HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
মানবগোষ্ঠীর জন্য নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রিসালাতের প্রয়োজনীয়তা
লেখকঃ আদেল আলী আশ-শিদ্দী ও আবদুর রাযযাক মা‘আশ
بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على خاتم الأنبياء والمرسلين، أما بعد :
(সমস্ত প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য; আর সালাত (দুরূদ) ও সালাম সর্বশেষ নবী ও রাসূল (মুহাম্মদ) সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের); অতঃপর ...
পাশ্চাত্যের কেউ কেউ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশ্ববাসীর জন্য যে অভিনব ব্যববস্থাপনা পেশ করেছেন, সে সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করে? আর এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই যে, নিশ্চয় মহান রিসালাতের ধারক-বাহকগণ তাঁদের ব্যক্তিবৈশিষ্ট্য ও ব্যক্তিচরিত্রের ক্ষেত্রে অনন্য। যদিও তারা ইতিহাসের কোনো এক সুনির্দিষ্ট সময়ে আগমন করেছিলেন, কিন্তু তারা তাদের সে শ্রেষ্ঠত্বের ছাপ শুধু সে সমাজেই রেখে যাননি বরং তারা তাদের সে ছায়া যুগ-যুগান্তরের ইতিহাসে প্রাচ্য ও প্রাশ্চাত্যে রেখে যেতে সমর্থ হয়েছেন। আর তাঁদের অন্যতম হলেন: আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম; আর চক্ষুষ্মান ব্যক্তির জন্য রাসূলের মহত্ব সুস্পষ্ট, তিনি ছিলেন একত্ববাদের আসমানী রিসালাত বা বার্তা বহনকারী; যা পরিপূর্ণ, তার মৌলিক লক্ষ্য হল সাধারণভাবে সকল মানুষের জীবনকে সংশোধন করা এবং তাকে বেদুঈন-বর্বরতা ও পৌত্তলিকতা থেকে একত্ববাদের বিশ্বাসে নির্মিত সভ্যতা ও সংস্কৃতির দিকে নিয়ে আসা ...। ‘সভ্যতার কাহিনী’ ( قصة الحضارة ) এর লেখক আমেরিকান গবেষক ওল দিওয়ারনাত বলেন: “যখনই আমরা মানুষের মধ্যে মহান প্রভাব বিস্তারকারী কে ছিলেন, সেই ব্যাপারে শ্রেষ্ঠত্বের বিচার করব, তখন আমরা বলব, নিশ্চয় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন ইতিহাসের মহান ব্যক্তিদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ; কারণ, তিনি নিজে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন যে, তিনি জাতির অধ্যাত্মিক ও নৈতিক অবস্থানকে উন্নত করবেন, যাদেরকে উষ্ণ আবহাওয়া ও মরুভূমির অনুর্বরতা বিশৃঙ্খলার অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে; আর তিনি এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে পুরাপুরি সফল হয়েছেন, এই ক্ষেত্রে গোটা ইতিহাসে অপর কোন সংস্কারক তাঁর ধারে কাছেও যেতে পারে নি; আমরা তিনি ব্যতীত খুব কম সংখ্যক মানুষকেই পাব, যিনি যা স্বপ্ন দেখতেন, তা বাস্তাবায়ন করতে পেরেছেন ...; আর এই রকম না হওয়ার ক্ষেত্রে এটাই যথেষ্ট ছিল না যে, তিনি নিজেই দীনকে খুব শক্তভাবে আঁকড়ে ধরেছিলেন বরং মূল কারণ হলো, আরবরা তখন যে পথে চলেছিল সে পথে চলার জন্য একমাত্র দীনের শক্তি ছাড়া আর কোন শক্তি তাদের উদ্বুদ্ধ করে নি ...। আর যখন অনুর্বর মরুভূমিতে দাওয়াতী কাজের সুচনা হয়, তখন আরব দেশের অবস্থা ছিল: সেখানে বসবাস করত মূর্তি পূজারীগণ, যারা সংখ্যায় ছিল নগণ্য, তাদের কথা ছিল ভিন্ন ভিন্ন; সে জাতিই হয়ে গিয়েছিল তাঁর (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) মৃত্যুর সময় তাওহীদের মতবাদে উজ্জীবিত মজবুত ঐক্যে ঐক্যবদ্ধ এক জাতি। আর তিনি স্বজনপ্রীতি ও কুসংস্কারের অবাধ্য ঘোড়াকে অনুগত করলেন; তিনি ইয়াহূদী, খ্রিষ্টান ও তাঁর দেশের প্রাচীন ধর্মের উপর এক সহজ সরল স্পষ্ট শক্তিশালী দীনকে প্রতিষ্ঠিত করলেন; আরও প্রতিষ্ঠিত করলেন সুস্পষ্ট নৈতিকতা, তাঁর সাহসী নেতৃত্ব ও জাতিগত সম্মান। আর এক প্রজন্মের মধ্যে তিনি একশত যুদ্ধ জয়ে সক্ষম হয়েছেন; আরও সক্ষম হয়েছেন এক যুগে একটি মহান রাষ্ট্রে গঠনে; আর আমাদের আজকের এই দিন পর্যন্ত অর্ধ পৃথিবীর মধ্যে একটি উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন শক্তি হিসেবে তাঁর অবশিষ্ট রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন।” [ওল দিওয়ারনাত, ‘সভ্যতার কাহিনী’ ( قصة الحضارة ), ১৩ / ৪৭]
আর রহমতের নবীর পরিচয়দানে আন্তর্জাতিক প্রোগ্রামের দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকেই আমরা মনে করি যে, আমাদের উপর কর্তব্য হচ্ছে, আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশ্ব ও মানবতার জন্য যা পেশ করেছেন, তার সাথে সংশ্লিষ্ট এসব প্রশ্নের জবাব দেওয়া; আর তাই সে জবাবটিকে আমরা নিম্নোক্ত পয়েন্টে সাজিয়েছি:
الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على خاتم الأنبياء والمرسلين، أما بعد :
(সমস্ত প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য; আর সালাত (দুরূদ) ও সালাম সর্বশেষ নবী ও রাসূল (মুহাম্মদ) সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের); অতঃপর ...
পাশ্চাত্যের কেউ কেউ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশ্ববাসীর জন্য যে অভিনব ব্যববস্থাপনা পেশ করেছেন, সে সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করে? আর এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই যে, নিশ্চয় মহান রিসালাতের ধারক-বাহকগণ তাঁদের ব্যক্তিবৈশিষ্ট্য ও ব্যক্তিচরিত্রের ক্ষেত্রে অনন্য। যদিও তারা ইতিহাসের কোনো এক সুনির্দিষ্ট সময়ে আগমন করেছিলেন, কিন্তু তারা তাদের সে শ্রেষ্ঠত্বের ছাপ শুধু সে সমাজেই রেখে যাননি বরং তারা তাদের সে ছায়া যুগ-যুগান্তরের ইতিহাসে প্রাচ্য ও প্রাশ্চাত্যে রেখে যেতে সমর্থ হয়েছেন। আর তাঁদের অন্যতম হলেন: আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম; আর চক্ষুষ্মান ব্যক্তির জন্য রাসূলের মহত্ব সুস্পষ্ট, তিনি ছিলেন একত্ববাদের আসমানী রিসালাত বা বার্তা বহনকারী; যা পরিপূর্ণ, তার মৌলিক লক্ষ্য হল সাধারণভাবে সকল মানুষের জীবনকে সংশোধন করা এবং তাকে বেদুঈন-বর্বরতা ও পৌত্তলিকতা থেকে একত্ববাদের বিশ্বাসে নির্মিত সভ্যতা ও সংস্কৃতির দিকে নিয়ে আসা ...। ‘সভ্যতার কাহিনী’ ( قصة الحضارة ) এর লেখক আমেরিকান গবেষক ওল দিওয়ারনাত বলেন: “যখনই আমরা মানুষের মধ্যে মহান প্রভাব বিস্তারকারী কে ছিলেন, সেই ব্যাপারে শ্রেষ্ঠত্বের বিচার করব, তখন আমরা বলব, নিশ্চয় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন ইতিহাসের মহান ব্যক্তিদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ; কারণ, তিনি নিজে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন যে, তিনি জাতির অধ্যাত্মিক ও নৈতিক অবস্থানকে উন্নত করবেন, যাদেরকে উষ্ণ আবহাওয়া ও মরুভূমির অনুর্বরতা বিশৃঙ্খলার অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে; আর তিনি এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে পুরাপুরি সফল হয়েছেন, এই ক্ষেত্রে গোটা ইতিহাসে অপর কোন সংস্কারক তাঁর ধারে কাছেও যেতে পারে নি; আমরা তিনি ব্যতীত খুব কম সংখ্যক মানুষকেই পাব, যিনি যা স্বপ্ন দেখতেন, তা বাস্তাবায়ন করতে পেরেছেন ...; আর এই রকম না হওয়ার ক্ষেত্রে এটাই যথেষ্ট ছিল না যে, তিনি নিজেই দীনকে খুব শক্তভাবে আঁকড়ে ধরেছিলেন বরং মূল কারণ হলো, আরবরা তখন যে পথে চলেছিল সে পথে চলার জন্য একমাত্র দীনের শক্তি ছাড়া আর কোন শক্তি তাদের উদ্বুদ্ধ করে নি ...। আর যখন অনুর্বর মরুভূমিতে দাওয়াতী কাজের সুচনা হয়, তখন আরব দেশের অবস্থা ছিল: সেখানে বসবাস করত মূর্তি পূজারীগণ, যারা সংখ্যায় ছিল নগণ্য, তাদের কথা ছিল ভিন্ন ভিন্ন; সে জাতিই হয়ে গিয়েছিল তাঁর (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) মৃত্যুর সময় তাওহীদের মতবাদে উজ্জীবিত মজবুত ঐক্যে ঐক্যবদ্ধ এক জাতি। আর তিনি স্বজনপ্রীতি ও কুসংস্কারের অবাধ্য ঘোড়াকে অনুগত করলেন; তিনি ইয়াহূদী, খ্রিষ্টান ও তাঁর দেশের প্রাচীন ধর্মের উপর এক সহজ সরল স্পষ্ট শক্তিশালী দীনকে প্রতিষ্ঠিত করলেন; আরও প্রতিষ্ঠিত করলেন সুস্পষ্ট নৈতিকতা, তাঁর সাহসী নেতৃত্ব ও জাতিগত সম্মান। আর এক প্রজন্মের মধ্যে তিনি একশত যুদ্ধ জয়ে সক্ষম হয়েছেন; আরও সক্ষম হয়েছেন এক যুগে একটি মহান রাষ্ট্রে গঠনে; আর আমাদের আজকের এই দিন পর্যন্ত অর্ধ পৃথিবীর মধ্যে একটি উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন শক্তি হিসেবে তাঁর অবশিষ্ট রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন।” [ওল দিওয়ারনাত, ‘সভ্যতার কাহিনী’ ( قصة الحضارة ), ১৩ / ৪৭]
আর রহমতের নবীর পরিচয়দানে আন্তর্জাতিক প্রোগ্রামের দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকেই আমরা মনে করি যে, আমাদের উপর কর্তব্য হচ্ছে, আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশ্ব ও মানবতার জন্য যা পেশ করেছেন, তার সাথে সংশ্লিষ্ট এসব প্রশ্নের জবাব দেওয়া; আর তাই সে জবাবটিকে আমরা নিম্নোক্ত পয়েন্টে সাজিয়েছি:
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষকে তাঁর প্রতি আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক প্রেরীত ওহীর মাধ্যমে মানুষের পূজা করা থেকে শরীকবিহীন এক আল্লাহর ইবাদতের দিকে স্থানান্তার করেন; ফলে মানুষ আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্যের পূজা করা থেকে মুক্তি পেল; আর এটা নিঃসন্দেহে মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বড় সম্মান।
নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের পূর্বে সেখানকার প্রচলিত অবস্থা ছিল, ইতোপূর্বেকার সনাতন নিয়মনীতি, অর্থ-বিত্তের প্রভাব এবং মনিব ও গোলাম প্রথার সমন্বিত শাসনব্যবস্থা; সুতরাং ধনী ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা ছিল অনুসরণীয় নেতা; আর ফকীর ও বর্ণবৈষম্যের শিকার ব্যক্তিরা (তারা অধিকাংশ কৃষ্ণাঙ্গ) ছিল দাস, আনুগত্য ও বশ্যতা স্বীকারকারী। ফলে দাস-দাসীগণ নিজেদেরকে বস্তুগত পণ্যসামগ্রীর ব্যতিক্রম কিছু মনে করত না, মানুষ যার মালিকানা লাভ করে ক্রয়, বিক্রয়, হেবা ইত্যাদি রকম লেনদেনের মাধ্যমে এমতাবস্থায় যে, মা ও তার ছেলের মধ্যে, পিতা ও তার পুত্রের মধ্যে এবং স্ত্রী ও তার স্বামীর মধ্যে ক্রয়, বিক্রয় ও হেবা সংঘটিত হওয়ার মধ্যে কোন প্রকার পার্থক্যকরণের ব্যাপারে তার মানবিক অনুভূতি থাকত সম্পূর্ণ অনুপস্থিত!
আর পৌত্তলিকতা ছড়িয়ে পড়েছিল দেব-দেবী, গাছপালা ও পাথর পূজা এবং এগুলোর নৈকট্য হাসিলের মধ্যে।
আর তদানীন্তন নেতৃবৃন্দ সামাজিক প্রথা ও বানানো আইনসমূহকে এমনভাবে বাস্তবায়ণ করত, যেন এগুলো শরীয়তের বিধি-বিধান, মানুষকে তারা এসব আইন মানতে বাধ্য করত এবং তারা তাদেরকে সে সব প্রথা ও বানানো আইনের অনুগত করে রাখত। এভাবে তারা নিজেদেরকে সে হক ও সত্য ইলাহ ও মা‘বুদের পর্যায়ে নিয়ে গেল, যার রাজ্যে নেই কোনো সাদা, কালো, ধনী, গরীব, মনীব, গোলামের ভেদাভেদ, সকলে সে মহান সত্তা আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল; আর (যখনই সে সব অপশক্তি তাদেরকে হক মা‘বুদ আল্লাহর পর্যায়ে নিয়ে গেছে, তখনই সে অবস্থার অবসানকল্পে) তখনই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইসলামের বার্তা নিয়ে প্রেরণ করেছেন, যার মূল শ্লোগান হলো,
لا إله إلا الله محمد رسول الله (আল্লাহ ছাড়া কোন হক ইলাহ নেই, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্র রাসূল)।
অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষকে তার প্রতিপালক ও ইলাহ তথা মা‘বুদ হিসেবে একমাত্র আল্লাহর একত্ববাদের স্বীকৃতি দান করার দিকে আহ্বান করেন; আর তিনি আরও আহ্বান করেন যে, আল্লাহ হলেন এককভাবে ইবাদত ও সাধারণ আনুগত্য পাওয়ার একমাত্র হকদার, তাঁর সাথে কারোর কোন অধিকার নেই; আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ ٱعۡبُدُواْ رَبَّكُمُ ٱلَّذِي خَلَقَكُمۡ وَٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ٢١﴾ [ سُورَةُ البَقَرَةِ : 21 ]
“হে মানুষ! তোমরা তোমাদের সেই প্রতিপালকের ইবাদত কর, যিনি তোমাদেরকে ও তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার।” - ( সূরা আল-বাকারা: ২১ ); তিনি আরও বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ ضُرِبَ مَثَلٞ فَٱسۡتَمِعُواْ لَهُۥٓۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ تَدۡعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ لَن يَخۡلُقُواْ ذُبَابٗا وَلَوِ ٱجۡتَمَعُواْ لَهُۥۖ وَإِن يَسۡلُبۡهُمُ ٱلذُّبَابُ شَيۡٔٗا لَّا يَسۡتَنقِذُوهُ مِنۡهُۚ ضَعُفَ ٱلطَّالِبُ وَٱلۡمَطۡلُوبُ ٧٣ ﴾ [ سُورَةُ الحج : 73 ]
“হে মানুষ! একটি উপমা দেয়া হচ্ছে, মনোযোগ সহকারে তা শ্রবণ কর: তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাক, তারা তো কখনও একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারবে না, এই উদ্দেশ্যে তারা সকলে একত্র হলেও পারবে না। আর মাছি যদি তাদের নিকট থেকে কিছু ছিনিয়ে নিয়ে যায়, এটাও তারা তার নিকট থেকে উদ্ধার করতে পারবে না। অন্বেষক ও অন্বেষিত কতই না দুর্বল।” - ( সূরা আল-হাজ্জ: ৭৩ )।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক সাহাবী ঐ পরিবর্তনের কথা ব্যক্ত করেছেন, যার মাধ্যমে ইসলাম আরবদেরকে অপমান ও দাসত্বের জীবন থেকে সম্মান ও মর্যাদার জীবনে উন্নীত করেছে; আর তারা কিভাবে ব্যক্তির পূজা ও আনুগত্যের অন্ধকার থেকে বের হয়ে এক আল্লাহর দাসত্বের দিকে এলেন, যার মাধ্যমে তারা অনুধাবন করেছেন আল্লাহর একত্ববাদ ও অন্যকে বাদ দিয়ে একমাত্র তার ইবাদতের ছায়ার মধ্যে দুনিয়ার প্রশস্ততা ও তার বিস্তৃতিকে; এই ব্যাপারে রব‘য়ী ইবন ‘আমের পারস্যের নেতৃবৃন্দের কোনো একজনকে উদ্দেশ্য করে বলেন:
«الله ابتعثنا لنخرج من شاء من عبادة العباد إلى عبادة الله، ومن ضيق الدنيا إلى سعتها، ومن جور الاديان إلى عدل الاسلام، » .
“আল্লাহ আমাদেরকে প্রেরণ করেছেন, যাতে আমরা যে ব্যক্তি চায় তাকে মানুষের পূজা করা থেকে আল্লাহর ইবাদতের দিকে; দুনিয়ার সংকীর্ণতা থেকে তার প্রশস্ততার দিকে এবং বিভিন্ন ধর্মের যুলুম থেকে ইসলামের ন্যায় ও ইনসাফের দিকে বের করে নিয়ে যেতে পারি।” – (ইবনু কাসীর, বেদায়া ওয়ান নেহায়া, ৭/ ৩৯)।
আলজেরিয়ায় ইসলামগ্রহণকারী ফরাসী নাগরিক “ইতিয়ীন দীনীহ” (পরবর্তীতে নাসরউদ্দীন) তার ‘মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল’ ( محمد رسول الله ) নামক গ্রন্থে বলেন: যখন তিনি রিসালাতের বৈশিষ্ট্য, তার আন্তর্জাতিকতা ও ভবিষ্যতে তার সম্ভাব্য ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করেন, তখন তিনি বলেন: “আর সেখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে; আর তা হল বান্দা ও তার প্রতিপালকের মধ্যে কোন মাধ্যম না থাকা; আর এটাকেই বাস্তব প্রজ্ঞাসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ ইসলামের মধ্যে পেয়েছে, যেহেতু ইসলাম রহস্যজনক বিষয় ও সাধক বা ঋষির পূজাকরণ থেকে মুক্ত; আর তাঁকে (রবকে) পাওয়ার জন্য প্রতিকৃতি ও মন্দিরের প্রয়োজন নেই; কারণ, গোটা পৃথিবীই আল্লাহর মাসজিদ। তদুপরি শুধু আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসীরা, তারা নয় যারা আধুনিকতার দাবিদার, যারা তাদের অন্তরে যা উদিত হয় তা বর্ণনা করার ব্যাপারে সন্দেহের গোলকধাঁধায় আবর্তিত হতে থাকে, তারা ব্যতীত সত্যিকার আল্লাহর উপর বিশ্বাসীরা কখনও কখনও ইসলামের মধ্যে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের ক্ষেত্রে খাঁটি মাযহাবও পায়; অতঃপর তারা তাতে পায় ইবাদতের অভিনব ও সমুন্নত আমল বা কর্মসমূহ; আরও (খাঁটি আকীদা-বিশ্বাস) পায় দো‘য়ার শব্দসমূহের অর্থ নিয়ে যতটুকু চিন্তা করা সম্ভব তাতে...।” (‘মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল’ ( محمد رسول الله ), ৩৬২ – ৩৬৩)।
নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের পূর্বে সেখানকার প্রচলিত অবস্থা ছিল, ইতোপূর্বেকার সনাতন নিয়মনীতি, অর্থ-বিত্তের প্রভাব এবং মনিব ও গোলাম প্রথার সমন্বিত শাসনব্যবস্থা; সুতরাং ধনী ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা ছিল অনুসরণীয় নেতা; আর ফকীর ও বর্ণবৈষম্যের শিকার ব্যক্তিরা (তারা অধিকাংশ কৃষ্ণাঙ্গ) ছিল দাস, আনুগত্য ও বশ্যতা স্বীকারকারী। ফলে দাস-দাসীগণ নিজেদেরকে বস্তুগত পণ্যসামগ্রীর ব্যতিক্রম কিছু মনে করত না, মানুষ যার মালিকানা লাভ করে ক্রয়, বিক্রয়, হেবা ইত্যাদি রকম লেনদেনের মাধ্যমে এমতাবস্থায় যে, মা ও তার ছেলের মধ্যে, পিতা ও তার পুত্রের মধ্যে এবং স্ত্রী ও তার স্বামীর মধ্যে ক্রয়, বিক্রয় ও হেবা সংঘটিত হওয়ার মধ্যে কোন প্রকার পার্থক্যকরণের ব্যাপারে তার মানবিক অনুভূতি থাকত সম্পূর্ণ অনুপস্থিত!
আর পৌত্তলিকতা ছড়িয়ে পড়েছিল দেব-দেবী, গাছপালা ও পাথর পূজা এবং এগুলোর নৈকট্য হাসিলের মধ্যে।
আর তদানীন্তন নেতৃবৃন্দ সামাজিক প্রথা ও বানানো আইনসমূহকে এমনভাবে বাস্তবায়ণ করত, যেন এগুলো শরীয়তের বিধি-বিধান, মানুষকে তারা এসব আইন মানতে বাধ্য করত এবং তারা তাদেরকে সে সব প্রথা ও বানানো আইনের অনুগত করে রাখত। এভাবে তারা নিজেদেরকে সে হক ও সত্য ইলাহ ও মা‘বুদের পর্যায়ে নিয়ে গেল, যার রাজ্যে নেই কোনো সাদা, কালো, ধনী, গরীব, মনীব, গোলামের ভেদাভেদ, সকলে সে মহান সত্তা আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল; আর (যখনই সে সব অপশক্তি তাদেরকে হক মা‘বুদ আল্লাহর পর্যায়ে নিয়ে গেছে, তখনই সে অবস্থার অবসানকল্পে) তখনই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইসলামের বার্তা নিয়ে প্রেরণ করেছেন, যার মূল শ্লোগান হলো,
لا إله إلا الله محمد رسول الله (আল্লাহ ছাড়া কোন হক ইলাহ নেই, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্র রাসূল)।
অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষকে তার প্রতিপালক ও ইলাহ তথা মা‘বুদ হিসেবে একমাত্র আল্লাহর একত্ববাদের স্বীকৃতি দান করার দিকে আহ্বান করেন; আর তিনি আরও আহ্বান করেন যে, আল্লাহ হলেন এককভাবে ইবাদত ও সাধারণ আনুগত্য পাওয়ার একমাত্র হকদার, তাঁর সাথে কারোর কোন অধিকার নেই; আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ ٱعۡبُدُواْ رَبَّكُمُ ٱلَّذِي خَلَقَكُمۡ وَٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ٢١﴾ [ سُورَةُ البَقَرَةِ : 21 ]
“হে মানুষ! তোমরা তোমাদের সেই প্রতিপালকের ইবাদত কর, যিনি তোমাদেরকে ও তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার।” - ( সূরা আল-বাকারা: ২১ ); তিনি আরও বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ ضُرِبَ مَثَلٞ فَٱسۡتَمِعُواْ لَهُۥٓۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ تَدۡعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ لَن يَخۡلُقُواْ ذُبَابٗا وَلَوِ ٱجۡتَمَعُواْ لَهُۥۖ وَإِن يَسۡلُبۡهُمُ ٱلذُّبَابُ شَيۡٔٗا لَّا يَسۡتَنقِذُوهُ مِنۡهُۚ ضَعُفَ ٱلطَّالِبُ وَٱلۡمَطۡلُوبُ ٧٣ ﴾ [ سُورَةُ الحج : 73 ]
“হে মানুষ! একটি উপমা দেয়া হচ্ছে, মনোযোগ সহকারে তা শ্রবণ কর: তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাক, তারা তো কখনও একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারবে না, এই উদ্দেশ্যে তারা সকলে একত্র হলেও পারবে না। আর মাছি যদি তাদের নিকট থেকে কিছু ছিনিয়ে নিয়ে যায়, এটাও তারা তার নিকট থেকে উদ্ধার করতে পারবে না। অন্বেষক ও অন্বেষিত কতই না দুর্বল।” - ( সূরা আল-হাজ্জ: ৭৩ )।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক সাহাবী ঐ পরিবর্তনের কথা ব্যক্ত করেছেন, যার মাধ্যমে ইসলাম আরবদেরকে অপমান ও দাসত্বের জীবন থেকে সম্মান ও মর্যাদার জীবনে উন্নীত করেছে; আর তারা কিভাবে ব্যক্তির পূজা ও আনুগত্যের অন্ধকার থেকে বের হয়ে এক আল্লাহর দাসত্বের দিকে এলেন, যার মাধ্যমে তারা অনুধাবন করেছেন আল্লাহর একত্ববাদ ও অন্যকে বাদ দিয়ে একমাত্র তার ইবাদতের ছায়ার মধ্যে দুনিয়ার প্রশস্ততা ও তার বিস্তৃতিকে; এই ব্যাপারে রব‘য়ী ইবন ‘আমের পারস্যের নেতৃবৃন্দের কোনো একজনকে উদ্দেশ্য করে বলেন:
«الله ابتعثنا لنخرج من شاء من عبادة العباد إلى عبادة الله، ومن ضيق الدنيا إلى سعتها، ومن جور الاديان إلى عدل الاسلام، » .
“আল্লাহ আমাদেরকে প্রেরণ করেছেন, যাতে আমরা যে ব্যক্তি চায় তাকে মানুষের পূজা করা থেকে আল্লাহর ইবাদতের দিকে; দুনিয়ার সংকীর্ণতা থেকে তার প্রশস্ততার দিকে এবং বিভিন্ন ধর্মের যুলুম থেকে ইসলামের ন্যায় ও ইনসাফের দিকে বের করে নিয়ে যেতে পারি।” – (ইবনু কাসীর, বেদায়া ওয়ান নেহায়া, ৭/ ৩৯)।
আলজেরিয়ায় ইসলামগ্রহণকারী ফরাসী নাগরিক “ইতিয়ীন দীনীহ” (পরবর্তীতে নাসরউদ্দীন) তার ‘মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল’ ( محمد رسول الله ) নামক গ্রন্থে বলেন: যখন তিনি রিসালাতের বৈশিষ্ট্য, তার আন্তর্জাতিকতা ও ভবিষ্যতে তার সম্ভাব্য ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করেন, তখন তিনি বলেন: “আর সেখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে; আর তা হল বান্দা ও তার প্রতিপালকের মধ্যে কোন মাধ্যম না থাকা; আর এটাকেই বাস্তব প্রজ্ঞাসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ ইসলামের মধ্যে পেয়েছে, যেহেতু ইসলাম রহস্যজনক বিষয় ও সাধক বা ঋষির পূজাকরণ থেকে মুক্ত; আর তাঁকে (রবকে) পাওয়ার জন্য প্রতিকৃতি ও মন্দিরের প্রয়োজন নেই; কারণ, গোটা পৃথিবীই আল্লাহর মাসজিদ। তদুপরি শুধু আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসীরা, তারা নয় যারা আধুনিকতার দাবিদার, যারা তাদের অন্তরে যা উদিত হয় তা বর্ণনা করার ব্যাপারে সন্দেহের গোলকধাঁধায় আবর্তিত হতে থাকে, তারা ব্যতীত সত্যিকার আল্লাহর উপর বিশ্বাসীরা কখনও কখনও ইসলামের মধ্যে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের ক্ষেত্রে খাঁটি মাযহাবও পায়; অতঃপর তারা তাতে পায় ইবাদতের অভিনব ও সমুন্নত আমল বা কর্মসমূহ; আরও (খাঁটি আকীদা-বিশ্বাস) পায় দো‘য়ার শব্দসমূহের অর্থ নিয়ে যতটুকু চিন্তা করা সম্ভব তাতে...।” (‘মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল’ ( محمد رسول الله ), ৩৬২ – ৩৬৩)।
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত ওহীর মাধ্যমে মানুষের বিবেককে কুসংস্কার ও মিথ্যার কাছে আত্মসমর্পণ করা এবং দেবদেবী ও বাতিল উপাস্যদের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া অথবা বিবেকের বিপরীত যেমন: এই কথা বলা যে, মানুষের মধ্য থেকে আল্লাহর একজন পুত্র আছে; তিনি তাকে বিনা অপরাধ বা পাপে উৎসর্গ করেছেন, অথবা তার অপরাধের কারণে তাকে মানবজাতির জন্য উৎসর্গ করেছেন ইত্যাদি ধরনের অবাস্তব চিন্তা বাস্তবায়ন করা থেকে স্বাধীন করে দিয়েছেন।
নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের পূর্বে সুস্থ বিবেকের সাথে সাংঘর্ষিক অনেক বিশ্বাস ও কল্পকাহিনী আরবদের বিবেক-বুদ্ধিকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে; তথাকথিত জাহিল তথা অজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ কোনো প্রকার চিন্তাভাবনা ও বুদ্ধি-বিবেক কাজে লাগানো ছাড়াই যেসব আকিদা-বিশ্বাস লালন করত, তন্মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি হল: পাথর ও নিজ হাতে বানানো কাঠের মূর্তি বা ভাস্কর্যের মধ্যে উপকার ও ক্ষতি করার ক্ষমতা রয়েছে বলে বিশ্বাস করা, তারা আল্লাহর সাথে অথবা আল্লাহকে বাদ দিয়ে সেগুলোর পূজা করেছে, তাদের ধারণা অনুযায়ী তারা সেগুলোর প্রতিশোধ গ্রহণের আশঙ্কা করে। আর তারা তাদের অনুসারী, যারা ভালো-মন্দ বিবেচনার ক্ষমতা হারিয়ে তাদের বিবেক-বুদ্ধি নষ্ট করেছে, এমন লোকদেরকেও এ ধরনের বিশ্বাসে বিশ্বাসী করে ভয়ভীতিতে নিপতিত করেছে।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইসলামের মত এমন জীবনব্যবস্থা দিয়ে মানবজাতির নিকট প্রেরণ করেছেন, আর তিনিই মানুষকে বিবেকের মাধ্যমে সম্মানিত করেছেন এবং বিবেককে নির্ধারণ করেছেন দীনের আবশ্যকীয় দায়িত্ব, আদেশ ও নিষেধসমূহের দায়িত্ব অর্পণের মানদণ্ড বা ক্ষেত্র হিসেবে; আর শিথিল করে দিয়েছে পাগলের দায়িত্ব ও জবাবদিহিতা, যার বিবেক-বুদ্ধি লোপ পেয়েছে; আরও শিথিল করে দিয়েছে অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশু-কিশোরের দায়িত্ব ও জবাবদিহিতা, যার জ্ঞান-বুদ্ধির পরিপক্কতা আসেনি; যেমনিভাবে ইসলাম মানুষকে আহ্বান করেছে ও উৎসাহিত করেছে, বরং সৃষ্টি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে গবেষণার কাজে বিবেক-বুদ্ধিকে কাজে লাগানোর উপর পুরস্কার ঘোষণা করেছে; আর নিষেধ ও হারাম করে দিয়েছে এমন প্রত্যেক বস্তুকে, যা বিবেক-বুদ্ধির উপর কুপ্রভাব ফেলে, যেমন: সকল প্রকার মাদকদ্রব্য।
আর সর্বপ্রথম ইসলাম যে জিনিসটিকে কুসংস্কার ও মিথ্যার অন্ধকার থেকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করা শুরু করেছে, তা হল আকিদা, যে আকিদার মাধ্যমে বিবেক-বুদ্ধিকেই সম্বোধন করা হয়েছে, যাতে বিবেক আল-কুরআন যে সত্যকে নিয়ে এসেছে, তার সঠিকত্ব অর্জন করার মাধ্যমে পরিতুষ্ট হতে পারে; আর বাতিল বা প্রত্যাখ্যান করতে পারে জাহেলী তথা অজ্ঞ ব্যক্তিরা বহু ইলাহে বিশ্বাস করার মত যেসব ভ্রান্ত আকিদা-বিশ্বাসের প্রতিষ্ঠিত আছে, সেসব আকিদা-বিশ্বাসকে। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿مَا ٱتَّخَذَ ٱللَّهُ مِن وَلَدٖ وَمَا كَانَ مَعَهُۥ مِنۡ إِلَٰهٍۚ إِذٗا لَّذَهَبَ كُلُّ إِلَٰهِۢ بِمَا خَلَقَ وَلَعَلَا بَعۡضُهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖۚ سُبۡحَٰنَ ٱللَّهِ عَمَّا يَصِفُونَ ٩١﴾ [ سُورَةُ المُؤۡمِنُونَ : 91 ]
“আল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেন নি এবং তার সাথে অপর কোন ইলাহও নেই; যদি থাকত, তবে প্রত্যেক ইলাহ স্বীয় সৃষ্টি নিয়ে পৃথক হয়ে যেত এবং একে অপরের উপর প্রাধান্য বিস্তার করত। তারা যা বলে, তা থেকে আল্লাহ কত পবিত্র!” - ( সূরা আল-মুমিনুন: ৯১ )।
সুতরাং এটি একটি উজ্জ্বল প্রমাণ; তাতে এই সংক্ষিপ্ত শব্দের দ্বারা সুস্পষ্ট হয়েছে যে, প্রকৃত ইলাহ হওয়ার জন্য জরুরি হল কর্মক্ষম স্রষ্টা হওয়া; যিনি তার বান্দার নিকট উপকার পৌঁছিয়ে দেন এবং তার থেকে ক্ষতি প্রতিরোধ করেন; অতএব আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার সাথে যদি অপর ইলাহ থাকে, তবে তারও সৃষ্টি ও কাজ করার ক্ষমতা থাকত; এমতাবস্থায় সে তার সাথে অপর ইলাহের অংশীদারিত্ব মেনে নেবে না, বরং সে যদি তার উপর প্রভাব বিস্তার করতে এবং অন্যজনকে বাদ দিয়ে নিজেই একক ইলাহ ক্ষমতা থাকত তবে তা-ই করত; আর যদি সে তাতে সক্ষম না হয়, তবে সে তার সৃষ্টি নিয়ে পৃথক হয়ে চলে যাবে, যেমনিভাবে দুনিয়ার রাজা-বাদশাগণ তাদের রাজত্ব নিয়ে একে অপরের থেকে আলাদা হয়ে যায়; আর যখন স্বতন্ত্র ইলাহ অপর ইলাহর উপর প্রভাব, প্রাধান্য বিস্তার করতে সক্ষম না হবে, তখন নিম্নের তিনটি বিষয়ের যে কোন একটি অপরিহার্য হয়ে পড়বে:
হয় প্রত্যেক ইলাহ তার সৃষ্টি ও রাজত্ব নিয়ে আলাদা হয়ে যাবে।
অথবা তারা একে অপরের উপর প্রধান্য বিস্তার করবে।
নতুবা তাদের সকলে এক ইলাহের ক্ষমতা ও একই রাজত্বের অধীনে আসবে, সে তাদের উপর ক্ষমতা প্রয়োগ করবে, কিন্তু তারা তার উপর ক্ষমতা প্রয়োগ করবে না।
আর নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের বিষয়াদির সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা, একটির সাথে আরেকটির সম্পর্ক এবং সুশৃঙ্খল নিয়মে তার পরিভ্রমণ, যেখানে কোন প্রকার বিরোধ ও বিশৃঙ্খলা নেই— এসব কিছুই এই কথার উপর অন্যতম প্রধান দলিল-প্রমাণের অন্তর্ভুক্ত যে, এই ব্যবস্থাপনার মহাব্যবস্থাপক হলেন একজন, তিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই।
যেমনিভাবে বিশ্বের জন্য দুইজন সমমানের প্রতিপালক ও স্রষ্টা হওয়া অসম্ভব; তেমনিভাবে অসম্ভব তার জন্য দুইজন ইলাহ ও মা‘বুদ বা উপাস্য হওয়া।
সুতরাং এ দলিল-প্রমাণাদি দেয়ার ক্ষেত্রে এই যে বলিষ্ঠ বর্ণনা সেটাই প্রমাণ করে যে, আল্লাহর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাওহীদ বা একত্ববাদ, আল্লাহর একমাত্র রব হওয়া, আর তিনিই একমাত্র সঠিক মা‘বুদ অন্য কেউ নন, এসবের সত্যতার উপর প্রকৃষ্ট প্রমাণ; আর এটাই বিবেকবান-বুদ্ধিমানদের বিবেক-বুদ্ধিতে সবচেয়ে বেশী গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত, সে সব দাবীর চেয়ে, যাতে বলা হয়ে থাকে যে, তিনি তিন জনের তৃতীয় জন অথবা তাঁর প্রভূত্বে ও ইবাদাতের ক্ষেত্রে তার একমাত্র অধিকারের মধ্যে দেবদেবীদের অংশীদারিত্ব রয়েছে।
সুতরাং এই সুস্পষ্ট তাওহীদ বা একত্ববাদের চেয়ে মহান বস্তু আর কী হতে পারে, যা রহমতের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রেরিত হওয়ার দিন পর্যন্ত মানুষ জানতে পারে নি; আর আল্লাহর ব্যাপারে এই আকিদার চেয়ে বিবেক ও বিশুদ্ধ চিন্তার নিকট অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ আকিদা কোনটি?
নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের পূর্বে সুস্থ বিবেকের সাথে সাংঘর্ষিক অনেক বিশ্বাস ও কল্পকাহিনী আরবদের বিবেক-বুদ্ধিকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে; তথাকথিত জাহিল তথা অজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ কোনো প্রকার চিন্তাভাবনা ও বুদ্ধি-বিবেক কাজে লাগানো ছাড়াই যেসব আকিদা-বিশ্বাস লালন করত, তন্মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি হল: পাথর ও নিজ হাতে বানানো কাঠের মূর্তি বা ভাস্কর্যের মধ্যে উপকার ও ক্ষতি করার ক্ষমতা রয়েছে বলে বিশ্বাস করা, তারা আল্লাহর সাথে অথবা আল্লাহকে বাদ দিয়ে সেগুলোর পূজা করেছে, তাদের ধারণা অনুযায়ী তারা সেগুলোর প্রতিশোধ গ্রহণের আশঙ্কা করে। আর তারা তাদের অনুসারী, যারা ভালো-মন্দ বিবেচনার ক্ষমতা হারিয়ে তাদের বিবেক-বুদ্ধি নষ্ট করেছে, এমন লোকদেরকেও এ ধরনের বিশ্বাসে বিশ্বাসী করে ভয়ভীতিতে নিপতিত করেছে।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইসলামের মত এমন জীবনব্যবস্থা দিয়ে মানবজাতির নিকট প্রেরণ করেছেন, আর তিনিই মানুষকে বিবেকের মাধ্যমে সম্মানিত করেছেন এবং বিবেককে নির্ধারণ করেছেন দীনের আবশ্যকীয় দায়িত্ব, আদেশ ও নিষেধসমূহের দায়িত্ব অর্পণের মানদণ্ড বা ক্ষেত্র হিসেবে; আর শিথিল করে দিয়েছে পাগলের দায়িত্ব ও জবাবদিহিতা, যার বিবেক-বুদ্ধি লোপ পেয়েছে; আরও শিথিল করে দিয়েছে অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশু-কিশোরের দায়িত্ব ও জবাবদিহিতা, যার জ্ঞান-বুদ্ধির পরিপক্কতা আসেনি; যেমনিভাবে ইসলাম মানুষকে আহ্বান করেছে ও উৎসাহিত করেছে, বরং সৃষ্টি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে গবেষণার কাজে বিবেক-বুদ্ধিকে কাজে লাগানোর উপর পুরস্কার ঘোষণা করেছে; আর নিষেধ ও হারাম করে দিয়েছে এমন প্রত্যেক বস্তুকে, যা বিবেক-বুদ্ধির উপর কুপ্রভাব ফেলে, যেমন: সকল প্রকার মাদকদ্রব্য।
আর সর্বপ্রথম ইসলাম যে জিনিসটিকে কুসংস্কার ও মিথ্যার অন্ধকার থেকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করা শুরু করেছে, তা হল আকিদা, যে আকিদার মাধ্যমে বিবেক-বুদ্ধিকেই সম্বোধন করা হয়েছে, যাতে বিবেক আল-কুরআন যে সত্যকে নিয়ে এসেছে, তার সঠিকত্ব অর্জন করার মাধ্যমে পরিতুষ্ট হতে পারে; আর বাতিল বা প্রত্যাখ্যান করতে পারে জাহেলী তথা অজ্ঞ ব্যক্তিরা বহু ইলাহে বিশ্বাস করার মত যেসব ভ্রান্ত আকিদা-বিশ্বাসের প্রতিষ্ঠিত আছে, সেসব আকিদা-বিশ্বাসকে। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿مَا ٱتَّخَذَ ٱللَّهُ مِن وَلَدٖ وَمَا كَانَ مَعَهُۥ مِنۡ إِلَٰهٍۚ إِذٗا لَّذَهَبَ كُلُّ إِلَٰهِۢ بِمَا خَلَقَ وَلَعَلَا بَعۡضُهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖۚ سُبۡحَٰنَ ٱللَّهِ عَمَّا يَصِفُونَ ٩١﴾ [ سُورَةُ المُؤۡمِنُونَ : 91 ]
“আল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেন নি এবং তার সাথে অপর কোন ইলাহও নেই; যদি থাকত, তবে প্রত্যেক ইলাহ স্বীয় সৃষ্টি নিয়ে পৃথক হয়ে যেত এবং একে অপরের উপর প্রাধান্য বিস্তার করত। তারা যা বলে, তা থেকে আল্লাহ কত পবিত্র!” - ( সূরা আল-মুমিনুন: ৯১ )।
সুতরাং এটি একটি উজ্জ্বল প্রমাণ; তাতে এই সংক্ষিপ্ত শব্দের দ্বারা সুস্পষ্ট হয়েছে যে, প্রকৃত ইলাহ হওয়ার জন্য জরুরি হল কর্মক্ষম স্রষ্টা হওয়া; যিনি তার বান্দার নিকট উপকার পৌঁছিয়ে দেন এবং তার থেকে ক্ষতি প্রতিরোধ করেন; অতএব আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার সাথে যদি অপর ইলাহ থাকে, তবে তারও সৃষ্টি ও কাজ করার ক্ষমতা থাকত; এমতাবস্থায় সে তার সাথে অপর ইলাহের অংশীদারিত্ব মেনে নেবে না, বরং সে যদি তার উপর প্রভাব বিস্তার করতে এবং অন্যজনকে বাদ দিয়ে নিজেই একক ইলাহ ক্ষমতা থাকত তবে তা-ই করত; আর যদি সে তাতে সক্ষম না হয়, তবে সে তার সৃষ্টি নিয়ে পৃথক হয়ে চলে যাবে, যেমনিভাবে দুনিয়ার রাজা-বাদশাগণ তাদের রাজত্ব নিয়ে একে অপরের থেকে আলাদা হয়ে যায়; আর যখন স্বতন্ত্র ইলাহ অপর ইলাহর উপর প্রভাব, প্রাধান্য বিস্তার করতে সক্ষম না হবে, তখন নিম্নের তিনটি বিষয়ের যে কোন একটি অপরিহার্য হয়ে পড়বে:
হয় প্রত্যেক ইলাহ তার সৃষ্টি ও রাজত্ব নিয়ে আলাদা হয়ে যাবে।
অথবা তারা একে অপরের উপর প্রধান্য বিস্তার করবে।
নতুবা তাদের সকলে এক ইলাহের ক্ষমতা ও একই রাজত্বের অধীনে আসবে, সে তাদের উপর ক্ষমতা প্রয়োগ করবে, কিন্তু তারা তার উপর ক্ষমতা প্রয়োগ করবে না।
আর নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের বিষয়াদির সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা, একটির সাথে আরেকটির সম্পর্ক এবং সুশৃঙ্খল নিয়মে তার পরিভ্রমণ, যেখানে কোন প্রকার বিরোধ ও বিশৃঙ্খলা নেই— এসব কিছুই এই কথার উপর অন্যতম প্রধান দলিল-প্রমাণের অন্তর্ভুক্ত যে, এই ব্যবস্থাপনার মহাব্যবস্থাপক হলেন একজন, তিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই।
যেমনিভাবে বিশ্বের জন্য দুইজন সমমানের প্রতিপালক ও স্রষ্টা হওয়া অসম্ভব; তেমনিভাবে অসম্ভব তার জন্য দুইজন ইলাহ ও মা‘বুদ বা উপাস্য হওয়া।
সুতরাং এ দলিল-প্রমাণাদি দেয়ার ক্ষেত্রে এই যে বলিষ্ঠ বর্ণনা সেটাই প্রমাণ করে যে, আল্লাহর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাওহীদ বা একত্ববাদ, আল্লাহর একমাত্র রব হওয়া, আর তিনিই একমাত্র সঠিক মা‘বুদ অন্য কেউ নন, এসবের সত্যতার উপর প্রকৃষ্ট প্রমাণ; আর এটাই বিবেকবান-বুদ্ধিমানদের বিবেক-বুদ্ধিতে সবচেয়ে বেশী গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত, সে সব দাবীর চেয়ে, যাতে বলা হয়ে থাকে যে, তিনি তিন জনের তৃতীয় জন অথবা তাঁর প্রভূত্বে ও ইবাদাতের ক্ষেত্রে তার একমাত্র অধিকারের মধ্যে দেবদেবীদের অংশীদারিত্ব রয়েছে।
সুতরাং এই সুস্পষ্ট তাওহীদ বা একত্ববাদের চেয়ে মহান বস্তু আর কী হতে পারে, যা রহমতের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রেরিত হওয়ার দিন পর্যন্ত মানুষ জানতে পারে নি; আর আল্লাহর ব্যাপারে এই আকিদার চেয়ে বিবেক ও বিশুদ্ধ চিন্তার নিকট অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ আকিদা কোনটি?
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানবজাতির মধ্যে উদারতার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন এবং আল্লাহ তা‘আলা আল-কুরআনে এই ব্যাপারে তাঁর নিকট ওহী পাঠিয়েছেন যে, ‘দীন গ্রহণের ব্যাপারে কোনো জোর-জবরদস্তি নেই’। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐসব অমুসলিম নাগরিকের অধিকার বর্ণনা করেছেন, যারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয় না; এই বলে যে, তাদের পূর্ণ নিরাপত্তা থাকবে তাদের নিজেদের, সন্তানদের, তাদের মান-সম্মান ও ধন-সম্পদের। আর মুসলিম রাষ্ট্রের মধ্যে আজ পর্যন্ত ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টান নাগরিকগণ সম্মানের সাথে জীবনযাপন করছে; যেখানে স্পেনের গোয়েন্দা বিভাগ পশ্চিমা সভ্যতার ঘোষিত মূলনীতির বিরোধিতা করে বর্ণবাদী নীতি গ্রহণ করে মুসলিমদের অস্তিত্বকে ধ্বংস করার জন্য কাজ করেছে।
রহমতের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীনের যেসব নীতিমালা নিয়ে এসেছেন, তন্মধ্যে অন্যতম মহান দিক হল: ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারটি ব্যক্তি ও সমাজের পরিতুষ্টির ছেড়ে দেয়া। আর ইসলামের দিকে আহ্বানের মূল ভিত্তি-ই হচ্ছে, কৌশল ও উত্তম উপদেশ; জোর জবরদস্তি ও তরবারি বা অন্য কোন শক্তির মাধ্যমে বল প্রয়োগ করে নয়; আর এই প্রসঙ্গে আল-কুরআন ও সুন্নাহর অনেক বক্তব্য বর্ণিত হয়েছে; যেমন: আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ لَآ إِكۡرَاهَ فِي ٱلدِّينِۖ قَد تَّبَيَّنَ ٱلرُّشۡدُ مِنَ ٱلۡغَيِّۚ فَمَن يَكۡفُرۡ بِٱلطَّٰغُوتِ وَيُؤۡمِنۢ بِٱللَّهِ فَقَدِ ٱسۡتَمۡسَكَ بِٱلۡعُرۡوَةِ ٱلۡوُثۡقَىٰ لَا ٱنفِصَامَ لَهَاۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ٢٥٦﴾ [ سُورَةُ البَقَرَةِ : 256 ]
“দীন সম্পর্কে জোর-জবরদস্তি নেই; সত্য পথ ভ্রান্ত পথ থেকে সুস্পষ্ট হয়েছে। যে তাগূতকে অস্বীকার করবে ও আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে, সে এমন এক মজবুত হাতল ধরবে, যা কখনও ভাঙ্গবে না। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, প্রজ্ঞাময়।” - ( সূরা আল-বাকারা: ২৫৬ )
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ وَقُلِ ٱلۡحَقُّ مِن رَّبِّكُمۡۖ فَمَن شَآءَ فَلۡيُؤۡمِن وَمَن شَآءَ فَلۡيَكۡفُرۡۚ ﴾ [ سُورَةُ الكَهۡفِ : 29 ]
“বল, সত্য তোমাদের নিকট থেকে; সুতরাং যার ইচ্ছা বিশ্বাস করুক ও যার ইচ্ছা সত্য প্রত্যাখ্যান করুক” - ( সূরা আল-কাহফ: ২৯ )।
অনুরূপভাবে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দীন অমুসলিমদেরকে রক্ষণাবেক্ষণ করে; সুতরাং ইসলাম তাদের সাথে যুদ্ধ করতে নিষেধ করে দিয়েছে, যখন তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করবে; এমনকি ইসলাম তাদের সাথে উত্তম আচরণ ও তাদের প্রতি অনুগ্রহ করাটাকেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে নি; আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ لَّا يَنۡهَىٰكُمُ ٱللَّهُ عَنِ ٱلَّذِينَ لَمۡ يُقَٰتِلُوكُمۡ فِي ٱلدِّينِ وَلَمۡ يُخۡرِجُوكُم مِّن دِيَٰرِكُمۡ أَن تَبَرُّوهُمۡ وَتُقۡسِطُوٓاْ إِلَيۡهِمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلۡمُقۡسِطِينَ ٨﴾ [ سُورَةُ المُمۡتَحنَةِ : 8 ]
“দীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে তোমাদের বাড়িঘর থেকে বের করে দেয়নি, তাদের প্রতি মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। আল্লাহ তো ন্যায়পরায়ণদেরকে ভালবাসেন।” - ( সূরা আল-মুমতাহানা: ৮ )
অনুরূপভাবে মহান নীতিমালা থেকে আরও কিছু নিয়মনীতি রয়েছে, যেগুলো ইসলামী জীবনব্যবস্থা সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে; যেমন: অমুসলিমদের অধিকারসমূহকে সম্মান করা, চাই তারা ইসলামী রাষ্ট্রের নাগরিক হউক, অথবা ইসলামী রাষ্ট্রের বাইরের কোন দেশের নাগরিক হউক যখন তারা ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবে না। সুতরাং প্রত্যেক মুসলিমের জিম্মায় তাদের সকলের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে, যেখানে তারা নিজেদের জান, মাল, স্ত্রী ও সন্তানদের ব্যাপারে পূর্ণ নিরাপত্তা লাভ করবে। তাদের উপর কোন বিষয়ে সীমালংঘন করা কোন মুসলিমের জন্য বৈধ নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«من قتل معاهدا لم يرح رائحة الجنة وإن ريحها توجد من مسيرة أربعين عاما» ( أخرجه البخاري ).
“যে ব্যক্তি কোন জিম্মিকে হত্যা করবে, সে জান্নাতের ঘ্রাণ পাবে না। আর জান্নাতের ঘ্রাণ চল্লিশ বছরের দূরত্ব থেকে পাওয়া যাবে।” - ( বুখারী, হাদিস নং- ২৯৯৫); রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
«أَلاَ مَنْ ظَلَمَ مُعَاهِدًا أَوِ انْتَقَصَهُ أَوْ كَلَّفَهُ فَوْقَ طَاقَتِهِ أَوْ أَخَذَ مِنْهُ شَيْئًا بِغَيْرِ طِيبِ نَفْسٍ فَأَنَا حَجِيجُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» .( أخرجه أبو داود ).
“সাবধান! যে ব্যক্তি কোন জিম্মির উপর অত্যাচার করবে অথবা তার মর্যাদা ক্ষুণ্ন করবে অথবা তার উপর তার সাধ্যাতিরিক্ত কোন বোঝা চাপিয়ে দেবে অথবা তার নিকট থেকে তার স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি ব্যতিরেকে কোন কিছু গ্রহণ করবে, আমি কিয়ামতের দিন তার বিরুদ্ধে মামলায় দাঁড়াব।” - (আবূ দাউদ, হাদিস নং- ৩০৫৪)।
বরং (মুসলিম) বিচারকের নিকট আইন ও বিচার-ফয়সালার ক্ষেত্রে মুসলিম ও অমুসলিম সকলেই সমান; কারণ, আশ‘আছ রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে দেখা যায়, তিনি বলেন:
« كَانَ بَيْنِى وَبَيْنَ رَجُلٍ مِنَ الْيَهُودِ أَرْضٌ فَجَحَدَنِى فَقَدَّمْتُهُ إِلَى النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- فَقَالَ لِىَ النَّبِىُّ -صلى الله عليه وسلم- « أَلَكَ بَيِّنَةٌ ؟ » . قُلْتُ لاَ . قَالَ لِلْيَهُودِىِّ « احْلِفْ » . قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِذًا يَحْلِفُ وَيَذْهَبُ بِمَالِى فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى ( إِنَّ الَّذِينَ يَشْتَرُونَ بِعَهْدِ اللَّهِ وَأَيْمَانِهِمْ ثَمَنًا قَلِيلاً ) إِلَى آخِرِ الآيَةِ .». ( أخرجه أبو داود ).
“আমার ও জনৈক ইয়াহূদীর মাঝে যৌথ মালিকানায় একখণ্ড জমি ছিল; এক পর্যায়ে সে আমার মালিকানাকে অস্বীকার করে; অতঃপর আমি বিষয়টি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট পেশ করি; তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন: তোমার নিকট কোন প্রমাণ আছে কি? আমি বললাম: না। তখন তিনি ইয়াহূদীকে বললেন: ‘তুমি শপথ কর’। আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! তাহলে তো সে শপথ করবে এবং আমার সম্পদ নিয়ে যাবে, তখন আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করেন:
﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ يَشۡتَرُونَ بِعَهۡدِ ٱللَّهِ وَأَيۡمَٰنِهِمۡ ثَمَنٗا قَلِيلًا ﴾ إلى آخر الآية [ ال عمران : ٧٧ ]
(নিশ্চয় যারা আল্লাহর সাথে করা প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথের বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য খরিদ করে, (আখেরাতে তাদের কোন অংশ নেই)।) আয়াতের শেষ পর্যন্ত।” - ( আবূ দাউদ, শপথ ও মানত অধ্যায়, বাব নং- ২, হাদিস নং- ৩২৪৫)।
আর এই অবস্থা ইসলামী রাষ্ট্রে আজকের এই দিনের জনগণের মাঝে পর্যন্ত বিদ্যমান রয়েছে; সুতরাং মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে ইয়াহূদী, খ্রিষ্টান, অন্যান্য জাতি ও ধর্মের অনুসারীগণ শান্তি, নিরাপত্তা, ন্যায়, ইনসাফ ও উদারতার ছায়াতলে জীবনযাপন করছে। কোন কোন দেশে জাতিগত ও ধর্মীয় বর্ণবাদ অভিযান প্রত্যক্ষ করা হয়, তাই প্রকৃষ্ট যথাযথ দলিল-প্রমাণ যে ইসলাম অন্যান্য ধর্মের অনুসারী প্রজাদের জন্য কী মূল্যবান অবদান রাখতে পেরেছে। আর অপরদিকে মুসলিমগণ জাতিগত ও ধর্মীয় বর্ণবাদের যুদ্ধসমূহের মাধ্যমে অনেক বিপদ-মুসিবতে নিপতিত হয়েছে; তন্মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ হল যা ঘটেছে স্পেনে গোয়েন্দা বিভাগের হাতে। যারা ইয়াহূদী ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের কাউকেই এমনকি তাদের খ্রিষ্টান ধর্মের অনুসারীদের ভিন্ন মতাবলম্বীদের কোন একজন ব্যক্তিকেও অবশিষ্ট রাখে নি। অথচ এরপরেও তারা অন্যান্য মুসলিম দেশে নিরাপদ আশ্রয় পেতে সক্ষম হয়েছিল।
রহমতের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীনের যেসব নীতিমালা নিয়ে এসেছেন, তন্মধ্যে অন্যতম মহান দিক হল: ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারটি ব্যক্তি ও সমাজের পরিতুষ্টির ছেড়ে দেয়া। আর ইসলামের দিকে আহ্বানের মূল ভিত্তি-ই হচ্ছে, কৌশল ও উত্তম উপদেশ; জোর জবরদস্তি ও তরবারি বা অন্য কোন শক্তির মাধ্যমে বল প্রয়োগ করে নয়; আর এই প্রসঙ্গে আল-কুরআন ও সুন্নাহর অনেক বক্তব্য বর্ণিত হয়েছে; যেমন: আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ لَآ إِكۡرَاهَ فِي ٱلدِّينِۖ قَد تَّبَيَّنَ ٱلرُّشۡدُ مِنَ ٱلۡغَيِّۚ فَمَن يَكۡفُرۡ بِٱلطَّٰغُوتِ وَيُؤۡمِنۢ بِٱللَّهِ فَقَدِ ٱسۡتَمۡسَكَ بِٱلۡعُرۡوَةِ ٱلۡوُثۡقَىٰ لَا ٱنفِصَامَ لَهَاۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ٢٥٦﴾ [ سُورَةُ البَقَرَةِ : 256 ]
“দীন সম্পর্কে জোর-জবরদস্তি নেই; সত্য পথ ভ্রান্ত পথ থেকে সুস্পষ্ট হয়েছে। যে তাগূতকে অস্বীকার করবে ও আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে, সে এমন এক মজবুত হাতল ধরবে, যা কখনও ভাঙ্গবে না। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, প্রজ্ঞাময়।” - ( সূরা আল-বাকারা: ২৫৬ )
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ وَقُلِ ٱلۡحَقُّ مِن رَّبِّكُمۡۖ فَمَن شَآءَ فَلۡيُؤۡمِن وَمَن شَآءَ فَلۡيَكۡفُرۡۚ ﴾ [ سُورَةُ الكَهۡفِ : 29 ]
“বল, সত্য তোমাদের নিকট থেকে; সুতরাং যার ইচ্ছা বিশ্বাস করুক ও যার ইচ্ছা সত্য প্রত্যাখ্যান করুক” - ( সূরা আল-কাহফ: ২৯ )।
অনুরূপভাবে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দীন অমুসলিমদেরকে রক্ষণাবেক্ষণ করে; সুতরাং ইসলাম তাদের সাথে যুদ্ধ করতে নিষেধ করে দিয়েছে, যখন তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করবে; এমনকি ইসলাম তাদের সাথে উত্তম আচরণ ও তাদের প্রতি অনুগ্রহ করাটাকেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে নি; আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ لَّا يَنۡهَىٰكُمُ ٱللَّهُ عَنِ ٱلَّذِينَ لَمۡ يُقَٰتِلُوكُمۡ فِي ٱلدِّينِ وَلَمۡ يُخۡرِجُوكُم مِّن دِيَٰرِكُمۡ أَن تَبَرُّوهُمۡ وَتُقۡسِطُوٓاْ إِلَيۡهِمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلۡمُقۡسِطِينَ ٨﴾ [ سُورَةُ المُمۡتَحنَةِ : 8 ]
“দীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে তোমাদের বাড়িঘর থেকে বের করে দেয়নি, তাদের প্রতি মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। আল্লাহ তো ন্যায়পরায়ণদেরকে ভালবাসেন।” - ( সূরা আল-মুমতাহানা: ৮ )
অনুরূপভাবে মহান নীতিমালা থেকে আরও কিছু নিয়মনীতি রয়েছে, যেগুলো ইসলামী জীবনব্যবস্থা সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে; যেমন: অমুসলিমদের অধিকারসমূহকে সম্মান করা, চাই তারা ইসলামী রাষ্ট্রের নাগরিক হউক, অথবা ইসলামী রাষ্ট্রের বাইরের কোন দেশের নাগরিক হউক যখন তারা ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবে না। সুতরাং প্রত্যেক মুসলিমের জিম্মায় তাদের সকলের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে, যেখানে তারা নিজেদের জান, মাল, স্ত্রী ও সন্তানদের ব্যাপারে পূর্ণ নিরাপত্তা লাভ করবে। তাদের উপর কোন বিষয়ে সীমালংঘন করা কোন মুসলিমের জন্য বৈধ নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«من قتل معاهدا لم يرح رائحة الجنة وإن ريحها توجد من مسيرة أربعين عاما» ( أخرجه البخاري ).
“যে ব্যক্তি কোন জিম্মিকে হত্যা করবে, সে জান্নাতের ঘ্রাণ পাবে না। আর জান্নাতের ঘ্রাণ চল্লিশ বছরের দূরত্ব থেকে পাওয়া যাবে।” - ( বুখারী, হাদিস নং- ২৯৯৫); রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
«أَلاَ مَنْ ظَلَمَ مُعَاهِدًا أَوِ انْتَقَصَهُ أَوْ كَلَّفَهُ فَوْقَ طَاقَتِهِ أَوْ أَخَذَ مِنْهُ شَيْئًا بِغَيْرِ طِيبِ نَفْسٍ فَأَنَا حَجِيجُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» .( أخرجه أبو داود ).
“সাবধান! যে ব্যক্তি কোন জিম্মির উপর অত্যাচার করবে অথবা তার মর্যাদা ক্ষুণ্ন করবে অথবা তার উপর তার সাধ্যাতিরিক্ত কোন বোঝা চাপিয়ে দেবে অথবা তার নিকট থেকে তার স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি ব্যতিরেকে কোন কিছু গ্রহণ করবে, আমি কিয়ামতের দিন তার বিরুদ্ধে মামলায় দাঁড়াব।” - (আবূ দাউদ, হাদিস নং- ৩০৫৪)।
বরং (মুসলিম) বিচারকের নিকট আইন ও বিচার-ফয়সালার ক্ষেত্রে মুসলিম ও অমুসলিম সকলেই সমান; কারণ, আশ‘আছ রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে দেখা যায়, তিনি বলেন:
« كَانَ بَيْنِى وَبَيْنَ رَجُلٍ مِنَ الْيَهُودِ أَرْضٌ فَجَحَدَنِى فَقَدَّمْتُهُ إِلَى النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- فَقَالَ لِىَ النَّبِىُّ -صلى الله عليه وسلم- « أَلَكَ بَيِّنَةٌ ؟ » . قُلْتُ لاَ . قَالَ لِلْيَهُودِىِّ « احْلِفْ » . قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِذًا يَحْلِفُ وَيَذْهَبُ بِمَالِى فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى ( إِنَّ الَّذِينَ يَشْتَرُونَ بِعَهْدِ اللَّهِ وَأَيْمَانِهِمْ ثَمَنًا قَلِيلاً ) إِلَى آخِرِ الآيَةِ .». ( أخرجه أبو داود ).
“আমার ও জনৈক ইয়াহূদীর মাঝে যৌথ মালিকানায় একখণ্ড জমি ছিল; এক পর্যায়ে সে আমার মালিকানাকে অস্বীকার করে; অতঃপর আমি বিষয়টি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট পেশ করি; তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন: তোমার নিকট কোন প্রমাণ আছে কি? আমি বললাম: না। তখন তিনি ইয়াহূদীকে বললেন: ‘তুমি শপথ কর’। আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! তাহলে তো সে শপথ করবে এবং আমার সম্পদ নিয়ে যাবে, তখন আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করেন:
﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ يَشۡتَرُونَ بِعَهۡدِ ٱللَّهِ وَأَيۡمَٰنِهِمۡ ثَمَنٗا قَلِيلًا ﴾ إلى آخر الآية [ ال عمران : ٧٧ ]
(নিশ্চয় যারা আল্লাহর সাথে করা প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথের বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য খরিদ করে, (আখেরাতে তাদের কোন অংশ নেই)।) আয়াতের শেষ পর্যন্ত।” - ( আবূ দাউদ, শপথ ও মানত অধ্যায়, বাব নং- ২, হাদিস নং- ৩২৪৫)।
আর এই অবস্থা ইসলামী রাষ্ট্রে আজকের এই দিনের জনগণের মাঝে পর্যন্ত বিদ্যমান রয়েছে; সুতরাং মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে ইয়াহূদী, খ্রিষ্টান, অন্যান্য জাতি ও ধর্মের অনুসারীগণ শান্তি, নিরাপত্তা, ন্যায়, ইনসাফ ও উদারতার ছায়াতলে জীবনযাপন করছে। কোন কোন দেশে জাতিগত ও ধর্মীয় বর্ণবাদ অভিযান প্রত্যক্ষ করা হয়, তাই প্রকৃষ্ট যথাযথ দলিল-প্রমাণ যে ইসলাম অন্যান্য ধর্মের অনুসারী প্রজাদের জন্য কী মূল্যবান অবদান রাখতে পেরেছে। আর অপরদিকে মুসলিমগণ জাতিগত ও ধর্মীয় বর্ণবাদের যুদ্ধসমূহের মাধ্যমে অনেক বিপদ-মুসিবতে নিপতিত হয়েছে; তন্মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ হল যা ঘটেছে স্পেনে গোয়েন্দা বিভাগের হাতে। যারা ইয়াহূদী ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের কাউকেই এমনকি তাদের খ্রিষ্টান ধর্মের অনুসারীদের ভিন্ন মতাবলম্বীদের কোন একজন ব্যক্তিকেও অবশিষ্ট রাখে নি। অথচ এরপরেও তারা অন্যান্য মুসলিম দেশে নিরাপদ আশ্রয় পেতে সক্ষম হয়েছিল।
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে সমগ্র জগতবাসীর জন্য তাদের ধর্ম ও বংশের বিভিন্নতা সত্ত্বেও ছিলেন রহমতস্বরূপ; বরং তাঁর শিক্ষা ও দর্শনের মধ্যে পাখি ও চতুষ্পদ জন্তুদের প্রতি দয়া ও অনুকম্পা প্রদর্শনের জন্য এবং অন্যায়ভাবে তাদেরকে ক্ষতি করা ও তাদের উপর বাড়বাড়ি করাকে নিষিদ্ধ করার জন্য তাগিদ করা হয়।
ইসলামের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রহমত এত ব্যাপক ও বিস্তৃত যে তা মানবসন্তানসহ পাখি ও চতুষ্পদ জন্তুকেও অন্তর্ভুক্ত করেছে; এমনকি তিনি তাদের প্রতি কোমল আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন এবং তিনি ঐ ব্যক্তিকে হুমকি প্রদান করেছেন, যে ব্যক্তি তাদেরকে শাস্তি দেয় অথবা তাদের প্রতি মন্দ আচরণ করে, এমনকি সে শাস্তির মাধ্যমে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে এবং পরকালে পাবে জাহান্নাম।
সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাখি ও অন্যান্য প্রাণবিশিষ্ট প্রাণীকে তীর ও অন্যান্য অস্ত্রের লক্ষ্যস্থল বানাতে নিষেধ করেছেন; অতএব তিনি বলেন:
« لاَ تَتَّخِذُوا شَيْئًا فِيهِ الرُّوحُ غَرَضًا » .( أخرجه مسلم ).
“তোমরা কোন প্রাণীকে তীরের লক্ষ্যস্থল বানিও না।”
- ( মুসলিম, হাদিস নং- ৫১৭১)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
« دخلت امرأة النار في هرة ربطتها فلم تطعمها ولم تدعها تأكل من خشاش الأرض » . ( أخرجه البخاري ).
“একজন মহিলা একটি বিড়ালের কারণে জাহান্নামে গিয়েছিল, সে তাকে বেঁধে রেখেছিল; সে না তাকে খাবার দিয়েছিল, না তাকে ছেড়ে দিয়েছিল, যাতে সে জমিনের পোকা মাকড় খেতে পারত।” - ( বুখারী, হাদিস নং- ৩১৪০)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
«بينما كلب يطيف بركية كاد يقتله العطش إذ رأته بغي من بغايا بني إسرائيل فنزعت موقها فسقته فغفر لها به» . ( أخرجه البخاري ).
“একটি কুকুর একটি (পানি ভর্তি) কূপের পাশে চক্কর দিচ্ছিল; পিপাসায় তার প্রায় জীবন নাশের উপক্রম হয়েছিল; তখন বনী ইসরাঈলের পতিতাদের এক পতিতা তাকে দেখতে পেল এবং (দয়ার্দ্র হয়ে) সে তার (চামড়ার) মোজা খুলে ফেলল এবং তার জন্য পানি তুলে এনে তাকে পান করাল। ফলে এর বিনিময়ে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হল।” - ( বুখারী, হাদিস নং- ৩২৮০)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
« بينما رجل يمشي بطريق اشتد عليه العطش فوجد بئرا فنزل فيها فشرب ثم خرج فإذا كلب يلهث يأكل الثرى من العطش فقال الرجل لقد بلغ هذا الكلب من العطش مثل الذي كان بلغ بي فنزل البئر فملأ خفه ثم أمسكه بفيه فسقى الكلب فشكر الله له فغفر له . قالوا يا رسول الله وإن لنا في البهائم أجرا ؟ فقال : في كل ذات كبد رطبة أجر» . ( أخرجه البخاري ).
“একদা এক ব্যক্তি পথে হেঁটে যাচ্ছিল; তার তীব্র পিপাসা লাগে; সে একটি কূপ পেয়ে গেল। সে তাতে অবতরণ করল এবং পানি পান করল, তার পর উঠে এল। হঠাৎ দেখল একটি কুকুর হাপাচ্ছে, পিপাসায় কাতর হয়ে কাদা ছাটছে; লোকটি ভাবল, এ কুকুরটি পিপাসায় সেরূপ কষ্ট পাচ্ছে, যেরূপ কষ্ট আমার হয়েছিল; তখন সে কূপে অবতরণ করল এবং তার মোজার মধ্যে পানি ভরল, অতঃপর মুখ দিয়ে তা (কামড়িয়ে) ধরে উপরে উঠে এল; অতঃপর সে কুকুরটিকে পানি পান করাল। ফলে আল্লাহ তাকে এর প্রতিদান দিলেন এবং তাকে মাফ করে দিলেন। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন: হে আল্লাহর রাসূল! জীব-জন্তুর জন্যও কি আমাদের পুরস্কার আছে? হ্যাঁ, প্রত্যেক তাজা হৃদয়বিশিষ্ট প্রাণীর (উপর দয়া করার কারণে) পুরস্কার রয়েছে।” - ( বুখারী, হাদিস নং- ৫৬৬৩)।
আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুতুষ্পদ জন্তুকে জীবিত অবস্থায় আটকে রেখে তীর বা অনুরূপ কিছু দিয়ে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। আলেমগণ বলেন: " صبر البهائم " মানে: চুতুষ্পদ জন্তুকে জীবিত অবস্থায় তীর বা অনুরূপ কিছু দিয়ে হত্যা করার জন্য আটকিয়ে রাখা।
কোন একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি উটের পাশ দিয়ে পথ অতিক্রম করতে গিয়ে দেখলেন তার পেটের সাথে পিঠ লেগে আছে; তখন তিনি বললেন:
«اتَّقُوا اللَّهَ فِى هَذِهِ الْبَهَائِمِ الْمُعْجَمَةِ فَارْكَبُوهَا وَكُلُوهَا صَالِحَةً » .( أخرجه أبو داود ).
“তোমরা এসব অবলা জীবজন্তুর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর; সুতরাং তোমরা এগুলোকে ভালো অবস্থায় বাহন হিসেবে ব্যবহার কর এবং ভালো অবস্থায় খাও।” - ( আবূ দাউদ, হাদিস নং- ২৫৫০)।
ইসলামের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রহমত এত ব্যাপক ও বিস্তৃত যে তা মানবসন্তানসহ পাখি ও চতুষ্পদ জন্তুকেও অন্তর্ভুক্ত করেছে; এমনকি তিনি তাদের প্রতি কোমল আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন এবং তিনি ঐ ব্যক্তিকে হুমকি প্রদান করেছেন, যে ব্যক্তি তাদেরকে শাস্তি দেয় অথবা তাদের প্রতি মন্দ আচরণ করে, এমনকি সে শাস্তির মাধ্যমে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে এবং পরকালে পাবে জাহান্নাম।
সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাখি ও অন্যান্য প্রাণবিশিষ্ট প্রাণীকে তীর ও অন্যান্য অস্ত্রের লক্ষ্যস্থল বানাতে নিষেধ করেছেন; অতএব তিনি বলেন:
« لاَ تَتَّخِذُوا شَيْئًا فِيهِ الرُّوحُ غَرَضًا » .( أخرجه مسلم ).
“তোমরা কোন প্রাণীকে তীরের লক্ষ্যস্থল বানিও না।”
- ( মুসলিম, হাদিস নং- ৫১৭১)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
« دخلت امرأة النار في هرة ربطتها فلم تطعمها ولم تدعها تأكل من خشاش الأرض » . ( أخرجه البخاري ).
“একজন মহিলা একটি বিড়ালের কারণে জাহান্নামে গিয়েছিল, সে তাকে বেঁধে রেখেছিল; সে না তাকে খাবার দিয়েছিল, না তাকে ছেড়ে দিয়েছিল, যাতে সে জমিনের পোকা মাকড় খেতে পারত।” - ( বুখারী, হাদিস নং- ৩১৪০)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
«بينما كلب يطيف بركية كاد يقتله العطش إذ رأته بغي من بغايا بني إسرائيل فنزعت موقها فسقته فغفر لها به» . ( أخرجه البخاري ).
“একটি কুকুর একটি (পানি ভর্তি) কূপের পাশে চক্কর দিচ্ছিল; পিপাসায় তার প্রায় জীবন নাশের উপক্রম হয়েছিল; তখন বনী ইসরাঈলের পতিতাদের এক পতিতা তাকে দেখতে পেল এবং (দয়ার্দ্র হয়ে) সে তার (চামড়ার) মোজা খুলে ফেলল এবং তার জন্য পানি তুলে এনে তাকে পান করাল। ফলে এর বিনিময়ে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হল।” - ( বুখারী, হাদিস নং- ৩২৮০)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
« بينما رجل يمشي بطريق اشتد عليه العطش فوجد بئرا فنزل فيها فشرب ثم خرج فإذا كلب يلهث يأكل الثرى من العطش فقال الرجل لقد بلغ هذا الكلب من العطش مثل الذي كان بلغ بي فنزل البئر فملأ خفه ثم أمسكه بفيه فسقى الكلب فشكر الله له فغفر له . قالوا يا رسول الله وإن لنا في البهائم أجرا ؟ فقال : في كل ذات كبد رطبة أجر» . ( أخرجه البخاري ).
“একদা এক ব্যক্তি পথে হেঁটে যাচ্ছিল; তার তীব্র পিপাসা লাগে; সে একটি কূপ পেয়ে গেল। সে তাতে অবতরণ করল এবং পানি পান করল, তার পর উঠে এল। হঠাৎ দেখল একটি কুকুর হাপাচ্ছে, পিপাসায় কাতর হয়ে কাদা ছাটছে; লোকটি ভাবল, এ কুকুরটি পিপাসায় সেরূপ কষ্ট পাচ্ছে, যেরূপ কষ্ট আমার হয়েছিল; তখন সে কূপে অবতরণ করল এবং তার মোজার মধ্যে পানি ভরল, অতঃপর মুখ দিয়ে তা (কামড়িয়ে) ধরে উপরে উঠে এল; অতঃপর সে কুকুরটিকে পানি পান করাল। ফলে আল্লাহ তাকে এর প্রতিদান দিলেন এবং তাকে মাফ করে দিলেন। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন: হে আল্লাহর রাসূল! জীব-জন্তুর জন্যও কি আমাদের পুরস্কার আছে? হ্যাঁ, প্রত্যেক তাজা হৃদয়বিশিষ্ট প্রাণীর (উপর দয়া করার কারণে) পুরস্কার রয়েছে।” - ( বুখারী, হাদিস নং- ৫৬৬৩)।
আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুতুষ্পদ জন্তুকে জীবিত অবস্থায় আটকে রেখে তীর বা অনুরূপ কিছু দিয়ে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। আলেমগণ বলেন: " صبر البهائم " মানে: চুতুষ্পদ জন্তুকে জীবিত অবস্থায় তীর বা অনুরূপ কিছু দিয়ে হত্যা করার জন্য আটকিয়ে রাখা।
কোন একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি উটের পাশ দিয়ে পথ অতিক্রম করতে গিয়ে দেখলেন তার পেটের সাথে পিঠ লেগে আছে; তখন তিনি বললেন:
«اتَّقُوا اللَّهَ فِى هَذِهِ الْبَهَائِمِ الْمُعْجَمَةِ فَارْكَبُوهَا وَكُلُوهَا صَالِحَةً » .( أخرجه أبو داود ).
“তোমরা এসব অবলা জীবজন্তুর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর; সুতরাং তোমরা এগুলোকে ভালো অবস্থায় বাহন হিসেবে ব্যবহার কর এবং ভালো অবস্থায় খাও।” - ( আবূ দাউদ, হাদিস নং- ২৫৫০)।
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পূর্ববর্তী সকল নবীকে সম্মান ও মর্যাদা দানের উজ্জ্বল নমুনা পেশ করেছেন; আর তাঁদের মধ্যে প্রসিদ্ধ হলেন ইবরাহীম, মূসা ও ঈসা আ. প্রমূখ; বরং আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিকট বক্তব্য হিসেবে ওহী পাঠিয়েছেন যে, যে ব্যক্তি তাঁদের (নবীদের) কাউকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে অথবা তাঁর মর্যাদা ক্ষুণ্ন করবে, তবে সে মুসলিম নয়; কারণ, নবীগণ সকলেই ভাই ভাই, তাঁরা মানুষকে শরীকবিহীন এক আল্লাহর ইবাদতের দিকে আহ্বানের কাজে অংশগ্রহণ করেছেন।
নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসে আছে তিনি তাঁর ভাই নবী ও রাসূলদেরকে ভালবাসেন; যেমন তিনি তাঁদের কাউকে কাউকে" العبد الصالح " (সৎকর্মশীল বান্দা), অথবা " أخي " বলে সম্বোধন করেছেন এবং তাঁর উম্মতকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন তাঁদের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করার জন্য; আর তাদেরকে নিষেধ করেছেন তাঁকে তাঁদের কারোর উপর প্রাধান্য দিতে; আর এসবের পূর্বে আমরা আল-কুরআনের অনেক বাণী থেকে যা পেয়েছি, তা আল্লাহ তা‘আলা নবী ও রাসূলগণ এবং তাঁদের প্রশংসার ব্যাপারে তাঁর প্রতি ওহী বা প্রত্যাদেশ করেছেন। আর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁদের অনুসরণের নির্দেশ দেয়ার মধ্যে এক মহান অর্থ কাজ করছে, তা হচ্ছে, নবীগণ পরস্পর ভাই ভাই; অনুরূপভাবে তাতে রয়েছে পূর্ববর্তীজনকে পরবর্তীজন কর্তৃক সম্মান, মর্যাদা ও প্রশংসা করার মত মহৎ ব্যাপার; বরং আল্লাহ তা‘আলা পূর্ববর্তী নবীগণের কাহিনীসমূহকে নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দাওয়াতী কাজে যে কষ্ট সহ্য করতেন, তার জন্য ব্যথাতে মলমের প্রলেপ বানিয়েছেন।
পূর্বে উপস্থাপিত বক্তব্যের সমর্থনে কুরআন ও হাদীসভিত্তিক অনেক নস বা ভাষ্য এসেছে, যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ هَدَى ٱللَّهُۖ فَبِهُدَىٰهُمُ ٱقۡتَدِهۡۗ قُل لَّآ أَسَۡٔلُكُمۡ عَلَيۡهِ أَجۡرًاۖ إِنۡ هُوَ إِلَّا ذِكۡرَىٰ لِلۡعَٰلَمِينَ ٩٠ ﴾ [ سُورَةُ الأَنعَامِ : 90 ]
“ওদেরকে আল্লাহ সৎপথে পরিচালিত করেছেন, সুতরাং আপনি তাদের পথের অনুসরণ করুন। বলুন, এর জন্য আমি তোমাদের নিকট পারিশ্রমিক চাই না, এ তো শুধু সৃষ্টিকুলের জন্য উপদেশ।” - ( সূরা আল-আন‘আম: ৯০ )।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ ءَامَنَ ٱلرَّسُولُ بِمَآ أُنزِلَ إِلَيۡهِ مِن رَّبِّهِۦ وَٱلۡمُؤۡمِنُونَۚ كُلٌّ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَمَلَٰٓئِكَتِهِۦ وَكُتُبِهِۦ وَرُسُلِهِۦ لَا نُفَرِّقُ بَيۡنَ أَحَدٖ مِّن رُّسُلِهِۦۚ وَقَالُواْ سَمِعۡنَا وَأَطَعۡنَاۖ غُفۡرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيۡكَ ٱلۡمَصِيرُ ٢٨٥ ﴾ [ سُورَةُ البَقَرَةِ : 285 ]
“রাসূল তার প্রতি তার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ হয়েছে, তাতে ঈমান এনেছে এবং মুমিনগণও। তাদের সকলে আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনয়ন করেছে। তারা বলে, ‘আমরা তাঁর রাসূলগণের মধ্যে কোন তারতম্য করি না’, আর তারা বলে, ‘আমরা শুনেছি এবং পালন করেছি! হে আমাদের প্রতিপালক! আমারা তোমার ক্ষমা চাই; আর প্রত্যাবর্তন তো তোমারই নিকট।” - ( সূরা আল-বাকারা: ২৮৫ )।
আর" الأنبياء " (নবীগণ) নামে একটি পরিপূর্ণ সূরার নামকরণ করা হয়েছে; সেখানে সেসব নবীর অনেককেই উত্তম গুণাগুণের সাথে উল্লেখ করা এবং তাদের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও মহৎ গুণাবলীসমূহ বর্ণনা করার পর তাঁদের কাহিনী শেষ করেছেন তাঁর নিম্নোক্ত উক্তির মাধ্যমে:
﴿ إِنَّهُمۡ كَانُواْ يُسَٰرِعُونَ فِي ٱلۡخَيۡرَٰتِ وَيَدۡعُونَنَا رَغَبٗا وَرَهَبٗاۖ وَكَانُواْ لَنَا خَٰشِعِينَ ٩٠ ﴾ [ سُورَةُ الأَنبيَاءِ : 90 ]
“নিশ্চয়ই তারা সৎকর্মে প্রতিযোগিতা করত, তারা আমাকে ডাকত আশা ও ভয়ের সাথে এবং তারা ছিল আমার নিকট বিনীত।” - (সূরা আল-আম্বিয়া: ৯০ )।
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« أنا أولى الناس بعيسى بن مريم في الدنيا والآخرة والأنبياء أخوة لعلات : أمهاتهم شتى ودينهم واحد » . ( أخرجه البخاري ).
“মানব জাতির মধ্যে আমিই দুনিয়া ও আখিরাতে মরিয়মের পুত্র ‘ঈসা’র সর্বাধিক নিকটবর্তী। আর নবীগণ বৈমাত্রেয় ভাই, তাদের মাতাগণ ভিন্ন ভিন্ন, তাদের দীন হল এক ও অভিন্ন।” - (বুখারী, হাদিস নং- ৩২৫৯)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
«فأقول كما قال العبد الصالح : ﴿ وَكُنتُ عَلَيۡهِمۡ شَهِيدٗا مَّا دُمۡتُ فِيهِمۡۖ فَلَمَّا تَوَفَّيۡتَنِي كُنتَ أَنتَ ٱلرَّقِيبَ عَلَيۡهِمۡۚ وَأَنتَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ شَهِيدٌ ١١٧ ﴾ [ المائدة : ١١٧ ]». ( أخرجه البخاري ).
“ ... সুতরাং আমি বলব, যা সৎ বান্দা (ঈসা আলাইহিস সালাম) বলেছেন:
﴿ وَكُنتُ عَلَيۡهِمۡ شَهِيدٗا مَّا دُمۡتُ فِيهِمۡۖ فَلَمَّا تَوَفَّيۡتَنِي كُنتَ أَنتَ ٱلرَّقِيبَ عَلَيۡهِمۡۚ وَأَنتَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ شَهِيدٌ ١١٧ ﴾
(যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম ততদিন আমি ছিলাম তাদের কাজকর্মের সাক্ষী, কিন্তু যখন আপনি আমাকে তুলে নিলেন তখন আপনিই তো ছিলেন তাদের কাজকর্মের তত্ত্বাবধায়ক এবং আপনিই সব বিষয়ে সাক্ষী – সূরা আল-মায়িদা: ১১৭)।” - (বুখারী, হাদিস নং- ৪৩৪৯)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
« ... فذكرت قول أخي سليمان : ﴿ قَالَ رَبِّ ٱغۡفِرۡ لِي وَهَبۡ لِي مُلۡكٗا لَّا يَنۢبَغِي لِأَحَدٖ مِّنۢ بَعۡدِيٓۖ ﴾ [ص: ٣٥ ] ... » . ( أخرجه البخاري ).
“ ... তখন আমার ভাই সুলাইমান (আ.) এর দো‘আর কথা স্মরণ হল:
﴿ قَالَ رَبِّ ٱغۡفِرۡ لِي وَهَبۡ لِي مُلۡكٗا لَّا يَنۢبَغِي لِأَحَدٖ مِّنۢ بَعۡدِيٓۖ ﴾
(হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমাকে দান করুন এমন এক রাজ্য যা আমার পর আর কারও জন্যই প্রযোজ্য হবে না। - সূরা সোয়াদ: ৩৫)। ...” - (বুখারী, হাদিস নং- ৪৫৩০)।
সুতরাং এটা হল আল-কুরআনুল কারীম ও সুন্নাতে নববীর মধ্যে আল্লাহর নবী ও রাসূলগণের ইতিবাচক অবস্থান; বরং নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রতি আল্লাহ প্রদত্ত ওহীর মধ্য দিয়ে সকল মুসলিমকে নির্দেশনা দিয়েছেন যে, যে ব্যক্তি পূর্ববর্তী আল্লাহর নবীগণের কোন একজনকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে, সে ব্যক্তি মুসলিম নয়; আর এটাই হল এই প্রসঙ্গে বর্ণিত কুরআনিক ভাষ্য; আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَكۡفُرُونَ بِٱللَّهِ وَرُسُلِهِۦ وَيُرِيدُونَ أَن يُفَرِّقُواْ بَيۡنَ ٱللَّهِ وَرُسُلِهِۦ وَيَقُولُونَ نُؤۡمِنُ بِبَعۡضٖ وَنَكۡفُرُ بِبَعۡضٖ وَيُرِيدُونَ أَن يَتَّخِذُواْ بَيۡنَ ذَٰلِكَ سَبِيلًا ١٥٠ ﴾ [ سُورَةُ النِّسَاءِ : 150 ]
“যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলদেরকে অস্বীকার করে; আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলদের মধ্যে ঈমানের ব্যাপারে তারতম্য করতে চায় এবং বলে, ‘আমরা কতককে বিশ্বাস করি ও কতককে অবিশ্বাস করি’; আর তারা মধ্যবর্তী কোন পথ অবলম্বন করতে চায়।” - (সূরা আন-নিসা: ১৫০ )।
আর অপরদিকে আমরা কুৎসিত গুণ দেখতে পাই ইয়াহূদীদের মধ্যে, যারা নবীগণকে হত্যা করেছে এবং তাদের ব্যাপারে অপবাদ ছড়িয়ে দিয়েছে; মহাগ্রন্থ আল-কুরআন তাদের এই অবস্থানকে লিপিবদ্ধ করেছে তার এই বাণীর মাধ্যমে:
﴿ لَقَدۡ أَخَذۡنَا مِيثَٰقَ بَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ وَأَرۡسَلۡنَآ إِلَيۡهِمۡ رُسُلٗاۖ كُلَّمَا جَآءَهُمۡ رَسُولُۢ بِمَا لَا تَهۡوَىٰٓ أَنفُسُهُمۡ فَرِيقٗا كَذَّبُواْ وَفَرِيقٗا يَقۡتُلُونَ ٧٠ ﴾ [ سُورَةُ المَائِدَةِ : 70 ]
“আমি বনী ইরাঈলের নিকট থেকে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছিলাম ও তাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করেছিলাম। যখনই কোন রাসূল তাদের নিকট এমন কিছু নিয়ে আসত, যা তাদের মনঃপুত নয়, তখনই তারা কতককে মিথ্যা প্রতিপন্ন করত এবং কতককে হত্যা করত।” - (সূরা আল-মায়িদা: ৭০)।
এবং এ বাণীতে:
﴿ ضُرِبَتۡ عَلَيۡهِمُ ٱلذِّلَّةُ أَيۡنَ مَا ثُقِفُوٓاْ إِلَّا بِحَبۡلٖ مِّنَ ٱللَّهِ وَحَبۡلٖ مِّنَ ٱلنَّاسِ وَبَآءُو بِغَضَبٖ مِّنَ ٱللَّهِ وَضُرِبَتۡ عَلَيۡهِمُ ٱلۡمَسۡكَنَةُۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمۡ كَانُواْ يَكۡفُرُونَ بَِٔايَٰتِ ٱللَّهِ وَيَقۡتُلُونَ ٱلۡأَنۢبِيَآءَ بِغَيۡرِ حَقّٖۚ ذَٰلِكَ بِمَا عَصَواْ وَّكَانُواْ يَعۡتَدُونَ ١١٢﴾ [ سُورَةُ آلِ عِمۡرَانَ : 112 ]
“আল্লাহর প্রতিশ্রুতি ও মানুষের প্রতিশ্রুতির বাইরে যেখানেই তাদেরকে পাওয়া গেছে, সেখানেই তারা লাঞ্ছিত হয়েছে। তারা আল্লাহর ক্রোধের পাত্র হয়েছে এবং হীনতাগ্রস্ত হয়েছে। এটা এই জন্য যে, তারা আল্লাহর আয়াতসমূহ প্রত্যাখ্যান করত এবং অন্যায়ভাবে নবীদেরকে হত্যা করত; এটা এই জন্য যে, তারা অবাধ্য হয়েছিল এবং সীমালংঘন করত।” - ( সূরা আলে ইমরান: ১১২ )।
নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসে আছে তিনি তাঁর ভাই নবী ও রাসূলদেরকে ভালবাসেন; যেমন তিনি তাঁদের কাউকে কাউকে" العبد الصالح " (সৎকর্মশীল বান্দা), অথবা " أخي " বলে সম্বোধন করেছেন এবং তাঁর উম্মতকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন তাঁদের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করার জন্য; আর তাদেরকে নিষেধ করেছেন তাঁকে তাঁদের কারোর উপর প্রাধান্য দিতে; আর এসবের পূর্বে আমরা আল-কুরআনের অনেক বাণী থেকে যা পেয়েছি, তা আল্লাহ তা‘আলা নবী ও রাসূলগণ এবং তাঁদের প্রশংসার ব্যাপারে তাঁর প্রতি ওহী বা প্রত্যাদেশ করেছেন। আর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁদের অনুসরণের নির্দেশ দেয়ার মধ্যে এক মহান অর্থ কাজ করছে, তা হচ্ছে, নবীগণ পরস্পর ভাই ভাই; অনুরূপভাবে তাতে রয়েছে পূর্ববর্তীজনকে পরবর্তীজন কর্তৃক সম্মান, মর্যাদা ও প্রশংসা করার মত মহৎ ব্যাপার; বরং আল্লাহ তা‘আলা পূর্ববর্তী নবীগণের কাহিনীসমূহকে নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দাওয়াতী কাজে যে কষ্ট সহ্য করতেন, তার জন্য ব্যথাতে মলমের প্রলেপ বানিয়েছেন।
পূর্বে উপস্থাপিত বক্তব্যের সমর্থনে কুরআন ও হাদীসভিত্তিক অনেক নস বা ভাষ্য এসেছে, যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ هَدَى ٱللَّهُۖ فَبِهُدَىٰهُمُ ٱقۡتَدِهۡۗ قُل لَّآ أَسَۡٔلُكُمۡ عَلَيۡهِ أَجۡرًاۖ إِنۡ هُوَ إِلَّا ذِكۡرَىٰ لِلۡعَٰلَمِينَ ٩٠ ﴾ [ سُورَةُ الأَنعَامِ : 90 ]
“ওদেরকে আল্লাহ সৎপথে পরিচালিত করেছেন, সুতরাং আপনি তাদের পথের অনুসরণ করুন। বলুন, এর জন্য আমি তোমাদের নিকট পারিশ্রমিক চাই না, এ তো শুধু সৃষ্টিকুলের জন্য উপদেশ।” - ( সূরা আল-আন‘আম: ৯০ )।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ ءَامَنَ ٱلرَّسُولُ بِمَآ أُنزِلَ إِلَيۡهِ مِن رَّبِّهِۦ وَٱلۡمُؤۡمِنُونَۚ كُلٌّ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَمَلَٰٓئِكَتِهِۦ وَكُتُبِهِۦ وَرُسُلِهِۦ لَا نُفَرِّقُ بَيۡنَ أَحَدٖ مِّن رُّسُلِهِۦۚ وَقَالُواْ سَمِعۡنَا وَأَطَعۡنَاۖ غُفۡرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيۡكَ ٱلۡمَصِيرُ ٢٨٥ ﴾ [ سُورَةُ البَقَرَةِ : 285 ]
“রাসূল তার প্রতি তার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ হয়েছে, তাতে ঈমান এনেছে এবং মুমিনগণও। তাদের সকলে আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনয়ন করেছে। তারা বলে, ‘আমরা তাঁর রাসূলগণের মধ্যে কোন তারতম্য করি না’, আর তারা বলে, ‘আমরা শুনেছি এবং পালন করেছি! হে আমাদের প্রতিপালক! আমারা তোমার ক্ষমা চাই; আর প্রত্যাবর্তন তো তোমারই নিকট।” - ( সূরা আল-বাকারা: ২৮৫ )।
আর" الأنبياء " (নবীগণ) নামে একটি পরিপূর্ণ সূরার নামকরণ করা হয়েছে; সেখানে সেসব নবীর অনেককেই উত্তম গুণাগুণের সাথে উল্লেখ করা এবং তাদের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও মহৎ গুণাবলীসমূহ বর্ণনা করার পর তাঁদের কাহিনী শেষ করেছেন তাঁর নিম্নোক্ত উক্তির মাধ্যমে:
﴿ إِنَّهُمۡ كَانُواْ يُسَٰرِعُونَ فِي ٱلۡخَيۡرَٰتِ وَيَدۡعُونَنَا رَغَبٗا وَرَهَبٗاۖ وَكَانُواْ لَنَا خَٰشِعِينَ ٩٠ ﴾ [ سُورَةُ الأَنبيَاءِ : 90 ]
“নিশ্চয়ই তারা সৎকর্মে প্রতিযোগিতা করত, তারা আমাকে ডাকত আশা ও ভয়ের সাথে এবং তারা ছিল আমার নিকট বিনীত।” - (সূরা আল-আম্বিয়া: ৯০ )।
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« أنا أولى الناس بعيسى بن مريم في الدنيا والآخرة والأنبياء أخوة لعلات : أمهاتهم شتى ودينهم واحد » . ( أخرجه البخاري ).
“মানব জাতির মধ্যে আমিই দুনিয়া ও আখিরাতে মরিয়মের পুত্র ‘ঈসা’র সর্বাধিক নিকটবর্তী। আর নবীগণ বৈমাত্রেয় ভাই, তাদের মাতাগণ ভিন্ন ভিন্ন, তাদের দীন হল এক ও অভিন্ন।” - (বুখারী, হাদিস নং- ৩২৫৯)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
«فأقول كما قال العبد الصالح : ﴿ وَكُنتُ عَلَيۡهِمۡ شَهِيدٗا مَّا دُمۡتُ فِيهِمۡۖ فَلَمَّا تَوَفَّيۡتَنِي كُنتَ أَنتَ ٱلرَّقِيبَ عَلَيۡهِمۡۚ وَأَنتَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ شَهِيدٌ ١١٧ ﴾ [ المائدة : ١١٧ ]». ( أخرجه البخاري ).
“ ... সুতরাং আমি বলব, যা সৎ বান্দা (ঈসা আলাইহিস সালাম) বলেছেন:
﴿ وَكُنتُ عَلَيۡهِمۡ شَهِيدٗا مَّا دُمۡتُ فِيهِمۡۖ فَلَمَّا تَوَفَّيۡتَنِي كُنتَ أَنتَ ٱلرَّقِيبَ عَلَيۡهِمۡۚ وَأَنتَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ شَهِيدٌ ١١٧ ﴾
(যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম ততদিন আমি ছিলাম তাদের কাজকর্মের সাক্ষী, কিন্তু যখন আপনি আমাকে তুলে নিলেন তখন আপনিই তো ছিলেন তাদের কাজকর্মের তত্ত্বাবধায়ক এবং আপনিই সব বিষয়ে সাক্ষী – সূরা আল-মায়িদা: ১১৭)।” - (বুখারী, হাদিস নং- ৪৩৪৯)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
« ... فذكرت قول أخي سليمان : ﴿ قَالَ رَبِّ ٱغۡفِرۡ لِي وَهَبۡ لِي مُلۡكٗا لَّا يَنۢبَغِي لِأَحَدٖ مِّنۢ بَعۡدِيٓۖ ﴾ [ص: ٣٥ ] ... » . ( أخرجه البخاري ).
“ ... তখন আমার ভাই সুলাইমান (আ.) এর দো‘আর কথা স্মরণ হল:
﴿ قَالَ رَبِّ ٱغۡفِرۡ لِي وَهَبۡ لِي مُلۡكٗا لَّا يَنۢبَغِي لِأَحَدٖ مِّنۢ بَعۡدِيٓۖ ﴾
(হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমাকে দান করুন এমন এক রাজ্য যা আমার পর আর কারও জন্যই প্রযোজ্য হবে না। - সূরা সোয়াদ: ৩৫)। ...” - (বুখারী, হাদিস নং- ৪৫৩০)।
সুতরাং এটা হল আল-কুরআনুল কারীম ও সুন্নাতে নববীর মধ্যে আল্লাহর নবী ও রাসূলগণের ইতিবাচক অবস্থান; বরং নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রতি আল্লাহ প্রদত্ত ওহীর মধ্য দিয়ে সকল মুসলিমকে নির্দেশনা দিয়েছেন যে, যে ব্যক্তি পূর্ববর্তী আল্লাহর নবীগণের কোন একজনকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে, সে ব্যক্তি মুসলিম নয়; আর এটাই হল এই প্রসঙ্গে বর্ণিত কুরআনিক ভাষ্য; আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَكۡفُرُونَ بِٱللَّهِ وَرُسُلِهِۦ وَيُرِيدُونَ أَن يُفَرِّقُواْ بَيۡنَ ٱللَّهِ وَرُسُلِهِۦ وَيَقُولُونَ نُؤۡمِنُ بِبَعۡضٖ وَنَكۡفُرُ بِبَعۡضٖ وَيُرِيدُونَ أَن يَتَّخِذُواْ بَيۡنَ ذَٰلِكَ سَبِيلًا ١٥٠ ﴾ [ سُورَةُ النِّسَاءِ : 150 ]
“যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলদেরকে অস্বীকার করে; আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলদের মধ্যে ঈমানের ব্যাপারে তারতম্য করতে চায় এবং বলে, ‘আমরা কতককে বিশ্বাস করি ও কতককে অবিশ্বাস করি’; আর তারা মধ্যবর্তী কোন পথ অবলম্বন করতে চায়।” - (সূরা আন-নিসা: ১৫০ )।
আর অপরদিকে আমরা কুৎসিত গুণ দেখতে পাই ইয়াহূদীদের মধ্যে, যারা নবীগণকে হত্যা করেছে এবং তাদের ব্যাপারে অপবাদ ছড়িয়ে দিয়েছে; মহাগ্রন্থ আল-কুরআন তাদের এই অবস্থানকে লিপিবদ্ধ করেছে তার এই বাণীর মাধ্যমে:
﴿ لَقَدۡ أَخَذۡنَا مِيثَٰقَ بَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ وَأَرۡسَلۡنَآ إِلَيۡهِمۡ رُسُلٗاۖ كُلَّمَا جَآءَهُمۡ رَسُولُۢ بِمَا لَا تَهۡوَىٰٓ أَنفُسُهُمۡ فَرِيقٗا كَذَّبُواْ وَفَرِيقٗا يَقۡتُلُونَ ٧٠ ﴾ [ سُورَةُ المَائِدَةِ : 70 ]
“আমি বনী ইরাঈলের নিকট থেকে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছিলাম ও তাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করেছিলাম। যখনই কোন রাসূল তাদের নিকট এমন কিছু নিয়ে আসত, যা তাদের মনঃপুত নয়, তখনই তারা কতককে মিথ্যা প্রতিপন্ন করত এবং কতককে হত্যা করত।” - (সূরা আল-মায়িদা: ৭০)।
এবং এ বাণীতে:
﴿ ضُرِبَتۡ عَلَيۡهِمُ ٱلذِّلَّةُ أَيۡنَ مَا ثُقِفُوٓاْ إِلَّا بِحَبۡلٖ مِّنَ ٱللَّهِ وَحَبۡلٖ مِّنَ ٱلنَّاسِ وَبَآءُو بِغَضَبٖ مِّنَ ٱللَّهِ وَضُرِبَتۡ عَلَيۡهِمُ ٱلۡمَسۡكَنَةُۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمۡ كَانُواْ يَكۡفُرُونَ بَِٔايَٰتِ ٱللَّهِ وَيَقۡتُلُونَ ٱلۡأَنۢبِيَآءَ بِغَيۡرِ حَقّٖۚ ذَٰلِكَ بِمَا عَصَواْ وَّكَانُواْ يَعۡتَدُونَ ١١٢﴾ [ سُورَةُ آلِ عِمۡرَانَ : 112 ]
“আল্লাহর প্রতিশ্রুতি ও মানুষের প্রতিশ্রুতির বাইরে যেখানেই তাদেরকে পাওয়া গেছে, সেখানেই তারা লাঞ্ছিত হয়েছে। তারা আল্লাহর ক্রোধের পাত্র হয়েছে এবং হীনতাগ্রস্ত হয়েছে। এটা এই জন্য যে, তারা আল্লাহর আয়াতসমূহ প্রত্যাখ্যান করত এবং অন্যায়ভাবে নবীদেরকে হত্যা করত; এটা এই জন্য যে, তারা অবাধ্য হয়েছিল এবং সীমালংঘন করত।” - ( সূরা আলে ইমরান: ১১২ )।
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানবাধিকার সংরক্ষণ করেছেন, চাই সে মানুষটি পুরুষ হউক, অথবা নারী; ছোট হউক, অথবা বড়। অনুরূপভাবে যা-ই হোক না কেন তার সামাজিক মর্যাদা অথবা তার জীবনপদ্ধতিগত অবস্থান; আর তিনি এক্ষেত্রে বেশ কিছু উন্নত নীতিমালার স্বীকৃতি প্রদান করেছেন; আর তা-ই আমরা দেখতে পাই তাঁর মৃত্যুর তিন মাসেরও কম সময় পূর্বে প্রদত্ত বিদায় হজ্জের ভাষণে, তাঁর বক্তব্যটি ছিল মানুষের জান, মাল ও মান-সম্মানের উপর অবৈধ হস্তক্ষেপ করাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার উপর; আর এটা ছিল বিশ্ব কর্তৃক ‘মহাশর্ত আইন ১২১৫ খ্রি.’, ‘অধিকার ঘোষণা চুক্তি ১৬২৮ খ্রি.’, ‘শরীরমুক্তি আইন ১৬৭৯ খ্রি.’, ‘আমেরিকান স্বাধীনতা ঘোষণা ১৭৭৬ খ্রি.’, ‘মানব ও নাগরিক অধিকার চুক্তি ১৭৮৯ খ্রি.’ এবং ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ঘোষণা ১৯৪৮ খ্রি.’ সম্পর্কে জানার বহু পূর্বেকার ঘটনা।
অধিকার সংক্রান্ত যে নীতিগুলো পূর্বে আলোচিত হয়েছে, ইসলামী শরীয়ত মানবজাতির জন্য তার প্রত্যেকটি নীতিকে আগেই স্বীকৃতি ও বিধিবদ্ধ করেছে, যার বহু কাল পরে এগুলো ঘোষিত হয়েছে; বরং ইসলাম মানবাধিকারের সাথে সাথে জীবজন্তু ও গাছপালার অধিকারও ঘোষণা করেছে, এমনকি ঘোষণা করেছে পরিবেশ সংরক্ষণ অধিকার, যাকে সংরক্ষণ করাটা ঈমানের অন্যতম শাখার অন্তর্ভুক্ত করে দেয়া হয়েছে; কেননা, আল্লাহর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«الإِيمَانُ بِضْعٌ وَسَبْعُونَ أَوْ بِضْعٌ وَسِتُّونَ شُعْبَةً فَأَفْضَلُهَا قَوْلُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَدْنَاهَا إِمَاطَةُ الأَذَى عَنِ الطَّرِيقِ وَالْحَيَاءُ شُعْبَةٌ مِنَ الإِيمَانِ» . ( أخرجه البخاري و مسلم ).
“ঈমানের শাখা সত্তুরটির অথবা ষাটটিরও কিছু বেশি; এর সর্বোচ্চ হচ্ছে - لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ (আল্লাহ ছাড়া কোন হক ইলাহ নেই) এ কথা স্বীকার করা; আর সর্বনিম্ন শাখা হচ্ছে— রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা। আর লজ্জা ঈমানের বিশিষ্ট একটি শাখা।” - (বুখারী, ঈমান অধ্যায়, বাব নং- ২, হাদিস নং- ৯; মুসলিম, ঈমান অধ্যায়, বাব নং- ১৪, হাদিস নং- ১৬২);
যেমনিভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষকে এমন জায়গায় প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারতে নিষেধ করেছেন, যেখানে মানুষ (ছায়ায়) বিশ্রাম করে!!
এই ক্ষেত্রে সাধারণ মূলনীতি হল:
* মানবজীবনের নিরাপত্তা বিধান করা:
সুতরাং এ ব্যাপারে শরীয়তের অনেক বিধিবিধান, আদেশ ও নিষেধ এসেছে, তন্মধ্য থেকে কিছু হল:
* অন্যায়ভাবে কোন প্রাণ বা ব্যক্তিকে হত্যা করা হারাম; আর এক ব্যক্তিকে হত্যা করাকে সকল মানুষকে হত্যা করার মত অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা; আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ مَن قَتَلَ نَفۡسَۢا بِغَيۡرِ نَفۡسٍ أَوۡ فَسَادٖ فِي ٱلۡأَرۡضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ ٱلنَّاسَ جَمِيعٗا ﴾ [ سُورَةُ المَائِدَةِ : 32 ]
“যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে বিনা কারণে অথবা পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে কোন ব্যক্তিকে হত্যা করল, সে যেন দুনিয়ার সকল মানুষকেই হত্য করল।” - ( সূরা আল-মায়িদা: ৩২ )।
* আত্মহত্যা করা হারাম; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« من تردى من جبل فقتل نفسه فهو في نار جهنم يتردى فيه خالدا مخلدا فيها أبدا ومن تحسى سما فقتل نفسه فسمه في يده يتحساه في نار جهنم خالدا مخلدا فيها أبدا ومن قتل نفسه بحديدة فحديدته في يده يجأ بها في بطنه في نار جهنم خالدا مخلدا فيها أبدا » . ( أخرجه البخاري و مسلم ).
“যে ব্যক্তি পাহাড়ের উপর থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামের আগুনে পুড়বে এমতাবস্থায় যে, চিরদিন সে জাহান্নামের মধ্যে অনুরূপভাবে লাফিয়ে পড়তে থাকবে। যে ব্যক্তি বিষ পান করে আত্মহত্যা করবে, তবে তার বিষ জাহান্নামের আগুনের মধ্যে তার হাতে থাকবে, চিরকাল সে জাহান্নামের মধ্যে তা পান করতে থাকবে। যে ব্যক্তি লোহার আগাতে আত্মহত্যা করবে, জাহান্নামের আগুনের মধ্যে সে লোহা তার হাতে থাকবে, চিরকাল সে তা দ্বারা নিজের পেটে আঘাত করতে থাকবে।” - (বুখারী, চিকিৎসা অধ্যায়, বাব নং- ৫৫, হাদিস নং- ৫৪৪২; মুসলিম, ঈমান অধ্যায়, বাব নং- ৪৯, হাদিস নং- ৩১৩)।
* যেসব উপায়-উপকরণ হত্যা ও প্রাণহানির দিকে ধাবিত করে, সেগুলোর ব্যাপারে বাধা প্রদান করা; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« مَنْ حَمَلَ عَلَيْنَا السِّلاَحَ فَلَيْسَ مِنَّا » ( أخرجه البخاري و مسلم ).
“যে ব্যক্তি আমাদের উপর অস্ত্র উত্তোলন করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।” - ( বুখারী, দিয়াত বা ক্ষতিপূরণ অধ্যায়, বাব নং- ১, হাদিস নং- ৬৪৮০; মুসলিম, ভূমিকা (মুকাদ্দামা), বাব নং- ৬, হাদিস নং- ৭৫)।
* হাসি-ঠাট্টা করে হলেও ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হারাম।
* সম্ভাব্য হলেও সকল প্রকার কষ্ট দেয়া হারাম; যেমন, যে ব্যক্তি তীর নিয়ে বাজার অতিক্রম করে, তাকে তার তীর মুষ্টিবদ্ধ করে রাখতে নির্দেশ করা, যাতে কেউ আহত না হয়; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«مَنْ مَرَّ فِي شَيْءٍ مِنْ مَسَاجِدِنَا أَوْ أَسْوَاقِنَا بِنَبْلٍ، فَلْيَأْخُذْ عَلَى نِصَالِهَا، لاَ يَعْقِرْ بِكَفِّهِ مُسْلِمًا» ( أخرجه البخاري ).
“তোমাদের কেউ যদি তীর সঙ্গে নিয়ে আমাদের মসজিদে কিংবা বাজারে যায়, তাহলে সে যেন তীরের ফলাগুলো ধরে রাখে, যাতে সে তার হাতে কোনো মুসলিমকে আঘাত না লাগায়।” - ( বুখারী, হাদিস নং- ৪৫২)।
আর কষ্ট দেয়া হারাম করা ও তা প্রতিরোধের নির্দেশ দেয়ার ব্যাপারে হাদিসে নববীর অনেক বক্তব্য রয়েছে; তন্মধ্যে যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« مَنْ أَشَارَ إِلَى أَخِيهِ بِحَدِيدَةٍ فَإِنَّ الْمَلاَئِكَةَ تَلْعَنُهُ حَتَّى وَإِنْ كَانَ أَخَاهُ لأَبِيهِ وَأُمِّهِ » .( أخرجه مسلم ).
“যে ব্যক্তি লোহা বা লোহানির্মিত ছুরি দ্বারা তার ভাইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, সে ব্যক্তিকে ফেরেশতাগণ লানত বা অভিশাপ দিতে থাকে, এমনকি সে যদি তার আপন সহোদর ভাইও হয়।” - (মুসলিম, কিতাব নং- ৪৬, বাব নং- ৩৫, হাদিস নং- ৬৮৩২)।
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কষ্ট প্রতিরোধ বা দূর করাকে রাস্তার হকসমূহের মধ্য অন্যতম করে দিয়েছেন, যে হকসমূহকে সম্মান করা মুসলিম ব্যক্তির উপর আবশ্যক। (ইমাম বুখারী র. বর্ণনা করেছেন)।
* বিবেক-বুদ্ধি হেফাজত করা
বিবেক-বুদ্ধিকে বিপর্যস্ত করে, এমন বস্তুকে হারাম করা:
* বোধশক্তি বিনষ্টকারী বস্তুসমূহ: যেমন মাদকদ্রব্য সেবন করা ও নেশা বা মাদক জাতীয় ইন্জেকশান গ্রহণ করা; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« كُلُّ مُسْكِرٍ خَمْرٌ وَكُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ » .( أخرجه مسلم ).
“প্রত্যেক মাদকই মদ, আর প্রত্যেক মদই হারাম।” -( মুসলিম, পানীয় অধ্যায়, বাব নং- ৭, হাদিস নং- ৫৩৩৬)।
* অভ্যন্তরীনশক্তি বিনষ্টকারী বস্তুসমূহ: যেমন কুসংস্কার ও ভেল্কিবাজিতে বিশ্বাস করা, অন্ধ অনুসরণ করা এবং চিন্তা-গবেষণার কাজ না করা।
* বংশ রক্ষা করা:
- বিয়ে-শাদীর ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ » .( أخرجه البخاري و مسلم ).
“হে যুবসমাজ! তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তির বিয়ে করার সামর্থ্য আছে, সে যেন বিয়ে করে।” -( বুখারী, সাওম অধ্যায়, বাব নং- ১০, হাদিস নং- ১৮০৬; মুসলিম, বিবাহ অধ্যায়, বাব নং- ২, হাদিস নং- ৩৪৬৪)।
- সন্তান হত্যা ও গর্ভপাত নিষিদ্ধ করা: আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَلَا تَقۡتُلُوٓاْ أَوۡلَٰدَكُمۡ ﴾ [ سُورَةُ الإِسۡرَاءِ : 31]
“তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না।” - ( সূরা আল-ইসরা: ৩ )।
সুতরাং ইসলাম ভ্রূণহত্যা করা এবং মায়ের জন্য গর্ভস্থিত ভ্রূণ বহাল রাখাতে কোন প্রকার বিপদের আশঙ্কা না থাকা অবস্থায় গর্ভপাত করার সিদ্ধান্তকে হারাম করে দিয়েছে।
* মান-সম্মান রক্ষা করা:
* যিনা-ব্যভিচার নিষিদ্ধ করা ও তার জন্য নির্ধারিত শাস্তি বাধ্যতামূলক করা: আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَلَا تَقۡرَبُواْ ٱلزِّنَىٰٓۖ إِنَّهُۥ كَانَ فَٰحِشَةٗ وَسَآءَ سَبِيلٗا ٣٢﴾ [ سُورَةُ الإِسۡرَاءِ : 32 ]
“আর যিনা-ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না, এটা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ।” - ( সূরা আল-ইসরা: ৩)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ ٱلزَّانِيَةُ وَٱلزَّانِي فَاجْلِدُوْاْ كُلَّ وَٰحِدٖ مِّنۡهُمَا مِاْئَةَ جَلۡدَةٖۖ ﴾ الآية [ سُورَةُ النور : 2 ]
“ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী— তাদের প্রত্যেককে একশত কশাঘাত করবে।” - ( সূরা আন-নূর: ২ )।
* অপবাদ নিষিদ্ধকরণ ও তার জন্য নির্ধারিত শাস্তি বাধ্যতামূলক করা: আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَرۡمُونَ ٱلۡمُحۡصَنَٰتِ ٱلۡغَٰفِلَٰتِ ٱلۡمُؤۡمِنَٰتِ لُعِنُواْ فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِ وَلَهُمۡ عَذَابٌ عَظِيمٞ ٢٣ ﴾ [ سُورَةُ النور : 23 ]
“নিশ্চয়ই যারা সাধ্বী, সরলমনা ও ঈমানদার নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারা দুনিয়া আখিরাতে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি।” - ( সূরা আন-নূর: ২৩ );
তিনি আরও বলেন:
﴿ وَٱلَّذِينَ يَرۡمُونَ ٱلۡمُحۡصَنَٰتِ ثُمَّ لَمۡ يَأۡتُواْ بِأَرۡبَعَةِ شُهَدَآءَ فَٱجۡلِدُوهُمۡ ثَمَٰنِينَ جَلۡدَةٗ وَلَا تَقۡبَلُواْ لَهُمۡ شَهَٰدَةً أَبَدٗاۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡفَٰسِقُونَ ٤﴾ [ سُورَةُ النور : 4 ]
“যারা সাধ্বী রমণীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে এবং চারজন সাক্ষী উপস্থিত করে না, তাদেরকে আশিটি কশাঘাত করবে এবং কখনও তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করবে না; এরাই তো সত্যত্যাগী।” - ( সূরা আন-নূর: ৪ )।
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«اجتنبوا السبع الموبقات .... وقذف المحصنات المؤمنات الغافلات» .( أخرجه البخاري ).
“তোমরা সাতটি ধ্বংসকারী বিষয় থেকে দূরে থাক ... (সপ্তমটি হল) নিরীহ পবিত্রা মুমিন নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করা।” -(বুখারী, অসীয়ত অধ্যায়, বাব নং- ২৪, হাদিস নং- ২৬১৫)।
* অপবাদ, অভিযোগ ও সন্দেহমূলক স্থানসমূহ এড়িয়ে চলার ব্যপারে উৎসাহদান, যাতে চরিত্রের মধ্যে অপবাদ দেয়ার মাধ্যমসমূহকে প্রতিরোধ করা যায়।
* সম্পদ রক্ষা করা:
* সম্পদ খরচের ব্যাপারে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করার নির্দেশ প্রদান; আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَلَا تَجۡعَلۡ يَدَكَ مَغۡلُولَةً إِلَىٰ عُنُقِكَ وَلَا تَبۡسُطۡهَا كُلَّ ٱلۡبَسۡطِ فَتَقۡعُدَ مَلُومٗا مَّحۡسُورًا ٢٩ ﴾ [ سُورَةُ الإِسۡرَاءِ : 29 ]
“তুমি তোমার হাতকে ঘাড়ের সাথে আবদ্ধ করে রেখো না এবং তা সম্পূর্ণভাবে প্রসারিতও করো না, তাহলে তুমি তিরস্কৃত ও নিঃস্ব হয়ে পড়বে।” - ( সূরা আল-ইসরা: ২৯ )।
* মানুষের ধন-সম্পদে অবৈধ হস্তক্ষেপ করার ব্যাপারে শরীয়ত কর্তৃক শাস্তি নির্ধারণ করে দেয়া।
* ইয়াতীম ও দূর্বলদের ধন-সম্পদ হেফাজত করার নির্দেশ প্রদান।
* সুদ ও অন্যায়ভাবে মানুষের ধন-সম্পদ ভোগ করাকে নিষিদ্ধ করা।
* নারীকে সম্মান করা:
* নারীদের ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জোরালো অসিয়ত; তাঁর থেকে এই ব্যাপারে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে; যেমন: তিনি বলেন:
« استوصوا بالنساء خيرا» .( أخرجه البخاري ).
“তোমরা নারীদের ব্যাপারে উত্তম কল্যাণকামী হও।” - ( বুখারী); তিনি আরও বলেন:
« خيركم , خيركم لأهله , وأنا خيركم لأهلي» .( أخرجه الترمذي ).
“তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম, যে তোমাদের মধ্যে তার পরিবারের নিকট উত্তম; আর আমি তোমাদের মধ্যে আমার পরিবারের নিকট উত্তম। - (তিরমিযী)।
* নারী এমন মানুষ, যে পুরুষের সহোদরা: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসের মধ্যে এসেছে, তিনি বলেন:
« إن النساء شقائق الرجال » .( أخرجه الترمذي وأبو داود ).
“নিশ্চয় নারীগণ পুরুষদের সহোদরা।” – ( তিরমিযী ও আবূ দাউদ)।
* ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে পুরুষদের সাথে নারীদের অংশগ্রহণ: আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَٱلۡمُؤۡمِنُونَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتُ بَعۡضُهُمۡ أَوۡلِيَآءُ بَعۡضٖۚ يَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَيُقِيمُونَ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤۡتُونَ ٱلزَّكَوٰةَ وَيُطِيعُونَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥٓۚ أُوْلَٰٓئِكَ سَيَرۡحَمُهُمُ ٱللَّهُۗ إِنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٞ ٧١﴾ [ سُورَةُ التَّوۡبَةِ : 71 ]
“মুমিন নর ও মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু, তারা সৎকাজের নির্দেশ দেয় এবং অসৎকাজের নিষেধ করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে; এদেরকেই আল্লাহ করুণা করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” - ( সূরা আত-তাওবা: ৭১ )।
* শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে নারীর অধিকার: কয়েকটি সূত্র থেকে প্রমাণিত যে, প্রশিক্ষিত মহিলা সাহাবীদের মধ্য থেকে কোন একজন হাফসা বিনতে উমর রা. ( নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী)কে লেখা শিখিয়েছেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই ব্যাপারে তাকে সমর্থন করেছেন; এখান থেকে নারী শিক্ষার ব্যাপারে তাঁর উৎসাহ প্রদানের বিষয়টি প্রমাণিত হয়, যেহেতু তিনি তাঁর পরিবারের মাধ্যমে বাস্তব নমুনা পেশ করেছেন।
* সম্পদে নারীর অধিকার: ইসলাম পুরুষদের মত করে তাদের জন্য মিরাস তথা উত্তরাধিকারকে বিধিবদ্ধ করে দিয়েছে; আর তাদের আরও বেশি হল, তাদের জন্য পুরুষদের উপর বাধ্যতামূলক করে দেয়া হয়েছে বৈবাহিক মাহর, স্ত্রী ও তার (স্ত্রীর) সন্তানদের ভরণপোষণ, যদিও সে (স্ত্রী) সম্পদশালী হয়; আর ইসলাম তাদেরকে ক্রয়, বিক্রয়, ইজারা, হেবা, দান-সাদকা ইত্যাদির অধিকার দিয়েছে।
অধিকার সংক্রান্ত যে নীতিগুলো পূর্বে আলোচিত হয়েছে, ইসলামী শরীয়ত মানবজাতির জন্য তার প্রত্যেকটি নীতিকে আগেই স্বীকৃতি ও বিধিবদ্ধ করেছে, যার বহু কাল পরে এগুলো ঘোষিত হয়েছে; বরং ইসলাম মানবাধিকারের সাথে সাথে জীবজন্তু ও গাছপালার অধিকারও ঘোষণা করেছে, এমনকি ঘোষণা করেছে পরিবেশ সংরক্ষণ অধিকার, যাকে সংরক্ষণ করাটা ঈমানের অন্যতম শাখার অন্তর্ভুক্ত করে দেয়া হয়েছে; কেননা, আল্লাহর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«الإِيمَانُ بِضْعٌ وَسَبْعُونَ أَوْ بِضْعٌ وَسِتُّونَ شُعْبَةً فَأَفْضَلُهَا قَوْلُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَدْنَاهَا إِمَاطَةُ الأَذَى عَنِ الطَّرِيقِ وَالْحَيَاءُ شُعْبَةٌ مِنَ الإِيمَانِ» . ( أخرجه البخاري و مسلم ).
“ঈমানের শাখা সত্তুরটির অথবা ষাটটিরও কিছু বেশি; এর সর্বোচ্চ হচ্ছে - لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ (আল্লাহ ছাড়া কোন হক ইলাহ নেই) এ কথা স্বীকার করা; আর সর্বনিম্ন শাখা হচ্ছে— রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা। আর লজ্জা ঈমানের বিশিষ্ট একটি শাখা।” - (বুখারী, ঈমান অধ্যায়, বাব নং- ২, হাদিস নং- ৯; মুসলিম, ঈমান অধ্যায়, বাব নং- ১৪, হাদিস নং- ১৬২);
যেমনিভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষকে এমন জায়গায় প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারতে নিষেধ করেছেন, যেখানে মানুষ (ছায়ায়) বিশ্রাম করে!!
এই ক্ষেত্রে সাধারণ মূলনীতি হল:
* মানবজীবনের নিরাপত্তা বিধান করা:
সুতরাং এ ব্যাপারে শরীয়তের অনেক বিধিবিধান, আদেশ ও নিষেধ এসেছে, তন্মধ্য থেকে কিছু হল:
* অন্যায়ভাবে কোন প্রাণ বা ব্যক্তিকে হত্যা করা হারাম; আর এক ব্যক্তিকে হত্যা করাকে সকল মানুষকে হত্যা করার মত অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা; আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ مَن قَتَلَ نَفۡسَۢا بِغَيۡرِ نَفۡسٍ أَوۡ فَسَادٖ فِي ٱلۡأَرۡضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ ٱلنَّاسَ جَمِيعٗا ﴾ [ سُورَةُ المَائِدَةِ : 32 ]
“যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে বিনা কারণে অথবা পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে কোন ব্যক্তিকে হত্যা করল, সে যেন দুনিয়ার সকল মানুষকেই হত্য করল।” - ( সূরা আল-মায়িদা: ৩২ )।
* আত্মহত্যা করা হারাম; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« من تردى من جبل فقتل نفسه فهو في نار جهنم يتردى فيه خالدا مخلدا فيها أبدا ومن تحسى سما فقتل نفسه فسمه في يده يتحساه في نار جهنم خالدا مخلدا فيها أبدا ومن قتل نفسه بحديدة فحديدته في يده يجأ بها في بطنه في نار جهنم خالدا مخلدا فيها أبدا » . ( أخرجه البخاري و مسلم ).
“যে ব্যক্তি পাহাড়ের উপর থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামের আগুনে পুড়বে এমতাবস্থায় যে, চিরদিন সে জাহান্নামের মধ্যে অনুরূপভাবে লাফিয়ে পড়তে থাকবে। যে ব্যক্তি বিষ পান করে আত্মহত্যা করবে, তবে তার বিষ জাহান্নামের আগুনের মধ্যে তার হাতে থাকবে, চিরকাল সে জাহান্নামের মধ্যে তা পান করতে থাকবে। যে ব্যক্তি লোহার আগাতে আত্মহত্যা করবে, জাহান্নামের আগুনের মধ্যে সে লোহা তার হাতে থাকবে, চিরকাল সে তা দ্বারা নিজের পেটে আঘাত করতে থাকবে।” - (বুখারী, চিকিৎসা অধ্যায়, বাব নং- ৫৫, হাদিস নং- ৫৪৪২; মুসলিম, ঈমান অধ্যায়, বাব নং- ৪৯, হাদিস নং- ৩১৩)।
* যেসব উপায়-উপকরণ হত্যা ও প্রাণহানির দিকে ধাবিত করে, সেগুলোর ব্যাপারে বাধা প্রদান করা; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« مَنْ حَمَلَ عَلَيْنَا السِّلاَحَ فَلَيْسَ مِنَّا » ( أخرجه البخاري و مسلم ).
“যে ব্যক্তি আমাদের উপর অস্ত্র উত্তোলন করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।” - ( বুখারী, দিয়াত বা ক্ষতিপূরণ অধ্যায়, বাব নং- ১, হাদিস নং- ৬৪৮০; মুসলিম, ভূমিকা (মুকাদ্দামা), বাব নং- ৬, হাদিস নং- ৭৫)।
* হাসি-ঠাট্টা করে হলেও ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হারাম।
* সম্ভাব্য হলেও সকল প্রকার কষ্ট দেয়া হারাম; যেমন, যে ব্যক্তি তীর নিয়ে বাজার অতিক্রম করে, তাকে তার তীর মুষ্টিবদ্ধ করে রাখতে নির্দেশ করা, যাতে কেউ আহত না হয়; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«مَنْ مَرَّ فِي شَيْءٍ مِنْ مَسَاجِدِنَا أَوْ أَسْوَاقِنَا بِنَبْلٍ، فَلْيَأْخُذْ عَلَى نِصَالِهَا، لاَ يَعْقِرْ بِكَفِّهِ مُسْلِمًا» ( أخرجه البخاري ).
“তোমাদের কেউ যদি তীর সঙ্গে নিয়ে আমাদের মসজিদে কিংবা বাজারে যায়, তাহলে সে যেন তীরের ফলাগুলো ধরে রাখে, যাতে সে তার হাতে কোনো মুসলিমকে আঘাত না লাগায়।” - ( বুখারী, হাদিস নং- ৪৫২)।
আর কষ্ট দেয়া হারাম করা ও তা প্রতিরোধের নির্দেশ দেয়ার ব্যাপারে হাদিসে নববীর অনেক বক্তব্য রয়েছে; তন্মধ্যে যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« مَنْ أَشَارَ إِلَى أَخِيهِ بِحَدِيدَةٍ فَإِنَّ الْمَلاَئِكَةَ تَلْعَنُهُ حَتَّى وَإِنْ كَانَ أَخَاهُ لأَبِيهِ وَأُمِّهِ » .( أخرجه مسلم ).
“যে ব্যক্তি লোহা বা লোহানির্মিত ছুরি দ্বারা তার ভাইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, সে ব্যক্তিকে ফেরেশতাগণ লানত বা অভিশাপ দিতে থাকে, এমনকি সে যদি তার আপন সহোদর ভাইও হয়।” - (মুসলিম, কিতাব নং- ৪৬, বাব নং- ৩৫, হাদিস নং- ৬৮৩২)।
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কষ্ট প্রতিরোধ বা দূর করাকে রাস্তার হকসমূহের মধ্য অন্যতম করে দিয়েছেন, যে হকসমূহকে সম্মান করা মুসলিম ব্যক্তির উপর আবশ্যক। (ইমাম বুখারী র. বর্ণনা করেছেন)।
* বিবেক-বুদ্ধি হেফাজত করা
বিবেক-বুদ্ধিকে বিপর্যস্ত করে, এমন বস্তুকে হারাম করা:
* বোধশক্তি বিনষ্টকারী বস্তুসমূহ: যেমন মাদকদ্রব্য সেবন করা ও নেশা বা মাদক জাতীয় ইন্জেকশান গ্রহণ করা; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« كُلُّ مُسْكِرٍ خَمْرٌ وَكُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ » .( أخرجه مسلم ).
“প্রত্যেক মাদকই মদ, আর প্রত্যেক মদই হারাম।” -( মুসলিম, পানীয় অধ্যায়, বাব নং- ৭, হাদিস নং- ৫৩৩৬)।
* অভ্যন্তরীনশক্তি বিনষ্টকারী বস্তুসমূহ: যেমন কুসংস্কার ও ভেল্কিবাজিতে বিশ্বাস করা, অন্ধ অনুসরণ করা এবং চিন্তা-গবেষণার কাজ না করা।
* বংশ রক্ষা করা:
- বিয়ে-শাদীর ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ » .( أخرجه البخاري و مسلم ).
“হে যুবসমাজ! তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তির বিয়ে করার সামর্থ্য আছে, সে যেন বিয়ে করে।” -( বুখারী, সাওম অধ্যায়, বাব নং- ১০, হাদিস নং- ১৮০৬; মুসলিম, বিবাহ অধ্যায়, বাব নং- ২, হাদিস নং- ৩৪৬৪)।
- সন্তান হত্যা ও গর্ভপাত নিষিদ্ধ করা: আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَلَا تَقۡتُلُوٓاْ أَوۡلَٰدَكُمۡ ﴾ [ سُورَةُ الإِسۡرَاءِ : 31]
“তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না।” - ( সূরা আল-ইসরা: ৩ )।
সুতরাং ইসলাম ভ্রূণহত্যা করা এবং মায়ের জন্য গর্ভস্থিত ভ্রূণ বহাল রাখাতে কোন প্রকার বিপদের আশঙ্কা না থাকা অবস্থায় গর্ভপাত করার সিদ্ধান্তকে হারাম করে দিয়েছে।
* মান-সম্মান রক্ষা করা:
* যিনা-ব্যভিচার নিষিদ্ধ করা ও তার জন্য নির্ধারিত শাস্তি বাধ্যতামূলক করা: আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَلَا تَقۡرَبُواْ ٱلزِّنَىٰٓۖ إِنَّهُۥ كَانَ فَٰحِشَةٗ وَسَآءَ سَبِيلٗا ٣٢﴾ [ سُورَةُ الإِسۡرَاءِ : 32 ]
“আর যিনা-ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না, এটা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ।” - ( সূরা আল-ইসরা: ৩)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ ٱلزَّانِيَةُ وَٱلزَّانِي فَاجْلِدُوْاْ كُلَّ وَٰحِدٖ مِّنۡهُمَا مِاْئَةَ جَلۡدَةٖۖ ﴾ الآية [ سُورَةُ النور : 2 ]
“ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী— তাদের প্রত্যেককে একশত কশাঘাত করবে।” - ( সূরা আন-নূর: ২ )।
* অপবাদ নিষিদ্ধকরণ ও তার জন্য নির্ধারিত শাস্তি বাধ্যতামূলক করা: আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَرۡمُونَ ٱلۡمُحۡصَنَٰتِ ٱلۡغَٰفِلَٰتِ ٱلۡمُؤۡمِنَٰتِ لُعِنُواْ فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِ وَلَهُمۡ عَذَابٌ عَظِيمٞ ٢٣ ﴾ [ سُورَةُ النور : 23 ]
“নিশ্চয়ই যারা সাধ্বী, সরলমনা ও ঈমানদার নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারা দুনিয়া আখিরাতে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি।” - ( সূরা আন-নূর: ২৩ );
তিনি আরও বলেন:
﴿ وَٱلَّذِينَ يَرۡمُونَ ٱلۡمُحۡصَنَٰتِ ثُمَّ لَمۡ يَأۡتُواْ بِأَرۡبَعَةِ شُهَدَآءَ فَٱجۡلِدُوهُمۡ ثَمَٰنِينَ جَلۡدَةٗ وَلَا تَقۡبَلُواْ لَهُمۡ شَهَٰدَةً أَبَدٗاۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡفَٰسِقُونَ ٤﴾ [ سُورَةُ النور : 4 ]
“যারা সাধ্বী রমণীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে এবং চারজন সাক্ষী উপস্থিত করে না, তাদেরকে আশিটি কশাঘাত করবে এবং কখনও তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করবে না; এরাই তো সত্যত্যাগী।” - ( সূরা আন-নূর: ৪ )।
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«اجتنبوا السبع الموبقات .... وقذف المحصنات المؤمنات الغافلات» .( أخرجه البخاري ).
“তোমরা সাতটি ধ্বংসকারী বিষয় থেকে দূরে থাক ... (সপ্তমটি হল) নিরীহ পবিত্রা মুমিন নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করা।” -(বুখারী, অসীয়ত অধ্যায়, বাব নং- ২৪, হাদিস নং- ২৬১৫)।
* অপবাদ, অভিযোগ ও সন্দেহমূলক স্থানসমূহ এড়িয়ে চলার ব্যপারে উৎসাহদান, যাতে চরিত্রের মধ্যে অপবাদ দেয়ার মাধ্যমসমূহকে প্রতিরোধ করা যায়।
* সম্পদ রক্ষা করা:
* সম্পদ খরচের ব্যাপারে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করার নির্দেশ প্রদান; আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَلَا تَجۡعَلۡ يَدَكَ مَغۡلُولَةً إِلَىٰ عُنُقِكَ وَلَا تَبۡسُطۡهَا كُلَّ ٱلۡبَسۡطِ فَتَقۡعُدَ مَلُومٗا مَّحۡسُورًا ٢٩ ﴾ [ سُورَةُ الإِسۡرَاءِ : 29 ]
“তুমি তোমার হাতকে ঘাড়ের সাথে আবদ্ধ করে রেখো না এবং তা সম্পূর্ণভাবে প্রসারিতও করো না, তাহলে তুমি তিরস্কৃত ও নিঃস্ব হয়ে পড়বে।” - ( সূরা আল-ইসরা: ২৯ )।
* মানুষের ধন-সম্পদে অবৈধ হস্তক্ষেপ করার ব্যাপারে শরীয়ত কর্তৃক শাস্তি নির্ধারণ করে দেয়া।
* ইয়াতীম ও দূর্বলদের ধন-সম্পদ হেফাজত করার নির্দেশ প্রদান।
* সুদ ও অন্যায়ভাবে মানুষের ধন-সম্পদ ভোগ করাকে নিষিদ্ধ করা।
* নারীকে সম্মান করা:
* নারীদের ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জোরালো অসিয়ত; তাঁর থেকে এই ব্যাপারে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে; যেমন: তিনি বলেন:
« استوصوا بالنساء خيرا» .( أخرجه البخاري ).
“তোমরা নারীদের ব্যাপারে উত্তম কল্যাণকামী হও।” - ( বুখারী); তিনি আরও বলেন:
« خيركم , خيركم لأهله , وأنا خيركم لأهلي» .( أخرجه الترمذي ).
“তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম, যে তোমাদের মধ্যে তার পরিবারের নিকট উত্তম; আর আমি তোমাদের মধ্যে আমার পরিবারের নিকট উত্তম। - (তিরমিযী)।
* নারী এমন মানুষ, যে পুরুষের সহোদরা: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসের মধ্যে এসেছে, তিনি বলেন:
« إن النساء شقائق الرجال » .( أخرجه الترمذي وأبو داود ).
“নিশ্চয় নারীগণ পুরুষদের সহোদরা।” – ( তিরমিযী ও আবূ দাউদ)।
* ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে পুরুষদের সাথে নারীদের অংশগ্রহণ: আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَٱلۡمُؤۡمِنُونَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتُ بَعۡضُهُمۡ أَوۡلِيَآءُ بَعۡضٖۚ يَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَيُقِيمُونَ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤۡتُونَ ٱلزَّكَوٰةَ وَيُطِيعُونَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥٓۚ أُوْلَٰٓئِكَ سَيَرۡحَمُهُمُ ٱللَّهُۗ إِنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٞ ٧١﴾ [ سُورَةُ التَّوۡبَةِ : 71 ]
“মুমিন নর ও মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু, তারা সৎকাজের নির্দেশ দেয় এবং অসৎকাজের নিষেধ করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে; এদেরকেই আল্লাহ করুণা করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” - ( সূরা আত-তাওবা: ৭১ )।
* শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে নারীর অধিকার: কয়েকটি সূত্র থেকে প্রমাণিত যে, প্রশিক্ষিত মহিলা সাহাবীদের মধ্য থেকে কোন একজন হাফসা বিনতে উমর রা. ( নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী)কে লেখা শিখিয়েছেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই ব্যাপারে তাকে সমর্থন করেছেন; এখান থেকে নারী শিক্ষার ব্যাপারে তাঁর উৎসাহ প্রদানের বিষয়টি প্রমাণিত হয়, যেহেতু তিনি তাঁর পরিবারের মাধ্যমে বাস্তব নমুনা পেশ করেছেন।
* সম্পদে নারীর অধিকার: ইসলাম পুরুষদের মত করে তাদের জন্য মিরাস তথা উত্তরাধিকারকে বিধিবদ্ধ করে দিয়েছে; আর তাদের আরও বেশি হল, তাদের জন্য পুরুষদের উপর বাধ্যতামূলক করে দেয়া হয়েছে বৈবাহিক মাহর, স্ত্রী ও তার (স্ত্রীর) সন্তানদের ভরণপোষণ, যদিও সে (স্ত্রী) সম্পদশালী হয়; আর ইসলাম তাদেরকে ক্রয়, বিক্রয়, ইজারা, হেবা, দান-সাদকা ইত্যাদির অধিকার দিয়েছে।
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের জীবনে নৈতিক চরিত্রের অবস্থানকে সমুন্নত করেছেন। কারণ, তিনি উত্তম চরিত্রের দিকে আহ্বান করেছেন এবং তা সংরক্ষণ করেছেন; যেমন: সততা, বিশ্বস্ততা ও সচ্চরিত্রতা; তিনি আরও আহ্বান করেছেন সামাজিক বন্ধন মজবুত ও সুদৃঢ় করার দিকে; যেমন: পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার ও আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা এবং তিনি তা বাস্তবে পরিণত করেছেন; আর তিনি অসৎ চরিত্র ও অনৈতিকতা থেকে নিষেধ করেছেন এবং তা থেকে তিনি দূরে থেকেছেন ও জনগণকে সতর্ক করেছেন; যেমন: মিথ্যা বলা, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা, হিংসা-বিদ্বেষ, যিনা-ব্যভিচার, পিতা-মাতার অবাধ্যতা ইত্যাদি এবং এগুলো থেকে উদ্ভূত সমস্যাদির প্রতিকার করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা আল-কুরআনে তাঁর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রশংসা করেছেন তাঁর সরাসরি উক্তির মাধ্যমে; তিনি বলেন:
﴿ وَإِنَّكَ لَعَلَىٰ خُلُقٍ عَظِيمٖ ٤ ﴾ [ سُورَةُ القَلَمِ : 4 ]
“তুমি অবশ্যই মহান চরিত্রের উপর অধিষ্ঠিত।” - ( সূরা আল-কালাম: ৪ ); আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক আমানতের রক্ষণাবেক্ষণের সুখ্যাতির কারণে তিনি নবী হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার পূর্বে আরবগণ কর্তৃক ‘আল-আমীন’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন, এমনকি তিনি মুহাজির হিসেবে মক্কা থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময়ও তিনি তাঁর নিকট গচ্ছিত আমানতের কথা ভুলে যাননি, তিনি আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন তাঁর নিকট গচ্ছিত আমানতগুলো যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট পৌঁছিয়ে দেয়ার জন্য; আর সেই আমানতের হকদারদের কেউ কেউ ছিল কুরাইশ বংশের কাফির, যারা তাঁকে তাঁর জন্মভূমি থেকে বের করে দিয়েছে!!
আর এ জন্যই নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশি বেশি উত্তম চরিত্র ও মর্যাদাপূণ নৈতিকতার দিকে আহ্বান করেছেন এবং এর দ্বারা নিজেকে সুসজ্জিত করতে উৎসাহিত করেছেন, উত্তম চরিত্র গ্রহণের আহ্বানজনিত হাদিসগুলো নিয়ে এসেছেন; বরং আল-কুরআনের উত্তম চরিত্র সংক্রান্ত আয়াতসমূহের অংশবিশেষ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে মক্কাবাসীদের কারও কারও ইসলাম গ্রহণের কারণ ছিল; নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সীরাতের মধ্যে বর্ণিত আছে যে, তিনি আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿ إِنَّ ٱللَّهَ يَأۡمُرُ بِٱلۡعَدۡلِ وَٱلۡإِحۡسَٰنِ وَإِيتَآيِٕ ذِي ٱلۡقُرۡبَىٰ وَيَنۡهَىٰ عَنِ ٱلۡفَحۡشَآءِ وَٱلۡمُنكَرِ وَٱلۡبَغۡيِۚ يَعِظُكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَذَكَّرُونَ ٩٠ ﴾ [ سُورَةُ النحل : 90 ]
“নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ ও আত্মীয়-স্বজনকে দানের নির্দেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসৎকাজ ও সীমালংঘন করার ব্যাপারে নিষেধ করেন; তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর।” - ( সূরা আন-নাহল: ৯০ )— পাঠ করেছেন গোত্রীয় নেতাদের কোন একজনের দুই প্রতিনিধির নিকট; অতঃপর তারা উভয়ে তাদের মনিবের নিকট গিয়ে বলল: সে আমাদের প্রতি কতগুলো বাক্য ছুড়ে দিয়েছে, আমরা মনোযোগ সহকারে তা শ্রবণ করেছি; অতঃপর তাদের মনিব যখন এই বাক্যগুলো শুনল, তখন সে বলল: নিশ্চয়ই আমি তাকে দেখতে পাচ্ছি যে, সে উত্তম চরিত্রের নির্দেশ দিচ্ছে এবং কুচরিত্র বা অসৎ চরিত্র থেকে নিষেধ করছে।
আর আল-কুরআনুল কারীমে বর্ণিত চারিত্রিক নীতিমালা থেকে কিছু দিক:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ هَلۡ جَزَآءُ ٱلۡإِحۡسَٰنِ إِلَّا ٱلۡإِحۡسَٰنُ ٦٠﴾ [ سُورَةُ الرَّحۡمَٰن : 60 ]
“উত্তম কাজের জন্য উত্তম পুরস্কার ব্যতীত কী হতে পারে?” - (সূরা আর-রহমান: ৬০ )।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ وَقُولُواْ لِلنَّاسِ حُسۡنٗا ﴾ [ سُورَةُ البَقَرَةِ : 83 ]
“আর তোমরা মানুষের প্রতি উত্তম আচরণ করবে।” - (সূরা আল-বাকারা: ৮৩ )।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿وَأَن تَعۡفُوٓاْ أَقۡرَبُ لِلتَّقۡوَىٰۚ وَلَا تَنسَوُاْ ٱلۡفَضۡلَ بَيۡنَكُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ بِمَا تَعۡمَلُونَ بَصِيرٌ ٢٣٧ ﴾ [ سُورَةُ البَقَرَةِ : 237 ]
“আর মাফ করে দেওয়াটাই তাকওয়ার নিকটতর। আর তোমরা নিজেদের মধ্যকার অনুকম্পার কথা ভুলে যেয়ো না। তোমরা যা কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ তার সবকিছুই দেখেন।” - ( সূরা আল-বাকারা: ২৩৭ )।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿خُذِ ٱلۡعَفۡوَ وَأۡمُرۡ بِٱلۡعُرۡفِ وَأَعۡرِضۡ عَنِ ٱلۡجَٰهِلِينَ ١٩٩ وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ ٱلشَّيۡطَٰنِ نَزۡغٞ فَٱسۡتَعِذۡ بِٱللَّهِۚ إِنَّهُۥ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ٢٠٠﴾ [ سُورَةُ الأَعۡرَافِ : 199 - 200 ]
“তুমি ক্ষমাপরায়ণতা অবলম্বন কর, সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং অজ্ঞদেরকে এড়িয়ে চল। যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে, তবে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইবে; তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” - ( সূরা আল-আ‘রাফ: ১৯৯ - ২০০ )।
আর সুন্নাতে নববীর মধ্যে বর্ণিত চারিত্রিক নীতিমালা থেকে কিছু দিক, যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, যেগুলোকে অনেক আত্মিক ও সামাজিক সমস্যার সমাধান হিসেবে গণ্য করা হয়, সে সমস্যাগুলো তখনই উদ্ভূত হয়, যখন মানুষ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঐ হেদায়াত থেকে দূরে সরে যায়, যা তিনি মানুষের প্রতি দয়া বা রহমত ও তাদের জন্য শিক্ষাস্বরূপ এবং দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট ও আখিরাতের শাস্তি থেকে তাদের মুক্তির জন্য নিয়ে এসেছেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হাদিস হলো:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«ليس الشديد بالصرعة إنما الشديد الذي يملك نفسه عند الغضب » . ( أخرجه البخاري ).
“প্রকৃত বীর সে নয়, যে কাউকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয়; বরং সেই প্রকৃত বাহাদুর, যে ক্রোধের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।” -( বুখারী, শিষ্টাচার অধ্যায়, বাব নং- ৭৬, হাদিস নং- ৫৭৬৩)।
আবূ হুরায়রা রা. বর্ণিত হাদিসে এসেছে:
« أن رجلا قال للنبي صلى الله عليه و سلم أوصني قال : لا تغضب . فردد مرارا قال : لا تغضب » .( أخرجه البخاري ).
“এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বলল: আপনি আমাকে অসিয়ত করুন। তিনি বললেন: তুমি রাগ করো না। লোকটা কয়েকবার তা বলল; নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক বারই বললেন: তুমি রাগ করো না।” -( বুখারী, শিষ্টাচার অধ্যায়, বাব নং- ৭৬, হাদিস নং- ৫৭৬৫)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
« لا يشكر الله من لا يشكر الناس » .( أخرجه الإمام أحمد و غيره ).
“যে ব্যক্তি মানুষের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, সে ব্যক্তি আল্লাহরও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।” -(ইমাম আহমদ, মুসনাদ, হাদিস নং- ৭৯২৬)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
« إن من خياركم أحسنكم أخلاقا » .( أخرجه البخاري و مسلم ).
“নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে সেই সবচেয়ে বেশি উত্তম, যার চরিত্র তোমাদের মাঝে সবচেয়ে বেশি সুন্দর।” -( বুখারী, কিতাবুল মানাকিব, বাব নং- ২০, হাদিস নং- ৩৩৬৬; মুসলিম, ফাযায়েল অধ্যায়, বাব নং- ১৬, হাদিস নং- ৬১৭৭)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
« لا يؤمن أحدكم حتى يحب لأخيه ما يحب لنفسه » .( أخرجه البخاري ).
“তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তার ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ করবে, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে।” -( বুখারী, কিতাবুল ঈমান, বাব নং- ৬, হাদিস নং- ১৩)
আল্লাহ তা‘আলা আল-কুরআনে তাঁর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রশংসা করেছেন তাঁর সরাসরি উক্তির মাধ্যমে; তিনি বলেন:
﴿ وَإِنَّكَ لَعَلَىٰ خُلُقٍ عَظِيمٖ ٤ ﴾ [ سُورَةُ القَلَمِ : 4 ]
“তুমি অবশ্যই মহান চরিত্রের উপর অধিষ্ঠিত।” - ( সূরা আল-কালাম: ৪ ); আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক আমানতের রক্ষণাবেক্ষণের সুখ্যাতির কারণে তিনি নবী হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার পূর্বে আরবগণ কর্তৃক ‘আল-আমীন’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন, এমনকি তিনি মুহাজির হিসেবে মক্কা থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময়ও তিনি তাঁর নিকট গচ্ছিত আমানতের কথা ভুলে যাননি, তিনি আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন তাঁর নিকট গচ্ছিত আমানতগুলো যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট পৌঁছিয়ে দেয়ার জন্য; আর সেই আমানতের হকদারদের কেউ কেউ ছিল কুরাইশ বংশের কাফির, যারা তাঁকে তাঁর জন্মভূমি থেকে বের করে দিয়েছে!!
আর এ জন্যই নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশি বেশি উত্তম চরিত্র ও মর্যাদাপূণ নৈতিকতার দিকে আহ্বান করেছেন এবং এর দ্বারা নিজেকে সুসজ্জিত করতে উৎসাহিত করেছেন, উত্তম চরিত্র গ্রহণের আহ্বানজনিত হাদিসগুলো নিয়ে এসেছেন; বরং আল-কুরআনের উত্তম চরিত্র সংক্রান্ত আয়াতসমূহের অংশবিশেষ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে মক্কাবাসীদের কারও কারও ইসলাম গ্রহণের কারণ ছিল; নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সীরাতের মধ্যে বর্ণিত আছে যে, তিনি আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿ إِنَّ ٱللَّهَ يَأۡمُرُ بِٱلۡعَدۡلِ وَٱلۡإِحۡسَٰنِ وَإِيتَآيِٕ ذِي ٱلۡقُرۡبَىٰ وَيَنۡهَىٰ عَنِ ٱلۡفَحۡشَآءِ وَٱلۡمُنكَرِ وَٱلۡبَغۡيِۚ يَعِظُكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَذَكَّرُونَ ٩٠ ﴾ [ سُورَةُ النحل : 90 ]
“নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ ও আত্মীয়-স্বজনকে দানের নির্দেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসৎকাজ ও সীমালংঘন করার ব্যাপারে নিষেধ করেন; তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর।” - ( সূরা আন-নাহল: ৯০ )— পাঠ করেছেন গোত্রীয় নেতাদের কোন একজনের দুই প্রতিনিধির নিকট; অতঃপর তারা উভয়ে তাদের মনিবের নিকট গিয়ে বলল: সে আমাদের প্রতি কতগুলো বাক্য ছুড়ে দিয়েছে, আমরা মনোযোগ সহকারে তা শ্রবণ করেছি; অতঃপর তাদের মনিব যখন এই বাক্যগুলো শুনল, তখন সে বলল: নিশ্চয়ই আমি তাকে দেখতে পাচ্ছি যে, সে উত্তম চরিত্রের নির্দেশ দিচ্ছে এবং কুচরিত্র বা অসৎ চরিত্র থেকে নিষেধ করছে।
আর আল-কুরআনুল কারীমে বর্ণিত চারিত্রিক নীতিমালা থেকে কিছু দিক:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ هَلۡ جَزَآءُ ٱلۡإِحۡسَٰنِ إِلَّا ٱلۡإِحۡسَٰنُ ٦٠﴾ [ سُورَةُ الرَّحۡمَٰن : 60 ]
“উত্তম কাজের জন্য উত্তম পুরস্কার ব্যতীত কী হতে পারে?” - (সূরা আর-রহমান: ৬০ )।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ وَقُولُواْ لِلنَّاسِ حُسۡنٗا ﴾ [ سُورَةُ البَقَرَةِ : 83 ]
“আর তোমরা মানুষের প্রতি উত্তম আচরণ করবে।” - (সূরা আল-বাকারা: ৮৩ )।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿وَأَن تَعۡفُوٓاْ أَقۡرَبُ لِلتَّقۡوَىٰۚ وَلَا تَنسَوُاْ ٱلۡفَضۡلَ بَيۡنَكُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ بِمَا تَعۡمَلُونَ بَصِيرٌ ٢٣٧ ﴾ [ سُورَةُ البَقَرَةِ : 237 ]
“আর মাফ করে দেওয়াটাই তাকওয়ার নিকটতর। আর তোমরা নিজেদের মধ্যকার অনুকম্পার কথা ভুলে যেয়ো না। তোমরা যা কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ তার সবকিছুই দেখেন।” - ( সূরা আল-বাকারা: ২৩৭ )।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿خُذِ ٱلۡعَفۡوَ وَأۡمُرۡ بِٱلۡعُرۡفِ وَأَعۡرِضۡ عَنِ ٱلۡجَٰهِلِينَ ١٩٩ وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ ٱلشَّيۡطَٰنِ نَزۡغٞ فَٱسۡتَعِذۡ بِٱللَّهِۚ إِنَّهُۥ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ٢٠٠﴾ [ سُورَةُ الأَعۡرَافِ : 199 - 200 ]
“তুমি ক্ষমাপরায়ণতা অবলম্বন কর, সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং অজ্ঞদেরকে এড়িয়ে চল। যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে, তবে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইবে; তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” - ( সূরা আল-আ‘রাফ: ১৯৯ - ২০০ )।
আর সুন্নাতে নববীর মধ্যে বর্ণিত চারিত্রিক নীতিমালা থেকে কিছু দিক, যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, যেগুলোকে অনেক আত্মিক ও সামাজিক সমস্যার সমাধান হিসেবে গণ্য করা হয়, সে সমস্যাগুলো তখনই উদ্ভূত হয়, যখন মানুষ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঐ হেদায়াত থেকে দূরে সরে যায়, যা তিনি মানুষের প্রতি দয়া বা রহমত ও তাদের জন্য শিক্ষাস্বরূপ এবং দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট ও আখিরাতের শাস্তি থেকে তাদের মুক্তির জন্য নিয়ে এসেছেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হাদিস হলো:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«ليس الشديد بالصرعة إنما الشديد الذي يملك نفسه عند الغضب » . ( أخرجه البخاري ).
“প্রকৃত বীর সে নয়, যে কাউকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয়; বরং সেই প্রকৃত বাহাদুর, যে ক্রোধের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।” -( বুখারী, শিষ্টাচার অধ্যায়, বাব নং- ৭৬, হাদিস নং- ৫৭৬৩)।
আবূ হুরায়রা রা. বর্ণিত হাদিসে এসেছে:
« أن رجلا قال للنبي صلى الله عليه و سلم أوصني قال : لا تغضب . فردد مرارا قال : لا تغضب » .( أخرجه البخاري ).
“এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বলল: আপনি আমাকে অসিয়ত করুন। তিনি বললেন: তুমি রাগ করো না। লোকটা কয়েকবার তা বলল; নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক বারই বললেন: তুমি রাগ করো না।” -( বুখারী, শিষ্টাচার অধ্যায়, বাব নং- ৭৬, হাদিস নং- ৫৭৬৫)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
« لا يشكر الله من لا يشكر الناس » .( أخرجه الإمام أحمد و غيره ).
“যে ব্যক্তি মানুষের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, সে ব্যক্তি আল্লাহরও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।” -(ইমাম আহমদ, মুসনাদ, হাদিস নং- ৭৯২৬)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
« إن من خياركم أحسنكم أخلاقا » .( أخرجه البخاري و مسلم ).
“নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে সেই সবচেয়ে বেশি উত্তম, যার চরিত্র তোমাদের মাঝে সবচেয়ে বেশি সুন্দর।” -( বুখারী, কিতাবুল মানাকিব, বাব নং- ২০, হাদিস নং- ৩৩৬৬; মুসলিম, ফাযায়েল অধ্যায়, বাব নং- ১৬, হাদিস নং- ৬১৭৭)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
« لا يؤمن أحدكم حتى يحب لأخيه ما يحب لنفسه » .( أخرجه البخاري ).
“তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তার ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ করবে, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে।” -( বুখারী, কিতাবুল ঈমান, বাব নং- ৬, হাদিস নং- ১৩)
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে প্রাপ্ত ওহীর মাধ্যমে বিবেক-বুদ্ধিকে কাজে লাগানো, সৃষ্টির রহস্য উদঘাটন ও জ্ঞান অর্জনের দিকে আহ্বান করেছেন এবং এগুলোকে ঐসব আমলের মধ্যে পরিগণিত করেছেন, যেগুলোর উপর মানুষকে সাওয়াব দেয়া হয়; অথচ অন্যান্য সভ্যতায় পণ্ডিত ব্যক্তিবর্গ ও গবেষকগণকে যুলুম-নিপীড়ন, অবিশ্বাসী ও ধর্মত্যাগী হওয়ার মত অপবাদ সহ্য করতে হয়েছে; আর তাদেরকে কারাগারে নিক্ষেপ ও শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে ভীতিপ্রদর্শন করানো হচ্ছিল, আবার কখনও কখনও হত্যা পর্যন্ত গড়িয়েছিল।
নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর সর্বপ্রথম নাযিলকৃত আয়াত ছিল আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿ ٱقۡرَأۡ بِٱسۡمِ رَبِّكَ ٱلَّذِي خَلَقَ ١ ﴾ [ سُورَةُ العلق : 1 ]
“পাঠ কর তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।” - (সূরা আল-‘আলাক: ১ ); আর অনুরূপভাবে তাঁর নিকট প্রেরিত ওহীর অন্তর্ভুক্ত ছিল আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿أَمَّنۡ هُوَ قَٰنِتٌ ءَانَآءَ ٱلَّيۡلِ سَاجِدٗا وَقَآئِمٗا يَحۡذَرُ ٱلۡأٓخِرَةَ وَيَرۡجُواْ رَحۡمَةَ رَبِّهِۦۗ قُلۡ هَلۡ يَسۡتَوِي ٱلَّذِينَ يَعۡلَمُونَ وَٱلَّذِينَ لَا يَعۡلَمُونَۗ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُوْلُواْ ٱلۡأَلۡبَٰبِ ٩ ﴾ [ سُورَةُ الزُّمَرِ : 9 ]
“যে ব্যক্তি রাতের বিভিন্ন সময়ে সিজদাবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে আনুগত্য প্রকাশ করে, আখিরাতকে ভয় করে এবং তার প্রতিপালকের অনুগ্রহ প্রত্যাশা করে, সে কি তার সমান, যে তা করে না? বল, ‘যারা জানে এবং যারা জানে না, তারা কি সমান’? বোধশক্তি সম্পন্ন লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে।” - (সূরা আয-যুমার: ৯ ); আর আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿يَرۡفَعِ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مِنكُمۡ وَٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡعِلۡمَ دَرَجَٰتٖۚ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ خَبِيرٞ ١١﴾ [ سُورَةُ المجادلة : 11 ]
“তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায় উন্নত করবেন; তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত।” - (সূরা আল-মুজাদালা: ১১)।
আর এর চেয়ে অনেক দূর এগিয়ে বলা যায়, যে কিতাবটি নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ওহী হিসেবে পাঠানো হয়েছে, তা অনেক জ্ঞানগত ইঙ্গিতকে অন্তর্ভুক্ত করেছে, যাকে তার মু‘জিযার অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য করা হয়; কারণ, তাঁর নিকট থেকে বিজ্ঞানময় বাস্তবসত্য নিয়ে আল-কুরআনের যেসব আয়াত এসেছে, তা নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক নিজস্ব রচনা হওয়া কখনও সম্ভব ছিল না; কারণ তিনি ছিলেন নিরক্ষর, পড়তেও পারতেন না এবং লিখতেও জানতেন না; যেমনিভাবে তাঁর সময়কালে এমন কেউ ছিল না, যে এসব বিজ্ঞানময় বাস্তব সত্য বিষয়গুলো জানবেন। যেমন মিষ্টি পানি ও লোনা পানির অস্তিত্ব এবং কোন প্রকার মিশ্রণ ছাড়াই উভয় প্রকার পানির সহ-অবস্থান; আর নক্ষত্র পুঞ্জের বিশালত্ব, নারীর জরায়ুর অন্ধকার জগৎ ... ইত্যাদি সম্পর্কে তাঁর বাণী এবং এগুলো ছাড়াও আলেমগণ আল-কুরআনের মু‘জেযা হিসেবে যা সংকলন করেছেন ও তাদেরকে সে ক্ষেত্রে অমুসলিম পণ্ডিতগণ সমর্থন করেছে; আর তা বিদ্যমান রয়েছে মুদ্রিত ও প্রকাশিত বইপত্র, অডিও ও ভিডিও ক্যাসেট-সিডি ইত্যাদিতে।
আর অনুরূপভাবে সুন্নাহর মধ্যে উল্লেখ আছে মায়ের জরায়ুতে তার ভ্রূণের গঠনের স্তরসমূহের কথা ও অন্যান্য গুঢ় রহস্যের ব্যাপারে, যা সত্যতা বর্তমান বিজ্ঞান প্রমাণ করছে ...।
আল্লাহ তা‘আলা ওহীর মাধ্যমে রাসূলের নিকট যে দীন পাঠিয়েছেন, তাতে যখন রয়েছে এসব বিজ্ঞানময় বাস্তব বিষয়াদির বর্ণনা; সে রাসূল সম্পর্কে এ ধারণা কিভাবে করা যায় যে, তিনি জ্ঞানের সাথে যুদ্ধ করবেন কিংবা জ্ঞানী-পণ্ডিতদেরকে তাদের জ্ঞান চর্চার বিরোধিতা করবেন; বরং ইসলামী বিশ্বে তার সভ্যতা ও সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে কয়েক শতাব্দী কাল ধরে জ্ঞান সম্প্রসারিত হয়েছে শুধু নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দীনে সেটার প্রতি উৎসাহ ও প্রেরণা যোগানোর কারণেই; পরন্ত তিনি গোটা মুসলিম জাতিকেই অপরাধি সাব্যস্ত করেছেন যখন প্রয়োজনীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক ও বিভাগের কোন একটিতে কোন প্রকার ঘাটতি হয়।
অপরদিকে নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের কয়েক শতাব্দী পরে আমরা ইউরোপে অনেক বিজ্ঞানী ও আষ্কিারককে দেখতে পাই, তারা এসব আবিষ্কার এবং জ্ঞানগত চিন্তাধারা ও মতবাদ উদঘাটনে সফল হওয়ার কারণে তাদের উপর মৃত্যুদণ্ড, বঞ্চনা, রব বা মনিবের ইচ্ছার বিরোধিতা করার অপবাদ ও নাস্তিক হওয়ার হুকুম জারি হয়েছে; যেমন ঘটেছে গ্যালেলিও ও অন্যান্যের জীবনে; আর এসব চিন্তাধারা ও মতবাদের স্বীকৃতি মিলেছে বহু প্রাণহানি ও অসংখ্য স্বাধীন চিন্তাবিদের কারাবরণের পর। আর ইসলামের সভ্যতায় এমন ঘটনা কখনও ঘটেনি, যার ভীত রচনা করেছেন রহমতের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর সর্বপ্রথম নাযিলকৃত আয়াত ছিল আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿ ٱقۡرَأۡ بِٱسۡمِ رَبِّكَ ٱلَّذِي خَلَقَ ١ ﴾ [ سُورَةُ العلق : 1 ]
“পাঠ কর তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।” - (সূরা আল-‘আলাক: ১ ); আর অনুরূপভাবে তাঁর নিকট প্রেরিত ওহীর অন্তর্ভুক্ত ছিল আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿أَمَّنۡ هُوَ قَٰنِتٌ ءَانَآءَ ٱلَّيۡلِ سَاجِدٗا وَقَآئِمٗا يَحۡذَرُ ٱلۡأٓخِرَةَ وَيَرۡجُواْ رَحۡمَةَ رَبِّهِۦۗ قُلۡ هَلۡ يَسۡتَوِي ٱلَّذِينَ يَعۡلَمُونَ وَٱلَّذِينَ لَا يَعۡلَمُونَۗ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُوْلُواْ ٱلۡأَلۡبَٰبِ ٩ ﴾ [ سُورَةُ الزُّمَرِ : 9 ]
“যে ব্যক্তি রাতের বিভিন্ন সময়ে সিজদাবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে আনুগত্য প্রকাশ করে, আখিরাতকে ভয় করে এবং তার প্রতিপালকের অনুগ্রহ প্রত্যাশা করে, সে কি তার সমান, যে তা করে না? বল, ‘যারা জানে এবং যারা জানে না, তারা কি সমান’? বোধশক্তি সম্পন্ন লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে।” - (সূরা আয-যুমার: ৯ ); আর আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿يَرۡفَعِ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مِنكُمۡ وَٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡعِلۡمَ دَرَجَٰتٖۚ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ خَبِيرٞ ١١﴾ [ سُورَةُ المجادلة : 11 ]
“তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায় উন্নত করবেন; তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত।” - (সূরা আল-মুজাদালা: ১১)।
আর এর চেয়ে অনেক দূর এগিয়ে বলা যায়, যে কিতাবটি নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ওহী হিসেবে পাঠানো হয়েছে, তা অনেক জ্ঞানগত ইঙ্গিতকে অন্তর্ভুক্ত করেছে, যাকে তার মু‘জিযার অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য করা হয়; কারণ, তাঁর নিকট থেকে বিজ্ঞানময় বাস্তবসত্য নিয়ে আল-কুরআনের যেসব আয়াত এসেছে, তা নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক নিজস্ব রচনা হওয়া কখনও সম্ভব ছিল না; কারণ তিনি ছিলেন নিরক্ষর, পড়তেও পারতেন না এবং লিখতেও জানতেন না; যেমনিভাবে তাঁর সময়কালে এমন কেউ ছিল না, যে এসব বিজ্ঞানময় বাস্তব সত্য বিষয়গুলো জানবেন। যেমন মিষ্টি পানি ও লোনা পানির অস্তিত্ব এবং কোন প্রকার মিশ্রণ ছাড়াই উভয় প্রকার পানির সহ-অবস্থান; আর নক্ষত্র পুঞ্জের বিশালত্ব, নারীর জরায়ুর অন্ধকার জগৎ ... ইত্যাদি সম্পর্কে তাঁর বাণী এবং এগুলো ছাড়াও আলেমগণ আল-কুরআনের মু‘জেযা হিসেবে যা সংকলন করেছেন ও তাদেরকে সে ক্ষেত্রে অমুসলিম পণ্ডিতগণ সমর্থন করেছে; আর তা বিদ্যমান রয়েছে মুদ্রিত ও প্রকাশিত বইপত্র, অডিও ও ভিডিও ক্যাসেট-সিডি ইত্যাদিতে।
আর অনুরূপভাবে সুন্নাহর মধ্যে উল্লেখ আছে মায়ের জরায়ুতে তার ভ্রূণের গঠনের স্তরসমূহের কথা ও অন্যান্য গুঢ় রহস্যের ব্যাপারে, যা সত্যতা বর্তমান বিজ্ঞান প্রমাণ করছে ...।
আল্লাহ তা‘আলা ওহীর মাধ্যমে রাসূলের নিকট যে দীন পাঠিয়েছেন, তাতে যখন রয়েছে এসব বিজ্ঞানময় বাস্তব বিষয়াদির বর্ণনা; সে রাসূল সম্পর্কে এ ধারণা কিভাবে করা যায় যে, তিনি জ্ঞানের সাথে যুদ্ধ করবেন কিংবা জ্ঞানী-পণ্ডিতদেরকে তাদের জ্ঞান চর্চার বিরোধিতা করবেন; বরং ইসলামী বিশ্বে তার সভ্যতা ও সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে কয়েক শতাব্দী কাল ধরে জ্ঞান সম্প্রসারিত হয়েছে শুধু নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দীনে সেটার প্রতি উৎসাহ ও প্রেরণা যোগানোর কারণেই; পরন্ত তিনি গোটা মুসলিম জাতিকেই অপরাধি সাব্যস্ত করেছেন যখন প্রয়োজনীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক ও বিভাগের কোন একটিতে কোন প্রকার ঘাটতি হয়।
অপরদিকে নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের কয়েক শতাব্দী পরে আমরা ইউরোপে অনেক বিজ্ঞানী ও আষ্কিারককে দেখতে পাই, তারা এসব আবিষ্কার এবং জ্ঞানগত চিন্তাধারা ও মতবাদ উদঘাটনে সফল হওয়ার কারণে তাদের উপর মৃত্যুদণ্ড, বঞ্চনা, রব বা মনিবের ইচ্ছার বিরোধিতা করার অপবাদ ও নাস্তিক হওয়ার হুকুম জারি হয়েছে; যেমন ঘটেছে গ্যালেলিও ও অন্যান্যের জীবনে; আর এসব চিন্তাধারা ও মতবাদের স্বীকৃতি মিলেছে বহু প্রাণহানি ও অসংখ্য স্বাধীন চিন্তাবিদের কারাবরণের পর। আর ইসলামের সভ্যতায় এমন ঘটনা কখনও ঘটেনি, যার ভীত রচনা করেছেন রহমতের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত ওহীর মাধ্যমে মানবিক স্বভাব-প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ দীন নিয়ে এসেছেন, যেই দীন আত্মার প্রয়োজন ও দেহের চাহিদা সংরক্ষণ করে এবং দুনিয়ার কাজ ও পরকালের উদ্দেশ্যে কাজের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার কথা বলে; আর মানুষের সহজাত বাসনা ও তার চাহিদাগুলোকে পরিমার্জিত ও পরিশীলিত করে, আর দেহ ও মনের চাহিদাকে বিনষ্ট কিংবা বাধাগ্রস্ত করে না, যেমনিভাবে অন্যান্য জাতির সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে তা করা হয়। তারা তাদের সভতায় এমন বিধান রচনা করেছে যা মানব স্বভাবের বিপরীত দৃষ্টান্ত পেশের ক্ষেত্রে সীমালংঘন করেছে এবং ইবাদত ও প্রার্থনায় আগ্রহীজনদেরকে বিয়ে-সাদীর মত তাদের স্বভাবজাত অধিকারসমূহ থেকে নিষেধ করেছে। আর এ একপেশী নিয়মনীতির কুফল হিসেবে তাদের মানবিক স্বভাবসুলভ কর্মকাণ্ডসমূহ সীমালংঘনকারীদেরকে প্রত্যাখ্যান না করে বরং সে সভ্যতার সন্তান-সন্তুতিদের অধিকাংশকে এই শিক্ষা ও দর্শন থেকে বের করে নিয়ে তাদেরকে শুধু বস্তু জগতের মধ্যে প্রবেশ করিয়েছে, যা নিছক দৈহিক চাহিদা পূরণে সাড়া দেবে এবং আত্মাকে ছেড়ে দেবে বড় ধরনের দুশ্চিন্তায়।
নিশ্চয় যিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইসলামের বার্তা দিয়ে প্রেরণ করেছেন, তিনি হলেন সকল মানুষের স্রষ্টা আল্লাহ তা‘আলা, যিনি তাদের উপযোগী বিষয়ে সম্যক অবগত; আরও জানেন তাদের স্বভাব-প্রকৃতিতে তিনি যা আমানত হিসেবে রেখেছেন এবং সে স্বভাব-প্রকৃতির মধ্যে প্রস্তুতি, সামর্থ্য ও প্রয়োজনীয়তার মধ্যে যা কিছু গচ্ছিত রেখেছেন, সে সম্পর্কেও। এই স্বভাব-প্রকৃতি ততক্ষণ সঠিকভাবে পরিচালিত হতে পারে না, যতক্ষণ তা অতৃপ্ত থাকবে কিংবা তাতে সীমালঙ্ঘন করা হবে; যেমনিভাবে তা সঠিকভাবে পরিচালিত হবে না, যখন সেটাকে তার সাথে সাংঘর্ষিক কোন বিষয়ের দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে; আর এই স্বভাব-প্রকৃতির বিকৃতি ও বিপর্যয়ের কারণে এই পৃথিবীতে মানবজীবনের বিপর্যয় ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়; ফলে মানসিক ব্যাধি ও সামাজিক জটিলতা প্রকাশ পায়; আর এটাই হল পৃথিবীর অধিকাংশ ভূখণ্ডের সমাজগুলোর বাস্তব চিত্র, যাতে সঠিক স্বভাব-প্রকৃতির সাথে বিরোধিতা রয়েছে; যেমন: বিয়ে-শাদী বর্জন করা ও বৈরাগ্য জীবনের প্রতি মনোযোগ দেয়া; অনুরূপভাবে নারীদের মধ্যে একে অপরের সাথে যৌনবিকৃতি তথা সমকামিতা, অথবা পুরুষদের মধ্যে একে অপরের সাথে যৌনবিকৃতি বা সমকামিতার খারাপ স্বভাব-প্রকৃতি বিরোধী কাজ; অনুরূপভাবে পৃথিবীর আবাদ বর্জন করা এবং বিশ্বজগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার দিকে ঝুঁকে পড়া; অথবা বস্তুজগতের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে নিবিষ্ট হওয়া এবং আত্মার প্রয়োজন ও চাহিদার প্রতি কোন প্রকার গুরুত্ব না দিয়েই দৈহিক কামনা-বাসনাকে পরিতৃপ্ত করার জন্য বাড়াবাড়ি করা ... এবং এগুলো ছাড়াও সুস্থ স্বভাব-প্রকৃতি ও তার চাহিদাসমূহের ব্যতিক্রমধর্মী আরও দৃশ্য বিদ্যমান রয়েছে।
ঠিক ঐ সময়ে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে নিয়ে আসা ইসলামী জীবনব্যবস্থার সাথে সম্পর্কিত শিক্ষা ও দর্শনের বিষয়ে চিন্তাশীল ব্যক্তি মানবিক জীবনের বিভিন্ন দিক ও বিভাগের মধ্যে ভারসাম্য দেখতে পাবেন; যেমন: খাওয়া-দাওয়া, পানাহার, বিয়ে-শাদী ও সার্বিক অধিকারসহ দেহের বস্তুগত চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য রয়েছে; ভারসাম্য রয়েছে আল্লাহর ইবাদত, চরিত্রের পরিশুদ্ধির মত তার আধ্যাত্মিক চাহিদার মধ্যে; আর অনুরূপভাবে জ্ঞান, অধ্যয়ন ও আবিষ্কারের প্রতি ভালবাসার মত তার চিন্তা-গবেষণাগত ও যুক্তিনির্ভর চাহিদার মধ্যেও ভারসাম্য রয়েছে।
সুতরাং ইসলাম এসব চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করেছে অত্যন্ত সুশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে, এ ক্ষেত্রে এক দিকের উপর আরেক দিকের কোনো বাড়াবাড়ি নেই; বরং এই ব্যাপারে বাড়াবাড়ি ও অতিরঞ্জনকে বলিষ্ঠতার সাথে নিষেধ করেছে, যেমনিভাবে নিষেধ করেছে শৈথিল্য ও অবহেলা প্রদর্শন করা থেকে। আর সকল অবস্থায় মধ্যমপন্থা ও ভারসাম্যপূর্ণ নীতি অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছে; আর শরীয়ত এসব দাবি ও চাহিদা বাস্তবায়নের ব্যবস্থাপত্র এবং সীমারেখার বিবরণ নিয়েই এসেছে, যা মানুষের স্বভাব-প্রকৃতি এবং যে উদ্দেশ্যে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে, সেই দায়িত্ব ও কর্তব্যের সাথে সাংঘর্ষিক নয়; জেনে রাখ, সেই উদ্দেশ্য হচ্ছে, আল্লাহর ইবাদত করা এবং কল্যাণকামী হয়ে ও সততার সাথে পৃথিবী আবাদ করা। সুতরাং শরীয়ত এমন প্রত্যেক জিনিস বৈধ করে দিয়েছে, যাতে মানুষের জন্য উপকার ও কল্যাণ রয়েছে এবং এমন প্রত্যেক জিনিস থেকে নিষেধ করেছে, যাতে মানুষের জীবনের জন্য, অথবা তার বিবেক-বুদ্ধি বা ধন-সম্পদ অথবা তার শরীরের জন্য বিপর্যয় সৃষ্টিকারী ও ক্ষতিকারক বস্তু রয়েছে।
নিম্নে এতদসংক্রান্ত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর নাযিলকৃত ওহীর কিছু ভাষ্য বর্ণিত হলো:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَسَخَّرَ لَكُم مَّا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِ جَمِيعٗا مِّنۡهُۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّقَوۡمٖ يَتَفَكَّرُونَ ١٣﴾ [ سُورَةُ الجَاثِيةِ : 13 ]
“আর তিনি নিজ অনুগ্রহে তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সমস্ত কিছু, চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে রয়েছে নিদর্শন।” - (সূরা আল-জাসিয়া: ১৩);
সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা এই সৃষ্টিজগতকে এই জন্য সৃষ্টি করেন নি যে, তা নিষ্ফল অবিনোয়োগকারী হিসেবে বিদ্যমান থাকবে, অথবা তার থেকে সৃষ্টি বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকবে। আর আয়াতে উল্লেখিত " سَخَّرَ " শব্দের ব্যাখ্যা হল: তাতে অনুগতকরণ বা বশীভূতকরণের অর্থ রয়েছে; আরও রয়েছে এই সৃষ্টিজগৎ আবিষ্কার করার এবং তার লুক্কায়িত ও গুপ্তধন থেকে ফায়দা হাসিলের সহজ উপায়ের ইঙ্গিত।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ وَٱبۡتَغِ فِيمَآ ءَاتَىٰكَ ٱللَّهُ ٱلدَّارَ ٱلۡأٓخِرَةَۖ وَلَا تَنسَ نَصِيبَكَ مِنَ ٱلدُّنۡيَاۖ وَأَحۡسِن كَمَآ أَحۡسَنَ ٱللَّهُ إِلَيۡكَۖ وَلَا تَبۡغِ ٱلۡفَسَادَ فِي ٱلۡأَرۡضِۖ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُفۡسِدِينَ ٧٧﴾ [ سُورَةُ القَصَصِ : 77 ]
“আল্লাহ যা তোমাকে দিয়েছেন, তা দ্বারা আখিরাতের আবাস অনুসন্ধান কর এবং তোমার দুনিয়ার অংশকে ভুলে যেয়ো না; তুমি অনুগ্রহ কর যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন; আর পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চেয়ো না। আল্লাহ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীকে ভালবাসেন না।” - ( সূরা আল-কাসাস: ৭৭ )।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ رِجَالٞ لَّا تُلۡهِيهِمۡ تِجَٰرَةٞ وَلَا بَيۡعٌ عَن ذِكۡرِ ٱللَّهِ وَإِقَامِ ٱلصَّلَوٰةِ وَإِيتَآءِ ٱلزَّكَوٰةِ يَخَافُونَ يَوۡمٗا تَتَقَلَّبُ فِيهِ ٱلۡقُلُوبُ وَٱلۡأَبۡصَٰرُ ٣٧ ﴾ [ سُورَةُ النور : 37 ]
“সেসব লোক, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে এবং সালাত কায়েম ও যাকাত প্রদান থেকে বিরত রাখে না, তারা ভয় করে সেই দিনকে, যেই দিন অনেক অন্তর ও দৃষ্টি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।” - (সূরা আন-নূর: ৩৭)।
সুতরাং তারা তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সত্ত্বেও আধ্যাত্মিক, ইবাদত ও নৈতিকতার দিকটিকে অবহেলা বা অবজ্ঞা করে না, যা তাকে পরকালে আল্লাহর সামনে হিসাব দেয়ার ব্যাপারে শঙ্কিত করে তোলে।
অতএব আমাদের চিন্তাভাবনা-কল্পনা করে দেখা উচিত, কেমন ছিল সেসব আকিদা-বিশ্বাস ও নৈতিক চরিত্রের অধিকারী ব্যবসায়ীদের চালচলন। অতঃপর আমাদের আরও চিন্তাভাবনা-কল্পনা করা উচিত, যেখানে এ ধরণের মানুষ রয়েছে সেখানে মানুষের জীবন কেমন হতে পারে, জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও তাদের অবস্থা কেমন হতে পারে!!
আর ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে, ঐসব মুসলিম ব্যবসায়ীদের মত ব্যক্তিরাই ছিলেন ইন্দোনেশিয়া, সুদান ইত্যাদির মত দূরবর্তী দেশসমূহের ভিতরে ইসলাম প্রবেশের অন্যতম কারণ; সেখানে কোন প্রকারের দিক-বিজয়ী সৈন্যবাহিনী ছিল না, যেমনটি কেউ কেউ বলে থাকে [কোন কোন ঐতিহাসিক বলেন, এসব দূরবর্তী দেশসমূহে বিজয়ী সৈন্যবাহিনীর অভিযানের ফলে ইসলামের অনুপ্রবেশ ঘটেছে, বাস্তবে বিষয়টি তা নয়। - অনুবাদক।], যারা ইতিহাসকে ভালভাবে অধ্যয়ন করে নি।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَرَهۡبَانِيَّةً ٱبۡتَدَعُوهَا مَا كَتَبۡنَٰهَا عَلَيۡهِمۡ ﴾ [ سُورَةُ الحَدِيدِ : 27 ]
“আর সন্ন্যাসবাদ— এটা তো ওরা নিজেরাই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য প্রত্যাবর্তন করেছিল।” - (সূরা আল-হাদীদ: ২৭ )।
আর আত্মিক ও বস্তুগত ভারসাম্যের ক্ষেত্রে ইসলামের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবচেয়ে বুদ্ধিদীপ্ত কার্যকরী ও দিকনির্দেশনামূলক দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন, এমনকি তিনি কাউকে মানবিক স্বভাব এবং নবী ও রাসূলদের সুন্নাতের বিরোধী চিন্তা করতে দেখলে তার প্রতি কঠোরভাবে রাগান্বিত হয়ে যেতেন; কোন একবার তাঁর নিকট সংবাদ পৌঁছল যে, কিছু সংখ্যক লোক প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে- তারা ঘুম, বিয়ে-শাদী ও পানাহার থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে বেশি বেশি আল্লাহর ইবাদতে ব্যস্ত থাকবে; তখন তাঁর অবস্থান ছিল অত্যন্ত কঠোর ও অনড়, সেই ভারসাম্যপূর্ণ নীতি অক্ষুণ্ন রাখার জন্য যা দিয়ে তাঁকে প্রেরণ করা হয়েছে। অতএব আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
« جاء ثلاث رهط إلى بيوت أزواج النبي صلى الله عليه و سلم يسألون عن عبادة النبي صلى الله عليه و سلم فلما أخبروا كأنهم تقالوها فقالوا : أين نحن من النبي صلى الله عليه و سلم ؟ قد غفر الله له ما تقدم من ذنبه وما تأخر قال أحدهم : أما أنا فإني أصلي الليل أبدا وقال آخر أنا أصوم الدهر ولا أفطر وقال آخر أنا أعتزل النساء فلا أتزوج أبدا فجاء رسول الله صلى الله عليه و سلم فقال : أنتم الذين قلتم كذا وكذا ؟ أما والله أتي لأخشاكم لله وأتقاكم له لكني أصوم وأفطر وأصلي وأرقد وأتزوج النساء فمن رغب عن سنتي فليس مني » .( أخرجه البخاري و مسلم ).
“তিন জনের একটি দল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণের আগমন করল; যখন তাদেরকে এ সম্পর্কে অবহিত করা হল, তখন তারা এ ইবাদতের পরিমাণ যেন কম মনে করল এবং বলল, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমকক্ষ হতে পারি না। কারণ, তার আগে ও পরের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়েছে। এমন সময় তাদের মধ্য থেকে একজন বলল, আমি সারা জীবন রাতের সালাত আদায় করতে থাকব। অপর একজন বলল, আমি সারা বছর রোযা পালন করব এবং কখনও বিরতি দেব না। অপরজন বলল, আমি নারী বিবর্জিত থাকব- কখনও বিয়ে করব না। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিকট এলেন এবং বললেন: “তোমরা কি ঐ সকল ব্যক্তি, যারা এরূপ কথাবার্তা বলেছ? আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহকে তোমাদের চেয়ে বেশি ভয় করি এবং তোমাদের চেয়ে তাঁর প্রতি আমি বেশি আনুগত্যশীল; অথচ আমি রোযা পালন করি, আবার রোযা রাখা থেকে বিরতও থাকি। সালাত আদায় করি এবং ঘুমাই ও বিয়ে-শাদী করি। সুতরাং যারা আমার সুন্নাতের প্রতি বিরাগ ভাব পোষণ করবে, তারা আমার দলভূক্ত নয়।” -( বুখারী, বিবাহ অধ্যায়, বাব নং- ১, হাদিস নং- ৪৭৭৬; মুসলিম, বিবাহ অধ্যায়, বাব নং- ১, হাদিস নং- ৩৪৬৯)।
যেমনিভাবে তিনি উৎসাহিত করেছেন শ্রম ও কষ্টকর কাজের প্রতি এবং এই ধরনের কষ্টার্জিত উপার্জন থেকে খাওয়াকে মানুষের জন্য শ্রেষ্ঠ ও উত্তম খাবার বলে নির্ধারণ করেছেন; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ما أكل أحد طعاما قط خيرا من أن يأكل من عمل يده وإن نبي الله داود عليه السلام كان يأكل من عمل يده » .( أخرجه البخاري ).
“নিজ হাতে উপার্জিত জীবিকার খাদ্যের চেয়ে উত্তম খাদ্য কখনও কেউ খায় না। আল্লাহর নবী দাউদ আ. নিজ হাতে উপার্জন করে খেতেন।” -( বুখারী, ক্রয়-বিক্রয় অধ্যায়, বাব নং- ১৫, হাদিস নং- ১৯৬৬)।
নিশ্চয় যিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইসলামের বার্তা দিয়ে প্রেরণ করেছেন, তিনি হলেন সকল মানুষের স্রষ্টা আল্লাহ তা‘আলা, যিনি তাদের উপযোগী বিষয়ে সম্যক অবগত; আরও জানেন তাদের স্বভাব-প্রকৃতিতে তিনি যা আমানত হিসেবে রেখেছেন এবং সে স্বভাব-প্রকৃতির মধ্যে প্রস্তুতি, সামর্থ্য ও প্রয়োজনীয়তার মধ্যে যা কিছু গচ্ছিত রেখেছেন, সে সম্পর্কেও। এই স্বভাব-প্রকৃতি ততক্ষণ সঠিকভাবে পরিচালিত হতে পারে না, যতক্ষণ তা অতৃপ্ত থাকবে কিংবা তাতে সীমালঙ্ঘন করা হবে; যেমনিভাবে তা সঠিকভাবে পরিচালিত হবে না, যখন সেটাকে তার সাথে সাংঘর্ষিক কোন বিষয়ের দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে; আর এই স্বভাব-প্রকৃতির বিকৃতি ও বিপর্যয়ের কারণে এই পৃথিবীতে মানবজীবনের বিপর্যয় ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়; ফলে মানসিক ব্যাধি ও সামাজিক জটিলতা প্রকাশ পায়; আর এটাই হল পৃথিবীর অধিকাংশ ভূখণ্ডের সমাজগুলোর বাস্তব চিত্র, যাতে সঠিক স্বভাব-প্রকৃতির সাথে বিরোধিতা রয়েছে; যেমন: বিয়ে-শাদী বর্জন করা ও বৈরাগ্য জীবনের প্রতি মনোযোগ দেয়া; অনুরূপভাবে নারীদের মধ্যে একে অপরের সাথে যৌনবিকৃতি তথা সমকামিতা, অথবা পুরুষদের মধ্যে একে অপরের সাথে যৌনবিকৃতি বা সমকামিতার খারাপ স্বভাব-প্রকৃতি বিরোধী কাজ; অনুরূপভাবে পৃথিবীর আবাদ বর্জন করা এবং বিশ্বজগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার দিকে ঝুঁকে পড়া; অথবা বস্তুজগতের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে নিবিষ্ট হওয়া এবং আত্মার প্রয়োজন ও চাহিদার প্রতি কোন প্রকার গুরুত্ব না দিয়েই দৈহিক কামনা-বাসনাকে পরিতৃপ্ত করার জন্য বাড়াবাড়ি করা ... এবং এগুলো ছাড়াও সুস্থ স্বভাব-প্রকৃতি ও তার চাহিদাসমূহের ব্যতিক্রমধর্মী আরও দৃশ্য বিদ্যমান রয়েছে।
ঠিক ঐ সময়ে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে নিয়ে আসা ইসলামী জীবনব্যবস্থার সাথে সম্পর্কিত শিক্ষা ও দর্শনের বিষয়ে চিন্তাশীল ব্যক্তি মানবিক জীবনের বিভিন্ন দিক ও বিভাগের মধ্যে ভারসাম্য দেখতে পাবেন; যেমন: খাওয়া-দাওয়া, পানাহার, বিয়ে-শাদী ও সার্বিক অধিকারসহ দেহের বস্তুগত চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য রয়েছে; ভারসাম্য রয়েছে আল্লাহর ইবাদত, চরিত্রের পরিশুদ্ধির মত তার আধ্যাত্মিক চাহিদার মধ্যে; আর অনুরূপভাবে জ্ঞান, অধ্যয়ন ও আবিষ্কারের প্রতি ভালবাসার মত তার চিন্তা-গবেষণাগত ও যুক্তিনির্ভর চাহিদার মধ্যেও ভারসাম্য রয়েছে।
সুতরাং ইসলাম এসব চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করেছে অত্যন্ত সুশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে, এ ক্ষেত্রে এক দিকের উপর আরেক দিকের কোনো বাড়াবাড়ি নেই; বরং এই ব্যাপারে বাড়াবাড়ি ও অতিরঞ্জনকে বলিষ্ঠতার সাথে নিষেধ করেছে, যেমনিভাবে নিষেধ করেছে শৈথিল্য ও অবহেলা প্রদর্শন করা থেকে। আর সকল অবস্থায় মধ্যমপন্থা ও ভারসাম্যপূর্ণ নীতি অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছে; আর শরীয়ত এসব দাবি ও চাহিদা বাস্তবায়নের ব্যবস্থাপত্র এবং সীমারেখার বিবরণ নিয়েই এসেছে, যা মানুষের স্বভাব-প্রকৃতি এবং যে উদ্দেশ্যে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে, সেই দায়িত্ব ও কর্তব্যের সাথে সাংঘর্ষিক নয়; জেনে রাখ, সেই উদ্দেশ্য হচ্ছে, আল্লাহর ইবাদত করা এবং কল্যাণকামী হয়ে ও সততার সাথে পৃথিবী আবাদ করা। সুতরাং শরীয়ত এমন প্রত্যেক জিনিস বৈধ করে দিয়েছে, যাতে মানুষের জন্য উপকার ও কল্যাণ রয়েছে এবং এমন প্রত্যেক জিনিস থেকে নিষেধ করেছে, যাতে মানুষের জীবনের জন্য, অথবা তার বিবেক-বুদ্ধি বা ধন-সম্পদ অথবা তার শরীরের জন্য বিপর্যয় সৃষ্টিকারী ও ক্ষতিকারক বস্তু রয়েছে।
নিম্নে এতদসংক্রান্ত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর নাযিলকৃত ওহীর কিছু ভাষ্য বর্ণিত হলো:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَسَخَّرَ لَكُم مَّا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِ جَمِيعٗا مِّنۡهُۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّقَوۡمٖ يَتَفَكَّرُونَ ١٣﴾ [ سُورَةُ الجَاثِيةِ : 13 ]
“আর তিনি নিজ অনুগ্রহে তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সমস্ত কিছু, চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে রয়েছে নিদর্শন।” - (সূরা আল-জাসিয়া: ১৩);
সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা এই সৃষ্টিজগতকে এই জন্য সৃষ্টি করেন নি যে, তা নিষ্ফল অবিনোয়োগকারী হিসেবে বিদ্যমান থাকবে, অথবা তার থেকে সৃষ্টি বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকবে। আর আয়াতে উল্লেখিত " سَخَّرَ " শব্দের ব্যাখ্যা হল: তাতে অনুগতকরণ বা বশীভূতকরণের অর্থ রয়েছে; আরও রয়েছে এই সৃষ্টিজগৎ আবিষ্কার করার এবং তার লুক্কায়িত ও গুপ্তধন থেকে ফায়দা হাসিলের সহজ উপায়ের ইঙ্গিত।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ وَٱبۡتَغِ فِيمَآ ءَاتَىٰكَ ٱللَّهُ ٱلدَّارَ ٱلۡأٓخِرَةَۖ وَلَا تَنسَ نَصِيبَكَ مِنَ ٱلدُّنۡيَاۖ وَأَحۡسِن كَمَآ أَحۡسَنَ ٱللَّهُ إِلَيۡكَۖ وَلَا تَبۡغِ ٱلۡفَسَادَ فِي ٱلۡأَرۡضِۖ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُفۡسِدِينَ ٧٧﴾ [ سُورَةُ القَصَصِ : 77 ]
“আল্লাহ যা তোমাকে দিয়েছেন, তা দ্বারা আখিরাতের আবাস অনুসন্ধান কর এবং তোমার দুনিয়ার অংশকে ভুলে যেয়ো না; তুমি অনুগ্রহ কর যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন; আর পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চেয়ো না। আল্লাহ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীকে ভালবাসেন না।” - ( সূরা আল-কাসাস: ৭৭ )।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ رِجَالٞ لَّا تُلۡهِيهِمۡ تِجَٰرَةٞ وَلَا بَيۡعٌ عَن ذِكۡرِ ٱللَّهِ وَإِقَامِ ٱلصَّلَوٰةِ وَإِيتَآءِ ٱلزَّكَوٰةِ يَخَافُونَ يَوۡمٗا تَتَقَلَّبُ فِيهِ ٱلۡقُلُوبُ وَٱلۡأَبۡصَٰرُ ٣٧ ﴾ [ سُورَةُ النور : 37 ]
“সেসব লোক, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে এবং সালাত কায়েম ও যাকাত প্রদান থেকে বিরত রাখে না, তারা ভয় করে সেই দিনকে, যেই দিন অনেক অন্তর ও দৃষ্টি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।” - (সূরা আন-নূর: ৩৭)।
সুতরাং তারা তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সত্ত্বেও আধ্যাত্মিক, ইবাদত ও নৈতিকতার দিকটিকে অবহেলা বা অবজ্ঞা করে না, যা তাকে পরকালে আল্লাহর সামনে হিসাব দেয়ার ব্যাপারে শঙ্কিত করে তোলে।
অতএব আমাদের চিন্তাভাবনা-কল্পনা করে দেখা উচিত, কেমন ছিল সেসব আকিদা-বিশ্বাস ও নৈতিক চরিত্রের অধিকারী ব্যবসায়ীদের চালচলন। অতঃপর আমাদের আরও চিন্তাভাবনা-কল্পনা করা উচিত, যেখানে এ ধরণের মানুষ রয়েছে সেখানে মানুষের জীবন কেমন হতে পারে, জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও তাদের অবস্থা কেমন হতে পারে!!
আর ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে, ঐসব মুসলিম ব্যবসায়ীদের মত ব্যক্তিরাই ছিলেন ইন্দোনেশিয়া, সুদান ইত্যাদির মত দূরবর্তী দেশসমূহের ভিতরে ইসলাম প্রবেশের অন্যতম কারণ; সেখানে কোন প্রকারের দিক-বিজয়ী সৈন্যবাহিনী ছিল না, যেমনটি কেউ কেউ বলে থাকে [কোন কোন ঐতিহাসিক বলেন, এসব দূরবর্তী দেশসমূহে বিজয়ী সৈন্যবাহিনীর অভিযানের ফলে ইসলামের অনুপ্রবেশ ঘটেছে, বাস্তবে বিষয়টি তা নয়। - অনুবাদক।], যারা ইতিহাসকে ভালভাবে অধ্যয়ন করে নি।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَرَهۡبَانِيَّةً ٱبۡتَدَعُوهَا مَا كَتَبۡنَٰهَا عَلَيۡهِمۡ ﴾ [ سُورَةُ الحَدِيدِ : 27 ]
“আর সন্ন্যাসবাদ— এটা তো ওরা নিজেরাই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য প্রত্যাবর্তন করেছিল।” - (সূরা আল-হাদীদ: ২৭ )।
আর আত্মিক ও বস্তুগত ভারসাম্যের ক্ষেত্রে ইসলামের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবচেয়ে বুদ্ধিদীপ্ত কার্যকরী ও দিকনির্দেশনামূলক দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন, এমনকি তিনি কাউকে মানবিক স্বভাব এবং নবী ও রাসূলদের সুন্নাতের বিরোধী চিন্তা করতে দেখলে তার প্রতি কঠোরভাবে রাগান্বিত হয়ে যেতেন; কোন একবার তাঁর নিকট সংবাদ পৌঁছল যে, কিছু সংখ্যক লোক প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে- তারা ঘুম, বিয়ে-শাদী ও পানাহার থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে বেশি বেশি আল্লাহর ইবাদতে ব্যস্ত থাকবে; তখন তাঁর অবস্থান ছিল অত্যন্ত কঠোর ও অনড়, সেই ভারসাম্যপূর্ণ নীতি অক্ষুণ্ন রাখার জন্য যা দিয়ে তাঁকে প্রেরণ করা হয়েছে। অতএব আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
« جاء ثلاث رهط إلى بيوت أزواج النبي صلى الله عليه و سلم يسألون عن عبادة النبي صلى الله عليه و سلم فلما أخبروا كأنهم تقالوها فقالوا : أين نحن من النبي صلى الله عليه و سلم ؟ قد غفر الله له ما تقدم من ذنبه وما تأخر قال أحدهم : أما أنا فإني أصلي الليل أبدا وقال آخر أنا أصوم الدهر ولا أفطر وقال آخر أنا أعتزل النساء فلا أتزوج أبدا فجاء رسول الله صلى الله عليه و سلم فقال : أنتم الذين قلتم كذا وكذا ؟ أما والله أتي لأخشاكم لله وأتقاكم له لكني أصوم وأفطر وأصلي وأرقد وأتزوج النساء فمن رغب عن سنتي فليس مني » .( أخرجه البخاري و مسلم ).
“তিন জনের একটি দল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণের আগমন করল; যখন তাদেরকে এ সম্পর্কে অবহিত করা হল, তখন তারা এ ইবাদতের পরিমাণ যেন কম মনে করল এবং বলল, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমকক্ষ হতে পারি না। কারণ, তার আগে ও পরের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়েছে। এমন সময় তাদের মধ্য থেকে একজন বলল, আমি সারা জীবন রাতের সালাত আদায় করতে থাকব। অপর একজন বলল, আমি সারা বছর রোযা পালন করব এবং কখনও বিরতি দেব না। অপরজন বলল, আমি নারী বিবর্জিত থাকব- কখনও বিয়ে করব না। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিকট এলেন এবং বললেন: “তোমরা কি ঐ সকল ব্যক্তি, যারা এরূপ কথাবার্তা বলেছ? আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহকে তোমাদের চেয়ে বেশি ভয় করি এবং তোমাদের চেয়ে তাঁর প্রতি আমি বেশি আনুগত্যশীল; অথচ আমি রোযা পালন করি, আবার রোযা রাখা থেকে বিরতও থাকি। সালাত আদায় করি এবং ঘুমাই ও বিয়ে-শাদী করি। সুতরাং যারা আমার সুন্নাতের প্রতি বিরাগ ভাব পোষণ করবে, তারা আমার দলভূক্ত নয়।” -( বুখারী, বিবাহ অধ্যায়, বাব নং- ১, হাদিস নং- ৪৭৭৬; মুসলিম, বিবাহ অধ্যায়, বাব নং- ১, হাদিস নং- ৩৪৬৯)।
যেমনিভাবে তিনি উৎসাহিত করেছেন শ্রম ও কষ্টকর কাজের প্রতি এবং এই ধরনের কষ্টার্জিত উপার্জন থেকে খাওয়াকে মানুষের জন্য শ্রেষ্ঠ ও উত্তম খাবার বলে নির্ধারণ করেছেন; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ما أكل أحد طعاما قط خيرا من أن يأكل من عمل يده وإن نبي الله داود عليه السلام كان يأكل من عمل يده » .( أخرجه البخاري ).
“নিজ হাতে উপার্জিত জীবিকার খাদ্যের চেয়ে উত্তম খাদ্য কখনও কেউ খায় না। আল্লাহর নবী দাউদ আ. নিজ হাতে উপার্জন করে খেতেন।” -( বুখারী, ক্রয়-বিক্রয় অধ্যায়, বাব নং- ১৫, হাদিস নং- ১৯৬৬)।
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানবজাতির জন্য মানব সন্তানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের ব্যাপারে পরিপূর্ণ নমুনা পেশ করেছেন এবং তিনি জানিয়ে দিয়েছেন যে, মানবজাতির এক শ্রেণীর উপর অপর শ্রেণীর কোন বিশেষ মর্যাদা নেই; কারণ, তারা সকলেই সৃষ্টির মূল উপাদান, অধিকার এবং দায়িত্ব ও কর্তব্যের ক্ষেত্রে সমান; আর একজনের উপর আরেক জনের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই, তবে তার ঈমান ও আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করার পরিমাণ অনুযায়ী পরস্পরের শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারিত হবে; আর তিনি তাঁর সাহাবীদের মধ্যে দীনের খেদমত ও তাঁর সাথে সম্পৃক্ত থাকার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রুমী সুহাইব, হাবশী বেলাল ও ফারসী সালমান তাদের আরব ভাইদের পাশাপাশি অবস্থানে ছিল।
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন এক সমাজে বসবাস করেন, যাকে ঢেকে ফেলেছে সামাজিক, বস্তগত ও বংশগত বৈষম্যের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত শ্রেণীভেদ; আর এই অবস্থা বিশেষভাবে আরব উপ-দ্বীপের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং এই অবস্থা ছিল তৎকালীন সময়ের সারা বিশ্বে। আর এই কারণেই আমরা একটা মহাপরিবর্তন দেখতে পাই, যে দিকে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরব ও অন্যান্য ভূ-খণ্ডের অধিবাসীকে পরিবর্তন করে নিয়ে এসেছেন এমন শিক্ষার মাধ্যমে, যে শিক্ষাকে তিনি তাঁর প্রতিপালক আল্লাহ সুবহানহু ওয়া তা‘আলার পক্ষ থেকে প্রাপ্ত ওহীর মাধমে নিয়ে এসেছেন; যেমন তিনি আহ্বান করতেন মানব সন্তানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও সমতা প্রতিষ্ঠার দিকে; আর তিনি একজন মানুষকে অপর আরেকজন মানুষ থেকে মর্যদাগত পার্থক্য ও শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি ও সীমারেখা বর্ণনা করে দিয়েছেন; আর তা হল তাকওয়া (আল্লাহ-সচেতনতা, চরিত্র, পরোপকার ও সৎকর্মের বাস্তব অনুসরণ; আর পার্থক্যকরণ অথবা শ্রেষ্ঠত্বের ক্ষেত্রে বাহ্যিক বেশ-ভূষা, বর্ণ ও বংশের কোনটিরই কোন প্রভাব নেই।
আরবের অবস্থা এমন ছিল যে, তারা বিভিন্ন যুদ্ধে তরবারির জোরে অথবা অপর কোনো পরিবেশে কুটকৌশল ও প্রবঞ্চনার মাধ্যমে অনেক স্বাধীন মানুষকে দাস-দাসীতে পরিণত করত। আর দাস-দাসীর ব্যাপরে কেউ কোন কথা বলত না; তাদেরকে পণ্যসামগ্রী হিসেবে বিবেচনা করা হত, তার মনিবের তার উপর ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকার ছিল, যেমনিভাবে তার পছন্দ হত, এমনকি সে যদি ইচ্ছা করে যে, তাকে সে মেরে ফেলবে, তবে এই ব্যাপারে কোন তিরস্কারকারী তাকে তিরস্কার করবে না, অথবা কোন বিবেকবান ব্যক্তিও তার নিন্দা করবে না; এমনকি দাসীদেরকে পতিতা পেশায় বাধ্য করা হত, যাতে তাদের মনিবগণ মজুরি বা অর্থ উপার্জন করতে পারে; আর গোলামদেরকে কষ্টকর কাজে বাধ্য করত, যেমনিভাবে চতুষ্পদ জন্তুকে পরিচালিত করা হয়। আর এত সব কিছুর পরেও আশ্চর্যের বিষয় ছিল যে, দাস-দাসীর মধ্য থেকে কোন বিরোধী বা প্রতিরোধকারীর কণ্ঠ শোনা যেত না!! আর কিভাবেই বা তা সম্ভব হত, তারা তো জানত যে, এটাই জীবনের স্বাভাবিক নিয়ম।
অতঃপর সেই পরিবর্তনটা ছিল এমন, যা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ সমাজের মধ্যে নিয়ে এসেছিলেন, তিনি আল্লাহ তা‘আলার ওহীর মাধ্যমে ঘোষণা করলেন যে, এই সমাজের মধ্যে স্বীকৃত এসব বৈষম্যের কোন মূল্য ও গ্রহণযোগ্যতা নেই; আর তিনি এই ঘোষণা তিনি ঐ সমাজের প্রধান ব্যক্তিবর্গের সামনেই দিলেন এবং এই ব্যাপারে তিনি কোন প্রকার অবহেলা ও শৈথিল্য প্রদর্শন করেন নি।
এই প্রসঙ্গে তাঁর উদ্দেশ্যে প্রেরীত আল্লাহর ওহী হল:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنَّا خَلَقۡنَٰكُم مِّن ذَكَرٖ وَأُنثَىٰ وَجَعَلۡنَٰكُمۡ شُعُوبٗا وَقَبَآئِلَ لِتَعَارَفُوٓاْۚ إِنَّ أَكۡرَمَكُمۡ عِندَ ٱللَّهِ أَتۡقَىٰكُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٞ ١٣﴾ [ سُورَةُ الحُجُرَاتِ : 13 ]
“হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী থেকে, পরে তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্র, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সে ব্যক্তিই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন, যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকী। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল কিছু জানেন, সমস্ত খবর রাখেন।” - ( সূরা আল-হুজুরাত: ১৩ )।
আর তিনি মানব সৃষ্টির মূল উপাদানের বিষয়ে আল-কুরআনুল কারীমের বহু জায়গায় বর্ণনা করেছেন; তন্মধ্যে যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَلَقَدۡ خَلَقۡنَا ٱلۡإِنسَٰنَ مِن سُلَٰلَةٖ مِّن طِينٖ ١٢ ﴾ [ سُورَةُ المُؤۡمِنُونَ : 12]
“আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মাটির উপাদান থেকে।” - (সূরা আল-মুমিনুন: ১২ )।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ هُوَ ٱلَّذِي خَلَقَكُم مِّن طِينٖ ثُمَّ قَضَىٰٓ أَجَلٗاۖ وَأَجَلٞ مُّسَمًّى عِندَهُۥۖ ثُمَّ أَنتُمۡ تَمۡتَرُونَ ٢ ﴾ [ سُورَةُ الأَنعَامِ : 2 ]
“তিনিই তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর এক কাল নির্দিষ্ট করেছেন এবং আর একটি নির্ধারিত কাল আছে, যা তিনিই জ্ঞাত, এতদসত্ত্বেও তোমরা সন্দেহ কর।” - ( সূরা আল-আন‘আম: ২)।
আর আল্লাহর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«يا أيها الناس ألا إن ربكم واحد , وإن أباكم واحد , ألا لا فضل لعربي على أعجمي ولا لعجمي على عربي ولا لأحمر على أسود ولا أسود على أحمر إلا بالتقوى» .( أخرجه الإمام أحمد ).
“হে মানবজাতি! জেনে রাখ, নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক এক; আর তোমাদের পিতাও এক; সাবধান! তাকওয়া ছাড়া অনারবীর উপর আরবীর, আরবীর উপর অনারবীর, কৃষ্ণাঙ্গের উপর শ্বেতাঙ্গের এবং শ্বেতাঙ্গের উপর কৃষ্ণাঙ্গের কোন বাড়তি মর্যাদা নেই।” -(ইমাম আহমদ, মুসনাদ, হাদিস নং- ২৩৫৩৬)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
« ... والناس بنو آدم وخلق الله آدم من تراب ...» .( أخرجه الترمذي ).
“ ... আর মানবজাতি আদমের সন্তান; আর আল্লাহ তা‘আলা আদমকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন ...।” - ( তিরমিযী)।
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন এক সমাজে বসবাস করেন, যাকে ঢেকে ফেলেছে সামাজিক, বস্তগত ও বংশগত বৈষম্যের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত শ্রেণীভেদ; আর এই অবস্থা বিশেষভাবে আরব উপ-দ্বীপের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং এই অবস্থা ছিল তৎকালীন সময়ের সারা বিশ্বে। আর এই কারণেই আমরা একটা মহাপরিবর্তন দেখতে পাই, যে দিকে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরব ও অন্যান্য ভূ-খণ্ডের অধিবাসীকে পরিবর্তন করে নিয়ে এসেছেন এমন শিক্ষার মাধ্যমে, যে শিক্ষাকে তিনি তাঁর প্রতিপালক আল্লাহ সুবহানহু ওয়া তা‘আলার পক্ষ থেকে প্রাপ্ত ওহীর মাধমে নিয়ে এসেছেন; যেমন তিনি আহ্বান করতেন মানব সন্তানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও সমতা প্রতিষ্ঠার দিকে; আর তিনি একজন মানুষকে অপর আরেকজন মানুষ থেকে মর্যদাগত পার্থক্য ও শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি ও সীমারেখা বর্ণনা করে দিয়েছেন; আর তা হল তাকওয়া (আল্লাহ-সচেতনতা, চরিত্র, পরোপকার ও সৎকর্মের বাস্তব অনুসরণ; আর পার্থক্যকরণ অথবা শ্রেষ্ঠত্বের ক্ষেত্রে বাহ্যিক বেশ-ভূষা, বর্ণ ও বংশের কোনটিরই কোন প্রভাব নেই।
আরবের অবস্থা এমন ছিল যে, তারা বিভিন্ন যুদ্ধে তরবারির জোরে অথবা অপর কোনো পরিবেশে কুটকৌশল ও প্রবঞ্চনার মাধ্যমে অনেক স্বাধীন মানুষকে দাস-দাসীতে পরিণত করত। আর দাস-দাসীর ব্যাপরে কেউ কোন কথা বলত না; তাদেরকে পণ্যসামগ্রী হিসেবে বিবেচনা করা হত, তার মনিবের তার উপর ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকার ছিল, যেমনিভাবে তার পছন্দ হত, এমনকি সে যদি ইচ্ছা করে যে, তাকে সে মেরে ফেলবে, তবে এই ব্যাপারে কোন তিরস্কারকারী তাকে তিরস্কার করবে না, অথবা কোন বিবেকবান ব্যক্তিও তার নিন্দা করবে না; এমনকি দাসীদেরকে পতিতা পেশায় বাধ্য করা হত, যাতে তাদের মনিবগণ মজুরি বা অর্থ উপার্জন করতে পারে; আর গোলামদেরকে কষ্টকর কাজে বাধ্য করত, যেমনিভাবে চতুষ্পদ জন্তুকে পরিচালিত করা হয়। আর এত সব কিছুর পরেও আশ্চর্যের বিষয় ছিল যে, দাস-দাসীর মধ্য থেকে কোন বিরোধী বা প্রতিরোধকারীর কণ্ঠ শোনা যেত না!! আর কিভাবেই বা তা সম্ভব হত, তারা তো জানত যে, এটাই জীবনের স্বাভাবিক নিয়ম।
অতঃপর সেই পরিবর্তনটা ছিল এমন, যা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ সমাজের মধ্যে নিয়ে এসেছিলেন, তিনি আল্লাহ তা‘আলার ওহীর মাধ্যমে ঘোষণা করলেন যে, এই সমাজের মধ্যে স্বীকৃত এসব বৈষম্যের কোন মূল্য ও গ্রহণযোগ্যতা নেই; আর তিনি এই ঘোষণা তিনি ঐ সমাজের প্রধান ব্যক্তিবর্গের সামনেই দিলেন এবং এই ব্যাপারে তিনি কোন প্রকার অবহেলা ও শৈথিল্য প্রদর্শন করেন নি।
এই প্রসঙ্গে তাঁর উদ্দেশ্যে প্রেরীত আল্লাহর ওহী হল:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنَّا خَلَقۡنَٰكُم مِّن ذَكَرٖ وَأُنثَىٰ وَجَعَلۡنَٰكُمۡ شُعُوبٗا وَقَبَآئِلَ لِتَعَارَفُوٓاْۚ إِنَّ أَكۡرَمَكُمۡ عِندَ ٱللَّهِ أَتۡقَىٰكُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٞ ١٣﴾ [ سُورَةُ الحُجُرَاتِ : 13 ]
“হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী থেকে, পরে তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্র, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সে ব্যক্তিই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন, যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকী। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল কিছু জানেন, সমস্ত খবর রাখেন।” - ( সূরা আল-হুজুরাত: ১৩ )।
আর তিনি মানব সৃষ্টির মূল উপাদানের বিষয়ে আল-কুরআনুল কারীমের বহু জায়গায় বর্ণনা করেছেন; তন্মধ্যে যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَلَقَدۡ خَلَقۡنَا ٱلۡإِنسَٰنَ مِن سُلَٰلَةٖ مِّن طِينٖ ١٢ ﴾ [ سُورَةُ المُؤۡمِنُونَ : 12]
“আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মাটির উপাদান থেকে।” - (সূরা আল-মুমিনুন: ১২ )।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ هُوَ ٱلَّذِي خَلَقَكُم مِّن طِينٖ ثُمَّ قَضَىٰٓ أَجَلٗاۖ وَأَجَلٞ مُّسَمًّى عِندَهُۥۖ ثُمَّ أَنتُمۡ تَمۡتَرُونَ ٢ ﴾ [ سُورَةُ الأَنعَامِ : 2 ]
“তিনিই তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর এক কাল নির্দিষ্ট করেছেন এবং আর একটি নির্ধারিত কাল আছে, যা তিনিই জ্ঞাত, এতদসত্ত্বেও তোমরা সন্দেহ কর।” - ( সূরা আল-আন‘আম: ২)।
আর আল্লাহর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«يا أيها الناس ألا إن ربكم واحد , وإن أباكم واحد , ألا لا فضل لعربي على أعجمي ولا لعجمي على عربي ولا لأحمر على أسود ولا أسود على أحمر إلا بالتقوى» .( أخرجه الإمام أحمد ).
“হে মানবজাতি! জেনে রাখ, নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক এক; আর তোমাদের পিতাও এক; সাবধান! তাকওয়া ছাড়া অনারবীর উপর আরবীর, আরবীর উপর অনারবীর, কৃষ্ণাঙ্গের উপর শ্বেতাঙ্গের এবং শ্বেতাঙ্গের উপর কৃষ্ণাঙ্গের কোন বাড়তি মর্যাদা নেই।” -(ইমাম আহমদ, মুসনাদ, হাদিস নং- ২৩৫৩৬)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
« ... والناس بنو آدم وخلق الله آدم من تراب ...» .( أخرجه الترمذي ).
“ ... আর মানবজাতি আদমের সন্তান; আর আল্লাহ তা‘আলা আদমকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন ...।” - ( তিরমিযী)।
পূর্বে আলোচিত এই দশটি পয়েন্টের প্রত্যেকটি পয়েন্টই ব্যাপক ও বিস্তারিত আলোচনার দাবি করে। আর এগুলোর সপক্ষে তাকিদ দিয়ে দলিল-প্রমাণের উল্লেখকরণ এই প্রকাশনাটিতে স্থান কুলোন সম্ভব নয়। তাছাড়া মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে প্রাপ্ত ওহীর মাধ্যমে মানবজাতির জন্য যা পেশ করেছেন, তন্মধ্য থেকে অনেক বিষয়ে পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের ন্যায়পন্থীগণ এই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন-চরিত অধ্যয়নের পর কথা বলেছেন; সুতরাং তাদের পক্ষ থেকে আগত সাক্ষ্য-সনদ বা প্রত্যয়নের ভিত্তি হল জ্ঞান ও স্রেফ গবেষণা; আর এটাই হল বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানগত গবেষণার বৈশিষ্ট্য, যা কোন প্রকার কম-বেশি ও কাটছাঁট না করেই প্রকৃত সিদ্ধান্তে পৌঁছিয়ে দেয়।
আর অচিরেই এসব মূল্যবান সাক্ষ্য-সনদের আলোচনা- ইসলামের নবী মুহাম্মদ ইবন আবদুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিচিতিমূলক এই সিরিজের দ্বিতীয় প্রকাশে আসছে- ইনশাআল্লাহ; যার শিরোনাম হল:
“মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাপারে ন্যায়পন্থীদের উক্তি”
( أقوال المنصفين في محمد صلى الله عليه و سلم ) ।
এর চেয়ে আরও বেশি জানার জন্য দেখা যেতে পারে রহমতের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিচয়দানে আন্তর্জাতিক কার্যক্রমের এই ঠিকানায়: www.mercyprohet.com
و صلى الله و سلم على نبينا محمد و على إخوانه من النبيين و على آله و صحبه و التابعين .
আর অচিরেই এসব মূল্যবান সাক্ষ্য-সনদের আলোচনা- ইসলামের নবী মুহাম্মদ ইবন আবদুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিচিতিমূলক এই সিরিজের দ্বিতীয় প্রকাশে আসছে- ইনশাআল্লাহ; যার শিরোনাম হল:
“মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাপারে ন্যায়পন্থীদের উক্তি”
( أقوال المنصفين في محمد صلى الله عليه و سلم ) ।
এর চেয়ে আরও বেশি জানার জন্য দেখা যেতে পারে রহমতের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিচয়দানে আন্তর্জাতিক কার্যক্রমের এই ঠিকানায়: www.mercyprohet.com
و صلى الله و سلم على نبينا محمد و على إخوانه من النبيين و على آله و صحبه و التابعين .
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন