HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

মদীনাতুন্নবীর যিয়ারত

লেখকঃ আখতারুজ্জামান

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
মদীনাতুন্নবীর যিয়ারত

আখতারুজ্জামান

সম্পাদনা :

আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান

মদীনাতুন্নবীর যিয়ারত
মদীনাতুন্নবী : ঐ সকল পূণ্য ভূমি হতে যাকে আল্লাহ তাআলা মহিমান্বিত করেছেন এবং তার দর্শন ও সেখানে সালাত আদায়ের জন্য বাড়তি সওয়াবের ব্যবস্থা করেছেন। মসজিদে নববীর ফযিলত হল- সেটি ঐ তিন মসজিদের দ্বিতীয়তম, যেখানে সালাত পড়া ও ইবাদতের জন্য সফর করা যায়। আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত নবী (ﷺ) এরশাদ করেন:

«لا تشد الرحال إلا إلى ثلثة مساجد المسجد الحرام، ومسجدي هذا، والمسجد الأقصى»

একমাত্র তিনটি মসজিদের উদ্দেশ্যে সফর করা যায়। মসজিদে হারাম, আমার এই মসজিদ, এবং মসজিদে আকসা। [বুখারী-১৮৯, মুসলিম-৩৩৮৪] এই জন্যে আল্লাহ তাআলা সেখানে সালাত আদায়ের সওয়াবকে বহুগুণে বৃদ্ধি করেছেন। আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের (রাঃ) বলেন :

«صلاة في مسجدي خير من ألف صلاة فيما سواه إلا المسجد الحرام، وصلاة في المسجد الحرام أفضل من مائة صلاة في هذا»

আমার মসজিদের এ ওয়াক্ত সালাত মসজিদে হারাম ব্যাতিত অন্য মসিজদে এক হাজার সালাত হতে উত্তম, এবং মসজিদে হারামে এক ওয়াক্ত সালাত এই মসজিদে একশ সালাত হতে উত্তম। [আহমদ : ১৫৬৮৫]

মসজিদে নববীর যিয়ারতের সাথে হজের বিধানের কোন সম্পর্ক নেই। তবে উলামাগণ হজের বিধান আলোচনার পর এ বিষয় এই জন্যে উল্লেখ করেন। যেহেতু হাজীদের দ্বিতীয় বার হজ করা সম্ভব নাও হতে পারে। এই জন্যই হজের পূর্বে বা পরে মসজিদে নববীর দর্শনে আগ্রহী হয় সুযোগ নিকট হওয়ার কারণে।

কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা যাবে কি?
পূর্ববর্তী আলেমগণের কিতাবে রাসূল (ﷺ) এর কবর যিয়ারত উদ্দেশ্যে সফর বৈধতা সম্পর্কে কোনো বিষয় পাওয়া যায় না বরং ইহা এমন আলোচনা যার উৎস কৃত্রিম ভালবাসা, হটকারিতা ও শরীয়তের সীমালঙ্ঘন। এটা এমন কোনো বিষয় নয় যার স্বতন্ত্র আলোচনার প্রয়োজন আছে। এ সম্পর্কে পরবর্তী আলেমগণ কিছু আলোচনা করেছেন। তবে আমাদের জন্য তাই যথেষ্ট যার উপর এই উম্মতের পূর্বসূরীগণ ও ইমামগণ আছেন।

উল্লেখ্য মদীনাতুন্নবীতে যে যাবে সে একমাত্র মসজিদের উদ্দেশ্যে যাবে। যেহেতু মসজিদের উদ্দেশ্যে সফর করার বৈধতা আছে। চাই সেখানে কবর থাকুক বা না থাকুক। অতঃপর সে কবরের নিকটে আসবে এবং শরীয়ত অনুযায়ী যিয়ারত করবে। যেমন ইসলামী শহরগুলিতে সাধারণ মুসলিমদের কবর যিয়ারত করা হয়, উপদেশ গ্রহণ ও কবরবাসীর জন্য দো‘আর উদ্দেশ্যে। যে শরীয়াতের বর্ণনা নিয়ে গবেষণা করবে সে অবগত হবে যে, মসজিদে নববীর দর্শন ও সেখানে সালাত আদায় হচ্ছে অনুমোদিত এবং যে এর বিপরীত দাবী করবে সে প্রমান উপস্থাপন করবে। তর্কের খাতিরে যদি মেনেও নেওয়া হয় যে, রাসূল (ﷺ) এর কবর দর্শনের উদ্দেশ্যে সফর মুস্তাহাব বা ওয়াজিব। তাহলে প্রমাণ কোথায়? সাহাবায়ে কেরাম বা তাবে‘ঈগণ কি এমনটা করেছেন? এ জন্যেই ইমাম মালেক (র.) এই ধরনের কথা বলাকে অপছন্দ করেছেন মুওয়াত্তা কিতাবে উল্লেখ করেছেন। রাসূল (ﷺ) বলেন :

«اللهم لا تجعل قبري وثنا يعبد، إشتد غضب الله على قوم اتخذوا قبورأنبيائهم مساجد»

হে আল্লাহ! আপনি আমার কবরকে মূর্তি তুল্য করবেন না যার উপাসনা করা হয়। আল্লাহ ঐ জাতির উপর কঠোর রাগান্বিত হয়েছেন যারা স্বীয় নবীদের কবরকে মসজিদ বানিয়েছে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক : ১/১৭২]

অতএব, প্রত্যেক মুসলিমের শরীয়ত অনুযায়ী চলা কর্তব্য এবং রাসূল (ﷺ) এর অনুসরণে সচেষ্ট থাকা, তার সুন্নাত কে গোপনে ও প্রকাশ্যে মজবুতভাবে আকড়ে ধরা, তাকে ভালবাসা ও সম্মান করা এবং যারা তাকে ভালবাসে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখার আর শত্রুতা পোষনকারীদের সঙ্গে শত্রুতা রাখা কর্তব্য। জানা উচিত, তার অনুসরণ ব্যতীত আল্লাহ তাআলা পর্যন্ত পৌছা সম্ভব নয়, অধিকাংশ ইমাম প্রমাণ করেছেন যে, রাসূল (ﷺ) এর কবর যিয়ারতের ফযিলত সম্পর্কিত হাদীসসমূহ ভিত্তিহীন। যা দ্বারা প্রমাণ উপস্থান করা উপযুক্ত নয় এবং উল্লেখযোগ্য কোনো গ্রন্থকার তা বর্ণনাও করেন নি।

মসজিদে প্রবেশের নীতিমালা :
সুন্নাত হল ডান পা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করবে এবং বলবে যেমন অন্যান্য মসজিদে প্রবেশের সময় বলা হয়ত

«بسم الله والصلاة والسلام على رسول الله، اللهم اغفرلي ذنوبي وافتح لي ابواب رحمتك» [ইবনে মাযাহ : ৭৭১]

আরো বলবে :

«أعوذبالله العظيم وبوجهه الكريم وسلطانه القديم من الشيطان الرجيم» [আবু দাউদ : ৪৬৬]

অতঃপর তাহিয়্যাতুল মসজিদ হিসাবে দুই রাকাত সালাত পড়বে। আবু কাতাদাহ আসসুলামী হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেন :

«إذا دخل أحدكم المسجد فلا يجلس حتى يصلى ركعتين»

“যখন কেউ মসজিদে প্রবেশ করবে, তখন দুই রাকাত সালাত আদায়ের পর বসবে।” [বুখারী ৪৪৪, মুসলিম ১৬৫৪]

সহীহ মুসলিমে আছে, কা‘ব ইবন মালেক (রাঃ) বলেন, “রাসূল (ﷺ) সকল সফর থেকে পূর্বাহ্নে ফিরতেন এবং সর্বপ্রথম মসজিদে প্রবেশ করে দুই রাকাত সালাত আদায় করতেন অতঃপর বসতেন। [মুসলিম: ১৬৫৯]

আর সম্ভব হলে রওযাহ ও মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থানে সালাত আদায়ের চেষ্টা করবে। যেহেতু তার বিশেষ ফযিলত রয়েছে। আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেন :

«مابين بيتي ومنبري روضة من رياض الجنة ومنبري على حوضى»

“আমার ঘর ও মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থান জান্নাতের একটি অংশ, আর আমার মিম্বর হাউজের উপর স্থাপিত। [বুখারী-১১৯৫]”

আর সম্ভব না হলে যে কোনো স্থানে সালাত আদায় করে নিবে। আর এটা হলে জামাতবিহীন সালাতের ক্ষেত্রে, জামাতের সাথে সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে ইমামের কাছাকাছি প্রথম কাতারের প্রতি সচেষ্ট হবে। কারণ এটিই উত্তম। রাসূল (ﷺ) বলেন :

«لو يعلم الناس ما في النداء والصف الأول ثم لم يجدوا إلا أن يستهموا عليه لاستهموا»

“আযান ও প্রথম কাতারে কত মর্যাদা মানুষ যদি জানত, তাহলে লটারী করার দরকার হলেও লটারী করে তাতে অংশ গ্রহণ করত।” [বুখারী : ৬১৫, মুসলিম : ৯৮১]

রাসূল (ﷺ) ও তার দুই সঙ্গীর কবর যিয়ারত :
ফরয বা তাহিয়্যাতুল মসজিদ সালাত আদায়ের পর নিম্নের নিয়ম অনুযায়ী রাসূল (ﷺ) এবং তার দুই সাথী আবু বকর রা. ও উমার রা. কে সালাম দিতে যাবে।

১। কিবলা পিঠ করে কবরমুখী হয়ে রাসূল (ﷺ) এর কবরের সামনে দাড়িয়ে বলবে :

السلام عليك أيها النبي ورحمة الله وبركاته .

উপযুক্ত কোনো শব্দ বৃদ্ধিতে অসুবিধা নেই, যেমন :

السلام عليك يا خليل الله، وأمينه على وحيه، وخيرته من خلقه، أشهد أنك قد بلغت الرسالة، وأدية الأمانة، ونصحة الأمة، وجاهدت في الله حق جهاده .

শুধু প্রথমটা বললেও অসুবিধা নেই।

ইবনে উমার (রাঃ) সালাম দেওয়ার সময় বলতেন :

السلام عليك يا رسول الله، السلام عليك يا أبا بكر، السلام عليك يا أبت .

অতঃপর চলে যেতেন।

২। অতঃপর এক হাত পরিমান ডান দিকে এগিয়ে আবুবকর (রাঃ) এর কবরের সামনে এসে সালাম দিবে। বলবে :

السلام عليك يا أبا بكر، السلام عليك يا أمير المؤمنين، رضي الله عنك وجزاك عن أمة محمد خيرا .

অতঃপর চলে যাবে। কিবলামূখী বা কবরমুখী হয়ে দো‘আর জন্য অবস্থান করবে না। ইমাম মালিক (র.) বলেন : রাসূলের কবরের নিকট দো‘আ করা সম্পর্কে কোনো প্রমাণাদি পাওয়া যায় না, তবে সালাম করবে। যেমন ইবনে উমার (রাঃ) করতেন। ইবনুল জাওযী (র.) বলেন : দো‘আর জন্য কবরে যাওয়া মাকরূহ। ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, দো‘আর জন্য কবরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়া, দো‘আর জন্য সেখানে অবস্থান করা মাকরূহ। [ফাতওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়্যাহ : ২৪ /৩৫৮]

রাসূল (ﷺ) ও তার সাথীদ্বয়কে আদবের সাথে নিচু স্বরে সালাম দিবে। উচুস্বর মসজিদে সর্বাবস্থায় নিষিদ্ধ। বিশেষত রাসূলের (ﷺ) মসজিদে ও তার কবরের নিকট, সহী বুখারীতে বর্ণিত আছে, সায়িব বিন ইয়াযীদ (রাঃ) বলেন : আমি মসজিদে ঘুমিয়ে কি দাড়িয়ে ছিলাম হঠাৎ কে যেন খোচা দিলেন, দেখি উমার বিন খাত্তাব (রাঃ), তিনি বললেন, যাও এই দুই জনকে নিয়ে এস! আমি তাদের দুজনকে নিয়ে এলাম, তিনি তাদেরকে প্রশ্ন করলেন তোমরা কারা? তারা বললো আমরা তায়েফের বাসিন্দা। বললেন তোমরা যদি এই শহরবাসী হতে তাহলে তোমাদেরকে এমন প্রহার করতাম যে ব্যাথা অনুভব করতে। তোমরা আল্লাহর রাসূলের মসজিদে উচু আওয়াজ করছো। [বুখারী : ৪৭০]

রাসূল ও তার দুই সাথীর কবরে দীর্ঘক্ষণ দো‘আ বা অবস্থান না করা। কোন একজন সাহাবীও নিজের জন্য কবরের পাশে দাড়িয়ে দো‘আ করেন নি। কারণ এটা বিদআত এবং কোনো একজন আলিমও কবরমুখি হয়ে দো‘আ করতে বলেন নি। বরং সাহাবায়ে কেরাম মসজিদে দো‘আ করতেন, রওযা তাদের উদ্দেশ্য ছিল না, না কবর পিঠ করে, না কবরমুখী হয়ে।

ইমাম মালেক র. হতে যে ঘটনা বর্ণনা করা হয় যে, ‘তিনি আব্বাসী খলীফা মনসূরকে কবরমুখী হয়ে দো‘আ করতে বলেছেন’ এটা তার উপর অপবাদ আরোপ। ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন: ছাহাবায়ে কেরাম, তাবে‘ঈন, ইমামগণ ও পূর্ববর্তী মাশায়েখগণের কেউ নবী বা ওলীগণের কবরের নিকট দো‘আ করলে তা কবুল হওয়ার কথা বলেন নি এবং তাদের মধ্যে কেউ বলেন নি যে নবী বা সালেহীনদের কবরে দো‘আ করা অন্যস্থানে দো‘আ করা হতে উত্তম, এবং সেখানে সালাত পড়া অন্যস্থানে নামায হতে উত্তম, এবং তাদের মধ্যে কেউ এসব কবরের নিকট সালাত ও দো‘আর জন্য চেষ্টাও করেন নি। তারা শুধু কবরবাসীর জন্য দো‘আ ও তাদের সালাম প্রদানের অবকাশ টুকু দিতেন [ফতোয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া: ২৭/৯১৬] এবং উদ্দেশ্য তো শুধু নবী (ﷺ) কে সালাম দেওয়া ও তার প্রতি দরুদ পাঠ করা। এর অতিরিক্ত কিছু করলে যেমন সেখানে অবস্থান বেশি বেশি সালাম ও দুরুদ পাঠ, এগুলি ইমাম মালেক র. অপছন্দ করেছেন এবং তিনি বলেছেন এটা বিদআত যা পূর্ববর্তীদের থেকে প্রমাণিত নয়। আর উম্মতের পরবর্তী অংশ পূর্ববর্তীদের অনুসরণ ব্যতীত সংশোধিত হতে পারে না। [ফতওয়ায়ে তাইমিয়া-২৭/৩৮৪]

কিছু সংখ্যক সুফীবাদী ধারণা রাখে যে, রাসূলের রওজায় সালাম প্রদানের সময় অন্তরের উপস্থিতি চোখ অবনত রাখা, ডানে বামে না তাকানো, স্থিরতা, বিনয় অবলম্বন জরুরী। এ ধরণের কোন প্রমাণ নেই, কথা হলো আদব বজায় রেখে ছালাম দেওয়া, যাতে স্বর উচু না হয়, কবর ও মৃত্যুর স্মরণ পরিপন্থী কোন আচরণ প্রকাশ না পায়।

যেমন ইমাম মালেক র. যে কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে রাসূলের কবরের নিকট আসতে হবে, মদীনাবাসীদের এই রকম করা তিনি অপছন্দ করেছেন। পূর্বসূরীগণ তো এমন করেননি, বরং তারা মসজিদে এসে আবু বকর, উমার উসমান ও আলী রা. এর পিছনে নামায পড়তেন, তারা সালাতে বলতেন: ‘আচ্ছালামু আলাইকা আইউহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ’ অতঃপর তারা নামায শেষ করে বসতেন বা বের হয়ে যেতেন। কিন্তু সালাম দেয়ার জন্য কবরের কাছে আসতেন না। তারা জানতেন সালাতের মধ্যে দরুদ ও সালাম পরিপূর্ণ ও উত্তম। [আল ফতওয়া: ২৬/৩৮৬]

সাহাবায়ে কিরাম ছিলেন স্বর্ণ যুগের স্বর্ণ মানব, তারা ছিলেন উম্মতের মধ্যে সুন্নাত সম্বন্ধে সর্বাধিক জ্ঞানী ও আনুগত্যকারী, তাদের মধ্যে হতে কেউ তাঁর নিকট এসে পরীক্ষাস্বরূপ প্রশ্ন করত না যে, তারা কি বিষয়ে ঝগড়া করেছে? এমনকি শয়তানও তাদের এই প্ররোচনা দিতে পারত না যে তোমরা তাঁর নিকট গিয়ে বৃষ্টি দাবী কর, তার মাধ্যমে আল্লাহর নিকট সাহায্য চাও, বা ক্ষমা প্রার্থনা করাও। বরং সাহাবায়ে কেরামের অভ্যাস ছিল; তাদের কারো নিজের জন্য দো‘আর প্রয়োজন হলে মসজিদে গিয়ে কিবলামূখী হয়ে দো‘আ করতেন, যেমন তারা রাসূলের জীবদ্দশায় করতেন, অতএব তারা রাসূলের কবর বা হুজরার নিকট গিয়ে দো‘আ করতেন না।

অনুরূপ যখন ছাহাবায়ে কেরাম খুলাফায়ে রাশেদীন বা অন্য কারো সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে সফর থেকে আসতেন, তখন তারা মসজিদে গিয়ে নামায আদায় করতেন ও সালাতের মধ্যেই রাসূলের প্রতি দরূদ ও সালাম পেশ করতেন এবং মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় দো‘আ পাঠের মাধ্যমে দুরুদ ও সালাম প্রেরণ করতেন, স্বতন্ত্রভাবে কবরের নিকট গিয়ে সালাম দিতেন না দুরুদও পড়তেন না, কারণ তারা জানতেন রাসূল (ﷺ) তাদেরকে এ বিষয়ে আদেশ করেন নি। তবে ইবনে উমার (রাঃ) সফর থেকে ফিরলে রাসূলের কবরের নিকট গিয়ে তাকে ও তার সাথীদ্বয়কে সালাম করতেন। ইবনে উমার (রাঃ) ব্যতীত অন্য কোন ছাহাবী এমন করেন নি। এমনকি খুলাফায়ে রাশেদীন তো হজের সফর যাওয়া বা ফিরার সময় এমন করেন নি, তাদের কারণ তাদের নিকট এটা কোনো সুন্নতই নয়। [আল-ফাতাওয়া : ২৭/৩৮৬]

রাসূলের মসজিদের বিদায় জানানো যাবে কি?
কোনো কোনো লোক উল্লেখ করেছেন যে, রাসূলের মসজিদে দু’রাকাত নামায আদায় ও দো‘আর মাধ্যমে বিদায় জানানো যাবে, [আলআযকার লিননববী : ১৮৪-১৮৫] তবে শরীয়তে এর কোনো প্রমান নেই। কারণ নবী (ﷺ) কে মদীনা হতে বের হওয়ার সময় এ ধরণের কোনো আমল করতে দেখা যায় নি। বরং কাবা শরীফকে বিদায় জানানো তাঁর থেকে প্রমাণিত আছে। মক্কা থেকে বের হওয়ার সময় ছাহাবায়ে কেরামকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছিলেন :

«اجعلوا أخر عهدكم بالبيت الطواف»

তাওয়াফের মাধ্যমে বায়তুল্লাহর সাথে সর্বশেষ চুক্তি সম্পাদন করে নাও। মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় বাম পা দিয়ে বের হবে এবং এই দো‘আ পড়বে যেমন অন্যান্য মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় পড়া হয়।

«بسم الله والصلاة والسلام على رسول الله، اللهم اعفرلى ذنوبى وافتح لى أبواب فضلك» [তিরমিযি : ৩১৪]

যিয়ারতের সময় নিষিদ্ধ বিষয়াবলী ১. কবরের তওয়াফ, চুম্বন ও মাসেহ করা।
কবর যিয়ারতের সময় কবরকে তওয়াফ করা, মাসেহ করা ও চুম্বন করা যাবে না। ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন: ‘পূর্ববর্তী অনুকরণীয় ইমামগণ একথার উপর ঐকমত্য হয়েছেন যে, যে ব্যক্তি রাসূলের কবরের নিকট গিয়ে রাসূলকে (ﷺ) সালাম করবে, তার জন্য রাসূলের হুজরা চুম্বন করা ও মাসেহ করা মুস্তাহাব নয়। যাতে করে সৃষ্টির ঘর স্রষ্টার ঘরের সমতুল্য না হয়ে যায়। আর রাসূল (ﷺ) বলেছেন:

«اللهم لا تجعل قبري وثنا يعبد»

“হে আল্লাহ আমার কবরকে মূর্তিতূল্য ইবাদতগাহ বানিও না।”

অতএব সকল বনী আদমের নেতা রাসূলুল্লাহ্‌ (ﷺ) এর কবরের যখন এই নীতি। তখন অন্যের কবর মাসেহ ও চুম্বন করার কোন প্রশ্নই আসে না। [ফাতওয়া ইবনে তাইমিয়া-২৬/৯৮] তিনি আরো বলেন; একমাত্র কাবা শরীফ তাওয়াফ করা যাবে এবং দুই ডান কোনে (রুকনে ইয়ামানী) হাত বুলানো যাবে ও হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করা যাবে, এছাড়া মসজিদে নববী, মসজিদে আকসা, ও অন্যান্য সকল মসজিদের তাওয়াফ, মাসেহ ও চুম্বন করা জায়েয হবে না। অতএব কারো জন্য রাসূলের রওযা, বায়তুল মুকাদ্দাসের পাথর, আরাফা ও অন্যান্য পাহাড়ের চূড়া তাওয়াফ করা জায়েয হবে না। এক কথায়, কাবা ব্যতীত পৃথিবীর অন্য কোনো স্থানকে তাওয়াফ করা জায়েয নয়। যে অন্য স্থানের তওয়াফের বৈধতা বিশ্বাস করে সে ঐ ব্যক্তি থেকে নিকৃষ্ট যে কাবা ব্যতীত অন্য দিকে ফিরে নামায আদায় জায়েয মনে করে।’

ইবনে তাইমিয়া রহ. আরো বলেন: ‘যে হুজরায় রাসূলের কবর আছে সেই হুজরায় শরয়ী ইবাদতের কোনো বিশেষত্ব নেই। [ফতওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া-২৭/১০] আর যে কোন কবর মাসেহ করা, চুম্বন করা, চোয়াল ঘসা সর্বসম্মতি ক্রমে নিষিদ্ধ। এমনকি সেটা নবীদের কবর হলেও, পূর্বসূরীদের থেকে তা বর্ণিত হয়েছে; যেন মানুষ সেখানে পৌছতে না পারে, দর্শনার্থীদের সরাসরি পৌছার কোনো পথ রাখা হয় নি, দর্শনার্থী সংকুলানের মত প্রশস্ত জায়গাও রাখা হয় নি, কবর দেখা যায় এমন জানালাও রাখা হয় নি, এক কথায় কবর পর্যন্ত পৌছা বা তা দেখার মত কোন ব্যবস্থাই রাখা হয় নি, যেন মানুষ তার কবরকে ঈদগাহ বা মুর্তি সাব্যস্ত করতে না পারে। [ফতওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া-২৭/৮]

অনুরূপ কবরের প্রাচীর মাসেহ করা যাবে না, ইমাম আহমদ রহ. বলেন : আমি এ সম্পর্কে জানি না, আসলাম র. বলেন মদীনাবাসী বড় বড় আলিমগণকে রাসূলের কবর স্পর্শ করতে দেখি নি, তারা এক পার্শ্বে দাড়িয়ে তাকে সালাম করতেন। আবু আব্দুল্লাহ বলেন : ইবনে উমার (রাঃ) এমনি করতেন। আর এ আচরণ যদি আল্লাহর ইবাদত ও রাসূলের সম্মানার্থে করা হয় তাহলে তা শির্ক বলে গণ্য হবে। ইবনে আব্বাস (রাঃ) মুআবিয়া (রাঃ) এর কাবা শরীফের বাম কোণ স্পর্শ করা অপছন্দ করেছেন। অথচ এ স্পর্শ ডান কোণে করা বৈধ। আর হুজরা বা প্রাচীর স্পর্শের মধ্যেই রাসূলের ভালবাসা বা সম্মান নয়, বরং প্রকাশ্যে ও গোপনে তার অনুসরণ এবং তার শরীয়তের মধ্যে নতুন বিদআত চালু না করার মধ্যেই প্রকৃত ভালবাসা ও সম্মান নিহিত। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন :

﴿ قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِي يُحۡبِبۡكُمُ ٱللَّهُ﴾ [ ال عمران : ٣١ ]

“আপনি বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তবে তোমরা আমার অনুসরণ কর। তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন।” [আলে-ইমরান-৩১]

আর রওযার দেয়াল যদি এমনি আন্তরিকতাবশতঃ বা খেলার ছলে স্পর্শ করা হয়, তাহলে তা ভুল হবে, যার দ্বারা কোনো ফায়দা নেই। তাছাড়া রাসূল ও সাহাবাগণের তরীকা ও সুন্নাতের বিরোধিতা করা হবে। কেননা জাহেল ও মূর্খরা দেখে এটাকে ইবাদত মনে (সুন্নত) করে তারাও তা শুরু করবে।

২। উপকার প্রাপ্তি ও ক্ষতি হতে বাচতে রাসূলের নিকট দো‘আ করা :
যিয়ারতকারীকে রাসূল (ﷺ) কোনো উপকার করবেন বা ক্ষতি হতে রক্ষা করবেন এই আশায় তার নিকট দো‘আ করা যাবে না, কারণ এটা শির্ক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

﴿ وَقَالَ رَبُّكُمُ ٱدۡعُونِيٓ أَسۡتَجِبۡ لَكُمۡۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَسۡتَكۡبِرُونَ عَنۡ عِبَادَتِي سَيَدۡخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ ٦٠ ﴾ [ غافر : ٦٠ ]

“তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দেব। যারা আমার ইবাদতে অহংকার করে তারা সত্তরই জাহান্নামে লাঞ্ছিত হয়ে দাখিল হবে।” [মুমিন-৬০]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বরেন :

﴿ وَأَنَّ ٱلۡمَسَٰجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدۡعُواْ مَعَ ٱللَّهِ أَحَدٗا ١٨ ﴾ [ الجن : ١٨ ]

“আর মসজিদসমূহ আল্লাহকে স্মরণ করার জন্য। অতএব তোমরা আল্লাহ তাআলার সাথে কাউকে ডেকোনা।” [সূরা জিন-১৮] এবং আল্লাহ তাআলা তার নবীকে এই মর্মে আদেশ করেছেন যে, আপনি আপনার উম্মতকে জানিয়ে দিন, যে (কাউকে উপকার ও ক্ষতি করা তো দূরে) নিজের উপকার ও ক্ষতি হতে রক্ষার ক্ষমতা আমার নেই। আল্লাহ বলেন :

﴿ قُل لَّآ أَمۡلِكُ لِنَفۡسِي نَفۡعٗا وَلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَآءَ ٱللَّهُۚ ﴾ [ الاعراف : ١٨٨ ]

“আপনি বলে দিন, আমি আমার নিজের কল্যাণ সাধন ও অকল্যাণ সাধনের মালিক নই। কিন্তু যা আল্লাহ চান” [সূরা আরাফা-১৮৮] অতএব, তিনি যখন নিজের জন্য এই ক্ষমতা রাখেন না তখন অন্যের জন্য এই ক্ষমতা রাখা কি করে সম্ভব। আল্লাহ তাআলা তাকে এই ব্যাপারে উম্মতকে ঘোষণা দিতে বলেন

﴿ قُلۡ إِنِّي لَآ أَمۡلِكُ لَكُمۡ ضَرّٗا وَلَا رَشَدٗا ٢١ ﴾ [ الجن : ٢١ ]

“বলুন আমি তোমাদের ক্ষতি সাধন করার ও সুপথে আনয়ন করার মালিক নই।” [সূরা জিন : ২১]

আয়েশা (রাঃ) বলেন, যখন وأنذر عشيرتك الأقربين আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। তখনই রাসূল (ﷺ) আদেশ পালনে তৎপর হন এবং বলেন হে মুহাম্মদের (ﷺ) কন্যা ফাতেমা, হে আব্দুল মুত্তালিবের কন্যা ছফিয়া হে আব্দুল মুত্তালিবের সম্প্রদায় আমি আল্লাহর দরবারে তোমাদের ব্যাপারে কোন ক্ষমতা রাখি না তোমরা আমার সম্পদ হতে যা চাও দাবী করতে পার। [মুসলিম : ৫০৩]

৩। তার (ﷺ) থেকে দো‘আ ও ক্ষমা প্রার্থনার প্রত্যাশী হওয়া
যিয়ারতকারীর জন্য রাসূল আল্লাহর নিকট দো‘আ করবে বা ক্ষমা প্রার্থনা করবে এই দাবী তার নিকট করা যাবে না। কারণ মৃত্যুর সাথে সাথে এই ক্ষমতা তাঁর আর নেই। তিনি বলেন :

«إذا مات ابن آدم انقطع عنه عمله»

মানুষ মারা গেলে তার আমলের পথ বন্ধ হয়ে যায়। [মুসলিম-৪২২৩]

তবে আল্লাহ তাআলার নিম্নোক্ত বানী- রাসূলের জীবদ্দশায় কার্যকর ছিল।

﴿ وَلَوۡ أَنَّهُمۡ إِذ ظَّلَمُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ جَآءُوكَ فَٱسۡتَغۡفَرُواْ ٱللَّهَ وَٱسۡتَغۡفَرَ لَهُمُ ٱلرَّسُولُ لَوَجَدُواْ ٱللَّهَ تَوَّابٗا رَّحِيمٗا ﴾ [ النساء : ٦٤ ]

“তারা যখন নিজেদের অনিষ্ট করেছে, তখন যদি তারা আপনার কাছে এসে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করত এবং রাসূলও যদি তাদের জন্য ক্ষমা চাইতেন, তাহলে অবশ্যই তারা আল্লাহকে ক্ষমাকারী ও মেহেরবানরূপে পেত।” [সুরা নিসা : ৬৪]

এই আয়াত তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর দ্বারা ক্ষমা চাওয়ার উপর প্রমাণ হবে না। যেহেতু আল্লাহ তাআলা তার বাণী إذ ظلموا এর মধ্যে إذ শব্দ ব্যবহার করেছেন; শব্দ إذا ব্যবহার করেন নি। আর إذ শব্দ অতীত কালের ক্রিয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য- ভবিষ্যৎ কালের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। বস্তুত: উক্ত আয়াত তাদের সম্পর্কে অবতীর্ণ, যারা রাসূলের জীবদ্দশায় ছিল। অতএব, তাঁর মৃত্যুর পর অন্য কারো জন্য তা প্রযোজ্য হবে না।

অতএব, এ বিষয়গুলো রাসূল (ﷺ) ও তার দুই সাথীর কবর যিয়ারতের সময় মেনে চলা উচিৎ। এসকল নীতিমালা বিশেষভাবে পুরুষদের জন্য। নারীদের জন্য উত্তম হলো, তারা রাসূলের কবর ও অন্য কারো কবর যিয়ারত করবে না। আবূ হুরায়রা রা. বলেন রাসূল (ﷺ) কবর যিয়ারতকারীনীকে অভিশাপ দিয়েছেন। [তিরমিযী: ৩২০]

১০
মদীনা যিয়ারতের ক্ষেত্রে অন্যান্য স্থানসমূহ : ১। বাকী‘ গোরস্থান দর্শন
‘বাকী‘য়ে গারকাদ’ মদীনার অভ্যন্তরীণ কবরস্থান। যেখানে ইমাম মালিক র. এর বর্ণনা অনুযায়ী প্রায় দশ হাজার ছাহাবাকে দাফন করা হয়েছে। অনুরূপ রাসূল (ﷺ) পরিবারের বিশেষ বিশেষ বক্তিকে সেখানে দাফন করা হয়েছে। সেখানে শায়িত আছেন আব্বাস ইবন আ. মুত্তালিব (রাঃ) উসমান (রাঃ) আকীল ইবন আবিতালিব (রাঃ) রাসূল (ﷺ) এর অধিকাংশ স্ত্রীগণ, আব্দুর রহমান ইবন আউফ রা., সা‘আদ ইবন আবী ওয়াক্কাস রা. সহ প্রমূখ সাহাবীগণ। অতএব বাকী‘ গোরস্থানে সমাধিত ব্যক্তিগণকে সালাম প্রদান, তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা ও দো‘আ করার উদ্দেশ্যে যিয়ারত বৈধ আছে। রাসূল স. এর অনুসরণে বাকী গোরস্থান যিয়ারত করা উত্তম। তিনি যিয়ারতের সময় বলতেন :

«السلام عليكم دارقوم مؤمنين، وإنا إن شاء الله بكم لاحقون، اللهم غفرلأهل بقيع الغرقد»

“হে মুমিন জনবসতি তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক, ইনশাআল্লাহ আমরাও তোমাদের সাথে মিলিত হবো। হে, আল্লাহ বাকী‘র অধিবাসীকে ক্ষমা কর।”

বুরাইদা (রাঃ) বলেন : (ﷺ) আমাদেরকে কবর যিয়ারত শিক্ষা দেওয়ার সময় এই দো‘আ শিখিয়েছেন :

«السلام عليكم أهل الديار من المؤمنين والمسلمين وإنا إن شاء الله للاحقون، أسأل الله لنا ولكم العافية» .

“হে মুমিন ও মুসলিম অধিবাসীগণ তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক, আমরা তোমাদের সাথে মিলিত হবো ইনশাআল্লাহ, আমাদের ও তোমাদের জন্য আল্লাহর নিকট মঙ্গল কামনা করি। [মুসলিম : ৯৭৫]

আয়েশা (রাঃ) বলেন : আমার অংশের প্রতি রাত্রের শেষভাগে রাসূল (ﷺ) জান্নাতুল বাকীতে গমন করতেন, বলতেন,

«السلام عليكم دار قوم مؤمنين واتاكم ما توعدون غدا مؤجلون وإنا إن شاء الله بكم لا حقون اللهم إغفر لأهل بقيع الغرقد»

“হে মুমিন অধিবাসীগণ! তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক, তোমাদের সাথে কৃত ওয়াদা বাস্তবায়িত হয়েছে। আগামীটা বাকী রয়েছে। ইনশাআল্লাহ আমরা তোমাদের সাথে মিলিত হবো। হে আল্লাহ তুমি বাকী বাসীদেরকে ক্ষমা করে দাও।” [মুসলিম : ৯৭৪]

অতএব, কারো জন্য এর অতিরিক্ত করা বৈধ নয়, যে সেখানে নিজের জন্য দো‘আ করবে। কারণ পূর্বসূরীগণ মৃত ব্যক্তি থেকে বরকত হাসিলের উদ্দেশ্য বা তাদের কবরের নিকট নিজেদের জন্য দো‘আর উদ্দেশ্য বা তাদের দ্বারা দো‘আ করানোর জন্য কবর যিয়ারত করতেন না বরং তারা মৃত ব্যক্তিদের জন্য দো‘আ বা ইস্তিগফারের উদ্দেশ্যে কবর যিয়ারত করতেন। এতটুকুই শরীয়তসম্মত। অতএব, কোনো যিয়ারতকারী সীমা অতিক্রম করে যদি নিজের জন্য বা মৃত ব্যক্তি দ্বারা দো‘আ করায় তাহলে সে সর্ব সম্মতি ক্রমে নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত হলো। [ফতওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া : ২৯/১৪৩]

১১
২-মসজিদে কোবায় সালাত আদায়।
মসজিদে কোবা সেই মসজিদ যার ভিত্তি হলো তাকওয়ার উপর। রাসূল (ﷺ) সর্বপ্রথম যেদিন মদীনায় অবতরণ করেন, সেদিন তিনি এই মসজিদ নির্মাণ করেন। কারও কারও মতে, আল্লাহ তাআলা এই মসজিদ ও কুবাবাসীর প্রশংসা করে বলেন :

﴿ لَّمَسۡجِدٌ أُسِّسَ عَلَى ٱلتَّقۡوَىٰ مِنۡ أَوَّلِ يَوۡمٍ أَحَقُّ أَن تَقُومَ فِيهِۚ فِيهِ رِجَالٞ يُحِبُّونَ أَن يَتَطَهَّرُواْۚ وَٱللَّهُ يُحِبُّ ٱلۡمُطَّهِّرِينَ﴾ [ التوبة : ١٠٨ ]

“অবশ্যই যে মসজিদের ভিত্তি রাখা হয়েছে তাকওয়ার উপর প্রথম দিন থেকে, সেটিই তোমার দাড়াবার যোগ্যস্থান। সেখানে রয়েছে এমন লোক যারা পবিত্রতাকে ভালবাসে আর আল্লাহ পবিত্র লোকদের ভালবাসেন। [সূরা তাওবা-১০৮]

আয়শা রা. বলেন : রাসূল (ﷺ) আমর ইবন আউফ গোত্রে দশের অধিক রাত্রি অবস্থান করেছেন এবং ঐ মসজিদ নির্মাণ করেন যার ভিত্তি তাকওয়ার উপর। সেখানে তিনি সালাত পড়েন অতঃপর বাহনে সওয়ার হন এবং রাত্রি ভ্রমন করে সকাল পর্যন্ত মসজিদে নববীতে পৌছে যান। [বুখারী : ৩৯০৬] আব্দুল্লাহ ইবন উমার (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) প্রত্যেক শনিবারে পায়ে হেটে বা বাহনে চড়ে মসজিদে কোবায় আসতেন। ইবনে উমার রা. ও এমন করেছেন, অন্য বর্ণনায় আছে অতঃপর দুরাকাত নামায আদায় করতেন। [বুখারী ১১৯৩] আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেন :

«من خرج حتى يأتي هذا المسجد قباء فصلى فيه كان عدل عمرة» .

“যে ব্যক্তি মসজিদের কুবায় এসে নামায আদায় করবে সে উমরা পালনের সমতূল্য ছাওয়াব প্রাপ্ত হবে। [নাসায়ী : ২:৩৭]

১২
৩-উহুদ প্রান্তরে শহীদানের যিয়ারত
তৃতীয় হিজরীতে সংঘটিত উহুদ যুদ্ধে শহীদানের কবর যিয়ারত করা জায়েয আছে, তাদের জন্য দো‘আ করা ও দয়া ভালবাসা প্রকাশ করা হওয়া, যে কোন সময় যিয়ারতের জন্য যাওয়া উত্তম। বৃহস্পতি বা শুক্রবার হতে হবে এমন কোনো নিয়ম নেই।

এতক্ষণ যা আলোচনা করা হল তা ঐ সকল স্থানসমূহ যার যিয়ারত বৈধ আছে। এছাড়া আর কোনো স্থানের যিয়ারত বৈধ নয়। যারা এ জাতীয় যিয়ারত করে তারা রাসূল ও খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত সম্পর্কে সল্পজ্ঞানের অধিকারী।

সকল প্রশংসা উভয় জগতের প্রতিপালক মহান আল্লাহর এবং আমাদের নবী মুহাম্মদ (ﷺ) ও তার সকল পরিবারবর্গ ও সাহাবাগনের প্রতি শান্তি ও দুরূদ বর্ষিত হোক।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন