hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

হজের সাথে সংশ্লিষ্ট আকীদাগত ভুল-ভ্রান্তিসমূহ

লেখকঃ ড. আহমাদ ইবন উসমান আল-মাযইয়াদ

প্রথম অধ্যায় : পাথেয় ছাড়া হজের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার মাধ্যমে তাওয়াক্কুল করার মত ভুল ধারণা পোষণ করা
ইবন জারীর আত-ত্ববারী রহ. বলেন, “তাওয়াক্কুল’ -এর সঠিক মানে হলো: বান্দাকে তার দীন ও দুনিয়ার ব্যাপারে চেষ্টা-তদবির করার যে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে, সে ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ চেষ্টা-সাধনা করার পর তার কর্তৃক আল্লাহ তা‘আলার প্রতি দৃঢ় আস্থা পোষণ করা, কাজ-কারবারে তাঁর ওপর ভরসা করা এবং এর সবকিছু তাঁর প্রতি ন্যস্ত করা।” [ইবন বাত্তাল, শরহু সহীহ আল-বুখারী: (৯/৪০৮)।]

আর ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেন, “তাওয়াক্কুল’ হলো বান্দাকে তার দীন ও দুনিয়ার ব্যাপারে যা উপকৃত করে তা অর্জন করার ক্ষেত্রে এবং তার দীন ও দুনিয়ার ব্যাপারে যা ক্ষতি করে তা প্রতিরোধ করার ব্যাপারে আল্লাহর ওপর হৃদয়-মন দিয়ে নির্ভর করা, আর এ নির্ভরতার সাথে সরাসরি উপায়-উপকরণের অবলম্বনও জরুরি।” [ইবনুল কাইয়্যেম, যাদ আল-মা‘আদ: (৪/১৫)।]

সুতরাং ‘তাওয়াক্কুল’ হলো আল্লাহর ওপর ভরসা, তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন ও তাঁর শরণাপন্ন হয়ে এবং তাঁর ওপর সবকিছু ন্যস্ত করার মধ্য দিয়ে অন্তরের কাজ ও ইবাদত করার নাম। আরও থাকবে বান্দা কর্তৃক ঐ বিষয়ের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর দক্ষতাপূর্ণ জ্ঞানে ও সুন্দর পছন্দে তাঁর বান্দার জন্য যা ফয়সালা করেছেন; যখন সে তার বিষয়টি তাঁর ওপর ন্যস্ত করে, তবে সাথে সাথে তাকে নির্দেশিত উপায়-উপকরণ ব্যবহার করতে হবে এবং তা অর্জনের ব্যাপারে তার চেষ্টা-সাধনা থাকতে হবে।

‘তাওয়াক্কুল’ -এর স্বরূপ হচ্ছে: উপায়-উপকরণের ব্যবহার এবং অন্তর দ্বারা উপায়-উপকরণের মালিক আল্লাহর ওপর নির্ভর করা। [ইবন রজব, ‘জামে‘উল ‘উলূম ওয়াল হিকাম’: (২/৪৯৭); আল-কারাফী, ‘আয-যাখীরা’: (১৩/২৪৭); ইবনুল কায়্যিম, ‘মাদারেজ আস-সালেকীন’: (৩/৫২৩)।]

‘তাওয়াক্কুল’ -এর গুরুত্বের পক্ষে দলীল হলো: আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক তাঁর নবীকে সুস্পষ্টভাবে তাঁর ওপর ‘তাওয়াক্কুল’ করার নির্দেশ প্রদান করা, যেখানে তিনি বলেছেন:

﴿فَتَوَكَّلۡ عَلَى ٱللَّهِۖ إِنَّكَ عَلَى ٱلۡحَقِّ ٱلۡمُبِينِ ٧٩﴾ [ النمل : ٧٩ ]

“সুতরাং আল্লাহর ওপর নির্ভর করুন; আপনি তো স্পষ্ট সত্যে প্রতিষ্ঠিত।” [সূরা আন-নামল, আয়াত: ৭৯] আর এ একই নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে আল-কুরআনুল কারীমের আরও নয়টি জায়গায়; আর এর মধ্যে তিনি তাঁর মুমিন বান্দাগণকে তা অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন; আর এটাই হলো শরী‘আতসম্মত ‘তাওয়াক্কুল’, আর এটা এমন ‘তাওয়াক্কুল’, যা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারা উপায়-উপকরণ গ্রহণ করার বিষয়টিকে দাবি করে এবং আরও দাবি করে উপায়-উপকরণের মালিক আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার ওপর হৃদয়-মনের নির্ভরতা। এ মাসয়ালাতে এটাই হলো আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মত। আর এটাই সঠিক ও বাস্তব, যার পক্ষে প্রমাণ পেশ করে শরী‘আতের বক্তব্যগুলো এবং যুক্তিভিত্তিক দলীলসমূহ। সুতরাং আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী ‘মুতাওয়াক্কিল’ (আল্লাহর ওপর ভারসাকারী) ব্যক্তি (শুধু) উপায়-উপকরণের প্রতি মনোযোগ দেয় না, অর্থাৎ সে শুধু উপায়-উপকরণে নিশ্চিন্ত থাকে না, তার আশায় বসে থাকে না এবং তার ভয়ও করে না; ঠিক যেমনিভাবে সে উপায়-উপকরণ থেকে বিরতও থাকে না, ফলে সে তাকে ফেলে দেয় না, অবহেলা করে না এবং তাকে বাদ দেয় না; বরং সে মনোযোগ দিয়ে তা অবলম্বন করে, দৃষ্টি রাখে তার (উপায়-উপকরণের) স্রষ্টা ও পরিচালক আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার প্রতি [‘মাদারেজ আস-সালেকীন’: (৩/৫০০)।]।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَأَعِدُّواْ لَهُم مَّا ٱسۡتَطَعۡتُم﴾ [ الانفال : ٦٠ ]

“আর তোমরা তাদের মুকাবিলার জন্য যথাসাধ্য প্রস্তুতি রাখ।” [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৬০]

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«اعْقِلْهَا وَتَوَكَّلْ»

“তাকে (উটটিকে) বেঁধে নাও এবং (আল্লাহর ওপর) ভরসা করা।” [ইমামা তিরমিযী রহ. কিয়ামতের বর্ণনা প্রসঙ্গে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, বাব নং ৬০, হাদীস নং ৫৩৭, (৪/৬৬৮); ইবন হিব্বান, আস-সহীহ, হাদীস নং ২৫৪৯।] আর এটাই ছিল ‘তাওয়াক্কুল’-এর ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণের হিদায়াত বা নির্দেশনা, তারা ছিলেন ‘তাওয়াক্কুল’ -এর দিক থেকে সবচেয়ে বেশি পরিপূর্ণ নৈতিক চরিত্রের অধিকারী, আর তাঁদের হিদায়াত ও নির্দেশনার ওপরই জীবন চালিয়েছেন তাঁদের পরে আগত প্রজন্মসমূহ।

শরী‘আতসম্মত এ ‘তাওয়াক্কুল’ -এর বিপরীতে রয়েছে আরেক প্রকার ‘তাওয়াক্কুল’, যা শরী‘আতসম্মত নয়, আর তা হলো আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্যের ওপর ‘তাওয়াক্কুল’ (ভরসা) করা। আর তা দুই প্রকার:

১. এমন বিষয় বা কাজে আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্যের ওপর ‘তাওয়াক্কুল’ (ভরসা) করা, যা সমাধানের ব্যাপারে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা ছাড়া অন্যের কোনো ক্ষমতা নেই। যেমন, ঐসব ব্যক্তিবর্গ, যারা তাদের সাহায্য, রিযিক ও শাফা‘আতের দাবি পূরণের ব্যাপারে মৃতব্যক্তি ও ‘তাগুত’ (শয়তান)-এর ওপর ভরসা করে। বস্তুত এটা হলো বড় মাপের শির্ক, শির্কে আকবার। [‘তাইসীরুল ‘আযীয আল-হামীদ ফী শরহি কিতাব আত-তাওহীদ’: (৪৯৮)।] এ প্রকারের ‘তাওয়াক্কুল’-কে ‘তাওয়াক্কুল আস-সির’ বা ‘গোপন তাওয়াক্কুল’ নামে অভিহিত করা হয়। কারণ, এ জাতীয় ‘তাওয়াক্কুল’ শুধু এমন ব্যক্তির পক্ষ থেকেই হয়ে থাকে, যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে যে, সৃষ্টিজগতের মধ্যে এ মৃতব্যক্তির কোনো গোপন ক্ষমতা রয়েছে। [‘মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়েল আশ-শাইখ ইবন ‘উসাইমীন’: (৬/৫৪)।]

২. এমন বিষয় বা কাজে আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্যের ওপর ‘তাওয়াক্কুল’ করা, যা সমাধানের ব্যাপারে তার ধারণা অনুযায়ী ভরসাকৃত ব্যক্তি ক্ষমতা রাখে। বস্তুত এটা ছোট শির্ক [‘তাইসীরুল ‘আযীয আল-হামীদ ফী শরহি কিতাব আত-তাওহীদ’: (৪০)।]। এর দৃষ্টান্ত হলো: “দৃশ্যমান স্বাভাবিক উপায়-উপকরণে ‘তাওয়াক্কুল’ করা। যেমন, কোনো ব্যক্তি কর্তৃক কোনো নেতা বা শাসকের ওপর ‘তাওয়াক্কুল’ করা, যার হাতে আল্লাহ ‘রিযিক’ সরবরাহ অথবা দুঃখ-কষ্ট বা অসুবিধা দূর করার অথবা এর মত কোনো ক্ষমতা দিয়েছেন। তখন এটা হালকা বা ছোট মানের শির্ক বলে গণ্য হবে।” [‘তাইসীরুল ‘আযীয আল-হামীদ ফী শরহি কিতাব আত-তাওহীদ’: (৪৯৮)।]

হজের পাথেয় বর্জন করা তথা উপায়-উপকরণ পুরোপুরি বর্জন করাটা শরী‘আতসম্মত ‘তাওয়াক্কুল’-এর অন্তর্ভুক্ত নয়, আর আলিমগণের ঐক্যবদ্ধ রায় হলো; মুসলিম ব্যক্তির ওপর (শারীরিক ও আর্থিক) সামর্থ্য ছাড়া হজ আবশ্যক হয় না। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿وَلِلَّهِ عَلَى ٱلنَّاسِ حِجُّ ٱلۡبَيۡتِ مَنِ ٱسۡتَطَاعَ إِلَيۡهِ سَبِيلٗاۚ﴾ [ ال عمران : ٩٧ ]

“আর মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ ঘরের হজ করা তার জন্য অবশ্য কর্তব্য।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৯৭]

ইবনু কুদামা রহ. বলেন, (পাঁচটি শর্ত পূরণের মাধ্যমে হজ আবশ্যক হয়, তারপর তিনি তা উল্লেখ করেছেন তন্মধ্যে) অন্যতম একটি শর্ত হলো সামর্থ্য। [‘আল-মুগনী’: (৫/৬)।] এ শর্তে বর্ণিত সামর্থ্য দ্বারা উদ্দেশ্য হলো: পাথেয় ও যাতায়াত ব্যবস্থা অবলম্বন করা।

ইবন কুদামা রহ. বলেন, ‘আর সামর্থ্য হলো: পাথেয় ও যানবাহনের মালিক হওয়া।’ [‘আল-মুগনী’: (৫/৮)।]

সামর্থ্য এর উক্ত ব্যাখ্যার দলীল হলো, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক প্রদত্ত জবাব, যখন তাঁর নিকট জনৈক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করল:

«مَا يُوجِبُ الحَجَّ ؟ قال : الزادُ والراحلةُ» .

“কিসে হজকে আবশ্যক করবে? জবাবে তিনি বলেন, ‘পাথেয় ও যাতায়াত ব্যবস্থা’।” [হাদীসটি ‘মারফু’ সনদে আবদুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণনা করেছেন। ইবন মাজাহ, আস-সুনান, হাদীস নং ২৮৯৬; তিরমিযী, আস-সুনান, হাদীস নং ৮১৩।]

এসব ভাষ্য থেকে আমাদের নিকট স্পষ্ট হয়ে গেল যে, হজ আবশ্যক হওয়ার জন্য অন্যতম একটি শর্ত হলো ‘রসদপত্র’; আর হাজী সাহেবের জন্য তার সফরের মধ্যে ও আবাসিক অবস্থানে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর আলিম সমাজ হাজীদেরকে সর্কতার জন্য বেশি বেশি পাথেয় ও রসদপত্র সাথে রাখার উপদেশ দিয়ে থাকেন, যাতে তাকে জনগণের দ্বারস্থ হতে না হয়, এমনকি সে নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে না দেয়।

আল্লামা ইবন উসাইমীন রহ. বলেন,

‘যিনি হজ অথবা উমরা করার ইচ্ছা করেন, তার জন্য উচিৎ হলো বেশি বেশি করে খরচপাতি ও সফরের সম্বল কাছে রাখা এবং সতর্কতার জন্য তার প্রয়োজনের চেয়েও অতিরিক্ত অর্থ সঙ্গে রাখা, যাতে তাৎক্ষণিক জরুরি প্রয়োজন পূরণ করতে পারে’। [‘আল-মানহাজ লে-মুরীদ আল-হাজ ওয়াল ‘উমরা’: (পৃ. ১০৫)।]

অদ্ভুত ব্যাপার হলো যে, একটি গোষ্ঠী বিশ্বাস পোষণ করে যে, পাথেয় ও সহায়-সম্বল নিয়ে হজের উদ্দেশ্যে সফর করাটা আল্লাহর ওপর ‘তাওয়াক্কুল’ (ভরসা) করার পরিপন্থী। ফলে তারা সহায়-সম্বল ছাড়া সফরে বের হয়ে যায় এবং তারা তাদের নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়; তাদের ধারণা যে, এ সবকিছুই তারা করছে ‘তাওয়াক্কুল’-কে পরিশুদ্ধ করার নিমিত্তে। [‘দেখুন: ‘তালবীসু ইবলিস’: (২/৮৩২); ‘আস-সুনান ওয়াল মুবতাদা‘আত আল-মুতা‘আল্লাকা বিল আযকার ওয়াস সালাওয়াত’: (পৃ. ১৫২); ‘মানাসিক আল-হাজ ওয়াল ‘উমরা’: (পৃ. ৪৬)।]

বস্তুত তাদের এ ধরনের কুধারণা ও মন্দ বিশ্বাস অনেক আগ থেকেই চালু ছিল। এর প্রমাণ হলো:

১. আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা’র উক্তি, তিনি বলেন,

«كَانَ أَهْلُ الْيَمَنِ يَحُجُّونَ، وَلَا يَتَزَوَّدُونَ، وَيَقُولُونَ : نَحْنُ الْمُتَوَكِّلُونَ، فَإِذَا قَدِمُوا مَكَّةَ سَأَلُوا النَّاسَ، فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى : ﴿ وَتَزَوَّدُواْ فَإِنَّ خَيۡرَ ٱلزَّادِ ٱلتَّقۡوَىٰۖ ﴾ [ البقرة : ١٩٧ ] » .

“ইয়ামানের অধিবাসীগণ হজে গমনকালে পাথেয় সঙ্গে নিতো না এবং তারা বলত: আমরা আল্লাহর ওপর ভরসাকারী; কিন্তু যখন তারা মক্কায় আগমন করত, তখন তারা জনগণের কাছে সাহায্যের আবেদন করে বেড়াতো। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা আয়াত অবতীর্ণ করেন:

﴿وَتَزَوَّدُواْ فَإِنَّ خَيۡرَ ٱلزَّادِ ٱلتَّقۡوَىٰۖ﴾ [ البقرة : ١٩٧ ]

“আর তোমরা পাথেয় সংগ্রহ কর। নিশ্চয় সবচেয়ে উত্তম পাথেয় হচ্ছে তাকওয়া।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৯৭]” [সহীহ বুখারী, আস-সহীহ, হাদীস নং ১৪৫১; আবূ দাউদ, আস-সুনান, হাদীস নং ১৭৩০; নাসাঈ, ‘আস-সুনান আল-কুবরা’ (৮৭৩৯)।]

ইমাম ইবন জারীর ত্ববারী রহ. বলেন, “বর্ণিত আছে যে, এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে এমন এক সম্প্রদায়ের ব্যাপারে, যারা পাথেয় ছাড়া হজ করত, আর তাদের কেউ কেউ যখন ইহরাম বাঁধতো, তখন তাদের সাথে থাকা পাথেয় ছুড়ে ফেলে দিত এবং অন্যের নিকট পাথেয় চেয়ে আবেদন করত। তারপর তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সঙ্গে পাথেয় না নিত, আল্লাহ তা‘আলা তাকে তার সফরের জন্য পাথেয় নেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন, আর তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি পাথেয়ের মালিক ছিল, তিনি তাকে তার পাথেয়কে সংরক্ষণ করতে এবং তা ছুড়ে ফেলে না দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন”। [‘জামে‘উল বায়ান ‘আন তা’বীল আয়িল কুরআন’: (২/২৭৮)।]

২. সা‘ঈদ ইবন নাসীর বলেন,

«سألت سفيان بن عيينة رحمه الله _ فقلت : يا أبا محمد ! عندنا قوم يلبسون الشعر، ويحجون ولا يتزودون، ويزعمون أن من حمل الزاد فليس بمؤمن . فقال : كذبوا ؛ هؤلاء أعداء السنة، لا تجالسوهم ولا تحدثوهم»

“আমি সুফিয়ান ইবন ‘উয়ায়ানা রহ. কে প্রশ্ন করে বললাম: হে আবূ মুহাম্মাদ! আমাদের সমাজে এক সম্প্রদায় রয়েছে, যারা পশমের পোশাক পরিধান করে, আর তারা হজ করে এবং সঙ্গে পাথেয় নিয়ে যায় না, আর তারা বিশ্বাস করে যে, যে ব্যক্তি পাথেয় নিয়ে (হজে) যায়, সে ব্যক্তি মুমিন নয়। এ কথা শুনে তিনি বললেন: ‘তারা মিথ্যা বলেছে; এসব লোক সুন্নাহ’র শত্রু, তোমরা তাদের সাথে উঠা-বসা করবে না এবং তাদের সাথে কোনো কথা বলবে না।” [দেখুন: ‘আস-ছিকাত: (৮/২৬৯)।]

৩. জনৈক ব্যক্তি ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল রহ. এর কাছে এসে বলল:

«أُرِيد أَنْ أَخْرُجَ إلى مكَّةَ على التوكُّلِ بِغَير زادٍ، فقال له أَحْمَدُ : اخرج في غير القَافِلَةِ . فقال : لا ؛ إِلاَّ معهُم، فقال : على جراب النَّاسِ تَوكلتَ» .

“আমি আল্লাহর ওপর ‘তাওয়াক্কুল’ (ভরসা) করে কোনো রকম পাথেয় ছাড়াই মক্কার উদ্দেশ্যে বের হতে চাই, তখন আহমাদ রহ. তাকে লক্ষ্য করে বললেন: তাহলে তুমি কাফেলার সাথে না গিয়ে একা একা বের হও। তখন সে বলল: না, বরং আমি তাদের সাথেই বের হব। তখন তিনি বললেন: তাহলো তো তুমি জনগণের ভাণ্ডারের ওপর ‘তাওয়াক্কুল’ করেছ।” [এ কাহিনীটি ইমাম আহমাদ রহ. থেকে ইবনুল জাওযী রহ. বর্ণনা করেছেন ‘তালবীসু ইবলিস’: (২/৮৩২) গ্রন্থে। আর তিনি তা সনদসহ এর চেয়ে আরও পরিপূর্ণভাবে বর্ণনা করেছেন, তাঁর নিকট বর্ণনাটি এসেছে: (তাহলে তুমি কি একা একা মরুভূমিতে প্রবেশ করবে, নাকি জনগণের সাথে? জবাবে সে বলল: না, জনগণের সাথে প্রবেশ করব; তখন ইমাম আহমাদ রহ. বললেন: তুমি মিথ্যা বলছ; তুমি আল্লাহর ওপর ভরসাকারী নও; সুতরাং তুমি একা একা প্রবেশ কর, আর তা না হলে তুমি জনগণের ভাণ্ডারের ওপর ভরসাকারী) ‘আল-হাছ্ছু ‘আলাত তিজারাত ওয়াস সানা‘আত...’: (পৃ. ৯৪)।]

আর কোনো সন্দেহ নেই যে, এর কারণ হলো ‘তাওয়াক্কুল’-এর প্রকৃত অর্থ ও তাৎপর্য সম্পর্কে ঐসব লোকজনের অজ্ঞতা ও মূর্খতা; আরও একটি কারণ হলো, তাদের ওপর ইবলিস শয়তানের আছর বা প্রভাব।

ইমাম ইবনুল জাওযী রহ. বলেন,

«وقد لَبَّسَ إِبْلِيسُ على أقوامٍ يَدعُون التوكُّل؛ فخرجوا بِلاَ زادٍ، وظنُّوا أن هذا هو التوكُّلُ وهُم على غاية الخطأَ» .

“আর ইবলিস কর্তৃক প্রতারণার শিকার হয়েছে এমন কতগুলো গোষ্ঠী, যারা তাওয়াক্কুল তথা আল্লাহর ওপর ভরসা করার দাবি করে। ফলে তারা পাথেয় ছাড়া (হজের উদ্দেশ্যে) বের হয়ে যায়, আর বিশ্বাস করে যে, এটাই হলো ‘তাওয়াক্কুল’ অথচ তারা চরম ভুল ও বিভ্রান্তির মধ্যে ডুবে আছে”। [‘তালবীসু ইবলিস’: (২/৮৩২); আর এ অদ্ভুত ‘তাওয়াক্কুল’-এর উদাহরণ ও দৃষ্টান্ত দেখুন আল-কুশাইরীর ‘আর-রিসালা’ নামক গ্রন্থে: (পৃ. ১০৬-১০৮)।]

ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল রহ. এর জবাব ও যুক্তি খণ্ডনের মধ্য দিয়ে আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল যে, যে ব্যক্তি পাথেয় ছাড়া হজ করবে, সে ব্যক্তি হবে জনগণের ওপর তাওয়াক্কুলকারী ও নির্ভরশীল, আর এ কথা বলা সঠিক হবে না যে, সে আল্লাহর ওপর ভরসাকারী।

বস্তুত আল্লাহর তা‘আলার ওপর ভরসা করা হচ্ছে, মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য, আর তা হলো উপায়-উপকরণ অবলম্বন করা এবং সাথে আল্লাহর ওপর পরিপূর্ণ নির্ভরশীল হওয়া। ‘তাওয়াক্কুল’ মানে এমনটি নয় যেমনটি রূপরেখা পেশ করে ইবলিস তার অনুসারীদের জন্য।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন