HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

শিশুদের তাওহীদ শিক্ষা

লেখকঃ ড. আব্দুল আজীজ বিন মুহাম্মদ আল আব্দুল লতীফ

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
শিশুদের তাওহীদ শিক্ষা

ড. আব্দুল আজীজ বিন মুহাম্মদ আল আব্দুল লতীফ

অনুবাদক : কামাল উদ্দিন মোল্লা

সম্পাদানা : মুহাম্মদ শামসুল হক সিদ্দিক

ভূমিকা
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর তাআলার জন্য যিনি সৃষ্টিকুলের রব। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক নবী-রাসূলদের শ্রেষ্ঠ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর। তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবায়ে কিরামের উপর।

মূলত এটি শিশু কিশোরদের জন্য রচিত আকীদা বিষয়ক একটি বই। যা সংকলন করেছেন ড. আব্দুল আযীয বিন মুহাম্মদ আল আব্দুল লতীফ। মূল বইটি আরবী। এতে তাওহীদ বা ইসলামী আক্বীদার অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হয়েছে। সাথে তাওহীদ বিষয়ক দলীলগুলো দেয়া হয়েছে যাতে শিশুদের ছোট বয়স থেকেই দলীল-প্রমাণ জানার প্রতি আগ্রহ জন্ম নেয় । আমি বাংলা ভাষাবাসী শিশু-কিশোরদের জন্য এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে বইটি ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোট করে অনুবাদ করেছি। ।

আল্লাহর নিকট প্রার্থনা তিনি যেন এ মেহনতকে কবুল করেন। এবং সকলকে সিরাতুল মুসতাকিমের পথে পরিচালিত করেন।

অনুবাদক

মুহাম্মদ কামাল উদ্দিন মোল্লা

১৪ রমজান ১৪২১ হিজরী

শিশুদের তাওহীদ শিক্ষা
لا إله إلا الله

আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই

محمد رسول الله

মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল

ربي الله

আল্লাহ আমার রব

أنا أعبد ربي

আমি আমার রবের ইবাদত করি

أنا أحبّ ربي

আমি আমার রবকে ভালবাসি

প্রশ্ন উত্তর পর্ব: ০১
س1: مَن ربُّك؟

প্রশ্ন: তোমার রব কে?

ج1: ربّي الله .

উত্তর: আমার রব আল্লাহ।

س 2: مَن الذي خلقك؟

প্রশ্ন: তোমাকে কে সৃষ্টি করেছেন?

ج 2: الله الذي خلقني وخلق الناس جميعًا .

উত্তর: আল্লাহ যিনি আমাকে এবং সকল মানুষকে সৃষ্টি করেছেন।

س3: مَن الذي خلق الليل والنهار والشمس والقمر؟

প্রশ্ন: রাত-দিন এবং চন্দ্র-সূর্য্য কে সৃষ্টি করেছেন?

ج3: الله الذي خلق الليل والنهار والشمس والقمر .

উত্তর: আল্লাহ তাআলা রাত-দিন এবং চন্দ্র-সূর্য্য সৃষ্টি করেছেন।

س4: مَن الذي خلق الأرض التي نمشي عليها؟

প্রশ্ন: আমরা যে জমিনের উপর চলাচল করি তা কে সৃষ্টি করেছেন?

ج4: الله الذي خلق الأرض التي نمشي عليها .

উত্তর: আমরা যে জমিনের উপর চলাচল করি তা আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন।

س5: مَن الذي خلق البحار وأجرى الأنهار؟

প্রশ্ন: সাগরগুলো সৃষ্টি করেছেন কে এবং কে নদীসমূহ প্রবাহিত করেছেন?

ج 5: الله الذي خلق البحار وأجرى الأنهار .

উত্তর: আল্লাহ তাআলা সাগরগুলো সৃষ্টি করেছেন এবং প্রবাহিত করেছেন নদীগুলোকে।

س6: من الذي ينزِّل المطر من السماء؟

প্রশ্ন: আকাশ থেকে কে বৃষ্টি বর্ষণ করেন?

ج6: الله الذي ينزِّل المطر من السماء .

উত্তর: আল্লাহ তাআলা আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন

س7: مَن الذي خلق الأشجار وأخرج منها الثمار؟

প্রশ্ন: গাছ গাছালী এবং ফল ফলাদি কে সৃষ্টি করেছেন?

ج7: الله الذي خلق الأشجار وأخرج منها الثمار .

উত্তর: আল্লাহ তাআলা গাছ গাছালী এবং ফল ফলাদি সৃষ্টি করেছেন।

أنا أعبد الله .

আমি আল্লাহর ইবাদত করি

أنا أحب الله .

আমি আল্লাহকে ভালোবাসি

الله خلق الناس لعبادته وطاعته .

আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদত ও আনুগত্য করার জন্য

عبادة الله وطاعته واجبة على جميع الناس .

আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্য সকল মানুষের উপর ফরয

প্রশ্ন উত্তর পর্ব : ২
س1: ما دينك؟

প্রশ্ন: তোমার ধর্ম কি?

ج1: ديني الإسلام .

উত্তর: আমার ধর্ম হলো ইসলাম

س2: ما الإسلام؟

প্রশ্ন: ইসলাম কি?

ج2: الإسلام هو توحيد الله، وطاعة الله، وترك مخالفة أمر الله تعالى .

উত্তর: ইসলাম হলো, আল্লাহকে এক বলে জ্ঞান করা, তাঁর আনুগত্য করা এবং তাঁর নির্দেশাবলীর বিরোধিতা পরিহার করা।

س3: ما أساس الإسلام؟

প্রশ্ন: ইসলামের বুনিয়াদ কি?

ج3: أساس الإسلام شهادة أن لا إله إلا الله وأن محمدا رسول الله .

উত্তর: ইসলামের বুনিয়াদ হলো: এই সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল।

س4: لماذا نقوم جميعا لأداء الصلاة عند سماع الأذان؟

প্রশ্ন: আযান শুনে আমরা সবাই কেন নামাযের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ি?

ج4: لأن الصلاة ركن من أركان الإسلام، ولا يكون الإنسان مسلما إلا بفعلها .

উত্তর: কারণ নামায হচ্ছে ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ রুকন। আর নামায আদায় ছাড়া কোনো মানুষ মুসলিম বলে গণ্য হবে না।

س5: مَن الرسول الذي أرسله الله إلينا؟

প্রশ্ন: আমাদের জন্য মহান আল্লাহ যে রাসূল প্রেরণ করেছেন তিনি কে?

ج5: النبي محمد هو الرسول الذي أرسله الله إلينا .

উত্তর: মহান আল্লাহ আমাদের জন্য যে রাসূল প্রেরণ করেছেন তাঁর নাম মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

س6: لماذا أرسل الله محمدا صلى الله عليه وسلم إلى الناس جميعًا؟

প্রশ্ন: আল্লাহ তাআলা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সকল মানুষের কাছে কেন প্রেরণ করেছেন?

ج6: أرسله الله إلى الناس ليعلمهم الإسلام .

উত্তর: আল্লাহ তাআলা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সকল মানুষের নিকট প্রেরণ করেছেন, তাদেরকে ইসলাম শিক্ষা দানের জন্য।

س7: ما الذي يدعو إليه النبي محمد صلى الله عليه وسلم؟

প্রশ্ন: নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেসব বস্তুর দিকে দাওয়াত করতেন সেগুলো কি?

ج7: يدعو النبي محمد صلى الله عليه وسلم إلى عبادة الله وحده، وترك عبادة غير الله .

উত্তর: নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক আল্লাহর ইবাদত এবং তিনি ছাড়া অন্য সকলের ইবাদত প্রত্যাখ্যান করার প্রতি দাওয়াত দিতেন।

معرفة الأصول الثلاثة তিনটি মূলনীতি
رضيت بالله ربا وبالإسلام دينا وبمحمد صلى الله عليه وسلم رسولا ونبيا

আল্লাহকে রব, ইসলামকে ধর্ম, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রাসূল ও নবী হিসেবে পেয়ে আমি সন্তুষ্ট।

يجب علينا معرفة ثلاثة أصول: তিনটি মূলনীতি জানা আমাদের জন্য ফরয। আর তা হলো,
معرفة الرب تعالى، والدين، والرسول

রব সম্পর্কে জানা

দ্বীন সম্পর্কে জানা

রাসূল সম্পর্কে জানা

الأصل الأول: معرفة الربّ. প্র্রথম মূলনীতি: রবকে জানা
ربي الله الخالق المالك المدبِّر .

আমার রব আল্লাহ, তিনি সব কিছুর সৃষ্টিকারী, মালিক ও পরিচালক।

(আরবি)

আল্লাহ তাআলা বলেন: আল্লাহই সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা। [সূরা যুমার: ৬২]

أعرف ربي بآياته ومخلوقاته .

আমি আমার রবকে চিনতে পেরেছি তার নিদর্শনাবলী এবং তার সৃষ্টিজগত দ্বারা।

(আরবি)

আল্লাহ তাআলা বলেন: আর তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে আছে রাত, দিন সূর্য্য ও চন্দ্র। [সূরা ফুসসিলাত: ৩৭]

الله هو المعبود المستحق للعبادة وحده لا شريك له .

আল্লাহ তাআলাই ইবাদতের একমাত্র যোগ্য অধিকারী, তার কোন শরিক নেই।

তিনি বলেন,

(আরবি)

হে লোকসকল তোমরা তোমাদের রবের ইবাদত কর, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং সৃষ্টি করেছেন তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে, যাতে করে তোমরা তাকওয়া হাসিল কর। [সূরা বাকারা:২১]

প্রশ্নোত্তর পর্ব :

س1: لأي شيء خلقك الله؟

প্রশ্ন: আল্লাহ তাআলা তোমাকে কেন সৃষ্টি করেছেন?

ج1: خلقني لعبادته،

উত্তর: তিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদতের জন্য।

যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

আমি জ্বিন ও ইনসানকে শুধু আমার ইবাদতের জন্য তৈরী করেছি। [সূরা যারিয়াত: ৫৬]

س2: ما عبادته؟

প্রশ্ন: তার ইবাদত বলতে কি বুঝানো হয়?

ج 2: عبادته توحيده وطاعته .

উত্তর: তাঁর একত্ববাদকে স্বীকার করা এবং তাঁর আনুগত্য করাকেই ইবাদত বলা হয়।

س3: ما معنى لا إله إلا الله؟

প্রশ্ন: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ- এর অর্থ কি?

ج 3 معنى لا إله إلا الله : لا معبود بحقٍّ إلا الله .

উত্তর: লা ইলাহ ইল্লাল্লাহ- এর অর্থ হলো: আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোনো মাবুদ নাই।

الأصل الثاني: معرفة الدين. দ্বিতীয় মূলনীতি: দ্বীন সম্বন্ধে ধারণা লাভ করা
الإسلام هو توحيد الله وطاعته، وترك مخالفة أمر الله .

ইসলাম হলো: আল্লাহর একত্ববাদকে স্বীকার করা, এবং তার আনুগত্য করা, এবং তার আদেশের বিরোধীতা বর্জন করা।

(আরবি)

দ্বীনের ব্যাপারে ঐ ব্যক্তির তুলনায় কে উত্তম যে, স ‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍ ৎকর্মপরায়ণ অবস্থায় আল্লাহর কাছে নিজেকে পূর্ণ সমর্পণ করল? [সূরা নিসা:১২৫]

2 - الإسلام هو الدين الذي ارتضاه الله للناس جميعا .

ইসলাম এমন দ্বীন যাকে আল্লাহ তাআলা মনোনীত করেছে সকল মানুষের জন্য।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

(আরবি)

আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দীন হিসেবে পছন্দ করলাম ইসলামকে। [সূরা মায়েদা:৩]

3 - الإسلام هو دين الخير والسعادة والسرور .

ইসলাম হলো কল্যাণ, সফলতা ও প্রশান্তির ধর্ম।

ইরশাদ হচ্ছে,

(আরবি)

হ্যাঁ যে ব্যক্তি সৎকর্মপরায়ণ অবস্থায় নিজেকে আল্লাহর কাছে পূর্ণ সমর্পণ করল, তার জন্য তার প্রতিপালকের নিকট প্রতিদান রয়েছে এবং তাদের কোনো ভয় নেই আর তারা চিন্তিত হবে না। [সূরা বাকারা:১১২]

প্রশ্নোত্তর পর্ব:

س1: كم أركان الإسلام ؟ وما هي؟

প্রশ্ন: ইসলামের রুকন কয়টি ও কি কি?

ج1: أركان الإسلام خمسة وهي :

উত্তর: ইসলামের রুকন পাঁচটি, আর তা হলো:

1 - شهادة أن لا إله إلا الله وأن محمدا رسول الله .

2 - إقام الصلاة .

3 - إيتاء الزكاة .

4 - صوم رمضان .

5 - حج بيت الله الحرام مع الاستطاعة .

১. এই সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল।

২. সালাত কায়েম করা।

৩. যাকাত আদায় করা।

৪. রমজান মাসের সিয়াম পালন করা।

৫. সামর্থ থাকলে বাইতুল্লাহ শরিফের হজ্জ করা।

১০
الأصل الثالث : معرفة النبي صلى الله عليه وسلم তৃতীয় মূলনীতি: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে জানা
1 - نبيي محمد بن عبد الله صلى الله عليه وسلم .

১. আমার নবীর নাম হলো: মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

2 - أرسل الله نبينا محمدا صلى الله عليه وسلم إلى الناس جميعا ليعلمهم الإسلام .

২. আল্লাহ তাআলা আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সকল মানবজাতিকে ইসলাম শিক্ষা দেয়ার জন্য প্রেরণ করেছেন।

3 - يجب عليّ طاعةُ النبي صلى الله عليه وسلم .

৩. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আনুগত্য ও তাঁকে মান্য করা আমার উপর ফরয। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

(আরবি)

রাসূল তোমাদেরকে যা দেয় তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করে তা হতে বিরত থাক। [সূরা হাশর:৭]

১১
أصول عقيدتنا ثلاثة আমাদের ধর্মবিশ্বাসের মূলনীতি তিনটি
معرفة ربنا، وديننا، ونبينا

১. আমাদের রবকে জানা ২. দ্বীনকে জানা ৩. নবী সম্পর্কে জানা

১২
الأصل الأول: معرفة ربنا سبحانه. প্রথম মূলনীতি: আমাদের রব সম্পর্কে জানা
1 - ربنا الله سبحانه خالق السماوات والأرض .

১. আমাদের প্রতিপালক হলেন, আল্লাহ, আকাশসমূহ এবং জমিনের সৃষ্টিকর্তা। মহান আল্লাহ বলেন,

(আরবি)

তিনিই তোমাদের প্রতিপালক যিনি আকাশসমূহ ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। [ সূরা আরাফ: ৫৪]

2 -ربنا الله الذي خلق الإنسان وأحسن خلقه .

আমাদের রব হলেন আল্লাহ যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং সুন্দর আকৃতি দান করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

নিশ্চয়ই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সর্বোত্তম গঠনে। [সূরা তীন:৪]

3 -ربنا الله الذي يدبِّر الأمر .

আমাদের রব আল্লাহ যিনি সব কিছু পরিচালনা করেন। ইরশাদ হচ্ছে,

(আরবি)

তিনি আকাশ হতে জমিন পর্যন্ত সকল কিছু পরিচালনা করেন। [ সূরা সাজদাহ:৫]

4 - خلق الله الجن والإنس لعبادته .

আল্লাহ তাআলা জ্বিন ইনসানকে তার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,

(আরবি)

আমি জ্বিন ও ইনসানকে শুধুমাত্র আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি। [সূরা জারিয়াত: ৫৬]

5 - أمرنا الله بالكفر بالطاغوت والإيمان بالله .

আল্লাহ তাআলা আমাদের আদেশ করেছেন তার উপর ঈমান আনার জন্য এবং তাগুতকে অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করার জন্য। আল্লাহ বলেন,

(আরবি)

যে তাগুতকে অস্বীকার করে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, সে মজবুত রশিকে আঁকড়ে ধরলো। [সূরা বাকারা:২৫৬]

6 - العروة الوثقى هي : لا إله إلا الله، ومعناها : لا معبود بحق إلا الله .

আল উরুয়াতুল উসকা হলো কালিমা লাইলাহা ইল্লাল্লাহ যার অর্থ আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই।

১৩
الأصل الثاني: معرفة ديننا الإسلامي. দ্বিতীয় মূলনীতি: আমাদের ইসলাম ধর্ম সর্ম্পকে জানা
1 - ديننا هو الإسلام لا يقبل الله من أحد سواه .

১.আমাদের ধর্ম হলো ইসলাম, কারো থেকে এ ছাড়া অন্য কোন ধর্ম আল্লাহ গ্রহণ করেন না। মহান আল্লাহ বলেন,

(আরবি)

যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য দ্বীন চায় তা কখনই তার নিকট থেকে গৃহীত হবে না। আর সে আখেরাতে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত। [সূরা আলে ইমরান:৮৫]

2 - مراتب الدين الإسلامي ثلاث : الإسلام، والإيمان، والإحسان .

দ্বীন ইসলামের স্তর তিনটি : ইসলাম, ঈমান, ইহসান।

3 - الإسلام : هو الاستسلام لله تعالى بالتوحيد، والانقياد له بالطاعة، والخلوص من الشرك وأهله .

ইসলাম হলো: একত্ববাদের সাথে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করা, তার হুকুমকে মেনে নেয়া এবং শিরক এবং মুশরিক থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত থাকা।

4 - الإيمان : أن تؤمن بالله، وملائكته، وكتبه، ورسله، واليوم الآخر، والقدر خيره وشره .

ঈমান হলো, তোমার বিশ্বাস স্থাপন করা আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফিরেস্তাদের প্রতি, কিতাব সমূহের প্রতি, রাসূলগণের প্রতি, পরকালের প্রতি, তাকদীরের ভালো মন্দের প্রতি।

5 - الإحسان : أن تعبد الله كأنك تراه، فإن لم تكن تراه فإنه يراك .

ইহসান হলো: তোমার আল্লাহর ইবাদত এমনভাবে সম্পন্ন করা যেন তুমি তাকে দেখছ। তা না হলে তুমি যদি তাকে নাও দেখ (অন্তত এ বিশ্বাস পোষণ করা যে) তিনি তোমাকে দেখছেন।

১৪
الأصل الثالث: معرفة نبينا محمد صلى الله عليه وسلم. তৃতীয় মূলনীতি: আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে জানা
1 - هو محمد بن عبد الله بن عبد المطّلب الهاشمي القرشي صلى الله عليه وسلم وهو أفضل الأنبياء وخاتمهم .

১. তিনি মুহাম্মদ ইবনে আব্দিল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব আল হাশিমী আল কুরাশী। তিনি হলেন নবীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং সর্বশেষ নবী।

2 - بلّغ نبينا صلى الله عليه وسلم هذا الدين، وأمرنا بكل خير، ونهانا عن كل شر .

২. আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দ্বীন সঠিকভাবে পৌঁছিয়েছেন। নির্দেশ দিয়েছেন সব কল্যাণের আর বারণ করেছে তাবত অনিষ্ট ও অকল্যাণ থেকে।

3 - يجب علينا الاقتداء بنبينا صلى الله عليه وسلم واتِّباعه .

৩. আমাদের উপর ফরজ হচ্ছে আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ ও আনুগত্য করা। আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

তোমাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর রাসূলের মাঝে উত্তম আদর্শ, যে আল্লাহ ও কিয়ামত দিবসকে প্রত্যাশা করে এবং অধিক পরিমাণে আল্লাহর জিকির করে। [সূরা আহযাব: ২১]

4 - يجب علينا تقديم محبة نبينا صلى الله عليه وسلم على محبة الأمهات والآباء وجميع الناس .

৪. আমাদের উপর ফরজ হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ভালোবাসাকে পিতা-মাতা এবং সকল মানুষের ভালোবাসা থেকে প্রাধান্য দেয়া।

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم { لا يؤمن أحدكم حتى أكون أحبّ إليه من والده وولده والناس أجمعين } ( [() أخرجه البخاري ومسلم .]) ومحبته تكون باتِّباعه وطاعته .

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদরে কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হবে না যতক্ষণ না আমি তার পিতা, সন্তান-সন্ততি ও সকল মানুষকে থেকে বেশি প্রিয় হব। [ বোখারি ও মুসলিম]

তার প্রতি ভালোবাসার বাস্তবতা হচ্ছে, তার অনুসরণ ও তার আনুগত্য।

১৫
معنى الشهادتين কালিমা শাহাদাতের অর্থ:
أشهد أن لا إله إلا الله

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ,

وأشهد أن محمدًا رسول الله

আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল।

1 - معنى شهادة أن لا إله إلا الله : لا معبود بحق إلا الله .

لاإله إلا الله -এর সাক্ষ্য দেয়ার মানে হচ্ছে, এ কথার স্বীকৃতি দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন উপাস্য নেই ।

2 - العبادة : هي كل ما يحبه الله ويرضاه من الأقوال والأعمال .

২. ইবাদত হলো প্রত্যেক ঐ কথা ও কাজ যা আল্লাহ পছন্দ করেন এবং ভালোবাসেন।

3 - أنواع العبادة كثيرة منها : الدعاء، والخوف، والتوكل، والصلاة، والذكر، وبر الوالدين وغيرها .

৩. ইবাদত অনেক আছে, তম্মধ্যে রয়েছে দুআ করা, আল্লাহকে ভয় করা, আল্লাহর উপর ভরসা করা, নামায আদায় করা, আল্লাহর যিকির করা, মাতা-পিতার সাথে উত্তম ব্যবহার করা ইত্যাদি।

দু’আ ইবাদত হওয়ার প্রমাণ আল্লাহ তাআলার বাণী:

(আরবি)

তোমাদের প্রতিপালক বলেছেন তোমরা আমাকে ডকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব। নিশ্চয় যারা অহংকার করে আমার বন্দেগি থেকে বিমুখ থাকে। তারা অচিরেই জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত অবস্থায়। [সূরা গাফির : ৬০]

আল্লাহ তাআলাকে ভয় করা ইবাদত, এ প্রসঙ্গে দলিল হচ্ছে,

(আরবি)

সুতরাং তোমরা তাদেরকে ভয় করো না, আমাকে ভয় করো যদি তোমরা মুমিন হও। [সূরা আলে ইমরান: ১৭৫]

ভরসা করা ইবাদত হওয়ার প্রমাণ:

(আরবি)

কেবলমাত্র আল্লাহর উপরই ভরসা কর যদি তোমরা মুমিন হও। [ সূরা মায়েদা : ২৩] নামায ইবাদত হওয়ার প্রমাণ:

(আরবি)

আর তোমরা নামায কায়েম কর, এবং মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত হয়ো না। [সূরা রূম : ৩১]

যিকির ইবাদত হওয়ার প্রমাণ:

(আরবি)

হে ঈমানদারগণ তোমরা অধিক পরিমাণে আল্লাহর যিকির কর। [ সূরা আহযাব:৪১]

মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার ইবাদত হওয়ার প্রমাণ:

(আরবি)

আমি মানুষকে মাতা-পিতার সাতে সদ্ব্যবহার করার আদেশ করেছি। [ সূরা আহকাফ:১৫]

4 - تُصْرَفُ جميع أنواع العبادة لله وحده لا شريك له، فمن صرف منها شيئا لغير الله فهو كافر .

৪. সকল প্রকার ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্য নিবেদন করতে হবে, যার কোন শরিক নেই। যে কোন একটি ইবাদতও যদি কেউ আল্লাহ ভিন্ন অন্য কারো উদ্দেশ্যে সম্পাদন করে, সে কাফের বলে সাব্যস্ত হবে। মহান আল্লাহ বলেন,

(আরবি)

যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে আহবান করে যে বিষয়ে তার কাছে কোন দলিল নেই; তার হিসাব তার প্রতিপালকের কাছে রয়েছে। নিশ্চয়ই কাফিররা সফল হবে না। [ সূরা মুমিনূন:১১৭]

5 - خلق الله الجن والإنس لعبادته وحده .

৫. মহান আল্লাহ জ্বিন ইনসানকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তার ইবাদত করার জন্য। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করছেন,

(আরবি)

আমি জ্বিন ইনসানকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য। [সূরা জারিয়াত:৫৬]

6 - من عبد الله تعالى حقًّا فسيجد سعادة عظيمة وسرورا كبيرا وحيا ة طيبة .

৬. যে ব্যক্তি যথাযথভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে, সে মহা সৌভাগ্য লাভ করবে, আরো লাভ করবে বিশাল সাফল্য ও শান্তিময় জীবন। আল্লাহ তাআলা বলছেন,

(আরবি)

মুমিন আবস্থায় পুরুষ অথবা নারী যে কেউ নেককাজ করবে, নিশ্চয়ই আমি তাকে শান্তিময় জীবন দান করবো। [ সূরা নাহল : ৯৭]

1 - معنى شهادة أن محمدا رسول الله : تصديقه فيما أخبر، وطاعته فيما أمر، واجتناب ما عنه نهى وزجر، وأن لا يعبد الله إلا بما شرع .

১. أن محمدا رسول الله -এর সাক্ষ্য প্রদানের অর্থ হলো, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সকল সংবাদ দিয়েছেন তা সত্য বলে স্বীকৃতি দেয়া, তিনি যে সব আদেশ করেছেন তা পালন করা, যা থেকে তিনি নিষেধ করেছে, সাবধান করেছেন তা থেকে বিরত থাকা। এবং তিনি যেভাবে ইবাদত করতে বলেছেন সেভাবেই ইবাদত করা।

2 - اسمُ نبيِّنا : محمد بن عبد الله بن عبد المطلب الهاشمي القرشي، فهو أفضل العرب نسبا .

২. আমাদের নবীর নাম: মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুত্তালিব আল হাশেমী আল কুরাইশী। তিনি বংশীয় মর্যাদায় আরবের সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন।

3 - أرسل الله نبينا محمدا صلى الله عليه وسلم إلى الناس كافة، وافترض طاعته على جميع الناس .

৩. আল্লাহ তাআলা আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সকল মানুষের প্রতি প্রেরণ করেছেন। এবং তার অনুসরণ করা সকল মানুষের জন্য ফরয করেছেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

বল, হে মানুষ, আমি তোমাদের সবার প্রতি আল্লাহর রাসূল। [সূরা আরাফ:১৫৮]

4 - عاش النبي صلى الله عليه وسلم في مكة المكرمة، ودعا إلى التوحيد وعبادة الله وحده، ثم هاجر إلى المدينة النبوية، وأمر ببقية أحكام الإسلام مثل الزكاة والصوم والجهاد وغيرها، وتوفي صلى الله عليه وسلم في المدينة وعمره ثلاث وستون سنة .

৪. নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় জীবনের দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেছেন। মানুষকে তাওহীদ ও একমাত্র আল্লাহর ইবাদতের দিকে আহবান করেছেন। অত:পর মদীনায় হিজরত করেছেন এবং ইসলামের অন্যান্য বিধি বিধান- যাকাত, নামায, জিহাদ ইত্যাদি সম্পর্কে আদেশ করেছেন। এরপর মদীনাতেই ইন্তিকাল করেছেন, তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর।

5 - من خالف أمر النبي صلى الله عليه وسلم فهو مستحق للعذاب الأليم .

৫. যে রাসূলের আদেশ অমান্য করে সে কঠিন যন্ত্রণাদায়ক আযাবের যোগ্য। মহান আল্লাহ বলেন,

(আরবি)

অতএব যারা তার নির্দেশের বিরুদ্ধাচারণ করে তারা যেন তাদের উপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌঁছার ভয় করে। [সূরা নূর:৬৩]

6 - من أطاع النبي صلى الله عليه وسلم فسينال السعادة الكاملة، والفوز الكبير .

৬. যে রাসূলের আনুগত্য করবে, সে পূর্ণ সৌভাগ্যের মালিক হবে এবং বিরাট সাফল্য হাসিল করবে।

আল্লাহ বলেন:

(আরবি)

তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য কর, তোমারা করুণা প্রাপ্ত হবে। [ সূরা আলে ইমরান : ১৩২]

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন:

(আরবি)

তোমরা যদি তার আনুগত্য কর, তবে সঠিক পথ প্রাপ্ত হবে। [ সূরা নূর: ৫৪]

১৬
তাওহীদ
أنواع التوحيد

তাওহীদের প্রকারভেদ

التوحيد : هو إفراد الله تعالى بالربوبية والألوهية وكمال الأسماء والصفات .

তাওহীদ হলো: প্রতিপালক, উপাস্য, এবং তাঁর গুণবাচক নামসমূহে তাঁকে একক বলে জ্ঞান করা।

أنواع التوحيد : ثلاثة، وهي توحيد الربوبية، وتوحيد الألوهية وتوحيد الأسماء والصفات .

তাওহীদ তিন প্রকার: তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ, তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ, তাওহীদুল আসমায়ি ওয়াস সিফাত।

1 - توحيد الربوبية : وهو توحيد الله بأفعاله - سبحانه - مثل الخلق والرزق وتدبير الأمور والإحياء والإماتة ونحو ذلك .

১৭
তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ:
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলাকে তাঁর কাজে একক জানা। যেমন: সৃষ্টি করা, রিযিক দান করা, সব কিছুর পরিচালনা, জীবন দান, মৃত্যু দান ইত্যাদি।

فلا خالق إلا الله،

অতএব, আল্লাহ ছাড়া কোন সৃষ্টিকর্তা নেই

যেমন- আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

আল্লাহই সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা। ( সূরা যুমার : ৬২)

ولا رازق إلا الله،

আল্লাহ ছাড়া কোন রিযক দাতা নেই। যেমন – আল্লাহ তাআলা বলেন,

(আরবি)

পৃথিবীতে বিচরণশীল সকল প্রাণীর রিযিক একমাত্র আল্লাহ তাআলার যিম্মায়। [সূরা হূদ:৬]

ولا مدبِّر إلا الله،

আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কোন পরিচালক ও পরিকল্পনাকারী নেই। আল্লাহ বলেন,

(আরবি)

আল্লাহ তাআলা আকাশ থেকে জমিন পর্যন্ত সবকিছুর পরিচালনা করেন। [সূরা সেজদা:৫]

(আরবি)

আল্লাহ ছাড়া কোন জীবন-মৃত্যুদাতা নেই। আল্লাহ তাআলা বলেন,

(আরবি)

তিনিই জীবন দান করেন এবং তিনিই মৃত্যু ঘটান এবং তাঁর দিকেই তোমাদের ফিরে যেতে হবে। [ সূরা ইউনুস : ৫৬]

وهذا النوع قد أقر ه الكفار على زمن رسول الله صلى الله عليه وسلم ولم يدخلهم في الإسلام،

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়ে কাফেররা এ প্রকারের তাওহীদকে স্বীকার করতো। তবে শুধু এ প্রকার তাওহীদের স্বীকৃতি তাদেরকে ইসলামে প্রবেশ করায়নি। মহান আল্লাহ বলেন,

(আরবি)

আর যদি তুমি তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর, কে আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন? তারা অবশ্যই বলবে আল্লাহ। বল, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানেনা। [সূরা লুকমান : ২৫]

2 - توحيد الألوهية : وهو توحيد الله بأفعال العباد التي أمرهم بها . فتصرف جميع أنواع العبادة لله وحده لا شريك له، مثل الدعاء والخوف والتوكل والاستعانة والاستعاذة وغير ذلك .

১৮
তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ,
তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ হলো, আল্লাহর নির্দেশিত বান্দা কর্তৃক সম্পাদিত সকল প্রকার ইবাদতে তাঁর একত্ববাদকে বহাল রাখা। অতএব সকল প্রকার ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্য নিবেদন করা। যেমন দোআ, ভয়, ভরসা, সাহায্য চাওয়া, আশ্রয় প্রার্থণা করা ইত্যাদি। সব কিছুই আল্লাহর কাছে চাইতে হবে, তাঁর উদ্দেশ্যে সম্পাদন করতে হবে।

فلا ندعو إلا الله،

অতএব আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ডাকবো না। আর কারো কাছে দুআ করব না। আল্লাহ তাআলা বলেন,

(আরবি)

তোমাদের রব বলেছেন তোমরা আমাকে ডাক আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবো। [সূর গাফির : ৬০]

ولا نخاف إلا الله،

আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করবো না। আল্লাহ তাআলা বলেন,

(আরবি)

সুতরাং তোমরা তাদেরকে ভয় করো না আমাকে ভয় কর যদি তোমরা ঈমানদার হও।

ولا نتوكل إلا على الله،

আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য করো উপর ভরসা করবো না। ইরশাদ হচ্ছে,

(আরবি)

তোমরা একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা কর, যদি তোমরা মুমিন হও। [সূরা মায়েদা : ২৩]

ولا نستعين إلا بالله،

আমরা একমাত্র আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করব। আল্লাহ তাআলা বলেন,

(আরবি)

আমরা কেবল তোমারই ইবাদত করি, এবং একমাত্র তোমার কাছেই সাহায্য চাই। [সূরা ফাতেহা : ৫]

ولا نستعيذ إلا بالله،

আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে আশ্রয় চাইব না। ইরশাদ হচ্ছে,

(আরবি)

বলুন (হে রাসূল) আমি আশ্রয় চাচ্ছি মানুষের রবের কাছে। [ সূরা নাস : ১]

وهذا النوع من التوحيد هو الذي جاءت به الرسل عليهم السلام،

তাওহীদের এ প্রকারটি প্রতিষ্ঠার জন্যই নবী-রাসূলগণ (আলাইহিমুস সালাম) পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন। মহান আল্লাহ বলেন,

(আরবি)

আর আমি অবশ্যই প্রত্যেক জাতিতে একজন রাসূল প্রেরণ করেছি যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং পরিহার কর তাগুতকে। [ সূরা নাহল : ৩৬]

وهذا النوع من التوحيد هو الذي أنكره الكفار قديما وحديثا،

তাওহীদের এই প্রকারটিকে অতীত এবং বর্তমানের কাফেররা অস্বীকার করেছে। যেমন আল্লাহ তাআলা তাদের ভাষায় ব্যক্ত করেছেন,

(আরবি)

সে কি অনেক উপাস্যকে এক উপাস্য বানিয়ে নিয়েছে ? এতো এক অত্যাশ্চর্য বিষয় বটে। [ সূরা সাদ : ৫]

3 - توحيد الأسماء والصفات : وهو الإيمان بكل ما ورد في القرآن الكريم والأحاديث النبوية الصحيحة من أسماء الله وصفاته التي وصف بها نفسه أو وَصفه بها رسوله على الحقيقة .

১৯
তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত:
আর তা হচ্ছে, পবিত্র কুরআন এবং সহীহ হাদীসে বর্ণিত আল্লাহর নাম ও গুণাবলী সমূহের উপর ঈমান আনায়ন করা আল্লাহ তাআলা এবং তাঁর রাসূল যেভাবে বর্ণনা করেছেন ঠিক সেভাবে।

وأسماء الله كثيرة، منها : الرحمن، والسميع، والبصير، والعزيز، والحكيم .

আল্লাহর অনেক নাম: আর- রাহমান, আসসামীউ, আল- বাসীর, আল- আযীযু, আল- হাকীমু ইত্যাদি। আল্লাহ তাআলা বলেন,

(আরবি)

আল্লাহর সদৃশ কোন কিছু নেই, তিনি সব শোনেন ও সব দেখেন। [সূরা শুরা : ১১]

২০
صفات الفائزين সফলকামীদের কতিপয় বৈশিষ্ট্য
আল্লাহ তাআলা বলেন,

(আরবি)

সময়ের কসম, নিশ্চয় আজ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ততায় নিপতিত, তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে, সৎকাজ করেছে, পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দিয়েছে এবং পরস্পরকে ধৈর্যের উপদেশ দিয়েছে। [সূরা আসর]

أقسم الله تعالى بالعصر وهو الزمان على أن الإنسان في خسارة وهلاك إلا من حقق أربع صفات :

আল্লাহ তাআলা কালের শপথ করেছেন এবলে যে, সকল মানুষ ক্ষতি ও ধ্বংসের মাঝে বিরাজ করছে তবে যারা চারটি গুণ হাসিল করেছে তারা এ থেকে পরিত্রাণ পাবে।

1 - الإيمان : وهو معرفة الله تعالى، ومعرفة نبيه، ومعرفة دين الإسلام .

১. ঈমান: আর তা হচ্ছে, আল্লাহ সম্পর্কে জানা, তাঁর নবী সম্পর্কে জানা, দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে জানা।

2 - العمل الصالح : مثل الصلاة والزكاة والصيام والصدق وبرّ الوالدين .

২. নেক কাজ: যেমন নামায, যাকাত, রোযা, সত্য বলা, পিতা মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা।

3 - التواصي بالحق : وهو الدعوة إلى الإيمان والعمل الصالح، والترغيب في ذلك .

৩. সৎকাজে একে অপরের সহযোগীতা করা: আর তা হলো আল্লাহর উপর ঈমান আনয়ন ও নেক কাজ করার জন্য দাওয়াত দেয়া এবং এর জন্য উৎসাহ প্রদান করা।

4 - التواصي بالصبر : وهو الصبر على فعل الطاعات، والصبر عند وقوع المصائب .

৪. একে অপরকে সবরের উপদেশ দেয়া: অর্থাৎ ইবাদত-বন্দেগির উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে গেলে যে কষ্ট হয় তার উপর ধৈর্য ধারণ করা। এবং বিপদে সবর করা।

২১
ما ينافي التوحيد ويضاده তাওহীদ পরিপন্থী ও তা বিনষ্টকারী বিষয়
1 - أول ما فرض الله على الناس الإيمان بالله والكفر بالطاغوت .

১. মানুষের উপর প্রথম যে কাজটি আল্লাহ তাআলা ফরয করেছেন তা হলো আল্লাহর উপর ঈমান আনয়ন করা এবং তাগুতকে অস্বীকার করা। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,

(আরবি)

আমি প্রত্যের জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি এই বার্তা দিয়ে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুতকে প্রত্যাখান কর। [সূরা নাহল : ৩৬]

2 - معنى الطاغوت : كل ما عُبد من دون الله وهو راضٍ .

2. তাগুত অর্থ: আল্লাহ ছাড়া অন্য যার ইবাদত করা হয় এবং সে তাতে সন্তুষ্ট থাকে।

3 - صفة الكفر بالطاغوت : أن تعتقد بطلان عبادة غير الله تعالى وتتركها وتبغضها، وتكفِّر أهلها وتعاديهم .

৩. তাগুতকে অস্বীকার করার পদ্ধতি: আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ইবাদত-আনুগত্য করাকে বাতিল বলে বিশ্বাস করা, তাকে পুরোপুরি ত্যাগ করা, তার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করা। যে ব্যক্তি তা করবে তাকে কাফির বলে বিশ্বাস করা এবং তাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করা।

4 - الشرك ضد التوحيد، فالتوحيد هو إفراد الله تعالى بالعبادة، والشرك هو صرف إحدى العبادات لغير الله تعالى، مثل أن يدعو غير الله، أو يسجد لغير الله .

৪. শিরক হচ্ছে তাওহীদের বিপরীত। আর তাওহীদ হলো ইবাদতে আল্লাহ তাআলাকে একক এবং অদ্বিতীয় জানা। শিরক হলো যে কোন একটি ইবাদত আল্লাহ ছাড়া অন্যের জন্য সম্পাদন করা। যেমন আল্লাহ ছাড়া অন্যকে আহবান করা, অথবা আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সিজদা করা।

5 - الشرك أكبر الذنوب وأعظمها،

৫. শিরক সবচেয়ে বড় গুনাহ ও মারাত্মক অন্যায়, আল্লাহ তাআলা বলেন,

(আরবি)

নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমা করেন না তার সাথে শরীক করাকে এবং এ ছাড়া যাকে চান ক্ষমা করেন। আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে তো ঘোর পথভ্রষ্টতায় পথভ্রষ্ট হল। [সূরা নিসা : ১১৬]

والشرك يبطل جميع الطاعات، ويوجب الخلود في النار وعدم دخول الجنة،

শিরক সকল নেক আমলকে বিনষ্ট করে দেয়, চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামকে ওয়াজিব করে ও জান্নাতকে হারাম করে দেয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,

(আরবি)

এ হলো আল্লাহর হিদায়াত, নিজ বান্দাদের মাঝে যাকে ইচ্ছা হেদায়াত দান করেন, আর তারা যদি শিরক করতো তবে তাদের সকল কৃতকর্ম নিষ্ফল হয়ে যেতো। [সূরা আনআম: ৮৮]

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন:

(আরবি)

নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শিরক করে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতকে হারাম করেছেন এবং তার ঠিকানা জাহান্নাম। [ সূরা মায়েদা : ৭২]

6 - الكفر ينافي التوحيد، فالكفر أقوال وأعمال تخرج فاعلها عن التوحيد والإيمان . ومثال الكفر : الاستهزاء بالله تعالى، أو آيات القرآن، أو الرسول

৬. কুফর তাওহীদকে বিফল করে দেয়। কুফরী কথা ও কাজ মানুষকে তাওহীদ ও ঈমানের সীমানা হতে বের করে দেয়।

কুফরীর উদাহারণ: আল্লাহ তাআলা সম্পর্কে ঠাট্টা করা অথবা কুরআনের কোন আয়াত কিংবা ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে বিদ্রুপ করা। আল্লাহ তাআলা বলেন,

(আরবি)

আর যদি তুমি তাদেরকে প্রশ্ন কর, অবশ্যই তারা বলবে, আমরা আলাপচারিতা ও খেল-তামাশা করছিলাম। বল, আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসূলের সাথে তোমরা বিদ্রুপ করছিলে? তোমরা ওজর পেশ করো না । তোমরা তোমাদের ঈমানের পর অবশ্যই কুফরী করেছ। [সূরা তাওবা : ৬৫-৬৬]

7 - النفاق ينافي التوحيد، فالنفاق : أن يظهر للناس التوحيد والإيمان ويبطن في قلبه الشرك والكفر .

৭. নিফাক তাওহীদকে নিষ্ফল করে দেয়। নিফাক হলো বাহ্যিকভাবে তাওহীদ ও ঈমানকে মানুষের কাছে প্রকাশ করা, এবং অন্তরে শিরক ও কুফুর গোপন রাখা।

ومثال النفاق : أن يظهر بلسانه الإيمان بالله ويبطن الكفر

নিফাকের উদাহরণ যেমন, কেউ মুখে ঈমানের উচ্চারণ করলো এবং অন্তরে কুফরীকে গোপন করলো। আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

কতেক মানুষ বলে আমরা আল্লাহর উপর এবং পরকালের উপর ঈমান এনেছি অথচ তারা মুমিন নয়। [ সূরা বাকারা: ৮]

أي يقولون بألسنتهم آمنا بالله وما هم بمؤمنين حقيقة في قلوبهم .

অর্থাৎ, মুখে বলে আমরা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছি প্রকৃত পক্ষে তাদের অন্তরে ঈমান নেই।

২২
الإيمان بالله واليوم الآخر আল্লাহ ও পরকালের উপর ঈমান
التصديق الجازم بوقوع هذا اليوم، فيؤمن كل واحد منا بأن الله تعالى يبعث الناس من القبور، ثم يحاسبهم ويجازيهم على أعمالهم، حتى يستقر أهل الجنة في منازلهم، وأهل النار في منازلهم .

পরকালের উপর ঈমানের অর্থ: পরকাল দিবস সংঘটিত হবে মর্মে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা। অতএব আমাদের সকলকে বিশ্বাস করতে হবে যে, আল্লাহ তাআলা সকল মানুষকে কবর থেকে উত্থিত করবেন, অত:পর তাদের হিসাব নিবেন এবং প্রত্যেকের কর্ম অনুযায়ী প্রতিদান দিবেন। একপর্যায়ে ফলাফল অনুযায়ী জান্নাতীগণ তাদের জায়গায় এবং জাহান্নামীগণ তাদের জায়গাতে অবস্থান নিবে।

والإيمان باليوم الآخر أحد أركان الإيمان، فلا يصح الإيمان إلا به .

পরকাল দিবসের প্রতি বিশ্বাস ঈমানের রুকনসমূহের মধ্যে একটি, তাই পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন ছাড়া ঈমান শুদ্ধ হবে না।

২৩
والإيمان باليوم الآخر يتضمن ثلاثة أمور: পরকালের উপর ঈমান তিনটি বিষয়কে শামিল করে
1 - الإيمان بالبعث والحشر :

১. পূনরুত্থান ও হাশর সম্বন্ধে বিশ্বাস

وهو إحياء الموتـى من قبورهـم، وإعادة الأرواح إلى أجسادهم، فيقوم الناس لرب العالمين، ثم يحشرون ويجمعون في مكان واحد، حفاة غير منتعلين، عراة غير مستترين، غرلا غير مختونين .

পূনুরুত্থান হলো, মৃতদেরকে জীবিত করে কবর থেকে উঠানো এবং তাদের দেহে রূহ ফিরিয়ে দেয়া। ফলে সকল মানুষ রাব্বুল আলামীনের সামনে দাঁড়াবে অত:পর এক জায়গাতে তাদেরকে একত্র করা হবে। জুতা বিহীন-নাঙ্গা পায়ে, পোষাক বিহীন-বিবস্ত্র ও খতনা বিহীন উলঙ্গ অবস্থায়।

পূনরুত্থানের প্রমাণ, আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

অত:পর তোমরা অবশ্যই মারা যাবে, অত:পর তোমাদেরকে কিয়ামত দিবসে পুনরুত্থিত করা হবে। [ সূরা মুমিনূন : ১৫-১৬]

হাশরের দলিল, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

{ يحشر الناس يوم القيامة حفاة عراة غرلا } ( [() البخاري تفسير القرآن (4349) ، مسلم الجنة وصفة نعيمها وأهلها (2860) ، الترمذي تفسير القرآن (3167) ، النسائي الجنائز (2087) ، أحمد (1/253) ، الدارمي الرقاق (2802).]).

মানুষকে কিয়ামত দিবসে জুতা বিহীন নাঙ্গা পা, বস্ত্র বিহীন উলঙ্গ এবং খতনা বিহীন অবস্থায় একত্রিত করা হবে।

2 - الإيمان بالحساب والميزان :

২. হিসাব ও মিযানের প্রতি বিশ্বাস:

يحاسب الله الخلائق على أعمالهم التي عملوها في الحياة الدنيا، فمن كان من أهل التوحيد ومطيعا لله ورسوله فإن حسابه يسير، ومن كان من أهل الشرك والعصيان فحسابه عسير .

সৃষ্টিজীব দুনিয়ার জীবনে যে আমল করেছে আল্লাহ তাআলা তার হিসাব নিবেন। অত:পর যে ব্যক্তি তাওহীদ পন্থী হবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুগত হবে তার হিসাব সহজ হবে। আর যে ব্যক্তি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ও অবাধ্য হবে তার হিসাব হবে কঠিন।

وتوزن الأعمال في ميزان عظيم، فتوضع الحسنات في كفة، والسيئات في الكفة الأخرى، فمن رجحت حسناته بسيئاته فهو من أهل الجنة، ومن رجحت سيئاته بحسناته فهو من أهل النار .

বড় একটি মিযানের মাধ্যমে আমল ওজন করা হবে, এক পাল্লায় নেকী আর অন্য পাল্লায় গুণাহসমূহকে রাখা হবে। যার নেকীর পাল্লা গুনাহের তুলনায় ভারী হবে সে হবে জান্নাতী। এবং যার গুনাহের পাল্লা নকীর তুলনায় ভারী হবে সে হবে জাহান্নামী।

হিসাব এর দলীল, আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

অতপর যাকে তার আমলনামা তার ডান হাতে দেয়া হবে; অত্যন্ত সহজভাবেই তার হিসাব-নিকাশ করা হবে। আর সে তার পরিবার পরিজনের কাছে আনন্দিত হয়ে ফিরে যাবে। আর যাকে তার আমলনামা পিঠের পেছনে দেয়া হবে, অতপর সে ধ্বংস আহবান করতে থাকবে। আর সে জ্বলন্ত আগুনে প্রবেশ করবে। [ সূরা ইনশিকাক: ৭-১২]

মিযান এর দলীল, আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

আর কিয়ামতের দিন আমি ন্যায়বিচারের মানদণ্ড স্থাপন করব। সুতরাং কারো প্রতি কোন অবিচার করা হবে না। কারো কর্ম যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয়, আমি তা হাযির করব। আর হিসাব গ্রহণকারীরূপে আমিই যথেষ্ট। [সূরা আম্বিয়া : ৪৭]

3 - الجنـة والنـار :

৩. জান্নাত ও জাহান্নাম

الجنة هي دار النعيم المقيم، أعدها الله للمؤمنين المتقين، المطيعين للّه ورسوله، فيها جميع أنواع النعيم الدائم من المأكولات والمشروبات والملبوسات وجميع أنواع المحبوبات .

জান্নাত হলো চিরস্থায়ী সুখের স্থান, যা আল্লাহ তাআলা মুমিন মুত্তাকী, এবং আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনুগত্যকারীদের জন্য তৈরী করেছেন। তাতে রয়েছে পানীয়, খাদ্য, পরিধেয় বস্ত্র থেকে শুরু করে সর্ব প্রকারের নিয়ামত । রয়েছে সর্ব প্রকার প্রিয়বস্তু।

وأما النار فهي دار العذاب المقيم، أعدها الله للكافرين الذين كفروا بالله وعَصَوا رُسله، فيها من أنواع العذاب والآلام والنكال ما لا يخطر على البال .

আর জাহান্নাম হলো চিরস্থায়ী আজাবের আবাস। তা আল্লাহ তাআলা কাফিরদের জন্য তৈরী করেছেন। যারা আল্লাহর সাথে কুফুরী করেছে এবং তার রাসূলদের অবাধ্য হয়েছে। তাতে রয়েছে অকল্পনীয় সকল প্রকার শাস্তি ও যন্ত্রণা।

জান্নাত এর দলিল: মহান আল্লাহ বলেন,

(আরবি)

আর তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও তোমাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও জান্নাতের দিকে, যার পরিধি আসমানসমূহ ও যমীনের সমান, যা মুত্তাকীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। [ সূরা আলে ইমরান : ১৩৩]

(আরবি)

অত:পর কোন ব্যক্তি জানে না তাদের জন্য চোখ জুড়ানো কী জিনিস লুকিয়ে রাখা হয়েছে, তারা যা করত, তার বিনিময়স্বরূপ। [ সূরা সাজদাহ : ১৭]

وأما الدليل على النار

জাহান্নাম এর দলিল: আল্লাহ তাআলা বলেন,

(আরবি)

অতএব যদি তোমরা তা না কর- আর কখনো তোমরা তা করবে না- তাহলে আগুনকে ভয় কর যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর, যা প্রস্তুত করা হয়েছে কাফিরদের জন্য।

[ সূরা বাকারা : ২৪]

(আরবি)

নিশ্চয় আমার নিকট রয়েছে শিকলসমূহ ও প্রজ্জ্বলিত আগুন ও কাঁটাযুক্ত খাদ্য এবং যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। [ সূরা মুযযাম্মিল : ১২-১৩]

اللهم إنا نسألك الجنة وما قرّب إليها من قول وعمل، ونعوذ بك من النار وما قرّب إليها من قول وعمل .

হে আল্লাহ আমরা আপনার নিকট জান্নাত প্রার্থনা করছি এবং যে কথা ও কাজ জান্নাতের কাছে নিয়ে যায় তাও প্রার্থনা করছি। তোমার কাছে জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাই এবং যে কথা ও কাজ জাহান্নামের নিকটবর্তী করে দিবে তা থেকেও আশ্রয় চাই।

২৪
ইসলামী আক্বীদা
مقدمة عن العقيدة الإسلامية وأهميتها

ইসলামী আক্বীদার অবতরণীকা ও গুরুত্ব

إن الدين الإسلامي عقيدةٌ وشريعة، فأما العقائد فيراد بها : الأمور التي تصدق بها النفوس، وتطمئن إليها القلوب وتكون يقينا عند أصحابها لا شك فيها ولا ريب .

ইসলাম ধর্ম হলো: ধর্ম বিশ্বাস ও শরীয়তের সমষ্টি।

ইসলামী আক্বীদা বলতে বুঝায় এমন কতিপয় বস্তুকে অন্তর যার সত্যায়ন করে এবং হৃদয় যার প্রতি আস্থাশীল থাকে এবং আমলকারীর কাছে সন্দেহ সংশয়হীন হয় ।

والشريعة : تعني التكاليف العملية التي دعا إليها الإسلام كالصلاة والزكاة والصيام وبر الوالدين وغيرها .

শরীয়ত: ইসলাম কর্তৃক প্রদত্ত আমল যেমন নামায, যাকাত, রোজা ও মাতা পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করা ইত্যাদি।

وأسس العقيدة الإسلامية هي : الإيمان بالله، وملائكته، وكتبه، ورسله، واليوم الآخر، والإيمان بالقدر خيره وشره .

ইসলামী আক্বীদার মূল ভিত্তিসমূহ হলো: আল্লাহ তাআলা, তাঁর ফেরেস্তাসমূহ তাঁর নাযিলকৃত কিতাবসমূহ, তাঁর প্রেরিত রাসূলগণ, পরকাল ও তাকদীরের ভালমন্দের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা।

দলীল:

মহান আল্লাহ বলেন,

(আরবি)

ভালো কাজ এটা নয় যে, তোমরা তোমাদের চেহারা পূর্ব ও পশ্চিম দিকে ফিরাবে; বরং ভালো কাজ হল যে ঈমান আনে আল্লাহ, শেষ দিবস, ফেরেস্তাগণ, কিতাব ও নবীগণের প্রতি এবং যে সম্পদ প্রদান করে তার প্রতি আসক্তি সত্ত্বেও নিকটাত্মীয়গণকে, ইয়াতীম, অসহায়, মুসাফির ও প্রার্থনাকারীকে এবং বন্দিমুক্তিতে এবং যে সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং যারা ধৈর্যধারণ করে কষ্ট ও দুর্দশায় ও যুদ্ধের সময়ে। তারাই সত্যবাদী এবং তারাই মুত্তাকী। [ সূরা বাকারা : ১৭৭]

তাকদীর সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,

(আরবি)

নিশ্চয় আমি সব কিছু সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাণ অনুযায়ী। আর আমার আদেশ তো কেবল একটি কথা, চোখের পলকের মত। ( সূরা কামার : ৪৯-৫০)

وقوله صلى الله عليه وسلم { الإيمان أن تؤمن بالله وملائكته ورسله واليوم الآخر وتؤمن بالقدر خيره وشره } ( [() البخاري تفسير القرآن (4499) ، مسلم الإيمان (10) ، النسائي الإيمان وشرائعه (4991) ، ابن ماجه المقدمة (64) ، أحمد (2/426).]).

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ঈমান হলো: আল্লাহ তাআলা, ফেরেস্তাসমূহ, রাসূলগণ, পরকাল ও তাকদীরের ভালমন্দের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা।

২৫
أهمية العقيدة الإسلامية ইসলামী আক্বীদার গুরুত্ব
تظهر أهمية العقيدة الإسلامية من خلال أمور كثيرة منها ما يلي :

বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ইসলামী আক্বীদার গুরুত্ব ও আবশ্যকতা প্রকাশ পায়, এখানে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো

1 - أن حاجتنا إلى هذه العقيدة فوق كل حاجة، وضرورتنا إليها فوق كل ضرورة؛ لأنه لا سعادة للقلوب، ولا نعيم، ولا سرور إلا بأن تعبد ربها وفاطرها تعالى .

ইসলামী আকীদার প্রয়োজন আমাদের সকল প্রয়োজনের চেয়ে বেশি। এর জরুরত সকল জরুরতের উর্দ্ধে। কারণ অন্তরের প্রশান্তি, মানসিক সুখ , চিত্তের আনন্দ কেবল মাত্র তার সৃষ্টি কর্তা ও রবের আনুগত্যের মাধ্যমেই সাধিত হয়।

2 - أن العقيدة الإسلامية هي أعظم الواجبات وآكدها؛ لذا فهي أول ما يطالب به الناس، كما قال { أُمِرت أن أقاتل الناس حتى يشهدوا أن لا إله إلا الله وأن محمدا رسول الله } ( [() البخاري الإيمان (25) ، مسلم الإيمان (22).]).

ইসলামী আক্বীদাহ হলো গুরুত্বপূর্ণ ফরযসমূহের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় ফরয। এটিই মানুষদের কাছ থেকে সর্বপ্রথম চাওয়া হয়েছে। যেমন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

আমাকে আদেশ করা হয়েছে মানুষের বিরুদ্ধে লাড়াই করার জন্য যতক্ষণ না তারা এ সাক্ষ্য প্রদান করে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, এবং নিশ্চয় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল। বুখারী, মুসলিম।



3 - أن العقيدة الإسلامية هي العقيدة الوحيدة التي تحقق الأمن والاستقرار، والسعادة والسرور .

ইসলামী আকীদাই একমাত্র আক্বীদা যার মাধ্যমে শান্তি, নিরাপত্তা, সৌভাগ্য ও সফলতা নিশ্চিত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,

(আরবি)

হ্যাঁ, যে নিজেকে আল্লাহর কাছে সোপর্দ করেছে এবং সে সৎকর্মশীলও, তবে তার জন্য রয়েছে তার রবের নিকট প্রতিদান। আর তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দু:খিতও হবে না। [সূরা বাকারা : ১১২]

كما أن العقيدة الإسلامية وحدها هي التي تحقق العافية والرخاء،

এমনিভাবে ইসলামী আক্বীদাই এককভাবে সুস্থতা এবং সুখের নিশ্চয়তা দেয়। যেমন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

(আরবি)

আর যদি জনপদসমূহের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তাহলে আমি অবশ্যই আসমান ও যমীন থেকে বরকসমূহ তাদের উপর খুলে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, সুতরাং আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি যা তারা কামাই কিরেছে তার কারণে। [ সূরা আরাফ : ৯৬]

(4) أن العقيدة الإسلامية هي السبب في حصول التمكين في الأرض، وقيام دولة الإسلام .

ইসলামী আক্বীদাই হলো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অর্জন এবং ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অন্যতম উপকরণ। আল্লাহ তাআলা বলেন,

(আরবি)

আর উপদেশ দেয়ার পর আমি কিতাবে লিখে দিয়েছি যে, আমার যোগ্যতর বান্দাগণই পৃথিবীর উত্তরাধীকারী হবে। [ সূরা আম্বিয়া : ১০৫]

২৬
معنى الإيمان بالقدر : তাকদীরের প্রতি ঈমানের অর্থ
هو التصديق الجازم بأن كل خير وشر فهو بقضاء الله وقدره، وأنه الفعّال لما يريد، لا يكون شيء إلا بإرادته، ولا يخرج شيء عن مشيئته، وليس في العالم شيء يخرج عن تقديره، ولا يصدر إلا عن تدبيره، ولا مَحيد لأحد عن القدر المقدور، ولا يتجاوز ما خُط في اللوح المسطور، وأنه خالق أفعال العباد والطاعات والمعاصي، ومع ذلك فقد أمر العباد ونهاهم، وجعلهم مختارين لأفعالهم، غير مجبورين عليها، بل هي واقعة بحسب قدرتهم وإرادتهم، والله خالقهم وخالق قدرتهم، يهدي من يشاء برحمته، ويضل من يشاء بحكمته، لا يُسأل عما يفعل وهم يسألون .

এই দৃঢ় বিশ্বাস রাখা যে, সকল ভালো মন্দ আল্লাহর ফায়সালা ও নিরূপণ মত হয়। তিনি যা ইচ্ছে করেন সম্পাদন করেন। সব কিছু তার ইচ্ছাতেই হয়। কোন কিছু তার ইচ্ছার বাইরে যেতে পারে না। পৃথিবীর কোন বস্তুই তার নিয়তির বাইরে যেতে পারে না। তার ব্যবস্থাপনা ছাড়া কোন কিছু সংঘটিতও হতে পারে না। তার নির্ধারিত নিয়তিকে পরিত্যাগ করার ক্ষমতাও কারো নাই। লওহে মাহফুজে যা লিখিত আছে কেউ তা অতিক্রম করতে পারে না। পাপ হোক কিংবা পূণ্য বান্দার যাবতীয় কাজের স্রষ্টা তিনি। এরপরও তিনি তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন এবং নিষেধ করেছেন। তাদেরকে তাদের কাজের ব্যাপারে স্বাধীনতা দিয়েছেন। কোনোটির জন্য বাধ্য করেননি। বরং সেটি সংঘটিত হবে তাদের ক্ষমতা ও ইচ্ছা মাফিক। আর আল্লাহ তাদের ও তাদের কর্মের সৃষ্টিকর্তা। নিজ করুণায় যাকে ইচ্ছা হেদায়াত দান করেন। আর নিজ হিকমতে যাকে ইচ্ছা বিপথগামী করেন। তিনি যা কিছু করেন সে সম্বন্ধে তাকে জিজ্ঞেস করা হবে না কিন্তু তারা জিজ্ঞেসিত হবে।

والإيمان بقدر الله تعالى أحد أركان الإيمان، كما في جواب الرسول صلى الله عليه وسلم حين سأله جبريل عليه السلام عن الإيمان قال : { أن تؤمن بالله وملائكته وكتبه ورسله واليوم الآخر وتؤمن بالقدر خيره وشره }

তাকদীরের উপর বিশ্বাস ঈমানের রুকনসমূহের মধ্যে একটি। জিবরীল আলাইহিস সালাম যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ঈমান সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন তখন তিনি উত্তরে বলেছিলেন: ঈমান হলো আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা, তার ফেরেশতাসমূহ, কিতাবসমূহ ও রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। আরো বিশ্বাস স্থাপন করা তাকদীরের ভালো মন্দের উপর।

وقال صلى الله عليه وسلم { لو أن الله سبحانه عذّب أهل سماواته وأهل أرضه لعذبهم غير ظالم لهم، ولو رحمهم كانت رحمته لهم خيرا من أعمالهم، ولو كان لك مثل جبل أحد ذهبا أنفقته في سبيل الله تعالى ما قبله منك حتى تؤمن بالقدر وتعلم أن ما أصابك لم يكن ليخطئك وأن ما أخطأك لم يكن ليصيبك وأنك إن مت على غير هذا دخلت النار }

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন:

যদি আল্লাহ তাআলা আকাশবাসী এবং জমীনবাসীকে শাস্তি দান করেন তবে এটা তার পক্ষ থেকে তাদের উপর জুলুম হবে না। আর যদি তাদের প্রতি করুণা করেন তবে সেটি হবে তাদের কর্মের চেয়ে উত্তম। তুমি যদি তাকদীরকে বিশ্বাস না কর, তাহলে উহুদ পর্বত সমান সোনা আল্লাহর রাস্তায় দান করলেও তা তোমার কাছ থেকে কবুল করা হবে না। আর জেনে রাখ যে বিপদ তোমার উপর পতিত হয়েছে তা তোমাকে ভুল করে আসেনি। এবং যে বিপদ তোমার উপর পতিত হয়নি প্রকৃতপক্ষে তা তোমার উপর আসার ছিল না। যদি এর ব্যতিক্রম বিশ্বাস নিয়ে মারা যাও তা হলে তুমি জাহান্নামে যাবে।

( [() أبو داود السنة (4699) ، ابن ماجه المقدمة (77) ، أحمد (5/185).]). والقدر - بفتح الدال -: هو تقدير الله تعالى للكائنات حسبما سبق به علمه، واقتضته حكمته .

কাদার دال -এর উপর যবর দিয়ে উচ্চারণ করতে হবে। কাদার হলো: সৃষ্টিজগতের জন্য মহান আল্লাহর নির্ধারণ। যে সম্বন্ধে তাঁর জ্ঞান পূর্ব হতেই অবহিত ছিল এবং তাঁর প্রজ্ঞা সিদ্ধান্ত দিয়েছিল।

২৭
ب- مراتب الإيمان بالقدر : তাকদীরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের স্তরসমূহ
الإيمان بالقدر يتضمن أربعة أمور :

তাকদীরের উপর ঈমান চারটি বস্তুকে অন্তর্ভূক্ত করে:

الأول : الإيمان بأن الله تعالى

عَلِم بكل بشيء جملةً وتفصيَلَا، وأنه تعالى قد عَلِم جميع خلقه قبل أن يخلقهم وعلم أرزاقهم وآجالهم وأقوالهم وأعمالهم، وجميع حركاتهم وسكناتهم، وأسرارهم وعلانيَّاتهم، ومن هو منهم من أهل الجنة، ومن هو منهم من أهل النار .

১. বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ তাআলা সবকিছু সম্পর্কে মোটামুটি ও বিশদভাবে অবহিত। তিনি তাঁর সকল সৃষ্টিকে সৃষ্টি করার আগে থেকেই জানতেন। জানতেন তাদের রিযিক, জীবন-মৃত্যু, কথা-কাজ, উঠা-বসা, প্রকাশ্য-গোপনীয় সব বিষয়। এবং তাদের মধ্য থেকে কে জান্নাতে যাবে আর কে জাহান্নামে যাবে তাও তিনি পূর্ব থেকেই জানতেন।

মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন,

(আরবি)

তিনিই আল্লাহ , যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, দৃশ্য -অদৃশ্যের জ্ঞাতা; তিনিই পরম করুণাময়, দয়ালু। [ সূরা হাশর : ২২]

(আরবি)

তিনি আল্লাহ, যিনি সাত আসমান এবং অনুরূপ যমীন সৃষ্টি করেছেন; এগুলির মাঝে তার নির্দেশ অবতীর্ণ হয় যেন তোমরা জানতে পার যে, আল্লাহ সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান এবং আল্লাহর জ্ঞানতো সব কিছুকে বেষ্টন করে আছে। [ সূরা তালাক : ১২]

الثاني : الإيمان بكتابة ذلك، وأنه تعالى قد كتب جميع ما سبق به عِلْمُه أنه كائن في اللوح المحفوظ .

২. ভাগ্যসমূহ লিখে রাখার প্রতি ঈমান আনা: তাহলো লাওহে মাহফুজে আল্লাহর জানা মোতাবেক ভাগ্য সমূহ লিখে রাখার প্রতি ঈমান আনা।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

(আরবি)

যমীনে এবং তোমাদের নিজদের মধ্যে এমন কোন মুসীবত আপতিত হয় না, যা আমি সংঘটিত করার পূর্বে কিতাবে লিপিবদ্ধ রাখি না। নিশ্চয় এটা আল্লাহর পক্ষে খুবই সহজ। [ সূরা হাদীদ : ২২]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

{ كتب الله مقادير الخلائق قبل أن يخلق السماوات والأرض بخمسين ألف سنة } ( [() مسلم القدر (2653) ، الترمذي القدر (2156) ، أحمد (2/169).]).

আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিজীবের ভাগ্যসমূহ লিখে রেখেছেন আসমান -জমিন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে।

الأمر الثالث : الإيمان بمشيئة الله النافذة التي لا يردُّها شيء، وقدرته التي لا يعجزها شيء، فجميع الحوادث وقعت بمشيئة الله وقدرته، ما شاء كان، وما لم يشأ لم يكن .

৩. আল্লাহর কার্যকরী ইচ্ছা কোন কিছুই যাকে প্রতিহত করতে পারে না এবং তাঁর ব্যাপক ক্ষমতার প্রতি ঈমান আনা কোন কিছুই যাকে প্রতিরোধ করতে পারে না। সকল ঘটনা তারই ইচ্ছা ও শক্তিতে হয়। তিনি যা ইচ্ছা করেন তা হয় আর যা ইচ্ছা করেন না তা কখনো হয় না।

এই প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন,

(আরবি)

আর আল্লাহ ইচ্ছা না করলে তোমরা ইচ্ছা করবে না; নিশ্চয় আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রাজ্ঞ। [ সূরা ইনসান: ৩০]

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,

(আরবি)

আল্লাহ অবিচল রাখেন ঈমানদারদেরকে সুদৃঢ় বাণী দ্বারা দুনিয়ার জীবনে ও আখিরাতে। আর আল্লাহ যালিমদের পথভ্রষ্ট করেন এবং আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা করেন। [ সূরা ইবরাহীম : ২৭]

الأمر الرابع : الإيمان بأنه سبحانه هو الموجد للأشياء كلها، وأنه الخالق وحده، وكل ما سواه مخلوق له، وأنه على كل شيء قدير .

৪. নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা সব কিছুর একক উদ্ভাবক ও স্রষ্টা। তিনি ছাড়া বাকী সব সৃষ্টি। এবং তিনি সববস্তুর উপর সর্বশক্তিমান।

মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন,

(আরবি)

বল আল্লাহই সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা এবং তিনি এক, একচ্ছত্র ক্ষমতাধর। [ সূরা রা’দ : ১৬]

ويجب أن نعلم أن القدر قُدرة الله سبحانه وتعالى، وأن كل شيء يجري بتقديره، ومشيئته تنفذ، لا مشيئة للعباد إلا ما شاء لهم فما شاء لهم كان، وما لم يشأ لم يكن .

আমাদের জানা উচিত যে, তাকদীর বা ভাগ্য হলো আল্লাহ তাআলার কুদরত বা শক্তির প্রকাশ। সব কিছু তার নিরূপণে চলে এবং তার ইচ্ছাই কর্যকর হয়। তার ইচ্ছার বাইরে বান্দার কোন ইচ্ছা নেই। তিনি যা চান, শুধু তাই হয় এবং যা চান না তা কখনো হয় না।

كما يجب أن نعلم أن أصل القدر هو سر الله تعالى في خلقه، لم يطَّلع على ذلك ملك مقرَّب، ولا نبيٌّ مُرسل .

আমাদের আরো জানা দরকার যে তাকদীরের বিষয়টি মূলত: মাখলুকের মাঝে তার রহস্যের বিষয়। যা কোন নিকটবর্তী ফেরেশতা অথবা প্রেরিত নবীও অবগত নয়।

إن المؤمن يصف ربّه بصفات الكمال، فتراه مؤمنا بأن كل عمل لا يحدث إلا وله حكمة، وإذا غابت عنه الحكمة الإلهية في أمر من الأمور، عرف جهله أمام علم الله - المحيط بكل شيء - وترك الاعتراض على الحكيم الخبير العليم الذي لا يُسأل عما يفعل وهم يسألون .

মুমিন ব্যক্তি তার রবের উপযু্ক্ত প্রশংসা করে থাকে। তাই সে দেখতে পায় সব কিছুর পেছনে তার রবের প্রজ্ঞা নিহিত রয়েছে। যদি কোন ব্যাপারে আল্লাহর হেকমত তার জানা সম্ভব না হয় তখন সে আল্লাহর জ্ঞানের- যার জ্ঞান সব কিছু বেষ্টনকারী- সামনে তার অজ্ঞতা বুঝতে পারে। এবং এ ব্যাপারে সে আল্লাহর কাছে কোন প্রশ্নও তোলে না। যিনি তার কাজের জন্য জিজ্ঞাসিত হবেন না বরং আমার জিজ্ঞাসিত হবো।

جـ- حكم الاحتجاج بالقدر في ترك ما أمر الله به :

তাকদীরকে যু্ক্তি- প্রমাণ হিসেবে পেশ করে আল্লাহ যা করতে বলেছেন তা ত্যাগ করার বিধান

إن الإيمان بالقدر على ما وصفنا لا ينافي أن يكون للعبد مشيئة في أفعاله الاختيارية، وقدرة عليها، لأن الشرع والواقع دالان على إثبات ذلك له .

তাকদীরের প্রতি বিশ্বাস বান্দার কর্ম স্বাধীনতার জন্য বাধা নয়। কারণ শরীয়ত এবং বাস্তবতা উভয় দ্বারা বান্দার শক্তি ও কর্ম স্বাধীনতা প্রমাণীত।

আল্লাহ তাআলা বান্দার ইচ্ছা প্রসঙ্গে বলেন:

(আরবি)

ঐ দিনটি সত্য। অতএব যে চায়, সে তার রবের নিকট আশ্রয় গ্রহণ করুক। [ সূরা নাবা : ৩৯]

আল্লাহ তাআলা অনত্র বলেন,

(আরবি)

আল্লাহ কোন ব্যক্তিকে তার সামর্থ্যের বাইরে দায়িত্ব দেন না। সে যা অর্জন করে তা তার জন্যই এবং সে যা কামাই করে তা তার উপরই বর্তাবে। [ সূর বাকারা : ২৮৬]

আল্লাহ তাআলা বান্দার কর্ম শক্তি সম্পর্কে বলেন:

وأما الواقع فإن كل إنسان يعلم أن له مشيئة وقدرة بهما يفعل، و بهما يترك، ويفرِّق بين ما يقع بإرادته كالمشي وما يقع بغير إرادته كالارتعاش، لكن مشيئة العبد وقدرته واقعتان بمشيئة الله تعالى وقدرته،

বাস্তবতার আলোকে দেখা যায় যে, প্রত্যেক মানুষের রয়েছে ইচ্ছা ও কর্ম শক্তি এ দুইয়ের মাধ্যমেই সে কোন কিছু করে অথবা ছেড়ে দেয় এবং পার্থক্য করতে পারে কোনটি তার ইচ্ছা হয় যেমন : হাটা চলা করা আর কোনটি তার ইচ্ছায় হচ্ছে না যেমন শরীরের কোন অঙ্গতে কাঁপানি হওয়া। তবে কথা থাকে যে বান্দার ইচ্ছা ও কর্মক্ষমতাও আল্লাহর ইচ্ছা ও ক্ষমতায় সংঘটিত হয়।

মহান আল্লাহ বলেন,

(আরবি)

আর আল্লাহ ইচ্ছা না করলে তোমরা ইচ্ছা করবে না; নিশ্চয় আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রাজ্ঞ। [সূরা ইনসান : ৩০]

ولأن الكون كله مُلك لله تعالى فلا يكون في ملكه شيء بدون علمه ومشيئته .

আরেকটি কারণ হলো সৃষ্টিজগৎ পুরোটি হলো আল্লাহর রাজত্ব, তাই তার জ্ঞাত এবং ইচ্ছা ছাড়া কোন কিছুই তার রাজত্বে হবে না এটাই নিয়ম।

والإيمان بالقدر على ما سبق تقريره لا يمنح العبد حُجّةً على ترك ما أمر الله به أو فِعل ما نهى الله عنه، فمن احتج بالقدر على فعل المعاصي فهذا احتجاج باطل من وجوه :

তাকদীরের প্রতি ঈমান রাখার কারণে মানুষ আল্লাহর আদেশ পালন না করা অথবা আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজ করার কোন অজুহাত দাড় করাতে পারবে না। যদি কেউ তাকদীরের প্রতি ঈমানের অজুহাত দিয়ে গুনাহের কাজ করে তা কয়েকটি কারণে বাতিল বলে গণ্য হবে।

الأول : قال النبي صلى الله عليه وسلم { ما منكم من أحد إلا قد كتب مقعده من النار أو من الجنة . فقال رجل من القوم : ألا نتكل يا رسول الله؟ قال : لا، اعملوا فكل ميسر لما خلق له } ( [() البخاري القدر (6231) ، مسلم القدر (2647) ، الترمذي القدر (2136) ، أبو داود السنة (4694) ، ابن ماجه المقدمة (78) ، أحمد (1/140).]) . فأمر النبي صلى الله عليه وسلم بالعمل ونهى عن الاتكال على القدر .

১. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: তোমাদের সকলেরই অবস্থান জাহান্নামে অথবা জান্নাতে কোথায় হবে তা নির্ধারিত হয়ে গেছে। উপস্থিত লোকদের একজন প্রশ্ন করল হে আল্লাহর রাসূল তাহলে আমরা কি এর উপর ভরসা করে থাকব? তিনি বললেন না। তোমরা কাজ করে যাও যাকে যার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তা তার জন্য সহজসাধ্য করা হয়েছে।

এ হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাজ করার আদেশ করেছেন। এবং শুধু তাকদীরের উপর নির্ভর করে থাকতে নিষেধ করেছেন।

الثاني : أن الله تعالى أمر العبد ونهاه، ولم يكلفه إلا ما يستطيع،

২. আল্লাহ তাআলা বান্দাকে আদেশ ও নিষেধ করেছেন। তার সাধ্যের বাইরে কোন কিছু তার উপর চাপিয়ে দেননি।

মহান আল্লাহ বলেন,

(আরবি)

আর আল্লাহ ইচ্ছা না করলে তোমরা ইচ্ছা করবে না; নিশ্চয় আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রাজ্ঞ। [ সূরা ইনসান : ৩০]

মহান আল্লাহ আরও বলেন,

(আরবি)

অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর, শ্রবণ কর, আনুগত্য কর এবং তোমাদের নিজেদের কল্যাণে ব্যয় কর। [ সূরা তাগাবুন : ১৬]

ولو كان العبد مجبورا على الفعل، لكان مكلفا بما لا يستطيع الخلاص منه، وهذا باطل، ولذلك إذا وقعت منه المعصية بجهل أو نسيان أو إكراه فلا إثم عليه، لأنه معذور .

বান্দাকে যদি কোন কাজে বাধ্য করা হতো তখন বলা যেত যে তার উপর সাধ্যের অতিরিক্ত চাপিয়ে দেয়া হয়েছে যা থেকে তার বাচার কোন পথ নেই। সাধ্যের বাইরে কোন কিছু চাপিয়ে দেয়া শরীয়তে অনুমোদন দেয় না। তাই দেখা যায় বান্দা অজ্ঞতা বশত অথবা ভুলে অথবা জবরদস্তী মূলক কোন গুনাহে লিপ্ত হলে তার জন্য তার কোন গুনাহ হয় না। কারণ সে মাজুর বা অপারগ।

الثالث : أن قَدَرَ الله تعالى سرٌ مكتوم لا يُعْلَم إلا بعد وقوع المقدور، وإرادة العبد لما يفعله سابقةٌ على فعله، فتكون إرادته الفعل غيرُ مبنيةٍ على علم منه بقَدَر الله، وحينئذ تنتفي حُجته بالقدر؛ إذ لا حجة للمرء فيما لا يعلمه .

৩. তাকদীর বা ভাগ্য হলো গোপন রহস্য। নিয়তি-নির্ধারিত বস্তুটি সংঘটিত হওয়ার আগে তা জানা যায় না। বান্দা কাজের ইচ্ছা কাজ করার আগে করে থাকে। তা হলে বুঝা গেল তার কাজের ইচ্ছা করা নিয়তিকে জানার উপর নির্ভরশীল নয়। এতে করে তাকদীরকে অজুহাত হিসেবে পেশ করা খন্ডন হয়ে যায়। কারণ কোন মানুষের অজানা বিষয় তার জন্য দলিল হতে পারে না।

فإذا اعترض العاصي وقال : إن المعصية كانت مكتوبة عليّ، فيقال له : قبل أن تقترف المعصية، ما يدري عن علم الله تعالى؛ فما دمتَ لا تعلم ومعك الاختيار والقدرة، وقد وُضِّحت لك طُرُق الخير والشر، فحينئذ إذا عصيت فأنت المختار للمعصية، المفضل لها على الطاعة، فتتحمل عقوبة معصيتك .

পাপীব্যক্তি যদি প্রশ্ন করে যে, পাপ করা তো আমার ভাগ্যলিপিতে লিখা আছে, তাকে বলা হবে অপরাধ করার আগে তুমি তো জানতে না যে আল্লাহ তোমার ভাগ্যে কি রেখেছেন। যেহেতু তুমি জান না এবং তোমার রয়েছে বাছাই করার স্বাধীনতা ও শক্তি। এবং তোমার জন্য স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে ভালো ও খারাপ উভয় পথ। এর পরও যদি তুমি গুনাহ কর তবে গুনাহ করাটা তোমার পছন্দের কারণে হয়েছে যাকে তুমি প্রাধান্য দিয়েছ নেককাজের উপর। অতএব তোমাকে পাপের শাস্তি ভোগ করতে হবে।

الرابع : أن المحتج بالقدر على ما تركه من الواجبات أو فعله من المعاصي لو اعتدى عليه شخص، فأخذ ماله، أو انتهك حرمته، ثم احتج بالقدر، وقال : لا تلمني فإن اعتدائي كان بقدر الله، لم يَقبل حجته، فكيف لا يقبل الاحتجاج بالقدر في اعتداء غيره عليه، ويحتج به لنفسه في اعتدائه على حق الله تعالى؟ !

৪. যে ব্যক্তি ফরজ ত্যাগ করল অথবা কোন গুনাহ করল এবং যুক্তি হিসেবে বলল যে এটা আমার তাকদীরে ছিল। তাকে বলা হবে যদি তার প্রতি কেউ অন্যায় করে তার সম্পদ লুট করল অথবা তার সম্মানের হানী করল অত:পর লোকটি বলল: আমাকে সীমালঙ্ঘনের জন্য দোষারোপ করো না এটা তোমার ভাগ্যে ছিল। অত্যাচারীর এ যুক্তি সে গ্রহণ করবে না। তার প্রতি সীমালঙ্ঘনের জন্য ভাগ্যকে যুক্তি হিসেবে গ্রহণ করা হবে না অথচ সে আল্লাহর হকের সীমালঙ্ঘন করল আর ভাগ্যকে যুক্তি হিসেবে পেশ করল এটা কেমন কথা?।

২৮
د- آثار الإيمان بالقدر : তাকদীরে বিশ্বাসের ফলাফল
إن الإيمان بالقدر مع أنه عقيدة يجب الإيمان بها، وركن من أركان الإيمان يَكفُر مُنكره، إلاَّ أن له آَثارا محسوسة في حياة الناس،

তাকদীরের প্রতি বিশ্বাস, ধর্ম বিশ্বাসের অংশ এর প্রতি ঈমান আনা ফরয। এটি ঈমানের রুকনসমূহের একটি রুকন। এর অস্বীকারকারী কাফের। তবে ভাগ্যের প্রতি ঈমান আনলে মানব জীবনে কতিপয় ফলাফল লক্ষ্য করা যায়।

সে ফলাফলগুলো নিম্নরূপ:

(ক) নিশ্চয় ভাগ্যের প্রতি ঈমান বিভিন্ন প্রকার নেক আমল ও ভাল গুণ অর্জন করার সুযোগ করে দেয়। যেমন ইখলাসের জন্ম দেয়। আল্লাহর উপর ভরসা করা, তাকে ভয় করা, তার কাছে কিছু পাওয়ার আশা করা, ধৈর্য্য ধারণ করা, নৈরাশ্য দূর করা, আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকা, তার অনুগ্রহে খুশী হওয়া, উদাসিনতা ও অহংকার দূর করা শিক্ষা দেয়। বীরত্ব সৃষ্টি করে, ভাল কাজ করার দিকে অগ্রসর করে, আত্মসম্মানী করে, কর্ম দক্ষতা সৃষ্টি করে, হিংসা থেকে নিরাপদে রাখে।

(খ) ভাগ্যের প্রতি বিশ্বাসী ব্যক্তি তার জীবন সঠিক ও সরল পথে পরিচালিত হয়। অধিক নিয়ামত তাকে পথভ্রষ্ট করতে পারে না। বিপদে বিচলিত হয় না। ধৈর্য্য ধারণ করে ও নেকীর আশা রাখে।

(গ) জীবনের কষ্টদায়ক সমাপনী হতে হিফাজত করে। সঠিক পথে স্থির থাকার প্রচেষ্টা, নাফরমানী ও ধ্বংসাত্মক কাজ হতে বিরত থাকার সুযোগ করে দেয়।

(ঘ) মুমিন ব্যক্তি এর মাধ্যমে সুদৃঢ় অন্তর ও মজবুত ঈমান হাসিল করে থাকে এতে করে জীবনের কঠিন সময়গুলো সে সহজে পার করতে পারে আসবাব গ্রহণ করার মাধ্যমে।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

(( عجبا لأمر المؤمن إن أمره كله له خير وليس ذلك إلا للمؤمن، إن أصابته سراء شكر فكان خيرا له، وإن أصابته ضراء صبر فكان خيرا له ))[ رواه مسلم ].

মুমিনের বিষয়টি অতিশয় বিস্ময়কর, তার সকল কাজই কল্যাণকর, আর এটা শুধু মুমিনদের জন্যই। যদি তাকে কোন আনন্দ স্পর্শ করে সে শুকরিয়া আদায় করে, ফলে তা তার জন্য কল্যাণকর হয়। আর যদি তাকে কোন বিপদ স্পর্শ করে সে ধৈর্য্য ধারণ করে, ফলে ত তার জন্য কল্যাণকর হয়।

এ ছিল তাওহীদ ও ইসলামী আকীদা সম্বন্ধে আমাদের কিছু সংক্ষিপ্ত কথা। আল্লাহ আমাদের সকলকে বিশেষ করে আমাদের কোমলমতি সন্তানদেরকে এগুলোর সংস্পর্শে আসার তাওফীক দান করুন।

শত কোটি দরূদ ও সালাম আমাদের প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি তার পরিবারবর্গ ও সাহাবা আজমাঈনের প্রতি বর্ষিত হোক। আমিন।

সমাপ্ত

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন