাম সূরা আন-নিসা। যার মধ্যে এমন সব আয়াত রয়েছে, যেগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা নারীদের সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন আহকাম আলোচনা করেন। তাদের সামাজিক মর্যাদা, পুরুষদের প্রতি তাদের করণীয়, নারী অধিকার, বিবাহ, ঘর-সংসার, তালাক ইত্যাদি এ সূরাতে স্থান পায়। কুরআন নারীদের সাথে আচরণের বিষয়ে যে সব দিক নির্দেশনা দিয়েছে তা নিম্নে আলোচনা করা হল।
এক. নারীদের সাথে উত্তম ব্যবহার করা
আল্লাহ তা‘আলা নারীদের সাথে উত্তম ব্যবহার করতে আদেশ দেন এবং তাদের সাথে কোনো প্রকার দুর্ব্যবহার করতে নিষেধ করেন। তাদের সাথে যেন কোনো প্রকার অনিয়ম না হয় এবং আল্লাহর দেওয়া বিধান ও যাবতীয় আইনকানুন মেনে চলা হয়, তার জন্য তিনি বিশেষ নির্দেশ দেন। আর যারা তাদের ওপর যুলুম-অত্যাচার করে, আল্লাহ তা‘আলার বেধে দেওয়া সীমারেখা অতিক্রম করে এবং সীমাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে, তাদের তিনি বিশেষ সতর্ক করেন। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন
﴿فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُۥ مِنۢ بَعۡدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوۡجًا غَيۡرَهُۥۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيۡهِمَآ أَن يَتَرَاجَعَآ إِن ظَنَّآ أَن يُقِيمَا حُدُودَ ٱللَّهِۗ وَتِلۡكَ حُدُودُ ٱللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوۡمٖ يَعۡلَمُونَ ٢٣٠ وَإِذَا طَلَّقۡتُمُ ٱلنِّسَآءَ فَبَلَغۡنَ أَجَلَهُنَّ فَأَمۡسِكُوهُنَّ بِمَعۡرُوفٍ أَوۡ سَرِّحُوهُنَّ بِمَعۡرُوفٖۚ وَلَا تُمۡسِكُوهُنَّ ضِرَارٗا لِّتَعۡتَدُواْۚ وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ فَقَدۡ ظَلَمَ نَفۡسَهُۥۚ وَلَا تَتَّخِذُوٓاْ ءَايَٰتِ ٱللَّهِ هُزُوٗاۚ وَٱذۡكُرُواْ نِعۡمَتَ ٱللَّهِ عَلَيۡكُمۡ وَمَآ أَنزَلَ عَلَيۡكُم مِّنَ ٱلۡكِتَٰبِ وَٱلۡحِكۡمَةِ يَعِظُكُم بِهِۦۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ بِكُلِّ شَيۡءٍ عَلِيمٞ ٢٣١ وَإِذَا طَلَّقۡتُمُ ٱلنِّسَآءَ فَبَلَغۡنَ أَجَلَهُنَّ فَلَا تَعۡضُلُوهُنَّ أَن يَنكِحۡنَ أَزۡوَٰجَهُنَّ إِذَا تَرَٰضَوۡاْ بَيۡنَهُم بِٱلۡمَعۡرُوفِۗ ذَٰلِكَ يُوعَظُ بِهِۦ مَن كَانَ مِنكُمۡ يُؤۡمِنُ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۗ ذَٰلِكُمۡ أَزۡكَىٰ لَكُمۡ وَأَطۡهَرُۚ وَٱللَّهُ يَعۡلَمُ وَأَنتُمۡ لَا تَعۡلَمُونَ ٢٣٢﴾ [ البقرة : ٢٣٠، ٢٣٢ ]
“অতএব, যদি সে তাকে তালাক দেয় তাহলে সে পুরুষের জন্য হালাল হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত ভিন্ন একজন স্বামী সে গ্রহণ না করে। অতঃপর সে (স্বামী) যদি তাকে তালাক দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের অপরাধ হবে না যে, তারা একে অপরের নিকট ফিরে আসবে, যদি দৃঢ় ধারণা রাখে যে, তারা আল্লাহর সীমারেখা কায়েম রাখতে পারবে। আর এটা আল্লাহর সীমারেখা, তিনি তা এমন সম্প্রদায়ের জন্য স্পষ্ট করে দেন, যারা বুঝে।
আর যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দেবে অতঃপর তারা তাদের ইদ্দতে পৌঁছে যাবে তখন হয়তো বিধি মোতাবেক তাদেরকে রেখে দেবে অথবা বিধি মোতাবেক তাদেরকে ছেড়ে দেবে। তবে তাদেরকে কষ্ট দিয়ে সীমালঙ্ঘনের উদ্দেশ্যে তাদেরকে আটকে রেখো না। আর যে তা করবে সে তো নিজের প্রতি যুলুম করবে। আর তোমরা আল্লাহর আয়াতসমূহকে উপহাসরূপে গ্রহণ করো না। আর তোমরা স্মরণ কর তোমাদের ওপর আল্লাহর নিআমত এবং তোমাদের ওপর কিতাব ও হিকমত যা নাযিল করেছেন, যার মাধ্যমে তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন। আর আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রাখ যে, নিশ্চয় আল্লাহ সব বিষয় সম্পর্কে সুপরিজ্ঞাত।
আর যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দেবে অতঃপর তারা তাদের ইদ্দতে পৌঁছবে তখন তোমরা তাদেরকে বাধা দিয়ো না যে, তারা তাদের স্বামীদেরকে বিয়ে করবে যদি তারা পরস্পরে তাদের মধ্যে বিধি মোতাবেক সম্মত হয়। এটা উপদেশ তাকে দেওয়া হচ্ছে, যে তোমাদের মধ্যে আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে। এটি তোমাদের জন্য অধিক শুদ্ধ ও অধিক পবিত্র। আর আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২২৯-২৩২]
দুই. নারীদের জন্য খরচা করার বিধান:-
আল্লাহ তা‘আলা নারীদের ওপর ব্যয় করার বিষয়ে নিখুঁত একটি নীতিমালা তৈরি করে দিয়েছেন। আল্লাহর নির্দেশ হলো, যখন নারীদের সাথে ঘর সংসার করবে, তখন তাদের যাবতীয় খরচা তোমরাই বহন করবে। আর যদি তাদের সাথে ঘর সংসার করা কোনোভাবেই সম্ভব না হয়, তখন তোমরা দয়া ও অনুগ্রহের সাথে তাদের ছেড়ে দেবে। কোনো প্রকার বাড়াবাড়ি করবে না। আর তোমাদের এ কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে, তোমরা সর্বদা তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿لَّا جُنَاحَ عَلَيۡكُمۡ إِن طَلَّقۡتُمُ ٱلنِّسَآءَ مَا لَمۡ تَمَسُّوهُنَّ أَوۡ تَفۡرِضُواْ لَهُنَّ فَرِيضَةٗۚ وَمَتِّعُوهُنَّ عَلَى ٱلۡمُوسِعِ قَدَرُهُۥ وَعَلَى ٱلۡمُقۡتِرِ قَدَرُهُۥ مَتَٰعَۢا بِٱلۡمَعۡرُوفِۖ حَقًّا عَلَى ٱلۡمُحۡسِنِينَ ٢٣٦ وَإِن طَلَّقۡتُمُوهُنَّ مِن قَبۡلِ أَن تَمَسُّوهُنَّ وَقَدۡ فَرَضۡتُمۡ لَهُنَّ فَرِيضَةٗ فَنِصۡفُ مَا فَرَضۡتُمۡ إِلَّآ أَن يَعۡفُونَ أَوۡ يَعۡفُوَاْ ٱلَّذِي بِيَدِهِۦ عُقۡدَةُ ٱلنِّكَاحِۚ وَأَن تَعۡفُوٓاْ أَقۡرَبُ لِلتَّقۡوَىٰۚ وَلَا تَنسَوُاْ ٱلۡفَضۡلَ بَيۡنَكُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ بِمَا تَعۡمَلُونَ بَصِيرٌ ٢٣٧﴾ [ البقرة : ٢٣٦، ٢٣٧ ]
“তোমাদের কোনো অপরাধ নেই যদি তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দাও এমন অবস্থায় যে, তোমরা তাদেরকে স্পর্শ কর নি কিংবা তাদের জন্য কোনো মোহর নির্ধারণ করনি। আর উত্তমভাবে তাদেরকে ভোগ-উপকরণ দিয়ে দাও, ধনীর ওপর তার সাধ্যানুসারে এবং সংকটাপন্নের ওপর তার সাধ্যানুসারে। সুকর্মশীলদের ওপর এটি আবশ্যক।
আর যদি তোমরা তাদেরকে তালাক দাও, তাদেরকে স্পর্শ করার পূর্বে এবং তাদের জন্য কিছু মোহর নির্ধারণ করে থাক, তাহলে যা নির্ধারণ করেছ, তার অর্ধেক (দিয়ে দাও)। তবে স্ত্রীরা যদি মাফ করে দেয়, কিংবা যার হাতে বিবাহের বন্ধন সে যদি মাফ করে দেয়। আর তোমাদের মাফ করে দেওয়া তাকওয়ার অধিক নিকটতর। আর তোমরা পরস্পরের মধ্যে অনুগ্রহ ভুলে যেয়ো না। তোমরা যা কর, নিশ্চয় আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক দ্রষ্টা।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৩৬-২৩৭]
তিন. স্ত্রীদের মোহরানা পরিশোধ করা ফরয
আল্লাহ তা‘আলা স্বামীদের ওপর তাদের স্ত্রীদের জন্য নির্ধারিত মোহরানা আদায় করাকে ফরয করে দিয়েছেন। তাদের নির্ধারিত মোহরানাতে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করাকে আল্লাহ তা‘আলা অবৈধ বা হারাম করে দিয়েছেন। তবে যদি স্ত্রী তার নিজের পক্ষ হতে কিছু কমিয়ে দেয় বা ক্ষমা করে দেয় সেটা হলো, ভিন্ন কথা। তখন তা হতে গ্রহণ করা স্বামীর জন্য অবশ্যই হালাল হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন
﴿وَءَاتُواْ ٱلنِّسَآءَ صَدُقَٰتِهِنَّ نِحۡلَةٗۚ فَإِن طِبۡنَ لَكُمۡ عَن شَيۡءٖ مِّنۡهُ نَفۡسٗا فَكُلُوهُ هَنِيٓٔٗا مَّرِيٓٔٗا ٤﴾ [ النساء : ٤ ]
“আর তোমরা নারীদেরকে সন্তুষ্টচিত্তে তাদের মোহর দিয়ে দাও, অতঃপর যদি তারা তোমাদের জন্য তা থেকে খুশি হয়ে কিছু ছাড় দেয়, তাহলে তোমরা তা সানন্দে তৃপ্তিসহকারে খাও।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৪]
চার. নারীদের জন্য মালিকানা প্রতিষ্ঠা
আল্লাহ তা‘আলা নারীদের জন্য উত্তরাধিকারী সম্পত্তিতে অংশ নির্ধারণ করেন। ফলে তাদের মাতা-পিতা, সন্তানাদি বা নিকট আত্মীয় কেউ মারা গেলে তারাও পুরুষদের মতো সম্পত্তির মালিক হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿لِّلرِّجَالِ نَصِيبٞ مِّمَّا تَرَكَ ٱلۡوَٰلِدَانِ وَٱلۡأَقۡرَبُونَ وَلِلنِّسَآءِ نَصِيبٞ مِّمَّا تَرَكَ ٱلۡوَٰلِدَانِ وَٱلۡأَقۡرَبُونَ مِمَّا قَلَّ مِنۡهُ أَوۡ كَثُرَۚ نَصِيبٗا مَّفۡرُوضٗا ٧﴾ [ النساء : ٧ ]
“পুরুষদের জন্য মাতা পিতা ও নিকটাত্মীয়রা যা রেখে গিয়েছে তা থেকে একটি অংশ রয়েছে। আর নারীদের জন্য রয়েছে মাতা পিতা ও নিকটাত্মীয়রা যা রেখে গিয়েছে তা থেকে একটি অংশ (তা থেকে কম হোক বা বেশি হোক) নির্ধারিত হারে।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৭]
পাঁচ. নারীদের প্রতি উদারতা প্রদর্শন করা
আল্লাহ তা‘আলা নারীদের কোনো প্রকার কষ্ট দিতে এবং তাদের দেওয়া মোহরানাকে ফেরত নিতে সম্পূর্ণ নিষেধ করেছেন। তাদের সদয় থাকা জন্য তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا يَحِلُّ لَكُمۡ أَن تَرِثُواْ ٱلنِّسَآءَ كَرۡهٗاۖ وَلَا تَعۡضُلُوهُنَّ لِتَذۡهَبُواْ بِبَعۡضِ مَآ ءَاتَيۡتُمُوهُنَّ إِلَّآ أَن يَأۡتِينَ بِفَٰحِشَةٖ مُّبَيِّنَةٖۚ وَعَاشِرُوهُنَّ بِٱلۡمَعۡرُوفِۚ فَإِن كَرِهۡتُمُوهُنَّ فَعَسَىٰٓ أَن تَكۡرَهُواْ شَيۡٔٗا وَيَجۡعَلَ ٱللَّهُ فِيهِ خَيۡرٗا كَثِيرٗا ١٩ وَإِنۡ أَرَدتُّمُ ٱسۡتِبۡدَالَ زَوۡجٖ مَّكَانَ زَوۡجٖ وَءَاتَيۡتُمۡ إِحۡدَىٰهُنَّ قِنطَارٗا فَلَا تَأۡخُذُواْ مِنۡهُ شَيًۡٔاۚ أَتَأۡخُذُونَهُۥ بُهۡتَٰنٗا وَإِثۡمٗا مُّبِينٗا ٢٠ وَكَيۡفَ تَأۡخُذُونَهُۥ وَقَدۡ أَفۡضَىٰ بَعۡضُكُمۡ إِلَىٰ بَعۡضٖ وَأَخَذۡنَ مِنكُم مِّيثَٰقًا غَلِيظٗا ٢١﴾ [ النساء : ١٩، ٢١ ]
“হে মুমিনগণ, তোমাদের জন্য হালাল নয় যে, তোমরা জোর করে নারীদের ওয়ারিস হবে। আর তোমরা তাদেরকে আবদ্ধ করে রেখো না, তাদেরকে যা দিয়েছ তা থেকে তোমরা কিছু নিয়ে নেয়ার জন্য, তবে যদি তারা প্রকাশ্য অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়। আর তোমরা তাদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস কর। আর যদি তোমরা তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে এমনও হতে পারে যে, তোমরা কোনো কিছুকে অপছন্দ করছ আর আল্লাহ তাতে অনেক কল্যাণ রাখবেন।
আর যদি তোমরা এক স্ত্রীর স্থলে অন্য স্ত্রীকে বদলাতে চাও আর তাদের কাউকে তোমরা প্রদান করেছ প্রচুর সম্পদ, তবে তোমরা তা থেকে কোনো কিছু নিও না। তোমরা কি তা নেবে অপবাদ এবং প্রকাশ্য গুনাহের মাধ্যমে?
আর তোমরা তা কীভাবে নেবে অথচ তোমরা একে অপরের সাথে একান্তে মিলিত হয়েছ; আর তারা তোমাদের থেকে নিয়েছিল দৃঢ় অঙ্গীকার?” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৯-২১]
ছয়. নারী ও পুরুষের স্বকীয়তা বজায় রাখা বিষয়
আল্লাহ তা‘আলা নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য কতক আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য দিয়েছেন। কিছু ক্ষেত্রে আল্লাহ পুরুষদের ওপর নারীদের শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন আবার কিছু ক্ষেত্রে পুরুষদের নারীদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। কিন্তু কেউ যেন কারো বৈশিষ্ট্য বা অধিকার নিয়ে বিতর্কের সূচনা না করে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَا تَتَمَنَّوۡاْ مَا فَضَّلَ ٱللَّهُ بِهِۦ بَعۡضَكُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖۚ لِّلرِّجَالِ نَصِيبٞ مِّمَّا ٱكۡتَسَبُواْۖ وَلِلنِّسَآءِ نَصِيبٞ مِّمَّا ٱكۡتَسَبۡنَۚ وَسَۡٔلُواْ ٱللَّهَ مِن فَضۡلِهِۦٓۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِكُلِّ شَيۡءٍ عَلِيمٗا ٣٢﴾ [ النساء : ٣٢ ]
‘আর তোমরা আকাঙ্ক্ষা করো না সে-সবের, যার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাদের এক জনকে অন্য জনের ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন। পুরুষদের জন্য রয়েছে অংশ, তারা যা উপার্জন করে তা থেকে এবং নারীদের জন্য রয়েছে অংশ, যা তারা উপার্জন করে তা থেকে। আর তোমরা আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ চাও। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩২]
সাত. ইবাদতের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ সমান বিনিময়
আল্লাহ তা‘আলা নারীদেরকে ইবাদত বন্দেগী ও আল্লাহর নৈকট্য লাভে পুরুষের সঙ্গী বানিয়েছেন। তাদেরও সেই কাজের আদেশ দেওয়া হয়েছে, যে কাজের আদেশ পুরুষদের দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেককে তাদের ইখলাস, চেষ্টা ও কর্ম অনুযায়ী কিয়ামত দিবসে সাওয়াব ও বিনিময় দেওয়া হবে। তাদের কাউকে কোনো প্রকার বৈষম্য করা হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ ٱلۡمُسۡلِمِينَ وَٱلۡمُسۡلِمَٰتِ وَٱلۡمُؤۡمِنِينَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتِ وَٱلۡقَٰنِتِينَ وَٱلۡقَٰنِتَٰتِ وَٱلصَّٰدِقِينَ وَٱلصَّٰدِقَٰتِ وَٱلصَّٰبِرِينَ وَٱلصَّٰبِرَٰتِ وَٱلۡخَٰشِعِينَ وَٱلۡخَٰشِعَٰتِ وَٱلۡمُتَصَدِّقِينَ وَٱلۡمُتَصَدِّقَٰتِ وَٱلصَّٰٓئِمِينَ وَٱلصَّٰٓئِمَٰتِ وَٱلۡحَٰفِظِينَ فُرُوجَهُمۡ وَٱلۡحَٰفِظَٰتِ وَٱلذَّٰكِرِينَ ٱللَّهَ كَثِيرٗا وَٱلذَّٰكِرَٰتِ أَعَدَّ ٱللَّهُ لَهُم مَّغۡفِرَةٗ وَأَجۡرًا عَظِيمٗا ٣٥﴾ [ الاحزاب : ٣٥ ]
“নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ ও নারী, মুমিন পুরুষ ও নারী, অনুগত পুরুষ ও নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও নারী, বিনয়াবনত পুরুষ ও নারী, দানশীল পুরুষ ও নারী, সিয়ামপালনকারী পুরুষ ও নারী, নিজেদের লজ্জাস্থানের হিফাযতকারী পুরুষ ও নারী, আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও নারী, তাদের জন্য আল্লাহ মাগফিরাত ও মহান প্রতিদান প্রস্তুত রেখেছেন।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৫]
আট. স্বামীর মধ্যকার বিবাধ মীমাংসা
আল্লাহ তা‘আলা স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মাঝে কোনো ঝগড়া-বিবাধ দেখা দিলে, তা মীমাংসার জন্য কতক নীতিমালা নির্ধারণ করে দিয়েছন। স্ত্রী যদি স্বামীর অবাধ্য হয়, তখন তার সাথে কি ধরনের আচরণ করতে হবে, আর স্বামী যদি বাড়াবাড়ি করে তার ব্যাপারে স্ত্রীর করণীয় কি হবে, তা আল্লাহ সবিস্তারে বলে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَإِنِ ٱمۡرَأَةٌ خَافَتۡ مِنۢ بَعۡلِهَا نُشُوزًا أَوۡ إِعۡرَاضٗا فَلَا جُنَاحَ عَلَيۡهِمَآ أَن يُصۡلِحَا بَيۡنَهُمَا صُلۡحٗاۚ وَٱلصُّلۡحُ خَيۡرٞۗ وَأُحۡضِرَتِ ٱلۡأَنفُسُ ٱلشُّحَّۚ وَإِن تُحۡسِنُواْ وَتَتَّقُواْ فَإِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِمَا تَعۡمَلُونَ خَبِيرٗا ١٢٨ وَلَن تَسۡتَطِيعُوٓاْ أَن تَعۡدِلُواْ بَيۡنَ ٱلنِّسَآءِ وَلَوۡ حَرَصۡتُمۡۖ فَلَا تَمِيلُواْ كُلَّ ٱلۡمَيۡلِ فَتَذَرُوهَا كَٱلۡمُعَلَّقَةِۚ وَإِن تُصۡلِحُواْ وَتَتَّقُواْ فَإِنَّ ٱللَّهَ كَانَ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ١٢٩﴾ [ النساء : ١٢٨، ١٢٩ ]
“যদি কোনো নারী তার স্বামীর পক্ষ থেকে কোনো দুর্ব্যবহার কিংবা উপেক্ষার আশঙ্কা করে, তাহলে তারা উভয়ে কোনো মীমাংসা করলে তাদের কোনো অপরাধ নেই। আর মীমাংসা কল্যাণকর এবং মানুষের মধ্যে কৃপণতা বিদ্যমান রয়েছে। আর যদি তোমরা সৎকর্ম কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর তবে আল্লাহ তোমরা যা কর সে বিষয়ে সম্যক অবগত।
আর তোমরা যতই কামনা কর না কেন তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে সমান আচরণ করতে কখনো পারবে না। সুতরাং তোমরা (একজনের প্রতি) সম্পূর্ণরূপে ঝুঁকে পড়ো না, যার ফলে তোমরা (অপরকে) ঝুলন্তের মতো করে রাখবে। আর যদি তোমরা মীমাংসা করে নাও এবং তাকওয়া অবলম্বন কর তবে নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১২৮-১২৯]
নয়. কন্যা সন্তানদের প্রতি বৈষম্য নিরসন বিষয়ে
মুশরিকরা কন্যা সন্তানদের অপছন্দ ও ঘৃণা করার কারণে আল্লাহ তা‘আলা তাদের ভর্ৎসনা করেন এবং তাদের তিরস্কার করেন।
﴿وَإِذَا بُشِّرَ أَحَدُهُم بِٱلۡأُنثَىٰ ظَلَّ وَجۡهُهُۥ مُسۡوَدّٗا وَهُوَ كَظِيمٞ ٥٨ يَتَوَٰرَىٰ مِنَ ٱلۡقَوۡمِ مِن سُوٓءِ مَا بُشِّرَ بِهِۦٓۚ أَيُمۡسِكُهُۥ عَلَىٰ هُونٍ أَمۡ يَدُسُّهُۥ فِي ٱلتُّرَابِۗ أَلَا سَآءَ مَا يَحۡكُمُونَ ٥٩﴾ [ النحل : ٥٨، ٥٩ ]
“আর যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়, তখন তার চেহারা কালো হয়ে যায়। আর সে থাকে দুঃখ ভারাক্রান্ত। তাকে যে সংবাদ দেওয়া হয়েছে, সে দুঃখে সে কওমের থেকে আত্মগোপন করে। অপমান সত্ত্বেও কি একে রেখে দেবে, না মাটিতে পূতে ফেলবে? জেনে রেখ, তারা যা ফয়সালা করে, তা কতই না মন্দ!” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৫৮-৫৯]
দশ. নারীদের প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার শাস্তি বিষয়
যারা সতী-সিদ্ধ রমণীদের অপবাদ দেয় তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন এবং তাদের ফাসিক বলে আখ্যায়িত করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَٱلَّذِينَ يَرۡمُونَ ٱلۡمُحۡصَنَٰتِ ثُمَّ لَمۡ يَأۡتُواْ بِأَرۡبَعَةِ شُهَدَآءَ فَٱجۡلِدُوهُمۡ ثَمَٰنِينَ جَلۡدَةٗ وَلَا تَقۡبَلُواْ لَهُمۡ شَهَٰدَةً أَبَدٗاۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡفَٰسِقُونَ ٤﴾ [ النور : ٤ ]
“আর যারা সচ্চরিত্র নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারপর তারা চারজন সাক্ষী নিয়ে আসে না, তবে তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত কর এবং তোমরা কখনই তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করো না। আর এরাই হলো ফাসিক।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৪]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ يَرۡمُونَ ٱلۡمُحۡصَنَٰتِ ٱلۡغَٰفِلَٰتِ ٱلۡمُؤۡمِنَٰتِ لُعِنُواْ فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِ وَلَهُمۡ عَذَابٌ عَظِيمٞ ٢٣ ﴾ [ النور : ٢٣ ]
“যারা সচ্চরিত্রা সরলমনা মুমিন নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারা দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত। আর তাদের জন্য রয়েছে মহা আযাব।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ২৩]
এগার. স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মুহাব্বাত আল্লাহর একটি নিদর্শন
আল্লাহ তা‘আলা বিবাহ সম্পর্কে বলেন, বিবাহ হলো, আল্লাহ তা‘আলার মহান নিদর্শন, যার মাধ্যমে স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের মাঝে প্রেম, ভালোবাসা ও পারস্পরিক অনুগ্রহ তৈরি হয়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمِنۡ ءَايَٰتِهِۦٓ أَنۡ خَلَقَ لَكُم مِّنۡ أَنفُسِكُمۡ أَزۡوَٰجٗا لِّتَسۡكُنُوٓاْ إِلَيۡهَا وَجَعَلَ بَيۡنَكُم مَّوَدَّةٗ وَرَحۡمَةًۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّقَوۡمٖ يَتَفَكَّرُونَ ٢١﴾ [ الروم : ٢١ ]
“আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলি রয়েছে সে কাওমের জন্য, যারা চিন্তা করে।” [সূরা আর-রূম, আয়াত: ২১]
বার. তালাকের বিধান
যখন স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ চূড়ান্ত রূপ নেয় এবং তালাক অনিবার্য হয়ে যায়, তখন তাদের করণীয় কী? কতজন সাক্ষী লাগবে, কতদিন ইদ্দত পালন করতে হবে এবং তাদের খরচা কত দিতে হবে ইত্যাদি বিশদভাবে আল্লাহ আলোচনা করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ إِذَا طَلَّقۡتُمُ ٱلنِّسَآءَ فَطَلِّقُوهُنَّ لِعِدَّتِهِنَّ وَأَحۡصُواْ ٱلۡعِدَّةَۖ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ رَبَّكُمۡۖ لَا تُخۡرِجُوهُنَّ مِنۢ بُيُوتِهِنَّ وَلَا يَخۡرُجۡنَ إِلَّآ أَن يَأۡتِينَ بِفَٰحِشَةٖ مُّبَيِّنَةٖۚ وَتِلۡكَ حُدُودُ ٱللَّهِۚ وَمَن يَتَعَدَّ حُدُودَ ٱللَّهِ فَقَدۡ ظَلَمَ نَفۡسَهُۥۚ لَا تَدۡرِي لَعَلَّ ٱللَّهَ يُحۡدِثُ بَعۡدَ ذَٰلِكَ أَمۡرٗا ١ فَإِذَا بَلَغۡنَ أَجَلَهُنَّ فَأَمۡسِكُوهُنَّ بِمَعۡرُوفٍ أَوۡ فَارِقُوهُنَّ بِمَعۡرُوفٖ وَأَشۡهِدُواْ ذَوَيۡ عَدۡلٖ مِّنكُمۡ وَأَقِيمُواْ ٱلشَّهَٰدَةَ لِلَّهِۚ ذَٰلِكُمۡ يُوعَظُ بِهِۦ مَن كَانَ يُؤۡمِنُ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۚ وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مَخۡرَجٗا ٢﴾ [ الطلاق : ١، ٢ ]
“হে নবী, (বল), তোমরা যখন স্ত্রীদেরকে তালাক দেবে, তখন তাদের ইদ্দত অনুসারে তাদের তালাক দাও এবং ‘ইদ্দত হিসাব করে রাখবে এবং তোমাদের রব আল্লাহকে ভয় করবে। তোমরা তাদেরকে তোমাদের বাড়ীÑঘর থেকে বের করে দিয়ো না এবং তারাও বের হবে না। যদি না তারা কোনো স্পষ্ট অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়। আর এগুলো আল্লাহর সীমারেখা। আর যে আল্লাহর (নির্ধারিত) সীমারেখাসমূহ অতিক্রম করে সে অবশ্যই তার নিজের ওপর যুলম করে। তুমি জান না, হয়তো এর পর আল্লাহ, (ফিরে আসার) কোনো পথ তৈরী করে দিবেন।
অতঃপর যখন তারা তাদের ইদ্দতের শেষ সীমায় পৌঁছবে, তখন তোমরা তাদের ন্যায়ানুগ পন্থায় রেখে দেবে অথবা ন্যায়ানুগ পন্থায় তাদের পরিত্যাগ করবে এবং তোমাদের মধ্য থেকে ন্যায়পরায়ণ দুইজনকে সাক্ষী বানাবে। আর আল্লাহর জন্য সঠিক সাক্ষ্য দেবে। তোমাদের মধ্যে যে আল্লাহ ও আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান আনে এটি দ্বারা তাকে উপদেশ দেওয়া হচ্ছে। যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন।” [সূরা আত-ত্বালাক, আয়াত: ১-২]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿أَسۡكِنُوهُنَّ مِنۡ حَيۡثُ سَكَنتُم مِّن وُجۡدِكُمۡ وَلَا تُضَآرُّوهُنَّ لِتُضَيِّقُواْ عَلَيۡهِنَّۚ وَإِن كُنَّ أُوْلَٰتِ حَمۡلٖ فَأَنفِقُواْ عَلَيۡهِنَّ حَتَّىٰ يَضَعۡنَ حَمۡلَهُنَّۚ فَإِنۡ أَرۡضَعۡنَ لَكُمۡ فََٔاتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ وَأۡتَمِرُواْ بَيۡنَكُم بِمَعۡرُوفٖۖ وَإِن تَعَاسَرۡتُمۡ فَسَتُرۡضِعُ لَهُۥٓ أُخۡرَىٰ ٦﴾ [ الطلاق : ٦ ]
“তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যেখানে তোমরা বসবাস কর সেখানে তাদেরকেও বাস করতে দাও, তাদেরকে সঙ্কটে ফেলার জন্য কষ্ট দিয়ো না। আর তারা গর্ভবতী হলে তাদের সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত তাদের জন্য তোমরা ব্যয় কর, আর তারা তোমাদের জন্য সন্তানকে দুধ পান করালে তাদের পাওনা তাদেরকে দিয়ে দাও এবং (সন্তানের কল্যাণের জন্য) সংগতভাবে তোমাদের মাঝে পরস্পর পরামর্শ কর। আর যদি তোমরা পরস্পর কঠোর হও তবে পিতার পক্ষে অন্য কোনো নারী দুধপান করাবে।” [সূরা আত-ত্বালাক, আয়াত: ৬]
তের. একাধিক বিবাহ সম্পর্কে দিক-নির্দেশনা
যারা একাধিক বিবাহ করতে চায় তাদের জন্য চারজন পর্যন্ত বিবাহ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে যারা একাধিক বিবাহ করবে, তাদের জন্য শর্ত হলো, তারা তাদের মধ্যে ন্যায় বিচার ও ইনসাফ কায়েম করবে। অন্যথায় তাকে আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَٱنكِحُواْ مَا طَابَ لَكُم مِّنَ ٱلنِّسَآءِ مَثۡنَىٰ وَثُلَٰثَ وَرُبَٰعَۖ فَإِنۡ خِفۡتُمۡ أَلَّا تَعۡدِلُواْ فَوَٰحِدَةً﴾ [ النساء : ٣ ]
“এখানে পবিত্র কুরআন হতে নারীদের সাথে সম্পৃক্ত কিছু দিক-নির্দেশনা এবং তাদের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ বিষয়ে কেবল কতগুলো দৃষ্টান্ত পেশ করা হল। এগুলো ছাড়াও আরও অনেক আয়াত রয়েছে সবগুলোর আলোচনা এখানে সম্ভব নয়।
আর যখন সমাজ থেকে নারীদের সাথে সম্পৃক্ত বিধানগুলো বিলুপ্ত হয়ে যায়, তখন সমাজে অন্যায়, অনাচার, ঝগড়া, বিবাদ ও বিশৃঙ্খলা বৃদ্ধি পায়। নারীদের কোনো নিরাপত্তা সে সমাজে অবশিষ্ট থাকে না।
আর মানবজাতির ইতিহাস হলো এর জ্বলন্ত ও উৎকৃষ্ট প্রমাণ, কারণ, যে ব্যক্তি পৃথিবীর ইতিহাসের দিকে নজর দেবে, সে অবশ্যই দেখতে পাবে, পৃথিবীতে বড় বড় বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হলো, সামাজিক বিশৃঙ্খলা, নৈতিক পতন, বেহায়াপনা ও বেলাল্লাপনার বিস্তার, অবাধে অন্যায়-অত্যাচার সংঘটিত হওয়া ইত্যাদি। আর সমাজে এ গুলো বিস্তারের পিছনে মূল কারণ হলো, নারীদের অবাধ চলা ফেরা, নারীরা পুরুষের সাথে অবাধ মেলামেশা করা, সাজ-সজ্জা অবলম্বন, বেপর্দা হয়ে ঘর থেকে বের হওয়া, অপরিচিত লোকদের সাথে তাদের ওঠবস, লোক সমাজে তারা অত্যন্ত সুন্দর কাপড় পরিধান করে কোনো প্রকার লজ্জা-শরম ছাড়াই বের হওয়া।
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেন, এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে যে, সব ধরনের অনিষ্ট ও বিপদ-আপদের মূল কারণ হলো, নারীদের পুরুষদের সাথে অবাধ চলা ফেরা করতে সুযোগ পাওয়া। আর এটাই হলো বড় কারণ, দুনিয়াতে ব্যাপক হারে আযাব নাযিল হওয়ার জন্য। অনুরূপভাবে নারীদের কারণেই সর্বসাধারণ হোক কিংবা বিশেষ লোক, সবার ওপর বিপর্যয় নেমে আসে, সবাইকে আল্লাহর আযাবে আক্রান্ত হতে হয়।
মনে রাখতে হবে, নারীদের অবাধ মেলামেশার কারণেই সমাজে অন্যায়, অনাচার, অশ্লীলতা, যেনা ব্যভিচার বৃদ্ধি পায়, সমাজের সুনাম সুখ্যাতি বিনষ্ট হয়। আর এ সব হলো, সমাজের জন্য বড় ধরনের মহামারি ও আযাবের কারণ। মুসা আলাইহিস সালামের সৈন্যদের মধ্যে যখন নারীরা প্রবেশ করল, তখন তাদের মধ্যে ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়ল এবং তারা অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়ল। যার ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের ওপর এমন আযাব পাঠালেন, একদিনেই তাদের সত্তর হাজার লোক একসাথে মারা গেল। এ ঘটনা তাফসীরের কিতাবসমূহে বিখ্যাত।
ইসলামের আগমন হয়েছে মানব জাতিকে আপদ-বিপদ হতে রক্ষা করা এবং মানবতাকে চিকিৎসা ও সংশোধন করার জন্য, যাতে সমাজে যে সব ফিতনা-ফ্যাসাদ দেখা দেয় এবং বিপর্যয় নেমে আসে তা থেকে মানবতাকে মুক্ত করা যায়। ইসলাম হলো মূলতঃ এমন একটি পবিত্র শিক্ষা, যা মানুষকে ধ্বংস ও অশ্লীল কার্যকলাপ হতে রক্ষা করে। এ জন্য বলাবাহুল্য যে, ইসলাম হলো আল্লাহর পক্ষ হতে মানব জাতির জন্য বিশেষ রহমত, যা দ্বারা বান্দাদের আত্ম মর্যাদার সংরক্ষণ হয় এবং তাদেরকে দুনিয়াতে অপমান অপদস্থ হওয়া ও আখিরাতের আযাব হতে রক্ষা করে।
হাদীস-কুরআন পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই, নারীদের ফিতনার কারণেই দেশ ও সমাজে ফিতনা ফাসাদ, অনিষ্টতা ও এমন এমন বিপর্যয় দেখা দেয়, যার পরিণতি ও শাস্তি যে কত ভয়াবহ, তা আয়ত্ত করা কারোর পক্ষেই সম্ভব নয়।
সহীহ বুখারী ও মুসলিমে উসামা ইবন যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ما تركتُ بعدي فتنةً أضرَّ على الرجال من النساء»
“আমার পর পুরুষদের জন্য নারীদের ফিতনার চেয়ে মারাত্মক ও ক্ষতিকর আর কোনো ফিতনা আমি রেখে যাই নি।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫০৯৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৪।]
এ কারণেই আল্লাহ তা‘আলা নারী ও পুরুষদের জন্য আলাদা আলাদা নীতিমালা আরোপ করেছেন, যেগুলো মেনে চললে এবং সমাজে বাস্তবায়ন করলে যাবতীয় কল্যাণ ও দুনিয়া আখিরাতের সম্মান লাভ করা যাবে। সমাজ বা দেশে কোনো প্রকার ফিতনা, ফাসাদ আর অবশিষ্ট থাকবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قُل لِّلۡمُؤۡمِنِينَ يَغُضُّواْ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِمۡ وَيَحۡفَظُواْ فُرُوجَهُمۡۚ ذَٰلِكَ أَزۡكَىٰ لَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرُۢ بِمَا يَصۡنَعُونَ ٣٠ وَقُل لِّلۡمُؤۡمِنَٰتِ يَغۡضُضۡنَ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِنَّ وَيَحۡفَظۡنَ فُرُوجَهُنَّ ٣١ ﴾ [ النور : ٣٠، ٣١ ]
“মুমিন পুরুষদের বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জা-স্থানের হিফাজত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত। আর মুমিন নারীদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩০-৩১]
﴿يَٰنِسَآءَ ٱلنَّبِيِّ لَسۡتُنَّ كَأَحَدٖ مِّنَ ٱلنِّسَآءِ إِنِ ٱتَّقَيۡتُنَّۚ فَلَا تَخۡضَعۡنَ بِٱلۡقَوۡلِ فَيَطۡمَعَ ٱلَّذِي فِي قَلۡبِهِۦ مَرَضٞ وَقُلۡنَ قَوۡلٗا مَّعۡرُوفٗا ٣٢ وَقَرۡنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ ٱلۡأُولَىٰۖ٣٣ ﴾ [ الاحزاب : ٣٢، ٣٣ ]
“হে নবী-পত্নীগণ, তোমরা অন্য কোনো নারীর মতো নও। যদি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে (পরপুরুষের সাথে) কোমল কণ্ঠে কথা বলো না। তাহলে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, সে প্রলুব্ধ হয়। আর তোমরা ন্যায় সংগত কথা বলবে। আর তোমরা তোমাদের নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক-জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩২-৩৩]
এ বিষয়ে কুরআন ও সুন্নাহের বর্ণনা অনেক। ইসলাম নারীদের বিষয়ে যে সব বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে, তা মানুষের অকল্যাণ বা তাদের স্বাধীনতা হরণ করার জন্য করে নি, বরং তা করা হয়েছে সমাজকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা, সামাজিক আত্ম-মর্যাদাবোধ ও সমাজের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার লক্ষে।
ইসলাম নারীদের জন্য যে সব বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে, তা তাদের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়ার জন্য করেনি, বরং তারা যাতে কোনো প্রকার অন্যায় ও অশ্লীল কাজে জড়িয়ে না পড়ে, নিরাপত্তা-হীনতায় না পড়ে, সে জন্যই তাদের ওপর এ সব বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। আল্লাহ তাদের ওপর বিধি নিষেধ আরোপ করার মাধ্যমে, নারীদের অশ্লীল কাজের দিকে নিয়ে যায়, এমন সব ধরনের উপায় উপকরণ বন্ধ করে দিয়েছেন। আর এটিই হলো নারীদের জন্য সত্যিকার সম্মান ও মর্যাদা।
নারীদের অধিকার বিষয়ে কুরআনের দিক নির্দেশনা
পবিত্র কুরআন, যাকে আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দাদের জন্য বিশেষ রহমত ও অনুপম আদর্শ হিসেবে দুনিয়াতে নাযিল করেছেন, যদি কোনো ব্যক্তি তার আয়াতসমূহে গভীরভাবে চিন্তা করে, সে অবশ্যই দেখতে পাবে, আল্লাহ তা‘আলা নারীদের বিষয়ে কতই না সুন্দর ব্যবস্থা রেখেছেন এবং নারীদের অধিকারকে তিনি কতই না গুরুত্ব দিয়েছেন এবং সমুন্নত রেখেছেন। আল্লাহ তা‘আলা নারীদের অধিকারকে সংরক্ষণ করার বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। আর যারা নারীদের অধিকার নষ্ট করে এবং তাদের ওপর যুলুম, অত্যাচার ও তাদের সাথে বিমাতা-সুলভ আচরণ করে, তাদের বিষয়ে তিনি কঠিন হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। নারীদের অধিকার বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে অনেক আয়াত নাযিল করেছেন। এমনকি নারীদের নামে একটি সূরাও নাযিল তিনি নাযিল করেন, যার নাম সূরা আন-নিসা। যার মধ্যে এমন সব আয়াত রয়েছে, যেগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা নারীদের সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন আহকাম আলোচনা করেন। তাদের সামাজিক মর্যাদা, পুরুষদের প্রতি তাদের করণীয়, নারী অধিকার, বিবাহ, ঘর-সংসার, তালাক ইত্যাদি এ সূরাতে স্থান পায়। কুরআন নারীদের সাথে আচরণের বিষয়ে যে সব দিক নির্দেশনা দিয়েছে তা নিম্নে আলোচনা করা হল।
এক. নারীদের সাথে উত্তম ব্যবহার করা
আল্লাহ তা‘আলা নারীদের সাথে উত্তম ব্যবহার করতে আদেশ দেন এবং তাদের সাথে কোনো প্রকার দুর্ব্যবহার করতে নিষেধ করেন। তাদের সাথে যেন কোনো প্রকার অনিয়ম না হয় এবং আল্লাহর দেওয়া বিধান ও যাবতীয় আইনকানুন মেনে চলা হয়, তার জন্য তিনি বিশেষ নির্দেশ দেন। আর যারা তাদের ওপর যুলুম-অত্যাচার করে, আল্লাহ তা‘আলার বেধে দেওয়া সীমারেখা অতিক্রম করে এবং সীমাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে, তাদের তিনি বিশেষ সতর্ক করেন। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন
﴿فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُۥ مِنۢ بَعۡدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوۡجًا غَيۡرَهُۥۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيۡهِمَآ أَن يَتَرَاجَعَآ إِن ظَنَّآ أَن يُقِيمَا حُدُودَ ٱللَّهِۗ وَتِلۡكَ حُدُودُ ٱللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوۡمٖ يَعۡلَمُونَ ٢٣٠ وَإِذَا طَلَّقۡتُمُ ٱلنِّسَآءَ فَبَلَغۡنَ أَجَلَهُنَّ فَأَمۡسِكُوهُنَّ بِمَعۡرُوفٍ أَوۡ سَرِّحُوهُنَّ بِمَعۡرُوفٖۚ وَلَا تُمۡسِكُوهُنَّ ضِرَارٗا لِّتَعۡتَدُواْۚ وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ فَقَدۡ ظَلَمَ نَفۡسَهُۥۚ وَلَا تَتَّخِذُوٓاْ ءَايَٰتِ ٱللَّهِ هُزُوٗاۚ وَٱذۡكُرُواْ نِعۡمَتَ ٱللَّهِ عَلَيۡكُمۡ وَمَآ أَنزَلَ عَلَيۡكُم مِّنَ ٱلۡكِتَٰبِ وَٱلۡحِكۡمَةِ يَعِظُكُم بِهِۦۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ بِكُلِّ شَيۡءٍ عَلِيمٞ ٢٣١ وَإِذَا طَلَّقۡتُمُ ٱلنِّسَآءَ فَبَلَغۡنَ أَجَلَهُنَّ فَلَا تَعۡضُلُوهُنَّ أَن يَنكِحۡنَ أَزۡوَٰجَهُنَّ إِذَا تَرَٰضَوۡاْ بَيۡنَهُم بِٱلۡمَعۡرُوفِۗ ذَٰلِكَ يُوعَظُ بِهِۦ مَن كَانَ مِنكُمۡ يُؤۡمِنُ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۗ ذَٰلِكُمۡ أَزۡكَىٰ لَكُمۡ وَأَطۡهَرُۚ وَٱللَّهُ يَعۡلَمُ وَأَنتُمۡ لَا تَعۡلَمُونَ ٢٣٢﴾ [ البقرة : ٢٣٠، ٢٣٢ ]
“অতএব, যদি সে তাকে তালাক দেয় তাহলে সে পুরুষের জন্য হালাল হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত ভিন্ন একজন স্বামী সে গ্রহণ না করে। অতঃপর সে (স্বামী) যদি তাকে তালাক দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের অপরাধ হবে না যে, তারা একে অপরের নিকট ফিরে আসবে, যদি দৃঢ় ধারণা রাখে যে, তারা আল্লাহর সীমারেখা কায়েম রাখতে পারবে। আর এটা আল্লাহর সীমারেখা, তিনি তা এমন সম্প্রদায়ের জন্য স্পষ্ট করে দেন, যারা বুঝে।
আর যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দেবে অতঃপর তারা তাদের ইদ্দতে পৌঁছে যাবে তখন হয়তো বিধি মোতাবেক তাদেরকে রেখে দেবে অথবা বিধি মোতাবেক তাদেরকে ছেড়ে দেবে। তবে তাদেরকে কষ্ট দিয়ে সীমালঙ্ঘনের উদ্দেশ্যে তাদেরকে আটকে রেখো না। আর যে তা করবে সে তো নিজের প্রতি যুলুম করবে। আর তোমরা আল্লাহর আয়াতসমূহকে উপহাসরূপে গ্রহণ করো না। আর তোমরা স্মরণ কর তোমাদের ওপর আল্লাহর নিআমত এবং তোমাদের ওপর কিতাব ও হিকমত যা নাযিল করেছেন, যার মাধ্যমে তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন। আর আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রাখ যে, নিশ্চয় আল্লাহ সব বিষয় সম্পর্কে সুপরিজ্ঞাত।
আর যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দেবে অতঃপর তারা তাদের ইদ্দতে পৌঁছবে তখন তোমরা তাদেরকে বাধা দিয়ো না যে, তারা তাদের স্বামীদেরকে বিয়ে করবে যদি তারা পরস্পরে তাদের মধ্যে বিধি মোতাবেক সম্মত হয়। এটা উপদেশ তাকে দেওয়া হচ্ছে, যে তোমাদের মধ্যে আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে। এটি তোমাদের জন্য অধিক শুদ্ধ ও অধিক পবিত্র। আর আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২২৯-২৩২]
দুই. নারীদের জন্য খরচা করার বিধান:-
আল্লাহ তা‘আলা নারীদের ওপর ব্যয় করার বিষয়ে নিখুঁত একটি নীতিমালা তৈরি করে দিয়েছেন। আল্লাহর নির্দেশ হলো, যখন নারীদের সাথে ঘর সংসার করবে, তখন তাদের যাবতীয় খরচা তোমরাই বহন করবে। আর যদি তাদের সাথে ঘর সংসার করা কোনোভাবেই সম্ভব না হয়, তখন তোমরা দয়া ও অনুগ্রহের সাথে তাদের ছেড়ে দেবে। কোনো প্রকার বাড়াবাড়ি করবে না। আর তোমাদের এ কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে, তোমরা সর্বদা তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿لَّا جُنَاحَ عَلَيۡكُمۡ إِن طَلَّقۡتُمُ ٱلنِّسَآءَ مَا لَمۡ تَمَسُّوهُنَّ أَوۡ تَفۡرِضُواْ لَهُنَّ فَرِيضَةٗۚ وَمَتِّعُوهُنَّ عَلَى ٱلۡمُوسِعِ قَدَرُهُۥ وَعَلَى ٱلۡمُقۡتِرِ قَدَرُهُۥ مَتَٰعَۢا بِٱلۡمَعۡرُوفِۖ حَقًّا عَلَى ٱلۡمُحۡسِنِينَ ٢٣٦ وَإِن طَلَّقۡتُمُوهُنَّ مِن قَبۡلِ أَن تَمَسُّوهُنَّ وَقَدۡ فَرَضۡتُمۡ لَهُنَّ فَرِيضَةٗ فَنِصۡفُ مَا فَرَضۡتُمۡ إِلَّآ أَن يَعۡفُونَ أَوۡ يَعۡفُوَاْ ٱلَّذِي بِيَدِهِۦ عُقۡدَةُ ٱلنِّكَاحِۚ وَأَن تَعۡفُوٓاْ أَقۡرَبُ لِلتَّقۡوَىٰۚ وَلَا تَنسَوُاْ ٱلۡفَضۡلَ بَيۡنَكُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ بِمَا تَعۡمَلُونَ بَصِيرٌ ٢٣٧﴾ [ البقرة : ٢٣٦، ٢٣٧ ]
“তোমাদের কোনো অপরাধ নেই যদি তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দাও এমন অবস্থায় যে, তোমরা তাদেরকে স্পর্শ কর নি কিংবা তাদের জন্য কোনো মোহর নির্ধারণ করনি। আর উত্তমভাবে তাদেরকে ভোগ-উপকরণ দিয়ে দাও, ধনীর ওপর তার সাধ্যানুসারে এবং সংকটাপন্নের ওপর তার সাধ্যানুসারে। সুকর্মশীলদের ওপর এটি আবশ্যক।
আর যদি তোমরা তাদেরকে তালাক দাও, তাদেরকে স্পর্শ করার পূর্বে এবং তাদের জন্য কিছু মোহর নির্ধারণ করে থাক, তাহলে যা নির্ধারণ করেছ, তার অর্ধেক (দিয়ে দাও)। তবে স্ত্রীরা যদি মাফ করে দেয়, কিংবা যার হাতে বিবাহের বন্ধন সে যদি মাফ করে দেয়। আর তোমাদের মাফ করে দেওয়া তাকওয়ার অধিক নিকটতর। আর তোমরা পরস্পরের মধ্যে অনুগ্রহ ভুলে যেয়ো না। তোমরা যা কর, নিশ্চয় আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক দ্রষ্টা।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৩৬-২৩৭]
তিন. স্ত্রীদের মোহরানা পরিশোধ করা ফরয
আল্লাহ তা‘আলা স্বামীদের ওপর তাদের স্ত্রীদের জন্য নির্ধারিত মোহরানা আদায় করাকে ফরয করে দিয়েছেন। তাদের নির্ধারিত মোহরানাতে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করাকে আল্লাহ তা‘আলা অবৈধ বা হারাম করে দিয়েছেন। তবে যদি স্ত্রী তার নিজের পক্ষ হতে কিছু কমিয়ে দেয় বা ক্ষমা করে দেয় সেটা হলো, ভিন্ন কথা। তখন তা হতে গ্রহণ করা স্বামীর জন্য অবশ্যই হালাল হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন
﴿وَءَاتُواْ ٱلنِّسَآءَ صَدُقَٰتِهِنَّ نِحۡلَةٗۚ فَإِن طِبۡنَ لَكُمۡ عَن شَيۡءٖ مِّنۡهُ نَفۡسٗا فَكُلُوهُ هَنِيٓٔٗا مَّرِيٓٔٗا ٤﴾ [ النساء : ٤ ]
“আর তোমরা নারীদেরকে সন্তুষ্টচিত্তে তাদের মোহর দিয়ে দাও, অতঃপর যদি তারা তোমাদের জন্য তা থেকে খুশি হয়ে কিছু ছাড় দেয়, তাহলে তোমরা তা সানন্দে তৃপ্তিসহকারে খাও।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৪]
চার. নারীদের জন্য মালিকানা প্রতিষ্ঠা
আল্লাহ তা‘আলা নারীদের জন্য উত্তরাধিকারী সম্পত্তিতে অংশ নির্ধারণ করেন। ফলে তাদের মাতা-পিতা, সন্তানাদি বা নিকট আত্মীয় কেউ মারা গেলে তারাও পুরুষদের মতো সম্পত্তির মালিক হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿لِّلرِّجَالِ نَصِيبٞ مِّمَّا تَرَكَ ٱلۡوَٰلِدَانِ وَٱلۡأَقۡرَبُونَ وَلِلنِّسَآءِ نَصِيبٞ مِّمَّا تَرَكَ ٱلۡوَٰلِدَانِ وَٱلۡأَقۡرَبُونَ مِمَّا قَلَّ مِنۡهُ أَوۡ كَثُرَۚ نَصِيبٗا مَّفۡرُوضٗا ٧﴾ [ النساء : ٧ ]
“পুরুষদের জন্য মাতা পিতা ও নিকটাত্মীয়রা যা রেখে গিয়েছে তা থেকে একটি অংশ রয়েছে। আর নারীদের জন্য রয়েছে মাতা পিতা ও নিকটাত্মীয়রা যা রেখে গিয়েছে তা থেকে একটি অংশ (তা থেকে কম হোক বা বেশি হোক) নির্ধারিত হারে।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৭]
পাঁচ. নারীদের প্রতি উদারতা প্রদর্শন করা
আল্লাহ তা‘আলা নারীদের কোনো প্রকার কষ্ট দিতে এবং তাদের দেওয়া মোহরানাকে ফেরত নিতে সম্পূর্ণ নিষেধ করেছেন। তাদের সদয় থাকা জন্য তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا يَحِلُّ لَكُمۡ أَن تَرِثُواْ ٱلنِّسَآءَ كَرۡهٗاۖ وَلَا تَعۡضُلُوهُنَّ لِتَذۡهَبُواْ بِبَعۡضِ مَآ ءَاتَيۡتُمُوهُنَّ إِلَّآ أَن يَأۡتِينَ بِفَٰحِشَةٖ مُّبَيِّنَةٖۚ وَعَاشِرُوهُنَّ بِٱلۡمَعۡرُوفِۚ فَإِن كَرِهۡتُمُوهُنَّ فَعَسَىٰٓ أَن تَكۡرَهُواْ شَيۡٔٗا وَيَجۡعَلَ ٱللَّهُ فِيهِ خَيۡرٗا كَثِيرٗا ١٩ وَإِنۡ أَرَدتُّمُ ٱسۡتِبۡدَالَ زَوۡجٖ مَّكَانَ زَوۡجٖ وَءَاتَيۡتُمۡ إِحۡدَىٰهُنَّ قِنطَارٗا فَلَا تَأۡخُذُواْ مِنۡهُ شَيًۡٔاۚ أَتَأۡخُذُونَهُۥ بُهۡتَٰنٗا وَإِثۡمٗا مُّبِينٗا ٢٠ وَكَيۡفَ تَأۡخُذُونَهُۥ وَقَدۡ أَفۡضَىٰ بَعۡضُكُمۡ إِلَىٰ بَعۡضٖ وَأَخَذۡنَ مِنكُم مِّيثَٰقًا غَلِيظٗا ٢١﴾ [ النساء : ١٩، ٢١ ]
“হে মুমিনগণ, তোমাদের জন্য হালাল নয় যে, তোমরা জোর করে নারীদের ওয়ারিস হবে। আর তোমরা তাদেরকে আবদ্ধ করে রেখো না, তাদেরকে যা দিয়েছ তা থেকে তোমরা কিছু নিয়ে নেয়ার জন্য, তবে যদি তারা প্রকাশ্য অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়। আর তোমরা তাদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস কর। আর যদি তোমরা তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে এমনও হতে পারে যে, তোমরা কোনো কিছুকে অপছন্দ করছ আর আল্লাহ তাতে অনেক কল্যাণ রাখবেন।
আর যদি তোমরা এক স্ত্রীর স্থলে অন্য স্ত্রীকে বদলাতে চাও আর তাদের কাউকে তোমরা প্রদান করেছ প্রচুর সম্পদ, তবে তোমরা তা থেকে কোনো কিছু নিও না। তোমরা কি তা নেবে অপবাদ এবং প্রকাশ্য গুনাহের মাধ্যমে?
আর তোমরা তা কীভাবে নেবে অথচ তোমরা একে অপরের সাথে একান্তে মিলিত হয়েছ; আর তারা তোমাদের থেকে নিয়েছিল দৃঢ় অঙ্গীকার?” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৯-২১]
ছয়. নারী ও পুরুষের স্বকীয়তা বজায় রাখা বিষয়
আল্লাহ তা‘আলা নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য কতক আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য দিয়েছেন। কিছু ক্ষেত্রে আল্লাহ পুরুষদের ওপর নারীদের শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন আবার কিছু ক্ষেত্রে পুরুষদের নারীদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। কিন্তু কেউ যেন কারো বৈশিষ্ট্য বা অধিকার নিয়ে বিতর্কের সূচনা না করে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَا تَتَمَنَّوۡاْ مَا فَضَّلَ ٱللَّهُ بِهِۦ بَعۡضَكُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖۚ لِّلرِّجَالِ نَصِيبٞ مِّمَّا ٱكۡتَسَبُواْۖ وَلِلنِّسَآءِ نَصِيبٞ مِّمَّا ٱكۡتَسَبۡنَۚ وَسَۡٔلُواْ ٱللَّهَ مِن فَضۡلِهِۦٓۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِكُلِّ شَيۡءٍ عَلِيمٗا ٣٢﴾ [ النساء : ٣٢ ]
‘আর তোমরা আকাঙ্ক্ষা করো না সে-সবের, যার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাদের এক জনকে অন্য জনের ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন। পুরুষদের জন্য রয়েছে অংশ, তারা যা উপার্জন করে তা থেকে এবং নারীদের জন্য রয়েছে অংশ, যা তারা উপার্জন করে তা থেকে। আর তোমরা আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ চাও। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩২]
সাত. ইবাদতের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ সমান বিনিময়
আল্লাহ তা‘আলা নারীদেরকে ইবাদত বন্দেগী ও আল্লাহর নৈকট্য লাভে পুরুষের সঙ্গী বানিয়েছেন। তাদেরও সেই কাজের আদেশ দেওয়া হয়েছে, যে কাজের আদেশ পুরুষদের দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেককে তাদের ইখলাস, চেষ্টা ও কর্ম অনুযায়ী কিয়ামত দিবসে সাওয়াব ও বিনিময় দেওয়া হবে। তাদের কাউকে কোনো প্রকার বৈষম্য করা হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ ٱلۡمُسۡلِمِينَ وَٱلۡمُسۡلِمَٰتِ وَٱلۡمُؤۡمِنِينَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتِ وَٱلۡقَٰنِتِينَ وَٱلۡقَٰنِتَٰتِ وَٱلصَّٰدِقِينَ وَٱلصَّٰدِقَٰتِ وَٱلصَّٰبِرِينَ وَٱلصَّٰبِرَٰتِ وَٱلۡخَٰشِعِينَ وَٱلۡخَٰشِعَٰتِ وَٱلۡمُتَصَدِّقِينَ وَٱلۡمُتَصَدِّقَٰتِ وَٱلصَّٰٓئِمِينَ وَٱلصَّٰٓئِمَٰتِ وَٱلۡحَٰفِظِينَ فُرُوجَهُمۡ وَٱلۡحَٰفِظَٰتِ وَٱلذَّٰكِرِينَ ٱللَّهَ كَثِيرٗا وَٱلذَّٰكِرَٰتِ أَعَدَّ ٱللَّهُ لَهُم مَّغۡفِرَةٗ وَأَجۡرًا عَظِيمٗا ٣٥﴾ [ الاحزاب : ٣٥ ]
“নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ ও নারী, মুমিন পুরুষ ও নারী, অনুগত পুরুষ ও নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও নারী, বিনয়াবনত পুরুষ ও নারী, দানশীল পুরুষ ও নারী, সিয়ামপালনকারী পুরুষ ও নারী, নিজেদের লজ্জাস্থানের হিফাযতকারী পুরুষ ও নারী, আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও নারী, তাদের জন্য আল্লাহ মাগফিরাত ও মহান প্রতিদান প্রস্তুত রেখেছেন।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৫]
আট. স্বামীর মধ্যকার বিবাধ মীমাংসা
আল্লাহ তা‘আলা স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মাঝে কোনো ঝগড়া-বিবাধ দেখা দিলে, তা মীমাংসার জন্য কতক নীতিমালা নির্ধারণ করে দিয়েছন। স্ত্রী যদি স্বামীর অবাধ্য হয়, তখন তার সাথে কি ধরনের আচরণ করতে হবে, আর স্বামী যদি বাড়াবাড়ি করে তার ব্যাপারে স্ত্রীর করণীয় কি হবে, তা আল্লাহ সবিস্তারে বলে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَإِنِ ٱمۡرَأَةٌ خَافَتۡ مِنۢ بَعۡلِهَا نُشُوزًا أَوۡ إِعۡرَاضٗا فَلَا جُنَاحَ عَلَيۡهِمَآ أَن يُصۡلِحَا بَيۡنَهُمَا صُلۡحٗاۚ وَٱلصُّلۡحُ خَيۡرٞۗ وَأُحۡضِرَتِ ٱلۡأَنفُسُ ٱلشُّحَّۚ وَإِن تُحۡسِنُواْ وَتَتَّقُواْ فَإِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِمَا تَعۡمَلُونَ خَبِيرٗا ١٢٨ وَلَن تَسۡتَطِيعُوٓاْ أَن تَعۡدِلُواْ بَيۡنَ ٱلنِّسَآءِ وَلَوۡ حَرَصۡتُمۡۖ فَلَا تَمِيلُواْ كُلَّ ٱلۡمَيۡلِ فَتَذَرُوهَا كَٱلۡمُعَلَّقَةِۚ وَإِن تُصۡلِحُواْ وَتَتَّقُواْ فَإِنَّ ٱللَّهَ كَانَ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ١٢٩﴾ [ النساء : ١٢٨، ١٢٩ ]
“যদি কোনো নারী তার স্বামীর পক্ষ থেকে কোনো দুর্ব্যবহার কিংবা উপেক্ষার আশঙ্কা করে, তাহলে তারা উভয়ে কোনো মীমাংসা করলে তাদের কোনো অপরাধ নেই। আর মীমাংসা কল্যাণকর এবং মানুষের মধ্যে কৃপণতা বিদ্যমান রয়েছে। আর যদি তোমরা সৎকর্ম কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর তবে আল্লাহ তোমরা যা কর সে বিষয়ে সম্যক অবগত।
আর তোমরা যতই কামনা কর না কেন তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে সমান আচরণ করতে কখনো পারবে না। সুতরাং তোমরা (একজনের প্রতি) সম্পূর্ণরূপে ঝুঁকে পড়ো না, যার ফলে তোমরা (অপরকে) ঝুলন্তের মতো করে রাখবে। আর যদি তোমরা মীমাংসা করে নাও এবং তাকওয়া অবলম্বন কর তবে নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১২৮-১২৯]
নয়. কন্যা সন্তানদের প্রতি বৈষম্য নিরসন বিষয়ে
মুশরিকরা কন্যা সন্তানদের অপছন্দ ও ঘৃণা করার কারণে আল্লাহ তা‘আলা তাদের ভর্ৎসনা করেন এবং তাদের তিরস্কার করেন।
﴿وَإِذَا بُشِّرَ أَحَدُهُم بِٱلۡأُنثَىٰ ظَلَّ وَجۡهُهُۥ مُسۡوَدّٗا وَهُوَ كَظِيمٞ ٥٨ يَتَوَٰرَىٰ مِنَ ٱلۡقَوۡمِ مِن سُوٓءِ مَا بُشِّرَ بِهِۦٓۚ أَيُمۡسِكُهُۥ عَلَىٰ هُونٍ أَمۡ يَدُسُّهُۥ فِي ٱلتُّرَابِۗ أَلَا سَآءَ مَا يَحۡكُمُونَ ٥٩﴾ [ النحل : ٥٨، ٥٩ ]
“আর যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়, তখন তার চেহারা কালো হয়ে যায়। আর সে থাকে দুঃখ ভারাক্রান্ত। তাকে যে সংবাদ দেওয়া হয়েছে, সে দুঃখে সে কওমের থেকে আত্মগোপন করে। অপমান সত্ত্বেও কি একে রেখে দেবে, না মাটিতে পূতে ফেলবে? জেনে রেখ, তারা যা ফয়সালা করে, তা কতই না মন্দ!” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৫৮-৫৯]
দশ. নারীদের প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার শাস্তি বিষয়
যারা সতী-সিদ্ধ রমণীদের অপবাদ দেয় তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন এবং তাদের ফাসিক বলে আখ্যায়িত করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَٱلَّذِينَ يَرۡمُونَ ٱلۡمُحۡصَنَٰتِ ثُمَّ لَمۡ يَأۡتُواْ بِأَرۡبَعَةِ شُهَدَآءَ فَٱجۡلِدُوهُمۡ ثَمَٰنِينَ جَلۡدَةٗ وَلَا تَقۡبَلُواْ لَهُمۡ شَهَٰدَةً أَبَدٗاۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡفَٰسِقُونَ ٤﴾ [ النور : ٤ ]
“আর যারা সচ্চরিত্র নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারপর তারা চারজন সাক্ষী নিয়ে আসে না, তবে তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত কর এবং তোমরা কখনই তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করো না। আর এরাই হলো ফাসিক।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৪]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ يَرۡمُونَ ٱلۡمُحۡصَنَٰتِ ٱلۡغَٰفِلَٰتِ ٱلۡمُؤۡمِنَٰتِ لُعِنُواْ فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِ وَلَهُمۡ عَذَابٌ عَظِيمٞ ٢٣ ﴾ [ النور : ٢٣ ]
“যারা সচ্চরিত্রা সরলমনা মুমিন নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারা দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত। আর তাদের জন্য রয়েছে মহা আযাব।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ২৩]
এগার. স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মুহাব্বাত আল্লাহর একটি নিদর্শন
আল্লাহ তা‘আলা বিবাহ সম্পর্কে বলেন, বিবাহ হলো, আল্লাহ তা‘আলার মহান নিদর্শন, যার মাধ্যমে স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের মাঝে প্রেম, ভালোবাসা ও পারস্পরিক অনুগ্রহ তৈরি হয়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمِنۡ ءَايَٰتِهِۦٓ أَنۡ خَلَقَ لَكُم مِّنۡ أَنفُسِكُمۡ أَزۡوَٰجٗا لِّتَسۡكُنُوٓاْ إِلَيۡهَا وَجَعَلَ بَيۡنَكُم مَّوَدَّةٗ وَرَحۡمَةًۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّقَوۡمٖ يَتَفَكَّرُونَ ٢١﴾ [ الروم : ٢١ ]
“আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলি রয়েছে সে কাওমের জন্য, যারা চিন্তা করে।” [সূরা আর-রূম, আয়াত: ২১]
বার. তালাকের বিধান
যখন স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ চূড়ান্ত রূপ নেয় এবং তালাক অনিবার্য হয়ে যায়, তখন তাদের করণীয় কী? কতজন সাক্ষী লাগবে, কতদিন ইদ্দত পালন করতে হবে এবং তাদের খরচা কত দিতে হবে ইত্যাদি বিশদভাবে আল্লাহ আলোচনা করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ إِذَا طَلَّقۡتُمُ ٱلنِّسَآءَ فَطَلِّقُوهُنَّ لِعِدَّتِهِنَّ وَأَحۡصُواْ ٱلۡعِدَّةَۖ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ رَبَّكُمۡۖ لَا تُخۡرِجُوهُنَّ مِنۢ بُيُوتِهِنَّ وَلَا يَخۡرُجۡنَ إِلَّآ أَن يَأۡتِينَ بِفَٰحِشَةٖ مُّبَيِّنَةٖۚ وَتِلۡكَ حُدُودُ ٱللَّهِۚ وَمَن يَتَعَدَّ حُدُودَ ٱللَّهِ فَقَدۡ ظَلَمَ نَفۡسَهُۥۚ لَا تَدۡرِي لَعَلَّ ٱللَّهَ يُحۡدِثُ بَعۡدَ ذَٰلِكَ أَمۡرٗا ١ فَإِذَا بَلَغۡنَ أَجَلَهُنَّ فَأَمۡسِكُوهُنَّ بِمَعۡرُوفٍ أَوۡ فَارِقُوهُنَّ بِمَعۡرُوفٖ وَأَشۡهِدُواْ ذَوَيۡ عَدۡلٖ مِّنكُمۡ وَأَقِيمُواْ ٱلشَّهَٰدَةَ لِلَّهِۚ ذَٰلِكُمۡ يُوعَظُ بِهِۦ مَن كَانَ يُؤۡمِنُ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۚ وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مَخۡرَجٗا ٢﴾ [ الطلاق : ١، ٢ ]
“হে নবী, (বল), তোমরা যখন স্ত্রীদেরকে তালাক দেবে, তখন তাদের ইদ্দত অনুসারে তাদের তালাক দাও এবং ‘ইদ্দত হিসাব করে রাখবে এবং তোমাদের রব আল্লাহকে ভয় করবে। তোমরা তাদেরকে তোমাদের বাড়ীÑঘর থেকে বের করে দিয়ো না এবং তারাও বের হবে না। যদি না তারা কোনো স্পষ্ট অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়। আর এগুলো আল্লাহর সীমারেখা। আর যে আল্লাহর (নির্ধারিত) সীমারেখাসমূহ অতিক্রম করে সে অবশ্যই তার নিজের ওপর যুলম করে। তুমি জান না, হয়তো এর পর আল্লাহ, (ফিরে আসার) কোনো পথ তৈরী করে দিবেন।
অতঃপর যখন তারা তাদের ইদ্দতের শেষ সীমায় পৌঁছবে, তখন তোমরা তাদের ন্যায়ানুগ পন্থায় রেখে দেবে অথবা ন্যায়ানুগ পন্থায় তাদের পরিত্যাগ করবে এবং তোমাদের মধ্য থেকে ন্যায়পরায়ণ দুইজনকে সাক্ষী বানাবে। আর আল্লাহর জন্য সঠিক সাক্ষ্য দেবে। তোমাদের মধ্যে যে আল্লাহ ও আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান আনে এটি দ্বারা তাকে উপদেশ দেওয়া হচ্ছে। যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন।” [সূরা আত-ত্বালাক, আয়াত: ১-২]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿أَسۡكِنُوهُنَّ مِنۡ حَيۡثُ سَكَنتُم مِّن وُجۡدِكُمۡ وَلَا تُضَآرُّوهُنَّ لِتُضَيِّقُواْ عَلَيۡهِنَّۚ وَإِن كُنَّ أُوْلَٰتِ حَمۡلٖ فَأَنفِقُواْ عَلَيۡهِنَّ حَتَّىٰ يَضَعۡنَ حَمۡلَهُنَّۚ فَإِنۡ أَرۡضَعۡنَ لَكُمۡ فََٔاتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ وَأۡتَمِرُواْ بَيۡنَكُم بِمَعۡرُوفٖۖ وَإِن تَعَاسَرۡتُمۡ فَسَتُرۡضِعُ لَهُۥٓ أُخۡرَىٰ ٦﴾ [ الطلاق : ٦ ]
“তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যেখানে তোমরা বসবাস কর সেখানে তাদেরকেও বাস করতে দাও, তাদেরকে সঙ্কটে ফেলার জন্য কষ্ট দিয়ো না। আর তারা গর্ভবতী হলে তাদের সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত তাদের জন্য তোমরা ব্যয় কর, আর তারা তোমাদের জন্য সন্তানকে দুধ পান করালে তাদের পাওনা তাদেরকে দিয়ে দাও এবং (সন্তানের কল্যাণের জন্য) সংগতভাবে তোমাদের মাঝে পরস্পর পরামর্শ কর। আর যদি তোমরা পরস্পর কঠোর হও তবে পিতার পক্ষে অন্য কোনো নারী দুধপান করাবে।” [সূরা আত-ত্বালাক, আয়াত: ৬]
তের. একাধিক বিবাহ সম্পর্কে দিক-নির্দেশনা
যারা একাধিক বিবাহ করতে চায় তাদের জন্য চারজন পর্যন্ত বিবাহ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে যারা একাধিক বিবাহ করবে, তাদের জন্য শর্ত হলো, তারা তাদের মধ্যে ন্যায় বিচার ও ইনসাফ কায়েম করবে। অন্যথায় তাকে আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَٱنكِحُواْ مَا طَابَ لَكُم مِّنَ ٱلنِّسَآءِ مَثۡنَىٰ وَثُلَٰثَ وَرُبَٰعَۖ فَإِنۡ خِفۡتُمۡ أَلَّا تَعۡدِلُواْ فَوَٰحِدَةً﴾ [ النساء : ٣ ]
“এখানে পবিত্র কুরআন হতে নারীদের সাথে সম্পৃক্ত কিছু দিক-নির্দেশনা এবং তাদের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ বিষয়ে কেবল কতগুলো দৃষ্টান্ত পেশ করা হল। এগুলো ছাড়াও আরও অনেক আয়াত রয়েছে সবগুলোর আলোচনা এখানে সম্ভব নয়।
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন