HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ঈমানের মূলনীতিসমূহের ব্যাখ্যা

লেখকঃ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উছাইমীন

১০
ঈমানের পঞ্চম ভিত্তি: আখেরাতের ওপর ঈমান
শেষ দিবস বলতে কিয়ামতের দিনকে বুঝানো হয়েছে। যেদিন প্রতিফল প্রদান ও হিসাব-নিকাশের জন্য সব মৃত মানুষদের পুনরুত্থান করা হবে।

ঐ দিনকে ইয়াওমুল আখের বা শেষ দিন এ জন্যই বলা হয় যে, এরপর আর অন্য কোনো দিবস থাকবে না। হিসাব-নিকাশের পর জান্নাতীগণ তাঁদের চিরস্থায়ী আবাসস্থলে অবস্থান করবে এবং জাহান্নামীগণও তাদের ঠিকানায় অবস্থান করবে।

 আখেরাতের ওপর ঈমান তিনটি বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে:

প্রথম: পুনরুত্থান দিবসের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা। আর তা হলো যেদিন শিঙ্গায় দ্বিতীয় বার ফুঁৎকার দেওয়া হবে, তখন সব মৃতরা জীবিত হয়ে নগ্ন দেহ, নগ্ন পা ও খত্নাবিহীন অবস্থায় রাব্বুল ‘আলামীনের সামনে উপস্থিত হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿كَمَا بَدَأۡنَآ أَوَّلَ خَلۡقٖ نُّعِيدُهُۥۚ وَعۡدًا عَلَيۡنَآۚ إِنَّا كُنَّا فَٰعِلِينَ﴾ [ الانبياء : ١٠٤ ]

“যেভাবে আমরা প্রথমবার সৃষ্টি শুরু করেছিলাম সেভাবে পুনরায় তাকে সৃষ্টি করব। আমার ওয়াদা নিশ্চিত। অবশ্যই আমরা তা পূর্ণ করব।” [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ১০৪]

পুনরুত্থান:

মৃত্যুর পর পুনরুত্থান সত্য, যা কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত এবং এর ওপর মুসলিমদের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ثُمَّ إِنَّكُم بَعۡدَ ذَٰلِكَ لَمَيِّتُونَ ١٥ ثُمَّ إِنَّكُمۡ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ تُبۡعَثُونَ ١٦﴾ [ المؤمنون : ١٥، ١٦ ]

“অতঃপর নিশ্চয় তোমরা মারা যাবে। তারপর কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে পুনঃর্জীবিত করা হবে।” [সূরা আল-মু’মিনূন, আয়াত: ১৫-১৬]

অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

‘‘কিয়ামতের দিন সব মানুষকে নগ্ন পা ও খত্নাবিহীন অবস্থায় সমবেত করা হবে।” (বুখারী ও মুসলিম)

আর পুনরুত্থান সাব্যস্ত হওয়ার ওপর মুসলিমদের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

তাছাড়া আল্লাহর হিকমতের দাবী হলো এই পৃথিবীবাসীর জন্য পরবর্তীতে একটি সময় নির্ধারণ করা অনিবার্য, যাতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলদের মাধ্যমে বান্দার ওপর যেসব কাজ-কর্মের দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি তার প্রতিফল প্রদান করেন। আল্লাহ বলেন,

﴿أَفَحَسِبۡتُمۡ أَنَّمَا خَلَقۡنَٰكُمۡ عَبَثٗا وَأَنَّكُمۡ إِلَيۡنَا لَا تُرۡجَعُونَ ١١٥﴾ [ المؤمنون : ١١٥ ]

“তোমরা কি ধারণা করেছ যে, আমরা তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং আমাদের কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে না?” [সূরা আল-মু’মিনূন, আয়াত: ১১৫]

আল্লাহ স্বীয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্বোধন করে বলেন,

﴿إِنَّ ٱلَّذِي فَرَضَ عَلَيۡكَ ٱلۡقُرۡءَانَ لَرَآدُّكَ إِلَىٰ مَعَادٖۚ﴾ [ القصص : ٨٥ ]

‘‘যিনি আপনার জন্য কুরআনকে করেছেন বিধান তিনি অবশ্যই আপনাকে তাঁর অঙ্গিকারকৃত প্রত্যাবর্তনস্থলে ফিরিয়ে নিবেন।” [সূরা আল-ক্বাসাস, আয়াত: ৮৫]

দ্বিতীয়: হিসাব-নিকাশ ও প্রতিফল প্রদানের ওপর ঈমান আনা।

আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন বান্দার কৃতকর্মের হিসাব-নিকাশ নিবেন এবং প্রত্যেকের যাবতীয় কাজ-কর্মের প্রতিফল প্রদান করবেন। এর প্রমাণ কুরআন, সুন্নাহ্ ও মুসলিম উম্মার ইজমা‘। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِنَّ إِلَيۡنَآ إِيَابَهُمۡ ٢٥ ثُمَّ إِنَّ عَلَيۡنَا حِسَابَهُم ٢٦﴾ [ الغاشية : ٢٥، ٢٦ ]

‘‘নিশ্চয়ই তাদের প্রত্যাবর্তন আমারই দিকে হবে। অতঃপর তাদের হিসাব-নিকাশ থাকবে আমারই দায়িত্বে।” [সূরা আল-গাশিয়াহ, আয়াত: ২৫-২৬]

তিনি আরো বলেন,

﴿مَن جَآءَ بِٱلۡحَسَنَةِ فَلَهُۥ عَشۡرُ أَمۡثَالِهَاۖ وَمَن جَآءَ بِٱلسَّيِّئَةِ فَلَا يُجۡزَىٰٓ إِلَّا مِثۡلَهَا وَهُمۡ لَا يُظۡلَمُونَ ١٦٠﴾ [ الانعام : ١٦٠ ]

‘‘যে একটি সৎকর্ম করবে তার জন্য রয়েছে এর দশগুণ সাওয়াব এবং যে একটি মন্দ কাজ করবে সে তারই সমান শাস্তি পাবে। বস্তুতঃ তাদের প্রতি কোনো যুলুম করা হবে না।” [সূরা আল-আন’আম, আয়াত: ১৬০]

অন্যত্র আল্লাহ বলেন,

﴿وَنَضَعُ ٱلۡمَوَٰزِينَ ٱلۡقِسۡطَ لِيَوۡمِ ٱلۡقِيَٰمَةِ فَلَا تُظۡلَمُ نَفۡسٞ شَيۡ‍ٔٗاۖ وَإِن كَانَ مِثۡقَالَ حَبَّةٖ مِّنۡ خَرۡدَلٍ أَتَيۡنَا بِهَاۗ وَكَفَىٰ بِنَا حَٰسِبِينَ ٤٧﴾ [ الانبياء : ٤٧ ]

“আর আমরা কিয়ামতের দিন ন্যায় বিচারের পাল্লা স্থাপন করব। সুতরাং কারো প্রতি যুলুম করা হবে না। যদি কোনো ‘আমল সরিষার দানা পরিমাণও ক্ষুদ্র হয়, আমরা তা উপস্থিত করব এবং হিসাব গ্রহণের জন্য আমরাই যথেষ্ট।” [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ৪৭]

আবদুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,

«إن الله يدني الْمُؤْمِنَ حَتَّى يَضَعَ عَلَيْهِ كَنَفَهُ فَيُقَرِّرُهُ بِذُنُوبِهِ تَعْرِفُ ذَنْبَ كَذَا يَقُولُ أَعْرِفُ يَقُولُ رَبِّ أَعْرِفُ مَرَّتَيْنِ فَيَقُولُ سَتَرْتُهَا فِي الدُّنْيَا وَأَغْفِرُهَا لَكَ الْيَوْمَ ثُمَّ تُطْوَى صَحِيفَةُ حَسَنَاتِهِ وَأَمَّا الْآخَرُونَ أَوْ الْكُفَّارُ فَيُنَادَى عَلَى رُءُوسِ الْأَشْهَادِ هَؤُلاءِ الَّذِينَ كَذَبُوا عَلَى رَبِّهِمْ أَلا لَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الظَّالِمِينَ»

‘‘আল্লাহ ঈমানদার ব্যক্তিকে শেষ বিচারের দিন নিকটবর্তী করে তার ওপর পর্দা ঢেলে দিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করবেন, তুমি কি তোমার অমুক অমুক পাপ সম্পর্কে অবগত আছ? সে উত্তরে বলবে, হ্যাঁ, হে আমার রব! এভাবে যখন সে তার পাপসমূহ স্বীকার করে নিবে এবং দেখবে যে, সে ধ্বংসের মুখোমুখী হয়ে গেছে, তখন আল্লাহ বলবেন, আমি দুনিয়াতে তোমার পাপসমূহ গোপন করে রেখেছিলাম এবং আজ তোমার সে সব পাপ ক্ষমা করে দিলাম। এরপর তাকে তার নেকীর ‘আমলনামা দেওয়া হবে। আর কাফের ও মুনাফিকদেরকে সকল সৃষ্টির সামনে সমবেত করে বলা হবে, এরা সেই সব লোক যারা তাদের রবের প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল। শুনে রাখ, অত্যাচারীদের ওপর আল্লাহর অভিসম্পাৎ রয়েছে।” (বুখারী ও মুসলিম)

অন্য এক হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি কোনো একটি সৎকাজের ইচ্ছা করে এবং তা সম্পন্ন করে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য দশ থেকে সাতশত গুণ সাওয়াব লিখে রাখেন; বরং আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় কৃপায় আরো বেশি দিতে পারেন। পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তি একটি গুনাহের ইচ্ছা করে আর সে তা বাস্তবায়িত করে, আল্লাহ তার নামে শুধু একটি গুনাহই লিপিবদ্ধ করেন।”

আর আখেরাতে হিসাব-নিকাশ শাস্তি ও পুরষ্কার প্রদান করার ওপর মুসলিম উম্মাতের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

তাছাড়া এটাই হিকমতের দাবী। কেননা আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীতে গ্রন্থরাজি পাঠিয়েছেন, রাসূলগণকে প্রেরণ করেছেন এবং তাঁদের আনিত দীন গ্রহণ করা ও তার ওপর আমল করা বান্দাদের ওপর ফরয করে দিয়েছেন। তাদের বিরোধীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ওয়াজিব করেছেন, তাদের রক্ত, ছেলে-সন্তান, মাল-সম্পদ ও নারীদেরকে মুসলিমদের জন্য হালাল করেছেন। অতএব, যদি প্রতিটি কৃতকর্মের হিসাব-নিকাশ ও শাস্তি-পুরষ্কার প্রদান করা না হয় তাহলে এ সবই হয় অনর্থক, যা থেকে আমাদের সর্ববিজ্ঞ রব আল্লাহ তা‘আলা পাক-পবিত্র। এর প্রতিই আল্লাহ তা‘আলা ইঙ্গিত করে বলেন,

{ فَلَنَسْأَلَنَّ الَّذِينَ أُرْسِلَ إِلَيْهِمْ وَلَنَسْأَلَنَّ الْمُرْسَلِينَ فَلَنَقُصَّنَّ عَلَيْهِم بِعِلْمٍ وَمَا كُنَّا غَآئِبِينَ }

‘‘অতএব আমরা অবশ্যই তাদেরকে জিজ্ঞেস করব, যাদের কাছে রাসূল প্রেরিত হয়েছিল এবং আমরা অবশ্যই জিজ্ঞেস করব রাসূলগণকে। অতঃপর আমি স্বজ্ঞানে তাদের কাছে অবস্থা বর্ণনা করব। বস্তুত আমি সেখানে অনুপস্থিত ছিলাম না।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৬]

তৃতীয়: জান্নাত ও জাহান্নামের ওপর বিশ্বাস স্থাপন এবং বিশ্বাস স্থাপন করা যে, এই দু’টি স্থান মু’মিন ও কাফিরদের চিরকালের শেষ আবাসস্থল।

জান্নাত, তা তো অফুরন্ত নি‘আমতের স্থান, আল্লাহ তা সেসব মু’মিন-মুত্তাকীদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন, যারা ঐ সব বিষয়ের প্রতি ঈমান এনেছে যে সব বিষয়ের প্রতি ঈমান আনা আল্লাহ তাদের ওপর অপরিহার্য করেছেন এবং নিষ্ঠার সাথে তারা আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য ও তাঁর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ করেছে। সেথায় এমন অফুরন্ত নিয়ামতের ভাণ্ডার মওজুদ রয়েছে যা কখনও কোনো চক্ষু দেখে নি, কোনো কর্ণ শ্রবণ করে নি এবং কোনো মানুষ তা মনে মনে কল্পনাও করতে পারে নি।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ أُوْلَٰٓئِكَ هُمۡ خَيۡرُ ٱلۡبَرِيَّةِ ٧ جَزَآؤُهُمۡ عِندَ رَبِّهِمۡ جَنَّٰتُ عَدۡنٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدٗاۖ رَّضِيَ ٱللَّهُ عَنۡهُمۡ وَرَضُواْ عَنۡهُۚ ذَٰلِكَ لِمَنۡ خَشِيَ رَبَّهُۥ ٨﴾ [ البينة : ٧، ٨ ]

“যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তারাই হলো সৃষ্টির সেরা। তাদের রবের কাছে রয়েছে তাদের প্রতিদান, চিরকাল বসবাসের জান্নাত, যার তলদেশে নির্ঝরিনীসমূহ প্রবাহিত। তারা সেখানে থাকবে অনন্তকাল। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। এটা তার জন্য যে তার রবকে ভয় করে।” [সূরা আল-বাইয়্যিনাত, আয়াত: ৭-৮]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿فَلَا تَعۡلَمُ نَفۡسٞ مَّآ أُخۡفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعۡيُنٖ جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٧﴾ [ السجدة : ١٧ ]

“কেউ জানে না, তাদের জন্য নয়ণ প্রীতিকর কী লুক্কায়িত রাখা আছে তাদের কৃতকর্মের পুরস্কারস্বরূপ” [সূরা আস-সিজদা, আয়াত: ১৭]

আর জাহান্নাম, জাহান্নাম তো শাস্তির স্থান, যা আল্লাহ তা‘আলা কাফির যালিমদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন। যারা আল্লাহ তা‘আলার সাথে কুফুরী ও তাঁর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাফরমানী করে। সেখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার ‘আযাব ও হৃদয়বিদারক শাস্তি, যা কারো কল্পনায়ও আসতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَٱتَّقُواْ ٱلنَّارَ ٱلَّتِيٓ أُعِدَّتۡ لِلۡكَٰفِرِينَ ١٣١﴾ [ ال عمران : ١٣١ ]

“সেই আগুন থেকে তাকওয়া অবলম্বন কর, যা প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে কাফিরদের জন্য।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩১]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿ إِنَّآ أَعۡتَدۡنَا لِلظَّٰلِمِينَ نَارًا أَحَاطَ بِهِمۡ سُرَادِقُهَاۚ وَإِن يَسۡتَغِيثُواْ يُغَاثُواْ بِمَآءٖ كَٱلۡمُهۡلِ يَشۡوِي ٱلۡوُجُوهَۚ بِئۡسَ ٱلشَّرَابُ وَسَآءَتۡ مُرۡتَفَقًا﴾ [ الكهف : ٢٩ ]

“আমরা যালিমদের জন্য জাহান্নাম প্রস্তুত করে রেখেছি, যার বেষ্টনী তাদেরকে পরিবেষ্টিত করে রাখবে। যদি তারা পানীয় প্রার্থনা করে তাহলে তাদেরকে পূঁজের ন্যায় পানীয় দেওয়া হবে, যা তাদের মুখমণ্ডল বিদগ্ধ করবে। কতই না নিকৃষ্ট পানীয় তা এবং কতই না মন্দ সেই আশ্রয়স্থল।” [সূরা আল কাহাফ, আয়াত: ২৯]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَعَنَ ٱلۡكَٰفِرِينَ وَأَعَدَّ لَهُمۡ سَعِيرًا ٦٤ خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدٗاۖ لَّا يَجِدُونَ وَلِيّٗا وَلَا نَصِيرٗا ٦٥ يَوۡمَ تُقَلَّبُ وُجُوهُهُمۡ فِي ٱلنَّارِ يَقُولُونَ يَٰلَيۡتَنَآ أَطَعۡنَا ٱللَّهَ وَأَطَعۡنَا ٱلرَّسُولَا۠ ٦٦﴾ [ الاحزاب : ٦٤، ٦٦ ]

‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফিরদের ওপর অভিসম্পাত করেছেন এবং তাদের জন্য জ্বলন্ত অগ্নি প্রস্তুত করে রেখেছেন। তথায় তারা অনন্তকাল থাকবে এবং তথায় কোনো অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাবে না। যে দিন অগ্নিতে তাদের মুখমণ্ডল ওলট-পালট করা হবে, সে দিন তারা বলবে, হায়! আমরা যদি আল্লাহ ও আমাদের রাসূলের আনুগত্য করতাম।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৬৪-৬৬]

 শেষ দিবসের ওপর ঈমান আনার সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির মধ্যে আরও রয়েছে, মৃত্যুর পর সংগঠিত বিভিন্ন বিষয়। যেমন,

(ক) কবরের পরীক্ষা:

মৃত ব্যক্তির দাফনের পর ফিরিশতা কর্তৃক তাকে তার রব, তার দীন ও তার নবী সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা ঈমানদারগণকে সুদৃঢ় বাণী দ্বারা সংহত করবেন এবং ঈমানদার ব্যক্তি বলবে, আল্লাহ আমার রব, ইসলাম আমার দীন এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নবী। আর আল্লাহ জালেমদের বিভ্রান্ত করবেন। তাই কাফের বলবে, হায়! হায়! আমি তো কিছুই জানি না। আর মুনাফিক বা সন্দেহকারী বলবে, আমি কিছুই জানি না, তবে লোকদেরকে কিছু বলতে শুনেছি, অতঃপর আমিও তাই বলেছিলাম।

(খ) কবরের ‘আযাব ও তার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য:

কবরের ‘আযাব যালিম, কাফির ও মুনাফিকদের জন্য হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَوۡ تَرَىٰٓ إِذِ ٱلظَّٰلِمُونَ فِي غَمَرَٰتِ ٱلۡمَوۡتِ وَٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ بَاسِطُوٓاْ أَيۡدِيهِمۡ أَخۡرِجُوٓاْ أَنفُسَكُمُۖ ٱلۡيَوۡمَ تُجۡزَوۡنَ عَذَابَ ٱلۡهُونِ بِمَا كُنتُمۡ تَقُولُونَ عَلَى ٱللَّهِ غَيۡرَ ٱلۡحَقِّ وَكُنتُمۡ عَنۡ ءَايَٰتِهِۦ تَسۡتَكۡبِرُونَ﴾ [ الانعام : ٩٣ ]

“যদি আপনি দেখেন, যখন যালিমরা মৃত্যু-যন্ত্রণায় থাকে এবং ফিরিশতারা স্বীয়-হস্ত প্রসারিত করে বলবে, বের কর স্বীয় আত্মা! অদ্য তোমাদেরকে অপমানকর শাস্তি প্রদান করা হবে। কারণ, তোমরা আল্লাহর ওপর অসত্য বলতে এবং তাঁর আয়াতসমূহ থেকে অহংকার করতে। [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৯৩]

মহান আল্লাহ তা‘আলা ফির‘আউনের গোত্র সম্পর্কে বলেন,

﴿ٱلنَّارُ يُعۡرَضُونَ عَلَيۡهَا غُدُوّٗا وَعَشِيّٗاۚ وَيَوۡمَ تَقُومُ ٱلسَّاعَةُ أَدۡخِلُوٓاْ ءَالَ فِرۡعَوۡنَ أَشَدَّ ٱلۡعَذَابِ ٤٦﴾ [ غافر : ٤٦ ]

“সকাল ও সন্ধ্যায় তাদেরকে আগুনের সামনে পেশ করা হয় এবং যেদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে, সেদিন আদেশ করা হবে, ফির‘আউন গোত্রকে কঠিনতর ‘আযাবে প্রবেশ করাও।” [সূরা গাফির, আয়াত: ৪৫]

সহীহ মুসলিম শরীফে যায়েদ ইবন সাবেত রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যদি তোমরা মৃতদেরকে দাফন করবে না -এ আশঙ্কা আমার না হতো তাহলে আমি আল্লাহর নিকট দো‘আ করতাম, তোমাদেরকে কবরের ঐ ‘আযাব শুনিয়ে দেওয়ার জন্য যা আমি শুনে থাকি। তারপর সাহাবীগণের প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, তোমরা জাহান্নামের ‘আযাব থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা কর। তাঁরা বললেন, আমরা জাহান্নামের ‘আযাব থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি। অতঃপর তিনি বললেন, তোমরা কবরের ‘আযাব হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাও। তাঁরা বললেন, আমরা কবরের ‘আযাব থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ফিতনাসমূহ থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় কামনা কর। তাঁরা বললেন, আমরা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ফিতনাসমূহ থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি। তিনি বললেন, তোমরা দাজ্জালের ফিতনা থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা কর। তাঁরা বললেন, আমরা দাজ্জালের ফিতনা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি।”

আর কবরের নি‘আমত ও স্বাচ্ছন্দ্য, তা তো সত্যবাদী ঈমানদার লোকদের জন্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ قَالُواْ رَبُّنَا ٱللَّهُ ثُمَّ ٱسۡتَقَٰمُواْ تَتَنَزَّلُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ أَلَّا تَخَافُواْ وَلَا تَحۡزَنُواْ وَأَبۡشِرُواْ بِٱلۡجَنَّةِ ٱلَّتِي كُنتُمۡ تُوعَدُونَ ٣٠﴾ [ فصلت : ٣٠ ]

“নিশ্চয় যারা বলে, আমাদের রব আল্লাহ, অতঃপর এর ওপর তারা অবিচল থাকে, তাদের কাছে ফিরিশতারা অবতীর্ণ হয়ে বলে, তোমরা ভয় করো না, চিন্তা করো না এবং তোমাদের প্রতিশ্রুত জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর” [সূরা ফুসসিলাত, আয়াত: ৩০]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿فَلَوۡلَآ إِذَا بَلَغَتِ ٱلۡحُلۡقُومَ ٨٣ وَأَنتُمۡ حِينَئِذٖ تَنظُرُونَ ٨٤ وَنَحۡنُ أَقۡرَبُ إِلَيۡهِ مِنكُمۡ وَلَٰكِن لَّا تُبۡصِرُونَ ٨٥ فَلَوۡلَآ إِن كُنتُمۡ غَيۡرَ مَدِينِينَ ٨٦ تَرۡجِعُونَهَآ إِن كُنتُمۡ صَٰدِقِينَ ٨٧ فَأَمَّآ إِن كَانَ مِنَ ٱلۡمُقَرَّبِينَ ٨٨ فَرَوۡحٞ وَرَيۡحَانٞ وَجَنَّتُ نَعِيمٖ ٨٩﴾ [ الواقعة : ٨٣، ٨٩ ]

‘‘উপরন্তু কেন নয় যখন কারো প্রাণ কন্ঠাগত হয় এবং তোমরা তাকিয়ে থাক, তখন আমরা তোমাদের অপেক্ষা তার অধিক নিকটে থাকি; কিন্তু তোমরা দেখ না। যদি তোমাদের হিসাব-কিতাব না হওয়াই ঠিক হয়, তবে তোমরা এই আত্মাকে ফিরাও না কেন? যদি তোমরা সত্যবাদী হও। অতঃপর যদি সে নৈকট্যপ্রাপ্তদের একজন হয়, তবে তাঁর জন্য আছে সুখ-সাচ্ছন্দ্য, উত্তম জীবনোপকরণ ও নি‘আমত ভরা উদ্যান।” [সূরা ওয়াকিয়াহ, আয়াত: ৮৩-৮৯]

অনুরূপভাবে বারা ইবনে ‘আযিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ঈমানদার ব্যক্তি কর্তৃক কবরে ফিরিশতাদ্বয়ের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পর এক আহ্বানকারী আসমান থেকে আহ্বান করে বলবে, আমার বান্দা সত্য বলেছে। তোমরা তার জন্য জান্নাতে বিছানা করে দাও, তাকে জান্নাতের পোষাক পরিধান করিয়ে দাও এবং তার জন্য জান্নাতের একটা দরজা খুলে দাও। অতঃপর তাঁর কবরে জান্নাতের সুগন্ধি আসতে থাকবে এবং তার জন্য কবর চক্ষুদৃষ্টির সীমা পর্যন্ত প্রশস্ত করা হবে। (ইমাম আহমদ ও আবু দাউদ কর্তৃক বর্ণিত, এটি দীর্ঘ একটি হাদীসের অংশ বিশেষ)

শেষ দিবসের ওপর ঈমানে অনেক উপকারিতা রয়েছে, তন্মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপ:

১। আখেরাতের সে দিনের সুখ-শান্তি ও প্রতিফলের আশায় ঈমান অনুযায়ী আল্লাহর আনুগত্যে ‘আমল করার প্রেরণা ও স্পৃহা সৃষ্টি হয়।

২। আখেরাতের সে দিনের ‘আযাব ও শাস্তির ভয়ে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাফরমানী করা থেকে ও পাপ কাজের ওপর সন্তুষ্ট হওয়া থেকে বিরত থাকা।

৩। আখেরাতে সংরক্ষিত নি‘আমত ও সাওয়াবের আশায় পার্থিব বঞ্চনায় মু’মিনের আন্তরিক প্রশান্তি লাভ হয়।

আখেরাতের ব্যাপারে সন্দেহ ও তার অপনোদন:

 কাফেরগণ মৃত্যুর পর পূনরুজ্জীবন অস্বীকার করে। তাদের ধারণায় এ পুনরুজ্জীবন অসম্ভব:

কাফেরদের এই ধারণা বাতিল। কারণ, মৃত্যুর পর পুণরুত্থানের ওপর শরী‘আত, ইন্দ্রিয় শক্তি ও যুক্তিগত প্রমাণ রয়েছে:

(ক) শরী‘আতের প্রমাণ: আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿زَعَمَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوٓاْ أَن لَّن يُبۡعَثُواْۚ قُلۡ بَلَىٰ وَرَبِّي لَتُبۡعَثُنَّ ثُمَّ لَتُنَبَّؤُنَّ بِمَا عَمِلۡتُمۡۚ وَذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ يَسِيرٞ ٧﴾ [ التغابن : ٧ ]

“কাফেররা ধারণা করে যে, তারা কখনও পুণরুত্থিত হবে না। বলুন, অবশ্যই তা হবে, আমার পালনকর্তার কসম, নিশ্চয়ই তোমরা পুণরুত্থিত হবে। অতঃপর তোমাদেরকে অবহিত করানো হবে যা তোমরা করতে। এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ। [সূরা আত-তাগাবুন, আয়াত: ৭]

উপরন্তু সব আসমানী গ্রন্থ মৃত্যুর পর পুনরুত্থান সংগঠিত হওয়ার ব্যাপারে একমত।

(খ) ইন্দ্রিয় শক্তির আলোকে প্রমাণ:

আল্লাহ তা‘আলা এ পৃথিবীতে মৃত ব্যক্তিদেরকে জীবিত করে তার বান্দাদের সম্মুখে প্রত্যক্ষ প্রমাণ পেশ করেছেন। সূরা আল-বাক্বারাতে এর পাঁচটি দৃষ্টান্ত বর্ণিত হয়েছে।

প্রথম উদাহরণ: মূসা আলাইহিস সালামের ঘটনা। যখন মুসা আলাইহিস সালাম বনী ইসরাঈলের সত্তর জন লোককে মনোনীত করে তাঁর সঙ্গে তূর পর্বতে নিয়ে গেলেন। সেখানে পৌঁছে তারা আল্লাহর বাণী স্বয়ং শ্রবণ করেও ঈমান আনলো না বরং বলল, যতক্ষণ না আমরা আল্লাহকে প্রকাশ্য দেখবো ততক্ষণ পর্যন্ত বিশ্বাস করব না। এ ধৃষ্টতার জন্য তাদের ওপর বজ্রপাত হলো এবং সবাই ধ্বংস হয়ে গেল। অতঃপর মুসা আলাইহিস সালামের দো‘আয় আল্লাহ দয়াপরবশ হয়ে তাদেরকে পূণর্জীবিত করে ছিলেন। আল্লাহ বনী ইসরাঈলদেরকে সম্বোধন করে বলেন,

﴿وَإِذۡ قُلۡتُمۡ يَٰمُوسَىٰ لَن نُّؤۡمِنَ لَكَ حَتَّىٰ نَرَى ٱللَّهَ جَهۡرَةٗ فَأَخَذَتۡكُمُ ٱلصَّٰعِقَةُ وَأَنتُمۡ تَنظُرُونَ ٥٥ ثُمَّ بَعَثۡنَٰكُم مِّنۢ بَعۡدِ مَوۡتِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ ٥٦﴾ [ البقرة : ٥٥، ٥٦ ]

‘‘আর যখন তোমরা বললে, হে মুসা, কস্মিনকালেও আমরা তোমাকে বিশ্বাস করব না যতক্ষণ না আমরা আল্লাহকে প্রকাশ্য দেখতে পাব। বস্তুতঃ তোমদেরকে পাকড়াও করল বজ্রপাত এবং তোমরা তা প্রত্যক্ষ করছিলে। তারপর মরে যাবার পর তোমাদিগকে পূনরায় জীবন দান করেছি, যাতে করে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে নাও।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ৫৫-৫৬]

দ্বিতীয় উদাহরণ: একজন নিহত ব্যক্তির ঘটনা। বনী ইসরাঈলের মধ্যে একটি হত্যাকাণ্ড সংঘঠিত হয় এবং মুল হত্যাকারী কে? তা জানা কঠিন হয়ে পড়ে। তখন আল্লাহ তাদেরকে একটি গরু জবাই করে তার একটি অংশ দ্বারা মৃত ব্যক্তিকে আঘাত করার আদেশ দিলেন। অতঃপর তারা সেভাবে আঘাত করলে ঐ ব্যক্তি জীবিত হয়ে উঠে এবং হত্যাকারীর নাম বলে দেয়। এই প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَإِذۡ قَتَلۡتُمۡ نَفۡسٗا فَٱدَّٰرَٰٔتُمۡ فِيهَاۖ وَٱللَّهُ مُخۡرِجٞ مَّا كُنتُمۡ تَكۡتُمُونَ ٧٢ فَقُلۡنَا ٱضۡرِبُوهُ بِبَعۡضِهَاۚ كَذَٰلِكَ يُحۡيِ ٱللَّهُ ٱلۡمَوۡتَىٰ وَيُرِيكُمۡ ءَايَٰتِهِۦ لَعَلَّكُمۡ تَعۡقِلُونَ ٧٣﴾ [ البقرة : ٧٢، ٧٣ ]

“স্মরণ কর, যখন তোমরা এক ব্যক্তিকে হত্যা করলে, অতঃপর সে সম্পর্কে একে অপরকে অভিযুক্ত করেছিলে। তোমরা গোপন করতে চেয়েছ, তা প্রকাশ করে দেওয়া ছিল আল্লাহর অভিপ্রায়। অতঃপর আমি বললাম, গরুর একটি খণ্ড দ্বারা মৃতকে আঘাত কর। এভাবে আল্লাহ মৃতকে জীবিত করেন এবং তোমাদেরকে তাঁর নির্দশনসমূহ প্রদর্শন করেন, যাতে তোমরা চিন্তা কর।” [সূরা আল-বাক্বারা, আয়াত: ৭২-৭৩]

তৃতীয় উদাহরণ: এ ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ এই যে, বনী ইসরাঈলের কিছু লোক কোনো এক শহরে বাস করতো, সেখানে কোনো মহামারী বা মারাত্মক রোগ-ব্যধির প্রাদুর্ভাব হয়। তখন তারা মৃত্যুর ভয়ে বাড়ি-ঘর ছেড়ে দু’টি পাহাড়ের মধ্যবর্তী এক প্রশস্ত ময়দানে গিয়ে বসবাস করতে লাগলো। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে এবং দুনিয়ার অন্যান্য, জাতিকে একথা অবগত করার জন্য যে, মৃত্যুর ভয়ে পালিয়ে গিয়ে কেউ রক্ষা পেতে পারে না, তাদের সবাইকে ঐ জায়গায় একসাথে মৃত্যু দিয়ে দিলেন এবং পরে তাদেরকে আবার জীবিত করেন।

এই প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿أَلَمۡ تَرَ إِلَى ٱلَّذِينَ خَرَجُواْ مِن دِيَٰرِهِمۡ وَهُمۡ أُلُوفٌ حَذَرَ ٱلۡمَوۡتِ فَقَالَ لَهُمُ ٱللَّهُ مُوتُواْ ثُمَّ أَحۡيَٰهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ لَذُو فَضۡلٍ عَلَى ٱلنَّاسِ وَلَٰكِنَّ أَكۡثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَشۡكُرُونَ ٢٤٣﴾ [ البقرة : ٢٤٣ ]

“তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা মৃত্যুর ভয়ে নিজেদের ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল? আর তারা ছিল সংখ্যায় হাজার হাজার। তারপর আল্লাহ তাদেরকে বললেন, মরে যাও। তারপর আবার তাদেরকে জীবিত করে দিলেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ মানুষের ওপর পরম অনুগ্রহশীল। কিন্তু অধিকাংশ লোক শুকরিয়া জ্ঞাপন করে না।” [সূরা আল-বাক্বারা, আয়াত: ২৪৩]

চতুর্থ উদাহরণ: সেই ব্যক্তির ঘটনা যে এক মৃত শহর দিয়ে যাচ্ছিল। অবস্থা দেখে সে ধারণা করল যে, আল্লাহ এই শহরকে আর জীবিত করতে পারবেন না। আল্লাহ তা‘আলা তাকে একশত বছর মৃত রাখেন। তারপর তাকে জীবিত করেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,

﴿أَوۡ كَٱلَّذِي مَرَّ عَلَىٰ قَرۡيَةٖ وَهِيَ خَاوِيَةٌ عَلَىٰ عُرُوشِهَا قَالَ أَنَّىٰ يُحۡيِۦ هَٰذِهِ ٱللَّهُ بَعۡدَ مَوۡتِهَاۖ فَأَمَاتَهُ ٱللَّهُ مِاْئَةَ عَامٖ ثُمَّ بَعَثَهُۥۖ قَالَ كَمۡ لَبِثۡتَۖ قَالَ لَبِثۡتُ يَوۡمًا أَوۡ بَعۡضَ يَوۡمٖۖ قَالَ بَل لَّبِثۡتَ مِاْئَةَ عَامٖ فَٱنظُرۡ إِلَىٰ طَعَامِكَ وَشَرَابِكَ لَمۡ يَتَسَنَّهۡۖ وَٱنظُرۡ إِلَىٰ حِمَارِكَ وَلِنَجۡعَلَكَ ءَايَةٗ لِّلنَّاسِۖ وَٱنظُرۡ إِلَى ٱلۡعِظَامِ كَيۡفَ نُنشِزُهَا ثُمَّ نَكۡسُوهَا لَحۡمٗاۚ فَلَمَّا تَبَيَّنَ لَهُۥ قَالَ أَعۡلَمُ أَنَّ ٱللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٞ ٢٥٩﴾ [ البقرة : ٢٥٩ ]

‘‘তুমি কি সে লোককে দেখনি, যে এমন এক জনপদ দিয়ে যাচ্ছিল, যার ঘর-বাড়িগুলো ধ্বংস-স্তুপে পরিণত হয়েছিল। বলল, কেমন করে আল্লাহ মরণের পর একে জীবিত করবেন? অতঃপর আল্লাহ তাকে মৃত অবস্থায় রাখলেন একশত বছর। তারপর তাকে পুনঃর্জীবিত করে বললেন, কতকাল মৃত ছিলে? বলল, আমি মৃত ছিলাম একদিন কিংবা একদিনের কিছু কম সময়। আল্লাহ বললেন, তা নয়! বরং তুমি তো একশত বছর মৃত ছিলে। এবার চেয়ে দেখ নিজের খাবার ও পানীয় দ্রব্যের দিকে, সেগুলো পঁচে যায় নি এবং দেখ, নিজের গাধাটির দিকে। আর আমি তোমাকে মানুষের জন্য দৃষ্টান্ত বানাতে চেয়েছি। আর হাড়গুলোর দিকে চেয়ে দেখ, আমি এগুলোকে কেমন করে জুড়ে দেই এবং সেগুলোর ওপর মাংসের আবরণ কীভাবে পরিয়ে দেই। অতঃপর যখন তার ওপর এ অবস্থা স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হল, তখন বলে উঠল, আমি জানি, নিঃসন্দেহে আল্লাহ সব কিছুর ওপর সর্ব শক্তিমান।” [সূরা আল-বাক্বারা, আয়াত: ২৫৯]

পঞ্চম উদাহরণ: ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ঘটনা, যখন তিনি আল্লাহ তা‘আলার কাছে আরয করলেন, তিনি কীভাবে মৃতকে পূনঃর্জীবিত করেন, তখন আল্লাহ তাকে তা প্রত্যক্ষ করান।

আল্লাহ তা‘আলা ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে নির্দেশ দিলেন, তিনি যেন চারটি পাখী জবাই করে সেগুলোর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পার্শ্ববর্তী পাহাড়গুলোর ওপর ছড়িয়ে-ছিঠিয়ে দেন। এরপর তাদের ডাক দিলে দেখা যাবে তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো একত্রিত হয়ে পূর্ণ আকারে ইবরাহীমের দিকে ধাবিত হয়ে আসছে।

আল্লাহ তা‘আলা ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেন,

﴿وَإِذۡ قَالَ إِبۡرَٰهِ‍ۧمُ رَبِّ أَرِنِي كَيۡفَ تُحۡيِ ٱلۡمَوۡتَىٰۖ قَالَ أَوَ لَمۡ تُؤۡمِنۖ قَالَ بَلَىٰ وَلَٰكِن لِّيَطۡمَئِنَّ قَلۡبِيۖ قَالَ فَخُذۡ أَرۡبَعَةٗ مِّنَ ٱلطَّيۡرِ فَصُرۡهُنَّ إِلَيۡكَ ثُمَّ ٱجۡعَلۡ عَلَىٰ كُلِّ جَبَلٖ مِّنۡهُنَّ جُزۡءٗا ثُمَّ ٱدۡعُهُنَّ يَأۡتِينَكَ سَعۡيٗاۚ وَٱعۡلَمۡ أَنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٞ ٢٦٠﴾ [ البقرة : ٢٦٠ ]

‘‘এবং স্মরণ কর, যখন ইবরাহীম বলল, হে আমার রব! আমাকে দেখাও, কেমন করে তুমি মৃতকে জীবিত কর। বললেন, তুমি কি তা ঈমান আনয়ন কর নি? বলল, অবশ্যই বিশ্বাস করি, কিন্তু এজন্য দেখতে চাই যাতে অন্তরে প্রশান্তি লাভ করতে পারি। বললেন, তাহলে চারটি পাখী ধরে নাও। পরে সেগুলোকে কেটে টুকরো টুকরো করে নাও। অতঃপর সেগুলোর দেহের একেকটি অংশ বিভিন্ন পাহাড়ের উপর রেখে দাও। তারপর সেগুলোকে ডাক। দেখবে, সেগুলো (জীবিত হয়ে) তোমার নিকট দৌড়ে আসবে। আর জেনে রেখো, নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, অতি জ্ঞানসম্পন্ন।” [সূরা বাক্বারা, আয়াত: ২৬০]

এ সকল বাস্তব ইন্দ্রিয়গত উদাহরণ যা মৃতদের পুনরায় জীবিত করা নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করে। ইতোপূর্বে মৃতকে জীবিত করা এবং কবর থেকে পুণরুত্থিত করা সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শনসমূহের মধ্যে অন্যতম নিদর্শন ঈসা ইবন মারিয়াম আলাইহিমাস সালামের মু‘জিযার প্রতি ঈঙ্গিত করা হয়েছে।

(গ) যুক্তির আলোকে পুণরুত্থানের প্রমাণসমূহ এবং সেগুলো দু’ভাবে উপস্থাপন করা যায়:

এক: নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা নভোমণ্ডল ও ভুমণ্ডল এবং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সব কিছুর স্রষ্টা। আর যিনি প্রথমবার এগুলো সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে কোনো ক্লান্তিবোধ করেন নি, তিনি কি পুনরুত্থানে দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করতে অক্ষম? না তিনি অক্ষম নন; বরং তা তো আরো সহজ। আর তিনি সর্বশক্তিমান। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَهُوَ ٱلَّذِي يَبۡدَؤُاْ ٱلۡخَلۡقَ ثُمَّ يُعِيدُهُۥ وَهُوَ أَهۡوَنُ عَلَيۡهِۚ وَلَهُ ٱلۡمَثَلُ ٱلۡأَعۡلَىٰ فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۚ وَهُوَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡحَكِيمُ ٢٧﴾ [ الروم : ٢٧ ]

‘‘তিনিই প্রথমবার সৃষ্টিকে অস্তিত্বে আনয়ন করেন, অতঃপর পুনর্বার তিনিই সৃষ্টি করবেন। এটা তাঁর জন্য অধিকতর সহজ। আকাশ ও পৃথিবীতে সর্বোচ্চ মর্যাদা তাঁরই এবং তিনিই পরাক্রমাশালী প্রজ্ঞাময়।” [সূরা রূম, আয়াত: ২৭]

আল্লাহ আরো বলেন,

﴿كَمَا بَدَأۡنَآ أَوَّلَ خَلۡقٖ نُّعِيدُهُۥۚ وَعۡدًا عَلَيۡنَآۚ إِنَّا كُنَّا فَٰعِلِينَ﴾ [ الانبياء : ١٠٤ ]

‘‘যেভাবে আমি প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম সেভাবে আমি পুনরায় সৃষ্টি করব। আমার ওয়াদা নিশ্চিত, আমি অবশ্যই তা পূর্ণ করব।” [সূরা আল-আম্বিয়া আয়াত: ১০৪]

যে ব্যক্তি পঁচে-গলে যাওয়া হাড্ডি পুনর্জীবিত হওয়াকে অস্বীকার করে, আল্লাহ তা‘আলা তার উত্তর প্রদানের জন্য তাঁর নবীকে নির্দেশ দিয়ে বলেন,

﴿وَضَرَبَ لَنَا مَثَلٗا وَنَسِيَ خَلۡقَهُۥۖ قَالَ مَن يُحۡيِ ٱلۡعِظَٰمَ وَهِيَ رَمِيمٞ ٧٨ قُلۡ يُحۡيِيهَا ٱلَّذِيٓ أَنشَأَهَآ أَوَّلَ مَرَّةٖۖ وَهُوَ بِكُلِّ خَلۡقٍ عَلِيمٌ ٧٩ ٱلَّذِي جَعَلَ لَكُم مِّنَ ٱلشَّجَرِ ٱلۡأَخۡضَرِ نَارٗا فَإِذَآ أَنتُم مِّنۡهُ تُوقِدُونَ ٨٠ أَوَ لَيۡسَ ٱلَّذِي خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ بِقَٰدِرٍ عَلَىٰٓ أَن يَخۡلُقَ مِثۡلَهُمۚ بَلَىٰ وَهُوَ ٱلۡخَلَّٰقُ ٱلۡعَلِيمُ ٨١﴾ [ يس : ٧٨، ٨١ ]

‘‘সে আমার সম্পর্কে এক অদ্ভুত কথা বর্ণনা করে অথচ সে নিজের সৃষ্টি ভুলে যায়। সে বলে, কে জীবিত করবে অস্থিসমূহকে যখন সেগুলো পঁচে গলে যাবে? বলুন, যিনি প্রথমবার এগুলোকে সৃষ্টি করেছেন তিনিই পুনরায় সেগুলোকে জীবিত করবেন। তিনি সর্বপ্রকার সৃষ্টি সম্পর্কে সম্যক অবগত।” [সূরা ইয়াসীন, আয়াত: ৭৮-৭৯]

দুই: জমীন কখনও কখনও সবুজ বৃক্ষ, তৃন-লতাহীন পতিত হয়ে পড়ে। আল্লাহ তা‘আলা তখন বৃষ্টি বর্ষণ করে পুনরায় তাকে জীবিত ও সবুজ-শ্যামল করে তুলেন। যিনি এই জমিনকে মরে যাওয়ার পর জীবিত করতে সক্ষম তিনি নিশ্চয়ই মৃত প্রাণীদেরকে পুনরায় জীবন্ত করতে সম্পূর্ণ সক্ষম।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمِنۡ ءَايَٰتِهِۦٓ أَنَّكَ تَرَى ٱلۡأَرۡضَ خَٰشِعَةٗ فَإِذَآ أَنزَلۡنَا عَلَيۡهَا ٱلۡمَآءَ ٱهۡتَزَّتۡ وَرَبَتۡۚ إِنَّ ٱلَّذِيٓ أَحۡيَاهَا لَمُحۡيِ ٱلۡمَوۡتَىٰٓۚ إِنَّهُۥ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٌ ٣٩﴾ [ فصلت : ٣٩ ]

“তাঁর এক নিদর্শন এই যে, তুমি ভূমিকে দেখবে অনুর্বর পড়ে আছে। অতঃপর আমি যখন তার উপর বৃষ্টি বর্ষণ করি তখন তা সবুজ-শ্যামল ও স্ফীত হয়ে উঠে। নিশ্চয়ই যিনি একে জীবিত করেন তিনি জীবিত করবেন মৃতুদেরকেও। নিশ্চয়ই তিনি সব কিছু করতে সক্ষম।” [সূরা ফুসসিলাত, আয়াত: ৩৯]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿وَنَزَّلۡنَا مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءٗ مُّبَٰرَكٗا فَأَنۢبَتۡنَا بِهِۦ جَنَّٰتٖ وَحَبَّ ٱلۡحَصِيدِ ٩ وَٱلنَّخۡلَ بَاسِقَٰتٖ لَّهَا طَلۡعٞ نَّضِيدٞ ١٠ رِّزۡقٗا لِّلۡعِبَادِۖ وَأَحۡيَيۡنَا بِهِۦ بَلۡدَةٗ مَّيۡتٗاۚ كَذَٰلِكَ ٱلۡخُرُوجُ ١١﴾ [ق: ٩، ١١ ]

“এবং আমি আকাশ থেকে বরকতময় বৃষ্টি বর্ষণ করি এবং তদ্বারা বাগান ও পরিপক্ষ শষ্যরাজি উদ্গত করি। আর সৃষ্টি করি সমুন্নত খর্জুর বৃক্ষ, যাতে থাকে গুচ্ছ গুচ্ছ খেজুর আমার বান্দাদের জীবিকাস্বরূপ; বৃষ্টির দ্বারা আমি সঞ্জীবিত করি মৃত ভূমিকে। এভাবে পুনরুত্থান ঘটবে।” [সূরা ক্বাফ, আয়াত: ৯-১১]

আরও একটি সন্দেহ ও তাঁর অপনোদন:

পথভ্রষ্ট একটি সম্প্রদায় কবরের আযাব ও তার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যকে অস্বীকার করে। তাদের ধারণা এটা অসম্ভব ও বাস্তবতা বিরোধী। তারা বলে, কোনো সময় কবর উন্মুক্ত করা হলে দেখা যায়, মৃত ব্যক্তি যেমন ছিল তেমনই আছে। কবরের পরিসর বৃদ্ধি পায় নি বা তা সংকুচিতও হয় নি।

বস্তুত এ ধরনের সন্দেহ শরী‘আত, ইন্দ্রিয়শক্তি ও যুক্তির বিচারে তাদের এ ধারণা বাতিল:

শরী‘আতের প্রমাণ: কবরের শাস্তি ও এর সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের প্রমাণ হিসাবে ইতোপূর্বে কুরআন ও হাদীসের উদ্ধৃতিসমূহ ‘শেষ দিবসের উপর ঈমান’ পরিচ্ছদে (খ) প্যারায় উল্লেখ করা হয়েছে।

সহীহ বুখারীতে আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক বাগানের পার্শ্ব দিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি দু’জন লোকের আওয়াজ শুনতে পেলেন, যাদেরকে তাদের কবরে শাস্তি দেওয়া হচ্ছিল...। এই হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ্ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আযাবের কারণ উল্লেখ করে বললেন, এদের একজন প্রস্রাব থেকে নিজেকে রক্ষা করতো না এবং অপরজন চোগলখুরী করতো।

ইন্দ্রিয়শক্তির আলোকে এর প্রমাণ:

যেমন, ঘুমন্ত ব্যক্তি স্বপ্নে হয়ত একটা প্রশস্ত বাগান বা ময়দান দেখতে পায় এবং সেখানে শান্তি উপভোগ করতে থাকে। আবার কখনও সে দেখে যে, কোনো বিপদে পতিত হয়ে ভীষণ কষ্টে অস্থির হয়ে উঠে এবং অনেক সময় ভয়ে জাগ্রত হয়ে যায় অথচ সে নিজ বিছানার উপর পূর্বাবস্থায় বহাল রয়েছে।

বলা হয়, ‘‘নিদ্রা মৃত্যুর সমতুল্য।” এজন্য আল্লাহ তা‘আলা নিদ্রাকে মৃত্যু বলেছেন। আল্লাহ বলেন,

﴿ٱللَّهُ يَتَوَفَّى ٱلۡأَنفُسَ حِينَ مَوۡتِهَا وَٱلَّتِي لَمۡ تَمُتۡ فِي مَنَامِهَاۖ فَيُمۡسِكُ ٱلَّتِي قَضَىٰ عَلَيۡهَا ٱلۡمَوۡتَ وَيُرۡسِلُ ٱلۡأُخۡرَىٰٓ إِلَىٰٓ أَجَلٖ مُّسَمًّىۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّقَوۡمٖ يَتَفَكَّرُونَ ٤٢﴾ [ الزمر : ٤٢ ]

“আল্লাহ মানুষের প্রাণ হরণ করেন তার মৃত্যুর সময়। আর যে মরে না তার নিদ্রাকালে। অতঃপর যার মৃত্যু অবধারিত করেন,তার প্রাণ ছাড়েন না এবং অন্যান্যদের ছেড়ে দেন এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৪২]

যুক্তি বা বুদ্ধির আলোকে কবরের শাস্তি ও শান্তির প্রমাণ:

ঘুমন্ত ব্যক্তি কখনো এমন সত্য স্বপ্ন দেখে থাকে যা বাস্তবের সাথে মিলে যায় এবং হয়ত বা সে কখনো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর প্রকৃত আকৃতিতে স্বপ্নে দেখল। আর যে রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর প্রকৃত আকৃতিতে স্বপ্নে দেখে, সে অবশ্য রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেই দেখেছে। অথচ তখন সে নিজ কক্ষে আপন বিছানায় শায়িত। দুনিয়ার ব্যাপারে এসব সম্ভব হলে আখেরাতের ব্যাপারে কেন সম্ভব হবে না?

আর যে ধারণার ওপর নির্ভর করে তারা বলে যে, অনেক সময় কবর উন্মুক্ত করা হলে দেখা যায় যে, মৃত ব্যক্তি যেমন ছিল তেমনই আছে। কবরের পরিসর বৃদ্ধি পায় নি বা তা সংকুচিতও হয় নি। তাদের এ ভ্রান্ত ধারণার জবাব কয়েক ভাবে দেওয়া যায়। যেমন,

১। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোনো কাজের আদেশ করলে বা কোনো ব্যাপারে সংবাদ দিলে তা মান্য ও বিশ্বাস করা ছাড়া ঈমানদার নর-নারীর ভিন্ন কোনো ক্ষমতা থাকে না। বিশেষ করে এজাতীয় অমূলক ক্ষেত্রে। যদি অস্বীকার কারী ব্যক্তি শরী‘আত কর্তৃক বর্ণিত বিষয়সমূহে যথাযথ চিন্তা-ভাবনা করে তা হলে সে এসব সন্দেহ-সংশয়ের অসারতা অনুধাবন করতে পারবে। আরবীতে বলা হয়,

وكم من عائب قولا صحيحا وآفته من الفهم السقيم

‘‘অনেকেই বিশুদ্ধ বক্তব্যের মধ্যে দোষত্রুটি খুঁজে বেড়ায় অথচ প্রকৃত দোষ বা বিপদ তার রুগ্ন বুদ্ধিমত্তাতেই নিহিত রয়েছে।”

২। কবরের অবস্থাসমূহ গায়েব বা অদৃশ্য বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত। ইন্দ্রিয়শক্তির মাধ্যমে তা উপলব্দি করা অসম্ভব। যদি ইন্দ্রিয় বা অনুভূতির মাধ্যমে উপলব্ধি করা যেতো তা হলে ঈমান বিল গায়বের আর প্রয়োজন হতো না এবং এ কারণে গায়েবে বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী একই পর্যায়ভুক্ত হয়ে যাবে।

৩। কবরের শান্তি ও শাস্তি এবং প্রশস্ততা ও সংকীর্ণতা কেবল কবরবাসী মৃত ব্যক্তিই অনুভব করে, অন্যেরা নয়। যেমন ঘুমন্ত ব্যক্তি স্বপ্নে কোনো বিপদে পতিত হয়ে ভীষণ কষ্টে অস্থির হতে থাকে; কিন্তু নিকটে উপবিষ্ট ব্যক্তি মোটেই তা টের পায় না। অনুরূপ সমবেত সাহাবায়ে কেরামের মাঝে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি যখন ওহী অবতীর্ণ হতো তখন তিনি তা শুনতেন ও কন্ঠস্থ করতেন; কিন্তু সাহাবীগণ কিছুই শুনতেন না। অনেক সময় জিবরীল আলাইহিস সালাম ওহী নিয়ে আগমন করতেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পাঠ করে শুনাতেন। তিনি শুনতেন, ও দেখতেন; কিন্তু সাহাবীগণ টেরও পেতেন না।

৪। মানুষের জ্ঞান অতি সামান্য ও সীমিত। সৃষ্টির অনেক বস্তু মানুষের ইন্দ্রিয় ও চেতনা এবং জ্ঞানের ঊর্ধে।

এভাবে সপ্তাকাশ, জমিন ও এতদুভয়ের সব বস্তু সত্যিকারার্থে আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করে কিন্তু তা আমাদের বোধশক্তি ও অনুভূতির উর্ধ্বে, সাধারণ মানুষের তা শ্রুতিগোচর হয় না। যেমন; আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿تُسَبِّحُ لَهُ ٱلسَّمَٰوَٰتُ ٱلسَّبۡعُ وَٱلۡأَرۡضُ وَمَن فِيهِنَّۚ وَإِن مِّن شَيۡءٍ إِلَّا يُسَبِّحُ بِحَمۡدِهِۦ وَلَٰكِن لَّا تَفۡقَهُونَ تَسۡبِيحَهُمۡۚ إِنَّهُۥ كَانَ حَلِيمًا غَفُورٗا ٤٤﴾ [ الاسراء : ٤٤ ]

‘‘সপ্তাকাশ ও পৃথিবী এবং এগুলোর মধ্যে যা কিছু আছে সমস্ত কিছু তাঁরই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং এমন কিছু নেই যা তাঁর প্রশংসা, পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে না। কিন্তু তাদের পবিত্রতা, মহিমা ঘোষণা তোমরা অনুধাবন করতে পার না। নিশ্চয় তিনি অতি সহনশীল, ক্ষমাপরায়ণ। [সূরা আশ-শু‘আরা আয়াত: ৪৪]

আর এভাবেই শয়তান ও জ্বিনদের পৃথিবীতে গমনাগমন। জিন্নদের একদল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হয়ে নীরবে কুরআন শ্রবণ করার পর ইসলাম গ্রহণ করে এবং আপন সম্প্রদায়ের প্রতি ভীতিপ্রদর্শনকারী হিসেবে প্রত্যাবর্তন করে। এতদসত্বেও তারা আমাদের দৃষ্টির অগোচরে। এই সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَٰبَنِيٓ ءَادَمَ لَا يَفۡتِنَنَّكُمُ ٱلشَّيۡطَٰنُ كَمَآ أَخۡرَجَ أَبَوَيۡكُم مِّنَ ٱلۡجَنَّةِ يَنزِعُ عَنۡهُمَا لِبَاسَهُمَا لِيُرِيَهُمَا سَوۡءَٰتِهِمَآۚ إِنَّهُۥ يَرَىٰكُمۡ هُوَ وَقَبِيلُهُۥ مِنۡ حَيۡثُ لَا تَرَوۡنَهُمۡۗ إِنَّا جَعَلۡنَا ٱلشَّيَٰطِينَ أَوۡلِيَآءَ لِلَّذِينَ لَا يُؤۡمِنُونَ ٢٧﴾ [ الاعراف : ٢٧ ]

“হে আদম সন্তান! শয়তান যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত না করে, যেমন সে তোমাদের পিতা-মাতাকে (বিভ্রান্ত করে) জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছিল, এমতাবস্থায় যে, তাদের পোষাক তাদের থেকে খুলিয়ে দিয়েছিল যাতে তাদেরকে তাদের লজ্জাস্থান দেখিয়ে দেয়। সে এবং তার দলবল তোমাদেরকে দেখে যেখান থেকে তোমরা তাদেরকে দেখ না। আমি শয়তানদেরকে তাদের বন্ধু করে দিয়েছি, যারা ঈমান আনে না।” [সূরা আল আ‘রাফ, আয়াত: ২৭]

আর যখন সৃষ্টিলোক পৃথিবীতে বিরাজমান সবকিছু উপলব্ধি করতে পারে না, তখন তাদের পক্ষে তাদের উপলব্ধির বাইরে বিরাজমান যে সব গায়েবী বিষয়াদি রয়েছে সেগুলো অস্বীকার করা কোনোভাবেই বৈধ হবে না।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন