HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
শিয়া আকিদার অসারতা
লেখকঃ শাইখ মুহাম্মদ আবদুস সাত্তার আত-তুনসাবী
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য; আমরা তাঁর প্রশংসা করি, তাঁর নিকট সাহায্য ও ক্ষমা প্রার্থনা করি; তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করি; তাঁর উপর ভরসা করি; আর আমাদের নফসের জন্য ক্ষতিকর এমন সকল খারাপি এবং আমাদের সকল প্রকার মন্দ আমল থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। সুতরাং আল্লাহ যাকে পথ প্রদর্শন করেন, তাকে পথভ্রষ্ট করার কেউ নেই; আর যাকে তিনি পথহারা করেন, তাকে পথ প্রদর্শনকারীও কেউ নেই। আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমাদের নেতা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল, যাকে তিনি সত্যসহকারে কিয়ামতকে সামনে রেখে সুসংবাদ দাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারীরূপে পাঠিয়েছেন। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে, সে সঠিক পথ পাবে; আর যে ব্যক্তি তাঁদের অবাধ্য হবে, সে তার নিজেরই ক্ষতি করবে এবং সে আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
অতঃপর...
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাঁর পবিত্র কিতাবে বলেন:
﴿ لُعِنَ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ مِنۢ بَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ عَلَىٰ لِسَانِ دَاوُۥدَ وَعِيسَى ٱبۡنِ مَرۡيَمَۚ ذَٰلِكَ بِمَا عَصَواْ وَّكَانُواْ يَعۡتَدُونَ ٧٨ كَانُواْ لَا يَتَنَاهَوۡنَ عَن مُّنكَرٖ فَعَلُوهُۚ لَبِئۡسَ مَا كَانُواْ يَفۡعَلُونَ ٧٩ ﴾ [ سورة المائدة : 78-79]
“বনী ইরাঈলের মধ্যে যারা কুফরী করেছিল, তারা দাঊদ ও ঈসা ইবন মারইয়াম কর্তৃক অভিশপ্ত হয়েছিল—এটা এই জন্য যে, তারা ছিল অবাধ্য ও সীমালংঘনকারী। তারা যেসব গর্হিত কাজ করত, তা থেকে তারা একে অন্যকে বারণ করত না। তারা যা করত, তা কতই না নিকৃষ্ট।” — (সূরা আল-মায়িদা: ৭৮-৭৯)
সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ وَذَلِكَ أَضْعَفُ الإِيمَانِ» ( رواه مسلم في صحيحه ).
“তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোন অশ্লীল কাজ দেখে, সে যেন তা হাত দ্বারা প্রতিরোধ করে; আর যদি তাতে সে অক্ষম হয়, তবে সে যেন তার মুখ দ্বারা তার প্রতিবাদ করে; আর সে যদি তাতেও অক্ষম হয়, তবে সে যেন তার অন্তর দ্বারা তা প্রতিরোধের পরিকল্পনা করে; আর তা হচ্ছে ঈমানের দুর্বলতা”। — (মুসলিম, ঈমান, বাব নং- ২২, হাদিস নং- ১৮৬)
আর দীনের ক্ষেত্রে ঈমানের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী অন্যতম মন্দ কাজ হল রাফেযী শিয়াদের ফিতনা, যার দিকে তার অনুসারীগণ প্রতিটি জায়গায় দাওয়াতী তৎপরতা চালাচ্ছে। আর তারা জনগণের কাছে প্রকাশ করে যে, শিয়া মাযহাব ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের প্রসিদ্ধ চার মাযহাবের মধ্যে বড় ধরনের কোন পার্থক্য নেই। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ও শিয়াদের মধ্যকার বিরোধ হল বিভিন্ন বিষয়ের শাখা-প্রশাখায় অতি সামান্য সাদাসিধে বিরোধ।
প্রকৃতপক্ষে বিষয়টি এই রকম নয়; বরং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ও শিয়াদের মধ্যকার বিরোধটি মৌলিক এবং প্রধান আকিদাসমূহের মধ্যে। আর তা এত জঘন্য যে, তার অনুসারী ব্যক্তি মুসলিম মিল্লাত থেকে খারিজ হয়ে যায়।
তাছাড়া আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের সাধারণ অনুসারীদের এই মারাত্মক বিরোধ সম্পর্কে কোন জ্ঞান নেই; এমনকি সাধারণ শিয়াদের অধিকাংশই জানে না শিয়াদের ভ্রান্ত আকিদা সম্পর্কে। কারণ, শিয়া আলেমগণ যেসব মৌলিক গ্রন্থের উপর তাদের মাযহাব নির্ভরশীল, সেগুলো সাধারণ জনসমক্ষে প্রকাশ করে না।
এই জন্য আমরা পাকিস্তান আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত সংগঠনের সভাপতি সম্মানিত শাইখ মুহাম্মদ আবদুস সাত্তার আততুনসাবীকে অনুরোধ করেছি যাতে তিনি আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ বিরোধী গুরুত্বপূর্ণ শিয়া আকিদাসমূহ একটি সংক্ষিপ্ত পুস্তকে সংকলন করেন; যা হবে জনগণের জন্য জাফরীয়া শিয়াদের মতবাদের উপর একটি প্রামাণ্য দলিল এবং তাদের জন্য তার (জাফরীয়া শিয়াদের মতবাদের) ভ্রান্ত ও অসার দিকগুলো সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে।
আর তিনিও তাতে সাড়া দিয়েছেন (আল্লাহ তাঁকে এই জন্য উত্তম পুরস্কার দান করুন) এবং এই মূল্যবান সংক্ষিপ্ত পুস্তিকাটি রচনা করছেন।
আর সম্মানিত শাইখ মুহাম্মদ আবদুস সাত্তার আততুনসাবী দেওবন্দ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষাসনদ লাভ করেন। তাঁর ওস্তাদদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আল্লামা শাইখুল ইসলাম হোসাইন আহমদ মাদানী, যিনি শিয়া আকিদার গুরুত্ব অনুভব করার পর তাঁকে লাখনু যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন, যাতে তিনি এই বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের ইমাম শাইখ আবদুস শুকুর লাখনুবী’র নিকট থেকে ফায়দা হাসিল করতে পারেন। অতঃপর তিনি ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে লাখনু গমন করেন এবং শিয়াদের যুক্তি খণ্ডনের উপর বিশেষ অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য শাইখ লাখনুবী’র নিকট কয়েক মাস অবস্থান করেন; তিনি তাঁর নিকট এই বিষয়ে প্রচুর অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। অতঃপর তিনি ভারত ও পাকিস্তান নামে দেশ বিভক্তির পর নাজাফ, কারবালা ও তেহরানে গমন করেন এবং শিয়াদের কেন্দ্রসমূহ যিয়ারত করেন এবং তাদের গ্রন্থসমূহ ও তথ্যপঞ্জি’র উপর দক্ষতা অর্জন করেন, যা তিনি লাখনুতে অর্জন করতে পারেন নি। অতঃপর তিনি তাঁর দেশ পাকিস্তানে ফিরে যান এবং ঐ দিন থেকেই তিনি “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত সংগঠন”-এর মঞ্চে বসে এই ময়দানে সংগ্রাম করতে থাকেন। আর তাঁর হাতে হাজার হাজার শিয়া তাওবা করে; আর তাদের বড় বড় আলেমগণ তাঁর সাথে বিতর্ক করে এবং আল্লাহ ইচ্ছায় তিনি তাদেরকে পরাজিত করেন; এমনকি শেষ পর্যন্ত শিয়াগণ তাঁকে ভয় পেতে লাগল এবং তারা তাঁর সাথে বিতর্কে আর অগ্রসর হতে চাইত না।
আর এই পুস্তিকাটি আকারে ছোট, বিষয়বস্তুর ক্ষেত্রে মূল্যবান। আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র নিকট প্রত্যাশা করি, তিনি যেন তা ভালভাবে গ্রহণ করেন এবং তাকে তাঁর বান্দাদের জন্য হেদায়াতের মাধ্যম বা উপায় বানিয়ে দেন।
وصلى الله على سيدنا محمد و آله و صحبه وسلّم تسليمًا
بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لله رب العالمين . و الصلاة و السلام على خاتم الأنبياء وسيد المرسلين وعلى آله الطيبين وأصحابه البررة المتقين وأزواجه أمهات المؤمنين والتابعين لهم بإحسان أجمعين .
(সমস্ত প্রশংসা সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহর জন্য; আর সালাত (দুরূদ) ও সালাম সর্বশেষ নবী ও রসূলদের নেতা (মুহাম্মদ) সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি এবং এবং শান্তি বর্ষিত হউক তাঁর পবিত্র পরিবার-পরিজন, পুণ্যবান তাকওয়ার অধিকারী সাহাবীবৃন্দ ও তাঁর স্ত্রী মুমিন জননীগণের প্রতি এবং অতি উত্তমভাবে তাঁদের সকল অনুসারীদের প্রতি) ।
অতঃপর:
এটা সংক্ষিপ্ত নিবেদন, যার দ্বারা আমি আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি কামনা করছি এবং (এটা) আমার মুসলিম ভাইদের জন্য উপদেশ, যাতে তা হতে পারে সত্যের সন্ধানী’র জন্য হেদায়াতের মশাল এবং সরল সঠিক পথের অনুসন্ধানকারীদের জন্য সুপথের দিশা দানকারী আলোকস্তম্ভ। হে আল্লাহ! আমাদেরকে সত্যকে সত্যরূপে দেখাও এবং আমাদেরকে তার অনুসরণ করার তাওফিক দান কর; আর বাতিলকে বাতিলরূপেই আমাদেরকে দেখাও এবং তার থেকে দূরে থাকার তাওফিক আমাদেরকে দাও।
আর আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿فَإِنَّهَا لَا تَعۡمَى ٱلۡأَبۡصَٰرُ وَلَٰكِن تَعۡمَى ٱلۡقُلُوبُ ٱلَّتِي فِي ٱلصُّدُورِ ٤٦﴾ [ سورة الحج : 46]
“বস্তুত চোখ তো অন্ধ নয়, বরং অন্ধ হচ্ছে বক্ষস্থিত হৃদয়।” — (সূরা আল-হাজ্জ: ৪৬)
তিনি আরও বলেন:
﴿وَأَنَّ هَٰذَا صِرَٰطِي مُسۡتَقِيمٗا فَٱتَّبِعُوهُۖ وَلَا تَتَّبِعُواْ ٱلسُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمۡ عَن سَبِيلِهِ﴾ [ سورة الأنعام : 153]
“আর এই পথই আমার সরল পথ সুতরাং তোমরা এর অনুসরণ করবে এবং বিভিন্ন পথ অনুসরণ করবে না, করলে তা তোমাদেরকে তার পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করবে”। — (সূরা আল-আন‘আম: ১৫৩)
তিনি আরও বলেন:
﴿أَرَءَيۡتَ مَنِ ٱتَّخَذَ إِلَٰهَهُۥ هَوَىٰهُ﴾ [ سورة الفرقان : 43]
“তুমি কি তাকে দেখ না, যে তার কামনা-বাসনাকে ইলাহরূপে গ্রহণ করে”? — (সূরা আল-ফুরকান: ৪৩)
তিনি আরও বলেন:
﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ فَرَّقُواْ دِينَهُمۡ وَكَانُواْ شِيَعٗا لَّسۡتَ مِنۡهُمۡ فِي شَيۡءٍ﴾ [ الأنعام : 159]
“যারা দীন সম্পর্কে নানা মতের সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে, তাদের কোন দায়িত্ব তোমার নয়”। — (সূরা আল-আন‘আম: ১৫৯)
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«تركت فيكم أمرين لن تضلوا ما تمسكتم بهما كتاب الله وسنة نبيه » ( أخرجه الإمام مالك في الموطأ ).
“আমি তোমাদের মাঝে দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি; যা তোমরা আঁকড়ে ধরে রাখতে পারলে কখনও পথভ্রষ্ট হবে না; সেই বস্তু দু’টি হল: আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নাহ।” — (ইমাম মালেক, মুয়াত্তা, মানাকিব অধ্যায়, হাদিস নং- ৩৭৮৬)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
«وتفترق أمتي على ثلاث وسبعين ملة كلهم في النار إلا ملة واحدة قالوا ومن هي يا رسول الله قال : ما أنا عليه وأصحابي » ( أخرجه الترمذي ).
“আর আমার উম্মত তিহাত্তর দলে বিভক্ত হবে; একটি দল ছাড়া বাকি সব ক’টি দলই জাহান্নামের অধিবাসী হবে। সাহবীগণ বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! সেই দল করা? তিনি বললে: সেই দল হল যার উপর আমি এবং আমার সাহাবীগণ রয়েছে।” — (তিরমিযী, ঈমান, বাব নং- ১৯, হাদিস নং- ২৬৪১)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
«إذا رأيتم الذين يسبون أصحابي فقولوا لعنة الله على شركم» ( أخرجه الترمذي ).
“তোমরা যখন তাদেরকে দেখবে, যারা আমার সাহাবীদেরকে গালি দেয়, তখন তোমরা বলবে: তোমাদের নিকৃষ্টদের উপর আল্লাহর লানত (অভিশাপ)”। — (তিরমিযী, মানাকিব, হাদিস নং- ৩৮৬৬)
ইবনু ‘আসাকির বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« إذا ظهرت البدعُ ولَعَنَ آخرُ هذه الأمةِ أولَها فمن كان عنده علم فلينشرْه فإنَّ كاتمَ العلمِ يومئذٍ ككاتمِ ما أنزل اللهُ على محمدٍ صلى الله عليه وسلم» ( ابن عساكر عن معاذ ).
“যখন বিদ‘আত প্রকাশ পাবে এবং এই উম্মতের পরবর্তীগণ পূর্ববর্তীদেরকে অভিশাপ দেবে, তখন যার নিকট জ্ঞান আছে, সে যেন তা প্রকাশ করে; কারণ, সেই দিন ইলম তথা জ্ঞান গোপনকারী হবে ঐ ব্যক্তির মত, যে ব্যক্তি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা গোপন করে।” — (ইবনু ‘আসাকির মু‘আয রা. থেকে); আল্লামা সুয়ুতী র. ‘জামে সগীর’-এ অনুরূপ বর্ণনা করেছেন [তবে হাদীসটির সনদ দুর্বল। দেখুন, আলবানী:দয়িফুল জামে‘, হাদীস নং ৫৮৯ [সম্পাদক]]।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
« ذا لَعَنَ آخِرُ هَذِهِ الْأُمَّة أَوَّلِهَا , فَمَنْ كَتَمَ حَدِيثًا فَقَدْ كَتَمَ مَا أَنْزَلَ اللَّه»
“যখন উম্মতের পরবর্তীগণ পূর্ববর্তীদেরকে অভিশাপ দেবে, তখন যে ব্যক্তি হাদিস গোপন করবে, তবে সে যেন আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা গোপন করল।” — (ইবন মাজাহ, ইফতিতাহুল কিতাব ফিল ঈমান..., বাব নং- ২৪, হাদিস নং- ২৬৩ [হাদীসটির সনদ অত্যন্ত দুর্বল। [সম্পাদক]])
এই কথা পরিষ্কার যে, এই যুগে ছড়িয়ে পড়েছে নাস্তিকতা, কুটিলতা, পাপাচার, বিদ‘আত, ইসলাম ও তার নিদর্শনসমূহের সমালোচনা এবং পূর্ববর্তী উম্মত তথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবী ও তাবেয়ীদের নিন্দা; আরও ছড়িয়ে পড়েছে নানারকম ফিতনা বা বিশৃঙ্খলা। বাতিলপন্থীগণ তাদের ভ্রান্ত মতবাদ দ্বারা আল্লাহর বান্দাদেরকে বিপথগামী করতে শুরু করেছে এবং পরিবর্তন করে দিচ্ছে আল্লাহর দীনকে। আর ইসলামের নামে নির্লজ্জ ও মনুষত্বহীনভাবে আল্লাহর কিতাবকে পরিবর্তন করছে এবং সঠিক ইসলামী জীবনবিধানের নামে ছড়িয়ে দিচ্ছে অবিশ্বাস, নাস্তিকতা, অন্যায় ও অবিচার।
আর এই ফিতনাসমূহের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ও নিকৃষ্টতর দিক হল রাফেযী ও শিয়া ফিতনা; এর দ্বারা তারা আহলে বাইত তথা নবী পরিবার ও ইমামদের প্রতি ভালবাসার গান গেয়ে মূর্খ ও নির্বোধ লোকদেরকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আর তার অনুসারীগণ তা প্রচলন ও সম্প্রসারণের জন্য ভয়ানক পদ্ধতি অবলম্বন করেছে এবং তাদের এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য তারা সকল আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে শুরু করেছে এবং তার জন্য তারা সকল প্রকার মূল্যবান ও দামী বস্তু ব্যয় করছে; আর এর জন্য যাবতীয় ষড়যন্ত্র ও কুটবুদ্ধির অবতারণা করছে। হে আল্লাহ! আমরা তোমাকে তাদের ঘাঁড়ে রাখছি এবং তাদের অনিষ্ট থেকে তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
আর মুসলিম দা‘য়ী (আল্লাহর দিকে আহ্বানকারী), বক্তা, সংস্কারক ও সকল আলেমের উপর ওয়াজিব (আবশ্যক) হল এই নিকৃষ্ট ফিতনার আসল চেহারা উম্মোচন করে দেয়া এবং জনগণের নিকট তার বিপথগামীতা ও অসারতা তুলে ধরা, যাতে তারা তাদের ঈমান ও আকিদাকে হেফাযত করতে পারে।
হে ইসলামের অনুসারী আলেমগণ! হে মুসলিমদের প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ! আজকের দিনে অন্যতম আবশ্যক কাজ হল, তোমাদের সর্বশক্তি দিয়ে সত্যকে বিজয় করা, বাতিলকে বিতাড়িত করা এবং এই ফিতনাকে দূর করা। কেননা প্রাথমিকভাবে দায়িত্ব তো তোমাদের উপরই বর্তায়, সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আল্লাহকে আরও ভয় কর তোমাদের নিজেদের ব্যাপারে এবং ঐসব মুসলিমদের ব্যাপারে, বাতিল যাদের মধ্যে তার ফিতনার বিষ ছড়িয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে এবং যাদের মধ্যে বাতিল তার (তথাকথিত!) বিপ্লবের আমদানী ঘটিয়েছে। ফলে ঐসব সহজ সরল লোকদের আকিদাকে হক থেকে বাতিলে রূপান্তরিত করছে।
ওহে! আমি কি পৌঁছাতে পেরেছি.. হে আল্লাহ তুমি সাক্ষী থাক...।
প্রকাশ থাকে যে, শিয়া ফিতনার সূচনা হয়েছে ইসলাম ও মুসলিমের শত্রু আবদুল্লাহ ইবন সাবা ইহুদী ও তার অনুসারী যুরারা, আবূ বসীর, আবদুল্লাহ ইবন ই‘য়াফুর, আবূ মিখনাফ লূত ইবন ইয়াহইয়া প্রমুখ মিথ্যাবাদীদের চেষ্টা-সাধনার দ্বারা; তাদের সার্বিক প্রচেষ্টা হচ্ছে, যাতে তারা এর মাধ্যমে ইসলামের প্রকৃতরূপকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে এবং মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ সারিকে ভেঙ্গে টুকরা টুকরা করতে পারে ।
আর তারা এই শিয়া আকিদাসমূহকে তাদের পক্ষ থেকে মিথ্যা অপবাদের মাধ্যমে সম্পর্কিত করেছে আমাদের নেতা আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও তাঁর পবিত্র পরিবার-পরিজনের প্রতি; অথচ তাঁরা সকলেই এর থেকে মুক্ত। কারণ, আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও তাঁর পরিবার-পরিজন সকলেই ছিলেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের অন্তর্ভুক্ত।
আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এবং জাফর সাদিক পর্যন্ত তাঁর পরিবার-পরিজনের সকলেই মদীনা মুনাওয়ারায় ঈমান, ইসলাম, কিতাব ও সুন্নাহ’র পরিবেশে জীবনযাপন করেছেন। আর তাঁদের ইবাদত ও যাবতীয় আমল-আখলাক ছিল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অন্যান্য সকলের আমল-আখলাকের মত।
যখন জিজ্ঞাসা করা হয় যে, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ও তাঁর বংশধরগণ ছিলেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অন্তর্ভুক্ত; তাঁরা আমল করতেন তাদের (আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের) আমলের মত ... এবং তাঁদের গোটা জীবন ছিল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের জীবনের মত? তখন তারা জবাব দেয় যে, নিশ্চয় তাঁরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অনুসরণ করতেন ‘তাকিয়া’ ( التقية ) [‘তাকিয়া’ ( التقية ) হচ্ছে মানুষের মনের বিপরীত অভিমত প্রকাশ করা। অর্থাৎ ভিতর এক রকম, আর বাহির অন্য রকম। - অনুবাদক।] –এর পথ অনুসরণ করে। তারা রাত ও দিনের মধ্যে এক ঘন্টা বাছাই করে সেই সময়ের মধ্যে তাদের অনুসারীদের সাথে বসত এবং তাদেরকে শিয়া মাযহাবের তালীম (প্রশিক্ষণ) দিত। তাদের এই জওয়াব শুনে একজন বিবেকবান ও ন্যায়পরায়ণ মুসলিম ব্যক্তি হতভম্ব হয়ে যাওয়ার কথা। কারণ, যদি আমরা তাদের কথা মেনে নেই, তবে তার থেকে এটা আবশ্যক হয় যে, ইমামগণ রাতে ও দিনে তেইশ ঘন্টা (তাদের কথা অনুযায়ী) বাতিলের উপর এবং এক ঘন্টা হকের উপর জীবন যাপন করেছে। আর এটা আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর শিয়াদের পক্ষ থেকে ডাহা মিথ্যা অপবাদ ছাড়া আর কিছুই নয়। সুতরাং মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর লানত (অভিশাপ)।
আমরা প্রথমে মোটামুটিভাবে তাদের কতগুলো ভ্রান্ত আকিদা লিপিবদ্ধ করব, অতঃপর তাদের নিকট নির্ভরযোগ্য তাদের গ্রন্থসমূহ ও তথ্যপঞ্জি থেকে রেফারেন্সসহ (তথ্যসূত্র উল্লেখ করে) বিস্তারিত আলোচনা করব; যাতে স্পষ্ট হয়ে যায় তাদের কর্মপদ্ধতি এবং জানা যায় তাদের পথভ্রষ্টতা ও গোমরাহী সম্পর্কে।
১. ইহুদী, খ্রিষ্টান ও সকল মুশরিকদের মত আল্লাহর সাথে শির্কের আকিদা (বিশ্বাস) পোষণ করা। (নাউযুবিল্লাহ)।
২. البداء - “বাদা [অর্থাৎ অপ্রকাশিত কোন কিছু প্রকাশ পাওয়া, অজানা কিছু নতুন করে জানা। [সম্পাদক]]” এর আকিদা পোষণ করা, যা আল্লাহ তা‘আলার প্রতি অজ্ঞতার সম্পর্ককে আবশ্যক করে তোলে।
৩. বার ইমামের নিষ্পাপ হওয়ার আকিদা পোষণ করা; যা সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খতমে নবুওয়তের আকিদার পরিপন্থী।
৪. ‘কুরআন বিকৃত ও পরিবর্তিত অবস্থায় মওজুদ রয়েছে এবং তাতে বেশি ও কম করা হয়েছে’ — এমন আকিদা বিশ্বাস পোষণ করা। (নাউযুবিল্লাহ); আর এটা তাদের নোংরা ও নিকৃষ্ট আকিদাসমূহের অন্যতম, যা তাদেরকে ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয়া আবশ্যক করে তোলে।
৫. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আলী, হাসান ও হোসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম-দের অসম্মান করার আকিদা।
৬. মুমিন জননী, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুন্না-দের অসম্মান করার আকিদা।
৭. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্যা, বিশেষ করে নারীদের নেত্রী ফাতিমা যোহরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুন্না-দের অসম্মান করার আকিদা।
৮. আব্বাস, ইবনু আব্বাস ও ‘আকিল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম-দের অপমান করার আকিদা।
৯. খোলাফায়ে রাশেদীন, মুহাজির ও আনসার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম-দের অপমান করার আকিদা।
১০. আহলে বাইত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম তথা নবী পরিবার-পরিজনের মধ্যকার ইমামদের অপমান করার আকিদা।
১১. ‘তাকিয়া’ ( التقية ) –এর আকিদা।
১২. মুত‘আ বিয়ের (সাময়িক বিয়ে) আকিদা।
১৩. মহিলাদের যৌনাঙ্গ ধার করার (বেশ্যাবৃত্তি) বৈধতার আকিদা।
১৪. নারীদের সাথে সমকামিতা বৈধতার আকিদা।
১৫. রাজ‘আ ( الرجعة ) বা পুনর্জন্মের আকিদা।
১৬. মৃত্তিকার আকিদা।
১৭. হোসাইনের শাহাদাতের স্মরণে মাতম, বক্ষ বিদীর্ণকরণ ও গালে আঘাত করার মধ্যে সাওয়াব প্রত্যাশার আকিদা; যা বিপদে ধৈর্য অবলম্বন করার ইসলামী আকিদা বিশ্বাসের পরিপন্থী।
মুহাম্মদ আবদুস সাত্তার আততুনসাবী
দারুল উলুমুল আরাবিয়্যা আল-ইসলামিয়্যাহ
হুলকম্ব, বরী, ব্রিটেন
অতঃপর...
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাঁর পবিত্র কিতাবে বলেন:
﴿ لُعِنَ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ مِنۢ بَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ عَلَىٰ لِسَانِ دَاوُۥدَ وَعِيسَى ٱبۡنِ مَرۡيَمَۚ ذَٰلِكَ بِمَا عَصَواْ وَّكَانُواْ يَعۡتَدُونَ ٧٨ كَانُواْ لَا يَتَنَاهَوۡنَ عَن مُّنكَرٖ فَعَلُوهُۚ لَبِئۡسَ مَا كَانُواْ يَفۡعَلُونَ ٧٩ ﴾ [ سورة المائدة : 78-79]
“বনী ইরাঈলের মধ্যে যারা কুফরী করেছিল, তারা দাঊদ ও ঈসা ইবন মারইয়াম কর্তৃক অভিশপ্ত হয়েছিল—এটা এই জন্য যে, তারা ছিল অবাধ্য ও সীমালংঘনকারী। তারা যেসব গর্হিত কাজ করত, তা থেকে তারা একে অন্যকে বারণ করত না। তারা যা করত, তা কতই না নিকৃষ্ট।” — (সূরা আল-মায়িদা: ৭৮-৭৯)
সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ وَذَلِكَ أَضْعَفُ الإِيمَانِ» ( رواه مسلم في صحيحه ).
“তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোন অশ্লীল কাজ দেখে, সে যেন তা হাত দ্বারা প্রতিরোধ করে; আর যদি তাতে সে অক্ষম হয়, তবে সে যেন তার মুখ দ্বারা তার প্রতিবাদ করে; আর সে যদি তাতেও অক্ষম হয়, তবে সে যেন তার অন্তর দ্বারা তা প্রতিরোধের পরিকল্পনা করে; আর তা হচ্ছে ঈমানের দুর্বলতা”। — (মুসলিম, ঈমান, বাব নং- ২২, হাদিস নং- ১৮৬)
আর দীনের ক্ষেত্রে ঈমানের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী অন্যতম মন্দ কাজ হল রাফেযী শিয়াদের ফিতনা, যার দিকে তার অনুসারীগণ প্রতিটি জায়গায় দাওয়াতী তৎপরতা চালাচ্ছে। আর তারা জনগণের কাছে প্রকাশ করে যে, শিয়া মাযহাব ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের প্রসিদ্ধ চার মাযহাবের মধ্যে বড় ধরনের কোন পার্থক্য নেই। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ও শিয়াদের মধ্যকার বিরোধ হল বিভিন্ন বিষয়ের শাখা-প্রশাখায় অতি সামান্য সাদাসিধে বিরোধ।
প্রকৃতপক্ষে বিষয়টি এই রকম নয়; বরং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ও শিয়াদের মধ্যকার বিরোধটি মৌলিক এবং প্রধান আকিদাসমূহের মধ্যে। আর তা এত জঘন্য যে, তার অনুসারী ব্যক্তি মুসলিম মিল্লাত থেকে খারিজ হয়ে যায়।
তাছাড়া আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের সাধারণ অনুসারীদের এই মারাত্মক বিরোধ সম্পর্কে কোন জ্ঞান নেই; এমনকি সাধারণ শিয়াদের অধিকাংশই জানে না শিয়াদের ভ্রান্ত আকিদা সম্পর্কে। কারণ, শিয়া আলেমগণ যেসব মৌলিক গ্রন্থের উপর তাদের মাযহাব নির্ভরশীল, সেগুলো সাধারণ জনসমক্ষে প্রকাশ করে না।
এই জন্য আমরা পাকিস্তান আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত সংগঠনের সভাপতি সম্মানিত শাইখ মুহাম্মদ আবদুস সাত্তার আততুনসাবীকে অনুরোধ করেছি যাতে তিনি আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ বিরোধী গুরুত্বপূর্ণ শিয়া আকিদাসমূহ একটি সংক্ষিপ্ত পুস্তকে সংকলন করেন; যা হবে জনগণের জন্য জাফরীয়া শিয়াদের মতবাদের উপর একটি প্রামাণ্য দলিল এবং তাদের জন্য তার (জাফরীয়া শিয়াদের মতবাদের) ভ্রান্ত ও অসার দিকগুলো সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে।
আর তিনিও তাতে সাড়া দিয়েছেন (আল্লাহ তাঁকে এই জন্য উত্তম পুরস্কার দান করুন) এবং এই মূল্যবান সংক্ষিপ্ত পুস্তিকাটি রচনা করছেন।
আর সম্মানিত শাইখ মুহাম্মদ আবদুস সাত্তার আততুনসাবী দেওবন্দ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষাসনদ লাভ করেন। তাঁর ওস্তাদদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আল্লামা শাইখুল ইসলাম হোসাইন আহমদ মাদানী, যিনি শিয়া আকিদার গুরুত্ব অনুভব করার পর তাঁকে লাখনু যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন, যাতে তিনি এই বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের ইমাম শাইখ আবদুস শুকুর লাখনুবী’র নিকট থেকে ফায়দা হাসিল করতে পারেন। অতঃপর তিনি ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে লাখনু গমন করেন এবং শিয়াদের যুক্তি খণ্ডনের উপর বিশেষ অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য শাইখ লাখনুবী’র নিকট কয়েক মাস অবস্থান করেন; তিনি তাঁর নিকট এই বিষয়ে প্রচুর অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। অতঃপর তিনি ভারত ও পাকিস্তান নামে দেশ বিভক্তির পর নাজাফ, কারবালা ও তেহরানে গমন করেন এবং শিয়াদের কেন্দ্রসমূহ যিয়ারত করেন এবং তাদের গ্রন্থসমূহ ও তথ্যপঞ্জি’র উপর দক্ষতা অর্জন করেন, যা তিনি লাখনুতে অর্জন করতে পারেন নি। অতঃপর তিনি তাঁর দেশ পাকিস্তানে ফিরে যান এবং ঐ দিন থেকেই তিনি “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত সংগঠন”-এর মঞ্চে বসে এই ময়দানে সংগ্রাম করতে থাকেন। আর তাঁর হাতে হাজার হাজার শিয়া তাওবা করে; আর তাদের বড় বড় আলেমগণ তাঁর সাথে বিতর্ক করে এবং আল্লাহ ইচ্ছায় তিনি তাদেরকে পরাজিত করেন; এমনকি শেষ পর্যন্ত শিয়াগণ তাঁকে ভয় পেতে লাগল এবং তারা তাঁর সাথে বিতর্কে আর অগ্রসর হতে চাইত না।
আর এই পুস্তিকাটি আকারে ছোট, বিষয়বস্তুর ক্ষেত্রে মূল্যবান। আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র নিকট প্রত্যাশা করি, তিনি যেন তা ভালভাবে গ্রহণ করেন এবং তাকে তাঁর বান্দাদের জন্য হেদায়াতের মাধ্যম বা উপায় বানিয়ে দেন।
وصلى الله على سيدنا محمد و آله و صحبه وسلّم تسليمًا
بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لله رب العالمين . و الصلاة و السلام على خاتم الأنبياء وسيد المرسلين وعلى آله الطيبين وأصحابه البررة المتقين وأزواجه أمهات المؤمنين والتابعين لهم بإحسان أجمعين .
(সমস্ত প্রশংসা সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহর জন্য; আর সালাত (দুরূদ) ও সালাম সর্বশেষ নবী ও রসূলদের নেতা (মুহাম্মদ) সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি এবং এবং শান্তি বর্ষিত হউক তাঁর পবিত্র পরিবার-পরিজন, পুণ্যবান তাকওয়ার অধিকারী সাহাবীবৃন্দ ও তাঁর স্ত্রী মুমিন জননীগণের প্রতি এবং অতি উত্তমভাবে তাঁদের সকল অনুসারীদের প্রতি) ।
অতঃপর:
এটা সংক্ষিপ্ত নিবেদন, যার দ্বারা আমি আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি কামনা করছি এবং (এটা) আমার মুসলিম ভাইদের জন্য উপদেশ, যাতে তা হতে পারে সত্যের সন্ধানী’র জন্য হেদায়াতের মশাল এবং সরল সঠিক পথের অনুসন্ধানকারীদের জন্য সুপথের দিশা দানকারী আলোকস্তম্ভ। হে আল্লাহ! আমাদেরকে সত্যকে সত্যরূপে দেখাও এবং আমাদেরকে তার অনুসরণ করার তাওফিক দান কর; আর বাতিলকে বাতিলরূপেই আমাদেরকে দেখাও এবং তার থেকে দূরে থাকার তাওফিক আমাদেরকে দাও।
আর আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿فَإِنَّهَا لَا تَعۡمَى ٱلۡأَبۡصَٰرُ وَلَٰكِن تَعۡمَى ٱلۡقُلُوبُ ٱلَّتِي فِي ٱلصُّدُورِ ٤٦﴾ [ سورة الحج : 46]
“বস্তুত চোখ তো অন্ধ নয়, বরং অন্ধ হচ্ছে বক্ষস্থিত হৃদয়।” — (সূরা আল-হাজ্জ: ৪৬)
তিনি আরও বলেন:
﴿وَأَنَّ هَٰذَا صِرَٰطِي مُسۡتَقِيمٗا فَٱتَّبِعُوهُۖ وَلَا تَتَّبِعُواْ ٱلسُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمۡ عَن سَبِيلِهِ﴾ [ سورة الأنعام : 153]
“আর এই পথই আমার সরল পথ সুতরাং তোমরা এর অনুসরণ করবে এবং বিভিন্ন পথ অনুসরণ করবে না, করলে তা তোমাদেরকে তার পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করবে”। — (সূরা আল-আন‘আম: ১৫৩)
তিনি আরও বলেন:
﴿أَرَءَيۡتَ مَنِ ٱتَّخَذَ إِلَٰهَهُۥ هَوَىٰهُ﴾ [ سورة الفرقان : 43]
“তুমি কি তাকে দেখ না, যে তার কামনা-বাসনাকে ইলাহরূপে গ্রহণ করে”? — (সূরা আল-ফুরকান: ৪৩)
তিনি আরও বলেন:
﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ فَرَّقُواْ دِينَهُمۡ وَكَانُواْ شِيَعٗا لَّسۡتَ مِنۡهُمۡ فِي شَيۡءٍ﴾ [ الأنعام : 159]
“যারা দীন সম্পর্কে নানা মতের সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে, তাদের কোন দায়িত্ব তোমার নয়”। — (সূরা আল-আন‘আম: ১৫৯)
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«تركت فيكم أمرين لن تضلوا ما تمسكتم بهما كتاب الله وسنة نبيه » ( أخرجه الإمام مالك في الموطأ ).
“আমি তোমাদের মাঝে দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি; যা তোমরা আঁকড়ে ধরে রাখতে পারলে কখনও পথভ্রষ্ট হবে না; সেই বস্তু দু’টি হল: আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নাহ।” — (ইমাম মালেক, মুয়াত্তা, মানাকিব অধ্যায়, হাদিস নং- ৩৭৮৬)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
«وتفترق أمتي على ثلاث وسبعين ملة كلهم في النار إلا ملة واحدة قالوا ومن هي يا رسول الله قال : ما أنا عليه وأصحابي » ( أخرجه الترمذي ).
“আর আমার উম্মত তিহাত্তর দলে বিভক্ত হবে; একটি দল ছাড়া বাকি সব ক’টি দলই জাহান্নামের অধিবাসী হবে। সাহবীগণ বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! সেই দল করা? তিনি বললে: সেই দল হল যার উপর আমি এবং আমার সাহাবীগণ রয়েছে।” — (তিরমিযী, ঈমান, বাব নং- ১৯, হাদিস নং- ২৬৪১)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
«إذا رأيتم الذين يسبون أصحابي فقولوا لعنة الله على شركم» ( أخرجه الترمذي ).
“তোমরা যখন তাদেরকে দেখবে, যারা আমার সাহাবীদেরকে গালি দেয়, তখন তোমরা বলবে: তোমাদের নিকৃষ্টদের উপর আল্লাহর লানত (অভিশাপ)”। — (তিরমিযী, মানাকিব, হাদিস নং- ৩৮৬৬)
ইবনু ‘আসাকির বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« إذا ظهرت البدعُ ولَعَنَ آخرُ هذه الأمةِ أولَها فمن كان عنده علم فلينشرْه فإنَّ كاتمَ العلمِ يومئذٍ ككاتمِ ما أنزل اللهُ على محمدٍ صلى الله عليه وسلم» ( ابن عساكر عن معاذ ).
“যখন বিদ‘আত প্রকাশ পাবে এবং এই উম্মতের পরবর্তীগণ পূর্ববর্তীদেরকে অভিশাপ দেবে, তখন যার নিকট জ্ঞান আছে, সে যেন তা প্রকাশ করে; কারণ, সেই দিন ইলম তথা জ্ঞান গোপনকারী হবে ঐ ব্যক্তির মত, যে ব্যক্তি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা গোপন করে।” — (ইবনু ‘আসাকির মু‘আয রা. থেকে); আল্লামা সুয়ুতী র. ‘জামে সগীর’-এ অনুরূপ বর্ণনা করেছেন [তবে হাদীসটির সনদ দুর্বল। দেখুন, আলবানী:দয়িফুল জামে‘, হাদীস নং ৫৮৯ [সম্পাদক]]।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
« ذا لَعَنَ آخِرُ هَذِهِ الْأُمَّة أَوَّلِهَا , فَمَنْ كَتَمَ حَدِيثًا فَقَدْ كَتَمَ مَا أَنْزَلَ اللَّه»
“যখন উম্মতের পরবর্তীগণ পূর্ববর্তীদেরকে অভিশাপ দেবে, তখন যে ব্যক্তি হাদিস গোপন করবে, তবে সে যেন আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা গোপন করল।” — (ইবন মাজাহ, ইফতিতাহুল কিতাব ফিল ঈমান..., বাব নং- ২৪, হাদিস নং- ২৬৩ [হাদীসটির সনদ অত্যন্ত দুর্বল। [সম্পাদক]])
এই কথা পরিষ্কার যে, এই যুগে ছড়িয়ে পড়েছে নাস্তিকতা, কুটিলতা, পাপাচার, বিদ‘আত, ইসলাম ও তার নিদর্শনসমূহের সমালোচনা এবং পূর্ববর্তী উম্মত তথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবী ও তাবেয়ীদের নিন্দা; আরও ছড়িয়ে পড়েছে নানারকম ফিতনা বা বিশৃঙ্খলা। বাতিলপন্থীগণ তাদের ভ্রান্ত মতবাদ দ্বারা আল্লাহর বান্দাদেরকে বিপথগামী করতে শুরু করেছে এবং পরিবর্তন করে দিচ্ছে আল্লাহর দীনকে। আর ইসলামের নামে নির্লজ্জ ও মনুষত্বহীনভাবে আল্লাহর কিতাবকে পরিবর্তন করছে এবং সঠিক ইসলামী জীবনবিধানের নামে ছড়িয়ে দিচ্ছে অবিশ্বাস, নাস্তিকতা, অন্যায় ও অবিচার।
আর এই ফিতনাসমূহের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ও নিকৃষ্টতর দিক হল রাফেযী ও শিয়া ফিতনা; এর দ্বারা তারা আহলে বাইত তথা নবী পরিবার ও ইমামদের প্রতি ভালবাসার গান গেয়ে মূর্খ ও নির্বোধ লোকদেরকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আর তার অনুসারীগণ তা প্রচলন ও সম্প্রসারণের জন্য ভয়ানক পদ্ধতি অবলম্বন করেছে এবং তাদের এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য তারা সকল আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে শুরু করেছে এবং তার জন্য তারা সকল প্রকার মূল্যবান ও দামী বস্তু ব্যয় করছে; আর এর জন্য যাবতীয় ষড়যন্ত্র ও কুটবুদ্ধির অবতারণা করছে। হে আল্লাহ! আমরা তোমাকে তাদের ঘাঁড়ে রাখছি এবং তাদের অনিষ্ট থেকে তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
আর মুসলিম দা‘য়ী (আল্লাহর দিকে আহ্বানকারী), বক্তা, সংস্কারক ও সকল আলেমের উপর ওয়াজিব (আবশ্যক) হল এই নিকৃষ্ট ফিতনার আসল চেহারা উম্মোচন করে দেয়া এবং জনগণের নিকট তার বিপথগামীতা ও অসারতা তুলে ধরা, যাতে তারা তাদের ঈমান ও আকিদাকে হেফাযত করতে পারে।
হে ইসলামের অনুসারী আলেমগণ! হে মুসলিমদের প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ! আজকের দিনে অন্যতম আবশ্যক কাজ হল, তোমাদের সর্বশক্তি দিয়ে সত্যকে বিজয় করা, বাতিলকে বিতাড়িত করা এবং এই ফিতনাকে দূর করা। কেননা প্রাথমিকভাবে দায়িত্ব তো তোমাদের উপরই বর্তায়, সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আল্লাহকে আরও ভয় কর তোমাদের নিজেদের ব্যাপারে এবং ঐসব মুসলিমদের ব্যাপারে, বাতিল যাদের মধ্যে তার ফিতনার বিষ ছড়িয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে এবং যাদের মধ্যে বাতিল তার (তথাকথিত!) বিপ্লবের আমদানী ঘটিয়েছে। ফলে ঐসব সহজ সরল লোকদের আকিদাকে হক থেকে বাতিলে রূপান্তরিত করছে।
ওহে! আমি কি পৌঁছাতে পেরেছি.. হে আল্লাহ তুমি সাক্ষী থাক...।
প্রকাশ থাকে যে, শিয়া ফিতনার সূচনা হয়েছে ইসলাম ও মুসলিমের শত্রু আবদুল্লাহ ইবন সাবা ইহুদী ও তার অনুসারী যুরারা, আবূ বসীর, আবদুল্লাহ ইবন ই‘য়াফুর, আবূ মিখনাফ লূত ইবন ইয়াহইয়া প্রমুখ মিথ্যাবাদীদের চেষ্টা-সাধনার দ্বারা; তাদের সার্বিক প্রচেষ্টা হচ্ছে, যাতে তারা এর মাধ্যমে ইসলামের প্রকৃতরূপকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে এবং মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ সারিকে ভেঙ্গে টুকরা টুকরা করতে পারে ।
আর তারা এই শিয়া আকিদাসমূহকে তাদের পক্ষ থেকে মিথ্যা অপবাদের মাধ্যমে সম্পর্কিত করেছে আমাদের নেতা আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও তাঁর পবিত্র পরিবার-পরিজনের প্রতি; অথচ তাঁরা সকলেই এর থেকে মুক্ত। কারণ, আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও তাঁর পরিবার-পরিজন সকলেই ছিলেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের অন্তর্ভুক্ত।
আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এবং জাফর সাদিক পর্যন্ত তাঁর পরিবার-পরিজনের সকলেই মদীনা মুনাওয়ারায় ঈমান, ইসলাম, কিতাব ও সুন্নাহ’র পরিবেশে জীবনযাপন করেছেন। আর তাঁদের ইবাদত ও যাবতীয় আমল-আখলাক ছিল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অন্যান্য সকলের আমল-আখলাকের মত।
যখন জিজ্ঞাসা করা হয় যে, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ও তাঁর বংশধরগণ ছিলেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অন্তর্ভুক্ত; তাঁরা আমল করতেন তাদের (আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের) আমলের মত ... এবং তাঁদের গোটা জীবন ছিল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের জীবনের মত? তখন তারা জবাব দেয় যে, নিশ্চয় তাঁরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অনুসরণ করতেন ‘তাকিয়া’ ( التقية ) [‘তাকিয়া’ ( التقية ) হচ্ছে মানুষের মনের বিপরীত অভিমত প্রকাশ করা। অর্থাৎ ভিতর এক রকম, আর বাহির অন্য রকম। - অনুবাদক।] –এর পথ অনুসরণ করে। তারা রাত ও দিনের মধ্যে এক ঘন্টা বাছাই করে সেই সময়ের মধ্যে তাদের অনুসারীদের সাথে বসত এবং তাদেরকে শিয়া মাযহাবের তালীম (প্রশিক্ষণ) দিত। তাদের এই জওয়াব শুনে একজন বিবেকবান ও ন্যায়পরায়ণ মুসলিম ব্যক্তি হতভম্ব হয়ে যাওয়ার কথা। কারণ, যদি আমরা তাদের কথা মেনে নেই, তবে তার থেকে এটা আবশ্যক হয় যে, ইমামগণ রাতে ও দিনে তেইশ ঘন্টা (তাদের কথা অনুযায়ী) বাতিলের উপর এবং এক ঘন্টা হকের উপর জীবন যাপন করেছে। আর এটা আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর শিয়াদের পক্ষ থেকে ডাহা মিথ্যা অপবাদ ছাড়া আর কিছুই নয়। সুতরাং মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর লানত (অভিশাপ)।
আমরা প্রথমে মোটামুটিভাবে তাদের কতগুলো ভ্রান্ত আকিদা লিপিবদ্ধ করব, অতঃপর তাদের নিকট নির্ভরযোগ্য তাদের গ্রন্থসমূহ ও তথ্যপঞ্জি থেকে রেফারেন্সসহ (তথ্যসূত্র উল্লেখ করে) বিস্তারিত আলোচনা করব; যাতে স্পষ্ট হয়ে যায় তাদের কর্মপদ্ধতি এবং জানা যায় তাদের পথভ্রষ্টতা ও গোমরাহী সম্পর্কে।
১. ইহুদী, খ্রিষ্টান ও সকল মুশরিকদের মত আল্লাহর সাথে শির্কের আকিদা (বিশ্বাস) পোষণ করা। (নাউযুবিল্লাহ)।
২. البداء - “বাদা [অর্থাৎ অপ্রকাশিত কোন কিছু প্রকাশ পাওয়া, অজানা কিছু নতুন করে জানা। [সম্পাদক]]” এর আকিদা পোষণ করা, যা আল্লাহ তা‘আলার প্রতি অজ্ঞতার সম্পর্ককে আবশ্যক করে তোলে।
৩. বার ইমামের নিষ্পাপ হওয়ার আকিদা পোষণ করা; যা সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খতমে নবুওয়তের আকিদার পরিপন্থী।
৪. ‘কুরআন বিকৃত ও পরিবর্তিত অবস্থায় মওজুদ রয়েছে এবং তাতে বেশি ও কম করা হয়েছে’ — এমন আকিদা বিশ্বাস পোষণ করা। (নাউযুবিল্লাহ); আর এটা তাদের নোংরা ও নিকৃষ্ট আকিদাসমূহের অন্যতম, যা তাদেরকে ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয়া আবশ্যক করে তোলে।
৫. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আলী, হাসান ও হোসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম-দের অসম্মান করার আকিদা।
৬. মুমিন জননী, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুন্না-দের অসম্মান করার আকিদা।
৭. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্যা, বিশেষ করে নারীদের নেত্রী ফাতিমা যোহরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুন্না-দের অসম্মান করার আকিদা।
৮. আব্বাস, ইবনু আব্বাস ও ‘আকিল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম-দের অপমান করার আকিদা।
৯. খোলাফায়ে রাশেদীন, মুহাজির ও আনসার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম-দের অপমান করার আকিদা।
১০. আহলে বাইত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম তথা নবী পরিবার-পরিজনের মধ্যকার ইমামদের অপমান করার আকিদা।
১১. ‘তাকিয়া’ ( التقية ) –এর আকিদা।
১২. মুত‘আ বিয়ের (সাময়িক বিয়ে) আকিদা।
১৩. মহিলাদের যৌনাঙ্গ ধার করার (বেশ্যাবৃত্তি) বৈধতার আকিদা।
১৪. নারীদের সাথে সমকামিতা বৈধতার আকিদা।
১৫. রাজ‘আ ( الرجعة ) বা পুনর্জন্মের আকিদা।
১৬. মৃত্তিকার আকিদা।
১৭. হোসাইনের শাহাদাতের স্মরণে মাতম, বক্ষ বিদীর্ণকরণ ও গালে আঘাত করার মধ্যে সাওয়াব প্রত্যাশার আকিদা; যা বিপদে ধৈর্য অবলম্বন করার ইসলামী আকিদা বিশ্বাসের পরিপন্থী।
মুহাম্মদ আবদুস সাত্তার আততুনসাবী
দারুল উলুমুল আরাবিয়্যা আল-ইসলামিয়্যাহ
হুলকম্ব, বরী, ব্রিটেন
মুহাম্মদ ইবন ইয়াকুব আল-কুলাইনী ‘উসুলুল কাফী’ গ্রন্থের মধ্যে “গোটা পৃথিবীর মালিক ইমাম” ( باب أن الأرض كلها للإمام ) নামক অধ্যায়ে আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: দুনিয়া ও আখেরাত ইমামের মালিকানায়, যেখানে ইচ্ছা তিনি তা রাখেন এবং আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কারস্বরূপ যার কাছে ইচ্ছা তা হস্তান্তর করেন। [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ২৫৯; (ভারত প্রকাশনা)।]
সুতরাং একজন বিচক্ষণ মুসলিম এই বক্তব্য থেকে কী উদঘাটন করবেন; অথচ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সুস্পষ্ট আয়াতে বলেন:
﴿ إِنَّ ٱلۡأَرۡضَ لِلَّهِ يُورِثُهَا مَن يَشَآءُ ﴾ [ سورة الأعراف : 128]
“যমীন তো আল্লাহরই। তিনি বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তার উত্তরাধিকারী করেন”। [সূরা আল-আ‘রাফ: ১২৮]
﴿ وَلِلَّهِ مُلۡكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ ﴾ [ سورة آل عمران : 189]
“আসমান ও যমীনের সার্বভৌম ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহরই”। [সূরা আলে ইমরান: ১৮৯]
﴿ فَلِلَّهِ ٱلۡأٓخِرَةُ وَٱلۡأُولَىٰ ٢٥ ﴾ [ سورة النجم : 25]
“বস্তুত ইহকাল ও পরকাল আল্লাহরই”। [সূরা আন-নাজম: ২৫]
﴿ لَهُ مُلۡكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ ﴾ [ سورة الحديد : 2]
“আসমান ও যমীনের সার্বভৌম ক্ষমতা একমাত্র তারই”। [সূরা আল- হাদীদ: ২]
﴿ تَبَٰرَكَ ٱلَّذِي بِيَدِهِ ٱلۡمُلۡكُ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٌ ١﴾ [ سورة الملك : 1]
“মহামহিমান্বিত তিনি, সর্বময় কর্তৃত্ব যাঁর নিয়ন্ত্রণে; তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান”। [সূরা আল-মুলক: ১]
আর শিয়াগণ লেখে: “আলী বলেন: ... আমিই প্রথম, আমিই শেষ, আমিই ব্যক্ত, আমিই উপরে আর আমিই নিকটে এবং আমিই যমিনের উত্তরাধিকারী”। [‘রিজালু কাশী’ ( رجال كشي ), পৃ. ১৩৮ (ভারতীয় ছাপা)।]
আর এই আকিদাটিও প্রথম আকিদার মত ভ্রান্ত। আর আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তা থেকে পবিত্র ও মুক্ত; আর এটা তাঁর উপর একটা বড় ধরনের মিথ্যারোপ। তিনি এই ধরনের কথা বলতেই পারেন না।
আর আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ هُوَ ٱلۡأَوَّلُ وَٱلۡأٓخِرُ وَٱلظَّٰهِرُ وَٱلۡبَاطِنُ ﴾ [ سورة الحديد : 3]
“তিনিই আদি, তিনিই অন্ত; তিনিই সবার উপরে এবং তিনিই সবার নিকটে”। [সূরা আল- হাদীদ: ৩]
﴿ وَلِلَّهِ مِيرَٰثُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ ﴾ [ سورة الحديد : 10]
“আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর মালিকানা তো আল্লাহরই”। [সূরা আল- হাদীদ: ১০]
আর প্রসিদ্ধ শিয়া মুফাসসির মকবুল আহমদ সূরা যুমারের এই আয়াতের ব্যাখ্যা করেছে:
﴿ وَأَشۡرَقَتِ ٱلۡأَرۡضُ بِنُورِ رَبِّهَا ﴾ [ سورة الزمر : 69]
“বিশ্ব তার প্রতিপালকের জ্যোতিতে উদ্ভাসিত হবে”। — (সূরা যুমার: ৬৯)
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় সে (মকবুল আহমদ) বলেছে, জাফর সাদিক বলেন: নিশ্চয় যমিনের রব (মালিক) হলেন ইমাম। সুতরাং যখন ইমাম বের হবে, তখন তার আলোই যথেষ্ট; মানুষের জন্য চন্দ্র ও সূর্যের প্রয়োজন হবে না। [তরজমাতু মকবুল আহমদ, পৃ. ৩৩৯ (আসল বক্তব্য উর্দু ভাষায়; আমরা পুরাপুরি আমানতের সাথে আরবি অনুবাদ করেছি)।]
তোমরা চিন্তা করে দেখ, তারা কিভাবে ইমামকে ‘রব’ (প্রতিপালক) বানিয়েছে; এমনকি তারা " بنور ربها " (তার প্রতিপালকের জ্যোতিতে)-এর অর্থ বর্ণনায় বলে: ইমামই হলেন সেই রব এবং যমিনের মালিক।
অনুরূপভাবে সূরা যুমারের এই আয়াতের ব্যাখ্যায়:
﴿لَئِنۡ أَشۡرَكۡتَ لَيَحۡبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٦٥ بَلِ ٱللَّهَ فَٱعۡبُدۡ وَكُن مِّنَ ٱلشَّٰكِرِينَ ٦٦﴾ [ سورة الزمر : 65-66]
“তুমি আল্লাহর শরিক স্থির করলে তোমার কর্ম তো নিষ্ফল হবে এবং অবশ্য তুমি হবে ক্ষতিগ্রস্ত। অতএব তুমি আল্লাহরই ইবাদত কর এবং কৃতজ্ঞ হও।” — (সূরা যুমার: ৬৫-৬৬)
এই শিয়া মুফাসসির (মকবুল আহমদ) জাফর সাদিক থেকে ‘কাফী’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন: তার (আয়াতের) অর্থ হল: যদি তোমরা আলী’র বেলায়াতের (একচ্ছত্র কর্তৃত্ব বা অভিভাবকত্বের) সাথে কাউকে শরিক কর, তবে তার ফলে তোমার আমল নিষ্ফল হবে।
অতঃপর ﴿ بَلِ ٱللَّهَ فَٱعۡبُدۡ وَكُن مِّنَ ٱلشَّٰكِرِينَ ٦٦﴾ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন: অর্থাৎ তোমরা আনুগত্যসহ নবীর ইবাদত কর এবং তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; কারণ, আমরা আপনার ভাই এবং চাচার ছেলেকে আপনার বাহুবলে পরিণত করেছি। [তরজমাতু মকবুল আহমদ, পৃ. ৯৩২]
লক্ষ্য কর, কিভাবে তারা আয়াতের ব্যাখ্যায় জাফর সাদিকের উপর মিথ্যারোপ করে; অথচ এই আয়াতগুলোর বক্তব্য হচ্ছে, আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদ তথা একত্ববাদ প্রসঙ্গে; আর আল্লাহই হলেন সকল কিছুর সৃষ্টা। আর সকল প্রকার ইবাদত তাঁর জন্য হওয়াই বাঞ্ছনীয়। [এ আয়াত এগুলোই প্রমাণ হয়] কিভাবে তারা তা (আয়াত) বিকৃত করল এবং তার থেকে সুস্পষ্ট শির্ককে বৈধতার প্রমাণ পেশ করল? আল্লাহ তাদেরকে উপযুক্ত এর শাস্তি প্রদান করুন।
অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿ وَمَا خَلَقۡتُ ٱلۡجِنَّ وَٱلۡإِنسَ إِلَّا لِيَعۡبُدُونِ ٥٦ ﴾ [ سورة الذاريات : 56]
“আর আমি সৃষ্টি করেছি জিন ও মানুষকে এই জন্য যে, তারা কেবল আমারই ইবাদত করবে।” — (সূরা আয-যারিয়াত: ৫৬)-এর ব্যাখ্যায় এই শিয়া মুফাসসির বলেন যে, জাফর সাদিক এই আয়াতের ব্যাখ্যায় হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ থেকে বর্ণনা করেন, আল্লাহ জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছেন যাতে তারা তাকে চিনতে পারে। কারণ, তারা যখন তাকে চিনবে, তখন তারা তার ইবাদত করবে। অতঃপর তাদের একজন তাকে জিজ্ঞাসা করল: চিনা-জানা বলতে কী বুঝায়? তখন সে জবাব দিল: মানুষ তাদের যামানার ইমামকে চিনবে-জানবে। [তরজমাতু মকবুল আহমদ, পৃ. ১০৪৩]
আর কুলাইনী ‘উসুলুল কাফী’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ইমাম মুহাম্মদ বাকের বলেন: আমরা আল্লাহর চেহারা; আমরা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে তার চোখ এবং তার হাত যা রহমতসহ তার বান্দাদের উপর সম্প্রসারিত। [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ৮৩]
অনুরূপভাবে সে বলে: আমরা আল্লাহর জিহ্বা; আমরা আল্লাহর চেহারা এবং আমরা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে তার চোখ। [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ১৯৩]
আর আবূ আবদিল্লাহ আ. (জাফর সাদিক) থেকে বর্ণিত, আমীরুল মুমিনীন আ. বেশি বেশি বলতেন: জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যে আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে বণ্টনকারী ... আমাকে এমন কতগুলো বৈশিষ্ট্য দেয়া হয়েছে, যা আমার পূর্বে আর কাউকে দেয়া হয়নি; আমি জানি মৃত্যু, বালা-মুসিবত, বংশ এবং বক্তৃতা-বিবৃতির ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ সম্পর্কে। সুতরাং আমার পূর্বেকার কোন বিষয় আমার জানা থেকে বাদ পড়েনি এবং আমার নিকট থেকে যা অদৃশ্য, তাও আমার কাছ থেকে অজানা থাকে না। [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ১১৭]
তোমরা লক্ষ্য কর, কিভাবে তারা আল্লাহ তা‘আলার গুণাবলীকে আলী’র জন্য সাব্যস্ত করার সাহস করল।
অনুরূপভাবে সূরা আল-কাসাসের
﴿كُلُّ شَيۡءٍ هَالِكٌ إِلَّا وَجۡهَهُ﴾ [ سورة القصص : 88]
“তাঁর (আল্লাহর) চেহারা (সত্তা) ব্যতীত সব কিছুই ধ্বংসশীল”। — (সূরা আল-কাসাস: ৮৮)
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় শিয়া মুফাসসির মকবুল আহমদ বলেন, জাফর সাদিক তার ব্যাখ্যায় বলেন: আমরা আল্লাহর (চেহারা) সত্তা। অতএব তোমরা লক্ষ্য কর, কিভাবে তারা ইমামকে অবিনশ্বর ইলাহ বা মা‘বুদে পরিণত করেছে; অথচ যালিমগণ যা বলে, তার থেকে আল্লাহ অনেক মহান, উচ্চ।
কুলাইনী তার গ্রন্থের কোন এক অধ্যায়ে উল্লেখ করেন: ইমামগণ যা হয়েছে এবং যা হবে, তার জ্ঞান রাখেন; আর তাদের নিকট কোন কিছুই গোপন নেই।
আবূ আবদিল্লাহ আ. (জাফর সাদিক) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি অবশ্যই আসমান ও যমিনে যা কিছু আছে, তা জানি এবং আমি আরও জানি জান্নাত ও জাহান্নামে যা কিছু আছে। আর যা হয়েছে এবং যা হবে, তাও আমি জানি। [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ১৬০]
অনুরূপভাবে ‘উসুলুল কাফী’ গ্রন্থে উল্লেখ আছে: “তারা (ইমামগণ) যা ইচ্ছা করে, তা হালাল করতে পারে; আবার যা ইচ্ছা করে, তা হারামও করতে পারে। আর তারা কখনও কিছুর ইচ্ছা করেন না, যতক্ষণ না মহান আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা করেন। [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ২৭৮]
অথচ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলকে উদ্দেশ্য করে বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ لِمَ تُحَرِّمُ مَآ أَحَلَّ ٱللَّهُ لَكَ ﴾ [ سورة التحريم : 1]
“হে নবী! আল্লাহ যা তোমার জন্য হালাল করেছেন, তা তুমি কেন হারাম করলে”। — (সূরা তাহরীম: ১)
সুতরাং আল্লাহ যখন তাঁর রাসূলকে হালাল জিনিসকে হারাম করার কারণে সতর্ক করে দিয়েছেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত অন্যের দ্বারা তা কি করে সম্ভব হতে পারে।
কুলাইনী তার গ্রন্থের কোন এক অধ্যায়ে আরও উল্লেখ করেন: ইমামগণ জানেন যে, তারা কখন মারা যাবেন; আর তারা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী মারা যাবেন। আবূ আবদিল্লাহ আ. বলেন: কোন ইমাম যদি তার উপর আপতিত বিপদাপদ ও তার পরিণতি সম্পর্কে না জানে; তবে সে ইমাম আল্লাহর সৃষ্টির ব্যাপারে দলিল (হিসেবে গ্রহণযোগ্য) নয়। [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ২৭৮। (অর্থাৎ গায়েব জানতে হবে, নতুবা ইমাম হতে পারবে না। মনে হচ্ছে যেন তারা ইমামদেরকে মুশরিক না বানানো পর্যন্ত অনুসরণযোগ্য মনে করে না।) [সম্পাদক]] অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ قُل لَّا يَعۡلَمُ مَن فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ ٱلۡغَيۡبَ إِلَّا ٱللَّهُ﴾ [ سورة النمل : 65]
“বল, আল্লাহ ব্যতীত আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে কেউই অদৃশ্য বা গায়েবী বিষয়সমূহের জ্ঞান রাখে না”। — (সূরা আন-নমল: ৬৫) মহান আল্লাহ্ আরও বলেন,
﴿ وَعِندَهُۥ مَفَاتِحُ ٱلۡغَيۡبِ لَا يَعۡلَمُهَآ إِلَّا هُوَ ﴾ [ سورة الأنعام : 59]
“আর অদৃশ্যের চাবিকাঠি তাঁরই নিকট রয়েছে, তিনি ব্যতীত অন্য কেউ তা জনে না”। — (সূরা আল-আন‘আম: ৫৯)
কিন্তু শিয়াগণ তাদের ইমামদেরকে অদৃশ্যের জ্ঞানের ব্যাপারে আল্লাহর সাথে শরিক করে।
কুলাইনী তার গ্রন্থের কোন এক অধ্যায়ে আরও উল্লেখ করেন: ইমামগণকে যদি গোপনে জিজ্ঞেস করা হতো, তবে তারা প্রত্যেক মানুষের যাবতীয় কল্যাণ ও অকল্যাণ বলে দিত।
কুলাইনী ‘উসুলুল কাফী’ (এটা শিয়াদের মহাগ্রন্থ) গ্রন্থের “ইমামগণ ফেরেশতা, নবী ও রাসূলগণের নিকট প্রেরিত সকল জ্ঞান সম্পর্কে অবহিত” ( باب أن الأئمة يعلمون جميع العلوم التي خرجت إلى الملائكة و الأنبياء و الرسل عليهم السلام ) নামক অধ্যায়ে আরও উল্লেখ করেন: সামা‘আ থেকে বর্ণিত, সে আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণনা করেছেন, সে বলল: ‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলার নিকট দুই ধরনের জ্ঞান রয়েছে: এক প্রকারের জ্ঞান সম্পর্কে তাঁর ফেরেশতা, নবী ও রাসূলগণ অবহিত; সুতরাং যে বিষয়ে তাঁর ফেরেশতা, নবী ও রাসূলগণ অবহিত, তা আমরা জানি। আরেক প্রকার জ্ঞান হল যা একচেটিয়া তাঁর (আল্লাহর) নিজের জন্য; সুতরাং সেখান থেকে কোন বিষয়ে যখন আল্লাহর বোধোদয় হয়, তখন তিনি তা আমাদেরকে জানিয়ে দেন এবং আমাদের পূর্বে যেসব ইমাম ছিলেন, তাদের নিকট তা পেশ করেন।’ তোমরা লক্ষ্য কর, তারা তাদের ইমামদেরকে তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী ফেরেশতা, নবী ও রাসূলগণের চেয়ে বেশি জ্ঞানী মনে করে। আর জ্ঞানের ক্ষেত্রে তারা তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার অংশীদার মনে করে। এই সবগুলোই মিথ্যা, বানোয়াট ও কুফরী।
আর ‘উসুলুল কাফী’ এবং শিয়াদের অন্যান্য গ্রন্থসমূহ এই ধরণের মারাত্মক বিষয়াদি দ্বারা পরিপূর্ণ। আমরা এখানে যা উল্লেখ করেছি, তা নিতান্তই কম। আর উর্দু ভাষায় শিয়াদের অনেক কাব্য রয়েছে, যেগুলো আল্লাহর সাথে শির্ক এবং তাদের ইমামদের নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি দ্বারা ভরপুর; তার কিছু অংশে বর্ণিত আছে যে, সকল নবী বিপদ-মুসিবতের সময় আলী’র নিকট সাহায্য-সহযোগিতা চাইত; অতঃপর তিনি তাদেরকে সাহায্য করতেন। সুতরাং নূহ আ. প্লাবনের সময় তার নিকট সাহায্য চেয়েছেন; ইবরাহীম, লুত, হুদ ও শীস আ.-সহ সকলেই তার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করেছেন এবং তিনি তাদের সাহায্য করেছেন। আর আলী’র মু‘জিযাসমূহ খুবই মহান, বিস্ময়কর এবং প্রত্যেক বস্তুর উপর প্রভাবশালী (নাউযুবিল্লাহ)।
আর শিয়াদের নিকট নির্ভরযোগ্য গ্রন্থসমূহ থেকে আমরা কয়েকটি বর্ণনা মাত্র এখানে লিপিবদ্ধ করেছি। পাঠকদের জানা উচিত যে, তাদের গ্রন্থসমূহ এ ধরনের শির্ক মিশ্রিত আকিদায় ভরপুর। সুতরাং এসব ভ্রান্ত আকিদায় বিশ্বাস করার পরও কোন ব্যক্তি মুসলিম থাকতে পারে কি?
কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ٱللَّهُ خَٰلِقُ كُلِّ شَيۡءٖۖ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ وَكِيلٞ ٦٢﴾ [ سورة الزمر : 62]
“আল্লাহ সব কিছুর স্রষ্টা এবং তিনি সকল কিছুর কর্মবিধায়ক”। — (সূরা যুমার: ৬২)
তিনি আরও বলেন:
﴿ وَلَا يُشۡرِكُ فِي حُكۡمِهِۦٓ أَحَدٗا ٢٦ ﴾ [ سورة الكهف : 26]
“তিনি কাউকেও নিজ কর্তৃত্বে শরিক করেন না”। — (সূরা আল-কাহফ: ২৬)
তিনি আরও বলেন:
﴿ ٱللَّهُ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلۡحَيُّ ٱلۡقَيُّومُۚ لَا تَأۡخُذُهُۥ سِنَةٞ وَلَا نَوۡمٞۚ لَّهُۥ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِ ﴾ [ سورة البقرة : 255]
“আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তিনি চিরঞ্জীব, সর্বসত্তার ধারক। তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না। আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সমস্ত তাঁরই।” — (সূরা আল-বাকারা: ২৫৫)
তিনি আরও বলেন:
﴿وَلَقَدۡ أُوحِيَ إِلَيۡكَ وَإِلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكَ لَئِنۡ أَشۡرَكۡتَ لَيَحۡبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٦٥﴾ [ سورة الزمر : 65]
“তোমার প্রতি ও তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবশ্যই ওহী হয়েছে, তুমি আল্লাহর শরিক স্থির করলে তোমার কর্ম তো নিষ্ফল হবে এবং অবশ্য তুমি হবে ক্ষতিগ্রস্ত।” — (সূরা যুমার: ৬৫)
তিনি আরও বলেন:
﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُ﴾ [ سورة النساء : 116]
“নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরিক করাকে ক্ষমা করেন না; এটা ব্যতীত সব কিছু যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন”। — (সূরা আন-নিসা: ১১৬)
তিনি আরও বলেন:
﴿ إِنَّهُۥ مَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِ ٱلۡجَنَّةَ وَمَأۡوَىٰهُ ٱلنَّارُ﴾ [ سورة المائدة : 72]
“কেউ আল্লাহর সাথে শরিক করলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত অবশ্যই নিষিদ্ধ করবেন এবং তার আবাস জাহান্নাম”। — (সূরা আল-মায়িদা: ৭২)
তিনি আরও বলেন:
﴿ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَخۡفَىٰ عَلَيۡهِ شَيۡءٞ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَلَا فِي ٱلسَّمَآءِ ٥ ﴾ [ سورة آل عمران : 5]
“নিশ্চয় আল্লাহর নিকট আসমান ও যমিনে কিছুই গোপন থাকে না”। — (সূরা আলে ইমরান: ৫)
সুতরাং এই আয়াত ও অনুরূপ অন্যান্য আয়াত খুবই স্পষ্ট যে, আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক বস্তুর একক স্রষ্টা এবং আসমান ও যমিনের ব্যবস্থাপক। আর তিনিই প্রত্যেক বস্তুর উপর ক্ষমতাবান এবং তিনিই সব কিছুই জানেন।
পক্ষান্তরে শিয়াগণ আল্লাহ্র গুণাবলীকে তাদের ইমামের জন্য সাব্যস্ত করেন; আর আল্লাহ্র গুণাবলী আল্লাহ ব্যতীত অন্যের জন্য সাব্যস্ত করা কি শির্ক নয়?
আর যে ব্যক্তি এসব গুণাবলী আল্লাহ ব্যতীত অন্যের জন্য সাব্যস্ত করাকে বৈধ বলে বিশ্বাস করে, সে কি মুশরিক নয়? হ্যাঁ, অবশ্যই তা আল্লাহর গুণাবলীর মধ্যে শির্ক। আর এসব কথার প্রবক্তাগণ প্রকৃতই মুশরিক।
সুতরাং একজন বিচক্ষণ মুসলিম এই বক্তব্য থেকে কী উদঘাটন করবেন; অথচ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সুস্পষ্ট আয়াতে বলেন:
﴿ إِنَّ ٱلۡأَرۡضَ لِلَّهِ يُورِثُهَا مَن يَشَآءُ ﴾ [ سورة الأعراف : 128]
“যমীন তো আল্লাহরই। তিনি বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তার উত্তরাধিকারী করেন”। [সূরা আল-আ‘রাফ: ১২৮]
﴿ وَلِلَّهِ مُلۡكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ ﴾ [ سورة آل عمران : 189]
“আসমান ও যমীনের সার্বভৌম ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহরই”। [সূরা আলে ইমরান: ১৮৯]
﴿ فَلِلَّهِ ٱلۡأٓخِرَةُ وَٱلۡأُولَىٰ ٢٥ ﴾ [ سورة النجم : 25]
“বস্তুত ইহকাল ও পরকাল আল্লাহরই”। [সূরা আন-নাজম: ২৫]
﴿ لَهُ مُلۡكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ ﴾ [ سورة الحديد : 2]
“আসমান ও যমীনের সার্বভৌম ক্ষমতা একমাত্র তারই”। [সূরা আল- হাদীদ: ২]
﴿ تَبَٰرَكَ ٱلَّذِي بِيَدِهِ ٱلۡمُلۡكُ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٌ ١﴾ [ سورة الملك : 1]
“মহামহিমান্বিত তিনি, সর্বময় কর্তৃত্ব যাঁর নিয়ন্ত্রণে; তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান”। [সূরা আল-মুলক: ১]
আর শিয়াগণ লেখে: “আলী বলেন: ... আমিই প্রথম, আমিই শেষ, আমিই ব্যক্ত, আমিই উপরে আর আমিই নিকটে এবং আমিই যমিনের উত্তরাধিকারী”। [‘রিজালু কাশী’ ( رجال كشي ), পৃ. ১৩৮ (ভারতীয় ছাপা)।]
আর এই আকিদাটিও প্রথম আকিদার মত ভ্রান্ত। আর আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তা থেকে পবিত্র ও মুক্ত; আর এটা তাঁর উপর একটা বড় ধরনের মিথ্যারোপ। তিনি এই ধরনের কথা বলতেই পারেন না।
আর আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ هُوَ ٱلۡأَوَّلُ وَٱلۡأٓخِرُ وَٱلظَّٰهِرُ وَٱلۡبَاطِنُ ﴾ [ سورة الحديد : 3]
“তিনিই আদি, তিনিই অন্ত; তিনিই সবার উপরে এবং তিনিই সবার নিকটে”। [সূরা আল- হাদীদ: ৩]
﴿ وَلِلَّهِ مِيرَٰثُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ ﴾ [ سورة الحديد : 10]
“আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর মালিকানা তো আল্লাহরই”। [সূরা আল- হাদীদ: ১০]
আর প্রসিদ্ধ শিয়া মুফাসসির মকবুল আহমদ সূরা যুমারের এই আয়াতের ব্যাখ্যা করেছে:
﴿ وَأَشۡرَقَتِ ٱلۡأَرۡضُ بِنُورِ رَبِّهَا ﴾ [ سورة الزمر : 69]
“বিশ্ব তার প্রতিপালকের জ্যোতিতে উদ্ভাসিত হবে”। — (সূরা যুমার: ৬৯)
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় সে (মকবুল আহমদ) বলেছে, জাফর সাদিক বলেন: নিশ্চয় যমিনের রব (মালিক) হলেন ইমাম। সুতরাং যখন ইমাম বের হবে, তখন তার আলোই যথেষ্ট; মানুষের জন্য চন্দ্র ও সূর্যের প্রয়োজন হবে না। [তরজমাতু মকবুল আহমদ, পৃ. ৩৩৯ (আসল বক্তব্য উর্দু ভাষায়; আমরা পুরাপুরি আমানতের সাথে আরবি অনুবাদ করেছি)।]
তোমরা চিন্তা করে দেখ, তারা কিভাবে ইমামকে ‘রব’ (প্রতিপালক) বানিয়েছে; এমনকি তারা " بنور ربها " (তার প্রতিপালকের জ্যোতিতে)-এর অর্থ বর্ণনায় বলে: ইমামই হলেন সেই রব এবং যমিনের মালিক।
অনুরূপভাবে সূরা যুমারের এই আয়াতের ব্যাখ্যায়:
﴿لَئِنۡ أَشۡرَكۡتَ لَيَحۡبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٦٥ بَلِ ٱللَّهَ فَٱعۡبُدۡ وَكُن مِّنَ ٱلشَّٰكِرِينَ ٦٦﴾ [ سورة الزمر : 65-66]
“তুমি আল্লাহর শরিক স্থির করলে তোমার কর্ম তো নিষ্ফল হবে এবং অবশ্য তুমি হবে ক্ষতিগ্রস্ত। অতএব তুমি আল্লাহরই ইবাদত কর এবং কৃতজ্ঞ হও।” — (সূরা যুমার: ৬৫-৬৬)
এই শিয়া মুফাসসির (মকবুল আহমদ) জাফর সাদিক থেকে ‘কাফী’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন: তার (আয়াতের) অর্থ হল: যদি তোমরা আলী’র বেলায়াতের (একচ্ছত্র কর্তৃত্ব বা অভিভাবকত্বের) সাথে কাউকে শরিক কর, তবে তার ফলে তোমার আমল নিষ্ফল হবে।
অতঃপর ﴿ بَلِ ٱللَّهَ فَٱعۡبُدۡ وَكُن مِّنَ ٱلشَّٰكِرِينَ ٦٦﴾ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন: অর্থাৎ তোমরা আনুগত্যসহ নবীর ইবাদত কর এবং তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; কারণ, আমরা আপনার ভাই এবং চাচার ছেলেকে আপনার বাহুবলে পরিণত করেছি। [তরজমাতু মকবুল আহমদ, পৃ. ৯৩২]
লক্ষ্য কর, কিভাবে তারা আয়াতের ব্যাখ্যায় জাফর সাদিকের উপর মিথ্যারোপ করে; অথচ এই আয়াতগুলোর বক্তব্য হচ্ছে, আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদ তথা একত্ববাদ প্রসঙ্গে; আর আল্লাহই হলেন সকল কিছুর সৃষ্টা। আর সকল প্রকার ইবাদত তাঁর জন্য হওয়াই বাঞ্ছনীয়। [এ আয়াত এগুলোই প্রমাণ হয়] কিভাবে তারা তা (আয়াত) বিকৃত করল এবং তার থেকে সুস্পষ্ট শির্ককে বৈধতার প্রমাণ পেশ করল? আল্লাহ তাদেরকে উপযুক্ত এর শাস্তি প্রদান করুন।
অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿ وَمَا خَلَقۡتُ ٱلۡجِنَّ وَٱلۡإِنسَ إِلَّا لِيَعۡبُدُونِ ٥٦ ﴾ [ سورة الذاريات : 56]
“আর আমি সৃষ্টি করেছি জিন ও মানুষকে এই জন্য যে, তারা কেবল আমারই ইবাদত করবে।” — (সূরা আয-যারিয়াত: ৫৬)-এর ব্যাখ্যায় এই শিয়া মুফাসসির বলেন যে, জাফর সাদিক এই আয়াতের ব্যাখ্যায় হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ থেকে বর্ণনা করেন, আল্লাহ জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছেন যাতে তারা তাকে চিনতে পারে। কারণ, তারা যখন তাকে চিনবে, তখন তারা তার ইবাদত করবে। অতঃপর তাদের একজন তাকে জিজ্ঞাসা করল: চিনা-জানা বলতে কী বুঝায়? তখন সে জবাব দিল: মানুষ তাদের যামানার ইমামকে চিনবে-জানবে। [তরজমাতু মকবুল আহমদ, পৃ. ১০৪৩]
আর কুলাইনী ‘উসুলুল কাফী’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ইমাম মুহাম্মদ বাকের বলেন: আমরা আল্লাহর চেহারা; আমরা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে তার চোখ এবং তার হাত যা রহমতসহ তার বান্দাদের উপর সম্প্রসারিত। [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ৮৩]
অনুরূপভাবে সে বলে: আমরা আল্লাহর জিহ্বা; আমরা আল্লাহর চেহারা এবং আমরা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে তার চোখ। [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ১৯৩]
আর আবূ আবদিল্লাহ আ. (জাফর সাদিক) থেকে বর্ণিত, আমীরুল মুমিনীন আ. বেশি বেশি বলতেন: জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যে আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে বণ্টনকারী ... আমাকে এমন কতগুলো বৈশিষ্ট্য দেয়া হয়েছে, যা আমার পূর্বে আর কাউকে দেয়া হয়নি; আমি জানি মৃত্যু, বালা-মুসিবত, বংশ এবং বক্তৃতা-বিবৃতির ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ সম্পর্কে। সুতরাং আমার পূর্বেকার কোন বিষয় আমার জানা থেকে বাদ পড়েনি এবং আমার নিকট থেকে যা অদৃশ্য, তাও আমার কাছ থেকে অজানা থাকে না। [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ১১৭]
তোমরা লক্ষ্য কর, কিভাবে তারা আল্লাহ তা‘আলার গুণাবলীকে আলী’র জন্য সাব্যস্ত করার সাহস করল।
অনুরূপভাবে সূরা আল-কাসাসের
﴿كُلُّ شَيۡءٍ هَالِكٌ إِلَّا وَجۡهَهُ﴾ [ سورة القصص : 88]
“তাঁর (আল্লাহর) চেহারা (সত্তা) ব্যতীত সব কিছুই ধ্বংসশীল”। — (সূরা আল-কাসাস: ৮৮)
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় শিয়া মুফাসসির মকবুল আহমদ বলেন, জাফর সাদিক তার ব্যাখ্যায় বলেন: আমরা আল্লাহর (চেহারা) সত্তা। অতএব তোমরা লক্ষ্য কর, কিভাবে তারা ইমামকে অবিনশ্বর ইলাহ বা মা‘বুদে পরিণত করেছে; অথচ যালিমগণ যা বলে, তার থেকে আল্লাহ অনেক মহান, উচ্চ।
কুলাইনী তার গ্রন্থের কোন এক অধ্যায়ে উল্লেখ করেন: ইমামগণ যা হয়েছে এবং যা হবে, তার জ্ঞান রাখেন; আর তাদের নিকট কোন কিছুই গোপন নেই।
আবূ আবদিল্লাহ আ. (জাফর সাদিক) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি অবশ্যই আসমান ও যমিনে যা কিছু আছে, তা জানি এবং আমি আরও জানি জান্নাত ও জাহান্নামে যা কিছু আছে। আর যা হয়েছে এবং যা হবে, তাও আমি জানি। [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ১৬০]
অনুরূপভাবে ‘উসুলুল কাফী’ গ্রন্থে উল্লেখ আছে: “তারা (ইমামগণ) যা ইচ্ছা করে, তা হালাল করতে পারে; আবার যা ইচ্ছা করে, তা হারামও করতে পারে। আর তারা কখনও কিছুর ইচ্ছা করেন না, যতক্ষণ না মহান আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা করেন। [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ২৭৮]
অথচ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলকে উদ্দেশ্য করে বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ لِمَ تُحَرِّمُ مَآ أَحَلَّ ٱللَّهُ لَكَ ﴾ [ سورة التحريم : 1]
“হে নবী! আল্লাহ যা তোমার জন্য হালাল করেছেন, তা তুমি কেন হারাম করলে”। — (সূরা তাহরীম: ১)
সুতরাং আল্লাহ যখন তাঁর রাসূলকে হালাল জিনিসকে হারাম করার কারণে সতর্ক করে দিয়েছেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত অন্যের দ্বারা তা কি করে সম্ভব হতে পারে।
কুলাইনী তার গ্রন্থের কোন এক অধ্যায়ে আরও উল্লেখ করেন: ইমামগণ জানেন যে, তারা কখন মারা যাবেন; আর তারা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী মারা যাবেন। আবূ আবদিল্লাহ আ. বলেন: কোন ইমাম যদি তার উপর আপতিত বিপদাপদ ও তার পরিণতি সম্পর্কে না জানে; তবে সে ইমাম আল্লাহর সৃষ্টির ব্যাপারে দলিল (হিসেবে গ্রহণযোগ্য) নয়। [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ২৭৮। (অর্থাৎ গায়েব জানতে হবে, নতুবা ইমাম হতে পারবে না। মনে হচ্ছে যেন তারা ইমামদেরকে মুশরিক না বানানো পর্যন্ত অনুসরণযোগ্য মনে করে না।) [সম্পাদক]] অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ قُل لَّا يَعۡلَمُ مَن فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ ٱلۡغَيۡبَ إِلَّا ٱللَّهُ﴾ [ سورة النمل : 65]
“বল, আল্লাহ ব্যতীত আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে কেউই অদৃশ্য বা গায়েবী বিষয়সমূহের জ্ঞান রাখে না”। — (সূরা আন-নমল: ৬৫) মহান আল্লাহ্ আরও বলেন,
﴿ وَعِندَهُۥ مَفَاتِحُ ٱلۡغَيۡبِ لَا يَعۡلَمُهَآ إِلَّا هُوَ ﴾ [ سورة الأنعام : 59]
“আর অদৃশ্যের চাবিকাঠি তাঁরই নিকট রয়েছে, তিনি ব্যতীত অন্য কেউ তা জনে না”। — (সূরা আল-আন‘আম: ৫৯)
কিন্তু শিয়াগণ তাদের ইমামদেরকে অদৃশ্যের জ্ঞানের ব্যাপারে আল্লাহর সাথে শরিক করে।
কুলাইনী তার গ্রন্থের কোন এক অধ্যায়ে আরও উল্লেখ করেন: ইমামগণকে যদি গোপনে জিজ্ঞেস করা হতো, তবে তারা প্রত্যেক মানুষের যাবতীয় কল্যাণ ও অকল্যাণ বলে দিত।
কুলাইনী ‘উসুলুল কাফী’ (এটা শিয়াদের মহাগ্রন্থ) গ্রন্থের “ইমামগণ ফেরেশতা, নবী ও রাসূলগণের নিকট প্রেরিত সকল জ্ঞান সম্পর্কে অবহিত” ( باب أن الأئمة يعلمون جميع العلوم التي خرجت إلى الملائكة و الأنبياء و الرسل عليهم السلام ) নামক অধ্যায়ে আরও উল্লেখ করেন: সামা‘আ থেকে বর্ণিত, সে আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণনা করেছেন, সে বলল: ‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলার নিকট দুই ধরনের জ্ঞান রয়েছে: এক প্রকারের জ্ঞান সম্পর্কে তাঁর ফেরেশতা, নবী ও রাসূলগণ অবহিত; সুতরাং যে বিষয়ে তাঁর ফেরেশতা, নবী ও রাসূলগণ অবহিত, তা আমরা জানি। আরেক প্রকার জ্ঞান হল যা একচেটিয়া তাঁর (আল্লাহর) নিজের জন্য; সুতরাং সেখান থেকে কোন বিষয়ে যখন আল্লাহর বোধোদয় হয়, তখন তিনি তা আমাদেরকে জানিয়ে দেন এবং আমাদের পূর্বে যেসব ইমাম ছিলেন, তাদের নিকট তা পেশ করেন।’ তোমরা লক্ষ্য কর, তারা তাদের ইমামদেরকে তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী ফেরেশতা, নবী ও রাসূলগণের চেয়ে বেশি জ্ঞানী মনে করে। আর জ্ঞানের ক্ষেত্রে তারা তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার অংশীদার মনে করে। এই সবগুলোই মিথ্যা, বানোয়াট ও কুফরী।
আর ‘উসুলুল কাফী’ এবং শিয়াদের অন্যান্য গ্রন্থসমূহ এই ধরণের মারাত্মক বিষয়াদি দ্বারা পরিপূর্ণ। আমরা এখানে যা উল্লেখ করেছি, তা নিতান্তই কম। আর উর্দু ভাষায় শিয়াদের অনেক কাব্য রয়েছে, যেগুলো আল্লাহর সাথে শির্ক এবং তাদের ইমামদের নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি দ্বারা ভরপুর; তার কিছু অংশে বর্ণিত আছে যে, সকল নবী বিপদ-মুসিবতের সময় আলী’র নিকট সাহায্য-সহযোগিতা চাইত; অতঃপর তিনি তাদেরকে সাহায্য করতেন। সুতরাং নূহ আ. প্লাবনের সময় তার নিকট সাহায্য চেয়েছেন; ইবরাহীম, লুত, হুদ ও শীস আ.-সহ সকলেই তার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করেছেন এবং তিনি তাদের সাহায্য করেছেন। আর আলী’র মু‘জিযাসমূহ খুবই মহান, বিস্ময়কর এবং প্রত্যেক বস্তুর উপর প্রভাবশালী (নাউযুবিল্লাহ)।
আর শিয়াদের নিকট নির্ভরযোগ্য গ্রন্থসমূহ থেকে আমরা কয়েকটি বর্ণনা মাত্র এখানে লিপিবদ্ধ করেছি। পাঠকদের জানা উচিত যে, তাদের গ্রন্থসমূহ এ ধরনের শির্ক মিশ্রিত আকিদায় ভরপুর। সুতরাং এসব ভ্রান্ত আকিদায় বিশ্বাস করার পরও কোন ব্যক্তি মুসলিম থাকতে পারে কি?
কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ٱللَّهُ خَٰلِقُ كُلِّ شَيۡءٖۖ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ وَكِيلٞ ٦٢﴾ [ سورة الزمر : 62]
“আল্লাহ সব কিছুর স্রষ্টা এবং তিনি সকল কিছুর কর্মবিধায়ক”। — (সূরা যুমার: ৬২)
তিনি আরও বলেন:
﴿ وَلَا يُشۡرِكُ فِي حُكۡمِهِۦٓ أَحَدٗا ٢٦ ﴾ [ سورة الكهف : 26]
“তিনি কাউকেও নিজ কর্তৃত্বে শরিক করেন না”। — (সূরা আল-কাহফ: ২৬)
তিনি আরও বলেন:
﴿ ٱللَّهُ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلۡحَيُّ ٱلۡقَيُّومُۚ لَا تَأۡخُذُهُۥ سِنَةٞ وَلَا نَوۡمٞۚ لَّهُۥ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِ ﴾ [ سورة البقرة : 255]
“আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তিনি চিরঞ্জীব, সর্বসত্তার ধারক। তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না। আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সমস্ত তাঁরই।” — (সূরা আল-বাকারা: ২৫৫)
তিনি আরও বলেন:
﴿وَلَقَدۡ أُوحِيَ إِلَيۡكَ وَإِلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكَ لَئِنۡ أَشۡرَكۡتَ لَيَحۡبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٦٥﴾ [ سورة الزمر : 65]
“তোমার প্রতি ও তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবশ্যই ওহী হয়েছে, তুমি আল্লাহর শরিক স্থির করলে তোমার কর্ম তো নিষ্ফল হবে এবং অবশ্য তুমি হবে ক্ষতিগ্রস্ত।” — (সূরা যুমার: ৬৫)
তিনি আরও বলেন:
﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُ﴾ [ سورة النساء : 116]
“নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরিক করাকে ক্ষমা করেন না; এটা ব্যতীত সব কিছু যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন”। — (সূরা আন-নিসা: ১১৬)
তিনি আরও বলেন:
﴿ إِنَّهُۥ مَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِ ٱلۡجَنَّةَ وَمَأۡوَىٰهُ ٱلنَّارُ﴾ [ سورة المائدة : 72]
“কেউ আল্লাহর সাথে শরিক করলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত অবশ্যই নিষিদ্ধ করবেন এবং তার আবাস জাহান্নাম”। — (সূরা আল-মায়িদা: ৭২)
তিনি আরও বলেন:
﴿ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَخۡفَىٰ عَلَيۡهِ شَيۡءٞ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَلَا فِي ٱلسَّمَآءِ ٥ ﴾ [ سورة آل عمران : 5]
“নিশ্চয় আল্লাহর নিকট আসমান ও যমিনে কিছুই গোপন থাকে না”। — (সূরা আলে ইমরান: ৫)
সুতরাং এই আয়াত ও অনুরূপ অন্যান্য আয়াত খুবই স্পষ্ট যে, আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক বস্তুর একক স্রষ্টা এবং আসমান ও যমিনের ব্যবস্থাপক। আর তিনিই প্রত্যেক বস্তুর উপর ক্ষমতাবান এবং তিনিই সব কিছুই জানেন।
পক্ষান্তরে শিয়াগণ আল্লাহ্র গুণাবলীকে তাদের ইমামের জন্য সাব্যস্ত করেন; আর আল্লাহ্র গুণাবলী আল্লাহ ব্যতীত অন্যের জন্য সাব্যস্ত করা কি শির্ক নয়?
আর যে ব্যক্তি এসব গুণাবলী আল্লাহ ব্যতীত অন্যের জন্য সাব্যস্ত করাকে বৈধ বলে বিশ্বাস করে, সে কি মুশরিক নয়? হ্যাঁ, অবশ্যই তা আল্লাহর গুণাবলীর মধ্যে শির্ক। আর এসব কথার প্রবক্তাগণ প্রকৃতই মুশরিক।
البداء শব্দের অর্থ গোপন থাকার পরে প্রকাশ হওয়া; [কুরআনুল কারীমে এ শব্দটি সৃষ্টির গুণ হিসেবে এসেছে, স্রষ্টার জন্য নয়] যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿ وَبَدَا لَهُم مِّنَ ٱللَّهِ مَا لَمۡ يَكُونُواْ يَحۡتَسِبُونَ ٤٧ ﴾ [ سورة الزمر : 47]
“এবং তাদের (কাফেরদের) জন্য আল্লাহর নিকট থেকে এমন কিছু প্রকাশিত হবে, যা তারা কল্পনাও করেনি। —(সূরা আয-যুমার: ৪৭)
অথবা শব্দটির অর্থ: নতুন রায় বা সিদ্ধান্তের উৎপত্তি যা পূর্বে ছিল না; [কুরআনুল কারীমে এ শব্দটি সৃষ্টির গুণ হিসেবে এসেছে, স্রষ্টার জন্য নয়] যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿ثُمَّ بَدَا لَهُم مِّنۢ بَعۡدِ مَا رَأَوُاْ ٱلۡأٓيَٰتِ لَيَسۡجُنُنَّهُۥ حَتَّىٰ حِينٖ ٣٥﴾ [ سورة يوسف : 35]
“নিদর্শনাবলী দেখার পর তাদের [মিসর রাজের সভাসদদের] মনে হল যে, তাকে কিছু কালের জন্য কারারুদ্ধ করে রাখতে হবে।” — (সূরা ইউসূফ: ৩৫)
আর البداء (আল-বাদা) শব্দের দু’টি অর্থই প্রথমে মূর্খতা এবং পরে জ্ঞান প্রকাশ বা হাসিল হওয়াকে আবশ্যক করে তোলে; আর উভয়টিই আল্লাহর ক্ষেত্রে অসম্ভব। কারণ, আল্লাহ তা‘আলার জ্ঞান সর্বপ্রাচীন ও চিরস্থায়ী। কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَعِندَهُۥ مَفَاتِحُ ٱلۡغَيۡبِ لَا يَعۡلَمُهَآ إِلَّا هُوَۚ وَيَعۡلَمُ مَا فِي ٱلۡبَرِّ وَٱلۡبَحۡرِۚ وَمَا تَسۡقُطُ مِن وَرَقَةٍ إِلَّا يَعۡلَمُهَا وَلَا حَبَّةٖ فِي ظُلُمَٰتِ ٱلۡأَرۡضِ وَلَا رَطۡبٖ وَلَا يَابِسٍ إِلَّا فِي كِتَٰبٖ مُّبِينٖ ٥٩ ﴾ [ سورة النمل : 59]
“অদৃশ্যের চাবিকাঠি তাঁরই নিকট রয়েছে, তিনি ব্যতীত অন্য কেউ তা জানে না। জলে ও স্থলে যা কিছু আছে, তা তিনিই অবগত; তাঁর অজ্ঞাতসারে একটি পাতাও পড়ে না। মাটির অন্ধকারে এমন কোন শস্যকণাও অঙ্কুরিত হয় না, আর রসযুক্ত কিংবা শুষ্ক এমন কোন বস্তু নেই, যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই”। — (সূরা আল-আন‘আম: ৫৯)
আর শিয়াদের মতে, البداء তথা অজানার পরে জানার বিষয়টি আল্লাহ তা‘আলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য; যেমন তাদের মৌলিক গ্রন্থসমূহ থেকে উদ্ধৃত নিম্নোক্ত বক্তব্যসমূহ তাই প্রমাণ করে:
মুহাম্মদ ইবন ইয়াকুব আল-কুলাইনী তার ‘উসুলুল কাফী’ গ্রন্থের মধ্যে البداء -এর বিষয়ে একটি পরিপূর্ণ অধ্যায়ের উল্লেখ করেছেন এবং তার নাম দিয়েছেন " باب البداء "; আর তাতে তিনি অনেকগুলো বর্ণনা নিয়ে এসেছেন। তার মধ্য থেকে কিছু বর্ণনা আমরা উল্লেখ করছি:
যুরারা ইবন আ‘ইউন থেকে বর্ণিত, তিনি (জাফর সাদেক অথবা মুসা কাযেম) তাদের একজন থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: البداء -এর মত অন্য কোন কিছুকে আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করে কেউ আল্লাহর ইবাদত করতে পারে নি। [অর্থাৎ আল্লাহর জন্য ‘বাদা’ সাব্যস্ত করার মাধ্যমেই সবচেয়ে বড় ইবাদাত সম্পন্ন হয়, নাউযুবিল্লাহ]
আর ইবনু আবি উমাইয়েরের এক বর্ণনায় আছে, তিনি হিশাম ইবন সালেম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণনা করেন: আল্লাহ তা‘আলাকে البداء - ‘বাদা’ সাব্যস্ত করার মত অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্মানিত করা হয় না।
আর মারাযেম ইবন হাকিম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আবূ আবদিল্লাহ আ.-কে বলতে শুনেছি: আল্লাহর জন্য পাঁচটি বিষয়ের স্বীকৃতি দেয়ার পূর্বে কোন নবী ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারত না; সেগুলো হল: البداء বা (কোন গোপন কিছু প্রকাশ পাওয়া) المشيئة বা (ইচ্ছা) সিজদা, ইবাদত বা দাসত্ব এবং আনুগত্য।
রাইয়ান ইবন সালত থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রেযা আ.-কে বলতে শুনেছি: আল্লাহ যত নবী প্রেরণ করেছেন, তাদের প্রত্যেকেই মদকে নিষিদ্ধ করত এবং আল্লাহর জন্য البداء -এর স্বীকৃতি প্রদান করত।
কুলাইনী নিজেও বলেন: আবূ জাফরের পরে আল্লাহর মনে হল আবূ মুহাম্মদের কথা, যা তিনি আগে জানতেন না; যেমনিভাবে তাঁর মনে হল ইসমাঈল চলে যাওয়ার পর মূসার কথা [কারণ ইসমাইল জা‘ফর সাদেকের বড় সন্তান ছিলেন। কিন্তু তার মৃত্যুর পর শিয়ারা মূসা কাযেমকে তাদের ইমাম বানায়। এখন তারা সমস্যাগ্রস্ত হয়ে পড়ে, কারণ সাধারণত বড় ছেলেকেই তারা ইমাম ধরে নিয়েছিল, কিন্তু সে তো মারা গেল, তাহলে এখন কিভাবে ছোট ছেলেকে ইমাম বানাবে? তখন তাদের মনে হলো যে তারা ভুল করেনি, বরং আল্লাহই ভুল করেছেন, তিনি প্রথমে ইসমাইলকে ইমাম বানালেও পরে তাঁর কাছে স্পষ্ট হলো যে, ইমাম আসলে ইসমাইল নয় বরং মূসা। নাউযুবিল্লাহ [সম্পাদক]], যখন তার অবস্থা সম্পর্কে তিনি পরিষ্কার ধারণা পেলেন। আর তিনি (আল্লাহ) হলেন তেমন, যেমন তোমার নিকট তোমার মনে যা উদয় হয়; যদিও বাতিলগণ তা অপছন্দ করুক। আর আবূ মুহাম্মদ আমার ছেলে এবং আমার পরবর্তী বংশধর। তার নিকট প্রয়োজনীয় জ্ঞান রয়েছে এবং তার সাথে রয়েছে ইমামতের উপকরণ। [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ৪০] আর এভাবেই শি‘আরা আল্লাহর উপর ও তাদের ইমামদের উপর মিথ্যারোপ করে; তারা আল্লাহর ব্যাপারে অন্যায়ভাবে জাহেলী ধারণা পোষণ করে। আর তারা দাবি করে যে, আল্লাহ আবূ জাফর (মুহাম্মাদ ইবন আলী)কে ইমাম বানানোর ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন; অতঃপর সে যখন ইমাম হওয়ার পূর্বেই মারা গেল, তখন মহান ক্ষমতাধর আল্লাহর মনে হল যে, ইমাম হবে আবূ মুহাম্মদ; অতঃপর তিনি তাই করলেন। আর এটা অনুরূপ যে, আল্লাহ চেয়েছিলেন ইসমাঈলকে ইমাম বানাতে, অতঃপর (নাউযুবিল্লাহ) আল্লাহর কাছে নতুন কিছু প্রকাশ পেল; তখন তিনি পূর্ববর্তী রায়কে পরিবর্তন করেছেন এবং মূসা আল-কাযেমকে মানুষের ইমাম বানিয়েছেন। আর এভাবেই তারা তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র উপর মিথ্যারোপ করেছে। সুতরাং তারা যা বলে, তার কারণে তাদের ধ্বংস অনিবার্য।
তারা ভুলে গেছে -আল্লাহ যে তাদেরকে অভিশাপ দিন- তাদের এই মিথ্যা বক্তব্যসমূহের ফলে আল্লাহ তা‘আলার প্রতি অজ্ঞতার সম্পর্ক আবশ্যক হয়ে পড়ে; আর তা স্পষ্ট কুফরী।
আর কুলাইনী আবূ হামযা আস-সুমালী থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন আমি আবূ জাফর আ.-কে বলতে শুনেছি: হে সাবিত! নিশ্চয় আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা‘আলা এই বিষয়ের (মাহাদী আগমনের) সময় নির্ধারণ করেছেন সত্তর বছরের মধ্যে। অতঃপর যখন হোসাইন আ. নিহত হলেন, তখন জগতবাসীর উপর আল্লাহর প্রচণ্ড রাগ হয় এবং তার আগমনের সময়কাল একশত চল্লিশ [অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার নিকট এই জ্ঞান ছিল না যে, হোসাইন শীঘ্রই মারা যাবে; অতঃপর যখন তিনি তা জানতে পারলেন, তখন তিনি বিষয়টিকে বিলম্বিত করে দিলেন। (আল্লাহ তাদেরেকে ধ্বংস করুন)।] বছরে পিছিয়ে দেন। অতঃপর আমরা তোমাদের নিকট তার বর্ণনা দিলাম এবং তোমরাও এই ঘটনা প্রচার করে দিলে। সুতরাং তোমরা গোপন বিষয় স্পষ্ট করে দিলে; আর আল্লাহ তা‘আলা এর পরে আমাদের জানা মতে তার আগমনের কোন সময় নির্ধারণ করেন নি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ يَمۡحُواْ ٱللَّهُ مَا يَشَآءُ وَيُثۡبِتُۖ وَعِندَهُۥٓ أُمُّ ٱلۡكِتَٰبِ ٣٩﴾ [ سورة الرعد : 39]
“আল্লাহ যা ইচ্ছা তা নিশ্চিহ্ন করেন এবং যা ইচ্ছা তা প্রতিষ্ঠিত রাখেন; আর তাঁরই নিকট রয়েছে উম্মুল কিতাব।” —(সূরা আর-রা‘দ: ৩৯) আবূ হামযা বলেন: আমি এই ঘটনাটি আবূ আবদিল্লাহ আ.-এর নিকট বর্ণনা করলাম; তখন তিনি বললেন: বিষয়টি এই রকমই ছিল। [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ২৩২; (ভারত প্রকাশনা)।]
আর তার কথায় ‘এই বিষয় দ্বারা’ ( بهذا الأمر ) উদ্দেশ্য হল, ইমাম মাহদী’র আত্মপ্রকাশ। অতঃপর তাদের এই সকল কথা এবং দাবিসমূহ সুস্পষ্ট ভ্রান্ত দাবি ও অসার। কারণ, البداء -এর আকিদা (নাউযুবিল্লাহ) এই কথা আবশ্যক করে তোলে যে, আল্লাহ তা‘আলার অবস্থা হল এমন, এসব বিষয় তিনি জানতেন না, যেগুলো পরবর্তীতে এসেছে। অতঃপর যখন তা প্রকাশ পেল এবং আল্লাহ তা‘আলা তা জানতে পারলেন, তখন তিনি তাঁর পুরাতন রায়কে পরিবর্তন করলেন এবং নতুন প্রেক্ষাপট ও অবস্থার আলোকে নতুর রায় বা সিদ্ধান্ত প্রস্তুত করলেন। অথচ আল্লাহ তা‘আলার প্রতি অজ্ঞতার সম্পর্ক জুড়ে দেয়াটা স্পষ্ট কুফরী, যা যথাস্হানে আলোচিত হয়েছে।
﴿ وَبَدَا لَهُم مِّنَ ٱللَّهِ مَا لَمۡ يَكُونُواْ يَحۡتَسِبُونَ ٤٧ ﴾ [ سورة الزمر : 47]
“এবং তাদের (কাফেরদের) জন্য আল্লাহর নিকট থেকে এমন কিছু প্রকাশিত হবে, যা তারা কল্পনাও করেনি। —(সূরা আয-যুমার: ৪৭)
অথবা শব্দটির অর্থ: নতুন রায় বা সিদ্ধান্তের উৎপত্তি যা পূর্বে ছিল না; [কুরআনুল কারীমে এ শব্দটি সৃষ্টির গুণ হিসেবে এসেছে, স্রষ্টার জন্য নয়] যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿ثُمَّ بَدَا لَهُم مِّنۢ بَعۡدِ مَا رَأَوُاْ ٱلۡأٓيَٰتِ لَيَسۡجُنُنَّهُۥ حَتَّىٰ حِينٖ ٣٥﴾ [ سورة يوسف : 35]
“নিদর্শনাবলী দেখার পর তাদের [মিসর রাজের সভাসদদের] মনে হল যে, তাকে কিছু কালের জন্য কারারুদ্ধ করে রাখতে হবে।” — (সূরা ইউসূফ: ৩৫)
আর البداء (আল-বাদা) শব্দের দু’টি অর্থই প্রথমে মূর্খতা এবং পরে জ্ঞান প্রকাশ বা হাসিল হওয়াকে আবশ্যক করে তোলে; আর উভয়টিই আল্লাহর ক্ষেত্রে অসম্ভব। কারণ, আল্লাহ তা‘আলার জ্ঞান সর্বপ্রাচীন ও চিরস্থায়ী। কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَعِندَهُۥ مَفَاتِحُ ٱلۡغَيۡبِ لَا يَعۡلَمُهَآ إِلَّا هُوَۚ وَيَعۡلَمُ مَا فِي ٱلۡبَرِّ وَٱلۡبَحۡرِۚ وَمَا تَسۡقُطُ مِن وَرَقَةٍ إِلَّا يَعۡلَمُهَا وَلَا حَبَّةٖ فِي ظُلُمَٰتِ ٱلۡأَرۡضِ وَلَا رَطۡبٖ وَلَا يَابِسٍ إِلَّا فِي كِتَٰبٖ مُّبِينٖ ٥٩ ﴾ [ سورة النمل : 59]
“অদৃশ্যের চাবিকাঠি তাঁরই নিকট রয়েছে, তিনি ব্যতীত অন্য কেউ তা জানে না। জলে ও স্থলে যা কিছু আছে, তা তিনিই অবগত; তাঁর অজ্ঞাতসারে একটি পাতাও পড়ে না। মাটির অন্ধকারে এমন কোন শস্যকণাও অঙ্কুরিত হয় না, আর রসযুক্ত কিংবা শুষ্ক এমন কোন বস্তু নেই, যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই”। — (সূরা আল-আন‘আম: ৫৯)
আর শিয়াদের মতে, البداء তথা অজানার পরে জানার বিষয়টি আল্লাহ তা‘আলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য; যেমন তাদের মৌলিক গ্রন্থসমূহ থেকে উদ্ধৃত নিম্নোক্ত বক্তব্যসমূহ তাই প্রমাণ করে:
মুহাম্মদ ইবন ইয়াকুব আল-কুলাইনী তার ‘উসুলুল কাফী’ গ্রন্থের মধ্যে البداء -এর বিষয়ে একটি পরিপূর্ণ অধ্যায়ের উল্লেখ করেছেন এবং তার নাম দিয়েছেন " باب البداء "; আর তাতে তিনি অনেকগুলো বর্ণনা নিয়ে এসেছেন। তার মধ্য থেকে কিছু বর্ণনা আমরা উল্লেখ করছি:
যুরারা ইবন আ‘ইউন থেকে বর্ণিত, তিনি (জাফর সাদেক অথবা মুসা কাযেম) তাদের একজন থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: البداء -এর মত অন্য কোন কিছুকে আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করে কেউ আল্লাহর ইবাদত করতে পারে নি। [অর্থাৎ আল্লাহর জন্য ‘বাদা’ সাব্যস্ত করার মাধ্যমেই সবচেয়ে বড় ইবাদাত সম্পন্ন হয়, নাউযুবিল্লাহ]
আর ইবনু আবি উমাইয়েরের এক বর্ণনায় আছে, তিনি হিশাম ইবন সালেম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণনা করেন: আল্লাহ তা‘আলাকে البداء - ‘বাদা’ সাব্যস্ত করার মত অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্মানিত করা হয় না।
আর মারাযেম ইবন হাকিম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আবূ আবদিল্লাহ আ.-কে বলতে শুনেছি: আল্লাহর জন্য পাঁচটি বিষয়ের স্বীকৃতি দেয়ার পূর্বে কোন নবী ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারত না; সেগুলো হল: البداء বা (কোন গোপন কিছু প্রকাশ পাওয়া) المشيئة বা (ইচ্ছা) সিজদা, ইবাদত বা দাসত্ব এবং আনুগত্য।
রাইয়ান ইবন সালত থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রেযা আ.-কে বলতে শুনেছি: আল্লাহ যত নবী প্রেরণ করেছেন, তাদের প্রত্যেকেই মদকে নিষিদ্ধ করত এবং আল্লাহর জন্য البداء -এর স্বীকৃতি প্রদান করত।
কুলাইনী নিজেও বলেন: আবূ জাফরের পরে আল্লাহর মনে হল আবূ মুহাম্মদের কথা, যা তিনি আগে জানতেন না; যেমনিভাবে তাঁর মনে হল ইসমাঈল চলে যাওয়ার পর মূসার কথা [কারণ ইসমাইল জা‘ফর সাদেকের বড় সন্তান ছিলেন। কিন্তু তার মৃত্যুর পর শিয়ারা মূসা কাযেমকে তাদের ইমাম বানায়। এখন তারা সমস্যাগ্রস্ত হয়ে পড়ে, কারণ সাধারণত বড় ছেলেকেই তারা ইমাম ধরে নিয়েছিল, কিন্তু সে তো মারা গেল, তাহলে এখন কিভাবে ছোট ছেলেকে ইমাম বানাবে? তখন তাদের মনে হলো যে তারা ভুল করেনি, বরং আল্লাহই ভুল করেছেন, তিনি প্রথমে ইসমাইলকে ইমাম বানালেও পরে তাঁর কাছে স্পষ্ট হলো যে, ইমাম আসলে ইসমাইল নয় বরং মূসা। নাউযুবিল্লাহ [সম্পাদক]], যখন তার অবস্থা সম্পর্কে তিনি পরিষ্কার ধারণা পেলেন। আর তিনি (আল্লাহ) হলেন তেমন, যেমন তোমার নিকট তোমার মনে যা উদয় হয়; যদিও বাতিলগণ তা অপছন্দ করুক। আর আবূ মুহাম্মদ আমার ছেলে এবং আমার পরবর্তী বংশধর। তার নিকট প্রয়োজনীয় জ্ঞান রয়েছে এবং তার সাথে রয়েছে ইমামতের উপকরণ। [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ৪০] আর এভাবেই শি‘আরা আল্লাহর উপর ও তাদের ইমামদের উপর মিথ্যারোপ করে; তারা আল্লাহর ব্যাপারে অন্যায়ভাবে জাহেলী ধারণা পোষণ করে। আর তারা দাবি করে যে, আল্লাহ আবূ জাফর (মুহাম্মাদ ইবন আলী)কে ইমাম বানানোর ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন; অতঃপর সে যখন ইমাম হওয়ার পূর্বেই মারা গেল, তখন মহান ক্ষমতাধর আল্লাহর মনে হল যে, ইমাম হবে আবূ মুহাম্মদ; অতঃপর তিনি তাই করলেন। আর এটা অনুরূপ যে, আল্লাহ চেয়েছিলেন ইসমাঈলকে ইমাম বানাতে, অতঃপর (নাউযুবিল্লাহ) আল্লাহর কাছে নতুন কিছু প্রকাশ পেল; তখন তিনি পূর্ববর্তী রায়কে পরিবর্তন করেছেন এবং মূসা আল-কাযেমকে মানুষের ইমাম বানিয়েছেন। আর এভাবেই তারা তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র উপর মিথ্যারোপ করেছে। সুতরাং তারা যা বলে, তার কারণে তাদের ধ্বংস অনিবার্য।
তারা ভুলে গেছে -আল্লাহ যে তাদেরকে অভিশাপ দিন- তাদের এই মিথ্যা বক্তব্যসমূহের ফলে আল্লাহ তা‘আলার প্রতি অজ্ঞতার সম্পর্ক আবশ্যক হয়ে পড়ে; আর তা স্পষ্ট কুফরী।
আর কুলাইনী আবূ হামযা আস-সুমালী থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন আমি আবূ জাফর আ.-কে বলতে শুনেছি: হে সাবিত! নিশ্চয় আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা‘আলা এই বিষয়ের (মাহাদী আগমনের) সময় নির্ধারণ করেছেন সত্তর বছরের মধ্যে। অতঃপর যখন হোসাইন আ. নিহত হলেন, তখন জগতবাসীর উপর আল্লাহর প্রচণ্ড রাগ হয় এবং তার আগমনের সময়কাল একশত চল্লিশ [অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার নিকট এই জ্ঞান ছিল না যে, হোসাইন শীঘ্রই মারা যাবে; অতঃপর যখন তিনি তা জানতে পারলেন, তখন তিনি বিষয়টিকে বিলম্বিত করে দিলেন। (আল্লাহ তাদেরেকে ধ্বংস করুন)।] বছরে পিছিয়ে দেন। অতঃপর আমরা তোমাদের নিকট তার বর্ণনা দিলাম এবং তোমরাও এই ঘটনা প্রচার করে দিলে। সুতরাং তোমরা গোপন বিষয় স্পষ্ট করে দিলে; আর আল্লাহ তা‘আলা এর পরে আমাদের জানা মতে তার আগমনের কোন সময় নির্ধারণ করেন নি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ يَمۡحُواْ ٱللَّهُ مَا يَشَآءُ وَيُثۡبِتُۖ وَعِندَهُۥٓ أُمُّ ٱلۡكِتَٰبِ ٣٩﴾ [ سورة الرعد : 39]
“আল্লাহ যা ইচ্ছা তা নিশ্চিহ্ন করেন এবং যা ইচ্ছা তা প্রতিষ্ঠিত রাখেন; আর তাঁরই নিকট রয়েছে উম্মুল কিতাব।” —(সূরা আর-রা‘দ: ৩৯) আবূ হামযা বলেন: আমি এই ঘটনাটি আবূ আবদিল্লাহ আ.-এর নিকট বর্ণনা করলাম; তখন তিনি বললেন: বিষয়টি এই রকমই ছিল। [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ২৩২; (ভারত প্রকাশনা)।]
আর তার কথায় ‘এই বিষয় দ্বারা’ ( بهذا الأمر ) উদ্দেশ্য হল, ইমাম মাহদী’র আত্মপ্রকাশ। অতঃপর তাদের এই সকল কথা এবং দাবিসমূহ সুস্পষ্ট ভ্রান্ত দাবি ও অসার। কারণ, البداء -এর আকিদা (নাউযুবিল্লাহ) এই কথা আবশ্যক করে তোলে যে, আল্লাহ তা‘আলার অবস্থা হল এমন, এসব বিষয় তিনি জানতেন না, যেগুলো পরবর্তীতে এসেছে। অতঃপর যখন তা প্রকাশ পেল এবং আল্লাহ তা‘আলা তা জানতে পারলেন, তখন তিনি তাঁর পুরাতন রায়কে পরিবর্তন করলেন এবং নতুন প্রেক্ষাপট ও অবস্থার আলোকে নতুর রায় বা সিদ্ধান্ত প্রস্তুত করলেন। অথচ আল্লাহ তা‘আলার প্রতি অজ্ঞতার সম্পর্ক জুড়ে দেয়াটা স্পষ্ট কুফরী, যা যথাস্হানে আলোচিত হয়েছে।
মুহাম্মদ ইবন ইয়াকুব আল-কুলাইনী তার ‘উসুলুল কাফী’ গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখ করেছেন:
আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আলী আ. যা কিছু নিয়ে এসেছেন, তা তিনি গ্রহণ করব এবং যা থেকে নিষেধ করেছেন, তা থেকে তিনি বিরত থাকব। তিনি (আলী) মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মত মর্যাদাসম্পন্ন। আর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মর্যাদা আল্লাহর সকল সৃষ্টির উপর স্বীকৃত। কেউ আলীর কথার উপর কথা বলা যেন আল্লাহ ও তার রাসূলের উপর কথা বলা। আর আলীর কোন কথার বিরুদ্ধাচারণ করা আল্লাহর সাথে শির্ক করার পর্যায়ে।...... অনুরূপভাবে এ বিধান বহাল থাকবে ক্রমান্বয়ে আগত হেদায়াতের ইমামদের বেলায়ও [অর্থাৎ আলীর জন্য যা সাব্যস্ত করা হলো তা শুধু তার সাথেই বিশেষিত নয়; বরং তাদের অন্যান্য ইমামদের ক্ষেত্রেও তা সমভাবে প্রযোজ্য। সুতরাং তাদের মর্যাদাও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মর্যাদার অনুরূপ, কেউ তাদের উপর কথা বলার অর্থ আল্লাহ ও তার রাসূলের উপর কথা বলা, কেউ তাদের বর্ণিত ছোট বড় যে কোন বিধানের বিরোধিতা করার অর্থ আল্লাহর সাথে শির্কের নামান্তর। নাউযুবিল্লাহ কিভাবে তারা তাদের ইমামদেরকে আল্লাহর সমকক্ষ নির্ধারণ করে নিয়েছে!!!! [সম্পাদক]]; আল্লাহ তাদেরকে যমিনের খুঁটি বানিয়েছেন, যাতে যমিন তার অধিবাসীদের নিয়ে স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং যমিনের উপরে ও নীচে যারা আছেন, তাদের জন্য তাঁর পরিপূর্ণ দলিল বানিয়েছেন। আর আমীরুল মুমিনীন আ. বেশি বেশি বলতেন: জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যে আমি আল্লাহর বণ্টনকারী; আমি সত্য-মিথ্যার বড় পার্থক্যকারী; আমি লাঠি ও লৌহযন্ত্রের অধিকারী। আর আমাকে স্বীকৃতি দিয়েছে সকল ফেরেশতা, জিবরাঈল এবং রাসূলগণ, যেমনিভাবে তারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। আর আমি তার (দায়িত্বের) বোঝার মতই বোঝা বহন করেছি; আর সেই বোঝাটি হল রব তথা প্রতিপালকের বোঝা। [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), হুজ্জত অধ্যায়, পৃ. ১১৭]
কুলাইনী আরও উল্লেখ করেন, ইমাম জাফর সাদিক বলেন: আমরা আল্লাহর জ্ঞানভাণ্ডার; আমরা আল্লাহর আদেশের ব্যাখ্যা; আমরা নিষ্পাপ জাতি। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের আনুগত্য করতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং আমাদের বিরুদ্ধাচরণ করতে নিষেধ করেছেন। আমরা আসমানের নীচে এবং যমিনের উপরে আল্লাহর পরিপূর্ণ দলিল। [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ১৬৫]
কুলাইনী আরও উল্লেখ করেন যে, আমি আবূ আবদিল্লাহ আ.-কে বলতে শুনেছি: ইমামগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমান মর্যাদা সম্পন্ন; কিন্তু তারা নবী নন। আর তাদের জন্য বেশী নারী বিয়ে করা বৈধ নয়, যেমনিভাবে নবীর জন্য বৈধ ছিল। সুতরাং এটা ছাড়া তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমান মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي )]
কুলাইনী " باب ما نص الله عز و جل و رسوله على الأئمة عليهم السلام واحدا فواحدا " (এক এক করে ইমাম আ.-দের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের বক্তব্যের অধ্যায়)-এ উল্লেখ করেন: আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿ ٱلنَّبِيُّ أَوۡلَىٰ بِٱلۡمُؤۡمِنِينَ مِنۡ أَنفُسِهِمۡۖ وَأَزۡوَٰجُهُۥٓ أُمَّهَٰتُهُمۡۗ وَأُوْلُواْ ٱلۡأَرۡحَامِ بَعۡضُهُمۡ أَوۡلَىٰ بِبَعۡضٖ فِي كِتَٰبِ ٱللَّهِ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ وَٱلۡمُهَٰجِرِينَ﴾ [ سورةالأحزاب :6]
“নবী মুমিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা ঘনিষ্ঠতর এবং তার স্ত্রীগণ তাদের মাতা। আল্লাহর বিধান অনুসারে মুমিন ও মুহাজির অপেক্ষা— যারা আত্মীয় তারা পরস্পরের নিকটতর।” — (সূরা আল-আহযাব: ৬); —প্রসঙ্গে আবূ জাফর আ. থেকে বর্ণিত যে, জিজ্ঞাসা করা হল, কাদের ব্যাপারে এই আয়াত নাযিল হয়েছে? তখন তিনি বললেন: এই আয়াত নাযিল হয়েছে আমীর বা ইমামদের ব্যাপারে; এই আয়াতটি হোসাইন আ.-এর পরে তার সন্তানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সুতরাং আমরা ইমামত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পরিবার-পরিজনের ব্যাপারে মুমিন, মুহাজির ও আনসারদের চেয়ে ঘনিষ্ঠতর। আমি বললাম, এর মধ্যে জাফরের সন্তানদের [উদ্দেশ্য, আপনাদের মত জা‘ফর তাইয়ার ও তার বংশধরদের জন্য কোন বৈশিষ্ট্য আছে কি ? কারণ জা‘ফর তো আলী রা. এর ভাই আর তার সন্তানরাও আলী রা. এরই ভ্রাতুষ্পুত্র।] কোন অংশ আছে কি? [অর্থাৎ তারা কি ইমাম হওয়ার যোগ্য? তাদের বংশধরদের কেউ কি ইমাম হওয়ার দাবী করতে পারে?] তিনি বললেন: না; অতঃপর আমি বললাম: এর মধ্যে আব্বাসের সন্তানদের কোন অংশ আছে কি? তিনি বললেন: না; অতঃপর আমি বনী আবদুল মুত্তালিবের মধ্যকার একজন একজন করে তার নিকট জিজ্ঞাসা করলাম, এর মধ্যে তাদের কোন অংশ আছে কিনা? তিনি প্রত্যেকের ব্যাপারে না বললেন। আর আমি হাসান আ.-এর সন্তানের কথা ভুলে গেছি; অতঃপর তার নিকট আবার হাজির হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম: হাসানের সন্তানের জন্য এর মধ্যে কোন অংশ আছে কি? তিনি বললেন: না [হাসানের বংশধরদের কেউ শিয়াদের নিকট ইমাম নয়। এর কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা তারা দিতে পারবে না। তবে সম্ভবত এটা এজন্যে যে, হাসান পারস্য রাজকুমারী বিয়ে করেন নি, যেমনটি হুসাইন করেছিলেন !!!। [সম্পাদক]], আল্লাহর শপথ করে বলছি হে আবদুর রহীম! এর মধ্যে আমরা ব্যতীত কোন মুহাম্মদী’র জন্য কোন অংশ নেই। [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ১৭৭]
ইমামদের আনুগত্য ফরয হওয়ার অধ্যায় [আল-কুলাইনি, উসুলুল কাফী [সম্পাদক]]:
আবূ সাবাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি আবূ আবদিল্লাহ আ.-কে বলতে শুনেছি: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আলী ইমাম; আল্লাহ তার আনুগত্য করাকে ফরয করে দিয়েছেন। আর নিশ্চয় হাসান ইমাম; আল্লাহ তার আনুগত্য করাকে ফরয করে দিয়েছেন এবং হোসাইনও ইমাম; আল্লাহ তার আনুগত্য করাকে ফরয করে দিয়েছেন। আর আলী ইবন হোসাইন ইমাম; আল্লাহ তার আনুগত্য করাকে ফরয করে দিয়েছেন এবং মুহাম্মদ ইবন আলীও ইমাম; আল্লাহ তার আনুগত্য করাকে ফরয করে দিয়েছেন। [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ১০৯]
কুলাইনী আরও উল্লেখ করেন, ইমাম মুহাম্মদ বাকের বলেন: আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে কদরের রাতসমূহে নবী এবং অসী [শিয়ারা নবীর জন্য অসী থাকতে হবে বলে মিথ্যা বিশ্বাস ও মত চালু করেছে। সেজন্য তারা প্রত্যেক নবীর জন্য অসী নির্ধারণ করে থাকে। অর্থাৎ তাদের মতে, নবী অবশ্যই তার মৃত্যুর পরে তার মিশন বাস্তবায়ণ করার জন্য একজনকে অসিয়ত করে যাবেন, তাকে বলা হবে, অসী। তাদের এসব পুরেপুরিই মিথ্যাচার [সম্পাদক]]দের নিকট নির্দেশ আসত যে, এটা কর; আর এই নির্দেশটি তারা ভালভাবেই শিখেছিল, কিভাবে তারা তা কার্যে পরিণত করবে। [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ১৫৪]
শিয়াগণ তাদের নিজেদের মনগড়া মতে ইমামতের (নেতৃত্বের) অর্থ আবিষ্কার করেছে; এমনকি তারা ইমামকে আল্লাহর নবীদের মত নিষ্পাপ মনে করে এবং তারা তাকে অদৃশ্যজগতের জ্ঞানের অধিকারী মনে করে। আর তারা তাদের এই লক্ষ্যকে বাস্তবায়নের জন্য অসংখ্য মিথ্যা ও বানোয়াট বর্ণনা উপস্থাপন করে। অথচ বাস্তব ও সত্য কথা হচ্ছে, অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। আর এই শব্দটি মুমিন ও কাফির উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿ إِنِّي جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ إِمَامٗا﴾ [ سورة البقرة : 124]
“আমি তোমাকে মানবজাতির নেতা বানাচ্ছি” —(সূরা আল-বাকারা: ১২৪)
﴿رَبَّنَا هَبۡ لَنَا مِنۡ أَزۡوَٰجِنَا وَذُرِّيَّٰتِنَا قُرَّةَ أَعۡيُنٖ وَٱجۡعَلۡنَا لِلۡمُتَّقِينَ إِمَامًا ٧٤ ﴾ [ سورة الفرقان : 74]
“হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান কর, যারা হবে আমাদের জন্য নয়নপ্রীতিকর এবং আমাদেরকে কর মুত্তাকীদের জন্য অনুসরণযোগ্য” — (সূরা আল-ফুরকান: ৭৪)
আর কাফিরের ক্ষেত্রে ‘ইমাম’ শব্দের ব্যবহারে যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿ فَقَٰتِلُوٓاْ أَئِمَّةَ ٱلۡكُفۡرِ ﴾ [ سورة التوبة : 12]
“তবে কাফিরদের প্রধানদের সাথে যুদ্ধ কর” — (সূরা আত-তাওবা: ১২)
﴿وَجَعَلۡنَٰهُمۡ أَئِمَّةٗ يَدۡعُونَ إِلَى ٱلنَّارِ﴾ [ سورة القصص : 41]
“আর আমি তাদেরেকে নেতা বানিয়েছিলাম; তারা জনগণকে জাহান্নামের দিকে আহ্বান করত”। — (সূরা আল-কাসাস: ৪১)
সুতরাং এই ইমাম শব্দটি নিষ্পাপ হওয়া, অদৃশ্যজগতের জ্ঞান রাখা এবং বিভিন্ন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা থাকতে হবে এমনটি দাবি করে না। আর তাদের নিকট শরীয়তের এমন কোন প্রমাণ নেই, যার দ্বারা তারা ইমামের জন্য যেসব গুণাবলী নির্ধারণ করেছে, তা প্রমাণ করতে পারে। তবে হ্যাঁ, আল্লাহর কিতাব চারটি স্তর বিন্যাস করেছে; যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿ وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَ فَأُوْلَٰٓئِكَ مَعَ ٱلَّذِينَ أَنۡعَمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِم مِّنَ ٱلنَّبِيِّۧنَ وَٱلصِّدِّيقِينَ وَٱلشُّهَدَآءِ وَٱلصَّٰلِحِينَۚ وَحَسُنَ أُوْلَٰٓئِكَ رَفِيقٗا ٦٩﴾ [ سورة النساء : 69]
“আর কেউ আল্লাহ এবং রাসূলের আনুগত্য করলে সে নবী, সত্যনিষ্ঠ, শহীদ ও সৎকর্মপরায়ণ— যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন— তাদের সঙ্গী হবে এবং তারা কত উত্তম সঙ্গী!” — (সূরা আন-নিসা: ৬৯)
সুতরাং এই চার স্তরের মধ্যে ইমামতের পদ নেই, যা শিয়াগণ আবিষ্কার করেছে এবং তাদের মাযহাবের ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। অথচ আলী ও তাঁর পরিবার-পরিজন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম (তার আনুগত্য করা ফরয অথবা সে নিষ্পাপ) এই অর্থে ইমাম হওয়ার তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। কারণ, ওসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’র শাহাদাতের পর যখন জনগণ আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’র হাতে আনুগত্যের শপথ নিতে চাইল এবং তারা বলল, আপনি আপনার হাত প্রসারিত করুন, আমরা আপনার নিকট আপনার খেলাফতের অধীনে থাকার জন্য আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করব; তখন তিনি বললেন: তোমরা আমাকে মাফ কর (মুক্তি দাও) এবং আমি ভিন্ন অন্য একজনকে খোঁজ করে বের কর; আর তোমরা যদি আমাকে রুখসত দাও, তবে আমি তোমাদের মত একজন হব এবং তোমরা যাকে তোমাদের শাসনক্ষমতা দান করবে, আমি আলী তোমাদের চেয়ে বেশি তার কথা শুনব এবং তার আনুগত্য করব; আর আমার চেয়ে তোমাদের ভাল আমীরের জন্য আমি হব উত্তম সাহায্যকারী। [নাহজুল বালাগাহ ( نهج البلاغة ), প্রথম খণ্ড, পৃ. ১৮৩]
আর এই বক্তব্যটি নাহজুল বালাগাহ ( نهج البلاغة )-এর মধ্যে উদ্ধৃত; আর এই গ্রন্থটি শিয়াদের গ্রন্থসমূহের মধ্যে অন্যতম, যার উপর তারা নির্ভর করে থাকে।(?)
সুতরাং তার ইমামত (নেতৃত্ব) যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত হত, তা হলে তিনি এই ধরনের ওযর পেশ করতেন না। কারণ, আল্লাহর পক্ষ থেকে ইমামতের দায়িত্ব নির্ধারণ করে দেয়া হলে [যেমনটি শিয়ারা দাবী করে থাকে। [সম্পাদক]] তার আনুগত্য করা ইমাম ও প্রজাসাধারণ সবার উপরই ওয়াজিব। অনুরূপভাবে হাসান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর ইমামত (নেতৃত্ব)-কে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’র নিকট অর্পণ করেছেন এবং তাঁর হাতে আনুগত্যের শপথ করেছেন। অনুরূপভাবে হোসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুও মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’র হাতে আনুগত্যের শপথ করেছেন। [মা‘রেফাতু আখবারির রিজাল ( معرفة أخبار الرجال ), (রিজালু কাশী) পৃ.৭২।]
সুতরাং হাসান ও হোসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা যদি আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে নির্দেশনার দ্বারা ইমাম হতেন, তবে তাঁরা মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’র হাতে আনুগত্যের শপথ করতেন না এবং তাঁর নিকট ক্ষমতার বিষয়টি অর্পণ করতেন না।
আর খলীফা মামুনুর রশিদ আলী রেযা র.-কে বলেন: আমি চাই আমি নিজেকে খেলাফতের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নিব এবং সে পদে আপনাকে নিয়োগ দিব; আর আমি আপনার নিকট আনুগত্যের শপথ নিব। তখন তিনি বললেন, আমি স্বেচ্ছায় কখনও এই কাজ করব না।
সুতরাং এটাও প্রমাণ করে যে, ইমাম আলী রেযা র. ইমামত তথা নেতৃত্ব গ্রহণ করেন নি। অতএব, ইমামত (আল্লাহর পক্ষ থেকে) নির্দেশিত কোন ফরয বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত নয়, যার কারণে রাফেযী ও শিয়াগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণকে কাফির বলে আখ্যায়িত করেছে; যে বিষয়ে অচিরেই আলোচনা আসছে ইনশাআল্লাহ।
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যেসব গুণাবলী আমরা বিশ্বাস করে থাকি, সেগুলো আল-কুরআন ও হাদিসে নববীর বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত; সুতরাং আল-কুরআন সুস্পষ্ট ভাষায় বলে:
﴿ وَمَآ أَرۡسَلۡنَٰكَ إِلَّا رَحۡمَةٗ لِّلۡعَٰلَمِينَ ١٠٧ ﴾ [ سورة الأنبياء : 107]
“আমি তো তোমাকে বিশ্বজগতের প্রতি কেবল রহমতরূপেই প্রেরণ করেছি।” — (সূরা আল-আম্বিয়া: ১০৭)
﴿ وَمَآ أَرۡسَلۡنَٰكَ إِلَّا كَآفَّةٗ لِّلنَّاسِ بَشِيرٗا وَنَذِيرٗا ﴾ [ سورة سبا : 28]
“আমি তো তোমাকে সমগ্র মানবজাতির প্রতি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি।” — (সূরা সাবা: ২৮)
﴿ قُلۡ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنِّي رَسُولُ ٱللَّهِ إِلَيۡكُمۡ جَمِيعًا ﴾ [ سورة الأعراف : 158]
“বল, হে মানুষ! আমি তোমাদের সকলের জন্য আল্লাহর রাসূল”। — (সূরা আল-আ‘রাফ: ১৫৮)
﴿ تَبَارَكَ ٱلَّذِي نَزَّلَ ٱلۡفُرۡقَانَ عَلَىٰ عَبۡدِهِۦ لِيَكُونَ لِلۡعَٰلَمِينَ نَذِيرًا ١﴾ [ سورة الفرقان : 1]
“কত বরকতময় তিনি, যিনি তাঁর বান্দার প্রতি ফুরকান অবতীর্ণ করেছেন; যাতে সে সৃষ্টিকুলের জন্য সতর্ককারী হতে পারে”। — (সূরা আল-ফুরকান: ১৫৮)
﴿ فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤۡمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا يَجِدُواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسۡلِيمٗا ٦٥﴾ [ سورة النساء : 65]
“কিন্তু না, তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদের বিচার ভার তোমার উপর অর্পণ না করে; অতঃপর তোমার সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তঃকরণে তা মেনে না নেয়”। — (সূরা আন-নিসা: ৬৫)
﴿ وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْ ﴾ [ سورة الحشر : 7]
“রাসূল তোমাদেরকে যা দেয়, তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করে, তা থেকে তোমরা বিরত থাক”। — (সূরা আল-হাশর: ৭)
﴿ قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِي يُحۡبِبۡكُمُ ٱللَّهُ ﴾ [ سورة آل عمران : 31]
“বল, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস, তবে আমাকে অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন”। — (সূরা আলে ইমরান: ৩১)
﴿ مَّن يُطِعِ ٱلرَّسُولَ فَقَدۡ أَطَاعَ ٱللَّهَ﴾ [ سورة النساء : 80]
“কেউ রাসূলের আনুগত্য করলে সে তো আল্লাহরই আনুগত্য করল”। — (সূরা আন-নিসা: ৮০)
﴿ وَمَن يُشَاقِقِ ٱلرَّسُولَ مِنۢ بَعۡدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ ٱلۡهُدَىٰ وَيَتَّبِعۡ غَيۡرَ سَبِيلِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ نُوَلِّهِۦ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصۡلِهِۦ جَهَنَّمَۖ وَسَآءَتۡ مَصِيرًا ١١٥ ﴾ [ سورة النساء : 115]
“কারো নিকট সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ব্যতীত অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে যে দিকে সে ফিরে যায় সে দিকেই তাকে ফিরায়ে দেব এবং জাহান্নামে তাকে দগ্ধ করব; আর তা কত মন্দ আবাস!” — (সূরা আন-নিসা: ১১৫)
আর ইমামগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি এবং তাদের মধ্যে সব চেয়ে বেশি সম্মানিত। আর তাঁর রয়েছে সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ স্থান; যাঁর গুণাবলী ও মান-মর্যাদার ধারে কাছেও কোন সৃষ্টি পৌঁছাতে পারবে না; আর তিনি হলেন নিষ্পাপ, অনুসরণীয় এবং সর্বশেষ নবী। আর তাঁর খলিফাগণ তাঁর যথাযথ আনুগত্য করেছেন এবং অনুকরণ করেছেন তাঁর পদাঙ্ক। আর তাঁরা ছোট ও বড় প্রতিটি বিষয়ে তাঁর অনুসরণ করতেন। আর তাঁরা ছিলেন তাকওয়ার অনুসারী এবং মহান মর্যাদার অধিকারী; কিন্তু তাঁরা নিজেদেরকে নিষ্পাপ হওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর শরিক মনে করতেন না এবং মর্যাদা ও কামালিয়াতের (পরিপূর্ণতার) ক্ষেত্রে তাঁকে নিজেদের সমান মনে করতেন না; যেমনিভাবে শিয়াগণ তাদের ইমামদের ব্যাপারে মিথ্যারোপ করে থাকে।
আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আলী আ. যা কিছু নিয়ে এসেছেন, তা তিনি গ্রহণ করব এবং যা থেকে নিষেধ করেছেন, তা থেকে তিনি বিরত থাকব। তিনি (আলী) মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মত মর্যাদাসম্পন্ন। আর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মর্যাদা আল্লাহর সকল সৃষ্টির উপর স্বীকৃত। কেউ আলীর কথার উপর কথা বলা যেন আল্লাহ ও তার রাসূলের উপর কথা বলা। আর আলীর কোন কথার বিরুদ্ধাচারণ করা আল্লাহর সাথে শির্ক করার পর্যায়ে।...... অনুরূপভাবে এ বিধান বহাল থাকবে ক্রমান্বয়ে আগত হেদায়াতের ইমামদের বেলায়ও [অর্থাৎ আলীর জন্য যা সাব্যস্ত করা হলো তা শুধু তার সাথেই বিশেষিত নয়; বরং তাদের অন্যান্য ইমামদের ক্ষেত্রেও তা সমভাবে প্রযোজ্য। সুতরাং তাদের মর্যাদাও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মর্যাদার অনুরূপ, কেউ তাদের উপর কথা বলার অর্থ আল্লাহ ও তার রাসূলের উপর কথা বলা, কেউ তাদের বর্ণিত ছোট বড় যে কোন বিধানের বিরোধিতা করার অর্থ আল্লাহর সাথে শির্কের নামান্তর। নাউযুবিল্লাহ কিভাবে তারা তাদের ইমামদেরকে আল্লাহর সমকক্ষ নির্ধারণ করে নিয়েছে!!!! [সম্পাদক]]; আল্লাহ তাদেরকে যমিনের খুঁটি বানিয়েছেন, যাতে যমিন তার অধিবাসীদের নিয়ে স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং যমিনের উপরে ও নীচে যারা আছেন, তাদের জন্য তাঁর পরিপূর্ণ দলিল বানিয়েছেন। আর আমীরুল মুমিনীন আ. বেশি বেশি বলতেন: জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যে আমি আল্লাহর বণ্টনকারী; আমি সত্য-মিথ্যার বড় পার্থক্যকারী; আমি লাঠি ও লৌহযন্ত্রের অধিকারী। আর আমাকে স্বীকৃতি দিয়েছে সকল ফেরেশতা, জিবরাঈল এবং রাসূলগণ, যেমনিভাবে তারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। আর আমি তার (দায়িত্বের) বোঝার মতই বোঝা বহন করেছি; আর সেই বোঝাটি হল রব তথা প্রতিপালকের বোঝা। [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), হুজ্জত অধ্যায়, পৃ. ১১৭]
কুলাইনী আরও উল্লেখ করেন, ইমাম জাফর সাদিক বলেন: আমরা আল্লাহর জ্ঞানভাণ্ডার; আমরা আল্লাহর আদেশের ব্যাখ্যা; আমরা নিষ্পাপ জাতি। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের আনুগত্য করতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং আমাদের বিরুদ্ধাচরণ করতে নিষেধ করেছেন। আমরা আসমানের নীচে এবং যমিনের উপরে আল্লাহর পরিপূর্ণ দলিল। [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ১৬৫]
কুলাইনী আরও উল্লেখ করেন যে, আমি আবূ আবদিল্লাহ আ.-কে বলতে শুনেছি: ইমামগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমান মর্যাদা সম্পন্ন; কিন্তু তারা নবী নন। আর তাদের জন্য বেশী নারী বিয়ে করা বৈধ নয়, যেমনিভাবে নবীর জন্য বৈধ ছিল। সুতরাং এটা ছাড়া তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমান মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي )]
কুলাইনী " باب ما نص الله عز و جل و رسوله على الأئمة عليهم السلام واحدا فواحدا " (এক এক করে ইমাম আ.-দের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের বক্তব্যের অধ্যায়)-এ উল্লেখ করেন: আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿ ٱلنَّبِيُّ أَوۡلَىٰ بِٱلۡمُؤۡمِنِينَ مِنۡ أَنفُسِهِمۡۖ وَأَزۡوَٰجُهُۥٓ أُمَّهَٰتُهُمۡۗ وَأُوْلُواْ ٱلۡأَرۡحَامِ بَعۡضُهُمۡ أَوۡلَىٰ بِبَعۡضٖ فِي كِتَٰبِ ٱللَّهِ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ وَٱلۡمُهَٰجِرِينَ﴾ [ سورةالأحزاب :6]
“নবী মুমিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা ঘনিষ্ঠতর এবং তার স্ত্রীগণ তাদের মাতা। আল্লাহর বিধান অনুসারে মুমিন ও মুহাজির অপেক্ষা— যারা আত্মীয় তারা পরস্পরের নিকটতর।” — (সূরা আল-আহযাব: ৬); —প্রসঙ্গে আবূ জাফর আ. থেকে বর্ণিত যে, জিজ্ঞাসা করা হল, কাদের ব্যাপারে এই আয়াত নাযিল হয়েছে? তখন তিনি বললেন: এই আয়াত নাযিল হয়েছে আমীর বা ইমামদের ব্যাপারে; এই আয়াতটি হোসাইন আ.-এর পরে তার সন্তানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সুতরাং আমরা ইমামত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পরিবার-পরিজনের ব্যাপারে মুমিন, মুহাজির ও আনসারদের চেয়ে ঘনিষ্ঠতর। আমি বললাম, এর মধ্যে জাফরের সন্তানদের [উদ্দেশ্য, আপনাদের মত জা‘ফর তাইয়ার ও তার বংশধরদের জন্য কোন বৈশিষ্ট্য আছে কি ? কারণ জা‘ফর তো আলী রা. এর ভাই আর তার সন্তানরাও আলী রা. এরই ভ্রাতুষ্পুত্র।] কোন অংশ আছে কি? [অর্থাৎ তারা কি ইমাম হওয়ার যোগ্য? তাদের বংশধরদের কেউ কি ইমাম হওয়ার দাবী করতে পারে?] তিনি বললেন: না; অতঃপর আমি বললাম: এর মধ্যে আব্বাসের সন্তানদের কোন অংশ আছে কি? তিনি বললেন: না; অতঃপর আমি বনী আবদুল মুত্তালিবের মধ্যকার একজন একজন করে তার নিকট জিজ্ঞাসা করলাম, এর মধ্যে তাদের কোন অংশ আছে কিনা? তিনি প্রত্যেকের ব্যাপারে না বললেন। আর আমি হাসান আ.-এর সন্তানের কথা ভুলে গেছি; অতঃপর তার নিকট আবার হাজির হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম: হাসানের সন্তানের জন্য এর মধ্যে কোন অংশ আছে কি? তিনি বললেন: না [হাসানের বংশধরদের কেউ শিয়াদের নিকট ইমাম নয়। এর কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা তারা দিতে পারবে না। তবে সম্ভবত এটা এজন্যে যে, হাসান পারস্য রাজকুমারী বিয়ে করেন নি, যেমনটি হুসাইন করেছিলেন !!!। [সম্পাদক]], আল্লাহর শপথ করে বলছি হে আবদুর রহীম! এর মধ্যে আমরা ব্যতীত কোন মুহাম্মদী’র জন্য কোন অংশ নেই। [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ১৭৭]
ইমামদের আনুগত্য ফরয হওয়ার অধ্যায় [আল-কুলাইনি, উসুলুল কাফী [সম্পাদক]]:
আবূ সাবাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি আবূ আবদিল্লাহ আ.-কে বলতে শুনেছি: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আলী ইমাম; আল্লাহ তার আনুগত্য করাকে ফরয করে দিয়েছেন। আর নিশ্চয় হাসান ইমাম; আল্লাহ তার আনুগত্য করাকে ফরয করে দিয়েছেন এবং হোসাইনও ইমাম; আল্লাহ তার আনুগত্য করাকে ফরয করে দিয়েছেন। আর আলী ইবন হোসাইন ইমাম; আল্লাহ তার আনুগত্য করাকে ফরয করে দিয়েছেন এবং মুহাম্মদ ইবন আলীও ইমাম; আল্লাহ তার আনুগত্য করাকে ফরয করে দিয়েছেন। [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ১০৯]
কুলাইনী আরও উল্লেখ করেন, ইমাম মুহাম্মদ বাকের বলেন: আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে কদরের রাতসমূহে নবী এবং অসী [শিয়ারা নবীর জন্য অসী থাকতে হবে বলে মিথ্যা বিশ্বাস ও মত চালু করেছে। সেজন্য তারা প্রত্যেক নবীর জন্য অসী নির্ধারণ করে থাকে। অর্থাৎ তাদের মতে, নবী অবশ্যই তার মৃত্যুর পরে তার মিশন বাস্তবায়ণ করার জন্য একজনকে অসিয়ত করে যাবেন, তাকে বলা হবে, অসী। তাদের এসব পুরেপুরিই মিথ্যাচার [সম্পাদক]]দের নিকট নির্দেশ আসত যে, এটা কর; আর এই নির্দেশটি তারা ভালভাবেই শিখেছিল, কিভাবে তারা তা কার্যে পরিণত করবে। [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ১৫৪]
শিয়াগণ তাদের নিজেদের মনগড়া মতে ইমামতের (নেতৃত্বের) অর্থ আবিষ্কার করেছে; এমনকি তারা ইমামকে আল্লাহর নবীদের মত নিষ্পাপ মনে করে এবং তারা তাকে অদৃশ্যজগতের জ্ঞানের অধিকারী মনে করে। আর তারা তাদের এই লক্ষ্যকে বাস্তবায়নের জন্য অসংখ্য মিথ্যা ও বানোয়াট বর্ণনা উপস্থাপন করে। অথচ বাস্তব ও সত্য কথা হচ্ছে, অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। আর এই শব্দটি মুমিন ও কাফির উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿ إِنِّي جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ إِمَامٗا﴾ [ سورة البقرة : 124]
“আমি তোমাকে মানবজাতির নেতা বানাচ্ছি” —(সূরা আল-বাকারা: ১২৪)
﴿رَبَّنَا هَبۡ لَنَا مِنۡ أَزۡوَٰجِنَا وَذُرِّيَّٰتِنَا قُرَّةَ أَعۡيُنٖ وَٱجۡعَلۡنَا لِلۡمُتَّقِينَ إِمَامًا ٧٤ ﴾ [ سورة الفرقان : 74]
“হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান কর, যারা হবে আমাদের জন্য নয়নপ্রীতিকর এবং আমাদেরকে কর মুত্তাকীদের জন্য অনুসরণযোগ্য” — (সূরা আল-ফুরকান: ৭৪)
আর কাফিরের ক্ষেত্রে ‘ইমাম’ শব্দের ব্যবহারে যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿ فَقَٰتِلُوٓاْ أَئِمَّةَ ٱلۡكُفۡرِ ﴾ [ سورة التوبة : 12]
“তবে কাফিরদের প্রধানদের সাথে যুদ্ধ কর” — (সূরা আত-তাওবা: ১২)
﴿وَجَعَلۡنَٰهُمۡ أَئِمَّةٗ يَدۡعُونَ إِلَى ٱلنَّارِ﴾ [ سورة القصص : 41]
“আর আমি তাদেরেকে নেতা বানিয়েছিলাম; তারা জনগণকে জাহান্নামের দিকে আহ্বান করত”। — (সূরা আল-কাসাস: ৪১)
সুতরাং এই ইমাম শব্দটি নিষ্পাপ হওয়া, অদৃশ্যজগতের জ্ঞান রাখা এবং বিভিন্ন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা থাকতে হবে এমনটি দাবি করে না। আর তাদের নিকট শরীয়তের এমন কোন প্রমাণ নেই, যার দ্বারা তারা ইমামের জন্য যেসব গুণাবলী নির্ধারণ করেছে, তা প্রমাণ করতে পারে। তবে হ্যাঁ, আল্লাহর কিতাব চারটি স্তর বিন্যাস করেছে; যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿ وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَ فَأُوْلَٰٓئِكَ مَعَ ٱلَّذِينَ أَنۡعَمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِم مِّنَ ٱلنَّبِيِّۧنَ وَٱلصِّدِّيقِينَ وَٱلشُّهَدَآءِ وَٱلصَّٰلِحِينَۚ وَحَسُنَ أُوْلَٰٓئِكَ رَفِيقٗا ٦٩﴾ [ سورة النساء : 69]
“আর কেউ আল্লাহ এবং রাসূলের আনুগত্য করলে সে নবী, সত্যনিষ্ঠ, শহীদ ও সৎকর্মপরায়ণ— যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন— তাদের সঙ্গী হবে এবং তারা কত উত্তম সঙ্গী!” — (সূরা আন-নিসা: ৬৯)
সুতরাং এই চার স্তরের মধ্যে ইমামতের পদ নেই, যা শিয়াগণ আবিষ্কার করেছে এবং তাদের মাযহাবের ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। অথচ আলী ও তাঁর পরিবার-পরিজন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম (তার আনুগত্য করা ফরয অথবা সে নিষ্পাপ) এই অর্থে ইমাম হওয়ার তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। কারণ, ওসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’র শাহাদাতের পর যখন জনগণ আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’র হাতে আনুগত্যের শপথ নিতে চাইল এবং তারা বলল, আপনি আপনার হাত প্রসারিত করুন, আমরা আপনার নিকট আপনার খেলাফতের অধীনে থাকার জন্য আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করব; তখন তিনি বললেন: তোমরা আমাকে মাফ কর (মুক্তি দাও) এবং আমি ভিন্ন অন্য একজনকে খোঁজ করে বের কর; আর তোমরা যদি আমাকে রুখসত দাও, তবে আমি তোমাদের মত একজন হব এবং তোমরা যাকে তোমাদের শাসনক্ষমতা দান করবে, আমি আলী তোমাদের চেয়ে বেশি তার কথা শুনব এবং তার আনুগত্য করব; আর আমার চেয়ে তোমাদের ভাল আমীরের জন্য আমি হব উত্তম সাহায্যকারী। [নাহজুল বালাগাহ ( نهج البلاغة ), প্রথম খণ্ড, পৃ. ১৮৩]
আর এই বক্তব্যটি নাহজুল বালাগাহ ( نهج البلاغة )-এর মধ্যে উদ্ধৃত; আর এই গ্রন্থটি শিয়াদের গ্রন্থসমূহের মধ্যে অন্যতম, যার উপর তারা নির্ভর করে থাকে।(?)
সুতরাং তার ইমামত (নেতৃত্ব) যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত হত, তা হলে তিনি এই ধরনের ওযর পেশ করতেন না। কারণ, আল্লাহর পক্ষ থেকে ইমামতের দায়িত্ব নির্ধারণ করে দেয়া হলে [যেমনটি শিয়ারা দাবী করে থাকে। [সম্পাদক]] তার আনুগত্য করা ইমাম ও প্রজাসাধারণ সবার উপরই ওয়াজিব। অনুরূপভাবে হাসান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর ইমামত (নেতৃত্ব)-কে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’র নিকট অর্পণ করেছেন এবং তাঁর হাতে আনুগত্যের শপথ করেছেন। অনুরূপভাবে হোসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুও মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’র হাতে আনুগত্যের শপথ করেছেন। [মা‘রেফাতু আখবারির রিজাল ( معرفة أخبار الرجال ), (রিজালু কাশী) পৃ.৭২।]
সুতরাং হাসান ও হোসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা যদি আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে নির্দেশনার দ্বারা ইমাম হতেন, তবে তাঁরা মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’র হাতে আনুগত্যের শপথ করতেন না এবং তাঁর নিকট ক্ষমতার বিষয়টি অর্পণ করতেন না।
আর খলীফা মামুনুর রশিদ আলী রেযা র.-কে বলেন: আমি চাই আমি নিজেকে খেলাফতের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নিব এবং সে পদে আপনাকে নিয়োগ দিব; আর আমি আপনার নিকট আনুগত্যের শপথ নিব। তখন তিনি বললেন, আমি স্বেচ্ছায় কখনও এই কাজ করব না।
সুতরাং এটাও প্রমাণ করে যে, ইমাম আলী রেযা র. ইমামত তথা নেতৃত্ব গ্রহণ করেন নি। অতএব, ইমামত (আল্লাহর পক্ষ থেকে) নির্দেশিত কোন ফরয বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত নয়, যার কারণে রাফেযী ও শিয়াগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণকে কাফির বলে আখ্যায়িত করেছে; যে বিষয়ে অচিরেই আলোচনা আসছে ইনশাআল্লাহ।
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যেসব গুণাবলী আমরা বিশ্বাস করে থাকি, সেগুলো আল-কুরআন ও হাদিসে নববীর বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত; সুতরাং আল-কুরআন সুস্পষ্ট ভাষায় বলে:
﴿ وَمَآ أَرۡسَلۡنَٰكَ إِلَّا رَحۡمَةٗ لِّلۡعَٰلَمِينَ ١٠٧ ﴾ [ سورة الأنبياء : 107]
“আমি তো তোমাকে বিশ্বজগতের প্রতি কেবল রহমতরূপেই প্রেরণ করেছি।” — (সূরা আল-আম্বিয়া: ১০৭)
﴿ وَمَآ أَرۡسَلۡنَٰكَ إِلَّا كَآفَّةٗ لِّلنَّاسِ بَشِيرٗا وَنَذِيرٗا ﴾ [ سورة سبا : 28]
“আমি তো তোমাকে সমগ্র মানবজাতির প্রতি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি।” — (সূরা সাবা: ২৮)
﴿ قُلۡ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنِّي رَسُولُ ٱللَّهِ إِلَيۡكُمۡ جَمِيعًا ﴾ [ سورة الأعراف : 158]
“বল, হে মানুষ! আমি তোমাদের সকলের জন্য আল্লাহর রাসূল”। — (সূরা আল-আ‘রাফ: ১৫৮)
﴿ تَبَارَكَ ٱلَّذِي نَزَّلَ ٱلۡفُرۡقَانَ عَلَىٰ عَبۡدِهِۦ لِيَكُونَ لِلۡعَٰلَمِينَ نَذِيرًا ١﴾ [ سورة الفرقان : 1]
“কত বরকতময় তিনি, যিনি তাঁর বান্দার প্রতি ফুরকান অবতীর্ণ করেছেন; যাতে সে সৃষ্টিকুলের জন্য সতর্ককারী হতে পারে”। — (সূরা আল-ফুরকান: ১৫৮)
﴿ فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤۡمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا يَجِدُواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسۡلِيمٗا ٦٥﴾ [ سورة النساء : 65]
“কিন্তু না, তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদের বিচার ভার তোমার উপর অর্পণ না করে; অতঃপর তোমার সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তঃকরণে তা মেনে না নেয়”। — (সূরা আন-নিসা: ৬৫)
﴿ وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْ ﴾ [ سورة الحشر : 7]
“রাসূল তোমাদেরকে যা দেয়, তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করে, তা থেকে তোমরা বিরত থাক”। — (সূরা আল-হাশর: ৭)
﴿ قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِي يُحۡبِبۡكُمُ ٱللَّهُ ﴾ [ سورة آل عمران : 31]
“বল, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস, তবে আমাকে অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন”। — (সূরা আলে ইমরান: ৩১)
﴿ مَّن يُطِعِ ٱلرَّسُولَ فَقَدۡ أَطَاعَ ٱللَّهَ﴾ [ سورة النساء : 80]
“কেউ রাসূলের আনুগত্য করলে সে তো আল্লাহরই আনুগত্য করল”। — (সূরা আন-নিসা: ৮০)
﴿ وَمَن يُشَاقِقِ ٱلرَّسُولَ مِنۢ بَعۡدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ ٱلۡهُدَىٰ وَيَتَّبِعۡ غَيۡرَ سَبِيلِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ نُوَلِّهِۦ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصۡلِهِۦ جَهَنَّمَۖ وَسَآءَتۡ مَصِيرًا ١١٥ ﴾ [ سورة النساء : 115]
“কারো নিকট সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ব্যতীত অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে যে দিকে সে ফিরে যায় সে দিকেই তাকে ফিরায়ে দেব এবং জাহান্নামে তাকে দগ্ধ করব; আর তা কত মন্দ আবাস!” — (সূরা আন-নিসা: ১১৫)
আর ইমামগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি এবং তাদের মধ্যে সব চেয়ে বেশি সম্মানিত। আর তাঁর রয়েছে সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ স্থান; যাঁর গুণাবলী ও মান-মর্যাদার ধারে কাছেও কোন সৃষ্টি পৌঁছাতে পারবে না; আর তিনি হলেন নিষ্পাপ, অনুসরণীয় এবং সর্বশেষ নবী। আর তাঁর খলিফাগণ তাঁর যথাযথ আনুগত্য করেছেন এবং অনুকরণ করেছেন তাঁর পদাঙ্ক। আর তাঁরা ছোট ও বড় প্রতিটি বিষয়ে তাঁর অনুসরণ করতেন। আর তাঁরা ছিলেন তাকওয়ার অনুসারী এবং মহান মর্যাদার অধিকারী; কিন্তু তাঁরা নিজেদেরকে নিষ্পাপ হওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর শরিক মনে করতেন না এবং মর্যাদা ও কামালিয়াতের (পরিপূর্ণতার) ক্ষেত্রে তাঁকে নিজেদের সমান মনে করতেন না; যেমনিভাবে শিয়াগণ তাদের ইমামদের ব্যাপারে মিথ্যারোপ করে থাকে।
শিয়াগণ মুসলিমদের নিকট বর্তমানে বিদ্যমান কুরআনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না তিন কারণে:
প্রথম কারণ:
শিয়াদের আকিদা (বিশ্বাস) অনুযায়ী সাহাবীগণ সকলেই মিথ্যাবাদী।
“আর তারা বিশ্বাস করে মিথ্যা বলা ইবাদত”।
অনুরূপভাবে আহলে বাইত তথা নবী পরিবারের ইমামগণ মিথ্যাবাদী এবং ‘তাকীয়া’-র অনুসারী।
“আর তারা বিশ্বাস করে মিথ্যা বলা ইবাদত”।
সুতরাং যখন সকল সাহাবী ও আহলে বাইত তথা নবী পরিবারের ইমামগণ মিথ্যাবাদী হয়ে যায়, তখন তারা কারা, যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে এই কুরআন মাজীদ যথাযথভাবে পৌঁছাবে?
দ্বিতীয় কারণ:
অনুরূপভাবে শিয়াদের আকিদা (বিশ্বাস) অনুযায়ী সাহাবীগণ মিথ্যাবাদী ছিলেন। আর তারাই আল-কুরআনুল কারীম কপি করেছেন এবং বর্ণনা করেছেন।
আর আহলে বাইত তথা নবী পরিবারের ইমামগণ তা বর্ণনা, সংকলন ও সত্যায়ন কোনটাই করেনি; সুতরাং কিভাবে রাফেযী ও শিয়াগণ বিদ্যমান এই কুরআনের বিশুদ্ধতা ও পরিপূর্ণতার ব্যাপারে আস্থা পোষণ করবে?
তৃতীয় কারণ:
শিয়াদের মত অনুযায়ী তাদের নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহে বর্ণিত বিশুদ্ধ বর্ণনাসমূহ; যার সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়ে গেছে (যা তাদের নিকট মুতাওয়াতির বর্ণনা বলে বিবেচিত)। আর প্রত্যেকটি বর্ণনাই স্পষ্ট করে বলে যে, আমাদের নিকট বিদ্যমান কুরআন বিকৃত, পরিবর্তিত এবং তার থেকে কম-বেশি করা হয়েছে; আর আমরা শিয়াদের গ্রন্থসমূহের মধ্যে একটি বিশুদ্ধ বর্ণনাও পাব না, যা প্রমাণ করবে যে, আমাদের নিকট বিদ্যমান কুরআন পরিপূর্ণ, অবিকৃত এবং অপরিবর্তিত। সুতরাং মনে হয় যেন সাব্যস্ত হওয়ার দিক থেকে (আমাদের নিকট বিদ্যমান) কুরআন মাজীদের অবস্থান শিয়াদের নিকট বিশুদ্ধ হাদিসের অবস্থানের চেয়েও অপূর্ণাঙ্গ।
আর শিয়ারা তাদের আলেম শরীফ মুর্তযা, আবূ জাফর আত-তুসী, আবূ আলী আত-তাবারসী এবং শাইখ সাদুক এ চার জন আলেমের বক্তব্য দ্বারা দলীল পেশ করে থাকে যে, তারা চারজন কুরআন বিকৃত হওয়াকে অস্বীকার করেছেন [এ চারজনের বক্তব্য যদিও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের বক্তব্যের অনুরূপ, কিন্তু শিয়ারা তাদের ‘তাকিয়া’ বা আসল বক্তব্য গোপন করে প্রকাশ্যে ভিন্ন বক্তব্য প্রদানের নীতি অবলম্বন করার কারণে তাদের এ বক্তব্য কতটুকু তাদের মন থেকে বের হয়েছে, তা নির্ধারণ করা কঠিন। সুতরাং শিয়ারা যখন এ চারজনের বক্তব্য পেশ করে বোঝাতে চায় যে, তাদের আলেমরাও কুরআন বিকৃত হয়েছে সংক্রান্ত বর্ণনাগুলো অস্বীকার করেছে, তখন তারা তাদের অগণিত অসংখ্য বর্ণনা (যাতে কুরআন বিকৃত হয়েছে বলে বর্ণনা এসেছে) সেগুলো গ্রহণ করবে নাকি এ চারজনের বক্তব্য (যা তাকিয়া নীতির মাধ্যমে বলা হয়েছে কিনা জানা যায় না তা) গ্রহণ করবে সেটা স্পষ্ট নয়। [সম্পাদক]]। বস্তুত শিয়াদের দ্বারা (কুরআন বিকৃত না হওয়ার পক্ষে) ঐ চারজনের বক্তব্য পেশকরা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলক। কারণ, শিয়া মাযহাবের গণ্ডি বা পরিধি তাদের নিষ্পাপ ইমামগণ ও অধিকাংশ হাদিসবিদের বক্তব্যসমূহের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত; আর তাদের রেওয়ায়েত তথা বর্ণনার পরিমাণ দুই হাজারের বেশি, যার সবগুলোই কুরআন বিকৃত হওয়ার পক্ষে বক্তব্য প্রদান করছে। সুতরাং তাদের নিষ্পাপ(!) ইমামগণ, অধিকাংশ হাদিসবেত্তা এবং শিয়াদের প্রবীণ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের বক্তব্যসমূহের সামনে ঐ চার মিসকীনের বক্তব্যের কোন ভারত্ব নেই। তাছাড়া ঐ চারজন এমন পরিস্থিতির শিকার হয়ে ‘তাকীয়া’ পদ্ধতির অনুসরণ করে (আল-কুরআনুল কারীম) অবিকৃত বলে মন্তব্য করেছেন, যে পরিস্থিতিতে তাদের (আল-কুরআনুল কারীম) বিকৃত বলে মন্তব্য করার কোন সুযোগ ছিল না; বিশেষ করে যখন সে ‘তাকীয়া’-এর ফযিলত এবং তাদের নিকট তার মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে জানতে পারল। অচিরেই আমরা তার কিছু দিক এই গ্রন্থের মধ্যে যথাস্থানে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। এমনকি শিয়াদের বিদগ্ধ পণ্ডিতগণ ঐ চারজন আলেমের বক্তব্যসমূহের কড়া সমালোচনা করেছেন। যেমন হোসাইন ইবন মুহাম্মদ তকী আন-নূরী আত-তাবারসী তার ‘ফাসলুল খিতাব ফি তাহরীফে কিতাবে রাব্বিল আরবাব’ ( فصل الخطاب في تحريف كتاب رب الأرباب ) নামক কিতাবের ৩৩ পৃষ্ঠায় যা এসেছে তার ভাষ্য হচ্ছে,
( لم يعرف من القدماء موافق لهم )
অর্থাৎ পূর্ববর্তী মনিষীগণ থেকে এ চারজনের মতের সপক্ষে কোন মত পাওয়া যায় না [এর অর্থ হচ্ছে, উক্ত গ্রন্থের লেখকের মতে, পূর্ববর্তী সবাই একবাক্যে বলেছেন যে, কুরআনে বিকৃতি হয়েছে। এ চারজন পূর্ববর্তীদের মতের বিরোধিতা করে কুরআনে বিকৃতি হয় নি বলে নতুন কথা বলেছেন। [সম্পাদক]]।
আর শিয়াদের অধিকাংশ মুহাদ্দিস আল-কুরআনের মধ্যে পরিবর্তন-পরিবর্ধন বা বিকৃতি হওয়ার কথা বিশ্বাস করে, যেমন হোসাইন ইবন মুহাম্মদ তকী আন-নূরী আত-তাবারসী তার ‘ফাসলুল খিতাব ফি তাহরীফে কিতাবে রাব্বিল আরবাব’ ( فصل الخطاب في تحريف كتاب رب الأرباب ) নামক কিতাবের ৩২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করে বলেন,
( وهو مذهب جمهور المحدثين الذين عثرنا على كلماتهم )
(আর এটা অধিকাংশ মুহাদ্দিসের মাযহাব, যাদের বক্তব্যসমূহ আমরা জানতে পেরেছি)।
আমাদের ইচ্ছা যে, আমরা শিয়াদের নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহ থেকে সামান্য কিছু পরিমাণ বর্ণনা সূত্র সহ পেশ করব, যাতে প্রমাণ হবে যে, তারা আল-কুরআন বিকৃত হয়েছে বলে বিশ্বাস করে থাকে।
মুহাম্মদ ইবন ইয়াকুব আল-কুলাইনী তার উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ) নামক গ্রন্থে ( باب أنه لم يجمع القرآن كله إلا الأئمة و أنهم يعلمون علمه كله / অধ্যায়, ইমামগণই আল-কুরআনকে পরিপূর্ণ সংকলন করেন এবং তারাই তার পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখে) শিরোনামের অধীনে বর্ণনা করেন:
“জাবের থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আবূ জাফর আ.-কে বলতে শুনেছি, মানুষের মধ্যে মিথ্যাবাদী ছাড়া কেউ দাবি করতে পারে না যে, আল্লাহ যেভাবে কুরআন নাযিল করেছেন, সে তা পরিপূর্ণভাবে সেভাবে সংকলন করেছে; বরং আলী ইবন আবি তালিব ও তার পরবর্তী ইমামগণই আল্লাহ যেভাবে তা নাযিল করেছেন, ঠিক সেভাবে সংকলন ও সংরক্ষণ করেছেন।”
কুলাইনী তার উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ) নামক গ্রন্থের ৬৭ পৃষ্ঠায় (ভারতীয় ছাপা) আরও বর্ণনা করেন:
“সালেম ইবন সালামা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: জনৈক ব্যক্তি আবূ আবদিল্লাহ আ.-এর নিকট (কুরআন থেকে) পাঠ করছিল; আর আমি আল-কুরআনের এমন কতগুলো শব্দ শুনলাম, যা কুরআনের সর্বজনবিদিত পাঠের মত নয়। অতঃপর আবূ আবদিল্লাহ বললেন: তুমি এই ধরনের পাঠ থেকে বিরত থাক; পাঠ কর মানুষ যেভাবে পাঠ করে; যতক্ষণ না কায়েম বা মাহদীর উত্থান ঘটবে, যখন সে কায়েম বা মাহদীর উত্থান হবে, তখন আল্লাহর কিতাবকে তার সীমারেখায় রেখে পাঠ করা হবে; আর তিনি কুরআনের ঐ কপিটি বের করবেন, যা আলী আ. লিপিবদ্ধ করেছিলেন। তিনি আরও বললেন, আলী আ. যখন তা লিপিবদ্ধ করে অবসর হলেন, তখন তিনি জনগণের নিকট তা বর্ণনা করলেন এবং তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন: এটা আল্লাহ তা‘আলার কিতাব, যেমনিভাবে তা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করেছেন; আমি দু’টি ফলক থেকে তা সংকলন করেছি। তখন লোকেরা বলল: আমাদের নিকটে তো কুরআন সংকলিত রয়েছে; এর কোন প্রয়োজন আমাদের নেই। অতঃপর আলী বললেন: জেনে রাখ! আল্লাহর শপথ, আজকের এই দিনের পরে তোমরা তা আর কখনও দেখতে পাবে না; কারণ, যখন আমি তা সংকলন করি, তখন আমার উপর দায়িত্ব ছিল যে, আমি তা তোমাদেরকে জানাব, যাতে তা তোমরা পাঠ করতে পার।” [নাউযুবিল্লাহ, কুরআন বিকৃতির বিশ্বাস কেউ করলে তার ঈমান থাকার কথা নয়; আর তারা সেই কুফরি বিশ্বাসটিকে আলী রা. এর দিকেই সম্পর্কযুক্ত করল। [সম্পাদক]]
কুলাইনী তার উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ) নামক গ্রন্থের (ভারতীয় ছাপা) ৬৭০ পৃষ্ঠায় আরও বর্ণনা করেন:
“আহমদ ইবন মুহাম্মদ ইবন আবি নসর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমার নিকট আবুল হাসান আ. একটি কুরআনের কপি হস্তান্তর করলেন এবং বললেন, তুমি তাতে দৃষ্টি দেবে না; কিন্তু আমি তা খুলে ফেললাম এবং তাতে পড়লাম " لم يكن الذين كفروا " অতঃপর তাতে পিতার নামসহ কুরাইশ বংশের সত্তর ব্যক্তির নাম পেলাম।”
কুলাইনী তার উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ) নামক গ্রন্থের ২৬৩ পৃষ্ঠায় ( باب فيه نكت و نتف من التنزيل في الولاية ) নামক অধ্যায়ে বর্ণনা করেন:
“আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত: " و لقد عهدنا إلي آدم من قبل كلمات في محمد و علي و فاطمة و الحسن و الحسين و الأئمة من ذريتهم فنسي " (আর আমি ইতঃপূর্বে আদমের প্রতি তার বংশধরের মধ্য থেকে মুহাম্মদ, আলী, ফাতেমা, হাসান, হোসাইন এবং ইমামদের ব্যাপারে কতগুলো নির্দেশ দান করেছিলাম; কিন্তু সে ভুলে গিয়েছিল।) আল্লাহর কসম, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি অনুরূপই অবতীর্ণ হয়েছিল।”
কুলাইনী তার উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ) নামক গ্রন্থের ২৬৩ পৃষ্ঠায় আরও বর্ণনা করেন:
“আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: জিবরাইল আ. মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর এই আয়াত নাযিল করেন:
" يا أيها الذين أوتوا الكتاب آمنوا بما نزلنا في علي نورا مبينا "
“হে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে! আমরা আলী’র ব্যাপারে যে সুস্পষ্ট নুর বা আলো অবতীর্ণ করেছি, তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর।”
আর তাদের কেউ কেউ বলে: ওসমান কুরআনের কপিগুলো পুড়িয়ে দিয়েছে এবং আলী আ. ও তার পরিবার-পরিজনের মর্যাদা বর্ণনায় যেসব সূরা ছিল, সে তা ধ্বংস কর দিয়েছে; তন্মধ্যে এই সূরাটিও ছিল:
" بسم الله الرحمن الرحيم يا أيها الذين آمنوا آمنوا بالنورين أنزلناهما يتلوان عليكم آياتي و يحذرانكم عذاب يوم عظيم نوران بعضهما من بعض و أنا السميع العليم ".
(আল্লাহর নামে শুরু করছি; হে ঈমানদারগণ! তোমরা দুই নুরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর, যা আমরা নাযিল করেছি; তারা তোমাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করবে এবং মহান দিবসের শাস্তির ভয় প্রদর্শন করবে; উভয় নুর পরস্পর পরস্পরের অংশ; আর আমি শ্রবণকারী, জ্ঞানী।) [ফসলুল খিতাব ( فصل الخطاب ), (ইরানি সংস্করণ) পৃ. ১৮০]
আর মোল্লা হাসান উল্লেখ করেন:
“আবূ জাফর আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: যদি আল্লাহর কিতাবের মধ্যে কম-বেশি করা না হত, তবে কোন বিবেকবানের কাছেই আমাদের হক (অধিকার) গোপন থাকত না।” [মোল্লা হাসান, তাফসীরুস সাফী ( تفسير الصافي ), পৃ. ১১]
আহমদ ইবন আবি তালিব আত-তাবারসী ‘আল-ইহতিজাজ’ ( الاحتجاج ) নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেন:
“আবূ যর গিফারী থেকে বর্ণিত, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকাল করেন, তখন আলী কুরআন সংকলন করেন এবং তা মুহাজির ও আনসারদের নিকট নিয়ে আসেন; অতঃপর তিনি তা তাদের নিকট পেশ করেন; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই জন্য তাকে অসিয়ত করেছিলেন। অতঃপর যখন আবূ বকর তা খুললেন, তখন প্রথম পৃষ্ঠার শুরুতেই বের হয়ে আসল সম্প্রদায়ের লোকদের দোষ-ত্রুটি ও অসম্মানের কথা; অতঃপর ওমর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল এবং বলল: হে আলী! তুমি তা ফেরত নিয়ে যাও; কারণ, এতে আমাদের কোন প্রয়োজন নেই। অতঃপর আলী আ. তা ফেরত নিয়ে নিলেন এবং সেখান থেকে প্রস্থান করলেন। অতঃপর যায়েদ ইবন সাবিতকে হাযির করা হল, আর সে ছিল কুরআনের কারী (পাঠক); অতঃপর তাকে ওমর বলল: আলী আমাদের নিকট এমন এক কুরআন নিয়ে এসেছে, যার মধ্যে মুহাজির ও আনসারদের অসম্মান ও অপমান করা হয়েছে। সুতরাং আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি যে, আমরা কুরআন সংকলন করব এবং তার থেকে ঐ অংশ বাদ দেব, যাতে মুহাজির ও আনসারদের অসম্মান ও অপমান করা হয়েছে। অতঃপর যায়েদ তার আহ্বানে সাড়া দিল এবং বলল, যদি আমি তোমাদের দাবি মোতাবেক কুরআন সংকলনের কাজ সমাপ্ত করি; আর আলীও তার সংকলন করা কুরআন প্রকাশ করে, তবে কি তোমরা যে কাজ করেছ, তা বাতিল করে দেবে না? তখন ওমর বলল: তাহলে উপায় কী? যায়েদ বলল: উপায় সম্পর্কে তোমরাই ভাল জান। তখন ওমর বলল: তাকে হত্যা করা ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় নেই এবং আমাদের স্বস্তিও নেই। অতঃপর সে খালিদ ইবন ওয়ালিদের হাতে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করল, কিন্তু এই কাজে সে সক্ষম হয়নি। সুতরাং যখন ওমর খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করে, তখন তারা আলী আ.-এর নিকট আবেদন করে যে, তিনি যেন তাদের নিকট কুরআন হস্তান্তর করেন; যাতে তারা তাতে পরিবর্তন করতে পারে। অতঃপর ওমর বলল: হে হাসানের পিতা! যদি আপনি ঐ কুরআনটা নিয়ে আসতেন, যা আপনি আবূ বকরের নিকট নিয়ে এসেছিলেন; কেননা শেষ পর্যন্ত আমরা তার ব্যাপারে ঐক্যমতে পৌঁছেছি; তখন তিনি বললেন: অসম্ভব! এটা পুনরায় নিয়ে আসার আর কোন সুযোগ নেই; আমি তো আবূ বকরের নিকট তা শুধু এই জন্য নিয়ে এসেছিলাম, যাতে তোমাদের উপর দলিল-প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তোমরা কিয়ামতের দিন এই কথা বলতে না পার: ﴿ إِنَّا كُنَّا عَنۡ هَٰذَا غَٰفِلِينَ ﴾ (আমরা তো এই বিষয়ে গাফিল ছিলাম); অথবা তোমরা বলতে না পার: ﴿ مَا جِئۡتَنَا بِبَيِّنَةٖ ﴾ (তুমি তো আমাদের নিকট প্রমাণ নিয়ে আস নি)। আমার নিকট যে কুরআন রয়েছে, তা পবিত্র ব্যক্তিগণ ও আমার বংশের অসীগণ ছাড়া অন্য কেউ স্পর্শ করতে পারবে না; অতঃপর ওমর বলল: তা প্রকাশ করার কোন নির্দিষ্ট সময় আছে কি? তখন আলী আ. বলল: হ্যাঁ, যখন আমার বংশধর থেকে কায়েম (অর্থাৎ মাহদী) শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবে, তখন সে তা প্রকাশ করবে এবং জনগণ তা গ্রহণ করবে।” [আল-ইহতিজাজ আত-তাবারসী ( الاحتجاج الطبرسي ), নাজাফ সংস্করণ, পৃ. ২২৫; অনুরূপ রয়েছে তাফসীরুস সাফী ( تفسير الصافي )-এর মধ্যে, পৃ. ১১; অনুরূপ রয়েছে ফসলুল খিতাব ( فصل الخطاب )-এর মধ্যে, পৃ. ৭]
আর নুরী আত-তাবারসী ‘ফসলুল খিতাব’ ( فصل الخطاب )-এর মধ্যে বলেন:
“আমীরুল মুমিনীনের একটি বিশেষ কুরআন ছিল, যা তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকালের পর নিজেই সংকলন করেন এবং তা জনসমক্ষে পেশ করেন; কিন্তু তারা তা উপেক্ষা করে। অতঃপর তিনি তা তাদের দৃষ্টি থেকে গোপন করে রাখেন; আর তা ছিল তার সন্তান তথা বংশধরের নিকট সংরক্ষিত, ইমামত তথা নেতৃত্বের সকল বৈশিষ্ট্য ও নবুয়তের ভাণ্ডারের মত যার উত্তরাধিকারী হয় এক ইমাম থেকে অপর ইমাম। আর তা প্রমাণ (মাহদী) এর নিকট সংরক্ষিত রয়েছে। -আল্লাহ আল্লাহ দ্রুত তাকে মুক্ত করে দিন- ; তিনি তখন তা জনসমক্ষে প্রকাশ করবেন এবং তাদেরকে তা পাঠ করার নির্দেশ দিবেন; আর তা সংকলন, সূরা ও আয়াতসমূহের ধারাবাহিকতার দিক থেকে বিদ্যমান এই কুরআনের বিপরীত; এমনকি শব্দসমূহও কম-বেশি করার দৃষ্টিকোণ থেকে তার বিপরীত। আর যেখানে সত্য আলী’র সাথে; আর আলী সত্যের সাথে, সেখানে বিদ্যমান কুরআনের মধ্যে উভয়দিক থেকেই পরিবর্তন রয়েছে; আর এটাই উদ্দেশ্য।” [ফসলুল খিতাব ( فصل الخطاب ), পৃ. ৯৭] হ্যাঁ, সে (নূরী তাবরসী এর) এ রকম ভাষ্য ও শব্দে এ জঘন্য কথাটি বলেছে, আল্লাহ তার উপর অভিশাপ করুন।
আর আহমাদ ইবন আবী তালিব আত তাবারসী তার আল-ইহতিজাজ গ্রন্থে বলেন, তারপর তাদের কাছে যে সমস্ত মাসআলা আপতিত হলো নিজেদের পক্ষ থেকে তাদের কুফরীকে সাব্যস্ত করার জন্য তারা সেগুলোকে একত্রিত করতে ও সংকলন করতে বাধ্য হলো... তাছাড়া তারা আরও এমন কিছু তাতে বর্ধিত করলো যার অগ্রহণযোগ্যতা ও অস্বীকৃতির ব্যাপারটি ছিল প্রকাশিত .. এভাবে মুলহিদ শ্রেণীর লোকদের পক্ষ থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী এর উপর মিথ্যাচার করে কুরআন শুরু করল। আর এজন্যই মিথ্যা ও অসার কথা তারা বলেছে এবং বলে থাকে [আল-ইহতিজাজ, পৃ. ৩৮৩; আহমাদ ইবন আবী তালেব আত-তাবারসী কর্তৃক রচিত।]। [নাউযুবিল্লাহ, এভাবে সে (লেখক আহমাদ ইবন আবী তালেব আত-তাবারসী) এ উম্মতের সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের প্রতি মিথ্যাচার করে তাদেরকে কুরআনের মধ্যে মিথ্যা প্রবেশ করানোর অপবাদ দিল। আল্লাহ তার উপর লানত করুন।]
হোসাইন আন-নুরী আত-তাবারসী ‘ফসলুল খিতাব’ ( فصل الخطاب ) নামক গ্রন্থের মধ্যে আরো বলেন:
“অনেক প্রবীণ রাফেযীর নিকট থেকে বর্ণিত আছে যে, আমাদের নিকট যে কুরআন বিদ্যমান আছে, তা ঐ কুরআন নয়, যা আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর নাযিল করেছেন; বরং তা রদবদল করা হয়েছে এবং করা হয়েছে তাতে কম-বেশি।” [ফসলুল খিতাব ( فصل الخطاب ), (ইরানি সংস্করণ) পৃ. ৩২]
মোল্লা হাসান বর্ণনা করেন:
“আবূ জাফর থেকে বর্ণিত, আল-কুরআন থেকে অনেক আয়াত বাদ দেয়া হয়েছে; আর কতগুলো শব্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে।” [মোল্লা হাসান, তাফসীরুস সাফী ( تفسير الصافي ), পৃ. ১১]
মোল্লা হাসান আরও বলেন:
“আহলে বাইত তথা নবী পরিবারের সুত্রে বর্ণিত এসব কাহিনী ও অন্যান্য বর্ণনাসমূহ থেকে বুঝা যায় যে, আমাদের মধ্যে প্রচলিত কুরআন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর অবতীর্ণ কুরআনের মত পরিপূর্ণ নয়; বরং তার মাঝে আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তার পরিপন্থী আয়াত যেমন রয়েছে; আবার তেমনি পরিবর্তিত ও বিকৃত আয়াতও রয়েছে। আর তার থেকে অনেক কিছু বিলুপ্ত করা হয়েছে; তন্মধ্যে অনেক জায়গায় আলী’র নাম বিলুপ্ত করা হয়েছে; আবার একাধিক বার " آل محمد " (মুহাম্মদের বংশধর) শব্দটি বিলুপ্ত করা হয়েছে; আরও বিলুপ্ত করা হয়েছে মুনাফিকদের নামসমূহ এবং ইত্যাদি ইত্যাদি। আর এটা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পছন্দসই ক্রমধারা অনুযায়ী সাজানোও নয়।” [মোল্লা হাসান, তাফসীরুস সাফী ( تفسير الصافي ), পৃ. ১৩]
আর কুলাইনী বর্ণনা করেন:
“আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নিশ্চয় জিবরাঈল আ. যে কুরআন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট নিয়ে এসেছে, তাতে আয়াত সংখ্যা সতের হাজার।” [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), (ভারতীয় সংস্করণ) পৃ. ৬৭১]
অথচ আমাদের সামনে বিদ্যমান কুরআনে আছে ছয় হাজার ছয়শত ছেষট্টি আয়াত [গ্রন্থকার এখানে কুরআনের আয়াতসংখ্যা বর্ণনায় একটি মারাত্মক ভুল করেছেন, কুরআনের আয়াত সংখ্যা মূলত: ৬২৩৬। কোনভাবেই তার সংখ্যা ৬৬৬৬ নয়। [সম্পাদক]]। সুতরাং মনে হচ্ছে যেন তার থেকে প্রায় দুই তৃতীয়াংশ আয়াত বিলুপ্ত করা হয়েছে এবং শুধু এক তৃতীয়াংশ আয়াত বাকি আছে। ‘মিরআতুল ‘ওকুল’ ( مرآة العقول ) নামক গ্রন্থের লেখক কুলাইনী কর্তৃক আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত উক্ত হাদীসের টীকায় বলেন: সুতরাং হাদিসটি বিশুদ্ধ; আর এই কথা অস্পষ্ট নয় যে, আল-কুরআনের ত্রুটি-বিচ্যুতি ও রদবদলের ব্যাপারে এই হাদিসটি ও আরও বহু বিশুদ্ধ হাদিসের বক্তব্য সুস্পষ্ট। আর আমার মতে, এই অধ্যায়ের হাদিসগুলো অর্থের দিক থেকে মুতাওয়াতির পর্যায়ের এবং সামগ্রিকভাবে এগুলোকে উপেক্ষা করার মানে মূলত হাদিসের উপর নির্ভরশীলতাকে বাধ্যতামূলকভাবে উপেক্ষা করা; বরং আমার ধারণা, এই অধ্যায়ের হাদিসগুলো ইমামতের হাদিসের চেয়ে কম নয়। সুতরাং তারা কিভাবে হাদিস দ্বারা তা সাব্যস্ত করবে। [মোল্লা মুহাম্মদ আল-বাকের আল-মজলিসী, মিরআতুল ‘ওকুল শরহুল উসূল ওয়াল ফুরু‘ ( مرآة العقول شرح الأصول و الفروع ), দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ. ৫৩৯]
‘আল-কাফী’ গ্রন্থের ব্যাখ্যাকার মোল্লা খলিল আল-কাযবীনী উপরে উল্লেখিত হাদিসের সত্যতা প্রসঙ্গে ফারসি ভাষায় বলেন, যার আরবি অনুবাদের (বাংলা) হল:
“তার (হাদিস) দ্বারা উদ্দেশ্য হল, বহু আয়াত আল-কুরআন থেকে বিলুপ্ত করা হয়েছে; আর তা প্রসিদ্ধ কপিসমূহের মধ্যে নেই। আর বিশেষ ও সাধারণ পদ্ধতিতে বর্ণিত বিশুদ্ধ হাদিসসমূহ আল-কুরআনের একটা বিরাট অংশ বিলুপ্তির প্রমাণ করে। আর এই হাদিসগুলো একটা বিরাট সংখ্যায় পৌঁছেছে, যার সবগুলোকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা রীতিমত দুঃসাহস বলে বিবেচনা করা হয়। আর দাবি করা হয় যে, গ্রন্থসমূহে বিদ্যমান এই কুরআন জটিলতা মুক্ত নয়। আর আবূ বকর, ওমর ও ওসমানের কর্মকাণ্ড উপলব্ধি করার পর আল-কুরআন সংকলনের ব্যাপারে সাহাবী ও ইসলামের অনুসারীগণ কর্তৃক গুরুত্বারোপের দলিলগুলো দুর্বল দলিল বলে প্রমাণিত। আর অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলার বাণী: [অর্থাৎ- “আমরাই কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং অবশ্যই আমরা তার সংরক্ষক”। — (সূরা আল-হিজর: ৯)] ﴿ إِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا ٱلذِّكۡرَ وَإِنَّا لَهُۥ لَحَٰفِظُونَ ٩ ﴾ আয়াত দ্বারা দলিল পেশ করাটা দলিলের দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ। কারণ, এখানে আয়াতটি অতীতকালীন শব্দ দ্বারা পেশ করা হয়েছে এবং তা মাক্কী সূরার অন্তর্ভুক্ত। আর এই সূরা নাযিল হওয়ার পর মক্কাতে আরও অনেক সূরা অবতীর্ণ হয়েছে এবং এই সূরাগুলো ছাড়া মদিনাতেও আরও বহু সূরা অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তাতে এই কথা বুঝায় না যে, গোটা কুরআন সংরক্ষিত ...। আর কুরআন সংরক্ষণের দ্বারা এই কথাও বুঝায় না যে, তা সকল মানুষের নিকট সংরক্ষিত থাকবে। কারণ, হতে পারে এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, তা সংরক্ষিত থাকবে যুগের ইমাম ও তার অনুসারীদের নিকট, যারা তার গোপন রহস্যের অধিকারী।” [মোল্লা খলিল আল-কাযবীনী, আস-সাফী শরহু উসূলুল কাফী ( الصافي شرح أصول الكافي ), কিতাবু ফদলুল কুরআন ( كتاب فضل القران ), ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ৭৫]
হোসাইন আন-নুরী আত-তাবারসী ‘ফসলুল খিতাব’ ( فصل الخطاب ) নামক গ্রন্থের মধ্যে আরও বলেন:
“কুরআনের বিশেষ বিশেষ স্থানের ব্যাপারে বর্ণিত হাদিসসমূহ পূর্বে আলোচিত পদ্ধতিসমূহের কোন এক পদ্ধতিতে কুরআনের কোন কোন শব্দ, আয়াত ও সূরার পরিবর্তন ও রদবদল প্রমাণ করে। আর এর পরিমাণ অনেক বেশি; এমনকি সাইয়্যেদ নিয়ামত উল্লাহ আল-জাযায়েরী তার কোন কোন গ্রন্থে বলেন: এই বিষয়টি প্রমাণ করার মত হাদিসের সংখ্যা দুই হাজারেরও অধিক এবং এই হাদিসগুলো প্রসিদ্ধ হাদিস বলে দাবি করেছেন মুফিদ, পণ্ডিত দামাদ, আল্লামা আল-মুজাল্লেলী প্রমুখের মত একদল; তাছাড়া শাইখও তার ‘তিবয়ান’ গ্রন্থে তার সংখ্যাধিক্যতার কথা স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন। এমনকি আরও একদল হাদিসগুলোকে ‘মুতাওয়াতির’ পর্যায়ের বলে দাবি করেছে, যাদের আলোচনা আসছে এই অধ্যায়ের শেষে।” [হোসাইন আন-নুরী আত-তাবারসী, ফসলুল খিতাব ( فصل الخطاب ), পৃ. ২২৭]
হোসাইন আন-নুরী আত-তাবারসী আরও বলেন: মুহাদ্দিস সাইয়্যেদ আল-জাযায়েরী ‘আনওয়ার’ গ্রন্থে বলেন, যার অর্থ হল: বিশেষ ব্যক্তিবর্গ প্রসিদ্ধ তথা মুতাওয়াতির হাদিসসমূহের বিশুদ্ধতার ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন, যা আল-কুরআনের মধ্যে বাক্যগত, শব্দগত ও ই‘রাবগত রদবদল ও বিকৃতি সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট ও বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ বহন করে। [হোসাইন আন-নুরী আত-তাবারসী, ফসলুল খিতাব ( فصل الخطاب ), পৃ. ৩১]
আন-নুরী আত-তাবারসী আরও বলেন: অনেক নির্ভরযোগ্য হাদিস সুস্পষ্ট করে দিয়েছে বিদ্যমান কুরআনের মধ্যে বিকৃতি, ত্রুটি-বিচ্যুতি ও কম-বেশি সংঘটিত হওয়ার বিষয়টিকে, যা বিচ্ছিন্নভাবে পূর্ববর্তী দলিলসমূহের মধ্যে আলোচিত হয়েছে। আর মানুষ ও জিন জাতির নেতার হৃদয়ে মু‘জিযা স্বরূপ আয়াত অথবা সূরার সাথে নির্দিষ্ট না করে যা নাযিল করা হয়েছে, এই কুরআন তার থেকে অনকে কম ও অপূর্ণাঙ্গ। আর তা বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক স্বীকৃত ও নির্ভরযোগ্য গ্রন্থসমূহে বিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যমান আছে। [ফসলুল খিতাব ( فصل الخطاب ), পৃ. ২১১]
আন-নুরী আত-তাবারসী আরও বলেন: জেনে রাখবেন, এই হাদিসগুলো নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহ থেকে উদ্ধৃত; শরীয়তের বিধি-বিধান ও সুন্নাতে নববী সাব্যস্তকরণের ক্ষেত্রে আমাদের সহকারীবৃন্দ যার মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে। [ফসলুল খিতাব ( فصل الخطاب ), পৃ. ২২৮]
শিয়া আলেমগণ অনেকগুলো বর্ণনার উল্লেখ করেছেন, যেগুলো আল-কুরআনের মধ্যে ব্যাপক আকারে বিকৃতির প্রমাণ করে এবং আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী আল-কুরআনের মধ্যে বিকৃতির ব্যাপারে যুক্তিভিত্তিক প্রমাণও পেশ করেছেন; যেমন তিনি বলেন: আকল তথা বিবেকের ফয়সালা হল, যখন আল-কুরআন জনগণের নিকট বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত আকারে ছিল এবং তা সংকলনের জন্য যারা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তারা নিষ্পাপ ছিল না; তখন স্বাভাবিকভাবেই তার পরিপূর্ণ ও যথাযথ সংকলন বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। কিন্তু এতে সন্দেহ নেই যে, স্বয়ংসম্পূর্ণ ব্যক্তি তথা ইমামের আবির্ভাব হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত মানুষ গ্রন্থসমূহ (মাসহাফ) ও তিলাওয়াতের মধ্যে যা আছে, সে অনুযায়ী আমল করতে বাধ্য। এটাও আহলে বাইত আ. সুত্রে জানা ও মুতাওয়াতির বিষয়। আর এই অধ্যায়ের অধিকাংশ হাদিস আল-কুরআনের ত্রুটি-বিচ্যুতি ও রদবদলের উপর দলিল; অচিরেই তার অনেকগুলো দলিল সামনের অধ্যায়সমূহে আসবে; বিশেষ করে আল-কুরআনের ফযিলতের অধ্যায়ে। আল্লাহ তা‘আলা চাহে তো এই প্রসঙ্গে প্রাণভরে অনেকগুলো বক্তব্য পেশ করব। [মুহাম্মদ আল-বাকের আল-মজলিসী, মিরায়াতুল ‘ওকুল শরহুল উসূল ওয়াল ফুরু‘ ( مرآة العقول شرح الأصول و الفروع ), ১ম খণ্ড, পৃ. ১৭১। আমরা বলব, মিথ্যবাদীদের উপর আল্লাহর লানত [সম্পাদক]]
আর ঐসব বর্ণনার (রেওয়ায়েতের) অংশ বিশেষ বিস্তারিত আলোচনা করার পর, যা শিয়াগণ তাদের গ্রন্থসমূহে বর্ণনা করেছে এবং তাদের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের পক্ষ থেকে সত্যায়ণ করেছে যে, নিশ্চয় তা (এসব বর্ণনা) কুরআনের মধ্যে বিকৃতি হওয়ার ব্যাপারে বিশুদ্ধ, সুস্পষ্ট ও মুতাওয়াতির পর্যায়ের; আমরা এই বর্ণনা অনুযায়ী তাদের আকিদার উল্লেখ করব এইভাবে যে, নিশ্চয় বিদ্যমান কুরআন বিকৃত ও পরিবর্তিত; সুতরাং ‘আত-তাফসীরুস সাফী’ ( التفسير الصافي )-এর গ্রন্থকার বলেন:
“এই ব্যাপারে আমাদের শাইখবৃন্দের আকিদা-বিশ্বাস ইসলামের বিশ্বস্ত ব্যক্তিত্ব মুহাম্মদ ইবন ইয়াকুব আল-কুলাইনী’র বক্তব্য ও বিশ্বাস থেকে পরিষ্কার ও সুস্পষ্ট; তিনি কুরআনের মধ্যে ত্রুটি-বিচ্যুতি ও বিকৃতির আকিদায় বিশ্বাসী। কারণ, তিনি এই অর্থে তার ‘কাফী’ নামক গ্রন্থে বহু বর্ণনার (রেওয়ায়েতের) অবতারণা করেছেন; কিন্তু তাতে দোষ-ত্রুটি প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করেন নি; এমনকি গ্রন্থের শুরুতে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, তিনি তাতে যা বর্ণনা করেছেন, তা তিনি সত্য বলে বিশ্বাস করেন। অনুরূপ হলেন তার শিক্ষক আলী ইবন ইবরাহীম আল-কুমী; কারণ, তার তাফসীরখানা এ ধরণের বর্ণনা দ্বারা ভরপুর এবং তাতে তার বাড়াবাড়িও আছে। আর অনুরূপ হলেন শাইখ আহমদ ইবন আবি তালিব আত-তাবারসী; কেননা তিনিও তার ‘ইহতিজাজ’ নামক গ্রন্থে তাদের পথ ও পন্থে চলেছেন।” [মোল্লা হাসান, তাফসীরুস সাফী ( تفسير الصافي ), পৃ. ১৪] অর্থাৎ তাদের মত করে তিনি তার গ্রন্থে এ সব বর্ণনা উল্লেখ বর্ণনা করেছেন।
আর শিয়া মুহাদ্দিসদের অনেকে এই বিষয়ে স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচনা করেছেন; তাতে তারা প্রমাণ করেছেন যে, আল-কুরআন বিকৃত এবং তাতে রদবদল করা হয়েছে। যেমন হোসাইন ইবন মুহাম্মদ তকী আন-নূরী আত-তাবারসী তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘ফাসলুল খিতাব ফি তাহরীফে কিতাবে রাব্বিল আরবাব’ ( فصل الخطاب في تحريف كتاب رب الأرباب ) -এর মধ্যে ঐসব গ্রন্থের নাম উল্লেখ করেছেন।
আর তিনি তার কিতাবের ভূমিকায় বলেন: এটা একটি চমৎকার গ্রন্থ ও পবিত্র কিতাব, যা আমি সম্পাদন করেছি আল-কুরআনের বিকৃতি এবং অত্যাচারীদের লজ্জাজনক কাজের প্রমাণ স্বরূপ; আর তার নামকরণ করেছি ‘ফাসলুল খিতাব ফি তাহরীফে কিতাবে রাব্বিল আরবাব’ ( فصل الخطاب في تحريف كتاب رب الأرباب )।
অতঃপর তিনি এই বিষয়ের উপর যেসব গ্রন্থ রচনা করেছেন, এই কিতাবের ২৯ পৃষ্ঠায় তার একটি তালিকা পেশ করেছেন; তিনি উল্লেখ করেছেন:
১. কিতাবুত তাহরীফ ( كتاب التحريف )
২. কিতাবুত তানযীল ওয়াত তাগয়ীর ( كتاب التنزيل و التغيير )
৩. কিতাবুত তানযীল মিনাল কুরআন ওয়াত তাহরীফ ( كتاب التنزيل من القرآن و التحريف )
৪. কিতাবুত তাহরীফ ওয়াত তাবদীল ( كتاب التحريف و التبديل )
৫. আত-তানযীল ওয়াত তাহরীফ ( التنزيل و التحريف )
সুতরাং এই গ্রন্থসমূহ আমাদেরকে জানাচ্ছে যে, তাদের নিকট এই আকিদাটি (বিশ্বাসটি) দীনের জরুরী বিষয়সমূহের অন্যতম একটি; যার কারণে তারা এই বিষয়ে বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন।
আর এই বর্ণনাগুলো দুর্বল বলে শিয়াদের কেউ কেউ যে আপত্তি উত্থাপন করে, তা এক ধরনের দুর্বল আপত্তি; কারণ, অধিকাংশ শিয়া মুহাদ্দিস ও তাদের বিশেষ ব্যক্তিবর্গ এই বর্ণনাসমূহ পেশ করেছে এবং সত্যায়ণ করেছেন। আর তাদের মধ্য থেকে কেউ এই বর্ণনাসমূহের বিপরীত কোন বর্ণনা পেশ করে নি এবং বর্ণনা করে নি এই আকিদার বিপরীত ভিন্ন কোন আকিদা; বরং তারা নিশ্চিন্তমনে কুরআন বিকৃত হওয়ার আকিদায় বিশ্বাসী। আর আমরা শিয়া আলেমদের নিকট আবেদন করি, তারা যখন স্বীকৃতি প্রদান করে যে, আল-কুরআন অবিকৃত ও অপরিবর্তিত অবস্থায় সংরক্ষিত আছে, তখন তাদের উপর বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে:
প্রথমত: তারা তাদের নিষ্পাপ ইমামদের নিকট থেকে একটি বর্ণনা (রেওয়ায়েত) নিয়ে আসবে, যা তাদের নিকট নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহের মধ্য থেকে যে কোন একটি কিতাবে উল্লেখ আছে এবং তা প্রমাণ করবে যে, আল-কুরআন পরিপূর্ণভাবে অবিকৃত অবস্থায় সংরক্ষিত আছে; কিন্তু তারা এই ধরনের বর্ণনা কিয়ামত পর্যন্ত কখনও নিয়ে আসবে না।
দ্বিতীয়ত: তাদের উপর আবশ্যক হয়ে পড়বে ঐ ব্যক্তিকে কাফির বলা, যে ব্যক্তি আল-কুরআনকে বিকৃত বলে এবং তাদের এই আকিদাকে পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করা।
আর তাদের উপর আরও আবশ্যক হয়ে পড়বে আল-কুরআন বিকৃত হওয়ার প্রমাণ স্বরূপ বর্ণিত এই বর্ণনাসমূহ তাদের সভা ও সমাবেশে প্রচার ও প্রচলন না করা; বরং এসব বর্ণনার ধারক ও বাহকগণের উপর আবশ্যক হয়ে পড়বে তাদের সভা ও সমাবেশে এগুলো প্রচার করা থেকে বিরত থাকা এবং ঐসব কিতাবসমূহকে ভুল বলে আখ্যায়িত করা, যেগুলোতে এই ধরনের মিথ্যা, বানোয়াট ও ভ্রান্ত বর্ণনাসমূহ বর্ণিত হয়েছে। যেমন উসূলুল কাফী ( أصول الكافي ), আল-ইহতিজাজ ( الاحتجاج ) ইত্যাদি।
আমরা এই পৃষ্ঠাগুলোতে আল-কুরআনের মধ্যে বিকৃতি হওয়াকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট শিয়াদের আকিদা উপস্থাপন করেছি, যেই আকিদাকে সমর্থন যুগিয়েছে তাদের মতানুসারে মুতাওয়াতির পর্যায়ের বর্ণনা (রেওয়ায়েত) এবং তাদের মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের বক্তব্যসমূহ। সুতরাং তাদের মধ্য থেকে কেউ তা অস্বীকার করতে পারবে না; আর তাদের এই বক্তব্যগুলো তাদের কুৎসিত চেহারা থেকে মুখোশ উন্মোচন করে দিয়েছে এবং আমাদের সামনে পবিত্র কিতাবকে কেন্দ্র করে তাদের আকিদাসমূহ স্পষ্ট করে দিয়েছে, অথচ এ কিতাব এমন যে, বাতিল তার সামনে ও পেছনে কোনভাবেই আগমন করতে পারে না। কারণ এটি প্রজ্ঞাময় প্রশংসিত আল্লাহর নাযিলকৃত কিতাব। এই সম্মানিত কিতাবের ব্যাপারে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা‘আলা বলেন:
﴿ الٓمٓ ١ ذَٰلِكَ ٱلۡكِتَٰبُ لَا رَيۡبَۛ فِيهِۛ هُدٗى لِّلۡمُتَّقِينَ ٢ ﴾ [ سورة البقرة : 1-2[
“আলিফ-লাম-মীম, এটা সেই কিতাব; এতে কোন সন্দেহ নেই, মুত্তকীদের জন্য তা পথ প্রদর্শক” —(সূরা আল-বাকারা: ১-২)
তিনি আরও বলেন:
﴿ إِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا ٱلذِّكۡرَ وَإِنَّا لَهُۥ لَحَٰفِظُونَ ٩ ﴾ [ سورة الحجر : 9]
“আমিই কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং অবশ্যই আমি তার সংরক্ষক”। — (সূরা আল-হিজর: ৯)
তিনি আরও বলেন:
﴿ لَا تُحَرِّكۡ بِهِۦ لِسَانَكَ لِتَعۡجَلَ بِهِۦٓ ١٦ إِنَّ عَلَيۡنَا جَمۡعَهُۥ وَقُرۡءَانَهُۥ ١٧ فَإِذَا قَرَأۡنَٰهُ فَٱتَّبِعۡ قُرۡءَانَهُۥ ١٨ ثُمَّ إِنَّ عَلَيۡنَا بَيَانَهُۥ ١٩ ﴾ [ سورة القيامة : 16-19]
“তাড়াতাড়ি ওহী আয়ত্ব করার জন্য তুমি তোমার জিহ্বা তার সাথে সঞ্চালন করো না। এটা সংরক্ষণ ও পাঠ করাবার দায়িত্ব আমারই। সুতরাং যখন আমি তা পাঠ করি, তখন তুমি সেই পাঠের অনুসরণ কর; অতঃপর এর বিশদ ব্যাখ্যার দায়িত্ব আমারই।” — (সূরা আল-কিয়ামা: ১৬-১৯)
তিনি আরও বলেন:
﴿ وَإِن كُنتُمۡ فِي رَيۡبٖ مِّمَّا نَزَّلۡنَا عَلَىٰ عَبۡدِنَا فَأۡتُواْ بِسُورَةٖ مِّن مِّثۡلِهِۦ ﴾ [ سورة البقرة : 23]
“আমি আমার বান্দার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছি, তাতে তোমাদের কোন সন্দেহ থাকলে তোমরা তার অনুরূপ কোন সূরা নিয়ে আস।” — (সূরা আল-বাকারা: ২৩)
তিনি আরও বলেন:
﴿ قُل لَّئِنِ ٱجۡتَمَعَتِ ٱلۡإِنسُ وَٱلۡجِنُّ عَلَىٰٓ أَن يَأۡتُواْ بِمِثۡلِ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانِ لَا يَأۡتُونَ بِمِثۡلِهِۦ وَلَوۡ كَانَ بَعۡضُهُمۡ لِبَعۡضٖ ظَهِيرٗا ٨٨ ﴾ [ سورة الإسراء : 88]
“বল, যদি এই কুরআনের অনুরূপ কুরআন নিয়ে আসার জন্য মানুষ ও জিন সমবেত হয় এবং যদিও তারা পরস্পরকে সাহায্য করে, তবুও তারা এর অনুরূপ আনয়ন করতে পারবে না।” — (সূরা আল-ইসরা: ৮৮)
আর মুসলিমগণ সামগ্রিকভাবে ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, নিশ্চয় পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত এবং তন্মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থানরত মুসলিমদের সামনে বিদ্যমান আল-কুরআনের কপিগুলোর প্রথম থেকে শুরু করে সূরা ফালাক ও নাসের শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলার বাণী এবং তার ওহী, যা তিনি তাঁর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর নাযিল করেছেন। সুতরাং তার একটি হরফ (অক্ষর) যে অস্বীকার করবে, সে কাফির।
তবে শিয়াদের কোন কোন অসতর্ক ব্যক্তি যখনই পরিপূর্ণ সংরক্ষিত বিদ্যমান কুরআনের প্রতি তার বিশ্বাস প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয় তখনই বলতে থাকে যে যদিও আমাদের কিতাবসমূহে কুরআন বিকৃত হওয়া সম্পর্কিত বর্ণনাসমূহ মওজুদ রয়েছে, তাতে কোন সমস্যা নেই। কারণ, তোমাদের কিতাবগুলোতেও তিলাওয়াত রহিত হওয়া ও কিরাতের বিভিন্নতার কথা উল্লেখ আছে। বস্তুত: তাদের এই ধরণের প্রমাণ গ্রহণ করা ডুবন্ত ব্যক্তির খড়কুটো আঁকড়ে ধরার ন্যায়। কারণ, তিলাওয়াত রহিত হওয়ার বিষয়টি আল-কুরআনের ভাষ্য দ্বারা প্রমাণিত; অনুরূপভাবে কিরাতের বিভিন্নতার বিষয়টিও। সুতরাং কোথায় ভিজা মাটি, আর কোথায় আকাশের তারকারাজি। নির্বোধ গোঁড়ামীকারীদের থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। বরং সেই অসতর্ক ব্যক্তির উচিত আমাদের সামনে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আলেমদের পক্ষ থেকে একটা বক্তব্য বা উদ্ধৃতি উপস্থাপন করা, যা সুস্পষ্ট করে বলবে যে, আল-কুরআন বিকৃত অথবা তাতে রদবদল করা হয়েছে; বরং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের সকলেই বিশ্বাস করেন যে, ‘আল-কুরআন বিকৃত’-এই কথার প্রবক্তা কাফির, মুসলিম মিল্লাত (জাতি) থেকে বহিষ্কৃত।
প্রথম কারণ:
শিয়াদের আকিদা (বিশ্বাস) অনুযায়ী সাহাবীগণ সকলেই মিথ্যাবাদী।
“আর তারা বিশ্বাস করে মিথ্যা বলা ইবাদত”।
অনুরূপভাবে আহলে বাইত তথা নবী পরিবারের ইমামগণ মিথ্যাবাদী এবং ‘তাকীয়া’-র অনুসারী।
“আর তারা বিশ্বাস করে মিথ্যা বলা ইবাদত”।
সুতরাং যখন সকল সাহাবী ও আহলে বাইত তথা নবী পরিবারের ইমামগণ মিথ্যাবাদী হয়ে যায়, তখন তারা কারা, যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে এই কুরআন মাজীদ যথাযথভাবে পৌঁছাবে?
দ্বিতীয় কারণ:
অনুরূপভাবে শিয়াদের আকিদা (বিশ্বাস) অনুযায়ী সাহাবীগণ মিথ্যাবাদী ছিলেন। আর তারাই আল-কুরআনুল কারীম কপি করেছেন এবং বর্ণনা করেছেন।
আর আহলে বাইত তথা নবী পরিবারের ইমামগণ তা বর্ণনা, সংকলন ও সত্যায়ন কোনটাই করেনি; সুতরাং কিভাবে রাফেযী ও শিয়াগণ বিদ্যমান এই কুরআনের বিশুদ্ধতা ও পরিপূর্ণতার ব্যাপারে আস্থা পোষণ করবে?
তৃতীয় কারণ:
শিয়াদের মত অনুযায়ী তাদের নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহে বর্ণিত বিশুদ্ধ বর্ণনাসমূহ; যার সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়ে গেছে (যা তাদের নিকট মুতাওয়াতির বর্ণনা বলে বিবেচিত)। আর প্রত্যেকটি বর্ণনাই স্পষ্ট করে বলে যে, আমাদের নিকট বিদ্যমান কুরআন বিকৃত, পরিবর্তিত এবং তার থেকে কম-বেশি করা হয়েছে; আর আমরা শিয়াদের গ্রন্থসমূহের মধ্যে একটি বিশুদ্ধ বর্ণনাও পাব না, যা প্রমাণ করবে যে, আমাদের নিকট বিদ্যমান কুরআন পরিপূর্ণ, অবিকৃত এবং অপরিবর্তিত। সুতরাং মনে হয় যেন সাব্যস্ত হওয়ার দিক থেকে (আমাদের নিকট বিদ্যমান) কুরআন মাজীদের অবস্থান শিয়াদের নিকট বিশুদ্ধ হাদিসের অবস্থানের চেয়েও অপূর্ণাঙ্গ।
আর শিয়ারা তাদের আলেম শরীফ মুর্তযা, আবূ জাফর আত-তুসী, আবূ আলী আত-তাবারসী এবং শাইখ সাদুক এ চার জন আলেমের বক্তব্য দ্বারা দলীল পেশ করে থাকে যে, তারা চারজন কুরআন বিকৃত হওয়াকে অস্বীকার করেছেন [এ চারজনের বক্তব্য যদিও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের বক্তব্যের অনুরূপ, কিন্তু শিয়ারা তাদের ‘তাকিয়া’ বা আসল বক্তব্য গোপন করে প্রকাশ্যে ভিন্ন বক্তব্য প্রদানের নীতি অবলম্বন করার কারণে তাদের এ বক্তব্য কতটুকু তাদের মন থেকে বের হয়েছে, তা নির্ধারণ করা কঠিন। সুতরাং শিয়ারা যখন এ চারজনের বক্তব্য পেশ করে বোঝাতে চায় যে, তাদের আলেমরাও কুরআন বিকৃত হয়েছে সংক্রান্ত বর্ণনাগুলো অস্বীকার করেছে, তখন তারা তাদের অগণিত অসংখ্য বর্ণনা (যাতে কুরআন বিকৃত হয়েছে বলে বর্ণনা এসেছে) সেগুলো গ্রহণ করবে নাকি এ চারজনের বক্তব্য (যা তাকিয়া নীতির মাধ্যমে বলা হয়েছে কিনা জানা যায় না তা) গ্রহণ করবে সেটা স্পষ্ট নয়। [সম্পাদক]]। বস্তুত শিয়াদের দ্বারা (কুরআন বিকৃত না হওয়ার পক্ষে) ঐ চারজনের বক্তব্য পেশকরা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলক। কারণ, শিয়া মাযহাবের গণ্ডি বা পরিধি তাদের নিষ্পাপ ইমামগণ ও অধিকাংশ হাদিসবিদের বক্তব্যসমূহের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত; আর তাদের রেওয়ায়েত তথা বর্ণনার পরিমাণ দুই হাজারের বেশি, যার সবগুলোই কুরআন বিকৃত হওয়ার পক্ষে বক্তব্য প্রদান করছে। সুতরাং তাদের নিষ্পাপ(!) ইমামগণ, অধিকাংশ হাদিসবেত্তা এবং শিয়াদের প্রবীণ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের বক্তব্যসমূহের সামনে ঐ চার মিসকীনের বক্তব্যের কোন ভারত্ব নেই। তাছাড়া ঐ চারজন এমন পরিস্থিতির শিকার হয়ে ‘তাকীয়া’ পদ্ধতির অনুসরণ করে (আল-কুরআনুল কারীম) অবিকৃত বলে মন্তব্য করেছেন, যে পরিস্থিতিতে তাদের (আল-কুরআনুল কারীম) বিকৃত বলে মন্তব্য করার কোন সুযোগ ছিল না; বিশেষ করে যখন সে ‘তাকীয়া’-এর ফযিলত এবং তাদের নিকট তার মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে জানতে পারল। অচিরেই আমরা তার কিছু দিক এই গ্রন্থের মধ্যে যথাস্থানে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। এমনকি শিয়াদের বিদগ্ধ পণ্ডিতগণ ঐ চারজন আলেমের বক্তব্যসমূহের কড়া সমালোচনা করেছেন। যেমন হোসাইন ইবন মুহাম্মদ তকী আন-নূরী আত-তাবারসী তার ‘ফাসলুল খিতাব ফি তাহরীফে কিতাবে রাব্বিল আরবাব’ ( فصل الخطاب في تحريف كتاب رب الأرباب ) নামক কিতাবের ৩৩ পৃষ্ঠায় যা এসেছে তার ভাষ্য হচ্ছে,
( لم يعرف من القدماء موافق لهم )
অর্থাৎ পূর্ববর্তী মনিষীগণ থেকে এ চারজনের মতের সপক্ষে কোন মত পাওয়া যায় না [এর অর্থ হচ্ছে, উক্ত গ্রন্থের লেখকের মতে, পূর্ববর্তী সবাই একবাক্যে বলেছেন যে, কুরআনে বিকৃতি হয়েছে। এ চারজন পূর্ববর্তীদের মতের বিরোধিতা করে কুরআনে বিকৃতি হয় নি বলে নতুন কথা বলেছেন। [সম্পাদক]]।
আর শিয়াদের অধিকাংশ মুহাদ্দিস আল-কুরআনের মধ্যে পরিবর্তন-পরিবর্ধন বা বিকৃতি হওয়ার কথা বিশ্বাস করে, যেমন হোসাইন ইবন মুহাম্মদ তকী আন-নূরী আত-তাবারসী তার ‘ফাসলুল খিতাব ফি তাহরীফে কিতাবে রাব্বিল আরবাব’ ( فصل الخطاب في تحريف كتاب رب الأرباب ) নামক কিতাবের ৩২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করে বলেন,
( وهو مذهب جمهور المحدثين الذين عثرنا على كلماتهم )
(আর এটা অধিকাংশ মুহাদ্দিসের মাযহাব, যাদের বক্তব্যসমূহ আমরা জানতে পেরেছি)।
আমাদের ইচ্ছা যে, আমরা শিয়াদের নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহ থেকে সামান্য কিছু পরিমাণ বর্ণনা সূত্র সহ পেশ করব, যাতে প্রমাণ হবে যে, তারা আল-কুরআন বিকৃত হয়েছে বলে বিশ্বাস করে থাকে।
মুহাম্মদ ইবন ইয়াকুব আল-কুলাইনী তার উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ) নামক গ্রন্থে ( باب أنه لم يجمع القرآن كله إلا الأئمة و أنهم يعلمون علمه كله / অধ্যায়, ইমামগণই আল-কুরআনকে পরিপূর্ণ সংকলন করেন এবং তারাই তার পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখে) শিরোনামের অধীনে বর্ণনা করেন:
“জাবের থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আবূ জাফর আ.-কে বলতে শুনেছি, মানুষের মধ্যে মিথ্যাবাদী ছাড়া কেউ দাবি করতে পারে না যে, আল্লাহ যেভাবে কুরআন নাযিল করেছেন, সে তা পরিপূর্ণভাবে সেভাবে সংকলন করেছে; বরং আলী ইবন আবি তালিব ও তার পরবর্তী ইমামগণই আল্লাহ যেভাবে তা নাযিল করেছেন, ঠিক সেভাবে সংকলন ও সংরক্ষণ করেছেন।”
কুলাইনী তার উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ) নামক গ্রন্থের ৬৭ পৃষ্ঠায় (ভারতীয় ছাপা) আরও বর্ণনা করেন:
“সালেম ইবন সালামা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: জনৈক ব্যক্তি আবূ আবদিল্লাহ আ.-এর নিকট (কুরআন থেকে) পাঠ করছিল; আর আমি আল-কুরআনের এমন কতগুলো শব্দ শুনলাম, যা কুরআনের সর্বজনবিদিত পাঠের মত নয়। অতঃপর আবূ আবদিল্লাহ বললেন: তুমি এই ধরনের পাঠ থেকে বিরত থাক; পাঠ কর মানুষ যেভাবে পাঠ করে; যতক্ষণ না কায়েম বা মাহদীর উত্থান ঘটবে, যখন সে কায়েম বা মাহদীর উত্থান হবে, তখন আল্লাহর কিতাবকে তার সীমারেখায় রেখে পাঠ করা হবে; আর তিনি কুরআনের ঐ কপিটি বের করবেন, যা আলী আ. লিপিবদ্ধ করেছিলেন। তিনি আরও বললেন, আলী আ. যখন তা লিপিবদ্ধ করে অবসর হলেন, তখন তিনি জনগণের নিকট তা বর্ণনা করলেন এবং তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন: এটা আল্লাহ তা‘আলার কিতাব, যেমনিভাবে তা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করেছেন; আমি দু’টি ফলক থেকে তা সংকলন করেছি। তখন লোকেরা বলল: আমাদের নিকটে তো কুরআন সংকলিত রয়েছে; এর কোন প্রয়োজন আমাদের নেই। অতঃপর আলী বললেন: জেনে রাখ! আল্লাহর শপথ, আজকের এই দিনের পরে তোমরা তা আর কখনও দেখতে পাবে না; কারণ, যখন আমি তা সংকলন করি, তখন আমার উপর দায়িত্ব ছিল যে, আমি তা তোমাদেরকে জানাব, যাতে তা তোমরা পাঠ করতে পার।” [নাউযুবিল্লাহ, কুরআন বিকৃতির বিশ্বাস কেউ করলে তার ঈমান থাকার কথা নয়; আর তারা সেই কুফরি বিশ্বাসটিকে আলী রা. এর দিকেই সম্পর্কযুক্ত করল। [সম্পাদক]]
কুলাইনী তার উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ) নামক গ্রন্থের (ভারতীয় ছাপা) ৬৭০ পৃষ্ঠায় আরও বর্ণনা করেন:
“আহমদ ইবন মুহাম্মদ ইবন আবি নসর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমার নিকট আবুল হাসান আ. একটি কুরআনের কপি হস্তান্তর করলেন এবং বললেন, তুমি তাতে দৃষ্টি দেবে না; কিন্তু আমি তা খুলে ফেললাম এবং তাতে পড়লাম " لم يكن الذين كفروا " অতঃপর তাতে পিতার নামসহ কুরাইশ বংশের সত্তর ব্যক্তির নাম পেলাম।”
কুলাইনী তার উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ) নামক গ্রন্থের ২৬৩ পৃষ্ঠায় ( باب فيه نكت و نتف من التنزيل في الولاية ) নামক অধ্যায়ে বর্ণনা করেন:
“আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত: " و لقد عهدنا إلي آدم من قبل كلمات في محمد و علي و فاطمة و الحسن و الحسين و الأئمة من ذريتهم فنسي " (আর আমি ইতঃপূর্বে আদমের প্রতি তার বংশধরের মধ্য থেকে মুহাম্মদ, আলী, ফাতেমা, হাসান, হোসাইন এবং ইমামদের ব্যাপারে কতগুলো নির্দেশ দান করেছিলাম; কিন্তু সে ভুলে গিয়েছিল।) আল্লাহর কসম, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি অনুরূপই অবতীর্ণ হয়েছিল।”
কুলাইনী তার উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ) নামক গ্রন্থের ২৬৩ পৃষ্ঠায় আরও বর্ণনা করেন:
“আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: জিবরাইল আ. মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর এই আয়াত নাযিল করেন:
" يا أيها الذين أوتوا الكتاب آمنوا بما نزلنا في علي نورا مبينا "
“হে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে! আমরা আলী’র ব্যাপারে যে সুস্পষ্ট নুর বা আলো অবতীর্ণ করেছি, তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর।”
আর তাদের কেউ কেউ বলে: ওসমান কুরআনের কপিগুলো পুড়িয়ে দিয়েছে এবং আলী আ. ও তার পরিবার-পরিজনের মর্যাদা বর্ণনায় যেসব সূরা ছিল, সে তা ধ্বংস কর দিয়েছে; তন্মধ্যে এই সূরাটিও ছিল:
" بسم الله الرحمن الرحيم يا أيها الذين آمنوا آمنوا بالنورين أنزلناهما يتلوان عليكم آياتي و يحذرانكم عذاب يوم عظيم نوران بعضهما من بعض و أنا السميع العليم ".
(আল্লাহর নামে শুরু করছি; হে ঈমানদারগণ! তোমরা দুই নুরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর, যা আমরা নাযিল করেছি; তারা তোমাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করবে এবং মহান দিবসের শাস্তির ভয় প্রদর্শন করবে; উভয় নুর পরস্পর পরস্পরের অংশ; আর আমি শ্রবণকারী, জ্ঞানী।) [ফসলুল খিতাব ( فصل الخطاب ), (ইরানি সংস্করণ) পৃ. ১৮০]
আর মোল্লা হাসান উল্লেখ করেন:
“আবূ জাফর আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: যদি আল্লাহর কিতাবের মধ্যে কম-বেশি করা না হত, তবে কোন বিবেকবানের কাছেই আমাদের হক (অধিকার) গোপন থাকত না।” [মোল্লা হাসান, তাফসীরুস সাফী ( تفسير الصافي ), পৃ. ১১]
আহমদ ইবন আবি তালিব আত-তাবারসী ‘আল-ইহতিজাজ’ ( الاحتجاج ) নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেন:
“আবূ যর গিফারী থেকে বর্ণিত, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকাল করেন, তখন আলী কুরআন সংকলন করেন এবং তা মুহাজির ও আনসারদের নিকট নিয়ে আসেন; অতঃপর তিনি তা তাদের নিকট পেশ করেন; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই জন্য তাকে অসিয়ত করেছিলেন। অতঃপর যখন আবূ বকর তা খুললেন, তখন প্রথম পৃষ্ঠার শুরুতেই বের হয়ে আসল সম্প্রদায়ের লোকদের দোষ-ত্রুটি ও অসম্মানের কথা; অতঃপর ওমর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল এবং বলল: হে আলী! তুমি তা ফেরত নিয়ে যাও; কারণ, এতে আমাদের কোন প্রয়োজন নেই। অতঃপর আলী আ. তা ফেরত নিয়ে নিলেন এবং সেখান থেকে প্রস্থান করলেন। অতঃপর যায়েদ ইবন সাবিতকে হাযির করা হল, আর সে ছিল কুরআনের কারী (পাঠক); অতঃপর তাকে ওমর বলল: আলী আমাদের নিকট এমন এক কুরআন নিয়ে এসেছে, যার মধ্যে মুহাজির ও আনসারদের অসম্মান ও অপমান করা হয়েছে। সুতরাং আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি যে, আমরা কুরআন সংকলন করব এবং তার থেকে ঐ অংশ বাদ দেব, যাতে মুহাজির ও আনসারদের অসম্মান ও অপমান করা হয়েছে। অতঃপর যায়েদ তার আহ্বানে সাড়া দিল এবং বলল, যদি আমি তোমাদের দাবি মোতাবেক কুরআন সংকলনের কাজ সমাপ্ত করি; আর আলীও তার সংকলন করা কুরআন প্রকাশ করে, তবে কি তোমরা যে কাজ করেছ, তা বাতিল করে দেবে না? তখন ওমর বলল: তাহলে উপায় কী? যায়েদ বলল: উপায় সম্পর্কে তোমরাই ভাল জান। তখন ওমর বলল: তাকে হত্যা করা ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় নেই এবং আমাদের স্বস্তিও নেই। অতঃপর সে খালিদ ইবন ওয়ালিদের হাতে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করল, কিন্তু এই কাজে সে সক্ষম হয়নি। সুতরাং যখন ওমর খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করে, তখন তারা আলী আ.-এর নিকট আবেদন করে যে, তিনি যেন তাদের নিকট কুরআন হস্তান্তর করেন; যাতে তারা তাতে পরিবর্তন করতে পারে। অতঃপর ওমর বলল: হে হাসানের পিতা! যদি আপনি ঐ কুরআনটা নিয়ে আসতেন, যা আপনি আবূ বকরের নিকট নিয়ে এসেছিলেন; কেননা শেষ পর্যন্ত আমরা তার ব্যাপারে ঐক্যমতে পৌঁছেছি; তখন তিনি বললেন: অসম্ভব! এটা পুনরায় নিয়ে আসার আর কোন সুযোগ নেই; আমি তো আবূ বকরের নিকট তা শুধু এই জন্য নিয়ে এসেছিলাম, যাতে তোমাদের উপর দলিল-প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তোমরা কিয়ামতের দিন এই কথা বলতে না পার: ﴿ إِنَّا كُنَّا عَنۡ هَٰذَا غَٰفِلِينَ ﴾ (আমরা তো এই বিষয়ে গাফিল ছিলাম); অথবা তোমরা বলতে না পার: ﴿ مَا جِئۡتَنَا بِبَيِّنَةٖ ﴾ (তুমি তো আমাদের নিকট প্রমাণ নিয়ে আস নি)। আমার নিকট যে কুরআন রয়েছে, তা পবিত্র ব্যক্তিগণ ও আমার বংশের অসীগণ ছাড়া অন্য কেউ স্পর্শ করতে পারবে না; অতঃপর ওমর বলল: তা প্রকাশ করার কোন নির্দিষ্ট সময় আছে কি? তখন আলী আ. বলল: হ্যাঁ, যখন আমার বংশধর থেকে কায়েম (অর্থাৎ মাহদী) শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবে, তখন সে তা প্রকাশ করবে এবং জনগণ তা গ্রহণ করবে।” [আল-ইহতিজাজ আত-তাবারসী ( الاحتجاج الطبرسي ), নাজাফ সংস্করণ, পৃ. ২২৫; অনুরূপ রয়েছে তাফসীরুস সাফী ( تفسير الصافي )-এর মধ্যে, পৃ. ১১; অনুরূপ রয়েছে ফসলুল খিতাব ( فصل الخطاب )-এর মধ্যে, পৃ. ৭]
আর নুরী আত-তাবারসী ‘ফসলুল খিতাব’ ( فصل الخطاب )-এর মধ্যে বলেন:
“আমীরুল মুমিনীনের একটি বিশেষ কুরআন ছিল, যা তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকালের পর নিজেই সংকলন করেন এবং তা জনসমক্ষে পেশ করেন; কিন্তু তারা তা উপেক্ষা করে। অতঃপর তিনি তা তাদের দৃষ্টি থেকে গোপন করে রাখেন; আর তা ছিল তার সন্তান তথা বংশধরের নিকট সংরক্ষিত, ইমামত তথা নেতৃত্বের সকল বৈশিষ্ট্য ও নবুয়তের ভাণ্ডারের মত যার উত্তরাধিকারী হয় এক ইমাম থেকে অপর ইমাম। আর তা প্রমাণ (মাহদী) এর নিকট সংরক্ষিত রয়েছে। -আল্লাহ আল্লাহ দ্রুত তাকে মুক্ত করে দিন- ; তিনি তখন তা জনসমক্ষে প্রকাশ করবেন এবং তাদেরকে তা পাঠ করার নির্দেশ দিবেন; আর তা সংকলন, সূরা ও আয়াতসমূহের ধারাবাহিকতার দিক থেকে বিদ্যমান এই কুরআনের বিপরীত; এমনকি শব্দসমূহও কম-বেশি করার দৃষ্টিকোণ থেকে তার বিপরীত। আর যেখানে সত্য আলী’র সাথে; আর আলী সত্যের সাথে, সেখানে বিদ্যমান কুরআনের মধ্যে উভয়দিক থেকেই পরিবর্তন রয়েছে; আর এটাই উদ্দেশ্য।” [ফসলুল খিতাব ( فصل الخطاب ), পৃ. ৯৭] হ্যাঁ, সে (নূরী তাবরসী এর) এ রকম ভাষ্য ও শব্দে এ জঘন্য কথাটি বলেছে, আল্লাহ তার উপর অভিশাপ করুন।
আর আহমাদ ইবন আবী তালিব আত তাবারসী তার আল-ইহতিজাজ গ্রন্থে বলেন, তারপর তাদের কাছে যে সমস্ত মাসআলা আপতিত হলো নিজেদের পক্ষ থেকে তাদের কুফরীকে সাব্যস্ত করার জন্য তারা সেগুলোকে একত্রিত করতে ও সংকলন করতে বাধ্য হলো... তাছাড়া তারা আরও এমন কিছু তাতে বর্ধিত করলো যার অগ্রহণযোগ্যতা ও অস্বীকৃতির ব্যাপারটি ছিল প্রকাশিত .. এভাবে মুলহিদ শ্রেণীর লোকদের পক্ষ থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী এর উপর মিথ্যাচার করে কুরআন শুরু করল। আর এজন্যই মিথ্যা ও অসার কথা তারা বলেছে এবং বলে থাকে [আল-ইহতিজাজ, পৃ. ৩৮৩; আহমাদ ইবন আবী তালেব আত-তাবারসী কর্তৃক রচিত।]। [নাউযুবিল্লাহ, এভাবে সে (লেখক আহমাদ ইবন আবী তালেব আত-তাবারসী) এ উম্মতের সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের প্রতি মিথ্যাচার করে তাদেরকে কুরআনের মধ্যে মিথ্যা প্রবেশ করানোর অপবাদ দিল। আল্লাহ তার উপর লানত করুন।]
হোসাইন আন-নুরী আত-তাবারসী ‘ফসলুল খিতাব’ ( فصل الخطاب ) নামক গ্রন্থের মধ্যে আরো বলেন:
“অনেক প্রবীণ রাফেযীর নিকট থেকে বর্ণিত আছে যে, আমাদের নিকট যে কুরআন বিদ্যমান আছে, তা ঐ কুরআন নয়, যা আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর নাযিল করেছেন; বরং তা রদবদল করা হয়েছে এবং করা হয়েছে তাতে কম-বেশি।” [ফসলুল খিতাব ( فصل الخطاب ), (ইরানি সংস্করণ) পৃ. ৩২]
মোল্লা হাসান বর্ণনা করেন:
“আবূ জাফর থেকে বর্ণিত, আল-কুরআন থেকে অনেক আয়াত বাদ দেয়া হয়েছে; আর কতগুলো শব্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে।” [মোল্লা হাসান, তাফসীরুস সাফী ( تفسير الصافي ), পৃ. ১১]
মোল্লা হাসান আরও বলেন:
“আহলে বাইত তথা নবী পরিবারের সুত্রে বর্ণিত এসব কাহিনী ও অন্যান্য বর্ণনাসমূহ থেকে বুঝা যায় যে, আমাদের মধ্যে প্রচলিত কুরআন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর অবতীর্ণ কুরআনের মত পরিপূর্ণ নয়; বরং তার মাঝে আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তার পরিপন্থী আয়াত যেমন রয়েছে; আবার তেমনি পরিবর্তিত ও বিকৃত আয়াতও রয়েছে। আর তার থেকে অনেক কিছু বিলুপ্ত করা হয়েছে; তন্মধ্যে অনেক জায়গায় আলী’র নাম বিলুপ্ত করা হয়েছে; আবার একাধিক বার " آل محمد " (মুহাম্মদের বংশধর) শব্দটি বিলুপ্ত করা হয়েছে; আরও বিলুপ্ত করা হয়েছে মুনাফিকদের নামসমূহ এবং ইত্যাদি ইত্যাদি। আর এটা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পছন্দসই ক্রমধারা অনুযায়ী সাজানোও নয়।” [মোল্লা হাসান, তাফসীরুস সাফী ( تفسير الصافي ), পৃ. ১৩]
আর কুলাইনী বর্ণনা করেন:
“আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নিশ্চয় জিবরাঈল আ. যে কুরআন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট নিয়ে এসেছে, তাতে আয়াত সংখ্যা সতের হাজার।” [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), (ভারতীয় সংস্করণ) পৃ. ৬৭১]
অথচ আমাদের সামনে বিদ্যমান কুরআনে আছে ছয় হাজার ছয়শত ছেষট্টি আয়াত [গ্রন্থকার এখানে কুরআনের আয়াতসংখ্যা বর্ণনায় একটি মারাত্মক ভুল করেছেন, কুরআনের আয়াত সংখ্যা মূলত: ৬২৩৬। কোনভাবেই তার সংখ্যা ৬৬৬৬ নয়। [সম্পাদক]]। সুতরাং মনে হচ্ছে যেন তার থেকে প্রায় দুই তৃতীয়াংশ আয়াত বিলুপ্ত করা হয়েছে এবং শুধু এক তৃতীয়াংশ আয়াত বাকি আছে। ‘মিরআতুল ‘ওকুল’ ( مرآة العقول ) নামক গ্রন্থের লেখক কুলাইনী কর্তৃক আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত উক্ত হাদীসের টীকায় বলেন: সুতরাং হাদিসটি বিশুদ্ধ; আর এই কথা অস্পষ্ট নয় যে, আল-কুরআনের ত্রুটি-বিচ্যুতি ও রদবদলের ব্যাপারে এই হাদিসটি ও আরও বহু বিশুদ্ধ হাদিসের বক্তব্য সুস্পষ্ট। আর আমার মতে, এই অধ্যায়ের হাদিসগুলো অর্থের দিক থেকে মুতাওয়াতির পর্যায়ের এবং সামগ্রিকভাবে এগুলোকে উপেক্ষা করার মানে মূলত হাদিসের উপর নির্ভরশীলতাকে বাধ্যতামূলকভাবে উপেক্ষা করা; বরং আমার ধারণা, এই অধ্যায়ের হাদিসগুলো ইমামতের হাদিসের চেয়ে কম নয়। সুতরাং তারা কিভাবে হাদিস দ্বারা তা সাব্যস্ত করবে। [মোল্লা মুহাম্মদ আল-বাকের আল-মজলিসী, মিরআতুল ‘ওকুল শরহুল উসূল ওয়াল ফুরু‘ ( مرآة العقول شرح الأصول و الفروع ), দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ. ৫৩৯]
‘আল-কাফী’ গ্রন্থের ব্যাখ্যাকার মোল্লা খলিল আল-কাযবীনী উপরে উল্লেখিত হাদিসের সত্যতা প্রসঙ্গে ফারসি ভাষায় বলেন, যার আরবি অনুবাদের (বাংলা) হল:
“তার (হাদিস) দ্বারা উদ্দেশ্য হল, বহু আয়াত আল-কুরআন থেকে বিলুপ্ত করা হয়েছে; আর তা প্রসিদ্ধ কপিসমূহের মধ্যে নেই। আর বিশেষ ও সাধারণ পদ্ধতিতে বর্ণিত বিশুদ্ধ হাদিসসমূহ আল-কুরআনের একটা বিরাট অংশ বিলুপ্তির প্রমাণ করে। আর এই হাদিসগুলো একটা বিরাট সংখ্যায় পৌঁছেছে, যার সবগুলোকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা রীতিমত দুঃসাহস বলে বিবেচনা করা হয়। আর দাবি করা হয় যে, গ্রন্থসমূহে বিদ্যমান এই কুরআন জটিলতা মুক্ত নয়। আর আবূ বকর, ওমর ও ওসমানের কর্মকাণ্ড উপলব্ধি করার পর আল-কুরআন সংকলনের ব্যাপারে সাহাবী ও ইসলামের অনুসারীগণ কর্তৃক গুরুত্বারোপের দলিলগুলো দুর্বল দলিল বলে প্রমাণিত। আর অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলার বাণী: [অর্থাৎ- “আমরাই কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং অবশ্যই আমরা তার সংরক্ষক”। — (সূরা আল-হিজর: ৯)] ﴿ إِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا ٱلذِّكۡرَ وَإِنَّا لَهُۥ لَحَٰفِظُونَ ٩ ﴾ আয়াত দ্বারা দলিল পেশ করাটা দলিলের দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ। কারণ, এখানে আয়াতটি অতীতকালীন শব্দ দ্বারা পেশ করা হয়েছে এবং তা মাক্কী সূরার অন্তর্ভুক্ত। আর এই সূরা নাযিল হওয়ার পর মক্কাতে আরও অনেক সূরা অবতীর্ণ হয়েছে এবং এই সূরাগুলো ছাড়া মদিনাতেও আরও বহু সূরা অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তাতে এই কথা বুঝায় না যে, গোটা কুরআন সংরক্ষিত ...। আর কুরআন সংরক্ষণের দ্বারা এই কথাও বুঝায় না যে, তা সকল মানুষের নিকট সংরক্ষিত থাকবে। কারণ, হতে পারে এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, তা সংরক্ষিত থাকবে যুগের ইমাম ও তার অনুসারীদের নিকট, যারা তার গোপন রহস্যের অধিকারী।” [মোল্লা খলিল আল-কাযবীনী, আস-সাফী শরহু উসূলুল কাফী ( الصافي شرح أصول الكافي ), কিতাবু ফদলুল কুরআন ( كتاب فضل القران ), ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ৭৫]
হোসাইন আন-নুরী আত-তাবারসী ‘ফসলুল খিতাব’ ( فصل الخطاب ) নামক গ্রন্থের মধ্যে আরও বলেন:
“কুরআনের বিশেষ বিশেষ স্থানের ব্যাপারে বর্ণিত হাদিসসমূহ পূর্বে আলোচিত পদ্ধতিসমূহের কোন এক পদ্ধতিতে কুরআনের কোন কোন শব্দ, আয়াত ও সূরার পরিবর্তন ও রদবদল প্রমাণ করে। আর এর পরিমাণ অনেক বেশি; এমনকি সাইয়্যেদ নিয়ামত উল্লাহ আল-জাযায়েরী তার কোন কোন গ্রন্থে বলেন: এই বিষয়টি প্রমাণ করার মত হাদিসের সংখ্যা দুই হাজারেরও অধিক এবং এই হাদিসগুলো প্রসিদ্ধ হাদিস বলে দাবি করেছেন মুফিদ, পণ্ডিত দামাদ, আল্লামা আল-মুজাল্লেলী প্রমুখের মত একদল; তাছাড়া শাইখও তার ‘তিবয়ান’ গ্রন্থে তার সংখ্যাধিক্যতার কথা স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন। এমনকি আরও একদল হাদিসগুলোকে ‘মুতাওয়াতির’ পর্যায়ের বলে দাবি করেছে, যাদের আলোচনা আসছে এই অধ্যায়ের শেষে।” [হোসাইন আন-নুরী আত-তাবারসী, ফসলুল খিতাব ( فصل الخطاب ), পৃ. ২২৭]
হোসাইন আন-নুরী আত-তাবারসী আরও বলেন: মুহাদ্দিস সাইয়্যেদ আল-জাযায়েরী ‘আনওয়ার’ গ্রন্থে বলেন, যার অর্থ হল: বিশেষ ব্যক্তিবর্গ প্রসিদ্ধ তথা মুতাওয়াতির হাদিসসমূহের বিশুদ্ধতার ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন, যা আল-কুরআনের মধ্যে বাক্যগত, শব্দগত ও ই‘রাবগত রদবদল ও বিকৃতি সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট ও বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ বহন করে। [হোসাইন আন-নুরী আত-তাবারসী, ফসলুল খিতাব ( فصل الخطاب ), পৃ. ৩১]
আন-নুরী আত-তাবারসী আরও বলেন: অনেক নির্ভরযোগ্য হাদিস সুস্পষ্ট করে দিয়েছে বিদ্যমান কুরআনের মধ্যে বিকৃতি, ত্রুটি-বিচ্যুতি ও কম-বেশি সংঘটিত হওয়ার বিষয়টিকে, যা বিচ্ছিন্নভাবে পূর্ববর্তী দলিলসমূহের মধ্যে আলোচিত হয়েছে। আর মানুষ ও জিন জাতির নেতার হৃদয়ে মু‘জিযা স্বরূপ আয়াত অথবা সূরার সাথে নির্দিষ্ট না করে যা নাযিল করা হয়েছে, এই কুরআন তার থেকে অনকে কম ও অপূর্ণাঙ্গ। আর তা বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক স্বীকৃত ও নির্ভরযোগ্য গ্রন্থসমূহে বিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যমান আছে। [ফসলুল খিতাব ( فصل الخطاب ), পৃ. ২১১]
আন-নুরী আত-তাবারসী আরও বলেন: জেনে রাখবেন, এই হাদিসগুলো নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহ থেকে উদ্ধৃত; শরীয়তের বিধি-বিধান ও সুন্নাতে নববী সাব্যস্তকরণের ক্ষেত্রে আমাদের সহকারীবৃন্দ যার মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে। [ফসলুল খিতাব ( فصل الخطاب ), পৃ. ২২৮]
শিয়া আলেমগণ অনেকগুলো বর্ণনার উল্লেখ করেছেন, যেগুলো আল-কুরআনের মধ্যে ব্যাপক আকারে বিকৃতির প্রমাণ করে এবং আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী আল-কুরআনের মধ্যে বিকৃতির ব্যাপারে যুক্তিভিত্তিক প্রমাণও পেশ করেছেন; যেমন তিনি বলেন: আকল তথা বিবেকের ফয়সালা হল, যখন আল-কুরআন জনগণের নিকট বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত আকারে ছিল এবং তা সংকলনের জন্য যারা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তারা নিষ্পাপ ছিল না; তখন স্বাভাবিকভাবেই তার পরিপূর্ণ ও যথাযথ সংকলন বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। কিন্তু এতে সন্দেহ নেই যে, স্বয়ংসম্পূর্ণ ব্যক্তি তথা ইমামের আবির্ভাব হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত মানুষ গ্রন্থসমূহ (মাসহাফ) ও তিলাওয়াতের মধ্যে যা আছে, সে অনুযায়ী আমল করতে বাধ্য। এটাও আহলে বাইত আ. সুত্রে জানা ও মুতাওয়াতির বিষয়। আর এই অধ্যায়ের অধিকাংশ হাদিস আল-কুরআনের ত্রুটি-বিচ্যুতি ও রদবদলের উপর দলিল; অচিরেই তার অনেকগুলো দলিল সামনের অধ্যায়সমূহে আসবে; বিশেষ করে আল-কুরআনের ফযিলতের অধ্যায়ে। আল্লাহ তা‘আলা চাহে তো এই প্রসঙ্গে প্রাণভরে অনেকগুলো বক্তব্য পেশ করব। [মুহাম্মদ আল-বাকের আল-মজলিসী, মিরায়াতুল ‘ওকুল শরহুল উসূল ওয়াল ফুরু‘ ( مرآة العقول شرح الأصول و الفروع ), ১ম খণ্ড, পৃ. ১৭১। আমরা বলব, মিথ্যবাদীদের উপর আল্লাহর লানত [সম্পাদক]]
আর ঐসব বর্ণনার (রেওয়ায়েতের) অংশ বিশেষ বিস্তারিত আলোচনা করার পর, যা শিয়াগণ তাদের গ্রন্থসমূহে বর্ণনা করেছে এবং তাদের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের পক্ষ থেকে সত্যায়ণ করেছে যে, নিশ্চয় তা (এসব বর্ণনা) কুরআনের মধ্যে বিকৃতি হওয়ার ব্যাপারে বিশুদ্ধ, সুস্পষ্ট ও মুতাওয়াতির পর্যায়ের; আমরা এই বর্ণনা অনুযায়ী তাদের আকিদার উল্লেখ করব এইভাবে যে, নিশ্চয় বিদ্যমান কুরআন বিকৃত ও পরিবর্তিত; সুতরাং ‘আত-তাফসীরুস সাফী’ ( التفسير الصافي )-এর গ্রন্থকার বলেন:
“এই ব্যাপারে আমাদের শাইখবৃন্দের আকিদা-বিশ্বাস ইসলামের বিশ্বস্ত ব্যক্তিত্ব মুহাম্মদ ইবন ইয়াকুব আল-কুলাইনী’র বক্তব্য ও বিশ্বাস থেকে পরিষ্কার ও সুস্পষ্ট; তিনি কুরআনের মধ্যে ত্রুটি-বিচ্যুতি ও বিকৃতির আকিদায় বিশ্বাসী। কারণ, তিনি এই অর্থে তার ‘কাফী’ নামক গ্রন্থে বহু বর্ণনার (রেওয়ায়েতের) অবতারণা করেছেন; কিন্তু তাতে দোষ-ত্রুটি প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করেন নি; এমনকি গ্রন্থের শুরুতে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, তিনি তাতে যা বর্ণনা করেছেন, তা তিনি সত্য বলে বিশ্বাস করেন। অনুরূপ হলেন তার শিক্ষক আলী ইবন ইবরাহীম আল-কুমী; কারণ, তার তাফসীরখানা এ ধরণের বর্ণনা দ্বারা ভরপুর এবং তাতে তার বাড়াবাড়িও আছে। আর অনুরূপ হলেন শাইখ আহমদ ইবন আবি তালিব আত-তাবারসী; কেননা তিনিও তার ‘ইহতিজাজ’ নামক গ্রন্থে তাদের পথ ও পন্থে চলেছেন।” [মোল্লা হাসান, তাফসীরুস সাফী ( تفسير الصافي ), পৃ. ১৪] অর্থাৎ তাদের মত করে তিনি তার গ্রন্থে এ সব বর্ণনা উল্লেখ বর্ণনা করেছেন।
আর শিয়া মুহাদ্দিসদের অনেকে এই বিষয়ে স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচনা করেছেন; তাতে তারা প্রমাণ করেছেন যে, আল-কুরআন বিকৃত এবং তাতে রদবদল করা হয়েছে। যেমন হোসাইন ইবন মুহাম্মদ তকী আন-নূরী আত-তাবারসী তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘ফাসলুল খিতাব ফি তাহরীফে কিতাবে রাব্বিল আরবাব’ ( فصل الخطاب في تحريف كتاب رب الأرباب ) -এর মধ্যে ঐসব গ্রন্থের নাম উল্লেখ করেছেন।
আর তিনি তার কিতাবের ভূমিকায় বলেন: এটা একটি চমৎকার গ্রন্থ ও পবিত্র কিতাব, যা আমি সম্পাদন করেছি আল-কুরআনের বিকৃতি এবং অত্যাচারীদের লজ্জাজনক কাজের প্রমাণ স্বরূপ; আর তার নামকরণ করেছি ‘ফাসলুল খিতাব ফি তাহরীফে কিতাবে রাব্বিল আরবাব’ ( فصل الخطاب في تحريف كتاب رب الأرباب )।
অতঃপর তিনি এই বিষয়ের উপর যেসব গ্রন্থ রচনা করেছেন, এই কিতাবের ২৯ পৃষ্ঠায় তার একটি তালিকা পেশ করেছেন; তিনি উল্লেখ করেছেন:
১. কিতাবুত তাহরীফ ( كتاب التحريف )
২. কিতাবুত তানযীল ওয়াত তাগয়ীর ( كتاب التنزيل و التغيير )
৩. কিতাবুত তানযীল মিনাল কুরআন ওয়াত তাহরীফ ( كتاب التنزيل من القرآن و التحريف )
৪. কিতাবুত তাহরীফ ওয়াত তাবদীল ( كتاب التحريف و التبديل )
৫. আত-তানযীল ওয়াত তাহরীফ ( التنزيل و التحريف )
সুতরাং এই গ্রন্থসমূহ আমাদেরকে জানাচ্ছে যে, তাদের নিকট এই আকিদাটি (বিশ্বাসটি) দীনের জরুরী বিষয়সমূহের অন্যতম একটি; যার কারণে তারা এই বিষয়ে বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন।
আর এই বর্ণনাগুলো দুর্বল বলে শিয়াদের কেউ কেউ যে আপত্তি উত্থাপন করে, তা এক ধরনের দুর্বল আপত্তি; কারণ, অধিকাংশ শিয়া মুহাদ্দিস ও তাদের বিশেষ ব্যক্তিবর্গ এই বর্ণনাসমূহ পেশ করেছে এবং সত্যায়ণ করেছেন। আর তাদের মধ্য থেকে কেউ এই বর্ণনাসমূহের বিপরীত কোন বর্ণনা পেশ করে নি এবং বর্ণনা করে নি এই আকিদার বিপরীত ভিন্ন কোন আকিদা; বরং তারা নিশ্চিন্তমনে কুরআন বিকৃত হওয়ার আকিদায় বিশ্বাসী। আর আমরা শিয়া আলেমদের নিকট আবেদন করি, তারা যখন স্বীকৃতি প্রদান করে যে, আল-কুরআন অবিকৃত ও অপরিবর্তিত অবস্থায় সংরক্ষিত আছে, তখন তাদের উপর বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে:
প্রথমত: তারা তাদের নিষ্পাপ ইমামদের নিকট থেকে একটি বর্ণনা (রেওয়ায়েত) নিয়ে আসবে, যা তাদের নিকট নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহের মধ্য থেকে যে কোন একটি কিতাবে উল্লেখ আছে এবং তা প্রমাণ করবে যে, আল-কুরআন পরিপূর্ণভাবে অবিকৃত অবস্থায় সংরক্ষিত আছে; কিন্তু তারা এই ধরনের বর্ণনা কিয়ামত পর্যন্ত কখনও নিয়ে আসবে না।
দ্বিতীয়ত: তাদের উপর আবশ্যক হয়ে পড়বে ঐ ব্যক্তিকে কাফির বলা, যে ব্যক্তি আল-কুরআনকে বিকৃত বলে এবং তাদের এই আকিদাকে পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করা।
আর তাদের উপর আরও আবশ্যক হয়ে পড়বে আল-কুরআন বিকৃত হওয়ার প্রমাণ স্বরূপ বর্ণিত এই বর্ণনাসমূহ তাদের সভা ও সমাবেশে প্রচার ও প্রচলন না করা; বরং এসব বর্ণনার ধারক ও বাহকগণের উপর আবশ্যক হয়ে পড়বে তাদের সভা ও সমাবেশে এগুলো প্রচার করা থেকে বিরত থাকা এবং ঐসব কিতাবসমূহকে ভুল বলে আখ্যায়িত করা, যেগুলোতে এই ধরনের মিথ্যা, বানোয়াট ও ভ্রান্ত বর্ণনাসমূহ বর্ণিত হয়েছে। যেমন উসূলুল কাফী ( أصول الكافي ), আল-ইহতিজাজ ( الاحتجاج ) ইত্যাদি।
আমরা এই পৃষ্ঠাগুলোতে আল-কুরআনের মধ্যে বিকৃতি হওয়াকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট শিয়াদের আকিদা উপস্থাপন করেছি, যেই আকিদাকে সমর্থন যুগিয়েছে তাদের মতানুসারে মুতাওয়াতির পর্যায়ের বর্ণনা (রেওয়ায়েত) এবং তাদের মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের বক্তব্যসমূহ। সুতরাং তাদের মধ্য থেকে কেউ তা অস্বীকার করতে পারবে না; আর তাদের এই বক্তব্যগুলো তাদের কুৎসিত চেহারা থেকে মুখোশ উন্মোচন করে দিয়েছে এবং আমাদের সামনে পবিত্র কিতাবকে কেন্দ্র করে তাদের আকিদাসমূহ স্পষ্ট করে দিয়েছে, অথচ এ কিতাব এমন যে, বাতিল তার সামনে ও পেছনে কোনভাবেই আগমন করতে পারে না। কারণ এটি প্রজ্ঞাময় প্রশংসিত আল্লাহর নাযিলকৃত কিতাব। এই সম্মানিত কিতাবের ব্যাপারে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা‘আলা বলেন:
﴿ الٓمٓ ١ ذَٰلِكَ ٱلۡكِتَٰبُ لَا رَيۡبَۛ فِيهِۛ هُدٗى لِّلۡمُتَّقِينَ ٢ ﴾ [ سورة البقرة : 1-2[
“আলিফ-লাম-মীম, এটা সেই কিতাব; এতে কোন সন্দেহ নেই, মুত্তকীদের জন্য তা পথ প্রদর্শক” —(সূরা আল-বাকারা: ১-২)
তিনি আরও বলেন:
﴿ إِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا ٱلذِّكۡرَ وَإِنَّا لَهُۥ لَحَٰفِظُونَ ٩ ﴾ [ سورة الحجر : 9]
“আমিই কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং অবশ্যই আমি তার সংরক্ষক”। — (সূরা আল-হিজর: ৯)
তিনি আরও বলেন:
﴿ لَا تُحَرِّكۡ بِهِۦ لِسَانَكَ لِتَعۡجَلَ بِهِۦٓ ١٦ إِنَّ عَلَيۡنَا جَمۡعَهُۥ وَقُرۡءَانَهُۥ ١٧ فَإِذَا قَرَأۡنَٰهُ فَٱتَّبِعۡ قُرۡءَانَهُۥ ١٨ ثُمَّ إِنَّ عَلَيۡنَا بَيَانَهُۥ ١٩ ﴾ [ سورة القيامة : 16-19]
“তাড়াতাড়ি ওহী আয়ত্ব করার জন্য তুমি তোমার জিহ্বা তার সাথে সঞ্চালন করো না। এটা সংরক্ষণ ও পাঠ করাবার দায়িত্ব আমারই। সুতরাং যখন আমি তা পাঠ করি, তখন তুমি সেই পাঠের অনুসরণ কর; অতঃপর এর বিশদ ব্যাখ্যার দায়িত্ব আমারই।” — (সূরা আল-কিয়ামা: ১৬-১৯)
তিনি আরও বলেন:
﴿ وَإِن كُنتُمۡ فِي رَيۡبٖ مِّمَّا نَزَّلۡنَا عَلَىٰ عَبۡدِنَا فَأۡتُواْ بِسُورَةٖ مِّن مِّثۡلِهِۦ ﴾ [ سورة البقرة : 23]
“আমি আমার বান্দার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছি, তাতে তোমাদের কোন সন্দেহ থাকলে তোমরা তার অনুরূপ কোন সূরা নিয়ে আস।” — (সূরা আল-বাকারা: ২৩)
তিনি আরও বলেন:
﴿ قُل لَّئِنِ ٱجۡتَمَعَتِ ٱلۡإِنسُ وَٱلۡجِنُّ عَلَىٰٓ أَن يَأۡتُواْ بِمِثۡلِ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانِ لَا يَأۡتُونَ بِمِثۡلِهِۦ وَلَوۡ كَانَ بَعۡضُهُمۡ لِبَعۡضٖ ظَهِيرٗا ٨٨ ﴾ [ سورة الإسراء : 88]
“বল, যদি এই কুরআনের অনুরূপ কুরআন নিয়ে আসার জন্য মানুষ ও জিন সমবেত হয় এবং যদিও তারা পরস্পরকে সাহায্য করে, তবুও তারা এর অনুরূপ আনয়ন করতে পারবে না।” — (সূরা আল-ইসরা: ৮৮)
আর মুসলিমগণ সামগ্রিকভাবে ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, নিশ্চয় পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত এবং তন্মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থানরত মুসলিমদের সামনে বিদ্যমান আল-কুরআনের কপিগুলোর প্রথম থেকে শুরু করে সূরা ফালাক ও নাসের শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলার বাণী এবং তার ওহী, যা তিনি তাঁর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর নাযিল করেছেন। সুতরাং তার একটি হরফ (অক্ষর) যে অস্বীকার করবে, সে কাফির।
তবে শিয়াদের কোন কোন অসতর্ক ব্যক্তি যখনই পরিপূর্ণ সংরক্ষিত বিদ্যমান কুরআনের প্রতি তার বিশ্বাস প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয় তখনই বলতে থাকে যে যদিও আমাদের কিতাবসমূহে কুরআন বিকৃত হওয়া সম্পর্কিত বর্ণনাসমূহ মওজুদ রয়েছে, তাতে কোন সমস্যা নেই। কারণ, তোমাদের কিতাবগুলোতেও তিলাওয়াত রহিত হওয়া ও কিরাতের বিভিন্নতার কথা উল্লেখ আছে। বস্তুত: তাদের এই ধরণের প্রমাণ গ্রহণ করা ডুবন্ত ব্যক্তির খড়কুটো আঁকড়ে ধরার ন্যায়। কারণ, তিলাওয়াত রহিত হওয়ার বিষয়টি আল-কুরআনের ভাষ্য দ্বারা প্রমাণিত; অনুরূপভাবে কিরাতের বিভিন্নতার বিষয়টিও। সুতরাং কোথায় ভিজা মাটি, আর কোথায় আকাশের তারকারাজি। নির্বোধ গোঁড়ামীকারীদের থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। বরং সেই অসতর্ক ব্যক্তির উচিত আমাদের সামনে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আলেমদের পক্ষ থেকে একটা বক্তব্য বা উদ্ধৃতি উপস্থাপন করা, যা সুস্পষ্ট করে বলবে যে, আল-কুরআন বিকৃত অথবা তাতে রদবদল করা হয়েছে; বরং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের সকলেই বিশ্বাস করেন যে, ‘আল-কুরআন বিকৃত’-এই কথার প্রবক্তা কাফির, মুসলিম মিল্লাত (জাতি) থেকে বহিষ্কৃত।
৭
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং হাসান, হোসাইন ও আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমকে অপমান করা:মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী ফারসি ভাষায় উল্লেখ করেন, যার আরবি (বাংলা) অনুবাদ হল:
“নু‘মানী ইমাম মুহাম্মদ বাকের আ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: যখন ইমাম মাহদী আত্মপ্রকাশ করবে, তখন তাকে ফেরেশতাদের দ্বারা পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হবে এবং তার নিকট সর্বপ্রথম যিনি বায়‘আত (আনুগত্যের শপথ) গ্রহণ করবেন, তিনি হলেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম; অতঃপর আলী আ.। আবার শাইখ তুসী ও নু‘মানী ইমাম রেজা আ. থেকে বর্ণনা করেন, ইমাম মাহদী আত্মপ্রকাশের অন্যতম নিদর্শন হল, তিনি অচিরেই বিবস্ত্র অবস্থায় সূর্যের গোলকের সামনে আত্মপ্রকাশ করবেন।” [আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী, হক্কুল ইয়াকীন ( حق اليقين ) (ফারসি ভাষায়), পৃ. ৩৪৭]
সুতরাং লক্ষ্য কর হে আমার ভাই! আল্লাহ তোমার প্রতি রহম করুন, কিভাবে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আমিরুল মুমেনীন আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে অপমান করছে; আবার মিথ্যা দাবি করছে যে, তারা উভয়ে অচিরেই মাহদী’র নিকট বায়‘আত (আনুগত্যের শপথ) গ্রহণ করবেন। অতঃপর তারা মাহদী’র উপরও মিথ্যারোপ করে যে, সে নাকি অচিরেই বিবস্ত্র অবস্থায় দিগম্বর হয়ে আত্মপ্রকাশ করবে। এটা কোন ধর্ম? (আল্লাহ তাদেরকে লাঞ্ছিত করুন)।
অতঃপর শিয়াগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মিথ্যার সম্পর্ক জুড়ে দিয়েছে এইভাবে যে, তিনি বলেছেন:
“যে ব্যক্তি একবার মুত‘আ বিয়ে করবে, তার মর্যাদা হবে হোসাইনের মর্যাদার সমান; আর যে ব্যক্তি দুইবার মুত‘আ বিয়ে করবে, তার মর্যাদা হবে হাসানের মর্যাদার সমান; আর যে ব্যক্তি তিনবার মুত‘আ বিয়ে করবে, তার মর্যাদা হবে আলী ইবন আবি তালিবের মর্যাদার সমান এবং যে ব্যক্তি চারবার মুত‘আ বিয়ে করবে, তার মর্যাদা হবে আমার মর্যাদার সমান।” [মুহাম্মদ মোল্লা আল-কাশানী, তাফসীরু মানহাজিস সাদেকীন ( تفسير منهج الصادقين ), পৃ. ৩৫৬]
তোমরা ঐসব আহাম্মকদের প্রতি লক্ষ্য কর, হোসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর মর্যাদায় পৌঁছা কি এতই সহজ? আমরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত বিশ্বাস করি যে, একজন ব্যক্তি বিভিন্ন প্রকারের মহান ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর বান্দা হতে পারে; কিন্তু তার পক্ষে এমন অবস্থা অর্জন সম্ভব নয় যে, সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের মধ্য থেকে কোন একজন নগণ্য সাহাবীর মর্যাদায় পৌঁছতে পারে। সুতরাং কিভাবে সে জান্নাতবাসী যুবকদের সরদার ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাতীর মর্যাদায় পৌঁছতে পারে। অতঃপর কিভাবেই বা সে তাঁর বড় ভাই হাসান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও তাঁর পিতা আমিরুল মুমেনীন খোলাফায়ে রাশেদীনের চতুর্থ খলিফা আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’র মর্যাদায় পৌঁছতে পারে। আর তাদের নির্লজ্জ অপবাদ বা মিথ্যাচার হচ্ছে সর্বযুগের নেতা ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূলের শানে; (তারা বলে) তিনি নাকি বলেছেন: যে ব্যক্তি চারবার মুত‘আ বিয়ে করবে, তার মর্যাদা হবে তাঁর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) মর্যাদার সমান (না‘উযুবিল্লাহ)।
সুতরাং হে আল্লাহ! ঐসব খবিসগণ যা দাবি করে, আমরা তা থেকে তোমার নিকট মুক্তি চাই; আর তাদের সকল কর্মকাণ্ড আল্লাহর দায়-দায়িত্বে অর্পণ করছি, যিনি প্রবল শক্তিশালী। لا حول و لا قوة إلا بالله العلي العظيم (মহান আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত কোন ক্ষমতা নেই এবং কোন শক্তি নেই)।
কুলাইনী ‘ফুরু‘উল কাফী’ ( فروع الكافي ) নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেন, যুরারা বলেন:
“যখন আমার কাছে সে সহীফা বা বিশেষ গ্রন্থ দেয়া হলো, তখন দেখলাম যে এটি একটি মোটা গ্রন্থ, যার সম্পর্কে প্রসিদ্ধি আছে যে, এটি প্রথম যুগের গ্রন্থসমূহের মধ্যে অন্যতম একটি গ্রন্থ; অতঃপর তাতে আমি লক্ষ্য করলাম এবং আচমকা দেখতে পেলাম তাতে এমন কিছু রয়েছে, যা মানুষের সামনে বিদ্যমান আত্মীয়তার সম্পর্ক ও সর্বসম্মত ভাল কর্মকাণ্ডের বিপরীত। আর যখন তার (গ্রন্থটির) সার্বিক অবস্থা এই রকম, তখন আমি তা পাঠ করলাম; এমনকি খারাপ মন, অল্প সংযম ও দুর্বল সিদ্ধান্তসহ আমি তার পাঠ শেষ করলাম এবং পাঠ করতে করতে বললাম: বাতিল। অতঃপর আমি তা নথিভুক্ত করলাম এবং তার নিকট পেশ করলাম। অতঃপর যখন আমি সকাল বেলায় আবূ জাফর আ.-এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম, তখন তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি কি ফারায়েযের গ্রন্থটি পাঠ করেছ? জওয়াবে আমি বললাম: হ্যাঁ। অতঃপর তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি যা পাঠ করেছ, তা কেমন মনে হল? জওয়াবে আমি বললাম: বাতিল, এটা কিছুই নয়, এটা জনগণের প্রতিষ্ঠিত মত ও পথের বিপরীত। তিনি আবার বললেন: আল্লাহর শপথ করে বলছি, হে যুরারা! তুমি যা দেখেছ, তা সত্য এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শ্রুতলিপি, যা আলী নিজ হাতে লিখেছে।” [ফুরু‘উল কাফী ( فروع الكافي ), ৩য় খণ্ড, পৃ. ৫২]
এটা ‘কাফী’ গ্রন্থের বর্ণনাসমূহের মধ্য থেকে একটি অন্যতম বর্ণনা; আর এই ‘কাফী’ ( الكافي ) গ্রন্থটি শিয়াদের নিকট একটি বড় ধরনের তথ্যবহুল গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত।
লক্ষ্য করুন হে আমার ভাই! আমিরুল মুমেনীন আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এবং সকল সৃষ্টির সেরা সৃষ্টি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ‘যা মানুষের সামনে বিদ্যমান আত্মীয়তার সম্পর্ক ও সর্বসম্মত ভাল কর্মকাণ্ডের বিপরীত’ এমন কিছু সেই গ্রন্থের মধ্যে লেখার যোগসূত্র তৈরি করার চেয়ে জঘন্য অপমান আর হতে পারে কি? অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (না‘উযুবিল্লাহ) সকল মানুষকে সব সময় আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা এবং ভাল কাজ করার নির্দেশ দিয়ে থাকেন; কিন্তু নির্জনে গিয়ে সাইয়্যিদুনা আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে তার বিপরীত লিখতে বলেন (অর্থাৎ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং মন্দ কাজের নির্দেশ ইত্যাদি); সুতরাং এর চেয়ে অধিক ঘৃণ্য অপবাদ আর কী হতে পারে? অতঃপর লক্ষ্য করুন, ঐসব শিয়াদের ধর্মীয় মতবাদের ব্যাপারে আপনার কী অভিমত, যারা মনে করে যে, প্রকৃত ধর্ম হল ঐ ধর্ম, যা যুরারা মিথ্যা অপবাদের মাধ্যমে দাবি করে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা লিখতে বলেছেন; আর সাইয়্যিদুনা আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তা নিজ হাতে লিপিবদ্ধ করেছেন, তাতে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং মন্দ কাজের নির্দেশ সংক্রান্ত বিধানসমূহ রয়েছে। এই ধরনের বিধি-বিধান কি ধর্ম হওয়ার যোগ্যতা রাখে?
আর শিয়াগণ আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর ব্যাপারে বলেন: আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ভাষণ দিয়েছেন; অতঃপর তিনি মুখ ফিরালেন, এমতাবস্থায় যে, তার চতুর্দিকে তার পরিবার-পরিজন, বিশেষ ব্যক্তিবর্গ ও দলীয় লোকজন ছিল; অতঃপর তিনি বলেন:
আমার পূর্ববর্তী প্রশাসকগণ প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেছেন এবং এই ক্ষেত্রে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধাচরণ করেছেন, তাঁর সাথে কৃত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন এবং তাঁর সুন্নাতকে পরিবর্তন করেছেন। আমি যদি জনগণকে তা পরিত্যাগ করতে উদ্বুদ্ধ করি এবং তা রদবদল করি ... তবে আমার সৈনিকগণ আমার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে ...। আর যদি আমি ‘ফাদাক’ অঞ্চলকে ফাতেমার ওয়ারিসদের নিকট ফেরত দেই ...। আর যুলুম-নির্যাতনের বিচারগুলোর সঠিক বিচার করি এবং অন্যায়ভাবে গ্রহণকৃত পুরুষদের অধীনস্থ নারীদেরকে ফেরত নিয়ে এসে তাদেরকে তাদের স্বামীদের নিকট সমর্পণ করি ... আর আমি জনগণকে আল-কুরআনের বিধানের প্রতি উদ্বুদ্ধ করি; আরও উদ্বুদ্ধ করি সুন্নাহ অনুযায়ী তালাক প্রদান করতে ... আর যদি আমি গোটা জাতিকে আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহর দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাই, তখন তারা আমার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। [ফুরু‘উল কাফী ( فروع الكافي ), রওযা অধ্যায়, পৃ. ২৯]
এই বর্ণনাটিও ‘কাফী’ ( الكافي ) গ্রন্থের বর্ণনাসমূহের অন্তর্ভুক্ত। মহাবীর সিংহ শার্দূল আসাদুল্লাহ আল-গালিব সাইয়্যিদুনা আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এরূপ ছিলেন, তা কি সত্য হতে পারে; যেমনিভাবে তাদের এই বর্ণনাসমূহ থেকে তার ভীরুতা ও অসহায়ত্ব প্রকাশ পাচ্ছে যে, তিনি তাঁর থেকে সৈন্যদের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করতেন এবং যার কারণে তিনি জনগণকে আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহর প্রতি উদ্বুদ্ধ করণকে উপেক্ষা করতেন; বরং তিনি তখন মুসলিমদের ইমাম ও বাদশাহ হওয়া সত্ত্বেও তাদের জন্য পছন্দ করতেন যে, তারা ঐ পথ ও মতের উপর অবশিষ্ট থাকবে, যার উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল ইচ্ছাকৃতভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধাচরণকারী প্রশাসকগণ, যারা তাঁর সাথে কৃত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী এবং তাঁর সুন্নাতকে পরিবর্তনকারী [নাউযুবিল্লাহ, কিভাবে তারা আবু বকর, উমর ও উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুমকে রাসূলের সুন্নাতের বিরোধী সাব্যস্ত করেছে !!! আলী রা. কখনও এ ধরনের কথা বলেন নি, এটা মূলত: শিয়াদের মিথ্যাচার। তারা তাদের মিথ্যা কথা আলী রা. এর নামে চালানোর অপচেষ্টা করেছে। [সম্পাদক]]। সুতরাং আলী রা. এর ওপর এর চেয়ে অধিক ঘৃণ্য অপবাদ আর কী হতে পারে? আর আমিরুল মুমেনীন আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর ব্যাপারে ওখানে (তাদের পক্ষ থেকে) এর চেয়ে আর বড় অপমান, নির্লজ্জতা ও বেহায়াপনা হতে পারে কী? অথচ শিয়াগণ তার ব্যাপারে মিথ্যা আকিদা-বিশ্বাস পোষণ করে যে, আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট ছিল মূসার লাঠি এবং সুলাইমানের আংটি; আর তিনি ছিলেন (না‘উযুবিল্লাহ) সকল বস্তুর উপর ক্ষমতাবান; সুতরাং আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত কোন ক্ষমতা নেই এবং কোন শক্তি নেই ( لا حول و لا قوة إلا بالله )।
হে আল্লাহ! আমাদেরকে আমাদের উত্তম কর্মসমূহের অনুপ্রেরণা দাও এবং আমাদেরকে আমাদের মন্দ কর্মসমূহ থেকে রক্ষা কর।
আল-কুলাইনী তার উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ) নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেন:
“জিবরাইল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট অবতরণ করেন এবং তাঁকে বলেন: হে মুহাম্মদ! আল্লাহ আপনাকে এমন এক সন্তানের সুসংবাদ দিচ্ছেন, যে ফাতেমার ঘরে জন্ম গ্রহণ করবে, তাকে আপনার পরে আপনার উম্মত হত্যা করবে; তখন তিনি বললেন: হে জিবরাইল! আমার প্রতিপালকের প্রতি সালাম, আমার এমন সন্তানের প্রয়োজন নেই, যে ফাতেমার ঘরে জন্ম গ্রহণ করবে এবং আমার পরে আমার উম্মত তাকে হত্যা করবে; অতঃপর সে (জিবরাইল) উর্ধ্বে গমন করল এবং আবার অবতরণ করল; অতঃপর পূর্বের মত করে কথা বলল; আর তিনিও পূর্বের মতই বললেন: হে জিবরাইল! আমার প্রতিপালকের প্রতি সালাম, আমার এমন সন্তানের প্রয়োজন নেই, যাকে আমার পরে আমার উম্মত হত্যা করবে; অতঃপর জিবরাইল আকাশে গমন করল এবং আবার অবতরণ করল; অতঃপর বলল: হে মুহাম্মদ! আপনার রব আপনাকে সালাম বলেছেন এবং সুসংবাদ দিচ্ছেন যে, তিনি তার বংশধরের মধ্যে ইমামত, বেলায়াত ও অসী তথা নেতৃত্ব, কর্তৃত্ব ও অসী প্রদান করবেন। অতঃপর তিনি বললেন: আমি তাতে রাজি। অতঃপর ফাতেমার নিকট সংবাদ পাঠানো হল যে, আল্লাহ আমাকে তোমার এক সন্তানের সুসংবাদ দিচ্ছেন, যাকে আমার পরে আমার উম্মত হত্যা করবে; তিনি (ফাতেমা) তাঁর নিকট সংবাদ পাঠালেন যে, আমার এমন সন্তানের প্রয়োজন নেই, যাকে তোমার পরে তোমার উম্মত হত্যা করবে। তার নিকট আবার সংবাদ পাঠানো হল যে, আল্লাহ তার বংশধরের মধ্যে নেতৃত্ব, কর্তৃত্ব ও অসী প্রদান করবেন। অতঃপর তিনি তাঁর নিকট সংবাদ পাঠালেন যে, আমি তাতে রাজি। অতঃপর সে তাকে কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে এবং কষ্ট সহ্য করে তাকে প্রসব করেছে ...; কিন্তু হোসাইন ফাতেমা আ. এবং অন্য কোন মহিলা থেকে দুধ পান করেনি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার নিকট নিয়ে আসা হত, অতঃপর তিনি তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি তার মুখের মধ্যে রাখতেন; অতঃপর সে তার থেকে যা চুষে নিত, তা তার জন্য দুই-তিন দিন পর্যন্ত যথেষ্ট হয়ে যেত।” [আল-কুলাইনী, উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ২৯৪]
এই বর্ণনাটি কি সাইয়্যিদুনা হোসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর জন্য অপমানজনক নয় যে, আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক জিবরাইল আ.-এর ভাষায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার সুসংবাদ দেয়া সত্ত্বেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পক্ষ থেকে বলেন: “আমার জন্য তার কোন প্রয়োজন নেই”। অনুরূপভাবে তার মাতা সাইয়্যেদা ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাও বলেন: “আমার জন্য তার কোন প্রয়োজন নেই”। অতঃপর “তিনি তাকে কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে এবং কষ্ট সহ্য করে তাকে প্রসব করেছে, অতঃপর তাকে দুধ পান করান নি।” কোন মা তার সন্তানের প্রতি এমন কথা বলেছেন বা এমন কাজ করেছেন বলে আমরা আদৌ শুনিনি। আর যদি সে সন্তানটি হয় হোসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর মত মহান ব্যক্তিত্ব ও জান্নাতের অধিবাসী যুবকদের নেতা, তবে তাঁর জন্য এটা কি অপমানজনক নয়?
আল-কুলাইনী আরও বর্ণনা করেন:
“আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, যখন আবদুল্লাহ ইবন উবাই ইবন সুলুল মারা গেল, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানাযায় উপস্থিত হলেন; কিন্তু ওমর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন: আল্লাহ তা‘আলা কি আপনাকে তার কবরের পাশে দাঁড়াতে নিষেধ করেন নি, তখন তিনি নীরব থাকলেন; অতঃপর তিনি (ওমর) আবার বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তা‘আলা কি আপনাকে তার কবরের পাশে দাঁড়াতে নিষেধ করেন নি, তখন তিনি তাকে বললেন: তোমার জন্য আফসোস! আমি কী বলেছি তুমি কি তা জান? আমি বলেছি: হে আল্লাহ! তুমি তার পেটকে আগুন দ্বারা পূর্ণ করে দাও, আর তার কবরকে আগুন দ্বারা ভর্তি করে দাও এবং তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাও।” [ফুরু‘উল কাফী ( فروع الكافي ), জানায়েয অধ্যায়, পৃ. ১৮৮]
শিয়াগণ কিভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর মিথ্যা অপবাদ দেয়; যেমন তারা মিথ্যা ও বানোয়াট দাবি করে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুনাফিকের জানাযা পড়েছেন [বস্তুত : রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুল্লাহ ইবন উবাই এর ওপর জানাযার সালাত আদায় করেন নি। [সম্পাদক]], কিন্তু তার জানাযায় তার জন্য দো‘আ করেননি, বরং তার জন্য শুধু বদ-দো‘আ করেছেন। আর এই ধরনের কাজ স্পষ্ট নিফাকী চরিত্রের অন্তর্ভুক্ত; আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে নিফাকের সম্পর্ক যুক্ত করাটা তাঁর শানে বড় ধরনের অমর্যাদাকর ও অপমানকর কাজ।
আল-কুলাইনী আরও বর্ণনা করেন:
“আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, মুনাফিকদের মধ্য থেকে জনৈক ব্যক্তি মারা গেল; অতঃপর হোসাইন ইবন আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু পায়ে হেঁটে বের হলেন; অতঃপর তার মাওলার (বন্ধু বা প্রভু বা দাস) সাথে তার সাক্ষাৎ হল, তখন হোসাইন আ. তাকে জিজ্ঞাসা করলেন: হে অমুক! তুমি কোথায় যাচ্ছ? তখন সে বলল: আমি এই মুনাফিকের জানাযার নামায পড়া থেকে পলায়ন করছি; অতঃপর হোসাইন আ. তাকে বললেন: আমি চাচ্ছি যে, তুমি আমার ডান পাশে দাঁড়াবে, অতঃপর আমাকে যা বলতে শুনবে, তুমিও তাই বলবে। অতঃপর যখন তার অভিভাবক তাকবির বলল, তখন হোসাইন আ. বললেন: আল্লাহু আকবার, হে আল্লাহ! তুমি তোমার অমুক বান্দার প্রতি একসাথে (বিচ্ছিন্নভাবে নয়) এক হাজার অভিশাপ দাও; হে আল্লাহ! তুমি তোমার বান্দাকে তোমার বান্দাগণের মধ্যে ও তোমার রাজ্যে অপমান কর; আর তাকে তোমার জাহান্নামে প্রবেশ করাও এবং তোমার কঠিন শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করাও। কারণ, সে তোমার শত্রুদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছিল, আর তোমার বন্ধুদেরকে শত্রু হিসেবে গ্রহণ করেছিল এবং তোমার নবীর পরিবার-পরিজনকে ঘৃণা করেছিল।” [ফুরু‘উল কাফী ( فروع الكافي ), জানায়েয অধ্যায়, পৃ. ১৮৯]
লক্ষ্য করুন, আল্লাহ আপনাকে কল্যাণের তাওফিক দিন; শিয়াগণ কেমন দুঃসাহস করল যে, তারা হোসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে তাদের প্রিয় ব্যক্তি বলে দাবি করা সত্ত্বেও তাঁর উপর মিথ্যারোপ করছে এইভাবে যে, তিনি জনৈক ব্যক্তির জানাযার নামায পড়েছেন; অতঃপর তার জন্য বদদো‘আ করেছেন এবং তাকে অভিশাপ দিয়েছেন; অথচ দো‘আ করা এবং মাগফেরাত ও রহমত কামনা করা ব্যতীত সালাত হতে পারে না ...। সুতরাং তারা মিথ্যা ও বানোয়াট পদ্ধতিতে হোসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সাথে নিফাকের সম্পর্ক যুক্ত করে দিল। আর ‘হোসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর মধ্যে নিফাক ও প্রতারণার বাস্তবতা রয়েছে’-এমন ধারণা থেকে আমরা আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। দীনকে নিফাকের (প্রতারণার) উপর প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাফির, মুশরিক, ইহুদী প্রমুখদের পক্ষ থেকে এত বিপদ-মুসিবত ও কষ্টকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন। বিষয়টি যদি এমনই হত, তবে কারবালার যুদ্ধ সংঘটিত হত না এবং হোসাইন ইবন আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা শাহাদাত বরণ করতেন না।
“নু‘মানী ইমাম মুহাম্মদ বাকের আ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: যখন ইমাম মাহদী আত্মপ্রকাশ করবে, তখন তাকে ফেরেশতাদের দ্বারা পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হবে এবং তার নিকট সর্বপ্রথম যিনি বায়‘আত (আনুগত্যের শপথ) গ্রহণ করবেন, তিনি হলেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম; অতঃপর আলী আ.। আবার শাইখ তুসী ও নু‘মানী ইমাম রেজা আ. থেকে বর্ণনা করেন, ইমাম মাহদী আত্মপ্রকাশের অন্যতম নিদর্শন হল, তিনি অচিরেই বিবস্ত্র অবস্থায় সূর্যের গোলকের সামনে আত্মপ্রকাশ করবেন।” [আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী, হক্কুল ইয়াকীন ( حق اليقين ) (ফারসি ভাষায়), পৃ. ৩৪৭]
সুতরাং লক্ষ্য কর হে আমার ভাই! আল্লাহ তোমার প্রতি রহম করুন, কিভাবে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আমিরুল মুমেনীন আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে অপমান করছে; আবার মিথ্যা দাবি করছে যে, তারা উভয়ে অচিরেই মাহদী’র নিকট বায়‘আত (আনুগত্যের শপথ) গ্রহণ করবেন। অতঃপর তারা মাহদী’র উপরও মিথ্যারোপ করে যে, সে নাকি অচিরেই বিবস্ত্র অবস্থায় দিগম্বর হয়ে আত্মপ্রকাশ করবে। এটা কোন ধর্ম? (আল্লাহ তাদেরকে লাঞ্ছিত করুন)।
অতঃপর শিয়াগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মিথ্যার সম্পর্ক জুড়ে দিয়েছে এইভাবে যে, তিনি বলেছেন:
“যে ব্যক্তি একবার মুত‘আ বিয়ে করবে, তার মর্যাদা হবে হোসাইনের মর্যাদার সমান; আর যে ব্যক্তি দুইবার মুত‘আ বিয়ে করবে, তার মর্যাদা হবে হাসানের মর্যাদার সমান; আর যে ব্যক্তি তিনবার মুত‘আ বিয়ে করবে, তার মর্যাদা হবে আলী ইবন আবি তালিবের মর্যাদার সমান এবং যে ব্যক্তি চারবার মুত‘আ বিয়ে করবে, তার মর্যাদা হবে আমার মর্যাদার সমান।” [মুহাম্মদ মোল্লা আল-কাশানী, তাফসীরু মানহাজিস সাদেকীন ( تفسير منهج الصادقين ), পৃ. ৩৫৬]
তোমরা ঐসব আহাম্মকদের প্রতি লক্ষ্য কর, হোসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর মর্যাদায় পৌঁছা কি এতই সহজ? আমরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত বিশ্বাস করি যে, একজন ব্যক্তি বিভিন্ন প্রকারের মহান ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর বান্দা হতে পারে; কিন্তু তার পক্ষে এমন অবস্থা অর্জন সম্ভব নয় যে, সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের মধ্য থেকে কোন একজন নগণ্য সাহাবীর মর্যাদায় পৌঁছতে পারে। সুতরাং কিভাবে সে জান্নাতবাসী যুবকদের সরদার ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাতীর মর্যাদায় পৌঁছতে পারে। অতঃপর কিভাবেই বা সে তাঁর বড় ভাই হাসান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও তাঁর পিতা আমিরুল মুমেনীন খোলাফায়ে রাশেদীনের চতুর্থ খলিফা আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’র মর্যাদায় পৌঁছতে পারে। আর তাদের নির্লজ্জ অপবাদ বা মিথ্যাচার হচ্ছে সর্বযুগের নেতা ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূলের শানে; (তারা বলে) তিনি নাকি বলেছেন: যে ব্যক্তি চারবার মুত‘আ বিয়ে করবে, তার মর্যাদা হবে তাঁর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) মর্যাদার সমান (না‘উযুবিল্লাহ)।
সুতরাং হে আল্লাহ! ঐসব খবিসগণ যা দাবি করে, আমরা তা থেকে তোমার নিকট মুক্তি চাই; আর তাদের সকল কর্মকাণ্ড আল্লাহর দায়-দায়িত্বে অর্পণ করছি, যিনি প্রবল শক্তিশালী। لا حول و لا قوة إلا بالله العلي العظيم (মহান আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত কোন ক্ষমতা নেই এবং কোন শক্তি নেই)।
কুলাইনী ‘ফুরু‘উল কাফী’ ( فروع الكافي ) নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেন, যুরারা বলেন:
“যখন আমার কাছে সে সহীফা বা বিশেষ গ্রন্থ দেয়া হলো, তখন দেখলাম যে এটি একটি মোটা গ্রন্থ, যার সম্পর্কে প্রসিদ্ধি আছে যে, এটি প্রথম যুগের গ্রন্থসমূহের মধ্যে অন্যতম একটি গ্রন্থ; অতঃপর তাতে আমি লক্ষ্য করলাম এবং আচমকা দেখতে পেলাম তাতে এমন কিছু রয়েছে, যা মানুষের সামনে বিদ্যমান আত্মীয়তার সম্পর্ক ও সর্বসম্মত ভাল কর্মকাণ্ডের বিপরীত। আর যখন তার (গ্রন্থটির) সার্বিক অবস্থা এই রকম, তখন আমি তা পাঠ করলাম; এমনকি খারাপ মন, অল্প সংযম ও দুর্বল সিদ্ধান্তসহ আমি তার পাঠ শেষ করলাম এবং পাঠ করতে করতে বললাম: বাতিল। অতঃপর আমি তা নথিভুক্ত করলাম এবং তার নিকট পেশ করলাম। অতঃপর যখন আমি সকাল বেলায় আবূ জাফর আ.-এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম, তখন তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি কি ফারায়েযের গ্রন্থটি পাঠ করেছ? জওয়াবে আমি বললাম: হ্যাঁ। অতঃপর তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি যা পাঠ করেছ, তা কেমন মনে হল? জওয়াবে আমি বললাম: বাতিল, এটা কিছুই নয়, এটা জনগণের প্রতিষ্ঠিত মত ও পথের বিপরীত। তিনি আবার বললেন: আল্লাহর শপথ করে বলছি, হে যুরারা! তুমি যা দেখেছ, তা সত্য এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শ্রুতলিপি, যা আলী নিজ হাতে লিখেছে।” [ফুরু‘উল কাফী ( فروع الكافي ), ৩য় খণ্ড, পৃ. ৫২]
এটা ‘কাফী’ গ্রন্থের বর্ণনাসমূহের মধ্য থেকে একটি অন্যতম বর্ণনা; আর এই ‘কাফী’ ( الكافي ) গ্রন্থটি শিয়াদের নিকট একটি বড় ধরনের তথ্যবহুল গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত।
লক্ষ্য করুন হে আমার ভাই! আমিরুল মুমেনীন আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এবং সকল সৃষ্টির সেরা সৃষ্টি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ‘যা মানুষের সামনে বিদ্যমান আত্মীয়তার সম্পর্ক ও সর্বসম্মত ভাল কর্মকাণ্ডের বিপরীত’ এমন কিছু সেই গ্রন্থের মধ্যে লেখার যোগসূত্র তৈরি করার চেয়ে জঘন্য অপমান আর হতে পারে কি? অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (না‘উযুবিল্লাহ) সকল মানুষকে সব সময় আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা এবং ভাল কাজ করার নির্দেশ দিয়ে থাকেন; কিন্তু নির্জনে গিয়ে সাইয়্যিদুনা আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে তার বিপরীত লিখতে বলেন (অর্থাৎ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং মন্দ কাজের নির্দেশ ইত্যাদি); সুতরাং এর চেয়ে অধিক ঘৃণ্য অপবাদ আর কী হতে পারে? অতঃপর লক্ষ্য করুন, ঐসব শিয়াদের ধর্মীয় মতবাদের ব্যাপারে আপনার কী অভিমত, যারা মনে করে যে, প্রকৃত ধর্ম হল ঐ ধর্ম, যা যুরারা মিথ্যা অপবাদের মাধ্যমে দাবি করে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা লিখতে বলেছেন; আর সাইয়্যিদুনা আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তা নিজ হাতে লিপিবদ্ধ করেছেন, তাতে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং মন্দ কাজের নির্দেশ সংক্রান্ত বিধানসমূহ রয়েছে। এই ধরনের বিধি-বিধান কি ধর্ম হওয়ার যোগ্যতা রাখে?
আর শিয়াগণ আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর ব্যাপারে বলেন: আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ভাষণ দিয়েছেন; অতঃপর তিনি মুখ ফিরালেন, এমতাবস্থায় যে, তার চতুর্দিকে তার পরিবার-পরিজন, বিশেষ ব্যক্তিবর্গ ও দলীয় লোকজন ছিল; অতঃপর তিনি বলেন:
আমার পূর্ববর্তী প্রশাসকগণ প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেছেন এবং এই ক্ষেত্রে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধাচরণ করেছেন, তাঁর সাথে কৃত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন এবং তাঁর সুন্নাতকে পরিবর্তন করেছেন। আমি যদি জনগণকে তা পরিত্যাগ করতে উদ্বুদ্ধ করি এবং তা রদবদল করি ... তবে আমার সৈনিকগণ আমার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে ...। আর যদি আমি ‘ফাদাক’ অঞ্চলকে ফাতেমার ওয়ারিসদের নিকট ফেরত দেই ...। আর যুলুম-নির্যাতনের বিচারগুলোর সঠিক বিচার করি এবং অন্যায়ভাবে গ্রহণকৃত পুরুষদের অধীনস্থ নারীদেরকে ফেরত নিয়ে এসে তাদেরকে তাদের স্বামীদের নিকট সমর্পণ করি ... আর আমি জনগণকে আল-কুরআনের বিধানের প্রতি উদ্বুদ্ধ করি; আরও উদ্বুদ্ধ করি সুন্নাহ অনুযায়ী তালাক প্রদান করতে ... আর যদি আমি গোটা জাতিকে আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহর দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাই, তখন তারা আমার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। [ফুরু‘উল কাফী ( فروع الكافي ), রওযা অধ্যায়, পৃ. ২৯]
এই বর্ণনাটিও ‘কাফী’ ( الكافي ) গ্রন্থের বর্ণনাসমূহের অন্তর্ভুক্ত। মহাবীর সিংহ শার্দূল আসাদুল্লাহ আল-গালিব সাইয়্যিদুনা আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এরূপ ছিলেন, তা কি সত্য হতে পারে; যেমনিভাবে তাদের এই বর্ণনাসমূহ থেকে তার ভীরুতা ও অসহায়ত্ব প্রকাশ পাচ্ছে যে, তিনি তাঁর থেকে সৈন্যদের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করতেন এবং যার কারণে তিনি জনগণকে আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহর প্রতি উদ্বুদ্ধ করণকে উপেক্ষা করতেন; বরং তিনি তখন মুসলিমদের ইমাম ও বাদশাহ হওয়া সত্ত্বেও তাদের জন্য পছন্দ করতেন যে, তারা ঐ পথ ও মতের উপর অবশিষ্ট থাকবে, যার উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল ইচ্ছাকৃতভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধাচরণকারী প্রশাসকগণ, যারা তাঁর সাথে কৃত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী এবং তাঁর সুন্নাতকে পরিবর্তনকারী [নাউযুবিল্লাহ, কিভাবে তারা আবু বকর, উমর ও উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুমকে রাসূলের সুন্নাতের বিরোধী সাব্যস্ত করেছে !!! আলী রা. কখনও এ ধরনের কথা বলেন নি, এটা মূলত: শিয়াদের মিথ্যাচার। তারা তাদের মিথ্যা কথা আলী রা. এর নামে চালানোর অপচেষ্টা করেছে। [সম্পাদক]]। সুতরাং আলী রা. এর ওপর এর চেয়ে অধিক ঘৃণ্য অপবাদ আর কী হতে পারে? আর আমিরুল মুমেনীন আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর ব্যাপারে ওখানে (তাদের পক্ষ থেকে) এর চেয়ে আর বড় অপমান, নির্লজ্জতা ও বেহায়াপনা হতে পারে কী? অথচ শিয়াগণ তার ব্যাপারে মিথ্যা আকিদা-বিশ্বাস পোষণ করে যে, আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট ছিল মূসার লাঠি এবং সুলাইমানের আংটি; আর তিনি ছিলেন (না‘উযুবিল্লাহ) সকল বস্তুর উপর ক্ষমতাবান; সুতরাং আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত কোন ক্ষমতা নেই এবং কোন শক্তি নেই ( لا حول و لا قوة إلا بالله )।
হে আল্লাহ! আমাদেরকে আমাদের উত্তম কর্মসমূহের অনুপ্রেরণা দাও এবং আমাদেরকে আমাদের মন্দ কর্মসমূহ থেকে রক্ষা কর।
আল-কুলাইনী তার উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ) নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেন:
“জিবরাইল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট অবতরণ করেন এবং তাঁকে বলেন: হে মুহাম্মদ! আল্লাহ আপনাকে এমন এক সন্তানের সুসংবাদ দিচ্ছেন, যে ফাতেমার ঘরে জন্ম গ্রহণ করবে, তাকে আপনার পরে আপনার উম্মত হত্যা করবে; তখন তিনি বললেন: হে জিবরাইল! আমার প্রতিপালকের প্রতি সালাম, আমার এমন সন্তানের প্রয়োজন নেই, যে ফাতেমার ঘরে জন্ম গ্রহণ করবে এবং আমার পরে আমার উম্মত তাকে হত্যা করবে; অতঃপর সে (জিবরাইল) উর্ধ্বে গমন করল এবং আবার অবতরণ করল; অতঃপর পূর্বের মত করে কথা বলল; আর তিনিও পূর্বের মতই বললেন: হে জিবরাইল! আমার প্রতিপালকের প্রতি সালাম, আমার এমন সন্তানের প্রয়োজন নেই, যাকে আমার পরে আমার উম্মত হত্যা করবে; অতঃপর জিবরাইল আকাশে গমন করল এবং আবার অবতরণ করল; অতঃপর বলল: হে মুহাম্মদ! আপনার রব আপনাকে সালাম বলেছেন এবং সুসংবাদ দিচ্ছেন যে, তিনি তার বংশধরের মধ্যে ইমামত, বেলায়াত ও অসী তথা নেতৃত্ব, কর্তৃত্ব ও অসী প্রদান করবেন। অতঃপর তিনি বললেন: আমি তাতে রাজি। অতঃপর ফাতেমার নিকট সংবাদ পাঠানো হল যে, আল্লাহ আমাকে তোমার এক সন্তানের সুসংবাদ দিচ্ছেন, যাকে আমার পরে আমার উম্মত হত্যা করবে; তিনি (ফাতেমা) তাঁর নিকট সংবাদ পাঠালেন যে, আমার এমন সন্তানের প্রয়োজন নেই, যাকে তোমার পরে তোমার উম্মত হত্যা করবে। তার নিকট আবার সংবাদ পাঠানো হল যে, আল্লাহ তার বংশধরের মধ্যে নেতৃত্ব, কর্তৃত্ব ও অসী প্রদান করবেন। অতঃপর তিনি তাঁর নিকট সংবাদ পাঠালেন যে, আমি তাতে রাজি। অতঃপর সে তাকে কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে এবং কষ্ট সহ্য করে তাকে প্রসব করেছে ...; কিন্তু হোসাইন ফাতেমা আ. এবং অন্য কোন মহিলা থেকে দুধ পান করেনি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার নিকট নিয়ে আসা হত, অতঃপর তিনি তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি তার মুখের মধ্যে রাখতেন; অতঃপর সে তার থেকে যা চুষে নিত, তা তার জন্য দুই-তিন দিন পর্যন্ত যথেষ্ট হয়ে যেত।” [আল-কুলাইনী, উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ২৯৪]
এই বর্ণনাটি কি সাইয়্যিদুনা হোসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর জন্য অপমানজনক নয় যে, আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক জিবরাইল আ.-এর ভাষায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার সুসংবাদ দেয়া সত্ত্বেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পক্ষ থেকে বলেন: “আমার জন্য তার কোন প্রয়োজন নেই”। অনুরূপভাবে তার মাতা সাইয়্যেদা ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাও বলেন: “আমার জন্য তার কোন প্রয়োজন নেই”। অতঃপর “তিনি তাকে কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে এবং কষ্ট সহ্য করে তাকে প্রসব করেছে, অতঃপর তাকে দুধ পান করান নি।” কোন মা তার সন্তানের প্রতি এমন কথা বলেছেন বা এমন কাজ করেছেন বলে আমরা আদৌ শুনিনি। আর যদি সে সন্তানটি হয় হোসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর মত মহান ব্যক্তিত্ব ও জান্নাতের অধিবাসী যুবকদের নেতা, তবে তাঁর জন্য এটা কি অপমানজনক নয়?
আল-কুলাইনী আরও বর্ণনা করেন:
“আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, যখন আবদুল্লাহ ইবন উবাই ইবন সুলুল মারা গেল, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানাযায় উপস্থিত হলেন; কিন্তু ওমর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন: আল্লাহ তা‘আলা কি আপনাকে তার কবরের পাশে দাঁড়াতে নিষেধ করেন নি, তখন তিনি নীরব থাকলেন; অতঃপর তিনি (ওমর) আবার বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তা‘আলা কি আপনাকে তার কবরের পাশে দাঁড়াতে নিষেধ করেন নি, তখন তিনি তাকে বললেন: তোমার জন্য আফসোস! আমি কী বলেছি তুমি কি তা জান? আমি বলেছি: হে আল্লাহ! তুমি তার পেটকে আগুন দ্বারা পূর্ণ করে দাও, আর তার কবরকে আগুন দ্বারা ভর্তি করে দাও এবং তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাও।” [ফুরু‘উল কাফী ( فروع الكافي ), জানায়েয অধ্যায়, পৃ. ১৮৮]
শিয়াগণ কিভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর মিথ্যা অপবাদ দেয়; যেমন তারা মিথ্যা ও বানোয়াট দাবি করে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুনাফিকের জানাযা পড়েছেন [বস্তুত : রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুল্লাহ ইবন উবাই এর ওপর জানাযার সালাত আদায় করেন নি। [সম্পাদক]], কিন্তু তার জানাযায় তার জন্য দো‘আ করেননি, বরং তার জন্য শুধু বদ-দো‘আ করেছেন। আর এই ধরনের কাজ স্পষ্ট নিফাকী চরিত্রের অন্তর্ভুক্ত; আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে নিফাকের সম্পর্ক যুক্ত করাটা তাঁর শানে বড় ধরনের অমর্যাদাকর ও অপমানকর কাজ।
আল-কুলাইনী আরও বর্ণনা করেন:
“আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, মুনাফিকদের মধ্য থেকে জনৈক ব্যক্তি মারা গেল; অতঃপর হোসাইন ইবন আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু পায়ে হেঁটে বের হলেন; অতঃপর তার মাওলার (বন্ধু বা প্রভু বা দাস) সাথে তার সাক্ষাৎ হল, তখন হোসাইন আ. তাকে জিজ্ঞাসা করলেন: হে অমুক! তুমি কোথায় যাচ্ছ? তখন সে বলল: আমি এই মুনাফিকের জানাযার নামায পড়া থেকে পলায়ন করছি; অতঃপর হোসাইন আ. তাকে বললেন: আমি চাচ্ছি যে, তুমি আমার ডান পাশে দাঁড়াবে, অতঃপর আমাকে যা বলতে শুনবে, তুমিও তাই বলবে। অতঃপর যখন তার অভিভাবক তাকবির বলল, তখন হোসাইন আ. বললেন: আল্লাহু আকবার, হে আল্লাহ! তুমি তোমার অমুক বান্দার প্রতি একসাথে (বিচ্ছিন্নভাবে নয়) এক হাজার অভিশাপ দাও; হে আল্লাহ! তুমি তোমার বান্দাকে তোমার বান্দাগণের মধ্যে ও তোমার রাজ্যে অপমান কর; আর তাকে তোমার জাহান্নামে প্রবেশ করাও এবং তোমার কঠিন শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করাও। কারণ, সে তোমার শত্রুদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছিল, আর তোমার বন্ধুদেরকে শত্রু হিসেবে গ্রহণ করেছিল এবং তোমার নবীর পরিবার-পরিজনকে ঘৃণা করেছিল।” [ফুরু‘উল কাফী ( فروع الكافي ), জানায়েয অধ্যায়, পৃ. ১৮৯]
লক্ষ্য করুন, আল্লাহ আপনাকে কল্যাণের তাওফিক দিন; শিয়াগণ কেমন দুঃসাহস করল যে, তারা হোসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে তাদের প্রিয় ব্যক্তি বলে দাবি করা সত্ত্বেও তাঁর উপর মিথ্যারোপ করছে এইভাবে যে, তিনি জনৈক ব্যক্তির জানাযার নামায পড়েছেন; অতঃপর তার জন্য বদদো‘আ করেছেন এবং তাকে অভিশাপ দিয়েছেন; অথচ দো‘আ করা এবং মাগফেরাত ও রহমত কামনা করা ব্যতীত সালাত হতে পারে না ...। সুতরাং তারা মিথ্যা ও বানোয়াট পদ্ধতিতে হোসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সাথে নিফাকের সম্পর্ক যুক্ত করে দিল। আর ‘হোসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর মধ্যে নিফাক ও প্রতারণার বাস্তবতা রয়েছে’-এমন ধারণা থেকে আমরা আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। দীনকে নিফাকের (প্রতারণার) উপর প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাফির, মুশরিক, ইহুদী প্রমুখদের পক্ষ থেকে এত বিপদ-মুসিবত ও কষ্টকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন। বিষয়টি যদি এমনই হত, তবে কারবালার যুদ্ধ সংঘটিত হত না এবং হোসাইন ইবন আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা শাহাদাত বরণ করতেন না।
আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী ‘হক্কুল ইয়াকীন’ ( حق اليقين ) নামক গ্রন্থে ফারসি ভাষায় বলেন, যার আরবি (বাংলা) অনুবাদ হল:
“দায়মুক্তির ব্যাপারে আমাদের (শিয়াদের) আকিদা ও বিশ্বাস হল, আমরা আবূ বকর, ওমর, ওসমান ও মুয়াবিয়ার মত চার মূর্তি থেকে মুক্ত; আমরা আরও মুক্ত আয়েশা, হাফসা, হিন্দা ও উম্মুল হেকামের মত চার নারী এবং তাদের অনুসারী ও তাদের বিভিন্ন দল-গোষ্ঠী থেকে। আর তারা হল পৃথিবীর বুকে আল্লাহর নিকৃষ্ট সৃষ্টি। আর তাদের শত্রুদের থেকে মুক্ত হওয়ার পরেই শুধু আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও ইমামদের প্রতি ঈমান পরিপূর্ণতা লাভ করবে।” [আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী, হক্কুল ইয়াকীন ( حق اليقين ), পৃ. ৫১৯]
এই বিশ্বাস অন্যান্যদের সাথে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী আয়েশা ও হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে অপমানের সুস্পষ্ট প্রমাণ; অথচ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাদের ব্যাপারে বলেন:
﴿ ٱلنَّبِيُّ أَوۡلَىٰ بِٱلۡمُؤۡمِنِينَ مِنۡ أَنفُسِهِمۡۖ وَأَزۡوَٰجُهُۥٓ أُمَّهَٰتُهُمۡ﴾ الآية ... [ سورة الأحزاب : 6]
“নবী মুমিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা ঘনিষ্ঠতর এবং তার স্ত্রীগণ তাদের মাতা।” আয়াত ... — (সূরা আল-আহযাব: ৬)
মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী ‘হায়াতুল কুলুব’ ( حياة القلوب ) নামক গ্রন্থে ফারসি ভাষায় বলেন, যার বাংলা অনুবাদ হল:
“ইবনু বাবুইয়া ‘এলালুশ শারায়ে‘ ( علل الشرائع ) নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেন, ইমাম মুহাম্মদ বাকের আ. বলেন: যখন ইমাম মাহদী আত্মপ্রকাশ করবে, তখন তিনি অতিসত্বর আয়েশাকে জীবিত করবেন এবং ফাতেমার প্রতিশোধ হিসেবে তার উপর শাস্তির বিধান (হদ) কায়েম করবেন” ... [আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী, হক্কুল ইয়াকীন ( حق اليقين ), পৃ. ৩৭৮; হায়াতুল কুলুব ( حياة القلوب ), ২য় খণ্ড, পৃ. ৮৫৪]
আর এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয়া আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার ব্যাপারে তাদের চরম নির্লজ্জতা ও নোংরামি। কি দিয়ে আমরা এই ধরনের মিথ্যা অপবাদের সমালোচনা বা পর্যালোচনা করব, সেই ভাষা আমাদের জানা নেই। আমরা ঐসব শিয়া ও তাদের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের কর্মকাণ্ডের বিষয়টি প্রবল পরাক্রমশালী আল্লাহ তা‘আলার হাতে সোপর্দ করলাম, যাতে তিনি তাদের নিকট থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করেন।
আর তাদের শাইখ মকবুল আহমদ তার ‘তরজমাতু লি মা‘আনিল কুরআন’ ( ترجمة لمعاني القرآن )-এর মধ্যে উর্দু ভাষায় বলেন, যার বাংলা অনুবাদ হল:
“নিশ্চয় উষ্ট্রের যুদ্ধে বসরার সৈনিকদের সেনানেত্রী আয়েশা এই আয়াত অনুযায়ী স্পষ্ট অশ্লিল কাজে জড়িয়ে গেছে ...।” [মকবুল আহমদ, তরজমাতুল কুরআন ( ترجمة لمعاني القرآن ), (উর্দু ভাষায়), পৃ. ৮৪০, সূরা আল-আযহাব।]
আহমদ ইবন আবি তালিব আত-তাবারসী ‘আল-ইহতিজাজ’ নামক গ্রন্থের ২য় খণ্ডের ২৪০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন:
“আলী আ. উম্মুল মুমেনীন আয়েশাকে উদ্দেশ্য করে বলেন: আল্লাহর শপথ! তিনি আমাকে তাকে তালাক দেয়ার সিদ্ধান্ত দিয়ে গেছেন ...। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী আ.-কে উদ্দেশ্য করে বলেছেন: হে আলী! আমার স্ত্রীদের বিষয়টি আমার অবর্তমানে তোমার হাতে দিয়ে গেলাম।”
অর্থাৎ- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরে আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর অধিকার ছিল যে, তিনি ইচ্ছা করলে তাঁর (রাসূলের) পবিত্র স্ত্রীদের যে কাউকে তালাক দিতে পারতেন। শিয়াগণ বিশেষ করে উম্মুল মুমেনীন আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অপরাপর স্ত্রীগণের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার জন্য এই বর্ণনাসমূহের মত মিথ্যা ও বানোয়াট বর্ণনার উদ্ভাবন করেছে; অথচ আল্লাহ তা‘আলা আল-কুরআনুল কারীমের মধ্যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণের গুণাগুণ বর্ণনা করেছেন; তিনি তাঁর নবীকে উদ্দেশ্য করে তাঁর এসব স্ত্রীদের শানে বলেন:
﴿ لَّا يَحِلُّ لَكَ ٱلنِّسَآءُ مِنۢ بَعۡدُ وَلَآ أَن تَبَدَّلَ بِهِنَّ مِنۡ أَزۡوَٰجٖ وَلَوۡ أَعۡجَبَكَ حُسۡنُهُنَّ إِلَّا مَا مَلَكَتۡ يَمِينُكَۗ وَكَانَ ٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ رَّقِيبٗا ﴾ [ سورة الأحزاب : 52]
“এর পর তোমার জন্য কোন নারী বৈধ নয় এবং তোমার স্ত্রীদের পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহণও বৈধ নয়, যদিও তাদের সৌন্দর্য তোমাকে মুগ্ধ করে; তবে তোমার অধিকারভুক্ত দাসীদের ব্যাপারে এই বিধান প্রযোজ্য নয়। আল্লাহ সমস্ত কিছুর উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন ।” — (সূরা আল-আহযাব: ৫২)
তিনি আরও বলেন:
﴿ ٱلنَّبِيُّ أَوۡلَىٰ بِٱلۡمُؤۡمِنِينَ مِنۡ أَنفُسِهِمۡۖ وَأَزۡوَٰجُهُۥٓ أُمَّهَٰتُهُمۡ﴾ [ سورة الأحزاب : 6]
“নবী মুমিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা ঘনিষ্ঠতর এবং তার স্ত্রীগণ তাদের মাতা।” — (সূরা আল-আহযাব: ৬)
তিনি আরও বলেন:
﴿ يَٰنِسَآءَ ٱلنَّبِيِّ لَسۡتُنَّ كَأَحَدٖ مِّنَ ٱلنِّسَآءِ ﴾ الآية ... [ سورة الأحزاب : 32]
“হে নবী-পত্নিগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও;” আয়াত ... — (সূরা আল-আহযাব: ৩২)
তাঁদের (উম্মুহাতুল মুমেনীন) ব্যাপারে আয়াত নাযিল হয়েছে:
﴿إِنَّمَا يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيُذۡهِبَ عَنكُمُ ٱلرِّجۡسَ أَهۡلَ ٱلۡبَيۡتِ وَيُطَهِّرَكُمۡ تَطۡهِيرٗا ٣٣﴾ [ سورة الأحزاب : 33]
“হে নবী-পরিবার! আল্লাহ তো শুধু চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।”— (সূরা আল-আহযাব: ৩৩)
আর বিশেষ করে সাইয়্যেদা আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার পবিত্রতা ও পরিপূর্ণতার ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা সূরা নূরের আয়াতসমূহ নাযিল করেছেন। আর তা সুস্পষ্ট করে বলে দিয়েছে যে, যে ব্যক্তি তাঁর ব্যাপারে মিথ্যা অপবাদ দেয় এবং তাঁর ব্যাপারে মিথ্যা অপবাদ দেয়ার জন্য মিথ্যা ও বানোয়াট বর্ণনাসমূহের উদ্ভাবন করে, সে ব্যক্তি মুনাফিক গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত; আল্লাহ তা‘আলা সূরার শেষ অংশে বলেন:
﴿يَعِظُكُمُ ٱللَّهُ أَن تَعُودُواْ لِمِثۡلِهِۦٓ أَبَدًا إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ ١٧﴾ [ سورة النور : 17]
“আল্লাহ তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছেন, ‘তোমরা যদি মুমিন হও, তবে কখনও অনুরূপ আচরণের পূনরাবৃত্তি করো না।”— (সূরা আন-নূর: ১৭)
কেমন দুঃসাহস করেছে ঐসব শিয়াগণ; আল্লাহ ও তাঁর বান্দাদের প্রতি তাদের কোন লজ্জাবোধ নেই; ফলে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণকে অসম্মান করছে। কারণ, কোন স্বামী কখনও পছন্দ করবে না যে, কেউ তার স্ত্রীর পিছনে লেগে থাকুক, অথবা তার ব্যাপারে অপবাদ দিক এবং যে কোন ধরনের অপমান করুক; বরং একজন ভদ্র মানুষ কোন কোন সময় কোন কারণে নিজের অপমান সহ্য করতে পারলেও সে তার স্ত্রী ও পরিবার-পরিজনের ব্যাপারে অসম্মান, অপমান ও অপবাদ সহ্য করতে পারে না।
“দায়মুক্তির ব্যাপারে আমাদের (শিয়াদের) আকিদা ও বিশ্বাস হল, আমরা আবূ বকর, ওমর, ওসমান ও মুয়াবিয়ার মত চার মূর্তি থেকে মুক্ত; আমরা আরও মুক্ত আয়েশা, হাফসা, হিন্দা ও উম্মুল হেকামের মত চার নারী এবং তাদের অনুসারী ও তাদের বিভিন্ন দল-গোষ্ঠী থেকে। আর তারা হল পৃথিবীর বুকে আল্লাহর নিকৃষ্ট সৃষ্টি। আর তাদের শত্রুদের থেকে মুক্ত হওয়ার পরেই শুধু আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও ইমামদের প্রতি ঈমান পরিপূর্ণতা লাভ করবে।” [আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী, হক্কুল ইয়াকীন ( حق اليقين ), পৃ. ৫১৯]
এই বিশ্বাস অন্যান্যদের সাথে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী আয়েশা ও হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে অপমানের সুস্পষ্ট প্রমাণ; অথচ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাদের ব্যাপারে বলেন:
﴿ ٱلنَّبِيُّ أَوۡلَىٰ بِٱلۡمُؤۡمِنِينَ مِنۡ أَنفُسِهِمۡۖ وَأَزۡوَٰجُهُۥٓ أُمَّهَٰتُهُمۡ﴾ الآية ... [ سورة الأحزاب : 6]
“নবী মুমিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা ঘনিষ্ঠতর এবং তার স্ত্রীগণ তাদের মাতা।” আয়াত ... — (সূরা আল-আহযাব: ৬)
মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী ‘হায়াতুল কুলুব’ ( حياة القلوب ) নামক গ্রন্থে ফারসি ভাষায় বলেন, যার বাংলা অনুবাদ হল:
“ইবনু বাবুইয়া ‘এলালুশ শারায়ে‘ ( علل الشرائع ) নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেন, ইমাম মুহাম্মদ বাকের আ. বলেন: যখন ইমাম মাহদী আত্মপ্রকাশ করবে, তখন তিনি অতিসত্বর আয়েশাকে জীবিত করবেন এবং ফাতেমার প্রতিশোধ হিসেবে তার উপর শাস্তির বিধান (হদ) কায়েম করবেন” ... [আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী, হক্কুল ইয়াকীন ( حق اليقين ), পৃ. ৩৭৮; হায়াতুল কুলুব ( حياة القلوب ), ২য় খণ্ড, পৃ. ৮৫৪]
আর এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয়া আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার ব্যাপারে তাদের চরম নির্লজ্জতা ও নোংরামি। কি দিয়ে আমরা এই ধরনের মিথ্যা অপবাদের সমালোচনা বা পর্যালোচনা করব, সেই ভাষা আমাদের জানা নেই। আমরা ঐসব শিয়া ও তাদের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের কর্মকাণ্ডের বিষয়টি প্রবল পরাক্রমশালী আল্লাহ তা‘আলার হাতে সোপর্দ করলাম, যাতে তিনি তাদের নিকট থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করেন।
আর তাদের শাইখ মকবুল আহমদ তার ‘তরজমাতু লি মা‘আনিল কুরআন’ ( ترجمة لمعاني القرآن )-এর মধ্যে উর্দু ভাষায় বলেন, যার বাংলা অনুবাদ হল:
“নিশ্চয় উষ্ট্রের যুদ্ধে বসরার সৈনিকদের সেনানেত্রী আয়েশা এই আয়াত অনুযায়ী স্পষ্ট অশ্লিল কাজে জড়িয়ে গেছে ...।” [মকবুল আহমদ, তরজমাতুল কুরআন ( ترجمة لمعاني القرآن ), (উর্দু ভাষায়), পৃ. ৮৪০, সূরা আল-আযহাব।]
আহমদ ইবন আবি তালিব আত-তাবারসী ‘আল-ইহতিজাজ’ নামক গ্রন্থের ২য় খণ্ডের ২৪০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন:
“আলী আ. উম্মুল মুমেনীন আয়েশাকে উদ্দেশ্য করে বলেন: আল্লাহর শপথ! তিনি আমাকে তাকে তালাক দেয়ার সিদ্ধান্ত দিয়ে গেছেন ...। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী আ.-কে উদ্দেশ্য করে বলেছেন: হে আলী! আমার স্ত্রীদের বিষয়টি আমার অবর্তমানে তোমার হাতে দিয়ে গেলাম।”
অর্থাৎ- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরে আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর অধিকার ছিল যে, তিনি ইচ্ছা করলে তাঁর (রাসূলের) পবিত্র স্ত্রীদের যে কাউকে তালাক দিতে পারতেন। শিয়াগণ বিশেষ করে উম্মুল মুমেনীন আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অপরাপর স্ত্রীগণের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার জন্য এই বর্ণনাসমূহের মত মিথ্যা ও বানোয়াট বর্ণনার উদ্ভাবন করেছে; অথচ আল্লাহ তা‘আলা আল-কুরআনুল কারীমের মধ্যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণের গুণাগুণ বর্ণনা করেছেন; তিনি তাঁর নবীকে উদ্দেশ্য করে তাঁর এসব স্ত্রীদের শানে বলেন:
﴿ لَّا يَحِلُّ لَكَ ٱلنِّسَآءُ مِنۢ بَعۡدُ وَلَآ أَن تَبَدَّلَ بِهِنَّ مِنۡ أَزۡوَٰجٖ وَلَوۡ أَعۡجَبَكَ حُسۡنُهُنَّ إِلَّا مَا مَلَكَتۡ يَمِينُكَۗ وَكَانَ ٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ رَّقِيبٗا ﴾ [ سورة الأحزاب : 52]
“এর পর তোমার জন্য কোন নারী বৈধ নয় এবং তোমার স্ত্রীদের পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহণও বৈধ নয়, যদিও তাদের সৌন্দর্য তোমাকে মুগ্ধ করে; তবে তোমার অধিকারভুক্ত দাসীদের ব্যাপারে এই বিধান প্রযোজ্য নয়। আল্লাহ সমস্ত কিছুর উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন ।” — (সূরা আল-আহযাব: ৫২)
তিনি আরও বলেন:
﴿ ٱلنَّبِيُّ أَوۡلَىٰ بِٱلۡمُؤۡمِنِينَ مِنۡ أَنفُسِهِمۡۖ وَأَزۡوَٰجُهُۥٓ أُمَّهَٰتُهُمۡ﴾ [ سورة الأحزاب : 6]
“নবী মুমিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা ঘনিষ্ঠতর এবং তার স্ত্রীগণ তাদের মাতা।” — (সূরা আল-আহযাব: ৬)
তিনি আরও বলেন:
﴿ يَٰنِسَآءَ ٱلنَّبِيِّ لَسۡتُنَّ كَأَحَدٖ مِّنَ ٱلنِّسَآءِ ﴾ الآية ... [ سورة الأحزاب : 32]
“হে নবী-পত্নিগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও;” আয়াত ... — (সূরা আল-আহযাব: ৩২)
তাঁদের (উম্মুহাতুল মুমেনীন) ব্যাপারে আয়াত নাযিল হয়েছে:
﴿إِنَّمَا يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيُذۡهِبَ عَنكُمُ ٱلرِّجۡسَ أَهۡلَ ٱلۡبَيۡتِ وَيُطَهِّرَكُمۡ تَطۡهِيرٗا ٣٣﴾ [ سورة الأحزاب : 33]
“হে নবী-পরিবার! আল্লাহ তো শুধু চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।”— (সূরা আল-আহযাব: ৩৩)
আর বিশেষ করে সাইয়্যেদা আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার পবিত্রতা ও পরিপূর্ণতার ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা সূরা নূরের আয়াতসমূহ নাযিল করেছেন। আর তা সুস্পষ্ট করে বলে দিয়েছে যে, যে ব্যক্তি তাঁর ব্যাপারে মিথ্যা অপবাদ দেয় এবং তাঁর ব্যাপারে মিথ্যা অপবাদ দেয়ার জন্য মিথ্যা ও বানোয়াট বর্ণনাসমূহের উদ্ভাবন করে, সে ব্যক্তি মুনাফিক গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত; আল্লাহ তা‘আলা সূরার শেষ অংশে বলেন:
﴿يَعِظُكُمُ ٱللَّهُ أَن تَعُودُواْ لِمِثۡلِهِۦٓ أَبَدًا إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ ١٧﴾ [ سورة النور : 17]
“আল্লাহ তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছেন, ‘তোমরা যদি মুমিন হও, তবে কখনও অনুরূপ আচরণের পূনরাবৃত্তি করো না।”— (সূরা আন-নূর: ১৭)
কেমন দুঃসাহস করেছে ঐসব শিয়াগণ; আল্লাহ ও তাঁর বান্দাদের প্রতি তাদের কোন লজ্জাবোধ নেই; ফলে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণকে অসম্মান করছে। কারণ, কোন স্বামী কখনও পছন্দ করবে না যে, কেউ তার স্ত্রীর পিছনে লেগে থাকুক, অথবা তার ব্যাপারে অপবাদ দিক এবং যে কোন ধরনের অপমান করুক; বরং একজন ভদ্র মানুষ কোন কোন সময় কোন কারণে নিজের অপমান সহ্য করতে পারলেও সে তার স্ত্রী ও পরিবার-পরিজনের ব্যাপারে অসম্মান, অপমান ও অপবাদ সহ্য করতে পারে না।
৯
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্যাদেরকে, বিশেষ করে নারীদের নেত্রী ফাতেমা যোহরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে অপমান করা:আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের সকল অনুসারী কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্যাদের সংখ্যা চারজন: সাইয়্যেদা যয়নব, সাইয়্যেদা রুকাইয়া, সাইয়্যেদা উম্মে কুলসুম ও সাইয়্যেদা ফাতেমা যাহরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুন্না। আর অনুরূপ মত পোষণ করে সাধারণ শিয়াগণও। তবে ভারত ও পাকিস্তানের শিয়াগণ তিন কন্যাকে অস্বীকার করে এবং তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য শুধু এক কন্যাকে সাব্যস্ত করে; আর তিনি হলেন সাইয়্যেদা ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা। আর বাকি তিনজনকে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্যা নয় বলে মতামত প্রকাশ করেছে এবং এর দ্বারা তারা আল্লাহ তা‘আলার বিধানের স্পষ্ট বিরোধিতা করেছে; আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ٱدۡعُوهُمۡ لِأٓبَآئِهِمۡ هُوَ أَقۡسَطُ عِندَ ٱللَّهِ﴾ [ سورة الأحزاب : 5]
“তোমরা তাদেরকে তাদের পিতার পরিচয়ে ডাক; আল্লাহর দৃষ্টিতে এটাই অধিক ন্যায়সংগত।”— (সূরা আল-আহযাব: ৫)
তাদের এই মত প্রকাশের একমাত্র কারণ হল ওসমান ইবন ‘আফফান যূন্নুরাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সাথে শত্রুতা করা, যাতে তাঁর উচ্চ মর্যাদা স্বীকৃত না হয়; কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিকট প্রথমে সাইয়্যেদা রুকাইয়াকে বিয়ে দেন; অতঃপর যখন তিনি (রুকাইয়া) ইন্তিকাল করেন, তখন তাঁর নিকট নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাইয়্যেদা উম্মে কুলসুমকে বিয়ে দেন; আর এ জন্য তাকে ‘যূন্নুরাইন’ নামে ডাকা হত।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ قُل لِّأَزۡوَٰجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ يُدۡنِينَ عَلَيۡهِنَّ مِن جَلَٰبِيبِهِنَّ ﴾ [ سورة الأحزاب : 59]
“হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও মুমিনদের নারীগণকে বল, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়।”— (সূরা আল-আহযাব: ৫৯)
সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা " بنات " শব্দটি বহুবচনের শব্দ দ্বারা উল্লেখ করেছেন, যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একাধিক কন্যা সন্তানের প্রমাণ করে। আর শিয়া আলেমগণ লিখেছেন: তিনি খাদিজাকে যখন বিয়ে করেন, তখন তাঁর বয়স হয়েছিল বিশ বছরের বেশি; অতঃপর তার থেকে তাঁর নবুয়তের পূর্বে জন্ম গ্রহণ করে কাসেম, রুকাইয়া, যয়নব ও উম্মে কুলসুম এবং তার থেকে তাঁর নবুয়তের পরে জন্ম গ্রহণ করে তাইয়্যেব, তাহের ও ফাতেমা আ.। [আল-কুলাইনী, উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), (ভারতীয় সংস্করণ) পৃ. ২৭৮]
অনুরূপভাবে শিয়াদের (মতে তাদের) নিষ্পাপ ইমাম ও তাদের আলেমগণের বক্তব্যগুলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একাধিক কন্যা সন্তান সাব্যস্ত করার ব্যাপারে সুস্পষ্ট এবং তাদের নামসমূহ নিম্নোক্ত গ্রন্থসমূহের মধ্যে লিপিবদ্ধ রয়েছে; আর এই গ্রন্থগুলোর সব কটিই শিয়াদের:
- মাজালিসুল মুমিননীন ( مجالس المؤمنين ), পৃ. ৮৩
- আত-তাহযিব ( التهذيب ), ২য় খণ্ড, পৃ. ১৫৪
- তাফসীরু মাজমা‘ইল বায়ান ( تفسير مجمع البيان ),২য় খণ্ড, পৃ. ২৩৩
- ফুরু‘উল কাফী ( فروع الكافي ), ২য় খণ্ড, পৃ. ২২২
- ফয়দুল ইসলাম ( فيض الإسلام ), পৃ. ৫১৯
- নাহজুল বালাগাহ ( نهج البلاغة ), ২য় খণ্ড, পৃ. ৮৫
- কুরবুল ইসনাদ ( قرب الإسناد ), পৃ. ৬
- তুহফাতুল ‘আওয়াম ( تحفة العوام ), সাইয়্যেদ আহমদ আলী, পৃ. ১১৩
- হায়াতুল কুলুব ( حيات القلوب ), ২য় খণ্ড, পৃ. ৮২, ৫৫৯, ২২৩, ৫৬০
- মুন্তাহাল আমাল ( منتهى الامال ), ১ম খণ্ড, পৃ. ৮৯
- মিরআতুল ‘উকুল ( مرآة العقول ), ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৫২
আর আল-কুলাইনী ফুরু‘উল কাফী ( فروع الكافي ) নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেন:
“যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতেমা আ.-কে আলীর নিকট বিয়ে দেন, তখন তিনি তার নিকট হাজির হয়ে দেখতে পান যে, সে কাঁদছে; অতঃপর তিনি তাকে বললেন, তুমি কি জন্য কাঁদছ? আমি আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, আমার পরিবারে তার (আলীর) চেয়ে উত্তম কেউ যদি থাকত, তবে আমি তোমাকে তার নিকট বিয়ে দিতাম। আর আমি তোমাকে তার নিকট বিয়ে দেইনি; বরং আল্লাহই তোমাকে তার নিকট বিয়ে দিয়েছেন।” [ফুরু‘উল কাফী ( فروع الكافي ), ২য় খণ্ড, বিবাহ অধ্যায়, পৃ. ১৫৭]
আল-কুলাইনী আরও উল্লেখ করেন:
“আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: ফাতেমা আ. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল: আপনি আমাকে তুচ্ছ মোহরের বিনিময়ে বিয়ে দিয়েছেন? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন: আমি তো তোমাকে বিয়ে দেইনি; বরং আল্লাহই তোমাকে আকাশ থেকে বিয়ে দিয়েছেন।” [ফুরু‘উল কাফী ( فروع الكافي ), ২য় খণ্ড, বিবাহ অধ্যায়, পৃ. ১৫৭]
আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসী তার ‘জালাউল ‘উয়ুন’ ( جلاء العيون ) নামক গ্রন্থে ফারসি ভাষায় উল্লেখ করেন, যার বাংলা অনুবাদ হল:
“ইমাম মুহাম্মদ বাকের আ. ‘কাশফুল গুম্মাহ’ ( كشف الغمة ) গ্রন্থে বলেন যে, কোন একদিন ফাতেমা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট অভিযোগ করল: আলীর নিকট অর্থ-সম্পদ আসলেই সে তা ফকির ও মিসকিনদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়? তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তুমি কি চাও যে, আমার ভাই ও আমার চাচার ছেলে অসন্তুষ্ট হউক? তুমি জেনে রাখ যে, তার অসন্তুষ্টি মানে আমার অসন্তুষ্টি; আর আমার অসন্তুষ্টি মানে আল্লাহর অসন্তুষ্টি; এই কথা শুনে ফাতেমা বলল: আমি আল্লাহর কাছে আল্লাহর ক্রোধ ও তাঁর রাসূলের ক্রোধ থেকে আশ্রয় চাই।” [আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসী, জালাউল ‘উয়ুন ( جلاء العيون ), (ইরানি সংস্করণ), পৃ. ৬১]
প্রথম দু’টি বর্ণনা থেকে স্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হয় যে, সাইয়্যেদা ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা সাইয়্যেদুনা আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সাথে তাঁর দরিদ্রতা ও মোহরের স্বল্পতার কারণে বিয়ে বসতে রাজি ছিলেন না। আর এতে জান্নাতবাসী নারীদের নেত্রীকে অপমান করা হয়েছে। কারণ, তিনি এই নশ্বর পৃথিবীর মধ্যে দুনিয়া ত্যাগী এবং পরকালের প্রতি আগ্রহী নারীদের মাঝে অন্যতমা ছিলেন। সুতরাং কিভাবে এরূপ কল্পনা করা যায় যে, তিনি দুনিয়ার কারণে অথবা অঢেল সম্পদ ও তুচ্ছ মোহরের অজুহাতে এই বরকতময় বিয়েতে রাজি ছিলেন না। অনুরূপভাবে তৃতীয় বর্ণনা থেকে স্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হয় যে, তিনি (ফাতেমা রা.) সাইয়্যেদুনা আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক ফকির ও মিসকিনদেরকে অর্থ-সম্পদ দান করাকে অপছন্দ করতেন (নাউযুবিল্লাহ), এমনকি তিনি তাঁর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট অভিযোগও করতেন। আর এটা কি করে সম্ভব, অথচ তিনি হলেন দানশীলের মেয়ে দানশীলা। আর শিয়াদের ব্যাপারে এটা অবাক লাগে যে, তারা সাইয়্যেদা ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে এই ধরনের নিকৃষ্ট কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত করার পর কিভাবে তাঁর প্রতি ভালবাসার দাবি করে; যেসব কর্মকাণ্ড যে কোন ভদ্র মহিলার জন্য বেমানান; সুতরাং তা কিভাবে তাঁর সাথে মানানসই হতে পারে।
আহমদ ইবন আবি তালিব আত-তাবারসী ‘আল-ইহতিজাজ’ ( الاحتجاج ) নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেন:
“অতঃপর তিনি (ফাতেমা আ.) ফিরে গেলেন; আর আমীরুল মুমিনীন তার নিকট তার ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকলেন এবং তার নিকট তার আগমনের প্রত্যাশা করলেন। অতঃপর তিনি যখন তার বাড়ীতে অবস্থান করেন, তখন তিনি আমীরুল মুমিনীন আ.কে উদ্দেশ্য করে বললেন, হে আবূ তালিবের ছেলে! তুমি ‘জানীন’ শহরের চাদর পরিধান করেছ, অকল্যাণকর ব্যক্তির ঘরে বসেছ এবং পাকানো পশমের গিঁট খুলেছ। সুতরাং নিরস্ত্র ব্যক্তির সম্পদ তোমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে; এই হল আবূ কুহাফার ছেলে, যে আমার পিতার ধর্মভীরুতা এবং আমার ছেলের নির্বুদ্ধিতার সুযোগ নিয়ে আমাকে ছিনিয়ে নিয়েছে। সে আমার সাথে বাক-বিতণ্ডায় সাবধানতা অবলম্বন করেছে; আর আমি তাকে আমার কথায় প্রচণ্ড ঝগড়াকারীরূপে পেয়েছি; এমনকি আনসারদের উষ্ট্রী আমাকে অবরুদ্ধ করেছে; আর মুহাজিরগণ তাকে পৌঁছায়ে দিয়েছে। আর একদল লোক তাদের নীচু চোখে আমাকে দেখল; কিন্তু তারা প্রতিরোধ ও বাধা প্রদান কোনটিই করতে পারল না। আমি সংযত হয়ে বের হলাম এবং নারাজ অবস্থায় ফিরে এলাম; তুমি তোমার গণ্ডদেশকে দুর্বল করেছ সেই দিন, যেই দিন তুমি তোমার দণ্ড মওকুফ করেছ। আমি নেকড়ে বাঘ শিকার করেছি এবং মাটিকে বিছানারূপে ব্যবহার করেছি; আমি কোন বক্তাকে বাধা দেইনি এবং কোন উপকারকে যথেষ্ট মনে করিনি। আর আমার কোন স্বাধীনতা নেই; হায় আমি যদি আমার সুখস্বাচ্ছন্দ্য ও অপমানের পূর্বে মারা যেতাম! আমার সাহায্যকারী হলেন আল্লাহ, তিনি স্বাভাবিকভাবেই আমাকে সাহায্য করবেন এবং তোমার থেকে আমাকে রক্ষা করবেন। প্রত্যেক পূর্ব ও পশ্চিমে অবস্থানকারীর মধ্যে আমার ধ্বংস ও দুর্ভাগ্য। ইচ্ছাশক্তি মারা গেছে এবং বাহু-বল দুর্বল হয়ে গেছে। আমার অভিযোগ আমার পিতার প্রতি এবং আমার বিভ্রান্তি বা বিপর্যয় আমার প্রভুর দিকে। হে আল্লাহ! তুমি তাদের চেয়ে শক্তিধর ও ক্ষমতাবান; কষ্ট ও শাস্তিদানে কঠোর। অতঃপর আমীরুল মুমিনীন আ. বলেন: তোমার জন্য আফসোস নয়; বরং আফসোস হয় তোমার শত্রুর জন্য; অতঃপর তুমি তোমার ক্রোধ থেকে বিরত থাক হে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির কন্যা ও নবুয়তের বাকি অংশ! আমি আমার দীনের ব্যাপারে ক্লান্ত হইনি এবং আমি আমার নিয়তিতে ত্রুটি করিনি। সুতরাং তুমি যদি জীবন ধারণের ন্যূনতম উপকরণ চাও, তবে তোমার রিযিক সংরক্ষিত এবং তোমার অভিভাবক নিরাপদ; তুমি যা হারিয়েছ তার চেয়ে উত্তম জিনিস তোমার জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। সুতরাং আল্লাহকেই যথেষ্ট মনে কর; অতঃপর সে বলল: আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট এবং আমি বিরত থাকলাম।” [আহমদ ইবন আবি তালিব আত-তাবারসী, আল-ইহতিজাজ ( الاحتجاج ), পৃ. ১৪৫]
এটা কি যুক্তিসংগত হতে পারে যে, সাইয়্যেদা ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা তার স্বামী সাইয়্যেদুনা আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে এই পদ্ধতিতে সম্বোধন করেছেন, যে পদ্ধতিতে এই যুগের কোন ভদ্র স্ত্রীও তার স্বামীকে সম্বোধন করতে পছন্দ করে না। আর আমরা যদি এই বর্ণনাটিকে সত্য বলে রায় পেশ করি, তবে তা থেকে সাইয়্যেদা ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা কর্তৃক তার স্বামীর ব্যাপারে নির্লজ্জতা, কঠোরতা ও রূঢ়তা প্রকাশ পাবে (নাউযুবিল্লাহ); আর সত্য বিষয়ে জনসমক্ষে সাইয়্যেদুনা আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাপুরুষতা ও দুর্বলতা প্রকাশ পাবে। আর এটাও কি যুক্তিসংগত হতে পারে, অথচ তিনি হলেন অনন্য বীরত্বের অধিকারী আসাদুল্লাহ আল-গালিব (আল্লাহর বিজয়ী সিংহ)। আমি বুঝতে পারছি না, শিয়াদের জ্ঞান-বুদ্ধি কোথায় যাচ্ছে, যারা আলী ও ফাতেমার ভালবাসা দাবি করে; অতঃপর এসব নির্বুদ্ধিতার বিবরণসমূহ নিয়ে আসে, যা তাদের দাবিকৃত বিষয়ের বিপরীত। আর প্রকৃতপক্ষে – যেমনটি আপনি দেখলেন- তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্যাদেরকে অপমান করে। আর এসব হাসিল হয় তাদের হীন উদ্দেশ্য সাধনের জন্য এই ধরনের মিথ্যা ও বানোয়াট আয়াতসমূহ আবিষ্কারের সময়। আর তারা বেমালুম ভুলে যায় যে, এই বানোয়াট বর্ণনাসমূহ প্রকারান্তরে তাদেরই ক্ষতি করে। বস্তুত বানোয়াট বর্ণনাসমূহের চিরাচরিত অবস্থা এরকমই হয়ে থাকে এবং সেগুলোর মিথ্যার দিকটি সকল মানুষের সামনে যথাসময়ে ফুটে উঠে।
আহমদ ইবন আবি তালিব আত-তাবারসী ‘আল-ইহতিজাজ’ ( الاحتجاج ) নামক গ্রন্থে আরও উল্লেখ করেন:
“সালমান (ফারসি) বলেন: যখন রাত হয়, তখন আলী ফাতেমাকে গাধার উপর আরোহণ করান এবং তার দুই ছেলে হাসান ও হোসাইনের হাত ধরেন; অতঃপর বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুহাজির ও আনসারগণকে এক এক করে ডাকেন; তারা প্রত্যেকে তার বাসায় আসল; আর তিনি (তাদের নিকট) তার অধিকারের কথা বললেন এবং তাকে সাহায্য করার জন্য আহ্বান করলেন ..., অতঃপর সকাল হয়ে গেল, কিন্তু চারজন ব্যতীত আর কেউ তার আবদার রক্ষা করেনি; আমি সালমানকে জিজ্ঞাসা করলাম: সেই চারজন কে? তিনি বললেন: আমি, আবূ যর, মিকদাদ ও যোবায়ের ইবন ‘আওয়াম; তিনি তাদের নিকট দ্বিতীয় রাত্রে আসলেন ..., অতঃপর তৃতীয় রাত্রে আসলেন, কিন্তু আমরা ব্যতীত কেউই তার আবদার রক্ষা করেনি।” [আহমদ ইবন আবি তালিব আত-তাবারসী, আল-ইহতিজাজ ( الاحتجاج ), পৃ. ১৫৭]
আত-তাবারসী ‘আল-ইহতিজাজ’ ( الاحتجاج ) নামক গ্রন্থে আরও উল্লেখ করেন:
“যখন রাত হয়, তখন তিনি ফাতেমাকে গাধার উপর আরোহণ করান, অতঃপর তিনি তাদেরকে তার সাহায্য করার জন্য আহ্বান করেন, কিন্তু আমরা চারজন ব্যতীত কেউই তার আহ্বানে সাড়া দেয়নি।” [আহমদ ইবন আবি তালিব আত-তাবারসী, আল-ইহতিজাজ ( الاحتجاج ), পৃ. ১৫৮]
সাইয়্যেদুনা আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কলিজার টুকরা ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে নিয়ে অধিক ঘোরাঘুরি ও তাকে নিয়ে প্রত্যেক মুসলিমের দরজায় দরজায় ধরনা দেয়া কি সাইয়্যেদা ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা ও সাইয়্যেদুনা আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর জন্য অসম্মান ও অপমানজনক নয়? আর এটা কি যুক্তিসংগত হতে পারে যে, তিনি এই ধরনের সকল চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার পরেও তার ডাকে কেউই সাড়া দেয়নি, বিশেষ করে বনু হাশিমের কেউ; বরং নিঃসন্দেহে এই বর্ণনাটি রাফেযীগণ মিথ্যা ও বানোয়াটি কায়দায় তৈরি করেছে।
﴿ ٱدۡعُوهُمۡ لِأٓبَآئِهِمۡ هُوَ أَقۡسَطُ عِندَ ٱللَّهِ﴾ [ سورة الأحزاب : 5]
“তোমরা তাদেরকে তাদের পিতার পরিচয়ে ডাক; আল্লাহর দৃষ্টিতে এটাই অধিক ন্যায়সংগত।”— (সূরা আল-আহযাব: ৫)
তাদের এই মত প্রকাশের একমাত্র কারণ হল ওসমান ইবন ‘আফফান যূন্নুরাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সাথে শত্রুতা করা, যাতে তাঁর উচ্চ মর্যাদা স্বীকৃত না হয়; কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিকট প্রথমে সাইয়্যেদা রুকাইয়াকে বিয়ে দেন; অতঃপর যখন তিনি (রুকাইয়া) ইন্তিকাল করেন, তখন তাঁর নিকট নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাইয়্যেদা উম্মে কুলসুমকে বিয়ে দেন; আর এ জন্য তাকে ‘যূন্নুরাইন’ নামে ডাকা হত।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ قُل لِّأَزۡوَٰجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ يُدۡنِينَ عَلَيۡهِنَّ مِن جَلَٰبِيبِهِنَّ ﴾ [ سورة الأحزاب : 59]
“হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও মুমিনদের নারীগণকে বল, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়।”— (সূরা আল-আহযাব: ৫৯)
সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা " بنات " শব্দটি বহুবচনের শব্দ দ্বারা উল্লেখ করেছেন, যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একাধিক কন্যা সন্তানের প্রমাণ করে। আর শিয়া আলেমগণ লিখেছেন: তিনি খাদিজাকে যখন বিয়ে করেন, তখন তাঁর বয়স হয়েছিল বিশ বছরের বেশি; অতঃপর তার থেকে তাঁর নবুয়তের পূর্বে জন্ম গ্রহণ করে কাসেম, রুকাইয়া, যয়নব ও উম্মে কুলসুম এবং তার থেকে তাঁর নবুয়তের পরে জন্ম গ্রহণ করে তাইয়্যেব, তাহের ও ফাতেমা আ.। [আল-কুলাইনী, উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), (ভারতীয় সংস্করণ) পৃ. ২৭৮]
অনুরূপভাবে শিয়াদের (মতে তাদের) নিষ্পাপ ইমাম ও তাদের আলেমগণের বক্তব্যগুলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একাধিক কন্যা সন্তান সাব্যস্ত করার ব্যাপারে সুস্পষ্ট এবং তাদের নামসমূহ নিম্নোক্ত গ্রন্থসমূহের মধ্যে লিপিবদ্ধ রয়েছে; আর এই গ্রন্থগুলোর সব কটিই শিয়াদের:
- মাজালিসুল মুমিননীন ( مجالس المؤمنين ), পৃ. ৮৩
- আত-তাহযিব ( التهذيب ), ২য় খণ্ড, পৃ. ১৫৪
- তাফসীরু মাজমা‘ইল বায়ান ( تفسير مجمع البيان ),২য় খণ্ড, পৃ. ২৩৩
- ফুরু‘উল কাফী ( فروع الكافي ), ২য় খণ্ড, পৃ. ২২২
- ফয়দুল ইসলাম ( فيض الإسلام ), পৃ. ৫১৯
- নাহজুল বালাগাহ ( نهج البلاغة ), ২য় খণ্ড, পৃ. ৮৫
- কুরবুল ইসনাদ ( قرب الإسناد ), পৃ. ৬
- তুহফাতুল ‘আওয়াম ( تحفة العوام ), সাইয়্যেদ আহমদ আলী, পৃ. ১১৩
- হায়াতুল কুলুব ( حيات القلوب ), ২য় খণ্ড, পৃ. ৮২, ৫৫৯, ২২৩, ৫৬০
- মুন্তাহাল আমাল ( منتهى الامال ), ১ম খণ্ড, পৃ. ৮৯
- মিরআতুল ‘উকুল ( مرآة العقول ), ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৫২
আর আল-কুলাইনী ফুরু‘উল কাফী ( فروع الكافي ) নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেন:
“যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতেমা আ.-কে আলীর নিকট বিয়ে দেন, তখন তিনি তার নিকট হাজির হয়ে দেখতে পান যে, সে কাঁদছে; অতঃপর তিনি তাকে বললেন, তুমি কি জন্য কাঁদছ? আমি আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, আমার পরিবারে তার (আলীর) চেয়ে উত্তম কেউ যদি থাকত, তবে আমি তোমাকে তার নিকট বিয়ে দিতাম। আর আমি তোমাকে তার নিকট বিয়ে দেইনি; বরং আল্লাহই তোমাকে তার নিকট বিয়ে দিয়েছেন।” [ফুরু‘উল কাফী ( فروع الكافي ), ২য় খণ্ড, বিবাহ অধ্যায়, পৃ. ১৫৭]
আল-কুলাইনী আরও উল্লেখ করেন:
“আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: ফাতেমা আ. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল: আপনি আমাকে তুচ্ছ মোহরের বিনিময়ে বিয়ে দিয়েছেন? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন: আমি তো তোমাকে বিয়ে দেইনি; বরং আল্লাহই তোমাকে আকাশ থেকে বিয়ে দিয়েছেন।” [ফুরু‘উল কাফী ( فروع الكافي ), ২য় খণ্ড, বিবাহ অধ্যায়, পৃ. ১৫৭]
আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসী তার ‘জালাউল ‘উয়ুন’ ( جلاء العيون ) নামক গ্রন্থে ফারসি ভাষায় উল্লেখ করেন, যার বাংলা অনুবাদ হল:
“ইমাম মুহাম্মদ বাকের আ. ‘কাশফুল গুম্মাহ’ ( كشف الغمة ) গ্রন্থে বলেন যে, কোন একদিন ফাতেমা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট অভিযোগ করল: আলীর নিকট অর্থ-সম্পদ আসলেই সে তা ফকির ও মিসকিনদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়? তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তুমি কি চাও যে, আমার ভাই ও আমার চাচার ছেলে অসন্তুষ্ট হউক? তুমি জেনে রাখ যে, তার অসন্তুষ্টি মানে আমার অসন্তুষ্টি; আর আমার অসন্তুষ্টি মানে আল্লাহর অসন্তুষ্টি; এই কথা শুনে ফাতেমা বলল: আমি আল্লাহর কাছে আল্লাহর ক্রোধ ও তাঁর রাসূলের ক্রোধ থেকে আশ্রয় চাই।” [আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসী, জালাউল ‘উয়ুন ( جلاء العيون ), (ইরানি সংস্করণ), পৃ. ৬১]
প্রথম দু’টি বর্ণনা থেকে স্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হয় যে, সাইয়্যেদা ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা সাইয়্যেদুনা আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সাথে তাঁর দরিদ্রতা ও মোহরের স্বল্পতার কারণে বিয়ে বসতে রাজি ছিলেন না। আর এতে জান্নাতবাসী নারীদের নেত্রীকে অপমান করা হয়েছে। কারণ, তিনি এই নশ্বর পৃথিবীর মধ্যে দুনিয়া ত্যাগী এবং পরকালের প্রতি আগ্রহী নারীদের মাঝে অন্যতমা ছিলেন। সুতরাং কিভাবে এরূপ কল্পনা করা যায় যে, তিনি দুনিয়ার কারণে অথবা অঢেল সম্পদ ও তুচ্ছ মোহরের অজুহাতে এই বরকতময় বিয়েতে রাজি ছিলেন না। অনুরূপভাবে তৃতীয় বর্ণনা থেকে স্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হয় যে, তিনি (ফাতেমা রা.) সাইয়্যেদুনা আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক ফকির ও মিসকিনদেরকে অর্থ-সম্পদ দান করাকে অপছন্দ করতেন (নাউযুবিল্লাহ), এমনকি তিনি তাঁর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট অভিযোগও করতেন। আর এটা কি করে সম্ভব, অথচ তিনি হলেন দানশীলের মেয়ে দানশীলা। আর শিয়াদের ব্যাপারে এটা অবাক লাগে যে, তারা সাইয়্যেদা ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে এই ধরনের নিকৃষ্ট কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত করার পর কিভাবে তাঁর প্রতি ভালবাসার দাবি করে; যেসব কর্মকাণ্ড যে কোন ভদ্র মহিলার জন্য বেমানান; সুতরাং তা কিভাবে তাঁর সাথে মানানসই হতে পারে।
আহমদ ইবন আবি তালিব আত-তাবারসী ‘আল-ইহতিজাজ’ ( الاحتجاج ) নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেন:
“অতঃপর তিনি (ফাতেমা আ.) ফিরে গেলেন; আর আমীরুল মুমিনীন তার নিকট তার ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকলেন এবং তার নিকট তার আগমনের প্রত্যাশা করলেন। অতঃপর তিনি যখন তার বাড়ীতে অবস্থান করেন, তখন তিনি আমীরুল মুমিনীন আ.কে উদ্দেশ্য করে বললেন, হে আবূ তালিবের ছেলে! তুমি ‘জানীন’ শহরের চাদর পরিধান করেছ, অকল্যাণকর ব্যক্তির ঘরে বসেছ এবং পাকানো পশমের গিঁট খুলেছ। সুতরাং নিরস্ত্র ব্যক্তির সম্পদ তোমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে; এই হল আবূ কুহাফার ছেলে, যে আমার পিতার ধর্মভীরুতা এবং আমার ছেলের নির্বুদ্ধিতার সুযোগ নিয়ে আমাকে ছিনিয়ে নিয়েছে। সে আমার সাথে বাক-বিতণ্ডায় সাবধানতা অবলম্বন করেছে; আর আমি তাকে আমার কথায় প্রচণ্ড ঝগড়াকারীরূপে পেয়েছি; এমনকি আনসারদের উষ্ট্রী আমাকে অবরুদ্ধ করেছে; আর মুহাজিরগণ তাকে পৌঁছায়ে দিয়েছে। আর একদল লোক তাদের নীচু চোখে আমাকে দেখল; কিন্তু তারা প্রতিরোধ ও বাধা প্রদান কোনটিই করতে পারল না। আমি সংযত হয়ে বের হলাম এবং নারাজ অবস্থায় ফিরে এলাম; তুমি তোমার গণ্ডদেশকে দুর্বল করেছ সেই দিন, যেই দিন তুমি তোমার দণ্ড মওকুফ করেছ। আমি নেকড়ে বাঘ শিকার করেছি এবং মাটিকে বিছানারূপে ব্যবহার করেছি; আমি কোন বক্তাকে বাধা দেইনি এবং কোন উপকারকে যথেষ্ট মনে করিনি। আর আমার কোন স্বাধীনতা নেই; হায় আমি যদি আমার সুখস্বাচ্ছন্দ্য ও অপমানের পূর্বে মারা যেতাম! আমার সাহায্যকারী হলেন আল্লাহ, তিনি স্বাভাবিকভাবেই আমাকে সাহায্য করবেন এবং তোমার থেকে আমাকে রক্ষা করবেন। প্রত্যেক পূর্ব ও পশ্চিমে অবস্থানকারীর মধ্যে আমার ধ্বংস ও দুর্ভাগ্য। ইচ্ছাশক্তি মারা গেছে এবং বাহু-বল দুর্বল হয়ে গেছে। আমার অভিযোগ আমার পিতার প্রতি এবং আমার বিভ্রান্তি বা বিপর্যয় আমার প্রভুর দিকে। হে আল্লাহ! তুমি তাদের চেয়ে শক্তিধর ও ক্ষমতাবান; কষ্ট ও শাস্তিদানে কঠোর। অতঃপর আমীরুল মুমিনীন আ. বলেন: তোমার জন্য আফসোস নয়; বরং আফসোস হয় তোমার শত্রুর জন্য; অতঃপর তুমি তোমার ক্রোধ থেকে বিরত থাক হে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির কন্যা ও নবুয়তের বাকি অংশ! আমি আমার দীনের ব্যাপারে ক্লান্ত হইনি এবং আমি আমার নিয়তিতে ত্রুটি করিনি। সুতরাং তুমি যদি জীবন ধারণের ন্যূনতম উপকরণ চাও, তবে তোমার রিযিক সংরক্ষিত এবং তোমার অভিভাবক নিরাপদ; তুমি যা হারিয়েছ তার চেয়ে উত্তম জিনিস তোমার জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। সুতরাং আল্লাহকেই যথেষ্ট মনে কর; অতঃপর সে বলল: আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট এবং আমি বিরত থাকলাম।” [আহমদ ইবন আবি তালিব আত-তাবারসী, আল-ইহতিজাজ ( الاحتجاج ), পৃ. ১৪৫]
এটা কি যুক্তিসংগত হতে পারে যে, সাইয়্যেদা ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা তার স্বামী সাইয়্যেদুনা আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে এই পদ্ধতিতে সম্বোধন করেছেন, যে পদ্ধতিতে এই যুগের কোন ভদ্র স্ত্রীও তার স্বামীকে সম্বোধন করতে পছন্দ করে না। আর আমরা যদি এই বর্ণনাটিকে সত্য বলে রায় পেশ করি, তবে তা থেকে সাইয়্যেদা ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা কর্তৃক তার স্বামীর ব্যাপারে নির্লজ্জতা, কঠোরতা ও রূঢ়তা প্রকাশ পাবে (নাউযুবিল্লাহ); আর সত্য বিষয়ে জনসমক্ষে সাইয়্যেদুনা আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাপুরুষতা ও দুর্বলতা প্রকাশ পাবে। আর এটাও কি যুক্তিসংগত হতে পারে, অথচ তিনি হলেন অনন্য বীরত্বের অধিকারী আসাদুল্লাহ আল-গালিব (আল্লাহর বিজয়ী সিংহ)। আমি বুঝতে পারছি না, শিয়াদের জ্ঞান-বুদ্ধি কোথায় যাচ্ছে, যারা আলী ও ফাতেমার ভালবাসা দাবি করে; অতঃপর এসব নির্বুদ্ধিতার বিবরণসমূহ নিয়ে আসে, যা তাদের দাবিকৃত বিষয়ের বিপরীত। আর প্রকৃতপক্ষে – যেমনটি আপনি দেখলেন- তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্যাদেরকে অপমান করে। আর এসব হাসিল হয় তাদের হীন উদ্দেশ্য সাধনের জন্য এই ধরনের মিথ্যা ও বানোয়াট আয়াতসমূহ আবিষ্কারের সময়। আর তারা বেমালুম ভুলে যায় যে, এই বানোয়াট বর্ণনাসমূহ প্রকারান্তরে তাদেরই ক্ষতি করে। বস্তুত বানোয়াট বর্ণনাসমূহের চিরাচরিত অবস্থা এরকমই হয়ে থাকে এবং সেগুলোর মিথ্যার দিকটি সকল মানুষের সামনে যথাসময়ে ফুটে উঠে।
আহমদ ইবন আবি তালিব আত-তাবারসী ‘আল-ইহতিজাজ’ ( الاحتجاج ) নামক গ্রন্থে আরও উল্লেখ করেন:
“সালমান (ফারসি) বলেন: যখন রাত হয়, তখন আলী ফাতেমাকে গাধার উপর আরোহণ করান এবং তার দুই ছেলে হাসান ও হোসাইনের হাত ধরেন; অতঃপর বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুহাজির ও আনসারগণকে এক এক করে ডাকেন; তারা প্রত্যেকে তার বাসায় আসল; আর তিনি (তাদের নিকট) তার অধিকারের কথা বললেন এবং তাকে সাহায্য করার জন্য আহ্বান করলেন ..., অতঃপর সকাল হয়ে গেল, কিন্তু চারজন ব্যতীত আর কেউ তার আবদার রক্ষা করেনি; আমি সালমানকে জিজ্ঞাসা করলাম: সেই চারজন কে? তিনি বললেন: আমি, আবূ যর, মিকদাদ ও যোবায়ের ইবন ‘আওয়াম; তিনি তাদের নিকট দ্বিতীয় রাত্রে আসলেন ..., অতঃপর তৃতীয় রাত্রে আসলেন, কিন্তু আমরা ব্যতীত কেউই তার আবদার রক্ষা করেনি।” [আহমদ ইবন আবি তালিব আত-তাবারসী, আল-ইহতিজাজ ( الاحتجاج ), পৃ. ১৫৭]
আত-তাবারসী ‘আল-ইহতিজাজ’ ( الاحتجاج ) নামক গ্রন্থে আরও উল্লেখ করেন:
“যখন রাত হয়, তখন তিনি ফাতেমাকে গাধার উপর আরোহণ করান, অতঃপর তিনি তাদেরকে তার সাহায্য করার জন্য আহ্বান করেন, কিন্তু আমরা চারজন ব্যতীত কেউই তার আহ্বানে সাড়া দেয়নি।” [আহমদ ইবন আবি তালিব আত-তাবারসী, আল-ইহতিজাজ ( الاحتجاج ), পৃ. ১৫৮]
সাইয়্যেদুনা আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কলিজার টুকরা ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে নিয়ে অধিক ঘোরাঘুরি ও তাকে নিয়ে প্রত্যেক মুসলিমের দরজায় দরজায় ধরনা দেয়া কি সাইয়্যেদা ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা ও সাইয়্যেদুনা আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর জন্য অসম্মান ও অপমানজনক নয়? আর এটা কি যুক্তিসংগত হতে পারে যে, তিনি এই ধরনের সকল চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার পরেও তার ডাকে কেউই সাড়া দেয়নি, বিশেষ করে বনু হাশিমের কেউ; বরং নিঃসন্দেহে এই বর্ণনাটি রাফেযীগণ মিথ্যা ও বানোয়াটি কায়দায় তৈরি করেছে।
আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসী ফারসি ভাষায় উল্লেখ করেন, যার অনুবাদ হল:
“আল-কুলাইনী হাসান সনদে বর্ণনা করেন, তিনি ইমাম মুহাম্মদ বাকেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তিকালের পর বনু হাশিমের আত্মমর্যাদা, শান-শওকত ও সংখ্যাধিক্য কোথায় ছিল, যখন আলী আবূ বকর, ওমর ও সকল মুনাফিকের কাছে পরাজিত হলেন? তখন ইমাম মুহাম্মদ বাকের জওয়াব দিলেন, বনু হাশিমের মধ্যে কে-ই বা অবশিষ্ট ছিলেন? জাফর ও হামযা ছিলেন প্রথম সারির ও পরিপূর্ণ মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত, যারা মারা গেছেন; আর দুইজন, যারা ছিলেন বিশ্বাসে দুর্বল, হীন মানসিকতার এবং নও মুসলিম, তারা অবশিষ্ট আছে- আব্বাস ও ‘আকিল।” [হায়াতুল কুলুব ( حيات القلوب ), ২য় খণ্ড, পৃ. ৮৪৬; আবার এই বর্ণনাটি ফুরু‘উল কাফী ( فروع الكافي ), ২য় খণ্ড, রওযা অধ্যায় বিদ্যমান আছে।]
মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসী আব্বাস থেকে ফারসি ভাষায় বর্ণনা করেন, যার অনুবাদ হল:
“নিঃসন্দেহে আমাদের হাদিসসমূহ থেকে প্রমাণিত হয় যে, আব্বাস পরিপূর্ণ মুমিন ছিলেন না; আর ‘আকিলও ঈমানের অপূর্ণতার দিক থেকে তার মতই ছিলেন।” [হায়াতুল কুলুব ( حيات القلوب ), ২য় খণ্ড, পৃ. ৮৬৬]
আল-মাজলিসী ফারসি ভাষায় আরও বর্ণনা করেন, যার অনুবাদ হল:
“ইমাম মুহাম্মদ বাকের ইমাম যাইনুল আবেদীন আ. থেকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণনা করেন যে, এই আয়াতটি আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস ও তার পিতা আব্বাসের শানে অবতীর্ণ হয়েছে; আয়াতটি হল:
﴿ وَمَن كَانَ فِي هَٰذِهِۦٓ أَعۡمَىٰ فَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ أَعۡمَىٰ وَأَضَلُّ سَبِيلٗا ٧٢ ﴾ [ سورة الإسراء : 72]
“আর যে ব্যক্তি এখানে অন্ধ, সে আখিরাতেও অন্ধ এবং অধিকতর পথভ্রষ্ট।”— (সূরা আল-ইসরা: ৭২)।” [হায়াতুল কুলুব ( حيات القلوب ), ২য় খণ্ড, পৃ. ৮৬৫]
এই বর্ণনাসমূহ থেকে মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচা সাইয়্যেদুনা আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এবং অনুরূপভাবে সাইয়্যেদুনা ‘আকিল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে তাদের পক্ষ থেকে অপমান করার এবং তাদের উভয়কে ব্যর্থতা, দুর্বল বিশ্বাস ও ঈমানের অপূর্ণতার অপবাদ দেয়ার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ পাচ্ছে। আরও অপমান করা হয়েছে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও তাঁর ছেলে উম্মতের (জাতির) পণ্ডিত ব্যক্তিত্ব সাইয়্যেদুনা আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে এই বলে যে, তারা নাকি উপরিউক্ত আয়াতে কারিমার হুকুমের আওতাধীন (নাউযুবিল্লাহ), অর্থাৎ তাদের শানে উপরিউক্ত আয়াতটি নাযিল হয়েছে; অথচ এই আয়াতটি নাযিল হয়েছে কাফিরদেরকে উপলক্ষ করে। আমরা আল্লাহ তা‘আলার কাছে সকল প্রকার বক্রতা, ভ্রষ্টতা ও নাস্তিকতা থেকে আশ্রয় চাই।
“আল-কুলাইনী হাসান সনদে বর্ণনা করেন, তিনি ইমাম মুহাম্মদ বাকেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তিকালের পর বনু হাশিমের আত্মমর্যাদা, শান-শওকত ও সংখ্যাধিক্য কোথায় ছিল, যখন আলী আবূ বকর, ওমর ও সকল মুনাফিকের কাছে পরাজিত হলেন? তখন ইমাম মুহাম্মদ বাকের জওয়াব দিলেন, বনু হাশিমের মধ্যে কে-ই বা অবশিষ্ট ছিলেন? জাফর ও হামযা ছিলেন প্রথম সারির ও পরিপূর্ণ মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত, যারা মারা গেছেন; আর দুইজন, যারা ছিলেন বিশ্বাসে দুর্বল, হীন মানসিকতার এবং নও মুসলিম, তারা অবশিষ্ট আছে- আব্বাস ও ‘আকিল।” [হায়াতুল কুলুব ( حيات القلوب ), ২য় খণ্ড, পৃ. ৮৪৬; আবার এই বর্ণনাটি ফুরু‘উল কাফী ( فروع الكافي ), ২য় খণ্ড, রওযা অধ্যায় বিদ্যমান আছে।]
মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসী আব্বাস থেকে ফারসি ভাষায় বর্ণনা করেন, যার অনুবাদ হল:
“নিঃসন্দেহে আমাদের হাদিসসমূহ থেকে প্রমাণিত হয় যে, আব্বাস পরিপূর্ণ মুমিন ছিলেন না; আর ‘আকিলও ঈমানের অপূর্ণতার দিক থেকে তার মতই ছিলেন।” [হায়াতুল কুলুব ( حيات القلوب ), ২য় খণ্ড, পৃ. ৮৬৬]
আল-মাজলিসী ফারসি ভাষায় আরও বর্ণনা করেন, যার অনুবাদ হল:
“ইমাম মুহাম্মদ বাকের ইমাম যাইনুল আবেদীন আ. থেকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণনা করেন যে, এই আয়াতটি আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস ও তার পিতা আব্বাসের শানে অবতীর্ণ হয়েছে; আয়াতটি হল:
﴿ وَمَن كَانَ فِي هَٰذِهِۦٓ أَعۡمَىٰ فَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ أَعۡمَىٰ وَأَضَلُّ سَبِيلٗا ٧٢ ﴾ [ سورة الإسراء : 72]
“আর যে ব্যক্তি এখানে অন্ধ, সে আখিরাতেও অন্ধ এবং অধিকতর পথভ্রষ্ট।”— (সূরা আল-ইসরা: ৭২)।” [হায়াতুল কুলুব ( حيات القلوب ), ২য় খণ্ড, পৃ. ৮৬৫]
এই বর্ণনাসমূহ থেকে মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচা সাইয়্যেদুনা আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এবং অনুরূপভাবে সাইয়্যেদুনা ‘আকিল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে তাদের পক্ষ থেকে অপমান করার এবং তাদের উভয়কে ব্যর্থতা, দুর্বল বিশ্বাস ও ঈমানের অপূর্ণতার অপবাদ দেয়ার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ পাচ্ছে। আরও অপমান করা হয়েছে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও তাঁর ছেলে উম্মতের (জাতির) পণ্ডিত ব্যক্তিত্ব সাইয়্যেদুনা আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে এই বলে যে, তারা নাকি উপরিউক্ত আয়াতে কারিমার হুকুমের আওতাধীন (নাউযুবিল্লাহ), অর্থাৎ তাদের শানে উপরিউক্ত আয়াতটি নাযিল হয়েছে; অথচ এই আয়াতটি নাযিল হয়েছে কাফিরদেরকে উপলক্ষ করে। আমরা আল্লাহ তা‘আলার কাছে সকল প্রকার বক্রতা, ভ্রষ্টতা ও নাস্তিকতা থেকে আশ্রয় চাই।
আল-কুলাইনী ফুরু‘উল কাফী ( فروع الكافي ) নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেন:
“আবূ জাফর আ. থেকে বর্ণিত: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তিকালের পর তিনজন ব্যতীত বাকি সকল মানুষ ধর্মত্যাগীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে; তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম: সে তিন ব্যক্তি কে? জওয়াবে তিনি বললেন: মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ, আবূ যর আল-গিফারী এবং সালমান ফারসী।” [আল-কুলাইনী, ফুরু‘উল কাফী ( فروع الكافي ), রওযা অধ্যায়, পৃ. ১১৫]
আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসী ফারসি ভাষায় উল্লেখ করেন, যার অনুবাদ হল:
“নিশ্চয় আবূ বকর এবং ওমর উভয় হলেন: ফেরাউন ও হামান।” [আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী, হক্কুল ইয়াকীন ( حق اليقين ), পৃ. ৩৬৭]
আল-মাজলিসী ফারসি ভাষায় আরও উল্লেখ করেন, যার অনুবাদ হল:
“ ‘তাকরীবুল মা‘আরেফ’ ( تقريب المعارف ) নামক গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আলী ইবন হোসাইনকে উদ্দেশ্য করে তার মাওলা (মুক্ত দাস) বলল: আপনার উপর আমার খেদমতের হক রয়েছে; সুতরাং আপনি আমাকে আবূ বকর ও ওমর সম্পর্কে সংবাদ দিন? তখন আলী ইবন হোসাইন বলল: তারা উভয়ে কাফির ছিল। আর যে ব্যক্তি তাদেরকে ভালবাসবে, সেও কাফির।” [আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী, হক্কুল ইয়াকীন ( حق اليقين ), পৃ. ৫২২]
আল-মাজলিসী ফারসি ভাষায় আরও উল্লেখ করেন, যার অনুবাদ হল:
“আবূ হামযা আত-সামালী বর্ণনা করেন, তিনি ইমাম যাইনুল আবেদীনকে আবূ বকর ও ওমরের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন? তখন তিনি বললেন: তারা উভয়ে কাফির ছিল। আর আর যে ব্যক্তি তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে, সেও কাফির। আর এই অধ্যায়ে বিভিন্ন গ্রন্থে বহু হাদিস রয়েছে; তার অধিকাংশই ‘বিহারুল আনওয়ার’ ( بحار الأنوار ) নামক গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে।” [আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী, হক্কুল ইয়াকীন ( حق اليقين ), পৃ. ৫৩৩]
আল-মাজলিসী ফারসি ভাষায় আরও উল্লেখ করেন, যার অনুবাদ হল:
“আর তাকে মুফাদ্দাল জিজ্ঞাসা করল, এই আয়াতে কারীমার মধ্যে ফির‘আউন ও হামান বলতে কাদের বুঝানো হয়েছে? তখন তিনি জবাব দিলেন, তাদের দ্বারা উদ্দেশ্য হল: আবূ বকর ও ওমর।” [আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী, হক্কুল ইয়াকীন ( حق اليقين ), পৃ. ৩৯৩] (নাউযুবিল্লাহ)।
আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসী ফারসি ভাষায় উল্লেখ করেন, আরবিতে (বাংলায়) যার অর্থ হল:
“সালমান (ফারসী) বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তিকালের পর চারজন ব্যতীত বাকি সকল মানুষ মুরতাদ বা ধর্মত্যাগী হয়ে গেছে। আর রাসূলের পরে মানুষ হয়ে গেল হারুন ও তার অনুসারীদের মত এবং গো বৎস ও তার পূজারীদের পর্যায়ভুক্ত। সুতরাং আলী হল হারুনের পদমর্যাদায়, আর আবূ বকর হল গরুর বাছুরের মর্যদার এবং ওমর হল সামেরীর পদমর্যাদার।”
আর ‘মা‘রেফাতু আখবারির রিজাল’ ( معرفة أخبار الرجال ), (রিজালু কাশি)-এর গ্রন্থকার কাশি উল্লেখ করেন:
“আবূ জাফর আ. বলেন: তিন ব্যক্তি ব্যতীত বাকি সকল মানুষ মুরতাদ বা ধর্মত্যাগী হয়ে গেছে। আর সে তিন ব্যক্তি হলেন: সালমান, আবূ যর ও মিকদাদ; তিনি বলেন, আমি বললাম: অতঃপর ‘আম্মার? তখন তিনি বলেন: সে অহংকার প্রদর্শন করেছিল, অতঃপর সে ফিরে এসেছে। অতঃপর তিনি বলেন: আমি যদি এমন কোন একজনকে চাই, যার মধ্যে কোন সন্দেহ-সংশয় অনুপ্রবেশ করেনি, তিনি হলেন মিকদাদ; আর সালমানের ব্যাপারটি হল, তার হৃদয়ে বাধাদানকারী বাধা প্রদান করেছে ...। আর আবূ যরের বিষয়টি হল, তাকে আমীরুল মুমিনীন চুপ থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন; আর আল্লাহর ব্যাপারে তাকে কোন নিন্দুকের নিন্দা স্পর্শ করতে পারে না; ফলে তিনি কথা বলতে অস্বীকার করেন।” [মুহাম্মদ ইবন ওমর আল-কাশী, মা‘রেফাতু আখবারির রিজাল ( معرفة أخبار الرجال ), পৃ. ৬ (রিজালু কাশী/ رجال كشي )]
কাশি আরও বর্ণনা করেন:
“আবূ জাফর আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তিকালের পর তিনজন ব্যতীত বাকি সকল মানুষ ধর্মত্যাগীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে; তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম: সে তিন ব্যক্তি কে? জওয়াবে তিনি বললেন: মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ, আবূ যর আল-গিফারী এবং সালমান ফারসী। অতঃপর জনগণ কিছুদিন পরেই জানতে পারল এবং সে বলল, তারা (তিনজন) ঐসব ব্যক্তি, যাদের উপর নির্যাতনের ষ্টীম রোলার চলেছে, অথচ তারা আবূ বকরের নিকট আনুগত্যের শপথ বাক্য পাঠ করতে অস্বীকার করেন।” [মা‘রেফাতু আখবারির রিজাল ( معرفة أخبار الرجال ), (রিজালু কাশী/ رجال كشي ), পৃ. ৪]
কাশি আরও বর্ণনা করেন:
“কুমাইত বলল, হে আমার নেতা! আমি আপনাকে একটি মাস’আলা জিজ্ঞাসা করব; অতঃপর তিনি বললেন: জিজ্ঞাসা কর, তখন সে বলল, আমি আপনাকে দুই ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছি; তখন তিনি বললেন, হে কুমাইত ইবন যায়েদ! ইসলামের মধ্যে যত রক্তপাত, অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন এবং অবৈধভাবে যৌনকাম চরিতার্থ করার দায়ভার রয়েছে তা তাদের (দুই ব্যক্তির) ঘাড়ে বর্তাবে ঐ দিন পর্যন্ত, যেদিন আমাদের ইমাম (মাহদী) দাঁড়াবে; আর আমরা বনু হাশিমের জনসমষ্টি আমাদের বড় ও ছোটদেরকে নির্দেশ দিচ্ছি তাদেরকে গালি দিতে এবং তাদের থেকে মুক্তি ঘোষণা করতে।” [মা‘রেফাতু আখবারির রিজাল ( معرفة أخبار الرجال ), (রিজালু কাশী/ رجال كشي ), পৃ. ১৩৫]
কাশি আরও বর্ণনা করেন:
“ওরদ ইবন যায়েদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবূ জাফর আ.কে উদ্দেশ্য করে বলেছি: আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন, কুমাইতের পা দেখা যাচ্ছে (সে এসেছে)। তখন তিনি বললেন, তুমি তাকে আমার নিকট প্রবেশ করাও; অতঃপর কুমাইত তাকে শায়খাইন তথা আবূ বকর ও ওমর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল; জওয়াবে আবূ জাফর আ. তাকে বললেন: রক্তপাত করা এবং আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও আলী আ.-এর বিধানের পরিপন্থী রায় পেশ করার দায়ভার তাদের উভয়ের ঘাড়ের উপর বর্তাবে; তখন কুমাইত বলল: আল্লাহু আকবার (আল্লাহ মহান), আল্লাহু আকবার (আল্লাহ মহান), আমার জন্য যথেষ্ট, আমার জন্য যথেষ্ট।” [মা‘রেফাতু আখবারির রিজাল ( معرفة أخبار الرجال ), (রিজালু কাশী/ رجال كشي ), পৃ. ১৩৫]
আলী ইবন ইবরাহীম আল-কুমী তার তাফসীরের মধ্যে উল্লেখ করেন:
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের মধ্যে অল্পসংখ্যক ব্যতীত মুনাফিক হতে কেউ বাকি নেই।” [আলী ইবন ইবরাহীম আল-কুমী, তাফসীরুল কুমী ( تفسير القمي )]
আল-কুমী তার তাফসীরের মধ্যে আরও উল্লেখ করেন:
﴿أَلۡقَى ٱلشَّيۡطَٰنُ فِيٓ أُمۡنِيَّتِهِۦ﴾ [ الحج : ٥٢ ]
“শয়তান তার কথা-বার্তায় বাতিল ঢেলে দিয়েছে; অর্থাৎ- আবূ বকর ও ওমরের চিন্তাধারায়।” [আলী ইবন ইবরাহীম আল-কুমী, তাফসীরুল কুমী ( تفسير القمي ), পৃ.২৫৯। নাউযুবিল্লাহ, দেখুন কিভাবে কুরআনের আয়াতকে তারা অপব্যাখ্যা করে ইসলামের সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের অসম্মান করার চেষ্টা করে। এ আয়াতের সাথে আবু বকর ও উমরের ন্যূনতম কোন সম্পর্ক নেই। [সম্পাদক]]
মকবুল আহমদ তার ‘তরজমাতু লি মা‘আনিল কুরআন’ ( ترجمة لمعاني القرآن )-এর মধ্যে উর্দু ভাষায় বলেন, যার অনুবাদ হল:
“" الفحشاء (অশ্লীলতা) দ্বারা উদ্দেশ্য হল প্রথম নেতা আবূ বকর; " المنكر " (মন্দ) দ্বারা উদ্দেশ্য হল দ্বিতীয় শাইখ ওমর এবং " البغي " (বিদ্রোহ) দ্বারা উদ্দেশ্য হল তৃতীয় পর্দা ওসমান।” [তরজমাতু মকবুল, পৃ. ৫৫১; তাফসীরুল কুমী ( تفسير القمي ), পৃ. ২১৮।]
মকবুল আহমদ উর্দু ভাষায় আরও বলেন, যার অনুবাদ হল:
“ " الكفر "(অস্বীকার) দ্বারা উদ্দেশ্য হল প্রথম নেতা আবূ বকর; " الفسوق " (পাপাচার) দ্বারা উদ্দেশ্য হল দ্বিতীয় শাইখ ওমর এবং " العصيان " (অমান্য করা) দ্বারা উদ্দেশ্য হল তৃতীয় পর্দা ওসমান।” [তরজমাতু মকবুল, পৃ. ১০২৭; তাফসীরুল কুমী ( تفسير القمي ), পৃ. ৩২২।]
মকবুল আহমদ তার ‘তরজমাতুল কুরআন’-এর মধ্যে উর্দু ভাষায় বলেন, যার অনুবাদ হল:
“মোটকথা, এই বিষয়টি নতুন নয়; বরং তোমার পূর্বে আল্লাহ যত নবী, রাসূল ও মুহাদ্দিস প্রেরণ করেছেন, শয়তান তার কামনা-বাসনায় তার ইচ্ছানুযায়ী বাতিল চিন্তাধারা ঢেলে দিয়েছে, যেমনিভাবে সেখানে শয়তান তার কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে দুইজনকে পাঠিয়েছে; আর তারা হল: আবূ বকর ও ওমর।” [তরজমাতু মকবুল, পৃ. ৬৭৪]
হে মানব মণ্ডলী! তোমরা এই নোংরা বর্ণনাসমূহের ব্যাপারের চিন্তা-ভাবনা কর, যেগুলো শিয়া সম্প্রদায়ের পূর্ববর্তী ও পরবর্তীগণ কর্তৃক আল-কুরআনুল কারীমের অর্থসমূহ বিকৃতিকরণের সংবাদ (ম্যাসেজ) দিচ্ছে; আরও সংবাদ দিচ্ছে তাদের পক্ষ থেকে আল-কুরআনের মনগড়া তাফসীর প্রসঙ্গে, যে ব্যাপারে আল্লাহ কোন কিছু নাযিল করেন নি; আরও জানিয়ে দিচ্ছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বড় বড় সাহাবীদের উপর তাদের দেয়া মিথ্যা অপবাদ সম্পর্কে, যাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং সঠিক পন্থায় তা‘লীম (শিক্ষা) ও তারবিয়ত (প্রশিক্ষণ) দিয়েছেন এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেছেন। আর আল-কুরআন তাদেরকে আল্লাহর পক্ষ থেকে জান্নাত, ক্ষমা ও সন্তুষ্টির সনদ (certificate) দিয়েছে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট; আর তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট।
সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা তাদের ব্যাপারে তাঁর কুরআনে বলেন:
﴿وَأَعَدَّ لَهُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي تَحۡتَهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدٗا﴾ [ التوبة : 100]
“এবং তিনি তাদের জন্য জান্নাত প্রস্তুত করেছেন, যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত, যেথায় তারা চিরস্থায়ী হবে।”— (সূরা আত-তাওবা: ১০০)
তিনি আরও বলেন:
﴿أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ حَقّٗاۚ لَّهُمۡ دَرَجَٰتٌ عِندَ رَبِّهِمۡ ...﴾ [ سورة الأنفال : 4]
“তারাই প্রকৃত মুমিন। তাদের প্রতিপালকের নিকট তাদেরই জন্য রয়েছে মর্যাদা; ... ”— (সূরা আল-আনফাল: ৪)
আর তাদের সম্পর্কে তিনি আরও বলেন:
﴿وَأَلۡزَمَهُمۡ كَلِمَةَ ٱلتَّقۡوَىٰ وَكَانُوٓاْ أَحَقَّ بِهَا وَأَهۡلَهَا﴾ [ سورة الفتح : 26]
“আর তাদেরকে তাকওয়ার বাক্যে সুদৃঢ় করলেন এবং তারাই ছিল এর অধিকতর যোগ্য ও উপযুক্ত”— (সূরা আল-ফাতহ: ২৬)
তাদের সম্পর্কে তিনি আরও বলেন:
﴿وَلَٰكِنَّ ٱللَّهَ حَبَّبَ إِلَيۡكُمُ ٱلۡإِيمَٰنَ وَزَيَّنَهُۥ فِي قُلُوبِكُمۡ وَكَرَّهَ إِلَيۡكُمُ ٱلۡكُفۡرَ وَٱلۡفُسُوقَ وَٱلۡعِصۡيَانَ﴾ [ سورة الحجرات : 7]
“কিন্তু আল্লাহ তোমাদের নিকট ঈমানকে প্রিয় করেছেন এবং তাকে তোমাদের হৃদয়গ্রাহী করেছেন; আর কুফরী, পাপাচার ও অবাধ্যতাকে করেছেন তোমাদের নিকট অপ্রিয়।”— (সূরা আল-হুজুরাত: ৭)
তিনি আরও বলেন:
﴿ وَكُلّٗا وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلۡحُسۡنَىٰ﴾ [ سورة النساء : 95]
“আল্লাহ সকলকেই কল্যাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।”— (সূরা আন-নিসা: ৯৫)
এগুলো ছাড়া আরও বহু আয়াতে তাদের মর্যাদা বর্ণিত হয়েছে।
আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের শত্রু এবং ইসলাম ও মুসলিমের শত্রু আবদুল্লাহ ইবন সাবা ইহুদী ও তার অনুসারী বিপথগামী শিয়াগণ ভ্রান্ত আকিদাসমূহ প্রচার করেছে এবং তাদের ইমামদের উপর মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মিথ্যা ও বানোয়াট বর্ণনাসমূহ তৈরি করেছে। আর নিজেদের পক্ষ থেকে মনগড়া মত আল্লাহর কালামের তাফসীরসমূহ উদ্ভাবন করেছে; আর প্রত্যেকটির উদ্দেশ্য ছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের উপর মিথ্যারোপ করা এবং ইসলাম ও মুসলিমের শত্রুতা করা। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ ছিলেন আল-কুরআন, নবুওয়াত ও সুন্নাতের বাস্তব সাক্ষী। সুতরাং প্রকৃত অর্থে ঐসব বাস্তব সাক্ষীদের কুৎসা রটনা করা মানেই আল-কুরআন, নবুওয়াত ও সুন্নাতের মন্দ সমালোচনা করা। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর একান্ত অনুগ্রহ দিয়ে আমাদেরকে এবং সকল মুসলিমকে যাবতীয় ফিতনা ও পথভ্রষ্টতা থেকে রক্ষা করুন, আমীন!
“আবূ জাফর আ. থেকে বর্ণিত: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তিকালের পর তিনজন ব্যতীত বাকি সকল মানুষ ধর্মত্যাগীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে; তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম: সে তিন ব্যক্তি কে? জওয়াবে তিনি বললেন: মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ, আবূ যর আল-গিফারী এবং সালমান ফারসী।” [আল-কুলাইনী, ফুরু‘উল কাফী ( فروع الكافي ), রওযা অধ্যায়, পৃ. ১১৫]
আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসী ফারসি ভাষায় উল্লেখ করেন, যার অনুবাদ হল:
“নিশ্চয় আবূ বকর এবং ওমর উভয় হলেন: ফেরাউন ও হামান।” [আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী, হক্কুল ইয়াকীন ( حق اليقين ), পৃ. ৩৬৭]
আল-মাজলিসী ফারসি ভাষায় আরও উল্লেখ করেন, যার অনুবাদ হল:
“ ‘তাকরীবুল মা‘আরেফ’ ( تقريب المعارف ) নামক গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আলী ইবন হোসাইনকে উদ্দেশ্য করে তার মাওলা (মুক্ত দাস) বলল: আপনার উপর আমার খেদমতের হক রয়েছে; সুতরাং আপনি আমাকে আবূ বকর ও ওমর সম্পর্কে সংবাদ দিন? তখন আলী ইবন হোসাইন বলল: তারা উভয়ে কাফির ছিল। আর যে ব্যক্তি তাদেরকে ভালবাসবে, সেও কাফির।” [আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী, হক্কুল ইয়াকীন ( حق اليقين ), পৃ. ৫২২]
আল-মাজলিসী ফারসি ভাষায় আরও উল্লেখ করেন, যার অনুবাদ হল:
“আবূ হামযা আত-সামালী বর্ণনা করেন, তিনি ইমাম যাইনুল আবেদীনকে আবূ বকর ও ওমরের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন? তখন তিনি বললেন: তারা উভয়ে কাফির ছিল। আর আর যে ব্যক্তি তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে, সেও কাফির। আর এই অধ্যায়ে বিভিন্ন গ্রন্থে বহু হাদিস রয়েছে; তার অধিকাংশই ‘বিহারুল আনওয়ার’ ( بحار الأنوار ) নামক গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে।” [আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী, হক্কুল ইয়াকীন ( حق اليقين ), পৃ. ৫৩৩]
আল-মাজলিসী ফারসি ভাষায় আরও উল্লেখ করেন, যার অনুবাদ হল:
“আর তাকে মুফাদ্দাল জিজ্ঞাসা করল, এই আয়াতে কারীমার মধ্যে ফির‘আউন ও হামান বলতে কাদের বুঝানো হয়েছে? তখন তিনি জবাব দিলেন, তাদের দ্বারা উদ্দেশ্য হল: আবূ বকর ও ওমর।” [আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী, হক্কুল ইয়াকীন ( حق اليقين ), পৃ. ৩৯৩] (নাউযুবিল্লাহ)।
আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসী ফারসি ভাষায় উল্লেখ করেন, আরবিতে (বাংলায়) যার অর্থ হল:
“সালমান (ফারসী) বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তিকালের পর চারজন ব্যতীত বাকি সকল মানুষ মুরতাদ বা ধর্মত্যাগী হয়ে গেছে। আর রাসূলের পরে মানুষ হয়ে গেল হারুন ও তার অনুসারীদের মত এবং গো বৎস ও তার পূজারীদের পর্যায়ভুক্ত। সুতরাং আলী হল হারুনের পদমর্যাদায়, আর আবূ বকর হল গরুর বাছুরের মর্যদার এবং ওমর হল সামেরীর পদমর্যাদার।”
আর ‘মা‘রেফাতু আখবারির রিজাল’ ( معرفة أخبار الرجال ), (রিজালু কাশি)-এর গ্রন্থকার কাশি উল্লেখ করেন:
“আবূ জাফর আ. বলেন: তিন ব্যক্তি ব্যতীত বাকি সকল মানুষ মুরতাদ বা ধর্মত্যাগী হয়ে গেছে। আর সে তিন ব্যক্তি হলেন: সালমান, আবূ যর ও মিকদাদ; তিনি বলেন, আমি বললাম: অতঃপর ‘আম্মার? তখন তিনি বলেন: সে অহংকার প্রদর্শন করেছিল, অতঃপর সে ফিরে এসেছে। অতঃপর তিনি বলেন: আমি যদি এমন কোন একজনকে চাই, যার মধ্যে কোন সন্দেহ-সংশয় অনুপ্রবেশ করেনি, তিনি হলেন মিকদাদ; আর সালমানের ব্যাপারটি হল, তার হৃদয়ে বাধাদানকারী বাধা প্রদান করেছে ...। আর আবূ যরের বিষয়টি হল, তাকে আমীরুল মুমিনীন চুপ থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন; আর আল্লাহর ব্যাপারে তাকে কোন নিন্দুকের নিন্দা স্পর্শ করতে পারে না; ফলে তিনি কথা বলতে অস্বীকার করেন।” [মুহাম্মদ ইবন ওমর আল-কাশী, মা‘রেফাতু আখবারির রিজাল ( معرفة أخبار الرجال ), পৃ. ৬ (রিজালু কাশী/ رجال كشي )]
কাশি আরও বর্ণনা করেন:
“আবূ জাফর আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তিকালের পর তিনজন ব্যতীত বাকি সকল মানুষ ধর্মত্যাগীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে; তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম: সে তিন ব্যক্তি কে? জওয়াবে তিনি বললেন: মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ, আবূ যর আল-গিফারী এবং সালমান ফারসী। অতঃপর জনগণ কিছুদিন পরেই জানতে পারল এবং সে বলল, তারা (তিনজন) ঐসব ব্যক্তি, যাদের উপর নির্যাতনের ষ্টীম রোলার চলেছে, অথচ তারা আবূ বকরের নিকট আনুগত্যের শপথ বাক্য পাঠ করতে অস্বীকার করেন।” [মা‘রেফাতু আখবারির রিজাল ( معرفة أخبار الرجال ), (রিজালু কাশী/ رجال كشي ), পৃ. ৪]
কাশি আরও বর্ণনা করেন:
“কুমাইত বলল, হে আমার নেতা! আমি আপনাকে একটি মাস’আলা জিজ্ঞাসা করব; অতঃপর তিনি বললেন: জিজ্ঞাসা কর, তখন সে বলল, আমি আপনাকে দুই ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছি; তখন তিনি বললেন, হে কুমাইত ইবন যায়েদ! ইসলামের মধ্যে যত রক্তপাত, অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন এবং অবৈধভাবে যৌনকাম চরিতার্থ করার দায়ভার রয়েছে তা তাদের (দুই ব্যক্তির) ঘাড়ে বর্তাবে ঐ দিন পর্যন্ত, যেদিন আমাদের ইমাম (মাহদী) দাঁড়াবে; আর আমরা বনু হাশিমের জনসমষ্টি আমাদের বড় ও ছোটদেরকে নির্দেশ দিচ্ছি তাদেরকে গালি দিতে এবং তাদের থেকে মুক্তি ঘোষণা করতে।” [মা‘রেফাতু আখবারির রিজাল ( معرفة أخبار الرجال ), (রিজালু কাশী/ رجال كشي ), পৃ. ১৩৫]
কাশি আরও বর্ণনা করেন:
“ওরদ ইবন যায়েদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবূ জাফর আ.কে উদ্দেশ্য করে বলেছি: আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন, কুমাইতের পা দেখা যাচ্ছে (সে এসেছে)। তখন তিনি বললেন, তুমি তাকে আমার নিকট প্রবেশ করাও; অতঃপর কুমাইত তাকে শায়খাইন তথা আবূ বকর ও ওমর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল; জওয়াবে আবূ জাফর আ. তাকে বললেন: রক্তপাত করা এবং আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও আলী আ.-এর বিধানের পরিপন্থী রায় পেশ করার দায়ভার তাদের উভয়ের ঘাড়ের উপর বর্তাবে; তখন কুমাইত বলল: আল্লাহু আকবার (আল্লাহ মহান), আল্লাহু আকবার (আল্লাহ মহান), আমার জন্য যথেষ্ট, আমার জন্য যথেষ্ট।” [মা‘রেফাতু আখবারির রিজাল ( معرفة أخبار الرجال ), (রিজালু কাশী/ رجال كشي ), পৃ. ১৩৫]
আলী ইবন ইবরাহীম আল-কুমী তার তাফসীরের মধ্যে উল্লেখ করেন:
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের মধ্যে অল্পসংখ্যক ব্যতীত মুনাফিক হতে কেউ বাকি নেই।” [আলী ইবন ইবরাহীম আল-কুমী, তাফসীরুল কুমী ( تفسير القمي )]
আল-কুমী তার তাফসীরের মধ্যে আরও উল্লেখ করেন:
﴿أَلۡقَى ٱلشَّيۡطَٰنُ فِيٓ أُمۡنِيَّتِهِۦ﴾ [ الحج : ٥٢ ]
“শয়তান তার কথা-বার্তায় বাতিল ঢেলে দিয়েছে; অর্থাৎ- আবূ বকর ও ওমরের চিন্তাধারায়।” [আলী ইবন ইবরাহীম আল-কুমী, তাফসীরুল কুমী ( تفسير القمي ), পৃ.২৫৯। নাউযুবিল্লাহ, দেখুন কিভাবে কুরআনের আয়াতকে তারা অপব্যাখ্যা করে ইসলামের সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের অসম্মান করার চেষ্টা করে। এ আয়াতের সাথে আবু বকর ও উমরের ন্যূনতম কোন সম্পর্ক নেই। [সম্পাদক]]
মকবুল আহমদ তার ‘তরজমাতু লি মা‘আনিল কুরআন’ ( ترجمة لمعاني القرآن )-এর মধ্যে উর্দু ভাষায় বলেন, যার অনুবাদ হল:
“" الفحشاء (অশ্লীলতা) দ্বারা উদ্দেশ্য হল প্রথম নেতা আবূ বকর; " المنكر " (মন্দ) দ্বারা উদ্দেশ্য হল দ্বিতীয় শাইখ ওমর এবং " البغي " (বিদ্রোহ) দ্বারা উদ্দেশ্য হল তৃতীয় পর্দা ওসমান।” [তরজমাতু মকবুল, পৃ. ৫৫১; তাফসীরুল কুমী ( تفسير القمي ), পৃ. ২১৮।]
মকবুল আহমদ উর্দু ভাষায় আরও বলেন, যার অনুবাদ হল:
“ " الكفر "(অস্বীকার) দ্বারা উদ্দেশ্য হল প্রথম নেতা আবূ বকর; " الفسوق " (পাপাচার) দ্বারা উদ্দেশ্য হল দ্বিতীয় শাইখ ওমর এবং " العصيان " (অমান্য করা) দ্বারা উদ্দেশ্য হল তৃতীয় পর্দা ওসমান।” [তরজমাতু মকবুল, পৃ. ১০২৭; তাফসীরুল কুমী ( تفسير القمي ), পৃ. ৩২২।]
মকবুল আহমদ তার ‘তরজমাতুল কুরআন’-এর মধ্যে উর্দু ভাষায় বলেন, যার অনুবাদ হল:
“মোটকথা, এই বিষয়টি নতুন নয়; বরং তোমার পূর্বে আল্লাহ যত নবী, রাসূল ও মুহাদ্দিস প্রেরণ করেছেন, শয়তান তার কামনা-বাসনায় তার ইচ্ছানুযায়ী বাতিল চিন্তাধারা ঢেলে দিয়েছে, যেমনিভাবে সেখানে শয়তান তার কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে দুইজনকে পাঠিয়েছে; আর তারা হল: আবূ বকর ও ওমর।” [তরজমাতু মকবুল, পৃ. ৬৭৪]
হে মানব মণ্ডলী! তোমরা এই নোংরা বর্ণনাসমূহের ব্যাপারের চিন্তা-ভাবনা কর, যেগুলো শিয়া সম্প্রদায়ের পূর্ববর্তী ও পরবর্তীগণ কর্তৃক আল-কুরআনুল কারীমের অর্থসমূহ বিকৃতিকরণের সংবাদ (ম্যাসেজ) দিচ্ছে; আরও সংবাদ দিচ্ছে তাদের পক্ষ থেকে আল-কুরআনের মনগড়া তাফসীর প্রসঙ্গে, যে ব্যাপারে আল্লাহ কোন কিছু নাযিল করেন নি; আরও জানিয়ে দিচ্ছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বড় বড় সাহাবীদের উপর তাদের দেয়া মিথ্যা অপবাদ সম্পর্কে, যাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং সঠিক পন্থায় তা‘লীম (শিক্ষা) ও তারবিয়ত (প্রশিক্ষণ) দিয়েছেন এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেছেন। আর আল-কুরআন তাদেরকে আল্লাহর পক্ষ থেকে জান্নাত, ক্ষমা ও সন্তুষ্টির সনদ (certificate) দিয়েছে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট; আর তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট।
সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা তাদের ব্যাপারে তাঁর কুরআনে বলেন:
﴿وَأَعَدَّ لَهُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي تَحۡتَهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدٗا﴾ [ التوبة : 100]
“এবং তিনি তাদের জন্য জান্নাত প্রস্তুত করেছেন, যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত, যেথায় তারা চিরস্থায়ী হবে।”— (সূরা আত-তাওবা: ১০০)
তিনি আরও বলেন:
﴿أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ حَقّٗاۚ لَّهُمۡ دَرَجَٰتٌ عِندَ رَبِّهِمۡ ...﴾ [ سورة الأنفال : 4]
“তারাই প্রকৃত মুমিন। তাদের প্রতিপালকের নিকট তাদেরই জন্য রয়েছে মর্যাদা; ... ”— (সূরা আল-আনফাল: ৪)
আর তাদের সম্পর্কে তিনি আরও বলেন:
﴿وَأَلۡزَمَهُمۡ كَلِمَةَ ٱلتَّقۡوَىٰ وَكَانُوٓاْ أَحَقَّ بِهَا وَأَهۡلَهَا﴾ [ سورة الفتح : 26]
“আর তাদেরকে তাকওয়ার বাক্যে সুদৃঢ় করলেন এবং তারাই ছিল এর অধিকতর যোগ্য ও উপযুক্ত”— (সূরা আল-ফাতহ: ২৬)
তাদের সম্পর্কে তিনি আরও বলেন:
﴿وَلَٰكِنَّ ٱللَّهَ حَبَّبَ إِلَيۡكُمُ ٱلۡإِيمَٰنَ وَزَيَّنَهُۥ فِي قُلُوبِكُمۡ وَكَرَّهَ إِلَيۡكُمُ ٱلۡكُفۡرَ وَٱلۡفُسُوقَ وَٱلۡعِصۡيَانَ﴾ [ سورة الحجرات : 7]
“কিন্তু আল্লাহ তোমাদের নিকট ঈমানকে প্রিয় করেছেন এবং তাকে তোমাদের হৃদয়গ্রাহী করেছেন; আর কুফরী, পাপাচার ও অবাধ্যতাকে করেছেন তোমাদের নিকট অপ্রিয়।”— (সূরা আল-হুজুরাত: ৭)
তিনি আরও বলেন:
﴿ وَكُلّٗا وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلۡحُسۡنَىٰ﴾ [ سورة النساء : 95]
“আল্লাহ সকলকেই কল্যাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।”— (সূরা আন-নিসা: ৯৫)
এগুলো ছাড়া আরও বহু আয়াতে তাদের মর্যাদা বর্ণিত হয়েছে।
আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের শত্রু এবং ইসলাম ও মুসলিমের শত্রু আবদুল্লাহ ইবন সাবা ইহুদী ও তার অনুসারী বিপথগামী শিয়াগণ ভ্রান্ত আকিদাসমূহ প্রচার করেছে এবং তাদের ইমামদের উপর মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মিথ্যা ও বানোয়াট বর্ণনাসমূহ তৈরি করেছে। আর নিজেদের পক্ষ থেকে মনগড়া মত আল্লাহর কালামের তাফসীরসমূহ উদ্ভাবন করেছে; আর প্রত্যেকটির উদ্দেশ্য ছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের উপর মিথ্যারোপ করা এবং ইসলাম ও মুসলিমের শত্রুতা করা। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ ছিলেন আল-কুরআন, নবুওয়াত ও সুন্নাতের বাস্তব সাক্ষী। সুতরাং প্রকৃত অর্থে ঐসব বাস্তব সাক্ষীদের কুৎসা রটনা করা মানেই আল-কুরআন, নবুওয়াত ও সুন্নাতের মন্দ সমালোচনা করা। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর একান্ত অনুগ্রহ দিয়ে আমাদেরকে এবং সকল মুসলিমকে যাবতীয় ফিতনা ও পথভ্রষ্টতা থেকে রক্ষা করুন, আমীন!
শিয়া মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতাগণ প্রমাণ সাব্যস্ত করেছে যে, তাদের ইমামগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মত নিষ্পাপ এবং তারা নবীদের সকলের চেয়ে উত্তম। আর তাদের আনুগত্য করা এবং তাদের ইমামত তথা নেতৃত্বের উপর আস্থা রাখা বাধ্যতামূলক; যেমনিভাবে বাধ্যতামূলক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা ও তাঁর আনুগত্য করা। আর তারা তাদের ইমামদের জন্য এমন সব গুণাবলী ও মর্যাদার কথা বলে, যা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও জন্য সাব্যস্ত হতে পারে না। সুতরাং তারা তাদের ইমামদের জন্য দাবি করে যে, যা হয়েছে এবং যা হবে, তারা সেই জ্ঞান রাখে। আর তারা তাদের মৃত্যুর সময় সম্পর্কেও জানে, এমনকি তারা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী মৃত্যুবরণ করে। [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ১৫৮-১৫৯] আর ফযিলতের দৃষ্টিকোণ থেকে তারা হলেন জাতির সাহসী সন্তান ইত্যাদি ইত্যাদি।
একদিকে তারা তাদের (ইমামদের) জন্য এই ধরনের শ্রেষ্ঠত্ব, অলৌকিক ঘটনা ও কল্পকাহিনী থেকে যা সাব্যস্ত করেছে, এ সব এমন ধরণের কল্পকাহিনী যে তা নিজের জন্য সাব্যস্ত করা বা নিজের প্রতি সম্পৃক্ত করা থেকে যে কোন সাধারণ মানুষও নিজেকে মুক্ত ঘোষণা করে এবং তা সাব্যস্ত করতে লজ্জাবোধ করে; কারণ তাতে রয়েছে সীমাহীন লজ্জা ও অবমাননা। অপরদিকে তারা তাদের জন্য স্থির করেছে যে, তারা মুনাফিক ও কাপুরুষ ছিল এবং তারা মিথ্যা বলে ইত্যাদি।
আমরা তাদের মাযহাবের নির্ভরযোগ্য প্রধান গ্রন্থসমূহ থেকে তাদের বর্ণনা ও বক্তব্যসমূহ থেকে অংশবিশেষ আপনার সামনে উপস্থাপন করতে চাই। অতএব তারা ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক উম্মে কুলসুম বিনতে আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার ব্যাপারে লিখেছে: “ইমাম জাফর সাদিক বলেছেন: সেই প্রথম (গুপ্তাঙ্গ), যা আমাদের থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে।” [ফুরু‘উল কাফী ( فروع الكافي ), দ্বিতীয় খণ্ড।]
আমরা সাইয়্যেদা (উম্মে কুলসুম), তাঁর পিতা আলী এবং তাঁর ভাই হাসান ও হোসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমের ব্যাপারে তাদের এই নির্লজ্জ মন্তব্য থেকে আল্লাহ তা‘আলার নিকট আশ্রয় চাই।
মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসীর বক্তব্যের দৃষ্টি আকর্ষণপূর্বক শিয়া বিশিষ্ট ব্যক্তিদের একজন এই বর্ণনাটির সমালোচনা করতে গিয়ে বলেন:
“অভিশপ্ত মুনাফিক ওমর ইবনুল খাত্তাবের নিকট উম্মে কুলসুমকে বিয়ে দেয়ার বিষয়টি ছিল নিরুপায় হয়ে ‘তাকীয়া’ পদ্ধতি বা নীতির অনুসরণে।”
দেখুন, কোন প্রশ্নকারী কি এই প্রশ্নটা করতে পারে না যে, তখন আসাদুল্লাহ (আল্লাহর সিংহ) আল-গালিব সাইয়্যেদুনা আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর বীরত্ব ও ব্যক্তিত্ব কোথায় ছিল? অনুরূপভাবে তাঁর দুই ছেলে হাসান ও হোসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার বীরত্ব ও ব্যক্তিত্বই বা কোথায় ছিল?
আর যাইনুল আবেদীন ইয়াযীদকে উদ্দেশ্য করে বলেন:
“তুমি যে চেয়েছ, আমি তা স্বীকার করে নিচ্ছি; আর আমি হলাম তোমার অপছন্দের গোলাম। সুতরাং তুমি চাইলে আমাকে আটকিয়ে রাখতে পার; আবার চাইলে বিক্রিও করে দিতে পার।” [ফুরু‘উল কাফী ( فروع الكافي ), রওযা অধ্যায়।]
কিভাবে শিয়াদের বিশ্বাস অনুযায়ী নিষ্পাপ ইমাম নিজেকে ইয়াযীদের গোলাম বলে স্বীকৃতি দেবে এবং তা কি করে হয়?
আল-কুলাইনী বর্ণনা করেন:
“ইবনু আবি ‘উমাইর আল-আ‘জামী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে আবূ আবদিল্লাহ আ. বলেন: হে আবূ ওমর! নিশ্চয় দীনের দশ ভাগের নয় ভাগ ‘তাকীয়া’ [‘তাকিয়া’ ( التقية ) হচ্ছে মানুষের মনের বিপরীত অভিমত প্রকাশ করা। অর্থাৎ ভিতর এক রকম, আর বাহির অন্য রকম। - অনুবাদক।]-এর মধ্যে; যার ‘তাকীয়া’ নেই, তার ধর্ম নেই। আর নাবীয ও মোজার উপর মাসেহ ব্যতীত সকল বস্তুর মধ্যে ‘তাকীয়া’ আছে।” [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ৪৮২। অর্থাৎ শিয়ারা নাবীয খাবে না ও মোজার উপর মসেহ করবে না, এ ব্যাপারে তারা সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ্যে তার ঘোষণা দিচ্ছে। এ দু’ ব্যাপারে তারা প্রকাশ্যে ও গোপনে আলাদা নীতি অবলম্বন করবে না। তন্মধ্যে নাবীয হচ্ছে খেজুর পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরে সে পানি (মাদকতা আসার আগেই) খাওয়া, যা খাওয়ার ব্যাপারে বিভিন্ন বর্ণনায় বৈধতা এসেছে, অথচ তারা তা খাবে না। আর মোজার উপর মাসেহ করার ব্যাপারে মুতাওয়াতির হাদীস রয়েছে। যার অস্বীকারকারী কাফির হয়ে যাবে। অথচ তারা তাই অস্বীকার করছে। এজন্য আপনি দেখবেন, তারা মোজা খুলে খালি পায়ে মাসেহ করে অযু করে থাকে। একদিকে খালি পায়ে মাসেহ করার কারণে তাদের অযু শুদ্ধ হয় না। অপরদিকে মোজার উপর মাসেহ করা অস্বীকার করে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের সাথে বিরোধিতা করে এবং মুতাওয়াতির হাদীসের উপর আমল করে না। শয়তান তাদেরকে এভাবে প্রতারিত করছে। [সম্পাদক]]
তিনি আরও বর্ণনা করেন:
“আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: তোমরা তোমাদের দীনের ব্যাপারে ভয় কর এবং তাকে ‘তাকীয়া’ দ্বারা ঢেকে রাখ। কারণ, যার ‘তাকীয়া’ নেই, তার ঈমান নেই।” [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ৪৮৩]
তিনি আরও বর্ণনা করেন:
“মা‘মার ইবন খাল্লাদ থেকে বর্ণিত, আমি আবূল হাসান আ.-কে ওলীদের উদ্দেশ্যে দাঁড়ানোর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম; আবূ জাফর আ. বললেন: ‘তাকীয়া’ আমার এবং আমার বাপ-দাদাদের ধর্ম। যার ‘তাকীয়া’ নেই, তার ঈমান নেই।” [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ৪৮৪]
তিনি আরও বর্ণনা করেন:
“আবূ আবদিল্লাহ আ. বলেন: হে সুলায়মান! তোমরা এমন ব্যক্তির দীনের উপর প্রতিষ্ঠিত আছ, যিনি তা গোপন করে রেখেছেন; আল্লাহ তাকে সম্মান দিয়েছেন। আর যে ব্যক্তি তা প্রচার করবে, আল্লাহ তাকে অপমানিত করবেন।” [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ৪৮৪]
তিনি আরও বর্ণনা করেন:
“যুরারা মুহাম্মদ বাকের আ.-কে এক মাসআলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন, তখন তিনি বললেন: আগামীকাল তুমি আমার সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন আমি তোমাকে কিতাব পড়ে শুনাব; অতঃপর আমি পরের দিন যোহরের পর তার নিকট এসে উপস্থিত হলাম। আর আমার যে সময়টিতে আমি তাঁর সাথে নির্জনে কাটাতাম সে সময়টি ছিল যোহর ও আসরের মধ্যবর্তী সময়। আর আমি নির্জনে ব্যতীত তাকে কোন কিছু জিজ্ঞাসা করতে অপছন্দ করতাম এই আশঙ্কায় যে, তার নিকট উপস্থিত ব্যক্তির কারণে তিনি আমাকে ‘তাকীয়া’ দ্বারা ফতোয়া দেবেন।” [ফুরু‘উল কাফী ( فروع الكافي ), ৩য় খণ্ড, পৃ. ৫২]
তিনি আরও বর্ণনা করেন:
“আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমার পিতা বনী উমাইয়াদের যুগে ফতোয়া দিতেন যে, বাজপাখি ও ঈগল পাখি অন্যান্য শিকারী পাখি দ্বারা যা হত্যা করা হয় তা খাওয়া বৈধ (হালাল), কিন্তু তিনি তাদের নিকট ‘তাকীয়া’ করতেন। আর আমি তাদের নিকট ‘তাকীয়া’ না করেই বলতাম, সেগুলোর দ্বারা হত্যা করা বস্তু হারাম (অবৈধ)।” [ফুরু‘উল কাফী ( فروع الكافي ), ৩য় খণ্ড, পৃ. ৮০]
তিনি বর্ণনা আরও করেন:
“যখন তিনি (ইমাম) মারা গেলেন এবং তা (নেতৃত্ব বা শাসনক্ষমতা) মুহাম্মদ ইবন আলী আ.-এর নিকট স্থানান্তর হল, তখন পঞ্চম মোহর খুললেন এবং তিনি তাতে যা পেলেন, তা হচ্ছে: তুমি আল্লাহর কিতাব ব্যাখ্যা (তাফসীর) কর ... এবং ভয়ভীতি ও নিরাপদ অবস্থায় সর্বাবস্থায় সত্য কথা বল; আর আল্লাহকে ব্যতীত আর কাউকে ভয় করো না। অতঃপর সে তাই করল।” [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ১৭১]
অর্থাৎ- তার পূর্ববর্তী ইমামগণ ভয়ভীতি ও নিরাপদ অবস্থায় সত্য কথা বলতেন না এবং তারা জনগণকে ভয় করতেন (নাউযুবিল্লাহ)।
আল-কুলাইনী আরও বর্ণনা করেন:
“যুরারা ইবন আ‘ইউন থেকে বর্ণিত, তিনি আবূ জাফর আ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আমি একটি মাসআলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, তখন তিনি আমাকে জওয়াব দিলেন। অতঃপর তার নিকট জনৈক ব্যক্তি আসল এবং তার নিকট সে একই প্রশ্ন করল; তখন তিনি আমাকে যে জওয়াব দিয়েছিলেন, তাকে তার বিপরীত জওয়াব দিলেন। অতঃপর তার নিকট (একই প্রশ্ন নিয়ে) অপর আরেক ব্যক্তি আসল; তিনি আমাকে ও আমার সঙ্গীকে যে জওয়াব দিয়েছিলেন, তাকে তার বিপরীত জওয়াব দিলেন। অতঃপর যখন উভয় ব্যক্তি বের হল, তখন আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূলের (বংশের) ছেলে! ইরাক থেকে আপনাদের দলীয় দুই লোক আগমন করে প্রশ্ন করলে আপনি তাদের প্রত্যেককে তার সঙ্গীকে যে জওয়াব দিয়েছেন, অপর জনকে তার বিপরীত জওয়াব দিয়েছেন? অতঃপর তিনি বললেন: হে যুরারা! এটাই আমাদের জন্য কল্যাণকর এবং আমাদের ও তোমাদের জন্য দীর্ঘস্থায়ী।” [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ৩৭]
আল-কুলাইনী আরও বর্ণনা করেন:
“মূসা ইবন আসইয়াম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আবূ আবদিল্লাহ আ.-এর নিকট ছিলাম; অতঃপর এক ব্যক্তি তাকে আল্লাহ তা‘আলার কিতাবের একটি আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করল, আর তিনি তার জওয়াব দিলেন। অতঃপর তার নিকট আরও এক প্রবেশকারী এসে প্রবেশ করল; অতঃপর সে তাকে ঐ একই আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করল; অতঃপর তিনি তাকে প্রথম ব্যক্তির জবাবের বিপরীত জওয়াব দিলেন। আর সেই থেকে আমার মধ্যে আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী এমন কিছু বিষয় প্রবেশ করল, এমনকি শেষ পর্যন্ত মনে হল আমার হৃদয়কে ছুরি দিয়ে উম্মুক্ত করে দেয়া হচ্ছে। অতঃপর আমি মনে মনে বললাম: আমি আবূ কাতাদাকে শাম (সিরিয়া) দেশে রেখে এসেছি, তিনি ওয়াও ( واو ) এবং তার অনুরূপ কিছুর মধ্যেও ভুল করতেন না; আর আমি এর নিকট আসলাম, সে তো সবকিছুতেই ভুল করে। সুতরাং আমার অবস্থা যখন এই রকম, তখন অপর আরেক ব্যক্তি এসে তার নিকট প্রবেশ করল এবং তাকে জিজ্ঞাসা করল ঐ আয়াত সম্পর্কে ; অতঃপর তিনি আমাকে ও আমার সাথীকে যে উত্তর দিয়েছিলেন, তাকে তার বিপরীত বা ভিন্ন উত্তর দিলেন। অতঃপর আমি আমার মনের সান্ত্বনা পেলাম এবং জানতে পারলাম যে, এটা তার পক্ষ থেকে ‘তাকীয়া’ হিসেবে হয়েছে। সে বলল: অতঃপর তিনি আমার দিকে তাকালেন এবং আমাকে বললেন: হে আশইয়ামের ছেলে! আল্লাহ তা‘আলা সুলাইমান ইবন দাঊদ আ.-কে ক্ষমতা প্রদান করেছেন; অতঃপর তিনি বলেছেন: এটা আমাদেরকে দেয়া উপহার। সুতরাং তুমি (এর মাধ্যমে) দয়া কর, অথবা বিরত থাক; এর জন্য তোমাকে হিসেব দিতে হবে না। আর তিনি (আল্লাহ) ক্ষমতা প্রদান করেছেন তার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এবং তিনি বলেন:
﴿وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْ﴾ [ سورة الحشر : 7]
“রাসূল তোমাদেরকে যা দেয়, তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করে, তা থেকে বিরত থাক।”— (সূরা আল-হাশর: ৭)
সুতরাং তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যে ক্ষমতা দান করেছেন, সেই একই ক্ষমতা তিনি আমাদের প্রতি অর্পণ করেছেন।” [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ১৬৩]
এটা কি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রিসালাতের মধ্যে শির্ক নয়, অথবা এই আকিদা বা বিশ্বাসের পরও (নাউযুবিল্লাহ) কি কোন মানুষ মুসলিম থাকতে পারে?
আল-কুলাইনী আরও বর্ণনা করেন:
“সালামা ইবন মিহরায থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আবূ আবদিল্লাহ আ.-কে বললাম: জনৈক আরমানীয় ব্যক্তি মারা গেল এবং সে আমার নিকট অসিয়ত করল; তখন তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন: আরমানীয় কী? আমি বললাম: পাহাড়ে বসবাসকারী অনারব লোকদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি মারা গেল এবং সে আমাকে উত্তরাধিকারের ব্যাপারে অসিয়ত করল এমন অবস্থায় যে, সে তার এক কন্যা রেখে গিয়েছিল। তখন তিনি (আবূ আবদিল্লাহ আ) আমাকে বললেন, তাকে অর্ধেক দিয়ে দাও। তিনি (সালামা ইবন মিহরায) বলেন: আমি এই বিষয়টি যুরারাকে জানালাম; তখন তিনি আমাকে বললেন: সে তোমার সাথে ‘তাকীয়া’ করেছে, সম্পদ সবটুকুই তার। তিনি বললেন: পরবর্তীতে আমি তার নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম: আল্লাহ আপনাকে সংশোধন করে দিক; আমাদের সাথীগণ ধারণা করেছে যে, আপনি আমার সাথে ‘তাকীয়া’ করেছেন। তখন তিনি বললেন: না, আল্লাহর কসম! আমি তোমার সাথে ‘তাকীয়া’ করি নি; বরং আমি ‘তাকীয়া’ করেছি তোমার প্রতি অর্পিত তোমার কর্তব্যকে। সুতরাং এই সম্পর্কে কেউ জানতে পেরেছে কি? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তুমি তাকে (তার কন্যাকে) বাকিটুকু দিয়ে দাও।” [ফুরু‘উল কাফী ( فروع الكافي ), ৩য় খণ্ড, পৃ. ৪৮]
এই বর্ণনাসমূহ থেকে বুঝা যায় যে, ইমামগণ একবার মাসআলা গোপন করতেন এবং আরেকবার তা পরিবর্তন করতেন। আর তাদের জওয়াবসমূহ এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তির নিকট পরিবর্তন করে করে বলেন। আর মাসআলাসমূহের ক্ষেত্রে গোপন করাটাই হল তাদের দীনের সিংহভাগ; বরং তারা তাদের (ইমামদের) থেকে মিথ্যা ও বানোয়াট বর্ণনা পেশ করে যে, ‘যে ব্যক্তি দীন গোপন করবে, আল্লাহ তাকে সম্মানিত করবেন; আর যে ব্যক্তি তা প্রকাশ করবে, আল্লাহ তাকে অপমানিত করবেন। সুতরাং তাদের নিকট তাদের নিষ্পাপ ইমামদের অবস্থা যখন এই রকম, তখন আল্লাহর কসম! এসব ইমামদের উপর কিভাবে নির্ভর করা সম্ভব? তারা কি দীন বিকৃত ও গোপন করার ক্ষেত্রে ইহুদী আলেমদের মত নয়? আর এ সবই আহলে বাইতের ইমামদের ব্যাপারে শিয়াদের পক্ষ থেকে কুৎসা রটনা ও অবমাননা; আর তারা (আহলে বাইতের ইমামগণ) এসব ভ্রান্ত ও কুটিল বক্তব্যসমূহ থেকে মুক্ত।
আল-কুলাইনী আরও বর্ণনা করেন:
“আমার নিকট হিশাম ইবন হেকাম ও হাম্মাদ যুরারা থেকে হাদিস বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আমি মনে মনে বলি, শাইখের বিতর্ক করার মত কোন জ্ঞান নেই (আর শাইখ দ্বারা উদ্দেশ্য হল তার ইমাম)।” [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ৫৫৭]
এই হাদিসের ব্যাখ্যায় মোল্লা খলিল আল-কাযবিনী ফারসি ভাষায় লিখেছেন, যার অর্থ হল: এই শাইখ অক্ষম, তার কোন জ্ঞান-বুদ্ধি নেই এবং বিতর্ককারীর সাথে সুন্দর করে কথা বলতে পারে না।
কাশি বর্ণনা করেন:
“যুরারা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আবূ আবদিল্লাহ আ.-কে ‘তাশাহহুদ’ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম ... আমি বললাম: التحيات و الصلوات ... অতঃপর আমি তাকে ‘তাশাহহুদ’ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, তখন সে অনুরূপই বলল, সে বলল: التحيات و الصلوات ; অতঃপর আমি যখন বের হলাম, তখন আমি তার দাড়ির মধ্যে সশব্দে বায়ু নির্গত করলাম এবং বললাম, সে কখনও সফলকাম হবে না।” [মা‘রেফাতু আখবারির রিজাল ( معرفة أخبار الرجال ), পৃ. ১০৬]
এই আবূ আবদিল্লাহই হলেন ইমাম জাফর সাদিক, যার সাথে সম্পর্ক যুক্ত করে শিয়াদের একটি গ্রুপ (দল) নিজেদেরকে জাফরী বলে পরিচয় দেয়। আর এই যুরারা হল শিয়াদের অন্যতম সর্দার বা নেতা। আর ইমামদের অধিকাংশ বর্ণনাই শিয়াগণ একই পদ্ধতিতে বর্ণনা করে। নিঃসন্দেহে যুরারা তার (বিশ্বাসমত) নিষ্পাপ ইমামের সাথে যে ব্যবহার করেছে, তা বড় ধরনের অপমান-অবমাননার শামিল। আর যেখানে সাধারণ জনগণের মধ্য থেকে কোন নগণ্য ব্যক্তি কাউকে তার চেহারা বা দাড়ির মধ্যে সশব্দে বায়ু নির্গত করাকে মেনে নেয় না, সেখানে কিভাবে জাফর সাদিক র.-এর মত সম্মানিত ইমামের চেহারা বা দাড়ির সামনে তা করার মত দুঃসাহস কেউ দেখাতে পারে?!!!
আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসী ‘জালাউল ‘উয়ুন’ ( جلاء العيون ) নামক গ্রন্থে ফারসি ভাষায় উল্লেখ করেন, যার অর্থ হল:
“আমার দাদা থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: যখন জাফর ইবন মুহাম্মদ ইবন আলী ইবন হোসাইন জন্ম গ্রহণ করবে, তখন তোমরা তার নাম রাখবে ‘সাদিক’। কারণ, তার পঞ্চম আওলাদ থেকে জাফর নামে যে ব্যক্তি জন্ম গ্রহণ করবে, মিথ্যা ইমামতের দাবি করবে এবং আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করবে, সে হবে আল্লাহর নিকট জাফর আল-কাজ্জাব (মিথ্যাবাদী জাফর)।” [আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসী, জালাউল ‘উয়ুন ( جلاء العيون ), পৃ. ৩৪৮]
এই বর্ণনাটিতে যাকে জাফর আল-কাযযাব বলা হচ্ছে সে আর কেউ নয়, তাদেরই ইমাম নকী’ -যিনি শিয়াদের নিকট স্বীকৃত নিষ্পাপ ইমামদের একজন- এই জাফর তাঁরই ছেলে এবং ইমাম হাসান আল-‘আসকারী’র সহোদর ভাই। যে হাসান আল-আসকারী শিয়াদের নিকট স্বীকৃত দ্বাদশ নিষ্পাপ ইমাম হিসেবে স্বীকৃত। আর এই জাফর, তিনি তো আলী ও ফাতেমার বংশেরই সন্তান এবং হোসাইন ও যাইনুল আবেদীনের বংশের অন্যতম ব্যক্তি। সুতরাং কিভাবে তারা আহলে বাইতের প্রতি তাদের অসার ভালবাসার দাবি করে। নিশ্চয় তার বংশের এই ধারাটি হল ‘সোনালী ধারা’; কিন্তু ‘আলে বাইতের’ (নবী পরিবারের) মহব্বতকারী শিয়াগণ তাকে ‘জাফর আল-কাজ্জাব’ (মিথ্যাবাদী জাফর) উপাধিতে ভূষিত করে। সুতরাং হে আল্লাহ! তুমি পবিত্র (সুবহানাল্লাহ) ...!
একদিকে তারা তাদের (ইমামদের) জন্য এই ধরনের শ্রেষ্ঠত্ব, অলৌকিক ঘটনা ও কল্পকাহিনী থেকে যা সাব্যস্ত করেছে, এ সব এমন ধরণের কল্পকাহিনী যে তা নিজের জন্য সাব্যস্ত করা বা নিজের প্রতি সম্পৃক্ত করা থেকে যে কোন সাধারণ মানুষও নিজেকে মুক্ত ঘোষণা করে এবং তা সাব্যস্ত করতে লজ্জাবোধ করে; কারণ তাতে রয়েছে সীমাহীন লজ্জা ও অবমাননা। অপরদিকে তারা তাদের জন্য স্থির করেছে যে, তারা মুনাফিক ও কাপুরুষ ছিল এবং তারা মিথ্যা বলে ইত্যাদি।
আমরা তাদের মাযহাবের নির্ভরযোগ্য প্রধান গ্রন্থসমূহ থেকে তাদের বর্ণনা ও বক্তব্যসমূহ থেকে অংশবিশেষ আপনার সামনে উপস্থাপন করতে চাই। অতএব তারা ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক উম্মে কুলসুম বিনতে আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার ব্যাপারে লিখেছে: “ইমাম জাফর সাদিক বলেছেন: সেই প্রথম (গুপ্তাঙ্গ), যা আমাদের থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে।” [ফুরু‘উল কাফী ( فروع الكافي ), দ্বিতীয় খণ্ড।]
আমরা সাইয়্যেদা (উম্মে কুলসুম), তাঁর পিতা আলী এবং তাঁর ভাই হাসান ও হোসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমের ব্যাপারে তাদের এই নির্লজ্জ মন্তব্য থেকে আল্লাহ তা‘আলার নিকট আশ্রয় চাই।
মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসীর বক্তব্যের দৃষ্টি আকর্ষণপূর্বক শিয়া বিশিষ্ট ব্যক্তিদের একজন এই বর্ণনাটির সমালোচনা করতে গিয়ে বলেন:
“অভিশপ্ত মুনাফিক ওমর ইবনুল খাত্তাবের নিকট উম্মে কুলসুমকে বিয়ে দেয়ার বিষয়টি ছিল নিরুপায় হয়ে ‘তাকীয়া’ পদ্ধতি বা নীতির অনুসরণে।”
দেখুন, কোন প্রশ্নকারী কি এই প্রশ্নটা করতে পারে না যে, তখন আসাদুল্লাহ (আল্লাহর সিংহ) আল-গালিব সাইয়্যেদুনা আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর বীরত্ব ও ব্যক্তিত্ব কোথায় ছিল? অনুরূপভাবে তাঁর দুই ছেলে হাসান ও হোসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার বীরত্ব ও ব্যক্তিত্বই বা কোথায় ছিল?
আর যাইনুল আবেদীন ইয়াযীদকে উদ্দেশ্য করে বলেন:
“তুমি যে চেয়েছ, আমি তা স্বীকার করে নিচ্ছি; আর আমি হলাম তোমার অপছন্দের গোলাম। সুতরাং তুমি চাইলে আমাকে আটকিয়ে রাখতে পার; আবার চাইলে বিক্রিও করে দিতে পার।” [ফুরু‘উল কাফী ( فروع الكافي ), রওযা অধ্যায়।]
কিভাবে শিয়াদের বিশ্বাস অনুযায়ী নিষ্পাপ ইমাম নিজেকে ইয়াযীদের গোলাম বলে স্বীকৃতি দেবে এবং তা কি করে হয়?
আল-কুলাইনী বর্ণনা করেন:
“ইবনু আবি ‘উমাইর আল-আ‘জামী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে আবূ আবদিল্লাহ আ. বলেন: হে আবূ ওমর! নিশ্চয় দীনের দশ ভাগের নয় ভাগ ‘তাকীয়া’ [‘তাকিয়া’ ( التقية ) হচ্ছে মানুষের মনের বিপরীত অভিমত প্রকাশ করা। অর্থাৎ ভিতর এক রকম, আর বাহির অন্য রকম। - অনুবাদক।]-এর মধ্যে; যার ‘তাকীয়া’ নেই, তার ধর্ম নেই। আর নাবীয ও মোজার উপর মাসেহ ব্যতীত সকল বস্তুর মধ্যে ‘তাকীয়া’ আছে।” [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ৪৮২। অর্থাৎ শিয়ারা নাবীয খাবে না ও মোজার উপর মসেহ করবে না, এ ব্যাপারে তারা সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ্যে তার ঘোষণা দিচ্ছে। এ দু’ ব্যাপারে তারা প্রকাশ্যে ও গোপনে আলাদা নীতি অবলম্বন করবে না। তন্মধ্যে নাবীয হচ্ছে খেজুর পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরে সে পানি (মাদকতা আসার আগেই) খাওয়া, যা খাওয়ার ব্যাপারে বিভিন্ন বর্ণনায় বৈধতা এসেছে, অথচ তারা তা খাবে না। আর মোজার উপর মাসেহ করার ব্যাপারে মুতাওয়াতির হাদীস রয়েছে। যার অস্বীকারকারী কাফির হয়ে যাবে। অথচ তারা তাই অস্বীকার করছে। এজন্য আপনি দেখবেন, তারা মোজা খুলে খালি পায়ে মাসেহ করে অযু করে থাকে। একদিকে খালি পায়ে মাসেহ করার কারণে তাদের অযু শুদ্ধ হয় না। অপরদিকে মোজার উপর মাসেহ করা অস্বীকার করে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের সাথে বিরোধিতা করে এবং মুতাওয়াতির হাদীসের উপর আমল করে না। শয়তান তাদেরকে এভাবে প্রতারিত করছে। [সম্পাদক]]
তিনি আরও বর্ণনা করেন:
“আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: তোমরা তোমাদের দীনের ব্যাপারে ভয় কর এবং তাকে ‘তাকীয়া’ দ্বারা ঢেকে রাখ। কারণ, যার ‘তাকীয়া’ নেই, তার ঈমান নেই।” [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ৪৮৩]
তিনি আরও বর্ণনা করেন:
“মা‘মার ইবন খাল্লাদ থেকে বর্ণিত, আমি আবূল হাসান আ.-কে ওলীদের উদ্দেশ্যে দাঁড়ানোর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম; আবূ জাফর আ. বললেন: ‘তাকীয়া’ আমার এবং আমার বাপ-দাদাদের ধর্ম। যার ‘তাকীয়া’ নেই, তার ঈমান নেই।” [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ৪৮৪]
তিনি আরও বর্ণনা করেন:
“আবূ আবদিল্লাহ আ. বলেন: হে সুলায়মান! তোমরা এমন ব্যক্তির দীনের উপর প্রতিষ্ঠিত আছ, যিনি তা গোপন করে রেখেছেন; আল্লাহ তাকে সম্মান দিয়েছেন। আর যে ব্যক্তি তা প্রচার করবে, আল্লাহ তাকে অপমানিত করবেন।” [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ৪৮৪]
তিনি আরও বর্ণনা করেন:
“যুরারা মুহাম্মদ বাকের আ.-কে এক মাসআলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন, তখন তিনি বললেন: আগামীকাল তুমি আমার সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন আমি তোমাকে কিতাব পড়ে শুনাব; অতঃপর আমি পরের দিন যোহরের পর তার নিকট এসে উপস্থিত হলাম। আর আমার যে সময়টিতে আমি তাঁর সাথে নির্জনে কাটাতাম সে সময়টি ছিল যোহর ও আসরের মধ্যবর্তী সময়। আর আমি নির্জনে ব্যতীত তাকে কোন কিছু জিজ্ঞাসা করতে অপছন্দ করতাম এই আশঙ্কায় যে, তার নিকট উপস্থিত ব্যক্তির কারণে তিনি আমাকে ‘তাকীয়া’ দ্বারা ফতোয়া দেবেন।” [ফুরু‘উল কাফী ( فروع الكافي ), ৩য় খণ্ড, পৃ. ৫২]
তিনি আরও বর্ণনা করেন:
“আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমার পিতা বনী উমাইয়াদের যুগে ফতোয়া দিতেন যে, বাজপাখি ও ঈগল পাখি অন্যান্য শিকারী পাখি দ্বারা যা হত্যা করা হয় তা খাওয়া বৈধ (হালাল), কিন্তু তিনি তাদের নিকট ‘তাকীয়া’ করতেন। আর আমি তাদের নিকট ‘তাকীয়া’ না করেই বলতাম, সেগুলোর দ্বারা হত্যা করা বস্তু হারাম (অবৈধ)।” [ফুরু‘উল কাফী ( فروع الكافي ), ৩য় খণ্ড, পৃ. ৮০]
তিনি বর্ণনা আরও করেন:
“যখন তিনি (ইমাম) মারা গেলেন এবং তা (নেতৃত্ব বা শাসনক্ষমতা) মুহাম্মদ ইবন আলী আ.-এর নিকট স্থানান্তর হল, তখন পঞ্চম মোহর খুললেন এবং তিনি তাতে যা পেলেন, তা হচ্ছে: তুমি আল্লাহর কিতাব ব্যাখ্যা (তাফসীর) কর ... এবং ভয়ভীতি ও নিরাপদ অবস্থায় সর্বাবস্থায় সত্য কথা বল; আর আল্লাহকে ব্যতীত আর কাউকে ভয় করো না। অতঃপর সে তাই করল।” [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ১৭১]
অর্থাৎ- তার পূর্ববর্তী ইমামগণ ভয়ভীতি ও নিরাপদ অবস্থায় সত্য কথা বলতেন না এবং তারা জনগণকে ভয় করতেন (নাউযুবিল্লাহ)।
আল-কুলাইনী আরও বর্ণনা করেন:
“যুরারা ইবন আ‘ইউন থেকে বর্ণিত, তিনি আবূ জাফর আ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আমি একটি মাসআলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, তখন তিনি আমাকে জওয়াব দিলেন। অতঃপর তার নিকট জনৈক ব্যক্তি আসল এবং তার নিকট সে একই প্রশ্ন করল; তখন তিনি আমাকে যে জওয়াব দিয়েছিলেন, তাকে তার বিপরীত জওয়াব দিলেন। অতঃপর তার নিকট (একই প্রশ্ন নিয়ে) অপর আরেক ব্যক্তি আসল; তিনি আমাকে ও আমার সঙ্গীকে যে জওয়াব দিয়েছিলেন, তাকে তার বিপরীত জওয়াব দিলেন। অতঃপর যখন উভয় ব্যক্তি বের হল, তখন আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূলের (বংশের) ছেলে! ইরাক থেকে আপনাদের দলীয় দুই লোক আগমন করে প্রশ্ন করলে আপনি তাদের প্রত্যেককে তার সঙ্গীকে যে জওয়াব দিয়েছেন, অপর জনকে তার বিপরীত জওয়াব দিয়েছেন? অতঃপর তিনি বললেন: হে যুরারা! এটাই আমাদের জন্য কল্যাণকর এবং আমাদের ও তোমাদের জন্য দীর্ঘস্থায়ী।” [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ৩৭]
আল-কুলাইনী আরও বর্ণনা করেন:
“মূসা ইবন আসইয়াম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আবূ আবদিল্লাহ আ.-এর নিকট ছিলাম; অতঃপর এক ব্যক্তি তাকে আল্লাহ তা‘আলার কিতাবের একটি আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করল, আর তিনি তার জওয়াব দিলেন। অতঃপর তার নিকট আরও এক প্রবেশকারী এসে প্রবেশ করল; অতঃপর সে তাকে ঐ একই আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করল; অতঃপর তিনি তাকে প্রথম ব্যক্তির জবাবের বিপরীত জওয়াব দিলেন। আর সেই থেকে আমার মধ্যে আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী এমন কিছু বিষয় প্রবেশ করল, এমনকি শেষ পর্যন্ত মনে হল আমার হৃদয়কে ছুরি দিয়ে উম্মুক্ত করে দেয়া হচ্ছে। অতঃপর আমি মনে মনে বললাম: আমি আবূ কাতাদাকে শাম (সিরিয়া) দেশে রেখে এসেছি, তিনি ওয়াও ( واو ) এবং তার অনুরূপ কিছুর মধ্যেও ভুল করতেন না; আর আমি এর নিকট আসলাম, সে তো সবকিছুতেই ভুল করে। সুতরাং আমার অবস্থা যখন এই রকম, তখন অপর আরেক ব্যক্তি এসে তার নিকট প্রবেশ করল এবং তাকে জিজ্ঞাসা করল ঐ আয়াত সম্পর্কে ; অতঃপর তিনি আমাকে ও আমার সাথীকে যে উত্তর দিয়েছিলেন, তাকে তার বিপরীত বা ভিন্ন উত্তর দিলেন। অতঃপর আমি আমার মনের সান্ত্বনা পেলাম এবং জানতে পারলাম যে, এটা তার পক্ষ থেকে ‘তাকীয়া’ হিসেবে হয়েছে। সে বলল: অতঃপর তিনি আমার দিকে তাকালেন এবং আমাকে বললেন: হে আশইয়ামের ছেলে! আল্লাহ তা‘আলা সুলাইমান ইবন দাঊদ আ.-কে ক্ষমতা প্রদান করেছেন; অতঃপর তিনি বলেছেন: এটা আমাদেরকে দেয়া উপহার। সুতরাং তুমি (এর মাধ্যমে) দয়া কর, অথবা বিরত থাক; এর জন্য তোমাকে হিসেব দিতে হবে না। আর তিনি (আল্লাহ) ক্ষমতা প্রদান করেছেন তার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এবং তিনি বলেন:
﴿وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْ﴾ [ سورة الحشر : 7]
“রাসূল তোমাদেরকে যা দেয়, তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করে, তা থেকে বিরত থাক।”— (সূরা আল-হাশর: ৭)
সুতরাং তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যে ক্ষমতা দান করেছেন, সেই একই ক্ষমতা তিনি আমাদের প্রতি অর্পণ করেছেন।” [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ১৬৩]
এটা কি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রিসালাতের মধ্যে শির্ক নয়, অথবা এই আকিদা বা বিশ্বাসের পরও (নাউযুবিল্লাহ) কি কোন মানুষ মুসলিম থাকতে পারে?
আল-কুলাইনী আরও বর্ণনা করেন:
“সালামা ইবন মিহরায থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আবূ আবদিল্লাহ আ.-কে বললাম: জনৈক আরমানীয় ব্যক্তি মারা গেল এবং সে আমার নিকট অসিয়ত করল; তখন তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন: আরমানীয় কী? আমি বললাম: পাহাড়ে বসবাসকারী অনারব লোকদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি মারা গেল এবং সে আমাকে উত্তরাধিকারের ব্যাপারে অসিয়ত করল এমন অবস্থায় যে, সে তার এক কন্যা রেখে গিয়েছিল। তখন তিনি (আবূ আবদিল্লাহ আ) আমাকে বললেন, তাকে অর্ধেক দিয়ে দাও। তিনি (সালামা ইবন মিহরায) বলেন: আমি এই বিষয়টি যুরারাকে জানালাম; তখন তিনি আমাকে বললেন: সে তোমার সাথে ‘তাকীয়া’ করেছে, সম্পদ সবটুকুই তার। তিনি বললেন: পরবর্তীতে আমি তার নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম: আল্লাহ আপনাকে সংশোধন করে দিক; আমাদের সাথীগণ ধারণা করেছে যে, আপনি আমার সাথে ‘তাকীয়া’ করেছেন। তখন তিনি বললেন: না, আল্লাহর কসম! আমি তোমার সাথে ‘তাকীয়া’ করি নি; বরং আমি ‘তাকীয়া’ করেছি তোমার প্রতি অর্পিত তোমার কর্তব্যকে। সুতরাং এই সম্পর্কে কেউ জানতে পেরেছে কি? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তুমি তাকে (তার কন্যাকে) বাকিটুকু দিয়ে দাও।” [ফুরু‘উল কাফী ( فروع الكافي ), ৩য় খণ্ড, পৃ. ৪৮]
এই বর্ণনাসমূহ থেকে বুঝা যায় যে, ইমামগণ একবার মাসআলা গোপন করতেন এবং আরেকবার তা পরিবর্তন করতেন। আর তাদের জওয়াবসমূহ এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তির নিকট পরিবর্তন করে করে বলেন। আর মাসআলাসমূহের ক্ষেত্রে গোপন করাটাই হল তাদের দীনের সিংহভাগ; বরং তারা তাদের (ইমামদের) থেকে মিথ্যা ও বানোয়াট বর্ণনা পেশ করে যে, ‘যে ব্যক্তি দীন গোপন করবে, আল্লাহ তাকে সম্মানিত করবেন; আর যে ব্যক্তি তা প্রকাশ করবে, আল্লাহ তাকে অপমানিত করবেন। সুতরাং তাদের নিকট তাদের নিষ্পাপ ইমামদের অবস্থা যখন এই রকম, তখন আল্লাহর কসম! এসব ইমামদের উপর কিভাবে নির্ভর করা সম্ভব? তারা কি দীন বিকৃত ও গোপন করার ক্ষেত্রে ইহুদী আলেমদের মত নয়? আর এ সবই আহলে বাইতের ইমামদের ব্যাপারে শিয়াদের পক্ষ থেকে কুৎসা রটনা ও অবমাননা; আর তারা (আহলে বাইতের ইমামগণ) এসব ভ্রান্ত ও কুটিল বক্তব্যসমূহ থেকে মুক্ত।
আল-কুলাইনী আরও বর্ণনা করেন:
“আমার নিকট হিশাম ইবন হেকাম ও হাম্মাদ যুরারা থেকে হাদিস বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আমি মনে মনে বলি, শাইখের বিতর্ক করার মত কোন জ্ঞান নেই (আর শাইখ দ্বারা উদ্দেশ্য হল তার ইমাম)।” [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ৫৫৭]
এই হাদিসের ব্যাখ্যায় মোল্লা খলিল আল-কাযবিনী ফারসি ভাষায় লিখেছেন, যার অর্থ হল: এই শাইখ অক্ষম, তার কোন জ্ঞান-বুদ্ধি নেই এবং বিতর্ককারীর সাথে সুন্দর করে কথা বলতে পারে না।
কাশি বর্ণনা করেন:
“যুরারা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আবূ আবদিল্লাহ আ.-কে ‘তাশাহহুদ’ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম ... আমি বললাম: التحيات و الصلوات ... অতঃপর আমি তাকে ‘তাশাহহুদ’ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, তখন সে অনুরূপই বলল, সে বলল: التحيات و الصلوات ; অতঃপর আমি যখন বের হলাম, তখন আমি তার দাড়ির মধ্যে সশব্দে বায়ু নির্গত করলাম এবং বললাম, সে কখনও সফলকাম হবে না।” [মা‘রেফাতু আখবারির রিজাল ( معرفة أخبار الرجال ), পৃ. ১০৬]
এই আবূ আবদিল্লাহই হলেন ইমাম জাফর সাদিক, যার সাথে সম্পর্ক যুক্ত করে শিয়াদের একটি গ্রুপ (দল) নিজেদেরকে জাফরী বলে পরিচয় দেয়। আর এই যুরারা হল শিয়াদের অন্যতম সর্দার বা নেতা। আর ইমামদের অধিকাংশ বর্ণনাই শিয়াগণ একই পদ্ধতিতে বর্ণনা করে। নিঃসন্দেহে যুরারা তার (বিশ্বাসমত) নিষ্পাপ ইমামের সাথে যে ব্যবহার করেছে, তা বড় ধরনের অপমান-অবমাননার শামিল। আর যেখানে সাধারণ জনগণের মধ্য থেকে কোন নগণ্য ব্যক্তি কাউকে তার চেহারা বা দাড়ির মধ্যে সশব্দে বায়ু নির্গত করাকে মেনে নেয় না, সেখানে কিভাবে জাফর সাদিক র.-এর মত সম্মানিত ইমামের চেহারা বা দাড়ির সামনে তা করার মত দুঃসাহস কেউ দেখাতে পারে?!!!
আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসী ‘জালাউল ‘উয়ুন’ ( جلاء العيون ) নামক গ্রন্থে ফারসি ভাষায় উল্লেখ করেন, যার অর্থ হল:
“আমার দাদা থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: যখন জাফর ইবন মুহাম্মদ ইবন আলী ইবন হোসাইন জন্ম গ্রহণ করবে, তখন তোমরা তার নাম রাখবে ‘সাদিক’। কারণ, তার পঞ্চম আওলাদ থেকে জাফর নামে যে ব্যক্তি জন্ম গ্রহণ করবে, মিথ্যা ইমামতের দাবি করবে এবং আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করবে, সে হবে আল্লাহর নিকট জাফর আল-কাজ্জাব (মিথ্যাবাদী জাফর)।” [আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসী, জালাউল ‘উয়ুন ( جلاء العيون ), পৃ. ৩৪৮]
এই বর্ণনাটিতে যাকে জাফর আল-কাযযাব বলা হচ্ছে সে আর কেউ নয়, তাদেরই ইমাম নকী’ -যিনি শিয়াদের নিকট স্বীকৃত নিষ্পাপ ইমামদের একজন- এই জাফর তাঁরই ছেলে এবং ইমাম হাসান আল-‘আসকারী’র সহোদর ভাই। যে হাসান আল-আসকারী শিয়াদের নিকট স্বীকৃত দ্বাদশ নিষ্পাপ ইমাম হিসেবে স্বীকৃত। আর এই জাফর, তিনি তো আলী ও ফাতেমার বংশেরই সন্তান এবং হোসাইন ও যাইনুল আবেদীনের বংশের অন্যতম ব্যক্তি। সুতরাং কিভাবে তারা আহলে বাইতের প্রতি তাদের অসার ভালবাসার দাবি করে। নিশ্চয় তার বংশের এই ধারাটি হল ‘সোনালী ধারা’; কিন্তু ‘আলে বাইতের’ (নবী পরিবারের) মহব্বতকারী শিয়াগণ তাকে ‘জাফর আল-কাজ্জাব’ (মিথ্যাবাদী জাফর) উপাধিতে ভূষিত করে। সুতরাং হে আল্লাহ! তুমি পবিত্র (সুবহানাল্লাহ) ...!
শিয়াদের নিকট তাকীয়া ( التقية )-র অর্থ হল: নির্ভেজাল মিথ্যা, অথবা সুস্পষ্ট মুনাফেকি (কপটতা); যেমনিভাবে তাদের বর্ণনাসমূহ থেকে তা পরিষ্কার ও সুস্পষ্ট।
তাকীয়া ( التقية ) ও তার ফযিলতের ব্যাপারে শিয়াদের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থসমূহ থেকে তাদের আকিদা ও বিশ্বাস নিয়ে বর্ণিত বর্ণনাসমূহ থেকে অংশবিশেষ উপস্থাপন করা হল।
আল-কুলাইনী বর্ণনা করেন:
“ইবনু ‘উমাইর আল-আ‘জামী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে আবূ আবদিল্লাহ আ. বলেন: হে আবূ ওমর! নিশ্চয় দীনের দশ ভাগের নয় ভাগ ‘তাকীয়া’ ( التقية )-র মধ্যে; যার ‘তাকীয়া’ নেই, তার ধর্ম নেই। আর মদ ও মোজার উপর মাসেহ ব্যতীত সকল বস্তুর মধ্যে ‘তাকীয়া’ আছে।” [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ৪৮২]
আল-কুলাইনী আরও বর্ণনা করেন:
“আবূ জাফর আ. বলেন: ‘তাকীয়া’ আমার এবং আমার বাপ-দাদাদের ধর্ম। যার ‘তাকীয়া’ নেই, তার ঈমান নেই।” [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ৪৮৪]
আল-কুলাইনী আরও বর্ণনা করেন:
“আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: তোমরা তোমাদের দীনের ব্যাপারে ভয় কর এবং তাকে ‘তাকীয়া’ দ্বারা ঢেকে রাখ। কারণ, যার ‘তাকীয়া’ নেই, তার ঈমান নেই।” [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ৪৮৩]
আল-কুলাইনী আরও বর্ণনা করেন:
“আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿ وَلَا تَسۡتَوِي ٱلۡحَسَنَةُ وَلَا ٱلسَّيِّئَةُ﴾ (ভাল ও মন্দ সমান হতে পারে না)-প্রসঙ্গে তিনি বলেন: ভাল ( ٱلۡحَسَنَةُ ) হচ্ছে ‘তাকীয়া’ ( التقية ) বা গোপন করা এবং মন্দ ( ٱلسَّيِّئَةُ ) হচ্ছে প্রচার করা। আর আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿ ٱدۡفَعۡ بِٱلَّتِي هِيَ أَحۡسَنُ ﴾ (মন্দ প্রতিহত কর উৎকৃষ্ট দ্বারা)- প্রসঙ্গে তিনি বলেন: উৎকৃষ্ট হল ‘তাকীয়া’ ( التقية )।” [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ৪৮২]
আল-কুলাইনী আরও বর্ণনা করেন:
“দরাসত আল-ওয়াসেতী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ আবদিল্লাহ আ. বলেন: কোন ব্যক্তির তাকীয়াই আসহাবে কাহাফের তাকীয়ার পর্যায়ে পৌঁছেনি; যদি তারা উৎবসমূহ প্রত্যক্ষ করত এবং পৈতা বাঁধত, তবে আল্লাহ তাদেরকে দ্বিগুণ প্রতিদান দিতেন।” উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ) নামক গ্রন্থের ‘তাকীয়া’ ( التقية ) অধ্যায়ে এ বক্তব্য উদ্ধৃত হয়েছে।
প্রত্যেক প্রয়োজনে তাকীয়া ( التقية )
আল-কুলাইনী বর্ণনা করেন:
“আবূ জাফর আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: প্রত্যেক প্রয়োজনের সময়েই ‘তাকীয়া’ রয়েছে; তার (প্রয়োজন) কখন হবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিই তা সম্পর্কে অধিক অবগত, যখন তার উপর সে প্রয়োজন এসে পড়ে।” [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ৪৮৪]
তিনি আরও বর্ণনা করেন:
“মুহাম্মদ ইবন মুসলিম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আবূ আবদিল্লাহ আ.-এর নিকট উপস্থিত হলাম এমতাবস্থায় যে, তার নিকট আবূ হানিফা ছিলেন; অতঃপর আমি তাকে বললাম: আমি আমার নিজেকে আপনার জন্য উৎসর্গ করলাম, আমি এক বিস্ময়কর স্বপ্ন দেখেছি; তখন তিনি আমাকে বললেন: হে মুসলিমের ছেলে! তুমি তা বর্ণনা কর, তার সম্পর্কে অভিজ্ঞ ব্যক্তি এখানে বসা আছেন এবং তিনি তার হাত দ্বারা আবূ হানিফার দিকে ইঙ্গিত করেন; অতঃপর আমি বললাম: আমি (স্বপ্নে) দেখেছি যে, আমার মনে হল আমি আমার বাড়িতে প্রবেশ করলাম; তৎক্ষণাৎ আমার স্ত্রী আমার নিকট বের হয়ে আসল এবং অনেকগুলো আখরোট ভেঙ্গে তা আমার উপর চিটিয়ে দিল। আর এই স্বপ্ন দেখে আমি আশ্চর্য হলাম। অতঃপর আবূ হানিফা বললেন: তুমি এমন এক ব্যক্তি, যে তোমার স্ত্রীর উত্তরাধিকার নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ করবে এবং প্রচণ্ড ঝগড়ার পর তার থেকে তোমার প্রয়োজন মিটে যাবে ইনশাআল্লাহ। অতঃপর আবূ আবদিল্লাহ আ. বললেন: আল্লাহর শপথ, হে আবূ হানিফা! আপনি সঠিক বলেছেন। অতঃপর আবূ হানিফা তার নিকট থেকে বের হয়ে গেল; তখন আমি তাকে বললাম: আমি আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করলাম, আমি এই নাসেবী [শিয়ারা তাদের প্রতিপক্ষ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের লোকদেরকে নাসেবী বলে থাকে। এটা তাদের শত্রুতার প্রমাণ। [সম্পাদক]] লোকের ব্যাখ্যাকে অপছন্দ করি। অতঃপর তিনি বললেন: হে মুসলিমের ছেলে! আল্লাহ তোমাকে ক্ষতির সম্মূখীন করবেন না; কারণ, তাদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী কিছু হবে না। আর সে যে ব্যাখ্যা করেছে, প্রকৃত ব্যাখ্যা এই রকম নয়। অতঃপর আমি তাকে বললাম: আপনার কথা সঠিক এবং তার কথার বিপরীত; আর সে ভুল করেছে; তখন তিনি বললেন: হ্যাঁ, আমি তার নিকট শপথ করে বলেছি যে, সে ভুল করেছে।” [ফুরু‘উল কাফী ( فروع الكافي ), রওযা অধ্যায়, পৃ. ১৩৮]
আল-কুলাইনী বর্ণনা করেন:
“আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমার পিতা বলতেন: ‘তাকীয়া’র চেয়ে আমার চক্ষু অধিক শীতলকারী বস্তু আর কি হতে পারে! নিশ্চয় তাকীয়া’ হল মুমিনের জান্নাত। [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ৪৮৪]
আল-কুলাইনী আরও বর্ণনা করেন:
“আবূ আবদিল্লাহ আ.-কে বলা হল: জনগণ আলী আ.-কে দেখেছে যে, তিনি কুফার মিম্বরে বসে বলেছিলেন: হে জনগণ! তোমাদেরকে অচিরেই আমাকে গালি দেয়ার জন্য আহ্বান করা হবে, সুতরাং তোমরা আমাকে গালি দাও; অতঃপর আমার সাথে সম্পর্কচ্যুতি ঘটাতে তোমাদেরকে আহ্বান করা হবে, তখন তোমরা আমার সাথে সম্পর্কচ্যুতি ঘটাবে না। অতঃপর তিনি বললেন, মানুষ আলী আ.-এর ব্যাপারে খুব বেশি মিথ্যা বলে; তারপর তিনি বললেন: তিনি (আলী আ.) তো শুধু বলেছেন, নিশ্চয় তোমাদেরকে অচিরেই আমাকে গালি দেয়ার জন্য আহ্বান করা হবে, সুতরাং তোমরা আমাকে গালি দিও; অতঃপর আমার সাথে সম্পর্কচ্যুতি ঘটাতে তোমাদেরকে আহ্বান করা হবে, অথচ নিশ্চতভাবে আমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দীনের উপর প্রতিষ্ঠিত। আর তিনি বলেননি: তোমরা আমার সাথে সম্পর্কচ্যুতি ঘটাবে না।” [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ৪৮৪]
শিয়াদের নিকট ইমামগণ নিষ্পাপ; আর তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমতার অধিকারীও; তাদের মতে ছোট ও বড় প্রত্যেক ক্ষেত্রে তাদের আনুগত্য করা আবশ্যক। তাদের মতে ‘তাকীয়া’র জন্য যখন এত সব গুণাবলী বিদ্যমান আছে; তখন তাদের প্রত্যেক কথা ও কাজের মধ্যে অচিরেই সন্দেহ ও সংশয়ের সৃষ্টি হবে যে, তাদের মধ্য থেকে তা প্রকাশ পেয়েছে ‘তাকীয়া’র পথ ধরে; আর কোন সে ব্যক্তি যে নিশ্চিতরূপে ফয়সালা করবে যে, ইমামের উক্তিসমূহের মধ্যে এই কথাটি ছিল ‘তাকীয়া’ এবং এই কথাটি ছিল ‘তাকীয়া’ ব্যতীত? আর কিসে আমাদেরকে জানিয়ে দেবে যে, সম্ভবত শিয়াদের গ্রন্থসমূহে বিদ্যমান বক্তব্য ও বর্ণনাসমূহও বর্ণিত হয়েছে ‘তাকীয়া’র পথ অনুসরণে?
অতএব যেহেতু তাদের প্রত্যেকটি কথা ও কাজ তাকীয়া’র সম্ভাবনা রাখে, সেহেতু তাদের (কিতাবে বর্ণিত) প্রতিটি নির্দেশই কার্যকর না করাটা আবশ্যক হয়ে পড়ে। সুতরাং এর ফলে তাদের পক্ষ থেকে সংঘটিত সকল কথা ও কাজ ‘তাকীয়া’র সম্ভাবনার কারণে বাদ পড়ে যাবে।
শিয়াদের মতে গোপন ( الكتمان ) করা
আল-কুলাইনী বর্ণনা করেন:
“সুলাইমান খালিদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আবূ আবদিল্লাহ আ. বলেন, নিশ্চয় তোমরা দীনের উপর প্রতিষ্ঠিত; যে ব্যক্তি তা গোপন করবে, তাকে আল্লাহ সম্মানিত করবেন এবং যে ব্যক্তি তা প্রচার করবে, তাকে আল্লাহ অপমানিত করবেন।” [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ৪৮৫]
জেনে রাখুন, পূর্বে শিয়াদের যেসব আকিদা ও বর্ণনাসমূহ আলোচিত হয়েছে, তার সবকটিই আল-কুরআনের বক্তব্যের পরিপন্থী; আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلرَّسُولُ بَلِّغۡ مَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ مِن رَّبِّكَۖ وَإِن لَّمۡ تَفۡعَلۡ فَمَا بَلَّغۡتَ رِسَالَتَهُ﴾ [ سورة المائدة : 67]
“হে রাসূল! তোমার প্রতিপালকের নিকট থেকে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা তুমি প্রচার কর; যদি না কর, তবে তো তুমি তাঁর বার্তা প্রচার করলে না।”— (সূরা আল-মায়িদা: ৬৭)
তিনি আরও বলেন:
﴿ هُوَ ٱلَّذِيٓ أَرۡسَلَ رَسُولَهُۥ بِٱلۡهُدَىٰ وَدِينِ ٱلۡحَقِّ لِيُظۡهِرَهُۥ عَلَى ٱلدِّينِ كُلِّهِ﴾ [ سورة التوبة : 33]
“অপর সমস্ত দীনের উপর জয়যুক্ত করার জন্য তিনিই পথনির্দেশ ও সত্য দীনসহ তাঁর রাসূল প্রেরণ করেছেন।”— (সূরা আত-তাওবা: ৩৩)
তিনি আরও বলেন:
﴿ وَٱتۡلُ مَآ أُوحِيَ إِلَيۡكَ مِن كِتَابِ رَبِّكَ﴾ [ سورة الكهف : 27]
“তুমি তোমার প্রতি প্রত্যাদিষ্ট তোমার প্রতিপালকের কিতাব থেকে পাঠ করে শুনাও।”— (সূরা আল-কাহফ: ২৭)
তিনি আরও বলেন:
﴿ فَٱصۡدَعۡ بِمَا تُؤۡمَرُ وَأَعۡرِضۡ عَنِ ٱلۡمُشۡرِكِينَ ٩٤ ﴾ [ سورة الحجر : 94]
“অতএব তুমি যে বিষয়ে আদিষ্ট হয়েছে, তা প্রকাশ্যে প্রচার কর এবং মুশরিকদেকে উপেক্ষা কর।”— (সূরা আল-হিজর: ৯৪)
তিনি আরও বলেন:
﴿ ٱلۡيَوۡمَ يَئِسَ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ مِن دِينِكُمۡ فَلَا تَخۡشَوۡهُمۡ وَٱخۡشَوۡنِ﴾ [ سورة المائدة : 3]
“আজ কাফিরগণ তোমাদের দীনের বিরুদ্ধাচরণে হতাশ হয়েছে; সুতরাং তাদেরকে ভয় করো না, শুধু আমাকে ভয় কর।”— (সূরা আল-মায়িদা: ৩)
তিনি আরও বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَكُونُواْ مَعَ ٱلصَّٰدِقِينَ ١١٩ ﴾ [ سورة التوبة : 119]
“হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও।”— (সূরা আত-তাওবা: ১১৯)
তিনি আরও বলেন:
﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ يَكۡتُمُونَ مَآ أَنزَلۡنَا مِنَ ٱلۡبَيِّنَٰتِ وَٱلۡهُدَىٰ مِنۢ بَعۡدِ مَا بَيَّنَّٰهُ لِلنَّاسِ فِي ٱلۡكِتَٰبِ أُوْلَٰٓئِكَ يَلۡعَنُهُمُ ٱللَّهُ وَيَلۡعَنُهُمُ ٱللَّٰعِنُونَ ١٥٩ ﴾ [ سورة البقرة : 159]
“নিশ্চয় আমি মানুষের জন্য যে সব স্পষ্ট নিদর্শন ও পথনির্দেশ অবতীর্ণ করেছি, কিতাবে তা স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করার পরও যারা তা গোপন করে রাখে, আল্লাহ তাদেরকে ‘লানত’ (অভিশাপ) দেন এবং অভিশাপ দানকারীগণও তাদেরকে অভিশাপ দেয়। ”— (সূরা আল-বাকারা: ১৫৯)
ইসলামে তাকীয়া ( التقية )-এর বিধান
ইসলামে ‘তাকীয়া’ শূকরের মাংস ভক্ষণ করার চেয়েও বেশি কঠোরতার সাথে নিষিদ্ধ। কারণ, কঠিন পরিস্থিতিতে নিরুপায় ব্যক্তির জন্য শূকরের মাংস ভক্ষণ করা বৈধ; আর তেমনিভাবে অনুরূপ কঠিন পরিস্থিতিতেই শুধু ‘তাকীয়া’ বৈধ হবে। কারণ, কোন মানুষ যদি নিরুপায় অবস্থায়ও শূকরের মাংস ভক্ষণ করা থেকে মুক্ত থাকে এবং মারা যায়, তবে সে আল্লাহর নিকট গুনাহগার হবে। আর এটা ‘তাকীয়া’র বিপরীত। কারণ, যখন কোন মানুষ নিরুপায় অবস্থায় ‘তাকীয়া’র আশ্রয় না নেয় এবং মারা যায়, তবে আল্লাহর নিকট তার জন্য উচ্চ মর্যাদা ও সাওয়াবের ব্যবস্থা থাকবে। সুতরাং শূকরের মাংস ভক্ষণ করার অবকাশটি যেন শরীয়তের আবশ্যিক বিধানে রূপান্তরিত হয়, কিন্তু ‘তাকীয়া’র অবকাশটি শরীয়তের আবশ্যিক বিধানে রূপান্তরিত হয় না। বরং যে ব্যক্তি আল্লাহর দীনের জন্য ‘তাকীয়া’র আশ্রয় না নিয়েই মৃত্যুবরণ করবে, সে ব্যক্তি তার এই মৃত্যুর কারণে শীঘ্রই মহাপ্রতিদানের অধিকারী হবে। আর এই ক্ষেত্রে প্রত্যেক অবস্থায় তাকীয়ার চেয়ে দৃঢ় সিদ্ধান্তই উত্তম। আর এই উম্মতের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় ইসলামের ইতিহাসে রয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক মুশরিকদের প্রদত্ত কষ্ট সহ্যকরণ, অনুরূপভাবে আবূ বকর সিদ্দীক ও বেলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা প্রমুখের কষ্ট সহ্যকরণ; আম্মার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর মাতা সুমাইয়া ও খুবাইব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা প্রমুখের শাহাদাত ইত্যাদি ধরনের বীরত্ব ও দৃঢ় সিদ্ধান্তের বহু বিরল ঘটনা ও কাহিনী এর উপর উত্তম দলিল যে, দৃঢ় সিদ্ধান্তই হল মূল বিষয়, অতি উত্তম ও সুন্দর।
তাকীয়া ( التقية ) ও তার ফযিলতের ব্যাপারে শিয়াদের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থসমূহ থেকে তাদের আকিদা ও বিশ্বাস নিয়ে বর্ণিত বর্ণনাসমূহ থেকে অংশবিশেষ উপস্থাপন করা হল।
আল-কুলাইনী বর্ণনা করেন:
“ইবনু ‘উমাইর আল-আ‘জামী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে আবূ আবদিল্লাহ আ. বলেন: হে আবূ ওমর! নিশ্চয় দীনের দশ ভাগের নয় ভাগ ‘তাকীয়া’ ( التقية )-র মধ্যে; যার ‘তাকীয়া’ নেই, তার ধর্ম নেই। আর মদ ও মোজার উপর মাসেহ ব্যতীত সকল বস্তুর মধ্যে ‘তাকীয়া’ আছে।” [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ৪৮২]
আল-কুলাইনী আরও বর্ণনা করেন:
“আবূ জাফর আ. বলেন: ‘তাকীয়া’ আমার এবং আমার বাপ-দাদাদের ধর্ম। যার ‘তাকীয়া’ নেই, তার ঈমান নেই।” [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ৪৮৪]
আল-কুলাইনী আরও বর্ণনা করেন:
“আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: তোমরা তোমাদের দীনের ব্যাপারে ভয় কর এবং তাকে ‘তাকীয়া’ দ্বারা ঢেকে রাখ। কারণ, যার ‘তাকীয়া’ নেই, তার ঈমান নেই।” [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ৪৮৩]
আল-কুলাইনী আরও বর্ণনা করেন:
“আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿ وَلَا تَسۡتَوِي ٱلۡحَسَنَةُ وَلَا ٱلسَّيِّئَةُ﴾ (ভাল ও মন্দ সমান হতে পারে না)-প্রসঙ্গে তিনি বলেন: ভাল ( ٱلۡحَسَنَةُ ) হচ্ছে ‘তাকীয়া’ ( التقية ) বা গোপন করা এবং মন্দ ( ٱلسَّيِّئَةُ ) হচ্ছে প্রচার করা। আর আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿ ٱدۡفَعۡ بِٱلَّتِي هِيَ أَحۡسَنُ ﴾ (মন্দ প্রতিহত কর উৎকৃষ্ট দ্বারা)- প্রসঙ্গে তিনি বলেন: উৎকৃষ্ট হল ‘তাকীয়া’ ( التقية )।” [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ৪৮২]
আল-কুলাইনী আরও বর্ণনা করেন:
“দরাসত আল-ওয়াসেতী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ আবদিল্লাহ আ. বলেন: কোন ব্যক্তির তাকীয়াই আসহাবে কাহাফের তাকীয়ার পর্যায়ে পৌঁছেনি; যদি তারা উৎবসমূহ প্রত্যক্ষ করত এবং পৈতা বাঁধত, তবে আল্লাহ তাদেরকে দ্বিগুণ প্রতিদান দিতেন।” উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ) নামক গ্রন্থের ‘তাকীয়া’ ( التقية ) অধ্যায়ে এ বক্তব্য উদ্ধৃত হয়েছে।
প্রত্যেক প্রয়োজনে তাকীয়া ( التقية )
আল-কুলাইনী বর্ণনা করেন:
“আবূ জাফর আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: প্রত্যেক প্রয়োজনের সময়েই ‘তাকীয়া’ রয়েছে; তার (প্রয়োজন) কখন হবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিই তা সম্পর্কে অধিক অবগত, যখন তার উপর সে প্রয়োজন এসে পড়ে।” [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ৪৮৪]
তিনি আরও বর্ণনা করেন:
“মুহাম্মদ ইবন মুসলিম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আবূ আবদিল্লাহ আ.-এর নিকট উপস্থিত হলাম এমতাবস্থায় যে, তার নিকট আবূ হানিফা ছিলেন; অতঃপর আমি তাকে বললাম: আমি আমার নিজেকে আপনার জন্য উৎসর্গ করলাম, আমি এক বিস্ময়কর স্বপ্ন দেখেছি; তখন তিনি আমাকে বললেন: হে মুসলিমের ছেলে! তুমি তা বর্ণনা কর, তার সম্পর্কে অভিজ্ঞ ব্যক্তি এখানে বসা আছেন এবং তিনি তার হাত দ্বারা আবূ হানিফার দিকে ইঙ্গিত করেন; অতঃপর আমি বললাম: আমি (স্বপ্নে) দেখেছি যে, আমার মনে হল আমি আমার বাড়িতে প্রবেশ করলাম; তৎক্ষণাৎ আমার স্ত্রী আমার নিকট বের হয়ে আসল এবং অনেকগুলো আখরোট ভেঙ্গে তা আমার উপর চিটিয়ে দিল। আর এই স্বপ্ন দেখে আমি আশ্চর্য হলাম। অতঃপর আবূ হানিফা বললেন: তুমি এমন এক ব্যক্তি, যে তোমার স্ত্রীর উত্তরাধিকার নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ করবে এবং প্রচণ্ড ঝগড়ার পর তার থেকে তোমার প্রয়োজন মিটে যাবে ইনশাআল্লাহ। অতঃপর আবূ আবদিল্লাহ আ. বললেন: আল্লাহর শপথ, হে আবূ হানিফা! আপনি সঠিক বলেছেন। অতঃপর আবূ হানিফা তার নিকট থেকে বের হয়ে গেল; তখন আমি তাকে বললাম: আমি আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করলাম, আমি এই নাসেবী [শিয়ারা তাদের প্রতিপক্ষ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের লোকদেরকে নাসেবী বলে থাকে। এটা তাদের শত্রুতার প্রমাণ। [সম্পাদক]] লোকের ব্যাখ্যাকে অপছন্দ করি। অতঃপর তিনি বললেন: হে মুসলিমের ছেলে! আল্লাহ তোমাকে ক্ষতির সম্মূখীন করবেন না; কারণ, তাদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী কিছু হবে না। আর সে যে ব্যাখ্যা করেছে, প্রকৃত ব্যাখ্যা এই রকম নয়। অতঃপর আমি তাকে বললাম: আপনার কথা সঠিক এবং তার কথার বিপরীত; আর সে ভুল করেছে; তখন তিনি বললেন: হ্যাঁ, আমি তার নিকট শপথ করে বলেছি যে, সে ভুল করেছে।” [ফুরু‘উল কাফী ( فروع الكافي ), রওযা অধ্যায়, পৃ. ১৩৮]
আল-কুলাইনী বর্ণনা করেন:
“আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমার পিতা বলতেন: ‘তাকীয়া’র চেয়ে আমার চক্ষু অধিক শীতলকারী বস্তু আর কি হতে পারে! নিশ্চয় তাকীয়া’ হল মুমিনের জান্নাত। [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ৪৮৪]
আল-কুলাইনী আরও বর্ণনা করেন:
“আবূ আবদিল্লাহ আ.-কে বলা হল: জনগণ আলী আ.-কে দেখেছে যে, তিনি কুফার মিম্বরে বসে বলেছিলেন: হে জনগণ! তোমাদেরকে অচিরেই আমাকে গালি দেয়ার জন্য আহ্বান করা হবে, সুতরাং তোমরা আমাকে গালি দাও; অতঃপর আমার সাথে সম্পর্কচ্যুতি ঘটাতে তোমাদেরকে আহ্বান করা হবে, তখন তোমরা আমার সাথে সম্পর্কচ্যুতি ঘটাবে না। অতঃপর তিনি বললেন, মানুষ আলী আ.-এর ব্যাপারে খুব বেশি মিথ্যা বলে; তারপর তিনি বললেন: তিনি (আলী আ.) তো শুধু বলেছেন, নিশ্চয় তোমাদেরকে অচিরেই আমাকে গালি দেয়ার জন্য আহ্বান করা হবে, সুতরাং তোমরা আমাকে গালি দিও; অতঃপর আমার সাথে সম্পর্কচ্যুতি ঘটাতে তোমাদেরকে আহ্বান করা হবে, অথচ নিশ্চতভাবে আমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দীনের উপর প্রতিষ্ঠিত। আর তিনি বলেননি: তোমরা আমার সাথে সম্পর্কচ্যুতি ঘটাবে না।” [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ৪৮৪]
শিয়াদের নিকট ইমামগণ নিষ্পাপ; আর তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমতার অধিকারীও; তাদের মতে ছোট ও বড় প্রত্যেক ক্ষেত্রে তাদের আনুগত্য করা আবশ্যক। তাদের মতে ‘তাকীয়া’র জন্য যখন এত সব গুণাবলী বিদ্যমান আছে; তখন তাদের প্রত্যেক কথা ও কাজের মধ্যে অচিরেই সন্দেহ ও সংশয়ের সৃষ্টি হবে যে, তাদের মধ্য থেকে তা প্রকাশ পেয়েছে ‘তাকীয়া’র পথ ধরে; আর কোন সে ব্যক্তি যে নিশ্চিতরূপে ফয়সালা করবে যে, ইমামের উক্তিসমূহের মধ্যে এই কথাটি ছিল ‘তাকীয়া’ এবং এই কথাটি ছিল ‘তাকীয়া’ ব্যতীত? আর কিসে আমাদেরকে জানিয়ে দেবে যে, সম্ভবত শিয়াদের গ্রন্থসমূহে বিদ্যমান বক্তব্য ও বর্ণনাসমূহও বর্ণিত হয়েছে ‘তাকীয়া’র পথ অনুসরণে?
অতএব যেহেতু তাদের প্রত্যেকটি কথা ও কাজ তাকীয়া’র সম্ভাবনা রাখে, সেহেতু তাদের (কিতাবে বর্ণিত) প্রতিটি নির্দেশই কার্যকর না করাটা আবশ্যক হয়ে পড়ে। সুতরাং এর ফলে তাদের পক্ষ থেকে সংঘটিত সকল কথা ও কাজ ‘তাকীয়া’র সম্ভাবনার কারণে বাদ পড়ে যাবে।
শিয়াদের মতে গোপন ( الكتمان ) করা
আল-কুলাইনী বর্ণনা করেন:
“সুলাইমান খালিদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আবূ আবদিল্লাহ আ. বলেন, নিশ্চয় তোমরা দীনের উপর প্রতিষ্ঠিত; যে ব্যক্তি তা গোপন করবে, তাকে আল্লাহ সম্মানিত করবেন এবং যে ব্যক্তি তা প্রচার করবে, তাকে আল্লাহ অপমানিত করবেন।” [উসুলুল কাফী ( أصول الكافي ), পৃ. ৪৮৫]
জেনে রাখুন, পূর্বে শিয়াদের যেসব আকিদা ও বর্ণনাসমূহ আলোচিত হয়েছে, তার সবকটিই আল-কুরআনের বক্তব্যের পরিপন্থী; আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلرَّسُولُ بَلِّغۡ مَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ مِن رَّبِّكَۖ وَإِن لَّمۡ تَفۡعَلۡ فَمَا بَلَّغۡتَ رِسَالَتَهُ﴾ [ سورة المائدة : 67]
“হে রাসূল! তোমার প্রতিপালকের নিকট থেকে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা তুমি প্রচার কর; যদি না কর, তবে তো তুমি তাঁর বার্তা প্রচার করলে না।”— (সূরা আল-মায়িদা: ৬৭)
তিনি আরও বলেন:
﴿ هُوَ ٱلَّذِيٓ أَرۡسَلَ رَسُولَهُۥ بِٱلۡهُدَىٰ وَدِينِ ٱلۡحَقِّ لِيُظۡهِرَهُۥ عَلَى ٱلدِّينِ كُلِّهِ﴾ [ سورة التوبة : 33]
“অপর সমস্ত দীনের উপর জয়যুক্ত করার জন্য তিনিই পথনির্দেশ ও সত্য দীনসহ তাঁর রাসূল প্রেরণ করেছেন।”— (সূরা আত-তাওবা: ৩৩)
তিনি আরও বলেন:
﴿ وَٱتۡلُ مَآ أُوحِيَ إِلَيۡكَ مِن كِتَابِ رَبِّكَ﴾ [ سورة الكهف : 27]
“তুমি তোমার প্রতি প্রত্যাদিষ্ট তোমার প্রতিপালকের কিতাব থেকে পাঠ করে শুনাও।”— (সূরা আল-কাহফ: ২৭)
তিনি আরও বলেন:
﴿ فَٱصۡدَعۡ بِمَا تُؤۡمَرُ وَأَعۡرِضۡ عَنِ ٱلۡمُشۡرِكِينَ ٩٤ ﴾ [ سورة الحجر : 94]
“অতএব তুমি যে বিষয়ে আদিষ্ট হয়েছে, তা প্রকাশ্যে প্রচার কর এবং মুশরিকদেকে উপেক্ষা কর।”— (সূরা আল-হিজর: ৯৪)
তিনি আরও বলেন:
﴿ ٱلۡيَوۡمَ يَئِسَ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ مِن دِينِكُمۡ فَلَا تَخۡشَوۡهُمۡ وَٱخۡشَوۡنِ﴾ [ سورة المائدة : 3]
“আজ কাফিরগণ তোমাদের দীনের বিরুদ্ধাচরণে হতাশ হয়েছে; সুতরাং তাদেরকে ভয় করো না, শুধু আমাকে ভয় কর।”— (সূরা আল-মায়িদা: ৩)
তিনি আরও বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَكُونُواْ مَعَ ٱلصَّٰدِقِينَ ١١٩ ﴾ [ سورة التوبة : 119]
“হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও।”— (সূরা আত-তাওবা: ১১৯)
তিনি আরও বলেন:
﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ يَكۡتُمُونَ مَآ أَنزَلۡنَا مِنَ ٱلۡبَيِّنَٰتِ وَٱلۡهُدَىٰ مِنۢ بَعۡدِ مَا بَيَّنَّٰهُ لِلنَّاسِ فِي ٱلۡكِتَٰبِ أُوْلَٰٓئِكَ يَلۡعَنُهُمُ ٱللَّهُ وَيَلۡعَنُهُمُ ٱللَّٰعِنُونَ ١٥٩ ﴾ [ سورة البقرة : 159]
“নিশ্চয় আমি মানুষের জন্য যে সব স্পষ্ট নিদর্শন ও পথনির্দেশ অবতীর্ণ করেছি, কিতাবে তা স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করার পরও যারা তা গোপন করে রাখে, আল্লাহ তাদেরকে ‘লানত’ (অভিশাপ) দেন এবং অভিশাপ দানকারীগণও তাদেরকে অভিশাপ দেয়। ”— (সূরা আল-বাকারা: ১৫৯)
ইসলামে তাকীয়া ( التقية )-এর বিধান
ইসলামে ‘তাকীয়া’ শূকরের মাংস ভক্ষণ করার চেয়েও বেশি কঠোরতার সাথে নিষিদ্ধ। কারণ, কঠিন পরিস্থিতিতে নিরুপায় ব্যক্তির জন্য শূকরের মাংস ভক্ষণ করা বৈধ; আর তেমনিভাবে অনুরূপ কঠিন পরিস্থিতিতেই শুধু ‘তাকীয়া’ বৈধ হবে। কারণ, কোন মানুষ যদি নিরুপায় অবস্থায়ও শূকরের মাংস ভক্ষণ করা থেকে মুক্ত থাকে এবং মারা যায়, তবে সে আল্লাহর নিকট গুনাহগার হবে। আর এটা ‘তাকীয়া’র বিপরীত। কারণ, যখন কোন মানুষ নিরুপায় অবস্থায় ‘তাকীয়া’র আশ্রয় না নেয় এবং মারা যায়, তবে আল্লাহর নিকট তার জন্য উচ্চ মর্যাদা ও সাওয়াবের ব্যবস্থা থাকবে। সুতরাং শূকরের মাংস ভক্ষণ করার অবকাশটি যেন শরীয়তের আবশ্যিক বিধানে রূপান্তরিত হয়, কিন্তু ‘তাকীয়া’র অবকাশটি শরীয়তের আবশ্যিক বিধানে রূপান্তরিত হয় না। বরং যে ব্যক্তি আল্লাহর দীনের জন্য ‘তাকীয়া’র আশ্রয় না নিয়েই মৃত্যুবরণ করবে, সে ব্যক্তি তার এই মৃত্যুর কারণে শীঘ্রই মহাপ্রতিদানের অধিকারী হবে। আর এই ক্ষেত্রে প্রত্যেক অবস্থায় তাকীয়ার চেয়ে দৃঢ় সিদ্ধান্তই উত্তম। আর এই উম্মতের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় ইসলামের ইতিহাসে রয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক মুশরিকদের প্রদত্ত কষ্ট সহ্যকরণ, অনুরূপভাবে আবূ বকর সিদ্দীক ও বেলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা প্রমুখের কষ্ট সহ্যকরণ; আম্মার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর মাতা সুমাইয়া ও খুবাইব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা প্রমুখের শাহাদাত ইত্যাদি ধরনের বীরত্ব ও দৃঢ় সিদ্ধান্তের বহু বিরল ঘটনা ও কাহিনী এর উপর উত্তম দলিল যে, দৃঢ় সিদ্ধান্তই হল মূল বিষয়, অতি উত্তম ও সুন্দর।
ফতহুল্লাহ আল-কাশানী তার তাফসীরের মধ্যে উল্লেখ করেন:
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: যে ব্যক্তি একবার মুত‘আ বিয়ে করবে, তার মর্যাদা হবে হোসাইনের মর্যাদার সমান; আর যে ব্যক্তি দুইবার মুত‘আ বিয়ে করবে, তার মর্যাদা হবে হাসানের মর্যাদার সমান; আর যে ব্যক্তি তিনবার মুত‘আ বিয়ে করবে, তার মর্যাদা হবে আলী ইবন আবি তালিবের মর্যাদার সমান এবং যে ব্যক্তি চারবার মুত‘আ বিয়ে করবে, তার মর্যাদা হবে আমার মর্যাদার সমান।” [মোল্লা ফতহুল্লাহ আল-কাশানী, তাফসীরু মানহাজিস সাদেকীন ( تفسير منهج الصادقين ), পৃ. ৩৫৬]
আল-কাশানী তার তাফসীরের মধ্যে আরও উল্লেখ করেন:
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: যে ব্যক্তি মুত‘আ বিয়ে (সাময়িক বিবাহ) না করে দুনিয়া থেকে বের হয়েছে (মৃত্যুবরণ করেছে), সে কিয়ামতের দিন নাক কাটা অবস্থায় হাজির হবে।” [মোল্লা ফতহুল্লাহ আল-কাশানী, তাফসীরু মানহাজিস সাদেকীন ( تفسير منهج الصادقين ), পৃ. ৩৫৬]
আল-কাশানী তার তাফসীরের মধ্যে ফারসি ভাষায় বর্ণনা করেন, যার অনুবাদ হল:
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: জিবরাইল আমার নিকট আমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে উপহার নিয়ে আগমন করল; আর ঐ উপহার ছিল মুমিন নারীদের ভোগ করা। আর এই উপহার আমার পূর্বে আল্লাহ তা‘আলা আর কোন নবীকে দান করেন নি ...। তোমরা জেনে রাখ, পূর্ববতী সকল নবীর উপর আমার মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের কারণে আল্লাহ তা‘আলা আমাকে মুত‘আ বিয়ের মাধ্যমে বিশেষিত করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি তার জীবনে একবার মুত‘আ বিয়ে করবে, সে ব্যক্তি জান্নাতের অধিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। ... আর যখন মুত‘আ বিবাহিত নারী ও পুরুষ কোন জায়গায় একত্রিত হবে, তখন তাদের উপর একজন ফেরেশতা নাযিল হবে এবং সে তারা বিচ্ছিন্ন হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে পাহারা দেবে; আর তাদের উভয়ের মধ্যে যে কথাবার্তা হবে, সে কথাবার্তাগুলো হবে যিকির ও তাসবীহ; আর তাদের একজন যখন অপর জনের হাত ধরবে, তখন তাদের উভয়ের আঙ্গুলসমূহ থেকে গুনাহসমূহ ফোটায় ফোটায় ঝরতে থাকবে; আর যখন তাদের একজন অপর জনকে চুম্বন করবে, তখন তাদের জন্য প্রত্যেক চুম্বনের বিনিময়ে হজ ও ওমরার সাওয়াব লিপিবদ্ধ করা হবে এবং তাদের সহবাসের সময় প্রত্যেক কামনা ও স্বাদের বিনিময়ে সুউচ্চ পর্বতসমূহ পরিমাণ পুণ্য লেখা হবে। আর যখন তারা গোসলে মশগুল থাকবে এবং পানি ফোটা ঝড়বে, তখন আল্লাহ তা‘আলা ঐ পানির প্রত্যেক ফোটা দ্বারা একজন করে ফেরেশতা সৃষ্টি করবেন, যে আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করবে ও তার পবিত্রতা বর্ণনা করবে এবং তার তাসবীহ ও পবিত্রতা বর্ণনার সাওয়াব তাদের উভয়ের জন্য কিয়ামত পর্যন্ত লিপিবদ্ধ হতে থাকবে।
হে আলী! যে ব্যক্তি এই সুন্নাতটিকে (মুত‘আ বিয়েকে) হালকা ও দুর্বল মনে করবে এবং তাকে অপছন্দ করবে, সে ব্যক্তি আমার দলভূক্ত নয় এবং আমি তার দায়-দায়িত্ব থেকে মুক্ত ...।
জিবরাইল আ. বলল: হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! যে দিরহামটি মুমিন তার মুত‘আ বিয়েতে খরচ করবে, তা আল্লাহর নিকট মুতা‘ বিয়ের বাইরে এক হাজার দিরহাম ব্যয় করার চেয়ে উত্তম।
হে মুহাম্মদ! জান্নাতের মধ্যে ডাগর চক্ষু বিশিষ্ট এক দল হুর রয়েছে, যাদেরকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন মুত‘আ বিয়ের অনুসারীদের জন্য।
হে মুহাম্মদ! যখন মুমিন পুরুষ মুমিন নারীকে মুত‘আ বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ করে, তখন সে তার যে জায়গায়ই দাঁড়াবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং মুমিন নারীকেও ক্ষমা করে দেবেন ...।
আস-সাদিক আ. থেকে বর্ণিত, মুত‘আ বিয়ে আমার এবং আমার বাপ-দাদার দীনের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং যে ব্যক্তি তার উপর আমল করবে, সে আমাদের দীনের উপর আমল করবে এবং যে ব্যক্তি তা অস্বীকার করবে, সে আমাদের দীনকে অস্বীকার করবে; বরং সে আমাদের দীন ব্যতীত অন্য দীনের অনুসরণ করবে। মুত‘আ বিয়ের স্ত্রীর গর্ভের সন্তান স্থায়ী স্ত্রীর গর্ভের সন্তানের চেয়ে উত্তম। আর মুত‘আ বিয়ের বিধান অস্বীকারকারী কাফির, মুরতাদ।” [মোল্লা ফতহুল্লাহ আল-কাশানী, তাফসীরু মানহাজিস সাদেকীন ( تفسير منهج الصادقين ), পৃ. ৩৫৬]
‘মুন্তাহাল আমাল’ ( منتهى الأمال ) নামক গ্রন্থের লেখক ফারসি ভাষায় উল্লেখ করেন, যার অনুবাদ হল:
“আস-সাদিক আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: যে ব্যক্তি মুত‘আ বিয়ের স্ত্রীকে ভোগ করে, অতঃপর গোসল করে, আল্লাহ তার শরীর থেকে ঝরে পড়া প্রতি ফোটা পানি থেকে সত্তর জন ফেরেশতা সৃষ্টি করেন, যাতে তারা কিয়ামত পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং কিয়ামত পর্যন্ত ঐ ব্যক্তিকে অভিশাপ দেয়, যে মুত‘আ বিয়ে থেকে দূরে থাকে।” [মুন্তাহাল আমাল ( منتهى الأمال ), ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৪১]
উর্দু ভাষায় লিখিত ‘উজালাতুন হাসানাহ্ ( عجالة حسنة ) মুত‘আ বিয়ের ফযিলত সম্পর্কে অনেকগুলো বর্ণনার উল্লেখ করা হয়েছে; আর তা হল আল-মাজলিসী’র ‘রিসালাতুল মুত‘আ’ ( رسالة المتعة ) নামক পুস্তিকার অনুবাদ। এখানে আমরা তার কিয়দংশের অনুবাদ উল্লেখ করছি:
“আমীরুল মুমিনীন আলী আ. বলেন: যে ব্যক্তি এই সুন্নাতটিকে (মুত‘আ বিয়েকে) কঠিন হিসেবে পেল এবং তা গ্রহণ করল না, সে ব্যক্তি আমার দলভূক্ত নয় এবং আমি তার দায়-দায়িত্ব থেকে মুক্ত।” [আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসী’র ‘রিসালাতুল মুত‘আ’ ( رسالة المتعة )-এর অনুবাদ ‘উজালাতুন হাসানা’ ( عجالة حسنة ), পৃ. ১৫]
“সাইয়্যেদুল ‘আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যে ব্যক্তি মুমিন নারীকে মুত‘আ বিয়ের মাধ্যমে ভোগ করে, সে যেন সত্তর বার কাবা যিয়ারত করে।” [‘উজালাতুন হাসানা ( عجالة حسنة ), পৃ. ১৬]
“রহমাতুল্লিল ‘আলামীন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যে ব্যক্তি একবার মুত‘আ বিয়ে করল, সে তার শরীরের এক তৃতীয়াংশ জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করল। আর যে ব্যক্তি দুইবার মুত‘আ বিয়ে করল, সে তার শরীরের দুই তৃতীয়াংশ জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করল। আর যে ব্যক্তি তিনবার মুত‘আ বিয়ে করল, সে তার গোটা শরীরকে জাহান্নামের জ্বলন্ত আগুন থেকে নিরাপদ করল।” [‘উজালাতুন হাসানা ( عجالة حسنة ), পৃ. ১৬]
“সাইয়্যেদুল বাশার শাফে‘উল মাহশার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: হে আলী! মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীগণের উচিত দুনিয়া থেকে ইন্তিকাল করে আখেরাতে যাওয়ার পূর্বে একবার হলেও মুত‘আ বিয়ের প্রতি উৎসাহিত হওয়া।
আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং নিজেই শপথ করে বলেন যে, তিনি এমন পুরুষ অথবা নারীকে শাস্তি দেবেন না, যে মুত‘আ বিয়ে করেছে; আর যে ব্যক্তি এই কল্যাণকর (মুত‘আ বিয়ের) বিষয়টি নিয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা-সাধনা করে এবং সেই ব্যাপারে পাথেয় প্রার্থনা করে, আল্লাহ তা‘আলা তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন।” [‘উজালাতুন হাসানা ( عجالة حسنة ), পৃ. ১৬]
আল-কাশানী তার তাফসীরের মধ্যে ফারসি ভাষায় একটি দীর্ঘ বর্ণনার উল্লেখ করেন, যার অর্থ হল:
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল: যে ব্যক্তি মুত‘আ বিয়ের এই বিষয়টি নিয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা-সাধনা করবে, তার প্রতিদান কী হবে? জওয়াবে তিনি বললেন: সে উভয়ের (সমান) প্রতিদান পাবে। অর্থাৎ মুত‘আ বিবাহকারী নারী ও পুরুষের মধ্যে চেষ্টা-সাধনাকারীর জন্য তাদের উভয়ের সমান প্রতিদান রয়েছে।” [মোল্লা ফতহুল্লাহ আল-কাশানী, তাফসীরু মানহাজিস সাদেকীন ( تفسير منهج الصادقين ), পৃ. ৩৫৬]
আবূ জাফর আল-কুমী ‘মান লা ইয়াহদুরুহুল ফকিহ’ ( من لا يحضره الفقيه ) নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেন; আর এটা শিয়াদের নিকট চারটি বিশুদ্ধ গ্রন্থের অন্যতম, তাতে বলা হয়:
“মুমিন পরিপূর্ণ হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে মুত‘আ বিয়ে করবে।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন বাবুইয়া আল-কুমী, মান লা ইয়াহদুরুহুল ফকিহ ( من لا يحضره الفقيه ), পৃ. ৩৩০]
আল-কুমী আরও উল্লেখ করেন:
“আবূ জাফর আ. বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখন আকশ পর্যন্ত ভ্রমণ করানো হল, তখন তিনি বলেন, জিবরাইল আমার সাথে মিলিত হল এবং বলল: হে মুহাম্মদ! আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি তোমার উম্মতের মধ্য থেকে মুত‘আ বিয়ের মাধ্যমে নারীদের ভোগকারীদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন বাবুইয়া আল-কুমী, মান লা ইয়াহদুরুহুল ফকিহ ( من لا يحضره الفقيه ), পৃ. ৩৩০]
আল-কুমী আরও উল্লেখ করেন:
“আস-সাদিক আ. বলেন: আমি সেই পুরুষ ব্যক্তির মৃত্যুবরণকে অপছন্দ করি, যার স্বভাবের মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্বভাবসমূহের মধ্য থেকে একটি স্বভাব বাকি রয়েছে এবং সে তা বাস্তবায়ন করেনি; অতঃপর আমি বললাম: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি মুত‘আ বিয়ে করেছেন? তিনি বললনে: হ্যাঁ।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন বাবুইয়া আল-কুমী, মান লা ইয়াহদুরুহুল ফকিহ ( من لا يحضره الفقيه ), পৃ. ৩৩০]
আল-কুমী আরও উল্লেখ করেন:
“আবদুল্লাহ ইবন সিনান থেকে বর্ণিত, তিনি আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা‘আলা আমাদের শিয়াদের উপর মাতালকারী প্রত্যেক শরাব নিষিদ্ধ করেছেন এবং তার বিনিময় স্বরূপ তাদেরকে মুত‘আ বিয়ের সুযোগ দিয়েছেন।” [মান লা ইয়াহদুরুহুল ফকিহ ( من لا يحضره الفقيه ), পৃ. ৩৩০; মুন্তাহাল আমাল ( منتهى الأمال ), ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩৪১]
শিয়াদের মতে মুত‘আ বিয়ের রুকন ও তার বিধানসমূহ
মোল্লা ফতহুল্লাহ আল-কাশানী তার তাফসীরু মানহাজিস সাদেকীন ( تفسير منهج الصادقين ) নামক তাফসীরের মধ্যে ফারসি ভাষায় বর্ণনা করেন, যার অর্থ হল:
“জেনে রাখা উচিত, মুত‘আ বিয়ে সংঘটিত করার রুকন পাঁচটি: স্বামী, স্ত্রী, মোহর, সময় নির্ধারণ এবং ইজাব (প্রস্তাব) ও কবুল (গ্রহণ)।” [মোল্লা ফতহুল্লাহ আল-কাশানী, তাফসীরু মানহাজিস সাদেকীন ( تفسير منهج الصادقين ), পৃ. ৩৫৭]
আল-কাশানী ফারসি ভাষায় আরও বর্ণনা করেন, যার অর্থ হল:
“জেনে রাখ, মুত‘আ বিয়ের মধ্যে স্ত্রীদের সংখ্যা সীমিত নয়; আর পুরুষের জন্য ব্যয়ভার বহন, বাসস্থানের ব্যবস্থা করা ও পোষাক-পরিচ্ছদ প্রদান করা আবশ্যক নয়। আর মুত‘আ বিবাহকারী স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে উত্তরাধিকার সাব্যস্ত হয় না। এসব জিনিস (বিষয়) স্হায়ী বিবাহ বন্ধনের ক্ষেত্রেই কেবল প্রযোজ্য হবে।” [মোল্লা ফতহুল্লাহ আল-কাশানী, তাফসীরু মানহাজিস সাদেকীন ( تفسير منهج الصادقين ), পৃ. ৩৫২]
আবূ জাফর আত-তুসী বর্ণনা করেন:
“আবূ আবদুল্লাহ আ.কে মুত‘আ বিয়ে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল, তা কি চারের ভিতরেই সীমিত? জওয়াবে তিনি বলেন: না, এমনকি সত্তরের মধ্যেও সীমিত নয় ...। আবূ আবদুল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: তার নিকট মুত‘আ বিয়ে সম্পর্কে আলোচনা করা হল, তা কি চারের ভিতরেই সীমিত? জওয়াবে তিনি বলেন: তুমি তাদের (নারীদের) মধ্য থেকে এক হাজার জনকে বিয়ে করতে পার! কারণ, তারা ভাড়াটে ... সে তালাকও পাবে না এবং উত্তরাধিকারীও হবে না; সে শুধু ভাড়াটে।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আত-তাহযীব ( التهذيب ), ৩য় খণ্ড, ১৮৮]
মুত‘আ বিয়ের মাহর
আবূ জাফর আত-তুসী তার আত-তাহযীব ( التهذيب ) নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেন:
“উভয়ের সম্মতি ও সন্তুষ্টি চিত্তে যা নির্ধারিত হবে, তাই হবে মুত‘আ বিয়ের মোহর; কম হউক বা বেশি হউক ...। আমি আবূ আবদিল্লাহ আ.কে বললাম, সর্বনিম্ন কী দিয়ে মুত‘আ বিয়ে অনুষ্ঠিত হবে? তখন তিনি বললেন: এক মুষ্টি গম।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আত-তাহযীব ( التهذيب ), ২য় খণ্ড, ১৮৮]
মুত‘আ বিয়ের মধ্যে কোন সাক্ষী ও ঘোষণার দরকার নেই
আত-তুসী আত-তাহযীব ( التهذيب ) নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেন:
“মুত‘আ বিয়ের মধ্যে কোন সাক্ষী রাখার ও ঘোষণা দেয়ার প্রয়োজন নেই।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আত-তাহযীব ( التهذيب ), ২য় খণ্ড, ১৮৮]
আত-তুসী আরও বর্ণনা করেন:
“আবূ জাফর আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: শুধু মিরাস বা উত্তরাধিকারের কারণে বিবাহের মধ্যে দলিল-প্রমাণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আত-তাহযীব ( التهذيب ), ২য় খণ্ড, ১৮৬]
আবূ জাফর আত-তুসী তার আত-তাহযীব ( التهذيب ) নামক গ্রন্থে আরও বর্ণনা করেন:
“আমি আবূ আবদিল্লাহ আ.কে জিজ্ঞাসা করলাম ঐ পুরুষ ব্যক্তি সম্পর্কে, যে ব্যক্তি কোন নারীকে একটি কাঠির বিনিময়ে বিয়ে করে? জওয়াবে তিনি বললেন: কোন অসুবিধা নেই; কিন্তু যখন সে কাজ শেষ করে অবসর গ্রহণ করবে, তখন সে তার চেহারাকে পরিবর্তন করবে এবং তাকাবে না।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আত-তাহযীব ( التهذيب ), ২য় খণ্ড, ১৯০]
তিনি আত-তাহযীব ( التهذيب ) নামক গ্রন্থে আরও বর্ণনা করেন:
হাশেমী বংশের মহিলার সাথে মুত‘আ বিয়েতে কোন সমস্যা নেই।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আত-তাহযীব ( التهذيب ), ২য় খণ্ড, ১৯৩]
আল-কুলাইনী তার ‘আল-কাফী’ নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেন:
“আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: জনৈক মহিলা ওমরের নিকট আগমন করল, অতঃপর বলল, আমি ব্যভিচার করেছি, সুতরাং আপনি আমাকে পবিত্র করুন; অতঃপর তিনি (ওমর) তাকে পাথর মেরে হত্যার নির্দেশ দিলেন। অতঃপর আমীরুল মুমিনীন আ.কে এই ব্যাপারে সংবাদ দেয়া হলে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি কিভাবে ব্যভিচার (যিনা) করেছ? তখন সে বলল: আমি মরুভূমিতে পথ অতিক্রম করেছি, অতঃপর আমাকে প্রচণ্ড পানির তৃষ্ণায় পেল, আমি এক বেদুইনের নিকট পানি প্রার্থনা করলাম, কিন্তু সে আমাকে পানি পান করাতে অস্বীকার করল যতক্ষণ না আমি তাকে আমার উপর ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ দেই। অতঃপর পিপাসা যখন আমাকে ক্লান্ত করে ফেলল এবং আমি আমার জীবন নিয়ে আশঙ্কাবোধ করলাম, তখন সে আমাকে পানি পান করাল; আর আমিও আমার নিজের উপর তাকে ক্ষমতাবান করে দিলাম। এ কথা শুনে আমীরুল মুমিনীন আ. বললেন: কাবার মালিকের শপথ, এটা তো বিবাহ।” [ফুরু‘উল কাফী ( فروع الكافي ), ২য় খণ্ড, বিবাহ অধ্যায় ( كتاب النكاح ) পৃ. ১৯৮]
সুবহানাল্লাহ! প্রবৃত্তি শিয়াদের উপর বিজয় লাভ করেছে; ফলে তারা আমীরুল মুমিনীন আলী ইবন আবি তালিবের সাথে এই ধরনের মিথ্যাসমূহের সম্পর্কযুক্ত করেছে। অথবা তারা বুঝাতে চাচ্ছে যে, অপরাধী যালিম কর্তৃক জোরপূর্বক একজন নারীকে ব্যভিচার করা, তার উপর জবরদস্তি করা এবং মৃত্যু ও পিপাসা দ্বারা তাকে ভীতি প্রদর্শন করা; অতঃপর তার ষড়যন্ত্রের কারণে তার আহ্বানে সাড়া দেয়া এই সব কিছুই শিয়াদের নিকট শরিয়ত সম্মত বিবাহ বলে স্বীকৃত। অথবা এর দ্বারা কি প্রশস্ত দরজা উন্মুক্ত হয়ে যাবে না, যা দিয়ে প্রত্যেক অপরাধী ও ইতর শ্রেণীর লোক অনুপ্রবেশ করবে, অতঃপর যে কোন ভদ্র ও সম্মানিত মহিলাকে অপহরণ করবে এবং এই ধরনের যে কোন উপায় অবলম্বন করে তার সাথে যিনা-ব্যভিচার করতে তাকে বাধ্য করবে। অতঃপর শিয়াদের নিকট তা হয়ে যাবে বৈধ বিবাহ। আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, ইসলাম এই ধরনের মন্দ কাজ ও অপকর্ম থেকে মুক্ত ও পবিত্র।
অতঃপর শিয়াগণ মুত‘আ বিয়ের বৈধতার ব্যাপারে দলিল পেশ করে আল্লাহ তা‘আলার বাণী দ্বারা:
﴿فَمَا ٱسۡتَمۡتَعۡتُم بِهِۦ مِنۡهُنَّ فََٔاتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ فَرِيضَةٗ﴾ [ سورة النساء : 24]
“তাদের মধ্যে যাদেরকে তোমরা সম্ভোগ করেছ, তাদেরকে নির্ধারিত মোহর দিয়ে দাও।”— (সূরা আন-নিসা: ২৪); ইবনু মাসউদের এক কিরাতে রয়েছে:
" فَمَا ٱسۡتَمۡتَعۡتُم بِهِ مِنۡهُنّ إلى أجلٍ "
অর্থাৎ- তাদের মধ্যে যাদেরকে তোমরা সম্ভোগ করেছ নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত।
দলিলের জওয়াব:
আয়াতে উল্লেখিত " فاء " টি বাক্যকে পৃথক করার জন্য ব্যবহৃত, বাক্যকে নতুন করে শুরু করার অর্থে নয়। সুতরাং فَمَا ٱسۡتَمۡتَعۡتُم بِهِ مِنۡهُنّ মানে তোমরা বিশুদ্ধ বিবাহের দ্বারা নারীদের সাথে মিলনের মাধ্যমে যে স্বাদ ও উপকার হাসিল করেছে, তার বিনিময় স্বরূপ তাদের প্রতিদান তথা মোহর দিয়ে দাও। আর ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কিরাতটি একটি বিচ্ছিন্ন কিরাত, যা মূল গ্রন্থসমূহের মধ্যে পাওয়া যায় না; সুতরাং এটাকে কুরআন ও হাদিস বলে প্রমাণ দেয়া যাবে না এবং তার উপর আমল করাও আবশ্যক হবে না।
মুত‘আ বিয়ে অবৈধ ও নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে ইজমা সংঘটিত হয়েছে। এ ব্যাপারে শিয়াদের একটা অংশ ব্যতীত শহুরে আলেমদের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। আর মুত‘আ বিয়ে নিষিদ্ধ (হারাম) হওয়ার উপর দলিল হল আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿ قَدۡ أَفۡلَحَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ١ ٱلَّذِينَ هُمۡ فِي صَلَاتِهِمۡ خَٰشِعُونَ ٢ وَٱلَّذِينَ هُمۡ عَنِ ٱللَّغۡوِ مُعۡرِضُونَ ٣ وَٱلَّذِينَ هُمۡ لِلزَّكَوٰةِ فَٰعِلُونَ ٤ وَٱلَّذِينَ هُمۡ لِفُرُوجِهِمۡ حَٰفِظُونَ ٥ إِلَّا عَلَىٰٓ أَزۡوَٰجِهِمۡ أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُهُمۡ فَإِنَّهُمۡ غَيۡرُ مَلُومِينَ ٦ فَمَنِ ٱبۡتَغَىٰ وَرَآءَ ذَٰلِكَ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡعَادُونَ ٧ ﴾ [ سورة المؤمنون : 1-7]
“অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মুমিনগণ, যারা বিনয়-নম্র নিজেদের সালাতে, যারা ক্রিয়াকলাপ থেকে বিরত থাকে, যারা যাকাত দানে সক্রিয়, যারা নিজেদের যৌন অঙ্গকে সংযত রাখে নিজেদের স্ত্রী অথবা অধিকারভূক্ত দাসীগণ ব্যতীত, এতে তারা নিন্দনীয় হবে না, আর কেউ এদের ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তার হবে সীমালংঘনকারী।”— (সূরা আল-মুমিনুন: ১-৭)
সুতরাং এই আয়াতসমূহ দ্বারা প্রমাণিত হল যে, পুরুষ ব্যক্তির জন্য তার স্ত্রী ও অধিকারভূক্ত দাসীগণ ব্যতীত অন্য কোন নারী বৈধ নয়; অতএব এর বাইরে কোন নারীকে ব্যবহারের পথ খুঁজলে, সে হবে সীমালংঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত। আর এই কথা সুস্পষ্ট যে, পুরুষ ব্যক্তি মুত‘আ বিয়ের মাধ্যমে যে নারীর কর্তৃত্ব লাভ করবে, সে নারী তার জন্য বিবাহিত নয়। কারণ, মুত‘আ বিয়ের সাক্ষী, তার খরচ বহন করা, উত্তরাধিকার ও তালাকের শর্ত নেই; অনুরূপভাবে তাতে (মুত‘আ বিয়ের মধ্যে) চারটাতে সীমিতকরণ, তাকে বিক্রয়, হেবা ও মুক্তি দেয়ার বৈধতার শর্তও নেই, যেমনিভাবে তা দাসীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়। সুতরাং কিভাবে মুত‘আ বিয়ে হালাল বা বৈধ হবে?
অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿فَإِنۡ خِفۡتُمۡ أَلَّا تَعۡدِلُواْ فَوَٰحِدَةً أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُكُمۡ﴾ [ سورة النساء : 3]
“আর যদি আশঙ্কা কর যে, সুবিচার করতে পারবে না, তবে একজনকে অথবা তোমাদের অধিকারভূক্ত দাসীকে।”— (সূরা আন-নিসা: ৩)
সুতরাং যে ব্যক্তি অন্যায়ের আশঙ্কা করবে, সে যেন একজন স্ত্রী অথবা তার অধিকারভূক্ত দাসীকে যথেষ্ট মনে করে। সুতরাং কোথায় মুত‘আ বিয়ে? অতএব যদি তা হালাল হত, তবে তিনি (আল্লাহ) তা উল্লেখ করতেন। কারণ, প্রয়োজনের সময় আলোচনা বিলম্বিত করা বৈধ নয়।
অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿ وَمَن لَّمۡ يَسۡتَطِعۡ مِنكُمۡ طَوۡلًا أَن يَنكِحَ ٱلۡمُحۡصَنَٰتِ ٱلۡمُؤۡمِنَٰتِ فَمِن مَّا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُكُم مِّن فَتَيَٰتِكُمُ ٱلۡمُؤۡمِنَٰتِۚ وَٱللَّهُ أَعۡلَمُ بِإِيمَٰنِكُمۚ بَعۡضُكُم مِّنۢ بَعۡضٖۚ فَٱنكِحُوهُنَّ بِإِذۡنِ أَهۡلِهِنَّ وَءَاتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ بِٱلۡمَعۡرُوفِ مُحۡصَنَٰتٍ غَيۡرَ مُسَٰفِحَٰتٖ وَلَا مُتَّخِذَٰتِ أَخۡدَانٖۚ فَإِذَآ أُحۡصِنَّ فَإِنۡ أَتَيۡنَ بِفَٰحِشَةٖ فَعَلَيۡهِنَّ نِصۡفُ مَا عَلَى ٱلۡمُحۡصَنَٰتِ مِنَ ٱلۡعَذَابِۚ ذَٰلِكَ لِمَنۡ خَشِيَ ٱلۡعَنَتَ مِنكُمۡۚ وَأَن تَصۡبِرُواْ خَيۡرٞ لَّكُمۡۗ وَٱللَّهُ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٢٥ ﴾ [ سورة النساء : 25]
“তোমাদের মধ্যে কারও স্বাধীনা ঈমানদার নারী বিয়ে করার সামর্থ্য না থাকলে তোমরা তোমাদের অধিকারভূক্ত ঈমানদার দাসী বিয়ে করবে; আল্লাহ তোমাদের ঈমান সম্বন্ধে পরিজ্ঞাত। তোমরা একে অপরের সমান; সুতরাং তাদেরকে বিয়ে করবে তাদের মালিকের অনুমতিক্রমে এবং তাদেরকে তাদের মোহর ন্যায়সংগতভাবে দিয়ে দেবে। তারা হবে সচ্চরিত্রা, ব্যভিচারী নয় ও উপপতি গ্রহণকারিণীও নয়। বিবাহিতা হওয়ার পর যদি তারা ব্যভিচার করে, তবে তাদের শাস্তি স্বাধীনা নারীর অর্ধেক; তোমাদের মধ্যে যারা ব্যভিচারকে ভয় করে, এটা তাদের জন্য; ধৈর্য ধারণ করা তোমাদের জন্য মঙ্গল। আল্লাহ ক্ষমাপরায়ণ, পরম দয়ালু।”— (সূরা আন-নিসা: ২৫)
সুতরাং যদি মুত‘আ বিয়ে হালাল হত, তবে তিনি (আল্লাহ) তা উল্লেখ করতেন। বিশেষ করে তিনি উল্লেখ করেছেন ﴿ مَنۡ خَشِيَ ٱلۡعَنَتَ ﴾ অর্থাৎ- ‘যারা ব্যভিচারকে ভয় করে’। আর (যদি মুত‘আ বিয়ে হালাল হত) তিনি তা উল্লেখ করতেন না। সুতরাং এটাই প্রমাণ হয় যে, নিঃসন্দেহ তা (মুত‘আ বিয়ে) হারাম।
অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿ وَلۡيَسۡتَعۡفِفِ ٱلَّذِينَ لَا يَجِدُونَ نِكَاحًا حَتَّىٰ يُغۡنِيَهُمُ ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِۦ﴾ [ سورة النور : 33]
“যাদের বিয়ের সামর্থ্য নেই, আল্লাহ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত না করা পর্যন্ত তারা যেন সংযম অবলম্বন করে।”— (সূরা আন-নূর: ৩৩)
সুতরাং তিনি যার বিয়ের সামর্থ্য নেই, তাকে মুত‘আ বিয়ের মাধ্যমে নারীর উপর কর্তৃত্ব গ্রহণ ও তাকে ভোগ করার নির্দেশ দেননি; যতক্ষণ না আল্লাহ তাকে নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত করেন (সচ্চরিত্রবান অবস্থায় প্রকাশ্য ব্যভিচারের জন্য নয়)। আর আয়াত দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, বিয়ের মধ্যে রয়েছে সতীত্ব ও পবিত্রতা; আর মুত‘আ বিয়ের মধ্যে তার কিছুই নেই। সুতরাং তা হারাম (নিষিদ্ধ) হওয়ার ব্যাপারে এ সবই সুস্পষ্ট প্রমাণ।
আর রাফেযীগণ (শিয়াগণ) মুত‘আ বিয়ের বৈধতার ব্যাপারে আমাদের নিকট বিশুদ্ধ গ্রন্থসমূহে বর্ণিত কিছু সংখ্যক হাদিস দ্বারা দলিল পেশ করে; তার জওয়াব হল: ঐসব হাদিস মানসুখ (রহিত) হয়ে গেছে; যেমনিভাবে তা সুস্পষ্ট হয়ে যায় অপরাপর হাদিসসমূহ থেকে, যা আমরা অচিরেই উল্লেখ করব। যা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন সকল ব্যাখ্যাকার এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ইমামগণ। আর এই ব্যাপারে সকলের ইজমা (ঐক্যমত) হয়েছে। সুতরাং তাদের পক্ষে তার (মুত‘আ বিয়ের বৈধতার) ব্যাপারে কোন দলিল নেই।
আর মুত‘আ বিয়ে নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে আরও দলিল হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী:
« يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّى قَدْ كُنْتُ أَذِنْتُ لَكُمْ فِى الاِسْتِمْتَاعِ مِنَ النِّسَاءِ وَإِنَّ اللَّهَ قَدْ حَرَّمَ ذَلِكَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ فَمَنْ كَانَ عِنْدَهُ مِنْهُنَّ شَىْءٌ فَلْيُخَلِّ سَبِيلَهُ وَلاَ تَأْخُذُوا مِمَّا آتَيْتُمُوهُنَّ شَيْئًا » . [ أخرجه مسلم ]
“হে লোকসকল! আমি তোমাদেরকে (সাময়িক বিয়ের মাধ্যমে) নারীদের ভোগ করার অনুমতি দিয়েছিলাম; আর আল্লাহ তা কিয়ামতের দিন পর্যন্ত নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। সুতরাং যার নিকট তাদের পক্ষ থেকে কোন বস্তু রয়েছে, সে যেন তার পথ উন্মুক্ত করে দেয়; আর তোমরা তাদেরকে যা প্রদান করেছ, তার মধ্য থেকে কিছুই গ্রহণ করো না।” [সহীহ মুসলিম, বিবাহ ( نكاح ) অধ্যায়, বাব নং- ৩, হাদিস নং- ৩৪৮৮]
অনুরূপভাবে ইমাম মুসলিম র. আরও বর্ণনা করেছেন:
«أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم نَهَى عَنِ الْمُتْعَةِ وَقَالَ : أَلاَ إِنَّهَا حَرَامٌ مِنْ يَوْمِكُمْ هَذَا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَمَنْ كَانَ أَعْطَى شَيْئًا فَلاَ يَأْخُذْهُ » . [ أخرجه مسلم ]
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুত‘আ বিয়ে থেকে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন: সাবধান! নিশ্চয় তা (মুত‘আ বিয়ে) তোমাদের এই দিন থেকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত হারাম (নিষিদ্ধ)। আর যে ব্যক্তি কোন কিছু প্রদান করেছে, সে যেন তা গ্রহণ না করে।” [সহীহ মুসলিম, বিবাহ ( نكاح ) অধ্যায়, বাব নং- ৩, হাদিস নং- ৩৪৯৬]
ইমাম তিরমিযী র. বর্ণনা করেন:
«عن ابن عباس قال : إنما كانت المتعة في أول الإسلام كان الرجل يقدم البلدة ليس له بها معرفة فيتزوج المرأة بقدر ما يرى أنه يقيم فتحفظ له متاعه وتصلح له شيئه حتى إذا نزلت الآية ﴿ إلا على أزواجهم أو ما ملكت أيمانهم ﴾ قال ابن عباس فكل فرج سوى هذين فهو حرام » . [ أخرجه مسلم ]
“ইবনু আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: মুত‘আ বিয়ে ইসলামের প্রথম দিকে বৈধ ছিল, পুরুষ ব্যক্তি বিভিন্ন শহরে আগমন করত, যা তার নিকট অপরিচিত; অতঃপর সে যেই পরিমাণ সময় সেখানে অবস্থান করত, সেই পরিমাণ সময়ের জন্য কোন নারীকে বিয়ে করত; অতঃপর সে তার মালমাত্তার হেফাজত করত এবং তার জিনিসপত্র তার জন্য ঠিকঠাক করে রাখবে, শেষ পর্যন্ত আয়াত নাযিল হল: ﴿ إلا على أزواجهم أو ما ملكت أيمانهم ﴾ অর্থাৎ- (যারা নিজেদের যৌন অঙ্গকে সংযত রাখে) নিজেদের স্ত্রী অথবা অধিকারভূক্ত দাসীগণ ব্যতীত); ইবনু আব্বাস রা. বলেন: এই দুই যৌন অঙ্গ ব্যতীত সকল যৌন অঙ্গই হারাম।” [সুনানুত তিরমিযী, বিবাহ ( نكاح ) অধ্যায়, বাব নং- ২৯ ( باب تحريم نكاح المتعة ), হাদিস নং- ১১২২]
আল-হাযেমী বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারা তাদের বাড়ি-ঘর ও নিজ দেশে অবস্থানরত অবস্থায় তাদের জন্য কখনও মুত‘আ বিয়ে বৈধ করেন নি; বরং তিনি শুধু বিভিন্ন সময়ে জরুরী প্রয়োজনে তাদের জন্য তা বৈধ করেছেন; শেষ পর্যন্ত তিনি তাদের উপর তা কিয়ামতের দিন পর্যন্ত নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন।
শিয়াদের কিতাবসমূহের মধ্যেও বর্ণিত আছে:
« عن علي عليه السلام قال : حرّم رسول الله صلى الله عليه و سلم يوم خيبر لحوم الحمر الأهلية و نكاح المتعة » . [ التهذيب ]
“আলী আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বরের যুদ্ধের দিন গৃহপালিত গাদার গোশত ও মুত‘আ বিয়ে নিষিদ্ধ করেছেন।” [আত-তাহযীব ( التهذيب ), ২য় খণ্ড, পৃ. ১৮৬; আল-ইসতিবসার ( الاستبصار ),৩য় খণ্ড, পৃ. ১৪২]
মুত‘আ বিয়ে নিষিদ্ধ হওয়ার উপর কার্যকরী ও অকাট্য দলিলসমূহ পুরাপুরিভাবে উপস্থাপনের পর আমাদের উচিত যুক্তিভিত্তিক দলিলের গভীরভাবে দৃষ্টি দেওয়া; তবে কিন্তু সে দলিলসমূহ হতে হবে খেয়াল-খুশি থেকে মুক্ত এবং নির্লজ্জতা ও খোঁড়া যুক্তির উর্ধ্বে। আর তা হল, একজন পুরুষের জন্য শুধু চারটি [চারটি বিয়ে মানে একজন পুরুষ একসাথে সর্বোচ্চ চারজন স্ত্রী নিয়ে ঘর-সংসার করতে পারবে। তালাক বা মৃত্যু জনিত কারণে শূন্যতার ভিত্তিতে শরিয়ত সম্মতভাবে তার বিয়ের সংখ্যা চারের অধিকও হতে পারে। — অনুবাদক।] বিবাহ বৈধ রাখা হয়েছে, তার বেশি নয়। অপরদিকে রাফেযী ও শিয়াগণ একজন পুরুষের জন্য এক হাজার অথবা দুই হাজার নারীকে ভোগ করার বৈধতা দিয়েছে, যার আলোচনা পূর্বে হয়েছে। সুতরাং এই পদ্ধতি তার অধিক ছেলে ও মেয়ের বাস্তবতার দিকে নিয়ে নিয়ে যাবে এবং বিবাহ ও উত্তরাধিকার নীতিমালার মধ্যে ত্রুটি সৃষ্টি করবে। কারণ, সে বিবাহ ও উত্তরাধিকারের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে তখনই জানতে পারবে, যখন সে বংশের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে জানতে পারবে; কিন্তু তাদের সংখ্যাধিক্যের কারণে তা সম্ভব হয়ে উঠবে না। অতএব ধরে নাও যে, যদি কোন ব্যক্তি বিনোদনের উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করে এবং প্রত্যেক শহরে গিয়ে সে মুত‘আ বিয়ের মাধ্যমে নারী ভোগ করতে থাকে, এমনকি পরবর্তীতে তার অনেক ছেলে-মেয়ে হয়ে গেল; অতঃপর তার অথবা তার কোন এক ভাই অথবা কন্যার সুযোগ হল ঐ শহরগুলোতে ফিরে যাওয়ার এবং চলাফেরা করার; অতঃপর সে ব্যক্তি সেখানকার কোন নারীকে বিয়ে করল; সুতরাং ঐ নারীদের কেউ তার কন্যা হতে কিসে বাধা দেবে? আর তখন দেখা যাবে যে, তার বিয়ে হয়েছে তার কোন কন্যা অথবা তার ভাইয়ের কন্যা অথবা তার বোনের সাথে।
আশ্চর্যের বিষয় হল, এই সবের পরেও শিয়াগণ মুত‘আ বিয়েকে (বৈধ বলে) আঁকড়ে ধরে রাখে এবং দলিল পেশ করে যে, তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যামানার শুরুর দিকে প্রচলিত ছিল। আর তারা প্রমাণ করে যে, মুত‘আ বিয়ে সংঘটিত হত সাক্ষীর মাধ্যমে এবং তারা এ সম্পর্কে জানতে পারে তাদের কিতাবসমূহের মধ্য থেকে।
আর এই যুগে শিয়াগণ যে মুত‘আ বিয়ের কথা প্রকাশ করে, তাতে তারা সাক্ষীর শর্ত করে না; সুতরাং কিভাবে এই মুত‘আ বিয়ের বিশুদ্ধতার উপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যামানার শুরুর দিকে প্রচলিত মুত‘আ বিয়ের দ্বারা তাদের দলিল পেশ করাটা শুদ্ধ হবে? আর তুমি তাদের বর্ণনাসমূহ নিয়ে ভেবে দেখ।
ইমাম জাফর সাদিককে জিজ্ঞাসা করা হল: মুসলিমগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে বিনা প্রমাণে বিবাহ করত কিনা; জবাবে তিনি বললেন: না। [আত-তাহযীব ( التهذيب ), ২য় খণ্ড, পৃ. ১৮৯] আর তারা এই বর্ণনাটি উল্লেখ করেছে “তারা মুত‘আ বিয়ে করে” ( باب المتعة يتزوجون ) নামক অধ্যায়ে। বিয়ে দ্বারা তাদের নিকট উদ্দেশ্য হল মুত‘আ বিয়ে। আর লেখক সুস্পষ্ট করেছেন যে, তিনি এর থেকে স্থায়ী বিবাহকে উদ্দেশ্য করেন নি; বরং এর দ্বারা উদ্দেশ্য করেছেন মুত‘আ বিয়েকে।
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: যে ব্যক্তি একবার মুত‘আ বিয়ে করবে, তার মর্যাদা হবে হোসাইনের মর্যাদার সমান; আর যে ব্যক্তি দুইবার মুত‘আ বিয়ে করবে, তার মর্যাদা হবে হাসানের মর্যাদার সমান; আর যে ব্যক্তি তিনবার মুত‘আ বিয়ে করবে, তার মর্যাদা হবে আলী ইবন আবি তালিবের মর্যাদার সমান এবং যে ব্যক্তি চারবার মুত‘আ বিয়ে করবে, তার মর্যাদা হবে আমার মর্যাদার সমান।” [মোল্লা ফতহুল্লাহ আল-কাশানী, তাফসীরু মানহাজিস সাদেকীন ( تفسير منهج الصادقين ), পৃ. ৩৫৬]
আল-কাশানী তার তাফসীরের মধ্যে আরও উল্লেখ করেন:
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: যে ব্যক্তি মুত‘আ বিয়ে (সাময়িক বিবাহ) না করে দুনিয়া থেকে বের হয়েছে (মৃত্যুবরণ করেছে), সে কিয়ামতের দিন নাক কাটা অবস্থায় হাজির হবে।” [মোল্লা ফতহুল্লাহ আল-কাশানী, তাফসীরু মানহাজিস সাদেকীন ( تفسير منهج الصادقين ), পৃ. ৩৫৬]
আল-কাশানী তার তাফসীরের মধ্যে ফারসি ভাষায় বর্ণনা করেন, যার অনুবাদ হল:
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: জিবরাইল আমার নিকট আমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে উপহার নিয়ে আগমন করল; আর ঐ উপহার ছিল মুমিন নারীদের ভোগ করা। আর এই উপহার আমার পূর্বে আল্লাহ তা‘আলা আর কোন নবীকে দান করেন নি ...। তোমরা জেনে রাখ, পূর্ববতী সকল নবীর উপর আমার মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের কারণে আল্লাহ তা‘আলা আমাকে মুত‘আ বিয়ের মাধ্যমে বিশেষিত করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি তার জীবনে একবার মুত‘আ বিয়ে করবে, সে ব্যক্তি জান্নাতের অধিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। ... আর যখন মুত‘আ বিবাহিত নারী ও পুরুষ কোন জায়গায় একত্রিত হবে, তখন তাদের উপর একজন ফেরেশতা নাযিল হবে এবং সে তারা বিচ্ছিন্ন হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে পাহারা দেবে; আর তাদের উভয়ের মধ্যে যে কথাবার্তা হবে, সে কথাবার্তাগুলো হবে যিকির ও তাসবীহ; আর তাদের একজন যখন অপর জনের হাত ধরবে, তখন তাদের উভয়ের আঙ্গুলসমূহ থেকে গুনাহসমূহ ফোটায় ফোটায় ঝরতে থাকবে; আর যখন তাদের একজন অপর জনকে চুম্বন করবে, তখন তাদের জন্য প্রত্যেক চুম্বনের বিনিময়ে হজ ও ওমরার সাওয়াব লিপিবদ্ধ করা হবে এবং তাদের সহবাসের সময় প্রত্যেক কামনা ও স্বাদের বিনিময়ে সুউচ্চ পর্বতসমূহ পরিমাণ পুণ্য লেখা হবে। আর যখন তারা গোসলে মশগুল থাকবে এবং পানি ফোটা ঝড়বে, তখন আল্লাহ তা‘আলা ঐ পানির প্রত্যেক ফোটা দ্বারা একজন করে ফেরেশতা সৃষ্টি করবেন, যে আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করবে ও তার পবিত্রতা বর্ণনা করবে এবং তার তাসবীহ ও পবিত্রতা বর্ণনার সাওয়াব তাদের উভয়ের জন্য কিয়ামত পর্যন্ত লিপিবদ্ধ হতে থাকবে।
হে আলী! যে ব্যক্তি এই সুন্নাতটিকে (মুত‘আ বিয়েকে) হালকা ও দুর্বল মনে করবে এবং তাকে অপছন্দ করবে, সে ব্যক্তি আমার দলভূক্ত নয় এবং আমি তার দায়-দায়িত্ব থেকে মুক্ত ...।
জিবরাইল আ. বলল: হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! যে দিরহামটি মুমিন তার মুত‘আ বিয়েতে খরচ করবে, তা আল্লাহর নিকট মুতা‘ বিয়ের বাইরে এক হাজার দিরহাম ব্যয় করার চেয়ে উত্তম।
হে মুহাম্মদ! জান্নাতের মধ্যে ডাগর চক্ষু বিশিষ্ট এক দল হুর রয়েছে, যাদেরকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন মুত‘আ বিয়ের অনুসারীদের জন্য।
হে মুহাম্মদ! যখন মুমিন পুরুষ মুমিন নারীকে মুত‘আ বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ করে, তখন সে তার যে জায়গায়ই দাঁড়াবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং মুমিন নারীকেও ক্ষমা করে দেবেন ...।
আস-সাদিক আ. থেকে বর্ণিত, মুত‘আ বিয়ে আমার এবং আমার বাপ-দাদার দীনের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং যে ব্যক্তি তার উপর আমল করবে, সে আমাদের দীনের উপর আমল করবে এবং যে ব্যক্তি তা অস্বীকার করবে, সে আমাদের দীনকে অস্বীকার করবে; বরং সে আমাদের দীন ব্যতীত অন্য দীনের অনুসরণ করবে। মুত‘আ বিয়ের স্ত্রীর গর্ভের সন্তান স্থায়ী স্ত্রীর গর্ভের সন্তানের চেয়ে উত্তম। আর মুত‘আ বিয়ের বিধান অস্বীকারকারী কাফির, মুরতাদ।” [মোল্লা ফতহুল্লাহ আল-কাশানী, তাফসীরু মানহাজিস সাদেকীন ( تفسير منهج الصادقين ), পৃ. ৩৫৬]
‘মুন্তাহাল আমাল’ ( منتهى الأمال ) নামক গ্রন্থের লেখক ফারসি ভাষায় উল্লেখ করেন, যার অনুবাদ হল:
“আস-সাদিক আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: যে ব্যক্তি মুত‘আ বিয়ের স্ত্রীকে ভোগ করে, অতঃপর গোসল করে, আল্লাহ তার শরীর থেকে ঝরে পড়া প্রতি ফোটা পানি থেকে সত্তর জন ফেরেশতা সৃষ্টি করেন, যাতে তারা কিয়ামত পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং কিয়ামত পর্যন্ত ঐ ব্যক্তিকে অভিশাপ দেয়, যে মুত‘আ বিয়ে থেকে দূরে থাকে।” [মুন্তাহাল আমাল ( منتهى الأمال ), ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৪১]
উর্দু ভাষায় লিখিত ‘উজালাতুন হাসানাহ্ ( عجالة حسنة ) মুত‘আ বিয়ের ফযিলত সম্পর্কে অনেকগুলো বর্ণনার উল্লেখ করা হয়েছে; আর তা হল আল-মাজলিসী’র ‘রিসালাতুল মুত‘আ’ ( رسالة المتعة ) নামক পুস্তিকার অনুবাদ। এখানে আমরা তার কিয়দংশের অনুবাদ উল্লেখ করছি:
“আমীরুল মুমিনীন আলী আ. বলেন: যে ব্যক্তি এই সুন্নাতটিকে (মুত‘আ বিয়েকে) কঠিন হিসেবে পেল এবং তা গ্রহণ করল না, সে ব্যক্তি আমার দলভূক্ত নয় এবং আমি তার দায়-দায়িত্ব থেকে মুক্ত।” [আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসী’র ‘রিসালাতুল মুত‘আ’ ( رسالة المتعة )-এর অনুবাদ ‘উজালাতুন হাসানা’ ( عجالة حسنة ), পৃ. ১৫]
“সাইয়্যেদুল ‘আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যে ব্যক্তি মুমিন নারীকে মুত‘আ বিয়ের মাধ্যমে ভোগ করে, সে যেন সত্তর বার কাবা যিয়ারত করে।” [‘উজালাতুন হাসানা ( عجالة حسنة ), পৃ. ১৬]
“রহমাতুল্লিল ‘আলামীন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যে ব্যক্তি একবার মুত‘আ বিয়ে করল, সে তার শরীরের এক তৃতীয়াংশ জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করল। আর যে ব্যক্তি দুইবার মুত‘আ বিয়ে করল, সে তার শরীরের দুই তৃতীয়াংশ জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করল। আর যে ব্যক্তি তিনবার মুত‘আ বিয়ে করল, সে তার গোটা শরীরকে জাহান্নামের জ্বলন্ত আগুন থেকে নিরাপদ করল।” [‘উজালাতুন হাসানা ( عجالة حسنة ), পৃ. ১৬]
“সাইয়্যেদুল বাশার শাফে‘উল মাহশার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: হে আলী! মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীগণের উচিত দুনিয়া থেকে ইন্তিকাল করে আখেরাতে যাওয়ার পূর্বে একবার হলেও মুত‘আ বিয়ের প্রতি উৎসাহিত হওয়া।
আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং নিজেই শপথ করে বলেন যে, তিনি এমন পুরুষ অথবা নারীকে শাস্তি দেবেন না, যে মুত‘আ বিয়ে করেছে; আর যে ব্যক্তি এই কল্যাণকর (মুত‘আ বিয়ের) বিষয়টি নিয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা-সাধনা করে এবং সেই ব্যাপারে পাথেয় প্রার্থনা করে, আল্লাহ তা‘আলা তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন।” [‘উজালাতুন হাসানা ( عجالة حسنة ), পৃ. ১৬]
আল-কাশানী তার তাফসীরের মধ্যে ফারসি ভাষায় একটি দীর্ঘ বর্ণনার উল্লেখ করেন, যার অর্থ হল:
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল: যে ব্যক্তি মুত‘আ বিয়ের এই বিষয়টি নিয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা-সাধনা করবে, তার প্রতিদান কী হবে? জওয়াবে তিনি বললেন: সে উভয়ের (সমান) প্রতিদান পাবে। অর্থাৎ মুত‘আ বিবাহকারী নারী ও পুরুষের মধ্যে চেষ্টা-সাধনাকারীর জন্য তাদের উভয়ের সমান প্রতিদান রয়েছে।” [মোল্লা ফতহুল্লাহ আল-কাশানী, তাফসীরু মানহাজিস সাদেকীন ( تفسير منهج الصادقين ), পৃ. ৩৫৬]
আবূ জাফর আল-কুমী ‘মান লা ইয়াহদুরুহুল ফকিহ’ ( من لا يحضره الفقيه ) নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেন; আর এটা শিয়াদের নিকট চারটি বিশুদ্ধ গ্রন্থের অন্যতম, তাতে বলা হয়:
“মুমিন পরিপূর্ণ হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে মুত‘আ বিয়ে করবে।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন বাবুইয়া আল-কুমী, মান লা ইয়াহদুরুহুল ফকিহ ( من لا يحضره الفقيه ), পৃ. ৩৩০]
আল-কুমী আরও উল্লেখ করেন:
“আবূ জাফর আ. বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখন আকশ পর্যন্ত ভ্রমণ করানো হল, তখন তিনি বলেন, জিবরাইল আমার সাথে মিলিত হল এবং বলল: হে মুহাম্মদ! আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি তোমার উম্মতের মধ্য থেকে মুত‘আ বিয়ের মাধ্যমে নারীদের ভোগকারীদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন বাবুইয়া আল-কুমী, মান লা ইয়াহদুরুহুল ফকিহ ( من لا يحضره الفقيه ), পৃ. ৩৩০]
আল-কুমী আরও উল্লেখ করেন:
“আস-সাদিক আ. বলেন: আমি সেই পুরুষ ব্যক্তির মৃত্যুবরণকে অপছন্দ করি, যার স্বভাবের মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্বভাবসমূহের মধ্য থেকে একটি স্বভাব বাকি রয়েছে এবং সে তা বাস্তবায়ন করেনি; অতঃপর আমি বললাম: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি মুত‘আ বিয়ে করেছেন? তিনি বললনে: হ্যাঁ।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন বাবুইয়া আল-কুমী, মান লা ইয়াহদুরুহুল ফকিহ ( من لا يحضره الفقيه ), পৃ. ৩৩০]
আল-কুমী আরও উল্লেখ করেন:
“আবদুল্লাহ ইবন সিনান থেকে বর্ণিত, তিনি আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা‘আলা আমাদের শিয়াদের উপর মাতালকারী প্রত্যেক শরাব নিষিদ্ধ করেছেন এবং তার বিনিময় স্বরূপ তাদেরকে মুত‘আ বিয়ের সুযোগ দিয়েছেন।” [মান লা ইয়াহদুরুহুল ফকিহ ( من لا يحضره الفقيه ), পৃ. ৩৩০; মুন্তাহাল আমাল ( منتهى الأمال ), ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩৪১]
শিয়াদের মতে মুত‘আ বিয়ের রুকন ও তার বিধানসমূহ
মোল্লা ফতহুল্লাহ আল-কাশানী তার তাফসীরু মানহাজিস সাদেকীন ( تفسير منهج الصادقين ) নামক তাফসীরের মধ্যে ফারসি ভাষায় বর্ণনা করেন, যার অর্থ হল:
“জেনে রাখা উচিত, মুত‘আ বিয়ে সংঘটিত করার রুকন পাঁচটি: স্বামী, স্ত্রী, মোহর, সময় নির্ধারণ এবং ইজাব (প্রস্তাব) ও কবুল (গ্রহণ)।” [মোল্লা ফতহুল্লাহ আল-কাশানী, তাফসীরু মানহাজিস সাদেকীন ( تفسير منهج الصادقين ), পৃ. ৩৫৭]
আল-কাশানী ফারসি ভাষায় আরও বর্ণনা করেন, যার অর্থ হল:
“জেনে রাখ, মুত‘আ বিয়ের মধ্যে স্ত্রীদের সংখ্যা সীমিত নয়; আর পুরুষের জন্য ব্যয়ভার বহন, বাসস্থানের ব্যবস্থা করা ও পোষাক-পরিচ্ছদ প্রদান করা আবশ্যক নয়। আর মুত‘আ বিবাহকারী স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে উত্তরাধিকার সাব্যস্ত হয় না। এসব জিনিস (বিষয়) স্হায়ী বিবাহ বন্ধনের ক্ষেত্রেই কেবল প্রযোজ্য হবে।” [মোল্লা ফতহুল্লাহ আল-কাশানী, তাফসীরু মানহাজিস সাদেকীন ( تفسير منهج الصادقين ), পৃ. ৩৫২]
আবূ জাফর আত-তুসী বর্ণনা করেন:
“আবূ আবদুল্লাহ আ.কে মুত‘আ বিয়ে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল, তা কি চারের ভিতরেই সীমিত? জওয়াবে তিনি বলেন: না, এমনকি সত্তরের মধ্যেও সীমিত নয় ...। আবূ আবদুল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: তার নিকট মুত‘আ বিয়ে সম্পর্কে আলোচনা করা হল, তা কি চারের ভিতরেই সীমিত? জওয়াবে তিনি বলেন: তুমি তাদের (নারীদের) মধ্য থেকে এক হাজার জনকে বিয়ে করতে পার! কারণ, তারা ভাড়াটে ... সে তালাকও পাবে না এবং উত্তরাধিকারীও হবে না; সে শুধু ভাড়াটে।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আত-তাহযীব ( التهذيب ), ৩য় খণ্ড, ১৮৮]
মুত‘আ বিয়ের মাহর
আবূ জাফর আত-তুসী তার আত-তাহযীব ( التهذيب ) নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেন:
“উভয়ের সম্মতি ও সন্তুষ্টি চিত্তে যা নির্ধারিত হবে, তাই হবে মুত‘আ বিয়ের মোহর; কম হউক বা বেশি হউক ...। আমি আবূ আবদিল্লাহ আ.কে বললাম, সর্বনিম্ন কী দিয়ে মুত‘আ বিয়ে অনুষ্ঠিত হবে? তখন তিনি বললেন: এক মুষ্টি গম।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আত-তাহযীব ( التهذيب ), ২য় খণ্ড, ১৮৮]
মুত‘আ বিয়ের মধ্যে কোন সাক্ষী ও ঘোষণার দরকার নেই
আত-তুসী আত-তাহযীব ( التهذيب ) নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেন:
“মুত‘আ বিয়ের মধ্যে কোন সাক্ষী রাখার ও ঘোষণা দেয়ার প্রয়োজন নেই।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আত-তাহযীব ( التهذيب ), ২য় খণ্ড, ১৮৮]
আত-তুসী আরও বর্ণনা করেন:
“আবূ জাফর আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: শুধু মিরাস বা উত্তরাধিকারের কারণে বিবাহের মধ্যে দলিল-প্রমাণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আত-তাহযীব ( التهذيب ), ২য় খণ্ড, ১৮৬]
আবূ জাফর আত-তুসী তার আত-তাহযীব ( التهذيب ) নামক গ্রন্থে আরও বর্ণনা করেন:
“আমি আবূ আবদিল্লাহ আ.কে জিজ্ঞাসা করলাম ঐ পুরুষ ব্যক্তি সম্পর্কে, যে ব্যক্তি কোন নারীকে একটি কাঠির বিনিময়ে বিয়ে করে? জওয়াবে তিনি বললেন: কোন অসুবিধা নেই; কিন্তু যখন সে কাজ শেষ করে অবসর গ্রহণ করবে, তখন সে তার চেহারাকে পরিবর্তন করবে এবং তাকাবে না।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আত-তাহযীব ( التهذيب ), ২য় খণ্ড, ১৯০]
তিনি আত-তাহযীব ( التهذيب ) নামক গ্রন্থে আরও বর্ণনা করেন:
হাশেমী বংশের মহিলার সাথে মুত‘আ বিয়েতে কোন সমস্যা নেই।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আত-তাহযীব ( التهذيب ), ২য় খণ্ড, ১৯৩]
আল-কুলাইনী তার ‘আল-কাফী’ নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেন:
“আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: জনৈক মহিলা ওমরের নিকট আগমন করল, অতঃপর বলল, আমি ব্যভিচার করেছি, সুতরাং আপনি আমাকে পবিত্র করুন; অতঃপর তিনি (ওমর) তাকে পাথর মেরে হত্যার নির্দেশ দিলেন। অতঃপর আমীরুল মুমিনীন আ.কে এই ব্যাপারে সংবাদ দেয়া হলে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি কিভাবে ব্যভিচার (যিনা) করেছ? তখন সে বলল: আমি মরুভূমিতে পথ অতিক্রম করেছি, অতঃপর আমাকে প্রচণ্ড পানির তৃষ্ণায় পেল, আমি এক বেদুইনের নিকট পানি প্রার্থনা করলাম, কিন্তু সে আমাকে পানি পান করাতে অস্বীকার করল যতক্ষণ না আমি তাকে আমার উপর ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ দেই। অতঃপর পিপাসা যখন আমাকে ক্লান্ত করে ফেলল এবং আমি আমার জীবন নিয়ে আশঙ্কাবোধ করলাম, তখন সে আমাকে পানি পান করাল; আর আমিও আমার নিজের উপর তাকে ক্ষমতাবান করে দিলাম। এ কথা শুনে আমীরুল মুমিনীন আ. বললেন: কাবার মালিকের শপথ, এটা তো বিবাহ।” [ফুরু‘উল কাফী ( فروع الكافي ), ২য় খণ্ড, বিবাহ অধ্যায় ( كتاب النكاح ) পৃ. ১৯৮]
সুবহানাল্লাহ! প্রবৃত্তি শিয়াদের উপর বিজয় লাভ করেছে; ফলে তারা আমীরুল মুমিনীন আলী ইবন আবি তালিবের সাথে এই ধরনের মিথ্যাসমূহের সম্পর্কযুক্ত করেছে। অথবা তারা বুঝাতে চাচ্ছে যে, অপরাধী যালিম কর্তৃক জোরপূর্বক একজন নারীকে ব্যভিচার করা, তার উপর জবরদস্তি করা এবং মৃত্যু ও পিপাসা দ্বারা তাকে ভীতি প্রদর্শন করা; অতঃপর তার ষড়যন্ত্রের কারণে তার আহ্বানে সাড়া দেয়া এই সব কিছুই শিয়াদের নিকট শরিয়ত সম্মত বিবাহ বলে স্বীকৃত। অথবা এর দ্বারা কি প্রশস্ত দরজা উন্মুক্ত হয়ে যাবে না, যা দিয়ে প্রত্যেক অপরাধী ও ইতর শ্রেণীর লোক অনুপ্রবেশ করবে, অতঃপর যে কোন ভদ্র ও সম্মানিত মহিলাকে অপহরণ করবে এবং এই ধরনের যে কোন উপায় অবলম্বন করে তার সাথে যিনা-ব্যভিচার করতে তাকে বাধ্য করবে। অতঃপর শিয়াদের নিকট তা হয়ে যাবে বৈধ বিবাহ। আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, ইসলাম এই ধরনের মন্দ কাজ ও অপকর্ম থেকে মুক্ত ও পবিত্র।
অতঃপর শিয়াগণ মুত‘আ বিয়ের বৈধতার ব্যাপারে দলিল পেশ করে আল্লাহ তা‘আলার বাণী দ্বারা:
﴿فَمَا ٱسۡتَمۡتَعۡتُم بِهِۦ مِنۡهُنَّ فََٔاتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ فَرِيضَةٗ﴾ [ سورة النساء : 24]
“তাদের মধ্যে যাদেরকে তোমরা সম্ভোগ করেছ, তাদেরকে নির্ধারিত মোহর দিয়ে দাও।”— (সূরা আন-নিসা: ২৪); ইবনু মাসউদের এক কিরাতে রয়েছে:
" فَمَا ٱسۡتَمۡتَعۡتُم بِهِ مِنۡهُنّ إلى أجلٍ "
অর্থাৎ- তাদের মধ্যে যাদেরকে তোমরা সম্ভোগ করেছ নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত।
দলিলের জওয়াব:
আয়াতে উল্লেখিত " فاء " টি বাক্যকে পৃথক করার জন্য ব্যবহৃত, বাক্যকে নতুন করে শুরু করার অর্থে নয়। সুতরাং فَمَا ٱسۡتَمۡتَعۡتُم بِهِ مِنۡهُنّ মানে তোমরা বিশুদ্ধ বিবাহের দ্বারা নারীদের সাথে মিলনের মাধ্যমে যে স্বাদ ও উপকার হাসিল করেছে, তার বিনিময় স্বরূপ তাদের প্রতিদান তথা মোহর দিয়ে দাও। আর ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কিরাতটি একটি বিচ্ছিন্ন কিরাত, যা মূল গ্রন্থসমূহের মধ্যে পাওয়া যায় না; সুতরাং এটাকে কুরআন ও হাদিস বলে প্রমাণ দেয়া যাবে না এবং তার উপর আমল করাও আবশ্যক হবে না।
মুত‘আ বিয়ে অবৈধ ও নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে ইজমা সংঘটিত হয়েছে। এ ব্যাপারে শিয়াদের একটা অংশ ব্যতীত শহুরে আলেমদের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। আর মুত‘আ বিয়ে নিষিদ্ধ (হারাম) হওয়ার উপর দলিল হল আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿ قَدۡ أَفۡلَحَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ١ ٱلَّذِينَ هُمۡ فِي صَلَاتِهِمۡ خَٰشِعُونَ ٢ وَٱلَّذِينَ هُمۡ عَنِ ٱللَّغۡوِ مُعۡرِضُونَ ٣ وَٱلَّذِينَ هُمۡ لِلزَّكَوٰةِ فَٰعِلُونَ ٤ وَٱلَّذِينَ هُمۡ لِفُرُوجِهِمۡ حَٰفِظُونَ ٥ إِلَّا عَلَىٰٓ أَزۡوَٰجِهِمۡ أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُهُمۡ فَإِنَّهُمۡ غَيۡرُ مَلُومِينَ ٦ فَمَنِ ٱبۡتَغَىٰ وَرَآءَ ذَٰلِكَ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡعَادُونَ ٧ ﴾ [ سورة المؤمنون : 1-7]
“অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মুমিনগণ, যারা বিনয়-নম্র নিজেদের সালাতে, যারা ক্রিয়াকলাপ থেকে বিরত থাকে, যারা যাকাত দানে সক্রিয়, যারা নিজেদের যৌন অঙ্গকে সংযত রাখে নিজেদের স্ত্রী অথবা অধিকারভূক্ত দাসীগণ ব্যতীত, এতে তারা নিন্দনীয় হবে না, আর কেউ এদের ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তার হবে সীমালংঘনকারী।”— (সূরা আল-মুমিনুন: ১-৭)
সুতরাং এই আয়াতসমূহ দ্বারা প্রমাণিত হল যে, পুরুষ ব্যক্তির জন্য তার স্ত্রী ও অধিকারভূক্ত দাসীগণ ব্যতীত অন্য কোন নারী বৈধ নয়; অতএব এর বাইরে কোন নারীকে ব্যবহারের পথ খুঁজলে, সে হবে সীমালংঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত। আর এই কথা সুস্পষ্ট যে, পুরুষ ব্যক্তি মুত‘আ বিয়ের মাধ্যমে যে নারীর কর্তৃত্ব লাভ করবে, সে নারী তার জন্য বিবাহিত নয়। কারণ, মুত‘আ বিয়ের সাক্ষী, তার খরচ বহন করা, উত্তরাধিকার ও তালাকের শর্ত নেই; অনুরূপভাবে তাতে (মুত‘আ বিয়ের মধ্যে) চারটাতে সীমিতকরণ, তাকে বিক্রয়, হেবা ও মুক্তি দেয়ার বৈধতার শর্তও নেই, যেমনিভাবে তা দাসীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়। সুতরাং কিভাবে মুত‘আ বিয়ে হালাল বা বৈধ হবে?
অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿فَإِنۡ خِفۡتُمۡ أَلَّا تَعۡدِلُواْ فَوَٰحِدَةً أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُكُمۡ﴾ [ سورة النساء : 3]
“আর যদি আশঙ্কা কর যে, সুবিচার করতে পারবে না, তবে একজনকে অথবা তোমাদের অধিকারভূক্ত দাসীকে।”— (সূরা আন-নিসা: ৩)
সুতরাং যে ব্যক্তি অন্যায়ের আশঙ্কা করবে, সে যেন একজন স্ত্রী অথবা তার অধিকারভূক্ত দাসীকে যথেষ্ট মনে করে। সুতরাং কোথায় মুত‘আ বিয়ে? অতএব যদি তা হালাল হত, তবে তিনি (আল্লাহ) তা উল্লেখ করতেন। কারণ, প্রয়োজনের সময় আলোচনা বিলম্বিত করা বৈধ নয়।
অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿ وَمَن لَّمۡ يَسۡتَطِعۡ مِنكُمۡ طَوۡلًا أَن يَنكِحَ ٱلۡمُحۡصَنَٰتِ ٱلۡمُؤۡمِنَٰتِ فَمِن مَّا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُكُم مِّن فَتَيَٰتِكُمُ ٱلۡمُؤۡمِنَٰتِۚ وَٱللَّهُ أَعۡلَمُ بِإِيمَٰنِكُمۚ بَعۡضُكُم مِّنۢ بَعۡضٖۚ فَٱنكِحُوهُنَّ بِإِذۡنِ أَهۡلِهِنَّ وَءَاتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ بِٱلۡمَعۡرُوفِ مُحۡصَنَٰتٍ غَيۡرَ مُسَٰفِحَٰتٖ وَلَا مُتَّخِذَٰتِ أَخۡدَانٖۚ فَإِذَآ أُحۡصِنَّ فَإِنۡ أَتَيۡنَ بِفَٰحِشَةٖ فَعَلَيۡهِنَّ نِصۡفُ مَا عَلَى ٱلۡمُحۡصَنَٰتِ مِنَ ٱلۡعَذَابِۚ ذَٰلِكَ لِمَنۡ خَشِيَ ٱلۡعَنَتَ مِنكُمۡۚ وَأَن تَصۡبِرُواْ خَيۡرٞ لَّكُمۡۗ وَٱللَّهُ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٢٥ ﴾ [ سورة النساء : 25]
“তোমাদের মধ্যে কারও স্বাধীনা ঈমানদার নারী বিয়ে করার সামর্থ্য না থাকলে তোমরা তোমাদের অধিকারভূক্ত ঈমানদার দাসী বিয়ে করবে; আল্লাহ তোমাদের ঈমান সম্বন্ধে পরিজ্ঞাত। তোমরা একে অপরের সমান; সুতরাং তাদেরকে বিয়ে করবে তাদের মালিকের অনুমতিক্রমে এবং তাদেরকে তাদের মোহর ন্যায়সংগতভাবে দিয়ে দেবে। তারা হবে সচ্চরিত্রা, ব্যভিচারী নয় ও উপপতি গ্রহণকারিণীও নয়। বিবাহিতা হওয়ার পর যদি তারা ব্যভিচার করে, তবে তাদের শাস্তি স্বাধীনা নারীর অর্ধেক; তোমাদের মধ্যে যারা ব্যভিচারকে ভয় করে, এটা তাদের জন্য; ধৈর্য ধারণ করা তোমাদের জন্য মঙ্গল। আল্লাহ ক্ষমাপরায়ণ, পরম দয়ালু।”— (সূরা আন-নিসা: ২৫)
সুতরাং যদি মুত‘আ বিয়ে হালাল হত, তবে তিনি (আল্লাহ) তা উল্লেখ করতেন। বিশেষ করে তিনি উল্লেখ করেছেন ﴿ مَنۡ خَشِيَ ٱلۡعَنَتَ ﴾ অর্থাৎ- ‘যারা ব্যভিচারকে ভয় করে’। আর (যদি মুত‘আ বিয়ে হালাল হত) তিনি তা উল্লেখ করতেন না। সুতরাং এটাই প্রমাণ হয় যে, নিঃসন্দেহ তা (মুত‘আ বিয়ে) হারাম।
অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿ وَلۡيَسۡتَعۡفِفِ ٱلَّذِينَ لَا يَجِدُونَ نِكَاحًا حَتَّىٰ يُغۡنِيَهُمُ ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِۦ﴾ [ سورة النور : 33]
“যাদের বিয়ের সামর্থ্য নেই, আল্লাহ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত না করা পর্যন্ত তারা যেন সংযম অবলম্বন করে।”— (সূরা আন-নূর: ৩৩)
সুতরাং তিনি যার বিয়ের সামর্থ্য নেই, তাকে মুত‘আ বিয়ের মাধ্যমে নারীর উপর কর্তৃত্ব গ্রহণ ও তাকে ভোগ করার নির্দেশ দেননি; যতক্ষণ না আল্লাহ তাকে নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত করেন (সচ্চরিত্রবান অবস্থায় প্রকাশ্য ব্যভিচারের জন্য নয়)। আর আয়াত দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, বিয়ের মধ্যে রয়েছে সতীত্ব ও পবিত্রতা; আর মুত‘আ বিয়ের মধ্যে তার কিছুই নেই। সুতরাং তা হারাম (নিষিদ্ধ) হওয়ার ব্যাপারে এ সবই সুস্পষ্ট প্রমাণ।
আর রাফেযীগণ (শিয়াগণ) মুত‘আ বিয়ের বৈধতার ব্যাপারে আমাদের নিকট বিশুদ্ধ গ্রন্থসমূহে বর্ণিত কিছু সংখ্যক হাদিস দ্বারা দলিল পেশ করে; তার জওয়াব হল: ঐসব হাদিস মানসুখ (রহিত) হয়ে গেছে; যেমনিভাবে তা সুস্পষ্ট হয়ে যায় অপরাপর হাদিসসমূহ থেকে, যা আমরা অচিরেই উল্লেখ করব। যা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন সকল ব্যাখ্যাকার এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ইমামগণ। আর এই ব্যাপারে সকলের ইজমা (ঐক্যমত) হয়েছে। সুতরাং তাদের পক্ষে তার (মুত‘আ বিয়ের বৈধতার) ব্যাপারে কোন দলিল নেই।
আর মুত‘আ বিয়ে নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে আরও দলিল হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী:
« يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّى قَدْ كُنْتُ أَذِنْتُ لَكُمْ فِى الاِسْتِمْتَاعِ مِنَ النِّسَاءِ وَإِنَّ اللَّهَ قَدْ حَرَّمَ ذَلِكَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ فَمَنْ كَانَ عِنْدَهُ مِنْهُنَّ شَىْءٌ فَلْيُخَلِّ سَبِيلَهُ وَلاَ تَأْخُذُوا مِمَّا آتَيْتُمُوهُنَّ شَيْئًا » . [ أخرجه مسلم ]
“হে লোকসকল! আমি তোমাদেরকে (সাময়িক বিয়ের মাধ্যমে) নারীদের ভোগ করার অনুমতি দিয়েছিলাম; আর আল্লাহ তা কিয়ামতের দিন পর্যন্ত নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। সুতরাং যার নিকট তাদের পক্ষ থেকে কোন বস্তু রয়েছে, সে যেন তার পথ উন্মুক্ত করে দেয়; আর তোমরা তাদেরকে যা প্রদান করেছ, তার মধ্য থেকে কিছুই গ্রহণ করো না।” [সহীহ মুসলিম, বিবাহ ( نكاح ) অধ্যায়, বাব নং- ৩, হাদিস নং- ৩৪৮৮]
অনুরূপভাবে ইমাম মুসলিম র. আরও বর্ণনা করেছেন:
«أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم نَهَى عَنِ الْمُتْعَةِ وَقَالَ : أَلاَ إِنَّهَا حَرَامٌ مِنْ يَوْمِكُمْ هَذَا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَمَنْ كَانَ أَعْطَى شَيْئًا فَلاَ يَأْخُذْهُ » . [ أخرجه مسلم ]
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুত‘আ বিয়ে থেকে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন: সাবধান! নিশ্চয় তা (মুত‘আ বিয়ে) তোমাদের এই দিন থেকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত হারাম (নিষিদ্ধ)। আর যে ব্যক্তি কোন কিছু প্রদান করেছে, সে যেন তা গ্রহণ না করে।” [সহীহ মুসলিম, বিবাহ ( نكاح ) অধ্যায়, বাব নং- ৩, হাদিস নং- ৩৪৯৬]
ইমাম তিরমিযী র. বর্ণনা করেন:
«عن ابن عباس قال : إنما كانت المتعة في أول الإسلام كان الرجل يقدم البلدة ليس له بها معرفة فيتزوج المرأة بقدر ما يرى أنه يقيم فتحفظ له متاعه وتصلح له شيئه حتى إذا نزلت الآية ﴿ إلا على أزواجهم أو ما ملكت أيمانهم ﴾ قال ابن عباس فكل فرج سوى هذين فهو حرام » . [ أخرجه مسلم ]
“ইবনু আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: মুত‘আ বিয়ে ইসলামের প্রথম দিকে বৈধ ছিল, পুরুষ ব্যক্তি বিভিন্ন শহরে আগমন করত, যা তার নিকট অপরিচিত; অতঃপর সে যেই পরিমাণ সময় সেখানে অবস্থান করত, সেই পরিমাণ সময়ের জন্য কোন নারীকে বিয়ে করত; অতঃপর সে তার মালমাত্তার হেফাজত করত এবং তার জিনিসপত্র তার জন্য ঠিকঠাক করে রাখবে, শেষ পর্যন্ত আয়াত নাযিল হল: ﴿ إلا على أزواجهم أو ما ملكت أيمانهم ﴾ অর্থাৎ- (যারা নিজেদের যৌন অঙ্গকে সংযত রাখে) নিজেদের স্ত্রী অথবা অধিকারভূক্ত দাসীগণ ব্যতীত); ইবনু আব্বাস রা. বলেন: এই দুই যৌন অঙ্গ ব্যতীত সকল যৌন অঙ্গই হারাম।” [সুনানুত তিরমিযী, বিবাহ ( نكاح ) অধ্যায়, বাব নং- ২৯ ( باب تحريم نكاح المتعة ), হাদিস নং- ১১২২]
আল-হাযেমী বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারা তাদের বাড়ি-ঘর ও নিজ দেশে অবস্থানরত অবস্থায় তাদের জন্য কখনও মুত‘আ বিয়ে বৈধ করেন নি; বরং তিনি শুধু বিভিন্ন সময়ে জরুরী প্রয়োজনে তাদের জন্য তা বৈধ করেছেন; শেষ পর্যন্ত তিনি তাদের উপর তা কিয়ামতের দিন পর্যন্ত নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন।
শিয়াদের কিতাবসমূহের মধ্যেও বর্ণিত আছে:
« عن علي عليه السلام قال : حرّم رسول الله صلى الله عليه و سلم يوم خيبر لحوم الحمر الأهلية و نكاح المتعة » . [ التهذيب ]
“আলী আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বরের যুদ্ধের দিন গৃহপালিত গাদার গোশত ও মুত‘আ বিয়ে নিষিদ্ধ করেছেন।” [আত-তাহযীব ( التهذيب ), ২য় খণ্ড, পৃ. ১৮৬; আল-ইসতিবসার ( الاستبصار ),৩য় খণ্ড, পৃ. ১৪২]
মুত‘আ বিয়ে নিষিদ্ধ হওয়ার উপর কার্যকরী ও অকাট্য দলিলসমূহ পুরাপুরিভাবে উপস্থাপনের পর আমাদের উচিত যুক্তিভিত্তিক দলিলের গভীরভাবে দৃষ্টি দেওয়া; তবে কিন্তু সে দলিলসমূহ হতে হবে খেয়াল-খুশি থেকে মুক্ত এবং নির্লজ্জতা ও খোঁড়া যুক্তির উর্ধ্বে। আর তা হল, একজন পুরুষের জন্য শুধু চারটি [চারটি বিয়ে মানে একজন পুরুষ একসাথে সর্বোচ্চ চারজন স্ত্রী নিয়ে ঘর-সংসার করতে পারবে। তালাক বা মৃত্যু জনিত কারণে শূন্যতার ভিত্তিতে শরিয়ত সম্মতভাবে তার বিয়ের সংখ্যা চারের অধিকও হতে পারে। — অনুবাদক।] বিবাহ বৈধ রাখা হয়েছে, তার বেশি নয়। অপরদিকে রাফেযী ও শিয়াগণ একজন পুরুষের জন্য এক হাজার অথবা দুই হাজার নারীকে ভোগ করার বৈধতা দিয়েছে, যার আলোচনা পূর্বে হয়েছে। সুতরাং এই পদ্ধতি তার অধিক ছেলে ও মেয়ের বাস্তবতার দিকে নিয়ে নিয়ে যাবে এবং বিবাহ ও উত্তরাধিকার নীতিমালার মধ্যে ত্রুটি সৃষ্টি করবে। কারণ, সে বিবাহ ও উত্তরাধিকারের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে তখনই জানতে পারবে, যখন সে বংশের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে জানতে পারবে; কিন্তু তাদের সংখ্যাধিক্যের কারণে তা সম্ভব হয়ে উঠবে না। অতএব ধরে নাও যে, যদি কোন ব্যক্তি বিনোদনের উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করে এবং প্রত্যেক শহরে গিয়ে সে মুত‘আ বিয়ের মাধ্যমে নারী ভোগ করতে থাকে, এমনকি পরবর্তীতে তার অনেক ছেলে-মেয়ে হয়ে গেল; অতঃপর তার অথবা তার কোন এক ভাই অথবা কন্যার সুযোগ হল ঐ শহরগুলোতে ফিরে যাওয়ার এবং চলাফেরা করার; অতঃপর সে ব্যক্তি সেখানকার কোন নারীকে বিয়ে করল; সুতরাং ঐ নারীদের কেউ তার কন্যা হতে কিসে বাধা দেবে? আর তখন দেখা যাবে যে, তার বিয়ে হয়েছে তার কোন কন্যা অথবা তার ভাইয়ের কন্যা অথবা তার বোনের সাথে।
আশ্চর্যের বিষয় হল, এই সবের পরেও শিয়াগণ মুত‘আ বিয়েকে (বৈধ বলে) আঁকড়ে ধরে রাখে এবং দলিল পেশ করে যে, তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যামানার শুরুর দিকে প্রচলিত ছিল। আর তারা প্রমাণ করে যে, মুত‘আ বিয়ে সংঘটিত হত সাক্ষীর মাধ্যমে এবং তারা এ সম্পর্কে জানতে পারে তাদের কিতাবসমূহের মধ্য থেকে।
আর এই যুগে শিয়াগণ যে মুত‘আ বিয়ের কথা প্রকাশ করে, তাতে তারা সাক্ষীর শর্ত করে না; সুতরাং কিভাবে এই মুত‘আ বিয়ের বিশুদ্ধতার উপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যামানার শুরুর দিকে প্রচলিত মুত‘আ বিয়ের দ্বারা তাদের দলিল পেশ করাটা শুদ্ধ হবে? আর তুমি তাদের বর্ণনাসমূহ নিয়ে ভেবে দেখ।
ইমাম জাফর সাদিককে জিজ্ঞাসা করা হল: মুসলিমগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে বিনা প্রমাণে বিবাহ করত কিনা; জবাবে তিনি বললেন: না। [আত-তাহযীব ( التهذيب ), ২য় খণ্ড, পৃ. ১৮৯] আর তারা এই বর্ণনাটি উল্লেখ করেছে “তারা মুত‘আ বিয়ে করে” ( باب المتعة يتزوجون ) নামক অধ্যায়ে। বিয়ে দ্বারা তাদের নিকট উদ্দেশ্য হল মুত‘আ বিয়ে। আর লেখক সুস্পষ্ট করেছেন যে, তিনি এর থেকে স্থায়ী বিবাহকে উদ্দেশ্য করেন নি; বরং এর দ্বারা উদ্দেশ্য করেছেন মুত‘আ বিয়েকে।
আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী ‘আল-ইসতিবসার’ ( الاستبصار ) নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেন:
“মুহাম্মদ ইবন মুসলিম থেকে বর্ণিত, তিনি আবূ জাফর আ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম: কোন ব্যক্তি কি তার ভাইয়ের জন্য তার কন্যা বা দাসীর গুপ্তাঙ্গকে বৈধ করে দিতে পারে? তিনি জবাব দিলেন: হ্যাঁ, সে ব্যক্তি তার (কন্যা বা দাসীর) থেকে তার জন্য যা বৈধ করেছে, তাতে তার কোন সমস্যা নেই।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আল-ইসতিবসার ( الاستبصار ), ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৩৬]
আত-তুসী ‘আল-ইসতিবসার’ ( الاستبصار ) নামক গ্রন্থে আরও বর্ণনা করেন:
“মুহাম্মদ ইবন মুদারিব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আবূ আবদিল্লাহ আ. আমাকে বলল: হে মুহাম্মদ! তুমি এই দাসীটিকে গ্রহণ কর, সে তোমার সেবা করবে এবং তুমি তার থেকে (ফায়দা) অর্জন করবে। অতঃপর যখন বের হয়ে যাবে, তখন তাকে আমাদের নিকট ফেরত দিয়ে যাবে।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আল-ইসতিবসার ( الاستبصار ), ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৩৬; মুহাম্মদ ইবন ইয়াকুব আল-কুলাইনী, ফুরু‘উল কাফী ( فروع الكافي ), দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ. ২০০]
আর শিয়াদের কিছু কিছু বর্ণনার মধ্যে তাদের কোন এক ইমাম থেকে একটি কথা বর্ণিত আছে, তা হল:" لا أحب ذالك " (আমি এটা পছন্দ করি না); অর্থাৎ- গুপ্তাঙ্গ ধার করাকে আমি পছন্দ করি না। অতঃপর ‘আল-ইসতিবসার’ ( الاستبصار ) নামক গ্রন্থের লেখক মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী তার উপর একটি টীকা লিখেছেন, তাতে আমরা (গুপ্তাঙ্গ ধার করা নিয়ে) যা আলোচনা করেছি, তা নিষিদ্ধ (হারাম) হওয়ার দাবি রাখে না। কারণ, অপছন্দের কথা বর্ণিত হয়েছে। আর এই কথাটিকে ঐ ইমাম আ. তার ভাষায়: " لا أحب ذلك " (আমি এটা পছন্দ করি না)। আর এটা অপছন্দনীয় হওয়ার কারণ হল, এটা এমন একটি কর্ম, যার ব্যাপারে সাধারণ জনগণের ও যারা আমাদেরকে দোষারোপ করে তাদের কেউ আমাদেরকে সমর্থন করে না। সুতরাং তার এই পথ থেকে পবিত্র থাকাই উত্তম, যদিও তা হারাম নয়। আর এটা বৈধ এই হিসাবে যে, এটা অপছন্দনীয় তখন, যখন সন্তানের স্বাধীন হওয়ার শর্ত করা না হয়; সুতরাং যখন এই (সন্তানের স্বাধীন হওয়ার) শর্ত করা হবে, তখন এই অপছন্দনীয় দিকটি দূর হয়ে যাবে। [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আল-ইসতিবসার ( الاستبصار ), ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৩৭]
আর এটা যিনা-ব্যভিচারের আরেক প্রকার, যাকে শিয়াগণ বৈধ করে দিয়েছে এবং তাকে মিথ্যা ও বানোয়াটি কায়দায় আহলে বাইতের ইমামগণের সাথে সম্পর্কযুক্ত করে দিয়েছে। আর এ ক্ষেত্রে তারা শুধু তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে; অথচ ইসলামী শরীয়তে সকল প্রকারের যিনা-ব্যভিচার নিষিদ্ধ (হারাম), যেমনিভাবে তা সর্বজন বিদিত।
“মুহাম্মদ ইবন মুসলিম থেকে বর্ণিত, তিনি আবূ জাফর আ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম: কোন ব্যক্তি কি তার ভাইয়ের জন্য তার কন্যা বা দাসীর গুপ্তাঙ্গকে বৈধ করে দিতে পারে? তিনি জবাব দিলেন: হ্যাঁ, সে ব্যক্তি তার (কন্যা বা দাসীর) থেকে তার জন্য যা বৈধ করেছে, তাতে তার কোন সমস্যা নেই।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আল-ইসতিবসার ( الاستبصار ), ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৩৬]
আত-তুসী ‘আল-ইসতিবসার’ ( الاستبصار ) নামক গ্রন্থে আরও বর্ণনা করেন:
“মুহাম্মদ ইবন মুদারিব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আবূ আবদিল্লাহ আ. আমাকে বলল: হে মুহাম্মদ! তুমি এই দাসীটিকে গ্রহণ কর, সে তোমার সেবা করবে এবং তুমি তার থেকে (ফায়দা) অর্জন করবে। অতঃপর যখন বের হয়ে যাবে, তখন তাকে আমাদের নিকট ফেরত দিয়ে যাবে।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আল-ইসতিবসার ( الاستبصار ), ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৩৬; মুহাম্মদ ইবন ইয়াকুব আল-কুলাইনী, ফুরু‘উল কাফী ( فروع الكافي ), দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ. ২০০]
আর শিয়াদের কিছু কিছু বর্ণনার মধ্যে তাদের কোন এক ইমাম থেকে একটি কথা বর্ণিত আছে, তা হল:" لا أحب ذالك " (আমি এটা পছন্দ করি না); অর্থাৎ- গুপ্তাঙ্গ ধার করাকে আমি পছন্দ করি না। অতঃপর ‘আল-ইসতিবসার’ ( الاستبصار ) নামক গ্রন্থের লেখক মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী তার উপর একটি টীকা লিখেছেন, তাতে আমরা (গুপ্তাঙ্গ ধার করা নিয়ে) যা আলোচনা করেছি, তা নিষিদ্ধ (হারাম) হওয়ার দাবি রাখে না। কারণ, অপছন্দের কথা বর্ণিত হয়েছে। আর এই কথাটিকে ঐ ইমাম আ. তার ভাষায়: " لا أحب ذلك " (আমি এটা পছন্দ করি না)। আর এটা অপছন্দনীয় হওয়ার কারণ হল, এটা এমন একটি কর্ম, যার ব্যাপারে সাধারণ জনগণের ও যারা আমাদেরকে দোষারোপ করে তাদের কেউ আমাদেরকে সমর্থন করে না। সুতরাং তার এই পথ থেকে পবিত্র থাকাই উত্তম, যদিও তা হারাম নয়। আর এটা বৈধ এই হিসাবে যে, এটা অপছন্দনীয় তখন, যখন সন্তানের স্বাধীন হওয়ার শর্ত করা না হয়; সুতরাং যখন এই (সন্তানের স্বাধীন হওয়ার) শর্ত করা হবে, তখন এই অপছন্দনীয় দিকটি দূর হয়ে যাবে। [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আল-ইসতিবসার ( الاستبصار ), ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৩৭]
আর এটা যিনা-ব্যভিচারের আরেক প্রকার, যাকে শিয়াগণ বৈধ করে দিয়েছে এবং তাকে মিথ্যা ও বানোয়াটি কায়দায় আহলে বাইতের ইমামগণের সাথে সম্পর্কযুক্ত করে দিয়েছে। আর এ ক্ষেত্রে তারা শুধু তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে; অথচ ইসলামী শরীয়তে সকল প্রকারের যিনা-ব্যভিচার নিষিদ্ধ (হারাম), যেমনিভাবে তা সর্বজন বিদিত।
আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী ‘আল-ইসতিবসার’ ( الاستبصار ) নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেন:
“আবদুল্লাহ ইবন আবি ইয়া‘ফুর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আবূ আবদিল্লাহ আ.কে জিজ্ঞাসা করলাম ঐ পুরুষ ব্যক্তি সম্পর্কে, যে তার স্ত্রীর সাথে তার পিছনের পথে সংগমে মিলিত হয়; তখন তিনি বললেন: সে রাজি থাকলে কোন অসুবিধা নেই। আমি বললাম: তাহলে আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿ فَأۡتُوهُنَّ مِنۡ حَيۡثُ أَمَرَكُمُ ٱللَّهُ﴾ (তখন তাদের নিকট ঠিক সেভাবে গমন করবে, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন) —এর বাস্তবতা কোথায়? তখন তিনি বললেন: এই আয়াতের বিধান সন্তান কামনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সুতরাং তোমরা সন্তান অনুসন্ধান কর, আল্লাহ যেভাবে তোমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ْ نِسَآؤُكُمۡ حَرۡثٞ لَّكُمۡ فَأۡتُواْ حَرۡثَكُمۡ أَنَّىٰ شِئۡتُمۡ﴾ [ سورة البقرة : 223]
“তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের ক্ষেত্র। অতএব তোমরা তোমাদের ক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা গমন কর। —( সূরা আল-বাকারা: ২২৩)।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আল-ইসতিবসার ( الاستبصار ), ৩য় খণ্ড, পৃ. ২৪৩]
তিনি ‘আল-ইসতিবসার’ ( الاستبصار ) নামক গ্রন্থে আরও বর্ণনা করেন:
“মূসা ইবন আবদিল মুলক থেকে বর্ণিত, তিনি জনৈক ব্যক্তি থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আমি আবুল হাসান রেজা আ.কে জিজ্ঞাসা করলাম পুরুষ ব্যক্তি কর্তৃক তার স্ত্রীর পিছনের পথে সংগমে মিলিত হওয়ার বিষয়ে; তখন তিনি বললেন: আল্লাহ তা‘আলার কিতাবের একটি আয়াত তা বৈধ করে দিয়েছে, লুত আ.-এর উক্তি: ﴿ هَٰٓؤُلَآءِ بَنَاتِي هُنَّ أَطۡهَرُ لَكُمۡ﴾ (এরা আমার কন্যা, তোমাদের জন্য তারা পবিত্র); কারণ, তিনি জানতেন যে, তারা সম্মুখস্থ গুপ্তাঙ্গের প্রত্যাশী ছিল না।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আল-ইসতিবসার ( الاستبصار ), ৩য় খণ্ড, পৃ. ২৪৩]
তিনি ‘আল-ইসতিবসার’ ( الاستبصار ) নামক গ্রন্থে আরও বর্ণনা করেন:
“আলী ইবন হেকাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সাফওয়ানকে বলতে শুনেছি: আমি রেজা আ.কে বললাম: তোমার আযাদ করা গোলামদের একজন আমাকে অনুরোধ করল যাতে আমি তোমাকে একটি মাসআলা জিজ্ঞাসা করি; কারণ, সে তোমাকে জিজ্ঞাসা করতে ভয় ও লজ্জাবোধ করে; তখন তিনি (রেজা আ.) বললেন, মাসআলাটা কী? সে বলল, পুরুষ ব্যক্তির জন্য তার স্ত্রীর পিছন দিকে সংগমে মিলিত হওয়ার বৈধতা আছে কি? তিনি বললেন: এটা তার জন্য বৈধ আছে।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আল-ইসতিবসার ( الاستبصار ), ৩য় খণ্ড, পৃ. ২৪৩]
তিনি ‘আল-ইসতিবসার’ ( الاستبصار ) নামক গ্রন্থে আরও বর্ণনা করেন:
“ইউনুস ইবন ‘আম্মার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবূ আবদিল্লাহ আ. অথবা আবুল হাসান আ.কে বললাম: আমি কখনও কখনও দাসীর সাথে তার পায়ু পথে মিলিত হই এবং তা ফেটে যায়। অতঃপর আমি আমার নিজের উপর সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমি যদি স্ত্রীর সাথে পুনরায় অনুরূপ করি, তবে আমার উপর এক দিরহাম সদকা করা আবশ্যক হবে; আর এটা আমার উপর কঠিন হয়ে গেল; তখন তিনি বললেন, তোমার কিছুই দিতে হবে না; আর এটা তোমার জন্য বৈধ।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আল-ইসতিবসার ( الاستبصار ), ৩য় খণ্ড, ( باب النساء فيما دون الفرج ) পৃ. ৪৪৪]
তিনি ‘আল-ইসতিবসার’ ( الاستبصار ) নামক গ্রন্থে আরও বর্ণনা করেন:
“হাম্মাদ ইবন ওসমান থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবূ আবদিল্লাহ আ.কে জিজ্ঞাসা করলাম অথবা এমন ব্যক্তি আমাকে সংবাদ দিয়েছে, যাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে ঐ পুরুষ ব্যক্তি সম্পর্কে, যে তার স্ত্রীর সাথে ঐ জায়গায় (পিছন পথে) মিলিত হয়; আর সে অবস্থায় (জিজ্ঞাসার সময়) ঘরের মধ্যে একদল লোক উপস্থিত ছিল। অতঃপর তিনি আমাকে তার উচ্চ কণ্ঠে বললেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি তার গোলামকে সাধ্যাতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দিয়ে কষ্ট দেয়, সে যেন তাকে বিক্রি করে দেয়; অতঃপর তিনি ঘরে অবস্থানরত সকলের চেহারার দিকে তাকালেন, অতঃপর আমার কথায় মনোযোগ দেন এবং বলেন: তাতে কোন অসুবিধা নেই।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আল-ইসতিবসার ( الاستبصار ), ৩য় খণ্ড, পৃ. ২৪৩]
‘আল-ইসতিবসার’ ( الاستبصار ) নামক গ্রন্থের লেখক এমন দু’টি হাদীসের অবতারণা করেন যাতে নারীদের সাথে সমকামিতার ব্যাপারে নিষেধের কথা বর্ণিত হয়েছে। তারপর তিনি সে হাদীস দুটির টীকার মধ্যে দুইটি হাদিসের পর্যালোচনা করে বলেন:
“এই হাদিস দু’টির মধ্যে একটি দিক হল, অপছন্দনীয়তার (মাকরূহ) বর্ণনা করা। কারণ, উত্তম কাজ হল, তা (সমকামিতা) থেকে বিরত থাকা; যদিও তা হারাম (নিষিদ্ধ) নয় ...। তাছাড়া এ হাদিস দু’টি ‘তাকীয়া’র নীতির স্থলাভিষিক্ত হওয়ারও সম্ভাবনা রাখে; কারণ, সাধারণ জনগণের কেউ এটাকে বৈধ বলে অুমোদন দেয় না।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আল-ইসতিবসার ( الاستبصار ), ৩য় খণ্ড, পৃ. ২৪৪]
আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, যেসব হাদিস সমকামিতা বৈধতার ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে, সেগুলো ‘তাকীয়া’র নীতি অনুসরণ করে বর্ণিত হওয়ার সম্ভাবনা রাখে। কারণ, মানুষ সাধারণভাবে এই বিষয়গুলো কামনা করে; ফলে ইমামগণ তাদের (জনগণের) কারণে এবং তাদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য ‘তাকীয়া’র পথ বেচে নিয়েছে। নিশ্চয় প্রত্যেক বস্তু এবং প্রত্যেক খবরের (হাদিসের) মধ্যে ‘তাকীয়া’র সম্ভাবনা রয়েছে।
সমগ্রিকভাবে বলা যায় যে, এই বিষয়টির অসারতা সুস্পষ্ট এবং তা আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে যা এসেছে, তার বিপরীত। আর এর সবকিছুই হয়েছে শুধুমাত্র খেয়াল-খুশি ও প্রবৃত্তির অনুসরণে।
আল-কুরআন ও সুন্নাহ থেকে নারীদের সাথে সমকামিতা অবৈধতার প্রমাণ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ْ نِسَآؤُكُمۡ حَرۡثٞ لَّكُمۡ فَأۡتُواْ حَرۡثَكُمۡ أَنَّىٰ شِئۡتُمۡ﴾ [ سورة البقرة : 223]
“তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের শস্যক্ষেত্র। অতএব তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা গমন কর।” —( সূরা আল-বাকারা: ২২৩)
নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা চাষের জায়গায় আসার অনুমতি দিয়েছেন; আর তা হল লজ্জাস্থান। আর তিনি পায়খানার জায়গায় গমনের অনুমতি দেননি; আর তা হল পিছনের রাস্তা।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ وَيَسَۡٔلُونَكَ عَنِ ٱلۡمَحِيضِۖ قُلۡ هُوَ أَذٗى فَٱعۡتَزِلُواْ ٱلنِّسَآءَ فِي ٱلۡمَحِيضِ وَلَا تَقۡرَبُوهُنَّ حَتَّىٰ يَطۡهُرۡنَ﴾ [ سورة البقرة : 222]
“লোকে তোমাকে রজঃস্রাব (হায়েয) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বল, ‘তা অশুচি’। সুতরাং তোমরা রজঃস্রাবকালে স্ত্রী-সংগম বর্জন করবে এবং পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত স্ত্রী-সংগম করবে না।”— (সূরা আল-বাকারা: ২২২)
এই আয়াতের মধ্যে হাতেগণা কয়েকদিন অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও হায়েয তথা রজঃস্রাবকালে নারীদের লজ্জাস্থানের নিকট গমন করতে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে নিষেধ করেছেন। সুতরাং সার্বক্ষণিক নাপাকি তথা ময়লা বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও কিভাবে নারীদের পায়ুপথে গমন করা বৈধ হতে পারে! আর এই আয়াতে আরও বর্ণনা করা হয়েছে যে, (মাসিক অবস্থায়) শুধু নারীদের সামনের লজ্জাস্থানের নিকট গমন করা নিষিদ্ধ, পায়ুপথে নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ নেই। কারণ, হায়েযের বিষয়টি শুধু সামনের লজ্জাস্থানের সাথে সংশ্লিষ্ট। আর পায়ুপথের বিধানের অবস্থা হবে হায়েযের পূর্বেকার অবস্থার বিধানের মত; সুতরাং হায়েযের পূর্বে সেখানে গমন করা যদি বৈধ হয়ে থাকে, তবে এখনও গমন করতে কোন বাধা নেই। অতঃপর বিষয়টি যদি অনুরূপই হত, তবে তখন আয়াতের ধরণ হত: " فاعتزلوا الفروج في المحيض " (সুতরাং তোমরা মাসিক অবস্থায় তাদের লজ্জাস্থানে গমন করা থেকে দূরে থাক); " فَٱعۡتَزِلُواْ ٱلنِّسَآءَ فِي ٱلۡمَحِيضِ " (সুতরাং তোমরা রজঃস্রাবকালে স্ত্রী-সংগম বর্জন করবে)- এমন কথা বলা হত না, যেমন আয়াতে বর্তমান আছে।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« مَنْ أَتَى كَاهِنًا فَصَدَّقَهُ بِمَا يَقُولُ أَوْ أَتَى امْرَأَتَهُ حَائِضًا أَوْ أَتَى امْرَأَتَهُ فِى دُبُرِهَا فَقَدْ بَرِئَ مِمَّا أَنْزَلَ اللَّهُ عَلَى مُحَمَّدٍ » . [ أخرجه أبو داود ]
“যে ব্যক্তি জ্যোতিষীর নিকট আসে এবং সে যা বলে, তা বিশ্বাস করে; অথবা রজঃস্রাবকালীন সময়ে তার স্ত্রীর নিকট গমন করে; অথবা তার স্ত্রীর সাথে পায়ুপথে মিলিত হয়, সেই ব্যক্তি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা থেকে মুক্ত।” [আবু দাঊদ, চিকিৎসা অধ্যায় ( كتاب الطب ), বাব নং- ২১, হাদিস নং- ৩৯০৬]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« مَلْعُونٌ مَنْ أَتَى امْرَأَتَهُ فِى دُبُرِهَا » . [ أخرجه أبو داود ]
“যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে পায়ুপথে মিলিত হয়, সেই ব্যক্তি অভিশপ্ত।” [আবু দাঊদ, নিকাহ (বিবাহ) অধ্যায়, বাব নং- ৪৬ ( باب في جامع النكاح ), হাদিস নং- ২১৬৪]
হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে যাবতীয় অশ্লীল, অন্যায় এবং বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ ফিতনা থেকে দূরে রাখ; আমীন ...
“আবদুল্লাহ ইবন আবি ইয়া‘ফুর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আবূ আবদিল্লাহ আ.কে জিজ্ঞাসা করলাম ঐ পুরুষ ব্যক্তি সম্পর্কে, যে তার স্ত্রীর সাথে তার পিছনের পথে সংগমে মিলিত হয়; তখন তিনি বললেন: সে রাজি থাকলে কোন অসুবিধা নেই। আমি বললাম: তাহলে আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿ فَأۡتُوهُنَّ مِنۡ حَيۡثُ أَمَرَكُمُ ٱللَّهُ﴾ (তখন তাদের নিকট ঠিক সেভাবে গমন করবে, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন) —এর বাস্তবতা কোথায়? তখন তিনি বললেন: এই আয়াতের বিধান সন্তান কামনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সুতরাং তোমরা সন্তান অনুসন্ধান কর, আল্লাহ যেভাবে তোমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ْ نِسَآؤُكُمۡ حَرۡثٞ لَّكُمۡ فَأۡتُواْ حَرۡثَكُمۡ أَنَّىٰ شِئۡتُمۡ﴾ [ سورة البقرة : 223]
“তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের ক্ষেত্র। অতএব তোমরা তোমাদের ক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা গমন কর। —( সূরা আল-বাকারা: ২২৩)।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আল-ইসতিবসার ( الاستبصار ), ৩য় খণ্ড, পৃ. ২৪৩]
তিনি ‘আল-ইসতিবসার’ ( الاستبصار ) নামক গ্রন্থে আরও বর্ণনা করেন:
“মূসা ইবন আবদিল মুলক থেকে বর্ণিত, তিনি জনৈক ব্যক্তি থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আমি আবুল হাসান রেজা আ.কে জিজ্ঞাসা করলাম পুরুষ ব্যক্তি কর্তৃক তার স্ত্রীর পিছনের পথে সংগমে মিলিত হওয়ার বিষয়ে; তখন তিনি বললেন: আল্লাহ তা‘আলার কিতাবের একটি আয়াত তা বৈধ করে দিয়েছে, লুত আ.-এর উক্তি: ﴿ هَٰٓؤُلَآءِ بَنَاتِي هُنَّ أَطۡهَرُ لَكُمۡ﴾ (এরা আমার কন্যা, তোমাদের জন্য তারা পবিত্র); কারণ, তিনি জানতেন যে, তারা সম্মুখস্থ গুপ্তাঙ্গের প্রত্যাশী ছিল না।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আল-ইসতিবসার ( الاستبصار ), ৩য় খণ্ড, পৃ. ২৪৩]
তিনি ‘আল-ইসতিবসার’ ( الاستبصار ) নামক গ্রন্থে আরও বর্ণনা করেন:
“আলী ইবন হেকাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সাফওয়ানকে বলতে শুনেছি: আমি রেজা আ.কে বললাম: তোমার আযাদ করা গোলামদের একজন আমাকে অনুরোধ করল যাতে আমি তোমাকে একটি মাসআলা জিজ্ঞাসা করি; কারণ, সে তোমাকে জিজ্ঞাসা করতে ভয় ও লজ্জাবোধ করে; তখন তিনি (রেজা আ.) বললেন, মাসআলাটা কী? সে বলল, পুরুষ ব্যক্তির জন্য তার স্ত্রীর পিছন দিকে সংগমে মিলিত হওয়ার বৈধতা আছে কি? তিনি বললেন: এটা তার জন্য বৈধ আছে।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আল-ইসতিবসার ( الاستبصار ), ৩য় খণ্ড, পৃ. ২৪৩]
তিনি ‘আল-ইসতিবসার’ ( الاستبصار ) নামক গ্রন্থে আরও বর্ণনা করেন:
“ইউনুস ইবন ‘আম্মার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবূ আবদিল্লাহ আ. অথবা আবুল হাসান আ.কে বললাম: আমি কখনও কখনও দাসীর সাথে তার পায়ু পথে মিলিত হই এবং তা ফেটে যায়। অতঃপর আমি আমার নিজের উপর সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমি যদি স্ত্রীর সাথে পুনরায় অনুরূপ করি, তবে আমার উপর এক দিরহাম সদকা করা আবশ্যক হবে; আর এটা আমার উপর কঠিন হয়ে গেল; তখন তিনি বললেন, তোমার কিছুই দিতে হবে না; আর এটা তোমার জন্য বৈধ।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আল-ইসতিবসার ( الاستبصار ), ৩য় খণ্ড, ( باب النساء فيما دون الفرج ) পৃ. ৪৪৪]
তিনি ‘আল-ইসতিবসার’ ( الاستبصار ) নামক গ্রন্থে আরও বর্ণনা করেন:
“হাম্মাদ ইবন ওসমান থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবূ আবদিল্লাহ আ.কে জিজ্ঞাসা করলাম অথবা এমন ব্যক্তি আমাকে সংবাদ দিয়েছে, যাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে ঐ পুরুষ ব্যক্তি সম্পর্কে, যে তার স্ত্রীর সাথে ঐ জায়গায় (পিছন পথে) মিলিত হয়; আর সে অবস্থায় (জিজ্ঞাসার সময়) ঘরের মধ্যে একদল লোক উপস্থিত ছিল। অতঃপর তিনি আমাকে তার উচ্চ কণ্ঠে বললেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি তার গোলামকে সাধ্যাতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দিয়ে কষ্ট দেয়, সে যেন তাকে বিক্রি করে দেয়; অতঃপর তিনি ঘরে অবস্থানরত সকলের চেহারার দিকে তাকালেন, অতঃপর আমার কথায় মনোযোগ দেন এবং বলেন: তাতে কোন অসুবিধা নেই।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আল-ইসতিবসার ( الاستبصار ), ৩য় খণ্ড, পৃ. ২৪৩]
‘আল-ইসতিবসার’ ( الاستبصار ) নামক গ্রন্থের লেখক এমন দু’টি হাদীসের অবতারণা করেন যাতে নারীদের সাথে সমকামিতার ব্যাপারে নিষেধের কথা বর্ণিত হয়েছে। তারপর তিনি সে হাদীস দুটির টীকার মধ্যে দুইটি হাদিসের পর্যালোচনা করে বলেন:
“এই হাদিস দু’টির মধ্যে একটি দিক হল, অপছন্দনীয়তার (মাকরূহ) বর্ণনা করা। কারণ, উত্তম কাজ হল, তা (সমকামিতা) থেকে বিরত থাকা; যদিও তা হারাম (নিষিদ্ধ) নয় ...। তাছাড়া এ হাদিস দু’টি ‘তাকীয়া’র নীতির স্থলাভিষিক্ত হওয়ারও সম্ভাবনা রাখে; কারণ, সাধারণ জনগণের কেউ এটাকে বৈধ বলে অুমোদন দেয় না।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আল-ইসতিবসার ( الاستبصار ), ৩য় খণ্ড, পৃ. ২৪৪]
আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, যেসব হাদিস সমকামিতা বৈধতার ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে, সেগুলো ‘তাকীয়া’র নীতি অনুসরণ করে বর্ণিত হওয়ার সম্ভাবনা রাখে। কারণ, মানুষ সাধারণভাবে এই বিষয়গুলো কামনা করে; ফলে ইমামগণ তাদের (জনগণের) কারণে এবং তাদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য ‘তাকীয়া’র পথ বেচে নিয়েছে। নিশ্চয় প্রত্যেক বস্তু এবং প্রত্যেক খবরের (হাদিসের) মধ্যে ‘তাকীয়া’র সম্ভাবনা রয়েছে।
সমগ্রিকভাবে বলা যায় যে, এই বিষয়টির অসারতা সুস্পষ্ট এবং তা আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে যা এসেছে, তার বিপরীত। আর এর সবকিছুই হয়েছে শুধুমাত্র খেয়াল-খুশি ও প্রবৃত্তির অনুসরণে।
আল-কুরআন ও সুন্নাহ থেকে নারীদের সাথে সমকামিতা অবৈধতার প্রমাণ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ْ نِسَآؤُكُمۡ حَرۡثٞ لَّكُمۡ فَأۡتُواْ حَرۡثَكُمۡ أَنَّىٰ شِئۡتُمۡ﴾ [ سورة البقرة : 223]
“তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের শস্যক্ষেত্র। অতএব তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা গমন কর।” —( সূরা আল-বাকারা: ২২৩)
নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা চাষের জায়গায় আসার অনুমতি দিয়েছেন; আর তা হল লজ্জাস্থান। আর তিনি পায়খানার জায়গায় গমনের অনুমতি দেননি; আর তা হল পিছনের রাস্তা।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ وَيَسَۡٔلُونَكَ عَنِ ٱلۡمَحِيضِۖ قُلۡ هُوَ أَذٗى فَٱعۡتَزِلُواْ ٱلنِّسَآءَ فِي ٱلۡمَحِيضِ وَلَا تَقۡرَبُوهُنَّ حَتَّىٰ يَطۡهُرۡنَ﴾ [ سورة البقرة : 222]
“লোকে তোমাকে রজঃস্রাব (হায়েয) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বল, ‘তা অশুচি’। সুতরাং তোমরা রজঃস্রাবকালে স্ত্রী-সংগম বর্জন করবে এবং পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত স্ত্রী-সংগম করবে না।”— (সূরা আল-বাকারা: ২২২)
এই আয়াতের মধ্যে হাতেগণা কয়েকদিন অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও হায়েয তথা রজঃস্রাবকালে নারীদের লজ্জাস্থানের নিকট গমন করতে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে নিষেধ করেছেন। সুতরাং সার্বক্ষণিক নাপাকি তথা ময়লা বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও কিভাবে নারীদের পায়ুপথে গমন করা বৈধ হতে পারে! আর এই আয়াতে আরও বর্ণনা করা হয়েছে যে, (মাসিক অবস্থায়) শুধু নারীদের সামনের লজ্জাস্থানের নিকট গমন করা নিষিদ্ধ, পায়ুপথে নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ নেই। কারণ, হায়েযের বিষয়টি শুধু সামনের লজ্জাস্থানের সাথে সংশ্লিষ্ট। আর পায়ুপথের বিধানের অবস্থা হবে হায়েযের পূর্বেকার অবস্থার বিধানের মত; সুতরাং হায়েযের পূর্বে সেখানে গমন করা যদি বৈধ হয়ে থাকে, তবে এখনও গমন করতে কোন বাধা নেই। অতঃপর বিষয়টি যদি অনুরূপই হত, তবে তখন আয়াতের ধরণ হত: " فاعتزلوا الفروج في المحيض " (সুতরাং তোমরা মাসিক অবস্থায় তাদের লজ্জাস্থানে গমন করা থেকে দূরে থাক); " فَٱعۡتَزِلُواْ ٱلنِّسَآءَ فِي ٱلۡمَحِيضِ " (সুতরাং তোমরা রজঃস্রাবকালে স্ত্রী-সংগম বর্জন করবে)- এমন কথা বলা হত না, যেমন আয়াতে বর্তমান আছে।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« مَنْ أَتَى كَاهِنًا فَصَدَّقَهُ بِمَا يَقُولُ أَوْ أَتَى امْرَأَتَهُ حَائِضًا أَوْ أَتَى امْرَأَتَهُ فِى دُبُرِهَا فَقَدْ بَرِئَ مِمَّا أَنْزَلَ اللَّهُ عَلَى مُحَمَّدٍ » . [ أخرجه أبو داود ]
“যে ব্যক্তি জ্যোতিষীর নিকট আসে এবং সে যা বলে, তা বিশ্বাস করে; অথবা রজঃস্রাবকালীন সময়ে তার স্ত্রীর নিকট গমন করে; অথবা তার স্ত্রীর সাথে পায়ুপথে মিলিত হয়, সেই ব্যক্তি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা থেকে মুক্ত।” [আবু দাঊদ, চিকিৎসা অধ্যায় ( كتاب الطب ), বাব নং- ২১, হাদিস নং- ৩৯০৬]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« مَلْعُونٌ مَنْ أَتَى امْرَأَتَهُ فِى دُبُرِهَا » . [ أخرجه أبو داود ]
“যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে পায়ুপথে মিলিত হয়, সেই ব্যক্তি অভিশপ্ত।” [আবু দাঊদ, নিকাহ (বিবাহ) অধ্যায়, বাব নং- ৪৬ ( باب في جامع النكاح ), হাদিস নং- ২১৬৪]
হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে যাবতীয় অশ্লীল, অন্যায় এবং বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ ফিতনা থেকে দূরে রাখ; আমীন ...
শাইখ আব্বাস আল-কুমী তার ‘মুন্তাহাল আমাল’ ( منتهى الأمال ) নামক গ্রন্থের মধ্যে ফারসি ভাষায় উল্লেখ করেন, যার অনুবাদ হল:
“আস-সাদিক আ. বলেন: যে ব্যক্তি আমাদের পুনর্জন্মে বিশ্বাস করে না এবং মুত‘আ বিয়ের বৈধতাকে স্বীকৃতি দেয় না, সে ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়।” [শাইখ আব্বাস আল-কুমী, মুন্তাহাল আমাল ( منتهى الأمال ), ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৪১]
আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী ফারসি ভাষায় বলেন, যার অনুবাদ হল:
“ইবনু বাবুইয়া ‘এলালুশ শারায়ে‘ ( علل الشرائع ) নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেন, ইমাম মুহাম্মদ বাকের আ. বলেন: যখন ইমাম মাহাদী আত্মপ্রকাশ করবে, তখন তিনি অতিসত্বর আয়েশাকে জীবিত করবেন এবং তার উপর শাস্তির বিধান (হদ) কায়েম করবেন।” [আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী, হক্কুল ইয়াকীন ( حق اليقين ), পৃ. ৩৪৭]
মকবুল আহমদ আশ-শি‘য়ী তার ‘তরজুমাতুল কুরআন’-এর মধ্যে উর্দু ভাষায় বর্ণনা করেন, যার অনুবাদ হল:
“ইমাম মুহাম্মদ বাকের আ. থেকে তাফসীরুল কুমী ও তাফসীরুল ‘আয়াশী’র মধ্যে বর্ণিত আছে যে, এই আয়াতের মধ্যে " الأخرة " দ্বারা উদ্দেশ্য হল, الرجعة বা পুনর্জন্ম। আর الرجعة বা পুনর্জন্ম মানে- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ইমামগণ কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্বে বিশেষ করে মুমিন ও কাফিরদের মধ্য থেকে ব্যক্তিবিশেষ দুনিয়ায় ফিরিয়ে আনবেন যাতে ভাল ও ঈমানকে সমুন্নত করা যায় এবং কুফর এবং পাপকে ধ্বংস করে দেয়া যায়।” [তরজুমাতু মকবুল আহমদ ( ترجمة مقبول أحمد ), পৃ. ৫৩৫]
মোল্লা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী ‘হক্কুল ইয়াকীন’ ( حق اليقين ) নামক গ্রন্থে ফারসি ভাষায় দীর্ঘ আলোচনা পেশ করেন, যার সারকথা হল: যখন মাহাদী আ. (কিয়ামতের অল্প কিছুদিন পূর্বে) আত্মপ্রকাশ করবেন, তখন অতি শীঘ্রই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরের দেয়াল ভেঙ্গে যাবে এবং তিনি আবূ বকর ও ওমরকে তাদের কবর থেকে বের করে নিয়ে আসবেন; অতঃপর তাদেরকে জীবিত করবেন এবং তাদেরকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করবেন (না‘উযুবিল্লাহ)।
অতঃপর তিনি মাহদী’র ব্যাপারে ফারসি ভাষায় আরও উল্লেখ করেন, যার অনুবাদ হল: অতঃপর তিনি মানবজাতিকে একত্রিত হওয়ার নির্দেশ দিবেন; তারপর বিশ্ব জগতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যত যুলুম (নির্যাতন) ও কুফরী প্রকাশ পেয়েছে, ঐসব যুলুম ও কুফরীর সকল পাপ তাদের (অর্থাৎ আবূ বকর ও ওমরের) আমলনামায় লিখা হবে। যে কোন যুগেই মুহাম্মদের বংশধরের মধ্যে যে রক্তপাত হয়েছে, বরং অন্যায়ভাবে যত রক্তপাত হয়েছে, যত অবৈধ মিলন হয়েছে, যত সুদী মাল অথবা যত অবৈধ সম্পদ খাওয়া হয়েছে এবং মাহাদী আগমনের পূর্ব পর্যন্ত যত পাপ ও অন্যায়-অত্যাচার সংঘটিত হয়েছে, নিশ্চিভাবে ঐসব কিছুই অচিরেই তাদের আমলনামায় হিসাব (গণনা) করা হবে। [মোল্লা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী, হক্কুল ইয়াকীন ( حق اليقين ), পৃ. ৩৬০]
আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী তার পরে আরও বর্ণনা করেন:
“নুমানী ইমাম মুহাম্মদ বাকের আ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: যখন ইমাম মাহদী আত্মপ্রকাশ করবে, তখন যে ব্যক্তি তার নিকট সর্বপ্রথম বায়‘আত (আনুগত্যের শপথ) গ্রহণ করবে, তিনি হলেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (না‘উযুবিল্লাহ); অতঃপর আলী আ. এবং আল্লাহ তা‘আলা তাকে ফেরেশতাদের দ্বারা সাহায্য করবেন। আর শাইখ আল-তুসী ও নুমানী ইমাম রেজা আ. থেকে বর্ণনা করেন যে, মাহদীর আগমনের অন্যতম নিদর্শন হল সে উলঙ্গ অবস্থায় সূর্যের সামনে আত্মপ্রকাশ করবে এবং আহ্বান করে বলবে এই হলেন আমীরুল মুমিনীন (মৃত্যুর পর) পুনরায় ফিরে এসেছেন যালিমদেরকে ধ্বংস করার জন্য।” [মোল্লা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী, হক্কুল ইয়াকীন ( حق اليقين ), পৃ. ৩৪৭]
আর এটা হল শিয়াদের বড় বড় মিথ্যাসমূহের মধ্যে অন্যতম, যা ইসলাম ও ইসলামী জীবন বিধান যার উপর প্রতিষ্ঠিত তার পরিপন্থী। আর সকল আসমানী ধর্ম এই ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ যে, নিশ্চয় সকল মানুষ এই দুনিয়ায় আমল করবে, অতঃপর মৃত্যুবরণ করবে, অতঃপর কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলার সামনে সমবেত হবে এবং সেখানে আল্লাহ তাদের সকল কৃতকর্মের হিসাব নেবেন। কিন্তু শিয়াগণ পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা অপবাদের মাধ্যমে মাহদীকে সৃষ্টির হিসাব গ্রহণকারীর আসনে সমাসীন করেছে। এই বর্ণনাসমূহ বাতিল ও অসার হওয়া সত্ত্বেও এর কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাইয়্যেদুনা আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর চরম অসম্মান হয়; কারণ, তারা উভয়জনকে ঐ মাহদীর নিকট বায়‘আত গ্রহণকারী হিসেবে আখ্যায়িত করে, যিনি অচিরেই তাদের সন্তান হিসেবে আগমন করবেন। অতঃপর মাহদীর আত্মপ্রকাশ উলঙ্গ ও একেবারে কাপড় বিহীন হওয়া (তাও তার শানে চরম অপমানকর কথা)। তাছাড়া সম্মানিত শায়খাইন আবূ বকর ও ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার তারা যে জঘন্য শত্রুতা ও বিদ্বেষ প্রকাশ করেছে, তা সমালোচনা ও পর্যালোচনার প্রয়োজন হয় না। কারণ, তা কুরআন ও সুন্নাহ থেকে উদ্ধৃত দলিল এবং যুক্তিভিত্তিক দলিলের পরিপন্থী। কেননা, কিভাবে সুস্থ বিবেক মেনে নেবে যে, ব্যক্তি তার পূর্ববর্তীদের পাপের বোঝা বহন করবে। সুতরাং সে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নয়; বরং বক্ষস্থিত হৃদয় প্রতিবন্ধী।
“আস-সাদিক আ. বলেন: যে ব্যক্তি আমাদের পুনর্জন্মে বিশ্বাস করে না এবং মুত‘আ বিয়ের বৈধতাকে স্বীকৃতি দেয় না, সে ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়।” [শাইখ আব্বাস আল-কুমী, মুন্তাহাল আমাল ( منتهى الأمال ), ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৪১]
আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী ফারসি ভাষায় বলেন, যার অনুবাদ হল:
“ইবনু বাবুইয়া ‘এলালুশ শারায়ে‘ ( علل الشرائع ) নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেন, ইমাম মুহাম্মদ বাকের আ. বলেন: যখন ইমাম মাহাদী আত্মপ্রকাশ করবে, তখন তিনি অতিসত্বর আয়েশাকে জীবিত করবেন এবং তার উপর শাস্তির বিধান (হদ) কায়েম করবেন।” [আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী, হক্কুল ইয়াকীন ( حق اليقين ), পৃ. ৩৪৭]
মকবুল আহমদ আশ-শি‘য়ী তার ‘তরজুমাতুল কুরআন’-এর মধ্যে উর্দু ভাষায় বর্ণনা করেন, যার অনুবাদ হল:
“ইমাম মুহাম্মদ বাকের আ. থেকে তাফসীরুল কুমী ও তাফসীরুল ‘আয়াশী’র মধ্যে বর্ণিত আছে যে, এই আয়াতের মধ্যে " الأخرة " দ্বারা উদ্দেশ্য হল, الرجعة বা পুনর্জন্ম। আর الرجعة বা পুনর্জন্ম মানে- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ইমামগণ কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্বে বিশেষ করে মুমিন ও কাফিরদের মধ্য থেকে ব্যক্তিবিশেষ দুনিয়ায় ফিরিয়ে আনবেন যাতে ভাল ও ঈমানকে সমুন্নত করা যায় এবং কুফর এবং পাপকে ধ্বংস করে দেয়া যায়।” [তরজুমাতু মকবুল আহমদ ( ترجمة مقبول أحمد ), পৃ. ৫৩৫]
মোল্লা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী ‘হক্কুল ইয়াকীন’ ( حق اليقين ) নামক গ্রন্থে ফারসি ভাষায় দীর্ঘ আলোচনা পেশ করেন, যার সারকথা হল: যখন মাহাদী আ. (কিয়ামতের অল্প কিছুদিন পূর্বে) আত্মপ্রকাশ করবেন, তখন অতি শীঘ্রই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরের দেয়াল ভেঙ্গে যাবে এবং তিনি আবূ বকর ও ওমরকে তাদের কবর থেকে বের করে নিয়ে আসবেন; অতঃপর তাদেরকে জীবিত করবেন এবং তাদেরকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করবেন (না‘উযুবিল্লাহ)।
অতঃপর তিনি মাহদী’র ব্যাপারে ফারসি ভাষায় আরও উল্লেখ করেন, যার অনুবাদ হল: অতঃপর তিনি মানবজাতিকে একত্রিত হওয়ার নির্দেশ দিবেন; তারপর বিশ্ব জগতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যত যুলুম (নির্যাতন) ও কুফরী প্রকাশ পেয়েছে, ঐসব যুলুম ও কুফরীর সকল পাপ তাদের (অর্থাৎ আবূ বকর ও ওমরের) আমলনামায় লিখা হবে। যে কোন যুগেই মুহাম্মদের বংশধরের মধ্যে যে রক্তপাত হয়েছে, বরং অন্যায়ভাবে যত রক্তপাত হয়েছে, যত অবৈধ মিলন হয়েছে, যত সুদী মাল অথবা যত অবৈধ সম্পদ খাওয়া হয়েছে এবং মাহাদী আগমনের পূর্ব পর্যন্ত যত পাপ ও অন্যায়-অত্যাচার সংঘটিত হয়েছে, নিশ্চিভাবে ঐসব কিছুই অচিরেই তাদের আমলনামায় হিসাব (গণনা) করা হবে। [মোল্লা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী, হক্কুল ইয়াকীন ( حق اليقين ), পৃ. ৩৬০]
আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী তার পরে আরও বর্ণনা করেন:
“নুমানী ইমাম মুহাম্মদ বাকের আ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: যখন ইমাম মাহদী আত্মপ্রকাশ করবে, তখন যে ব্যক্তি তার নিকট সর্বপ্রথম বায়‘আত (আনুগত্যের শপথ) গ্রহণ করবে, তিনি হলেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (না‘উযুবিল্লাহ); অতঃপর আলী আ. এবং আল্লাহ তা‘আলা তাকে ফেরেশতাদের দ্বারা সাহায্য করবেন। আর শাইখ আল-তুসী ও নুমানী ইমাম রেজা আ. থেকে বর্ণনা করেন যে, মাহদীর আগমনের অন্যতম নিদর্শন হল সে উলঙ্গ অবস্থায় সূর্যের সামনে আত্মপ্রকাশ করবে এবং আহ্বান করে বলবে এই হলেন আমীরুল মুমিনীন (মৃত্যুর পর) পুনরায় ফিরে এসেছেন যালিমদেরকে ধ্বংস করার জন্য।” [মোল্লা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী, হক্কুল ইয়াকীন ( حق اليقين ), পৃ. ৩৪৭]
আর এটা হল শিয়াদের বড় বড় মিথ্যাসমূহের মধ্যে অন্যতম, যা ইসলাম ও ইসলামী জীবন বিধান যার উপর প্রতিষ্ঠিত তার পরিপন্থী। আর সকল আসমানী ধর্ম এই ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ যে, নিশ্চয় সকল মানুষ এই দুনিয়ায় আমল করবে, অতঃপর মৃত্যুবরণ করবে, অতঃপর কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলার সামনে সমবেত হবে এবং সেখানে আল্লাহ তাদের সকল কৃতকর্মের হিসাব নেবেন। কিন্তু শিয়াগণ পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা অপবাদের মাধ্যমে মাহদীকে সৃষ্টির হিসাব গ্রহণকারীর আসনে সমাসীন করেছে। এই বর্ণনাসমূহ বাতিল ও অসার হওয়া সত্ত্বেও এর কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাইয়্যেদুনা আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর চরম অসম্মান হয়; কারণ, তারা উভয়জনকে ঐ মাহদীর নিকট বায়‘আত গ্রহণকারী হিসেবে আখ্যায়িত করে, যিনি অচিরেই তাদের সন্তান হিসেবে আগমন করবেন। অতঃপর মাহদীর আত্মপ্রকাশ উলঙ্গ ও একেবারে কাপড় বিহীন হওয়া (তাও তার শানে চরম অপমানকর কথা)। তাছাড়া সম্মানিত শায়খাইন আবূ বকর ও ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার তারা যে জঘন্য শত্রুতা ও বিদ্বেষ প্রকাশ করেছে, তা সমালোচনা ও পর্যালোচনার প্রয়োজন হয় না। কারণ, তা কুরআন ও সুন্নাহ থেকে উদ্ধৃত দলিল এবং যুক্তিভিত্তিক দলিলের পরিপন্থী। কেননা, কিভাবে সুস্থ বিবেক মেনে নেবে যে, ব্যক্তি তার পূর্ববর্তীদের পাপের বোঝা বহন করবে। সুতরাং সে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নয়; বরং বক্ষস্থিত হৃদয় প্রতিবন্ধী।
মুহাম্মদ ইবন ইয়াকুব আল-কুলাইনী তার ‘উসুলুল কাফী’ ( أصول الكافي ) নামক গ্রন্থের মধ্যে " باب طينة المؤمن و الكافر " (মুমিন ও কাফিরের মাটির অধ্যায়) নামে একটি অধ্যায়ের উল্লেখ করেন এবং তাতে অনেকগুলো বর্ণনা নিয়ে আসেন; তন্মধ্যে আমরা কিছুসংখ্যক বর্ণনা উল্লেখ করছি:
“আবদুল্লাহ ইবন কাইসান থেকে বর্ণিত, তিনি আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আমি তাকে বললাম, আমি তোমার গোলাম আবদুল্লাহ ইবন কাইসান, তিনি বললেন: বংশ সম্পর্কে আমার জানা আছে; কিন্তু আমি তোমাকে চিনতে পারছি না, সে বলল: আমি তাকে বললাম, আমি অথবা পাহাড়ে জন্ম গ্রহণ করেছি এবং পারস্য ভূমিতে বড় হয়েছি। আর ব্যবসা-বাণিজ্য ও অন্যান্যভাবে মানুষের সাথে মিশেছি। অতএব আমি এক ব্যক্তির সাথে মিশি, অতঃপর আমি তার উত্তম আচার-আচরণ, উত্তম চরিত্র ও আমানতদারিতা লক্ষ্য করি। অতঃপর আমি তাকে অনুসন্ধান চালাই এবং তাকে তোমাদের শত্রুতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি। আবার অন্য এক ব্যক্তির সাথে মিশি, অতঃপর আমি তার অসৎ চরিত্র, স্বল্প আমানতদারীতা ও অশ্লিলতা লক্ষ্য করি। অতঃপর আমি তাকে অনুসন্ধান চালাই এবং তাকে তোমাদের বন্ধুত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি; সুতরাং এটা কিভাবে হয়? সে বলল, অতঃপর তিনি আমাকে বললেন: হে ইবনু কাইসান! তুমি কি জান না যে, আল্লাহ তা‘আলা জান্নাত থেকে কিছু মাটি গ্রহণ করেছেন এবং জাহান্নাম থেকে কিছু মাটি গ্রহণ করেছেন; অতঃপর তা সামগ্রিকভাবে মিশ্রিত করেছেন। অতঃপর এটা থেকে ওটা, ওটা থেকে এটা বের করে দিয়েছেন; সুতরাং তুমি যাদের আমানতদারীতা, উত্তম চরিত্র ও উত্তম আচার-আচরণ লক্ষ্য করেছ, তাদের সাথে জান্নাতের মাটির সংস্পর্শ রয়েছে। আর তারা প্রত্যাবর্তন করবে ঐ দিকে, যার থেকে তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর তুমি যাদের স্বল্প আমানতদারীতা, অসৎ চরিত্র ও অশ্লিলতা লক্ষ্য করেছ, তাদের সাথে জাহান্নামের মাটির সংস্পর্শ রয়েছে। আর তারা প্রত্যাবর্তন করবে ঐ দিকে, যার থেকে তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন:
“ইবরাহীম থেকে বর্ণিত, তিনি আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আল্লাহ তা‘আলা যখন আদম আ.কে সৃষ্টি করার পরিকল্পনা করেন, তখন তিনি জিবরাইল আ.কে জুমার দিনের প্রথম মুহূর্তে প্রেরণ করলেন; অতঃপর সে তার ডান হাত দ্বারা এক মুষ্টি (মাটি) গ্রহণ করলেন, যে মুষ্টির পরিমাণ হল সপ্তম আকাশ থেকে শুরু করে দুনিয়ার আকাশ পর্যন্ত এবং তিনি প্রত্যেক আসমান থেকে মাটি গ্রহণ করেছেন। আর তিনি অপর এক মুষ্টি গ্রহণ করলেন সাত যমিনের উপরিভাগ থেকে শুরু করে সাত যমিনের প্রান্তসীমা পর্যন্ত সীমানা থেকে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তার পরিকল্পনা স্থির করলেন; অতঃপর তিনি প্রথম মুষ্টি গ্রহণ করেন তাঁর ডান হাতে এবং অপর মুষ্টি গ্রহণ করেন তাঁর বাম হাতে। অতঃপর তিনি মাটিকে দ্বিখণ্ডিত করলেন; অতঃপর তিনি যমিন থেকে যাদেরকে সৃষ্টি করলেন তারা যমিনে ছড়িয়ে গেল এবং আসমান যমিন থেকে যাদেরকে সৃষ্টি করলেন তারা আসমানে ছড়িয়ে পড়ল। অতঃপর তিনি তাঁর ডান হাতের মুষ্টিকে লক্ষ্য করে বললেন: তোমার থেকে সৃষ্টি হবে নবী ও রাসূলগণ, অসীয়তকারীগণ, সত্যবাদীগণ, মুমিনগণ, সৌভাগ্যবানগণ এবং তিনি যাদেরকে সম্মানিত করতে চান তারা; ফলে তিনি যা যেভাবে বলেছেন, তা তাদের জন্য আবশ্যক হয়ে যায়। আর তিনি তাঁর বাম হাতের মুষ্টিকে লক্ষ্য করে বললেন: তোমার থেকে সৃষ্টি হবে অহঙ্কারীগণ, মুশরিকগণ, কাফিরগণ, সীমালংঘনকারীগণ এবং তিনি যাদেরকে অপমানিত ও ভাগ্যাহত করতে চান তারা; ফলে তিনি যা যেভাবে বলেছেন, তা তাদের জন্য আবশ্যক হয়ে যায়। অতঃপর মাটির দুই খণ্ড সামগ্রিকভাবে মিশ্রিত হয়ে গেছে। আর এটাই হল আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿ إِنَّ ٱللَّهَ فَالِقُ ٱلۡحَبِّ وَٱلنَّوَىٰ﴾ (আল্লাহই শস্যবীজ ও আঁটি অঙ্কুরিত করেন; —সূরা আল-আন‘আম: ৯৫) এ আয়াতে (তাদের মতে) " الحب " (শস্যবীজ) হল, মুমিনগণের মাটি, যাতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ভালবাসা বা মহব্বত ঢেলে দিয়েছেন; আর " النوى " (আঁটি) হল কাফিরগণের মাটি, যারা সকল প্রকার কল্যাণ থেকে দূরে অবস্থান করে। আর এ জন্যই " النوى "-কে " النوى " বলে নামকরণ করা হয়েছে; কেননা, সে (কাফির) সকল প্রকার কল্যাণ থেকে দূরে বহুদূরে অবস্থান করে। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন: ﴿يُخۡرِجُ ٱلۡحَيَّ مِنَ ٱلۡمَيِّتِ وَيُخۡرِجُ ٱلۡمَيِّتَ مِنَ ٱلۡحَيِّ ﴾ ( (কে) জীবিতকে মৃত থেকে বের করে এবং মৃতকে জীবিত থেকে বের করে; —সূরা ইউনুস: ৩১) এ আয়াতে (তাদের মতে) " الحي " (জীবিত) হল, মুমিন ব্যক্তি, যার মাটিকে কাফিরের মাটি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে; আর " الميت " (মৃত) হল, যাকে জীবিত থেকে বের করা হয়েছে; আর সে হল কাফির, যাকে মুমিনের মাটি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। সুতরাং " الحي " (জীবিত) বলতে মুমিন ব্যক্তি এবং " الميت " (মৃত) বলতে কাফির ব্যক্তিকে বুঝায়। আর (তাদের মতে) এটাই হল আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿ أَوَ مَن كَانَ مَيۡتٗا فَأَحۡيَيۡنَٰهُ ﴾ (যে ব্যক্তি মৃত ছিল, যাকে আমি পরে জীবিত করেছি ...; —সূরা আল-আন‘আম: ১২২) —এর বাস্তবতা। সুতরাং তার মৃত্যুটা ছিল তার মাটি কাফিরের মাটির সাথে মিশ্রিত হওয়া; আর তার জীবন হল যখন আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নির্দেশের মাধ্যমে তাকে (কাফিরের মাটি থেকে) পৃথক করলেন। সুতরাং এটা ঐটার মত, আল্লাহ তা‘আলা মুমিন ব্যক্তিকে অন্ধকারে প্রবেশের পর জন্মের সময় আলোর দিকে বের করে নিয়ে আসেন; আর কাফির ব্যক্তিকে আলোতে প্রবেশের পর (জন্মের সময়) অন্ধকারের দিকে বের করে নিয়ে আসেন। আর (তাদের মতে) এটাই হল আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿ لِّيُنذِرَ مَن كَانَ حَيّٗا وَيَحِقَّ ٱلۡقَوۡلُ عَلَى ٱلۡكَٰفِرِينَ ٧٠ ﴾ (যাতে সে সতর্ক করতে পারে জীবিতগণকে এবং যাতে কাফিরদের বিরুদ্ধে শাস্তির কথা সত্য হতে পারে। —সূরা ইয়াসীন: ৭০) —এর বাস্তবতা।”
এই বর্ণনাসমূহ থেকে শিয়াদের ভ্রান্ত আকিদা-বিশ্বাস সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠে যে, কাফিরগণ ও তাদের সাথে সংযুক্ত সকল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অনুসারীগণের (অর্থাৎ- শিয়াগণ ব্যতীত বাকি সকলের) পুণ্যসমূহ রাফেযী শিয়াদেরকে দিয়ে দেয়া হবে; আর তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী তাদের (শিয়াদের) পাপসমূহ বহন করবে কাফিরগণ ও তাদের সাথে সংযুক্ত সকল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অনুসারীবৃন্দ। আর এই বিশ্বাসটি মহান প্রতিপালকের ন্যায় বা ইনসাফের পরিপন্থী; আর সুস্থ বিবেক এবং প্রকৃতি তা অস্বীকার করে। আর আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٞ وِزۡرَ أُخۡرَىٰ﴾ [ سورة الأنعام : 164]
“আর কেউ অন্য কারও বোঝা বহন করবে না।” —( সূরা আল-আন‘আম: ১৬৪)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ كُلُّ نَفۡسِۢ بِمَا كَسَبَتۡ رَهِينَةٌ ٣٨﴾ [ سورة المدثر : 38]
“প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের দায়ে আবদ্ধ।” —( সূরা আল-মুদ্দাছছির: ৩৮)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ فَمَن يَعۡمَلۡ مِثۡقَالَ ذَرَّةٍ خَيۡرٗا يَرَهُۥ ٧ وَمَن يَعۡمَلۡ مِثۡقَالَ ذَرَّةٖ شَرّٗا يَرَهُۥ٨ ﴾ [ سورة الزلزة : 7-8]
“কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে সে তা দেখবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে সে তাও দেখবে।” —( সূরা আল-যিলযাল: ৭-৮)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ وَتُوَفَّىٰ كُلُّ نَفۡسٖ مَّا عَمِلَتۡ﴾ [ سورة النحل : 111]
“এবং প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের পূর্ণফল দেয়া হবে।” —( সূরা আন-নাহল: ১১১)
এই অর্থে আল-কুরআনের আরও বহু আয়াত এবং অনেক বিশুদ্ধ হাদিস রয়েছে; যেগুলো এই অর্থকে সুস্পষ্ট করে এবং তাদের এই ভ্রান্ত আকিদাকে প্রত্যাখ্যান করে। সুতরাং তাদের এই আকিদাটি বাতিল, কুরআন-সুন্নাহ পরিপন্থি এবং বিবেক ও ইনসাফ বর্জিত।
“আবদুল্লাহ ইবন কাইসান থেকে বর্ণিত, তিনি আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আমি তাকে বললাম, আমি তোমার গোলাম আবদুল্লাহ ইবন কাইসান, তিনি বললেন: বংশ সম্পর্কে আমার জানা আছে; কিন্তু আমি তোমাকে চিনতে পারছি না, সে বলল: আমি তাকে বললাম, আমি অথবা পাহাড়ে জন্ম গ্রহণ করেছি এবং পারস্য ভূমিতে বড় হয়েছি। আর ব্যবসা-বাণিজ্য ও অন্যান্যভাবে মানুষের সাথে মিশেছি। অতএব আমি এক ব্যক্তির সাথে মিশি, অতঃপর আমি তার উত্তম আচার-আচরণ, উত্তম চরিত্র ও আমানতদারিতা লক্ষ্য করি। অতঃপর আমি তাকে অনুসন্ধান চালাই এবং তাকে তোমাদের শত্রুতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি। আবার অন্য এক ব্যক্তির সাথে মিশি, অতঃপর আমি তার অসৎ চরিত্র, স্বল্প আমানতদারীতা ও অশ্লিলতা লক্ষ্য করি। অতঃপর আমি তাকে অনুসন্ধান চালাই এবং তাকে তোমাদের বন্ধুত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি; সুতরাং এটা কিভাবে হয়? সে বলল, অতঃপর তিনি আমাকে বললেন: হে ইবনু কাইসান! তুমি কি জান না যে, আল্লাহ তা‘আলা জান্নাত থেকে কিছু মাটি গ্রহণ করেছেন এবং জাহান্নাম থেকে কিছু মাটি গ্রহণ করেছেন; অতঃপর তা সামগ্রিকভাবে মিশ্রিত করেছেন। অতঃপর এটা থেকে ওটা, ওটা থেকে এটা বের করে দিয়েছেন; সুতরাং তুমি যাদের আমানতদারীতা, উত্তম চরিত্র ও উত্তম আচার-আচরণ লক্ষ্য করেছ, তাদের সাথে জান্নাতের মাটির সংস্পর্শ রয়েছে। আর তারা প্রত্যাবর্তন করবে ঐ দিকে, যার থেকে তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর তুমি যাদের স্বল্প আমানতদারীতা, অসৎ চরিত্র ও অশ্লিলতা লক্ষ্য করেছ, তাদের সাথে জাহান্নামের মাটির সংস্পর্শ রয়েছে। আর তারা প্রত্যাবর্তন করবে ঐ দিকে, যার থেকে তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন:
“ইবরাহীম থেকে বর্ণিত, তিনি আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আল্লাহ তা‘আলা যখন আদম আ.কে সৃষ্টি করার পরিকল্পনা করেন, তখন তিনি জিবরাইল আ.কে জুমার দিনের প্রথম মুহূর্তে প্রেরণ করলেন; অতঃপর সে তার ডান হাত দ্বারা এক মুষ্টি (মাটি) গ্রহণ করলেন, যে মুষ্টির পরিমাণ হল সপ্তম আকাশ থেকে শুরু করে দুনিয়ার আকাশ পর্যন্ত এবং তিনি প্রত্যেক আসমান থেকে মাটি গ্রহণ করেছেন। আর তিনি অপর এক মুষ্টি গ্রহণ করলেন সাত যমিনের উপরিভাগ থেকে শুরু করে সাত যমিনের প্রান্তসীমা পর্যন্ত সীমানা থেকে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তার পরিকল্পনা স্থির করলেন; অতঃপর তিনি প্রথম মুষ্টি গ্রহণ করেন তাঁর ডান হাতে এবং অপর মুষ্টি গ্রহণ করেন তাঁর বাম হাতে। অতঃপর তিনি মাটিকে দ্বিখণ্ডিত করলেন; অতঃপর তিনি যমিন থেকে যাদেরকে সৃষ্টি করলেন তারা যমিনে ছড়িয়ে গেল এবং আসমান যমিন থেকে যাদেরকে সৃষ্টি করলেন তারা আসমানে ছড়িয়ে পড়ল। অতঃপর তিনি তাঁর ডান হাতের মুষ্টিকে লক্ষ্য করে বললেন: তোমার থেকে সৃষ্টি হবে নবী ও রাসূলগণ, অসীয়তকারীগণ, সত্যবাদীগণ, মুমিনগণ, সৌভাগ্যবানগণ এবং তিনি যাদেরকে সম্মানিত করতে চান তারা; ফলে তিনি যা যেভাবে বলেছেন, তা তাদের জন্য আবশ্যক হয়ে যায়। আর তিনি তাঁর বাম হাতের মুষ্টিকে লক্ষ্য করে বললেন: তোমার থেকে সৃষ্টি হবে অহঙ্কারীগণ, মুশরিকগণ, কাফিরগণ, সীমালংঘনকারীগণ এবং তিনি যাদেরকে অপমানিত ও ভাগ্যাহত করতে চান তারা; ফলে তিনি যা যেভাবে বলেছেন, তা তাদের জন্য আবশ্যক হয়ে যায়। অতঃপর মাটির দুই খণ্ড সামগ্রিকভাবে মিশ্রিত হয়ে গেছে। আর এটাই হল আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿ إِنَّ ٱللَّهَ فَالِقُ ٱلۡحَبِّ وَٱلنَّوَىٰ﴾ (আল্লাহই শস্যবীজ ও আঁটি অঙ্কুরিত করেন; —সূরা আল-আন‘আম: ৯৫) এ আয়াতে (তাদের মতে) " الحب " (শস্যবীজ) হল, মুমিনগণের মাটি, যাতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ভালবাসা বা মহব্বত ঢেলে দিয়েছেন; আর " النوى " (আঁটি) হল কাফিরগণের মাটি, যারা সকল প্রকার কল্যাণ থেকে দূরে অবস্থান করে। আর এ জন্যই " النوى "-কে " النوى " বলে নামকরণ করা হয়েছে; কেননা, সে (কাফির) সকল প্রকার কল্যাণ থেকে দূরে বহুদূরে অবস্থান করে। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন: ﴿يُخۡرِجُ ٱلۡحَيَّ مِنَ ٱلۡمَيِّتِ وَيُخۡرِجُ ٱلۡمَيِّتَ مِنَ ٱلۡحَيِّ ﴾ ( (কে) জীবিতকে মৃত থেকে বের করে এবং মৃতকে জীবিত থেকে বের করে; —সূরা ইউনুস: ৩১) এ আয়াতে (তাদের মতে) " الحي " (জীবিত) হল, মুমিন ব্যক্তি, যার মাটিকে কাফিরের মাটি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে; আর " الميت " (মৃত) হল, যাকে জীবিত থেকে বের করা হয়েছে; আর সে হল কাফির, যাকে মুমিনের মাটি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। সুতরাং " الحي " (জীবিত) বলতে মুমিন ব্যক্তি এবং " الميت " (মৃত) বলতে কাফির ব্যক্তিকে বুঝায়। আর (তাদের মতে) এটাই হল আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿ أَوَ مَن كَانَ مَيۡتٗا فَأَحۡيَيۡنَٰهُ ﴾ (যে ব্যক্তি মৃত ছিল, যাকে আমি পরে জীবিত করেছি ...; —সূরা আল-আন‘আম: ১২২) —এর বাস্তবতা। সুতরাং তার মৃত্যুটা ছিল তার মাটি কাফিরের মাটির সাথে মিশ্রিত হওয়া; আর তার জীবন হল যখন আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নির্দেশের মাধ্যমে তাকে (কাফিরের মাটি থেকে) পৃথক করলেন। সুতরাং এটা ঐটার মত, আল্লাহ তা‘আলা মুমিন ব্যক্তিকে অন্ধকারে প্রবেশের পর জন্মের সময় আলোর দিকে বের করে নিয়ে আসেন; আর কাফির ব্যক্তিকে আলোতে প্রবেশের পর (জন্মের সময়) অন্ধকারের দিকে বের করে নিয়ে আসেন। আর (তাদের মতে) এটাই হল আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿ لِّيُنذِرَ مَن كَانَ حَيّٗا وَيَحِقَّ ٱلۡقَوۡلُ عَلَى ٱلۡكَٰفِرِينَ ٧٠ ﴾ (যাতে সে সতর্ক করতে পারে জীবিতগণকে এবং যাতে কাফিরদের বিরুদ্ধে শাস্তির কথা সত্য হতে পারে। —সূরা ইয়াসীন: ৭০) —এর বাস্তবতা।”
এই বর্ণনাসমূহ থেকে শিয়াদের ভ্রান্ত আকিদা-বিশ্বাস সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠে যে, কাফিরগণ ও তাদের সাথে সংযুক্ত সকল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অনুসারীগণের (অর্থাৎ- শিয়াগণ ব্যতীত বাকি সকলের) পুণ্যসমূহ রাফেযী শিয়াদেরকে দিয়ে দেয়া হবে; আর তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী তাদের (শিয়াদের) পাপসমূহ বহন করবে কাফিরগণ ও তাদের সাথে সংযুক্ত সকল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অনুসারীবৃন্দ। আর এই বিশ্বাসটি মহান প্রতিপালকের ন্যায় বা ইনসাফের পরিপন্থী; আর সুস্থ বিবেক এবং প্রকৃতি তা অস্বীকার করে। আর আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٞ وِزۡرَ أُخۡرَىٰ﴾ [ سورة الأنعام : 164]
“আর কেউ অন্য কারও বোঝা বহন করবে না।” —( সূরা আল-আন‘আম: ১৬৪)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ كُلُّ نَفۡسِۢ بِمَا كَسَبَتۡ رَهِينَةٌ ٣٨﴾ [ سورة المدثر : 38]
“প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের দায়ে আবদ্ধ।” —( সূরা আল-মুদ্দাছছির: ৩৮)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ فَمَن يَعۡمَلۡ مِثۡقَالَ ذَرَّةٍ خَيۡرٗا يَرَهُۥ ٧ وَمَن يَعۡمَلۡ مِثۡقَالَ ذَرَّةٖ شَرّٗا يَرَهُۥ٨ ﴾ [ سورة الزلزة : 7-8]
“কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে সে তা দেখবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে সে তাও দেখবে।” —( সূরা আল-যিলযাল: ৭-৮)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ وَتُوَفَّىٰ كُلُّ نَفۡسٖ مَّا عَمِلَتۡ﴾ [ سورة النحل : 111]
“এবং প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের পূর্ণফল দেয়া হবে।” —( সূরা আন-নাহল: ১১১)
এই অর্থে আল-কুরআনের আরও বহু আয়াত এবং অনেক বিশুদ্ধ হাদিস রয়েছে; যেগুলো এই অর্থকে সুস্পষ্ট করে এবং তাদের এই ভ্রান্ত আকিদাকে প্রত্যাখ্যান করে। সুতরাং তাদের এই আকিদাটি বাতিল, কুরআন-সুন্নাহ পরিপন্থি এবং বিবেক ও ইনসাফ বর্জিত।
আর এটাও ইসলামী আকিদা ও বিশ্বাসের (বিপদ ও মুসিবতে ধৈর্য ধারণ) পরিপন্থী। শিয়াগণ শোক, মাতম ও বিলাপের জন্য মাহফিল ও মাজলিস তথা সভা ও সমাবেশের আকিদায় বিশ্বাস করে এবং তারা প্রতি বছর মহররম মাসের প্রথম দশকে আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের বিশ্বাস নিয়ে হোসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর শাহাদাতের স্মরণে বিভিন্ন মাঠে ও ময়দানে এবং মহাসড়কে বড় বড় শোক মিছিলের আয়োজন করে। অতঃপর তারা তাদের হাত দ্বারা তাদের গালে, বক্ষে ও পিঠে আঘাত করে এবং কাঁদতে কাঁদতে বক্ষ বিদীর্ণ করে। আর বিশেষ করে প্রত্যেক মহররম মাসের দশম তারিখে তারা ইয়া হোসাইন! ... ইয়া হোসাইন! শ্লোগানে শ্লোগানে চীৎকার করে। কারণ, বন্ধুত্বের আবেগ ভর্তি তাদের চীৎকার পৌঁছে যায় পরিপূর্ণতার চরম শিখরে। আরা তারা ঐ দিন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সারিবদ্ধভাবে কাঠ বা অনুরূপ বস্তু দ্বারা নির্মিত হোসাইনের কফিন বহন করে (র্যালিতে) বের হয় এবং সকল প্রকার সৌন্দর্য ও অলঙ্কার দ্বারা সুসজ্জিত ঘোড়া পরিচালিত করে; আর এর দ্বারা তারা কারবালার ময়দানে হোসাইনের ঘোড়া ও তার দলবলের সেই দিনের অবস্থার অভিনয় করে। আর তাদের সাথে এই হৈচৈ ও গোলযোগ অংশগ্রহণের জন্য তারা বড় ধরনের মজুরি দিয়ে শ্রমিক ভাড়া করে; আরা তারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের গালি দেয় এবং তাদের থেকে নিজেদেরকে মুক্ত মনে করে। আর তাদের এই প্রথম স্তরের জাহেলী কর্মকাণ্ডগুলো আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের সাথে বিবাদ ও বিতর্কের দিকে নিয়ে যায়; বিশেষ করে যখন তারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের গালি দেয়, নিন্দা করে এবং আবূ বকর, ওমর ও ওসমানের মত খলিফাদের থেকে নিজেদেরকে মুক্ত মনে করে। অতঃপর তাদের কারণেই সৎব্যক্তিদের মধ্যে রক্তপাতের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে বলে মনে করত।
আর শিয়াগণ হোসাইনের মাতম তথা শোক প্রকাশে এইভাবে বহু অর্থ-সম্পদ খরচ করে। কারণ, তারা বিশ্বাস করে যে, এটা তাদের দীনের মূল কর্মকাণ্ড ও মহান প্রতীক তথা নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত। আর শিয়াগণ তাদের সন্তানদেরকে এই মাতমের সময় কাঁদতে অভ্যস্ত করে তোলে; সুতরাং যখন তারা বড় হয়, তখন তারা যখন ইচ্ছা কাঁদতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। অতএব তাদের কাঁদাটা হল একটা ঐচ্ছিক বিষয়; আর তাদের শোক-দুঃখ হল কৃত্তিম শোক-দুঃখ; অথচ পবিত্র শরীয়ত দৃঢ়ভাবে শোকের মাতম (কান্নাকাটি), বক্ষ বিদীর্ণকরণ ও গালে আঘাত করাকে নিষেধ করেছে এবং আল-কুরআন আদম সন্তানদেরকে ধৈর্য ধারণ করার ও আল্লাহর সিদ্ধান্তের প্রতি সন্তুষ্ট থাকার উপদেশ দিয়েছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱسۡتَعِينُواْ بِٱلصَّبۡرِ وَٱلصَّلَوٰةِۚ إِنَّ ٱللَّهَ مَعَ ٱلصَّٰبِرِينَ ١٥٣ ﴾ [ سورة البقرة : 153]
“হে মুমিনগণ! ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে তোমরা সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।” —( সূরা আল-বাকারা: ১৫৩)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ وَبَشِّرِ ٱلصَّٰبِرِينَ ١٥٥ ٱلَّذِينَ إِذَآ أَصَٰبَتۡهُم مُّصِيبَةٞ قَالُوٓاْ إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّآ إِلَيۡهِ رَٰجِعُونَ ١٥٦﴾ [ سورة البقرة : 155-156]
“তুমি শুভ সংবাদ দাও ধৈর্যশীলগণকে, যারা তাদের উপর বিপদ আপতিত হলে বলে, ‘আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভোবে আমরা তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী।” —( সূরা আল-বাকারা: ১৫৫-১৫৬)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ وَتَوَاصَوۡاْ بِٱلۡحَقِّ وَتَوَاصَوۡاْ بِٱلصَّبۡرِ ٣ ﴾ [ سورة العصر : 3]
“এবং তারা পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও পরস্পরকে ধৈর্যের উপদেশ দেয়।” —( সূরা আল-‘আসর: ৩)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ وَتَوَاصَوۡاْ بِٱلصَّبۡرِ وَتَوَاصَوۡاْ بِٱلۡمَرۡحَمَةِ ١٧ ﴾ [ سورة البلد : 17]
“এবং যারা পরস্পরকে উপদেশ দেয় ধৈর্য ধারণের ও দয়া-দাক্ষিণ্যের।” —( সূরা আল-বালাদ: ১৭)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿... وَٱلصَّٰبِرِينَ فِي ٱلۡبَأۡسَآءِ وَٱلضَّرَّآءِ وَحِينَ ٱلۡبَأۡسِۗ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ صَدَقُواْۖ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُتَّقُونَ ١٧٧﴾ [ سورة البقرة : 177]
“... অর্থ-সংকটে, দুঃখ-ক্লেশে ও সংগ্রাম-সংকটে ধৈর্য ধারণ করলে। এরাই তারা যারা সত্যপরায়ণ এবং এরাই মুত্তাকী।” —(সূরা আল-বাকারা: ১৭৭)
অতঃপর তাদের মতে নিষ্পাপ ইমামগণ এবং তাদের নিকট যাদের আনুগত্য করা সর্বাবস্থায় ওয়াজিব, তাদের থেকেও এইরূপ সাব্যস্ত হয়েছে। ‘নাহজুল বালাগাহ’ ( نهج البلاغة ) নামক গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে:
“আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তিকালের পর তাঁকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উদ্দেশ্য করে বলেন: আপনি যদি দুঃখ প্রকাশ করা থেকে নিষেধ না করতেন এবং ধৈর্য ধারণ করার নির্দেশ না দিতেন, তবে আমরা আপনার শোকে (কাঁদতে কাঁদতে) চোখের পানি শেষ করে ফেলতাম।”
নাহজুল বালাগাহ’ ( نهج البلاغة ) নামক গ্রন্থে আরও উল্লেখ করা হয়েছে:
“আলী আ. বলেন: যে ব্যক্তি বিপদ-মুসিবতের সময় তার হাতকে উরুতে মারে, সে ব্যক্তির আমল বিনষ্ট হয়ে যায়।”
‘মুন্তাহাল আমাল’ ( منتهى الأمال ) নামক গ্রন্থের লেখক ফারসি ভাষায় উল্লেখ করেন, যার আরবি (বাংলা) অনুবাদ হল:
“হোসাইন তার বোন যয়নবকে কারবালার ময়দানে বলেছেন: হে আমার বোন! আমি তোমাকে আল্লাহর নামে শপথ দিয়ে বলছি, তোমার কর্তব্য হল এই শপথ রক্ষা করা। সুতরাং যখন আমি নিহত হব, তখন তুমি বক্ষ বিদীর্ণ করো না এবং তুমি তোমার নখ দ্বারা তোমার চেহারায় আঁচড় কাটবে না। আর আমার শাহাদাতের কারণে তুমি ধ্বংস ও মৃত্যুকে ডাকবে না।” [মুন্তাহাল আমাল ( منتهى الأمال ), প্রথম খণ্ড, পৃ. ২৪৮]
আবূ জাফর আল-কুমী বর্ণনা করেন:
“আমীরুল মুমিনীন আ. তাঁর সাথীদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময় বলেন: তোমরা কালো পোষাক পরিধান করো না। কারণ, এটা ফেরাউনের পোষাক।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন বাবুইয়া আল-কুমী, মান লা ইয়াহদুরুহুল ফকিহ ( من لا يحضره الفقيه ), পৃ. ৫১]
‘তাফসীর আস-সাফী’-এর মধ্যে - ﴿ وَلَا يَعۡصِينَكَ فِي مَعۡرُوفٖ ﴾ (তারা সৎকাজে তোমাকে অমান্য করবে না, —সূরা আল-মুমতাহিনা: ১২) -আয়াতের নীচে বর্ণিত আছে: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদেরকে আনুগত্যের শপথ দেয়ার সময় বলেছেন যে, তারা যেন কালো পোষাক পরিধান না করে, বক্ষ বিদীর্ণ না করে এবং ধ্বংসকে আহ্বান না করে। আর আল-কুলাইনী’র ‘ফুরু‘উল কাফী’ ( فروع الكافي ) নামক গ্রন্থে বর্ণিত আছে: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাইয়্যেদা ফাতেমা যোহরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন: “যখন আমি মৃত্যুবরণ করব, তখন তুমি তোমার চেহারায় আঁচড় কাটবে না, ধ্বংসকে ডাকবে না এবং আমার নিকট বিলাপরত অবস্থা দাঁড়াবে না।”
সেখানে শিয়াদের কিতাবসমূহে অনেক বেশি বর্ণনা (রেওয়ায়েত) বর্ণিত রয়েছে, যাতে বিপদ-মুসিবত ও তার উপর অধৈর্য হয়ে বিলাপ করা, ধ্বংস ও মৃত্যুকে ডাকা, বক্ষ বিদীর্ণকরণ, গালে আঘাত করা ইত্যাদি ধরনের দুঃখ প্রকাশ থেকে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। এখানে আমি তাদের বর্ণনাসমূহ থেকে শুধু কয়েকটি নমুনা করেছি। আর যিনি এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানতে আগ্রহী, তার উচিত হবে আমার ‘হাকীকাতুল মা’তম’ ( حقيقة المأتم ) অধ্যয়ন করা; তাতে আমি বিস্তারিত আলোচনা করেছি এবং তাদের কিতাবসমূহ থেকে বর্ণনাসমূহ (রেওয়ায়েতসমূহ) উল্লেখ করেছি তাদের এই শোক-আহাজারি ও সভা-সমাবেশসমূহের জওয়াব স্বরূপ, যেগুলো ‘ইসলামে ধৈর্য’ ( الصبر في الإسلام )-এই আকিদা-বিশ্বাসের পরিপন্থী।
আমার ব্যস্ততার মাঝে যতটুকু সম্ভব হয়েছে, দ্বাদশ জাফরীয়া রাফেযীয়া শিয়াদের বাতিল (অসার) আকিদাসমূহ থেকে ততটুকু পরিমাণ আমি আল্লাহর মুমিন বান্দাদের সামনে পেশ করেছি। আর আমি প্রতিটি অধ্যায়ে তাদের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থপঞ্জি থেকে শুধু স্বল্প সংখ্যক নমুনা উল্লেখ করেছি। সুতরাং যিনি আরও বেশি জানতে ও বুঝতে চান, তার উচিত তিনি যেন স্বয়ং শিয়াদের মূল গ্রন্থসমূহ অধ্যয়ন করেন। কারণ, এই গ্রন্থগুলো এ ধরনের বক্তব্য দ্বারা, এমনকি তার চেয়ে জঘন্য বক্তব্যসমষ্টি দ্বার ভরপুর।
পরিশেষে মহান আল্লাহ তা‘আলার নিকট প্রার্থনা করছি, তিনি যেন তাঁর অনুগ্রহ ও ইহসান দ্বারা শিয়াদের মিথ্যা বর্ণনাসমূহ, আকিদা-বিশ্বাস এবং তাদের পথভ্রষ্টতা থেকে মুসলিম সম্প্রদায়কে হেফাজত করেন। কারণ, তা সৎকর্মসমূহ নষ্ট করবে, মুমিন ব্যক্তিকে ঈমান শূন্য করবে এবং তাকে ইসলাম থেকে খারিজ (বের) করে দেবে। তাঁর নিকট আরও প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদেরকে সরল-সঠিক পথ প্রদর্শন করেন এবং আমাদেরকে সুস্পষ্ট সত্য বিধানের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখেন; আর তিনি যেন আমাদেরকে মুক্তিপ্রাপ্ত সাহায্যপ্রাপ্ত সুস্পষ্ট হকের উপর প্রতিষ্ঠিত দল (ফিরকা) আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আকিদা-বিশ্বাসের উপর সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত রাখেন। তাঁর নিকট আরও প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদেরকে এমন কথা, কাজ, নিয়ত ও হেদায়েত অর্জনের তাওফিক দান করেন, যা তিনি ভালবাসেন এবং পছন্দ করেন। আর তিনি সকল বস্তুর উপর ক্ষমতাবান।
و صلى الله على محمد و آله و أصحابه و أزواجه و أتباعه أجمعين و بارك و سلم تسليما ... و آخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين .
(আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পরিবার-পরিজন, সঙ্গী-সাথীগণ, স্ত্রীগণ এবং সকল অনুসারীর উপর রহমত, বরকত ও শান্তি বর্ষণ করুন ... আর আমাদের সর্বশেষ দাবি, আবেদন ও নিবেদন হল, সকল প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য নিবেদিত ...)।
মুহাম্মদ আবদুস সাত্তার আততুনসাবী
০৪. ১১. ১৪০৩ হিজরি।
আর শিয়াগণ হোসাইনের মাতম তথা শোক প্রকাশে এইভাবে বহু অর্থ-সম্পদ খরচ করে। কারণ, তারা বিশ্বাস করে যে, এটা তাদের দীনের মূল কর্মকাণ্ড ও মহান প্রতীক তথা নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত। আর শিয়াগণ তাদের সন্তানদেরকে এই মাতমের সময় কাঁদতে অভ্যস্ত করে তোলে; সুতরাং যখন তারা বড় হয়, তখন তারা যখন ইচ্ছা কাঁদতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। অতএব তাদের কাঁদাটা হল একটা ঐচ্ছিক বিষয়; আর তাদের শোক-দুঃখ হল কৃত্তিম শোক-দুঃখ; অথচ পবিত্র শরীয়ত দৃঢ়ভাবে শোকের মাতম (কান্নাকাটি), বক্ষ বিদীর্ণকরণ ও গালে আঘাত করাকে নিষেধ করেছে এবং আল-কুরআন আদম সন্তানদেরকে ধৈর্য ধারণ করার ও আল্লাহর সিদ্ধান্তের প্রতি সন্তুষ্ট থাকার উপদেশ দিয়েছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱسۡتَعِينُواْ بِٱلصَّبۡرِ وَٱلصَّلَوٰةِۚ إِنَّ ٱللَّهَ مَعَ ٱلصَّٰبِرِينَ ١٥٣ ﴾ [ سورة البقرة : 153]
“হে মুমিনগণ! ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে তোমরা সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।” —( সূরা আল-বাকারা: ১৫৩)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ وَبَشِّرِ ٱلصَّٰبِرِينَ ١٥٥ ٱلَّذِينَ إِذَآ أَصَٰبَتۡهُم مُّصِيبَةٞ قَالُوٓاْ إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّآ إِلَيۡهِ رَٰجِعُونَ ١٥٦﴾ [ سورة البقرة : 155-156]
“তুমি শুভ সংবাদ দাও ধৈর্যশীলগণকে, যারা তাদের উপর বিপদ আপতিত হলে বলে, ‘আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভোবে আমরা তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী।” —( সূরা আল-বাকারা: ১৫৫-১৫৬)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ وَتَوَاصَوۡاْ بِٱلۡحَقِّ وَتَوَاصَوۡاْ بِٱلصَّبۡرِ ٣ ﴾ [ سورة العصر : 3]
“এবং তারা পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও পরস্পরকে ধৈর্যের উপদেশ দেয়।” —( সূরা আল-‘আসর: ৩)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ وَتَوَاصَوۡاْ بِٱلصَّبۡرِ وَتَوَاصَوۡاْ بِٱلۡمَرۡحَمَةِ ١٧ ﴾ [ سورة البلد : 17]
“এবং যারা পরস্পরকে উপদেশ দেয় ধৈর্য ধারণের ও দয়া-দাক্ষিণ্যের।” —( সূরা আল-বালাদ: ১৭)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿... وَٱلصَّٰبِرِينَ فِي ٱلۡبَأۡسَآءِ وَٱلضَّرَّآءِ وَحِينَ ٱلۡبَأۡسِۗ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ صَدَقُواْۖ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُتَّقُونَ ١٧٧﴾ [ سورة البقرة : 177]
“... অর্থ-সংকটে, দুঃখ-ক্লেশে ও সংগ্রাম-সংকটে ধৈর্য ধারণ করলে। এরাই তারা যারা সত্যপরায়ণ এবং এরাই মুত্তাকী।” —(সূরা আল-বাকারা: ১৭৭)
অতঃপর তাদের মতে নিষ্পাপ ইমামগণ এবং তাদের নিকট যাদের আনুগত্য করা সর্বাবস্থায় ওয়াজিব, তাদের থেকেও এইরূপ সাব্যস্ত হয়েছে। ‘নাহজুল বালাগাহ’ ( نهج البلاغة ) নামক গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে:
“আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তিকালের পর তাঁকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উদ্দেশ্য করে বলেন: আপনি যদি দুঃখ প্রকাশ করা থেকে নিষেধ না করতেন এবং ধৈর্য ধারণ করার নির্দেশ না দিতেন, তবে আমরা আপনার শোকে (কাঁদতে কাঁদতে) চোখের পানি শেষ করে ফেলতাম।”
নাহজুল বালাগাহ’ ( نهج البلاغة ) নামক গ্রন্থে আরও উল্লেখ করা হয়েছে:
“আলী আ. বলেন: যে ব্যক্তি বিপদ-মুসিবতের সময় তার হাতকে উরুতে মারে, সে ব্যক্তির আমল বিনষ্ট হয়ে যায়।”
‘মুন্তাহাল আমাল’ ( منتهى الأمال ) নামক গ্রন্থের লেখক ফারসি ভাষায় উল্লেখ করেন, যার আরবি (বাংলা) অনুবাদ হল:
“হোসাইন তার বোন যয়নবকে কারবালার ময়দানে বলেছেন: হে আমার বোন! আমি তোমাকে আল্লাহর নামে শপথ দিয়ে বলছি, তোমার কর্তব্য হল এই শপথ রক্ষা করা। সুতরাং যখন আমি নিহত হব, তখন তুমি বক্ষ বিদীর্ণ করো না এবং তুমি তোমার নখ দ্বারা তোমার চেহারায় আঁচড় কাটবে না। আর আমার শাহাদাতের কারণে তুমি ধ্বংস ও মৃত্যুকে ডাকবে না।” [মুন্তাহাল আমাল ( منتهى الأمال ), প্রথম খণ্ড, পৃ. ২৪৮]
আবূ জাফর আল-কুমী বর্ণনা করেন:
“আমীরুল মুমিনীন আ. তাঁর সাথীদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময় বলেন: তোমরা কালো পোষাক পরিধান করো না। কারণ, এটা ফেরাউনের পোষাক।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন বাবুইয়া আল-কুমী, মান লা ইয়াহদুরুহুল ফকিহ ( من لا يحضره الفقيه ), পৃ. ৫১]
‘তাফসীর আস-সাফী’-এর মধ্যে - ﴿ وَلَا يَعۡصِينَكَ فِي مَعۡرُوفٖ ﴾ (তারা সৎকাজে তোমাকে অমান্য করবে না, —সূরা আল-মুমতাহিনা: ১২) -আয়াতের নীচে বর্ণিত আছে: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদেরকে আনুগত্যের শপথ দেয়ার সময় বলেছেন যে, তারা যেন কালো পোষাক পরিধান না করে, বক্ষ বিদীর্ণ না করে এবং ধ্বংসকে আহ্বান না করে। আর আল-কুলাইনী’র ‘ফুরু‘উল কাফী’ ( فروع الكافي ) নামক গ্রন্থে বর্ণিত আছে: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাইয়্যেদা ফাতেমা যোহরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন: “যখন আমি মৃত্যুবরণ করব, তখন তুমি তোমার চেহারায় আঁচড় কাটবে না, ধ্বংসকে ডাকবে না এবং আমার নিকট বিলাপরত অবস্থা দাঁড়াবে না।”
সেখানে শিয়াদের কিতাবসমূহে অনেক বেশি বর্ণনা (রেওয়ায়েত) বর্ণিত রয়েছে, যাতে বিপদ-মুসিবত ও তার উপর অধৈর্য হয়ে বিলাপ করা, ধ্বংস ও মৃত্যুকে ডাকা, বক্ষ বিদীর্ণকরণ, গালে আঘাত করা ইত্যাদি ধরনের দুঃখ প্রকাশ থেকে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। এখানে আমি তাদের বর্ণনাসমূহ থেকে শুধু কয়েকটি নমুনা করেছি। আর যিনি এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানতে আগ্রহী, তার উচিত হবে আমার ‘হাকীকাতুল মা’তম’ ( حقيقة المأتم ) অধ্যয়ন করা; তাতে আমি বিস্তারিত আলোচনা করেছি এবং তাদের কিতাবসমূহ থেকে বর্ণনাসমূহ (রেওয়ায়েতসমূহ) উল্লেখ করেছি তাদের এই শোক-আহাজারি ও সভা-সমাবেশসমূহের জওয়াব স্বরূপ, যেগুলো ‘ইসলামে ধৈর্য’ ( الصبر في الإسلام )-এই আকিদা-বিশ্বাসের পরিপন্থী।
আমার ব্যস্ততার মাঝে যতটুকু সম্ভব হয়েছে, দ্বাদশ জাফরীয়া রাফেযীয়া শিয়াদের বাতিল (অসার) আকিদাসমূহ থেকে ততটুকু পরিমাণ আমি আল্লাহর মুমিন বান্দাদের সামনে পেশ করেছি। আর আমি প্রতিটি অধ্যায়ে তাদের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থপঞ্জি থেকে শুধু স্বল্প সংখ্যক নমুনা উল্লেখ করেছি। সুতরাং যিনি আরও বেশি জানতে ও বুঝতে চান, তার উচিত তিনি যেন স্বয়ং শিয়াদের মূল গ্রন্থসমূহ অধ্যয়ন করেন। কারণ, এই গ্রন্থগুলো এ ধরনের বক্তব্য দ্বারা, এমনকি তার চেয়ে জঘন্য বক্তব্যসমষ্টি দ্বার ভরপুর।
পরিশেষে মহান আল্লাহ তা‘আলার নিকট প্রার্থনা করছি, তিনি যেন তাঁর অনুগ্রহ ও ইহসান দ্বারা শিয়াদের মিথ্যা বর্ণনাসমূহ, আকিদা-বিশ্বাস এবং তাদের পথভ্রষ্টতা থেকে মুসলিম সম্প্রদায়কে হেফাজত করেন। কারণ, তা সৎকর্মসমূহ নষ্ট করবে, মুমিন ব্যক্তিকে ঈমান শূন্য করবে এবং তাকে ইসলাম থেকে খারিজ (বের) করে দেবে। তাঁর নিকট আরও প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদেরকে সরল-সঠিক পথ প্রদর্শন করেন এবং আমাদেরকে সুস্পষ্ট সত্য বিধানের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখেন; আর তিনি যেন আমাদেরকে মুক্তিপ্রাপ্ত সাহায্যপ্রাপ্ত সুস্পষ্ট হকের উপর প্রতিষ্ঠিত দল (ফিরকা) আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আকিদা-বিশ্বাসের উপর সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত রাখেন। তাঁর নিকট আরও প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদেরকে এমন কথা, কাজ, নিয়ত ও হেদায়েত অর্জনের তাওফিক দান করেন, যা তিনি ভালবাসেন এবং পছন্দ করেন। আর তিনি সকল বস্তুর উপর ক্ষমতাবান।
و صلى الله على محمد و آله و أصحابه و أزواجه و أتباعه أجمعين و بارك و سلم تسليما ... و آخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين .
(আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পরিবার-পরিজন, সঙ্গী-সাথীগণ, স্ত্রীগণ এবং সকল অনুসারীর উপর রহমত, বরকত ও শান্তি বর্ষণ করুন ... আর আমাদের সর্বশেষ দাবি, আবেদন ও নিবেদন হল, সকল প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য নিবেদিত ...)।
মুহাম্মদ আবদুস সাত্তার আততুনসাবী
০৪. ১১. ১৪০৩ হিজরি।
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন