hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আল-কুরআন ও তার সুমহান মর্যাদা

লেখকঃ শাইখ আব্দুল আযীয ইবন আবদুল্লাহ আলে শাইখ

১৩
কুরআন তিলাওয়াতকারী ও হিফযকারীকে কতিপয় বিষয় গুরুত্ব সহকারে খেয়াল রাখা উচিত:
প্রথমত: সে যে কাজ করছে সে কাজে একমাত্র আল্লাহর জন্যই নিষ্ঠা সহকারে হওয়া, তাতে দুনিয়ার কোনো স্বার্থ না থাকা, কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿ مَن كَانَ يُرِيدُ ٱلۡحَيَوٰةَ ٱلدُّنۡيَا وَزِينَتَهَا نُوَفِّ إِلَيۡهِمۡ أَعۡمَٰلَهُمۡ فِيهَا وَهُمۡ فِيهَا لَا يُبۡخَسُونَ ١٥ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ لَيۡسَ لَهُمۡ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ إِلَّا ٱلنَّارُۖ وَحَبِطَ مَا صَنَعُواْ فِيهَا وَبَٰطِلٞ مَّا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٦ ﴾ [ هود : ١٦-١٥ ]

“যে ব্যক্তি দুনিয়ার জীবন ও তার জৌলুস কামনা করে, আমরা সেখানে তাদেরকে তাদের আমলের ফল পুরোপুরি দিয়ে দেই এবং সেখানে তাদেরকে কম দেয়া হবে না। এরাই তারা, আখিরাতে যাদের জন্য আগুন ছাড়া আর কিছুই নেই এবং তারা সেখানে যা করে তা বরবাদ হয়ে যাবে আর তারা যা করত, তা সম্পূর্ণ বাতিল।” [সূরা হূদ, আয়াত ১৫-১৬]

﴿ مَن كَانَ يُرِيدُ حَرۡثَ ٱلۡأٓخِرَةِ نَزِدۡ لَهُۥ فِي حَرۡثِهِۦۖ وَمَن كَانَ يُرِيدُ حَرۡثَ ٱلدُّنۡيَا نُؤۡتِهِۦ مِنۡهَا وَمَا لَهُۥ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِن نَّصِيبٍ ٢٠ ﴾ [ الشورا : ٢٠ ]

“যে আখিরাতের ফসল কামনা করে, আমরা তার জন্য তার ফসলে প্রবৃদ্ধি দান করি, আর যে দুনিয়ার ফসল কামনা করে আমরা তাকে তা থেকে কিছু দেই এবং আখিরাতে তার জন্য কোনো অংশই থাকবে না”। [সূরা শূরা, আয়াত ২০]

﴿ مَّن كَانَ يُرِيدُ ٱلۡعَاجِلَةَ عَجَّلۡنَا لَهُۥ فِيهَا مَا نَشَآءُ لِمَن نُّرِيدُ ثُمَّ جَعَلۡنَا لَهُۥ جَهَنَّمَ يَصۡلَىٰهَا مَذۡمُومٗا مَّدۡحُورٗا ١٨ ﴾ [ الاسراء : ١٨ ]

“যে দুনিয়া চায় আমি সেখানে তাকে দ্রুত দিয়ে দেই, যা আমি চাই, যার জন্য চাই। তারপর তার জন্য নির্ধারণ করি জাহান্নাম, সেখানে সে প্রবেশ করবে নিন্দিত, বিতাড়িত অবস্থায়”। [সূরা আল-ইসরা, আয়াত ১৮]

عن أبي هريرة - رضي الله عنه -: أن النبي -صلى الله عليه وسلم- قال : « إِنَّ أَوَّلَ النَّاسِ يُقْضَى يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَيْهِ رَجُلٌ اسْتُشْهِدَ، فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا، قَالَ : فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا؟ قَالَ : قَاتَلْتُ فِيكَ حَتَّى اسْتُشْهِدْتُ، قَالَ : كَذَبْتَ، وَلَكِنَّكَ قَاتَلْتَ لِأَنْ يُقَالَ : جَرِيءٌ، فَقَدْ قِيلَ، ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ حَتَّى أُلْقِيَ فِي النَّارِ، وَرَجُلٌ تَعَلَّمَ الْعِلْمَ، وَعَلَّمَهُ وَقَرَأَ الْقُرْآنَ، فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا، قَالَ : فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا؟ قَالَ : تَعَلَّمْتُ الْعِلْمَ، وَعَلَّمْتُهُ وَقَرَأْتُ فِيكَ الْقُرْآنَ، قَالَ : كَذَبْتَ، وَلَكِنَّكَ تَعَلَّمْتَ الْعِلْمَ لِيُقَالَ : عَالِمٌ، وَقَرَأْتَ الْقُرْآنَ لِيُقَالَ : هُوَ قَارِئٌ، فَقَدْ قِيلَ، ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ حَتَّى أُلْقِيَ فِي النَّارِ، وَرَجُلٌ وَسَّعَ اللهُ عَلَيْهِ، وَأَعْطَاهُ مِنْ أَصْنَافِ الْمَالِ كُلِّهِ، فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا، قَالَ : فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا؟ قَالَ : مَا تَرَكْتُ مِنْ سَبِيلٍ تُحِبُّ أَنْ يُنْفَقَ فِيهَا إِلَّا أَنْفَقْتُ فِيهَا لَكَ، قَالَ : كَذَبْتَ، وَلَكِنَّكَ فَعَلْتَ لِيُقَالَ : هُوَ جَوَادٌ، فَقَدْ قِيلَ، ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ، ثُمَّ أُلْقِيَ فِي النَّارِ» .

আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম এমন এক ব্যক্তির ব্যাপারে ফয়সালা হবে যে শহীদ হয়েছিল। তাকে আনা হবে এবং তাকে যে সব নিয়ামত দেয়া হয়েছিল তাও তার সামনে পেশ করা হবে। সে তা চিনতে পারবে। আল্লাহ তা‘আলা তাকে জিজ্ঞেস করবেন, আমি যে সব নিয়ামত তোমাকে দিয়েছিলাম তার বিনিময়ে তুমি কি কাজ করেছ? সে বলবে, আমি তোমার পথে জিহাদ করে শহীদ হয়েছি। তিনি বলবেন: তুমি মিথ্যা বলেছ। তুমি তো এ জন্য জিহাদ করেছ যে, লোকেরা তোমাকে বীর-বাহাদুর বলবে। আর দুনিয়াতে তা বলাও হয়েছে। অতঃপর তার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হবে এবং তাকে উপুড় করে টেনে নিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। অতঃপর আরেক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে, সে ইলম অর্জন করেছে, তা লোকদেরকে শিক্ষা দিয়েছে এবং কুরআন পাঠ করেছে। তাকে উপস্থিত করা হবে এবং তাকে দেয়া নিয়ামতের কথা তার সামনে তুলে ধরা হবে, সে তা দেখে চিনতে পারবে। তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, তুমি তোমার নিয়ামতের কি সদ্ব্যবহার করেছো? সে বলবে, আমি ইলম অর্জন করেছি, লোকদেরকে তা শিক্ষা দিয়েছি এওং তোমার সন্তুষ্টির জন্য কুরআন পাঠ করেছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা কথা বলছ। বরং তুমি এ উদ্দেশ্যে ইলম অর্জন করেছিলে যে, লোকেরা তোমাকে আলেম বা বিদ্বান বলবে, এবং কুরআন এ জন্যে পাঠ করেছিলে যে, তোমাকে ক্বারী বলা হবে। আর তা বলাও হয়েছে। অতঃপর তার সম্বন্ধে নির্দেশ দেয়া হবে এবং তাকে মুখের উপর উপুর করে টেনে নিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। অতঃপর আরেক ব্যক্তিকে আনা হবে, তাকে অজস্র ধন- সম্পদ দান করা হয়েছে এবং নানা প্রকারের সম্পদ দেওয়া হয়েছে। তাকে দেওয়া সুযোগ-সুবিধাগুলো তার সামনে তুলে ধরা হবে। সে তা চিনতে পারবে। আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন, তোমার এ সম্পদ দ্বারা তুমি কি কাজ করেছ? সে বলবে, যেখানে ব্যয় করলে তুমি সন্তুষ্ট হবে এমন কোনো খাত আমি বাদ আমি বাদ দেইনি বরং সেখানেই খরচ করেছি তোমার সন্তুষ্ট লাভের উদ্দেশ্যে। মহান আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা কথা বলছ। বরং তুমি এ জন্যেই দান করেছ যে, লোকেরা তোমাকে দাতা বলবে। আর তা বলাও হয়েছে। অতঃপর নির্দেশ দেয়া হবে এবং তদনুযায়ী তাকে উপুড় করে টেনে নিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯০৫।]

ইবন কাইয়্যেম রহ. এ হাদীস উল্লেখ করে বলেন, শায়খুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আম্বিয়াকিরামগণ যেমনিভাবে সর্বশ্রেষ্ট মানব, তেমনিভাবে তাদের মতো বেশ-ভূষা ধারণকারী মিথ্যাবাদিরা হলো সর্বনিকৃষ্ট মানুষ, তারা দাবী করে তারা তাদের অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু বাস্তবে তারা তাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। নবী রাসূলদের পরে সর্বোৎকৃষ্ট মানুষ হলো উলামা কিরাম, শহীদগণ, সিদ্দীকগণ ও মুখলিস বান্দাহগণ। আবার তেমনিভাবে যারা তাদের বেশ-ভূষা ধারণকারী মিথ্যাবাদিরা হলো নিকৃষ্ট মানুষ, তারা দাবী করে তারা তাদের অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু বাস্তবে তারা তাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।

দ্বিতীয়তঃ যারা কুরআন হিফয করতে চায় তাদের উচিত বারবার তিলাওয়াত করা ও অনবরত তেলাওয়াত করতে থাকা; যাতে হিফয ঠিক থাকে। বান্দার সৎ নিয়্যাত থাকলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে হিফযের পথ সহজ করে দিবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ وَلَقَدۡ يَسَّرۡنَا ٱلۡقُرۡءَانَ لِلذِّكۡرِ فَهَلۡ مِن مُّدَّكِرٖ ١٧ ﴾ [ القمر : ١٧ ]

“আমি কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি বোঝার জন্যে। অতএব, কোনো চিন্তাশীল আছে কি?” [সূরা ক্বামার, আয়াত ১৭]

তৃতীয়ত: যে ব্যক্তি কুরআনের কিছু অংশ হিফয করেছে তার উচিত তা নিয়মিত তিলাওয়াত করা ও স্মরণ রাখা, যাতে ভুলে না যায়। সালাতের মধ্যে তিলাওয়াত করে হিফয ধরে রাখা যায়, কেননা সালাতে কুরআনের কিছু অংশ পড়বে সে তা ভুলবে না।

عن ابن عمر -رضي الله عنهما- قال : قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم -: «إِنَّمَا مَثَلُ صَاحِبِ الْقُرْآنِ كَمَثَلِ الْإِبِلِ الْمُعَقَّلَةِ، إِنْ عَاهَدَ عَلَيْهَا أَمْسَكَهَا، وَإِنْ أَطْلَقَهَا ذَهَبَتْ» . وَزَادَ فِي حَدِيثِ مُوسَى بْنِ عُقْبَةَ : «وَإِذَا قَامَ صَاحِبُ الْقُرْآنِ فَقَرَأَهُ بِاللَّيْلِ، وَالنَّهَارِ ذَكَرَهُ، وَإِذَا لَمْ يَقُمْ بِهِ نَسِيَهُ»

ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কুরআন হিফযকারির উদাহরণ হলো পা বাঁধা উটের মত, যদি এর মালিক এটির প্রতি লক্ষ্য রাখে তাহলে ধরে রাখতে পারে। আর যদি তার বাঁধন খুলে দেয় তাহলে সেটি ছাড়া পেয়ে চলে যায়।”

ইমাম মুসলিম তার রেওয়ায়েতে আরো সংযোগ করেছে, “কুরআনের হাফেয যদি রাতে ও দিনে কুরআন পড়ে তাহলে তা স্মরণে থাকে, আর যদি তা নিয়ে তা দাঁড়ায় তবে ভুলে যায়।” [বুখারী, ৫০৩১, মুসলিম ৭৮৯।]

চতুর্থত: পরস্পর তিলাওয়াত করা কুরআন হিফযে খুবই সাহায্য করে। জিবরাঈল আলাইহিস সালাম প্রতি বছর একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে পরস্পর কুরআন তিলাওয়াত শুনাতেন। তবে রাসূলের মৃত্যুর বছর দু’বার শুনিয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরস্পরে কুরআন শোনানোর ফযিলত সম্পর্কে বলেছেন:

«وَمَا اجْتَمَعَ قَوْمٌ فِي بَيْتٍ مِنْ بُيُوتِ اللهِ، يَتْلُونَ كِتَابَ اللهِ، وَيَتَدَارَسُونَهُ بَيْنَهُمْ، إِلَّا نَزَلَتْ عَلَيْهِمِ السَّكِينَةُ، وَغَشِيَتْهُمُ الرَّحْمَةُ وَحَفَّتْهُمُ الْمَلَائِكَةُ، وَذَكَرَهُمُ اللهُ فِيمَنْ عِنْدَهُ ....»

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন কোনো এক দল লোক আল্লাহর ঘরে একত্রিত হয়ে কুরআন তিলাওয়াত করে ও পরস্পরে শোনায়, তখন তাদের উপর আল্লাহর প্রশান্তি নাযিল হয়, আল্লহর রহমত তাদেরকে বেষ্টন করে রাখে, ফেরেশতাগণ তাদেরকে ঘিরে রাখেন এবং আল্লাহ তাঁর নিকট যারা আছেন তাদের সাথে তিনি তাদেরকে স্মরণ করেন।” [মুসলিম, হাদীস নং ২৬৯৯।]

পঞ্চমত: আল্লাহর কিতাব হতে মুসলিমের গাফিল হওয়া উচিত নয়। তিলাওয়াত করে খতম করা উচিত। সালাফগণের অভ্যাস ছিল কুরআন খতম করা। তাদের কেউ কেউ দু’মাসে এক খতম করতেন, কেউ আবার মাসে এক খতম করতেন, আবার কেউ দশ দিনে, আট দিনে খতম করতেন। অধিকাংশে সাত দিনে খতম করতেন, আবার কেউ এর চেয়ে কম সময়েও খতম করতেন।

উত্তম হলো সাত দিনে খতম করা, কেননা তা এক দল সাহাবীদের থেকে প্রমাণিত, যেহেতু তারা কুরআনকে সাত হিযবে ভাগ করেছেন। প্রতিদিন এক হিযব পরিমাণ পড়তেন।

عن أوس بن حذيفة قال : سَأَلْتُ أَصْحَابَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَيْفَ يُحَزِّبُونَ الْقُرْآنَ، قَالُوا : ثَلَاثٌ، وَخَمْسٌ، وَسَبْعٌ، وَتِسْعٌ، وَإِحْدَى عَشْرَةَ، وَثَلَاثَ عَشْرَةَ، وَحِزْبُ الْمُفَصَّلِ وَحْدَهُ

আউস ইবন হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলের সাহাবীদেরকে জিজ্ঞেস করলাম, তারা কিভাবে কুরআনকে ভাগ করে তিলাওয়াত করেছেন? তারা বললেন, তিন, পাঁচ, সাত, নয়, এগারো, তেরো এবং হিযবে মুফাসসল একত্রে [আবু দাউদ, হাদীস নং ১৩৯৩।]।

হিযবে মুফাসসল হলো সূরায়ে ক্বাফ থেকে কুরআনের শেষ পর্যন্ত। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবন ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহুমাকে বলেছেন,

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «اقْرَإِ القُرْآنَ فِي شَهْرٍ» قُلْتُ : إِنِّي أَجِدُ قُوَّةً حَتَّى قَالَ : «فَاقْرَأْهُ فِي سَبْعٍ وَلاَ تَزِدْ عَلَى ذَلِكَ»

“তুমি মাসে একবার কুরআন খুতম কর। আমি বললাম, আমি আরো বেশি পড়ার শক্তি রাখি। তিনি বললেন, তাহলে সাত দিনে খতম কর। এর চেয়ে বেশি পড়োনা। [বুখারী, হাদীস নং ৫০৫৪।]

আর যে ব্যক্তি তিন দিনের কমে কুরআন খতম করে সাধারণত সে এতে তাড়াহুড়া করে, পঠিত আয়াতের অর্থ বুঝে না। একজন মুসলিমের এ কাজ করা ঠিক নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে বলেছেন:

عنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «لَا يَفْقَهُ مَنْ قَرَأَ الْقُرْآنَ فِي أَقَلَّ مِنْ ثَلَاثٍ»

আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবন ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি তিন দিনের কমে কুরআন খতম করে সে তা বুঝতে পারে না।” [আবু দাউদ, হাদীস নং ১৩৯৪।]

অতঃএব, সুন্নত হলো কমপক্ষে তিন দিনে কুরআন খতম করা। মানুষ বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে, কেউ অধিক জ্ঞানের অধিকারী, সূক্ষ্ম বুঝ সম্পন্ন, দ্রুত পড়তে পারে এবং অল্প ব্যস্ত। এ ধরণের লোক তার চেয়ে কম দক্ষ লোকের চেয়ে বেশী দ্রুত পড়তে পারে। পূর্ববর্তী উলামা কিরামগণ রাতের প্রথমভাগে বা দিনের প্রথম প্রহরে কুরআন খতম করা মুস্তাহাব বলেছেন। কেননা যে ব্যক্তি রাতে কুরআন খতম করে তার জন্য ফেরেশতারা সকাল পর্যন্ত দো‘আ করতে থাকেন, আর যে দিনের বেলায় খতম করে তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত দো‘আ করতে থাকেন।

এ মতটি সা‘দ ইবন আবু ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে মাওকুফ সূত্রে বর্ণিত রয়েছে। ইমাম দারাক্বুতনী একে হাসান বলেছেন।” [সুনানে দারাকুতনী, হাদীস নং ৩৪৮৬।]

ষষ্ঠত: মুসলিমের উচিত সে যা পড়ে তা বুঝার চেষ্টা করা, যাতে সে যা পড়ে তা বুঝে নিতে পারে আর এতে তার গভীর জ্ঞান ও খুশু‘ও অর্জন হবে। কেননা তিলাওয়াতের মূল উদ্দেশ্য শুধু তিলাওয়াত করাই না, কেননা শুধু তিলাওয়াত আহলে কিতাবিদের সাথে সাদৃশ্য রাখে, যাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ وَمِنۡهُمۡ أُمِّيُّونَ لَا يَعۡلَمُونَ ٱلۡكِتَٰبَ إِلَّآ أَمَانِيَّ وَإِنۡ هُمۡ إِلَّا يَظُنُّونَ ٧٨ ﴾ [ البقرة : ٧٨ ]

“আর তাদের মধ্যে আছে নিরক্ষর, তারা কেবল তিলাওয়াত ছাড়া কিতাবের কোনো জ্ঞান রাখে না এবং তারা শুধুই ধারণা করে থাকে।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত ৭৮]

অর্থাৎ তারা কুরআন পড়ে, কিন্তু এতে কি রয়েছে তার কিছুই জানে না। অথচ আল্লাহ তা‘আলা গভীর চিন্তা-ভাবনা ও বুঝে শুনে কুরআন তিলাওয়াতের ব্যাপারে কুরআনের বিভিন্ন স্থানে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ إِنَّآ أَنزَلۡنَٰهُ قُرۡءَٰنًا عَرَبِيّٗا لَّعَلَّكُمۡ تَعۡقِلُونَ ٢ ﴾ [ يوسف : ٢ ]

“নিশ্চয় আমরা একে আরবী কুরআনরূপে নাযিল করেছি; যাতে তোমরা বুঝতে পার”। [সূরা ইউসুফ, আয়াত ২]

তিনি আরো বলেছেন:

﴿ كِتَٰبٌ أَنزَلۡنَٰهُ إِلَيۡكَ مُبَٰرَكٞ لِّيَدَّبَّرُوٓاْ ءَايَٰتِهِۦ وَلِيَتَذَكَّرَ أُوْلُواْ ٱلۡأَلۡبَٰبِ ٢٩ ﴾ [ص: ٢٩ ]

“আমি আপনার প্রতি নাযিল করেছি এক বরকতময় কিতাব, যাতে তারা এর আয়াতসমূহ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে এবং যাতে বুদ্ধিমানগণ উপদেশ গ্রহণ করে।” [সূরা ছোয়াদ, আয়াত ২৯]

আল্লাহ অন্য আয়াতে বলেছেন:

﴿ أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ ٱلۡقُرۡءَانَ أَمۡ عَلَىٰ قُلُوبٍ أَقۡفَالُهَآ ٢٤ ﴾ [ محمد : ٢٤ ]

“তবে কি তারা কুরআন নিয়ে গভীর চিন্তা- ভাবনা করে না? নাকি তাদের অন্তরসমূহে তালা রয়েছে?” [সূরা মুহাম্মদ, আয়াত ২৪]

তিনি আরো বলেছেন:

﴿ أَفَلَمۡ يَدَّبَّرُواْ ٱلۡقَوۡلَ أَمۡ جَآءَهُم مَّا لَمۡ يَأۡتِ ءَابَآءَهُمُ ٱلۡأَوَّلِينَ ٦٨ ﴾ [ المؤمنون : ٦٨ ]

“তারা কি এ বাণী সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে না? নাকি তাদের কাছে এমন কিছু এসেছে যা তাদের পূর্ববর্তী পিতৃপুরুষদের কাছে আসেনি?” [সূরা আল-মু’মিনুন, আয়াত ৬৮]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন