মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে কিরাত জোরে পড়তেন, না আস্তে পড়তেন? তিনি বললেন: তিনি সব করতেন, কখনো জোরে পড়তেন আবার কখনো আস্তে পড়তেন”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪৩৭; তিরমিযী, হাদীস নং ২৯২৪; নাসাঈ, হাদীস নং ১৬৬২; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৩৫৪; আহমদ: (৬/১৪৯), আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ সুনান নাসাঈ: (১/৩৬৫)।] আবু কাতাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকরকে বলেন,
«يا أبا بكر، مررت بك وإنك تصلي تخفضُ صوتك» قال : قد أسمعتُ من ناجيتُ يا رسول الله، قال : «ارفع قليلاً»
“হে আবু বকর, আমি তোমার পাশ দিয়ে গিয়েছি, তুমি নিচু স্বরে সালাত আদায় করতে ছিলে” তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমি যার সাথে নিভৃতে কথোপকথন করেছি তাকে শুনিয়েছি। তিনি বললেন: “তোমার আওয়াজ সামান্য উঁচু কর” আর উমারকে তিনি বলেন,
«مررت بك وأنت تصلي رافعاً صوتك» فقال : يا رسول الله ! أوقظ الوسنان وأطرد الشيطان، قال : «اخفض قليلاً» .
“আমি তোমার পাশ দিয়ে অতিক্রম করেছি, তুমি উঁচু আওয়াজে সালাত আদায় করছিলে”। তিনি বললেন: হে আল্লাহর রাসূল, আমি ঘুমন্তদের জাগ্রত ও শয়তান বিতাড়িত করছিলাম। তিনি বললেন: “তুমি সামান্য নিচু কর”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ১৩২৯; তিরমিযী, হাদীস নং ৪৪৭, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ সুনান আবু দাউদ: (১/২৪৭)।]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো এক রাতে জনৈক ব্যক্তিকে কুরআন তিলাওয়াত করতে শুনেন, অতঃপর তিনি বলেন,
«يرحمه الله لقد أذكرني كذا وكذا، آية كنت أسقطتها من سورة كذا وكذا» وفي لفظ : «كان النبي صلى الله عليه وسلم يستمع قراءة رجل في المسجد فقال : «رحمه الله لقد أذكرني آية كنت أُنسيتها» .
“আল্লাহ তাকে রহম করুন, সে আমাকে অমুক অমুক আয়াত স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, যা আমি অমুক অমুক সূরা থেকে বাদ দিয়ে ছিলাম”। অপর শব্দে এভাবে এসেছে: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে এক ব্যক্তির কিরাত শুনতে ছিলেন, তিনি বললেন: “আল্লাহ তাকে রহম করুন, সে আমাকে অমুক আয়াত স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, যা আমি ভুলে গিয়ে ছিলাম”। [বুখারি: ফাদায়েলুল কুরআন ও সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৮৮।]
কুরআনের হাফেয যদি দিন-রাতের সালাতে কুরআন তিলাওয়াত করে, তাহলে কুরআন তার স্মরণ ও মুখস্থ থাকবে। আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إنما مثل صاحب القرآن كمثل صاحب الإبل المعقلة إن عاهد عليها أمسكها وإن أطلقها ذهبت» .
“কুরআনের হাফেযের উদাহরণ হচ্ছে উটের মালিকের ন্যায়, যদি সে তা বারবার তিলাওয়াত করে রাখতে পারবে, আর যদি ছেড়ে দেয় চলে যাবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫০৩১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৮৯।]
মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে:
«وإذا قام صاحب القرآن فقرأه بالليل والنهار ذكره وإذا لم يقم به نسيه» .
“কুরআনের হাফিয যদি রাতে ও দিনে সালাতে দণ্ডায়মান হয়ে তিলাওয়াত করে, স্মরণ রাখতে পারবে, আর যদি সে তা সালাতে না পড়ে ভুলে যাবে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৭-৭৮৯।]
৯. কখনো কখনো জামা‘আতের সাথে রাতের নফল আদায় করা বৈধ। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামা‘আতের সাথে ও একলা সালাত আদায় করেছেন, তবে তার অধিকাংশ নফল সালাত ছিল একলা। তিনি কখনো হুযায়ফার সাথে সালাত আদায় করেছেন। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৭।] কখনো ইবন আব্বাসের সাথে। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৯২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮২-৭৬৩।] কখনো আনাস, তার মাতা ও ইয়াতিমের সাথে। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৫৮।] কখনো ইবন মাসউদের সাথে। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৭৩।] কখনো আউফ ইবন মালেকের সাথে। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৮৭৩; নাসাঈ, হাদীস নং ১০৪৯।] কখনো আনাস ও তার মা এবং তার খালা উম্মে হারামের সাথে। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৬০।] কখনো ইতবান ইবন মালেক ও আবু বাকরার সাথে। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৮৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৩।] একবার তাঁর সাহাবীগণ উসমানের বাড়িতে ইমামতি করেছে। [‘আল-মুগনি’ লি ইবন কুদামাহ: (২/৫৬৭)।] হ্যাঁ এটাকে নিয়মিত সুন্নাত হিসেবে গ্রহণ করবে না, যদি কখনো তা করে তাহলে সমস্যা নেই, তারাবীর সালাত ব্যতীত, কারণ তাতে জামা‘আত দায়েমি সুন্নাত”। [‘ইখতিয়ারাতুল ফিকহিয়্যাহ’ লি ইবন তাইমিয়াহ: (পৃ. ৯৮)।]
১০. বিতর সালাত দ্বারা তাহাজ্জুদ শেষ। আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«اجعلوا آخر صلاتكم بالليل وتراً» . وفي لفظ لمسلم : «من صلى من الليل فليجعل آخر صلاته وتراً [ قبل الصبح ] ، فإن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يأمر بذلك» .
“বেতেরকে তোমাদের রাতের শেষ সালাত বানাও”। মুসলিমের বর্ণনায় এরূপ এসেছে, (আব্দুল্লাহ ইবন উমার বলেছেন): “যে রাতে সালাত আদায় করে, সে যেন তার শেষ সালাত করে বিতরকে ‘ফজরের পূর্বে’, কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুরূপ নির্দেশ করতেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৯৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৫১।]
১১. ঘুম যাওয়া ও দণ্ডায়মানকে সাওয়াব জ্ঞান করা, তাহলে ঘুম ও সজাগ সর্বাবস্থায় সাওয়াব হাসিল হবে। একবার মুয়ায ও আবু মুসা আশা'আরি রাদিয়াল্লাহু আনহুমা নেক আমলের আলোচনা করতে ছিলেন। মুয়ায বললেন: হে আব্দুল্লাহ [আবু মুসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহুর নাম আব্দুল্লাহ ইবন কায়েস।] আপনি কীভাবে কুরআন তিলাওয়াত করেন? তিনি বললেন: আমি রাত-দিন সর্বদা বিরতি দিয়ে দিয়ে তিলাওয়াত করি। তিনি বললেন: আপনি কীভাবে তিলাওয়াত করেন হে মুয়ায? তিনি বললেন: আমি প্রথম রাতে ঘুমাই অতঃপর সালাতে দাঁড়াই, যখন আমার কিছু ঘুম হয়ে যায় এবং আল্লাহর তাওফীক মোতাবেক তিলাওয়াত করি। আমি ঘুমকে ইবাদাত মনে করি, যেমন দাঁড়ানোকে ইবাদাত মনে করি”। অপর বর্ণনায় এসেছে: “মুয়ায আবু মুসাকে বললেন: আপনি কিভাবে তিলাওয়াত করেন? তিনি বললেন: দাঁড়িয়ে, বসে ও আমার বাহনের ওপর, বিরতি দিয়ে দিয়ে তিলাওয়াত করি। তিনি বলেন, কিন্তু আমি দাঁড়াই ও ঘুমাই, আমি আমার ঘুমকে ইবাদাত মনে করি যেমন দাঁড়ানোকে ইবাদাত মনে করি”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৩৪২, ৪৩৪২, ৪৩৪৪, ৪৩৪৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭৩৩।]
হাফেয ইবন হাজার রহ. বলেছেন: “এর অর্থ হচ্ছে তিনি বিশ্রামে সাওয়াব অন্বেষণ করেন, যেমন তিনি কষ্ট করে সাওয়াব অন্বেষণ করেন কারণ বিশ্রাম দ্বারা যদি ইবাদাতের শক্তি অর্জন উদ্দেশ্য হয়, তাহলে সেখানেও সাওয়াব হয়” [‘ফাতহুল বারি’: (৮/৬২)।]
আমি আল্লামা আব্দুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ ইবন বায রহ.-কে বলতে শুনেছি: “এতে সাহাবীদের সুন্দর আখলাক, ইবাদাতের প্রতি তাদের ঈর্ষা ও পরস্পর ইবাদাতের আলোচনার প্রমাণ পাওয়া যায়। তারা ঘুম ও দাঁড়ানোকে পর্যন্ত ইবাদাত গণ্য করতেন। অতএব, মুসলিমের উচিৎ তার সময় ও কাজ বণ্টন করে নেওয়া: একটি সময় কুরআনের জন্য, একটি সময় অন্যান্য কাজের জন্য ও একটি সময় পরিবারের জন্য...”। [আমি এ বাণী সহীহ বুখারীর তাকরিরের সময় শুনেছি হাদীস নং (৪৩৪১), সোমবার দিন, ফজরের সময়, রিয়াদে অবস্থিত জামে কাবির মসজিদে। তারিখ: ২২/৭/১৪১৬হি.।]
১২. লম্বা কিরাতের সাথে অধিক রুকু সাজদা করা উত্তম রাতের সালাতে যদি কষ্ট অথবা বিরক্ত না লাগে। জাবের ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«أفضل الصلاة طول القنوت ...»
“লম্বা কুনুত [হাদীসে বর্ণিত " قنوت " (কুনুত) শব্দ বিভিন্ন অর্থ প্রদান করে। যেমন, আনুগত্য, খুশু বা একাগ্রতা, সালাত, দো‘আ, ইবাদত, কিয়াম, লম্বা কিয়াম, চুপ থাকা, স্থিরতা, আনুগত্য প্রতিষ্ঠা করা ও বিনয়বনতা। দেখুন: ‘নিহায়া ফি গারিবিল হাদীস’ লি ইবন আসির, বাবুল কাফ মাআন নুন: (৪/১১১); ‘মাশারিকুল আনওয়ার আলাস সিহাহ ওয়াল আসার’ লিল কাদি আয়াদ, হারফুল কাফ মাআ সায়েরিল হুরুফ: (২/১৮৬); ‘হাদইউস সারি মুকাদ্দামাহ ফাতহুল বারি’ লি ইবন হাজার: (পৃ. ১৭৬), হাফেয ইবন হাজার বলেছেন, ইবনুল আরাবি কুনুতের দশটি অর্থ উল্লেখ করেছেন, যা যয়নুদ্দিন আল-ইরাকি কবিতায় রূপান্তর করেছেন: ولفظ القنوت اعدد معانيه تجد = مزيداً على عشرة معاني مرضيةدعاء، خشوع، والعبادة، طاعة = إقامتها، إفراده بالعبوديـةسكوت، صلاة، والقيام، وطوله = كذا دوام الطاعة الرابح القنيه “আমি কুনুত শব্দের অর্থ গণনা করেছি, তুমি তার সঠিক অর্থ দশটিরও অধিক পাবে: দোয়া, খুশু বা একাগ্রতা, ইবাদত, আনুগত্য কায়েম করা, একমাত্র আল্লাহকে ইবাদাত নিবেদন করা, চুপ থাকা, সালাত, কিয়াম, লম্বা কিয়াম, সর্বদা ইবাদতে মশগুল থাকা”। দেখুন: ‘ফাতহুল বারি’ মাকতাবাহ সালফিয়াহ: (২/৪৯১) ইবন আসির হাদীসে বর্ণিত কুনুতের অর্থ উল্লেখ করে বলেছেন: “হাদীসে বর্ণিত কুনুত উল্লিখিত যে শব্দের সম্ভাবনা রাখে, সে অর্থে তা ব্যবহার করতে হবে”। ‘আন-নিহায়া ফি গারিবিল হাদীস ওয়াল আসর’: (৪/১১১)।] বিশিষ্ট সালাত উত্তম”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৫৬।] সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি তাকে জান্নাতে প্রকাশকারী আমল অথবা আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিল, তিনি বলেন, আমি এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেছি, তিনি বলেছেন:
«عليك بكثرة السجود لله، فإنك لا تسجد لله سجدة إلا رفعك الله بها درجة وحطَّ عنك بها خطيئة»؛
“তুমি আল্লাহর জন্য অধিক সাজদা কর। কারণ, তুমি এমন কোনো সাজদা করবে না, যার বিনিময়ে আল্লাহ তোমার মর্তবা বৃদ্ধি করবেন না ও তোমার পাপ মোচন করবেন না”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৮৮।] রাবিআ ইবন কাব আসলামি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে রাত্রি যাপন করতাম, তার অযুর পানি ও প্রয়োজনীয় জিনিস পেশ করতাম। তিনি আমাকে বলেন, “চাও”, আমি বললাম: আমি জান্নাতে আপনার সাথে থাকতে চাই। তিনি বললেন: “এ ছাড়া অন্য কিছু?” আমি বললাম: এটাই। তিনি বললেন:
«فأعنِّي على نفسك بكثرة السجود»
“অধিক সাজদা দ্বারা তুমি আমাকে সাহায্য কর, তোমার জন্যই” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৮৯।] আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«أقرب ما يكون العبد من ربه وهو ساجد، فأكثروا الدعاء»
“বান্দা তার রবের অধিক নিকটবর্তী হয় সাজদা অবস্থায়, অতএব তোমরা অধিক দো‘আ কর”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৮২।]
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত একটি ‘মারফূ’ হাদীসে আছে:
«أما الركوع فعظموا فيه الرب، وأما السجود فاجتهدوا في الدعاء، فقمِنٌ أن يُستجاب لكم» .
“আর রুকুতে তোমরা আল্লাহর বড়ত্ব বর্ণনা কর, সাজদাতে অধিকহারে দো‘আ কর, অধিক সম্ভাবনা রয়েছে যে তোমাদের ডাকে সাড়া দেওয়া হবে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৭৯।]
এসব হাদীসের কারণে আলিমগণ ইখতিলাফ করেছেন কোনোটি উত্তম: লম্বা কিয়াম করে কম সাজদা করা অথবা সংক্ষেপ কিয়াম করে অধিক সাজদা করা?
কেউ বলেছেন: লম্বা কিয়ামের তুলনায় অধিক রুকু সাজদা উত্তম। ইমাম আহমদের সাথীদের একটি জামা‘আত এ অভিমত গ্রহণ করেছেন, তাদের দলীল পূর্বে উল্লিখিত সাজদার ফযীলত সংক্রান্ত হাদীস।
কেউ বলেছেন: উভয় সমান।
কেউ বলেছেন: লম্বা কিয়াম করা অধিক রুকু সাজদা থেকে উত্তম। তাদের দলীল পূর্বে উল্লিখিত [দেখুন: ‘আল-মুগনি’ লি ইবন কুদামাহ: (২/৫৬৪); ফাতওয়া শাইখুল ইসলাম লি ইবন তাইমিয়াহ: (২৩/৬৯); ‘নাইলুল আওতার’ লি শাওকানি: (২/২৭০)।] জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীস:
«أفضل الصلاة طول القنوت»،
“লম্বা কুনুত বিশিষ্ট সালাতই উত্তম”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৫৬।] ইমাম তাবারি রহ. আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿أَمَّنۡ هُوَ قَٰنِتٌ ءَانَآءَ ٱلَّيۡلِ سَاجِدٗا وَقَآئِمٗا ٩ ﴾ [ الزمر : ٩ ] “যে ব্যক্তি রাতের প্রহরে সাদজাবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে আনুগত্য প্রকাশ করে” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৯] সম্পর্কে বলেন, এখানে কুনুতের অর্থ সালাতে দাঁড়িয়ে কিরাত পড়া। অন্যরা বলেছেন: কুনুত অর্থ ইবাদাত, আর ‘কানেত’ অর্থ আনুগত্যকারী। [‘জামেউল বায়ান আন তাবিলি আয়াল কুরআন’: (৪/৪৮)।] ইবন কাসির রহ. বলেন, ﴿أَمَّنۡ هُوَ قَٰنِتٌ ءَانَآءَ ٱلَّيۡلِ سَاجِدٗا وَقَآئِمٗا ٩ ﴾ [ الزمر : ٩ ] “যে ব্যক্তি রাতের প্রহরে সাদজাবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে আনুগত্য প্রকাশ করে” [সূরা যুমারআয়াত: ৯] অর্থাৎ সাজদা ও কিয়াম অবস্থায়। এ জন্য যারা কুনুতের অর্থ বলেছেন সালাতে খুশু বা একাগ্রতা, তারা দলীল হিসেবে এ আয়াত পেশ করেছেন, এখানে কুনুত অর্থ শুধু দাঁড়ানো নয় যেমন অনেকে বলেছেন। ইবন মাসউদ বলেছেন: قانت “কানেত” অর্থ আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্যকারী”। [‘তাফসিরে ইবন কাসির’: (৪/৪৮)।]
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া রহ. বলেছেন: “কিয়াম, রুকু ও সাজদা লম্বা করা অধিক কিয়াম, রুকু ও সাজদা থেকে উত্তম”। [ফতোয়া শাইখুল ইসলাম: (২৩/৭১), তিনি (২৩/৬৯-৮৩)নং পৃষ্ঠাসমূহে এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন, সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন শুধু সাজদা বারোটি কারণে শুধু রুকু থেকে উত্তম অতঃপর তিনি তা দলীলসহ উল্লেখ করেছেন।] আমি শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায রহ.-কে বলতে শুনেছি: “এ নিয়ে আলিমগণ মতবিরোধ করেছেন কোনোটি উত্তম: কম সাজদা করে দীর্ঘ কিয়াম করা, অথবা সংক্ষেপে কিয়াম করে অধিক সাজদা করা তাদের কেউ এটা, আর কেউ ওটা উত্তম বলেছেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাত ছিল মধ্যম পন্থার, তিনি যদি লম্বা কিয়াম করতেন, তাহলে রুকু-সেজদাও লম্বা করতেন। আর যদি সংক্ষেপে কিয়াম করতেন, তাহলে রুকু-সাজদাও সংক্ষেপ করতেন এটাই উত্তম”। তিনি আরো বলেছেন: উত্তম হচ্ছে মুসল্লি তার সাধ্যমত সালাত আদায় করবে যেন বিরক্তি না আসে। তার মন যদি লম্বা কিরাতের জন্য সায় দেয় তাহলে লম্বা করবে। আর যদি তার মন সংক্ষেপে আরাম বোধ করে, তাহলে সংক্ষেপ করবে, যখন দেখবে যে সংক্ষেপে অধিক খুশু/একাগ্রতা সৃষ্টি হয়, মনোযোগ তৈরি হয় ও ইবাদত করতে আনন্দ লাগে। সাজদা যত অধিক হবে, তত উত্তম, অতএব মুসলিম যদি এরূপ করতে পারে, তাহলে দীর্ঘ কিয়াম করা উত্তম অধিক রুকু-সাজদার সাথে, যেখানে উভয় পদ্ধতি বিদ্যমান, আর তা হচ্ছে মধ্যম পন্থার সালাত, যদি কিয়াম লম্বা করে রুকু-সাজদা লম্বা করবে, আর যদি কিয়াম সংক্ষেপ করে, রুকু-সাজদা সংক্ষেপ করবে। [‘মুনতাকাল আখবার’ লি ইবন তাইমিয়াহ গ্রন্থের (১২৬১) নং হাদীসের তাকরিরের সময় শুনেছি।]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রচুর ইবাদাত করতেন ও তার থেকে তিনি আনন্দ পেতেন। অনেক সময় তিনি রাতের সালাতে দীর্ঘ কিরাত পড়তেন যে, তার দু’পা ফেটে যেত। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তাকে বলেন; আপনি এরূপ করেন কেন, অথচ আল্লাহ আপনার পূর্বাপর সব গুনা মাফ করে দিয়েছেন? তিনি বলেন,
«أفلا أكون عبداً شكوراً» .
“আমি কি আল্লাহর শোকর গুজার বান্দা হবো না?” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৮৩৬, ৪৮৩৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮১৯, ২৮২০, আয়েশা ও মুগিরা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণনা করেন।] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত, তিনি রাতের সালাতে এক রাকাতে সূরা বাকারাহ, নিসা ও আল ইমরান তিলাওয়াত করেছেন। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৭২।] হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু রাতে তাকে চার রাকাত সালাত আদায় করতে দেখেছেন, সেখানে তিনি সূরা বাকারাহ, আল ইমরান, নিসা, মায়েদাহ অথবা আন‘আম তিলাওয়াত করেছেন”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৮৭৩; নাসাঈ, হাদীস নং ১০৪৯।] আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে বলেন,
«كان يصلي إحدى عشرة ركعة، كانت تلك صلاته - تعني بالليل - فيسجد السجدة من ذلك قدر ما يقرأُ أَحَدُكُم خمسين آية قبل أن يرفع رأسه» .
“তিনি এগারো রাকাত সালাত আদায় করতেন, তার সালাত এমন ছিল যে, তিনি একটি সাজদা করতেন, তার মাথা উঠানোর আগে তোমাদের কেউ পঞ্চাশ আয়াত পড়তে পারত”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৯৪।] তিনি এ কারণে আনন্দ বোধ করতেন, তার রবের ইবাদাতে তিনি বিরক্ত হতেন না, বরং সালাত ছিল তার চোখের শীতলতা। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«حُبِّبَ إليّ النساء والطيب، وجُعِلت قُرَّةُ عيني في الصلاة» .
“আমার নিকট নারী ও সুগন্ধি প্রিয় করে দেওয়া হয়েছে, আর আমার চোখের শীতলতা বানানো হয়েছে সালাতকে”। [নাসাঈ, হাদীস নং ৩৯০৪; আহমদ: (৩/১২৮), আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ নাসাঈ: (৩/৮২৭)।] সালাত ছিল তার আরামের বস্তু। সালেম ইবন আবুল জাদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বলল: আফসোস আমি যদি সালাত আদায় করে স্বস্তি হাসিল করতাম! ফলে তারা (উপস্থিত লোকেরা) তাকে তিরস্কার করল, সে বলল: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:
«يا بلال أقم الصلاة أرحنا بها» .
“হে বেলাল সালাত কায়েম কর, আমাদেরকে তার দ্বারা স্বস্তি দাও”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৯৮৫, ৪৯৮৬, আলবানী সহীহ সুনান নাসাঈতে হাদীসটি সহীহ বলেছেন: (৩/৯৪১)।] কিন্তু উম্মতের জন্য তিনি বলেছেন:
«خذوا من الأعمال ما تطيقون، فإن الله لا يملُّ حتى تملُّوا» .
“তোমরা যা পার তাই আমল কর। কারণ আল্লাহ ক্লান্ত হন না, যতক্ষণ না তোমরা ক্লান্ত হও”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৮২।]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إن الدين يُسْرٌ ولن يُشادَّ الدينَ أحدٌ إلا غَلَبَهُ، فسدِّدوا وقاربوا، وأبشروا، واستعينوا بالغدوة والروحة، وشيء من الدُّلجة، والقصدَ القصدَ تبلغوا» .
“দীন সহজ, তোমাদের যে কেউ দীনে কঠোরতা করবে, দীন তার ওপর গালেব হবে। অতএব, তোমরা মধ্যম পন্থা অবলম্বন কর, তার নিকটবর্তী থাক ও সুসংবাদ গ্রহণ কর, (কারণ নিয়মতান্ত্রিক আমল কম হলেও অধিক সাওয়াব), আর সকাল, সন্ধ্যা ও রাতের কিছু অংশে অর্থাৎ প্রাণবন্ত সময়ে নিয়মিত আমল করে সাহায্য চাও। আর মধ্যম পন্থা অবলম্বন কর, মধ্যম পন্থা অবলম্বন কর, তাহলে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৯, ৬৪৬৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮১৬।]
আমি শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায রহ.-কে বলতে শুনেছি: “এ থেকে প্রমাণিত হয় আমাদের পক্ষে উত্তম হচ্ছে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা, অধিক লম্বা না করা যেন আমরা বিরক্ত না হই ও ইবাদাত ত্যাগ না করি। মুমিন নিজেকে কষ্ট না দিয়ে সালাত আদায় করবে, মুজাহাদা ও ইবাদাত করবে, বরং সব বিষয়ে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করবে, যেন বিরক্তির ফলে ইবাদাতের প্রতি অনিহা সৃষ্টি না হয়” [‘মুনতাকাল আখবার’ এর (১২৫৭-১২৬২) নং হাদীসের ব্যাখ্যার সময় আমি তার এ বাণী শ্রবণ করেছি।]
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/73/10
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।