HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
সালাত আদায়ের জন্য আসো
লেখকঃ খালেদ আবূ সালেহ
بسم الله الرحمن الرحيم
সমস্ত প্রশংসা সকল সৃষ্টির রব আল্লাহর জন্য আর আল্লাহ সালাত, সালাম ও বরকত নাযিল করুন প্রথম থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত সকলের নেতা, সর্বশেষ নবী ও রাসূল, আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সঙ্গী-সাথীদের সকলের প্রতি।
অতঃপর...
ইসলামে সালাতের রয়েছে মহান মর্যাদা, বিরাট কদর, বিশাল গুরুত্ব ও উচ্চ মর্যাদা। কারণ, ইসলামে সালাতের বিষয়টি ঠিক তেমনি, দেহের মধ্যে মাথার মর্যাদা যেমনি। আর যেমনিভাবে মাথা ছাড়া শরীরের অবস্থান কল্পনা করা যায় না, ঠিক তেমনিভাবে সালাত ছাড়া ইসলামের অবস্থান কল্পনা করা যায় না।
সমস্ত প্রশংসা সকল সৃষ্টির রব আল্লাহর জন্য আর আল্লাহ সালাত, সালাম ও বরকত নাযিল করুন প্রথম থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত সকলের নেতা, সর্বশেষ নবী ও রাসূল, আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সঙ্গী-সাথীদের সকলের প্রতি।
অতঃপর...
ইসলামে সালাতের রয়েছে মহান মর্যাদা, বিরাট কদর, বিশাল গুরুত্ব ও উচ্চ মর্যাদা। কারণ, ইসলামে সালাতের বিষয়টি ঠিক তেমনি, দেহের মধ্যে মাথার মর্যাদা যেমনি। আর যেমনিভাবে মাথা ছাড়া শরীরের অবস্থান কল্পনা করা যায় না, ঠিক তেমনিভাবে সালাত ছাড়া ইসলামের অবস্থান কল্পনা করা যায় না।
১. আল্লাহ তা‘আলা সালাতকে মি‘রাজের রজনীতে তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর ফরয করেছেন, তখন তিনি আকাশে অবস্থান করছিলেন। এটা সালাতের গুরুত্ব, মর্যাদা ও মহত্বের প্রমাণ বহনকারী অন্যতম দলীল। কারণ, অপরাপর সকল ইবাদাতের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা যখন নির্দেশনা নাযিল করেছেন তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথিবীতে অবস্থান করছিলেন।
২. সালাত হলো একমাত্র রুকন, যা প্রতিদিন পাঁচবার আদায় করতে হয় এবং যা হায়েয ও নিফাসগ্রস্ত নারী ব্যতীত অন্য কোনো অবস্থাতেই কারও জন্য শিথিল বা প্রত্যাহার হয় না।
৩. আর সালাত হলো সর্বোত্তম আমল, সবচেয়ে সুন্দর কাজ এবং মহান আল্লাহর সবচেয়ে নৈকট্যপূর্ণ আনুগত্য। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«أفضَلُ الْأَعْمَالِ الصَّلَاةُ عَلَى وَقْتِهَا» .
“সর্বোত্তম আমল হলো সময় মতো সালাত আদায় করা।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫০৪ ও ৫৬২৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬৪]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
«اسْتَقِيمُوا وَلَنْ تُحْصُوا ، وَاعْلَمُوا أَنَّ خَيْرَ أَعْمَالِكُمُ الصَّلاةُ ، وَلَنْ يُحَافِظَ عَلَى الْوُضُوءِ إِلا مُؤْمِنٌ» .
“তোমরা সঠিকভাবে চল তবে কখনও তোমরা যথার্থভাবে সে হক্ব আদায় করতে সমর্থ হবে না। আর জেনে রাখ, তোমাদের শ্রেষ্ঠ আমল হলো সালাত। আর মুমিনই কেবল সদা অযুর ওপর থাকতে সচেষ্ট থাকে।” [আহমাদ ও হাকেম। আর আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
৪. আর সালাত হলো দীনের খুঁটি, বিশ্বাসের ভিত্তি এবং তাওহীদপন্থী তথা আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী ব্যক্তিবর্গের চোখের সান্ত্বনা বা প্রিয়বস্তু। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« رأس الأمر الإسلام , و عموده الصلاة , و ذروة سنامه الجهاد في سبيل الله» .
“প্রধান বিষয় হলো ইসলাম, আর তার খুঁটি হলো সালাত এবং তার সর্বোচ্চ চূড়া হলো জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ (আল্লাহর পথে সংগ্রাম করা)।” [আহমদ ও তিরমিযী; আর আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
৫. আর সালাত হলো ইসলামের প্রমাণ, ঈমানের নিদর্শন এবং মানব জীবনের সুরক্ষা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿فَإِن تَابُواْ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُاْ ٱلزَّكَوٰةَ فَإِخۡوَٰنُكُمۡ فِي ٱلدِّينِۗ﴾ [ التوبة : ١١ ]
“অতএব তারা যদি তাওবা করে, সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয়, তবে দীনের মধ্যে তারা তোমাদের ভাই।” [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১১]
৬. আর সালাত হলো নিফাকী থেকে মুক্ত থাকা এবং সত্য ও শান্তির ঠিকানা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«مَنْ صَلَّى لِلَّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا فِي جَمَاعَةٍ ، يُدْرِكُ التَّكْبِيرَةَ الْأُولَى، كُتِبَتْ لَهُ بَرَاءَتَانِ : بَرَاءَةٌ مِنْ النَّارِ ، وَبَرَاءَةٌ مِنْ النِّفَاقِ» .
“যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে চল্লিশ দিন প্রথম তাকবীরের সাথে জামা‘আতে সালাত আদায় করবে, তার জন্য সুনিশ্চিতভাবে দু’টি মুক্তির ব্যবস্থা করা হবে: একটি হলো জাহান্নাম থেকে মুক্তি, আর অপরটি হলো নিফাকী চরিত্রের কলঙ্ক থেকে মুক্তি।” [আহমাদ। আর আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
৭. সালাত হলো একটি উত্তম বিষয়, শরী‘আতের সবচেয়ে লাভজনক বিধান এবং ভয় ও বিনয়ের জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় আনুগত্য। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«الصَّلاةُ خَيْر مَوْضُوع ، فَمَنِ استطاعَ أن يستكثرَ فليستكثرْ» .
“সালাত একটি উত্তম বিষয়। সুতরাং যে ব্যক্তি বেশি বেশি সালাত আদায় করতে সক্ষম, সে যেন বেশি বেশি সালাত আদায় করে।” [আহমাদ। আর আলবানী হাদীসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।]
৮. আর সালাত হলো দয়াময় করুণাময় আল্লাহর নির্দেশ, আদনান বংশীয় নবীর জোরালো অসীয়ত এবং মুসলিম ও মুমিনগণের বিশেষ প্রতীক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿حَٰفِظُواْ عَلَى ٱلصَّلَوَٰتِ وَٱلصَّلَوٰةِ ٱلۡوُسۡطَىٰ وَقُومُواْ لِلَّهِ قَٰنِتِينَ ٢٣٨﴾ [ البقرة : ٢٣٨ ]
“তোমরা সালাতের প্রতি যত্নবান হবে, বিশেষত মধ্যবর্তী সালাতের এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে তোমরা দাঁড়াবে বিনীতভাবে।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৩৮]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿وَأَقِمِ ٱلصَّلَوٰةَ لِذِكۡرِيٓ ١٤﴾ [ طه : ١٤ ]
“আর আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম করুন।” [সূরা ত্বহা, আয়াত: ১৪]
৯. আর সালাত হলো মর্যাদা বৃদ্ধিকারী, মন্দ দূরকারী এবং গুনাহ ও পাপরাশি মোচনকারী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«أَرَأَيْتُمْ لَوْ أَنَّ نَهْرًا بِبَابِ أَحَدِكُمْ يَغْتَسِلُ مِنْهُ كُلَّ يَوْمٍ خَمْسَ مَرَّاتٍ هَلْ يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَىْءٌ ؟ » . قَالُوا : لاَ يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَىْءٌ . قَالَ : « فَذَلِكَ مَثَلُ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ يَمْحُو اللَّهُ بِهِنَّ الْخَطَايَا» .
“তোমরা কি মনে কর, যদি তোমাদের কারো দরজায় একটি পানির নহর থাকে, যাতে সে দৈনিক পাঁচবার গোসল করে, তার শরীরে কি কোনো ময়লা থাকতে পারে? তাঁরা (সাহাবীগণ) উত্তরে বললেন: না, তার শরীরে কোনো ময়লা থাকতে পারে না। তখন তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন: পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের উদাহরণ এরকমই, এগুলোর বিনিময়ে আল্লাহ তা‘আলা তার গুনাহরাশি মাফ করে দেন।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৫৪]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
«مَا مِنِ امْرِئٍ مُسْلِمٍ تَحْضُرُهُ صَلاَةٌ مَكْتُوبَةٌ فَيُحْسِنُ وُضُوءَهَا وَخُشُوعَهَا وَرُكُوعَهَا إِلاَّ كَانَتْ كَفَّارَةً لِمَا قَبْلَهَا مِنَ الذُّنُوبِ , مَا لَمْ يُؤْتِ كَبِيرَةً , وَذَلِكَ الدَّهْرَ كُلَّهُ» .
“কোনো মুসলিম ব্যক্তির যখন কোনো ফরয সালাতের ওয়াক্ত হয়, আর সে সালাতের অযুকে উত্তমরূপে আদায় করে এবং সালাতের বিনয় (খুশূ) ও রুকূ সুন্দরভাবে আদায় করে, তাহলে তার এ সালাত তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহের কাফফারা হয়ে যাবে, যদি না সে কবীরা গুনাহে লিপ্ত হয়। আর এ অবস্থা সর্বযুগেই বিদ্যমান।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৬৫]
১০. আর সালাত জাহান্নাম থেকে নিরাপত্তাদানকারী, বিপদ-আপদ থেকে রক্ষাকারী, মহা শক্তিধর আল্লাহর শাস্তির হাত থেকে মুক্তিদাতা এবং সৎ ও ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিবর্গের সাথে জান্নাতের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে সফলতা দানকারী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«لَنْ يَلِجَ النَّارَ أَحَدٌ صَلَّى قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا » يَعْنِى الْفَجْرَ وَالْعَصْرَ» .
“সে ব্যক্তি কখনও জাহান্নামে প্রবেশ করবে না, যে ব্যক্তি সূর্য উদয়ের পূর্বে এবং সূর্যাস্তের পূর্বে সালাত আদায় করেছে অর্থাৎ ফজর ও আসরের সালাত আদায় করেছে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৪৬৮]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
مَنْ صَلَّى الصُّبْحَ فَهُوَ فِى ذِمَّةِ اللَّهِ، فَانْظُرْ يَا ابْنَ آدَمَ، لا يَطْلُبَنَّكُمُ اللَّهُ بِشَيْءٍ مِنْ ذِمَّتِهِ» .
“যে ব্যক্তি ফজরের সালাত আদায় করেছে, সে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার দায়িত্বে বা তত্ত্বাবধানে চলে গিয়েছে। সুতরাং হে আদম সন্তান! তুমি লক্ষ্য রাখবে, আল্লাহ যেন তাঁর আপন দায়িত্বের কোনো বিষয় সম্পর্কে তোমাদের বিপক্ষে বাদী না হন।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫২৫]
১১. আর সালাত হচ্ছে সাহায্য ও বিজয়ের ঠিকানা এবং স্বীকৃতি ও সফলতার সনদ, আর সকাল ও সন্ধ্যার আমলসমূহের মধ্য থেকে বান্দাকে যে বিষয়ে সর্বপ্রথম জবাবদিহি করতে হবে তা হলো সালাত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿قَدۡ أَفۡلَحَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ١ ٱلَّذِينَ هُمۡ فِي صَلَاتِهِمۡ خَٰشِعُونَ ٢﴾ [ المؤمنون : ١، ٢ ]
“অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মুমিনগণ, যারা তাদের সালাতে ভয়ে অবনত।” [সূরা আল-মুমিনূন, আয়াত: ১-২]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿وَٱلَّذِينَ هُمۡ عَلَىٰ صَلَوَٰتِهِمۡ يُحَافِظُونَ ٩ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡوَٰرِثُونَ ١٠ ٱلَّذِينَ يَرِثُونَ ٱلۡفِرۡدَوۡسَ هُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ ١١﴾ [ المؤمنون : ٩، ١١ ]
“আর যারা নিজেদের সালাতে থাকে যত্নবান, তারাই হবে অধিকারী, যারা অধিকারী হবে ফিরদাউসের, যাতে তারা হবে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী।” [সূরা আল-মুমিনূন, আয়াত: ৯-১১]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«إِنَّمَا يَنْصُرُ اللَّهُ هَذِهِ الْأُمَّةَ بِضَعِيفِهَا : بِدَعْوَتِهِمْ، وَصَلَاتِهِمْ، وَإِخْلَاصِهِمْ» .
“আল্লাহ তা‘আলা তো এ উম্মাতকে শুধু তাদের দুর্বল মুহূর্তে তথা তাদের দো‘আ, সালাত ও একনিষ্ঠতার বিনিময়ে সাহায্য করেন।” [নাসাঈ, হাদীস নং ৩১৭৮। আর আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«صَلاةٌ فِي إِثْرِ صَلاةٍ لا لَغْوَ بَيْنَهُمَا ، كِتَابٌ فِي عِلِّيِّينَ» .
“এক সালাতের পর আরেক সালাত -এ দুই সালাতের মাঝখানে কোনো অনর্থক কথা বা কাজ না হলে বিষয়টি ‘ইল্লীনে লিপিবদ্ধ হয়ে যায়।” [আবূ দাউদ, হাদীস নং ১২৯০। আর আলবানী হাদীসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«أول ما يحاسب عليه العبد يوم القيامة الصلاةُ ، فإن صلُحتْ صلح سائر عمله ، وإن فسدت فسد سائر عمله» .
“কিয়ামতের দিনে বান্দাকে যে আমলের ব্যাপারে সর্বপ্রথম জবাবদিহি করতে হবে তা হলো সালাত। সুতরাং সালাতের বিষয়টি যদি সঠিক হয়, তাহলে তার সকল আমল সঠিক বলে গণ্য হবে, আর যদি সালাতের বিষয়টি বেঠিক বা বিপর্যস্ত হয়, তাহলো তার সকল আমল বাতিল বলে গণ্য হবে।” [ত্ববারানী ও দ্বিয়া। আর আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
১২. আর সালাত হচ্ছে চলার পথের পাথেয়, আত্মার শান্তি, অঙ্গ-প্রতঙ্গসমূহের প্রশান্তি, অন্তরের আলো, মনের পবিত্রতা, হৃদয়ের নিরাপত্তা এবং মুক্তির সনদ।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿مُّحَمَّدٞ رَّسُولُ ٱللَّهِۚ وَٱلَّذِينَ مَعَهُۥٓ أَشِدَّآءُ عَلَى ٱلۡكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَيۡنَهُمۡۖ تَرَىٰهُمۡ رُكَّعٗا سُجَّدٗا يَبۡتَغُونَ فَضۡلٗا مِّنَ ٱللَّهِ وَرِضۡوَٰنٗاۖ سِيمَاهُمۡ فِي وُجُوهِهِم مِّنۡ أَثَرِ ٱلسُّجُودِۚ﴾ [ الفتح : ٢٩ ]
“মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল আর তাঁর সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর, তাদের পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি তাদেরকে রুকূ ও সাজদাহ’য় অবনত দেখবেন। তাদের লক্ষণ তাদের মুখমণ্ডলে সাজদাহর প্রভাবে পরিস্ফুট।” [সূরা আল-ফাতহ, আয়াত: ২৯]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَلَقَدۡ نَعۡلَمُ أَنَّكَ يَضِيقُ صَدۡرُكَ بِمَا يَقُولُونَ ٩٧﴾ [ الحجر : ٩٧ ]
“আর অবশ্যই আমরা জানি, তারা যা বলে তাতে আপনার অন্তর সংকুচিত হয়।” [সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৯৭]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«يَا بِلَالُ ! أَقِمْ الصَّلَاةَ أَرِحْنَا بِهَا» .
“হে বেলাল! সালাত কায়েম কর (অর্থাৎ সালাতের জন্য ইকামত দাও), আমাদেরকে তার দ্বারা আরাম দাও।” [আহমাদ ও আবূ দাউদ। আর আলবানী হাদীসটিকে ‘সহীহ’ বলেছেন।]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
«الصَّلاَةُ نُورٌ» .
“সালাত হচ্ছে নূর বা আলো।” [সহীহ মুসলিম।]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
«مَنْ حَافَظَ عَلَيْ الصَّلاَةِ كَانَتْ لَهُ نُورًا وَبُرْهَانًا وَنَجَاةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَمَنْ لَمْ يُحَافِظْ عَلَيْهَا لَمْ يَكُنْ لَهُ نُورٌ وَلاَ بُرْهَانٌ وَلاَ نَجَاةٌ، وَكَانَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ قَارونَ و فِرْعَوْنَ وَهَامَانَ وَأُبَىِّ بْنِ خَلَفٍ » .
“যে ব্যক্তি সালাতের ব্যাপারে যত্নবান হবে, কিয়ামতের দিন তা তার জন্য আলো, (আনুগত্যের) দলীল ও (শাস্তি থেকে) মুক্তির কারণ হবে। আর যে ব্যক্তি তার ব্যাপারে যত্নবান হবে না, কিয়ামতের দিন তার জন্য তা আলো হবে না, হবে না দলীল এবং না হবে মুক্তির কারণ; বরং কিয়ামতের দিনে সে সমবেত হবে কারূন, ফির‘আউন, হামান ও উবাই ইবন খালফের (মত আল্লাহর শত্রুদের) সাথে।” [ইমাম আহমাদ রহ. হাদীসটি উৎকৃষ্ট সনদে বর্ণনা করেছেন, যেমনটি আল-মুনযিরী বলেছেন।]
১৩. আর সালাত হচ্ছে শয়তানের ক্রোধ এবং কাফির ও আল্লাহদ্রোহীদের জন্য হতাশার কারণ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ إِنَّمَا يُرِيدُ ٱلشَّيۡطَٰنُ أَن يُوقِعَ بَيۡنَكُمُ ٱلۡعَدَٰوَةَ وَٱلۡبَغۡضَآءَ فِي ٱلۡخَمۡرِ وَٱلۡمَيۡسِرِ وَيَصُدَّكُمۡ عَن ذِكۡرِ ٱللَّهِ وَعَنِ ٱلصَّلَوٰةِۖ فَهَلۡ أَنتُم مُّنتَهُونَ ٩١ ﴾ [ المائدة : ٩١ ]
“শয়তান তো চায় মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে এবং তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণে ও সালাতে বাধা দিতে। তবে কি তোমরা বিরত হবে না?” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৯১]
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« إِذَا قَرَأَ ابْنُ آدَمَ السَّجْدَةَ فَسَجَدَ , اعْتَزَلَ الشَّيْطَانُ يَبْكِى يَقُولُ : يَا وَيْلَهُ ! أُمِرَ ابْنُ آدَمَ بِالسُّجُودِ فَسَجَدَ فَلَهُ الْجَنَّةُ وَأُمِرْتُ بِالسُّجُودِ , فَأَبَيْتُ فَلِىَ النَّارُ» .
“যখন আদম সন্তান সাজদাহ’র আয়াত পাঠ করে এবং সাজদাহ’য় অবনত হয়, তখন শয়তান কাঁদতে কাঁদতে দূরে সরে যায় এবং বলতে থাকে, হায় আফসোস! বনী আদমকে সাজদাহ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তারপর সে সাজদাহ করেছে এবং জান্নাতের অধিকারী হয়েছে, আর আমাকে সাজদাহ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তারপর আমি সাজদাহ করতে অস্বীকার করেছি, ফলে আমি জাহান্নামের অধিকারী হয়েছি।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৪]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
«مَا حَسَدَتْكُمْ الْيَهُودُ عَلَى شَيْءٍ مَا حَسَدَتْكُمْ عَلَى السَّلَامِ وَالتَّأْمِينِ» .
“ইয়াহূদীগণ সালাম ও ‘আমীন’ বলার ব্যাপারে যেভাবে তোমাদেরকে ঈর্ষা করে, সেভাবে আর কোনো কিছুর ব্যাপারে তোমাদের প্রতি তারা ঈর্ষা করে না।” [ইমাম আহমাদ রহ. হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
১৪. আর সালাত হচ্ছে কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ, মহান আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা এবং ‘তাসবীহ’ (সুবহানাল্লাহ), ‘তাহমীদ’ (আল-হামদুলিল্লাহ) ও তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু)-এর ভাণ্ডার। মুগীরা ইবন শু‘বা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:
«قام النبيُّ صلى الله عليه وسلم حتى تورَّمت قدماه، فقيل له : قد غفرَ الله لك ما تقدَّمَ من ذنبكَ وما تأخَّر؟ قال : أفلا أكونُ عبدا شكورا ؟» .
“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের বেলায় এত বেশি ‘ইবাদাত করতেন যে, শেষ পর্যন্ত তাঁর কদম মোবারক ফুলে ফেটে যেত। অতঃপর তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলা হত ‘আল্লাহ তা‘আলা তো আপনার অতীত ও ভবিষ্যতের গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন, (তাহলে আপনি এরূপ করছেন কেন)? তখন তিনি বললেন: ‘আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হব না?’।” [বুখারী, হাদীস নং ৪৫৫৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৩০৩]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«يُصْبحُ عَلَى كُلِّ سُلاَمَى مِنْ أَحَدِكُمْ صَدَقةٌ : فَكُلُّ تَسْبيحَةٍ صَدَقةٌ، وَكُلُّ تَحْميدَةٍ صَدَقَةٌ ، وَكُلُّ تَهْلِيلةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَكْبيرَةٍ صَدَقَةٌ، وأمْرٌ بالمَعْرُوفِ صَدَقَةٌ، وَنَهْيٌ عَنِ المُنْكَرِ صَدَقَةٌ، وَيجْزئُ مِنْ ذَلِكَ رَكْعَتَانِ يَرْكَعُهُمَا مِنَ الضُّحَى» .
“তোমাদের যে কোনো লোকেরই শরীরের প্রত্যেকটি সংযোগস্থলের ওপর সাদকা (ওয়াজিব) হয়। সুতরাং ‘সুবহানাল্লাহ’, ‘আল-হামদুলিল্লাহ’, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ ও আল্লাহু আকবার -এসবের প্রত্যেকটি একটি করে সাদকা। আর সৎ কাজের আদেশ দেওয়া ও অসৎ কাজে নিষেধ করাও সাদকা। আর এসব ‘চাশত’-এর (দুপুরের পূর্বের) দুই রাকাত সালাত আদায় করলে পূরণ হয়ে যায়।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭০৪]
১৫. আর সালাত কু-প্রবৃত্তি থেকে মুক্তি দেয়, যাবতীয় অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে এবং যাবতীয় রোগ-ব্যাধি ও দুঃখ-কষ্ট দূর করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ إِنَّ ٱلصَّلَوٰةَ تَنۡهَىٰ عَنِ ٱلۡفَحۡشَآءِ وَٱلۡمُنكَرِۗ ﴾ [ العنكبوت : ٤٥ ]
“নিশ্চয় সালাত বিরত রাখে অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে।” [সূরা আল-‘আনকাবুত, আয়াত: ৪৫]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«عَلَيْكُمْ بِقِيَامِ اللَّيْلِ ، فَإِنَّهُ دَأْبُ الصَّالِحِينَ قَبْلَكُمْ، وَقُرْبَةٌ إِلَى اللَّهِ تعالى، وَمَنْهَاةٌ عَنِ الإِثْم، وَتَكْفِيرٌ لِلسَّيِّئَاتِ، وَمَطْرَدَةٌ لِلدَّاءِ عَنِ الْجَسَدِ» .
“তোমরা রাত জেগে নফল সালাত আদায় কর। কারণ, তা তোমাদের পূর্ববর্তী নেক বান্দাগণের অভ্যাস, আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য লাভের উপায়, গুনাহের কাজ থেকে বাধা প্রদানকারী, পাপ মোচনকারী এবং শরীর থেকে রোগ-ব্যাধি দূরকারী।” [আহমাদ ও তিরমিযী; আর আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
২. সালাত হলো একমাত্র রুকন, যা প্রতিদিন পাঁচবার আদায় করতে হয় এবং যা হায়েয ও নিফাসগ্রস্ত নারী ব্যতীত অন্য কোনো অবস্থাতেই কারও জন্য শিথিল বা প্রত্যাহার হয় না।
৩. আর সালাত হলো সর্বোত্তম আমল, সবচেয়ে সুন্দর কাজ এবং মহান আল্লাহর সবচেয়ে নৈকট্যপূর্ণ আনুগত্য। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«أفضَلُ الْأَعْمَالِ الصَّلَاةُ عَلَى وَقْتِهَا» .
“সর্বোত্তম আমল হলো সময় মতো সালাত আদায় করা।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫০৪ ও ৫৬২৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬৪]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
«اسْتَقِيمُوا وَلَنْ تُحْصُوا ، وَاعْلَمُوا أَنَّ خَيْرَ أَعْمَالِكُمُ الصَّلاةُ ، وَلَنْ يُحَافِظَ عَلَى الْوُضُوءِ إِلا مُؤْمِنٌ» .
“তোমরা সঠিকভাবে চল তবে কখনও তোমরা যথার্থভাবে সে হক্ব আদায় করতে সমর্থ হবে না। আর জেনে রাখ, তোমাদের শ্রেষ্ঠ আমল হলো সালাত। আর মুমিনই কেবল সদা অযুর ওপর থাকতে সচেষ্ট থাকে।” [আহমাদ ও হাকেম। আর আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
৪. আর সালাত হলো দীনের খুঁটি, বিশ্বাসের ভিত্তি এবং তাওহীদপন্থী তথা আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী ব্যক্তিবর্গের চোখের সান্ত্বনা বা প্রিয়বস্তু। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« رأس الأمر الإسلام , و عموده الصلاة , و ذروة سنامه الجهاد في سبيل الله» .
“প্রধান বিষয় হলো ইসলাম, আর তার খুঁটি হলো সালাত এবং তার সর্বোচ্চ চূড়া হলো জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ (আল্লাহর পথে সংগ্রাম করা)।” [আহমদ ও তিরমিযী; আর আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
৫. আর সালাত হলো ইসলামের প্রমাণ, ঈমানের নিদর্শন এবং মানব জীবনের সুরক্ষা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿فَإِن تَابُواْ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُاْ ٱلزَّكَوٰةَ فَإِخۡوَٰنُكُمۡ فِي ٱلدِّينِۗ﴾ [ التوبة : ١١ ]
“অতএব তারা যদি তাওবা করে, সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয়, তবে দীনের মধ্যে তারা তোমাদের ভাই।” [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১১]
৬. আর সালাত হলো নিফাকী থেকে মুক্ত থাকা এবং সত্য ও শান্তির ঠিকানা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«مَنْ صَلَّى لِلَّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا فِي جَمَاعَةٍ ، يُدْرِكُ التَّكْبِيرَةَ الْأُولَى، كُتِبَتْ لَهُ بَرَاءَتَانِ : بَرَاءَةٌ مِنْ النَّارِ ، وَبَرَاءَةٌ مِنْ النِّفَاقِ» .
“যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে চল্লিশ দিন প্রথম তাকবীরের সাথে জামা‘আতে সালাত আদায় করবে, তার জন্য সুনিশ্চিতভাবে দু’টি মুক্তির ব্যবস্থা করা হবে: একটি হলো জাহান্নাম থেকে মুক্তি, আর অপরটি হলো নিফাকী চরিত্রের কলঙ্ক থেকে মুক্তি।” [আহমাদ। আর আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
৭. সালাত হলো একটি উত্তম বিষয়, শরী‘আতের সবচেয়ে লাভজনক বিধান এবং ভয় ও বিনয়ের জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় আনুগত্য। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«الصَّلاةُ خَيْر مَوْضُوع ، فَمَنِ استطاعَ أن يستكثرَ فليستكثرْ» .
“সালাত একটি উত্তম বিষয়। সুতরাং যে ব্যক্তি বেশি বেশি সালাত আদায় করতে সক্ষম, সে যেন বেশি বেশি সালাত আদায় করে।” [আহমাদ। আর আলবানী হাদীসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।]
৮. আর সালাত হলো দয়াময় করুণাময় আল্লাহর নির্দেশ, আদনান বংশীয় নবীর জোরালো অসীয়ত এবং মুসলিম ও মুমিনগণের বিশেষ প্রতীক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿حَٰفِظُواْ عَلَى ٱلصَّلَوَٰتِ وَٱلصَّلَوٰةِ ٱلۡوُسۡطَىٰ وَقُومُواْ لِلَّهِ قَٰنِتِينَ ٢٣٨﴾ [ البقرة : ٢٣٨ ]
“তোমরা সালাতের প্রতি যত্নবান হবে, বিশেষত মধ্যবর্তী সালাতের এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে তোমরা দাঁড়াবে বিনীতভাবে।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৩৮]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿وَأَقِمِ ٱلصَّلَوٰةَ لِذِكۡرِيٓ ١٤﴾ [ طه : ١٤ ]
“আর আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম করুন।” [সূরা ত্বহা, আয়াত: ১৪]
৯. আর সালাত হলো মর্যাদা বৃদ্ধিকারী, মন্দ দূরকারী এবং গুনাহ ও পাপরাশি মোচনকারী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«أَرَأَيْتُمْ لَوْ أَنَّ نَهْرًا بِبَابِ أَحَدِكُمْ يَغْتَسِلُ مِنْهُ كُلَّ يَوْمٍ خَمْسَ مَرَّاتٍ هَلْ يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَىْءٌ ؟ » . قَالُوا : لاَ يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَىْءٌ . قَالَ : « فَذَلِكَ مَثَلُ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ يَمْحُو اللَّهُ بِهِنَّ الْخَطَايَا» .
“তোমরা কি মনে কর, যদি তোমাদের কারো দরজায় একটি পানির নহর থাকে, যাতে সে দৈনিক পাঁচবার গোসল করে, তার শরীরে কি কোনো ময়লা থাকতে পারে? তাঁরা (সাহাবীগণ) উত্তরে বললেন: না, তার শরীরে কোনো ময়লা থাকতে পারে না। তখন তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন: পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের উদাহরণ এরকমই, এগুলোর বিনিময়ে আল্লাহ তা‘আলা তার গুনাহরাশি মাফ করে দেন।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৫৪]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
«مَا مِنِ امْرِئٍ مُسْلِمٍ تَحْضُرُهُ صَلاَةٌ مَكْتُوبَةٌ فَيُحْسِنُ وُضُوءَهَا وَخُشُوعَهَا وَرُكُوعَهَا إِلاَّ كَانَتْ كَفَّارَةً لِمَا قَبْلَهَا مِنَ الذُّنُوبِ , مَا لَمْ يُؤْتِ كَبِيرَةً , وَذَلِكَ الدَّهْرَ كُلَّهُ» .
“কোনো মুসলিম ব্যক্তির যখন কোনো ফরয সালাতের ওয়াক্ত হয়, আর সে সালাতের অযুকে উত্তমরূপে আদায় করে এবং সালাতের বিনয় (খুশূ) ও রুকূ সুন্দরভাবে আদায় করে, তাহলে তার এ সালাত তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহের কাফফারা হয়ে যাবে, যদি না সে কবীরা গুনাহে লিপ্ত হয়। আর এ অবস্থা সর্বযুগেই বিদ্যমান।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৬৫]
১০. আর সালাত জাহান্নাম থেকে নিরাপত্তাদানকারী, বিপদ-আপদ থেকে রক্ষাকারী, মহা শক্তিধর আল্লাহর শাস্তির হাত থেকে মুক্তিদাতা এবং সৎ ও ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিবর্গের সাথে জান্নাতের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে সফলতা দানকারী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«لَنْ يَلِجَ النَّارَ أَحَدٌ صَلَّى قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا » يَعْنِى الْفَجْرَ وَالْعَصْرَ» .
“সে ব্যক্তি কখনও জাহান্নামে প্রবেশ করবে না, যে ব্যক্তি সূর্য উদয়ের পূর্বে এবং সূর্যাস্তের পূর্বে সালাত আদায় করেছে অর্থাৎ ফজর ও আসরের সালাত আদায় করেছে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৪৬৮]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
مَنْ صَلَّى الصُّبْحَ فَهُوَ فِى ذِمَّةِ اللَّهِ، فَانْظُرْ يَا ابْنَ آدَمَ، لا يَطْلُبَنَّكُمُ اللَّهُ بِشَيْءٍ مِنْ ذِمَّتِهِ» .
“যে ব্যক্তি ফজরের সালাত আদায় করেছে, সে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার দায়িত্বে বা তত্ত্বাবধানে চলে গিয়েছে। সুতরাং হে আদম সন্তান! তুমি লক্ষ্য রাখবে, আল্লাহ যেন তাঁর আপন দায়িত্বের কোনো বিষয় সম্পর্কে তোমাদের বিপক্ষে বাদী না হন।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫২৫]
১১. আর সালাত হচ্ছে সাহায্য ও বিজয়ের ঠিকানা এবং স্বীকৃতি ও সফলতার সনদ, আর সকাল ও সন্ধ্যার আমলসমূহের মধ্য থেকে বান্দাকে যে বিষয়ে সর্বপ্রথম জবাবদিহি করতে হবে তা হলো সালাত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿قَدۡ أَفۡلَحَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ١ ٱلَّذِينَ هُمۡ فِي صَلَاتِهِمۡ خَٰشِعُونَ ٢﴾ [ المؤمنون : ١، ٢ ]
“অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মুমিনগণ, যারা তাদের সালাতে ভয়ে অবনত।” [সূরা আল-মুমিনূন, আয়াত: ১-২]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿وَٱلَّذِينَ هُمۡ عَلَىٰ صَلَوَٰتِهِمۡ يُحَافِظُونَ ٩ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡوَٰرِثُونَ ١٠ ٱلَّذِينَ يَرِثُونَ ٱلۡفِرۡدَوۡسَ هُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ ١١﴾ [ المؤمنون : ٩، ١١ ]
“আর যারা নিজেদের সালাতে থাকে যত্নবান, তারাই হবে অধিকারী, যারা অধিকারী হবে ফিরদাউসের, যাতে তারা হবে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী।” [সূরা আল-মুমিনূন, আয়াত: ৯-১১]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«إِنَّمَا يَنْصُرُ اللَّهُ هَذِهِ الْأُمَّةَ بِضَعِيفِهَا : بِدَعْوَتِهِمْ، وَصَلَاتِهِمْ، وَإِخْلَاصِهِمْ» .
“আল্লাহ তা‘আলা তো এ উম্মাতকে শুধু তাদের দুর্বল মুহূর্তে তথা তাদের দো‘আ, সালাত ও একনিষ্ঠতার বিনিময়ে সাহায্য করেন।” [নাসাঈ, হাদীস নং ৩১৭৮। আর আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«صَلاةٌ فِي إِثْرِ صَلاةٍ لا لَغْوَ بَيْنَهُمَا ، كِتَابٌ فِي عِلِّيِّينَ» .
“এক সালাতের পর আরেক সালাত -এ দুই সালাতের মাঝখানে কোনো অনর্থক কথা বা কাজ না হলে বিষয়টি ‘ইল্লীনে লিপিবদ্ধ হয়ে যায়।” [আবূ দাউদ, হাদীস নং ১২৯০। আর আলবানী হাদীসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«أول ما يحاسب عليه العبد يوم القيامة الصلاةُ ، فإن صلُحتْ صلح سائر عمله ، وإن فسدت فسد سائر عمله» .
“কিয়ামতের দিনে বান্দাকে যে আমলের ব্যাপারে সর্বপ্রথম জবাবদিহি করতে হবে তা হলো সালাত। সুতরাং সালাতের বিষয়টি যদি সঠিক হয়, তাহলে তার সকল আমল সঠিক বলে গণ্য হবে, আর যদি সালাতের বিষয়টি বেঠিক বা বিপর্যস্ত হয়, তাহলো তার সকল আমল বাতিল বলে গণ্য হবে।” [ত্ববারানী ও দ্বিয়া। আর আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
১২. আর সালাত হচ্ছে চলার পথের পাথেয়, আত্মার শান্তি, অঙ্গ-প্রতঙ্গসমূহের প্রশান্তি, অন্তরের আলো, মনের পবিত্রতা, হৃদয়ের নিরাপত্তা এবং মুক্তির সনদ।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿مُّحَمَّدٞ رَّسُولُ ٱللَّهِۚ وَٱلَّذِينَ مَعَهُۥٓ أَشِدَّآءُ عَلَى ٱلۡكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَيۡنَهُمۡۖ تَرَىٰهُمۡ رُكَّعٗا سُجَّدٗا يَبۡتَغُونَ فَضۡلٗا مِّنَ ٱللَّهِ وَرِضۡوَٰنٗاۖ سِيمَاهُمۡ فِي وُجُوهِهِم مِّنۡ أَثَرِ ٱلسُّجُودِۚ﴾ [ الفتح : ٢٩ ]
“মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল আর তাঁর সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর, তাদের পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি তাদেরকে রুকূ ও সাজদাহ’য় অবনত দেখবেন। তাদের লক্ষণ তাদের মুখমণ্ডলে সাজদাহর প্রভাবে পরিস্ফুট।” [সূরা আল-ফাতহ, আয়াত: ২৯]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَلَقَدۡ نَعۡلَمُ أَنَّكَ يَضِيقُ صَدۡرُكَ بِمَا يَقُولُونَ ٩٧﴾ [ الحجر : ٩٧ ]
“আর অবশ্যই আমরা জানি, তারা যা বলে তাতে আপনার অন্তর সংকুচিত হয়।” [সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৯৭]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«يَا بِلَالُ ! أَقِمْ الصَّلَاةَ أَرِحْنَا بِهَا» .
“হে বেলাল! সালাত কায়েম কর (অর্থাৎ সালাতের জন্য ইকামত দাও), আমাদেরকে তার দ্বারা আরাম দাও।” [আহমাদ ও আবূ দাউদ। আর আলবানী হাদীসটিকে ‘সহীহ’ বলেছেন।]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
«الصَّلاَةُ نُورٌ» .
“সালাত হচ্ছে নূর বা আলো।” [সহীহ মুসলিম।]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
«مَنْ حَافَظَ عَلَيْ الصَّلاَةِ كَانَتْ لَهُ نُورًا وَبُرْهَانًا وَنَجَاةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَمَنْ لَمْ يُحَافِظْ عَلَيْهَا لَمْ يَكُنْ لَهُ نُورٌ وَلاَ بُرْهَانٌ وَلاَ نَجَاةٌ، وَكَانَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ قَارونَ و فِرْعَوْنَ وَهَامَانَ وَأُبَىِّ بْنِ خَلَفٍ » .
“যে ব্যক্তি সালাতের ব্যাপারে যত্নবান হবে, কিয়ামতের দিন তা তার জন্য আলো, (আনুগত্যের) দলীল ও (শাস্তি থেকে) মুক্তির কারণ হবে। আর যে ব্যক্তি তার ব্যাপারে যত্নবান হবে না, কিয়ামতের দিন তার জন্য তা আলো হবে না, হবে না দলীল এবং না হবে মুক্তির কারণ; বরং কিয়ামতের দিনে সে সমবেত হবে কারূন, ফির‘আউন, হামান ও উবাই ইবন খালফের (মত আল্লাহর শত্রুদের) সাথে।” [ইমাম আহমাদ রহ. হাদীসটি উৎকৃষ্ট সনদে বর্ণনা করেছেন, যেমনটি আল-মুনযিরী বলেছেন।]
১৩. আর সালাত হচ্ছে শয়তানের ক্রোধ এবং কাফির ও আল্লাহদ্রোহীদের জন্য হতাশার কারণ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ إِنَّمَا يُرِيدُ ٱلشَّيۡطَٰنُ أَن يُوقِعَ بَيۡنَكُمُ ٱلۡعَدَٰوَةَ وَٱلۡبَغۡضَآءَ فِي ٱلۡخَمۡرِ وَٱلۡمَيۡسِرِ وَيَصُدَّكُمۡ عَن ذِكۡرِ ٱللَّهِ وَعَنِ ٱلصَّلَوٰةِۖ فَهَلۡ أَنتُم مُّنتَهُونَ ٩١ ﴾ [ المائدة : ٩١ ]
“শয়তান তো চায় মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে এবং তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণে ও সালাতে বাধা দিতে। তবে কি তোমরা বিরত হবে না?” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৯১]
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« إِذَا قَرَأَ ابْنُ آدَمَ السَّجْدَةَ فَسَجَدَ , اعْتَزَلَ الشَّيْطَانُ يَبْكِى يَقُولُ : يَا وَيْلَهُ ! أُمِرَ ابْنُ آدَمَ بِالسُّجُودِ فَسَجَدَ فَلَهُ الْجَنَّةُ وَأُمِرْتُ بِالسُّجُودِ , فَأَبَيْتُ فَلِىَ النَّارُ» .
“যখন আদম সন্তান সাজদাহ’র আয়াত পাঠ করে এবং সাজদাহ’য় অবনত হয়, তখন শয়তান কাঁদতে কাঁদতে দূরে সরে যায় এবং বলতে থাকে, হায় আফসোস! বনী আদমকে সাজদাহ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তারপর সে সাজদাহ করেছে এবং জান্নাতের অধিকারী হয়েছে, আর আমাকে সাজদাহ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তারপর আমি সাজদাহ করতে অস্বীকার করেছি, ফলে আমি জাহান্নামের অধিকারী হয়েছি।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৪]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
«مَا حَسَدَتْكُمْ الْيَهُودُ عَلَى شَيْءٍ مَا حَسَدَتْكُمْ عَلَى السَّلَامِ وَالتَّأْمِينِ» .
“ইয়াহূদীগণ সালাম ও ‘আমীন’ বলার ব্যাপারে যেভাবে তোমাদেরকে ঈর্ষা করে, সেভাবে আর কোনো কিছুর ব্যাপারে তোমাদের প্রতি তারা ঈর্ষা করে না।” [ইমাম আহমাদ রহ. হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
১৪. আর সালাত হচ্ছে কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ, মহান আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা এবং ‘তাসবীহ’ (সুবহানাল্লাহ), ‘তাহমীদ’ (আল-হামদুলিল্লাহ) ও তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু)-এর ভাণ্ডার। মুগীরা ইবন শু‘বা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:
«قام النبيُّ صلى الله عليه وسلم حتى تورَّمت قدماه، فقيل له : قد غفرَ الله لك ما تقدَّمَ من ذنبكَ وما تأخَّر؟ قال : أفلا أكونُ عبدا شكورا ؟» .
“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের বেলায় এত বেশি ‘ইবাদাত করতেন যে, শেষ পর্যন্ত তাঁর কদম মোবারক ফুলে ফেটে যেত। অতঃপর তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলা হত ‘আল্লাহ তা‘আলা তো আপনার অতীত ও ভবিষ্যতের গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন, (তাহলে আপনি এরূপ করছেন কেন)? তখন তিনি বললেন: ‘আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হব না?’।” [বুখারী, হাদীস নং ৪৫৫৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৩০৩]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«يُصْبحُ عَلَى كُلِّ سُلاَمَى مِنْ أَحَدِكُمْ صَدَقةٌ : فَكُلُّ تَسْبيحَةٍ صَدَقةٌ، وَكُلُّ تَحْميدَةٍ صَدَقَةٌ ، وَكُلُّ تَهْلِيلةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَكْبيرَةٍ صَدَقَةٌ، وأمْرٌ بالمَعْرُوفِ صَدَقَةٌ، وَنَهْيٌ عَنِ المُنْكَرِ صَدَقَةٌ، وَيجْزئُ مِنْ ذَلِكَ رَكْعَتَانِ يَرْكَعُهُمَا مِنَ الضُّحَى» .
“তোমাদের যে কোনো লোকেরই শরীরের প্রত্যেকটি সংযোগস্থলের ওপর সাদকা (ওয়াজিব) হয়। সুতরাং ‘সুবহানাল্লাহ’, ‘আল-হামদুলিল্লাহ’, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ ও আল্লাহু আকবার -এসবের প্রত্যেকটি একটি করে সাদকা। আর সৎ কাজের আদেশ দেওয়া ও অসৎ কাজে নিষেধ করাও সাদকা। আর এসব ‘চাশত’-এর (দুপুরের পূর্বের) দুই রাকাত সালাত আদায় করলে পূরণ হয়ে যায়।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭০৪]
১৫. আর সালাত কু-প্রবৃত্তি থেকে মুক্তি দেয়, যাবতীয় অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে এবং যাবতীয় রোগ-ব্যাধি ও দুঃখ-কষ্ট দূর করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ إِنَّ ٱلصَّلَوٰةَ تَنۡهَىٰ عَنِ ٱلۡفَحۡشَآءِ وَٱلۡمُنكَرِۗ ﴾ [ العنكبوت : ٤٥ ]
“নিশ্চয় সালাত বিরত রাখে অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে।” [সূরা আল-‘আনকাবুত, আয়াত: ৪৫]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«عَلَيْكُمْ بِقِيَامِ اللَّيْلِ ، فَإِنَّهُ دَأْبُ الصَّالِحِينَ قَبْلَكُمْ، وَقُرْبَةٌ إِلَى اللَّهِ تعالى، وَمَنْهَاةٌ عَنِ الإِثْم، وَتَكْفِيرٌ لِلسَّيِّئَاتِ، وَمَطْرَدَةٌ لِلدَّاءِ عَنِ الْجَسَدِ» .
“তোমরা রাত জেগে নফল সালাত আদায় কর। কারণ, তা তোমাদের পূর্ববর্তী নেক বান্দাগণের অভ্যাস, আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য লাভের উপায়, গুনাহের কাজ থেকে বাধা প্রদানকারী, পাপ মোচনকারী এবং শরীর থেকে রোগ-ব্যাধি দূরকারী।” [আহমাদ ও তিরমিযী; আর আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
হে সালাত বর্জনকারী! তুমি সালাতকে বর্জন করেছ, তাহলে তোমার জন্য ইসলামের আর কী বাকি থাকল? তুমি কি জান না যে, সালাত হচ্ছে ইসলামের খুঁটি এবং ঈমানের তাঁবু?
হে সালাত বর্জনকারী! তুমি ছাড়া প্রত্যেকটি সৃষ্টি তার প্রতিপালককে সাজদাহ করে!! আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿أَلَمۡ تَرَ أَنَّ ٱللَّهَ يَسۡجُدُۤ لَهُۥۤ مَن فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَن فِي ٱلۡأَرۡضِ وَٱلشَّمۡسُ وَٱلۡقَمَرُ وَٱلنُّجُومُ وَٱلۡجِبَالُ وَٱلشَّجَرُ وَٱلدَّوَآبُّ وَكَثِيرٞ مِّنَ ٱلنَّاسِۖ وَكَثِيرٌ حَقَّ عَلَيۡهِ ٱلۡعَذَابُۗ﴾ [ الحج : ١٨ ]
“আপনি কি দেখেন না যে, আল্লাহকে সাজদাহ করে যারা আছে আসমানসমূহে ও যারা আছে যমীনে, আর সূর্য, চাঁদ, নক্ষত্রমণ্ডলী, পর্বতরাজি, বৃক্ষলতা, জীবজন্তু এবং সাজদাহ করে মানুষের মধ্যে অনেকে? আবার অনেকের প্রতি অবধারিত হয়েছে শাস্তি।” [সূরা আল-হাজ, আয়াত: ১৮]
আর যখন তুমি সালাত আদায় করছ না, তখন তুমি তো ঐসব লোকদের কাতারে শামিল হয়ে যাচ্ছ, যাদের প্রতি আল্লাহর শাস্তি অবধারিত হয়ে গেছে!
হে সালাত বর্জনকারী! তুমি কি জানো না যে, সালাত বর্জন করাটা কুফুরী ও শির্কের পর্যায়ভুক্ত? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«بَيْنَ الرَّجُلِ وَبَيْنَ الشِّرْكِ والكفر، تَرْكَ الصَّلاَةِ » .
“ব্যক্তি এবং শির্ক ও কুফুরের মধ্যে পার্থক্য হলো সালাত ত্যাগ করা।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৭] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
«العَهْدُ الَّذِي بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمْ الصَّلاَةُ، فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَرَ» .
“আমাদের ও তাদের (অমুসলিমদের) মধ্যে যে প্রতিজ্ঞা বা চুক্তি রয়েছে তা হচ্ছে সালাত। সুতরাং যে ব্যক্তি সালাত বর্জন করল, সে কুফুরী করল।” [আহমাদ ও তিরমিযী। আর আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
হে সালাত বর্জনকারী! তুমি কি জানো না যে, সালাত বর্জন করা এবং তাকে অবজ্ঞা করাটা মুনাফেকী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ? আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿إِنَّ ٱلۡمُنَٰفِقِينَ يُخَٰدِعُونَ ٱللَّهَ وَهُوَ خَٰدِعُهُمۡ وَإِذَا قَامُوٓاْ إِلَى ٱلصَّلَوٰةِ قَامُواْ كُسَالَىٰ يُرَآءُونَ ٱلنَّاسَ وَلَا يَذۡكُرُونَ ٱللَّهَ إِلَّا قَلِيلٗا ١٤٢﴾ [ النساء : ١٤٢ ]
“নিশ্চয় মুনাফিকরা আল্লাহর সাথে ধোঁকাবাজি করে। বস্তুতঃ তিনি তাদেরকে ধোঁকায় ফেলেন। আর যখন তারা সালাতে দাঁড়ায়, তখন শৈথিল্যের সাথে দাঁড়ায়, শুধুমাত্র লোক দেখানোর জন্য এবং আল্লাহকে তারা অল্পই স্মরণ করে।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৪২]
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«إنَّ أَثْقَلَ الصَّلاةِ عَلَى الْمُنَافِقِينَ : صَلاةُ الْعِشَاءِ وَصَلاةُ الْفَجْرِ . وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِيهَا لأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا» .
“নিশ্চয় মুনাফিকদের ওপর বেশি ভারী ও কষ্টকর সালাত হলো এশা ও ফজরের সালাত। আর যদি তারা জানত যে, এ দুই সালাতের মধ্যে কী আছে, তাহলে তারা হামাগুড়ি দিয়ে হলেও এ দুই সালাতে শামিল হত।” [বুখারী, হাদীস নং ৬২৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫১৪]
হে সালাত বর্জনকারী! তুমি কি বিষয়টি ভেবে দেখেছ? মুনাফিক সম্প্রদায়ও সালাত আদায় করত, তবে তারা সালাত আদায় করত লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে, অথচ তুমি কখনও সালাত-ই আদায় করছ না!!
হে সালাত বর্জনকারী! তুমি কি জানো না যে, সালাত বর্জন করাটা এক প্রকার গাফলতি ও অলসতা এবং অন্তরের কঠোরতা ও নিষ্ঠুরতা? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لَيَنْتَهِيَنَّ أَقْوَامٌ عَنْ وَدْعِهِمُ الْجُمُعَاتِ، أَوْ لَيَخْتِمَنَّ اللَّهُ عَلَى قُلُوبِهِمْ، ثُمَّ لَيَكُونُنَّ مِنَ الْغَافِلِينَ» .
“অবশ্যই মুসলিম জনগণ সালাতের জামা‘আত/জুম‘আহ ছেড়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকবে, নতুবা আল্লাহ তা‘আলা তাদের অন্তরের ওপর মোহর মেরে দেবেন, তারপর তারা নিশ্চিতভাবে গাফেল বান্দাদের কাতারে শামিল হয়ে যাবে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২০৩৯]
হে সালাত বর্জনকারী! তুমি কি জানো না যে, সালাত বর্জন করার বিষয়টি সকল আমল বিনষ্ট করে দেয়? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ تَرَكَ صَلَاةَ الْعَصْرِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهُ» .
“যে ব্যক্তি আসরের সালাত বর্জন করল, সে ব্যক্তির আমল নষ্ট হয়ে গেল।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫২৮]
হে সালাত বর্জনকারী! তুমি কি জানো না যে, সালাত বর্জন করার ব্যাপারটি কাফির ও পাপীষ্ঠদের সাথে জাহান্নামের মধ্যে নিয়ে যাবে? আল্লাহ তা‘আলা যখন জাহান্নামের অধিবাসীদেরকে প্রশ্ন করবেন, তখন জবাবে তারা কী বলবে, তা কোড করে বলেন, :
﴿مَا سَلَكَكُمۡ فِي سَقَرَ ٤٢ قَالُواْ لَمۡ نَكُ مِنَ ٱلۡمُصَلِّينَ ٤٣﴾ [ المدثر : ٤٢، ٤٣ ]
“তোমাদেরকে কিসে ‘সাকার’-এ নিক্ষেপ করেছে? তারা বলবে, আমরা সালাত আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না।” [সূরা আল-মুদ্দাচ্ছির, আয়াত: ৪২-৪৩]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿فَخَلَفَ مِنۢ بَعۡدِهِمۡ خَلۡفٌ أَضَاعُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَٱتَّبَعُواْ ٱلشَّهَوَٰتِۖ فَسَوۡفَ يَلۡقَوۡنَ غَيًّا ٥٩﴾ [ مريم : ٥٩ ]
“তাদের পরে আসল অযোগ্য উত্তরসূরীরা, তারা সালাত নষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুবর্তী হল। কাজেই অচিরেই তারা ক্ষতিগ্রস্ততার সম্মুখীন হবে।” [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৫৯]
হে সালাত বর্জনকারী! তুমি কি জানো না যে, সালাত বর্জন করার বিষয়টি তোমার জন্য বড় ধরনের বিপদ-মুসীবত ডেকে আনবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«الَّذِى تَفُوتُهُ صَلاَةُ الْعَصْرِ، كَأَنَّمَا وُتِرَ أَهْلَهُ، وَمَالَهُ» .
“যে ব্যক্তির আসরের সালাত ছুটে গেল, সে ব্যক্তির পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদ যেন লুণ্ঠিত হয়ে গেল।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫২৭] অর্থাৎ সে যেন তার পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদ হারিয়ে ফেলল। সুতরাং এক ওয়াক্ত সালাত বর্জনের পরিণতি এমন হলে, সকল ওয়াক্তের সালাত বর্জন করার পরিণতি কেমন ভয়াবহ হতে পারে?
হে সালাত বর্জনকারী! তুমি কি জানো না যে, সালাত বর্জন করার বিষয়টি হৃদয় মনের অস্থিরতা, অশান্তি ও কষ্টকর পরিস্থিতি তৈরি করে এবং জীবন-যাপনের বিষয়টিকে সংকুচিত ও দুর্বিষহ করে তুলে? আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَمَنۡ أَعۡرَضَ عَن ذِكۡرِي فَإِنَّ لَهُۥ مَعِيشَةٗ ضَنكٗا وَنَحۡشُرُهُۥ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ أَعۡمَىٰ ١٢٤ قَالَ رَبِّ لِمَ حَشَرۡتَنِيٓ أَعۡمَىٰ وَقَدۡ كُنتُ بَصِيرٗا ١٢٥ قَالَ كَذَٰلِكَ أَتَتۡكَ ءَايَٰتُنَا فَنَسِيتَهَاۖ وَكَذَٰلِكَ ٱلۡيَوۡمَ تُنسَىٰ ١٢٦﴾ [ طه : ١٢٤، ١٢٦ ]
“‘আর যে আমার স্মরণ থেকে বিমুখ থাকবে, নিশ্চয় তার জীবন-যাপন হবে সংকুচিত এবং আমরা তাকে কিয়ামতের দিন জমায়েত করব অন্ধ অবস্থায়। সে বলবে, ‘হে আমার রব! কেন আমাকে অন্ধ অবস্থায় জমায়েত করলেন? অথচ আমি তো ছিলাম চক্ষুষ্মান। তিনি বলবেন, ‘এরূপই আমাদের নিদর্শনাবলী তোমার কাছে এসেছিল; কিন্তু তুমি তা ছেড়ে দিয়েছিলে এবং সেভাবে আজ তোমাকেও (জাহান্নামে) ছেড়ে রাখা হবে।” [সূরা ত্বহা, আয়াত: ১২৪-১২৬]
সুতরাং হে সালাত বর্জনকারী! হায়, তোমার জন্য আফসোস হয় এবং হৃদয়ে কষ্ট অনুভব করি! কীভাবে সময় অতিবাহিত হয় এবং কিভাবে জীবনকাল ফুরিয়ে যাচ্ছে, অথচ তোমার রব থেকে তোমার অন্তর আড়ালকৃত ও বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে? দুনিয়ার সবচেয়ে উৎকৃষ্ট বস্তুর মজা উপভোগ না করে তুমি কিভাবে দুনিয়া থেকে বেরিয়ে যাবে? আর দুনিয়ার মধ্যকার সবচেয়ে উৎকৃষ্ট বস্তু হলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার ‘ইবাদাত করা, তাঁর যিকির করা, তাঁর শুকরিয়া বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং তাঁর উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করা।
হে সালাত বর্জনকারী! যখন তোমার নিকট তোমার সালাতের বিষয়টি অবজ্ঞার বস্তু হয়, তখন তোমার দীনের কোন বিষয়টি তোমার নিকট প্রিয় হবে? তুমি কি জান না যে, যে ব্যক্তি সালাতকে উপেক্ষা করল, তাহলে এর চেয়ে আর বড় উপেক্ষা বা হাতছাড়া কারার মতো কোনো বস্তু কি হতে পারে?
হাসান বলেন: হে আদম সন্তান! যখন তোমার নিকট তোমার সালাতের বিষয়টি অবজ্ঞার বস্তু হয়, তখন এমন কী বস্তু আছে, যা তোমার নিকট প্রিয় হবে?
হে গাফেল (অলস) ব্যক্তি! তুমি সালাত বর্জনকারী অবস্থায় মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়ার পূর্বেই ফিরে আস তুমি তোমার ‘রব’-এর কাছে।
হে সালাত বর্জনকারী! তুমি ছাড়া প্রত্যেকটি সৃষ্টি তার প্রতিপালককে সাজদাহ করে!! আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿أَلَمۡ تَرَ أَنَّ ٱللَّهَ يَسۡجُدُۤ لَهُۥۤ مَن فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَن فِي ٱلۡأَرۡضِ وَٱلشَّمۡسُ وَٱلۡقَمَرُ وَٱلنُّجُومُ وَٱلۡجِبَالُ وَٱلشَّجَرُ وَٱلدَّوَآبُّ وَكَثِيرٞ مِّنَ ٱلنَّاسِۖ وَكَثِيرٌ حَقَّ عَلَيۡهِ ٱلۡعَذَابُۗ﴾ [ الحج : ١٨ ]
“আপনি কি দেখেন না যে, আল্লাহকে সাজদাহ করে যারা আছে আসমানসমূহে ও যারা আছে যমীনে, আর সূর্য, চাঁদ, নক্ষত্রমণ্ডলী, পর্বতরাজি, বৃক্ষলতা, জীবজন্তু এবং সাজদাহ করে মানুষের মধ্যে অনেকে? আবার অনেকের প্রতি অবধারিত হয়েছে শাস্তি।” [সূরা আল-হাজ, আয়াত: ১৮]
আর যখন তুমি সালাত আদায় করছ না, তখন তুমি তো ঐসব লোকদের কাতারে শামিল হয়ে যাচ্ছ, যাদের প্রতি আল্লাহর শাস্তি অবধারিত হয়ে গেছে!
হে সালাত বর্জনকারী! তুমি কি জানো না যে, সালাত বর্জন করাটা কুফুরী ও শির্কের পর্যায়ভুক্ত? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«بَيْنَ الرَّجُلِ وَبَيْنَ الشِّرْكِ والكفر، تَرْكَ الصَّلاَةِ » .
“ব্যক্তি এবং শির্ক ও কুফুরের মধ্যে পার্থক্য হলো সালাত ত্যাগ করা।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৭] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
«العَهْدُ الَّذِي بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمْ الصَّلاَةُ، فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَرَ» .
“আমাদের ও তাদের (অমুসলিমদের) মধ্যে যে প্রতিজ্ঞা বা চুক্তি রয়েছে তা হচ্ছে সালাত। সুতরাং যে ব্যক্তি সালাত বর্জন করল, সে কুফুরী করল।” [আহমাদ ও তিরমিযী। আর আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
হে সালাত বর্জনকারী! তুমি কি জানো না যে, সালাত বর্জন করা এবং তাকে অবজ্ঞা করাটা মুনাফেকী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ? আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿إِنَّ ٱلۡمُنَٰفِقِينَ يُخَٰدِعُونَ ٱللَّهَ وَهُوَ خَٰدِعُهُمۡ وَإِذَا قَامُوٓاْ إِلَى ٱلصَّلَوٰةِ قَامُواْ كُسَالَىٰ يُرَآءُونَ ٱلنَّاسَ وَلَا يَذۡكُرُونَ ٱللَّهَ إِلَّا قَلِيلٗا ١٤٢﴾ [ النساء : ١٤٢ ]
“নিশ্চয় মুনাফিকরা আল্লাহর সাথে ধোঁকাবাজি করে। বস্তুতঃ তিনি তাদেরকে ধোঁকায় ফেলেন। আর যখন তারা সালাতে দাঁড়ায়, তখন শৈথিল্যের সাথে দাঁড়ায়, শুধুমাত্র লোক দেখানোর জন্য এবং আল্লাহকে তারা অল্পই স্মরণ করে।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৪২]
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«إنَّ أَثْقَلَ الصَّلاةِ عَلَى الْمُنَافِقِينَ : صَلاةُ الْعِشَاءِ وَصَلاةُ الْفَجْرِ . وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِيهَا لأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا» .
“নিশ্চয় মুনাফিকদের ওপর বেশি ভারী ও কষ্টকর সালাত হলো এশা ও ফজরের সালাত। আর যদি তারা জানত যে, এ দুই সালাতের মধ্যে কী আছে, তাহলে তারা হামাগুড়ি দিয়ে হলেও এ দুই সালাতে শামিল হত।” [বুখারী, হাদীস নং ৬২৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫১৪]
হে সালাত বর্জনকারী! তুমি কি বিষয়টি ভেবে দেখেছ? মুনাফিক সম্প্রদায়ও সালাত আদায় করত, তবে তারা সালাত আদায় করত লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে, অথচ তুমি কখনও সালাত-ই আদায় করছ না!!
হে সালাত বর্জনকারী! তুমি কি জানো না যে, সালাত বর্জন করাটা এক প্রকার গাফলতি ও অলসতা এবং অন্তরের কঠোরতা ও নিষ্ঠুরতা? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لَيَنْتَهِيَنَّ أَقْوَامٌ عَنْ وَدْعِهِمُ الْجُمُعَاتِ، أَوْ لَيَخْتِمَنَّ اللَّهُ عَلَى قُلُوبِهِمْ، ثُمَّ لَيَكُونُنَّ مِنَ الْغَافِلِينَ» .
“অবশ্যই মুসলিম জনগণ সালাতের জামা‘আত/জুম‘আহ ছেড়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকবে, নতুবা আল্লাহ তা‘আলা তাদের অন্তরের ওপর মোহর মেরে দেবেন, তারপর তারা নিশ্চিতভাবে গাফেল বান্দাদের কাতারে শামিল হয়ে যাবে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২০৩৯]
হে সালাত বর্জনকারী! তুমি কি জানো না যে, সালাত বর্জন করার বিষয়টি সকল আমল বিনষ্ট করে দেয়? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ تَرَكَ صَلَاةَ الْعَصْرِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهُ» .
“যে ব্যক্তি আসরের সালাত বর্জন করল, সে ব্যক্তির আমল নষ্ট হয়ে গেল।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫২৮]
হে সালাত বর্জনকারী! তুমি কি জানো না যে, সালাত বর্জন করার ব্যাপারটি কাফির ও পাপীষ্ঠদের সাথে জাহান্নামের মধ্যে নিয়ে যাবে? আল্লাহ তা‘আলা যখন জাহান্নামের অধিবাসীদেরকে প্রশ্ন করবেন, তখন জবাবে তারা কী বলবে, তা কোড করে বলেন, :
﴿مَا سَلَكَكُمۡ فِي سَقَرَ ٤٢ قَالُواْ لَمۡ نَكُ مِنَ ٱلۡمُصَلِّينَ ٤٣﴾ [ المدثر : ٤٢، ٤٣ ]
“তোমাদেরকে কিসে ‘সাকার’-এ নিক্ষেপ করেছে? তারা বলবে, আমরা সালাত আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না।” [সূরা আল-মুদ্দাচ্ছির, আয়াত: ৪২-৪৩]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿فَخَلَفَ مِنۢ بَعۡدِهِمۡ خَلۡفٌ أَضَاعُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَٱتَّبَعُواْ ٱلشَّهَوَٰتِۖ فَسَوۡفَ يَلۡقَوۡنَ غَيًّا ٥٩﴾ [ مريم : ٥٩ ]
“তাদের পরে আসল অযোগ্য উত্তরসূরীরা, তারা সালাত নষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুবর্তী হল। কাজেই অচিরেই তারা ক্ষতিগ্রস্ততার সম্মুখীন হবে।” [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৫৯]
হে সালাত বর্জনকারী! তুমি কি জানো না যে, সালাত বর্জন করার বিষয়টি তোমার জন্য বড় ধরনের বিপদ-মুসীবত ডেকে আনবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«الَّذِى تَفُوتُهُ صَلاَةُ الْعَصْرِ، كَأَنَّمَا وُتِرَ أَهْلَهُ، وَمَالَهُ» .
“যে ব্যক্তির আসরের সালাত ছুটে গেল, সে ব্যক্তির পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদ যেন লুণ্ঠিত হয়ে গেল।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫২৭] অর্থাৎ সে যেন তার পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদ হারিয়ে ফেলল। সুতরাং এক ওয়াক্ত সালাত বর্জনের পরিণতি এমন হলে, সকল ওয়াক্তের সালাত বর্জন করার পরিণতি কেমন ভয়াবহ হতে পারে?
হে সালাত বর্জনকারী! তুমি কি জানো না যে, সালাত বর্জন করার বিষয়টি হৃদয় মনের অস্থিরতা, অশান্তি ও কষ্টকর পরিস্থিতি তৈরি করে এবং জীবন-যাপনের বিষয়টিকে সংকুচিত ও দুর্বিষহ করে তুলে? আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَمَنۡ أَعۡرَضَ عَن ذِكۡرِي فَإِنَّ لَهُۥ مَعِيشَةٗ ضَنكٗا وَنَحۡشُرُهُۥ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ أَعۡمَىٰ ١٢٤ قَالَ رَبِّ لِمَ حَشَرۡتَنِيٓ أَعۡمَىٰ وَقَدۡ كُنتُ بَصِيرٗا ١٢٥ قَالَ كَذَٰلِكَ أَتَتۡكَ ءَايَٰتُنَا فَنَسِيتَهَاۖ وَكَذَٰلِكَ ٱلۡيَوۡمَ تُنسَىٰ ١٢٦﴾ [ طه : ١٢٤، ١٢٦ ]
“‘আর যে আমার স্মরণ থেকে বিমুখ থাকবে, নিশ্চয় তার জীবন-যাপন হবে সংকুচিত এবং আমরা তাকে কিয়ামতের দিন জমায়েত করব অন্ধ অবস্থায়। সে বলবে, ‘হে আমার রব! কেন আমাকে অন্ধ অবস্থায় জমায়েত করলেন? অথচ আমি তো ছিলাম চক্ষুষ্মান। তিনি বলবেন, ‘এরূপই আমাদের নিদর্শনাবলী তোমার কাছে এসেছিল; কিন্তু তুমি তা ছেড়ে দিয়েছিলে এবং সেভাবে আজ তোমাকেও (জাহান্নামে) ছেড়ে রাখা হবে।” [সূরা ত্বহা, আয়াত: ১২৪-১২৬]
সুতরাং হে সালাত বর্জনকারী! হায়, তোমার জন্য আফসোস হয় এবং হৃদয়ে কষ্ট অনুভব করি! কীভাবে সময় অতিবাহিত হয় এবং কিভাবে জীবনকাল ফুরিয়ে যাচ্ছে, অথচ তোমার রব থেকে তোমার অন্তর আড়ালকৃত ও বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে? দুনিয়ার সবচেয়ে উৎকৃষ্ট বস্তুর মজা উপভোগ না করে তুমি কিভাবে দুনিয়া থেকে বেরিয়ে যাবে? আর দুনিয়ার মধ্যকার সবচেয়ে উৎকৃষ্ট বস্তু হলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার ‘ইবাদাত করা, তাঁর যিকির করা, তাঁর শুকরিয়া বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং তাঁর উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করা।
হে সালাত বর্জনকারী! যখন তোমার নিকট তোমার সালাতের বিষয়টি অবজ্ঞার বস্তু হয়, তখন তোমার দীনের কোন বিষয়টি তোমার নিকট প্রিয় হবে? তুমি কি জান না যে, যে ব্যক্তি সালাতকে উপেক্ষা করল, তাহলে এর চেয়ে আর বড় উপেক্ষা বা হাতছাড়া কারার মতো কোনো বস্তু কি হতে পারে?
হাসান বলেন: হে আদম সন্তান! যখন তোমার নিকট তোমার সালাতের বিষয়টি অবজ্ঞার বস্তু হয়, তখন এমন কী বস্তু আছে, যা তোমার নিকট প্রিয় হবে?
হে গাফেল (অলস) ব্যক্তি! তুমি সালাত বর্জনকারী অবস্থায় মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়ার পূর্বেই ফিরে আস তুমি তোমার ‘রব’-এর কাছে।
* সালাতের মহান ফযীলতসমূহ জানার পর তুমি কী করবে?
* আর মুসল্লীগণের (সালাত আদায়কারী ব্যক্তিবর্গের) পুরস্কারগুলো দেখার পর তুমি কী করবে?
* আর সালাত উপেক্ষাকারী ব্যক্তিবর্গের শাস্তিগুলো সম্পর্কে জানার পর তুমি কী করবে?
* সালাতের প্রতি উপেক্ষা ও তা বর্জন করার কাজটি কি তুমি এখনও অব্যাহত রাখবে?
* এখনও কি তুমি অবিরতভাবে সালাত আদায় না করে ঘুমিয়ে থাকবে এবং নির্দিষ্ট সময়ে তা আদায় না করে তাকে বিলম্বিত করতে থাকবে?
হে ভাই আমার! উচ্চতর অভিপ্রায় বা সংকল্প কোথায়? শক্তিশালী সিদ্ধান্ত কোথায়? জান্নাত পাওয়ার জন্য উদ্যোগ বা তৎপরতা কোথায়? (সালাতের) সময়গুলোর ব্যাপারে যত্নবান হওয়ার বিষয়টি কোথায়? আগে আগে সালাতের জামা‘আতে হাযির হওয়ার বিষয়টি কোথায়?
* আর মুসল্লীগণের (সালাত আদায়কারী ব্যক্তিবর্গের) পুরস্কারগুলো দেখার পর তুমি কী করবে?
* আর সালাত উপেক্ষাকারী ব্যক্তিবর্গের শাস্তিগুলো সম্পর্কে জানার পর তুমি কী করবে?
* সালাতের প্রতি উপেক্ষা ও তা বর্জন করার কাজটি কি তুমি এখনও অব্যাহত রাখবে?
* এখনও কি তুমি অবিরতভাবে সালাত আদায় না করে ঘুমিয়ে থাকবে এবং নির্দিষ্ট সময়ে তা আদায় না করে তাকে বিলম্বিত করতে থাকবে?
হে ভাই আমার! উচ্চতর অভিপ্রায় বা সংকল্প কোথায়? শক্তিশালী সিদ্ধান্ত কোথায়? জান্নাত পাওয়ার জন্য উদ্যোগ বা তৎপরতা কোথায়? (সালাতের) সময়গুলোর ব্যাপারে যত্নবান হওয়ার বিষয়টি কোথায়? আগে আগে সালাতের জামা‘আতে হাযির হওয়ার বিষয়টি কোথায়?
ইমাম ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেন, তা‘আলা বলেন: “সালাতের আদায়ের ক্ষেত্রে মানুষের শ্রেণী বা স্তর হলো পাঁচটি:
১. প্রথম স্তরের মানুষ হলো স্বীয় নাফসের ওপর অনেক বেশি যুলুমকারী, আর সে এমন ব্যক্তি, যে সালাতের অযু, সময়, বিধিবিধান ও রুকনসমূহের ক্ষেত্রে কম গুরুত্ব প্রদান করে বা কমতি করে।
২. যে ব্যক্তি সালাতের সময়, বিধিবিধান, বাহ্যিক রুকনসমূহ ও অযুর ব্যাপারে যত্নবান; কিন্তু সে অসওয়াসার সময় স্বীয় নাফসকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা-প্রচেষ্টার বিষয়টিকে উপেক্ষা করে; ফলে সে বিভিন্ন ‘অসওয়াসা’ (কুমন্ত্রণা) ও চিন্তার পিছনে লেগে যায়।
৩. যে ব্যক্তি সালাতের সময়, বিধিবিধান ও রুকনসমূহের ব্যাপারে যত্নবান এবং যাবতীয় ‘অসওয়াসা’ (কুমন্ত্রণা) ও বাজে চিন্তা প্রতিরোধ করার ব্যাপারে স্বীয় নাফসের সাথে লড়াই করে, সে ব্যক্তি তো তার শত্রুর (শয়তানের) সাথে যুদ্ধে ব্যস্ত হয়ে যায়, যাতে সে তার সালাতকে চুরি করে নিতে না পারে। ফলে সে সালাত ও জিহাদের মধ্যেই থাকে।
৪. এমন ব্যক্তি, যখন তিনি সালাত আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে যান, তখন তিনি তার হক ও রুকনসমূহ এবং তার যাবতীয় বিধিবিধান পরিপূর্ণভাবে আদায় করেন এবং তার হৃদয় মনকে তার (সালাতের) বিধিবিধান ও হকসমূহের যত্ন ও সংরক্ষণের জন্য নিয়োজিত করেন, যাতে তার কোনো কিছু তিনি নষ্ট না করেন; এমনকি তার যাবতীয় চিন্তা-চেতনা নিয়োজিত থাকে যথাযথভাবে পরিপূর্ণতা সহকারে সালাত আদায়ের প্রতি। তার মন সালাতের বিষয়টি নিয়ে ব্যস্ত থাকে এবং তার মাধ্যমে ডুবে থাকে তার ‘রব’ আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা‘আলার ইবাদাত-বন্দেগীর মধ্যে।
৫. এমন ব্যক্তি, যখন তিনি সালাত আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে যান, তখন তিনি তার উদ্দেশ্যে অনুরূপভাবে তথা পূর্বোক্ত চতুর্থ স্তরের মুসল্লীর মত করে দাঁড়িয়ে যান; কিন্তু এটা সত্ত্বেও তিনি তার মনকে ধরে তার মহান প্রতিপালকের সমানে এমনভাবে সঁপে দিয়েছেন, তিনি যেন তার হৃদয় দিয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছেন, তাঁকে ভয় করছেন, তাঁর ভালোবাসা ও মহত্বের আবহ দিয়ে নিজেকে পরিপূর্ণ করে নিয়েছেন, মনে হয় যেন তিনি তাঁকে দেখতে পাচ্ছেন এবং প্রত্যক্ষ করছেন, আর এমতাবস্থায় ঐসব অসওয়াসা ও কুমন্ত্রণা বিলুপ্ত ও বিলীন হয়ে যায় এবং তার ও তার রব-এর মধ্যকার সকল পর্দা উঠে যায়; সুতরাং সালাতের মধ্যে তার ও অন্যের মধ্যকার এ অবস্থাটি আসমান ও যমীনের মধ্যকার সকল কিছুর চেয়ে অনেক বেশি উত্তম ও মহান, আর তার সালাতের মধ্যকার এ অবস্থাটি তাকে তার মহান রবকে নিয়ে এমনভাবে ব্যস্ত রাখে, যার ফলে তাঁকে নিয়ে তার চোখ শীতল হয়, আনন্দে আত্মরহারা হয়ে উঠে।
সুতরাং প্রথম শ্রেণী: শাস্তির মুখোমুখি হবে,
দ্বিতীয় শ্রেণী: হিসাবের মুখোমুখি হবে,
তৃতীয় শ্রেণী: ক্ষমা পাওয়ার উপযুক্ত,
চতুর্শ শ্রেণী: সাওয়াব পাবে এবং
পঞ্চম শ্রেণী: তার ‘রব’-এর নৈকট্য অর্জনে সক্ষম হবে। কারণ, সে এমন ভাগ্যবান ব্যক্তির অন্তর্ভুক্ত হবে, যার জন্য সালাতে তার চক্ষু শীতল করণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সুতরাং দুনিয়াতে যে ব্যক্তির চক্ষু শীতল হবে তার সালাতের মাধ্যমে, আখিরাতে সে ব্যক্তির চক্ষু শীতল হবে তার মহান রব-এর নৈকট্য হাসিলের মাধ্যমে এবং দুনিয়াতেও তার চক্ষু শীতল হবে তাঁকে নিয়ে; আর যে ব্যক্তির চক্ষু শীতল হলো আল্লাহকে পেয়ে, তার চোখ তো তাঁকে নিয়ে পুরাপুরিভাবেই শীতল ও পরিতৃপ্ত হলো, আর যে ব্যক্তির চক্ষু শীতল হয়নি আল্লাহ তা‘আলার মাধ্যমে, দুনিয়াতে আফসোস ও দুঃখ করতে করতে তার জীবন টুকরা টুকরা হয়ে যাবে।”
প্রিয় ভাই আমার! এ হলো সালাতের আদায়ের ক্ষেত্রে মানুষের শ্রেণি বা স্তর বিন্যাস। সুতরাং তুমি কোন শ্রেণি বা স্তরের মধ্যে আছ? তুমি নিজেই একটু হিসাব করে নাও এবং সালাতের মানদণ্ডে তা একটু ওজন করে নাও। কারণ, সালাতের মানদণ্ড ভুল করবে না!
হে আমার ভাই! এ গাফলতি ও অধঃপতনই কি তোমার শেষ পরিণতি? এ অবহেলা আর উপেক্ষা কত দিন চলবে? সুতরাং তোমার অমনোযোগিতা ও অবহেলার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। আর তোমাকে সতর্ককারীর বুকের মধ্যে তোমাকে ডাকা হচ্ছে, তুমি কি প্রস্তুত হবে না? তোমার পরিকল্পনা ও পরিচালন নীতি খুবই মন্দ।
হে আমার ভাই! মুয়াজ্জিন তোমাকে আর কত কাল ধরে ডাকবে, আর তুমি থাকবে ঘুমিয়ে? অতঃপর যখন তুমি সালাতের দিকে আস, তখন তোমার দেহ থাকে হাজির, আর মন থাকে উদাসীন! তুমি তোমার নিজেকে বল, তুমি কি সালাত আদায় করছ!! নাকি সমালোচকদেরকে দেখাচ্ছ?
১. প্রথম স্তরের মানুষ হলো স্বীয় নাফসের ওপর অনেক বেশি যুলুমকারী, আর সে এমন ব্যক্তি, যে সালাতের অযু, সময়, বিধিবিধান ও রুকনসমূহের ক্ষেত্রে কম গুরুত্ব প্রদান করে বা কমতি করে।
২. যে ব্যক্তি সালাতের সময়, বিধিবিধান, বাহ্যিক রুকনসমূহ ও অযুর ব্যাপারে যত্নবান; কিন্তু সে অসওয়াসার সময় স্বীয় নাফসকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা-প্রচেষ্টার বিষয়টিকে উপেক্ষা করে; ফলে সে বিভিন্ন ‘অসওয়াসা’ (কুমন্ত্রণা) ও চিন্তার পিছনে লেগে যায়।
৩. যে ব্যক্তি সালাতের সময়, বিধিবিধান ও রুকনসমূহের ব্যাপারে যত্নবান এবং যাবতীয় ‘অসওয়াসা’ (কুমন্ত্রণা) ও বাজে চিন্তা প্রতিরোধ করার ব্যাপারে স্বীয় নাফসের সাথে লড়াই করে, সে ব্যক্তি তো তার শত্রুর (শয়তানের) সাথে যুদ্ধে ব্যস্ত হয়ে যায়, যাতে সে তার সালাতকে চুরি করে নিতে না পারে। ফলে সে সালাত ও জিহাদের মধ্যেই থাকে।
৪. এমন ব্যক্তি, যখন তিনি সালাত আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে যান, তখন তিনি তার হক ও রুকনসমূহ এবং তার যাবতীয় বিধিবিধান পরিপূর্ণভাবে আদায় করেন এবং তার হৃদয় মনকে তার (সালাতের) বিধিবিধান ও হকসমূহের যত্ন ও সংরক্ষণের জন্য নিয়োজিত করেন, যাতে তার কোনো কিছু তিনি নষ্ট না করেন; এমনকি তার যাবতীয় চিন্তা-চেতনা নিয়োজিত থাকে যথাযথভাবে পরিপূর্ণতা সহকারে সালাত আদায়ের প্রতি। তার মন সালাতের বিষয়টি নিয়ে ব্যস্ত থাকে এবং তার মাধ্যমে ডুবে থাকে তার ‘রব’ আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা‘আলার ইবাদাত-বন্দেগীর মধ্যে।
৫. এমন ব্যক্তি, যখন তিনি সালাত আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে যান, তখন তিনি তার উদ্দেশ্যে অনুরূপভাবে তথা পূর্বোক্ত চতুর্থ স্তরের মুসল্লীর মত করে দাঁড়িয়ে যান; কিন্তু এটা সত্ত্বেও তিনি তার মনকে ধরে তার মহান প্রতিপালকের সমানে এমনভাবে সঁপে দিয়েছেন, তিনি যেন তার হৃদয় দিয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছেন, তাঁকে ভয় করছেন, তাঁর ভালোবাসা ও মহত্বের আবহ দিয়ে নিজেকে পরিপূর্ণ করে নিয়েছেন, মনে হয় যেন তিনি তাঁকে দেখতে পাচ্ছেন এবং প্রত্যক্ষ করছেন, আর এমতাবস্থায় ঐসব অসওয়াসা ও কুমন্ত্রণা বিলুপ্ত ও বিলীন হয়ে যায় এবং তার ও তার রব-এর মধ্যকার সকল পর্দা উঠে যায়; সুতরাং সালাতের মধ্যে তার ও অন্যের মধ্যকার এ অবস্থাটি আসমান ও যমীনের মধ্যকার সকল কিছুর চেয়ে অনেক বেশি উত্তম ও মহান, আর তার সালাতের মধ্যকার এ অবস্থাটি তাকে তার মহান রবকে নিয়ে এমনভাবে ব্যস্ত রাখে, যার ফলে তাঁকে নিয়ে তার চোখ শীতল হয়, আনন্দে আত্মরহারা হয়ে উঠে।
সুতরাং প্রথম শ্রেণী: শাস্তির মুখোমুখি হবে,
দ্বিতীয় শ্রেণী: হিসাবের মুখোমুখি হবে,
তৃতীয় শ্রেণী: ক্ষমা পাওয়ার উপযুক্ত,
চতুর্শ শ্রেণী: সাওয়াব পাবে এবং
পঞ্চম শ্রেণী: তার ‘রব’-এর নৈকট্য অর্জনে সক্ষম হবে। কারণ, সে এমন ভাগ্যবান ব্যক্তির অন্তর্ভুক্ত হবে, যার জন্য সালাতে তার চক্ষু শীতল করণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সুতরাং দুনিয়াতে যে ব্যক্তির চক্ষু শীতল হবে তার সালাতের মাধ্যমে, আখিরাতে সে ব্যক্তির চক্ষু শীতল হবে তার মহান রব-এর নৈকট্য হাসিলের মাধ্যমে এবং দুনিয়াতেও তার চক্ষু শীতল হবে তাঁকে নিয়ে; আর যে ব্যক্তির চক্ষু শীতল হলো আল্লাহকে পেয়ে, তার চোখ তো তাঁকে নিয়ে পুরাপুরিভাবেই শীতল ও পরিতৃপ্ত হলো, আর যে ব্যক্তির চক্ষু শীতল হয়নি আল্লাহ তা‘আলার মাধ্যমে, দুনিয়াতে আফসোস ও দুঃখ করতে করতে তার জীবন টুকরা টুকরা হয়ে যাবে।”
প্রিয় ভাই আমার! এ হলো সালাতের আদায়ের ক্ষেত্রে মানুষের শ্রেণি বা স্তর বিন্যাস। সুতরাং তুমি কোন শ্রেণি বা স্তরের মধ্যে আছ? তুমি নিজেই একটু হিসাব করে নাও এবং সালাতের মানদণ্ডে তা একটু ওজন করে নাও। কারণ, সালাতের মানদণ্ড ভুল করবে না!
হে আমার ভাই! এ গাফলতি ও অধঃপতনই কি তোমার শেষ পরিণতি? এ অবহেলা আর উপেক্ষা কত দিন চলবে? সুতরাং তোমার অমনোযোগিতা ও অবহেলার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। আর তোমাকে সতর্ককারীর বুকের মধ্যে তোমাকে ডাকা হচ্ছে, তুমি কি প্রস্তুত হবে না? তোমার পরিকল্পনা ও পরিচালন নীতি খুবই মন্দ।
হে আমার ভাই! মুয়াজ্জিন তোমাকে আর কত কাল ধরে ডাকবে, আর তুমি থাকবে ঘুমিয়ে? অতঃপর যখন তুমি সালাতের দিকে আস, তখন তোমার দেহ থাকে হাজির, আর মন থাকে উদাসীন! তুমি তোমার নিজেকে বল, তুমি কি সালাত আদায় করছ!! নাকি সমালোচকদেরকে দেখাচ্ছ?
নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর মাধ্যমে সালাতের বিষয়টিকে যথাযোগ্য সম্মান দেওয়ার কাজটি সম্ভব হয়ে উঠবে-
প্রথমত: সালাতের সময় ও বিধিবিধানগুলোর ব্যাপারে যত্নবান হওয়া।
দ্বিতীয়ত: তার ফরয, ওয়াজিব ও পরিপূর্ণতার বিষয়গুলো অনুসন্ধান করা।
তৃতীয়ত: সালাত আবশ্যক হওয়ার সাথে সাথে তা আদায়ে দ্রুত এগিয়ে যাওয়া।
চতুর্থত: তার কোনো ‘হক’ ছুটে গেলে সাথে সাথে দুঃখ প্রকাশ ও আফসোস করা।
* ঐ ব্যক্তির মতো, যে ব্যক্তি সালাতের জামা‘আত না পাওয়ার কারণে দুঃখিত ও ব্যথিত হয়, অথচ সে জানে যে, যদিও তার পক্ষ থেকে একাকী আদায় করা সালাত গ্রহণ করা হবে; কারণ, সে সাতাশ গুণ সাওয়াব পাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
* আর অনুরূপভাবে সে দুঃখিত হয়, যখন তার থেকে সালাতের প্রথম ওয়াক্ত ছুটে যায়, যে সময়টি আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জনের উপলক্ষ হতে পারে, অথবা তার থেকে প্রথম কাতারে শামিল হওয়ার সুযোগটি হাতছাড়া হয়ে যায়, যে প্রথম কাতারে শামিল হওয়ার ফযীলত সম্পর্কে যদি বান্দা জানতে পারত, তাহলে সে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হত এবং প্রয়োজনে লটারীর সুযোগ নিত।
* অনুরূপভাবে সে দুঃখিত হয়, যখন সালাতের মধ্যকার ভয় মিশ্রিত বিনয় (খুশু‘) এবং তাতে আল্লাহ তা‘আলার সামনে হৃদয় মনের উপস্থিতির (হুদুরুল ক্বলবের) বিষয়টি ছুটে যায়, যা সালাতের প্রাণ ও সারাংশ বলে গণ্য। সুতরাং ভয় মিশ্রিত বিনয় (খুশু‘) ও হৃদয় মনের উপস্থিতির (হুদুরুল ক্বলব) ব্যতীত আদায় করা সালাত মৃত দেহের মতো, যাতে কোনো প্রাণ নেই, আর এ জন্য বান্দার পক্ষ থেকে আল্লাহ তা‘আলা তা (সালাত) গ্রহণ করবেন না এবং তার জন্য তাকে সাওয়াব দিবেন না, যদিও দুনিয়ার বিধিবিধানগুলোর ক্ষেত্রে কোনো কোনো ফরয বিষয় থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। কারণ, বান্দা তার সালাত থেকে শুধু ততটুকু উপকার হাসিল করতে সক্ষম হবে, তার থেকে যতটুকু সে অনুধাবন করতে পেরেছে, যেমনটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إِنَّ الْعَبْدَ لَيُصَلِّي الصَّلَاةَ، و مَا كُتِبَ لَهُ إِلَّا عُشْرُهَا، تُسْعُهَا، ثُمُنُهَا، سُبُعُهَا، سُدُسُهَا، خُمُسُهَا، رُبُعُهَا، ثُلُثُهَا، نِصْفُهَا» .
“বান্দা সালাত আদায় করে এবং তার জন্য সালাত থেকে সাওয়াব বরাদ্দ হয় তার এক-দশমাংশ, এক-নবমাংশ, এক-অষ্টমাংশ, এক-সপ্তমাংশ, এক-ষষ্ঠাংশ, এক-পঞ্চমাংশ, এক-চতুর্থাংশ, এক-তৃতীয়াংশ ও তার অর্ধেক।” [আহমাদ ও আবূ দাউদ। আর আলবানী হাদীসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
«إِذَا قُمْتَ فِي صَلَاتِكَ، فَصَلِّ صَلَاةَ مُوَدِّعٍ» .
“যখন তুমি তোমার সালাতে দণ্ডায়মান হবে, তখন তুমি এমনভাবে সালাত আদায় কর, যা হবে বিদায়ী ব্যক্তির শেষ সালাতের মতো।” [আহমাদ ও ইবনু মাজাহ। আর আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
প্রথমত: সালাতের সময় ও বিধিবিধানগুলোর ব্যাপারে যত্নবান হওয়া।
দ্বিতীয়ত: তার ফরয, ওয়াজিব ও পরিপূর্ণতার বিষয়গুলো অনুসন্ধান করা।
তৃতীয়ত: সালাত আবশ্যক হওয়ার সাথে সাথে তা আদায়ে দ্রুত এগিয়ে যাওয়া।
চতুর্থত: তার কোনো ‘হক’ ছুটে গেলে সাথে সাথে দুঃখ প্রকাশ ও আফসোস করা।
* ঐ ব্যক্তির মতো, যে ব্যক্তি সালাতের জামা‘আত না পাওয়ার কারণে দুঃখিত ও ব্যথিত হয়, অথচ সে জানে যে, যদিও তার পক্ষ থেকে একাকী আদায় করা সালাত গ্রহণ করা হবে; কারণ, সে সাতাশ গুণ সাওয়াব পাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
* আর অনুরূপভাবে সে দুঃখিত হয়, যখন তার থেকে সালাতের প্রথম ওয়াক্ত ছুটে যায়, যে সময়টি আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জনের উপলক্ষ হতে পারে, অথবা তার থেকে প্রথম কাতারে শামিল হওয়ার সুযোগটি হাতছাড়া হয়ে যায়, যে প্রথম কাতারে শামিল হওয়ার ফযীলত সম্পর্কে যদি বান্দা জানতে পারত, তাহলে সে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হত এবং প্রয়োজনে লটারীর সুযোগ নিত।
* অনুরূপভাবে সে দুঃখিত হয়, যখন সালাতের মধ্যকার ভয় মিশ্রিত বিনয় (খুশু‘) এবং তাতে আল্লাহ তা‘আলার সামনে হৃদয় মনের উপস্থিতির (হুদুরুল ক্বলবের) বিষয়টি ছুটে যায়, যা সালাতের প্রাণ ও সারাংশ বলে গণ্য। সুতরাং ভয় মিশ্রিত বিনয় (খুশু‘) ও হৃদয় মনের উপস্থিতির (হুদুরুল ক্বলব) ব্যতীত আদায় করা সালাত মৃত দেহের মতো, যাতে কোনো প্রাণ নেই, আর এ জন্য বান্দার পক্ষ থেকে আল্লাহ তা‘আলা তা (সালাত) গ্রহণ করবেন না এবং তার জন্য তাকে সাওয়াব দিবেন না, যদিও দুনিয়ার বিধিবিধানগুলোর ক্ষেত্রে কোনো কোনো ফরয বিষয় থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। কারণ, বান্দা তার সালাত থেকে শুধু ততটুকু উপকার হাসিল করতে সক্ষম হবে, তার থেকে যতটুকু সে অনুধাবন করতে পেরেছে, যেমনটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إِنَّ الْعَبْدَ لَيُصَلِّي الصَّلَاةَ، و مَا كُتِبَ لَهُ إِلَّا عُشْرُهَا، تُسْعُهَا، ثُمُنُهَا، سُبُعُهَا، سُدُسُهَا، خُمُسُهَا، رُبُعُهَا، ثُلُثُهَا، نِصْفُهَا» .
“বান্দা সালাত আদায় করে এবং তার জন্য সালাত থেকে সাওয়াব বরাদ্দ হয় তার এক-দশমাংশ, এক-নবমাংশ, এক-অষ্টমাংশ, এক-সপ্তমাংশ, এক-ষষ্ঠাংশ, এক-পঞ্চমাংশ, এক-চতুর্থাংশ, এক-তৃতীয়াংশ ও তার অর্ধেক।” [আহমাদ ও আবূ দাউদ। আর আলবানী হাদীসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
«إِذَا قُمْتَ فِي صَلَاتِكَ، فَصَلِّ صَلَاةَ مُوَدِّعٍ» .
“যখন তুমি তোমার সালাতে দণ্ডায়মান হবে, তখন তুমি এমনভাবে সালাত আদায় কর, যা হবে বিদায়ী ব্যক্তির শেষ সালাতের মতো।” [আহমাদ ও ইবনু মাজাহ। আর আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
হে প্রিয় ভাই আমার! নিম্নে আলোচিত এগুলো হলো এমন কিছু নসীহত ও উপদেশ, যা শরী‘আতের দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে সালাতের যত্ন ও আদায়ের ব্যাপারে সহযোগিতা করবে এবং যেগুলো সালাতকে গ্রহণযোগ্য মানে উন্নীত করবে ও তার থেকে ফায়দা অর্জনের বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
১. সালাতের জন্য তোমার অযুকে সুন্দর কর: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَتَوَضَّأُ فَيُحْسِنُ وُضُوءَهُ، ثُمَّ يَقُومُ فَيُصَلِّى رَكْعَتَيْنِ، مُقْبِلٌ عَلَيْهِمَا بِقَلْبِهِ وَوَجْهِهِ إِلاَّ وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ» .
“যে কোনো মুসলিম ব্যক্তি অযু করবে এবং তার অযুকে সন্দরভাবে সম্পন্ন করবে, অতঃপর দাঁড়িয়ে যাবে এবং দুই রাকাত সালাত আদায় করবে তার প্রতি তার হৃদয়-মন ও চেহারাকে নিবেদিত করে, সে ব্যক্তির জন্য জান্নাত ওয়াজিব (আবশ্যক) হয়ে যাবে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৭৬]
২. অযু করা অবস্থায় তোমার ঘর থেকে মাসজিদের উদ্দেশ্যে বের হও: কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ خَرَجَ مِنْ بَيْتِهِ مُتَطَهِّرًا إِلَى صَلَاةٍ مَكْتُوبَةٍ، فَأَجْرُهُ كَأَجْرِ الْحَاجِّ الْمُحْرِمِ» .
“যে ব্যক্তি পবিত্র অবস্থায় তার ঘর থেকে ফরয সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে বের হয়, তার জন্য ইহরাম অবস্থায় হাজ পালনকারীর সাওয়াবের মতো সাওয়াবের ব্যবস্থা থাকবে।” [আহমাদ ও আবূ দাউদ। আর আলবানী হাদীসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।]
৩. প্রথম ওয়াক্তে সালাত আদায়ের জন্য আগ্রহী হও: কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “সময় মতো সালাত আদায় করা সর্বোত্তম আমল।” [সহীহ বুখারী ও মুসলিম।]
৪. জামা‘আতে সালাত আদায়ের ব্যাপারে আগ্রহী হও: কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«صلاة الجماعة تفضل صلاة الفذ بسبع وعشرين درجة» .
“জামা‘য়াতে আদায়কৃত সালাতের ফযীলত একাকী আদায়কৃত সালাতের চেয়ে সাতাশ গুণ বেশি।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬১৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫০৯]
৫. প্রথম তাকবীর তথা তাকবীরে তাহরীমায় শামিল হওয়ার জন্য আগ্রহী হও। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«أن مَنْ صَلَّى لِلَّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا فِي جَمَاعَةٍ يُدْرِكُ التَّكْبِيرَةَ الْأُولَى، كُتِبَتْ لَهُ بَرَاءَتَانِ : بَرَاءَةٌ مِنْ النَّارِ، وَبَرَاءَةٌ مِنْ النِّفَاقِ» .
আল্লাহর উদ্দেশ্যে চল্লিশ দিন প্রথম তাকবীরের সাথে জামা‘আতে সালাত আদায় করবে, তার জন্য সুনিশ্চিতভাবে দু’টি মুক্তির ব্যবস্থা করা হবে: একটি হলো জাহান্নাম থেকে মুক্তি, আর অপরটি হলো নিফাকী চরিত্রের কলঙ্ক থেকে মুক্তি।” [আহমাদ ও তিরমিযী। আর আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
৬. পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়ার জন্য আগ্রহী হও। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«بَشِّرْ الْمَشَّائِينَ فِي الظُّلَمِ إِلَى الْمَسَاجِدِ بِالنُّورِ التَّامِّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» .
“যারা অন্ধকারে পায়ে হেঁটে মসজিদে আসা-যাওয়া করে, তাদেরকে কিয়ামতের দিনে পরিপূর্ণ নূর (আলো) প্রাপ্তির সুসংবাদ দিয়ে দাও।” [আবূ দাউদ ও তিরমিযী। আর আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
৭. তোমার মনকে সালাতের মধ্যে উপস্থিত রাখ: ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন: “বান্দা তখনই শুধু তাকে নিজেকে সালাতের মধ্যে উপস্থিত রাখতে এবং তাতে তার ‘রব’ আল্লাহ তা‘আলার সাথে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে সক্ষম হবে, যখন সে তার প্রবৃত্তি ও আবেগকে বশীভূত করবে, নতুবা অন্তরকে প্রবৃত্তি বশীভূত করে ফেলবে, আবেগ তাকে দখল করে নিবে এবং শয়তান তার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মত আসন পেয়ে যাবে। ফলে সে কীভাবে (সালাতের মধ্যে) অসওয়াসা ও চিন্তাভাবনা মুক্ত থাকবে।”
৮. তুমি তোমার মনকে আল্লাহর ঘরের সাথে সম্পৃক্ত করে নাও এবং মসজিদের দিকে বেশি বেশি পদচিহ্ন এঁকে দাও। আর এক সালাত আদায় করার পর আরেক সালাতের অপেক্ষায় থাক। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাত জনের একজন বলে উল্লেখ করেছেন, যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ছায়ায় ছায়া দিবেন, যে দিন তাঁর ছায়া ব্যতীত আর কোনো ছায়া থাকবে না; তিনি বলেন:
«وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ بِالْمَسَاجِدِ» .
“আর এমন ব্যক্তি, যার অন্তর মসজিদের সাথে লেগে থাকে...।” [বুখারী, হাদীস নং ১৩৫৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪২৭]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
«أَلاَ أَدُلُّكُمْ عَلَى مَا يَمْحُو اللَّهُ بِهِ الْخَطَايَا , وَيَرْفَعُ بِهِ الدَّرَجَاتِ؟ » قَالُوا : بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ . قَالَ : « إِسْبَاغُ الْوُضُوءِ عَلَى الْمَكَارِهِ وَكَثْرَةُ الْخُطَا إِلَى الْمَسَاجِدِ وَانْتِظَارُ الصَّلاَةِ بَعْدَ الصَّلاَةِ فَذَلِكُمُ الرِّبَاطُ» .
“আমি কি তোমাদেরকে এমন (কাজের) কথা বলব না, যার দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা পাপরাশি দূর করে দিবেন এবং মর্যাদা উঁচু করে দিবেন? সাহাবীগণ বললেন: হ্যাঁ, অবশ্যই, হে আল্লাহর রাসূল! তখন তিনি বললেন, তা হলো: অসুবিধা ও কষ্ট সত্ত্বেও পরিপূর্ণভাবে অযু করা, মসজিদে আসার জন্য বেশি বেশি পদচারণা এবং এক সালাতের পর অন্য সালাতের জন্য অপেক্ষা করা। আর জেনে রাখ, এটিই হলো রিবাত তথা নিজেকে আটকে রাখা।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬১০]
৯. সালাতের বিধিবিধানগুলো শিখে নাও: তুমি জেনে নাও কীভাবে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের ব্যাপারে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন এবং এ জন্য ইবনুল কাইয়্যেম রহ.-এর ‘যাদুল মা‘আদ’-এর মতো কিছু উপকারী বই পুস্তকের সহযোগিতা নাও।
১০. ফরয সালাতের সাথে সংশ্লিষ্ট আগে-পরের সুন্নাত সালাতগুলোর ব্যাপারে আগ্রহী হও এবং তা ঘরের মধ্যে আদায়ের জন্য যত্নবান হও। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«فضل صلاة الرجل في بيته على صلاته حيث يراه الناس كفضل المكتوبة على النافلة» .
“যেখানে ব্যক্তির সালাত আদায়ের বিষয়টি (ফরয সালাত ব্যতীত) জনগণ দেখতে পায় সেখানে তার আদায়কৃত সালাতের উপর তার ঘরের মধ্যে আদায়কৃত সালাত মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব তেমন, নফল সালাতের ওপর ফরয সালাতের মর্যাদা যেমন।” [ত্ববারানী। আর আলবানী হাদীসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।]
১১. এমনভাবে দীর্ঘ রাত জেগে থাকা থেকে সাবধান থাকবে, যা সালাতকে হাতছাড়া করা এবং তা আদায় না করে ঘুমিয়ে থাকার দিকে নিয়ে যাবে।
১২. বেশি বেশি খাওয়া, পান করা, ঘুমানো, হাসাহাসি ও জনগণের সাথে আড্ডা মারা থেকে সাবধান থাকবে। কারণ, তা সালাত আদায়ের বিষয়টিকে জটিল ও কষ্টকর করে ফেলবে।
১৩. ফজরের সালাতের জন্য এমন ব্যক্তির সাহায্য চাও, যিনি টেলিফোনের মাধ্যমে অথবা ঘরের কলিং বেলের মাধ্যমে তোমাকে জাগিয়ে দেবেন, আর ঘড়ি বা মোবাইলে সালাতের সময় অনুসারে এলার্ম বা সতর্ক সংকেত দিয়ে রাখ।
১৪. একই মসজিদে সব সময় ফজরের সালাত আদায় কর, যাতে তুমি যখন কোনো সময় অনুপস্থিত থাক, তখন মাসজিদের মুসল্লীগণ তোমার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতে পারে।
১৫. যেসব আয়াত তুমি (সালাতের মধ্যে) পাঠ কর অথবা ইমাম যেসব আয়াত তিলাওয়াত করে, তুমি সেসব আয়াত নিয়ে চিন্তা-গবেষণা কর এবং হৃদয় দিয়ে তার অর্থসমূহের মধ্যে বিচরণ বা পরিভ্রমণ কর।
১৬. পূর্ববর্তী সৎ ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক সালাতের যত্নের ব্যাপারে তাঁদের উচ্চ চিন্তার ইতিহাস ও তথ্যসমূহ অধ্যয়ন কর। কারণ, তা তোমাকে তাঁদের অনুসরণের দিকে আহ্বান করবে।
১৭. সালাতের মধ্যে প্রবেশ করার পূর্বে তোমার মনের মধ্যে আল্লাহর মহত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের কথা স্মরণ কর। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إن أحدكم إذا قام يصلي، فإنما يناجي ربه، فلينظر كيف يناجيه» .
“তোমাদের কেউ যখন সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে দণ্ডায়মান হয়, তখন সে তার ‘রব’-এর সাথে চুপে চুপে কথা বলে। অতএব, সে যেন লক্ষ্য রাখে কীভাবে সে তাঁর সাথে চুপে চুপে কথা বলবে।” [হাকেম, আর আলবানী হাদীসটিকে ‘সহীহ’ বলেছেন।]
১৮. সালাত আদায় করার পর শরী‘আতসম্মত দো‘আ ও যিকিরসমূহ পাঠ করার ব্যাপারে আগ্রহী হও এবং তা পাঠ করার পূর্বে মসজিদ থেকে বের হওয়ার প্রতিযোগিতায় মেতে উঠবে না।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে এবং তোমাদেরকে সালাতের ব্যাপারে যত্নবান ও বিনয়ী বান্দাগণের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন, যারা যুগে যুগে সালাতের দ্বারা উপকৃত হয়েছেন।
আর আমাদের শেষ ধ্বনি হউক ‘সকল প্রশংসা সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহর জন্য নিবেদিত।’
সমাপ্ত
১. সালাতের জন্য তোমার অযুকে সুন্দর কর: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَتَوَضَّأُ فَيُحْسِنُ وُضُوءَهُ، ثُمَّ يَقُومُ فَيُصَلِّى رَكْعَتَيْنِ، مُقْبِلٌ عَلَيْهِمَا بِقَلْبِهِ وَوَجْهِهِ إِلاَّ وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ» .
“যে কোনো মুসলিম ব্যক্তি অযু করবে এবং তার অযুকে সন্দরভাবে সম্পন্ন করবে, অতঃপর দাঁড়িয়ে যাবে এবং দুই রাকাত সালাত আদায় করবে তার প্রতি তার হৃদয়-মন ও চেহারাকে নিবেদিত করে, সে ব্যক্তির জন্য জান্নাত ওয়াজিব (আবশ্যক) হয়ে যাবে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৭৬]
২. অযু করা অবস্থায় তোমার ঘর থেকে মাসজিদের উদ্দেশ্যে বের হও: কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ خَرَجَ مِنْ بَيْتِهِ مُتَطَهِّرًا إِلَى صَلَاةٍ مَكْتُوبَةٍ، فَأَجْرُهُ كَأَجْرِ الْحَاجِّ الْمُحْرِمِ» .
“যে ব্যক্তি পবিত্র অবস্থায় তার ঘর থেকে ফরয সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে বের হয়, তার জন্য ইহরাম অবস্থায় হাজ পালনকারীর সাওয়াবের মতো সাওয়াবের ব্যবস্থা থাকবে।” [আহমাদ ও আবূ দাউদ। আর আলবানী হাদীসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।]
৩. প্রথম ওয়াক্তে সালাত আদায়ের জন্য আগ্রহী হও: কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “সময় মতো সালাত আদায় করা সর্বোত্তম আমল।” [সহীহ বুখারী ও মুসলিম।]
৪. জামা‘আতে সালাত আদায়ের ব্যাপারে আগ্রহী হও: কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«صلاة الجماعة تفضل صلاة الفذ بسبع وعشرين درجة» .
“জামা‘য়াতে আদায়কৃত সালাতের ফযীলত একাকী আদায়কৃত সালাতের চেয়ে সাতাশ গুণ বেশি।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬১৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫০৯]
৫. প্রথম তাকবীর তথা তাকবীরে তাহরীমায় শামিল হওয়ার জন্য আগ্রহী হও। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«أن مَنْ صَلَّى لِلَّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا فِي جَمَاعَةٍ يُدْرِكُ التَّكْبِيرَةَ الْأُولَى، كُتِبَتْ لَهُ بَرَاءَتَانِ : بَرَاءَةٌ مِنْ النَّارِ، وَبَرَاءَةٌ مِنْ النِّفَاقِ» .
আল্লাহর উদ্দেশ্যে চল্লিশ দিন প্রথম তাকবীরের সাথে জামা‘আতে সালাত আদায় করবে, তার জন্য সুনিশ্চিতভাবে দু’টি মুক্তির ব্যবস্থা করা হবে: একটি হলো জাহান্নাম থেকে মুক্তি, আর অপরটি হলো নিফাকী চরিত্রের কলঙ্ক থেকে মুক্তি।” [আহমাদ ও তিরমিযী। আর আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
৬. পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়ার জন্য আগ্রহী হও। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«بَشِّرْ الْمَشَّائِينَ فِي الظُّلَمِ إِلَى الْمَسَاجِدِ بِالنُّورِ التَّامِّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» .
“যারা অন্ধকারে পায়ে হেঁটে মসজিদে আসা-যাওয়া করে, তাদেরকে কিয়ামতের দিনে পরিপূর্ণ নূর (আলো) প্রাপ্তির সুসংবাদ দিয়ে দাও।” [আবূ দাউদ ও তিরমিযী। আর আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
৭. তোমার মনকে সালাতের মধ্যে উপস্থিত রাখ: ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন: “বান্দা তখনই শুধু তাকে নিজেকে সালাতের মধ্যে উপস্থিত রাখতে এবং তাতে তার ‘রব’ আল্লাহ তা‘আলার সাথে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে সক্ষম হবে, যখন সে তার প্রবৃত্তি ও আবেগকে বশীভূত করবে, নতুবা অন্তরকে প্রবৃত্তি বশীভূত করে ফেলবে, আবেগ তাকে দখল করে নিবে এবং শয়তান তার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মত আসন পেয়ে যাবে। ফলে সে কীভাবে (সালাতের মধ্যে) অসওয়াসা ও চিন্তাভাবনা মুক্ত থাকবে।”
৮. তুমি তোমার মনকে আল্লাহর ঘরের সাথে সম্পৃক্ত করে নাও এবং মসজিদের দিকে বেশি বেশি পদচিহ্ন এঁকে দাও। আর এক সালাত আদায় করার পর আরেক সালাতের অপেক্ষায় থাক। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাত জনের একজন বলে উল্লেখ করেছেন, যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ছায়ায় ছায়া দিবেন, যে দিন তাঁর ছায়া ব্যতীত আর কোনো ছায়া থাকবে না; তিনি বলেন:
«وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ بِالْمَسَاجِدِ» .
“আর এমন ব্যক্তি, যার অন্তর মসজিদের সাথে লেগে থাকে...।” [বুখারী, হাদীস নং ১৩৫৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪২৭]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
«أَلاَ أَدُلُّكُمْ عَلَى مَا يَمْحُو اللَّهُ بِهِ الْخَطَايَا , وَيَرْفَعُ بِهِ الدَّرَجَاتِ؟ » قَالُوا : بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ . قَالَ : « إِسْبَاغُ الْوُضُوءِ عَلَى الْمَكَارِهِ وَكَثْرَةُ الْخُطَا إِلَى الْمَسَاجِدِ وَانْتِظَارُ الصَّلاَةِ بَعْدَ الصَّلاَةِ فَذَلِكُمُ الرِّبَاطُ» .
“আমি কি তোমাদেরকে এমন (কাজের) কথা বলব না, যার দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা পাপরাশি দূর করে দিবেন এবং মর্যাদা উঁচু করে দিবেন? সাহাবীগণ বললেন: হ্যাঁ, অবশ্যই, হে আল্লাহর রাসূল! তখন তিনি বললেন, তা হলো: অসুবিধা ও কষ্ট সত্ত্বেও পরিপূর্ণভাবে অযু করা, মসজিদে আসার জন্য বেশি বেশি পদচারণা এবং এক সালাতের পর অন্য সালাতের জন্য অপেক্ষা করা। আর জেনে রাখ, এটিই হলো রিবাত তথা নিজেকে আটকে রাখা।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬১০]
৯. সালাতের বিধিবিধানগুলো শিখে নাও: তুমি জেনে নাও কীভাবে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের ব্যাপারে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন এবং এ জন্য ইবনুল কাইয়্যেম রহ.-এর ‘যাদুল মা‘আদ’-এর মতো কিছু উপকারী বই পুস্তকের সহযোগিতা নাও।
১০. ফরয সালাতের সাথে সংশ্লিষ্ট আগে-পরের সুন্নাত সালাতগুলোর ব্যাপারে আগ্রহী হও এবং তা ঘরের মধ্যে আদায়ের জন্য যত্নবান হও। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«فضل صلاة الرجل في بيته على صلاته حيث يراه الناس كفضل المكتوبة على النافلة» .
“যেখানে ব্যক্তির সালাত আদায়ের বিষয়টি (ফরয সালাত ব্যতীত) জনগণ দেখতে পায় সেখানে তার আদায়কৃত সালাতের উপর তার ঘরের মধ্যে আদায়কৃত সালাত মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব তেমন, নফল সালাতের ওপর ফরয সালাতের মর্যাদা যেমন।” [ত্ববারানী। আর আলবানী হাদীসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।]
১১. এমনভাবে দীর্ঘ রাত জেগে থাকা থেকে সাবধান থাকবে, যা সালাতকে হাতছাড়া করা এবং তা আদায় না করে ঘুমিয়ে থাকার দিকে নিয়ে যাবে।
১২. বেশি বেশি খাওয়া, পান করা, ঘুমানো, হাসাহাসি ও জনগণের সাথে আড্ডা মারা থেকে সাবধান থাকবে। কারণ, তা সালাত আদায়ের বিষয়টিকে জটিল ও কষ্টকর করে ফেলবে।
১৩. ফজরের সালাতের জন্য এমন ব্যক্তির সাহায্য চাও, যিনি টেলিফোনের মাধ্যমে অথবা ঘরের কলিং বেলের মাধ্যমে তোমাকে জাগিয়ে দেবেন, আর ঘড়ি বা মোবাইলে সালাতের সময় অনুসারে এলার্ম বা সতর্ক সংকেত দিয়ে রাখ।
১৪. একই মসজিদে সব সময় ফজরের সালাত আদায় কর, যাতে তুমি যখন কোনো সময় অনুপস্থিত থাক, তখন মাসজিদের মুসল্লীগণ তোমার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতে পারে।
১৫. যেসব আয়াত তুমি (সালাতের মধ্যে) পাঠ কর অথবা ইমাম যেসব আয়াত তিলাওয়াত করে, তুমি সেসব আয়াত নিয়ে চিন্তা-গবেষণা কর এবং হৃদয় দিয়ে তার অর্থসমূহের মধ্যে বিচরণ বা পরিভ্রমণ কর।
১৬. পূর্ববর্তী সৎ ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক সালাতের যত্নের ব্যাপারে তাঁদের উচ্চ চিন্তার ইতিহাস ও তথ্যসমূহ অধ্যয়ন কর। কারণ, তা তোমাকে তাঁদের অনুসরণের দিকে আহ্বান করবে।
১৭. সালাতের মধ্যে প্রবেশ করার পূর্বে তোমার মনের মধ্যে আল্লাহর মহত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের কথা স্মরণ কর। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إن أحدكم إذا قام يصلي، فإنما يناجي ربه، فلينظر كيف يناجيه» .
“তোমাদের কেউ যখন সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে দণ্ডায়মান হয়, তখন সে তার ‘রব’-এর সাথে চুপে চুপে কথা বলে। অতএব, সে যেন লক্ষ্য রাখে কীভাবে সে তাঁর সাথে চুপে চুপে কথা বলবে।” [হাকেম, আর আলবানী হাদীসটিকে ‘সহীহ’ বলেছেন।]
১৮. সালাত আদায় করার পর শরী‘আতসম্মত দো‘আ ও যিকিরসমূহ পাঠ করার ব্যাপারে আগ্রহী হও এবং তা পাঠ করার পূর্বে মসজিদ থেকে বের হওয়ার প্রতিযোগিতায় মেতে উঠবে না।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে এবং তোমাদেরকে সালাতের ব্যাপারে যত্নবান ও বিনয়ী বান্দাগণের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন, যারা যুগে যুগে সালাতের দ্বারা উপকৃত হয়েছেন।
আর আমাদের শেষ ধ্বনি হউক ‘সকল প্রশংসা সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহর জন্য নিবেদিত।’
সমাপ্ত
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন