HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সূরা আন-নাবা-এর তাফসীর

লেখকঃ আবু আবদুল্লাহ কুরতুবী রহ.

জাহান্নামের শাস্তির বর্ণনা:
إِنَّ جَهَنَّمَ كَانَتۡ مِرۡصَادٗا “জাহান্নাম তো ওৎ পেতে আছে” مرصاد শব্দটি رصد মূত ধাতু থেকে مفعال এর ওজনে হয়েছে প্রত্যেক বস্তু যা তোমার সম্মুখে রয়েছে হাসান বলেন, জাহান্নামে একজন প্রহরী রয়েছে, তাকে অতিক্রম না করা পর্যন্ত কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যে ব্যক্তি অনুমতি নিয়ে আসবে সে অতিক্রম করবে আর যে অনুমতি নিয়ে আসবে না সে আঁটকে যাবে

সুফিয়ান রহ. বলেন, সেখানে তিনটি সাঁকো থাকবে

কেউ বলেন, مرصاد হচ্ছে পর্যবেক্ষক, যে তার সামনে দিয়ে অতিক্রম করবে তাকে পর্যবেক্ষণ করবে

মুকাতিল বলেন, বন্দিখানা, কেউ কেউ বলেন, পথ। কাজেই জাহান্নাম অতিক্রম করা ছাড়া জান্নাতে যাওয়ার কোনো পথ নেই।

বিশুদ্ধ বর্ণনায় এসেছে: المرصاد হচ্ছে পথ,। কুশাইরী বলেন, مرصاد হচ্ছে ঐ স্থান যেখানে কেউ তার শত্রুকে পর্যবেক্ষণ করে যেমন, مضمار সেটা ঐ স্থান যেখানে (দৌড়ের) ঘোড়াকে শক্তিশালী করার জন্য প্রস্তুত করা হয় مرصاد অর্থ হচ্ছে স্থান, ফিরিশতাগণ কাফিরদের পর্যবেক্ষন করবে অবশেষে তাদেরকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া হবে মাওয়ারদী রহ. বর্ণনা করেন, আবু সিনান রহ. বলেন, এর অর্থ হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক, তাদেরকে তাদের কর্ম অনুসারে বদলা দেওয়া হবে বিশুদ্ধ বর্ণনায় রয়েছে কোনো বিষয়ের الراصد -এর অর্থ হচ্ছে তার তত্ত্বাবধায়ক, ترصد শব্দের অর্থ হচ্ছে তত্ত্বাবধান, مرصد হচ্ছে তত্ত্বাবধানস্থল আসমা‘ঈ রহ. বলেন, أرصدته মানে হচ্ছে আমি তার জন্য প্রস্তুত করেছি কাসাঈও অনুরূপ বলেছেন আমি বলি: জাহান্নাম। مترصدة (একে) প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে, الرصد মাসদার থেকে متفعل তত্ত্বাবধান করা হয়েছে, مرصاد হচ্ছে مفعال এর ওজনে মুবালাগা (অতিশয়) অর্থে ব্যবহৃত যেমন, معطار এবং مغيار যেন জাহান্নাম কাফিরদের জন্য খুব বেশি বেশি প্রতীক্ষা করছে।

لِّلطَّٰغِينَ مَ‍َٔابٗا (আর তা হলো) “সীমালঙ্ঘনকারীদের আশ্রয়স্থল” مرصاداً থেকে (আরবী ব্যাকরণে) বদল (ব্যাখ্যা বিশেষ্য) সংঘটিত হয়েছে, والمآب অর্থ হচ্ছে প্রত্যাবর্তনস্থল অর্থাৎ যেখানে তারা প্রত্যবর্তন করবে, যেমন বলা হয়, آب يؤوب أوبة কাতাদা রহ. বলেন, আশ্রয়স্থল, গৃহ। الطاغين হচ্ছে যে ব্যক্তি কুফরীর মাধ্যমে দীনের ক্ষেত্রে সীমলঙ্ঘন করে অর্থাৎ দুনিয়াতে সে যুলুম-অত্যাচারের মাধ্যমে (সীমালঙ্ঘন করে)।

لَّٰبِثِينَ فِيهَآ أَحۡقَابٗا “সেখানে তারা যুগ যুগ ধরে থাকবে” অর্থাৎ জাহান্নামে বসবাস করবে অনন্তকাল অর্থাৎ শেষ হবে না। যখনই কোনো এক যুগ শেষ হবে এরপর আসবে আরেক যুগ, حُقُب দুই পেশ সহকারে, অর্থ হচ্ছে যুগ, কাল। এর বহুবচন হচ্ছে الأحقاب আর الحِقْبَة যের সহকারে অর্থ হচ্ছে: বৎসর, এর বহুবচন হচ্ছে حِقَب

الحُقْب حا এর উপর পেশ এবং با এর উপরে সাকিন সহকারে অর্থ হচ্ছে আশি বৎসর। কেউ কেউ বলেন, এর চেয়ে বেশি অথবা কম, আগমনের ভিত্তিতে, এর বহুবচন হচ্ছে أحقاب আয়াতে অর্থাৎ لَّٰبِثِينَ فِيهَآ أَحۡقَابٗا এ আয়াতের অর্থ হচ্ছে পরকালের অনন্তকাল, যার কোনো শেষ নেই الآخرة কথাটিকে হযফ করে দেওয়া হয়েছে। কেননা এখানে এর কথাই বলা হয়েছে, এছাড়াও বাক্যে পরকালের উল্লেখ রয়েছে, যেমন বলা হয় পরলৌকিক দিনসমূহে অর্থাৎ দিনের পর দিন যার কোনো শেষ নেই, যদি বলা হয় خمسة أحقاب অথবা عشرة أحقاب তাহলে নির্দিষ্ট সময় বুঝাবে। এখানে الأحقاب বলা হয়েছে, কেননা حقب শব্দের অর্থ সবচেয়ে দূরবর্তী সময় আর এ শব্দের উল্লেখ করা হয়েছে যাতে করে তাদের মন-মস্তিষ্ক সেদিকে নিবদ্ধ হয়, যেন তারা তা বুঝতে পারে। এখানে অনন্তকালের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে অর্থাৎ তাতে তারা চিরকাল বসবাস করবে।

কেউ কেউ বলেন, أحقاب বলা হয়েছে ايام বলা হয় নি, কেননা أحقاب এ শব্দের প্রয়োগে অন্তরে আতঙ্কের সৃষ্টি হয় আর চিরস্থায়ী অধিকরূপে বুঝায়, অর্থ কাছাকাছি, এ চিরস্থায়ী (জাহান্নামে বসবাস) কাফিরদের জন্য, এ আয়াতে ঐ সমস্ত পাপিষ্টরাও শামিল হতে পারে যারা যুগ যুগ পরে জাহান্নাম থেকে বের হবে কেউ কেউ বলেন, أحقاب হচ্ছে তাদের ফুটন্ত পানি ও দুর্গন্ধময় পানি পানের সময়, যখন তারা তা পান শেষ করবে তখন তাদের জন্য অন্য ধরণের শাস্তি রয়েছে, এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, لَّٰبِثِينَ فِيهَآ أَحۡقَابٗا ٢٣ لَّا يَذُوقُونَ فِيهَا بَرۡدٗا وَلَا شَرَابًا ٢٤ إِلَّا حَمِيمٗا وَغَسَّاقٗا “সেখানে তারা যুগ যুগ ধরে থাকবে, ২৪. সেখানে তারা কোনো শীতল ও পানীয় আস্বাদন করবে না ২৫. ফুটন্ত পানি ও পুঁজ ছাড়া”

لابثين হচ্ছে لبث মাসদার থেকে اسم فاعل -এর সীগাহ, আর তাকে শক্তিশালী করে ( لابثين )—এর মাসদার হচ্ছে اللبث , با —এর উপরে সাকিন। যেমন الشرب হামযাহ এবং কাসাঈ পড়েছেন: لبثين অর্থাৎ الف ছাড়া, আবু আবু হাতিম, আবু আবু উবাইদ একে পছন্দ করেছেন, এর দুইটি (পড়ার) রীতি রয়েছে। বলা হয়: لابث এবং لبث যেমন, طامع এবং طمع বলা হয়: সে অমুক স্থানে বসবাস করে অর্থাৎ বসবাস করা তার কাজ, যা মানুষের স্বভাব-প্রকৃতির সাদৃশ্যপূর্ণ কেননা فَعِل এর বাব অধিকাংশ ক্ষেত্রে যা মানুষের স্বভাব-চরিত্র-এরূপ অর্থে ব্যবহৃত হয় لابث অর্থাৎ اسم فاعل এ অর্থ প্রদান করে না।

الحقب হচ্ছে আশি বৎসর, এ মত পোষণ করেছেন আব্দুল্লাহ ইবন উমার, ইবন মুহাইসিন, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুম। বৎসর হবে তিনশত ষাট দিনে, আর একদিন হবে দুনিয়ার হিসেবে এক হাজার বৎসরের সমান, আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা এ মত পোষণ করেছেন, আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-থেকে মারফু‘ সূত্রে বর্ণনা করেছেন আবু আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, বৎসর হবে তিনশত ষাট দিনে, প্রত্যেক দিন হবে দুনিয়ার হিসেবের মতো। আব্দুল্লাহ ইবন উমার থেকে আরও বর্ণিত হয়েছে: الحقب হচ্ছে চল্লিশ বৎসর, সুদ্দী বলেন, সত্তর বৎসর, কেউ কেউ বলেন, তা হচ্ছে এক হাজার মাস, আবু আবু উমামা তা মারফু‘ সূত্রে বর্ণনা করেছেন বাশীর ইবন কা‘আব বলেন, তিনশত বৎসর। হাসান বলেন, الأحقاب সম্পর্কে কেউ জানে না সেটা কী? তবে উল্লেখ করা হয়েছে তা হবে একশত حقب , আর এক حقب সত্তর হাজার বৎসর, এর একদিন হবে তোমাদের গণনায় এক হাজার বৎসরের সমান আবু আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে আরও বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “এক حقب ত্রিশ হাজার বৎসর” মাহদাওয়ী এটা বর্ণনা করেছেন, প্রথম উক্তিটি করেছেন মাওয়ারদী, কুতরুব বলেন, তা হচ্ছে দীর্ঘ সময় যার সীমা নেই।

‘উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“আল্লাহর শপথ, জাহান্নামে যে প্রবেশ করবে সে বের হবে না, যতক্ষণ না সে তাতে কয়েক حقب অবস্থান করে। الحقب হচ্ছে আশির কিছু বেশি বৎসর বৎসর হবে তিনশত ষাট দিন, প্রতিদিন হবে তোমাদের গণনায়, সুতরাং তোমাদের কেউ যেন এ ভরসা না করে যে সে জাহান্নাম থেকে বের হবে।” সা‘লাবী। আর কুরাযী বলেন, الأحقاب হবে তেতাল্লিশটি, প্রতিটি حقب এর দুরত্ব হবে সত্তর খারিফ, প্রত্যেক খারিফ হবে সাতশত বৎসর, প্রত্যেক বৎসর হবে তিনশত ষাট দিন, প্রতি দিন হবে হাজার বৎসরের সমান।

আমি বলি: উপরোক্ত উক্তিগুলো পরস্পর বিরোধী, আর এগুলো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত নয়, বস্তুত حقب এর অর্থ হচ্ছে -আল্লাহ ভালো ভালো জানেন। পূর্বে আমরা যা উল্লেখ করেছি অর্থাৎ তারা তাতে যুগের পর যুগ, কালের পর কাল বসবাস করবে, যখনই একটি কাল অতিক্রম করবে পরে পরেই আরেক কাল এসে হাযির হবে, যুগের পর যুগ আসবে, এভাবে ধারাবাহিকভাবে অনন্তকাল বসবাস করবে।

ইবনু কাইসান বলেন: لَّٰبِثِينَ فِيهَآ أَحۡقَابٗا “সেখানে তারা যুগ যুগ ধরে থাকবে” এর অর্থ হচ্ছে: যার কোনো শেষ নেই, যেন তিনি বলেন, অনন্তকাল ইবন যায়েদ এবং মুকাতিল বলেন, এ আয়াতটি পরবর্তী আয়াত-

فَذُوقُواْ فَلَن نَّزِيدَكُمۡ إِلَّا عَذَابًا “অতএব এখন স্বাদ গ্রহণ কর, আমরা তোমাদের জন্য কেবল শাস্তিই বৃদ্ধি করব” (অন্য আর কিছু নয়)- এর মাধ্যমে রহিত হয়ে গেছে, নির্দিষ্ট সংখ্যা শেষ হয়ে গেছে, অনন্তকাল সাব্যস্ত হয়েছে আমি বলি: এ সম্ভাবনা অনেক দুরে, কেননা তা হচ্ছে খবর বা সংবাদ (আর সংবাদে রহিত হওয়ার বিষয়টি প্রবেশ করবে না)। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ﴿وَلَا يَدۡخُلُونَ ٱلۡجَنَّةَ حَتَّىٰ يَلِجَ ٱلۡجَمَلُ فِي سَمِّ ٱلۡخِيَاطِۚ ٤٠﴾ [ الاعراف : ٤٠ ] “আর তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না সূঁচের ছিদ্রে উট প্রবেশ করে” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৪০]

যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, এটা কাফিরদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, আর আল্লাহ তা‘আলার একত্ববাদে বিশ্বাসী পাপিষ্টদের ক্ষেত্রে রহিত হওয়ার বিষয়টি সঠিক হতে পারে; আর তখন রহিত হওয়ার দ্বারা উদ্দেশ্য হবে তাখসীস বা বিশেষায়িত করণ। আল্লাহ ভালো ভালো জানেন

কারও কারও মতে এখানে যে বলা হয়েছে: لَّٰبِثِينَ فِيهَآ أَحۡقَابٗا “সেখানে তারা যুগ যুগ ধরে থাকবে” এর দ্বারা উদ্দেশ্য তারা যমীনে এ সময়টুকু থাকবে। যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।

لَّا يَذُوقُونَ فِيهَا بَرۡدٗا وَلَا شَرَابًا “সেখানে তারা কোনো শীতল ও পানীয় আস্বাদন করবে না” এ আয়াতে ها সর্বনামটির উদ্দেশ্য হচ্ছে جهنم কেউ বলেন, الأحقاب এর একবচন حقب এবং حقبة

আল্লাহ তা‘আলার বাণী: لَّا يَذُوقُونَ فِيهَا “সেখানে আস্বাদন করবে না” অর্থাৎ যে যুগ যুগ ধরে তারা থাকবে তাতে بَرۡدٗا وَلَا شَرَابًا “শীতল ও পানীয় আস্বাদন করবে না।” البرد হচ্ছে নিদ্রা, এ মত পোষণ করেছেন আবু আবু উবাইদ এবং অন্যান্যরা আরবরা বলে: منع البرد البرد অর্থাৎ শীত ঘুম কেড়ে নিয়েছে। আমি বলি: হাদীসে এসেছে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জান্নাতে নিদ্রা আছে কিনা -এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, «لا؛ النوم أخو الموت، والجنة لا موت فيها " فكذلك النار؛ وقد قال تعالى : لَا يُقۡضَىٰ عَلَيۡهِمۡ فَيَمُوتُواْ» “না, নিদ্রা হচ্ছে মৃত্যুর ভাই, জান্নাতে মৃত্যু নেই, অনুরূপভাবে জাহান্নামে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿لَا يُقۡضَىٰ عَلَيۡهِمۡ فَيَمُوتُواْ ٣٦﴾ [ فاطر : ٣٦ ] “তাদের জন্য কোনো সময় নির্ধারণ করা হবে না যে, তারা (নির্ধারিত সময় আসলে) মরে যাবে” [সূরা ফাতির, আয়াত: ৩৬]

আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, البرد হচ্ছে ঠাণ্ডা পানীয়। তাঁর থেকে আরও বর্ণিত হয়েছে: البرد হচ্ছে নিদ্রা, আর الشراب হচ্ছে পানি।

যাজ্জাজ রহ. বলেন, তারা সেখানে না পাবে ঠাণ্ডা বাতাস, ছায়া, আর না নিদ্রা, ঠাণ্ডা জিনিস সবকিছুকে ঠাণ্ডা করে দেয় যাতে আরাম বোধ হয় আর এ ঠাণ্ডা মানুষের উপকারে আসে, কিন্তু ‘যামহারীর’ এমন ঠাণ্ডা যাতে জাহান্নামীরা কষ্ট ভোগ করবে, এতে তাদের কোনো উপকার হবে না, এর দ্বারা তারা শাস্তি ভোগ করবে। সে সম্পর্কে কেবল আল্লাহ তা‘আলা ভালো জানেন।

হাসান, ‘আতা’, ইবন যায়েদ বলেন, برداً -এর অর্থ হচ্ছে: আরাম-বিশ্রাম।

আল্লাহ তা‘আলার বাণী: لَّا يَذُوقُونَ فِيهَا بَرۡدٗا وَلَا شَرَابًا “সেখানে তারা কোনো শীতল ও পানীয় আস্বাদন করবে না” এ বাক্যটি الطاغين (সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য) থেকে حال বা অবস্থাবোধক বাক্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে অথবা احقاب -এর সিফাত বা বিশেষণ হিসেবে গণ্য, احقاب (ব্যাকরণে) ظرف زمان অর্থাৎ (ক্রিয়া সংঘটিত হবার কাল) হয়েছে, এর চালক শব্দ ( عامل ) হচ্ছে لابثين অথবা لبثين থেকে।

إِلَّا حَمِيمٗا وَغَسَّاقٗا “ফুটন্ত পানি ও পুঁজ ছাড়া” ব্যাকরণে ( ( مستثنى منقطع সংঘটিত হয়েছে, যারা البرد শব্দ দ্বারা নিদ্রা উদ্দেশ্য করেছেন তাদের মতে। আর যারা البرد দ্বারা শীতল উদ্দেশ্য নিয়েছেন তাদের মতে حميما وغساقا বদল (ব্যাখ্যা বিশেষ্য) সংঘটিত হয়েছে। حميم হচ্ছে গরম পানি আবু আবু উবাইদাহ এ মত ব্যক্ত করেছেন ইবন যায়েদ বলেন, حميم হচ্ছে তাদের চোখের অশ্রু, হায়েযের সাথে একত্রিত করে তাদেরকে পান করানো হবে নাহ্হস বলেন, حميم এর অর্থ হচ্ছে গরম পানি, এ থেকে নির্গত হয়েছে حمام গোসলখানা এবং حمى জ্বর এবং ﴿وَظِلّٖ مِّن يَحۡمُومٖ ٤٣﴾ [ الواقعة : ٤٣ ] “আর কালো ধোঁয়ার ছায়ায়” [সূরা আল-ওয়াকি‘আহ, আয়াত: ৪৩] এখানে প্রচণ্ড গরম উদ্দেশ্য। غساق হচ্ছে জাহান্নামীদের পুঁজ কেউ কেউ বলেন, এর অর্থ হচ্ছে যামহারীরা। হামযাহ এবং কাসাঈ س এ তাশদীদ সহ পাঠ করেছেন, সূরা স-দ এ সংক্রান্ত আলোচনা অতিবাহিত হয়েছে।

তারপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, جَزَآءٗ وِفَاقًا “উপযুক্ত প্রতিফল” অর্থাৎ তাদের কৃতকর্ম অনুযায়ী আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা, মুজাহিদ এবং অন্যান্যদের থেকে বর্ণিত হয়েছে, وفاق অর্থ হচ্ছে موافقة অনুসারে, যেমন قتال থেকে مقاتلة , جزاءً এটি মাসদার, (এবং) এর উপরেযবর হয়েছে অর্থাৎ তাদের কর্ম অনুযায়ী আমরা তাদেরকে প্রতিদান দিয়েছি ফাররা এবং আখফাস রহ. উভয় ইমাম এ মত পোষণ করেছেন ফাররা রহ. আরও বলেন, এটা হচ্ছে وفق -এর বহুবচন মুকাতিল রহ. বলেন, পাপ অনুযায়ী শাস্তি হয়েছে, শির্কের চেয়ে বড় গোনাহ নাই, জাহান্নামের চেয়ে বড় শাস্তি নাই হাসান ও ইকরিমা রহ. বলেন, তাদের কর্ম ছিল মন্দ, ফলে আল্লাহ তা‘আলাও তাদের প্রতি এমন কিছু আপতিত করেন যা তাদেরকে কষ্ট দেয়।

إِنَّهُمۡ كَانُواْ لَا يَرۡجُونَ حِسَابٗا “তারা (তাদের কৃতকর্মের) কোনো হিসেব আশা করত না” অর্থাৎ ভয় করত না, حِسَابٗا “হিসাব-নিকাশের” অর্থাৎ তাদের কর্মের হিসাব-নিকাশ নেওয়া হবে এর কোনো ভয় তারা করতো না। কেউ কেউ বলেন, এর অর্থ হচ্ছে তারা হিসাব-নিকাশের পুরষ্কারের আশা করত না যাজ্জাজ রহ. বলেন, তারা পুনরুত্থান দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করত না, ফলে হিসাব-নিকাশের আশা করত না

وَكَذَّبُواْ بِ‍َٔايَٰتِنَا كِذَّابٗا “তারা আমার নিদর্শনগুলোতে সম্পূর্ণরূপে মিথ্যারোপ করেছিল” অর্থাৎ নবীগণ যা কিছু নিয়ে এসেছিলেন তা তারা পুরোপুরি অস্বীকার করেছিল। কেউ কেউ বলেন, আমরা যে সমস্ত কিতাব অবতীর্ণ করেছিলাম তা তারা অস্বীকার করেছিল। সকলে পড়েছেন كذّابا যাল ( ذال )-এর ওপর তাশদীদ এবং كاف -এর নিচে যের সহকারে অর্থাৎ كذب মাসদার থেকে অর্থাৎ, তারা বড় ধরণের মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিল ফাররা রহ. বলেন, এটা হচ্ছে ইয়েমেনের বিশুদ্ধ ভাষা, তারা বলে: كذبت به كِذابا অর্থাৎ তুমি এ সম্পর্কে বড় মিথ্যা বলেছ; যেমন خرقت القميص خراقا অর্থাৎ তুমি কাপড়টি টুকরা টুকরা করে ফেলেছ। প্রতি فعل (ক্রিয়া) যা فِعل -এর ওজনে হয় তাদের নিকট এর মাসদার আসে فعَّال -এর ওজনে, অর্থাৎ ع -এ তাশদীদ সহকারে।

আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু كذابا অর্থাৎ ذال -এর উপরে তাশদীদ ছাড়া, এটাও আরেকটি মাসদার, আবু আলী রহ. বলেন, ذال এর উপরে তাশদীদ হোক বা না হোক সর্বাবস্থায় মাসদার مكاذبة যামাখশারী রহ. বলেন, كذابا ( ذال ) -এর উপরে তাশদীদ ছাড়া হলে মাসদার হচ্ছে كذب এটা হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার ঐ আয়াতের মতো, যাতে ﴿وَٱللَّهُ أَنۢبَتَكُم مِّنَ ٱلۡأَرۡضِ نَبَاتٗا ١٧ ﴾ [ نوح : ١٧ ] “আল্লাহ তোমাদেরকে মাটি থেকে যথাযথভাবে উদ্গত করেন”। [সূরা নূহ, আয়াত: ১৭] অর্থাৎ তারা আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করেছিল, তারা পুরোপুরি অস্বীকার করেছিল كذّابا -তে যবর প্রদান করেছে كذّبوا ক্রিয়াটি কেননা তা ‘তারা মিথ্যা বলেছিল’-এর অর্থের সাথে সম্পৃক্ত, কেননা যে ব্যক্তিই সত্যকে অস্বীকার করে সেই মিথ্যাবাদী কেননা তারা মুসলিমগণের নিকট মিথ্যাবাদী আর তাদের নিকট মুসলিমবৃন্দ মিথ্যাবাদী, তারা পরস্পরকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা পাঠ করেছেন كُذَّابا অর্থাৎ كاف -এর উপরে পেশ এবং ذال -এর উপরে তাশদীদ সহকারে এর একবচন হচ্ছে كاذب আবু হাতিম এ মত ব্যক্ত করেছেন (আরবী ব্যাকরণে) حال হওয়ার কারণে এতেযবর হয়েছে, এ মত ব্যক্ত করেছেন যামাখশারী রহ.। কখন সে অতিশয় মিথ্যাবাদী হয় অর্থাৎ খুব বেশি মিথ্যা কথা বলে বলা হয়: رجل كذّاب লোকটি ডাহা মিথ্যাবাদী, যেমন বলা হয় حسّان এবং بخّال এরপর كذابا -কে كذّبوا -এর মাসদারের সিফাত করা হয়েছে; অর্থাৎ تكذيباً كذابا অর্থাৎ মিথ্যায় সীমা ছাড়িয়ে গেছে বিশুদ্ধ বর্ণনায় রয়েছে: আল্লাহ তা‘আলার বাণী: وَكَذَّبُواْ بِ‍َٔايَٰتِنَا كِذَّابٗا “তারা আমার নিদর্শনগুলোকে অস্বীকার করেছিল- পুরোপুরি অস্বীকার” এর তাশদীদযুক্ত মাসদারসমূহের মধ্য থেকে অন্যতম একটি মাসদার, কেননা এর মাসদার কখনও আসে تفعيل -এর ওজনে, যেমন تكليم , কখনও আসে فعّال -এর ওজনে, যেমন كذّاب আবার কখনও আসে تفعلة -এর ওজনে, যেমন توصية কখনও আসে مفعَّل -এর ওজনে, যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿وَمَزَّقۡنَٰهُمۡ كُلَّ مُمَزَّقٍۚ ٖ ١٩﴾ [ سبا : ١٩ ] “আর তাদেরকে পুরোপুরি ছিন্ন ভিন্ন করে দিলাম” [সূরা সাবা, আয়াত: ১৯]

وَكُلَّ شَيۡءٍ أَحۡصَيۡنَٰهُ كِتَٰبٗا “সবকিছুই আমরা সংরক্ষণ করে রেখেছি লিখিতভাবে” كلَّ -কে যবর প্রদান করেছে উহ্য একটি فعل যা বাহ্যত বুঝা যায় (যে তা লুকিয়ে আছে) (তা হচ্ছে) أحصيناه অর্থাৎ أحصيناه كل شيء أحصيناه অর্থাৎ আমরা সংরক্ষণ করে রেখেছি সবকিছু, সংরক্ষণ করে রেখেছি লিখিতভাবে আবুস সাম্মাল وكل شيء -এ كُلُّ লামের উপরে পেশ সহকারে পড়েছেন। কেননা তা মুবতাদা, (উদেশ্য) আর كتاباً -এর উপরে যবর হয়েছে মাসদার হওয়ার কারণে কেননা أحصينا এর অর্থ হচ্ছে كتبنا “আমরা লিপিবদ্ধ করে রেখেছি” অর্থাৎ আমরা তা যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করে রেখেছি এরপর বলা হয়েছে: এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে জ্ঞান কেননা যা লিখা হয় তা ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা কম কেউ কেউ বলেন, অর্থাৎ আমরা তা লাওহে মাহফুযে লিপিবদ্ধ করেছি যাতে করে ফিরিশতারা তা জানতে পারে কেউ কেউ বলেন, এতে বান্দাদের যে সমস্ত আমল লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়েছে, বান্দাদের আমলের এ সমস্ত রেকর্ড আল্লাহর নির্দেশে দায়িত্বপ্রাপ্ত ফিরিশতাগণই সম্পাদন করেছেন, প্রমাণ হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿وَإِنَّ عَلَيۡكُمۡ لَحَٰفِظِينَ ١٠ كِرَامٗا كَٰتِبِينَ ١١﴾ [ الانفطار : ١٠، ١١ ]“অবশ্যই তোমাদের ওপর নিযুক্ত আছে তত্ত্বাবধায়কগণ, সম্মানিত লেখকগণ (যারা লিপিবদ্ধ করছে তোমাদের কার্যকলাপ” [সূরা আল-ইনফিতার, আয়াত: ১০-১১]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন