মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
প্রথম অধ্যায় : হজের পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর যিয়ারত করা
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/170/22
লক্ষণীয় যে, ফিকাহবিদগণ হজের বিধানাবলীর ওপর আলোচনা করার পর ‘মসজিদে নববী’ যিয়ারত করার ব্যাপারে আলোচনা করেন, আর ‘মসজিদে নববী’-এর ফযীলত ও মর্যাদার বিষয়টি একেবারে পরিষ্কার। কেননা তা এমন এক মসজিদ, যা তাকওয়ার ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত [যেমন এ জবাবটিই দিয়েছেন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যখন তাকে প্রশ্ন করা হয়: দুই মসজিদ দু’টির কোনটি তাকওয়ার ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত? দেখুন: সহীহ মুসলিম, আস-সহীহ, হাদীস নং ১৩৯৮; আহমাদ, আল-মুসনাদ, হাদীস নং ১১০৪৬, ১১১৭৮, ১১১৮৭; তিরমিযী, আস-সুনান, হাদীস নং ৩০৯৯; নাসাঈ, আস-সুনান, হাদীস নং ৬৯৬)। আর তা বিশুদ্ধ ও সুস্পষ্ট বক্তব্য এ প্রসঙ্গে- ‘মাসজিদে নববী’ এমন এক মসজিদ, যা তাকওয়ার ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। আর শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. কর্তৃক এ হাদীস ও আল্লাহ তা‘আলার নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল হওয়ার কারণ সমন্বয় প্রসঙ্গে একটি উত্তম ব্যাখ্যা ও দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে, আয়াতটি হলো: “আপনি তাতে কখনো সালাতের জন্য দাঁড়াবেন না, যে মসজিদের ভিত্তি প্রথম দিন থেকেই স্থাপিত হয়েছে তাকওয়ার ওপর, তাই আপনার সালাতের জন্য দাড়ানোর বেশি হকদার। সেখানে এমন লোক আছে যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন ভালোবাসে, আর পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে আল্লাহ্ পছন্দ করেন”। [সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ১০৮]। আর তা নাযিল হয়েছে ‘মাসজিদে কুবা’ প্রসঙ্গে। -দেখুন: মিনহাজ আস-সুন্নাহ আন-নববীয়্যাহ: (৭/৭৪); মাজমূ‘উ আল-ফাতাওয়া: (২৭/৪০৬)।], আর তার ফযীলত প্রসঙ্গে যা বর্ণিত হয়েছে, তন্মধ্যে একটি বর্ণনা হলো নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী:
“আমার এই মসজিদে একবার সালাত আদায় করা মসজিদে হারাম ব্যতীত অন্যান্য মসজিদে এক হাজার বার সালাত আদায় করার চেয়েও উত্তম।” [হাদীসটি ‘মারফু’ সনদে আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন; সহীহ বুখারী, আস-সহীহ, হাদীস নং ১১৩৩; সহীহ মুসলিম, আস-সহীহ, হাদীস নং ১৩৯৪; আহমাদ, আল-মুসনাদ, হাদীস নং ৭৪৮১; ইবন মাজাহ, আস-সুনান, হাদীস নং ১৪০৪; তিরমিযী, আস-সুনান, হাদীস নং ৩২৫; নাসাঈ, আস-সুনান, হাদীস নং ২৮৯৯।]
এটা তার ফযীলত সম্পর্কিত বর্ণনা, আর অনুরূপভাবে তার যিয়ারত করাটাও শরী‘আতসম্মত কাজ, আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে, তিনি বলেছেন:
“তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্য কোনো মাসজিদের জন্য সফরের প্রস্তুতি গ্রহণ করা যাবে না: মসজিদে হারাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মসজিদ এবং মসজিদে আকসা।” [হাদীসটি ‘মারফু’ সনদে আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন; সহীহ বুখারী, আস-সহীহ, হাদীস নং ১১৩২ এবং হাদীসের শব্দগুলো তার; সহীহ মুসলিম, আস-সহীহ, হাদীস নং ১৩৯৭; আহমাদ, আল-মুসনাদ, হাদীস নং ৭১৯১; ইবন মাজাহ, আস-সুনান, হাদীস নং ১৪০৯; আবূ দাউদ, আস-সুনান, হাদীস নং ২০৩৩; তিরমিযী, আস-সুনান, হাদীস নং ৩২৬; নাসাঈ, আস-সুনান, হাদীস নং ২৯৯; আর হাদীসের এ শব্দগুলো সহীহ বুখারীর; আর বাকিদের বর্ণনায়: এর পরিবর্তে, আর হাদীসটি ‘মারফু’ সনদে আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেও বর্ণনা করেছেন। সহীহ বুখারী, আস-সহীহ, হাদীস নং ১১৩৯; সহীহ মুসলিম, আস-সহীহ (২/৯৭৫-৯৭৬); আহমাদ, আল-মুসনাদ, হাদীস নং ১১০৪০; ইবন মাজাহ, আস-সুনান, হাদীস নং ১৪১০; তিরমিযী, আস-সুনান, হাদীস নং ৩২৬।]
আর এটা জানা কথা যে, ‘মসজিদে নববী’ যিয়ারত করাটা মুস্তাহাব, হজের সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই, আর যিয়ারতের বিষয়টি হজের কোনো রুকন বা ফরয নয় এবং তার কোনো সুন্নাতের অন্তর্ভুক্তও নয়, আর ফিকহের কিতাবসমূহের মধ্যে ‘হজ’-এর অধ্যায়ের পর ফকীহগণ কর্তৃক ‘মসজিদে নববী’ যিয়ারত করার প্রসঙ্গটির উল্লেখ করাটা হলো ধারাবাহিকতা রক্ষা করার কারণে এবং তাদের পক্ষ থেকে হাজী সাহেবকে তা যিয়ারত করতে উৎসাহিত করার জন্য, যাতে তিনি একটু কষ্ট করে হলেও ‘হারামাইন’ তথা দুই মর্যাদা পূর্ণ জায়গা- মক্কা ও মদীনায় কিছু মুস্তাহাব ইবাদত না করে নিজ দেশে ফিরে না আসেন, আর তা এখন তার পক্ষে খুবই সহজ এবং তা পালনে তার তেমন কোনো কষ্টই হয় না।
তার ওপর ভিত্তি করে আবশ্যকীয় কাজ হলো: হাজী সাহেবের ‘মাসজিদে নববী’ যিয়ারত করার কাজটি নিছক মসজিদের সাথেই নির্দিষ্ট হওয়া, তারপর তিনি যদি তাতে প্রবেশ করেন, তাহলে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর যিয়ারত করবেন এবং তাঁর প্রতি সালাম পেশ করবেন, অতঃপর তাঁর দুই সাহাবী আবূ বকর ও উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার কবর দু’টি যিয়ারত করবেন।
এ বিষয়টি শরী‘আতের ‘নস’ বা বক্তব্যসমুহের দ্বারা স্বীকৃত এবং তার উপর ভিত্তি করেই প্রাজ্ঞ অভিজ্ঞ আলিম সমাজ কথা বলেছেন। [ফাতাওয়া ইবন ইবরাহীম: (৬/১২৬)।]
কিন্তু আজকালকার কোনো কোনো হাজী সাহেবের সফরের উদ্দেশ্য হয়ে থাকে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর যিয়ারত করা। [জেনে রাখা উচিৎ যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর যিয়ারত করাটা অবশ্যই শরী‘আতসম্মত সৎকাজসমূহের অন্যতম একটি সৎকাজ এবং এ ব্যাপারে কেউ সন্দেহ পোষণ করে না, তা যিয়ারত করা থেকে নিষেধ করা তো দূরে থাক, তবে এখানে কথা হলো তাঁর কবরের উদ্দেশ্যে প্রস্তুতি নিয়ে উদ্দেশ্যমূলক সফর নিয়ে, মদীনাতে যিনি অবস্থান করছেন অথবা যিনি ‘মাসজিদে নববী’-এর উদ্দেশ্যে মদীনাতে সফর করেন, তার জন্য তাঁর কবর যিয়ারত করা নিয়ে কোনো কথা নেই, অর্থাৎ তিনি ‘মাসজিদে নববী’-তে ইবাদত করার পর তাঁর কবর যিয়ারত করবেন। কোনো কোনো মানুষ দু’টো মাসআলাকে এক করে দিয়েছে ইচ্ছাকৃতভাবে সমস্যা তৈরী করার জন্য। তারা সেসব সম্মানিত আলেমগণ যারা কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করাকে নিষেধ করেছেন, যেমন শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যা ও তার সহমতের আলেমদের উপর মিথ্যা অপবাদ দিয়ে থাকেন যে, তাঁরা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করে থাকেন। আসলে তা অসত্য কথা।] আর এ কাজটি যারা করে, তারা দু’টি কারণে তা করে থাকে:
প্রথম কারণ: এ বিষয়ে বর্ণিত হাদীসমূহ।
দ্বিতীয় কারণ: কোনো কোনো ফকীহ রহ. এর কর্মকাণ্ড।
তন্মধ্যে তাদের প্রথম কারণ বা যুক্তি নিয়ে আলোচনা করার পূর্বে আমরা এ বিষয়ে বর্ণিত হাদীসগুলো উল্লেখ করব; বস্তুত এ হাদীসগুলো আবার দুই ভাগে বিভক্ত:
প্রথম প্রকার: এ প্রকারের হাদীসগুলো সাধারণ যিয়ারতের সাথে সুনির্দিষ্ট; আর এ শ্রেণির হাদীসের সংখ্যা কয়েকটি; তন্মধ্যে প্রসিদ্ধ কয়টি নিম্নরূপ:
“যে ব্যক্তি আমার কবর যিয়ারত করবে, তার জন্য আমার শাফা‘আত (সুপারিশ) ওয়াজিব হয়ে যাবে।” [হাদীসটি ‘মারফু’ সনদে আবদুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণনা করেছেন; আল-‘উকাইলী, ‘আদ-দু‘আফাউ’: (৪/১৩২১); আদ-দূলাবী, ‘আল-কুনা ওয়াল আসমাউ’: (১৪৮৩); ইবন ‘আদী, ‘আল-কামেল’: (৬/২৩৫০); দারাকুতনী, আস-সুনান: (২/২৭৮); বায়হাকী, আল-জামে‘ লি-শু‘আব আল-ঈমান’: (৩৮৬২); খতীব, ‘তালখীস আল-মুতাশাবেহ ফির্ রাসম’: (১/৫৮১)।]
বস্তুত এ হাদীসটি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত হয়নি [যেমনটি হাদীসের সনদ বিশ্লেষণ থেকে পরিষ্কার হয়েছে।]; তারপর বিশেষজ্ঞ আলিম সমাজ এ হাদীসের সাথে সম্পর্কিত সনদ ও মতনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন; তারপর অভিজ্ঞ প্রাজ্ঞ ইমামদের একজনও হাদীসটিকে সহীহ বলেন নি; তাঁদের মধ্যে এ হাদীসের ব্যাপারে সবচেয়ে সুন্দর সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তিনি, যিনি তাকে দাঈফ (দুর্বল) বলেছেন; আর একদল আলিম হাদীসটিকে মাউদু‘ (বানোয়াট) বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন; তাঁদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন ইমাম শাওকানী [আল-ফাওয়ায়েদ আল-মাজমূ‘আ ফিল্ আহাদীস আল-মাওদু‘আ, হাদীস নং ৩২৬।] রহ.।
আর ইবন খুযাইমা রহ. বলেন, “যদি হাদীসটি প্রমাণিত হয় তাহলে তো, আমার মনে এ ব্যাপারে অস্বস্তি রয়েছে।” [দেখুন: লিসানুল মীযান: (৬/১৩৫)।]
আর তিনি হাদীসটি তাঁর ‘আস-সহীহ’ নামক গ্রন্থে ‘নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর যিয়ারত’ অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি বর্ণনার পরপরই বলেন, (আমি এ হাদীসের যিম্মাদারী থেকে মুক্ত, এ খবরটি আহমাসী’র বর্ণনার অন্তর্ভুক্ত হওয়াটাই অনেক বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ। কেননা আবদুল্লাহ ইবন উমার এ ধরণের ‘মুনকার’ হাদীস বর্ণনা করা থেকে অনেক বেশি উঁচু মানের ও সুরক্ষিত ব্যক্তিত্ব)। [দেখুন: লিসানুল মীযান: (৬/১৩৫)।]
তাই ইবন খুযাইমার এ কথার দ্বারা ঐ ব্যক্তির কথা বাতিল হয়ে যায়, যিনি তার বিশুদ্ধতার ব্যাপারে দলীল করেন এই বলে যে, ইবন খুযাইমা রহ. হাদীসটি তার ‘আস-সহীহ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।
এ জন্য হাফেয ইবন হাজার আসকালানী রহ. বলেন, “পূর্বে ইবন খুযাইমা রহ. এর যে ভাষ্যের বর্ণিত হয়েছে এবং এ হাদীসের তিনি যে ত্রুটি উন্মোচিত করেছেন, তাতে এমন কথা বললে সুন্দর হয় না যে, ‘ইবন খুযাইমা রহ. তার সহীহ গ্রন্থে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, বরং সাথে সাথে এ হাদীসের প্রকৃত অবস্থা যা ইবন খুযাইমা বর্ণনা করেছেন তাও বর্ণনা করতে হবে”। [দেখুন: লিসানুল মীযান: (৬/১৩৫)।]
আর শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন, “দারাকুতনী রহ. হাদীসটি দুর্বল সনদে বর্ণনা করেছেন, আর এ জন্য একাধিক মুহাদ্দিস হাদীসটিকে মাউদু‘ (বানোয়াট) হাদীসের অন্তর্ভুক্ত বলে উল্লেখ করেছেন; আর ‘সহীহ’, ‘সুনান’ ও ‘মুসনাদ’ এর মত নির্ভরযোগ্য গ্রন্থসমূহের সংকলকদের মধ্য থেকে একজন বর্ণনাকারীও তা বর্ণনা করেন নি”। [মাজমূ‘উ আল-ফাতাওয়া: (২৭/২৫)।]
আর তিনি অন্য ভাষায় বলেন, “পূর্ববর্তী সৎ মানুষ ও ইমামগণের মধ্য থেকে একজনও এ হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেন নি; আর মুসলিম আলিম সমাজের সর্বসম্মতিক্রমে অনুরূপ হাদীস দ্বারা শরী‘আতের বিধান সাব্যস্ত করা বৈধ নয়; আর আল্লাহই সবচেয়ে বেশি জানেন”। [মাজমূ‘উ আল-ফাতাওয়া: (২৭/২৮); আরও দেখুন: কায়েদাতুন জালিলাতুন ফিত্ তাওয়াস্সুল ওয়াল ওসীলা: (পৃ. ১১৩-১৩৪)।]
আর ইমাম ইবন আবদিল হাদী রহ. বলেন, “হাদিসটি বিশুদ্ধও নয় প্রমাণিতও নয়; বরং এ বিষয়ে অভিজ্ঞ ইমামগণের মতে তা ‘মুনকার হাদীস’, দুর্বল সনদে বর্ণিত, অনুরূপ হাদীস দ্বারা দলীল প্রতিষ্ঠিত হয় না এবং এ শাস্ত্রে দুর্বল ব্যক্তিগণ ছাড়া দলীল-প্রমাণ পেশ করার সময় অনুরূপ হাদীসের ওপর নির্ভর করা হয় না, আর এ শাস্ত্রের ইমাম, বিদগ্ধ পণ্ডিতগণ, যাদের কথার ওপর নির্ভর করা হয় এবং যাদের কথা প্রাধান্য পায়- এমন ব্যক্তিবর্গ এ হাদীসের দুর্বলতা ও অখ্যাতি সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন... আর তা ‘দুর্বল হাদীস’, অপরিচিত ও দুর্বল সনদে বর্ণিত, অনুরূপ হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করা ঠিক নয় এবং হাদীসের প্রসিদ্ধ হাফেযগণের কেউ তাকে ‘সহীহ’ বলেন নি; আর প্রাজ্ঞ ইমামগণের একজনও তার ওপর নির্ভর করেন নি; বরং তা বর্ণনা করেছেন দারাকুতনী রহ. এর মত ব্যক্তি, যিনি তার গ্রন্থের মধ্যে অদ্ভুত ও অপরিচিত হাদীসগুলো সংকলন করেছেন এবং যার মধ্যে অধিকাংশ বর্ণনা হলো দুর্বল (দ‘ঈফ), অপরিচিত (মুনকার), এমনকি মাউদু‘ (বানোয়াট) পর্যায়ের, আর তিনি তার গ্রন্থের কোনো কোনো জায়গায় হাদীসের দোষ-ত্রুটি স্পষ্ট করে দিয়েছেন এবং হাদীসের দুর্বলতা ও অখ্যাতির কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। অথবা তা বর্ণনা করেছেন আবূ জা‘ফর আল-‘উকাইলী ও আবূ আহমাদ ইবন ‘আদী’র মত ব্যক্তি তাঁদের ‘আদ-দু‘আফা’ ( الضعفاء ) নামক গ্রন্থে এবং তারা সাথে সাথে তার দুর্বলতা ও অখ্যাতির কারণ ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন। অথবা তা বর্ণনা করেছেন বায়হাকী রহ. এর মত ব্যক্তি তিনিও তার দুর্বলতা ও অখ্যাতির কারণ ব্যাখ্যা করেছেন”। [আস-সারেম আল-মুনকী ফী আর-রাদ্দ ‘আলা আস-সুবুকী: (পৃ. ২১-২২)।]
বস্তুত সমালোচিত এ হাদীসটি হচ্ছে এ অধ্যায়ে বর্ণিত সবচেয়ে উৎকৃষ্ট হাদীস। [দেখুন: কায়েদাতুন জালিলাতুন ফিত্ তাওয়াস্সুল ওয়াল ওসীলা: (পৃ. ১১৩ ); আস-সারেম আল-মুনকী ফী আর-রাদ্দ ‘আলা আস-সুবুকী: (পৃ. ২১)।] (তার অবস্থাই যদি এমন হয় অন্যগুলোর অবস্থা কেমন হবে তা বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না)।
২.
«مَنْ جاءنى زائرًا، [ لاَ تُعمِلُه ] [অনুরূপ ভাষ্য হলো ‘আল-মু‘জাম আল-আওসাত’: (৪৫৪৬) ও ‘মাজমা‘উল বাহরাইন’: (১৮২৮); আর ‘আল-মু‘জাম আল-কাবীর’ এর মুদ্রণে রয়েছে:] حاجةٌ إلا زيارتِىْ، كان حقًّا علىَّ أن أكونَ له شفيعا يومَ القيامةِ» .
“যে ব্যক্তি যিয়ারতকারী হিসেবে আমার নিকট আসলো, আমার যিয়ারতের উদ্দেশ্য ছাড়া আর অন্য কোনো প্রয়োজন তাকে এ কাজে নিয়োজিত করে নি, সে ব্যক্তির জন্য কিয়ামতের দিনে সুপারিশ করাটা আমার ওপর আবশ্যকীয় কর্তব্য হয়ে যায়।” [হাদীসটি ত্ববারানী রহ. বর্ণনা করেছেন: ‘আল-মু‘জাম আল-কাবীর’, হাদীস নং ১৩১৪৯; ‘আল-মু‘জাম আল-আওসাত’: (৪৫৪৬)।]
ইমাম ইবন আবদিল হাদী রহ. এ হাদীস ও তার দ্বারা দলীল পেশ করা প্রসঙ্গে বলেন, “এ হাদীসটি কবর যিয়ারতের আলোচনা প্রসঙ্গে নয় এবং মৃত্যুর পরে যিয়ারত করার আলোচনা প্রসঙ্গেও নয়; তাছাড়া তা এমন এক হাদীস, যার সনদ দুর্বল, মতন অপরিচিত ও অখ্যাত, তার দ্বারা দলীল পেশ করা শুদ্ধ নয়, আর অনুরূপ হাদীসের ওপর নির্ভর করা বৈধ নয় এবং ছয়টি বিশেষ গ্রন্থের কোনো সংকলনকারী তা বর্ণনা করেন নি, আর ইমাম আহমাদ রহ.-ও তার ‘আল-মুসনাদ’ এর মধ্যে তা বর্ণনা করেন নি, আর যে সব ইমাম হাদীস বর্ণনা করে কোনো মন্তব্য না করলে তা গ্রহণযোগ্য হয় এমন কোন ইমামও তা বর্ণনা করেন নি। যাদের বিশুদ্ধ বলা গ্রহণযোগ্য এমন নির্ভরযোগ্য কোনো ইমামও এ হাদীসকে বিশুদ্ধ বলেন নি। বরং এ শাইখই এককভাবে তা এমন এক ব্যক্তির কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন, যিনি ‘ইলম অর্জনে খুব পরিচিত নন, তা বহনে খ্যাতি লাভ করেন নি এবং তার অবস্থা সম্পর্কে এমন কিছু জানা যায় না, যা তার হাদীস গ্রহণ করার বিষয়টিকে আবশ্যক করে, আর তিনি হলেন: মাসলামাহ ইবন সালেম আল-জুহানী, যিনি এ ‘মুনকার হাদীস’ এবং অপর একটি ‘মাউদু‘ (বানোয়াট) হাদীস’ ছাড়া আর তেমন কোনো বিষয়ে খ্যাতি অর্জন করতে পারেন নি।
আর যখন এ শাইখের মত কোনো ব্যক্তি এককভাবে হাদীস বর্ণনা করেন, যার অবস্থা অজানা, যিনি খুব কম হাদীস বর্ণনা করেছেন। যেমন, এ দু’টি ‘মুনকার হাদীস’ বর্ণনা করেছেন, ‘উবায়দুল্লাহ ইবন উমার থেকে, যিনি তার যুগে উমার ইবনল খাত্তার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বংশের সবচেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য ও অধিক স্মৃতিসম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন, তিনি বর্ণনা করেছেন নাফে‘ থেকে, নাফে‘ সালেম থেকে, সালেম তাঁর পিতা আবদুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণনা করেন। বর্ণনার এ ধারায় ‘উবায়দুল্লাহর সকল সঙ্গী-সাথী হলেন প্রসিদ্ধ, বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী। সুতরাং জানা গেল যে, তিনি এমন এক শাইখ, যার হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করা বৈধ হবে না এবং তার বর্ণনার ওপর নির্ভর করা জায়েয হবে না; এ সত্ত্বেও তার থেকে যিনি বর্ণনা করেছেন, তিনি হলেন: আবদুল্লাহ ইবন মুহাম্মাদ আল-‘উব্বাদী, তিনি ঐসব শাইখদের একজন, যাদের এককভাবে বর্ণিত হাদীস দলীল হিসেবে পেশ করা যায় না...)। [‘আস-সারেম আল-মুনকী ফী আর-রাদ্দ ‘আলা আস-সুবুকী: (পৃ. ৪৯-৫০); আর তিনি হাদীসের অপর আরেকটি ত্রুটি আলোচনা করেছেন, সংক্ষেপ করার দিক বিবেচনা করে আমি তা আলোচনা না করার দিকটিকে প্রাধান্য দিয়েছি।]
মোটকথা, এ প্রকারের হাদীসগুলো নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে বলে সঠিক নয়; শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন, “নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর যিয়ারত প্রসঙ্গে বর্ণিত হাদীসের সব কয়টা হাদীস দুর্বল, দীনের ব্যাপারে তার কোনো একটির ওপরও নির্ভর করা যায় না, আর এ জন্য ‘সহীহ’ ও ‘সুনান’ গ্রন্থের সংকলনকারীগণ সেসব হাদীস থেকে কোনো কিছুই বর্ণনা করেন নি, আর এসব হাদীস শুধু তিনিই বর্ণনা করেন, যিনি দুর্বল হাদীস বর্ণনাকারী হিসেবে প্রসিদ্ধ। যেমন, দারাকুতনী, বাযযার ও অন্যান্যগণ”। [‘কায়েদাতুন জালিলাতুন ফিত্ তাওয়াস্সুল ওয়াল ওসীলা: (পৃ. ১৩৩)। আর ইমাম ইবন আবদিল হাদী রহ. তাঁর ‘আস-সারেম আল-মুনকী ফী আর-রাদ্দ ‘আলা আস-সুবুকী নামক গ্রন্থে এ প্রসঙ্গের হাদীসগুলো নিয়ে লম্বা আলোচনা করেছেন, যা আপনি অন্য কারও আলোচনার মধ্যে পাবেন না; আর আধুনিক গবেষণায় এ বিষয়ে আলোচনা আছে: ড. সালেহ ইবন হামিদ আর-রেফা‘য়ী, ‘আল-আহাদীস আল-ওয়ারেদা ফী ফাদায়েলিল মাদীনা জাম‘আন ওয়া দিরাসাতান’; শাইখ আহমাদ ইবন ইয়াহইয়া আন-নাজমী, ‘আওদাহুল ইশারা ফির্ রাদ্দে ‘আলা মান আজাযাল মামনূ‘ মিনায্ যিয়ারাত’ ।]
দ্বিতীয় প্রকার: এ প্রকারের হাদীসগুলো সরাসরি হজের পর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর যিয়ারতের সাথে সুনির্দিষ্ট; আর এ শ্রেণির হাদীসের সংখ্যা কয়েকটি। তন্মধ্যে প্রসিদ্ধ কয়টি নিম্নরূপ:
“যে ব্যক্তি বায়তুল্লায় হজ করল, অথচ আমার (কবর) যিয়ারত করল না, সে ব্যক্তি আমার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করল।” [হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, ইবন হিব্বান, আল-মাজরুহীন মিনাল মুহাদ্দিসীন ওয়াদ্ দু‘আফায়ে ওয়াল মাতরুকীন: (২/৪১৪); ইবন ‘আদী, ‘আল-কামেল’: (৭/২৪৮০); ইবনুল জাওযী, ‘আল-মাউদু‘আত মিনাল আহাদীস আল-মারফূ‘আত, হাদীস নং ১১৬৮।]
আর এটা মাউদু‘ বা জাল হাদীস, যে ব্যাপারে একদল আলিম সিদ্ধান্ত দিয়েছেন [যেমনটি পরিষ্কার হয়েছে হাদীসের সনদ বিশ্লেষণ থেকে।]। তারা হলেন: ইবনু তাহের আল-মাকদিসী রহ. [মা‘আরেফাতুত্ তাযকিরা ফিল্ আহাদীস আল-মাউদু‘আ: (৭৮৬)।], ইবনল জাওযী রহ. [‘আল-মাউদু‘আত মিনাল আহাদীস আল-মারফূ‘আত: (পৃ. ১১৬৮)।], আস-সাগানী রহ. [‘মাউদু‘আত আস-সাগানী: (পৃ. ৫২)।], ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. [ইকতিযাউ আস-সিরাত আল-মুস্তাকীম লি-মুখালিফাতি আসহাবিল জাহীম: (২/২৯৬)।], ইবন আবদিল হাদী রহ. [‘আস-সারেম আল-মুনকী ফী আর-রাদ্দ ‘আলা আস-সুবুকী: (পৃ. ৮৭)।], যাহাবী রহ. [মীযানুল ই‘তিদাল ফী নাকদ আর-রিজাল: (৪/২৬৫)।] ও শাওকানী রহ. [আল-ফাওয়ায়েদ আল-মাজমূ‘আ ফিল্ আহাদীস আল-মাওদু‘আ’: (পৃ. ৩২৪); আর তিনি তা উল্লেখ করেছেন কাছাকাছি শব্দ দ্বারা।]।
এ ক্ষেত্রে শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. এর বক্তব্যটিই যথেষ্ট, যেখানে তিনি বলেছেন: “নির্দিষ্ট কোনো কবর যিয়ারত প্রসঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে একটি হাদীসও (বিশুদ্ধভাবে) প্রমাণিত হয় নি, আর এ ব্যাপারে কেউ কোনো কিছু বর্ণনা করেন নি, না বর্ণনা করেছেন কোনো ‘সহীহ’ হাদীসের সংকলনকারী, না বর্ণনা করেছেন কোনো ‘সুনান’ গ্রন্থের সংকলনকারী; আর ইমাম আহমাদ প্রমুখের মত ‘আল-মুসনাদ’ সংকলনকারী ইমামগণের কোনো একজনও এ ধরণের হাদীস বর্ণনা করেন নি, আর এ ধরণের হাদীস শুধু তিনিই বর্ণনা করেছেন, যিনি ‘মাউদু‘ (জাল হাদীস) ও এ জাতীয় অন্যান্য হাদীস সংকলন করেছেন।
আর এ বিষয়ে বর্ণিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রসিদ্ধ হাদীস হলো যা দারাকুতনী রহ. বর্ণনা করেছেন, আর তা তাঁর (নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের) কবর যিয়ারত প্রসঙ্গে বর্ণিত হাদীসগুলো সম্পর্কে অভিজ্ঞ আলিম সমাজের সর্বসম্মত মতে ‘দ‘ঈফ’ বা দুর্বল। যেমন, তাঁর নামে প্রচলিত কথা:
“যে ব্যক্তি একই বছরে আমাকে এবং আমার পিতা ইবরাহীমকে যিয়ারত করল, আমি তার জন্য আল্লাহর নিকট জান্নাতের জামিন হব।” [ইমাম নববী রহ. বলেন: (এ হাদীসটি বাতিল, এটা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত নয়; আর এটা কোনো ‘সহীহ’ ও দুর্বল গ্রন্থে পাওয়া যায় না, বরং কিছু কিছু পাপী এ হাদীসটি তৈরি করে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামে চালিয়ে দিয়েছে)। -আল-মাজমূ‘উ শরহু ‘আল-মুহায্যাব’: (৮/২৬১)।আরও দেখুন: ফাতাওয়া আন-নববী: (পৃ. ৩৩০); ‘আল-আসরার আল-মারফূ‘আ’: (পৃ. ৪৮৯); আল-ফাওয়ায়েদ আল-মাজমূ‘আ ফিল্ আহাদীস আল-মাওদু‘আ’: (পৃ. ১১৭-১১৮)।] আর
“যে ব্যক্তি মৃত্যুর পর আমার (কবর) যিয়ারত করল, সে যেন আমার জীবদ্দশায় আমার সাথে সাক্ষাৎ করল।” [হাদীসটি দারাকুতনী রহ. বর্ণনা করেছেন, ‘আস-সুনান’ (২/২৭৮); তিনি হাদীসটি দু’টি পদ্ধতিতে বর্ণনা করেছেন: তন্মধ্যে একটির ভাষ্য হলো: (আমার মৃত্যুর পর যে ব্যক্তি হজ করল, তারপর আমার কবর যিয়ারত করল, সে যেন আমার জীবদ্দশায় আমার সাথে সাক্ষাৎ করল)। আর অপর ভাষ্যটি হলো:] আর
“যে ব্যক্তি বায়তুল্লার হজ করল, অথচ আমার (কবর) যিয়ারত করল না, সে ব্যক্তি আমার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করল।” [(যে ব্যক্তি মৃত্যুর পর আমার (কবর) যিয়ারত করল, সে যেন আমার জীবদ্দশায় আমার সাথে সাক্ষাৎ করল)। আর এ ভাষ্যের কাছাকাছি শব্দে আরও কতগুলো বর্ণনা বর্ণিত হয়েছে এবং এর একটি হাদীসও ‘সহীহ’ নয়।ইমাম ইবন আবদিল হাদী রহ. বলেন: (এ হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করা বৈধ নয় এবং অনুরূপ হাদীসের ওপর নির্ভর করা সঠিক নয়; কারণ, তা এমন হাদীস, যার মতন অপরিচিত ও অখ্যাত, সনদ পরিত্যাজ্য এবং হাফিযগণের একজনও তাকে ‘সহীহ’ বলেননি; আর ইমামগণের কেউ তার দ্বারা দলীল পেশ করেন নি, বরং তাঁরা তাকে দুর্বল বলেছেন এবং তার সমালোচনা ও নিন্দা করেছেন, আর তাঁদের কেউ কেউ তাকে মিথ্যা ও বানোয়াট হাদীসের অন্তর্ভুক্ত বলে উল্লেখ করেছেন)। — ‘আস-সারেম আল-মুনকী ফী আর-রাদ্দ ‘আলা আস-সুবুকী: (পৃ. ৬২)। হাদীসটি বর্ণনা করেছেন: ইবন হিব্বান, আল-মাজরুহীন মিনাল মুহাদ্দিসীন ওয়াদ্ দু‘আফায়ে ওয়াল মাতরুকীন: (২/৪১৪); ইবন ‘আদী, ‘আল-কামেল’: (৭/২৪৮০); ইবনুল জাওযী, ‘আল-মাউদু‘আত মিনাল আহাদীস আল-মারফূ‘আত: (১১৬৮)।] আর এ ধরণের হাদীসের সব ক’টিই মিথ্যা ও বানোয়াট”। [ইকতিযাউ আস-সিরাত আল-মুস্তাকীম লি-মুখালিফাতি আসহাবিল জাহীম: (২/২৯৬)।]
আর তাদের দ্বিতীয় কারণের ওপর আলোচনা- আর তা হলো কোনো কোনো ফকীহ রহ.-এর কর্মকাণ্ড। যেমন, তারা হজের পরে সরাসরি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরকে উদ্দেশ্য করে পরিকল্পিত সফরকে বৈধ বলে দলীল পেশ করে থাকেন, তা হলো ফিক্হ শাস্ত্রের গ্রন্থসমূহের ‘কিতাবুল মানাসিক’ (হাজ্জের অধ্যায়)-এর শেষের দিকে ফকীহগণ কর্তৃক ‘মদীনায়ে নববী’ ও ‘নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর যিয়ারত’-এর উদ্দেশ্য সফর করা এবং এ ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান প্রসঙ্গে আলোচনা করা, আর এ অধ্যায়ের প্রথম দিকে এর পরিপূর্ণ জবাব দেওয়া হয়েছে; আর আমি এখানে একটু বাড়িয়ে বলতে চাই যে, প্রকৃত যুক্তি-প্রমাণ হলো ‘কুরআন’ ও ‘সুন্নাহ’-এর দলীলের মধ্যে, আর যিনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর যিয়ারত করার উদ্দেশ্য সফর করার বৈধতার পক্ষে কথা বলেন, তার নিকট কোনো সহীহ দলীল নেই, চাই সেই যিয়ারত সরাসরি হজের পরে হউক অথবা বছরের যে কোনো দিনেই হউক।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/170/22
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।