hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

বৈধ ও অবৈধ অসীলা

লেখকঃ ডক্টর আব্দুস সালাম বারজাস আল আব্দুল করীম

তাওহীদের গুরুত্ব এবং উম্মতের মাঝে কিভাবে শির্ক প্রবেশ করল তার বর্ণনা
সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য, দুরুদ এবং শান্তির ধারা বর্ষিত হোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর, তাঁর পরিবার পরিজন, সহচরবৃন্দ এবং তাঁকে যারা ভালবাসে তাদের উপর।

অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা কোনো সৃষ্টিকে অনর্থক সৃষ্টি করেননি, তাদেরকে অকারণে ছেড়ে দেননি, নিজ সল্পতার অনুভূতি থেকে সংখ্যায় অধিক হওয়ার জন্য সৃষ্টি করেননি, অনুরূপ নিজের দুর্বলতা থেকে শক্তি যোগানোর জন্য সৃষ্টি করেননি বরং এক মহা কাজ ও বিরাট উদ্দেশ্যের জন্য সৃষ্টি করেছেন। সে লক্ষ্যে তাদের জন্য ভুমণ্ডল ও নভোমণ্ডলকে নিয়োজিত এবং তাদের জীবন যা দ্বারা সুচারুরূপে পরিচালিত হবে তার ব্যবস্থা করেছেন। তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন কেবলমাত্র তাঁরই ইবাদত করার জন্য, তাঁরই তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করার জন্য, এবং সকল প্রকার ইবাদত কেবল তাঁর জন্যই নির্দিষ্ট করার জন্য, যে ইবাদতকে আল্লাহ তা‘আলা ভালোবাসেন ও পছন্দ করেন, তা কথা হোক, কাজ হোক বা বিশ্বাস হোক।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

﴿ وَمَا خَلَقۡتُ ٱلۡجِنَّ وَٱلۡإِنسَ إِلَّا لِيَعۡبُدُونِ ٥٦ مَآ أُرِيدُ مِنۡهُم مِّن رِّزۡقٖ وَمَآ أُرِيدُ أَن يُطۡعِمُونِ ٥٧ إِنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلرَّزَّاقُ ذُو ٱلۡقُوَّةِ ٱلۡمَتِينُ ٥٨ ﴾ [ الذاريات : ٥٦، ٥٨ ]

“এবং আমি জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি শুধুমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য, আমি তাদের নিকট জীবিকা চাইনা এবং এটাও চাইনা যে, তারা আমার জন্য আহার যোগাবে। আল্লাহ তা‘আলাই জীবিকাদাতা, শক্তিধর পরাক্রান্ত। [সূরা আয-যারিয়াহ/৫৫-৫৮]

এ কাজের মাহাত্ম্য এবং গুরুত্বের জন্য আল্লাহ কিতাব অবতীর্ণ করেছেন এবং এর জন্য রাসূল পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন :

﴿ يُنَزِّلُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةَ بِٱلرُّوحِ مِنۡ أَمۡرِهِۦ عَلَىٰ مَن يَشَآءُ مِنۡ عِبَادِهِۦٓ أَنۡ أَنذِرُوٓاْ أَنَّهُۥ لَآ إِلَٰهَ إِلَّآ أَنَا۠ فَٱتَّقُونِ ٢ ﴾ [ النحل : ٢ ]

“তিনি স্বীয় নির্দেশে বান্দাদের মধ্যে যার নিকট ইচ্ছা তার প্রতি ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দিয়ে এই মর্মে পাঠান যে, তাদেরকে সতর্ক করে দাও, আমি ব্যতীত কোনো সত্য উপাস্য নেই। অতএব, আমাকে তোমরা ভয় কর। [সূরা আন-নাহল/২]

তিনি আরো বলেন :

﴿وَلَقَدۡ بَعَثۡنَا فِي كُلِّ أُمَّةٖ رَّسُولًا أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَٱجۡتَنِبُواْ ٱلطَّٰغُوتَۖ﴾ [ النحل : ٣٦ ]

“আমি প্রত্যেক উম্মতের মাঝে রাসূল প্রেরণ করেছি এ মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুতকে বর্জন কর। [সূরা আন-নাহল/৩৬]

তিনি বলেন :

﴿ وَمَآ أَرۡسَلۡنَا مِن قَبۡلِكَ مِن رَّسُولٍ إِلَّا نُوحِيٓ إِلَيۡهِ أَنَّهُۥ لَآ إِلَٰهَ إِلَّآ أَنَا۠ فَٱعۡبُدُونِ ٢٥ ﴾ [ الانبياء : ٢٥ ]

“আমি আপনার পূর্বে যে রাসূলই প্রেরণ করেছি তাকে এ নির্দেশ দিয়েছি যে, আমি ব্যতীত অন্য কোনো উপাস্য নেই। অতএব, তোমরা আমারই ইবাদত কর। [সূরা আম্বিয়া/২৫]

মানুষ প্রথম দিকে বিশুদ্ধ ফিতরাতের উপর এবং সঠিক পথে ছিল, তখন শুধুমাত্র তারা আল্লাহর ইবাদত করতো। কিন্তু যখনই তাদের মধ্যে আল্লাহর সহিত শির্কের আবির্ভাব ঘটেছে তখনই তিঁনি তাদের নিকট রাসূল পাঠিয়েছেন, যেন তাঁরা শির্ক থেকে নিষেধ করেন এবং এক আল্লাহর ইবাদতের দিকে তাদেরকে আহ্বান করেন। যেমন আল্লাহ বলেন,

﴿ كَانَ ٱلنَّاسُ أُمَّةٗ وَٰحِدَةٗ ﴾ [ البقرة : ٢١٣ ]

“সকল মানুষ একই উম্মত ছিল’’। ইবনে মাসউদ এবং উবাই ইবন কা‘ব (রা:) এর ক্বেরাতে এসেছে,

«كان الناس أمة واحدة فاختلفوا»

“সকল মানুষ একই উম্মত ছিল, অতঃপর তারা বিভক্ত হয়ে গেল।”

আল্লাহ আরো বলেন:

﴿كَانَ ٱلنَّاسُ أُمَّةٗ وَٰحِدَةٗ فَبَعَثَ ٱللَّهُ ٱلنَّبِيِّ‍ۧنَ مُبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ وَأَنزَلَ مَعَهُمُ ٱلۡكِتَٰبَ بِٱلۡحَقِّ لِيَحۡكُمَ بَيۡنَ ٱلنَّاسِ فِيمَا ٱخۡتَلَفُواْ فِيهِۚ وَمَا ٱخۡتَلَفَ فِيهِ إِلَّا ٱلَّذِينَ أُوتُوهُ مِنۢ بَعۡدِ مَا جَآءَتۡهُمُ ٱلۡبَيِّنَٰتُ بَغۡيَۢا بَيۡنَهُمۡۖ فَهَدَى ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لِمَا ٱخۡتَلَفُواْ فِيهِ مِنَ ٱلۡحَقِّ بِإِذۡنِهِۦۗ وَٱللَّهُ يَهۡدِي مَن يَشَآءُ إِلَىٰ صِرَٰطٖ مُّسۡتَقِيمٍ ٢١٣ ﴾ [ البقرة : ٢١٣ ]

“সকল মানুষ একই উম্মতের অন্তর্ভুক্ত ছিল, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা সুসংবাদদাতা এবং ভীতি প্রদর্শনকারী হিসাবে রাসূল পাঠালেন এবং তাদের সহিত পাঠালেন সত্য কিতাব যেন মানুষের মধ্যে বিতর্কমূলক বিষয়ে মীমাংসা করতে পারেন। বস্তুত: কিতাবের ব্যাপারে অন্য কেউ মতভেদ করেনি; কিন্তু পরিস্কার নির্দেশ আসার পর নিজেদের পারস্পারিক জেদবশত: তারাই করেছে, যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে, অতঃপর আল্লাহ ঈমানদারগণকে হেদায়াত করেছেন সেই সত্য বিষয়ে, যে ব্যাপারে তারা মতভেদ করেছিল। বস্তুত: আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সরল পথ দেখান।” [সূরা আল-বাকারা/২১৩]

প্রথম দিকে মানুষের অবস্থা সম্পর্কে তিনি আরো বলেন :

﴿وَمَا كَانَ ٱلنَّاسُ إِلَّآ أُمَّةٗ وَٰحِدَةٗ فَٱخۡتَلَفُواْۚ وَلَوۡلَا كَلِمَةٞ سَبَقَتۡ مِن رَّبِّكَ لَقُضِيَ بَيۡنَهُمۡ فِيمَا فِيهِ يَخۡتَلِفُونَ ١٩ ﴾ [ يونس : ١٩ ]

“সকল মানুষ একই উম্মতভুক্ত ছিল, অতঃপর তারা বিভক্ত হয়ে গেল, আর একটি কথা যদি তোমার প্রভুর পক্ষ থেকে পূর্ব নির্ধারিত না হয়ে থাকত তবে তারা যে বিষয়ে বিরোধ করছে তার মীমাংসা হয়ে যেত।” [সূরা ইউনুস/১৯]

আদম (আলাইহিস সালাম) এর মৃত্যুর পর তার সন্তানগণ প্রায় দশ প্রজম্ম তাদের পিতৃ ধর্ম ইসলামের উপর ছিল; এরপর তারা কুফরী করেছে। তাদের কুফরী করার কারণ ছিল, সৎ লোকদের ব্যাপারে অধিক বাড়াবাড়ি। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَقَالُواْ لَا تَذَرُنَّ ءَالِهَتَكُمۡ وَلَا تَذَرُنَّ وَدّٗا وَلَا سُوَاعٗا وَلَا يَغُوثَ وَيَعُوقَ وَنَسۡرٗا ٢٣ ﴾ [ نوح : ٢٣ ]

“তারা বলল: তোমাদের প্রভুদেরকে ত্যাগ করোনা এবং আদ্দ, সুওয়া, ইয়াগুস, ইয়াউক এবং নাসরকে ত্যাগ করোনা।” [সূরা নূহ/২৩]

তারা পাঁচজন সকলেই ভাল এবং সৎ লোক ছিল, তারা মানুষকে সৎকাজের নির্দেশ দিতো এবং অসৎ কাজের নিষেধ করতো। অতঃপর তারা সকলেই একই মাসে মৃত্যুবরণ করলে তাদের পরে দ্বীনের শিক্ষা কমে যাওয়ার ভয়ে সাধারণ লোক ভীত হয়ে পড়ল। তারপর তাদের কাজ কর্ম ও স্মৃতির কথা স্মরন করে ইবাদত করার জন্য তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ স্থানে তাদের প্রতিমূর্তি তৈরী করে রেখে দিল। তখনো তাদের পুজা করা হয়নি।

তারপর দ্বিতীয় স্তর এসে তাদেরকে পূর্বের লোকদের চেয়ে অধিক ভালবাসতে শুরু করল কিন্তু তখনো পুজা করা হয়নি।

দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেল এবং আলেমগণ মারা গেল। এলাকা যখন আলেম মুক্ত হল; শয়তান এসে মুর্খ লোকদের বলল: এ সৎলোকদের প্রতিমূর্তিতো এমনিই তৈরী করা হয়নি বরং তাদের অসীলা করে সুপারিশ হিসেবে আল্লাহর নিকট চাওয়ার জন্যই তৈরী করা হয়েছে। অতঃপর তাদের পুজা করা শুরু হয়ে গেল।

তারা যখন পুজা শুরু করল, তখনই আল্লাহ নূহ আলাইহিস সালামকে নবী হিসাবে তাদের নিকট পাঠালেন, তাদেরকে আদম এবং তার সেসব সন্তানের ধর্মে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য যাদের ধর্মে কোনো পরিবর্তন ছিল না। এর ফলে যা ঘটেছিল সেসব কথা ও কাজ আল্লাহ তা‘আলা তার কিতাবে বর্ণনা করেছেন।

তারপর নূহ আলাইহিস সালাম এবং জাহাজের অধিবাসীগণ পৃথিবী আবাদ করলে আল্লাহ তাদের মধ্যে বরকত দিলেন, ফলে পৃথিবীতে বিভিন্ন উম্মতের সৃষ্টি হলো এবং অজানা এক দীর্ঘ সময় তারা ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল।

অতঃপর শির্কের আবির্ভাব ঘটলে আল্লাহ তাদের নিকট রাসূলগণকে প্রেরণ করতে থাকলেন। তাই আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক উম্মতের নিকট রাসূল প্রেরণ করেছেন, তাঁরা তাদেরকে আল্লাহর একত্ববাদের নির্দেশ দিতেন এবং শির্ক থেকে নিষেধ করতেন।

বহু রাসূল এবং তাঁদের উম্মত রয়েছে যাদের সম্পর্কে আমরা কিছু জানি না, কারণ আল্লাহ তাদের সম্পর্কে আমাদের কিছু বলেননি। তিনি বলেন:

﴿مِنۡهُم مَّن قَصَصۡنَا عَلَيۡكَ وَمِنۡهُم مَّن لَّمۡ نَقۡصُصۡ عَلَيۡكَۗ﴾ [ غافر : ٧٨ ]

‘‘তাদের মধ্যে কারো কারো সম্পর্কে আপনাকে বলেছি এবং কারো কারো সম্পর্কে আপনাকে বলিনি’’। [সূরা গাফির:৭৮]

তবে আল্লাহ তা‘আলা ‘আদ জাতি সম্পর্কে আমাদের জানিয়েছেন। যাদের মতো পৃথিবীতে আর কোনো জাতিকে সৃষ্টি করা হয়নি। অতঃপর আল্লাহ তাদের নিকট হূদ আলাইহিস সালামকে পাঠালেন, আল্লাহ তা‘আলা তাদের কর্ম সম্পর্কে কুরআনে উল্লেখ করেছেন।

হূদ আলাইহিস সালামের জাতির মধ্যে কিছু সময় তাওহীদ ছিল, কিন্তু তা কতদিন সঠিকভাবে ছিল তা আমরা জানিনা।

তারপর আল্লাহ ইব্রাহীম আলাইহিস সালামকে পাঠালেন, তখন পৃথিবীতে কোনো মুসলিম ছিলনা; অতঃপর তাঁর জাতির পক্ষ থেকে তার উপর যা হওয়ার তা হয়েছে, শুধূ তাঁর স্ত্রী সারা এবং লূত আলাইহিস সালাম তাঁর প্রতি ঈমান এনেছেন।

ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের জামানা থেকে তাঁর সন্তানদের মধ্যে তাওহীদ কখনও একেবারে নাই হয়ে যায়নি। যেমন আল্লাহ বলেন:

﴿ وَجَعَلَهَا كَلِمَةَۢ بَاقِيَةٗ فِي عَقِبِهِۦ لَعَلَّهُمۡ يَرۡجِعُونَ ٢٨ ﴾ [ الزخرف : ٢٨ ]

“এ (তাওহীদের) ঘোষণাকে তিনি স্থায়ী বাণী হিসাবে তাঁর পরবর্তীদের জন্য রেখে গিয়েছেন, যেন তারা প্রত্যাবর্তন করে।” [সূরা আয-যুখরুফ: ২৮]

তিনি প্রথমে ইরাকে ছিলেন, তাঁর জাতির ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে শামে গিয়ে সেখানে বসবাস করেন এবং সেখানেই মারা যান।

তাঁর স্ত্রী সারা তাঁকে একজন দাসী হাজারকে (হাজেরা) উপহার দিলেন। তিনি তার সহিত মেলামেশা করলেন, তাতে ইসমা‘ঈল আলাইহিস সালাম জন্ম গ্রহণ করলেন, এতে সারা কিছুটা হিংসা করতে লাগলেন। অতঃপর আল্লাহ হাজারকে ‘সারা’ থেকে দূরে রাখার জন্য তাঁকে নির্দেশ দিলে তিনি ‘হাজার’ এবং তার সন্তানকে নিয়ে মক্কায় রেখে আসলেন।

অতঃপর আল্লাহ তাঁকে এবং সারাকে একজন সন্তান (ইসহাক আলাইহিস সালামকে) উপহার দিলেন। ইসহাক আলাইহিস সালাম থেকে জন্ম নিলেন ইয়া‘কুব আলাইহিস সালাম।

আর তাঁর ঘটনা বুখারী শরীফে আব্দুল্লাহ ইবন আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।

আর তখনই মক্কা এবং কাবা ঘরের দায়িত্ব ইসমাঈল আলাইহিস সালামের হাতে আসল, তারপর তাঁর সন্তানদের হাতে। তাঁর বহু সন্তান হেজাযে তথা মক্কা মদিনায় ছড়িয়ে পড়েছে। শত শত বছর তারা তাদের পিতৃ পুরুষ ইব্রাহীম এবং ইসমাঈল আলাইহিস সালামের ধর্ম ইসলামের উপর ছিল। পরবর্তীতে আমর ইবন লুহাই এসে তাদের মধ্যে শির্কের আবির্ভাব ঘটিয়ে ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের দ্বীনকে বিকৃত করেছে।

‘আমর ইবন লুহাই এর বিস্তারিত ঘটনা হলো : সে দান খয়রাত, সদকা ইত্যাদি ভাল কাজের উপর লালিত পালিত হয়েছে এবং দ্বীনের প্রতিটি কাজে খুব আগ্রহী ছিল, যার ফলে মানুষ তাকে অত্যন্ত ভালবাসতো, এ কারণে তারা তার অনুগত হয়ে গেল, এমন কি তারা তাকে শাসক বানিয়ে দিল। অতঃপর সে মক্কার শাসক হয়ে গেলে তার হাতে চলে এসেছে ক্বাবা ঘরের দায়িত্ব। তারা মনে করতো সেই বড় আলেম এবং সম্মানিত একজন অলী।

অতঃপর এক সময় সে শামে সফরে যায়, সেখানে গিয়ে দেখলো মানুষ মূর্তি পূজা করছে, সেটা তার ভাল লেগে গেলে মনে করল যে এটাই হয়তো সত্য। কারণ শাম এলাকা নবী রাসূলদের এলাকা, সে কারণে শাম বাসীদের মর্যাদা হেজায এবং অন্যান্য এলাকা বাসীর চেয়ে অনেক বেশী। সে মক্কায় ফিরে এল এবং তার সাথে হুবাল নামক একটি মূর্তি নিয়ে এল। সেটাকে ক্বাবা ঘরে রেখে মক্কাবাসীদেরকে শির্কের দিকে আহ্বান করলে তারা তার আহবানে সাড়া দিয়ে শির্ক করা শুরু করল।

হেজাযবাসী দ্বীনের দিক দিয়ে মক্কাবাসীর অনুগত, কারণ তারা ক্বাবা ঘর এবং হারামের দায়িত্বে আছে বিধায় তারাও মক্কাবাসীর শির্কি কাজ দেখে সত্য মনে করে তাদের সহিত শির্ক করা শুরু করল।

জাহেলিয়া যুগেও তা ছিল, সেই সাথে দ্বীনে ইব্রাহীমের উপরও কিছু লোক বাকী ছিল, তারা মনে করতো যে, তারা যে ধর্মের উপর আছে তাতে ‘আমর ইবন লুহাই কোনো পরিবর্তন করেনি বরং সে যা নিয়ে এসেছে তা হচ্ছে বিদ‘আতে হাসানাহ।

নেযারের তালবিয়া ছিল:

لبيك لا شريك لك إلا شريكا هو لك تملكه وما ملك

“আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই কিন্তু একজন তোমার শরিক আছে, তুমি যার মালিক তবে সে তোমার মালিক নয়।”

তাদের মূর্তিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরাতন মূর্তি হলো (মানাত) সেটি সাগর তীরে কুদাইদ নামক জায়গায় দাড় করানো ছিল। সমগ্র আরব একে সম্মান করতো, কিন্তু আউস এবং খাযরাজ গোত্রদ্বয় একে সকলের চেয়ে বেশি সম্মান করতো।

তারপর তারা তায়েফে (লাত) কে গ্রহণ করল, কেউ কেউ বলেছেন: আসলে সে একজন সৎ লোক ছিল, হাজীদেরকে সাতু বানিয়ে খাওয়াতো। সে মারা গেলে তারা তার কবরের পাশে এসে অবস্থান নিতে আরম্ভ করলো।

অতঃপর তারা মক্কা এবং তায়েফের মাঝে নাখলা নামক উপত্যকায় (উয্যা) কে গ্রহণ করল। এ তিনটি মূর্তিই সবচেয়ে বড় ছিল।

তারপর শির্ক বৃদ্ধির সাথে সাথে হেজাযের প্রায় প্রতিটি জায়গাতেই মূর্তির সংখ্যা বৃদ্ধি হতে লাগল।

এমনি মূহুর্তে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে বের করে আনার জন্য মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রেরণ করলেন। তিনি বলেন :

﴿ لَقَدۡ مَنَّ ٱللَّهُ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ إِذۡ بَعَثَ فِيهِمۡ رَسُولٗا مِّنۡ أَنفُسِهِمۡ يَتۡلُواْ عَلَيۡهِمۡ ءَايَٰتِهِۦ وَيُزَكِّيهِمۡ وَيُعَلِّمُهُمُ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ وَإِن كَانُواْ مِن قَبۡلُ لَفِي ضَلَٰلٖ مُّبِينٍ ١٦٤ ﴾ [ ال عمران : ١٦٤ ]

“আল্লাহ তা‘আলা ঈমানদারদের উপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদের মাঝে তাদের নিজেদের মধ্য থেকে একজন নবী প্রেরণ করেছেন। তিনি তাদের জন্য তাঁর আয়াত সমুহ পাঠ করেন, তাদেরকে পরিশোধ্য করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকতম শিক্ষা দেন, যদি ও তারা পূর্ব থেকেই পথ ভ্রষ্ট ছিল।” [সূরা আল ইমরান/১৬৪]

আল্লাহ তা‘আলা শির্ক থেকে সতর্ক করে তাওহীদের দিকে দাওয়াত দেওয়ার জন্য তাঁকে প্রেরণ করেছেন। যেমন তিনি বলেন:

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلۡمُدَّثِّرُ ١ قُمۡ فَأَنذِرۡ ٢ وَرَبَّكَ فَكَبِّرۡ ٣ وَثِيَابَكَ فَطَهِّرۡ ٤ وَٱلرُّجۡزَ فَٱهۡجُرۡ ٥ وَلَا تَمۡنُن تَسۡتَكۡثِرُ ٦ وَلِرَبِّكَ فَٱصۡبِرۡ ٧ ﴾ [ المدثر : ١، ٧ ]

“হে চাদরাবৃত, উঠে সতর্ক করুন, আপনার পালনকর্তার মাহাত্ম্য ঘোষনা করুন, আপনার পোষাক পবিত্র করুন এবং অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকুন এবং অধিক প্রতিদানের আশায় অন্যকে কিছু দিবেন না এবং আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে ধৈর্য্য ধারণ করুন।” [সূরা মুদ্দাসি্সর/ ১-৭]

“কুম ফা-আনযির অর্থ: শির্ক থেকে সতর্ক করা এবং তাওহীদের দিকে অহবান করা। অ রববাকা ফাকাব্বির অর্থ: আর তোমার রবকে তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করে তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর। অ সিয়াবাকা ফাতাহহির’ অর্থ: শির্ক থেকে তোমার আমলকে পবিত্র কর। অর রুজযা ফাহজুর রুজয : মূর্তি, ফাহজুর: তাকে ত্যাগ করে তার এবং তা থেকে বিমুক্তি ঘোষণা করা আর মুর্তিপূজারীদের সাথে সম্পর্কচ্যুতি ঘোষণা কর।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মানুষকে সতর্কবাণী শুনালেন; তখন কিছু সংখ্যক লোক তার আহ্বানে সাড়া দিল এবং অধিকাংশ লোক যা বলেছে তা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:

﴿ إِنَّهُمۡ كَانُوٓاْ إِذَا قِيلَ لَهُمۡ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّهُ يَسۡتَكۡبِرُونَ ٣٥ وَيَقُولُونَ أَئِنَّا لَتَارِكُوٓاْ ءَالِهَتِنَا لِشَاعِرٖ مَّجۡنُونِۢ ٣٦ ﴾ [ الصافات : ٣٥، ٣٦ ]

“যখন তাদেরকে বলা হতো যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো যোগ্য উপাস্য নেই, তখন তারা আত্ম অহংকার করতো এবং বলতো; আমরা কি একজন পাগল কবির কথায় আমাদের ইলাহ বা মা‘বুদ ও উপাস্যদের ত্যাগ করব’’? তাদের কথার জবাব দিয়ে আল্লাহ বলেন:

﴿ بَلۡ جَآءَ بِٱلۡحَقِّ وَصَدَّقَ ٱلۡمُرۡسَلِينَ ٣٧ ﴾ [ الصافات : ٣٧ ]

‘‘বরং তিনি সত্য নিয়ে আগমণ করেছেন এবং পূর্বের রাসূলদেরকে সত্যায়িত করেছেন।” [সূরা আস-সফ্ফাত/৩৫-৩৭] অর্থাৎ তিনি আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে তাঁর শরীয়ত ও নির্দেশ সম্পর্কে সংবাদ দিয়েছেন এবং তিনি সে সংবাদই দিয়েছেন, যে সংবাদ দিয়েছিল তাঁর পূর্ববর্তী রাসূলগণ। যেমন আল্লাহ তা‘আলা অন্য আয়াতে বলেন:

﴿ مَّا يُقَالُ لَكَ إِلَّا مَا قَدۡ قِيلَ لِلرُّسُلِ مِن قَبۡلِكَۚ﴾ [ فصلت : ٤٣ ]

‘‘আপনাকে তো তাই বলা হবে, যা বলা হয়েছিল আপনার পূর্ববর্তী রাসূলদেরকে’’।

অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর বহু অত্যাচার নির্যাতন করা হয়েছিল যা তাঁর জীবনী থেকে জানা যায়, আর তা বিজয় লাভ এবং দ্বীন পরিপূর্ণ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত চলেছিল। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗاۚ ﴾ [ المائ‍دة : ٣ ]

“আজকের দিনে আমি তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, আমার নেয়ামতকে তোমাদের উপর সম্পন্ন করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম।”

অতঃপর যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মারা গেলেন তখন তিনি তাঁর উম্মতকে একটি নির্ভেজাল সত্য পথে রেখে গেলেন, যার রাত্রি দিনের ন্যায় ষ্পষ্ট, ধ্বংসশীল ব্যতীত এ থেকে কেউ পথ থেকে বিচ্যুত হয় না।

আবু যর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:

" لَقَدْ تَرَكَنَا مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَمَا يُحَرِّكُ طَائِرٌ جَنَاحَيْهِ فِي السَّمَاءِ إِلَّا أَذْكَرَنَا مِنْهُ عِلْمًا "

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এমন অবস্থায় রেখে গিয়েছেন যে, আকাশে কোনো পাখী উড়ার জ্ঞানটুকু পর্যন্ত আমাদেরকে বর্ণনা করেছেন। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ২১৩৬১।] আহমাদ ও তাবরানী, তাবরানীতে বেশি এসেছে যে:

«ما بقى شىء يقرب من الجنة ويباعد من النار إلا وقد بين لكم»

আবু যার রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “জান্নাতের নিকটবর্তী করে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখে এমন সকল বিষয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে তোমাদেরকে স্পষ্ট বর্ণনা করা হয়েছে।” [ত্বাবরানী, ২/১৫৫; নং ১৬৪৭।]

কিয়ামত পর্যন্ত কি হবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতকে বলে গিয়েছেন। যেমন হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:

«قَامَ فِينَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَقَامًا، مَا تَرَكَ شَيْئًا يَكُونُ فِي مَقَامِهِ ذَلِكَ إِلَى قِيَامِ السَّاعَةِ، إِلَّا حَدَّثَ بِهِ»، حَفِظَهُ مَنْ حَفِظَهُ وَنَسِيَهُ مَنْ نَسِيَهُ»

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে এক দিন দাঁড়িয়ে কিয়ামত পর্যন্ত কি হবে তা স্পষ্ট বর্ণনা করে গিয়েছেন, যার সংরক্ষণ করার সে তা সংরক্ষণ করেছে আর যার ভুলার সে ভুলে গেছে [মুসলিম, ২৮৯১।]। [বুখারী ও মুসলিম]

মুসলিম শরীফে আমর ইবন আখতব আল আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন:

«صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْفَجْرَ، وَصَعِدَ الْمِنْبَرَ فَخَطَبَنَا حَتَّى حَضَرَتِ الظُّهْرُ، فَنَزَلَ فَصَلَّى، ثُمَّ صَعِدَ الْمِنْبَرَ، فَخَطَبَنَا حَتَّى حَضَرَتِ الْعَصْرُ، ثُمَّ نَزَلَ فَصَلَّى، ثُمَّ صَعِدَ الْمِنْبَرَ، فَخَطَبَنَا حَتَّى غَرَبَتِ الشَّمْسُ، فَأَخْبَرَنَا بِمَا كَانَ وَبِمَا هُوَ كَائِنٌ» فَأَعْلَمُنَا أَحْفَظُنَا

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের নামায পড়ে মিম্বারে চড়লেন, অতঃপর তিনি যোহর পর্যন্ত আমাদেরকে নসিহত করলেন, তারপর যোহরের নামায পড়ে আবার মিম্বারে চড়ে আসর পর্যন্ত, আসরের নামায পড়ে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আমাদেরকে নসিহত করলেন, এতে যা আগে হয়েছে এবং যা ভবিষ্যতে হওয়ার আছে তিনি তার বর্ণনা দিলেন, কাজেই আমাদের মধ্যে যিনি বেশি জানেন তিনিই তা অধিক হেফজ করেছেন। [মুসলিম, ২৮৯২।]

তাঁর নসিহতের মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, শেষ জামানায় এ উম্মতের মাঝে আবার শির্ক ফিরে আসবে। যেমন তিনি আবু হুরাইরার হাদীসে বলেছেন :

«لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَضْطَرِبَ أَلَيَاتُ نِسَاءِ دَوْسٍ، حَوْلَ ذِي الْخَلَصَةِ» وَكَانَتْ صَنَمًا تَعْبُدُهَا دَوْسٌ فِي الْجَاهِلِيَّةِ بِتَبَالَةَ

‘‘ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবেনা যতক্ষণ না যিল খালাসার নিকট দাউস গোত্রের নারীদের নিতম্বগুলো নড়াচড়া করবে [বুখারী, ৭১১৬, মুসলিম, ২৯০৬।]। [বুখারী ও মুসলিম]।

যুল খালাসা হলো: একটি মূর্তি, জাহেলিয়া যুগে ইয়ামানে তাবালা নামক একটি জায়গায় দাউস গোত্র এর পূজা করতো।

আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা হতে, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لَا يَذْهَبُ اللَّيْلُ وَالنَّهَارُ حَتَّى تُعْبَدَ اللَّاتُ وَالْعُزَّى»

লাত এবং উয্যার পূজা পুনরায় শুরু হওয়া ব্যতীত দিবা রাত্রি নিঃশেষ হবেনা। [মুসলিম, ২৯০৭।] [অর্থাৎ কিয়ামত হবে না]

উপরোল্লেখিত হাদীসদ্বয় আল্লাহর সাথে শির্ক করা থেকে সতর্ক এবং কঠোর হুশিয়ার থাকা মুসলিমের উপর ওয়াজিব করে দেয়। কেননা তা একটি মহা ফেৎনা, নবীগণই তা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এবং শির্ককে তাদের থেকে দূরে রাখার জন্য আল্লাহর নিকট বিনীত প্রার্থনা করেছেন।

আল্লাহ তা‘আলা ইব্রাহীম খলীল আলাইহিস সালাম দো‘আ বর্ণনা করে বলেন :

﴿ وَٱجۡنُبۡنِي وَبَنِيَّ أَن نَّعۡبُدَ ٱلۡأَصۡنَامَ ٣٥ ﴾ [ ابراهيم : ٣٥ ]

“আমাকে এবং আমার সন্তানাদিকে মূর্তিপূজা থেকে দূরে রাখুন।” [সূরা ইব্রাহীম/৩৫]

যদি ইব্রাহীম খলীল যিনি একাই একটি উম্মত, যাকে আল্লাহ বিভিন্ন বাক্য দ্বারা পরীক্ষা করার পর তিনি তা পূর্ণ করেছেন, যেমন: আল্লাহ বলেন:

﴿ وَإِبۡرَٰهِيمَ ٱلَّذِي وَفَّىٰٓ ٣٧ ﴾ [ النجم : ٣٧ ]

“এবং ইব্রাহীমকে স্মরণ করুন, যিনি পূর্ণ করেছেন।” [সূরা আন-নাজম] সন্তানকে জবাই করার নির্দেশ দেওয়া হলে তিনি তাঁর রবের নির্দেশ বাস্তবায়ন করেছেন, মূর্তি ভেঙ্গেছেন, মুশরিকদের প্রতি তাঁর কঠোর নিন্দা ছিল, এতকিছুর পরেও তিনি মূর্তি পূজার মত শির্ককে ভীষন ভয় করতেন। কারণ তিনি জানতেন যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো জন্য তা করা যাবেনা এবং তা কেবল তাঁর হেদায়েত, তাওফীক এবং শক্তিতেই হয়ে থাকে। মানুষের মধ্যে কেউ এর ক্ষমতা রাখে না। যদি ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের এ অবস্থা হয় তবে অন্যদের অবস্থা কী হবে?

আল্লাহ ইব্রাহীম আত্ তাইমীর উপর রহম করুন, তিনি বলেছেন : ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের পর এমন কে আছে যে, এ কঠিন পরীক্ষা থেকে নিরাপদ থাকবে? শির্ক এমন একটি কাজ যাতে পতিত হওয়া নিরাপদ নয়।

স্বর্ণ যুগের পর এ উম্মতের বহু বুদ্ধিমান লোকও এতে পতিত হয়েছে, ফলে কবরের উপর মাসজিদ ও মাজার বানানো হয়েছে, এর জন্য সর্ব প্রকার ইবাদত করা হয়েছে এবং একে দ্বীন হিসাবে গ্রহণ করেছে। আর এগুলো নূহ আলাইহিস সালামের জাতির মূর্তির ন্যায় বেদী ও মূর্তি।

বড় শির্কের সূচনা হয়ে থাকে এর উপকরণ এবং মাধ্যমের মাধ্যমে। অতঃপর মানুষ যখন একে দ্বীন হিসাবে গ্রহণ করে তখন শয়তান তাদেরকে আল্লাহর ইবাদত করা থেকে বেদী, মূর্তি, মাজার এবং কবর পূজার দিকে নিয়ে যায়, ফলে তারা শির্কের মত মহা পাপে পতিত হয় যা আল্লাহ কখনো ক্ষমা করবেন না।

আর তাই এখানে শির্ক এবং এর পদ্ধতিগুলো জানার গুরুত্ব দেওয়াই একমাত্র পথ সেই ব্যক্তির জন্য, যে তার নিজেকে, তার সন্তানাদি এবং পরিবার পরিজনের ব্যাপারে শির্কে পতিত হওয়ার ভয় করে।

এ ধরনের মাসলা মাসায়েলের ব্যাপারে মানুষের নিকট জ্ঞানপূর্ণ আলোচনার প্রয়োজন অত্যাধিক। কেননা পৃথিবীর অধিকাংশ জায়গায় তা বিস্তার লাভ করেছে এবং অনেকেই এর দ্বারা প্রতারিত হচ্ছে।

এজন্য আজ রাতের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে, (অসীলা: এর প্রকার ও হুকুমসমূহ) এটি এমন একটি বিষয় যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর তা জানা এবং বুঝা দরকার; কেননা অজ্ঞতাই শির্ক ও এর প্রকারগুলো প্রসারের একমাত্র কারণ। এমনিভাবে কুপ্রবৃত্তির বশবর্তী কিছু লোকদের হাত এ দিকে সম্প্রসারিত হয়েছে, ফলে তারা এ নিয়ে তাদের মনমত খেলেছে। যেমন তারা অসীলার নাম করে আল্লাহর সহিত শির্ক করার দিকে মানুষকে আহ্বান করে তারা নিজেরা পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং বহু মানুষকে সৎ পথ থেকে পথ ভ্রষ্ট করেছে।

তাদের এ কুটিল মনোভাব থেকে আল্লাহ ব্যতীত কোনো রক্ষা কারী নেই, অতঃপর শরয়ী জ্ঞানই প্রতিটি পথভ্রষ্টতার ঢাল এবং প্রতিটি বিদ‘আত থেকে রক্ষাকারী, কারণ, “আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে দ্বীনের গভীর জ্ঞান দান করেন।” এ বিষয়ে জ্ঞানার্জন করা একটি প্রশংসনীয় কাজ, এর দ্বারা মুসলিমগণ ছিনতাইকারী সন্দেহ থেকে বাঁচতে পারবে এবং এর দ্বারাই জ্ঞানের হাতিয়ার বহন করতে পারবে, যার মাধ্যমে কুপ্রবৃত্তির বশবর্তী লোকদের গর্দানে আঘাত করতে সক্ষম হবে এবং এর দ্বারাই তার দ্বীনের অকাট্য প্রমাণের উপর আল্লাহর ইবাদত করতে পারবে।

হে প্রিয় ভাই সকল, এ আলোচনায় আমি এ বিষয়ে কিছূ গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব উল্লেখ করব। আল্লাহর তা‘আলার নিকট এর জন্য সহযোগিতা এবং তাওফীক চাচ্ছি।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন