মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
১- বিতর সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। আবু আইয়ূব আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«الوتر حقٌ على كل مسلم، فمن أحب أن يوتر بثلاث فليفعل، ومن أحب أن يوتر بواحدة فليفعل»
“বেতের প্রত্যেক মুসলিমের ওপর একটি হক, যে তিন রাকাত দ্বারা বিতর পড়তে পছন্দ করে, সে যেন তাই করে, আর যে এক রাকাত দ্বারা বিতর পড়তে পছন্দ করে, সে যেন তাই করে”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪২২; নাসাঈ, হাদীস নং ১৭১২; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১১৯০, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ আবু দাউদ: (১/২৬৭)।]
আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন:
«الوتر ليس بحَتْم كصلاتكم المكتوبة، ولكن سنةٌ سنها رسول الله صلى الله عليه وسلم» .
আরো কিছু দলীল, যার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে বিতর ওয়াজিব নয়, বরং সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। যেমন, তালহা ইবন উবাইদুল্লাহর হাদীস, তিনি বলেন, নজদ থেকে এক ব্যক্তি বিক্ষিপ্ত কেশে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে উপস্থিত হল, আমরা তার আওয়াজের গুঞ্জন শুনতে ছিলাম, কিন্তু সে কি বলছে বুঝতে ছিলাম না, অবশেষে নিকটে এসে ইসলাম সম্পর্কে প্রশ্ন করে, বলে: হে আল্লাহর রাসূল, আমাকে বলুন আল্লাহ আমার ওপর কোনো কোনো সালাত ফরয করেছেন? তিনি বললেন: “পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, তবে তুমি যদি নফল পড়তে চাও”। সে বলল: আমাকে বলুন আমার ওপর আল্লাহ কোনো কোনো সিয়াম ফরয করেছেন? তিনি বললেন: রমযান মাসের সিয়াম, তবে তুমি যদি নফল পড়তে চাও”। সে বলল: আমাকে বলুন আমার ওপর আল্লাহ কি পরিমাণ যাকাত ফরয করেছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে যাকাতের কথা বললেন। সে বলল: এ ছাড়া আর কিছু আছে? তিনি বললেন: না, তবে তুমি যদি নফল আদায় করতে চাও। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে শরীয়তের নিদর্শন ও মৌলিক বিধানগুলো বললেন। তালহা বলেন, লোকটি চলে গেল, যাওয়ার সময় বলতে ছিল: “তার কসম, যে আপনাকে সম্মানিত করেছে, আমি কোনো নফল আদায় করব না, আল্লাহ আমার ওপর যা ফরয করেছেন তার থেকে কমও করব না” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “লোকটি সফল হল, যদি সত্য বলে থাকে, অথবা জান্নাতে প্রবেশ করল, যদি সত্য বলে থাকে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৬, ১৮১৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১।] ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুয়ায ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ইয়ামানে প্রেরণ করেন, তাকে উপদেশ দিয়ে তিনি বলেন, “... তুমি তাদের জানাবে যে, আল্লাহ তাদের ওপর দিন-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন...”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৩৪৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯।]
এ দু’টি হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় বিতর ওয়াজিব নয়। এটা জমহুর আলেমদের মাযহাব। [ইমাম আবু হানিফা রহ. হাদীসের বাহ্যিক অর্থ থেকে বিতর ওয়াজিব বলেছেন, কিন্তু অন্যান্য হাদীস থেকে বুঝা যায় বিতর ওয়াজিব নয়। দেখুন: নাইলুল আওতার লিশ শাওকানি: (২/২০৫-২০৬), শাইল ইসলাম ইবন তাইমিয়া রহ. গ্রহণ করেছেন যে, রাতে যে তাহাজ্জুদ পড়ে তার ওপর বিতর ওয়াজিব। “যারা বিতর ওয়াজিব বলেন, তাদের কেউ এ অভিমত পেশ করেছেন” দেখুন: ইখতিয়ারাতুল ফিকইয়াহ লি শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়াহ লিল বা’লি: (পৃ. ৯৬)।] বরং বিতর সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। এ জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুকিম ও মুসাফির কোনো অবস্থায় ফজরের সুন্নাত ও বিতর ত্যাগ করেন নি। [দেখুন: যাদুল মা‘দ লি ইবন কাইয়ূম: (১/৩১৫); আল-মুগনি লি ইবন কুদামাহ: (৩/১৯৬) ও (২/২৪০)।]
২. বিতর সালাতের ফযীলত: খারেজা ইবন হুযাফাতুল আদাভি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন:
«إن الله تعالى قد أمدكم بصلاة وهي خير لكم من حُمرِ النَّعم، وهي الوِتر، وجعلها لكم فيما بين العشاء إلى طلوع الفجر» .
“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে একটি সালাত দ্বারা সাহায্য করেছেন, যা তোমাদের জন্য লাল উটের চেয়েও উত্তম, আর তা হচ্ছে বিতর, তিনি তা নির্ধারণ করেছেন এশা থেকে ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪১৮; সুনান তিরমিযী, হাদীস নং ৪৫২; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১১৬৮; হাকেম: (১/৩০৬), হাকেম হাদীসটি সহীহ বলেছেন, ইমাম যাহাব তার সমর্থন করেছেন। ইমাম আহমদের মুসনাদে এ হাদীসের একটি শাহেদ রয়েছে: (১/১৪৮), আলবানী এ হাদীসটি সহীহ বলেছেন, তবে «هي خير لكم من حمر النعم» এ অংশটি তার নিকট সহীহ নয় দেখুন: ইরওয়াউল গালিল: (২/১৫৬)]
বেতের সালাতের ফযীলত ও সুন্নতে মুয়াক্কাদা হওয়ার আরো দলীল: আলি ইবন আবু তালেব রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীস, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর পড়েছেন, অতঃপর বলেছেন:
«يا أهل القرآن أوتروا فإن الله تعالى وتر يحب الوتر» .
আমি শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায রহ.-কে এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলতে শুনেছি: “এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, আলেমগণ অন্যদের তুলনায় বিতর সালাতের প্রতি অধিক গুরুত্ব প্রদান করবেন, যদিও বিতর সবার জন্য সুন্নাত, যেন তাদের অনুসারীরা তাদের অনুসরণ করে, যারা তাদের আমল ও অবস্থার খবর রাখে। বিতর এশা ও ফজরের মধ্যবর্তী সময়ে সর্বনিম্ন এক রাকাত আল্লাহ বিতর (বেজোড়), তিনি বিতর পছন্দ করেন। তার সিফাতের সাথে সামঞ্জস্য তিনি পছন্দ করেন , তাই ধৈর্যধারণকারীদের পছন্দ করেন, তবে ইজ্জত ও বড়ত্বের ক্ষেত্রে নয়। বান্দাগণ আল্লাহর সেসব সিফাত গ্রহণ করবে, যা তাদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ যেমন ইহসান, অনুগ্রহ ও দয়া ইত্যাদি” [বুলুগুল মারামের: (৪০৫) নং হাদীসের ব্যাখ্যার সময় আমি তা শ্রবণ করেছি।]
৩. বিতর সালাতের সময়: এশার সালাতের পর থেকে পুরো রাত বিতর সালাতের সময়। যেমন,
ক. ব্যাপক ওয়াক্ত: এশার সালাতের পর থেকে দ্বিতীয় ফজর উদিত হওয়ার আগ পর্যন্ত। আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবন আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি আবু বসরাহ গিফারি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إن الله تعالى زادكم صلاة وهي الوتر، فصلُّوها فيما بين صلاة العشاء إلى صلاة الفجر» .
“নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে একটি সালাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, আর তা হচ্ছে বিতর তোমরা তা এশার সালাতের পর থেকে ফজর সালাতের আগ পর্যন্ত পড়”। [আহমদ: (৬/৩৯৭), (২/১৮০, ২০৬, ২০৮), আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন দেখুন: ইরওয়াউল গালিল: (২/২৫৮), আমি বলছি: মুয়ায ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে এ হাদীসের একটি শাহেদ রয়েছে মুসনাদে আহমদে: (৫/২০৮)।] এ হাদীস থেকে প্রমাণ করে যে, বিতর এর ওয়াক্ত এশা ও ফজরের মধ্যবর্তী সময়। এশা নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করুক বা মাগরিবের সাথে একত্র আদায় করুক, এশা আদায়ের পর থেকে বিতর আরম্ভ হয়। [দেখুন: ‘আল-মুগনি’ লি ইবন কুদামাহ: (২/৫৯৫); ‘হাশিয়াতুর রওদুল মুরবি’ লি ইবন কাসেম: (২/১৮৪), আমি শাইখ আব্দুল আযিয ইবন বায রহ.-কে বলতে শুনেছি, তিনি ‘রওদুল মুরবি’: (২/১৮৪) গ্রন্থের ব্যাখ্যার সময় বলেছেন: “বিতরের সময় আরম্ভ হয় এশার সালাতের পর, যদিও মাগরিবের সাথে এশা আদায় করা হয়, ফজর উদিত পর্যন্ত বাকি থাকে” দেখুন: শারহুল মুমতি লি ইবন উসাইমিন: (৩/১৫)।]
বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা ও কাজ বিতর প্রমাণ করে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশা থেকে ফারেগ হয়ে ফজর পর্যন্ত এগারো রাকাত পড়তেন। প্রত্যেক দু’রাকাত শেষে সালাম ফিরাতেন। এক রাকাত দ্বারা বিতর পড়তেন। যখন মুয়াজ্জিন ফজরের সালাত (তাহাজ্জুদ) থেকে ফারেগ হত এবং তার নিকট ফজর স্পষ্ট হত ও মুয়াজ্জিন আসত, তিনি দাঁড়িয়ে হালকা দু’রাকাত সালাত আদায় করতেন। অতঃপর ডান পাশে কাত হয়ে শুতেন যতক্ষণ না মুয়াজ্জিন ইকামতের জন্য আসত [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৩৬।]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর সালাতের সর্বশেষ সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আবু সাইদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«أوتروا قبل أن تُصبحوا» . وفي رواية : «أوتروا قبل الصبح» .
“তোমরা ভোর করার আগে বিতর পড়”। অপর বর্ণনায় রয়েছে: “সকালের পূর্বে তোমরা বিতর পড়”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৫০।] আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমরা বিতর নিয়ে সকালের সাথে প্রতিযোগিতা কর”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৫০।] এখানে বিতর নিয়ে ফজর উদিত হওয়ার সাথে প্রতিযোগিতা প্রমাণ করে, ফজরের আগে বিতর আদায় করা জরুরি ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীস থেকে প্রমাণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«صلاة الليل مثنى مثنى فإذا خشي أحدكم الصبح صلى ركعة واحدة توتر له ما قد صلَّى» .
“রাতের সালাত দু’রাকাত দু’রাকাত, যখন তোমাদের কেউ ভোর হওয়ার আশঙ্কা করে সে যেন এক রাকাত পড়ে নেয়, যা তার পঠিত সকল সালাত বিতর (বেজোড়) করে দিবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৯০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৯।] আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«من أدرك الصبح فلم يوتر فلا وتر له» .
“যে সকাল পেল কিন্তু বিতর পড়ল না, তার বিতর নেই”। [সহীহ ইবন হিব্বান: (৬/১৬৮), হাদীস নং (২৪০৮); সহীহ ইবন খুজাইমাহ: (২/১৪৮), হাদীস নং (১০৯২); হাকেম: (১/৩০১-৩০২), হাকেম হাদীসটি সহীহ বলেছেন, ইমাম যাহাবী তার সমর্থন করেছেন। বায়হাকি: (২/৪৭৮), আলবানী সহীহ ইবন খুজাইমার টিকায় এ হাদীসের সনদ সহীহ বলেছেন দেখুন: ইবন খুজাইমাহ: (২/১৪৮), এ হাদীসটি শুআইব আল-আরনাউত সহীহ বলেছেন দেখুন: তাখরিজ সহীহ ইবন হিব্বান: (৬/১৬৯)।] এটা আরো প্রমাণ করে ইবন উমার রাদিয়াল্লোহু আনহুর হাদীস, যেখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إذا طلع الفجر فقد ذهب كلُّ صلاة الليل والوتر، فأوتروا قبل طلوع الفجر» .
“যখন ফজর উদিত হয়, তখন রাতের সকল সালাত ও বিতর সালাতের সময় শেষ হয়ে যায়। অতএব, তোমরা ফজর উদিত হওয়ার আগে বিতর পড়”। [তিরমিযী, হাদীস নং ৪৬৯, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন দেখুন: সহীহ তিরমিযী: (১/১৪৬) ও ইরওয়াউল গালিল: (২/১৫৪)।] ইমাম নববী রহ. বলেছেন: “এটাই একাধিক আলেমের অভিমত, ইমাম শাফি, আহমদ, ইসহাক প্রমুখগণ ফজর উদিত হওয়ার পর বিতর বৈধ মনে করতেন না”। [সুনান তিরমিযী: (২/৩৩৩), অপর হাদীস নং (৪৬৯)।] এ অভিমত আরো স্পষ্ট করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমল। কারণ, তার বিতর সালাতের শেষ সময় ছিল সাহরী। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের সব অংশে বিতর আদায় করেছেন, প্রথম রাতে, মধ্য রাতে ও শেষ রাতে, সাহরী পর্যন্ত তার বিতর সালাতের সময় ছিল”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৯৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৫।]
এসব হাদীস থেকে প্রমাণ হল যে, বিতর এশার পর থেকে আরম্ভ হয়, এবং দ্বিতীয় ফজর উদিত হওয়ার দ্বারা শেষ হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসের পর কারো কথা শ্রবণ যোগ্য নয়। [এর দ্বারা তাদের প্রতিবাদ করা উদ্দেশ্য, যারা বলেছে ফজরের পর বেতর আদায় করা বৈধ, যেমন আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস, উবাদাহ ইবন সামেত, কাসেম ইবন মুহাম্মদ, আব্দুল্লাহ ইবন আমের ইবন রাবিআহ ও আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ প্রমুখ। তারা ফজরের পর বিতর আদায় করতেন, যদি ফজরের আগে তাদের বিতর ছুটে যেত। তারা বিতর পড়ে ফজর পড়তেন। দেখুন: মুয়াত্তা ইমাম মালেক: (২/১২৬)। আলী ও আবু দারদা প্রমুখদের থেকে অনুরূপ রয়েছে। দেখুন: মুসান্নাফ ইবন আবি শায়বাহ: (২/২৮৬); মুসনাদে আহমদ: (৬/২৪২-২২৩); ইরওয়াউল গালিল: (২/১৫৫); শারহুল মুমতি লি ইবন উসাইমিন: (৩/১৭); মজমু‘ ফাতওয়া ইবন বায: (১১/৩০৫-৩০৮)। ইমাম মালেক মুয়াত্তাতে বলেছেন তারা এ ক্ষেত্রে মাযূর ও ওজরগ্রস্ত: “বাদ ফজর সেই বিতর পড়বে, যে বিতর না পড়ে ঘুমিয়েছে, তবে ইচ্ছাকৃত কেউ ঘুমাবে না, যেন ফজরের পর বিতর পড়তে না হয়”। মুয়াত্তা: (২/১২৭); জামেউল উসূল: (৬/৫৯-৬১)। ইবন উসাইমীন বলেছেন: “যদি ফজর উদিত হয়, তাহলে কোনো বিতর নেই। আর কতক পূর্বসূরী থেকে যে রয়েছে, তারা ফজরের আযান ও ফজর সালাতের মধ্যবর্তী সময়ে বিতর পড়তেন, তা সুন্নাতের দাবির পরিন্থী, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীর পর কারো কথা শ্রবণ যোগ্য নয়” আশ-শারহুল মুমতি: (৩/১৬)।]
খ. যার আশঙ্কা হয় শেষ রাতে উঠতে পারবে না, তার পক্ষে প্রথম রাতে বিতর পড়া মুস্তাহাব আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: “আমার একান্ত বন্ধু আমাকে তিনটি বিষয়ে ওসিয়ত করেছেন, (আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তা কখনো ত্যাগ করব না), প্রত্যেক মাসে তিন দিন সিয়াম, চাশতের দু’রাকাত এবং ঘুমের আগে বিতর আদায় করা”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৮১। ব্রাকেটের মধ্যবর্তী অংশ ‘আতরাফ হাদীস’ থেকে সংগৃহীত, নং ১১৭৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭২১।] আবু দারদা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: “আমার বন্ধু আমাকে তিনটি বিষয়ে ওসিয়ত করেছেন, আমি যত দিন বেঁচে থাকব তা কখনো ত্যাগ করব না, প্রত্যেক মাসে তিন দিন সিয়াম পালন করা, চাশতের দু’রাকাত সালাত আদায় করা ও আমি যেন বিতর পড়া ব্যতীত না ঘুমাই”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭২২।] হাফেয ইবন হাজার রহ. বলেছেন: “এ থেকে প্রমাণ হয় ঘুমের আগে বিতর পড়া মুস্তাহাব এটা তার জন্য যে জাগ্রত হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত নয়, আর যে ব্যক্তি দু‘ঘুমের মধ্যে সালাত আদায় করে, তাকেও এ হুকুম অন্তর্ভুক্ত করবে” [ফাতহুল বারি: (৩/৫৭)।]
মূলতঃ বিতর সালাতের ওয়াক্ত মানুষের অবস্থা ও তাদের সামর্থ্যের ওপর নির্ভরশীল। জাবের ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকরকে বলেছেন: “কখন তুমি বিতর পড়?” তিনি বললেন: প্রথম রাতে এশার পর। তিনি বললেন: “হে উমার তুমি কখন পড়?” তিনি বললেন: শেষ রাতে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “হে আবু বকর তুমি অধিক সতর্কতা গ্রহণ করেছ। আর হে উমার তুমি শক্তিশালী পন্থা অবলম্বন করেছ”। [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১২০২, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ ইবন মাজাহ: (১/১৯৮)।] আবু কাতাদা রহ. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকরকে বলেছেন: “তুমি কখন বিতর পড়?” তিনি বললেন: প্রথম রাতে। উমারকে বললেন: “তুমি কখন বিতর পড়?” তিনি বললেন: শেষ রাতে অতঃপর তিনি আবু বকরকে বলেন, “সে নিরাপত্তার পথ বেছে নিয়েছে” আর উমারকে বললেন: “সে শক্তিশালী পন্থা অবলম্বন করেছে”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪৩৪, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ সুনান আবু দাউদ: (১/২৬৮)।]
গ. যে জাগ্রত হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত তার জন্য শেষ রাতে বিতর পড়া উত্তম জাবের ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«من خاف أن لا يقوم من آخر الليل فليوتر أوله، ومن طمع أن يقوم آخره فليوتر آخر الليل؛ فإن صلاة آخر الليل مشهودة، وذلك أفضل» .
“যে আশঙ্কা করে শেষ রাতে উঠতে পারবে না, সে যেন শুরুতে বিতর পড়ে নেয়। যে শেষ রাতে উঠার ব্যাপারে আশাবাদী, তার উচিৎ শেষ রাতে বিতর পড়া। কারণ, শেষ রাতের সালাত উপস্থিতির সালাত [অর্থাৎ এ সময় রহমতের ফিরিশতা উপস্থিত হন এ থেকে শেষ রাতে বিতর ও অন্যান্য সালাত আদায়ের ফযীলত প্রমাণিত হয়। শারহুন নববী: (৬/২৮১)। কেউ বলেছেন: দিন-রাতের ফিরিশতাগণ উপস্থিত হন, এক দল আসে ও অপর দল প্রস্থান করে। ‘জামেউল উসূল’ লি ইবন আসির: (৬/৫৮)।], আর তাই উত্তম”। অপর বর্ণনায় আছে:
«... ومن وثق بقيام من الليل فليوتر من آخره؛ فإن قراءة آخر الليل محضورة، وذلك أفضل» .
“... যে কিয়ামুল লাইলের ব্যাপারে নিশ্চিত, সে যেন শেষ রাতে বিতর পড়ে। কারণ, শেষ রাতের কিরাত উপস্থিতির কিরাত, আর তাই উত্তম” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৫।] ইমাম নববী রহ. বলেছেন: “এ থেকে স্পষ্ট যে শেষ রাত পর্যন্ত বিতর বিলম্ব করা উত্তম, যে শেষ রাতে জাগ্রত হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত তার জন্য। আর যে শেষ রাতে উঠার ব্যাপারে নিশ্চিত নয়, তার জন্য শুরুতে বিতর পড়া উত্তম এ হচ্ছে হাদীসের সঠিক অর্থ। অন্যান্য সাধারণ হাদীসকে এ ব্যাখ্যা মোতাবেক বুঝতে হবে। যেমন, হাদীসে এসেছে: “আমার বন্ধু আমাকে ওসিয়ত করেছেন, যেন আমি বিতর পড়া ব্যতীত না ঘুমাই”। এটা তার জন্য যে শেষ রাতে উঠার ব্যাপারে নিশ্চিত নয়”। [শারহুন নববী আলা সহিহে সহীহ মুসলিম: (৬/২৮১)।]
আরো যেসব হাদীস প্রমাণ করে শেষ রাতে বিতর পড়া মুস্তাহাব, তন্মধ্যে যেমন, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«ينزل ربنا تبارك وتعالى كلَّ ليلة إلى السماء الدنيا حين يبقى ثلث الليل الآخر فيقول : من يدعوني فأستجيب له؟ من يسألني فأُعطيَهُ؟ من يستغفرني فأغفرَ له؟» .
“আমাদের রব প্রতি রাতে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন, যখন রাতের এক তৃতীয়াংশ বাকি থাকে। অতঃপর তিনি বলেন, কে আমাকে আহ্বান করবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব? কে আমার নিকট প্রার্থনা করবে, আমি প্রদান করব? কে আমার নিকট ক্ষমা চাইবে, আমি ক্ষমা করব?” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৪৫, দেখুন তার আতরাফ: ৬৩২১ ও ৭৪৯৪ নং হাদীস। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৫৮।] মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে:
«فلا يزال كذلك حتى يضيء الفجر» .
“তিনি এভাবেই অবস্থান করেন যতক্ষণ না ফজর স্পষ্ট হয়”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬৯-৭৫৮।] মুসলিমের অপর বাক্য এরূপ এসেছে:
«... هل من سائلٍ يُعْطَى؟ هل من داعٍ يُستجابُ له؟ هل من مستغفرٍ يُغْفَرُ له؟ حتى ينفجرَ الفجر» .
“...আছে কোনো প্রশ্নকারী যাকে দেওয়া হবে? আছে কোনো আহ্বানকারী যার ডাকে সাড়া দেওয়া হবে? আছে কেউ ক্ষমা প্রার্থনাকারী যাকে ক্ষমা করা হবে? যতক্ষণ না ফজর উদিত হয়”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭০-৭৫৮।]
৪. বিতর সালাতের বিভিন্ন পদ্ধতি ও তার রাকাত সংখ্যার বর্ণনা বিতর সালাত নিম্নের পদ্ধতি অনুসারে কয়েকভাবে আদায় করা যায়:
প্রথমত: এগারো রাকাত পড়া। প্রত্যেক দু’রাকাত পর সালাম ফিরানো ও এক রাকাত দ্বারা বিতর পড়া আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত:
«كان يصلي بالليل إحدى عشرة ركعة ويوتر منها بواحدة» .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে এগারো রাকাত পড়তেন ও তন্মধ্যে এক রাকাত দ্বারা বিতর পড়তেন”। অপর বর্ণনায় আছে:
«كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يصلي فيما بين أن يفرغ من صلاة العشاء- وهي التي تدعونها العتمة - إلى الفجر إحدى عشر ركعة يسلم بين كل ركعتين ويوتر بواحدة ...».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার সালাত থেকে ফারেগ হয়ে ফজর পর্যন্ত এগারো রাকাত সালাত আদায় করতেন, প্রত্যেক দু’রাকাত পর সালাম ফিরাতেন ও এক রাকাত দ্বারা বিতর পড়তেন...।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৩৬।]
দুই. তিন রাকাত পড়া। দু’রাকাত পর সালাম ফিরানো ও এক রাকাত দ্বারা বিতর আদায় করা আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাতের পদ্ধতি বর্ণনা করেন:
«... فقمت إلى جنبه عن يساره فوضع يده اليمنى على رأسي وأخذ بأذني يفتلها، فحوَّلَني فجعلني عن يمينه ثم صلى ركعتين، ثم ركعتين، ثم ركعتين، ثم ركعتين، ثم ركعتين، ثم ركعتين، ثم أوتر، ثم اضطجع حتى جاءه المؤذن فقام فصلى ركعتين خفيفتين، ثم خرج فصلى الصبح» .
“...আমি তার বাঁ পাশে দাঁড়িয়েছি, তিনি আমার মাথায় হাত রেখে আমার কান ধরে ঘুরিয়ে তার ডান পাশে নিয়ে আসলেন, অতঃপর দু’রাকাত সালাত আদায় করলেন। অতঃপর দু’রাকাত আদায় করলেন। অতঃপর দু’রাকাত আদায় করলেন অতঃপর দু’রাকাত আদায় করলেন। অতঃপর দু’রাকাত আদায় করলেন। অতঃপর দু’রাকাত আদায় করলেন। অতঃপর বিতর পড়লেন। অতঃপর তিনি শুইলেন, যখন মুয়াজ্জিন আসল তিনি দাঁড়িয়ে হালকা দু’রাকাত আদায় করলেন। অতঃপর বের হয়ে ফজরের সালাত আদায় করলেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৯২, ১১৭, ১৩৭, ৬৩১৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮২-৭৬৩।] তার থেকে আরো বর্ণিত:
«كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يصلي من الليل ثلاث عشرة ركعة» .
যায়েদ ইবন খালেদ আল-জুহানি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি একদা বলেছেন:
«لأرمقن صلاة رسول الله صلى الله عليه وسلم الليلة، فصلى ركعتين خفيفتين، ثم صلى ركعتين طويلتين، طويلتين، طويلتين، ثم صلى ركعتين، وهما دون اللتين قبلهما، ثم صلى ركعتين وهما دون اللتين قبلهما، ثم صلى ركعتين وهما دون اللتين قبلهما، ثم صلى ركعتين وهما دون اللتين قبلهما، ثم أوتر، فذلك ثلاث عشرة ركعة» .
“আমি আজ অবশ্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাত দেখব তিনি হালকা দু’রাকাত আদায় করলেন। অতঃপর দীর্ঘ দীর্ঘ দীর্ঘ দু’রাকাত আদায় করলেন। অতঃপর দু’রাকাত আদায় করলেন, যা পূর্বের তুলনায় সংক্ষেপ ছিল। অতঃপর দু’রাকাত আদায় করলেন, যা তার পূর্বের দু’রাকাতের তুলনায় সংক্ষেপ ছিল। অতঃপর দু’রাকাত আদায় করলেন, যা তার পূর্বের দু’রাকাতের তুলনায় সংক্ষেপ ছিল। অতঃপর দু’রাকাত আদায় করলেন, যা তার পূর্বের দু’রাকাতের তুলনায় সংক্ষেপ ছিল। অতঃপর বিতর পড়লেন। এ হচ্ছে তেরো রাকাত সালাত”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৬৫।]
তিন. তেরো রাকাত সালাত আদায় করা তন্মধ্যে মধ্যে এক বৈঠকে পাঁচ রাকাত আদায় করা। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يصلي من الليل ثلاث عشرة ركعة يوتر من ذلك بخمس لا يجلس في شيء إلا في آخرها» .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে তেরো রাকাত সালাত আদায় করতেন, তার মধ্যে তিনি পাঁচ রাকাত দ্বারা বিতর পড়তেন, কোথাও তিনি বসতেন না শেষ রাকাত ব্যতীত”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৩৭।]
«... كنا نُعدُّ له سواكه وطهوره فيبعثه الله ما شاء أن يبعثه من الليل فيتسوَّك ويتوضأ، ويصلي تسع ركعات لا يجلس فيها إلا في الثامنة، فيذكر الله ويحمده ويدعوه، ثم ينهض ولا يسلم، ثم يقوم فيصلي التاسعة، ثم يقعد فيذكر الله ويحمده ويدعوه، ثم يسلم تسليماً يسمعناه ...».
“... আমরা তার জন্য মিসওয়াক ও পানি প্রস্তুত রাখতাম, আল্লাহ যখন তাকে উঠানোর ইচ্ছা করতেন, তাকে উঠাতেন অতঃপর তিনি মিসওয়াক করতেন ও অযু করতেন, অতঃপর নয় রাকাত সালাত আদায় করতেন আট নাম্বার রাকাত ব্যতীত কোথাও তিনি বসতেন না। অতঃপর তিনি আল্লাহর যিকির করতেন, হামদ্ ও সানা এবং দো‘আ করতেন, অতঃপর উঠতেন কিন্তু সালাম ফিরাতেন না, এবং নবম রাকাতের জন্য দণ্ডায়মান হতেন। অতঃপর বসে আল্লাহর যিকির করতেন, তার হামদ-সানা করতেন ও তার নিকট দো‘আ করতেন। অতঃপর তিনি আমাদের শুনিয়ে সালাম ফিরাতেন...”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৬।]
পাঁচ. সাত রাকাত আদায় করা, শেষ রাকাত ব্যতীত কোথাও না বসা। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে:
«... فلما أسنَّ نبي الله صلى الله عليه وسلم وأخذه اللحم أوتر بسبع ... » .
“... যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বার্ধক্যে উপনীত হলেন ও মোটিয়ে গেলেন, তখন সাত রাকাত দ্বারা বিতর পড়েছেন...”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৬।] অপর বর্ণনায় এসেছে:
«لا يقعد إلا في آخرهن» .
“শেষ রাকাত ব্যতীত কোথাও বসতেন না”। [নাসাঈ, হাদীস নং ১৭১৮, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ নাসাঈ: (১/৩৭৫)। ইমাম ইবন মাজাহ ও ইমাম আহমদ: (৬/২৯০) উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে নিম্নের শব্দে বর্ণনা করেছেন: «كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يوتر بسبع أو بخمس لا يفصل بينهن بسلام ولا كلام» “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাত অথবা পাঁচ রাকাত দ্বারা বেতর পড়তেন, সালাম ও কথার দ্বারা মাঝখানে বিচ্ছেদ করতেন না”। সুনান ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১১৯২, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ সুনান ইবন মাজাহ: (১/১৯৭)।]
ষষ্ঠ. সাত রাকাত পড়া, ষষ্ঠ রাকাত ব্যতীত কোথাও না বসা। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: “আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিসওয়াক ও পানি প্রস্তুত রাখতাম, আল্লাহ তাকে উঠিয়ে দিতেন, যখন তাকে উঠাতে চাইতেন, তিনি মিসওয়াক করতেন ও অযু করতেন অতঃপর সাত রাকাত আদায় করতেন, ষষ্ঠ রাকাত ব্যতীত কোথাও বসতেন না। অতঃপর বসে আল্লাহর যিকির ও দো‘আ করতেন”। [ইবন হিব্বান: (২৪৪১), শুআইব আরনাউত ইবন হিব্বানের টিকায়: (৬/১৯৫) বলেছেন: “এ সনদটি বুখারি ও মুসলিমের শর্ত মোতাবেক। আহমদ অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন: (৬/৫৪)।]
সাত. পাঁচ রাকাত পড়া, শেষ রাকাত ব্যতীত কোথাও না বসা। আবু আইয়ূব আনসারি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«الوتر حق على كل مسلم، فمن أحبَّ أن يُوترَ بخمسٍ فليفعلْ، ومن أحبَّ أن يوتر بثلاثٍ فليفعلْ، ومن أحبَّ أن يوتر بواحدةٍ فليفعلْ» .
“বেতের প্রত্যেক মুসলিমের ওপর একটি হক, যে পাঁচ রাকাত দ্বারা বিতর আদায় করতে চায়, সে যেন তাই করে। যে তিন রাকাত দ্বারা বিতর আদায় করতে চায়, সে যেন তাই করে। আর যে এক রাকাত দ্বারা বিতর আদায় করতে চায়, সে যেন তাই করে”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪২২; নাসাঈ, হাদীস নং ১৭১২; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১১৯২; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৬৭০; হাকেম: (১/৩০২-৩০৩)।] আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার হাদীস থেকে প্রমাণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ রাকাতগুলো বিনা বৈঠকে পড়তেন, পঞ্চম রাকাত ব্যতীত বসতেন না। তাতে আরো রয়েছে: “... পাঁচ রাকাত দ্বারা বিতর আদায় করতেন, শেষ রাকাত ব্যতীত কোথাও বসতেন না”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৩৭।]
আট. তিন রাকাত পড়া, দু’রাকাত পর সালাত ফিরানো, অতঃপর এক রাকাত দ্বারা বিতর আদায় করা। আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের শুনিয়ে সালাম দ্বারা জোড় ও বেজোড় সালাতের মধ্যে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করতেন”। [ইবন হিব্বান, হাদীস নং ২৪৩৩, ২৪৩৪, ২৪৩৫; আহমদ: (২/৭৬) ইতাব ইবন যিয়াদ থেকে বর্ণনা করেছেন। হাফিয ইবন হাজার বলেছেন: “এর সনদ শক্তিশালী”। ফাতহুল বারি: (২/৪৮২), আলবানী বলেছেন: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে এর একটি ‘মরফূ’ ‘শাহেদ’ রয়েছে: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক রাকাত দ্বারা বিতর পড়তেন, তিনি দু’রাকাত ও এক রাকাতের মাঝে কথা বলতেন”। এ সনদটি সহীহ বুখারী ও মুসলিমের শর্ত মোতাবেক”। তিনি এর সূত্র হিসেবে ইবন শায়বাহ উল্লেখ করেছেন। দেখুন: ইরওয়াউল গালিল: (২/১৫০)।] আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে একটি ‘মওকুফ’ বর্ণনা রয়েছে, নাফে বলেছেন: “আব্দুল্লাহ ইবন উমার বিতর সালাতে এক রাকাত ও দু’রাকাতের মাঝে সালাম ফিরাতেন, কখনো কোনো প্রয়োজনের নির্দেশ করতেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৯১; মুয়াত্তা ইমাম মালেক: (১/১২৫)।] ‘মওকুফ’ দ্বারা ‘মরফূ’ হাদীস শক্তিশালী হয়। আমি শাইখ আব্দুল আযিয ইবন বায রহ.-কে বলতে শুনেছি, তিনি তিন রাকাত বিতর সম্পর্কে বলেছেন: “যে তিন রাকাত বিতর পড়তে চায় তার জন্য এটাই উত্তম। এটা পূর্ণতার নিকটবর্তী” [‘রওদুল মুরিব’: (২/১৮৭) গ্রন্থের ব্যাখ্যার সময় আমি তা শুনেছি, তারিখ: ১৫/১১/১৪২২হি.।]
নয়. এক সাথে তিন রাকাত পড়া, শেষ রাকাত ব্যতীত না বসা। আবু আইয়ূব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে:
«ومن أحبَّ أن يوتر بثلاثٍ فليفعلْ»
“যে তিন রাকাত দ্বারা বিতর পড়তে চায়, সে যেন তাই করে”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪২২; নাসাঈ, হাদীস নং ১৭১২; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১১৯২; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৬৭; হাকেম: (১/৩০২)।] উবাই ইবন কাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর সালাতে প্রথম রাকাতে সূরা আলা, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরূন ও তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস পড়তেন। শেষ রাকাত ব্যতীত কোথাও তিনি সালাম ফিরাতেন না। সালামের পর তিনি তিনবার বলতেন [নাসাঈ, হাদীস নং ১৭০১, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ সুনান নাসাঈ: (১/৩৭২)। আরো দেখুন: নাইলুল আওতার: (২/২১১), ফাতহুল বারি: (২/৪৮১), ফাতহুল বারিতে এর অনেক শাহেদ রয়েছে। নাইলুল আওতার: (২/২১২)।]:
«سبحان الملك القدوس»
তবে এ পদ্ধতিতে তিন রাকাত এক তাশাহুদ দ্বারা আদায় করা, শেষ রাকাত ব্যতীত না বসা। কারণ, দুই তাশাহুদ দ্বারা পড়লে মাগরিবের সালাতের সাথে সামঞ্জস্য হয়। [আমি শাইখ আব্দুল আযিয ইবন বায রহ. থেকে শুনেছি, তিনি ‘রওদুল মুরবি’: (২/১৮৮) গ্রন্থের ব্যাখ্যায় এক সালামে তিন রাকাত পড়ার আলোচনায় বলেছেন: “কিন্তু মাগরিবের সাথে মিল করবে না, বরং লাগাতার পড়বে”। অর্থাৎ বিনা বৈঠকে।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগরিবের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিতর আদায় করতে নিষেধ করেছেন। [দেখুন: শারহুল মুমতি লি ইবন উসাইমিন: (৪/২১)।] আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لا توتروا بثلاث، أوتروا بخمس، أو بسبع، ولا تشبَّهوا بصلاة المغرب» .
“তোমরা তিন রাকাত দ্বারা বিতর পড় না, বরং পাঁচ রাকাত অথবা সাত রাকাত দ্বারা বিতর পড়, আর মাগরিব সালাতের সাথে সামঞ্জস্য রেখ না”। [ইবন হিব্বান, হাদীস নং ২৪২৯; দারাকুতনি: (২/২৪); বায়হাকি: (৩/৩১); হাকেম: (১/৩০৪), হাকেম হাদীসটি সহীহ বলেছেন, ইমাম যাহাবী তার সমর্থন করেছেন। হাফিয ইবন হাজার ফাতহুল বারি: (২/৪৮১) গ্রন্থে বলেছেন: “এর সনদ বুখারী ও মুসলিমের শর্ত মোতাবেক”। তালখিসুল হাবিরে বলেছেন: সবার সনদ নির্ভরযোগ্য, তাই কারো মওকুফ বর্ণনার ফলে সমস্যা নেই। তাখিসুল হাবির: (২/১৪), হাদীস নং (৫১১)।]
হাফিয ইবন হাজার রহ. সেসব হাদীস ও মনীষীদের বাণী উল্লেখ করেছেন, যা থেকে প্রমাণ হয় যে, শেষ বৈঠকে এক তাশাহুদ দ্বারা বিতর জায়েয। তিনি সেসব হাদীসও একত্র করেছেন যা থেকে প্রমাণ হয় যে, দুই তাশাহুদ দ্বারা তিন রাকাত বিতর পড়া নিষেধ, মাগরিবের সাথে সামঞ্জস্যতার কারণে। [দেখুন: ফাতহুল বারী: (২/৪৮১); নাইলুল আওতার: (২/২১৪)।] যে সব হাদীস তিন রাকাত বিতর প্রমাণ করে, তার মধ্যে কাসেম ইবন আব্দুল্লাহ ইবন উমার এর হাদীস একটি, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«صلاة الليل مثنى مثنى، فإذا أردت أن تنصرف فاركع ركعة واحدة توتر لك ما صليت» .
“রাতের সালাত দু’রাকাত দু’রাকাত, যখন তুমি শেষ করার ইচ্ছা কর, এক রাকাত পড়ে নাও, যা তোমার পূর্বের সালাত বেজোড় করে দিবে”। কাসেম বলেছেন: “আমরা সাবালক হয়ে অনেক লোককে দেখেছি যারা তিন রাকাত দ্বারা বিতর পড়তেন। তবে সব পদ্ধতি বৈধ, আশা করি কোনোটিতে কোনো সমস্যা নেই”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৯৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৯।]
দশ. এক রাকাত বিতর পড়া আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«الوتر ركعة من آخر الليل»
“বেতের হচ্ছে এক রাকাত শেষ রাতে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৫২।]
আবু মিজলায থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবন আব্বাসকে বিতর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি? তিনি বললেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি:
«ركعة من آخر الليل»
“এক রাকাত শেষ রাতে”। আমি ইবন উমারকে জিজ্ঞাসা করেছি, তিনি বললেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:
«ركعة من آخر الليل» .
“এক রাকাত শেষ রাতে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৫৩।] ইমাম নববী রহ. বলেছেন: “এ থেকে প্রমাণ হয় এক রাকাত বিতর পড়া বৈধ, এবং তা শেষ রাতে পড়া মুস্তাহাব” [শারহুন নববী: (৬/২৭৭)।] আমি শাইখ আব্দুল আযিয ইবন বায রহ.-কে বলতে শুনেছি: “কিন্তু যত বেশি রাকাত পড়বে তত উত্তম, যদি কেউ এক রাকাতে সমাপ্ত করে, তাহলেও মকরুহ ব্যতীত বৈধ...”। [রওদুল মুরবি: (২/১৮৫) গ্রন্থের ব্যাখ্যার সময় শুনেছি।]
এক রাকাত দ্বারা বিতর পড়ার আরো দলীল: আবু আইয়ূব আনসারি রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীস, তাতে রয়েছে:
« ... ومن أحب أن يوتر بواحدةٍ فليفعلْ ...».
“... যে এক রাকাত দ্বারা বিতর পড়তে চায়, সে যেন তাই করে...”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪২২; নাসাঈ, হাদীস নং ১৭১২; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১১৯০।]
৫. বিতর সালাতের কিরাত। প্রথম রাকাতে সূরা আলা, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরূন এবং তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস পড়া আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর সালাতে সূরা আলা, সূরা কাফিরূন ও সূরা ইখলাস পাঠ করতেন এক এক রাকাতে। [তিরমিযী, হাদীস নং ৪৬২; নাসাঈ, হাদীস নং ১৭০২; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১১৭২, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ সুনান নাসাঈ: (১/৩৭২); সহীহ ইবন মাজাহ: (১/১৯৩); সহীহ সুনান তিরমিযী: (১/১৪৪)।] ইমাম তিরমিযি রহ. বলেন, প্রত্যেক রাকাতে এখন একটি করে সূরা পাঠ করবে। [সুনান তিরমিযী: (২/৩২৬), এ হাদীসটি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণনা করেছেন। তিরমিযী, হাদীস নং ৪৬৩; আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪২৪ ও ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১১৭৩। “তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন সূরা দ্বারা বিতর আদায় করতেন? তিনি বলেন: প্রথম রাকাতে সূরা আলা, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরূন ও তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস এবং সূরা নাস ও ফালাক পাঠ করতেন। অনেকে এ হাদীসটি দুর্বল বলেছেন। দেখুন: নাইলুল আওতার: (২/২১১-২১২), আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ সুনান আবু দাউদ: (১/২৬৭); সহীহ সুনান তিরমিযী: (১/১৪৪), সহীহ ইবন মাজাহ: (১/১৯৩), তিরমিযি বলেছেন: “সাহাবী ও তাদের পরবর্তী অনেক আলিম যা গ্রহণ করেছেন তা হচ্ছে, সূরা আলা, সূরা কাফিরূন ও সূরা ইখলাস পাঠ করা, প্রত্যেক রাকাতে একটি করে সূরা পড়া তিরমিযী: (২/৩২৬), আমি শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায রহ.-কে ‘বুলুগুল মারামের’ (৪০৯) নং হাদীসের ব্যাখ্যায় বলতে শুনেছি: “সূরা ফালাক ও নাসের বৃদ্ধি দুর্বল। বিশুদ্ধ বর্ণনা হচ্ছে: সূরা ইখলাস পড়া। যদি আয়েশার হাদীস বিশুদ্ধ সনদে প্রমাণিত হয়, তাহলে কখনো এটা, কখনো ওটা পড়া” আমি বলছি: এ হাদীসটি হাকেম বর্ণনা করে সহীহ বলেছেন, আর ইমাম যাহাভি তার সমর্থন করেছেন। হাকেম: (১/৩০৫), শুআইব আরনউত রহ. জামেউল উসূলের টিকায় বলেছেন: “হাকেম ও যাহাবী যথার্থ বলেছেন”। ‘সুবুলুস সালামে’র গবেষক বলেছেন: হাফেয ইবন হাজার নাতায়েজুল আফকার’: (১/৫১৩-৫১৪) গ্রন্থে বলেছেন: “এ হাদীসটি হাসান”। সুবুলুস সালাম: (৩/৫৪)।]
৬. বিতর সালাতে কুনুত পড়ার বিধান। [কুনুতের একাধিক অর্থ রয়েছে: এখানে উদ্দেশ্য সালাতের বিশেষ স্থানে কিয়ামের সময় দো‘আ করা। দেখুন: ফাতহুল বারি: (২/৪৯০-৪৯১), শারহুল মুমতি: (৪/২৪)] বিতর সালাতে কুনুত পড়া বৈধ হাসান ইবন আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে কয়েকটি বাক্য শিক্ষা দিয়েছেন, যা আমি বিতর সালাতের কুনুতে পড়ি [আহমদ: (১/১৯৯); আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪২৫; নাসাঈ, হাদীস নং ১৭৪৫, ৭৪৬; তিরমিযী, হাদীস নং ৪৬৪; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১১৭৯, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: ইরওয়াউল গালিল: (২/১৭২), হাদীস নং (৪৪৯)।]:
«اللهم اهدني فيمن هديت، وعافني فيمن عافيت، وتولني فيمن توليت، وبارك لي فيما أعطيت،وقني شر ما قضيت؛ فإنك تقضي ولا يُقضى عليك، وإنه لا يذلّ من واليت [ ولا يعز من عاديت ] [ব্রাকেটের শব্দ বাড়িয়েছেন তাবরানি রহ. দেখুন: তাবরানি ফিল মুজামিল কাবির: (৩/৭৩), হাদীস নং ১৭০১, ২৭০৩, ২৭০৪, ২৭০৫, ২৭০৭; বায়হাকি ফি সুনানিল কুবরা: (২/২০৯), হাফেয ইবন হাজার বলেছেন: “এ অতিরিক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত”। অতঃপর তিনি প্রমাণ করেছেন এটা মুত্তাসিল সনদ দ্বারা সাব্যস্ত। ইমাম নববী রহ. এ অতিরিক্তকে দুর্বল বলেছেন, তিনি তার প্রতিবাদ করেছেন। দেখুন: তালখিসুল হাবির: (১/২৪৯), হাদীস নং (৩৭১)। আরো দেখুন: নাইলুল আওতার লি শাওকানি: (২/২২৪), ‘ইরওয়াউল গালিল’ লিল আলবানী: (২/১৭২)।] [ سبحانك ] [ব্রাকেটের অতিরিক্ত ইমাম তিরমিয বৃদ্ধি করেছেন, হাদীস নং ৪৬৪।] تباركت ربنا وتعاليت» .
খ. আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বিতর শেষে বলতেন:
«اللهم إني أعوذ برضاك من سخطك، وبمعافاتك من عقوبتك، وأعوذ بك منك، لا أُحصي ثناءً عليك، أنت كما أثنيت على نفسك» [আহমদ: (১/৯৬); নাসাঈ, হাদীস নং ১৭৪৭; আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪২৭; তিরমিযী, হাদীস নং ৩৫৬৬; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১১৭৯, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: ইরওয়াউল গালিল: (২/১৭৫), হাদীস নং (৪৩০)।]. وصلى الله وسلم على نبينا محمد وآله وصحبه ومن تبعهم بإحسان إلى يوم الدين [আল্লামা আলবানী রহ. বলেছেন: “দো‘আ কুনুতের পর সাহাবীদের আমল থেকে দুরূদ প্রমাণিত। দেখুন: ইরওয়াউল গালিল: (২/১৭৭)।].
৭. কুনুতের দো‘আ রুকুর আগে ও পরে উভয় স্থানে পড়া যায়। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত তিনি রুকুর পূর্বে কুনুত পড়েছেন। রুকুর পরেও তার থেকে কুনুত পড়ার প্রমাণ রয়েছে অতএব উভয় পদ্ধতি বৈধ ও জায়েয, তবে উত্তম হচ্ছে রুকুর পরে কুনুত পড়া। কারণ এটা অধিক হাদীসে এসেছে। [শায়খুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া রহ. বলেছেন: “কুনুতের ব্যাপারে মানুষ দু’ভাগে বিভক্ত, অপর ভাগ আছে মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী: তাদের কেউ বলেন রুকুর পূর্ব ব্যতীত কুনুত বৈধ নয়। কেউ বলেন: রুকুর পর ব্যতীত কুনুত বৈধ নয়। আর ফিকাহবিদ আহলে হাদীসগণ, যেমন আহমদ প্রমুখ বলেন: উভয় বৈধ। কারণ, উভয় পক্ষে সহীহ হাদীস বিদ্যমান, যদিও তারা রুকুর পরে কুনুতকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন। কারণ, এ ব্যাপারে হাদীস বেশি ও তা কিয়াস মোতাবেক”। ফাতওয়া ইবন তাইমিয়া: (২৩/১০০)।আমি শাইখ আব্দুল আযিয ইবন বায রহ.-কে ‘রওদুল মুরবি’: (২/১৮৯) গ্রন্থের ব্যাখ্যার সময় বলতে শুনেছি: “শেষ রাকাতে রুকুর পর কুনুত পড়বে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত মুসিবতের সময় তিনি রুকুর পর কুনুত পড়েছেন। রুকুর পূর্বেও কুনুত পড়া প্রমাণিত। উভয় বৈধ, এ ব্যাপারে কোনো সংকীর্ণতা নেই; কিন্তু বিশুদ্ধ ও উত্তম হচ্ছে রুকুর পর কুনুত পড়া। কারণ, হাদীসে এর উল্লেখ বেশি”। ইবন কুদামাহ উল্লেখ করেছেন: “চার খলিফা থেকে অনুরূপ বর্ণনা করা হয়েছে। ইমাম আহমদ থেকে বর্ণনা করা হয়েছে: তার মতে রুকুর পর কুনুত পড়বে, তবে তার পূর্বে পড়লে কোনো সমস্যা নেই। আল-মুগনি: (২/৫৮১-৫৮২)। আরো দেখুন: যাদুল মায়াদ: (১/২৮২); ফাতহুল বারি: (২/৪৯১)।] বিতর সালাতে কুনুত পড়া সুন্নাত। [কেউ বলেছেন পুরো বছর কুনুত পড়া সুন্নাত। আর কেউ বলেছেন: শুধু রমযানের শেষ অর্ধেকে কুনুত পড়া সুন্নাত আর কেউ বলেছেন: কখনো কুনুত পড়া সুন্নাত নয়। ইমাম আহমদের অধিকাংশ সাথীগণ প্রথম মত গ্রহণ করেছেন। দেখুন: আল-মুগনি: (২/৫৮০-৫৮১); নাইলুল আওতার: (২/২২৬); শারহুন নববী আলা সহীহ মুসলিম: (৫/১৮৩), শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়াহ রহ. বলেছেন: “বিতর সালাতে কুনুত পড়া জায়েয, জরুরি নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবিদের মধ্যে কেউ কুনুত পড়েননি, কেউ রমযানের শেষ অর্ধেকে কুনুত পড়েছেন, আবার কেউ পুরো বছর কুনুত পড়েছেন। আলিমদের মধ্যে কেউ প্রথম মত মুস্তাহাব বলেছেন, যেমন ইমাম মালেক। কেউ দ্বিতীয় মত মুস্তাহাব বলেছেন, যেমন ইমাম শাফি ও আহমদের এক বর্ণনা। কেউ তৃতীয় মত মুস্তাহাব বলেছেন, যেমন ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম আহমদের এক বর্ণনা সব পদ্ধতি বৈধ, এর কোনো একটি গ্রহণকারী তিরষ্কারের উপযুক্ত হবে না”। ফাতওয়া: (২৩/৯৯)। আরো দেখুন: আল-মুগনি: (২/৫৮০); নাইলুল আওতার: (২/২২৬)।]
কুনুতের স্থান নির্ণয় সম্পর্কে হাদীস: আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তাকে কুনুত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল রুকুর পূর্বে না পরে? তিনি বলেন, “রুকুর পূর্বে...” অতঃপর বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মাস রুকুর পর কুনুত পড়েন, যেখানে তিনি বনু সুলাইম জনপদের ওপর বদ-দো‘আ করতেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১০০২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৭৭।] আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ফজরের কিরাত শেষ করে তাকবীর বলতেন ও রুকু থেকে মাথা উঠাতেন:
«سمع الله لمن حمده، ربنا ولك الحمد»
বলতেন, অতঃপর তিনি দাঁড়িয়ে বলতেন:
«اللهم أنج الوليد بن الوليد ...».
“হে আল্লাহ তুমি ওলীদ ইবন ওলিদকে মুক্ত কর...” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৭৫।] আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহর, আসর, মাগরিব, এশা ও ফজরে সালাতে একমাস লাগাতার কুনুত পড়েছেন। প্রত্যেক সালাতের শেষে, অর্থাৎ শেষ রাকাতে سمع الله لمن حمده বলে কুনুত পড়তেন। তিনি বনু সুলাইম, রা’আল, যাকওয়ান, উসাইয়্যাহ জনপদের ওপর বদ দো‘আ করতেন। তার পিছনে যারা থাকত, তারা আমীন বলত”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪৪৩; হাকেম: (১/২২৫), বায়হাকি, আলবানী রহ. বায়হাকির সনদকে সহীহ সুনান আবু দাউদে: (১/২৭০) হাসান বলেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন: রুকুর পর কুনুত পড়া আবু বকর, উমার ও উসমান থেকে হাসান সনদে প্রমাণিত। দেখুন: ইরওয়াউল গালিল: (২/১৬৪)।] উবাই ইবন কাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর পড়তেন ও রুকুর পূর্বে কুনুত পড়তেন”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪২৭; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১১৮২, আলবানী তার সনদ হাসান বলেছেন। দেখুন: সহীহ ইবন মাজাহ: (১/১৯৫), ইরওয়াউল গালিল: (২/১৬৭), হাদীস নং (৪২৬); সহীহ সুনান আবু দাইদ: (১/২৬৮)।] আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ফজরের সালাতে কুনুত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তিনি বলেন, “আমরা রুকুর পূর্বে ও পরে কুনুত পড়তাম”। [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১১৮৩, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ ইবন মাজাহ১: (১/১৯৫); ইরওয়াউল গালিল: (২/১৬০)।]
৮. কুনুতে হাত উঠানো ও মুক্তাদিদের আমীন বলা। সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীসের ব্যাপকতা থেকে কুনুতে হাত উঠানো ও মুক্তাদিদের আমীন বলা প্রমাণ হয়, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إن ربكم تبارك وتعالى حييٌّ كريم يستحي من عبده إذا رفع يديه أن يردَّهما صفراً»
“নিশ্চয় তোমাদের রব লজ্জাশীল ও দয়াবান, বান্দা যখন তার দু’হাত উঠায়, তিনি তা খালি ফিরিয়ে দিতে লজ্জা বোধ করেন”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪৮৮; তিরমিযী, হাদীস নং ৩৫৫৬;ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৮৬৫; বগভি ফি শারহুস সুন্নাহ: (৫/১৮৫, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ সুনান তিরমিযী: (৩/১৬৯)।] দ্বিতীয়ত উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাফে ইবন খাদিজ বলেছেন: “আমি উমার ইবন খাত্তাবের পিছনে সালাত আদায় করেছি, তিনি রুকুর পর কুনুত পড়েছেন, দু’হাত উঠিয়েছেন ও জোড়ে দো‘আ পড়েছেন”। [বায়হাকি: (২/২১২), তিনি বলেছেন: এ হাদীসটি উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে সহীহ।]
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে কারীদের ঘটনায় বর্ণিত, যাদেরকে শহীদ করা হয়েছিল। তিনি বলেন, “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, যখনি তিনি ফজরের সালাত আদায় করতেন, হাত উঠিয়ে তাদের জন্য বদ দো‘আ করতেন, অর্থাৎ যারা কারীদের হত্যা করেছে, তাদের জন্য বদ দো‘আ করতেন”। [বায়হাকি: (২/২১১), আল-বান্না বলেছেন: “আল-বায়ান গ্রন্থের লেখক বলেছেন: “এটা আমাদের অধিকাংশ সাথীদের কথা। আমাদের সাথীদের মধ্যে ইমাম হাফিয আবু বকর বায়হাকি ফিকাহ ও হাদীসের মধ্যে সমন্বয় করার জন্য এটাকে গ্রহণ করেছেন। কারণ, তিনি এ হাদীসটি সহীহ অথবা হাসান সনদে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন”। অর্থৎ পূর্বের হাদীস। দেখুন: ‘ফাতহুর রাব্বানি মা‘আ বুলুগুল আমানি’।] ইমাম বায়হাকি রহ. উল্লেখ করেছেন: কতক সংখ্যক সাহাবী কুনুতে হাত উঠিয়েছেন। [সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকি: (২/২১১)। দেখুন: আল-মুগনি: (২/৫৮৪),; আশ-শারহুল মুমতি: (৪/২৬); শারহুন নববী আলা সহীহ মুসলিম: (৫/৮৩)।] আর ইমামের কুনুতে মুক্তাদিদের আমীন বলার দলীল হচ্ছে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীস। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন سمع الله لمن حمده শেষ রাকাতে বলতেন, তিনি বনু সুলাইম জনপদের রা‘আল, যাকওয়ান ও উসাইয়্যাহ বংশের লোকদের ওপর বদ-দো‘আ করতেন। তার পিছনে যারা থাকত, তারা আমীন বলত” [আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪৪৩।]
৯. রাতের সর্ব শেষ সালাত বিতর আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«اجعلوا آخر صلاتكم بالليل وتراً» .
“রাতে তোমরা তোমাদের সর্বশেষ সালাত আদায় কর বিতর” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৯৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৫১।] মুসলিমের অপর বর্ণনায় আছে: “যে রাতে সালাত আদায় করে, সে যেন তার সর্বশেষ সালাত আদায় করে বিতর ফজরের পূর্বে কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ নির্দেশ দিতেন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫২-৭৫১।]
১০. বিতর সালাত শেষে সালামের পর দো‘আ করা। যেমন, সালামের পর বলা:
«سبحان الملك القدوس، سبحان الملك القدوس، سبحان الملك القدوس رب الملائكة والروح»
কারণ, উবাই ইবন কাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাকাত দ্বারা বিতর পড়তেন। প্রথম রাকাতে সূরা আলা, দ্বিতীয় রাকাতে সুরা কাফিরুন ও তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস পড়তেন। তিনি রুকুর পূর্বে কুনুত পড়তেন। যখন তিনি সালাত শেষ করতেন, তখন বলতেন [নাসাঈ, হাদীস নং ১৬৯৯; আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪৩০; দারাকুতনি: (২/৩১), ব্রাকেটের অংশ দারাকুতনি থেকে সংগৃহীত। আলবানী এ অংশ সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ সুনান নাসাঈ: (১/২৭২)।]:
«سبحان الملك القدوس»
তিনবার। অতঃপর উচ্চ আওয়াজে বলতেন:
«[ رب الملائكة والروح ]»
১১. এক রাতে দু’বার বিতর বৈধ নয়, সাবেক বিতর বাতিল করা যাবে না। তালক ইবন আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি:
«لا وتران في ليلةٍ»
“এক রাতে দু’বার বিতর নেই”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪৩৯; তিরমিযী, হাদীস নং ৪৭০; নাসাঈ, হাদীস নং ১৬৭৯; আহমদ: (৪/২৩); ইবন হিব্বান: (৪/৭৪), হাদীস নং ২৪৪। আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ তিরমিযী: (১/১৪৬)।] দ্বিতীয়তঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর পড়ে দু’রাকাত সালাত আদায় করতেন। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৩৮।] যদি কোনো মুসলিম প্রথম রাতে বিতর আদায় করে, অতঃপর ঘুমিয়ে যায়, অতঃপর আল্লাহ তাকে শেষ রাতে উঠার তাওফিক দান করেন, তখন সে দু’রাকাত দু’রাকাত সালাত আদায় করবে, পূর্বের বিতর ভঙ্গ করবে না, বরং তাতেই যথেষ্ট করবে। [দেখুন: আল-মুগনি: (২/৫৯৮), আমি শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায রহ.-কে ‘বুলুগুল মারামের’ (৪০৭) নং হাদীসের ব্যাখ্যার সময় বলতে শুনেছি: “শেষ রাতে বিতর পড়া সুন্নাত; কিন্তু কেউ যদি প্রথম রাতে বিতর পড়ে, তাহলে শেষ রাতে তা পড়বে না। কারণ, হাদীসে এসেছে: “এক রাতে দু’বার বিতর নেই”। আর যারা বিতর ভঙ্গ করার কথা বলেন, তাদের কথার অর্থ হচ্ছে তিনবার বিতর পড়া। তবে বিশুদ্ধ অভিমত হচ্ছে যখন কেউ প্রথম রাতে বিতর পড়ে, অতঃপর শেষ রাতেও সালাত আদায় করে, তাহলে সালাত আদায় করবে কিন্তু বিতর পড়বে না, বরং প্রথম রাতের বিতরকে যথেষ্ট করবে”। দেখুন: তার মজমু‘ ফাতওয়া: (১১/৩১০-৩১১)।]
১২. বিতর সালাতের জন্য পরিবারের সদস্যদের জাগ্রত করা বৈধ। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে সালাত আদায় করতেন, আমি তার বিছানায় শুয়ে থাকতাম। যখন তিনি বিতর পড়ার ইচ্ছা করতেন আমাকে জাগিয়ে দিতেন, আমি বিতর পড়তাম”। মুসলিমের এক বর্ণনা এভাবে এসেছে: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে তার সালাত আদায় করতেন, আর সে (আয়েশা) তার সামনে শুয়ে থাকত, যখন বিতর বাকি থাকত, তিনি তাকে জাগ্রত করতেন, সে বিতর পড়ত”। মুসলিমের অপর বর্ণনা এভাবে এসেছে: “যখন তিনি বিতর পড়তেন বলতেন, ‘হে আয়েশা ওঠ, বিতর পড়”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৯৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৪।] ইমাম নববী রহ. বলেছেন: “এখান থেকে প্রমাণ হয় যে, শেষ রাতে বিতর পড়া মুস্তাহাব, ব্যক্তি তাহাজ্জুদ পড়ুক বা না পড়ুক, যদি শেষ রাতে উঠার ব্যাপারে নিশ্চিত হয় নিজে নিজে অথবা কারো জাগ্রত করার দ্বারা। ঘুমের পূর্বে বিতর পড়ার নির্দেশ তাকে দেওয়া হয়েছে, যে শেষ রাতে উঠার ব্যাপারে নিশ্চিত নয়”। [শারহুন নববী আলা সহীহ মুসলিম: (২/২৭০), দেখুন: ফাতহুল বারি: (২/৪৮৭)।]
১৩. যার বিতর ছুটে যায়, তার বিতর কাযা করা উচিৎ। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত: “... নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোনো সালাত আদায় করতেন, তা তিনি নিয়মিত আদায় করা পছন্দ করতেন। তার অভ্যাস ছিল, যদি তার ওপর ঘুম প্রবল হত অথবা রাতে সালাত আদায় করা কষ্টদায়ক হত, তাহলে তিনি দিনের বেলা বারো রাকাত সালাত আদায় করতেন। আমি জানি না আল্লাহর নবী কোনো রাতে পূর্ণ কুরআন খতম করেছেন, আর না সকাল পর্যন্ত কোনো রাত সালাত আদায় করেছেন, না পূর্ণ মাস সিয়াম পালন করেছেন রমযান ব্যতীত...”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৬।] উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«من نام عن حزبه أو عن شيء منه فقرأه فيما بين صلاة الفجر وصلاة الظهر كتب له كأنما قرأه من الليل» .
“যে ব্যক্তি তার অযীফা না পড়ে ঘুমিয়ে যায়, অথবা আংশিক পড়ে ঘুমিয়ে যায়, অতঃপর সে তা ফজর ও যোহরের মধ্যবর্তী সময়ে পড়ে নেয়, তার জন্য লেখা হবে যেন সে তা রাতেই পড়েছে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৭।]
আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«من نام عن الوتر أو نسيه فليصلِّ إذا أصبح أو ذكره» .
“যে ব্যক্তি বিতর না পড়ে ঘুমিয়ে যায় অথবা তা ভুলে যায়, সে যেন তা পড়ে নেয় যখন ভোর করে অথবা যখন স্মরণ হয়”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪৩১), ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১১৮৮; তিরমিযী, হাদীস নং ৪৬৫), তিরমিযির বর্ণিত শব্দ: «فليصلِّ إذا ذكر وإذا استيقظ» “সে যেন পড়ে নেয় যখন স্মরণ করে ও যখন জাগ্রত হয়”। হাকেম: (১/৩০২), হাকেমের বর্ণিত শব্দ তিরমিযির শব্দের অনুরূপ। হাদীসটি হাকেম সহীহ বলেছেন, ইমাম যাহাভি তার সমর্থন করেছেন। আহমদ: (৩/৪৪), তার শব্দ: «إذا ذكرها أو إذا أصبح» “যখন তা স্মরণ করে অথবা যখন ভোর করে”। আলবানী আহমদের হাদীস সহীহ বলেছেন। দেখুন: ইরওয়াউল গালিল: (২/১৫৩), আমি শাইখ আব্দুল আযিয ইবন বায রহ.-কে বলতে শুনেছি: “এ শব্দে এ হাদীস দুর্বল, আবু দাউদ এ হাদীসটি জায়্যেদ সনদে বর্ণনা করেছেন, কিন্তু সেখানে إذا أصبح শব্দ নেই। আবু দাউদের বর্ণনা বিশুদ্ধ বলা যায়। তাই উত্তম হচ্ছে কাযা করবে ঠিক, কিন্তু জোড় রাকাত আদায় করবে। সহীহ হাদীসে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: “রাসূলুল্লাহ যদি ঘুম অথবা অসুস্থতার কারণে বিতর না পড়তেন, তাহলে দিনে বারো রাকাত সালাত আদায় করতেন”। বুলুগুল মারামের: (৪১২) নং হাদীসের ব্যাখ্যার সময় আমি তার এ বক্তব্য শ্রবণ করেছি।]
অতএব, উত্তম হচ্ছে যদি বিতর আদায় না করে ঘুমায় অথবা ভুলে যায়, তাহলে তা দিনে সূর্য উঠার পর অভ্যাস অনুযায়ী জোড় সংখ্যায় কাযা করে নেওয়া। যদি রাতে এগারো রাকাত পড়ার অভ্যাস থাকে, তাহলে দিনে বারো রাকাত পড়া আর যদি রাতে নয় রাকাত পড়ার অভ্যাস থাকে, তাহলে দিনে দশ রাকাত পড়া, এভাবে।
সমাপ্ত
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/73/15
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।