HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
ইসলাম একমাত্র পরিপূর্ণ দীন
লেখকঃ মুহাম্মাদ আল-আমীন ইবন মুহাম্মাদ আল-মুখতার আশ্-শানকীতী
এই গ্রন্থটিতে দুনিয়ার সকল বিষয় পরিচালিত হয় এমন দশটি মহান বিষয়ের প্রতি আলোকপাত করে আল-কুরআনের মাধ্যমে এর সমাধান করা হয়েছে। যেমন, ১. তাওহীদ ২. উপদেশ ৩. সৎকর্ম ও অন্যান্য কর্মের মধ্যে পার্থক্য ৪. পবিত্র শরী‘আত ব্যতীত অন্য কোনো বিধানকে ফয়সালাকারী হিসেবে গ্রহণ করা ৫. সমাজের সামাজিক অবস্থা ৬. অর্থনীতি ৭. রাজনীতি ৮. কাফির কর্তৃক মুসলিমদের ওপর প্রভাব বিস্তার সমস্যা ৯. কাফিরদের প্রতিরোধে মুসলিমদের সংখ্যাগত ও প্রস্তুতিগত দুর্বলতা সমস্যা ১০. সমাজের পারস্পরিক আন্তরিক অনৈক্য সমস্যা।
الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على نبينا محمد وعلى آله وصحبه و من دعا بدعوته إلى يوم الدين .
সমস্ত প্রশংসা সৃষ্টিজগতের রব আল্লাহর জন্য, আর সালাত (দুরূদ) ও সালাম আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি। আরও বর্ষিত হউক তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবীবৃন্দের প্রতি এবং তার প্রতিও, যিনি তাঁর দাওয়াতের মাধ্যমে কিয়ামত পর্যন্ত দাওয়াতী তৎপরতা পরিচালনা করেন।
অতঃপর...
এটি একটি বক্তব্য, যা আমি মরক্কোর বাদশাহের অনুরোধে মসজিদে নববীতে পেশ করেছিলাম। অতঃপর আমার কিছুসংখ্যক ভাই তা লিপিবদ্ধ করে প্রকাশ করার জন্য আমাকে অনুরোধ করেন এবং আল্লাহ তা‘আলা এর মাধ্যমে কল্যাণ করবেন এই আশা করে আমি সেই অনুরোধে সাড়া দেই।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗا﴾ [ سورة المائدة : 3]
“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের ওপর আমার নি‘আমত সম্পূর্ণ করলাম; আর তোমাদের জন্য ইসলামকে দীন হিসেবে পছন্দ করলাম।” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৩]
সেই দিনটি ছিল ‘আরাফাতের দিন, আর তা ছিল বিদায় হজের সময়কার জুম‘আর দিন। এই আয়াতটি ঐ দিন বিকাল বেলায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আরাফাতের ময়দানে অবস্থানকালীন সময়ে অবতীর্ণ হয়েছে। [যেমন সহীহাইনে উল্লিখিত উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে রয়েছে: সহীহ বুখারী, কিতাবুল ঈমান ( كتاب الإيمان ), বাবু যিয়াদাতুল ঈমান ওয়া নুকসানিহী ( باب زيادة الإيمان و نقصانه ), ১/ ১৭; সহীহ মুসলিম, কিতাবুত তাফসীর ( كتاب التفسير ), (৪/ ২৩১২), হাদীস নং ৩০১৭।] আর এই আয়াতটি অবতীর্ণের পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাশি দিন জীবিত ছিলেন। আল্লাহ তা‘আলা এই আয়াতে স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, তিনি আমাদের জন্য আমাদের দীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। সুতরাং তিনি কখনও তার মধ্যে কমতি করবেন না এবং কখনও বৃদ্ধিরও প্রয়োজন হবে না। আর এই জন্যই তিনি আমাদের নবীর মাধ্যমে নবীদের আগমনের ধারার পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছেন।
আর তিনি এই আয়াতে আরও স্পষ্ট করেছেন যে, তিনি আমাদের জন্য ইসলামকে আমাদের দীন হিসেবে পছন্দ করেছেন, তাই এই দীনের প্রতি তিনি কখনো অসন্তুষ্ট হবেন না। আর এ কারণেই তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, কারও নিকট থেকে তিনি ইসলাম ব্যতীত কোনো কিছু গ্রহণ করবেন না। তিনি বলেন,
﴿وَمَن يَبۡتَغِ غَيۡرَ ٱلۡإِسۡلَٰمِ دِينٗا فَلَن يُقۡبَلَ مِنۡهُ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٨٥﴾ [ سورة آل عمران : 85]
“কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো দীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনও গ্রহণ করা হবে না এবং সে হবে আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৮৫]
তিনি আরও বলেন,
﴿إِنَّ ٱلدِّينَ عِندَ ٱللَّهِ ٱلۡإِسۡلَٰمُ﴾ [ سُورَةُ آلِ عِمۡرَان : 19]
“নিঃসন্দেহে ইসলামই আল্লাহর নিকট একমাত্র দীন।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৯] আর দীন পরিপূর্ণ করে দেওয়া এবং তার যাবতীয় বিধিবিধান বর্ণনা করার মধ্যে উভয় জগতের সকল প্রকার নি‘আমত অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, তাই তিনি বলেছেন:
﴿وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي﴾ [ سورة المائدة : 3]
“এবং তোমাদের ওপর আমার নি‘আমত সম্পূর্ণ করলাম।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৩]
এই আয়াতখানা একটি সুস্পষ্ট ভাষ্য, যা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নিঃসন্দেহে দীন ইসলাম মানুষের প্রয়োজনীয় দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় বিষয় ব্যাখ্যাসহকারে যথাযথভাবে বর্ণনা করে দিয়েছে।
এর দৃষ্টান্তস্বরূপ আমরা দশটি বিশেষ মাসআলার বিবরণ পেশ করছি, যার ওপর ভিত্তি করে দুনিয়ার জীবন পরিচালিত হয়। জ্ঞানী ব্যক্তির নিকট এই মাসআলাসমূহ উভয় জগতেই গুরুত্ব বহন করে। কিছু সংখ্যক বিষয়ের মধ্যে অন্যান্য সব বিষয়গুলোর প্রতিই সুক্ষ্মভাবে ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে। মাসআলা দশটি হলো:
প্রথমত: আল্লাহর তাওহীদ;
দ্বিতীয়ত: উপদেশ;
তৃতীয়ত: সৎকর্ম ও অন্যান্য কর্মের মধ্যে পার্থক্য;
চতুর্থত: শরী‘আতের বিধান ব্যতীত অন্য বিধান দ্বারা বিচার-ফয়সালা করা;
পঞ্চমত: সামাজিক অবস্থা;
ষষ্ঠত: অর্থনীতি;
সপ্তমত: রাজনীতি;
অষ্টমত: মুসলিমদের ওপর কাফিরদের প্রভাব বিস্তারজনিত সমস্যা;
নবমত: সংখ্যায় ও প্রস্তুতির ক্ষেত্রে কাফিরদের প্রতিরোধে মুসলিমদের দুর্বলতাজনিত সমস্যা;
দশমত: সমাজের মধ্যে আন্তরিক অনৈক্যজনিত সমস্যা।
আমরা আল-কুরআন থেকে এসব সমস্যার সমাধান ব্যাখ্যা করব। এই বিষয়গুলো কুরআনের ইঙ্গিত দ্বারা বর্ণনার মাধ্যমে অন্যান্য বিষয়ের প্রতিও কিঞ্চিত ইশারা প্রদান করা হয়েছে।
সমস্ত প্রশংসা সৃষ্টিজগতের রব আল্লাহর জন্য, আর সালাত (দুরূদ) ও সালাম আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি। আরও বর্ষিত হউক তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবীবৃন্দের প্রতি এবং তার প্রতিও, যিনি তাঁর দাওয়াতের মাধ্যমে কিয়ামত পর্যন্ত দাওয়াতী তৎপরতা পরিচালনা করেন।
অতঃপর...
এটি একটি বক্তব্য, যা আমি মরক্কোর বাদশাহের অনুরোধে মসজিদে নববীতে পেশ করেছিলাম। অতঃপর আমার কিছুসংখ্যক ভাই তা লিপিবদ্ধ করে প্রকাশ করার জন্য আমাকে অনুরোধ করেন এবং আল্লাহ তা‘আলা এর মাধ্যমে কল্যাণ করবেন এই আশা করে আমি সেই অনুরোধে সাড়া দেই।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗا﴾ [ سورة المائدة : 3]
“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের ওপর আমার নি‘আমত সম্পূর্ণ করলাম; আর তোমাদের জন্য ইসলামকে দীন হিসেবে পছন্দ করলাম।” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৩]
সেই দিনটি ছিল ‘আরাফাতের দিন, আর তা ছিল বিদায় হজের সময়কার জুম‘আর দিন। এই আয়াতটি ঐ দিন বিকাল বেলায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আরাফাতের ময়দানে অবস্থানকালীন সময়ে অবতীর্ণ হয়েছে। [যেমন সহীহাইনে উল্লিখিত উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে রয়েছে: সহীহ বুখারী, কিতাবুল ঈমান ( كتاب الإيمان ), বাবু যিয়াদাতুল ঈমান ওয়া নুকসানিহী ( باب زيادة الإيمان و نقصانه ), ১/ ১৭; সহীহ মুসলিম, কিতাবুত তাফসীর ( كتاب التفسير ), (৪/ ২৩১২), হাদীস নং ৩০১৭।] আর এই আয়াতটি অবতীর্ণের পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাশি দিন জীবিত ছিলেন। আল্লাহ তা‘আলা এই আয়াতে স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, তিনি আমাদের জন্য আমাদের দীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। সুতরাং তিনি কখনও তার মধ্যে কমতি করবেন না এবং কখনও বৃদ্ধিরও প্রয়োজন হবে না। আর এই জন্যই তিনি আমাদের নবীর মাধ্যমে নবীদের আগমনের ধারার পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছেন।
আর তিনি এই আয়াতে আরও স্পষ্ট করেছেন যে, তিনি আমাদের জন্য ইসলামকে আমাদের দীন হিসেবে পছন্দ করেছেন, তাই এই দীনের প্রতি তিনি কখনো অসন্তুষ্ট হবেন না। আর এ কারণেই তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, কারও নিকট থেকে তিনি ইসলাম ব্যতীত কোনো কিছু গ্রহণ করবেন না। তিনি বলেন,
﴿وَمَن يَبۡتَغِ غَيۡرَ ٱلۡإِسۡلَٰمِ دِينٗا فَلَن يُقۡبَلَ مِنۡهُ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٨٥﴾ [ سورة آل عمران : 85]
“কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো দীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনও গ্রহণ করা হবে না এবং সে হবে আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৮৫]
তিনি আরও বলেন,
﴿إِنَّ ٱلدِّينَ عِندَ ٱللَّهِ ٱلۡإِسۡلَٰمُ﴾ [ سُورَةُ آلِ عِمۡرَان : 19]
“নিঃসন্দেহে ইসলামই আল্লাহর নিকট একমাত্র দীন।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৯] আর দীন পরিপূর্ণ করে দেওয়া এবং তার যাবতীয় বিধিবিধান বর্ণনা করার মধ্যে উভয় জগতের সকল প্রকার নি‘আমত অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, তাই তিনি বলেছেন:
﴿وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي﴾ [ سورة المائدة : 3]
“এবং তোমাদের ওপর আমার নি‘আমত সম্পূর্ণ করলাম।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৩]
এই আয়াতখানা একটি সুস্পষ্ট ভাষ্য, যা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নিঃসন্দেহে দীন ইসলাম মানুষের প্রয়োজনীয় দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় বিষয় ব্যাখ্যাসহকারে যথাযথভাবে বর্ণনা করে দিয়েছে।
এর দৃষ্টান্তস্বরূপ আমরা দশটি বিশেষ মাসআলার বিবরণ পেশ করছি, যার ওপর ভিত্তি করে দুনিয়ার জীবন পরিচালিত হয়। জ্ঞানী ব্যক্তির নিকট এই মাসআলাসমূহ উভয় জগতেই গুরুত্ব বহন করে। কিছু সংখ্যক বিষয়ের মধ্যে অন্যান্য সব বিষয়গুলোর প্রতিই সুক্ষ্মভাবে ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে। মাসআলা দশটি হলো:
প্রথমত: আল্লাহর তাওহীদ;
দ্বিতীয়ত: উপদেশ;
তৃতীয়ত: সৎকর্ম ও অন্যান্য কর্মের মধ্যে পার্থক্য;
চতুর্থত: শরী‘আতের বিধান ব্যতীত অন্য বিধান দ্বারা বিচার-ফয়সালা করা;
পঞ্চমত: সামাজিক অবস্থা;
ষষ্ঠত: অর্থনীতি;
সপ্তমত: রাজনীতি;
অষ্টমত: মুসলিমদের ওপর কাফিরদের প্রভাব বিস্তারজনিত সমস্যা;
নবমত: সংখ্যায় ও প্রস্তুতির ক্ষেত্রে কাফিরদের প্রতিরোধে মুসলিমদের দুর্বলতাজনিত সমস্যা;
দশমত: সমাজের মধ্যে আন্তরিক অনৈক্যজনিত সমস্যা।
আমরা আল-কুরআন থেকে এসব সমস্যার সমাধান ব্যাখ্যা করব। এই বিষয়গুলো কুরআনের ইঙ্গিত দ্বারা বর্ণনার মাধ্যমে অন্যান্য বিষয়ের প্রতিও কিঞ্চিত ইশারা প্রদান করা হয়েছে।
কুরআনের পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণের মাধ্যমে জানা যায় যে, তাওহীদ তথা একত্ববাদের তিনটি অংশ রয়েছে:
প্রথম প্রকার: রুবুবিয়াত (সৃষ্টি, সার্বভৌম প্রভুত্ব ও পরিচালন)-এর ক্ষেত্রে আল্লাহর তাওহীদ:
তাওহীদের এই অংশের ওপর জ্ঞানবানদের স্বভাব-প্রকৃতি প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَئِن سَأَلۡتَهُم مَّنۡ خَلَقَهُمۡ لَيَقُولُنَّ ٱللَّهُ﴾ الآية [ سُورَةُ الزخرف : 87]
“যদি তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস কর, কে তাদেরকে সৃষ্টি করেছে, তারা অবশ্যই বলবে, আল্লাহ।” [সূরা আয-যুখরুফ, আয়াত: ৮৭]
তিনি আরও বলেন,
﴿قُلۡ مَن يَرۡزُقُكُم مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِ أَمَّن يَمۡلِكُ ٱلسَّمۡعَ وَٱلۡأَبۡصَٰرَ وَمَن يُخۡرِجُ ٱلۡحَيَّ مِنَ ٱلۡمَيِّتِ وَيُخۡرِجُ ٱلۡمَيِّتَ مِنَ ٱلۡحَيِّ وَمَن يُدَبِّرُ ٱلۡأَمۡرَۚ فَسَيَقُولُونَ ٱللَّهُۚ فَقُلۡ أَفَلَا تَتَّقُونَ ٣١﴾ [ سُورَةُ يونس : 31]
“বল, কে তোমাদেরকে আকাশ ও পৃথিবী থেকে জীবনোপকরণ সরবরাহ করে অথবা শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি কার কর্তৃত্বাধীন, জীবিতকে মৃত থেকে কে বের করে এবং মৃততে জীবিত থেকে কে বের করে এবং সকল বিষয় কে নিয়ন্ত্রণ করে? তখন তারা বলবে, আল্লাহ। বল, তবুও কি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করবে না?” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৩১] আর অনুরূপ আরও অনেক আয়াত রয়েছে।
আর এই প্রকার তাওহীদকে ফির‘আউন অহঙ্কার ও গোঁড়ামিবশত অস্বীকার করেছে। যেমন, তার কথায়:
﴿قَالَ فِرۡعَوۡنُ وَمَا رَبُّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٢٣﴾ [ سُورَةُ الشعراء : 23]
“ফির‘আউন বলল, সৃষ্টিজগতের রব আবার কী?” [সূরা আশ-শু‘আরা, আয়াত: ২৩] তার অস্বীকার করা যে অহঙ্কারবশত ও ইচ্ছাকৃত, তার প্রমাণে আল্লাহ তা‘আলা অন্য আয়াতে বলেন,
﴿قَالَ لَقَدۡ عَلِمۡتَ مَآ أَنزَلَ هَٰٓؤُلَآءِ إِلَّا رَبُّ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ بَصَآئِرَ ﴾ الآية [ سُورَةُ الإسراء : 102]
“মূসা বলেছিল, তুমি অবশ্যই অবগত আছ যে, এসব স্পষ্ট নিদর্শন আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর রব-ই অবতীর্ণ করেছেন প্রত্যক্ষ প্রমাণস্বরূপ।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ১০২]
তিনি আরও বলেন,
﴿وَجَحَدُواْ بِهَا وَٱسۡتَيۡقَنَتۡهَآ أَنفُسُهُمۡ ظُلۡمٗا وَعُلُوّٗاۚ﴾ [ سُورَةُ النمل : 14]
“তারা অন্যায় ও উদ্ধতভাবে নিদর্শনগুলো প্রত্যাখ্যান করল, যদিও তাদের অন্তর এগুলোকে সত্য বলে গ্রহণ করেছিল।” [সূরা আন-নামল, আয়াত: ১৪]
আর এই কারণে তাওহীদের এই প্রকারকে প্রমাণ করার জন্য সাব্যস্তকরণসূচক প্রশ্নবোধক ( استفهام التقرير ) শব্দ দ্বারা আল-কুরআন অবতীর্ণ হতো, যেমন তাঁর বাণী:
﴿أَفِي ٱللَّهِ شَكّٞ فَاطِرِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۖ ۚ﴾ [ سُورَةُ إبراهيم : 10]
“আল্লাহ সম্বন্ধে কি কোনো সন্দেহ আছে, যিনি আকাশমণ্ডলী ও যমীনের সৃষ্টিকর্তা?” [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ১০]
তিনি আরও বলেন,
﴿قُلۡ أَغَيۡرَ ٱللَّهِ أَبۡغِي رَبّٗا وَهُوَ رَبُّ كُلِّ شَيۡءٖۚ﴾ [ سُورَةُ الأنعام : 164]
“বল, আমি কি আল্লাহকে ছেড়ে অন্য রবকে খুঁজব? অথচ তিনিই সবকিছুর রব।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৬৪]
তিনি আরও বলেন,
﴿قُلۡ مَن رَّبُّ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ قُلِ ٱللَّهُ﴾ [ سُورَةُ الرعد : 16]
“বল, কে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর রব? বল, আল্লাহ।” [সূরা আর-রা‘দ, আয়াত: ১৬) এবং অনুরূপ আর আয়াত। কারণ, তারা এর স্বীকৃতি প্রদান করে।
আর এই প্রকারের তাওহীদে বিশ্বাস কাফির সম্প্রদায়ের কোনো উপকার করে নি। কারণ, তারা ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহকে একমাত্র ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করে নি। যেমন, তিনি বলেছেন:
﴿وَمَا يُؤۡمِنُ أَكۡثَرُهُم بِٱللَّهِ إِلَّا وَهُم مُّشۡرِكُونَ ١٠٦﴾ [ سُورَةُ يوسف : 106]
“তাদের অধিকাংশ আল্লাহতে বিশ্বাস করে, কিন্তু তারা তাঁর সাথে শরীক করে।” [সূরা ইউসুফ, আয়াত: ১০৬] তিনি আরও বলেছেন:
﴿مَا نَعۡبُدُهُمۡ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَآ إِلَى ٱللَّهِ زُلۡفَىٰٓ ﴾ [ سُورَةُ الزمر : 3]
“আমরা তো তাদের ইবাদত-আনুগত্য এজন্যই করি যে, তারা আমাদেরকে সুপারিশ করে আল্লাহর সান্নিধ্যে এনে দিবে।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৩]
তিনি আরও বলেছেন:
﴿وَيَقُولُونَ هَٰٓؤُلَآءِ شُفَعَٰٓؤُنَا عِندَ ٱللَّهِۚ قُلۡ أَتُنَبُِّٔونَ ٱللَّهَ بِمَا لَا يَعۡلَمُ فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَلَا فِي ٱلۡأَرۡضِ﴾ [ سُورَةُ يونس : 18]
“তারা বলে, এগুলো আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী। বল, তোমরা কি আল্লাহকে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর এমন কিছুর সংবাদ দিবে, যা তিনি জানেন না?” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ১৮]
দ্বিতীয় প্রকার: ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহর তাওহীদ:
এটা এমন একটি বিষয়, যাকে কেন্দ্র করেই রাসূলগণ ও বিভিন্ন জাতির মধ্যে সকল যুদ্ধবিগ্রহ সংঘটিত হয়েছে। আর এটা এমন একটি ব্যাপার, যা বাস্তবায়ন করার জন্যই নবী ও রাসূলদের প্রেরণ করা হয়েছে। আর তার মূলকথা হলো: ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই’-এর অর্থ। সুতরাং তা দু’টি মূলনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত: নীতি দু’টি হলো (আল্লাহ ছাড়া কোনো হক ইলাহ নেই) এর মধ্যকার নেতিবাচক দিক এবং ইতিবাচক দিক।
বাক্যটির নেতিবাচক অর্থ হলো: সকল প্রকার ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত সকল প্রকার উপাস্যকে পরিহার বা প্রত্যাহার করে নেওয়া।
বাক্যটির ইতিবাচক অর্থ হলো: সকল প্রকার ইবাদত তাঁর বিধিবদ্ধ শর‘ঈ পদ্ধতিতে এককভাবে ও একমাত্র তাঁরই জন্য নির্দিষ্ট করা। আল-কুরআনের সিংহভাগ আয়াতই এই প্রকার তাওহীদ প্রসঙ্গে। যেমন,
﴿وَلَقَدۡ بَعَثۡنَا فِي كُلِّ أُمَّةٖ رَّسُولًا أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَٱجۡتَنِبُواْ ٱلطَّٰغُوتَۖ﴾ [ سُورَةُ النحل : 36]
“আল্লাহর ইবাদত করার ও তাগুতকে বর্জন করার নির্দেশ দেওয়ার জন্য আমরা তো প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল পাঠিয়েছি।” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৩৬]
﴿وَمَآ أَرۡسَلۡنَا مِن قَبۡلِكَ مِن رَّسُولٍ إِلَّا نُوحِيٓ إِلَيۡهِ أَنَّهُۥ لَآ إِلَٰهَ إِلَّآ أَنَا۠ فَٱعۡبُدُونِ ٢٥﴾ [ سُورَةُ الأنبياء : 25]
“আমরা তোমার পূর্বে এমন কোনো রাসূল প্রেরণ করিনি তার প্রতি এই ওহী ব্যতীত যে, আমি ব্যতীত অন্য কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। সুতরাং আমারই ইবাদত কর।” [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ২৫]
﴿فَمَن يَكۡفُرۡ بِٱلطَّٰغُوتِ وَيُؤۡمِنۢ بِٱللَّهِ فَقَدِ ٱسۡتَمۡسَكَ بِٱلۡعُرۡوَةِ ٱلۡوُثۡقَىٰ لَا ٱنفِصَامَ لَهَا﴾ [ سُورَةُ البقرة : 256]
“সুতরাং যে তাগুতকে অস্বীকার করবে ও আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে, সে এমন এক মজবুত হাতল ধরবে, যা কখনও ভাঙ্গবে না।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৫৬]
﴿وَسَۡٔلۡ مَنۡ أَرۡسَلۡنَا مِن قَبۡلِكَ مِن رُّسُلِنَآ أَجَعَلۡنَا مِن دُونِ ٱلرَّحۡمَٰنِ ءَالِهَةٗ يُعۡبَدُونَ ٤٥﴾ [ سُورَةُ الزخرف : 45]
“তোমার পূর্বে আমরা যে সকল রাসূল প্রেরণ করেছিলাম তাদেরকে তুমি জিজ্ঞাসা কর, আমরা কি দয়াময় আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য স্থির করেছিলাম, যার ইবাদত করা যায়?” [সূরা আয-যুখরুফ, আয়াত: ৪৫]
﴿قُلۡ إِنَّمَا يُوحَىٰٓ إِلَيَّ أَنَّمَآ إِلَٰهُكُمۡ إِلَٰهٞ وَٰحِدٞۖ فَهَلۡ أَنتُم مُّسۡلِمُونَ ١٠٨﴾ [ سُورَةُ الأنبياء : 108]
“বল আমার প্রতি ওহী হয় যে, তোমাদের ইলাহ একজন ইলাহ। সুতরাং তোমরা কি আত্মসমর্পণকারী হবে না?” [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ১০৮] আর এই প্রসঙ্গে আরও বহু আয়াত রয়েছে।
তৃতীয় প্রকার: নাম ও গুণাবলীর ক্ষেত্রে আল্লাহর তাওহীদ:
এ প্রকারের তাওহীদ দু’টি মূলনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত, যেমনটি আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা করেছেন:
প্রথমত: আল্লাহ তা‘আলাকে সৃষ্টির গুণাবলির সাথে তুলনা করা থেকে পবিত্র রাখা।
দ্বিতীয়ত: আল্লাহ তা‘আলা নিজেকে অথবা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে যেসব গুণে গুণান্বিত করেছেন, রূপকার্থে নয় বরং প্রকৃতার্থে আল্লাহ তা‘আলার পরিপূর্ণতা ও যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে সেগুলোর প্রতি ঈমান আনা। আর এটা জানা কথা যে, আল্লাহ সম্পর্কে আল্লাহর চেয়ে জ্ঞানী কেউ নেই যে আল্লাহর গুণ বর্ণনা করতে পারে, আর আল্লাহর পরে আল্লাহর গুণাবলি সম্পর্কে আল্লাহ্র রাসূলের চেয়ে অধিক জ্ঞানী কেউ নেই যে তাঁর গুণাবলি বর্ণনা করতে সক্ষম।
আর আল্লাহ তা‘আলা নিজের ব্যাপারে বলছেন:
﴿ءَأَنتُمۡ أَعۡلَمُ أَمِ ٱللَّهُ﴾ [ سُورَةُ البقرة : 140]
“তোমরা কি বেশি জানো, না আল্লাহ?” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৪০]
আর তিনি তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে বলেন,
﴿وَمَا يَنطِقُ عَنِ ٱلۡهَوَىٰٓ ٣ إِنۡ هُوَ إِلَّا وَحۡيٞ يُوحَىٰ ٤﴾ [ سُورَةُ النجم : 3-4]
“এবং সে মনগড়া কথাও বলে না। এটা তো ওহী, যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়” [সূরা আন-নাজম, আয়াত: ৩-৪]
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বাণী দ্বারাই তাঁর অনুরূপ কোনো কিছু নেই বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন,
﴿لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞ﴾ [ سُورَة الشورى : 11]
“কোনো কিছুই তাঁর সদৃশ নয়।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ১১] আর তিনি তাঁর ইতিবাচক গুণাবলীসমূহ প্রকৃতার্থেই সাব্যস্ত করেছেন তাঁর ভাষায়:
﴿وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ﴾ [ سُورَة الشورى : 11]
“..আর তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ১১] সুতরাং আয়াতের প্রথমাংশ দ্বারা প্রমাণিত যে, তাঁর গুণাবলি অকার্যকর বা অসার করার অবকাশ নেই।
তাই আয়াত থেকে সুস্পষ্ট যে, প্রত্যেকের জন্য আবশ্যক হলো কোনো প্রকার সাদৃশ্যস্থাপন ছাড়া প্রকৃত অর্থেই তাঁর গুণাবলী তাঁর জন্য সাব্যস্ত করা এবং তাঁর গুণাবলি অকার্যকর না করে অন্য সব কিছুর সাথে তাঁর সাদৃশ্যতাকে অস্বীকার করা।
কারণ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৃষ্টি কর্তৃক তাঁকে জ্ঞানে বেষ্টন করার অক্ষমতার কথা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন:
﴿يَعۡلَمُ مَا بَيۡنَ أَيۡدِيهِمۡ وَمَا خَلۡفَهُمۡ وَلَا يُحِيطُونَ بِهِۦ عِلۡمٗا ١١٠ ﴾ [ سُورَةُ طه : 110]
“তাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে যা কিছু আছে তা তিনি অবগত, কিন্তু তারা জ্ঞান দ্বারা তাঁকে বেষ্টন করতে পারে না”। [সূরা ত্ব-হা, আয়াত: ১১০]
প্রথম প্রকার: রুবুবিয়াত (সৃষ্টি, সার্বভৌম প্রভুত্ব ও পরিচালন)-এর ক্ষেত্রে আল্লাহর তাওহীদ:
তাওহীদের এই অংশের ওপর জ্ঞানবানদের স্বভাব-প্রকৃতি প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَئِن سَأَلۡتَهُم مَّنۡ خَلَقَهُمۡ لَيَقُولُنَّ ٱللَّهُ﴾ الآية [ سُورَةُ الزخرف : 87]
“যদি তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস কর, কে তাদেরকে সৃষ্টি করেছে, তারা অবশ্যই বলবে, আল্লাহ।” [সূরা আয-যুখরুফ, আয়াত: ৮৭]
তিনি আরও বলেন,
﴿قُلۡ مَن يَرۡزُقُكُم مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِ أَمَّن يَمۡلِكُ ٱلسَّمۡعَ وَٱلۡأَبۡصَٰرَ وَمَن يُخۡرِجُ ٱلۡحَيَّ مِنَ ٱلۡمَيِّتِ وَيُخۡرِجُ ٱلۡمَيِّتَ مِنَ ٱلۡحَيِّ وَمَن يُدَبِّرُ ٱلۡأَمۡرَۚ فَسَيَقُولُونَ ٱللَّهُۚ فَقُلۡ أَفَلَا تَتَّقُونَ ٣١﴾ [ سُورَةُ يونس : 31]
“বল, কে তোমাদেরকে আকাশ ও পৃথিবী থেকে জীবনোপকরণ সরবরাহ করে অথবা শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি কার কর্তৃত্বাধীন, জীবিতকে মৃত থেকে কে বের করে এবং মৃততে জীবিত থেকে কে বের করে এবং সকল বিষয় কে নিয়ন্ত্রণ করে? তখন তারা বলবে, আল্লাহ। বল, তবুও কি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করবে না?” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৩১] আর অনুরূপ আরও অনেক আয়াত রয়েছে।
আর এই প্রকার তাওহীদকে ফির‘আউন অহঙ্কার ও গোঁড়ামিবশত অস্বীকার করেছে। যেমন, তার কথায়:
﴿قَالَ فِرۡعَوۡنُ وَمَا رَبُّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٢٣﴾ [ سُورَةُ الشعراء : 23]
“ফির‘আউন বলল, সৃষ্টিজগতের রব আবার কী?” [সূরা আশ-শু‘আরা, আয়াত: ২৩] তার অস্বীকার করা যে অহঙ্কারবশত ও ইচ্ছাকৃত, তার প্রমাণে আল্লাহ তা‘আলা অন্য আয়াতে বলেন,
﴿قَالَ لَقَدۡ عَلِمۡتَ مَآ أَنزَلَ هَٰٓؤُلَآءِ إِلَّا رَبُّ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ بَصَآئِرَ ﴾ الآية [ سُورَةُ الإسراء : 102]
“মূসা বলেছিল, তুমি অবশ্যই অবগত আছ যে, এসব স্পষ্ট নিদর্শন আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর রব-ই অবতীর্ণ করেছেন প্রত্যক্ষ প্রমাণস্বরূপ।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ১০২]
তিনি আরও বলেন,
﴿وَجَحَدُواْ بِهَا وَٱسۡتَيۡقَنَتۡهَآ أَنفُسُهُمۡ ظُلۡمٗا وَعُلُوّٗاۚ﴾ [ سُورَةُ النمل : 14]
“তারা অন্যায় ও উদ্ধতভাবে নিদর্শনগুলো প্রত্যাখ্যান করল, যদিও তাদের অন্তর এগুলোকে সত্য বলে গ্রহণ করেছিল।” [সূরা আন-নামল, আয়াত: ১৪]
আর এই কারণে তাওহীদের এই প্রকারকে প্রমাণ করার জন্য সাব্যস্তকরণসূচক প্রশ্নবোধক ( استفهام التقرير ) শব্দ দ্বারা আল-কুরআন অবতীর্ণ হতো, যেমন তাঁর বাণী:
﴿أَفِي ٱللَّهِ شَكّٞ فَاطِرِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۖ ۚ﴾ [ سُورَةُ إبراهيم : 10]
“আল্লাহ সম্বন্ধে কি কোনো সন্দেহ আছে, যিনি আকাশমণ্ডলী ও যমীনের সৃষ্টিকর্তা?” [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ১০]
তিনি আরও বলেন,
﴿قُلۡ أَغَيۡرَ ٱللَّهِ أَبۡغِي رَبّٗا وَهُوَ رَبُّ كُلِّ شَيۡءٖۚ﴾ [ سُورَةُ الأنعام : 164]
“বল, আমি কি আল্লাহকে ছেড়ে অন্য রবকে খুঁজব? অথচ তিনিই সবকিছুর রব।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৬৪]
তিনি আরও বলেন,
﴿قُلۡ مَن رَّبُّ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ قُلِ ٱللَّهُ﴾ [ سُورَةُ الرعد : 16]
“বল, কে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর রব? বল, আল্লাহ।” [সূরা আর-রা‘দ, আয়াত: ১৬) এবং অনুরূপ আর আয়াত। কারণ, তারা এর স্বীকৃতি প্রদান করে।
আর এই প্রকারের তাওহীদে বিশ্বাস কাফির সম্প্রদায়ের কোনো উপকার করে নি। কারণ, তারা ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহকে একমাত্র ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করে নি। যেমন, তিনি বলেছেন:
﴿وَمَا يُؤۡمِنُ أَكۡثَرُهُم بِٱللَّهِ إِلَّا وَهُم مُّشۡرِكُونَ ١٠٦﴾ [ سُورَةُ يوسف : 106]
“তাদের অধিকাংশ আল্লাহতে বিশ্বাস করে, কিন্তু তারা তাঁর সাথে শরীক করে।” [সূরা ইউসুফ, আয়াত: ১০৬] তিনি আরও বলেছেন:
﴿مَا نَعۡبُدُهُمۡ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَآ إِلَى ٱللَّهِ زُلۡفَىٰٓ ﴾ [ سُورَةُ الزمر : 3]
“আমরা তো তাদের ইবাদত-আনুগত্য এজন্যই করি যে, তারা আমাদেরকে সুপারিশ করে আল্লাহর সান্নিধ্যে এনে দিবে।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৩]
তিনি আরও বলেছেন:
﴿وَيَقُولُونَ هَٰٓؤُلَآءِ شُفَعَٰٓؤُنَا عِندَ ٱللَّهِۚ قُلۡ أَتُنَبُِّٔونَ ٱللَّهَ بِمَا لَا يَعۡلَمُ فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَلَا فِي ٱلۡأَرۡضِ﴾ [ سُورَةُ يونس : 18]
“তারা বলে, এগুলো আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী। বল, তোমরা কি আল্লাহকে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর এমন কিছুর সংবাদ দিবে, যা তিনি জানেন না?” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ১৮]
দ্বিতীয় প্রকার: ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহর তাওহীদ:
এটা এমন একটি বিষয়, যাকে কেন্দ্র করেই রাসূলগণ ও বিভিন্ন জাতির মধ্যে সকল যুদ্ধবিগ্রহ সংঘটিত হয়েছে। আর এটা এমন একটি ব্যাপার, যা বাস্তবায়ন করার জন্যই নবী ও রাসূলদের প্রেরণ করা হয়েছে। আর তার মূলকথা হলো: ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই’-এর অর্থ। সুতরাং তা দু’টি মূলনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত: নীতি দু’টি হলো (আল্লাহ ছাড়া কোনো হক ইলাহ নেই) এর মধ্যকার নেতিবাচক দিক এবং ইতিবাচক দিক।
বাক্যটির নেতিবাচক অর্থ হলো: সকল প্রকার ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত সকল প্রকার উপাস্যকে পরিহার বা প্রত্যাহার করে নেওয়া।
বাক্যটির ইতিবাচক অর্থ হলো: সকল প্রকার ইবাদত তাঁর বিধিবদ্ধ শর‘ঈ পদ্ধতিতে এককভাবে ও একমাত্র তাঁরই জন্য নির্দিষ্ট করা। আল-কুরআনের সিংহভাগ আয়াতই এই প্রকার তাওহীদ প্রসঙ্গে। যেমন,
﴿وَلَقَدۡ بَعَثۡنَا فِي كُلِّ أُمَّةٖ رَّسُولًا أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَٱجۡتَنِبُواْ ٱلطَّٰغُوتَۖ﴾ [ سُورَةُ النحل : 36]
“আল্লাহর ইবাদত করার ও তাগুতকে বর্জন করার নির্দেশ দেওয়ার জন্য আমরা তো প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল পাঠিয়েছি।” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৩৬]
﴿وَمَآ أَرۡسَلۡنَا مِن قَبۡلِكَ مِن رَّسُولٍ إِلَّا نُوحِيٓ إِلَيۡهِ أَنَّهُۥ لَآ إِلَٰهَ إِلَّآ أَنَا۠ فَٱعۡبُدُونِ ٢٥﴾ [ سُورَةُ الأنبياء : 25]
“আমরা তোমার পূর্বে এমন কোনো রাসূল প্রেরণ করিনি তার প্রতি এই ওহী ব্যতীত যে, আমি ব্যতীত অন্য কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। সুতরাং আমারই ইবাদত কর।” [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ২৫]
﴿فَمَن يَكۡفُرۡ بِٱلطَّٰغُوتِ وَيُؤۡمِنۢ بِٱللَّهِ فَقَدِ ٱسۡتَمۡسَكَ بِٱلۡعُرۡوَةِ ٱلۡوُثۡقَىٰ لَا ٱنفِصَامَ لَهَا﴾ [ سُورَةُ البقرة : 256]
“সুতরাং যে তাগুতকে অস্বীকার করবে ও আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে, সে এমন এক মজবুত হাতল ধরবে, যা কখনও ভাঙ্গবে না।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৫৬]
﴿وَسَۡٔلۡ مَنۡ أَرۡسَلۡنَا مِن قَبۡلِكَ مِن رُّسُلِنَآ أَجَعَلۡنَا مِن دُونِ ٱلرَّحۡمَٰنِ ءَالِهَةٗ يُعۡبَدُونَ ٤٥﴾ [ سُورَةُ الزخرف : 45]
“তোমার পূর্বে আমরা যে সকল রাসূল প্রেরণ করেছিলাম তাদেরকে তুমি জিজ্ঞাসা কর, আমরা কি দয়াময় আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য স্থির করেছিলাম, যার ইবাদত করা যায়?” [সূরা আয-যুখরুফ, আয়াত: ৪৫]
﴿قُلۡ إِنَّمَا يُوحَىٰٓ إِلَيَّ أَنَّمَآ إِلَٰهُكُمۡ إِلَٰهٞ وَٰحِدٞۖ فَهَلۡ أَنتُم مُّسۡلِمُونَ ١٠٨﴾ [ سُورَةُ الأنبياء : 108]
“বল আমার প্রতি ওহী হয় যে, তোমাদের ইলাহ একজন ইলাহ। সুতরাং তোমরা কি আত্মসমর্পণকারী হবে না?” [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ১০৮] আর এই প্রসঙ্গে আরও বহু আয়াত রয়েছে।
তৃতীয় প্রকার: নাম ও গুণাবলীর ক্ষেত্রে আল্লাহর তাওহীদ:
এ প্রকারের তাওহীদ দু’টি মূলনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত, যেমনটি আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা করেছেন:
প্রথমত: আল্লাহ তা‘আলাকে সৃষ্টির গুণাবলির সাথে তুলনা করা থেকে পবিত্র রাখা।
দ্বিতীয়ত: আল্লাহ তা‘আলা নিজেকে অথবা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে যেসব গুণে গুণান্বিত করেছেন, রূপকার্থে নয় বরং প্রকৃতার্থে আল্লাহ তা‘আলার পরিপূর্ণতা ও যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে সেগুলোর প্রতি ঈমান আনা। আর এটা জানা কথা যে, আল্লাহ সম্পর্কে আল্লাহর চেয়ে জ্ঞানী কেউ নেই যে আল্লাহর গুণ বর্ণনা করতে পারে, আর আল্লাহর পরে আল্লাহর গুণাবলি সম্পর্কে আল্লাহ্র রাসূলের চেয়ে অধিক জ্ঞানী কেউ নেই যে তাঁর গুণাবলি বর্ণনা করতে সক্ষম।
আর আল্লাহ তা‘আলা নিজের ব্যাপারে বলছেন:
﴿ءَأَنتُمۡ أَعۡلَمُ أَمِ ٱللَّهُ﴾ [ سُورَةُ البقرة : 140]
“তোমরা কি বেশি জানো, না আল্লাহ?” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৪০]
আর তিনি তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে বলেন,
﴿وَمَا يَنطِقُ عَنِ ٱلۡهَوَىٰٓ ٣ إِنۡ هُوَ إِلَّا وَحۡيٞ يُوحَىٰ ٤﴾ [ سُورَةُ النجم : 3-4]
“এবং সে মনগড়া কথাও বলে না। এটা তো ওহী, যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়” [সূরা আন-নাজম, আয়াত: ৩-৪]
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বাণী দ্বারাই তাঁর অনুরূপ কোনো কিছু নেই বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন,
﴿لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞ﴾ [ سُورَة الشورى : 11]
“কোনো কিছুই তাঁর সদৃশ নয়।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ১১] আর তিনি তাঁর ইতিবাচক গুণাবলীসমূহ প্রকৃতার্থেই সাব্যস্ত করেছেন তাঁর ভাষায়:
﴿وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ﴾ [ سُورَة الشورى : 11]
“..আর তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ১১] সুতরাং আয়াতের প্রথমাংশ দ্বারা প্রমাণিত যে, তাঁর গুণাবলি অকার্যকর বা অসার করার অবকাশ নেই।
তাই আয়াত থেকে সুস্পষ্ট যে, প্রত্যেকের জন্য আবশ্যক হলো কোনো প্রকার সাদৃশ্যস্থাপন ছাড়া প্রকৃত অর্থেই তাঁর গুণাবলী তাঁর জন্য সাব্যস্ত করা এবং তাঁর গুণাবলি অকার্যকর না করে অন্য সব কিছুর সাথে তাঁর সাদৃশ্যতাকে অস্বীকার করা।
কারণ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৃষ্টি কর্তৃক তাঁকে জ্ঞানে বেষ্টন করার অক্ষমতার কথা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন:
﴿يَعۡلَمُ مَا بَيۡنَ أَيۡدِيهِمۡ وَمَا خَلۡفَهُمۡ وَلَا يُحِيطُونَ بِهِۦ عِلۡمٗا ١١٠ ﴾ [ سُورَةُ طه : 110]
“তাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে যা কিছু আছে তা তিনি অবগত, কিন্তু তারা জ্ঞান দ্বারা তাঁকে বেষ্টন করতে পারে না”। [সূরা ত্ব-হা, আয়াত: ১১০]
সকল বিজ্ঞজন একমত পোষণ করেছেন যে, আল্লাহ তা‘আলা আকাশ থেকে পৃথিবীতে ‘পর্যবেক্ষণ ও জ্ঞান’ এ দু’টি উপদেশের চেয়ে বড় কোনো উপদেষ্টা ও ধমকদাতা প্রেরণ করেন নি। আর তা হচ্ছে এই যে, মানুষ এ-কথা খেয়াল রাখবে যে তাঁর সম্মানিত ও মহান প্রতিপালক তাকে পর্যবেক্ষণ করেন এবং সে যা কিছু গোপন করে ও প্রকাশ করে, তিনি সে সম্পর্কে জানেন।
আলিমগণ এই বড় উপদেষ্টা ও মহা ধমকদাতার জন্য এমন দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন, যার দ্বারা বোধগম্য জিনিস অনুভবযোগ্য জিনিসের মতো হয়ে যায়। তারা বলেন, যদি আমরা একজন বাদশাহকে ধরে নিই, যে বাদশাহ অত্যধিক রক্তপাতকারী, মানুষ হত্যাকারী এবং প্রচণ্ড আক্রমণকারী ও শাস্তিদাতা, আর তার জল্লাদ তার মাথার উপরে দাঁড়ানো এবং চামড়ার বিছানা [ النطع শব্দের অর্থ- চামড়ার বিছানা, যা অপরাধীদেরকে হত্যা করার জন্য বিছানো হয়। - অনুবাদক।] বিছানো, তরবারিটি থেকে রক্ত ঝরছে এবং ঐ বাদশার চারপাশে তার কন্যা ও স্ত্রীগণ; এমন ভয়ঙ্কর অবস্থায়, বাদশাহের চোখের সামনে ও তার উপস্থিতিতে উপস্থিত কোনো দর্শক কি ঐ বাদশার কন্যা ও স্ত্রীগণের নিকট থেকে অবৈধ কিছু অর্জনের চিন্তা করবে?! না, কখনও না! (আর আল্লাহর জন্য রয়েছে যাবতীয় মহত্তম দৃষ্টান্তসমূহ।) বরং তখন প্রত্যেক উপস্থিত ব্যক্তি হবে ভীত-সন্ত্রস্ত, তাদের হৃদয়সমূহ হবে অবনত, তাদের চক্ষুসমূহ হবে আতঙ্কগ্রস্ত, তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো হবে হিম শীতল, তাদের চূড়ান্ত আশা হবে নিরাপদে প্রত্যাবর্তন। আর এতেও কোনো সন্দেহ নেই যে, (আর আল্লাহর জন্য রয়েছে মহত্তম দৃষ্টান্ত) আল্লাহ তা‘আলা হলেন মহাজ্ঞানী, ঐ বাদশার চেয়ে অধিক ও বিস্তৃত জ্ঞানের অধিকারী; সন্দেহ নেই যে, তিনি মহান শাস্তিদাতা, প্রচণ্ড শক্তিশালী ও কঠিন শাস্তিদাতা। তাঁর জমিনে তাঁর সংরক্ষিত এলাকা হচ্ছে তাঁর নিষেধসমূহ।
এমনিভাবে যদি কোনো শহরবাসী জানে যে, শহরের আমীর বা শাসক তারা রাতের বেলায় যেসব কাজ করে তার সব কিছুই জানতে পারেন, তবে তারা আতঙ্কিত অবস্থায় রাত্রিযাপন করবে এবং তার ভয়ে তারা সকল প্রকার অন্যায় ও অপকর্ম পরিত্যাগ করবে।
আর আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টিকুলকে যে হেকমত বা রহস্যের কারণে সৃষ্টি করেছেন, তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন; তা হলো তাদেরকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাছাই-বাছাই করা। যেমন, তিনি বলেছেন:
﴿إِنَّا جَعَلۡنَا مَا عَلَى ٱلۡأَرۡضِ زِينَةٗ لَّهَا لِنَبۡلُوَهُمۡ أَيُّهُمۡ أَحۡسَنُ عَمَلٗا ٧﴾ [ سُورَةُ الكهف : 7]
“পৃথিবীর উপর যা কিছু আছে আমরা সেগুলোকে তার শোভা করেছি মানুষকে এই পরীক্ষা করার জন্য যে, তাদের মধ্যে কর্মে কে শ্রেষ্ঠ।” [সূরা আল-কাহাফ, আয়াত: ৭] তিনি সূরা হুদের প্রথম দিকে বলেন,
﴿وَهُوَ ٱلَّذِي خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٖ وَكَانَ عَرۡشُهُۥ عَلَى ٱلۡمَآءِ لِيَبۡلُوَكُمۡ أَيُّكُمۡ أَحۡسَنُ عَمَلٗا﴾ [ سُورَةُ هود : 7]
“আর তিনিই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেন, তখন তাঁর আরশ ছিল পানির উপর, তোমাদের মধ্যে কাজে-কর্মে কে শ্রেষ্ঠ তা পরীক্ষা করার জন্য।” [সূরা হুদ, আয়াত: ৭] তিনি বলেন নি: তোমাদের মধ্যে কে সবচেয়ে বেশি আমলকারী!
তিনি সূরা আল-মুলকের মধ্যে বলেন,
﴿ٱلَّذِي خَلَقَ ٱلۡمَوۡتَ وَٱلۡحَيَوٰةَ لِيَبۡلُوَكُمۡ أَيُّكُمۡ أَحۡسَنُ عَمَلٗاۚ وَهُوَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡغَفُورُ ٢ ﴾ [ سُورَةُ الملك : 2]
“যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য- কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম। আর তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।” [সূরা আল-মুলক, আয়াত: ২]
এই আয়াত দু‘টি তাঁর নিম্নোক্ত বাণীর উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য বর্ণনা করে। যেমন তিনি বলেন,
﴿وَمَا خَلَقۡتُ ٱلۡجِنَّ وَٱلۡإِنسَ إِلَّا لِيَعۡبُدُونِ ٥٦﴾ [ سُورَةُ الذاريات : 56]
“আমি সৃষ্টি করেছি জিন্ন এবং মানুষকে এজন্য যে, তারা আমারই ইবাদত করবে।” [সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত: ৫৬]
যেহেতু সৃষ্টিকুলকে সৃষ্টি করার হেকমত তথা রহস্য হলো উল্লেখিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাছাই-বাছাই করা, সেহেতু জিবরীল আলাইহিস সালাম মানুষের জন্য এই পরীক্ষায় সফলকাম হওয়ার পদ্ধতি বর্ণনা করে দিতে চাইলেন, তাই তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন: আপনি আমাকে ইহসান সম্পর্কে বলে দিন? তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুস্পষ্ট করেন যে, এখানে আলোচিত এই শ্রেষ্ঠ ধমকদাতা ও মহা উপদেষ্টাই হচ্ছে ইহসানের পথ। তিনি বলেন,
«هو أَنْ تَعْبُدَ اللَّهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ» .
“ইহসান হচ্ছে, তুমি আল্লাহর ইবাদত এমনভাবে করবে যেন তুমি তাঁকে দেখছ; আর যদি তুমি তাঁকে দেখতে না পাও, তাহলে মনে করবে, তিনি তোমাকে দেখতে পাচ্ছেন।” [ইমাম বুখারী ও মুসলিম আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে হাদীসখানা বর্ণনা করেছেন: সহীহ বুখারী, ঈমান অধ্যায় ( كتاب الإيمان ), পরিচ্ছেদ: জিবরীল আলাইহিস সালাম কর্তৃক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঈমান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা ( باب سؤال جبريل النبي صلى الله عليه عن الإيمان ) (১/১৮); সহীহ মুসলিম, ঈমান অধ্যায় ( كتاب الإيمان ), (১/৩৯), হাদীস নং ৯; আর ইমাম মুসলিম এই হাদীসখানা উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেও বর্ণনা করেছেন, ঈমান অধ্যায় ( كتاب الإيمان ), (১/৩৬), হাদীস নং ৮।] এ জন্যই আপনি পবিত্র কুরআনুল কারীমের প্রতি পৃষ্ঠায় এই মহান উপদেষ্টাকে দেখতে পাবেন। যেমন,
﴿وَلَقَدۡ خَلَقۡنَا ٱلۡإِنسَٰنَ وَنَعۡلَمُ مَا تُوَسۡوِسُ بِهِۦ نَفۡسُهُۥۖ وَنَحۡنُ أَقۡرَبُ إِلَيۡهِ مِنۡ حَبۡلِ ٱلۡوَرِيدِ ١٦ .... مَّا يَلۡفِظُ مِن قَوۡلٍ إِلَّا لَدَيۡهِ رَقِيبٌ عَتِيدٞ ١٨﴾ [ سُورَةُ ق : 16 و 18]
“আমরাই মানুষকে সৃষ্টি করেছি এবং তার প্রবৃত্তি তাকে যে কুমন্ত্রণা দেয় তা আমরা জানি। আর আমরা তার গ্রীবাস্থিত ধমনী অপেক্ষাও নিকটতর।...মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে, তার জন্য তৎপর প্রহরী তার নিকটেই রয়েছে।” [সূরা ক্বাফ, আয়াত: ১৬-১৮]
﴿فَلَنَقُصَّنَّ عَلَيۡهِم بِعِلۡمٖۖ وَمَا كُنَّا غَآئِبِينَ ٧﴾ [ سُورَةُ الأعراف : 7]
“অতঃপর তাদের নিকট পূর্ণ জ্ঞানের সাথে তাদের কার্যাবলী বর্ণনা করবই, আর আমরা তো অনুপস্থিত ছিলাম না”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৭]
﴿وَمَا تَكُونُ فِي شَأۡنٖ وَمَا تَتۡلُواْ مِنۡهُ مِن قُرۡءَانٖ وَلَا تَعۡمَلُونَ مِنۡ عَمَلٍ إِلَّا كُنَّا عَلَيۡكُمۡ شُهُودًا إِذۡ تُفِيضُونَ فِيهِۚ وَمَا يَعۡزُبُ عَن رَّبِّكَ مِن مِّثۡقَالِ ذَرَّةٖ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَلَا فِي ٱلسَّمَآءِ وَلَآ أَصۡغَرَ مِن ذَٰلِكَ وَلَآ أَكۡبَرَ إِلَّا فِي كِتَٰبٖ مُّبِينٍ ٦١﴾ [ سُورَةُ يونس : 61]
“তুমি যে কোনো অবস্থায় থাক এবং তুমি তৎসম্পর্কে কুরআন থেকে যা তিলাওয়াত কর এবং তোমরা যে কোনো কাজ কর, আমি তার পরিদর্শক- যখন তোমরা তাতে প্রবৃত্ত হও। আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর অণু পরিমাণও তোমার রবের অগোচর নয় এবং তা অপেক্ষা ক্ষুদ্রতর অথবা বৃহত্তর কিছুই নেই, যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই।” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৬১]
﴿أَلَآ إِنَّهُمۡ يَثۡنُونَ صُدُورَهُمۡ لِيَسۡتَخۡفُواْ مِنۡهُۚ أَلَا حِينَ يَسۡتَغۡشُونَ ثِيَابَهُمۡ يَعۡلَمُ مَا يُسِرُّونَ وَمَا يُعۡلِنُونَۚ إِنَّهُۥ عَلِيمُۢ بِذَاتِ ٱلصُّدُورِ ٥﴾ [ سُورَةُ هود : 5]
“সাবধান! নিশ্চয় তারা তাঁর নিকট গোপন রাখার জন্য তাদের বক্ষ দ্বিভাঁজ করে। সাবধান! তারা যখন নিজেদেরকে বস্ত্রে আচ্ছদিত করে, তখন তারা যা গোপন করে ও প্রকাশ করে, তিনি তা জানেন। অন্তরে যা আছে, নিশ্চয় তিনি তা সবিশেষ অবহিত।” [সূরা হুদ, আয়াত: ৫] আর অনুরূপভাবে আল-কুরআনের প্রায় প্রত্যেক স্থানে এই প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে।
আলিমগণ এই বড় উপদেষ্টা ও মহা ধমকদাতার জন্য এমন দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন, যার দ্বারা বোধগম্য জিনিস অনুভবযোগ্য জিনিসের মতো হয়ে যায়। তারা বলেন, যদি আমরা একজন বাদশাহকে ধরে নিই, যে বাদশাহ অত্যধিক রক্তপাতকারী, মানুষ হত্যাকারী এবং প্রচণ্ড আক্রমণকারী ও শাস্তিদাতা, আর তার জল্লাদ তার মাথার উপরে দাঁড়ানো এবং চামড়ার বিছানা [ النطع শব্দের অর্থ- চামড়ার বিছানা, যা অপরাধীদেরকে হত্যা করার জন্য বিছানো হয়। - অনুবাদক।] বিছানো, তরবারিটি থেকে রক্ত ঝরছে এবং ঐ বাদশার চারপাশে তার কন্যা ও স্ত্রীগণ; এমন ভয়ঙ্কর অবস্থায়, বাদশাহের চোখের সামনে ও তার উপস্থিতিতে উপস্থিত কোনো দর্শক কি ঐ বাদশার কন্যা ও স্ত্রীগণের নিকট থেকে অবৈধ কিছু অর্জনের চিন্তা করবে?! না, কখনও না! (আর আল্লাহর জন্য রয়েছে যাবতীয় মহত্তম দৃষ্টান্তসমূহ।) বরং তখন প্রত্যেক উপস্থিত ব্যক্তি হবে ভীত-সন্ত্রস্ত, তাদের হৃদয়সমূহ হবে অবনত, তাদের চক্ষুসমূহ হবে আতঙ্কগ্রস্ত, তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো হবে হিম শীতল, তাদের চূড়ান্ত আশা হবে নিরাপদে প্রত্যাবর্তন। আর এতেও কোনো সন্দেহ নেই যে, (আর আল্লাহর জন্য রয়েছে মহত্তম দৃষ্টান্ত) আল্লাহ তা‘আলা হলেন মহাজ্ঞানী, ঐ বাদশার চেয়ে অধিক ও বিস্তৃত জ্ঞানের অধিকারী; সন্দেহ নেই যে, তিনি মহান শাস্তিদাতা, প্রচণ্ড শক্তিশালী ও কঠিন শাস্তিদাতা। তাঁর জমিনে তাঁর সংরক্ষিত এলাকা হচ্ছে তাঁর নিষেধসমূহ।
এমনিভাবে যদি কোনো শহরবাসী জানে যে, শহরের আমীর বা শাসক তারা রাতের বেলায় যেসব কাজ করে তার সব কিছুই জানতে পারেন, তবে তারা আতঙ্কিত অবস্থায় রাত্রিযাপন করবে এবং তার ভয়ে তারা সকল প্রকার অন্যায় ও অপকর্ম পরিত্যাগ করবে।
আর আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টিকুলকে যে হেকমত বা রহস্যের কারণে সৃষ্টি করেছেন, তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন; তা হলো তাদেরকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাছাই-বাছাই করা। যেমন, তিনি বলেছেন:
﴿إِنَّا جَعَلۡنَا مَا عَلَى ٱلۡأَرۡضِ زِينَةٗ لَّهَا لِنَبۡلُوَهُمۡ أَيُّهُمۡ أَحۡسَنُ عَمَلٗا ٧﴾ [ سُورَةُ الكهف : 7]
“পৃথিবীর উপর যা কিছু আছে আমরা সেগুলোকে তার শোভা করেছি মানুষকে এই পরীক্ষা করার জন্য যে, তাদের মধ্যে কর্মে কে শ্রেষ্ঠ।” [সূরা আল-কাহাফ, আয়াত: ৭] তিনি সূরা হুদের প্রথম দিকে বলেন,
﴿وَهُوَ ٱلَّذِي خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٖ وَكَانَ عَرۡشُهُۥ عَلَى ٱلۡمَآءِ لِيَبۡلُوَكُمۡ أَيُّكُمۡ أَحۡسَنُ عَمَلٗا﴾ [ سُورَةُ هود : 7]
“আর তিনিই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেন, তখন তাঁর আরশ ছিল পানির উপর, তোমাদের মধ্যে কাজে-কর্মে কে শ্রেষ্ঠ তা পরীক্ষা করার জন্য।” [সূরা হুদ, আয়াত: ৭] তিনি বলেন নি: তোমাদের মধ্যে কে সবচেয়ে বেশি আমলকারী!
তিনি সূরা আল-মুলকের মধ্যে বলেন,
﴿ٱلَّذِي خَلَقَ ٱلۡمَوۡتَ وَٱلۡحَيَوٰةَ لِيَبۡلُوَكُمۡ أَيُّكُمۡ أَحۡسَنُ عَمَلٗاۚ وَهُوَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡغَفُورُ ٢ ﴾ [ سُورَةُ الملك : 2]
“যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য- কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম। আর তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।” [সূরা আল-মুলক, আয়াত: ২]
এই আয়াত দু‘টি তাঁর নিম্নোক্ত বাণীর উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য বর্ণনা করে। যেমন তিনি বলেন,
﴿وَمَا خَلَقۡتُ ٱلۡجِنَّ وَٱلۡإِنسَ إِلَّا لِيَعۡبُدُونِ ٥٦﴾ [ سُورَةُ الذاريات : 56]
“আমি সৃষ্টি করেছি জিন্ন এবং মানুষকে এজন্য যে, তারা আমারই ইবাদত করবে।” [সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত: ৫৬]
যেহেতু সৃষ্টিকুলকে সৃষ্টি করার হেকমত তথা রহস্য হলো উল্লেখিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাছাই-বাছাই করা, সেহেতু জিবরীল আলাইহিস সালাম মানুষের জন্য এই পরীক্ষায় সফলকাম হওয়ার পদ্ধতি বর্ণনা করে দিতে চাইলেন, তাই তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন: আপনি আমাকে ইহসান সম্পর্কে বলে দিন? তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুস্পষ্ট করেন যে, এখানে আলোচিত এই শ্রেষ্ঠ ধমকদাতা ও মহা উপদেষ্টাই হচ্ছে ইহসানের পথ। তিনি বলেন,
«هو أَنْ تَعْبُدَ اللَّهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ» .
“ইহসান হচ্ছে, তুমি আল্লাহর ইবাদত এমনভাবে করবে যেন তুমি তাঁকে দেখছ; আর যদি তুমি তাঁকে দেখতে না পাও, তাহলে মনে করবে, তিনি তোমাকে দেখতে পাচ্ছেন।” [ইমাম বুখারী ও মুসলিম আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে হাদীসখানা বর্ণনা করেছেন: সহীহ বুখারী, ঈমান অধ্যায় ( كتاب الإيمان ), পরিচ্ছেদ: জিবরীল আলাইহিস সালাম কর্তৃক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঈমান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা ( باب سؤال جبريل النبي صلى الله عليه عن الإيمان ) (১/১৮); সহীহ মুসলিম, ঈমান অধ্যায় ( كتاب الإيمان ), (১/৩৯), হাদীস নং ৯; আর ইমাম মুসলিম এই হাদীসখানা উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেও বর্ণনা করেছেন, ঈমান অধ্যায় ( كتاب الإيمان ), (১/৩৬), হাদীস নং ৮।] এ জন্যই আপনি পবিত্র কুরআনুল কারীমের প্রতি পৃষ্ঠায় এই মহান উপদেষ্টাকে দেখতে পাবেন। যেমন,
﴿وَلَقَدۡ خَلَقۡنَا ٱلۡإِنسَٰنَ وَنَعۡلَمُ مَا تُوَسۡوِسُ بِهِۦ نَفۡسُهُۥۖ وَنَحۡنُ أَقۡرَبُ إِلَيۡهِ مِنۡ حَبۡلِ ٱلۡوَرِيدِ ١٦ .... مَّا يَلۡفِظُ مِن قَوۡلٍ إِلَّا لَدَيۡهِ رَقِيبٌ عَتِيدٞ ١٨﴾ [ سُورَةُ ق : 16 و 18]
“আমরাই মানুষকে সৃষ্টি করেছি এবং তার প্রবৃত্তি তাকে যে কুমন্ত্রণা দেয় তা আমরা জানি। আর আমরা তার গ্রীবাস্থিত ধমনী অপেক্ষাও নিকটতর।...মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে, তার জন্য তৎপর প্রহরী তার নিকটেই রয়েছে।” [সূরা ক্বাফ, আয়াত: ১৬-১৮]
﴿فَلَنَقُصَّنَّ عَلَيۡهِم بِعِلۡمٖۖ وَمَا كُنَّا غَآئِبِينَ ٧﴾ [ سُورَةُ الأعراف : 7]
“অতঃপর তাদের নিকট পূর্ণ জ্ঞানের সাথে তাদের কার্যাবলী বর্ণনা করবই, আর আমরা তো অনুপস্থিত ছিলাম না”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৭]
﴿وَمَا تَكُونُ فِي شَأۡنٖ وَمَا تَتۡلُواْ مِنۡهُ مِن قُرۡءَانٖ وَلَا تَعۡمَلُونَ مِنۡ عَمَلٍ إِلَّا كُنَّا عَلَيۡكُمۡ شُهُودًا إِذۡ تُفِيضُونَ فِيهِۚ وَمَا يَعۡزُبُ عَن رَّبِّكَ مِن مِّثۡقَالِ ذَرَّةٖ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَلَا فِي ٱلسَّمَآءِ وَلَآ أَصۡغَرَ مِن ذَٰلِكَ وَلَآ أَكۡبَرَ إِلَّا فِي كِتَٰبٖ مُّبِينٍ ٦١﴾ [ سُورَةُ يونس : 61]
“তুমি যে কোনো অবস্থায় থাক এবং তুমি তৎসম্পর্কে কুরআন থেকে যা তিলাওয়াত কর এবং তোমরা যে কোনো কাজ কর, আমি তার পরিদর্শক- যখন তোমরা তাতে প্রবৃত্ত হও। আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর অণু পরিমাণও তোমার রবের অগোচর নয় এবং তা অপেক্ষা ক্ষুদ্রতর অথবা বৃহত্তর কিছুই নেই, যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই।” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৬১]
﴿أَلَآ إِنَّهُمۡ يَثۡنُونَ صُدُورَهُمۡ لِيَسۡتَخۡفُواْ مِنۡهُۚ أَلَا حِينَ يَسۡتَغۡشُونَ ثِيَابَهُمۡ يَعۡلَمُ مَا يُسِرُّونَ وَمَا يُعۡلِنُونَۚ إِنَّهُۥ عَلِيمُۢ بِذَاتِ ٱلصُّدُورِ ٥﴾ [ سُورَةُ هود : 5]
“সাবধান! নিশ্চয় তারা তাঁর নিকট গোপন রাখার জন্য তাদের বক্ষ দ্বিভাঁজ করে। সাবধান! তারা যখন নিজেদেরকে বস্ত্রে আচ্ছদিত করে, তখন তারা যা গোপন করে ও প্রকাশ করে, তিনি তা জানেন। অন্তরে যা আছে, নিশ্চয় তিনি তা সবিশেষ অবহিত।” [সূরা হুদ, আয়াত: ৫] আর অনুরূপভাবে আল-কুরআনের প্রায় প্রত্যেক স্থানে এই প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে।
আল-কুরআন স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছে যে, সৎকর্ম এমন এক কর্মকে বলা হয়, যাতে তিনটি বিষয়ের সমাবেশ ঘটে; তন্মধ্যে থেকে যখন কোনো একটি ত্রুটিপূর্ণ হবে, তবে কিয়ামতের দিন তা দ্বারা ব্যক্তির কোনো উপকার হবে না।
প্রথমত: কাজটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক আনিত বিধান অনুযায়ী হওয়া [সহীহ বুখারী, সন্ধির অধ্যায় ( كتاب الصلح ), পরিচ্ছেদ: যখন তারা অন্যায় সন্ধির ওপর মীমাংসা করে, তখন সেই সন্ধি বাতিল বলে গণ্য হবে ( باب إذا اصطلحوا على صلح جور فالصلح مردود ), (৩/১৬৭); সহীহ মুসলিম, বিচার অধ্যায় ( كتاب الأقضية ), পরিচ্ছেদ: বাতিল বিধানসমূহ খণ্ডন করা এবং শরী‘আতের মধ্যে নতুন উদ্ভাবিত বিষয়সমূহ প্রত্যাখ্যান করা ( باب نقض الأحكام الباطلة و رد محدثات الأمور ) (৩/১৩৪৩), হাদীস নং ১৭১৮, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি আমাদের এই দীনের মধ্যে এমন কিছুর উদ্ভাবন করবে যা তার মধ্যে নেই, তবে তা অগ্রহণযোগ্য হবে”; অন্য বর্ণনায় আছে: “যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়”। ( عائشة رضي الله عنها مرفوعا : " من أحدث في أمرنا هذا ما ليس فيه فهو رد ", و في رواية : " ما ليس منه "); আর ইমাম মুসলিমের বর্ণনায় আছে: “যে ব্যক্তি এমন কাজ করল, যার ব্যাপারে আমাদের সমর্থন নেই, তবে সে কর্ম প্রত্যাখ্যান হবে।” ( من عمل عملا ليس عليه أمرنا فهو رد )।]। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْۚ ﴾ [ سُورَةُ الحشر : 7]
“রাসূল তোমাদেরকে যা প্রদান করেন, তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করেছেন, তা থেকে বিরত থাক।” [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ৭]
তিনি আরও বলেন,
﴿مَّن يُطِعِ ٱلرَّسُولَ فَقَدۡ أَطَاعَ ٱللَّهَۖ ﴾ [ سُورَةُ النساء : 80]
“কেউ রাসূলের আনুগত্য করলে সে তো আল্লাহরই আনুগত্য করল।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৮০]
তিনি আরও বলেন,
﴿قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِي﴾ [ سُورَةُ آل عمران : 31]
“বল, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস, তবে আমার অনুসরণ কর।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩১]
তিনি আরও বলেন,
﴿أَمۡ لَهُمۡ شُرَكَٰٓؤُاْ شَرَعُواْ لَهُم مِّنَ ٱلدِّينِ مَا لَمۡ يَأۡذَنۢ بِهِ ٱللَّهُ﴾ [ سُورَةُ الشورى : 21]
“এদের কি এমন কতগুলো দেবতা আছে, যারা এদের জন্য বিধান দিয়েছে এমন দীনের, যার অনুমতি আল্লাহ দেননি।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ২১]
তিনি আরও বলেন,
﴿ءَآللَّهُ أَذِنَ لَكُمۡۖ أَمۡ عَلَى ٱللَّهِ تَفۡتَرُونَ ٥٩﴾ [ سُورَةُ يونس : 59]
“আল্লাহ কি তোমাদেরকে এর অনুমতি দিয়েছেন, না তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করছ?” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৫৯]
দ্বিতীয়ত: কাজটি একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ তা‘আলার উদ্দেশ্যে হওয়া। কেননা তিনি বলেন,
﴿وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ﴾ [ سُورَةُ البينة : 5]
“তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করতে।” [সূরা আল-বাইয়্যেনাহ, আয়াত: ৫]
তিনি আরও বলেন,
﴿قُلۡ إِنِّيٓ أُمِرۡتُ أَنۡ أَعۡبُدَ ٱللَّهَ مُخۡلِصٗا لَّهُ ٱلدِّينَ ١١ وَأُمِرۡتُ لِأَنۡ أَكُونَ أَوَّلَ ٱلۡمُسۡلِمِينَ ١٢ قُلۡ إِنِّيٓ أَخَافُ إِنۡ عَصَيۡتُ رَبِّي عَذَابَ يَوۡمٍ عَظِيمٖ ١٣ قُلِ ٱللَّهَ أَعۡبُدُ مُخۡلِصٗا لَّهُۥ دِينِي ١٤ فَٱعۡبُدُواْ مَا شِئۡتُم مِّن دُونِهِۦۗ ﴾ [ سُورَةُ الزمر : 11-15]
“বল, আমি তো আদিষ্ট হয়েছি আল্লাহর আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে তাঁর ইবাদত করতে, আর আদিষ্ট হয়েছি, আমি যেন আত্মসমর্পণকারীদের অগ্রণী হই। বল, আমি যদি আমার রবের অবাধ্য হই, তবে আমি ভয় করি মহাদিবসের শাস্তির। বল, আমি ইবাদত করি আল্লাহরই, তাঁর প্রতি আমার আনুগত্যকে একনিষ্ঠ রেখে। আর তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইচ্ছা তার ইবাদত কর।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ১১-১৫]
তৃতীয়ত: কাজটি বিশুদ্ধ আকীদাহ তথা বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে হতে হবে। কেননা কাজ হলো ছাদের মত, আর আকিদা তথা বিশ্বাস হলো ভিতস্বরূপ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَن يَعۡمَلۡ مِنَ ٱلصَّٰلِحَٰتِ مِن ذَكَرٍ أَوۡ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤۡمِنٞ فَأُوْلَٰٓئِكَ يَدۡخُلُونَ ٱلۡجَنَّةَ﴾ [ سُورَةُ النساء : 124]
“পুরুষ অথবা নারীর মধ্যে কেউ সৎ কাজ করলে ও মুমিন হলে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১২৪] এখানে তিনি সৎকর্মের সাথে ﴿وَهُوَ مُؤۡمِنٞ﴾ (সে ঈমানদার অবস্থায়) বলে ঈমানের শর্তারোপ করেছেন। আর তিনি অবিশ্বাসীদের প্রসঙ্গে বলেন,
﴿وَقَدِمۡنَآ إِلَىٰ مَا عَمِلُواْ مِنۡ عَمَلٖ فَجَعَلۡنَٰهُ هَبَآءٗ مَّنثُورًا ٢٣﴾ [ سُورَةُ الفرقان : 23]
“আর আমরা তাদের কৃতকর্মের প্রতি লক্ষ্য করব, অতঃপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধুলিকণায় পরিণত করব।” [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ২৩] তাদের ব্যাপারে তিনি আরও বলেন,
﴿أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ لَيۡسَ لَهُمۡ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ إِلَّا ٱلنَّارُۖ وَحَبِطَ مَا صَنَعُواْ فِيهَا وَبَٰطِلٞ مَّا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٦﴾ [ سُورَةُ هود : 16]
“ওদের জন্য আখেরাতে অগ্নি ব্যতীত অন্য কিছুই নেই, ওরা যা করে আখেরাতে তা নিষ্ফল হবে এবং তারা যা করে থাকে তা নিরর্থক।” [সূরা হুদ, আয়াত: ১৬]... এগুলো ছাড়াও এ প্রসঙ্গে আরও অনেক আয়াত রয়েছে।
প্রথমত: কাজটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক আনিত বিধান অনুযায়ী হওয়া [সহীহ বুখারী, সন্ধির অধ্যায় ( كتاب الصلح ), পরিচ্ছেদ: যখন তারা অন্যায় সন্ধির ওপর মীমাংসা করে, তখন সেই সন্ধি বাতিল বলে গণ্য হবে ( باب إذا اصطلحوا على صلح جور فالصلح مردود ), (৩/১৬৭); সহীহ মুসলিম, বিচার অধ্যায় ( كتاب الأقضية ), পরিচ্ছেদ: বাতিল বিধানসমূহ খণ্ডন করা এবং শরী‘আতের মধ্যে নতুন উদ্ভাবিত বিষয়সমূহ প্রত্যাখ্যান করা ( باب نقض الأحكام الباطلة و رد محدثات الأمور ) (৩/১৩৪৩), হাদীস নং ১৭১৮, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি আমাদের এই দীনের মধ্যে এমন কিছুর উদ্ভাবন করবে যা তার মধ্যে নেই, তবে তা অগ্রহণযোগ্য হবে”; অন্য বর্ণনায় আছে: “যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়”। ( عائشة رضي الله عنها مرفوعا : " من أحدث في أمرنا هذا ما ليس فيه فهو رد ", و في رواية : " ما ليس منه "); আর ইমাম মুসলিমের বর্ণনায় আছে: “যে ব্যক্তি এমন কাজ করল, যার ব্যাপারে আমাদের সমর্থন নেই, তবে সে কর্ম প্রত্যাখ্যান হবে।” ( من عمل عملا ليس عليه أمرنا فهو رد )।]। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْۚ ﴾ [ سُورَةُ الحشر : 7]
“রাসূল তোমাদেরকে যা প্রদান করেন, তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করেছেন, তা থেকে বিরত থাক।” [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ৭]
তিনি আরও বলেন,
﴿مَّن يُطِعِ ٱلرَّسُولَ فَقَدۡ أَطَاعَ ٱللَّهَۖ ﴾ [ سُورَةُ النساء : 80]
“কেউ রাসূলের আনুগত্য করলে সে তো আল্লাহরই আনুগত্য করল।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৮০]
তিনি আরও বলেন,
﴿قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِي﴾ [ سُورَةُ آل عمران : 31]
“বল, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস, তবে আমার অনুসরণ কর।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩১]
তিনি আরও বলেন,
﴿أَمۡ لَهُمۡ شُرَكَٰٓؤُاْ شَرَعُواْ لَهُم مِّنَ ٱلدِّينِ مَا لَمۡ يَأۡذَنۢ بِهِ ٱللَّهُ﴾ [ سُورَةُ الشورى : 21]
“এদের কি এমন কতগুলো দেবতা আছে, যারা এদের জন্য বিধান দিয়েছে এমন দীনের, যার অনুমতি আল্লাহ দেননি।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ২১]
তিনি আরও বলেন,
﴿ءَآللَّهُ أَذِنَ لَكُمۡۖ أَمۡ عَلَى ٱللَّهِ تَفۡتَرُونَ ٥٩﴾ [ سُورَةُ يونس : 59]
“আল্লাহ কি তোমাদেরকে এর অনুমতি দিয়েছেন, না তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করছ?” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৫৯]
দ্বিতীয়ত: কাজটি একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ তা‘আলার উদ্দেশ্যে হওয়া। কেননা তিনি বলেন,
﴿وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ﴾ [ سُورَةُ البينة : 5]
“তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করতে।” [সূরা আল-বাইয়্যেনাহ, আয়াত: ৫]
তিনি আরও বলেন,
﴿قُلۡ إِنِّيٓ أُمِرۡتُ أَنۡ أَعۡبُدَ ٱللَّهَ مُخۡلِصٗا لَّهُ ٱلدِّينَ ١١ وَأُمِرۡتُ لِأَنۡ أَكُونَ أَوَّلَ ٱلۡمُسۡلِمِينَ ١٢ قُلۡ إِنِّيٓ أَخَافُ إِنۡ عَصَيۡتُ رَبِّي عَذَابَ يَوۡمٍ عَظِيمٖ ١٣ قُلِ ٱللَّهَ أَعۡبُدُ مُخۡلِصٗا لَّهُۥ دِينِي ١٤ فَٱعۡبُدُواْ مَا شِئۡتُم مِّن دُونِهِۦۗ ﴾ [ سُورَةُ الزمر : 11-15]
“বল, আমি তো আদিষ্ট হয়েছি আল্লাহর আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে তাঁর ইবাদত করতে, আর আদিষ্ট হয়েছি, আমি যেন আত্মসমর্পণকারীদের অগ্রণী হই। বল, আমি যদি আমার রবের অবাধ্য হই, তবে আমি ভয় করি মহাদিবসের শাস্তির। বল, আমি ইবাদত করি আল্লাহরই, তাঁর প্রতি আমার আনুগত্যকে একনিষ্ঠ রেখে। আর তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইচ্ছা তার ইবাদত কর।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ১১-১৫]
তৃতীয়ত: কাজটি বিশুদ্ধ আকীদাহ তথা বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে হতে হবে। কেননা কাজ হলো ছাদের মত, আর আকিদা তথা বিশ্বাস হলো ভিতস্বরূপ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَن يَعۡمَلۡ مِنَ ٱلصَّٰلِحَٰتِ مِن ذَكَرٍ أَوۡ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤۡمِنٞ فَأُوْلَٰٓئِكَ يَدۡخُلُونَ ٱلۡجَنَّةَ﴾ [ سُورَةُ النساء : 124]
“পুরুষ অথবা নারীর মধ্যে কেউ সৎ কাজ করলে ও মুমিন হলে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১২৪] এখানে তিনি সৎকর্মের সাথে ﴿وَهُوَ مُؤۡمِنٞ﴾ (সে ঈমানদার অবস্থায়) বলে ঈমানের শর্তারোপ করেছেন। আর তিনি অবিশ্বাসীদের প্রসঙ্গে বলেন,
﴿وَقَدِمۡنَآ إِلَىٰ مَا عَمِلُواْ مِنۡ عَمَلٖ فَجَعَلۡنَٰهُ هَبَآءٗ مَّنثُورًا ٢٣﴾ [ سُورَةُ الفرقان : 23]
“আর আমরা তাদের কৃতকর্মের প্রতি লক্ষ্য করব, অতঃপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধুলিকণায় পরিণত করব।” [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ২৩] তাদের ব্যাপারে তিনি আরও বলেন,
﴿أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ لَيۡسَ لَهُمۡ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ إِلَّا ٱلنَّارُۖ وَحَبِطَ مَا صَنَعُواْ فِيهَا وَبَٰطِلٞ مَّا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٦﴾ [ سُورَةُ هود : 16]
“ওদের জন্য আখেরাতে অগ্নি ব্যতীত অন্য কিছুই নেই, ওরা যা করে আখেরাতে তা নিষ্ফল হবে এবং তারা যা করে থাকে তা নিরর্থক।” [সূরা হুদ, আয়াত: ১৬]... এগুলো ছাড়াও এ প্রসঙ্গে আরও অনেক আয়াত রয়েছে।
আল-কুরআন সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছে যে, শরী‘আতের বিধান ব্যতীত অন্যকে বিচারক মানা সুস্পষ্ট কুফুরী ও আল্লাহ তা‘আলার সাথে শির্ক। আর শয়তান যখন মক্কার কাফিরদেরকে প্রত্যাদেশ করল তারা যাতে আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মৃত ছাগল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে যে, কে তাকে হত্যা করেছে। জবাবে তিনি বললেন: “তাকে আল্লাহ হত্যা করেছেন”। অতঃপর শয়তান তাদেরকে আবার প্রত্যাদেশ করল যে তারা যেন তাকে বলে: তোমরা নিজেদের হাতে যা জবাই কর, তা হালাল এবং আল্লাহ তাঁর পবিত্র হাতে যা জবাই করেন, তা হারাম? তাহলে তোমরা তো দেখছি আল্লাহর চেয়ে উত্তম [হাদীসখানা আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে সনদসহ বর্ণনা করেন ইমাম আবূ দাউদ, কুরাবানীর অধ্যায় ( كتاب الأضاحي ), পরিচ্ছেদ: আহলে কিতাবের জবাই প্রসঙ্গে ( باب في ذبائح أهل الكتاب ), (৩/২৪৫), হাদীস নং ২৮১৮; তিরমিযী, আল-কুরআনের তাফসীর অধ্যায় ( كتاب تفسير القرآن ), পরিচ্ছেদ: সূরা আল-আন‘আম থেকে ( باب و من سورة الأنعام ), (৫/২৪৬), হাদীস নং ৩০৬৯; নাসাঈ, কুরাবানীর অধ্যায় ( كتاب الضحايا ), পরিচ্ছেদ: আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿ وَلَا تَأۡكُلُواْ مِمَّا لَمۡ يُذۡكَرِ ٱسۡمُ ٱللَّهِ عَلَيۡهِ ﴾ -এর ব্যাখ্যা ( باب تأويل قول الله عزو جل : ﴿ وَلَا تَأۡكُلُواْ مِمَّا لَمۡ يُذۡكَرِ ٱسۡمُ ٱللَّهِ عَلَيۡهِ ﴾ ), (৭/২৩৭), আবদুল ফাত্তাহ আবূ গুদ্দাহ এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী হাদীস নং ৪৪৩৭; অপর এক অর্থে হাদীসখানা বর্ণনা করেছেন ইবনু মাজাহ, জবাই অধ্যায় ( كتاب الذبائح ), পরিচ্ছেদ: জবাইয়ের সময় বিসমিল্লাহ বলা ( باب تسمية عند الذبح ), (২/১০৫৯), হাদীস নং ৩১৭৩।]! এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করেন:
﴿وَإِنَّ ٱلشَّيَٰطِينَ لَيُوحُونَ إِلَىٰٓ أَوۡلِيَآئِهِمۡ لِيُجَٰدِلُوكُمۡۖ وَإِنۡ أَطَعۡتُمُوهُمۡ إِنَّكُمۡ لَمُشۡرِكُونَ ١٢١﴾ [ سُورَةُ الأنعام : 121]
“নিশ্চয় শয়তানেরা তাদের বন্ধুদেরকে তোমাদের সাথে বিবাদ করতে প্ররোচনা দেয়, যদি তোমরা তাদের কথামত চল, তবে তোমরা অবশ্যই মুশরিক হয়ে যাবে।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১২১] আর ﴿إِنَّكُمۡ لَمُشۡرِكُونَ ١٢١﴾ বাক্যের শুরুতে ফা ( الفاء ) সংযুক্ত না হওয়াটা কসম তথা শপথের ভূমিকাস্বরূপ লাম ( لام ) উহ্য থাকার ওপর প্রকাশ্য ইঙ্গিত। সুতরাং তা আল্লাহর পক্ষ থেকে শপথ, তিনি এর দ্বারা এই আয়াতে কারীমার মধ্যে এ ব্যাপারে শপথ করেছেন যে, যে ব্যক্তি শয়তানের শরী‘আত ও বিধানের অনুসরণ করে মৃতকে হালাল মনে করবে, সে মুশরিক বলে গণ্য হবে, আর তা হলো বড় শির্ক ( شرك أكبر ), যা মুসলিম সম্প্রদায়ের ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে মুসলিম মিল্লাত থেকে খারিজ করে দেবে। এই অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অচিরেই আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তাঁর এ কথার মাধ্যমে তিরস্কার করবেন:
﴿أَلَمۡ أَعۡهَدۡ إِلَيۡكُمۡ يَٰبَنِيٓ ءَادَمَ أَن لَّا تَعۡبُدُواْ ٱلشَّيۡطَٰنَۖ إِنَّهُۥ لَكُمۡ عَدُوّٞ مُّبِينٞ ٦٠ وَأَنِ ٱعۡبُدُونِيۚ هَٰذَا صِرَٰطٞ مُّسۡتَقِيمٞ ٦١﴾ [ سُورَةُ يس : 60-61]
“হে বনী আদম! আমি কি তোমাদেরকে নির্দেশ দিই নি যে, তোমরা শয়তানের দাসত্ব করো না। কারণ সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু? আর আমারই ইবাদত কর, এটাই সরল পথ?” [সূরা ইয়সীন, আয়াত: ৬০-৬১]
আর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রিয় বন্ধু ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কথা উদ্ধৃত করে বলেন,
﴿يَٰٓأَبَتِ لَا تَعۡبُدِ ٱلشَّيۡطَٰنَ﴾ [ سُورَةُ مريم : 44]
“হে আমার পিতা! শয়তানের ইবাদত করো না”। [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৪৪] অর্থাৎ কুফুরী ও অবাধ্যতার বিধানে শয়তানের অনুসরণ করার মাধ্যমে তার ইবাদত করো না।
তিনি আরও বলেন,
﴿إِن يَدۡعُونَ مِن دُونِهِۦٓ إِلَّآ إِنَٰثٗا وَإِن يَدۡعُونَ إِلَّا شَيۡطَٰنٗا مَّرِيدٗا ١١٧ ﴾ [ سُورَةُ النساء : 117]
“তাঁর পরিবর্তে তারা তো দেবীরই পূজা করে থাকে এবং বিদ্রোহী শয়তানেরই পূজা করে।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১১৭] অর্থাৎ তারা শুধু শয়তানেরই দাসত্ব করে, তার (শয়তানের) শরী‘আত তথা বিধিবিধানের অনুসরণ করার মাধ্যমে।
তিনি আরও বলেন,
﴿وَكَذَٰلِكَ زَيَّنَ لِكَثِيرٖ مِّنَ ٱلۡمُشۡرِكِينَ قَتۡلَ أَوۡلَٰدِهِمۡ شُرَكَآؤُهُمۡ﴾ [ سُورَةُ الأنعام : 137]
“এরূপে তাদের শরীকরা বহু মুশরিকের দৃষ্টিতে তাদের সন্তানদের হত্যাকে শোভন করেছে।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৩৭] তিনি তাদেরকে তাদের ‘শরীক’ বলে নামকরণ করেছেন। কেননা, সন্তানদেরকে হত্যা করার দ্বারা আল্লাহর অবাধ্যতার ক্ষেত্রে তারা তাদেরকে অনুসরণ করেছে।
আর যখন ‘আদী ইবন হাতেম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তা‘আলার নিম্নোক্ত বাণী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন:
﴿ٱتَّخَذُوٓاْ أَحۡبَارَهُمۡ وَرُهۡبَٰنَهُمۡ أَرۡبَابٗا مِّن دُونِ ٱللَّهِ ﴾ [ سُورَةُ التوبة : 31]
“তারা আল্লাহ ব্যতীত তাদের পণ্ডিতগণকে ও সংসার-বিরাগীগণকে তাদের প্রভুরূপে গ্রহণ করেছে।” [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৩১] তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জবাবস্বরূপ বললেন যে, তাদেরকে প্রভু হিসেবে গ্রহণ করার মানে হলো: আল্লাহ যা হালাল করেছেন, তা হারাম করার এবং তিনি যা হারাম করেছেন, তা হালাল করার ব্যাপারে তারা তাদেরকে অনুসরণ করত [তিরমিযী, আল-কুরআনের তাফসীর অধ্যায় ( كتاب تفسير القرآن ), পরিচ্ছেদ: সূরা আত-তাওবা থেকে ( باب و من سورة التوبة ), (৫/২৫৯), হাদীস নং ৩০৯৫, তিনি বলেন: এই হাদীসটি গরীব।]। আর এটা এমন একটি বিষয়, যে ব্যাপারে কোনো বিতর্ক নেই। আল-কুরআনের ভাষায়:
﴿أَلَمۡ تَرَ إِلَى ٱلَّذِينَ يَزۡعُمُونَ أَنَّهُمۡ ءَامَنُواْ بِمَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ وَمَآ أُنزِلَ مِن قَبۡلِكَ يُرِيدُونَ أَن يَتَحَاكَمُوٓاْ إِلَى ٱلطَّٰغُوتِ وَقَدۡ أُمِرُوٓاْ أَن يَكۡفُرُواْ بِهِۦۖ وَيُرِيدُ ٱلشَّيۡطَٰنُ أَن يُضِلَّهُمۡ ضَلَٰلَۢا بَعِيدٗا ٦٠﴾ [ سُورَةُ النساء : 60]
“তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা দাবি করে যে, তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে এবং তোমার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে, তাতে তারা বিশ্বাস করে; অথচ তারা তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায়, যদিও তা প্রত্যাখ্যান করার জন্য তাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে? আর শয়তান তাদেরকে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট করতে চায়।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬০]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿وَمَن لَّمۡ يَحۡكُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡكَٰفِرُونَ ٤٤﴾ [ سُورَةُ المائدة : 44]
“আর আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তদনুসারে যারা বিধান দেয় না, তারাই কাফির।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৪৪] তিনি আরও বলেন,
﴿أَفَغَيۡرَ ٱللَّهِ أَبۡتَغِي حَكَمٗا وَهُوَ ٱلَّذِيٓ أَنزَلَ إِلَيۡكُمُ ٱلۡكِتَٰبَ مُفَصَّلٗاۚ وَٱلَّذِينَ ءَاتَيۡنَٰهُمُ ٱلۡكِتَٰبَ يَعۡلَمُونَ أَنَّهُۥ مُنَزَّلٞ مِّن رَّبِّكَ بِٱلۡحَقِّۖ فَلَا تَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡمُمۡتَرِينَ ١١٤﴾ [ سُورَةُ الأنعام : 114]
“বল, তবে কি আমি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ফয়সালাকারী হিসেবে তালাশ করব- অথচ তিনিই তোমাদের প্রতি বিস্তারিত কিতাব নাযিল করেছেন! আর আমরা যাদেরকে কিতাব দিয়েছি, তারা জানে যে, এটা তোমার রব-এর নিকট থেকে সত্যসহ নাযিল হয়েছে। সুতরাং তুমি সন্দিহানদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১১৪]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿وَتَمَّتۡ كَلِمَتُ رَبِّكَ صِدۡقٗا وَعَدۡلٗاۚ لَّا مُبَدِّلَ لِكَلِمَٰتِهِۦۚ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡعَلِيمُ ١١٥﴾ [ سُورَةُ الأنعام : 115]
“আর সত্য ও ন্যায়ের দিক দিয়ে তোমার রব-এর বাণী পরিপূর্ণ। তাঁর বাণী পরিবর্তন করার মত কেউ নেই। আর তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” [সূরা আল-আন‘আম: ১১৫] এখানে তাঁর বাণী: صِدۡقٗا অর্থ: সংবাদ দানের ক্ষেত্রে সত্য এবং وَعَدۡلٗاۚ অর্থ: বিধিবিধানের ক্ষেত্রে ন্যায় ও ইনসাফপূর্ণ। তিনি আরও বলেন,
﴿أَفَحُكۡمَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ يَبۡغُونَۚ وَمَنۡ أَحۡسَنُ مِنَ ٱللَّهِ حُكۡمٗا لِّقَوۡمٖ يُوقِنُونَ ٥٠﴾ [ سُورَةُ المائدة : 50]
“তবে কি তারা জাহেলী যুগের বিধিবিধান কামনা করে? নিশ্চিত বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য বিধান প্রদানে আল্লাহর চেয়ে কে শ্রেষ্ঠতর?” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৫০]
﴿وَإِنَّ ٱلشَّيَٰطِينَ لَيُوحُونَ إِلَىٰٓ أَوۡلِيَآئِهِمۡ لِيُجَٰدِلُوكُمۡۖ وَإِنۡ أَطَعۡتُمُوهُمۡ إِنَّكُمۡ لَمُشۡرِكُونَ ١٢١﴾ [ سُورَةُ الأنعام : 121]
“নিশ্চয় শয়তানেরা তাদের বন্ধুদেরকে তোমাদের সাথে বিবাদ করতে প্ররোচনা দেয়, যদি তোমরা তাদের কথামত চল, তবে তোমরা অবশ্যই মুশরিক হয়ে যাবে।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১২১] আর ﴿إِنَّكُمۡ لَمُشۡرِكُونَ ١٢١﴾ বাক্যের শুরুতে ফা ( الفاء ) সংযুক্ত না হওয়াটা কসম তথা শপথের ভূমিকাস্বরূপ লাম ( لام ) উহ্য থাকার ওপর প্রকাশ্য ইঙ্গিত। সুতরাং তা আল্লাহর পক্ষ থেকে শপথ, তিনি এর দ্বারা এই আয়াতে কারীমার মধ্যে এ ব্যাপারে শপথ করেছেন যে, যে ব্যক্তি শয়তানের শরী‘আত ও বিধানের অনুসরণ করে মৃতকে হালাল মনে করবে, সে মুশরিক বলে গণ্য হবে, আর তা হলো বড় শির্ক ( شرك أكبر ), যা মুসলিম সম্প্রদায়ের ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে মুসলিম মিল্লাত থেকে খারিজ করে দেবে। এই অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অচিরেই আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তাঁর এ কথার মাধ্যমে তিরস্কার করবেন:
﴿أَلَمۡ أَعۡهَدۡ إِلَيۡكُمۡ يَٰبَنِيٓ ءَادَمَ أَن لَّا تَعۡبُدُواْ ٱلشَّيۡطَٰنَۖ إِنَّهُۥ لَكُمۡ عَدُوّٞ مُّبِينٞ ٦٠ وَأَنِ ٱعۡبُدُونِيۚ هَٰذَا صِرَٰطٞ مُّسۡتَقِيمٞ ٦١﴾ [ سُورَةُ يس : 60-61]
“হে বনী আদম! আমি কি তোমাদেরকে নির্দেশ দিই নি যে, তোমরা শয়তানের দাসত্ব করো না। কারণ সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু? আর আমারই ইবাদত কর, এটাই সরল পথ?” [সূরা ইয়সীন, আয়াত: ৬০-৬১]
আর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রিয় বন্ধু ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কথা উদ্ধৃত করে বলেন,
﴿يَٰٓأَبَتِ لَا تَعۡبُدِ ٱلشَّيۡطَٰنَ﴾ [ سُورَةُ مريم : 44]
“হে আমার পিতা! শয়তানের ইবাদত করো না”। [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৪৪] অর্থাৎ কুফুরী ও অবাধ্যতার বিধানে শয়তানের অনুসরণ করার মাধ্যমে তার ইবাদত করো না।
তিনি আরও বলেন,
﴿إِن يَدۡعُونَ مِن دُونِهِۦٓ إِلَّآ إِنَٰثٗا وَإِن يَدۡعُونَ إِلَّا شَيۡطَٰنٗا مَّرِيدٗا ١١٧ ﴾ [ سُورَةُ النساء : 117]
“তাঁর পরিবর্তে তারা তো দেবীরই পূজা করে থাকে এবং বিদ্রোহী শয়তানেরই পূজা করে।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১১৭] অর্থাৎ তারা শুধু শয়তানেরই দাসত্ব করে, তার (শয়তানের) শরী‘আত তথা বিধিবিধানের অনুসরণ করার মাধ্যমে।
তিনি আরও বলেন,
﴿وَكَذَٰلِكَ زَيَّنَ لِكَثِيرٖ مِّنَ ٱلۡمُشۡرِكِينَ قَتۡلَ أَوۡلَٰدِهِمۡ شُرَكَآؤُهُمۡ﴾ [ سُورَةُ الأنعام : 137]
“এরূপে তাদের শরীকরা বহু মুশরিকের দৃষ্টিতে তাদের সন্তানদের হত্যাকে শোভন করেছে।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৩৭] তিনি তাদেরকে তাদের ‘শরীক’ বলে নামকরণ করেছেন। কেননা, সন্তানদেরকে হত্যা করার দ্বারা আল্লাহর অবাধ্যতার ক্ষেত্রে তারা তাদেরকে অনুসরণ করেছে।
আর যখন ‘আদী ইবন হাতেম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তা‘আলার নিম্নোক্ত বাণী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন:
﴿ٱتَّخَذُوٓاْ أَحۡبَارَهُمۡ وَرُهۡبَٰنَهُمۡ أَرۡبَابٗا مِّن دُونِ ٱللَّهِ ﴾ [ سُورَةُ التوبة : 31]
“তারা আল্লাহ ব্যতীত তাদের পণ্ডিতগণকে ও সংসার-বিরাগীগণকে তাদের প্রভুরূপে গ্রহণ করেছে।” [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৩১] তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জবাবস্বরূপ বললেন যে, তাদেরকে প্রভু হিসেবে গ্রহণ করার মানে হলো: আল্লাহ যা হালাল করেছেন, তা হারাম করার এবং তিনি যা হারাম করেছেন, তা হালাল করার ব্যাপারে তারা তাদেরকে অনুসরণ করত [তিরমিযী, আল-কুরআনের তাফসীর অধ্যায় ( كتاب تفسير القرآن ), পরিচ্ছেদ: সূরা আত-তাওবা থেকে ( باب و من سورة التوبة ), (৫/২৫৯), হাদীস নং ৩০৯৫, তিনি বলেন: এই হাদীসটি গরীব।]। আর এটা এমন একটি বিষয়, যে ব্যাপারে কোনো বিতর্ক নেই। আল-কুরআনের ভাষায়:
﴿أَلَمۡ تَرَ إِلَى ٱلَّذِينَ يَزۡعُمُونَ أَنَّهُمۡ ءَامَنُواْ بِمَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ وَمَآ أُنزِلَ مِن قَبۡلِكَ يُرِيدُونَ أَن يَتَحَاكَمُوٓاْ إِلَى ٱلطَّٰغُوتِ وَقَدۡ أُمِرُوٓاْ أَن يَكۡفُرُواْ بِهِۦۖ وَيُرِيدُ ٱلشَّيۡطَٰنُ أَن يُضِلَّهُمۡ ضَلَٰلَۢا بَعِيدٗا ٦٠﴾ [ سُورَةُ النساء : 60]
“তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা দাবি করে যে, তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে এবং তোমার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে, তাতে তারা বিশ্বাস করে; অথচ তারা তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায়, যদিও তা প্রত্যাখ্যান করার জন্য তাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে? আর শয়তান তাদেরকে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট করতে চায়।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬০]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿وَمَن لَّمۡ يَحۡكُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡكَٰفِرُونَ ٤٤﴾ [ سُورَةُ المائدة : 44]
“আর আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তদনুসারে যারা বিধান দেয় না, তারাই কাফির।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৪৪] তিনি আরও বলেন,
﴿أَفَغَيۡرَ ٱللَّهِ أَبۡتَغِي حَكَمٗا وَهُوَ ٱلَّذِيٓ أَنزَلَ إِلَيۡكُمُ ٱلۡكِتَٰبَ مُفَصَّلٗاۚ وَٱلَّذِينَ ءَاتَيۡنَٰهُمُ ٱلۡكِتَٰبَ يَعۡلَمُونَ أَنَّهُۥ مُنَزَّلٞ مِّن رَّبِّكَ بِٱلۡحَقِّۖ فَلَا تَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡمُمۡتَرِينَ ١١٤﴾ [ سُورَةُ الأنعام : 114]
“বল, তবে কি আমি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ফয়সালাকারী হিসেবে তালাশ করব- অথচ তিনিই তোমাদের প্রতি বিস্তারিত কিতাব নাযিল করেছেন! আর আমরা যাদেরকে কিতাব দিয়েছি, তারা জানে যে, এটা তোমার রব-এর নিকট থেকে সত্যসহ নাযিল হয়েছে। সুতরাং তুমি সন্দিহানদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১১৪]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿وَتَمَّتۡ كَلِمَتُ رَبِّكَ صِدۡقٗا وَعَدۡلٗاۚ لَّا مُبَدِّلَ لِكَلِمَٰتِهِۦۚ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡعَلِيمُ ١١٥﴾ [ سُورَةُ الأنعام : 115]
“আর সত্য ও ন্যায়ের দিক দিয়ে তোমার রব-এর বাণী পরিপূর্ণ। তাঁর বাণী পরিবর্তন করার মত কেউ নেই। আর তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” [সূরা আল-আন‘আম: ১১৫] এখানে তাঁর বাণী: صِدۡقٗا অর্থ: সংবাদ দানের ক্ষেত্রে সত্য এবং وَعَدۡلٗاۚ অর্থ: বিধিবিধানের ক্ষেত্রে ন্যায় ও ইনসাফপূর্ণ। তিনি আরও বলেন,
﴿أَفَحُكۡمَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ يَبۡغُونَۚ وَمَنۡ أَحۡسَنُ مِنَ ٱللَّهِ حُكۡمٗا لِّقَوۡمٖ يُوقِنُونَ ٥٠﴾ [ سُورَةُ المائدة : 50]
“তবে কি তারা জাহেলী যুগের বিধিবিধান কামনা করে? নিশ্চিত বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য বিধান প্রদানে আল্লাহর চেয়ে কে শ্রেষ্ঠতর?” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৫০]
এ প্রসঙ্গে আল-কুরআন অন্তরের তৃষ্ণা নিবারণ করেছে এবং এর পথ-ঘাট আলোকিত করেছে।
আল্লাহ তা‘আলা প্রধান সমাজপতিকে তার সমাজ ও সম্প্রদায়ের প্রতি কেমন আচরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন, সেই দিকে লক্ষ্য করুন। তিনি বলেন,
﴿وَٱخۡفِضۡ جَنَاحَكَ لِمَنِ ٱتَّبَعَكَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٢١٥﴾ [ سُورَةُ الشعراء : 215]
“এবং যারা তোমার অনুসরণ করে, সেসব মুমিনদের প্রতি বিনয়ী হও।” [সূরা আশ-শু‘আরা, আয়াত: ২১৫]
তিনি আরও বলেন,
﴿فَبِمَا رَحۡمَةٖ مِّنَ ٱللَّهِ لِنتَ لَهُمۡۖ وَلَوۡ كُنتَ فَظًّا غَلِيظَ ٱلۡقَلۡبِ لَٱنفَضُّواْ مِنۡ حَوۡلِكَۖ فَٱعۡفُ عَنۡهُمۡ وَٱسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ وَشَاوِرۡهُمۡ فِي ٱلۡأَمۡرِۖ ﴾ [ سُورَةُ آل عمران : 159]
“আল্লাহর দয়ায় তুমি তাদের প্রতি কোমল হৃদয় হয়েছিলে, যদি তুমি রূঢ় ও কঠোর চিত্ত হতে, তবে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। সুতরাং তুমি তাদেরকে ক্ষমা কর ও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং কাজে-কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ কর।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৫৯]
আর তিনি সাধারণ সমাজকে তার নেতৃবৃন্দের প্রতি কেমন আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন, সেই দিকে লক্ষ্য করুন। তিনি বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَأُوْلِي ٱلۡأَمۡرِ مِنكُمۡۖ ﴾ [ سُورَةُ النساء : 59]
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আনুগত্য কর রাসূলের এবং তাদের, যারা তোমাদের মধ্যকার ক্ষমতাশীল।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৫৯]
আরও লক্ষ্য করুন, তিনি মানুষকে তার বিশেষ সমাজ তথা সন্তান-সন্ততি ও স্ত্রীর প্রতি যেমন আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন সেই দিকে। তিনি বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ قُوٓاْ أَنفُسَكُمۡ وَأَهۡلِيكُمۡ نَارٗا وَقُودُهَا ٱلنَّاسُ وَٱلۡحِجَارَةُ عَلَيۡهَا مَلَٰٓئِكَةٌ غِلَاظٞ شِدَادٞ لَّا يَعۡصُونَ ٱللَّهَ مَآ أَمَرَهُمۡ وَيَفۡعَلُونَ مَا يُؤۡمَرُونَ ٦﴾ [ سُورَةُ التحريم : 6]
“হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মমহৃদয়, কঠোরস্বভাব ফিরিশতাগণ, যারা অমান্য করে না তা, যা আল্লাহ তাদেরকে আদেশ করেন। আর তারা যা করতে আদিষ্ট হয়, তাই করে।” [সূরা আত-তাহরীম, আয়াত: ৬]
আরও লক্ষ্য করুন, তিনি কীভাবে ব্যক্তিকে তার বিশেষ সমাজ থেকে সাবধান ও সংযমী হওয়ার ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন; আর তিনি তাকে নির্দেশ দিয়েছেন, কোনো অনাকাঙ্খিত ব্যাপার তার নজরে এলে সে যেন ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখে। তিনি প্রথমে তাকে সংযমী ও সজাগ হওয়ার নির্দেশ দেন, তারপর তাকে নির্দেশ দেন ক্ষমা ও মার্জনা করার। তিনি বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِنَّ مِنۡ أَزۡوَٰجِكُمۡ وَأَوۡلَٰدِكُمۡ عَدُوّٗا لَّكُمۡ فَٱحۡذَرُوهُمۡۚ وَإِن تَعۡفُواْ وَتَصۡفَحُواْ وَتَغۡفِرُواْ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٞ رَّحِيمٌ ١٤﴾ [ سُورَةُ التغابن : 14]
“হে মুমিনগণ! তোমাদের স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিগণের মধ্যে কেউ কেউ তোমাদের শত্রু। অতএব, তোমরা তাদের সম্পর্কে সতর্ক থাক। তোমরা যদি তাদেরকে মার্জনা কর, তাদের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা কর এবং তাদেরকে ক্ষমা কর, তবে জেনে রাখ, আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা আত-তাগাবুন, আয়াত: ১৪]
আরও লক্ষ্য করুন, তিনি সাধারণভাবে সমাজের সকল ব্যক্তিকে তাদের মধ্যকার পারস্পরিক লেনদেনের ব্যাপারে যে নির্দেশনা দিয়েছেন সেই দিকে। তিনি বলেন,
﴿إِنَّ ٱللَّهَ يَأۡمُرُ بِٱلۡعَدۡلِ وَٱلۡإِحۡسَٰنِ وَإِيتَآيِٕ ذِي ٱلۡقُرۡبَىٰ وَيَنۡهَىٰ عَنِ ٱلۡفَحۡشَآءِ وَٱلۡمُنكَرِ وَٱلۡبَغۡيِۚ يَعِظُكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَذَكَّرُونَ ٩٠﴾ [ سُورَةُ النحل : 90]
“আল্লাহ ন্যায়পরায়নতা, সদাচরণ ও আত্মীয়-স্বজনকে দানের নির্দেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসৎকাজ ও সীমালঙ্ঘন করার ব্যাপারে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর।” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৯০]
তিনি আরও বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱجۡتَنِبُواْ كَثِيرٗا مِّنَ ٱلظَّنِّ إِنَّ بَعۡضَ ٱلظَّنِّ إِثۡمٞۖ وَ لَا تَجَسَّسُواْ وَلَا يَغۡتَب بَّعۡضُكُم بَعۡضًا﴾ [ سُورَةُ الحجرات : 12]
“হে মুমিনগণ! তোমরা অধিকাংশ অনুমান থেকে দূরে থাক। কারণ, অনুমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাপ, আর তোমরা একে অপরের গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না এবং একে অপরের পশ্চাতে নিন্দা করো না।” [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ১২] তিনি আরও বলেন,
﴿لَا يَسۡخَرۡ قَوۡمٞ مِّن قَوۡمٍ عَسَىٰٓ أَن يَكُونُواْ خَيۡرٗا مِّنۡهُمۡ وَلَا نِسَآءٞ مِّن نِّسَآءٍ عَسَىٰٓ أَن يَكُنَّ خَيۡرٗا مِّنۡهُنَّۖ وَلَا تَلۡمِزُوٓاْ أَنفُسَكُمۡ وَلَا تَنَابَزُواْ بِٱلۡأَلۡقَٰبِۖ بِئۡسَ ٱلِٱسۡمُ ٱلۡفُسُوقُ بَعۡدَ ٱلۡإِيمَٰنِۚ وَمَن لَّمۡ يَتُبۡ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ ١١﴾ [ سُورَةُ الحجرات : 11]
“কোনো পুরুষ যেন অপর কোনো পুরুষকে উপহাস না করে। কেননা যাকে উপহাস করা হয়, সে উপহাসকারীর চেয়ে উত্তম হতে পারে এবং কোনো নারী যেন অপর কোনো নারীকেও উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয়, সে উপহাসকারিণীর চেয়ে উত্তম হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডাকডাকি করো না; ঈমানের পর মন্দ নাম অতি মন্দ। যারা তাওবা না করে, তারাই যালিম।” [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ১১]
তিনি আরও বলেন,
﴿وَتَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡبِرِّ وَٱلتَّقۡوَىٰۖ وَلَا تَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡإِثۡمِ وَٱلۡعُدۡوَٰنِ﴾ [ سُورَةُ المائدة : 2]
“আর তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে পরস্পর সাহায্য করবে এবং পাপ ও সীমালঙ্ঘনে একে অন্যের সাহায্য করবে না।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ২] তিনি আরও বলেন,
﴿إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ إِخۡوَةٞ ﴾ [ سُورَةُ الحجرات : 10]
“মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই।” [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ১০]
তিনি আরও বলেন,
﴿وَأَمۡرُهُمۡ شُورَىٰ بَيۡنَهُمۡ﴾ [ سُورَةُ الشورى : 38]
“আর তারা নিজেদের মধ্যে পরামর্শের মাধ্যমে নিজেদের কর্ম সম্পাদন করে।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ৩৮]... এ বিষয়ে এগুলো ছাড়াও আরও অনেক আয়াত রয়েছে।
আর যেহেতু সমাজের কোনো সদস্যই মানব ও জিন্ন শত্রুর শত্রুতা থেকে নিরাপদ নয়; কোনো ব্যক্তিই প্রতিদ্বন্দ্বী ও বিরোধী মুক্ত নয়, যদিও সে পাহাড়ের চূড়ায় নিঃসঙ্গ থাকে; আর যেহেতু প্রত্যেক ব্যক্তিই এই ধরনের সর্বগ্রাসী ব্যাধি থেকে চিকিৎসার মুখাপেক্ষী, সেহেতু আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কিতাবের তিন জায়গায় এই ব্যাধির চিকিৎসা বর্ণনা করেছেন। তাতে তিনি বর্ণনা করেছেন যে, মানুষের শত্রুতা থেকে বাঁচার চিকিৎসা হলো তার অসদাচরণকে উপেক্ষা করা এবং সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে তার মোকাবিলা করা; আর জিন্ন শয়তানের থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট তার অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা ছাড়া আর অন্য কোনো চিকিৎসা নেই।
প্রথম স্থান: আল্লাহ তা‘আলা সূরা আল-আ‘রাফের শেষে দুষ্ট মানুষের সাথে আচরণবিধি প্রসঙ্গে বলেন,
﴿خُذِ ٱلۡعَفۡوَ وَأۡمُرۡ بِٱلۡعُرۡفِ وَأَعۡرِضۡ عَنِ ٱلۡجَٰهِلِينَ ١٩٩﴾ [ سُورَةُ الأعراف : 199]
“তুমি ক্ষমাপরায়ণতা অবলম্বন কর, সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং অজ্ঞদেরকে এড়িয়ে চল।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৯৯]
অনরূপভাবে জিন্ন শয়তানের সাথে আচরণবিধির দৃষ্টান্ত দিতে গিয়ে বলেন,
﴿وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ ٱلشَّيۡطَٰنِ نَزۡغٞ فَٱسۡتَعِذۡ بِٱللَّهِۚ إِنَّهُۥ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ٢٠٠﴾ [ سُورَةُ الأعراف : 200]
“আর যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে, তবে আল্লাহর আশ্রয়প্রার্থী হবে, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ২০০]
দ্বিতীয় স্থান: সূরা মুমিনূনের এক আয়াতে এই প্রসঙ্গে বলেন,
﴿ٱدۡفَعۡ بِٱلَّتِي هِيَ أَحۡسَنُ ٱلسَّيِّئَةَۚ نَحۡنُ أَعۡلَمُ بِمَا يَصِفُونَ ٩٦﴾ [ سُورَةُ المؤمنون : 96]
“যা উত্তম, তা দ্বারা মন্দের মোকাবেলা কর; তারা যা বলে, আমি সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত।” [সূরা আল-মুমিনুন, আয়াত: ৯৬]
অনুরূপভাবে জিন্ন শয়তান সম্পর্কে তিনি বলেন,
﴿وَقُل رَّبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنۡ هَمَزَٰتِ ٱلشَّيَٰطِينِ ٩٧ وَأَعُوذُ بِكَ رَبِّ أَن يَحۡضُرُونِ ٩٨ ﴾ [ سُورَةُ المؤمنون : 97-98]
“আর বল, হে আমার রব! আমি শয়তানের প্ররোচনা থেকে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করি। হে আমার রব! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করি আমার নিকট তাদের উপস্থিতি থেকে।” [সূরা আল-মুমিনুন, আয়াত: ৯৭-৯৮]
তৃতীয় স্থান: সূরা ফুসসিলাত; আর তাতে আল্লাহ তা‘আলা আরও বেশি স্পষ্ট করে বলেছেন যে, এই আসমানী চিকিৎসা ঐ শয়তানী রোগকে নির্মূল করে দিবে এবং তাতে তিনি আরও একটু বেশি করে বলেছেন যে, এই আসমানী চিকিৎসা সকল মানুষকে দেওয়া হয় না, বরং এটা শুধু ঐ ব্যক্তিকেই দেওয়া হয়, যিনি সৌভাগ্যের অধিকারী। আল্লাহ তা‘আলা তাতে বলেন,
﴿ٱدۡفَعۡ بِٱلَّتِي هِيَ أَحۡسَنُ فَإِذَا ٱلَّذِي بَيۡنَكَ وَبَيۡنَهُۥ عَدَٰوَةٞ كَأَنَّهُۥ وَلِيٌّ حَمِيمٞ ٣٤ وَمَا يُلَقَّىٰهَآ إِلَّا ٱلَّذِينَ صَبَرُواْ وَمَا يُلَقَّىٰهَآ إِلَّا ذُو حَظٍّ عَظِيمٖ ٣٥﴾ [ سُورَةُ فصلت : 34-35]
“মন্দ প্রতিহত কর উৎকৃষ্ট দ্বারা। ফলে তোমার সাথে যার শত্রুতা আছে, সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মতো। এই গুণের অধিকারী করা হয় কেবল তাদেরকেই, যারা ধৈর্যশীল, আর এই এই গুণের অধিকারী করা হয় কেবল তাদেরকেই, যারা মহাভাগ্যবান।” [সূরা ফুসসিলাত, আয়াত: ৩৪-৩৫]
আর জিন্ন শয়তান প্রসঙ্গে তিনি বলেন,
﴿وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ ٱلشَّيۡطَٰنِ نَزۡغٞ فَٱسۡتَعِذۡ بِٱللَّهِۖ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡعَلِيمُ ٣٦ ﴾ [ سُورَةُ فصلت : 36]
“যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে, তবে আল্লাহর আশ্রয়প্রার্থী হবে, তিনি তো সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” [সূরা ফুসসিলাত, আয়াত: ৩৬]
আর তিনি অন্যান্য জায়গায় বর্ণনা করেন যে, এই কোমল আচরণ ও নম্র ব্যবহার বিশেষভাবে মুসলিমদের জন্য প্রযোজ্য, কাফিরদের জন্য নয় [তবে এখানে সাধারণভাবে যুদ্ধ বা ষড়যন্ত্ররত কাফেরদের বিষয়ে তা বলা হচ্ছে। কিন্তু যে সব কাফের রাষ্ট্র কর্তৃক নিরাপত্তাপ্রাপ্ত হয়ে এসেছে কিংবা কোনো দেশের নিজস্ব নাগরিক তাদের নিরাপত্তা রক্ষা করা ও তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করার জন্য আমরা সর্বদা আদিষ্ট। যেমনটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনা সমাজে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। -সম্পাদক।]। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَسَوۡفَ يَأۡتِي ٱللَّهُ بِقَوۡمٖ يُحِبُّهُمۡ وَيُحِبُّونَهُۥٓ أَذِلَّةٍ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى ٱلۡكَٰفِرِينَ﴾ [ سُورَةُ المائدة : 54]
“নিশ্চয় আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায়কে নিয়ে আসবেন, যাদেরকে তিনি ভালোবাসবেন এবং যারা তাঁকে ভালোবাসবে; তারা মুমিনদের প্রতি কোমল ও কাফিরদের প্রতি কঠোর হবে।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৫৪]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿مُّحَمَّدٞ رَّسُولُ ٱللَّهِۚ وَٱلَّذِينَ مَعَهُۥٓ أَشِدَّآءُ عَلَى ٱلۡكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَيۡنَهُمۡۖ﴾ [ سُورَةُ الفتح : 29]
“মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল; তার সহচরগণ কাফিরদের প্রতি কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল।” [সূরা আল-ফাতহ, আয়াত: ২৯]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ جَٰهِدِ ٱلۡكُفَّارَ وَٱلۡمُنَٰفِقِينَ وَٱغۡلُظۡ عَلَيۡهِمۡۚ﴾ [ سُورَةُ التوبة : 73, سورة التحريم : 9]
“হে নবী! কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ কর ও তাদের প্রতি কঠোর হও।” [সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ৭৩; সূরা আত-তাহরীম, আয়াত: ৯]
কোমলতার জায়গায় কঠোরতা হলো নির্বুদ্ধিতা ও বোকামী; আর কঠোরতার স্থানে কোমলতা হলো দুর্বলতার পরিচায়ক ও এক ধরনের শৈথিল্য প্রদর্শন। কবির কবিতায়:
“যখন সহিষ্ণুতার কথা বলা হবে, তখন বল, নির্ধারিত স্থান রয়েছে সহিষ্ণুতার, আর যুবকের অপাত্রে সহিষ্ণুতা প্রকাশ এক ধরনের মূর্খতা।”
আল্লাহ তা‘আলা প্রধান সমাজপতিকে তার সমাজ ও সম্প্রদায়ের প্রতি কেমন আচরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন, সেই দিকে লক্ষ্য করুন। তিনি বলেন,
﴿وَٱخۡفِضۡ جَنَاحَكَ لِمَنِ ٱتَّبَعَكَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٢١٥﴾ [ سُورَةُ الشعراء : 215]
“এবং যারা তোমার অনুসরণ করে, সেসব মুমিনদের প্রতি বিনয়ী হও।” [সূরা আশ-শু‘আরা, আয়াত: ২১৫]
তিনি আরও বলেন,
﴿فَبِمَا رَحۡمَةٖ مِّنَ ٱللَّهِ لِنتَ لَهُمۡۖ وَلَوۡ كُنتَ فَظًّا غَلِيظَ ٱلۡقَلۡبِ لَٱنفَضُّواْ مِنۡ حَوۡلِكَۖ فَٱعۡفُ عَنۡهُمۡ وَٱسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ وَشَاوِرۡهُمۡ فِي ٱلۡأَمۡرِۖ ﴾ [ سُورَةُ آل عمران : 159]
“আল্লাহর দয়ায় তুমি তাদের প্রতি কোমল হৃদয় হয়েছিলে, যদি তুমি রূঢ় ও কঠোর চিত্ত হতে, তবে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। সুতরাং তুমি তাদেরকে ক্ষমা কর ও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং কাজে-কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ কর।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৫৯]
আর তিনি সাধারণ সমাজকে তার নেতৃবৃন্দের প্রতি কেমন আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন, সেই দিকে লক্ষ্য করুন। তিনি বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَأُوْلِي ٱلۡأَمۡرِ مِنكُمۡۖ ﴾ [ سُورَةُ النساء : 59]
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আনুগত্য কর রাসূলের এবং তাদের, যারা তোমাদের মধ্যকার ক্ষমতাশীল।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৫৯]
আরও লক্ষ্য করুন, তিনি মানুষকে তার বিশেষ সমাজ তথা সন্তান-সন্ততি ও স্ত্রীর প্রতি যেমন আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন সেই দিকে। তিনি বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ قُوٓاْ أَنفُسَكُمۡ وَأَهۡلِيكُمۡ نَارٗا وَقُودُهَا ٱلنَّاسُ وَٱلۡحِجَارَةُ عَلَيۡهَا مَلَٰٓئِكَةٌ غِلَاظٞ شِدَادٞ لَّا يَعۡصُونَ ٱللَّهَ مَآ أَمَرَهُمۡ وَيَفۡعَلُونَ مَا يُؤۡمَرُونَ ٦﴾ [ سُورَةُ التحريم : 6]
“হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মমহৃদয়, কঠোরস্বভাব ফিরিশতাগণ, যারা অমান্য করে না তা, যা আল্লাহ তাদেরকে আদেশ করেন। আর তারা যা করতে আদিষ্ট হয়, তাই করে।” [সূরা আত-তাহরীম, আয়াত: ৬]
আরও লক্ষ্য করুন, তিনি কীভাবে ব্যক্তিকে তার বিশেষ সমাজ থেকে সাবধান ও সংযমী হওয়ার ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন; আর তিনি তাকে নির্দেশ দিয়েছেন, কোনো অনাকাঙ্খিত ব্যাপার তার নজরে এলে সে যেন ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখে। তিনি প্রথমে তাকে সংযমী ও সজাগ হওয়ার নির্দেশ দেন, তারপর তাকে নির্দেশ দেন ক্ষমা ও মার্জনা করার। তিনি বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِنَّ مِنۡ أَزۡوَٰجِكُمۡ وَأَوۡلَٰدِكُمۡ عَدُوّٗا لَّكُمۡ فَٱحۡذَرُوهُمۡۚ وَإِن تَعۡفُواْ وَتَصۡفَحُواْ وَتَغۡفِرُواْ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٞ رَّحِيمٌ ١٤﴾ [ سُورَةُ التغابن : 14]
“হে মুমিনগণ! তোমাদের স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিগণের মধ্যে কেউ কেউ তোমাদের শত্রু। অতএব, তোমরা তাদের সম্পর্কে সতর্ক থাক। তোমরা যদি তাদেরকে মার্জনা কর, তাদের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা কর এবং তাদেরকে ক্ষমা কর, তবে জেনে রাখ, আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা আত-তাগাবুন, আয়াত: ১৪]
আরও লক্ষ্য করুন, তিনি সাধারণভাবে সমাজের সকল ব্যক্তিকে তাদের মধ্যকার পারস্পরিক লেনদেনের ব্যাপারে যে নির্দেশনা দিয়েছেন সেই দিকে। তিনি বলেন,
﴿إِنَّ ٱللَّهَ يَأۡمُرُ بِٱلۡعَدۡلِ وَٱلۡإِحۡسَٰنِ وَإِيتَآيِٕ ذِي ٱلۡقُرۡبَىٰ وَيَنۡهَىٰ عَنِ ٱلۡفَحۡشَآءِ وَٱلۡمُنكَرِ وَٱلۡبَغۡيِۚ يَعِظُكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَذَكَّرُونَ ٩٠﴾ [ سُورَةُ النحل : 90]
“আল্লাহ ন্যায়পরায়নতা, সদাচরণ ও আত্মীয়-স্বজনকে দানের নির্দেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসৎকাজ ও সীমালঙ্ঘন করার ব্যাপারে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর।” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৯০]
তিনি আরও বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱجۡتَنِبُواْ كَثِيرٗا مِّنَ ٱلظَّنِّ إِنَّ بَعۡضَ ٱلظَّنِّ إِثۡمٞۖ وَ لَا تَجَسَّسُواْ وَلَا يَغۡتَب بَّعۡضُكُم بَعۡضًا﴾ [ سُورَةُ الحجرات : 12]
“হে মুমিনগণ! তোমরা অধিকাংশ অনুমান থেকে দূরে থাক। কারণ, অনুমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাপ, আর তোমরা একে অপরের গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না এবং একে অপরের পশ্চাতে নিন্দা করো না।” [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ১২] তিনি আরও বলেন,
﴿لَا يَسۡخَرۡ قَوۡمٞ مِّن قَوۡمٍ عَسَىٰٓ أَن يَكُونُواْ خَيۡرٗا مِّنۡهُمۡ وَلَا نِسَآءٞ مِّن نِّسَآءٍ عَسَىٰٓ أَن يَكُنَّ خَيۡرٗا مِّنۡهُنَّۖ وَلَا تَلۡمِزُوٓاْ أَنفُسَكُمۡ وَلَا تَنَابَزُواْ بِٱلۡأَلۡقَٰبِۖ بِئۡسَ ٱلِٱسۡمُ ٱلۡفُسُوقُ بَعۡدَ ٱلۡإِيمَٰنِۚ وَمَن لَّمۡ يَتُبۡ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ ١١﴾ [ سُورَةُ الحجرات : 11]
“কোনো পুরুষ যেন অপর কোনো পুরুষকে উপহাস না করে। কেননা যাকে উপহাস করা হয়, সে উপহাসকারীর চেয়ে উত্তম হতে পারে এবং কোনো নারী যেন অপর কোনো নারীকেও উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয়, সে উপহাসকারিণীর চেয়ে উত্তম হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডাকডাকি করো না; ঈমানের পর মন্দ নাম অতি মন্দ। যারা তাওবা না করে, তারাই যালিম।” [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ১১]
তিনি আরও বলেন,
﴿وَتَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡبِرِّ وَٱلتَّقۡوَىٰۖ وَلَا تَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡإِثۡمِ وَٱلۡعُدۡوَٰنِ﴾ [ سُورَةُ المائدة : 2]
“আর তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে পরস্পর সাহায্য করবে এবং পাপ ও সীমালঙ্ঘনে একে অন্যের সাহায্য করবে না।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ২] তিনি আরও বলেন,
﴿إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ إِخۡوَةٞ ﴾ [ سُورَةُ الحجرات : 10]
“মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই।” [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ১০]
তিনি আরও বলেন,
﴿وَأَمۡرُهُمۡ شُورَىٰ بَيۡنَهُمۡ﴾ [ سُورَةُ الشورى : 38]
“আর তারা নিজেদের মধ্যে পরামর্শের মাধ্যমে নিজেদের কর্ম সম্পাদন করে।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ৩৮]... এ বিষয়ে এগুলো ছাড়াও আরও অনেক আয়াত রয়েছে।
আর যেহেতু সমাজের কোনো সদস্যই মানব ও জিন্ন শত্রুর শত্রুতা থেকে নিরাপদ নয়; কোনো ব্যক্তিই প্রতিদ্বন্দ্বী ও বিরোধী মুক্ত নয়, যদিও সে পাহাড়ের চূড়ায় নিঃসঙ্গ থাকে; আর যেহেতু প্রত্যেক ব্যক্তিই এই ধরনের সর্বগ্রাসী ব্যাধি থেকে চিকিৎসার মুখাপেক্ষী, সেহেতু আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কিতাবের তিন জায়গায় এই ব্যাধির চিকিৎসা বর্ণনা করেছেন। তাতে তিনি বর্ণনা করেছেন যে, মানুষের শত্রুতা থেকে বাঁচার চিকিৎসা হলো তার অসদাচরণকে উপেক্ষা করা এবং সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে তার মোকাবিলা করা; আর জিন্ন শয়তানের থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট তার অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা ছাড়া আর অন্য কোনো চিকিৎসা নেই।
প্রথম স্থান: আল্লাহ তা‘আলা সূরা আল-আ‘রাফের শেষে দুষ্ট মানুষের সাথে আচরণবিধি প্রসঙ্গে বলেন,
﴿خُذِ ٱلۡعَفۡوَ وَأۡمُرۡ بِٱلۡعُرۡفِ وَأَعۡرِضۡ عَنِ ٱلۡجَٰهِلِينَ ١٩٩﴾ [ سُورَةُ الأعراف : 199]
“তুমি ক্ষমাপরায়ণতা অবলম্বন কর, সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং অজ্ঞদেরকে এড়িয়ে চল।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৯৯]
অনরূপভাবে জিন্ন শয়তানের সাথে আচরণবিধির দৃষ্টান্ত দিতে গিয়ে বলেন,
﴿وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ ٱلشَّيۡطَٰنِ نَزۡغٞ فَٱسۡتَعِذۡ بِٱللَّهِۚ إِنَّهُۥ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ٢٠٠﴾ [ سُورَةُ الأعراف : 200]
“আর যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে, তবে আল্লাহর আশ্রয়প্রার্থী হবে, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ২০০]
দ্বিতীয় স্থান: সূরা মুমিনূনের এক আয়াতে এই প্রসঙ্গে বলেন,
﴿ٱدۡفَعۡ بِٱلَّتِي هِيَ أَحۡسَنُ ٱلسَّيِّئَةَۚ نَحۡنُ أَعۡلَمُ بِمَا يَصِفُونَ ٩٦﴾ [ سُورَةُ المؤمنون : 96]
“যা উত্তম, তা দ্বারা মন্দের মোকাবেলা কর; তারা যা বলে, আমি সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত।” [সূরা আল-মুমিনুন, আয়াত: ৯৬]
অনুরূপভাবে জিন্ন শয়তান সম্পর্কে তিনি বলেন,
﴿وَقُل رَّبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنۡ هَمَزَٰتِ ٱلشَّيَٰطِينِ ٩٧ وَأَعُوذُ بِكَ رَبِّ أَن يَحۡضُرُونِ ٩٨ ﴾ [ سُورَةُ المؤمنون : 97-98]
“আর বল, হে আমার রব! আমি শয়তানের প্ররোচনা থেকে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করি। হে আমার রব! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করি আমার নিকট তাদের উপস্থিতি থেকে।” [সূরা আল-মুমিনুন, আয়াত: ৯৭-৯৮]
তৃতীয় স্থান: সূরা ফুসসিলাত; আর তাতে আল্লাহ তা‘আলা আরও বেশি স্পষ্ট করে বলেছেন যে, এই আসমানী চিকিৎসা ঐ শয়তানী রোগকে নির্মূল করে দিবে এবং তাতে তিনি আরও একটু বেশি করে বলেছেন যে, এই আসমানী চিকিৎসা সকল মানুষকে দেওয়া হয় না, বরং এটা শুধু ঐ ব্যক্তিকেই দেওয়া হয়, যিনি সৌভাগ্যের অধিকারী। আল্লাহ তা‘আলা তাতে বলেন,
﴿ٱدۡفَعۡ بِٱلَّتِي هِيَ أَحۡسَنُ فَإِذَا ٱلَّذِي بَيۡنَكَ وَبَيۡنَهُۥ عَدَٰوَةٞ كَأَنَّهُۥ وَلِيٌّ حَمِيمٞ ٣٤ وَمَا يُلَقَّىٰهَآ إِلَّا ٱلَّذِينَ صَبَرُواْ وَمَا يُلَقَّىٰهَآ إِلَّا ذُو حَظٍّ عَظِيمٖ ٣٥﴾ [ سُورَةُ فصلت : 34-35]
“মন্দ প্রতিহত কর উৎকৃষ্ট দ্বারা। ফলে তোমার সাথে যার শত্রুতা আছে, সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মতো। এই গুণের অধিকারী করা হয় কেবল তাদেরকেই, যারা ধৈর্যশীল, আর এই এই গুণের অধিকারী করা হয় কেবল তাদেরকেই, যারা মহাভাগ্যবান।” [সূরা ফুসসিলাত, আয়াত: ৩৪-৩৫]
আর জিন্ন শয়তান প্রসঙ্গে তিনি বলেন,
﴿وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ ٱلشَّيۡطَٰنِ نَزۡغٞ فَٱسۡتَعِذۡ بِٱللَّهِۖ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡعَلِيمُ ٣٦ ﴾ [ سُورَةُ فصلت : 36]
“যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে, তবে আল্লাহর আশ্রয়প্রার্থী হবে, তিনি তো সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” [সূরা ফুসসিলাত, আয়াত: ৩৬]
আর তিনি অন্যান্য জায়গায় বর্ণনা করেন যে, এই কোমল আচরণ ও নম্র ব্যবহার বিশেষভাবে মুসলিমদের জন্য প্রযোজ্য, কাফিরদের জন্য নয় [তবে এখানে সাধারণভাবে যুদ্ধ বা ষড়যন্ত্ররত কাফেরদের বিষয়ে তা বলা হচ্ছে। কিন্তু যে সব কাফের রাষ্ট্র কর্তৃক নিরাপত্তাপ্রাপ্ত হয়ে এসেছে কিংবা কোনো দেশের নিজস্ব নাগরিক তাদের নিরাপত্তা রক্ষা করা ও তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করার জন্য আমরা সর্বদা আদিষ্ট। যেমনটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনা সমাজে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। -সম্পাদক।]। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَسَوۡفَ يَأۡتِي ٱللَّهُ بِقَوۡمٖ يُحِبُّهُمۡ وَيُحِبُّونَهُۥٓ أَذِلَّةٍ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى ٱلۡكَٰفِرِينَ﴾ [ سُورَةُ المائدة : 54]
“নিশ্চয় আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায়কে নিয়ে আসবেন, যাদেরকে তিনি ভালোবাসবেন এবং যারা তাঁকে ভালোবাসবে; তারা মুমিনদের প্রতি কোমল ও কাফিরদের প্রতি কঠোর হবে।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৫৪]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿مُّحَمَّدٞ رَّسُولُ ٱللَّهِۚ وَٱلَّذِينَ مَعَهُۥٓ أَشِدَّآءُ عَلَى ٱلۡكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَيۡنَهُمۡۖ﴾ [ سُورَةُ الفتح : 29]
“মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল; তার সহচরগণ কাফিরদের প্রতি কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল।” [সূরা আল-ফাতহ, আয়াত: ২৯]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ جَٰهِدِ ٱلۡكُفَّارَ وَٱلۡمُنَٰفِقِينَ وَٱغۡلُظۡ عَلَيۡهِمۡۚ﴾ [ سُورَةُ التوبة : 73, سورة التحريم : 9]
“হে নবী! কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ কর ও তাদের প্রতি কঠোর হও।” [সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ৭৩; সূরা আত-তাহরীম, আয়াত: ৯]
কোমলতার জায়গায় কঠোরতা হলো নির্বুদ্ধিতা ও বোকামী; আর কঠোরতার স্থানে কোমলতা হলো দুর্বলতার পরিচায়ক ও এক ধরনের শৈথিল্য প্রদর্শন। কবির কবিতায়:
“যখন সহিষ্ণুতার কথা বলা হবে, তখন বল, নির্ধারিত স্থান রয়েছে সহিষ্ণুতার, আর যুবকের অপাত্রে সহিষ্ণুতা প্রকাশ এক ধরনের মূর্খতা।”
আল-কুরআন অর্থব্যবস্থার সেই মূলনীতিসমূহ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিয়েছে, যে নীতিমালার দিকে অর্থনীতির সকল শাখা-প্রশাখা ধাবিত। এর ব্যাখ্যা এই যে, অর্থনীতির সকল বিষয় দু’টি মূলনীতির দিকে ধাবমান:
প্রথমত: সম্পদ উপার্জনের ক্ষেত্রে উত্তম দৃষ্টিভঙ্গি;
দ্বিতীয়ত: সম্পদ ব্যয়ের খাতসমূহে তা ব্যয় করার ক্ষেত্রে উত্তম দৃষ্টিভঙ্গি।
সুতরাং লক্ষ্য করুন, কীভাবে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কিতাবে ব্যক্তিত্ব ও দীনের সাথে সামঞ্জস্যশীল বিভিন্ন উপায় ও উপকরণের মাধ্যমে সম্পদ উপার্জনের পদ্ধতিসমূহ খোলামেলা বর্ণনা করেছেন এবং এই ক্ষেত্রে সঠিক পথ আলোকপাত করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَإِذَا قُضِيَتِ ٱلصَّلَوٰةُ فَٱنتَشِرُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَٱبۡتَغُواْ مِن فَضۡلِ ٱللَّهِ وَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ كَثِيرٗا لَّعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ١٠﴾ [ سُورَةُ الجمعة : 10]
“অতঃপর সালাত শেষ হলে তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান কর ও আল্লাহকে খুব বেশি স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।” [সূরা আল-জুম‘আ, আয়াত: ১০]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿وَءَاخَرُونَ يَضۡرِبُونَ فِي ٱلۡأَرۡضِ يَبۡتَغُونَ مِن فَضۡلِ ٱللَّهِ﴾ [ سُورَةُ المزمل : 20]
“আর কেউ কেউ আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে দেশভ্রমণ করবে।” [সূরা আল-মুয্যাম্মিল, আয়াত: ২০]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿لَيۡسَ عَلَيۡكُمۡ جُنَاحٌ أَن تَبۡتَغُواْ فَضۡلٗا مِّن رَّبِّكُمۡۚ ﴾ [ سُورَةُ البقرة : 198]
“তোমাদের রব-এর অনুগ্রহ সন্ধান করাতে তোমাদের কোনো পাপ নেই।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৯৮]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿إِلَّآ أَن تَكُونَ تِجَٰرَةً عَن تَرَاضٖ مِّنكُمۡ﴾ [ سُورَةُ النساء : 29]
“কিন্তু তোমাদের পরস্পরের সন্তুষ্টির ভিত্তিতে ব্যবসা করা বৈধ।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ২৯]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿وَأَحَلَّ ٱللَّهُ ٱلۡبَيۡعَ وَحَرَّمَ ٱلرِّبَوٰاْ﴾ [ سُورَةُ البقرة : 275]
“অথচ আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৭৫]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿فَكُلُواْ مِمَّا غَنِمۡتُمۡ حَلَٰلٗا طَيِّبٗا﴾ [ سُورَةُ الأنفال : 69]
“যুদ্ধে যা তোমরা লাভ করেছ, তা বৈধ ও উত্তম বলে ভোগ কর।” [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৬৯] এই প্রসঙ্গে এগুলো ছাড়াও আরও আয়াত রয়েছে।
আরও লক্ষ্য করুন, তিনি কীভাবে ব্যয়ের ক্ষেত্রে মিতব্যয়িতার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন,
﴿وَلَا تَجۡعَلۡ يَدَكَ مَغۡلُولَةً إِلَىٰ عُنُقِكَ وَلَا تَبۡسُطۡهَا كُلَّ ٱلۡبَسۡطِ﴾ [ سُورَةُ الإسراء : 29]
“তুমি তোমার হাতকে তোমার ঘাড়ে আবদ্ধ করে রেখো না এবং তাকে সম্পূর্ণভাবে প্রসারিতও করো না।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ২৯]
তিনি আরও বলেন,
﴿وَٱلَّذِينَ إِذَآ أَنفَقُواْ لَمۡ يُسۡرِفُواْ وَلَمۡ يَقۡتُرُواْ وَكَانَ بَيۡنَ ذَٰلِكَ قَوَامٗا ٦٧﴾ [ سُورَةُ الفرقان : 67]
“এবং যখন তারা ব্যয় করে, তখন অপব্যয় করে না, কার্পণ্যও করে না; বরং তারা আছে এতদুভয়ের মাঝে মধ্যম পন্থায়।” [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৬৭]
তিনি আরও বলেন,
﴿وَيَسَۡٔلُونَكَ مَاذَا يُنفِقُونَۖ قُلِ ٱلۡعَفۡوَۗ ﴾ الآية [ سُورَةُ البقرة : 219]
“লোকে তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, তারা কী ব্যয় করবে? বল, যা উদ্বৃত্ত।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২১৯] আরও লক্ষ্য করুন, যেই খাতে ব্যয় করা বৈধ নয়, সেই খাতে ব্যয় করতে তিনি কীভাবে নিষেধ করেন। তিনি বলেন,
﴿فَسَيُنفِقُونَهَا ثُمَّ تَكُونُ عَلَيۡهِمۡ حَسۡرَةٗ ثُمَّ يُغۡلَبُونَ﴾ [ سُورَةُ الأنفال : 36]
“তারা ধন-সম্পদ ব্যয় করতেই থাকবে, অতঃপর তা তাদের মনস্তাপের কারণ হবে, অতঃপর তারা পরাভূত হবে।” [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৩৬]
প্রথমত: সম্পদ উপার্জনের ক্ষেত্রে উত্তম দৃষ্টিভঙ্গি;
দ্বিতীয়ত: সম্পদ ব্যয়ের খাতসমূহে তা ব্যয় করার ক্ষেত্রে উত্তম দৃষ্টিভঙ্গি।
সুতরাং লক্ষ্য করুন, কীভাবে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কিতাবে ব্যক্তিত্ব ও দীনের সাথে সামঞ্জস্যশীল বিভিন্ন উপায় ও উপকরণের মাধ্যমে সম্পদ উপার্জনের পদ্ধতিসমূহ খোলামেলা বর্ণনা করেছেন এবং এই ক্ষেত্রে সঠিক পথ আলোকপাত করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَإِذَا قُضِيَتِ ٱلصَّلَوٰةُ فَٱنتَشِرُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَٱبۡتَغُواْ مِن فَضۡلِ ٱللَّهِ وَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ كَثِيرٗا لَّعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ١٠﴾ [ سُورَةُ الجمعة : 10]
“অতঃপর সালাত শেষ হলে তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান কর ও আল্লাহকে খুব বেশি স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।” [সূরা আল-জুম‘আ, আয়াত: ১০]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿وَءَاخَرُونَ يَضۡرِبُونَ فِي ٱلۡأَرۡضِ يَبۡتَغُونَ مِن فَضۡلِ ٱللَّهِ﴾ [ سُورَةُ المزمل : 20]
“আর কেউ কেউ আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে দেশভ্রমণ করবে।” [সূরা আল-মুয্যাম্মিল, আয়াত: ২০]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿لَيۡسَ عَلَيۡكُمۡ جُنَاحٌ أَن تَبۡتَغُواْ فَضۡلٗا مِّن رَّبِّكُمۡۚ ﴾ [ سُورَةُ البقرة : 198]
“তোমাদের রব-এর অনুগ্রহ সন্ধান করাতে তোমাদের কোনো পাপ নেই।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৯৮]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿إِلَّآ أَن تَكُونَ تِجَٰرَةً عَن تَرَاضٖ مِّنكُمۡ﴾ [ سُورَةُ النساء : 29]
“কিন্তু তোমাদের পরস্পরের সন্তুষ্টির ভিত্তিতে ব্যবসা করা বৈধ।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ২৯]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿وَأَحَلَّ ٱللَّهُ ٱلۡبَيۡعَ وَحَرَّمَ ٱلرِّبَوٰاْ﴾ [ سُورَةُ البقرة : 275]
“অথচ আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৭৫]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿فَكُلُواْ مِمَّا غَنِمۡتُمۡ حَلَٰلٗا طَيِّبٗا﴾ [ سُورَةُ الأنفال : 69]
“যুদ্ধে যা তোমরা লাভ করেছ, তা বৈধ ও উত্তম বলে ভোগ কর।” [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৬৯] এই প্রসঙ্গে এগুলো ছাড়াও আরও আয়াত রয়েছে।
আরও লক্ষ্য করুন, তিনি কীভাবে ব্যয়ের ক্ষেত্রে মিতব্যয়িতার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন,
﴿وَلَا تَجۡعَلۡ يَدَكَ مَغۡلُولَةً إِلَىٰ عُنُقِكَ وَلَا تَبۡسُطۡهَا كُلَّ ٱلۡبَسۡطِ﴾ [ سُورَةُ الإسراء : 29]
“তুমি তোমার হাতকে তোমার ঘাড়ে আবদ্ধ করে রেখো না এবং তাকে সম্পূর্ণভাবে প্রসারিতও করো না।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ২৯]
তিনি আরও বলেন,
﴿وَٱلَّذِينَ إِذَآ أَنفَقُواْ لَمۡ يُسۡرِفُواْ وَلَمۡ يَقۡتُرُواْ وَكَانَ بَيۡنَ ذَٰلِكَ قَوَامٗا ٦٧﴾ [ سُورَةُ الفرقان : 67]
“এবং যখন তারা ব্যয় করে, তখন অপব্যয় করে না, কার্পণ্যও করে না; বরং তারা আছে এতদুভয়ের মাঝে মধ্যম পন্থায়।” [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৬৭]
তিনি আরও বলেন,
﴿وَيَسَۡٔلُونَكَ مَاذَا يُنفِقُونَۖ قُلِ ٱلۡعَفۡوَۗ ﴾ الآية [ سُورَةُ البقرة : 219]
“লোকে তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, তারা কী ব্যয় করবে? বল, যা উদ্বৃত্ত।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২১৯] আরও লক্ষ্য করুন, যেই খাতে ব্যয় করা বৈধ নয়, সেই খাতে ব্যয় করতে তিনি কীভাবে নিষেধ করেন। তিনি বলেন,
﴿فَسَيُنفِقُونَهَا ثُمَّ تَكُونُ عَلَيۡهِمۡ حَسۡرَةٗ ثُمَّ يُغۡلَبُونَ﴾ [ سُورَةُ الأنفال : 36]
“তারা ধন-সম্পদ ব্যয় করতেই থাকবে, অতঃপর তা তাদের মনস্তাপের কারণ হবে, অতঃপর তারা পরাভূত হবে।” [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৩৬]
আল-কুরআন রাজনীতির মূলনীতি ও নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করে দিয়েছে এবং পদ্ধতিসমূহ সুস্পষ্ট করেছে। এর ব্যাখ্যা হলো যে, রাজনীতি দুই ভাগে বিভিক্ত: বৈদেশিক রাজনীতি ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতি।
বৈদেশিক রাজনীতি:
তার পরিধি দু’টি মূলনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত:
এক: শত্রু দমন ও তার ধ্বংসসাধনে পরিপূর্ণ শক্তি সঞ্চয় করা। আর এই মূলনীতির ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَأَعِدُّواْ لَهُم مَّا ٱسۡتَطَعۡتُم مِّن قُوَّةٖ وَمِن رِّبَاطِ ٱلۡخَيۡلِ تُرۡهِبُونَ بِهِۦ عَدُوَّ ٱللَّهِ وَعَدُوَّكُمۡ﴾ [ سُورَةُ الأنفال : 60]
“তোমরা তাদের মোকাবেলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ব-বাহিনী প্রস্তুত করে রাখবে, যাতে এর দ্বারা তোমরা আল্লাহর শত্রু ও তোমাদের শত্রুকে সন্ত্রস্ত করতে পার।” [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৬০]
দুই: এই শক্তিকে কেন্দ্র করে পরিপূর্ণ ও নির্ভেজাল ঐক্য গড়ে তোলা। আর এই ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَٱعۡتَصِمُواْ بِحَبۡلِ ٱللَّهِ جَمِيعٗا وَلَا تَفَرَّقُواْۚ﴾ [ سُورَةُ آل عمران : 103]
“তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৩]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿وَأَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَلَا تَنَٰزَعُواْ فَتَفۡشَلُواْ وَتَذۡهَبَ رِيحُكُمۡ﴾ [ سُورَةُ الأنفال : 46]
“তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে এবং নিজেদের মধ্যে বিবাদ করবে না, করলে তোমরা সাহস হারাবে এবং তোমাদের শক্তি বিলুপ্ত হবে।” [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৪৬]
আর এই রাজনৈতিক প্রয়োজনে সন্ধি ও চুক্তি করা এবং প্রয়োজনে সেসব সন্ধি-চুক্তি বাতিল করে দেওয়া ইত্যাদি বিষয়ে আল-কুরআন স্পষ্ট ব্যাখ্যাসহ বক্তব্য পেশ করেছে; আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَأَتِمُّوٓاْ إِلَيۡهِمۡ عَهۡدَهُمۡ إِلَىٰ مُدَّتِهِمۡ﴾ [ سُورَةُ التوبة : 4]
“তাদের সাথে নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত চুক্তি পূর্ণ করবে।” [সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ৪]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿فَمَا ٱسۡتَقَٰمُواْ لَكُمۡ فَٱسۡتَقِيمُواْ لَهُمۡۚ ﴾ [ سُورَةُ التوبة : 7]
“যে পর্যন্ত তারা তোমাদের চুক্তিতে স্থির থাকবে, সে পর্যন্ত তোমরাও তাদের চুক্তিতে স্থির থাকবে।” [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৭]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿وَإِمَّا تَخَافَنَّ مِن قَوۡمٍ خِيَانَةٗ فَٱنۢبِذۡ إِلَيۡهِمۡ عَلَىٰ سَوَآءٍۚ﴾ [ سُورَةُ الأنفال : 58]
“যদি তুমি কোনো সম্প্রদায়ের চুক্তি ভঙ্গের আশঙ্কা কর, তবে তুমি তাদের চুক্তি তাদের প্রতি সরাসরি নিক্ষেপ কর।” [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৫৮]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿وَأَذَٰنٞ مِّنَ ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦٓ إِلَى ٱلنَّاسِ يَوۡمَ ٱلۡحَجِّ ٱلۡأَكۡبَرِ أَنَّ ٱللَّهَ بَرِيٓءٞ مِّنَ ٱلۡمُشۡرِكِينَ وَرَسُولُهُۥۚ﴾ [ سُورَةُ التوبة : 3]
“মহান হজের দিনে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে মানুষের প্রতি ঘোষণা হলো এই যে, নিশ্চয় মুশরিকদের সম্পর্কে আল্লাহ দায়মুক্ত এবং তাঁর রাসূলও।” [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৩]
এছাড়াও তিনি তাদের (শত্রুদের) ষড়যন্ত্র ও সুযোগ-গ্রহণ থেকে সতর্কতা অবলম্বন ও মুক্ত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ خُذُواْ حِذۡرَكُمۡ ۚ﴾ [ سُورَةُ النساء : 71]
“হে মুমিনগণ! তোমরা সতর্কতা অবলম্বন কর।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৭১]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿وَلۡيَأۡخُذُواْ حِذۡرَهُمۡ وَأَسۡلِحَتَهُمۡۗ وَدَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ لَوۡ تَغۡفُلُونَ عَنۡ أَسۡلِحَتِكُمۡۚ﴾ [ سُورَةُ النساء : 102]
“এবং তারা যেন সতর্ক ও সশস্ত্র থাকে। কাফিরগণ কামনা করে যে, তোমরা যেন তোমাদের অস্ত্রশস্ত্র সম্বন্ধে অসতর্ক হও।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১০২] অনুরূপ আরও অনেক আয়াত রয়েছে।
অভ্যন্তরীণ রাজনীতি:
এই রাজনীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো সমাজের অভ্যন্তরে শান্তি ও নিরাপত্তা সম্প্রসারণ করা, যুলুম-নির্যাতন প্রতিরোধ করা এবং প্রত্যেকের কাছে তাদের অধিকার পৌঁছিয়ে দেওয়া।
ছয়টি মহারন ও প্রধান উপাদানের ওপর ভিত্তি করে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি পরিচালিত হয়:
প্রথমত: দীন: দীনকে রক্ষার্থে শরী‘আত অনেক বিধিবিধান নিয়ে এসেছে; এ জন্যই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من بدّل دينه فاقتلوه » .
“যে ব্যক্তি তার দীন পরিবর্তন করবে, তোমরা তাকে হত্যা কর”। [ইমাম বুখারী আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে হাদীসখানা বর্ণনা করেন, জিহাদ অধ্যায় ( كتاب الجهاد ), পরিচ্ছেদ: আল্লাহর শাস্তির দ্বারা শাস্তি না দেওয়া ( باب لا يعذب بعذاب الله ), ৪/২১।] এর মাধ্যমে দীন পরিবর্তন ও বিনষ্ট করার হাত থেকে রক্ষার জন্য পরিপূর্ণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা রয়েছে।
দ্বিতীয়ত: জীবন: জীবন রক্ষা ও তার নিরাপত্তা বিধানে আল্লাহ তা‘আলা আল-কুরআনুল কারীমে কিসাসের [কিসাস ( القصاص ) মানে- হত্যার পরিবর্তে হত্যা, যা প্রশাসনের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে। -অনুবাদক।] বিধান প্রবর্তন করেছেন। তিনি বলেন,
﴿وَلَكُمۡ فِي ٱلۡقِصَاصِ حَيَوٰةٞ ﴾ [ سُورَةُ البقرة : 179]
“কিসাসের মধ্যে তোমাদের জন্য জীবন রয়েছে, ।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৭৯]
তিনি আরও বলেন,
﴿كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلۡقِصَاصُ فِي ٱلۡقَتۡلَىۖ﴾ [ سُورَةُ البقرة : 178]
“নিহতদের ব্যাপারে তোমাদের জন্য কিসাসের বিধান দেওয়া হয়েছে।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৭৮] তিনি আরও বলেন,
﴿وَمَن قُتِلَ مَظۡلُومٗا فَقَدۡ جَعَلۡنَا لِوَلِيِّهِۦ سُلۡطَٰنٗا﴾ الآية [ سُورَةُ الإسراء : 33]
“আর কেউ অন্যায়ভাবে নিহত হলে তার উত্তরাধিকারীকে তো আমি তা প্রতিকারের অধিকার দিয়েছি।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৩৩]
তৃতীয়ত: বিবেক-বুদ্ধি: আল-কুরআনের মধ্যে মানুষের বিবেক-বুদ্ধিকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বক্তব্য এসেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِنَّمَا ٱلۡخَمۡرُ وَٱلۡمَيۡسِرُ وَٱلۡأَنصَابُ وَٱلۡأَزۡلَٰمُ رِجۡسٞ مِّنۡ عَمَلِ ٱلشَّيۡطَٰنِ فَٱجۡتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٩٠﴾ [ سُورَةُ المائدة : 90]
“হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক তীর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কাজ। সুতরাং তেমারা তা বর্জন কর- যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৯০]
আর হাদীসে এসেছে:
«كل مسكر حرام وما أسكر كثيره فقليله حرام» .
“প্রত্যেক নেশাগ্রস্তকারী বস্তুই হারাম; আর যে বস্তু মাতাল করে তোলে, বেশি হোক বা কম হোক তা হারাম তথা নিষিদ্ধ বলে গণ্য হবে।” [এই শব্দেই হাদীসখানা বর্ণনা করেন ইমাম ইবনু মাজাহ, পানীয় অধ্যায় ( كتاب الأشربة ), পরিচ্ছেদ: যে বস্তু মাতাল করে তোলে, তা বেশি হউক বা কম হউক হারাম( باب ما أسكر كثيره فقليله حرام ), (২/১১২৪), হাদীস নং ৩৩৯২; আর হাদিসের প্রথম অংশ: «كل مسكر حرام» সম্মিলিতভাবে ইমাম বুখারী ও মুসলিম রহ. আবূ মূসা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন; বুখারী, কিতাবুল মাগাযী ( كتاب المغازي ), পরিচ্ছেদ: বিদায় হজের পূর্বে আবূ মূসা ও মু‘আয রাদিয়াল্লাহু আনহুমাকে ইয়ামনে প্রেরণ ( باب بعث أبي موسى و معاذ إلى اليمن قبل حجة الوداع ), ৫/ ১০৮; মুসলিম, পানীয় অধ্যায় ( كتاب الأشربة ), পরিচ্ছেদ: ‘প্রত্যেক নেশাগ্রস্তকারী বস্তুই মদ, আর প্রত্যেক মদই হারাম’ এর বিবরণ ( باب بيان أن كل مسكر خمر و أن كل خمر حرام ), ৩/ ১৫৮৫, হাদীস নং ২০০১।] বিবেক-বুদ্ধিকে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণের জন্যই শরী‘আত মদ পানকারীর জন্য ‘হদ’ তথা নির্দিষ্ট শাস্তির আবশ্যকীয় ব্যবস্থা করেছে।
চতুর্থত: বংশ: বংশকে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আল্লাহ তা‘আলা যিনা-ব্যভিচারের মত অপরাধের নির্ধারিত শাস্তি ‘হদের’ বিধান করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ٱلزَّانِيَةُ وَٱلزَّانِي فأجۡلِدُواْ كُلَّ وَٰحِدٖ مِّنۡهُمَا مِاْئَةَ جَلۡدَةٖ﴾ الآية [ سُورَةُ النور : 2]
“ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী- তাদের প্রত্যেককে একশত কশাঘাত করবে।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ২]
পঞ্চমত: মান-সম্মান: মান-সম্মান রক্ষণাবেক্ষণের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য আল্লাহ তা‘আলা অপবাদদাতার জন্য আশিটি কশাঘাতের শাস্তির বিধান করেছেন। তিনি বলেন,
﴿وَٱلَّذِينَ يَرۡمُونَ ٱلۡمُحۡصَنَٰتِ ثُمَّ لَمۡ يَأۡتُواْ بِأَرۡبَعَةِ شُهَدَآءَ فَٱجۡلِدُوهُمۡ ثَمَٰنِينَ جَلۡدَةٗ وَلَا تَقۡبَلُواْ لَهُمۡ شَهَٰدَةً أَبَدٗاۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡفَٰسِقُونَ ٤﴾ [ سُورَةُ النور : 4]
“আর যারা সচ্চরিত্রা নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারপর চারজন সাক্ষী উপস্থিত না করে, তাদেরকে আশিটি কশাঘাত করবে এবং কখনও তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করবে না, এরাই তো ফাসেক।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৪]
ষষ্ঠত: ধন-সম্পদ: ধন-সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য আল্লাহ তা‘আলা চোরের হাত কাটার শাস্তির বিধান করেছেন। তিনি বলেন,
﴿وَٱلسَّارِقُ وَٱلسَّارِقَةُ فَٱقۡطَعُوٓاْ أَيۡدِيَهُمَا جَزَآءَۢ بِمَا كَسَبَا نَكَٰلٗا مِّنَ ٱللَّهِۗ وَٱللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٞ ٣٨﴾ [ سُورَةُ المائدة : 38]
“পুরুষ চোর ও নারী চোর, তাদের হাত কেটে দাও। এটা তাদের কৃতকর্মের ফল এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে দৃষ্টান্তমূলক দণ্ড; আর আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৩৮]
সুতরাং এই কথা সুস্পষ্ট হয়ে গেল যে, সমাজের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক সকল স্বার্থ রক্ষার জন্য আল-কুরআনের অনুসরণ করাই যথেষ্ট।
বৈদেশিক রাজনীতি:
তার পরিধি দু’টি মূলনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত:
এক: শত্রু দমন ও তার ধ্বংসসাধনে পরিপূর্ণ শক্তি সঞ্চয় করা। আর এই মূলনীতির ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَأَعِدُّواْ لَهُم مَّا ٱسۡتَطَعۡتُم مِّن قُوَّةٖ وَمِن رِّبَاطِ ٱلۡخَيۡلِ تُرۡهِبُونَ بِهِۦ عَدُوَّ ٱللَّهِ وَعَدُوَّكُمۡ﴾ [ سُورَةُ الأنفال : 60]
“তোমরা তাদের মোকাবেলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ব-বাহিনী প্রস্তুত করে রাখবে, যাতে এর দ্বারা তোমরা আল্লাহর শত্রু ও তোমাদের শত্রুকে সন্ত্রস্ত করতে পার।” [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৬০]
দুই: এই শক্তিকে কেন্দ্র করে পরিপূর্ণ ও নির্ভেজাল ঐক্য গড়ে তোলা। আর এই ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَٱعۡتَصِمُواْ بِحَبۡلِ ٱللَّهِ جَمِيعٗا وَلَا تَفَرَّقُواْۚ﴾ [ سُورَةُ آل عمران : 103]
“তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৩]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿وَأَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَلَا تَنَٰزَعُواْ فَتَفۡشَلُواْ وَتَذۡهَبَ رِيحُكُمۡ﴾ [ سُورَةُ الأنفال : 46]
“তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে এবং নিজেদের মধ্যে বিবাদ করবে না, করলে তোমরা সাহস হারাবে এবং তোমাদের শক্তি বিলুপ্ত হবে।” [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৪৬]
আর এই রাজনৈতিক প্রয়োজনে সন্ধি ও চুক্তি করা এবং প্রয়োজনে সেসব সন্ধি-চুক্তি বাতিল করে দেওয়া ইত্যাদি বিষয়ে আল-কুরআন স্পষ্ট ব্যাখ্যাসহ বক্তব্য পেশ করেছে; আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَأَتِمُّوٓاْ إِلَيۡهِمۡ عَهۡدَهُمۡ إِلَىٰ مُدَّتِهِمۡ﴾ [ سُورَةُ التوبة : 4]
“তাদের সাথে নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত চুক্তি পূর্ণ করবে।” [সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ৪]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿فَمَا ٱسۡتَقَٰمُواْ لَكُمۡ فَٱسۡتَقِيمُواْ لَهُمۡۚ ﴾ [ سُورَةُ التوبة : 7]
“যে পর্যন্ত তারা তোমাদের চুক্তিতে স্থির থাকবে, সে পর্যন্ত তোমরাও তাদের চুক্তিতে স্থির থাকবে।” [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৭]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿وَإِمَّا تَخَافَنَّ مِن قَوۡمٍ خِيَانَةٗ فَٱنۢبِذۡ إِلَيۡهِمۡ عَلَىٰ سَوَآءٍۚ﴾ [ سُورَةُ الأنفال : 58]
“যদি তুমি কোনো সম্প্রদায়ের চুক্তি ভঙ্গের আশঙ্কা কর, তবে তুমি তাদের চুক্তি তাদের প্রতি সরাসরি নিক্ষেপ কর।” [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৫৮]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿وَأَذَٰنٞ مِّنَ ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦٓ إِلَى ٱلنَّاسِ يَوۡمَ ٱلۡحَجِّ ٱلۡأَكۡبَرِ أَنَّ ٱللَّهَ بَرِيٓءٞ مِّنَ ٱلۡمُشۡرِكِينَ وَرَسُولُهُۥۚ﴾ [ سُورَةُ التوبة : 3]
“মহান হজের দিনে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে মানুষের প্রতি ঘোষণা হলো এই যে, নিশ্চয় মুশরিকদের সম্পর্কে আল্লাহ দায়মুক্ত এবং তাঁর রাসূলও।” [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৩]
এছাড়াও তিনি তাদের (শত্রুদের) ষড়যন্ত্র ও সুযোগ-গ্রহণ থেকে সতর্কতা অবলম্বন ও মুক্ত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ خُذُواْ حِذۡرَكُمۡ ۚ﴾ [ سُورَةُ النساء : 71]
“হে মুমিনগণ! তোমরা সতর্কতা অবলম্বন কর।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৭১]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿وَلۡيَأۡخُذُواْ حِذۡرَهُمۡ وَأَسۡلِحَتَهُمۡۗ وَدَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ لَوۡ تَغۡفُلُونَ عَنۡ أَسۡلِحَتِكُمۡۚ﴾ [ سُورَةُ النساء : 102]
“এবং তারা যেন সতর্ক ও সশস্ত্র থাকে। কাফিরগণ কামনা করে যে, তোমরা যেন তোমাদের অস্ত্রশস্ত্র সম্বন্ধে অসতর্ক হও।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১০২] অনুরূপ আরও অনেক আয়াত রয়েছে।
অভ্যন্তরীণ রাজনীতি:
এই রাজনীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো সমাজের অভ্যন্তরে শান্তি ও নিরাপত্তা সম্প্রসারণ করা, যুলুম-নির্যাতন প্রতিরোধ করা এবং প্রত্যেকের কাছে তাদের অধিকার পৌঁছিয়ে দেওয়া।
ছয়টি মহারন ও প্রধান উপাদানের ওপর ভিত্তি করে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি পরিচালিত হয়:
প্রথমত: দীন: দীনকে রক্ষার্থে শরী‘আত অনেক বিধিবিধান নিয়ে এসেছে; এ জন্যই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من بدّل دينه فاقتلوه » .
“যে ব্যক্তি তার দীন পরিবর্তন করবে, তোমরা তাকে হত্যা কর”। [ইমাম বুখারী আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে হাদীসখানা বর্ণনা করেন, জিহাদ অধ্যায় ( كتاب الجهاد ), পরিচ্ছেদ: আল্লাহর শাস্তির দ্বারা শাস্তি না দেওয়া ( باب لا يعذب بعذاب الله ), ৪/২১।] এর মাধ্যমে দীন পরিবর্তন ও বিনষ্ট করার হাত থেকে রক্ষার জন্য পরিপূর্ণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা রয়েছে।
দ্বিতীয়ত: জীবন: জীবন রক্ষা ও তার নিরাপত্তা বিধানে আল্লাহ তা‘আলা আল-কুরআনুল কারীমে কিসাসের [কিসাস ( القصاص ) মানে- হত্যার পরিবর্তে হত্যা, যা প্রশাসনের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে। -অনুবাদক।] বিধান প্রবর্তন করেছেন। তিনি বলেন,
﴿وَلَكُمۡ فِي ٱلۡقِصَاصِ حَيَوٰةٞ ﴾ [ سُورَةُ البقرة : 179]
“কিসাসের মধ্যে তোমাদের জন্য জীবন রয়েছে, ।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৭৯]
তিনি আরও বলেন,
﴿كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلۡقِصَاصُ فِي ٱلۡقَتۡلَىۖ﴾ [ سُورَةُ البقرة : 178]
“নিহতদের ব্যাপারে তোমাদের জন্য কিসাসের বিধান দেওয়া হয়েছে।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৭৮] তিনি আরও বলেন,
﴿وَمَن قُتِلَ مَظۡلُومٗا فَقَدۡ جَعَلۡنَا لِوَلِيِّهِۦ سُلۡطَٰنٗا﴾ الآية [ سُورَةُ الإسراء : 33]
“আর কেউ অন্যায়ভাবে নিহত হলে তার উত্তরাধিকারীকে তো আমি তা প্রতিকারের অধিকার দিয়েছি।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৩৩]
তৃতীয়ত: বিবেক-বুদ্ধি: আল-কুরআনের মধ্যে মানুষের বিবেক-বুদ্ধিকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বক্তব্য এসেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِنَّمَا ٱلۡخَمۡرُ وَٱلۡمَيۡسِرُ وَٱلۡأَنصَابُ وَٱلۡأَزۡلَٰمُ رِجۡسٞ مِّنۡ عَمَلِ ٱلشَّيۡطَٰنِ فَٱجۡتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٩٠﴾ [ سُورَةُ المائدة : 90]
“হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক তীর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কাজ। সুতরাং তেমারা তা বর্জন কর- যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৯০]
আর হাদীসে এসেছে:
«كل مسكر حرام وما أسكر كثيره فقليله حرام» .
“প্রত্যেক নেশাগ্রস্তকারী বস্তুই হারাম; আর যে বস্তু মাতাল করে তোলে, বেশি হোক বা কম হোক তা হারাম তথা নিষিদ্ধ বলে গণ্য হবে।” [এই শব্দেই হাদীসখানা বর্ণনা করেন ইমাম ইবনু মাজাহ, পানীয় অধ্যায় ( كتاب الأشربة ), পরিচ্ছেদ: যে বস্তু মাতাল করে তোলে, তা বেশি হউক বা কম হউক হারাম( باب ما أسكر كثيره فقليله حرام ), (২/১১২৪), হাদীস নং ৩৩৯২; আর হাদিসের প্রথম অংশ: «كل مسكر حرام» সম্মিলিতভাবে ইমাম বুখারী ও মুসলিম রহ. আবূ মূসা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন; বুখারী, কিতাবুল মাগাযী ( كتاب المغازي ), পরিচ্ছেদ: বিদায় হজের পূর্বে আবূ মূসা ও মু‘আয রাদিয়াল্লাহু আনহুমাকে ইয়ামনে প্রেরণ ( باب بعث أبي موسى و معاذ إلى اليمن قبل حجة الوداع ), ৫/ ১০৮; মুসলিম, পানীয় অধ্যায় ( كتاب الأشربة ), পরিচ্ছেদ: ‘প্রত্যেক নেশাগ্রস্তকারী বস্তুই মদ, আর প্রত্যেক মদই হারাম’ এর বিবরণ ( باب بيان أن كل مسكر خمر و أن كل خمر حرام ), ৩/ ১৫৮৫, হাদীস নং ২০০১।] বিবেক-বুদ্ধিকে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণের জন্যই শরী‘আত মদ পানকারীর জন্য ‘হদ’ তথা নির্দিষ্ট শাস্তির আবশ্যকীয় ব্যবস্থা করেছে।
চতুর্থত: বংশ: বংশকে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আল্লাহ তা‘আলা যিনা-ব্যভিচারের মত অপরাধের নির্ধারিত শাস্তি ‘হদের’ বিধান করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ٱلزَّانِيَةُ وَٱلزَّانِي فأجۡلِدُواْ كُلَّ وَٰحِدٖ مِّنۡهُمَا مِاْئَةَ جَلۡدَةٖ﴾ الآية [ سُورَةُ النور : 2]
“ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী- তাদের প্রত্যেককে একশত কশাঘাত করবে।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ২]
পঞ্চমত: মান-সম্মান: মান-সম্মান রক্ষণাবেক্ষণের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য আল্লাহ তা‘আলা অপবাদদাতার জন্য আশিটি কশাঘাতের শাস্তির বিধান করেছেন। তিনি বলেন,
﴿وَٱلَّذِينَ يَرۡمُونَ ٱلۡمُحۡصَنَٰتِ ثُمَّ لَمۡ يَأۡتُواْ بِأَرۡبَعَةِ شُهَدَآءَ فَٱجۡلِدُوهُمۡ ثَمَٰنِينَ جَلۡدَةٗ وَلَا تَقۡبَلُواْ لَهُمۡ شَهَٰدَةً أَبَدٗاۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡفَٰسِقُونَ ٤﴾ [ سُورَةُ النور : 4]
“আর যারা সচ্চরিত্রা নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারপর চারজন সাক্ষী উপস্থিত না করে, তাদেরকে আশিটি কশাঘাত করবে এবং কখনও তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করবে না, এরাই তো ফাসেক।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৪]
ষষ্ঠত: ধন-সম্পদ: ধন-সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য আল্লাহ তা‘আলা চোরের হাত কাটার শাস্তির বিধান করেছেন। তিনি বলেন,
﴿وَٱلسَّارِقُ وَٱلسَّارِقَةُ فَٱقۡطَعُوٓاْ أَيۡدِيَهُمَا جَزَآءَۢ بِمَا كَسَبَا نَكَٰلٗا مِّنَ ٱللَّهِۗ وَٱللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٞ ٣٨﴾ [ سُورَةُ المائدة : 38]
“পুরুষ চোর ও নারী চোর, তাদের হাত কেটে দাও। এটা তাদের কৃতকর্মের ফল এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে দৃষ্টান্তমূলক দণ্ড; আর আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৩৮]
সুতরাং এই কথা সুস্পষ্ট হয়ে গেল যে, সমাজের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক সকল স্বার্থ রক্ষার জন্য আল-কুরআনের অনুসরণ করাই যথেষ্ট।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদের মধ্যে বিদ্যমান থাকার সময়েই এই বিষয়টি তাদের নিকট জটিল ব্যাপার মনে হয়েছিল। আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং তাঁর কিতাবে এই ব্যাপারে আসমানী ফাতওয়া দেন, যার দ্বারা এই সমস্যাটি দূর হয়ে গেছে। ঘটনাটি হলো, যখন ওহুদের যুদ্ধের দিন মুসলিমগণ বিপর্যয়ের শিকার হয়েছিলেন, তখন তারা এই জটিলতার সম্মুখীন হন এবং তারা বলেন, কীভাবে মুশরিকগণকে আমাদের উদ্দেশ্যে ঘুরিয়ে দেওয়া হলো এবং আমাদের ওপর তাদেরকে প্রভাবশালী করা হলো, অথচ আমরা হকের (সত্যের) ওপর প্রতিষ্ঠিত আছি এবং তারা বাতিলের (অসত্যের) ওপর প্রতিষ্ঠিত? তখন আল্লাহ তা‘আলা নিম্নোক্ত বাণীর মাধ্যমে এ ব্যাপারে [ইবন আবু হাতেম তার তাফসীরের মধ্যে (নং ১৮২২ -আলে ইমরান) হাসান বসরী রহ. থেকে এই ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন।] তাদেরকে ফাতওয়া দিলেন:
﴿أَوَلَمَّآ أَصَٰبَتۡكُم مُّصِيبَةٞ قَدۡ أَصَبۡتُم مِّثۡلَيۡهَا قُلۡتُمۡ أَنَّىٰ هَٰذَاۖ قُلۡ هُوَ مِنۡ عِندِ أَنفُسِكُمۡۗ﴾ [ سُورَةُ آل عمران : 165]
“কী ব্যাপার! যখন তোমাদের ওপর মুসীবত এলো, তখন তোমরা বললে: ‘এটা কোথা থেকে আসল?’ অথচ তোমরা তো দ্বিগুণ বিপদ ঘটিয়েছিলে। বল, ‘এটা তোমাদের নিজেদেরই নিকট থেকে।’” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৬৫] আর তাঁর বাণী: “এটা তোমাদের নিজেদেরই নিকট থেকে” -কে সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করে দিয়েছে তাঁর নিম্নোক্ত বাণী:
﴿وَلَقَدۡ صَدَقَكُمُ ٱللَّهُ وَعۡدَهُۥٓ إِذۡ تَحُسُّونَهُم بِإِذۡنِهِۦۖ حَتَّىٰٓ إِذَا فَشِلۡتُمۡ وَتَنَٰزَعۡتُمۡ فِي ٱلۡأَمۡرِ وَعَصَيۡتُم مِّنۢ بَعۡدِ مَآ أَرَىٰكُم مَّا تُحِبُّونَۚ مِنكُم مَّن يُرِيدُ ٱلدُّنۡيَا وَمِنكُم مَّن يُرِيدُ ٱلۡأٓخِرَةَۚ ثُمَّ صَرَفَكُمۡ عَنۡهُمۡ لِيَبۡتَلِيَكُمۡۖ﴾ [ سُورَةُ آل عمران : 152]
“আল্লাহ তোমাদের সাথে তাঁর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছিলেন যখন তোমরা আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাদেরকে বিনাশ করছিলে, যে পর্যন্ত না তোমরা সাহস হারালে এবং নির্দেশ সম্বন্ধে মতভেদ সৃষ্টি করলে এবং যা তোমরা ভালবাস তা তোমাদেরকে দেখানোর পর তোমরা অবাধ্য হলে। তোমাদের কতক দুনিয়া চাচ্ছিলে এবং কতক আখেরাত চাচ্ছিলে। অতঃপর তিনি পরীক্ষা করার জন্য তোমাদেরকে তাদের থেকে ফিরিয়ে দিলেন।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৫২]
সুতরাং তিনি এই আসমানী ফাতওয়ায় বর্ণনা করেছেন যে, তাদের ওপর কাফিরদের কর্তৃত্ব বা প্রভাবের কারণ তাদের নিজেদেরই সৃষ্ট; আর তা হচ্ছে তাদের ব্যর্থতা, নির্দেশ পালনে মতভিন্নতা, তাদের একাংশ কর্তৃক রাসূলের অবাধ্যতা এবং দুনিয়ার প্রতি তাদের আগ্রহ ও উদ্দীপনা। কারণ, তীরন্দাজ বাহিনী পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থান করে কাফিরদেরকে মুসলিমদের পেছন দিক থেকে এসে আক্রমন করা থেকে বিরত রাখছিলেন; কিন্তু যুদ্ধের প্রথম দিকে মুশরিকদের পরাজয়ের সময় তারা গনীমতের মালের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করে। এভাবে তারা দুনিয়ার সম্পদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তা অর্জনের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশকে উপেক্ষা করেছিল। [যেমনটি বর্ণিত আছে বারা ইবন ‘আযেব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীসে, যা ইমাম বুখারী রহ. বর্ণনা করেছেন, জিহাদ অধ্যায় ( كتاب الجهاد ), পরিচ্ছেদ: যুদ্ধের ময়দানে মতবিরোধ অপছন্দনীয় এবং যে তার নেতার অবাধ্য হয় তার পরিণতি ( باب ما يكره من التنازع و الاختلاط في الحرب و عقوبة من عصى إمامه ), ৪/২৬।]
﴿أَوَلَمَّآ أَصَٰبَتۡكُم مُّصِيبَةٞ قَدۡ أَصَبۡتُم مِّثۡلَيۡهَا قُلۡتُمۡ أَنَّىٰ هَٰذَاۖ قُلۡ هُوَ مِنۡ عِندِ أَنفُسِكُمۡۗ﴾ [ سُورَةُ آل عمران : 165]
“কী ব্যাপার! যখন তোমাদের ওপর মুসীবত এলো, তখন তোমরা বললে: ‘এটা কোথা থেকে আসল?’ অথচ তোমরা তো দ্বিগুণ বিপদ ঘটিয়েছিলে। বল, ‘এটা তোমাদের নিজেদেরই নিকট থেকে।’” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৬৫] আর তাঁর বাণী: “এটা তোমাদের নিজেদেরই নিকট থেকে” -কে সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করে দিয়েছে তাঁর নিম্নোক্ত বাণী:
﴿وَلَقَدۡ صَدَقَكُمُ ٱللَّهُ وَعۡدَهُۥٓ إِذۡ تَحُسُّونَهُم بِإِذۡنِهِۦۖ حَتَّىٰٓ إِذَا فَشِلۡتُمۡ وَتَنَٰزَعۡتُمۡ فِي ٱلۡأَمۡرِ وَعَصَيۡتُم مِّنۢ بَعۡدِ مَآ أَرَىٰكُم مَّا تُحِبُّونَۚ مِنكُم مَّن يُرِيدُ ٱلدُّنۡيَا وَمِنكُم مَّن يُرِيدُ ٱلۡأٓخِرَةَۚ ثُمَّ صَرَفَكُمۡ عَنۡهُمۡ لِيَبۡتَلِيَكُمۡۖ﴾ [ سُورَةُ آل عمران : 152]
“আল্লাহ তোমাদের সাথে তাঁর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছিলেন যখন তোমরা আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাদেরকে বিনাশ করছিলে, যে পর্যন্ত না তোমরা সাহস হারালে এবং নির্দেশ সম্বন্ধে মতভেদ সৃষ্টি করলে এবং যা তোমরা ভালবাস তা তোমাদেরকে দেখানোর পর তোমরা অবাধ্য হলে। তোমাদের কতক দুনিয়া চাচ্ছিলে এবং কতক আখেরাত চাচ্ছিলে। অতঃপর তিনি পরীক্ষা করার জন্য তোমাদেরকে তাদের থেকে ফিরিয়ে দিলেন।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৫২]
সুতরাং তিনি এই আসমানী ফাতওয়ায় বর্ণনা করেছেন যে, তাদের ওপর কাফিরদের কর্তৃত্ব বা প্রভাবের কারণ তাদের নিজেদেরই সৃষ্ট; আর তা হচ্ছে তাদের ব্যর্থতা, নির্দেশ পালনে মতভিন্নতা, তাদের একাংশ কর্তৃক রাসূলের অবাধ্যতা এবং দুনিয়ার প্রতি তাদের আগ্রহ ও উদ্দীপনা। কারণ, তীরন্দাজ বাহিনী পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থান করে কাফিরদেরকে মুসলিমদের পেছন দিক থেকে এসে আক্রমন করা থেকে বিরত রাখছিলেন; কিন্তু যুদ্ধের প্রথম দিকে মুশরিকদের পরাজয়ের সময় তারা গনীমতের মালের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করে। এভাবে তারা দুনিয়ার সম্পদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তা অর্জনের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশকে উপেক্ষা করেছিল। [যেমনটি বর্ণিত আছে বারা ইবন ‘আযেব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীসে, যা ইমাম বুখারী রহ. বর্ণনা করেছেন, জিহাদ অধ্যায় ( كتاب الجهاد ), পরিচ্ছেদ: যুদ্ধের ময়দানে মতবিরোধ অপছন্দনীয় এবং যে তার নেতার অবাধ্য হয় তার পরিণতি ( باب ما يكره من التنازع و الاختلاط في الحرب و عقوبة من عصى إمامه ), ৪/২৬।]
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কিতাবে এই সমস্যার প্রতিকার সুষ্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বর্ণনা করেছেন যে, তিনি যদি তাঁর বান্দাদের অন্তরের যথাযথ আন্তরিকতা ও একনিষ্ঠতার ব্যাপারে অবগত হন, তবে এ ইখলাস তথা একনিষ্ঠতার ফলে তারা তাদের চেয়ে শক্তিশালীদের ওপর কর্তৃত্ব বিস্তার ও বিজয় লাভ করতে পারবে। আর এ জন্যই যখন আল্লাহ তা‘আলা ‘বাই‘আতে রিদওয়ান’ -এর সদস্যদের যথাযথ ইখলাস তথা একনিষ্ঠতার বিষয়ে অবগত হলেন এবং তাদের আন্তরিকতা ও একনিষ্ঠতাকে তাঁর নিম্নোক্ত বাণীর মধ্যে উচ্চ মর্যাদা দান করলেন:
﴿لَّقَدۡ رَضِيَ ٱللَّهُ عَنِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ إِذۡ يُبَايِعُونَكَ تَحۡتَ ٱلشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِي قُلُوبِهِمۡ﴾ [ سُورَةُ الفتح : 18]
“আল্লাহ তো মুমিনগনের ওপর সন্তুষ্ট হলেন যখন তারা বৃক্ষতলে তোমার নিকট বাই‘আত গ্রহণ করল, তাদের অন্তরে যা ছিল তা তিনি অবগত ছিলেন।” [সূরা আল-ফাতহ, আয়াত: ১৮], তখন তিনি পরিষ্কার করেন যে, এই ইখলাস তথা একনিষ্ঠতার ফলে তিনি তাদেরকে এমন বিষয়ের ওপর ক্ষমতাবান করলেন, যে ব্যাপারে তাদের শক্তি ও সামর্থ্য ছিল না। তিনি বলেন,
﴿وَأُخۡرَىٰ لَمۡ تَقۡدِرُواْ عَلَيۡهَا قَدۡ أَحَاطَ ٱللَّهُ بِهَا﴾ [ سُورَةُ الفتح : 21]
“এবং আরও রয়েছে, যা এখনও তোমাদের অধিকারে আসে নি, তা তো আল্লাহ বেষ্টন করে রেখেছেন।” [সূরা আল-ফাতহ, আয়াত: ২১] এখানে তিনি পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন যে, তা তাদের অধিকারে ছিল না; তিনিই তা বেষ্টন করে রেখেছিলেন, অতঃপর তিনি তাদের ইখলাস তথা একনিষ্ঠতার বিষয়টি জানার কারণে তিনি তাদেরকে এর ওপর ক্ষমতাবান করেছেন এবং তাদের জন্য তা গনীমত হিসেবে দান করেছেন।
আর এই জন্য যখন কাফিরগণ আহযাবের যুদ্ধ তথা বহুজাতিক বাহিনীর যুদ্ধের সময় মুসলিম সম্প্রদায়কে বড় ধরনের সামরিক অবরোধ করে, যা আল্লাহ তা‘আলার নিম্নোক্ত বাণীর মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে:
﴿إِذۡ جَآءُوكُم مِّن فَوۡقِكُمۡ وَمِنۡ أَسۡفَلَ مِنكُمۡ وَإِذۡ زَاغَتِ ٱلۡأَبۡصَٰرُ وَبَلَغَتِ ٱلۡقُلُوبُ ٱلۡحَنَاجِرَ وَتَظُنُّونَ بِٱللَّهِ ٱلظُّنُونَا۠ ١٠ هُنَالِكَ ٱبۡتُلِيَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ وَزُلۡزِلُواْ زِلۡزَالٗا شَدِيدٗا ١١ ﴾ [ سُورَةُ الأحزاب : 10-11]
“যখন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সমাগত হয়েছিল তোমাদের উপরের দিক ও নিচের দিক থেকে, আর যখন তোমাদের চক্ষু বিস্ফোরিত হয়েছিল, তোমাদের প্রাণ হয়ে পড়েছিল কণ্ঠাগত এবং তোমরা আল্লাহ সম্বন্ধে নানাবিধ ধারণা পোষণ করছিলে; তখন মুমিনগণ পরীক্ষিত হয়েছিল এবং তারা ভীষণভাবে প্রকম্পিত হয়েছিল।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ১০-১১], তখন এই দুর্বলতা ও সামরিক অবরোধের প্রতিষেধক ছিল আল্লাহর প্রতি ইখলাস (একনিষ্ঠতা) ও তাঁর প্রতি শক্তিশালী ঈমান। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَمَّا رَءَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٱلۡأَحۡزَابَ قَالُواْ هَٰذَا مَا وَعَدَنَا ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥ وَصَدَقَ ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥۚ وَمَا زَادَهُمۡ إِلَّآ إِيمَٰنٗا وَتَسۡلِيمٗا ٢٢﴾ [ سُورَةُ الأحزاب : 22]
“মুমিনগণ যখন সম্মিলিত বাহিনীকে দেখল, তখন তারা বলে উঠল, ‘এ তো দেখছি তা-ই, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যার প্রতিশ্রুতি আমাদেরকে দিয়েছিলেন এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সত্যই বলেছিলেন।’ আর তাতে তাদের ঈমান ও আনুগত্যই বৃদ্ধি পেল।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ২২]
এই ইখলাস তথা একনিষ্ঠতার ফলাফল আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিম্নোক্ত বক্তব্যের মাধ্যমে উল্লেখ করেছেন:
﴿وَرَدَّ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ بِغَيۡظِهِمۡ لَمۡ يَنَالُواْ خَيۡرٗاۚ وَكَفَى ٱللَّهُ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٱلۡقِتَالَۚ وَكَانَ ٱللَّهُ قَوِيًّا عَزِيزٗا ٢٥ وَأَنزَلَ ٱلَّذِينَ ظَٰهَرُوهُم مِّنۡ أَهۡلِ ٱلۡكِتَٰبِ مِن صَيَاصِيهِمۡ وَقَذَفَ فِي قُلُوبِهِمُ ٱلرُّعۡبَ فَرِيقٗا تَقۡتُلُونَ وَتَأۡسِرُونَ فَرِيقٗا ٢٦ وَأَوۡرَثَكُمۡ أَرۡضَهُمۡ وَدِيَٰرَهُمۡ وَأَمۡوَٰلَهُمۡ وَأَرۡضٗا لَّمۡ تَطَُٔوهَاۚ وَكَانَ ٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٗا ٢٧﴾ [ سُورَةُ الأحزاب : 25-27]
“আল্লাহ কাফিরদেরকে ক্রুদ্ধাবস্থায় ফিরিয়ে দিলেন, তারা কোনো কল্যাণ লাভ করে নি। যুদ্ধে মুমিনদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট; আল্লাহ সর্বশক্তিমান, প্রবল পরাক্রমশালী। আর কিতাবীদের মধ্যে যারা তাদেরকে সাহায্য করেছিল, তাদেরকে তিনি তাদের দুর্গ থেকে নামিয়ে দিলেন এবং তাদের অন্তরে ভীতি সঞ্চার করলেন: তোমরা তাদের কতককে হত্যা করছ এবং কতককে করছ বন্দী। আর তিনি তোমাদেরকে অধিকারী করলেন তাদের ভূমি, ঘরবাড়ি ও ধন-সম্পদের এবং এমন ভূমির যাতে তোমরা এখনও পদার্পন কর নি। আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ২৫-২৭] আল্লাহ তা‘আলা এ সাহায্য এমন এক বাহিনীর মাধ্যমে করেছেন, যা তাদের ধারণায় ছিল না: তা হচ্ছে ফিরিশতা ও বিক্ষুব্ধ বাতাস। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱذۡكُرُواْ نِعۡمَةَ ٱللَّهِ عَلَيۡكُمۡ إِذۡ جَآءَتۡكُمۡ جُنُودٞ فَأَرۡسَلۡنَا عَلَيۡهِمۡ رِيحٗا وَجُنُودٗا لَّمۡ تَرَوۡهَاۚ وَكَانَ ٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ بَصِيرًا ٩﴾ [ سُورَةُ الأحزاب : 9]
“হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর, যখন শত্রুবাহিনী তোমাদের বিরুদ্ধে সমাগত হয়েছিল এবং আমি তাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেছিলাম বিক্ষুব্ধ বাতাস এবং এক বাহিনী যা তোমরা দেখ নি। তোমরা যা কর, আল্লাহ তার সব কিছুই দেখেন।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৯]
আর এ জন্যই দীন ইসলামের বিশুদ্ধতার প্রমাণের অন্যতম এই যে, একে আঁকড়ে-ধরা সংখ্যালঘু দুর্বল দল সংখ্যাগরিষ্ঠ শক্তিশালী কাফির দলকে পরাজিত করে। আল-কুরআনের ভাষায়:
﴿كَم مِّن فِئَةٖ قَلِيلَةٍ غَلَبَتۡ فِئَةٗ كَثِيرَةَۢ بِإِذۡنِ ٱللَّهِۗ وَٱللَّهُ مَعَ ٱلصَّٰبِرِينَ ٢٤٩﴾ [ سُورَةُ البقرة : 249]
“আল্লাহর হুকুমে কত ক্ষুদ্র দল কত বৃহৎ দলকে পরাভূত করেছে! আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৪৯]
আর এ জন্য আল্লাহ তা‘আলা বদরের দিনকে নিদর্শন ( آية ), দলিল-প্রমাণ ( بينة ) ও সত্য-মিথ্যার মীমাংসাকারী ( فرقان ) হিসেবে নামকরণ করেছেন। কেননা তা দীন ইসলামের বিশুদ্ধতার প্রমাণ ও নিদর্শন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قَدۡ كَانَ لَكُمۡ ءَايَةٞ فِي فِئَتَيۡنِ ٱلۡتَقَتَاۖ فِئَةٞ تُقَٰتِلُ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ وَأُخۡرَىٰ كَافِرَةٞ﴾ [ سُورَةُ آل عمران : 13]
“দু’টি দলের পরস্পর সম্মুখীন হওয়ার মধ্যে তোমাদের জন্য অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে। একদল আল্লাহর পথে যুদ্ধ করছিল, অন্যদল কাফির ছিল।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩] এটি ছিল বদর দিবসের ঘটনা। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿إِن كُنتُمۡ ءَامَنتُم بِٱللَّهِ وَمَآ أَنزَلۡنَا عَلَىٰ عَبۡدِنَا يَوۡمَ ٱلۡفُرۡقَانِ يَوۡمَ ٱلۡتَقَى ٱلۡجَمۡعَانِۗ﴾ [ سُورَةُ الأنفال : 41]
“যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনো এবং ঈমান আনো তাতে, যা মীমাংসার দিন আমি আমার বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছিলাম, যেদিন দু’দল পরস্পরের সম্মুখীন হয়েছিল।” [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৪১] এটাও ছিল বদর দিবসের ঘটনা।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿لِّيَهۡلِكَ مَنۡ هَلَكَ عَنۢ بَيِّنَةٖ ﴾ [ سُورَةُ الأنفال : 42]
“যাতে যে ধ্বংস হবে, সে যেন সত্যাসত্য স্পষ্ট প্রকাশের পর ধ্বংস হয়।” [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৪২] কোনো কোনো তাফসীরকারের বিশ্লেষণ অনুযায়ী এটাও ছিল বদর দিবসের ঘটনা।
আর সন্দেহ নেই যে, একটি সংখ্যালঘু দুর্বল কিন্তু ঈমানদার দল কর্তৃক একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ শক্তিশালী কাফির দলকে পরাজিত করাটা ঐ দুর্বল দলটি যে হকের (সত্যের) ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং আল্লাহ তা‘আলা যে তার সাহায্যকারী, তার স্পষ্ট প্রমাণ। যেমন, তিনি বদর যুদ্ধের ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন,
﴿وَلَقَدۡ نَصَرَكُمُ ٱللَّهُ بِبَدۡرٖ وَأَنتُمۡ أَذِلَّةٞ﴾ [ سُورَةُ آل عمران : 123]
“আর বদরের যুদ্ধে যখন তোমরা হীনবল ছিলে আল্লাহ তো তোমাদেরকে সাহায্য করেছিলেন।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১২৩]
তিনি আরও বলেন,
﴿إِذۡ يُوحِي رَبُّكَ إِلَى ٱلۡمَلَٰٓئِكَةِ أَنِّي مَعَكُمۡ فَثَبِّتُواْ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْۚ سَأُلۡقِي فِي قُلُوبِ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ ٱلرُّعۡبَ﴾ الآية [ سُورَةُ الأنفال : 12]
“স্মরণ কর, তোমার রব ফিরিশতাগণের প্রতি প্রত্যাদেশ করেন, আমি তোমাদের সাথে আছি। সুতরাং মুমিনগণকে অবিচলিত রাখ। যারা কুফুরী করে, আমি তাদের হৃদয়ে ভীতির সঞ্চার করব...।” [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ১২]
আর আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদেরকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং তাদের গুণাবলী বর্ণনা করেছেন এবং এসব গুণাবলী দ্বারা তাদেরকে অন্যদের থেকে পৃথক করেছেন। তিনি বলেন,
﴿وَلَيَنصُرَنَّ ٱللَّهُ مَن يَنصُرُهُۥٓۚ إِنَّ ٱللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ ٤٠﴾ [ سُورَةُ الحج : 40]
“নিশ্চয় আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন, যে তাঁকে সাহায্য করে। আল্লাহ নিশ্চয় শক্তিমান, পরাক্রমশালী।” [সূরা আল-হাজ, আয়াত: ৪০] এরপরই তিনি তাদের গুণাবলী দ্বারা তাদেরকে অন্যদের থেকে পৃথক করেছেন:
﴿ٱلَّذِينَ إِن مَّكَّنَّٰهُمۡ فِي ٱلۡأَرۡضِ أَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُاْ ٱلزَّكَوٰةَ وَأَمَرُواْ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَنَهَوۡاْ عَنِ ٱلۡمُنكَرِۗ وَلِلَّهِ عَٰقِبَةُ ٱلۡأُمُورِ ٤١﴾ [ سُورَةُ الحج : 41]
“আমরা তাদেরকে যমীনের বুকে প্রতিষ্ঠিত করলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দিবে এবং সৎকাজের নির্দেশ দিবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে; আর সকল কর্মের পরিণাম আল্লাহর ইখতিয়ারে।” [সূরা আল-হাজ, আয়াত: ৪১]
আর আলোচ্য সামরিক অবরোধের এই প্রতিকারটিকে আল্লাহ তা‘আলা সূরা আল-মুনাফিকূনে অর্থনৈতিক অবরোধের প্রতিকার হিসেবেও ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেন,
﴿هُمُ ٱلَّذِينَ يَقُولُونَ لَا تُنفِقُواْ عَلَىٰ مَنۡ عِندَ رَسُولِ ٱللَّهِ حَتَّىٰ يَنفَضُّواْۗ﴾ [ سُورَةُ المنافقون : 7]
“তারাই বলে, তোমরা আল্লাহর রাসূলের সহচরদের জন্য ব্যয় করো না, যাতে তারা সরে পড়ে।” [সূরা আল-মুনাফিকুন, আয়াত: ৭]
যে কাজটি মুনাফিকগণ মুসলিমগণের সাথে করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল তা নিঃসন্দেহে ছিল অর্থনৈতিক অবরোধ। আল্লাহ তা‘আলা এই ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, এর প্রতিকার হলো তাঁর প্রতি মজবুত ঈমান এবং পরিপূর্ণভাবে তাঁর প্রতি মুখাপেক্ষী হওয়া। তিনি বলেন,
﴿وَلِلَّهِ خَزَآئِنُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَلَٰكِنَّ ٱلۡمُنَٰفِقِينَ لَا يَفۡقَهُونَ ٧﴾ [ سُورَةُ المنافقون : 7]
“আর আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর ধন-ভাণ্ডার তো আল্লাহরই, কিন্তু মুনাফিকগণ তা বুঝে না।” [সূরা আল-মুনাফিকুন, আয়াত: ৭] কারণ, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর ধন-ভাণ্ডার যার হাতে রয়েছে, তিনি তাঁর নিকট আশ্রয়প্রার্থী, তাঁর অনুগত বান্দাকে উপেক্ষা করবেন না। তিনি বলেন,
﴿وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مَخۡرَجٗا ٢ وَيَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَيۡثُ لَا يَحۡتَسِبُۚ وَمَن يَتَوَكَّلۡ عَلَى ٱللَّهِ فَهُوَ حَسۡبُهُ﴾ [ سُورَةُ الطلاق : 2-3]
“যে কেউ আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করবে, আল্লাহ তার (উত্তরণের) পথ করে দেবেন, আর তাকে তার ধারণাতীত উৎস থেকে রিযিক দান করবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর নির্ভর করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।” [সূরা আত-তালাক, আয়াত: ২-৩] আর তিনি এই ব্যাপারটি আরও স্পষ্ট করে বলেন,
﴿وَإِنۡ خِفۡتُمۡ عَيۡلَةٗ فَسَوۡفَ يُغۡنِيكُمُ ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِۦٓ إِن شَآءَ﴾ [ التوبة : ٢٨ ]
“যদি তোমরা দারিদ্র্যের আশঙ্কা কর, তবে আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাঁর নিজ করুণায় তোমাদেরকে অভাবমুক্ত করবেন।” [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ২৮]
﴿لَّقَدۡ رَضِيَ ٱللَّهُ عَنِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ إِذۡ يُبَايِعُونَكَ تَحۡتَ ٱلشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِي قُلُوبِهِمۡ﴾ [ سُورَةُ الفتح : 18]
“আল্লাহ তো মুমিনগনের ওপর সন্তুষ্ট হলেন যখন তারা বৃক্ষতলে তোমার নিকট বাই‘আত গ্রহণ করল, তাদের অন্তরে যা ছিল তা তিনি অবগত ছিলেন।” [সূরা আল-ফাতহ, আয়াত: ১৮], তখন তিনি পরিষ্কার করেন যে, এই ইখলাস তথা একনিষ্ঠতার ফলে তিনি তাদেরকে এমন বিষয়ের ওপর ক্ষমতাবান করলেন, যে ব্যাপারে তাদের শক্তি ও সামর্থ্য ছিল না। তিনি বলেন,
﴿وَأُخۡرَىٰ لَمۡ تَقۡدِرُواْ عَلَيۡهَا قَدۡ أَحَاطَ ٱللَّهُ بِهَا﴾ [ سُورَةُ الفتح : 21]
“এবং আরও রয়েছে, যা এখনও তোমাদের অধিকারে আসে নি, তা তো আল্লাহ বেষ্টন করে রেখেছেন।” [সূরা আল-ফাতহ, আয়াত: ২১] এখানে তিনি পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন যে, তা তাদের অধিকারে ছিল না; তিনিই তা বেষ্টন করে রেখেছিলেন, অতঃপর তিনি তাদের ইখলাস তথা একনিষ্ঠতার বিষয়টি জানার কারণে তিনি তাদেরকে এর ওপর ক্ষমতাবান করেছেন এবং তাদের জন্য তা গনীমত হিসেবে দান করেছেন।
আর এই জন্য যখন কাফিরগণ আহযাবের যুদ্ধ তথা বহুজাতিক বাহিনীর যুদ্ধের সময় মুসলিম সম্প্রদায়কে বড় ধরনের সামরিক অবরোধ করে, যা আল্লাহ তা‘আলার নিম্নোক্ত বাণীর মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে:
﴿إِذۡ جَآءُوكُم مِّن فَوۡقِكُمۡ وَمِنۡ أَسۡفَلَ مِنكُمۡ وَإِذۡ زَاغَتِ ٱلۡأَبۡصَٰرُ وَبَلَغَتِ ٱلۡقُلُوبُ ٱلۡحَنَاجِرَ وَتَظُنُّونَ بِٱللَّهِ ٱلظُّنُونَا۠ ١٠ هُنَالِكَ ٱبۡتُلِيَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ وَزُلۡزِلُواْ زِلۡزَالٗا شَدِيدٗا ١١ ﴾ [ سُورَةُ الأحزاب : 10-11]
“যখন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সমাগত হয়েছিল তোমাদের উপরের দিক ও নিচের দিক থেকে, আর যখন তোমাদের চক্ষু বিস্ফোরিত হয়েছিল, তোমাদের প্রাণ হয়ে পড়েছিল কণ্ঠাগত এবং তোমরা আল্লাহ সম্বন্ধে নানাবিধ ধারণা পোষণ করছিলে; তখন মুমিনগণ পরীক্ষিত হয়েছিল এবং তারা ভীষণভাবে প্রকম্পিত হয়েছিল।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ১০-১১], তখন এই দুর্বলতা ও সামরিক অবরোধের প্রতিষেধক ছিল আল্লাহর প্রতি ইখলাস (একনিষ্ঠতা) ও তাঁর প্রতি শক্তিশালী ঈমান। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَمَّا رَءَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٱلۡأَحۡزَابَ قَالُواْ هَٰذَا مَا وَعَدَنَا ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥ وَصَدَقَ ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥۚ وَمَا زَادَهُمۡ إِلَّآ إِيمَٰنٗا وَتَسۡلِيمٗا ٢٢﴾ [ سُورَةُ الأحزاب : 22]
“মুমিনগণ যখন সম্মিলিত বাহিনীকে দেখল, তখন তারা বলে উঠল, ‘এ তো দেখছি তা-ই, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যার প্রতিশ্রুতি আমাদেরকে দিয়েছিলেন এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সত্যই বলেছিলেন।’ আর তাতে তাদের ঈমান ও আনুগত্যই বৃদ্ধি পেল।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ২২]
এই ইখলাস তথা একনিষ্ঠতার ফলাফল আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিম্নোক্ত বক্তব্যের মাধ্যমে উল্লেখ করেছেন:
﴿وَرَدَّ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ بِغَيۡظِهِمۡ لَمۡ يَنَالُواْ خَيۡرٗاۚ وَكَفَى ٱللَّهُ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٱلۡقِتَالَۚ وَكَانَ ٱللَّهُ قَوِيًّا عَزِيزٗا ٢٥ وَأَنزَلَ ٱلَّذِينَ ظَٰهَرُوهُم مِّنۡ أَهۡلِ ٱلۡكِتَٰبِ مِن صَيَاصِيهِمۡ وَقَذَفَ فِي قُلُوبِهِمُ ٱلرُّعۡبَ فَرِيقٗا تَقۡتُلُونَ وَتَأۡسِرُونَ فَرِيقٗا ٢٦ وَأَوۡرَثَكُمۡ أَرۡضَهُمۡ وَدِيَٰرَهُمۡ وَأَمۡوَٰلَهُمۡ وَأَرۡضٗا لَّمۡ تَطَُٔوهَاۚ وَكَانَ ٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٗا ٢٧﴾ [ سُورَةُ الأحزاب : 25-27]
“আল্লাহ কাফিরদেরকে ক্রুদ্ধাবস্থায় ফিরিয়ে দিলেন, তারা কোনো কল্যাণ লাভ করে নি। যুদ্ধে মুমিনদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট; আল্লাহ সর্বশক্তিমান, প্রবল পরাক্রমশালী। আর কিতাবীদের মধ্যে যারা তাদেরকে সাহায্য করেছিল, তাদেরকে তিনি তাদের দুর্গ থেকে নামিয়ে দিলেন এবং তাদের অন্তরে ভীতি সঞ্চার করলেন: তোমরা তাদের কতককে হত্যা করছ এবং কতককে করছ বন্দী। আর তিনি তোমাদেরকে অধিকারী করলেন তাদের ভূমি, ঘরবাড়ি ও ধন-সম্পদের এবং এমন ভূমির যাতে তোমরা এখনও পদার্পন কর নি। আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ২৫-২৭] আল্লাহ তা‘আলা এ সাহায্য এমন এক বাহিনীর মাধ্যমে করেছেন, যা তাদের ধারণায় ছিল না: তা হচ্ছে ফিরিশতা ও বিক্ষুব্ধ বাতাস। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱذۡكُرُواْ نِعۡمَةَ ٱللَّهِ عَلَيۡكُمۡ إِذۡ جَآءَتۡكُمۡ جُنُودٞ فَأَرۡسَلۡنَا عَلَيۡهِمۡ رِيحٗا وَجُنُودٗا لَّمۡ تَرَوۡهَاۚ وَكَانَ ٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ بَصِيرًا ٩﴾ [ سُورَةُ الأحزاب : 9]
“হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর, যখন শত্রুবাহিনী তোমাদের বিরুদ্ধে সমাগত হয়েছিল এবং আমি তাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেছিলাম বিক্ষুব্ধ বাতাস এবং এক বাহিনী যা তোমরা দেখ নি। তোমরা যা কর, আল্লাহ তার সব কিছুই দেখেন।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৯]
আর এ জন্যই দীন ইসলামের বিশুদ্ধতার প্রমাণের অন্যতম এই যে, একে আঁকড়ে-ধরা সংখ্যালঘু দুর্বল দল সংখ্যাগরিষ্ঠ শক্তিশালী কাফির দলকে পরাজিত করে। আল-কুরআনের ভাষায়:
﴿كَم مِّن فِئَةٖ قَلِيلَةٍ غَلَبَتۡ فِئَةٗ كَثِيرَةَۢ بِإِذۡنِ ٱللَّهِۗ وَٱللَّهُ مَعَ ٱلصَّٰبِرِينَ ٢٤٩﴾ [ سُورَةُ البقرة : 249]
“আল্লাহর হুকুমে কত ক্ষুদ্র দল কত বৃহৎ দলকে পরাভূত করেছে! আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৪৯]
আর এ জন্য আল্লাহ তা‘আলা বদরের দিনকে নিদর্শন ( آية ), দলিল-প্রমাণ ( بينة ) ও সত্য-মিথ্যার মীমাংসাকারী ( فرقان ) হিসেবে নামকরণ করেছেন। কেননা তা দীন ইসলামের বিশুদ্ধতার প্রমাণ ও নিদর্শন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قَدۡ كَانَ لَكُمۡ ءَايَةٞ فِي فِئَتَيۡنِ ٱلۡتَقَتَاۖ فِئَةٞ تُقَٰتِلُ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ وَأُخۡرَىٰ كَافِرَةٞ﴾ [ سُورَةُ آل عمران : 13]
“দু’টি দলের পরস্পর সম্মুখীন হওয়ার মধ্যে তোমাদের জন্য অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে। একদল আল্লাহর পথে যুদ্ধ করছিল, অন্যদল কাফির ছিল।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩] এটি ছিল বদর দিবসের ঘটনা। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿إِن كُنتُمۡ ءَامَنتُم بِٱللَّهِ وَمَآ أَنزَلۡنَا عَلَىٰ عَبۡدِنَا يَوۡمَ ٱلۡفُرۡقَانِ يَوۡمَ ٱلۡتَقَى ٱلۡجَمۡعَانِۗ﴾ [ سُورَةُ الأنفال : 41]
“যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনো এবং ঈমান আনো তাতে, যা মীমাংসার দিন আমি আমার বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছিলাম, যেদিন দু’দল পরস্পরের সম্মুখীন হয়েছিল।” [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৪১] এটাও ছিল বদর দিবসের ঘটনা।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿لِّيَهۡلِكَ مَنۡ هَلَكَ عَنۢ بَيِّنَةٖ ﴾ [ سُورَةُ الأنفال : 42]
“যাতে যে ধ্বংস হবে, সে যেন সত্যাসত্য স্পষ্ট প্রকাশের পর ধ্বংস হয়।” [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৪২] কোনো কোনো তাফসীরকারের বিশ্লেষণ অনুযায়ী এটাও ছিল বদর দিবসের ঘটনা।
আর সন্দেহ নেই যে, একটি সংখ্যালঘু দুর্বল কিন্তু ঈমানদার দল কর্তৃক একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ শক্তিশালী কাফির দলকে পরাজিত করাটা ঐ দুর্বল দলটি যে হকের (সত্যের) ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং আল্লাহ তা‘আলা যে তার সাহায্যকারী, তার স্পষ্ট প্রমাণ। যেমন, তিনি বদর যুদ্ধের ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন,
﴿وَلَقَدۡ نَصَرَكُمُ ٱللَّهُ بِبَدۡرٖ وَأَنتُمۡ أَذِلَّةٞ﴾ [ سُورَةُ آل عمران : 123]
“আর বদরের যুদ্ধে যখন তোমরা হীনবল ছিলে আল্লাহ তো তোমাদেরকে সাহায্য করেছিলেন।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১২৩]
তিনি আরও বলেন,
﴿إِذۡ يُوحِي رَبُّكَ إِلَى ٱلۡمَلَٰٓئِكَةِ أَنِّي مَعَكُمۡ فَثَبِّتُواْ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْۚ سَأُلۡقِي فِي قُلُوبِ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ ٱلرُّعۡبَ﴾ الآية [ سُورَةُ الأنفال : 12]
“স্মরণ কর, তোমার রব ফিরিশতাগণের প্রতি প্রত্যাদেশ করেন, আমি তোমাদের সাথে আছি। সুতরাং মুমিনগণকে অবিচলিত রাখ। যারা কুফুরী করে, আমি তাদের হৃদয়ে ভীতির সঞ্চার করব...।” [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ১২]
আর আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদেরকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং তাদের গুণাবলী বর্ণনা করেছেন এবং এসব গুণাবলী দ্বারা তাদেরকে অন্যদের থেকে পৃথক করেছেন। তিনি বলেন,
﴿وَلَيَنصُرَنَّ ٱللَّهُ مَن يَنصُرُهُۥٓۚ إِنَّ ٱللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ ٤٠﴾ [ سُورَةُ الحج : 40]
“নিশ্চয় আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন, যে তাঁকে সাহায্য করে। আল্লাহ নিশ্চয় শক্তিমান, পরাক্রমশালী।” [সূরা আল-হাজ, আয়াত: ৪০] এরপরই তিনি তাদের গুণাবলী দ্বারা তাদেরকে অন্যদের থেকে পৃথক করেছেন:
﴿ٱلَّذِينَ إِن مَّكَّنَّٰهُمۡ فِي ٱلۡأَرۡضِ أَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُاْ ٱلزَّكَوٰةَ وَأَمَرُواْ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَنَهَوۡاْ عَنِ ٱلۡمُنكَرِۗ وَلِلَّهِ عَٰقِبَةُ ٱلۡأُمُورِ ٤١﴾ [ سُورَةُ الحج : 41]
“আমরা তাদেরকে যমীনের বুকে প্রতিষ্ঠিত করলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দিবে এবং সৎকাজের নির্দেশ দিবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে; আর সকল কর্মের পরিণাম আল্লাহর ইখতিয়ারে।” [সূরা আল-হাজ, আয়াত: ৪১]
আর আলোচ্য সামরিক অবরোধের এই প্রতিকারটিকে আল্লাহ তা‘আলা সূরা আল-মুনাফিকূনে অর্থনৈতিক অবরোধের প্রতিকার হিসেবেও ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেন,
﴿هُمُ ٱلَّذِينَ يَقُولُونَ لَا تُنفِقُواْ عَلَىٰ مَنۡ عِندَ رَسُولِ ٱللَّهِ حَتَّىٰ يَنفَضُّواْۗ﴾ [ سُورَةُ المنافقون : 7]
“তারাই বলে, তোমরা আল্লাহর রাসূলের সহচরদের জন্য ব্যয় করো না, যাতে তারা সরে পড়ে।” [সূরা আল-মুনাফিকুন, আয়াত: ৭]
যে কাজটি মুনাফিকগণ মুসলিমগণের সাথে করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল তা নিঃসন্দেহে ছিল অর্থনৈতিক অবরোধ। আল্লাহ তা‘আলা এই ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, এর প্রতিকার হলো তাঁর প্রতি মজবুত ঈমান এবং পরিপূর্ণভাবে তাঁর প্রতি মুখাপেক্ষী হওয়া। তিনি বলেন,
﴿وَلِلَّهِ خَزَآئِنُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَلَٰكِنَّ ٱلۡمُنَٰفِقِينَ لَا يَفۡقَهُونَ ٧﴾ [ سُورَةُ المنافقون : 7]
“আর আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর ধন-ভাণ্ডার তো আল্লাহরই, কিন্তু মুনাফিকগণ তা বুঝে না।” [সূরা আল-মুনাফিকুন, আয়াত: ৭] কারণ, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর ধন-ভাণ্ডার যার হাতে রয়েছে, তিনি তাঁর নিকট আশ্রয়প্রার্থী, তাঁর অনুগত বান্দাকে উপেক্ষা করবেন না। তিনি বলেন,
﴿وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مَخۡرَجٗا ٢ وَيَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَيۡثُ لَا يَحۡتَسِبُۚ وَمَن يَتَوَكَّلۡ عَلَى ٱللَّهِ فَهُوَ حَسۡبُهُ﴾ [ سُورَةُ الطلاق : 2-3]
“যে কেউ আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করবে, আল্লাহ তার (উত্তরণের) পথ করে দেবেন, আর তাকে তার ধারণাতীত উৎস থেকে রিযিক দান করবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর নির্ভর করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।” [সূরা আত-তালাক, আয়াত: ২-৩] আর তিনি এই ব্যাপারটি আরও স্পষ্ট করে বলেন,
﴿وَإِنۡ خِفۡتُمۡ عَيۡلَةٗ فَسَوۡفَ يُغۡنِيكُمُ ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِۦٓ إِن شَآءَ﴾ [ التوبة : ٢٨ ]
“যদি তোমরা দারিদ্র্যের আশঙ্কা কর, তবে আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাঁর নিজ করুণায় তোমাদেরকে অভাবমুক্ত করবেন।” [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ২৮]
আল্লাহ তা‘আলা সূরা হাশরের মধ্যে জ্ঞান-বুদ্ধির অভাবকে এই সমস্যার কারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন,
﴿تَحۡسَبُهُمۡ جَمِيعٗا وَقُلُوبُهُمۡ شَتَّىٰ﴾
“তুমি মনে কর তারা ঐক্যবদ্ধ, কিন্তু তাদের মনের মিল নেই।” এরপরই আয়াতের বাকি অংশে মনের গরমিলের কারণ বর্ণনা করে বলেন,
﴿ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمۡ قَوۡمٞ لَّا يَعۡقِلُونَ ١٤ ﴾ [ سُورَةُ الحشر : 14]
“এটা এই জন্য যে, তারা এক নির্বোধ সম্প্রদায়।” [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ১৪]
আর এই জ্ঞান ও বুদ্ধিগত দুর্বলতাজনিত রোগের ঔষধ হলো ওহীর আলোর অনুসরণ করার মাধ্যমে নিজেকে আলোকিত করা। কারণ, ওহী এমন সব কল্যাণের পথ দেখায়, যা শুধুমাত্র জ্ঞান-বুদ্ধির মাধ্যমে অর্জন সম্ভব না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿أَوَ مَن كَانَ مَيۡتٗا فَأَحۡيَيۡنَٰهُ وَجَعَلۡنَا لَهُۥ نُورٗا يَمۡشِي بِهِۦ فِي ٱلنَّاسِ كَمَن مَّثَلُهُۥ فِي ٱلظُّلُمَٰتِ لَيۡسَ بِخَارِجٖ مِّنۡهَا﴾ [ سُورَةُ الأنعام : 122]
“যে ব্যক্তি মৃত ছিল, যাকে আমরা পরে জীবিত করেছি এবং যাকে মানুষের মধ্যে চলার জন্য আলোক দিয়েছি, সে ব্যক্তি কি ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে অন্ধকারে রয়েছে এবং সেই স্থান থেকে বের হওয়ার নয়?” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১২২]
তিনি এই আয়াতের মধ্যে বর্ণনা করেন যে, যে ব্যক্তি মৃত ছিল, ঈমানের নূর তাকে জীবিত করে তোলে এবং তার চলার পথকে আলোকিত করে।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿ٱللَّهُ وَلِيُّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ يُخۡرِجُهُم مِّنَ ٱلظُّلُمَٰتِ إِلَى ٱلنُّورِ﴾ [ سُورَةُ البقرة : 257]
“যারা ঈমান আনে আল্লাহ তাদের অভিভাবক, তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে নিয়ে যান।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৫৭]
তিনি আরও বলেন,
﴿أَفَمَن يَمۡشِي مُكِبًّا عَلَىٰ وَجۡهِهِۦٓ أَهۡدَىٰٓ أَمَّن يَمۡشِي سَوِيًّا عَلَىٰ صِرَٰطٖ مُّسۡتَقِيمٖ ٢٢﴾ [ سُورَةُ الملك : 22]
“যে ব্যক্তি ঝুঁকে মুখে ভর দিয়ে চলে, সে-ই কি ঠিক পথে চলে, না কি সেই ব্যক্তি যে ঋজু হয়ে সরল পথে চলে?” [সূরা আল-মুলকর: ২২] এই প্রসঙ্গে এগুলো ছাড়াও আরও অনেক আয়াত রয়েছে।
মোটকথা: মানবতার কল্যাণে প্রণীত দুনিয়ার নিয়মনীতি তিন শ্রেণিতে বিভক্ত:
১. প্রথম প্রকার: বিপর্যয় সৃষ্টিকারী বস্তু বিতাড়িত করা: এটা উসূলবিদদের নিকট ‘জরুরি আবশ্যকীয় বিষয়’ হিসেবে পরিচিত। এর মূলকথা হলো, পূর্বে আলোচিত ছয়টি বিষয় অর্থাৎ দীন, জীবন, বিবেক-বুদ্ধি, বংশ, মান-সম্মান ও ধন-সম্পদ থেকে ক্ষতিকারক সব কিছু দূরীভূত করা।
২. দ্বিতীয় প্রকার: কল্যাণকর বস্তু আমদানি করা: এটা উসূলবিদদের নিকট ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় বিষয়’ হিসেবে পরিচিত। আর এর শাখা-প্রশাখার মধ্যে কিছু দিক হলো: ক্রয়-বিক্রয়, ইজারা এবং শরী‘আতের ভিত্তিতে পরিচালিত সমাজের সদস্যদের মধ্যে সংঘটিত সকল প্রকার পারস্পরিক লেনদেন ও বিনিময়।
৩. তৃতীয় প্রকার: উত্তম চরিত্র ও সুন্দর স্বভাব দ্বারা সুসজ্জিত হওয়া: এটা উসূলবিদদের নিকট ‘সৌন্দর্য বিধানকারী ও পরিপূর্ণতা দানকারী গুণাবলি’ হিসেবে পরিচিত। এর শাখা-প্রশাখার কিছু দিক হলো: স্বভাগত বৈশিষ্টসমূহ যেমন, দাড়ি রাখা, গোঁফ খাট করা.. ইত্যাদি।
এর শাখা-প্রশাখার আরও কিছু দিক হলো: সকল প্রকার নোংরা বস্তুকে নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং নিকটাত্মীয় অভাবীদের মধ্যে দানকে আবশ্যক করা।
আর এই ধরনের সকল কল্যাণকর বিষয়সমূহ সর্বোত্তমভাবে সঠিক ও প্রজ্ঞাসম্মত পদ্ধতিতে সুসম্পন্ন ও সুসংরক্ষিত করা কেবল দীন ইসলামের মাধ্যমেই সম্ভব। আল-কুরআনের বাণী:
﴿الٓرۚ كِتَٰبٌ أُحۡكِمَتۡ ءَايَٰتُهُۥ ثُمَّ فُصِّلَتۡ مِن لَّدُنۡ حَكِيمٍ خَبِيرٍ ١﴾ [ سُورَةُ هود : 1]
“আলিফ-লাম-রা, এই কিতাব, যার আয়াতসমূহ সুস্পষ্ট, সুবিন্যস্ত ও পরে বিশদভাবে বিবৃত প্রজ্ঞাময়, সবিশেষ অবহিত সত্তার নিকট থেকে।” [সূরা হুদ, আয়াত: ১]
و صلى الله على محمد و على آله و صحبه أجمعين .
﴿تَحۡسَبُهُمۡ جَمِيعٗا وَقُلُوبُهُمۡ شَتَّىٰ﴾
“তুমি মনে কর তারা ঐক্যবদ্ধ, কিন্তু তাদের মনের মিল নেই।” এরপরই আয়াতের বাকি অংশে মনের গরমিলের কারণ বর্ণনা করে বলেন,
﴿ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمۡ قَوۡمٞ لَّا يَعۡقِلُونَ ١٤ ﴾ [ سُورَةُ الحشر : 14]
“এটা এই জন্য যে, তারা এক নির্বোধ সম্প্রদায়।” [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ১৪]
আর এই জ্ঞান ও বুদ্ধিগত দুর্বলতাজনিত রোগের ঔষধ হলো ওহীর আলোর অনুসরণ করার মাধ্যমে নিজেকে আলোকিত করা। কারণ, ওহী এমন সব কল্যাণের পথ দেখায়, যা শুধুমাত্র জ্ঞান-বুদ্ধির মাধ্যমে অর্জন সম্ভব না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿أَوَ مَن كَانَ مَيۡتٗا فَأَحۡيَيۡنَٰهُ وَجَعَلۡنَا لَهُۥ نُورٗا يَمۡشِي بِهِۦ فِي ٱلنَّاسِ كَمَن مَّثَلُهُۥ فِي ٱلظُّلُمَٰتِ لَيۡسَ بِخَارِجٖ مِّنۡهَا﴾ [ سُورَةُ الأنعام : 122]
“যে ব্যক্তি মৃত ছিল, যাকে আমরা পরে জীবিত করেছি এবং যাকে মানুষের মধ্যে চলার জন্য আলোক দিয়েছি, সে ব্যক্তি কি ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে অন্ধকারে রয়েছে এবং সেই স্থান থেকে বের হওয়ার নয়?” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১২২]
তিনি এই আয়াতের মধ্যে বর্ণনা করেন যে, যে ব্যক্তি মৃত ছিল, ঈমানের নূর তাকে জীবিত করে তোলে এবং তার চলার পথকে আলোকিত করে।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿ٱللَّهُ وَلِيُّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ يُخۡرِجُهُم مِّنَ ٱلظُّلُمَٰتِ إِلَى ٱلنُّورِ﴾ [ سُورَةُ البقرة : 257]
“যারা ঈমান আনে আল্লাহ তাদের অভিভাবক, তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে নিয়ে যান।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৫৭]
তিনি আরও বলেন,
﴿أَفَمَن يَمۡشِي مُكِبًّا عَلَىٰ وَجۡهِهِۦٓ أَهۡدَىٰٓ أَمَّن يَمۡشِي سَوِيًّا عَلَىٰ صِرَٰطٖ مُّسۡتَقِيمٖ ٢٢﴾ [ سُورَةُ الملك : 22]
“যে ব্যক্তি ঝুঁকে মুখে ভর দিয়ে চলে, সে-ই কি ঠিক পথে চলে, না কি সেই ব্যক্তি যে ঋজু হয়ে সরল পথে চলে?” [সূরা আল-মুলকর: ২২] এই প্রসঙ্গে এগুলো ছাড়াও আরও অনেক আয়াত রয়েছে।
মোটকথা: মানবতার কল্যাণে প্রণীত দুনিয়ার নিয়মনীতি তিন শ্রেণিতে বিভক্ত:
১. প্রথম প্রকার: বিপর্যয় সৃষ্টিকারী বস্তু বিতাড়িত করা: এটা উসূলবিদদের নিকট ‘জরুরি আবশ্যকীয় বিষয়’ হিসেবে পরিচিত। এর মূলকথা হলো, পূর্বে আলোচিত ছয়টি বিষয় অর্থাৎ দীন, জীবন, বিবেক-বুদ্ধি, বংশ, মান-সম্মান ও ধন-সম্পদ থেকে ক্ষতিকারক সব কিছু দূরীভূত করা।
২. দ্বিতীয় প্রকার: কল্যাণকর বস্তু আমদানি করা: এটা উসূলবিদদের নিকট ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় বিষয়’ হিসেবে পরিচিত। আর এর শাখা-প্রশাখার মধ্যে কিছু দিক হলো: ক্রয়-বিক্রয়, ইজারা এবং শরী‘আতের ভিত্তিতে পরিচালিত সমাজের সদস্যদের মধ্যে সংঘটিত সকল প্রকার পারস্পরিক লেনদেন ও বিনিময়।
৩. তৃতীয় প্রকার: উত্তম চরিত্র ও সুন্দর স্বভাব দ্বারা সুসজ্জিত হওয়া: এটা উসূলবিদদের নিকট ‘সৌন্দর্য বিধানকারী ও পরিপূর্ণতা দানকারী গুণাবলি’ হিসেবে পরিচিত। এর শাখা-প্রশাখার কিছু দিক হলো: স্বভাগত বৈশিষ্টসমূহ যেমন, দাড়ি রাখা, গোঁফ খাট করা.. ইত্যাদি।
এর শাখা-প্রশাখার আরও কিছু দিক হলো: সকল প্রকার নোংরা বস্তুকে নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং নিকটাত্মীয় অভাবীদের মধ্যে দানকে আবশ্যক করা।
আর এই ধরনের সকল কল্যাণকর বিষয়সমূহ সর্বোত্তমভাবে সঠিক ও প্রজ্ঞাসম্মত পদ্ধতিতে সুসম্পন্ন ও সুসংরক্ষিত করা কেবল দীন ইসলামের মাধ্যমেই সম্ভব। আল-কুরআনের বাণী:
﴿الٓرۚ كِتَٰبٌ أُحۡكِمَتۡ ءَايَٰتُهُۥ ثُمَّ فُصِّلَتۡ مِن لَّدُنۡ حَكِيمٍ خَبِيرٍ ١﴾ [ سُورَةُ هود : 1]
“আলিফ-লাম-রা, এই কিতাব, যার আয়াতসমূহ সুস্পষ্ট, সুবিন্যস্ত ও পরে বিশদভাবে বিবৃত প্রজ্ঞাময়, সবিশেষ অবহিত সত্তার নিকট থেকে।” [সূরা হুদ, আয়াত: ১]
و صلى الله على محمد و على آله و صحبه أجمعين .
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন