hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আশুরা করনীয় ও বর্জনীয়

লেখকঃ আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান

১৩
কাফেরদের অনুসরণ না করা ইসলাম ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক
উপরে আলোচিত আশুরা সম্পর্কিত হাদীসসমূহে আমরা দেখতে পাই যে,

(أ) قالوا : إنه يوم تعظمه اليهود والنصارى .

(ب) صوموا يوم عاشوراء وخالفوا فيه اليهود، وصوموا قبله يوما أو بعده يوما .

(ج) كان أهل خيبر يصومونه يوم عاشوراء، يتخذونه عيدا، ويلبسون نسائهم فيه حليهم وشاراتهم، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم ( فصوموه أنتم )

(ক) সাহাবায়ে কেরাম রা. বললেনঃ এটা এমন একটা দিন যা ইহুদী ও খৃষ্টানরা সম্মানিত মনে করে।

(খ) রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘‘তোমরা আশুরার সওম পালন করবে ও এ ক্ষেত্রে ইহুদীদের বিরোধীতা করবে। তার একদিন পূর্বে অথবা একদিন পরে সওম পালন করবে।’’

(গ) খায়বর অঞ্চলের ইহুদীরা আশুরার দিনে সওম পালন ও ঈদ উদযাপন করত। এ দিনে তাদের মেয়েরা অলংকারাদি পরিধান করত ও তারা উত্তম পোষাকে সজ্জিত হত। রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘‘তাহলে তোমরা সেদিনে সওম পালন করবে।’’

এ সকল হাদীসে আমরা দেখতে পেলাম যে, আশুরা এমন একটি দিন যাকে ইহুদী, খৃষ্টান ও মুসলিমরা সম্মান করে। তারা এ দিনের ফজীলতের ব্যাপারে একমত। তা সত্বেও আল্লাহর রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ ক্ষেত্রে তাদের বিরোধীতা করার নির্দেশ দিলেন। আর এ শিক্ষা তাঁর সাহাবায়ে কেরাম এত প্রবল ভাবে অনুসরণ করেছেন ও এমন গভীর ভাবে অনুধাবন করেছেন যে, তারা রাসূলে কারীম (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে পর্যন্ত বলেছেনঃ এ আশুরা ইহুদী খৃষ্টানেরা যখন উদযাপন করে তখন আমরা উদযাপন কেন করব? তাদের এ প্রশ্নের জওয়াবে রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আশুরা পালনের ক্ষেত্রে কাফেরদের বিরোধীতা কিভাবে করা যায় তার দিক-নির্দেশনা দিলেন।

এ ছাড়া হাদীসে রাসূলে কারীম (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্পষ্ট বাণী রয়েছেঃ

عن عبد الله بن عمرو رضى الله عنهما أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : من تشبه بقوم فهو منهم رواه أبو داود وصححه الألباني

সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন আমর রা. থেকে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘‘ যে ব্যক্তি অন্য জাতির সাথে সা-দৃশ্যতা রাখবে সে তাদের দলভূক্ত বলে গণ্য হবে।

বর্ণনায়ঃ আবু দাউদ

এ হাদীসের ব্যাখ্যায় শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া (রহঃ) বলেনঃ ‘‘এ হাদীসের বাহ্যিক অর্থ হলঃ যে কাফিরদের সাথে সা-দৃশ্যতা রাখবে সে কাফের হয়ে যাবে। যদি এ বাহ্যিক অর্থ (কুফরীর হকুম) আমরা নাও ধরি তবুও কমপক্ষে এ কাজটি যে হারাম (নিষিদ্ধ) তাতে কোন সন্দেহ নেই।’’

এমনিভাবে রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সর্বদা ইহুদী, খৃষ্টান ও মুশরিকদের আচার-আচরণের বিরোধীতা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এ রকম বহু দৃষ্টান্ত আপনি হাদীস ও সীরাতের কিতাবে দেখতে পাবেন।

যেমনঃ

সালাতের জন্য লোকজনকে আহবান কিভাবে করা যায়, এ প্রসঙ্গে যখন রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবায়ে কেরামের সাথে আলোচনায় বসলেন তখন কেহ প্রস্তাব করলেন সালাতের সময় হলে আগুন জালানো যেতে পারে। দূর থেকে আগুন দেখে লোকজন বুঝে নিবে এখন সালাত ও জামা‘আতের সময় হয়েছে।

আল্লাহর রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বললেন এটা পারসিক (অগ্নি-পুজারী) দের আচার।

অনেকে প্রস্তাব করলেন সালাতের সময় হলে ঘন্টাধ্বনি করা যেতে পারে।

রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে বললেনঃ ‘‘ঘন্টা বাজানো খৃষ্টানদের আচরণ।’’

কেহ কেহ প্রস্তাব করলেন সালাতের সময় ঘোষণার জন্য বাঁশী বাজানো যেতে পারে।

রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘‘বাঁশী বাজানো তো মুশরিকদের আচরণ।’’ তিনি এ প্রস্তাবটাও প্রত্যাখ্যান করলেন।

কেহ বললেনঃ ইহুদীদের মত শিংগা বাজানো যেতে পারে।

আল্লাহর রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এটাও প্রত্যাখ্যান করলেন। এরপর আজানের প্রবর্তন করলেন।

উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ ‘‘অনেক সময় রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শনি ও রবিবার সওম পালন করতেন।

তিনি বলতেনঃ ‘‘এ দু দিন মুশরিক (ইহুদী ও খৃষ্টান) দের সাপ্তাহিক ঈদের দিন। তাই এ দিনে সওম পালন করে তাদের ঈদের বিরোধীতা করা আমি পছন্দ করি।’’

বর্ণনায়ঃ আহমদ

ইবনে উমার রা. বর্ণনা করেন যে রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘‘তোমরা মুশরিকদের বিরোধীতা কর; দাঁড়ি পূর্ণ কর আর গোঁফ ছোট কর।’’ অন্য এক বর্ণনায় এসেছে ‘‘ইহুদীদের বিরোধীতা কর।’’

বর্ণনায়ঃ বুখারী ও মুসলিম

আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত যে রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘‘ইহুদী ও খৃষ্টানেরা চুল ও দাঁড়িকে রঙ্গীন করে না। তোমরা চুল ও দাড়িতে মেহেদীর রং ব্যবহার করবে।’’

বর্ণনায়ঃ বুখারী ও মুসলিম

এমনি ভাবে অসংখ্য হাদীস ও দৃষ্টান্ত রয়েছে যেখানে আপনি দেখবেন রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ধর্মীয় ও সাংস্কৃতির ক্ষেত্রে ইহুদী, খৃষ্টান ও মুশরিকদের বিরোধীতা করার জন্য মুসলিমদের নির্দেশ দিয়েছেন।

তাঁর সাহাবায়ে কেরাম এ আদর্শে কতটা উদ্বুদ্ধ ছিলেন আশুরার হাদীস সমূহের প্রতি তাকালে কিছুটা অনুমান করা যায়।

উমার রা. এর খেলাফত কালে যখন ইসলামী সনের প্রচলনের বিষয় আলোচনা হচ্ছিল তখন কোন এক ব্যক্তি প্রস্তাব করেছিলেন যে ইসলামী সন রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্ম দিন থেকে শুরু করা যেতে পারে। তখন এ প্রস্তাব প্রায় সকল সাহাবা এ বলে প্রত্যাখ্যান করলেন যে এটা খৃষ্টানদের নিয়ম-নীতির মধ্যে পড়ে। তারা তাদের নবীর জন্ম দিন থেকে সন গণনা করেছে। আমরা তা করবোনা। আমরা আমাদের নবীর হিজরত থেকে সন গণনা করবো। (উসূলুদ্দাওয়াহ)

আমীরুল মুমিনিন উমার রা. জেরুজালেম অধিকার করার পর সেখানে মসজিদ আকসা পুননির্মানের সিদ্ধান্ত নিলেন। সেখানে ইহুদীদের কেবলা সাখরাকে মসজিদের পিছনে রাখা হবে, না সম্মুখে রাখা হবে এ বিষয় তিনি অন্যান্য সাহাবায়ে কেরামের পরামর্শ চাইলেন। সাহাবীদের মধ্যে কা‘ব আহবার রা. বললেনঃ ‘‘সাখরার পিছনে মসজিদ নির্মান করুন।’’

এ কথা শুনে উমার রা. বললেন ইহুদীয়্যত (ইহুদীবাদ) তোমাকে জড়িয়ে ফেলেছে। আমি সাখরার সম্মুখে মসজিদ নির্মান করব। যাতে সালাত আদায়ের সময় এটা যেন মুসল্লীদের সম্মুখে না থাকে। ’’

(আল-মানারুল মুনীফ : ইবনে কায়্যিম জাওযী)

কেননা ইহুদীরা এটাকে কেবলাহ মনে করে থাকে। তাই মুসলিমগণ যেন এটাকে সামনে নিয়ে সালাত আদায় না করে। বরং এটাকে পিছনে রেখে সালাত আদায় করবে। এতে ইহুদীদের বিরোধীতা করার ইসলামের নির্দেশ পালিত হবে।

সাহাবায়ে কেরাম আল্লাহর রসূলের আদর্শের প্রতি এতটা একনিষ্ঠ ছিলেন বলেই তারা বিশ্ব ও বিশ্ববাসীর হ্রদয় জয় করতে পেরেছিলেন।

আজ আমরা অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবে অংশ গ্রহণ করি। তাদের ঈদের দিনে মুসলিম দেশে সরকারী ছুটি পালনের মাধ্যমে তাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করি। তাদের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তাদের উৎসাহ যোগাই। তাদের ও তাদের উপাষ্য দেবতাদের গুণগান করি।

আসলে এ সকল কাজ করে আমরা কী অর্জন করতে চাই? আমরা কী তাদের ঘনিষ্ঠতা অর্জন করে তাদের মত উন্নত হবো বলে ধারণা করছি?

অনেক মুসলিম দেশ তো ইহুদী ও খৃষ্টানদের খুশী করার জন্য অনেক কিছু করেছে। নিজ ধর্মের বিরুদ্ধে সকল প্রকার অস্ত্র ব্যবহার করেছে। হিজাব নিষিদ্ধ করেছে। কুরআন শিক্ষার মাদ্রাসাগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। আরবী ভাষা শিক্ষা নিষিদ্ধ করেছে। তারপরও তারা কি ইহুদী-খৃষ্টানদের আপন হতে পেরেছে? তারা নিজেদের দেশকে উন্নত করতে পেরেছে? মোটেই পারেনি। বরং তারা ইহুদী ও খৃষ্টানদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে বারবার। শত চেষ্টা করেও তাদের ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হতে পারেনি আজ পর্যন্ত। যদি তাদের অনুসরণ করে কোন মুসলিম দেশ জাগতিক বিষয়ে উন্নতি করত, তাহলে দুনিয়ার স্বার্থে হলেও আমরা না হয় তাদের মত একটু করে দেখতাম। কোন জাতির অনুসরণ ও অনুকরণ করে উন্নতি অগ্রগতিতে তাদের ছাড়িয়ে যাওয়া তো দূরের কথা তাদের সমকক্ষ হওয়া যায়না। কাউকে অনুসরণ করতে গেলে তার পিছনে পিছনে চলতে হয়। উন্নতি অগ্রগতির ক্ষেত্রে কোন জাতিকে পরাজিত করে এগিয়ে যেতে হলে তাদের অনুকরণ ও আনুগত্যের মানষিকতা পরিহার করতে হয়। নিজেদের স্বকীয়তা ও আদর্শের প্রতি গভীর আস্থা রাখতে হয়।

আমরা অমুসলিমদের এত তোষামোদ করি কী কারণে? হয়ত আমরা এমন যে নিজেরা মুসলিম হয়েছি বলে নিজেদের হতভাগ্য মনে করে আফসোস করি। মনে মনে বলি, যদি তাদের ধর্মের হতে পারতাম! বা আমাদের ধর্মেটা এমন না হলেও চলত। অথবা মনে করি, এ দুনিয়াটা তাদের লীজ নেয়া। তাদের তোষামোদ না করলে এ দুনিয়া আমাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে যাবে। তারা অত্যন্ত শক্তিশালী আর আমরা খূব দুর্বল। বা তাদের তোষামোদ করে নিজেদের উদারতা ও সহনশীলতা প্রদর্শন করতে চাই।

আমরা আশুরা থেকে শিক্ষা নিতে চাইনা। আশুরার একটি শিক্ষা হলঃ জালিম সাম্রাজ্য যত শক্তিশালী হোক না কেন, যত বর্বর ও পিশাচ হোক না কেন তার পতন হবেই। যদি আমরা সত্যিকারার্থে ঈমানদার হই ও জালেম সাম্রাজ্য ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে ধৈর্যের সাথে অটল থাকতে পারি।

আর মুছা আ. ও তার অনুসারীরা এদিনেই তো ফেরআউনী সাম্রাজ্যেকে পরাজিত করেছিলেন আল্লাহর সাহায্যে।

আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেনঃ

قَالَ مُوسَى لِقَوْمِهِ اسْتَعِينُوا بِاللَّهِ وَاصْبِرُوا إِنَّ الْأَرْضَ لِلَّهِ يُورِثُهَا مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِينَ ﴿128﴾ ( الأعراف :128)

‘‘মুছা তার সম্প্রদায়কে বলল , ‘আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা কর এবং ধৈর্য ধারণ কর; এ পৃথিবীতো আল্লাহরই। তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তার উত্তরাধিকারী করেন এবং শেষ ফলাফল তো মুত্তাকীদের পক্ষে।’’

(সূরা আরাফ : ১২৯)

যে কারণেই আমরা ইহুদী, খৃষ্টানদের অনুসরণ করি বা তোষামোদ করি না কেন আমরা যে হীনমন্য, আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল ও ধৈর্য যে আমাদের নেই এটাই অন্যকে বুঝিয়ে দিচ্ছি। যদি বিষয়টি উদারতা ও সহশীলতার বিষয় হয় তাহলে তা একতরফা হবে কেন? ‘শুধু আমাদের মুসলিমদের সহনশীল ও উদার হতে হবে অন্যদের সহনশীল ও উদার হওয়ার দরকার নেই’ এ নিয়ম আমাদের কে শিখিয়েছে?

বহু খৃষ্টান ও অমুসলিম দেশ আছে যেখানে মুসলিমগন দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠী। আনুপাতিক হারে আমাদের দেশের অমুসলিমদের সংখ্যার তুলনায় সে সব দেশে মুসলিমদের সংখ্যা বেশী। সে সকল দেশে মুসলিমদের ঈদের দিনে সাধারণ ছুটি দেয়া হয় না। শুধু এটুকুই নয় অনেক মুসলিম দেশ আছে যেখানে খৃষ্টানদের অনুকরণে এখনও সাপ্তাহিক ছুটি পালিত হয় রবিবারে। একটু অনুসন্ধান করে দেখুন না এমন একটা অমুসলিম দেশ পাওয়া যায় কিনা যেখানে মুসলিমদের অনুকরণ করে সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবারে পালিত হয়? কখনো পাবেন না। তারা তো আমাদের ধর্মীয় ক্ষেত্রে কোন সহনশীলতা ও উদারতা দেখায় না। আমরা কেন এত উদার? তারা আমাদের কোন ছাড় দেয় না। আমরা কেন এত ছাড় দেই? শুধু ছাড় দেয়া নয় রীতিমত তাদের প্রভু মানতেও আপত্তি করি না। আমরা এত ভীরু কেন? নিজেদের ধর্ম বিশ্বাসে এত দুর্বল কেন?

এ সকল ইহুদী ও খৃষ্টান দেশগুলোর অনেকে তো আরব ও মুসলিম বিশ্বের সাথে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা বানিজ্য করে। তারা তো ব্যবসার স্বার্থে তাদের দেশে সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার করার কথা কল্পনাও করে না। ব্যবসায়িক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার ব্যাপারে ইহুদীদের সাথে কারো তুলনা চলে না। তারাও তো নিজেদের দেশে শনিবার ছাড়া অন্যদিন সাপ্তাহিক ছুটির কথা কল্পনা করতে পারে না। আমাদের মুসলিমরা শুধু কল্পনা নয় রীতিমত দাবী করে যে সাপ্তাহিক ছুটি রবিবার করা হোক। এতে নাকি তারা ব্যবসা করে দেশকে উন্নত করে দিবে। ফলাফল দাড়ায় এ রকম যে ইহুদী ও খৃষ্টানেরা তাদের ধর্মের বিধানমত শনি ও রবিবার সাপ্তাহিক ছুটি পালন করে অর্থনৈতিক ক্ষতি বরদাশ্ত করতে রাজী কিন্তু আমরা মুসলিমরা শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার পালন করে কোন ক্ষতি বরদাশ্ত করতে প্রস্ত্তত নই। বরং কাফেরদের ধর্ম ও সাংস্কৃতির অনুসরণ করে ধনী হওয়ার স্বপ্ন দেখি।

সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবারে হতে হবে এমন নির্দেশ ইসলামে নেই ঠিক। কিন্তু ইসলামের কথা হল ইহুদী ও খৃষ্টানদের সাপ্তাহিক ছুটির দিনকে মুসলিমরা ছুটির দিন হিসেবে গ্রহণ করতে পারেনা।

ইসলাম হল মধ্য পন্থার ধর্ম। তার দৃষ্টিভংগি সর্বদা সত্য ও ন্যায়ের প্রতি নিবদ্ধ। তাই অমুসলিমরা ভাল কিছু করলে শুধু বিরোধীতার খাতিরে তার বিরোধীতা করতে হবে এমন শিক্ষা কিন্তু ইসলাম দেয় না।

কথা ছিল আমরা জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে তাদের থেকে শিক্ষা নিয়ে তাদের ছাড়িয়ে যাবো। যেমন রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ

الحكمة ضالة المؤمن حيث وجدها فهو أحق بها . رواه الترمذي في كتاب العلم وقال هذا حديث غريب

‘‘জ্ঞান-বিজ্ঞান হল মুসলিমদের হারিয়ে যাওয়া সম্পদ। তাই যেখানেই তা পাবে সেখান থেকেই তা লুফে নেয়ার অধিকার থাকবে অন্যের চেয়ে তার বেশী।’’

বর্ণনায়ঃ তিরমিজী

কিন্তু আমরা কি তা পেরেছি? আমরা অবশ্য তাদের থেকে কিছু শিখেছি। যা শিখেছি তা আমাদের উন্নতির দিকে নিয়ে যায় না, অবনতির দিকে নিয়ে যায়। তাদের থেকে আমরা পার্টি দেয়া শিখেছি। কাউকে সাহায্য করার নামে কনসার্ট করতে শিখেছি। কবরে ও প্রতিকৃতিতে পূষ্পমাল্য দিতে শিখেছি। সন্তানদের জন্ম দিবস পালন করতে শিখেছি। মৃতের সম্মানে নীরবতা পালন করতে শিখেছি। নব-বর্ষ ও থার্টি ফাষ্ট নাইট উদযাপন করতে শিখেছি। আরো শিখেছি উচ্ছৃংখল নোংড়া বিনোদন সহ অনেক কিছু। যত অনর্থক ও বেহুদা কাজ আছে সবগুলোই আমরা তাদের থেকে রপ্ত করে নিয়েছি। আর যা কিছু কল্যাণকর ও অগ্রগতির উপাদান তা আমরা রপ্ত করতে পারিনি। না পারার ব্যর্থতার দায়ভার অনেকে ধর্মীয় নেতাদের উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। যা সম্পূর্ন অযৌক্তিক। কেননা বহু যুগ থেকেই মুসলিম সমাজ ও রাষট্র পরিচালনায় ধর্মীয় নেতাদের ভূমিকা নেই ও কোন ভূমিকা নিতে দেয়া হচ্ছেনা। যখন তাদের ভূমিকা ছিল তখন মুসলিম উম্মাহর অবস্থা এমন ছিল না।

আমরা মুসলিমরা তাদের থেকে শিখতে পারিনি কিভাবে মহাকাশে গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে ঘুরে বেড়াতে হয়। শিখতে পারিনি কিভাবে নিজ দেশ ও স্বজাতির জন্য দায়িত্ব পালনে আন্তরিক ও একনিষ্ঠ হতে হয়। শিখতে পারিনি কিভাবে নিজ দেশ ও জাতির জন্য নিজের স্বার্থ বিসর্জন দিতে হয়। শিখতে পারিনি নিজ ধর্মের অনুসারী মানুষের স্বার্থে কিভাবে সোচ্চার ও ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করতে হয়। পারস্পরিক লেনদেন আচার-আচারণে কিভাবে সততার পরিচয় দিতে হয়। দেশের স্বার্থে কিভাবে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রিয়তা পরিহার করে চলতে হয়।

আমরা কি নিজেদের একটা প্রশ্ন করতে পারি না যে, আমরা কেন ওদের থেকে এমন আচার-আচরণ অনুকরণ করব যা একবারে অনর্থক। সকল অনর্থক কাজ পরিহার ও অর্থবহ কাজ করার জন্য কি আমাদের ধর্ম নির্দেশ দেয়নি? কেন তাদের ভাল কাজগুলোকে বাদ দিয়ে তাদের অনর্থক কাজগুলোকে আমরা অনুসরণ করে যাচ্ছি? কেহ আমাদের এতে বাধা দিতে গেলে আমরা তাদের বিভিন্ন ভাষায় গালি-গালাজ করি। আর নিজেদের খুব প্রগতিশীল ভাবি।

আমাদের অবস্থা যেন তাদের মত হয়েছে যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন

وَإِنْ يَرَوْا سَبِيلَ الرُّشْدِ لَا يَتَّخِذُوهُ سَبِيلًا وَإِنْ يَرَوْا سَبِيلَ الْغَيِّ يَتَّخِذُوهُ سَبِيلًا ( الأعراف : 146)

‘‘তারা সৎপথ দেখলে উহাকে অনুসরণীয় পথ বলে গ্রহণ করে না, কিন্তু তারা ভ্রান্ত পথ দেখলে তাকে তারা অনুসরণীয় পথ হিসেবে গ্রহণ করে।’’

সূরা আরাফ : ১৪৬

আচ্ছা ওরা কি আমাদের কোন ভাল আচার-আচরণ গ্রহণ করে? না আমাদের ধর্মে ভাল বলতে কিছুই নেই। তাদের আনুগত্য ও অনুকরণ করার এ পরাজিত মানসিকতা কখনো আমাদের সামনের দিকে নিয়ে যাবে না। বরং আমাদের পিছনেই নিয়ে যাবে।

আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেনঃ

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِنْ تُطِيعُوا الَّذِينَ كَفَرُوا يَرُدُّوكُمْ عَلَى أَعْقَابِكُمْ فَتَنْقَلِبُوا خَاسِرِينَ ﴿149﴾ ( آل عمران : 149)

‘‘হে মু’মিনগন! যদি তোমরা কাফিরদের আনুগত্য কর তবে তারা তোমাদেরকে পিছনের দিকে ফিরিয়ে নিবে। ফলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে।’’

সূরা আলে ইমরানঃ ১৪৯

রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বারবার এ বিষয়ে মুসলিম উম্মাহকে সাবধান করেছেন। মুসলিমগণ যে ইহুদী খৃষ্টানদের অন্ধ অনুকরণ করা শুরু করবে তা তিনি ভবিষ্যতবানী করে গেছেন।

যেমন হাদীসে এসেছে

عن أبي سعيد الخدري رضى الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : لتتبعن سنن من كان قبلكم حذو القذة بالقذة، حتى لو دخلوا جحر ضب لدخلتموه، قالوا : يا رسول الله ، اليهود والنصارى؟ قال : فمن ؟ رواه البخاري و مسلم

আবু সায়ীদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘‘নিশ্চয়ই তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তী জাতি সমূহের আচার-আচরণ সর্বোতভাবে অনুসরণ করবে। এমনকি তারা গুই সাপের গর্তে প্রবেশ করলে তোমরাও তাতে প্রবেশ করবে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন হে রসূল! পূর্ববর্তী জাতি বলতে কি ইহুদী খৃষ্টানদের বুঝানো হয়েছে? রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘‘তারা ছাড়া আর কারা?’’ বর্ণনায়ঃ বুখারী ও মুসলিম

এ হাদীসে রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভবিষ্যতবানী করেছেন। উদ্দেশ্য হল আমাদের সতর্ক করা। তাদের আনুগত্য ও অনুসরণ প্রত্যাখ্যান করা। তার ভবিষ্যতবানী বাস্তবায়ন করা নয়। কিন্তু আজ আমরা সতর্কতা অবলম্বন না করে সর্বক্ষেত্রে তাদের অনুকরণ করছি। তারা যদি গুই সাপের গর্তে প্রবেশ করার মত কোন অনর্থক কাজ করে আমরাও তা করে যাচ্ছি। আর ভাবছি এমনি করে আমরা উন্নত হবো।

পরিতাপের বিষয় আজ মুসলিমদের মধ্যে একটা উল্লেখযোগ্য অংশ ইহুদী ও খৃষ্টানদের পদে পদে অন্ধের মত অনুসরণ করেই তৃপ্তি লাভ করছে না বরং এ ক্ষেত্রে তারা মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করতে আরম্ভ করেছে। তাদের অন্ধ ভক্তের মত আচরণ করতেও পিছপা হচ্ছেনা।

উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় ; মনে করুন আমেরিকার খৃষ্টান প্রেসিডেন্ট একটি ইসলামী প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বললেন যে , ‘‘আমরা ঐ প্রতিষ্ঠানটিকে সন্ত্রাসী কাজে মদদ দাতা বলে সন্দেহ করি।’’ তিনি হয়ত কথাটি ৫০% ভাগ বিশ্বাস নিয়ে বলেছেন। তার এ কথাটি আমেরিকার খৃষ্টান জনগন ৪০% ভাগ সত্য মনে করে গ্রহণ করেছে। কিন্তু আমাদের মুসলিম দেশের বুদ্ধিজীবি, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদসহ সুশীল সমাজের একটি অংশ মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ কথাটিকে ১০০% ভাগ বিশ্বাস করে নিলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রতিষ্ঠানটিকে ‘সন্দেহ ভাজন সন্ত্রাসীর মদদদাতা’ বলে আখ্যায়িত করলেন। কিন্তু সেই মুসলিম নামধারী বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকরা প্রতিষ্ঠানটিকে সন্ত্রাসী, জঙ্গী, চরমপন্থী, তালেবান, আল-কায়েদা সহ অনেক গুলো বিশেষনে ভুষিত করলেন। সর্বদা তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালাতে থাকলেন।

সম্মানিত পাঠক!

এটা শুধু একটা কাল্পনিক উদাহরণ নয়। বাস্তবে এর অসংখ দৃষ্টান্ত আপনাদের সামনেই রয়েছে। আমাদের সংবাদ-মাধ্যমগুলোর ভূমিকার প্রতি লক্ষ করে দেখুন না! ইহুদী খৃষ্টানদের উচ্ছিষ্ট ভোগের আশায় ও তাদের গ্রহণযোগ্যতা লাভ করার জন্য তারা জেনে বুঝেই এমন কাজে লিপ্ত হয়ে পড়েছেন। ইহুদী খৃষ্টানদের প্রতি কত গভীর বন্ধুত্ব, আনুগত্য ও দাসত্ব থাকলে এটা সম্ভব, তা একটু ভেবে দেখতে পারেন।

তাদের জন্য আল্লাহ রাববুল আলামীনের সেই বাণী স্মরণ করতে হয়

الَّذِينَ يَتَّخِذُونَ الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُونِ الْمُؤْمِنِينَ أَيَبْتَغُونَ عِنْدَهُمُ الْعِزَّةَ فَإِنَّ الْعِزَّةَ لِلَّهِ جَمِيعًا ﴿139﴾ ( سورة النساء : 139)

‘‘মুমিনদের পরিবর্তে যারা কাফিরদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করে তারা কি তাদের নিকট সম্মান চায়? সমস্ত ইয্যত-সম্মান তো আল্লাহরই।’’ সূরা নিসাঃ ১৩৯

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন