hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ঈসা মসীহ ইসলামের এক নবী চার্চের বিকৃতির এক ঐতিহাসিক আলেখ্য

লেখকঃ মুহাম্মাদ আতাউর- রহীম

১৪
নবম অধ্যায়: কুরআনে ঈসা আলাইহিস সালাম
মহান আল্লাহ রাববুল আলামীন কর্তৃক বিশেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর নাজিলকৃত সর্বশেষ আসমানি কিতাব আল-কুরআন ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে জ্ঞানের একটি উৎস যা সাধারণভাবে অধিকাংশ খৃষ্টানেরই জানা নেই। কুরআন আমাদেরকে তার সম্পর্কে শুধু ভালোভাবে জানতেই সাহায্য করে না, উপরন্তু এই জানার মধ্য দিয়ে তার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসাকেও বৃদ্ধি করে। ঈসা আলাইহিস সালামের জন্মের প্রায় ৬শ’ বছর পর নাজিলকৃত সর্বশেষ আসমানি কিতাব কুরআন পাক তার জীবন ও শিক্ষা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বর্ণনা প্রদান করেছে। একত্ববাদীদের ধারণায় নবী জীবনের বিশাল প্রেক্ষাপট রয়েছে, কুরআন সেই প্রেক্ষাপটে ঈসা আলাইহিস সালামের ভূমিকাকে স্থাপন করেছে। প্রকৃতপক্ষে কুরআন তার সম্পর্কে যতটা জ্ঞাত করেছে, অন্য আর কোনো সূত্র তা পারে নি।

পবিত্র কুরআন ঈসা আলাইহিস সালামের জীবন-কাহিনীর বিশদ বর্ণনা প্রদান করে নি, বরং সুনির্দিষ্ট কিছু ঘটনা ব্যক্ত করেছে। তাকে যে অলৌকিক ক্ষমতা ও শক্তি দেওয়া হয়েছিল তার উল্লেখ রয়েছে, কিন্তু তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাধারণ ভাষায়। অনুরূপভাবে আল্লাহ তার কাছে “ইনজিল” নামে যে আসমানি কিতাব নাযিল করেছিলেন বেশ কয়েকবার তার উল্লেখ রয়েছে, কিন্তু উক্ত কিতাবের সঠিক বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিশেষ কিছু বলা হয় নি। যা হোক, তিনি কীভাবে পৃথিবীতে আগমন করেন, তিনি কে ছিলেন, তিনি কী ছিলেন না এবং কীভাবে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের পরিসমাপ্তি ঘটে এসব বিষয়ে কুরআনে সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে।

ঈসা আলাইহিস সালামের জীবনের প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার আগে পৃথিবীতে তার কাজ কী ছিল, তিনি কীভাবে পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছিলেন এবং তার পরে কী আসার কথা ছিল এসব বিষয় পরীক্ষা করে নিলে তার জীবন সম্পর্কে জানা সহজ হবে। একথা বারবার বলা হয়েছে যে, ঈসা আলাইহিস সালাম ছিলেন পর্যায়ক্রমে আগত নবীগণের একজন যাকে পৃথিবীর মানুষের কাছে প্রেরণ করা হয়েছিল। তিনি ছিলেন একজন নবী যিনি তার পূর্বে আগত নবীদের নির্দেশনা ও শিক্ষাই পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন এবং তিনি ছিলেন তার পরবর্তী নবীরই পূর্বসূরী।

কুরআনের একেবারে গোড়ার দিকেই ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে:

﴿وَلَقَدۡ ءَاتَيۡنَا مُوسَى ٱلۡكِتَٰبَ وَقَفَّيۡنَا مِنۢ بَعۡدِهِۦ بِٱلرُّسُلِۖ وَءَاتَيۡنَا عِيسَى ٱبۡنَ مَرۡيَمَ ٱلۡبَيِّنَٰتِ وَأَيَّدۡنَٰهُ بِرُوحِ ٱلۡقُدُسِ﴾ [ البقرة : ٨٧ ]

“এবং নিশ্চয় মূসাকে কিতাব দিয়েছি এবং তার পরে পর্যায়ক্রমে রাসূলগণকে প্রেরণ করেছি, মারইয়াম-পুত্র ঈসাকে স্পষ্ট প্রমাণ দিয়েছি এবং ‘পবিত্র আত্মা’ দ্বারা তাকে শক্তিশালী করেছি।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ৮৭]

কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতগুলো বহু নবীর কথা স্মরণ করিয়ে দেয় ঈসা আলাইহিস সালাম যাঁদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। ইবরাহিম আলাইহিস সালাম সম্পর্কে উল্লেখপূর্বক বলা হয়েছে:

﴿وَوَهَبۡنَا لَهُۥٓ إِسۡحَٰقَ وَيَعۡقُوبَۚ كُلًّا هَدَيۡنَاۚ وَنُوحًا هَدَيۡنَا مِن قَبۡلُۖ وَمِن ذُرِّيَّتِهِۦ دَاوُۥدَ وَسُلَيۡمَٰنَ وَأَيُّوبَ وَيُوسُفَ وَمُوسَىٰ وَهَٰرُونَۚ وَكَذَٰلِكَ نَجۡزِي ٱلۡمُحۡسِنِينَ ٨٤ وَزَكَرِيَّا وَيَحۡيَىٰ وَعِيسَىٰ وَإِلۡيَاسَۖ كُلّٞ مِّنَ ٱلصَّٰلِحِينَ ٨٥ وَإِسۡمَٰعِيلَ وَٱلۡيَسَعَ وَيُونُسَ وَلُوطٗاۚ وَكُلّٗا فَضَّلۡنَا عَلَى ٱلۡعَٰلَمِينَ ٨٦﴾ [ الانعام : ٨٤، ٨٦ ]

“এবং তাকে দান করেছিলাম ইসহাক ও ইয়াকুব এবং তাদের প্রত্যেককে সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম; পূর্বে নূহকেও সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম এবং তার বংশধর দাউদ, সুলায়মান, আইয়ুব, ইউসুফ, মূসা ও হারুনকেও; আর এভাবেই সৎকর্ম পরায়ণদের পুরস্কৃত করি। এবং যাকারিয়া, ইয়াহইয়া, ঈসা এবং ইলিয়াসকেও সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম, এরা সকলেই সজ্জনদের অন্তর্ভুক্ত।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৮৪-৮৬]

রাসূলগণের এ তালিকা কিন্তু এই-ই সম্পূর্ণ নয়। এ ব্যাপারে বলা হয়েছে:

﴿وَرُسُلٗا قَدۡ قَصَصۡنَٰهُمۡ عَلَيۡكَ مِن قَبۡلُ وَرُسُلٗا لَّمۡ نَقۡصُصۡهُمۡ عَلَيۡكَۚ﴾ [ النساء : ١٦٤ ]

“অনেক রাসূল প্রেরণ করেছি যাদের কথা পূর্বে আমি তোমাকে বলেছি এবং অনেক রাসূল যাদের কথা তোমাকে বলি নি।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৬৪]

হাদীস শরীফে আছে, নবীগণের সংখ্যা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ১লাখ ২৪ হাজার। ঈসা আলাইহিস সালাম যে তাদের মধ্যে একজন এ নিয়ে কোনো বিরোধ বা বিতর্কের অবকাশ নেই। আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মজীদে বলেন,

﴿قُلۡ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ وَمَآ أُنزِلَ عَلَيۡنَا وَمَآ أُنزِلَ عَلَىٰٓ إِبۡرَٰهِيمَ وَإِسۡمَٰعِيلَ وَإِسۡحَٰقَ وَيَعۡقُوبَ وَٱلۡأَسۡبَاطِ وَمَآ أُوتِيَ مُوسَىٰ وَعِيسَىٰ وَٱلنَّبِيُّونَ مِن رَّبِّهِمۡ لَا نُفَرِّقُ بَيۡنَ أَحَدٖ مِّنۡهُمۡ وَنَحۡنُ لَهُۥ مُسۡلِمُونَ ٨٤﴾ [ ال عمران : ٨٤ ]

“বল, ‘আমরা আল্লাহতে এবং আমাদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে এবং ইবরাহীম, ইসমাইল, ইসহাক, ইয়াকূব ও তার বংশধরগণের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছিল এবং যা মূসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীগণকে তাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে প্রদান করা হয়েছে, তাতে ঈমান এনেছি। আমরা তাদের মধ্যে কোনো তারতম্য করি না এবং আমরা তার নিকট আত্মসমর্পণকারী।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৮৪]

সকল নবীই এ ব্যাপারে অবহিত ছিলেন যে, আল্লাহ তাদেরকে একই উদ্দেশ্যে ও একই বাণী দিয়ে প্রেরণ করেছেন:

﴿وَإِذۡ أَخَذۡنَا مِنَ ٱلنَّبِيِّ‍ۧنَ مِيثَٰقَهُمۡ وَمِنكَ وَمِن نُّوحٖ وَإِبۡرَٰهِيمَ وَمُوسَىٰ وَعِيسَى ٱبۡنِ مَرۡيَمَۖ وَأَخَذۡنَا مِنۡهُم مِّيثَٰقًا غَلِيظٗا ٧ لِّيَسۡ‍َٔلَ ٱلصَّٰدِقِينَ عَن صِدۡقِهِمۡۚ وَأَعَدَّ لِلۡكَٰفِرِينَ عَذَابًا أَلِيمٗا ٨﴾ [ الاحزاب : ٧، ٨ ]

“স্মরণ কর, যখন আমরা নবীদের নিকট থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম এবং তোমার নিকট থেকেও এবং নূহ, ইবরাহীম, মূসা, মারইয়াম-পুত্র ঈসার নিকট থেকেও। তাদের কাছ থেকে গ্রহণ করেছিলাম দৃঢ় অঙ্গীকার; সত্যবাদীদেরকে তাদের সত্যবাদিতা সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করার জন্য। তিনি কাফিরদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন মর্মন্তুদ শাস্তি।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৭-৮]

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلرُّسُلُ كُلُواْ مِنَ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَٱعۡمَلُواْ صَٰلِحًاۖ إِنِّي بِمَا تَعۡمَلُونَ عَلِيمٞ ٥١ وَإِنَّ هَٰذِهِۦٓ أُمَّتُكُمۡ أُمَّةٗ وَٰحِدَةٗ وَأَنَا۠ رَبُّكُمۡ فَٱتَّقُونِ ٥٢﴾ [ المؤمنون : ٥١، ٥٢ ]

“হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু থেকে আহার কর ও সৎকর্ম কর; তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবহিত এবং তোমাদের এই যে জাতি- এতো একই জাতি এবং আমিই তোমাদের প্রতিপালক, অতএব আমাকে ভয় কর।” [সূরা আল-মুমিনূন, আয়াত: ৫১-৫২]

﴿شَرَعَ لَكُم مِّنَ ٱلدِّينِ مَا وَصَّىٰ بِهِۦ نُوحٗا وَٱلَّذِيٓ أَوۡحَيۡنَآ إِلَيۡكَ وَمَا وَصَّيۡنَا بِهِۦٓ إِبۡرَٰهِيمَ وَمُوسَىٰ وَعِيسَىٰٓۖ أَنۡ أَقِيمُواْ ٱلدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُواْ فِيهِۚ﴾ [ الشورا : ١٣ ]

“তিনি তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন দীন যার নির্দেশ তিনি দিয়েছিলেন নূহকে, (আর যা আমরা অহী করেছি) তোমাকে এবং যার নির্দেশ দিয়েছিলাম ইবরাহীম, মূসা ও ঈসাকে এই বলে যে, তোমরা দীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং এতে মতভেদ কর না।” [সূরা আশ-শুরা, আয়াত: ১৩]

এসব আয়াতে এ গোলযোগপূর্ণ পৃথিবীতে বিচ্ছিন্ন ঘটনার জন্য স্মরণীয় একজন মানুষ হিসেবে ঈসা আলাইহিস সালামের আগমনের কথা বলা হয় নি, বরং বলা হয়েছে এমন একজন নবীর কথা যাকে প্রেরণ করা হয়েছিল তার সময় ও কালের জন্য, আর তা মহা সত্যের উন্মোচনের অংশ হিসেবেই:

﴿وَقَفَّيۡنَا عَلَىٰٓ ءَاثَٰرِهِم بِعِيسَى ٱبۡنِ مَرۡيَمَ مُصَدِّقٗا لِّمَا بَيۡنَ يَدَيۡهِ مِنَ ٱلتَّوۡرَىٰةِۖ وَءَاتَيۡنَٰهُ ٱلۡإِنجِيلَ فِيهِ هُدٗى وَنُورٞ﴾ [ المائ‍دة : ٤٦ ]

“মারইয়াম পুত্র ঈসাকে তার পূর্বে অবতীর্ণ তাওরাতের সমর্থকরূপে তাদের পশ্চাতে প্রেরণ করেছিলাম এবং মুত্তাকীদের জন্য পথের নির্দেশ ও উপদেশরূপে তাকে ইঞ্জিল দিয়েছিলাম, তাতে ছিল পথের নির্দেশ ও আলো।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৪৬]

উপরন্তু সময় সম্পর্কেও কুরআনে বলা হয়েছে, যে বিষয়ে ঈসা আলাইহিস সালাম নিজেও অত্যন্ত সচেতন ছিলেন। তার আগে ও তার পরেও সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল:

﴿وَإِذۡ قَالَ عِيسَى ٱبۡنُ مَرۡيَمَ يَٰبَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ إِنِّي رَسُولُ ٱللَّهِ إِلَيۡكُم مُّصَدِّقٗا لِّمَا بَيۡنَ يَدَيَّ مِنَ ٱلتَّوۡرَىٰةِ وَمُبَشِّرَۢا بِرَسُولٖ يَأۡتِي مِنۢ بَعۡدِي ٱسۡمُهُۥٓ أَحۡمَدُۖ﴾ [ الصف : ٦ ]

“স্মরণ কর, মারইয়াম পুত্র ঈসা বলেছিল: হে বনী ইসরাঈল! আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর রাসূল এবং আমার পূর্ব থেকে তোমাদের কাছে যে তাওরাত রয়েছে আমি তার সমর্থক এবং আমার পরে আহমদ নামে যে রাসূল আসবেন আমি তার সুসংবাদদাতা।” [সূরা আস-সাফ, আয়াত: ৬]

ঈসা আলাইহিস সালামের আগমন ও জন্ম সম্পর্কে কুরআনে বিশদ বর্ণনা রয়েছে। এখানে তার মায়ের জন্ম ও বেড়ে ওঠা বিষয় কুরআনে মাজীদে যা উল্লেখ হয়েছে তা উদ্ধৃত করা যেতে পারে, কারণ যীশুর ভবিষ্যৎ মাতা হিসেবে আল্লাহর ইচ্ছায় তার জন্ম ও কীভাবে তিনি নির্বাচিত হন তা জানতে সহায়ক হবে:

﴿إِذۡ قَالَتِ ٱمۡرَأَتُ عِمۡرَٰنَ رَبِّ إِنِّي نَذَرۡتُ لَكَ مَا فِي بَطۡنِي مُحَرَّرٗا فَتَقَبَّلۡ مِنِّيٓۖ إِنَّكَ أَنتَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡعَلِيمُ ٣٥ فَلَمَّا وَضَعَتۡهَا قَالَتۡ رَبِّ إِنِّي وَضَعۡتُهَآ أُنثَىٰ وَٱللَّهُ أَعۡلَمُ بِمَا وَضَعَتۡ وَلَيۡسَ ٱلذَّكَرُ كَٱلۡأُنثَىٰۖ وَإِنِّي سَمَّيۡتُهَا مَرۡيَمَ وَإِنِّيٓ أُعِيذُهَا بِكَ وَذُرِّيَّتَهَا مِنَ ٱلشَّيۡطَٰنِ ٱلرَّجِيمِ ٣٦ فَتَقَبَّلَهَا رَبُّهَا بِقَبُولٍ حَسَنٖ وَأَنۢبَتَهَا نَبَاتًا حَسَنٗا وَكَفَّلَهَا زَكَرِيَّاۖ كُلَّمَا دَخَلَ عَلَيۡهَا زَكَرِيَّا ٱلۡمِحۡرَابَ وَجَدَ عِندَهَا رِزۡقٗاۖ قَالَ يَٰمَرۡيَمُ أَنَّىٰ لَكِ هَٰذَاۖ قَالَتۡ هُوَ مِنۡ عِندِ ٱللَّهِۖ إِنَّ ٱللَّهَ يَرۡزُقُ مَن يَشَآءُ بِغَيۡرِ حِسَابٍ ٣٧ هُنَالِكَ دَعَا زَكَرِيَّا رَبَّهُۥۖ قَالَ رَبِّ هَبۡ لِي مِن لَّدُنكَ ذُرِّيَّةٗ طَيِّبَةًۖ إِنَّكَ سَمِيعُ ٱلدُّعَآءِ ٣٨ فَنَادَتۡهُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ وَهُوَ قَآئِمٞ يُصَلِّي فِي ٱلۡمِحۡرَابِ أَنَّ ٱللَّهَ يُبَشِّرُكَ بِيَحۡيَىٰ مُصَدِّقَۢا بِكَلِمَةٖ مِّنَ ٱللَّهِ وَسَيِّدٗا وَحَصُورٗا وَنَبِيّٗا مِّنَ ٱلصَّٰلِحِينَ ٣٩ قَالَ رَبِّ أَنَّىٰ يَكُونُ لِي غُلَٰمٞ وَقَدۡ بَلَغَنِيَ ٱلۡكِبَرُ وَٱمۡرَأَتِي عَاقِرٞۖ قَالَ كَذَٰلِكَ ٱللَّهُ يَفۡعَلُ مَا يَشَآءُ ٤٠ قَالَ رَبِّ ٱجۡعَل لِّيٓ ءَايَةٗۖ قَالَ ءَايَتُكَ أَلَّا تُكَلِّمَ ٱلنَّاسَ ثَلَٰثَةَ أَيَّامٍ إِلَّا رَمۡزٗاۗ وَٱذۡكُر رَّبَّكَ كَثِيرٗا وَسَبِّحۡ بِٱلۡعَشِيِّ وَٱلۡإِبۡكَٰرِ ٤١ ﴾ [ ال عمران : ٣٥، ٤١ ]

“স্মরণ কর, যখন ইমরানের স্ত্রী বলেছিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার গর্ভে যা আছে তা একান্ত তোমার জন্য আমি উৎসর্গ করলাম। সুতরাং তুমি আমার কাছ থেকে তা কবুল কর, তুমি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ তারপর যখন সে তাকে প্রসব করল, তখন সে বলল, ‘হে আল্লাহ আমার প্রতিপালক! আমি কন্যা প্রসব করেছি।’ সে যা প্রসব করেছে আল্লাহ তা সম্যক অবগত। ‘ছেলে তো মেয়ের মতো নয়, আমি তার নাম মারইয়াম রেখেছি।’ ‘এবং অভিশপ্ত শয়তান থেকে তার ও তার বংশধরদের জন্য তোমার স্মরণ গ্রহণ করছি।’ তারপর তার রব তাকে সাগ্রহে কবুল করলেন এবং তাকে উত্তমরূপে লালন পালন করলেন এবং তিনি তাকে যাকারিয়ার তত্ত্বাবধানে রেখেছিলেন। যখনই যাকারিয়া কক্ষে তার সাথে সাক্ষাৎ করতে যেত তখনি তার কাছে খাদ্য-সামগ্রী দেখতে পেত। সে বলত ‘হে মারইয়াম! এসব তুমি কোথায় পেলে? সে বলত- ‘আল্লাহর কাছ থেকে।’ আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অপরিমিত জীবনোপকরণ দান করেন। সেখানেই যাকারিয়া তার রবের কাছে প্রার্থনা করে বলল- ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে তুমি তোমার কাছ থেকে সৎ বংশধর দান কর। নিশ্চয় তুমি প্রার্থনা শ্রবণকারী।’ যখন যাকারিয়া কক্ষে সালাতে দাঁড়িয়েছিলেন তখন ফিরিশতাগণ তাকে সম্বোধন করে বলল, ‘আল্লাহ তোমাকে ইয়াহয়ার সুসংবাদ দিচ্ছেন, সে হবে আল্লাহর বাণীর সমর্থক, নেতা, স্ত্রী বিরাগী এবং পুণ্যবানদের মধ্যে একজন নবী।’ সে বলল, ‘হে আমার রব! আমার পুত্র হবে কীভাবে? আমার তো বার্ধক্য এসেছে এবং আমার স্ত্রী বন্ধ্যা।’ তিনি বললেন- ‘ এভাবেই।’ আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন। সে বলল- ‘হে আমার রব! আমাকে একটি নিদর্শন দাও।’ তিনি বললেন, ‘ তোমার নিদর্শন এই যে, তিন দিন তুমি ইঙ্গিত ব্যতীত কথা বলতে পারবে না। আর তোমার রবকে অধিক স্মরণ করবে এবং সন্ধ্যায় ও প্রভাতে তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করবে।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩৫-৪১]

ঈসা আলাইহিস সালামের ঠিক আগের নবী ছিলেন ইয়াহয়া আলাইহিস সালাম। ‘সূরা মারইয়াম’- এ নবী ইয়াহইয়ার অলৌকিক জন্মগ্রহণের উল্লেখ করা হয়েছে:

﴿ذِكۡرُ رَحۡمَتِ رَبِّكَ عَبۡدَهُۥ زَكَرِيَّآ ٢ إِذۡ نَادَىٰ رَبَّهُۥ نِدَآءً خَفِيّٗا ٣ قَالَ رَبِّ إِنِّي وَهَنَ ٱلۡعَظۡمُ مِنِّي وَٱشۡتَعَلَ ٱلرَّأۡسُ شَيۡبٗا وَلَمۡ أَكُنۢ بِدُعَآئِكَ رَبِّ شَقِيّٗا ٤ وَإِنِّي خِفۡتُ ٱلۡمَوَٰلِيَ مِن وَرَآءِي وَكَانَتِ ٱمۡرَأَتِي عَاقِرٗا فَهَبۡ لِي مِن لَّدُنكَ وَلِيّٗا ٥ يَرِثُنِي وَيَرِثُ مِنۡ ءَالِ يَعۡقُوبَۖ وَٱجۡعَلۡهُ رَبِّ رَضِيّٗا ٦ يَٰزَكَرِيَّآ إِنَّا نُبَشِّرُكَ بِغُلَٰمٍ ٱسۡمُهُۥ يَحۡيَىٰ لَمۡ نَجۡعَل لَّهُۥ مِن قَبۡلُ سَمِيّٗا ٧ قَالَ رَبِّ أَنَّىٰ يَكُونُ لِي غُلَٰمٞ وَكَانَتِ ٱمۡرَأَتِي عَاقِرٗا وَقَدۡ بَلَغۡتُ مِنَ ٱلۡكِبَرِ عِتِيّٗا ٨ قَالَ كَذَٰلِكَ قَالَ رَبُّكَ هُوَ عَلَيَّ هَيِّنٞ وَقَدۡ خَلَقۡتُكَ مِن قَبۡلُ وَلَمۡ تَكُ شَيۡ‍ٔٗا ٩ قَالَ رَبِّ ٱجۡعَل لِّيٓ ءَايَةٗۖ قَالَ ءَايَتُكَ أَلَّا تُكَلِّمَ ٱلنَّاسَ ثَلَٰثَ لَيَالٖ سَوِيّٗا ١٠ فَخَرَجَ عَلَىٰ قَوۡمِهِۦ مِنَ ٱلۡمِحۡرَابِ فَأَوۡحَىٰٓ إِلَيۡهِمۡ أَن سَبِّحُواْ بُكۡرَةٗ وَعَشِيّٗا ١١ يَٰيَحۡيَىٰ خُذِ ٱلۡكِتَٰبَ بِقُوَّةٖۖ وَءَاتَيۡنَٰهُ ٱلۡحُكۡمَ صَبِيّٗا ١٢ وَحَنَانٗا مِّن لَّدُنَّا وَزَكَوٰةٗۖ وَكَانَ تَقِيّٗا ١٣ وَبَرَّۢا بِوَٰلِدَيۡهِ وَلَمۡ يَكُن جَبَّارًا عَصِيّٗا ١٤ وَسَلَٰمٌ عَلَيۡهِ يَوۡمَ وُلِدَ وَيَوۡمَ يَمُوتُ وَيَوۡمَ يُبۡعَثُ حَيّٗا ١٥﴾ [ مريم : ٢، ١٥ ]

“এটি তোমার রবের অনুগ্রহের বিবরণ তার বান্দা যাকারিয়ার প্রতি যখন সে তার রবকে আহ্বান করেছিল নিভৃতে যে, বলেছিল, ‘আমার অস্থি দুর্বল হয়েছে, বার্ধক্যে আমার মস্তক শোভিত ধূসর চুলে, হে আমার রব! আমি কখনো তোমার প্রার্থনা করে বিফল হইনি।’ আমি আশঙ্কা করি আমার পর আমার সগোত্রীয়দের সম্পর্কে; আমার স্ত্রী বন্ধ্যা, সুতরাং তুমি তোমার নিকট থেকে দান কর উত্তরাধিকারী, যে আমার উত্তরাধিকারিত্ব করবে এবং উত্তরাধিকারিত্ব করবে ইয়াকুবের বংশের এবং হে আমার প্রতিপালক! তাকে তুমি কর সন্তোষভাজন।’ তিনি বললেন হে যাকারিয়া! আমি তোমাকে এক পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছি তার নাম হবে ইয়াহয়া, এ নামে আমি আগে কারো নামকরণ করি নি।’ সে বলল, ‘হে আমার রব! কেমন করে আমার পুত্র হবে যখন আমার স্ত্রী বন্ধ্যা ও আমি বার্ধক্যের শেষ সীমায় উপনীত?’ তিনি বললেন: ‘এরূপই হবে।’ তোমার প্রতিপালক বললেন, ‘এটা আমার জন্য সহজ, আমি তো এর আগে তোমাকেও সৃষ্টি করেছি যখন তুমি কিছুই ছিলেন না।’ যাকারিয়া বলল, ‘হে আমার রব! আমাকে একটি নির্দেশন দাও।’ তিনি বললেন, ‘তোমার নিদর্শন এই যে, তুমি সুস্থ থাকা সত্ত্বেও তিন দিন কারো সাথে কোনো বাক্যালাপ করবে না।’ এরপর সে তার ঘর থেকে বের হয়ে তার সম্প্রদায়ের লোকদের কাছে এল এবং ইঙ্গিতে তাদেরকে সকাল- সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতে বলল। আমি বলিলাম, ‘হে ইয়াহইয়া! এই কিতাব দৃঢ়তার সাথে গ্রহণ কর। আমি শৈশবেই তাকে দান করেছিলাম জ্ঞান এবং আমার নিকট থেকে হৃদয়ের কোমলতা ও পবিত্রতা এবং সে ছিল মুত্তাকী, পিতা- মাতার অনুগত। সে ছিল না উদ্ধত ও অবাধ্য। তার প্রতি ছিল শান্তি যে দিন সে জন্মগ্রহণ করে, শান্তি থাকবে যে দিন তার মৃত্যু হবে এবং যেদিন সে জীবিত অবস্থায় পুনরুত্থিত হবে।” [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ২-১৫]

পবিত্র কুরআনে দু’টি স্থানে ঈসা আলাইহিস সালামের জন্ম গ্রহণের প্রসঙ্গে আছে:

﴿وَإِذۡ قَالَتِ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ يَٰمَرۡيَمُ إِنَّ ٱللَّهَ ٱصۡطَفَىٰكِ وَطَهَّرَكِ وَٱصۡطَفَىٰكِ عَلَىٰ نِسَآءِ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٤٢ يَٰمَرۡيَمُ ٱقۡنُتِي لِرَبِّكِ وَٱسۡجُدِي وَٱرۡكَعِي مَعَ ٱلرَّٰكِعِينَ ٤٣ ذَٰلِكَ مِنۡ أَنۢبَآءِ ٱلۡغَيۡبِ نُوحِيهِ إِلَيۡكَۚ وَمَا كُنتَ لَدَيۡهِمۡ إِذۡ يُلۡقُونَ أَقۡلَٰمَهُمۡ أَيُّهُمۡ يَكۡفُلُ مَرۡيَمَ وَمَا كُنتَ لَدَيۡهِمۡ إِذۡ يَخۡتَصِمُونَ ٤٤ إِذۡ قَالَتِ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ يَٰمَرۡيَمُ إِنَّ ٱللَّهَ يُبَشِّرُكِ بِكَلِمَةٖ مِّنۡهُ ٱسۡمُهُ ٱلۡمَسِيحُ عِيسَى ٱبۡنُ مَرۡيَمَ وَجِيهٗا فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِ وَمِنَ ٱلۡمُقَرَّبِينَ ٤٥ وَيُكَلِّمُ ٱلنَّاسَ فِي ٱلۡمَهۡدِ وَكَهۡلٗا وَمِنَ ٱلصَّٰلِحِينَ ٤٦ قَالَتۡ رَبِّ أَنَّىٰ يَكُونُ لِي وَلَدٞ وَلَمۡ يَمۡسَسۡنِي بَشَرٞۖ قَالَ كَذَٰلِكِ ٱللَّهُ يَخۡلُقُ مَا يَشَآءُۚ إِذَا قَضَىٰٓ أَمۡرٗا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُۥ كُن فَيَكُونُ ٤٧ وَيُعَلِّمُهُ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ وَٱلتَّوۡرَىٰةَ وَٱلۡإِنجِيلَ ٤٨ وَرَسُولًا إِلَىٰ بَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ أَنِّي قَدۡ جِئۡتُكُم بِ‍َٔايَةٖ مِّن رَّبِّكُمۡ أَنِّيٓ أَخۡلُقُ لَكُم مِّنَ ٱلطِّينِ كَهَيۡ‍َٔةِ ٱلطَّيۡرِ فَأَنفُخُ فِيهِ فَيَكُونُ طَيۡرَۢا بِإِذۡنِ ٱللَّهِۖ وَأُبۡرِئُ ٱلۡأَكۡمَهَ وَٱلۡأَبۡرَصَ وَأُحۡيِ ٱلۡمَوۡتَىٰ بِإِذۡنِ ٱللَّهِۖ وَأُنَبِّئُكُم بِمَا تَأۡكُلُونَ وَمَا تَدَّخِرُونَ فِي بُيُوتِكُمۡۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَةٗ لَّكُمۡ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ ٤٩ وَمُصَدِّقٗا لِّمَا بَيۡنَ يَدَيَّ مِنَ ٱلتَّوۡرَىٰةِ وَلِأُحِلَّ لَكُم بَعۡضَ ٱلَّذِي حُرِّمَ عَلَيۡكُمۡۚ وَجِئۡتُكُم بِ‍َٔايَةٖ مِّن رَّبِّكُمۡ فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُونِ ٥٠ إِنَّ ٱللَّهَ رَبِّي وَرَبُّكُمۡ فَٱعۡبُدُوهُۚ هَٰذَا صِرَٰطٞ مُّسۡتَقِيمٞ ٥١ ۞فَلَمَّآ أَحَسَّ عِيسَىٰ مِنۡهُمُ ٱلۡكُفۡرَ قَالَ مَنۡ أَنصَارِيٓ إِلَى ٱللَّهِۖ قَالَ ٱلۡحَوَارِيُّونَ نَحۡنُ أَنصَارُ ٱللَّهِ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ وَٱشۡهَدۡ بِأَنَّا مُسۡلِمُونَ ٥٢ رَبَّنَآ ءَامَنَّا بِمَآ أَنزَلۡتَ وَٱتَّبَعۡنَا ٱلرَّسُولَ فَٱكۡتُبۡنَا مَعَ ٱلشَّٰهِدِينَ ٥٣﴾ [ ال عمران : ٤٢، ٥٣ ]

স্মরণ কর, যখন ফিরিশতাগণ বলেছিল, ‘হে মারইয়াম! আল্লাহ তোমাকে মনোনীত ও পবিত্র করেছেন এবং বিশ্বের নারীদের মধ্যে তোমাকে মনোনীত করেছেন।’ ‘হে মারইয়াম! তোমার রবের অনুগত হও ও সাজদাহ কর এবং যারা রুকু করে তাদের সাথে রুকু কর।’ ‘এটি অদৃশ্য বিষয়ের সংবাদ যা তোমাকে ওহি দ্বারা অবহিত করছি। মারইয়ামের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব কে গ্রহণ করবে এ নিয়ে যখন তারা তাদের কলম নিক্ষেপ করছিল তুমি তখন তাদের নিকট ছিলে না এবং তারা যখন বাদানুবাদ করছিল তখনও তুমি তাদের নিকট ছিলে না। স্মরণ কর, যখন ফেরশতাগণ বলল, হে মারইয়াম! আল্লাহ তোমাকে তার পক্ষ হতে একটি কালেমার সুসংবাদ দিচ্ছেন, তার নাম মসীহ, মারইয়াম পুত্র ঈসা। সে ইহলোক ও পরলোকে সম্মানিত হবে এবং আল্লাহর সান্নিধ্যপ্রাপ্তদের মধ্যে অন্যতম হবে।’ ‘সে দোলনায় থাকা অবস্থায় ও পরিণত বয়সে মানুষের সাথে কথা বলবে এবং সে হবে পুণ্যবানদের একজন।’ সে বলল, ‘ হে আমার রব! আমাকে কোনো পুরুষ স্পর্শ করে নি, আমার সন্তান হবে কীভাবে?’ তিনি বললেন, ‘এভাবেই।’ আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। তিনি যখন কিছু স্থির করেন তখন বলেন, ‘হও!’ এবং তা হয়ে যায়। এবং তিনি তাকে শিক্ষা দেবেন কিতাব, হিকমত, তাওরাত ও ইঞ্জীল এবং তাকে বনী ইসরাঈলের জন্য রাসূল করবেন। সে বলবে, আমি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে নির্দশন নিয়ে এসেছি। আমি তোমাদের জন্য কাদামাটি দিয়ে একটি পাখি সদৃশ আকৃতি তৈরি করব, তারপর আমি তাতে ফুঁ দেব এবং আল্লাহর হুকুমে তা পাখি হয়ে যাবে। আমি জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ রোগীদের নিরাময় করব এবং আল্লাহর হুকুমে মৃতদের জীবিত করব। তোমরা তোমাদের ঘরে যা আহার কর ও মজুদ কর তা তোমাদের বলে দেব। তোমরা যদি বিশ্বাসী হও, তাহলে এর মধ্যে তোমাদের জন্য নিদর্শন আছে। আমি এসেছি আমার সম্মুখে তাওরাতে যা রয়েছে তার সমর্থকরূপে এবং তোমাদের জন্য যা নিষিদ্ধ ছিল তার কতকগুোকে বৈধ করতে। আমি তোমাদের রবের কাছ থেকে তোমাদের জন্য নিদর্শন নিয়ে এসেছি। সুতরাং আল্লাহকে ভয় কর আর আমাকে অনুসরণ কর। নিশ্চয় আল্লাহ আমার রব এবং তোমাদেরও রব সুতরাং তোমরা তার ইবাদত করবে। এটাই সরল পথ। যখন ঈসা তাদের অবিশ্বাস উপলব্ধি করল তখন সে বলল, আল্লাহর পথে কারা আমার সাহায্যকারী? শিষ্যগণ বলল, আল্লাহর পথে আমরাই সাহায্যকারী। আমরা আল্লাহতে ঈমান এনেছি। তুমি সাক্ষী থাক যে, আমরা আত্মসমর্পণকারী। ‘হে আমাদের রব! তুমি যা অবতীর্ণ করেছ তাতে আমরা ঈমান এনেছি এবং আমরা এই রাসূলের অনুসরণ করেছি। সুতরাং আমাদের সত্যের পথে সাক্ষ্য বহনকারীদের তালিকাভুক্ত কর।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৪২-৫৩]

সূরা মারইয়ামেও এ ঘটনা বর্ণিত হয়েছে:

﴿وَٱذۡكُرۡ فِي ٱلۡكِتَٰبِ مَرۡيَمَ إِذِ ٱنتَبَذَتۡ مِنۡ أَهۡلِهَا مَكَانٗا شَرۡقِيّٗا ١٦ فَٱتَّخَذَتۡ مِن دُونِهِمۡ حِجَابٗا فَأَرۡسَلۡنَآ إِلَيۡهَا رُوحَنَا فَتَمَثَّلَ لَهَا بَشَرٗا سَوِيّٗا ١٧ قَالَتۡ إِنِّيٓ أَعُوذُ بِٱلرَّحۡمَٰنِ مِنكَ إِن كُنتَ تَقِيّٗا ١٨ قَالَ إِنَّمَآ أَنَا۠ رَسُولُ رَبِّكِ لِأَهَبَ لَكِ غُلَٰمٗا زَكِيّٗا ١٩ قَالَتۡ أَنَّىٰ يَكُونُ لِي غُلَٰمٞ وَلَمۡ يَمۡسَسۡنِي بَشَرٞ وَلَمۡ أَكُ بَغِيّٗا ٢٠ قَالَ كَذَٰلِكِ قَالَ رَبُّكِ هُوَ عَلَيَّ هَيِّنٞۖ وَلِنَجۡعَلَهُۥٓ ءَايَةٗ لِّلنَّاسِ وَرَحۡمَةٗ مِّنَّاۚ وَكَانَ أَمۡرٗا مَّقۡضِيّٗا ٢١ ۞فَحَمَلَتۡهُ فَٱنتَبَذَتۡ بِهِۦ مَكَانٗا قَصِيّٗا ٢٢ فَأَجَآءَهَا ٱلۡمَخَاضُ إِلَىٰ جِذۡعِ ٱلنَّخۡلَةِ قَالَتۡ يَٰلَيۡتَنِي مِتُّ قَبۡلَ هَٰذَا وَكُنتُ نَسۡيٗا مَّنسِيّٗا ٢٣ فَنَادَىٰهَا مِن تَحۡتِهَآ أَلَّا تَحۡزَنِي قَدۡ جَعَلَ رَبُّكِ تَحۡتَكِ سَرِيّٗا ٢٤ وَهُزِّيٓ إِلَيۡكِ بِجِذۡعِ ٱلنَّخۡلَةِ تُسَٰقِطۡ عَلَيۡكِ رُطَبٗا جَنِيّٗا ٢٥ فَكُلِي وَٱشۡرَبِي وَقَرِّي عَيۡنٗاۖ فَإِمَّا تَرَيِنَّ مِنَ ٱلۡبَشَرِ أَحَدٗا فَقُولِيٓ إِنِّي نَذَرۡتُ لِلرَّحۡمَٰنِ صَوۡمٗا فَلَنۡ أُكَلِّمَ ٱلۡيَوۡمَ إِنسِيّٗا ٢٦ فَأَتَتۡ بِهِۦ قَوۡمَهَا تَحۡمِلُهُۥۖ قَالُواْ يَٰمَرۡيَمُ لَقَدۡ جِئۡتِ شَيۡ‍ٔٗا فَرِيّٗا ٢٧ يَٰٓأُخۡتَ هَٰرُونَ مَا كَانَ أَبُوكِ ٱمۡرَأَ سَوۡءٖ وَمَا كَانَتۡ أُمُّكِ بَغِيّٗا ٢٨ فَأَشَارَتۡ إِلَيۡهِۖ قَالُواْ كَيۡفَ نُكَلِّمُ مَن كَانَ فِي ٱلۡمَهۡدِ صَبِيّٗا ٢٩ قَالَ إِنِّي عَبۡدُ ٱللَّهِ ءَاتَىٰنِيَ ٱلۡكِتَٰبَ وَجَعَلَنِي نَبِيّٗا ٣٠ وَجَعَلَنِي مُبَارَكًا أَيۡنَ مَا كُنتُ وَأَوۡصَٰنِي بِٱلصَّلَوٰةِ وَٱلزَّكَوٰةِ مَا دُمۡتُ حَيّٗا ٣١ وَبَرَّۢا بِوَٰلِدَتِي وَلَمۡ يَجۡعَلۡنِي جَبَّارٗا شَقِيّٗا ٣٢ وَٱلسَّلَٰمُ عَلَيَّ يَوۡمَ وُلِدتُّ وَيَوۡمَ أَمُوتُ وَيَوۡمَ أُبۡعَثُ حَيّٗا ٣٣ ذَٰلِكَ عِيسَى ٱبۡنُ مَرۡيَمَۖ قَوۡلَ ٱلۡحَقِّ ٱلَّذِي فِيهِ يَمۡتَرُونَ ٣٤ مَا كَانَ لِلَّهِ أَن يَتَّخِذَ مِن وَلَدٖۖ سُبۡحَٰنَهُۥٓۚ إِذَا قَضَىٰٓ أَمۡرٗا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُۥ كُن فَيَكُونُ ٣٥ وَإِنَّ ٱللَّهَ رَبِّي وَرَبُّكُمۡ فَٱعۡبُدُوهُۚ هَٰذَا صِرَٰطٞ مُّسۡتَقِيمٞ ٣٦﴾ [ مريم : ١٦، ٣٦ ]

“বর্ণনা কর, এই কিতাবে উল্লিখিত মারইয়ামের কথা, যখন সে তার পরিবার বর্গ থেকে পৃথক হয়ে নিভৃতে পূর্বদিকে একস্থানে আশ্রয় নিল, তারপর তাদের কাছ থেকে সে পর্দা করল। এরপর আমি তার কাছে আমার রূহকে (জিবরীল) পাঠালাম, সে তার কাছে পূর্ণ মানুষ আকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করল। মারইয়াম বলল: তুমি যদি আল্লাহকে ভয় কর তবে আমি তোমার কাছ থেকে দয়াময়ের আশ্রয় গ্রহণ করছি। সে বলল, আমি তো কেবল তোমার রব- প্রেরিত, আমি এসেছি তোমাকে এক পবিত্র পুত্র দান করার জন্য। মারইয়াম বলল, ‘কেমন করে আমার পুত্র হবে যখন আমাকে কোনো পুরুষ স্পর্শ করে নি এবং আমি ব্যভিচারিণীও নই।’ সে বলল, ‘এভাবেই হবে।’ তোমার প্রতিপালক বলেছেন, ‘ এটা আমার জন্য সহজসাধ্য এবং আমি তাকে এ জন্য সৃষ্টি করব যেন সে হয় মানুষের জন্য এক নিদর্শন ও আমার কাছ থেকে এক অনুগ্রহ। এতো এক স্থিরীকৃত ব্যাপার।’ তারপর সে তাকে গর্ভে ধরল, পরে তাকে গর্ভে নিয়ে এক দূরবর্তী স্থানে চলে গেল। প্রসব বেদনা তাকে এক খেজুর গাছের নিচে আশ্রয় নিতে বাধ্য করল। সে বলল, ‘হায়, এর আগে যদি আমি মারা যেতাম আর যদি লোকের স্মৃতি থেকে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যেতাম!’ তখন তার নীচের দিক থেকে ফিরিশতা তাকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘তুমি দুঃখ কর না, তোমার পদতলে তোমার প্রতিপালক এক নহর সৃষ্টি করেছেন, তুমি খেজুর গাছের কাণ্ড তোমার দিকে নাড়া দাও, এর ফলে তোমার ওপর পাকা খেজুর পতিত হবে। সুতরাং তুমি খাও, পান কর ও চক্ষু জুড়াও। তোমার সাথে যদি কোনো মানুষের সাক্ষাৎ হয়, তাকে বল যে, আমি দয়াময়ের উদ্দেশ্যে মৌনতা অবলম্বনের মানত করেছি। সুতরাং আজ আমি কিছুতেই কোনো মানুষের সাথে কথা- বার্তা বলব না। তারপর সে তার পুত্রকে নিয়ে তার সম্প্রদায়ের কাছে উপস্থিত হলো। তারা বলল, ‘ হে মারইয়াম! তুমি তো এক অদ্ভুত কাণ্ড করেছ! হে হারুণের বোন, তোমার পিতা অসৎ লোক ছিল না এবং তোমার মাও ছিল না ব্যভিচারিণী। তারপর মারইয়াম তার সন্তানের দিকে ইঙ্গিত করল। তারা বলল, ‘যে কোলের শিশু তার সাথে আমরা কেমন করে কথা বলব?’ সে বলল, ‘আমি তো আল্লাহর বান্দা। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন, আমাকে নবী করেছেন, যেখানেই আমি থাকি না কেন তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন, তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যতদিন জীবিত থাকি ততদিন সালাত ও যাকাত আদায় করতে। আর আমাকে আমার মায়ের প্রতি অনুগত করেছেন এবং তিনি আমাকে উদ্ধত ও হতভাগ্য করেন নি। আমার প্রতি শান্তি যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি, যেদিন আমার মৃত্যু হবে এবং যেদিন আমি জীবিত অবস্থায় পুনরুত্থিত হব।’ এই-ই ছিল মারইয়াম পুত্র ঈসা। আমি বললাম সত্য কথা, যে বিষয়ে তারা বিতর্ক করে। সন্তান গ্রহণ করা আল্লাহর কাজ নয়, তিনি পবিত্র মহিমাময়। তিনি যখন কিছু স্থির করেন তখন বলেন, ‘হও’ এবং তা হয়ে যায়। আল্লাহই আমার প্রতিপালক ও তোমাদের রব সুতরাং তোমরা তার ইবাদত কর; এটাই সরল পথ।” [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ১৬-৩৬]

ঈসা আলাইহিস সালাম যে স্থানে জন্মগ্রহণ করেন, কুরআনের একটি আয়াতে তার উল্লেখ করা হয়েছে:

﴿وَجَعَلۡنَا ٱبۡنَ مَرۡيَمَ وَأُمَّهُۥٓ ءَايَةٗ وَءَاوَيۡنَٰهُمَآ إِلَىٰ رَبۡوَةٖ ذَاتِ قَرَارٖ وَمَعِينٖ ٥٠﴾ [ المؤمنون : ٥٠ ]

“এবং আমরা মারইয়াম পুত্র ও তার জননীকে করেছিলাম এক নিদর্শন, তাদের আশ্রয় দিয়েছিলাম এক নিরাপদ ও প্রস্রবণ বিশিষ্ট উঁচু ভূমিতে।” [সূরা আর-মুমিনূন, আয়াত: ৫০]

ঈসার আলাইহিস সালাম শৈশব ও কৈশোর সম্পর্কে কুরআনে কিছু উল্লেখ করা হয় নি। তবে যারা তার শিষ্য হয়েছিলেন তারা তার আহবানে কীভাবে সাড়া দিয়েছিলেন, সে বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে:

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُونُوٓاْ أَنصَارَ ٱللَّهِ كَمَا قَالَ عِيسَى ٱبۡنُ مَرۡيَمَ لِلۡحَوَارِيِّ‍ۧنَ مَنۡ أَنصَارِيٓ إِلَى ٱللَّهِۖ قَالَ ٱلۡحَوَارِيُّونَ نَحۡنُ أَنصَارُ ٱللَّهِۖ فَ‍َٔامَنَت طَّآئِفَةٞ مِّنۢ بَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ وَكَفَرَت طَّآئِفَةٞ﴾ [ الصف : ١٤ ]

“হে মুমিনগণ! আল্লাহর দীনের সাহায্যকারী হও। যেমন, মারইয়াম পুত্র ঈসা বলেছিল তার শিষ্যগণকে- ‘আল্লাহর পথে কে আমার সাহায্যকারী হবে?’ শিষ্যগণ বলেছিল, ‘আমরাই তো আল্লাহর পথে সাহায্যকারী।’ এরপর বনী ইসরাইলদের একদল ঈমান আনল এবং একদল কুফুরী করল।” [সূরা আস-সফ, আয়াত: ১৪]

পুনরায় আরো বিশদভাবে উল্লেখ রয়েছে:

﴿وَإِذۡ أَوۡحَيۡتُ إِلَى ٱلۡحَوَارِيِّ‍ۧنَ أَنۡ ءَامِنُواْ بِي وَبِرَسُولِي قَالُوٓاْ ءَامَنَّا وَٱشۡهَدۡ بِأَنَّنَا مُسۡلِمُونَ ١١١ إِذۡ قَالَ ٱلۡحَوَارِيُّونَ يَٰعِيسَى ٱبۡنَ مَرۡيَمَ هَلۡ يَسۡتَطِيعُ رَبُّكَ أَن يُنَزِّلَ عَلَيۡنَا مَآئِدَةٗ مِّنَ ٱلسَّمَآءِۖ قَالَ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ ١١٢ قَالُواْ نُرِيدُ أَن نَّأۡكُلَ مِنۡهَا وَتَطۡمَئِنَّ قُلُوبُنَا وَنَعۡلَمَ أَن قَدۡ صَدَقۡتَنَا وَنَكُونَ عَلَيۡهَا مِنَ ٱلشَّٰهِدِينَ ١١٣ قَالَ عِيسَى ٱبۡنُ مَرۡيَمَ ٱللَّهُمَّ رَبَّنَآ أَنزِلۡ عَلَيۡنَا مَآئِدَةٗ مِّنَ ٱلسَّمَآءِ تَكُونُ لَنَا عِيدٗا لِّأَوَّلِنَا وَءَاخِرِنَا وَءَايَةٗ مِّنكَۖ وَٱرۡزُقۡنَا وَأَنتَ خَيۡرُ ٱلرَّٰزِقِينَ ١١٤ قَالَ ٱللَّهُ إِنِّي مُنَزِّلُهَا عَلَيۡكُمۡۖ فَمَن يَكۡفُرۡ بَعۡدُ مِنكُمۡ فَإِنِّيٓ أُعَذِّبُهُۥ عَذَابٗا لَّآ أُعَذِّبُهُۥٓ أَحَدٗا مِّنَ ٱلۡعَٰلَمِينَ ١١٥﴾ [ المائ‍دة : ١١١، ١١٥ ]

“আরও স্মরণ কর আমি যখন হাওয়ারীদিগকে এই আদেশ দিয়েছিলাম যে, তোমরা আমার প্রতি ও আমার রাসূলের প্রতি ঈমান আন, তারা বলেছিল, আমরা ঈমান আনলাম এবং তুমি সাক্ষী থাক যে, আমরা তো মুসলিম (আত্মসমর্পণকারী)। স্মরণ কর, হাওয়ারীগণ বলেছিল, হে মারইয়াম পুত্র ঈসা! তোমার প্রতিপালক কি আমাদের জন্য আসমান থেকে খাদ্য পরিপূর্ণ খাঞ্চা প্রেরণ প্রেরণ করতে সক্ষম। সে বলেছিল, ‘আল্লাহকে ভয় কর, যদি তোমরা মোমিন হও।’ তারা বলেছিল, আমরা চাই যে তা থেকে আহার করি এবং এতে আমাদের মন সন্তুষ্ট হবে। আর আমরা জানতে চাই যে তুমি আমাদের কাছে সত্য বলেছ এবং আমরা তার সাক্ষী থাকতে চাই।’ মারইয়াম পুত্র ঈসা বলল, ‘হে আল্লাহ, আমাদের রব! আমাদের জন্য আসমান থেকে খাদ্যপূর্ণ খাঞ্চা প্রেরণ কর, তা হবে আমাদের ও আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য আনন্দোৎসবস্বরূপ ও তোমার নিকট থেকে নিদর্শন। আমাদের জীবিকা দান কর, আর তুমিই তো শ্রেষ্ঠ জীবিকাদাতা। আল্লাহ বললেন, আমি তোমাদের কাছে তা প্রেরণ করব, কিন্তু তারপর তোমাদের মধ্যে কেউ কুফরি করলে তাকে এমন শাস্তি প্রদান করব যে শাস্তি বিশ্ব- জগতের অন্য কোনো সৃষ্টিকে আমি দিব না।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ১১১-১১৫]

ঈসা আলাইহিস সালামের শিক্ষা যখন ছড়িয়ে পড়তে শুরু করল, তখন কিছু লোক তা গ্রহণ করল, কিছু লোক করল না:

﴿وَلَمَّا ضُرِبَ ٱبۡنُ مَرۡيَمَ مَثَلًا إِذَا قَوۡمُكَ مِنۡهُ يَصِدُّونَ ٥٧ وَقَالُوٓاْ ءَأَٰلِهَتُنَا خَيۡرٌ أَمۡ هُوَۚ مَا ضَرَبُوهُ لَكَ إِلَّا جَدَلَۢاۚ بَلۡ هُمۡ قَوۡمٌ خَصِمُونَ ٥٨ إِنۡ هُوَ إِلَّا عَبۡدٌ أَنۡعَمۡنَا عَلَيۡهِ وَجَعَلۡنَٰهُ مَثَلٗا لِّبَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ ٥٩ ﴾ [ الزخرف : ٥٧، ٥٩ ]

“যখন মারইয়াম পুত্রের দৃষ্টান্ত উপস্থিত করা হয় তখন তোমার সম্প্রদায় তাতে শোরগোল শুরু করে দেয় এবং বলে, ‘আমাদের উপাস্যগুলো শ্রেষ্ঠ না ঈসা? তারা কেবল বাক-বিতণ্ডার উদ্দেশ্যেই আমাকে একথা বলে। বস্তুত তারা তো এক বিতণ্ডাকারী সম্প্রদায়। সে তো ছিল আমারই এক বান্দা যাকে আমরা অনুগ্রহ করেছিলাম এবং করেছিলাম বনী ইসরাঈলের জন্য দৃষ্টান্ত।” [সূরা আয-যুখরুফ, আয়াত: ৫৭-৫৯]

﴿ قَفَّيۡنَا عَلَىٰٓ ءَاثَٰرِهِم بِرُسُلِنَا وَقَفَّيۡنَا بِعِيسَى ٱبۡنِ مَرۡيَمَ وَءَاتَيۡنَٰهُ ٱلۡإِنجِيلَۖ وَجَعَلۡنَا فِي قُلُوبِ ٱلَّذِينَ ٱتَّبَعُوهُ رَأۡفَةٗ وَرَحۡمَةٗۚ وَرَهۡبَانِيَّةً ٱبۡتَدَعُوهَا مَا كَتَبۡنَٰهَا عَلَيۡهِمۡ إِلَّا ٱبۡتِغَآءَ رِضۡوَٰنِ ٱللَّهِ فَمَا رَعَوۡهَا حَقَّ رِعَايَتِهَاۖ فَ‍َٔاتَيۡنَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مِنۡهُمۡ أَجۡرَهُمۡۖ وَكَثِيرٞ مِّنۡهُمۡ فَٰسِقُونَ ٢٧﴾ [ الحديد : ٢٧ ]

“..... আমরা তাদের পশ্চাতে অনুগামী করেছিলাম আমার রাসূলগণকে এবং অনুগামী করেছিলাম মারইয়াম পুত্র ঈসাকে, আর তাকে দিয়েছিলাম ইঞ্জিল এবং তার অনুসারীদের অন্তরে দিয়েছিলাম করুণা ও দয়া; আর সন্ন্যাসবাদ- সেতো আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানের জন্যই তারা এর প্রবর্তন করেছিল, আমরা এ বিধান তাদের দেই নি, অথচ তাও তারা যথাযথভাবে পালন করে নি। তাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছিল তাদের আমরা দিয়েছিলাম পুরস্কার, কিন্তু তাদের অধিকাংশই সত্য ত্যাগী।” [সূরা আল-হাদীদ, আয়াত: ২৭]

তিনি যে বাণী বহন করেছিলেন তা ছিল সহজ ও সরল:

﴿وَلَمَّا جَآءَ عِيسَىٰ بِٱلۡبَيِّنَٰتِ قَالَ قَدۡ جِئۡتُكُم بِٱلۡحِكۡمَةِ وَلِأُبَيِّنَ لَكُم بَعۡضَ ٱلَّذِي تَخۡتَلِفُونَ فِيهِۖ فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُونِ ٦٣ إِنَّ ٱللَّهَ هُوَ رَبِّي وَرَبُّكُمۡ فَٱعۡبُدُوهُۚ هَٰذَا صِرَٰطٞ مُّسۡتَقِيمٞ ٦٤﴾ [ الزخرف : ٦٣، ٦٤ ]

“ঈসা যখন স্পষ্ট নিদর্শনসহ এল, সে বলেছিল, ‘আমি তো তোমাদের নিকট এসেছি প্রজ্ঞাসহ এবং তোমরা যে বিষয়ে মতভেদ করছ, তা স্পষ্ট করে দেয়ার জন্য। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার অনুসরণ কর। আল্লাহই তো আমাদের প্রতিপালক এবং তোমাদেরও রব। অতএব, তার ইবাদত কর, এটাই সরল পথ।” [সূরা আয-যুখরুফ, আয়াত: ৬৩-৬৪]

তাঁর অলৌকিক কর্মকাণ্ডের কথা আবার উল্লেখ করা হয়েছে:

﴿إِذۡ قَالَ ٱللَّهُ يَٰعِيسَى ٱبۡنَ مَرۡيَمَ ٱذۡكُرۡ نِعۡمَتِي عَلَيۡكَ وَعَلَىٰ وَٰلِدَتِكَ إِذۡ أَيَّدتُّكَ بِرُوحِ ٱلۡقُدُسِ تُكَلِّمُ ٱلنَّاسَ فِي ٱلۡمَهۡدِ وَكَهۡلٗاۖ وَإِذۡ عَلَّمۡتُكَ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ وَٱلتَّوۡرَىٰةَ وَٱلۡإِنجِيلَۖ وَإِذۡ تَخۡلُقُ مِنَ ٱلطِّينِ كَهَيۡ‍َٔةِ ٱلطَّيۡرِ بِإِذۡنِي فَتَنفُخُ فِيهَا فَتَكُونُ طَيۡرَۢا بِإِذۡنِيۖ وَتُبۡرِئُ ٱلۡأَكۡمَهَ وَٱلۡأَبۡرَصَ بِإِذۡنِيۖ وَإِذۡ تُخۡرِجُ ٱلۡمَوۡتَىٰ بِإِذۡنِيۖ وَإِذۡ كَفَفۡتُ بَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ عَنكَ إِذۡ جِئۡتَهُم بِٱلۡبَيِّنَٰتِ فَقَالَ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ مِنۡهُمۡ إِنۡ هَٰذَآ إِلَّا سِحۡرٞ مُّبِينٞ ١١٠﴾ [ المائ‍دة : ١١٠ ]

“স্মরণ কর, আল্লাহ বললেন, ‘হে মরিয়াম পুত্র ঈসা, তোমার প্রতি ও তোমার জননীর প্রতি আমার অনুগ্রহ স্মরণ কর: পবিত্র আত্মা দ্বারা আমি তোমাকে শক্তিশালী করেছিলাম এবং তুমি দোলনায় থাকা অবস্থাও পরিণত বয়সে মানুষের সাথে কথা বলতে; তোমাকে কিতাব, হিকমত, তাওরাত ও ইনজিল শিক্ষা দিয়েছিলাম, তুমি কাদামাটি দিয়ে আমার অনুমতিক্রমে পাখি সদৃশ আকৃতি গঠন ও তাতে ফুঁ দিতে, ফলে আমার অনুমতিক্রমে নিরাময় ও আমার অনুমতিক্রমে মৃতকে জীবিত করতে; আমি তোমার ক্ষতি করা থেকে বনী ইসলাইলকে নিবৃত্ত রেখেছিলাম; তুমি যখন তাদের মধ্যে স্পষ্ট নিদর্শন এনেছিলে তখন তাদের মধ্যে যারা কুফরি করেছিল, তারা বলেছিল- এতো স্পষ্ট যাদু।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ১১০]

ঈসা আলাইহিস সালামের জন্মগ্রহণকালীন পরিস্থিতির কারণে একটি ভ্রান্ত ধারণার সৃষ্টি হয় যে, তিনি ‘আল্লাহর পুত্র।’ কুরআনে বলা হয়েছে:

﴿قَالُواْ ٱتَّخَذَ ٱللَّهُ وَلَدٗاۗ سُبۡحَٰنَهُۥۖ هُوَ ٱلۡغَنِيُّۖ لَهُۥ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِۚ إِنۡ عِندَكُم مِّن سُلۡطَٰنِۢ بِهَٰذَآۚ أَتَقُولُونَ عَلَى ٱللَّهِ مَا لَا تَعۡلَمُونَ ٦٨ ﴾ [ يونس : ٦٨ ]

“তারা বলে, ‘আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন।’ তিনি মহান পবিত্র। তিনি অভাবমুক্ত। আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, তা তারই। এ বিষয়ে তোমাদের কাছে কোনো সনদ নেই। তোমরা কি আল্লাহ সম্পর্কে এমন কিছু বলছ যে বিষয়ে তোমাদের কোনো জ্ঞান নেই?” [সূরা ইউনূস, আয়াত: ৬৮]

﴿إِذۡ قَالَ ٱللَّهُ يَٰعِيسَىٰٓ إِنِّي مُتَوَفِّيكَ وَرَافِعُكَ إِلَيَّ وَمُطَهِّرُكَ مِنَ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ وَجَاعِلُ ٱلَّذِينَ ٱتَّبَعُوكَ فَوۡقَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوٓاْ إِلَىٰ يَوۡمِ ٱلۡقِيَٰمَةِۖ ثُمَّ إِلَيَّ مَرۡجِعُكُمۡ فَأَحۡكُمُ بَيۡنَكُمۡ فِيمَا كُنتُمۡ فِيهِ تَخۡتَلِفُونَ ٥٥ فَأَمَّا ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ فَأُعَذِّبُهُمۡ عَذَابٗا شَدِيدٗا فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِ وَمَا لَهُم مِّن نَّٰصِرِينَ ٥٦ وَأَمَّا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ فَيُوَفِّيهِمۡ أُجُورَهُمۡۗ وَٱللَّهُ لَا يُحِبُّ ٱلظَّٰلِمِينَ ٥٧ ذَٰلِكَ نَتۡلُوهُ عَلَيۡكَ مِنَ ٱلۡأٓيَٰتِ وَٱلذِّكۡرِ ٱلۡحَكِيمِ ٥٨ إِنَّ مَثَلَ عِيسَىٰ عِندَ ٱللَّهِ كَمَثَلِ ءَادَمَۖ خَلَقَهُۥ مِن تُرَابٖ ثُمَّ قَالَ لَهُۥ كُن فَيَكُونُ ٥٩﴾ [ ال عمران : ٥٥، ٥٩ ]

“.... স্মরণ কর, যখন আল্লাহ বললেন: ‘হে ঈসা! আমি তোমার কাল পূর্ণ করছি এবং আমার কাছে তোমাকে তুলে নিচ্ছি এবং যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করেছে তাদের মধ্য থেকে তোমাকে পবিত্র (মুক্ত) করছি। আর তোমার অনুসারীদের কিয়ামত পর্যন্ত কাফিরদের ওপর প্রাধান্য দান করছি, এরপর আমার কাছে তোমাদের প্রত্যাবর্তন।’ তারপর যে বিষয়ে তোমাদের মতান্তর ঘটছে তা আমি মীমাংসা করে দেব। যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করেছে আমি তাদেরকে দুনিয়ায় ও আখরাতে কঠোর শাস্তি প্রদান করব এবং তাদের কোনো সাহায্যকারী নেই। আর যারা ঈমান এনেছে ও সৎকার্য করেছে তিনি তাদের প্রতিফল পুরোপুরি প্রদান করবেন। আল্লাহ জালিমদের পছন্দ করেন না। যা আমি তোমার নিকট তিলাওয়াত করছি তা নিদর্শন ও সারগর্ভ বাণী থেকে। আল্লাহর কাছে ঈসার দৃষ্টান্ত আদমের দৃষ্টান্ত সদৃশ। তাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছিলেন, তারপর তাকে বলেছিলেন, ‘হও’, ফলে সে হয়ে গেল।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৫৫-৫৯]

﴿وَقَالُواْ ٱتَّخَذَ ٱللَّهُ وَلَدٗاۗ سُبۡحَٰنَهُۥۖ بَل لَّهُۥ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۖ كُلّٞ لَّهُۥ قَٰنِتُونَ ١١٦ بَدِيعُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۖ وَإِذَا قَضَىٰٓ أَمۡرٗا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُۥ كُن فَيَكُونُ ١١٧﴾ [ البقرة : ١١٦، ١١٧ ]

“এবং তারা বলে, ‘আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন’ তিনি অতি পবিত্র। বরং আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সব আল্লাহরই। সবকিছু তারই একান্ত অনুগত। আল্লাহ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর স্রষ্টা এবং যখন তিনি কিছু করতে ইচ্ছা করেন তখন শুধু বলেন, ‘হও’. আর তা হয়ে যায়।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১১৬-১৭]

﴿وَقَالُواْ ٱتَّخَذَ ٱلرَّحۡمَٰنُ وَلَدٗاۗ سُبۡحَٰنَهُۥۚ بَلۡ عِبَادٞ مُّكۡرَمُونَ ٢٦ لَا يَسۡبِقُونَهُۥ بِٱلۡقَوۡلِ وَهُم بِأَمۡرِهِۦ يَعۡمَلُونَ ٢٧ يَعۡلَمُ مَا بَيۡنَ أَيۡدِيهِمۡ وَمَا خَلۡفَهُمۡ وَلَا يَشۡفَعُونَ إِلَّا لِمَنِ ٱرۡتَضَىٰ وَهُم مِّنۡ خَشۡيَتِهِۦ مُشۡفِقُونَ ٢٨ ۞وَمَن يَقُلۡ مِنۡهُمۡ إِنِّيٓ إِلَٰهٞ مِّن دُونِهِۦ فَذَٰلِكَ نَجۡزِيهِ جَهَنَّمَۚ كَذَٰلِكَ نَجۡزِي ٱلظَّٰلِمِينَ ٢٩﴾ [ الانبياء : ٢٦، ٢٩ ]

“তারা বলে, ‘দয়াময় আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন।’ তিনি পবিত্র, মহান। তারা তো তার সম্মানিত বান্দা। তারা আগ বাড়িয়ে কথা বলে না, তারা তো তার আদেশ অনুসারেই কাজ করে থাকে। তাদের সামনে ও পশ্চাতে যা কিছু আছে তা তিনি অবগত। তারা সুপারিশ করে শুধু তাদের জন্য যাদের প্রতি তিনি সন্তুষ্ট এবং যারা তার ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত। তাদের মধ্যে যে বলবে, ‘আমি ইলাহ্, তিনি ব্যতীত’, তাকে আমি প্রতিফল দিব জাহান্নাম; এভাবেই আমরা যালিমদের শাস্তি দিয়ে থাকি।” [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ২৬-২৯]

﴿وَقَالُواْ ٱتَّخَذَ ٱلرَّحۡمَٰنُ وَلَدٗا ٨٨ لَّقَدۡ جِئۡتُمۡ شَيۡ‍ًٔا إِدّٗا ٨٩ تَكَادُ ٱلسَّمَٰوَٰتُ يَتَفَطَّرۡنَ مِنۡهُ وَتَنشَقُّ ٱلۡأَرۡضُ وَتَخِرُّ ٱلۡجِبَالُ هَدًّا ٩٠ أَن دَعَوۡاْ لِلرَّحۡمَٰنِ وَلَدٗا ٩١ وَمَا يَنۢبَغِي لِلرَّحۡمَٰنِ أَن يَتَّخِذَ وَلَدًا ٩٢ إِن كُلُّ مَن فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ إِلَّآ ءَاتِي ٱلرَّحۡمَٰنِ عَبۡدٗا ٩٣ ﴾ [ مريم : ٨٨، ٩٣ ]

“তারা বলে, দয়াময় সন্তান গ্রহণ করেছেন। তোমরা তো এক বীভৎস কথার অবতারণা করেছ। এতে যেন আকাশমণ্ডলী বিদীর্ণ হয়ে যাবে, পৃথিবী খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে যাবে ও পর্বতমালা চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে আপতিত হবে, যেহেতু তারা দয়াময়ের প্রতি সন্তান আরোপ করে। অথচ সন্তান গ্রহণ করা দয়াময়ের জন্য শোভন নয়। আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে এমন কেউ নেই সে দয়াময়ের নিকট বান্দারূপে উপস্থিত হবে না।” [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৮৮-৯৩]

কুরআন ঈসা আলাইহিস সালামের ইলাহ হওয়া অস্বীকার করেছে:

﴿ لَّقَدۡ كَفَرَ ٱلَّذِينَ قَالُوٓاْ إِنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلۡمَسِيحُ ٱبۡنُ مَرۡيَمَۚ قُلۡ فَمَن يَمۡلِكُ مِنَ ٱللَّهِ شَيۡ‍ًٔا إِنۡ أَرَادَ أَن يُهۡلِكَ ٱلۡمَسِيحَ ٱبۡنَ مَرۡيَمَ وَأُمَّهُۥ وَمَن فِي ٱلۡأَرۡضِ جَمِيعٗاۗ وَلِلَّهِ مُلۡكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَمَا بَيۡنَهُمَاۚ يَخۡلُقُ مَا يَشَآءُۚ وَٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٞ ١٧﴾ [ المائ‍دة : ١٧ ]

“যারা বলে, ‘মারইয়াম পুত্র মসীহই আল্লাহ’ তারা তো কুফুরী করেছে। বল, আল্লাহ মারইয়াম পুত্র মসীহ, তার মাতা এবং দুনিয়ার সকলকে যদি ধ্বংস করার ইচ্ছা করেন তাহলে তাঁকে বাধা দেয়ার শক্তি কার আছে? আসমান ও জমিনের এবং এর মধ্যে যা কিছু আছে তার সার্বভৌমত্ব আল্লাহরই। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।” [সূরা আর-মায়েদাহ, আয়াত: ১৭]

﴿وَإِذۡ قَالَ ٱللَّهُ يَٰعِيسَى ٱبۡنَ مَرۡيَمَ ءَأَنتَ قُلۡتَ لِلنَّاسِ ٱتَّخِذُونِي وَأُمِّيَ إِلَٰهَيۡنِ مِن دُونِ ٱللَّهِۖ قَالَ سُبۡحَٰنَكَ مَا يَكُونُ لِيٓ أَنۡ أَقُولَ مَا لَيۡسَ لِي بِحَقٍّۚ إِن كُنتُ قُلۡتُهُۥ فَقَدۡ عَلِمۡتَهُۥۚ تَعۡلَمُ مَا فِي نَفۡسِي وَلَآ أَعۡلَمُ مَا فِي نَفۡسِكَۚ إِنَّكَ أَنتَ عَلَّٰمُ ٱلۡغُيُوبِ ١١٦ مَا قُلۡتُ لَهُمۡ إِلَّا مَآ أَمَرۡتَنِي بِهِۦٓ أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ رَبِّي وَرَبَّكُمۡۚ وَكُنتُ عَلَيۡهِمۡ شَهِيدٗا مَّا دُمۡتُ فِيهِمۡۖ فَلَمَّا تَوَفَّيۡتَنِي كُنتَ أَنتَ ٱلرَّقِيبَ عَلَيۡهِمۡۚ وَأَنتَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ شَهِيدٌ ١١٧ ﴾ [ المائ‍دة : ١١٦، ١١٧ ]

“আল্লাহ যখন বলবেন, ‘হে মারইয়াম পুত্র ঈসা! তুমি কি লোকদের বলছিলে যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত আমাকে ও আমার জননীকে ইলাহরূপে গ্রহণ কর?’ সে বলবে, ‘তুমিই মহিমান্বিত! যা বলার অধিকার আমার নেই তা বলা আমার পক্ষে শোভন নয়। যদি আমি তা বলতাম তবে তুমি তো তা জানতে। আমার অন্তরের কথা তো তুমি অবগত আছ, কিন্তু তোমার অন্তরের কথা আমি অবগত নই, তুমি তো অদৃশ্য সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত। তুমি আমাকে যে আদেশ করেছ তা ব্যতীত আমি কিছুই বলিনি। আমি তাদের বলেছি: ‘তোমরা আমার ও তোমাদের রব আল্লাহর ইবাদত কর’; এবং যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম ততদিন আমি ছিলাম তাদের কার্যকলাপের সাক্ষী; কিন্তু যখন তুমি আমাকে তুলে নিলে তখন তুমিই তো ছিলে তাদের কার্যকলাপের তত্ত্বাবধায়ক এবং তুমি সর্ব বিষয়ে সাক্ষী। তুমি যদি তাদের শাস্তি দাও তবে তারা তো তোমারই বান্দা, আর যদি তাদের ক্ষমা কর তবে তুমি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” [সূরা আল-মায়েদাহ: ১১৬-১১৮]

﴿وَقَالَتِ ٱلۡيَهُودُ عُزَيۡرٌ ٱبۡنُ ٱللَّهِ وَقَالَتِ ٱلنَّصَٰرَى ٱلۡمَسِيحُ ٱبۡنُ ٱللَّهِۖ ذَٰلِكَ قَوۡلُهُم بِأَفۡوَٰهِهِمۡۖ يُضَٰهِ‍ُٔونَ قَوۡلَ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ مِن قَبۡلُۚ قَٰتَلَهُمُ ٱللَّهُۖ أَنَّىٰ يُؤۡفَكُونَ ٣٠ ٱتَّخَذُوٓاْ أَحۡبَارَهُمۡ وَرُهۡبَٰنَهُمۡ أَرۡبَابٗا مِّن دُونِ ٱللَّهِ وَٱلۡمَسِيحَ ٱبۡنَ مَرۡيَمَ وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُوٓاْ إِلَٰهٗا وَٰحِدٗاۖ لَّآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَۚ سُبۡحَٰنَهُۥ عَمَّا يُشۡرِكُونَ ٣١ يُرِيدُونَ أَن يُطۡفِ‍ُٔواْ نُورَ ٱللَّهِ بِأَفۡوَٰهِهِمۡ وَيَأۡبَى ٱللَّهُ إِلَّآ أَن يُتِمَّ نُورَهُۥ وَلَوۡ كَرِهَ ٱلۡكَٰفِرُونَ ٣٢﴾ [ التوبة : ٣٠، ٣٢ ]

ইয়াহূদীরা বলে, ‘উযাইর (Ezra) আল্লাহর পুত্র’ এবং খৃষ্টানরা বলে, ‘মসীহ আল্লাহর পুত্র।’ এগুলো তাদের মুখের কথা। আগে যারা কুফরি করেছিল তারা তাদের মত কথা বলে। আল্লাহ তাদের ধ্বংস করুন। তারা কেমন করে সত্য বিমুখ হয়! তারা আল্লাহ ব্যতীত তাদের পণ্ডিতগণকে ও সংসার বিরাগীগণকে তাদের প্রভূ (হুকুমের মালিক) রূপে গ্রহণ করেছে এবং মারইয়াম পুত্র মসীহকেও। কিন্তু তারা এক ইলাহের ইবাদত করার জন্যই আদিষ্ট হয়েছিল। তিনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। তারা যাকে তার শরিক করে তা হতে তিনি কত পবিত্র! তারা তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর জ্যোতি নির্বাপিত করতে চায়। কাফিরগণ অপ্রীতিকরণ মনে করলেও আল্লাহ তার জ্যোতির পূর্ণ উদভাসন ছাড়া অন্য কিছু চান না।” [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৩০-৩২]

কুরআন ত্রিত্ববাদকে প্রত্যাখ্যান করেছে:

﴿يَٰٓأَهۡلَ ٱلۡكِتَٰبِ لَا تَغۡلُواْ فِي دِينِكُمۡ وَلَا تَقُولُواْ عَلَى ٱللَّهِ إِلَّا ٱلۡحَقَّۚ إِنَّمَا ٱلۡمَسِيحُ عِيسَى ٱبۡنُ مَرۡيَمَ رَسُولُ ٱللَّهِ وَكَلِمَتُهُۥٓ أَلۡقَىٰهَآ إِلَىٰ مَرۡيَمَ وَرُوحٞ مِّنۡهُۖ فَ‍َٔامِنُواْ بِٱللَّهِ وَرُسُلِهِۦۖ وَلَا تَقُولُواْ ثَلَٰثَةٌۚ ٱنتَهُواْ خَيۡرٗا لَّكُمۡۚ إِنَّمَا ٱللَّهُ إِلَٰهٞ وَٰحِدٞۖ سُبۡحَٰنَهُۥٓ أَن يَكُونَ لَهُۥ وَلَدٞۘ لَّهُۥ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِۗ وَكَفَىٰ بِٱللَّهِ وَكِيلٗا ١٧١ لَّن يَسۡتَنكِفَ ٱلۡمَسِيحُ أَن يَكُونَ عَبۡدٗا لِّلَّهِ وَلَا ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ ٱلۡمُقَرَّبُونَۚ وَمَن يَسۡتَنكِفۡ عَنۡ عِبَادَتِهِۦ وَيَسۡتَكۡبِرۡ فَسَيَحۡشُرُهُمۡ إِلَيۡهِ جَمِيعٗا ١٧٢ فَأَمَّا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ فَيُوَفِّيهِمۡ أُجُورَهُمۡ وَيَزِيدُهُم مِّن فَضۡلِهِۦۖ وَأَمَّا ٱلَّذِينَ ٱسۡتَنكَفُواْ وَٱسۡتَكۡبَرُواْ فَيُعَذِّبُهُمۡ عَذَابًا أَلِيمٗا وَلَا يَجِدُونَ لَهُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ وَلِيّٗا وَلَا نَصِيرٗا ١٧٣﴾ [ النساء : ١٧١، ١٧٣ ]

“হে কিতাবিগণ! দীনের ব্যাপারে বাড়বাড়ি কর না ও আল্লাহর সম্বন্ধে সত্য ব্যতীত বল না। মারইয়াম পুত্র ঈসা মসীহ আল্লাহর রাসূল এবং তার বাণী যা তিনি মারইয়ামের কাছে প্রেরণ করেছিলেন ও তার আদেশ। সুতরাং তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি ঈমান আন এবং ‘তিন’ বলো না- নিবৃত্ত হও, এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর হবে। আল্লাহ তো একমাত্র ইলাহ। তার সন্তান হবে- তিনি এ থেকে পবিত্র। আসমানে যা কিছু আছে ও জমিনে যা কিছু আছে সব আল্লাহরই। কর্ম-বিধানে আল্লাহই যথেষ্ট। মসীহ আল্লাহর বান্দা হওয়াকে হেয় জ্ঞান করে না এবং ঘনিষ্ঠ ফেরেশতাগণও নয়; কেউ আল্লাহর বান্দা হওয়াকে হেয় জ্ঞান করলে এবং অহংকার করলে তিনি তাদের সকলকে তার কাছে একত্র করবেন। যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে তিনি তাদেরকে পূর্ণ পুরস্কার দান করবেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরো বেশি দেবেন; কিন্তু যারা হেয় জ্ঞান করে ও অহংকার করে তাদের তিনি মর্মন্তুদ শাস্তিদান করবেন এবং আল্লাহ ব্যতীত তাদের জন্য তারা কোনো অভিভাবক ও সহায় পাবে না।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৭১-১৭৩]

কুরআন ঈসা আলাইহিস সালামের ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যার দাবি প্রত্যাখ্যান করে, পক্ষান্তরে সমর্থন করে তার ঊর্ধ্বারোহণকে:

﴿وَقَوۡلِهِمۡ إِنَّا قَتَلۡنَا ٱلۡمَسِيحَ عِيسَى ٱبۡنَ مَرۡيَمَ رَسُولَ ٱللَّهِ وَمَا قَتَلُوهُ وَمَا صَلَبُوهُ وَلَٰكِن شُبِّهَ لَهُمۡۚ وَإِنَّ ٱلَّذِينَ ٱخۡتَلَفُواْ فِيهِ لَفِي شَكّٖ مِّنۡهُۚ مَا لَهُم بِهِۦ مِنۡ عِلۡمٍ إِلَّا ٱتِّبَاعَ ٱلظَّنِّۚ وَمَا قَتَلُوهُ يَقِينَۢا ١٥٧ بَل رَّفَعَهُ ٱللَّهُ إِلَيۡهِۚ وَكَانَ ٱللَّهُ عَزِيزًا حَكِيمٗا ١٥٨﴾ [ النساء : ١٥٧، ١٥٨ ]

“আর ‘আমরা আল্লাহর রাসূল মারইয়াম পুত্র ঈসা মসীহকে হত্যা করেছি’ তাদের এ উক্তির জন্য তারা লা‘নতগ্রস্ত। অথচ তারা তাকে হত্যাও করে নি, ক্রুশবিদ্ধও করে নি, কিন্তু তাদের এ রকম বিভ্রম হয়েছিল। যারা তার সম্বন্ধে মতভেদ করেছিল তারা নিশ্চয় এ সম্বন্ধে সংশয়যুক্ত ছিল; এ সম্পর্কে অনুমান করা ছাড়া তাদের কোনো জ্ঞানই ছিল না। এটা নিশ্চিত যে, তারা তাকে হত্যা করে নি। বরং আল্লাহ তাকে তার নিকট তুলে নিয়েছেন এবং আল্লাহ পরাক্রমশালী; প্রজ্ঞাময়।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৫৭-১৫৮]

চূড়ান্তভাবে:

﴿ لَقَدۡ كَفَرَ ٱلَّذِينَ قَالُوٓاْ إِنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلۡمَسِيحُ ٱبۡنُ مَرۡيَمَۖ وَقَالَ ٱلۡمَسِيحُ يَٰبَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ رَبِّي وَرَبَّكُمۡۖ إِنَّهُۥ مَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِ ٱلۡجَنَّةَ وَمَأۡوَىٰهُ ٱلنَّارُۖ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ أَنصَارٖ ٧٢ لَّقَدۡ كَفَرَ ٱلَّذِينَ قَالُوٓاْ إِنَّ ٱللَّهَ ثَالِثُ ثَلَٰثَةٖۘ وَمَا مِنۡ إِلَٰهٍ إِلَّآ إِلَٰهٞ وَٰحِدٞۚ وَإِن لَّمۡ يَنتَهُواْ عَمَّا يَقُولُونَ لَيَمَسَّنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ مِنۡهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ ٧٣ أَفَلَا يَتُوبُونَ إِلَى ٱللَّهِ وَيَسۡتَغۡفِرُونَهُۥۚ وَٱللَّهُ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٧٤ مَّا ٱلۡمَسِيحُ ٱبۡنُ مَرۡيَمَ إِلَّا رَسُولٞ قَدۡ خَلَتۡ مِن قَبۡلِهِ ٱلرُّسُلُ وَأُمُّهُۥ صِدِّيقَةٞۖ كَانَا يَأۡكُلَانِ ٱلطَّعَامَۗ ٱنظُرۡ كَيۡفَ نُبَيِّنُ لَهُمُ ٱلۡأٓيَٰتِ ثُمَّ ٱنظُرۡ أَنَّىٰ يُؤۡفَكُونَ ٧٥﴾ [ المائ‍دة : ٧٢، ٧٥ ]

“যারা বলে, ‘আল্লাহই মারইয়াম পুত্র মসীহ’, তারা তো কুফুরী করেছেই; অথচ মসীহ বলেছিল, ‘হে বনী ইসরাইল! তোমরা আমার প্রতিপালক ও তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহর ইবাদত কর।’ কেউ আল্লাহর শরিক করলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত অবশ্যই নিষিদ্ধ করবেন ও তার আবাস জাহান্নাম। জালিমদের কোনো সাহায্যকারী নেই। যারা বলে, ‘আল্লাহ তো তিনের মধ্যে একজন; তারা তো কুফরি করেছেই; যদিও এক ইলাহ ব্যতীত অন্য কোনো ইলাহ নেই। তারা যা বলে তা থেকে নিবৃত্ত না হলে তাদের মধ্যে যারা কুফরি করেছে তাদের ওপর মর্মন্তুদ শাস্তি আপতিত হবেই। তবে কি তারা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করবে না ও তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে না? আল্লাহ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। মারইয়াম পুত্র মসীহ তো কেবল একজন রাসূল; তার পূর্বে বহু রাসূল গত হয়েছে এবং তার মাতা সত্যনিষ্ঠ ছিল। তারা উভয়েই খাদ্য আহার করত। দেখ তাদের জন্য আয়াত কত বিশদভাবে বর্ণনা করি; আরও দেখ, তারা কীভাবে সত্য বিমুখ হয়।” [সূরা আল-মায়েদাহ: ৭২-৭৫]

﴿تِلۡكَ ٱلرُّسُلُ فَضَّلۡنَا بَعۡضَهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖۘ مِّنۡهُم مَّن كَلَّمَ ٱللَّهُۖ وَرَفَعَ بَعۡضَهُمۡ دَرَجَٰتٖۚ وَءَاتَيۡنَا عِيسَى ٱبۡنَ مَرۡيَمَ ٱلۡبَيِّنَٰتِ وَأَيَّدۡنَٰهُ بِرُوحِ ٱلۡقُدُسِۗ وَلَوۡ شَآءَ ٱللَّهُ مَا ٱقۡتَتَلَ ٱلَّذِينَ مِنۢ بَعۡدِهِم مِّنۢ بَعۡدِ مَا جَآءَتۡهُمُ ٱلۡبَيِّنَٰتُ وَلَٰكِنِ ٱخۡتَلَفُواْ فَمِنۡهُم مَّنۡ ءَامَنَ وَمِنۡهُم مَّن كَفَرَۚ وَلَوۡ شَآءَ ٱللَّهُ مَا ٱقۡتَتَلُواْ وَلَٰكِنَّ ٱللَّهَ يَفۡعَلُ مَا يُرِيدُ ٢٥٣﴾ [ البقرة : ٢٥٣ ]

“এই রাসূলগণ, তাদের মধ্যে কাউকে কারো ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। তাদের মধ্যে এমন কেউ রয়েছে যার সাথে আল্লাহ কথা বলেছেন, আবার কাউকে উচ্চ মর্যাদাও উন্নীত করেছেন। মারইয়াম পুত্র ঈসাকে স্পষ্ট প্রমাণ প্রদান করেছি ও পবিত্র আত্মা দ্বারা তাকে শক্তিশালী করেছি। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদের পরবর্তীরা তাদের কাছে স্পষ্ট প্রমাণ সমাগত হওয়ার পর পারস্পরিক যুদ্ধ- বিগ্রহে লিপ্ত হত না; কিন্তু তাদের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি হলো। ফলে তাদের কিছু কিছু ঈমান আনল এবং কিছু কিছু কুফুরী করল। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তারা পারস্পরিক যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত হত না, কিন্তু আল্লাহ যা ইচ্ছা তা করেন।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৫৩]

কিন্তু-

﴿لَتَجِدَنَّ أَشَدَّ ٱلنَّاسِ عَدَٰوَةٗ لِّلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱلۡيَهُودَ وَٱلَّذِينَ أَشۡرَكُواْۖ وَلَتَجِدَنَّ أَقۡرَبَهُم مَّوَدَّةٗ لِّلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱلَّذِينَ قَالُوٓاْ إِنَّا نَصَٰرَىٰۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّ مِنۡهُمۡ قِسِّيسِينَ وَرُهۡبَانٗا وَأَنَّهُمۡ لَا يَسۡتَكۡبِرُونَ ٨٢﴾ [ المائ‍دة : ٨٢ ]

“অবশ্য মুমিনদের প্রতি শত্রুতায় মানুষের মধ্যে ইয়াহূদী ও মুশরিকদেরই তুমি সর্বাধিক উগ্র দেখবে এবং যারা বলে ‘আমরা খৃষ্টান’, মানুষের মধ্যে তাদেরই তুমি মোমিনদের নিকটতর বন্ধুরূপে দেখবে, কারণ তাদের মধ্যে অনেক পণ্ডিত ও সংসার বিরাগী আছে, আর তারা অহংকার করে না।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৮২]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন