মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
إن الحمد لله نحمده ونستعينه ونستغفره، ونعوذ بالله من شرور أنفسنا وسيئات أعمالنا، من يهده الله فلا مضل له، ومن يضلل فلا هادي له، وأشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له، وأشهد أن محمداً عبده ورسوله، وصفيه وخليله وخيرته من خلقه، بعثه الله بالهدى ودين الحق بين يدي الساعة بشيراً ونذيراً، فبلَّغ الرسالة، وأدّى الأمانة، ونصـح الأمة، وجاهد في الله حقّ الجهاد حتى أتاه اليقين وهو على ذلك، فصلَّى الله عليه وعلى آله وصحبه ومن اتبع بإحسان سُنّته إلى يوم الدين، أما بعد :
“নিশ্চয় যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আমরা তাঁরই প্রশংসা করি এবং তাঁরই কাছে সাহায্য কামনা করি আর তাঁরই নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি। আমরা আমাদের অন্তরের অনিষ্ট এবং নিজেদের অন্যায় কার্যাদির অশুভ পরিণতি থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি। আল্লাহ যাকে হিদায়াত দান করেন তাকে বিভ্রান্তকারী কেউ নেই এবং যাকে তিনি বিভ্রান্ত করেন তাকে হিদায়াত প্রদানকারী কেউ নেই। আমি এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, আল্লাহ ব্যতীত (সত্য) কোনো মা‘বুদ নেই, তিনি একক এবং তাঁর কোনো শরীক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, নিশ্চয় মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল, তাঁর দোস্ত, তাঁর বন্ধু এবং তাঁর সৃষ্টিকুলের সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে হিদায়াত এবং সত্য দীন দিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত সুসংবাদদাতা এবং সতর্ককারী করে পাঠিয়েছেন। তিনি রিসালাতের মহান দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন এবং আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি অর্পিত দায়িত্বকে তিনি যথাযথভাবে আদায় করেছেন এবং উম্মতকে তিনি সকল বিষয়ে উপদেশ প্রদান প্রদান করেছেন এবং তাঁর মৃত্যু আসা পর্যন্ত আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে গেছেন এবং তিনি তারই ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রতি এবং তাঁর পরিবার পরিজন, তাঁর সাহাবায়ে কেরাম এবং যারা কিয়ামত পর্যন্ত পরিপূর্ণভাবে তাঁর সুন্নাতের অনুসরণ করবে তাদের সকলের প্রতি রহমত নাযিল করুন।
অতঃপর, যদি কোনো দর্শক ও পর্যবেক্ষক আজ অধিকাংশ মানুষের অবস্থা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন, তাহলে তিনি আজব বা বিস্ময়কর এক বিষয় লক্ষ্য করতে পারবেন, তিনি দেখতে পাবেন যে, মানুষ বাহ্যিক বিষয়ে উন্নয়ন, সুন্দর ও সজ্জিতকরণে অধিক যত্নবান ও মনোযোগী। তিনি দেখতে পাবেন তাদেরকে বিভিন্ন প্রকার রূপসজ্জার সামগ্রী দ্বারা সজ্জিত ও সৌন্দর্যচর্চায় যত্নবান হতে। একই সময়ে পর্যবেক্ষক ব্যক্তি মানুষকে আভ্যন্তরীণ বিষয়ের সজ্জিতকরণে ও তার শুদ্ধি এবং সংশোধনে সম্পূর্ণভাবে অমনোযোগী দেখতে পাবেন। বাহ্যিক বিষয়কে সুন্দর করার জন্যে সে কত যে সময়, চেষ্টা ও শক্তি ব্যয় করছে অথচ অন্তরের সংশোধন ও আভ্যন্তরীণ বিষয়ের সংশোধনে সম্পূর্ণভাবে গাফিল। এমনকি অনেক মানুষের মাঝে বাহ্যিক সৌন্দর্য এবং তার শোভা প্রকাশ করা ছাড়া অন্য কোনো আগ্রহই দেখা যায় না। তাই আল্লাহ তা‘আলা মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনায় সত্যই বলেছেন:
“(হে রাসূল!) তুমি যখন মুনাফিকদের দিকে তাকাও তখন তাদের দেহাকৃতি তোমার নিকট প্রীতিকর মনে হয় এবং তারা যখন কথা বলে তখন তুমি সাগ্রহে তাদের কথা শ্রবণ কর, যেন তারা দেওয়ালে ঠেকানো কাঠর স্তম্ভসদৃশ। তারা যে কোনো শোরগোলকে মনে করে তাদেরই বিরুদ্ধে। তারাই শত্রু। অতএব, তাদের সম্পর্কে সতর্ক হও, আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করুন! বিভ্রান্ত হয়ে তারা কোথায় চলছে?” [সূরা আল-মুনাফিকূন, আয়াত: ৪]
অতএব, এই হলো সেই সকল জাতি যারা দৃশ্যত সুন্দর ও মনোরম এবং তাদের কথায় প্রতারক। তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা দেওয়ালে ঠেকানো কাঠের সাথে তুলনা করেছেন, যে কাঠের মধ্যে কোনো উপকারিতা নেই এবং এ সমস্ত এমন দৃশ্য যার কোনো মূল্য নেই এবং এমন অপরাধ ও অন্যায় যা অনুভব করা ও বুঝানো যায় না। এগুলো এমন নিকৃষ্ট অবস্থা যা কোনো ঈমানদার তার নিজের জন্য পছন্দ করতে পারেন না বরং কোনো ঈমানদারের ঈমান তার আভ্যন্তরীণ বিষয়ের সংশোধন এবং তার অন্তরের পবিত্রতা ও সুবাসিত করা ব্যতীত পরিপূর্ণ হতে পারে না। তাই বান্দার আভ্যন্তরীন বিষয় এবং অন্তর যদি নষ্ট, কুৎসিত ও নোংরা হয় তাহলে বাহ্যিক সৌন্দর্য ও উন্নয়ন কোনোই উপকারে আসবে না। আল্লাহ তা‘আলা ঐ সকল লোক বা জাতির কর্মকাণ্ডের নিন্দা করেছেন, যাদেরকে তাদের বাহ্যিক সৌন্দর্য ও তাদের অবস্থার উন্নয়ন প্রতারিত করেছিল এবং তারা তাদের এই অবস্থাকে তাদের আখেরাতের উত্তম পরিণতির প্রমাণ জ্ঞান করেছিল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“তাদের পূর্বে আমরা কত মানব গোষ্ঠীকে ধ্বংস করেছি যারা তাদের অপেক্ষা সম্পদ ও বাহ্যিক দৃষ্টিতে শ্রেষ্ঠ ছিল।” [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৭৪]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা অবহিত করেছেন যে, তিনি এমন অনেক জাতিকে পূর্বে ধ্বংস করেছেন, যারা আকৃতিতে উত্তম এবং অর্থে অধিক আর গঠনে সুন্দর ছিল এবং তারা যে সম্পদ ও সমৃদ্ধি দ্বারা সমৃদ্ধ ছিল তা তাদের কোনোই উপকারে আসে নি।
“তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমন করে নি ও দেখে নি যে, তাদের পূর্ববর্তীদের কী পরিণতি হয়েছিল? পৃথিবীতে তারা ছিল এদের অপেক্ষা সংখ্যায় অধিক এবং শক্তিতে ও কীর্তিতে অধিক প্রবল। তারা যা করতো তা তাদের কোনো কাজে আসে নি।” [সূরা গাফির, আয়াত: ৮২]
অতএব, অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য এবং অন্তরের যথার্থতা ও পরিশুদ্ধতাই হলো মূলবিষয় এবং এর ওপরই নির্ভর করবে দুনিয়া ও আখিরাতের মুক্তি।
“হে বানী আদম! আমি তোমাদেরকে লজ্জাস্থান আবৃত করার ও বেশভুষার জন্যে তোমাদের পোশাক-পরিচ্ছদের উপকরণ অবতীর্ণ করেছি, তাকওয়ার পরিচ্ছদই সর্বোত্তম পরিচ্ছদ। এটা আল্লাহর নির্দশনসমূহের অন্যতম নিদর্শন, যাতে মানুষ এটা থেকে উপদেশ গ্রহণ করবে।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ২৬]
আল্লাহ তা‘আলা অবহিত করেছেন যে, তাকওয়ার পোশাক ও তার সজ্জিতকরণই হলো বাহ্যিক সাজসজ্জা, প্রাচুর্য ও ইত্যাদি থেকে উত্তম। বান্দা তার অন্তরের সংশোধন, সজ্জিতকরণ, সুবাসিত ও সুগন্ধযুক্ত করা ছাড়া তার তাকওয়ার পোশাকে সজ্জিতকরণ সম্ভব নয়। কারণ, তাকওয়ার স্থান হলো অন্তর। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“এটাই আল্লাহর বিধান আর কেউ আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে সম্মান করলে এটাতো তার হৃদয়ের তাকওয়ারই বহিঃপ্রকাশ।” [সূরা আল-হাজ, আয়াত: ৩২]
আল্লাহ তা‘আলা দীন ইসলামের নিদর্শন ও অনুষ্ঠান-এর সম্মান প্রদর্শন করা বান্দার অন্তরে তাকওয়ার বিদ্যমানতা ও অবস্থান এর প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সহীহ মুসলিমে (সাহাবী) আবূ যার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর রব থেকে বর্ণনা করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
«يا عبادي، لو أن أولكم وآخركم وإنسكم وجنَّكم كانوا على أتقى قلب رجل واحد منكم ما زاد ذلك في مُلكي شيئاً، يا عبادي، لو أن أولكم وآخركم وإنسكم وجنَّكم كانوا على أفجر قلب رجل واحد منكم ما نقص ذلك من ملكي شيئاً»
“হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের পূর্বাপর সকল মানুষ ও সকল জিন্ন যদি তোমাদের মধ্যে এক ব্যক্তির সবচেয়ে অধিক সংযমশীল বা পরহেজগার হৃদয়ের মতো হয়ে যায়, তবে তা আমার রাজত্বের মধ্যে কোনো কিছু বৃদ্ধি ঘটাবে না। আর পূর্বাপর সকল মানুষ ও জিন্ন যদি তোমাদের মধ্যে এক ব্যক্তির সবচেয়ে অধিক পাপী ব্যক্তির হৃদয়ের মতো হয়ে যায় তবুও আমার রাজত্বের কিছুই কমাতে পারবে না।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৭৭।]
হাদীসটি এ কথার প্রমাণ করে যে, তাকওয়ার মূল হলো অন্তরের পরহেজগারী এবং একইভাবে অন্যায় ও ব্যভিচারের স্থানও হলো অন্তর। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকওয়া বা পরহেজগারীকে এবং অন্যায় ও ব্যভিচারকে তার স্বস্থানেই যুক্ত করেছেন আর উক্ত স্থান হলো অন্তর। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সম্পর্কে স্পষ্ট করে ব্যাখ্যা করে বলেছেন যা ইমাম মুসলিম স্বীয় সহীহ মুসলিমে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে হাদীস বর্ণনা করেন, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«التقوى هاهنا، التقوى هاهنا، التقوى هاهنا، وأشار إلى صدره »
“তাকওয়া এখানে, তাকওয়া এখানে, তাকওয়া এখানে এবং (তৃতীয়বারে) তিনি তাঁর বক্ষের বা অন্তরের দিকে ইশারা করলেন।” [সহীহ মুসলিম হাদীস নং ২৫৬৪।]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বুকের দিকে ইশারা করার কারণ হলো যে, অন্তরই হলো তাকওয়ার স্থান ও তার মূল।
প্রিয় পাঠক! আপনার অন্তরের বিষয়টি হলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও তার প্রভাবও হলো বিরাট গৌরবময়। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা অন্তরের ইসলাহ বা সংশোধনের জন্য কিতাব (কুরআন) অবতীর্ণ করেছেন এবং অন্তরের সংশোধন, সজ্জিতকরণ এবং সুবাসিত ও সুগন্ধযুক্ত করার জন্য রাসূলগণকে পাঠিয়েছেন।
“হে মানুষ! তোমাদের কাছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে এমন এক বস্তু সমাগত হয়েছে যা হচ্ছে নসীহত এবং অন্তরসমূহের সকল রোগের আরোগ্যকারী, আর ঈমানদারদের জন্য এটি পথ-প্রদর্শক ও রহমত।” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৫৭]
“নিশ্চয় আল্লাহ ঈমানদারগণের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদের নিজেদেরই মধ্যে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন, যে তাদের নিকট আল্লাহর নিদর্শনাবলী পাঠ করে ও তাদেরকে পবিত্র করে এবং তাদেরকে গ্রন্থ এবং প্রজ্ঞা শিক্ষা দান করে।”[সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৬৪]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃহত্তর ও সুমহান যা নিয়ে এসেছেন তা হলো অন্তরের সংশোধন ও পরিশুদ্ধতার ব্যবস্থাপত্র। এ কারণেই একমাত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পথ ও পদ্ধতি ব্যতীত তা পরিশুদ্ধ করার কোনো উপায় নেই। অন্তরের বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার আবশ্যকতার কারণ হলো যে, অন্তর এমন একটি সূক্ষ্ম বা কমনীয় মাংসখণ্ড যা আল্লাহ তা‘আলা তাঁর জ্ঞান ও বিচক্ষণতার দ্বারা মনোনীত করেছেন এবং তাকে তার আলোর স্থান এবং হিদায়াতের জন্যে মূলকেন্দ্র বানিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কিতাবে অন্তরের উদাহরণ উল্লেখ করে বলেছেন:
“আল্লাহ আকাশমণ্ডলী ও যমীনের জ্যোতি, তার জ্যোতির উপমা যেন একটি দীপাধার, যার মধ্যে আছে এক প্রদীপ, প্রদীপটি একটি কাঁচের আবরণের মধ্যে স্থাপিত, কাঁচের আবরণটি উজ্জ্বল নক্ষত্রসদৃশ; এটা প্রজ্জ্বলিত করা হয় পাক-পবিত্র যয়তুন বৃক্ষের তৈল দ্বারা, যা প্রাচ্যের নয়, প্রতিচ্যের নয়, অগ্নি একে স্পর্শ না করলেও যেন এর তৈল উজ্জ্বল আলো দিচ্ছে, জ্যোতির উপর জ্যোতি! আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথ-নির্দেশ করেন তাঁর জ্যোতির দিকে। আল্লাহ মানুষের জন্যে উপমা দিয়ে থাকেন এবং আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বজ্ঞ।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩৫]
অন্তর হলো পরিচয়ের স্থান, তাই এই অন্তর দিয়েই বান্দা তার রব ও মনিবের পরিচয় লাভ করে থাকে। এর মাধ্যমেই মহান আল্লাহর নাম ও গুণাবলী সম্পর্কে পরিচয় লাভ করে থাকে এবং এরই মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর শর‘ঈ আয়াত বা আল্লাহ তা‘আলা যা তার বান্দার প্রতি অহী আকারে নাযিল করেছেন তা গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করে থাকে ।
“তবে কি তারা কুরআন সম্বন্ধে অভিনিবেশ সহকারে চিন্তা করে না? নাকি তাদের অন্তর তালাবন্ধ?” [সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ২৪]
বরং তাদের অন্তরে এমন তালা লাগানো, যা চিন্তা ভাবনা করতে বাধার সৃষ্টি করে এবং এ অন্তর দিয়েই বান্দা আল্লাহ তা‘আলার মাখলুকাত (যেমন, দিন-রাত এবং চন্দ্র-সূর্য ইত্যাদি) এবং দিগন্ত ও সুদূর প্রান্তের নিদর্শন নিয়ে চিন্তা ও গবেষণা করে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“তারা কি দেশ ভ্রমণ করে নি? তাহলে তারা জ্ঞান বুদ্ধিসম্পন্ন হৃদয় ও শ্রুতি শক্তিসম্পন্ন কর্ণের অধিকারী হতে পারতো। বস্তুতঃ চক্ষু তো অন্ধ নয়, বরং অন্ধ হচ্ছে বক্ষস্থিত হৃদয়।” [সূরা আল-হাজ, আয়াত: ৪৬]
আল্লাহ তা‘আলা সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, মানুষ নিজের মধ্যে এবং আল্লাহর মাখলুকাত, দিগন্ত ও সুদূর প্রান্তের নিদর্শন নিয়ে অন্তর ও বোধশক্তি দ্বারাই চিন্তা ও গবেষণা করে থাকে এবং অন্তরের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার আবশ্যকতার তাকিদের কারণ হলো যে, তা এমন এক বাহন যার মাধ্যমে বান্দা তার আখিরাতের পথকে অতিক্রম করতে পারে। কেননা আল্লাহর দিকে ভ্রমণ বা গমন করার অর্থ হলো অন্তরের ভ্রমন, শরীর ও কায়ার ভ্রমন নয়। কবি বলেন:
قطع المسافة بالقلوب إليـه لا
بالسير فـوق مقاعـد الرُّكبـانِ
“তাঁর (আল্লাহর) দিকে পৌঁছতে পথের দূরত্ব ও ব্যবধান অন্তরের দ্বারা অতিক্রম করার মাধ্যমে সম্ভব। সাওয়ারীর গদিতে বসে (তাঁর কাছে) ভ্রমণ সম্ভব নয়।”
ইমাম বুখারী স্বীয় সহীহ বুখারীতে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন যে, আমরা আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সঙ্গে তাবুক যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার পর তিনি আমাদের উদ্দেশ্যে বললেন:
«إنّ أقواماً خلفنا بالمدينة ما سلكنا شِعباً ولا وادياً إلا وهم معنا، حبسهم العذر»
“এমন লোকজন আছে যাদেরকে আমরা মদীনায় পিছনে ছেড়ে এসেছি, আমরা এমন কোনো উপত্যকা ও গোত্রকে অতিক্রম করি না যে, তারা আমাদের সাথে অন্তরের দিক থেকে উপস্থিত থাকেন। তাদেরকে ওযর বা কারণ আটকিয়ে রখেছে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৪২৩।]
ইমাম মুসলিম জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদীসে বর্ণনা করেন,
«إلا شركوكم في الأجر، حبسهم المرض»
“কিন্তু তারা সাওয়াবে তোমাদের সাথে শরীক, যাদেরকে অসুস্থতা আটকে রেখেছে।” [সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১৯১১।]
সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে তারা এমন লোক যাদের দেহ বা শরীর মদীনায় ওযর বা অসুস্থতার কারণে আটকে রাখা হয়েছে, যার ফলে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে উক্ত যুদ্ধে বের হতে পারেন নি, তবে তারা অন্তরের দিক থেকে ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ে বের হয়েছিলেন। তারা আল্লাহর রাসূলের সাথে আত্মা এবং অস্পষ্ট ছায়ামূর্তির ন্যায় উপস্থিত থাকেন এবং এটিই হলো অন্তরের দ্বারা জিহাদ। ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেন: “এবং এটি হলো অন্তর দিয়ে জিহাদ করা, আর তা হলো জিহাদের চার স্তরের একটি। স্তর চারটি হলো নিম্নরূপ: অন্তর, জিহ্বা, অর্থ-সম্পদ এবং শরীর”। হাদীসে বর্ণিত আছে:
তাই ঐ সকল সাহাবায়ে কেরাম যারা মদিনা থেকে অসুস্থতা বা ওযরের জন্য (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে) বের হতে পারেন নি বটে, তবে তারা সাওয়াবে তাদের সমান যারা জান ও মালসহ (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে) যুদ্ধে বের হয়েছিলেন। আর এটা হলো আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ, যাকে চান তিনি তাকে তা দান করেন। আল্লাহ তা‘আলার দিকে অগ্রবর্তিতার ইচ্ছা, অভিপ্রায়, খাঁটি আগ্রহ এবং চূড়ান্ত সংকল্প দ্বারা সম্ভব যদিও ওযরের কারণে আমলে পশ্চাদগামী হউক না কেন।
ইবন রজব রহ. বলেন,
ليست الفضائل بكثرة الأعمال البدنية، لكن بكونها خالصة لله عز وجل، صواباً على متابعة السنة، وبكثرة معارف القلوب وأعمالها
“শারিরীক অধিক আমলের ওপরই শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা নির্ভর করে না, বরং তা নির্ভর করে আল্লাহর জন্য খাঁটি ও বিশুদ্ধ নিয়ত এবং সুন্নাত বা হাদীসের সঠিক অনুবর্তীতার মাধ্যমে এবং অন্তরের দ্বারা অধিক পরিচয় এবং তার আমলের মাধ্যমে”। এজন্যেই বাকর ইবন আব্দুল্লাহ আল-মুযানী রহ. আবু বাকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর অন্য সকল সাহাবায়ে কেরামের প্রতি তার অগ্রবর্তীতার রহস্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, “আবূ বকর তাদের থেকে অগ্রবর্তীতা সালাত ও সাওমের আধিক্যের জন্যে নয়, বরং তার অন্তরে এমন এক বস্তুর মাধ্যমে, যা তার অন্তরকে বিদীর্ণ করেছিল। কবি বলেন,
مـن لـي بمثـل سيـرك المدلـَّل
تمشـي رويـداً وتجـي في الأول
“আমার কাছে তোমার ন্যায় ভ্রমনকারী এমন কে আছে? কারণ, তুমি আস্তে আস্তে চল কিন্তু সবার পূর্বে (গন্তব্যে) পৌঁছে যাও।
প্রিয় পাঠক!
প্রকৃতপক্ষে অন্তরের তাকওয়া হলো মূল বিষয়, অঙ্গপ্রত্যঙ্গের তাকওয়া নয়। আল্লাহ তা‘আলা কুরবানীর পশু এবং (হজে) হাদী কুরবানী করা সম্পর্কে যা বলেন তা এ বিষয়ের প্রমাণ করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“তাঁরই (আল্লাহর) দিকে পবিত্র বাণীসমূহ আরোহণ করে এবং সৎকর্ম সেটাকে উন্নীত করে।” [সূরা ফাতির, আয়াত: ১০]
যে কোনো প্রকার আমলের মূল উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া এবং তা সম্ভব হবে ভালোবাসা এবং সম্মানের সাথে একমাত্র আল্লাহর জন্য অন্তরের ইবাদতের মাধ্যমে।
কবি বলেন,
فالفضـل عنـد الله ليـس بصـورة الـ
أعمـال بـل بحقائـق الإيمـان
وتفاضـل الأعمـال يتبـع مـا يقـو
م بقلـب صاحبـها مـن البرهـان
حتـى يكـون العامـلان كلاهمـا
فـي رتبـة تبـدو لنــا بعيــان
هـذا وبينهمـا كمـا بين السمـا
والأرض في فضـل وفـي رجحـان
“আল্লাহর কাছে আমলের (প্রকাশ্য) আকৃতির কোনো মর্যাদা নেই, বরং তাহলো ঈমানের বাস্তবতার প্রতি নির্ভরশীল। আমলের শ্রেষ্ঠতা ব্যক্তি বা দলীল বা প্রমাণসহ অনুসরণ করে থাকে তার প্রতি। এমন কি আমরা উভয় প্রকার আমলকারীর মর্যাদার স্বচক্ষ দর্শনকারী। এই হলো তাদের দু’জনের মধ্যে মর্যাদায় ও অগ্রাধিকার এবং প্রাধান্যে আসমান ও যমীনের মধ্যে যে পার্থক্য।”
অন্তরের সংশোধন, পবিত্রতা, সকল প্রকার মহামারী থেকে মুক্ত করা এবং মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বে সজ্জিত ও অলংকৃত করার প্রতি মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার প্রতি তাগিদ করে। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বান্দার অন্তরকে তাঁর দেখার স্থান বানিয়েছেন।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إن الله لا ينظر إلى أجسادكم ولا إلى صوركم، ولكن ينظر إلى قلوبكم، وأشار بأصبعه إلى صدره»
“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের বাহ্যিক আকার-আকৃতি ও ধন-দৌলতের দিকে দৃষ্টিপাত করেন না, বরং তিনি লক্ষ্য করে থাকেন তোমাদের অন্তরের দিকে এবং তিনি তাঁর আঙ্গুল দিয়ে বুকের বা অন্তরের দিকে ইশারা করলেন।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৬৪।]
ঈমান ও কুফুরী এবং হিদায়াত ও গোমরাহী, ভ্রষ্টতা ও সততার মূল হলো যা বান্দার অন্তরে সম্পন্ন হয়ে থাকে। এ কারণেই উম্মতের সাধারণ ওলামায়ে কেরামের রায় হলো যে, কোনো বক্তিকে যদি কুফুরী কথার প্রতি বাধ্য করা হয় তাহলে তাকে উক্ত বিষয়ের জন্য পাকড়াও করা হবে না, যদি ইসলামের প্রতি তার অন্তর ঈমানের সাথে নিশ্চিন্ত থাকে। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“কেউ ঈমান আনার পরে আল্লাহকে অস্বীকার করলে এবং কুফুরীর জন্য হৃদয় উন্মুক্ত রাখলে তার ওপর আপতিত হবে আল্লাহর গযব এবং তার জন্যে আছে মহাশাস্তি, তবে তার জন্যে নয়, যাকে কুফুরীর জন্যে বাধ্য করা হয়েছে, কিন্তু তার অন্তর ঈমানে অবিচল। এটা এ জন্য যে, তারা দুনিয়ার জীবনকে আখিরাতের ওপর প্রাধান্য দেয় এবং এই জন্যে যে, আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না।” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ১০৬-১০৭]
এ আয়াতটি অধিকাংশ মুফাসসিরের রায় অনুযায়ী আম্মার ইবন ইয়াসির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সম্পর্কে নাযিল হয়েছিল। তিনি যখন ইসলাম গ্রহণ করেন মুশকিরা তাকে শাস্তি দেয় এবং তার বিরাট ক্ষতি সাধন করে, কষ্টের কারণে তিনি কাফিরদেরকে আল্লাহর সাথে কুফুরীর এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসম্মান করার স্বীকৃতি প্রদান করেন। আম্মার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে কাঁদতে কাঁদতে তার সাথে যে ব্যবহার করা হয়েছিল সে অভিযোগ ব্যক্ত করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আম্মারকে জিজ্ঞাসা করেন, كيف تجد قلبك؟ “তোমার অন্তরকে তুমি কী অবস্থায় পেয়েছিলে?”
আম্মার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু উত্তরে বলেন, আমার অন্তর ঈমানের সাথে প্রশান্তচিত্ত ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আম্মারকে সহজভাবে সুসংবাদ জানালেন, তোমাকে কোনো কুফুরী কথায় বাধ্য করলে তোমার গোনাহ হবে না। “যদি তারা আবারও তোমাকে অনুরূপ করতে আসে আবারও তা করবে”। সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি প্রশংসিত ও মহান।
অন্তরের বিষয়ে অধিক মনোযোগের প্রয়োজনীয়তার তাগিদের কারণ হলো যে, মানুষের অন্তরই হলো তার দেহের বাদশাহ এবং অনুসৃত রাষ্ট্রপ্রধান। কাজেই অন্তরের যথার্থতা, সুস্থতা ও পরিশুদ্ধতাই হলো সব কল্যাণের মূল এবং দুনিয়া ও আখিরাতের মুক্তির মাধ্যম। সহীহ বুখারী ও মুসলিমের হাদীসে নো‘মান ইবন বাশীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ألا وإن في الجسد مضغة إذا صلحت صلح الجسد كله، وإذا فسدت فسد الجسد كله، ألا وهي القلب»
“সাবধান! শুনে রেখো, দেহে বা শরীরে একটি মাংসখণ্ড আছে, মাংসখণ্ডটি যখন সুস্থ ও ভালো থাকে তখন সমস্ত দেহ ও শরীর সুস্থ ও ভালো থাকে এবং তা যখন নষ্ট ও বিকৃত হয়ে যায় তখন সমস্ত দেহ ও শরীর নষ্ট হয়ে যায় এবং জেনে রেখো যে, সেই মাংসখণ্ডটি হলো ক্বালব বা অন্তর।” [সহীহ বুখারী পৃ. ৫২; সহীহ মুসলিম পৃ. ১৫৯৯।]
একথা স্পষ্ট ও পরিষ্কার যে, অন্তরের ইবাদতই হলো মূল, যার ওপরই সমস্ত ইবাদত দাঁড়াবে। তাই শারীরিক পরিশুদ্ধতা নির্ভর করবে অন্তরের পরিশুদ্ধতার ওপর। অন্তর যখন তাকওয়া ও ঈমানের মাধ্যমে যথাযথ ও সঠিক হবে সমস্ত তখন শরীরও আনুগত্য ও আজ্ঞানুবর্তী থাকবে। ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল, আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لا يستقيم إيمان عبد حتى يستقيم قلبه»
“বান্দার অন্তর সঠিক ও সোজা না হওয়া পর্যন্ত তার ঈমান খাঁটি হবে না।” [আল মুসনাদ হাদীস নং ১৩০৭৯।]
তাই বান্দার ঈমান ততক্ষণ পর্যন্ত সঠিক এবং মুক্ত হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তার অন্তর সোজা ও সঠিক না হবে। এ কারণেই মহাজ্ঞানী সর্বজ্ঞ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কিয়ামতের দিনের নাজাতকে অন্তরের পরিশুদ্ধতা, সততা এবং পরিচ্ছন্নতার সাথে সম্পৃক্ত করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“যে দিন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোনো কাজে আসবে না। সে দিন উপকৃত হবে শুধু সে, যে আল্লাহর নিকট আসবে বিশুদ্ধ অন্তঃকরণ নিয়ে।” [সূরা আশ- শু‘আরা, আয়াত: ৮৮-৮৯]
অন্তরের বিষয়ে মনোযোগের প্রয়োজনীয়তা ও এর প্রতি তাগিদের কারণ হলো, তার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য ও লক্ষণ হলো যে, সে পরিবর্তনশীল। কবি বলেন,
ومـا سمـي الإنسـان إلا لأنسـه
ولا القلـب إلا أنـه يتقلَّـب
“মানুষকে ইনসান নামকরণ করা হয়েছে তার বন্ধুত্ব ও ঘনিষ্ঠতার জন্য, আর অন্তরকে ক্বলব এ জন্যে বলা হয় যে তা পরিবর্তনশীল।”
অন্তর হলো দ্রুত পরিবর্তনশীল এবং অত্যন্ত স্বাধীন ইচ্ছার অধিকারী। ইমাম আহমাদ তার মুসনাদ গ্রন্থে মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে হাদীস বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لقلب ابن آدم أشد انقلاباً من القِدر إذا اجتمعت غلياناً»
“আদম সন্তানের অন্তর হাড়ির উথলানো বা টগবগ করে ফোটা পানি থেকেও অধিক দ্রুত পরিবর্তনশীল।” [আল মুসনাদ, পৃষ্ঠা: ২৪৩১৭।]
অতঃপর মিকদাদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, সেই ব্যক্তিই সৌভাগ্যবান যার থেকে ফিতনা দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি উক্ত বাক্যটি তিনবার পুনরাবৃত্তি করেন এবং এর দ্বারা এদিকেই ইঙ্গিত করেন যে, অন্তরের এ পরিবর্তনের কারণ হচ্ছে অন্তরের ওপর ফিতনা আপতিত হওয়া। এ কারণেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অধিক দো‘আ ছিল:
«اللهم مقلب القلوب ثبت قلبي على دينك»
“হে অন্তরের পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে তোমার দীনের প্রতি স্থির রাখ।”
মুসনাদ ইমাম আহমাদে উম্মে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে হাদীস বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দো‘আয় পাঠ করতেন:
«اللهم مقلب القلوب ثبت قلبي على دينك»
“হে অন্তরের পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে তোমার দীনের প্রতি স্থির রাখ।”
এবং তাঁর দো‘আর তালিকায় নিম্নের দো‘আটিও থাকতো:
«وأسألك قلباً سليماً»
“হে আল্লাহ! তোমার কাছে নিরাপদ অন্তর কামনা করছি।” [হাদীসটি ইমাম আহমাদ ৪র্থ খণ্ডের ১২৩, ১২৫ এবং ইমাম তিরমিযী ৩৪০৭ পৃষ্ঠায় এবং নাসাঈ ১৩০৫ বর্ণনা করেছেন।]
এর কারণ হলো, অন্তরের পদস্খলন খুবই মারাত্মক এবং তার ভ্রষ্টতা ও বক্রতা ভয়াবহ ও গুরুতর। আর তার সবচেয়ে নিকৃষ্টতর হলো আল্লাহ থেকে বিমুখ হওয়া এবং তার সমাপ্তি হলো অন্তরে সীলমোহর ও ছাপ এবং পরিশেষে মৃত্যু। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“(হে রাসূল!) তুমি কি লক্ষ্য করেছো তাকে, যে তার খেয়াল-খুশিকে নিজের মা‘বুদ বানিয়ে নিয়েছে? আল্লাহ জেনে শুনেই তাকে বিভ্রান্ত করেছেন এবং তার কর্ণ ও অন্তরে মোহর করে দিয়েছেন এবং তার চক্ষুর উপর রেখেছেন আবরণ। অতএব, আল্লাহর পর কে তাকে পথ নির্দেশ করবে? তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না? “ [সূরা আল-জাসিয়াহ, আয়াত: ২৩]
এ সবই অন্তরের মর্যাদা এবং অন্তরের বিপদ ও ভয়াবহতা বর্ণনা করে।
* কাজেই এই মাংসখণ্ডটি কি মনোযোগ ও চিন্তা-ভাবনার, দাবি রাখে না?!
* এই অন্তরটি কি পরীক্ষা নিরীক্ষা ও অনুসন্ধানের প্রয়োজন নেই?!
* এই অন্তরটি কি পরিষ্কার, পরিশোধন এবং পরীক্ষার উপযুক্ত নয়?!
প্রিয় পাঠক!
তোমার অন্তরের প্রতি দৃষ্টি দাও সে দিন আসার পূর্বে যে দিন অন্তর তাতে জমাকৃত সবই জানিয়ে দিবে, সেদিন আসার পূর্বে যে দিন গোপনীয়তা প্রকাশ পাবে, সে দিন আসার পূর্বে যে দিন অন্তরসমূহ বিদীর্ণ হবে, এবং সে দিন আসার পূর্বে যে দিন হৃদয়ের লুকায়িত ও আচ্ছাদিত যাবতীয় বিষয় প্রকাশিত হবে (অর্থাৎ কিয়ামতের দিন)
“তবে কি সে ঐ সম্পর্কে অবহিত নয় যখন কবরে যা আছে তা উত্থিত করা হবে এবং অন্তরে যা আছে তা প্রকাশ করা হবে? সেদিন তাদের কী ঘটবে, তাদের রব অবশ্যই তা সবিশেষ অবহিত।” [সূরা আল-‘আদিয়াত, আয়াত: ৯-১১]
প্রিয় পাঠক! তোমার অন্তরের হিফাযত করার চেষ্টা করো এবং কোনো প্রকার ক্লান্তি ও বিরক্তি ছাড়া তার সংশোধন ও তাতে উৎকর্ষতার জন্য যত্নবান হও। কারণ, তোমার অন্তর হলো তোমার অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সবচেয়ে বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ একটি অংশ। অন্তর হলো শরীরের সবচেয়ে প্রভাবিত অংশ, যা তার সবচেয়ে সূক্ষ্ম স্থান এবং সংশোধনের দিক থেকে সবচেয়ে কঠিন।
প্রিয় পাঠক! তুমি জেনে রাখো যে, অন্তরের সততা, যথার্থতা এবং পরিশুদ্ধতা অন্তরকে সমস্ত রোগমুক্ত না করে এবং অন্তরকে সমস্ত আপদ থেকে রক্ষা করা ছাড়া অর্জন করা সম্ভব নয়। এ সমস্ত রোগ আর সেই সমস্ত আপদ বা দূর্যোগগুলো মোট পাঁচটি মহামারীর আকার ধারণ করেছে, আর এগুলোই হলো রোগের মূল এবং প্রত্যেক বিপদ ও বালাই এর উৎস। যে ব্যক্তি তা থেকে রক্ষা পেল সে নিরাপদ থাকলো।
কবি বলেন:
فـإن تنـج منهـا تنج مـن ذي عظيمة
وإلا فإنـي لا إخــالك ناجيــا
“তুমি যদি সেই সমস্ত আপদ থেকে নাজাত বা রক্ষা পাও তাহলে তুমি বিরাট সফলতা অর্জন করলে, কিন্তু তুমি যদি তা অর্জনে ব্যর্থ হও তাহলে আমি তোমাকে নাজাতপ্রাপ্ত বলে মনে করবো না।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/554/2
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।