মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
কালেমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর অর্থ, শর্তসমূহ এবং ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে তার প্রভাব
লেখকঃ শায়খ সালেহ ইবন ফাওযান আলে-ফাওযান
১০
একজন ব্যক্তির জন্য কখন لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ এর স্বীকৃতি ফলদায়ক হবে আর কখন এর স্বীকৃতি নিষ্ফল হবে?
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/24/10
আমরা পূর্বেই বলেছি যে, لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ এর স্বীকৃতির সাথে এর অর্থ বুঝা এবং এর দাবী অনুযায়ী কাজ করাটা ওতোপ্রোতভাবে জড়িত কিন্তু কুরআন ও হাদিসে এমন কিছু উদ্ধৃতি আছে যা থেকে সন্দেহের উদ্ভব হয় যে, শুধুমাত্র ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ মুখে উচ্চারণ করলেই যথেষ্ট। মূলতঃ কিছু লোক এ ধারণাই পোষণ করে বসে আছে। অতএব সত্যসন্ধানীদের জন্য এ সন্দেহের নিরসন করে দেওয়া একান্তই প্রয়োজন মনে করি।
ইতবান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, “যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে বলবে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, আল্লাহ তার ওপর জাহান্নামের আগুনকে হারাম করে দিবেন। [সহীহ বুখারী, ১১/২০৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৩।]” এই হাদীসের আলোচনায় শাইখ সুলাইমান ইবন আব্দুল্লাহ বলেন, মনে রাখবেন অনেক হাদীসের বাহ্যিক অর্থ দেখলে মনে হবে যে, কোনো ব্যক্তি তাওহীদ এবং রিসালাতের শুধুমাত্র সাক্ষ্য দান করলেই জাহান্নামের জন্য সে হারাম হয়ে যাবে যেমনটি উল্লিখিত হাদীসে বলা হয়েছে। এমনিভাবে আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসেও এসেছে তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু একবার সাওয়ারীর পিঠে আরোহণ করে কোথাও যাচ্ছেন এমন সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু‘আযকে ডাকলেন। তিনি বললেন, লাব্বাইকা ওয়া সা‘দাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ। এর পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে মু‘আয, যে বান্দাই এ সাক্ষ্য প্রদান করবে যে, ‘আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্য মা‘বুদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল’ আল্লাহ তাকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দিবেন [সহীহ বুখারী ১/১৯৯।]। অনুরূপ ইমাম মুসলিম ‘উবাদাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্য ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দাহ এবং রাসূল, আল্লাহ তাকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দিবেন’ [সহীহ মুসলিম ১/২২৮–২২৯।]। এছাড়া অনেকগুলো হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি তাওহীদ ও রিসালাতের স্বীকৃতি দান করবে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, তবে জাহান্নাম তার জন্য হারাম করা হবে এমন কোনো উল্লেখ তাতে নেই। অনুরূপভাবে তাবুক যুদ্ধ চলাকালীন একটি ঘটনা, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বললেন, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্য মা‘বুদ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল।’ সংশয়হীনভাবে এ কালেমা পাঠকারী যদি আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করে তবে জান্নাতের মধ্যে এবং তার মধ্যে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকবে না। [সহীহ মুসলিম ১/২২৪।]” এসব হাদীস ও বর্ণনার বিষয়ে শাইখ সুলাইমান ইবন আব্দুল্লাহ রহ. বলেন, শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ এবং অন্যান্য ওলামায়ে কেরাম এ বিষয়ে যে ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন তা অত্যন্ত চমৎকার। ইবনে তাইমিয়্যাহ্ রহ. বলেন, এ সমস্ত হাদীসের অর্থ হচ্ছে, যে ব্যক্তি এ কালেমা পাঠ করে এর ওপর মারা যাবে (যেভাবে নির্দিষ্ট সীমারেখায় বর্ণিত হয়েছে) এবং এই কালেমাকে সংশয়হীনভাবে একেবারে নিরেট আল্লাহর ভালোবাসায় হৃদয় মন থেকে এর স্বীকৃতি দিবে; কেননা প্রকৃত তাওহীদ হচ্ছে সার্বিক ভাবে আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করা এবং আকৃষ্ট হওয়া। অতএব, যে ব্যক্তি খালেস দিলে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ এর সাক্ষ্য দান করবে সেই জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর ইখলাস হচ্ছে আল্লাহর প্রতি ঐ আকর্ষণের নাম যে আকর্ষণ বা আবেগের ফলে আল্লাহর নিকট বান্দা সমস্ত পাপের জন্য খালেস তওবা করবে এবং যদি এ অবস্থায় সে মারা যায় তবেই জান্নাত লাভ করতে পারবে। কারণ, অসংখ্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, যে ব্যক্তি বলবে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ সে ব্যক্তি জাহান্নাম থেকে বেরিয়ে আসবে যদি তার মধ্যে অণু পরিমাণও ঈমান বিদ্যমান থাকে। এছাড়া অসংখ্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, অনেক লোক ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার পরেও জাহান্নামে প্রবেশ করবে এবং কৃতকর্মের শাস্তি ভোগ করার পর সেখান থেকে বেরিয়ে আসবে। অনেকগুলো হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, বনি আদম সিজদা করার ফলে যে চিহ্ন পড়ে ঐ চিহ্নকে জাহান্নাম কখনো স্পর্শ করতে পারবে না, এতে বুঝা গেল ঐ ব্যক্তিরা সালাত পড়ত এবং আল্লাহর জন্য সাজদাহ করত। আর অনেকগুলো মুতাওয়াতির হাদীসে এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, যে ব্যক্তি বলবে, ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ এবং এই সাক্ষ্য দান করবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য মা‘বুদ নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, তার ওপর জাহান্নামকে হারাম করা হবে। তবে একথাগুলো কঠোর শর্তে (যেমন, ইখলাস, ইয়াকীন, সততা ইত্যাদির সাথে) শর্তযুক্ত করে বর্ণিত হয়েছে। অথচ অধিকাংশ লোক যারা এ কালেমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ মুখে উচ্চারণ করে তারা জানে না ইখলাস এবং ইয়াকীন বা দৃঢ় প্রত্যয় বলতে কি বুঝায়। আর যে ব্যক্তি এ বিষয়গুলো সম্পর্কে অবহিত থাকবে না মৃত্যুর সময় এ কারণে ফিতনার সম্মুখীন হওয়াটাই স্বাভাবিক এবং ঐ সময় হয়ত তার মাঝে এবং এ কালেমার মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে। অনেক লোক এ কালেমা অনুকরণমূলক বা সামাজিক প্রথা অনুযায়ী পাঠ করে থাকে অথচ তাদের অন্তরে ঐকান্তিকভাবে ঈমানের খুশি প্রবেশ করে না। আর মৃত্যুকালে ও কবরের ফিতনার সম্মুখীন যারা হয় তাদের অধিকাংশই এই শ্রেণির মানুষ। যেমন, হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, এ ধরনের লোকরা কবরে প্রশ্ন করার পর উত্তরে বলবে, ‘মানুষকে এভাবে একটা কিছু বলতে শুনেছি এবং আমিও তাদের মত বুলি আওড়িয়েছি মাত্র’। তাদের অধিকাংশ কাজ কর্ম এবং আমল তাদের পূর্বসূরীদের অনুকরণেই হয়ে থাকে। আর এ কারণে তাদের জন্য আল্লাহর এ বাণীই শোভা পায়:
“আমরা আমাদের পিতা-পিতামহদের এই পথের পথিক হিসেবে পেয়েছি এবং আমরা তাদেরই পদাংক অনুসরণ করে চলেছি।” [সূরা আয-যুখরুফ, আয়াত: ২৩]
এই দীর্ঘ আলোচনার পর বলা যায় যে, এ প্রসঙ্গে বর্ণিত হাদীসগুলোর মধ্যে কোনো প্রকার বিরোধিতা নেই। অতএব, কোনো ব্যক্তি যদি পূর্ণ ইখলাস এবং ইয়াকীনের সাথে এ কালেমা পাঠ করে থাকে তা হলে কোনো মতেই সে কোনো পাপ কাজের ওপর অবিচলিত থাকতে পারে না। কারণ, তার বিশুদ্ধ ইসলাম বা সততার কারণে আল্লাহর ভালোবাসা তার নিকট সকল কিছুর উর্ধ্বে স্থান পাবে। অতএব, এ কালেমা পাঠ করার পর আল্লাহর হারামকৃত বস্তুর প্রতি তার হৃদয়ের মধ্যে কোনো প্রকার আগ্রহ বা ইচ্ছা থাকবে না এবং আল্লাহ যা আদেশ করেছেন সে সম্পর্কে তার মনের মাঝে কোনো প্রকার দ্বিধা- সংকোচ বা ঘৃণা থাকবে না। আর এ ধরনের ব্যক্তির জন্যই জাহান্নাম হারাম হবে, যদিও তার নিকট থেকে এর পূর্বে কিছু গুনাহ হয়ে থাকে। কারণ তার ঈমান, ইখলাস, ভালোবাসা এবং ইয়াকীন তার অন্যসব পাপকে এভাবে মুছে দিবে যেভাবে দিনের আলো রাতের অন্ধকারকে দূরিভূত করে দেয়। [শাইখ সুলাইমান ইবন আবদিল্লাহ, তাইসীরুল আযীযিল হামীদ, পৃ. ৬৬-৬৭।]
শাইখ মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল ওয়াহ্হাব বলেন, এই প্রসঙ্গে তাদের আরেকটি সংশয় এই যে তারা বলে, উসামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এক ব্যক্তিকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার পরেও হত্যা করার কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এ কাজকে নিন্দা করেছেন এবং উসামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে জিজ্ঞাসা করেছেন, তুমি কি তাকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার পর হত্যা করেছ? এ ধরনের আরো অন্যান্য হাদীস যাতে কালেমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পাঠকারীর নিরাপত্তা সম্পর্কে বলা হয়েছে। এ থেকে এ সকল মূর্খরা বলতে চায় যে, কোনো ব্যক্তি এ কালেমা পড়ার পর যা ইচ্ছা করতে পারে, এ কারণে আর কখনো কাফের হয়ে যাবে না এবং তার জীবনের নিরাপত্তার জন্য এটাই যথেষ্ট। এ সমস্ত অজ্ঞদের বলতে হয় যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াহূদীদের সাথে জিহাদ করেছেন এবং তাদের বন্দী করেছেন অথচ তারা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এ কথাকে স্বীকার করত। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীগণ বনু হানিফা গোত্রের সাথে জিহাদ করেছেন অথচ তারা স্বীকার করত যে, আল্লাহ এক এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ এবং তারা সালাত পড়ত ও ইসলামের দাবীদার ছিল। এভাবে আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যাদেরকে জ্বালিয়ে মেরেছিলেন তাদের কথাও উল্লেখ করা যায়।
এ সমস্ত অজ্ঞরা এ বিষয় স্বীকৃতি দান করে যে, যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার পর পুনরুত্থানকে অবিশ্বাস করবে সে কাফের ও মুরতাদ হয়ে যাবে এবং মুরতাদ হওয়ার কারণে তাকে হত্যা করা হবে। এছাড়া যে ব্যক্তি ইসলামের স্তম্ভগুলোর কোনো একটিকে অস্বীকার করবে তাকে কাফির বলা হবে এবং মুরতাদ হওয়ার কারণে তাকে হত্যা করা হবে, যদিও সে মুখে لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ এ কালেমা উচ্চারণ করুক। তা হলে বিষয়টা কেমন হলো? আংশিক দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বক্রতার পথ গ্রহণ করলে যদি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা কোনো উপকারে না আসে তা হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনিত দ্বীনের মূল বিষয় তাওহীদের সাথে কুফুরী করার পর কীভাবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ শুধুমাত্র মুখে উচ্চারণ করাটা তার উপকার সাধন করতে পারে? মূলত আল্লাহদ্রোহীরা এই সমস্ত হাদীসের অর্থ বুঝতে পারে নি [দেখুন, মাজমূ‘আতুত তাওহীদ, পৃ. ১২০-১২১।]।
উসামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদীসের ব্যাখ্যায় তিনি আরো বলেন, উসামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ঐ ব্যক্তিকে হত্যা করেছেন এই মনে করে যে, ঐ ব্যক্তি মুসলিম হওয়ার দাবী করেছে শুধুমাত্র তার জীবন ও সম্পদ রক্ষার ভয়ে। আর ইসলামের নীতি হচ্ছে কেউ ইসলাম গ্রহণ করলে ঐ পর্যন্ত তার ধন-সম্পদ ও জীবনের নিরাপত্তা প্রদান করা হবে যে পর্যন্ত ইসলামের পরিপন্থী কোনো কাজ সে না করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“হে ঈমানদারগণ তোমরা যখন আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য বাহির হও তখন যাচাই করে নিও।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৯৪] এই আয়াতের অর্থ হলো এই যে, কোনো ব্যক্তির ইসলাম গ্রহণের পর ঐ পর্যন্ত তার জীবনের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে যে পর্যন্ত ইসলাম পরিপন্থী কোনো কাজ তার নিকট থেকে প্রকাশ না পায়। কিন্তু যদি এর বিপরীত কোনো কাজ করা হয় তাহলে তাকে হত্যা করা যাবে। কেননা আয়াতে বলা হয়েছে, তোমরা অনুসন্ধানের মাধ্যমে নিরূপণ কর। আর যদি তাই না হতো তাহলে এখানে ( فَتَبَيَّنُواْ ) অর্থাৎ ‘যাচাই কর’ এ শব্দের কোনো মূল্যই থাকে না। এভাবে অন্যান্য হাদীসসমূহ, যার আলোচনা পূর্বে বর্ণনা করেছি অর্থাৎ যে ব্যক্তি ইসলাম এবং তাওহীদের স্বীকৃতি দান করল এবং এরপর ইসলাম পরিপন্থী কাজ থেকে বিরত থাকল তার জীবনের নিরাপত্তা প্রদান করা ওয়াজিব। আর একথার দলিল হচ্ছে, যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উসামাকে বললেন, “তুমি কি তাকে لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ বলার পর হত্যা করেছ?” সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই বলেছেন, “আমি মানুষের সাথে জিহাদ করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি যে পর্যন্ত না তারা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সত্য মা‘বুদ নেই।” আবার তিনিই খারেজিদের সম্পর্কে বলেন, ‘তোমরা যেখানেই তাদের দেখা পাও সেখানেই তাদেরকে হত্যা কর, আমি যদি তাদেরকে পেতাম তাহলে ‘আদ জাতির হত্যার মত তাদেরকে হত্যা করতাম’। অথচ এরাই ছিল তখনকার সময় সবচেয়ে বেশি ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ উচ্চারণকারী। এমনকি সাহাবায়ে কেরাম এ দিক থেকে এ সমস্ত লোকদের তুলনায় নিজদেরকে খুব খাটো মনে করতেন। যদিও তারা সাহাবায়ে কেরামের নিকট থেকে শিক্ষা গ্রহণ করত, কিন্তু এদের নিকট থেকে ইসলাম বহির্ভূত কাজ প্রকাশ পাওয়ায় এদের “লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ” বলা বা এর প্রচার করা এবং ইবাদত করা ও মুখে ইসলামের দাবি করা কোনো কিছুই তাদের কাজে আসল না। এভাবে ইয়াহূদীদের সাথে যুদ্ধ করা এবং সাহাবীদের ‘বনু হানিফা’ গোত্রের সাথে যুদ্ধ করার বিষয়গুলোও এখানে উল্লেখযোগ্য।
এ প্রসঙ্গে হাফেয ইবন রজব তার ‘কালেমাতুল ইখলাস’ নামক গ্রন্থে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস ‘আমি আদিষ্ট হয়েছি মানুষের সাথে জিহাদ করার জন্য যে পর্যন্ত না তারা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্য মা‘বুদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল” এর ব্যাখ্যায় বলেন, ‘উমর ও একদল সাহাবী বুঝে ছিলেন যে, যে ব্যক্তি শুধুমাত্র তাওহীদ ও রিসালাতের সাক্ষ্য দান করবে একমাত্র এর ওপর নির্ভর করে তাদের দুনিয়াবী শাস্তি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে। এ জন্যই তারা যাকাত প্রদান করতে যারা অস্বীকার করেছে তাদের সাথে যুদ্ধের ব্যাপারে দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েছেন, কিন্তু আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বুঝেছিলেন যে, ‘ঐ পর্যন্ত তাদেরকে যুদ্ধ থেকে অব্যাহতি দেয়া যাবে না যে পর্যন্ত তারা এ কালেমার হক্ব (যাকাত) আদায় করতে স্বীকৃতি না দিবে। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “অতঃপর যখন তারা এ কালেমার (তাওহীদ ও রিসালাতের) স্বীকৃতি দিবে, তখন তারা আমার নিকট থেকে তাদের জীবনকে হিফাযত করবে তবে এ স্বীকৃতির হক বা অধিকার অনুযায়ী ইসলামী দণ্ডে দণ্ডিত হলে দুনিয়ায় তাদের ওপর সে দণ্ড প্রয়োগ করা হবে এবং তাদের পরকালীন হিসাবের দায়িত্ব আল্লাহর উপর বর্তাবে।” আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু আরও বলেছিলেন যে, “যাকাত হচ্ছে, সম্পদের হক” [অর্থাৎ সম্পদের হক আদায় করার জন্য হাদীসের মধ্যেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সুতরাং ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ বলার পরও সে কিন্তু নিরাপদ থাকে নি, কারণ সে কালেমার হক নষ্ট করেছে। সুতরাং যারাই ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ বলবে তারা যদি এ কালেমার অর্থ ও চাহিদা বিরোধী কাজ করে তাহলে তারা কোনোভাবেই নিরাপদ হবে না। [সম্পাদক]]।
অবশ্য আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর এ বুঝ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ইবন ‘উমার, আনাস ও অন্যান্য অনেক সাহাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম স্পষ্টভাবেই বর্ণনা করেছেন। তারা বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“আমি মানুষের সাথে লড়াই করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি যে পর্যন্ত না তারা বলবে, ‘আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সত্য মা‘বুদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর রাসূল এবং সালাত প্রতিষ্ঠিত করবে ও যাকাত দান করবে” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২।]।
তাছাড়া আল্লাহ তা‘আলার বাণীও এ অর্থই বহন করে। তিনি বলেন,
“তারা যদি তাওবা করে, সালাত কায়েম করে ও যাকাত প্রদান করে তাহলে তারা তোমাদের দীনি ভাই”। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১১] এ থেকে প্রমাণিত হলো যে, কোনো ব্যক্তির সাথে দীনি ভ্রাতৃত্ব ঐ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত হবে না, যে পর্যন্ত সে তাওহীদের স্বীকৃতির সাথে সাথে সমস্ত ফরয ওয়াজিব আদায় না করবে। আর শির্ক থেকে তাওবা করা ঐ পর্যন্ত প্রমাণিত হবে না যে পর্যন্ত তাওহীদের ওপর অবিচল না থাকবে।
আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যখন সাহাবীদের কাছে এটা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হলেন, তখন তাঁরা এ রায়ের প্রতি ফিরে আসলেন এবং তাঁর সিদ্ধান্তই সঠিক মনে করলেন। এতে বুঝা গেল যে, শুধুমাত্র এই কালেমা পাঠ করলেই যেমন দুনিয়ার শাস্তি থেকে রেহাই পাওয়া যাবে না, তেমনি ইসলামের কোনো বিধি বিধান লংঘন করলেও দুনিয়াতেই তাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে। সুতরাং আখেরাতের শাস্তির বিষয়টিও একই রকম।
হাফেয ইবন রাজাব আরও বলেন [কালেমাতুল ইখলাস, পৃ. ৯-১০।], আলেমদের মধ্যে অন্য একটি দল (উক্ত সন্দেহের জবাবে) বলেন, এ সব হাদীসের অর্থ হচ্ছে, لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ মুখে উচ্চারণ করা জান্নাতে প্রবেশ এবং জাহান্নাম থেকে নিস্কৃতি পাওয়ার একটা প্রধান উপকরণ এবং এর দাবী মাত্র। আর এ দাবীর ফলাফল সিদ্ধি হবে শুধুমাত্র তখই যখন প্রয়োজনীয় শর্তগুলো আদায় করা হবে এবং এর প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করা হবে। ঐ লক্ষ্যে পৌঁছার শর্তগুলো যদি অনুপস্থিত থাকে অথবা এর প্রতিবন্ধক কোনো কাজ পাওয়া যায় তবে এ কালেমা পাঠ করা এবং এর লক্ষ্যে পৌঁছা সম্ভব হয় না। হাসান বসরী এবং ওয়াহাব ইবন মুনাব্বেহ এ মতই ব্যাক্ত করেছেন এবং এ মতই হলো অধিক স্পষ্ট।
তারপর ইমাম ইবন রাজাব রহ. হাসান বসরী থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি ফারাযদাক নামক কবিকে তার স্ত্রীর দাফনে সময় তাকে বলেন, এ দিনের (মৃত্যু ও আখেরাতের) জন্য কি প্রস্তুতি গ্রহণ করেছ? উত্তরে ফারাযদাক বললেন, সত্তর বৎসর যাবত কালেমা لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ এর যে সাক্ষ্য দিয়ে আসছি সেটাই আমার সম্বল। হাসান বসরী বললেন, বেশ উত্তম প্রস্তুতি; কিন্তু এই কালেমার কতগুলো শর্ত রয়েছে, তুমি অবশ্যই পবিত্রা নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে কবিতা লেখা থেকে নিজকে বিরত রাখবে।
হাসান বসরীকে প্রশ্ন করা হলো, কিছু সংখ্যক মানুষ বলে থাকে যে, যে ব্যক্তি বলবে, لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তখন তিনি বললেন, ‘যে ব্যক্তি বলবে, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এবং এর ফরয ওয়াজিব আদায় করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’
এক ব্যক্তি ওয়াহাব ইবন মুনাব্বেহকে বললেন, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” কি বেহেস্তের কুঞ্জি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তবে প্রত্যেক কুঞ্জির মধ্যেই দাঁত কাটা থাকে, তুমি যে চাবি নিয়ে আসবে তাতে যদি দাঁত থাকে তবেই তোমার জন্য জান্নাতের দরজা খোলা হবে, নইলে নয়।
আমি মনে করছি, আলেমদের এ কথাসমূহ তাদের সন্দেহের যথাযথ অপনোদন করেছে যারা মনে করে, “লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ” এ কালেমা পাঠ করলেই জান্নাতে প্রবেশ করবে, এর দাবী অনুযায়ী কাজ করা হোক বা নাই হোক, অনুরূপ তাদের সন্দেহও দূরীভূত হলো যারা মনে করে “লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ” বললেই আর কখনো তাদেরকে কাফির বলা যাবে না, চাই মাজার পূজা ও পীর পূজার মাধ্যমে যত বড় শির্কের চর্চাই তারা করুক না কেন, যা বর্তমানে কোথাও কোথাও চর্চা করা হচ্ছে। কারণ এসব কর্মকাণ্ড কালেমা “লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ” এর সম্পূর্ণ পরিপন্থী ও একেবারেই বিপরীত। বস্তুত এ জাতীয় সন্দেহ তৈরি করা সেসব ভ্রষ্টলোকদেরই কাজ যারা কুরআন ও হাদীসের সেসব সংক্ষিপ্ত ভাষ্যসমূহ গ্রহণ করে থাকে যেগুলোকে তারা নিজেদের মতের সপক্ষে দলীল হিসেবে মনে করে, অন্যদিকে তারা সেসব সংক্ষিপ্ত ভাষ্যসমূহের বর্ণনাকারীভাষ্যসমূহকে পরিত্যাগ করে এবং বিশদ ব্যাখ্যাসম্বলিত ভাষ্যসমূহকেও উপেক্ষা করে। এদের অবস্থা হলো ঐ সমস্ত লোকদের মতো যারা কুরআনের কিছু অংশে বিশ্বাস করে আর কিছু অংশের সাথে কুফরি করে। এদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“তিনিই আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন তাতে কিছু সংখ্যক আয়াত রয়েছে সুস্পষ্ট, সেগুলো কিতাবের আসল অংশ। আর অন্যগুলো অস্পষ্ট। সুতরাং যাদের অন্তরে কুটিলতা রয়েছে তারা ফিতনা বিস্তার ও অস্পষ্ট আয়াত গুলোর অপব্যাখ্যার অনুসরণ করে। মূলত সেগুলোর ব্যাখ্যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। আর যারা জ্ঞানে সুগভীর তারা বলেন, আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি, এসব আমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। জ্ঞানী লোকেরা ছাড়া অন্য কেউ উপদেশ গ্রহণ করে না। হে আমাদের পালনকর্তা, তুমি আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শনের পর আমাদের অন্তরকে সত্য লংঘনে প্রবৃত্ত করো না এবং তোমার নিকট থেকে অনুগ্রহ দান কর তুমিই সব কিছুর দাতা, হে আমাদের রব তুমি একদিন মানব জাতিকে অবশ্যই একত্রিত করবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ তার ওয়াদা ভঙ্গ করেন না”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৭-৯]
হে আল্লাহ আমাদেরকে তাওফীক দান করুন, যাতে আমরা সত্যকে সত্য হিসাবে দেখি এবং তা গ্রহন করতে পারি। আর মিথ্যাকে মিথ্যা হিসেবে দেখি এবং তা পরিহার করতে পারি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/24/10
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।