মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
কুরআন তিলাওয়াতকারীর জন্য কতিপয় নিয়ম কানুন তথা শিষ্টাচার রয়েছে, যা তিলাওয়াতের সময় বাস্তবায়ন করা উচিত। সেগুলো হলো:
প্রথমত: আল্লাহর কালামের সম্মানে এর তিলাওয়াত সময় সর্বোত্তম অবস্থায় থাকা উচিত, পাক-পবিত্র, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে তিলাওয়াত করা। পবিত্র অবস্থায় তিলাওয়াত করা মুস্তাহাব। অপবিত্রাবস্থায় (যার গোসল ফরয নয়) তিলাওয়াত করতে অসুবিধে নেই। কেননা একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে মুখমণ্ডল ধৌত করলেন এবং আলে-ইমরানের শেষ দশ আয়াত তিলাওয়াত করেন, তিনি অযু করেন নি।
তাছাড়া উমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে এসেছে, তিনি
একবার একদল লোকের মাঝে ছিলেন, তারা কুরআন তিলাওয়াত করছিলো, অতঃপর তিনি ইস্তেঞ্জায় গেলেন, সেখান থেকে ফিরে কুরআন তিলাওয়াত করতে লাগলেন। এক ব্যক্তি তাকে বললেন: হে আমীরুল মু’মিনূন! আপনি অযু না করে কুরআন তিলাওয়াত করছেন? তিনি তাকে বললেন: কে তোমাকে এ ফতওয়া দিয়েছে? মুসাইলামা কি একথা বলেছে?! [মুয়াত্তা মালেক, হাদীস নং ৪৭০।]
ইবন আব্দুল বার বলেন: এ হাদীস থেকে বুঝা যায়, অযু ছাড়া কুরআন তিলাওয়াত করা জায়েয, যদি জুনুবী (গভীর অপবিত্রতা বা ফরয গোসলের অবস্থা) না হয়। অতি অল্প সংখ্যক ব্যতীত প্রায় সব সম্মানিত আলেম এ মত পোষণ করেন। সালাফে সালেহীন সাহাবীদের মধ্যে উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এ মতের পৃষ্ঠপোষক, আর এটাই আমাদের জন্য যথেষ্ট।
অযু বিহীন কুরআন তিলাওয়াত জায়েযের ব্যাপারে ইমাম নববী ও ইবন তাইমিয়াহ (রহ.) ইজমা উল্লেখ করেছেন। আর অপবিত্র (যার গোসল ফরয সে) ব্যক্তির জন্য গোসল করা ব্যতীত তিলাওয়াত করা জায়েয নেই। কেননা আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জুনুবী ছাড়া কোনো কিছু কুরআন তিলাওয়াত থেকে বিরত রাখতো না”।
এ ব্যাপারে অনেক হাদীস আছে, একটি অন্যটিকে শক্তিশালী করে। অধিকাংশ ফিকহবিদ এ মত পোষণ করেন। এমনকি ইবন আব্দুল বার (রহ.) বলেছেন, “দাউদ যাহেরী জুনুবী অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত জায়েয বলে উলামা কিরামদের দল থেকে বেরিয়ে গেছেন”।
আর হায়েযগ্রস্তদের জন্য হায়েয অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত করা জায়েয, কেননা তাদেরকে নিষেধ করার ব্যাপারে কোনো হাদীস আসেনি। অন্যদিকে জুনুবীর উপর কিয়াস করা সহীহ নয়, কেননা হায়েযের অপবিত্রতা সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী হয়, আর এ সময়ে তার জন্য কুরআন ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, পক্ষান্তরে জুনুবীর অপবিত্রতা স্বল্প মেয়াদী, যখন খুশী গোসল করে পবিত্র হওয়া যায়।
আর কুরআন স্পর্শের ব্যাপারে কথা হলো, ছোট বড় উভয় প্রকার অপবিত্রাবস্থায় ধরা যাবে না। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
“কেউ তা স্পর্শ করবে না পবিত্রগণ ছাড়া”। (সূরা আল-ওয়াকি‘আ, আয়াত ৭৯)
এছাড়া ‘আমর ইবন হাযাম এর কিতাবে লিখা ছিল:
أَنْ لاَ يَمَسَّ الْقُرَآنَ إِلاَّ طَاهِرٌ .
“পবিত্র অবস্থা ছাড়া কুরআন স্পর্শ করবে না”। ইবন আব্দুল বার রহ. বলেন, ‘আমর ইবন হাযাম এর কিতাব উলামায়ে কিরামগণ গ্রহণ করেছেন ও সে অনুযায়ী আমল করেন। তা তাদের নিকট প্রসিদ্ধ ও সুস্পষ্ট যা এক সনদে মুত্তাসিল। অতঃপর তিনি বলেছেন, “ফকীহগণ একমত যে, পবিত্রগণ ছাড়া কেউ কুরআন স্পর্শ করবে না”। [আল-ইস্তিযকার (৮/১০)।]
“সুতরাং যখন তুমি কুরআন পড়বে তখন আল্লাহর কাছে বিতাড়িত শয়তান হতে পানাহ চাও”। [সূরা নাহল, আয়াত ৯৮]
أعوذ بالله من الشيطان الرجيم পড়া, কেউ কেউ আবার أعوذ بالله السميع العليم من الشيطان الرجيم পড়েন। উভয়টিই সহীহ।
তৃতীয়ত: তিলাওয়াতকারীকে প্রত্যেক সূরার শুরুতে বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম পড়া, সূরায়ে তাওবা ছাড়া। কেননা বিসমিল্লাহ কুরআনের আয়াত, যা দু’সূরার মাঝে পার্থক্য করতে এসেছে। সাহাবীগণ থেকে সূরা তাওবা ব্যতীত অন্যান্য সূরার শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া সাব্যস্ত আছে।
চতুর্থত: পাঠককে ধীরে ধীরে সাবলীল, তারতীলসহকারে চিন্তাভাবনা করে কুরআন তিলাওয়াত করা উচিত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আর কুরআন, আমরা তা নাযিল করেছি কিছু কিছু করে, যেন তুমি তা মানুষের কাছে পাঠ করতে পার ধীরে ধীরে; আর আমরা তা নাযিল করেছি পর্যায়ক্রমে”। [সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত ১০৬]
“কুরআন তাড়াতাড়ি আয়ত্ত করার উদ্দেশ্যে তুমি তোমার জিহ্বাকে দ্রুত আন্দোলিত করো না”। [সূরা কিয়ামাহ, আয়াত ১৬] তিনি বলেন: জিবরীল আলাইহিস সালাম যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর ওহী নাযিল করতেন তিনি তা আয়াত্ত করার জন্য জিহ্বা ও ঠোঁট নাড়তেন। এটা তাঁর জন্য খুবই কষ্টকর হয়ে পড়ত। তাঁর অবস্থা থেকেই এটা প্রতিভাত হত। এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করলেন: “কুরআন তাড়াতাড়ি আয়ত্ত করার উদ্দেশ্যে তুমি তোমার জিহ্বাকে দ্রুত আন্দোলিত করো না।”। [সূরা কিয়ামাহ, আয়াত ১৬] অর্থাৎ এটা তোমার অন্তরে পুঞ্জিভূত করে দেওয়া এবং পড়িয়ে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। অতএব আমরা যখন তা পাঠ করতে থাকি তখন তুমি তা মনোযোগ দিয়ে শুনতে থাক। অর্থাৎ এই ওহী আমরাই নাযিল করছি, তুমি তা মনোনিবেশ সহকারে শুনো। এর তাৎপর্য বুঝিয়ে দেয়া আমাদেরই দায়িত্ব, অর্থাৎ তোমার মুখ দিয়ে তা বলিয়ে দেওয়া আমাদেরই দায়িত্ব। এরপর থেকে যখন জিবরীল আলাইহিস সালাম তাঁর কাছে ওহী নিয়ে আসতেন, তিনি মনোযোগ সহকারে তা শুনতেন। তিনি চলে যাওয়ার পর মহান আল্লাহর ওয়াদা অনুযায়ী তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তা পাঠ করতেন। [মুসলিম, হাদীস নং ৪৪৮।]
“এক লোক ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কে বললেন: গত রাতে আমি মুফাসসাল সূরা পাঠ করেছি। এ কথা শুনে আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তুমি এত তাড়াতাড়ি পাঠ কর যেন কবিতা পাঠ করার মতো; অথচ আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পাঠ শুনেছি এবং তা আমার ভালভাবে স্মরণ আছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যে সব সূরা পাঠ করতে আমি শুনেছি তার সংখ্যা মুফাস্সাল হতে একসাথে আঠারটি এবং হা-মীম যুক্ত সূরা হতে দু’টি”। [বুখারী, হাদীস নং ৫০৪৩।]
কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে, লোকটি মুফাস্সল সূরাগুলো এক রাকা‘আতে পড়েছিল। [মুসলিম, হাদীস নং ৮২২।]
আবু দাউদের বর্ণনায় ‘সমজাতীয় (সমান দীর্ঘ) সূরা’র কথা উল্লেখ আছে। তাতে এসেছে,
“কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমজাতীয় (সমান দীর্ঘ) দু’টি সূরা এক রাকাতে পড়তেন। সূরা আন-নাজম ও আর-রহমান এক রাকাতে, সূরা আল-কামার ও আল-হাক্কা এক রাকাতে, সূরা আত-তুর ও যারিয়াত এক রাকাতে, ওয়াক্বিয়া ও নূন এক রাকাতে, সূরা মা‘আরিজ ও নাযিয়াত এক রাকাতে, সূরা মুতাফফিফীন ও আবাসা এক রাকাতে, সূরা মুদ্দাসির ও মুযযাম্মিল এক রাকাতে, সূরা ইনসান ও কিয়ামাহ এক রাকাতে, সূরা নাবা’ ও মুরসালাত এক রাকাতে, এবং সূরা দুখান ও তাকবীর এক রাকাতে পড়তেন”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ১৩৯৬।]
“আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন: তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম টেনে টেনে (মাদ্দসহকারে) পড়তেন। অতঃপর তিনি পড়লেন: بسم الله الرحمن الرحيم , তিনি بسم الله তে , الرحمن ও الرحيم শব্দে মাদ্দ করে টেনে টেনে পড়েছেন। [বুখারী, হাদীস নং ৫০৪৬।]
পঞ্চমত: তিলাওয়াতকারীর জন্য মুস্তাহাব হলো সুললিত কণ্ঠে তিলাওয়াত করা।
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ নবীকে এমন কিছুর অনুমতি দেননি, যা আমাকে দিয়েছেন, আর তা হলো কুরআন তিলাওয়াত সুষ্পষ্ট ও মধুর সুরে করা। [বুখারী, হাদীস নং ৫০২৩।]
‘আমর ইবন মুররাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন: আমার কাছে কুরআন পাঠ কর। আমি বললাম, আমি আপনার কাছে পাঠ করব? অথচ তা আপনার কাছেই অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি বললেন, অন্যের মুখে শ্রবণ করাকে আমি পছন্দ করি। এরপর আমি তাঁর নিকট ‘সূরা নিসা’ পড়লাম, যখন আমি পর্যন্ত পাঠ করলাম,
“অতএব কেমন হবে যখন আমরা প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং আপনাকে উপস্থিত করব তাদের উপর সাক্ষীরূপে?” [সূরা নিসা, আয়াত ৪১] তিনি বললেন, থাম, থাম, তখন তাঁর দুচোখ থেকে টপ টপ করে অশ্রু নির্গত হচ্ছিল। [বুখারী, হাদীস নং ৪৫৮৩।]
মুসনাদে আহমদে মুতাররিফ ইবন আব্দুল্লাহ তাঁর পিতার থেকে বর্ণনা করেন, “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নামাযে দেখলাম, তিনি নামাযে এমনভাবে কাঁদছিলেন যে, যেন তাঁর বক্ষ থেকে ডেকচি (হাঁড়ি-পাতিল) এর গুঞ্জনের মত আওয়াজ শুনা যাচ্ছিল”। [মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ১৬৩১২।]
বুখারীতে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন অসুস্থাবস্থায় আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে নামায পড়াতে বললেন, তখন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন:
তিনি (আবু বকর) অতি নরম হৃদয়ের অধিকারী, তিনি আপনার স্থানে দাঁড়িয়ে লোকদের নিয়ে (কান্নার কারণে) নামায পড়াতে পারবেন না। [বুখারী, হাদিস নং ৫৬৮।] অন্য বর্ণনায় এসেছে, কান্নার কারণে লোকদের নিয়ে নামায পড়াতে পারবেন না।
উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যখন নামায পড়তেন তখন তাঁর কান্নার আওয়াজ পিছনের কাতার থেকেও শুনা যেত। আবু রাজা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমাকে দেখেছি কান্নার কারণে তাঁর চোখের নিচে ফিতার মত জীর্ন দাগ পড়ে গেছে। এজন্যই ইমাম নাওয়াওয়ী (রহ.) ক্বিরাত পড়া অবস্থায় কান্নাকে বলেছেন: তা আল্লাহ ওয়ালা ও সালেহীন বান্দাহদের বৈশিষ্ট্য [আত-তিবইয়ান ফি আদাবি হামালাতিল কুরআন, পৃ. ৬৮।]।
একথা জেনে রাখা উচিত যে, তিলাওয়াতের সময় কান্না করা বা কান্নার ভাব করা উভয়টিই প্রশংসনীয়, যদি তা আল্লাহর কিতাব চিন্তা-গবেষণা করা ও অন্তরে আল্লাহর ভয় থেকে হয়। আর এটা আল্লাহর প্রতি বান্দার পূর্ণ ঈমানের কথাই প্রমাণ করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম বাণী, সাদৃশ্যপূর্ণ একটি কিতাব (আল কুরআন), যা বারবার আবৃত্তি করা হয়। যারা তাদের রবকে ভয় করে, তাদের গা এতে শিহরিত হয়, তারপর তাদের দেহ ও মন আল্লাহর স্মরণে বিনম্র হয়ে যায়। [সূরা আয-যুমার, আয়াত ২৩]
তবে লৌকিকতা ও খ্যাতির জন্য কান্নার ভান করা থেকে মুসলিমকে বিরত থাকতে হবে। কেননা এটা খুবই ভয়ংকর ও বান্দার উপর শয়তানের দখলদারিত্ব।
সপ্তমত: তিলাওয়ারকারীর জন্য মুস্তাহাব হলো ফরয নামায ব্যতীত তিলাওয়াতের সময় রহমতের আয়াত আসলে আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহ কামনা করা, আর আযাবের আয়াত পড়লে তা থেকে পানাহ চাওয়া।
হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: এক রাতে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে তাহাজ্জুদের নামায পড়লাম। তিনি সূরা বাকারা পড়তে শুরু করলে আমি ভাবলাম তিনি হয়তো একশ আয়াত পড়ে রুকু করবেন। কিন্তু এর পরেও তিনি পড়তে লাগলেন। তখন আমি মনে মনে ভাবলাম তিনি এর (সূরা বাকারা) এক রাকাতে পড়বেন। কিন্তু তিনি এরপরেও পড়তে থাকলে আমি ভাবলাম সূরাটি শেষ করে তিনি রুকু করবেন। কিন্তু তিনি সূরা শেষ করার পরও রুকু না করে এরপরে সূরা নিসা পড়তে শুরু করলেন এবং শেষ করে সূরা আলে-ইমরান শুরু করলেন। এ সূরাটিও তিনি পড়লেন। তিনি থেমে থেমে ধীরে ধীরে পড়ছিলেন। তাসবীহর উল্লেখ আছে এমন আয়াত যখন তিনি পড়ছিলেন তখন তাসবীহ পড়ছিলেন। যখন কিছু চাওয়ার আয়াত পড়ছিলেন তখন প্রার্থনা করছিলেন। আবার যখন আশ্রয় প্রার্থনা করার কোনো আয়াত পড়ছিলেন তখন আশ্রয় প্রার্থনা করছিলেন। [মুসলিম, হাদীস নং ৭৭২।]
অষ্টমত: মুসলিমের উচিত কুরআনের হিফয ধরে রাখা, বার বার তা পড়া। যদি কোনো আয়াত ভুলে যায় তবে এ কথা বলা উচিত নয় যে, আমি তা ভুলে গেছি, বরং বলবে, আমাকে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।
يقول النبي -صلى الله عليه وسلم -: « بِئْسَ مَا لِأَحَدِهِمْ يَقُولُ : نَسِيتُ آيَةَ كَيْتَ وَكَيْتَ، بَلْ هُوَ نُسِّيَ »
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: কোনো লোক এ কথা বলা অনেক খারাপ যে, আমি অমুক আয়াত ভুলে গেছি; বরং তাকে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। [বুখারী, হাদীস নং ৫০৩৯।]
এখানে ভুলে গেছি বলতে নিষেধ করা হয়েছে কেননা এতে আল্লাহর কালামের প্রতি অবহেলা, অযত্ন বুঝায়। মুসলিমের তো উচিত সে সর্বদা আল্লাহর কালামের ব্যাপারে সতর্ক থাকবে।
নবমত: হাঁটা, দাঁড়ানো বা শোয়া অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত করতে কোনো অসুবিধে নেই।
আব্দুল্লাহ ইবন মুগাফ্ফাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উটের পিঠে সাওয়ারী অবস্থায় কুরআন পড়তে দেখেছি। তখন তিনি সূরা ফাতহ বা সূরা ফাতহের কিছু আয়াত আস্তে আস্তে পড়ছিলেন। তিনি বার বার করে টেনে টেনে তা তিলাওয়াত করছিলেন। [বুখারী, হাদীস নং ৫০৪৭।]
বুখারী ও মুসলিমে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত,
عن عائشة - رضي الله عنها- قالت : «كَانَ يَتَّكِئُ فِي حَجْرِي وَأَنَا حَائِضٌ، ثُمَّ يَقْرَأُ القُرْآنَ»
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হায়েয অবস্থায় আমার কোলে হেলান দিয়ে কুরআন তিলাওয়াত করছিলেন। [বুখারী, হাদীস নং ২৯৭।]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত তিনি খাটে শুয়ে শুয়ে এক হিজব পড়তেন।
আবু মূসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি নামাযে ও বিছানায় উভয় অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত করি।
দশমত: মুসলিমের উচিত যতক্ষণ মন চায় ততক্ষণ কুরআন তিলাওয়াত করা, মনের বিরুদ্ধে জোর করে তিলাওয়াত করা থেকে বিরত থাকা উচিত। বুখারীতে এসেছে:
জুনদুব ইবন আব্দুল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, তোমরা যতক্ষণ মন চায় তিলাওয়াত কর এবং মন যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন ছেড়ে দাও। [বুখারী, হাদীস নং ৫০৬০।] এটা এজন্য যে, যাতে মনের সাথে মতানৈক্য ও বিচ্ছেদ না হয়।
একাদশতম: তিলাওয়াতকারীকে সিজদায়ে তিলাওয়াতের আয়াতের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। অধিকাংশ আলেমগণের মতে তিলাওয়াতের সিজদা দেওয়া মুস্তাহাব। কেননা হাদীসে এসেছে:
একদা উমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু জুমার দিনে মিম্বারে সূরা আন-নাহল পড়ছিলেন, সিজদার আয়াত আসলে মিম্বার থেকে নেমে সিজদা দিলেন, লোকজনও তাঁর সাথে সিজদা দিলেন। পরবর্তী জুমাতে তিনি উক্ত সূরা আবার তিলাওয়াত করলেন, সিজদার আয়াত আসলে তিনি লোকদেরকে বললেন: হে লোক সকল, আমি সিজদার আয়াত অতিক্রম করছি, সুতরাং যে ব্যক্তি সিজদা দিবে সে ঠিক করল, আর যে সিজদা করল না তার কোনো গুনাহ হবে না। উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সে দিন সিজদা দেননি। [বুখারী, হাদীস নং ১০৭৭।]
তিলাওয়াতকারী ও শ্রোতা উভয়কেই এ সিজদা দিতে হয়।
কুরআনের হাফেযকে উত্তম চরিত্র ও সর্বোত্তম গুনাবলীর অধিকারী হতে হবে। আল্লাহর কিতাবের সম্মানে কুরআনে যা নিষিদ্ধ করা হয়েছে তা থেকে বিরত থাকতে হবে। অনুরূপ তার জন্য উচিত হচ্ছে, হীন উপার্জন থেকে নিজেকে বিরত থাকা। আজেবাজে কথাবার্তা থেকে বেঁচে থাকা ও সর্বদা আল্লাহর বিনয়ী বান্দা হওয়া। এককথায়, তার চরিত্র হওয়া উচিত আল-কুরআন, যেমনটি ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চরিত্র, যা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হয়েছে।
আল্লাহর কিতাব ধারণকারীকে আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত গুনাবলী থাকা উচিত। তিনি বলেছেন: কুরআনের হাফেযকে রাত্রি জাগরণ করা উচিত যখন লোকজন ঘুমায়, দিনে রোযা থাকা উচিত যখন লোকজন পানাহার করে, মানুষ যখন আনন্দ করে তখন তার চিন্তা-ভাবনা করা উচিত, মানুষ হাসলে তার কাঁদা উচিত, তারা যখন ঝগড়া বিবাদ করে তখন তাদের চুপ থাকা উচিত, তারা যখন অহংকার করে তাদেরকে বিনয়ী হওয়া উচিত।
কুরআনের হাফেযের জন্য উচিত হচ্ছে, অন্তর, জিহ্বা ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সব কিছু দিয়েই সর্বদা তিলাওয়াত করা। সে দলিল ভিত্তিক সত্যকেই বিশ্বাস করবে, সৎ ও কল্যাণকর ছাড়া কিছু উচ্চরণ করবে না। ভাল কাজ করবে। ঈমান, কথা, কাজ ইত্যাদি থেকে বাতিলকে প্রতিহত করবে। মানুষের থেকে কষ্টকর জিনিস দূর করবে।
অতঃপর প্রত্যেক মুসলিমকে জানা উচিত কুরআন পাঠ কখনও ফরয যেমন: নামাযে তিলাওয়াত, কেননা ইজমার দ্বারা এটা সাব্যস্ত।
সম্মানিত আলেমগণ নামাযে সূরা ফাতিহা তিলাওয়াতের ব্যাপারে মতানৈক্য করেছেন। শুধু সূরা ফাতিহা পড়লেই কি নামায যথেষ্ট হবে? নাকি এর সাথে অন্য সূরা পড়তে হবে? প্রথম মতটি সহীহ। অর্থাৎ শুধু সূরা ফাতিহা পড়লেই নামায আদায় যথেষ্ট হবে।
আবার কখনও কুরআন পড়া মুস্তাহাব, আর তা হলো নামাযে ফরয কেরাত পড়ার পরে অতিরিক্ত পড়া।
এমনিভাবে অন্যান্য সময় তিলাওয়াত করাও মুস্তাহাব।
আবার কখনও কুরআন তিলাওয়াত করা মাকরূহ, যেমন এমন উচ্চস্বরে তিলাওয়াত করা যা পাশের কাউকে, নামাযীকে বা ঘুমন্ত ব্যক্তিকে বিরক্ত করে।
আবার কখনও কুরআন পড়া হারামও হয়ে থাকে, যেমন কেউ লোক দেখানো বা বিদ‘আতের স্থানে বসে তিলাওয়াত করল। কেননা এতে বাতিলকে সাহায্য করা হয়। সম্মানিত আলেমগণের কেউ কেউ অতি টেনে পড়া যা শব্দের উচ্চারণ বিঘ্ন হয় ও লাহান পড়াকে হারাম বলেছেন। এটা আল্লাহর কিতাবের সম্মান রক্ষা ও অযাচিত সব কিছু থেকে মুক্ত রাখার জন্য।
এছাড়াও মৃত্যু ব্যক্তির জন্য সমবেত হয়ে কুরআন পড়ে বিলাপ করে শোক পালন করা বিদ‘আত। এমনিভাবে মৃত্যু ব্যক্তির রূহের মাগফিরাতে কুরআন পড়ে মজুরি নেয়া ইত্যাদি কাজ যা বর্তমানে মানুষ করছে করা বিদ‘আত। তা মানুষের স্বল্প ইলম, অজ্ঞতা বিস্তার, অন্যায় কাজ থেকে বিরত না থাকা ও মানুষকে দ্বীনের সঠিক জ্ঞান না জানানোর কারণে হয়ে থাকে। আমরা সকলেই আল্লাহর জন্য, আর তাঁর সমীপেই প্রত্যাবর্তন করব।
এখানে আরো একটি বিষয় সব সাধারণ ও নেতা-নেত্রী মুসলিমকে সতর্ক করা দরকার যে, আল্লাহ কুরআন নাযিল করেছেন আমল ও এর দ্বারা বিচারকার্য পরিচালনা করার জন্য। এটা আমাদের শরীয়তের মূল বিধান, হুকুম ও আমলের ক্ষেত্রে এটাই আমাদের উৎস।
আল্লাহ আমাকে যতটুকু লিখার তাওফিক দিয়েছেন ততটুকু এখানে লিখেছি। তাছাড়া আল্লাহর কালামের মর্যাদা মহান, কোনো শব্দে তা বর্ণনা করা সম্ভব নয়, হক্ব আদায় করা সম্ভবপর নয়। এখানে আমি শুধু কিছু সতর্কতা ও উপদেশ আলোচনা করেছি যা আমার ও অন্যান্য মুসলিম ভাইদের উপকারে আসে। সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহ তা‘আলার দয়া ও অনুগ্রহ কামনা করছি তিনি যেন আমাদেরকে তাঁর দ্বীন বুঝার তাওফিক দান করেন, কুরআনের তাফসীর শিক্ষা দেন, সম্মানিত আল-কুরআনকে আমাদের অন্তরের বসন্ত, হৃদয়ের আলো ও দুশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনা দূরকারী বানিয়ে দেন।
হে আল্লাহ, আমরা যা ভুলে যাই তা স্মরণ করিয়ে দিন, যা জানি না তা শিখিয়ে দিন, কুরআনের তিলাওয়াত দিবানিশি করার তাওফিক দান করুন, যেভাবে আপনি আমাদের উপর খুশী হোন। আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন যারা কুরআন অনুযায়ী আমল করে, এর মুতাশাবিহ আয়াতগুলোর উপর ঈমান আনে।
হে আল্লাহ, আপনি কুরআনকে আমাদের জন্য দলিলস্বরূপ করুন, আমাদের বিরুদ্ধে নয়, তা আমাদের জন্য সাক্ষ্য ও দলিল করুন, চিরস্থায়ী জান্নাতের দিকে চালক বানান। হে আল্লাহ আপনি এর দ্বারা আমাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করুন, আমাদের গুনাহ খাতা ও ভুল ত্রুটি ক্ষমা করুন এবং আপনার দরবারে একে আমাদের জন্য সুপারিশকারী বানান।
আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর পরিবারবর্গ, সাহাবায়ে কিরাম এবং কিয়ামত পর্যন্ত যারা তাঁর যথাযথ অনুসরণ করবে তাদের সকলের উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে সালাত ও সালাম বর্ষিত হউক।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/323/15
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।