HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদা

লেখকঃ শাইখ মুহাম্মাদ আস-সালেহ আল-উসাইমীন

আমাদের আক্বীদা
আল্লাহর প্রতি ঈমান:

আমাদের আক্বীদা হচ্ছে: আল্লাহ তা‘আলা, তাঁর সকল ফিরিশ্‌তা, আসমানী কিতাব, নবী-রাসূল, আখেরাত এবং তাকদীরের ভাল-মন্দের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখা।

আল্লাহর রুবুবিয়্যাত

আমরা আল্লাহ তা‘আলার রুবুবিয়্যাতে ঈমান আনি। এর অর্থ হচ্ছে, তিনিই হচ্ছেন রব; খালিক [সৃষ্টিকর্তা] বাদশাহ, সকল কাজেরই মহানিয়ন্ত্রক।

আল্লাহর উলুহিয়্যাত

আমরা আল্লাহর তা‘আলার উলুহিয়্যাতে ঈমান আনি। যার অর্থ হচেছ, তিনিই হচ্ছেন সত্য ইলাহ। তিনি ব্যতীত সব মা‘বুদই বাতিল ও অসত্য।

আল্লাহর নাম ও সিফাত

আমরা আল্লাহ তা‘আলার সব পবিত্র নাম ও সিফাত ঈমান আনি। অর্থাৎ তাঁর বহু পবিত্র নাম ও উন্নত সিফাতে কামেলা অর্থাৎ পরিপূর্ণ গুণাবলী রয়েছে।

আল্লাহর ওয়াহদানিয়্যাত

আর এতে করে আমরা ঈমান আনি আল্লাহ তা‘আলার ওয়াহদানিয়্যাতে বা একত্ববাদে। এর অর্থ হচ্ছে তাঁর রুবুবিয়্যাত, উলুহিয়্যাত এবং যত পবিত্র নাম ও সিফাত রয়েছে তাতে কোন শরীক বা অংশীদার নেই।

আল্লাহ তা‘আলাই এরশাদ করেছেন:

﴿رَّبُّ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَمَا بَيۡنَهُمَا فَٱعۡبُدۡهُ وَٱصۡطَبِرۡ لِعِبَٰدَتِهِۦۚ هَلۡ تَعۡلَمُ لَهُۥ سَمِيّٗا ٦٥﴾ [ مريم :65]

[আল্লাহ] “আসমান ও যমীন এবং এ দু’টির মাঝখানে যা আছে সব কিছুরই তিনি রব। অতএব তুমি তাঁরই ইবাদত করো এবং ইবাদতের পথে ধৈর্যের মাধ্যমে অবিচল থাকো। তাঁর সমতুল্য কোন সত্তার কথা তুমি জান কি?” [সূরা মারইয়াম: ৬৫]।

আল্লাহর জ্ঞান, সাম্রাজ্য ও ক্ষমতা

আমরা ঈমান আনি যে,

﴿ٱللَّهُ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلۡحَيُّ ٱلۡقَيُّومُۚ لَا تَأۡخُذُهُۥ سِنَةٞ وَلَا نَوۡمٞۚ لَّهُۥ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِۗ مَن ذَا ٱلَّذِي يَشۡفَعُ عِندَهُۥٓ إِلَّا بِإِذۡنِهِۦۚ يَعۡلَمُ مَا بَيۡنَ أَيۡدِيهِمۡ وَمَا خَلۡفَهُمۡۖ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيۡءٖ مِّنۡ عِلۡمِهِۦٓ إِلَّا بِمَا شَآءَۚ وَسِعَ كُرۡسِيُّهُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَۖ وَلَا يَ‍ُٔودُهُۥ حِفۡظُهُمَاۚ وَهُوَ ٱلۡعَلِيُّ ٱلۡعَظِيمُ ٢٥٥﴾ [ البقرة :255]

“আল্লাহ সেই চিরঞ্জীব শাশ্বত সত্তা, যিনি সমস্ত বিশ্বচরাচরকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে আছেন, তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তন্দ্রা তাঁকে স্পর্শ করতে পারে না। তিনি নিদ্রাও যান না। আসমান ও যমিনে যা কিছু আছে সবই তাঁর মালিকানাধীন। এমন কে আছে যে তাঁর দরবারে তাঁরই অনুমতি ব্যতীত সুপারিশ করতে পারে? সামনে পিছনে যা কিছু আছে সবই তিনি জানেন। তাঁর জানা বিষয়সমূহের কোন জিনিসই তাদের জ্ঞানসীমার আয়ত্বাধীন হতে পারে না। অবশ্য কোন বিষয়ের জ্ঞান যদি তিনি নিজেই কাউকে জানাতে চান (তবে তা অন্য কথা)। তাঁর কুরসী সমগ্র আসমান ও যমীনকে ঘিরে আছে। আসমান ও যমীনের রক্ষণ-বেক্ষণ তাঁকে ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত করে দিতে পারে না। বস্তুত: তিনিই হচ্ছেন এক সর্বোচ্চ মহান শ্রেষ্ঠতম সত্তা”। [সূরা আল-বাকারাহ: ২৫৫]

আমরা ঈমান আনি—

﴿هُوَ ٱللَّهُ ٱلَّذِي لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَۖ عَٰلِمُ ٱلۡغَيۡبِ وَٱلشَّهَٰدَةِۖ هُوَ ٱلرَّحۡمَٰنُ ٱلرَّحِيمُ ٢٢ هُوَ ٱللَّهُ ٱلَّذِي لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلۡمَلِكُ ٱلۡقُدُّوسُ ٱلسَّلَٰمُ ٱلۡمُؤۡمِنُ ٱلۡمُهَيۡمِنُ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡجَبَّارُ ٱلۡمُتَكَبِّرُۚ سُبۡحَٰنَ ٱللَّهِ عَمَّا يُشۡرِكُونَ ٢٣ هُوَ ٱللَّهُ ٱلۡخَٰلِقُ ٱلۡبَارِئُ ٱلۡمُصَوِّرُۖ لَهُ ٱلۡأَسۡمَآءُ ٱلۡحُسۡنَىٰۚ يُسَبِّحُ لَهُۥ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۖ وَهُوَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡحَكِيمُ ٢٤﴾ [ الحشر : 22-24]

“তিনিই আল্লাহ, যিনি ছাড়া কোন হক ইলাহ নেই। গোপন ও প্রকাশ্য সব কিছুই তিনি জানেন। তিনিই রহমান ও রহীম। তিনিই আল্লাহ যিনি ছাড়া কোন হক ইলাহ নেই। তিনি বাদশাহ। অতীব মহান ও পবিত্র। শান্তির ধারক। নিরাপত্তার আঁধার। রক্ষণাবেক্ষণকারী। তিনি পরাক্রমশালী, সর্বজয়ী, মহাশক্তিধর এবং নিজ বড়ত্ব গ্রহণকারী। লোকেরা যেসব শিরক করছে, তা থেকে আল্লাহ সম্পূর্ণ পবিত্র। তিনিই আল্লাহ যিনি সৃষ্টিকর্তা, পরিকল্পনাকারী, আকার আকৃতি রচনাকারী। তাঁর অনেক সুন্দর-সুন্দর নাম রয়েছে। আসমান ও যমিনে যা কিছু আছে সব কিছুই তাঁর প্রশংসা করে। তিনি অতীব পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” [হাশর : ২২-২৪]

আমরা ঈমান আনি যে, আসমান ও যমীনের রাজত্ব একমাত্র আল্লাহর।

﴿يَخۡلُقُ مَا يَشَآءُۚ يَهَبُ لِمَن يَشَآءُ إِنَٰثٗا وَيَهَبُ لِمَن يَشَآءُ ٱلذُّكُورَ ٤٩ أَوۡ يُزَوِّجُهُمۡ ذُكۡرَانٗا وَإِنَٰثٗاۖ وَيَجۡعَلُ مَن يَشَآءُ عَقِيمًاۚ إِنَّهُۥ عَلِيمٞ قَدِيرٞ ٥٠﴾ [ الشورى : 49-50]

“তিনি যাই চান, সৃষ্টি করেন। যাকে চান কন্যা-সন্তান দান করেন, যাকে চান পুত্র-সন্তান দান করেন। আবার যাকে চান পুত্র-কন্যা উভয় রকমের সন্তানই দান করেন। আর যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। তিনি সব কিছুই জানেন এবং সব বিষয়েই ক্ষমতাবান।” [শূরা : ৪৯-৫০]

আমরা ঈমান আনি যে,

﴿لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١١ لَهُۥ مَقَالِيدُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۖ يَبۡسُطُ ٱلرِّزۡقَ لِمَن يَشَآءُ وَيَقۡدِرُۚ إِنَّهُۥ بِكُلِّ شَيۡءٍ عَلِيمٞ ١٢ ﴾ [ الشورى : 11-12]

“কোন জিনিসই তাঁর অনুরূপ নয়। তিনি সব কিছুই শুনেন ও দেখেন। আকাশমণ্ডল ও যমীনের সকল ধনভাণ্ডারের চাবি তাঁরই কাছে। যাকে তিনি চান প্রচুর রিজিক দান করেন, আর যাকে চান পরিমিত দান করেন। তিনি সব বিষয়ে জ্ঞান রাখেন।” [শূরা : ১১-১২]

আল্লাহ রিযিকদাতা

আমরা আরও ঈমান আনি যে,

﴿وَمَا مِن دَآبَّةٖ فِي ٱلۡأَرۡضِ إِلَّا عَلَى ٱللَّهِ رِزۡقُهَا وَيَعۡلَمُ مُسۡتَقَرَّهَا وَمُسۡتَوۡدَعَهَاۚ كُلّٞ فِي كِتَٰبٖ مُّبِينٖ ٦ ﴾ [ هود : 6]

“যমীনে বিচরণশীল এমন কোন জীব নেই, যার রিজিকের ব্যবস্থা আল্লাহর উপর নয় এবং যার স্থায়ী অস্থায়ী অবস্থান সম্পর্কে তিনি অবহিত নন। এসব কিছুই এক সুস্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে।” [হুদ : ৬]

আল্লাহ আলিমুল গায়েব

আমরা ঈমান আনি যে,

﴿وَعِندَهُۥ مَفَاتِحُ ٱلۡغَيۡبِ لَا يَعۡلَمُهَآ إِلَّا هُوَۚ وَيَعۡلَمُ مَا فِي ٱلۡبَرِّ وَٱلۡبَحۡرِۚ وَمَا تَسۡقُطُ مِن وَرَقَةٍ إِلَّا يَعۡلَمُهَا وَلَا حَبَّةٖ فِي ظُلُمَٰتِ ٱلۡأَرۡضِ وَلَا رَطۡبٖ وَلَا يَابِسٍ إِلَّا فِي كِتَٰبٖ مُّبِينٖ ٥٩ ﴾ [ الأنعام :59]

“গায়েবের সব চাবিকাঠি তাঁরই কাছে রয়েছে। তিনি ছাড়া আর কেউ তা জানে না। স্থল ও জল ভাগে যা কিছু আছে তার সবই তিনি জানেন। বৃক্ষচ্যুত একটি পাতাও এমন নেই যার সম্পর্কে আল্লাহ জানেন না। যমীনের অন্ধকারে কোন শস্য, কোন আর্দ্র, কোন শুষ্ক জিনিস সবই এক সুস্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে।” [আন‘আম : ৫৯]

আমরা ঈমান আনি যে,

﴿ إِنَّ ٱللَّهَ عِندَهُۥ عِلۡمُ ٱلسَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ ٱلۡغَيۡثَ وَيَعۡلَمُ مَا فِي ٱلۡأَرۡحَامِۖ وَمَا تَدۡرِي نَفۡسٞ مَّاذَا تَكۡسِبُ غَدٗاۖ وَمَا تَدۡرِي نَفۡسُۢ بِأَيِّ أَرۡضٖ تَمُوتُۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرُۢ ٣٤ ﴾ [ لقمان : 34]

“কেয়ামতের সময়ের জ্ঞান আল্লাহরই কাছে রয়েছে। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন। তিনিই জানেন গর্ভে কী আছে। কেউ জানে না আগামী কাল সে কী কামাই করবে। না কেউ জানে তার মৃত্যু হবে কোন যমীনে। আল্লাহই সব কিছু জানেন এবং সব বিষয়েই তিনি ওয়াকিফহাল।” [লোকমান : ৩৪]

আল্লাহ কথা বলেন

আমরা ঈমান আনি যে, আল্লাহ তা‘আলা কথা বলেন যা বলেতে চান, যখন চান এবং যেভাবে চান।

﴿ وَكَلَّمَ ٱللَّهُ مُوسَىٰ تَكۡلِيمٗا ١٦٤﴾ [ النساء : 164]

“আল্লাহ মূসার সাথে কথা বলেছেন, যেভাবে কথা বলা হয়ে থাকে।” [নিসা : ১৬৪]

﴿وَلَمَّا جَآءَ مُوسَىٰ لِمِيقَٰتِنَا وَكَلَّمَهُۥ رَبُّهُۥ﴾ [ الأعراف : 143]

“যখন মূসা আমার নির্দিষ্ট সময়ে এসে পৌছলো এবং তার রব তার সাথে কথা বললেন”। [আ‘রাফ : ১৪৩]

﴿وَنَٰدَيۡنَٰهُ مِن جَانِبِ ٱلطُّورِ ٱلۡأَيۡمَنِ وَقَرَّبۡنَٰهُ نَجِيّٗا ٥٢﴾ [ مريم : 52]

“আমি মূসাকে তুর [পাহাড়] এর ডান দিক থেকে ডাকলাম এবং গোপন কথা বার্তার দ্বারা তাকে নৈকট্য দান করলাম।” [মারইয়াম: ৫২]

আমরা একথা ঈমান রাখি যে,

﴿قُل لَّوۡ كَانَ ٱلۡبَحۡرُ مِدَادٗا لِّكَلِمَٰتِ رَبِّي لَنَفِدَ ٱلۡبَحۡرُ قَبۡلَ أَن تَنفَدَ كَلِمَٰتُ رَبِّي﴾ [ الكهف : 109]

“সমুদ্রগুলো যদি আমার রবের কথাসমূহ লেখার জন্য কালি হয়ে যেতো তাহলে আমার রবের কথা শেষ হওয়ার আগেই কালি শেষ হয়ে যেতো।” [কাহ্‌ফ : ১০৯]

﴿وَلَوۡ أَنَّمَا فِي ٱلۡأَرۡضِ مِن شَجَرَةٍ أَقۡلَٰمٞ وَٱلۡبَحۡرُ يَمُدُّهُۥ مِنۢ بَعۡدِهِۦ سَبۡعَةُ أَبۡحُرٖ مَّا نَفِدَتۡ كَلِمَٰتُ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٞ ٢٧﴾ [ لقمان : 27]

“যমীনে যত গাছ আছে, তা সবই যদি কলম হয়ে যেতো, আর সমুদ্র্ আরও সাতটি সমুদ্র্ একে কালি সরবরাহ করতো, তাহলেও আল্লাহর কথাগুলো শেষ হবে না। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” [লোকমান: ২৭]

আমরা ঈমান আনি যে, সিদ্ধান্ত ও কোন খবর দানের ব্যাপারে আল্লাহর কালামই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি সত্য ও সঠিক এবং পূর্ণতার দাবিদার। হুকুম আহকামের ক্ষেত্রে তা সবচেয়ে বেশি ন্যায়ভিত্তিক ও ইনসাফপূর্ণ। বর্ণনার দিক থেকে তা সবচেয়ে বেশি সুন্দর। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَتَمَّتۡ كَلِمَتُ رَبِّكَ صِدۡقٗا وَعَدۡلٗاۚ﴾ [ الأنعام : 115]

“তোমরা রবের কথা সত্যতা ও ইনসাফের দিক থেকে পূর্ণতা লাভ করেছে।” [আন‘আম : ১১৫]

﴿وَمَنۡ أَصۡدَقُ مِنَ ٱللَّهِ حَدِيثٗا ٨٧﴾ [ النساء : 87]

“বস্তুত আল্লাহর কথা অপেক্ষা অধিক সত্য কথা আর কার হতে পারে?” [নিসা : ৮৭]

কুরআন আল্লাহর কালাম

আমরা ঈমান আনি যে, কুরআনে কারীম হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার পবিত্র কালাম। এর মাধ্যমে তিনি হক কথা বলেছেন এবং জিবরাইল [আলাইহিস সালাম] এর কাছে তা অর্পণ করেছেন। এরপর জিবরাইল [আলাইহিস সালাম] সেই অর্পিত কথাগুলো নাযিল করেছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অন্তরে।

﴿ قُلۡ نَزَّلَهُۥ رُوحُ ٱلۡقُدُسِ مِن رَّبِّكَ بِٱلۡحَقِّ ﴾ [ النحل : 102]

“হে মুহাম্মাদ! এদেরকে বল, এ কুরআনকে ‘রুহুল কুদুস’ [জিবরীল] যথাযথভাবে তোমার রবের কাছ থেকে ক্রমাগতভাবে নাযিল করেছেন।” [নাহল : ১০২]

﴿وَإِنَّهُۥ لَتَنزِيلُ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ١٩٢ نَزَلَ بِهِ ٱلرُّوحُ ٱلۡأَمِينُ ١٩٣ عَلَىٰ قَلۡبِكَ لِتَكُونَ مِنَ ٱلۡمُنذِرِينَ ١٩٤ بِلِسَانٍ عَرَبِيّٖ مُّبِينٖ ١٩٥﴾ [ الشعراء : 192-195]

“এটা [কুরআন] আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত বাণী। এটা নিয়ে আমানতদার ‘রুহ’ তোমার দিলে অবতরণ করেছে। যেন তুমি সতর্ককারীগণের অন্তর্ভুক্ত হতে পারো।” [শু‘আরা : ১৯২-১৯৫]

আল্লাহ সবকিছুর উপরে আছেন

আমরা আরও ঈমান আনি যে, আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় “যাত ও সিফাত” [সত্তা ও গুণাবলী] দ্বারা সমগ্র সৃষ্টির উপরে আছেন।

এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলার এরশাদ হচ্ছে:

﴿وَهُوَ ٱلۡعَلِيُّ ٱلۡعَظِيمُ ٢٥٥﴾ [ البقرة : 255]

“আর তিনিই সর্বোচ্চ ও মহান সত্তা।” [বাকারা ; ২৫৫]

﴿ وَهُوَ ٱلۡقَاهِرُ فَوۡقَ عِبَادِهِۦۚ وَهُوَ ٱلۡحَكِيمُ ٱلۡخَبِيرُ ١٨ ﴾ [ الأنعام : 18]

“তিনি তাঁর বান্দাহদের উপর একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী। তিনি জ্ঞানী এবং সব বিষয়ে ওয়াকিফহাল।” [আন‘আম: ১৮]

সব কিছুই আল্লাহর সৃষ্টি

আমরা ঈমান আনি যে,

﴿خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٖ ثُمَّ ٱسۡتَوَىٰ عَلَى ٱلۡعَرۡشِۖ يُدَبِّرُ ٱلۡأَمۡرَۖ﴾ [ يونس : 3]

“তিনি আসমান ও যমীন ছয়দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আরশের উপর উঠেছেন। তিনি যাবতীয় বিষয়াদি নিয়ন্ত্রণ করেন।” [ইউনুছ: ৩]

আল্লাহ তা‘আলার আরশের উপর উঠার অর্থ হচ্ছে তাঁর সত্তা স্বীয় বিরাটত্ব ও বড়ত্বের জন্য যেমনটি শোভনীয় ঠিক তেমনভাবে আরশের উপর উঠা। এর অবস্থা ও রূপরেখা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না।

আমরা ঈমান আনি যে, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৃষ্টির সাথে রয়েছেন। (সাথে থাকার অর্থ এ নয় যে, তিনি তাদের সাথে লেগে বা মিশে আছেন বরং তিনি আরশের উপরেই রয়েছেন।) আরশের উপর থেকে তিনি সৃষ্টির সব অবস্থা সম্পর্কেই জ্ঞাত আছেন। তিনি তাদের কথা শুনেন। তাদের কার্যকলাপ দেখতে পান। তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করেন। ফকীরকে রিযিক দান করেন। নি:স্ব ও অভাবী ব্যক্তির অভাব পূরণ করেন। যাকে ইচ্ছা রজত্ব দান করেন। যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজত্ব ছিনিয়ে নেন। যাকে ইচ্ছা সম্মানিত করেন। যাকে ইচ্ছা অপমাণিত করেন। তাঁর হাতেই সমস্ত কল্যাণ নিহিত। সব কিছুর উপরই তিনি ক্ষমতাবান। যার এত বড় শান তিনি প্রকৃত অর্থেই তাঁর সৃষ্টির সাথে রয়েছেন। যদিও তিনি প্রকৃতপক্ষে সৃষ্টির উর্ধালোকে আরশের উপর রয়েছেন।

﴿ لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١١﴾ [ الشورى : 11]

“বিশ্বের কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়। তিনি সব কিছুই শুনেন এবং দেখেন।” [শূরা : ১১]

হুলুলিয়া [হুলুলিয়া: জাহমিয়া সম্প্রদায়ের একটি অংশ যারা আল্লাহকে সর্বত্র স্বশরীরে উপস্থিত বা বিরাজমান বলে মনে করে। বর্তমানেও যারা মনে করে যে আল্লাহ্ তা‘আলা সর্বত্র বিরাজমান তারা কাফের অথবা পথভ্রষ্ট। [সম্পাদক]] এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের মত আমরা এ কথা বলিনা যে, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৃষ্টি জগত বা মাখলুকের সাথে এই যমীনে বিরাজ করছেন।

আমরা মনে করি যারা এধরনের কথা বলে তারা কাফের অথবা পথভ্রষ্ট। কারণ আল্লাহর শানে যা অশোভনীয় এবং অবমাননাকর তারা তাই বলছে।

আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা‘আলা সম্পর্কে খবর বা তথ্য জানিয়েছেন যে, আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক রাতেই এক তৃতীয়াংশ বাকী থাকতে দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন। তারপর [দুনিয়াবাসীকে উদ্দেশ্য করে] বলতে থাকেন:

«من يدعوني فأستجيب له من يسألنى فأعطيه من يستغفرنى فأغفر له»

কে আমাকে ডাকবে যে আমি তার ডাকে সাড়া দিব? কে আমার কাছে চাইবে যে আমি তাকে দান করব? কে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে যে আমি তাকে ক্ষমা করে দেব? [মুয়াত্তা ১/২১৪, বুখারী ৯/২৫,২৬, মুসলিম ১/৫২১]

আল্লাহ বিচার-ফায়সালা করবেন

আমরা ঈমান আনি যে, আল্লাহ তা‘আলা নির্ধারিত দিন অর্থাৎ শেষ বিচারের দিন বান্দাহদের মাঝে বিচার-ফায়সালা করার জন্য আগমন করবেন।

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿كَلَّآۖ إِذَا دُكَّتِ ٱلۡأَرۡضُ دَكّٗا دَكّٗا ٢١ وَجَآءَ رَبُّكَ وَٱلۡمَلَكُ صَفّٗا صَفّٗا ٢٢ وَجِاْيٓءَ يَوۡمَئِذِۢ بِجَهَنَّمَۚ يَوۡمَئِذٖ يَتَذَكَّرُ ٱلۡإِنسَٰنُ وَأَنَّىٰ لَهُ ٱلذِّكۡرَىٰ ٢٣﴾ [ الفجر : 21-23]

“কখনো নয়, যমীনকে যখন চুর্ণ-বিচুর্ণ করে বালুকাময় বানিয়ে দেয়া হবে এবং তোমার রব আগমন করবেন, আর ফিরিশ্‌তারা সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান অবস্থায় থাকবে, জাহান্নামকে সেদিন সবার সামনে উপস্থিত করা হবে। সেদিন মানুষ স্মরণ করবে। কিন্তু তখন তার বোধশক্তি ফিরে পাওয়ায় কি লাভ হবে।” [ফজর : ২১ -২৩]

আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন

আমরা ঈমান আনি যে, আল্লাহ তা‘আলা

﴿ فَعَّالٞ لِّمَا يُرِيدُ ١٦﴾ [ البروج : 16]

“[আল্লাহ] যা ইচ্ছা করেন তা সম্পন্ন করেই ছাড়েন।” [বুরুজ: ১৬]

আল্লাহর ইচ্ছা দু’রকমের

আমরা আরও ঈমান আনি যে, আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছা দু’রকমের: ১। কাউনিয়্যাহ ২। শারইয়্যাহ

১। কাউনিয়্যাহ : এ ধরনের ইচ্ছা দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছাকৃত জিনিসটি সম্পন্ন হয়। তবে জিনিসটি আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় হওয়ার ব্যাপারটি জরূরী নয়। আর এটা দ্বারাই আল্লাহর ‘মাশিয়াত’ বা ইচ্ছা বুঝানো হয়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَلَوۡ شَآءَ ٱللَّهُ مَا ٱقۡتَتَلُواْ وَلَٰكِنَّ ٱللَّهَ يَفۡعَلُ مَا يُرِيدُ ٢٥٣﴾ [ البقرة : 253]

“আল্লাহ চাইলে তারা পরস্পরে লড়াই করতে পারতো না-কিন্তু আল্লাহ যা চান তাই করেন।” [বাকারা : ২৫৩]

﴿ إِن كَانَ ٱللَّهُ يُرِيدُ أَن يُغۡوِيَكُمۡۚ هُوَ رَبُّكُمۡ﴾ [ هود : 34]

“যদি আল্লাহই তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করতে চান (তাহলে কোন নসিহতই কাজে আসবে না)। তিনিই হচ্ছেন তোমাদের রব।” [হূদ : ৩৪]

২। শরইয়্যাহ : এ ধরনের ইচ্ছা দ্বারা আল্লাহর ইচ্ছাকৃত জিনিসটি সম্পন্ন হওয়া অপরিহার্য নয়। তবে এ ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃত জিনিস বা বিষয়টি তাঁর পছন্দনীয় হতে হবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন:

﴿وَٱللَّهُ يُرِيدُ أَن يَتُوبَ عَلَيۡكُمۡ﴾ [ النساء : 27]

“আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিতে চান।” [নিসা : ২৭]

আমরা আরও ঈমান আনি যে, আল্লাহ তা‘আলার কাউনী এবং শর‘য়ী উভয় ইচ্ছাই তাঁর হিকমতের অধীন। আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় কাউনী ইচ্ছানুযায়ী যা ফয়সালা করেন অথবা শর‘য়ী ইচ্ছানুযায়ী বান্দাহ [মাখলুক] যে ইবাদত করে উভয় ক্ষেত্রেই তাঁর হিকমত নিহিত রয়েছে। এ ব্যাপারে আল্লাহর হিকমতের কিছু আমরা বুঝতে সক্ষম হই বা না হই অথবা আমাদের বিবেক-বুদ্ধি এ ক্ষেত্রে অক্ষম হলেও কিছু যায় আসে না। [সর্বাবস্থাতেই তিনি সবচেয়ে বড় হাকীম]

﴿أَلَيۡسَ ٱللَّهُ بِأَحۡكَمِ ٱلۡحَٰكِمِينَ ٨﴾ [ التين : 8]

“আল্লাহ কি সবচেয়ে বড় হাকীম নন?” [তীন: ৮]

﴿ وَمَنۡ أَحۡسَنُ مِنَ ٱللَّهِ حُكۡمٗا لِّقَوۡمٖ يُوقِنُونَ ٥٠﴾ [ المائدة : 50]

“যারা আল্লাহর প্রতি দৃঢ় প্রত্যয়ী তাদের কাছে আল্লাহর চেয়ে উত্তম হুকুমের অধীকারী আর কে হতে পারে?” [মায়েদা: ৫০]

আল্লাহর ভালবাসা

আমরা ঈমান আনি যে, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর অলিগণকে ভালবাসেন। তাঁরাও আল্লাহকে ভালবাসেন।

﴿ قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِي يُحۡبِبۡكُمُ ٱللَّهُ﴾ [ آل عمران : 31]

“হে নবী! লোকদের বলে দাও, তোমরা যদি প্রকৃতই আল্লাহকে ভালবাস বলে দাবী করো, তবে আমার অনুসরণ করো। তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন।” [আল ইমরান : ৩১]

﴿ فَسَوۡفَ يَأۡتِي ٱللَّهُ بِقَوۡمٖ يُحِبُّهُمۡ وَيُحِبُّونَهُۥٓ﴾ [ المائدة : 54]

(তোমাদের কেউ যদি নিজের দ্বীন থেকে ফিরে যায়, তবে যাক না) আল্লাহ আরো এমন জাতির উত্থান ঘটাবেন যাদেরকে আল্লাহ ভালবাসবেন আর তারাও আল্লাহকে ভালোবাসবেন। [মায়েদা: ৫৪]

﴿وَٱللَّهُ يُحِبُّ ٱلصَّٰبِرِينَ ١٤٦﴾ [ آل عمران : 146]

“আল্লাহ ধৈর্যশীল লোকদেরকে ভালবাসেন।” [আল ইমরান: ১৪৬]

﴿ وَأَقۡسِطُوٓاْۖ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلۡمُقۡسِطِينَ ٩﴾ [ الحجرات : 9]

“তোমরা ইনসাফ করো। আল্লাহ ইনসাফকারীদেরকে ভালবাসেন” [হুজুরাত : ৯]

﴿ وَأَحۡسِنُوٓاْۚ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلۡمُحۡسِنِينَ ١٩٥﴾ [ البقرة : 195]

“তোমরা ইহসান করো। আল্লাহ মুহসিন বান্দাগণকে ভালবাসেন।” [বাকারা : ১৯৫]

আমরা ঈমান আনি যে, আল্লাহ তা‘আলা সেসব কাজ ও কথার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি সেগুলোকে পছন্দ করেন; আর সেসব জিনিস তিনি নিষেধ করেছেন সেগুলোকে তিনি অপছন্দ করেন ।

﴿إِن تَكۡفُرُواْ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَنِيٌّ عَنكُمۡۖ وَلَا يَرۡضَىٰ لِعِبَادِهِ ٱلۡكُفۡرَۖ وَإِن تَشۡكُرُواْ يَرۡضَهُ لَكُمۡۗ ﴾ [ الزمر : 7]

“তোমরা যদি কুফরী করো তাহলে [মনে রেখো] আল্লাহ তোমাদের মুখাপেক্ষী নন। তিনি তাঁর বান্দাহদের জন্য কুফরী পছন্দ করেন না। আ তোমরা শোকর করলে তিনি তোমাদের জন্য তা পছন্দ করেন।” [যুমার : ৭]

﴿ وَلَٰكِن كَرِهَ ٱللَّهُ ٱنۢبِعَاثَهُمۡ فَثَبَّطَهُمۡ وَقِيلَ ٱقۡعُدُواْ مَعَ ٱلۡقَٰعِدِينَ ٤٦﴾ [ التوبة : 46]

“তাদের বের হয়ে যাবার যদি ইচ্ছা সত্যিই থাকতো তবে তারা সে জন্য কিছু প্রস্তুতি অবশ্যই গ্রহণ করতো। কিন্তু তাদের সংকল্পবদ্ধ হওয়াটাই আল্লাহর পছন্দ ছিলো না। তাই আল্লাহ তাদেরকে অবসাদগ্রস্ত করে দিয়েছেন এবং বলে দিয়েছেন, ‘বসে থাকো বসে থাকা অন্যান্য লোকদের সাথে।” [তাওবা: ৪৬]

আল্লাহর সন্তুষ্টি

আমরা ঈমান আনি যে, যারা ঈমানদার এবং নেক আমল করে আল্লাহ্ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট।

﴿ رَّضِيَ ٱللَّهُ عَنۡهُمۡ وَرَضُواْ عَنۡهُۚ ذَٰلِكَ لِمَنۡ خَشِيَ رَبَّهُۥ ٨﴾ [ البينة : 8]

“তাদের প্রতি আল্লাহ তা‘আলা সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। এ সন্তুষ্টি তার জন্যই যে ব্যক্তি স্বীয় রবকে ভয় করে।” [বাইয়িনাহ : ৮]

আল্লাহর গযব

আমরা আরও ঈমান আনি যে, আল্লাহ তা‘আলা কাফের এবং অন্যান্য এমন লোকদের উপরই গযব নাযিল করেন যারা গযবের উপযুক্ত।

﴿ٱلظَّآنِّينَ بِٱللَّهِ ظَنَّ ٱلسَّوۡءِۚ عَلَيۡهِمۡ دَآئِرَةُ ٱلسَّوۡءِۖ وَغَضِبَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِمۡ﴾ [ الفتح : 6]

“যারা আল্লাহ সম্পর্কে কারাপ ধারণা পোষণ করে, দোষ-ত্রুটি ও খারাপের আবর্তে তারা নিজেরাই নিমজ্জিত। তাদের উপরই আল্লাহর গযব পড়েছে।” [ফাতহ: ৬]

﴿وَلَٰكِن مَّن شَرَحَ بِٱلۡكُفۡرِ صَدۡرٗا فَعَلَيۡهِمۡ غَضَبٞ مِّنَ ٱللَّهِ وَلَهُمۡ عَذَابٌ عَظِيمٞ ١٠٦﴾ [ النحل : 106]

“কিন্তু যারা মনের সন্তোষ সহকারে কুফরী গ্রহণ করে নিয়েছে তাদের উপরই আল্লাহর গযব। এসব লোকদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি” [নাহল : ১০৬]

আল্লাহর চেহারা

আমরা ঈমান আনি যে, আল্লাহ তা‘আলার চেহারা রয়েছে যা “জালাল ও ইকরাম” অর্থাৎ মহিয়ান এবং গরিয়ান গুণ বিশিষ্ট।

﴿وَيَبۡقَىٰ وَجۡهُ رَبِّكَ ذُو ٱلۡجَلَٰلِ وَٱلۡإِكۡرَامِ ٢٧﴾ [ الرحمن : 27]

“এবং কেবলমাত্র তোমরা রবের মহিয়ান ও গরিয়ান চেহারাই অবশিষ্ট থাকবে।” [রাহমান : ২৭]

আল্লাহর হাত

আমরা ঈমান আনি যে, আল্লাহ তা‘আলার উদার এবং উম্মুক্ত দুটি হাত রয়েছে।

﴿بَلۡ يَدَاهُ مَبۡسُوطَتَانِ يُنفِقُ كَيۡفَ يَشَآءُۚ﴾ [ المائدة : 64]

“আল্লাহর হাত তো উদার ও উন্মুক্ত। তিনি যেভাবেই ইচ্ছা খরচ করেন।” [মায়েদা : ৬৪]

﴿وَمَا قَدَرُواْ ٱللَّهَ حَقَّ قَدۡرِهِۦ وَٱلۡأَرۡضُ جَمِيعٗا قَبۡضَتُهُۥ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ وَٱلسَّمَٰوَٰتُ مَطۡوِيَّٰتُۢ بِيَمِينِهِۦۚ سُبۡحَٰنَهُۥ وَتَعَٰلَىٰ عَمَّا يُشۡرِكُونَ ٦٧﴾ [ الزمر : 67]

“এসব লোকেরা তো আল্লাহর কদর যতটুকু করা উচিৎ তা করলো না, অথচ কেয়ামতের দিন গোটা যমীন তাঁর মুষ্ঠির মধ্যে থাকবে। আসমানসমূহ থাকবে তার ডান হাতের মধ্যে পেচানো অবস্থায়। এসব লোকেরা যে শিরক করে তা হতে তিনি সম্পূর্ণ পবিত্র।” [যুমার: ৬৭]

আল্লাহর চক্ষু

আমরা ঈমান আনি যে, আল্লাহ তা‘আলার দুটি হাকীকী (প্রকৃত) চক্ষু আছে। এর প্রমাণ হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলা নিম্নোক্ত বাণী:

﴿وَٱصۡنَعِ ٱلۡفُلۡكَ بِأَعۡيُنِنَا وَوَحۡيِنَا﴾ [ هود 37]

“আমার চোখের সামনে এবং অহী মোতাবেক তুমি নৌকা তৈরী করো।” [হূদ : ৩৭]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:

«حجابه النور لو كشفه لأحرقت سبحات وجهه ما انتهى اليه بصره من خلقه»

নূর হলো আল্লাহর পর্দা। যদি তিনি তা উন্মুক্ত করেন তাহলে তাঁর নুরের তাজাল্লী সৃষ্টি জগতের যতদূর পর্যন্ত চোখের দৃষ্টি পৌঁছবে, জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। [মুসলিম, ইবন মাজা]

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত এ ব্যাপারে একমত যে আল্লাহ তা‘আলার দুটি চক্ষু রয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাজ্জাল সম্পর্কিত হাদীসটি এর সমর্থন করছে। এ হাদীসটিতে তিনি বলেছেন:

إنه أعور وإن ربكم ليس بأعور

সে [দাজ্জাল] হলো কানা [এক চোখে দেখে] আর আমাদের রব কানা নন। [বুখারী ও মুসলিম]

আমরা ঈমান আনি যে,

﴿ لَّا تُدۡرِكُهُ ٱلۡأَبۡصَٰرُ وَهُوَ يُدۡرِكُ ٱلۡأَبۡصَٰرَۖ وَهُوَ ٱللَّطِيفُ ٱلۡخَبِيرُ ١٠٣﴾ [ الأنعام : 103]

“আমরা তা‘আলাকে দুনিয়ার কোন চোখ প্রত্যক্ষ করতে পারে না বরং তিনিই সমস্ত চোখকে প্রত্যক্ষ করতে পারেন। তিনি অতিশয় সুক্ষ্নদর্শী এবং সর্ববিষয়ে ওয়াকিফহাল।” [আন‘আম: ১০৩]

মুমিন লোকেরা আল্লাহকে দেখতে পাবে

আমরা একথা ঈমান আনি যে, মুমিন ব্যক্তিগন কেয়ামতের দিন তাঁকে [রবকে] দেখতে পাবে।

﴿وُجُوهٞ يَوۡمَئِذٖ نَّاضِرَةٌ ٢٢ إِلَىٰ رَبِّهَا نَاظِرَةٞ ٢٣﴾ [ القيامة : 22-23]

“সেদিন [কেয়ামতের দিন] কিছু সংখ্যক চেহারা হাস্যোজ্জল হবে। নিজেদের রবের দিকে দৃষ্টি দিয়ে রাখবে।” [কিয়ামাহ : ২২-২৩]

কোন কিছুই আল্লাহর মত নয়

আমরা আরও ঈমান আনি যে, আল্লাহ তা‘আলার কোন দৃষ্টান্ত নেই, তাঁর সিফাতে কামাল বা পূর্ণাঙ্গ গুণাবলীর কারণে।

﴿لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١١﴾ [ الشورى : 11]

“কোন কিছুই তার মত নয়। তিনি সব কিছুই শুনেন এবং দেখেন।” [শূরা : ১১]

আল্লাহর তন্দ্রা ও ঘুম নেই

আমরা আরও ঈমান আনি যে,

﴿لَا تَأۡخُذُهُۥ سِنَةٞ وَلَا نَوۡمٞۚ ﴾ [ البقرة : 255]

“না তন্দ্রা, না নিদ্রা তাঁকে [আল্লাহকে] স্পর্শ করতে পারে।” [বাকারা : ২৫৫]

আল্লাহ পূর্ণ ইনসাফগার

আমরা আরও ঈমান আনি যে, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর “কামালে আদল” [পূর্ণ ইনসাফ] এর গুণে গুণান্বিত হওয়ার কারণে কারো প্রতি জুলুম করেন না।

অনুরূপভাবে, তিনি তাঁর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ও আয়ত্তের গুণে গুণান্বিত হওয়ার কারণে বান্দাহদের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে গাফেল ও উদাসীন নন।

আল্লাহর জ্ঞান ও ক্ষমতা অসীম

আমরা ঈমান আনি যে, আল্লাহ তা‘আলার অসীম জ্ঞান ও ক্ষমতার কারণে আকাশ ও যমীনের কোন জিনিসই তাঁকে অক্ষম অপারগ বানাতে পারে না।

﴿إِنَّمَآ أَمۡرُهُۥٓ إِذَآ أَرَادَ شَيۡ‍ًٔا أَن يَقُولَ لَهُۥ كُن فَيَكُونُ ٨٢﴾ [ يس : 82]

“অর্থাৎ আল্লাহ যখন কোন জিনিসের ইচ্ছা পোষণ করেন তখন তিনি [কাঙ্খিত] জিনিসটিকে শুধু বলেন: “হয়ে যাও”। অমনি তা হয়ে যায়।” [ইয়াসীন: ৮২]

অনুরূপ, পূর্ণ শক্তি ও ক্ষমতার অধিকারী হবার ফলে তিনি কখনো ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েন না।

﴿وَلَقَدۡ خَلَقۡنَا ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ وَمَا بَيۡنَهُمَا فِي سِتَّةِ أَيَّامٖ وَمَا مَسَّنَا مِن لُّغُوبٖ ٣٨﴾ [ق: 38]

“আমি যমীন ও আসমানসমূহ এবং এ দু’য়ের মধ্যে অবস্থিত সব জিনিসকে ছয়দিনে সৃষ্টি করেছি। এতে কোন ক্লান্তি আমাকে স্পর্শ করেনি।” [ক্বাফ: ৩৮]

আল্লাহর নাম ও সিফাত

যেসব নাম ও গুণাবলী আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং নিজের জন্য ঘোষণা করেছেন অথবা তাঁর জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাব্যস্ত করেছেন বা স্বীকৃতি দিয়েছেন, সেসব নাম ও গুণাবলীর প্রতি আমরা ঈমান রাখি। কিন্তু কঠিনভাবে নিষিদ্ধ দু’টি জিনিসকে আমরা অস্বীকার করি। আর তা হচ্ছে: ১. তামছীল; ২. তাকয়ীফ।

১. তামছীল: অর্থাৎ অন্তরে কিংবা মূখে এ কথা বলা, “আল্লাহর সিফাত বা গুণাবলী মাখলুকের গুণাবলীর মত।

২. তাকয়ীফ: অর্থাৎ অন্তরে কিংবা মুখে একথা বলা, “আল্লাহর সিফাত বা গুণাবলীর অবস্থা, আকৃতি বা সূরত এ রকমের।

অনুরূপভাবে, যেসব বিষয় আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিজের ব্যাপারে অথবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর ব্যাপারে নেতিবাচক ঘোষণা করেছেন সেসব বিষয় নেতিবাচক হিসেবেই আমরা ঈমান আনি। এ সব নফী বা নেতিবাচক বিষয়গুলো, এর বিপরীতে আল্লাহ তা‘আলার জন্য কামালিয়াত তথা পূর্ণতাসম্পন্ন গুণ সাব্যস্ত করে। আর যেসব বিষয়ে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুই বলেননি সেসব বিষয়ে আমরা চুপ থাকি।

আকীদা ও তাওহীদের এ পথে চলা ফরয

আমরা মনে করি যে, এ আক্বীদা ও তাওহীদের উপরে বর্ণিত পথে চলা ফরয ও অপরিহার্য। কারণ যেসব বিষয় আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিজের ব্যাপারে ইতিবাচক বা নেতিবাচক বলে ঘোষণা করেছেন সে সব বিষয়গুলো এমন সংবাদ ও তথ্য যা তিনি আপন সত্তা সম্পর্কে পরিবেশন করেছেন। আর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিজের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী জ্ঞান রাখেন। তিনি সবচেয়ে সত্যবাদী এবং সবচেয়ে সুন্দর বচনের অধিকারী। বান্দারা নিজের জ্ঞান দ্বারা তাঁকে আয়ত্ত করতে পারে না।

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা‘আলার ব্যাপারে যে সব বিষয় ইতিবাচক বা নেতিবাচক বলে ঘোষণা করেছেন সেগুলো হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিবেশিত খবর বা তথ্য। তিনি হচ্ছেন এমন এক মহান ব্যক্তি যিনি ‘আপন রব’ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশী জ্ঞানী। সবচেয়ে উত্তম নসীহতকারী। সবচেয়ে বেশী সত্যবাদী এবং সুন্দর ভাষার অধিকারী। অতএব আল্লাহ তা‘আলা এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী হচ্ছে জ্ঞান, সত্যবাদিতা এবং পরিপূর্ণ বর্ণনায় সমৃদ্ধ। তাই তা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে কোন প্রকার সংশয় অথবা প্রত্যাখ্যান করার ব্যপারে কোন ওজর আপত্তি চলতে পারে না।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন