hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

পিতামাতার অবাধ্যতা কারণ, কিছু বাহ্যিক চিত্র ও প্রতিকারের উপায়

লেখকঃ শাইখ মুহাম্মদ ইবন ইবরাহীম আল-হামাদ

পিতামাতার অবাধ্যতার বাহ্যিক রূপ-প্রকৃতি, অবাধ্যতার ৩৩টি বাহ্যিক রূপ
পিতামাতার অবাধ্যতার অনকেগুলো বাহ্যিক রূপ ও আকার-প্রকৃতি রয়েছে; সেগুলো নিম্নরূপ [দেখুন: ড. মুস্তফা আস-সাবা‘য়ী, ‘আখলাকুনা আল-ইজতিমা‘য়ীয়্যাহ’ ( أخلاقنا الاجتماعية ), পৃ. ১৬৬; আবদুর রউফ আল-হানাবী, ‘বির্রুল ওয়ালিদাইন’ ( بر الوالدين ), পৃ. ১৪৩; হাসান আইয়ূব, ‘আস-সুলুকুল ইজতিমা‘য়ী’ ( السلوك الاجتماعي ), পৃ. ২৫৮ - ২৫৯; উম্মু আবদিল কারীম, ‘কুর্রাতুল ‘আইনাইন ফী ফাদায়েলি বির্রিল ওয়ালিদাইন’ ( قرة العينين في فضائل بر الوالدين ); সা‘আদ বিনতে মুহাম্মাদ ফারাজ, ‘বিল ওয়ালিদাইনে ইহসানা’ ( بالوالدين إحسانا ), পৃ. ৪৪ - ৪৮; নিযাম সাকাজিহা, ‘বির্রুল ওয়ালিদাইনে ফিল কুরআনিল কারীমে ওয়াস সুন্নাহ আস-সহীহা’ ( بر الوالدين في القرآن الكريم والسنة الصحيحة ), পৃ. ৩৫ - ৪১ ও ৬৩ - ৬৫; ড. আবদুল্লাহ আত-ত্বাইয়ার, ‘ফয়দুর রাহীম আর-রাহমান’ ( فيض الرحيم الرحمن ), পৃ. ৯৬; আহমাদ ‘ঈসা ‘আশুরা, ‘বির্রুল ওয়ালিদাইনে ওয়া হুকুকুল আবায়ে ওয়াল আবনায়ে ওয়াল আরহাম’ ( بر الوالدين و حقوق الآباء و الأبناء و الأرحام ), পৃ. ৩৩ - ৪৫; ইবরাহীম আল-হাযেমী, ‘আল-ই‘লাম বেবির্রিল ওয়ালিদাইনে ওয়া সিলাতিল আরহাম’ ( الإعلام ببر الوالدين و صلة الأرحام ), পৃ. ৩৫ - ৪১; ড. মুহাম্মাদ ইবন আহমাদ আস-সালেহ, ‘আত-তাকাফুলুল ইজতিমা‘য়ী ফিশ শারী‘য়াতিল ইসলামিয়্যা’ ( التكافل الاجتماعي في الشريعة الإسلامية ), পৃ. ৯৮ - ১০৫]:

১. পিতামাতাকে কাঁদানো ও দুঃখ দেওয়া: চাই তা কথার দ্বারা হউক অথবা কাজের দ্বারা, অথবা অন্য কোনো পন্থায়।

২. তাদেরকে ধমক ও হুমকি দেওয়া: আর এটা হতে পারে উচ্চস্বরে কথা বলার দ্বারা; অথবা তাদেরকে কঠোর ভাষায় শক্ত কথা বলা; আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿ وَلَا تَنۡهَرۡهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوۡلٗا كَرِيمٗا ٢٣ ﴾ [ الاسراء : ٢٣ ]

“তাদেরকে ধমক দিও না; আর তাদের সাথে সম্মানসূচক কথা বলো।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ২৩]

৩. পিতামাতার আদেশ-নির্দেশের কারণে ত্যক্ত ও বিরক্ত হওয়া: আর এটা এমন এক চরিত্র, যা বর্জন করাটাকে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে আদব ও শিষ্টাচার বলে শিক্ষা দিয়েছেন; কারণ, এমন অনেক মানুষ আছে, যাকে তার পিতামাতা যখন আদেশ করে, তখন সে ‘উফ্’ বলে তার বিরক্তিসূচক কথা প্রকাশ করে, যদিও সে অচিরেই তাদের আনুগত্য করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ فَلَا تَقُل لَّهُمَآ أُفّٖ ﴾ [ الاسراء : ٢٣ ]

“তাদেরকে ‘উফ্’ বলো না।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ২৩]

৪. পিতামাতার সামনে ভ্রুকুটি করা এবং কপাল ভাঁজ করে ক্রোধ প্রকাশ করা: আপনি কোনো কোন মানুষকে বিভিন্ন মাজলিস ও আসরে দেখতে পাবেন হাস্যোজ্জ্বল, মুচকি হাসিসম্পন্ন, উত্তম চরিত্রবান, উত্তম কথার কারিগর ও মিষ্টিভাষী; অতঃপর যখনই সে বাসায় প্রবেশ করবে এবং পিতামাতার সামনে গিয়ে বসবে, তখন সে প্রভাবশালী সিংহে রূপান্তরিত হয়ে যায়, কোনো কিছুই পরোয়া করে না; ফলে তার অবস্থা পরিবর্তন হয়ে যায়, নম্রতা-ভদ্রতা চলে যায়, উদারতা লোপ পায় এবং তার মাঝে কঠোরতা, রূঢ়তা, হীনতা ও অশ্লীলতার আগমন ঘটে। এটাকে সত্যে পরিণত করে কথকের কথা:

مِنَ النّاسِ مَنْ يصلُ الأبعدينَ

ويشقَى بهِ الأقربُ الأقربُ

(মানুষের মাঝে কেউ কেউ আছে অনেক দূরতমদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে,

আর তার কাছে নিকটমতম থেকে নিকটতম ব্যক্তিরা হতভাগ্য হয়ে যায়)।

৫. পিতামাতার দিকে বাঁকা চোখে তাকানো: আর এটা হলো ক্ষুব্ধ ও বিরক্তির চোখে তাদের দিকে তাকানো এবং তাদের দিকে অবজ্ঞা ও ঘৃণার চোখে দৃষ্টি দেওয়া।

মুয়াবিয়া ইবন ইসহাক র. ‘উরওয়া ইবন যুবায়ের রা. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:

" ما بَرَّ والدَه مَنْ شَدَّ الطّرفَ إليه " .

“যে ব্যক্তি তার পিতার দিকে কঠোর দৃষ্টিতে তাকালো সে তার পিতার সাথে ভাল ব্যবহার করল না।” [যাহাবী, ‘সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা’ ( سير أعلام النبلاء ): ৪/৪৩৩]

৬. পিতামাতার প্রতি নির্দেশ জারি করা: ঐ ব্যক্তির মত, যে তারা মাতাকে বাড়ি-ঘর ঝাড়ু দেওয়ার জন্য, অথবা কাপড় ধোয়ার জন্য, অথবা খাবার তৈরি করার জন্য নির্দেশ করে; অথচ এই কাজটি তার জন্য মানানসই নয়, বিশেষ করে মা যখন অক্ষম, বা বয়স্ক, বা অসুস্থ হন।

তবে মা যখন স্বেচ্ছায় ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ কাজগুলো করেন এবং তিনি অক্ষমও নন, এমতাবস্থায় এই ধরনের কাজে কোনো দোষ নেই, তবে এ ক্ষেত্রে তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দিকটি লক্ষ্য রাখতে হবে এবং তাঁর জন্য দো‘আ করবে।

৭. মাতা কর্তৃক তৈরি করা খাবারের সমালোচনা করা: আর এই কাজটির মধ্যে দু’টি নিষিদ্ধ বিষয় রয়েছে; একটি হচ্ছে: খাদ্যের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করা, আর এটি করা বৈধ নয়; কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও কোনো খাদ্যের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করেন নি; ভাল মনে হলে খেয়েছেন, নতুবা বর্জন করেছেন।

আর দ্বিতীয় অবৈধ বিষয়টি হল: তাতে মায়ের সাথে শিষ্টাচারপূর্ণ ব্যবহারের কমতি হয় এবং তাকে বিরক্ত করা হয়।

৮. পারিবারিক কাজে পিতামাতাকে সহযোগিতা না করা: চাই তা ঘর সাজানো ও গোছগাছ করার ক্ষেত্রে হউক, অথবা খাবার প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে হউক, অথবা পারিবারিক অন্য যে কোনো কাজের ক্ষেত্রেই হউক।

বরং ছেলেদের কেউ কেউ (আল্লাহ তাদেরকে হেদায়েত করুন) এটাকে তার অধিকার ক্ষুন্ন ও ব্যক্তিত্ব নষ্ট হয় বলে মনে করে।

আর মেয়েদের কেউ কেউ (আল্লাহ তাদেরকেও হেদায়েত করুন) মনে করে, তার মাতাই ঘরের অভ্যন্তরীণ কাজ-কর্ম সম্পাদন করবে, সে তার মাকে সহযোগিতা করতে পারবে না। এমনকি তাদের কেউ কেউ তার মাকে কাজে ব্যস্ত থাকা অবস্থায় রেখে তার বান্ধবীদের সাথে টেলিফোনে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করে।

৯. পিতামাতা যখন কথা বলেন, তখন তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া: আর এর মানে হল তাদের কথায় কর্ণপাত না করা, অথবা তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা, অথবা তাদেরকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করা, অথবা তাদের সাথে তর্ক করা এবং তাদের সাথে কঠোরভাবে ঝগড়া-বিবাদ করা।

পিতামাতার ব্যাপারে এ ধরনের কাজে কতই না অপমানজনক এবং তাতে তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের কমতি বা ঘাটতির বিষয়টি তাদেরকে কত ভাবেই না জানিয়ে দেওয়া হয়!

১০. পিতামাতার মতামত বিবেচনায় কমতি করা: কোনো কোনো মানুষ তার কোনো বিষয় বা কাজেই তার পিতামাতার পরামর্শ ও অনুমতি গ্রহণ করে না, চাই তার বিয়ের ক্ষেত্রে হউক, অথবা তালাক প্রদান করার ক্ষেত্রে হউক, চাই ঘর থেকে তার বের হওয়ার ক্ষেত্রে হউক, অথবা ঘরের বাইরে অবস্থান করার ক্ষেত্রে হউক, চাই তার বন্ধু-বান্ধবদের সাথে কোনো সুনির্দিষ্ট স্থানে যাওয়ার ব্যাপারে হউক, অথবা এ ধরনের অন্য কোনো বিষয়ে হউক।

১১. পিতামাতার নিকট প্রবেশের সময় অনুমতি না নেওয়া: এটা পিতামাতার সাথে শিষ্টাচার পরিপন্থী আচরণ; কেননা, কখনও কখনও তারা উভয়ে অথবা তাদের কোনো একজন এমন অবস্থায় থাকেন, তারা পছন্দ করেন না যে, এই অবস্থাটি কেউ প্রত্যক্ষ করুক।

১২. পিতামাতার সামনে বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরা: চাই সেই সমস্যা ভাইদের সাথে সংশ্লিষ্ট হউক, অথবা স্ত্রী’র সাথে সংশ্লিষ্ট হউক, অথবা সন্তানদের সাথে সংশ্লিষ্ট হউক, অথবা অন্য কারও সাথে সংশ্লিষ্ট হউক। কেননা, কোনো কোন মানুষ পরিবারের কেউ কোনো ভুল করলে তাকে তার পিতামাতার সামনেই তিরস্কার করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে; অথচ, কোনো সন্দেহ নেই যে, এই কাজটি এমন কার্যতালিকার অন্তর্ভুক্ত, যা তাদেরকে অস্থির করে তুলে এবং তারা শান্তিতে ঘুমাতে পারে না।

১৩. জনগণের নিকট পিতামাতার নিন্দা ও দুর্নাম করা এবং তাদের দোষ-ত্রুটি আলোচনা করা: কোনো কোনো মানুষ যখন কোনো কাজে ব্যর্থ হয়— যেমন সে তার পড়ালেখায় ব্যর্থ হল, তখন সে তার পিতামাতার উপর সকল দোষ ও দায়ভার চাপিয়ে দেয় এবং সে তার নিজের ব্যর্থতা ও অপারগতাকে বৈধতা দিতে থাকে এভাবে যে, তার পিতামাতা তাকে অযত্ন করেছে, তাকে যথাযথভাবে লালন-পালন করে নি, তারা তার জীবনটাকে নষ্ট করে দিয়েছে, তার ভবিষ্যৎটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি ধরনের রংবেরংয়ের নানা অপবাদ ও দোষারোপ করতে থাকে।

১৪. পিতামাতাকে গালি ও অভিশাপ দেওয়া: তাদেরকে সরাসরি গালি দেওয়া, অথবা গালি দেওয়ার উপলক্ষ তৈরি করা; যেমন— ছেলে কোনো ব্যক্তির পিতা বা মাতাকে গালি দিল, তারপর ঐ ব্যক্তিও পাল্টা তার পিতামাতাকে গালি দিল। কারণ, আবদুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে হাদিস বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« مِنَ الكَبَائِر شَتْمُ الرَّجُل وَالِدَيهِ ! ، قالوا : يَا رَسُول الله ، وَهَلْ يَشْتُمُ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ ؟ ! قَالَ : نَعَمْ ، يَسُبُّ أَبَا الرَّجُلِ ، فَيَسُبُّ أبَاه ، وَيَسُبُّ أُمَّهُ ، فَيَسُبُّ أُمَّهُ » . ( مُتَّفَقٌ عَلَيهِ ) .

“কোন ব্যক্তি কর্তৃক তার পিতামাতাকে গালি দেওয়া কবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত! সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন: হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম! কোনো মানুষ কি তার পিতামাতাকে গালি দিতে পারে?! জবাবে তিনি বললেন: হ্যাঁ, সে অন্য কোনো মানুষের পিতাকে গালি দেয়, তখন ঐ ব্যক্তি তার পিতাকে গালি দেয় এবং সে অন্য ব্যক্তির মাকে গালি দেয়, তখন ঐ ব্যক্তি তার মাকে গালি দেয়।” [বুখারী, হাদিস নং- ৫৬২৮; মুসলিম, হাদিস নং- ২৭৩; হাদিসের শব্দগুলো ইমাম মুসলিম রহ. এর।]

১৫. ঘরের মধ্যে খারাপ কিছু নিয়ে আসা: যেমন খেল-তামাশার সরঞ্জামাদি ও ঘরের মধ্যে গোলযোগ সৃষ্টির যন্ত্রপাতির অনুপ্রবেশ ঘটানো, যা স্বয়ং ব্যক্তির চারিত্রিক বিকৃতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়; আবার কখনও কখনও এগুলো তার ভাই-বোন ও পরিবারের সকলের মধ্যে গোলযোগ সৃষ্টির দিকে ধাবিত করে; ফলে সন্তানের অন্যায়-অপকর্ম ও পরিবারের অধঃপতনের কারণে পিতামাতা দুঃখ-কষ্ট অনুভব করেন।

১৬. পিতামাতার সামনে বদ অভ্যাসের বহিঃপ্রকাশ ঘটানো: যেমন পিতামাতার সামনে ধূমপান করা, অথবা তাদের উপস্থিতিতে খেল-তামাশার উপকরণ উপভোগ করা, অথবা ফরয সালাত বাদ দিয়ে ঘুমিয়ে থাকা এবং তার জন্য তাকে জাগিয়ে দিলে জাগানোর বিষয়টিকে প্রত্যাখ্যান করা; আর অনুরপভাবে খারাপ সঙ্গী-সাথীদেরকে বাসায় নিয়ে আসা। আর এই সবগুলোই হল পিতা-মাতার সাথে বেহায়াপনার চূড়ান্ত দলীলস্বরূপ।

১৭. পিতামাতার সুনাম ও সুখ্যাতি নষ্ট করা: আর তা হয় এমন মন্দ ও নিকৃষ্ট কাজ করার মাধ্যমে, যা সম্মানহানি করে এবং ব্যক্তিত্ব নষ্ট করে; আবার কখনও কখনও তা কারাগারের দিকে নিয়ে যায় এবং লজ্জজনক পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যায়। সুতরাং কোনো সন্দেহ নেই যে, এসব কর্মকাণ্ড পিতামাতার অবাধ্যতার অন্তর্ভুক্ত; কেননা, তা পিতামাতার জন্য দুশ্চিন্তা, দুঃখ-কষ্ট, অসম্মান ও অপমান বয়ে আনে।

১৮. পিতামাতাকে বিপদে বা জটিলতায় ফেলে দেওয়া: যেমন— সন্তান কারও নিকট থেকে অর্থ-সম্পদ ঋণ নেওয়ার পর তা পরিশোধ করে না, অথবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেয়াদবী করে, তারপর সন্তানের পলাতক অবস্থায় অথবা তার বেয়াদবীর কারণে কর্তৃপক্ষ পিতাকে হাজির হওয়ার জন্য বাধ্য করে।

আবার কখনও কখনও পিতাকে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়, যে পর্যন্ত না সন্তান তার ঋণ পরিশোধ করে, অথবা সে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ না করে।

১৯. ঘরের বাইরে দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করা: আর এটা পিতামাতাকে তার সন্তানের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন ও অস্থির করে তোলে; তাছাড়া অনেক সময় তাদের সেবা-যত্নের প্রয়োজন হয়; সুতরাং সন্তান যখন ঘরের বাইরে থাকে, তখন তারা তাদের সেবা-যত্ন করার মত কাউকে পায় না।

২০. বেশি বেশি দাবি-দাওয়া ও বায়না ধরে পিতামাতার উপর চাপ সৃষ্টি করা: কোনো কোন মানুষ বেশি বেশি দাবি-দাওয়া ও বায়না ধরে তার পিতামাতার উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে, অথচ অনেক সময় পিতামাতা’র উপার্জনের ক্ষমতা কম হয়ে থাকে, এই সত্ত্বেও দেখা যায় সন্তান তাদেরকে গাড়ি কিনে দেওয়ার জন্য বাধ্য করে, তাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ দেয় এবং তাকে নতুন বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার জন্য বলে, অথবা সে তাদের নিকট বেশি বেশি অর্থ-সম্পদ দাবি করে যাতে বন্ধু-বান্ধব ও সমবয়সীদেরকে নিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারে।

২১. পিতামাতার উপর স্ত্রীকে প্রাধান্য দেওয়া: কোনো কোনো মানুষ তার পিতামাতার আনুগত্য করার চেয়ে তার স্ত্রী’র আনুগত্য করাটাকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে এবং স্ত্রীকে পিতামাতার উপর প্রাধান্য দেয়; এমনকি স্ত্রী যদি তার নিকট তার পিতামাতাকে তাড়িয়ে দিতে আবদার করে, তাহলে সে তাদেরকে তাড়িয়ে দিবে, যদিও তাদের কোনো আবাসিক ঠিকানা নেই।

আর আপনি কোনো কোনো ছেলে-সন্তানকে দেখবেন যে, সে তার পিতামাতার সামনে স্ত্রী’র জন্য মাত্রাতিরিক্ত ভালবাসা প্রকাশ করে এবং একই সময় তাকে দেখবেন যে, সে তার পিতামাতার প্রতি রূঢ় আচরণ করে, অথচ সে তাদের অধিকারের প্রতি কোনো লক্ষ্য রাখে না।

অচিরেই এই প্রসঙ্গে সামনের পৃষ্ঠাগুলোতে বিস্তারিত বিবরণ আসবে।

২২. পিতামাতার প্রয়োজনের সময় অথবা বৃদ্ধ বয়সে তাদেরকে পরিত্যাগ করা: কেননা, পিতামাতা যখন বৃদ্ধ হয়ে যায় এবং তাদের টাকা-পয়সা লাগে এমন কোনো কাজ দেখা দেয়, তখন কোনো কোনো সন্তান তাদের থেকে সরে যায় এবং নিজেকে নিয়ে বিশেষভাবে ব্যস্ত হয়ে যায়।

২৩. পিতামাতার দায়-দায়িত্ব থেকে মুক্ত থাকা এবং তাদের সন্তান হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করা: আর এটা হল পিতামাতার অবাধ্যতার জঘন্য রূপ; কারণ, কোনো কোনো সন্তানকে দেখা যায়, সে যখন সামাজিকভাবে উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন স্থানে উন্নিত হয় অথবা বড় রকমের চাকুরি পেয়ে যায়, তখন সে তার পিতামাতাকে স্বীকার করতে চায় না এবং তাদের দায়-দায়িত্ব থেকে মুক্ত থাকতে চায়; আর সে তার ঘরের মধ্যে পুরাতন পোষাক-পরিচ্ছদে তাদের অবস্থান করাটাকে রীতিমত অপমানবোধ করে।

আবার কখনও কখনও তাদের ব্যাপারে তার কাছে যদি জানতে চাওয়া হয়, তখন সে বলে দেয়: ওরা আমাদের চাকর-বাকর।

আবার কোনো কোনো সন্তান বিয়ে-সাদী ও সাধারণ অনুষ্ঠানসমূহে লজ্জায় তার পিতার নাম উচ্চারণ করার বিষয়টি এড়িয়ে চলে! আর এই ধরনের কাজ নিঃসন্দেহে নিকৃষ্ট মন-মানসিকতা, দুর্বল বুদ্ধি, মর্যাদাহীনতা ও চরম অধৈর্যের প্রমাণ বহন করে। তবে পিতামাতাকে ভালোবাসে প্রেমিক ভদ্র মানুষ তার উৎসস্থল, প্রজন্ম ও মূলকে নিয়ে গৌরব বর্ণনা করে; আর ভদ্রজনেরা সুন্দরকে ভুলে যায় না। কবির ভাষায়:

" إن الكرام إذا ما أيسروا ذكروا

من كان يألفهم في المنزل الخشن ".

(ভদ্রলোকেরা যখন স্বচ্ছল হয়ে যায়, তখন আলোচনা করে তারা

সেই জনদের, জীর্ণ কুঠিরে তাদেরকে আদর-সোহাগ করেছেন যারা)।

২৪. পিতামাতাকে প্রহার করা: বড় নিষ্ঠুর ও পাষাণ্ড হৃদয়ের অধিকারী ব্যক্তিবর্গ ছাড়া এই কাজ করা কারও পক্ষে সম্ভব নয়; এমন কাজ তারাই করতে পারে, যাদের হৃদয়ে মায়া-মমতা ও লজ্জা-শরমের ভালাই নেই এবং যাদের জীবনে ন্যূনতম ব্যক্তিত্ব, গৌরব ও আত্মমর্যাদাবোধ নেই।

২৫. বার্ধক্য ও দেখাশুনা করার প্রয়োজনের সময় পিতামাতাকে ছেড়ে যাওয়া: আর এই কাজটি সীমাহীন নোংরামি এবং চরম ঘৃণিত ও মন্দ কাজ; যার ভয়াবহতা বা আতঙ্কে শরীর শিউরে উঠে এবং যার কথা শুনলে মাথার চুল দাঁড়িয়ে যায়; আর যে ব্যক্তি এই কাজ করবে, তার জীবনে কখনও ভাল কিছু হবে না।

২৬. পিতামাতা যখন কোনো অন্যায় কাজ করে ফেলে, তখন তারেকে পরিত্যাগ করা এবং তাদের সাথে সদ্ব্যবহার না করা ও তাদের তাদের কল্যাণ কামনা না করা: আর এটা এক ধরনের ত্রুটি ও মূর্খতা; কারণ, পিতামাতা কাফির হলেও যেখানে তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করা ওয়াজিব (আবশ্যক), সেখানে তারা মুসলিম হওয়ার পরেও তাদের সাথে কিভাবে এরূপ ব্যবহার করা বৈধ হবে, না হয় তাদের কিছু ত্রুটি-বিচ্যূতি হয়েই গেল? !

২৭. পিতামাতার ব্যাপারে কার্পণ্য করা: সুতরাং কোনো কোন মানুষ এমন প্রকৃতির, যে তার পিতামাতার জন্য ব্যয় করার ক্ষেত্রে কার্পণ্য ও কমতি করে। আবার কখনও কখনও পিতামাতার সম্পদের খুব বেশি প্রয়োজন হয়ে পড়ে, এতদসত্ত্বেও তাদের প্রতি তার কোনো দায়িত্ব আছে বলে মনে করে না এবং তাদের প্রতি কোনো মনোযোগ দেয় না।

২৮. পিতামাতার প্রতি অবদানের খোটা দেওয়া ও বার বার গণনা করা: সুতরাং কোনো কোন মানুষ এমন, যে তার পিতামাতার সাথে ভাল ব্যবহার করে, কিন্তু সে খোটা ও কষ্ট দেওয়ার মাধ্যমে এটাকে নষ্ট করে ফেলে; আর এই ভালটাকে আরও নষ্ট করে ফেলে তাদের প্রতি তার অবদানের বিষয়টি বার বার গণনা করার দ্বারা এবং কারণে অকারণে এই সদ্ব্যবহারের কথা আলোচনা করার মাধ্যমে।

২৯. পিতামাতার সম্পদ চুরি করা: আর এই কাজটি দু’টি হারাম কাজকে একত্রিত করে: চুরি ও অবাধ্যতা; সুতরাং মানুষের মধ্য থেকে এমন মানুষও দেখতে পাবেন, যার অর্থের প্রয়োজন হয় এবং এ প্রয়োজনিয়তা তাকে তার পিতামাতার সম্পদ চুরির দিকে নিয়ে যায়— হয় তাদের বার্ধক্যের কারণে, অথবা তাদের অসতর্কতার সুযোগ নিয়ে চুরির কাজটি সম্পন্ন হয়।

এ ধরনের চুরির অন্যতম একটি নমুনা হল— কেউ তার পিতামাতার সাথে প্রতারণার উদ্দেশ্যে তার নিকট আবেদন করল যে, তিনি যাতে তাকে এই এই পরিমাণ সম্পদ অথবা জমি অথবা এ জাতীয় কিছু দেওয়ার ব্যাপারে স্বাক্ষর করে দেন। আবার কখনও কখনও সে তাদের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করে এবং তার পাকাপোক্ত নিয়ত হল সে তা পরিশোধ করবে না।

৩০. পিতামাতার সামনে বিলাপ করা ও দুঃখ-কষ্ট প্রকাশ করা: আর এই কাজটি হল নিকৃষ্ট মানের অবাধ্যতার নমুনা; আর এটা এ জন্য যে, পিতামাতা — বিশেষ করে মা সন্তানের বিপদ-মুসিবতের কারণে অস্থির হয়ে পড়েন; তারা তার ব্যথায় ব্যথিত হন; এমনকি কখনও কখনও তারা তার চেয়ে বেশি ব্যথা অনুভব করেন।

৩১. বিনা প্রয়োজনে পিতামাতার অনুমতি ছাড়া দূরে কোথাও প্রবাসজীবনে চলে যাওয়া: কোনো কোনো সন্তান তার পিতামাতা থেকে দূরে চলে যাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া উপলব্ধি করতে পারে না; ফলে আপনি তাকে দেখতে পাবেন যে, সে তার পিতামাতার অনুমতি ছাড়াই তাদের থেকে দূরে প্রবাসজীবনে চলে যাওয়ার জন্য চেষ্টা-তদবীর করে, অথচ তার প্রবাসজীবনের কোনো প্রয়োজন নেই; আবার কখনও কখনও তার পিতামাতা যে শহরে বসবাস করেন কোনো কারণ ছাড়াই সে তা ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়; আবার কখনও কখনও সে পড়ালেখার উদ্দেশ্যে নিজ শহর ছেড়ে অন্য শহরে চলে যায়, অথচ এ ধরনের পড়ালেখা ঐ শহরেই সম্ভব, যেখানে তার পিতামাতা বসবাস করে; এগুলো ছাড়াও আরও অনেক কারণে সে প্রবাসে চলে যায়, যেসব কারণ তার এই প্রবাসজীবনকে বৈধ বলে অনুমোদন করে না।

আর সে জানে না যে, তার পিতামাতাকে ছেড়ে তার বিদেশে চলে যাওয়াটা তাদের পরিতাপ ও মনের অস্থিরতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়; আবার সে এটাও জানে না যে, কখনও কখনও তার পিতামাতা উভয়ে অথবা তাদের কোনো একজন মারা যেতে পারে এমন অবস্থায় যে, সে তাদের থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে দূরে অবস্থান করছে; সুতরাং এ কারণে তাদের প্রতি আনুগত্য, সদ্ব্যবহার ও দায়িত্ব পালনের বিষয়ে ব্যাঘাত ঘটবে।

তবে ছেলের যখন প্রবাসজীবনে যাওয়ার প্রয়োজন হবে এবং তার পিতামাতা থেকে সে ব্যাপারে অনুমতি নেয়, তাহলে তাতে কোনো সমস্যা নেই।

৩২. পিতামাতার মৃত্যু কামনা করা: কোনো কোনো সন্তান তার পিতামাতার মৃত্যু কামনা করে, যাতে সে তাদের সম্পদের উত্তরাধিকারী হতে পারে, যদি তারা সম্পদশালী হন, অথবা যাতে তাদের থেকে মুক্তি পেতে পারে, যদি তারা অসুস্থ হন বা দরিদ্র হন অথবা সে যাতে মুক্তি পেতে পারে তাদের সেবা-যত্ন করা থেকে এবং তাদের মুখোমুখি অবস্থান করা থেকে— যাতে সে তার ভ্রষ্টতা ও মূর্খতার মধ্যে মনের সুখে দিনকাল অতিবাহিত করতে পারে।

৩৩. পিতামাতাকে হত্যা করা এবং তাদের থেকে মুক্তি পাওয়া: কখনও কখনও এমন হতভাগ্য ছেলে-সন্তানও পাওয়া যায়, যে তার পিতামাতার কোনো একজনকে হত্যার জন্য অগ্রসর হয়; হয় প্রচণ্ড মূর্খতার কারণে, অথবা ক্রোধের উত্তেজনার কারণে, অথবা মাতাল অবস্থায় থাকার কারণে, অথবা সম্পদের উত্তরাধিকারী হওয়ার আশায়, অথবা এগুলো ভিন্ন অন্য কোনো কারণে।

হে দুর্ভাগা! হে কালো মুখওয়ালা! হে মন্দ পরিনাম ও পরিণতির অধিকারী! যদি আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রহমত দ্বারা তাকে সংশোধন না করেন, (তাহলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ)।

এ হল পিতামাতার অবাধ্যতার কিছু বাহ্যিক চিত্র ও রূপ-প্রকৃতি; এটা ঘৃণ্য কাজ ও দূষিত কর্মপন্থা, যা জ্ঞানীদের জন্য মানানসই নয় এবং যা তাকওয়া, সততা ও সঠিক পথের অধিকারী ব্যক্তিবর্গের পক্ষ থেকে সংঘটিত হতে পারে না।

সুতরাং পিতামাতার অবাধ্য সন্তান থেকে কল্যাণ বহু দূরে, শাস্তি তার অতি নিকটে এবং অকল্যাণ তার দিকে দ্রুত ধাবমান।

আর এই বিষয়টি চাক্ষুষ অনুভবযোগ্য, অনেক মানুষ তা জানে এবং তারা তাদের নিজ চোখে তা প্রত্যক্ষ করে; আর তারা একের পর এক ঐসব মানুষের কাহিনী শুনে, যারা তাদের পিতামাতার সাথে অবাধ্য আচরণের কারণে লাঞ্ছিত, অপদস্থ ও সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন