HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
তারাবীহ্ সালাতের রাকা‘আত একটি তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ
লেখকঃ আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
শরী‘আতের মূল হলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর নিকট হতে যা নিয়ে এসেছেন। আর নবীর যুগই হলো শরী‘আতের যুগ। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْۚ﴾ [ الحشر : 7]
‘‘তোমাদের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন তা আঁকড়ে ধর এবং যা হতে নিষেধ করেছেন তা হতে বিরত থাক’’। [সূরা আল-হাশর : ৭]
এছাড়াও অন্যত্র এসেছে-
﴿لَّقَدۡ كَانَ لَكُمۡ فِي رَسُولِ ٱللَّهِ أُسۡوَةٌ حَسَنَةٞ ﴾ [ الأحزاب : 21]
‘‘তোমাদের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনে রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ’’। [সূরা আল আহযার : ২১] নবীর যুগের সাথে শরী‘আতের মূল উৎস হিসেবে খুলাফায়ে রাশেদার যুগও সংশ্লিষ্ট। এ মর্মে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«عليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين المهديين من بعدي»
‘‘তোমরা রাসূলের সুন্নাত এবং আমার পরবর্তী সৎপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে ধারণ কর’’। [ঈমাম বুখারী, জামে সহীহ্ (রিয়াদ, দারুসসালাম, ১৯৮৫ খ্রি:) হাদীস নং ৩৭; ইমাম মুসলিম, সহীহ বৈরুত: দারু এহইয়াউততুরাছিল আরাবী) তাহকীক: মুহাম্মদ ফুয়াদ আব্দুল বাকী, হাদীস নং ৭৫৯।]
তারাবীহ্ যদিও রমযানের সাথে সংশ্লিষ্ট, তবুও এটি সাধারণভাবে কিয়ামুল লাইল বা রাত্রি জাগরনের সাথে সংশ্লিষ্ট। সাধারণভাবে রাত্রি জাগরণ ও বিশেষ করে রমযানের তারাবীহ্ সম্পর্কে অনেক দলীল রয়েছে। রাত্রে তাহাজ্জুদ পড়া সম্পর্কে এসেছে—
﴿وَمِنَ ٱلَّيۡلِ فَتَهَجَّدۡ بِهِۦ نَافِلَةٗ لَّكَ﴾ [ الإسراء : 79]
‘‘আর রাত্রের কিছু অংশ অতিরিক্ত হিসেবে তাহাজ্জুদ পড়ুন’’।
আরও বলা হয়েছে,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلۡمُزَّمِّلُ ١ قُمِ ٱلَّيۡلَ إِلَّا قَلِيلٗا﴾ [ المزمل :1- 2]
‘‘হে বস্ত্রাবৃত, দাঁড়ান রাত্রের কিয়দাংশ।”
আর নির্দিষ্ট করে রমযানে রাত্রি জাগরণ মূলত যদিও সাধারণ কিয়ামুল লাইলের চেয়ে সময়ের দিক থেকে নির্দিষ্ট, তবে তা নির্দেশ প্রদানের দিক থেকে ‘আম। কেননা, এ ব্যাপারে বিশেষ উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে এবং অনেক সওয়াব রয়েছে বলে প্রমাণিত হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন—
«من قام رمضان إيمانًا واحتسابًا غفر له ما تقدم من ذنبه»
‘‘যে ব্যক্তি রমযান মাসে ঈমান ও ইহতেসাবের সাথে রোজা পালন করে তার পূর্বের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়’’ [বুখারী, জামে সহীহ (রিয়াদ দারুস সালাম,১৯৮৫ খী.) হাদীস নং(৩৭);ইমাম মুসলিম,সহীহ (বৈরুত,দারু ইহইয়াউত তুরাছিল আরাবী)তাহকীক:মুহাম্মদ ফুয়াদ আব্দুল বাকী, নং(৭৫৯)।]।
এ-কথা সুস্পষ্ট যে, শরী‘আত কর্তৃক নির্ধারিত তারাবীহ্ এর রাকা‘আত সংখ্যা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা, এ ক্ষেত্রে অনেক মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে; এমনকি অনেকে মতবিরোধের ক্ষেত্রে শরী‘আতের সীমালংঘন করেছে। প্রত্যেক দল তাদের মতের ব্যাপারে হয়েছে অবিচল ও অন্ধ; কেউই হক ও সঠিক বিষয় উপলব্ধি করতে চায় না। তাই বিষয়টি বিভিন্ন দলীল-প্রমানাদির সাহায্যে সুস্পষ্ট করার প্রয়োজনবোধ করছি, যেন বিষয়টির একটি সমাধান করা সম্ভব হয়।
﴿وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْۚ﴾ [ الحشر : 7]
‘‘তোমাদের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন তা আঁকড়ে ধর এবং যা হতে নিষেধ করেছেন তা হতে বিরত থাক’’। [সূরা আল-হাশর : ৭]
এছাড়াও অন্যত্র এসেছে-
﴿لَّقَدۡ كَانَ لَكُمۡ فِي رَسُولِ ٱللَّهِ أُسۡوَةٌ حَسَنَةٞ ﴾ [ الأحزاب : 21]
‘‘তোমাদের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনে রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ’’। [সূরা আল আহযার : ২১] নবীর যুগের সাথে শরী‘আতের মূল উৎস হিসেবে খুলাফায়ে রাশেদার যুগও সংশ্লিষ্ট। এ মর্মে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«عليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين المهديين من بعدي»
‘‘তোমরা রাসূলের সুন্নাত এবং আমার পরবর্তী সৎপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে ধারণ কর’’। [ঈমাম বুখারী, জামে সহীহ্ (রিয়াদ, দারুসসালাম, ১৯৮৫ খ্রি:) হাদীস নং ৩৭; ইমাম মুসলিম, সহীহ বৈরুত: দারু এহইয়াউততুরাছিল আরাবী) তাহকীক: মুহাম্মদ ফুয়াদ আব্দুল বাকী, হাদীস নং ৭৫৯।]
তারাবীহ্ যদিও রমযানের সাথে সংশ্লিষ্ট, তবুও এটি সাধারণভাবে কিয়ামুল লাইল বা রাত্রি জাগরনের সাথে সংশ্লিষ্ট। সাধারণভাবে রাত্রি জাগরণ ও বিশেষ করে রমযানের তারাবীহ্ সম্পর্কে অনেক দলীল রয়েছে। রাত্রে তাহাজ্জুদ পড়া সম্পর্কে এসেছে—
﴿وَمِنَ ٱلَّيۡلِ فَتَهَجَّدۡ بِهِۦ نَافِلَةٗ لَّكَ﴾ [ الإسراء : 79]
‘‘আর রাত্রের কিছু অংশ অতিরিক্ত হিসেবে তাহাজ্জুদ পড়ুন’’।
আরও বলা হয়েছে,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلۡمُزَّمِّلُ ١ قُمِ ٱلَّيۡلَ إِلَّا قَلِيلٗا﴾ [ المزمل :1- 2]
‘‘হে বস্ত্রাবৃত, দাঁড়ান রাত্রের কিয়দাংশ।”
আর নির্দিষ্ট করে রমযানে রাত্রি জাগরণ মূলত যদিও সাধারণ কিয়ামুল লাইলের চেয়ে সময়ের দিক থেকে নির্দিষ্ট, তবে তা নির্দেশ প্রদানের দিক থেকে ‘আম। কেননা, এ ব্যাপারে বিশেষ উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে এবং অনেক সওয়াব রয়েছে বলে প্রমাণিত হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন—
«من قام رمضان إيمانًا واحتسابًا غفر له ما تقدم من ذنبه»
‘‘যে ব্যক্তি রমযান মাসে ঈমান ও ইহতেসাবের সাথে রোজা পালন করে তার পূর্বের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়’’ [বুখারী, জামে সহীহ (রিয়াদ দারুস সালাম,১৯৮৫ খী.) হাদীস নং(৩৭);ইমাম মুসলিম,সহীহ (বৈরুত,দারু ইহইয়াউত তুরাছিল আরাবী)তাহকীক:মুহাম্মদ ফুয়াদ আব্দুল বাকী, নং(৭৫৯)।]।
এ-কথা সুস্পষ্ট যে, শরী‘আত কর্তৃক নির্ধারিত তারাবীহ্ এর রাকা‘আত সংখ্যা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা, এ ক্ষেত্রে অনেক মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে; এমনকি অনেকে মতবিরোধের ক্ষেত্রে শরী‘আতের সীমালংঘন করেছে। প্রত্যেক দল তাদের মতের ব্যাপারে হয়েছে অবিচল ও অন্ধ; কেউই হক ও সঠিক বিষয় উপলব্ধি করতে চায় না। তাই বিষয়টি বিভিন্ন দলীল-প্রমানাদির সাহায্যে সুস্পষ্ট করার প্রয়োজনবোধ করছি, যেন বিষয়টির একটি সমাধান করা সম্ভব হয়।
‘তারাবীহ্’ শব্দটি বহুবচন, একবচনে ‘তারওয়ীহাতুন’ ‘‘ ترويحة ’’ মূলে শব্দটি মাসদার। [কসেম ইবন্ আবদুল্লাহ ইবন্ আমীর আলী আল কুনুনী, আনিসুল ফুকাহা ফী তা’রিফাতিল আলফামিল মুতাদাওয়ালাহ বাইনাল ফুকাহা ( জিদ্দা: দারুল ওফা, প্রথম সংস্করণ ১৪০৬) তাহকীক : ড. আহমদ ইবন্ আবদুর রাজ্জাক আল কাবীসী, পৃ. ১০৭।] কেউ কেউ বলে মূলত: তারবীহা ترويحة বৈঠক বা বসাকে বুঝায়। [প্রাগুক্ত পৃ. ১০৭।]
ইবনুল আসীর বলেন, تراويح শব্দটি ترويحة এর বহুবচন। আর এটি راحة থেকে تفعيلة ওযনে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন تسليمة শব্দটি سلام থেকে এসেছে। [আবু সা’আদাত মুবারক ইবন্ মুহাম্মদ আল জাযরী, আন নিহায়াহ ফী গারীবিল হাদীস ওয়াল ‘আছার’, বৈরুত: আল মাকতাবুল ইলমিয়াহ, ১৩৯৯ হিজরী, ১৯৭৯ খ্রি.) তাহকীক: তাহের আহমদ আযযাওয়ী, মাহমুদ মুহাম্মদ আত্ তানাহী (২/৬৫৮) আয্-যাবীদী, তাজুল উরুস (বেনগাজী: দারু লিবিয়া, তা. বি) খ.১ পৃ.১৬০৪।]
পরিভাষায়, এটি এমন এক সালাত যা রমযান মাসে ইশার সালাতের পর পড়া হয়। [সা‘দী আবু যাইব, আল কামুসূল ফিকহী ( বৈরুত; দারুল ফিকর, দ্বিতীয় সংস্করণ ১৪০৮ হি. ঈৃ. ১৫৫।]
অথবা বলা হয়: রমযান মাসে দু’ দু’ রাকা‘আত সালাত আদায় করা, যার রাকা‘আত সংখ্যা সম্পর্কে ফকীহগণের মতভেদ রয়েছে এবং অন্যান্য মাসআলা সম্পর্কেও। [আল মাওসুয়াতিল ফিকহিয়্যা আল কুয়েতিয়্যা (কুয়েত: ওযারাতুশ শুইনিল ইসলামীয়্যাহ ওয়াল আওকাফ) মাদ্দাহ: صلاة التراويح ২৭ খণ্ড, পৃ. ১০২।]
মূলত একে তারাবীহ্ বলা হয়, যেহেতু এর দ্বারা শান্তি বা প্রশান্তি চাওয়া হয়। কেননা চার রাকা‘আত সালাতের পর মুসল্লিগণ বিশ্রাম নেন। [আনিসুল ফুকাহা, পৃ. ১০৭।.] অথবা প্রত্যেক দু’ রাকা‘আত পর। [ইবনুল আসীর, আন নিহায়াহ ফি গারীবিল হাদীস, খ. ২য়, পৃ. ৬৫৮।] ফাইয়্যুমী বলেনঃ বিশ্রাম কষ্ট ও ক্লান্তিকে দূর করে— আর তারাবীহ্র সালাত راحة থেকে নির্গত হয়েছে, কেননা, এক ترويحة চার রাকা‘আতে। আর মুসল্লিগণ চার রাকা‘আত পর বিশ্রাম নেন। [আহমদ ইবন্ মুহাম্মদ ইবন্ আলী আল মাকরী আল ফুয়ুমী, আল মিসবাহুল মুনীর বৈরূত: আল মাকাতাবাতুল ইলমিয়্যাহ,) পৃ. ২১৪।] বলা হয়ে থাকে, এ সালাতটি দীর্ঘ এবং এতে প্রত্যেক চার রাকা‘আত পর মুসল্লিগণ বিশ্রাম নেয় বিধায় একে তারাবীহ্ বলা হয় । [আল মাওসুয়াতিল ফিকহিয়্যাহ আল কুয়েতিয়া,( ২৭/১০২)।]
ইবনুল আসীর বলেন, تراويح শব্দটি ترويحة এর বহুবচন। আর এটি راحة থেকে تفعيلة ওযনে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন تسليمة শব্দটি سلام থেকে এসেছে। [আবু সা’আদাত মুবারক ইবন্ মুহাম্মদ আল জাযরী, আন নিহায়াহ ফী গারীবিল হাদীস ওয়াল ‘আছার’, বৈরুত: আল মাকতাবুল ইলমিয়াহ, ১৩৯৯ হিজরী, ১৯৭৯ খ্রি.) তাহকীক: তাহের আহমদ আযযাওয়ী, মাহমুদ মুহাম্মদ আত্ তানাহী (২/৬৫৮) আয্-যাবীদী, তাজুল উরুস (বেনগাজী: দারু লিবিয়া, তা. বি) খ.১ পৃ.১৬০৪।]
পরিভাষায়, এটি এমন এক সালাত যা রমযান মাসে ইশার সালাতের পর পড়া হয়। [সা‘দী আবু যাইব, আল কামুসূল ফিকহী ( বৈরুত; দারুল ফিকর, দ্বিতীয় সংস্করণ ১৪০৮ হি. ঈৃ. ১৫৫।]
অথবা বলা হয়: রমযান মাসে দু’ দু’ রাকা‘আত সালাত আদায় করা, যার রাকা‘আত সংখ্যা সম্পর্কে ফকীহগণের মতভেদ রয়েছে এবং অন্যান্য মাসআলা সম্পর্কেও। [আল মাওসুয়াতিল ফিকহিয়্যা আল কুয়েতিয়্যা (কুয়েত: ওযারাতুশ শুইনিল ইসলামীয়্যাহ ওয়াল আওকাফ) মাদ্দাহ: صلاة التراويح ২৭ খণ্ড, পৃ. ১০২।]
মূলত একে তারাবীহ্ বলা হয়, যেহেতু এর দ্বারা শান্তি বা প্রশান্তি চাওয়া হয়। কেননা চার রাকা‘আত সালাতের পর মুসল্লিগণ বিশ্রাম নেন। [আনিসুল ফুকাহা, পৃ. ১০৭।.] অথবা প্রত্যেক দু’ রাকা‘আত পর। [ইবনুল আসীর, আন নিহায়াহ ফি গারীবিল হাদীস, খ. ২য়, পৃ. ৬৫৮।] ফাইয়্যুমী বলেনঃ বিশ্রাম কষ্ট ও ক্লান্তিকে দূর করে— আর তারাবীহ্র সালাত راحة থেকে নির্গত হয়েছে, কেননা, এক ترويحة চার রাকা‘আতে। আর মুসল্লিগণ চার রাকা‘আত পর বিশ্রাম নেন। [আহমদ ইবন্ মুহাম্মদ ইবন্ আলী আল মাকরী আল ফুয়ুমী, আল মিসবাহুল মুনীর বৈরূত: আল মাকাতাবাতুল ইলমিয়্যাহ,) পৃ. ২১৪।] বলা হয়ে থাকে, এ সালাতটি দীর্ঘ এবং এতে প্রত্যেক চার রাকা‘আত পর মুসল্লিগণ বিশ্রাম নেয় বিধায় একে তারাবীহ্ বলা হয় । [আল মাওসুয়াতিল ফিকহিয়্যাহ আল কুয়েতিয়া,( ২৭/১০২)।]
‘তারাবীহ্ এর সালাত’, ‘রমযানের কিয়াম’, ‘রাত্রের সালাত’, ‘রমযানে তাহাজ্জুদের সালাত’ সবই এক, যদিও প্রত্যেকটি স্বতন্ত্র নামে পরিচিত। রমযানে তারাবীহ্ ব্যতীত কোনো তাহাজ্জুদ নেই। কেননা, কোনো সহীহ বা দুর্বল বর্ণনা দ্বারা এটি সাব্যস্ত হয় নি যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসে রাত্রে দু’ধরনের সালাত আদায় করেছেন, একটি তারাবীহ্ এবং অপরটি তাহাজ্জুদ। অতএব, রমযান মাস ব্যতীত অন্যান্য মাসে যেটি তাহাজ্জুদ সেটিই রমযানে তারাবীহ্। এ মর্মে আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর হাদীসটি দলীল হিসেবে পেশ করা যায়। তিনি বলেন,
আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামসহ রমযান মাসে সাওম পালন করেছিলাম, তখন তিনি এ মাসের সাতটি রাত অবশিষ্ট থাকা পর্যন্ত কোন অংশ সালাতে দাঁড়ান নি। সে সময় (২৩ তারিখের রাত) তিনি আমাদের সাথে নিয়ে রাতের এক-তৃতীয়াংশ জাগ্রত ছিলেন। তারপর অবশিষ্ট ষষ্ঠ (২৪ তারিখের রাত) জাগ্রত ছিলেন না। অত:পর যখন অবশিষ্ট পঞ্চম রাত্রি (২৫ তারিখের রাত) এলো, তখন তিনি আমাদের নিয়ে রাত্রের অর্ধেক সময় পর্যন্ত জাগ্রত ছিলেন। তখন আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা কি এটাকে আরও বর্ধিত করতে পারি? [অর্থাৎ যদি রাত্রের অর্ধেকের চেয়ে অবশিষ্ট অংশও জাগ্রত থাকার জন্য অতিরিক্ত নির্ধারণ করা হতো তবে তা ভালো হতো। অথবা অর্থ হলো যদি আপনি আমাদের সাথে রাত্রের দীর্ঘ সময় জাগ্রত থাকতেন এবং আমাদের জন্য প্রতিদান বর্ধিত করে দেয়া হতো যা সালাত আদায়ের মাধ্যমে অর্জিত হতো।] তখন তিনি বললেন,
«إن الرجل إذا قام مع الإمام حتى ينصرف كتب له قيام ليلة»
‘‘কোন ব্যক্তি যখন ঈমামের সাথে সালাত আদায়ে শেষ পর্যন্ত দন্ডায়মান থাকে, তখন তার কিয়ামুল লাইল বা রাত্রি জাগরণ হয়ে যায়’’। [ইমাম আহমদ, মুসনাদ, (বৈরুত: মুয়াসসাসাতুর রিসালাহ, লেবানন, প্রথম সংস্করণ ১৯৯৪ খ্রীঃ) তাহকীক; শুয়াইব আল আরনাউত ও অন্যান্যরা, (৫/১৬৩) শায়খ শুয়াইব আল আরনাউত বলেন হাদীসটির সনদ মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ।] তারপর অবশিষ্ট চতুর্থ রাত্রিতেও (২৬ তারিখের রাত) তিনি জাগ্রত ছিলেন না। তারপর যখন অবশিষ্ট তৃতীয় রাত (২৭ তারিখের রাত) এলো, তখন তিনি আমাদের সাথে নিয়ে জাগ্রত রইলেন। এমনকি আমরা فلاح ‘ফালাহ’ শেষ হয়ে যওয়ার আশংকা করলাম। আমি জিজ্ঞাস করলাম, ফালাহ কি? জবাবে তিনি বললেন, সাহরী। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি এ রাত্রিতে তাঁর পরিবার পরিজন, কন্যাগণ ও স্ত্রীগণকেও জাগিয়ে দিতেন।
উপরোক্ত হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উল্লেখিত রাত্রিগুলোতে এ সালাত ব্যতীত অন্য কোন সালাত পড়েন নি। অথচ তাহাজ্জুদের সালাত তাঁর জন্য ওয়াজিব ছিল। যদি তারাবীহ্ এর সালাত তাহাজ্জুদের সালাতের ভিন্ন কোন সালাত হতো তবে অবশ্যই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে সালাত আদায় করতেন।
আনওয়ার শাহ্ কাশ্মিরী রাহেমাহুল্লাহ্ বলেন [শায়খ আনওয়ার শাহ কাশ্মিরী, ফয়জুল বারী শরহে সহীহ বুখারী ( বৈরুত: দারুল মারিফাহ্: লেবানন) (২/৪২০)।], “আমার নিকট গ্রহণযোগ্য হলো তারাবীহ্ ও রাত্রের সালাত এক সালাত। যদিও উভয়ের বৈশিষ্ট্যের ভিন্নতা রয়েছে যে, তারাবীহ্ এ নিরবিচ্ছিন্নতা থাকে না আবার জামা‘আতে আদায় করা হয়। কখনও রাত্রের প্রথমাংশে আদায় করা এবং অন্যভাবে সেহরী পর্যন্ত পৌছার ব্যাপারে তাহাজ্জুদ ব্যতিক্রম। কেননা তাহাজ্জুদ হলো শেষ রাত্রের সালাত।
আর বৈশিষ্ট্যের ভিন্নতার ফলে ভিন্ন প্রকার মনে করা আমার নিকট ভালো মনে হয় না। বরং এগুলো একই সালাত। যদি রাত্রের প্রথমাংশে পড়া হয় তবে তাকে তারাবীহ্ বলে, আর শেষে পড়লে তাহাজ্জুদ বলা হয়। বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন থাকা সত্বেও উভয় সালাতকে এক নামে নামকরণ করাটা বিদ‘আত হবে না। কেননা নামের পরিবর্তনে কোন সমস্যা নেই, কারণ উম্মত এতে ঐক্যমত পোষণ করেছে। আর দুই প্রকারের ব্যাখ্যা সাব্যস্ত হয়েছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বর্ণনা থেকে যে, তিনি তারাবীহ্র সালাত আদায়ের মাধ্যমে তাহাজ্জুদ আদায় করেছেন।”
এ বিষয়ে ওমর (রাঃ) এর একটি হাদীস প্রণিধানযোগ্য, তিনি বলেন,
«والتي ينامون عنها أفضل من التي يقومون»
‘‘আর যা থেকে তারা ঘুমিয়ে আছে (অর্থাৎ তাহাজ্জুদ) তা তার চেয়ে উত্তম যা তারা জাগ্রত থেকে আদায় করছে’’। [ইমাম বুখারী, জামে সহীহ, আল মতবু‘ মায়া‘ ফাতহিল বারি, ( কায়রো: দারু রাইয়্যান লিত্তুরাছ, তাহকীক; মুহিবুদ্দিন আল খতীব, নম্বর মুহাম্মদ ফুয়াদ আব্দুল বাকী, প্রথম সংস্করণ, ১৪০৭ হি. হাদীস নং ২০১০।] এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো রাতের শেষ অংশ। আর মানুষ জাগ্রত থাকত রাতের প্রথমাংশে। এ হিসেবে এসব সালাত সব এক। এখানে শুধুমাত্র শেষ রাত্রে জাগ্রত থাকাকে প্রথম রাতের চেয়ে অধিক মর্যাদা দেয়া হয়েছে।
আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামসহ রমযান মাসে সাওম পালন করেছিলাম, তখন তিনি এ মাসের সাতটি রাত অবশিষ্ট থাকা পর্যন্ত কোন অংশ সালাতে দাঁড়ান নি। সে সময় (২৩ তারিখের রাত) তিনি আমাদের সাথে নিয়ে রাতের এক-তৃতীয়াংশ জাগ্রত ছিলেন। তারপর অবশিষ্ট ষষ্ঠ (২৪ তারিখের রাত) জাগ্রত ছিলেন না। অত:পর যখন অবশিষ্ট পঞ্চম রাত্রি (২৫ তারিখের রাত) এলো, তখন তিনি আমাদের নিয়ে রাত্রের অর্ধেক সময় পর্যন্ত জাগ্রত ছিলেন। তখন আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা কি এটাকে আরও বর্ধিত করতে পারি? [অর্থাৎ যদি রাত্রের অর্ধেকের চেয়ে অবশিষ্ট অংশও জাগ্রত থাকার জন্য অতিরিক্ত নির্ধারণ করা হতো তবে তা ভালো হতো। অথবা অর্থ হলো যদি আপনি আমাদের সাথে রাত্রের দীর্ঘ সময় জাগ্রত থাকতেন এবং আমাদের জন্য প্রতিদান বর্ধিত করে দেয়া হতো যা সালাত আদায়ের মাধ্যমে অর্জিত হতো।] তখন তিনি বললেন,
«إن الرجل إذا قام مع الإمام حتى ينصرف كتب له قيام ليلة»
‘‘কোন ব্যক্তি যখন ঈমামের সাথে সালাত আদায়ে শেষ পর্যন্ত দন্ডায়মান থাকে, তখন তার কিয়ামুল লাইল বা রাত্রি জাগরণ হয়ে যায়’’। [ইমাম আহমদ, মুসনাদ, (বৈরুত: মুয়াসসাসাতুর রিসালাহ, লেবানন, প্রথম সংস্করণ ১৯৯৪ খ্রীঃ) তাহকীক; শুয়াইব আল আরনাউত ও অন্যান্যরা, (৫/১৬৩) শায়খ শুয়াইব আল আরনাউত বলেন হাদীসটির সনদ মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ।] তারপর অবশিষ্ট চতুর্থ রাত্রিতেও (২৬ তারিখের রাত) তিনি জাগ্রত ছিলেন না। তারপর যখন অবশিষ্ট তৃতীয় রাত (২৭ তারিখের রাত) এলো, তখন তিনি আমাদের সাথে নিয়ে জাগ্রত রইলেন। এমনকি আমরা فلاح ‘ফালাহ’ শেষ হয়ে যওয়ার আশংকা করলাম। আমি জিজ্ঞাস করলাম, ফালাহ কি? জবাবে তিনি বললেন, সাহরী। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি এ রাত্রিতে তাঁর পরিবার পরিজন, কন্যাগণ ও স্ত্রীগণকেও জাগিয়ে দিতেন।
উপরোক্ত হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উল্লেখিত রাত্রিগুলোতে এ সালাত ব্যতীত অন্য কোন সালাত পড়েন নি। অথচ তাহাজ্জুদের সালাত তাঁর জন্য ওয়াজিব ছিল। যদি তারাবীহ্ এর সালাত তাহাজ্জুদের সালাতের ভিন্ন কোন সালাত হতো তবে অবশ্যই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে সালাত আদায় করতেন।
আনওয়ার শাহ্ কাশ্মিরী রাহেমাহুল্লাহ্ বলেন [শায়খ আনওয়ার শাহ কাশ্মিরী, ফয়জুল বারী শরহে সহীহ বুখারী ( বৈরুত: দারুল মারিফাহ্: লেবানন) (২/৪২০)।], “আমার নিকট গ্রহণযোগ্য হলো তারাবীহ্ ও রাত্রের সালাত এক সালাত। যদিও উভয়ের বৈশিষ্ট্যের ভিন্নতা রয়েছে যে, তারাবীহ্ এ নিরবিচ্ছিন্নতা থাকে না আবার জামা‘আতে আদায় করা হয়। কখনও রাত্রের প্রথমাংশে আদায় করা এবং অন্যভাবে সেহরী পর্যন্ত পৌছার ব্যাপারে তাহাজ্জুদ ব্যতিক্রম। কেননা তাহাজ্জুদ হলো শেষ রাত্রের সালাত।
আর বৈশিষ্ট্যের ভিন্নতার ফলে ভিন্ন প্রকার মনে করা আমার নিকট ভালো মনে হয় না। বরং এগুলো একই সালাত। যদি রাত্রের প্রথমাংশে পড়া হয় তবে তাকে তারাবীহ্ বলে, আর শেষে পড়লে তাহাজ্জুদ বলা হয়। বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন থাকা সত্বেও উভয় সালাতকে এক নামে নামকরণ করাটা বিদ‘আত হবে না। কেননা নামের পরিবর্তনে কোন সমস্যা নেই, কারণ উম্মত এতে ঐক্যমত পোষণ করেছে। আর দুই প্রকারের ব্যাখ্যা সাব্যস্ত হয়েছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বর্ণনা থেকে যে, তিনি তারাবীহ্র সালাত আদায়ের মাধ্যমে তাহাজ্জুদ আদায় করেছেন।”
এ বিষয়ে ওমর (রাঃ) এর একটি হাদীস প্রণিধানযোগ্য, তিনি বলেন,
«والتي ينامون عنها أفضل من التي يقومون»
‘‘আর যা থেকে তারা ঘুমিয়ে আছে (অর্থাৎ তাহাজ্জুদ) তা তার চেয়ে উত্তম যা তারা জাগ্রত থেকে আদায় করছে’’। [ইমাম বুখারী, জামে সহীহ, আল মতবু‘ মায়া‘ ফাতহিল বারি, ( কায়রো: দারু রাইয়্যান লিত্তুরাছ, তাহকীক; মুহিবুদ্দিন আল খতীব, নম্বর মুহাম্মদ ফুয়াদ আব্দুল বাকী, প্রথম সংস্করণ, ১৪০৭ হি. হাদীস নং ২০১০।] এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো রাতের শেষ অংশ। আর মানুষ জাগ্রত থাকত রাতের প্রথমাংশে। এ হিসেবে এসব সালাত সব এক। এখানে শুধুমাত্র শেষ রাত্রে জাগ্রত থাকাকে প্রথম রাতের চেয়ে অধিক মর্যাদা দেয়া হয়েছে।
তারাবীহ্ এর সালাত সুন্নাত হওয়ার ব্যাপারে ফকীহগণ একমত পোষণ করেছেন। আর এটি হানাফীগণ, [. আল কাসানী, বাদায়েউস- সানায়ে‘ ফী তারতীবিশ শারায়ে‘ (বৈরুত: দারুল মারিফাহ) (১/৬২৩)।]হাম্বলীগণ, [. মুয়াফফিক উদ্দিন ইবন কুদামাহ, আল মুগনী (কায়রো, দারুল হিজর, দ্বিতীয় সংস্করণ ১৪১২ হি.) তাহকীক: আব্দুল্লাহ ইবন আবদুল মুহসিন তুর্কী ও আবদুল ফাত্তাহ মুহাম্মদ আল হালু (২/৬০১)।]শাফেয়ীগণ, [. ড. ওহাবাতুল যুহাইলী, আল ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু ( মিশর: দারুল ফিকর, তৃতীয় সংস্করণ, ১৪০৯ হি.) (২/৬৪,৬৫)।]কতিপয় মালেকীর [. আবুল ওলীদ মুহম্মদ ইবন আহমদ ইবন মুহম্মদ ইবন আহমদ ইবন রুশদ আল কুরতুবী, আল- আন্দালুসী আশ-শাহীর ইবন আল-হাফীদ, বিদায়াতুল মুজতাহেদ ওয়া নেহায়েতুল মুকতাসিদ ( মিশর, দারুস-সালাম, প্রথম সংস্করণ ১৪১৬ হি.) তাহকীক: ড. আব্দুল্লাহ আল-আবাদী (১/৪৭৩)।] নিকট সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। নারী -পুরষ নির্বিশেষে সকলের জন্য সুন্নাত। আর এটা প্রকাশ্য দ্বীনের নিদর্শন। [.আল-মাওসুয়াতুল ফিকহিয়্যা আল-কুয়েতিয়্যাহ ( ২৭/১০৩)।]
সালফে সালেহীন রমযান মাসে কিয়ামুল লাইলে ও বিতর সালাতের রাকা‘আত সংখ্যা সর্ম্পকে বিভিন্ন মতভেদ করেছেন। যেমন:
প্রথমত: তারাবীহ্ এর রাকা‘আত সংখ্যা আট। আর এটা অধিকাংশ মুহাদ্দিস ও কতিপয় প্রখ্যাত ফকীহদের মত।
দ্বিতীয়ত: তারাবীহ্ এর সালাত বিশ রাকা‘আত। এ মতের প্রবক্তা হলেন ঈমাম শাফেয়ী, আবু হানিফা ও আহমদ রাহেমাহুমুল্লাহ্। [. দেখুন, ইবন কুদামাহ আল মুগনী গ্রন্থে যা বর্ণনা করেছেন, (২/৬০৪)।]
তৃতীয়ত: তারাবীহ্ এর সালাত ছত্রিশ রাকা‘আত, এটি ইমাম মালেক (রহঃ) এর মত। [. দেখুন, প্রাগুক্ত।]
প্রথমত: তারাবীহ্ এর রাকা‘আত সংখ্যা আট। আর এটা অধিকাংশ মুহাদ্দিস ও কতিপয় প্রখ্যাত ফকীহদের মত।
দ্বিতীয়ত: তারাবীহ্ এর সালাত বিশ রাকা‘আত। এ মতের প্রবক্তা হলেন ঈমাম শাফেয়ী, আবু হানিফা ও আহমদ রাহেমাহুমুল্লাহ্। [. দেখুন, ইবন কুদামাহ আল মুগনী গ্রন্থে যা বর্ণনা করেছেন, (২/৬০৪)।]
তৃতীয়ত: তারাবীহ্ এর সালাত ছত্রিশ রাকা‘আত, এটি ইমাম মালেক (রহঃ) এর মত। [. দেখুন, প্রাগুক্ত।]
১. বুখারী ও মুসলিম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, ‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান ও অন্যান্য সময়ে এগার রাকা‘আতের বেশী সালাত পড়েননি’’। [. ইমাম বুখারী, সহীহ (৩/৩৩) হাদীস নং (১০৯৬), অনুরূপভাবে মুহম্মদ ইবন ইসহাক ইবন খুযাইমা, সহীহ ইবন খুযাইমা ( বৈরুত: আল-মাকতাবাতুল ইসলামী, ১৩৯০ হি.), তাহকীক: ড. মুহম্মদ মুস্তফা আল-আযামী, আল-আহাদীস মাযিলাহ বি আহকামিল আ‘যামী ওয়াল আলবানী আলাইহা (৩/৩৪১) হাদীস নং (১১৬৬)।]
২. যাবির ইবন্ আবদুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে রমযান মাসে আট রাকা‘আত তারাবীহ্র সালাত ও (বেজোড় সংখ্যায়) বিতিরের সালাত পড়তাম। অত:পর যখন আগামী দিন আমরা মসজিদে একত্রিত হলাম এবং আমরা আশা করেছিলাম তিনি (রাসূল) সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হবেন। অথচ সকাল হওয়া পর্যন্ত তিনি বের হননি। ফলে আমরা তার গৃহে প্রবেশ করলাম। তারপর আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমরা খুব সকাল সকাল মসজিদে একত্রিত হয়ে হয়েছিলাম এবং আমরা আশা করেছিলাম আপনি আমাদের সাথে সালাত আদায় করবেন। অতঃপর তিনি বললেন,
«إني خشيت أن يكتب عليكم»
‘‘নিশ্চয় আমি ভয় করেছিলাম যে, এটি তোমাদের উপর ফরয হয়ে যাবে’’। [সুলাইমান ইবন আইয়াব আবুল কাসিম আত-তিবরানী, আর-রাওযুদ-দানী, আল-মু‘জামু সাগীর, (বৈরুত: আল মাকতাবুল ইসলামী, ওমান, দারু ওমান, প্রথম সংস্করণ ১৪০৫ হি.), তাহকীক: মুহম্মদ শাকুর মাহমুদ আল-হাজ্ব আমরীর (১/১৯০), তার সনদ যেরূপ বলেছেন আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবন আহমদ ইবন উসমান আয-যাহাবী, মীযানুল ‘ইতেদাল ফী নাকদির রিযাল, তাহকীক: আলী মুহাম্মদ আল-বাজাওয়ী, ( বৈরুত: দারুল মা‘রিফাহ) (৩/৩১১)।]
৩. রাতের সালাত সংক্রান্ত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যেসব বর্ণনা পাওয়া যায় তাতে সাব্যস্ত হয়েছে যে, রাত্রে তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তের রাকা‘আত সালাত পড়তেন। এ বিষয়টি আরও শক্তিশালী হয়েছে বদরুদ্দীন ‘আইনী (রহ.) এর বর্ণনায়: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার বক্তব্য যে, নিশ্চয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশকে এমন প্রচেষ্টা চালাতেন যা তিনি অন্য সময় করতেন না। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সংখ্যা বাড়ানো ব্যতীত রাকা‘আত, সিজদা, কিয়াম, বৈঠক প্রভৃতির দীর্ঘতা। অত:পর ‘আইনী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাতের রাকা‘আত সংখ্যা সাব্যস্ত করতে সাহাবাদের নিকট হতে অনেক বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। সেসব বর্ণনা হতে সুস্পষ্ট হয় যে, তিনি আট রাকা‘আতের বেশী সালাত পড়তেন না, তবে বিতিরের রাকা‘আতে ইচ্ছামাফিক কম বেশী করতেন। [. আল-‘আইনী, বদরুদ্দীন আহমাদ: উমদাতুল কারী শারহে সহীহুল বুখারী,( বৈরুত: দারুল ফিকর) (৭/২০৪)।] এজন্য ইবনুল হুমাম [মুহাম্মদ ইবন আবদুল ওয়াহেদ, আল কামাল ইবনুল হুম্মাম: শরহে ফাতহুল কাদীর ( বৈরুত: লেবানন, দারু এহইয়াউত তুরাছিল আরাবী) (১/৩৩৪)।] বলেছেন, আট রাকা‘আত সুন্নাত, আর অবশিষ্টগুলো মুস্তাহাব। [. জেনে রাখা দরকার, নিশ্চয় মুস্তাহাব শরী‘আতের হুকুম। আমাদের জানা নেই মুস্তাহাব হওয়ার বিধানটি কোত্থেকে তিনি গ্রহণ করেছেন। খুব সম্ভব তিনি পরবর্তীতে উল্লেখিত যঈফ হাদীস থেকে এ বিধান গ্রহণ করেছেন।]
৪. ইমাম মালেক (রহ:) মুহাম্মদ ইবন্ ইউসুফ হতে, তিনি সায়েব ইবন ইয়াযিদ হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন: ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) উবাই ইবন কা‘ব ও তামীম আদ- দারী কে লোকজন সাথে নিয়ে এগার রাকা’আত সালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। বর্ণনাকারী বলেন, এ সময় সালাতে কারী মি’ঈন সূরাসমূহ [. অর্থাৎ এক শ আয়াতবিশিষ্ট সূরাসমূহ। দেখুন: শারহুন নববী ‘আলা মুসলিম, (দারু ইহয়া’ইত তুরাছ, বৈরূত, ১৩৯২ হি.) (৬/১০৭)।] তেলাওয়াত করত, আর আমরা দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকায় লাঠিতে ভর করতাম। আর আমরা বিরত হতাম না ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত।
আলোচ্য বর্ণনাটি মালেক (রহ.) স্বীয় গ্রন্থ ‘‘মুয়াত্তা’’ তে বর্ণনা করেছেন, আর তার অনুরূপ বর্ণনা করেছেন আবদুল আযীয ইবন মুহাম্মদ আদ দারাওয়ারদী সাঈদ ইবন মানছুরের নিকট এবং ইয়াহইয়া ইবন সাইদ আল কাত্তান আবু বকর ইবন আবি শাইবার নিকট। আর তাদের উভয়ে একই সূত্র তথা মুহাম্মদ ইবন ইউছুফ হতে বর্ণনা করেন। আর তিনি বলেন, এগার রাকা‘আত। [. দেখুন, নিমাওয়াই যা উল্লেখ করেছেন তাঁর আছারুস-সুনান গ্রন্থে, (মুসাওয়ারাহ, তা.বি পৃ. ২৫০)]
শায়খ মুহাম্মদ নাসিরুদ্দিন আলবানী বলেন, অনুরূপভাবে মালেক (রহ.) এর বর্ণনা মোতাবেক বর্ণনা করেছেন ইসমাইল ইবন উমাইয়্যাহ, উসামা ইবন যায়েদ, মুহাম্মদ উবন ইসহাক। যা নিশাপুরীর বর্ণনা করেছেন। অনুরূপভাবে ইসমাঈল ইবন জা‘ফর আল মাদানী ইবন খুযাইমার নিকট, সকল বর্ণনা মুহাম্মদ ইবন ইউসুফের সাথে সংশ্লিষ্ট রযেছে। [. শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী, রিসালাতু সালাতুত তারাবীহ (রিয়াদ: মাকতাবাতুল মা‘আরেফ লিন -নাশারে ওয়াত তাওযী‘, প্রথম সংস্করণ ১৪২১, পৃ. ৫৩।]
উপরোক্ত বর্ণনাগুলোর মধ্যে যা ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে এসেছে তা বিশুদ্ধতার শীর্ষে অবস্থান করছে। আর তাতেও এগার রাকা‘আতের বর্ণনা এসেছে।
২. যাবির ইবন্ আবদুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে রমযান মাসে আট রাকা‘আত তারাবীহ্র সালাত ও (বেজোড় সংখ্যায়) বিতিরের সালাত পড়তাম। অত:পর যখন আগামী দিন আমরা মসজিদে একত্রিত হলাম এবং আমরা আশা করেছিলাম তিনি (রাসূল) সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হবেন। অথচ সকাল হওয়া পর্যন্ত তিনি বের হননি। ফলে আমরা তার গৃহে প্রবেশ করলাম। তারপর আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমরা খুব সকাল সকাল মসজিদে একত্রিত হয়ে হয়েছিলাম এবং আমরা আশা করেছিলাম আপনি আমাদের সাথে সালাত আদায় করবেন। অতঃপর তিনি বললেন,
«إني خشيت أن يكتب عليكم»
‘‘নিশ্চয় আমি ভয় করেছিলাম যে, এটি তোমাদের উপর ফরয হয়ে যাবে’’। [সুলাইমান ইবন আইয়াব আবুল কাসিম আত-তিবরানী, আর-রাওযুদ-দানী, আল-মু‘জামু সাগীর, (বৈরুত: আল মাকতাবুল ইসলামী, ওমান, দারু ওমান, প্রথম সংস্করণ ১৪০৫ হি.), তাহকীক: মুহম্মদ শাকুর মাহমুদ আল-হাজ্ব আমরীর (১/১৯০), তার সনদ যেরূপ বলেছেন আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবন আহমদ ইবন উসমান আয-যাহাবী, মীযানুল ‘ইতেদাল ফী নাকদির রিযাল, তাহকীক: আলী মুহাম্মদ আল-বাজাওয়ী, ( বৈরুত: দারুল মা‘রিফাহ) (৩/৩১১)।]
৩. রাতের সালাত সংক্রান্ত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যেসব বর্ণনা পাওয়া যায় তাতে সাব্যস্ত হয়েছে যে, রাত্রে তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তের রাকা‘আত সালাত পড়তেন। এ বিষয়টি আরও শক্তিশালী হয়েছে বদরুদ্দীন ‘আইনী (রহ.) এর বর্ণনায়: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার বক্তব্য যে, নিশ্চয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশকে এমন প্রচেষ্টা চালাতেন যা তিনি অন্য সময় করতেন না। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সংখ্যা বাড়ানো ব্যতীত রাকা‘আত, সিজদা, কিয়াম, বৈঠক প্রভৃতির দীর্ঘতা। অত:পর ‘আইনী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাতের রাকা‘আত সংখ্যা সাব্যস্ত করতে সাহাবাদের নিকট হতে অনেক বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। সেসব বর্ণনা হতে সুস্পষ্ট হয় যে, তিনি আট রাকা‘আতের বেশী সালাত পড়তেন না, তবে বিতিরের রাকা‘আতে ইচ্ছামাফিক কম বেশী করতেন। [. আল-‘আইনী, বদরুদ্দীন আহমাদ: উমদাতুল কারী শারহে সহীহুল বুখারী,( বৈরুত: দারুল ফিকর) (৭/২০৪)।] এজন্য ইবনুল হুমাম [মুহাম্মদ ইবন আবদুল ওয়াহেদ, আল কামাল ইবনুল হুম্মাম: শরহে ফাতহুল কাদীর ( বৈরুত: লেবানন, দারু এহইয়াউত তুরাছিল আরাবী) (১/৩৩৪)।] বলেছেন, আট রাকা‘আত সুন্নাত, আর অবশিষ্টগুলো মুস্তাহাব। [. জেনে রাখা দরকার, নিশ্চয় মুস্তাহাব শরী‘আতের হুকুম। আমাদের জানা নেই মুস্তাহাব হওয়ার বিধানটি কোত্থেকে তিনি গ্রহণ করেছেন। খুব সম্ভব তিনি পরবর্তীতে উল্লেখিত যঈফ হাদীস থেকে এ বিধান গ্রহণ করেছেন।]
৪. ইমাম মালেক (রহ:) মুহাম্মদ ইবন্ ইউসুফ হতে, তিনি সায়েব ইবন ইয়াযিদ হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন: ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) উবাই ইবন কা‘ব ও তামীম আদ- দারী কে লোকজন সাথে নিয়ে এগার রাকা’আত সালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। বর্ণনাকারী বলেন, এ সময় সালাতে কারী মি’ঈন সূরাসমূহ [. অর্থাৎ এক শ আয়াতবিশিষ্ট সূরাসমূহ। দেখুন: শারহুন নববী ‘আলা মুসলিম, (দারু ইহয়া’ইত তুরাছ, বৈরূত, ১৩৯২ হি.) (৬/১০৭)।] তেলাওয়াত করত, আর আমরা দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকায় লাঠিতে ভর করতাম। আর আমরা বিরত হতাম না ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত।
আলোচ্য বর্ণনাটি মালেক (রহ.) স্বীয় গ্রন্থ ‘‘মুয়াত্তা’’ তে বর্ণনা করেছেন, আর তার অনুরূপ বর্ণনা করেছেন আবদুল আযীয ইবন মুহাম্মদ আদ দারাওয়ারদী সাঈদ ইবন মানছুরের নিকট এবং ইয়াহইয়া ইবন সাইদ আল কাত্তান আবু বকর ইবন আবি শাইবার নিকট। আর তাদের উভয়ে একই সূত্র তথা মুহাম্মদ ইবন ইউছুফ হতে বর্ণনা করেন। আর তিনি বলেন, এগার রাকা‘আত। [. দেখুন, নিমাওয়াই যা উল্লেখ করেছেন তাঁর আছারুস-সুনান গ্রন্থে, (মুসাওয়ারাহ, তা.বি পৃ. ২৫০)]
শায়খ মুহাম্মদ নাসিরুদ্দিন আলবানী বলেন, অনুরূপভাবে মালেক (রহ.) এর বর্ণনা মোতাবেক বর্ণনা করেছেন ইসমাইল ইবন উমাইয়্যাহ, উসামা ইবন যায়েদ, মুহাম্মদ উবন ইসহাক। যা নিশাপুরীর বর্ণনা করেছেন। অনুরূপভাবে ইসমাঈল ইবন জা‘ফর আল মাদানী ইবন খুযাইমার নিকট, সকল বর্ণনা মুহাম্মদ ইবন ইউসুফের সাথে সংশ্লিষ্ট রযেছে। [. শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী, রিসালাতু সালাতুত তারাবীহ (রিয়াদ: মাকতাবাতুল মা‘আরেফ লিন -নাশারে ওয়াত তাওযী‘, প্রথম সংস্করণ ১৪২১, পৃ. ৫৩।]
উপরোক্ত বর্ণনাগুলোর মধ্যে যা ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে এসেছে তা বিশুদ্ধতার শীর্ষে অবস্থান করছে। আর তাতেও এগার রাকা‘আতের বর্ণনা এসেছে।
ইবন আবি শাইবা তার মুসান্নাফে [. দারুত-তাজ, তাকদীম ওয়া যবত, কামাল ইউসুফ আল-হুত, প্রথম সংস্করণ ১৪০৯ হি.(বৈরুত: লেবানন) (২/৩৯৪)।] উল্লেখ করেছেন, আর তাবারানী তার মু‘জামে কাবীরে [. সুলাইমান ইবন আইয়াব আবুল কাসিম আত-তিবরানী, আল-মু‘জামুল-কাবীর (মু‘সেল, মাকতাবাতুল উলূম ওয়াল হেকাম, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৪০৪ হি. ১৯৮৩ খী্.) তাহকীক: হামদ ইবন আবদুল মাজীদ আস-সালাফী, ১১/৩৯৩)], সাগীরে, [(১/৪৪৪) দেখুন, মাজমাউয যাওয়ায়েদ (৩/১৭২)।] তার থেকে বায়হাকী তার সুনানে কুবরাতে, [মুসনাদু আবদ ইবন হামীদ ইবন্ নাসর আবু মুহাম্মদ আল কিসী, (২/৪৯৬)।] আবদ ইবন হুমাইদ ‘‘মুন্তাখাবে’’ [আবদ ইবন হামীদ ইবন নসর আবু মুহাম্মদ আল কিসী, আল মুন্তাখাব মিনাল মুসনাদ, মাকতাবাতুস সুন্নাহ (কায়রো, প্রথম সংস্করণ, ১৪০৮-১৯৮৮ খ্রি.) তাহকীক: সুবহী আল বাদরী আস্ সামরাই, মাহমুদ মুহাম্মদ খলীল আস-সাঈদী, পৃ. (২১৮)।] — সকলেই ইবরাহিম ইবন উসমান আবু শাইবা থেকে তিনি আল-হিকাম হতে, তিনি মুকসিম হতে, তিনি আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানে বিশ রাকা‘আত তারাবিহর সালাত ও বিতরের সালাত আদায় করতেন।
যাইলা‘ঈ বলেন, বর্ণনাটি ইমাম আবু বকর ইবন আবু শাইবার দাদা আবু শাইবা ইবরাহিম ইবন উসমানের কারণে মা‘লূল বা ত্রুটিযুক্ত। তার দুর্বলতার ব্যাপারে সকলে ঐক্যমত। এছাড়াও তার বর্ণিত হাদীসটি সহীহ হাদীসের বিপরীত যা আবু সালমাহ ইবন আবদুর রহমান হতে বর্ণিত, নিশ্চয় তিনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞেস করলে, তিনি তাঁর (পূর্বোল্লেখিত) হাদীস বর্ণনা করেন। [. আবদুল্লাহ ইবন ইউসুফ আবু মুহাম্মদ আল-হানাফী আয-যাইলী, নাসবুর রায়িয়া ফী তাখরীজে আহাদিসিল হিদায়াহ, (দারুল হাদীস, মিশর, ১৩৫৭ হি.) তাহকীক: মুহাম্মদ ইউসুফ বিন -নূরী (৩/১৭২)।]
এ হাদীসের সব বর্ণনার মূলভিত্তি হলেন, আবু শাইবাহ ইবরাহীম ইবন উসমান আল-আবাসী আল-কূফী। আলেমগণের ঐক্যমতের ভিত্তিতে তিনি দুর্বল বর্ণনাকারী। [. দেখুন, ইমাম বায়হাকী যা তার কুবরা গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, (২/৪৯৬) ইবনুল হুম্মাম ফী শরহে ফাতহুল কাদীর, (১/৩২৩), যাহাবী তার মীযানুল ই‘তিদালে (১/৪৭)।] ইমাম বায়হাকী ও তাবারানী আরও স্পষ্ট করে বলেছেন যে, এ হাদীসটি শুধুমাত্র আবু শাইবার সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম যাহাবী তাঁর মীযানুল ই‘তিদাল গ্রন্থে আবু শাইবাকে মুনকার বলেছেন। হাফিয ইবন হাজার আসকালানি যঈফ বলেছেন। আর অন্য কোনো সনদও তিনি পাননি। [. ফাতহুল বারী (৪/২৫৪)।]
যাইলা‘ঈ বলেন, বর্ণনাটি ইমাম আবু বকর ইবন আবু শাইবার দাদা আবু শাইবা ইবরাহিম ইবন উসমানের কারণে মা‘লূল বা ত্রুটিযুক্ত। তার দুর্বলতার ব্যাপারে সকলে ঐক্যমত। এছাড়াও তার বর্ণিত হাদীসটি সহীহ হাদীসের বিপরীত যা আবু সালমাহ ইবন আবদুর রহমান হতে বর্ণিত, নিশ্চয় তিনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞেস করলে, তিনি তাঁর (পূর্বোল্লেখিত) হাদীস বর্ণনা করেন। [. আবদুল্লাহ ইবন ইউসুফ আবু মুহাম্মদ আল-হানাফী আয-যাইলী, নাসবুর রায়িয়া ফী তাখরীজে আহাদিসিল হিদায়াহ, (দারুল হাদীস, মিশর, ১৩৫৭ হি.) তাহকীক: মুহাম্মদ ইউসুফ বিন -নূরী (৩/১৭২)।]
এ হাদীসের সব বর্ণনার মূলভিত্তি হলেন, আবু শাইবাহ ইবরাহীম ইবন উসমান আল-আবাসী আল-কূফী। আলেমগণের ঐক্যমতের ভিত্তিতে তিনি দুর্বল বর্ণনাকারী। [. দেখুন, ইমাম বায়হাকী যা তার কুবরা গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, (২/৪৯৬) ইবনুল হুম্মাম ফী শরহে ফাতহুল কাদীর, (১/৩২৩), যাহাবী তার মীযানুল ই‘তিদালে (১/৪৭)।] ইমাম বায়হাকী ও তাবারানী আরও স্পষ্ট করে বলেছেন যে, এ হাদীসটি শুধুমাত্র আবু শাইবার সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম যাহাবী তাঁর মীযানুল ই‘তিদাল গ্রন্থে আবু শাইবাকে মুনকার বলেছেন। হাফিয ইবন হাজার আসকালানি যঈফ বলেছেন। আর অন্য কোনো সনদও তিনি পাননি। [. ফাতহুল বারী (৪/২৫৪)।]
১. উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত:
আবদুর রাযযাক তাঁর মুসান্নাফে [. আবদুর রাযযাক, আবু বকর আবদুর রাজ্জাক ইবন হুমাম আস-সানআনী (বৈরুত: আল-মাকতাবাতুল ইসলামী, দ্বিতীয় সংস্করণ ১৪০৩ হি.) তাহকীক: হাবীবুর রহমান আল-আজাদী (৪/২৬০)।] দাউদ ইবন কায়স ও অন্যান্যরা মুহাম্মদ ইবন ইউসুফ হতে তিনি সায়েব ইবন ইয়াযিদ হতে বর্ণনা করেছেন যে, উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু রমযান মাসে মানুষকে উবাই ইবন কা‘ব ও তামীম আদ-দারীর নিকট একত্রিত করতেন। তারা একুশ রাকা‘আত সালাত পড়ত যাতে মি’ঈন (এক শ আয়াতবিশিষ্ট) সূরাগুলো তেলাওয়াত করত এবং ফজর উদিত হলে সবাইকে ছেড়ে দিত।
এই বর্ণনাটি আবদুর রাযযাকের একক বর্ণনা। তিনি দাউদ ইবন কায়স্ হতে, তিনি মুহাম্মদ ইবন ইউসুফ হতে বর্ণনা করেছেন। আর আব্দুর রাযযাক এ বর্ণনায় মুখতালেত। মুখতালাত বর্ণনাকারীর হুকুম হলো, ইখতেলাতের পূর্বে যাদের থেকে হাদীস গ্রহণ করা হয়েছে তা গ্রহণ করা। ইখতেলাতের পরে যাদের থেকে বর্ণিত হয়েছে তাদের বর্ণনা নেয়া যাবে না। অথবা বিষয়টি জটিল, ফলে ইখতেলাতের আগে বা পরে তা জানা যায় না। এখানে আব্দুর রাযযাকের মাস‘আলাটি তৃতীয় পর্যায়ের। বিশেষ করে নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীগণের যখন বিপরীত বর্ণনা করছে। কেননা আব্দুর রাযযাক এ বর্ণনাটি ইখতেলাতের পূর্বে না পরে বর্ণনা করেছেন সেটা জানা যায় না। অত:পর এ বর্ণনাটি মালেক (রহ:) মুহাম্মদ ইবন ইউসুফ হতে বর্ণনা করেছেন। যেমনটি পূর্বে অতিবাহিত হয়েছে। আর সেখানেও এগার রাকা‘আতের বিষয়টি সুস্পষ্ট এবং তার থেকে আব্দুর রাযযাকের বর্ণনা দাউদ ইবন কায়স হতে, আর তিনি মুহাম্মদ ইবন্ ইউসুফ হতে’’ এগার রাকা‘আতের বর্ণনা সুস্পষ্ট হয়েছে। কোনো সন্দেহ নেই যে, এখানে প্রথমোক্ত বর্ণনাটি সহীহ। কেননা আব্দুর রাযযাক মুখতালেত, আর তিনি বর্ণনা করেছেন দাউদ ইবন্ কায়স থেকে সেটি গ্রহণযোগ্য। (যখন ধারাবাহিক বর্ণনা পাওয়া যায়) তিনি বর্ণনা করেছেন মুহাম্মদ ইবন ইউসুফ থেকে। অথচ দাউদ ইবন কায়সের কোন ধারাবাহিকতা নেই। এ হিসেবে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে আবদুর রাযযাকের বর্ণিত ‘আছার’ কে মুনকার বলা সহীহ। যেহেতু আবদুর রাযযাক ও দাউদ ইবন কায়সের মধ্যে কে অধিক নির্ভরযোগ্য তা নিয়ে মালেক (রহঃ) মতবিরোধ করেছেন।
২. মুহাম্মদ ইবন নসর আল মারওয়াযী রাত্রি জাগরণ বা কিয়ামুল লাইল সম্পর্কে বর্ণনা করেন [. প্রাগুক্ত, পৃ. ১৫৭।], ইমাম বায়হাকী সুনানুল কুবরা গ্রন্থে ইয়াযিদ ইবন খাসীফাহ হতে এবং তিনি সায়েব ইবন্ ইয়াযিদ হতে এবং তিনি ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেছেন যে, রাত্রের সালাত বিশ রাকা‘আত। [. প্রাগুক্ত, (২/৪৯৬)।]
এ বর্ণনায় ইয়াযিদ ইবন খাসীফাহ একক বর্ণনাকারী তিনি সায়েব ইবন ইয়াযিদ হতে এবং তিনি ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে। আর এটি তারা যা বর্ণনা করেছেন সেটি নির্ভরযোগ্যতার দিক থেকে বিপরীতমুখী বর্ণনা রয়েছে। অত:এব বিরোধিতার কারণে বর্ণনায় দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। ইমাম আহমদ (রহঃ) ইয়াযিদ ইবন খাসীফাহ সম্পর্কে বলেছেন যে, তিনি মুনকারুল হাদীস। [. মীযানুল ই‘তিদাল, (৪/৪৩০)।] হাফেয ইবন হাজর আসকালানী ফতহুল বারী গ্রন্থের ভূমিকায় বলেন: ‘মুনকারুল হাদীস’ এ শব্দটি ইমাম আহমদ ঐ ব্যক্তির জন্য ব্যবহার করেছেন, যিনি হাদীসের সাথে খুব সীমিতভাবে সম্পৃক্ত বা অপরিচিত। তার অবস্থার সার্বিক বিশ্লেষণ মাধ্যমে এটি বুঝা যায়। আর ইমাম মালেক ও অন্যান্য আইম্মায়ে কিরামগণ ইবন খাসীফাহকে হুজ্জত মনে করেন। [মুকাদ্দামাতুল ফাতহুল বারী, পৃ. ৪৫৩।]
যেহেতু ইয়াযীদ ইবন খাসীফাহ এর বর্ণনা সহীহ হওয়ার দিক থেকে দুর্ভোদ্য ও অপ্রতুল। [. ইমাম নববী শরহে মুহাযযাব গ্রন্থে বিষয়টি আরো দৃঢ়তার সাথে উল্লেখ করেছেন। আল-মাকতাবাতুল ‘আলামিয়্যা, তাহকীক: মুহাম্মদ নাজীব আল- মুতি‘ঈ (৩/৫২৭)।] কেননা এটি নির্ভরযোগ্য বর্ণনার বিপরীত। কেননা ইবন খাসীফাহ ও মুহাম্মদ ইবন ইউসুফ উভয়ে নির্ভরযোগ্য এবং তারা সায়েব ইবন ইয়াযিদ হতে বর্ণনা করেছেন। প্রথমে তিনি বলেছেন একুশ রাকা‘আত, আর দ্বিতীয়বার এগার রাকা‘আত। ফলে দ্বিতীয় মতটি অগ্রাধিকার পাবে। এখানে দুটি দিক রয়েছে। যেমন:
প্রথম: কেননা তিনি তার সাথীর চেয়ে বেশী নির্ভরযোগ্য। এজন্য হাফেয ইবন হাজর ইয়াযিদ ইবন খাসীফাহ এর গুণ বর্ণনায় বলেছেন সিকাহ বা নির্ভরযোগ্য। আর মুহাম্মদ ইবন ইউসুফের শানে বলেছেন: নির্ভরযোগ্য প্রমাণিত বা সাব্যস্ত হয়েছে।
দ্বিতীয়: অনুরূপভাবে মুহাম্মদ ইবন ইউসুফ সায়েব এর বোনের ছেলে। আর তিনি তার মামার হাদীস সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞাত।
মোটকথা: উপরের বর্ণনাটি ইয়যিদ ইবন খাসীফাহ ও মুহাম্মদ ইবন ইউসুফের মতবিরোধের মূল বর্ণনা। আর আলিমগণ ইয়াযিদ ইবন খাসীফাহকে যঈফ বলেননি। বরং তারা মুহাম্মদ ইবন ইউসুফের বর্ণনাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।
৩- ইমাম মালেক (রহ) তাঁর মুয়াত্তা গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন; [. মালেক, মুয়াত্তা, (১/১১৫)।] ইয়াযিদ ইবন রুমান হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ওমর ইবনুল খাত্তাবের যুগে মানুষ তেইশ রাকা‘আত সালাত আদায় করত। আলোচ্য বর্ণনাটি মুনকাতি‘ বা বিচ্ছিন্ন সনদে; কেননা ইয়াযিদ ইবন রুমান ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু কে পাননি। [. দেখুন,ইমাম যাইলীঈ , নাসবুর রায়িয়াহ, (২/১৫৪); উমদাতুল কারী, আঈনী (১১/১২৬)।]
৪- ইবন আবু শাইবাহ ওকী‘ হতে, তিনি মালেক হতে তিনি ইয়াহইয়া ইবন সাঈদ হতে বর্ণনা করেছেন যে, ‘ওমর ইবনুল খাত্তাব এক ব্যক্তিকে বিশ রাকা‘আত সালাত পড়তে নির্দেশ দিয়েছেন। [. মুসান্নাফে ইবন আবি শাইবা, (২/৩৯৩)। (বৈরুত: দারুল ফিকর, প্রথম সংস্করণ ১৪০৪-১৯৮৪ খী.) (১১/২২৩)।] এ বর্ণনাটিও বিচ্ছিন্ন বর্ণনা, কেননা ইয়াহইয়া ইবন সাইদ ওমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু কে পাননি। ইবন মাদিনী বলেন: আমার জানা নেই তিনি আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু ব্যতীত অন্য কোন সাহাবী থেকে শুনেছেন কি না। [. আহমদ ইবন আলী ইবন হাজার আল-‘আসকালানী, তাহযীবুত তাহযীব, ( বৈরুত: দারুল ফিকর, প্রথম সংস্করণ ১৪০৪-১৯৮৪ খী.) (১১/২২৩)।]
আবদুর রাযযাক তাঁর মুসান্নাফে [. আবদুর রাযযাক, আবু বকর আবদুর রাজ্জাক ইবন হুমাম আস-সানআনী (বৈরুত: আল-মাকতাবাতুল ইসলামী, দ্বিতীয় সংস্করণ ১৪০৩ হি.) তাহকীক: হাবীবুর রহমান আল-আজাদী (৪/২৬০)।] দাউদ ইবন কায়স ও অন্যান্যরা মুহাম্মদ ইবন ইউসুফ হতে তিনি সায়েব ইবন ইয়াযিদ হতে বর্ণনা করেছেন যে, উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু রমযান মাসে মানুষকে উবাই ইবন কা‘ব ও তামীম আদ-দারীর নিকট একত্রিত করতেন। তারা একুশ রাকা‘আত সালাত পড়ত যাতে মি’ঈন (এক শ আয়াতবিশিষ্ট) সূরাগুলো তেলাওয়াত করত এবং ফজর উদিত হলে সবাইকে ছেড়ে দিত।
এই বর্ণনাটি আবদুর রাযযাকের একক বর্ণনা। তিনি দাউদ ইবন কায়স্ হতে, তিনি মুহাম্মদ ইবন ইউসুফ হতে বর্ণনা করেছেন। আর আব্দুর রাযযাক এ বর্ণনায় মুখতালেত। মুখতালাত বর্ণনাকারীর হুকুম হলো, ইখতেলাতের পূর্বে যাদের থেকে হাদীস গ্রহণ করা হয়েছে তা গ্রহণ করা। ইখতেলাতের পরে যাদের থেকে বর্ণিত হয়েছে তাদের বর্ণনা নেয়া যাবে না। অথবা বিষয়টি জটিল, ফলে ইখতেলাতের আগে বা পরে তা জানা যায় না। এখানে আব্দুর রাযযাকের মাস‘আলাটি তৃতীয় পর্যায়ের। বিশেষ করে নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীগণের যখন বিপরীত বর্ণনা করছে। কেননা আব্দুর রাযযাক এ বর্ণনাটি ইখতেলাতের পূর্বে না পরে বর্ণনা করেছেন সেটা জানা যায় না। অত:পর এ বর্ণনাটি মালেক (রহ:) মুহাম্মদ ইবন ইউসুফ হতে বর্ণনা করেছেন। যেমনটি পূর্বে অতিবাহিত হয়েছে। আর সেখানেও এগার রাকা‘আতের বিষয়টি সুস্পষ্ট এবং তার থেকে আব্দুর রাযযাকের বর্ণনা দাউদ ইবন কায়স হতে, আর তিনি মুহাম্মদ ইবন্ ইউসুফ হতে’’ এগার রাকা‘আতের বর্ণনা সুস্পষ্ট হয়েছে। কোনো সন্দেহ নেই যে, এখানে প্রথমোক্ত বর্ণনাটি সহীহ। কেননা আব্দুর রাযযাক মুখতালেত, আর তিনি বর্ণনা করেছেন দাউদ ইবন্ কায়স থেকে সেটি গ্রহণযোগ্য। (যখন ধারাবাহিক বর্ণনা পাওয়া যায়) তিনি বর্ণনা করেছেন মুহাম্মদ ইবন ইউসুফ থেকে। অথচ দাউদ ইবন কায়সের কোন ধারাবাহিকতা নেই। এ হিসেবে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে আবদুর রাযযাকের বর্ণিত ‘আছার’ কে মুনকার বলা সহীহ। যেহেতু আবদুর রাযযাক ও দাউদ ইবন কায়সের মধ্যে কে অধিক নির্ভরযোগ্য তা নিয়ে মালেক (রহঃ) মতবিরোধ করেছেন।
২. মুহাম্মদ ইবন নসর আল মারওয়াযী রাত্রি জাগরণ বা কিয়ামুল লাইল সম্পর্কে বর্ণনা করেন [. প্রাগুক্ত, পৃ. ১৫৭।], ইমাম বায়হাকী সুনানুল কুবরা গ্রন্থে ইয়াযিদ ইবন খাসীফাহ হতে এবং তিনি সায়েব ইবন্ ইয়াযিদ হতে এবং তিনি ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেছেন যে, রাত্রের সালাত বিশ রাকা‘আত। [. প্রাগুক্ত, (২/৪৯৬)।]
এ বর্ণনায় ইয়াযিদ ইবন খাসীফাহ একক বর্ণনাকারী তিনি সায়েব ইবন ইয়াযিদ হতে এবং তিনি ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে। আর এটি তারা যা বর্ণনা করেছেন সেটি নির্ভরযোগ্যতার দিক থেকে বিপরীতমুখী বর্ণনা রয়েছে। অত:এব বিরোধিতার কারণে বর্ণনায় দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। ইমাম আহমদ (রহঃ) ইয়াযিদ ইবন খাসীফাহ সম্পর্কে বলেছেন যে, তিনি মুনকারুল হাদীস। [. মীযানুল ই‘তিদাল, (৪/৪৩০)।] হাফেয ইবন হাজর আসকালানী ফতহুল বারী গ্রন্থের ভূমিকায় বলেন: ‘মুনকারুল হাদীস’ এ শব্দটি ইমাম আহমদ ঐ ব্যক্তির জন্য ব্যবহার করেছেন, যিনি হাদীসের সাথে খুব সীমিতভাবে সম্পৃক্ত বা অপরিচিত। তার অবস্থার সার্বিক বিশ্লেষণ মাধ্যমে এটি বুঝা যায়। আর ইমাম মালেক ও অন্যান্য আইম্মায়ে কিরামগণ ইবন খাসীফাহকে হুজ্জত মনে করেন। [মুকাদ্দামাতুল ফাতহুল বারী, পৃ. ৪৫৩।]
যেহেতু ইয়াযীদ ইবন খাসীফাহ এর বর্ণনা সহীহ হওয়ার দিক থেকে দুর্ভোদ্য ও অপ্রতুল। [. ইমাম নববী শরহে মুহাযযাব গ্রন্থে বিষয়টি আরো দৃঢ়তার সাথে উল্লেখ করেছেন। আল-মাকতাবাতুল ‘আলামিয়্যা, তাহকীক: মুহাম্মদ নাজীব আল- মুতি‘ঈ (৩/৫২৭)।] কেননা এটি নির্ভরযোগ্য বর্ণনার বিপরীত। কেননা ইবন খাসীফাহ ও মুহাম্মদ ইবন ইউসুফ উভয়ে নির্ভরযোগ্য এবং তারা সায়েব ইবন ইয়াযিদ হতে বর্ণনা করেছেন। প্রথমে তিনি বলেছেন একুশ রাকা‘আত, আর দ্বিতীয়বার এগার রাকা‘আত। ফলে দ্বিতীয় মতটি অগ্রাধিকার পাবে। এখানে দুটি দিক রয়েছে। যেমন:
প্রথম: কেননা তিনি তার সাথীর চেয়ে বেশী নির্ভরযোগ্য। এজন্য হাফেয ইবন হাজর ইয়াযিদ ইবন খাসীফাহ এর গুণ বর্ণনায় বলেছেন সিকাহ বা নির্ভরযোগ্য। আর মুহাম্মদ ইবন ইউসুফের শানে বলেছেন: নির্ভরযোগ্য প্রমাণিত বা সাব্যস্ত হয়েছে।
দ্বিতীয়: অনুরূপভাবে মুহাম্মদ ইবন ইউসুফ সায়েব এর বোনের ছেলে। আর তিনি তার মামার হাদীস সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞাত।
মোটকথা: উপরের বর্ণনাটি ইয়যিদ ইবন খাসীফাহ ও মুহাম্মদ ইবন ইউসুফের মতবিরোধের মূল বর্ণনা। আর আলিমগণ ইয়াযিদ ইবন খাসীফাহকে যঈফ বলেননি। বরং তারা মুহাম্মদ ইবন ইউসুফের বর্ণনাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।
৩- ইমাম মালেক (রহ) তাঁর মুয়াত্তা গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন; [. মালেক, মুয়াত্তা, (১/১১৫)।] ইয়াযিদ ইবন রুমান হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ওমর ইবনুল খাত্তাবের যুগে মানুষ তেইশ রাকা‘আত সালাত আদায় করত। আলোচ্য বর্ণনাটি মুনকাতি‘ বা বিচ্ছিন্ন সনদে; কেননা ইয়াযিদ ইবন রুমান ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু কে পাননি। [. দেখুন,ইমাম যাইলীঈ , নাসবুর রায়িয়াহ, (২/১৫৪); উমদাতুল কারী, আঈনী (১১/১২৬)।]
৪- ইবন আবু শাইবাহ ওকী‘ হতে, তিনি মালেক হতে তিনি ইয়াহইয়া ইবন সাঈদ হতে বর্ণনা করেছেন যে, ‘ওমর ইবনুল খাত্তাব এক ব্যক্তিকে বিশ রাকা‘আত সালাত পড়তে নির্দেশ দিয়েছেন। [. মুসান্নাফে ইবন আবি শাইবা, (২/৩৯৩)। (বৈরুত: দারুল ফিকর, প্রথম সংস্করণ ১৪০৪-১৯৮৪ খী.) (১১/২২৩)।] এ বর্ণনাটিও বিচ্ছিন্ন বর্ণনা, কেননা ইয়াহইয়া ইবন সাইদ ওমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু কে পাননি। ইবন মাদিনী বলেন: আমার জানা নেই তিনি আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু ব্যতীত অন্য কোন সাহাবী থেকে শুনেছেন কি না। [. আহমদ ইবন আলী ইবন হাজার আল-‘আসকালানী, তাহযীবুত তাহযীব, ( বৈরুত: দারুল ফিকর, প্রথম সংস্করণ ১৪০৪-১৯৮৪ খী.) (১১/২২৩)।]
৫- ইবন আবি শাইবাহ আব্দুল আযীয ইবন রুফাঈ‘ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন, রমযান মাসে মদিনাতে উবাই ইবন কা‘ব বিশ বাকা‘আত সালাত আদায় করতেন এবং তিন রাকা‘আত বিতির পড়তেন। [. ইবন আবি শাইবা, মুসান্নাফ (২/৩৯৩)।]
এ বর্ণনাটিও মুনকাতি‘ বা বিচ্ছিন্ন। কেননা আব্দুল আযীয উবাই ইবন কা‘ব রাদিয়াল্লাহু আনহু কে পাননি, তিনি রাদিয়াল্লাহু আনহু ১৯ হিজরীতে অথবা ৩২ হিজরীতে মারা গিয়েছেন, আর আব্দুল আযীয মারা গেছে ১৩০ হিজরীতে। তার জীবনীতে এমন কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না যে তিনি উবাই ইবন কা‘ব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেছেন। অথচ তিনি শুধুমাত্র ছোট সাহাবী ও বড় বড় তাবেঈন থেকে বর্ণনা করেছেন। [আহমদ ইবন হাজার আল-আসকালানী, তাহযীবুত তাহযীব (হলব, দারুর রাশীদ, সিরিয়া, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৪১১ হি.) অনুবাদ নং (৪০৯৫) এ হিসেবে একে চর্তুথ সংস্করণ হিসেবে গণ্য করা হয়।]
এ বর্ণনাটিও মুনকাতি‘ বা বিচ্ছিন্ন। কেননা আব্দুল আযীয উবাই ইবন কা‘ব রাদিয়াল্লাহু আনহু কে পাননি, তিনি রাদিয়াল্লাহু আনহু ১৯ হিজরীতে অথবা ৩২ হিজরীতে মারা গিয়েছেন, আর আব্দুল আযীয মারা গেছে ১৩০ হিজরীতে। তার জীবনীতে এমন কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না যে তিনি উবাই ইবন কা‘ব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেছেন। অথচ তিনি শুধুমাত্র ছোট সাহাবী ও বড় বড় তাবেঈন থেকে বর্ণনা করেছেন। [আহমদ ইবন হাজার আল-আসকালানী, তাহযীবুত তাহযীব (হলব, দারুর রাশীদ, সিরিয়া, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৪১১ হি.) অনুবাদ নং (৪০৯৫) এ হিসেবে একে চর্তুথ সংস্করণ হিসেবে গণ্য করা হয়।]
৬- মুহাম্মদ ইবন নসর আল-মারওয়াযী হতে কিয়ামুল লাইল সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, আ‘মাশ বলেন, ইবন মাসউদ বিশ রাকা‘আত তারাবীহ্ পড়তেন এবং তিন রাকা‘আত বিতির সালাত পড়তেন। [. দেখুন, মুখতাসারু কিয়ামিল লাইল, পৃ. ১৪৮।]
আলোচ্য বর্ণনাটিও মুনকাতি‘ বা বিচ্ছিন্ন। কেননা, নিশ্চয় আ‘মাশ (রহ.) ইবন মাসউদ কে পাননি। [. দেখুন, তাহযীবুত তাহযীব, (৪/১৯৫)।]
আলোচ্য বর্ণনাটিও মুনকাতি‘ বা বিচ্ছিন্ন। কেননা, নিশ্চয় আ‘মাশ (রহ.) ইবন মাসউদ কে পাননি। [. দেখুন, তাহযীবুত তাহযীব, (৪/১৯৫)।]
৭- ইমাম বায়হাকী তার সুনানে কুবরা গ্রন্থে আবুল হাসনা হতে বর্ণনা করেছেন যে, ‘আলী ইবন আবু তালেব রাদিয়াল্লাহু আনহু মানুষকে পাঁচ বার বিশ্রামের সাথে বিশ রাকা‘আত তারাবীর সালাত পড়তে নির্দেশ দিয়েছেন। [. বায়হাকী, সুনানুল কুবরা, (২/১৯৭)।]
আলোচ্য বর্ণনাটি যঈফ বা দুর্বল। কেননা আবুল হাসনা একজন অপরিচিত ব্যক্তি। [. ইবন হাজার, তাকরীব নং ৮০৫৩, অপরিচিত, সাহাবী, মীযানুল ই‘তিদাল (৪/৫১৫) নং ১০১০৬।]
৮- ইমাম বায়হাকী অন্য আরেকটি বর্ণনায় হাম্মাদ ইবন শুয়াইব হতে এবং তিনি আতা ইবন আস-সায়েব হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি আব্দুর রহমান আস সুলামী হতে, তিনি আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেন যে, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু রমযান মাসে কারীদেরকে তার কাছে ডেকে পাঠালেন, তারপর তাদের মধ্যে হতে একজনকে বিশ রাকা‘আত তারাবীহ্র সালাত মানুষদের পড়াতে নিদের্শ দিলেন। আর তিনি (আলী রা. স্বয়ং) লোকদের সঙ্গে বিতির সালাত আদায় করতেন।
এ বর্ণনাটি দুর্বল বা যঈফ। কেননা, এখানে হাম্মাদ ইবন শু‘য়াঈব দুর্বল রাবী। [. ইবন মঈন ও অন্যান্যরা এটাকে যঈফ বলেছেন। দেখুন: আব্দুর রহমান ইবন আবি হাতেম মুহম্মাদ ইবন ইদ্রিস আবু মুহম্মদ আর-রাযী আত-তামীমী,আল-জারহা ওয়াত তা‘দীল,(বৈরুত: দারু এহইয়াউত তুরাছিল আরাবী, প্রথম সংস্করণ ১৯৫২ খী.)১/১/১৪২); ইমাম বুখারী, তারীখুল কাবীর ( বৈরুত: দারুল ফিকর) তাহকীক: আস-সাইয়্যেদ হাশেম নদভী (২/১/৫২).]
৯- ইমাম বায়হাকী আরও বলেন, [. আস-সুনান আল-কুবরা,(২/৪৯৬)।] আমাদের নিকট শাতীর ইবন শাকল বর্ণনা করেছেন। আর তিনি আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সঙ্গী ছিলেন। নিশ্চয় তিনি রমযান মাসে বিশ রাকা‘আত তারাবীহ্ ও তিন রাকা‘আত বিতিরের ইমামতি করতেন।
আলোচ্য বর্ণনাটি যঈফ বা দুর্বল। কেননা আবুল হাসনা একজন অপরিচিত ব্যক্তি। [. ইবন হাজার, তাকরীব নং ৮০৫৩, অপরিচিত, সাহাবী, মীযানুল ই‘তিদাল (৪/৫১৫) নং ১০১০৬।]
৮- ইমাম বায়হাকী অন্য আরেকটি বর্ণনায় হাম্মাদ ইবন শুয়াইব হতে এবং তিনি আতা ইবন আস-সায়েব হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি আব্দুর রহমান আস সুলামী হতে, তিনি আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেন যে, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু রমযান মাসে কারীদেরকে তার কাছে ডেকে পাঠালেন, তারপর তাদের মধ্যে হতে একজনকে বিশ রাকা‘আত তারাবীহ্র সালাত মানুষদের পড়াতে নিদের্শ দিলেন। আর তিনি (আলী রা. স্বয়ং) লোকদের সঙ্গে বিতির সালাত আদায় করতেন।
এ বর্ণনাটি দুর্বল বা যঈফ। কেননা, এখানে হাম্মাদ ইবন শু‘য়াঈব দুর্বল রাবী। [. ইবন মঈন ও অন্যান্যরা এটাকে যঈফ বলেছেন। দেখুন: আব্দুর রহমান ইবন আবি হাতেম মুহম্মাদ ইবন ইদ্রিস আবু মুহম্মদ আর-রাযী আত-তামীমী,আল-জারহা ওয়াত তা‘দীল,(বৈরুত: দারু এহইয়াউত তুরাছিল আরাবী, প্রথম সংস্করণ ১৯৫২ খী.)১/১/১৪২); ইমাম বুখারী, তারীখুল কাবীর ( বৈরুত: দারুল ফিকর) তাহকীক: আস-সাইয়্যেদ হাশেম নদভী (২/১/৫২).]
৯- ইমাম বায়হাকী আরও বলেন, [. আস-সুনান আল-কুবরা,(২/৪৯৬)।] আমাদের নিকট শাতীর ইবন শাকল বর্ণনা করেছেন। আর তিনি আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সঙ্গী ছিলেন। নিশ্চয় তিনি রমযান মাসে বিশ রাকা‘আত তারাবীহ্ ও তিন রাকা‘আত বিতিরের ইমামতি করতেন।
১০- বায়হাকী হতে বর্ণিত তিনি তার সনদে বলেন [. প্রাগুক্ত।], আমার নিকট আবু যাকারিয়া ইবন আবু ইসহাক সংবাদ দিয়েছেন, তার নিকট আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবন ইয়াকুব খবর দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের নিকট মুহাম্মদ ইবন আব্দুল ওয়াহহাব বর্ণনা করেছেন, তাকে জা‘ফর ইবন আউন, এবং তাকে আবুল খুসাইব এ মর্মে সংবাদ দিয়েছেন যে, তিনি বলেন, রমযান মাসে সুয়াইদ ইবন গাফলাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু আমাদের সালাতে ইমামতি করতেন এবং তিনি পাঁচ বিশ্রামে বিশ রাকা‘আত সালাত আদায় করতেন।
এ হচ্ছে রমযানে কিয়ামুল লাইল হিসেবে বিশ রাকা‘আত তারাবীহ্ সালাতকে সুস্পষ্ট প্রমাণ করার ক্ষেত্রে মৌলিক বর্ণনা। কিন্তু বর্ণানাকারীগণের জীবনী পাঠে জানা যায় যে, তাদের কেউ কেউ মুনকার, আবার কারো বর্ণনা যঈফ, কেউ কেউ মুনকাতি‘, তবে অধিক সংখ্যক সাহাবীর বর্ণনা হওয়ায় বুঝা যায় যে, এ বর্ণনাটির একটি মৌলিকত্ব রয়েছে। আর এটাও জানা যায় যে, তাদের নিকট বিশ রাকা‘আত সালাত প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল।
অতঃপর উপর্যুক্ত বক্তব্য প্রদানকারীগণ আরও দলীল হিসেবে যেটি উপস্থাপন করেন তা হলো এ সকল ‘আছার’ এর অনুসরণে হারামাইন শরীফাইন তথা মক্কা-মদিনা সুদীর্ঘকাল পর্যন্ত বিশ রাক‘আত তারাবীহ্ এর সালাত আদায় করে আসছেন। [. আতীয়া মুহম্মদ সালেম, কিতাবুল মাতে‘, আত-তারাবীহ আকছার মিন আলফে আম মাকতাবাতুত দার, মদীনা মুনাওয়ারাহ।]
এ হচ্ছে রমযানে কিয়ামুল লাইল হিসেবে বিশ রাকা‘আত তারাবীহ্ সালাতকে সুস্পষ্ট প্রমাণ করার ক্ষেত্রে মৌলিক বর্ণনা। কিন্তু বর্ণানাকারীগণের জীবনী পাঠে জানা যায় যে, তাদের কেউ কেউ মুনকার, আবার কারো বর্ণনা যঈফ, কেউ কেউ মুনকাতি‘, তবে অধিক সংখ্যক সাহাবীর বর্ণনা হওয়ায় বুঝা যায় যে, এ বর্ণনাটির একটি মৌলিকত্ব রয়েছে। আর এটাও জানা যায় যে, তাদের নিকট বিশ রাকা‘আত সালাত প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল।
অতঃপর উপর্যুক্ত বক্তব্য প্রদানকারীগণ আরও দলীল হিসেবে যেটি উপস্থাপন করেন তা হলো এ সকল ‘আছার’ এর অনুসরণে হারামাইন শরীফাইন তথা মক্কা-মদিনা সুদীর্ঘকাল পর্যন্ত বিশ রাক‘আত তারাবীহ্ এর সালাত আদায় করে আসছেন। [. আতীয়া মুহম্মদ সালেম, কিতাবুল মাতে‘, আত-তারাবীহ আকছার মিন আলফে আম মাকতাবাতুত দার, মদীনা মুনাওয়ারাহ।]
উল্লেখ করা হয়েছে যে, মদিনাবাসীগণ এমনটি করে থাকেন। অর্থাৎ তারা ছত্রিশ রাকা‘আত তারাবীহ্ সালাত পড়েন। কারণ তারা জেনেছেন যে, মক্কাবাসীগণ প্রত্যেক বিশ্রামের সময় কা‘বার এক তাওয়াফ করে এবং দুই রাকা‘আত সালাত আদায় করেন। তবে পঞ্চমবার বিশ্রামের পর আর তাওয়াফ করা হয় না। ফলে মদিনাবাসীগণ তাদের অনুরুপ হতে প্রত্যেক তাওয়াফের স্থলে চার রাকা‘আত সালাত পড়তেন। এ হিসেবে তারাবীহ্ এর সালাতের রাকা‘আতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ছ‘ত্রিশ রাকা‘আতে। [. শারহুল মুহাযযাব (৩/৫২৭)।]
মুহাম্মদ ইবন নসর দাউদ ইবন কায়সের বরাতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন, আবান ইবন উসমান ও ওমর ইবন আব্দুল আযীযের শাসনকালে মদিনায় আমি মানুষদেরকে ছত্রিশ রাকা‘আত তারাবীহ্র সালাত আদায় করতে দেখেছি। আর তারা তিন রাকা‘আত বিতির পড়তেন। [. মুখতাসারু কিয়ামিল লাইল, পৃ. ১৪৯।]
ইমাম মালেক (রহঃ) বলেন, আমাদের নিকট এটি অনেক প্রাচীন কাল থেকেই চলে আসছে।
মুহাম্মদ ইবন নসর দাউদ ইবন কায়সের বরাতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন, আবান ইবন উসমান ও ওমর ইবন আব্দুল আযীযের শাসনকালে মদিনায় আমি মানুষদেরকে ছত্রিশ রাকা‘আত তারাবীহ্র সালাত আদায় করতে দেখেছি। আর তারা তিন রাকা‘আত বিতির পড়তেন। [. মুখতাসারু কিয়ামিল লাইল, পৃ. ১৪৯।]
ইমাম মালেক (রহঃ) বলেন, আমাদের নিকট এটি অনেক প্রাচীন কাল থেকেই চলে আসছে।
তারাবীহ্ এর রাকা‘আতের ব্যাপারে অধিক সংখ্যা যা বর্ণিত হয়েছে, তা হচ্ছে, বিতিরসহ তারাবীহ্র সালাত এক চল্লিশ রাকা‘আত।
ইবন আবি শাইবাহ হাসান ইবন উবায়দিল্লাহ হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আব্দুর রহমান ইবনুল আসওয়াদ আমাদের সাথে রমযান মাসে চল্লিশ রাকা‘আত তারাবীহ্ এবং সাত রাকা‘আত বিতির সালাত পড়েছেন। [. মুসান্নাফ,ইবন আবি শাইবা, (২/১৬৩) নং ৭৬৮৭।]
ইবন আব্দুল বার (রহ.) আসওয়াদ ইবন ইয়াযীদ হতে বর্ণনা করেছেন চল্লিশ রাকা‘আত তারাবীহ্ ও সাত রাকা‘আত বিতির। [. আবু ওমর ইউসুফ ইবন আব্দুল্লাহ ইবন আব্দুল বির আন নামিরী,আল ইস্তেযকার (বৈরুত:দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ,প্রথম সংস্করণ,১৪২১হি.-২০০০খী.)তাহকীক সালেম মুহাম্মদ আতা,মুহাম্মদ আল মুয়াওয়্যায(২/৭০)।]
নাফে‘ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মানুষকে (৩৯) উনচল্লিশ রাকা‘আত সালাত পড়তে দেখেছি [.প্রাগুক্ত,]। তন্মধ্যে তারা তিন রাকা‘আত বিতির সালাত পড়তেন।
যারারাহ ইবন আওফা হতে বর্ণিত তিনি বসরাতে চৌত্রিশ রাকা‘আত তারাবীহ্ পড়তেন, তারপর বিতির সালাত পড়তেন।
সাঈদ ইবন জুবায়ের হতে বর্ণিত : তারাবীহ্র সালাত ২৪ (চবিবশ) রাকা‘আত। কেউ কেউ বলেন, বিতর ব্যতীত ষোল রাকা‘আত [ইবন হাজার,ফতহুল বারী,.প্রাগুক্ত,(৪/২৫৪)।]।
সালেহ মাওলা তাওয়ামাহ বলেন, আমি মানুষদেরকে একচল্লিশ রাকা‘আত তারাবীহ্র সালাত পড়তে দেখেছি তন্মধ্যে পাঁচ রাকা‘আত বিতির ছিল।
ইবন আবি শাইবাহ হাসান ইবন উবায়দিল্লাহ হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আব্দুর রহমান ইবনুল আসওয়াদ আমাদের সাথে রমযান মাসে চল্লিশ রাকা‘আত তারাবীহ্ এবং সাত রাকা‘আত বিতির সালাত পড়েছেন। [. মুসান্নাফ,ইবন আবি শাইবা, (২/১৬৩) নং ৭৬৮৭।]
ইবন আব্দুল বার (রহ.) আসওয়াদ ইবন ইয়াযীদ হতে বর্ণনা করেছেন চল্লিশ রাকা‘আত তারাবীহ্ ও সাত রাকা‘আত বিতির। [. আবু ওমর ইউসুফ ইবন আব্দুল্লাহ ইবন আব্দুল বির আন নামিরী,আল ইস্তেযকার (বৈরুত:দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ,প্রথম সংস্করণ,১৪২১হি.-২০০০খী.)তাহকীক সালেম মুহাম্মদ আতা,মুহাম্মদ আল মুয়াওয়্যায(২/৭০)।]
নাফে‘ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মানুষকে (৩৯) উনচল্লিশ রাকা‘আত সালাত পড়তে দেখেছি [.প্রাগুক্ত,]। তন্মধ্যে তারা তিন রাকা‘আত বিতির সালাত পড়তেন।
যারারাহ ইবন আওফা হতে বর্ণিত তিনি বসরাতে চৌত্রিশ রাকা‘আত তারাবীহ্ পড়তেন, তারপর বিতির সালাত পড়তেন।
সাঈদ ইবন জুবায়ের হতে বর্ণিত : তারাবীহ্র সালাত ২৪ (চবিবশ) রাকা‘আত। কেউ কেউ বলেন, বিতর ব্যতীত ষোল রাকা‘আত [ইবন হাজার,ফতহুল বারী,.প্রাগুক্ত,(৪/২৫৪)।]।
সালেহ মাওলা তাওয়ামাহ বলেন, আমি মানুষদেরকে একচল্লিশ রাকা‘আত তারাবীহ্র সালাত পড়তে দেখেছি তন্মধ্যে পাঁচ রাকা‘আত বিতির ছিল।
হাফেয ইবন হাজার ‘আসকালানী (রহ.) উপরোক্ত বর্ণনাসমূহের উল্লেখের পর বলেন, ইবন ইসহাক বলেছেন, “আর আমি যা শুনেছি তন্মধ্যে এটি সবচেয়ে বেশী প্রমাণিত বর্ণনা। (অর্থাৎ মুহাম্মদ ইবন্ ইউসুফ এর বর্ণনা, যা তিনি সায়েব ইবন ইয়াযিদ হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমরা ওমর (রা.) এর যুগে রমযান মাসে তের রাকা‘আত তারাবীহ্ এর সালাত পড়তাম) আর এটি রাত্রে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাতের বর্ণনা সংক্রান্ত আয়েশা (রা.) এর হাদীসের অনুরূপ। [. ফতহুল বারী, (৪/২৯৯)।]
আলোচ্য মাস‘আলাটি ব্যাপক, আর আলিমগণ এ বিষয়ে মতভেদ করেছেন, আর কঠোরতা আরওপ ব্যতীত মাস‘আলাটি বর্ণনা করেছেন। যেমন:
মালেক (রহ.) দাউদ ইবন হুসাইন থেকে যা বর্ণনা করেছেন, তিনি আল ‘আরাজ কে বলতে শুনেছেন তিনি বলেন, রমযান মাসে মানুষকে কাফেরদের অভিসম্পাত দেয়া অবস্থায় পেয়েছি। বর্ণনাকারী বলেন, আট রাকা‘আতে ক্কারী সূরা বাকারাহ পাঠ করত। অত:পর যখন বার রাকা‘আত পড়তে যেতেন, তখন মানুষ মনে করত যে, (কিরাআত) হাল্কা করা হয়েছে। [. ইমাম মালেক, আল-মুয়াত্তা (১/১১৫) নং (২৫৩); আব্দুর রাযযাক, আল- মুসান্নাফ (৪/২৬২) নং (৭৭৩৪)।] এ বর্ণনা থেকে আমরা জানতে পারি যে, নিশ্চয় তারা কখনো কখনো আট রাকা‘আত তারাবীহ্ এর সালাত পড়তেন, আবার কখনো কখনো বার রাকা‘আত পড়তেন, আর এটি তাদের নিকট স্বাভাবিক ছিল।
ইমাম মালেক বলেন, ছত্রিশ রাকা‘আত বিষয়টি উপরোক্ত বিষয়ের উপর র্নিভর করে শত বছরের বেশী সময় ধরে চলে আসছে। আর এ বিষয়ে কোন সংর্কীণতা নেই। [. ফতহুল বারী, (৪/২৫৩)।]
ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেন, আমি মদিনাতে মানুষকে উনচল্লিশ রাকা‘আত এবং মক্কায় তেইশ রাকা‘আত পড়তে দেখেছি। এ থেকে এখানে আর কোন কিছু সংকীর্ণ নেই।
তার থেকে আরও বর্ণিত আছে যে, যদি কিয়াম দীর্ঘ হয়, সিজদা কম হয় তবে তা ভালো। আবার যদি সিজদা বেশী হয় এবং কিরাত সহজ হয় তাও উত্তম। তবে প্রথমটি আমার নিকট বেশী প্রিয়। [ফতহুল বারী, (৪/২৯৮)।]
ইমাম তিরমিযী বলেন, জ্ঞানীগণ রমযান মাসে কিয়ামুল লাইল সম্পর্কে মতবিরোধ করেছে। ফলে তাদের কারো কারো অভিমত বিতিরসহ একচল্লিশ রাকা‘আত, আর এটি মদিনাবাসীর বক্তব্য এবং মদিনায় এটির উপর আমল হয় বেশী। তবে অধিকাংশ আলেম যারা ওমর (রা.), আলী (রা.) সহ অন্যান্য সাহাবীদের হতে বিশ রাকা‘আত সালাত বর্ণনা করেছেন; তাদের মধ্যে সুফিয়ান সাওরী, ইবনুল মুবারক, শাফেয়ী‘ অন্যতম। শাফেয়ী বলেন, আর অনুরূপ সংখ্যা আমি আমার শহর মক্কায় পেয়েছি। তারা বিশ রাকা‘আত সালাত আদায় করে। ইমাম আহমদ বলেন, এ বিষয়ে অনেক মতবিরোধ রয়েছে। আর তিনি এ বিষয়ে কোন সুরাহা করেন নি। ইসহাক বলেন, বরং আমরা একচল্লিশ রাকা‘আত গ্রহন করব যা উবাই ইবন কা‘ব (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে।
ইমাম বাইহাকী বলেন, উভয় বর্ণনার মধ্যে এ ভাবে সমন্বয় করা সম্ভব যে, তারা সাধারণত: এগারো রাকা‘আত আদায় করতেন, পরে বিশ রাকা‘আত পড়তেন এবং তিন রাকা‘আতের বিতির পড়তেন। আল্লাহই অধিক জানেন [ইমাম বাইহাকী; আস-সুনানুল কুবরা: (২/৪৯৬)।]।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ (রহ.) বলেন, বর্ণনাগুলোর পারস্পরিক বৈপরিত্য ও সেগুলোর মাঝে সমন্বয় করতে গিয়ে বলা যায়, রাকা‘আত সংখ্যা কম বা বেশী হতে পারে দন্ডায়মানের দীর্ঘতা ও স্বল্পতার উপর। তিনি বলেন, উত্তম হলো মুসল্লীদের সিদ্ধান্ত বা পারিপাশ্বিকতা যদি তাদের র্দীঘ সময় দন্ডায়মান থেকে দশ রাকা‘আত তারাবীহ্ ও তিন রাকা‘আত বিতির সালাত আদায় করা সম্ভব হয় যেমনটি নবী করিম (স.) ও অন্যান্যরা রমযানে আদায় করেছেন, তবে সেটিই উত্তম। আর যদি মুসল্লীরা সেটা করতে সমর্থ না হয় তবে বিশ রাক‘আত পড়া উত্তম। আর এটির উপরই অধিকাংশ মুসলিম আমল করে থাকেন। কেননা বিশ সংখ্যাটি দশ ও চল্লিশ এর মাঝামাঝি। আর যদি কেউ চল্লিশ রাকা‘আত বা অন্য কিছু পড়ে তবে তাও জায়েয। এখানে মাকরূহ হওয়ার কিছু নেই। আর যে ব্যক্তি এ ধারণা করে যে রমযানে কিয়ামুল লাইলে রাকা‘আতের সংখ্যা নির্দিষ্ট, তাতে কম বেশী করা যাবে না, তাহলে তিনি ভুল করেছেন। [. শাইখুল ইসলাম আহমদ ইবন আবদুল হালীম ইবন আব্দুস সালাম ইবন তাইমিয়্যাহ মাজমুউল ফাতাওয়া, মুহাম্মদ মালেক ফাহাদ, আল মাসহাফ আশ-শরীফ সৌদি আরব: ওয়াযারাতুল শুয়ু‘নিল ইসলামিয়্যাহ ১৪১৬ হি. (২৩/১১৩)।]
শাইখ আব্দুর রহমান ইবন জিবরীন বলেন, শায়খুল ইসলামের বক্তব্য থেকে আমরা জানতে পারলাম, নিশ্চয় কিয়ামুল লাইল সময়সীমার সাথে নির্দিষ্ট, রাকা‘আতের সংখ্যার সাথে নয়। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগার রাকা‘আত পড়তেন পাঁচ ঘন্টা সময় ধরে। মাঝেমাঝে সারা রাত ব্যাপী। এমন কি সেহেরীর সময় শেষ হয়ে যাবার আশংকা হয়ে যেত। আর এটি দন্ডায়মানের দীর্ঘতাকে বুঝায় যাতে এক রাকা‘আতে চল্লিশ মিনিট সময় লাগে। আর সাহাবায়ে কিরাম তা করতেন। কারণ, তারা দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার জন্য লাঠির উপর ভর করতেন। অতঃপর যখন দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা ও অন্যান্য রুকনগুলো তাদের নিকট কষ্টকর মনে হলো, তখন তারা সহজ করে নিলেন, তারা রাকা‘আতের সংখ্যা বৃদ্ধি করলেন, শেষ পর্যন্ত সারা রাত অথবা রাতের অধিকাংশ সময় তারা সালাতে মশগুল থাকতেন।
এটা হলো সাহাবাগণের সুন্নাত, সহজ করে আরকান আদায় করার সাথে অধিক রাকা‘আত সালাত আদায় অথবা দীর্ঘ সময় রুকন আদায়ে ব্যয় করার পাশাপাশি কম সংখ্যক রাকা‘আত সালাত আদায় করা। তবে তাদের কেউ একে অপরের বিরোধিতা করেন নি। সুতরাং তাদের প্রত্যেকেই হকের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন এবং সকলে এমন ইবাদত করতেন যাতে কবুল ও বহুগুণ বৃদ্ধির প্রত্যাশা করা যায়। [. ইবন জিবরীন, ফাতাওয়া আস-সিয়াম, ( রিয়াদ: দারু ইবন খুযাইমাহ, ১৪২০ হি.) পৃ. ১৪২-১৪৪।]
হাফেয ইবন হাজার আসকালানী (রহ.) উপরোক্ত বর্ণনাসমূহের সমন্বয় সাধনে বলেন: মানুষের প্রয়োজন ও পারিপাশ্বিক অবস্থার উপর নির্ভর করে বর্ণনা ও সংখ্যার ভিন্নতা। ফলে মাঝে মাঝে তারা এগারো রাকা‘আত পড়তেন। কখনো কখনো একুশ রাকা‘আত, মাঝে মধ্যে তেইশ রাকা‘আত, মানুষের শক্তি উদ্যমের ভিত্তিতে পড়া হতো। যখন তারা এগার রাকা‘আত পড়তেন. তখন তারা ;দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে কিরাত পড়তেন; এমনকি দীর্ঘ দাঁড়িয়ে থাকার সুবিধার্থে লাঠিতে ভর দিতেন। আর যখন তেইশ রাকা‘আত পড়তেন, তখন দাঁড়িয়ে থাকাটা সহজ করতেন, অর্থ্যাৎ কিরাআতকে ছোট করে পড়তেন। যাতে করে এটা মানুষের জন্য কষ্টকর না হয়।
তিনি আরও বলেন, উপরোক্ত বর্ণনাসমূহের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান এভাবে সম্ভব যে, তা অবস্থার ভিন্নতার কারণে হয়ে থাকবে। আর সম্ভবত: এ মতবিরোধটি কিরাআত দীর্ঘ ও সহজ হওয়ার দিক থেকে হতে পারে। ফলে দীর্ঘ কিরাআতে রাকা‘আত সংখ্যা কমবে এবং সহজ কিরাআতে রাকা‘আত সংখ্যা বাড়বে। [. ফতহুল বারী, (৪/২৯৮)।]
শাইখ ইবন জিবরীন বলেন, সে যুগে তের রাকা‘আত তারাবীহ্ এর সালাত আদায় করা হতো। আর তারা কিরাআত এমন দীর্ঘ করতেন যে, বার রাকা‘আতের মধ্যে তারা সূরা বাকারাহ শেষ করতেন, মাঝে মাঝে আট রাকা‘আতের মধ্যে। এ কারণে যে, নবী করীম (স.) এ সালাতের সংখ্যা নির্দিষ্ট করেননি। ফলে এ বিষয়টি অত্যন্ত ব্যাপক। যদি কেউ ইচ্ছা করে তবে রাকা‘আত সংখ্যা কম করে রুকনসমূহ দীর্ঘ করবে, আর ইচ্ছা করলে রাকা‘আতের সংখ্যা বাড়িয়ে রুকনসমূহ সহজ করতে পারে। [ইবন জিবরীন, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৩৫।]
শাইখ সালেহ উসাইমিন বলেন, এর রাকা‘আত সংখ্যা এগার অথবা তের। কেননা বিভিন্ন মাধ্যমে সালফে সালেহীন থেকে কম বা বেশীর বর্ণনা এসেছে। অথচ কেউ এতে বিরোধিতা করেননি। সুতরাং যদি কেউ বৃদ্ধি করে তাও অস্বীকার করা হবে না। আর যে ব্যক্তি উপরোক্ত সংখ্যায় সীমাবদ্ধ করবে তবে তা উত্তম। এছাড়াও হাদীসে এসেছে, সংখ্যা বেশী করার ব্যপারে কোন অসুবিধা নেই। সহীহ বুখারী ও অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে ইবন ওমর (রা.) হতে একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে কোন এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করেছিল রাতের সালাত সম্পর্কে, তখন তিনি বলেন,
«مثني مثني فإذا خشي أحدكم الصبح صلى واحدة فأوترت له ما قد صلى»
“দুই দু্ই রাকা‘আত। যদি কেউ সকাল হয়ে যাবার আশংকা করে তাহলে এক রাকা‘আত পড়বে। সেই এক রাকা‘আত যা সে পড়েছে সেটাকে বিতির বা বেজোড় সালাতে পরিগণিত করবে। [. ইমাম বুখারী, সহীহ, হাদীস নং ৪৭৩; ইমাম মুসলিম, সহীহ, হাদীস নং ৭৪৯।] সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের সালাতের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেননি। [ইবনুল উসাইমিন, আল-ফাতাওয়া, কিতাবুদ দাওয়াত, (রিয়াদ; মুয়াসসাসাতুত দা‘ওয়াহ আল-ইসলামিয়া আস-সহীফাহ, প্রথম সংস্করণ, ১৪১৪ হি.), পৃ. ১/১৯১-১৯২।]
শাইখ মুহাম্মদ ইবন সালেহ উসাইমিনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: যখন কোনও ব্যক্তি ইমামের পিছনে সালাত আদায় করবে, আর তিনি এগার রাকা‘আতের বেশী পড়ছেন, তখন ইমামের অনুসরণ করবে নাকি কিয়াম থেকে ফিরে আসবে? জবাবে তিনি বলেন, সুন্নাত হলো ইমামের অনুসরণ করা। কেননা যদি সে ইমামের সালাত সম্পন্ন হওয়ার পূর্বে ফিরে আসে, তবে তার কিয়ামুল লাইলের সওয়াব মিলবে না। কেননা এ মর্মে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«من قام مع الإمام حتى ينصرف كتب له قيام ليلة»
‘‘যে ব্যক্তি ইমামের সাথে শেষ পর্যন্ত সালাত আদায় করে তার কিয়ামুল লাইল লিপিবদ্ধ করা হয়’’
কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এ কথা দ্বারা ইমামের অনুসরণ তথা বাকী সালাতেও ইমামের সাথে থাকার ব্যাপারে উৎসাহ দেয়ার জন্য বলেছেন। আর যখন সাহাবীগণ (কোন কোন ফরয সালাতে) এক রাকা‘আত অতিরিক্ত করার পরও ইমামের অনুসরণ করেছিলেন, তাহলে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে আদায় করা যায় এমন সালাত আদায়ের সময়ে তাদের জন্য ইমামের অনুসরণে কি সমস্যা হবে?
সাহাবীগণ এক সালাতে শরয়ী বিধানে অতিরিক্ত বৃদ্ধি করার পরও তাদের ইমামের অনুসরণ করেছেন। আর এটি আমীরুল মু’মেনীন উসমান ইবন আফফান (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি হজ্বের সময় মিনাতে সালাত সম্পন্ন করতেন অর্থাৎ চার রাকা‘আত পড়তেন। অথচ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আবু বকর (রা.), ওমর (রা.) এমনকি ওসমান (রা.) এর প্রথম আট বছর এভাবে অতিবাহিত হলো যে, তারা সবাই দু’ রাকা‘আত পড়তেন। তারপর তিনি (উসমান) চার রাকা‘আত পড়েন। সাহাবাগণ তার এ মতটি অস্বীকার করলেন, তবুও তাকে অনুসরণ করে তারা চার রাকা‘আত সালাত পড়েন। যদি ইমামের অনুসরণের প্রতি গুরুত্ব দেওয়াই হয় সাহাবীদের প্রদর্শিত পথ, তবে আমরা যাদেরকে দেখি নবী (স.) যে এগার রাকা‘আত পড়তেন তা থেকে ইমাম বৃদ্ধি করে পড়লে তারা সালাতের মধ্যে ইমামের পিছন থেকে সরে পড়ে; যেমনটি আজকাল আমরা দেখি কতিপয় মানুষ ইমামের সালাত সম্পন্ন হওয়ার পূর্বে “এগার রাকা‘আতই শর‘য়ী হুকুম” এ অজুহাতে সরে পড়ে। আমরা বলব: শরী‘আতের দৃষ্টিতে ইমামের অনুসরণই অধিক ওয়াজিব। [. ইবনলু উসাইমিন, প্রাগুক্ত, (১/১৯৪-১৯৬।]
শাইখ ইবন জিবরীন এরূপ মাস‘আলায় বলেন, ইমাম আহমদ (রহ.) ইমামের সাথে সালাত আদায় করতেন, তিনি তার পিছন থেকে সরে যেতেন না। [. ইবন জিবরীন, ফাতাওয়া আস-সিয়াম, পৃ. ১৪৪-১৪৫।]
ওয়াসাল্লাল্লাহু ‘আলা মুহাম্মাদ।
আলোচ্য মাস‘আলাটি ব্যাপক, আর আলিমগণ এ বিষয়ে মতভেদ করেছেন, আর কঠোরতা আরওপ ব্যতীত মাস‘আলাটি বর্ণনা করেছেন। যেমন:
মালেক (রহ.) দাউদ ইবন হুসাইন থেকে যা বর্ণনা করেছেন, তিনি আল ‘আরাজ কে বলতে শুনেছেন তিনি বলেন, রমযান মাসে মানুষকে কাফেরদের অভিসম্পাত দেয়া অবস্থায় পেয়েছি। বর্ণনাকারী বলেন, আট রাকা‘আতে ক্কারী সূরা বাকারাহ পাঠ করত। অত:পর যখন বার রাকা‘আত পড়তে যেতেন, তখন মানুষ মনে করত যে, (কিরাআত) হাল্কা করা হয়েছে। [. ইমাম মালেক, আল-মুয়াত্তা (১/১১৫) নং (২৫৩); আব্দুর রাযযাক, আল- মুসান্নাফ (৪/২৬২) নং (৭৭৩৪)।] এ বর্ণনা থেকে আমরা জানতে পারি যে, নিশ্চয় তারা কখনো কখনো আট রাকা‘আত তারাবীহ্ এর সালাত পড়তেন, আবার কখনো কখনো বার রাকা‘আত পড়তেন, আর এটি তাদের নিকট স্বাভাবিক ছিল।
ইমাম মালেক বলেন, ছত্রিশ রাকা‘আত বিষয়টি উপরোক্ত বিষয়ের উপর র্নিভর করে শত বছরের বেশী সময় ধরে চলে আসছে। আর এ বিষয়ে কোন সংর্কীণতা নেই। [. ফতহুল বারী, (৪/২৫৩)।]
ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেন, আমি মদিনাতে মানুষকে উনচল্লিশ রাকা‘আত এবং মক্কায় তেইশ রাকা‘আত পড়তে দেখেছি। এ থেকে এখানে আর কোন কিছু সংকীর্ণ নেই।
তার থেকে আরও বর্ণিত আছে যে, যদি কিয়াম দীর্ঘ হয়, সিজদা কম হয় তবে তা ভালো। আবার যদি সিজদা বেশী হয় এবং কিরাত সহজ হয় তাও উত্তম। তবে প্রথমটি আমার নিকট বেশী প্রিয়। [ফতহুল বারী, (৪/২৯৮)।]
ইমাম তিরমিযী বলেন, জ্ঞানীগণ রমযান মাসে কিয়ামুল লাইল সম্পর্কে মতবিরোধ করেছে। ফলে তাদের কারো কারো অভিমত বিতিরসহ একচল্লিশ রাকা‘আত, আর এটি মদিনাবাসীর বক্তব্য এবং মদিনায় এটির উপর আমল হয় বেশী। তবে অধিকাংশ আলেম যারা ওমর (রা.), আলী (রা.) সহ অন্যান্য সাহাবীদের হতে বিশ রাকা‘আত সালাত বর্ণনা করেছেন; তাদের মধ্যে সুফিয়ান সাওরী, ইবনুল মুবারক, শাফেয়ী‘ অন্যতম। শাফেয়ী বলেন, আর অনুরূপ সংখ্যা আমি আমার শহর মক্কায় পেয়েছি। তারা বিশ রাকা‘আত সালাত আদায় করে। ইমাম আহমদ বলেন, এ বিষয়ে অনেক মতবিরোধ রয়েছে। আর তিনি এ বিষয়ে কোন সুরাহা করেন নি। ইসহাক বলেন, বরং আমরা একচল্লিশ রাকা‘আত গ্রহন করব যা উবাই ইবন কা‘ব (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে।
ইমাম বাইহাকী বলেন, উভয় বর্ণনার মধ্যে এ ভাবে সমন্বয় করা সম্ভব যে, তারা সাধারণত: এগারো রাকা‘আত আদায় করতেন, পরে বিশ রাকা‘আত পড়তেন এবং তিন রাকা‘আতের বিতির পড়তেন। আল্লাহই অধিক জানেন [ইমাম বাইহাকী; আস-সুনানুল কুবরা: (২/৪৯৬)।]।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ (রহ.) বলেন, বর্ণনাগুলোর পারস্পরিক বৈপরিত্য ও সেগুলোর মাঝে সমন্বয় করতে গিয়ে বলা যায়, রাকা‘আত সংখ্যা কম বা বেশী হতে পারে দন্ডায়মানের দীর্ঘতা ও স্বল্পতার উপর। তিনি বলেন, উত্তম হলো মুসল্লীদের সিদ্ধান্ত বা পারিপাশ্বিকতা যদি তাদের র্দীঘ সময় দন্ডায়মান থেকে দশ রাকা‘আত তারাবীহ্ ও তিন রাকা‘আত বিতির সালাত আদায় করা সম্ভব হয় যেমনটি নবী করিম (স.) ও অন্যান্যরা রমযানে আদায় করেছেন, তবে সেটিই উত্তম। আর যদি মুসল্লীরা সেটা করতে সমর্থ না হয় তবে বিশ রাক‘আত পড়া উত্তম। আর এটির উপরই অধিকাংশ মুসলিম আমল করে থাকেন। কেননা বিশ সংখ্যাটি দশ ও চল্লিশ এর মাঝামাঝি। আর যদি কেউ চল্লিশ রাকা‘আত বা অন্য কিছু পড়ে তবে তাও জায়েয। এখানে মাকরূহ হওয়ার কিছু নেই। আর যে ব্যক্তি এ ধারণা করে যে রমযানে কিয়ামুল লাইলে রাকা‘আতের সংখ্যা নির্দিষ্ট, তাতে কম বেশী করা যাবে না, তাহলে তিনি ভুল করেছেন। [. শাইখুল ইসলাম আহমদ ইবন আবদুল হালীম ইবন আব্দুস সালাম ইবন তাইমিয়্যাহ মাজমুউল ফাতাওয়া, মুহাম্মদ মালেক ফাহাদ, আল মাসহাফ আশ-শরীফ সৌদি আরব: ওয়াযারাতুল শুয়ু‘নিল ইসলামিয়্যাহ ১৪১৬ হি. (২৩/১১৩)।]
শাইখ আব্দুর রহমান ইবন জিবরীন বলেন, শায়খুল ইসলামের বক্তব্য থেকে আমরা জানতে পারলাম, নিশ্চয় কিয়ামুল লাইল সময়সীমার সাথে নির্দিষ্ট, রাকা‘আতের সংখ্যার সাথে নয়। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগার রাকা‘আত পড়তেন পাঁচ ঘন্টা সময় ধরে। মাঝেমাঝে সারা রাত ব্যাপী। এমন কি সেহেরীর সময় শেষ হয়ে যাবার আশংকা হয়ে যেত। আর এটি দন্ডায়মানের দীর্ঘতাকে বুঝায় যাতে এক রাকা‘আতে চল্লিশ মিনিট সময় লাগে। আর সাহাবায়ে কিরাম তা করতেন। কারণ, তারা দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার জন্য লাঠির উপর ভর করতেন। অতঃপর যখন দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা ও অন্যান্য রুকনগুলো তাদের নিকট কষ্টকর মনে হলো, তখন তারা সহজ করে নিলেন, তারা রাকা‘আতের সংখ্যা বৃদ্ধি করলেন, শেষ পর্যন্ত সারা রাত অথবা রাতের অধিকাংশ সময় তারা সালাতে মশগুল থাকতেন।
এটা হলো সাহাবাগণের সুন্নাত, সহজ করে আরকান আদায় করার সাথে অধিক রাকা‘আত সালাত আদায় অথবা দীর্ঘ সময় রুকন আদায়ে ব্যয় করার পাশাপাশি কম সংখ্যক রাকা‘আত সালাত আদায় করা। তবে তাদের কেউ একে অপরের বিরোধিতা করেন নি। সুতরাং তাদের প্রত্যেকেই হকের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন এবং সকলে এমন ইবাদত করতেন যাতে কবুল ও বহুগুণ বৃদ্ধির প্রত্যাশা করা যায়। [. ইবন জিবরীন, ফাতাওয়া আস-সিয়াম, ( রিয়াদ: দারু ইবন খুযাইমাহ, ১৪২০ হি.) পৃ. ১৪২-১৪৪।]
হাফেয ইবন হাজার আসকালানী (রহ.) উপরোক্ত বর্ণনাসমূহের সমন্বয় সাধনে বলেন: মানুষের প্রয়োজন ও পারিপাশ্বিক অবস্থার উপর নির্ভর করে বর্ণনা ও সংখ্যার ভিন্নতা। ফলে মাঝে মাঝে তারা এগারো রাকা‘আত পড়তেন। কখনো কখনো একুশ রাকা‘আত, মাঝে মধ্যে তেইশ রাকা‘আত, মানুষের শক্তি উদ্যমের ভিত্তিতে পড়া হতো। যখন তারা এগার রাকা‘আত পড়তেন. তখন তারা ;দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে কিরাত পড়তেন; এমনকি দীর্ঘ দাঁড়িয়ে থাকার সুবিধার্থে লাঠিতে ভর দিতেন। আর যখন তেইশ রাকা‘আত পড়তেন, তখন দাঁড়িয়ে থাকাটা সহজ করতেন, অর্থ্যাৎ কিরাআতকে ছোট করে পড়তেন। যাতে করে এটা মানুষের জন্য কষ্টকর না হয়।
তিনি আরও বলেন, উপরোক্ত বর্ণনাসমূহের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান এভাবে সম্ভব যে, তা অবস্থার ভিন্নতার কারণে হয়ে থাকবে। আর সম্ভবত: এ মতবিরোধটি কিরাআত দীর্ঘ ও সহজ হওয়ার দিক থেকে হতে পারে। ফলে দীর্ঘ কিরাআতে রাকা‘আত সংখ্যা কমবে এবং সহজ কিরাআতে রাকা‘আত সংখ্যা বাড়বে। [. ফতহুল বারী, (৪/২৯৮)।]
শাইখ ইবন জিবরীন বলেন, সে যুগে তের রাকা‘আত তারাবীহ্ এর সালাত আদায় করা হতো। আর তারা কিরাআত এমন দীর্ঘ করতেন যে, বার রাকা‘আতের মধ্যে তারা সূরা বাকারাহ শেষ করতেন, মাঝে মাঝে আট রাকা‘আতের মধ্যে। এ কারণে যে, নবী করীম (স.) এ সালাতের সংখ্যা নির্দিষ্ট করেননি। ফলে এ বিষয়টি অত্যন্ত ব্যাপক। যদি কেউ ইচ্ছা করে তবে রাকা‘আত সংখ্যা কম করে রুকনসমূহ দীর্ঘ করবে, আর ইচ্ছা করলে রাকা‘আতের সংখ্যা বাড়িয়ে রুকনসমূহ সহজ করতে পারে। [ইবন জিবরীন, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৩৫।]
শাইখ সালেহ উসাইমিন বলেন, এর রাকা‘আত সংখ্যা এগার অথবা তের। কেননা বিভিন্ন মাধ্যমে সালফে সালেহীন থেকে কম বা বেশীর বর্ণনা এসেছে। অথচ কেউ এতে বিরোধিতা করেননি। সুতরাং যদি কেউ বৃদ্ধি করে তাও অস্বীকার করা হবে না। আর যে ব্যক্তি উপরোক্ত সংখ্যায় সীমাবদ্ধ করবে তবে তা উত্তম। এছাড়াও হাদীসে এসেছে, সংখ্যা বেশী করার ব্যপারে কোন অসুবিধা নেই। সহীহ বুখারী ও অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে ইবন ওমর (রা.) হতে একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে কোন এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করেছিল রাতের সালাত সম্পর্কে, তখন তিনি বলেন,
«مثني مثني فإذا خشي أحدكم الصبح صلى واحدة فأوترت له ما قد صلى»
“দুই দু্ই রাকা‘আত। যদি কেউ সকাল হয়ে যাবার আশংকা করে তাহলে এক রাকা‘আত পড়বে। সেই এক রাকা‘আত যা সে পড়েছে সেটাকে বিতির বা বেজোড় সালাতে পরিগণিত করবে। [. ইমাম বুখারী, সহীহ, হাদীস নং ৪৭৩; ইমাম মুসলিম, সহীহ, হাদীস নং ৭৪৯।] সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের সালাতের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেননি। [ইবনুল উসাইমিন, আল-ফাতাওয়া, কিতাবুদ দাওয়াত, (রিয়াদ; মুয়াসসাসাতুত দা‘ওয়াহ আল-ইসলামিয়া আস-সহীফাহ, প্রথম সংস্করণ, ১৪১৪ হি.), পৃ. ১/১৯১-১৯২।]
শাইখ মুহাম্মদ ইবন সালেহ উসাইমিনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: যখন কোনও ব্যক্তি ইমামের পিছনে সালাত আদায় করবে, আর তিনি এগার রাকা‘আতের বেশী পড়ছেন, তখন ইমামের অনুসরণ করবে নাকি কিয়াম থেকে ফিরে আসবে? জবাবে তিনি বলেন, সুন্নাত হলো ইমামের অনুসরণ করা। কেননা যদি সে ইমামের সালাত সম্পন্ন হওয়ার পূর্বে ফিরে আসে, তবে তার কিয়ামুল লাইলের সওয়াব মিলবে না। কেননা এ মর্মে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«من قام مع الإمام حتى ينصرف كتب له قيام ليلة»
‘‘যে ব্যক্তি ইমামের সাথে শেষ পর্যন্ত সালাত আদায় করে তার কিয়ামুল লাইল লিপিবদ্ধ করা হয়’’
কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এ কথা দ্বারা ইমামের অনুসরণ তথা বাকী সালাতেও ইমামের সাথে থাকার ব্যাপারে উৎসাহ দেয়ার জন্য বলেছেন। আর যখন সাহাবীগণ (কোন কোন ফরয সালাতে) এক রাকা‘আত অতিরিক্ত করার পরও ইমামের অনুসরণ করেছিলেন, তাহলে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে আদায় করা যায় এমন সালাত আদায়ের সময়ে তাদের জন্য ইমামের অনুসরণে কি সমস্যা হবে?
সাহাবীগণ এক সালাতে শরয়ী বিধানে অতিরিক্ত বৃদ্ধি করার পরও তাদের ইমামের অনুসরণ করেছেন। আর এটি আমীরুল মু’মেনীন উসমান ইবন আফফান (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি হজ্বের সময় মিনাতে সালাত সম্পন্ন করতেন অর্থাৎ চার রাকা‘আত পড়তেন। অথচ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আবু বকর (রা.), ওমর (রা.) এমনকি ওসমান (রা.) এর প্রথম আট বছর এভাবে অতিবাহিত হলো যে, তারা সবাই দু’ রাকা‘আত পড়তেন। তারপর তিনি (উসমান) চার রাকা‘আত পড়েন। সাহাবাগণ তার এ মতটি অস্বীকার করলেন, তবুও তাকে অনুসরণ করে তারা চার রাকা‘আত সালাত পড়েন। যদি ইমামের অনুসরণের প্রতি গুরুত্ব দেওয়াই হয় সাহাবীদের প্রদর্শিত পথ, তবে আমরা যাদেরকে দেখি নবী (স.) যে এগার রাকা‘আত পড়তেন তা থেকে ইমাম বৃদ্ধি করে পড়লে তারা সালাতের মধ্যে ইমামের পিছন থেকে সরে পড়ে; যেমনটি আজকাল আমরা দেখি কতিপয় মানুষ ইমামের সালাত সম্পন্ন হওয়ার পূর্বে “এগার রাকা‘আতই শর‘য়ী হুকুম” এ অজুহাতে সরে পড়ে। আমরা বলব: শরী‘আতের দৃষ্টিতে ইমামের অনুসরণই অধিক ওয়াজিব। [. ইবনলু উসাইমিন, প্রাগুক্ত, (১/১৯৪-১৯৬।]
শাইখ ইবন জিবরীন এরূপ মাস‘আলায় বলেন, ইমাম আহমদ (রহ.) ইমামের সাথে সালাত আদায় করতেন, তিনি তার পিছন থেকে সরে যেতেন না। [. ইবন জিবরীন, ফাতাওয়া আস-সিয়াম, পৃ. ১৪৪-১৪৫।]
ওয়াসাল্লাল্লাহু ‘আলা মুহাম্মাদ।
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন