HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

স্বনির্ভরতা অর্জনে ইসলাম একটি পর্যালোচনা

লেখকঃ ড. হুসাইন আহমাদ

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
স্বনির্ভরতা অর্জনে ইসলাম : একটি পর্যালোচনা

ড. হুসাইন আহমাদ

সম্পাদনা : ড. মো: আবদুল কাদের

ভূমিকাঃ
আল্লাহ তা‘আলা ইসলামকে পরিপূর্ণ জীবন বিধান ও মনোনীত ধর্ম এবং মানুষকে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত জাতি হিসেবে ঘোষণা করেছেন। পৃথিবীতে মানুষকে স্বীয় প্রতিনিধিত্ব প্রদান করেছেন। সমগ্র মানবতার মাঝে মুসলিমরাই এ খেলাফতের যোগ্য। অথচ মুসলিম জাতিই বর্তমান বিশ্বে অর্থনৈতিকভাবে পশ্চাদপদ ও পরনির্ভরশীল জাতি হিসেবে স্বীকৃত এবং পেশাগত দিক থেকে সর্বনিন্ম পেশা ভিক্ষাবৃত্তি মুসলিম জাতির মাঝেই উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদিও ইসলাম এ পেশাটিকে অসহায়ত্বে সর্বশেষ পর্যায়ে সর্বনিন্ম বৈধ পেশা বলেছে। বাস্তবতায় ইসলাম পরনির্ভরশীলতা ও ভিক্ষাবৃত্তিকে নিরুতসাহিত করেছে। পক্ষান্তরে স্বনির্ভরতা অর্জনে উৎসাহিত করেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানবতাকে হীনতম অবস্থা থেকে সম্মানজনক অবস্থায় সমাসীন করার লক্ষে ভিক্ষুকের হাতকে কর্মের হাতে পরিণত করার বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। বহুল প্রসিদ্ধ ঘটনা ভিক্ষুকের শেষ সম্বল কম্বল বিক্রয় করে কুড়াল ক্রয় করে দিয়ে স্বনির্ভরতার দীক্ষা প্রদান করেছেন। বস্তুত পবিত্র কুরআন ও হাদীস শরীফে স্বাবলম্বীতা ও স্বনির্ভরতা অর্জনের যথার্থ দিক নির্দেশনা রয়েছে। মুসলিম জাতিকে হীনমানসিকতা ও দুর্দশা থেকে মুক্তির নিমিত্তে এ বিষয়ে জ্ঞার্নাজন বিশেষ প্রয়োজন। এ লক্ষে ‘‘স্বনির্ভরতা অর্জনে ইসলাম : একটি পর্যালোচনা’’ শীর্ষক প্রবন্ধের অবতারণা। যখন বিশ্ব মানবতা বিরাজমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থার দুর্বহচাপে নির্যাতিত নিষ্পেষিত শোষিত ও বঞ্চিত। কেননা মানব রচিত অর্থব্যবস্থা মানব জাতির অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান দিতে সর্ম্পূনরূপে ব্যথ। শুধু তাই নয়, যে অর্থব্যবস্থা বর্তমান বিভিন্ন দেশে কার্যকর রয়েছে, তা পুঁজিবাদ হউক বা সমাজতন্ত্র, মানব জীবনে নিত্য নতুন জটিল সমস্যা ও অর্থনেতিক ব্যাধি সৃষ্টি করছে। যা সাধারণ মানুষকে ঠেলে দিচ্ছে নির্মম কষ্টদায়ক দারিদ্র্য ও দুঃসহ অভাব অনটনের গভীরতম পংকে। এ অর্থ ব্যবস্থায় নির্বিশেষে সমস্ত মানুষকে পেট ভরে খাবার, লজ্জা ঢাকার বস্ত্র ও রৌদ্র বৃষ্টি হতে রক্ষাকারী আশ্রয়ের ব্যবস্থাকরে দিতে সম্পূর্ণ অক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে। ফলে মানুষ প্রতিনিয়ত পরনির্ভর অসহায় হয়ে পড়ছে। এমতাবস্থায় ‘‘স্বনির্ভরতা অর্জনে ইসলাম: একটি পর্যালোচনা’’ শীর্ষক প্রবন্ধ সময়োপযোগী ও যথার্থ নির্বাচন। এ প্রবন্ধ দুদর্শাগ্রস্ত নিঃস্ব মানুষকে স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করবে ইনশা আল্লাহ।

পরনির্ভরশীলতা বিশ্বমানবতার জন্য অভিশাপ। এটা মানবতাকে পশুত্বের পর্যায়ে নামিয়ে নিতে পারে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন; দারিদ্র্য মানুষকে কাফির বানিয়ে দিতে পারে। এ জন্য প্রায় সবসময় আল্লাহর নিকট এ বলে প্রার্থনা করতেন, ‘‘ হে আল্লাহ তুমি আমার খাদ্যে বরকত দাও, আর আমাদের খাদ্যের মাঝে তুমি ব্যবধান সৃষ্টি করো না। কেননা যথারীতি খাদ্য না পেলে আমরা নামায রোযা করতে পারব না। আমাদের মহান রব নির্দেশিত কর্তব্য পালন করাও আমাদের দ্বারা সম্ভব হবে না। [. আহমাদ শালাবী, আল-হুকুমাতুল ইসলামিয়্যাহ, দারুল আরব, কায়রো, খৃ. ১৯৯১, পৃ. ৫৩০]

পরনির্ভরশীলতা হল রক্ত শূন্যতা বিশেষ। অর্থ সম্পদ মানুষের জন্য সে কাজ করে যা রক্ত করে মানুষের দেহের জন্য। রক্ত মানুষের দেহ ও জীবনের স্থিতির নিয়ামক। রক্ত স্বল্পতা দেখা দিলে মানুষের দেহে নানা দুরারোগ্য ব্যাধির লীলাক্ষেত্রে পরিণত হয়। অনুরূপ সম্পদ না থাকলে মানুষের জীবনও অচল হয়ে পড়ে অনিবার্যভাবে। [. মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুর রহীম, আল-কুরআনে রাষ্ট্র ও সরকার, খায়রুন প্রকাশনী, ঢাকা, খৃ. ১৯৯৫, পৃ.৩১৬] তা যেমন ব্যক্তি জীবনে বিপর্যয় সুষ্টি করে তেমনি করে সামষ্টিক জীবনে। কারণ মানুষের আর্থিক প্রয়োজন দেখা দেয় জন্ম মুহুর্ত থেকেই। অর্থ সম্পদহীন ব্যক্তির যেমন কোন শক্তি মান-মর্যাদা থাকে না তেমনি পরনির্ভরলশীল জাতিও বিশ্ব জাতি সমূহের সামনে সম্মান সস্ত্রম থেকে হয় বঞ্চিত। এ বঞ্চনা ও অবমাননা হতে মুক্তির লক্ষে ইসলামের রয়েছে সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রেখে গেছেন বিশ্ববাসীর সামনে এক উজ্জ্বল শিক্ষা ও আর্দশ। নিন্মে স্বর্নিভরতা অর্জনে ইসলামের দিক নির্দেশনা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

স্বনির্ভরতা অর্জনে মালিকানার ধারণার পরিবর্তন সাধন
সম্পদের উপর একচ্ছত্র মালিকানা মানুষের ভেতর সেচ্ছাচারিতা ও লাগামহীনতার জন্ম দেয়। এ সেচ্ছাচারী মানসিকতাই হচ্ছে শোষণের মূল, যা সমাজের একাংশকে পরনির্ভরশীল করে দেয়। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পদের উপর মানুষের নিরঙ্কুশ মালিকানার ধারণা রহিত করে শুরুতেই শোষণবাদী মানসিকতার মুলোৎপাটন করেন। এ ক্ষেত্রে তিনি দু’টি যুগান্তকারী মূলনীতি আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষকে জানিয়ে দেন। প্রথমতঃ সার্বভৌমত্ব ও মালিকানা কেবলমাত্র আল্লাহর। সৃষ্টি জগতের কোন বস্ত্ত তা যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন মানুষ তার আসল মালিক নয়। আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,

﴿لِّلَّهِ مُلۡكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۚ يَخۡلُقُ مَا يَشَآءُۚ﴾ [ الشورى : 42 ]

আকাশ মণ্ডলী ও ভূমণ্ডলের সার্বভৌমত্ব আল্লারই তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। [. আল-কুরআন ৪২: ৪৯]

আরও এরশাদ করেন-

﴿لِّلَّهِ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِۗ﴾ [ البقرة :284]

আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে সমস্ত আল্লাহরই। [. আল-কুরআন ২: ২৮৪]

দ্বিতীয়তঃ মালিকানার ব্যাপারে মানুষ আল্লাহর বিধান পুরাপুরি মেনে চলবে এবং আল্লাহর ইচ্ছার বিপরীতে সে একটি কর্পদকও আয় ব্যয় করবে না। আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেনঃ

﴿ٱللَّهُ ٱلَّذِي خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ وَأَنزَلَ مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءٗ فَأَخۡرَجَ بِهِۦ مِنَ ٱلثَّمَرَٰتِ رِزۡقٗا لَّكُمۡۖ وَسَخَّرَ لَكُمُ ٱلۡفُلۡكَ لِتَجۡرِيَ فِي ٱلۡبَحۡرِ بِأَمۡرِهِۦۖ وَسَخَّرَ لَكُمُ ٱلۡأَنۡهَٰرَ﴾ [ إبراهيم :32]

তিনিই আল্লাহ যিনি আকাশ মণ্ডলী ও ভূমণ্ডল সৃষ্টি করেছেন। যিনি আকাশ হতে পানি বর্ষণ করে তদ্দারা জীবিকার জন্য ফল-মুল উৎপাদন করেন। নৌযানকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তাঁর বিধানে তা সমুদ্রে চলাফেরা করে এবং নদ-নদীকে তোমাদের সেবায় নিয়োজিত করেছেন। [. আল-কুরআন ১৪: ৩২] আরও এরশাদ হচেছঃ

﴿وَسَخَّرَ لَكُم مَّا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِ جَمِيعٗا مِّنۡهُۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّقَوۡمٖ يَتَفَكَّرُونَ﴾ [ الجاثية : 13]

তিনি তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন আকাশমণ্ডলী ও ভূমণ্ডলীর সমস্ত কিছু নিজ অনুগ্রহে, চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে তো রয়েছে নির্দশন। [. আল-কুরআন ৪৫: ১৩]

অতএব আকাশমণ্ডলী ও ভূমণ্ডলের সমস্ত কল্যাণ লাভ করার ও ভোগ ব্যবহারে সমস্ত মানুষ অভিন্ন ও সমান অধিকার সম্পন্ন। কেননা আল্লাহ তা‘আলা এসব কিছুকে সকল মানুষের আয়ত্তাধীন হওয়ার জন্য নিয়ন্ত্রিত করে দিয়েছেন। [. Professor Raihan Sharif, Islamic Economics : Principles and Applications, IFB. Dhaka, 1985, P. 226] এতে বিশেষ কোন ব্যক্তি বংশ বা শ্রেণী বা বর্ণের লোকদের সম্বোধন করা হয়নি। এ গুলোর উপর কারো একক কর্তৃত্বের অধিকার দেয় হয়নি। অতএব যে ব্যক্তি সম্পদ অর্জনে চেষ্টা করবে সম্পদ তার অধীনে যাবে। সুতারং নিজেকে প্রচেষ্টার মাধ্যমে স্বর্নিভরতা অর্জন করতে হবে।

জীবিকা অর্জনে উদ্বুদ্ধকরণ
সম্মানজনক ও আত্মতৃপ্তী মূলক জীবিকার জন্য স্বহস্তে উপার্জিত সম্পদের বিকল্প নেই। তাই ইসলাম জীবিকা অর্জনের লক্ষ্যে কর্মে উৎসাহিত করেছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে সব সময় কর্ম ব্যস্ত থাকতেন। সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)দেরকে কর্মে উৎসাহ প্রদান করতেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে শ্রমের মাধ্যমে জীবিকা অর্জনে অভ্যস্ত ছিলেন। এমনকি কাজ করার কারণে তাঁর হাতে ফোস্কা পড়ে যেত। সে হাত দেখিয়ে তিনি বলতেন। আল্লাহ ও তাঁর রাসুল এরূপ শ্রমাহত হাত খুবই পছন্দ করেন ও ভালবাসেন।১ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্মের প্রতি গুরুত্বারোপ করে এরশাদ করেন।

«طلب الرزق الحلال من أفضل الفرائض»

হালাল জীবিকা উর্পাজন করা সর্বাপেক্ষা বড় কর্তব্য। [. খৃ. ১৯৮০, সংস্ক. ২ পৃ.-১২ আবু বকর আহমাদ ইবনু হুসাইন আল-বায়হাকী, আস-সুনানুল কুবরা, দারুল মা’আরিফ, বৈরুত, হি. ১৪০৬ শু’আবুল ইমান।]

তিনি আরও এরশাদ করেনঃ

«إن أطيب ما أكل الرجل من كسبه»

স্বহস্তে উর্পাজিত খাদ্য অপেক্ষা অধিক উত্তম খাদ্য আর কিছু নেই। [. সুনানু নাসাঈ, কিতাবুল বুয়ু, হাদীস নং ৪৩৭৫]

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও এরশাদ করেন, ইবাদতের সত্তরটি অংশ রয়েছে তম্মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে হালাল জীবিকা সন্ধান। [. আহমাদ শালাবী প্রাগুক্ত, পৃ. ৫৩৫]

রাসুল আরও এরশাদ করেন,

«قال سئل النبى صلى الله عليه وسلم عن أفضل الكسب فقال بيع مبرورو عمل الرجل بيد ه»

সাহাবীগণ একদা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলেন কোন প্রকারের উপার্জন উত্তম। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ব্যক্তির নিজ হাতে কাজের বিনিময় বা সুষ্ট ব্যবসায় লব্ধ মুনাফা। [. মুসনাদু আহমাদ, হাদীস নং ৫২৭৬]

শ্রম নিয়োগে উৎসাহ দিয়ে এরশাদ করেনঃ

«لان يأ خذ أحد كم حبلة فيحتطب على ظهره خير له من أن يأ تى رجلا فيسئله أعطاه أومنه»

তোমাদের কেউ রশি নিয়ে গিয়ে জঙ্গল থেকে কাঠ কেটে স্বীয় পিঠের উপর বহন করে নিয়ে আসল আল্লাহ তাকে সে ভিক্ষাবৃত্তিহতে রক্ষা করবেন যাতে কিছু পাওয়া না পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। [. সাহীহুল বুখারী, কিতাবুয যাকাত, হাদীস নং ১৩৭৭]

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও এরশাদ করেন,

«إذا صليتم الفجر فلا تنو موا عن طلب أرزقكم»

ফজরের নামাজ আদায় করার পর জীবিকা উপার্জনে লিপ্ত না হয়ে ঘুমিয়ে থেকো না। [. মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান, খৃ. ১৯৮৯ সংস্ক, ৪, পৃ.-২৬]

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে ব্যবসা করতেন ও বকরী চরাতেন। বস্ত্তত শুধু মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নন হযরত আদম (আঃ), হযরত দাউদ (আঃ), হযরত নূহ (আঃ) সহ সকল নবী রসুলই কাজ করেছেন। [. Farid Uddin Mosuad, ibid. চ. ৪৪,৪৫]রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অলস বসে না থেকে পরিশ্রমের মাধ্যমে স্বনির্ভরতা অর্জনের বাস্তব দীক্ষা প্রদান করেছেন।

ব্যবসায় উৎসাহিতকরণ
স্বাবলম্বীতা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম হলো ব্যবসা বাণিজ্য। পবিত্র কুরআনে ব্যবসার বৈধতা ঘোষণা করা হয়েছে। এরশাদ হচ্ছে,

﴿ وَأَحَلَّ ٱللَّهُ ٱلۡبَيۡعَ ﴾ [ البقرة : 275]

আল্লাহ বেচাকেনাকে হালাল করেছেন। [সূরা আল-বাকারাহ: ২৭৫]

পবিত্র কুরআন শুধু বৈধতাই ঘোষণা করেনি বরং ব্যবসার প্রতি মানুষকে উৎসাহিত করেছে। এরশাদ হচ্ছেঃ

﴿فَإِذَا قُضِيَتِ ٱلصَّلَوٰةُ فَٱنتَشِرُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَٱبۡتَغُواْ مِن فَضۡلِ ٱللَّهِ وَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ كَثِيرٗا لَّعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ﴾ [ الجمعة :10]

সালাত সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করবে ও আল্লাহকে অধিক স্বরণ করবে, যাতে তোমরা সফল কাম হও। [. আল- কুরআন ৬২: ১০] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَأۡكُلُوٓاْ أَمۡوَٰلَكُم بَيۡنَكُم بِٱلۡبَٰطِلِ إِلَّآ أَن تَكُونَ تِجَٰرَةً عَن تَرَاضٖ مِّنكُمۡۚ﴾ [ النساء :29]

হে মুমিনগণ! তোমরা অন্যায়ভাবে একে অন্যের সম্পদ গ্রাস করো না, কিন্তু তোমাদের পরস্পর রাজী হয়ে ব্যবসা করা বৈধ। [. আল- কুরআন ৪: ২৯]

মহানবী নিজে ব্যবসা করেছেন এবং এ ক্ষেত্রে তাঁর দক্ষতার কথাও জানা যায়। তিনি একবার খাদিজা (রাঃ) এর পণ্য সামগ্রী সমেত সিরিয়া যান এবং প্রায় দ্বিগুণ মুনাফা অর্জন করেন। ব্যবসার মাধ্যমে জীবিকার্জনে তিনি প্রচুর উৎসাহব্যঞ্জক বাণী প্রদান করেছেন। তিনি বলেন,

«التاجر الصدوق الأ مين مع النبيين والصديقين والشهداء»

সত্যবাদী ন্যায়পন্থী ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী আম্বিয়া, সিদ্দীকীন ও শুহাদা প্রমুখ মহান ব্যক্তির সমান মর্যাদায় অভিষিক্ত হবেন। [. সুনানুত তিরমিযী,, কিতাবুল বুয়ু, হাদীস নং ১১৩০] মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, রুজীর দশভাগের নয় ভাগই রয়েছে ব্যবসা বাণিজ্যের মধ্যে। [. আলা উদ্দিন আল-মুত্তাকী, কানযুল উম্মাল, মুআস্সাতুর রিসালাহ, বৈরুত খৃ. ১৯৮৫, খ. ৪, পৃ.- ১২৬] সুতারং বলা যায় স্বনির্ভরতা অর্জনে ব্যবসা বাণিজ্যের সুদূর প্রসারী ভূমিকা রয়েছে ।

ধন-সম্পদের সুষম আবর্তন ব্যবস্থা
অর্থনেতিক ভারসাম্যহীনতার কারণ সমাজের গুটিকতক লোকের হাতে সম্পদ পুঞ্জীভূত থাকা। এর ফলে ধন-সম্পদের আবর্তন বদ্ধ হয়ে যায় এবং ধন-সম্পদ বন্টনও বিস্তারণে সামঞ্জস্য রক্ষিত হয় না। [. সাইয়্যেদ আবুল আলা মা’ওদুদী, ইসলাম ও আধুনিক অর্থনৈতিক মতবাদ, অনু.মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুর রহীম, আধুনিক প্রকাশনী, ঢাকা খৃ. ১৯৭৬ ইং, ৮৩-৮৪] যদ্দরুন পুঁজিপতি শ্রেণী আরও ধনবান এবং দারিদ্র শ্রেণী নিঃস্ব ও পরনির্ভরশীল হয়ে পড়ে।(সঃ)

এ অবস্থার অবসান কল্পে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমাজের সর্বস্তরের লোকের মাঝে সম্পদের সুষম আবর্তনের ব্যবস্থা করনে। [. আবুল খালেক, বিশ্বনবী (সঃ) এর কর্মসূচীতে অর্থনীতির রূপ, অগ্রপথিক, ইফাবা, ঢাকা, এপ্রিল, খৃ. ১৯৯৫] আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন:

﴿وَٱلَّذِينَ يَكۡنِزُونَ ٱلذَّهَبَ وَٱلۡفِضَّةَ وَلَا يُنفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ فَبَشِّرۡهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٖ﴾ [ التوبة :34]

যারা স্বর্ণ রোপ্য পুঞ্জিভূত করে রাখে আর তা আল্লাহর পথে ব্যয় করেনা তাদেরকে কঠোর শাস্তির সুসংবাদ দাও। [. আল-কুরআন ৯: ৩৪]

আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন

﴿كَيۡ لَا يَكُونَ دُولَةَۢ بَيۡنَ ٱلۡأَغۡنِيَآءِ مِنكُم﴾ [ الحشر :7]

তোমাদের মাঝে যারা বিত্তবান কেবল তাদের মাঝেই যেন সম্পদ আবর্তন না করে। [. আল- কুরআন ৫৯: ৭] [সূরা হাশর]

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পদের সুষম আর্বতনের জন্য কার্যকর সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তিনি এ জন্য যাকাত, ফিতরা, উশর, মিরাসী আ’ঈন, দান, করজে হাসান, হিবা ও ওসিয়ত ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ফলে ভারসাম্য অর্থব্যবস্থা প্রর্বতিত হয়।

খাস ও পতিত জমি আবাদের ব্যবস্থা
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খাস ও পতিত জমি আবাদের পদক্ষেপ স্বনির্ভরতা অর্জনের ক্ষেত্রে একটি পদক্ষেপ। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, যখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় পৌঁছেন তখন তিনি সেখানকার যে সকল জমিতে পানি পৌঁচাত না এবং পতিত পড়ে থাকত সেগুলো নিজ ইচ্ছামত মুসলমানদের মাঝে বন্টর করেন দেন। [. গাজী শামছুর রহমান, রাসুল (সঃ) ও খুলাফায়ে রাশেদীনের যমানায় কৃষক, অগ্রপথিক, ইফাবা, ঢাকা, জানুয়ারী-মার্চ, খৃ. ১৯৯৮, পৃ.- ৪৩]ভূমিতেই মহান আল্লাহ মানুষের প্রাচুর্যের ব্যবস্থা রেখেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿هُوَ ٱلَّذِي جَعَلَ لَكُمُ ٱلۡأَرۡضَ ذَلُولٗا فَٱمۡشُواْ فِي مَنَاكِبِهَا وَكُلُواْ مِن رِّزۡقِهِۦۖ وَإِلَيۡهِ ٱلنُّشُورُ﴾ [ الملك :15]

সে মহান সত্ত্বা আল্লাহ জমিনকে তোমাদের জন্য নরম সমতল অনুগত বানিয়ে দিয়েছেন। অতএব তোমরা সে জমিনের সর্বদিক ও পরতে পরতে পৌঁছাতে চেষ্টা কর, আর সেখানে থেকে পাওয়া আল্লাহর রিযিক তোমরা ভক্ষণ কর। আর শেষ পর্যন্ত তাঁর কাছেই তোমাদের উত্থান ঘটবে| [. আল-কুরআন ৬৭: ১৫][সূরা মুলক:১৫]

এ জন্যই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পতিত ভূমি আবাদের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং এ ব্যাপারে সবাইকে উৎসাহিত করেন। তিনি বলেন,

« من كا نت له أرض فليزر عها فان لم يزرعها فليمنحها أخاه»

যার জমি রয়েছে সে তা হয় নিজে চাষ করবে, অন্যথায় তার কোন ভাইয়ের দ্বারা চাষ করাবে অথবা তাকে চাষ করতে দেবে। [. সহীহ লি মুসলিম, কিতাবুল বুয়ু, হাদীস নং ১৮৬৫]

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পতিত জমি কেবলমাত্র চাষ করতেই বলেননি বরং উৎসাহ দেয়ার জন্য পতিত জমিতে চাষকারীর মালিকানারও স্বীকৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেনঃ

« من أحيى أرضا متية فهى له »

যে লোক পোড়া ও অনাবদী জমি আবাদ ও চাষযোগ্য করে নেবে সে তার মালিক হবে। [. সুনানুত তিরমিযী, কতিাবুল আহকাম, হাদীস নং ১৩০০]

পতিত জমি আবাদে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এতটাই গুরুত্ব দিয়েছেন যে, তা নিশ্চিত করার জন্য তিনি বলেন, ‘‘জমি আবাদ না করলে তিন বছর পর তার কোন অধিকার থাকবে না। [. ড. মায়েজুর রহমান, খাদ্য সমস্যাও ইসলাম, ইফাবা, ঢাকা, খৃ. ১৯৮৭, পৃ.- ৩২]তিনি আরও বলেন, আর যে শুধু তার সীমানা নির্ধারণ করে রেখেছে অথচ তার চাষ করেনি, তিন বছর পর তাতে তার কোন অধিকার নেই। [. আবু ইউছুফ, কিতাবুল খারাজ, দারুল কুরআন ওয়া উলুমুল ইসলামিয়া, পাকিস্তান, খৃ. ১৯৮৬, পৃ.- ৬৫]

ভিক্ষাবৃত্তি উচ্ছেদ
পরনির্ভরশীলতার সর্বশেষ পর্যায় হচ্ছে ভিক্ষাবৃত্তি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভিক্ষাবৃত্তি নিষিদ্ধ করে স্বনির্ভরতা অর্জনের বাস্তব শিক্ষা প্রদান করেছেন। নিন্মের ঘটনায় যার বাস্তব প্রমাণ পাওয়া যায়। একদিন এক ব্যক্তি তাঁর কাছে কিছু সাহায্য চেয়েছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে প্রশ্ন করে জেনে নেন যে, তার কি সম্পদ আছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্পদ অর্থাৎ একটা পেয়ালা ও একটা কম্বল আনতে বললেন, ঐ গুলো নিলাম করে দিয়ে ২ দিরহাম সংগ্রহ করলেন। ১ দিরহাম দিয়ে ঐ ব্যক্তির মাধ্যমে একটা কুঠার ক্রয় করে আনালেন। ঐ কুঠার তিনি নিজে হাতল লাগানোর পর তার হাতে দিয়ে বলেছিলেন, ‘‘যাও জঙ্গলে গিয়ে কাঠ কাট এবং ১৫দিন তোমাকে যেন আর না দেখি’’ এভাবে তিনি শ্রমের মাধ্যমে স্বনির্ভর হতে বলেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভিক্ষায় অর্জিত সম্পদকে জাহান্নামের ‘উত্তপ্ত পাথর’ বলেছেন:

«من سال من غير فقر فكانما يأ كل الجمر »

যে ব্যাক্তি অভাব ব্যতীত ভিক্ষা করে সে যেন (জাহান্নামের) পাথর ভক্ষন করে। [. মুসনাদ আহমাদ হাদীস নং ১৬৮৫।] তিনি আরও বলেন,

«ما يزال الرجل يسال الناس حتى يأتي يوم القيامة ليس فى وجهه مز عة لحم»

তোমাদের মাঝে যে ভিক্ষা করে সে যখন আল্লাহর সামনে যাবে তখন তার চেহারায় এক টুকরা গোশতও থাকবে না। [. সহীহুল বুখারী কিতাবুল যাকাত হাদীস নং ১৩৮১।.] মহানবী এমনিভাবে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও নিরুৎসাহিত করণেরমাধ্যমে ভিক্ষাবৃত্তি উচ্ছেদ করেন।

সুদমুক্ত ঋণপ্রদান
দরিদ্র ও পরনির্ভরশীল মানুষকে স্বনির্ভর করে তোলার জন্য করজে হাসানাহ্ বা সুদ মুক্ত ঋণ দান একটি অতি উত্তম পন্থা। এ কারণে ইসলামী শরিয়ত দরিদ্র অসহায়, নিঃস্ব, অভাবী মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে ঋণ প্রদানকে সম্পদশালী ও ধনীব্যক্তিদের উপর ওয়াজিব ঘোষণা করেছে। যাতে পারস্পপারিক সহযোগিতা প্রীতি, ভালবাসা বৃদ্ধিপায় এবং দায়িত্বানুভূতি বিকশিত হয়। যদিও বিরাজমান পুঁজিবাদ ও সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা সুদমুক্ত ঋণদানকে বোকামী মনে করে। আল্লাহ তাওয়ালা সমাজের ধনশালীদের ঋণদানে উৎসাহিত করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَأَقۡرِضُواْ ٱللَّهَ قَرۡضًا حَسَنٗاۚ﴾ [ المزمل :20]

তোমরা আল্লাহকে করজে হাসানাহ্ (উত্তম ঋণ) দাও। [. আল-কুরআন ৭৩: ২০।]

অন্য আয়াতে অভাবী নিঃস্ব পীড়িতকে ঋণদান প্রকারান্তরে আল্লাহকে ঋণ প্রদান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আল-কুরআনে বলা হয়েছে,

﴿مَّن ذَا ٱلَّذِي يُقۡرِضُ ٱللَّهَ قَرۡضًا حَسَنٗا فَيُضَٰعِفَهُۥ لَهُۥٓ أَضۡعَافٗا كَثِيرَةٗ﴾ [ البقرة :245]

যে আল্লাহকে উত্তমরূপে ঋণ (সুদমুক্ত) প্রদান করবে, আল্লাহ তার সেই দানকে বহুগুণে বৃদ্ধি করে (কিয়ামতের দিন পুরুস্কার হিসেবে) দিবেন। [, আল-কুরআন ০২: ২৪৫।] বাস্তবতায় বর্তমানে সারা পৃথিবীর কোথাও ইসলামের এ সুমহান শিক্ষার অনুসরণ করা হচ্ছে না। বিধায় সুদের রাজত্ব সর্বগ্রাসী রূপ নিয়েছে গোটা বিশ্বব্যাপী, দেশ, অঞ্চল, প্রতি জনপদে। অর্থনীতির চাকা সুদ ছাড়া ঘুরছে না। ফলে ধনী আরো ধনী হচ্ছে আর অভাবী দরিদ্র জনগোষ্ঠী দারিদ্রের চুড়ান্ত পর্যায় অসহায় ও পরনির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। ধনী দরিদ্রের ব্যবধান সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট করছে। লক্ষ- কোটি বনী আদম মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য হচ্ছে। অথচ করজে হাসানাহ্ প্রচলিত থাকলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী স্বনির্ভরতা অর্জনের সুযোগ পেত। এতে ধনী দরিদ্রের ব্যবধান দুর হয়ে সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা হত।

১০
দান-সদকায় উৎসাহ দান
স্বনির্ভরতা অর্জনে দানশীলতার সুদুরপ্রসারী ভূমিকা রয়েছে। এ কারণে । রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দানশীলতা বিকাশে উৎসাহ প্রদান করেছেন। মানুষের চরিত্রের একটা বড় দিক হল সে সবকিছু নিজের কাছে রাখতে চায়। কৃপণতার কারণে ক্রমেই সে সঙ্কুচিত হতে থাকে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কৃপণাতাকে নিকৃষ্ট মানসিক রোগ বলে চিহ্নিত করেছেন। প্রয়োজনাতিরিক্ত সবকিছু দান করে দেয়ার জন্য মানুষকে উৎসাহিত করেছেন। পবিত্র আল-কুরআনে এ দিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘লোকেরা তোমাকে জিজ্ঞেস করে যে, কি ব্যয় করবে? বলে দাও উদ্বৃত সবকিছু।

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿وَفِيٓ أَمۡوَٰلِهِمۡ حَقّٞ لِّلسَّآئِلِ وَٱلۡمَحۡرُومِ﴾ [ الذاريات :19]

অর্থাৎ তোমাদের সম্পদে ভিক্ষুকও বঞ্চিত জনের অধিকার রয়েছে। [. আল-কুরআন ৫১: ১৯।]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীরা দানশীলতার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যকার দারিদ্য দূরীকরণে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ইমাম মুসলিম উল্লেখ করেছেন,

«جاء ناس من الأ عراب إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم عليهم الصوف فرأى سؤ حا لهم قد أصا بتهم حا جة فحث الناس على الصد قة فا بطئوا عنه حتى رئى ذالك فى وجهه قال ثم إن رجلا من الأ نصار جاء بصرة من ورق ثم جاء أخرثم تتا بعوا حتى عرف السرور فى وجهه»

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার একটি নও মুসলিম গোত্রের জন্য সাহায্যের কথা বললে সবাই তাদের জন্য ছুটে আসেন; কেউ খাদ্য ও কেউ কাপড় নিয়ে আসেন, আর একজন আনসারী বেশ বড় পরিমাণের অর্থ দান করে। [. সহীহ মুসলিম, কিতাবুল, ইলম হাদীস নং ৪৮৩০।] একটি ঘটনার কথাতো সুবিদিত যে, বদরের যুদ্ধবন্দীদেরকে মুসলমানরাই উদারতার সঙ্গে খাদ্য ও বস্ত্র দান করেছিলেন। [. মুহাম্মদ ইবনু ইসহাক, কিতাবুল মাগাযী, দারুত তুরাস আল ইসলামী, বৈরুত, খৃ. ১৯৯০, পৃ. ৩০৯।] একইভাবে মুসলমানগণ হুনায়ন ও তায়েফ যুদ্ধের পর হাওয়াজিন গোত্রের ৬০০০ যুদ্ধবন্দীকে পরিধানের কাপড় দান করে ছিলেন। [. মুহাম্মদ ইবনু উমর আল-ওয়াকেদী, কিতাবুল মাগাযী, লন্ডন, খৃ. ১৯৬৬, খ. ২, পৃ.-১৫৪।] এ প্রসেঙ্গ মদীনার আনসারগণ কর্তৃক সর্বস্বত্যাগী মুহাজিরগণকে নিজেদের জায়গা, জমি, বাগিচা, ঘর ও অর্থ সম্পদ দান করার কথা উল্লেখযোগ্য। [. আবুল হাসান আল-বালাজুরী, ফতহুল বুলদান, দারু মাকতাবাতিল হিলাল, বৈরুত, খৃ. ১৯৮৮, পৃ.-২৯।] সুতারং দানশীলতার মাধ্যমে পরনির্ভরশীল, নিঃস্ব ও অভাবী মানুষ স্বনির্ভরতা অর্জনের অবলম্বন পেতে পারে।

১১
পুঁজি ও মূলধনের ব্যবস্থা
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুদসহ মুলধন লাভের অবৈধ পন্থাগুলো নিষিদ্ধ করে মূলধন লাভে ইচ্ছুকদেরকে বৈধপন্থায় তাদের মুলধন লাভের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। যারা চাষাবাদে উৎসাহী তিনি তাদের মাঝে পতিত জমি বন্টন করেছিলেন। এভাবে রাষ্ট্রাধীন অনাবদী জমিসমূহ আবাদী জমিতে পরিণত করেছিল। ব্যবসা ও বাণিজ্য প্রবণ লোককে নগদ মুলধন যোগাড় করে দেন, তাছাড়া ধনাঢ্য সাহাবীগণ ব্যবসার উদ্দেশ্যে টাকা বিনোয়োগ করতেন অথবা সাময়িক ঋন দিতেন। এতে সমস্যার সমাধান না হলে । রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল মাল থেকে ঋনের ব্যবস্থা করতেন। ফলে যেমন বেকার জনগোষ্ঠী অর্থোপার্জন করার সুযোগ পেয়েছিল, তেমনি অলস মুলধন উৎপাদন খাতে ব্যয়ে স্বনির্ভরতা অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। [. শাহ মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, ইসলামী অর্থনীতিঃ নির্বাচিত প্রবন্ধ, স্কয়ার পাবলিকেশন, রাজশাহী, খৃ. ১৯৯৬, পৃ. ১৬-১৭।]

১২
আয়-ব্যয়ের ক্ষেত্রে মিতব্যয়ীতা
অপরিমিত সম্পদ ব্যয় পরনির্ভশীলতার অন্যতম প্রধান কারণ। । রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামতাই সম্পদ ব্যয়ে মিতাচারী হবার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা অপব্যয করতে নিষেধ করেছেন। এরশাদ হচ্ছে,

﴿وَءَاتِ ذَا ٱلۡقُرۡبَىٰ حَقَّهُۥ وَٱلۡمِسۡكِينَ وَٱبۡنَ ٱلسَّبِيلِ وَلَا تُبَذِّرۡ تَبۡذِيرًا﴾ [ الإسراء :26]

‘‘প্রাপ্য দেবে আত্মীয়-স্বজন, মিসকীন ও মুসাফিরদেরকে কিন্তু কিছুতেই অপব্যয় করবে না। [. আল-কুরআন ১৭: ২৬।]

আল্লাহ তাওয়ালা আরও বলেন,

﴿إِنَّ ٱلۡمُبَذِّرِينَ كَانُوٓاْ إِخۡوَٰنَ ٱلشَّيَٰطِينِۖ﴾ [ الإسراء :27]

অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। [. আল-কুরআন ১৭: ২৭।] ব্যয়ের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলা মধ্যম পন্থাবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন। এরশাদ হচ্ছে

﴿وَٱلَّذِينَ إِذَآ أَنفَقُواْ لَمۡ يُسۡرِفُواْ وَلَمۡ يَقۡتُرُواْ وَكَانَ بَيۡنَ ذَٰلِكَ قَوَامٗا﴾ [ فاطر :67]

আর যখন তারা ব্যয় করে তখন তারা অপব্যয় করে না, কার্পণ্যও করে না, বরং তারা আছে এতদুভয়ের মাঝে মধ্যম পন্থায়। [. আল-কুরআন ২৫: ৬৭।] অতএব বলা যায় স্বনির্ভরতা অর্জনের জন্য অপব্যয় না করা ও মিতব্যয়ী হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন।

১৩
নিয়ন্ত্রিত ভোগ-লিপ্সা
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধনী ও দরিদ্রের মধ্যকার ব্যবধান কমানোর লক্ষে সম্পদ অর্জনে মানুষের অতিরিক্ত লিপ্সাকে নিয়ন্ত্রন করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তিনি ইহকালের পরিবর্তে পরকালকেই মানুষের একমাত্র লক্ষ্য বলে বর্ণনা করে পার্থিব জীবনকে আখিরাতের শষ্যক্ষেত্র হিসবে উপস্থাপন করেছেন।

পরকালীন সাফল্যের এ চেতনাবোধ মানুষকে সংযমী হবার প্রেরণা যোগায়। ফলে সবধরনের অনৈতিকতা ও লালসার যন্ত্রণা হতে মানুষ মুক্তি পায়। এ চেতনা তাকে আত্মনিয়ন্ত্রিত হতে গভীরভাবে সাহায্য করে। তখন সে অন্যের বৈভব-আত্মসাৎকারী না হয়ে বরং কল্যাণকামীরূপে আত্মপ্রকাশ করে। জাগতিক স্বার্থচিন্তা ও পরস্বহরণ মানসিকতা আর থাকে না। পবিত্র কুরআনে এ উদ্দীপক চেতনাবোধের দিকে ইঙ্গিত করে এরশাদ হয়েছে-

﴿وَٱبۡتَغِ فِيمَآ ءَاتَىٰكَ ٱللَّهُ ٱلدَّارَ ٱلۡأٓخِرَةَۖ﴾ [ص:77]

অর্থাৎ তোমাকে আল্লাহ যা দিয়েছেন তা দিয়ে আখেরাতের বাসস্থান অনুসন্ধান কর। [. আল-কুরআন ২৮: ৭৭।] এ চিন্তাধারা সমাজে বিকশিত হলে সম্পাদার্জনের প্রতিযোগিতা বন্ধ হয়ে যায়। বেড়ে যায় সাহায্য ও সহযোগিতার পরিমাণ, কমে যায়, পরনির্ভরশীলতা ও দারিদ্রতা।

১৪
কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করা
স্বনির্ভরতা অর্জনের প্রধান অন্তরায় বেকারত্ব। কোন সমাজে বেকারত্ব থাকাবস্থায় স্বনির্ভরতা সম্ভব নয়। এ কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল মানুষের কর্মসংস্থানের অধিকারের কেবল স্বীকৃতি দেননি বরং তা নিশ্চিত ও করেছেন। বস্ত্তত অধিকারের ক্ষেত্রে সকল মানুষ সমান অংশীদার এবং এটি একটি মানবাধিকারও বটে। কোন মানুষকেই তার এ জন্মগত অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় না। এ ক্ষেত্রে অন্যায়ভাবে একজন অন্যজনের উপর প্রাধান্যও পেতে পারে না।

মদিনা রাষ্ট্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ অধিকার লাভের সুযোগ সকলের জন্য সমভাবে উম্মুক্ত করেছিলেন। এর ফলে সকল মানুষই নিজের দক্ষতায় অর্থ উপার্জন করে বিত্তবান হতে পারত। অবশ্য নিজের অক্ষমতার কারণেও অনেকে/সচ্চলতা হারাত, কিন্তু তাই বলে কোন লোককেই তার মৌলিক অধিকার হতে বঞ্চিত হতে হত না। স্বীয় দক্ষতার পরীক্ষায় কেউ ব্যর্থ হলে সে রাষ্ট্রীয়ভাবে তার মৌলিক চাহিদা পূরণের ব্যবস্থাদি পাকাপোক্ত দেখতে পেত। ফলে কাউকেউ অপরের দ্বারস্ত হতে হত না। বস্ত্তত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রবর্তিত অর্থব্যবস্থা সামাজিক সুবিচারের একটি অনন্য দৃষ্টান্ত।

১৫
উৎপাদন ক্ষেত্রে মুনাফায় শ্রমিকের অংশ দান
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শ্রমজীবি মানুষের অর্থনৈতিক দৈন্যতা দুরকরণ ও স্বনির্ভর করে তোলার জন্য মুনাফায় শ্রমিকের অধিকারের ঘোষাণা দিয়ে এক যুগান্তকারী ইতিহাস সৃষ্টি করেন। [. ফরিদ উদ্দিন মাসউদ, ইসলামে শ্রমিকের অধিকার, ইফাবা, ঢাকা, খৃ. ১৯৮৪, সংস্ক. ৪, পৃ.-১৩৮।] তাঁর প্রবর্তিত নীতি অনুযায়ী শ্রমিকের খাওয়া পরা বা বাসস্থান কিছুতেই মালিকের জীবন যাত্রার মানের নিচে নামতে পারবে না। [. শামছূল আলম , ইসলামী রাষ্ট্র, ইফাবা, ঢাকা, খৃ. ১৯৯৫, সংস্ক, ৩ পৃ.- ১১৬।] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করেছেন;

« إعطوا العامل من عمله فإن عامل الله لا يخيب »

শ্রমিকগণকে তাদের উৎপাদিত পণ্য থেকে অংশ প্রদান কর। কারণ আল্লাহর বান্দাহ এ শ্রমিকদেরকে কিছুতেই বঞ্চিত করা যাবে না। [. মুসনাদু আহমাদ, হাদীস নং ৮২৫০।] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেনঃ

« قال الله : ثلاثة أنا خصمهم يوم القيامة رجل أعطى بى ثم غدر ورجل باع حرا فأ كل ثمنه ورجل إستا جر أجيرا فاستوفى منه ولم يعط أجره»

তিন ধরণের ব্যক্তির বিরুদ্ধে আমি অভিযোগ করব। তাদের মধ্যে একজন হল সে, যে শ্রমিক খাটিয়ে নিজের কাজ আদায় করে নেয়ার পর শ্রমিকের মজুরী পরিশোধ করে না। [. সহীহুল বুখারী, কিতাবুল বুয়ু’, হাদীস নং ২০৭৫।] শ্রমজীবী মানুষের স্বণির্ভরতা অর্জনে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ঘোষণা এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

১৬
সুদব্যবস্থা নিষিদ্ধ করণ
সমাজ শোষণের সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম সুদ। সুদের কারণেই সমাজের দরিদ্র শ্রেণী আরও দরিদ্র এবং ধনী শ্রেণী আরও ধনবান হয়, দরিদ্র ও অভাবগ্রস্থ মানুষ প্রয়োজনের সময় সাহায্যের কোন দরজা খোলা না পেয়ে সুদে ঋণ গ্রহণে বাধ্য হয়। [. মুহাম্মদ শরীফ হুসাইন, সুদ, সমাজ, অর্থনীতি, ইসলামিক ইকনমিকস রিচার্স ব্যুরো, ঢাকা খৃ. ১৯৯২, সংস্ক. ১, পৃ. ১৯]

সুদের টাকা ফেরত দেয়ার বাধ্য বাধকতার কারণে ঋণ গ্রহীতাকে অনেক সময় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রয় করে হলেও সুদসহ আসল টাকা পরিশোধ করতে হয়। এর ফলে ঋণগ্রহীতা পরনির্ভশীল ও নিঃস্ব হয়ে পড়ে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবির্ভবকালীন সময় আরব সমাজে এ ধরণের চক্রবৃদ্ধি হারে সুদের প্রচলন ছিল।

সুদের এই ভয়াবহ ও জঘন্য কুফল থেকে মানবতাকে রক্ষার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বিধান অনুযায়ী সুদকে নিষিদ্ধ করে বিনিয়োগ ও উৎপাদনকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। [. মুফতী মুহাম্মদ শফী, ইসলামের অর্থ বন্টন ব্যবস্থা, অনু. ফরীদ উদ্দীন মাসউদ, ইফাবা, ঢাকা, খৃ. ১৯৮৩, পৃ.- ২৪।] সুদ নিষিদ্ধ হওয়ার ফলে অর্থবন্টণ ব্যবস্থায় সুসামঞ্জস্য ও ভারসাম্যের সৃষ্টি হয়। মদীনায় সুদমুক্ত অর্থনীতি প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় সুদজনিত মুদ্রাষ্ফীতি, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, মন্দা ও অস্থিতিশীলতা থেকে অর্থ ব্যবস্থা রক্ষা পায়। বিনিয়োগ ও উৎপাদনের সুস্থ পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সুদের কারণে সৃষ্ট শোষণ ও বৈষম্যের অবসান ঘটে। ভোক্তাগণ সুদ জনিত ব্যয় হতে রেহাই পায়, স্বনির্ভরতা অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি হয়। সুদ উচ্ছেদের ফলে বন্টন ক্ষেত্রে সৃষ্ট জুলুম ও বে-ইনসাফীর অবসান ঘটে।

বস্ত্তত সুদ ভিত্তিক অর্থব্যবস্থা এমননি ধ্বংসাত্বক অর্থ ব্যবস্থা। ভোগবাদী পাশ্চাত্যেও যার বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত সৃষ্টি হয়েছে। মনীষী এরিস্টটল সুদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে বলেন ‘‘একটা টাকা আর একটা টাকার জন্মদান করতে পারে না। [. Aristotol’s polities, London. ১৯৮৭ চ. ২৩] মনীষী প্লেটোও সুদকে সমর্থন করেন নি। [. Plato, Law’s Book, V. London. ১৯৯০] মনীষী পেটাস বলেন, ‘‘অর্থ হল বন্ধ্যা এবং এর উপর সুদ ধার্য্য করা অযৌক্তিক [. Boom Bowark, Capital and Interest. London. 1999. Vol. 1. P. ১০-১১]।

সুদের প্রতি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আল্লাহ তা‘আলা ব্যবসা কে হালাল ও সুদকে হারাম করেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমাজ ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক কার্য্যাদির মাঝে যাবতীয় অসৎ কাজের ভেতর সুদকে সবচেয়ে গুরুতর পাপ হিসেবে গণ্য করেছেন। মূলত সুদের মতো সমাজ বিধ্বংসী অর্থনৈতিক হাতিয়ার আর নেই [. শাহ মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, ইসলামী অর্থনীতি, নির্বাচিত প্রবন্ধ, স্কয়ার পাবলিকেশন , রাজশাহী, খৃ. ১৯৯৬, পৃ. ৫১]। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুদের ব্যাপারে এতই কঠোর ছিলেন যে তিনি বলেন,

« لعن رسول الله صلى الله عليه وسلم آكل الربا وموكله وشاهديه وكاتبه »

সুদখোর সুদ দাতা এর লেখক ও সাক্ষী অভিশপ্ত। তারা সকলেই এক পর্যায়ভূক্ত [. সহীহ মুসলিম, কিতাবুল বুয়ু,’ হাদীস নং ১১২৭]।

১৭
জুলুম-শোষণ নিষিদ্ধ ঘোষণা
স্বনির্ভরতা অর্জনের পথে শোষণ ও জুলুম বড় অন্তরায়। ইসলাম অর্থনৈতিকভাবে শোষণের হাত থেকে মানবতাকে রক্ষার জন্য সুদ ছাড়াও শোষণের অন্যান্য পথ ও প্রস্থা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা জুয়া, লটারী নিষিদ্ধ করে এরশাদ করেন,

﴿إِنَّمَا ٱلۡخَمۡرُ وَٱلۡمَيۡسِرُ وَٱلۡأَنصَابُ وَٱلۡأَزۡلَٰمُ رِجۡسٞ مِّنۡ عَمَلِ ٱلشَّيۡطَٰنِ فَٱجۡتَنِبُوهُ﴾ [ المائدة :90]

মদ, জুয়া, মূর্তিপুজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্ত্ত, শয়তানের কার্য। সুতারং তোমরা উহা বর্জন কর [. আল-কুরআন ৫: ৯০]। ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ওজনে কম দেয়া এক প্রকার জুলুম। এ প্রসঙ্গে আল-কুরআনে এরশাদ হচ্ছে,

﴿أَوۡفُواْ ٱلۡكَيۡلَ وَلَا تَكُونُواْ مِنَ ٱلۡمُخۡسِرِينَ﴾ [ الشعراء :181]

মাপ পূর্ণ কর এবং যারা পরিমাপে কম দেয়, তাদের অন্তর্ভূক্ত হয়োনা [. আল-কুরআন ২৬: ১৮১]।

শোষণ ও জুলুমের একটি বড় হাতিয়ার মজুদদারী, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মজুদদারকে অভিসপ্ত ঘোষণা করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«قوله عليه السلام الجالب مرزوق والمحتكر ملعون»

আমদানি কারক রিযিকপ্রাপ্ত, মজুদদার অভসপ্ত [. বুরহান উদ্দিন, আল-হিদায়া, জাকারিয়া কুতুবখনা, যশহর, পৃ. ৪৫৪।]।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,

«من احتكر طعاما أربعين ليلة فقد برى من الله وبرئ الله منه»

যে ব্যক্তিচল্লিশদিন খাদ্য দ্রব্য মজুদ করে রাখবে সে আল্লাহ তায়ালা থেকে সম্পর্ক মুক্ত [. প্রাগুক্ত, পৃ. ৪৫৪।]।

এছাড়াও ইসলাম ঘুষ, রিসওয়াহ, অশ্লীল দ্রব্যের ব্যবসা ও মানুষ শোষণ ও জুলুমের শিকার হয় এমন সর্বপ্রকার কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলেন যে, এসব উপায়ে আর্থিক লেনদেনের ফলে সামাজের একদল লোক অন্যায়ভাবে জাতীয় অর্থের বিরাট অংশ লুটে নিচ্ছে আর ব্যাপক জনগোষ্ঠী নির্মমভাবে শোষিত হচ্ছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সবের মাধ্যমে সৃষ্ট শোষণ ও জুলুমের সকল পন্থা বন্ধ করেছেন।

১৮
যাকাত ভিক্তিক অর্থ ব্যবস্থার প্রবর্তন
যাকাতের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উদ্দেশ্য হচ্ছে দারিদ্র দূর করা। এতে শুধু ব্যক্তি বা সমাজই নয় রাষ্ট্রও সমানভাবে উপকৃত হয়। দারিদ্র মানবতার এক নম্বর শত্রু। যে কোন দেশের ও সমাজের জন্য এটা একটি জটিল সমস্যা। দারিদ্রের ফলে সমাজে হতাশা ও বঞ্চনার অনুভূতি সৃষ্টি হয়। পরিণামে দেখা দেয় মারাত্মক সামাজিক সংঘাত। অধিকাংশ সামাজিক অপরাধ ঘটে দারিদ্রের জন্য। এ সকল সমস্যার সমাধানকল্পে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর পক্ষ থেকে যাকাতের বিধান প্রাপ্ত হন।

যাকাত আল্লাহ তা‘আলার হুকুম এবং অন্যতম মৌলিক ফরয। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম। যাকাত ইসলামী অর্থনীতির মুল স্তম্ভ [. Zohurul Islam. Islamic Economics. IFB. 1997. 1st ED. Page-183] ও ইসলামী রাষ্ট্রের রাজস্বের অন্যতম উৎস। এটি একটি সমাজকল্যাণ মূলক বিধান [. Salem Azzam. Islam and Contemporary Socicty. Islamic Council of Europe. ১৯৮২. Page-102]। আল্লাহর সন্তোষ লাভের উদ্দেশ্যে কোন ব্যক্তি কর্তৃক কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে তার কোন নির্দিষ্ট মালের নির্ধারিত অংশের স্বত্ব অর্পন করাকে যাকাত বলা হয়। পবিত্র কুরআনে বিরাশি স্থানে যাকাতের কথা বলা হয়েছে [.মুহাম্মদ মুসা, যাকাতের তাৎপর্য ও বিধান, ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা, জুলাই সেপ্টেম্বর, খৃ. ১৯৯৬, পৃ. ৫০।]। সাধারণত মানুষের ধারণা যাকাত প্রদান করলে সম্পদ কমে যায় অথচ আল্লাহ তাওয়ালা এরশাদ করেন;

﴿وَمَآ ءَاتَيۡتُم مِّن رِّبٗا لِّيَرۡبُوَاْ فِيٓ أَمۡوَٰلِ ٱلنَّاسِ فَلَا يَرۡبُواْ عِندَ ٱللَّهِۖ وَمَآ ءَاتَيۡتُم مِّن زَكَوٰةٖ تُرِيدُونَ وَجۡهَ ٱللَّهِ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُضۡعِفُونَ﴾ [ الروم :39]

মানুষের ধনে বৃদ্ধি পাবে বলে তোমরা সুদে যা দিয়ে থাক, আল্লাহর দৃষ্টিতে তাহা ধন সম্পদ বৃদ্ধি করে না, কিন্তু আল্লাহর সমত্তষ্টি লাভের জন্য যে যাকাত তোমরা দিয়ে থাক তা বৃদ্ধি পায়, উহারাই (যাকাত সাদকা প্রদানকারী) সমৃদ্ধিশালী [. আল-কুরআন ৩০: ৩৯।]।

যাকাত ব্যবস্থাকে আল্লাহ তাওয়ালা সম্পদাধিকারীর সম্পদের পবিত্রতা এবং তাদের জন্য আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহের এক মহামাধ্যম হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। যাকাত দানের ফলে যাকাত দাতার অবশিষ্ট ধন ও সেই সঙ্গে তার আত্মার ও পরিশুদ্ধি ঘটে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন

﴿خُذۡ مِنۡ أَمۡوَٰلِهِمۡ صَدَقَةٗ تُطَهِّرُهُمۡ وَتُزَكِّيهِم بِهَا وَصَلِّ عَلَيۡهِمۡۖ إِنَّ صَلَوٰتَكَ سَكَنٞ لَّهُمۡۗ﴾ [ التوبة :103]

তাদের মালামাল থেকে যাকাত গ্রহণ কর যাতে তুমি সেগুলোকে পবিত্র করতে এবং বরকতময় করতে পার এর মাধ্যমে। আর তুমি তাদের জন্য দোয়া কর, নিঃসন্দেহে তোমার দোয়া তাদের জন্য সান্তনা স্বরপ [. আল-কুরআন ৯: ১০৩।]। যাকাত আদায় ও তার যথাযথ ব্যবহার সমাজে আয় ও সম্পদের সুবিচারপূর্ণ বন্টনের ক্ষেত্রে একটি অন্যতম বলিষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। যাকাতের মাধ্যমে সম্পদের একটি সুনিদিষ্ট অংশ এমন কয়েকটি নির্দিষ্ট খাতে বন্টিত ও ব্যবহৃত হয় যাদের প্রকৃতই বিত্তহীন শ্রেণীভূক্ত। এদের মধ্য রয়েছে গরীব, মিসকীন, ঋণগ্রস্থ, মুসাফির এবং ক্ষেত্র বিশেষে নও মুসলিম। কিন্তু বাংলাদেশে এখন রাষ্ট্রীয়ভাবে বাধ্যতামূলক ভাবে যাকাত আদায় করা হয়না এবং তা বিলি বন্টেনেরও ব্যবস্থাও নেয়া হয়নি।

যাকাত আদায় এখন ব্যক্তিগত ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। অথচ যাকাতের মাধ্যমে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পূর্ণবাসন সম্ভব। কেননা যাকাত স্থায়ীভাবে দারিদ্র বিমোচনের একটি স্থায়ী পদ্ধতি। যাকাতের মাধ্যমে সমাজ থেকে দারিদ্র দূরিকরণের ব্যাপারে ফিকহবিদগণ দ্ব্যর্থহীন মত প্রকাশ করেছেন। দরিদ্র ব্যক্তি যাতে দ্বিতীয়বার যাকাতের অর্থের মুখাপেক্ষী না হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় বিধান প্রয়োগের জন্য ফকীহগণ তাকিদ প্রদান করছেন। ইমাম নববী (রঃ) বলেছেন, ফকীর, মিসকীনকে এতটুকু পরিমাণ সম্পদ দিতে হবে যাতে তারা তাদের অভাবের গ্লানি থেকে মুক্তি পায় এবং ধনী ব্যক্তিতে উপনীত হয়। ‘‘ইমাম শাফেয়ী (রঃ) এ মত সমর্থন করেন। [. ড. মাহমুদ আহমাদ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দারিদ্র বিমোচনে যাকাতের ভূমিকা, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, পূ-৩] তার সমর্থক, ফকীহগণ শিল্প ব্যবসায়ে নিয়োজিত প্রার্থীগণকে তাদের স্ব-স্ব কাজে (কুটির শিল্প, কৃষিকাজ, দোকান, দরজীরকাজ, কাঠের কাজ প্রভৃতি) স্বনির্ভর হওয়ার উপযুক্ত পরিমাণ যাকাতের অর্থ প্রদানের কথা বলেছেন। ইমাম মালিক (রঃ) ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল (রঃ) এবং অন্যান্য ফকীহর মত হলো যে, প্রার্থী ফকির মিসকীনকে নিজসহ পরিবার পরিজনের এক বছরের ভরণ পোষণের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ যাকাত দিতে হবে।

হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন যখন তোমরা ফকির মিসকীনকে কিছু দেবে, তখন তাকে ধনী বানিয়ে দেবে। [. প্রাগুক্ত, পৃ.- ৪।] মূলত যাকাত অভাবী মানুষকে স্বনির্ভর এবং দ্বিতীয়বার যাকাত প্রার্থী না হবার অবস্থায় আনয়ন করতে চায়। একটি বছর স্বচ্ছলভাবে চলার অবলম্বন পাবার পর স্বাবলম্বী হতে আগ্রহী প্রতিটি ব্যক্তিই স্বনির্ভরতা অর্জনে সক্ষম হওয়াটাই স্বাভাবিক।

১৯
বায়তুল মাল
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সঙ্গে বায়তুল মালও প্রতিষ্ঠা করেন। রাষ্ট্রের যাবতীয় অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনার পাশাপাশি তাঁর প্রতিষ্ঠিত বায়তুল জনকল্যাণ এবং মৌলিক চাহিদা পূরণ সংক্রান্ত কাজ করত। [. সাইয়্যেদ হাসান মুসান্না নদভী, ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা, ইফাবা, ঢাকা, খৃ. ১৯৮৩, পৃ.- ৩০।] যা দারিদ্র বিমোচন করে স্বনির্ভরতা অর্জনে সুদুর প্রসারী ভূমিকা রাখে।

বর্তমান বিরাজিত অর্থব্যবস্থা যখন মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলার লক্ষে নানা নামে ও চটকদার শ্লোগানে গড়ে উঠেছে এন.জি.ও বিভিণ্ণ প্রকার সাহায্য সংস্থা। যারা দুঃস্থ, অভাবী, অসহায় মানুষকে সুখের স্বপ্ন দেখিয়ে সুদের উপর ঋণ প্রদান করছে, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা অর্জনের পরিবর্তে পরনির্ভরশীলতাই বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ ইসলাম স্বনির্ভরতা অর্জনের ক্ষেত্রে যে বাস্তব শিক্ষা ও দিক নির্দেশনা প্রদান করেছে, যা অনুসরণ ও বাস্তবায়ন করলে দরিদ্র অভাবীও অসহায় মানুষ অতি সহজে স্বনির্ভর জীবন যাপন করতে পারে। মূলত ইসলাম রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রাধীন ব্যক্তি মালিকানা প্রতিষ্ঠা, সুদ ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে রহিত করণ, যাকাত ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক, মীরাসী আইন প্রবর্তনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করছে। পুঁজিকে উৎপাদন ক্ষেত্রে কাজে না লাগায়ে অসল ফেলে রাখা, কর্মক্ষম ব্যক্তি কর্মহীন সময় কাটানোর বিরোধীতা করছে, অপব্যয় নিষেধও মিতবায়ী হতে উৎসাহদান, পতিত জমি আবাদের ব্যবস্থা, দানশীলতা, ভিক্ষুকের হাতকে কর্মের হাতে পরিণত করার মধ্যে দিয়ে স্বনির্ভরতা অর্জনের দিক নির্দেশনা প্রদান করছে। এ ক্ষেত্রে জাতিগত স্বনির্ভরতা অর্জনের জন্য সর্বস্তরের মানুষের এ সংক্রান্ত ইসলামী শিক্ষা একান্ত প্রয়োজন। ‘‘স্বনির্ভরতা অর্জনে ইসলামঃ একটি পর্যালোচনা’’ শীর্ষক প্রবন্ধে এ বিষয়টি আলোচিত হয়েছে । মানব কল্যাণে আমার এ ক্ষুদ্র প্রয়াস সামান্যতম কাজে লাগলে ও আমার শ্রম স্বার্থক হবে। আমিন

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন