মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
লেখকঃ আব্দুর রহমান বিন সাঈদ বিন আলী বিন ওহাফ আল-কাহতানী রহ.
৮
প্রথম পরিচ্ছেদ: জান্নাতীদের নেয়ামতসমূহ
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/304/8
প্রথম প্রকার নেয়ামত: মনস্তাত্বিক নেয়ামত:
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
«إن الله تبارك وتعالى يقول لأهل الجنة : يا أهل الجنة ! فيقولون : لبيك ربنا وسعديك، والخير في يديك، فيقول : هل رضيتم؟ ! فيقولون : وما لنا لا نرضى يا ربِّ، وقد أعطيتنا ما لم تُعطِ أحداً من خلقك، فيقول : ألا أعطيكم أفضل من ذلك؟ ! فيقولون : وأي شيء أفضل من ذلك؟ فيقول : أُحلُّ عليكم رضواني، فلا أسخط عليكم بعده أبداً»
“আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জান্নাতীদের ডেকে বলবেন, হে জান্নাতবাসী! উত্তরে তারা বলবেন: হে রব, ‘আমরা তোমার দরবারে উপস্থিত, আমরা তোমার নিকট সফলতা কামনা করছি, যাবতীয় কল্যাণ তোমারই হাতে’ তখন আল্লাহ তাদের বলবেন, তোমরা কি আমার প্রতি রাজি-খুশি? তারা বলবে, হে আমাদের রব রাজি-খুশি না হওয়ার কি আছে? তুমি আমাদের এমন সবকিছু দিয়েছ, যা তুমি তোমার আর কোন মাখলুককে দাওনি। তারপর আল্লাহ বলবেন, আমি কি তোমাদের এর চেয়েও উত্তম কিছু দান করব? তখন তারা বলবে, কোন জিনিস এর চেয়ে উত্তম? তখন আল্লাহ ঘোষণা দেবেন, “তোমাদের প্রতি আমার সন্তুষ্টি অবধারিত, আমি আর কখনো তোমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হব না” [. মুত্তাফাকুন আলাইহ : বুখারি, কিতাবুর রিকাক, জান্নাত ও জাহান্নামের আলোচনা, হাদীস নং: ৬৫৪৯। মুসলিম, জান্নাত ও জান্নাতের নেয়ামতসমূহের আলোচনা অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: জান্নাতীদের প্রতি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর সন্তুষ্টি তাদের প্রতি তিনি আর কোন দিন অসন্তুষ্ট হবেন না, হাদিস নং: ২৮২৯।], [. মনস্তাত্বিক নেয়ামত বিষয়ে আবু সাঈদ খুদরী রা. হতে আরো বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এরশাদ করেন, «يجاء بالموت يوم القيامة كأنه كبش أملح، فيوقف بين الجنة والنار، فيقال : يا أهل الجنة، هل تعرفون هذا؟ فيشرئبّون وينظرون ويقولون : نعم هذا الموت، ويقال : يا أهل النار، هل تعرفون هذا؟ فيشرئبّون وينظرون ويقولون : نعم هذا الموت، فيُؤمَر به فيُذبح، ثم يقال : يا أهل الجنة خلود فلا موت، ويا أهل النار خلود فلا موت» “মৃত্যুকে কিয়ামতের দিন একটি মেষের আকৃতিতে উপস্থিত করা হবে এবং জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝে রাখা হবে। তারপর বলা হবে, হে জান্নাতবাসী তোমরা একে চেন? তখন তারা মাথা উঁচু করবে এবং দেখে বলবে, হ্যাঁ আমরা চিনি, এ হল মৃত্যু। তারপর জাহান্নামীদের বলা হবে, হে জাহান্নামবাসী, তোমরা একে চেন? তখন তারা মাথা উঁচু করবে এবং দেখে বলবে, হ্যাঁ আমরা চিনি, এ হল মৃত্যু। তারপর আদেশ দেয়া হবে যবেহ করার জন্য। তখন তাকে যবেহ করা হবে। তারপর জান্নাতীদের বলা হবে, হে জান্নাতীগণ, তোমরা জান্নাতে চিরদিন থাকবে আর কোন দিন তোমরা মৃত্যুবরণ করবে না। এবং জাহান্নামীদের বলা হবে, হে জাহান্নামীরা, তোমরা জাহান্নামে চিরদিন থাকবে, আর কোন দিন তোমরা মৃত্যুবরণ করবে না। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮৪৯। আব্দুল্লাহ বিন ওমর রা. হতেও অনুরূপ বর্ণিত। তাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন, « فيزداد أهل الجنة فرحاً إلى فرحهم، ويزداد أهل النار حزناً إلى حزنهم » “তখন জান্নাতীদের আনন্দ আরো বৃদ্ধি পাবে। আর জাহান্নামীদের অশান্তি আরও বৃদ্ধি পাবে”। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৫০। আর মনস্তাত্বিক নেয়ামতের মধ্যে সবচেয়ে বড় নেয়ামত হল, আল্লাহর চেহারার দিকে তাকানো। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, ﴿۞لِّلَّذِينَ أَحۡسَنُواْ ٱلۡحُسۡنَىٰ وَزِيَادَةٞۖ ٢٦﴾ [ يونس : ٢٦ ] . “যারা ভালো কাজ করে তাদের জন্য রয়েছে শুভ পরিণাম (জান্নাত) এবং আরও বেশি কিছু”। [সূরা ইউনুস, আয়াত: ২৬] আয়াতে ‘আল-হুসনা’ অর্থ জান্নাত আর ‘যিয়াদা’ বা আরো বেশী কিছু অর্থ আল্লাহর দিকে তাকানো। আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন, ﴿لَهُم مَّا يَشَآءُونَ فِيهَا وَلَدَيۡنَا مَزِيدٞ ٣٥﴾ [ق: ٣٥ ] “তারা যা চাইবে, সেখানে তাদের জন্য তাই থাকবে এবং আমার কাছে রয়েছে আরও অধিক”। সূরা ক্বাফ, আয়াত: ৩৫] এখানে ‘মাযিদ’ বা অধিক দ্বারা উদ্দেশ্য আল্লাহর চেহারার দিকে তাকানো। আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন, ﴿وُجُوهٞ يَوۡمَئِذٖ نَّاضِرَةٌ ٢٢ إِلَىٰ رَبِّهَا نَاظِرَةٞ ٢٣ ﴾ [ القيامة : ٢٢، ٢٣ ]- “সেদিন কতক মুখমণ্ডল হবে হাস্যোজ্জ্বল। তাদের রবের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপকারী”। সূরা কিয়ামাহ, আয়াত: ২২, ২৩] হাদিসে বর্ণিত আছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন, «فيكشف الحجاب، فما أُعطوا شيئاً أحبّ إليهم من النظر إلى ربهم » [ مسلم، برقم 181].“তারপর পর্দা খোলা হবে, [তখন তারা আল্লাহর দিকে তাকাবে।] জান্নাতীদেরকে তাদের প্রভূর দিকে তাকানোর চেয়ে বড় প্রিয় আর কোন কিছু দেয়া হয়নি”। সহীহ মুসলিম, হাদিস নং: ১৮১]]।
দ্বিতীয় প্রকার নেয়ামত: মনস্তাত্বিক নেয়ামত ও শান্তি:
এক- জান্নাতের নহরসমূহ: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
“মুত্তাকীদেরকে যে জান্নাতের ওয়াদা দেয়া হয়েছে তার দৃষ্টান্ত হল, তাতে রয়েছে নির্মল পানির নহরসমূহ, দুধের ঝর্ণাধারা, যার স্বাদ পরিবর্তিত হয়নি, পানকারীদের জন্য সুস্বাদু সুরার নহরসমূহ এবং আছে পরিশোধিত মধুর ঝর্ণাধারা। তথায় তাদের জন্য থাকবে সব ধরনের ফলমূল আর তাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা। তারা কি তাদের ন্যায়, যারা জাহান্নামে স্থায়ী হবে এবং তাদেরকে ফুটন্ত পানি পান করানো হবে ফলে তা তাদের নাড়িভুঁড়ি ছিন্নÑবিচ্ছিন্ন করে দেবে” [. সূরা মুহাম্মদ, আয়াত: ১৫।]?
আয়াতের তাফসীর: মুত্তাকীদেরকে যে জান্নাতের ওয়াদা দেয়া হয়েছে তার দৃষ্টান্ত অর্থাৎ গুণাগুণ হল- তাতে রয়েছে নির্মল পানির নহরসমূহ, দুধের ঝর্ণাধারা, যার স্বাদ পরিবর্তিত হয়নি। এ কথার অর্থ, পঁচে গলে যার স্বাদ পরিবর্তন হয়নি এবং দুর্গন্ধ ছড়ায়নি।
‘এবং আছে পরিশোধিত মধুর ঝর্ণাধারা’ তাকে পা পৃষ্ট করেনি এবং ইতঃপূর্বে হাত বদল হয়নি। ‘তথায় তাদের জন্য থাকবে সব ধরনের ফলমূল আর তাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা। তারা কি তাদের ন্যায়, যারা জাহান্নামে স্থায়ী হবে’ অর্থাৎ যারা এ ধরনের নেয়ামতসমূহের মধ্যে থাকবে তারা কি ওদের মত হবে, যারা চিরদিন জাহান্নামে থাকবে?( [.তাফসীরে বগবী: ১৮১/৪, তাফসীরে ইবনে কাসীর: ১৭৭/৪।]) ,( [.জান্নাতের নহরসমূহের মধ্যে রয়েছে, হাউজে কাউছার যা একমাত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’কে দেয়া হয়েছে। এর দু’প্রান্ত মর্মর পাথরে শোভিত। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘এর দু’ প্রান্ত কারুকার্যপূর্ণ মর্মর পাথরে সুশোভিত’। সহীহ বুখারী, ৪৯৬৪ ও ৬৫৮১।আর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর হাউজ কিয়ামতের মূহুর্তে তার প্রস্থ একমাসের রাস্তা আর দৈর্ঘ্য আসমান ও যমীনের দূরত্বের সমান দূরত্ব। যে ব্যক্তি সে হাউজ থেকে একবার পানি পান করবে সে আর কখনো পিপাসিত হবে না। সহীহ বুখারি, হাদীস নং ৬৫৭৯, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৯২। অচীরেই এমন একটি দিবস আসবে, সেদিন এ হাউজ হতে প্রতিহত করা হবে, কতক লোকদের। আমরা আল্লাহর নিকট নিরাপত্তা চাই। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন, «ليردن عليّ أناس من أصحابي » وفي رواية : « أقوام أعرفهم ويعرفوني، ثم يُحال بيني وبينهم، فأقول : إنهم من أمتي، فيقال : إنك لا تدري ما أحدثوا بعدك، فأقول : سُحقاً سُحقاً لمن غيَّر بعدي » وقال ابن عباس : سُحقاً : بُعداً [ البخاري، برقم 6583 ، ومسلم، برقم 2292]. “অবশ্যই আমার সাহাবাদের কতক লোক কিয়ামতের দিন (আমার হাউজের নিকট) আমার উদ্দেশ্যে আগমন করবে’। অপর এক বর্ণনায় এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন, “এমন এক সম্প্রদায়ের লোকেরা আগমন করবে, যাদের আমি চিনি এবং তারাও আমাকে চিনে। তারপর তাদের মাঝে ও আমার মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হবে। তখন আমি বলব, তারা আমার উম্মত তাদের কেন বাধা দাও? তখন বলা হবে, তুমি জাননা, তারা তোমার পর কি কি আবিষ্কার করেছিল! এ কথা শোনে আমি যারা আমার পর [আমার দ্বীনের মধ্যে] পরিবর্তন পরিবর্ধন করেছিল তাদের জন্য বলব, দুর হও, দুর হও”। আব্দুল্লাহ ইব্ন আব্বাস রা. বলেন, سُحقاً শব্দের অর্থ بُعداً দূর হও। সহীহ বুখারি, হাদিস নং ৬৫৮৩, সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ২২৯২।])।
দুই, তিন- ‘হুর’ তথা সুন্দরী নারী ও জান্নাতীদের বাসস্থান:
“সেখানে থাকবে এমন নারীগণ যাদের দৃষ্টি সীমাবদ্ধ থাকবে স্বামীর প্রতি, যাদেরকে ইতঃপূর্বে স্পর্শ করেনি কোন মানুষ আর না কোন জিন”। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
“সারিবদ্ধ পালঙ্কে তারা হেলান দিয়ে বসবে; আর আমি তাদেরকে মিলায়ে দেব ডাগর-চোখা হুর-এর সাথে”। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
«في الجنة خيمة من لؤلؤة مجوفة عرضها ستون ميلاً، في كل زاوية منها أهل ما يرون الآخرين، يطوف عليهم المؤمن »
“জান্নাতের মধ্যে মর্মর পাথরে সুশোভিত গোলাকার তাঁবু রয়েছে যার প্রস্থ ষাট মাইল। তাঁবুগুলোর প্রতিটি কোণে কিছু লোক রয়েছে, তার এক কোণে যারা থাকবে তারা অপর কোণের লোকদের দেখতে পাবে না। মুমিনরা তাদের উপর ঘুরে বেড়াবে ( [.মুত্তাফাকুন আলাইহ : সহীহ বুখারি, তাফসীর অধ্যায়, সূরা আর-রহমান এর তাফসীর: হাদীস নং: ৪৮৭৯। সহীহ মুসলিম, জান্নাত ও তার নেয়ামতসমূহের বর্ণনা অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: জান্নাতের তাঁবু সমূহের আলোচনা, হাদীস নং: ২৮৩৮। সহীহ মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় এসেছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন, « إن للمؤمن في الجنة لخيمةً من لؤلؤة واحدةٍ مجوفة طولها في السماء ستون ميلاً » “জান্নাতে মুমিনদের জন্য মণি মুক্ত দ্বারা একটি তাঁবু থাকবে, যার দৈর্ঘ্য আসমানে ষাট মাইল। উভয় বর্ণনায় বর্ণিত দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের বর্ণনার মধ্যে কোন পার্থক্য নাই। জান্নাতের প্রশস্ততা সমতল হওয়ার দিক বিবেচনায় ষাট মাইল। আর জান্নাতের দৈর্ঘ্য আসমানে ষাট মাইল। সুতরাং জান্নাতের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ উভয়টি বরাবর। ইমাম নববী, শরহে সহীহ মুসলিম, দেখুন: ১৭৫/১৭।])।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জান্নাতীতের বাসস্থান ও জান্নাতের রুম সমূহের বর্ণনা দিয়ে বলেন,
“কিন্তু যারা নিজদের রবকে ভয় করে তাদের জন্য রয়েছে কক্ষসমূহ যার উপর নির্মিত আছে আরও কক্ষ। তার নিচ দিয়ে নদী প্রবাহিত। এটি আল্লাহর ওয়াদা; আল্লাহ ওয়াদা খেলাফ করেন না” [.সূরা আয-যুমার, আয়াত: ২০।]।
আল্লামা ইব্ন কাসীর রহ. বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার নেককার বান্দাদের বিষয়ে বর্ণনা দিয়ে বলেন, তাদের জন্য রয়েছে, জান্নাতে কামরাসমূহ। অর্থাৎ উঁচু উঁচু প্রাসাদ। مِّن فَوْقِهَا غُرَفٌ مَّبْنِيَّةٌ، ‘যার উপর নির্মিত আছে আরও কক্ষ’ অর্থাৎ, এক তলার উপর আরেক তলা, অত্যন্ত মজবুত, সু-সজ্জিত ও সু-উচ্চ কামরা সমূহ [. দেখুন- আল্লামা ইবনে কাসীরের তাফসীরুল কুরআন আল আযীম, পৃ: ৬৭২/৪।]।
আবু মালেক আশয়ারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
«إن في الجنة غرفاً يُرى ظاهرُها من باطنها، وباطنُها من ظاهرها، أعدّها الله تعالى لمن أطعم الطعام، وألان الكلام، وتابع الصيام، وأفشى السلام، وصلّى بالليل والناس نيام »
জান্নাতে এমন কতক কামরা আছে, যার বাহির থেকে ভিতর এবং ভিতর থেকে বাহির সবকিছু দেখা যায়। এ কামরাগুলো আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তৈরি করেছেন, তাদের জন্য যারা মানুষকে খানা খাওয়ায়, মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করে, নিয়মিত সাওমের পাবন্দি করে, সালামের প্রসার করে এবং রাতে মানুষ যখন ঘুমায়, তখন সালাত আদায় করে [. আহমদ, মুসনাদ ৩৪৩/৫, ইবনে হিব্বান ৬৪১, তিরমিযি আলী রা. হতে, অধ্যায়: জান্নাতের বর্ণনা, পরিচ্ছেদ: জান্নাতের রুমসমূহের বর্ণনা। হাদিস নং ২৫২৭। আল্লামা আলবানী সহীহ সুনান আত-তিরমিযিতে হাদিসটিকে হাসান বলে আখ্যায়িত করেন। জামে তিরমিযি: ২২০/২ হাদিস নং ২১১৯।]।
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’কে জান্নাতের ঘরসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে উত্তরে তিনি বলেন,
«لَبِنةٌ من فضة، ولَبِنةٌ من ذهب، ومِلاطها ( [. মাটি: যা দেয়ালের সাথে আস্তর হিসেবে ব্যবহার করা হয়। দেখুন, আন-নিহায়া হাদীসের শব্দের অর্থ সমূহের বর্ণনায়, পৃ: ৩৫৭/৪।]) المسك الأذفرُ، وحصباؤها اللؤلؤُ والياقوتُ، وتُربَتُها الزعفران، من يدخلها : ينعم ولا يبأس، ويخلدُ ولا يموت، لا تبلى ثيابهم، ولا يفنى شبابهم »
“জান্নাতের একটি ইট রুপার অপরটি স্বর্ণের আর তার আস্তর হল, মিসক। আর তার সূরকী হল, মুণি মুক্তার পাথর। জান্নাতের মাটি হল, যাফরান। যে ব্যক্তি জান্নাতে একবার প্রবেশ করবে, সে জান্নাতের নেয়ামত ভোগ করতে থাকবে কখনো সে হতাশ হবে না, জান্নাতে চির কাল থাকবে তাতে সে কখনো মরবে না, তাদের কাপড় কখনো পুরাতন হবে না এবং তাদের যৌবন কখনো শেষ হবে না” [. তিরমিযি, জান্নাতের বর্ণনা অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: জান্নাতের গুণাগুণ ও নেয়ামত সমূহের বর্ণনা, হাদিস নং ২৫২৬, আহমদ ৩০৫/২। আল্লামা আলবানী রহ. বিশুদ্ধ তিরমিযিতে হাদীসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেছেন, পৃ: ৩১১/২।]।
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম রহ. তার ‘আন-নুনিয়া’ নামক বিশিষ্ট কাব্যগ্রন্থে জান্নাতের আসনসমূহ ও তার সৌন্দর্যের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন,
“তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সুসংহত ও মজবুত কাবা যাকে পাথর ও খুঁটির দ্বারা আবৃত করা হয়েছে তার তাওয়াফ করে, সে সর্বদা সাফা মারওয়া ওয়াদিয়ে মুহাস্সার ও দুটি সবুজ রেখার মাঝে দৌড়তে থাকে। সে মিনার নিকটে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করছে কিন্তু খাইফ তাকে নিকটে যাওয়া থেকে প্রতিরোধ করছে”।
তিনি আরও বলেন, “যারা তাদের চক্ষুকে বিরত রাখে, তারা তাদের প্রিয়া ছাড়া অন্য কোন মাহবুবকে তালাশ করে না। তাদের চোখ তাদের প্রিয় মানুষটির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। অন্য কোন যুবকের প্রতি তার দৃষ্টি যায় না”।
তিনি আরও বলেন, “ঐ লোক তার চোখ বিরত রাখার নয়, যে দূর্বল। সুতরাং তারা দুই প্রকার। হে চক্ষু উন্মুক্তকারী ব্যক্তি, অবশ্যই পরবর্তীতে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। সে অবশ্যই সৌন্দর্য ও অনুগ্রহ উভয়টি থেকে খালি হবে।
তিনি আরও বলেন, “হে জ্ঞানীজন! তুমি জান্নাতের আসনসমূহের বর্ণনা শোন! তারপর তুমি তোমার জন্য ডাগর চোখ বিশিষ্ট নারী যারা সৌন্দর্য ও সৃষ্টির দিক বিবেচনায় পরিপূর্ণ এবং সর্বাধিক সুন্দর নারী হিসেবে পরিগণিত”।( [. আল্লামা ইবনুল কাইয়্যুমের কাসিদার ব্যাখ্যা আহমদ বিন ঈসার ৫৪২/২ -৫৪৮।])
ব্যাখ্যা দানকারী বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, ﴿وَزَوَّجۡنَٰهُم بِحُورٍ عِينٖ ٢٠﴾ [ الطور : ٢٠ ] “আর আমি তাদেরকে মিলায়ে দেব ডাগর-চোখা হউর-এর সাথে” [. সূরা আত-তূর. আয়াত: ২০।]।
আল্লামা মুজাহিদ বলেন, الحور শব্দটি حوراء শব্দের বহুবচন। ‘হুর’ বলা হয়-কুমারী নারী, ধবধবে সাদা, কালো চোখ বিশিষ্ট সুন্দরী নারী যাদের দিকে তাকালে তাদের দেহের আকৃতি ও দৈহিক সৌন্দর্য দেখে চক্ষুদ্বয় অভিভূত হয়।
কিন্তু বিশুদ্ধ হল, الحور শব্দটি নির্গত হল, الحور في العين، হতে। অর্থাৎ, কঠিন ধবধবে সাদা যার মধ্যে রয়েছে, কঠিন কালো। মোট কথা তার মধ্যে দুটি অর্থই বিদ্যমান( [.আল্লামা ইবনুল কাইয়্যুমের কাসিদার ব্যাখ্যা আহমদ বিন ঈসার ৫৪২/২ -৫৪৮।]) ( [. হুরদের গুণাগুণ সম্পর্কিত হাদিস অনেক। অনুরুপভাবে জান্নাতীদের আবাস স্থানের গুণাগুণ সম্পর্কিত হাদিসও অনেক। নিম্নে সংক্ষেপে কয়েকটি হাদিসের কথা আলোচনা করা হল। হুরের বর্ননা সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত। যেমন আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন, « إن أول زمرة يدخلون الجنة على صورة القمر ليلة البدر، والذين يلونهم على أشد كوكب دُرِّيّ في السماء إضاءة، لكل امرئٍ منهم زوجتان اثنتان يُرى مُخُّ سُوقهما من وراء اللحم، وما في الجنة أعزب » “প্রথম গ্রুপ যেটি জান্নাতে প্রবেশ করবে, তারা চৌদ্দ তারিখের চাঁদের আকৃতিতে প্রবেশ করবে, তারপর যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, তারা আকাশে প্রজ্জলিত নক্ষত্রের মত হবে। তাদের প্রত্যেকের জন্য দুইজন স্থী থাকবে। তাদের স্ত্রীদের সৌন্দর্য এত বেশি হবে, চামড়ার উপর দিয়ে তাদের পায়ের নলার মগজ দেখা যাবে। আর জান্নাতে আশ্চর্য্য বলতে কিছু নাই”। সহীহ বুখারি, হাদিস নং ৩২৪৫, ৩২৫৪, ৩৩২৭ আর সহীহ মুসলিমে এ শব্দে হাদীস নং ২৮৩৪। আনাস রা. হতে হাদিস বর্ণিত, « ولو أن امرأة من نساء أهل الجنة اطّلعت على أهل الأرض لأضاءت ما بينهما، ولملأت ما بينهما ريحاً، ولَـنَصِيفُها على رأسها – يعني خمارَها – خير من الدنيا وما فيها » “জান্নাতের কোন নারী যদি যমীনবাসীর উপর উঁকি মারত, তাহলে সমগ্র দুনিয়া আলোকিত হয়ে যেত, আসমান ও মধ্যবর্তী স্থান সুঘ্রাণে পরিপূর্ণ হয়ে যেত। তাদের মাথার উপর যে ওড়না ব্যবহার করা হয়, দুনিয়া ও দুনিয়াতে যা কিছু আছে তা হতে অধিক উত্তম”। বুখারি হাদিস নং ৬৫৬৮, ২৭৯৬। আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন, «أول زمرة يدخلون الجنة كأنّ وجوههم ضوء القمر ليلةَ البدر، والزمرة الثانية على لون أحسن كوكب دُرّيّ في السماء، لكل رجل منهم زوجتان من الحور العين، على كل زوجة سبعون حُلّة، يُرى مُخُّ سُوقهما من وراء لحومِهِما، وحُللهما، كما يُرى الشَّرابُ الأحمرُ في الزجاجة البيضاء » “প্রথম দল যেটি জান্নাতে প্রবেশ করবে, তাদের চেহারা চৌদ্দ তারিখের চাঁদের মত উজ্জল হবে। আর দ্বিতীয় জামাত যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, তারা আসমানে প্রজ্জলিত নক্ষত্র হতেও অধিক সুন্দর হবে। তাদের প্রতিটি ব্যক্তির জন্য ‘হুরে ঈন’ থেকে দুটি করে স্ত্রী থাকবে। আর প্রতিটি স্ত্রীর জন্য সত্তুরটি চাদর থাকবে। তাদের পায়ের গোড়ালীর মগজ তাদের চামড়ার উপর থেকে দেখা যাবে। আর তাদের চাদরের সৌন্দর্য হল, সাদা কাঁচের গ্লাসে লাল মদের মত”। তাবরানী, আল-মু‘জাম আল-কাবীর ১৬০/১ হাদিস নং ১০৩২১, আল্লামা ইবুল কাইয়ুম রহ. হাদিয়ুল আরওয়াহ, পৃ: ৩৪৬ কিতাবে লিখেন, এ হাদিসটির সনদ বুখারির শর্তানুযায় সহীহ। আর আল্লামা হাইসামী মাজমায়ুয যাওয়ায়েদ ৪১১/১০ কিতাবে লিখেন, ইবনে মাসউদ হতে বর্ণিত হাদিসটির সনদ বিশুদ্ধ। জান্নাতীদের ঘর-বাড়ী, প্রাসাদ ও বাসস্থান সম্পর্কে একাধিক হাদিস বর্ণিত, যেমন আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, « أن النبي صلى الله عليه وسلم رأى امرأة وقصراً من ذهب لعمر في الجنة، » রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ ওমর রা. এর জান্নাতে একজন রমণী ও একটি স্বর্ণের প্রাসাদ দেখতে পান। বুখারি হাদিস নং: ৩২৪২, ৭০২৪ এবং মুসলিম: ২৩৪৯, ২৩৪৫ অপর একটি হাদিসে বর্ণিত -«وجاء جبريل عليه السلام ، إلى النبي صلى الله عليه وسلم وأمره أن يبشّر خديجة ببيت في الجنة من قصبٍ، لا صَخَبَ فيه ولا نَصَبَ » একবার জিবরীল আ. রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর নিকট এসে তাকে নির্দেশ দেন তিনি যেন খাদিজা রা. এ সু-সংবাদ দেন, জান্নাতে তার জন্য মণিমুক্তা দ্বারা একটি বাড়ী রয়েছে, যাতে কোন প্রকার ছিদ্র নাই এবং কোন ফাটল নাই। বুখারি হাদিস নং ৩৮২০ এবং মুসলিম ২৪৩২। এখানে قصب শব্দের অর্থ গোলাকার মণি মুক্তা। আবার কেউ কেউ বলেন, মণিমুক্তা ও ইয়াকুত পাথর খচিত ঘর। ফতহুল বারী ১৩৮/৭। ওসমান রা. হতে বর্ণিত রাসূল. বলেন, « من بنى مسجداً لله بنى الله له بيتاً في الجنة » “যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য একটি মসজিদ নির্মাণ করবে, আল্লাহ তা’আলা জান্নাতে তার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করবে”। মুসলিম: ৫৩৩ বুখারি: ৪৫০ শব্দগুলো মুসলিমের। উম্মে হাবীবা রা. হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন, «ما من مسلم يصلي لله كل يوم ثنتي عشرة ركعة تطوعاً غير فريضة إلا بنى الله له بيتاً في الجنة، أو إلا بُنِيَ له بيت في الجنة » “যদি কোন ব্যক্তি প্রতিদিন ফরয সালাত ছাড়া বার রাকাত নফল সালাত আদায় করে, আল্লাহ তা’আলা তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ী বানাবে। অথবা তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ী বানানো হবে। সহীহ মুসলিম-৭২৮। ইমাম তিরমিযি ব্যখ্যা করে বলেন যে, এখানে সালাত দ্বারা উদ্দেশ্য হল, সুন্নাতে রাওয়াতেব সমূহ। আর কামরাবাসীদের জান্নাতে অধিক সম্মান ও উচ্চাসন থাকবে। এ কারণে আবু সাঈদ খুদরী রা. এর হাদিসে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন, « إن أهل الجنة ليتراءون أهل الغرف من فوقهم كما تتراءون الكوكب الدرّي الغابر من الأفق من المشرق أو المغرب، لتفاضل ما بينهم » ، قالوا : يا رسول الله : تلك منازل الأنبياء، لا يبلغها غيرهم، قال : «بلى، والذي نفسي بيده، رجال آمنوا بالله، وصدّقوا المرسلين » “নিশ্চয় জান্নাতীরা জান্নাতে তাদের মাথার উপর থেকে কামরাবাসীদের দেখতে পাবে যেমনটি দেখতে পাবে প্রজ্জলিত নক্ষত্র আসমানের পশ্চিম বা পূর্ব প্রান্তে উদীয়মান। জান্নাতীদের মধ্যে তাদের মর্যাদা ও সম্মান অধিক হওয়ার কারণে। সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রাসূল, এতো নবীদের স্তর। এ স্তরে নবীরা ছাড়া অন্য কেউ পৌছতে পারবে না। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বললেন, হ্যাঁ, আমি সে সত্ত্বার কসম করে বলছি যার হাতে আমার জীবন, তারা হল, ঐ সব লোক যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে এবং নবীদের বিশ্বাস করেছেন। সহীহ মুসলিম-২৮৩১।]).।
“আর যারা ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে তুমি তাদেরকে সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতসমূহ, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হবে নদীসমূহ। যখনই তাদেরকে জান্নাত থেকে কোন ফল খেতে দেয়া হবে, তারা বলবে, ‘এটা তো পূর্বে আমাদেরকে খেতে দেয়া হয়েছিল’। আর তাদেরকে তা দেয়া হবে সাদৃশ্যপূর্ণ করে এবং তাদের জন্য তাতে থাকবে পূতঃপবিত্র স্ত্রীগণ এবং তারা সেখানে হবে স্থায়ী” [. সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৫।]। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেন,
“নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে ছায়া ও ঝর্ণা-বহুল স্থানে, আর ফলমূল-এর মধ্যে, যা তারা চাইবে। (তাদেরকে বলা হবে) ‘তোমরা যে আমল করতে তার প্রতিদানস্বরূপ তৃপ্তির সাথে পানাহার কর; সৎকর্ম-শীলদের আমরা এমন-ই প্রতিদান দিয়ে থাকি” [. সূরা আল-মুরসালাত, আয়াত: ৪১-৪৪।]।
“আর (ঘোরাফেরা করবে) তাদের পছন্দমত ফল নিয়ে। আর পাখির গোস্ত নিয়ে, যা তারা কামনা করবে” [. সূরা আল-ওয়াকেয়া, আয়াত: ২০, ২১।]।
জাবের ইব্ন আব্দুল্লাহ রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
«يأكل أهل الجنة فيها ويشربون، ولا يتغوّطون، ولا يمتخّطون، ولا يبولون، ولكن طعامهم ذاك جشاء كرشح المسك، يُلهَمون التسبيح والتحميد كما يُلهَمون النَّفَس »
“জান্নাতীরা জান্নাতে খাবে এবং পান করবে, কিন্তু তারা জান্নাতে পেশাব পায়খানা করবে না এবং তাদের নাক দিয়ে কোন সর্দি বের হবে না। তাদের খাদ্যগুলো হবে মিসকের ফোটার মত একটি ঢেকুর মাত্র। তাদের মুখ থেকে তাসবীহ ও তাহমীদ নিশ্বাসের মত বের হতে থাকব [. সহীহ মুসলিম, কিতাবুল জান্নাহ ও নেয়ামতসমূহের বর্ণনা। পরিচ্ছেদ: জান্নাত ও জান্নাতীদের গুনাগুণের বর্ণনা এবং তাদের তাসবীহ- হাদিস নং ২৮৩৫।] , [. জান্নাতীদের আল্লাহ তা’আলা কত নেয়ামত দান করবেন তা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। যেমন আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন, « يقول الله تعالى : أعددت لعبادي الصالحين ما لا عين رأت، ولا أذن سمعت، ولا خطر على قلب بشر، فاقرأوا إن شئتم : ﴿فَلَا تَعۡلَمُ نَفۡسٞ مَّآ أُخۡفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعۡيُنٖ جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٧﴾ [ السجدة : ١٧ ] “অতঃপর কোন ব্যক্তি জানে না তাদের জন্য চোখ জুড়ানো কী জিনিস লুকিয়ে রাখা হয়েছে, তারা যা করত, তার বিনিময়স্বরূপ”।[সূরা আস-সাজদা, আয়াত: ১৭] আল্লাহ তা’আলা বলবেন, আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন সব জিনিস তৈরি করেছি যা কোন চোখ কখনো দেখেনি, কোন কান শুনেনি এবং কোন মানুষের অন্তর কখনো তা চিন্তা করেনি। তোমরা যদি চাও এ কথার সমর্থনে এ আয়াত -﴿ فَلَا تَعۡلَمُ نَفۡسٞ مَّآ أُخۡفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعۡيُنٖ جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٧ ﴾ [ السجدة : ١٧ ] “অতঃপর কোন ব্যক্তি জানে না তাদের জন্য চোখ জুড়ানো কী জিনিস লুকিয়ে রাখা হয়েছে, তারা যা করত, তার বিনিময়স্বরূপ”। [সূরা সেজদা, আয়াত: ১৭] - তিলাওয়াত করতে পার। বুখারি-৩২৪৪, মুসলিম-২৮২৪। আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন, «أول زمرة تدخل الجنة على صورة القمر ليلة البدر، ثم الذين يلونهم على أشدّ كوكب دُرّيٍّ في السماء إضاءة : لا يبولون، ولا يتغوّطون، ولا يتفلون، ولا يمتخّطون، أمشاطهم الذهب، ورشحهم المسك، ومجامرهم الألوّة الأنجوم عود الطيب، وأزواجهم الحور العين، على خلق رجل واحد، على صورة أبيهم آدم ستون ذراعاً في السماء» “সর্ব প্রথম যে দলটি জান্নাতের প্রবেশ করবে তার আকৃতি হবে চৌদ্দ তারিখের চাঁদের আকৃতি। তারপর যারা তাদের কাছাকাছি জান্নাতের প্রবেশ করবেন, তাদের আকৃতি হবে আকাশে প্রজ্জলিত নক্ষত্রের মত, তারা সেখানে পেশাব করবে না, পায়খানা করবে না, তাদের কোন থুথু হবে না, তাদের চিরনি হবে স্বর্ণের, তাদের ঘাম হবে মিশকের, তাদের স্ত্রীরা হবে ডাগর চোখ বিশিষ্ট হুর। তাদেরকে একই ব্যক্তির আকৃতিতে সৃষ্টি করা হবে। অর্থাৎ, তাদের পিতা আদম আ. এর আকৃতি। তাদের দৈর্ঘ্য হবে ষাট গজ। অপর এক বর্ণনায় বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন, «... ولكل واحد منهم زوجتان، كل واحدة منهما يُرى مخُّ ساقها من وراء اللحم من الحسن، لا اختلاف بينهم ولا تباغض، قلوبهم على قلب رجل واحد »، [ البخاري، 3245، 3246، 3254، 3327 ، ومسلم، برقم 2834]“প্রতিটি জান্নাতীর জন্য দু’জন করে স্ত্রী থাকবে, তারা এত সুন্দর হবে, তাদের চামড়ার উপর দিয়ে তাদের পায়ের গোড়ালীর মগজ পর্যন্ত দেখা যাবে। জান্নাতীদের মধ্যে কোন ধরনের বিভেদ ও মতবিরোধ থাকবে না, কোন ধরনের হিংসা-বিদ্বেষ থাকবে না। তাদের অন্তর এক ব্যক্তির অন্তরের মত হবে। বুখারি: ৩২৪৫, ৩২৪৬, ৩৩২৭ এবং মুসলিম, ২৮৩৪। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ আরও বলেন, « وأبواب الجنة ثمانية، ما بين مصراعين من مصاريع الجنة مسيرة أربعين سنة، وليأتين عليها يوم وهو كظيظ من الزحام » [ مسلم، برقم 234 ، ورقم 2967].“জান্নাতের দরজাসমূহ আটটি। জান্নাতের দরজাসমূহের দুটি চৌকাটের দূরত্ব চল্লিশ বছরের দূরত্বের সমান। অচীরেই তার উপর এমন একটি দিন আসবে সেদিন মানুষের ভিড়ের কারণে জান্নাতের দরজাগুলো লোকারণ্য থাকবে। মুসলিম: হাদিস নং ২৩৪, ২৯৬৭। « وأول من يدخل الجنة فيستفتح فتفتح له أبوابها محمد صلى الله عليه وسلم،» [ مسلم، برقم 196، 197] .‘সর্ব প্রথম যিনি জান্নাতে প্রবেশ করবে তিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’। তিনি দরজা খুলে দেয়ার জন্য অনুমতি চাইলে তার জন্য দরজা খুলে দেয়া হবে। [মুসলিম: ১৯৬, ১৯৭] জান্নাতের স্তরসমূহ: সবোর্চ্চ স্তর হল, ‘ওয়াসিলা’ - এটি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর জন্য খাস। এটি আল্লাহর আরশের অতি কাছের একটি স্তর এবং আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয়। মুসলিম: ৩৮৪, আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেমের হাদীয়ূল আরওয়াহ পৃ: ৯৯।জান্নাতুল ফিরদাউস: রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন, «إن في الجنة مائة درجة أعدّها الله للمجاهدين في سبيله، كل درجتين ما بينهما كما بين السماء والأرض، فإذا سألتم الله فاسألوه الفردوس، فإنه أوسط الجنة، وأعلى الجنة، وفوقه عرش الرحمن» [ البخاري، 2790، 7423]،“জান্নাতে একশটি স্তর আছে এ সব স্তরসমূহকে আল্লাহ তা’আলা আল্লাহর রাহের মুজাহিদদের জন্য তৈরি করেছেন, দুটি দরজার মধ্যবর্তী স্থানের দূরত্ব আসমান ও যমীনের দূরত্বের সমান। আর যখন তোমরা জান্নাত কামনা কর, তখন তোমরা জান্নাতুল ফিরদাউস কামনা কর। কারণ এটি জান্নাতের মধ্যমণি এবং উন্নত জান্নাত। তার উপর রয়েছে আল্লাহর আরশ। বুখারি ২৭৯০,৭৪২৩। আবু সাঈদ খুদরী রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এরশাদ করেন - «أنه يقال لصاحب القرآن يوم القيامة إذا دخل الجنة : اقرأ واصعد، فيقرأ ويصعد بكل آية درجة، حتى يقرأ آخر شيء معه » [ أحمد في المسند، 3/40]، “কিয়ামতের দিন কুরআনওয়ালাকে বলা হবে, যখন সে জান্নাতে প্রবেশ করবে, তুমি তিলাওয়াত কর এবং উপরের দিক উঠতে থাক তখন সে প্রতি আয়াত তিলাওয়াতের অনুকুলে জান্নাতের একটি স্তর অতিক্রম করতে থাকবে। এভাবে চলতে চলতে শেষ আয়াত পর্যন্ত তিলাওয়াত করবে”। আহমদ রহ. মুসনাদ [৪০/৩]। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন, «يُقال لصاحب القرآن : اقرأ، وارقَ، ورتِّل كما كنت تُرتّل في الدنيا، فإن منزلتك عند آخر آية تقرؤها» [ الترمذي، برقم 3003 ، وأحمد، 2/192 ، وحسنه الألباني في صحيح الترمذي، 3/10].কুরআনওয়ালাকে বলা হবে, তুমি কুরআন পড় এবং উপরের দিক উঠতে থাক। দুনিয়াতে তুমি যেভাবে কুরআন তিলাওয়াত করতে, সেভাবে তিলাওয়াত কর। কারণ, তোমার অবস্থান শেষ আয়াত যা তুমি দুনিয়াতে তিলাওয়াত করতে”। [তিরমিযি ৩০০৩, আহমদ: ১৯২/২, আল্লামা আলবানী সহীহ তিরমিযি ১০/৩ তে হাদীসটিকে সহীহ আখ্যায়িত করেন] মোট কথা জান্নাতীদের জন্য জান্নাতে রয়েছে তাদের মন যা চায়। চোখে যা দেখতে পায়। সাধারণ একজন জান্নাতীকে বলা হবে, «ولك ما اشتهت نفسك، ولذّت عينك» [ انظر : سورة الزخرف، الآيات : 70-73 ، ومسلم، برقم 189].“তোমার জন্য রয়েছে, তোমার মন যা চায়, তা এবং তোমার চোখ যাতে খুশি হয় তা। দেখুন- [সূরা যুখরফ, আয়াত: ৭০-৭৩, মুসলিম হাদীস নং: ১৮৯]আর মুমিনদের জন্য জান্নাতে সব চেয়ে বড় নেয়ামত হল, আল্লাহর চেহারার দিকে তাকানো। সুহাইব রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন, «إذا دخل أهل الجنة الجنة يقول الله تعالى : تريدون شيئاً أزيدكم؟ فيقولون : ألم تُبيِّض وجوهنا، وتدخلنا الجنة وتنجِّنا من النار؟ فيكشف الحجاب، فما أُعطوا شيئاً أحبّ إليهم من النظر إلى ربهم » [ مسلم، برقم 181].“যখন জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, তখন আল্লাহ তা’আলা জান্নাতীদের বলবে, তোমরা আর কিছু চাও? আমি তোমাদের বাড়িয়ে দেব। তখন তারা বলবে, তুমি কি আমাদের চেহারাকে উজ্জল করনি? আমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাওনি? এবং জাহান্নাম হতে নাজাত দাওনি? তারপর আল্লাহ তা’আলা তার আবরণ খুলে দেবে। জান্নাতীদের জন্য আল্লাহর দিকে তাকানোর চেয়ে অধিক উত্তম কোন নেয়ামত তাদের দেয়া হয়নি”। [মুসলিম: হাদিস নং: ১৮১]]।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/304/8
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।