HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
সালাত আদায়ের জন্য আসো
লেখকঃ খালেদ আবূ সালেহ
৮
মাকবুল বা গ্রহণযোগ্য সালাতহে প্রিয় ভাই আমার! নিম্নে আলোচিত এগুলো হলো এমন কিছু নসীহত ও উপদেশ, যা শরী‘আতের দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে সালাতের যত্ন ও আদায়ের ব্যাপারে সহযোগিতা করবে এবং যেগুলো সালাতকে গ্রহণযোগ্য মানে উন্নীত করবে ও তার থেকে ফায়দা অর্জনের বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
১. সালাতের জন্য তোমার অযুকে সুন্দর কর: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَتَوَضَّأُ فَيُحْسِنُ وُضُوءَهُ، ثُمَّ يَقُومُ فَيُصَلِّى رَكْعَتَيْنِ، مُقْبِلٌ عَلَيْهِمَا بِقَلْبِهِ وَوَجْهِهِ إِلاَّ وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ» .
“যে কোনো মুসলিম ব্যক্তি অযু করবে এবং তার অযুকে সন্দরভাবে সম্পন্ন করবে, অতঃপর দাঁড়িয়ে যাবে এবং দুই রাকাত সালাত আদায় করবে তার প্রতি তার হৃদয়-মন ও চেহারাকে নিবেদিত করে, সে ব্যক্তির জন্য জান্নাত ওয়াজিব (আবশ্যক) হয়ে যাবে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৭৬]
২. অযু করা অবস্থায় তোমার ঘর থেকে মাসজিদের উদ্দেশ্যে বের হও: কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ خَرَجَ مِنْ بَيْتِهِ مُتَطَهِّرًا إِلَى صَلَاةٍ مَكْتُوبَةٍ، فَأَجْرُهُ كَأَجْرِ الْحَاجِّ الْمُحْرِمِ» .
“যে ব্যক্তি পবিত্র অবস্থায় তার ঘর থেকে ফরয সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে বের হয়, তার জন্য ইহরাম অবস্থায় হাজ পালনকারীর সাওয়াবের মতো সাওয়াবের ব্যবস্থা থাকবে।” [আহমাদ ও আবূ দাউদ। আর আলবানী হাদীসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।]
৩. প্রথম ওয়াক্তে সালাত আদায়ের জন্য আগ্রহী হও: কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “সময় মতো সালাত আদায় করা সর্বোত্তম আমল।” [সহীহ বুখারী ও মুসলিম।]
৪. জামা‘আতে সালাত আদায়ের ব্যাপারে আগ্রহী হও: কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«صلاة الجماعة تفضل صلاة الفذ بسبع وعشرين درجة» .
“জামা‘য়াতে আদায়কৃত সালাতের ফযীলত একাকী আদায়কৃত সালাতের চেয়ে সাতাশ গুণ বেশি।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬১৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫০৯]
৫. প্রথম তাকবীর তথা তাকবীরে তাহরীমায় শামিল হওয়ার জন্য আগ্রহী হও। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«أن مَنْ صَلَّى لِلَّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا فِي جَمَاعَةٍ يُدْرِكُ التَّكْبِيرَةَ الْأُولَى، كُتِبَتْ لَهُ بَرَاءَتَانِ : بَرَاءَةٌ مِنْ النَّارِ، وَبَرَاءَةٌ مِنْ النِّفَاقِ» .
আল্লাহর উদ্দেশ্যে চল্লিশ দিন প্রথম তাকবীরের সাথে জামা‘আতে সালাত আদায় করবে, তার জন্য সুনিশ্চিতভাবে দু’টি মুক্তির ব্যবস্থা করা হবে: একটি হলো জাহান্নাম থেকে মুক্তি, আর অপরটি হলো নিফাকী চরিত্রের কলঙ্ক থেকে মুক্তি।” [আহমাদ ও তিরমিযী। আর আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
৬. পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়ার জন্য আগ্রহী হও। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«بَشِّرْ الْمَشَّائِينَ فِي الظُّلَمِ إِلَى الْمَسَاجِدِ بِالنُّورِ التَّامِّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» .
“যারা অন্ধকারে পায়ে হেঁটে মসজিদে আসা-যাওয়া করে, তাদেরকে কিয়ামতের দিনে পরিপূর্ণ নূর (আলো) প্রাপ্তির সুসংবাদ দিয়ে দাও।” [আবূ দাউদ ও তিরমিযী। আর আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
৭. তোমার মনকে সালাতের মধ্যে উপস্থিত রাখ: ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন: “বান্দা তখনই শুধু তাকে নিজেকে সালাতের মধ্যে উপস্থিত রাখতে এবং তাতে তার ‘রব’ আল্লাহ তা‘আলার সাথে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে সক্ষম হবে, যখন সে তার প্রবৃত্তি ও আবেগকে বশীভূত করবে, নতুবা অন্তরকে প্রবৃত্তি বশীভূত করে ফেলবে, আবেগ তাকে দখল করে নিবে এবং শয়তান তার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মত আসন পেয়ে যাবে। ফলে সে কীভাবে (সালাতের মধ্যে) অসওয়াসা ও চিন্তাভাবনা মুক্ত থাকবে।”
৮. তুমি তোমার মনকে আল্লাহর ঘরের সাথে সম্পৃক্ত করে নাও এবং মসজিদের দিকে বেশি বেশি পদচিহ্ন এঁকে দাও। আর এক সালাত আদায় করার পর আরেক সালাতের অপেক্ষায় থাক। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাত জনের একজন বলে উল্লেখ করেছেন, যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ছায়ায় ছায়া দিবেন, যে দিন তাঁর ছায়া ব্যতীত আর কোনো ছায়া থাকবে না; তিনি বলেন:
«وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ بِالْمَسَاجِدِ» .
“আর এমন ব্যক্তি, যার অন্তর মসজিদের সাথে লেগে থাকে...।” [বুখারী, হাদীস নং ১৩৫৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪২৭]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
«أَلاَ أَدُلُّكُمْ عَلَى مَا يَمْحُو اللَّهُ بِهِ الْخَطَايَا , وَيَرْفَعُ بِهِ الدَّرَجَاتِ؟ » قَالُوا : بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ . قَالَ : « إِسْبَاغُ الْوُضُوءِ عَلَى الْمَكَارِهِ وَكَثْرَةُ الْخُطَا إِلَى الْمَسَاجِدِ وَانْتِظَارُ الصَّلاَةِ بَعْدَ الصَّلاَةِ فَذَلِكُمُ الرِّبَاطُ» .
“আমি কি তোমাদেরকে এমন (কাজের) কথা বলব না, যার দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা পাপরাশি দূর করে দিবেন এবং মর্যাদা উঁচু করে দিবেন? সাহাবীগণ বললেন: হ্যাঁ, অবশ্যই, হে আল্লাহর রাসূল! তখন তিনি বললেন, তা হলো: অসুবিধা ও কষ্ট সত্ত্বেও পরিপূর্ণভাবে অযু করা, মসজিদে আসার জন্য বেশি বেশি পদচারণা এবং এক সালাতের পর অন্য সালাতের জন্য অপেক্ষা করা। আর জেনে রাখ, এটিই হলো রিবাত তথা নিজেকে আটকে রাখা।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬১০]
৯. সালাতের বিধিবিধানগুলো শিখে নাও: তুমি জেনে নাও কীভাবে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের ব্যাপারে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন এবং এ জন্য ইবনুল কাইয়্যেম রহ.-এর ‘যাদুল মা‘আদ’-এর মতো কিছু উপকারী বই পুস্তকের সহযোগিতা নাও।
১০. ফরয সালাতের সাথে সংশ্লিষ্ট আগে-পরের সুন্নাত সালাতগুলোর ব্যাপারে আগ্রহী হও এবং তা ঘরের মধ্যে আদায়ের জন্য যত্নবান হও। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«فضل صلاة الرجل في بيته على صلاته حيث يراه الناس كفضل المكتوبة على النافلة» .
“যেখানে ব্যক্তির সালাত আদায়ের বিষয়টি (ফরয সালাত ব্যতীত) জনগণ দেখতে পায় সেখানে তার আদায়কৃত সালাতের উপর তার ঘরের মধ্যে আদায়কৃত সালাত মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব তেমন, নফল সালাতের ওপর ফরয সালাতের মর্যাদা যেমন।” [ত্ববারানী। আর আলবানী হাদীসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।]
১১. এমনভাবে দীর্ঘ রাত জেগে থাকা থেকে সাবধান থাকবে, যা সালাতকে হাতছাড়া করা এবং তা আদায় না করে ঘুমিয়ে থাকার দিকে নিয়ে যাবে।
১২. বেশি বেশি খাওয়া, পান করা, ঘুমানো, হাসাহাসি ও জনগণের সাথে আড্ডা মারা থেকে সাবধান থাকবে। কারণ, তা সালাত আদায়ের বিষয়টিকে জটিল ও কষ্টকর করে ফেলবে।
১৩. ফজরের সালাতের জন্য এমন ব্যক্তির সাহায্য চাও, যিনি টেলিফোনের মাধ্যমে অথবা ঘরের কলিং বেলের মাধ্যমে তোমাকে জাগিয়ে দেবেন, আর ঘড়ি বা মোবাইলে সালাতের সময় অনুসারে এলার্ম বা সতর্ক সংকেত দিয়ে রাখ।
১৪. একই মসজিদে সব সময় ফজরের সালাত আদায় কর, যাতে তুমি যখন কোনো সময় অনুপস্থিত থাক, তখন মাসজিদের মুসল্লীগণ তোমার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতে পারে।
১৫. যেসব আয়াত তুমি (সালাতের মধ্যে) পাঠ কর অথবা ইমাম যেসব আয়াত তিলাওয়াত করে, তুমি সেসব আয়াত নিয়ে চিন্তা-গবেষণা কর এবং হৃদয় দিয়ে তার অর্থসমূহের মধ্যে বিচরণ বা পরিভ্রমণ কর।
১৬. পূর্ববর্তী সৎ ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক সালাতের যত্নের ব্যাপারে তাঁদের উচ্চ চিন্তার ইতিহাস ও তথ্যসমূহ অধ্যয়ন কর। কারণ, তা তোমাকে তাঁদের অনুসরণের দিকে আহ্বান করবে।
১৭. সালাতের মধ্যে প্রবেশ করার পূর্বে তোমার মনের মধ্যে আল্লাহর মহত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের কথা স্মরণ কর। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إن أحدكم إذا قام يصلي، فإنما يناجي ربه، فلينظر كيف يناجيه» .
“তোমাদের কেউ যখন সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে দণ্ডায়মান হয়, তখন সে তার ‘রব’-এর সাথে চুপে চুপে কথা বলে। অতএব, সে যেন লক্ষ্য রাখে কীভাবে সে তাঁর সাথে চুপে চুপে কথা বলবে।” [হাকেম, আর আলবানী হাদীসটিকে ‘সহীহ’ বলেছেন।]
১৮. সালাত আদায় করার পর শরী‘আতসম্মত দো‘আ ও যিকিরসমূহ পাঠ করার ব্যাপারে আগ্রহী হও এবং তা পাঠ করার পূর্বে মসজিদ থেকে বের হওয়ার প্রতিযোগিতায় মেতে উঠবে না।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে এবং তোমাদেরকে সালাতের ব্যাপারে যত্নবান ও বিনয়ী বান্দাগণের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন, যারা যুগে যুগে সালাতের দ্বারা উপকৃত হয়েছেন।
আর আমাদের শেষ ধ্বনি হউক ‘সকল প্রশংসা সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহর জন্য নিবেদিত।’
সমাপ্ত
১. সালাতের জন্য তোমার অযুকে সুন্দর কর: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَتَوَضَّأُ فَيُحْسِنُ وُضُوءَهُ، ثُمَّ يَقُومُ فَيُصَلِّى رَكْعَتَيْنِ، مُقْبِلٌ عَلَيْهِمَا بِقَلْبِهِ وَوَجْهِهِ إِلاَّ وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ» .
“যে কোনো মুসলিম ব্যক্তি অযু করবে এবং তার অযুকে সন্দরভাবে সম্পন্ন করবে, অতঃপর দাঁড়িয়ে যাবে এবং দুই রাকাত সালাত আদায় করবে তার প্রতি তার হৃদয়-মন ও চেহারাকে নিবেদিত করে, সে ব্যক্তির জন্য জান্নাত ওয়াজিব (আবশ্যক) হয়ে যাবে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৭৬]
২. অযু করা অবস্থায় তোমার ঘর থেকে মাসজিদের উদ্দেশ্যে বের হও: কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ خَرَجَ مِنْ بَيْتِهِ مُتَطَهِّرًا إِلَى صَلَاةٍ مَكْتُوبَةٍ، فَأَجْرُهُ كَأَجْرِ الْحَاجِّ الْمُحْرِمِ» .
“যে ব্যক্তি পবিত্র অবস্থায় তার ঘর থেকে ফরয সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে বের হয়, তার জন্য ইহরাম অবস্থায় হাজ পালনকারীর সাওয়াবের মতো সাওয়াবের ব্যবস্থা থাকবে।” [আহমাদ ও আবূ দাউদ। আর আলবানী হাদীসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।]
৩. প্রথম ওয়াক্তে সালাত আদায়ের জন্য আগ্রহী হও: কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “সময় মতো সালাত আদায় করা সর্বোত্তম আমল।” [সহীহ বুখারী ও মুসলিম।]
৪. জামা‘আতে সালাত আদায়ের ব্যাপারে আগ্রহী হও: কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«صلاة الجماعة تفضل صلاة الفذ بسبع وعشرين درجة» .
“জামা‘য়াতে আদায়কৃত সালাতের ফযীলত একাকী আদায়কৃত সালাতের চেয়ে সাতাশ গুণ বেশি।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬১৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫০৯]
৫. প্রথম তাকবীর তথা তাকবীরে তাহরীমায় শামিল হওয়ার জন্য আগ্রহী হও। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«أن مَنْ صَلَّى لِلَّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا فِي جَمَاعَةٍ يُدْرِكُ التَّكْبِيرَةَ الْأُولَى، كُتِبَتْ لَهُ بَرَاءَتَانِ : بَرَاءَةٌ مِنْ النَّارِ، وَبَرَاءَةٌ مِنْ النِّفَاقِ» .
আল্লাহর উদ্দেশ্যে চল্লিশ দিন প্রথম তাকবীরের সাথে জামা‘আতে সালাত আদায় করবে, তার জন্য সুনিশ্চিতভাবে দু’টি মুক্তির ব্যবস্থা করা হবে: একটি হলো জাহান্নাম থেকে মুক্তি, আর অপরটি হলো নিফাকী চরিত্রের কলঙ্ক থেকে মুক্তি।” [আহমাদ ও তিরমিযী। আর আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
৬. পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়ার জন্য আগ্রহী হও। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«بَشِّرْ الْمَشَّائِينَ فِي الظُّلَمِ إِلَى الْمَسَاجِدِ بِالنُّورِ التَّامِّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» .
“যারা অন্ধকারে পায়ে হেঁটে মসজিদে আসা-যাওয়া করে, তাদেরকে কিয়ামতের দিনে পরিপূর্ণ নূর (আলো) প্রাপ্তির সুসংবাদ দিয়ে দাও।” [আবূ দাউদ ও তিরমিযী। আর আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
৭. তোমার মনকে সালাতের মধ্যে উপস্থিত রাখ: ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন: “বান্দা তখনই শুধু তাকে নিজেকে সালাতের মধ্যে উপস্থিত রাখতে এবং তাতে তার ‘রব’ আল্লাহ তা‘আলার সাথে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে সক্ষম হবে, যখন সে তার প্রবৃত্তি ও আবেগকে বশীভূত করবে, নতুবা অন্তরকে প্রবৃত্তি বশীভূত করে ফেলবে, আবেগ তাকে দখল করে নিবে এবং শয়তান তার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মত আসন পেয়ে যাবে। ফলে সে কীভাবে (সালাতের মধ্যে) অসওয়াসা ও চিন্তাভাবনা মুক্ত থাকবে।”
৮. তুমি তোমার মনকে আল্লাহর ঘরের সাথে সম্পৃক্ত করে নাও এবং মসজিদের দিকে বেশি বেশি পদচিহ্ন এঁকে দাও। আর এক সালাত আদায় করার পর আরেক সালাতের অপেক্ষায় থাক। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাত জনের একজন বলে উল্লেখ করেছেন, যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ছায়ায় ছায়া দিবেন, যে দিন তাঁর ছায়া ব্যতীত আর কোনো ছায়া থাকবে না; তিনি বলেন:
«وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ بِالْمَسَاجِدِ» .
“আর এমন ব্যক্তি, যার অন্তর মসজিদের সাথে লেগে থাকে...।” [বুখারী, হাদীস নং ১৩৫৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪২৭]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
«أَلاَ أَدُلُّكُمْ عَلَى مَا يَمْحُو اللَّهُ بِهِ الْخَطَايَا , وَيَرْفَعُ بِهِ الدَّرَجَاتِ؟ » قَالُوا : بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ . قَالَ : « إِسْبَاغُ الْوُضُوءِ عَلَى الْمَكَارِهِ وَكَثْرَةُ الْخُطَا إِلَى الْمَسَاجِدِ وَانْتِظَارُ الصَّلاَةِ بَعْدَ الصَّلاَةِ فَذَلِكُمُ الرِّبَاطُ» .
“আমি কি তোমাদেরকে এমন (কাজের) কথা বলব না, যার দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা পাপরাশি দূর করে দিবেন এবং মর্যাদা উঁচু করে দিবেন? সাহাবীগণ বললেন: হ্যাঁ, অবশ্যই, হে আল্লাহর রাসূল! তখন তিনি বললেন, তা হলো: অসুবিধা ও কষ্ট সত্ত্বেও পরিপূর্ণভাবে অযু করা, মসজিদে আসার জন্য বেশি বেশি পদচারণা এবং এক সালাতের পর অন্য সালাতের জন্য অপেক্ষা করা। আর জেনে রাখ, এটিই হলো রিবাত তথা নিজেকে আটকে রাখা।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬১০]
৯. সালাতের বিধিবিধানগুলো শিখে নাও: তুমি জেনে নাও কীভাবে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের ব্যাপারে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন এবং এ জন্য ইবনুল কাইয়্যেম রহ.-এর ‘যাদুল মা‘আদ’-এর মতো কিছু উপকারী বই পুস্তকের সহযোগিতা নাও।
১০. ফরয সালাতের সাথে সংশ্লিষ্ট আগে-পরের সুন্নাত সালাতগুলোর ব্যাপারে আগ্রহী হও এবং তা ঘরের মধ্যে আদায়ের জন্য যত্নবান হও। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«فضل صلاة الرجل في بيته على صلاته حيث يراه الناس كفضل المكتوبة على النافلة» .
“যেখানে ব্যক্তির সালাত আদায়ের বিষয়টি (ফরয সালাত ব্যতীত) জনগণ দেখতে পায় সেখানে তার আদায়কৃত সালাতের উপর তার ঘরের মধ্যে আদায়কৃত সালাত মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব তেমন, নফল সালাতের ওপর ফরয সালাতের মর্যাদা যেমন।” [ত্ববারানী। আর আলবানী হাদীসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।]
১১. এমনভাবে দীর্ঘ রাত জেগে থাকা থেকে সাবধান থাকবে, যা সালাতকে হাতছাড়া করা এবং তা আদায় না করে ঘুমিয়ে থাকার দিকে নিয়ে যাবে।
১২. বেশি বেশি খাওয়া, পান করা, ঘুমানো, হাসাহাসি ও জনগণের সাথে আড্ডা মারা থেকে সাবধান থাকবে। কারণ, তা সালাত আদায়ের বিষয়টিকে জটিল ও কষ্টকর করে ফেলবে।
১৩. ফজরের সালাতের জন্য এমন ব্যক্তির সাহায্য চাও, যিনি টেলিফোনের মাধ্যমে অথবা ঘরের কলিং বেলের মাধ্যমে তোমাকে জাগিয়ে দেবেন, আর ঘড়ি বা মোবাইলে সালাতের সময় অনুসারে এলার্ম বা সতর্ক সংকেত দিয়ে রাখ।
১৪. একই মসজিদে সব সময় ফজরের সালাত আদায় কর, যাতে তুমি যখন কোনো সময় অনুপস্থিত থাক, তখন মাসজিদের মুসল্লীগণ তোমার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতে পারে।
১৫. যেসব আয়াত তুমি (সালাতের মধ্যে) পাঠ কর অথবা ইমাম যেসব আয়াত তিলাওয়াত করে, তুমি সেসব আয়াত নিয়ে চিন্তা-গবেষণা কর এবং হৃদয় দিয়ে তার অর্থসমূহের মধ্যে বিচরণ বা পরিভ্রমণ কর।
১৬. পূর্ববর্তী সৎ ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক সালাতের যত্নের ব্যাপারে তাঁদের উচ্চ চিন্তার ইতিহাস ও তথ্যসমূহ অধ্যয়ন কর। কারণ, তা তোমাকে তাঁদের অনুসরণের দিকে আহ্বান করবে।
১৭. সালাতের মধ্যে প্রবেশ করার পূর্বে তোমার মনের মধ্যে আল্লাহর মহত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের কথা স্মরণ কর। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إن أحدكم إذا قام يصلي، فإنما يناجي ربه، فلينظر كيف يناجيه» .
“তোমাদের কেউ যখন সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে দণ্ডায়মান হয়, তখন সে তার ‘রব’-এর সাথে চুপে চুপে কথা বলে। অতএব, সে যেন লক্ষ্য রাখে কীভাবে সে তাঁর সাথে চুপে চুপে কথা বলবে।” [হাকেম, আর আলবানী হাদীসটিকে ‘সহীহ’ বলেছেন।]
১৮. সালাত আদায় করার পর শরী‘আতসম্মত দো‘আ ও যিকিরসমূহ পাঠ করার ব্যাপারে আগ্রহী হও এবং তা পাঠ করার পূর্বে মসজিদ থেকে বের হওয়ার প্রতিযোগিতায় মেতে উঠবে না।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে এবং তোমাদেরকে সালাতের ব্যাপারে যত্নবান ও বিনয়ী বান্দাগণের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন, যারা যুগে যুগে সালাতের দ্বারা উপকৃত হয়েছেন।
আর আমাদের শেষ ধ্বনি হউক ‘সকল প্রশংসা সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহর জন্য নিবেদিত।’
সমাপ্ত
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন