hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমকালীন আরবের অবস্থা ও তাঁর মক্কী জীবন

লেখকঃ মো. আব্দুল কাদের

১০
দুধ পান ও শৈশবকাল:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম তাঁর মা আমিনার দুধ পান করেন। এরপর আবু লাহাবের দাসী সুওয়াইবা কয়েক দিন দুধ পান করান। আরবের অভিজাত বংশের প্রচলিত রীতি অনুযায়ী তাঁর দুগ্ধপানের ভার হাওয়াযিন বংশের সা‘দ গোত্রের এক ধাত্রী হালীমা বিনত আবু যুয়ায়ব-এর উপর ন্যস্ত হয়। [মুহাম্মাদ রসূলুল্লাহ, পৃ. ১৭।] কারণ পাশ্ববর্তী অঞ্চলে পাঠানোর ফলে শারীরিক অবস্থাও ভাল হতো এবং তারা খাটি আরবী ভাষা শিখতেও সক্ষম হতো।

হালীমা সা‘দিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমি তায়েফ হতে বনী সা‘দের মহিলাদের সাথে দুগ্ধপোষ্য শিশুর খোঁজে মক্কায় আসি। ঐ বছর দুর্ভিক্ষ ছিল। আমার কোলেও এক শিশু ছিল। কিন্তু দারিদ্র ও অনাহারের ফলে তার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ দুধ আমার ছিল না।

সারা রাত সে দুধের জন্য চিৎকার করতো এবং আমি তার জন্য সারারাত বসে বসে কাটাতাম। আমাদের একটি উটনী ছিল, কিন্তু এটারও দুধ ছিল না।

মক্কায় সফরে তিনি যে খচ্চরের উপরে আরোহণ করেছিলেন, এটাও এত দুর্বল ছিল যে, সবার সাথে এটা চলতে সক্ষম ছিল না। সাথীরাও এতে বিরক্ত হয়ে যেতন। অবশেষে অতিকষ্টে এ ভ্রমণ শেষ হয়। মক্কায় পৌছে সে রাসূলকে দেখে এবং শোনে যে, তিনি ইয়াতীম। তখন কেউই তাকে গ্রহণ করতে রাযী ছিল না। এদিকে হালীমার ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলো। তাঁর দুধের স্বল্পতা তাঁর জন্য রহমত হয়ে গেল। কেননা দুধের স্বল্পতায় কেউ তাঁকে আপন শিশু প্রদান করতে চায়নি।

হালীমা বর্ণনা করেন, “আমি আমার স্বামীর সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেই যে, শূন্য হাতে ফিরে যাওয়ার চেয়ে উত্তম হলো এ শিশুকেই নিয়ে যাই।”

স্বামী রাজি হলেন এবং এ মানিক্য রতন ইয়াতীমকে ঘরে নিয়ে এলেন, যাঁর জন্য কেবলমাত্র হালীমা ও আমিনার ঘরই নয়, বরং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য তথা বিশ্বই আলোকোজ্জ্বল হয়ে যাচ্ছিল। আল্লাহ তা’আলার অশেষ অনুগ্রহে তাঁর ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলো এবং রাসূল তাঁদের কোলে এলেন। তাঁবুতে এসে তিনি শিশুকে দুধ পান করাতে বসলেন আর সাথে সাথেই বরকত ও রহমত প্রকাশ হতে লাগল। এত পরিমাণ দুধ নির্গত হল যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর দুই-ভাই একান্ত তৃপ্তির সাথে পান করে ঘুমিয়ে পড়লেন। এদিকে উটনীর দিকে চেয়ে তিনি দেখতে পান যে, এর দুধের স্তর পরিপূর্ণ হয়ে আছে।

আমার স্বামী দুধ দোহন করলেন এবং আমরা তৃপ্তির সাথে পান করে সারা রাত আরামে কাটালাম। দীর্ঘ দিন পর এটাই প্রথম রাত, যে রাতে আমরা শান্তির সাথে ঘুমিয়েছিলাম। [মুফতী মুহাম্মদ শফী রাদিয়াল্লাহু আনহু, সীরাতু খাতিমিল আম্বিয়া, অনুবাদ: মুহাম্মদ সিরাজুল হক (ঢাকা: ইফাবা: তৃতীয় সংস্করণ, ১৯৮৭/১৪০৭), পৃ.৫।]

দু’ বছর বয়সে স্তন্যদান বন্ধ করার পর হালীমা তাঁর মায়ের কাছে প্রত্যাবর্তনের জন্য তাঁতে মক্কায় নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু মক্কায় মহামারী দেখা দেয়ায় তিনি তাঁকে আরো কিছুদিনের জন্য নিয়ে আসলেন। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সংস্পর্শে হালীমার শারীরিক এবং পারিবারিক প্রবৃদ্ধি লাভ হয়েছিল। হালিমার গৃহে থাকাকালে তাঁর কতক চরিত্র বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয় হয়েছিল। তার ছেলে-মেয়ের সাথে শিশু মুহাম্মদও ছাগল ও মেষ চরাতে যেতেন। একদা তিনি দুধ-ভাই আব্দুল্লাহর সাথে পশু চরাচ্ছিলেন। হঠাৎ আব্দুল্লাহ হাপাতে হাপাতে বাড়ি ছুটে এলো এবং আমাকে ও তার পিতাকে বলল, ঐ কুরাইশী ভাইটাকে সাদা কাপড় পরা দুজন লোক এসে শুইয়ে দিয়ে পেট চিরে ফেলেছে এবং পেটের সবকিছু বের করে নাড়াচাড়া করছে। এ কথা শুনে আমি ও আমার স্বামী তৎক্ষণাৎ তাঁর কাছে ছুটে গেলাম। গিয়ে দেখলাম, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিবর্ণ মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আমরা উভয়ে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরলাম এবং বললাম, বাবা তোমার কি হয়েছে? তিনি বললেন, আমার কাছে সাদা কাপড় পরিহিত দু ব্যক্তি এসে আমাকে শুইয়ে আমার পেট চিরল। তারপর কি যেন একটা জিনিস তন্ন তন্ন করে খুঁজছিল। আমি জানি না জিনিসটা কি। এরপর আমরা মুহাম্মদকে সাথে নিয়ে বাড়িতে চলে আসলাম। [শাইখ মুহাম্মদ খুদরী বেগ, নূরুল ইয়াকীন ফি সীরাতে সায়্যেদিল মুরসালিন (দিল্লী: কুতুব খানাই ইশাআতুল ইসলাম, তা.বি), পৃ. ৭; মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃ. ১৯, আস সিরাতুন নবুবিয়্যাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৪৫।]

হালীমা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমার স্বামী বললেন, আমার মনে হয় এ ছেলের উপর কোন কিছুর আছর হয়েছে। সুতরাং কোন ক্ষতি হওয়ার আগেই তাঁতে তার পরিবারের কাছে পৌঁছে দাও। অতঃপর আমরা তাঁকে তাঁর মায়ের কাছে নিয়ে আসলাম এবং তাঁর কাছে সোপর্দ করলাম। তখন তাঁর মা হালীমাকে জিজ্ঞেস করলেন, এত আগ্রহ করে নিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও এত শীঘ্র ফেরত দেওয়ার কারণ কি? বারবার জিজ্ঞেস করার পর হালিমা সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করলেন। তিনি তা শুনে বললেন, নিশ্চয় আমার পুত্রের কোন বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। অতঃপর তিনি গর্ভধারণের দিনগুলোর ও জন্মের সময়ের আশ্চর্য ঘটনা বর্ণনা করলেন। মা আমিনা ধাত্রী হালিমাকে বললেন, তুমি মুহাম্মদকে রেখে নির্দ্বিধায় চলে যেতে পার।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বয়স যখন ছয় বছর, তখন তাঁর মাতা আমিনা তাঁকেসহ তাঁর পিতার কবর যিয়ারত করার জন্য ইয়াসরিবে গমন করেন। অতঃপর মক্কায় ফেরত পথে আবওয়া নামক স্থানে আমিনা মারা যান। সফরসঙ্গী পরিচারিকা উম্মে আয়মান ইয়াতীম মুহাম্মাদকে মক্কায় দাদা আব্দুল মুত্তালিবের কাছে অর্পণ করেন। [সিয়ারু ‘আলামিন-নুবালা, ১ম খণ্ড, পৃ. ৫৪; মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ, পৃ. ২২; আস সীরাতুন নবুবিয়্যাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৪৮।]

মা আমিনার মৃত্যুর পর শিশু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর লালন পালনের দায়িত্ব দাদা আব্দুল মুত্তালিব গ্রহণ করলেন। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাদার সাথেই অবস্থান করতে থাকেন। কাবা শরীফের পার্শ্বেই আব্দুল মুত্তালিবের জন্য বিছানা পেতে রাখা হত এবং তাঁর পুত্ররা সকলে তার সেই বিছানার চারপাশে বসতো। তিনি যতক্ষণ বের না হতেন ততক্ষণ তারা স্থির হয়ে বসে থাকতেন এবং তার মর্যাদার খাতিরে কেউ তার বিছানার উপর বসতো না। এই সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে আসতেন। তখন তিনি সুদর্শন কিশোর। তিনি সে বিছানার উপর বসে পড়তেন। তাঁর চাচাগণ তাঁকে ধরে সরিয়ে দিতে গেলেই আব্দুল মুত্তালিব তাদেরকে বলতেন, আমার সন্তানকে ছেড়ে দাও। আল্লাহর কসম, সে নিশ্চয়ই সম্মানিত। তারপর তাতেই তিনি আনন্দিত হতেন। রাসূলের জন্মের আট বছর পর আব্দুল মুত্তালিব মারা যান। [আস সীরাতুন নবুবিয়্যাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৪৮।]

দাদা আব্দুল মুত্তালিবের মৃত্যুর পর তাঁর চাচা আবু তালিবের নিকট শিশু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লালিত-পালিত হতে লাগলেন। স্নেহময় চাচার সর্তক দৃষ্টিতে তিনি ক্রমান্বয়ে বড় হতে লাগলেন। যখন তাঁর বয়স দশ বছর তখন তিনি ছাগল ও মেষ চরাতেন। তখন আরবদেশে মেষ চরানো অপমানজনক কাজ বলে বিবেচিত হতো না। আবু তালিব বাণিজ্য করতেন। কুরাইশদের প্রথা ছিল যে, তারা প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে একবার শামদেশ এবং শীতকালে ইয়েমেন যেত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বয়স যখন বার বছর তখন তিনি চাচার সাথে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে সিরিয়ায় গমন করেন এবং সফরের এক পর্যায়ে বুসরায় গিয়ে উপস্থিত হন। উক্ত শহরে জারজিস নামক একজন খ্রিষ্টান ধর্মযাজক (রাহেব) বসবাস করতেন। তার উপাধি ছিল বুহায়রা। এ উপাধিতেই তিনি সবার কাছে পরিচিত ছিলেন। মক্কার ব্যবসায়ী দল যখন বসরায় শিবির স্থাপন করেন, তখন রাহেব গির্জা থেকে বেরিয়ে তাদের নিকট আগমন করেন এবং আতিথেয়তায় আপ্যায়িত করেন। অথচ এর পূর্বে তিনি গির্জা থেকে বের হয়ে কোনো বাণিজ্য কাফেলার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন নি। তিনি কিশোর নবীর আচার-আচরণ এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য দেখে বুঝতে পারেন যে, ইনিই হচ্ছেন বিশ্বমানবের মুক্তির দিশারী আখেরী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। অতঃপর কিশোর নবীর হাত ধরে তিনি বলেন যে, ইনিই হচ্ছেন বিশ্বজাহানের সরদার। আল্লাহ তাঁকে বিশ্বজাহানের রহমত রূপী রাসূল মনোনীত করবেন। আবু তালিব বললেন, আপনি কিভাবে অবগত হলেন যে, তিনিই হবেন আখিরী নবী?

বুহায়রা বললেন, গিরিপথের ঐ প্রান্ত থেকে তোমাদের আগমন যখন ধীরে ধীরে দৃষ্টগোচর হয়ে আসছিল আমি প্রত্যক্ষ করলাম যে, সেখানে এমন কোনো বৃক্ষ কিংবা প্রস্তরখণ্ড ছিল না, যা তাকে সিজদা করে নি। এ সমস্ত জিনিস নবী-রাসূল ছাড়া সৃষ্টিরাজির অন্য কাউকে কখনই সিজদা করে না। [আর রাহীকুল মাখতুম, পৃ. ৫৮-৫৯।] তারপর তিনি তাঁর পিঠে দেখলেন। পিঠে দুই কাঁধের মাঝখানে নবুয়তের মোহর অংকিত দেখতে পেলেন। মোহরটি অবিকল সেই জায়গায় দেখতে পেলেন, যেখানে বুহায়রার পড়া আসমানী কিতাবের বর্ণনা অনুসারে থাকার কথা ছিল। ইবন হিশাম বলেন, “মোহরটি দেখতে ঠিক শিংগা লাগানোর যন্ত্রের অংকিত চিহ্নের মত বৃত্তাকার ছিল।” ইবন ইসহাক বলেন, “বুহায়রা তার চাচাকে জিজ্ঞাসা করলেন এ বালকটি আপনার কে? তিনি বললেন, আমার ছেলে। বুহায়রা বললেন, সে আপনার ছেলে নয়। এই ছেলের পিতা জীবিত থাকার কথা নয়।”

আবু তালিব বললেন, সে আমার ভাই-এর ছেলে। বুহায়রা বললেন, ওর পিতার কি হয়েছিল? আবু তালিব বললেন, এই ছেলে মায়ের পেটে থাকতেই তার পিতা মারা গেছে। বুহায়রা বললেন, “এ রকমই হওয়ার কথা। আপনি আপনার ভাতিজাকে নিয়ে দেশে ফিরে যান। খবরদার, ইয়াহুদীদের থেকে ওকে সাবধানে রাখবেন। আল্লাহর কসম, তারা যদি এই বালককে দেখতে পায় এবং আমি তার যে নির্দশনাবলী দেখে চিনেছি, তা যদি চিনতে পারে তাহলে ওরা ওর ক্ষতি সাধনের চেষ্টা করবে। কেননা আপনার এ ভাতিজা ভবিষ্যতে এক মহামানব হিসেবে আবির্ভূত হবেন।” তারপর আবু তালিব তাকে নিয়ে স্বদেশে ফিরে গেলেন। [আস সীরাতুল নবুবিয়্যাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৫৬-১৫৭।]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বয়স যখন চৌদ্দ, মতান্তরে পনের বছর তখন “ফুজ্জার যুদ্ধ” সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে এক পক্ষে ছিলেন কুরাইশগণ এবং তাদের মিত্র বনু কিনানা। বিপক্ষে ছিলেন কায়েস আয়লান। কুরাইশ কিনানা মিত্র পক্ষের সেনাপতি ছিলেন হরব ইবন উমাইয়া। কারণ স্বীয় প্রতিভা এবং প্রভাব-প্রতিপত্তির ফলে তিনি কুরাইশ ও কিনানা গোত্রের মধ্যে নিজেকে মান-মর্যাদার উচ্চাসনে প্রতিষ্ঠিত করে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন। একে ফুজ্জার যুদ্ধ এ জন্যই বলা হয় যে, এতে নিষিদ্ধ বস্তুসমূহ এবং পবিত্র মাসের পবিত্রতা উভয়ই বিনষ্ট করা হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কৈশোরান্তিক বয়ক্রমকালে এই যুদ্ধে গমন করেছিলেন। এই যুদ্ধে তিনি তীরের আঘাত থেকে তাঁর চাচাদের রক্ষার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি আমার চাচাগণের দিকে শত্রুদের ছুড়ে মারা তীর ও বর্শাগুলো কুড়িয়ে তাদের কাছে ফিরিয়ে দিতাম। [আর রাহীকুল মাখতুম, পৃ. ৫৯।]

হরবুল ফুজ্জারের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ হারাম মাসগুলোর যিলকদ মাসে হিলফুল ফুযুল গঠিত হয়। [প্রাগুক্ত, পৃ. ৫৯।] ফুজ্জার থেকে প্রত্যাবর্তন করে কুরাইশরা এ সংগঠনটি গঠন করেন। আর ইহা ছিল একটি উত্তম প্রতিজ্ঞা। এ বৈঠকে যে গোত্রগুলো অংশগ্রহণ করে, তারা হলো কুরাইশ, বনু হাশিম, বনু মুত্তালিব, বনু আসাদ, বনু যোহরা এবং বনু তামীম। বৈঠকে একত্রিত হয়ে সকলে যাবতীয় অন্যায়- অত্যাচার এবং অর্থহীন যুদ্ধ-বিগ্রহের প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করেন।

আলোচ্য পরামর্শ সভায় এটা স্থির হয় যে, এ জাতীয় নীতি হচ্ছে ভয়ংকর অন্যায়, অমানবিক ও অবমাননাকর। [মুহাম্মাদ রসূলুল্লাহ, পৃ. ৩৫; আত তাবাকাতুল কুবরা, ১ম খণ্ড, পৃ. ১০৩; ইয়াকুবী, তারিখুল ইয়াকুবী, ২য় খণ্ড, (বৈরুত: দারুল সদর, তা.বি), পৃ. ১৭।]

কাজেই এ ধরনের জঘন্য নীতি আর কিছুতেই চলতে দেয়া যায় না। তারা প্রতিজ্ঞা করলেন:

ক. দেশের অশান্তি দূর করার জন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব।

খ. বিদেশী লোকদের ধন প্রাণ ও মান-সম্ভম রক্ষা করার জন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব।

গ. দরিদ্র, দুর্বল ও অসহায় লোকদের সহায়তা দানে আমরা কখনই কুণ্ঠাবোধ করব না।

ঘ.অত্যাচারী ও অনাচারীর অন্যায়-অত্যাচার থেকে দুর্বল দেশবাসীদের রক্ষা করতে প্রাণপণ চেষ্টা করব। [আর রাহীকুল মাখতুম, পৃ. ৬০।]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর পিতৃব্য যুবাইর ইবন আব্দুল মুত্তালিব উক্ত আলোচনা বৈঠকে যোগদান করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে যুবক নবীই ছিলেন যে কল্যাণমুখী চিন্তা-ভাবনার উদ্ভাবক এবং পিতৃব্য যুবাইর ছিলেন প্রথম সমর্থক। তাদের উভয়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টাতেই ক্রমে ক্রমে সমর্থক সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত আব্দুল্লাহ ইবন জুদ‘আনের গৃহে বিভিন্ন গোত্রপতির উপস্থিতি ও সম্মতি সাপেক্ষে অঙ্গীকারনামা সম্পাদিত হয় এবং তার ভিত্তিতেই সেবা-সংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ছিল অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য অঙ্গীকারনামা। এ জন্য এ অঙ্গীকারনামা ভিত্তিক সেবা সংঘের নাম দেয়া হয়েছিল হিলফুল ফুযুল। [নূরুল ইয়াকীন, পৃ. ১১।] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

“আমি অঙ্গীকারের সময় আব্দুল্লাহ ইবন জুদআনের গৃহে উপস্থিত ছিলাম। এর বিনিময়ে লাল বর্ণের উট দিলেও আমি গ্রহণ করতে রাযী নই। আজও যদি অনুরূপ অঙ্গীকারের জন্য আহূত হই আমি নিশ্চয়ই উপস্থিত হব।” [ড. ওসমান গনি, মহানবী (কলিকাতা: মল্লিক ব্রাদার্স, ৩য় সংস্করণ, ১৯৯১), পকৃ. ১০৬।]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকজন ধনী বণিকের কর্মচারী বা প্রতিনিধি হিসেবে উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্বদেশে বাণিজ্য উপলক্ষে গমন করেন। এই সমস্ত যাত্রাগুলোতে তাঁর মানবিক ব্যবহার ও বাণিজ্য লেনদেন সম্পর্কে তাঁর চারিত্রিক সততা এতই উচ্ছ্বসিতভাবে প্রশংসিত হয় যে, তাঁকে সকলেই দ্বিধাহীনভাবে আল আমীন অর্থাৎ চিরবিশ্বাসী নামে অভিহিত করতে থাকেন। জীবনের যে কোনো অবস্থাতেই তিনি কথার খেলাফ করেন নি। তাই বিভিন্ন দিক থেকে সমগ্র আরববাসীর নিকট তার চরিত্রের সাধুতা সন্দেহের বহু উচ্চে স্থান লাভ করে। সমগ্র আরব জগতে ছোট-বড় বৃদ্ধ সকলেই যে কোন বিষয়ে তাঁকে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করতো। [আস সীরাতুন নাবুবিয়্যাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৬১-১৬২; মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ, পৃ. ৩৭।]

ইবন ইসহাক বলেন, খাদীজা অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত ও ধনাঢ্য মহিলা ছিলেন। তিনি বেতনভুক্ত কর্মচারী রেখেও অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বাণিজ্য পরিচালনা করতেন। বস্তুত পক্ষে গোটা কুরাইশ বংশই ছিল ব্যবসাজীবী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সত্যবাদিতা, বিশ্বস্ততা ও চারিত্রিক মহত্ত্বের সুখ্যাতি অন্যদের ন্যায় খাদীজারও গোচরীভূত হয়। তাই তিনি তাঁর কাছে লোক পাঠিয়ে তাঁর পণ্য-সামগ্রী নিয়ে সিরিয়া যাওয়ার প্রস্তাব দেন। তিনি তাঁকে এও জানান যে, এ কাজের জন্য তিনি অন্যদেরকে যা দিয়ে থাকেন তার চেয়ে উত্তম সম্মানী তাঁকে দিবেন। খাদীজা তাঁর গোলাম মায়সারাকেও তাঁর সাহায্যের জন্য সঙ্গে দিতে চাইলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রস্তাব গ্রহণ করলেন এবং খাদীজার পণ্য-সামগ্রী নিয়ে ভৃত্য মায়সারাসহ সিরিয়া অভিমূখে যাত্রা করলেন। সিরিয়ায় পৌছে তিনি জনৈক ধর্মযাজকের গির্জার নিকটবর্তী এক গাছের ছায়ায় বিশ্রাম গ্রহণ করলেন। এক সময় সেই ধর্মযাজক মায়সারাকে নিভৃতে নিজ্ঞাসা করলেন, এই গাছের নিচে বিশ্রামরত ভদ্রলোকটি কে? সে বলল, তিনি কাবা শরীফের কাছেই বসবাসকারী জনৈক কুরায়শ। ধর্মযাজক বললেন, “এই গাছের নিচে নবী ছাড়া আর কেউ এখন বিশ্রাম নেয় নি।”

বাণিজ্যের কার্য সম্পাদন পূর্বক মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয় করে মায়সারাকে সাথে নিয়ে মক্কা অভিমুখে যাত্রা করলেন। মক্কায় পৌছে তিনি খাদীজাকে তাঁর ক্রয় করা মালপত্র বুঝিয়ে দিলেন। খাদীজা ঐ মাল বিক্রয় করে দ্বিগুণ মুনাফা অর্জন করলেন। এ দিকে মায়সারাকে যাজক যা যা বলেছিল তা সে খাদীজার নিকট হুবহু বিবৃত করলো। [আস সীরাতুল নবুবিয়্যাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৫৬-১৫৭।]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন