HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলাম

লেখকঃ শাইখ আব্দুর রাজ্জাক ইবন আব্দুল মুহসিন আল-বদর

বিশেষ মূলনীতি
এ ক্ষেত্রে একজন মুসলিমের জন্য কতক গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি অবশ্যই জানা থাকতে হবে, যাতে করে সে, তার জ্ঞান-বুদ্ধি অনুযায়ী সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারে ও তদানুযায়ী নিজেকে দুনিয়ার জীবনে পরিচালনা করতে পারে। আর একজন মুসলিমকে এ কথা অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে যে, এসব মূলনীতিগুলোর আলোকে জীবনকে পরিচালনা করার দ্বারা সে সত্যিকার অর্থে সম্মানের অধিকারী হবে এবং দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয় কল্যাণ অর্জন করবে। নিম্নে এ সব মূলনীতিগুলোকে সংক্ষিপ্ত আকারে আলোচনা করা হল।

এক.

একজন মুসলিম বান্দাকে এ কথার ওপর অবিচল ও অটুট বিশ্বাস রাখেতে হবে যে, দুনিয়াতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দেওয়া বিধানই সবচেয়ে সুন্দর, সঠিক, মজবুত, নিখুঁত ও পরিপূর্ণ বিধান। যার মধ্যে কোনো প্রকার প্রশ্ন তোলার কোনো অবকাশ নেই। আর আল্লাহর বিধান ছাড়া আর যত বিধানই দুনিয়াতে আবিষ্কার হয়েছে, সবই ভ্রান্ত ও ভূলে ভরা। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা হলেন, সমগ্র মখলুকের স্রষ্টা। আর স্রষ্টার বিধান সৃষ্টির জন্য নিখুঁত হবে এটাই স্বাভাবিক। স্রষ্টা অবশ্যই জানে কোনো বিধান তার সৃষ্টির জন্য উপযোগী হবে আর কেন বিধান তাদের জন্য অকল্যাণ হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন ,

﴿إِنِ ٱلۡحُكۡمُ إِلَّا لِلَّهِ أَمَرَ أَلَّا تَعۡبُدُوٓاْ إِلَّآ إِيَّاهُۚ ذَٰلِكَ ٱلدِّينُ ٱلۡقَيِّمُ وَلَٰكِنَّ أَكۡثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَعۡلَمُونَ﴾ [ يوسف : ٤٠ ]

“বিধান একমাত্র আল্লাহরই। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাকে ছাড়া আর কারো ইবাদত করো না। এটিই সঠিক দীন, কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না।” [সূরা ইউসূফ, আয়াত: ৪০]

﴿أَفَحُكۡمَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ يَبۡغُونَۚ وَمَنۡ أَحۡسَنُ مِنَ ٱللَّهِ حُكۡمٗا لِّقَوۡمٖ يُوقِنُونَ ٥٠﴾ [ المائ‍دة : ٥٠ ]

“তারা কি তবে জাহেলিয়্যাতের বিধান চায়? আর নিশ্চিত বিশ্বাসী কওমের জন্য বিধান প্রদানে আল্লাহর চেয়ে কে অধিক উত্তম?” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৫০]

﴿أَلَيۡسَ ٱللَّهُ بِأَحۡكَمِ ٱلۡحَٰكِمِينَ ٨﴾ [ التين : ٨ ]

“আল্লাহ তা‘আলা কি বিচারকদের শ্রেষ্ঠ বিচারক নন? [সূরা আত-তীন, আয়াত: ৭]

﴿كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ ٱللَّهُ لَكُمۡ ءَايَٰتِهِۦۗ وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٞ﴾ [ النور : ٥٩ ]

“এভাবেই আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য তার আয়াতসমূহ বর্ণনা করেন। আল্লাহ তা‘আলা মহা জ্ঞানী প্রজ্ঞাময়।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৫৯]

দুই.

একথা অবশ্যই জানা থাকতে হবে, একজন মুসলিমের যাবতীয় কল্যাণ, ইজ্জত, সম্মান ও সৌভাগ্য সবই, তার রবের আনুগত্যের সাথে সম্পৃক্ত। একজন মুসলিম যত বেশি তার প্রভুর আনুগত্য করবে, দুনিয়া ও আখেরাতে তার ইজ্জত, সম্মান ও কামিয়াবি তত বেশি বৃদ্ধি পাবে। আল্লাহর দেওয়া বিধানের প্রতি তার আনুগত্য যতই বাড়বে, তার সওয়াব বা বিনিময়ও তদনুযায়ী বাড়বে। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে করীমে বলেন,

﴿إِن تَجۡتَنِبُواْ كَبَآئِرَ مَا تُنۡهَوۡنَ عَنۡهُ نُكَفِّرۡ عَنكُمۡ سَيِّ‍َٔاتِكُمۡ وَنُدۡخِلۡكُم مُّدۡخَلٗا كَرِيمٗا ٣١﴾ [ النساء : ٣١ ]

“তোমরা যদি সেসব কবীরা গুনাহ পরিহার কর, যা থেকে তোমাদের বারণ করা করা হয়েছে, তাহলে আমরা তোমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেব এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাব সম্মানজনক প্রবেশস্থলে।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩১]

﴿إِنِّيٓ ءَامَنتُ بِرَبِّكُمۡ فَٱسۡمَعُونِ ٢٥ قِيلَ ٱدۡخُلِ ٱلۡجَنَّةَۖ قَالَ يَٰلَيۡتَ قَوۡمِي يَعۡلَمُونَ ٢٦ بِمَا غَفَرَ لِي رَبِّي وَجَعَلَنِي مِنَ ٱلۡمُكۡرَمِينَ ٢٧﴾ [ يس : ٢٥، ٢٧ ]

“নিশ্চয় আমি তোমাদের রবের প্রতি ঈমান এনেছি। অতএব, তোমরা আমার কথা শোন। তাকে বলা হলো, জান্নাতে প্রবেশ কর। সে বলল, হায়! আমার কাওম যদি জানতের পারত, আমার রব আমাকে কিসের বিনিময়ে ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং আমাকে সম্মানিতদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। [সূরা ইয়াসীন, আয়াত: ২৫-২৭]

﴿قَدۡ أَفۡلَحَ مَن زَكَّىٰهَا ٩ وَقَدۡ خَابَ مَن دَسَّىٰهَا ١٠﴾ [ الشمس : ٩، ١٠ ]

“নিঃসন্দেহে সে সফল কাম হয়েছে, যে তাকে পরিশুদ্ধ করেছে এবং সে ব্যর্থ হয়েছে, যে তাকে কলুষিত করেছে।”[সূরা আশ-শামস, আয়াত: ৯-১০]

﴿يَٰٓأَهۡلَ ٱلۡكِتَٰبِ قَدۡ جَآءَكُمۡ رَسُولُنَا يُبَيِّنُ لَكُمۡ كَثِيرٗا مِّمَّا كُنتُمۡ تُخۡفُونَ مِنَ ٱلۡكِتَٰبِ وَيَعۡفُواْ عَن كَثِيرٖۚ قَدۡ جَآءَكُم مِّنَ ٱللَّهِ نُورٞ وَكِتَٰبٞ مُّبِينٞ ١٥ يَهۡدِي بِهِ ٱللَّهُ مَنِ ٱتَّبَعَ رِضۡوَٰنَهُۥ سُبُلَ ٱلسَّلَٰمِ وَيُخۡرِجُهُم مِّنَ ٱلظُّلُمَٰتِ إِلَى ٱلنُّورِ بِإِذۡنِهِۦ وَيَهۡدِيهِمۡ إِلَىٰ صِرَٰطٖ مُّسۡتَقِيمٖ ١٦﴾ [ المائ‍دة : ١٥، ١٦ ]

“হে কিতাবীগণ, তোমাদের নিকট আমার রাসূল এসেছে, কিতাব থেকে যা তোমরা গোপন করতে, তার অনেক কিছু তোমাদের নিকট সে প্রকাশ করছে এবং কিছু অনেক কিছু ছেড়ে দিয়েছে। অবশ্যই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ হতে আলো ও স্পষ্ট কিতাব এসেছে। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাদেরকে শান্তির পথ দেখান, যারা তার সন্তষ্টির অনুসরণ করে এবং তার অনুমতিতে তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করেন। আর তাদেরকে সরল পথের দিকে হিদায়াত দেন।” [আল মায়েদাহ্, আয়াত: ১৫-১৬]

তিন.

মুসলিম জাতিকে এ কথা অবশ্যই মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে হবে যে, এ জগতে তাদের বিপক্ষে অসংখ্য- অগণিত শত্রু রয়েছে, যারা সব সময় তাদের ক্ষতি করতে সচেষ্ট থাকে, আপ্রাণ চেষ্টা করে কীভাবে এ জাতির ক্ষতি করা যায় এবং দুনিয়ার ইতিহাস থেকে তাদের নাম নিশানা মুছে ফেলা যায়। তাদের কাজই হলো, মুসলিম জাতির ইজ্জত সম্মান লাভের যাবতীয় সব পথ ও উপকরণ বন্ধ করে দেওয়া এবং তাদের অগ্রগতির সব পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা। মুসলিম জাতির ইজ্জত সম্মানকে ধূলিসাৎ করতে এবং তাদের অপমান- অপদস্থ করার লক্ষে তারা তাদের যাবতীয় প্রচেষ্টাকে ব্যয় করে। এমন কোনো ষড়যন্ত্র নেই, যা তারা মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে প্রয়োগ করে না। তারা মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে যত প্রকার উপায় উপকরণ আছে সব কিছু প্রয়োগ করে। মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে তারা নানা প্রকার অপপ্রচার চালায়। কোথাও আজ তারা যাতে নিজ পায়ে দাঁড়াতে না পারে, সে জন্য যেখানেই তাদের কোনো উত্থান দেখে, সেখানেই তারা আক্রমণ চালিয়ে তাদের নিস্তেজ করে দেয়।

আর এদের অগ্রভাগে রয়েছে অভিশপ্ত ও বিতাড়িত শয়তান, যে শয়তান হলো আল্লাহর শত্রু, ইসলাম ও মুমিন বান্দাদের শত্রু আল্লাহ তা‘আলা যখন মুমিনদের এ দীনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ সম্মান দেন, তখন শয়তানই সর্বাধিক বিক্ষুব্ধ হয় এবং তার শরীরে আগুন ধরে যায়। ফলে সে আল্লাহর মুমিন বান্দাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং তাদের প্রতিটি চলার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার ঘোষণা দেয়। চতুর্দিক থেকে সে তাদের ঈমান-আমল ধ্বংস করার জন্য আক্রমণ চালায়। অভিশপ্ত শয়তানের লক্ষই হলো, মুমিনদের ক্ষতি করা, তাদের সম্মানহানি ও অপমান করা এবং আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের যে সম্মান দিয়েছেন, তা নষ্ট করা। শয়তানের কাজই হলো, মানুষকে দুনিয়ার জীবনে ধোঁকায় ফেলার জন্য চেষ্টা চালানো। তবে আল্লাহ যাদের হিফাযত করেন, শয়তান তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারে না।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَإِذۡ قُلۡنَا لِلۡمَلَٰٓئِكَةِ ٱسۡجُدُواْ لِأٓدَمَ فَسَجَدُوٓاْ إِلَّآ إِبۡلِيسَ قَالَ ءَأَسۡجُدُ لِمَنۡ خَلَقۡتَ طِينٗا ٦١ قَالَ أَرَءَيۡتَكَ هَٰذَا ٱلَّذِي كَرَّمۡتَ عَلَيَّ لَئِنۡ أَخَّرۡتَنِ إِلَىٰ يَوۡمِ ٱلۡقِيَٰمَةِ لَأَحۡتَنِكَنَّ ذُرِّيَّتَهُۥٓ إِلَّا قَلِيلٗا ٦٢ قَالَ ٱذۡهَبۡ فَمَن تَبِعَكَ مِنۡهُمۡ فَإِنَّ جَهَنَّمَ جَزَآؤُكُمۡ جَزَآءٗ مَّوۡفُورٗا ٦٣ وَٱسۡتَفۡزِزۡ مَنِ ٱسۡتَطَعۡتَ مِنۡهُم بِصَوۡتِكَ وَأَجۡلِبۡ عَلَيۡهِم بِخَيۡلِكَ وَرَجِلِكَ وَشَارِكۡهُمۡ فِي ٱلۡأَمۡوَٰلِ وَٱلۡأَوۡلَٰدِ وَعِدۡهُمۡۚ وَمَا يَعِدُهُمُ ٱلشَّيۡطَٰنُ إِلَّا غُرُورًا ٦٤﴾ [ الاسراء : ٦١، ٦٤ ]

“আর স্মরণ কর, যখন আমি ফিরিশতাদের বললাম, আদমকে সেজদা কর, তখন ইবলীস ছাড়া সকলে সাজদাহ করল। সে বলল, আমি কি এমন ব্যক্তিকে সাজদাহ করব, যাকে আপনি কাদামাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন?

সে বলল, দেখুন, এ ব্যক্তি যাকে আপনি আমার ওপর সম্মান দিয়েছেন, যদি আপনি আমাকে কিয়ামত পর্যন্ত সময় দেন, তবে অতি সামান্য সংখ্যক ছাড়া তার বংশধরদেরকে অবশ্যই পথভ্রষ্ট করে ছাড়বো।

তিনি বললেন, যাও, অতঃপর তাদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করবে, জাহান্নামই হবে তোমাদের প্রতিদান, পূর্ণ প্রতিদান হিসেবে।

তোমার কন্ঠ দিয়ে তাদের মধ্যে যাকে পারো প্ররোচিত কর, তাদের ওপর ঝাপিয়ে পড়, তোমার আশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী নিয়ে এবং তাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে অংশীদার হও এবং তাদেরকে ওয়াদা দাও। আর শয়তান প্রতারণা ছাড়া তাদেরকে কোনো ওয়াদাই দেয় না।”

﴿إِنَّ ٱلشَّيۡطَٰنَ لَكُمۡ عَدُوّٞ فَٱتَّخِذُوهُ عَدُوًّاۚ إِنَّمَا يَدۡعُواْ حِزۡبَهُۥ لِيَكُونُواْ مِنۡ أَصۡحَٰبِ ٱلسَّعِيرِ ٦﴾ [ فاطر : ٦ ]

“নিশ্চয় শয়তান তোমাদের শত্রু। অতএব, তাকে শত্রু হিসেবে গণ্য কর। সে তার দলকে কেবল এ জন্যই ডাকে যাতে তারা জ্বলন্ত আগুনের অধিবাসী হয়।” [সূরা ফাতির, আয়াত: ৬]

চার.

যাবতীয় ভালো কাজের তাওফীক, কর্মের বিশুদ্ধতা, আল্লাহর দীনের ওপর অবিচলতা ও সম্মান অর্জন সবকিছুই একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের হাতে, যাকে আল্লাহ তা‘আলা সম্মান দেয় তাকে অপমান করার কেউ নেই। আর যাকে আল্লাহ তা‘আলা অপমান করে তাকে ইজ্জত দেওয়ারও কেউ নেই। আল্লাহ যা চান তাই করেন, তাকে বাধ্য করার কেউ নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَن يُهِنِ ٱللَّهُ فَمَا لَهُۥ مِن مُّكۡرِمٍۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَفۡعَلُ مَا يَشَآءُ۩﴾ [ الحج : ١٨ ]

“আল্লাহ তা‘আলা যাকে অপমানিত করেন তার সম্মানদাতা কেউ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন। [সূরা আল-হাজ, আয়াত: ১৮]

সুতরাং একজন মুমিন বান্দার জন্য কর্তব্য হলো, তারা যেন আল্লাহর সাথে তাদের সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করে এবং তারই নিকট ইজ্জত-সম্মান প্রার্থনা করে। তার বাইরে গিয়ে ইজ্জত সম্মান তালাশ করলে, তাকে অবশ্যই পদে পদে অপমানিত হতে হবে প্রতিটি ক্ষেত্রে। সুতরাং একজন মুসলিম বান্দাকে পদে পদে আল্লাহর দিকে মুখাপেক্ষী থাকতে হবে। কোনোক্রমেই আল্লাহর বিধানের অবাধ্য হলে চলবে না।

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ হলো, তিনি দো‘আতে বলতেন,

«اللهم أصلح لي ديني الذي هو عصمةُ أمري،وأصلح لي دنياي التي فيها معاشي، وأصلح لي آخرتي التي فيها معادي، واجعل الحياة زيادةً لي في كلِّ خير، والموت راحةً لي من كلِّ شرٍّ »

“হে আল্লাহ তুমি আমার জন্য আমার দীনকে সংশোধন কর, যে দীন হলো আমার যাবতীয় কর্মের সংরক্ষক। আর আমার জন্য দুনিয়াকে উপযুক্ত করে দাও, যাতে রয়েছে আমাদের জীবন-যাপন। আর আমার জন্য আমার আখিরাতকে সুন্দর করে দাও যা হলো আমার শেষ পরিণতি। আর আমার হায়াতকে তুমি বাড়িয়ে দাও প্রতিটি ভালো কর্মের জন্য। আর আমার মৃত্যুকে আমার জন্য আরামদায়ক করে দাও প্রতিটি খারাপ কর্মে নিপতিত হওয়ার পূর্বে।”

এ দো‘আ দ্বারা প্রমাণিত হয়, আমরা কেউ আমাদের রবের তাওফীকের বাইরে কোনো প্রকার ইজ্জত সম্মান লাভ করতে পারি না এবং কোনো ভালো কাজ করলেও তা আল্লাহর তাওফিকের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। আমাদের যাবতীয় কর্মের বিধায়ক কেবলই আমাদের রব। তিনিই আমাদের ভালো কাজ করার তাওফীক দেন এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখেন।

পাঁচ.

একজন মুসলিমের দুনিয়াতে সব চেয়ে বড় চাহিদা যেন হয়, আল্লাহ তা‘আলার নিকট সম্মানী হওয়া। যদি কোনো বান্দা আল্লাহ তা‘আলার নিকট সম্মানী হয়, দুনিয়ার কোনো অসম্মান তার কোনো ক্ষতি করতে পারে না। আর যখন আল্লাহর দরবারে তার কোনো সম্মান থাকবে না, দুনিয়ার কোনো ইজ্জত-সম্মান তার কোনো কাজে আসবে না। যার ফলে সে যখন আল্লাহ তা‘আলার নিকট সম্মানী হবে, তখন নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করবে। আর যখন আল্লাহর নিকট অসম্মান হবে তখন সে নিজেকে দুর্ভাগা হিসেবে বিবেচনা করবে। আল্লাহ তা‘আলা মুমিন বান্দাদের জন্য অনেক সম্মান প্রস্তুত করে রেখেছেন। যখন কোনো মুমিন আল্লাহ তা‘আলা যে সব নি‘আমতরাজি প্রস্তুত রেখেছেন, তা লাভ করবে তখন সে নিজেকে ধন্য ও ভাগ্যবান মনে করবে। মুমিনদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে করীমে ঘোষণা দিয়ে বলেন,

﴿أُوْلَٰٓئِكَ فِي جَنَّٰتٖ مُّكۡرَمُونَ ٣٥﴾ [ المعارج : ٣٥ ]

“তারাই জান্নাতসমূহে সম্মানিত হবে। [সূরা আল-মা‘আরিজ, আয়াত: ৩৫]

প্রকৃতপক্ষে তারাই সম্মানী যাদের আল্লাহ সম্মান দেন, আর আল্লাহ যাদের অসম্মান করেন, তারা কখনোই সম্মানের অধিকারী হতে পারে না। আর আল্লাহর পক্ষ হতে সম্মান লাভ তখন হবে, যখন সে প্রকাশ্যে ও গোপনে আল্লাহকে ভয় করতে থাকবে। আল্লাহর ভয়ের সাথেই ইজ্জত-সম্মানের সম্পর্ক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنَّا خَلَقۡنَٰكُم مِّن ذَكَرٖ وَأُنثَىٰ وَجَعَلۡنَٰكُمۡ شُعُوبٗا وَقَبَآئِلَ لِتَعَارَفُوٓاْۚ إِنَّ أَكۡرَمَكُمۡ عِندَ ٱللَّهِ أَتۡقَىٰكُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٞ ١٣﴾ [ الحجرات : ١٣ ]

“হে মানুষ আমি তোমাদেরকে এক নারী ও এক পুরুষ হতে সৃষ্টি করেছি আর তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি। যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক তোমাদের মধ্যে তাকওয়া সম্পন্ন। নিশ্চয় আল্লাহ তো সর্বজ্ঞ সম্যক অবগত। [সূরা আল-হুজরাত, আয়াত: ১৩]

সহীহ বুখারীতে আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো,

«من أكرمُ الناس؟ قال : أكرمهم أتقاهم»

“দুনিয়াতে মানুষের মধ্যে সর্বাধিক সম্মানিত ব্যক্তি কে? উত্তরে তিনি বললেন, মানুষের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানী ব্যক্তি হলো, সে যে সর্বাধিক আল্লাহকে ভয় করে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৩৭৪।]

হাদীস দ্বারা স্পষ্ট হয় যে, আল্লাহর ভয়ের সাথেই ইজ্জত সম্মানের সম্পর্ক। ইজ্জত সম্মান লাভ করতে হলে তাকে অবশ্যই তাকওয়া অর্জন করতে হবে, আল্লাহকে ভয় করতে হবে। আর যে ব্যক্তি এর বাইরে গিয়ে সম্মান তালাশ করে, সে মরীচিকাকেই পানি হিসেবে দেখতে পাবে। আসলে তা কোনো পানি নয়, তা কখনো তৃষ্ণা মেটাতে পারে না। যার ফলে সে নৈরাশ্য ও হতাশার ঘোর অন্ধকারে হাবু-ডবু খেতে থাকবে।

ছয়.

একজন নারীকে অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে, ইসলামের বিধানগুলো সম্পূর্ণ নিখুঁত, তাতে কোনো প্রকার খুঁত নেই। বিশেষ করে মহিলাদের সাথে সম্পৃক্ত ইসলামের বিধানগুলো আরও বেশি নিখুঁত ও সঠিক। তার মধ্যে কোনো প্রকার ছিদ্র ও ফাঁক নেই, যাতে কেউ আপত্তি তুলতে পারে এবং অবজ্ঞা করার বিন্দু-পরিমাণও সুযোগ নেই, যাতে কেউ এড়িয়ে যেতে পারে। ইসলাম নারীদের জন্য যে বিধান দিয়েছে, তা নারীদের স্বভাব ও মানসিকতার সাথে একেবারেই অভিন্ন। ইসলামের বিধানে তাদের প্রতি কোনো প্রকার যুলুম, নির্যাতন ও অবিচার করা হয় নেই এবং তাদের প্রতি কোনো বৈষম্যও করা হয় নি।

আর তা কীভাবে সম্ভব হতে পারে? যেহেতু এ সব বিধানগুলো হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ বিধান। আর আল্লাহ হলেন সমগ্র জগতের স্রষ্টা ও প্রতিপালক। তিনিই এ জগতকে পরিচালনা করেন এবং পরিচালনায় তিনি মহা জ্ঞানী ও সর্বজ্ঞ। আল্লাহ তার স্বীয় মাখলুক-বান্দাদের বিষয়েও অভিজ্ঞ। কোনো কাজে তার বান্দাদের দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ ও কামিয়াবী সে বিষয়ে তিনিই সর্বজ্ঞ। সুতরাং তিনি এমন কোনো বিধান মানব জাতির জন্য দেবেন না, যাতে তাদের কোনো অকল্যাণ থাকতে পারে।

একটি কথা মনে রাখতে হবে, সবচেয়ে বড় অপরাধ ও অন্যায় হলো, নারীদের সাথে সম্পৃক্ত বা অন্য যে বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত আল্লাহর দেওয়া শরী‘আতের কোনো বিধান সম্পর্কে এ মন্তব্য করা যে, আল্লাহর এ বিধানে তার বান্দাদের প্রতি যুলুম করা হয়েছে অথবা এ বিধানে দুর্বলতা রয়েছে অথবা এ বিধানটি বর্তমানে প্রযোজ্য নয়, ইত্যাদি। এ ধরনের কথা যেই বলবে, মনে রাখতে হবে, অবশ্যই সে আল্লাহ তা‘আলার সম্মান সম্পর্কে একেবারেই মূর্খ। আল্লাহর কুদরাত ও ক্ষমতা সম্পর্কে তার কোনো কাণ্ড-জ্ঞান বলতে কিছুই নেই। সে আল্লাহকে যথাযথ সম্মান দেয় নি। তার সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿مَّا لَكُمۡ لَا تَرۡجُونَ لِلَّهِ وَقَارٗا ١٣﴾ [ نوح : ١٣ ]

“তোমাদের কী হলো, তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের পরোয়া করছ না?” [সূরা নূহ, আয়াত: ১৩]

আল্লাহকে সম্মান করার অর্থ হলো, তার বিধানকে আঁকড়ে ধরা এবং তার দেওয়া আদেশ ও নিষেধের পরিপূর্ণ আনুগত্য করা। আর এ কথা বিশ্বাস করা যে, আল্লাহর আদেশ নিষেধের আনুগত্য করার মধ্যেই দুনিয়াও আখিরাতের শান্তি ও কামিয়াবী। আর যে এ বিশ্বাসের পরিপন্থী কোনো বিশ্বাস তার অন্তরে লালন করে, তার চেয়ে হতভাগা দুনিয়াতে আর কেউ হতেই পারে না। দুনিয়া ও আখিরাতে সেই অপমান অপদস্থের জন্য একমাত্র ব্যক্তি।

উপরে ছয়টি নীতিমালা আলোচনা করা হল। আর এগুলো হলো, এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা ও আইনকানূন, যা মুসলিম হিসেবে আমাদের প্রত্যেককে মেনে নিতে হবে। আর এখানে আমাদের মূল আলোচনার বিষয়টি সম্পর্কে জানার পূর্বে অবশ্যই এসব নীতিমালা সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে। অন্যথায় আলোচনাটি বুঝে আসবে না। আর এগুলো শুধু নীতিমালাই নয় বরং এগুলোই হলো আমাদের আলোচনার মূলভিত্তি বা উপাদান। এ নীতিমালাকে সামনে রেখেই আমাদের আলোচনাকে সাজানো হয়েছে। এগুলো ছাড়া আমাদের আলোচনা একেবারেই নিষ্ফল।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন