মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
ফতহুল্লাহ আল-কাশানী তার তাফসীরের মধ্যে উল্লেখ করেন:
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: যে ব্যক্তি একবার মুত‘আ বিয়ে করবে, তার মর্যাদা হবে হোসাইনের মর্যাদার সমান; আর যে ব্যক্তি দুইবার মুত‘আ বিয়ে করবে, তার মর্যাদা হবে হাসানের মর্যাদার সমান; আর যে ব্যক্তি তিনবার মুত‘আ বিয়ে করবে, তার মর্যাদা হবে আলী ইবন আবি তালিবের মর্যাদার সমান এবং যে ব্যক্তি চারবার মুত‘আ বিয়ে করবে, তার মর্যাদা হবে আমার মর্যাদার সমান।” [মোল্লা ফতহুল্লাহ আল-কাশানী, তাফসীরু মানহাজিস সাদেকীন ( تفسير منهج الصادقين ), পৃ. ৩৫৬]
আল-কাশানী তার তাফসীরের মধ্যে আরও উল্লেখ করেন:
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: যে ব্যক্তি মুত‘আ বিয়ে (সাময়িক বিবাহ) না করে দুনিয়া থেকে বের হয়েছে (মৃত্যুবরণ করেছে), সে কিয়ামতের দিন নাক কাটা অবস্থায় হাজির হবে।” [মোল্লা ফতহুল্লাহ আল-কাশানী, তাফসীরু মানহাজিস সাদেকীন ( تفسير منهج الصادقين ), পৃ. ৩৫৬]
আল-কাশানী তার তাফসীরের মধ্যে ফারসি ভাষায় বর্ণনা করেন, যার অনুবাদ হল:
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: জিবরাইল আমার নিকট আমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে উপহার নিয়ে আগমন করল; আর ঐ উপহার ছিল মুমিন নারীদের ভোগ করা। আর এই উপহার আমার পূর্বে আল্লাহ তা‘আলা আর কোন নবীকে দান করেন নি ...। তোমরা জেনে রাখ, পূর্ববতী সকল নবীর উপর আমার মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের কারণে আল্লাহ তা‘আলা আমাকে মুত‘আ বিয়ের মাধ্যমে বিশেষিত করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি তার জীবনে একবার মুত‘আ বিয়ে করবে, সে ব্যক্তি জান্নাতের অধিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। ... আর যখন মুত‘আ বিবাহিত নারী ও পুরুষ কোন জায়গায় একত্রিত হবে, তখন তাদের উপর একজন ফেরেশতা নাযিল হবে এবং সে তারা বিচ্ছিন্ন হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে পাহারা দেবে; আর তাদের উভয়ের মধ্যে যে কথাবার্তা হবে, সে কথাবার্তাগুলো হবে যিকির ও তাসবীহ; আর তাদের একজন যখন অপর জনের হাত ধরবে, তখন তাদের উভয়ের আঙ্গুলসমূহ থেকে গুনাহসমূহ ফোটায় ফোটায় ঝরতে থাকবে; আর যখন তাদের একজন অপর জনকে চুম্বন করবে, তখন তাদের জন্য প্রত্যেক চুম্বনের বিনিময়ে হজ ও ওমরার সাওয়াব লিপিবদ্ধ করা হবে এবং তাদের সহবাসের সময় প্রত্যেক কামনা ও স্বাদের বিনিময়ে সুউচ্চ পর্বতসমূহ পরিমাণ পুণ্য লেখা হবে। আর যখন তারা গোসলে মশগুল থাকবে এবং পানি ফোটা ঝড়বে, তখন আল্লাহ তা‘আলা ঐ পানির প্রত্যেক ফোটা দ্বারা একজন করে ফেরেশতা সৃষ্টি করবেন, যে আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করবে ও তার পবিত্রতা বর্ণনা করবে এবং তার তাসবীহ ও পবিত্রতা বর্ণনার সাওয়াব তাদের উভয়ের জন্য কিয়ামত পর্যন্ত লিপিবদ্ধ হতে থাকবে।
হে আলী! যে ব্যক্তি এই সুন্নাতটিকে (মুত‘আ বিয়েকে) হালকা ও দুর্বল মনে করবে এবং তাকে অপছন্দ করবে, সে ব্যক্তি আমার দলভূক্ত নয় এবং আমি তার দায়-দায়িত্ব থেকে মুক্ত ...।
জিবরাইল আ. বলল: হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! যে দিরহামটি মুমিন তার মুত‘আ বিয়েতে খরচ করবে, তা আল্লাহর নিকট মুতা‘ বিয়ের বাইরে এক হাজার দিরহাম ব্যয় করার চেয়ে উত্তম।
হে মুহাম্মদ! জান্নাতের মধ্যে ডাগর চক্ষু বিশিষ্ট এক দল হুর রয়েছে, যাদেরকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন মুত‘আ বিয়ের অনুসারীদের জন্য।
হে মুহাম্মদ! যখন মুমিন পুরুষ মুমিন নারীকে মুত‘আ বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ করে, তখন সে তার যে জায়গায়ই দাঁড়াবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং মুমিন নারীকেও ক্ষমা করে দেবেন ...।
আস-সাদিক আ. থেকে বর্ণিত, মুত‘আ বিয়ে আমার এবং আমার বাপ-দাদার দীনের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং যে ব্যক্তি তার উপর আমল করবে, সে আমাদের দীনের উপর আমল করবে এবং যে ব্যক্তি তা অস্বীকার করবে, সে আমাদের দীনকে অস্বীকার করবে; বরং সে আমাদের দীন ব্যতীত অন্য দীনের অনুসরণ করবে। মুত‘আ বিয়ের স্ত্রীর গর্ভের সন্তান স্থায়ী স্ত্রীর গর্ভের সন্তানের চেয়ে উত্তম। আর মুত‘আ বিয়ের বিধান অস্বীকারকারী কাফির, মুরতাদ।” [মোল্লা ফতহুল্লাহ আল-কাশানী, তাফসীরু মানহাজিস সাদেকীন ( تفسير منهج الصادقين ), পৃ. ৩৫৬]
‘মুন্তাহাল আমাল’ ( منتهى الأمال ) নামক গ্রন্থের লেখক ফারসি ভাষায় উল্লেখ করেন, যার অনুবাদ হল:
“আস-সাদিক আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: যে ব্যক্তি মুত‘আ বিয়ের স্ত্রীকে ভোগ করে, অতঃপর গোসল করে, আল্লাহ তার শরীর থেকে ঝরে পড়া প্রতি ফোটা পানি থেকে সত্তর জন ফেরেশতা সৃষ্টি করেন, যাতে তারা কিয়ামত পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং কিয়ামত পর্যন্ত ঐ ব্যক্তিকে অভিশাপ দেয়, যে মুত‘আ বিয়ে থেকে দূরে থাকে।” [মুন্তাহাল আমাল ( منتهى الأمال ), ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৪১]
উর্দু ভাষায় লিখিত ‘উজালাতুন হাসানাহ্ ( عجالة حسنة ) মুত‘আ বিয়ের ফযিলত সম্পর্কে অনেকগুলো বর্ণনার উল্লেখ করা হয়েছে; আর তা হল আল-মাজলিসী’র ‘রিসালাতুল মুত‘আ’ ( رسالة المتعة ) নামক পুস্তিকার অনুবাদ। এখানে আমরা তার কিয়দংশের অনুবাদ উল্লেখ করছি:
“আমীরুল মুমিনীন আলী আ. বলেন: যে ব্যক্তি এই সুন্নাতটিকে (মুত‘আ বিয়েকে) কঠিন হিসেবে পেল এবং তা গ্রহণ করল না, সে ব্যক্তি আমার দলভূক্ত নয় এবং আমি তার দায়-দায়িত্ব থেকে মুক্ত।” [আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসী’র ‘রিসালাতুল মুত‘আ’ ( رسالة المتعة )-এর অনুবাদ ‘উজালাতুন হাসানা’ ( عجالة حسنة ), পৃ. ১৫]
“সাইয়্যেদুল ‘আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যে ব্যক্তি মুমিন নারীকে মুত‘আ বিয়ের মাধ্যমে ভোগ করে, সে যেন সত্তর বার কাবা যিয়ারত করে।” [‘উজালাতুন হাসানা ( عجالة حسنة ), পৃ. ১৬]
“রহমাতুল্লিল ‘আলামীন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যে ব্যক্তি একবার মুত‘আ বিয়ে করল, সে তার শরীরের এক তৃতীয়াংশ জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করল। আর যে ব্যক্তি দুইবার মুত‘আ বিয়ে করল, সে তার শরীরের দুই তৃতীয়াংশ জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করল। আর যে ব্যক্তি তিনবার মুত‘আ বিয়ে করল, সে তার গোটা শরীরকে জাহান্নামের জ্বলন্ত আগুন থেকে নিরাপদ করল।” [‘উজালাতুন হাসানা ( عجالة حسنة ), পৃ. ১৬]
“সাইয়্যেদুল বাশার শাফে‘উল মাহশার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: হে আলী! মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীগণের উচিত দুনিয়া থেকে ইন্তিকাল করে আখেরাতে যাওয়ার পূর্বে একবার হলেও মুত‘আ বিয়ের প্রতি উৎসাহিত হওয়া।
আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং নিজেই শপথ করে বলেন যে, তিনি এমন পুরুষ অথবা নারীকে শাস্তি দেবেন না, যে মুত‘আ বিয়ে করেছে; আর যে ব্যক্তি এই কল্যাণকর (মুত‘আ বিয়ের) বিষয়টি নিয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা-সাধনা করে এবং সেই ব্যাপারে পাথেয় প্রার্থনা করে, আল্লাহ তা‘আলা তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন।” [‘উজালাতুন হাসানা ( عجالة حسنة ), পৃ. ১৬]
আল-কাশানী তার তাফসীরের মধ্যে ফারসি ভাষায় একটি দীর্ঘ বর্ণনার উল্লেখ করেন, যার অর্থ হল:
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল: যে ব্যক্তি মুত‘আ বিয়ের এই বিষয়টি নিয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা-সাধনা করবে, তার প্রতিদান কী হবে? জওয়াবে তিনি বললেন: সে উভয়ের (সমান) প্রতিদান পাবে। অর্থাৎ মুত‘আ বিবাহকারী নারী ও পুরুষের মধ্যে চেষ্টা-সাধনাকারীর জন্য তাদের উভয়ের সমান প্রতিদান রয়েছে।” [মোল্লা ফতহুল্লাহ আল-কাশানী, তাফসীরু মানহাজিস সাদেকীন ( تفسير منهج الصادقين ), পৃ. ৩৫৬]
আবূ জাফর আল-কুমী ‘মান লা ইয়াহদুরুহুল ফকিহ’ ( من لا يحضره الفقيه ) নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেন; আর এটা শিয়াদের নিকট চারটি বিশুদ্ধ গ্রন্থের অন্যতম, তাতে বলা হয়:
“মুমিন পরিপূর্ণ হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে মুত‘আ বিয়ে করবে।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন বাবুইয়া আল-কুমী, মান লা ইয়াহদুরুহুল ফকিহ ( من لا يحضره الفقيه ), পৃ. ৩৩০]
আল-কুমী আরও উল্লেখ করেন:
“আবূ জাফর আ. বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখন আকশ পর্যন্ত ভ্রমণ করানো হল, তখন তিনি বলেন, জিবরাইল আমার সাথে মিলিত হল এবং বলল: হে মুহাম্মদ! আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি তোমার উম্মতের মধ্য থেকে মুত‘আ বিয়ের মাধ্যমে নারীদের ভোগকারীদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন বাবুইয়া আল-কুমী, মান লা ইয়াহদুরুহুল ফকিহ ( من لا يحضره الفقيه ), পৃ. ৩৩০]
আল-কুমী আরও উল্লেখ করেন:
“আস-সাদিক আ. বলেন: আমি সেই পুরুষ ব্যক্তির মৃত্যুবরণকে অপছন্দ করি, যার স্বভাবের মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্বভাবসমূহের মধ্য থেকে একটি স্বভাব বাকি রয়েছে এবং সে তা বাস্তবায়ন করেনি; অতঃপর আমি বললাম: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি মুত‘আ বিয়ে করেছেন? তিনি বললনে: হ্যাঁ।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন বাবুইয়া আল-কুমী, মান লা ইয়াহদুরুহুল ফকিহ ( من لا يحضره الفقيه ), পৃ. ৩৩০]
আল-কুমী আরও উল্লেখ করেন:
“আবদুল্লাহ ইবন সিনান থেকে বর্ণিত, তিনি আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা‘আলা আমাদের শিয়াদের উপর মাতালকারী প্রত্যেক শরাব নিষিদ্ধ করেছেন এবং তার বিনিময় স্বরূপ তাদেরকে মুত‘আ বিয়ের সুযোগ দিয়েছেন।” [মান লা ইয়াহদুরুহুল ফকিহ ( من لا يحضره الفقيه ), পৃ. ৩৩০; মুন্তাহাল আমাল ( منتهى الأمال ), ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩৪১]
শিয়াদের মতে মুত‘আ বিয়ের রুকন ও তার বিধানসমূহ
মোল্লা ফতহুল্লাহ আল-কাশানী তার তাফসীরু মানহাজিস সাদেকীন ( تفسير منهج الصادقين ) নামক তাফসীরের মধ্যে ফারসি ভাষায় বর্ণনা করেন, যার অর্থ হল:
“জেনে রাখা উচিত, মুত‘আ বিয়ে সংঘটিত করার রুকন পাঁচটি: স্বামী, স্ত্রী, মোহর, সময় নির্ধারণ এবং ইজাব (প্রস্তাব) ও কবুল (গ্রহণ)।” [মোল্লা ফতহুল্লাহ আল-কাশানী, তাফসীরু মানহাজিস সাদেকীন ( تفسير منهج الصادقين ), পৃ. ৩৫৭]
আল-কাশানী ফারসি ভাষায় আরও বর্ণনা করেন, যার অর্থ হল:
“জেনে রাখ, মুত‘আ বিয়ের মধ্যে স্ত্রীদের সংখ্যা সীমিত নয়; আর পুরুষের জন্য ব্যয়ভার বহন, বাসস্থানের ব্যবস্থা করা ও পোষাক-পরিচ্ছদ প্রদান করা আবশ্যক নয়। আর মুত‘আ বিবাহকারী স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে উত্তরাধিকার সাব্যস্ত হয় না। এসব জিনিস (বিষয়) স্হায়ী বিবাহ বন্ধনের ক্ষেত্রেই কেবল প্রযোজ্য হবে।” [মোল্লা ফতহুল্লাহ আল-কাশানী, তাফসীরু মানহাজিস সাদেকীন ( تفسير منهج الصادقين ), পৃ. ৩৫২]
আবূ জাফর আত-তুসী বর্ণনা করেন:
“আবূ আবদুল্লাহ আ.কে মুত‘আ বিয়ে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল, তা কি চারের ভিতরেই সীমিত? জওয়াবে তিনি বলেন: না, এমনকি সত্তরের মধ্যেও সীমিত নয় ...। আবূ আবদুল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: তার নিকট মুত‘আ বিয়ে সম্পর্কে আলোচনা করা হল, তা কি চারের ভিতরেই সীমিত? জওয়াবে তিনি বলেন: তুমি তাদের (নারীদের) মধ্য থেকে এক হাজার জনকে বিয়ে করতে পার! কারণ, তারা ভাড়াটে ... সে তালাকও পাবে না এবং উত্তরাধিকারীও হবে না; সে শুধু ভাড়াটে।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আত-তাহযীব ( التهذيب ), ৩য় খণ্ড, ১৮৮]
মুত‘আ বিয়ের মাহর
আবূ জাফর আত-তুসী তার আত-তাহযীব ( التهذيب ) নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেন:
“উভয়ের সম্মতি ও সন্তুষ্টি চিত্তে যা নির্ধারিত হবে, তাই হবে মুত‘আ বিয়ের মোহর; কম হউক বা বেশি হউক ...। আমি আবূ আবদিল্লাহ আ.কে বললাম, সর্বনিম্ন কী দিয়ে মুত‘আ বিয়ে অনুষ্ঠিত হবে? তখন তিনি বললেন: এক মুষ্টি গম।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আত-তাহযীব ( التهذيب ), ২য় খণ্ড, ১৮৮]
মুত‘আ বিয়ের মধ্যে কোন সাক্ষী ও ঘোষণার দরকার নেই
আত-তুসী আত-তাহযীব ( التهذيب ) নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেন:
“মুত‘আ বিয়ের মধ্যে কোন সাক্ষী রাখার ও ঘোষণা দেয়ার প্রয়োজন নেই।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আত-তাহযীব ( التهذيب ), ২য় খণ্ড, ১৮৮]
আত-তুসী আরও বর্ণনা করেন:
“আবূ জাফর আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: শুধু মিরাস বা উত্তরাধিকারের কারণে বিবাহের মধ্যে দলিল-প্রমাণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আত-তাহযীব ( التهذيب ), ২য় খণ্ড, ১৮৬]
আবূ জাফর আত-তুসী তার আত-তাহযীব ( التهذيب ) নামক গ্রন্থে আরও বর্ণনা করেন:
“আমি আবূ আবদিল্লাহ আ.কে জিজ্ঞাসা করলাম ঐ পুরুষ ব্যক্তি সম্পর্কে, যে ব্যক্তি কোন নারীকে একটি কাঠির বিনিময়ে বিয়ে করে? জওয়াবে তিনি বললেন: কোন অসুবিধা নেই; কিন্তু যখন সে কাজ শেষ করে অবসর গ্রহণ করবে, তখন সে তার চেহারাকে পরিবর্তন করবে এবং তাকাবে না।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আত-তাহযীব ( التهذيب ), ২য় খণ্ড, ১৯০]
তিনি আত-তাহযীব ( التهذيب ) নামক গ্রন্থে আরও বর্ণনা করেন:
হাশেমী বংশের মহিলার সাথে মুত‘আ বিয়েতে কোন সমস্যা নেই।” [আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আত-তাহযীব ( التهذيب ), ২য় খণ্ড, ১৯৩]
আল-কুলাইনী তার ‘আল-কাফী’ নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেন:
“আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: জনৈক মহিলা ওমরের নিকট আগমন করল, অতঃপর বলল, আমি ব্যভিচার করেছি, সুতরাং আপনি আমাকে পবিত্র করুন; অতঃপর তিনি (ওমর) তাকে পাথর মেরে হত্যার নির্দেশ দিলেন। অতঃপর আমীরুল মুমিনীন আ.কে এই ব্যাপারে সংবাদ দেয়া হলে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি কিভাবে ব্যভিচার (যিনা) করেছ? তখন সে বলল: আমি মরুভূমিতে পথ অতিক্রম করেছি, অতঃপর আমাকে প্রচণ্ড পানির তৃষ্ণায় পেল, আমি এক বেদুইনের নিকট পানি প্রার্থনা করলাম, কিন্তু সে আমাকে পানি পান করাতে অস্বীকার করল যতক্ষণ না আমি তাকে আমার উপর ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ দেই। অতঃপর পিপাসা যখন আমাকে ক্লান্ত করে ফেলল এবং আমি আমার জীবন নিয়ে আশঙ্কাবোধ করলাম, তখন সে আমাকে পানি পান করাল; আর আমিও আমার নিজের উপর তাকে ক্ষমতাবান করে দিলাম। এ কথা শুনে আমীরুল মুমিনীন আ. বললেন: কাবার মালিকের শপথ, এটা তো বিবাহ।” [ফুরু‘উল কাফী ( فروع الكافي ), ২য় খণ্ড, বিবাহ অধ্যায় ( كتاب النكاح ) পৃ. ১৯৮]
সুবহানাল্লাহ! প্রবৃত্তি শিয়াদের উপর বিজয় লাভ করেছে; ফলে তারা আমীরুল মুমিনীন আলী ইবন আবি তালিবের সাথে এই ধরনের মিথ্যাসমূহের সম্পর্কযুক্ত করেছে। অথবা তারা বুঝাতে চাচ্ছে যে, অপরাধী যালিম কর্তৃক জোরপূর্বক একজন নারীকে ব্যভিচার করা, তার উপর জবরদস্তি করা এবং মৃত্যু ও পিপাসা দ্বারা তাকে ভীতি প্রদর্শন করা; অতঃপর তার ষড়যন্ত্রের কারণে তার আহ্বানে সাড়া দেয়া এই সব কিছুই শিয়াদের নিকট শরিয়ত সম্মত বিবাহ বলে স্বীকৃত। অথবা এর দ্বারা কি প্রশস্ত দরজা উন্মুক্ত হয়ে যাবে না, যা দিয়ে প্রত্যেক অপরাধী ও ইতর শ্রেণীর লোক অনুপ্রবেশ করবে, অতঃপর যে কোন ভদ্র ও সম্মানিত মহিলাকে অপহরণ করবে এবং এই ধরনের যে কোন উপায় অবলম্বন করে তার সাথে যিনা-ব্যভিচার করতে তাকে বাধ্য করবে। অতঃপর শিয়াদের নিকট তা হয়ে যাবে বৈধ বিবাহ। আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, ইসলাম এই ধরনের মন্দ কাজ ও অপকর্ম থেকে মুক্ত ও পবিত্র।
অতঃপর শিয়াগণ মুত‘আ বিয়ের বৈধতার ব্যাপারে দলিল পেশ করে আল্লাহ তা‘আলার বাণী দ্বারা:
﴿فَمَا ٱسۡتَمۡتَعۡتُم بِهِۦ مِنۡهُنَّ فََٔاتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ فَرِيضَةٗ﴾ [ سورة النساء : 24]
“তাদের মধ্যে যাদেরকে তোমরা সম্ভোগ করেছ, তাদেরকে নির্ধারিত মোহর দিয়ে দাও।”— (সূরা আন-নিসা: ২৪); ইবনু মাসউদের এক কিরাতে রয়েছে:
" فَمَا ٱسۡتَمۡتَعۡتُم بِهِ مِنۡهُنّ إلى أجلٍ "
অর্থাৎ- তাদের মধ্যে যাদেরকে তোমরা সম্ভোগ করেছ নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত।
দলিলের জওয়াব:
আয়াতে উল্লেখিত " فاء " টি বাক্যকে পৃথক করার জন্য ব্যবহৃত, বাক্যকে নতুন করে শুরু করার অর্থে নয়। সুতরাং فَمَا ٱسۡتَمۡتَعۡتُم بِهِ مِنۡهُنّ মানে তোমরা বিশুদ্ধ বিবাহের দ্বারা নারীদের সাথে মিলনের মাধ্যমে যে স্বাদ ও উপকার হাসিল করেছে, তার বিনিময় স্বরূপ তাদের প্রতিদান তথা মোহর দিয়ে দাও। আর ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কিরাতটি একটি বিচ্ছিন্ন কিরাত, যা মূল গ্রন্থসমূহের মধ্যে পাওয়া যায় না; সুতরাং এটাকে কুরআন ও হাদিস বলে প্রমাণ দেয়া যাবে না এবং তার উপর আমল করাও আবশ্যক হবে না।
মুত‘আ বিয়ে অবৈধ ও নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে ইজমা সংঘটিত হয়েছে। এ ব্যাপারে শিয়াদের একটা অংশ ব্যতীত শহুরে আলেমদের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। আর মুত‘আ বিয়ে নিষিদ্ধ (হারাম) হওয়ার উপর দলিল হল আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
“অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মুমিনগণ, যারা বিনয়-নম্র নিজেদের সালাতে, যারা ক্রিয়াকলাপ থেকে বিরত থাকে, যারা যাকাত দানে সক্রিয়, যারা নিজেদের যৌন অঙ্গকে সংযত রাখে নিজেদের স্ত্রী অথবা অধিকারভূক্ত দাসীগণ ব্যতীত, এতে তারা নিন্দনীয় হবে না, আর কেউ এদের ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তার হবে সীমালংঘনকারী।”— (সূরা আল-মুমিনুন: ১-৭)
সুতরাং এই আয়াতসমূহ দ্বারা প্রমাণিত হল যে, পুরুষ ব্যক্তির জন্য তার স্ত্রী ও অধিকারভূক্ত দাসীগণ ব্যতীত অন্য কোন নারী বৈধ নয়; অতএব এর বাইরে কোন নারীকে ব্যবহারের পথ খুঁজলে, সে হবে সীমালংঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত। আর এই কথা সুস্পষ্ট যে, পুরুষ ব্যক্তি মুত‘আ বিয়ের মাধ্যমে যে নারীর কর্তৃত্ব লাভ করবে, সে নারী তার জন্য বিবাহিত নয়। কারণ, মুত‘আ বিয়ের সাক্ষী, তার খরচ বহন করা, উত্তরাধিকার ও তালাকের শর্ত নেই; অনুরূপভাবে তাতে (মুত‘আ বিয়ের মধ্যে) চারটাতে সীমিতকরণ, তাকে বিক্রয়, হেবা ও মুক্তি দেয়ার বৈধতার শর্তও নেই, যেমনিভাবে তা দাসীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়। সুতরাং কিভাবে মুত‘আ বিয়ে হালাল বা বৈধ হবে?
অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿فَإِنۡ خِفۡتُمۡ أَلَّا تَعۡدِلُواْ فَوَٰحِدَةً أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُكُمۡ﴾ [ سورة النساء : 3]
“আর যদি আশঙ্কা কর যে, সুবিচার করতে পারবে না, তবে একজনকে অথবা তোমাদের অধিকারভূক্ত দাসীকে।”— (সূরা আন-নিসা: ৩)
সুতরাং যে ব্যক্তি অন্যায়ের আশঙ্কা করবে, সে যেন একজন স্ত্রী অথবা তার অধিকারভূক্ত দাসীকে যথেষ্ট মনে করে। সুতরাং কোথায় মুত‘আ বিয়ে? অতএব যদি তা হালাল হত, তবে তিনি (আল্লাহ) তা উল্লেখ করতেন। কারণ, প্রয়োজনের সময় আলোচনা বিলম্বিত করা বৈধ নয়।
“তোমাদের মধ্যে কারও স্বাধীনা ঈমানদার নারী বিয়ে করার সামর্থ্য না থাকলে তোমরা তোমাদের অধিকারভূক্ত ঈমানদার দাসী বিয়ে করবে; আল্লাহ তোমাদের ঈমান সম্বন্ধে পরিজ্ঞাত। তোমরা একে অপরের সমান; সুতরাং তাদেরকে বিয়ে করবে তাদের মালিকের অনুমতিক্রমে এবং তাদেরকে তাদের মোহর ন্যায়সংগতভাবে দিয়ে দেবে। তারা হবে সচ্চরিত্রা, ব্যভিচারী নয় ও উপপতি গ্রহণকারিণীও নয়। বিবাহিতা হওয়ার পর যদি তারা ব্যভিচার করে, তবে তাদের শাস্তি স্বাধীনা নারীর অর্ধেক; তোমাদের মধ্যে যারা ব্যভিচারকে ভয় করে, এটা তাদের জন্য; ধৈর্য ধারণ করা তোমাদের জন্য মঙ্গল। আল্লাহ ক্ষমাপরায়ণ, পরম দয়ালু।”— (সূরা আন-নিসা: ২৫)
সুতরাং যদি মুত‘আ বিয়ে হালাল হত, তবে তিনি (আল্লাহ) তা উল্লেখ করতেন। বিশেষ করে তিনি উল্লেখ করেছেন ﴿ مَنۡ خَشِيَ ٱلۡعَنَتَ ﴾ অর্থাৎ- ‘যারা ব্যভিচারকে ভয় করে’। আর (যদি মুত‘আ বিয়ে হালাল হত) তিনি তা উল্লেখ করতেন না। সুতরাং এটাই প্রমাণ হয় যে, নিঃসন্দেহ তা (মুত‘আ বিয়ে) হারাম।
“যাদের বিয়ের সামর্থ্য নেই, আল্লাহ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত না করা পর্যন্ত তারা যেন সংযম অবলম্বন করে।”— (সূরা আন-নূর: ৩৩)
সুতরাং তিনি যার বিয়ের সামর্থ্য নেই, তাকে মুত‘আ বিয়ের মাধ্যমে নারীর উপর কর্তৃত্ব গ্রহণ ও তাকে ভোগ করার নির্দেশ দেননি; যতক্ষণ না আল্লাহ তাকে নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত করেন (সচ্চরিত্রবান অবস্থায় প্রকাশ্য ব্যভিচারের জন্য নয়)। আর আয়াত দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, বিয়ের মধ্যে রয়েছে সতীত্ব ও পবিত্রতা; আর মুত‘আ বিয়ের মধ্যে তার কিছুই নেই। সুতরাং তা হারাম (নিষিদ্ধ) হওয়ার ব্যাপারে এ সবই সুস্পষ্ট প্রমাণ।
আর রাফেযীগণ (শিয়াগণ) মুত‘আ বিয়ের বৈধতার ব্যাপারে আমাদের নিকট বিশুদ্ধ গ্রন্থসমূহে বর্ণিত কিছু সংখ্যক হাদিস দ্বারা দলিল পেশ করে; তার জওয়াব হল: ঐসব হাদিস মানসুখ (রহিত) হয়ে গেছে; যেমনিভাবে তা সুস্পষ্ট হয়ে যায় অপরাপর হাদিসসমূহ থেকে, যা আমরা অচিরেই উল্লেখ করব। যা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন সকল ব্যাখ্যাকার এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ইমামগণ। আর এই ব্যাপারে সকলের ইজমা (ঐক্যমত) হয়েছে। সুতরাং তাদের পক্ষে তার (মুত‘আ বিয়ের বৈধতার) ব্যাপারে কোন দলিল নেই।
আর মুত‘আ বিয়ে নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে আরও দলিল হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী:
“হে লোকসকল! আমি তোমাদেরকে (সাময়িক বিয়ের মাধ্যমে) নারীদের ভোগ করার অনুমতি দিয়েছিলাম; আর আল্লাহ তা কিয়ামতের দিন পর্যন্ত নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। সুতরাং যার নিকট তাদের পক্ষ থেকে কোন বস্তু রয়েছে, সে যেন তার পথ উন্মুক্ত করে দেয়; আর তোমরা তাদেরকে যা প্রদান করেছ, তার মধ্য থেকে কিছুই গ্রহণ করো না।” [সহীহ মুসলিম, বিবাহ ( نكاح ) অধ্যায়, বাব নং- ৩, হাদিস নং- ৩৪৮৮]
অনুরূপভাবে ইমাম মুসলিম র. আরও বর্ণনা করেছেন:
«أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم نَهَى عَنِ الْمُتْعَةِ وَقَالَ : أَلاَ إِنَّهَا حَرَامٌ مِنْ يَوْمِكُمْ هَذَا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَمَنْ كَانَ أَعْطَى شَيْئًا فَلاَ يَأْخُذْهُ » . [ أخرجه مسلم ]
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুত‘আ বিয়ে থেকে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন: সাবধান! নিশ্চয় তা (মুত‘আ বিয়ে) তোমাদের এই দিন থেকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত হারাম (নিষিদ্ধ)। আর যে ব্যক্তি কোন কিছু প্রদান করেছে, সে যেন তা গ্রহণ না করে।” [সহীহ মুসলিম, বিবাহ ( نكاح ) অধ্যায়, বাব নং- ৩, হাদিস নং- ৩৪৯৬]
ইমাম তিরমিযী র. বর্ণনা করেন:
«عن ابن عباس قال : إنما كانت المتعة في أول الإسلام كان الرجل يقدم البلدة ليس له بها معرفة فيتزوج المرأة بقدر ما يرى أنه يقيم فتحفظ له متاعه وتصلح له شيئه حتى إذا نزلت الآية ﴿ إلا على أزواجهم أو ما ملكت أيمانهم ﴾ قال ابن عباس فكل فرج سوى هذين فهو حرام » . [ أخرجه مسلم ]
“ইবনু আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: মুত‘আ বিয়ে ইসলামের প্রথম দিকে বৈধ ছিল, পুরুষ ব্যক্তি বিভিন্ন শহরে আগমন করত, যা তার নিকট অপরিচিত; অতঃপর সে যেই পরিমাণ সময় সেখানে অবস্থান করত, সেই পরিমাণ সময়ের জন্য কোন নারীকে বিয়ে করত; অতঃপর সে তার মালমাত্তার হেফাজত করত এবং তার জিনিসপত্র তার জন্য ঠিকঠাক করে রাখবে, শেষ পর্যন্ত আয়াত নাযিল হল: ﴿ إلا على أزواجهم أو ما ملكت أيمانهم ﴾ অর্থাৎ- (যারা নিজেদের যৌন অঙ্গকে সংযত রাখে) নিজেদের স্ত্রী অথবা অধিকারভূক্ত দাসীগণ ব্যতীত); ইবনু আব্বাস রা. বলেন: এই দুই যৌন অঙ্গ ব্যতীত সকল যৌন অঙ্গই হারাম।” [সুনানুত তিরমিযী, বিবাহ ( نكاح ) অধ্যায়, বাব নং- ২৯ ( باب تحريم نكاح المتعة ), হাদিস নং- ১১২২]
আল-হাযেমী বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারা তাদের বাড়ি-ঘর ও নিজ দেশে অবস্থানরত অবস্থায় তাদের জন্য কখনও মুত‘আ বিয়ে বৈধ করেন নি; বরং তিনি শুধু বিভিন্ন সময়ে জরুরী প্রয়োজনে তাদের জন্য তা বৈধ করেছেন; শেষ পর্যন্ত তিনি তাদের উপর তা কিয়ামতের দিন পর্যন্ত নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন।
শিয়াদের কিতাবসমূহের মধ্যেও বর্ণিত আছে:
« عن علي عليه السلام قال : حرّم رسول الله صلى الله عليه و سلم يوم خيبر لحوم الحمر الأهلية و نكاح المتعة » . [ التهذيب ]
“আলী আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বরের যুদ্ধের দিন গৃহপালিত গাদার গোশত ও মুত‘আ বিয়ে নিষিদ্ধ করেছেন।” [আত-তাহযীব ( التهذيب ), ২য় খণ্ড, পৃ. ১৮৬; আল-ইসতিবসার ( الاستبصار ),৩য় খণ্ড, পৃ. ১৪২]
মুত‘আ বিয়ে নিষিদ্ধ হওয়ার উপর কার্যকরী ও অকাট্য দলিলসমূহ পুরাপুরিভাবে উপস্থাপনের পর আমাদের উচিত যুক্তিভিত্তিক দলিলের গভীরভাবে দৃষ্টি দেওয়া; তবে কিন্তু সে দলিলসমূহ হতে হবে খেয়াল-খুশি থেকে মুক্ত এবং নির্লজ্জতা ও খোঁড়া যুক্তির উর্ধ্বে। আর তা হল, একজন পুরুষের জন্য শুধু চারটি [চারটি বিয়ে মানে একজন পুরুষ একসাথে সর্বোচ্চ চারজন স্ত্রী নিয়ে ঘর-সংসার করতে পারবে। তালাক বা মৃত্যু জনিত কারণে শূন্যতার ভিত্তিতে শরিয়ত সম্মতভাবে তার বিয়ের সংখ্যা চারের অধিকও হতে পারে। — অনুবাদক।] বিবাহ বৈধ রাখা হয়েছে, তার বেশি নয়। অপরদিকে রাফেযী ও শিয়াগণ একজন পুরুষের জন্য এক হাজার অথবা দুই হাজার নারীকে ভোগ করার বৈধতা দিয়েছে, যার আলোচনা পূর্বে হয়েছে। সুতরাং এই পদ্ধতি তার অধিক ছেলে ও মেয়ের বাস্তবতার দিকে নিয়ে নিয়ে যাবে এবং বিবাহ ও উত্তরাধিকার নীতিমালার মধ্যে ত্রুটি সৃষ্টি করবে। কারণ, সে বিবাহ ও উত্তরাধিকারের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে তখনই জানতে পারবে, যখন সে বংশের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে জানতে পারবে; কিন্তু তাদের সংখ্যাধিক্যের কারণে তা সম্ভব হয়ে উঠবে না। অতএব ধরে নাও যে, যদি কোন ব্যক্তি বিনোদনের উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করে এবং প্রত্যেক শহরে গিয়ে সে মুত‘আ বিয়ের মাধ্যমে নারী ভোগ করতে থাকে, এমনকি পরবর্তীতে তার অনেক ছেলে-মেয়ে হয়ে গেল; অতঃপর তার অথবা তার কোন এক ভাই অথবা কন্যার সুযোগ হল ঐ শহরগুলোতে ফিরে যাওয়ার এবং চলাফেরা করার; অতঃপর সে ব্যক্তি সেখানকার কোন নারীকে বিয়ে করল; সুতরাং ঐ নারীদের কেউ তার কন্যা হতে কিসে বাধা দেবে? আর তখন দেখা যাবে যে, তার বিয়ে হয়েছে তার কোন কন্যা অথবা তার ভাইয়ের কন্যা অথবা তার বোনের সাথে।
আশ্চর্যের বিষয় হল, এই সবের পরেও শিয়াগণ মুত‘আ বিয়েকে (বৈধ বলে) আঁকড়ে ধরে রাখে এবং দলিল পেশ করে যে, তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যামানার শুরুর দিকে প্রচলিত ছিল। আর তারা প্রমাণ করে যে, মুত‘আ বিয়ে সংঘটিত হত সাক্ষীর মাধ্যমে এবং তারা এ সম্পর্কে জানতে পারে তাদের কিতাবসমূহের মধ্য থেকে।
আর এই যুগে শিয়াগণ যে মুত‘আ বিয়ের কথা প্রকাশ করে, তাতে তারা সাক্ষীর শর্ত করে না; সুতরাং কিভাবে এই মুত‘আ বিয়ের বিশুদ্ধতার উপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যামানার শুরুর দিকে প্রচলিত মুত‘আ বিয়ের দ্বারা তাদের দলিল পেশ করাটা শুদ্ধ হবে? আর তুমি তাদের বর্ণনাসমূহ নিয়ে ভেবে দেখ।
ইমাম জাফর সাদিককে জিজ্ঞাসা করা হল: মুসলিমগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে বিনা প্রমাণে বিবাহ করত কিনা; জবাবে তিনি বললেন: না। [আত-তাহযীব ( التهذيب ), ২য় খণ্ড, পৃ. ১৮৯] আর তারা এই বর্ণনাটি উল্লেখ করেছে “তারা মুত‘আ বিয়ে করে” ( باب المتعة يتزوجون ) নামক অধ্যায়ে। বিয়ে দ্বারা তাদের নিকট উদ্দেশ্য হল মুত‘আ বিয়ে। আর লেখক সুস্পষ্ট করেছেন যে, তিনি এর থেকে স্থায়ী বিবাহকে উদ্দেশ্য করেন নি; বরং এর দ্বারা উদ্দেশ্য করেছেন মুত‘আ বিয়েকে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/705/14
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।