মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র। কিন্তু স্বাধীনতা লাভের দীর্ঘদিন পরও আজ পর্যন্ত এখানে আদর্শ ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হয়নি। বাংলাদেশে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় নাগরিকদের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাবার ব্যবস্থা নেই। এ অবস্থা চলে আসছে আরো আগে থেকে।
মুসলিম শাসনামলে ভারত উপমহাদেশে চালু ছিলো ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্থা। সে শিক্ষা ব্যবস্থায় তৈরি হতো আদর্শ নাগরিক, আদর্শ মুসলিম এবং দেশ পরিচালনার যোগ্যতা সম্পন্ন দক্ষ নেতৃত্ব ও জনশক্তি।
কিন্তু ১৭৫৭ সাল থেকে যখন ইংরেজরা ভারতবর্ষ দখল করে নিতে থাকে, তখন থেকে তারা এ দেশে এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করার বন্দবস্ত করে, যে শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে শিক্ষা লাভকারীরা তাদের মানসিক গোলাম হিসেবে তৈরি হবে। তাদের খাদেম ও সেবক হয়ে কাজ করবে এবং মুসলমানের ঘরে জন্ম নিলেও সত্যিকার খাদেম ও সেবক হয়ে কাজ করবে এবং মুসলমানের ঘরে জন্ম নিলেও সত্যিকার মুসলিম হয়ে গড়ে উঠবে না। তারা সে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করার পর নানা ভাবে তার পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে থাকে। এবং ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে সরকারি যাবতীয় পৃষ্ঠপোষকতা উঠিয়ে নেয়। শেষ পর্যন্ত সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাহীন ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্থা তার শৌর্যবীর্য হারিয়ে স্তিমিত হয়ে পড়ে এবং কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। অপরদিকে বৃটিশদের প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা ব্যবস্থা জমে উঠে। চাকুরি বাকরিসহ বস্তুগত জীবন ধারণ ও জীবন যাপনের জন্যে তখন এই শিক্ষা গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়ে।
সেই থেকে এদেশে চালু হয় দ্বি-মুখী শিক্ষা ব্যবস্থা। অর্থ্যাৎ দুই ধারার শিক্ষা ব্যবস্থা। একটি হলো বৃটিশদের বস্তুবাদী দর্শনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা। আর অপরটি হলো পূর্ব থেকে চলে আসা মুসলামানদের ধর্মীয় তথা মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা। কিন্তু মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা ধীরে ধীরে তার উপযোগিতা হারিয়ে ফেলে।
এ সময় মুসলমানরা রাষ্ট্র ও ক্ষমতা হারিয়ে জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে সম্পর্কহীন হয়ে পড়ার কারণেই তাদের শিক্ষা ব্যবস্থাও ধীরে ধীরে সেকেলে হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত মুসলমানদের পরিচালিত মাদ্রাসাগুলো শুধুমাত্র ধর্মীয় শিক্ষা কেন্দ্রে পরিণত হয়। সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার যোগ্য লোক তৈরি করবার উপযুক্ততা হারিয়ে ফেলে।
১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ স্বাধীন হয়। স্বাধীনতার সময় ভারত বিভক্ত হয়। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলসমূহ নিয়ে গঠিত হয় পাকিস্তান রাষ্ট্র। আর হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলসমূহ নিয়ে গঠিত হয় ভারত।
মুসলমানরা স্বাধীন পৃথক রাষ্ট্র দাবি করেছিল ইসলাম অনুযায়ী দেশ পরিচালনার জন্য। তাদের আদর্শিক ঐতিহ্য ও শিক্ষা সংস্কৃতি চালু করবার জন্য। কিন্তু যারা পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতায় আরোহণ করে, তারা মুসলামনদের এই প্রাণের দাবির সাথে গাদ্দারি করে। তারা পাকিস্তানে কিছুতেই ইসলামি রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত ও চালু করেনি। ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করেনি। তারা ইংরেজদের চালু করে যাওয়া রাষ্ট্র ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা সবই হুবহু বহাল রাখে। কিছু সংস্কার সংশোধন করলেও ইসলামের পক্ষে তেমন কিছুই করেনি। কেবল মুসলমান জনগণের প্রবল চাপের মুখে বাধ্য হয়ে ইসলামি প্রজাতন্ত্র পাকিস্তান নামের সাইন বোর্ডটি গ্রহণ করে। ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা বাস্তবায়ন করেননি। অতপর চব্বিশ বছরের মাথায় পাকিস্তান ভেঙ্গে যায়। পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হয়ে বাংলাদেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে যায় পাকিস্তান হিসেবে।
স্বাধীন বাংলাদেশেরও আটত্রিশ বছর বিগত হলো। আদর্শ ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা এখানে আজও চালু হয়নি। জনগণের প্রাণের দাবি ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণীত ও প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
১৯৭১-র স্বাধীনতার পর কয়েকবারই জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়নের চেষ্টা করা হয়েছে। ডঃ কুদরাত-এ-খুদা, মজীদ খান ও প্রফেসর মফিজ উদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়। প্রথম কমিশনটি ছিলো ডঃ কুদরাত-এ-খুদা কমিশন। এ কমিশনের রিপোর্টের উপর বিগত ৪ ফেব্রুয়ারি ৯৭ তারিখে ঢাকাস্থ হোটেল সুন্দরবনে একটি আলোচনা সভার স্বাগত ভাষণে আমি বলেছিলাম:
আপনারা জানেন, ১৯৭২ সালের ২৬ জুলাই তৎকালীন সরকার কর্তৃক ড:কুদরাত-এ-খুদার নেতৃত্বে একটি শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়। একই সালের ২৪ সেপ্টেম্বরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এ কমিশনের উদ্বোধন করেন। কমিশন সদস্যগণ ১৯৭৩ সালের জানুয়ারি মাসে ভারত সরকার কর্তৃক আমন্ত্রিত হয়ে ভারত সফর করেন। এক মাসব্যাপী সেখানকার শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। অতপর কমিশন সরকারি প্রস্তাবের নির্দেশনা অনুযায়ী ১৯৭৩ সালের ৮ জুন প্রধানমন্ত্রীর নিকট অন্তর্বর্তীকালীন রিপোর্ট পেশ করেন। প্রধানমন্ত্রী রিপোর্ট গ্রহণ করে সন্তোষ প্রকাশ করেন। (বাংলাদেশ শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট ভূমিকা-)
আপনারা একথাও অবগত আছেন, ১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পটপরির্তনের পর উক্ত শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট আর বাস্তবায়িত হয়নি। এ বিষয়টিও নিশ্চয়ই আপনাদের দৃষ্টি এড়ায়নি যে, বর্তমান সরকার ইতোমধ্যেই উক্ত কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কিমিশনই রিপোর্টকে গণমুখী ও যোগপযোগী করে একটি বাস্তবভিত্তিক শিক্ষানীতি প্রণয়নে উদ্দেশ্যে অধ্যাপক শামসুল হকের নেতৃত্বে ৫৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটিও গঠন করেছে।
একথাতে তো কোন প্রকার সন্দেহ নেই যে, বাংলাদেশের জন্যে অবশ্যি একটি যুগোপযোগী বাস্তবভিত্তিক শিক্ষানীতি প্রয়োজন। কিন্তু যুগোপযোগী এবং বাস্তবভিত্তিক কথা দুটি আপেক্ষিক। এ দুটি কথাই দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা বিবেচিত ও প্রভাবিত হয়ে থাকে। যেমন, কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন রিপোর্টকেও গণমুখী, যুগোপযোগী এবং বাস্তবভিত্তিক শিক্ষা রিপোর্ট বলা হয়েছিল। এ রিপোর্টের ভূমিকায় বলা হয়: আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আমাদের সুপারিশসমূহ বাস্তাবায়িত হলে শিক্ষা ক্ষেত্রের এ অবাঞ্চিত পরিস্থিতির অবসান ঘটবে এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে নব দিগন্তের সূচনা হবে।
নবদিগন্ত সূচনাকারী সেসব সুপারিশ কি? উক্ত শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট থেকে আমি কয়েকটি সুপারিশ আপনাদের সামনে উল্লেখ করছি:
১. কাজেই দেশের কৃষক, শ্রমিক, মধ্যবিত্তসহ সকল শ্রেণীর জনগণের জীবনে নানা গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনের উপলব্ধি জাগানো, নানাবিধ সমস্যা সমাধানের যোগ্যতা অর্জন এবং তাদের মাঝে বাঞ্চিত নতুন সমাজতান্ত্রিক সমাজ সৃষ্টির প্রেরণা সঞ্চারই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রধান দায়িত্ব ও লক্ষ্য। (অধ্যায়: ১:১)২. আমাদের শিক্ষার মাধ্যমে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাবোধ শিক্ষার্থীর চিত্তে জাগ্রত ও বিকশিত করে তুলতে হবে এবং তার বাস্তব জীবনে যেন এর সম্যক প্রতিফলন ঘটে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। (অধ্যয় : ১: ২)
৩. সাম্যবাদী গণতান্ত্রিক সমাজ সৃষ্টির সকল নাগরিকদের ....শিক্ষা সুনিশ্চিত করতে হবে। (অধ্যায় : ১:২)
৪. নতুন সমাজতান্ত্রিক সমাজে স্বাধীন চিন্তা, সৃজনশীল সংগঠন ক্ষমতা ও নেতৃত্বের গুনাবলী বিকাশের উপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। (অধ্যায়: ১:৯)
৫. প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে বাংলাদেশেকে গভীরভাবে ভালবাসতে হবে এবং বাঙালী জাতীয়তাবাদ আদর্শের সম্যক উপলব্ধি অর্জন করতে হবে। (অধ্যায় ২:৩)
৬. সমগ্র দেশে সরকারী ব্যয়ে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত একই মৌলিক পাঠ্যসূচি ভিত্তিক এবং অভিন্ন এবং অভিন্ন ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে। (অধ্যায় ৭:৯)। (অর্থ্যাৎ মাদ্রাসা শিক্ষা থাকবে না)।
৭. প্রাথমিক শিক্ষার পঠিতব্য বিষয় : সাপ্তাহিক পিরিয়ড: প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণীর পর্যন্ত ধর্ম শিক্ষা থাকবে না। ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৮ম শ্রেণীতে সপ্তাহে ধর্ম শিক্ষার ২টি করে পিরিয়ড থাকবে। (অধ্যায় ৭:১০)
৮. মাধ্যমিক শিক্ষা স্তর হবে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত। এ স্তরের শিক্ষার্থীদের বয়সের প্রেক্ষিতে ধর্ম শিক্ষার একই শিক্ষা পরিবেশ শিক্ষাদানের সুযোগ সৃষ্টি শিক্ষা মনোবিজ্ঞান সম্মত। (অধ্যায় : ৭:১০) । অর্থ্যাৎ সহশিক্ষা।
৯. নবম শ্রেণী হতে শিক্ষা কার্যক্রম মূলত দ্বিধাবিভক্ত হবে: (ক) বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও (খ) সাধারণ শিক্ষা। (অধ্যায় ৮:৫)। (ধর্মীয় শিক্ষা থাকবে না)।
১০. মাদ্রসা শিক্ষা পদ্ধতি অনেকটা একদেশদর্শী। কেননা সকল শিক্ষার্থীকেই ইসলাম সম্পর্কে বিশেষ শিক্ষা প্রদান মাদ্রাসার লক্ষ্য। (অধ্যায়: ১১:২)
১১. বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মাদ্রাসা শিক্ষার আমূল সংস্কার ও যুগোপযোগী পূর্ণগঠনের প্রয়োজন। আমাদের সুপারিশ হচ্ছে দেশের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রিপোর্টের সপ্তম আধ্যায় বর্ণিত একই প্রাথমিক শিক্ষাক্রম (১ম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত) প্রবর্তিত হবে। (অধ্যায় ১১:৩)। অর্থ্যাৎ মাদ্রাসা থাকবে না।
এ শিক্ষা কমিশন রিপোর্টে শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাস্তব ও কর্মমূখী করার জন্যে অনেকগুলো প্রস্তাবই আছে। তবে সেই সাথে শিক্ষা ব্যবস্থাকে জাতির ঈমান আকীদা, ধ্যান ধারণা, দৃষ্টিভঙ্গি ও ইতিহাস ঐতিহ্য থেকে বিচ্যুত করার একটা পরিকল্পনাও পরিলক্ষিত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, জাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ইসলামি আদর্শের বিপরীত বিশেষ ধ্যান ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গিতে গড়ে তোলার সুস্পষ্ট সুপারিশ এই রিপোর্টে রয়েছে। সুতরাং এ রিপোর্টকে কতটা গণমুখী ও বাস্তব ভিত্তিক বলা যায়? বর্তমান সরকার উক্ত কমিশনের সুপারিশমালাকে বাস্তবভিত্তিকে করে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়নের জন্যে যে কমিটি গঠন করেছে, সে কমিটি কি কুদরাত-এ-খুদা কমিশনের সুপারিশমালায় সন্নিবেশিত লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাবে? জাতির ঈমান আকীদা, দৃষ্টিভঙ্গি ও ইতিহাস-ঐতিহ্যের কথা কি তারা চিন্তা করবে? তারা কি পারবে ইসলামি আদর্শভিত্তিক শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে? দীনি শিক্ষার অস্তিত্ব বজায় রাখতে?
সরকার কমিটি সদস্যদের তালিকা প্রকাশ করার পর জাতি হতাশ হয়েছে। ইতোমধ্যেই এ কমিটির ব্যাপারে পত্র-পত্রিকায় বিরুপ প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ কমিটি জাতির প্রত্যাশিত শিক্ষানীতি প্রণয়ন করবে বলে সচেতন মহল মনে করতে পারেছ না। ফলে ইসলামি শিক্ষা ও মাদ্রাসা শিক্ষার অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন হয়েছে।১
সরকার ড: কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন রিপোর্টকে বাস্তবভিত্তিক ও যুগোপযোগী করার জন্য যে কমিটি গঠন করেছে (জানুয়ারি ৯৭তে), সে কমিটিকে প্রস্তাব ও সুপারিশমালা প্রদানের জন্যে সেন্টার ফর পলিসি স্টাডিজ ২১
১. দ্রষ্টব্য : জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়নে প্রস্তাব ও সুপারিশমালা গ্রন্থ প্রকাশক: সেন্টার ফর পলিসি স্টাডিজ, জুন ১৯৯৭।মার্চ ৯৭ তারিখে ন্যাম এ এক সেমিনার কাম ওয়ার্কশপের আয়োজন করে। উক্ত সেমিনারে স্বাগত ভাষণ প্রদানকালে আমি বলেছিলাম:
শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। কিন্তু নীতিহীন শিক্ষা ব্যবস্থা জাতিকে বিভ্রান্ত করে। শিক্ষা অবশ্যই এমন হতে হবে, যে, শিক্ষা মানুষকে স্রষ্টামুখী করে এবং সাথে সাথে জীবন ও জগৎকে সঠিক নীতি ও দক্ষতার সাথে পরিচালিত করার উপযুক্ত করে গড়ে তোলে। তাই শিক্ষানীতি আমাদের লাগবেই। আমাদের শিক্ষানীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে একথা সুস্পষ্ট করে বলে দিতে হবে যে, আমরা আমাদের সন্তানদের মধ্যে কোন দৃষ্টিভঙ্গি, ধ্যান-ধারণা, আকিদা, কোন ঐতিহ্য চেতনা এবং কিসের প্রেরণা সৃষ্টি করতে চাই? অর্থ্যাৎ আমরা আমাদের শিক্ষা দর্শনকে কোন ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে চাই? একথাতো পরিষ্কার, মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও নৈতিক চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রে যদি ধর্মীয় বিশ্বাসকে ভিত্তি বানানো না হয়, তাহলে Stanly Hull এর কথাই যথার্থ। তিনি বলেছিলেন, তিনটি R অর্থ্যাৎ Reading, Writing এবং Arithmetic এর সাথে যদি নৈতিকতার শিক্ষা না থাকে তাহলে আপনি ৪র্থ R মানে Rascal-ই পাবেন। অর্থ্যাৎ সেক্ষেত্রে শিক্ষাথীর্রা Rascal হতে বাধ্য। মহাকবি W.B.Yeats বলেছিলেন:
I heard an old religious manBut yesternight declareThat he had found & text to proveThat only God, my dear,Could love you for your self aloneAnd not for your yellow hair.
হ্যাঁ, কেবল আল্লাহই মানুষকে সত্যিকার ভালোবাসেন। তাই কেবল তাঁর বিধানই মানুষের ইহ ও পারলৌকিক কল্যাণের গ্যারান্টি। মানব কল্যাণের শিক্ষা ব্যবস্থা কেবল আল্লাহ বিধানের ভিত্তিতেই গড়ে উঠতে পারে। অপরদিকে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা হতে হবে এতোটা উন্নত একটি প্রতিবেদন প্রণয়ন করেছে। এ প্রতিবেদনের শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বল হয়েছে:
১. ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনে নৈতিক, মানবিক,ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠাকল্পে শিক্ষার্থীদের মননে, কর্মে ও ব্যবহারিক জীবনে উদ্দীপনা সৃষ্টি করা।
২. বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতা রক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীকে সচেতন করা।
৩. মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শিক্ষার্থীদের অনুপ্রণিত করে তোলা এবং তাদের চিন্তা চেতনায় দেশাত্মবোধ, জাতীয়তাবোধ এবং চরিত্র সুনাগরিকের গুলাবলির বিকাশ ঘটানো।
৪. দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থায় পরিবর্তন আনার জন্য শিক্ষাকে প্রয়োগমুখী, উৎপাদনক্ষম, সৃজনশীল করে তোলা এবং শিক্ষার্থীদের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন, দায়িত্ববান ও কর্তব্যপরায়ণ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা।
৫. কায়িক শ্রমের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও আগ্রহী করে তোলা এবং শিক্ষার স্তর নির্বিশেষে আত্মকর্ম সংস্থানে নিয়োজিত হওয়ার জন্য বৃত্তিমূলক শিক্ষার দক্ষতা অর্জনে সমর্থ করা।
৬. বিশ্বভ্রাতৃত্ব, অসাম্প্রদায়িকতা, সৌহার্দ্য ও মানুষে মানুষে সহমর্মিতাবোধ গড়ে তোলা এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তোলা।
৭. গণতান্ত্রিক চেতনাবোধের বিকাশের জন্য পারষ্পরিক মতাদর্শের প্রতি সহনশীল হওয়া এবং জীবনমুখী, বস্তুনিষ্ঠ ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশে সহায়তা করা।
৮. শিক্ষার প্রত্যেক স্তরে পূর্ববর্তী স্তরে অর্জিত জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গির ভিত দৃঢ় করা ও এগুলো সম্প্রসারণে সহায়তা করা এবং নবতর জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনে শিক্ষার্থীদের সমর্থ করা।
৯. জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতির ধারা ও নৈতিক মূল্যবোধ বিকশিত করে বংশ পরস্পরায় হস্তান্তরের ব্যবস্থা করা।
১০. দেশর জনগোষ্ঠীকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করা।
১১. বৈষম্যহীন সমাজ সৃষ্টির লক্ষ্যে মেধা ও প্রবণতা অনুযায়ী শিক্ষালাভের সমান সুযোগ-সুবিধা অবারিত করা।
১২. শিক্ষা ক্ষেত্রে জাতি, ধর্ম, গোত্র নির্বিশেষে নারী পুরুষ বৈষম্য (Gender bias) দূর করা।
১৩. শিক্ষার সর্বস্তরে সাংবিধানিক নিশ্চয়তার প্রতিফলন ঘটানো।
এখানে ২নং পয়েন্ট সুস্পষ্ট ও অকাট্য কথা বলে দেয়ার পর ৩ নং পয়েন্ট মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কি, তা উহ্য ও অস্পষ্ট রেখে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে। তাছাড়া ৬,৭ ও ৯ নং পয়েন্টসমূহ খুবই বিভ্রান্তিকর। এছাড়া এ প্রতিবেদনের ভেতরেও মাঝে মাঝে বেশ বিভ্রান্তিকর সুপারিশ করা হয়েছে।
এযাবৎ যতোগুলো শিক্ষা কমিশন রিপোর্টই প্রকাশ হয়েছে, তার কোনোটিই বাস্তবায়িত হয়নি। তবে শিক্ষানীতি, শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচিকে বিভিন্ন সময় সংস্কার করা হয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষার ক্ষেত্রেও বিভিন্ন সময় কিছু কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তবে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ইসলাম, বিজ্ঞান,প্রযুক্তি ও আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়ে এখনো ঢেলে সাজানো হয়নি।
আমাদের দেশে এখনো মূলত সেই ইংরেজ আমল থেকে চলে আসা দুই ধারার শিক্ষা ব্যবস্থা চালু আছে। একটি হলো ট্রেডিশনাল মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা আর অপরটি ইংরেজদের প্রতিষ্ঠিত বস্তুবাদী শিক্ষা ব্যবস্থা। একটি আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞান বিবর্জিত আর অপরটি ইসলামি আদর্শ বিবর্জিত। তাই এক ধারার শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে আরেক ধারার শিক্ষার্থীরা সুধারণা পোষণ করে না। আদর্শ মুসলিম জাতি গঠনের জন্যে এর কোনো ধারাই এখন আর উপযুক্ত নয়। উভয় ধারার শিক্ষা ব্যবস্থাকেই আমাদের বিশ্লেষণ করে দেখা দরকার।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/584/16
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।