মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
প্রথম সন্দেহ: এ দাবি যে, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও দীন পরস্পর বিরোধী।
তাদের এ দাবি খণ্ডনে বলা যায় যে, দীন বা ধর্ম বলতে যদি আল্লাহ তা‘আলা প্রবর্তিত দীন না বুঝিয়ে জাগতিক কোনো দীন বুঝিয়ে থাকে তবে সন্দেহ ঠিক হতে পারে। কেননা সেগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে নি। কিন্তু যদি দীন/ধর্ম বলতে ইয়াহূদী, খ্রিষ্ট ও ইসলাম ধর্ম বুঝিয়ে থাকেন, তাহলে তাও কোন কোন ব্যাপারে বিশুদ্ধ হতে পারে। কারণ, ইয়াহূদী ও খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী কেউই তাদের বর্তমান আইন-কানূনসমূহকে আল্লাহ প্রদত্ত এবং তাদের রাসূল-প্রদর্শিত বলে প্রমাণ করতে পারবে না। তাদের ধর্মে হয়েছে বিভিন্ন প্রকার বিকৃতি, ধর্মের নামে কু-সংস্কারের ব্যাপক প্রসার। সর্বোপরি তাদের পাদ্রীগণ শাসকগোষ্ঠীর সাথে একজোট হয়ে ধর্মকে মানুষের ওপর অত্যাচারের হাতিয়ার বানিয়েছে। জ্ঞানীদের করেছে লাঞ্ছিত করেছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, খ্রিষ্টান পাদ্রীগণ যখনই কোনো বিজ্ঞানীকে কোনো কিছু আবিষ্কার করতে শুনতেন, তখনই তাদেরকে ধর্মদ্রোহিতার দোষে দোষী করে কঠোর শাস্তি দিতেন, এমনকি মৃত্যুদণ্ড দানেও পিছপা হতেন না। আবার কোনো কোনো এলাকার মানুষ ছিল গির্জার প্রজাস্বরূপ। তাদের নিজস্ব সম্পত্তি বলতে কিছু ছিল না। সুতরাং কেউ যদি জ্ঞান-বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে বিরোধিতা বলতে এ সমস্ত বিকৃত ধর্মসমূহকে বুঝিয়ে থাকেন তাহলে আমাদের বলার কিছু থাকে না। কেননা এসব বিকৃত ধর্ম মানবতার জন্য জীবন ব্যবস্থা হতে পারে না।
কিন্তু ইসলাম এমন একটি দীন যা এ অপবাদ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। কারণ, প্রথমত ইসলামী আইনের প্রধান দু’টি উৎস: কুরআন ও সুন্নাহ আজও অবিকৃত অবস্থায় রয়েছে। কুরআনের কথাই ধরা যাক, আল্লাহ তা‘আলা এর হিফাযতের ভার নিয়েছেন, তাই আজ পর্যন্ত এর মধ্যে কোনো প্রকার পরিবর্তন প্রমাণ করে কেউ দেখাতে পারে নি। অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসের ক্ষেত্রেও কথাটি বলা যায়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত সহীহ হাদীসগুলোকে হিফাযত করেছেন, ফলে মিথ্যা ও জাল হাদীসের প্রবর্তনকারীদের শত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কোনো মিথ্যা হাদীসকে কেউ সঠিক হাদীস বলে মেনে নেয় নি; বরং মিথ্যা হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছে। এজন্য আল্লাহ তা‘আলা এমন কিছু মুহাদ্দিস প্রেরণ করেছেন যারা সঠিক হাদীসকে জাল/মিথ্যা হাদীস থেকে পৃথক করে গেছেন। আর তা হওয়ার কারণ এই যে, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
“অবশ্যই আমরা এ যিকির অবতীর্ণ করেছি, আর আমরাই এর হিফাযত করবো”। [সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৯] এখানে যিকির দ্বারা কুরআন ও সহীহ হাদীস বুঝানো হয়েছে।
আল্লাহ তা‘আলা পূর্ববর্তী কোনো উম্মতের গ্রন্থ ও তাদের নবীর বাণী সম্পর্কে এ রকম ঘোষণা দেন নি।
ইসলামী আইনের তৃতীয় ও চতুর্থ উৎস হলো: ইজমা‘ ও কিয়াস।
ইজমা হলো: এ উম্মতের দীনি জ্ঞানসম্পন্ন মুজতাহিদদের ঐকমত্য পোষণ। আর এর ভিত্তি হলো রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহীহ হাদীস- “আমার উম্মত কখনও ভ্রষ্ট পথে একমত হবে না”। [দেখুন: মুস্তাদরাকে হাকিম (১/২০০-২০১), হাদীস নং ৩৯৪, ৩৯৬, ৩৯৭, ৩৯৯, ৪০০। আরো দেখুন: আবূ দাউদ (৪/৯৮), হাদীস নং ৪২৫৩; তিরমিযী (৪/৪৬৬), হাদীস নং ২১৬৭; ইবন মাজাহ (২/১৩০৩), হাদীস নং ৩৯৫০।] সুতরাং উম্মতের সবাই যদি কোনো ব্যাপারে একমত হয়, তাহলে তাও আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুমতিক্রমেই হবে। আর তা হবে গ্রহণযোগ্য। পূর্ববর্তী কোনো দ্বীনের ক্ষেত্রে তাদের নবীর মুখ থেকে এরকম কোনো অভয়বাণী শোনানো হয় নি। ফলে তাদের সবাই একমত হলেই সে মতটি সঠিক হওয়ার গ্যারান্টি নেই।
ইসলামী শরী‘আতের (আইনের) চতুর্থ উৎস হলো কিয়াস: যা নির্ভর করে পূর্ববর্তী তিনটি উৎসের ওপর। সুতরাং এটাও মনগড়া কিছু নয়।
অতএব, আমরা বুঝতে পারছি যে, ইসলাম এমন একটি দ্বীনের নাম, যা সম্পূর্ণভাবে অবিকৃত রয়েছে। আর তার বিধানসমূহে বাইরের কোনো প্রভাব সেখানে পড়ে নি। যেহেতু আল্লাহ তা‘আলাই এ বিধান দিয়েছেন, আর জ্ঞান-বিজ্ঞানও তাঁর পক্ষ থেকেই দেওয়া নেয়ামত বিশেষ, সেহেতু এ দু’টি কখনও পরস্পর বিরোধী হতে পারে না। বাস্তবেও তা ঘটে নি। আল্লাহর কুরআনের কোনো আয়াত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোনো সহীহ হাদীস বিজ্ঞানে-পরীক্ষিত কোনো ধ্রুবসত্যের বিরোধী হয়েছে- এমন কোনো প্রমাণ আজও কেউ দিতে পারে নি। যদিও কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের কোনো কোনো থিওরি প্রাথমিকভাবে আল-কুরআন ও সহীহ হাদীসের সাথে বিরোধী হয়েছে এমন মনে হয়ে থাকে, তথাপি সেখানে আল্লাহর কুরআন ও সহীহ হাদীসই মূলত গ্রহণযোগ্য হবে, কারণ এ সমস্ত প্রাথমিক থিওরি (যা পরীক্ষিত সত্য বলে প্রমাণিত হয় নি তা) পরিবর্তনশীল। আল্লাহর কুরআনের কোনো আয়াত, আর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো সহীহ হাদীস পরিবর্তনশীল নয়। হাঁ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া করে অনেকেই সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা অনুধাবন করতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে দরকার প্রকৃত জ্ঞানীর কাছে ফিরে যাওয়া।
আর ইসলাম জ্ঞান-বিজ্ঞানকে উৎসাহিত করেছে, জ্ঞান অর্জনকে ফরয করেছে। অন্যান্য ধর্মের মত নিরুৎসাহিত করে নি। ইসলামে বিজ্ঞানীদের যে কদর আছে, অন্যান্য ধর্মের সাথে এর কোনো তুলনাই চলতে পারে না। সুতরাং দীন (ইসলাম) এবং জ্ঞান-বিজ্ঞান পরস্পর বিরোধী বলা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। আর তাই ইসলামী বিধান বাস্তবায়নে এ সন্দেহের অবতারণা করা বাতুলতা মাত্র।
দ্বিতীয় সন্দেহ: বর্তমান যুগ জাতীয়তাবাদের যুগ, প্রত্যেক জাতির নির্দিষ্ট ধ্যান-ধারনা অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালিত হওয়া উচিৎ। ইসলামী আইন চললে তা জাতীয়তাবাদের রীতিনীতি বিরোধী হতে বাধ্য।
এ প্রশ্নের উত্তর আমরা দু’ভাবে দিতে পারি:
এক) একজন ঈমানদার কখনও এ রকম অযৌক্তিক কথা বলতে পারেনা, কারণ সে জানে যে, ইসলাম গ্রহণের পর তার পরিচয় হলো সে একজন মুসলিম। তার জাতীয়তাবাদ হবে ইসলামী জাতীয়তাবাদ। শুধুমাত্র পরিচয়ের জন্য কোনো দেশের অধিবাসী তা উল্লেখ করতে পারে। বিশ্বাস ও নিয়ম-নীতি, চাল-চলন ইত্যাদিতে সে ইসলাম বিরোধী যাবতীয় রীতি-নীতি পরিত্যাগ করতে বাধ্য।
দুই) মূলত জাতীয়তাবাদের ধুয়া তুলে ইসলামী আইন থেকে দূরে সরে থাকা কোনো ক্রমেই সম্ভব নয়। কারণ, আমরা জানি প্রত্যেক রাষ্ট্রেই কতগুলো জাতি থাকে, প্রত্যেক জাতির জন্য আলাদা আইন কেউই রচনা করে না। রাষ্ট্র একটি হলে তার আইন এক রকমই হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ: পাকিস্তানে বেলুচি, সিন্ধি, পাঞ্জাবী প্রভৃতি জাতি রয়েছে, ভারতেও রয়েছে তদনুরূপ বহু জাতি; প্রত্যেকের জন্য আইন একটাই, ভিন্ন ভিন্ন আইন তৈরি হয় নি। তাই আল্লাহর আইন চললে সেখানে জাতি-ভিত্তিক কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। পরন্তু তাতে বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীকে একই নিয়মে পরিচালনা করা সম্ভব; যা রাষ্ট্রীয় ঐক্য ও শক্তিকে আরও সুদৃঢ় করার ক্ষেত্রে উপকারী।
অতএব, আল্লাহর আইন মূলত কোনো জাতির জন্য বিশেষভাবে প্রণয়ন করা হয় নি, যাতে এ-ধরনের সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। মূলত গোটা মানব সমাজের জন্য আল্লাহর আইনই একমাত্র জীবন ব্যবস্থা, তাই জাতীয়তাবাদের মতো সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি কখনো ইসলামী আইনের বিকল্প হতে পারে না; বরং যেহেতু একটি রাষ্ট্রে বিভিন্ন জাতির অবস্থান সেহেতু সেখানে গোটা মানবতার জন্য প্রণীত জীবন ব্যবস্থা আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করা দরকার, যাতে জাতি, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে গোটা মানবগোষ্ঠী আইনের সুবিধা লাভ করতে পারে।
তৃতীয় সন্দেহ: ‘ইসলামী আইন আধুনিক যুগের উদ্ভূত বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে অপারগ’। মূলত এটি একটি মিথ্যা অপবাদ ছাড়া আর কিছুই না। কারণ, কেউই এমন কোনো সমস্যা দেখাতে পারবে না যার জন্য ইসলাম কোনো হুকুম নির্ধারণ করে দেয় নি। হাঁ, অনেক সময় অনেকের কাছে তা স্পষ্ট থাকে না, আর সে জন্য ইসলামী আইনের প্রতি দোষারোপ না করে এমন লোকদের সাহায্য নেয়া উচিত যারা যেকোনো উদ্ভূত সমস্যার সমাধান কল্পে সঠিক সমাধান বের করে দিতে পারেন। এ রকম অস্পষ্টতা শুধু ইসলামী আইনের বেলায় নয়, অন্যান্য আইনেও রয়েছে; বরং অন্যান্য আইনে অসংখ্য অস্পষ্টতা বিদ্যমান। যদি অন্যান্য আইন শেখানোর জন্য, আইনগত পরামর্শ নেয়ার জন্য, আইনের ব্যাখ্যা দানের জন্য বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটি থাকতে পারে, তাহলে ইসলামী আইনের ক্ষেত্রেও এরকম শিক্ষা প্রদান, পরামর্শ প্রদান ও ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি নির্ধারণ করলেই সে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বস্তুত ইসলামী আইনের সাথে অন্যান্য আইনের অস্পষ্টতার কোনো তুলনাই চলে না।
এর একমাত্র কারণ হলো : ইসলামী আইন প্রথমে যে কাজটি করেছে তা হলো- একজন মানুষের জীবনে কী কী সমস্যা হতে পারে তা নির্ধারণ করেছে, তারপর সেগুলোকে কীভাবে সমাধান করা যায় তার বর্ণনা দিয়েছে।
ইসলামের দৃষ্টিতে একজন মানুষের মৌলিক সমস্যা পাঁচটি:
(১) জীবন-নাশের আশংকা।
(২) সম্পদ হারানোর আশংকা।
(৩) মানসম্মান বা ইজ্জত নষ্টের আশংকা।
(৪) ‘আকল বা বুদ্ধি বিবেক হারানোর ভয়।
(৫) দীন বা ধর্ম বিনষ্টের আশংকা।
এই সবগুলোকে “অতীব প্রয়োজনীয় পাঁচটি বস্তু” নামে ইসলাম অভিহিত করেছে। এ পাঁচটি বস্তুরই সমাধান ইসলামী আইনে রয়েছে। ভালো করে চিন্তা করলে দেখা যাবে যে, আধুনিক যুগেও এ পাঁচটি মৌলিক সমস্যার বাইরে আর মৌলিক কোনো সমস্যার উৎপত্তি হয় নি। ফলে, যে সন্দেহ তোলা হয়েছে তার কোনো ভিত্তি নেই।
এ সন্দেহ যে সম্পূর্ণভাবে অমূলক, তার প্রমাণ হিসেবে আমরা বর্তমান সৌদি আরবের আইনের কথা উল্লেখ করতে পারি, সেখানে আল্লাহর আইন বাস্তবায়িত রয়েছে, সে দেশে এখনো আইনি কোনো সমস্যা দেখা দেয় নি। তাদের কাছে এমন কোনো মুকদ্দমা এখনও পেশ হয় নি যার জন্য তারা ইসলামী আইনে সমাধান পায় নি। বরং সে দেশ যাবতীয় সমস্যার সমাধান ইসলামী আইনে করে থাকে বলে এখনও সেখানে যারা থাকে তারা শান্তিতে বসবাস করে যাচ্ছে।
চতুর্থ সন্দেহ: ‘ইসলামী আইন বাস্তবায়ন করলে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা আছে’। এ সন্দেহটি মূলত ইসলামী আইন সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞানের অভাবেই সৃষ্ট। কেননা, ইসলামের সোনালী যুগে ইসলামী আইন পরিপূর্ণভাবেই বাস্তবায়িত ছিল, অথচ সেখানে একনায়কতন্ত্রের নমুনা দৃষ্ট হয় নি; বরং তার বিপরীতটি দেখা গেছে। আবু বকর, উমার, উসমান এবং আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমের সময়ে খলিফাদেরও জবাবদিহী করতে হত। তাদেরও “শূরা” (পরামর্শ) বোর্ড ছিল। তাদের অধিকাংশ কর্মকাণ্ডই পরামর্শের ভিত্তিতে পরিচালিত হত। যদিও পরামর্শ দান ও গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রাধান্য ছিল কুরআন ও সুন্নাহ্র ওপর নির্ভরশীল হওয়া না হওয়া, সংখ্যাগরিষ্ঠতা নয়।
তবে হ্যাঁ, ইসলামে এমন কিছু কর্মকাণ্ড আছে, যা স্থায়ী, যেখানে কোনোরূপ পরামর্শ বা সুপারিশ গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা তা আল্লাহর পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে অনেক বিষয় আছে যা যুগের চাহিদা অনুসারে পরামর্শের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে। আর ঐ নির্দিষ্টসমূহ (যেগুলোতে কোনো প্রকার হেরফের করা যায় না) তা আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন কর্তৃক নির্ধারিত। তাই সেখানে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হওয়ার সম্ভাবনা কোনো ক্রমেই সম্ভব নয়।
পঞ্চম সন্দেহ: ‘ইসলামী বিধান মানুষের বাক-স্বাধীনতা ক্ষুন্ন করে। তেমনিভাবে চিন্তার স্বাধীনতায় বাধ সাধে। আর তা প্রগতির অন্তরায়।’ এটি মূলত তিনটি সন্দেহের সমষ্টি।
এক) প্রথমেই বাক-স্বাধীনতা না দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অথচ এ কথা ভালোভাবেই প্রত্যেক ঈমানদারের জানা উচিৎ যে, আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত কোনো আইন থাকলে সেখানে বাক-স্বাধীনতা দিয়ে কোনো লাভ নেই। কারণ, বাক-স্বাধীনতা সাধারণত মানব রচিত আইনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারে। কেননা, মানব রচিত আইনের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি, ফাঁকি, যুলুম, অত্যাচারের সম্ভাবনাসমূহ বিদ্যমান। সেখানে বাক-স্বাধীনতা ব্যবহারের মাধ্যমে সংশোধনের পথ সুগম করা যায়। পক্ষান্তরে, আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিনের আইনের ক্ষেত্রে বাক-স্বাধীনতা দিয়ে শুধুমাত্র আল্লাহকে অপরিপক্ব, অপরিণামদর্শী, যালেম, মূর্খ ইত্যাদি কুফুরী করা ছাড়া আর কিছু করা সম্ভব নয়। কেননা, তিনি জেনে-বুঝেই বান্দার জন্য এগুলো প্রবর্তন করেছেন।
দুই) চিন্তার স্বাধীনতা না দেওয়া। মূলত এটা একটা অপবাদ; বরং ইসলামই মানুষকে চিন্তা করার, গবেষণা করার ও ভাবার জন্য উৎসাহিত করেছে। কিন্তু যেহেতু মানব চিন্তা বহুমুখী এবং শতধাবিভক্ত হতে বাধ্য, তাই ইসলাম সে ব্যাপারে একটি সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। এমন চিন্তা করতে বলেছে, যাতে সুফল আশা করা যায়, নিষ্ফল চিন্তা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। ইসলাম মানুষকে সৃষ্টি জগতের বিভিন্ন বিষয়ে চিন্তা করতে নির্দেশও দিয়েছে। কিন্তু স্রষ্টার ব্যাপারে চিন্তা করতে নিষেধ করেছে, কারণ তারা এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সক্ষম হবে না। স্রষ্টা সম্পর্কে তাদের চিন্তার ফসল তাদের জন্য কোনো সুফল বয়ে আনবে না। কারণ, তাদেরকে এ ব্যাপারে যতটুকু জ্ঞান দেওয়া হয়েছে এর বাইরে তারা শত চেষ্টা করেও কোনো কিছু উদ্ধার করতে পারবে না; বরং বিভিন্ন মত ও পথে বিভক্ত হতে বাধ্য।
আল্লাহর আইন যেহেতু তার একান্ত নিজের পক্ষ থেকে প্রবর্তিত বিধান, সেখানে চিন্তা করার কিছু নেই। সেখানে চিন্তা করলে শুধু প্রযোজ্য হওয়ার ক্ষেত্র সম্পর্কে করা যায়। মানা না মানার ক্ষেত্রে নয়।
মূলত যারা বলে ‘ইসলামী আইন স্বাধীন চিন্তার ক্ষেত্রে বাধা’ তারা আসলে তাদের নিজেদের চিন্তাধারাকে আইন বলে চালাতে চেষ্টা করে, সবার চিন্তাধারাকে তারা গ্রহণ করে না। তাদের চিন্তাধারার যথার্থতা নিরূপণের একটা মাপকাঠি দরকার। আজ পর্যন্ত মানব রচিত আইনের এমন কোনো ধারা নেই যার মধ্যে দেশ-কাল ভেদে, চিন্তাধারার পরিবর্তনে পরিবর্তিত হয় নি। এতেই এর অসারতা প্রমাণিত হয়।
তিন) ইসলামী আইন প্রগতির অন্তরায়। এ সন্দেহটি অলীক ও ভুল চিন্তাধারার ওপর প্রতিষ্ঠিত। কেননা প্রগতি শব্দের অর্থ যদি উন্নতি হয় তাহলে ঈমানদার মাত্রই বিশ্বাস করতে বাধ্য যে, আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন যা বান্দার জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন, তাতেই রয়েছে উন্নতি, সেটার পরিপূর্ণ বাস্তবায়নই হলো প্রগতি। ইসলামের কোনো আইন আধুনিক আবিষ্কৃত কোনো কিছুর বিরোধিতা করে নি; বরং এগুলোর যত ভালো দিক আছে তা গ্রহণ করা জরুরী মনে করেছে, কিন্তু যদি প্রগতি বলতে বেহায়াপনা, বেলেল্লাপনা, অশ্লীলতা, নগ্নতা ইত্যাদি বুঝানো হয়, তাহলে প্রত্যেক বিবেকবানকেই জিজ্ঞাসা করতে চাই যে, এগুলো কি উন্নতি না অবনতি? যদি এগুলো উন্নতির সোপান হতো তাহলে এ ব্যাপারে বিবেকবানদের মধ্যে দ্বিমত দেখা যেত না, অথচ সুস্থ বিবেকবান মাত্রই নিজ পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র থেকে এগুলোকে দূরীভূত করা গর্বের বিষয় মনে করে থাকে। সুতরাং ইসলাম প্রগতির অন্তরায় এ রকম অপবাদ বিকৃত মস্তিষ্কের ফসল মাত্র।
ষষ্ঠ সন্দেহ: ‘ইসলামী আইন কীভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব অথচ একই রাষ্ট্রে বিভিন্ন ধর্মের লোক বিদ্যমান’?
এ সন্দেহটিও অন্যান্য সন্দেহের ন্যায় অমূলক, ইসলামী আইনের প্রয়োগক্ষেত্র নির্দিষ্ট করা আছে। যদি ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিমগণ থাকেন এবং তাদের মাঝে কোনো প্রকার সমস্যার সৃষ্টি হয় তখন প্রত্যেক নাগরিকই তার বিশ্বাসকৃত জীবন ব্যবস্থা অনুসারে চলতে পারবে, কারো ব্যাপারে জোর করা হবে না। তাদের মধ্যকার সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে তাদের যদি নির্দিষ্ট আইন থাকে, তবে সে অনুসারে ফয়সালা করা হবে। তবে যেখানে মুসলিম ও অমুসলিমের মাঝে সমস্যা দেখা দিবে সেখানে ইসলামী আইন প্রাধান্য পাবে। সুতরাং একই রাষ্ট্রে বিভিন্ন ধর্মের লোক থাকলেও ইসলামী আইন প্রবর্তনে কোনো বাধা নেই।
সপ্তম সন্দেহ: ‘ইসলামী আইনে কঠোরতা আছে বলে দাবি করা’।
এ সন্দেহটিও মূলত ইসলামী আইন সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা না থাকার ওপর প্রমাণবহ। কেননা ইসলামী আইনের যে অংশের প্রতি তাদের এ সন্দেহ নির্ভরশীল তা হলো, দণ্ডবিধি অংশ। ইসলামী আইনের দণ্ডবিধি অংশের উদ্দেশ্য হলো: “প্রতিরোধ করা”; সমাজ থেকে অন্যায়ের মূলোৎপাটন করা। বিকলাঙ্গ মানুষ তৈরি এর উদ্দেশ্য নয়। এক চোরের হাত কাটলেই আপনি দেখতে পাবেন সেখানে চুরি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। তদুপরি বিচারের প্রক্রিয়ায় রয়েছে চুরি প্রমাণ করা। শুধুমাত্র অনুমান বা দাবির মুখে এ বিধান কার্যকর করা হয় না, তার উপরে আছে চুরি-করা সম্পদের পরিমাণ কত হবে তা নিরূপণ করা, নির্দিষ্ট পরিমাণ পর্যন্ত চুরি করলেই শুধু হাত কাটা যাবে তার আগে নয়। আবার দেখা হবে কোত্থেকে চুরি করেছে, সে কি এমন স্থান থেকে চুরি করেছে যা কারো সংরক্ষিত বলে বিবেচিত, আবার এটাও দেখার বিষয় হবে যে, সে চোর নিতান্ত পেটের দায়ে চুরি করেছে কি না, দুর্ভিক্ষে মানুষ দিশেহারা কি না, মানুষের ন্যূনতম খাবারের ব্যবস্থা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে করা হয়েছে কি না? এ-সব বিবেচনায় রাখার পর যদি চুরি প্রমাণিত হয়, তবে তার ডান হাতের কব্জি পর্যন্ত কাটার হুকুম ইসলামী আইন দিয়েছে। যে কেউ এ রকম হাত-কাটা লোক দেখবে তার চুরির সাধ মিটে যাবে, ইসলামী আইনের বাস্তবায়ন হয়েছে শুনতে পেয়েই সেখানে চুরি বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ কেউই চুরির কারণে নিজের মূল্যবান হাতটি যেমনি খোয়াতে চায় না, তেমনি আবার খোয়াতে চায় না নিজের সম্মান, কারণ তার হাত-কাটা অবস্থা তার জন্য যেমনি শিক্ষা অপরের জন্যও তা শিক্ষা হিসেবে দেখা দিবে।
ইসলামের সোনালী যুগে থেকে শুরু করে বর্তমান সৌদি আরব (যেখানে ইসলামী আইনের দণ্ডবিধির অংশ বাস্তবায়িত আছে) সেখানে যদি ভালোভাবে দেখা হয়, তাহলে হাত-কাটা লোকদের সংখ্যা নিতান্তই কম দেখা যাবে। হয়তো কয়েক লক্ষ লোকের মাঝে দু’একজন দেখা যাবে। এ দু’একজনের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো ব্যবস্থা রাখা কঠিন কিছু নয়। এর বিপরীতে যে অনাবিল শান্তি বিরাজ করছে, যে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা মানুষ পাচ্ছে, তার তুলনা আজ সারা বিশ্বে নেই। অন্য কোনো প্রকার আইন বাস্তবায়ন করে এরূপ শান্তি ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা আজ পর্যন্ত কেউ করতে পারে নি এবং পারবেও না।
আমি শুধুমাত্র চুরির ব্যাপারে ইসলামী দণ্ডবিধি আইনের যৌক্তিকতা পেশ করছি; বরং অন্যান্য সকল আইনের ব্যাপারেও একই কথা প্রযোজ্য। এখানে কোনো প্রকার যুলুমের সম্ভাবনাই নেই, আর কীভাবেই বা যুলুমের সম্ভাবনা থাকতে পারে এ আইনে; যে আইনটি এমন এক সত্তা নির্ধারণ করে দিয়েছেন যিনি বান্দাহ্র প্রতিটি শিরা-উপশিরা, চিন্তা-চেতনা সম্পর্কে সম্যক ওয়াকিফহাল। কোথায় কীভাবে কোনো আইন দিলে বান্দার জন্য তা হিতকর হবে, তা তিনিই সবচেয়ে ভালো জানেন। কারণ তিনিই তো তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন সুতরাং তাদের ব্যাপারে তাঁর চেয়ে বেশি আর কে জানতে পারে?
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/368/8
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।