HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
অপরাধমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে সাওমের ভূমিকা
লেখকঃ মুহাম্মাদ শাহিদুল ইসলাম
৪
তাকওয়াতাকওয়া [তাকওয়া শব্দের অর্থ আল্লাহকে ভয় করা। আভিধানিক অর্থ হলো, আত্মরক্ষা, ভীতি এবং কোনো প্রকার অনিষ্ট ও ক্ষতিকর বস্তু থেকৈ নিজেকে রক্ষা করা। আর শরী‘আতের পরিভাষায় এর অর্থ হলো আল্লাহ তায়ালার ভয়ে নিষিদ্ধ বস্তু হতে দূরে থেকে ইসলাম নির্দেশিত বস্তু থেকে দূরে থেকে ইসলাম নির্দেশিত পথে চলার আপ্রাণ চেষ্টা করা। যে কাজ করা বা পরিত্যাগ করার কারণে আল্লাহর শাস্তির যোগ্য হতে হয় তা থেকে নিজেকে রক্ষা করা। আল্লাহর তরফ থেকে প্রাপ্ত করুণা, ভালোবাসা, দয়া ও অনুগ্রহ হারাবার ভয় অন্তরে সদা জেগে থাকা।] আরবী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ ভয়, ভীতি, শঙ্কা, ডর, আতঙ্ক, আশঙ্কা। কুরআনুল কারীমে এ শব্দটি ১৫ বার ব্যবহৃত হয়েছে।
তাকওয়ার ফযীলত সম্পর্কে কুরআনের আয়াত ও হাদীসের সংখ্যা অনেক। আল্লাহ্ তা‘আলা হিদায়াত, রহমত, ইলম ও রিজা জান্নাতীদের এই মাকাম চতুষ্টয়কে তিনটি আয়াতে খাওফকারীরে জন্য নির্দিষ্ট করে বর্ণনা করেছেন। খাওফের ফযীলতের জন্য এটাই যথেষ্ট। হিদায়াত ও রহমত সম্পর্কে আল-কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে:
﴿هُدٗى وَرَحۡمَةٞ لِّلَّذِينَ هُمۡ لِرَبِّهِمۡ يَرۡهَبُونَ ١٥٤ ﴾ [ الاعراف : ١٥٤ ]
“...হিদায়াত ও রহমত তাদের জন্য যারা তাদের পালনকর্তাকে ভয় করে।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৫৪] অন্য এক আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿أَلَمۡ تَرَ أَنَّ ٱللَّهَ أَنزَلَ مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءٗ فَأَخۡرَجۡنَا بِهِۦ ثَمَرَٰتٖ مُّخۡتَلِفًا أَلۡوَٰنُهَاۚ وَمِنَ ٱلۡجِبَالِ جُدَدُۢ بِيضٞ وَحُمۡرٞ مُّخۡتَلِفٌ أَلۡوَٰنُهَا وَغَرَابِيبُ سُودٞ ٢٧ وَمِنَ ٱلنَّاسِ وَٱلدَّوَآبِّ وَٱلۡأَنۡعَٰمِ مُخۡتَلِفٌ أَلۡوَٰنُهُۥ كَذَٰلِكَۗ إِنَّمَا يَخۡشَى ٱللَّهَ مِنۡ عِبَادِهِ ٱلۡعُلَمَٰٓؤُاْۗ إِنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌ غَفُورٌ ٢٨ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَتۡلُونَ كِتَٰبَ ٱللَّهِ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَأَنفَقُواْ مِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ سِرّٗا وَعَلَانِيَةٗ يَرۡجُونَ تِجَٰرَةٗ لَّن تَبُورَ ٢٩ لِيُوَفِّيَهُمۡ أُجُورَهُمۡ وَيَزِيدَهُم مِّن فَضۡلِهِۦٓۚ إِنَّهُۥ غَفُورٞ شَكُورٞ ٣٠ وَٱلَّذِيٓ أَوۡحَيۡنَآ إِلَيۡكَ مِنَ ٱلۡكِتَٰبِ هُوَ ٱلۡحَقُّ مُصَدِّقٗا لِّمَا بَيۡنَ يَدَيۡهِۗ إِنَّ ٱللَّهَ بِعِبَادِهِۦ لَخَبِيرُۢ بَصِيرٞ ٣١ ثُمَّ أَوۡرَثۡنَا ٱلۡكِتَٰبَ ٱلَّذِينَ ٱصۡطَفَيۡنَا مِنۡ عِبَادِنَاۖ فَمِنۡهُمۡ ظَالِمٞ لِّنَفۡسِهِۦ وَمِنۡهُم مُّقۡتَصِدٞ وَمِنۡهُمۡ سَابِقُۢ بِٱلۡخَيۡرَٰتِ بِإِذۡنِ ٱللَّهِۚ ذَٰلِكَ هُوَ ٱلۡفَضۡلُ ٱلۡكَبِيرُ ٣٢ جَنَّٰتُ عَدۡنٖ يَدۡخُلُونَهَا يُحَلَّوۡنَ فِيهَا مِنۡ أَسَاوِرَ مِن ذَهَبٖ وَلُؤۡلُؤٗاۖ وَلِبَاسُهُمۡ فِيهَا حَرِيرٞ ٣٣ وَقَالُواْ ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ ٱلَّذِيٓ أَذۡهَبَ عَنَّا ٱلۡحَزَنَۖ إِنَّ رَبَّنَا لَغَفُورٞ شَكُورٌ ٣٤ ٱلَّذِيٓ أَحَلَّنَا دَارَ ٱلۡمُقَامَةِ مِن فَضۡلِهِۦ لَا يَمَسُّنَا فِيهَا نَصَبٞ وَلَا يَمَسُّنَا فِيهَا لُغُوبٞ ٣٥﴾ [ فاطر : ٢٧، ٣٥ ]
“তুমি কি দেখ নি যে, আল্লাহ আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন, তারপর তা দিয়ে আমরা বিচিত্র বর্ণের ফলমূল উৎপাদন করি আর পাহাড়ে রয়েছে নানা বর্ণের শুভ্র ও লাল পথ এবং (কিছু) মিশকালো। আর এমনিভাবে মানুষ, বিচরণশীল প্রাণী ও চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যেও রয়েছে নানা বর্ণ। বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, পরম ক্ষমাশীল। নিশ্চয় যারা আল্লাহর কিতাব অধ্যয়ন করে, সালাত কায়েম করে এবং আল্লাহ যে রিযিক দিয়েছেন তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করতে পারে যা কখনো ধ্বংস হবে না। যাতে তিনি তাদেরকে তাদের পূর্ণ প্রতিফল দান করেন এবং নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে আরো বাড়িয়ে দেন। নিশ্চয় তিনি অতি ক্ষমাশীল, মহাগুণগ্রাহী। আর আমি যে কিতাবটি তোমার কাছে ওহী করেছি তা সত্য, এটা তার পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়নকারী। নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ব্যাপারে সম্যক অবহিত, সর্বদ্রষ্টা। অতঃপর আমরা এ কিতাবটির উত্তরাধিকারী করেছি আমাদের বান্দাদের মধ্যে তাদেরকে, যাদেরকে আমরা মনোনীত করেছি। তারপর তাদের কেউ কেউ নিজের প্রতি যুলুমকারী এবং কেউ কেউ মধ্যমপন্থা অবলম্বনকারী। আবার তাদের কেউ কেউ আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে কল্যাণকর কাজে অগ্রগামী। এটাই হলো মহা অনুগ্রহ। চিরস্থায়ী জান্নাত, এতে তারা প্রবেশ করবে। যেখানে তাদেরকে স্বর্ণের চুড়ি ও মুক্তা দ্বারা অলঙ্কৃত করা হবে এবং সেখানে তাদের পোশাক হবে রেশমের। আর তারা বলবে, ‘সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের দুঃখ-কষ্ট দূর করে দিয়েছেন। নিশ্চয় আমাদের রব পরম ক্ষমাশীল, মহাগুণগ্রাহী’। ‘যিনি নিজ অনুগ্রহে আমাদেরকে স্থায়ী নিবাসে স্থান দিয়েছেন, যেখানে কোনো কষ্ট আমাদেরকে স্পর্শ করে না এবং যেখানে কোন ক্লান্তিও আমাদেরকে স্পর্শ করে না।” [সূরা ফাতির, আয়াত: ২৭-৩৫]
এ মর্মে হাদীসে এসেছে, আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তোমরা কি জান কোন জিনিস মানুষকে সবচেয়ে বেশি জান্নাতে প্রবেশ করায়? তা হচ্ছে আল্লাহর ভয় বা তাক্বওয়া ও উত্তম চরিত্র। তোমরা কি জান মানুষকে সবচেয়ে বেশি জাহান্নামে প্রবেশ করায় কোন জিনিস? একটি মুখ ও অপরটি লজ্জাস্থান। [তিরমিযী; মিশকাত, হাদীস নং ৪৬২১, হাদীসটি সহীহ।]
আল্লাহর প্রতি ভয়ের দু’টি অবস্থান রয়েছে।
এক. আল্লাহ তা‘আলার আযাবকে ভয় করা। দুই. তাঁর সত্ত্বাকে ভয় করা। দ্বিতীয় প্রকার খাওফ তাদের হয়, যারা ইলম ও অন্তর্দৃষ্টির অধিকারী। প্রথম প্রকার খাওফ সাধারণ মানুষের হয়, যা কেবল জান্নাত ও জাহান্নামে বিশ্বাস স্থাপন এবং এগুলোকে ইবাদত ও নাফরমানীর প্রতিফল বিশ্বাস করার কারণে সৃষ্টি হয়। এ খাওফ অনবধানতা ও ঈমানের দুর্বলতার কারনে দুর্বল হয়ে পড়ে। কিয়ামতের আতঙ্ক চিন্তা করলে এবং আখিরাতের বিভিন্ন কথা স্মরণ করলে এই অনবধানতা দূরীভূত হয়ে যায়। এছাড়া খাওফকারীদেরকে দেখলে এবং তাদের কাছে বসলেও এ থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
দুই. আল্লাহর সত্তাকে ভয় করার অর্থ হচ্ছে আল্লাহর কাছ থেকে দূরে সরে পড়া এবং তাঁর ও বান্দার মাঝখানে অন্তরাল সৃষ্টি আশঙ্কা করা। যুন্নুন মিসরী রহ. বলেন: আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বিচ্ছেদের ভয়ের তুলনায় জাহান্নামের ভয় সমুদ্রের তুলনায় এক ফোঁটা পানির মতোই। এ খাওফ আলিমগণের হয়। সেমতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿أَلَمۡ تَرَ أَنَّ ٱللَّهَ أَنزَلَ مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءٗ فَأَخۡرَجۡنَا بِهِۦ ثَمَرَٰتٖ مُّخۡتَلِفًا أَلۡوَٰنُهَاۚ وَمِنَ ٱلۡجِبَالِ جُدَدُۢ بِيضٞ وَحُمۡرٞ مُّخۡتَلِفٌ أَلۡوَٰنُهَا وَغَرَابِيبُ سُودٞ ٢٧ وَمِنَ ٱلنَّاسِ وَٱلدَّوَآبِّ وَٱلۡأَنۡعَٰمِ مُخۡتَلِفٌ أَلۡوَٰنُهُۥ كَذَٰلِكَۗ إِنَّمَا يَخۡشَى ٱللَّهَ مِنۡ عِبَادِهِ ٱلۡعُلَمَٰٓؤُاْۗ إِنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌ غَفُورٌ ٢٨﴾ [ فاطر : ٢٧، ٢٨ ]
“তুমি কি দেখ নি আল্লাহ আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন, তারপর তা দিয়ে আমি বিচিত্র বর্ণের ফলমূল উৎপাদন করি আর পাহাড়ের মধ্যে রয়েছে নানা বর্ণের শুভ্র ও লাল পথ এবং (কিছু) মিশকালো। আর এমনিভাবে মানুষ, বিচরণশীল প্রাণী ও চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যেও রয়েছে নানা বর্ণ। বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, পরম ক্ষমাশীল।” [সূরা ফাতির, আয়াত: ২৭-২৮]
সাধারণ মুমিনও এই ভয়ের কিছু অংশ পায়; কিন্তু তাদের ভয় নিছক তাকলীদ তথা অনুকরণ হয়ে থাকে। যেমন, অবুঝ শিশু তার পিতার অনুকরণের সাপকে ভয় করে। এই ভয়ের মধ্যে অন্তদৃষ্টি থাকে না বিধায় এটা দুর্বল হয়ে থাকে এবং দ্রুত বিলীন হয়ে যায়। তবে যদি ভয়ের কারণসমূহ সর্বদা অনুধাবন করা যায় এবং তদনুযায়ী দীর্ঘদিন ইবাদত ও গুনাহ থেকে আত্মরক্ষা করা যায়, তা হলে খাওফ শক্তিশালী হয়।
মোটকথা, যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলাকে যথাযথ চিনতে সক্ষম হয়, সে আপনা-আপনিই খাওফ করতে থাকে। তার জন্য কোনো উপায় অবলম্বনের প্রয়োজন নেই। যেমন, কোনো ব্যক্তি হিংস্র জন্তুর স্বরূপ জেনে নেয়, এরপর নিজেকে তার নাগালের মধ্যে দেখতে পায়, সে আপনা-আপনিই হিংস্র জন্তুকে ভয় করতে থাকবে। এজন্য তার কোনো উপায় অবলম্বন করতে হবে না।
উল্লেখ্য যারা আরিফ তথা আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞানী তাদের সব সময় জীবনের অন্তিম মুহূর্ত অশুভ হওয়ার ভয়ে লেগে থাকে। এর কারণ একাধিক, যা অন্তিম মুহূর্তের পূর্বে সংঘটিত হয়। বিদ‘আত, গুনাহ ও নিফাকও এসব কারণের অন্তর্ভুক্ত। মানুষ এসব থেকে মুক্ত নয়। যদি কেউ নিজেকে নিফাক থেকে মুক্ত বলে ধারণা করে, তবে তাও এক ধরনের নিফাক। কেননা প্রসিদ্ধ উক্তি রয়েছে: যে নিফাককে ভয় করে না, সে মুনাফিক। জনৈক বুযুর্গ এক দীনদার আলেমকে বললেন: আমি নিজের জন্য নিফাকের ভয় করি। আলেম বললেন : যদি তুমি মুনাফিক হতে, তবে নিফাকের ভয় করতে না। বস্তুত নিফাকের ভয় করা সত্যিকারের ঈমানের লক্ষণ।
সারকথা, মুমিনের দৃষ্টি সর্বদা অন্তিম মুহূর্তের প্রতি থাকে তা শুভ হবে, না অশুভ। মুমিন বান্দা দু’টি ভয়ের মাঝখানে অবস্থান করে। এক. অতীত সময়। আল্লাহ তা‘আলা তাতে কী করবেন, তা সে জানে না। দুই. অনাগত সময়, যাতে আল্লাহ কী ফায়সালা দিবেন, তা তার জানা নেই। মৃত্যুর পর সন্তুষ্টি অর্জনের কোনো উপায় নেই এবং দুনিয়ার পরে জান্নাত অথবা জাহান্নাম ছাড়া কোনো ঠিকানা নেই।
এ পৃথিবীকে অপরাধমুক্ত করতে হলে তার প্রথম উপাদান হচ্ছে আল্লাহর ভয়, আরবীতে যাকে খাওফ বলে। আবার সেটাকে কেউ কেউ তাকওয়া বলেন। তাকওয়ার মহত্ব ও মহিমা অশেষ। শরঈ‘ এ অর্থ দ্বারা সহজেই বুঝা যায় যে, সত্যিকার তাকওয়াবান লোক আল্লাহর ভয়ে নিষিদ্ধ বস্তু ও কাজসমূহ থেকে নিজেকে রক্ষা করবে কারণ অমান্য করলে কঠিন শাস্তি পেতে হয়। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, বিশ্বকে অপরাধমুক্ত করতে হলে এ তাকওয়ার কোনো বিকল্প নেই। লোক চক্ষুর অন্তরালে পুলিশী প্রহরা যেখানে নিষ্ক্রিয়, রাষ্ট্রীয় এন. এস. আই, অথবা ভি. জি. এফ. আই. বা এস এস এফ এর মতে গোয়েন্দা বাহিনী যেখানে অপারগ, স্যাটেলাইটের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি যেখানে অসহায়, সেখানেও আল্লাহর ভয় একজন ব্যক্তিকে অপরাধমুক্ত রাখতে পারে।
অপরাধমুক্ত সমাজ বিনির্মাণের ক্ষেত্রে তাকওয়ার কোনো বিকল্প নেই বিধায় এর অপরিসীম প্রয়োজনীয়তার দিকে লক্ষ্য রেখে আল্লাহ সিয়ামের মাধ্যমে তাকওয়া অনুশীলন করার ঘোষণা দেন। আর সিয়াম ফরয করার অন্তরালে এ তাকওয়ার গুণ সৃষ্টি হচ্ছে অন্যতম লক্ষ্য। আল্লাহ বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٨٣﴾ [ البقرة : ١٨٣ ]
“হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত : ১৮৩]
আল্লাহর নিকট মানুষের মর্যাদার মাপকাঠিও এ তাকওয়া। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন,
﴿إِنَّ أَكۡرَمَكُمۡ عِندَ ٱللَّهِ أَتۡقَىٰكُمۡۚ١٣﴾ [ الحجرات : ١٣ ]
“তোমাদের মধ্যে সে-ই আল্লাহর নিকট বেশি মর্যাদাবান যে বেশি মুত্তাকী (তাকওয়ার অধিকারী।” [সূরা সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৩]
ইসলামী জীবন দর্শনে তাকওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। তাকওয়ার পোশাক যে পরিধান করে তার দ্বারা কোনোরূপ অন্যায় ও অসৎকর্ম সংঘটিত হতে পারে না। কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন,
﴿وَلَوۡ أَنَّ أَهۡلَ ٱلۡقُرَىٰٓ ءَامَنُواْ وَٱتَّقَوۡاْ لَفَتَحۡنَا عَلَيۡهِم بَرَكَٰتٖ مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِ٩٦﴾ [ الاعراف : ٩٦ ]
“যদি সে সমস্ত জনপদের অধিবাসীবৃন্দ ঈমান আনত ও তাকওয়া অবলম্বন করত তবে আমি তাদের জন্য আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর কল্যাণ উম্মুক্ত করে দিতাম।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৯৬]
অপরাধমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় তাকওয়ার বিকল্প নেই। এ জন্য তাকওয়ার অনুশীলন দরকার। তাকওয়ার অনুশীলন অর্থই হচ্ছে-অপরাধমুক্ত সমাজ তৈরির জন্য এক উচ্চাঙ্গের প্রশিক্ষণ। অনেক সাওম পালনকারীর প্রাণ ক্ষুধা ও পিপাসায় ওষ্ঠাগত হয়। সে গোপনে পৃথিবীর সকল চক্ষুকে ফাঁকি দিয়ে অনেক সুযোগ সুবিধা লাভ করেও ক্ষুধা তৃষ্ণা নিবারণের জন্য পানি ও খাদ্যের দিকে হাত বাড়ায় না। সে অত্যন্ত কষ্ট স্বীকার করে। তাকওয়া নামক এ অতন্দ্র প্রহরীর কারণে সিয়ামের বলিষ্ঠ ভূমিকা তা আমরা স্পষ্ট উপলব্ধি করতে পারি। আল্লাহ, আখেরাত, জাহান্নাম এগুলোর প্রতি যার বিশ্বাস নেই তাকে কখনো অপরাধমুক্ত রাখা সম্ভব নয়। একটু সুযোগ পেলেই সে অপরাধ সংঘটিত করবে। এটাই বাস্তব। আর যদি সকলের মধ্যে তাকওয়া উজ্জীবিত থাকত তাহলে তাকওয়া সকল অপরাধ কর্ম থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে তাদেরকে বাধ্য করত। অপরাধী ও অপরাধ নির্মূলের দায়িত্বশীল উভয়কেই তাকওয়া অর্জন করা ছাড়া সমাজ অপরাধমুক্ত হওয়া সম্ভব নয়।
তাকওয়ার ফযীলত সম্পর্কে কুরআনের আয়াত ও হাদীসের সংখ্যা অনেক। আল্লাহ্ তা‘আলা হিদায়াত, রহমত, ইলম ও রিজা জান্নাতীদের এই মাকাম চতুষ্টয়কে তিনটি আয়াতে খাওফকারীরে জন্য নির্দিষ্ট করে বর্ণনা করেছেন। খাওফের ফযীলতের জন্য এটাই যথেষ্ট। হিদায়াত ও রহমত সম্পর্কে আল-কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে:
﴿هُدٗى وَرَحۡمَةٞ لِّلَّذِينَ هُمۡ لِرَبِّهِمۡ يَرۡهَبُونَ ١٥٤ ﴾ [ الاعراف : ١٥٤ ]
“...হিদায়াত ও রহমত তাদের জন্য যারা তাদের পালনকর্তাকে ভয় করে।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৫৪] অন্য এক আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿أَلَمۡ تَرَ أَنَّ ٱللَّهَ أَنزَلَ مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءٗ فَأَخۡرَجۡنَا بِهِۦ ثَمَرَٰتٖ مُّخۡتَلِفًا أَلۡوَٰنُهَاۚ وَمِنَ ٱلۡجِبَالِ جُدَدُۢ بِيضٞ وَحُمۡرٞ مُّخۡتَلِفٌ أَلۡوَٰنُهَا وَغَرَابِيبُ سُودٞ ٢٧ وَمِنَ ٱلنَّاسِ وَٱلدَّوَآبِّ وَٱلۡأَنۡعَٰمِ مُخۡتَلِفٌ أَلۡوَٰنُهُۥ كَذَٰلِكَۗ إِنَّمَا يَخۡشَى ٱللَّهَ مِنۡ عِبَادِهِ ٱلۡعُلَمَٰٓؤُاْۗ إِنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌ غَفُورٌ ٢٨ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَتۡلُونَ كِتَٰبَ ٱللَّهِ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَأَنفَقُواْ مِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ سِرّٗا وَعَلَانِيَةٗ يَرۡجُونَ تِجَٰرَةٗ لَّن تَبُورَ ٢٩ لِيُوَفِّيَهُمۡ أُجُورَهُمۡ وَيَزِيدَهُم مِّن فَضۡلِهِۦٓۚ إِنَّهُۥ غَفُورٞ شَكُورٞ ٣٠ وَٱلَّذِيٓ أَوۡحَيۡنَآ إِلَيۡكَ مِنَ ٱلۡكِتَٰبِ هُوَ ٱلۡحَقُّ مُصَدِّقٗا لِّمَا بَيۡنَ يَدَيۡهِۗ إِنَّ ٱللَّهَ بِعِبَادِهِۦ لَخَبِيرُۢ بَصِيرٞ ٣١ ثُمَّ أَوۡرَثۡنَا ٱلۡكِتَٰبَ ٱلَّذِينَ ٱصۡطَفَيۡنَا مِنۡ عِبَادِنَاۖ فَمِنۡهُمۡ ظَالِمٞ لِّنَفۡسِهِۦ وَمِنۡهُم مُّقۡتَصِدٞ وَمِنۡهُمۡ سَابِقُۢ بِٱلۡخَيۡرَٰتِ بِإِذۡنِ ٱللَّهِۚ ذَٰلِكَ هُوَ ٱلۡفَضۡلُ ٱلۡكَبِيرُ ٣٢ جَنَّٰتُ عَدۡنٖ يَدۡخُلُونَهَا يُحَلَّوۡنَ فِيهَا مِنۡ أَسَاوِرَ مِن ذَهَبٖ وَلُؤۡلُؤٗاۖ وَلِبَاسُهُمۡ فِيهَا حَرِيرٞ ٣٣ وَقَالُواْ ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ ٱلَّذِيٓ أَذۡهَبَ عَنَّا ٱلۡحَزَنَۖ إِنَّ رَبَّنَا لَغَفُورٞ شَكُورٌ ٣٤ ٱلَّذِيٓ أَحَلَّنَا دَارَ ٱلۡمُقَامَةِ مِن فَضۡلِهِۦ لَا يَمَسُّنَا فِيهَا نَصَبٞ وَلَا يَمَسُّنَا فِيهَا لُغُوبٞ ٣٥﴾ [ فاطر : ٢٧، ٣٥ ]
“তুমি কি দেখ নি যে, আল্লাহ আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন, তারপর তা দিয়ে আমরা বিচিত্র বর্ণের ফলমূল উৎপাদন করি আর পাহাড়ে রয়েছে নানা বর্ণের শুভ্র ও লাল পথ এবং (কিছু) মিশকালো। আর এমনিভাবে মানুষ, বিচরণশীল প্রাণী ও চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যেও রয়েছে নানা বর্ণ। বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, পরম ক্ষমাশীল। নিশ্চয় যারা আল্লাহর কিতাব অধ্যয়ন করে, সালাত কায়েম করে এবং আল্লাহ যে রিযিক দিয়েছেন তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করতে পারে যা কখনো ধ্বংস হবে না। যাতে তিনি তাদেরকে তাদের পূর্ণ প্রতিফল দান করেন এবং নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে আরো বাড়িয়ে দেন। নিশ্চয় তিনি অতি ক্ষমাশীল, মহাগুণগ্রাহী। আর আমি যে কিতাবটি তোমার কাছে ওহী করেছি তা সত্য, এটা তার পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়নকারী। নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ব্যাপারে সম্যক অবহিত, সর্বদ্রষ্টা। অতঃপর আমরা এ কিতাবটির উত্তরাধিকারী করেছি আমাদের বান্দাদের মধ্যে তাদেরকে, যাদেরকে আমরা মনোনীত করেছি। তারপর তাদের কেউ কেউ নিজের প্রতি যুলুমকারী এবং কেউ কেউ মধ্যমপন্থা অবলম্বনকারী। আবার তাদের কেউ কেউ আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে কল্যাণকর কাজে অগ্রগামী। এটাই হলো মহা অনুগ্রহ। চিরস্থায়ী জান্নাত, এতে তারা প্রবেশ করবে। যেখানে তাদেরকে স্বর্ণের চুড়ি ও মুক্তা দ্বারা অলঙ্কৃত করা হবে এবং সেখানে তাদের পোশাক হবে রেশমের। আর তারা বলবে, ‘সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের দুঃখ-কষ্ট দূর করে দিয়েছেন। নিশ্চয় আমাদের রব পরম ক্ষমাশীল, মহাগুণগ্রাহী’। ‘যিনি নিজ অনুগ্রহে আমাদেরকে স্থায়ী নিবাসে স্থান দিয়েছেন, যেখানে কোনো কষ্ট আমাদেরকে স্পর্শ করে না এবং যেখানে কোন ক্লান্তিও আমাদেরকে স্পর্শ করে না।” [সূরা ফাতির, আয়াত: ২৭-৩৫]
এ মর্মে হাদীসে এসেছে, আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তোমরা কি জান কোন জিনিস মানুষকে সবচেয়ে বেশি জান্নাতে প্রবেশ করায়? তা হচ্ছে আল্লাহর ভয় বা তাক্বওয়া ও উত্তম চরিত্র। তোমরা কি জান মানুষকে সবচেয়ে বেশি জাহান্নামে প্রবেশ করায় কোন জিনিস? একটি মুখ ও অপরটি লজ্জাস্থান। [তিরমিযী; মিশকাত, হাদীস নং ৪৬২১, হাদীসটি সহীহ।]
আল্লাহর প্রতি ভয়ের দু’টি অবস্থান রয়েছে।
এক. আল্লাহ তা‘আলার আযাবকে ভয় করা। দুই. তাঁর সত্ত্বাকে ভয় করা। দ্বিতীয় প্রকার খাওফ তাদের হয়, যারা ইলম ও অন্তর্দৃষ্টির অধিকারী। প্রথম প্রকার খাওফ সাধারণ মানুষের হয়, যা কেবল জান্নাত ও জাহান্নামে বিশ্বাস স্থাপন এবং এগুলোকে ইবাদত ও নাফরমানীর প্রতিফল বিশ্বাস করার কারণে সৃষ্টি হয়। এ খাওফ অনবধানতা ও ঈমানের দুর্বলতার কারনে দুর্বল হয়ে পড়ে। কিয়ামতের আতঙ্ক চিন্তা করলে এবং আখিরাতের বিভিন্ন কথা স্মরণ করলে এই অনবধানতা দূরীভূত হয়ে যায়। এছাড়া খাওফকারীদেরকে দেখলে এবং তাদের কাছে বসলেও এ থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
দুই. আল্লাহর সত্তাকে ভয় করার অর্থ হচ্ছে আল্লাহর কাছ থেকে দূরে সরে পড়া এবং তাঁর ও বান্দার মাঝখানে অন্তরাল সৃষ্টি আশঙ্কা করা। যুন্নুন মিসরী রহ. বলেন: আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বিচ্ছেদের ভয়ের তুলনায় জাহান্নামের ভয় সমুদ্রের তুলনায় এক ফোঁটা পানির মতোই। এ খাওফ আলিমগণের হয়। সেমতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿أَلَمۡ تَرَ أَنَّ ٱللَّهَ أَنزَلَ مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءٗ فَأَخۡرَجۡنَا بِهِۦ ثَمَرَٰتٖ مُّخۡتَلِفًا أَلۡوَٰنُهَاۚ وَمِنَ ٱلۡجِبَالِ جُدَدُۢ بِيضٞ وَحُمۡرٞ مُّخۡتَلِفٌ أَلۡوَٰنُهَا وَغَرَابِيبُ سُودٞ ٢٧ وَمِنَ ٱلنَّاسِ وَٱلدَّوَآبِّ وَٱلۡأَنۡعَٰمِ مُخۡتَلِفٌ أَلۡوَٰنُهُۥ كَذَٰلِكَۗ إِنَّمَا يَخۡشَى ٱللَّهَ مِنۡ عِبَادِهِ ٱلۡعُلَمَٰٓؤُاْۗ إِنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌ غَفُورٌ ٢٨﴾ [ فاطر : ٢٧، ٢٨ ]
“তুমি কি দেখ নি আল্লাহ আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন, তারপর তা দিয়ে আমি বিচিত্র বর্ণের ফলমূল উৎপাদন করি আর পাহাড়ের মধ্যে রয়েছে নানা বর্ণের শুভ্র ও লাল পথ এবং (কিছু) মিশকালো। আর এমনিভাবে মানুষ, বিচরণশীল প্রাণী ও চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যেও রয়েছে নানা বর্ণ। বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, পরম ক্ষমাশীল।” [সূরা ফাতির, আয়াত: ২৭-২৮]
সাধারণ মুমিনও এই ভয়ের কিছু অংশ পায়; কিন্তু তাদের ভয় নিছক তাকলীদ তথা অনুকরণ হয়ে থাকে। যেমন, অবুঝ শিশু তার পিতার অনুকরণের সাপকে ভয় করে। এই ভয়ের মধ্যে অন্তদৃষ্টি থাকে না বিধায় এটা দুর্বল হয়ে থাকে এবং দ্রুত বিলীন হয়ে যায়। তবে যদি ভয়ের কারণসমূহ সর্বদা অনুধাবন করা যায় এবং তদনুযায়ী দীর্ঘদিন ইবাদত ও গুনাহ থেকে আত্মরক্ষা করা যায়, তা হলে খাওফ শক্তিশালী হয়।
মোটকথা, যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলাকে যথাযথ চিনতে সক্ষম হয়, সে আপনা-আপনিই খাওফ করতে থাকে। তার জন্য কোনো উপায় অবলম্বনের প্রয়োজন নেই। যেমন, কোনো ব্যক্তি হিংস্র জন্তুর স্বরূপ জেনে নেয়, এরপর নিজেকে তার নাগালের মধ্যে দেখতে পায়, সে আপনা-আপনিই হিংস্র জন্তুকে ভয় করতে থাকবে। এজন্য তার কোনো উপায় অবলম্বন করতে হবে না।
উল্লেখ্য যারা আরিফ তথা আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞানী তাদের সব সময় জীবনের অন্তিম মুহূর্ত অশুভ হওয়ার ভয়ে লেগে থাকে। এর কারণ একাধিক, যা অন্তিম মুহূর্তের পূর্বে সংঘটিত হয়। বিদ‘আত, গুনাহ ও নিফাকও এসব কারণের অন্তর্ভুক্ত। মানুষ এসব থেকে মুক্ত নয়। যদি কেউ নিজেকে নিফাক থেকে মুক্ত বলে ধারণা করে, তবে তাও এক ধরনের নিফাক। কেননা প্রসিদ্ধ উক্তি রয়েছে: যে নিফাককে ভয় করে না, সে মুনাফিক। জনৈক বুযুর্গ এক দীনদার আলেমকে বললেন: আমি নিজের জন্য নিফাকের ভয় করি। আলেম বললেন : যদি তুমি মুনাফিক হতে, তবে নিফাকের ভয় করতে না। বস্তুত নিফাকের ভয় করা সত্যিকারের ঈমানের লক্ষণ।
সারকথা, মুমিনের দৃষ্টি সর্বদা অন্তিম মুহূর্তের প্রতি থাকে তা শুভ হবে, না অশুভ। মুমিন বান্দা দু’টি ভয়ের মাঝখানে অবস্থান করে। এক. অতীত সময়। আল্লাহ তা‘আলা তাতে কী করবেন, তা সে জানে না। দুই. অনাগত সময়, যাতে আল্লাহ কী ফায়সালা দিবেন, তা তার জানা নেই। মৃত্যুর পর সন্তুষ্টি অর্জনের কোনো উপায় নেই এবং দুনিয়ার পরে জান্নাত অথবা জাহান্নাম ছাড়া কোনো ঠিকানা নেই।
এ পৃথিবীকে অপরাধমুক্ত করতে হলে তার প্রথম উপাদান হচ্ছে আল্লাহর ভয়, আরবীতে যাকে খাওফ বলে। আবার সেটাকে কেউ কেউ তাকওয়া বলেন। তাকওয়ার মহত্ব ও মহিমা অশেষ। শরঈ‘ এ অর্থ দ্বারা সহজেই বুঝা যায় যে, সত্যিকার তাকওয়াবান লোক আল্লাহর ভয়ে নিষিদ্ধ বস্তু ও কাজসমূহ থেকে নিজেকে রক্ষা করবে কারণ অমান্য করলে কঠিন শাস্তি পেতে হয়। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, বিশ্বকে অপরাধমুক্ত করতে হলে এ তাকওয়ার কোনো বিকল্প নেই। লোক চক্ষুর অন্তরালে পুলিশী প্রহরা যেখানে নিষ্ক্রিয়, রাষ্ট্রীয় এন. এস. আই, অথবা ভি. জি. এফ. আই. বা এস এস এফ এর মতে গোয়েন্দা বাহিনী যেখানে অপারগ, স্যাটেলাইটের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি যেখানে অসহায়, সেখানেও আল্লাহর ভয় একজন ব্যক্তিকে অপরাধমুক্ত রাখতে পারে।
অপরাধমুক্ত সমাজ বিনির্মাণের ক্ষেত্রে তাকওয়ার কোনো বিকল্প নেই বিধায় এর অপরিসীম প্রয়োজনীয়তার দিকে লক্ষ্য রেখে আল্লাহ সিয়ামের মাধ্যমে তাকওয়া অনুশীলন করার ঘোষণা দেন। আর সিয়াম ফরয করার অন্তরালে এ তাকওয়ার গুণ সৃষ্টি হচ্ছে অন্যতম লক্ষ্য। আল্লাহ বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٨٣﴾ [ البقرة : ١٨٣ ]
“হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত : ১৮৩]
আল্লাহর নিকট মানুষের মর্যাদার মাপকাঠিও এ তাকওয়া। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন,
﴿إِنَّ أَكۡرَمَكُمۡ عِندَ ٱللَّهِ أَتۡقَىٰكُمۡۚ١٣﴾ [ الحجرات : ١٣ ]
“তোমাদের মধ্যে সে-ই আল্লাহর নিকট বেশি মর্যাদাবান যে বেশি মুত্তাকী (তাকওয়ার অধিকারী।” [সূরা সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৩]
ইসলামী জীবন দর্শনে তাকওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। তাকওয়ার পোশাক যে পরিধান করে তার দ্বারা কোনোরূপ অন্যায় ও অসৎকর্ম সংঘটিত হতে পারে না। কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন,
﴿وَلَوۡ أَنَّ أَهۡلَ ٱلۡقُرَىٰٓ ءَامَنُواْ وَٱتَّقَوۡاْ لَفَتَحۡنَا عَلَيۡهِم بَرَكَٰتٖ مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِ٩٦﴾ [ الاعراف : ٩٦ ]
“যদি সে সমস্ত জনপদের অধিবাসীবৃন্দ ঈমান আনত ও তাকওয়া অবলম্বন করত তবে আমি তাদের জন্য আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর কল্যাণ উম্মুক্ত করে দিতাম।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৯৬]
অপরাধমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় তাকওয়ার বিকল্প নেই। এ জন্য তাকওয়ার অনুশীলন দরকার। তাকওয়ার অনুশীলন অর্থই হচ্ছে-অপরাধমুক্ত সমাজ তৈরির জন্য এক উচ্চাঙ্গের প্রশিক্ষণ। অনেক সাওম পালনকারীর প্রাণ ক্ষুধা ও পিপাসায় ওষ্ঠাগত হয়। সে গোপনে পৃথিবীর সকল চক্ষুকে ফাঁকি দিয়ে অনেক সুযোগ সুবিধা লাভ করেও ক্ষুধা তৃষ্ণা নিবারণের জন্য পানি ও খাদ্যের দিকে হাত বাড়ায় না। সে অত্যন্ত কষ্ট স্বীকার করে। তাকওয়া নামক এ অতন্দ্র প্রহরীর কারণে সিয়ামের বলিষ্ঠ ভূমিকা তা আমরা স্পষ্ট উপলব্ধি করতে পারি। আল্লাহ, আখেরাত, জাহান্নাম এগুলোর প্রতি যার বিশ্বাস নেই তাকে কখনো অপরাধমুক্ত রাখা সম্ভব নয়। একটু সুযোগ পেলেই সে অপরাধ সংঘটিত করবে। এটাই বাস্তব। আর যদি সকলের মধ্যে তাকওয়া উজ্জীবিত থাকত তাহলে তাকওয়া সকল অপরাধ কর্ম থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে তাদেরকে বাধ্য করত। অপরাধী ও অপরাধ নির্মূলের দায়িত্বশীল উভয়কেই তাকওয়া অর্জন করা ছাড়া সমাজ অপরাধমুক্ত হওয়া সম্ভব নয়।
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন