HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সালাত আদায়ের জন্য আসো

লেখকঃ খালেদ আবূ সালেহ

সালাত: ফযীলত ও ফলাফলসমূহ
১. আল্লাহ তা‘আলা সালাতকে মি‘রাজের রজনীতে তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর ফরয করেছেন, তখন তিনি আকাশে অবস্থান করছিলেন। এটা সালাতের গুরুত্ব, মর্যাদা ও মহত্বের প্রমাণ বহনকারী অন্যতম দলীল। কারণ, অপরাপর সকল ইবাদাতের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা যখন নির্দেশনা নাযিল করেছেন তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথিবীতে অবস্থান করছিলেন।

২. সালাত হলো একমাত্র রুকন, যা প্রতিদিন পাঁচবার আদায় করতে হয় এবং যা হায়েয ও নিফাসগ্রস্ত নারী ব্যতীত অন্য কোনো অবস্থাতেই কারও জন্য শিথিল বা প্রত্যাহার হয় না।

৩. আর সালাত হলো সর্বোত্তম আমল, সবচেয়ে সুন্দর কাজ এবং মহান আল্লাহর সবচেয়ে নৈকট্যপূর্ণ আনুগত্য। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«أفضَلُ الْأَعْمَالِ الصَّلَاةُ عَلَى وَقْتِهَا» .

“সর্বোত্তম আমল হলো সময় মতো সালাত আদায় করা।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫০৪ ও ৫৬২৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬৪]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:

«اسْتَقِيمُوا وَلَنْ تُحْصُوا ، وَاعْلَمُوا أَنَّ خَيْرَ أَعْمَالِكُمُ الصَّلاةُ ، وَلَنْ يُحَافِظَ عَلَى الْوُضُوءِ إِلا مُؤْمِنٌ» .

“তোমরা সঠিকভাবে চল তবে কখনও তোমরা যথার্থভাবে সে হক্ব আদায় করতে সমর্থ হবে না। আর জেনে রাখ, তোমাদের শ্রেষ্ঠ আমল হলো সালাত। আর মুমিনই কেবল সদা অযুর ওপর থাকতে সচেষ্ট থাকে।” [আহমাদ ও হাকেম। আর আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]

৪. আর সালাত হলো দীনের খুঁটি, বিশ্বাসের ভিত্তি এবং তাওহীদপন্থী তথা আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী ব্যক্তিবর্গের চোখের সান্ত্বনা বা প্রিয়বস্তু। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

« رأس الأمر الإسلام , و عموده الصلاة , و ذروة سنامه الجهاد في سبيل الله» .

“প্রধান বিষয় হলো ইসলাম, আর তার খুঁটি হলো সালাত এবং তার সর্বোচ্চ চূড়া হলো জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ (আল্লাহর পথে সংগ্রাম করা)।” [আহমদ ও তিরমিযী; আর আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]

৫. আর সালাত হলো ইসলামের প্রমাণ, ঈমানের নিদর্শন এবং মানব জীবনের সুরক্ষা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿فَإِن تَابُواْ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُاْ ٱلزَّكَوٰةَ فَإِخۡوَٰنُكُمۡ فِي ٱلدِّينِۗ﴾ [ التوبة : ١١ ]

“অতএব তারা যদি তাওবা করে, সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয়, তবে দীনের মধ্যে তারা তোমাদের ভাই।” [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১১]

৬. আর সালাত হলো নিফাকী থেকে মুক্ত থাকা এবং সত্য ও শান্তির ঠিকানা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«مَنْ صَلَّى لِلَّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا فِي جَمَاعَةٍ ، يُدْرِكُ التَّكْبِيرَةَ الْأُولَى، كُتِبَتْ لَهُ بَرَاءَتَانِ : بَرَاءَةٌ مِنْ النَّارِ ، وَبَرَاءَةٌ مِنْ النِّفَاقِ» .

“যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে চল্লিশ দিন প্রথম তাকবীরের সাথে জামা‘আতে সালাত আদায় করবে, তার জন্য সুনিশ্চিতভাবে দু’টি মুক্তির ব্যবস্থা করা হবে: একটি হলো জাহান্নাম থেকে মুক্তি, আর অপরটি হলো নিফাকী চরিত্রের কলঙ্ক থেকে মুক্তি।” [আহমাদ। আর আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]

৭. সালাত হলো একটি উত্তম বিষয়, শরী‘আতের সবচেয়ে লাভজনক বিধান এবং ভয় ও বিনয়ের জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় আনুগত্য। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«الصَّلاةُ خَيْر مَوْضُوع ، فَمَنِ استطاعَ أن يستكثرَ فليستكثرْ» .

“সালাত একটি উত্তম বিষয়। সুতরাং যে ব্যক্তি বেশি বেশি সালাত আদায় করতে সক্ষম, সে যেন বেশি বেশি সালাত আদায় করে।” [আহমাদ। আর আলবানী হাদীসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।]

৮. আর সালাত হলো দয়াময় করুণাময় আল্লাহর নির্দেশ, আদনান বংশীয় নবীর জোরালো অসীয়ত এবং মুসলিম ও মুমিনগণের বিশেষ প্রতীক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿حَٰفِظُواْ عَلَى ٱلصَّلَوَٰتِ وَٱلصَّلَوٰةِ ٱلۡوُسۡطَىٰ وَقُومُواْ لِلَّهِ قَٰنِتِينَ ٢٣٨﴾ [ البقرة : ٢٣٨ ]

“তোমরা সালাতের প্রতি যত্নবান হবে, বিশেষত মধ্যবর্তী সালাতের এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে তোমরা দাঁড়াবে বিনীতভাবে।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৩৮]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿وَأَقِمِ ٱلصَّلَوٰةَ لِذِكۡرِيٓ ١٤﴾ [ طه : ١٤ ]

“আর আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম করুন।” [সূরা ত্বহা, আয়াত: ১৪]

৯. আর সালাত হলো মর্যাদা বৃদ্ধিকারী, মন্দ দূরকারী এবং গুনাহ ও পাপরাশি মোচনকারী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«أَرَأَيْتُمْ لَوْ أَنَّ نَهْرًا بِبَابِ أَحَدِكُمْ يَغْتَسِلُ مِنْهُ كُلَّ يَوْمٍ خَمْسَ مَرَّاتٍ هَلْ يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَىْءٌ ؟ » . قَالُوا : لاَ يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَىْءٌ . قَالَ : « فَذَلِكَ مَثَلُ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ يَمْحُو اللَّهُ بِهِنَّ الْخَطَايَا» .

“তোমরা কি মনে কর, যদি তোমাদের কারো দরজায় একটি পানির নহর থাকে, যাতে সে দৈনিক পাঁচবার গোসল করে, তার শরীরে কি কোনো ময়লা থাকতে পারে? তাঁরা (সাহাবীগণ) উত্তরে বললেন: না, তার শরীরে কোনো ময়লা থাকতে পারে না। তখন তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন: পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের উদাহরণ এরকমই, এগুলোর বিনিময়ে আল্লাহ তা‘আলা তার গুনাহরাশি মাফ করে দেন।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৫৪]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:

«مَا مِنِ امْرِئٍ مُسْلِمٍ تَحْضُرُهُ صَلاَةٌ مَكْتُوبَةٌ فَيُحْسِنُ وُضُوءَهَا وَخُشُوعَهَا وَرُكُوعَهَا إِلاَّ كَانَتْ كَفَّارَةً لِمَا قَبْلَهَا مِنَ الذُّنُوبِ , مَا لَمْ يُؤْتِ كَبِيرَةً , وَذَلِكَ الدَّهْرَ كُلَّهُ» .

“কোনো মুসলিম ব্যক্তির যখন কোনো ফরয সালাতের ওয়াক্ত হয়, আর সে সালাতের অযুকে উত্তমরূপে আদায় করে এবং সালাতের বিনয় (খুশূ) ও রুকূ সুন্দরভাবে আদায় করে, তাহলে তার এ সালাত তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহের কাফফারা হয়ে যাবে, যদি না সে কবীরা গুনাহে লিপ্ত হয়। আর এ অবস্থা সর্বযুগেই বিদ্যমান।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৬৫]

১০. আর সালাত জাহান্নাম থেকে নিরাপত্তাদানকারী, বিপদ-আপদ থেকে রক্ষাকারী, মহা শক্তিধর আল্লাহর শাস্তির হাত থেকে মুক্তিদাতা এবং সৎ ও ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিবর্গের সাথে জান্নাতের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে সফলতা দানকারী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«لَنْ يَلِجَ النَّارَ أَحَدٌ صَلَّى قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا » يَعْنِى الْفَجْرَ وَالْعَصْرَ» .

“সে ব্যক্তি কখনও জাহান্নামে প্রবেশ করবে না, যে ব্যক্তি সূর্য উদয়ের পূর্বে এবং সূর্যাস্তের পূর্বে সালাত আদায় করেছে অর্থাৎ ফজর ও আসরের সালাত আদায় করেছে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৪৬৮]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:

مَنْ صَلَّى الصُّبْحَ فَهُوَ فِى ذِمَّةِ اللَّهِ، فَانْظُرْ يَا ابْنَ آدَمَ، لا يَطْلُبَنَّكُمُ اللَّهُ بِشَيْءٍ مِنْ ذِمَّتِهِ» .

“যে ব্যক্তি ফজরের সালাত আদায় করেছে, সে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার দায়িত্বে বা তত্ত্বাবধানে চলে গিয়েছে। সুতরাং হে আদম সন্তান! তুমি লক্ষ্য রাখবে, আল্লাহ যেন তাঁর আপন দায়িত্বের কোনো বিষয় সম্পর্কে তোমাদের বিপক্ষে বাদী না হন।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫২৫]

১১. আর সালাত হচ্ছে সাহায্য ও বিজয়ের ঠিকানা এবং স্বীকৃতি ও সফলতার সনদ, আর সকাল ও সন্ধ্যার আমলসমূহের মধ্য থেকে বান্দাকে যে বিষয়ে সর্বপ্রথম জবাবদিহি করতে হবে তা হলো সালাত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿قَدۡ أَفۡلَحَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ١ ٱلَّذِينَ هُمۡ فِي صَلَاتِهِمۡ خَٰشِعُونَ ٢﴾ [ المؤمنون : ١، ٢ ]

“অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মুমিনগণ, যারা তাদের সালাতে ভয়ে অবনত।” [সূরা আল-মুমিনূন, আয়াত: ১-২]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿وَٱلَّذِينَ هُمۡ عَلَىٰ صَلَوَٰتِهِمۡ يُحَافِظُونَ ٩ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡوَٰرِثُونَ ١٠ ٱلَّذِينَ يَرِثُونَ ٱلۡفِرۡدَوۡسَ هُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ ١١﴾ [ المؤمنون : ٩، ١١ ]

“আর যারা নিজেদের সালাতে থাকে যত্নবান, তারাই হবে অধিকারী, যারা অধিকারী হবে ফিরদাউসের, যাতে তারা হবে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী।” [সূরা আল-মুমিনূন, আয়াত: ৯-১১]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«إِنَّمَا يَنْصُرُ اللَّهُ هَذِهِ الْأُمَّةَ بِضَعِيفِهَا : بِدَعْوَتِهِمْ، وَصَلَاتِهِمْ، وَإِخْلَاصِهِمْ» .

“আল্লাহ তা‘আলা তো এ উম্মাতকে শুধু তাদের দুর্বল মুহূর্তে তথা তাদের দো‘আ, সালাত ও একনিষ্ঠতার বিনিময়ে সাহায্য করেন।” [নাসাঈ, হাদীস নং ৩১৭৮। আর আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«صَلاةٌ فِي إِثْرِ صَلاةٍ لا لَغْوَ بَيْنَهُمَا ، كِتَابٌ فِي عِلِّيِّينَ» .

“এক সালাতের পর আরেক সালাত -এ দুই সালাতের মাঝখানে কোনো অনর্থক কথা বা কাজ না হলে বিষয়টি ‘ইল্লীনে লিপিবদ্ধ হয়ে যায়।” [আবূ দাউদ, হাদীস নং ১২৯০। আর আলবানী হাদীসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«أول ما يحاسب عليه العبد يوم القيامة الصلاةُ ، فإن صلُحتْ صلح سائر عمله ، وإن فسدت فسد سائر عمله» .

“কিয়ামতের দিনে বান্দাকে যে আমলের ব্যাপারে সর্বপ্রথম জবাবদিহি করতে হবে তা হলো সালাত। সুতরাং সালাতের বিষয়টি যদি সঠিক হয়, তাহলে তার সকল আমল সঠিক বলে গণ্য হবে, আর যদি সালাতের বিষয়টি বেঠিক বা বিপর্যস্ত হয়, তাহলো তার সকল আমল বাতিল বলে গণ্য হবে।” [ত্ববারানী ও দ্বিয়া। আর আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]

১২. আর সালাত হচ্ছে চলার পথের পাথেয়, আত্মার শান্তি, অঙ্গ-প্রতঙ্গসমূহের প্রশান্তি, অন্তরের আলো, মনের পবিত্রতা, হৃদয়ের নিরাপত্তা এবং মুক্তির সনদ।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿مُّحَمَّدٞ رَّسُولُ ٱللَّهِۚ وَٱلَّذِينَ مَعَهُۥٓ أَشِدَّآءُ عَلَى ٱلۡكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَيۡنَهُمۡۖ تَرَىٰهُمۡ رُكَّعٗا سُجَّدٗا يَبۡتَغُونَ فَضۡلٗا مِّنَ ٱللَّهِ وَرِضۡوَٰنٗاۖ سِيمَاهُمۡ فِي وُجُوهِهِم مِّنۡ أَثَرِ ٱلسُّجُودِۚ﴾ [ الفتح : ٢٩ ]

“মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল আর তাঁর সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর, তাদের পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি তাদেরকে রুকূ ও সাজদাহ’য় অবনত দেখবেন। তাদের লক্ষণ তাদের মুখমণ্ডলে সাজদাহর প্রভাবে পরিস্ফুট।” [সূরা আল-ফাতহ, আয়াত: ২৯]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَلَقَدۡ نَعۡلَمُ أَنَّكَ يَضِيقُ صَدۡرُكَ بِمَا يَقُولُونَ ٩٧﴾ [ الحجر : ٩٧ ]

“আর অবশ্যই আমরা জানি, তারা যা বলে তাতে আপনার অন্তর সংকুচিত হয়।” [সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৯৭]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«يَا بِلَالُ ! أَقِمْ الصَّلَاةَ أَرِحْنَا بِهَا» .

“হে বেলাল! সালাত কায়েম কর (অর্থাৎ সালাতের জন্য ইকামত দাও), আমাদেরকে তার দ্বারা আরাম দাও।” [আহমাদ ও আবূ দাউদ। আর আলবানী হাদীসটিকে ‘সহীহ’ বলেছেন।]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:

«الصَّلاَةُ نُورٌ» .

“সালাত হচ্ছে নূর বা আলো।” [সহীহ মুসলিম।]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:

«مَنْ حَافَظَ عَلَيْ الصَّلاَةِ كَانَتْ لَهُ نُورًا وَبُرْهَانًا وَنَجَاةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَمَنْ لَمْ يُحَافِظْ عَلَيْهَا لَمْ يَكُنْ لَهُ نُورٌ وَلاَ بُرْهَانٌ وَلاَ نَجَاةٌ، وَكَانَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ قَارونَ و فِرْعَوْنَ وَهَامَانَ وَأُبَىِّ بْنِ خَلَفٍ » .

“যে ব্যক্তি সালাতের ব্যাপারে যত্নবান হবে, কিয়ামতের দিন তা তার জন্য আলো, (আনুগত্যের) দলীল ও (শাস্তি থেকে) মুক্তির কারণ হবে। আর যে ব্যক্তি তার ব্যাপারে যত্নবান হবে না, কিয়ামতের দিন তার জন্য তা আলো হবে না, হবে না দলীল এবং না হবে মুক্তির কারণ; বরং কিয়ামতের দিনে সে সমবেত হবে কারূন, ফির‘আউন, হামান ও উবাই ইবন খালফের (মত আল্লাহর শত্রুদের) সাথে।” [ইমাম আহমাদ রহ. হাদীসটি উৎকৃষ্ট সনদে বর্ণনা করেছেন, যেমনটি আল-মুনযিরী বলেছেন।]

১৩. আর সালাত হচ্ছে শয়তানের ক্রোধ এবং কাফির ও আল্লাহদ্রোহীদের জন্য হতাশার কারণ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ إِنَّمَا يُرِيدُ ٱلشَّيۡطَٰنُ أَن يُوقِعَ بَيۡنَكُمُ ٱلۡعَدَٰوَةَ وَٱلۡبَغۡضَآءَ فِي ٱلۡخَمۡرِ وَٱلۡمَيۡسِرِ وَيَصُدَّكُمۡ عَن ذِكۡرِ ٱللَّهِ وَعَنِ ٱلصَّلَوٰةِۖ فَهَلۡ أَنتُم مُّنتَهُونَ ٩١ ﴾ [ المائ‍دة : ٩١ ]

“শয়তান তো চায় মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে এবং তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণে ও সালাতে বাধা দিতে। তবে কি তোমরা বিরত হবে না?” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৯১]

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

« إِذَا قَرَأَ ابْنُ آدَمَ السَّجْدَةَ فَسَجَدَ , اعْتَزَلَ الشَّيْطَانُ يَبْكِى يَقُولُ : يَا وَيْلَهُ ! أُمِرَ ابْنُ آدَمَ بِالسُّجُودِ فَسَجَدَ فَلَهُ الْجَنَّةُ وَأُمِرْتُ بِالسُّجُودِ , فَأَبَيْتُ فَلِىَ النَّارُ» .

“যখন আদম সন্তান সাজদাহ’র আয়াত পাঠ করে এবং সাজদাহ’য় অবনত হয়, তখন শয়তান কাঁদতে কাঁদতে দূরে সরে যায় এবং বলতে থাকে, হায় আফসোস! বনী আদমকে সাজদাহ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তারপর সে সাজদাহ করেছে এবং জান্নাতের অধিকারী হয়েছে, আর আমাকে সাজদাহ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তারপর আমি সাজদাহ করতে অস্বীকার করেছি, ফলে আমি জাহান্নামের অধিকারী হয়েছি।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৪]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:

«مَا حَسَدَتْكُمْ الْيَهُودُ عَلَى شَيْءٍ مَا حَسَدَتْكُمْ عَلَى السَّلَامِ وَالتَّأْمِينِ» .

“ইয়াহূদীগণ সালাম ও ‘আমীন’ বলার ব্যাপারে যেভাবে তোমাদেরকে ঈর্ষা করে, সেভাবে আর কোনো কিছুর ব্যাপারে তোমাদের প্রতি তারা ঈর্ষা করে না।” [ইমাম আহমাদ রহ. হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]

১৪. আর সালাত হচ্ছে কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ, মহান আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা এবং ‘তাসবীহ’ (সুবহানাল্লাহ), ‘তাহমীদ’ (আল-হামদুলিল্লাহ) ও তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু)-এর ভাণ্ডার। মুগীরা ইবন শু‘বা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:

«قام النبيُّ صلى الله عليه وسلم حتى تورَّمت قدماه، فقيل له : قد غفرَ الله لك ما تقدَّمَ من ذنبكَ وما تأخَّر؟ قال : أفلا أكونُ عبدا شكورا ؟» .

“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের বেলায় এত বেশি ‘ইবাদাত করতেন যে, শেষ পর্যন্ত তাঁর কদম মোবারক ফুলে ফেটে যেত। অতঃপর তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলা হত ‘আল্লাহ তা‘আলা তো আপনার অতীত ও ভবিষ্যতের গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন, (তাহলে আপনি এরূপ করছেন কেন)? তখন তিনি বললেন: ‘আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হব না?’।” [বুখারী, হাদীস নং ৪৫৫৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৩০৩]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«يُصْبحُ عَلَى كُلِّ سُلاَمَى مِنْ أَحَدِكُمْ صَدَقةٌ : فَكُلُّ تَسْبيحَةٍ صَدَقةٌ، وَكُلُّ تَحْميدَةٍ صَدَقَةٌ ، وَكُلُّ تَهْلِيلةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَكْبيرَةٍ صَدَقَةٌ، وأمْرٌ بالمَعْرُوفِ صَدَقَةٌ، وَنَهْيٌ عَنِ المُنْكَرِ صَدَقَةٌ، وَيجْزئُ مِنْ ذَلِكَ رَكْعَتَانِ يَرْكَعُهُمَا مِنَ الضُّحَى» .

“তোমাদের যে কোনো লোকেরই শরীরের প্রত্যেকটি সংযোগস্থলের ওপর সাদকা (ওয়াজিব) হয়। সুতরাং ‘সুবহানাল্লাহ’, ‘আল-হামদুলিল্লাহ’, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ ও আল্লাহু আকবার -এসবের প্রত্যেকটি একটি করে সাদকা। আর সৎ কাজের আদেশ দেওয়া ও অসৎ কাজে নিষেধ করাও সাদকা। আর এসব ‘চাশত’-এর (দুপুরের পূর্বের) দুই রাকাত সালাত আদায় করলে পূরণ হয়ে যায়।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭০৪]

১৫. আর সালাত কু-প্রবৃত্তি থেকে মুক্তি দেয়, যাবতীয় অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে এবং যাবতীয় রোগ-ব্যাধি ও দুঃখ-কষ্ট দূর করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ إِنَّ ٱلصَّلَوٰةَ تَنۡهَىٰ عَنِ ٱلۡفَحۡشَآءِ وَٱلۡمُنكَرِۗ ﴾ [ العنكبوت : ٤٥ ]

“নিশ্চয় সালাত বিরত রাখে অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে।” [সূরা আল-‘আনকাবুত, আয়াত: ৪৫]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«عَلَيْكُمْ بِقِيَامِ اللَّيْلِ ، فَإِنَّهُ دَأْبُ الصَّالِحِينَ قَبْلَكُمْ، وَقُرْبَةٌ إِلَى اللَّهِ تعالى، وَمَنْهَاةٌ عَنِ الإِثْم، وَتَكْفِيرٌ لِلسَّيِّئَاتِ، وَمَطْرَدَةٌ لِلدَّاءِ عَنِ الْجَسَدِ» .

“তোমরা রাত জেগে নফল সালাত আদায় কর। কারণ, তা তোমাদের পূর্ববর্তী নেক বান্দাগণের অভ্যাস, আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য লাভের উপায়, গুনাহের কাজ থেকে বাধা প্রদানকারী, পাপ মোচনকারী এবং শরীর থেকে রোগ-ব্যাধি দূরকারী।” [আহমাদ ও তিরমিযী; আর আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন