HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

কুরআন ও সুন্নাহ’র আলোকে আযান ও ইকামত

লেখকঃ সাঈদ ইবন আলী ইবন ওহাফ আল-কাহতানী

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
কুরআন ও সুন্নাহ’র আলোকে

আযান ও ইকামত

সাঈদ ইবন আলী ইবন ওহাফ আল-কাহতানী

অনুবাদ: সানাউল্লাহ নজির আহমদ

সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

কভার পেইজ থেকে
আযান ও ইকামত নামক এ ছোট পুস্তিকাতে অতি সংক্ষেপে আযান ও ইকামতের হুকুম, অর্থ, ফযীলত, নিয়ম-পদ্ধতি, মুয়াজ্জিনের আদব, আযান ও মুয়াজ্জিনের শর্তসমূহ, সুবহে সাদেকের পূর্বে প্রথম আযান, কাযা ও দুই সালাত এক সাথে আদায় করার সময় আযান ও ইকামতের বিধান, মুয়াজ্জিনের জবাব দেওয়ার ফযীলত, আযানের পর মসজিদ থেকে বের হওয়ার হুকুম এবং আযান ও ইকামতের মাঝখানে বিরতি ইত্যাদি বিষয়গুলো দলীলসহ আলোচনা করা হয়েছে।

ভূমিকা
সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য, আমরা তাঁর প্রশংসা করি, তাঁর নিকট সাহায্য চাই এবং তাঁর নিকট ইস্তেগফার করি। আমরা আমাদের কু-প্রবৃত্তি ও বদ আমলের অনিষ্ট থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ চাই। তিনি যাকে হিদায়াত দান করেন তাকে কেউ গোমরাহ করতে পারে না, আর তিনি যাকে গোমরাহ করেন তাকে কেউ হিদায়াত দিতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, তিনি এক তাঁর কোনো শরীক নেই। আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। আল্লাহ তার ওপর, তার পরিবার ও সাহাবীদের ওপর এবং যারা ইহসানের সাথে তাদের অনুসরণ করবে, তাদের সবার ওপর কিয়ামত পর্যন্ত দুরূদ ও সালাম বর্ষণ করুন।

অতঃপর, বক্ষ্যমাণ রচনা আযান ও ইকামত সম্পর্কে ছোট পুস্তিকা, যেখানে আমি সংক্ষেপে আযান ও ইকামতের হুকুম, অর্থ, ফযীলত এবং আযানের নিয়ম ও মুয়াজ্জিন সাহেবদের আদব ইত্যাদি নিয়ে আলোচনার প্রয়াস পেয়েছি। এ পুস্তিকা লেখার সময় আমি আমাদের শাইখ আল্লামা ইবন বায রহ.-এর বয়ান-বক্তৃতা থেকে খুব উপকৃত হয়েছি। আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফিরদাউসে সমাসীন করুন। আমার এ ক্ষুদ্র আমলকে তার সন্তুষ্টির জন্য কবুল করুন।

লেখক

শুক্রবার, সকাল বেলা

১৮/৮/১৪২০ হিজরী

এক: আযান ও ইকামতের অর্থ এবং উভয়ের হুকুম:
১. আযানের আভিধানিক অর্থ: কোনো জিনিস সম্পর্কে ঘোষণা দেওয়া, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَأَذَٰنٞ مِّنَ ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦٓ ٣﴾

“আর আল্লাহ ও তার রাসূলের পক্ষ থেকে আযান”। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৩] অর্থাৎ ঘোষণা। অন্যত্র তিনি বলেন,

﴿ءَاذَنتُكُمۡ عَلَىٰ سَوَآءٖۖ ١٠٩﴾

“আর আমি যথাযথভাবে তোমাদেরকে আযান দিয়ে দিয়েছি”। [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ১০৯] অর্থাৎ জানিয়ে দিয়েছি। ফলে জ্ঞানের দিক দিয়ে আমরা সকলে সমান। [আন-নিহায়া  ফি গারিবিল হাদীস: (১/৩৪); মুগনি লি ইবন কুদামা: (২/৫৩)।]

শরী‘আতের পরিভাষায় আযান: “শরী‘আত কর্তৃক অনুমোদিত নির্দিষ্ট শব্দের মাধ্যমে সালাতের সময় সম্পর্কে ঘোষণা প্রদান করা”। [মুগনি লি ইবন কুদামা: (২/৫৩); তারিফাত লি জুরজানি: (পৃ. ৩৭); সুবুলুস সালাম: (২/৫৫)।] আযানের নাম এ জন্য আযান হয়েছে, যেহেতু মুয়াজ্জিন‎ সাহেব মানুষদেরকে সালাতের সময় জানিয়ে দেন ও তার ঘোষণা প্রদান করেন। আযানের আরেক নাম হচ্ছে ‘নিদা’ অর্থাৎ আহ্বান। কারণ, মুয়াজ্জিন‎ সাহেব লোকদেরকে ডাকেন ও তাদেরকে সালাতের দিকে আহ্বান করেন। [শারহুল উমদাহ লি ইবন তাইমিয়া: (২/৯২)।] আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَإِذَا نَادَيۡتُمۡ إِلَى ٱلصَّلَوٰةِ ٱتَّخَذُوهَا هُزُوٗا وَلَعِبٗاۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمۡ قَوۡمٞ لَّا يَعۡقِلُونَ ٥٨﴾

“আর যখন তোমরা সালাতের দিকে ডাক, তখনতারা একে উপহাস ও খেল-তামাশারূপে গ্রহণকরে। তা এই কারণে যে, তারা এমন কওম, যারাবুঝে না”। [সুরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৫৮]‎

﴿إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَوٰةِ مِن يَوۡمِ ٱلۡجُمُعَةِ فَٱسۡعَوۡاْ إِلَىٰ ذِكۡرِ ٱللَّهِ﴾

“যখন জুমু‘আর দিনে সালাতের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও”।‎ [সূরা আল-জুমু‘আ, আয়াত: ৯]

২. ইকামতের আভিধানিক অর্থ: الإقامة শব্দটি أقام ক্রিয়া এর মূল ধাতু বা মাসদার। আরবিতে إقامة الشيء তখনই বলা হয়, যখন কোনো কিছু স্থির ও সোজা করা হয়।

শরী‘আতের পরিভাষায় ইকামত: “নির্দিষ্ট যিকিরের মাধ্যমে সালাত আরম্ভ হওয়ার ঘোষণা দেওয়া”। [রওজুল মুরবি: (১/৪২৮)।] অতএব, আযান হচ্ছে সময়ের ঘোষণা দেওয়া, আর ইকামত হচ্ছে সালাত আরম্ভের ঘোষণা দেওয়া। ইকামতকে দ্বিতীয় আযান বা দ্বিতীয় আহ্বানও বলা হয়। [শারহুল উমদাহ: (২/৯৫)।]

৩. পাঁচ ওয়াক্ত ও জুমু‘আর সালাত আদায়ের জন্য আযান ও ইকামত দেওয়া পুরুষদের ওপর ফরযে কিফায়া, নারীদের ওপর নয়। আযান ও ইকামত উভয় ইসলামী শরী‘আতের বিধান। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَإِذَا نَادَيۡتُمۡ إِلَى ٱلصَّلَوٰةِ ٱتَّخَذُوهَا هُزُوٗا وَلَعِبٗاۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمۡ قَوۡمٞ لَّا يَعۡقِلُونَ ٥٨﴾

“আর যখন তোমরা সালাতের দিকে ডাক, তখনতারা একে উপহাস ও খেল-তামাশারূপে গ্রহণকরে। তা এই কারণে যে, তারা এমন কওম, যারাবুঝে না”। [সুরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৫৮]

অন্যত্র তিনি বলেন,

﴿إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَوٰةِ مِن يَوۡمِ ٱلۡجُمُعَةِ فَٱسۡعَوۡاْ إِلَىٰ ذِكۡرِ ٱللَّهِ ٩﴾

“হে মুমিনগণ, যখন জুমু‘আর দিনে সালাতের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও”।‎ [সূরা আল-জুমু‘আ, আয়াত: ৯]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«فإذا حضرت الصلاة فليؤذِّن لكم أحدكم وليؤمَّكم أكبركم» .

“যখন সালাতের সময় হয়, তখন তোমাদের একজন যেন আযান দেয় এবং তোমাদের মধ্যে বয়স্ক ব্যক্তি যেন তোমাদের ইমামতি করে”। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, আযান ফরযে কিফায়া।

ইবন তাইমিয়া রহ. বলেন, “মুতাওতির হাদীসে রয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের জন্য আযান দেওয়া হতো, এটা উম্মতের ইজমা‘ এবং তাদের আমলের পরম্পরা দ্বারা প্রমাণিত”। [শারহুল উমদা: (২/৯৬); ফাতওয়া ইবন তাইমিয়া: (২২/৬৪)।]

বিশুদ্ধ অভিমত অনুযায়ী আযান দেওয়া পুরুষদের জন্য ওয়াজিব: বাড়িতে বা সফরে, একাকী বা জমা‘আতের সাথে সালাত আদায়কারী, আদায় সালাত বা কাযা সালাত আদায়কারী, স্বাধীন বা গোলাম সবার ওপর আযান ওয়াজিব। [এটাই শাইখ আব্দুল্লাহ ইবন বায রহ.-এর অভিমত। রওজুল মুরবি গ্রন্থের ব্যাখ্যার সময় আমি তার নিকট এ কথা শ্রবণ করি। আরো দেখন: মুখতারাতুল জালিয়্যাহ লি সাদি: (পৃ. ৩৭), ফাতোয়া শায়খ মুহাম্মদ ইবন ইবরাহীম: (২/২২৪), শারহুল মুমতি: (২/৪১)।]

দুই: আযানের ফযীলত:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَنۡ أَحۡسَنُ قَوۡلٗا مِّمَّن دَعَآ إِلَى ٱللَّهِ وَعَمِلَ صَٰلِحٗا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ ٱلۡمُسۡلِمِينَ ٣٣﴾

“আর তার চেয়ে কার কথা উত্তম, যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, অবশ্যই আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত”। [সূরা ফুসসিলাত, আয়াত: ৩৩]

আযান ও মুয়াজ্জিনের ফযীলত সম্পর্কে অনেক হাদীস রয়েছে। যেমন,

১. মুয়াবিয়া ইবন আবু সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:

«المؤذنون أطول الناس أعناقًا يوم القيامة» .

“মুয়াজ্জিন‎গণ কিয়ামতের দিন সবচেয়ে উঁচু গর্দানের অধিকারী হবে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৮৭।]

২. আযান শয়তানকে তাড়িয়ে দেয়। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«إذا نُودي للصلاة أدبر الشيطان له ضُراط حتى لا يسمع التأذينَ،فإذا قُضِيَ النداءُ أقبل حتى إذا ثُوِّب للصلاة أدبَرَ،حتى إذا قُضِيَ التَّثْويبُ أقبلَ حتى يَخطُرُ بين المرء ونفسه،يقول له : اذكر كذا واذكر كذا لما لم يكن يذكر من قبل،حتى يظلَّ الرجلُ لا يدري كم صلى» .

“যখন সালাতের আযান দেওয়া হয়, তখন শয়তান বাতকর্ম করতে করতে পিছু হটতে থাকে, যেন সে আযান শুনতে না পায়। যখন আযান শেষ হয় নিকটবর্তী হয়, যখন ইকামত আরম্ভ হয় সে পিছু হটে, ইকামত শেষ হলে সে আগমন করে এবং ব্যক্তি ও তার অন্তরের মাঝে বিভিন্ন কথা ও ভাবনার উদ্রেক করে, সে বলে: এটা স্মরণ কর, ওটা স্মরণ কর, ইতোপূর্বে যা কখনো তার মনে হয় নি। এক সময় এমন হয় যে, সে সালাতের রাকাত সংখ্যা ভুলে যায়”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৮৯।]

৩. মানুষ যদি আযানের ফযীলত জানত, তাহলে তারা এর জন্য লটারি করত। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«لو يعلمُ الناسُ ما في النداء والصف الأول ثم لم يجدوا إلا أن يستهموا عليه لاستهموا، ولو يعلمون ما في التهجير لاستبقوا إليه، ولو يعلمون ما في العتمة والصبح لأتوهما ولو حبوًا» .

“মানুষেরা যদি আযান ও প্রথম কাতারের ফযীলত জানত, অতঃপর তারা লটারি ব্যতীত তার সুযোগ না পেত, তাহলে অবশ্যই তারা লটারিতে অংশ গ্রহণ করত। যদি তারা সালাতে দ্রুত যাওয়ার ফযীলত জানত, তাহলে তারা সে জন্যও প্রতিযোগিতা করত, যদি তারা এশা ও ফজর সালাতের ফযীলত জানত, তাহলে তারা হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাতে অংশ গ্রহণ করত”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬১৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৩৭।]

৪. যে কোনো বস্তু মুয়াজ্জিনের আওয়াজ শুনবে, সে তার সাক্ষ্য দিবে। আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু আব্দুল্লাহ ইবন আব্দুর রহমান ইবন আবু সাসা আনসারীকে বলেছেন:

«إني أراك تحب الغنم والبادية، فإذا كنت في غنمك أو باديتك فأذنت بالصلاة فارفع صوتك بالنداء؛ فإنه لا يسمعُ مدى صوت المؤذّن جنٌّ ولا إنسٌ، ولا شيء إلا شهد له يوم القيامة، قال أبو سعيد : سمعته من رسول الله » .

“আমি লক্ষ্য করছি, তুমি বকরি ও মরুভূমি ভালোবাস, যখন তুমি তোমার বকরির পালে অথবা মরুভূমিতে থাক, তখন আযানের সময় উচ্চ স্বরে আযান দেবে। কারণ, মুয়াজ্জিনের শব্দ জিন্ন, মানুষ বা যে কোনো বস্তুই শ্রবণ করুক, তারা কিয়ামতের দিন মুয়াজ্জিনের পক্ষে সাক্ষ্য দেবে। আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০৯।]

৫. মুয়াজ্জিনকে তার আওয়াজ পরিমাণ ক্ষমা করা হয়, আর যারা তার সাথে সালাত আদায় করে, সে তাদের সাওয়াবও লাভ করে। বারা ইবন আযেব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‎‎ বলেছেন:

«إن الله وملائكته يصلون على الصف المقدَّم، والمؤذنُ يغفرُ له بمدِّ صوته، ويصدقه من سمعه من رطبٍ ويابسٍ وله مثلُ أجر من صلى معه» .

“নিশ্চয় আল্লাহ সামনের কাতারের ওপর রহমত প্রেরণ করেন ও ফেরেশতাগণ তাদের জন্য মাগিফরাত কামনা করেন। আর মুয়াজ্জিনকে‎ তার আওয়াজ পরিমাণ ক্ষমা প্রদর্শন করা হয়, শুষ্ক ও তাজা যে কোনো বস্তু তার আওয়াজ শোনে, তারা তাকে সত্যারোপ করে। যারা তার সাথে সালাত আদায় করে, তাদের সাওয়াবও তাকে প্রদান করা হয়”। [নাসাঈ: (২/১৩), হাদীস নং ৬৪৬; আহমদ: (৪/২৮৪), মুনযিরী “তারগীব ও তারহীব”: (১/২৪৩) গ্রন্থে বলেন: ইমাম আহমদ ও নাসাঈ হাদীসটি জাইয়্যেদ সনদে বর্ণনা করেছেন। আল-বানি “সহীহ তারগীব ও তারহীব”: (১/৯৯) গ্রন্থে হাদীসটি সহীহ বলেছেন।]

[মুয়াজ্জিনকে‎ তার আওয়াজ পরিমাণ ক্ষমা প্রদর্শন করার অর্থ: “তার আওয়াজ যদি সুদূর মরুভূমি পর্যন্ত পৌঁছে, তাহলে তার মাগফিরাতও মরুভূমি পর্যন্ত পৌঁছবে, এর কম হলে মাগফিরাতও অনুরূপ হবে। অথবা অর্থ: তার পাপ যদি এ পরিমাণ হয় যে, তার স্থান থেকে আওয়াজের সর্ব শেষ সীমানা পর্যন্ত ভরে যায়, তবুও তার এসব পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। আর কেউ বলেছেন: এ সীমার মধ্যে-কৃত তার সকল পাপ ক্ষমা করা হবে”। আল্লামা সিন্ধির ইবন মাজাহ গ্রন্থের ব্যাখ্যা থেকে নেওয়া। -অনুবাদক]

৬. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুয়াজ্জিনের জন্য মাগফিরাতের দো‘আ করেছেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‎‎ বলেছেন:

«الإمام ضامنٌ والمؤذن مؤتمن، اللهم أرشد الأئمة واغفر للمؤذنين» .

“ইমাম জিম্মাদার [কারণ, সে তাদের সালাতের হিফাযতকারী, তার ওপর তার মুসল্লিদের সালাত নির্ভরশীল।] আর মুয়াজ্জিন হচ্ছে আমানতদার [কারণ, সে মানুষের সালাত ও সিয়ামের যিম্মাদার।]। হে আল্লাহ তুমি ইমামদের সঠিক পথ দেখাও এবং মুয়াজ্জিনদের ক্ষমা কর”। [আবু দাউদ: (১/১৪৩), হাদীস নং ৫১৭; তিরমিযী: (১/৪০২); ইবন খুজাইমাহ, হাদীস নং ৫২৮; “সহীহ তারগীব ও তারহীব”: (১/১০০)।]

৭. আযানের মাধ্যমে পাপ মোচন হয় ও জান্নাতে প্রবেশ সহজ হয়। উকবা ইবন আমের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:

«يعجب ربكم من راعي غنمٍ في رأس شظيَّة بجبل يؤذن بالصلاة ويصلي، فيقول الله : انظروا إلى عبدي هذا يؤذنُ ويقيمُ يخاف مني، فقد غفرتُ لعبدي وأدخلته الجنة» .

“তোমাদের রব বকরির সে রাখালকে দেখে আশ্চর্য হন, যে পাহাড়ের পাদদেশে আযান দেয় ও সালাত আদায় করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমার এ বান্দার দিকে দেখ, সে আযান দেয় ও ইকামত দেয় এবং আমাকে ভয় করে। আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করালাম”। [আবু দাউদ: (২/৪), হাদীস নং ১২০৩; নাসাঈ: (২/২০), হাদীস নং ৬৬৬; “সহীহ তারগীব ও তারহীব”: (১/১০২)-এ আল-বানি হাদীসটি সহীহ বলেছেন।]

৮. ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “বারো বছর যে ব্যক্তি আযান দিবে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। প্রতি দিন তার আযানের মোকাবেলায় ষাটটি নেকী এবং প্রত্যেক ইকামতের‎ জন্য ত্রিশটি নেকী লিপিবদ্ধ করা হবে”। [ইবন মাজাহ), হাদীস নং ৭২৩; হাকেম ফিল মুসতাদরাক: (১/২০৫), তিনি বলেছেন: বুখারীর শর্ত মোতাবেক হাদীসটি সহীহ, ইমাম যাহাবী তার সমর্থন করেছেন। ইমাম মুনযিরী বলেছেন: হাদীসটির ব্যাপারে হাকেম ঠিকই বলেছেন। তারগীব ও তারহীব: (১/১১১)।]

আযান ও ইকামতের‎ পদ্ধতি:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে বেলাল সর্বদা যে আযান দিয়েছেন, তা হচ্ছে আব্দুল্লাহ ইবন যায়েদ থেকে বর্ণিত আযান [আহমদ: (৪/৪২-৪৩; আবু দাউদ: (১/১৩৫), হাদীস নং ৪৯৯; তিরমিযী: (১/৩৫৮), হাদীস নং ১৮৯; সহীহ ইবন খুজাইমাহ: (১/১৯৩), হাদীস নং ৩৭১; ইবন মাজাহ: (১/২৩২), হাদীস নং ৭০৬।]। যার পদ্ধতি নিম্নরূপ:

«الله أكبر، الله أكبر، الله أكبر، الله أكبر، أشهد أن لا إله إلا الله، أشهد أن لا إله إلا الله، أشهد أن محمدًا رسولُ الله، أشهد أن محمدًا رسولُ الله، حيَّ على الصلاة، حيَّ على الصلاة، حيَّ على الفلاح، حيَّ على الفلاح، الله أكبر، الله أكبر، لا إله إلا الله»،

এ হাদীসে বর্ণিত ইকামতের‎ নিয়ম হচ্ছে:

«الله أكبر، الله أكبر، أشهد أن لا إله إلا الله، أشهد أن محمدًا رسولُ الله، حيَّ على الصلاة، حيَّ على الفلاح، قد قامت الصلاةُ، قد قامت الصلاة، الله أكبر الله أكبر، لا إله إلا الله» .

ফজরের আযানে حي على الفلاح বলে বলবে [ইমাম নাসাঈ আবু মাহযুরা থেকে বর্ণনা করেছেন: (২/৭), হাদীস নং ৬৩৩; সহীহ ইবন খুজাইমাহ: (১/২০০), হাদীস নং ৩৮৫।]:

«الصلاةُ خيرٌ مِنَ النوم، الصلاةُ خيرٌ من النوم»؛

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “মুয়াজ্জিনের حيّ على الفلاح বলার পর সুন্নত হচ্ছে الصلاة خير من النوم বলা। [ইবন খুজাইমাহ: (১/২০২), হাদীস নং ৩৮৬)]

অতএব, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ‎‎ সামনে বেলালের আযানের বাক্য হলো পনেরটি, আর ইকামতের‎ বাক্য হলো এগারটি। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর অপর হাদীস দ্বারা এ অভিমতটি আরো শক্তিশালী হয়, যেমন তিনি বলেন,

«أُمِرَ بلال أن يشفع الأذان ويوتر الإقامة، إلا الإقامة»

“বেলালকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন আযানে জোড় বাক্য বলে, আর ইকামতে বলে বেজোড় বাক্য, তবে قد قامت الصلاة،قد قامت الصلاة، ব্যতীত”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৭৮।] অর্থাৎ আযানের বাক্যগুলো দুইবার দুইবার অথবা চারবার চারবার বলা, আর দুই বা চার উভয়ের ক্ষেত্রে জোড় বলা প্রযোজ্য। এর ব্যাখ্যা রয়েছে আব্দুল্লাহ ইবন যায়েদ ও আবু মাহযুরার হাদীসে। আযানের শুরুতে তাকবীর জোড় বলার অর্থ চারবার চারবার বলা, আর অন্যান্য শব্দ জোড় বলার অর্থ সেগুলো দুইবার দুইবার বলা। এখানে আধিক্যের দিকে লক্ষ্য করে জোড় বলা হয়েছে, অন্যথায় সবার নিকট আযান ও ইকামতের‎ শেষে কালিমায়ে তাওহীদ একবার, অর্থাৎ বেজোড়। আযানের মধ্যে চারবার তাকবীর বলার মোকাবেলায় ইকামতে দুইবার বলা বেজোড়। অনুরূপ ইকামতের‎ শেষে তাকবীর দুইবার বলা হয়, قد قامت الصلاة، قد قامت الصلاة، দুইবার বলা হয়, অন্যান্য শব্দ একবার বলা হয়। [ফাতহুল বারি লি ইবন হাজার রহ.: (২/৮২); সুবুলুস সালাম লি সানআনি: (২/৫৮-৬৫)।] যদি আবু মাহযুরার হাদীস মোতাবেক আযান ও ইকামত বলে, তবুও কোনো সমস্যা নেই। [“তারজি” সম্বলিত আবু মাহযুরার হাদীস অনুযায়ী আযান হচ্ছে: «الله أكبر، الله أكبر، الله أكبر، الله أكبر، أشهد أن لا إله إلا الله، أشهد أن لا إله إلا الله، أشهد أن محمدًا رسولُ الله، أشهد أن محمدًا رسولُ الله» আস্তে বলবে, অতঃপর উঁচু আওয়াজে বলবে: أشهد أن لا إله إلا الله، أشهد أن لا إله إلا الله، أشهد أن محمدًا رسول الله، أشهد أن محمدًا رسول الله» এভাবে আযান পূর্ণ করবে, যেমন আবু মাহযুরার হাদিসে রয়েছে। মুসনাদ: (৩/৪০৯), (৬/৪০১), আবু দাউদ, হাদীস নং ৫০২), নাসায়ী, হাদীস নং ৬৩১), তিরমিযী, হাদীস নং ১৯২; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৭০৯; মুসলিম, হাদীস নং ৩৭৯। কিন্তু তার বর্ণনায় শুরুতে তাকবীর দুইবার, দুইবার।আবু মাহযুরার হাদীস অনুযায়ী তাকবীর চারবার চারবার, অবশিষ্ট বাক্য দুইবার দুইবার: «الله أكبر، الله أكبر، الله أكبر الله أكبر، أشهد أن لا إله إلا الله، أشهد أن لا إله إلا الله، أشهد أن محمدًا رسول الله، أشهد أن محمدًا رسول الله، حي على الصلاة حي على الصلاة، حي على الفلاح، حي على الفلاح،قد قامت الصلاة،قد قامت الصلاة،الله أكبر الله أكبر، لا إله إلا الله» . নাসাঈ, হাদীস নং ৬৩৩। অতএব, আবু মাহযুরার হাদীস অনুযায়ী আযান উনিশ বাক্য, আর ইকামাত সতের বাক্য। যেমন, ইমাম নাসাঈ ৬৩০ নং হাদীসে বর্ণনা করেছেন। ইবন তাইমিয়া রহ. বলেছেন: “হাদীসে যেহেতু আযান ও ইকামাত বিভিন্নভাবে প্রমাণিত, তাই এ ক্ষেত্রে আহলে হাদীসদের নীতিই সঠিক, তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ‎‎ থেকে প্রমাণিত প্রতেক্য পদ্ধতিকে বৈধ বলেন, কোনো পদ্ধতিকে তারা অপছন্দ করেন না। কিরাত ও তাশাহহুদ যেমন নানা রকম বর্ণিত আছে, অনুরূপ আযানও বিভিন্ন পদ্ধতিতে বর্ণিত রয়েছে”। ফাতওয়া: (২২/৬৬), আমি শায়খ আব্দুল আযিয ইবন বায রহ.-কে বলতে শোনেছি: “উত্তম হচ্ছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ‎‎ সামনে প্রদত্ত বেলালের আযান ও ইকামাত, তবে এসব ইখতিলাফ সালাতের শুরুতে বিভিন্ন দো‘আ দুরুদের বিভিন্নতার মতোই”। বুলুগুল মারামের ৯৩ নং হাদীসের ব্যাখ্যায় এ বক্তব্য শ্রবণ করেছি।]

চার: মুয়াজ্জিনের আদাব:
মুয়াজ্জিন পবিত্র অবস্থায় আযান দেবে, আযানের শব্দ ধীরে ধীরে বলবে, ইকামত দ্রুত বলবে, সব বাক্যের শেষে যযম বলবে, উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে কিবলা মুখী হয়ে আযান দেবে, কারণ বেলাল এভাবে আযান দিতেন। [“কারণ, বেলাল বুন নাজ্জারের জনৈক মহিলার বাড়ির ছাদে উঠে আযান দিত, তার বাড়িই মসজিদে নববীর আশ-পাশে অবস্থিত বাড়িসমূহের মধ্যে উঁচু ছিল”। আবু দাউদ, হাদীস নং ৫১৯।] মুয়াজ্জিন তার দুই কানে হাতের আঙুল রাখবে, যেহেতু আবু যুহাইফার হাদীসে আছে: “আমি বেলালকে আযান দিতে দেখেছি... তার আঙুলসমূহ ছিল কানের মধ্যে”। [আহমদ: (৪/৩০৮; তিরমিযী, হাদীস নং ১৯৭; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৭১১।] حيَّ على الصلاة، বলার সময় ডানে এবং حيَّ على الفلاح বলার সময় বামে চেহারা ঘুরাবে। কারণ, আবু জুহাইফার হাদীসে আছে, তিনি বলেন, “আমি বেলালকে দেখেছি আবতাহ নামক স্থানে গিয়ে আযান দেন, যখন حيَّ على الصلاة حيَّ على الفلاح তে পৌঁছেন, ডানে ও বামে গর্দান ঘুরান, কিন্তু নিজে ঘুরেন নি”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৫২০; আবু জুহাইফার মূল হাদীস সহীহ বাখারী: (৬৩৪) ও মুসলিমে: (৫০৩) রয়েছে।]

উত্তম হচ্ছে সালাতের প্রথম ওয়াক্তে আযান দেওয়া। কারণ, জাবের ইবন সামুরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,

«كان بلال لا يؤخر الأذان عن الوقت، وربما أخَّر الإقامة شيئًا» ،

“বেলাল আযান কখনো দেরিতে দিতেন না, তবে কখনো ইকামতে দেরি করতেন”। [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৭১৩; আহমদ: (৫/৯১)।]

মুয়াজ্জিনের উঁচু আওয়াজ সম্পন্ন হওয়া সুন্নত। কারণ আব্দুল্লাহ ইবন জায়েদ থেকে মারফু‘ সনদে বর্ণিত আছে:

«فقمْ مع بلالٍ فألقِ عليه ما رأيتَ فليؤذِّن به؛ فإنه أندى صوتًا منك» .

“তুমি বেলালের সাথে দাঁড়াও, অতঃপর যা দেখেছ তা বেলালের নিকট বল, সে যেন তার মাধ্যমে আযান দেয়, কারণ সে তোমার চেয়ে উঁচু আওয়াজের অধিকারী”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৯৯; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৭০৬।]

মুয়াজ্জিনের আওয়াজ সুন্দর হওয়া মুস্তাহাব। [দেখুন: সুবুলুস সালাম লি সানআনি: (২/৭০)।] কারণ, আবু মাহযুরার হাদীসে আছে, তার আওয়াজ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ‎‎ পছন্দ হয়, ফলে তিনি তাকে আযান শিক্ষা দেন। [সহীহ ইবন খুজাইমাহ: (১/১৯৫), হাদীস নং ৩৭৭।] মুয়াজ্জিনের আযানের সময় সম্পর্কে অবগত থাকা উত্তম, যেন ওয়াক্তের শুরুতে আযান দিতে সক্ষম হয়। কারণ কখনো সময় সম্পর্কে অবগত ব্যক্তির সাহায্য নেওয়া তার পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে। হ্যাঁ অন্ধ ব্যক্তির আযানে কোনো সমস্যা নেই, যদি সঠিক ওয়াক্ত সম্পর্কে সংবাদ দাতা কেউ থাকে। যেমন, ইবন উম্মে মাকতুম রাদিয়াল্লাহু আনহু অন্ধ ছিলেন, কিন্তু তিনি আযান দিতেন না যতক্ষণ না তাকে বলা হত, “সকাল হয়েছে, সকাল হয়েছে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬১৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৯২।] মুয়াজ্জিনের আমানতদার হওয়া ওয়াজিব। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِنَّ خَيۡرَ مَنِ ٱسۡتَ‍ٔۡجَرۡتَ ٱلۡقَوِيُّ ٱلۡأَمِينُ ٢٦﴾

“নিশ্চয় আপনি যাদেরকে মজুর নিযুক্ত করবেন তাদের মধ্যে সে উত্তম, যে শক্তিশালী বিশ্বস্ত”। [সূরা আল-কাসাস, আয়াত: ২৬]

ইবন আবু মাহযুরার হাদীসে এসেছে:

«أُمناءُ المسلمين على صلاتهم وسحورهم : المؤذنون»

“মুসলিমদের সালাত ও সাহরীর আমানতদার হচ্ছে মুয়াজ্জিনগণ”। [বায়হাকী: (১/৪২৬), আল-বানি হাদীসটি হাসান বলেছেন: ইরওয়াউল গালিল: (১/২৩৯)।] আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত মারফূ‘ হাদীসে এসেছে والمؤذن مؤتمن “মুয়াজ্জিনগণ আমানতদার”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৫১৭; তিরমিযী, হাদীস নং ২০৭।]

মুয়াজ্জিনের উচিৎ আযান দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করা। উসমান ইবন আবুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমাকে আমার কাওমের ইমাম নির্ধারণ করুন। তিনি বললেন:

«أنت إمامُهُم واقتدِ بأضعفهم، واتَّخِذ مؤذنًا لا يأخذ على أذانه أجرًا»

“তুমি তাদের ইমাম এবং তাদের দুর্বলদের অনুসরণ কর এবং এমন একজন মুয়াজ্জিন নির্ধারণ কর, যে আযানের বিনিময় গ্রহণ করবে না”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৩১; তিরমিযী, হাদীস নং ২০৯; নাসাঈ, হাদীস নং ৬৭২; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৭১৪; আহমদ: (৪/২১)। আল-বানি ইরওয়াউল গালিল: (৫/৩১৫) এ হাদীসটি সহীহ বলেছেন। হাদীস নং ১৪৯২।] তবে বায়তুল মাল থেকে মুয়াজ্জিনদের ভাতা দেওয়া দোষণীয় নয়। কারণ, বায়তুল মাল মুসলিমদের সুবিধার জন্যই গঠন করা হয়েছে। আর আযান ও ইকামত মুসলিমদের সুবিধার একটি। [মুগনি লি ইবন কুদামা: (২/৭০); নাইলুল আওতার লি শাওকানি: (২/১৩২); শারহুল মুমতি লি ইবন উসাইমিন: (২/৪৪)।]

পাঁচ: ফজরের পূর্বে আযান ও তার বিধান:
ফজরের পূর্বে প্রথম আযান দেওয়া বৈধ, যেন দাঁড়ানোরা ফিরে যায়, আর ঘুমন্তরা জেগে উঠে। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‎‎ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন:

«لا يمنعن أحَدَكُم أو أحدًا منكم أذانُ بلال من سحورِهِ؛ فإنه يؤذن أو ينادي بليلٍ، ليَرْجِعَ قائمَكُم وليُنبِّه نائمَكم»

“তোমাদের কাউকে যেন বেলালের আযান সাহরী থেকে বিরত না রাখে। কারণ, সে আযান দেয় অথবা আহ্বান করে রাতে, যেন তোমাদের দাঁড়ানোরা ফিরে যায় এবং তোমাদের ঘুমন্তরা জেগে উঠে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬২১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৯৩।]

ইমাম নববী রহ. বলেন, “এর অর্থ হচ্ছে বেলাল রাতে আযান দেয়, যেন তোমরা অবগত হও যে রাত বেশি বাকি নেই। সে মূলতঃ রাতে দাঁড়িয়ে তাহাজ্জুদ আদায়কারীকে তার আরামের জন্য যেতে বলে, যেন সামান্য ঘুমিয়ে উদ্যমতাসহ ভোর বেলা জাগতে পারে অথবা বেতের পড়ে নেয় যদি বেতের পড়ে না থাকে অথবা অন্য কোনো পবিত্রতার প্রয়োজন হলে তা সেরে ফজরের জন্য প্রস্তুতি নেয় অথবা অন্য কোনো প্রয়োজন সেরে নিতে পারে ফজর নিকটবর্তী জেনে। আর “তোমাদের ঘুমন্তদের জাগ্রত করে অর্থ”: যেন ভোর হওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। যেমন, সামান্য তাহাজ্জুদ আদায় করে নেয় অথবা বেতের পড়ে নেয় যদি বেতের পড়ে না থাকে অথবা সিয়ামের ইচ্ছা করলে সাহরী খেয়ে নেয় অথবা গোসল অথবা ওযু সেরে নেয় অথবা ফজরের পূর্বে অন্যান্য জরুরি কর্ম সেরে নেয়”। [ইমাম নববীর ব্যাখ্যাসহ সহীহ মুসলিম: (৭/২১১)।]

তবে ফজর হলে দ্বিতীয় আযানের জন্য মুয়াজ্জিন থাকা জরুরি। উত্তম হচ্ছে দ্বিতীয় মুয়াজ্জিন প্রথম মুয়াজ্জিন ব্যতীত অন্য কারো হওয়া। দুই আযানের মাঝখানে ব্যবধান কম থাকাও উত্তম। আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুইজন মুয়াজ্জিন ছিল: বেলাল ও অন্ধ উম্মে মাকতুম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إن بلالاً يؤذِّن بليل فكلوا واشربوا حتى يؤذِّن ابنُ أمِّ مكتوم» .

“বেলাল রাতে আযান দেয়। অতএব, তোমরা খাও-পান কর, যতক্ষণ না ইবন উম্মে মাকতুম আযান দেয়”। তিনি বলেন, তাদের দুইজনের আযানের মধ্যে কোনো ব্যবধান ছিল না, শুধু এতটুকু ছিল যে, একজন নামতেন আর অপরজন উঠতেন। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯১৮, ১৯১৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৯২।] প্রথম আযান ফজরের নিকটবর্তী হওয়া সুন্নত। [শাইখ মুহাম্মাদ ইবন ইবরাহীম আলে শাইখ তার ফাতওয়ায় বলেন, “এর থেকে প্রমাণিত হয় যে, ফজরের সামান্য আগ মুহূর্ত ব্যতীত আযান দেওয়া মুনাসিব নয়... যদি আধা ঘণ্টা বা একঘণ্টার এক তৃতীয়াংশ হয়, তাহলে আমার ধারণা মতে মানুষের জন্য উপকারী”।]

ফজরের দ্বিতীয় আযানে উত্তম হচ্ছে حيَّ على الفلاح এরপর মুয়াজ্জিনের الصلاة خير من النوم বলা। আর আবু মাহযুরার হাদীসে যেরূপ রয়েছে, “সকাল বেলার প্রথম আযানে الصلاة خير من النوم الصلاة خير من النوم বলবে”। এখানে প্রথম আযান দ্বারা উদ্দেশ্য ওয়াজিব আযান, আর দ্বিতীয় আযান দ্বারা উদ্দেশ্য ইকামত। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‎‎ বলেছেন:

«بين كل أذانين صلاة، بين كل أذانين صلاة»، قال في الثالثة : «لمن شاء» .

“প্রত্যেক দুই আযানের মাঝখানে সালাত আছে, প্রত্যেক দুই আযানের মাঝখানে সালাত আছে”। তৃতীয়বার বলেন, “যে ইচ্ছা করে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬২৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৩৮।]

শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায রহ.-কে বলতে শুনেছি: “ইবন রুসলান ও একদল আলিম উল্লেখ করেছেন যে, الصلاة خير من النوم، প্রথম আযানে বলবে, তারা আবু মাহযুরার হাদীসকে দলিল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। সঠিক হচ্ছে الصلاة خير من النوم، ফজরের দ্বিতীয় আযানে বলতে হবে, যে আযান ওয়াজিব। কারণ, এ আযান সালাতের আযান, যে সালাত ঘুম থেকে উত্তম। এ আযানকে ইকামতের‎ তুলনায় প্রথম আযান বলা হয়, আর ইকামত হচ্ছে দ্বিতীয় আযান”। [বুলুগুল মারামের ১৯১ নং হাদীসের ব্যাখ্যার সময় আমি এ বক্তব্য শ্রবণ করি। আরো দেখন: শারহুল মুমতি লি ইবন উসাইমিন: (২/৫৭)।]

ছয়: ফজরের পূর্বে আযান ও তার বিধান
কিছু শর্ত রয়েছে যার সম্পর্ক আযানের সাথে, আর কিছু শর্ত রয়েছে যার সম্পর্ক মুয়াজ্জিনের সাথে, নিচে তার বর্ণনা দেওয়া হলো:

১. ধারাবাহিকভাবে আযান দেওয়া, অর্থাৎ প্রথমে তাকবীর বলা, অতঃপর শাহাদাত, অতঃপর হাইআলাহ, অতঃপর তাকবীর, অতঃপর কালেমা তাওহীদ বলা, যদি আযান বা ইকামত উলট-পালট বলে, তাহলে শুদ্ধ হবে না। কারণ, আযান একটি ইবাদাত, যেভাবে তা প্রমাণিত, সেভাবে তা আদায় করা ওয়াজিব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«من عمل عملاً ليس عليه أمرنا فهو ردٌّ» .

“যে ব্যক্তি এমন আমল করল, যার ওপর আমাদের আদর্শ নেই, তা পরিত্যক্ত”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৬৯৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭১৮।]

২. আযানের শব্দগুলো পরপর বলা, দুই বাক্যের মাঝখানে দীর্ঘ বিরতি না নেওয়া, যদি হাঁচি চলে আসে, তাহলে পূর্বের বাক্যের ওপর নির্ভর করে পরবর্তী বাক্য বলা। কারণ, এ বিরতি অনিচ্ছাকৃত।

৩. সালাতের সময় হলে আযান দেওয়া। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‎‎ বলেছেন:

«إذا حضرت الصلاة فليؤذن لكم أحدكم»

“যখন সালাতের সময় হয়, তখন যেন তোমাদের কেউ আযান দেয়”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬২৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৭৪।] আর ফজরের পূর্বের আযান ফজর সালাতের জন্য নয়, বরং সেটা ঘুমন্ত ব্যক্তিদের জাগ্রত করা ও দণ্ডায়মান ব্যক্তিদের বাড়িতে ফিরানোর জন্য।

৪. আযানে এমন সূর গ্রহণ করা যাবে না, যা শব্দ ও অর্থ বিকৃতি করে দেয়, যা আরবি ব্যাকরণের বিপরীত। যেমন কেউ বলল الله أكبار، তাহলে বৈধ হবে না। কারণ, এটা অর্থ বিকৃতি করে দেয়। [ইবন উসাইমীন রহ. বলেন: ভুল দুই প্রকার: এক প্রকার রয়েছে, যে কারণে আযান শুদ্ধ হয় না, যেখানে অর্থের বিকৃতি ঘটে। যেমন, কেউ বলল: ( الله أكبار ) কারণ ( أكبار ) শব্দ ( كَبَر ) এর বহু বচন, যার অর্থ তবলা বা ঢোল। যেমন سبب এর বহু বচন أسباب আরেক প্রকার ভুল রয়েছে, যে কারণে অর্থ পরিবর্তণ হয় না, যেমন: (( اللهَ أكبر )) জবর দ্বারা পড়া, আরো যেমন: (( حيًّا على الصلاة )) বলা। দেখুন: শারহুল মুমতি: (২/৬৯,৬০-৬২)।]

৫. উচ্চ স্বরে আযান দেওয়া। কারণ, মুয়াজ্জিন যদি এমন আস্তে আযান দেয় যে, সে নিজে ব্যতীত কেউ না শোনে, তাহলে আযান বৈধ করণের কোনো মানে থাকে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের কেউ যেন তোমাদের জন্য আযান দেয়”। [বুখারি ও মুসলিম।] এ থেকে বুঝা যায় যে, আযান উচ্চ স্বরে দিতে হবে যেন অন্যরা শুনতে পায়, তাহলে মানুষকে শোনানোর উদ্দেশ্য হাসিল হবে, তবে উপস্থিত লোকদের জন্য আযান দিলে ভিন্ন কথা, কিন্তু সেখানেও উচ্চ স্বরে আযান দেওয়া উত্তম। আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে মারফূ‘ হাদীসে বর্ণিত আছে:

«.. فإذا كنت في غنمك أو باديتك فأذَّنْتَ فارفع صوتك بالنداء؛فإنه لا يسمع مدى صوتِ المؤذن جنٌّ ولا إنسٌّ،ولا شيء إلا شهد له يوم القيامة» .

“যখন তুমি তোমার বকরির পাল অথবা মরুভূমিতে থাক, তখন আযান দিলে উচ্চ স্বরে দিবে। কারণ, মুয়াজ্জিনের আওয়াজ যে কেউ শুনবে, জিন-মানুষ বা অন্য কোনো বস্তু, তারা মুয়াজ্জিনের জন্য কিয়ামতের দিন সাক্ষ্য দিবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০৯।]

৬. সুন্নত অনুযায়ী নির্দিষ্ট সংখ্যা মোতাবেক আযান দিবে, তাতে কম বা বেশি করবে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«من عمل عملاً ليس عليه أمرنا فهو رد» .

“যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল করল, যার ওপর আমাদের আদর্শ নেই, তা পরিত্যক্ত”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৬৯৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭১৮।]

৭. এক ব্যক্তির আযান দিতে হবে, দুই জনের আযান শুদ্ধ নয়। যদি এক ব্যক্তি আযান আরম্ভ করে, অতঃপর অপর ব্যক্তি তা পুরো করে, তাহলে আযান শুদ্ধ হবে না।

৮. মুয়াজ্জিন আযানের নিয়ত করে আযান দিবে। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‎‎ বলেছেন: “নিয়তের ওপর আমল নির্ভর করে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯০৭।]

৯. মুয়াজ্জিনের মুসলিম হওয়া জরুরি, যদি কোনো কাফের আযান দেয় তাহলে শুদ্ধ হবে না। কারণ, সে ইবাদতের উপযুক্ত নয়।

১০. মুয়াজ্জিনের বুঝমান হওয়া জরুরি, যার বয়স সাত থেকে সাবালক পর্যন্ত, যে কথা বুঝে ও উত্তর দিতে পারে, তার নিকট কোনো বস্তু চাওয়া হলে সে উপস্থিত করতে পারে।

১১. মুয়াজ্জিনের বিবেকবান হওয়া জরুরি, পাগলের আযান শুদ্ধ নয়।

১২. মুয়াজ্জিনের পুরুষ হওয়া জরুরি, নারীদের আযানের কোনো গ্রহণ যোগ্যতা নেই। ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, “নারীদের ওপর আযান ও ইকামত কিছু নেই”। [বায়হাকী: (১/৪০৮)।] নারীরা আযানের উপযুক্ত নয়, দ্বিতীয়ত আযান উচ্চ স্বরে দিতে হয়, আর নারীদের আওয়াজ উঁচু করা নিষেধ। [মানারুস সাবিল: (১/৬৩); শারহুল মুমতি: (২/৬১)।]

১৩. নীতিবান হওয়া জরুরি, যদিও বাহ্যিকভাবে হয়। কারণ, আযান ইবাদত, বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী আযান ইকামত থেকে উত্তম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুয়াজ্জিনদের আমানতদার বলেছেন, আর ফাসেক আমানতদার নয়। যেমন, হাদীসে এসেছে:

«أمناء الناس على صلاتهم وسحورهم المؤذنون» .

“মানুষের সালাত ও সাহরীর আমানতদার হচ্ছে মুয়াজ্জিনগণ”। [বায়হাকী: (১/৪২৬)।] শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া রহ. বলেন, “ফাসেকের আযান শুদ্ধ হবে কি না, এ ব্যাপারে দু’টি অভিমত রয়েছে, বিশুদ্ধ অভিমত অনুযায়ী আযান শুদ্ধ হবে না। কারণ, এটা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ‎‎ নির্দেশের বিপরীত, তবে ফাসেককে মুয়াজ্জিন হিসেবে নিয়োগ দেওয়া কোনো মত অনুসারেই বৈধ নয়”। [ইখতিয়ারাতুল ফিকহিয়্যাহ, লি শায়খুল ইসলাম: (পৃ. ৫৭)।] যার অবস্থা গোপন তার আযান বৈধ। আল্লামা আব্দুল আযীয ইবন বায রহ.-কে বলতে শুনেছি: “ফাসেকের আযানের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই, দাঁড়ি কর্তনকারী স্পষ্ট ফাসেক, তার অবস্থা গোপন নয়, আল্লাহর নিকট আমরা পানাহ চাই, দাঁড়ি কর্তনকারী ব্যতীত অন্য কাউকে মুয়াজ্জিন নিযুক্ত করা জরুরি”। [রওজুল মুরবি গ্রন্থের ব্যাখ্যার সময় আমি তার মুখে এ বাণী শ্রবণ করি। ফজর সালাতের পর, শনিবার: (১০/১১/১৪১৮ হিজরী)।]

এখানে আদেল শব্দের অর্থ হচ্ছে: মুসলিম হওয়া, বিবেকী হওয়া, পুরুষ হওয়া, একজন হওয়া, নীতিবান ও বুঝমান হওয়া। [শারহুল মুমতি: (২/৬২)।]

১০
সাত: জুমু‘আ ও কাযা সালাতের জন্য আযান ও ইকামতের‎ বিধান:
১. যে ব্যক্তি জোহর-আসর অথবা মাগরিব-এশা সফরে অথবা বাড়িতে বৃষ্টি কিংবা অসুস্থতার কারণে এক সাথে পড়ে, সে শুধু প্রথম সালাতের জন্য আযান দিবে, কিন্তু প্রত্যেক ফরজেরর জন্য ইকামত বলবে। জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফার ময়দানে জুমু‘আর সালাতের জন্য আযান দেন, অতঃপর জোহর সালাত আদায় করেন, অতঃপর ইকামত বলে আসর সালাত আদায় করেন। অনুরূপ মুজদালিফায় এসে এক আযান ও দুই ইকামতের মাধ্যমে মাগরিব ও এশার সালাত আদায় করেন। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২১৮।] তিনি দুই সালাতের জন্য এক আযান দেন। কারণ, দুই সালাতের ওয়াক্ত এক ওয়াক্তে পরিণত হয়েছে, কিন্তু এক ইকামতে যথেষ্ট করেন নি। কারণ, প্রত্যেক সালাতের জন্য ইকামত জরুরি। অতএব, দুই সালাত এক সাথে আদায়কারী ব্যক্তি একবার আযান দিবে ও প্রত্যেক সালাতের জন্য ইকামত বলবে।

২. অনেকগুলো কাযা যে ব্যক্তি আদায় করে, সে শুধু একবার আযান দিবে, আর প্রত্যেক সালাতের জন্য ইকামত বলবে। আবু কাতাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদীসে এসেছে: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাথীবৃন্দ ফজরের সালাতে ঘুমিয়ে ছিলেন, সূর্য উদিত হওয়ার আগে কেউ উঠতে পারেন নি, তারা সে স্থান প্রস্থান করেন, অতঃপর বেলাল সালাতের আযান দেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‎‎ সালাত আদায় করেন। অতঃপর প্রতি দিনের ন্যায় চাশতের সালাত আদায় করেন। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৬১।]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীস দ্বারাও এ সালাতের জন্য ইকামত প্রমাণিত হয়:

وأمر بلالاً فأقام الصلاة، فصلى بهم الصبح، فلما قضى الصلاة قال : «من نسي الصلاة فليصلِّها إذا ذكرها، فإن الله قال : ﴿وَأَقِمِ الصَّلاةَ لِذِكْرِي﴾»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেলালকে নির্দেশ দেন, সে সালাতের ইকামত বলে, তিনি তাদের নিয়ে ফজরের সালাত আদায় করেন, সালাত শেষ করে বলেন, যে সালাত ভুলে যায়, সে যেন স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে তা পড়ে নেয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম কর”। [সূরা ত্ব-হা]। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৮০।] আহযাবের যুদ্ধেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ‎‎ অনুরূপ করেন, যখন কাফিরদের কারণে তার কয়েক ওয়াক্ত সালাত কাযা হয়। [দেখুন: “ইরওয়াউল গালিল”: (১/২৫৭)।]

আমি শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায রহ.-কে কাতাদার হাদীস সম্পর্কে বলতে শুনেছি, যেখানে রয়েছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সময় জাগ্রত হতে না পেরে পরে তা কাযা করেন: “এ হাদীস প্রমাণ করে যে, যে ব্যক্তি সালাতের সময় ঘুমিয়ে থাকে অথবা তা ভুলে যায়, সে তা আদায় সালাতের ন্যায় আযান-ইকামতসহ সিরিয়াল অনুযায়ী পড়ে নিবে। আর যে স্থানে ঘুমিয়ে ছিল তা প্রস্থান করাও সুন্নত, যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রস্থান করেছেন। অনুরূপ জেহরি সালাতকে জেহরি আর সিররী সালাতকে সিররিভাবে আদায় করবে”। [বুলুগুল মারামের: ২০২ নং হাদিসের ব্যাখ্যার সময় এ বক্তব্য শ্রবণ করি।]

১১
আট. মুয়াজ্জিনের আযানের জাওয়াব ও তার ফযীলত:
আযান ও ইকামত শ্রবণকারীর জন্য সুন্নাত হচ্ছে মুয়াজ্জিনের সাথে সাথে আস্তে আস্তে তার অনুরূপ বাক্য উচ্চারণ করা, শুধু হাইআলাহ ব্যতীত, তখন বলবে: لا حول ولا قوة إلا بالله অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দুরূদ ও আযানের পরবর্তী দো‘আ পড়বে। এতে সন্দেহ নেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উম্মতের জন্য আযান ও তার পরবর্তী সময় পাঁচ প্রকার যিকির বৈধ করেছেন। যেমন,

১. শ্রবণকারী মুয়াজ্জিনের ন্যায় বাক্যগুলো বলবে, শুধু حي على الصلاة، وحي على الفلاح، ব্যতীত, তখন বলবে, لا حول ولا قوة إلا بالله»؛ আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‎‎ বলেছেন:

«إذا سمعتم النداء فقولوا مثل ما يقول المؤذِّن» .

“যখন তোমরা আযান শ্রবণ কর, তখন মুয়াজ্জিনের ন্যায় অনুরূপ শব্দ বল”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬১১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৮৩।] উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‎‎ বলেছেন: “যখন মুয়াজ্জিন বলে: الله أكبر الله أكبرُ، অতঃপর তোমাদের কেউ বলে: الله أكبر الله أكبرُ، যখন মুয়াজ্জিন বলে: أشهد أن لا إله إلا الله অতঃপর তোমাদের কেউ বলে: أشهد أن لا إله إلا الله যখন মুয়াজ্জিন বলে: أشهد أن محمدًا رسول الله، অতঃপর তোমাদের কেউ বলে: أشهد أن محمدًا رسول الله، যখন মুয়াজ্জিন বলে: حيَّ على الصلاة، অতঃপর তোমাদের কেউ বলে: لا حول ولا قوة إلا بالله، যখন মুয়াজ্জিন বলে: حي على الفلاح، অতঃপর তোমাদের কেউ বলে: لا حول ولا قوة إلا بالله، যখন মুয়াজ্জিন বলে: الله أكبر الله أكبر، অতঃপর তোমাদের কেউ বলে: الله أكبر الله أكبر، যখন মুয়াজ্জিন বলে: لا إله إلا الله، অতঃপর তোমাদের কেউ অন্তর থেকে বলে: لا إله إلا الله، সে জান্নাতে প্রবেশ করবে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৮৫।]

২. মুয়াজ্জিনের তাশাহহুদ বা কালেমায়ে শাহাদাত বলার পর বলা:

وأنا أشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له، وأن محمدًا عبده ورسوله، رضيت بالله ربًّا، وبمحمدٍ رسولاً، وبالإسلام دينًا،

কারণ, সাদ ইবন আবু ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন: “যে ব্যক্তি মুয়াজ্জিনকে‎ বলতে শোনে বলে:

«أشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له، وأن محمدًا عبده ورسوله، رضيت بالله ربًّا، وبمحمد رسولاً، وبالإسلام دينًا،» .

তার পাপ মোচ করা হয়”। অন্য বর্ণনায় আছে: “মুয়াজ্জিনকে‎ বলতে শোনে বলে: وأنا أشهد ... (তার পাপ মোচন করা হবে)। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৮৬।]

৩. মুয়াজ্জিনের উত্তর শেষ করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ‎‎ ওপর দরূদ পড়বে। আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন:

«إذا سمعتم المؤذن فقولوا مثل ما يقول، ثم صلُّوا علي؛ فإنه من صلَّى عليّ صلاة صلى الله عليه بها عشرًا، ثم سلوا الله لي الوسيلة؛ فإنها منزلةٌ في الجنة لا تنبغي إلا لعبدٍ من عباد الله، وأرجو أن أكون أنا هو، فمن سأل لي الوسيلة حلت عليه الشفاعة» .

“যখন মুয়াজ্জিনের আওয়াজ শ্রবণ কর, তখন তার ন্যায় তোমরাও বল, অতঃপর আমার ওপর দুরূদ পাঠ কর, কারণ আমার ওপর যে একবার দরূদ পাঠ করবে আল্লাহ তার ওপর দশবার দরূদ প্রেরণ করবেন। অতঃপর আমার জন্য উসীলা প্রার্থনা কর, উসীলা জান্নাতের একটি বিশেষ মর্যাদা যার ভাগীদার শুধু একজন বান্দাই হবে, আমি আশা করছি সে ব্যক্তিটি হবো আমিই। আমার জন্য যে ওসিলা প্রার্থনা করবে, তার জন্য আমার শাফা‘আত ওয়াজিব হয়ে যাবে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৮৪।]

৪. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ‎‎ ওপর দুরূদ পাঠ করে যাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত দো‘আ পাঠ করবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ‎‎ বলেছেন: “যে ব্যক্তি আযান শ্রবণ করে বলে:

«اللهم ربَّ هذه الدعوة التامة، والصلاة القائمة، آتِ محمدًا الوسيلة والفضيلة، وابعثه مقامًا محمودًا الذي وعدته»

কিয়ামতের দিন তার জন্য আমার শাফা‘আ বৈধ হয়ে যাবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬১৪।]

বায়হাকীর বর্ণনায় আরো একটু অতিরিক্ত বর্ণিত আছে [বায়হাকী: (১/৪১০); তুহফাতুল আখইয়ার গ্রন্থে: (পৃ. ৩৮) হাদিসের সনদটি ইমাম বায রহ. হাসান বলেছেন।]:

«... إنك لا تخلف الميعاد» .

৫. অতঃপর নিজের জন্য দোয়া করবে, আল্লাহর অনুগ্রহ প্রার্থনা করবে, কারণ এ দো‘আ কবুল করা হয়। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«الدعوة لا ترد بين الأذان والإقامة فادعوا» .

“আযান ও ইকামতের মাঝখানের দো‘আ প্রত্যাখ্যান করা হয় না। অতএব, এ সময় তোমরা দো‘আ কর”। [আহমদ: (৩/২২৫); আবু দাউদ, হাদীস নং ৫২১; তিরমিযী, হাদীস নং ২১২; আল-বানি ইরওয়াউল গালিল: (১/২৬২) এ হাদীসটি সহীহ বলেছেন।]

শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায রহ.-কে বলতে শুনেছি: “এসব দো‘আ প্রত্যেক আযানের পর একবার করে পড়তে হবে”। [যাদুল মায়াদ গ্রন্থের আযকার অধ্যায়ের: (২/৩৯১) ব্যাখ্যার সময় আমি তার মুখে এ বাণী শ্রবণ করি।]

১২
নয়: আযানের পর মসজিদ থেকে বের হওয়ার বিধান:
যার ওপর সালাত ওয়াজিব, আযানের পর মসজিদ থেকে তার বের হওয়া কোনো কারণ ব্যতীত অথবা ফিরে আসার নিয়ত ব্যতীত হারাম। কারণ, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু জনৈক ব্যক্তিকে বলেন, যে আযানের পর মসজিদ থেকে বের হয়েছিল:

«أما هذا فقد عصى أبا القاسم » .

“এ ব্যক্তি আবুল কাসেম তথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ‎‎ নাফরমানি করল”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৫৫।] ইমাম তিরমিযি রাহিমাহুল্লাহু বলেন, “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ‎‎ সাহাবী ও তার পরবর্তী লোকদের আমল অনুরূপ ছিল, অর্থাৎ আযানের পর কোনো কারণ ব্যতীত মসজিদ থেকে কেউ বের হবে না অথবা অযুর জন্য অথবা অন্য কোনো জরুরি কাজ ব্যতীত মসজিদ থেকে বের হবে না”। [তিরমিযী, হাদীস নং ২০৪।]

১৩
দশ: আযান ও ইকামতের মাঝখানের বিরতি:
আযানের বিধান মূলত সালাতের সময় সম্পর্কে ঘোষণা দেওয়ার জন্য, অতএব আযানের পর এতটুকু সময় দেরি করা জরুরি, যে সময়ের মধ্যে লোকেরা প্রস্তুত হয়ে সালাতে উপস্থিত হতে পারে, অন্যথায় আযান দেওয়ার কোনো মানে হয় না, অনেকের থেকে জামা‘আত ছুটে যাবে, যারা জামাতে উপস্থিত হতে ইচ্ছুক, কারণ যারা খেতে বসেছে অথবা পানাহারে মগ্ন অথবা বাথরুমে আছে তারা যখন এসব কাজ থেকে ফারেগ হবে অথবা অযুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করবে তাদের থেকে জামা‘আত ছুটে যাবে অথবা কয়েক রাকাত ছুটে যাবে, যার একমাত্র কারণ দ্রুত করা ও আযান-ইকামতের মাঝখানে কোনো বিরতি না দেওয়া, বিশেষ করে যখন মুসল্লির বাড়ি মসজিদ থেকে দূরে হয়। ইমাম বুখারী রহ. একটি অধ্যায় রচনা করেছেন, যার শিরোনাম: “আযান ও ইকামতের মাঝখানে বিরতি কতটুকু”? কিন্তু তার নিকট এর কোনো নির্দিষ্ট পরিমাণ নির্ধারিত হয় নি। তিনি শুধু আব্দুল্লাহ ইবন মুগাফ্ফাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীস বর্ণনা করেছেন, যেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “প্রত্যেক দুই আযানের মাঝখানে সালাত রয়েছে, প্রত্যেক দুই আযানের মাঝখানে সালাত রয়েছে”। তৃতীয়বার তিনি বলেন, “যে ইচ্ছা করে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬২৪।] এখানে দুই আযান দ্বারা উদ্দেশ্য আযান ও ইকামত। এতে সন্দেহ নেই আযান ও ইকামতের মাঝখানে সময় দেওয়া মূলত কল্যাণের সুযোগ দেওয়া ও তার জন্য সাহায্য করা, যার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। [নাইলুল আওতার লি শাওকানি: (২/৬২)।] আব্দুল্লাহ ইবন যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীস আযান ও ইকামতের মাঝখানে অপেক্ষা করা প্রমাণ করে, সেখানে রয়েছে: “আমি এক ব্যক্তিকে দেখলাম, যার গায়ে দুইটি সবুজ জামা ছিল, সে মসজিদে দাঁড়িয়ে আযান দিল, অতঃপর কিছুক্ষণ বসল, অতঃপর দাঁড়িয়ে আযানের ন্যায় শব্দ বলল, তবে এবার সে قد قامت الصلاة বলল। অন্য বর্ণনায় আছে: “ফিরিশতাগণ তাকে আযান শিক্ষা দিল, অতঃপর তার থেকে সামান্য দূরে সরে দাঁড়াল, অতঃপর তাকে ইকামত শিক্ষা দিল”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৫০৬; সহীহ সুনান আবু দাউদ: (১/৯৮), হাদীস নং ৪৯৯, ৫০৬।]

শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায রহ.-কে বলতে শুনেছি: “ইকামত দেওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করবে না যতক্ষণ না ইমাম অনুমতি প্রদান করেন। যার পরিমাণ এক ঘণ্টার চতুর্থাংশ অথবা এক তৃতীয়াংশ অথবা অনুরূপ, যদি ইমাম অনেক দেরি করে, তাহলে উপস্থিত কেউ সামনে গিয়ে সবার সাথে সালাত আদায় করবে। [আমি তার এ বক্তব্য শোনেছি জামে তুরকি ইবন আব্দুল্লাহ মসজিদে, বুধবার, ৬/১১/১৪১৮হিজরী।]

ইমাম ইকামতের বেশি হকদার। অতএব, তার অনুমতি ও ইশারা ব্যতীত ইকামত বলবে না, মুয়াজ্জিন আযানের বেশী হকদার। কারণ, আযানের সময়টি তার ওপর ন্যস্ত, সেই আমানতদার। [সুবুলুস সালাম লি সানআনি: (২/৯৫)।] শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায রহ. বলেন, “ইমাম ইকামতের জিম্মাদার, মুয়াজ্জিন আযানের জিম্মাদার, হাদীসটি যদিও দুর্বল, কিন্তু আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর বাণীর কারণে তা শক্তিশালী হয়, আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ‎‎ কর্মও তা সমর্থন করে। কারণ, তিনিই ইকামতের নির্দেশ দিতেন। এখানে দলীল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কর্ম, দুর্বল হাদীস নয়। [বুলুগুল মারামের: ২১৭ নং হাদীসের ব্যাখ্যার সময় এ বক্তব্য শ্রবণ করেছি।]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন