HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সৃজনশীল ও বৈজ্ঞানিক চিন্তার ব্যবহার একটি ভূমিকা

লেখকঃ নুমান বিন আবুল বাশার

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
সৃজনশীল ও বৈজ্ঞানিক চিন্তার ব্যবহার: একটি ভূমিকা

নুমান বিন আবুল বাশার

সম্পাদক

কাউসার বিন খালেদ

আলী হাসান তৈয়ব

সৃজনশীল ও বৈজ্ঞানিক চিন্তার: একটি ভূমিকা
মানুষের একটি অনিবার্য বৈশিষ্টের নাম চিন্তা। চিন্তা ছাড়া কোন মানবীয় অস্তিত্ব সম্ভব নয়। মূলত চিন্তাই মানুষকে অন্যান্য সৃষ্ট-প্রাণী থেকে আলাদা করে দিয়েছে। স্বাভাবিক কোন মানুষই, চিন্তাহীন থাকতে পারে না। চিন্তা নিয়ে যারা গবেষণা করেন, তারা চিন্তার উৎস ও লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে নানা কথা বলেন। তবে যারা সত্যিকার মুসলমান, তরা চিন্তাকে মনে করেন আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে পাওয়া একটি বিশেষ দান।

আল্লাহ মানুষকে এই সম্পদ দান করেছেন যাতে তা ব্যবহার করে মানুষ আল্লাহ সম্পর্কে জানতে পারে, পৃথিবী গড়তে পারে এবং নববী আদর্শ অনুসারে সভ্যতার প্রাসাদ নির্মাণ করতে পারে। সুতরাং মানুষের ব্যক্তিজীবন, সামাজিক-জীবন, ধর্মীয় ও পার্থিব-জীবন, বুদ্ধিবৃত্তিক ও বাস্তব কর্মজীবনে চিন্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সুতরাং চিন্তার ক্ষেত্রেও আমাদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা জরুরি।

বর্তমানের প্রথাগত চিন্তার যে পদ্ধতি তা নিয়ে আমাদের পুণরায় ভাবতে হবে। আমাদের পরীক্ষা করতে হবে চিন্তার যে মূল-লক্ষ্য তা এই পদ্ধতিতে অর্জন হওয়ার মতো কিনা। অর্থাৎ দেখতে হবে তা উবুদিয়াতের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে কতটা সহায়ক । যদি তা এ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়, তাহলে আমাদের চিন্তার এই প্রচলিত পদ্ধতির অবকাঠামো ভেঙ্গে নতুন চিন্তা-পদ্ধতি ও চিন্তা কাঠামো তৈরি করতে হবে। এই ভ্রান্ত পদ্ধতি, মানসিক দাসত্ব-শৃংখল এবং যেসব বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিবন্ধকতা সঠিক-সুস্থ চিন্তাকে প্রতিহত করে, বা স্বতঃস্ফূর্ত সৃষ্টিশীলতার পথ রুদ্ধ করে, সেগুলো ভেংগে চিন্তার নতুন পদ্ধতি- কাঠামো দাঁড় করাতে হবে।

বাস্তবতার নিরিখে, আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক, মনস্তাত্বিক ও সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক পরিবেশ-পরিস্থিতির বিচারে চিন্তা একটি জটিল বিষয়। প্র্রকৃতপক্ষে চিন্তা, নিরর্থক-অন্তঃসারশূন্য, প্রচলিত কোনো পদ্ধতির নাম নয়, তা বরং এমন এক নিয়ম-নীতির নাম যা চিন্তার সঠিক দিশারি, বিবেক-বুদ্ধির আলোকবর্তিকা, চিন্তাপ্রসূত-দূরদর্শী বিভিন্ন দৃষ্টিভংগিসম্পন্ন সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী মনকে মোহকারী হিসেবে কাজ করে ।

চিন্তা নিয়ে ভাবলে বেশকিছু প্রশ্ন সৃষ্টি হয়, যার সঠিক জওয়াব আসা অপরিহার্য, যাতে চিন্তার দিকগুলো বিশুদ্ধকরণ, পরিপূর্ণ মানসিক সুস্থতার পুনরুদ্ধার, অভিষ্ট লক্ষ্যসমূহ সমৃদ্ধকরণ ও সৃজিত বিষয়াদির সম্পাদনার গুণগত মান উৎকৃষ্টকরণ সম্ভবপর হয়।

বেশকিছু গুরুতপূর্ণ প্রশ্ন নিম্নে উল্লেখ করা হল

- চিন্তা কী ? মানুষ কিভাবে চিন্তা করে ?

-চিন্তাকে পরিপক্ক ও উৎকৃষ্টকারী উপাদান কি কি ?

- চিন্তাকে নষ্ট ও লক্ষ্যচ্যূতকারী উপাদান কি কি ?

- এক বিষয়ে ব্যস্ততা অন্য বিষয়ে উদাসীনতা কেন হয় ? কোন বিষয়কে এক সময়ে গুরুত্ব দেওয়া অন্য সময়ে অবহেলা কেন করা হয় ?

- চিন্তা ও ভাষার সম্পর্ক কি ? নির্দিষ্ট ভাষা ব্যতীত চিন্তা করা সম্ভব কি-না?

- ইন্দ্রিয়শক্তিগুলো আমাদেরকে চিন্তা কর্মের পূর্বে অনুভূতি প্রক্রিয়ায় প্রতারিত করে কি না ?

-পরিবেশ চিন্তা প্রক্রিয়ায় ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে কি ?

-চিন্তা মানুষকে কিভাবে সফল করে ?

- শেখা ও চর্চার মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক চিন্তা অর্জন করা সম্ভব কি না ? নাকি এটা সৃষ্টি ও স্বভাবগত বিষয়?

- প্রচলিত চিন্তা বৈজ্ঞানিক চিন্তার সাথে সঙ্গতি রাখে কি না ?

- মাঝে মাঝে সম্মিলিত চিন্তায় আমরা লাভবান হই না কেন ?

- সৃজনশীল চিন্তা কি ? মানুষ কি সৃজনশীল বা আবিষ্কারক হতে পারে ?

মোটামুটি সংক্ষেপে উল্লেখিত প্রশ্নগুলীর ব্যবহারিক উদাহরণসহ সুস্পষ্ট জওয়াব নিচে দেওয়া হল।

অবতারণা :
মূল পাঠে প্রবেশের পূর্বে পাঠক, আশা করি, নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টিপাত করবেন।

1- কোন পাঠ, বিশেষত : চিন্তা ও সৃষ্টিশীল কোন বিষয়-অধ্যয়নের পূর্বে ধ্যান ও মনোযোগকে কেন্দ্রীভূত ও জাগ্রত করে নিবেন।

২- পাঠের যে অংশ পাঠকের কাছে মনে হবে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রনিধানযোগ্য, তার পুণঃপাঠ। নিদেনপক্ষে, লেখক যার পুণঃপাঠে ইংগিত করেছেন, তা পড়ে নিবেন।

৩- বিজ্ঞান বলে, মনোসংযোগহীন দ্রুতপঠনে চিন্তার উন্মেষ ও বিকাশ ঘটে না। ধীরস্থির, সতেজ-সজাগ দৃষ্টিভঙ্গি, এবং পাঠের বিস্রস্ত ও বিক্ষিপ্ত সূত্রগুলোর একক পরম্পরার অনুসন্ধান ও গ্রন্থন অতীব প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। লেখক, অংশত, সুনির্দিষ্ট করে যে বিষয়গুলোর প্রতি আলোকপাত করেছেন, তা বিশেষভাবে টুকে নিতে হবে।

৪ - পাঠের প্রতি অংশের সাথে পাঠগত ও চিন্তাগত সংযোগ স্থাপন জরুরী , পূর্বোক্ত প্রবন্ধাংশ, যা বর্তমান অংশের জন্য ভূমিকা স্বরূপ, তার পুণর্পঠনের মাধ্যমে এ সংযোগ স্থাপন সম্ভব।

৫- মনে মনে এ বিশ্বাস পোষণ করা যে, বিশুদ্ধ ও সূক্ষ্ম চিন্তার প্রত্তুৎপন্নমতিত্ত এক ধরণের দক্ষতা, যা মানুষের জ্ঞানব্রতী আচরণ আহরণ করতে পারে, এবং একধরণের অভ্যাস যা নির্মাণ করে নিরবচ্ছিন্ন ও ক্রমাগত অনুশীলন। সাথে সাথে কোরআনের এ ঘোষণার প্রতি বিশ্বাস পোষণ করতে হবে-

إِنَّ اللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّى يُغَيِّرُوا مَا بِأَنْفُسِهِمْ . الرعد : 11

আল্লাহ কোন সমপ্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরাই পরিবর্তন করে [রাদ : ১১]

ওহী বিশুদ্ধ চিন্তায় উদ্বুদ্ধ করে
পবিত্র কুরআনে বিভিন্ন আয়াত রয়েছে, যা মানুষকে চিন্তা ও গবেষণার প্রতি উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা যোগায়। বিবেক ও বিবেকবানের মর্যাদা বৃদ্ধি করে। পবিত্র কুরআনে ফিকর অর্থাৎ চিন্তাবোধক ধাতুটি বিভিন্নরূপে বিশটি স্থানে উল্লেখ করা হয়েছে। নিচে কতিপয় উদাহরণ দেওয়া হল।

আল্লাহ তায়ালার বাণী :—

كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمُ الْآَيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَتَفَكَّرُونَ . البقرة : 219

এভাবে, আল্লাহ তোমাদের জন্য নিদর্শনাবলী সুস্পষ্টরূপে ব্যক্ত করেন, যাতে তোমরা চিন্তা কর। [আল-বাকারা : ২১৯]

أَوَلَمْ يَتَفَكَّرُوا فِي أَنْفُسِهِمْ . الروم : 8

তারা কি নিজেদের ব্যাপারে চিন্তার দ্বারস্থ হয় না [রূম : ৮]

فَاقْصُصِ الْقَصَصَ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ . الأعراف :176

তুমি বৃত্তান্তু বিবৃত কর, যাতে তারা চিন্তা করে। [আল-আরাফ ১৭৬]

এছাড়া ভিন্ন ধাতু হতে নির্গত কিছু শব্দ ও শব্দগুচ্ছ এসেছে, যা চিন্তা ও চিন্তাবৃত্তির গুরুত্ব প্রমাণ করে। নিম্নে এর কিছু নমুনা পেশ করা হল -

আল্লাহ তায়ালা বলেন :—

إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَآَيَاتٍ لِأُولِي الْأَلْبَابِ ﴿190﴾ الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَى جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ . آل عمران :190-191

আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টিতে, দিবস ও রাত্রির বিবর্তনে নিদর্শনাবলী রয়েছে বোধসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য, যারা বসে ও শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে, চিন্তা করে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্বন্ধে । [আলে-ইমরান ১৯০-১৯১]

كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آَيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ . البقرة : 242

এভাবেই, আল্লাহ তাঁর নিদর্শনাসমূহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা উপলব্ধি করতে পার। [আল-বাকারা ২৪২]

انْظُرْ كَيْفَ نُصَرِّفُ الْآَيَاتِ لَعَلَّهُمْ يَفْقَهُونَ . الأنعام :65

দেখ, আমি কিরূপে বিভিন্ন প্রকারে আয়াতসমূহ বিবৃত করি, যাতে তারা অনুধাবন করে। [আন-আম : ৬৫]

يُؤْتِي الْحِكْمَةَ مَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُؤْتَ الْحِكْمَةَ فَقَدْ أُوتِيَ خَيْرًا كَثِيرًا وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّا أُولُو الْأَلْبَابِ . البقرة 269

তিনি যাকে ইচ্ছা হিকমত প্রদান করেন এবং হিকমত প্রদান করা হয়েছে যাকে, লাভ করেছে সে প্রভূত কল্যাণ। এবং বোধসম্পন্ন লোকেরাই শুধু শিক্ষা গ্রহণ করে। (বাকারা : ২৬৯)

চিন্তার শাব্দিক গঠন ও আভিধানিক-পারিভাষিক ব্যাখ্যা
আরবী ভাষায় চিন্তা শব্দের ব্যবহার কয়েকভাবে হয়ে থাকে, যেমন: فكر في الامر অর্থাৎ, কোন বিষয়ে চিন্তাবৃত্তির ব্যবহার এবং জানা বিষয়গুলোর সমন্বয়ের মাধ্যমে অজানা বিষয় আত্মস্থ করার সক্রিয় প্রচেষ্টা করা। افكر في الأمر অর্থাৎ, চিন্তা করা। مفكر শব্দটি এ ধাতু থেকেই নির্গত। فكر কে আরো দৃঢ় ও সমন্বিত করে প্রকাশের জন্য التفكير থেকে নির্গত فكر শব্দটি ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে, এটি فكر শব্দের তুলনায় আরো ব্যাপক অর্থ জ্ঞাপক। সুতরাং, আমরা বলতে পারি, আভিধানিক অর্থে الفكر হচ্ছে, অজানা বিষয় আত্মস্থ করবার জন্য জানা বিষয়ে চিন্তাবৃত্তির ব্যবহার। التفكير হলো জটিল বিষয়ের সমাধানকল্পে চিন্তাবৃত্তির ব্যবহার। الفكر হল চিন্তা, افكار এর বহুবচন। অর্থ হচ্ছে -গভীর চিন্তামগ্নতা এবং মর্মের অনুসন্ধানে গবেষণায় নিরত হওয়া। এ সবই হচ্ছে চিন্তার আভিধানিক ব্যাখ্যা।

পরিভাষায় চিন্তার সংজ্ঞা নির্ধারণে গবেষকদের মাঝে রয়েছে বিবিধ মত, আমার মতে চিন্তার শুদ্ধ ও সর্বাঙ্গীন সংজ্ঞা হতে পারে এভাবে-চিন্তা এমন এক মানসিক প্রক্রিয়া, কোন সমস্যা নিরসনে কিংবা নির্দিষ্ট কোন বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণের ক্ষেত্রে সজ্ঞান চেতনা যার মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও অভিজ্ঞতার মাঝে সরল এক শৃঙ্খলা দান করে।

চিন্তার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানসমূহ
উপরোক্ত সংজ্ঞা ও বিশ্লেষণের আলোকে আমরা বলতে পারি চিন্তার কাঠামো পরিগঠিত হয় বিভিন্নভাবে, নানা উপাদানে। মেযন-

-বিশেষ একটি কাঠামো, যা মানুষের ধারণা ও জ্ঞাত বিষয়গুলোর সুসন্বিবেশ দান করে।

-সঠিক সময়ে উপস্থাপনের জন্য চিন্তার সুসংরক্ষণ ও পরিচর্যা।

-একটি নির্দিষ্ট, চিহ্নিত পরিবেশ ও সমাজ, যা একই সাথে ব্যক্তির স্বাতন্ত্র্য ও যূথবদ্ধতায় বিশ্বাসী হবে, যে পরিবেশ ও সমাজে তার কাণ্ড বিস্তার করবে।

এ কারণেই, আমাকে প্রথমে নির্ণয় করতে হবে চিন্তাবৃত্তির সাথে ভাষা, স্মৃতি ও মনস্তাত্ত্বিক অবস্থার সম্পর্ক ও সম্পৃক্ততা। ভাষাই হচ্ছে সেই কাঠামো, যাকে কেন্দ্র করে মানুষের জানা বিষয়গুলো মূর্ত হয়ে উঠে, আর তা ধারণ করে সংরক্ষণ করে স্মৃতি, অবশেষে তা মনস্তত্বের মাঝে প্রাণ পায়, বেড়ে উঠে ধীরে ধীরে।

ভাষার সমৃদ্ধি চিন্তায় গভীরতা দান করে
ভাষার সাথে চিন্তার সম্পর্ক অত্যন্ত দৃঢ়, খুবই অঙ্গাঙ্গী। ভাষা এমন এক ছাঁচ যা বেয়ে চিন্তা বেড়ে উঠে, লাভ করে সমন্বয়। ভাষাই চিন্তার প্রাণকে সতত জাগরুক রাখে। অনেকে ভাষা-চিন্তার সম্পর্ককে মুদ্রার এপিঠ ওপিঠের সম্পর্কের সাথে তুলনা করেছেন।

ভাষার অনুপস্থিতিতে আমরা বিমূর্ত ও অস্পৃশ্য বিষয়গুলো চিন্তা করতে পারি না এবং ভাষার দুর্বলতায় চিন্তা তার গভীরতা হারায়। কেননা, ভাষাই চিন্তার একমাত্র অবলম্বন, ভাষার মাধ্যমেই আমরা চিন্তার অনুভূতিগুলো ব্যক্ত করতে সক্ষম হই। গভীর চিন্তার জন্য ভাষাগত সমৃদ্ধি এবং শব্দমালার সঠিক ও মূল অর্থ বোঝা আবশ্যক। এ প্রসঙ্গে ডঃ মুহাম্মদ শানকীতি বলেন : কোন সন্দেহ নেই যে, চিন্তার সময় ভাষার অবলম্বন ব্যতীত আমাদের কোন উপায় নেই। চিন্তা ধরে রাখার জন্য সুস্পষ্ট ভাষাগত কাঠামো ছাড়া উপায় নেই। কেননা, এ ছাঁচে যে কোন অস্পষ্টতা বা সংশয় অবশেষে আমাদের চিন্তার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।

ভাষাগত সমৃদ্ধি লাভ খুবই প্রয়োজন। কেননা, যে কোন বিষয়ে চিন্তা এতদসংক্রান্ত বিশেষ শব্দমালা ও পরিভাষার ওপর নির্ভর করে। একথা সুস্পষ্ট, এ শব্দমালা ও পরিভাষা বুঝে, এর গভীর জ্ঞান রেখে, চিন্তায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে যে গবেষণায় রত, তার চিন্তা হবে সুগভীর, পরিপক্ক, বাস্তবধর্মী ও ফলপ্রসূ।

ভাষা ও চিন্তার সম্পর্কের নিবিড়তা বিশেষ গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত
এক গবেষণা প্রমাণ করে যে, ভারতে বসাবাসকারী হুবী গোত্রের ভাষাতে অতীত ও ভবিষ্যতের অর্থবোধক কোন শব্দ নেই, কেবলমাত্র বর্তমানের অর্থবোধক শব্দ বিদ্যমান। এটা তাদের চিন্তায় ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। কেননা, তারা যখন কথা বলে, বর্তমান নিয়ে বলে, এমনভাবে বলে, যেন সবই ঘটছে।

ভাল স্মৃতি-শক্তিই সুস্থ চিন্তা ধারণ করে
পূর্বে উল্লেখ হয়েছে যে, চিন্তা এমন এক মানসিক প্রক্রিয়া ও সজ্ঞান চেতনা যা কোন সমস্যা নিরসন কিংবা নির্দিষ্ট কোন বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণের নিমিত্তে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও অভিজ্ঞতার মাঝে সরল শৃঙ্খলা দান করে।

এ-সংজ্ঞা আমাদেরকে চিন্তার মত মানসিক প্রক্রিয়ার জন্য স্মৃতি-শক্তির অপরিসীম গুরুত্বের নির্দেশনা দেয়। কেননা এটি এমন এক সুসংরক্ষণাগার ও পরিচর্যাশালা যা মানুষের তথ্য-অভিজ্ঞতাকে ধারণ করে রাখে, চিন্তার মূহূর্তে যাতে মানুষের বিবেক-বুদ্ধি তা কাজে লাগাতে পারে।

এ-দ্বারা স্মৃতি-যন্ত্র সম্পর্কে বিশদ আলোচনা, একে সক্রিয় করার ধরন-পদ্ধতি সম্পকে যুক্তি-সঙ্গত পরিমাণ এমন বিস্তারিত আলোচনা করার আত্যবশ্যকতা পরিস্ফূট হয়, যা চিন্তাকে সুগভীরতা দান করে, চিন্তা-মিশনকে বাঁধামুক্ত ও বেগবান করে।

১০
স্মৃতিশক্তির প্রকারভেদ
১-অনুভূতিমূলক তথ্য সংরক্ষণাগার :

এ সংরক্ষণাগারে স্মৃতিশক্তি কয়েক মিনিটের বেশী তথ্য ধারণ করে রাখতে পারে না। গাড়ি নিয়ে আপনি রাজপথে চলাকালীন ডানে-বামে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোতে তথ্যসম্বলিত অনেক সাইনবোর্ড দেখতে পাবেন। কিন্তু এ তথ্যগুলো অল্প সময়ে মানসপট থেকে উধাও হয়ে যায়।

২- স্বল্পমেয়াদি স্মৃতিশক্তি :

যে স্মৃতিশক্তি সংরক্ষণের ও নিরবচ্ছিন্ন থাকার প্রয়োজন অনুভূত হয় এরকম তথ্যাবলি কয়েক ঘন্টা ধারন করে রাখতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ : যে ফোন নম্বরে আপনার একাধিকবার যোগাযোগ প্রয়োজন হয় না তা সম্পর্কে আপনার কাছে জানতে চাওয়া হলে আপনার স্বল্প মেয়াদী স্মৃতিপটে উপস্থিত করতে আপনাকে বেশ কয়েকবার ভাবতে হয় আর এটা আপনার স্মৃতিপটে অদূর ভবিষ্যতে আপনার গুরুত্বের মাত্রা অনুপাতে বিদ্যমান থাকবে।

৩- দীর্ঘ মেয়াদি স্মৃতিশক্তি :

এটি অনেক কষ্ট ও সময় ব্যয় করে সংরক্ষণকৃত তথ্যাবলি দীর্ঘ সময় হেফাযত করে। অনেক মনস্তাত্বিক বিজ্ঞানীর বিশ্বাস, ঐ তথ্যাবলি এ-স্মৃতিপটে সবসময় বিদ্যমান থাকে, কালের দীর্ঘতায় লোপ পায় না।

প্রকতপক্ষে, এর কিছু কিছু অংশ উবে যায় ও বিকৃত হয়ে যায়। কিন্তু বৃহাদাংশ সবসময় বিদ্যমান থাকে। জেনে রাখা দরকার যে, নির্দিষ্ট মূহূর্তে কোন তথ্য মানসপটে উপস্থিত করতে না পারার অর্থ এই নয় যে তা এতে বিদ্যমান নেই। বরং এটা উপস্থিতকরণ পদ্ধতি সংগতিপূর্ণ না হওয়া অথবা বিশেষ মানসিক অস্থিরতার কারণে হতে পারে।

১১
স্মরণে আনার স্তরসমূহ
১- উপরের বিবরণ মোতাবেক স্মৃতিশক্তির যে কোন এক প্রকারে সংরক্ষণের জন্য অবধারিত তথ্যকে স্থান দেওয়া। তথ্যগুলোকে স্থান প্রদান যেন সবসময় সুসংহতভাবে সম্পন্ন হয়।

২ - বিশেষ সংকেতের মাধ্যমে ঐ তথ্যকে প্রতীকীকরণ, প্রয়োজনের মূহূর্তে যাতে সং‡কত ব্যবহারের মাধ্যমে সহজে উপস্থিত করা সম্ভব হয়।

এটাকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্তর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তথ্য প্রতীকীকরণ সূক্ষ্ম ও সুস্পষ্টভাবে সম্পাদিত হলে তা অনায়াসে দীর্ঘ সময় সংরক্ষিত রাখা ও অতি অল্প-সময়ে উপস্থিত করা সম্ভব হবে।

আপনার কি স্মরণ হচ্ছে কাবীল এবং হাবীলের মাঝে কে কার হত্যাকারী? আপনি মাঝে মাঝে দ্রুত স্মরণে আনতে পারবেন এবং মাঝে মাঝে দ্রুত স্মরণে আনতে পারবেন না অথবা একেবারে স্মরণে আনতে পারবেন না। কিন্তু আপনি যদি সূক্ষ্মরূপে আপনার তথ্যাবলি প্রতীকীকরণে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন যেমনঃ আপনি আপনার প্রথম শ্রবণে বা পড়ায় কাবীলেই হত্যাকারী একথা অবগতিতে আপনি মনে মনে বলে উঠলেন কাবীলই হত্যাকারী .. ক, ক (ক অক্ষর দ্বারা আরম্ভ করে) তখন আপনি কি বিশ্বাস করেন আপনি এ তথ্য ভুলে যাবেন ?

আরেকটি উদাহরণ নিন, আপনি আপনার বন্ধুর নতুন নম্বর শোনার পর তা লজিকেল রূপে প্রতীকীকরণে চিন্তা করলেন, ধরে নিন নম্বরটা হচ্ছে ১৫৪৫/২৪০ আপনার নিকট প্রথমে এ-নম্বর কঠিন মনে হবে, কিন্তু আপনি যদি বলেন ২৪০ হচ্ছে ইমাম আহমদের মৃত্যুর এক বছর আগে, ১৫৪৫ এবং দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের মধ্যে ব্যবধান হচ্ছে ৪০০ বছর !! অনুরূপ তারিখের ক্ষেত্রে প্রত্যেক শতাব্দীতে নির্দিষ্ট তারিখ ঠিক করতে পারবে।

মানসিক চিত্রগুলো কাজে লাগানোই হচ্ছে প্রতীকীকরণের উত্তম পদ্ধতি। উদাহরণ স্বরূপ : ধরে নিন, আপনি লাইব্রেরী থেকে একটি কলম ও একটি খাতা কেনার ইচ্ছা করেছেন। আপনার ছোট শিশুর জন্য দোকান থেকে একটি রুটি, একটি কুস্তা ও একটি খেলনা কেনার ইচ্ছা করেছেন তখন আপনি মনে মনে কল্পনা করবেন যে নাস্তার পর শিশু খেলনা বিষয়ে লিখবে।

৩- স্মৃতি-সেলগুলোতে তথ্যাদি সংরক্ষণ করা। উল্লেখ্য যে, প্রতি মানবীয় স্মৃতিতে দশ বিলিয়ন সেল রয়েছে। প্রত্যেকটি সেল এক লক্ষ তথ্য সংরক্ষণ করতে পারে। অধুনা বিশেষ গবেষণা প্রমাণ করে যে, সাধারণত মানুষ পনের ট্রিলিয়ন তথ্য সংরক্ষণ করতে পারে। অতএব, মহান আল্লাহ কত বড় সুমহান! আমরা আমাদের শক্তি সম্পর্কে কতইনা অজ্ঞ।

৪- সাংকেতিক চিহ্নের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্যের সন্ধান করা।

১২
স্মৃতিশক্তির ধরন-প্রকৃতি :
সাময়িক স্মৃতিশক্তি :

যে স্মৃতিশক্তি পুণরাবৃত্তি ও বারবার আলোচনার ওপর নির্ভরশীল, এটা বিভিন্ন পাঠ মুখস্থ করার ক্ষেত্রে বেশ উপকারী।

লজিকেল স্মৃতিশক্তি :

যে স্মৃতিশক্তি যুক্তিসঙ্গত বিন্যাস ও সংযোগ প্রতিষ্ঠার ওপর নির্ভর করে। উপরোল্লেখিত উদাহরণগুলোতে তা প্রতীয়মান হয়েছে। সামর্থ্য অনুযায়ী এ স্মৃতিশক্তির ভূমিকা সক্রিয় ও জোরদার করা নিতান্ত প্রয়োজন।

১৩
আমরা কেন ভুলে যাই ?
চার বা পাঁচ কারণে মানুষ ভুলে যায়।

প্রয়োজনীয় গুরুত্বের অভাবে স্মৃতিতে তথ্য দুর্বলভাবে ধারণ করা।

তথ্য-সংরক্ষণের দীর্ঘ সময় পর তা স্থিরতা লাভ করা।

একটার ভিতর আরেকটা তথ্যের অনুপ্রবেশ ঘটা।

অপ্রফুল্লকর তথ্যাদি বর্জন করা। (মনোবিজ্ঞানে এটাকে অবদমন বলা হয়।)

পাপ পরিহার বিষয়ে ওয়াকির উপদেশ উপেক্ষা করা।

১৪
চিন্তা-বৃত্তিকে মনোবিজ্ঞানে রূপায়ন :
চিন্তা-বৃত্তি এমন এক মানসিক প্রক্রিয়া বা জ্ঞান চেতনা, যা ইতি বা নেতিবাচকভাবে আত্মিক উপাদান দ্ধারা বা চিন্তাধীন বিষয়ে পরিতুষ্টির মাত্রা দ্বারা প্রভাবিত হয়। মানুষ যখন পরিতুষ্টির কারণাদি বিদ্যমান আছে এমন বিষয়ে চিন্তা-বৃত্তির সময় মানসিকভাবে পূর্ণ সুস্থ থাকে তা তাকে উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে এবং উন্মুক্তভাবে চিন্তা-কর্ম সম্পাদন করার প্রতি কার্যকর প্রেরণা যোগায় এবং এ পদ্ধতি আল্লাহর বিশেষ কৃপায় উপযুক্ত সমাধানে উপণীত করতে সক্ষম করে।

পক্ষান্তরে, মানুষ যখন মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে, নির্ধারিত বিষয়ে চিন্তা-বৃত্তি নিরবচ্ছিন্নভাবে ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্বের প্রতি নিজেকে তুষ্ট করাতে সামর্থ্যবান হয় না। এ অবস্থাকে মানসিক ও আত্মিক বন্ধ্যাত্ব হিসেবে আখ্যা দেয়া যায়। অনেক সময় চিন্তা-কর্ম পরিহার করে অন্য কাজে ব্যস্ত হওয়া ব্যতীত কোন গতি থাকে না। অনেক ক্ষেত্রে মানসিক সুস্থতা এ পন্থার নির্দেশনা প্রদান করে।

১৫
চিন্তা-পদ্ধতি
চিন্তা জীবন্ত-মানুষের অবিচ্ছেদ্য প্রক্রিয়া বটে কিন্তু বিভিন্ন ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও পদক্ষেপের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় তা খুবই জটিলতাপূর্ণ কাজ। এটাই বাস্তবতা। স্নায়ুবিদদের অভিন্ন মত, মনুষ্য ব্রেইন আল্লাহর বিশাল জগতে সবচেয়ে জটিল বস্তু। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, ঐ সমস্ত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও পদক্ষেপ যুক্তি-তর্কবিদদের ম্যারপ্যাচ, দার্শনিকদের কূটতার্কিকতা এড়িয়ে পুরোপুরি নাগালে আনা অসম্ভব। নিচে যুক্তিবিদ ও দার্শনিকদের প্রবর্তিত চিন্তা-পদ্ধতির অবকাঠামো সংক্ষেপে বিবৃত করা হল।

১- বিভিন্ন কাঠামোতে উত্তেজনা উদ্রেককারীর বিদ্যমানতা, যার দিকে আমাদের বিবেক-বুদ্ধি আমাদের অনুভূতি শক্তিগুলোর মাধ্যমে আকৃষ্ট হয়। যে সমস্ত কারণ অনুভূতি শক্তির ওপর প্রভাব ফেলে তা নিম্নে উদ্ধৃত হল।

- অভ্যন্তরীণ কারণাদি : যেমন মোটিভ বা কর্ম-প্রেরণা, মূল্যবোধ এবং আগ্রহ-অনুরাগ।

- বাহ্যিক কারণাদি : যেমন উত্তেজনা উদ্রেককারী, এর ধরন-প্রকৃতি, শক্তি, তার অবস্থান ও আধুনিকত্বের সর্বশেষ পজিশন।

২- স্মৃতি ও কল্পনা শক্তির সহায়তায় মনে-মগজে ঐ উত্তেজনা উদ্রেককারীকে এমন সাংকেতিক চিহ্নাদিতে রুপায়ন যা বিবেক আয়ত্ত করতে পারে। (সাংকেতিক চিহ্নাদি যথা ব্যক্তিবর্গ, বস্তুসমূহ, অর্থসমূহ, উপলব্ধি, অনুভূতি।)

৩- সুনির্দিষ্ট রেজাল্টে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যে চিহ্নগুলোর ব্যবহারে বিবেক-বুদ্ধিকে সক্রিয় করা। মানসিক প্রক্রিয়ার আলোকে মনুষ্য বিবেক নিম্নরূপে বিভক্ত করা যায়।

- সচেতন বিবেক-বুদ্ধি : এদ্বারা বিভিন্ন বস্তু ও তথ্যাদি হৃদয়ঙ্গম, এগুলোর সংরক্ষণ ও হিতকর পদ্ধতিতে পারস্পরিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করণ, হ্যাঁ বা না সূচক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভবপর হয়।

- অবচেতন বিবেক-বুদ্ধি : যা অনিচ্ছাকৃত, স্বতঃস্ফূর্ত কর্মাবলি নিয়ন্ত্রণ করে, ঘটনাবলি সঞ্চয় করে এবং মানুষকে অভ্যস্ত ক্রিয়াসমূহ সম্পাদন করার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

উল্ল্যেখ্য যে, সচেতনা ও অবচেতনার মাঝে রয়েছে পরস্পর সম্পর্ক, একটা আরেকটার পরিপূরক।

১৬
বিধ্বংসী মানসিক বিস্রস্ততা (অমনোযোগিতা)
অনেক মানুষ তাদের চিন্তার ফলাফলকে বিস্রস্ততার রাহুগ্রাস আক্রান্ত করার পূর্বে চিন্তা-বৃত্তি প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পাদন করার সামর্থ্যবান হওয়ার লক্ষ্যে মনোযোগীতার নিরন্তর প্রচেষ্টা চালানোর দাবি করে। এতদসত্ত্বেও তারা চিন্তা-বৃত্তির সময় মানসিক বিস্রস্ততার অভিযোগ করে।

১৭
মনোযোগীতা কি ? কিভাবে আমরা মনোযোগী হব ?
কোন একটা বিষয় বা কোন চিন্তা সম্পর্কে অথবা নির্দিষ্ট স্থান নিয়ে বিবেক-বুদ্ধি ব্যস্ত হয়ে পড়ার নাম মনোযোগীতা নয়, অথচ আমাদের সমাজে এটাই চালু রয়েছে। মনোযোগীতার অর্থ হচ্ছে, সুনির্দিষ্ট রেজাল্টে উপণিত না হওয়া পর্যন্ত কোন সমস্যা বা বিষয় বিবেচনা বা প্রক্রিয়াধীন রাখা এবং এটাকে মূল টার্গেট বানানো। অধিকাংশ ক্ষেত্রে চিন্তাধীন বিষয়ের গুরুত্বের প্রতি পরিতুষ্টি না হওয়া বা এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা বা চিন্তায় আসার কারণে মানসিক বিস্রস্ততা স্থান করে নেয়। এখন মনোযোগীতার পন্থা কি ?

১৮
সদা মনোযোগ ধরে রাখার জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।
মনোযোগীতা ও অমনোযোগীতা উভয়টা মানুষের অভ্যাস হিসেবে পরিগণিত। মনোযোগীতার অভ্যাসকে ধরে রাখতে হবে। চিন্তা-বৃত্তি থেকে বিমুখকারী সমস্ত চিন্তা-ভাবনা রোধে দৃঢ়প্রত্যয়ী ও সচেষ্ট হতে হবে।

আপনাকে আক্রান্ত করার পূর্বেই এ থেকে পরিপূর্ণ রূপে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। আপনার নেত্র যেন এদিক সেদিক দৃষ্টিপাতকারী ও পর্যবেক্ষণকারী না হয়। আপনার কর্ণ যেন বিক্ষিপ্ত আওয়াজসমূহর প্রতি ওৎ পেতে থাকার যন্ত্রে পরিণত না হয়।

আপনি যা চিন্তা করবেন তা নিয়ে পরিতুষ্ট থাকবেন। অতঃপর চিন্তা-বৃত্তির জন্যে উপযুক্ত সময় চয়ন করবেন।

আপনি আপনার দেহ ও চিন্তাকে ঢিল দিবেন। কেউ কেউ বলে, ঢিল না দেওয়াই মনোযোগিতার উত্তম পন্থা। এখানে বিশুদ্ধ মত হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে মানুষ ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করে, সুতরাং আপনি আপনার জন্য অধিক উপযুক্ত দিকটা বেছে নিন।

উল্লেখ্য যে, মনোযোগহীনতার জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যাক্তিদের মনোযোগ সৃষ্টির সহায়ক হিসেবে এক বিশেষ পন্থা অবলম্বন করা যায় আর তা হচ্ছে কলম ধরে চিন্তা ভাবনায় যা আসে তা লেখতে থাকা।

এটা একটি পরিক্ষিত পন্থা- সচেতন ব্যাক্তিরা যেটা ব্যবহার করে দেখেছেন। এর উপকারিতার প্রশংসা করেছেন। ভাল রেজাল্টের কথা উল্লেখ করেছেন। কোন কোন সময় বিশেষ পরিস্থিতিতে স্বীয় চিন্তা-ভাবনা লিপিবদ্ধ করার জন্য কলম হাতে নিয়ে বসলে সবেগে চিন্তা আসতেই থাকে, সে সময় হাত থেকে কলম রেখে দেয়া এবং চিন্তা প্রক্রিয়ায় নিজকে ব্যস্ত রাখা উচিত। যখন সবেগতা কমে যায় তখন কলম নিয়ে লেখা আরম্ভ করা এটাই নিয়ম।

১৯
ভাইরাসের কারণে চিন্তা-বৃত্তি আক্রান্ত হয়ে পড়ে
এখানে আমাদের সাংস্কৃতিক পরিবেশের আওতাভুক্ত বিভিন্ন অঙ্গনে বিস্রস্তভাবে ভয়াবহ অনেক ভাইরাস ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, যা আমাদের চিন্তা-বৃত্তিকে সারশূন্য করে দেয়, আমাদের মন-মস্তিস্ককে করে ফেলে পঙ্গু, আমাদের বিবেক-বুদ্ধিকে করে নষ্ট। যার প্রতিকারকল্পে আমাদের ব্যক্তিক ও নৈর্ব্যক্তিক মন-মানসিকতায় ধর্মীয় বেশ কিছু অনুশাসন সক্রিয় করা অপরিহার্য। এ মর্মে আমাদের এমন অপারেশন দরকার যদ্বারা আমরা উল্লেখিত ভাইরাসগুলো দূর করতে সক্ষম হব। যেমন মহান আল্লাহ অনুসন্ধান ও যাচাই-বাচাইয়ের প্রতি উৎসাহ প্রদান করে বলেন : হে মুমিনগণ! যদি কোন পাপাচারী তোমাদের নিকট কোন বার্তা আনয়ন করে, তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে, পাছে অজ্ঞাতবশত তোমরা কোন সমপ্রদায়কে ক্ষতিগ্রস্ত করে বস, এবং পরে তোমাদের কৃতকর্মের জন্য তোমাদেরকে অনুতপ্ত হতে হয়। [হুজুরাত : ০৬]

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন :

সত্যের পরিবর্তে অনুমান কোন কাজে আসে না। [ইউনুছ : ৩৬]

আল্লাহ তাআলা ইনসাফ প্রতিষ্ঠা ও মনের খেয়াল-খুশি পরিহারের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে বলেন :

(হে মুমিনগণ! তোমরা ন্যায়বিচারে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত থাকবে আল্লাহর স্বাক্ষী স্বরূপ, যদিও তা তোমাদের নিজেদের অথবা পিতা-মাতা এবং আত্মীয়-স্বজনের বিরুদ্ধে; সে বিত্তবান হোক অথবা বিত্তহীন হোক আল্লাহ উভয়েরই ঘনিষ্টতর। সুতরাং তোমরা ন্যায়বিচার করতে প্রবৃত্তির অনুগামি হয়ো না। যদি তোমরা পেঁচালো কথা বল অথবা পাশ কেটে যাও তবে তোমরা যা কর আল্লাহ তো তার সম্যক খবর রাখেন।) [নিসা : ১৩৫]

মানুষ যে বিপদাপদে আক্রান্ত হয় এর কারণ উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা বলেন :

(তোমাদের যে বিপদ-আপদ ঘটে তা তো তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল এবং তোমাদের অনেক অপরাধ তো তিনি ক্ষমা করে দেন।) [শূরা : ৩০]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন :

যে ব্যক্তির অন্তরে অনু পরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। বলা হলো : মানুষ তো তার কাপড় সুন্দর হওয়া ও তার জুতা সুন্দর হওয়া পছন্দ করে? তিনি বললেন : নিশ্চয় আল্লাহ সুন্দর, সুন্দরকে তিনি পছন্দ করেন। (তিরমিযি: ১৯৯৯)

এ মূলসূত্র ও উদ্ধৃতিসমূহ বোধশক্তি ও মন-মানসে উপস্থিত ও সক্রিয় করার প্রয়োজনীয়তার পাশাপাশি বোধশক্তি ও মন-মানসকে পরিচর্যা, পরিপক্কতা, বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতা এবং দুঃসাহসিকতার মাধ্যমে যত্ন নিতে হবে, করতে হবে বিকশিত ও উর্বর। যাতে তা থেকে নানা কারণে আক্রান্তকারী ভাইরাসসমূহ দূর করা সম্ভব হয়, আক্রান্তদেরকে মানসিকভাবে বর্জন করা সম্ভব হয় এবং উদাসীন ও অবচেতন ব্যক্তিদের অব্যাহতভাবে স্মরণ করিয়ে দেয়া সম্ভব হয়।

২০
নিচে কতিপয় মারাত্মক ভাইরাসের তালিকা দেয়া হলো
নিজের খেয়াল-খুশি তথা বিষয়হীনতার ওপর প্রতিষ্ঠিত চিন্তা-বৃত্তি।

জালপূর্ণতার অনূভূতি অর্থাৎ মানসিক স্ফূরণ-স্ফীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত চিন্তা-বৃত্তি।

পূর্বেকার অবস্থান নির্ভর চিন্তা-বৃত্তি।

অনুভূতিনির্ভর চিন্তা, যেন সেটা প্রমানিত বাস্তবতা (মানসিক বয়োপ্রাপ্তি)

বিভিন্ন আকাঙ্ক্ষানির্ভর চিন্তা, যেন সেটা বাস্তব প্রত্যাশা (মানসিক কল্পনা)

অভ্যাসনির্ভর চিন্তা, (মানসিক অনগ্রসরতা)

যে চিন্তা লালনকারী সদা বিশ্বাস করে যে কোন এক পক্ষ যা ঘটে তার দায়িত্বভার বহন করে। (ষড়যন্ত্রের গিঁট)

যে চিন্তা লালনকারী বিশ্বাস করে যে, অন্যরা যা চিন্তা করে তা বুঝতে সে সদা সামর্থ্যবান (কাল্পনিক অন্তর্দৃষ্টি)

নির্দিষ্ট ও অপরিপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে চিন্তাবৃত্তিকে ব্যাপককরণ।

চিন্তা-বৃত্তিতে গড়িমসি ও ধীরগতিতা।

11- চিন্তা-বৃত্তির পুনরাবৃত্তিতে গড়িমসি ও ধীরগতিতা।

২১
প্যাকেজকৃত চিন্তা-বৃত্তি
এ ধাচেঁর চিন্তা-ভাবনাকারী তারা যারা ব্যক্তিগত ঘটনাবলি, ত্রুটিপূর্ণ বিভিন্ন অভিজ্ঞতা অথবা বাহ্যিক দ্রষ্টব্যাবলি থেকে সাধারণ নীতিমালা উদ্ভাবন করে, দ্রুত সার্বজনীন নীতিমালা ও প্রস্তুত বিধানসমূহ, স্থির ফরমাসমূহে উপণীত হয়। তারা পরিস্থিতি, প্রেক্ষাপটের পরিবর্তনকে স্বীকার করে না। আপনি তাদের একজনকে দেখবেন আপনার নিকট যে কোন এক জটিল বিষয় সম্পর্কে প্রশ্ন করছে এবং আপনার নিকট সংক্ষেপে হ্যাঁ বা না সূচক উত্তর চাচ্ছে। আপনি যদি তার বিরোধিতা করেন সে আপনার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে এবং বিষয়টির ইতি টানবে, অতঃপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। অনেক সময় আপনার সাথে দীর্ঘ আলোচনা কামনা করে আপনার দিকে তাকিয়ে থাকবে। বিষয়টির সুরাহার ক্ষেত্রে আপনার অক্ষমতায় বিস্ময় প্রকাশ করে, আপনার নেত্রদ্বয় যেন সমস্যা সমাধানে তার বিরল যোগ্যতাকে মুগ্ধকর দৃষ্টিতে দেখে।

সমাপ্ত

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন