মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
(ছ) মুসলিম জাতির পরস্পরের মধ্যকার আদব ও অধিকারসমূহ:
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/537/21
মুসলিম ব্যক্তি তার উপর তার অপর মুসলিম ভাইয়ের অধিকারসমূহ আদায় ও আদবসমূহ মেনে চলার আবশ্যকতার ব্যাপারে বিশ্বাস করে; সুতরাং সে তার মুসলিম ভাইয়ের সাথে আদবসমূহ রক্ষা করে চলবে এবং তার অধিকারসমূহ যথাযথভাবে আদায় করে দিবে; আর সে এটাও বিশ্বাস করে যে, এসব আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত এবং এর দ্বারা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার নৈকট্য অর্জন করা যায়; কেননা, এসব অধিকার ও আদব আল্লাহ তা‘আলা মুসলিম ব্যক্তির উপর বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন, যাতে সে তার মুসলিম ভাইয়ের সাথে এগুলো মেনে চলে; সুতরাং কোনো সন্দেহ নেই— তার এ কাজ করাটা আল্লাহর আনুগত্য ও তাঁর নৈকট্য অর্জনের উপায় বলে গণ্য হবে।
আর এসব আদব ও অধিকারের অন্যতম কিছু দিক নিম্নরূপ:
১. যখন তার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ হবে, তখন তার সাথে কথা বলার পূর্বেই তাকে সালাম প্রদান করবে; সুতরাং সে বলবে: " السلام عليكم و رحمة الله "(আপনার উপর শান্তি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হউক); তারপর সে তার সাথে মুসাফাহা (করমর্দন) করবে এবং সালামের জবাব স্বরূপ বলবে: " و عليكم السلام و رحمة الله و بركاته " (আপনার উপরও শান্তি এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হউক); আর এটা এ জন্য যে, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
“আর তোমাদেরকে যখন অভিবাদন করা হয়, তখন তোমরাও তার চেয়ে উত্তম প্রত্যাভিবাদন করবে অথবা সেটারই অনুরূপ করবে।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৮৬] আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
“বাহনে আরোহণকারী ব্যক্তি পদব্রজে আগমনকারী ব্যক্তিকে, পদব্রজে আগমনকারী ব্যক্তি বসা ব্যক্তিকে এবং কম সংখ্যক লোক বেশি সংখ্যক লোককে সালাম প্রদান করবে।” [বুখারী, হাদিস নং- ৫৮৭৮; মুসলিম, হাদিস নং- ৫৭৭২] তিনি আরও বলেন:
« إنَّ الملائكةَ تَعجِبُ من المسلمِ يمُرُّ على المسلمِ ولا يُسَلِّمُ عَليهِ » .
“ফেরেশ্তাগণ ঐ মুসলিম ব্যক্তির ব্যাপারে বিস্ময় প্রকাশ করেন, যে আরেক মুসলিম ব্যক্তির পাশ দিয়ে চলে গেল, অথচ সে তাকে সালাম প্রদান করল না।” [যাইন আল-‘ইরাকী বলেন: তার মূল সনদের ব্যাপারে আমার জানা নেই।] তিনি আরও বলেন:
“আর তুমি তোমার পরিচিত ও অপরিচিত সকল (মুসলিম) ব্যক্তিকে সালাম প্রদান করবে।” [বুখারী ও মুসলিম।] তিনি আরও বলেন:
« مَا مِنْ مُسْلِمَينِ يَلْتَقِيَانِ فَيَتَصَافَحَانِ إِلاَّ غُفِرَ لَهُمَا قَبْلَ أنْ يَفْتَرِقَا » . ( رواه أبو داود و ابن ماجه و الترمذي ).
“যখনই দুইজন মুসলিম ব্যক্তি পরস্পর সাক্ষাৎ হওয়ার পর মুসাফাহা করে, তারা পরস্পর থেকে আলাদা হওয়ার আগেই তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া হয়।” [আবূ দাউদ, ইবনু মাজাহ ও তিরমিযী।] তিনি আরও বলেন:
« مَنْ بَدَأَ بِالْكَلامِ قَبْلَ السَّلامِ فَلا تُجِيبُوهُ حتى يَبدأ بِالسَّلامِ » . ( رواه الطبراني و أبو نعيم ).
“যে ব্যক্তি সালাম দেয়ার পূর্বে কথা বলা আরম্ভ করে, তোমরা তার কথায় সায় দেবে না, যতক্ষণ না সে সালামের মাধ্যমে কথার সূচনা করে।” [ত্ববারানী ও আবূ না‘য়ীম; আর আলবানী হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।]
২. যখন সে হাঁচি দিবে, তখন তার হাঁচির জবাব দিবে; অর্থাৎ সে যখন হাঁচি দেওয়ার পর ‘আলহামদুলিল্লাহ’ ( الحَمْدُ للهِ ) বলে আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা করবে, তখন সে তাকে উদ্দেশ্য করে বলবে: ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ ( يَرْحَمُكَ اللهُ ) [অর্থাৎ আল্লাহ তোমার প্রতি রহম করুন]; আর তখন হাঁচিদাতা তার জবাব স্বরূপ আবার বলবে: " يَغْفِرُ اللهُ لِيْ و لَكَ " (আল্লাহ আমাকে ও তোমাকে ক্ষমা করে দিন) অথবা বলবে: " يَهْدِيكُمُ اللهُ وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ " (আল্লাহ তোমাদেরকে হিদায়েত করুন এবং তোমাদের অবস্থাকে ভালো করে দিন)। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
“যখন তোমাদের কেউ হাঁচি দেয়, তখন সে যেন বলে: ‘আলহামদুলিল্লাহ’ ( الحَمْدُ للهِ ) এবং তার ভাই বা সঙ্গী যেন তাকে বলে: " يَرْحَمُكَ اللهُ " (অর্থাৎ আল্লাহ তোমার উপর রহমত বর্ষণ করুন); আর যখন সে তাকে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ ( يَرْحَمُكَ اللهُ ) বলবে, তখন সে যেন বলে: " يَهْدِيكُمُ اللهُ وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ " (আল্লাহ তোমাদেরকে হিদায়েত করুন এবং তোমাদের অবস্থাকে ভালো করে দিন)।” [বুখারী, হাদিস নং- ৫৮৭০] আর আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:
« كَانَ رسول الله صلى الله عليه وسلم إِذَا عَطَسَ وَضَعَ يَدَهُ أَوْ ثَوْبَهُ عَلَى فِيهِ ، وَخَفَضَ أَوْ غَضَّ بِهَا صَوْتَهُ » . ( رواه أَبُو داود والترمذي ).
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হাঁচি দিতেন, তখন তিনি তাঁর মুখের উপর হাত বা কাপড় রাখতেন এবং এর দ্বারা হাঁচির আওয়াজ নিম্নগামী করতেন।” [আবূ দাউদ, হাদিস নং- ৫০৩১; তিরমিযী, হাদিস নং- ২৭৪৫]
৩. যখন সে অসুস্থ হবে, তখন তার সেবা-যত্ন করা এবং তার জন্য রোগমুক্তির দো‘য়া করা; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
“এক মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের পাঁচটি হক বা অধিকার রয়েছে: সালামের জবাব দেয়া, রোগীর সেবা করা, জানাযার সালাতে অংশ নেয়া, দাওয়াত কবুল করা এবং হাঁচির জবাব দেয়া।” [বুখারী, হাদিস নং- ৫৮৭৮; মুসলিম, হাদিস নং- ৫৭৭২] আর তাছাড়া বারা ইবন ‘আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:
« أمَرَنَارَسُول الله صلى الله عليه وسلم بعيَادَة المَرِيض ، وَاتِّبَاعِ الجَنَازَةِ ، وتَشْمِيتِ العَاطسِ، وَإبْرار المُقْسِم، ونَصْرِ المَظْلُوم ، وَإجَابَةِ الدَّاعِي ، وَإِفْشَاءِ السَّلامِ » . ( رواه البخاري ).
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন রোগীর সেবা করতে, জানাযার অনুসরণ করতে, হাঁচির জবাব দিতে, শপথ বা প্রতিজ্ঞা পূরণ করতে, মাযলুমকে সাহায্য করতে, দাওয়াত দাতার দাওয়াত কবুল করতে এবং ব্যাপকভাবে সালামের প্রচলন করতে।” [বুখারী, হাদিস নং- ৪৮৮০] নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
“এক মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের পাঁচটি হক বা অধিকার রয়েছে: সালামের জবাব দেয়া, রোগীর সেবা করা, জানাযার সালাতে অংশ নেয়া, দাওয়াত কবুল করা এবং হাঁচির জবাব দেয়া।” [বুখারী, হাদিস নং- ৫৮৭৮; মুসলিম, হাদিস নং- ৫৭৭২]
৫. তার শপথ পূরণ করা, যখন সে কোন ব্যাপারে শপথ করে বসে এবং তাতে অবৈধ কোন কিছু না থাকে; সুতরাং সে যে কারণে শপথ করেছে, তা পূরণে সহযোগিতামূলক কাজ করবে, যাতে তার শপথ ভঙ্গ করতে না হয়; কারণ, বারা ইবন ‘আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদিসের মধ্যে এসেছে, তিনি বলেন:
« أمَرَنَارَسُول الله صلى الله عليه وسلم بعيَادَة المَرِيض ، وَاتِّبَاعِ الجَنَازَةِ ، وتَشْمِيتِ العَاطسِ، وَإبْرار المُقْسِم، ونَصْرِ المَظْلُوم ، وَإجَابَةِ الدَّاعِي ، وَإِفْشَاءِ السَّلامِ » . ( رواه البخاري ).
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন রোগীর সেবা করতে, জানাযার অনুসরণ করতে, হাঁচির জবাব দিতে, শপথ বা প্রতিজ্ঞা পূরণ করতে, মাযলুমকে সাহায্য করতে, দা‘ওয়াত দাতার দা‘ওয়াত কবুল করতে এবং ব্যাপকভাবে সালামের প্রচলন করতে।” [বুখারী, হাদিস নং- ৪৮৮০]
৬. তাকে (ভালো) উপদেশ দেওয়া, যখন সে কোনো বিষয় বা ব্যাপারে উপদেশ বা পরামর্শ চায়; অর্থাৎ সে কোনো বিষয় বা ব্যাপারে যা উত্তম ও সঠিক মনে করবে, তা তাকে বলে দেবে; আর এটা এ জন্য যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“দীন হচ্ছে (জনগণের) কল্যাণ কামনা করা। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, কার জন্য? তিনি বললেন: আল্লাহ, তাঁর কিতাব, তাঁর রাসূল, মুসলিম নেতৃবৃন্দ ও সমস্ত মুসলিমের জন্য।” [মুসলিম, হাদিস নং- ২০৫] আর মুসলিম ব্যক্তি তো তাদের সকলের মধ্য থেকে একজন।
৭. নিজের জন্য যা পছন্দ করবে, তার জন্যও তা পছন্দ করা এবং নিজের জন্য যা অপছন্দ করবে, তার জন্যও তা অপছন্দ করা; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« لا يُؤمِنُ أحَدُكُمْ حَتَّى يُحِبَّ لأَخِيهِ مَا يُحبُّ لِنَفْسِهِ ، و يكرَهُ لَهُ ما يَكرَهُ لِنَفْسِهِ » . ( رواه البخاري و مسلم و أحمد ).
“তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার নিজের জন্য যা পছন্দ করবে, তার ভাইয়ের জন্যও তা পছন্দ করবে এবং তার নিজের জন্য যা অপছন্দ করবে, তার ভাইয়ের জন্যও তা অপছন্দ করবে।” [বুখারী, মুসলিম ও আহমাদ; তবে « و يكرَهُ لَهُ ما يَكرَهُ لِنَفْسِهِ » কথাটি বুখারী ও মুসলিমে নেই; বরং তা ইমাম আহমাদ রহ. এর ‘আল-মুসনাদ’ এর মধ্যে রয়েছে, যার শব্দগুলো নিম্নরূপ: « وَأَنْ تُحِبَّ لِلنَّاسِ مَا تُحِبُّ لِنَفْسِكَ ، وَتَكْرَهَ لَهُمْ مَا تَكْرَهُ لِنَفْسِكَ » “তোমার নিজের জন্য তুমি যা পছন্দ করবে, জনগণের জন্যও তা পছন্দ করা এবং তোমার নিজের জন্য তুমি যা অপছন্দ করবে, তাদের জন্যও তা অপছন্দ করা।” — (হাদিস নং- ২২১৮৩)।] তিনি আরও বলেন:
“পারস্পরিক ভালোবাসা, সহানুভূতি ও মায়া-মমতার দৃষ্টিকোণ থেকে গোটা মুসলিম জাতি একটি দেহের সমতুল্য; যখন তার একটি অঙ্গ ব্যথিত হয়, তখন তার গোটা শরীর তা অনুভব করে— সেটা জাগ্রত অবস্থায়ই হউক, কিংবা জ্বরের অবস্থায়।” [বুখারী, হাদিস নং- ৫৬৬৫; মুসলিম, হাদিস নং- ৬৭৫১] তিনি আরও বলেন:
“এক মুমিন অপর মুমিনের জন্য প্রাচীরস্বরূপ, এর এক অংশ অপর অংশকে শক্তিশালী করে।” [বুখারী, হাদিস নং- ৪৬৭; মুসলিম, হাদিস নং- ৬৭৫০]
৮. যেখানেই তার সাহায্য-সহযোগিতা পাওয়ার দরকার, সেখানেই তাকে সাহায্য করা এবং তাকে হেয় প্রতিপন্ন না করা; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
“তুমি তোমার ভাইকে সাহায্য কর, চাই সে যালেম হউক অথবা মাযলুম; একথা বলার পর এক ব্যক্তি বলল: হে আল্লাহর রাসূল! সে যদি মাযলুম হয়, আমি তাকে সাহায্য করব— এটা বুঝতে পারলাম; সে যালিম হলে আমি তাকে কিভাবে সাহায্য করব— সে ব্যাপারে আপনার অভিমত কী? তখন তিনি বললেন: তাকে যুলুম করা থেকে বিরত রাখ, বাধা দাও; এটাই হল তাকে সাহায্য করা।” [বুখারী, হাদিস নং- ৬৫৫২; মুসলিম, হাদিস নং- ৬৭৪৭] তিনি আরও বলেন:
“এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই; সে তার প্রতি যুলুম করবে না, তাকে অপমান করবে না এবং তাকে তুচ্ছ জ্ঞান করবে না।” [বুখারী, হাদিস নং- ৬৫৫১; মুসলিম, হাদিস নং- ৬৭০৬] তিনি আরও বলেন:
« ما من امرئٍ مسلمٍ ينصُرُ مسلماً في موضعٍ يُنْتَهَكُ فيه عرضُهُ ، وتُسْتَحَلُّ فيه حرمتُهُ إلاَّ نصرهُ اللهُ في موطنٍ يُحِبُّ فيه نَصْرَهُ ، وما من امرئٍ مسلمٍ خَذَلَ مسلماً في موطنٍ تُنْتَهَكُ فيه حرمتُهُ إلاَّ خذلهُ اللهُ في موضعٍ يُحِبُّ فيه نَصْرَهُ » . ( رواه أحمد ).
“যে কোনো মুসলিম ব্যক্তি অপর কোনো মুসলিমকে সাহায্য করবে এমন কোনো স্থানে, যেখানে তার চরিত্রকে কলুষিত করা হয় এবং তার সম্মানকে নষ্ট করা হয়, আল্লাহ তা‘আলা তাকে এমন স্থানে সাহায্য করবেন, যেখানে সে তাঁর সাহায্য পাওয়াটাকে পছন্দ করবে। আর যে কোনো মুসলিম ব্যক্তি অপর কোনো মুসলিমকে অপমান করবে এমন কোনো স্থানে, যেখানে তার সম্মানকে নষ্ট করা হয়, আল্লাহ তা‘আলা তাকে এমন স্থানে অপমানিত করবেন, যেখানে সে তাঁর সাহায্য পাওয়াটাকে কামনা করবে।” [আহমাদ।] তিনি আরও বলেন:
“যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের মান-সম্মান নষ্ট করা থেকে নিজে বিরত থাকবে বা কাউকে বিরত রাখবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে জাহান্নামে দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন।” [তিরমিযী, হাদিস নং- ১৯৩১]
৯. তাকে কোনো মন্দ কিছুর দ্বারা আক্রমণ না করা অথবা তাকে কোনো অপছন্দনীয় কিছুতে না জড়ানো; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“আর তুমি মানুষের প্রতি অবজ্ঞাভরে তোমার গাল বাঁকা কর না এবং যমীনে উদ্ধতভাবে বিচরণ কর না; নিশ্চয় আল্লাহ কোন উদ্ধত, অহঙ্কারীকে পছন্দ করেন না।” [সূরা লোকমান, আয়াত: ১৮] তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« إِنَّ اللَّهَ أَوْحَى إِلَيَّ أَنْ تَوَاضَعُوا حَتَّى لَا يَفْخَرَ أَحَدٌ عَلَى أَحَدٍ » . ( رواه أبو داود و ابن ماجه ).
“আল্লাহ তা‘আলা আমার নিকট অহী পাঠিয়েছেন যে, তোমরা বিনয়ী হও, যাতে কেউ কারও উপর অহঙ্কার প্রকাশ না করে।” [আবূ দাউদ ও ইবনু মাজাহ এবং হাদিসটি সহীহ।] তিনি আরও বলেন:
« ما تَواضعَ أحدٌ لله إلا رفعهُ اللهُ تعالى » . ( رواه الترمذي ).
“যে কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে বিনয় প্রকাশ করবে, আল্লাহ তা‘আলা তার মর্যাদাকে সমুন্নত করবেন।” [তিরমিযী, হাদিস নং- ২০২৯] তাছাড়া একথা সর্বজন বিদিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক মুসলিমের সাথে বিনয়ী ছিলেন, অথচ তিনি হলেন নবী-রাসূলগণের সর্দার; তাছাড়া তিনি নিঃস্ব ও মিসকীনদের সাথে হাঁটতে এবং তাদের সমস্যা সমাধান করতে উদ্ধতভাব ও অহঙ্কার প্রদর্শন করতেন না, বরং তিনি বলতেন:
« اللَّهُمَّ أَحْيِنِى مِسْكِيناً ، وَأَمِتْنِى مِسْكِيناً ، وَاحْشُرْنِى فِى زُمْرَةِ الْمَسَاكِينِ » . ( رواه ابن ماجه و الحاكم ).
“হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মিসকীন অবস্থায় বাঁচিয়ে রাখ, মিসকীন অবস্থায় মৃত্যু দান করিও এবং মিসকীনদের মাঝে আমার হাশরের ব্যবস্থা করিও।” [ইবনু মাজাহ ও হাকেম।] তাছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
« لا يُقِيمَنَّ أحَدُكُمْ رَجُلاً مِنْ مَجْلِسِهِ ثُمَّ يَجْلِسُ فِيهِ ، وَلكِنْ تَوَسَّعُوا وَتَفَسَّحُوا » . ( متفق عليه ).
“তোমাদের কেউ যেন কোনো ব্যক্তিকে তার জায়গা থেকে উঠিয়ে দিয়ে নিজে সেখানে না বসে; বরং তোমরা জায়গা বিস্তৃত করে দাও এবং ছড়িয়ে বসো।” [বুখারী, হাদিস নং- ৫৯১৪; মুসলিম, হাদিস নং- ৫৮১২]
১১. তাকে তিন দিনের বেশি বিচ্ছিন্ন করে না রাখা; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“কোনো মুসলিম ব্যক্তির জন্য তার কোনো মুসলিম ভাইকে তিন দিনের বেশি বিচ্ছিন্ন করে রাখা বৈধ নয়; তাদের উভয়ের মাঝে সাক্ষাৎ হয়, তখন একজন এ দিকে এড়িয়ে যায়, আরেকজন ঐ দিকে এড়িয়ে যায়; আর তাদের উভয়ের মধ্যে যে আগে সালাম দিবে, সে-ই উত্তম বলে বিবেচিত হবে।” [বুখারী, হাদিস নং- ৫৮৮৩; মুসলিম, হাদিস নং- ৬৬৯৭] তিনি আরও বলেন:
“আর তোমরা পরস্পর পরস্পরের পিছনে লেগনা; আর তোমরা আল্লাহর বান্দা ভাই ভাই হয়ে যাও।” [মুসলিম, হাদিস নং- ৬৭০১]
১২. তার গীবত না করা, অথবা তাকে হয়ে প্রতিপন্ন না করা, অথবা তার দোষ বর্ণনা না করা, অথবা তাকে উপহাস না করা, অথবা তাকে বিকৃত নামে না ডাকা, অথবা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার জন্য তার কোনো কথা ফাঁস না করা; কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা অধিকাংশ অনুমান হতে দূরে থাক; কারণ কোনো কোনো অনুমান পাপ এবং তোমরা একে অন্যের গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না এবং একে অন্যের গীবত করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশ্ত খেতে চাইবে? বস্তুত তোমরা তো একে ঘৃণ্যই মনে কর।” [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ১২] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
“হে ঈমানদারগণ! কোনো মুমিন সম্প্রদায় যেন অপর কোনো মুমিন সম্প্রদায়কে উপহাস না করে; কেননা, যাদেরকে উপহাস করা হচ্ছে তারা উপহাসকারীদের চেয়ে উত্তম হতে পারে এবং নারীরা যেন অন্য নারীদেরকে উপহাস না করে; কেননা যাদেরকে উপহাস করা হচ্ছে তারা উপহাসকারিণীদের চেয়ে উত্তম হতে পারে। আর তোমরা একে অন্যের প্রতি দোষারোপ করো না এবং তোমরা একে অন্যকে মন্দ নামে ডেকো না; ঈমানের পর মন্দ নাম অতি নিকৃষ্ট। আর যারা তওবা করে না তারাই তো যালিম।” [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ১১] আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
“তোমরা কি জান, গীবত কাকে বলে? সাহাবীগণ বললেন: আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বলেন: তুমি তোমার ভাইয়ের এমন প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা কর, যা সে অপছন্দ করে। বলা হল: আপনার কী অভিমত, আমি যা আলোচনা করলাম, তা যদি তার মধ্যে থেকে থাকে? তিনি বললেন: যেসব দোষ তুমি বর্ণনা করেছ তা যদি সত্যিই তার মধ্যে থেকে থাকে, তবেই তো তুমি তার গীবত করলে; যদি সেসব দোষ তার মধ্যে না থাকে, তাহলে তো তুমি তার প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করলে।” [মুসলিম, হাদিস নং- ৬৭৫৮] আর তিনি বিদায় হাজ্জের ভাষণে বলেন:
“কোনো ব্যক্তি যেন অপর কোনো ব্যক্তিকে ফাসেক অথবা কাফির না বলে; কারণ, সে ব্যক্তি যদি প্রকৃতই তা না হয়ে থাকে, তাহলে এ অপবাদ তার নিজের ঘাড়ে এসে পড়বে।” [বুখারী, হাদিস নং- ৫৬৯৮] তিনি আরও বলেন:
“পরস্পরকে গালি প্রদানকারী দুই ব্যক্তির মধ্যে যে আগে গালি দিয়েছে, সে দোষী বলে গণ্য হবে, যতক্ষণ না নির্যাতিত ব্যক্তি (অর্থাৎ প্রথম যাকে গালি দেয়া হয়েছে) সীমা অতিক্রম করবে।” [মুসলিম, হাদিস নং- ৬৭৫৬] নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
“কোনো ব্যক্তি কর্তৃক তার পিতামাতাকে গালি দেয়া কবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত! সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন: হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম! কোনো মানুষ কি তার পিতামাতাকে গালি দিতে পারে?! জবাবে তিনি বললেন: হ্যাঁ, সে অন্য কোনো মানুষের পিতাকে গালি দেয়, তখন ঐ ব্যক্তি তার পিতাকে গালি দেয় এবং সে অন্য ব্যক্তির মাকে গালি দেয়, তখন ঐ ব্যক্তি তার মাকে গালি দেয়।” [বুখারী, হাদিস নং- ৫৬২৮; মুসলিম, হাদিস নং- ২৭৩; হাদিসের শব্দগুলো ইমাম মুসলিম রহ. এর।]
১৪. তাকে হিংসা না করা, অথবা তার ব্যাপারে খারাপ ধারণা পোষণ না করা, অথবা তাকে ঘৃণা না করা, অথবা তার পিছনে গোয়েন্দাগিরি না করা; কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা অধিকাংশ অনুমান হতে দূরে থাক; কারণ কোনো কোনো অনুমান পাপ এবং তোমরা একে অন্যের গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না এবং একে অন্যের গীবত করো না।” [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ১২] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
“যখন তারা এটা শুনল, তখন মুমিন পুরুষ এবং মুমিন নারীগণ তাদের নিজেদের সম্পর্কে কেন ভাল ধারণা করল না।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৯৭] আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« لا تَحَاسَدُوا ، وَلاَ تَنَاجَشُوا ، وَلاَ تَبَاغَضُوا ، وَلاَ تَدَابَرُوا ، وَلاَ يَبعْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَيْع بَعْض ، وَكُونُوا عِبَادَ الله إخْوَاناً » . ( رواه مسلم ).
“তোমরা পরস্পরের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করো না, নকল ক্রেতা সেজে আসল ক্রেতার সামনে পণ্যদ্রব্যের দাম বাড়িয়ে বলবে না, পরস্পরের প্রতি ঘৃণা পোষণ করো না এবং পরস্পর পরস্পরের পিছনে লেগনা; আর তোমরা আল্লাহর বান্দা ভাই ভাই হয়ে যাও।” [মুসলিম, হাদিস নং- ৬৭০১] তিনি আরও বলেন:
“আর যারা মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে কষ্ট দেয় যা তারা করেনি তার জন্য; নিশ্চয় তারা অপবাদ ও স্পষ্ট পাপের বোঝা বহন করলো।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৮] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
“আর কেউ কোনো দোষ বা পাপ করে পরে সেটা কোনো নির্দোষ ব্যক্তির প্রতি আরোপ করলে সে তো মিথ্যা অপবাদ ও স্পষ্ট পাপের বোঝা বহন করে।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১১২] আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
“যে ব্যক্তি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়; আর যে ব্যক্তি আমাদের সাথে প্রতারণা করে, সেও আমাদের দলভুক্ত নয়।” [মুসলিম, হাদিস নং- ২৯৪] তিনি আরও বলেন:
“আল্লাহ তাঁর কোনো বান্দকে প্রজা সাধারণের তত্ত্বাবধায়ক বানাবার পর তাদের সাথে খিয়ানতকারী বা প্রতারণাকারী অবস্থায় যদি সে অবধারিত মৃত্যুর দিন মৃত্যুবরণ করে, তাহলে নিশ্চিতভাবে আল্লাহ তার উপর জান্নাত হারাম করে দেবেন।” [মুসলিম, হাদিস নং- ৩৮০] তিনি আরও বলেন:
“যে ব্যক্তি কারও স্ত্রী অথবা দাসীকে ধোঁকা দিয়ে তার চরিত্র নষ্ট করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।” [আবূ দাউদ, হাদিস নং- ৫১৭২]
১৬. তার সাথে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ না করা, অথবা তার খিয়ানত না করা, অথবা তার সাথে মিথ্যা কথা না বলা, অথবা তার ঋণ পরিশোধ করার ক্ষেত্রে টাল-বাহানা না করা; কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
“চারটি স্বভাব যার মধ্যে থাকে, সে হবে খাঁটি মুনাফিক। আর যার মধ্যে এর কোনো একটি স্বভাব থাকবে, তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত মুনাফিকের একটি স্বভাব তার মধ্যে থেকে যাবে; স্বভাবগুলো হল: আমানত রাখলে খিয়ানত করে, কথা বললে মিথ্যা বলে, চুক্তি করলে ভঙ্গ করে এবং ঝগড়ায় লিপ্ত হলে অশ্লীল ভাষায় কথা বলে।” [বুখারী, হাদিস নং- ৩৪; মুসলিম, হাদিস নং- ২১৯] নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
“আল্লাহ তা‘আলা বলেন: কিয়ামতের দিন আমি তিন ব্যক্তির সাথে ঝগড়া করব: যে ব্যক্তি আমার নামে ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করল; যে ব্যক্তি কোনো আযাদ বা স্বাধীন ব্যক্তিকে বিক্রি করে তার মূল্য ভোগ করল; আর যে ব্যক্তি কোনো শ্রমিককে কাজে নিযুক্ত করে তার কাছ থেকে পুরোপুরি কাজ আদায় করল, কিন্তু তার মজুরী বা পারশ্রমিক পরিশোধ করল না।” [বুখারী, হাদিস নং- ২১১৪] তিনি আরও বলেন:
“পাওনা আদায়ের ব্যাপারে ধনী ব্যক্তির টাল-বাহানা করাটা যুলুম। আর যদি কারোর ঋণকে অন্য (ধনী) ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর করা হয়, তাহলে (ঋণ দাতা) এ স্থানান্তরকে ঋণ বলে মেনে নেয়া উচিত।” [বুখারী, হাদিস নং- ২১৬৬; মুসলিম, হাদিস নং- ৪০৮৫]
১৭. তার সাথে সুন্দর ব্যবহার করবে; সুতরাং তার জন্য ভালো কিছু করবে এবং তাকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকবে; আর তার সাথে সাক্ষ্যাৎ করবে হাস্যোজ্জ্বল চেহারা নিয়ে— তার ভালো ব্যবহার গ্রহণ করে নিবে এবং মন্দ আচরণ ক্ষমা করে দিবে; আর তার নিকট যা নেই সে বিষয়ে তার উপর চাপ সৃষ্টি করবে না; সুতরাং জাহেলের নিকট থেকে জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করবে না এবং নির্বাক ব্যক্তি থেকে ভাষা শিখবে না। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
“মানুষের (চরিত্র ও কর্মের) উৎকৃষ্ট অংশ গ্রহণ করুন, সৎকাজের নির্দেশ দিন এবং অজ্ঞদেরকে এড়িয়ে চলুন।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৯৯] আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« اتَّقِ اللَّهَ حَيْثُ مَا كُنْتَ ، وَأَتْبِعِ السَّيِّئَةَ الْحَسَنَةَ تَمْحُهَا ، وَخَالِقِ النَّاسَ بِخُلُقٍ حَسَنٍ » . ( رواه أحمد و الترمذي و الحاكم ).
“তুমি যেখানেই থাক, আল্লাহকে ভয় কর; আর অসৎকাজ করলে তার পরপরই সৎকাজ কর, তাহলে তা মন্দ কাজকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে; আর মানুষের সাথে সদ্ব্যবহার কর।” [আহমাদ, তিরমিযী ও হাকেম।]
১৮. বড় হলে তাকে সম্মান করা; আর ছোট হলে তাকে স্নেহ করা; কেননা, মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَمْ يُوَقِّرْ كَبِيرَنَا ، وَيَرْحَمْ صَغِيرَنَا » . ( رواه أبو داود و الترمذي ).
“যে ব্যক্তি আমাদের বড়কে সম্মান করে না এবং ছোটকে স্নেহ করে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।” [আবূ দাউদ ও তিরমিযী এবং তিনি হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।] তিনি আরও বলেন:
« إنَّ مِنْ إجْلالِ اللهِ تَعَالَى : إكْرَامَ ذِي الشَّيْبَةِ المُسْلِمِ » . ( رواه أبو داود ).
“আল্লাহ তা‘আলাকে সম্মান করার অন্যতম একটি উপায় হলো বৃদ্ধ মুসলিম ব্যক্তিকে সম্মান করা।” [আবূ দাউদ রহ. হাদিসটি ‘হাসান’ সনদে বর্ণনা করেছেন।] তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন: « كَبِّرْ كَبِّرْ » অর্থাৎ বয়োজ্যেষ্ঠকে দিয়ে শুরু কর। হাদিসে প্রসিদ্ধ আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট শিশুকে নিয়ে আসা হত তার জন্য বরকতের দো‘য়া করার জন্য, অথবা তার নাম রাখার জন্য; তারপর তিনি তাকে তাঁর কোলে নিতেন, ফলে কখনও কখনও শিশু তাঁর কোলে পেশাব করে দিত। হাদিসে আরও বর্ণিত আছে: তিনি যখন সফর থেকে আগমন করতেন, তখন শিশুরা তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করত; ফলে তিনি তাদের জন্য থামতেন, তারপর সাহাবীদেরকে নির্দেশ দিতেন তাদেরকে তাঁর নিকট হাজির করার জন্য; তারপর তিনি তাদের মধ্য থেকে কিছু অংশকে তাঁর সামনে রাখতেন এবং কিছূ অংশকে তাঁর পেছনে রাখতেন; আবার তিনি তাঁর সাহাবীদেরকে নির্দেশ দিতেন শিশুদের কাউকে কাউকে (তাঁদের কোলে বা কাঁধে) বহন করার জন্য; আর শিশুদের প্রতি স্নেহ ও ভালোবাসার কারণেই নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসব করতেন।
১৯. নিজ থেকে তার প্রতি ইনসাফ করা এবং তার সাথে এমন ব্যবহার করা, যে ব্যবহার সে নিজে অন্যের কাছ থেকে আশা করে; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« لا يَستكمِلُ العبدُ الإيمانَ حتى يكونَ فيه ثَلاثُ خِصَالٍ : الإِنْفَاقُ مِنَ الإِقْتَارِ ، وَالإِنْصَافُ مِنْ نَفْسِهِ ، وَبَذْلُ السَّلامِ » . ( رواه البخاري و أحمد ).
“বান্দা ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানকে পরিপূর্ণ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তার মধ্যে তিনটি বৈশিষ্ট্যের সমাবেশ ঘটবে: ১. অভাবগ্রস্ত অবস্থায়ও দান করা, ২. নিজ থেকে ইসনাফ করা, এবং ৩. সালামের প্রচলন করা।” [ইমাম বুখারী রহ. হাদিসটি ‘আম্মার ইবন ইয়াসার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে ‘মাওকুফ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন; আর আহমাদ রহ. ‘মারফূ‘’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন (এখানে উল্লেখিত শব্দগুলো আহমাদ রহ. এর বর্ণনা)।] তিনি আরও বলেন:
« مَنْ سَرَّهُ أَنْ يُزَحْزَحَ عَنْ النَّارِ ، وَيُدْخَلَ الْجَنَّةَ فَلْتَأْتِهِ مَنِيَّتُهُ وَهُوَ يَشهَدُ أن لا إله إلا الله وأن محمدًا عَبْدُهُ و رسُولُهُ ، وَلْيَأْتِ إِلَى النَّاسِ الَّذِي يُحِبُّ أنْ يُؤْتَى إِلَيْهِ » . ( رواه الخرائطى و الطبرانى ).
“যে ব্যক্তি মনে প্রাণে জাহান্নাম থেকে মুক্ত হতে এবং জান্নাতে প্রবেশ করতে চায়, তার যেন মৃত্যু হয় এমন অবস্থায় যে, সে সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল এবং মানুষের সাথে এমন ব্যবহার করে, যে ব্যবহার সে নিজে অন্যের কাছ থেকে আশা করে।” [খারায়েত্বী ও ত্ববারানী।]
২০. তার ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমা করা ও অভ্যন্তরীণ বিষয় গোপন রাখা এবং তার গোপন কথা কান পেতে না শুনা; কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
“তবে তার ভাইয়ের পক্ষ থেকে কোনো ক্ষমা প্রদর্শন করা হলে যথাযথ বিধির অনুসরণ করা ও সততার সাথে তার রক্ত-বিনিময় আদায় করা কর্তব্য।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৭৮] তিনি আরও বলেন:
“নিশ্চয় যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ১৯] তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
“যে কোনো বান্দা দুনিয়াতে অন্য বান্দার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন।” [মুসলিম, হাদিস নং- ৬৭৬০] তিনি আরও বলেন:
“হে যারা মুখে ঈমান এনেছ, অথচ অন্তরে ঈমান প্রবেশ করেনি! তোমরা মুসলিমগণের গীবত করো না এবং তাদের গোপন বিষয়ের অনুসরণ করো না; কারণ, যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের গোপন বিষয় খোঁজাখুঁজি করবে, আল্লাহ তা‘আলাও তার গোপন বিষয়ের পিছনে লাগবেন; আর আল্লাহ যার গোপন বিষয়ের পিছনে লাগবেন, সে তার ঘরের মধ্যে অবস্থান করলেও তিনি তা ফাঁস করে দিবেন।” [তিরমিযী, আহমাদ আবূ দাউদ।] নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
“কেউ কোনো ভাল কাজের সুপারিশ করলে তাতে তার অংশ থাকবে।” [সূরা আ-নিসা, আয়াত: ৮৫] আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« مَنْ نَفَّسَ عَنْ مُؤْمِنٍ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ الدُّنيَا ، نَفَّسَ الله عَنْهُ كُربَةً مِنْ كُرَبِ يَوْمِ القِيَامَةِ ، وَمَنْ يَسَّر عَلَى مُعْسِرٍ يَسَّرَ الله عَلَيهِ في الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ ، وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِماً سَتَرَهُ الله في الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ ، والله في عَونِ العَبْدِ مَا كَانَ العَبْدُ في عَونِ أخِيهِ » . ( رواه مسلم ).
“যে ব্যক্তি কোনো মুসলিম ব্যক্তির পার্থিব কষ্টসমূহের মধ্য থেকে একটি কষ্ট দূর করে দেয়, আল্লাহ তা‘আলা তার কিয়ামতের দিনের কষ্টসমূহের মধ্য থেকে একটি কষ্ট দূর করে দিবেন; আর যে ব্যক্তি কোনো অভাবীর অভাবের কষ্ট লাঘব করে দেয়, আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার অভাবের কষ্ট লাঘব করে দিবেন; আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলিম ব্যক্তির দোষ-ত্রুটি গোপন করবে, আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন করে রাখবেন; আর বান্দা যতক্ষণ তার মুসলিম ভাইয়ের সাহায্য করতে থাকে, আল্লাহও ততক্ষণ তার সাহায্য-সহযোগিতা করতে থাকেন।” [মুসলিম, হাদিস নং- ৭০২৮] তিনি আরও বলেন:
“তোমরা সুপারিশ কর, প্রতিদান পাবে; আর আল্লাহ যা চান, তিনি তাঁর নবীর মুখ দিয়ে তা প্রকাশ করান।” [বুখারী, হাদিস নং- ১৩৬৫; মুসলিম, হাদিস নং- ৬৮৫৮]
২২. সে যখন আল্লাহর নামে আশ্রয় চাইবে, তখন তাকে আশ্রয় দেওয়া; যখন তার কাছে আল্লাহর নামে সাহায্য চাইবে, তখন তাকে দান করা; তার ভালো কাজের জন্য তাকে পুরস্কার দেওয়া অথবা তার জন্য দো‘য়া করা; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
“যে ব্যক্তি আল্লাহর নামে আশ্রয় চাইবে, তোমরা তাকে আশ্রয় দাও; আর যে ব্যক্তি তোমাদের কাছে আল্লাহর নামে সাহায্য চাইবে, তোমরা তাকে দান কর; আর যে ব্যক্তি তোমাদেরকে আহ্বান করবে, তোমরা তার ডাকে সাড়া দাও; আর যে ব্যক্তি তোমাদের উপকার করবে, তোমরা তাকে প্রতিদান দাও; আর যদি তাকে পুরস্কার দেওয়ার মত কিছু না পাও, তাহলে তোমরা তার জন্য এমনভাবে দো‘য়া কর, যাতে তোমাদের মনের তৃপ্তি হয় যে, তোমরা তাদের প্রতিদান দিতে পেরেছ।” [আহমাদ, আবূ দাউদ, নাসায়ী ও হাকেম এবং সনদটি ‘হাসান’ পর্যায়ের।]
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/537/21
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।