মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
বৈধ অবৈধের মানদণ্ডে পবিত্র মক্কার বিভিন্ন স্থানসমূহের সম্মাননা
লেখকঃ শাইখ সা‘দ ইবন আলী আশ-শাহরানী
৪
প্রথম অধ্যায় : মক্কার সম্মানযোগ্য স্থানসমূহ
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/783/4
মক্কা নগরীকে আল্লাহ তা‘আলা সম্মানিত স্থানসমূহ, বরকতময় অবস্থান, পবিত্র ইবাদত, স্পষ্ট নিদর্শনসমূহের মাধ্যমে বৈশিষ্ট্যময় করেছেন। যা তার মর্যাদা, সম্মান ও ইজ্জতকে বৃদ্ধি করেছে,, কুরআন ও হাদীসে এই বরকতময় স্থানের ফযিলত এবং বিধি-বিধান সম্বলিত ইসলামী দলীলসমূহ স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে এবং এই স্থানসমূহকে সম্মান করার এবং ওখানে আল্লাহর ইবাদত করার বিধিবদ্ধ নিয়ম ও পদ্ধতিসমূহ স্পষ্ট করা হয়েছে।” এখানে ঐ স্থানসমূহ তার ফযিলতসহ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হল:
“আমি জিজ্ঞেস করলাম ইয়া রাসূলুল্লাহ্, পৃথিবীতে সর্বপ্রথম কোন মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে? তিনি বললেন: মসজিদ হারাম, আমি জিজ্ঞেস করলাম এর পর কোনটি? তিনি বললেন: মসজিদ আকসা, আমি জিজ্ঞেস করলাম এই উভয় মসজিদ নির্মাণের মাঝে সময়ের ব্যবধান কি ছিল? তিনি বললেন: চল্লিশ বছর। অতঃপর সালাতের সময়ে তুমি যেখানেই উপস্থিত হবে সেখানেই সালাত আদায় করবে।” (মুসলিম: ৫২০)
অন্য হাদীসে জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“আমার এই মসজিদে সালাত আদায় করা মসজিদ হারাম ব্যতীত অন্য যে কোনো মসজিদে এক হাজার রাকাত সালাত আদায় করার চেয়ে উত্তম, আর মসজিদ হারামে এক রাকা‘আত সালাত আদায় করা (মসজিদ নববী ব্যতীত) অন্য যেকোন মসজিদে এক লক্ষ্য রাকাত সালাত আদায় করার চেয়ে উত্তম। (সুনান ইবন মাজাহ: ১৪০৬)
অধিকাংশ আলেমগণের মতে অতিরিক্ত সাওয়াব শুধু কা‘বা ঘরের চারপাশের মসজিদেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং হারামের সম্পূর্ণ এরিয়াকে তা অন্তর্ভুক্ত করে।
২. কা‘বা:
এটা হল আল্লাহর সম্মাণিত ঘর, মুসলিমদের কেবলা, আল্লাহ তাঁর খলীল ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-কে তা নির্মাণ ও উঁচু করার নির্দেশ দিয়েছেন, আর তিনি এই ঘরকে বিরাট বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যময় করেছেন।
আর এই ঘরের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন ইসলামের দু’টি রুকনকে; তাহলো সালাত ও হজ্ব। তাই এই ঘরের দিকে মুখ করে না দাঁড়ালে সালাত শুদ্ধ হবে না। এমনিভাবে এই ঘরের ত্বাওয়াফ না করা পর্যন্ত হজ্বকারীর হজ্ব কবুল হবে না।
“এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে এ গৃহের হজ্ব করা সেসব মানুষের অবশ্য কর্তব্য যারা শারিরীক ও আর্থিকভবে ঐ পথ অতিক্রমে সমর্থবান”। [সূরা আলে ইমরান-৯৭]
আল্লাহ্ তা‘আলা কাউকে কা‘বা ঘর ব্যতীত অন্য কোনো ঘরের ত্বাওয়াফের নির্দেশ দেন নি, আর তা প্রত্যেক হাজী এবং উমরাকারীর জন্য রুকন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। কা‘বা ঘরের চতুর্পার্শ্বে ত্বাওয়াফ করা ব্যতীত হজ্ব এবং উমরা শুদ্ধ হবে না।
আবার হজ্ব ওমরা ছাড়াও শরীয়ত এই ঘরের ত্বাওয়াফের ব্যাপারে উৎসাহিত করেছে এবং এতে বিরাট ফযিলত নির্ধারণ করেছে।
«مَنْ طَافَ سَبْعًا، فَهُوَ كَعِدْلِ رَقَبَةٍ»
“আব্দুল্লাহ্ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি (কাবা ঘর) সাতবার ত্বাওয়াফ করল সে যেন একটি ক্রীতদাস আযাদ করল”। (নাসাঈ: ২৯১৯)
এমনিভাবে শরীয়ত প্রত্যেক হাজ্বী সাহেবের জন্য যখন তিনি মক্কা ছেড়ে চলে যেতে চাইবেন তখন তার জন্য কা‘বা ঘরের ত্বাওয়াফকে ওয়াজিব করেছে।
অনুরূপভাবে কা‘বা ঘরের চতুর্পার্শ্বে ত্বাওয়াফকারীগণ যখনই চাইবে তখনই ত্বাওয়াফ করার অধিকার রাখে, তাদেরকে ত্বাওয়াফ করা থেকে বাধা দিতে নিষেধ করা হয়েছে।
কা‘বা ঘরের সম্মান ও তাঁর মর্যাদার কথা সুদৃঢ় করতে গিয়ে পায়খানা পেসাবের সময় তা সামনে বা পেছনে রাখা থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন।
“আবু আইউব আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যখন তোমরা পায়খানা পেসাব খানায় যাবে তখন কেবলাকে সামনে বা পেছনে রাখবে না। বরং পূর্ব বা পশ্চিম দিকে হয়ে বসবে [নোট: অর্থাৎ যে এলাকা থেকে কেবলা উত্তর বা দক্ষিণ দিকে তারা পূর্ব বা পশ্চিম দিকে মুখ করে বসবে আর যে এলাকা থেকে কেবলা পূর্ব বা পশ্চিম দিকে তারা উত্তর বা দক্ষিণ দিকে মুখ করে বসবে। (অনুবাদক)]।
এমনিভাবে কোনো কোনো হাদীসে কেবলার মর্যাদাকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে সেদিকে থুতু ফেলতে নিষেধ করা হয়েছে।
বস্তুত কা‘বা ঘরের সম্মান করতে হবে আল্লাহর দেওয়া বিধানাবলীর অনুসরণের মাধ্যমে যেমন: সেদিকে মুখ করে সালাত আদায় করা, ত্বাওয়াফ করা, তার যে অংশ স্পর্শ করা বিধিসম্মত করা হয়েছে তা স্পর্শ করা, অর্থাৎ হাজরে আসওয়াদ, রুকনুল ইয়ামানী, মুলতাযাম (দরজার) নিকট দো‘আ করা, যার বর্ণনা পরে আসছে।
এতদ্ব্যতীত যা কিছু করা হয় যেমন: কা‘বা ঘরের গিলাফ ধরে থাকা, তা স্পর্শ করা, গিলাফকে বরকতময় মনে করা, এগুলো সবই নিষিদ্ধ সম্মান এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তরীকা বিরোধী কাজ।
৩. হাজরে আসওয়াদ :
এটি মসজিদ হারামে একটি স্পষ্ট নিদর্শন, একাধিক হাদীস বর্ণিত হয়েছে যা প্রমাণ করে যে এটি জান্নাত থেকে আনিত একটি পাথর এবং তা দুধের চেয়েও সাদা ছিল, কিন্তু আদম সন্তানের পাপ এটিকে কালো করে দিয়েছে, তন্মধ্যে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহ আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদীস:
ইবনে ওমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট এক ব্যক্তি এসে বলল: হে আবু আব্দুর রহমান কি হয়েছে? আপনাকে শুধু এই দু’টি রুকন স্পর্শ করতে দেখি, তিনি বললেন, এ দু’টির স্পর্শে পাপসমূহ ঝরে যায়।”
এমনিভাবে তিনি বর্ণনা করেছেন যে, নিশ্চয়ই হাজরে আসওয়াদ তার স্পর্শকারীর ব্যাপারে সত্য সাক্ষী হবে।
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: অবশ্যই কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ এই রুকন (হাজরে আসওয়াদ) কে উত্থিত করবেন, তখন তার দু’টি চোখ থাকবে যা দিয়ে সে দেখতে পাবে এবং তার একটি জিহ্বা থাকবে যা দিয়ে সে কথা বলবে, এবং যে ব্যক্তি তা স্পর্শ করেছে তার ব্যাপারে সত্য সাক্ষী দিবে।” [ইবন মাজাহ, ২৯৪৪; মুসনাদে আহমাদ, ২২১৪]
ত্বাওয়াফকারীর জন্য সুন্নাত হল, প্রত্যেক ত্বাওয়াফের সময় শুরুতে হাজরে আসওয়াদ অতিক্রম করার সময় আল্লাহু আকবার বলা, এমনিভাবে তা চুম্বন করাও সুন্নাত যদি তা সম্ভব হয়, অন্যথায় তা হাতদিয়ে ধরে তার উপর হাত ঘুরাবে, অতঃপর স্বীয় হাতে চুম্বন করবে। অথবা তার কিছু অংশ ধরবে এবং যখন তার নিকট পৌঁছবে তখন চুম্বন করবে, আর যদি ধরা বা চুম্বন করা সম্ভব না হয় বা অন্যদেরকে কষ্ট দেওয়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে সেদিকে ইশারা করবে এবং এই সবগুলোর ক্ষেত্রে কেবল আল্লাহু আকবার বলবে।
আর তা করবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাতের অনুসরণের উদ্দেশ্যে এবং এই বিশ্বাস নিয়ে যে এই পাথরটি উপকার বা অপকার করার কোনো ক্ষমতা রাখে না, তাই ওমার ফারুক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু পাথর চুম্বন করার সময় বলেছিলেন:
“নিশ্চয়ই আমি অবগত আছি যে তুমি অপকারও করতে পার না আবার উপকারও করতে পার না, যদি আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে না দেখতাম যে তিনি তোমাকে চুম্বন করছেন, তাহলে আমিও তোমাকে চুম্বন করতাম না।” (বুখারী, ১৫৯৭; মুসলিম, ১২৭০)
৪. রুকনে ইয়ামানী:
সম্মানিত মক্কার যে সব সম্মানিত স্থান রয়েছে তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘রুকনে ইয়ামানী’। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে তা স্পর্শ করতেন এবং তা মাসেহ করতেন। যেমনটি হাদীসে গত হয়েছে যে, ‘‘নিশ্চয়ই রুকনে ইয়ামানী এবং রুকনে আসওয়াদ স্পর্শ করলে পাপসমূহ ঝরে যায়”।
আলেমগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন রুকনে ইয়ামানীকে উভয় হাতে কব্জি দিয়ে বা ডান হাত দিয়ে স্পর্শ করা মুস্তাহাব। আর তা হবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাতের অনুসরণে, তবে চুম্বন করার ব্যপারে অধিকাংশ আলেমগণ তা চুম্বন করা থেকে নিষেধ করেছেন।
হাজরে আসওয়াদ এবং রুকনে ইয়ামানীর ফযিলত সম্পর্কে ইমাম ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন: পৃথিবীতে এক মাত্র হাজরে আসওয়াদ এবং রুকনে ইয়ামানী ব্যতীত এমন কোনো স্থান নেই যা স্পর্শ করা এবং চুম্বন করা শরীয়তসম্মত এবং এর মাধ্যমে পাপ পঙ্কিলতা দূর হবে।
৫. হিজর:
আরবী ‘হ’ অক্ষরে যের দিয়ে কা‘বা ঘরের উত্তর পার্শ্বে অবস্থিত বৃত্তাকার দেয়ালকে বলা হয়, তা রুকনুশ্শামী এবং পশ্চিম পার্শ্বের মাঝে অবস্থিত, তা কা‘বা ঘরেরই একটি অংশ, কুরাইশদের অর্থনৈতিক অনটনের কারণে তারা তা ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ভিত্তির উপর পরিপূর্ণভাবে ভিত্তিস্থাপন করতে পারে নি। তবে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ভিত্তিকে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। তাই তাকে হিজর নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই হিজরের পরিমাণের কথাও স্পষ্ট করেছেন,
“আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: নিশ্চয়ই তোমার বংশধর কা‘বা ঘরের ভিত্তিস্থাপন করতে গিয়ে তা ছোট করে ফেলেছে, তারা যদি এই মাত্র কুফরী পরিত্যাগকারী না করত (নতুন মুসলিম না হতো) তাহলে তারা যা ছেড়েছে তা আমি পুনঃস্থাপন করতাম, যদি আমার পরে তোমার বংশধররা তা পুনঃনির্মাণ করতে চায় তাহলে আস আমি তোমাকে দেখাই যে তারা কতটুকু অংশ বাদ দিয়েছিল, তখন তিনি তাকে সাত গজ জায়গা দেখালেন”। (মুসলিম: ১৩৩৩)
এর ভিত্তিতে বলা যায় যে, যে ব্যক্তি হিজর (হাতীমে) সালাত আদায় করল সে যেন কা‘বা ঘরের ভিতরে সালাত আদায় করল।
৬. মুলতাযাম:
আরবী মীম অক্ষরে পেশ এবং যা অক্ষরে যবর দিয়ে, আর তা হলো হাজারে আসওয়াদ এবং কা‘বা ঘরের দরজার মধ্যবর্তী স্থান, এভাবেই স্থান নির্ধারণ করেছেন ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা। তিনি বলেছেন:
«مَا بَيْنَ الرُّكْنِ وَالْبَابِ الْمُلْتَزَمُ»
“মুলতাযাম হল রুকন (হাজরে আসওয়াদ) এবং দরজার মধ্যবর্তী স্থান।” (মুওয়াত্তা মালিক, ২৫১)
তাকে মোদ‘আ এবং মোতা‘আওয়াযও বলা হয়ে থাকে। (যার অর্থ ডাকার স্থান ও আশ্রয়ের স্থান)
ইমাম নববী রহ. বলেন: বর্ণিত হয়েছে যে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকন (হাজরে আসওয়াদ) এবং দরজার মধ্যবর্তী স্থানে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন, তিনি সেখানে তার বুক, উভয় হাত, উভয় কব্জি প্রশস্ত করে দো‘আ করেছেন, এই হাদীসটি দু’টি দুর্বল বর্ণনায় বর্ণিত হয়েছে, তবে যার ব্যাপারে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, তিনি তা করেছেন, তিনি হলেন ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা।
ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা রাহিমাল্লাহ্ বলেন: যদি কেউ পছন্দ করে যে সে মুলতাযামে, যা হাজরে আসওয়াদ এবং দরজার মাঝে অবস্থিত, সেখানে আসবে এবং ওখানে স্বীয় বুক, মুখ, উভয় হাত, উভয় কব্জি রেখে দো‘আ করবে এবং তার প্রয়োজনীয়তার কথা আল্লাহর নিকট পেশ করবে, বিদায় ত্বাওয়াফের পূর্বে সে তা করতে পারে। কেননা এই নিয়ম মেনে চলা বিদায় ত্বাওয়াফ বা অন্য কোনো সময়ে করার মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। আর সাহাবীগণ মক্কায় প্রবেশের সময় (ত্বাওয়াফ কুদুমে) তা করতেন।
৭.মাকামে ইবরাহীম:
এটি হল ঐ পাথর যার উপর আল্লাহর খলীল ইবরাহীম আলাইহিস সালাম দাঁড়িয়েছিলেন যখন কা‘বা ঘর ণির্মানের কাজ উপরে উঠছিল এবং নিচ থেকে পাথর নেওয়া তাঁর জন্য কষ্টকর হচ্ছিল, তখন তিনি এর উপর দাঁড়িয়ে কা‘বা ঘর নির্মাণ করছিলেন আর ইসমাঈল আলাইহিস সালাম তাঁকে পাথর এগিয়ে দিচ্ছিল। এটি ঐ পাথর যার উপর দাঁড়িয়ে তিনি আযান এবং হজ্বের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর কুরআনে স্পষ্ট নিদর্শনসমূহের মধ্যে মাকামে ইবরাহীমের কথাও উল্লেখ করেছেন, আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
“তার মধ্যে প্রকাশ্য নিদর্শনসমূহ বিদ্যমান রয়েছে, মাকামে ইবরাহীম উক্ত নিদর্শনসমূহের অন্যতম। আর যে ওর মধ্যে প্রবেশ করে সে নিরাপত্তা লাভ করবে”। [সূরা আলে ইমরান-৯৭]
ইমাম ত্বাবারী রহ. এ আয়াতের তাফসীরে বলেছেন: নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানব মন্ডলীর জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে তা ঐ ঘর যা মক্কায় অবস্থিত, ওটা বরকতময় এবং বিশ্ববাসীর জন্য পথ-প্রদর্শক। এর মধ্যে রয়েছে আল্লাহর অসীম ক্ষমতার স্পষ্ট নিদর্শন এবং তাঁর খলীল ইবরাহীম আলাইহিস সালামের স্মৃতি, তন্মধ্যে রয়েছে পাথরের গায়ে তাঁর খলীল ইবরাহীম আলাইহিস সালামের পদচিহ্ন যার উপর তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন।
আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদের জন্য আমাদের মধ্যে যারা কা‘বা ঘরের ত্বাওয়াফ করে তাদের জন্য মাকামে ইবরাহীমকে মোসাল্লা (সালাতের স্থান) হিসেবে গ্রহণ করার জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন,
“আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু ওমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন: আমি বললাম: ইয়া রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা আমাদেরও রবের খলীলের মাকাম (স্থান) আমরা কী এটাকে (মাকামে ইবরাহীমকে) মোসাল্লা (সালাতের স্থান হিসেবে গ্রহণ) করবনা? তখন আল্লাহ তা‘আলা অবতীর্ণ করলেন: {এবং তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থান হিসেবে গ্রহণ কর। [সূরা আল-বাকারা: ১২৫]}”। (বুখারী: ৪০২)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাকামে ইবরাহীমের পিছনে সালাত আদায় করেছেন, যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হজ্বের পদ্ধতি বর্ণনায় জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,
তারপর তিনি মাকামে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কাছে গেলেন এবং { وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى } [ البقرة : 125] ‘আর তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে মুসাল্লা বা সালাতের স্থান বানাও’ [সূরা আল-বাকারাহ: ১২৫] এটা পড়লেন আর বাইতুল্লাহ ও মাকামে ইবরাহীমকে সামনে রেখে সালাত আদায় করলেন”। (মুসলিম: ১২১৮)
তবে মাকামে ইবরাহীমকে চুম্বন বা স্পর্শ করা যাবে না কেননা তা বিদ‘আত।
ইবনে তাইমিয়্যা (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: “সুন্নাতের আলোকে আলেমগণ একমত হয়েছেন যে, মাকামে ইবরাহীমকে স্পর্শ করা বা চুম্বন করা বিধিসম্মত নয়।”
ইবনুল কাইয়্যেম যাদুল মা‘আদে বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা‘বা ঘরের ত্বাওয়াফ করতে গিয়ে সাত চক্কর দিলেন, এরমধ্যে তিন চক্করে রমল (দ্রুত হাটলেন) এবং চার চক্করে স্বাভাবিকভাবে হাটলেন, অতঃপর মাকামে ইবরাহীমের পেছনে দুই রাকাত সালাত আদায় করলেন অতঃপর তেলাওয়াত করলেন { وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى } [ البقرة : 125] এবং তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থান হিসাবে গ্রহণ কর” এই আয়াত তেলওয়াত করার তিনি স্বীয় স্বর উঁচু করলেন মানুষ তা শোনতে পেল।
তাই ত্বাওয়াফের পর মাকামে ইবরাহীমের পেছনে সালাত আদায় করা পছন্দনীয় সুন্নাত, যার পক্ষে তা আদায় করা সম্ভব হয়। অতএব মাকামে ইবরাহীমের বিধি সম্মত সম্মান করা হল তার পেছনে সালাত আদায় করা, যেমন করেছেন সৃষ্টির সরদার মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আর নিষিদ্ধ এবং বিদ‘আতী সম্মান করা হল তা স্পর্শ করা এবং চুম্বন করা। সালফে সালেহীনগণ তা থেকে নিষেধ করেছেন।
ইবনে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু একদল লোকের নিকট আসলেন যারা মাকামে ইবরাহীমকে স্পর্শ করত, অতঃপর তিনি বললেন: তোমরা তা স্পর্শ করতে নির্দেশিত হও নি, বরং তোমরা নির্দেশিত হয়েছ তার নিকট সালাত আদায় করতে।
ইবনে জুরাইজ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি ‘আতাকে জিজ্ঞেস করলাম যে, তুমি কি কাউকে দেখেছ যে, সে মাকামে ইবরাহীমকে চুম্বন করে বা স্পর্শ করে? সে বলল: গ্রহণযোগ্য কাউকে দেখি নি।
কাতাদা রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “এবং তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থান হিসেবে গ্রহণ কর।” মূলত এই আয়াত দ্বারা তারা নির্দেশিত হয়েছে, মাকামে ইবরাহীমের নিকট সালাত আদায় করার জন্য, তা স্পর্শ করার জন্য নির্দেশিত হয় নি। নিশ্চয়ই এই উম্মত তা করার জন্য দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়েছে যা করার জন্য পূর্ববর্তী উম্মত দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়েছিল।
৮. যমযম:
যমযম প্রসিদ্ধ বরকতময় কুয়া। যা মসজিদে হারামে হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথরের পূর্বে ও মাকামে ইবরাহীমের দক্ষিণে অবস্থিত। এ পানি বের হওয়ার ঘটনা প্রসিদ্ধ এবং তার ফযিলত সম্পর্কেও মানুষ অবগত। আল্লাহ এ পানির এমন অনেক বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করেছেন, যা দ্বারা সকল পানির উপর তার গুরুত্ব ও ফজিলত প্রমাণিত হয়। তার মধ্যে অন্যতম হলো:
(ক) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বক্ষ ইসরা ও মিরাজের ঘটনার পূর্বে এ পানি দ্বারা ধৌত করণ। (সহীহ বুখারী: ২/৪৯২)
(খ) শরীয়ত ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ পানি এই যমযম। ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘যমীনের উপরি ভাগের সর্বোত্তম পানি হল যমযমের পানি।” (তাবরানী: ১১/৯৮, মুনজেরীর তারগীব ও তারহীব: ২/২০৯)
(গ) খাদ্যের ন্যায় পানকারীকে পরিতৃপ্ত করে। সহীহ মুসলিমে বর্নিত হয়েছেন, আব্দুল্লাহ ইবন সামেত আবূ যর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে তাঁর ইসলাম গ্রহণের খবর বর্ণনা করেন। তাতে রয়েছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ যরকে বলেন: কখন থেকে এখানে রয়েছ? আবূ যর বলেন: আমি বললাম: ৩০ দিবা-রাত এখানে রয়েছি। তিনি বলেন: তোমার খাবার কি ছিল? আবূ যর বলেন: আমি বললাম: আমার যমযম পানি ব্যতীত আর কিছু ছিল না। পরিশেষে এমন মোটা হয়ে গেলাম যে পেটের চামড়া ভাজ হয়ে গেল। কলিজায় ক্ষুধার লেশমাত্র পেতাম না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: নিশ্চয়ই এ পানি বরকতময় নিশ্চয়ই তা খাদ্যের খাদ্য। (মুসলিম: ৪/১৯১৯)
ইবনুল আসীর বলেন: ‘‘অর্থাৎ: মানুষ যখন এপানি পান করবে তখন সে পরিতৃপ্ত হবে, যেমন খাবার গ্রহণকরে পরিতৃপ্ত হয়। (আন নেহায়া: ৩/১২৫), যাদুল মায়াদে ইমাম ইবনে কায়্যিম (রহিমাহুল্লাহর বাণী দ্র:)।
(ঘ) নিশ্চয়ই আল্লাহর হকুমে যমযম পানি হল রোগের আরোগ্য লাভের উপকরণ। যেমন: ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন: ‘‘যমীনের বুকে সর্বোত্তম পানি হল যমযমের পানি, তার মধ্যে রয়েছে খাদ্যের উপকরণ ও পীড়িতদের জন্য রয়েছে আরোগ্যের উপরকণ।” আল্লাহ তা‘আলা এ বরকতের পানিকে রক্ষা করেছেন। এটি আল্লাহর মহত্বের একটি স্পষ্ট প্রমাণ বা নিদর্শন । সুতরাং তা শতাব্দির পর শতাব্দিতেও বিলুপ্ত হয় নি। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের মাধ্যমে তা পরীক্ষা করা হয়েছিল, তাতে তার স্বচ্ছতা-বিশুদ্ধতা ও যাবতীয় দোষ ও মিশ্রণ হতে মুক্ত প্রমাণ হয়। (দেখুন: ইঞ্জিনিয়ার ইয়াহইয়াহ প্রণীত যমযম খাদ্য ও আরোগ্য: ১০৯ পৃষ্টা)
৯. সাফা-মারওয়া: কা‘বার পূর্বে মক্কার দু’টি পাহাড়ের নাম হল সাফা ও মারওয়া। হজ্ব ও উমরার সময় উভয় পাহাড়ের মাঝে সা‘ঈ করা হয়, যা তার রুকনের অন্তর্ভুক্ত।
“‘নিশ্চয় ‘সাফা’ ও ‘মারওয়া’ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্গত, অতএব যে ব্যক্তি এই গৃহের ‘হজ্ব’অথবা ‘উমরা’করে তার জন্যে এতদুভয়ের প্রদক্ষিণ করা দোষনীয় নয়, এবং কোনো ব্যক্তি স্বেচ্ছায় সৎকর্ম করলে আল্লাহ গুণগ্রাহী, সর্বজ্ঞাত”। (সূরা আল-বাকারা: ১৫৮)
এর তাফসীরে বলেন: আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত হল যে, তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য সাফা ও মারওয়াকে এমন একটি নিদর্শন ও ঐতিহ্যের প্রতীক বানিয়েছেন যে, তারা এর নিকট দো‘আ, যিকির বা সেখানে যে আমল তাদের জন্য ফরয করা হয়েছে তা পালনের মাধ্যমে তাঁর ইবাদত পূর্ণ করে থাকে। (তাফসীর তাবারী: ২/৭১০)
তার সম্মান মূলত: আল্লাহ তা‘আলা যে উভয়ের মাঝে সা‘ঈ করার বিধান প্রযোজ্য করেছেন তার মধ্যেই। পক্ষান্তরে উভয় পাহাড়কে স্পর্শ করা শরীয়তসম্মত নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তরীকা বিরোধী হওয়ার কারণে।
১০. মিনা, আরাফাত ও মুযদালিফা:
এ তিনটি স্থান হল সম্মানিত স্থান ও পবিত্র নিদর্শনাবলীর অন্তর্ভুক্ত। হজ্বে যার অভিমুখী হতে হয় ও কতিপয় বিধান সেখানে পালন করতে হয়।
মিনা: শুধু হজের দিনগুলোতে সেখানের সংশ্লিষ্ট আমলগুলি আদায় করা হয়। যেমন: রাত্রি যাপন, পাথর নিক্ষেপ ও পশু যবাই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
‘‘এবং নির্ধারিত (তাশরীকের) দিবসসমূহে আল্লাহর বিশেষ) যিকির কর: অতঃপর কেউ যদি দু’দিনের মধ্যে (মক্কায় ফিরে যেতে) তাড়াতাড়ি করে তবে তার জন্যে কোনো পাপ নেই, পক্ষান্তরে কেউ যদি বিলম্ব করে তবে তার জন্যেও পাপ নেই এমনটি মুত্তাকীর জন্য এবং তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর ও জেনে রেখো যে, অবশ্যই তোমাদের সকলকে তাঁরই নিকট সমবেত করা হবে।” [সূরা আল-বাকারা:২০৩]
মিনা নামকরণ: এজন্যই মিনা বলা হয় যে, সেখানে রক্ত প্রবাহিত করা হয়।
সীমানা: আকাবা হতে ওয়াদী মুহাসসার পর্যন্ত বিস্তৃত। (দেখুন: মু‘জামুল বুলদান: ৫/১৯৮-১৯৯ পৃষ্ঠা)
আরাফাত: দো‘আ ও যিকিরের জন্য যিলহজ্ব মাসের নবম তারিখ আরাফা দিবসেই শুধু সেখানে যেতে হয়। ‘‘ইলাল” (ইলাল নামটি এ পাহাড়ের বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত নাম। আর ‘‘জাবালে রহমত” নামকরণটি আসলে ভুল। দেখুন: আল্লামা বকর আবূ যায়েদ প্রণীত: ‘‘তাহকীকাত শরয়িয়্যাহ ওয়া তারীখিয়্যাহ: ১৬-২৯ পৃষ্টা) পাহাড়ের পাথরগুলির পাদদেশে সম্ভব হলে হাজী সাহেবানগণ অবস্থান করবেন, তা না হলে সমস্ত আরাফাই অবস্থান স্থল। যেমনভাবে অনেক হাজী পাহাড়টিতে আরোহণ করে থাকে, তার কোনো বিধিবদ্ধতা নেই। পাহাড় স্পর্শ করা বা তার বরকত গ্রহণ করাও শরীয়তসম্মত নয়। আরাফাতের বর্ণনা আল্লাহ তা‘আলার নিম্নের বাণীতে হয়েছে:
“তোমরা স্বীয় প্রতিপালকের অনুগ্রহ লভের চেষ্টা করলে তাতে তোমাদের পক্ষে কোনো অপরাধ নেই; অতঃপর যখন তোমরা আরাফাত হতে প্রত্যাবর্তিত হও তখন পবিত্র (মাশয়ারে হারাম) স্মৃতি-স্থানের নিকট আল্লাহকে স্মরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যেরূপ নির্দেশ দিয়েছেন তদ্রূপ তাঁকে স্মরণ করো এবং নিশ্চয় তোমরা এর পূর্বে বিভ্রান্তদের অন্তর্গত ছিলে।” [সূরা আল-বাকারা: ১৯৮]
ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ আয়েশারাদিয়াল্লাহু ‘আনহা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: কুরাইশ ও যারা তাদের দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত ছিল, মুযদালিফায় তারা অবস্থান নিত ও তার নামকরণ করেছিল ‘‘আলহুমুস” এবং সমস্ত আরব ‘আরাফায় অবস্থান করত। অতঃপর যখন ইসলামের আগমন ঘটল, তখন আল্লাহ্ তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুকুম করলেন: ‘আরাফায় এসে অবস্থান নেওয়ার জন্য। এরপর সেখান থেকে প্রস্থান করার জন্য। তার বর্ণনা যেমন: আল্লাহর বাণীতে এসেছে:
“অতঃপর যেখান থেকে লোক প্রত্যাবর্তন করে, তোমরাও সেখান থেকে প্রত্যাবর্তন কর এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর; নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়।” [সূরা আল-বাকারা: ১৯৯, বুখারী: ৮/১৮৬]
মুযদালিফা: আরাফা হতে প্রত্যাবর্তন কুরবানীর পূর্বের রাতে সেখানের মাশ‘য়ারে হারামে রাত্রি যাপন এবং আল্লাহর যিকির ও দো‘আর উদ্দেশ্যে আগমন করা হয়। মুযদালিফার মাঝামাঝি এখানে একটি পাহাড় ছিল যা বর্তমান যুগে প্রশস্ততার প্রয়োজনে বিলুপ্ত করে সেখানে মসিজিদ বানান হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
“তোমরা স্বীয় প্রতিপালকের অনুগ্রহ লাভের চেষ্টা করলে তাতে তোমাদের পক্ষে কোনো অপরাধ নেই; অতঃপর যখন তোমরা আরাফাত হতে প্রত্যাবর্তিত হও তখন পবিত্র (মাশ‘য়ারে হারাম) স্মৃতি-স্থানের নিকট আল্লাহকে স্মরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যেরূপ নির্দেশ দিয়েছেন তদ্রূপ তাঁকে স্মরণ করো এবং নিশ্চয় তোমরা এর পূর্বে বিভ্রান্তদের অন্তর্গত ছিলে।” [সূরা আল-বাকারা: ১৯৮]
সীমানা: মুযদালিফার সীমানা ওয়াদী মুহাসসার হতে শুরু করে মা’যিমা ই আরাফার মাঝামাঝি। অবশ্য এর দু’সীমা মুযদালিফার অন্তর্ভুক্ত নয়; তবে মুযদালিফা সম্পূর্ণটাই হারামের অন্তর্ভুক্ত।” (মু‘জামুল বুলদান: ৫/১৯৮)
উক্ত তিনটি স্থানের বর্ণনা বিভিন্ন সহীহ হাদীসে উল্লেখ রয়েছে। যেমন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী: “আরাফার সম্পূর্ণটিই অবস্থান স্থল, মিনার সম্পূর্ণটাই যবাইর স্থান, সম্পূর্ণ মুযদালিফা অবস্থান স্থল ও মক্কার সম্পূর্ণ রাস্তাই যবাইর স্থান। (আবু দাঊদ: ১৯৩৬, ইবনে মাজাহ: ৩০৪৮)
এই তিনটি স্থানের ফযিলত ও এগুলিকে আল্লাহর শরীয়ত মোতাবেক ইবাদতের জন্য খাস করা শরীয়তের সঠিক দলীল-প্রমাণ দ্বারা সাব্যস্ত। এগুলি দো‘আ কবূলের উপযুক্ত স্থান।
ইমাম শাওকানী (রহ.) এসব দো‘আর ফযিলত সম্পর্কে বলেন: ‘‘এসব বরকতময় স্থানের অতিরিক্ত কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা সেই সব স্থানের সম্মান ও বরকত থাকার কারণে। আর তার বরকতে ধন্য হবেন যাঁরা তার মধ্যে যথাবিহিত আমল করবেন। আল্লাহ তায়ালার রয়েছে অফুরন্ত অনুগ্রহ ও মহা অবদান। যেমন একটি হাদীসে এসেছে: তাঁরা এমন জাতি যে, তাঁদের সাথে অবস্থানকারীও বঞ্চিত হয় না। অর্থাৎ ঐ জাতির সাথে অবস্থানকারীদেরকেও তাদের অন্তর্ভুক্ত করে দেওয়া হয়েছে, অথচ তারা তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। বরং সেখানে অবস্থানকারীদের বরকত তাদের দিকে এসে পড়েছে যদিও তারা এদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। সুতরাং এটি কোনো দূরের বিষয় নয় যে বরকতের স্থানগুলি এমন হতে পারে: যার ফলে ওখানে আল্লাহকে আহ্বানকারী আল্লাহ প্রদত্ত সেখানের বরকতের অন্তর্ভুক্ত হবে; যে কারণে সে এক্ষেত্রে তার দো‘আ কবূল না হওয়া থেকে বঞ্চিত হবে না।” (শাওকানীর তুহফাতুয যাকেরীন: ৪৪ পৃষ্ঠা)
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/783/4
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।