HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
মাবরুর হজ
লেখকঃ মুহাম্মদ ইবন জামীল যাইনু
মাবরুর হজ, একটি ছোট পুস্তিকা। এতে খুবই সহজ ভাষায় এবং অতি সংক্ষিপ্তাকারে আলোচনা করা হয়েছে ওমরা ও হজের মূল আমলসমূহ। আরো আলোচনা করা হয়েছে আরাফাতে প্রদত্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খুৎবা ও তা থেকে আমাদের শিক্ষণীয় কিছু বিষয়, মসজিদে নববী যিয়ারতের কতিপয় বিধি-বিধান এবং হজ ও ওমরা পালন কালে হাজী সাহেবগণ সম্মুখীন হয়ে থাকেন এমন কিছু জরুরি বিষয়ও।
إن الحمد لله نحمده ونستعينه ونستغفره ، ونعوذ بالله من شرور أنفسنا وسيئات أعمالنا ، من يهده الله فلا مضل له ، ومن يضلل فلا هادي لـه ، وأشهد أن لا اله إلا الله وحده لا شريك له ، وأشهد أن محمداً عبده ورسوله .
মাবরুর হজ, একটি ছোট পুস্তিকা। আমি এতে খুবই সহজ ভাষায় এবং অতি সংক্ষিপ্তাকারে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো আলোচনা করেছি ওমরা ও হজের মূল আমলসমূহ। আরাফাতে প্রদত্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খুৎবা ও তা থেকে আমাদের শিক্ষণীয় কিছু বিষয়। মসজিদে নববী যিয়ারতের কতিপয় বিধি। হজ ও ওমরা পালন কালে হাজী সাহেবগণ সম্মুখীন হয়ে থাকেন এমন কিছু জরুরি বিষয়ও সন্নেবিশিত করে দিয়েছি।
হে আল্লাহ মেহেরবানী করে তুমি এ ক্ষুদ্র প্রয়াসটুকু কবুল কর। এ তাবত মুসলিমদেরকে এর দ্বারা উপকৃত কর।
মাবরুর হজ, একটি ছোট পুস্তিকা। আমি এতে খুবই সহজ ভাষায় এবং অতি সংক্ষিপ্তাকারে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো আলোচনা করেছি ওমরা ও হজের মূল আমলসমূহ। আরাফাতে প্রদত্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খুৎবা ও তা থেকে আমাদের শিক্ষণীয় কিছু বিষয়। মসজিদে নববী যিয়ারতের কতিপয় বিধি। হজ ও ওমরা পালন কালে হাজী সাহেবগণ সম্মুখীন হয়ে থাকেন এমন কিছু জরুরি বিষয়ও সন্নেবিশিত করে দিয়েছি।
হে আল্লাহ মেহেরবানী করে তুমি এ ক্ষুদ্র প্রয়াসটুকু কবুল কর। এ তাবত মুসলিমদেরকে এর দ্বারা উপকৃত কর।
১- ইহরাম
২. তাওয়াফ
৩. সাঈ
৪. চুল মুণ্ডানো বা ছোট করা
প্রথমত: ইহরাম
১. ভালোভাবে গোসল করে নিন এবং সম্ভব হলে সুগন্ধি মাখুন। এরপর স্বাভাবিক পোশাক ছেড়ে ইহরামের নির্ধারিত দু’টুকরো কাপড় পরে নিন। পুরুষদেরকে মাথা উন্মুক্ত রাখতে হবে। আর নারী হজযাত্রীগণ নিজ স্বাভাবিক পোশাক পরেই ইহরাম বাঁধুন। হাত মোজা পরিধান করে হাত ঢেকে রাখবেন না। অন্য পুরুষ দেখতে পায় এমন অবস্থায় উপনীত হলে মাথায় রাখা ওড়না দিয়ে চেহারা আড়াল করুন।
২. মীকাতে পৌঁছে কিবলা মুখী হয়ে দাঁড়িয়ে বলুন। ( لبيك اللهم بعمرة ) (তবে মীকাতের আগেও এর মাধ্যমে নিয়ত করা যায়) কোনোরূপ বাধা বা প্রতিবন্ধকতার আশঙ্কা করলে শর্ত আরোপ করে বলতে পারেন, ( اللهم محلي حيث حبستني ) অর্থাৎ হে আল্লাহ তুমি যেখানে আমাকে আটকে দেবে সেটিই আমার হালাল হবার স্থান। যদি বাস্তবিকই কোনো প্রতিবন্ধকতা এসে পড়ে তাহলে ওমরা পালন না করেই সেস্থানে ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যেতে পারবেন। তার জন্য দম, ফিদিয়া কিছুই আদায় করতে হবে না।
৩. উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠ করুন, বলুন-
«لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالمُلْكَ، لاَ شَرِيكَ لَكَ»
“আমি হাজীর, হে আল্লাহ আমি হাজীর, আমি হাজীর তোমার কোনো শরীক নেই আমি হাযির, নিশ্চয় সকল প্রশংসা ও যাবতীয় নি‘আমত তোমার এবং রাজত্বও, তোমার কোনো শরীক নেই”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫৪৯, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৮৪।]
২. তাওয়াফ
৩. সাঈ
৪. চুল মুণ্ডানো বা ছোট করা
প্রথমত: ইহরাম
১. ভালোভাবে গোসল করে নিন এবং সম্ভব হলে সুগন্ধি মাখুন। এরপর স্বাভাবিক পোশাক ছেড়ে ইহরামের নির্ধারিত দু’টুকরো কাপড় পরে নিন। পুরুষদেরকে মাথা উন্মুক্ত রাখতে হবে। আর নারী হজযাত্রীগণ নিজ স্বাভাবিক পোশাক পরেই ইহরাম বাঁধুন। হাত মোজা পরিধান করে হাত ঢেকে রাখবেন না। অন্য পুরুষ দেখতে পায় এমন অবস্থায় উপনীত হলে মাথায় রাখা ওড়না দিয়ে চেহারা আড়াল করুন।
২. মীকাতে পৌঁছে কিবলা মুখী হয়ে দাঁড়িয়ে বলুন। ( لبيك اللهم بعمرة ) (তবে মীকাতের আগেও এর মাধ্যমে নিয়ত করা যায়) কোনোরূপ বাধা বা প্রতিবন্ধকতার আশঙ্কা করলে শর্ত আরোপ করে বলতে পারেন, ( اللهم محلي حيث حبستني ) অর্থাৎ হে আল্লাহ তুমি যেখানে আমাকে আটকে দেবে সেটিই আমার হালাল হবার স্থান। যদি বাস্তবিকই কোনো প্রতিবন্ধকতা এসে পড়ে তাহলে ওমরা পালন না করেই সেস্থানে ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যেতে পারবেন। তার জন্য দম, ফিদিয়া কিছুই আদায় করতে হবে না।
৩. উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠ করুন, বলুন-
«لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالمُلْكَ، لاَ شَرِيكَ لَكَ»
“আমি হাজীর, হে আল্লাহ আমি হাজীর, আমি হাজীর তোমার কোনো শরীক নেই আমি হাযির, নিশ্চয় সকল প্রশংসা ও যাবতীয় নি‘আমত তোমার এবং রাজত্বও, তোমার কোনো শরীক নেই”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫৪৯, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৮৪।]
দৈহিক মেলামেশা ও যৌনস্পর্শ আছে এমন যাবতীয় কাজ। যে কোনো ধরনের পাপ। ঝগড়া-বিবাদ। অহেতুক ও নিষিদ্ধ বিতর্ক। পুরুষদের জন্য সেলাইযুক্ত পোশাক ও চেহারা-মাথা ঢেকে রাখা। সু-গন্ধি ব্যবহার করা (পূর্বে লাগানো সু-গন্ধি নাকে আসলে সমস্যা নেই)। মাথার চুল ও শরীরের অন্যান্য পশম মুণ্ডন করা, ছাঁটা ও উপড়ে ফেলা । নখ কাটা বা উপড়ে ফেলা। স্থলজ প্রাণী শিকার করা। বিবাহের প্রস্তাব দেওয়া ও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া।
গোসল করা, মাথা-শরীর মুড়ানোতেও কোনো অসুবিধা নেই। শরীর-মাথা চুলকানো ও চুল আচড়ানো, এ কারণে দুয়েকটি চুল কিংবা পশম পড়ে গেলেও সমস্যা নেই। সিংগা লাগানো। (চলাচলে অসুবিধার সৃষ্টি করে এমন) ভাঙ্গা নখ কেটে ফেলা। দাঁত উপড়ানো। তাঁবু, ঘরের ছাদ, গাছ-পালা কিংবা ছাতা ইত্যাদি দ্বারা ছায়া গ্রহণ করা, তবে শর্ত হচ্ছে এগুলো মাথার সাথে লাগানো যাবে না। ইজার তথা নিচে পরিহিত চাদর বেল্ট দ্বারা বাঁধা, প্রয়োজন হলে গিট্টুও দেওয়া যাবে। চপ্পল পরিধান করা। আংটি, হাত ঘড়ি ও চশমা ব্যবহার করা। ইহরামের কাপড় ধোয়া ও পরিবর্তন করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يُرِيدُ ٱللَّهُ بِكُمُ ٱلۡيُسۡرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ ٱلۡعُسۡرَ ١٨٥﴾ [ البقرة : ١٨٥ ]
“আল্লাহ তোমাদের সাথে সহজ করতে চান, তিনি তোমাদের সাথে কঠিন করতে চান না”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৫]
দ্বিতীয়ত: তাওয়াফ
১. মক্কা পৌঁছে তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দিন। অযু করুন। অতঃপর মসজিদে হারামে প্রবেশ কালে নির্ধারিত দো‘আ পাঠ করুন, বলুন:
«اللهم صل على محمد اللهم أفتح لي أبواب رحمتك»
“হে আল্লাহ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন, আমার জন্য আপনার রহমতের দরজা খুলে দিন”। [হাদীসের দ্বিতীয় অংশ মুসলিমে রয়েছে, হাদীস নং ৭১৩। আবূ দাউদ, হাদীস নং ৪৬৫, আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
এবং ডান পা দিয়ে প্রবেশ করুন। কা‘বা শরীফ পরিদৃষ্ট হলে দু’হাত তুলে ইচ্ছে মতো দো‘আ করতে পারেন অথবা এই দো‘আটি পাঠ করুন-
«اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ، وَمِنْكَ السَّلَامُ، فَحَيِّنَا رَبَّنَا بِالسَّلَامِ» [মুসনাদে শাফে‘য়ী, হাদীস নং পৃষ্ঠা নং ১২৫, সুনানে সগীর লিল বাইহাকী, হাদীস নং ১৬০৭।]
২. পবিত্র কা‘বার চার পাশে সাত বার প্রদক্ষিণ করে তাওয়াফ সম্পন্ন করুন। এটি আপনার ওমরার তাওয়াফের সাথে সাথে তাওয়াফে কুদূমও বটে, তাই প্রথম তিন পাকে ছোট ছোট কদম ফেলে ইসৎ দ্রুত চলে রমল করুন এবং পুরো তাওয়াফে ডান কাঁধ উন্মুক্ত রেখে ইজতেবা করুন। রমল আর ইজতেবা এই প্রথম তাওয়াফেই চলবে অন্য কোনো তাওয়াফে নয়। তাওয়াফ হাজরে আসওয়াদ থেকে শুরু হবে। আল্লাহু আকবার বলে তিনভাবে শুরু করতে পারেন আপনি তাওয়াফ। সরাসরি হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করে অথবা হাত বা অন্য কিছু দ্বারা স্পর্শ করে তাতে চুমু খেয়ে। ভিড়ের কারণে এ দু’টো সম্ভব না হলে দূর হতে ডান হাত তুলে ইশারা করে। হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করতে গিয়ে এবং সেখানে অবস্থান করে অযথা ভিড় বাড়াবেন না, এতে অপর লোকের কষ্ট হবে। তাওয়াফের সময় সম্ভব হলে রুকনে য়ামানি স্পর্শ করুন। রুকনে য়ামানিকে চুম্বন করার কোনো বিধান নেই। অনুরূপ স্পর্শ করা সম্ভব না হলে দূর হতে ইশারা করারও বিধান নেই। তাওয়াফ অবস্থায় মনের আকুতি ব্যক্ত করে অনুচ্চ স্বরে যে কোনো দো‘আ করতে পারেন। যিকিরও করা যায়। আওয়াজ উঁচু করে অপরের নিমগ্নতায় বিঘ্নতা সৃষ্টির কোনো অনুমতি নেই। একইভাবে দলবদ্ধভাবে সম্মিলিত দো‘আরও অনুমোদন নেই। কোনো চক্করের জন্য নির্দিষ্ট কোনো দো‘আও নেই। তবে রুকনে য়ামানি ও হাজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থানে পাঠ করার দো‘আটি হাদীস দ্বারা সমর্থিত। সেখানে পাঠ করুন-
﴿رَبَّنَآ ءَاتِنَا فِي ٱلدُّنۡيَا حَسَنَةٗ وَفِي ٱلۡأٓخِرَةِ حَسَنَةٗ وَقِنَا عَذَابَ ٱلنَّارِ ٢٠١﴾ [ البقرة : ٢٠١ ]
“হে আমাদের রব, আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দিন। আর আখিরাতেও কল্যাণ দিন এবং আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২০১]
৩. তাওয়াফ শেষ করে ডান কাঁধ ঢেকে ফেলুন। এবং মাকামে ইবরাহীমের পেছনে চলে যান আর পড়ুন
﴿وَٱتَّخِذُواْ مِن مَّقَامِ إِبۡرَٰهِۧمَ مُصَلّٗىۖ ١٢٥﴾ [ البقرة : ١٢٥ ]
“তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থানরূপে গ্রহণ কর”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১২৫]
অতঃপর দু’রাকাত সালাত আদায় করুন। প্রথম রাকাতে সূরা ফাতেহার পর সূরা কাফিরুন আর দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস পাঠ করুন। মাকামে ইবরাহীমের পেছনে সম্ভব না হলে মসজিদুল হারামের যে কোনো জায়গায় উক্ত সালাত আদায় করতে পারেন। অনুরূপভাবে উক্ত সূরাদ্বয় জানা না থাকলে যে কোনো সূরা দিয়ে আদায় করা যায়।
৪. সালাত শেষ করে জমজমের পানি পান করুন এবং কিছু পানি মাথার উপর ঢেলে দিন। এরপর হাজরে আসওয়াদের নিকট ফিরে আসুন। সম্ভব হলে আল্লাহু আকবার বলে চুমু খান। না হলে দূর হতে ডান হাত দ্বারা ইশারা করুন।
তৃতীয়ত: সাঈ
১. সাফার দিকে অগ্রসর হোন। পাহাড়ের কাছাকাছি পৌঁছলে পাঠ করুন-
﴿إِنَّ ٱلصَّفَا وَٱلۡمَرۡوَةَ مِن شَعَآئِرِ ٱللَّهِۖ ١٥٨ ﴾ [ البقرة : ١٥٨ ] «أَبْدَأُ بِمَا بَدَأَ اللهُ بِهِ»
“নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৫৮] আল্লাহ যেখান থেকে শুরু করেছেন আমিও সেখান থেকে শুরু করব”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২১৮।]
সাফায় আরোহন করে সম্ভব হলে কা‘বার দিকে তাকান। কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে তাকবির, তাহলিল ও দো‘আ করুন। বলুন-
«لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ، أَنْجَزَ وَعْدَهُ، وَنَصَرَ عَبْدَهُ، وَهَزَمَ الْأَحْزَابَ وَحْدَهُ»
“আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি এক, তাঁর কোনো শরীক নেই, তাঁর জন্য রাজত্ব এবং তাঁর জন্য সমস্ত প্রশংসা, তিনি প্রতিটি জিনিসের ওপর শক্তিমান। আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি এক, তিনি নিজের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছেন, নিজের বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং একাই সমস্ত সম্মিলিত শক্তিকে পরাভূত করেছেন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২১৮।]
এরপর হাত উঠিয়ে দো‘আ করুন। এরূপ পর পর তিন বার করুন।
২. দো‘আ শেষ করে সামান্য ডান দিকে সরে গিয়ে মারওয়া পানে অগ্রসর হোন। চলার গতি থাকবে স্বাভাবিক। সবুজ দুই আলামতের মাঝের জায়গা একটু দ্রুত অতিক্রম করুন। আর মুখে-
«رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ إِنَّكَ أَنْتَ الْأَعَزُّ الْأَكْرَمُ» [মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবা, হাদীস নং ২৯৬৪৭।]
দো‘আটি পাঠ করতে পারলে খুবই ভালো।
৩. মারওয়ায় পৌঁছে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে সাফার ন্যায় তাকবির, তাহলিল ও দো‘আ তিন তিনবার করে পাঠ করুন।
৪. এভাবে সাত সাঈ সম্পন্ন করুন। সাফা থেকে মারওয়া পর্যন্ত এক সাঈ আবার মারওয়া থেকে সাফায় ফিরে আসলে দ্বিতীয় সাঈ। সাফা থেকে শুরু হবে আর শেষ হবে মারওয়ায় ।
সাঈ শেষ করে হারাম থেকে বের হয়ে আসুন। বাম পা দিয়ে মসজিদ হতে বের হোন এবং পাঠ করুন-
«اللهم صل على محمد اللهم إني أسألك من فضلك» .
“হে আল্লাহ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন, হে আল্লাহ আমি আপনার অনুগ্রহ কামনা করি”। [হাদিসের দ্বিতীয় অংশ মুসলিমে রয়েছে, হাদীস নং ৭১৩। আবূ দাউদ, হাদীস নং ৪৬৫, আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
চতুর্থত: মাথা মুণ্ডন
১. (হারাম থেকে বের হয়ে) সমস্ত মাথা মুণ্ডন করুন-এটিই উত্তম। কিংবা চুল ছোট করুন। বিশেষ করে হজের সময় যদি অতি সন্নিকটে হয়। নারী হজকারীগণ সর্বাবস্থায় চুল কর্তন করবেন। চুলের গোছা একত্রিত করে মাথা হতে আঙ্গুলের এক কড়া পরিমাণ চুল কেটে নেওয়া হবে।
এরই সাথে আপনার ওমরার কাজ সম্পন্ন হয়ে গেল। স্বাভাবিক পোশাক পরে নিন। ইহরামের কারণে যে সব বিষয় হারাম হয়ে গিয়েছিল এখন থেকে আপনার জন্য সবই হালাল।
স্মর্তব্য: যিনি ইফরাদ কিংবা কেরান হজের ইহরাম বেঁধে এসেছেন তিনিও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরামর্শ-নির্দেশ মেনে নিয়ে মাথা মুণ্ডন বা চুল ছেটে হালাল হয়ে যান। নবীজী বলেছেন,
«فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ لَيْسَ مَعَهُ هَدْيٌ فَلْيَحِلَّ، وَلْيَجْعَلْهَا عُمْرَةً»
“তোমাদের যার সাথে হাদী নেই সে যেন হালাল হয়ে যায় এবং তাকে ওমরায় পরিণত করে নেয়”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২১৮।]
﴿يُرِيدُ ٱللَّهُ بِكُمُ ٱلۡيُسۡرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ ٱلۡعُسۡرَ ١٨٥﴾ [ البقرة : ١٨٥ ]
“আল্লাহ তোমাদের সাথে সহজ করতে চান, তিনি তোমাদের সাথে কঠিন করতে চান না”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৫]
দ্বিতীয়ত: তাওয়াফ
১. মক্কা পৌঁছে তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দিন। অযু করুন। অতঃপর মসজিদে হারামে প্রবেশ কালে নির্ধারিত দো‘আ পাঠ করুন, বলুন:
«اللهم صل على محمد اللهم أفتح لي أبواب رحمتك»
“হে আল্লাহ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন, আমার জন্য আপনার রহমতের দরজা খুলে দিন”। [হাদীসের দ্বিতীয় অংশ মুসলিমে রয়েছে, হাদীস নং ৭১৩। আবূ দাউদ, হাদীস নং ৪৬৫, আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
এবং ডান পা দিয়ে প্রবেশ করুন। কা‘বা শরীফ পরিদৃষ্ট হলে দু’হাত তুলে ইচ্ছে মতো দো‘আ করতে পারেন অথবা এই দো‘আটি পাঠ করুন-
«اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ، وَمِنْكَ السَّلَامُ، فَحَيِّنَا رَبَّنَا بِالسَّلَامِ» [মুসনাদে শাফে‘য়ী, হাদীস নং পৃষ্ঠা নং ১২৫, সুনানে সগীর লিল বাইহাকী, হাদীস নং ১৬০৭।]
২. পবিত্র কা‘বার চার পাশে সাত বার প্রদক্ষিণ করে তাওয়াফ সম্পন্ন করুন। এটি আপনার ওমরার তাওয়াফের সাথে সাথে তাওয়াফে কুদূমও বটে, তাই প্রথম তিন পাকে ছোট ছোট কদম ফেলে ইসৎ দ্রুত চলে রমল করুন এবং পুরো তাওয়াফে ডান কাঁধ উন্মুক্ত রেখে ইজতেবা করুন। রমল আর ইজতেবা এই প্রথম তাওয়াফেই চলবে অন্য কোনো তাওয়াফে নয়। তাওয়াফ হাজরে আসওয়াদ থেকে শুরু হবে। আল্লাহু আকবার বলে তিনভাবে শুরু করতে পারেন আপনি তাওয়াফ। সরাসরি হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করে অথবা হাত বা অন্য কিছু দ্বারা স্পর্শ করে তাতে চুমু খেয়ে। ভিড়ের কারণে এ দু’টো সম্ভব না হলে দূর হতে ডান হাত তুলে ইশারা করে। হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করতে গিয়ে এবং সেখানে অবস্থান করে অযথা ভিড় বাড়াবেন না, এতে অপর লোকের কষ্ট হবে। তাওয়াফের সময় সম্ভব হলে রুকনে য়ামানি স্পর্শ করুন। রুকনে য়ামানিকে চুম্বন করার কোনো বিধান নেই। অনুরূপ স্পর্শ করা সম্ভব না হলে দূর হতে ইশারা করারও বিধান নেই। তাওয়াফ অবস্থায় মনের আকুতি ব্যক্ত করে অনুচ্চ স্বরে যে কোনো দো‘আ করতে পারেন। যিকিরও করা যায়। আওয়াজ উঁচু করে অপরের নিমগ্নতায় বিঘ্নতা সৃষ্টির কোনো অনুমতি নেই। একইভাবে দলবদ্ধভাবে সম্মিলিত দো‘আরও অনুমোদন নেই। কোনো চক্করের জন্য নির্দিষ্ট কোনো দো‘আও নেই। তবে রুকনে য়ামানি ও হাজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থানে পাঠ করার দো‘আটি হাদীস দ্বারা সমর্থিত। সেখানে পাঠ করুন-
﴿رَبَّنَآ ءَاتِنَا فِي ٱلدُّنۡيَا حَسَنَةٗ وَفِي ٱلۡأٓخِرَةِ حَسَنَةٗ وَقِنَا عَذَابَ ٱلنَّارِ ٢٠١﴾ [ البقرة : ٢٠١ ]
“হে আমাদের রব, আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দিন। আর আখিরাতেও কল্যাণ দিন এবং আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২০১]
৩. তাওয়াফ শেষ করে ডান কাঁধ ঢেকে ফেলুন। এবং মাকামে ইবরাহীমের পেছনে চলে যান আর পড়ুন
﴿وَٱتَّخِذُواْ مِن مَّقَامِ إِبۡرَٰهِۧمَ مُصَلّٗىۖ ١٢٥﴾ [ البقرة : ١٢٥ ]
“তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থানরূপে গ্রহণ কর”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১২৫]
অতঃপর দু’রাকাত সালাত আদায় করুন। প্রথম রাকাতে সূরা ফাতেহার পর সূরা কাফিরুন আর দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস পাঠ করুন। মাকামে ইবরাহীমের পেছনে সম্ভব না হলে মসজিদুল হারামের যে কোনো জায়গায় উক্ত সালাত আদায় করতে পারেন। অনুরূপভাবে উক্ত সূরাদ্বয় জানা না থাকলে যে কোনো সূরা দিয়ে আদায় করা যায়।
৪. সালাত শেষ করে জমজমের পানি পান করুন এবং কিছু পানি মাথার উপর ঢেলে দিন। এরপর হাজরে আসওয়াদের নিকট ফিরে আসুন। সম্ভব হলে আল্লাহু আকবার বলে চুমু খান। না হলে দূর হতে ডান হাত দ্বারা ইশারা করুন।
তৃতীয়ত: সাঈ
১. সাফার দিকে অগ্রসর হোন। পাহাড়ের কাছাকাছি পৌঁছলে পাঠ করুন-
﴿إِنَّ ٱلصَّفَا وَٱلۡمَرۡوَةَ مِن شَعَآئِرِ ٱللَّهِۖ ١٥٨ ﴾ [ البقرة : ١٥٨ ] «أَبْدَأُ بِمَا بَدَأَ اللهُ بِهِ»
“নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৫৮] আল্লাহ যেখান থেকে শুরু করেছেন আমিও সেখান থেকে শুরু করব”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২১৮।]
সাফায় আরোহন করে সম্ভব হলে কা‘বার দিকে তাকান। কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে তাকবির, তাহলিল ও দো‘আ করুন। বলুন-
«لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ، أَنْجَزَ وَعْدَهُ، وَنَصَرَ عَبْدَهُ، وَهَزَمَ الْأَحْزَابَ وَحْدَهُ»
“আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি এক, তাঁর কোনো শরীক নেই, তাঁর জন্য রাজত্ব এবং তাঁর জন্য সমস্ত প্রশংসা, তিনি প্রতিটি জিনিসের ওপর শক্তিমান। আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি এক, তিনি নিজের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছেন, নিজের বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং একাই সমস্ত সম্মিলিত শক্তিকে পরাভূত করেছেন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২১৮।]
এরপর হাত উঠিয়ে দো‘আ করুন। এরূপ পর পর তিন বার করুন।
২. দো‘আ শেষ করে সামান্য ডান দিকে সরে গিয়ে মারওয়া পানে অগ্রসর হোন। চলার গতি থাকবে স্বাভাবিক। সবুজ দুই আলামতের মাঝের জায়গা একটু দ্রুত অতিক্রম করুন। আর মুখে-
«رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ إِنَّكَ أَنْتَ الْأَعَزُّ الْأَكْرَمُ» [মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবা, হাদীস নং ২৯৬৪৭।]
দো‘আটি পাঠ করতে পারলে খুবই ভালো।
৩. মারওয়ায় পৌঁছে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে সাফার ন্যায় তাকবির, তাহলিল ও দো‘আ তিন তিনবার করে পাঠ করুন।
৪. এভাবে সাত সাঈ সম্পন্ন করুন। সাফা থেকে মারওয়া পর্যন্ত এক সাঈ আবার মারওয়া থেকে সাফায় ফিরে আসলে দ্বিতীয় সাঈ। সাফা থেকে শুরু হবে আর শেষ হবে মারওয়ায় ।
সাঈ শেষ করে হারাম থেকে বের হয়ে আসুন। বাম পা দিয়ে মসজিদ হতে বের হোন এবং পাঠ করুন-
«اللهم صل على محمد اللهم إني أسألك من فضلك» .
“হে আল্লাহ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন, হে আল্লাহ আমি আপনার অনুগ্রহ কামনা করি”। [হাদিসের দ্বিতীয় অংশ মুসলিমে রয়েছে, হাদীস নং ৭১৩। আবূ দাউদ, হাদীস নং ৪৬৫, আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
চতুর্থত: মাথা মুণ্ডন
১. (হারাম থেকে বের হয়ে) সমস্ত মাথা মুণ্ডন করুন-এটিই উত্তম। কিংবা চুল ছোট করুন। বিশেষ করে হজের সময় যদি অতি সন্নিকটে হয়। নারী হজকারীগণ সর্বাবস্থায় চুল কর্তন করবেন। চুলের গোছা একত্রিত করে মাথা হতে আঙ্গুলের এক কড়া পরিমাণ চুল কেটে নেওয়া হবে।
এরই সাথে আপনার ওমরার কাজ সম্পন্ন হয়ে গেল। স্বাভাবিক পোশাক পরে নিন। ইহরামের কারণে যে সব বিষয় হারাম হয়ে গিয়েছিল এখন থেকে আপনার জন্য সবই হালাল।
স্মর্তব্য: যিনি ইফরাদ কিংবা কেরান হজের ইহরাম বেঁধে এসেছেন তিনিও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরামর্শ-নির্দেশ মেনে নিয়ে মাথা মুণ্ডন বা চুল ছেটে হালাল হয়ে যান। নবীজী বলেছেন,
«فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ لَيْسَ مَعَهُ هَدْيٌ فَلْيَحِلَّ، وَلْيَجْعَلْهَا عُمْرَةً»
“তোমাদের যার সাথে হাদী নেই সে যেন হালাল হয়ে যায় এবং তাকে ওমরায় পরিণত করে নেয়”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২১৮।]
১. ইহরাম
২. মিনায় রাত্রিযাপন
৩. আরাফায় অবস্থান
৪. মুযদালিফায় রাত্রিযাপন
৫. জামরাতে পাথর নিক্ষেপ
৬. হাদী জবাই
৭. মাথা মুণ্ডন
৮. তাওয়াফে যিয়ারত ও সাঈ
৯. ঈদ ও পাথর নিক্ষেপের দিনগুলিতে মিনায় রাত্রিযাপন
১০. বিদায়ী তাওয়াফ
প্রথমত: ইহরাম
১- ৮ যিলহজ মক্কায় নিজ নিজ বাসস্থানে ইহরামের নির্ধারিত কাপড় পরে নিন। কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে বলুন, لبيك اللهم حجة
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণে আরো বলতে পারেন,
«اللَّهُمَّ حَجَّةٌ لَا رِيَاءَ فِيهَا، وَلَا سُمْعَةَ»
“হে আল্লাহ! এ এমন হজ, যাতে কোনো প্রদর্শনেচ্ছা বা প্রচারেচ্ছা নেই”। [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৮৯০, আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
এরপর উঁচু আওয়াজে তালবিয়া পাঠ করুন। বলুন-
«لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالمُلْكَ، لاَ شَرِيكَ لَكَ»
“আমি হাযির, হে আল্লাহ আমি হাযির, আমি হাযির তোমার কোনো শরীক নেই আমি হাযির, নিশ্চয় সকল প্রশংসা ও যাবতীয় নি‘আমত তোমার এবং রাজত্বও, তোমার কোনো শরীক নেই”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫৪৯, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৮৪।]
দ্বিতীয়ত: মিনায় রাত্রিযাপন
১. ইহরাম সম্পন্ন করে চারিদিক আলোকিত হবার পর মিনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করুন। সেখানে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত কসর করে আদায় করুন। জোহর, আসর ও ইশা নিজ নিজ ওয়াক্তে দু’রাকাত করে আদায় করুন। এবং সেখানে রাত্রিযাপন করে পরদিনের ফজর আদায় করুন।
তৃতীয়ত: আরাফায় অবস্থান
১. ৯ যিলহজ সূর্য উদিত হয়ে চারিদিক ফর্সা হয়ে গেলে (ইশরাকের পর) তালবিয়া ও তাকবির পাঠ করতে করতে আরাফা অভিমুখে যাত্রা করুন। জোহরের ওয়াক্তে জোহর ও আসর একসাথে এক আযান ও দুই ইকামতে কসর করে আদায় করুন। সুন্নত আদায় করতে হবে না। আরাফার নির্ধারিত সীমানার অভ্যন্তরে অবস্থান করছেন মর্মে নিশ্চিত হোন। কেননা উকুফে আরাফা হজের প্রধান রুকন। এটি বাদ পড়ে গেলে হজই বাতিল হয়ে যাবে।
২. সালাত আদায় করে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়ান। দুই হাত তুলে দো‘আ করুন। লা শরীক আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করুন। তাঁর লা শরিকত্বের ঘোষণা উচ্চারণ করে বলুন,
«لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ»
“আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি এক, তাঁর কোনো শরীক নেই, তাঁর জন্য রাজত্ব এবং তাঁর জন্য সমস্ত প্রশংসা, আর তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২১৮।]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
«خَيْرُ الدُّعَاءِ دُعَاءُ يَوْمِ عَرَفَةَ، وَخَيْرُ مَا قُلْتُ أَنَا وَالنَّبِيُّونَ مِنْ قَبْلِي : لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ» .
“সর্বোত্তম দো‘আ হচ্ছে আরাফার দো‘আ, আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নবীগণের সর্বোত্তম কথা হল:
«لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ»
“আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি এক, তাঁর কোনো শরীক নেই, তাঁর জন্য রাজত্ব এবং তাঁর জন্য সমস্ত প্রশংসা, আর তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান”। [তিরমিযী, হাদীস নং ৩৫৮৫, আলবানী রহ. হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। দো‘আটি সহীহ মুসলিমে এসেছে, হাদীস নং ১২১৮।]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,
«أَحَبُّ الْكَلَامِ إِلَى اللهِ أَرْبَعٌ : سُبْحَانَ اللهِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ»
আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় বাক্য চারটি, তা হলো,
«سبحان الله، والحمد لله، ولا إله إلا الله، والله أكبر» [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২১৩৭।]
সূর্যাস্ত পর্যন্ত দো‘আ ও যিকিরে মশগুল থাকুন।
চতুর্থত: মুযদালিফায় রাত্রিযাপন
১- সূর্যাস্তের পর ধীরে-সুস্থে-শান্তভাবে মুযদালিফা অভিমুখে রওয়ানা হোন। সেখানে পৌঁছে ইশার ওয়াক্তে এক আযান ও দুই ইকামতে মাগরিব ও ইশার সালাত কসর করে আদায় করুন। সুন্নত আদায় করতে হবে না। মুযদালিফায় রাত্রিযাপন ওয়াজিব। আওয়াল ওয়াক্তে ফজর সালাত আদায় করুন। সালাত আদায়ান্তে মাশআরে হারামে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে দুই হাত উঠিয়ে আল্লাহকে ডাকুন। খুব দীন-হীন হয়ে তাঁর করুণা প্রার্থনা করুন। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার ও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলে তাঁর প্রশংসা করুন, বড়ত্ব ও একত্ববাদের স্বীকৃতি দিন। মুযদালিফা পুরোটাই মাশআর। দুর্বলদের জন্য মধ্য রাতের পর মুযদালিফা ত্যাগের অনুমতি আছে।
পঞ্চমত: কঙ্কর নিক্ষেপ
১- সূর্যোদয়ের সামান্য পূর্বে চারিদিক ফর্সা হয়ে গেলে মুযদালিফা হতে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় শান্তভাবে মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হোন। যাওয়ার পূর্বে বুটের দানার মতো ছোট ছোট কঙ্কর কুড়িয়ে নিতে পারেন। মিনায় পৌঁছে প্রথমে বড় জামরায় সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করুন। মিনা ডানে আর মক্কা বামে রেখে দাঁড়ান। অতঃপর আল্লাহু আকবার বলে সাত বারে সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করে নির্ধারিত গর্তে ফেলুন। কোনো কঙ্কর গর্তে না পড়লে এর পরিবর্তে আরেকটি নিক্ষেপ করতে হবে। কঙ্কর নিক্ষেপের সাথে সাথে তালবিয়া বন্ধ করে দিন। কঙ্কর সূর্যোদয়ের পর থেকে শুরু করে পরবর্তী রাত পর্যন্ত নিক্ষেপ করা যায়।
ষষ্ঠত: হাদী জবাই
ঈদের দিনগুলোর যে কোনো দিন হাদী জবাই করুন। তা হতে নিজে খান এবং দরিদ্রদের দান করুন। নিজে জবাই না করে অপরকে উকিল বানাতে পারেন। সে ক্ষেত্রে যার উপর আপনার আস্থা হয় তাকে কিংবা স্বীকৃত কোনো সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়ে হাদির মূল্য বাবদ নগদ অর্থ হস্তান্তর করতে পারেন। হাদী জবাইয়ের আর্থিক সঙ্গতি না থাকলে ১০টি সাওম পালন করুন।। ৩টি হজে আর অবশিষ্ট ৭টি নিজ পরিজনের নিকট প্রত্যাবর্তনের পর। নারী হজযাত্রী এ ক্ষেত্রে পুরুষের ন্যায়। হাদী জবাই ক্বিরান ও তামাত্তু হজকারীর ওপর ওয়াজিব। ইফরাদ হজকারীর জন্য হাদী জবাই আবশ্যক নয়।
সপ্তমত: মাথা মুণ্ডন
১- পূর্ণ মাথার চুল মুণ্ডন করে মাথা ন্যাড়া করুন। অথবা চুল ছোট করুন। মুণ্ডন করা উত্তম। নারীরা সর্বাবস্থায় চুলের গোছা হতে এক কড়া পরিমান চুল কাটবেন। তাদের ক্ষেত্রে মুণ্ডন নেই। অনেককে দেখা যায় মাথার কিছু অংশের চুল কেটে অবশিষ্ট অংশ রেখে দেয়। এর মাধ্যমে কসরের বিধান আদায় হবে না। বরং পূর্ণ মাথার চুলই কাটতে হবে। কেননা কসর (চুল কর্তন) হলক (মুণ্ডন)-এর স্থলাভিষিক্ত। আর পূর্ণ মাথার চুল ফেলে দিলেই কেবল হলক সাধিত হয়।
২- হলকের পর গোসল করে সাধারণ পোশাক পরিধান করুন। সু-গন্ধি মাখুন। ইহরামের কারণে যা কিছু হারাম হয়ে গিয়েছিল এখন থেকে স্ত্রী ব্যতীত সব কিছুই হালাল।
অষ্টমত: তাওয়াফ ও সাঈ
১- মক্কার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিন। ওমরাতে বর্ণিত পদ্ধতিতে (রমল ও ইজতিবা ব্যতীত) পবিত্র কা‘বা সাতবার প্রদক্ষিণ করে তাওয়াফ করুন। আর সাফা মারওয়ার মাঝে সাতবার সাঈ করুন। তাওয়াফ ও সাঈ সম্পন্ন করার পর স্ত্রীও হালাল হয়ে যাবে। তাওয়াফ-সাঈ এদিন কষ্টকর মনে হলে আইয়ামে তাশরিকের যে কোনো দিন আদায় করতে পারেন। তা-ও যদি সম্ভব না হয় তাহলে যিলহজ মাসের যে কোনো দিন সেরে নিলেই হবে।
২- ঈদের দিনের আমল চতুষ্টয়ের মাঝে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সুন্নত। প্রথমে বড় জামরার কঙ্কর নিক্ষেপ, এরপর হাদী জবাই, তারপর মাথা মুণ্ডন এবং সর্বশেষ তাওয়াফে ইফাযা। আর তামাত্তুকারীর জন্য তাওয়াফের পর সাঈ।
৩- আপনি যদি ধারাবাহিকতা লঙ্ঘন করে আমলগুলো আগে পরে করে ফেলেন। তাহলে সমস্যা নেই। কারণ এ ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড় দিয়েছেন। সাহাবদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন। ( لا حرج، لا حرج ) অর্থাৎ কোনো সমস্যা নেই।
নবমত: মিনায় রাত্রিযাপন ও কঙ্কর নিক্ষেপ
১- ঈদের দিনগুলোয় মিনায় রাত্রিযাপন করা ওয়াজিব। তাই আপনি তাওয়াফ শেষ করে মিনায় ফিরে আসুন।
২- কঙ্কর নিক্ষেপ করুন। ১১, ১২ ও ১৩ তারিখের কঙ্কর নিক্ষেপের সময় হচ্ছে জোহরের ওয়াক্ত হবার পর থেকে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত। প্রয়োজন বশত: রাতেও মারা যায়।
৩- ১১ তারিখ তিন জামরায় ৭টি করে ২১টি কঙ্কর নিক্ষেপ করুন। ছোট জামরা থেকে শুরু করুন। কঙ্কর মিনা হতে সংগ্রহ করতে পারেন। ছোট জামরায় ( মিনা ডান পাশে ও মক্কা বাম পাশে রেখে দাঁড়িয়ে) আল্লাহু আকবার বলে সাত বারে ৭টি কঙ্কর নিক্ষেপ করুন। এর পর কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে হাত উঠিয়ে আল্লাহর নিকট দো‘আ করুন।
৪- অতঃপর মধ্য জামরায় ছোট জামরার ন্যায় ৭টি কঙ্কর মারুন এবং দো‘আ করুন।
৫- সবশেষে বড় জামরায় একই নিয়মে ( মিনা ডান পাশে ও মক্কা বাম পাশে রেখে দাঁড়িয়ে) ৭টি কঙ্কর নিক্ষেপ করুন। বড় জামরাতে পাথর নিক্ষেপের পর দো‘আর জন্য আর দাঁড়াবেন না।
৬- ঈদের তৃতীয় দিন অর্থাৎ ১২ যিলহজ ১১ যিল হজের ন্যায় তিন জামরাতে ৭টি করে ২১টি পাথর নিক্ষেপ করুন। ছোট ও মধ্য জামরাতে নিক্ষেপের পর দো‘আ করুন। জামরায়ে আকাবাতে নিক্ষেপের পর আর দো‘আ নেই। এবার আপনি ইচ্ছা করলে মিনা ছেড়ে চলে যেতে পারেন। তবে সূর্যাস্তের পূর্বেই আপনাকে রওয়ানা দিয়ে মিনা ত্যাগ করতে হবে। রওয়ানা দেওয়ার আগেই সূর্য অস্তমিত হয়ে গেলে সে রাতও আপনাকে মিনায় অবস্থান করে পরদিন জোহরের পর তিন জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব হবে। আর এটিই উত্তম। অর্থাৎ ১২ তারিখ না গিয়ে ১৩ তারিখ অবস্থান করে পাথর মেরে তাখির করে যাওয়াই উত্তম। নবীজী তাই করেছেন।
৭- মাজুর-অক্ষমদের জন্য ঈদের দ্বিতীয় দিনের রমি (কঙ্কর নিক্ষেপ) তৃতীয় দিনে আর তৃতীয় দিনেরটি চতুর্থ দিনে বিলম্বিত করা জায়েয। দুর্বল, অসুস্থ নারী-পুরুষ ও শিশুদের পক্ষে অপরকে নিক্ষেপের জন্য উকিল বানানোও জায়েয আছে।
দশমত: বিদায়ী তাওয়াফ
১- হায়েয ও নিফাসগ্রস্ত নারী ব্যতীত দূর থেকে আসা সকল হজযাত্রীদের জন্য বিদায়ি তাওয়াফ ওয়াজিব। বিদায়ি তাওয়াফ সম্পন্ন করেই তাদেরকে মক্কা ত্যাগ করতে হবে। না হলে দম দিতে হবে। অনুরূপভাবে কেউ পাথর নিক্ষেপ কিংবা মিনায় রাত্রিযাপন ত্যাগ করলেও পশু জবাই করে দম দিতে হবে।
হারাম থেকে বের হবার সময়
«اللهم صل على محمد اللهم إني أسألك من فضلك» .
“হে আল্লাহ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন, হে আল্লাহ আমি আপনার অনুগ্রহ কামনা করি”। [হাদীসের দ্বিতীয় অংশ সহীহ মুসলিমে রয়েছে, হাদীস নং ৭১৩। আবূ দাউদ, হাদীস নং ৪৬৫, আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
বলে বাম পা দিয়ে বের হোন। সফরের প্রাক্কালে নির্ধারিত দো‘আটি পাঠ করতে ভুল করবেন না।
২. মিনায় রাত্রিযাপন
৩. আরাফায় অবস্থান
৪. মুযদালিফায় রাত্রিযাপন
৫. জামরাতে পাথর নিক্ষেপ
৬. হাদী জবাই
৭. মাথা মুণ্ডন
৮. তাওয়াফে যিয়ারত ও সাঈ
৯. ঈদ ও পাথর নিক্ষেপের দিনগুলিতে মিনায় রাত্রিযাপন
১০. বিদায়ী তাওয়াফ
প্রথমত: ইহরাম
১- ৮ যিলহজ মক্কায় নিজ নিজ বাসস্থানে ইহরামের নির্ধারিত কাপড় পরে নিন। কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে বলুন, لبيك اللهم حجة
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণে আরো বলতে পারেন,
«اللَّهُمَّ حَجَّةٌ لَا رِيَاءَ فِيهَا، وَلَا سُمْعَةَ»
“হে আল্লাহ! এ এমন হজ, যাতে কোনো প্রদর্শনেচ্ছা বা প্রচারেচ্ছা নেই”। [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৮৯০, আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
এরপর উঁচু আওয়াজে তালবিয়া পাঠ করুন। বলুন-
«لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالمُلْكَ، لاَ شَرِيكَ لَكَ»
“আমি হাযির, হে আল্লাহ আমি হাযির, আমি হাযির তোমার কোনো শরীক নেই আমি হাযির, নিশ্চয় সকল প্রশংসা ও যাবতীয় নি‘আমত তোমার এবং রাজত্বও, তোমার কোনো শরীক নেই”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫৪৯, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৮৪।]
দ্বিতীয়ত: মিনায় রাত্রিযাপন
১. ইহরাম সম্পন্ন করে চারিদিক আলোকিত হবার পর মিনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করুন। সেখানে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত কসর করে আদায় করুন। জোহর, আসর ও ইশা নিজ নিজ ওয়াক্তে দু’রাকাত করে আদায় করুন। এবং সেখানে রাত্রিযাপন করে পরদিনের ফজর আদায় করুন।
তৃতীয়ত: আরাফায় অবস্থান
১. ৯ যিলহজ সূর্য উদিত হয়ে চারিদিক ফর্সা হয়ে গেলে (ইশরাকের পর) তালবিয়া ও তাকবির পাঠ করতে করতে আরাফা অভিমুখে যাত্রা করুন। জোহরের ওয়াক্তে জোহর ও আসর একসাথে এক আযান ও দুই ইকামতে কসর করে আদায় করুন। সুন্নত আদায় করতে হবে না। আরাফার নির্ধারিত সীমানার অভ্যন্তরে অবস্থান করছেন মর্মে নিশ্চিত হোন। কেননা উকুফে আরাফা হজের প্রধান রুকন। এটি বাদ পড়ে গেলে হজই বাতিল হয়ে যাবে।
২. সালাত আদায় করে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়ান। দুই হাত তুলে দো‘আ করুন। লা শরীক আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করুন। তাঁর লা শরিকত্বের ঘোষণা উচ্চারণ করে বলুন,
«لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ»
“আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি এক, তাঁর কোনো শরীক নেই, তাঁর জন্য রাজত্ব এবং তাঁর জন্য সমস্ত প্রশংসা, আর তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২১৮।]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
«خَيْرُ الدُّعَاءِ دُعَاءُ يَوْمِ عَرَفَةَ، وَخَيْرُ مَا قُلْتُ أَنَا وَالنَّبِيُّونَ مِنْ قَبْلِي : لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ» .
“সর্বোত্তম দো‘আ হচ্ছে আরাফার দো‘আ, আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নবীগণের সর্বোত্তম কথা হল:
«لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ»
“আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি এক, তাঁর কোনো শরীক নেই, তাঁর জন্য রাজত্ব এবং তাঁর জন্য সমস্ত প্রশংসা, আর তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান”। [তিরমিযী, হাদীস নং ৩৫৮৫, আলবানী রহ. হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। দো‘আটি সহীহ মুসলিমে এসেছে, হাদীস নং ১২১৮।]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,
«أَحَبُّ الْكَلَامِ إِلَى اللهِ أَرْبَعٌ : سُبْحَانَ اللهِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ»
আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় বাক্য চারটি, তা হলো,
«سبحان الله، والحمد لله، ولا إله إلا الله، والله أكبر» [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২১৩৭।]
সূর্যাস্ত পর্যন্ত দো‘আ ও যিকিরে মশগুল থাকুন।
চতুর্থত: মুযদালিফায় রাত্রিযাপন
১- সূর্যাস্তের পর ধীরে-সুস্থে-শান্তভাবে মুযদালিফা অভিমুখে রওয়ানা হোন। সেখানে পৌঁছে ইশার ওয়াক্তে এক আযান ও দুই ইকামতে মাগরিব ও ইশার সালাত কসর করে আদায় করুন। সুন্নত আদায় করতে হবে না। মুযদালিফায় রাত্রিযাপন ওয়াজিব। আওয়াল ওয়াক্তে ফজর সালাত আদায় করুন। সালাত আদায়ান্তে মাশআরে হারামে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে দুই হাত উঠিয়ে আল্লাহকে ডাকুন। খুব দীন-হীন হয়ে তাঁর করুণা প্রার্থনা করুন। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার ও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলে তাঁর প্রশংসা করুন, বড়ত্ব ও একত্ববাদের স্বীকৃতি দিন। মুযদালিফা পুরোটাই মাশআর। দুর্বলদের জন্য মধ্য রাতের পর মুযদালিফা ত্যাগের অনুমতি আছে।
পঞ্চমত: কঙ্কর নিক্ষেপ
১- সূর্যোদয়ের সামান্য পূর্বে চারিদিক ফর্সা হয়ে গেলে মুযদালিফা হতে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় শান্তভাবে মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হোন। যাওয়ার পূর্বে বুটের দানার মতো ছোট ছোট কঙ্কর কুড়িয়ে নিতে পারেন। মিনায় পৌঁছে প্রথমে বড় জামরায় সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করুন। মিনা ডানে আর মক্কা বামে রেখে দাঁড়ান। অতঃপর আল্লাহু আকবার বলে সাত বারে সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করে নির্ধারিত গর্তে ফেলুন। কোনো কঙ্কর গর্তে না পড়লে এর পরিবর্তে আরেকটি নিক্ষেপ করতে হবে। কঙ্কর নিক্ষেপের সাথে সাথে তালবিয়া বন্ধ করে দিন। কঙ্কর সূর্যোদয়ের পর থেকে শুরু করে পরবর্তী রাত পর্যন্ত নিক্ষেপ করা যায়।
ষষ্ঠত: হাদী জবাই
ঈদের দিনগুলোর যে কোনো দিন হাদী জবাই করুন। তা হতে নিজে খান এবং দরিদ্রদের দান করুন। নিজে জবাই না করে অপরকে উকিল বানাতে পারেন। সে ক্ষেত্রে যার উপর আপনার আস্থা হয় তাকে কিংবা স্বীকৃত কোনো সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়ে হাদির মূল্য বাবদ নগদ অর্থ হস্তান্তর করতে পারেন। হাদী জবাইয়ের আর্থিক সঙ্গতি না থাকলে ১০টি সাওম পালন করুন।। ৩টি হজে আর অবশিষ্ট ৭টি নিজ পরিজনের নিকট প্রত্যাবর্তনের পর। নারী হজযাত্রী এ ক্ষেত্রে পুরুষের ন্যায়। হাদী জবাই ক্বিরান ও তামাত্তু হজকারীর ওপর ওয়াজিব। ইফরাদ হজকারীর জন্য হাদী জবাই আবশ্যক নয়।
সপ্তমত: মাথা মুণ্ডন
১- পূর্ণ মাথার চুল মুণ্ডন করে মাথা ন্যাড়া করুন। অথবা চুল ছোট করুন। মুণ্ডন করা উত্তম। নারীরা সর্বাবস্থায় চুলের গোছা হতে এক কড়া পরিমান চুল কাটবেন। তাদের ক্ষেত্রে মুণ্ডন নেই। অনেককে দেখা যায় মাথার কিছু অংশের চুল কেটে অবশিষ্ট অংশ রেখে দেয়। এর মাধ্যমে কসরের বিধান আদায় হবে না। বরং পূর্ণ মাথার চুলই কাটতে হবে। কেননা কসর (চুল কর্তন) হলক (মুণ্ডন)-এর স্থলাভিষিক্ত। আর পূর্ণ মাথার চুল ফেলে দিলেই কেবল হলক সাধিত হয়।
২- হলকের পর গোসল করে সাধারণ পোশাক পরিধান করুন। সু-গন্ধি মাখুন। ইহরামের কারণে যা কিছু হারাম হয়ে গিয়েছিল এখন থেকে স্ত্রী ব্যতীত সব কিছুই হালাল।
অষ্টমত: তাওয়াফ ও সাঈ
১- মক্কার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিন। ওমরাতে বর্ণিত পদ্ধতিতে (রমল ও ইজতিবা ব্যতীত) পবিত্র কা‘বা সাতবার প্রদক্ষিণ করে তাওয়াফ করুন। আর সাফা মারওয়ার মাঝে সাতবার সাঈ করুন। তাওয়াফ ও সাঈ সম্পন্ন করার পর স্ত্রীও হালাল হয়ে যাবে। তাওয়াফ-সাঈ এদিন কষ্টকর মনে হলে আইয়ামে তাশরিকের যে কোনো দিন আদায় করতে পারেন। তা-ও যদি সম্ভব না হয় তাহলে যিলহজ মাসের যে কোনো দিন সেরে নিলেই হবে।
২- ঈদের দিনের আমল চতুষ্টয়ের মাঝে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সুন্নত। প্রথমে বড় জামরার কঙ্কর নিক্ষেপ, এরপর হাদী জবাই, তারপর মাথা মুণ্ডন এবং সর্বশেষ তাওয়াফে ইফাযা। আর তামাত্তুকারীর জন্য তাওয়াফের পর সাঈ।
৩- আপনি যদি ধারাবাহিকতা লঙ্ঘন করে আমলগুলো আগে পরে করে ফেলেন। তাহলে সমস্যা নেই। কারণ এ ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড় দিয়েছেন। সাহাবদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন। ( لا حرج، لا حرج ) অর্থাৎ কোনো সমস্যা নেই।
নবমত: মিনায় রাত্রিযাপন ও কঙ্কর নিক্ষেপ
১- ঈদের দিনগুলোয় মিনায় রাত্রিযাপন করা ওয়াজিব। তাই আপনি তাওয়াফ শেষ করে মিনায় ফিরে আসুন।
২- কঙ্কর নিক্ষেপ করুন। ১১, ১২ ও ১৩ তারিখের কঙ্কর নিক্ষেপের সময় হচ্ছে জোহরের ওয়াক্ত হবার পর থেকে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত। প্রয়োজন বশত: রাতেও মারা যায়।
৩- ১১ তারিখ তিন জামরায় ৭টি করে ২১টি কঙ্কর নিক্ষেপ করুন। ছোট জামরা থেকে শুরু করুন। কঙ্কর মিনা হতে সংগ্রহ করতে পারেন। ছোট জামরায় ( মিনা ডান পাশে ও মক্কা বাম পাশে রেখে দাঁড়িয়ে) আল্লাহু আকবার বলে সাত বারে ৭টি কঙ্কর নিক্ষেপ করুন। এর পর কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে হাত উঠিয়ে আল্লাহর নিকট দো‘আ করুন।
৪- অতঃপর মধ্য জামরায় ছোট জামরার ন্যায় ৭টি কঙ্কর মারুন এবং দো‘আ করুন।
৫- সবশেষে বড় জামরায় একই নিয়মে ( মিনা ডান পাশে ও মক্কা বাম পাশে রেখে দাঁড়িয়ে) ৭টি কঙ্কর নিক্ষেপ করুন। বড় জামরাতে পাথর নিক্ষেপের পর দো‘আর জন্য আর দাঁড়াবেন না।
৬- ঈদের তৃতীয় দিন অর্থাৎ ১২ যিলহজ ১১ যিল হজের ন্যায় তিন জামরাতে ৭টি করে ২১টি পাথর নিক্ষেপ করুন। ছোট ও মধ্য জামরাতে নিক্ষেপের পর দো‘আ করুন। জামরায়ে আকাবাতে নিক্ষেপের পর আর দো‘আ নেই। এবার আপনি ইচ্ছা করলে মিনা ছেড়ে চলে যেতে পারেন। তবে সূর্যাস্তের পূর্বেই আপনাকে রওয়ানা দিয়ে মিনা ত্যাগ করতে হবে। রওয়ানা দেওয়ার আগেই সূর্য অস্তমিত হয়ে গেলে সে রাতও আপনাকে মিনায় অবস্থান করে পরদিন জোহরের পর তিন জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব হবে। আর এটিই উত্তম। অর্থাৎ ১২ তারিখ না গিয়ে ১৩ তারিখ অবস্থান করে পাথর মেরে তাখির করে যাওয়াই উত্তম। নবীজী তাই করেছেন।
৭- মাজুর-অক্ষমদের জন্য ঈদের দ্বিতীয় দিনের রমি (কঙ্কর নিক্ষেপ) তৃতীয় দিনে আর তৃতীয় দিনেরটি চতুর্থ দিনে বিলম্বিত করা জায়েয। দুর্বল, অসুস্থ নারী-পুরুষ ও শিশুদের পক্ষে অপরকে নিক্ষেপের জন্য উকিল বানানোও জায়েয আছে।
দশমত: বিদায়ী তাওয়াফ
১- হায়েয ও নিফাসগ্রস্ত নারী ব্যতীত দূর থেকে আসা সকল হজযাত্রীদের জন্য বিদায়ি তাওয়াফ ওয়াজিব। বিদায়ি তাওয়াফ সম্পন্ন করেই তাদেরকে মক্কা ত্যাগ করতে হবে। না হলে দম দিতে হবে। অনুরূপভাবে কেউ পাথর নিক্ষেপ কিংবা মিনায় রাত্রিযাপন ত্যাগ করলেও পশু জবাই করে দম দিতে হবে।
হারাম থেকে বের হবার সময়
«اللهم صل على محمد اللهم إني أسألك من فضلك» .
“হে আল্লাহ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন, হে আল্লাহ আমি আপনার অনুগ্রহ কামনা করি”। [হাদীসের দ্বিতীয় অংশ সহীহ মুসলিমে রয়েছে, হাদীস নং ৭১৩। আবূ দাউদ, হাদীস নং ৪৬৫, আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
বলে বাম পা দিয়ে বের হোন। সফরের প্রাক্কালে নির্ধারিত দো‘আটি পাঠ করতে ভুল করবেন না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফাতে একটি খুৎবা প্রদান করেছিলেন, তাতে তিনি বলেছিলেন,
«إن دماءكم وأموالكم حرام عليكم ، كحرمة يومكم هذا، في شهركم هذا، في بلدكم هذا ، ألا كل شئ من أمر الجاهلية تحت قدمي موضوع، ودماء الجاهلية موضوعة، وإن أول دم أضع من دمائنا دم ابن ربيعة بن الحارث كان مسترضعاً في بني سعد فقتلته هذيل وربا الجاهلية موضوع، وأول ربا أضع ربانا : ربا عباس بن عبدالمطلب فإنه موضوع كله، فاتقوا الله في النساء، فإنكم أخذتموهن بأمان الله، واستحللتم فروجهن بكلمة الله، ولكم عليهن أن لا يوطئن فرشكم أحداً تكرهونه، فإن فعلن ذلك فأضربوهن ضرباً غير مبرح ( شديد ) ، ولهن عليكم رزقهن، وكسوتهن بالمعروف .
وقد تركت فيكم ما لن تضلوا بعده إن اعتصمتم به كتاب الله، وأنتم تسألون عني، فما أنتم قائلون ؟ )
قالوا : نشهد أنك قد بلغت وأديت ونصحت .
فقال : بأصبعه السبابة يرفعها إلى السماء، وينكتها ( يميلها ) إلى الناس . ( اللهم أشهد، اللهم أشهد، اللهم أشهد ).
وقال صلى الله عليه وسلم عند الرمي يوم النحر : ( لتأخذوا عني مناسككم ، فإني لا أدري لعلي لا أحج بعد حجتي هذه ).
وقال أيضاً : ( ويحكم أو قال ويلكم لا ترجعوا بعدي كفاراً يضرب بعضكم رقاب بعض )».
“নিশ্চয় তোমাদের রক্ত (জীবন) ও সম্পদ তোমাদের উপর হারাম (সম্মানিত) যেমনি করে তোমাদের এই শহরে তোমাদের এই মাসে তোমাদের এই দিনটি হারাম। শুনে নাও! জাহেলি যুগের প্রতিটি বিষয় আমার পায়ের নিচে রেখে দেওয়া হল। (অর্থাৎ বাতিল করা হল) জাহেলি যুগের রক্তপাত (সংক্রান্ত দেনা-পাওনা) সব বাতিল। সর্ব প্রথম রক্ত যা আমি আমাদের রক্ত হতে রহিত করছি, রবি‘আ ইবনুল হারেছের বেটার রক্ত। -সে বনি সা‘আদে দুগ্ধপায়ী ছিল, হোযাইল গোত্রের লোকজন তাকে হত্যা করে- জাহেলি যুগের সব সুদ বাতিল। সর্ব প্রথম সুদ যা আমাদের (পাওনা) সুদ হতে আমি বাতিল করছি, আব্বাস ইবন আব্দুল মুত্তালিবের সুদ। সেগুলো সবই বাতিল। নারীদের ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা তাদেরকে আল্লাহর (প্রদত্ত) নিরাপত্তায় গ্রহণ করেছ। তাদের যৌনাঙ্গ হালাল হিসাবে পেয়েছ আল্লাহর কালিমার মাধ্যমে অর্থাৎ তার হুকুমে। তাদের উপর তোমাদের (প্রাপ্য) অধিকার হচ্ছে, তোমরা যাদের অপছন্দ কর তারা তাদেরকে তোমাদের বিছানায় জায়গা দিবে না। যদি তারা তা করে তাহলে তাদেরকে হালকা প্রহার করতে পার। আর তোমাদের ওপর তাদের (পাওনা) অধিকার হচ্ছে, যথাযথ পন্থায় তোমরা তাদের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করবে।
আমি তোমাদের মাঝে এমন বস্তু রেখে যাচ্ছি যদি তোমরা তা মজবুতভাবে ধারণ কর তাহলে কখনও পথভ্রষ্ট হবে না। (আর তা হচ্ছে) আল্লাহর কিতাব। আমার বিষয়ে তোমাদেরকে প্রশ্ন করা হবে। তখন তোমরা কি বলবে?
লোকেরা বলল: আমরা সাক্ষ্য দেব, আপনি পৌঁছিয়েছেন, আদায় করেছেন এবং হিতাকাঙ্খিতা করেছেন।
তখন তিনি আকাশ পানে তর্জনী উঁচিয়ে এবং লোকদের দিকে হেলিয়ে বললেন: হে আল্লাহ তুমি সাক্ষী থাক, হে আল্লাহ তুমি সাক্ষী থাক, হে আল্লাহ তুমি সাক্ষী থাক।
কুরবানীর দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাথর নিক্ষেপের স্থানে বলেছেন,
«لتأخذوا عني مناسككم، فإني لا أدري لعلي لا أحج بعد حجتي هذه» .
“তোমরা আমার নিকট হতে তোমাদের হজের মাসলা-মাসায়েল শিখে নাও, কেননা আমার জানা নেই, হতে পারে আমি এই হজের পর আর হজ করতে পারব না”।
«ويحكم أو قال ويلكم لا ترجعوا بعدي كفاراً يضرب بعضكم رقاب بعض» .
তিনি আরও বলেছেন, আমার (বিদায়ের) পর তোমরা কাফেরে রূপান্তরিত হয়ে যেওনা যে একে অপরের গ্রীবা কর্তন করবে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২১৮। হাদীসটি সহীহ বর্ণনায় অনেক কিতাবেই নানা শব্দে এসেছে।]
«إن دماءكم وأموالكم حرام عليكم ، كحرمة يومكم هذا، في شهركم هذا، في بلدكم هذا ، ألا كل شئ من أمر الجاهلية تحت قدمي موضوع، ودماء الجاهلية موضوعة، وإن أول دم أضع من دمائنا دم ابن ربيعة بن الحارث كان مسترضعاً في بني سعد فقتلته هذيل وربا الجاهلية موضوع، وأول ربا أضع ربانا : ربا عباس بن عبدالمطلب فإنه موضوع كله، فاتقوا الله في النساء، فإنكم أخذتموهن بأمان الله، واستحللتم فروجهن بكلمة الله، ولكم عليهن أن لا يوطئن فرشكم أحداً تكرهونه، فإن فعلن ذلك فأضربوهن ضرباً غير مبرح ( شديد ) ، ولهن عليكم رزقهن، وكسوتهن بالمعروف .
وقد تركت فيكم ما لن تضلوا بعده إن اعتصمتم به كتاب الله، وأنتم تسألون عني، فما أنتم قائلون ؟ )
قالوا : نشهد أنك قد بلغت وأديت ونصحت .
فقال : بأصبعه السبابة يرفعها إلى السماء، وينكتها ( يميلها ) إلى الناس . ( اللهم أشهد، اللهم أشهد، اللهم أشهد ).
وقال صلى الله عليه وسلم عند الرمي يوم النحر : ( لتأخذوا عني مناسككم ، فإني لا أدري لعلي لا أحج بعد حجتي هذه ).
وقال أيضاً : ( ويحكم أو قال ويلكم لا ترجعوا بعدي كفاراً يضرب بعضكم رقاب بعض )».
“নিশ্চয় তোমাদের রক্ত (জীবন) ও সম্পদ তোমাদের উপর হারাম (সম্মানিত) যেমনি করে তোমাদের এই শহরে তোমাদের এই মাসে তোমাদের এই দিনটি হারাম। শুনে নাও! জাহেলি যুগের প্রতিটি বিষয় আমার পায়ের নিচে রেখে দেওয়া হল। (অর্থাৎ বাতিল করা হল) জাহেলি যুগের রক্তপাত (সংক্রান্ত দেনা-পাওনা) সব বাতিল। সর্ব প্রথম রক্ত যা আমি আমাদের রক্ত হতে রহিত করছি, রবি‘আ ইবনুল হারেছের বেটার রক্ত। -সে বনি সা‘আদে দুগ্ধপায়ী ছিল, হোযাইল গোত্রের লোকজন তাকে হত্যা করে- জাহেলি যুগের সব সুদ বাতিল। সর্ব প্রথম সুদ যা আমাদের (পাওনা) সুদ হতে আমি বাতিল করছি, আব্বাস ইবন আব্দুল মুত্তালিবের সুদ। সেগুলো সবই বাতিল। নারীদের ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা তাদেরকে আল্লাহর (প্রদত্ত) নিরাপত্তায় গ্রহণ করেছ। তাদের যৌনাঙ্গ হালাল হিসাবে পেয়েছ আল্লাহর কালিমার মাধ্যমে অর্থাৎ তার হুকুমে। তাদের উপর তোমাদের (প্রাপ্য) অধিকার হচ্ছে, তোমরা যাদের অপছন্দ কর তারা তাদেরকে তোমাদের বিছানায় জায়গা দিবে না। যদি তারা তা করে তাহলে তাদেরকে হালকা প্রহার করতে পার। আর তোমাদের ওপর তাদের (পাওনা) অধিকার হচ্ছে, যথাযথ পন্থায় তোমরা তাদের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করবে।
আমি তোমাদের মাঝে এমন বস্তু রেখে যাচ্ছি যদি তোমরা তা মজবুতভাবে ধারণ কর তাহলে কখনও পথভ্রষ্ট হবে না। (আর তা হচ্ছে) আল্লাহর কিতাব। আমার বিষয়ে তোমাদেরকে প্রশ্ন করা হবে। তখন তোমরা কি বলবে?
লোকেরা বলল: আমরা সাক্ষ্য দেব, আপনি পৌঁছিয়েছেন, আদায় করেছেন এবং হিতাকাঙ্খিতা করেছেন।
তখন তিনি আকাশ পানে তর্জনী উঁচিয়ে এবং লোকদের দিকে হেলিয়ে বললেন: হে আল্লাহ তুমি সাক্ষী থাক, হে আল্লাহ তুমি সাক্ষী থাক, হে আল্লাহ তুমি সাক্ষী থাক।
কুরবানীর দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাথর নিক্ষেপের স্থানে বলেছেন,
«لتأخذوا عني مناسككم، فإني لا أدري لعلي لا أحج بعد حجتي هذه» .
“তোমরা আমার নিকট হতে তোমাদের হজের মাসলা-মাসায়েল শিখে নাও, কেননা আমার জানা নেই, হতে পারে আমি এই হজের পর আর হজ করতে পারব না”।
«ويحكم أو قال ويلكم لا ترجعوا بعدي كفاراً يضرب بعضكم رقاب بعض» .
তিনি আরও বলেছেন, আমার (বিদায়ের) পর তোমরা কাফেরে রূপান্তরিত হয়ে যেওনা যে একে অপরের গ্রীবা কর্তন করবে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২১৮। হাদীসটি সহীহ বর্ণনায় অনেক কিতাবেই নানা শব্দে এসেছে।]
এই খুৎবায় আমাদের জন্য অনেক শিক্ষনীয় বিষয় রয়েছে। সম্মানিত পাঠকদের উদ্দেশ্যে আমরা এখানে অল্প কয়েকটি উল্লেখ করছি,
১- নিরপরাধ ব্যক্তির রক্ত ঝরানো এবং অন্যায়ভাবে তাদের সম্পদ কেড়ে নেয়া শরিয়তের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ ও হারাম। মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করণে এটি ইসলামের একটি যুগান্তকারী বিধান। এর মাধ্যমে মানবতার কল্যাণ সাধনে ব্যর্থ, অসার সমাজতন্ত্রের বাতুলতা প্রকৃষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে। সমাজতন্ত্র নাস্তিক্যবাদী কমিউনিজমেরই একটি শাখা। ইতিমধ্যেই বিশ্বমানবতা সমাজতন্ত্রের ব্যর্থতা ও অকার্যকারিতা সম্পর্কে ধারণ লাভ করে ফেলেছে। এবং তার অভিশাপ হতে বের হয়ে আসার জন্য সংগ্রাম শুরু করে দিয়েছে।
২- জাহেলি যুগের যাবতীয় কর্মকাণ্ড ও রক্তপাত বাতিল করা হয়েছে। সে সময়ে সঙ্ঘটিত হত্যাযজ্ঞের কারণে এখন আর কেসাস নেওয়া হবে না।
৩- সুদকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। (প্রদেয়) মূলধনের অতিরিক্ত আদায়কৃত অর্থই হচ্ছে সুদ। পরিমাণে কম হোক কিংবা বেশি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَإِن تُبۡتُمۡ فَلَكُمۡ رُءُوسُ أَمۡوَٰلِكُمۡ ٢٧٩﴾ [ البقرة : ٢٧٩ ]
“যদি তোমরা তাওবা কর তাহলে তোমাদের মূলধন তোমরা ফেরত পাবে”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৭৯]
৪- সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে বাধা প্রদানকারীর জন্য জরুরি হচ্ছে, প্রথমে নিজে ও নিজ আপনজনের মাধ্যমে উক্ত কাজের বাস্তবায়ন শুরু করা।
৫- এই খুৎবা আমাদেরকে নারীর অধিকার বিষয়ে সতর্ক হতে সাহায্য করে। তাদের প্রতি যত্নবান ও তাদের হিতাকাঙ্খী হতে উৎসাহিত করে। তাদের খোর-পোশের ব্যাপারে গুরুত্বদানে প্রণোদিত করে। নারীদের প্রতি সদয় ও তাদের অধিকার আদায়ে গুরুত্বদান বিষয়ে বহু সহিহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এবং অবহেলাকারীদেরকে কঠিন শাস্তির ভয়ও দেখানো হয়েছে।
৬- শরী‘আত সমর্থিত পন্থায় বিবাহের মাধ্যমে নারীর যৌনাঙ্গ ব্যবহার হালাল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَٱنكِحُواْ مَا طَابَ لَكُم مِّنَ ٱلنِّسَآءِ ٣ ﴾ [ النساء : ٣ ]
“তোমরা বিয়ে কর নারীদের মাঝে যাদের তোমাদের ভালো লাগে”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩]
৭- স্বামীর পছন্দ নয় এমন ব্যক্তিদের তার বাড়িতে প্রবেশ করতে দেওয়া স্ত্রীর জন্য জায়েয নয়। সে সব লোক অপরিচিত হোক কিংবা মহিলা। এমনকি স্ত্রীর মাহরাম হলেও না। এই নিষিদ্ধতা উপরোক্ত সকলকেই শামিল করে। ইমাম নববী এমনটিই বলেছেন।
৮- এই নিষেধাজ্ঞা স্ত্রী অমান্য করলে স্বামীর পক্ষে তাকে হালকা প্রহার করার অনুমতি আছে, তবে কঠিন শাস্তি দিতে পারবে না। অনুরূপভাবে ভৎসণা ও চেহারায় আঘাত করতে পারবে না। কারণ, এটি আল্লাহর সৃষ্টি। তাছাড়া এ বিষয়ে হাদীসে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এই শাস্তি প্রদানের অধিকার নারীর উপর পুরুষের তত্ত্ববধান ও কর্তৃত্বের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ٱلرِّجَالُ قَوَّٰمُونَ عَلَى ٱلنِّسَآءِ بِمَا فَضَّلَ ٱللَّهُ بَعۡضَهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖ وَبِمَآ أَنفَقُواْ مِنۡ أَمۡوَٰلِهِمۡۚ ٣٤﴾ [ النساء : ٣٤ ]
“পুরুষরা নারীদের তত্ত্ববধায়ক, এ কারণে যে, আল্লাহ তাদের একের উপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং যেহেতু তারা নিজেদের সম্পদ থেকে ব্যয় করে”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩৪]
৯- খুৎবায় মুসলিমদেরকে আল্লাহ তা‘আলার কিতাব মহাগ্রন্থ আল-কুরআনকে আকড়ে ধরার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। যাতে রয়েছে তাদের ইজ্জত এবং সাহায্য প্রাপ্তির নিশ্চিয়তা। আরো উৎসাহিত করা হয়েছে সেই কোরআনের ব্যাখ্যা রাসূলুল্লাহর হাদীসকে আকড়ে ধরার জন্য। চলমান সময়ে বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের দুর্বলতার একটিই মাত্র কারণ, তারা কোরআন ও সুন্নাহকে ছেড়ে দিয়েছে। বাস্তব জীবনের কোনো ক্ষেত্রেই কুরআন-সুন্নাহর বিধানের অনুবর্তন নেই। সত্য কথা হল, বিশ্বমুসলিম কোরআন-সুন্নাহর দিকে ফিরে না আসলে আল্লাহর পক্ষ হতে কোনোরূপ সাহায্যের নিশ্চয়তা নেই।
১০- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যথাযথভাবে রিসালত পৌঁছিয়েছেন, আমানত আদায় করেছেন এবং উম্মতের হিতাকাঙ্খিতা করেছেন মর্মে সাহাবীদের সাক্ষ্য প্রদান।
১১- আল্লাহ তা‘আলা ‘আরশে অবস্থান করেন, এই খুৎবায় বিষয়টি খুবই প্রকৃষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ তর্জনী আকাশ পানে উঠিয়ে আল্লাহকে সাক্ষী করেছেন যে তিনি রিসালাত পৌঁছিয়েছেন।
১২- হজসহ যাবতীয় আমল সম্পাদনের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ গ্রহণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
১৩- খুৎবাতে প্রচ্ছন্নভাবে রাসূলুল্লাহর বিদায়ের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
১৪- মুসলিমদেরকে পরস্পর মারামারি-হানাহানি হতে সতর্ক করা হয়েছে। এবং একে কুফরি বলে অভহিত করা হয়েছে। এটি আমলি কুফর। এ কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে না। এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী-
«سِبَابُ المُسْلِمِ فُسُوقٌ، وَقِتَالُهُ كُفْرٌ»
“মুসলিমকে গাল-মন্দ করা ফাসেকী আর হত্যা করা কুফুরী”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৮, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৪।]-এর মত।
কোনো কোনো লেখক এখানে এসে মারাত্মক ভুল করেছেন। তারা (কর্মগত) আমলি কুফরকে (বিশ্বাসগত) ইতেকাদি কুফরের ন্যায় জ্ঞান করে উভয়ের একই হুকুম নির্ধারণ করেছেন। আমলি কুফরের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ইসলাম হতে খারিজ করে দিয়েছেন। এটি মারাত্মক ভুল। ইসলাম হতে খারিজ করে কেবল ইতেকাদী কুফর। আর আমলি কুফর কবিরা গুনাহের অন্তর্ভূক্ত।
১- নিরপরাধ ব্যক্তির রক্ত ঝরানো এবং অন্যায়ভাবে তাদের সম্পদ কেড়ে নেয়া শরিয়তের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ ও হারাম। মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করণে এটি ইসলামের একটি যুগান্তকারী বিধান। এর মাধ্যমে মানবতার কল্যাণ সাধনে ব্যর্থ, অসার সমাজতন্ত্রের বাতুলতা প্রকৃষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে। সমাজতন্ত্র নাস্তিক্যবাদী কমিউনিজমেরই একটি শাখা। ইতিমধ্যেই বিশ্বমানবতা সমাজতন্ত্রের ব্যর্থতা ও অকার্যকারিতা সম্পর্কে ধারণ লাভ করে ফেলেছে। এবং তার অভিশাপ হতে বের হয়ে আসার জন্য সংগ্রাম শুরু করে দিয়েছে।
২- জাহেলি যুগের যাবতীয় কর্মকাণ্ড ও রক্তপাত বাতিল করা হয়েছে। সে সময়ে সঙ্ঘটিত হত্যাযজ্ঞের কারণে এখন আর কেসাস নেওয়া হবে না।
৩- সুদকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। (প্রদেয়) মূলধনের অতিরিক্ত আদায়কৃত অর্থই হচ্ছে সুদ। পরিমাণে কম হোক কিংবা বেশি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَإِن تُبۡتُمۡ فَلَكُمۡ رُءُوسُ أَمۡوَٰلِكُمۡ ٢٧٩﴾ [ البقرة : ٢٧٩ ]
“যদি তোমরা তাওবা কর তাহলে তোমাদের মূলধন তোমরা ফেরত পাবে”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৭৯]
৪- সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে বাধা প্রদানকারীর জন্য জরুরি হচ্ছে, প্রথমে নিজে ও নিজ আপনজনের মাধ্যমে উক্ত কাজের বাস্তবায়ন শুরু করা।
৫- এই খুৎবা আমাদেরকে নারীর অধিকার বিষয়ে সতর্ক হতে সাহায্য করে। তাদের প্রতি যত্নবান ও তাদের হিতাকাঙ্খী হতে উৎসাহিত করে। তাদের খোর-পোশের ব্যাপারে গুরুত্বদানে প্রণোদিত করে। নারীদের প্রতি সদয় ও তাদের অধিকার আদায়ে গুরুত্বদান বিষয়ে বহু সহিহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এবং অবহেলাকারীদেরকে কঠিন শাস্তির ভয়ও দেখানো হয়েছে।
৬- শরী‘আত সমর্থিত পন্থায় বিবাহের মাধ্যমে নারীর যৌনাঙ্গ ব্যবহার হালাল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَٱنكِحُواْ مَا طَابَ لَكُم مِّنَ ٱلنِّسَآءِ ٣ ﴾ [ النساء : ٣ ]
“তোমরা বিয়ে কর নারীদের মাঝে যাদের তোমাদের ভালো লাগে”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩]
৭- স্বামীর পছন্দ নয় এমন ব্যক্তিদের তার বাড়িতে প্রবেশ করতে দেওয়া স্ত্রীর জন্য জায়েয নয়। সে সব লোক অপরিচিত হোক কিংবা মহিলা। এমনকি স্ত্রীর মাহরাম হলেও না। এই নিষিদ্ধতা উপরোক্ত সকলকেই শামিল করে। ইমাম নববী এমনটিই বলেছেন।
৮- এই নিষেধাজ্ঞা স্ত্রী অমান্য করলে স্বামীর পক্ষে তাকে হালকা প্রহার করার অনুমতি আছে, তবে কঠিন শাস্তি দিতে পারবে না। অনুরূপভাবে ভৎসণা ও চেহারায় আঘাত করতে পারবে না। কারণ, এটি আল্লাহর সৃষ্টি। তাছাড়া এ বিষয়ে হাদীসে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এই শাস্তি প্রদানের অধিকার নারীর উপর পুরুষের তত্ত্ববধান ও কর্তৃত্বের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ٱلرِّجَالُ قَوَّٰمُونَ عَلَى ٱلنِّسَآءِ بِمَا فَضَّلَ ٱللَّهُ بَعۡضَهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖ وَبِمَآ أَنفَقُواْ مِنۡ أَمۡوَٰلِهِمۡۚ ٣٤﴾ [ النساء : ٣٤ ]
“পুরুষরা নারীদের তত্ত্ববধায়ক, এ কারণে যে, আল্লাহ তাদের একের উপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং যেহেতু তারা নিজেদের সম্পদ থেকে ব্যয় করে”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩৪]
৯- খুৎবায় মুসলিমদেরকে আল্লাহ তা‘আলার কিতাব মহাগ্রন্থ আল-কুরআনকে আকড়ে ধরার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। যাতে রয়েছে তাদের ইজ্জত এবং সাহায্য প্রাপ্তির নিশ্চিয়তা। আরো উৎসাহিত করা হয়েছে সেই কোরআনের ব্যাখ্যা রাসূলুল্লাহর হাদীসকে আকড়ে ধরার জন্য। চলমান সময়ে বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের দুর্বলতার একটিই মাত্র কারণ, তারা কোরআন ও সুন্নাহকে ছেড়ে দিয়েছে। বাস্তব জীবনের কোনো ক্ষেত্রেই কুরআন-সুন্নাহর বিধানের অনুবর্তন নেই। সত্য কথা হল, বিশ্বমুসলিম কোরআন-সুন্নাহর দিকে ফিরে না আসলে আল্লাহর পক্ষ হতে কোনোরূপ সাহায্যের নিশ্চয়তা নেই।
১০- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যথাযথভাবে রিসালত পৌঁছিয়েছেন, আমানত আদায় করেছেন এবং উম্মতের হিতাকাঙ্খিতা করেছেন মর্মে সাহাবীদের সাক্ষ্য প্রদান।
১১- আল্লাহ তা‘আলা ‘আরশে অবস্থান করেন, এই খুৎবায় বিষয়টি খুবই প্রকৃষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ তর্জনী আকাশ পানে উঠিয়ে আল্লাহকে সাক্ষী করেছেন যে তিনি রিসালাত পৌঁছিয়েছেন।
১২- হজসহ যাবতীয় আমল সম্পাদনের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ গ্রহণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
১৩- খুৎবাতে প্রচ্ছন্নভাবে রাসূলুল্লাহর বিদায়ের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
১৪- মুসলিমদেরকে পরস্পর মারামারি-হানাহানি হতে সতর্ক করা হয়েছে। এবং একে কুফরি বলে অভহিত করা হয়েছে। এটি আমলি কুফর। এ কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে না। এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী-
«سِبَابُ المُسْلِمِ فُسُوقٌ، وَقِتَالُهُ كُفْرٌ»
“মুসলিমকে গাল-মন্দ করা ফাসেকী আর হত্যা করা কুফুরী”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৮, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৪।]-এর মত।
কোনো কোনো লেখক এখানে এসে মারাত্মক ভুল করেছেন। তারা (কর্মগত) আমলি কুফরকে (বিশ্বাসগত) ইতেকাদি কুফরের ন্যায় জ্ঞান করে উভয়ের একই হুকুম নির্ধারণ করেছেন। আমলি কুফরের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ইসলাম হতে খারিজ করে দিয়েছেন। এটি মারাত্মক ভুল। ইসলাম হতে খারিজ করে কেবল ইতেকাদী কুফর। আর আমলি কুফর কবিরা গুনাহের অন্তর্ভূক্ত।
১-আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلِلَّهِ عَلَى ٱلنَّاسِ حِجُّ ٱلۡبَيۡتِ مَنِ ٱسۡتَطَاعَ إِلَيۡهِ سَبِيلٗاۚ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٩٧ ﴾ [ ال عمران : ٩٧ ]
“সামর্থ্যবান মানুষের ওপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ করা ফরজ। আর যে কুফুরী করে, তবে আল্লাতো নিশ্চয় সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৯৭]
২- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«العُمْرَةُ إِلَى العُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا، وَالحَجُّ المَبْرُورُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلَّا الجَنَّةُ»
“এক ওমরা হতে অন্য ওমরা, এ দুয়ের মাঝে (সঙ্ঘটিত পাপের) জন্য কাফ্ফারা। আর মাবরূর হজের বিনিময় জান্নাত ভিন্ন অন্য কিছু নয়”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৭৭৩।]
৩- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
«من حج فلم يرفث ولم يفسق رجع من ذنوبه كيوم ولدته أمه»
“যে হজ করল এবং শরী‘আত অনুমতি দেয় না এমন কথা ও কাজ থেকে বিরত রইল, যৌনস্পর্শ রয়েছে এমন কাজ ও থেকেও বিরত থাকল, সে তার যাবতীয় পাপ থেকে মাতৃ-গর্ভ হতে ভূমিষ্ট হওয়ার দিনের মতো পবিত্র হয়ে ফিরে এল”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৫০, মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৭১৩৬, আল্লামা শুয়াইব আরনাউত হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
৪ তিনি আরও বলেছেন,
«خذوا عني مناسككم»
“তোমরা তোমাদের হজের মানাসিক (তথা বিধি-বাধান) আমার কাছ থেকে গ্রহণ কর”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২১৮, সুনানুল কুবরা লিল বাইহাকী, হাদীস নং ৯৫২৪।]
৫- হজ ও ওমরার যাবতীয় ব্যয় হালাল মাল হতে হওয়া আবশ্যক। যাতে তা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ اللهَ طَيِّبٌ لَا يَقْبَلُ إِلَّا طَيِّبًا»
“নিশ্চয় আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র ভিন্ন কবুল করেন না”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০১৫।]
৬- হজ মুসলিমদের জন্য একটি মহান মিলনমেলা। এর মাধ্যমে মুসলিম ভ্রাতৃবৃন্দের মাঝে পরিচয় ঘটে, হৃদ্যতা বৃদ্ধি পায়। পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমস্যাদি সমাধানের রাস্তা প্রশস্ত হয়। পার্থিব ও ধর্মীয় কল্যাণ লাভে সমর্থ হয়।
৭- ওমরার জন্য কোনো সময় নির্দিষ্ট করা নেই। বছরের যে কোনো সময়ই তা সম্পাদন করা যায়। তবে রমজান মাসে সম্পাদন করা উত্তম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«عُمرة في رمضان تعدل حجة»
“রমদানে সম্পাদিত ওমরা হজের সমান”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২৫৬।]
৮- মসজিদুল হারামে সম্পাদিত সালাত অন্যস্থানে সম্পাদিত সালাত হতে এক লক্ষগুণ বেশি উত্তম। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«صَلاَةٌ فِي مَسْجِدِي هَذَا خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ صَلاَةٍ فِيمَا سِوَاهُ، إِلَّا المَسْجِدَ الحَرَامَ»
“আমার এই মসজিদে (নববী) সম্পাদিত সালাত কা‘বা ব্যতীত অন্য সকল মসজিদের সালাত হতে এক হাজার গুণ বেশি উত্তম”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৯০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৯৪।]
তিনি আরও বলেন,
«وصلاة في المسجد الحرام أفضل من صلاة في مسجدي هذا بمائة صلاة»
“আর মসজিদুল হারামে সম্পাদিত সালাত আমার এই মসজিদে সম্পাদিত সালাত হতে একশ গুণ বেশি উত্তম”। [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৪১৩, আলবানী রহ. সমদটিকে দয়ীফ বলেছেন। মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ১৬১১৭, আল্লামা শুয়াইব আরনাউত সনদটিকে সহীহ বলেছেন।]
এক কথায় হজ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ রোকন। দুনিয়া ও আখিরাত ব্যাপী রয়েছে তার বহুবিধ কল্যাণ ও উপকারিতা। হে প্রিয় ভ্রাতৃবৃন্দ, সামর্থ্য থাকলে পাপী হয়ে মারা যাওয়ার পূর্বে তা সম্পাদন করে নিন। আর অশ্লীলতা, পাপাচার, ঝগড়া-বিবাদ ও যাবতীয় অন্যায়-অপরাধ থেকে বিরত থাকুন।
﴿وَلِلَّهِ عَلَى ٱلنَّاسِ حِجُّ ٱلۡبَيۡتِ مَنِ ٱسۡتَطَاعَ إِلَيۡهِ سَبِيلٗاۚ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٩٧ ﴾ [ ال عمران : ٩٧ ]
“সামর্থ্যবান মানুষের ওপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ করা ফরজ। আর যে কুফুরী করে, তবে আল্লাতো নিশ্চয় সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৯৭]
২- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«العُمْرَةُ إِلَى العُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا، وَالحَجُّ المَبْرُورُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلَّا الجَنَّةُ»
“এক ওমরা হতে অন্য ওমরা, এ দুয়ের মাঝে (সঙ্ঘটিত পাপের) জন্য কাফ্ফারা। আর মাবরূর হজের বিনিময় জান্নাত ভিন্ন অন্য কিছু নয়”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৭৭৩।]
৩- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
«من حج فلم يرفث ولم يفسق رجع من ذنوبه كيوم ولدته أمه»
“যে হজ করল এবং শরী‘আত অনুমতি দেয় না এমন কথা ও কাজ থেকে বিরত রইল, যৌনস্পর্শ রয়েছে এমন কাজ ও থেকেও বিরত থাকল, সে তার যাবতীয় পাপ থেকে মাতৃ-গর্ভ হতে ভূমিষ্ট হওয়ার দিনের মতো পবিত্র হয়ে ফিরে এল”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৫০, মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৭১৩৬, আল্লামা শুয়াইব আরনাউত হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
৪ তিনি আরও বলেছেন,
«خذوا عني مناسككم»
“তোমরা তোমাদের হজের মানাসিক (তথা বিধি-বাধান) আমার কাছ থেকে গ্রহণ কর”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২১৮, সুনানুল কুবরা লিল বাইহাকী, হাদীস নং ৯৫২৪।]
৫- হজ ও ওমরার যাবতীয় ব্যয় হালাল মাল হতে হওয়া আবশ্যক। যাতে তা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ اللهَ طَيِّبٌ لَا يَقْبَلُ إِلَّا طَيِّبًا»
“নিশ্চয় আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র ভিন্ন কবুল করেন না”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০১৫।]
৬- হজ মুসলিমদের জন্য একটি মহান মিলনমেলা। এর মাধ্যমে মুসলিম ভ্রাতৃবৃন্দের মাঝে পরিচয় ঘটে, হৃদ্যতা বৃদ্ধি পায়। পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমস্যাদি সমাধানের রাস্তা প্রশস্ত হয়। পার্থিব ও ধর্মীয় কল্যাণ লাভে সমর্থ হয়।
৭- ওমরার জন্য কোনো সময় নির্দিষ্ট করা নেই। বছরের যে কোনো সময়ই তা সম্পাদন করা যায়। তবে রমজান মাসে সম্পাদন করা উত্তম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«عُمرة في رمضان تعدل حجة»
“রমদানে সম্পাদিত ওমরা হজের সমান”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২৫৬।]
৮- মসজিদুল হারামে সম্পাদিত সালাত অন্যস্থানে সম্পাদিত সালাত হতে এক লক্ষগুণ বেশি উত্তম। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«صَلاَةٌ فِي مَسْجِدِي هَذَا خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ صَلاَةٍ فِيمَا سِوَاهُ، إِلَّا المَسْجِدَ الحَرَامَ»
“আমার এই মসজিদে (নববী) সম্পাদিত সালাত কা‘বা ব্যতীত অন্য সকল মসজিদের সালাত হতে এক হাজার গুণ বেশি উত্তম”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৯০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৯৪।]
তিনি আরও বলেন,
«وصلاة في المسجد الحرام أفضل من صلاة في مسجدي هذا بمائة صلاة»
“আর মসজিদুল হারামে সম্পাদিত সালাত আমার এই মসজিদে সম্পাদিত সালাত হতে একশ গুণ বেশি উত্তম”। [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৪১৩, আলবানী রহ. সমদটিকে দয়ীফ বলেছেন। মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ১৬১১৭, আল্লামা শুয়াইব আরনাউত সনদটিকে সহীহ বলেছেন।]
এক কথায় হজ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ রোকন। দুনিয়া ও আখিরাত ব্যাপী রয়েছে তার বহুবিধ কল্যাণ ও উপকারিতা। হে প্রিয় ভ্রাতৃবৃন্দ, সামর্থ্য থাকলে পাপী হয়ে মারা যাওয়ার পূর্বে তা সম্পাদন করে নিন। আর অশ্লীলতা, পাপাচার, ঝগড়া-বিবাদ ও যাবতীয় অন্যায়-অপরাধ থেকে বিরত থাকুন।
১- সর্ব প্রথম নিয়ত পরিশুদ্ধ করুন। কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই এ মহান কাজটি আপনি সম্পাদন করছেন মর্মে নিশ্চিত হোন। এ ছাড়া যাবতীয় ইচ্ছ পরিহার করুন। এবং হজ শুরুর সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ন্যায় বলুন।
«اللَّهُمَّ حَجَّةٌ لَا رِيَاءَ فِيهَا، وَلَا سُمْعَةَ»
“হে আল্লাহ! এ এমন হজ, যাতে কোনো প্রদর্শনেচ্ছা বা প্রচারেচ্ছা নেই”। [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৮৯০, আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
২- আপনার হজ যাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পাদিত হজের অনুকরণে হয় সে জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা ও সাধনা করুন। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«خذوا عني مناسككم»
“তোমরা তোমাদের হজের মানাসিক (তথা বিধি-বাধান) আমার কাছ থেকে গ্রহণ কর”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২১৮, সুনানুল কুবরা লিল বাইহাকী, হাদীস নং ৯৫২৪।]
৩- আপনার হজ কবুল হবে সে আশায় অশ্লীলতা, পাপাচার, অহেতুক ঝগড়া-বিবাদ হতে সম্পূর্ণ বিরত থাকুন।
৪- আল্লাহ ব্যতীত মৃত কারো নিকট সাহায্য প্রার্থনা-ফরিয়াদ করা হতে একেবারে বিরত থাকুন। কারণ এটি শির্ক, যা হজসহ যাবতীয় আমলকে নষ্ট করে দেয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿لَئِنۡ أَشۡرَكۡتَ لَيَحۡبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٦٥﴾ [ الزمر : ٦٤ ]
“তুমি যদি শির্ক কর, তাহলে অবশ্যই তোমার আমল নষ্ট হয়ে যাবে। আর তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে”। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৬৪]
৫- তাওয়াফ, সাঈ, কঙ্কর নিক্ষেপসহ যাবতীয় বিধান সম্পাদন কালে অন্য হজকারীদের প্রতি সদয় থাকুন। তাদের সুবিধা-অসুবিধার প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখুন। কনোভাবেই তাদের কষ্ট দেবেন না। তাদের কষ্ট হয় এমন সব পন্থা-পদ্ধতি পরিহার করুন। উচ্চ আওয়াজে দো‘আ, যিকির করে অপরের মনযোগ নষ্ট করবেন না। বিশেষ করে সম্মিলিত দো‘আ একেবারেই এড়িয়ে চলুন।
৬- হাজরে আসওয়াদ ইস্তিলাম করার জন্য অযথা ভিড় সৃষ্টি করে লোকদের কষ্ট দেওয়া হতে বিরত থাকুন। সেখানে অবস্থান করে তাওয়াফকে কষ্টসঙ্কুল করে তুলবেন না।
৭- তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার সাঈ চলা কালে সালাতের ইকামত হলে তাওয়াফ ও সাঈ বন্ধ রেখে সালাতে অংশগ্রহণ করুন। সাঈ চালু রেখে জামাত ত্যাগ করবেন না।
৮- মক্কায় অবস্থান কালে জামাতের প্রতি অধিক যত্নবান থাকবেন। বিশেষ করে হারামের জামাতের প্রতি।
৯- সম্মুখে যাবার জন্য মুসল্লিদের গর্দান মাড়িয়ে তাদের কষ্ট দেবেন না। যেখানে জায়গা পাবেন, বসে পড়বেন।
১০- উভয় হারামেও সালাতরত মুসল্লির সম্মুখ দিয়ে যাতায়াত করবেন না। এটি শয়তানের কাজ। তবে একান্ত প্রয়োজন হলে ভিন্ন কথা।
১১- মক্কায় অবস্থান কালে বেশি বেশি তাওয়াফ করুন। কারণ তাতে অনেক সাওয়াব রছেয়ে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«من طاف بالبيت سبعاً، وصلى ركعتين، كان كعتق رقبة»
“যে ব্যক্তি বায়তুল্লহকে সাতবার প্রদক্ষিণ করে তাওয়াফ করবে এবং দু’রাকাত সালাত আদায় করবে। তার এ কাজটি একটি গোলাম আযাদ করার সমতুল্য হবে”। [শু‘আবুল ঈমান লিল বাইহাকী, হাদীস নং ৩৭৫১।]
অর্থাৎ একটি তাওয়াফের পরিবর্তে তাকে একটি গোলাম মুক্ত করার সমপরিমাণ সাওয়াব দান করা হবে।
১২- কুরবানীর দিন আসার পূর্বে আপনার হাদী জবাই করবেন না। আর তার মূল্য সদকা করাও জায়েয হবে না।
১৩- আপনার হজ কবুল হবার নিদর্শন হলো, আপনার আকিদা, ইবাদত, মুয়ামালা, স্বভাব-চরিত্র এক কথায় যাবতীয় কাজে পরিবর্তন সাধন হওয়া। পূর্বের অবস্থা থেকে আরো উন্নত হয়ে যাওয়া। এজন্য আপনি এই দো‘আ করতে পারেন।
﴿رَبَّنَا تَقَبَّلۡ مِنَّآۖ إِنَّكَ أَنتَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡعَلِيمُ ١٢٧﴾ [ البقرة : ١٢٧ ]
“হে আমাদের রব, আমাদের থেকে কবুল করুন। আপনিতো সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১২৭]
«اللَّهُمَّ حَجَّةٌ لَا رِيَاءَ فِيهَا، وَلَا سُمْعَةَ»
“হে আল্লাহ! এ এমন হজ, যাতে কোনো প্রদর্শনেচ্ছা বা প্রচারেচ্ছা নেই”। [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৮৯০, আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
২- আপনার হজ যাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পাদিত হজের অনুকরণে হয় সে জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা ও সাধনা করুন। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«خذوا عني مناسككم»
“তোমরা তোমাদের হজের মানাসিক (তথা বিধি-বাধান) আমার কাছ থেকে গ্রহণ কর”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২১৮, সুনানুল কুবরা লিল বাইহাকী, হাদীস নং ৯৫২৪।]
৩- আপনার হজ কবুল হবে সে আশায় অশ্লীলতা, পাপাচার, অহেতুক ঝগড়া-বিবাদ হতে সম্পূর্ণ বিরত থাকুন।
৪- আল্লাহ ব্যতীত মৃত কারো নিকট সাহায্য প্রার্থনা-ফরিয়াদ করা হতে একেবারে বিরত থাকুন। কারণ এটি শির্ক, যা হজসহ যাবতীয় আমলকে নষ্ট করে দেয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿لَئِنۡ أَشۡرَكۡتَ لَيَحۡبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٦٥﴾ [ الزمر : ٦٤ ]
“তুমি যদি শির্ক কর, তাহলে অবশ্যই তোমার আমল নষ্ট হয়ে যাবে। আর তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে”। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৬৪]
৫- তাওয়াফ, সাঈ, কঙ্কর নিক্ষেপসহ যাবতীয় বিধান সম্পাদন কালে অন্য হজকারীদের প্রতি সদয় থাকুন। তাদের সুবিধা-অসুবিধার প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখুন। কনোভাবেই তাদের কষ্ট দেবেন না। তাদের কষ্ট হয় এমন সব পন্থা-পদ্ধতি পরিহার করুন। উচ্চ আওয়াজে দো‘আ, যিকির করে অপরের মনযোগ নষ্ট করবেন না। বিশেষ করে সম্মিলিত দো‘আ একেবারেই এড়িয়ে চলুন।
৬- হাজরে আসওয়াদ ইস্তিলাম করার জন্য অযথা ভিড় সৃষ্টি করে লোকদের কষ্ট দেওয়া হতে বিরত থাকুন। সেখানে অবস্থান করে তাওয়াফকে কষ্টসঙ্কুল করে তুলবেন না।
৭- তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার সাঈ চলা কালে সালাতের ইকামত হলে তাওয়াফ ও সাঈ বন্ধ রেখে সালাতে অংশগ্রহণ করুন। সাঈ চালু রেখে জামাত ত্যাগ করবেন না।
৮- মক্কায় অবস্থান কালে জামাতের প্রতি অধিক যত্নবান থাকবেন। বিশেষ করে হারামের জামাতের প্রতি।
৯- সম্মুখে যাবার জন্য মুসল্লিদের গর্দান মাড়িয়ে তাদের কষ্ট দেবেন না। যেখানে জায়গা পাবেন, বসে পড়বেন।
১০- উভয় হারামেও সালাতরত মুসল্লির সম্মুখ দিয়ে যাতায়াত করবেন না। এটি শয়তানের কাজ। তবে একান্ত প্রয়োজন হলে ভিন্ন কথা।
১১- মক্কায় অবস্থান কালে বেশি বেশি তাওয়াফ করুন। কারণ তাতে অনেক সাওয়াব রছেয়ে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«من طاف بالبيت سبعاً، وصلى ركعتين، كان كعتق رقبة»
“যে ব্যক্তি বায়তুল্লহকে সাতবার প্রদক্ষিণ করে তাওয়াফ করবে এবং দু’রাকাত সালাত আদায় করবে। তার এ কাজটি একটি গোলাম আযাদ করার সমতুল্য হবে”। [শু‘আবুল ঈমান লিল বাইহাকী, হাদীস নং ৩৭৫১।]
অর্থাৎ একটি তাওয়াফের পরিবর্তে তাকে একটি গোলাম মুক্ত করার সমপরিমাণ সাওয়াব দান করা হবে।
১২- কুরবানীর দিন আসার পূর্বে আপনার হাদী জবাই করবেন না। আর তার মূল্য সদকা করাও জায়েয হবে না।
১৩- আপনার হজ কবুল হবার নিদর্শন হলো, আপনার আকিদা, ইবাদত, মুয়ামালা, স্বভাব-চরিত্র এক কথায় যাবতীয় কাজে পরিবর্তন সাধন হওয়া। পূর্বের অবস্থা থেকে আরো উন্নত হয়ে যাওয়া। এজন্য আপনি এই দো‘আ করতে পারেন।
﴿رَبَّنَا تَقَبَّلۡ مِنَّآۖ إِنَّكَ أَنتَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡعَلِيمُ ١٢٧﴾ [ البقرة : ١٢٧ ]
“হে আমাদের রব, আমাদের থেকে কবুল করুন। আপনিতো সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১২৭]
১- সাথী হিসাবে অভিজ্ঞ, নেককার ও আলেম শ্রেণির লোকদের বেছে নিন এবং হজ বিষয়ে তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা গ্রহণ করুন।
২- সহনশীল, সহমর্মী ও কষ্ট সহিষ্ণ মানসিকতা পোষন করুন। ধৈর্য্য ও সবরের প্রতিজ্ঞা করে নিন। সহযাত্রীদের কাউকে কষ্ট দেবেন না। তাদের পক্ষ থেকে আগত যাবতীয় পীড়ার জবাব উত্তম পদ্ধতিতে প্রদান করুন। মন্দের জবাব ভালোর মাধ্যমে দিন।
৩- মিথ্যা, ধোকাবাজি, চুরি, পরচর্চা-গীবত, পরনিন্দা-চোগলখোরি ও ঠাট্টা-বিদ্রুপ-উপহাস করা হতে সম্পূর্ণ বিরত থাকুন।
৪- পরনারী দর্শন ও স্পর্শ থেকে সতর্ক থাকুন এবং নিজ নারীদের পর্দার ব্যাপারে সজাগ থাকুন।
৫- ক্রয়-বিক্রয়সহ যাবতীয় কাজে উদার ও সহমর্মীতার নীতি গ্রহণ করুন। এতে মহান আল্লাহ আপনার প্রতি সদয় হবেন, রহম করবেন।
৬- মিসওয়াক ব্যবহার করবেন। তার বহু উপকার রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«السِّوَاكُ يُطَيِّبُ الْفَمَ، وَيُرْضِي الرَّبَّ»
“মিসওয়াক মুখকে পরিষ্কার করে এবং রবের সন্তুষ্টি আনয়ন করে”। [মুজামুল কাবীর লিত্বতাবরানী, হাদীস নং ১২২১৫।]
হাদিয়া দেবার জন্য মেসওয়াক, খেজুর ও জমজমের পানি গ্রহণ করুন। জমজমের পানি সম্বন্ধে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«إِنَّهَا مُبَارَكَةٌ إِنَّهَا طَعَامُ طُعْمٍ وَشِفَاءُ سُقْمٍ »
“জমজমের পানি বরকতময়, এটি আহারের জন্য খাদ্য এবং রোগের জন্য প্রতিষেধক বিশেষ”। [সুনানে কুবরা লিল বাইহাকী, হাদীস নং ৯৬৫৯।]
«مَاءُ زَمْزَمَ لِمَا شُرِبَ لَهُ»
“জমজমের পানি যে কাজের জন্য ব্যবহার করা হবে সেটি সে কাজের জন্যই কার্যকর”। [মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ১৪৮৪৯, আল্লামা শুয়াইব আরনাউত বলেছেন, হাদীসটি হাসান হতে পারে।]
৭- ধুমপান হতে বিরত থাকুন। কেননা ধুমপান স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর। সহযাত্রী ও প্রতিবেশীর জন্য কষ্টদায়ক। এবং এর মাধ্যমে সম্পদ নষ্ট হয়। সুতরাং এটি হারাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَيُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡخَبَٰٓئِثَ ١٥٧﴾ [ الاعراف : ١٥٦ ]
“আর তিনি তাদের জন্য পবিত্র জিনিষসমূহ হালাল করেছেন আর হারাম করেছেন নিকৃষ্ট জিনিষসমূহ”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৫৬]
৮- দাঁড়ি পুরুষের সৌন্দর্য। সুতরাং দাঁড়ি মুণ্ডন করবেন না। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীকে এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أمرني ربي عز وجل أن أعفي لحيتي وأن أحف شاربي» .
“আমার রব আমাকে দাড়ি লম্বা ও গোফ খাট করার নির্দেশ দিয়েছেন”। [আমালী ইবন বিশরান, পৃষ্ঠা নং ৭৩।]
৯- স্বর্ণের আংটি থাকলে তা খুলে ফেলুন। একান্ত ব্যবহার করতে চাইলে রূপার আংটি ব্যবহার করতে পারেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বর্ণের আংটি ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,
«يَعْمِدُ أَحَدُكُمْ إِلَى جَمْرَةٍ مِنْ نَارٍ فَيَجْعَلُهَا فِي يَدِهِ»
“তোমাদের কেউ কি জ্বলন্ত কয়লার টুকরার কাছে গিয়ে তা উঠিয়ে নিজ হাতে স্থাপন করবে?” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২০৯০।]
১০- অধিক পরিমাণে কোরআন তেলাওয়াত করুন। তাতে গভীরভাবে চিন্তা করুন। তার নির্দেশ অনুযায়ী আমল করুন। যিকির-আজকার, দো‘আ ও সালাতে সময় ব্যয় করুন। কোথাও দরস হলে তাতে অংশ গ্রহণ করুন।
১১- সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধের মৌলিক দায়িত্ব থেকে বিঃস্মৃত হবেন না। হিকমত ও সুন্দর সুন্দর উপদেশ, নম্রতা ও বিনয়ের সাথে এ দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন।
১২- ঝগড়া-বিবাদ এড়িয়ে চলবেন। বিতর্ক অনুপকারী হলে বাস্তবতা আপনার পক্ষে থাকলেও তা পরিহার করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أَنَا زَعِيمٌ بِبَيْتٍ فِي رَبَضِ الْجَنَّةِ لِمَنْ تَرَكَ الْمِرَاءَ وَإِنْ كَانَ مُحِقًّا»
“আমি জান্নাতের পার্শ্বদেশে ওই ব্যক্তির জন্য একটি বিশেষ ঘরের জিম্মাদারি গ্রহণ করলাম, যে হকপন্থি হওয়া সত্ত্বেও বিতর্ক পরিহার করল”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৮০০, আলবানী রহ. হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।]
১৩- প্রতিপক্ষের সাথে দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলুন। ঋণ আদায় করে ভারমুক্ত হয়ে যান। এবং নিজ পরিজনকে নসিহত করুন, তারা যেন সাজ-সজ্জা, ভোগ-বিলাস ও বাড়ি-গাড়ি ইত্যাদির পেছনে অপব্যয় না করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَكُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ وَلَا تُسۡرِفُوٓاْۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُسۡرِفِينَ ٣١﴾ [ الاعراف : ٣١ ]
“আর তোমরা খাও, পান কর, অপব্যয় করো না। নিশ্চয় আল্লাহ অপব্যয়কারীদের পছন্দ করেন না”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৩১]
১৪- পবিত্র মক্কায় যাওয়া-আসার খরচের ব্যবস্থা হয়ে গেলে কাল-বিলম্ব না করে হজ আদায়ের ব্যাপারে উদ্যোগী হোন। সেখান থেকে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-পরিজনদের জন্য কিছু নিয়ে আসার মত পয়সা নেই কিংবা এ জাতীয় কোনো ওযর শরী‘আতের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং অসুস্থ, দরিদ্র কিংবা হজ না করে পাপী হয়ে মারা যাওয়ার আগেই হজ কর্ম সম্পাদন করে ফেলুন। কারণ, হজ ইসলামের পাঁচ রোকনের অন্যতম । দুনিয়া ও আখিরাতে তার রয়েছে নানাবিধ উপকারিতা।
১৫- সবচে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আপনি যেসব কষ্ট ও অসুবিধার আশঙ্কা করছেন তার জন্য একমাত্র আল্লাহর নিকট ধর্না দিন। তাঁকে ডাকুন। তাঁর নিকট প্রার্থনা করুন। তাঁর সাহায্যই কামনা করুন। তিনি ব্যতীত অন্য সব প্রার্থনা পরিহার করুন। আল্লাহ বলেন,
﴿قُلۡ إِنَّمَآ أَدۡعُواْ رَبِّي وَلَآ أُشۡرِكُ بِهِۦٓ أَحَدٗا ٢٠﴾ [ الجن : ٢٠ ]
“বল, নিশ্চয় আমি কেবল আমার রবকে ডাকি এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করি না”। [সূরা আল-জিন্ন, আয়াত: ২০]
১৬- মক্কায় অবস্থান কালে স্মরণ করুন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মক্কা নগরীতে দীর্ঘ ১৩টি বছর অবস্থান করে একত্ববাদের কালিমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’র প্রতি দাওয়াত দিয়েছেন। অর্থাৎ ‘আল্লাহ ব্যতীত সত্যিকার কোনো ইলাহ নেই’। এই তাওহীদ প্রতিষ্ঠার পেছনেই তিনি দীর্ঘ সময় মেহনত করেছেন। তাওহীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আল্লাহ সম্বন্ধে এ বিশ্বাস পোষণ করা যে তিনি ‘আরশের উপর আছেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿ٱلرَّحۡمَٰنُ عَلَى ٱلۡعَرۡشِ ٱسۡتَوَىٰ ٥﴾ [ طه : ٥ ]
“পরম দয়ালু রহমান ‘আরশে উঠেছেন”। [সূরা ত্বাহা, আয়াত: ৫]
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাবলেছেন,
«إِنَّ اللَّهَ كَتَبَ كِتَابًا قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ الخَلْقَ : إِنَّ رَحْمَتِي سَبَقَتْ غَضَبِي، فَهُوَ مَكْتُوبٌ عِنْدَهُ فَوْقَ العَرْشِ»
“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টিকুল সৃষ্টির পূর্বে একটি লিখনি লিখেছেন, আমার রহমত (করুণা) আমার ক্রোধকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। এটি তাঁর নিকট আরশের উপর লিখিত আছে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৫৫৪।]
১৭- নারীর পক্ষে মাহরাম ব্যতীত হজ ও অন্যান্য সফর করা হারাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
«وَلَا تُسَافِرِ الْمَرْأَةُ إِلَّا مَعَ ذِي مَحْرَمٍ»
“নারী যেন মাহরাম ব্যতীত সফর না করে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৪১।]
১৮- নারীর মাহরামের অবিদ্যমানতায় কোনো পুরুষ তার সাথে চুক্তি করে মাহরামের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া বৈধ নয়।
১৯- নারীর পক্ষে কোনো আজনবী পুরুষকে ভাই বানিয়ে মাহরাম বানানো, এবং তার সাথে মাহরামের ন্যায় মুআমালা (আচরণ) করা শরিয়ত অনুমোদন করে না।
২০- নারীর পক্ষে অপর নির্ভরযোগ্য (তাদের ধারণায়) নারী জামা‘আতের সাথে সফর করা না জায়েয। অনুরূপভাবে তাদের একজনের সাথে মাহরাম আছে সুতরাং তিনি সকলের জন্য মাহরাম এ ধারণায় অন্য নারীর পক্ষে তার সাথে সফর করাও না জায়েয।
২- সহনশীল, সহমর্মী ও কষ্ট সহিষ্ণ মানসিকতা পোষন করুন। ধৈর্য্য ও সবরের প্রতিজ্ঞা করে নিন। সহযাত্রীদের কাউকে কষ্ট দেবেন না। তাদের পক্ষ থেকে আগত যাবতীয় পীড়ার জবাব উত্তম পদ্ধতিতে প্রদান করুন। মন্দের জবাব ভালোর মাধ্যমে দিন।
৩- মিথ্যা, ধোকাবাজি, চুরি, পরচর্চা-গীবত, পরনিন্দা-চোগলখোরি ও ঠাট্টা-বিদ্রুপ-উপহাস করা হতে সম্পূর্ণ বিরত থাকুন।
৪- পরনারী দর্শন ও স্পর্শ থেকে সতর্ক থাকুন এবং নিজ নারীদের পর্দার ব্যাপারে সজাগ থাকুন।
৫- ক্রয়-বিক্রয়সহ যাবতীয় কাজে উদার ও সহমর্মীতার নীতি গ্রহণ করুন। এতে মহান আল্লাহ আপনার প্রতি সদয় হবেন, রহম করবেন।
৬- মিসওয়াক ব্যবহার করবেন। তার বহু উপকার রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«السِّوَاكُ يُطَيِّبُ الْفَمَ، وَيُرْضِي الرَّبَّ»
“মিসওয়াক মুখকে পরিষ্কার করে এবং রবের সন্তুষ্টি আনয়ন করে”। [মুজামুল কাবীর লিত্বতাবরানী, হাদীস নং ১২২১৫।]
হাদিয়া দেবার জন্য মেসওয়াক, খেজুর ও জমজমের পানি গ্রহণ করুন। জমজমের পানি সম্বন্ধে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«إِنَّهَا مُبَارَكَةٌ إِنَّهَا طَعَامُ طُعْمٍ وَشِفَاءُ سُقْمٍ »
“জমজমের পানি বরকতময়, এটি আহারের জন্য খাদ্য এবং রোগের জন্য প্রতিষেধক বিশেষ”। [সুনানে কুবরা লিল বাইহাকী, হাদীস নং ৯৬৫৯।]
«مَاءُ زَمْزَمَ لِمَا شُرِبَ لَهُ»
“জমজমের পানি যে কাজের জন্য ব্যবহার করা হবে সেটি সে কাজের জন্যই কার্যকর”। [মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ১৪৮৪৯, আল্লামা শুয়াইব আরনাউত বলেছেন, হাদীসটি হাসান হতে পারে।]
৭- ধুমপান হতে বিরত থাকুন। কেননা ধুমপান স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর। সহযাত্রী ও প্রতিবেশীর জন্য কষ্টদায়ক। এবং এর মাধ্যমে সম্পদ নষ্ট হয়। সুতরাং এটি হারাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَيُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡخَبَٰٓئِثَ ١٥٧﴾ [ الاعراف : ١٥٦ ]
“আর তিনি তাদের জন্য পবিত্র জিনিষসমূহ হালাল করেছেন আর হারাম করেছেন নিকৃষ্ট জিনিষসমূহ”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৫৬]
৮- দাঁড়ি পুরুষের সৌন্দর্য। সুতরাং দাঁড়ি মুণ্ডন করবেন না। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীকে এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أمرني ربي عز وجل أن أعفي لحيتي وأن أحف شاربي» .
“আমার রব আমাকে দাড়ি লম্বা ও গোফ খাট করার নির্দেশ দিয়েছেন”। [আমালী ইবন বিশরান, পৃষ্ঠা নং ৭৩।]
৯- স্বর্ণের আংটি থাকলে তা খুলে ফেলুন। একান্ত ব্যবহার করতে চাইলে রূপার আংটি ব্যবহার করতে পারেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বর্ণের আংটি ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,
«يَعْمِدُ أَحَدُكُمْ إِلَى جَمْرَةٍ مِنْ نَارٍ فَيَجْعَلُهَا فِي يَدِهِ»
“তোমাদের কেউ কি জ্বলন্ত কয়লার টুকরার কাছে গিয়ে তা উঠিয়ে নিজ হাতে স্থাপন করবে?” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২০৯০।]
১০- অধিক পরিমাণে কোরআন তেলাওয়াত করুন। তাতে গভীরভাবে চিন্তা করুন। তার নির্দেশ অনুযায়ী আমল করুন। যিকির-আজকার, দো‘আ ও সালাতে সময় ব্যয় করুন। কোথাও দরস হলে তাতে অংশ গ্রহণ করুন।
১১- সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধের মৌলিক দায়িত্ব থেকে বিঃস্মৃত হবেন না। হিকমত ও সুন্দর সুন্দর উপদেশ, নম্রতা ও বিনয়ের সাথে এ দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন।
১২- ঝগড়া-বিবাদ এড়িয়ে চলবেন। বিতর্ক অনুপকারী হলে বাস্তবতা আপনার পক্ষে থাকলেও তা পরিহার করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أَنَا زَعِيمٌ بِبَيْتٍ فِي رَبَضِ الْجَنَّةِ لِمَنْ تَرَكَ الْمِرَاءَ وَإِنْ كَانَ مُحِقًّا»
“আমি জান্নাতের পার্শ্বদেশে ওই ব্যক্তির জন্য একটি বিশেষ ঘরের জিম্মাদারি গ্রহণ করলাম, যে হকপন্থি হওয়া সত্ত্বেও বিতর্ক পরিহার করল”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৮০০, আলবানী রহ. হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।]
১৩- প্রতিপক্ষের সাথে দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলুন। ঋণ আদায় করে ভারমুক্ত হয়ে যান। এবং নিজ পরিজনকে নসিহত করুন, তারা যেন সাজ-সজ্জা, ভোগ-বিলাস ও বাড়ি-গাড়ি ইত্যাদির পেছনে অপব্যয় না করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَكُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ وَلَا تُسۡرِفُوٓاْۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُسۡرِفِينَ ٣١﴾ [ الاعراف : ٣١ ]
“আর তোমরা খাও, পান কর, অপব্যয় করো না। নিশ্চয় আল্লাহ অপব্যয়কারীদের পছন্দ করেন না”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৩১]
১৪- পবিত্র মক্কায় যাওয়া-আসার খরচের ব্যবস্থা হয়ে গেলে কাল-বিলম্ব না করে হজ আদায়ের ব্যাপারে উদ্যোগী হোন। সেখান থেকে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-পরিজনদের জন্য কিছু নিয়ে আসার মত পয়সা নেই কিংবা এ জাতীয় কোনো ওযর শরী‘আতের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং অসুস্থ, দরিদ্র কিংবা হজ না করে পাপী হয়ে মারা যাওয়ার আগেই হজ কর্ম সম্পাদন করে ফেলুন। কারণ, হজ ইসলামের পাঁচ রোকনের অন্যতম । দুনিয়া ও আখিরাতে তার রয়েছে নানাবিধ উপকারিতা।
১৫- সবচে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আপনি যেসব কষ্ট ও অসুবিধার আশঙ্কা করছেন তার জন্য একমাত্র আল্লাহর নিকট ধর্না দিন। তাঁকে ডাকুন। তাঁর নিকট প্রার্থনা করুন। তাঁর সাহায্যই কামনা করুন। তিনি ব্যতীত অন্য সব প্রার্থনা পরিহার করুন। আল্লাহ বলেন,
﴿قُلۡ إِنَّمَآ أَدۡعُواْ رَبِّي وَلَآ أُشۡرِكُ بِهِۦٓ أَحَدٗا ٢٠﴾ [ الجن : ٢٠ ]
“বল, নিশ্চয় আমি কেবল আমার রবকে ডাকি এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করি না”। [সূরা আল-জিন্ন, আয়াত: ২০]
১৬- মক্কায় অবস্থান কালে স্মরণ করুন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মক্কা নগরীতে দীর্ঘ ১৩টি বছর অবস্থান করে একত্ববাদের কালিমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’র প্রতি দাওয়াত দিয়েছেন। অর্থাৎ ‘আল্লাহ ব্যতীত সত্যিকার কোনো ইলাহ নেই’। এই তাওহীদ প্রতিষ্ঠার পেছনেই তিনি দীর্ঘ সময় মেহনত করেছেন। তাওহীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আল্লাহ সম্বন্ধে এ বিশ্বাস পোষণ করা যে তিনি ‘আরশের উপর আছেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿ٱلرَّحۡمَٰنُ عَلَى ٱلۡعَرۡشِ ٱسۡتَوَىٰ ٥﴾ [ طه : ٥ ]
“পরম দয়ালু রহমান ‘আরশে উঠেছেন”। [সূরা ত্বাহা, আয়াত: ৫]
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাবলেছেন,
«إِنَّ اللَّهَ كَتَبَ كِتَابًا قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ الخَلْقَ : إِنَّ رَحْمَتِي سَبَقَتْ غَضَبِي، فَهُوَ مَكْتُوبٌ عِنْدَهُ فَوْقَ العَرْشِ»
“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টিকুল সৃষ্টির পূর্বে একটি লিখনি লিখেছেন, আমার রহমত (করুণা) আমার ক্রোধকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। এটি তাঁর নিকট আরশের উপর লিখিত আছে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৫৫৪।]
১৭- নারীর পক্ষে মাহরাম ব্যতীত হজ ও অন্যান্য সফর করা হারাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
«وَلَا تُسَافِرِ الْمَرْأَةُ إِلَّا مَعَ ذِي مَحْرَمٍ»
“নারী যেন মাহরাম ব্যতীত সফর না করে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৪১।]
১৮- নারীর মাহরামের অবিদ্যমানতায় কোনো পুরুষ তার সাথে চুক্তি করে মাহরামের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া বৈধ নয়।
১৯- নারীর পক্ষে কোনো আজনবী পুরুষকে ভাই বানিয়ে মাহরাম বানানো, এবং তার সাথে মাহরামের ন্যায় মুআমালা (আচরণ) করা শরিয়ত অনুমোদন করে না।
২০- নারীর পক্ষে অপর নির্ভরযোগ্য (তাদের ধারণায়) নারী জামা‘আতের সাথে সফর করা না জায়েয। অনুরূপভাবে তাদের একজনের সাথে মাহরাম আছে সুতরাং তিনি সকলের জন্য মাহরাম এ ধারণায় অন্য নারীর পক্ষে তার সাথে সফর করাও না জায়েয।
১- ডান পা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করুন এবং নির্ধারিত দোয়া পাঠ করুন, বলুন:
«اللهم صل على محمد اللهم أفتح لي أبواب رحمتك»
“হে আল্লাহ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন, আমার জন্য আপনার রহমতের দরজা খুলে দিন”। [হাদিসের দ্বিতীয় অংশ মুসলিমে রয়েছে, হাদীস নং ৭১৩। আবূ দাউদ, হাদীস নং ৪৬৫, আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
২- মসজিদে প্রবেশ করে তাহিয়্যাতুল মসজিদের দু’রাকাত সালাত আদায় করুন। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাথীদ্বয়কে সালাম দিন। ভক্তি ও আদবের সাথে সম্মুখপানে অগ্রসর হোন। কবরকে সম্মুখে রেখে দাঁড়েয়ে অনুচ্চ আওয়াজে বলুন,
«السلام عليكم يا رسول الله، السلام عليكم يا أبا بكر، السلام عليكم يا عمر»
৩- কবরমুখী হয়ে দো‘আ করবেন না। দো‘আ কিবলামুখী হয়ে করবেন এবং কেবলমাত্র এক আল্লাহর নিকটই প্রার্থনা করবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَأَنَّ ٱلۡمَسَٰجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدۡعُواْ مَعَ ٱللَّهِ أَحَدٗا ١٨﴾ [ الجن : ١٨ ]
“আর নিশ্চয় মসজিদগুলো আল্লাহরই জন্য। কাজেই তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ডেকো না”। [সূরা আল-জিন্ন, আয়াত: ১৮]
৪- প্রয়োজন পূর্ণ করা, পেরেশানী দূর করা কিংবা রোগ থেকে মুক্তি লাভের জন্য রাসূলুল্লাহর নিকট প্রার্থনা করবেন না, বরং এ জাতীয় বিষয় সম্পূর্ণ আল্লাহর ক্ষমতাভুক্ত। অন্য কেউ এসব বিষয়ে ক্ষমতা রাখে না। ফলে এগুলো তাঁর নিকটই প্রার্থনা করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«إِذَا سَأَلْتَ فَاسْأَلِ اللَّهَ، وَإِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللَّه»
“যখন প্রার্থনা করবে কেবল আল্লাহর নিকটই করবে আর যখন সাহায্য চাইবে কেবল আল্লাহর নিকটই চাইবে”। [তিরমিযী, হাদীস নং ২৫১৬, তিনি হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন।]
নবীর নাম যুক্ত করে বলতে চাইলে এভাবে বলতে পারেন,
«اللهم بإيماني بكل وبحبي لنبيك محمد صلى الله عليه وسلم أقض حاجتي وفرج كربتي»
“হে আল্লাহ, তোমার প্রতি আমার ঈমান ও তোমার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি আমার মুহব্বতের দাবি নিয়ে বলছি, তুমি আমার প্রয়োজন মিটিয়ে দাও, আমার পেরেশানি দূর করে দাও”।
কারণ ঈমান ও নবীর মুহব্বত আমলে সালেহের অন্তর্ভূক্ত, যাকে অসিলা হিসাবে উল্লেখ করে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করাতে কোনো দোষ নেই।
৫- রাসূলুল্লাহর কবরের সম্মুখে ডান হাত বাম হাতের উপর রেখে সালাতে দাঁড়ানোর মতো করে দাঁড়াবেন না। কারণ এই অবস্থাটি বিনয়, নম্রতা ও আনুগত্য প্রকাশক অবস্থা, যা কেবল আল্লাহর জন্যই প্রযোজ্য।
৬- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট শাফায়াত প্রার্থনা করবেন না। কারণ, শাফা‘আত একমাত্র আল্লাহর মালিকানাভূক্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قُل لِّلَّهِ ٱلشَّفَٰعَةُ ٤٤﴾ [ الزمر : ٤٣ ]
আপনি এভাবে বলতে পারেন,
«اللهم أرزقنا حبه واتباعه وشفاعته يوم القيامة»
“হে আল্লাহ তুমি আমাদেরকে তাঁকে ভালোবাসা ও তাঁর অনুসরণ করার তাওফীক দাও এবং কিয়ামতের দিন তাঁর শাফা‘আত আমাদের নসীব কর”।
৭- কবরের কাছে অবস্থানকে দীর্ঘ করবেন না। বরং অপরকে সুযোগ দিন। কবরের সামনে ভীড় সৃষ্টি করে অপরের কষ্টের কারণ বনবেন না।
৮- কবরের সম্মুখে আওয়াজ উঁচু করে হৈ চৈ- এর সৃষ্টি করবেন না। বরং শরয়ি আদবের প্রতি যত্নবান থাকবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ يَغُضُّونَ أَصۡوَٰتَهُمۡ عِندَ رَسُولِ ٱللَّهِ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ ٱمۡتَحَنَ ٱللَّهُ قُلُوبَهُمۡ لِلتَّقۡوَىٰۚ لَهُم مَّغۡفِرَةٞ وَأَجۡرٌ عَظِيمٌ ٣﴾ [ الحجرات : ٣ ]
“নিশ্চয় যারা আল্লাহর রাসূলের নিকট নিজদের আওয়াজ অবনমিত করে, আল্লাহ তাদেরই অন্তরগুলোকে তাকওয়ার জন্য বাছাই করেছেন, তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহা প্রতিদান”। [সূরা আল-হুজরাত, আয়াত: ৩]
৯- বরকত লাভের আশায় কবরের জানালা, দেওয়াল ইত্যাদি স্পর্শ, চুম্বন ও এ জাতীয় যাবতীয় কাজ হতে কঠিন ভাবে বিরত থাকুন। কারণ, বরকতের উৎস কেবল মহান আল্লাহ। যাবতীয় বরকত তিনি হতেই।
১০- কবর তাওয়াফ করা হতে বিরত থাকুন। কারণ তাওয়াফ একটি নির্দিষ্ট ইবাদত যা কেবল বাইতুল্লাহকে ঘিরেই সম্পাদিত হয়ে থাকে। অন্য কথাও এই ইবাদত সম্পাদনের সুযোগ নেই। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلۡيَطَّوَّفُواْ بِٱلۡبَيۡتِ ٱلۡعَتِيقِ ٢٩﴾ [ الحج : ٢٩ ]
“আর তারা যেন পুরাতন ঘরের তাওয়াফ করে”। [সূরা আল-হাজ, আয়াত: ২৯]
১১- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি বেশি বেশি দুরূদ পাঠ করুন। কারণ, তিনি বলেন,
«مَنْ صَلَّى عَلَيَّ صَلَاةً صَلَّى الله عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا»
“যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দুরূদ পাঠ করবে আল্লাহ তা‘আলা তার উপর দশটি রহমত নাযিল করবেন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৮৪।]
দুরূদের মাঝে সর্বোত্তম দুরূদ হচ্ছে দুরূদে ইবরাহীম। কারণ, দুরূদ শিক্ষা দেবার সময় তিনি এটিই সাহাবীগণকে শিক্ষা দিয়েছিলেন। হাদীসে এসেছে,
«قُولُوا : اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ»
“তোমরা বল, আল্লাহুম্মা সাল্লি... [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৩৭০।]
১২- মসজিদ থেকে বিদায় নেবার সময় পিঠের পেছনে হেটে বের হবার কোনো বিধান নেই, বরং এটি বিদ‘আতের অন্তর্ভুক্ত।
১৩- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মসজিদের যিয়ারত মুস্তাহাব। হজ সহীহ হওয়া এর ওপর ভিত্তিশীল নয়। তার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই এবং নির্ধারিত কোনো মুদ্দতও নেই।
১৪- যিয়ারত প্রসঙ্গে প্রচলিত জাল হাদীস দ্বারা প্রতারিত হবেন না। এগুলো রাসূলুল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপের শামিল। যেমন,
«من حج ولم يزرني فقد جفاني»
“যে ব্যক্তি হজ করল আর আমার যিয়ারত করল না সে আমার প্রতি অবিচার করল”।
এটি একটি মওদু‘ অর্থাৎ জাল হাদীস।
«من زارني بعد مماتي فكأنما زراني في حياتي ) " موضوع» .
“যে ব্যক্তি আমার মৃত্যুর পর আমার যিয়ারত করল, সে যেন আমার জীবিতাবস্থায় আমার যিয়ারত করল। এটিও মওদু‘”।
১৫- মদিনার সফর হবে মসজিদে নববী যিয়ারতের উদ্দেশ্যে, অতঃপর প্রবেশকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম দানের উদ্দেশ্যে। কেননা মসজিদে নববীতে সম্পাদিত সালাত মসজিদুল হারাম ব্যতীত অন্য সকল মসজিদে সম্পাদিত সালাত অপেক্ষা হাজারগুণ উত্তম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«لَا تُشَدُّ الرِّحَالُ إِلَّا إِلَى ثَلَاثَةِ مَسَاجِدَ : مَسْجِدِي هَذَا، وَمَسْجِدِ الْحَرَامِ، وَمَسْجِدِ الْأَقْصَى»
“তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্য কোথাও সফর জায়েয নেই, মসজিদুল হারাম, আমার এই মসজিদ এবং মসজিদুল আকসা”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৯৭।]
১৬- মসজিদ হতে বের হবার সময় নিম্নোক্ত দো‘আ পড়ে বাম পা দিয়ে বের হোন।
«اللهم صل على محمد اللهم إني أسألك من فضلك» .
“হে আল্লাহ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন, হে আল্লাহ আমি আপনার অনুগ্রহ কামনা করি”। [হাদীসের দ্বিতীয় অংশ সহীহ মুসলিমে রয়েছে, হাদীস নং ৭১৩। আবূ দাউদ, হাদীস নং ৪৬৫, আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
১৭- মদিনায় অবস্থান কালে শুহাদায়ে উহুদ ও বাকী কবরস্থান যিয়ারত করা মুস্তাহাব। এটি নিজ আখিরাতকে স্মরণ করার জন্য। সেখানে গিয়ে দো‘আ করার জন্য নয়।
১৮- সাওয়াবের উদ্দেশ্যে সাত মসজিদে যিয়ারতে যাওয়ার কোনো অনুমোদন নেই। তাই এ উদ্দেশে সেখানে যাবেন না। বরং আপনি কোবা মসজিদে যেতে পারেন এবং সেখানে দু’রাকাত সালাত আদায় করতে পারেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَنْ تَطَهَّرَ فِي بَيْتِهِ ثُمَّ أَتَى مَسْجِدَ قُبَاءَ، فَصَلَّى فِيهِ صَلَاةً، كَانَ لَهُ كَأَجْرِ عُمْرَةٍ»
“যে ব্যক্তি নিজ বাসস্থান হতে পবিত্র হয়ে মসজিদে কোবায় এসে দু’রাকাত সালাত আদায় করবে। তাকে একটি ওমরার সমপরিমাণ সাওয়াব দেওয়া হবে”। [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৪১২, আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
«اللهم صل على محمد اللهم أفتح لي أبواب رحمتك»
“হে আল্লাহ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন, আমার জন্য আপনার রহমতের দরজা খুলে দিন”। [হাদিসের দ্বিতীয় অংশ মুসলিমে রয়েছে, হাদীস নং ৭১৩। আবূ দাউদ, হাদীস নং ৪৬৫, আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
২- মসজিদে প্রবেশ করে তাহিয়্যাতুল মসজিদের দু’রাকাত সালাত আদায় করুন। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাথীদ্বয়কে সালাম দিন। ভক্তি ও আদবের সাথে সম্মুখপানে অগ্রসর হোন। কবরকে সম্মুখে রেখে দাঁড়েয়ে অনুচ্চ আওয়াজে বলুন,
«السلام عليكم يا رسول الله، السلام عليكم يا أبا بكر، السلام عليكم يا عمر»
৩- কবরমুখী হয়ে দো‘আ করবেন না। দো‘আ কিবলামুখী হয়ে করবেন এবং কেবলমাত্র এক আল্লাহর নিকটই প্রার্থনা করবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَأَنَّ ٱلۡمَسَٰجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدۡعُواْ مَعَ ٱللَّهِ أَحَدٗا ١٨﴾ [ الجن : ١٨ ]
“আর নিশ্চয় মসজিদগুলো আল্লাহরই জন্য। কাজেই তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ডেকো না”। [সূরা আল-জিন্ন, আয়াত: ১৮]
৪- প্রয়োজন পূর্ণ করা, পেরেশানী দূর করা কিংবা রোগ থেকে মুক্তি লাভের জন্য রাসূলুল্লাহর নিকট প্রার্থনা করবেন না, বরং এ জাতীয় বিষয় সম্পূর্ণ আল্লাহর ক্ষমতাভুক্ত। অন্য কেউ এসব বিষয়ে ক্ষমতা রাখে না। ফলে এগুলো তাঁর নিকটই প্রার্থনা করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«إِذَا سَأَلْتَ فَاسْأَلِ اللَّهَ، وَإِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللَّه»
“যখন প্রার্থনা করবে কেবল আল্লাহর নিকটই করবে আর যখন সাহায্য চাইবে কেবল আল্লাহর নিকটই চাইবে”। [তিরমিযী, হাদীস নং ২৫১৬, তিনি হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন।]
নবীর নাম যুক্ত করে বলতে চাইলে এভাবে বলতে পারেন,
«اللهم بإيماني بكل وبحبي لنبيك محمد صلى الله عليه وسلم أقض حاجتي وفرج كربتي»
“হে আল্লাহ, তোমার প্রতি আমার ঈমান ও তোমার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি আমার মুহব্বতের দাবি নিয়ে বলছি, তুমি আমার প্রয়োজন মিটিয়ে দাও, আমার পেরেশানি দূর করে দাও”।
কারণ ঈমান ও নবীর মুহব্বত আমলে সালেহের অন্তর্ভূক্ত, যাকে অসিলা হিসাবে উল্লেখ করে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করাতে কোনো দোষ নেই।
৫- রাসূলুল্লাহর কবরের সম্মুখে ডান হাত বাম হাতের উপর রেখে সালাতে দাঁড়ানোর মতো করে দাঁড়াবেন না। কারণ এই অবস্থাটি বিনয়, নম্রতা ও আনুগত্য প্রকাশক অবস্থা, যা কেবল আল্লাহর জন্যই প্রযোজ্য।
৬- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট শাফায়াত প্রার্থনা করবেন না। কারণ, শাফা‘আত একমাত্র আল্লাহর মালিকানাভূক্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قُل لِّلَّهِ ٱلشَّفَٰعَةُ ٤٤﴾ [ الزمر : ٤٣ ]
আপনি এভাবে বলতে পারেন,
«اللهم أرزقنا حبه واتباعه وشفاعته يوم القيامة»
“হে আল্লাহ তুমি আমাদেরকে তাঁকে ভালোবাসা ও তাঁর অনুসরণ করার তাওফীক দাও এবং কিয়ামতের দিন তাঁর শাফা‘আত আমাদের নসীব কর”।
৭- কবরের কাছে অবস্থানকে দীর্ঘ করবেন না। বরং অপরকে সুযোগ দিন। কবরের সামনে ভীড় সৃষ্টি করে অপরের কষ্টের কারণ বনবেন না।
৮- কবরের সম্মুখে আওয়াজ উঁচু করে হৈ চৈ- এর সৃষ্টি করবেন না। বরং শরয়ি আদবের প্রতি যত্নবান থাকবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ يَغُضُّونَ أَصۡوَٰتَهُمۡ عِندَ رَسُولِ ٱللَّهِ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ ٱمۡتَحَنَ ٱللَّهُ قُلُوبَهُمۡ لِلتَّقۡوَىٰۚ لَهُم مَّغۡفِرَةٞ وَأَجۡرٌ عَظِيمٌ ٣﴾ [ الحجرات : ٣ ]
“নিশ্চয় যারা আল্লাহর রাসূলের নিকট নিজদের আওয়াজ অবনমিত করে, আল্লাহ তাদেরই অন্তরগুলোকে তাকওয়ার জন্য বাছাই করেছেন, তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহা প্রতিদান”। [সূরা আল-হুজরাত, আয়াত: ৩]
৯- বরকত লাভের আশায় কবরের জানালা, দেওয়াল ইত্যাদি স্পর্শ, চুম্বন ও এ জাতীয় যাবতীয় কাজ হতে কঠিন ভাবে বিরত থাকুন। কারণ, বরকতের উৎস কেবল মহান আল্লাহ। যাবতীয় বরকত তিনি হতেই।
১০- কবর তাওয়াফ করা হতে বিরত থাকুন। কারণ তাওয়াফ একটি নির্দিষ্ট ইবাদত যা কেবল বাইতুল্লাহকে ঘিরেই সম্পাদিত হয়ে থাকে। অন্য কথাও এই ইবাদত সম্পাদনের সুযোগ নেই। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلۡيَطَّوَّفُواْ بِٱلۡبَيۡتِ ٱلۡعَتِيقِ ٢٩﴾ [ الحج : ٢٩ ]
“আর তারা যেন পুরাতন ঘরের তাওয়াফ করে”। [সূরা আল-হাজ, আয়াত: ২৯]
১১- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি বেশি বেশি দুরূদ পাঠ করুন। কারণ, তিনি বলেন,
«مَنْ صَلَّى عَلَيَّ صَلَاةً صَلَّى الله عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا»
“যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দুরূদ পাঠ করবে আল্লাহ তা‘আলা তার উপর দশটি রহমত নাযিল করবেন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৮৪।]
দুরূদের মাঝে সর্বোত্তম দুরূদ হচ্ছে দুরূদে ইবরাহীম। কারণ, দুরূদ শিক্ষা দেবার সময় তিনি এটিই সাহাবীগণকে শিক্ষা দিয়েছিলেন। হাদীসে এসেছে,
«قُولُوا : اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ»
“তোমরা বল, আল্লাহুম্মা সাল্লি... [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৩৭০।]
১২- মসজিদ থেকে বিদায় নেবার সময় পিঠের পেছনে হেটে বের হবার কোনো বিধান নেই, বরং এটি বিদ‘আতের অন্তর্ভুক্ত।
১৩- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মসজিদের যিয়ারত মুস্তাহাব। হজ সহীহ হওয়া এর ওপর ভিত্তিশীল নয়। তার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই এবং নির্ধারিত কোনো মুদ্দতও নেই।
১৪- যিয়ারত প্রসঙ্গে প্রচলিত জাল হাদীস দ্বারা প্রতারিত হবেন না। এগুলো রাসূলুল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপের শামিল। যেমন,
«من حج ولم يزرني فقد جفاني»
“যে ব্যক্তি হজ করল আর আমার যিয়ারত করল না সে আমার প্রতি অবিচার করল”।
এটি একটি মওদু‘ অর্থাৎ জাল হাদীস।
«من زارني بعد مماتي فكأنما زراني في حياتي ) " موضوع» .
“যে ব্যক্তি আমার মৃত্যুর পর আমার যিয়ারত করল, সে যেন আমার জীবিতাবস্থায় আমার যিয়ারত করল। এটিও মওদু‘”।
১৫- মদিনার সফর হবে মসজিদে নববী যিয়ারতের উদ্দেশ্যে, অতঃপর প্রবেশকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম দানের উদ্দেশ্যে। কেননা মসজিদে নববীতে সম্পাদিত সালাত মসজিদুল হারাম ব্যতীত অন্য সকল মসজিদে সম্পাদিত সালাত অপেক্ষা হাজারগুণ উত্তম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«لَا تُشَدُّ الرِّحَالُ إِلَّا إِلَى ثَلَاثَةِ مَسَاجِدَ : مَسْجِدِي هَذَا، وَمَسْجِدِ الْحَرَامِ، وَمَسْجِدِ الْأَقْصَى»
“তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্য কোথাও সফর জায়েয নেই, মসজিদুল হারাম, আমার এই মসজিদ এবং মসজিদুল আকসা”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৯৭।]
১৬- মসজিদ হতে বের হবার সময় নিম্নোক্ত দো‘আ পড়ে বাম পা দিয়ে বের হোন।
«اللهم صل على محمد اللهم إني أسألك من فضلك» .
“হে আল্লাহ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন, হে আল্লাহ আমি আপনার অনুগ্রহ কামনা করি”। [হাদীসের দ্বিতীয় অংশ সহীহ মুসলিমে রয়েছে, হাদীস নং ৭১৩। আবূ দাউদ, হাদীস নং ৪৬৫, আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
১৭- মদিনায় অবস্থান কালে শুহাদায়ে উহুদ ও বাকী কবরস্থান যিয়ারত করা মুস্তাহাব। এটি নিজ আখিরাতকে স্মরণ করার জন্য। সেখানে গিয়ে দো‘আ করার জন্য নয়।
১৮- সাওয়াবের উদ্দেশ্যে সাত মসজিদে যিয়ারতে যাওয়ার কোনো অনুমোদন নেই। তাই এ উদ্দেশে সেখানে যাবেন না। বরং আপনি কোবা মসজিদে যেতে পারেন এবং সেখানে দু’রাকাত সালাত আদায় করতে পারেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَنْ تَطَهَّرَ فِي بَيْتِهِ ثُمَّ أَتَى مَسْجِدَ قُبَاءَ، فَصَلَّى فِيهِ صَلَاةً، كَانَ لَهُ كَأَجْرِ عُمْرَةٍ»
“যে ব্যক্তি নিজ বাসস্থান হতে পবিত্র হয়ে মসজিদে কোবায় এসে দু’রাকাত সালাত আদায় করবে। তাকে একটি ওমরার সমপরিমাণ সাওয়াব দেওয়া হবে”। [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৪১২, আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন