মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
১. ঘুমের সময় কিয়ামুল লাইলের নিয়ত করা আর ঘুমের উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ ইবাদাতে শক্তি অর্জন করা, তাহলে ঘুমেও সাওয়াব হবে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«ما من امرئ تكون له صلاة بليل فغلبه عليها نوم إلا كتب الله له أجر صلاته، وكان نومُه صدقةً عليه»
“এমন কোনো ব্যক্তি নেই, যার রাতে সালাত আদায়ের অভ্যাস ছিল, অতঃপর তার ওপর ঘুম প্রবল হল, আল্লাহ তার জন্য অবশ্যই সালাতের সাওয়াব লিখবেন, আর তার ঘুম হবে তার জন্য সদকা”। [নাসাঈ, হাদীস নং ১৭৮৪; আবু দাউদ, হাদীস নং ১৩১৪; মালেক ফিল ‘মুয়াত্তা’: (১/১১৭), আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ সুনান নাসাঈ: (১/৩৮৬) ও ‘ইরওয়াউল গালিল’: (২/২০৫)।] আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«من أتى فراشه وهو ينوي أن يقوم يصلي من الليل فغلبتْهُ عيناه حتى أصبح، كُتبَ له ما نوى، وكان نومُهُ صدقةً عليه من ربه تعالى» .
“যে ব্যক্তি তার বিছানায় আসল, যার নিয়ত ছিল রাতে উঠে সালাত আদায় করা, কিন্তু তার ওপর ঘুম প্রবল হল, অতঃপর ভোর করল, তার নিয়ত অনুযায়ী তার জন্য লেখা হবে। আর তার ঘুম হবে আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্য সদকা স্বরূপ” [নাসাঈ, হাদীস নং ৬৮৭, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: ‘ইরওয়াউল গালিল’: (৪৫৪) ও সহীহ সুনান নাসাঈ: (১/৩৮৬)।]
২. জাগ্রত হয়ে হাত মলে চেহারা থেকে ঘুম দূর করা, আল্লাহর যিকির করা ও মিসওয়াক করা, এবং বলা:
«لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد، وهو على كل شيء قدير، سبحان الله، والحمد لله، ولا إله إلا الله، والله أكبر، ولا حول ولا قوة إلا بالله العلي العظيم، ربِّ اغفر لي»
কারণ উবাদা ইবন সামেত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি রাতে ঘুম থেকে আড়মোড়া দিয়ে উঠে বলল:
«لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد، وهو على كل شيء قدير، الحمد لله، وسبحان الله، ولا إله إلا الله، والله أكبر، ولا حول ولا قوة إلا بالله، ثم قال : اللهم اغفر لي، أو دعا استجيب [ له ] [হাফিয ইবন হাজার রহ. বলেছেন: [ له ] শব্দটি ‘আসলি’ বাড়িয়েছেন। তিনি বলেছেন: অন্যান্য বর্ণনাতে এরূপ রয়েছে। আমি বলছি: এ শব্দ ইবন মাজাহ তার সুনান গ্রন্থে বাড়িয়েছেন, দেখুন হাদীস নং (৩৮৭৮), আলবানী হাদীসের এ বৃদ্ধিকে সুনান ইবন মাজাহ গ্রন্থে সহীহ বলেছেন। দেখুন: (২/৩৩৫)।]».
অতঃপর সে বলল: হে আল্লাহ আমাকে মাফ কর, অথবা দো‘আ করল, তার দো‘আ কবুল করা হবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৫৪।] ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: “...রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাগ্রত হয়ে হাত দ্বারা চেহারা থেকে ঘুম মুছতে ছিলেন, অতঃপর সূরা আল ইমরানের শেষ দশ আয়াত তিলাওয়াত করলেন...”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮২-৭৬৩।]
হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كان النبي صلى الله عليه وسلم إذا قام من الليل يشوص فاه بالسواك»،
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে যখন ঘুম থেকে উঠতেন, মিসওয়াক দ্বারা তার মুখ দাঁতন করতেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৪৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৪।] অতঃপর জাগ্রত হওয়ার অন্যান্য যিকির পড়া [দেখুন: লেখকের হিসনুল মুসলিম, (পৃ. ১২-১৬)।] এবং আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক অযু করা।
৩. হালকা দু’রাকাত সালাত দ্বারা তাহাজ্জুদ আরম্ভ করা। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা ও কর্ম দ্বারা অনুরূপ প্রমাণিত হয়। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
«كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا قام من الليل ليصلي افتتح صلاته بركعتين خفيفتين»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রাতে সালাত আদায়ের জন্য উঠতেন, তিনি হালকা দু’রাকাত সালাত দ্বারা তার সালাত আরম্ভ করতেন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৬৭।]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إذا قام أحدكم من الليل فليفتتح صلاته بركعتين خفيفتين» .
“যখন তোমাদের কেউ রাতে সালাতের জন্য উঠে, সে যেন তার সালাত হালকা দু’রাকাত দ্বারা আরম্ভ করে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৬৮।]
৪. ঘরে তাহাজ্জুদ আদায় করা মুস্তাহাব, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে তাহাজ্জুদ আদায় করতেন। যায়েদ ইবন সাবেত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«... فعليكم بالصلاة في بيوتكم، فإن خير صلاة المرء في بيته إلا المكتوبة» .
“... তোমরা ঘরে সালাত আদায় কর, কারণ ব্যক্তির উত্তম সালাত হচ্ছে তার ঘরে ফরয ব্যতীত”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৩১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৮১।]
৫. নিয়মিত কিয়ামুল লাইল আদায় করা, কখনো ত্যাগ না করা। নির্দিষ্ট সংখ্যক রাকাত নিয়মিত পড়া মুস্তাহাব যদি শরীর চাঙ্গা ও মন প্রফুল্ল থাকে, তাহলে দীর্ঘ কিরাত করবে, অন্যথায় হালকা কিরাতে সালাত আদায় করবে, আর কখনো ছুটে গেলে কাযা করবে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«خذوا من الأعمال ما تطيقون فإن الله لا يملُّ حتى تملّوا»
“তোমরা সে পরিমাণ আমল কর, যার সাধ্য তোমাদের রয়েছে, কারণ আল্লাহ ক্লান্ত হন না, যতক্ষণ না তোমরা ক্লান্ত হও”। তিনি বলতেন:
«أحب العمل إلى الله ما داوم عليه صاحبه وإن قلّ»
“আল্লাহর নিকট সে আমলই অধিক পছন্দনীয়, বান্দা যার ওপর নিয়মতান্ত্রিকতা বজায় রাখে, যদিও তার পরিমাণ কম হয়” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৭০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৮২।]
আব্দুল্লাহ ইবন আমর আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন:
«يا عبد الله لا تكن مثل فلان كان يقوم الليل فترك قيام الليل»
“হে আব্দুল্লাহ তুমি অমুকের মত হয়ো না, সে রাতে কিয়াম করত, কিন্তু সে তা ত্যাগ করেছে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৫২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১১৯।]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেছেন:
«... وكان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا صلى صلاة أحبّ أن يداوم عليها، وكان إذا غلبه نوم أو وجع عن قيام الليل صلى من النهار ثنتي عشرة ركعة»
“...রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোনো সালাত আদায় করতেন, তা তিনি নিয়মিত আদায় করা পছন্দ করতেন। যদি তার ওপর ঘুম প্রবল হত অথবা দাঁড়াতে কষ্ট হত, তাহলে তিনি দিনে বারো রাকাত সালাত আদায় করতেন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৬।] উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«من نام عن حزبه أو عن شيء منه فقرأه فيما بين صلاة الفجر وصلاة الظهر كُتِبَ له كأنما قرأه من الليل» .
“যে ব্যক্তি তার অযীফা থেকে ঘুমিয়ে পড়ল অথবা তার কতক অবশিষ্ট রইল, সে যদি তা ফজর ও যোহর সালাতের মধ্যবর্তী সময়ে পড়ে নেয়, তাহলে তার জন্য লেখা হবে যেন সে তা রাতেই পড়েছে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৭।]
৬. যদি তন্দ্রা চলে আসে, তাহলে সালাত ত্যাগ করে ঘুমানো উত্তম, যেন ঘুম পূর্ণ হয়। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إذا نعس أحدُكم في الصلاة فليرقدْ حتى يذهب عنه النوم؛فإن أحدَكم إذا صلى وهو ناعس لعله يذهب يستغفر فيسبّ نفسه»؛
“যখন তোমাদের কেউ সালাতে ঝিমায়, তার উচিৎ শুয়ে পড়া, যেন তার থেকে ঘুম চলে যায়। কারণ, ঘুমানো অবস্থায় যখন তোমাদের কেউ সালাত আদায় করে, তখন হয়তো সে নিজের জন্য ইস্তেগফার করতে গিয়ে নিজেকে গালি দেবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২১২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৮৬।] আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু ‘মারফূ’ সনদে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন:
«إذا قام أحدكم من الليل فاستعجم القرآن على لسانه فلم يدرِ ما يقول فليضطجع» .
“যখন তোমাদের কেউ রাতে দণ্ডায়মান হয়, অতঃপর তার জন্য যদি কুরআন পড়া কষ্টকর হয়, কী বলে বলতে পারে না, তাহলে সে যেন শুয়ে পড়ে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৮৭।]
৭. রাতের সালাতের জন্য স্ত্রীকে জাগ্রত করা মুস্তাহাব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে সালাত আদায় করতেন, যখন তিনি বিতর আদায় করতেন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বলতেন:
«رحم الله رجلاً قام من الليل فصلى، ثم أيقظ امرأته فصلت، فإن أبت نضح في وجهها الماء، ورحم الله امرأة قامت من الليل فصلت، ثم أيقظت زوجها، فإن أبى نضحت في وجهه الماء» .
“আল্লাহ সে ব্যক্তিকে রহম করুন, সে রাতে উঠে সালাত আদায় করল, অতঃপর তার স্ত্রীকে জাগ্রত করল। যদি সে উঠতে না চায় তার চেহারায় পানির ছিটা দিল। আল্লাহ সে নারীর ওপর রহম করুন যে রাতে উঠে সালাত আদায় করল, অতঃপর তার স্বামীকে জাগ্রত করল, যদি সে উঠতে না চায় তার চেহারায় পানির ছেটা দিল” [নাসাঈ, হাদীস নং ১৬১০; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৩৩৬; আবু দাউদ, হাদীস নং ১৩০৮, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ সুনান নাসাঈ: (১/৩৫৪)।]
আবু সাঈদ ও আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إذا استيقظ الرجل من الليل وأيقظ امرأته فصليا ركعتين كُتبا من الذاكرين الله كثيراً والذاكرات» .
“যখন ব্যক্তি ঘুম থেকে উঠে ও তার স্ত্রীকে জাগ্রত করে, অতঃপর উভয়ে সালাত আদায় করে, তাদেরকে অধিক যিকিরকারী নারী ও অধিক যিকিরকারী পুরুষদের অন্তর্ভুক্ত লেখা হয়” [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৩৩৫; আবু দাউদ, হাদীস নং ১৩০৯, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ সুনান আবু দাউদ: (১/২৪৩)।] আলী ইবন আবু তালিব বর্ণনা করেন, কোনো এক রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ও ফাতিমার নিকট গমন করলেন, অতঃপর বললেন: “তোমরা কি সালাত আদায় করছ না?” আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল, সন্দেহ নেই আমাদের অন্তর আল্লাহর হাতে, যখন তিনি আমাদেরকে উঠাতে চাইবেন আমরা উঠে যাব আমার এ কথা বলার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলে গেলেন। আমাকে কোনো উত্তর করলেন না। অতঃপর তার প্রস্থানের সময় আমি তাকে শুনলাম, তিনি উরুতে হাত মেরে বলতে ছিলেন:
“আর মানুষ সবচেয়ে বেশি তর্ককারী”। [সূরা আল-কাহাফ, আয়াত: ৫৪] [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১২৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৭৫।]
ইবন বাত্তাল রহ. বলেছেন: “এ থেকে রাতের সালাতের ফযীলত প্রমাণিত হয় এবং এ জন্য পরিবার ও ঘনিষ্ঠজনদের জাগ্রত করা উচিৎ”। [‘ফাতহুল বারি’ থেকে সংগৃহীত: (৩/১১)।] তাবারি রহ. বলেছেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যদি রাতের সালাতের অধিক ফযীলত জানা না থাকত, তাহলে তিনি কখনো নিজ মেয়ে ও চাচতো ভাইকে তার জন্য কষ্ট দিতেন না, তাও এমন সময় যা আল্লাহ তার মখলুকের আরামের জন্য নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু তিনি চেয়েছেন আরাম ও বিশ্রাম ত্যাগ করে তারা সে ফযীলত অর্জন করুক। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন [ফাতহুল বারি: (৩/১১)।]:
“আর তোমার পরিবার-পরিজনকে সালাত আদায়ের আদেশ দাও এবং নিজেও তার ওপর অবিচল থাক। আমি তোমার কাছে কোনো রিযিক চাই না। আমিই তোমাকে রিযিক দেই আর শুভ পরিণাম তো মুত্তাকীদের জন্য”। [সূরা ত্বহা, আয়াত: ১৩২]
আর আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু যে বলেছেন: “হে আল্লাহর রাসূল, সন্দেহ নেই আমাদের অন্তর আল্লাহর হাতে, যখন তিনি আমাদেরকে উঠাতে চাইবেন আমরা উঠে যাব” এ কথার উৎস হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
“আল্লাহ জীবসমূহের প্রাণ হরণ করেন তাদের মৃত্যুর সময় এবং যারা মরেনি তাদের নিদ্রার সময়। তারপর যার জন্য তিনি মৃত্যুর ফয়সালা করেন তার প্রাণ তিনি রেখে দেন এবং অন্যগুলো ফিরিয়ে দেন একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল কওমের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৪১]
আর তিনি যে বলেছেন: “আমরা উঠবো” [ফাতহুল বারি: (৩/১১)।] এর অর্থ আমরা জাগ্রত হব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উরুতে হাত মারার উত্তম অর্থ হচ্ছে আলির দ্রুত উত্তর দেওয়া ও যথাযথ ওজর পেশ না করা। এ জন্য তিনি উরুতে হাত মেরেছেন। হাদীস থেকে বুঝে আসে: রাতের সালাতের জন্য উদ্বুদ্ধ করা, সাথীদের নির্দেশ দেওয়া এবং ইমাম ও বড়দের উচিৎ অধীনদের দীনি ও দুনিয়াবী উপকারের স্বার্থে তাদের রাতের সালাতের খোঁজ-খবর নেওয়া। উপদেশ প্রদানকারীর কর্তব্য যখন তার কথা গ্রহণ করা না হয় অথবা তার মনের বিরুদ্ধে প্রতি উত্তর শুনে, তাহলে বিরত থাকা ও রুষ্ঠ না হওয়া, যদি কোনো হিকমত না থাকে”। [শারহুন নববী আলা সহীহি মুসলিম: (৬/৩১১); ‘ফাতহুল বারি’ লি ইবন হাজার: (৩/১১)।]
নবী পত্নী উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে ঘাবড়ে উঠেন, অতঃপর তিনি বলেন,
«سبحان الله ماذا أنزل الله من الخزائن؟ وماذا أُنزِل من الفتن؟ أيقظوا صواحب يوسف ) يريد أزواجه ( لكي يصلين، رُبَّ كاسية في الدنيا عارية في الآخرة» . وفي لفظ : «ماذا أنزل الليلة؟» .
“সুবহানাল্লাহ, আল্লাহ কত খাজানা নাযিল করেছেন? কত ফিতনা নাযিল করা হয়েছে? হে ইউসুফের সাথীগণ (তার স্ত্রীগণ উদ্দেশ্য) তোমরা সালাত আদায়ের জন্য জাগ্রত হও। দুনিয়াতে অনেক পোশাক পরিহিতা আখিরাতে নগ্ন থাকবে”। অপর বর্ণনায় এসেছে: “আজ রাতে কী নাযিল করা হয়েছে?”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৫, ১১২৬, ২৬১৮, ৭০৭৯।]
হাফেয ইবন হাজার রহ. বলেছেন: “...এ হাদীস থেকে রাতের সালাতের প্রতি উদ্বুদ্ধ করণ ও তা ওয়াজিব নয় বুঝে আসে। কারণ তিনি তাদের ওপর অবশ্য জরুরি করেন নি”। [‘ফাতহুল বারি’: (৩/১১)।] এ হাদীস থেকে আরো প্রমাণিত হয় ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে আল্লাহর যিকির করা মুস্তাহাব, অনুরূপ ইবাদাতের জন্য নিজ পরিবারের লোকদের জাগ্রত করা, বিশেষ করে যখন কোনো কিছু ঘটে তখন মুস্তাহাব” [‘ফাতহুল বারি’: (৩/১১)।]
ইবন আসির রহ. বলেছেন: “দুনিয়াতে অনেক পোশাক পরিহিতা আখিরাতে নগ্ন থাকবে” এ কথা দ্বারা মানুষের নেক আমলের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, যা সে পরকালের জন্য প্রেরণ করে। তিনি বলেন, “দুনিয়ার অনেক সম্পদশালী কোনো ভালো কাজ করে না, সে আখিরাতে ফকির। দুনিয়াতে অনেক পোশাক পরিহিতা, বিত্ত ও সচ্ছলতার মালিক আখিরাতে নগ্ন ও হতভাগা হবে”। [‘জামেউর রাসূল ফি আহাদিসির রাসূল”: (৬/৬৮)।]
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তার পিতা উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু আল্লাহর তাওফীক মোতাবেক রাতে সালাত আদায় করতেন, অতঃপর যখন শেষ রাত হত তার পরিবারকে সালাতের জন্য জাগিয়ে দিতেন। তিনি তাদেরকে বলতেন: সালাত, সালাত, অতঃপর নিম্নের আয়াত তিলাওয়াত করতেন:
“আর তোমার পরিবার-পরিজনকে সালাত আদায়ের আদেশ দাও এবং নিজেও তার ওপর অবিচল থাক। আমি তোমার কাছে কোনো রিযিক চাই না। আমিই তোমাকে রিযিক দেই আর শুভ পরিণাম তো মুত্তাকীদের জন্য” [সূরা ত্বহা, আয়াত: ১৩২] [‘জামেউল উসূল ফি আহাদিসির’ রাসূল: (৬/৬৮)।]
৮. মনোযোগ ও বুঝে বুঝে যে পরিমাণ কুরআন তিলাওয়াত করা যায়, তাহাজ্জুদে সে পরিমাণ পাঠ করা: এক পারা বা তার চেয়ে অধিক বা তার চেয়ে কম উচ্চ-অনুচ্চ যেভাবে ইচ্ছা পড়ার অনুমতি রয়েছে। হ্যাঁ যদি উচ্চ স্বরে তিলাওয়াত করলে পড়াতে প্রাণ আসে অথবা উপস্থিত লোকেরা শ্রবণ করতে পারে, অথবা অন্য কোনো ফায়দা রয়েছে, তাহলে উচ্চ স্বরে পড়া উত্তম। আর যদি নিকটে কেউ তাহাজ্জুদ পড়ে, অথবা তার উচ্চ স্বরের কারণে কারো কষ্ট হয়, তাহলে আস্তে পড়া উত্তম। আর যদি অগ্রাধিকারের কোনো কারণ না থাকে, তাহলে যেভাবে ইচ্ছা পড়বে। [‘আল-মুগনি’ লি ইবন কুদামাহ: (২/৫৬২)।]
উপরে বর্ণিত সব অবস্থা সম্পর্কে হাদীস রয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«صليت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم ليلة فأطال حتى هممت بأمر سوءٍ، قيل : وما هممت به؟ قال : هممت أن أجلس وأدعه» .
“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে কোনো এক রাতে সালাত আদায় করেছি, তিনি এত লম্বা করলেন যে আমি খারাপ ইচ্ছা করে ছিলাম, বলা হল: কি ইচ্ছা করে ছিলেন? তিনি বললেন: আমি ইচ্ছা করে ছিলাম তাকে ত্যাগ করে আমি বসে যাব”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৩৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৭৩।] হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি কোনো এক রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সালাত আদায় করেছি, তিনি বাকারা আরম্ভ করলেন, আমি বললাম: একশ’ আয়াত হলে হয়ত রুকু করবে। তিনি পড়তে থাকলেন আমি বললাম হয়ত এক রাকাতে এ সূরা শেষ করবেন, তিনি পড়তে থাকলেন আমি বললাম: এর দ্বারা হয়ত রুকু করবেন। অতঃপর তিনি সূরা আলে-ইমরান আরম্ভ করে তা শেষ করলেন। অতঃপর তিনি সূরা নিসা আরম্ভ করে শেষ করলেন তিনি ধীরে ধীরে স্পষ্ট করে পড়তে ছিলেন। যখন কোনো তাসবীহের আয়াত পাঠ করতেন, তাসবীহ পড়তেন, যখন কোনো প্রার্থনার আয়াত পড়তেন, প্রার্থনা করতেন। যখন কোনো আশ্রয় চাওয়ার আয়াত পড়তেন, আশ্রয় চাইতেন...।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৭২।] মালেক ইবন আশজায়ি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এক রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সালাতে দাঁড়িয়েছি, তিনি সূরা বাকারা তিলাওয়াত করলেন, তিনি এমন কোনো রহমতের আয়াত তিলাওয়াত করেননি, যেখানে তিনি বিরতি দিয়ে প্রার্থনা করেন নি। তিনি আযাবের কোনো অতিক্রম করলে সেখানে বিরতি দিয়ে আশ্রয় চেয়েছেন। অতঃপর তিনি দাঁড়ানোর সমপরিমাণ রুকু করেন, রুকুতে তিনি বলতেন:
«سبحان ذي الجبروت، والملكوت، والكبرياء، والعظمة»
অতঃপর তিনি সাজদা করেন, রুকুর অনুরূপ তিনি সাজদাতে বলেন। অতঃপর দাঁড়িয়ে তিনি সূরা আল ইমরান তিলাওয়াত করেন, অতঃপর তিনি একেকটি সূরা তিলাওয়াত করেন”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৮৭৩; নাসাঈ, হাদীস নং ১০৪৯, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ সুনান আবু দাউদ: (১/১৬৬)।] হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি এক রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাত আদায় করতে দেখেছেন, তিনি চার রাকাত সালাত আদায় করেন, তাতে তিনি সূরা বাকারাহ, আলে ইমরান, আন-নিসা, আল-মায়েদাহ অথবা সূরা আল-‘আনআম তিলাওয়াত করেন”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৭৭৪, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ সুনান আবু দাউদ: (১/১৬৬)।]
আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা জনৈক ব্যক্তিকে বলেন, যে এক রাকাতে মুফাস্সালের সকল সূরা তিলাওয়াত করেছে: “তুমি কি কবিতার মতো দ্রুত পড়েছ? আমি তো সামঞ্জস্যপূর্ণ [এখানে সামঞ্জস্যশীল বলতে অর্থের সামঞ্জস্য, যেমন উপদেশ, হিকমত, ঘটনা ইত্যাদি, আয়াতের সংখ্যার সমতা উদ্দেশ্য নয়।] সে সব সূরা জানি, যেগুলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটির সাথে অপরটি মিলিয়ে পাঠ করতেন। অতঃপর তিনি মুফাস্সাল থেকে বিশটি সূরা উল্লেখ করেন, প্রতি রাকাতে দু’টি করে সূরা”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৭৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৫-৭২২।] অপর বাক্যে এসেছে: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক রাকাতে এগুলো থেকে দু’টি সূরা তিলাওয়াত করতেন”। তিনি বলেন, ইবন মাসউদের ‘মাসহাফ’ মোতাবেক বিশটি সূরা মুফাস্সালের শুরু থেকে, যার সর্বশেষ সূরা দুখান ও সূরা নাবা”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৯৯৬, ৫০৪৩।] সহীহ মুসলিমের বর্ণিত শব্দ: “আব্দুল্লাহর রচনা মোতাবেক দশ রাকাতে মুফাস্সালের বিশটি সূরা”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৬-৭২২।] সহীহ মুসলিমের অপর বর্ণনায় এসেছে:
«... هذّاً كهذِّ الشعر، إن أقواماً يقرؤون القرآن لا يجاوز تراقيهم، ولكن إذا وقع في القلب فرسخ فيه نفع، وإن أفضل الصلاة الركوع والسجود، إني لأعلم النظائر التي كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يقرن بينهن ...».
“কবিতার মতো দ্রুত পড়েছ, নিশ্চয় এক জাতি রয়েছে যারা কুরআন তিলাওয়াত করে, তবে তাদের গর্দান অতিক্রম করে না; কিন্তু যখন অন্তরে স্থির হও ও তাতে প্রোথিত হয় উপকার করে। সর্বোত্তম সালাত হচ্ছে রুকু ও সাজদা। নিশ্চয় আমি সে সব সূরা জানি, যেগুলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিলিয়ে পাঠ করতেন...।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৫-৭২২।] আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের এক আয়াত দ্বারা এক রাত শেষ করেছেন”। [তিরমিযী, হাদীস নং ৪৪৮, আলবানী এ হাদীসের সনদ সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ তিরমিযী: (১/১৪০)।] আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক রাতে এক আয়াত পড়তে থাকেন, সকাল পর্যন্ত তিনি তা বারবার পড়তে ছিলেন। আর সে আয়াতটি হচ্ছে:
“যদি আপনি তাদেরকে শাস্তি প্রদান করেন তবে তারা আপনারই বান্দা, আর তাদেরকে যদি ক্ষমা করেন, তবে নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ১১৮] [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৩৫০, আলবানী হাদীসটি হাসান বলেছেন। দেখুন: সহীহ সুনান ইবন মাজাহ: (১/২২৫), আরনাউত ‘জামেউল উসূল’: (৬/১০৫) গ্রন্থে তা সহীহ বলেছেন।] এ থেকে বুঝা যায় সালাতুল লাইলে বান্দার তাওফিক, সুস্থতা ও ইমানী শক্তি মোতাবেক বিভিন্ন কিরাত পড়া শ্রেয়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/73/9
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।