HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ঈমানের মূলনীতিসমূহের ব্যাখ্যা

লেখকঃ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উছাইমীন

ঈমানের চতুর্থ ভিত্তি: রাসূলগণের ওপর ঈমান
‘রাসূল’ শব্দটি একবচন, আরবীতে এর বহুবচন হচ্ছে ‘রুসুল’। যার অর্থ কোনো বিষয় পৌঁছানোর জন্য প্রেরিত দূত বা প্রতিনিধি। ইসলামী পরিভাষায় রাসূল সেই মহান ব্যক্তি, যার প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে শরী‘আত অবতীর্ণ হয়েছে এবং তা প্রচার করার জন্য তাঁকে হুকুম দেওয়া হয়েছে।

সর্বপ্রথম রাসূল হলেন নূহ আলাইহিস সালাম আর সর্বশেষ রাসূল হলেন আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِنَّآ أَوۡحَيۡنَآ إِلَيۡكَ كَمَآ أَوۡحَيۡنَآ إِلَىٰ نُوحٖ وَٱلنَّبِيِّ‍ۧنَ مِنۢ بَعۡدِهِ﴾ [ النساء : ١٦٣ ]

“আমরা আপনার প্রতি ওহী পাঠিয়েছি। যেমন করে ওহী পাঠিয়েছিলাম নূহের ওপর এবং সে সমস্ত নবী-রাসূলগণের ওপর যাঁরা তাঁর পরে প্রেরিত হয়েছেন।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৬৩]

সহীহ বুখারীতে আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে শাফা‘আতের হাদীসে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিয়ামতের দিন হাশরবাসীগণ আল্লাহ তা‘আলার কাছে সুপারিশের আশায় প্রথমে আদম আলাইহিস সালামের নিকট আসবে। তখন আদম আলাইহিস সালাম নিজের অক্ষমতা প্রকাশ করে বলবেন, “তোমরা নূহ আলাইহিস সালামের নিকট যাও। তিনি প্রথম রাসূল, যাকে আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতির প্রতি প্রেরণ করেছেন।”

আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সম্পর্কে বলেন,

﴿مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَآ أَحَدٖ مِّن رِّجَالِكُمۡ وَلَٰكِن رَّسُولَ ٱللَّهِ وَخَاتَمَ ٱلنَّبِيِّ‍ۧنَۗ وَكَانَ ٱللَّهُ بِكُلِّ شَيۡءٍ عَلِيمٗا ٤٠﴾ [ الاحزاب : ٤٠ ]

‘‘মুহাম্মদ তোমাদের মধ্যকার কোনো পুরুষের পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং সর্বশেষ নবী। আর আল্লাহ সবকিছুর ব্যাপারে সম্পূর্ণ জ্ঞাত।’’ [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৪০]

আল্লাহ তা‘আলা যুগে-যুগে প্রত্যেক জাতির প্রতি স্বতন্ত্র শরী‘আতসহ রাসূল অথবা পূর্ববর্তী শরী‘আত নবায়নের জন্য ওহীসহ নবী প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَقَدۡ بَعَثۡنَا فِي كُلِّ أُمَّةٖ رَّسُولًا أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَٱجۡتَنِبُواْ ٱلطَّٰغُوتَۖ﴾ [ النحل : ٣٦ ]

‘‘আমরা প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর এবং তাগুতকে পরিহার কর।” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৩৬]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿وَإِن مِّنۡ أُمَّةٍ إِلَّا خَلَا فِيهَا نَذِيرٞ﴾ [ فاطر : ٢٤ ]

‘‘এমন কোনো সম্প্রদায় নেই যাদের কাছে আমার পক্ষ থেকে সতর্ককারী আসে নি।’’ [সূরা ফাতির, আয়াত: ২৪]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿ إِنَّآ أَنزَلۡنَا ٱلتَّوۡرَىٰةَ فِيهَا هُدٗى وَنُورٞۚ يَحۡكُمُ بِهَا ٱلنَّبِيُّونَ ٱلَّذِينَ أَسۡلَمُواْ لِلَّذِينَ هَادُواْ وَٱلرَّبَّٰنِيُّونَ وَٱلۡأَحۡبَارُ بِمَا ٱسۡتُحۡفِظُواْ مِن كِتَٰبِ ٱللَّهِ وَكَانُواْ عَلَيۡهِ شُهَدَآءَۚ﴾ [ المائ‍دة : ٤٤ ]

‘‘আমরা তাওরাত অবতীর্ণ করেছি, এতে রয়েছে হিদায়াত ও আলো। নবীগণ যাঁরা আল্লাহর অনুগত ছিলেন তারা ইয়াহূদীদেরকে তদনুসারে বিধান দিতেন, আরো বিধান দিতেন রাব্বানীগণ এবং বিদ্বানগণ। কেননা তাদেরকে এ কিতাবুল্লার দেখাশোনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল এবং তাঁরা এর ওপর সাক্ষ্য ছিল।” [সূরা আল-মায়িদাহ, আয়াত: ৪৪]

 নবী-রাসূলগণ আল্লাহর প্রিয় সৃষ্টি, তাঁরা মানুষ। তাঁদের মধ্যে রুবুবিয়্যাত বা উলুহিয়্যাতের কোনো বৈশিষ্ট্য নেই।

আল্লাহ তা‘আলা নবীকুল শিরোমনি ও নবীদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বড় মর্যাদার অধিকারী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেন,

﴿قُل لَّآ أَمۡلِكُ لِنَفۡسِي نَفۡعٗا وَلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَآءَ ٱللَّهُۚ وَلَوۡ كُنتُ أَعۡلَمُ ٱلۡغَيۡبَ لَٱسۡتَكۡثَرۡتُ مِنَ ٱلۡخَيۡرِ وَمَا مَسَّنِيَ ٱلسُّوٓءُۚ إِنۡ أَنَا۠ إِلَّا نَذِيرٞ وَبَشِيرٞ لِّقَوۡمٖ يُؤۡمِنُونَ ١٨٨﴾ [ الاعراف : ١٨٨ ]

“আপনি বলে দিন, আমি আমার নিজের কল্যাণ সাধন এবং অকল্যাণ সাধনের মালিক নই কিন্তু যা আল্লাহ চান। আর আমি যদি অদৃশ্যের কথা জানতাম, তাহলে বহু কল্যাণ অর্জন করে নিতে পারতাম। ফলে আমাকে কোনো অমঙ্গল স্পর্শ করতে পারত না। আমি তো একজন ভীতি প্রদর্শক ও সুসংবাদদাতা ঈমানদারদের জন্য।” [সূরা আল-আরাফ, আয়াত: ১৮৮]

আল্লাহ আরো বলেন,

﴿قُلۡ إِنِّي لَآ أَمۡلِكُ لَكُمۡ ضَرّٗا وَلَا رَشَدٗا ٢١ قُلۡ إِنِّي لَن يُجِيرَنِي مِنَ ٱللَّهِ أَحَدٞ وَلَنۡ أَجِدَ مِن دُونِهِۦ مُلۡتَحَدًا ٢٢﴾ [ الجن : ٢١، ٢٢ ]

“বলুন, আমি তোমাদের ক্ষতি সাধন করার ও সুপথে আনয়ন করার মালিক নই। বলুন, আল্লাহ তা‘আলার কবল থেকে আমাকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না এবং তিনি ব্যতীত আমি কখনও কোনো আশ্রয়স্থল পাব না।” [সূরা আল-জিন, আয়াত: ২১-২২]

নবী-রাসূলগণও সাধারণ মানুষের ন্যায় মানবিক বৈশিষ্ট্যে বিশেষিত। তাঁরাও পানাহার করতেন, অসুস্থ হতেন এবং তাঁরা মারা যেতেন। ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তাঁর জাতির সামনে স্বীয় রবের পরিচয় দিয়ে বলেন,

﴿وَٱلَّذِي هُوَ يُطۡعِمُنِي وَيَسۡقِينِ ٧٩ وَإِذَا مَرِضۡتُ فَهُوَ يَشۡفِينِ ٨٠ وَٱلَّذِي يُمِيتُنِي ثُمَّ يُحۡيِينِ ٨١﴾ [ الشعراء : ٧٩، ٨١ ]

“আর যিনি আমাকে আহার এবং পানীয় দান করেন। যখন আমি রোগাক্রান্ত হই তখন তিনিই আমাকে আরোগ্য দান করেন। যিনি আমার মৃত্যু ঘটাবেন, অতঃপর তিনিই আমার পুনঃর্জীবন দান করবেন।’’ [সূরা আশ-শু‘আরা, আয়াত: ৭৯-৮১]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি তোমাদের মতোই একজন মানুষ। আমি ভুলে যাই, যেমন তোমরা ভুলে যাও। আর যদি আমি ভুলে যাই তা হলে তোমরা আমাকে স্বরণ করিয়ে দিও। (বুখারী ও মুসলিম)

তাছাড়া আল্লাহ তা‘আলা নবী-রাসূলগণকে দাসত্বগুণে বিশেষিত করেছেন তাঁদের সর্বোচ্চ মর্যাদার স্থলে এবং তাঁদের প্রশংসা করার বেলায়ও তাঁদেরকে বান্দা বলে আখ্যায়িত করেছেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা নূহ আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বলেন,

﴿إِنَّهُۥ كَانَ عَبۡدٗا شَكُورٗا ﴾ [ الاسراء : ٣ ]

“নিশ্চয়ই সে ছিল আমার কৃতজ্ঞ বান্দা।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৩]

নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿تَبَارَكَ ٱلَّذِي نَزَّلَ ٱلۡفُرۡقَانَ عَلَىٰ عَبۡدِهِۦ لِيَكُونَ لِلۡعَٰلَمِينَ نَذِيرًا ١﴾ [ الفرقان : ١ ]

“পরম কল্যাণময় তিনি, যিনি তাঁর বান্দার প্রতি ফয়সালার গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছেন, যাতে সে সৃষ্টিকুলের জন্য সতর্ককারী হয়।” [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ১]

আল্লাহ তা‘আলা ইবরাহীম, ইসহাক ও ইয়াকুব আলাইহিমুস সালাম সম্পর্কে বলেন,

﴿وَٱذۡكُرۡ عِبَٰدَنَآ إِبۡرَٰهِيمَ وَإِسۡحَٰقَ وَيَعۡقُوبَ أُوْلِي ٱلۡأَيۡدِي وَٱلۡأَبۡصَٰرِ ٤٥ إِنَّآ أَخۡلَصۡنَٰهُم بِخَالِصَةٖ ذِكۡرَى ٱلدَّارِ ٤٦ وَإِنَّهُمۡ عِندَنَا لَمِنَ ٱلۡمُصۡطَفَيۡنَ ٱلۡأَخۡيَارِ ٤٧﴾ [ص: ٤٥، ٤٧ ]

“স্মরণ কর, আমার বান্দা ইবরাহীম, ইসহাক ও ইয়াকুবের কথা, তাঁরা ছিল শক্তিশালী ও সুক্ষ্মদর্শী। আমি তাঁদের এক বিশেষ গুণ, পরকালের স্মরণ দ্বারা স্বাতন্ত্র্য দান করেছিলাম। আর তাঁরা আমার কাছে মনোনীত ও সৎলোকদের অন্তর্ভুক্ত।” [সূরা সাদ, আয়াত: ৪৫-৪৭]

অনুরূপভাবে ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِنۡ هُوَ إِلَّا عَبۡدٌ أَنۡعَمۡنَا عَلَيۡهِ وَجَعَلۡنَٰهُ مَثَلٗا لِّبَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ ٥٩﴾ [ الزخرف : ٥٩ ]

“সে তো আমার এক বান্দাই বটে, আমি তার প্রতি অনুগ্রহ করেছি এবং তাকে করেছি বনী ইসরাঈলের জন্য এক আদর্শ।’’ [সূরা আয-যুখরুফ, আযাত: ৫৯] [সারকথা: আল্লাহর বান্দা হওয়াই সর্বোচ্চ মর্যাদার বিষয়। তাই আল্লাহ তা‘আলার নবী-রাসূলগণ ও তাঁর নৈকট্য লাভকারী ফেরেশতাগণ কখনো বান্দাহরূপে পরিচিত হতে লজ্জা বা অপমানবোধ করতেন না। কারণ; আল্লাহর দাসত্ব ও গোলামী করা, তাঁর ইবাদাত-বন্দেগী করা, আদেশ-নিষেধ পালন করা অতি মর্যাদা, গৌরব ও সৌভাগ্যের বিষয়। আর আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারো দাসত্ব বা ইবাদাত করাই অমর্যাদার বিষয় ও অমর্যাদার কাজ। যেমন, খ্রিস্টানরা ঈসা মাসীহ আলাইহিস সালামকে আল্লাহর পুত্র ও তাদের অন্যতম উপাস্য সাব্যস্ত করেছে এবং মুশরিকরা, ফিরিশতাদেরকে আল্লাহর কন্যা বলে তাদের দেবী সাব্যস্ত করে তাদের পূজা-আর্চনা করেছে। এ ভাবে কবর পূজারীরা আওলিয়াদের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে তাদের কবর পূজায় লিপ্ত হয়েছে।]

 রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনার মধ্যে চারটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:

প্রথম: ঈমান আনয়ন করা যে, সমস্ত নবী-রাসূলের রিসালাত মহান আল্লাহর পক্ষ থেকেই যথাযথভাবে এসেছে। তাঁদের কোনো একজনের প্রতি কুফুরী বা কোনো একজনকে অস্বীকার করা সবার প্রতি কুফুরী করার নামান্তর। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা নূহ আলাইহিস সালামের সম্প্রদায় সম্পর্কে বলেন,

﴿كَذَّبَتۡ قَوۡمُ نُوحٍ ٱلۡمُرۡسَلِينَ ١٠٥﴾ [ الشعراء : ١٠٥ ]

‘‘নূহের সম্প্রদায় রাসূলগণকে মিথ্যারোপ করেছে।” [সূরা আশ-শু‘আরা, আয়াত: ১০৫]

আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে সকল নবী-রাসূলগণের ওপর মিথ্যারোপকারী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন অথচ সে সময় নূহ আলাইহিস সালাম ব্যতীত অন্য কোনো রাসূল ছিলেন না। তাই খ্রিস্টানদের মধ্যে যারা নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর মিথ্যারোপ করে এবং তাঁর আনুগত্য ও অনুসরণ করে না, তারা বস্তুত ঈসা-মসীহ আলাইহিস সালামকে অস্বীকার করলো, তাঁর অনুকরণ ও আনুগত্য থেকে মুখ ফেরালো। কেননা, মরিয়ম তনয় ঈসা আলাইহিস সালাম বনী ইসরাঈলকে নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে সুসংবাদ দিয়েছিলেন আর সে সুসংবাদ প্রদানের অর্থই হচ্ছে এটা প্রমাণিত হওয়া যে, তিনি তাদের কাছে প্রেরিত রাসূল। যিনি তাদেরকে গোমরাহী ও পথভ্রষ্টতা থেকে রক্ষা করে সরল সঠিক পথ প্রদর্শন করবেন।(১)

দ্বিতীয়: নবী-রাসূলগণের মধ্যে যাঁদের নাম জানা আছে তাঁদের প্রতি নির্দিষ্ট করে ঈমান আনা। যেমন, মুহাম্মদ, ইবরাহীম, মুসা, ঈসা, নূহ (আলাইহিমুস সালাম)। উল্লিখিত পাঁচজন হলেন নবী-রাসূলগণের মধ্যে বিশিষ্ট ও উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁদেরকে কুরআনের দু’স্থানে বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। তিনি সূরা আল-আহযাবে বলেছেন,

﴿وَإِذۡ أَخَذۡنَا مِنَ ٱلنَّبِيِّ‍ۧنَ مِيثَٰقَهُمۡ وَمِنكَ وَمِن نُّوحٖ وَإِبۡرَٰهِيمَ وَمُوسَىٰ وَعِيسَى ٱبۡنِ مَرۡيَمَۖ﴾ [ الاحزاب : ٧ ]

“আর স্মরণ করুন সে সময়ের কথা, যখন আমরা নবীগণের কাছ থেকে ও তোমার কাছ থেকে এবং নূহ, ইবরাহীম, মূসা ও মরিয়ম তনয় ঈসার কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৭]

আর সূরা আশ-শূরায় বলা হয়েছে,

﴿شَرَعَ لَكُم مِّنَ ٱلدِّينِ مَا وَصَّىٰ بِهِۦ نُوحٗا وَٱلَّذِيٓ أَوۡحَيۡنَآ إِلَيۡكَ وَمَا وَصَّيۡنَا بِهِۦٓ إِبۡرَٰهِيمَ وَمُوسَىٰ وَعِيسَىٰٓۖ أَنۡ أَقِيمُواْ ٱلدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُواْ فِيهِۚ ﴾ [ الشورا : ١٣ ]

“তিনি তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন দীন, যার আদেশ দিয়েছিলেন নূহকে এবং যা আমরা প্রত্যাদেশ করেছি আপনার প্রতি এবং যার আদেশ দিয়েছিলাম ইবরাহীম, মূসা ও ঈসাকে এ মর্মে যে, তোমরা দীনকে প্রতিষ্ঠিত করো এবং তাতে অনৈক্য সৃষ্টি করো না।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ১৩]

আর নবী-রাসূলগণের মধ্যে যাদের নাম আমাদের জানা নেই, তাঁদের প্রতি সাধারণ ও সার্বিকভাবে ঈমান স্থাপন করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,

﴿وَلَقَدۡ أَرۡسَلۡنَا رُسُلٗا مِّن قَبۡلِكَ مِنۡهُم مَّن قَصَصۡنَا عَلَيۡكَ وَمِنۡهُم مَّن لَّمۡ نَقۡصُصۡ عَلَيۡكَۗ﴾ [ غافر : ٧٨ ]

“আমরা আপনার পূর্বে অনেক রাসূল প্রেরণ করেছি। তাঁদের কারো কারো ঘটনা আপনার কাছে বিবৃত করেছি এবং কারো কারো ঘটনা আপনার কাছে বিবৃত করি নি।” [সূরা গাফির, আয়াত: ৭৮]

তৃতীয়: কুরআন ও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত তাঁদের ঘটনাসমূহের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা।

চতুর্থ: নবী-রাসূলগণের মধ্যে যাঁকে আল্লাহ তা‘আলা আমাদের প্রতি রাসূল করে প্রেরণ করেছেন, তাঁর আনিত শরী‘আতের ওপর আমল করা। আর তিনি হলেন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যাকে আল্লাহ তা‘আলা সমগ্র সৃষ্টি জগতের জন্য প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤۡمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا يَجِدُواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسۡلِيمٗا ٦٥﴾ [ النساء : ٦٥ ]

“অতএব, না আপনার রবের শপথ, ঐ পর্যন্ত তারা ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তারা তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদ-বিসম্বাদের বিচারভার আপনার ওপর অর্পণ না করে। অতঃপর আপনার মীমাংসার ব্যাপারে তাদের মনে কোনো রকম সংকীর্ণতা না থাকে এবং সন্তুষ্টচিত্তে তা কবুল করে।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬৫]

নবী-রাসূলগণের প্রতি ঈমানের ফলে যে সব গুরুত্বপূর্ণ উপকার সাধিত হয় তন্মধ্যে রয়েছে:

১। আল্লাহ তা‘আলার রহমত ও বান্দাদের প্রতি তাঁর পূর্ণ তত্ত্বাবধান সম্পর্কে জানা। যেহেতু তিনি তাদের প্রতি আপন রাসূলগণকে প্রেরণ করেছেন, যাতে তাঁরা মানবজাতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন এবং কোন পদ্ধতিতে আল্লাহর ইবাদাত করতে হয় তা লোকদের স্পষ্ট করে বলে দেন। কেননা, মানুষের নিজস্ব জ্ঞান-বুদ্ধির মাধ্যমে তা জানা অসম্ভব।

২। এই মহা নি‘আমতের ওপর আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করা।

৩। নবী রাসূলগণের প্রতি মহব্বত ও সম্মান প্রদর্শন করা ও তাঁদের শান ও মর্যাদা উপযোগী প্রশংসা করা। কেননা, তাঁরা আল্লাহর রাসূল এবং তাঁরা প্রকৃত অর্থেই আল্লাহর ইবাদাত আদায় করেছেন। তাঁরা রিসালাতের পবিত্র দায়িত্ব যথাযথ ভাবে আদায় করেছেন এবং তাঁর বান্দাদের নসিহত করেছেন।

শুধূমাত্র একগুঁয়ে কাফেররা তাদের প্রতি প্রেরিত রাসূলগণকে অবিশ্বাস করেছে এই বলে যে, আল্লাহর রাসূলগণ মানুষ থেকে হতে পারেন না। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে কারীমে তাদের এ ভ্রান্ত ধারণার উল্লেখ করে তা বাতিল করে বলেন,

﴿وَمَا مَنَعَ ٱلنَّاسَ أَن يُؤۡمِنُوٓاْ إِذۡ جَآءَهُمُ ٱلۡهُدَىٰٓ إِلَّآ أَن قَالُوٓاْ أَبَعَثَ ٱللَّهُ بَشَرٗا رَّسُولٗا ٩٤ قُل لَّوۡ كَانَ فِي ٱلۡأَرۡضِ مَلَٰٓئِكَةٞ يَمۡشُونَ مُطۡمَئِنِّينَ لَنَزَّلۡنَا عَلَيۡهِم مِّنَ ٱلسَّمَآءِ مَلَكٗا رَّسُولٗا ٩٥﴾ [ الاسراء : ٩٤، ٩٥ ]

‘‘আল্লাহ কি মানুষকে রাসূল করে পাঠিয়েছেন?! যখন তাদের নিকট পথ-নির্দেশ আসে তখন তাদের এ উক্তিই লোকদেরকে ঈমান আনা থেকে বিরত রাখে। বল, যদি পৃথিবীতে ফিরিশতারা স্বাচ্ছন্দ্যে বিচরণ করত, তা হলে আমি আকাশ থেকে কোনো ফিরিশতাকেই তাদের নিকট রাসূল করে প্রেরণ করতাম।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৯৪-৯৫]

আল্লাহ তা‘আলা তাদের এই ধারণা খণ্ডন করে দেন এই অর্থে যে, আল্লাহর রাসূলগণ মানুষ হওয়া অপরিহার্য। কেননা তাঁরা পৃথিবীবাসীর প্রতি প্রেরিত, যেহেতু এরা হলো মানুষ। আর যদি পৃথিবীবাসীরা ফিরিশতা হতো তাহলে তাদের প্রতি নিশ্চয়ই কোনো ফিরিশতাকে রাসূল হিসেবে প্রেরণ করার প্রয়োজন দেখা দিতো, যাতে সেই রাসূল তাদেরই মত একজন হয়ে দায়িত্ব পালন করতেন।

অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা রাসূলগণকে অবিশ্বাসকারীদের বক্তব্য বর্ণনা করে বলেন,

﴿قَالُوٓاْ إِنۡ أَنتُمۡ إِلَّا بَشَرٞ مِّثۡلُنَا تُرِيدُونَ أَن تَصُدُّونَا عَمَّا كَانَ يَعۡبُدُ ءَابَآؤُنَا فَأۡتُونَا بِسُلۡطَٰنٖ مُّبِينٖ ١٠ قَالَتۡ لَهُمۡ رُسُلُهُمۡ إِن نَّحۡنُ إِلَّا بَشَرٞ مِّثۡلُكُمۡ وَلَٰكِنَّ ٱللَّهَ يَمُنُّ عَلَىٰ مَن يَشَآءُ مِنۡ عِبَادِهِۦۖ وَمَا كَانَ لَنَآ أَن نَّأۡتِيَكُم بِسُلۡطَٰنٍ إِلَّا بِإِذۡنِ ٱللَّهِۚ﴾ [ ابراهيم : ١٠، ١١ ]

‘‘তারা বললো, তোমরা তো আমাদের মতই মানুষ! তোমরা আমাদেরকে ঐ উপাস্য থেকে বিরত রাখতে চাও, যার ইবাদাত আমাদের পিতৃপুরুষগণ করত। অতএব তোমরা কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ আনয়ন কর। তাদের রাসূলগণ তাদেরকে বললেন, আমরাও তোমাদের মতো মানুষ; কিন্তু আল্লাহ বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা, অনুগ্রহ করেন। আল্লাহর নির্দেশ ব্যতীত তোমাদের কাছে প্রমাণ নিয়ে আসা আমাদের কাজ নয়। ঈমানদারগণ কেবল আল্লাহরই ওপর ভরসা করা উচিৎ।” [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ১০-১১]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন