মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
(ক). কুরআনে কি ‘আয়াতে তাতহীর’ নামে কোন আয়াত রয়েছে?
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/697/5
না, আমাদের জানা মতে, কুরআনুল কারীমে ‘তাতহীর’ নামে কোন আয়াতে নেই, যেমন রয়েছে আয়াতুল কুরসি ইত্যাদি। হ্যাঁ, সূরা আহযাবের (৩৩)নং আয়াতের শেষাংশকে শিয়া দ্বাদশ ইমামিয়্যাগণ আয়াতে তাতহীর বলেন, তাতে তাতহীর শব্দ রয়েছে তাই। দেখুন:
“... এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর। হে নবী পরিবার, আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূরীভূত করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে ‘তাতহীর’ বা পবিত্র করতে”। সূরা আহযাব: (৩৩)
এ ছাড়া অন্যান্য আয়াতেও তাতহীর শব্দ রয়েছে, কিন্তু সেগুলোকে শিয়ারা আয়াতে তাতহীর বলে না এবং যাদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে তাদেরকে নিষ্পাপ ও মাসুম বলে না। যেমন:
১. বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী তিন শো তেরোজন সাহাবি সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
“স্মরণ কর, যখন তিনি তোমাদেরকে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন করেন তার পক্ষ থেকে নিরাপত্তাস্বরূপ এবং আকাশ থেকে তোমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষণ করেন, আর যাতে এর মাধ্যমে তিনি তোমাদেরকে “তাতহীর” তথা পবিত্র করেন, আর তোমাদের থেকে শয়তানের কুমন্ত্রণা দূর করেন, তোমাদের অন্তরসমূহ দৃঢ় রাখেন এবং এর মাধ্যমে তোমাদের পা-সমূহ স্থির রাখেন”। সূরা আনফাল: (১১)
এ আয়াতে আহলে বদরকে পবিত্র করা এবং তাদের থেকে শয়তানের নাপাকি দূর করার কথা থাকলেও সবাই একমত যে, তারা মাসুম বা নিষ্পাপ নয়। অথচ এতে তাদের অতিরিক্ত সিফাত অন্তরসমূহ দৃঢ় রাখা ও পাসমূহ স্থির রাখার সংবাদ রয়েছে, যা কথিত আয়াতে তাতহীরে নেই। উল্লেখ্য, সূরা আল-আহযাবের رجس ও সূরা আল-আনফালের رجز শব্দদ্বয়ের অর্থ এক।
২. বরং সকল মুসলিম সম্পর্কে আল্লাহ তাতহীর শব্দ ব্যবহার করেছেন:
“আল্লাহ তোমাদের ওপর কোন সমস্যা সৃষ্টি করতে চান না, বরং তিনি চান তোমাদের “তাতহীর” বা পবিত্র করতে এবং তার নিয়ামত তোমাদের ওপর পূর্ণ করতে, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর”। সূরা মায়েদা: (৬)
এ আয়াতে সূরা আল-আহযাবের ন্যায় ইরাদা ও ‘তাতহীর’ উভয় শব্দ রয়েছে, অতিরিক্ত রয়েছে নিয়ামত পূর্ণ করার কথা, যা পাপ থেকে মুক্তি ও জান্নাতে প্রবেশ করাসহ যাবতীয় কল্যাণ শামিল করে, সুতরাং যদি ‘তাতহীর’ অর্থ নিষ্পাপ হয়, তাহলে প্রত্যেক মুসলিম এ আয়াত দ্বারা নিষ্পাপ হয়ে যায়। এটা তো কেউ দাবী করে না। যদি এটা না হয়, তবে সূরা আল-আহযাবের ৩৩ নং আয়াতেও নিষ্পাপ অর্থ প্রদান করবে না।
৩. কতক অপরাধী সাহাবির ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলা ‘তাতহীর’ শব্দ ব্যবহার করেছেন:
“আর অন্য কিছু লোক তাদের অপরাধ স্বীকার করেছে, সৎকর্মের সঙ্গে তারা অসৎকর্মের মিশ্রণ ঘটিয়েছে। আশা করা যায়, আল্লাহ্ তাদের তওবা কবুল করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। তাদের সম্পদ থেকে সদকা নাও। এর মাধ্যমে তাদেরকে তুমি ‘তাতহীর’ তথা পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করবে। আর তাদের জন্য দো‘আ কর, নিশ্চয় তোমার দো‘আ তাদের জন্য প্রশান্তিকর। আর আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ”। সূরা তাওবা: (১০২-১০৩)
‘তাতহীর’ অর্থ যদি নিষ্পাপ হত, তাহলে অপরাধীদের জন্য ‘তাতহীর’ শব্দ ব্যবহার করা হত না! অথচ এখানে তাদের জন্য ‘তাতহীর’ শব্দের সাথে তার চেয়ে উচ্চতর প্রশংসার শব্দ ‘তাযকিয়াহ’ ( تزكية ) যুগপৎ ব্যবহার করা হয়েছে । কারণ মূলত: ‘তাতহীর’ অর্থ অপবিত্র বস্তু দূর করা, আর ‘তাযকিয়াহ’ অর্থ বরকত দান করা এবং উন্নতি ও প্রবৃদ্ধি প্রদান করা। কোন বস্তু থেকে নাপাক দূর করাই ‘তাতহীর’ বা পবিত্র করা, এর দ্বারা সৌন্দর্যমণ্ডিত করা জরুরী নয়। পক্ষান্তরে ‘তাযকিয়া’র জন্য বস্তু থেকে নাপাক দূর করে সজ্জিত ও সৌন্দর্যমণ্ডিত করা জরুরী। পবিত্র না করে সজ্জিত করার কোন মানেই নেই। এ আয়াত দ্বারা প্রমাণ হয় তারা শুধু পবিত্রই নয়, বরং পরিশুদ্ধি ও ঈমানের সৌন্দর্যে সৌন্দর্যমণ্ডিত হওয়ার উপযুক্ত, অথচ তারা ছিল অপরাধী। তাহলে তারা কি আহলে বায়েতের চেয়ে উত্তম, যদিও শিয়াদের অর্থ তাই প্রমাণ করে! অতএব প্রমাণিত হলো যে, ‘তাতহীর’ শব্দ দ্বারা নিষ্পাপ হওয়া বুঝায় না।
৪. আল্লাহ তা‘আলা মসজিদে কুবার অধিবাসীদের সম্পর্কে বলেছেন:
“সেখানে এমন লোক আছে, যারা উত্তমরূপে ‘তাতহীর’ তথা পবিত্রতা অর্জন করতে ভালবাসে। আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন”। সূরা তাওবা: (১০৮) অথচ তারা নিষ্পাপ ও মাসুম ছিল না, কিন্তু আয়াত তাদের সম্পর্কে সাক্ষী দিচ্ছে যে, তারা পবিত্রতা পছন্দ করে, আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের পছন্দ করেন।
“সুতরাং তোমরা হায়েযকালে স্ত্রীদের থেকে দূরে থাক এবং তারা পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হয়ো না। অতঃপর যখন তারা ‘তাতহীর’ তথা ভালোভাবে পবিত্র হবে তখন তাদের নিকট আস, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন”। সূরা বাকারা: (২২২)
এ আয়াতের অর্থ কখনো এরূপ নয় যে, তাদের সাথে সহবাস কর না যাবত না তারা মাসুম ও নিষ্পাপ হয়, যখন নিষ্পাপ হয় তাদের সাথে সহবাস কর! ‘তাতহীর’ শব্দের অর্থ যদি নিষ্পাপ হওয়া বুঝাতো তাহলে এটাই আয়াতের ব্যাখ্যা হওয়া উচিত ছিল, তখন ইসলামী শরীয়তে নিষ্পাপ নারী ব্যতীত সহবাস বৈধ হত না। কিন্তু এ কথা তো কেউই বলে না!!
৬. ঋতুমতী নারীদের নিকটবর্তী হওয়ার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে উক্ত আয়াতের শেষে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
“নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদেরকে ভালবাসেন এবং ভালবাসেন ‘তাতহীর’ তথা অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে”। [সূরা আল-বাকারা: (২২২)] অথচ সবার নিকটই পবিত্রতা অর্জনকারী এসব স্বামী ও নিষ্পাপ হওয়ার মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই।
৭. ইয়াহূদী ও মুনাফিকদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
“এরাই হচ্ছে তারা, যাদের অন্তরসমূহকে আল্লাহ ‘তাতহীর’ তথা পবিত্র করতে চান না। তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়াতে লাঞ্ছনা এবং আখেরাতে তাদের জন্য রয়েছে মহাআযাব”। সূরা মায়েদা: (৪১)
এ আয়াতের অর্থ কখনো এরূপ নয় যে, আল্লাহ তাদের নিষ্পাপ করতে চান না, অর্থাৎ আল্লাহ তাদের অন্তরকে পাপের ইচ্ছা ও গুনাহের প্রতি ধাবিত হওয়া থেকে মুক্ত করতে চান এরূপ অর্থ নয়। আবার এ সূরার অপর আয়াত وَلَٰكِن يُرِيدُ لِيُطَهِّرَكُمۡ (৫/৬) এর অর্থ “কিন্তু তিনি (আল্লাহ) চান তোমাদের (ঈমানদারদের)কে ‘তাতহীর’ তথা পবিত্র করতে।” এ আয়াতের অর্থ ‘কিন্তু আল্লাহ তোমাদেরকে পাপ থেকে নিষ্পাপ করতে চান” এরূপ নয়। অতএব সূরা আল-আহযাবের ৩৩ নং আয়াতেও ‘তাতহীর’ অর্থ নিষ্পাপ নয়।
“সে বলল, হে আমার কওম, এরা আমার মেয়ে, তারা তোমাদের জন্য পবিত্র”। সূরা হুদ: (৭৮), এখানে ‘আতহার’ বা সবচেয়ে পবিত্র শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু এর দ্বারা তার মেয়েদের নিষ্পাপ ও মাসুম ঘোষণা করা হয় নি।
আমরা দেখলাম উল্লেখিত আয়াতসমূহে ‘তাতহীর’ শব্দ কেবল ‘পবিত্র’ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, যাদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে তারা কেউ নিষ্পাপ নয়। শিয়ারা এসব আয়াতকে আয়াতে ‘তাতহীর’ বলে না। বস্তুত উম্মুল মুমেনিনগণের প্রসঙ্গে নাযিল হওয়া আয়াতের শেষাংশকে ‘আয়াতে তাতহীর’ বলা কুরআনের অপব্যাখ্যা, গোঁড়ামি ও মূর্খতা ভিন্ন কিছু নয়।
আল্লাহর إرادة বা ইচ্ছার অর্থ:
কুরআনুল কারীমের সূরা আল-আহযাবের ৩৩ নং আয়াতে ‘তাতহীর’ এর ইচ্ছা, চাওয়া বা ইরাদা অর্থ আল্লাহর নির্দেশ, মহব্বত ও সন্তুষ্টি। অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদের থেকে নাপাকি দূর করতে পছন্দ করেন। এমন নয় যে, এ আয়াতের কারণে তাদের থেকে নাপাকি দূর হয়ে গেছে এবং তারা পবিত্র হয়ে গেছেন। এর স্পষ্ট উদাহরণ হচ্ছে আল্লাহ সবার জন্য চান বা ইরাদা করেন জান্নাতে প্রবেশ করুক, এখানে তার চাওয়া অর্থ পছন্দ বা মহব্বত করা। যারা আল্লাহর পছন্দকে প্রাধান্য দিবে তাদের জন্য রয়েছে পুরষ্কার, আর যারা তার অপছন্দকে গ্রহণ করবে তাদের জন্য রয়েছে তিরষ্কার। পরকালে এ মানদণ্ডেই আল্লাহ তাদের জন্য জান্নাত বা জাহান্নামের ফয়সালা করবেন। তাই এসব আয়াতে ইচ্ছা বা চাওয়া অর্থ আল্লাহর পছন্দ ও মহব্বত, যা ঘটা জরুরী নয়, কারণ আল্লাহ তা ওয়াজিব করেন নি। এটাকে বলা হয়, আল্লাহর শরীয়তগত ইচ্ছা, যা হওয়া আল্লাহ পছন্দ করেন, কিন্তু তা হওয়া বাধ্যতামূলক নয়। সুতরাং আয়াতে বর্ণিত “তোমাদেরকে ভালোভাবে পবিত্র করতে ইচ্ছা করেন” এর দ্বারা পবিত্র হয়ে যাওয়া বাধ্যতামূলক নয়। বরং এতে তার সন্তুষ্টি রয়েছে, কেউ এর বাইরে চলতে চাইলে সেটা আল্লাহর পছন্দনীয় পথ হবে না, কিন্তু সেটা হওয়া সম্ভব। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বান্দার জন্য কুফরী পছন্দ করেন না, আল্লাহ বলেন,
“যদি তোমরা কুফরী কর তবে (জেনে রাখ) আল্লাহ্ তোমাদের মুখাপেক্ষী নন। আর তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য কুফরী পছন্দ করেন না। এবং যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও তবে তিনি তোমাদের জন্য তা-ই পছন্দ করেন।” [সূরা আয-যুমার: ৭] কিন্তু তারপরও বান্দা কুফরী করছে, আবার তিনি পছন্দ করেন যে তার বান্দারা শুকরগুজার হবে, কিন্তু তারা তা করছে না। সুতরাং বোঝা গেল যে আল্লাহর ইচ্ছা দু’ প্রকার। এক. শরী‘আতগত ইচ্ছা, তাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি রয়েছে, কিন্তু তা সংঘটিত হওয়া অবশ্যম্ভাবী নয়। দুই. প্রকৃতিগত ইচ্ছা, যাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি থাকতে হবে এমন নয়, কিন্তু তা সংঘটিত হওয়া অবশ্যম্ভাবী। সে হিসেবে মৌলিকভাবে ‘আল্লাহর ইচ্ছা’র কয়েকটি অবস্থা হতে পারে।
যার ইচ্ছা আল্লাহ করেন (প্রকৃতিগতভাবে), কিন্তু তাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি নেই, যেমন, কোনো কোনো বান্দার পক্ষ থেকে কুফরী সংঘটিত হওয়া। এটি প্রকৃতিগত ইচ্ছা, শরীয়তগত ইচ্ছা নয়।
যার ইচ্ছা আল্লাহ করেন, আর তাতে আল্লাহর সন্তুষ্টিও রয়েছে, যেমন, ঈমানদারের ঈমান আনা। এখানে আল্লাহর প্রকৃতিগত ইচ্ছা ও শরীয়তগত ইচ্ছা উভয়টিই সংঘটিত হয়েছে।
যার ইচ্ছা আল্লাহ করেন (শরীয়তগতভাবে), আর তাতে আল্লাহর সন্তুষ্টিও রয়েছে, যেমন কাফের এর ঈমান আনা। খারাপ মানুষকে ভালো করা, অপবিত্রকে পবিত্র করা, ইত্যাদি। কিন্তু আল্লাহর এ জাতীয় ইচ্ছা ঘটা অবশ্যম্ভাবী নয়। হতেও পারে আবার নাও হতে পারে।
সুতরাং সূরা আল-আহযাবের ৩৩ নং আয়াতে বর্ণিত ‘আল্লাহ কর্তৃক পবিত্র করার ইচ্ছা’টি মূলত ‘আল্লাহর ইচ্ছা’র প্রকারসমূহের মধ্যে এই শেষোক্ত প্রকারের। যা হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। আর সে জন্যই বলা যায় যে, আল্লাহ তা‘আলা নবী-পরিবার, পরিজনকে পবিত্র করতে ইচ্ছা করেছেন বলেই তারা পবিত্র হয়ে গেছে ব্যাপারটি এমন নয়, বরং তা হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। আর সে জন্যই দেখা যায়, পরবর্তীকালের নবী পরিবারের কোনো কোনো বংশধরের মধ্যে কুফরী, নিফাক ও শির্কী কর্মকাণ্ড পর্যন্ত সংঘটিত হয়েছিল।
رجس বা নাপাকির অর্থ:
কথিত আয়াতে তাতহীরে আল্লাহ তা‘আলা আহলে বায়েত থেকে রিজস দূর করতে চান। পবিত্র কুরআনে রিজ্স বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
“বল, আমার নিকট যে ওহী পাঠানো হয়, তাতে আমি আহারকারীর ওপর কোন হারাম পাই না, যা সে আহার করে। তবে যদি মৃত কিংবা প্রবাহিত রক্ত অথবা শূকরের গোশত হয়, কারণ নিশ্চয় তা অপবিত্র কিংবা অবৈধ যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য যবেহ করা হয়েছে”। সূরা আন‘আম: (১৪৫)
আবার কখনো কখনো “রিজস” শব্দ দ্বারা শির্ক বুঝানো হয়। আল্লাহ তা'আলা বলেন:
“আর যাকে ভ্রষ্ট করতে চান, তার বুক সঙ্কীর্ণÑসঙ্কুচিত করে দেন, যেন সে আসমানে আরোহণ করছে। এমনিভাবে আল্লাহ অকল্যাণ দেন তাদের উপর, যারা ঈমান আনে না”। সূরা আন‘আম: (১২৫) অন্যত্র তিনি ইরশাদ করেন:
“এবং যারা বুঝে না তিনি আযাব চাপিয়ে দেবেন তাদের উপর”। সূরা ইউনুস: (১০০) অর্থাৎ যারা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ বুঝে না, তার উপদেশ ও নসিহতের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করে না, তাদের ওপর আল্লাহ অনিষ্ট ও গোমরাহী অবধারিত করে দেন।
কখনো “রিজস” শব্দ দ্বারা শাস্তি বুঝানো হয়, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
“সে বলল, ‘নিশ্চয় তোমাদের উপর তোমাদের রবের পক্ষ থেকে আযাব ও ক্রোধ পতিত হয়েছে”। সূরা আরাফ: (৭০)
উপরোক্ত আয়াতসমূহে রিজ্স শব্দ শয়তানি কর্ম যেমন মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদী ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ; হারাম, অপবিত্র ও অবৈধ বস্তু যেমন মৃত কিংবা প্রবাহিত রক্ত অথবা শূকরের গোশত; মূর্তিপূজার অপবিত্রতা, অকল্যাণ, অশ্লীলতা ও আযাব ইত্যাদি অর্থ প্রদান করেছে, কোথাও নিষ্পাপ অর্থ প্রদান করেনি।
অতএব আমরা নিশ্চিত যে, কথিত আয়াতে তাতহীর দ্বারা নবী পরিবার বা আলি পরিবার কাউকে নিষ্পাপ বা মাসুম প্রমাণ করা উদ্দেশ্য নয়, বরং আল্লাহর ইচ্ছা, পছন্দ ও মহব্বত করেন যে, তারা কুফর-শিরক, শয়তানী কর্ম, চারিত্রিক অশ্লীলতা, হারাম খাদ্য-পানীয় এবং প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য নাপাক বস্তু থেকে পাক-পবিত্র হোক। তাদের সম্পর্কে খারাপ জনশ্রুতি, কলঙ্ক ও কোন দুর্নাম না থাক। তারা আল্লাহর আদেশ ও নিষেধগুলো যথাযথ পালন করুক এবং তাদের ঘরে আল্লাহর যে আয়াত ও হিকমত পাঠ করা হয়, তা তিলাওয়াত করুক ও তার উপদেশ থেকে উপকৃত হোক।
সাহাবিদের সম্পর্কে আয়াতে তাতহীর থেকে আরো উচ্চতর প্রশংসা রয়েছে কুরআনে:
শিয়াদের কথিত আয়াতে তাতহীরে আহলে বায়েতের যে প্রশংসা রয়েছে, তার চেয়ে অধিক প্রশংসা রয়েছে সাহাবিদের সম্পর্কে অন্যান্য আয়াতে। অথচ তাদেরকে মাসুম বা নিষ্পাপ বলা হয় না। তার একটি উদাহরণ যেমন:
“হে ঈমানদারগণ, যদি কোন ফাসিক তোমাদের কাছে কোন সংবাদ নিয়ে আসে, তাহলে তোমরা তা যাচাই করে নাও। এ আশঙ্কায় যে, আমরা অজ্ঞতাবশত কোন কওমকে আক্রমণ করে বসবে, ফলে তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে। আর তোমরা জেনে রাখ যে, তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রাসূল রয়েছেন। সে যদি অধিকাংশ বিষয়ে তোমাদের কথা মেনে নিত, তাহলে তোমরা অবশ্যই কষ্টে পতিত হতে। কিন্তু আল্লাহ তোমাদের কাছে ঈমানকে প্রিয় করে দিয়েছেন এবং তা তোমাদের অন্তরে সুশোভিত করেছেন। আর তোমাদের কাছে কুফরি, পাপাচার ও অবাধ্যতাকে অপছন্দনীয় করে দিয়েছেন। তারাই তো সত্য পথপ্রাপ্ত। আল্লাহর পক্ষ থেকে করুণা ও নিয়ামত স্বরূপ। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়”। সূরা হুজুরাত: (৬-৮)
শিয়াদের ন্যায় যদি আমরা দলিল হিসেবে অস্পষ্ট ও মুতাশাবেহ আয়াত গ্রহণ করতাম, তাহলে উল্লেখিত সাহাবিদের নিষ্পাপ বলতাম। আমাদের এ দলিল তাদের দলিলের চেয়ে শক্তিশালী ও স্পষ্ট ছিল। কারণ এখানে স্পষ্ট রয়েছে যে, তাদের নিকট কুফর, পাপাচার ও ফাসেকিসহ সকল পাপ ও গুনাহ অপছন্দনীয় করে দেয়া হয়েছে। অধিকন্তু তাদের নিকট ঈমান পছন্দনীয় ও তাদের অন্তরে তা সৌন্দর্যমণ্ডিত করে দেয়া হয়েছে। এ আয়াতে বর্ণিত গুণাগুণ সাহাবীদেরকে নিষ্পাপ ও মাসুম পর্যায়ে নিয়ে যায় [কিন্তু আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত নবী-রাসূলগণ ব্যতীত অপর কাউকে মা‘সুম জ্ঞান করেন না। কারণ, তারা কারও গুণাগুণ বাড়িয়ে নবীদের পর্যায়ে উঠিয়ে দেন না; যেমনটি শিয়ারা করে থাকে। [সম্পাদক]]। তাদেরকে আরো বলা হয়েছে ‘রাশেদুন’ তথা সত্য পথপ্রাপ্ত। এরসাথে যদি তাদের আনুগত্য করার নির্দেশ সম্বলিত আয়াত একত্র করি, যেমন:
“আর মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যারা তাদেরকে অনুসরণ করেছে সুন্দরভাবে, আল্লাহ্ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন আর তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন জান্নাতসমূহ, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত, তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে”। এটাই মহাসাফল্য”। [সূরা তাওবা: (১০০)] এখানে মুহাজির ও আনসারদের অনুসারীদের আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে, যা প্রকৃতপক্ষে তাদের অনুসরণ করার নির্দেশ। অতএব তাদের নিষ্পাপ বলতে বাধা কোথায়, সব আলামত তো এখানেই রয়েছে [তারপরও কিন্তু আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত নবী-রাসূল ছাড়া কাউকেই নিষ্পাপ বলে বিশ্বাস করেন না। সাহাবায়ে কিরাম রা. কেও তারা নিষ্পাপ বলেন না। তবে তারা ন্যায়পরায়ণ ও কোনো প্রকার সমালোচনার ঊর্ধ্বে। সুতরাং নবী-রাসূল ব্যতীত কাউকেই নিষ্পাপ বা মা‘সুম বলার কোন সুযোগ নেই। [সম্পাদক]]!
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/697/5
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।