HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

একজন সফল গার্ডিয়ানের গুণাবলি

লেখকঃ মুহাম্মদ শামসুল হক সিদ্দিক

দুই. সহিষ্ণুতা ও ধীরস্থিরতা
গার্ডিয়ানকে বিবেচক হতে হবে। আবেগের মাথায় হুট্‌ করে একটা কিছু করে ফেললেই হবে না। সে হিসেবে তাকে যথেষ্ট পরিমাণ সহিষ্ণু হতে হবে। ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। সহিষ্ণুতা ও ধীরস্থিরতা আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় গুণ, হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক সাহাবিকে বলেছেন :’তোমার মধ্যে এ দুটি গুণ রয়েছে যা আল্লাহর কাছে পছন্দনীয়, সহিষ্ণুতা, ও ধীরস্থিরতা। [ মুসলিম:হাদিস নং ১৭]

সহিষ্ণুতা ও ধীরস্থিরতা দাবি হল, আপনি যখন আপনার ছেলেমেয়েকে কোনো অন্যায় করতে দেখবেন, তখন রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে সাথে সাথে মারধর করতে যাবেন না, এ ক্ষেত্রে আপনাকে বরং নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ অনুসরণ করতে হবে। শুরুতে আপনি তাকে জিজ্ঞাসা করবেন কেন এমনটি করল, তারপর তাকে এ ব্যাপারে যা সঠিক তা বাতলে দেবেন। সে যে অন্যায় করেছে তা ব্যাখ্যা দিয়ে বোঝাবেন। সাথে সাথে তাকে একটু আদরও করে দেবেন। হতে পারে সে সংশোধিত হয়ে যাবে। রাফে ইবনে আমর আল-গিফারি হতে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন: বাল্যকালে আমি আনসারদের খেজুর গাছে ঢিল ছুড়তাম, অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে বলা হল, ‘ একটি বালক আমাদের খেজুর গাছে ঢিল ছুড়ছে’। এরপর আমাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিয়ে যাওয়া হল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন: হে বালক খেজুর গাছে তোমার ঢিল ছোড়ার কারণ কী? আমি বললাম: (খেজুর) খাই। তিনি বললেন : খেজুর গাছে ঢিল মেরো না। গাছের নিচে যা এমনিতেই পড়ে তা খাও। অতঃপর তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন এবং বললেন, হে আল্লাহ! আপনি এর উদর পরিতৃপ্ত করুন। [ইমাম তিরমিযি হাদিসটি বিশুদ্ধ বলেছেন]

সহিষ্ণুতা ও ধীরস্থিরতার আরেকটি দাবি হল বাচ্ছাদেরকে প্রহার না করা। আমরা অনেকেই মনে করি যে মারধর না করলে ছেলেসন্তান মানুষ করা যাবে না। এ কথা ভুল। বরং হেকমত ও দূরদর্শিতার মাধ্যমে বাচ্চাদের ভুলত্রুটি শুদ্ধ করা জরুরি। আবু উমামা (রাযি:) হতে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন: নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটি বালক নিয়ে এলেন, তাদের একজনকে আলী (রাযি:) কে দিয়ে দিলেন এবং বললেন, একে মেরো না, কেননা নামাজ আদায়কারীকে মারার ব্যাপারে আমাকে নিষেধ করা হয়েছে। [ আলবানি: সহিহু আদাবিল মুফরাদ]

ইসলামে শাস্তি প্রদানের উদ্দেশ্য ইসলাহ ও সংশোধন, প্রতিশোধ ও মনের ঝাল মেটানো নয়। এ কারণে শিশুকে শাস্তি দেয়ার পূর্বে তার মেজাজ-প্রকৃতি বুঝতে হবে। ভুল সম্পর্কে শিশুকে বারবার বলে বুঝাতে হবে। ইবনে খালদুন রা. বলেন, ‘ যে ব্যক্তি শিক্ষার্থী ও খাদেমদেরকে মারধর ও মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগ করে শিক্ষা দিতে যাবে, এমতাবস্থায় এ বলপ্রয়োগই অধিপতি হয়ে বসবে, বলপ্রয়োগকৃত ব্যক্তির হৃদয়ে সংকীর্ণতা আগমন করবে। উদ্যম-উৎসাহ বিদায় নেবে। অলসতা জায়গা করে নেবে। এ কাজ তাকে মিথ্যা ও খারাবির দিকে ধাবিত করবে; সে এরূপ করবে এই ভয়ে যে অন্যথায় দমনপীড়নের খড়্গ তার উপর নেমে আসবে। দমনপীড়ন তাকে ধোঁকা ও ছলচাতুরি শেখাবে। পরবর্তীতে এরূপ করা তার অভ্যাসে পরিণত হবে। মানবতা, যা তাকে শেখানোর উদ্দেশ্য ছিল তা বিকারগ্রস্থ হয়ে পড়বে।

অভিজ্ঞতার সাক্ষী এই যে মারধর কোনো ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনে না। অধিকাংশ সময় মারধর বরং বিপরীত ফলাফল বয়ে আনে। মারধর শিশুর ইচ্ছা শক্তিকে দুর্বল করে দেয়, চেতনার শাণিতভাব বিলুপ্ত করে দেয়, উদ্যম উৎসাহে ব্যত্যয় ঘটায়। সন্তান যদি তার পাশে এমন ব্যক্তিকে পায় যে সবসময় তাকে হেকমত ও সুন্দর ভাষায় তার দায়দায়িত্ব সম্পর্কে বোঝাবে, কাজ করার প্রতি উৎসাহী করে তুলবে। তা হলে কঠিন শাস্তির কোনো প্রয়োজন হবে মনে হয় না।

হ্যাঁ, মারধর করার একান্তর প্রয়োজন হলে তা হতে হবে হালকাভাবে, অর্থাৎ তা হতে হবে এমনভাবে যে মারের আঘাত গায়ের চামড়া ভেদ করে কখনো যেন মাংস পর্যন্ত গিয়ে না পৌঁছায়। শিশুর বয়স দশ বছরের কম হলে হালকাভাবে একসাথে তিন প্রহারের অধিক করা যাবে না। উমর ইবনে আব্দুল আযীয রা. বিভিন্ন এলাকায় এই বলে চিঠি লিখে পাঠাতেন যে , শিক্ষক যেন একসাথে তিন প্রহারের অধিক না দেয়; কেননা এতটুকু শিশুকে ভয় দেখানোর জন্য যথেষ্ট। শিশু দশ বছর বয়সে উপনীত হলে তাকে নামাজ পড়তে বাধ্য করার প্রয়োজনে মারধরের অনুমতি রয়েছে, তবে এক্ষেত্রেও শুধু গাত্রের চামড়ার উপর দিয়ে হালকাভাবে বেশির বেশি দশ প্রহার পর্যন্ত যাওয়া যাবে, এর অধিক নয়। হাদিসে এসেছে: হদ(শরিয়ত নির্ধারিত শাস্তি) ব্যতীত অন্য কোনো ক্ষেত্র দশপ্রহারের অধিক প্রয়োগ করা হবে না। [বুখারি:৬৩৪২]

হালকাভাবে কেবল গাত্রের চামড়া স্পর্শ করে এমনভাবে প্রহার করতে হবে এই জন্য বললাম যে কুরআনের ব্যাখ্যাকারগণ ব্যভিচারকারীর উপর শাস্তি প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলা যে শব্দটি প্রয়োগ করেছেন তা হল { فاجلدوا } মুফাসসিরগণ বলেছেন যে এর অর্থ এমনভাবে প্রহার করা যা চামড়া অতিক্রম করে না। যদি চামড়া অতিক্রম করে মাংস পর্যন্ত চলে যায় তাহলে সেটা হবে ইসলামের আদর্শবহির্ভূত অযাচিত একটি কর্ম।

যেসব ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্কদের উপর হদ প্রয়োগের কথা আছে সেখানেও প্রহার করার মাধ্যম - বেত ইত্যাদি- কর্কশ বা গিটযুক্ত হওয়া নিষেধ। যায়েদ ইবনে আসলাম থেকে এক বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে এক ব্যক্তি ব্যভিচার করেছে বলে স্বীকার করে নেয়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাস্তি প্রয়োগের জন্য একটি বেত আনতে বললেন, অতঃপর একটি ভাঙ্গা বেত আনা হল। তিনি বললেন, এর চেয়ে ভাল। অতঃপর একটি নতুন বেত নিয়ে আসা হল যার গিটগুলো তখনো অকর্তিত। তিনি বললেন, এর চেয়ে নিচে। এরপর একটি বেত নিয়ে আসা হল যার গিটগুলো কর্তিত এবং বেতটিও নরম। অতঃপর তিনি নির্দেশ দিলেন এবং তাকে জিদল (প্রহার) করা হল। [মুয়াত্তায়ে ইমাম মালেক, কিতাবুল হুদুদ:২১৯৯]

প্রহারকারীর ক্ষেত্রে উমর (রাযি:) এর নির্দেশ হল হাত এমনভাবে না উঠানো যাতে বগলের নীচ প্রকাশ পেয়ে যায়।[ ইবনে আব্দুল বারর, আত্তামহিদ: খণ্ড :৫, পৃষ্ঠা ৩৩৪] অর্থাৎ প্রহার যেন শক্ত ও কঠিনভাবে না হয়।

প্রহারকালীন কোনো শিশু যদি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করে তবে সাথে সাথে প্রহার বন্ধ করে দেয়া জরুরি। হাদিসে এসেছে যে ব্যক্তি তোমাদের কাছে আল্লাহর নামে আশ্রয় প্রার্থনা করল, তাকে আশ্রয় দাও। এবং আল্লাহর নামে যে চাইল তাকে দাও। [ সহিহুল জামে:৬০২১]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো শিশুকে কোনো দিন মারধর করেন নি। বেশির বেশি তিনি হালকাভাবে কান ডলা দিয়ে দিতেন। এমনকী জেহাদের ময়দান ব্যতীত তিনি তার নিজ হাতে কাউকে প্রহার করেন নি। হাদিসে এসেছে, আয়েশা (রাযি:) বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত দিয়ে কাউকে কখনো প্রহার করেন নি। না কোনো নারীকে, না খাদেমকে, হ্যাঁ, যদি তিনি আল্লাহর রাস্তায় জেহাদে থাকতেন, (তবে ভিন্ন কথা)।[মুসলিম : ৪২৬৯]

অতএব এ ক্ষেত্রে খোলাসা কথা হল, শিশুকে আদব শেখানো প্রহারের আশ্রয় ব্যতীতই সম্পন্ন হওয়া উচিত। হিকমত-প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা, পরিণতি-চিন্তা ইত্যাদি বিবেচনায় রেখে শিশুকে আদব শেখানোর উত্তম পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত। দশ বছরের নিচে যার বয়স এমন শিশুকে প্রহার করার ক্ষেত্রে হালকাভাবে একত্রে তিন প্রহারের ঊর্ধ্বে যাওয়া যাবে না। দশ বছরের ঊর্ধ্বে হলে হালকাভাবে দশ প্রহার পর্যন্ত যাওয়া যাবে, এর বেশি নয়।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন