HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
কালেমা শাহাদাত
লেখকঃ সানাউল্লাহ নজির আহমদ
কালেমা শাহাদাত : কালেমার মর্ম উপলব্ধি করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্যে একান্ত জরুরী। এ প্রবন্ধে পাঠক কালেমা সম্পর্কিত নিম্নের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অবগত হবেন : (১) লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর অর্থ, (২) শাহাদাতের রোকনসমূহ, (৩) লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর শর্ত , (৫) মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাক্ষ্য প্রদানের মর্মার্থ, (৫) মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাক্ষ্য প্রদানের সাথে সম্পৃক্ত বিষয়াবলি, (৬) কালেমা বিরোধী কাজ ও কথা।
নিজেকে সঁপে দেওয়ার পদ্ধতি ও ইবাদতের বিশদ বর্ণনা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট থেকে গ্রহণ করা। উভয় শাহাদাতের মৌখিক উচ্চারণ ইসলাম গ্রহণ ও ইসলামকে আলিঙ্গন করার বহিঃপ্রকাশ।
কিয়ামতের দিন দুইটি প্রশ্নের উত্তর না দেওয়া পর্যন্ত কোনো আদম সন্তান স্বীয় অবস্থান ত্যাগ করতে পারবে না।
প্রথম প্রশ্ন: তোমরা কার ইবাদত করতে?
দ্বিতীয় প্রশ্ন: রাসূল কে কী জাওয়াব দিয়েছ?
প্রথম প্রশ্নের উত্তর: ইলম তথা আল্লাহর পরিচয় লাভ, মৌখিক স্বীকৃতি প্রদান এবং আমলের মাধ্যমে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর বাস্তবায়ন।
দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর: ইলম তথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিচয় লাভ, মৌখিক স্বীকৃতি প্রদান এবং আনুগত্যের মাধ্যমে ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ এর বাস্তবায়ন।
কিয়ামতের দিন দুইটি প্রশ্নের উত্তর না দেওয়া পর্যন্ত কোনো আদম সন্তান স্বীয় অবস্থান ত্যাগ করতে পারবে না।
প্রথম প্রশ্ন: তোমরা কার ইবাদত করতে?
দ্বিতীয় প্রশ্ন: রাসূল কে কী জাওয়াব দিয়েছ?
প্রথম প্রশ্নের উত্তর: ইলম তথা আল্লাহর পরিচয় লাভ, মৌখিক স্বীকৃতি প্রদান এবং আমলের মাধ্যমে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর বাস্তবায়ন।
দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর: ইলম তথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিচয় লাভ, মৌখিক স্বীকৃতি প্রদান এবং আনুগত্যের মাধ্যমে ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ এর বাস্তবায়ন।
সংবেদনশীল, তাৎপর্যপূর্ণ এ সাক্ষ্য প্রদানের অর্থ হলো: ‘সত্যিকারার্থে আল্লাহ ছাড়া কেউ ইবাদতের উপযুক্ত নয়। যেহেতু একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টিকর্তা, অধিপতি, রিযিকদাতা, কল্যাণসাধনকারী, ক্ষতিসাধনকারী ও পরিচালনাকারী, সেহেতু আল্লাহ তা‘আলার বান্দা স্বীয় নিবেদন, আশা, ভয়, মহব্বত, মীমাংসা, ভরসা এবং সমস্ত কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে একমাত্র তাঁর শরণাপন্ন হবে, অন্য কারো নয়।
শাহাদাত বা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর সাক্ষ্য মূল দু’টি ভিত্তির ওপর নির্ভরশীল-
১. প্রত্যাখ্যান।
২. স্বীকৃতি প্রদান।
لا إله : প্রত্যাখ্যান। অর্থাৎ ইবাদতের উপযুক্ত যে কোনো উপাস্যের অস্তিত্বকে প্রত্যাখ্যান করা, একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত।
إلا الله : স্বীকৃতি প্রদান। একমাত্র আল্লাহ তাআলাই ইবাদতের উপযুক্ত অন্য কেউ নয়, এর স্বীকৃতি প্রদান করা।
১. প্রত্যাখ্যান।
২. স্বীকৃতি প্রদান।
لا إله : প্রত্যাখ্যান। অর্থাৎ ইবাদতের উপযুক্ত যে কোনো উপাস্যের অস্তিত্বকে প্রত্যাখ্যান করা, একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত।
إلا الله : স্বীকৃতি প্রদান। একমাত্র আল্লাহ তাআলাই ইবাদতের উপযুক্ত অন্য কেউ নয়, এর স্বীকৃতি প্রদান করা।
আলোচিত কালেমায়ে তাওহীদ জান্নাতে প্রবেশের চাবিস্বরূপ, জাহান্নাম তাতে মুক্তির ঢালস্বরূপ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَعْلَمُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ» .
“যে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোনো মা‘বূদ নেই) এর অর্থ, তাৎপর্যের জ্ঞান নিয়ে মারা গেল সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’’ [মুসান্নাফে ইবন আবি শায়বাহ, হাদীস নং ১০৮৬৮; মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৪৯৮।]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,
«إِنَّ اللهَ قَدْ حَرَّمَ عَلَى النَّارِ مَنْ قَالَ : لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ يَبْتَغِي بِذَلِكَ وَجْهَ اللهِ» .
“অবশ্যই আল্লাহ তা‘আলা ঐ ব্যক্তির ওপর জাহান্নাম হারাম করে দিয়েছেন, যে আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ কালেমাটি পাঠ করেছে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৪০১, ১১৮৫; সহীহ মুসলিম, ১/৪৫৪।]
আফসোস! অনেক মানুষ কালেমায়ে শাহাদাত শুধু মুখে উচ্চারণ করে পরমানন্দে নিশ্চিন্ত বসে আছে, অথচ এর শর্ত, এর দাবী বাস্তবায়ন যে কত অপরিহার্য তা একেবারে বেমালুম ভুলে আছে। ওহাব ইবন মুনাব্বিহ রহ.-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল,
«أَلَيْسَ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مِفْتَاحُ الجَنَّةِ؟ قَالَ : «بَلَى، وَلَكِنْ لَيْسَ مِفْتَاحٌ إِلَّا لَهُ أَسْنَانٌ، فَإِنْ جِئْتَ بِمِفْتَاحٍ لَهُ أَسْنَانٌ فُتِحَ لَكَ، وَإِلَّا لَمْ يُفْتَحْ لَكَ» .
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ কি জান্নাতের চাবি নয়? তিনি উত্তর দিলেন: অবশ্যই। তবে প্রতিটি চাবির কিন্তু দাঁত থাকে। যদি তুমি দাঁত আছে এমন চাবি নিয়ে আস, তোমাকে দরজা খুলে দেওয়া হবে। অন্যথায় দরজা খুলে দেওয়া হবে না।” [সহীহ বুখারী ২/৭১।]
কতক প্রজ্ঞাময় ওলামায়ে কেরাম নিম্নের পংক্তির মাধ্যমে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর শর্তগুলো একত্রিত করে বর্ণনা করে দিয়েছেন:
علم يقين وإخلاص وصدقك
محبة وانقياد والقبول لها .
وزيد ثامنها الكفران منك بما
سوى الإله من الأوثان قد ألها .
১. ইলম।
২. দূঢ় বিশ্বাস।
৩. ইখলাস।
৪. সততা, আন্তরিকতা।
৫. ভালোবাসা।
৬. আত্মসমর্পণ।
৭. ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-কে মনে প্রাণে গ্রহণ করা।
৮. আল্লাহর বিপরীতে উপাস্য সকল মূর্তি প্রত্যাখ্যান করা।
আটটি মূল ভিত্তির ওপর সামান্য আলোকপাত:
«مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَعْلَمُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ» .
“যে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোনো মা‘বূদ নেই) এর অর্থ, তাৎপর্যের জ্ঞান নিয়ে মারা গেল সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’’ [মুসান্নাফে ইবন আবি শায়বাহ, হাদীস নং ১০৮৬৮; মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৪৯৮।]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,
«إِنَّ اللهَ قَدْ حَرَّمَ عَلَى النَّارِ مَنْ قَالَ : لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ يَبْتَغِي بِذَلِكَ وَجْهَ اللهِ» .
“অবশ্যই আল্লাহ তা‘আলা ঐ ব্যক্তির ওপর জাহান্নাম হারাম করে দিয়েছেন, যে আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ কালেমাটি পাঠ করেছে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৪০১, ১১৮৫; সহীহ মুসলিম, ১/৪৫৪।]
আফসোস! অনেক মানুষ কালেমায়ে শাহাদাত শুধু মুখে উচ্চারণ করে পরমানন্দে নিশ্চিন্ত বসে আছে, অথচ এর শর্ত, এর দাবী বাস্তবায়ন যে কত অপরিহার্য তা একেবারে বেমালুম ভুলে আছে। ওহাব ইবন মুনাব্বিহ রহ.-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল,
«أَلَيْسَ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مِفْتَاحُ الجَنَّةِ؟ قَالَ : «بَلَى، وَلَكِنْ لَيْسَ مِفْتَاحٌ إِلَّا لَهُ أَسْنَانٌ، فَإِنْ جِئْتَ بِمِفْتَاحٍ لَهُ أَسْنَانٌ فُتِحَ لَكَ، وَإِلَّا لَمْ يُفْتَحْ لَكَ» .
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ কি জান্নাতের চাবি নয়? তিনি উত্তর দিলেন: অবশ্যই। তবে প্রতিটি চাবির কিন্তু দাঁত থাকে। যদি তুমি দাঁত আছে এমন চাবি নিয়ে আস, তোমাকে দরজা খুলে দেওয়া হবে। অন্যথায় দরজা খুলে দেওয়া হবে না।” [সহীহ বুখারী ২/৭১।]
কতক প্রজ্ঞাময় ওলামায়ে কেরাম নিম্নের পংক্তির মাধ্যমে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর শর্তগুলো একত্রিত করে বর্ণনা করে দিয়েছেন:
علم يقين وإخلاص وصدقك
محبة وانقياد والقبول لها .
وزيد ثامنها الكفران منك بما
سوى الإله من الأوثان قد ألها .
১. ইলম।
২. দূঢ় বিশ্বাস।
৩. ইখলাস।
৪. সততা, আন্তরিকতা।
৫. ভালোবাসা।
৬. আত্মসমর্পণ।
৭. ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-কে মনে প্রাণে গ্রহণ করা।
৮. আল্লাহর বিপরীতে উপাস্য সকল মূর্তি প্রত্যাখ্যান করা।
আটটি মূল ভিত্তির ওপর সামান্য আলোকপাত:
বান্দাকে অবশ্যই জানতে হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (প্রত্যাখ্যান ও গ্রহণ) অস্বীকৃতি ও স্বীকৃতি দু’টি বিষয়ের সমন্বয়। এই কালেমার দাবি হচ্ছে: আল্লাহ ছাড়া যে কোনো জিনিসের ইবাদতের উপযুক্ততা প্রত্যাখ্যান করা এবং একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য স্বীকৃতি প্রদান করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَٱعۡلَمۡ أَنَّهُۥ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّهُ﴾ [ محمد : ١٩ ]
“জেনে রাখুন, আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই।” [সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ১৯] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَعْلَمُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ» .
“যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর তাৎপর্য ও অর্থ জানাবস্থায় মারা গেল, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” [মুসান্নাফে ইবন আবি শায়বাহ, হাদীস নং ১০৮৬৮; মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৪৯৮।]
﴿فَٱعۡلَمۡ أَنَّهُۥ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّهُ﴾ [ محمد : ١٩ ]
“জেনে রাখুন, আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই।” [সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ১৯] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَعْلَمُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ» .
“যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর তাৎপর্য ও অর্থ জানাবস্থায় মারা গেল, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” [মুসান্নাফে ইবন আবি শায়বাহ, হাদীস নং ১০৮৬৮; মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৪৯৮।]
‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর অর্থ ও তাৎপর্যকে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করার মানে এর ব্যাপারে কোনো ধরনের সংশয়, সন্দেহ বা কিংকর্তব্যবিমূঢ়তার বিন্দুমাত্র সংমিশ্রন থাকতে পারবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ ثُمَّ لَمۡ يَرۡتَابُواْ وَجَٰهَدُواْ بِأَمۡوَٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِۚ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلصَّٰدِقُونَ ١٥﴾ [ الحجرات : ١٥ ]
“তারাই মুমিন, যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি ঈমান আনার পর সন্দেহ পোষণ করে না এবং আল্লাহর রাস্তায় ধন-সম্পদ ও জীবন দ্বারা জিহাদ করে। তারাই সত্যনিষ্ঠ।” [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ১৫] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ হুরায়রাকে বলেন,
«يَا أَبَا هُرَيْرَةَ، اذْهَبْ بِنَعْلَيَّ هَاتَيْنِ فَمَنْ لَقِيتَ مِنْ وَرَاءِ هَذَا الْحَائِطِ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ مُسْتَيْقِنًا بِهَا قَلْبُهُ فَبَشِّرْهُ بِالْجَنَّةِ»
“হে আবূ হুরায়রা! তুমি আমার এ দু’টি জুতা নিয়ে যাও (তাকে জুতা দু’টি প্রদান করলেন) এ দেওয়ালের ওপাশে অন্তরের অন্তস্থল থেকে দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর সাক্ষ্য প্রদানকারী যার সাথেই তুমি সাক্ষাত করবে তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩১।]
﴿إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ ثُمَّ لَمۡ يَرۡتَابُواْ وَجَٰهَدُواْ بِأَمۡوَٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِۚ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلصَّٰدِقُونَ ١٥﴾ [ الحجرات : ١٥ ]
“তারাই মুমিন, যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি ঈমান আনার পর সন্দেহ পোষণ করে না এবং আল্লাহর রাস্তায় ধন-সম্পদ ও জীবন দ্বারা জিহাদ করে। তারাই সত্যনিষ্ঠ।” [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ১৫] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ হুরায়রাকে বলেন,
«يَا أَبَا هُرَيْرَةَ، اذْهَبْ بِنَعْلَيَّ هَاتَيْنِ فَمَنْ لَقِيتَ مِنْ وَرَاءِ هَذَا الْحَائِطِ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ مُسْتَيْقِنًا بِهَا قَلْبُهُ فَبَشِّرْهُ بِالْجَنَّةِ»
“হে আবূ হুরায়রা! তুমি আমার এ দু’টি জুতা নিয়ে যাও (তাকে জুতা দু’টি প্রদান করলেন) এ দেওয়ালের ওপাশে অন্তরের অন্তস্থল থেকে দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর সাক্ষ্য প্রদানকারী যার সাথেই তুমি সাক্ষাত করবে তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩১।]
অন্তর ও অঙ্গ-প্রতঙ্গের মাধ্যমে এই কালেমার আবেদন সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করা। যে ব্যক্তি এই কালেমার আবেদনকে প্রত্যাখ্যান করবে, আন্তরিকভাবে মেনে না নিবে সে কাফির। সাধারণত প্রত্যাখ্যান করা হয়ে থাকে অহংকার, বিরোধিতা, হিংসা, বাপ-দাদার অন্ধানুকরণ ইত্যাদি কারণে। যেমন, পবিত্র কুরআনের ভাষায় অহংকারবশতঃ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর অর্থ ও তাৎপর্যকে প্রত্যাখ্যানকারী কাফিরদের ঔদ্ধত্য প্রকাশের কারণে হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّهُمۡ كَانُوٓاْ إِذَا قِيلَ لَهُمۡ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّهُ يَسۡتَكۡبِرُونَ ٣٥ وَيَقُولُونَ أَئِنَّا لَتَارِكُوٓاْ ءَالِهَتِنَا لِشَاعِرٖ مَّجۡنُونِۢ ٣٦﴾ [ الصافات : ٣٥، ٣٦ ]
“তাদের যখন বলা হত আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই, তখন তারা ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করত এবং বলত, আমরা কি এক উন্মাদ কবির কথায় আমাদের উপাস্যদের পরিত্যাগ করব?’’ [সূরা আস-সাফফাত, আয়াত: ৩৫-৩৬]
অতীত উম্মতের ভিতর যারা এই কালেমার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে, আন্তরিকভাবে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, তাদের থেকে নেওয়া প্রতিশোধ চিত্র পবিত্র কুরআনে তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَكَذَٰلِكَ مَآ أَرۡسَلۡنَا مِن قَبۡلِكَ فِي قَرۡيَةٖ مِّن نَّذِيرٍ إِلَّا قَالَ مُتۡرَفُوهَآ إِنَّا وَجَدۡنَآ ءَابَآءَنَا عَلَىٰٓ أُمَّةٖ وَإِنَّا عَلَىٰٓ ءَاثَٰرِهِم مُّقۡتَدُونَ ٢٣ ۞قَٰلَ أَوَلَوۡ جِئۡتُكُم بِأَهۡدَىٰ مِمَّا وَجَدتُّمۡ عَلَيۡهِ ءَابَآءَكُمۡۖ قَالُوٓاْ إِنَّا بِمَآ أُرۡسِلۡتُم بِهِۦ كَٰفِرُونَ ٢٤ فَٱنتَقَمۡنَا مِنۡهُمۡۖ فَٱنظُرۡ كَيۡفَ كَانَ عَٰقِبَةُ ٱلۡمُكَذِّبِينَ ٢٥﴾ [ الزخرف : ٢٣، ٢٥ ]
“এমনিভাবে আপনার পূর্বে আমরা যখন কোনো জনপদে কোনো সতর্ককারী প্রেরণ করেছি, তখন তাদেরই বিত্তশালীরা বলেছে, আমরা আমাদের বাপ-দাদাদের পেয়েছি এক পথের পথিক এবং আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলি। সে বলত, তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষদেরকে যে বিষয়ের ওপর পেয়েছ, আমি যদি তদপেক্ষা উত্তম বিষয় নিয়ে তোমাদের কাছে এসে থাকি, তবুও কি তোমরা তাই বলবে, তারা বলত তোমরা যে বিষয়সহ প্রেরিত হয়েছ, তা আমরা মানব না। ফলে আমি তাদের থেকে প্রতিশোধ নিয়েছি। অতঃপর দেখুন, মিথ্যারোপকারীদের পরিণাম কিরূপ হয়েছে।” [সূরা আয-যুখরুফ, আয়াত: ২৩-২৫]
﴿إِنَّهُمۡ كَانُوٓاْ إِذَا قِيلَ لَهُمۡ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّهُ يَسۡتَكۡبِرُونَ ٣٥ وَيَقُولُونَ أَئِنَّا لَتَارِكُوٓاْ ءَالِهَتِنَا لِشَاعِرٖ مَّجۡنُونِۢ ٣٦﴾ [ الصافات : ٣٥، ٣٦ ]
“তাদের যখন বলা হত আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই, তখন তারা ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করত এবং বলত, আমরা কি এক উন্মাদ কবির কথায় আমাদের উপাস্যদের পরিত্যাগ করব?’’ [সূরা আস-সাফফাত, আয়াত: ৩৫-৩৬]
অতীত উম্মতের ভিতর যারা এই কালেমার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে, আন্তরিকভাবে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, তাদের থেকে নেওয়া প্রতিশোধ চিত্র পবিত্র কুরআনে তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَكَذَٰلِكَ مَآ أَرۡسَلۡنَا مِن قَبۡلِكَ فِي قَرۡيَةٖ مِّن نَّذِيرٍ إِلَّا قَالَ مُتۡرَفُوهَآ إِنَّا وَجَدۡنَآ ءَابَآءَنَا عَلَىٰٓ أُمَّةٖ وَإِنَّا عَلَىٰٓ ءَاثَٰرِهِم مُّقۡتَدُونَ ٢٣ ۞قَٰلَ أَوَلَوۡ جِئۡتُكُم بِأَهۡدَىٰ مِمَّا وَجَدتُّمۡ عَلَيۡهِ ءَابَآءَكُمۡۖ قَالُوٓاْ إِنَّا بِمَآ أُرۡسِلۡتُم بِهِۦ كَٰفِرُونَ ٢٤ فَٱنتَقَمۡنَا مِنۡهُمۡۖ فَٱنظُرۡ كَيۡفَ كَانَ عَٰقِبَةُ ٱلۡمُكَذِّبِينَ ٢٥﴾ [ الزخرف : ٢٣، ٢٥ ]
“এমনিভাবে আপনার পূর্বে আমরা যখন কোনো জনপদে কোনো সতর্ককারী প্রেরণ করেছি, তখন তাদেরই বিত্তশালীরা বলেছে, আমরা আমাদের বাপ-দাদাদের পেয়েছি এক পথের পথিক এবং আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলি। সে বলত, তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষদেরকে যে বিষয়ের ওপর পেয়েছ, আমি যদি তদপেক্ষা উত্তম বিষয় নিয়ে তোমাদের কাছে এসে থাকি, তবুও কি তোমরা তাই বলবে, তারা বলত তোমরা যে বিষয়সহ প্রেরিত হয়েছ, তা আমরা মানব না। ফলে আমি তাদের থেকে প্রতিশোধ নিয়েছি। অতঃপর দেখুন, মিথ্যারোপকারীদের পরিণাম কিরূপ হয়েছে।” [সূরা আয-যুখরুফ, আয়াত: ২৩-২৫]
বাহ্যিক অঙ্গ-প্রতঙ্গ, আভ্যন্তরিণ মননশীলতার মাধ্যমে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এই কালেমার অর্থ, আবেদন ও তাৎপর্যকে সম্পূর্ণরূপে মেনে নেওয়া। যার সত্যতা প্রমাণিত হবে, আল্লাহ তাআলার আদেশ বাস্তবায়ন, তার পছন্দনীয় বস্তুগুলো গ্রহণ, অপছন্দনীয় বস্তুগুলো বর্জন এবং তার গোস্বা ও রাগান্বিত বিষয়-বস্তুগুলো পরিহার করার মাধ্যমে। আল্লাহ বলেন,
﴿وَمَن يُسۡلِمۡ وَجۡهَهُۥٓ إِلَى ٱللَّهِ وَهُوَ مُحۡسِنٞ فَقَدِ ٱسۡتَمۡسَكَ بِٱلۡعُرۡوَةِ ٱلۡوُثۡقَىٰۗ وَإِلَى ٱللَّهِ عَٰقِبَةُ ٱلۡأُمُورِ ٢٢ وَمَن كَفَرَ فَلَا يَحۡزُنكَ كُفۡرُهُۥٓۚ﴾ [ لقمان : ٢٢، ٢٣ ]
“যে ব্যক্তি সৎকর্মপরায়ণ হয়ে আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পন করে, সে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে এক মজবুত হাতল। যাবতীয় কাজের পরিণাম আল্লাহর ইখতিয়ারে। যে ব্যক্তি কুফুরী করে, তার কুফুরী যেন আপনাকে ক্লিষ্ট না করে।” [সূরা লুকমান, আয়াত: ২২-২৩] অন্যত্র আল্লাহ বলেন,
﴿فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤۡمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا يَجِدُواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسۡلِيمٗا ٦٥﴾ [ النساء : ٦٥ ]
“অতএব, তোমার রবের শপথ! তারা কখনো ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক বলে মেনে না নেয়, তৎপর তুমি যে বিচার করবে তা দ্বিধাহীন অন্তরে গ্রহণ না করে।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬৫] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لايؤمن أحدكم حتى يكون هواه تبعا لما جئت به» .
“তোমাদের কেউ মুমিন বলে গণ্য হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আমার আনীত বিধানের প্রতি তার প্রবৃত্তি আনুগত্য প্রকাশ না করবে।” [ইমাম নাওয়াবী কর্তৃক আরবা‘ঈন গ্রন্থে বর্ণিত।]
﴿وَمَن يُسۡلِمۡ وَجۡهَهُۥٓ إِلَى ٱللَّهِ وَهُوَ مُحۡسِنٞ فَقَدِ ٱسۡتَمۡسَكَ بِٱلۡعُرۡوَةِ ٱلۡوُثۡقَىٰۗ وَإِلَى ٱللَّهِ عَٰقِبَةُ ٱلۡأُمُورِ ٢٢ وَمَن كَفَرَ فَلَا يَحۡزُنكَ كُفۡرُهُۥٓۚ﴾ [ لقمان : ٢٢، ٢٣ ]
“যে ব্যক্তি সৎকর্মপরায়ণ হয়ে আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পন করে, সে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে এক মজবুত হাতল। যাবতীয় কাজের পরিণাম আল্লাহর ইখতিয়ারে। যে ব্যক্তি কুফুরী করে, তার কুফুরী যেন আপনাকে ক্লিষ্ট না করে।” [সূরা লুকমান, আয়াত: ২২-২৩] অন্যত্র আল্লাহ বলেন,
﴿فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤۡمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا يَجِدُواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسۡلِيمٗا ٦٥﴾ [ النساء : ٦٥ ]
“অতএব, তোমার রবের শপথ! তারা কখনো ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক বলে মেনে না নেয়, তৎপর তুমি যে বিচার করবে তা দ্বিধাহীন অন্তরে গ্রহণ না করে।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬৫] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لايؤمن أحدكم حتى يكون هواه تبعا لما جئت به» .
“তোমাদের কেউ মুমিন বলে গণ্য হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আমার আনীত বিধানের প্রতি তার প্রবৃত্তি আনুগত্য প্রকাশ না করবে।” [ইমাম নাওয়াবী কর্তৃক আরবা‘ঈন গ্রন্থে বর্ণিত।]
বান্দার অন্তরে সুপ্ত অভিব্যক্তির সাথে মুখের উচ্চারণের এতটুকু সমন্বয় থাকতে হবে, যার দ্বারা তার অবস্থা মুনাফিক তথা কপটদের অবস্থা থেকে সম্পূর্ণ পৃথক হয়ে যায়- যারা মিথ্যা ও ধোকার আশ্রয় নিয়ে মুখে এমন সব কথা উচ্চারণ করে যা তাদের অন্তরে বিদ্যমান থাকে না। আল্লাহ বলেন,
﴿وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَقُولُ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ وَبِٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ وَمَا هُم بِمُؤۡمِنِينَ ٨ يُخَٰدِعُونَ ٱللَّهَ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَمَا يَخۡدَعُونَ إِلَّآ أَنفُسَهُمۡ وَمَا يَشۡعُرُونَ ٩ فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٞ فَزَادَهُمُ ٱللَّهُ مَرَضٗاۖ وَلَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمُۢ بِمَا كَانُواْ يَكۡذِبُونَ ١٠﴾ [ البقرة : ٨، ١٠ ]
“আর মানুষের মধ্যে কিছু লোক এমন রয়েছে যারা বলে, আমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান এনেছি অথচ তারা আদৌ ঈমানদার নয়। তারা আল্লাহ এবং ঈমানদারগণকে ধোঁকা দেয়। অথচ এর দ্বারা নিজেদেরকে ছাড়া অন্য কাউকে ধোঁকা দেয় না। অথচ তারা তা অনুভব করতে পারে না। তাদের অন্তকরণ ব্যধিগ্রস্ত আর আল্লাহ তাদের ব্যধি আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন। বস্তুত তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে ভয়াবহ আযাব, তাদের মিথ্যাচারের দরুন।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ৮-১০]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَا مِنْ أَحَدٍ يَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، صِدْقًا مِنْ قَلْبِهِ، إِلَّا حَرَّمَهُ اللَّهُ عَلَى النَّارِ»
“যে ব্যক্তি আন্তরিকভাবে এ সাক্ষ্য প্রদান করবে যে, ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল’ তার ওপর আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নাম হারাম করে দিবেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২৮।]
﴿وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَقُولُ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ وَبِٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ وَمَا هُم بِمُؤۡمِنِينَ ٨ يُخَٰدِعُونَ ٱللَّهَ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَمَا يَخۡدَعُونَ إِلَّآ أَنفُسَهُمۡ وَمَا يَشۡعُرُونَ ٩ فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٞ فَزَادَهُمُ ٱللَّهُ مَرَضٗاۖ وَلَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمُۢ بِمَا كَانُواْ يَكۡذِبُونَ ١٠﴾ [ البقرة : ٨، ١٠ ]
“আর মানুষের মধ্যে কিছু লোক এমন রয়েছে যারা বলে, আমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান এনেছি অথচ তারা আদৌ ঈমানদার নয়। তারা আল্লাহ এবং ঈমানদারগণকে ধোঁকা দেয়। অথচ এর দ্বারা নিজেদেরকে ছাড়া অন্য কাউকে ধোঁকা দেয় না। অথচ তারা তা অনুভব করতে পারে না। তাদের অন্তকরণ ব্যধিগ্রস্ত আর আল্লাহ তাদের ব্যধি আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন। বস্তুত তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে ভয়াবহ আযাব, তাদের মিথ্যাচারের দরুন।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ৮-১০]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَا مِنْ أَحَدٍ يَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، صِدْقًا مِنْ قَلْبِهِ، إِلَّا حَرَّمَهُ اللَّهُ عَلَى النَّارِ»
“যে ব্যক্তি আন্তরিকভাবে এ সাক্ষ্য প্রদান করবে যে, ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল’ তার ওপর আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নাম হারাম করে দিবেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২৮।]
এই কালেমা ও তার আবেদনের প্রতি অগাধ ভালোবাসা ও মহব্বত রাখা। অর্থাৎ এই কালেমা অনুযায়ী আমল পছন্দ করা, যারা এর ওপর আমল করে এবং এর প্রতি আহ্বান করে তাদের মহব্বত করা। যারা এই কালেমাকে অপছন্দ করে এর সাথে প্রতারণা বা মিথ্যারোপ করে, এর থেকে পৃষ্ঠপ্রর্দশন করে ও এর প্রচার প্রসারকে বাধাগ্রস্ত করে, তাদেরকে অপছন্দ ও প্রতিহত করা। এই কালেমার প্রতি মহব্বতের প্রমাণ দেওয়ার জন্য আরো প্রয়োজন- আল্লাহ তাআলার আদেশকৃত ও পছন্দনীয় জিনিসগুলো মেনে নেওয়া, যদিও তা প্রবৃত্তির বিপরীত হয়। অপরপক্ষে আল্লাহ তা‘আলার নিষেধকৃত ও অপছন্দনীয় জিনিসগুলোর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা, তা থেকে দূরে থাকা, যদিও তার প্রতি অন্তর ধাবিত হয়। আল্লাহর বান্দাদের সাথে সর্ম্পক স্থাপন করা। আল্লাহর শত্রুদের সাথে সর্ম্পকচ্ছেদ করা। রাসূলের অনুসেরন অনুকরণ করা। তার দিক নির্দেশনার অনুসরণ করা। তার আনীত বিধানকে কবুল করা। এ ছাড়া মহব্বত শুধু একটি দাবী যার কোনো বাস্তবতা নেই। আল্লাহ বলেন,
﴿وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَتَّخِذُ مِن دُونِ ٱللَّهِ أَندَادٗا يُحِبُّونَهُمۡ كَحُبِّ ٱللَّهِۖ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَشَدُّ حُبّٗا لِّلَّهِۗ﴾ [ البقرة : ١٦٥ ]
“আর কোনো লোক এমন রয়েছে যারা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কিছুকে আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করে এবং এদের প্রতি এমন ভালোবাসা পোষণ করে, যেমন আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা হয়ে থাকে। কিন্তু যারা আল্লাহর প্রতি ঈমানদার তাদের ভালোবাসা এদের তুলনায় বহুগুণ বেশি।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৬৫]
অর্থাৎ কালেমায়ে তাওহীদ তাদের অন্তরে ও হৃদয়ে স্থায়ীরূপ নিয়েছে। তাদের অন্তর ও হৃদয় এ কালেমা পরিপূর্ণ করে দিয়েছে, বিধায় অন্য কোনো জিনিসের জন্য তাদের অন্তর উন্মুক্ত হয় না। তাদের অন্তরে যত মহব্বত-বিদ্বেষ দেখা যায় সব এই কালেমার অনুকরণে উৎসারিত হয়।
﴿وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَتَّخِذُ مِن دُونِ ٱللَّهِ أَندَادٗا يُحِبُّونَهُمۡ كَحُبِّ ٱللَّهِۖ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَشَدُّ حُبّٗا لِّلَّهِۗ﴾ [ البقرة : ١٦٥ ]
“আর কোনো লোক এমন রয়েছে যারা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কিছুকে আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করে এবং এদের প্রতি এমন ভালোবাসা পোষণ করে, যেমন আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা হয়ে থাকে। কিন্তু যারা আল্লাহর প্রতি ঈমানদার তাদের ভালোবাসা এদের তুলনায় বহুগুণ বেশি।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৬৫]
অর্থাৎ কালেমায়ে তাওহীদ তাদের অন্তরে ও হৃদয়ে স্থায়ীরূপ নিয়েছে। তাদের অন্তর ও হৃদয় এ কালেমা পরিপূর্ণ করে দিয়েছে, বিধায় অন্য কোনো জিনিসের জন্য তাদের অন্তর উন্মুক্ত হয় না। তাদের অন্তরে যত মহব্বত-বিদ্বেষ দেখা যায় সব এই কালেমার অনুকরণে উৎসারিত হয়।
সমস্ত ইবাদতে একমাত্র আল্লাহর প্রতি নিবিষ্ট চিত্তে মনোনিবেশন করা। ছোট বড় সমস্ত শির্ক থেকে নিয়ত পরিশুদ্ধ রাখা। আল্লাহ বলেন,
﴿وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ وَيُقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤۡتُواْ ٱلزَّكَوٰةَۚ وَذَٰلِكَ دِينُ ٱلۡقَيِّمَةِ ٥﴾ [ البينة : ٥ ]
“তাদেরকে এ ছাড়া কোনো নির্দেশ করা হয় নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করবে, সালাত কায়েম করবে এবং যাকাত দিবে। এটাই সঠিক দীন।” [সূরা আল-বায়্যিনাহ, আয়াত: ৫] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إِنَّ اللهَ قَدْ حَرَّمَ عَلَى النَّارِ مَنْ قَالَ : لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ يَبْتَغِي بِذَلِكَ وَجْهَ اللهِ» .
“অবশ্যই আল্লাহ তা‘আলা ঐ ব্যক্তির ওপর জাহান্নাম হারাম করে দিয়েছেন, যে আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ কালেমাটি পাঠ করেছে।’’ [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৪০১, ১১৮৫; সহীহ মুসলিম ১/৪৫৪।]
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَنْ أَسْعَدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِكَ يَوْمَ القِيَامَةِ؟ فَقَالَ : " لَقَدْ ظَنَنْتُ، يَا أَبَا هُرَيْرَةَ، أَنْ لاَ يَسْأَلَنِي عَنْ هَذَا الحَدِيثِ أَحَدٌ أَوَّلُ مِنْكَ، لِمَا رَأَيْتُ مِنْ حِرْصِكَ عَلَى الحَدِيثِ، أَسْعَدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِي يَوْمَ القِيَامَةِ مَنْ قَالَ : لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، خَالِصًا مِنْ قِبَلِ نَفْسِهِ» .
“আমি বলেছি হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিয়ামতের দিন আপনার সুপারিশের মাধ্যমে কে সবচেয়ে বেশি সৌভাগ্যবান হবে? তিনি বললেন: হে আবূ হুরায়রা, আমি নিশ্চিতভাবে ধারণা করেছিলাম যে, এ ব্যাপারে তোমার আগে কেউ আমাকে জিজ্ঞাসা করবে না। যেহেতু হাদীসের প্রতি তোমার অধিক আগ্রহ লক্ষ্য করেছি। (শুন!) কিয়ামতের দিন আমার শাফা‘আত বা সুপারিশ দ্বারা ঐ ব্যক্তি বেশি লাভবান হবে যে অন্তরের অন্তস্থল থেকে নিবিষ্ট চিত্তে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৯, ৬৫৭০; মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৮৮৫৭।]
﴿وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ وَيُقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤۡتُواْ ٱلزَّكَوٰةَۚ وَذَٰلِكَ دِينُ ٱلۡقَيِّمَةِ ٥﴾ [ البينة : ٥ ]
“তাদেরকে এ ছাড়া কোনো নির্দেশ করা হয় নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করবে, সালাত কায়েম করবে এবং যাকাত দিবে। এটাই সঠিক দীন।” [সূরা আল-বায়্যিনাহ, আয়াত: ৫] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إِنَّ اللهَ قَدْ حَرَّمَ عَلَى النَّارِ مَنْ قَالَ : لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ يَبْتَغِي بِذَلِكَ وَجْهَ اللهِ» .
“অবশ্যই আল্লাহ তা‘আলা ঐ ব্যক্তির ওপর জাহান্নাম হারাম করে দিয়েছেন, যে আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ কালেমাটি পাঠ করেছে।’’ [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৪০১, ১১৮৫; সহীহ মুসলিম ১/৪৫৪।]
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَنْ أَسْعَدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِكَ يَوْمَ القِيَامَةِ؟ فَقَالَ : " لَقَدْ ظَنَنْتُ، يَا أَبَا هُرَيْرَةَ، أَنْ لاَ يَسْأَلَنِي عَنْ هَذَا الحَدِيثِ أَحَدٌ أَوَّلُ مِنْكَ، لِمَا رَأَيْتُ مِنْ حِرْصِكَ عَلَى الحَدِيثِ، أَسْعَدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِي يَوْمَ القِيَامَةِ مَنْ قَالَ : لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، خَالِصًا مِنْ قِبَلِ نَفْسِهِ» .
“আমি বলেছি হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিয়ামতের দিন আপনার সুপারিশের মাধ্যমে কে সবচেয়ে বেশি সৌভাগ্যবান হবে? তিনি বললেন: হে আবূ হুরায়রা, আমি নিশ্চিতভাবে ধারণা করেছিলাম যে, এ ব্যাপারে তোমার আগে কেউ আমাকে জিজ্ঞাসা করবে না। যেহেতু হাদীসের প্রতি তোমার অধিক আগ্রহ লক্ষ্য করেছি। (শুন!) কিয়ামতের দিন আমার শাফা‘আত বা সুপারিশ দ্বারা ঐ ব্যক্তি বেশি লাভবান হবে যে অন্তরের অন্তস্থল থেকে নিবিষ্ট চিত্তে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৯, ৬৫৭০; মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৮৮৫৭।]
কালেমা শাহাদাত : কালেমার মর্ম উপলব্ধি করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্যে একান্ত জরুরী। এ প্রবন্ধে পাঠক কালেমা সম্পর্কিত নিম্নের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অবগত হবেন : (১) ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর অর্থ, (২) শাহাদাতের রোকনসমূহ, (৩) ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর শর্ত , (৫) মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাক্ষ্য প্রদানের মর্মার্থ, (৫) মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাক্ষ্য প্রদানের সাথে সম্পৃক্ত বিষয়াবলি, (৬) কালেমা বিরোধী কাজ ও কথা।
বান্দার উচিৎ আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত ধারণাপ্রসূত সকল উপাস্য-মা‘বূদ অস্বীকার করা। সাথে সাথে এ বিশ্বাস সুদৃঢ় করা যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোনো উপাস্য নেই। আল্লাহ ছাড়া যাদের ইবাদত করা হচ্ছে সব অসার। যে কেউ এ সমস্ত কাজ করে সে আল্লাহর ওপর অপবাদ আরোপ করে, হোক না সে উপাস্য (মা‘বুদ) নৈকট্যপ্রাপ্ত ফিরিশতা, প্রেরিত রাসূল, নেককার ওলী, পাথর, গাছ, চন্দ্র, দল, গোষ্টি-জ্ঞাতি অথবা কোনো সংবিধান...ইত্যাদি। আল্লাহ বলেন,
﴿فَمَن يَكۡفُرۡ بِٱلطَّٰغُوتِ وَيُؤۡمِنۢ بِٱللَّهِ فَقَدِ ٱسۡتَمۡسَكَ بِٱلۡعُرۡوَةِ ٱلۡوُثۡقَىٰ لَا ٱنفِصَامَ لَهَاۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ﴾ [ البقرة : ٢٥٦ ]
“যে তাগুতকে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহতে বিশ্বাস স্থাপন করবে সে ধারণ করে এমন সুদৃঢ় হাতল যা ভঙ্গ হবার নয়। আর আল্লাহ সবই শুনেন এবং সবই জানেন।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৫৬]
﴿وَلَقَدۡ بَعَثۡنَا فِي كُلِّ أُمَّةٖ رَّسُولًا أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَٱجۡتَنِبُواْ ٱلطَّٰغُوتَ﴾ [ النحل : ٣٦ ]
“আর আমরা প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুতকে বর্জন কর।” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৩৬] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ قَالَ : لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَكَفَرَ بِمَا يُعْبَدُ مَنْ دُونِ اللهِ، حَرُمَ مَالُهُ، وَدَمُهُ، وَحِسَابُهُ عَلَى اللهِ» .
“যে কেউ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে এবং আল্লাহ ছাড়া সকল উপাস্যকে অস্বীকার করেছে তার সম্পদ ও জীবন হারাম হয়ে গেছে এবং তার হিসাব আল্লাহর ওপর ন্যস্ত।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৩।]
হে মুসলিম ভাই! তুমি ভালো করে জেনে নাও, জান্নাতের সৌভাগ্য লাভ করা, জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া এ কালেমার ওপর অটল, অবিরাম অবিচল থেকে আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করা ব্যতীত সম্ভব নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِۦ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسۡلِمُونَ ١٠٢﴾ [ ال عمران : ١٠٢ ]
“হে ঈমানদারগণ, আল্লাহর যথাযথ তাকওয়া অবলম্বন করা এবং অবশ্যই মুসলিম না হয়ে মারা যেও না।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০২] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ مَاتَ مِنْ أُمَّتِي لاَ يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا دَخَلَ الجَنَّةَ» .
“আল্লাহ তা‘আলার সাথে শির্ক না করে যে ব্যক্তি মারা গেল, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২৩৭, ১২৩৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯২, ৯৩।] অন্যত্র বলেন,
«مَا مِنْ عَبْدٍ قَالَ : لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، ثُمَّ مَاتَ عَلَى ذَلِكَ إِلَّا دَخَلَ الجَنَّةَ» .
“যে কোনো ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে অতঃপর এর ওপর স্থির থেকে মারা গিয়েছে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৮২৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৪।]
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি এই কালেমা ভিন্ন অন্য কোনো নীতির ওপর স্থির থেকে আল্লাহর সমীপে উপস্থিত হবে এবং শির্ক করা অবস্থায় মারা যাবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আল্লাহ বলেন,
﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُۚ﴾ [ النساء : ٤٨ ]
“নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন না যে লোক তার সাথে শরীক করে। তিনি ক্ষমা করবেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৪৮] অন্যত্র আল্লাহ বলেন,
﴿إِنَّهُۥ مَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِ ٱلۡجَنَّةَ وَمَأۡوَىٰهُ ٱلنَّارُۖ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ أَنصَارٖ﴾ [ المائدة : ٧٢ ]
“নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার সাথে অংশিদার স্থির করবে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম। আর অত্যাচারীদের কোনো সাহায্যকারী নেই।” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৭২] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ لَقِيَ اللَّهَ لاَ يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا دَخَلَ الجَنَّةَ»
“যে শির্কমুক্ত অবস্থায় আল্লাহ তা‘আলার সাথে সাক্ষাত করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি শির্কে জড়িত হয়ে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হবে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৩।]
﴿فَمَن يَكۡفُرۡ بِٱلطَّٰغُوتِ وَيُؤۡمِنۢ بِٱللَّهِ فَقَدِ ٱسۡتَمۡسَكَ بِٱلۡعُرۡوَةِ ٱلۡوُثۡقَىٰ لَا ٱنفِصَامَ لَهَاۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ﴾ [ البقرة : ٢٥٦ ]
“যে তাগুতকে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহতে বিশ্বাস স্থাপন করবে সে ধারণ করে এমন সুদৃঢ় হাতল যা ভঙ্গ হবার নয়। আর আল্লাহ সবই শুনেন এবং সবই জানেন।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৫৬]
﴿وَلَقَدۡ بَعَثۡنَا فِي كُلِّ أُمَّةٖ رَّسُولًا أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَٱجۡتَنِبُواْ ٱلطَّٰغُوتَ﴾ [ النحل : ٣٦ ]
“আর আমরা প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুতকে বর্জন কর।” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৩৬] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ قَالَ : لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَكَفَرَ بِمَا يُعْبَدُ مَنْ دُونِ اللهِ، حَرُمَ مَالُهُ، وَدَمُهُ، وَحِسَابُهُ عَلَى اللهِ» .
“যে কেউ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে এবং আল্লাহ ছাড়া সকল উপাস্যকে অস্বীকার করেছে তার সম্পদ ও জীবন হারাম হয়ে গেছে এবং তার হিসাব আল্লাহর ওপর ন্যস্ত।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৩।]
হে মুসলিম ভাই! তুমি ভালো করে জেনে নাও, জান্নাতের সৌভাগ্য লাভ করা, জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া এ কালেমার ওপর অটল, অবিরাম অবিচল থেকে আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করা ব্যতীত সম্ভব নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِۦ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسۡلِمُونَ ١٠٢﴾ [ ال عمران : ١٠٢ ]
“হে ঈমানদারগণ, আল্লাহর যথাযথ তাকওয়া অবলম্বন করা এবং অবশ্যই মুসলিম না হয়ে মারা যেও না।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০২] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ مَاتَ مِنْ أُمَّتِي لاَ يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا دَخَلَ الجَنَّةَ» .
“আল্লাহ তা‘আলার সাথে শির্ক না করে যে ব্যক্তি মারা গেল, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২৩৭, ১২৩৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯২, ৯৩।] অন্যত্র বলেন,
«مَا مِنْ عَبْدٍ قَالَ : لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، ثُمَّ مَاتَ عَلَى ذَلِكَ إِلَّا دَخَلَ الجَنَّةَ» .
“যে কোনো ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে অতঃপর এর ওপর স্থির থেকে মারা গিয়েছে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৮২৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৪।]
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি এই কালেমা ভিন্ন অন্য কোনো নীতির ওপর স্থির থেকে আল্লাহর সমীপে উপস্থিত হবে এবং শির্ক করা অবস্থায় মারা যাবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আল্লাহ বলেন,
﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُۚ﴾ [ النساء : ٤٨ ]
“নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন না যে লোক তার সাথে শরীক করে। তিনি ক্ষমা করবেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৪৮] অন্যত্র আল্লাহ বলেন,
﴿إِنَّهُۥ مَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِ ٱلۡجَنَّةَ وَمَأۡوَىٰهُ ٱلنَّارُۖ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ أَنصَارٖ﴾ [ المائدة : ٧٢ ]
“নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার সাথে অংশিদার স্থির করবে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম। আর অত্যাচারীদের কোনো সাহায্যকারী নেই।” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৭২] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ لَقِيَ اللَّهَ لاَ يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا دَخَلَ الجَنَّةَ»
“যে শির্কমুক্ত অবস্থায় আল্লাহ তা‘আলার সাথে সাক্ষাত করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি শির্কে জড়িত হয়ে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হবে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৩।]
‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ এর সাক্ষ্য প্রদানের অর্থ: মৌখিকভাবে স্বীকৃতির সাথে সাথে অন্তরে অবিচল, অটল ও অগাধ বিশ্বাস রাখা যে, তাদের নিকট আল্লাহর রিসালত বা বাণী পৌঁছানোর জন্য মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল্লাহ দায়িত্বপ্রাপ্ত রাসূল। আল্লাহ বলেন,
﴿قُلۡ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنِّي رَسُولُ ٱللَّهِ إِلَيۡكُمۡ جَمِيعًا﴾ [ الاعراف : ١٥٨ ]
“বলে দিন, হে সকল মানবমণ্ডলী! আমি তোমাদের প্রতি আল্লাহর প্রেরিত রাসূল।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৫৮] অন্যত্র আল্লাহ বলেন,
﴿مُّحَمَّدٞ رَّسُولُ ٱللَّهِۚ﴾ [ الفتح : ٢٩ ]
“মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল।” [সূরা আল-ফাতহ, আয়াত: ২৯] অন্যত্র আল্লাহ বলেন,
﴿تَبَارَكَ ٱلَّذِي نَزَّلَ ٱلۡفُرۡقَانَ عَلَىٰ عَبۡدِهِۦ لِيَكُونَ لِلۡعَٰلَمِينَ نَذِيرًا ١﴾ [ الفرقان : ١ ]
“কতই না বরকতময় তিনি, যিনি তার বান্দার প্রতি ফুরক্বান (কুরআন) অবতীর্ণ করেছেন। যাতে তিনি সৃষ্টিকুলের সকলের জন্যে সতর্ককারী হন।” [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ১]
‘আল্লাহ তা‘আলা তাকে শির্কসহ সমস্ত অপছন্দ-পরিত্যাজ্য কার্যকলাপ থেকে ভীতি প্রর্দশনকারী, নির্ভেজাল তাওহীদসহ সমস্ত পছন্দনীয়-গ্রহণীয় কার্যকলাপের দিকে আহ্বানকারীরূপে প্রেরণ করেছেন।’ আল্লাহ বলেন,
﴿قُمۡ فَأَنذِرۡ ٢ وَرَبَّكَ فَكَبِّرۡ ٣﴾ [ المدثر : ٢، ٣ ]
“উঠুন সতর্ক করুন, আপন রবের মহত্ব ঘোষণা করুন।” [সূরা আল-মুদ্দাসসির, আয়াত: ২-৩]
অর্থাৎ তাদেরকে শির্ক থেকে এবং মূর্তিপূজা থেকে ও আল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ সকল জিনিস থেকে ভীতিপ্রর্দশন করুন। তাওহীদ ও আল্লাহর অনুমোদিত বিধান মতে তাঁর বড়ত্ব বর্ণনা করুন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّآ أَرۡسَلۡنَٰكَ بِٱلۡحَقِّ بَشِيرٗا وَنَذِيرٗاۚ﴾ [ فاطر : ٢٤ ]
“আমরা আপনাকে সত্য দীনসহ পাঠিয়েছি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে।” [সূরা ফাতির, আয়াত: ২৪]
অর্থাৎ আমি তাকে তওহীদ, আনুগত্য ও অধিক সাওয়াবের সুসংবাদদানকারী হিসেবে প্রেরণ করেছি, সাথে সাথে শির্ক, গুনাহ ও কঠিন শাস্তির ভীতি প্রদর্শকও করেছি। অধিকন্তু আল্লাহ তা‘আলা তাকে শুধু পৌঁছিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন এবং এখানেই যথেষ্ট করতে বলেছেন। এর পর কে মানলো আর কে মানলো না এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞেস করা হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلرَّسُولُ بَلِّغۡ مَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ مِن رَّبِّكَۖ وَإِن لَّمۡ تَفۡعَلۡ فَمَا بَلَّغۡتَ رِسَالَتَهُۥۚ﴾ [ المائدة : ٦٧ ]
“হে রাসূল, পৌঁছে দিন আপনার রবের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে। আর যদি আপনি এরূপ না করেন, তবে আপনি তাঁর পয়গাম পৌঁছালেন না।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৬৭] অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿مَّا عَلَى ٱلرَّسُولِ إِلَّا ٱلۡبَلَٰغُۗ﴾ [ المائدة : ٩٩ ]
“রাসূলের দায়িত্ব শুধু পৌঁছে দেওয়া।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৯৯]
তিনি আমৃত্যু তার ওপর প্রেরিত অহী সংযোজন-বিয়োজন ব্যতীত হুবহু আমাদের পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছেন। যা আদিষ্ট হয়েছেন তা পঙ্খানুপুঙ্খ আদায় করেছেন। উম্মতের কল্যাণ কামনার সর্বশেষ উদাহরণটুকু পেশ করেছেন। এ জন্য আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেছেন:
«مَنْ حَدَّثَكَ أَنَّ مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَتَمَ شَيْئًا مِمَّا أَنْزَلَ اللَّهُ عَلَيْهِ، فَقَدْ كَذَبَ ولو كان كاتما شيئا لكتم عبس وتولى . لَيْسَ لَكَ مِنَ الأَمْرِ شَيْءٌ» .
“যদি কেউ তোমাকে বলে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ যা অহী হিসেবে নাযিল করেছেন তার কিয়দংশ গোপন করেছেন, সে মিথ্যুক। কারণ, যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো জিনিস গোপন করতেন, তাহলে অবশ্যই অত্র আয়াত দু’টি গোপন করতেন:
(১) عَبَسَ وَتَوَلَّى “তিনি ভ্রু-কুঞ্চিত করলেন এবং মুখ ফিরিয়ে নিলেন।” [সূরা আবাসা, আয়াত: ১]
(২) لَيْسَ لَكَ مِنَ الْأَمْرِ شَيْءٌ “এ ব্যাপারে আপনার কোনো করণীয় নেই।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১২৮]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে যা পৌঁছিয়েছেন তাই সর্ম্পূণ দীন। কোনো ধরনের কমতি রাখেন নি, যেখানে সংযোজন প্রয়োজন হবে। কোনো ধরনের জটিলতা রাখেন নি, যা দূরীভূত করতে হবে। আবার এমন সংক্ষিপ্ত করেন নি, যেখানে ব্যাখ্যার প্রয়োজন হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗاۚ﴾ [ المائدة : ٣ ]
“আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দীন হিসেবে মনোনীত করলাম।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৩] অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَنَزَّلۡنَا عَلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ تِبۡيَٰنٗا لِّكُلِّ شَيۡءٖ﴾ [ النحل : ٨٩ ]
“আর আমরা আপনার প্রতি নাযিল করেছি এমন কিতাব যাতে রয়েছে প্রত্যেক বস্তুর সুস্পষ্ট বর্ণনা।” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৮৯]
অতএব, কোনো ব্যক্তির এতে সংযোজন বিয়োজন বা পরিবর্তনের সুযোগ নেই। এ ঘোষণা শুনার পর যদি কেউ তাতে কোনো রকম পরিবর্তন করে, তবে পরিবর্তনকারীর ওপর এর পাপ বর্তাবে। আল্লাহ তাকে সময় মত পাকড়াও করবেন।
﴿قُلۡ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنِّي رَسُولُ ٱللَّهِ إِلَيۡكُمۡ جَمِيعًا﴾ [ الاعراف : ١٥٨ ]
“বলে দিন, হে সকল মানবমণ্ডলী! আমি তোমাদের প্রতি আল্লাহর প্রেরিত রাসূল।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৫৮] অন্যত্র আল্লাহ বলেন,
﴿مُّحَمَّدٞ رَّسُولُ ٱللَّهِۚ﴾ [ الفتح : ٢٩ ]
“মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল।” [সূরা আল-ফাতহ, আয়াত: ২৯] অন্যত্র আল্লাহ বলেন,
﴿تَبَارَكَ ٱلَّذِي نَزَّلَ ٱلۡفُرۡقَانَ عَلَىٰ عَبۡدِهِۦ لِيَكُونَ لِلۡعَٰلَمِينَ نَذِيرًا ١﴾ [ الفرقان : ١ ]
“কতই না বরকতময় তিনি, যিনি তার বান্দার প্রতি ফুরক্বান (কুরআন) অবতীর্ণ করেছেন। যাতে তিনি সৃষ্টিকুলের সকলের জন্যে সতর্ককারী হন।” [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ১]
‘আল্লাহ তা‘আলা তাকে শির্কসহ সমস্ত অপছন্দ-পরিত্যাজ্য কার্যকলাপ থেকে ভীতি প্রর্দশনকারী, নির্ভেজাল তাওহীদসহ সমস্ত পছন্দনীয়-গ্রহণীয় কার্যকলাপের দিকে আহ্বানকারীরূপে প্রেরণ করেছেন।’ আল্লাহ বলেন,
﴿قُمۡ فَأَنذِرۡ ٢ وَرَبَّكَ فَكَبِّرۡ ٣﴾ [ المدثر : ٢، ٣ ]
“উঠুন সতর্ক করুন, আপন রবের মহত্ব ঘোষণা করুন।” [সূরা আল-মুদ্দাসসির, আয়াত: ২-৩]
অর্থাৎ তাদেরকে শির্ক থেকে এবং মূর্তিপূজা থেকে ও আল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ সকল জিনিস থেকে ভীতিপ্রর্দশন করুন। তাওহীদ ও আল্লাহর অনুমোদিত বিধান মতে তাঁর বড়ত্ব বর্ণনা করুন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّآ أَرۡسَلۡنَٰكَ بِٱلۡحَقِّ بَشِيرٗا وَنَذِيرٗاۚ﴾ [ فاطر : ٢٤ ]
“আমরা আপনাকে সত্য দীনসহ পাঠিয়েছি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে।” [সূরা ফাতির, আয়াত: ২৪]
অর্থাৎ আমি তাকে তওহীদ, আনুগত্য ও অধিক সাওয়াবের সুসংবাদদানকারী হিসেবে প্রেরণ করেছি, সাথে সাথে শির্ক, গুনাহ ও কঠিন শাস্তির ভীতি প্রদর্শকও করেছি। অধিকন্তু আল্লাহ তা‘আলা তাকে শুধু পৌঁছিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন এবং এখানেই যথেষ্ট করতে বলেছেন। এর পর কে মানলো আর কে মানলো না এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞেস করা হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلرَّسُولُ بَلِّغۡ مَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ مِن رَّبِّكَۖ وَإِن لَّمۡ تَفۡعَلۡ فَمَا بَلَّغۡتَ رِسَالَتَهُۥۚ﴾ [ المائدة : ٦٧ ]
“হে রাসূল, পৌঁছে দিন আপনার রবের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে। আর যদি আপনি এরূপ না করেন, তবে আপনি তাঁর পয়গাম পৌঁছালেন না।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৬৭] অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿مَّا عَلَى ٱلرَّسُولِ إِلَّا ٱلۡبَلَٰغُۗ﴾ [ المائدة : ٩٩ ]
“রাসূলের দায়িত্ব শুধু পৌঁছে দেওয়া।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৯৯]
তিনি আমৃত্যু তার ওপর প্রেরিত অহী সংযোজন-বিয়োজন ব্যতীত হুবহু আমাদের পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছেন। যা আদিষ্ট হয়েছেন তা পঙ্খানুপুঙ্খ আদায় করেছেন। উম্মতের কল্যাণ কামনার সর্বশেষ উদাহরণটুকু পেশ করেছেন। এ জন্য আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেছেন:
«مَنْ حَدَّثَكَ أَنَّ مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَتَمَ شَيْئًا مِمَّا أَنْزَلَ اللَّهُ عَلَيْهِ، فَقَدْ كَذَبَ ولو كان كاتما شيئا لكتم عبس وتولى . لَيْسَ لَكَ مِنَ الأَمْرِ شَيْءٌ» .
“যদি কেউ তোমাকে বলে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ যা অহী হিসেবে নাযিল করেছেন তার কিয়দংশ গোপন করেছেন, সে মিথ্যুক। কারণ, যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো জিনিস গোপন করতেন, তাহলে অবশ্যই অত্র আয়াত দু’টি গোপন করতেন:
(১) عَبَسَ وَتَوَلَّى “তিনি ভ্রু-কুঞ্চিত করলেন এবং মুখ ফিরিয়ে নিলেন।” [সূরা আবাসা, আয়াত: ১]
(২) لَيْسَ لَكَ مِنَ الْأَمْرِ شَيْءٌ “এ ব্যাপারে আপনার কোনো করণীয় নেই।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১২৮]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে যা পৌঁছিয়েছেন তাই সর্ম্পূণ দীন। কোনো ধরনের কমতি রাখেন নি, যেখানে সংযোজন প্রয়োজন হবে। কোনো ধরনের জটিলতা রাখেন নি, যা দূরীভূত করতে হবে। আবার এমন সংক্ষিপ্ত করেন নি, যেখানে ব্যাখ্যার প্রয়োজন হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗاۚ﴾ [ المائدة : ٣ ]
“আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দীন হিসেবে মনোনীত করলাম।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৩] অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَنَزَّلۡنَا عَلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ تِبۡيَٰنٗا لِّكُلِّ شَيۡءٖ﴾ [ النحل : ٨٩ ]
“আর আমরা আপনার প্রতি নাযিল করেছি এমন কিতাব যাতে রয়েছে প্রত্যেক বস্তুর সুস্পষ্ট বর্ণনা।” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৮৯]
অতএব, কোনো ব্যক্তির এতে সংযোজন বিয়োজন বা পরিবর্তনের সুযোগ নেই। এ ঘোষণা শুনার পর যদি কেউ তাতে কোনো রকম পরিবর্তন করে, তবে পরিবর্তনকারীর ওপর এর পাপ বর্তাবে। আল্লাহ তাকে সময় মত পাকড়াও করবেন।
যে কোনো বান্দা কর্তৃক ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ এ সাক্ষ্য প্রদান করার ফলে কয়েকটি জিনিস অত্যাবশ্যকীয় হয়ে যায়। তন্মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো:
১. ইহকাল ও পরকালের ব্যাপারে অতীত ও ভবিষ্যত সংক্রান্ত যে সব সংবাদ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিয়েছেন সেগুলোর যথাযথ সত্যায়ণ করা, সত্য বলে মেনে নেওয়া। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿َمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ﴾ [ الحشر : ٧ ]
“রাসূল তোমাদেরকে যা দেন তা গ্রহণ কর।” [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ৭] অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ فَإِن كَذَّبُوكَ فَقُل رَّبُّكُمۡ ذُو رَحۡمَةٖ وَٰسِعَةٖ وَلَا يُرَدُّ بَأۡسُهُۥ عَنِ ٱلۡقَوۡمِ ٱلۡمُجۡرِمِينَ ١٤٧﴾ [ الانعام : ١٤٧ ]
“যদি তারা আপনাকে মিথ্যাবাদী বলে, তবে বলে দিন- তোমার রব সুপ্রশস্ত করুণার মালিক আর তার শাস্তি অপরাধীদের ওপর থেকে টলবে না।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৪৭]
২. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশ পালন করে ও নিষেধ থেকে বিরত থেকে যথাযথ তাঁর অনুসরণ করার প্রমাণ দেওয়া। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿مَّن يُطِعِ ٱلرَّسُولَ فَقَدۡ أَطَاعَ ٱللَّهَۖ وَمَن تَوَلَّىٰ فَمَآ أَرۡسَلۡنَٰكَ عَلَيۡهِمۡ حَفِيظٗا ٨٠﴾ [ النساء : ٨٠ ]
“যে লোক রসূলের হুকুম মান্য করল সে আল্লাহরই হুকুম মান্য করল। আর যে লোক বিমূখতা অবলম্বন করল, আমরা তো আপনাকে (হে মুহাম্মাদ) তাদের জন্য রক্ষক নিযুক্ত করে পাঠাই নি।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৮০] অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَن يَعۡصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَإِنَّ لَهُۥ نَارَ جَهَنَّمَ خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدًا﴾ [ الجن : ٢٣ ]
“আর যে কেউ আল্লাহ ও তার রাসূলের অবাধ্য হয়, তার জন্যে রয়েছে জাহান্নামের অগ্নি। তথায় তারা চিরকাল থাকবে।” [সূরা আল-জিন্ন, আয়াত: ২৩]
৩. একমাত্র তার আনুগত্য করা, অন্য কারো পথ বা পদ্ধতির অনুসরণ না করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَن يَبۡتَغِ غَيۡرَ ٱلۡإِسۡلَٰمِ دِينٗا فَلَن يُقۡبَلَ مِنۡهُ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٨٥﴾ [ ال عمران : ٨٥ ]
“যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দীন অন্বেষণ করে, কস্মিনকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখিরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্ত।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৮৫] অনুরূপভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ» .
“যে এমন আমল করল যার প্রতি আমাদের নির্দেশ নেই, তা পরিত্যক্ত, পরিত্যাজ্য ও প্রত্যাখ্যাত।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১০৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৪৩।] অন্যত্র বলেন,
«كُلُّ أُمَّتِي يَدْخُلُونَ الجَنَّةَ إِلَّا مَنْ أَبَى»، قَالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَمَنْ يَأْبَى؟ قَالَ : «مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الجَنَّةَ، وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أَبَى» .
“আমার উম্মতের প্রত্যেকেই জান্নাতে প্রবেশ করবে, তবে প্রত্যাখ্যানকারী ব্যতীত। তারা জিজ্ঞেস করল: হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রত্যাখ্যানকারী কে? তিনি বললেন, যে আমার আনুগত্য করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে আমার অবাধ্য হবে সেই তো প্রত্যাখ্যানকারী।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭২৮০।]
৪. পরিপূর্ণরূপে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শে আদর্শবান হওয়া। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿لَّقَدۡ كَانَ لَكُمۡ فِي رَسُولِ ٱللَّهِ أُسۡوَةٌ حَسَنَةٞ لِّمَن كَانَ يَرۡجُواْ ٱللَّهَ وَٱلۡيَوۡمَ ٱلۡأٓخِرَ وَذَكَرَ ٱللَّهَ كَثِيرٗا ٢١﴾ [ الاحزاب : ٢١ ]
“যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্যে রাসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ২১]
এতে সন্দেহ নেই যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হচ্ছেন ইসলামের চির জীবন্ত আদর্শ। প্রতিটি কাজে ও কর্মে তিনিই উত্তম পথিকৃত। যে তার আনুগত্য করবে সৌভাগ্যশীল হবে। যে তার আদর্শ ও নীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে সে পথভ্রষ্ট ও দিকভ্রান্ত হবে।
৫. সমস্ত বিরোধপূর্ণ বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মীমাংসার শরণাপন্ন হওয়া, সে মীমাংসাতে সন্তুষ্ট থাকার সাথে সাথে ন্যায় ও ইনসাফের বিশ্বাস রাখা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤۡمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا يَجِدُواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسۡلِيمٗا ٦٥﴾ [ النساء : ٦٥ ]
“অতএব, আপনার রবের শপথ! তারা কখনো ঈমানদার হতে পারবে না, যে পর্যন্ত তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে আপনাকে বিচারক বলে মেনে না নেয়। অতঃপর আপনি যে বিচার করবেন তা দ্বিধাহীন অন্তরে গ্রহণ না করে এবং এটি সন্তুষ্টচিত্তে কবুল করে।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬৫]
৬. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাপারে বাড়াবাড়িতে লিপ্ত না হওয়া এবং অবজ্ঞা ও অবাধ্যতা থেকে বিরত থাকা: আল্লাহ যতটুকু সম্মান দান করেছেন, ততটুকু সম্মান তাকে প্রদান করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَآ أَحَدٖ مِّن رِّجَالِكُمۡ وَلَٰكِن رَّسُولَ ٱللَّهِ وَخَاتَمَ ٱلنَّبِيِّۧنَۗ﴾ [ الاحزاب : ٤٠ ]
‘মুহাম্মাদ তোমাদের মধ্যকার কোনো পুরুষের পিতা নন, বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৪০]
সুতরাং রাসূলের ব্যাপারে এমন কোনো বিশ্বাস পোষণ করবে না যা আল্লাহর রুবুবিয়্যাতের সাথে শির্কের শামিল। যেমন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য আল্লাহর ন্যায় কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে বলে বিশ্বাস পোষণ করা। যেমন, তিনি গায়েব জানেন, দুনিয়ার আবর্তন ও বিবর্তনের অধিকার রাখেন, উপকার ও ক্ষতি করার সামর্থ্য রাখেন, কিছু দিতে পারেন, বঞ্চিত করতে পারেন ইত্যাদি বিশ্বাস করা।
অনুরূপভাবে রাসূলের জন্য এমন কোনো কাজ করা যাবে না, যা আল্লাহর উলুহিয়্যাতের সাথে শির্কের শামিল, যেমন কুরবানী, মানত, সাহায্যের আবেদন, সুপারিশ প্রার্থনা, ভরসা, ভয় ও আশা ইত্যাদির ব্যাপারে তার শরণাপন্ন হওয়া। উল্লিখিত যাবতীয় ইবাদত একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্যই নির্দিষ্ট। যে কেউ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করবে সে প্রকারান্তরে তার বিরোধিতায় ও অবাধ্যতায় লিপ্ত হলো। যেমন, তিনি বলেছেন:
«لَا تُطْرُونِي كَمَا أَطْرَتِ النَّصَارَى عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ فَإِنَّمَا أَنَا عَبْدٌ فَقُولُوا : عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُه» .
“তোমরা আমার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না, যেমন নাসারারা মারইয়াম তনয় ঈসার ব্যাপারে করেছে। নিঃসন্দেহে আমি আল্লাহর বান্দা। সুতরাং তোমরা আমাকে তাঁর বান্দা এবং রাসূল বলো।” [মুসনাদে আবি দাঊদ ত্বায়ালিসী, হাদীস নং ২৪।] যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা জানতেন যে, কতিপয় লোক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে। তাই তিনি উম্মতকে স্বীয় সাধ্য ও সামর্থ্যের কথা জানিয়ে দেওয়ার জন্য রাসূলকে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ قُل لَّآ أَقُولُ لَكُمۡ عِندِي خَزَآئِنُ ٱللَّهِ وَلَآ أَعۡلَمُ ٱلۡغَيۡبَ وَلَآ أَقُولُ لَكُمۡ إِنِّي مَلَكٌۖ إِنۡ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَىٰٓ إِلَيَّۚ﴾ [ الانعام : ٥٠ ]
“আপনি বলুন, আমি তোমাদেরকে বলি না যে আমার কাছে আল্লাহর ভাণ্ডার রয়েছে। তা ছাড়া আমি গায়েবী বিষয়ও অবগত নই। আমি এমনও বলি না যে, আমি ফিরিশতা। আমি তো শুধু ঐ অহীর অনুসরণ করি, যা আমার কাছে আসে।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৫০]
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قُل لَّآ أَمۡلِكُ لِنَفۡسِي نَفۡعٗا وَلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَآءَ ٱللَّهُۚ وَلَوۡ كُنتُ أَعۡلَمُ ٱلۡغَيۡبَ لَٱسۡتَكۡثَرۡتُ مِنَ ٱلۡخَيۡرِ وَمَا مَسَّنِيَ ٱلسُّوٓءُۚ إِنۡ أَنَا۠ إِلَّا نَذِيرٞ وَبَشِيرٞ لِّقَوۡمٖ يُؤۡمِنُونَ ١٨٨ ﴾ [ الاعراف : ١٨٨ ]
“আপনি বলে দিন, আমি আমার নিজের কল্যাণ বা অকল্যাণ সাধনের মালিক নই, কিন্তু যা আল্লাহ চান, আর আমি যদি গায়েবের কথা জানতাম, তাহলে বহু মঙ্গল অর্জন করে নিতাম এবং কোনো অমঙ্গল আমাকে কখনও স্পর্শ করতে পারতো না। আমি তো শুধু মাত্র ঈমানদারদের জন্য একজন ভীতিপ্রদর্শক ও সুসংবাদদাতা।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৮৮] অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قُلۡ إِنِّي لَآ أَمۡلِكُ لَكُمۡ ضَرّٗا وَلَا رَشَدٗا ٢١ قُلۡ إِنِّي لَن يُجِيرَنِي مِنَ ٱللَّهِ أَحَدٞ وَلَنۡ أَجِدَ مِن دُونِهِۦ مُلۡتَحَدًا ٢٢ إِلَّا بَلَٰغٗا مِّنَ ٱللَّهِ وَرِسَٰلَٰتِهِۦۚ وَمَن يَعۡصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَإِنَّ لَهُۥ نَارَ جَهَنَّمَ خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدًا ٢٣ ﴾ [ الجن : ٢١، ٢٣ ]
“বলুন, আমি তোমাদের ক্ষতি কিংবা কল্যাণ করার ক্ষমতা রাখি না। বলুন, আল্লাহর কবল থেকে কেউ আমাকে রক্ষা করতে পারবে না এবং তিনি ব্যতীত আমি কোনো আশ্রয়স্থল পাব না। কিন্তু আল্লাহর বাণী পৌঁছানো ও তার পয়গাম প্রচার করাই আমার কাজ। যে আল্লাহ ও তার রাসূলের অবাধ্য হবে, তার জন্যে রয়েছে জাহান্নামের অগ্নি। তথায় তারা চিরকাল থাকবে।” [সূরা আল-জিন্ন, আয়াত: ২১-২৩]
তদ্রুপ রাসূলকে ঐ সমস্ত বৈশিষ্ট্য থেকে মুক্ত মনে করা যাবে না, যার দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা তাকে ভূষিত করেছেন, এটাও এক ধরনের বাড়াবাড়ি। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা তাকে সমস্ত সৃষ্টি জীবের ওপর শ্রেষ্টত্ব দান করেছেন, রিসালাতের দায়িত্ব, সুসংবাদদান ও সতর্ককরণের দায়িত্ব প্রদান করেছেন, অলৌকিক ঘটনাবলীর দ্বারা স্বীয় নবুওয়াতের সত্যতা প্রমাণ করার ক্ষমতা প্রদান করেছেন। কতিপয় গায়েবী জ্ঞানের ইলম এবং হাওযে কাউসার প্রভৃতি দান করেছেন। সুতরাং ঈমানদারের উচিৎ এ সকল নি‘আমত ও পুরস্কারের প্রতি ঈমান রাখা, অতিরঞ্জন ও সীমালঙ্ঘন থেকে বিরত থাকা (যা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে দুনিয়া-আখিরাতে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে)।
এখানে আমরা আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রদত্ত কতিপয় স্বাতন্ত্র ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করছি, যা পূর্বের কোনো নবীকে দেওয়া হয় নি। যার ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং বলেছেন, তিনি বলেন,
«فُضِّلْتُ عَلَى الْأَنْبِيَاءِ بِسِتٍّ : أُعْطِيتُ جَوَامِعَ الْكَلِمِ، وَنُصِرْتُ بِالرُّعْبِ، وَأُحِلَّتْ لِيَ الْغَنَائِمُ، وَجُعِلَتْ لِيَ الْأَرْضُ طَهُورًا وَمَسْجِدًا، وَأُرْسِلْتُ إِلَى الْخَلْقِ كَافَّةً، وَخُتِمَ بِيَ النَّبِيُّونَ» .
“আমাকে ছয়টি জিনিসের মাধ্যমে অন্যান্য নবীদের ওপর প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। যথা-
১. পরিপূর্ণ অর্থবহ সংক্ষিপ্ত বাক্যবিন্নাস।
২. শত্রুপক্ষের অন্তরে আতংক।
৩. আমার জন্য গণীমতের সম্পদ বৈধ।
৪. সকল যমিন আমার জন্য মসজিদ ও পবিত্রতা অর্জন করার মাধ্যম।
৫. আমাকে সকল মানষের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে এবং
৬. আমার দ্বারা নবুওয়াতের পরিসমাপ্তি ঘটানো হয়েছে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫২৩; তিরমিযী, হাদীস নং ১৫৫৩; মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৯৩৩৭।]
১. ইহকাল ও পরকালের ব্যাপারে অতীত ও ভবিষ্যত সংক্রান্ত যে সব সংবাদ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিয়েছেন সেগুলোর যথাযথ সত্যায়ণ করা, সত্য বলে মেনে নেওয়া। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿َمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ﴾ [ الحشر : ٧ ]
“রাসূল তোমাদেরকে যা দেন তা গ্রহণ কর।” [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ৭] অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ فَإِن كَذَّبُوكَ فَقُل رَّبُّكُمۡ ذُو رَحۡمَةٖ وَٰسِعَةٖ وَلَا يُرَدُّ بَأۡسُهُۥ عَنِ ٱلۡقَوۡمِ ٱلۡمُجۡرِمِينَ ١٤٧﴾ [ الانعام : ١٤٧ ]
“যদি তারা আপনাকে মিথ্যাবাদী বলে, তবে বলে দিন- তোমার রব সুপ্রশস্ত করুণার মালিক আর তার শাস্তি অপরাধীদের ওপর থেকে টলবে না।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৪৭]
২. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশ পালন করে ও নিষেধ থেকে বিরত থেকে যথাযথ তাঁর অনুসরণ করার প্রমাণ দেওয়া। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿مَّن يُطِعِ ٱلرَّسُولَ فَقَدۡ أَطَاعَ ٱللَّهَۖ وَمَن تَوَلَّىٰ فَمَآ أَرۡسَلۡنَٰكَ عَلَيۡهِمۡ حَفِيظٗا ٨٠﴾ [ النساء : ٨٠ ]
“যে লোক রসূলের হুকুম মান্য করল সে আল্লাহরই হুকুম মান্য করল। আর যে লোক বিমূখতা অবলম্বন করল, আমরা তো আপনাকে (হে মুহাম্মাদ) তাদের জন্য রক্ষক নিযুক্ত করে পাঠাই নি।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৮০] অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَن يَعۡصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَإِنَّ لَهُۥ نَارَ جَهَنَّمَ خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدًا﴾ [ الجن : ٢٣ ]
“আর যে কেউ আল্লাহ ও তার রাসূলের অবাধ্য হয়, তার জন্যে রয়েছে জাহান্নামের অগ্নি। তথায় তারা চিরকাল থাকবে।” [সূরা আল-জিন্ন, আয়াত: ২৩]
৩. একমাত্র তার আনুগত্য করা, অন্য কারো পথ বা পদ্ধতির অনুসরণ না করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَن يَبۡتَغِ غَيۡرَ ٱلۡإِسۡلَٰمِ دِينٗا فَلَن يُقۡبَلَ مِنۡهُ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٨٥﴾ [ ال عمران : ٨٥ ]
“যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দীন অন্বেষণ করে, কস্মিনকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখিরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্ত।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৮৫] অনুরূপভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ» .
“যে এমন আমল করল যার প্রতি আমাদের নির্দেশ নেই, তা পরিত্যক্ত, পরিত্যাজ্য ও প্রত্যাখ্যাত।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১০৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৪৩।] অন্যত্র বলেন,
«كُلُّ أُمَّتِي يَدْخُلُونَ الجَنَّةَ إِلَّا مَنْ أَبَى»، قَالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَمَنْ يَأْبَى؟ قَالَ : «مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الجَنَّةَ، وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أَبَى» .
“আমার উম্মতের প্রত্যেকেই জান্নাতে প্রবেশ করবে, তবে প্রত্যাখ্যানকারী ব্যতীত। তারা জিজ্ঞেস করল: হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রত্যাখ্যানকারী কে? তিনি বললেন, যে আমার আনুগত্য করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে আমার অবাধ্য হবে সেই তো প্রত্যাখ্যানকারী।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭২৮০।]
৪. পরিপূর্ণরূপে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শে আদর্শবান হওয়া। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿لَّقَدۡ كَانَ لَكُمۡ فِي رَسُولِ ٱللَّهِ أُسۡوَةٌ حَسَنَةٞ لِّمَن كَانَ يَرۡجُواْ ٱللَّهَ وَٱلۡيَوۡمَ ٱلۡأٓخِرَ وَذَكَرَ ٱللَّهَ كَثِيرٗا ٢١﴾ [ الاحزاب : ٢١ ]
“যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্যে রাসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ২১]
এতে সন্দেহ নেই যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হচ্ছেন ইসলামের চির জীবন্ত আদর্শ। প্রতিটি কাজে ও কর্মে তিনিই উত্তম পথিকৃত। যে তার আনুগত্য করবে সৌভাগ্যশীল হবে। যে তার আদর্শ ও নীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে সে পথভ্রষ্ট ও দিকভ্রান্ত হবে।
৫. সমস্ত বিরোধপূর্ণ বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মীমাংসার শরণাপন্ন হওয়া, সে মীমাংসাতে সন্তুষ্ট থাকার সাথে সাথে ন্যায় ও ইনসাফের বিশ্বাস রাখা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤۡمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا يَجِدُواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسۡلِيمٗا ٦٥﴾ [ النساء : ٦٥ ]
“অতএব, আপনার রবের শপথ! তারা কখনো ঈমানদার হতে পারবে না, যে পর্যন্ত তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে আপনাকে বিচারক বলে মেনে না নেয়। অতঃপর আপনি যে বিচার করবেন তা দ্বিধাহীন অন্তরে গ্রহণ না করে এবং এটি সন্তুষ্টচিত্তে কবুল করে।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬৫]
৬. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাপারে বাড়াবাড়িতে লিপ্ত না হওয়া এবং অবজ্ঞা ও অবাধ্যতা থেকে বিরত থাকা: আল্লাহ যতটুকু সম্মান দান করেছেন, ততটুকু সম্মান তাকে প্রদান করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَآ أَحَدٖ مِّن رِّجَالِكُمۡ وَلَٰكِن رَّسُولَ ٱللَّهِ وَخَاتَمَ ٱلنَّبِيِّۧنَۗ﴾ [ الاحزاب : ٤٠ ]
‘মুহাম্মাদ তোমাদের মধ্যকার কোনো পুরুষের পিতা নন, বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৪০]
সুতরাং রাসূলের ব্যাপারে এমন কোনো বিশ্বাস পোষণ করবে না যা আল্লাহর রুবুবিয়্যাতের সাথে শির্কের শামিল। যেমন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য আল্লাহর ন্যায় কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে বলে বিশ্বাস পোষণ করা। যেমন, তিনি গায়েব জানেন, দুনিয়ার আবর্তন ও বিবর্তনের অধিকার রাখেন, উপকার ও ক্ষতি করার সামর্থ্য রাখেন, কিছু দিতে পারেন, বঞ্চিত করতে পারেন ইত্যাদি বিশ্বাস করা।
অনুরূপভাবে রাসূলের জন্য এমন কোনো কাজ করা যাবে না, যা আল্লাহর উলুহিয়্যাতের সাথে শির্কের শামিল, যেমন কুরবানী, মানত, সাহায্যের আবেদন, সুপারিশ প্রার্থনা, ভরসা, ভয় ও আশা ইত্যাদির ব্যাপারে তার শরণাপন্ন হওয়া। উল্লিখিত যাবতীয় ইবাদত একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্যই নির্দিষ্ট। যে কেউ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করবে সে প্রকারান্তরে তার বিরোধিতায় ও অবাধ্যতায় লিপ্ত হলো। যেমন, তিনি বলেছেন:
«لَا تُطْرُونِي كَمَا أَطْرَتِ النَّصَارَى عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ فَإِنَّمَا أَنَا عَبْدٌ فَقُولُوا : عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُه» .
“তোমরা আমার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না, যেমন নাসারারা মারইয়াম তনয় ঈসার ব্যাপারে করেছে। নিঃসন্দেহে আমি আল্লাহর বান্দা। সুতরাং তোমরা আমাকে তাঁর বান্দা এবং রাসূল বলো।” [মুসনাদে আবি দাঊদ ত্বায়ালিসী, হাদীস নং ২৪।] যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা জানতেন যে, কতিপয় লোক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে। তাই তিনি উম্মতকে স্বীয় সাধ্য ও সামর্থ্যের কথা জানিয়ে দেওয়ার জন্য রাসূলকে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ قُل لَّآ أَقُولُ لَكُمۡ عِندِي خَزَآئِنُ ٱللَّهِ وَلَآ أَعۡلَمُ ٱلۡغَيۡبَ وَلَآ أَقُولُ لَكُمۡ إِنِّي مَلَكٌۖ إِنۡ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَىٰٓ إِلَيَّۚ﴾ [ الانعام : ٥٠ ]
“আপনি বলুন, আমি তোমাদেরকে বলি না যে আমার কাছে আল্লাহর ভাণ্ডার রয়েছে। তা ছাড়া আমি গায়েবী বিষয়ও অবগত নই। আমি এমনও বলি না যে, আমি ফিরিশতা। আমি তো শুধু ঐ অহীর অনুসরণ করি, যা আমার কাছে আসে।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৫০]
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قُل لَّآ أَمۡلِكُ لِنَفۡسِي نَفۡعٗا وَلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَآءَ ٱللَّهُۚ وَلَوۡ كُنتُ أَعۡلَمُ ٱلۡغَيۡبَ لَٱسۡتَكۡثَرۡتُ مِنَ ٱلۡخَيۡرِ وَمَا مَسَّنِيَ ٱلسُّوٓءُۚ إِنۡ أَنَا۠ إِلَّا نَذِيرٞ وَبَشِيرٞ لِّقَوۡمٖ يُؤۡمِنُونَ ١٨٨ ﴾ [ الاعراف : ١٨٨ ]
“আপনি বলে দিন, আমি আমার নিজের কল্যাণ বা অকল্যাণ সাধনের মালিক নই, কিন্তু যা আল্লাহ চান, আর আমি যদি গায়েবের কথা জানতাম, তাহলে বহু মঙ্গল অর্জন করে নিতাম এবং কোনো অমঙ্গল আমাকে কখনও স্পর্শ করতে পারতো না। আমি তো শুধু মাত্র ঈমানদারদের জন্য একজন ভীতিপ্রদর্শক ও সুসংবাদদাতা।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৮৮] অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قُلۡ إِنِّي لَآ أَمۡلِكُ لَكُمۡ ضَرّٗا وَلَا رَشَدٗا ٢١ قُلۡ إِنِّي لَن يُجِيرَنِي مِنَ ٱللَّهِ أَحَدٞ وَلَنۡ أَجِدَ مِن دُونِهِۦ مُلۡتَحَدًا ٢٢ إِلَّا بَلَٰغٗا مِّنَ ٱللَّهِ وَرِسَٰلَٰتِهِۦۚ وَمَن يَعۡصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَإِنَّ لَهُۥ نَارَ جَهَنَّمَ خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدًا ٢٣ ﴾ [ الجن : ٢١، ٢٣ ]
“বলুন, আমি তোমাদের ক্ষতি কিংবা কল্যাণ করার ক্ষমতা রাখি না। বলুন, আল্লাহর কবল থেকে কেউ আমাকে রক্ষা করতে পারবে না এবং তিনি ব্যতীত আমি কোনো আশ্রয়স্থল পাব না। কিন্তু আল্লাহর বাণী পৌঁছানো ও তার পয়গাম প্রচার করাই আমার কাজ। যে আল্লাহ ও তার রাসূলের অবাধ্য হবে, তার জন্যে রয়েছে জাহান্নামের অগ্নি। তথায় তারা চিরকাল থাকবে।” [সূরা আল-জিন্ন, আয়াত: ২১-২৩]
তদ্রুপ রাসূলকে ঐ সমস্ত বৈশিষ্ট্য থেকে মুক্ত মনে করা যাবে না, যার দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা তাকে ভূষিত করেছেন, এটাও এক ধরনের বাড়াবাড়ি। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা তাকে সমস্ত সৃষ্টি জীবের ওপর শ্রেষ্টত্ব দান করেছেন, রিসালাতের দায়িত্ব, সুসংবাদদান ও সতর্ককরণের দায়িত্ব প্রদান করেছেন, অলৌকিক ঘটনাবলীর দ্বারা স্বীয় নবুওয়াতের সত্যতা প্রমাণ করার ক্ষমতা প্রদান করেছেন। কতিপয় গায়েবী জ্ঞানের ইলম এবং হাওযে কাউসার প্রভৃতি দান করেছেন। সুতরাং ঈমানদারের উচিৎ এ সকল নি‘আমত ও পুরস্কারের প্রতি ঈমান রাখা, অতিরঞ্জন ও সীমালঙ্ঘন থেকে বিরত থাকা (যা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে দুনিয়া-আখিরাতে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে)।
এখানে আমরা আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রদত্ত কতিপয় স্বাতন্ত্র ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করছি, যা পূর্বের কোনো নবীকে দেওয়া হয় নি। যার ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং বলেছেন, তিনি বলেন,
«فُضِّلْتُ عَلَى الْأَنْبِيَاءِ بِسِتٍّ : أُعْطِيتُ جَوَامِعَ الْكَلِمِ، وَنُصِرْتُ بِالرُّعْبِ، وَأُحِلَّتْ لِيَ الْغَنَائِمُ، وَجُعِلَتْ لِيَ الْأَرْضُ طَهُورًا وَمَسْجِدًا، وَأُرْسِلْتُ إِلَى الْخَلْقِ كَافَّةً، وَخُتِمَ بِيَ النَّبِيُّونَ» .
“আমাকে ছয়টি জিনিসের মাধ্যমে অন্যান্য নবীদের ওপর প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। যথা-
১. পরিপূর্ণ অর্থবহ সংক্ষিপ্ত বাক্যবিন্নাস।
২. শত্রুপক্ষের অন্তরে আতংক।
৩. আমার জন্য গণীমতের সম্পদ বৈধ।
৪. সকল যমিন আমার জন্য মসজিদ ও পবিত্রতা অর্জন করার মাধ্যম।
৫. আমাকে সকল মানষের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে এবং
৬. আমার দ্বারা নবুওয়াতের পরিসমাপ্তি ঘটানো হয়েছে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫২৩; তিরমিযী, হাদীস নং ১৫৫৩; মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৯৩৩৭।]
১. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহব্বত অবশ্য কর্তব্য, অতীব আবশ্যক। ধন-সম্পদ, নিজের জীবন, পিতা-মাতা, সন্তান, পরিবার-পরিজন ও সমস্ত মানুষের মহব্বতের ওপর তার মহব্বতকে অগ্রাধিকার দেওয়া ঈমানী দায়িত্ব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لايؤمن أحدكم حتى أكون أحب إليه من أهله وماله والناس أجمعين» .
“ততক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের কেউ ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি তার নিকট পরিবার-পরিজন, সম্পদ ও সমস্ত মানুষ হতে অধিক প্রিয় না হবো।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৪।]
২. তার ওপর দুরুদ ও সালাম পাঠ করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ ٱللَّهَ وَمَلَٰٓئِكَتَهُۥ يُصَلُّونَ عَلَى ٱلنَّبِيِّۚ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ صَلُّواْ عَلَيۡهِ وَسَلِّمُواْ تَسۡلِيمًا ٥٦﴾ [ الاحزاب : ٥٦ ]
‘আল্লাহ তা‘আলা ও তার ফিরিশতাগণ নবীর ওপর সালাত পেশ করে। হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর ওপর সালাত পেশ কর এবং তার প্রতি যথাযথ সালাম পেশ কর।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৬]
৩. তার কল্যাণ কামনা করা। অর্থাৎ তাঁর সুন্নাত ও শরী‘আতের হিফাযত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা, যাতে এর ভিতর কোনো ধরনের সংযোজন-বিয়োজন, পরিবর্তন বা পরিবর্ধন না হতে পারে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«الدِّينُ النَّصِيحَةُ» قُلْنَا : لِمَنْ؟ قَالَ : «لِلَّهِ وَلِكِتَابِهِ وَلِرَسُولِهِ وَلِأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِينَ وَعَامَّتِهِمْ»
“দীন কল্যাণ কামনার নাম: তিনবার বলেছেন, আমরা প্রশ্ন করলাম: কার জন্য কল্যাণ কামনা হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন: আল্লাহর জন্য, তার কিতাবের জন্য, তার রাসূলের জন্য, মুসলিমদের ঈমামদের জন্য এবং সমস্ত মানুষের জন্য।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৫; সুনান নাসাঈ, হাদীস নং ৪১৯৭, ৪১৯৮।]
৪. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আহলে বাইত তথা-পরিবার পরিজনের ব্যাপারে তার উপদেশ যথাযথ পালন করা। আহলে বাইত অর্থাৎ হাশেম ও আব্দুল মুত্তালিবের বংশধর ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণ।
মুসলিম মাত্রই তাঁর বংশধরের পবিত্রতা এবং রাসূলের সাথে নৈকট্যতার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিবে। অর্থাৎ তাদের অভাব মোচন করবে, মহব্বত করবে, তাদের সম্মান রক্ষা করবে। যেহেতু গাদিরে খুম-এর দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় পরিবারের সদস্যদের ব্যাপারে বলেছেন:
«أُذَكِّرُكُمُ اللهَ فِي أَهْلِ بَيْتِي» .
“আমি তোমাদেরকে আমার আহলে বাইতের ব্যাপারে আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪০৮।]
৫. তাঁর সাহাবীগণকে মহাব্বত করা এবং তাদের বিশ্বস্ততার ওপর আস্থা রাখা:
প্রত্যেক মুসলিমের ঈমানী দায়িত্ব হলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণকে মহব্বত করা। তাদের বিশ্বস্ততার ওপর আস্থা রাখা। তাদের সকলের শ্রেষ্টত্বের ঘোষণা দেওয়া। তাদের মাঝে সংঘটিত হয়ে যাওয়া বিরোধ নিয়ে সামালোচনা থেকে বিরত থাকা। তাদের নামের সাথে ‘রাদিয়াল্লাহু আনহুম’ বলা। তাদের ব্যাপারে অন্তর পরিচ্ছন্ন রাখা। তাদের কারো প্রতি বিদ্বেষ না রাখা। তাদের অপবাদ, গালি, কুৎসা রটনা ইত্যাদি থেকে নিজের মুখ নিরাপদ রাখা।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لَا تَسُبُّوا أَصْحَابِي، فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوْ أَنْفَقَ أَحَدُكُمْ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا مَا بَلَغَ مُدَّ أَحَدِهِمْ وَلَا نَصِيفَهُ»
“তোমরা আমার সাহাবীগণকে গালি দিও না। যার হাতে আমার জান তার শপথ করে বলছি: তোমাদের কেউ উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ দান করলেও তা তাদের এক অঞ্জলী বা তার অর্ধেক দানের সমানও হবে না।” [সুনান আবূ দাঊদ, হাদীস নং ৪৬৫৮।]
সমাপ্ত
«لايؤمن أحدكم حتى أكون أحب إليه من أهله وماله والناس أجمعين» .
“ততক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের কেউ ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি তার নিকট পরিবার-পরিজন, সম্পদ ও সমস্ত মানুষ হতে অধিক প্রিয় না হবো।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৪।]
২. তার ওপর দুরুদ ও সালাম পাঠ করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ ٱللَّهَ وَمَلَٰٓئِكَتَهُۥ يُصَلُّونَ عَلَى ٱلنَّبِيِّۚ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ صَلُّواْ عَلَيۡهِ وَسَلِّمُواْ تَسۡلِيمًا ٥٦﴾ [ الاحزاب : ٥٦ ]
‘আল্লাহ তা‘আলা ও তার ফিরিশতাগণ নবীর ওপর সালাত পেশ করে। হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর ওপর সালাত পেশ কর এবং তার প্রতি যথাযথ সালাম পেশ কর।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৬]
৩. তার কল্যাণ কামনা করা। অর্থাৎ তাঁর সুন্নাত ও শরী‘আতের হিফাযত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা, যাতে এর ভিতর কোনো ধরনের সংযোজন-বিয়োজন, পরিবর্তন বা পরিবর্ধন না হতে পারে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«الدِّينُ النَّصِيحَةُ» قُلْنَا : لِمَنْ؟ قَالَ : «لِلَّهِ وَلِكِتَابِهِ وَلِرَسُولِهِ وَلِأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِينَ وَعَامَّتِهِمْ»
“দীন কল্যাণ কামনার নাম: তিনবার বলেছেন, আমরা প্রশ্ন করলাম: কার জন্য কল্যাণ কামনা হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন: আল্লাহর জন্য, তার কিতাবের জন্য, তার রাসূলের জন্য, মুসলিমদের ঈমামদের জন্য এবং সমস্ত মানুষের জন্য।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৫; সুনান নাসাঈ, হাদীস নং ৪১৯৭, ৪১৯৮।]
৪. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আহলে বাইত তথা-পরিবার পরিজনের ব্যাপারে তার উপদেশ যথাযথ পালন করা। আহলে বাইত অর্থাৎ হাশেম ও আব্দুল মুত্তালিবের বংশধর ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণ।
মুসলিম মাত্রই তাঁর বংশধরের পবিত্রতা এবং রাসূলের সাথে নৈকট্যতার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিবে। অর্থাৎ তাদের অভাব মোচন করবে, মহব্বত করবে, তাদের সম্মান রক্ষা করবে। যেহেতু গাদিরে খুম-এর দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় পরিবারের সদস্যদের ব্যাপারে বলেছেন:
«أُذَكِّرُكُمُ اللهَ فِي أَهْلِ بَيْتِي» .
“আমি তোমাদেরকে আমার আহলে বাইতের ব্যাপারে আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪০৮।]
৫. তাঁর সাহাবীগণকে মহাব্বত করা এবং তাদের বিশ্বস্ততার ওপর আস্থা রাখা:
প্রত্যেক মুসলিমের ঈমানী দায়িত্ব হলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণকে মহব্বত করা। তাদের বিশ্বস্ততার ওপর আস্থা রাখা। তাদের সকলের শ্রেষ্টত্বের ঘোষণা দেওয়া। তাদের মাঝে সংঘটিত হয়ে যাওয়া বিরোধ নিয়ে সামালোচনা থেকে বিরত থাকা। তাদের নামের সাথে ‘রাদিয়াল্লাহু আনহুম’ বলা। তাদের ব্যাপারে অন্তর পরিচ্ছন্ন রাখা। তাদের কারো প্রতি বিদ্বেষ না রাখা। তাদের অপবাদ, গালি, কুৎসা রটনা ইত্যাদি থেকে নিজের মুখ নিরাপদ রাখা।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لَا تَسُبُّوا أَصْحَابِي، فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوْ أَنْفَقَ أَحَدُكُمْ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا مَا بَلَغَ مُدَّ أَحَدِهِمْ وَلَا نَصِيفَهُ»
“তোমরা আমার সাহাবীগণকে গালি দিও না। যার হাতে আমার জান তার শপথ করে বলছি: তোমাদের কেউ উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ দান করলেও তা তাদের এক অঞ্জলী বা তার অর্ধেক দানের সমানও হবে না।” [সুনান আবূ দাঊদ, হাদীস নং ৪৬৫৮।]
সমাপ্ত
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন