মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
শরী‘আতের পরিভাষায় ‘ক্বাদর ( قدر ) শব্দের অর্থ: আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক স্বীয় হিকমত ও জ্ঞান অনুসারে সৃষ্টিকুলের জন্য সবকিছু নির্ধারণ।
তাকদীরের উপর ঈমানের মধ্যে নিম্নোক্ত চারটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে,
প্রথম: ঈমান আনা যে, অনাদিকাল হতে অনন্তকাল পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিজের ও তাঁর বান্দাদের কার্যাবলী সংশ্লিষ্ট সব কিছু সম্পর্কে সামগ্রিক ও বিশেষভাবে অবগত আছেন।
দ্বিতীয়: এ ঈমান আনা যে আল্লাহ তা‘আলা যা কিছু নির্ধারণ ও সম্পাদন করেছেন সব কিছুই তিনি তাঁর লাওহে মাহফুযে (সংরক্ষিত ফলকে) লিখে রেখেছেন।
“তোমার কি জানা নেই, আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু রয়েছে আল্লাহ তা অবগত আছেন। নিশ্চয়ই তা একটি কিতাবে সংরক্ষিত আছে। তা আল্লাহর নিকট অতি সহজ।” [সূরা আল-হাজ, আয়াত: ৭০]
‘আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ তা‘আলা আসমান ও জমিন সৃষ্টি করার পঞ্চাশ হাজার বছর আগে সমগ্র সৃষ্টি জগতের তাকদীর লিপিবদ্ধ করেছেন। (সহীহ মুসলিম)
তৃতীয়: এই ঈমান স্থাপন করা যে, বিশ্বজগতের কোনো কিছুই আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছা ব্যতীত সংঘটিত হয় না। সেটি তাঁর নিজের কার্যসম্পর্কিত হোক অথবা তাঁর সৃষ্টির কার্যসম্পর্কিত হোক।
“তিনিই সেই আল্লাহ, যিনি তোমাদের আকৃতি গঠন করেন মায়ের গর্ভে যেমন তিনি ইচ্ছা করেন। তিনি ছাড়া আর কোনো সত্য উপাস্য নেই। তিনি প্রবল পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৬]
মাখলুকাতের কর্ম-কাণ্ড সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘‘আল্লাহই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমরা যে সব কর্ম সম্পাদন করছো সবই তিনি সৃষ্টি করেছেন।” [সূরা আস-সাফফাত, আয়াত: ৯৬]
পূর্বেই আমরা বর্ণনা করেছি যে ‘‘ঈমান বিল ক্বদার’’ বা তাক্বদীরের প্রতি ঈমান স্থাপন করার কারণে মানুষের কর্মসমূহের ওপর তার ইচ্ছা ও ক্ষমতার বিষয়টি সাংঘর্ষিক নয়। কেননা, শরী‘আত ও বাস্তব অবস্থা বান্দার নিজস্ব যে ইচ্ছাশক্তি রয়েছে তা সাব্যস্ত করে।
“আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোনো কাজের দায়িত্ব দেন না, সে তাই পায় যা সে উপার্জন করে এবং তাই তার ওপর বর্তায় যা সে করে।’’ [সূরা আল-বাক্বারা, আয়াত: ২৮৬]
২। বাস্তবতার আলোকে এর প্রমাণ:
প্রত্যেক মানুষ জানে যে, তার নিজেস্ব ইচ্ছাশক্তি ও সামর্থ্য রয়েছে এবং এরই মাধ্যমে সে কোনো কাজ করে বা তা থেকে বিরত থাকে। যে সব কাজ তার ইচ্ছায় সংঘঠিত হয় যেমন, চলাফেরা করা এবং যা তার অনিচ্ছায় হয়ে থাকে যেমন, হঠাৎ করে শরীর প্রকম্পিত হওয়া। এ উভয় অবস্থার মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে তা সে পার্থক্যও করতে পারে।
তবে বান্দার ইচ্ছা ও সামর্থ্য আল্লাহর ইচ্ছা ও সামর্থ্যের অধীন ও অনুগত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘‘যে সরল পথে চলার ইচ্ছা করে (এ ঘোষণা) তার জন্য, আর আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীনের ইচ্ছার বাইরে তোমাদের কোনো ইচ্ছা কার্যকর হতে পারে না।” [সূরা তাকওয়ীর: ২৮-২৯]
যেহেতু সমগ্র বিশ্বজগৎ আল্লাহ তা‘আলার রাজত্ব, তাই তাঁর রাজত্বে তাঁর অজানা কিছু ঘটতে পারে না।
আমাদের উল্লিখিত বর্ণনানুযায়ী তাক্বদীরের ওপর বিশ্বাস বান্দাকে তার ওপর অর্পিত ওয়াজিব আদায় না করার অথবা তাক্বদীরের কথা বলে পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার কোনো সুযোগ প্রদান করে না। সুতরাং তাক্বদীরের ওপর বিশ্বাস করে এই ধরণের যুক্তি উপস্থাপন করা কয়েকটি কারণে বাতিল বলে বিবেচিত হবে। তন্মধ্যে কয়েকটি প্রমাণ নিম্নে বর্ণনা করা হলো:
“যারা শির্ক করছে তারা অচিরেই বলবে, যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন তবে আমরা এবং আমাদের পূর্বপুরুষগণ শির্ক করতাম না এবং না আমরা কোনো বস্তুকে হারাম করতাম। এমনিভাবে তাদের পূর্ববর্তীরা মিথ্যারোপ করেছে, শেষ পর্যন্ত তারা আমার শাস্তি আস্বাদন করেছে। আপনি বলুন, তোমাদের কাছে কি কোনো প্রমাণ আছে, যা আমাদেরকে দেখাতে পার? তোমরা শুধুমাত্র আন্দাজের অনুসরণ কর এবং তোমরা শুধু অনুমান করে কথা বল।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৪৮]
এতে বুঝা গেল যে, পাপ কাজ করার জন্য তাক্বদীরকে প্রমাণ হিসাবে পেশ করা যদি বৈধ হত তবে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে তাদের অবাধ্যতার কারণে শাস্তি দিতেন না।
‘‘রাসূলগণকে সুসংবাদ দাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী হিসেবে প্রেরণ করেছি, যাতে রাসূলগণের পরে আল্লাহর প্রতি অপবাদ আরোপ করার মতো কোনো অবকাশ মানুষের জন্য না থাকে। আল্লাহ প্রবল পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৬৫]
যদি তাক্বদীর পথভ্রষ্ট লোকদের জন্য পাপ কাজ করার প্রমাণ হতো তা হলে নবী-রসূলগণ প্রেরিত হওয়ার পর এ প্রমাণকে উঠিয়ে নেওয়া হতো না। কেননা, নবী এবং রাসূলগণের আগমনের পরেও অবাধ্যতা ত্বাকদীরের কারণে সংঘটিত হচ্ছে।
তৃতীয়: সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আলী ইবন আবু তালেব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে একটি হাদীস বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের মধ্যে এমন কোনো লোক নেই, যার ঠিকানা জান্নাতে বা জাহান্নামে লেখা হয় নি। উপস্থিত শ্রোতাদের মধ্যে একলোক বলল, হে আল্লাহর রাসূল! তাহলে আমরা কি ভাগ্যের ওপর তাওয়াক্কুল তথা ভরসা করে থাকব না? রাসূলুল্লাহ তদুত্তোরে বললেন, না, আমল করতে থাক, যাকে যে উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করা হয়েছে, সে তা সহজ পাবে। তারপর তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করলেন:
“আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোনো কাজের দায়িত্ব দেন না” [সূরা বাক্বারা, আয়াত: ২৮৬]
যদি বান্দা কোনো কাজ করার ক্ষেত্রে বাধ্যই থাকত, তাহলে তাকে তার সাধ্য ও ক্ষমতার বহির্ভূত এমন কাজের নির্দেশ দেওয়া হতো যা থেকে তার রেহাই পাওয়ার কোনো উপায় থাকতো না। আর সেটা বাতেল। তাই বান্দা ভুল, অজ্ঞতাবশতঃ অথবা জোরপূর্বক অনিচ্ছাকৃত কোনো অপরাধ করলে তাতে তার পাপ হয় না।
পঞ্চম: আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত তাক্বদীর সম্পর্কে বান্দার কোনো জ্ঞান নেই। তা গায়েবী জগতের এক গোপন রহস্য। তক্বদীরের বিষয় সংঘটিত হওয়ার পরই কেবল বান্দা তা জানতে পারে। বান্দার ইচ্ছা তার কাজের পূর্বে হয়ে থাকে; তাই তার ইচ্ছা আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত তাক্বদীর জানার ওপর ভিত্তি করে হয় না। এমতাবস্থায় তাক্বদীরের দোহাই দেওয়ার কোনো অর্থ হয় না। আর যে বিষয় বান্দার জানা নেই সে বিষয়ে তার জন্য প্রমাণ হতে পারে না।
ষষ্ঠ: আমরা লক্ষ্য করি, মানুষ পার্থিব বিষয়ে সদাসর্বদা যথোপযুক্ত ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে আগ্রহী হয়ে থাকে। কখনও ক্ষতিকর ও অলাভজনক কাজে পা বাড়ায় না এবং তখন তাকদীরের দোহাইও দেয় না। তা হলে ধর্মীয় কাজে উপকারী দিক ছেড়ে দিয়ে ক্ষতিকর ও নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত হয়ে তাক্বদীরের দোহাই দেওয়া হয় কেন? ব্যাপারটা কি উভয় ক্ষেত্রে এক নয়?
প্রিয় পাঠক, আপনার সম্মুখে দুটি উদাহরণ পেশ করছি যা বিষয়টি স্পষ্ট করে দিবে:
প্রথম উদাহরণ: যদি কারো সামনে দুটি পথ থাকে। এক পথ তাকে এমন এক দেশে নিয়ে পৌঁছাবে যেখানে শুধু নৈরাজ্য, খুন-খারাবী, লুটপাট, ভয়-ভীতি ও দূর্ভিক্ষ বিরাজমান। দ্বিতীয় পথ তাকে এমন স্বপ্নের শহরে নিয়ে যাবে যেখানে শৃঙ্খলা নিরাপত্তা, সুখ স্বাচ্ছন্দ্য ও জান-মালের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিদ্যমান। এমতাবস্থায় সে কোনো পথে চলবে? নিশ্চিতভাবে বলা যাবে যে, সে দ্বিতীয় পথে চলবে, যে পথে শান্তি ও আইন-শৃঙ্খলা বলবৎ রয়েছে। কোনো বুদ্ধিমান লোক প্রথম পথে পা দিয়ে ভাগ্যের দোহাই দিবে না। তাহলে মানুষ আখিরাতের ব্যাপারে জান্নাতের পথ ছেড়ে জাহান্নামের পথে চলে ক্বদরের দোহাই দিবে কেন?
দ্বিতীয় উদাহরণ: রোগীকে ঔষধ সেবন করতে বললে তা তিক্ত হলেও সে সেবন করে। বিশেষ ধরনের কোনো খাবার খেতে নিষেধ করা হলে তা সে খায় না, যদিও তার মন তা খেতে চায়। এ সব শুধু নিরাময় ও রোগমুক্তির আশায় এবং সে ত্বাকদীরের দোহাই দিয়ে ঔষধ সেবন থেকে বিরত থাকে না বা নিষিদ্ধ খাদ্য ভক্ষণ করে না।
তাহলে মানুষ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের নির্দেশাবলী বর্জন এবং নিষেধাবলী অমান্য করে তাকদীরের দোহাই দেবে কেন?
সপ্তম: যে ব্যক্তি তার ওপর অর্পিত ওয়াজিব কাজসমূহ ত্যাগ করে অথবা পাপকাজ করে তাকদীরের দোহাই দিয়ে থাকে অথচ তার ধন-সম্পদ বা মান সম্মানে কেউ যদি আঘাত হেনে বলে, এটাই তোমার তাক্বদীরে লেখা ছিল, আমাকে দোষারূপ করো না, তখন সে তার যুক্তি গ্রহণ করবে না। তাহলে কেমন করে সে তার ওপর অন্যের আক্রমনের সময় তাক্বদীরের দোহাই স্বীকার করে না। তা হলে কেন সে আল্লাহর অধিকারে আঘাত হেনে তক্বদীরের দোহাই দেবে?
উল্লেখ্য, একদা উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর দরবারে এক চোরকে হাজির করা হয়। তার হাত কর্তনের নির্দেশ দেওয়া হলে সে বলে! হে আমিরুল মু’মিনীন! থামুন, আল্লাহ তাক্বদীরে লিখে রেখেছেন বলে আমি চুরি করেছি। উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমরাও আল্লাহ তাক্বদীরে লিখে রেখেছেন বলে হাত কর্তনের নির্দেশ দিয়েছি।
তাক্বদীরের ওপর ঈমানের বহুবিধ ফল রয়েছে তন্মধ্যে বিশেষ কয়েকটি হলো:
১। ঈমান বিল ক্বাদর দ্বারা উপায়-উপকরণ গ্রহণকালে ব্যক্তির অন্তরে আল্লাহ তা‘আলার ওপর তাওয়াক্কুল ও ভরসার সৃষ্টি হয় এবং সে তখন শুধুমাত্র উপায়-উপকরণের ওপর নির্ভরশীল হয় না। কেননা, প্রতিটি বস্তুই আল্লাহ তা‘আলার তাক্বদীরের আওতাধীন।
২। ব্যক্তির কোনো উদ্দেশ্য সাধিত হলে সে তখন নিজেকে নিয়ে গর্ববোধ করে না। কারণ, যা অর্জিত হয়েছে তা সবই আল্লাহর নে‘আমত। যা তিনি কল্যাণ ও সাফল্যের উপকরণ দ্বারা নির্ধারণ করে রেখেছেন। আর ব্যক্তি নিজ কর্মের জন্য আত্মম্ভরি হলে এই নি‘আমতের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে ভুলে যায়।
৩। ঈমান বিল ক্বাদর দ্বারা বান্দার ওপর আল্লাহর তক্বদীর অনুযায়ী যা কার্যকরী হয় তাতে তার অন্তরে প্রশান্তি ও নিশ্চিন্ততা অর্জিত হয়। ফলে সে কোনো প্রিয় বস্তু হারালে বা কোনো প্রকার কষ্ট ও বিপদাপদে পতিত হলে বিচলিত হয় না। কারণ; সে জানে যে, সবকিছুই সেই আল্লাহর তক্বদীর অনুযায়ী ঘটছে যিনি আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর মালিক। যা ঘটবার তা ঘটবেই। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“পৃথিবীতে এবং তোমাদের নিজেদের ওপর যে সব বিপদাপদ আসে জগৎ সৃষ্টির পূর্বেই তা একটি কিতাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে। নিশ্চয়ই এটা আল্লাহর পক্ষে অতি সহজ। এটা এজন্য, যাতে তোমরা যা হারিয়ে ফেলো তজ্জন্য দুঃখিত না হও এবং তিনি তোমাদেরকে যা দিয়েছেন, তজ্জন্য উল্লসিত না হয়ে উঠ। আল্লাহ কোনো উদ্ধত্ত অহংকারীকে পছন্দ করেন না।” [সূরা আল-হাদীদ, আয়াত: ২২-২৩]
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘মু’মিনের ব্যাপারে আশ্চর্য্য হতে হয়, তার সব ব্যাপারেই কল্যাণ নিহিত রয়েছে। একমাত্র মু’মিনের ব্যাপারেই তা হয়ে থাকে। আনন্দের কিছু হলে সে শুকরিয়া জ্ঞাপন করে, তখন তা তার জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। আর যখন তার ওপর কোনো ক্ষতিকর বিষয় আপতিত হয় তখন সে ধৈর্য ধারণ করে, তখন তার জন্য তাও কল্যাণকর হয়ে উঠে।” (সহীহ মুসলিম)
তাক্বদীর সম্পর্কে দু’টি সম্প্রদায় পথভ্রষ্ট হয়েছে:
তন্মধ্যে একটি হলো জাবরিয়্যাহ সম্প্রদায়, এরা বলে, বান্দা তাক্বদীরের কারণে স্বীয় ক্রিয়া-কর্মে বাধ্য, এতে তার নিজস্ব কোনো ইচ্ছা শক্তি বা সামর্থ্য নেই।
আর দ্বিতীয়টি হলো ক্বাদারিয়্যাহ সম্প্রদায়, এদের বক্তব্য হলো বান্দা তার যাবতীয় কর্ম-কাণ্ডে স্বীয় ইচ্ছা ও শক্তির ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পন্ন, তার কাজে আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছা বা কুদরতের কোনো প্রভাব নেই।
শরী‘আত ও বাস্তবতার আলোকে প্রথম দল (জাবরিয়্যাহ সম্প্রদায়)-এর বক্তব্যের জবাব:
১. শরী‘আতের আলোকে এর জবাব: নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দার জন্য ইরাদা ও ইচ্ছাশক্তি সাব্যস্ত করেছেন এবং বান্দার প্রতি তার কার্যক্রমের সম্বন্ধও আরোপ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“বল, সত্য তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আগত। অতএব, যার ইচ্ছা বিশ্বাস স্থাপন করুক এবং যার ইচ্ছা কুফুরী করুক। আমি যালিমদের জন্য অগ্নি প্রস্তুত করে রেখেছি। যার বেষ্টনী তাদেরকে পরিবেষ্টিত করে রাখবে।” [সূরা আল-ক্বাহাফ, আয়াত: ২৯]
“যে সৎকর্ম করে সে নিজের জন্যই করে আর যে অসৎকর্ম করে, তা তারই ওপর বর্তাবে। আপনার পালনকর্তা বান্দাদের প্রতি মোটেই যুলুম করেন না। [সূরা ফুসসিলাত, আয়াত: ৪৬]
২. বাস্তবতার আলোকে এর জবাব: সকল মানুষেরই জানা আছে যে, তার কিছু কর্ম স্বীয় ইচ্ছাধীন, যা তার আপন ইচ্ছায় সম্পাদিত করে, যেমন, খাওয়া-দাওয়া, পান করা এবং ক্রয়-বিক্রয় করা। আর কিছু কাজ তার অনিচ্ছাধীন, যেমন, অসুস্থ্যতার কারণে শরীর কম্পন করা ও উঁচু স্থান থেকে নীচের দিকে পড়ে যাওয়া। প্রথম ধরণের কাজে মানুষ নিজেই কর্তা, নিজ ইচ্ছায় সে তা গ্রহণ করেছে এতে কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না। আর দ্বিতীয় প্রকার কাজ-কর্মে তার কোনো নিজস্ব পছন্দ ছিল না এবং তার ওপর যা পতিত হয়েছে তার কোনো ইচ্ছাও তার ছিল না।
শরী‘আত ও যুক্তির আলোকে দ্বিতীয় দল ক্বাদারিয়্যাহদের বক্তব্যের জবাব:
শরী‘আত: আল্লাহ তা‘আলা সকল বস্তুর স্রষ্টা, জগতের সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছায় অস্তিত্ব লাভ করে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর পবিত্র গ্রন্থে স্পষ্ট করে বলেছেন যে, বান্দাদের সব কর্ম-কাণ্ডও আল্লাহর ইচ্ছায় বাস্তবায়িত হয়ে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আর আল্লাহ যদি ইচ্ছা করতেন, তাহলে সুস্পষ্ট প্রমাণাদি এসে যাবার পর তাঁদের পয়গম্বরদের পরবর্তীরা পরষ্পর লড়াই-বিগ্রহে লিপ্ত হতো না। কিন্তু তাদের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়ে গেলো। অতঃপর তাদের কেউ তো ঈমান এনেছে, আর কেউ হয়েছে কাফের। আর আল্লাহ যদি ইচ্ছা করতেন তাহলে তারা পরস্পর লড়াই করতো না। কিন্তু আল্লাহ তাই করেন, যা তিনি ইচ্ছা করেন।” [সূরা আল-বাকারা: আয়াত: ২৫৩]
“আমি ইচ্ছা করলে প্রত্যেক ব্যক্তিকে সৎপথে পরিচালিত করতাম। কিন্তু আমার এ উক্তি অবধারিত সত্য, আমি জিন্ন ও মানব উভয় দ্বারা অবশ্যই জাহান্নাম পূর্ণ করব।” [সূরা আস-সাজদাহ, আয়াত: ১৩]
যুক্তির মাধ্যমে এর জবাব: একথা নিশ্চিত যে, সমগ্র বিশ্বজগৎ আল্লাহর মালিকানাধীন এবং মানুষ এই বিশ্বজগতেরই একটি অংশ, তাই সেও আল্লাহর মালিকানাধীন। আর মালিকানাধীন কোনো সত্তার পক্ষে মালিকের অনুমতি ও ইচ্ছা ব্যতিরেকে তার রাজত্বে কোনো কিছু করা সম্ভব নয়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/19/11
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।