HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলাম
লেখকঃ শাইখ আব্দুর রাজ্জাক ইবন আব্দুল মুহসিন আল-বদর
৮
ইসলামের সুশীতল ছায়ায় নারীএকজন নারী ইসলামী শিক্ষা ও অনুপম আদর্শের ছায়া তলে ও ইসলোমের দিক নির্দেশনার আলোকে একটি সম্মানজনক অবস্থায় জীবন যাপন করতে পারে। ইসলামী বিধানে একজন নারী, সে যেদিন থেকে দুনিয়াতে আগমন করেছে, সেদিন থেকেই ইসলামী বিধানে তার জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে তার সম্মান ও মর্যাদাকে অক্ষুণ্ণ রাখা হয়েছে। তাকে কন্যা হিসেবে, মা হিসেবে, স্ত্রী হিসেবে, বোন হিসেবে, খালা, ফুফু ইত্যাদি হিসেব, তার জীবনের বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন ধরনের সম্মান ও অধিকার আলাদা আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। একজন নারীর জীবনে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন সাধিত হয়। ইসলামে নারীর অবস্থা বেধে একজন নারীকে বিভিন্ন ধরনের সম্মান ও অধিকার দেওয়া হয়েছে। নিম্নে তার সংক্ষিপ্ত একটি আলোচনা তুলে ধরা হল।
এক. কন্যা-সন্তান হিসেবে নারীর মর্যাদা
কন্যা হিসেবে নারীর মর্যাদা অধিক। ইসলাম কন্যা সন্তানদের প্রতি দয়া করা, তাদের নৈতিক শিক্ষা দেয়া, আদর যত্নসহকারে লালন-পালন করা এবং সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে নেককার নারী হিসেবে গড়ে তোলার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করে। পক্ষান্তরে জাহেলিয়্যাতের যুগে যে সব কাফির মুশরিকরা কন্যা সন্তানের জন্মকে অপছন্দ করত, তাদের বিরুদ্ধে ইসলাম কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَإِذَا بُشِّرَ أَحَدُهُم بِٱلۡأُنثَىٰ ظَلَّ وَجۡهُهُۥ مُسۡوَدّٗا وَهُوَ كَظِيمٞ ٥٨ يَتَوَٰرَىٰ مِنَ ٱلۡقَوۡمِ مِن سُوٓءِ مَا بُشِّرَ بِهِۦٓۚ أَيُمۡسِكُهُۥ عَلَىٰ هُونٍ أَمۡ يَدُسُّهُۥ فِي ٱلتُّرَابِۗ أَلَا سَآءَ مَا يَحۡكُمُونَ ٥٩﴾ [ النحل : ٥٨، ٥٩ ]
“আর যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়, তখন তার চেহারা কালো হয়ে যায়। আর সে থাকে দুঃখ ভারাক্রান্ত।
তাকে যে সংবাদ দেওয়া হয়েছে, সে দুঃখে সে কওমের থেকে আত্মগোপন করে। অপমান সত্ত্বেও কি একে রেখে দেবে, না মাটিতে পূতে ফেলবে? জেনে রেখ, তারা যা ফয়সালা করে, তা কতই না মন্দ!” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৫৮-৫৯]
সহীহ বুখারী ও মুসলিমে মুগিরা ইবন শু‘বা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إنَّ الله حرّم عليكم عقوق الأمهات، ومنعاً وهات، ووأد البنات»
“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের ওপর মাতা-পিতার নাফরমানী করাকে হারাম করেছেন, ভিক্ষা করা ও কন্যা সন্তানদের পুতে হত্যা করাকে হারাম করেছেন।”
হাফেয ইবন হাজার আসকালানী রহ. বলেন, জাহেলি যুগের লোকেরা কন্যা সন্তানদের দু’টি পদ্ধতিতে হত্যা করত:
এক. তারা তাদের স্ত্রীদের যখন সন্তান প্রসবের সময় হত, তখন তারা তাদের নির্দেশ দিয়ে বলত, তারা যেন একটি গুহার নিকট চলে যায়। তারপর যখন কোনো পুত্র সন্তান জন্ম লাভ করত, তখন তাকে জীবিত রাখত। আর যখন কোনো কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করত, তখন তাকে গর্তে নিক্ষেপ করে হত্যা করে ফেলত।
দুই. যখন তাদের কন্যা সন্তানদের বয়স ছয় বছর হত, তখন তারা তাদের সন্তানের মাকে বলত, তাকে তুমি সাজিয়ে দাও! আমি তাকে নিয়ে আমার আত্মীয়ের বাড়ীতে বেড়াতে যাব। মা তাকে সাজিয়ে দিলে, তার পিতা তাকে নিয়ে গভীর বন-জঙ্গলে চলে যেত এবং কুপের নিকট এসে তাকে বলত, তুমি একটু নিচের দিকে তাকিয়ে দেখ, সে যখন নিচের দিকে তাকিয়ে দেখত, তখন তাকে পিছন থেকে ধাক্কা দিয়ে কুপের মধ্যে ফেলে দিত। তারপর মাটি চাপা দিয়ে অথবা পাথর মেরে হত্যা করে ফেলত। এ ভাবেই তাদের মধ্যে কন্যা সন্তানদের হত্যা করার ধারাবাহিকতা যুগ যুগ ধরে চলছিল। ইসলামের আগমনের পর ইসলাম নারীদেরকে আল্লাহর পক্ষ হতে বড় একটি নি‘আমত হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং কন্যা সন্তানদের হত্যা করার প্রবণতা বন্ধ করে দেন এবং ঘোষণা দেন যে , কন্যা সন্তান হত্যা করা জঘন্য অপরাধ। কারণ, কন্যা সন্তান জন্ম কোনো মানুষের কর্মের ফল নয়, বরং তাও আল্লাহর দান। আল্লাহ যাকে চান কন্যা সন্তান দেন আবার যাকে চান পুত্র সন্তান দেন। এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿لِّلَّهِ مُلۡكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۚ يَخۡلُقُ مَا يَشَآءُۚ يَهَبُ لِمَن يَشَآءُ إِنَٰثٗا وَيَهَبُ لِمَن يَشَآءُ ٱلذُّكُورَ ٤٩ أَوۡ يُزَوِّجُهُمۡ ذُكۡرَانٗا وَإِنَٰثٗاۖ وَيَجۡعَلُ مَن يَشَآءُ عَقِيمًاۚ إِنَّهُۥ عَلِيمٞ قَدِيرٞ ٥٠﴾ [ الشورا : ٤٩، ٥٠ ]
“আসমানসমূহ ও যমীনের রাজত্ব আল্লাহরই। তিনি যা চান সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে পুত্র ও কন্যা উভয়ই দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করেন। তিনি তো সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান। [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ৪৯-৫০]
মুসনাদে আহমদে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من كانت له أنثى فلم يئدها، ولم يهنها، ولم يؤثر ولده عليها أدخله الله تعالى الجنّة»
“কোনো ব্যক্তির যদি একজন কন্যা সন্তান থাকে এবং সে তাকে হত্যা করে নি, কোনো প্রকার অবহেলা করেনি এবং পুত্র সন্তানকে কন্যা সন্তানের ওপর কোনো প্রকার প্রাধান্য দেয়নি। আল্লাহ তাকে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।” [মুসনাদে আহমদ: ২২৩/১।]
ইবন মাজাহ উকবা ইবন আমের থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,
«من كان له ثلاث بناتٍ وصبر عليهنَّ، وكساهنَّ من جِدَته، كنَّ له حجاباً من النار»
“যে ব্যক্তির তিনটি কন্যা সন্তান থাকবে এবং সে তাদের লালন- পালনে ধৈর্য্য ধারণ করে ও তাদের ভালো কাপড় পরায়, তখন তারা তার জন্য জাহান্নামের আগুনের প্রতিবন্ধক হবে।” [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৬৬৮।]
ইমাম মুসলিম তার সহীহ-তে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من عال جاريتين حتى تبلغا، جاء يوم القيامة أنا وهو كهاتين وضمَّ أصابعه»
“যে ব্যক্তি দুই জন কন্যা সন্তান লালন-পালন করে, কিয়ামতের আমি এবং সে দু’টি আঙ্গুলের মতো এক সাথে মিলেই উপস্থিত হব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আঙ্গুল দু’টি মিলিয়ে দেখান।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬৩১।]
ইমাম আহমদ রহ. বর্ণনা করেন, রাসুল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من عال ابنتين أو ثلاث بنات، أو أختين، أو ثلاث أخوات، حتى يبلغن، أو يموت عنهنَّ، أنا وهو كهاتين وأشاربأصبعه السبابة»
“যে ব্যক্তি দু’টি অথবা তিনটি কন্যা অথবা দুটি বোন বা তিনটি বোনকে তাদের প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত লালন-পালন করে, অথবা তাদের মারা যাওয়া পর্যন্ত লালন-পালন করে, জান্নাতে আমি ও সে দু’টি আঙ্গুলের মতো মিলে মিশে থাকবো। রাসূল তার শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা বৃদ্ধা আঙ্গুলের দিকে ইশারা করে দেখিয়ে দেন।” [মুসনাদে আহমদ: ১৪৭/৩।]
ইমাম বুখারী আদাবুল মুফরাদ গ্রন্থে জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من كان له ثلاث بناتٍ يؤويهنَّ، ويكفيهنَّ، ويرحمهنَّ، فقد وجبت له الجنّة البتّة، فقال رجل من بعض القوم : وثنتين يا رسول الله؟ قال : وثنتين»
“যে লোকের তিনজন বাচ্চা থাকবে এবং সে তাদের যথাযত বরণ-পোষণ, লালন-পালন ও আদর-যত্ন সহকারে ঘড়ে তুলবে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতকে ওয়াজিব করে দেবে। একথা শোনে এ লোক দাঁড়িয়ে বলল, যদি দুইজন কন্যা সন্তান থাকে, তা হলে কি বিধান হে আল্লাহর রাসূল? তখন রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলল, দু’জন হলেও একই বিধান। (সেও এ ফযীলতের অধিকারী হবে)” [সহীহ বুখারী, আদাবুল মুফরিদ, হাদীস নং ১৭৮।]
সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«جاء أعرابي إلى النَّبيِّ فقال : أتقبِّلون صبيانكم؟ فما نقبِّلهم، فقال النَّبيُّ صلى الله عليه وسلم : ( أو أملك لك أن نزع الله من قبلك الرحمة )».
“একজন গ্রাম্য লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এসে বললেন তোমরা কি তোমাদের বাচ্চাদের চুমু দাও? আমরা আমাদের বাচ্চাদের কখনোই চুমু দেই না। এ কথা শোনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার অন্তর থেকে যদি আল্লাহ তা‘আলা দয়া কেড়ে নিয়ে যায়, আমি তা কখনোই বাধা দিয়ে রাখতে পারব না।” [সহীহ বুখারী, আদাবুল মুফরিদ, হাদীস নং ৫৯৯৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৩১৭।]
দুই. মা হিসেবে একজন নারীর মর্যাদা
একজন নারী যখন মা হয়, তখন তাকে বিশেষ সম্মান ও অধিক মর্যাদা দেয়ার জন্য ইসলাম নির্দেশ দেয়। তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করা, তাদের খেদমতে সর্বদা সচেষ্ট হওয়া এবং তাদের কল্যাণের জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করান আদেশ দেয়। আর তাদের কোনো প্রকার কষ্ট না দেয়া। তাদের সাথে সুন্দর ও সর্বোত্তম ব্যবহার করা। একজন ভালো সাথী সঙ্গীর সাথে যে ধরনের ভালো ব্যবহার করা হয় তাদের সাথেও সে ধরনের ব্যবহার করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَوَصَّيۡنَا ٱلۡإِنسَٰنَ بِوَٰلِدَيۡهِ إِحۡسَٰنًاۖ حَمَلَتۡهُ أُمُّهُۥ كُرۡهٗا وَوَضَعَتۡهُ كُرۡهٗاۖ وَحَمۡلُهُۥ وَفِصَٰلُهُۥ ثَلَٰثُونَ شَهۡرًاۚ حَتَّىٰٓ إِذَا بَلَغَ أَشُدَّهُۥ وَبَلَغَ أَرۡبَعِينَ سَنَةٗ قَالَ رَبِّ أَوۡزِعۡنِيٓ أَنۡ أَشۡكُرَ نِعۡمَتَكَ ٱلَّتِيٓ أَنۡعَمۡتَ عَلَيَّ وَعَلَىٰ وَٰلِدَيَّ وَأَنۡ أَعۡمَلَ صَٰلِحٗا تَرۡضَىٰهُ وَأَصۡلِحۡ لِي فِي ذُرِّيَّتِيٓۖ إِنِّي تُبۡتُ إِلَيۡكَ وَإِنِّي مِنَ ٱلۡمُسۡلِمِينَ ١٥ ﴾ [ الاحقاف : ١٥ ]
“আর আমরা মানুষকে তার মাতা-পিতার প্রতি সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তা মা তাকে অতিকষ্টে গর্ভে ধারণ করেছে এবং অতি কষ্টে তাকে প্রসব করেছে। তার গর্ভধারণ ও দুধপান ছাড়ানোর সময় লাগে ত্রিশ মাস। অবশেষে যখন সে তার শক্তির পূর্ণতায় পৌছে এবং চল্লিশ বছরে উপনীত হয়, তখন সে বলে, হে আমার রব, আমাকে সামথ্য দাও, তুমি আমার ওপর ও আমার মাতা-পিতার ওপর যে নি‘আমত দান করেছ, তোমার সে নিআমতের যেন আমি শোকর আদায় করতে পারি এবং আমি যেন সতকর্ম করতে পারি, যা তুমি পছন্দ কর। আর আমার জন্য তুমি আমার বংশধরদের মধ্যে সংশোধন করে দাও। নিশ্চয় আমি তোমার কাছে তাওবা করলাম এবং নিশ্চয় আমি মুসলিমদের অন্তভূর্ক্ত। [সূরা আল-আহকাফ, আয়াত: ১৫]
﴿وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعۡبُدُوٓاْ إِلَّآ إِيَّاهُ وَبِٱلۡوَٰلِدَيۡنِ إِحۡسَٰنًاۚ إِمَّا يَبۡلُغَنَّ عِندَكَ ٱلۡكِبَرَ أَحَدُهُمَآ أَوۡ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُل لَّهُمَآ أُفّٖ وَلَا تَنۡهَرۡهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوۡلٗا كَرِيمٗا ٢٣ وَٱخۡفِضۡ لَهُمَا جَنَاحَ ٱلذُّلِّ مِنَ ٱلرَّحۡمَةِ وَقُل رَّبِّ ٱرۡحَمۡهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرٗا ٢٤﴾ [ الاسراء : ٢٣، ٢٤ ]
“আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না এবং পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে উফ, বল না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। আর তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বল। আর তাদের উভয়ের জন্য দয়াপরবশ হয়ে ডানা নত করে দাও এবং বল, হে আমার রব, তাদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছেন।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ২৩-২৪]
সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো,
«يا رسول الله من أبرُّ؟ قال : أُمّك، قال : ثم من؟ قال : أمَّك، قال : ثم من؟ قال أباك»
“হে আল্লাহর রাসূল! সবচেয়ে বেশি ভালো ব্যবহারের উপযুক্ত লোকটি কে? তিনি বললেন, তোমার মা, লোকটি বলল, তারপর কে? বলল, তোমার মা, লোকটি আবারো বলল, তারপর কে? বলল, তোমার পিতা।” [সহীহ বুখারী আদাবুল মুফরিদ, হাদীস নং ৫৯৭১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৫।]
ইমাম আবু দাউদ ও ইবন মাজায় আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট হিজরত করার জন্য অঙ্গিকার করতে আসে। আর সে তার মাতা-পিতাকে ক্রন্দনরত অবস্থায় রেখে আসছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলল,
«ارجع إليهما وأضحكهما كما أبكيتَهما»
“তুমি তাদের উভয়ের নিকট ফিরে যাও এবং তাদের যেভাবে তুমি কাঁদিয়েছিলে, সেভাবে তাদের খুশি করিয়ে দাও।” [আবু দাউদ, হাদীস নং ২৫২৮; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৭৮২।]
এতে প্রমাণিত হয় যে, মাতা পিতার অসুন্তুষ্টির প্রতি লক্ষ রেখে রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটিকে হিজরতও করতে দেয় নি।
সহীহ বুখারী মুসলিমে আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা আল্লাহ তা‘আলার নিকট সর্বাধিক পছন্দনীয় আমল কোনোটি? উত্তরে তিনি বললেন,
«الصلاة على وقتها، قلت : ثم أيّ؟ قال : برُّ الوالدين، قلت : ثم أيّ؟ قال : الجهاد في سبيل الله»
“সময়মত সালাত আদায় করা, আমি বললাম তারপর কোনোটি? তিনি বললেন, মাতা-পিতার সাথে ভালো ব্যবহার করা, আমি বললাম তারপর কোনোটি? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৯৭০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৫।]
মাতা-পিতাকে কষ্ট দেওয়ার বিষয়ে ইসলাম সবোর্চ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেছে, যাতে তাদের কোনো প্রকার কষ্ট দেওয়া না হয়। তাদের কোনো প্রকার কষ্ট না দেয়ার জন্য ইসলাম কঠিনভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। তাদের কোনো প্রকার কষ্ট দেয়াকে মাতা-পিতার নাফরমানী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং যারা তাদের মাতা-পিতাকে কষ্ট দেয়, তাদের কিয়ামতের দিন জিজ্ঞাসা করা হবে, বরং তাদের কষ্ট দেওয়াকে কবীরা গুনাহ বলেও আখ্যায়িত করা হয়েছে।
সহীহ বুখারী মুসলিমে আবু বকরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার বললেন,
«ألا أُنبِّئكم بأكبر الكبائر؟ ثلاثاً . قالوا : بلى يا رسول الله، قال : الإشراك بالله، وعقوق الوالدين، . وجلس وكان متّكئاً فقال : ألا وقولُ الزور ما زال يكرِّرها حتى قلنا : ليته سكت »
“আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেবো সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহ কী? (এ কথাটি রাসূল তিনবার বলেছেন) তারা বললেন, হা হে আল্লাহর রাসূল! তখন তিনি বললেন, সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহ, আল্লাহর সাথে শরীক করা, মাতা-পিতার নাফরমানী করা, (রাসূল হেলান দেওয়া অবস্থায় ছিলেন, তারপর তিনি উঠে বসে বললেন, সাবধান! মিথ্যা কথা বলা) রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথাটি বার বার বলছিল, যার ফলে আমরা চাইতেছিলাম যদি রাসূল চুপ থাকত!” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৯৭৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৭।]
ইমাম মুসলিম তার সহীহ গ্রন্থে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لعن اللهُ من لعن والديه »
“আল্লাহ তা‘আলার আযাব তার ওপর যে তার মাতা পিতাকে অভিশাপ দেয় বা কষ্ট দেয়।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৭৮।]
তিন: একজন স্ত্রী হিসেবে নারীর অধিকার
ইসলাম একজন নারী যখন কারো স্ত্রী হয়, তখন তাকে স্ত্রী হিসেবে যথাযথ মর্যাদা দেওয়া ও তার যাবতীয় অধিকারকে অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য স্বামীদের নির্দেশ দেয় এবং স্বামীর ওপর তার কিছু অধিকার বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হয়।একজন স্ত্রীর সাথে উত্তম আচরণ করা, লেবাস পোশাক, বরণ পোষণ ইত্যাদির ব্যবস্থা করা স্বামীর দায়িত্ব। তাদের সাথে বিনম্র ও কোমল ব্যবহার করা, তাদের বিষয়ে সহনশীল হওয়া এবং অহেতুক তার সাথে দুর্ব্যবহার না করা। তাদের ব্যবহারের ওপর ধৈর্য্য ধারণ করা। ইসলাম ঘোষণা করে যে, তোমাদের মধ্যে সেই সর্বোত্তম ব্যক্তি, যে তার পরিবার তথা স্ত্রীর নিকট উত্তম। একজন স্বামীর ওপর কর্তব্য হলো, সে তার স্ত্রীকে দীন শেখাবে, তার সম্ভ্রমের হিফাযত করতে যথা সাধ্য চেষ্টা করবে। তারা যাতে কোনো প্রকার ঘরের বাইরে যেতে না হয়, তা জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা করবে। তার সাথে কোনো প্রকার দুর্ব্যবহার করবে না। স্ত্রীদের অধিকার সম্বলিত কুরআনের বিশেষ আয়াত:
﴿وَعَاشِرُوهُنَّ بِٱلۡمَعۡرُوفِۚ فَإِن كَرِهۡتُمُوهُنَّ فَعَسَىٰٓ أَن تَكۡرَهُواْ شَيۡٔٗا وَيَجۡعَلَ ٱللَّهُ فِيهِ خَيۡرٗا كَثِيرٗا﴾ [ النساء : ١٩ ]
“আর তোমরা তাদের সাথে সদভাবে বসবাস কর। আর যদি তোমরা তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে এমনও হতে পারে যে, তোমরা কোনো কিছুকে অপছন্দ করছ আর আল্লাহ তাতে তোমাদের জন্য অনেক কল্যাণ রাখবেন।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৯]
যাতে আল্লাহ তা‘আলা নারীদের অধিকারের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন। তাদের অধিকার বিষয়ে হাদীসের সংখ্যাও অনেক, যাতে তাদের বিষয়ে সতর্কতা, তাদের অধিকার সম্পর্কে গুরুত্ব ও তাদের সাথে ভালো ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেমন, সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«استوصوا بالنساء خيراً، فإنَّ المرأة خُلقت من ضلعٍ أعوج، وإنَّ أعوج شيءٍ في الضلع أعلاه، فإن ذهبت تقيمه كسرته، وإن تركته لم يزل أعوج، فاستوصوا بالنساء»
“আর তোমরা নারীদের সাথে ভালো ব্যবহার কর। কারণ, নারীদের পাঁজরের বাম হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে, আর পাঁজরের হাড়ের সবচেয়ে বাঁকা হাড় হলো, উপরি ভাগ। যদি তাকে ঠিক করতে যাও তাহলে তুমি ভেঙ্গে ফেললে আর যদি তুমি তাকে দিয়ে সংসার করতে চাও তাহলে বাঁকা অবস্থাতেই তোমাকে তার সাথে ঘর সংসার করতে হবে।” [সহীহ বুখারী আদাবুল মুফরিদ, হাদীস নং ৩৩৩১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৪৬৮।]
ইমাম নববী রহ. বলেন, এ হাদীসে নারীদের সাথে বিনম্র ব্যবহার, তাদের প্রতি দয়া, তাদের চারিত্রিক ত্রুটি ও অসৌজন্য মূলক আচরণের ওপর ধৈর্য ধারণ, তাদের জ্ঞান ও বুদ্ধি কম হওয়ার কারণে তারা যেসব খারাব আচরণ করে তা বরদাশত করা, কারণ ছাড়াই তাদের তালাক না দেওয়া ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আহমদ, আবু দাউদ, তিরমিযী আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أكملُ المؤمنين إيماناً أحسنُهم خلقاً، وخيارُكم خيارُكم لنسائهم»
“মুমিনদের মধ্যে পুরোপুরি ঈমানদার হলো তোমাদের মধ্যে যারা আখলাকের দিক দিয়ে উত্তম। আর তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম যে তোমাদের স্ত্রীদের নিকট উত্তম।” [সহীহ মুসলিম: ৫৭/১০।]
ইমাম মুসলিম তার সহীহ-তে জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজের ভাষণে বলেছেন:
«فاتّقوا الله في النساء، فإنَّكم أخذتموهنَّ بأمانة الله، واستحللتم فروجهنَّ بكلمة الله، ولكم عليهنَّ أن لا يوطئن فرشكم أحداً تكرهونه فإن فعلن ذلك فاضربوهنَّ ضرباً غير مبرّح، ولهنَّ رزقهنّ وكسوتهنَّ بالمعروف»
“নারীদের বিষয়ে তোমরা আল্লাহকে ভয় কর! কারণ, তোমরা তাদের আল্লাহর আমানত হিসেবে গ্রহণ করেছ, আর আল্লাহর বাণীর দ্বারাই তোমরা তাদের হালাল করেছ। তাদের ওপর তোমাদের বিষয়ে দায়িত্ব হলো, তারা খেয়াল রাখবে যাতে তোমাদের বিছানায় এমন কোনো লোক না অবস্থান করে যাকে তোমরা অপছন্দ কর। যদি তারা এ ধরনের কোনো কাজ করে তোমরা তাদের প্রহার কর। তবে তা হবে সহনীয় পর্যায়ে অমানবিক নয়। তাদের জন্য তোমাদের দায়িত্ব তোমরা তাদের রিযিক দেবে বরণ পোষণ দেবে উত্তম উপায়ে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২১৮।]
ইমাম মুসলিম তার সহীহ-তে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لا يفْرك مؤمنٌ مؤمنةً، إن كره منها خلقاً رضي منها آخر»
“একজন মুমিন যেন অপর মুমিনকে কোনো প্রকার ঘৃণা না করে। কারণ, যদি তোমাদের কারো নিকট তার একটি চরিত্র খারাব লাগে, তার আরও অনেকগুলো দিক আছে যেগুলোর প্রতি সন্তুষ্ট হওয়া যায়।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৪৬৯।]
ইমাম আহমদ আবু দাউদ ও তিরমিযী আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে হাদীস বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إنَّما النساء شقائق الرجال»
“নারীরা পুরুষদেরই অনুরূপ।” [আহমদ: ২৭৭/৬; আবু দাউদ, হাদীস নং ২৩৬; তিরমিযী, হাদীস নং ১১৩।]
“স্বভাব-চরিত্রে নারীরা পুরুষদের সমতুল্য। তারা তাদেরই দৃষ্টান্ত। কারণ, হাওয়া আলাইহিসসালাম কে আদম আলাইহিসসালাম হতেই সৃষ্টি করেছেন। এ হাদীসে নারীদের সাথে উত্তম ব্যবহার, তাদের প্রতি নম্রতা, দয়া ও সুন্দর মোয়ামালা করার জন্য আহ্বান করা হয়েছে ও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চার. ফুফু, খালা, বোন হিসেবে নারীর মর্যাদা
ইসলাম বোন, খালা ও ফুফুদের সাথে উত্তম ব্যবহার, তাদের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ করা এবং তাদের অধিকার বিষয়ে অবগত হওয়ার জন্য বিশেষ নির্দেশ দেয়। তাদের সাথে ভালো ব্যবহার ও তাদের সহযোগিতা করার কারণে তাদের অনেক সওয়াব ও বিনিময় দেয়ার কথাও ইসলাম ঘোষণা করে।
ইমাম বুখারী আদাবুল মুফরাদে এবং ইবন মাজাহ মিকদাম ইবন মাদি কারাব থেকে হাদীস বর্ণনা করেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে শুনেছেন, তিনি বলেন,
«إنَّ اللهَ يوصيكم بأمّهاتكم، ثمَّ يوصيكم بأمّهاتكم، ثمَّ يوصيكم بآبائكم، ثم يوصيكم بالأقرب فالأقرب» .
“আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের মাতাদের বিষয়ে তোমাদের সতর্ক করেন, তারপর আবারো তিনি তোমাদের মাতাদের বিষয়ে উপদেশ দেন, তারপর তিনি তোমাদের পিতাদের বিষয়ে উপদেশ দেন। তারপর যারা তোমাদের অতি কাছের আত্মীয় তাদের বিষয়ে, তারপর যারা তোমাদের কাছের আত্মীয় তাদের বিষয়ে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৬।]
ইমাম তিরমিযী ও আবু দাউদ আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে হাদীস বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لا يكون لأحدٍ ثلاث بناتٍ، أو ثلاث أخوات فيحسن إليهنَّ إلاَّ دخل الجنّة»
“যদি কোনো লোকের তিনটি কন্যা সন্তান অথবা তিনজন বোন থাকে, তারপর সে তাদের প্রতি দয়া অনুগ্রহ করে লালন-পালন করে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।” [তিরমিযী, হাদীস নং ১৯১২; আবু দাউদ, হাদীস নং ৫১৪।]
সহীহ বুখারী মুসলিমে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«الرحم شجنةٌ من الله، من وصلها وصله الله، ومن قطعها قطعه الله»
“আত্মীয়তা হলো, আল্লাহর পক্ষ হতে একটি বন্ধন, যে ব্যক্তি তার সম্পর্ককে অটুট রাখে আল্লাহ তা‘আলা তার সাথে সম্পর্ক অটুট রাখবে, আর যে তার সম্পর্কে বিচ্ছিন্ন করে আল্লাহ তা‘আলা তার সাথে সম্পর্ককে চিহ্ন করে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৯৮৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৫৫।]
সহীহ বুখারী মুসলিমে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من أحبَّ أن يبسط له في رزقه، وأن ينسأ له في أثره، فليصل رحمه»
“যে ব্যক্তি চায় যে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য তার রিযিকের মধ্যে বরকত দান করুক এবং তার ধন সম্পত্তি আরও বাড়িয়ে দিক, সে যেন আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখে এবং নিকট আত্মীয়দের সাথে কোনো ভাবে সম্পর্ক নষ্ট না করে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৯৮২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৫৭।]
এমনকি যদি কোনো নারী অপরিচিতও হয়ে থাকে- তার সাথে কোনো আত্মীয় বন্ধন না থাকে, সেও যখন কোনো বিপদে পড়ে অথবা তার কোনো প্রয়োজন দেখা দেয়, তাকেও সহযোগিতা করার প্রতি ইসলাম নির্দেশ দিয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে করীমে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাদীসে এ ধরনের অসহায় নারী ও পুরুষদের সহযোগিতা করা এবং তাদের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ করার জন্য বিশেষভাবে উৎসাহ প্রদান করেন এবং নারীদের সহযোগিতা করার ওপর আল্লাহ তা‘আলা অনেক সাওয়াব ও বিনিময় ঘোষণা করেন।
সহীহ বুখারী মুসলিমে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«الساعي على الأرملة والمسكين كالمجاهد في سبيل الله، أو كالقائم الذي لا يفتر، أو كالصائم الذي لا يفطر»
“অসহায় দরিদ্র লোক ও বিধবা স্ত্রীলোকের সহযোগিতা করা, আল্লাহর রাহে জিহাদ করার নামান্তর। অথবা বিরামহীন রাত জেগে ইবাদতকারীর মতো অথবা সে সাওম পালনকারীদের মতো যে কখনো সাওম ভঙ্গ করে না।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০০৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৯৮২।]
এখানে ইসলাম নারীদের যে মান-মর্যাদা ও অধিকার দিয়েছে, সে সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা কুরআন ও হাদীসের আলোকে তুলে ধরা হলো। আর মনে রাখতে হবে, ইসলাম নারীদের যে অধিকার দিয়েছে, তাদের প্রতি সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও সহানুভূতির যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে, তার নূন্যতম অধিকারও অন্য কোনো ধর্ম বা মতবাদে পাওয়া যায় না। যদি আল্লাহর এ মহান দীন ছাড়া অন্য কোনো ধর্মে এর সামান্যও নারীদের অধিকার দেওয়া হত, তাহলেও আমরা আমাদের মনকে বুঝ দিতে পারতাম।
এক. কন্যা-সন্তান হিসেবে নারীর মর্যাদা
কন্যা হিসেবে নারীর মর্যাদা অধিক। ইসলাম কন্যা সন্তানদের প্রতি দয়া করা, তাদের নৈতিক শিক্ষা দেয়া, আদর যত্নসহকারে লালন-পালন করা এবং সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে নেককার নারী হিসেবে গড়ে তোলার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করে। পক্ষান্তরে জাহেলিয়্যাতের যুগে যে সব কাফির মুশরিকরা কন্যা সন্তানের জন্মকে অপছন্দ করত, তাদের বিরুদ্ধে ইসলাম কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَإِذَا بُشِّرَ أَحَدُهُم بِٱلۡأُنثَىٰ ظَلَّ وَجۡهُهُۥ مُسۡوَدّٗا وَهُوَ كَظِيمٞ ٥٨ يَتَوَٰرَىٰ مِنَ ٱلۡقَوۡمِ مِن سُوٓءِ مَا بُشِّرَ بِهِۦٓۚ أَيُمۡسِكُهُۥ عَلَىٰ هُونٍ أَمۡ يَدُسُّهُۥ فِي ٱلتُّرَابِۗ أَلَا سَآءَ مَا يَحۡكُمُونَ ٥٩﴾ [ النحل : ٥٨، ٥٩ ]
“আর যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়, তখন তার চেহারা কালো হয়ে যায়। আর সে থাকে দুঃখ ভারাক্রান্ত।
তাকে যে সংবাদ দেওয়া হয়েছে, সে দুঃখে সে কওমের থেকে আত্মগোপন করে। অপমান সত্ত্বেও কি একে রেখে দেবে, না মাটিতে পূতে ফেলবে? জেনে রেখ, তারা যা ফয়সালা করে, তা কতই না মন্দ!” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৫৮-৫৯]
সহীহ বুখারী ও মুসলিমে মুগিরা ইবন শু‘বা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إنَّ الله حرّم عليكم عقوق الأمهات، ومنعاً وهات، ووأد البنات»
“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের ওপর মাতা-পিতার নাফরমানী করাকে হারাম করেছেন, ভিক্ষা করা ও কন্যা সন্তানদের পুতে হত্যা করাকে হারাম করেছেন।”
হাফেয ইবন হাজার আসকালানী রহ. বলেন, জাহেলি যুগের লোকেরা কন্যা সন্তানদের দু’টি পদ্ধতিতে হত্যা করত:
এক. তারা তাদের স্ত্রীদের যখন সন্তান প্রসবের সময় হত, তখন তারা তাদের নির্দেশ দিয়ে বলত, তারা যেন একটি গুহার নিকট চলে যায়। তারপর যখন কোনো পুত্র সন্তান জন্ম লাভ করত, তখন তাকে জীবিত রাখত। আর যখন কোনো কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করত, তখন তাকে গর্তে নিক্ষেপ করে হত্যা করে ফেলত।
দুই. যখন তাদের কন্যা সন্তানদের বয়স ছয় বছর হত, তখন তারা তাদের সন্তানের মাকে বলত, তাকে তুমি সাজিয়ে দাও! আমি তাকে নিয়ে আমার আত্মীয়ের বাড়ীতে বেড়াতে যাব। মা তাকে সাজিয়ে দিলে, তার পিতা তাকে নিয়ে গভীর বন-জঙ্গলে চলে যেত এবং কুপের নিকট এসে তাকে বলত, তুমি একটু নিচের দিকে তাকিয়ে দেখ, সে যখন নিচের দিকে তাকিয়ে দেখত, তখন তাকে পিছন থেকে ধাক্কা দিয়ে কুপের মধ্যে ফেলে দিত। তারপর মাটি চাপা দিয়ে অথবা পাথর মেরে হত্যা করে ফেলত। এ ভাবেই তাদের মধ্যে কন্যা সন্তানদের হত্যা করার ধারাবাহিকতা যুগ যুগ ধরে চলছিল। ইসলামের আগমনের পর ইসলাম নারীদেরকে আল্লাহর পক্ষ হতে বড় একটি নি‘আমত হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং কন্যা সন্তানদের হত্যা করার প্রবণতা বন্ধ করে দেন এবং ঘোষণা দেন যে , কন্যা সন্তান হত্যা করা জঘন্য অপরাধ। কারণ, কন্যা সন্তান জন্ম কোনো মানুষের কর্মের ফল নয়, বরং তাও আল্লাহর দান। আল্লাহ যাকে চান কন্যা সন্তান দেন আবার যাকে চান পুত্র সন্তান দেন। এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿لِّلَّهِ مُلۡكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۚ يَخۡلُقُ مَا يَشَآءُۚ يَهَبُ لِمَن يَشَآءُ إِنَٰثٗا وَيَهَبُ لِمَن يَشَآءُ ٱلذُّكُورَ ٤٩ أَوۡ يُزَوِّجُهُمۡ ذُكۡرَانٗا وَإِنَٰثٗاۖ وَيَجۡعَلُ مَن يَشَآءُ عَقِيمًاۚ إِنَّهُۥ عَلِيمٞ قَدِيرٞ ٥٠﴾ [ الشورا : ٤٩، ٥٠ ]
“আসমানসমূহ ও যমীনের রাজত্ব আল্লাহরই। তিনি যা চান সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে পুত্র ও কন্যা উভয়ই দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করেন। তিনি তো সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান। [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ৪৯-৫০]
মুসনাদে আহমদে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من كانت له أنثى فلم يئدها، ولم يهنها، ولم يؤثر ولده عليها أدخله الله تعالى الجنّة»
“কোনো ব্যক্তির যদি একজন কন্যা সন্তান থাকে এবং সে তাকে হত্যা করে নি, কোনো প্রকার অবহেলা করেনি এবং পুত্র সন্তানকে কন্যা সন্তানের ওপর কোনো প্রকার প্রাধান্য দেয়নি। আল্লাহ তাকে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।” [মুসনাদে আহমদ: ২২৩/১।]
ইবন মাজাহ উকবা ইবন আমের থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,
«من كان له ثلاث بناتٍ وصبر عليهنَّ، وكساهنَّ من جِدَته، كنَّ له حجاباً من النار»
“যে ব্যক্তির তিনটি কন্যা সন্তান থাকবে এবং সে তাদের লালন- পালনে ধৈর্য্য ধারণ করে ও তাদের ভালো কাপড় পরায়, তখন তারা তার জন্য জাহান্নামের আগুনের প্রতিবন্ধক হবে।” [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৬৬৮।]
ইমাম মুসলিম তার সহীহ-তে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من عال جاريتين حتى تبلغا، جاء يوم القيامة أنا وهو كهاتين وضمَّ أصابعه»
“যে ব্যক্তি দুই জন কন্যা সন্তান লালন-পালন করে, কিয়ামতের আমি এবং সে দু’টি আঙ্গুলের মতো এক সাথে মিলেই উপস্থিত হব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আঙ্গুল দু’টি মিলিয়ে দেখান।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬৩১।]
ইমাম আহমদ রহ. বর্ণনা করেন, রাসুল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من عال ابنتين أو ثلاث بنات، أو أختين، أو ثلاث أخوات، حتى يبلغن، أو يموت عنهنَّ، أنا وهو كهاتين وأشاربأصبعه السبابة»
“যে ব্যক্তি দু’টি অথবা তিনটি কন্যা অথবা দুটি বোন বা তিনটি বোনকে তাদের প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত লালন-পালন করে, অথবা তাদের মারা যাওয়া পর্যন্ত লালন-পালন করে, জান্নাতে আমি ও সে দু’টি আঙ্গুলের মতো মিলে মিশে থাকবো। রাসূল তার শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা বৃদ্ধা আঙ্গুলের দিকে ইশারা করে দেখিয়ে দেন।” [মুসনাদে আহমদ: ১৪৭/৩।]
ইমাম বুখারী আদাবুল মুফরাদ গ্রন্থে জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من كان له ثلاث بناتٍ يؤويهنَّ، ويكفيهنَّ، ويرحمهنَّ، فقد وجبت له الجنّة البتّة، فقال رجل من بعض القوم : وثنتين يا رسول الله؟ قال : وثنتين»
“যে লোকের তিনজন বাচ্চা থাকবে এবং সে তাদের যথাযত বরণ-পোষণ, লালন-পালন ও আদর-যত্ন সহকারে ঘড়ে তুলবে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতকে ওয়াজিব করে দেবে। একথা শোনে এ লোক দাঁড়িয়ে বলল, যদি দুইজন কন্যা সন্তান থাকে, তা হলে কি বিধান হে আল্লাহর রাসূল? তখন রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলল, দু’জন হলেও একই বিধান। (সেও এ ফযীলতের অধিকারী হবে)” [সহীহ বুখারী, আদাবুল মুফরিদ, হাদীস নং ১৭৮।]
সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«جاء أعرابي إلى النَّبيِّ فقال : أتقبِّلون صبيانكم؟ فما نقبِّلهم، فقال النَّبيُّ صلى الله عليه وسلم : ( أو أملك لك أن نزع الله من قبلك الرحمة )».
“একজন গ্রাম্য লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এসে বললেন তোমরা কি তোমাদের বাচ্চাদের চুমু দাও? আমরা আমাদের বাচ্চাদের কখনোই চুমু দেই না। এ কথা শোনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার অন্তর থেকে যদি আল্লাহ তা‘আলা দয়া কেড়ে নিয়ে যায়, আমি তা কখনোই বাধা দিয়ে রাখতে পারব না।” [সহীহ বুখারী, আদাবুল মুফরিদ, হাদীস নং ৫৯৯৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৩১৭।]
দুই. মা হিসেবে একজন নারীর মর্যাদা
একজন নারী যখন মা হয়, তখন তাকে বিশেষ সম্মান ও অধিক মর্যাদা দেয়ার জন্য ইসলাম নির্দেশ দেয়। তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করা, তাদের খেদমতে সর্বদা সচেষ্ট হওয়া এবং তাদের কল্যাণের জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করান আদেশ দেয়। আর তাদের কোনো প্রকার কষ্ট না দেয়া। তাদের সাথে সুন্দর ও সর্বোত্তম ব্যবহার করা। একজন ভালো সাথী সঙ্গীর সাথে যে ধরনের ভালো ব্যবহার করা হয় তাদের সাথেও সে ধরনের ব্যবহার করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَوَصَّيۡنَا ٱلۡإِنسَٰنَ بِوَٰلِدَيۡهِ إِحۡسَٰنًاۖ حَمَلَتۡهُ أُمُّهُۥ كُرۡهٗا وَوَضَعَتۡهُ كُرۡهٗاۖ وَحَمۡلُهُۥ وَفِصَٰلُهُۥ ثَلَٰثُونَ شَهۡرًاۚ حَتَّىٰٓ إِذَا بَلَغَ أَشُدَّهُۥ وَبَلَغَ أَرۡبَعِينَ سَنَةٗ قَالَ رَبِّ أَوۡزِعۡنِيٓ أَنۡ أَشۡكُرَ نِعۡمَتَكَ ٱلَّتِيٓ أَنۡعَمۡتَ عَلَيَّ وَعَلَىٰ وَٰلِدَيَّ وَأَنۡ أَعۡمَلَ صَٰلِحٗا تَرۡضَىٰهُ وَأَصۡلِحۡ لِي فِي ذُرِّيَّتِيٓۖ إِنِّي تُبۡتُ إِلَيۡكَ وَإِنِّي مِنَ ٱلۡمُسۡلِمِينَ ١٥ ﴾ [ الاحقاف : ١٥ ]
“আর আমরা মানুষকে তার মাতা-পিতার প্রতি সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তা মা তাকে অতিকষ্টে গর্ভে ধারণ করেছে এবং অতি কষ্টে তাকে প্রসব করেছে। তার গর্ভধারণ ও দুধপান ছাড়ানোর সময় লাগে ত্রিশ মাস। অবশেষে যখন সে তার শক্তির পূর্ণতায় পৌছে এবং চল্লিশ বছরে উপনীত হয়, তখন সে বলে, হে আমার রব, আমাকে সামথ্য দাও, তুমি আমার ওপর ও আমার মাতা-পিতার ওপর যে নি‘আমত দান করেছ, তোমার সে নিআমতের যেন আমি শোকর আদায় করতে পারি এবং আমি যেন সতকর্ম করতে পারি, যা তুমি পছন্দ কর। আর আমার জন্য তুমি আমার বংশধরদের মধ্যে সংশোধন করে দাও। নিশ্চয় আমি তোমার কাছে তাওবা করলাম এবং নিশ্চয় আমি মুসলিমদের অন্তভূর্ক্ত। [সূরা আল-আহকাফ, আয়াত: ১৫]
﴿وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعۡبُدُوٓاْ إِلَّآ إِيَّاهُ وَبِٱلۡوَٰلِدَيۡنِ إِحۡسَٰنًاۚ إِمَّا يَبۡلُغَنَّ عِندَكَ ٱلۡكِبَرَ أَحَدُهُمَآ أَوۡ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُل لَّهُمَآ أُفّٖ وَلَا تَنۡهَرۡهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوۡلٗا كَرِيمٗا ٢٣ وَٱخۡفِضۡ لَهُمَا جَنَاحَ ٱلذُّلِّ مِنَ ٱلرَّحۡمَةِ وَقُل رَّبِّ ٱرۡحَمۡهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرٗا ٢٤﴾ [ الاسراء : ٢٣، ٢٤ ]
“আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না এবং পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে উফ, বল না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। আর তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বল। আর তাদের উভয়ের জন্য দয়াপরবশ হয়ে ডানা নত করে দাও এবং বল, হে আমার রব, তাদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছেন।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ২৩-২৪]
সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো,
«يا رسول الله من أبرُّ؟ قال : أُمّك، قال : ثم من؟ قال : أمَّك، قال : ثم من؟ قال أباك»
“হে আল্লাহর রাসূল! সবচেয়ে বেশি ভালো ব্যবহারের উপযুক্ত লোকটি কে? তিনি বললেন, তোমার মা, লোকটি বলল, তারপর কে? বলল, তোমার মা, লোকটি আবারো বলল, তারপর কে? বলল, তোমার পিতা।” [সহীহ বুখারী আদাবুল মুফরিদ, হাদীস নং ৫৯৭১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৫।]
ইমাম আবু দাউদ ও ইবন মাজায় আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট হিজরত করার জন্য অঙ্গিকার করতে আসে। আর সে তার মাতা-পিতাকে ক্রন্দনরত অবস্থায় রেখে আসছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলল,
«ارجع إليهما وأضحكهما كما أبكيتَهما»
“তুমি তাদের উভয়ের নিকট ফিরে যাও এবং তাদের যেভাবে তুমি কাঁদিয়েছিলে, সেভাবে তাদের খুশি করিয়ে দাও।” [আবু দাউদ, হাদীস নং ২৫২৮; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৭৮২।]
এতে প্রমাণিত হয় যে, মাতা পিতার অসুন্তুষ্টির প্রতি লক্ষ রেখে রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটিকে হিজরতও করতে দেয় নি।
সহীহ বুখারী মুসলিমে আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা আল্লাহ তা‘আলার নিকট সর্বাধিক পছন্দনীয় আমল কোনোটি? উত্তরে তিনি বললেন,
«الصلاة على وقتها، قلت : ثم أيّ؟ قال : برُّ الوالدين، قلت : ثم أيّ؟ قال : الجهاد في سبيل الله»
“সময়মত সালাত আদায় করা, আমি বললাম তারপর কোনোটি? তিনি বললেন, মাতা-পিতার সাথে ভালো ব্যবহার করা, আমি বললাম তারপর কোনোটি? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৯৭০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৫।]
মাতা-পিতাকে কষ্ট দেওয়ার বিষয়ে ইসলাম সবোর্চ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেছে, যাতে তাদের কোনো প্রকার কষ্ট দেওয়া না হয়। তাদের কোনো প্রকার কষ্ট না দেয়ার জন্য ইসলাম কঠিনভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। তাদের কোনো প্রকার কষ্ট দেয়াকে মাতা-পিতার নাফরমানী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং যারা তাদের মাতা-পিতাকে কষ্ট দেয়, তাদের কিয়ামতের দিন জিজ্ঞাসা করা হবে, বরং তাদের কষ্ট দেওয়াকে কবীরা গুনাহ বলেও আখ্যায়িত করা হয়েছে।
সহীহ বুখারী মুসলিমে আবু বকরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার বললেন,
«ألا أُنبِّئكم بأكبر الكبائر؟ ثلاثاً . قالوا : بلى يا رسول الله، قال : الإشراك بالله، وعقوق الوالدين، . وجلس وكان متّكئاً فقال : ألا وقولُ الزور ما زال يكرِّرها حتى قلنا : ليته سكت »
“আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেবো সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহ কী? (এ কথাটি রাসূল তিনবার বলেছেন) তারা বললেন, হা হে আল্লাহর রাসূল! তখন তিনি বললেন, সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহ, আল্লাহর সাথে শরীক করা, মাতা-পিতার নাফরমানী করা, (রাসূল হেলান দেওয়া অবস্থায় ছিলেন, তারপর তিনি উঠে বসে বললেন, সাবধান! মিথ্যা কথা বলা) রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথাটি বার বার বলছিল, যার ফলে আমরা চাইতেছিলাম যদি রাসূল চুপ থাকত!” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৯৭৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৭।]
ইমাম মুসলিম তার সহীহ গ্রন্থে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لعن اللهُ من لعن والديه »
“আল্লাহ তা‘আলার আযাব তার ওপর যে তার মাতা পিতাকে অভিশাপ দেয় বা কষ্ট দেয়।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৭৮।]
তিন: একজন স্ত্রী হিসেবে নারীর অধিকার
ইসলাম একজন নারী যখন কারো স্ত্রী হয়, তখন তাকে স্ত্রী হিসেবে যথাযথ মর্যাদা দেওয়া ও তার যাবতীয় অধিকারকে অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য স্বামীদের নির্দেশ দেয় এবং স্বামীর ওপর তার কিছু অধিকার বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হয়।একজন স্ত্রীর সাথে উত্তম আচরণ করা, লেবাস পোশাক, বরণ পোষণ ইত্যাদির ব্যবস্থা করা স্বামীর দায়িত্ব। তাদের সাথে বিনম্র ও কোমল ব্যবহার করা, তাদের বিষয়ে সহনশীল হওয়া এবং অহেতুক তার সাথে দুর্ব্যবহার না করা। তাদের ব্যবহারের ওপর ধৈর্য্য ধারণ করা। ইসলাম ঘোষণা করে যে, তোমাদের মধ্যে সেই সর্বোত্তম ব্যক্তি, যে তার পরিবার তথা স্ত্রীর নিকট উত্তম। একজন স্বামীর ওপর কর্তব্য হলো, সে তার স্ত্রীকে দীন শেখাবে, তার সম্ভ্রমের হিফাযত করতে যথা সাধ্য চেষ্টা করবে। তারা যাতে কোনো প্রকার ঘরের বাইরে যেতে না হয়, তা জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা করবে। তার সাথে কোনো প্রকার দুর্ব্যবহার করবে না। স্ত্রীদের অধিকার সম্বলিত কুরআনের বিশেষ আয়াত:
﴿وَعَاشِرُوهُنَّ بِٱلۡمَعۡرُوفِۚ فَإِن كَرِهۡتُمُوهُنَّ فَعَسَىٰٓ أَن تَكۡرَهُواْ شَيۡٔٗا وَيَجۡعَلَ ٱللَّهُ فِيهِ خَيۡرٗا كَثِيرٗا﴾ [ النساء : ١٩ ]
“আর তোমরা তাদের সাথে সদভাবে বসবাস কর। আর যদি তোমরা তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে এমনও হতে পারে যে, তোমরা কোনো কিছুকে অপছন্দ করছ আর আল্লাহ তাতে তোমাদের জন্য অনেক কল্যাণ রাখবেন।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৯]
যাতে আল্লাহ তা‘আলা নারীদের অধিকারের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন। তাদের অধিকার বিষয়ে হাদীসের সংখ্যাও অনেক, যাতে তাদের বিষয়ে সতর্কতা, তাদের অধিকার সম্পর্কে গুরুত্ব ও তাদের সাথে ভালো ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেমন, সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«استوصوا بالنساء خيراً، فإنَّ المرأة خُلقت من ضلعٍ أعوج، وإنَّ أعوج شيءٍ في الضلع أعلاه، فإن ذهبت تقيمه كسرته، وإن تركته لم يزل أعوج، فاستوصوا بالنساء»
“আর তোমরা নারীদের সাথে ভালো ব্যবহার কর। কারণ, নারীদের পাঁজরের বাম হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে, আর পাঁজরের হাড়ের সবচেয়ে বাঁকা হাড় হলো, উপরি ভাগ। যদি তাকে ঠিক করতে যাও তাহলে তুমি ভেঙ্গে ফেললে আর যদি তুমি তাকে দিয়ে সংসার করতে চাও তাহলে বাঁকা অবস্থাতেই তোমাকে তার সাথে ঘর সংসার করতে হবে।” [সহীহ বুখারী আদাবুল মুফরিদ, হাদীস নং ৩৩৩১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৪৬৮।]
ইমাম নববী রহ. বলেন, এ হাদীসে নারীদের সাথে বিনম্র ব্যবহার, তাদের প্রতি দয়া, তাদের চারিত্রিক ত্রুটি ও অসৌজন্য মূলক আচরণের ওপর ধৈর্য ধারণ, তাদের জ্ঞান ও বুদ্ধি কম হওয়ার কারণে তারা যেসব খারাব আচরণ করে তা বরদাশত করা, কারণ ছাড়াই তাদের তালাক না দেওয়া ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আহমদ, আবু দাউদ, তিরমিযী আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أكملُ المؤمنين إيماناً أحسنُهم خلقاً، وخيارُكم خيارُكم لنسائهم»
“মুমিনদের মধ্যে পুরোপুরি ঈমানদার হলো তোমাদের মধ্যে যারা আখলাকের দিক দিয়ে উত্তম। আর তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম যে তোমাদের স্ত্রীদের নিকট উত্তম।” [সহীহ মুসলিম: ৫৭/১০।]
ইমাম মুসলিম তার সহীহ-তে জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজের ভাষণে বলেছেন:
«فاتّقوا الله في النساء، فإنَّكم أخذتموهنَّ بأمانة الله، واستحللتم فروجهنَّ بكلمة الله، ولكم عليهنَّ أن لا يوطئن فرشكم أحداً تكرهونه فإن فعلن ذلك فاضربوهنَّ ضرباً غير مبرّح، ولهنَّ رزقهنّ وكسوتهنَّ بالمعروف»
“নারীদের বিষয়ে তোমরা আল্লাহকে ভয় কর! কারণ, তোমরা তাদের আল্লাহর আমানত হিসেবে গ্রহণ করেছ, আর আল্লাহর বাণীর দ্বারাই তোমরা তাদের হালাল করেছ। তাদের ওপর তোমাদের বিষয়ে দায়িত্ব হলো, তারা খেয়াল রাখবে যাতে তোমাদের বিছানায় এমন কোনো লোক না অবস্থান করে যাকে তোমরা অপছন্দ কর। যদি তারা এ ধরনের কোনো কাজ করে তোমরা তাদের প্রহার কর। তবে তা হবে সহনীয় পর্যায়ে অমানবিক নয়। তাদের জন্য তোমাদের দায়িত্ব তোমরা তাদের রিযিক দেবে বরণ পোষণ দেবে উত্তম উপায়ে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২১৮।]
ইমাম মুসলিম তার সহীহ-তে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لا يفْرك مؤمنٌ مؤمنةً، إن كره منها خلقاً رضي منها آخر»
“একজন মুমিন যেন অপর মুমিনকে কোনো প্রকার ঘৃণা না করে। কারণ, যদি তোমাদের কারো নিকট তার একটি চরিত্র খারাব লাগে, তার আরও অনেকগুলো দিক আছে যেগুলোর প্রতি সন্তুষ্ট হওয়া যায়।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৪৬৯।]
ইমাম আহমদ আবু দাউদ ও তিরমিযী আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে হাদীস বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إنَّما النساء شقائق الرجال»
“নারীরা পুরুষদেরই অনুরূপ।” [আহমদ: ২৭৭/৬; আবু দাউদ, হাদীস নং ২৩৬; তিরমিযী, হাদীস নং ১১৩।]
“স্বভাব-চরিত্রে নারীরা পুরুষদের সমতুল্য। তারা তাদেরই দৃষ্টান্ত। কারণ, হাওয়া আলাইহিসসালাম কে আদম আলাইহিসসালাম হতেই সৃষ্টি করেছেন। এ হাদীসে নারীদের সাথে উত্তম ব্যবহার, তাদের প্রতি নম্রতা, দয়া ও সুন্দর মোয়ামালা করার জন্য আহ্বান করা হয়েছে ও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চার. ফুফু, খালা, বোন হিসেবে নারীর মর্যাদা
ইসলাম বোন, খালা ও ফুফুদের সাথে উত্তম ব্যবহার, তাদের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ করা এবং তাদের অধিকার বিষয়ে অবগত হওয়ার জন্য বিশেষ নির্দেশ দেয়। তাদের সাথে ভালো ব্যবহার ও তাদের সহযোগিতা করার কারণে তাদের অনেক সওয়াব ও বিনিময় দেয়ার কথাও ইসলাম ঘোষণা করে।
ইমাম বুখারী আদাবুল মুফরাদে এবং ইবন মাজাহ মিকদাম ইবন মাদি কারাব থেকে হাদীস বর্ণনা করেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে শুনেছেন, তিনি বলেন,
«إنَّ اللهَ يوصيكم بأمّهاتكم، ثمَّ يوصيكم بأمّهاتكم، ثمَّ يوصيكم بآبائكم، ثم يوصيكم بالأقرب فالأقرب» .
“আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের মাতাদের বিষয়ে তোমাদের সতর্ক করেন, তারপর আবারো তিনি তোমাদের মাতাদের বিষয়ে উপদেশ দেন, তারপর তিনি তোমাদের পিতাদের বিষয়ে উপদেশ দেন। তারপর যারা তোমাদের অতি কাছের আত্মীয় তাদের বিষয়ে, তারপর যারা তোমাদের কাছের আত্মীয় তাদের বিষয়ে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৬।]
ইমাম তিরমিযী ও আবু দাউদ আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে হাদীস বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لا يكون لأحدٍ ثلاث بناتٍ، أو ثلاث أخوات فيحسن إليهنَّ إلاَّ دخل الجنّة»
“যদি কোনো লোকের তিনটি কন্যা সন্তান অথবা তিনজন বোন থাকে, তারপর সে তাদের প্রতি দয়া অনুগ্রহ করে লালন-পালন করে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।” [তিরমিযী, হাদীস নং ১৯১২; আবু দাউদ, হাদীস নং ৫১৪।]
সহীহ বুখারী মুসলিমে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«الرحم شجنةٌ من الله، من وصلها وصله الله، ومن قطعها قطعه الله»
“আত্মীয়তা হলো, আল্লাহর পক্ষ হতে একটি বন্ধন, যে ব্যক্তি তার সম্পর্ককে অটুট রাখে আল্লাহ তা‘আলা তার সাথে সম্পর্ক অটুট রাখবে, আর যে তার সম্পর্কে বিচ্ছিন্ন করে আল্লাহ তা‘আলা তার সাথে সম্পর্ককে চিহ্ন করে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৯৮৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৫৫।]
সহীহ বুখারী মুসলিমে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من أحبَّ أن يبسط له في رزقه، وأن ينسأ له في أثره، فليصل رحمه»
“যে ব্যক্তি চায় যে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য তার রিযিকের মধ্যে বরকত দান করুক এবং তার ধন সম্পত্তি আরও বাড়িয়ে দিক, সে যেন আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখে এবং নিকট আত্মীয়দের সাথে কোনো ভাবে সম্পর্ক নষ্ট না করে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৯৮২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৫৭।]
এমনকি যদি কোনো নারী অপরিচিতও হয়ে থাকে- তার সাথে কোনো আত্মীয় বন্ধন না থাকে, সেও যখন কোনো বিপদে পড়ে অথবা তার কোনো প্রয়োজন দেখা দেয়, তাকেও সহযোগিতা করার প্রতি ইসলাম নির্দেশ দিয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে করীমে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাদীসে এ ধরনের অসহায় নারী ও পুরুষদের সহযোগিতা করা এবং তাদের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ করার জন্য বিশেষভাবে উৎসাহ প্রদান করেন এবং নারীদের সহযোগিতা করার ওপর আল্লাহ তা‘আলা অনেক সাওয়াব ও বিনিময় ঘোষণা করেন।
সহীহ বুখারী মুসলিমে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«الساعي على الأرملة والمسكين كالمجاهد في سبيل الله، أو كالقائم الذي لا يفتر، أو كالصائم الذي لا يفطر»
“অসহায় দরিদ্র লোক ও বিধবা স্ত্রীলোকের সহযোগিতা করা, আল্লাহর রাহে জিহাদ করার নামান্তর। অথবা বিরামহীন রাত জেগে ইবাদতকারীর মতো অথবা সে সাওম পালনকারীদের মতো যে কখনো সাওম ভঙ্গ করে না।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০০৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৯৮২।]
এখানে ইসলাম নারীদের যে মান-মর্যাদা ও অধিকার দিয়েছে, সে সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা কুরআন ও হাদীসের আলোকে তুলে ধরা হলো। আর মনে রাখতে হবে, ইসলাম নারীদের যে অধিকার দিয়েছে, তাদের প্রতি সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও সহানুভূতির যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে, তার নূন্যতম অধিকারও অন্য কোনো ধর্ম বা মতবাদে পাওয়া যায় না। যদি আল্লাহর এ মহান দীন ছাড়া অন্য কোনো ধর্মে এর সামান্যও নারীদের অধিকার দেওয়া হত, তাহলেও আমরা আমাদের মনকে বুঝ দিতে পারতাম।
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন