HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
প্রকৃতি ও শরীয়ত স্বীকৃত অধিকার
লেখকঃ শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল উসাইমিন রহ.
৯
সাত : শাসক ও শাসিতের অধিকারশাসক তো তারাই, যারা মুসলিম জনগণের যাবতীয় কাজের দায়িত্বশীল বা জিম্মাদার। যেমন সাধারণভাবে রাষ্ট্র শাসন ব্যবস্থায় প্রধান ব্যক্তি অথবা বিশেষ করে কোনো একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল কোনো ব্যক্তি। এ উভয়ই মুসলিমদের অভিভাবক বলে বিবেচিত। দেশের নাগরিক বা প্রজা সাধারণের ওপর এদের যেমন অধিকার রয়েছে, তাদের ওপরও প্রজা সাধারণের অধিকার রয়েছে।
শাসক বা রাষ্ট্র পরিচালকদের ওপর প্রজা সাধারণের অধিকার এই যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে তারা রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে যে আমানত লাভ করেছেন এবং জিম্মাদারী গ্রহণ করেছেন সে মোতাবেক তারা দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের দিকে লক্ষ্য রেখে তাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করবে। আর সেটা করতে হবে মুমিনদের পথ অনুসরণের মাধ্যমেই। সে পথের মানেই হচ্ছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কর্মপদ্ধতি। কারণ, এ পথেই তাদের, তাদের প্রজাবর্গ ও যারা তাদের অধিনস্থ রয়েছে তাদের জন্য সৌভাগ্য রয়েছে। প্রজাদের থেকে শাসকদের জন্য সন্তুষ্টি লাভের এটাই সবোত্তম মাধ্যম, এর মাধ্যমেই তাদের মধ্যকার সম্পর্ক মজবুত হয়, তারা তাদের শাসকদের নির্দেশের প্রতি আনুগত্য করে, যে আমানত তারা তাদের প্রতি ন্যস্ত করেছে সেটা সংরক্ষণে তৎপর থাকে। কেননা, যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে তাকে লোকেরাও ভয় করে চলে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে সন্তুষ্ট রাখে আল্লাহ মানুষের ব্যাপারে তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান এবং জনগণের মাধ্যমে আল্লাহ তাকে সন্তুষ্ট রাখেন। কারণ, সমস্ত মানুষের অন্তরতো আল্লাহর হাতেই নিবদ্ধ তিনি যে দিকে চান, সে দিকেই তা প্রত্যাবর্তন করেন।
আর মুসলিমদের জিম্মাদার তথা শাসকের অধিকার হচ্ছে এই যে, জনগণের পক্ষ থেকে তারা যে ব্যাপারে দায়িত্বশীল সে ব্যাপারে তাদের কল্যাণ কামনা করা প্রজাদের কর্তব্য। তারা কোনো ব্যাপারে গাফেল বা অন্যমনস্ক হয়ে গেলে সে ব্যাপারে তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেওয়াও প্রজা সাধারনের কর্তব্য। তারা সত্য পথ থেকে বিচ্যুত হলে তখন তাদের জন্য দোয়া করতে হবে। আর আল্লাহর আনুগত্যের খেলাফ নয় তাদের এমন সব কাজে সহযোগিতা ও সমর্থন করা প্রজাদের কর্তব্য। কেননা এরূপ সহযোগিতার মাধ্যমেই তারা তাদের ওপর ন্যাস্ত দায়িত্ব সঠিক এবং সুশৃংখলভাবে আঞ্জাম দিতে পারেন। এর বিপরীত যদি তাদের শুধু বিরুদ্ধাচরণ ও তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহই করা হয়, তা হলে সমাজে বিশৃংখলা দেখা দিবে বৈকি। আর এজন্যই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্যসহ সামাজিক দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গেরও আনুগত্য করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَأُوْلِي ٱلۡأَمۡرِ مِنكُمۡۖ﴾ [ النساء : ٥٩ ]
‘হে ঈমানদার লোকেরা! আল্লাহর আনুগত্য করো, আরও আনুগত্য করো আল্লাহর রাসূলের। আর আনুগত্য কর সেসব লোকের যারা তোমাদের ব্যাপারে ক্ষমতাপ্রাপ্ত।’ [সূরা আন-নিসা: ৫৯]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«عَلَى الْمَرْءِ الْمُسْلِمِ السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ فِيمَا أَحَبَّ وَكَرِهَ، إِلَّا أَنْ يُؤْمَرَ بِمَعْصِيَةٍ، فَإِنْ أُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ، فَلَا سَمْعَ وَلَا طَاعَةَ»
‘একজন মুসলিমের কর্তব্য হচ্ছে যতক্ষণ পর্যন্ত তার নেতা তাকে কোনো প্রকার পাপের কাজে আদেশ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার কথা শোনা এবং তার আনুগত্য করা- চাই তা তার কাছে ভালো লাগে কি ভালো না লাগে। তবে যখন সে কোনো অন্যায় কাজে আদেশ করবে তখন তার কথা শোনা এবং তার প্রতি আনুগত্য দেখানো যাবে না’ [মুসলিম, ১৮৩৯।]। - (বুখারী ও মুসলিম)।’
‘আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন:
«كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَفَرٍ، فَنَزَلْنَا مَنْزِلًا ... إِذْ نَادَى مُنَادِي رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : الصَّلَاةَ جَامِعَةً، فَاجْتَمَعْنَا إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ : " إِنَّهُ لَمْ يَكُنْ نَبِيٌّ قَبْلِي إِلَّا كَانَ حَقًّا عَلَيْهِ أَنْ يَدُلَّ أُمَّتَهُ عَلَى خَيْرِ مَا يَعْلَمُهُ لَهُمْ، وَيُنْذِرَهُمْ شَرَّ مَا يَعْلَمُهُ لَهُمْ، وَإِنَّ أُمَّتَكُمْ هَذِهِ جُعِلَ عَافِيَتُهَا فِي أَوَّلِهَا، وَسَيُصِيبُ آخِرَهَا بَلَاءٌ، وَأُمُورٌ تُنْكِرُونَهَا، وَتَجِيءُ فِتْنَةٌ فَيُرَقِّقُ بَعْضُهَا بَعْضًا، وَتَجِيءُ الْفِتْنَةُ فَيَقُولُ الْمُؤْمِنُ : هَذِهِ مُهْلِكَتِي، ثُمَّ تَنْكَشِفُ وَتَجِيءُ الْفِتْنَةُ، فَيَقُولُ الْمُؤْمِنُ : هَذِهِ هَذِهِ، فَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يُزَحْزَحَ عَنِ النَّارِ، وَيُدْخَلَ الْجَنَّةَ، فَلْتَأْتِهِ مَنِيَّتُهُ وَهُوَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ، وَلْيَأْتِ إِلَى النَّاسِ الَّذِي يُحِبُّ أَنْ يُؤْتَى إِلَيْهِ، وَمَنْ بَايَعَ إِمَامًا فَأَعْطَاهُ صَفْقَةَ يَدِهِ، وَثَمَرَةَ قَلْبِهِ، فَلْيُطِعْهُ إِنِ اسْتَطَاعَ، فَإِنْ جَاءَ آخَرُ يُنَازِعُهُ فَاضْرِبُوا عُنُقَ الْآخَرِ»
‘আমরা একদা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সফরে ছিলাম। অতঃপর আমরা একটি স্থানে উপনীত হলাম। তারপর একজন নামাজের জন্য আমাদের আহ্বান জানালো। আর আমরাও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গিয়ে হাজির হলাম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন আল্লাহ্ যাকেই এ পৃথিবীতে নবীরূপে প্রেরণ করেছেন, তাকে এ দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করেছেন যে, তিনি তার উম্মাতকে ভালো কাজের নির্দেশ দিবেন এবং যা কিছু অকল্যাণকর সে ব্যাপারে তাদের ভীতি প্রদর্শণ করবেন। আর তোমাদের এই যে উম্মাত তার প্রথমাংশের জন্য যা কিছু মঙ্গলকর তা তারা লাভ করেছেন। আর তার শেষ অংশের জন্য এমন সব বালা-মুসিবত তথা অমঙ্গল আসতে থাকবে যার সাথে তোমরা কখনও পরিচিত নও। আবার কিছু বিপর্যয় ও ফেতনা আসবে, যা মানুষকে একে অপরের উপর প্রলুব্ধ করবে। আবার কিছু ফেতনা বা পরীক্ষা আসবে, তখন মুমিন ব্যক্তি বলবে, এটাতেই তো আমার ধ্বংস রয়েছে। তারপর তা কেটে যাবে। তারপর আবার কিছু ফিতনা বা পরীক্ষা আসবে, তখন মুমিন বলতে থাকবে, এটা এটা। এমতাবস্থায় যে ব্যক্তি জাহান্নামের আগুন থেকে নিষ্কৃতি এবং জান্নাতে প্রবেশ করতে চায়, তার মৃত্যু যেন এ অবস্থায় আসে যে, সে আল্লাহ এবং আখেরাতের ওপর ঈমানদার। আর সে এমন ব্যক্তির কাছে এমনভাবে আসবে যেভাবে আসা সে লোকটি পছন্দ করে। আর কোনো ব্যক্তি যদি কোনো ইমামের হাতে বাই‘আত তথা আনুগত্যের শপথ করে এবং অন্তর দিয়েই তাকে ইমাম হিসেবে গ্রহণ করে, তখন সে যেন তার সাধ্যানুসারে তার আনুগত্য করে। এর পর যদি অন্য কেউ তার সে ইমামের বিরুদ্ধে ঝগড়া করতে আসে তখন তোমাদের কর্তব্য হলো তার গর্দানে আঘাত করা (মুসলিম) [মুসলিম, ১৮৪৪।]।’
তাছাড়া কোনো এক ব্যক্তি এই বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন-করল :
يَا نَبِيَّ اللهِ، أَرَأَيْتَ إِنْ قَامَتْ عَلَيْنَا أُمَرَاءُ يَسْأَلُونَا حَقَّهُمْ وَيَمْنَعُونَا حَقَّنَا، فَمَا تَأْمُرُنَا؟ فَأَعْرَضَ عَنْهُ، ثُمَّ سَأَلَهُ، فَأَعْرَضَ عَنْهُ، ثُمَّ سَأَلَهُ فِي الثَّانِيَةِ أَوْ فِي الثَّالِثَةِ، فَجَذَبَهُ الْأَشْعَثُ بْنُ قَيْسٍ، وَقَالَ : «اسْمَعُوا وَأَطِيعُوا، فَإِنَّمَا عَلَيْهِمْ مَا حُمِّلُوا، وَعَلَيْكُمْ مَا حُمِّلْتُمْ»
‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের জন্য যখন নেতা মনোনীত হয় তখন তারা চায় যে আমরা যেন তাদের অধিকারগুলো আদায় করি। অথচ তারা আমাদের অধিকারগুলো আদায় করতে নারাজ। এই ব্যাপারে আপনার কি অভিমত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই ব্যাপারে নিরুত্তর রইলেন অর্থাৎ অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। উক্ত লোকটি এরপর তাকে আবারও প্রশ্ন করল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তাদের কথা শোন এবং তাদের আনগত্য কর। তারা যে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে তার জবাবদিহী তারাই করবে আর তোমাদের ওপর যে দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে তার দায়দায়িত্ব তোমাদের ওপরই বর্তাবে।’ [মুসলিম, ১৮৪৬]
জনসাধারণের ওপর শাসকবর্গের অধিকার এই যে, তারা যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাস্তবায়নের ব্যাপারে তাদের সহযোগিতা চাইবে তাতে সহযোগিতা করবে। এছাড়া তাদের প্রত্যেককেই কাজের নিজ নিজ গণ্ডি ও পরিসীমা এবং সামগ্রিক ভাবে সমাজে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন থাকবে। যাতে করে সকল কাজ তার স্বাভাবিক গতিতে চলে। কেননা, শাসকবর্গকে যদি প্রজাগণ তাদের সাধারণ প্রয়োজনীয় কাজে সহযোগিতা না করে তা হলে তা পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হতে পারে না।
শাসক বা রাষ্ট্র পরিচালকদের ওপর প্রজা সাধারণের অধিকার এই যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে তারা রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে যে আমানত লাভ করেছেন এবং জিম্মাদারী গ্রহণ করেছেন সে মোতাবেক তারা দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের দিকে লক্ষ্য রেখে তাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করবে। আর সেটা করতে হবে মুমিনদের পথ অনুসরণের মাধ্যমেই। সে পথের মানেই হচ্ছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কর্মপদ্ধতি। কারণ, এ পথেই তাদের, তাদের প্রজাবর্গ ও যারা তাদের অধিনস্থ রয়েছে তাদের জন্য সৌভাগ্য রয়েছে। প্রজাদের থেকে শাসকদের জন্য সন্তুষ্টি লাভের এটাই সবোত্তম মাধ্যম, এর মাধ্যমেই তাদের মধ্যকার সম্পর্ক মজবুত হয়, তারা তাদের শাসকদের নির্দেশের প্রতি আনুগত্য করে, যে আমানত তারা তাদের প্রতি ন্যস্ত করেছে সেটা সংরক্ষণে তৎপর থাকে। কেননা, যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে তাকে লোকেরাও ভয় করে চলে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে সন্তুষ্ট রাখে আল্লাহ মানুষের ব্যাপারে তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান এবং জনগণের মাধ্যমে আল্লাহ তাকে সন্তুষ্ট রাখেন। কারণ, সমস্ত মানুষের অন্তরতো আল্লাহর হাতেই নিবদ্ধ তিনি যে দিকে চান, সে দিকেই তা প্রত্যাবর্তন করেন।
আর মুসলিমদের জিম্মাদার তথা শাসকের অধিকার হচ্ছে এই যে, জনগণের পক্ষ থেকে তারা যে ব্যাপারে দায়িত্বশীল সে ব্যাপারে তাদের কল্যাণ কামনা করা প্রজাদের কর্তব্য। তারা কোনো ব্যাপারে গাফেল বা অন্যমনস্ক হয়ে গেলে সে ব্যাপারে তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেওয়াও প্রজা সাধারনের কর্তব্য। তারা সত্য পথ থেকে বিচ্যুত হলে তখন তাদের জন্য দোয়া করতে হবে। আর আল্লাহর আনুগত্যের খেলাফ নয় তাদের এমন সব কাজে সহযোগিতা ও সমর্থন করা প্রজাদের কর্তব্য। কেননা এরূপ সহযোগিতার মাধ্যমেই তারা তাদের ওপর ন্যাস্ত দায়িত্ব সঠিক এবং সুশৃংখলভাবে আঞ্জাম দিতে পারেন। এর বিপরীত যদি তাদের শুধু বিরুদ্ধাচরণ ও তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহই করা হয়, তা হলে সমাজে বিশৃংখলা দেখা দিবে বৈকি। আর এজন্যই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্যসহ সামাজিক দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গেরও আনুগত্য করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَأُوْلِي ٱلۡأَمۡرِ مِنكُمۡۖ﴾ [ النساء : ٥٩ ]
‘হে ঈমানদার লোকেরা! আল্লাহর আনুগত্য করো, আরও আনুগত্য করো আল্লাহর রাসূলের। আর আনুগত্য কর সেসব লোকের যারা তোমাদের ব্যাপারে ক্ষমতাপ্রাপ্ত।’ [সূরা আন-নিসা: ৫৯]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«عَلَى الْمَرْءِ الْمُسْلِمِ السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ فِيمَا أَحَبَّ وَكَرِهَ، إِلَّا أَنْ يُؤْمَرَ بِمَعْصِيَةٍ، فَإِنْ أُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ، فَلَا سَمْعَ وَلَا طَاعَةَ»
‘একজন মুসলিমের কর্তব্য হচ্ছে যতক্ষণ পর্যন্ত তার নেতা তাকে কোনো প্রকার পাপের কাজে আদেশ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার কথা শোনা এবং তার আনুগত্য করা- চাই তা তার কাছে ভালো লাগে কি ভালো না লাগে। তবে যখন সে কোনো অন্যায় কাজে আদেশ করবে তখন তার কথা শোনা এবং তার প্রতি আনুগত্য দেখানো যাবে না’ [মুসলিম, ১৮৩৯।]। - (বুখারী ও মুসলিম)।’
‘আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন:
«كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَفَرٍ، فَنَزَلْنَا مَنْزِلًا ... إِذْ نَادَى مُنَادِي رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : الصَّلَاةَ جَامِعَةً، فَاجْتَمَعْنَا إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ : " إِنَّهُ لَمْ يَكُنْ نَبِيٌّ قَبْلِي إِلَّا كَانَ حَقًّا عَلَيْهِ أَنْ يَدُلَّ أُمَّتَهُ عَلَى خَيْرِ مَا يَعْلَمُهُ لَهُمْ، وَيُنْذِرَهُمْ شَرَّ مَا يَعْلَمُهُ لَهُمْ، وَإِنَّ أُمَّتَكُمْ هَذِهِ جُعِلَ عَافِيَتُهَا فِي أَوَّلِهَا، وَسَيُصِيبُ آخِرَهَا بَلَاءٌ، وَأُمُورٌ تُنْكِرُونَهَا، وَتَجِيءُ فِتْنَةٌ فَيُرَقِّقُ بَعْضُهَا بَعْضًا، وَتَجِيءُ الْفِتْنَةُ فَيَقُولُ الْمُؤْمِنُ : هَذِهِ مُهْلِكَتِي، ثُمَّ تَنْكَشِفُ وَتَجِيءُ الْفِتْنَةُ، فَيَقُولُ الْمُؤْمِنُ : هَذِهِ هَذِهِ، فَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يُزَحْزَحَ عَنِ النَّارِ، وَيُدْخَلَ الْجَنَّةَ، فَلْتَأْتِهِ مَنِيَّتُهُ وَهُوَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ، وَلْيَأْتِ إِلَى النَّاسِ الَّذِي يُحِبُّ أَنْ يُؤْتَى إِلَيْهِ، وَمَنْ بَايَعَ إِمَامًا فَأَعْطَاهُ صَفْقَةَ يَدِهِ، وَثَمَرَةَ قَلْبِهِ، فَلْيُطِعْهُ إِنِ اسْتَطَاعَ، فَإِنْ جَاءَ آخَرُ يُنَازِعُهُ فَاضْرِبُوا عُنُقَ الْآخَرِ»
‘আমরা একদা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সফরে ছিলাম। অতঃপর আমরা একটি স্থানে উপনীত হলাম। তারপর একজন নামাজের জন্য আমাদের আহ্বান জানালো। আর আমরাও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গিয়ে হাজির হলাম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন আল্লাহ্ যাকেই এ পৃথিবীতে নবীরূপে প্রেরণ করেছেন, তাকে এ দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করেছেন যে, তিনি তার উম্মাতকে ভালো কাজের নির্দেশ দিবেন এবং যা কিছু অকল্যাণকর সে ব্যাপারে তাদের ভীতি প্রদর্শণ করবেন। আর তোমাদের এই যে উম্মাত তার প্রথমাংশের জন্য যা কিছু মঙ্গলকর তা তারা লাভ করেছেন। আর তার শেষ অংশের জন্য এমন সব বালা-মুসিবত তথা অমঙ্গল আসতে থাকবে যার সাথে তোমরা কখনও পরিচিত নও। আবার কিছু বিপর্যয় ও ফেতনা আসবে, যা মানুষকে একে অপরের উপর প্রলুব্ধ করবে। আবার কিছু ফেতনা বা পরীক্ষা আসবে, তখন মুমিন ব্যক্তি বলবে, এটাতেই তো আমার ধ্বংস রয়েছে। তারপর তা কেটে যাবে। তারপর আবার কিছু ফিতনা বা পরীক্ষা আসবে, তখন মুমিন বলতে থাকবে, এটা এটা। এমতাবস্থায় যে ব্যক্তি জাহান্নামের আগুন থেকে নিষ্কৃতি এবং জান্নাতে প্রবেশ করতে চায়, তার মৃত্যু যেন এ অবস্থায় আসে যে, সে আল্লাহ এবং আখেরাতের ওপর ঈমানদার। আর সে এমন ব্যক্তির কাছে এমনভাবে আসবে যেভাবে আসা সে লোকটি পছন্দ করে। আর কোনো ব্যক্তি যদি কোনো ইমামের হাতে বাই‘আত তথা আনুগত্যের শপথ করে এবং অন্তর দিয়েই তাকে ইমাম হিসেবে গ্রহণ করে, তখন সে যেন তার সাধ্যানুসারে তার আনুগত্য করে। এর পর যদি অন্য কেউ তার সে ইমামের বিরুদ্ধে ঝগড়া করতে আসে তখন তোমাদের কর্তব্য হলো তার গর্দানে আঘাত করা (মুসলিম) [মুসলিম, ১৮৪৪।]।’
তাছাড়া কোনো এক ব্যক্তি এই বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন-করল :
يَا نَبِيَّ اللهِ، أَرَأَيْتَ إِنْ قَامَتْ عَلَيْنَا أُمَرَاءُ يَسْأَلُونَا حَقَّهُمْ وَيَمْنَعُونَا حَقَّنَا، فَمَا تَأْمُرُنَا؟ فَأَعْرَضَ عَنْهُ، ثُمَّ سَأَلَهُ، فَأَعْرَضَ عَنْهُ، ثُمَّ سَأَلَهُ فِي الثَّانِيَةِ أَوْ فِي الثَّالِثَةِ، فَجَذَبَهُ الْأَشْعَثُ بْنُ قَيْسٍ، وَقَالَ : «اسْمَعُوا وَأَطِيعُوا، فَإِنَّمَا عَلَيْهِمْ مَا حُمِّلُوا، وَعَلَيْكُمْ مَا حُمِّلْتُمْ»
‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের জন্য যখন নেতা মনোনীত হয় তখন তারা চায় যে আমরা যেন তাদের অধিকারগুলো আদায় করি। অথচ তারা আমাদের অধিকারগুলো আদায় করতে নারাজ। এই ব্যাপারে আপনার কি অভিমত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই ব্যাপারে নিরুত্তর রইলেন অর্থাৎ অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। উক্ত লোকটি এরপর তাকে আবারও প্রশ্ন করল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তাদের কথা শোন এবং তাদের আনগত্য কর। তারা যে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে তার জবাবদিহী তারাই করবে আর তোমাদের ওপর যে দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে তার দায়দায়িত্ব তোমাদের ওপরই বর্তাবে।’ [মুসলিম, ১৮৪৬]
জনসাধারণের ওপর শাসকবর্গের অধিকার এই যে, তারা যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাস্তবায়নের ব্যাপারে তাদের সহযোগিতা চাইবে তাতে সহযোগিতা করবে। এছাড়া তাদের প্রত্যেককেই কাজের নিজ নিজ গণ্ডি ও পরিসীমা এবং সামগ্রিক ভাবে সমাজে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন থাকবে। যাতে করে সকল কাজ তার স্বাভাবিক গতিতে চলে। কেননা, শাসকবর্গকে যদি প্রজাগণ তাদের সাধারণ প্রয়োজনীয় কাজে সহযোগিতা না করে তা হলে তা পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হতে পারে না।
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন