hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলাম প্রচারে মনোবিজ্ঞানের ভূমিকা

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল-খাতির রহ.

মনোবিজ্ঞানের পদ্ধতি
মনোবিজ্ঞানে আমাদের নিকট যে বিষয়টা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে- একজন মনোবিজ্ঞানী তথ্যাদি সংগ্রহ সংরক্ষণে, মানুষের আস্থা অর্জন ও তাদের মধ্যে প্রভাব বিস্তারে যে পদ্ধতিটা অবলম্বন করে থাকেন। তাদের ব্যক্তিত্বের পরিচিতি, মন্দ আচরন পরিবর্তন পদ্ধতি ও তাদের ভাল আচরণের প্রশংসা; এটাই হচ্ছে এই পুস্তকের প্রতিপাদ্য বিষয়। সুতরাং এখানে আলোচনা হবে শুধুমাত্র ঐ পদ্ধতি সম্পর্কে যা একজন মনোবিজ্ঞানী প্রয়োগ করে থাকেন। তবে আত্মিক রোগ সমুহ ইত্যাদি ...... বিষয় এখানে আলোচনা হবে না। এমনিভাবে ইসলামের দাওয়াতের ক্ষেত্রে আমরা মানুষের সঙ্গে আচর-আচরণ, লেনদেন ও কথা-বার্তায় সর্বোত্তম পদ্ধতি গ্রহণের ব্যপারে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আদিষ্ট।

আল্লাহ তাআ’লা এরশাদ করেন-

ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ .

‘‘তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান করো হিকমত ও সদুপোদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে আলোচনা করো উত্তম পদ্ধতিতে।’’ [সূরা আন নাহল : ১২৫]

কাংক্ষিত জ্ঞান, উত্তম উপদেশ ও উৎকৃষ্ট পদ্ধতি ইসলামের দাওয়াতের প্রত্যেকটি ক্ষেত্র উন্মুক্ত ; যতক্ষণ পর্যন্ত তা শরীয়তের মুলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয়। সুতরাং দাওয়াত-কর্মীগন আমলের উৎকর্ষ সাধনে প্রয়োজনীয় সকল তথ্যাদি, মাধ্যম ও প্রকাশ পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারবে। মনোবিজ্ঞান এমনি একটা উত্তম পদ্ধতি; যদি তা শরিয়তের কোন বিষয়ের সাথে সাংঘর্ষিক না হয়। তখন আমরা যে কোন সু-দৃঢ় ও স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারবো-যা ইসলামের দাওয়াতের ক্ষেত্রে আমরা প্রয়োগ করতে পারি। দাওয়াতের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র শিক্ষা নয় ; বরং আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে-পরিচর্যা, শিক্ষা এবং আচার-ব্যবহারকে উত্তম রূপ দেয়া। ব্যক্তি ও ব্যক্তিত্বকে আল্লাহর সঠিক পথে ও ইসলামের সু-শীতল ছায়াতলে সুন্দর ও সঠিকভাবে লালন করা ও বিকাশ ঘটানো। আর এটাই হচ্ছে দাওয়াতের প্রতিপাদ্য, অভীষ্ট লক্ষ্য। দাওয়াতের দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত ব্যক্তিদের নিকট বিষয়টা নতুন ও অপরিচিত মনে হতে পারে। কিন্তু দাওয়াতী কাজে বিশেষ নৈপুণ্য অর্জন করতে এ পদ্ধতি প্রয়োগের বিকল্প নেই। প্রত্যেক বিশেষজ্ঞকে তার অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দিয়ে তার সত্য ধর্মের সেবা করা ইসলামী দাওয়াতের দাবী। অতএব আমরা এই বিশেষ জ্ঞান ও ব্যুৎপত্তিকে শুধু রুজী ও জীবিকা অর্জনের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করতে এবং এর মাধ্যমে কোন চাকুরী বা সুযোগ বাগিয়ে নিতে চাই না। বরং তার এ বিশেষ জ্ঞানের উত্তরোত্তর উৎকর্ষ সাধন, এর ব্যাপক ও সঠিক প্রয়োগ করতে চাই। এ বাপারে সংশ্লিষ্ট কারো দ্বি-মত নেই।

আমি বিপুল সংখ্যক পাঠক ভাইদের কথা বিবেচনা করে- যারা জানতে চায় কিভাবে এবং কোন পদ্ধতিতে আমরা মানুষের মাঝে প্রভাব বিস্তার করতে পারবো- এ মৌলিক বিষয়টার উপর খানিকটা আলোকপাত করতে চাই। শুরুতে এটা একটা দুর্বোধ্য বিষয় ছিল। যেমন কিভাবে একজন মনোবিজ্ঞানী মানুষের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করতে পারবে এবং কি করে তাদের আস্থা অর্জন করতে পারে। আগে তো মানুষ আশঙ্কা, ভয় ও উৎকন্ঠার মধ্যে জীবন কাটাতো । মনোবিজ্ঞানীকে এই ভেবে ভয় করতো যে, সে তার ব্যক্তিগত বিষয়গুলো প্রকাশ করে দেবে কারণ তার সকল কর্মকান্ড সে জানে। তখন এই ধারনাটা বর্তমান সময়ের ইন্টারনেট ও স্যাটেলাইটের মত সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। তবে এই সমস্যাটা এতটা সহজ নয় যে, এই ক্ষুদ্রপুস্তিকার মাধ্যমে এর ব্যাখ্যা দেবো কিংবা কঠিন বিষয়কে সহজ করে দেবো। আমি সে সকল বিষয় অনুসন্ধান করি যা মনোবিজ্ঞানের পদ্ধতি এবং ইসলামের দাওয়াতে তার প্রয়োগের সম্ভাবনা আছে। আমাকে পরিপূর্ণ তৃপ্তি দান করেছে যে বিশ্বাস টা তা হচ্ছে, অবশ্যই দাওয়াত-কর্মীগণ এক মহান বিষয় ও শাশ্বত গবেষণার অধিকারী হয়েছে। কিন্তু যাকে দাওয়াত দেয়া হবে তার মধ্যে প্রভাব বিস্তার, বিষয়বস্ত্তকেকে গ্রহণযোগ্য ও আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপনের জন্য একটি সু-নির্দিষ্ট পদ্ধতি প্রয়োজন । আর এটাতো এমন একটি বিষয় যা অধিকাংশ দাওয়াত-কর্মীর নেহায়েত প্রয়োজন। কখনো বা বিজ্ঞানীদেরও এর প্রয়োজন হয়ে পরে।

আমি আপনাদের জন্য এখানে কয়েকটি উদাহরণ দেবো। নিশ্চয়ই ইসলাম আমাদের জন্য বহুবিধ বিষয় বিধিবদ্ধ করেছেন। আর বিস্তারিত বিধানে -যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়েছে- আমাদের আচরন কি হবে? যা তার সু-বিস্তীর্ণ পথসমুহ বাতলে দিয়েছে। যখন আমরা মনোবিজ্ঞানের জন্য কোন বস্ত্ত বা বিষয় নিয়ে আসবো, তখন এ দ্বারা কোন অনভিপ্রেত বা নবআবিস্কৃত বিষয় কখনোই আমাদের উদ্দেশ্য নয়। উদাহরণত : একজন যুবক এসে যদি বলে- ‘এটা একটা নতুন কারণ অথবা নব আবিস্কৃত বিষয়। এ জাতীয় বিষয় কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যবহার করেছেন?’ তখন আমরা তাকে উত্তরে বলবো, ‘হ্যাঁ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এজাতীয় বিষয় ব্যবহার করেছেন।’ এখানে আমাদের লক্ষ্য করা উচিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদের রা. সঙ্গে কিরূপ আচরণ করেছেন। এবং তাঁকেই আমাদের সর্বোচ্চ উদাহরণ ও আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা উচিত। উল্লেখ থাকে যে, মনোবিজ্ঞানীদের নিকট মানুষের সঙ্গে ব্যবহার পদ্ধতিতে সু-নির্দিষ্ট ও অতিসুক্ষ কিছু উপায় থাকে। যেমন কিভাবে আমরা তার আস্থা অর্জন করতে পারি এবং কিভাবে একটি মানুষের চেহারার অভিব্যক্তি বুঝতে পারি?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস ভান্ডারকে তুমি যদি উদাহরন হিসেবে নিতে পারো, তাহলে এই বস্ত্তর জোগাড় ও মন্দ ব্যাখ্যার তোমার আর প্রয়োজন হবে না।কিন্তু এটা অবশ্যই বুঝতে হবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অর্থ কিভাবে বুঝেছিলেন এবং এর মর্মই বা কিভাবে উপলব্ধি করেছিলেন। যখন একই প্রশ্নের উত্তরে একাধিক প্রশ্নকারীর ভিন্ন ভিন্ন উত্তর দিয়েছেন। আর এটা একমাত্র রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় সুক্ষ্ম বিচক্ষণতার মাধ্যমে তাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত ব্যাপারেও অবহিত হতে সক্ষম হয়েছিলেন।

অতএব বিশেষজ্ঞ দায়ীবৃন্দকে সীরাতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধ্যায়ন এবং কিভাবে তিনি মানুষের সঙ্গে ব্যবহার করেছেন তা জানা কর্তব্য। এর প্রমাণ স্বরূপ কতিপয় বিবাদমান বিষয়ে কোন অভিমতকে বিশ্লেষন করার জন্য শরিয়তের কয়েকটি প্রমাণ শুনিয়ে দেয়া দরকার ; কিভাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের আস্থা ও ভালবাসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

উদাহরন স্বরূপ: মনোবিজ্ঞানী রোগীর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাত থেকে -যা রোগীর সঙ্গে এক ঘন্টা বা তার অধিক সময় পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল- সে অনেক বিষয় জানতে সক্ষম হবে। অতএব আপনি একজন দায়ী হিসেবে যদি এ পদ্ধতিটা প্রয়োগ করতে পারেন তাহলে নিশ্চয়ই আপনি প্রথম সাক্ষাতেই কাংক্ষিত দাওয়াত দিতে সক্ষম হবেন ; চাই সুস্থ বা অসুস্থ যে অবস্থায়ই সে থাকুক না কেন। সর্বোপরি আপনি তার আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন করতেও সক্ষম হবেন । এ অবস্থায় আপনার প্রভাব তার উপর দ্রুত ও গভীরভাবে পড়বে। সুতরাং এখন আপনার কর্তব্য হচ্ছে, প্রথমে তাকে নিজের সম্পর্কে বলতে দিন। কারণ মানুষের স্বভাবজাত চাহিদাও এটা। তাকে ক্রমাগত বলে যেতে দিন আর আপনি শুধু মনোযোগ দিয়ে শুনতে থাকুন। কারণ এর দ্বারা তার মধ্যে যে পুঞ্জিভূত চাপ ও আত্মিক জড়তা আছে, তা আপনি বের করে ফেলতে পারবেন। যখন নিজের সম্পর্কে পর্যাপ্ত কথাবলা শেষ হবে, তখন তার অন্তর স্বস্তি লাভ করবে, মনে প্রশান্তি অনুভব করবে এবং মনের মধ্যে আরামবোধ হবে। এ পর্যায়ে আপনিতো তার আস্থা অর্জনে বিরাট একটি পদক্ষেপ নিলেন। সে যা বলে তা আপনার গ্রহণ করা উচিত এই ভিত্তিতে যে, এটা তার স্বভাবজাত বিষয়। তার প্রদত্ত বক্তব্যকে অনভিপ্রেত মনে করবেন না। অবহেলা করবেন না। কারণ আপনি যদি তার বক্তব্যকে অনভিপ্রেত মনে করেন এবং ‘বোধগম্য নয়’ কথার দ্বারা যদি বিরক্তিভাব প্রকাশ করে দেন। তাহলে আপনার এই অনভিপ্রেত মনে করাটা তাকে আপনার সম্পর্কে নেতিবাচক দিকে তার মন নিয়ে যাবে। অতঃপর অন্তর দিয়ে সকল কথাবলা থেকে সে বিরত থাকবে।

আপনার শুধুমাত্র কথার মাধ্যমে দুর্বোধ্য মনে করা, যেমন, ‘আপনার বক্তব্য বোধগম্য নয়’ অথবা ‘এটা কি ঠিক হয়েছে?’ অথবা কখনো আপনার চেহারার অভিব্যক্তি পরিবর্তন করে তার মাধ্যমে নিজের বিরক্তি প্রকাশ করলেন। এমতাবস্থায় ঐ ভদ্রলোক ভাববে যে, আপনি তার কথা বিশ্বাস করছেন না ; তখন সে আলোচনা স্থগিত করে দেবে। এবং আপনাকে বলবে, আপনার সঙ্গে অন্য সময় সাক্ষাত করবো। তার সকল বক্তব্যের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে আপনাকে অনুভব করাতে হবে আমরা তাদের সঙ্গে কিরূপ আচরণ করছি। তাহলে ভদ্রলোক অনেক কথা বলবে। তার ভিতরে যা আছে তা উদগীরন করার জন্য অনর্গল বলে যাবে সে। যাতে সে দূশ্চিন্তামূক্ত হয়ে আত্মিক প্রশান্তি অনূভব করতে পারে। ‘বক্তার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনার প্রতি গুরুত্বারোপ করা’ একজন দাওয়াত-কর্মীর কাছ থেকে একান্তভাবে কাম্য। কথা হেলান দিয়ে শুনবে না। এমনকি গুরুত্ব না দেয়ার কারণে আপনি তার কথা উপলব্ধি করতে নাও পারেন। আর সে যখন এটা টের পেয়ে যাবে, তখনই সে তার কথা বলা বন্ধ করে দেবে। এবং সে বুঝাতে চেষ্টা করবে যে, অপর বিষয়টা সে একেবারে ভুলে গেছে। বরং কথার গতি তখন অন্য বাঁকে ঘুরিয়ে দেবে। ফলে আপনি দেখবেন, যে বিষয় সে কথা আরম্ভ করেছিল তার সম্পূর্ণ বিপরীত বিষয় শুরু করে দিয়েছে।

দাওয়াতের ক্ষেত্রে সভা-সেমিনারের গুরুত্ব অপরিসীম। এ প্রেক্ষিতে আপনার কর্তব্য হচ্ছে-আপনার প্রদত্ত বক্তব্যে তার প্রতি আপনার আন্তরিকতা, ভালোবাসা ও মহববতের কথাটা ফুটিয়ে তুলতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ- তার সঙ্গে এমন অবস্থায় আলোচনা জুড়ে দেয়া ঠিক হবে না, যখন আপনি চেয়ারে এবং সে মেঝেতে বসে থাকবে-যাতে সে একথা মনে করতে না পারে যে, আপনার ও তার মধ্যে অনেক ব্যবধান, অথবা মনে করবে আপনি তার উপর কর্তৃত্ব করছেন। এই অভিমতটি ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যে নিম্নে আর একটি সহায়ক উদাহরণ দিচ্ছি :

যখন আপনি কোন সরকারী উর্ধতন কর্মকর্তার নিকট যাবেন, তাকে একটি উঁচু চেয়ারে এবং আপনি অপেক্ষাকৃত একটু কম উঁচু চেয়ারে বা ছোট চেয়ারে বসা থাকবেন। অতঃপর আপনি যখন কথা বলবেন-তখন অবশ্যই আপনাকে নিচ থেকে উপরের দিকে লক্ষ্য করতে হবে। এমতাবস্থায় আপনি বেশি কথা বলতে পারবেন না। কারণ আপনি মনে করছেন সে আপনার উপর আধিপত্য বিস্তার করে আছে। উপরন্তু আপনি এটাও উপলব্ধি করছেন যে, সে আপনার উপর অহংকার প্রদর্শনকারী। আপনাদের মধ্যে সম্পূর্ণ ব্যবধানটা তেমন -উঁচু চেয়ার যার উপর সে বসে আছে এবং ছোট আসন যার উপর আপনি বসে আছেন-এ দু’টি আসনের মধ্যে পার্থক্য যেমন। পক্ষান্তরে আপনাকে যদি তার পাশে একই চেয়ারে বসায় অথবা আপনারা দু’জন এক সঙ্গে একই স্তরে বসেন ; তখন সে আপনার বিনয় উপলব্ধি করতে পারবে ও আপনাদের মধ্যে আন্তরিকতা ও ভালোবাসার সৃষ্টি হবে। এটা এমন একটি বিষয় যার প্রতি আমাদের সকলকেই খেয়াল রাখতে হবে।

অতএব এটা প্রমাণিত হয়ে গেল যে, বসার স্থান ও আসনের সমতা শ্রোতার অন্তরে একটা বিরাট প্রভাব থাকে। সে যদি আপনার সঙ্গে কোন বিষয় কথা বলতে প্রস্ত্তত নয়, তা সত্যেও এই সুযোগে আপনি তার সঙ্গে কথা বলার প্রস্ত্ততি নিতে পারেন। সে তাতে সাড়া দেবে। যে সাড়াটা আপনি আসন বৈষম্যের সময় পেতেন না।

জনসাধারনের সঙ্গে কথা বলার জন্য উপযুক্ত সময় নির্বাচন করা কর্তব্য। যেমন-আপনার নিকট যদি একজন লোক এসে বলে, আমার একটি প্রশ্ন আছে, অথচ আপনারা উভয় তখন একটি সংকীর্ণ স্থান অতিক্রম করছেন, অথবা একটি রাস্তার মধ্যে তার সঙ্গে দাড়িয়ে আছেন। এটা কি কথা বলার কোন উপযুক্ত স্থান হলো? অবশ্যই আপনাকে একটি উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করতে হবে যেখানে আপনার সঙ্গী আপনার বিশেষত্ব উপলব্ধি করতে পারবে। এবং আলোচনার জন্য উপযুক্ত সময় নির্বাচন ও অনুকুল পরিবেশ তৈরী করতে হবে। উভয়ের জন্য উপযুক্ত স্থান, নির্ধারিত সময় ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে। যেমন-আপনি তাড়াহুড়া করছেন, এ অবস্থায় কেহ আপনার সঙ্গে সাক্ষাত করে কথা বলতে চায় ; অতঃপর আপনি তাকে বললেন-আমার একটু তাড়া আছে, আপনার সঙ্গে এ মুহুর্তে কয়েক মিনিটের বেশি কথা বলতে পারছি না। এ অবস্থাতো আপনি কিছুতেই তার হক আদায় করতে পারছেন না। বরং এ ধরনের প্রেক্ষাপটে আপনাকে অন্য একটি সময় বেছে নিতে হবে যেখানে সে বিশেষত্ব অনুভব করবে। এবং উপলব্ধি করতে পারবে-নিশ্চয়ই আপনি তার প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছেন ও তার প্রতি মনোযোগ নিবদ্ধ করে রেখেছেন। আর তখনই আপনি তার আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হবেন। এবং তার অন্তরে আপনার বিশাল প্রভাব পড়বে।

যখন আপনারা উভয়ে এক সঙ্গে বসবেন তখন তার কথার মধ্যে যে বিষয়টাকে সে মুলত বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে তা উপলব্ধি করা আপনার কর্তব্য। বক্তার কথা আপনি সম্পূর্ণ বুঝছেন, এটা তাকে বুঝাতে হবে। আপনার বুঝার প্রমাণ হিসেবে আপনি তার সম্পূর্ণ বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারেন, সে আপনাকে তার বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করণের সুযোগ দিয়েছে। আপনি তাকে এভাবে বলতে পারেন-নিশ্চয়ই আপনার এ কথার উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘এটা...’ , অথবা আপনি এরক বলতে চাচ্ছেন... এরকম..... বলেছেন। তখন সে অনুভব করবে-নিশ্চয়ই সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে আপনি তার কথা শুনছেন। এ কারণে সে আপনার সঙ্গে কথা চালিয়ে যাবে আপনার প্রতি তার সৃষ্ট আস্থার সঙ্গে ; যা সৃষ্টি হয়েছে মনোযোগ সহকারে তার ক্রমাগত কথা শ্রবন করার কারণে। এ অবস্থায় তাকে আপনি সম্পূর্ণ প্রশান্ত, ধীর-স্থির ও ফুরফুরে মেজাজে পাবেন। অথবা আপনি তাকে বলতে পারেন, আমার ভুল হলে শুধরে দেবেন-‘আপনি সম্ভবত এটাও বুঝাতে চেয়েছেন। তখন সে আপনাকে উত্তর দেবে, ‘হ্যাঁ ; আপনি যা বলেছেন তা ঠিক।’ আপনি তখন বলবেন, ‘কিন্তু আমি এর সঙ্গে এটা ও সংযোজন করতে চাই ..।’

আপনি যদি হুবহু ঐ শব্দগুলো ব্যবহার করতে পারেন যা সে তার বক্তব্যে প্রয়োগ করেছে ; তাহলে সে আরো বেশী কথা বলবে এবং মনে করবে নিশ্চয়ই আপনি তাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। পক্ষান্তরে আপনি যদি তাকে কোন অস্পষ্ট কথা বলেন, এ কারনে যে, আপনি তার কথা ভাল করে শুনেননি অথবা আপনি তার সঙ্গে বাক্যালাপ করেছেন সে আপনার কথা বুঝতে পারেনি তাহলে তাকে উপলব্ধি করতে দেয়া যাবে না যে, সে আপনার কথা সে বুঝতে পারেনি। বরং এ প্রেক্ষিতে আপনার কর্তব্য হচ্ছে-তখন এর বিশদ ব্যখ্যা করে দেয়া; অতএব আপনি তাকে বলতে পারেন ‘আশা করি আপনি বিষয়টা বুঝতে পেরেছেন।’ এটা আপনার প্রতি তাকে আরো সজাগ করবে এবং তার প্রতি আপনার অব্যাহত আনুগত্য বজায় রাখবে, নিজেকে নিরাপদ ভাবতে এবং ক্রমাগত কথা চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করবে। আপনি তাকে ক্রমাগত প্রশ্ন করতে থাকুন, কারণ আপনি যদি প্রশ্ন না করেন তাহলে সে তার প্রতি আপনার গুরুত্বহীনতা মনে করে বসবে। এবং বলবে লোকটার নিকট আমি যে উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছিলাম সে তার কোন গুরুত্বই দিলো না।

কখনো এমন বিষয় নিয়ে কথা বলতে থাকবে যা আপনি চাচ্ছেন না, উপরন্তু আলোচ্য বিষয়টা আপনি পরিবর্তন করতে চান। তাহলে এ ক্ষেত্রে তা সরাসরি পরিবর্তন না করে, বরং বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে হবে। আর তা এভাবে করা যেতে পারে, আপনি কৌশলে তাকে অন্য প্রসঙ্গে নিয়ে যাবেন অথচ সে মনে করবে তার বিষয়ে-ই সে আছে। কিন্তু আপনি তার সঙ্গে স্পষ্টবাদী হবেন এবং তাকে উদাত্ত্ব আহবান জানাবেন-আলোচ্য বিষয়টা যেন গুরুত্বপূর্ণ ও পরিস্কার হয়। আর একটু অগ্রসর হয়ে তাকে বলবেন ‘তার কাংক্ষিত বিষয়টা যেন অপ্রাসঙ্গিকতা হতে মুক্ত হয়।’ যাতে সে বুঝতে পারে নিশ্চয়ই আপনি তাকে এবং তার বিষয়টাকে খুব গুরুত্ব দিচ্ছেন।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন