HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

প্রবৃত্তি পূজাই সকল ব্যাধির কারণ

লেখকঃ ড. আব্দুল আজিজ আব্দুল লতিফ

নারী প্রীতির প্রতিকার :
এ পর্যন্ত আমরা প্রবৃত্তি প্রসংগ নিয়ে আলোচনা করলাম, যা অনেকটাই বিস্তারিত। এখন আমরা এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার ও মুক্ত হওয়ার বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব।

আবুলফারাজ ইবনে জাওজি রহ. ‘জাম্মুল হাওয়া’ এবং ইবনুল কাইয়ূম রহ. ‘রওজাতুল মুহিববীন’ নামক গ্রন্থে প্রবৃত্তির বিভিন্ন প্রকার ও প্রকৃতির ওপর বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। ইবনে জাওজি রহ. প্রবৃত্তির প্রত্যেক প্রকার আলাদা আলাদা লিখে, আলাদা আলাদা চিকিৎসা পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন : হারাম দৃষ্টি প্রতিরোধের জন্য আলাদা চিকিৎসা, বেগানা নারীর সঙ্গ ত্যাগ করার আলাদা চিকিৎসা ইত্যাদি। এভাবে ইবনে জাওজি রহ. প্রবৃত্তির প্রায় পঞ্চাশটি চিকিৎসা পদ্ধতি সংক্ষেপে ও ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করেছেন।

এখানে আমরা আবুলফারাজ রহ. এর পদ্ধতি অনুসরণ করে উল্লেখ করছি, তিনি বলেন, ‘জেনে রেখ! প্রেম ও মহববতের রোগ ভিন্ন ভিন্ন। সে হিসেবে তার চিকিৎসাও ভিন্ন ভিন্ন হওয়া স্বাভাবিক। সবেমাত্র প্রেমে-পড়া ব্যক্তি আর দীর্ঘ দিন থেকে প্রেমে লিপ্ত ব্যক্তির চিকিৎসা এক নয়। তবে এটা ঠিক যে, প্রবৃত্তি ও প্রেম যতক্ষণ পর্যন্ত শেষ পর্যায়ে না পৌঁছুবে, ততক্ষণ তার চিকিৎসা সম্ভব। হ্যাঁ, চুরান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেলে, তখন আর চিকিৎসা সম্ভব নয়। সেটা হচ্ছে পাগল ও উন্মাদনার অবস্থা, যে অবস্থায় কোনো চিকিৎসা ফলপ্রসূ হয় না।’ (জাম্মুল হাওয়া : ৪৯৮)

তিনি আরো বলেন, ‘বার বার দৃষ্টির ফলে প্রেমিকার ছবি অন্তরে স্থীর হয়। যার নিদর্শন : অন্তরে শুধু সে-ই সে বিদ্যমান থাকে, অন্তরে অন্তরে তাকে অবলোকন করে, ঘুমে তাকে জড়িয়ে ধরে, একা একা তার সঙ্গে কথা বলে ইত্যাদি। জেনে রেখ! এর কারণ হচ্ছে প্রেমিকাকে পাওয়ার বাসনা। আর এ পাওয়ার বাসনাই অন্তরের একটি ব্যাধি হওয়ার জন্য যথেষ্ট। লম্পট ও বখাটেরা সম্ভাব্য চাওয়া পাওয়ার মধ্যেই লিপ্ত হয়, অসম্ভব নিয়ে তারা ব্যস্ত হয় না। কারণ, কেউ বাদশাহর স্ত্রীকে দেখে তার সঙ্গে অন্তরের যোগসূত্র কায়েম করে না। কারণ, সে জানে এ আশা কোনো দিন তার পুরণ হবে না, এখানে সে নিরাশ। সাধারণত যে যে জিনিসের ব্যাপারে আশাবাদী হয়, সে ঐ জিনিস অর্জন করার জন্যই চেষ্টা করে। কোনভাবে তা অর্জন করতে সক্ষম না হলে, আক্ষেপের আগুনে জ্বলে পুড়ে মরে।

এ থেকে পরিত্রাণের উপায় : প্রেমিকা থেকে দূরে থাকার দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করা, তার প্রতি দৃষ্টি না দেয়া, তাকে পাওয়ার আশা ছেড়ে দেয়া, তার ব্যাপারে নিরাশ হয়ে যাওয়া।’ (জাম্মুল হাওয়া : ৫০১-৫০২)

আরেকটি স্থানে তিনি বলেন : ‘অন্তকরণ শুদ্ধ করার একটি পদ্ধতি হচ্ছে, তুমি মনে কর তোমার প্রেমিকা তোমার অন্তরের ধারণা অনুযায়ী বিদ্যমান নেই, তার ত্রুটিগুলো নিয়ে তুমি চিন্তা কর। কারণ, মানুষের ভেতরটা নাপাকি ও বর্জ্যে ভরা। এর মধ্যে প্রেমিক শুধু ভাল দিকটাই দেখে, তার প্রবৃত্ত তাকে প্রেমিকার খারাপ বস্ত্তগুলোর ব্যাপারে চিন্তা করতে দেয় না। দ্বিতীয়ত মানুষ স্বাভাবিক অবস্থায় না থাকলে, প্রকৃত বাস্তবতা বুঝতে সক্ষম হয় না। প্রবৃত্তি এমন জিনিস যে, শ্রীহীন ও অসুন্দর প্রেমিকাকেও প্রেমিকের নিকট সজ্জিত করে পেশ করে।

এ জন্যই ইবনে মাসউদ রা. বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যদি কোনো নারীর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়, সে যেন সঙ্গে সঙ্গে সে নারীর বর্জ্য ও দুর্গন্ধ লাশের কথা চিন্তা করে।’ (জাম্মুল হাওয়া : ৫৪৬-৫৪৭ সংক্ষিপ্ত)

ইবনে কাইয়ূম রহ. এ ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য যে পদ্ধতির কথা উল্লেখ করেছেন, তার কয়েকটি আমরা এখানে উল্লেখ করছি। তিনি বলেন, এ থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি পদ্ধতি হচ্ছে, যেমন ‘এ কথা চিন্তা করা যে, আমাকে প্রবৃত্তির গোলাম হওয়ার জন্য সৃষ্টি করা হয়নি, আমাকে আরো বড় কাজ ও দায়িত্বের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, যা প্রবৃত্তির বিরোধিতা ভিন্ন সম্পাদন করা সম্ভব নয়। যেমন কেউ বলেছে,

وقد هيؤوك لأمر لو فطنت له فاربأ بنفسك أن ترعى مع الهمل .

‘সে তোমাকে এমন এক মহৎ কাজের জন্য সৃষ্টি করেছে, যদি তুমি জানতে! তুমি নিজের ওপর রহম কর, অনর্থের পিছু নিয়ো না।’ (রওজাতুল মুহিবিবন : ৪৭২)

‘প্রবৃত্তির অনুসরণ ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করা। কারণ, যে কেউ স্বীয় প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে, সে নিজের মধ্যে অপমান বোধ করেছে। অতএব, প্রবৃত্তপূজারীদের দাপট ও অহংকারের ধোঁকায় পতিত হওয়া সমীচিন নয়। তারা অন্তরের দিক হতে খুব নিচু, তারা অপমাণিত। তারা দু’টি ঘৃণীত স্বভাবে অভিযুক্ত : অহংকার ও অপমান।’ (রওজাতুল মুহিবিবন : ৪৭৩)

‘ জেনে রাখা জরুরি যে, যে স্থানেই প্রবৃত্তির অনুপ্রবেশ ঘটেছে, সে স্থানেই বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে। ইলমের সঙ্গে প্রবৃত্তির সংমিশ্রন হওয়ার ফলে বেদআত ও গোমরাহীর জন্ম হয়েছে, এ প্রবৃত্তি দুনিয়ার মোহ ত্যাগকারীদের মধ্যে প্রবেশ করে, তাদেরকে সুন্নতপরিপন্থী করে দিয়েছে, বাদশাদের দরবারে প্রবেশ করে, তাদেরকে অত্যাচারী ও সত্য প্রত্যাখ্যানকারী বানিয়েছে, নিয়োগ কমিটিতে প্রবেশ করে, তাদেরকে আল্লাহ ও মুসলমানদের সঙ্গে খেয়ানতকারী বানিয়ে দিয়েছে, যার ফলে নিয়োগও প্রবৃত্তের জন্য বদলি-বাতিলও প্রবৃত্তের জন্য।’ (রওজাতুল মুহিবিবন : ৪৭৪)

‘প্রবৃত্তির সঙ্গে যুদ্ধ করা যদিও কাফেরদের সঙ্গে যুদ্ধ করার সমান নয়, তবু ছোটও নয়। জনৈক ব্যক্তি হাসান বসরি রহ.-কে জিজ্ঞাসা করে ছিল, ‘হে আবু সাইদের বাপ! কোন্ জিহাদ সব চেয়ে উত্তম? তিনি বললেন, প্রবৃত্তের সঙ্গে যুদ্ধ করা। আমাদের উস্তাদ শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.-কে বলতে শুনেছি, ‘কাফের, মুনাফেকদের সাথে জেহাদ করার মূলেও প্রবৃত্তের সঙ্গে জেহাদ করা। কারণ, তাদের সাথে জেহাদ করার আগে নিজের নফস ও প্রবৃত্তের সাথে জেহাদ না হলে, জেহাদের জন্য বের হওয়াও সম্ভব হতো না।’ (রওজাতুল মুহিবিবন : ৪৭৮)

‘প্রবৃত্তের অনুসরণ আল্লাহ প্রদত্ত্ব সাহায্যের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়, লাঞ্ছনার দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দেয়। প্রবৃত্তির অনুসারীরা বলে, যদি আল্লাহ তওফিক দেয়, তবে এ করব, সে করব ইত্যাদি। অথচ সে প্রবৃত্তির অনুসরণ করে নিজের জন্য তওফিকের দরজাসমূহ বন্ধ করে দিয়েছে। ফুজায়েল ইবনে আয়াজ রহ. বলেন, যে ব্যক্তির ওপর নফস্ ও প্রবৃত্তির অনুসরণ প্রবল হয়, তার জন্য তওফিকের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়।’ (রওজাতুল মুহিবিবন : ৪৭৯)

‘প্রবৃত্ত ও তওহিদ হচ্ছে দু'মেরুর দু’টি জিনিস। প্রবৃত্তি একটি মূর্তির ন্যায়, যার অন্তরে প্রবৃত্তির পরিমাণ বেশী, তার অন্তরে এ মূর্তির অস্তিত্বও শক্তিশালী। আল্লাহ তাআলা রাসূলদের মাটির তৈরি মূর্তি ভাঙ্গার জন্য ও এক আল্লাহর এবাদত প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রেরণ করেছেন। এর অর্থ এ নয় যে, মাটির তৈরী মূর্তিগুলো ভেঙ্গে ফেলো আর অন্তরের মূর্তি গুলো রেখে দাও। বরং অন্তর থেকে মূর্তি দূর করার নির্দেশই প্রথম। লক্ষ্য করুন ইবারিহমের বাণীর প্রতি। আল্লাহ তাআলা বলেন,

(আরবি)

‘‘যখন সে তার পিতা ও কওমকে বলল, ‘এ মূর্তিগুলো কী, যেগুলোর পূজায় তোমরা রত রয়েছ’? (আম্বিয়া : ৫২) কি চমৎকার মিল! অন্তরে বিদ্যমান মূর্তি ও আল্লাহকে দিয়ে যেসব মূর্তির এবাদত করা হয় তার মাঝে।’ (রওজাতুল মুহিবিবন : পৃ :৪৮১-৪৮২)

প্রত্যেক ব্যক্তির একটি শুরু আছে, আরেকটি আছে শেষ। যার শুরু প্রবৃত্তি দিয়ে তার শেষ হবে লাঞ্ছনা, অপমান, নৈরাশ্য ও মুসিবতের মাধ্যমে। প্রবৃত্তির অনুসরণ অনুপাতে এর আকারও বেশী হতে থাকবে, অবশেষে এটি শাস্তিতে পরিণত হবে এবং তাকে ভেতরে ভেতরে পুড়ে মারবে। যেমন কেউ বলেছেন,

‘যৌবনে অনেক স্বপ্ন ও অনেক আশা ছিলো, যা বার্ধক্যে হতাশা ও অশান্তিতে পরিণত হয়েছে।’

মুসিবত ও পতিত অবস্থার লোকদের পরখ করলে দেখা যাবে যে, তাদের শুরুটা হয়েছে প্রবৃত্তির অনুসরণ ও বিবেককে বর্জন করার মধ্য দিয়ে। পক্ষান্তরে যার শুরুটা হবে প্রবৃত্তির বিরোধিতা ও বিবেকচালিত, তার শেষটাও হবে সম্মান ও মর্যাদার। আল্লাহর নিকটে সে সম্মানিত, মানুষের নিকটও সে সম্মানিত। মাহলাব ইবনে আবু সাকরকে প্রশ্ন করা হয়ে ছিলো, তুমি এ মর্যাদায় কিভাবে উন্নীত হয়েছ? তিনি বলেন, বিবেকের অনুসরণ ও প্রবৃত্তের বিরুদ্ধাচারণ করে। এটা হচ্ছে দুনিয়ার শুরু শেষ। পরকালের প্রতিদান হলো, যে ব্যক্তি প্রবৃত্তির বিরুদ্ধাচারণ করবে, তার স্থান জান্নাত আর যে ব্যক্তি প্রবৃত্তির অনুকরণ করবে, তার স্থান জাহান্নাম।’ (জাম্মুল হওয়া : ৪৮৩,৪৮৪)

মুদ্দা কথা : প্রত্যেক রোগের ঔষধ রয়েছে, যে জানলো সে-তো জানলোই। আর যে জানলো না সে মুর্খই রয়ে গেল। তবে, শেষ কথা হচ্ছে, যে ব্যক্তি এ ধরনের প্রবৃত্তির জালে আবদ্ধ হয়ে যায়, তার উচিত দেরি না করে, দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে এর কিচিৎসায় লেগে যাওয়া। ধৈর্যধারণ করা, ধৈর্যের আসবাব গ্রহণ করা এবং সম্মানজনক কাজে ব্যাপৃত হওয়া, নোংরামি হতে দূরে থাকা, আল্লাহর সত্তাকে নিয়ে ধ্যানমগ্ন হওয়া, নফস্কে প্রবৃত্তি, কু-বাসনা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত রাকা, নেককার লোকদের সঙ্গ গ্রহণ করা, আল্লাহর দরবারে সর্বদা অবনত মস্তক হয়ে থাকা এবং তার দরাবারে নিজেকে সর্বতোভাবে সোর্পদ করা।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন