HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
স্ত্রী নির্বাচন
লেখকঃ মফিজুল ইসলাম
স্ত্রী নির্বাচন
WIFE SELECTION
মফিজুল ইসলাম
(অনার্স তৃতীয় বর্ষ) দাওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ,
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া, বাংলাদেশ।
সম্পাদনায়
শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
আরবি প্রভাষক :
আলহাজ্জ মোহাম্মদ ইউসুফ মেমোরিয়াল দারুল হাদীস মাদরাসা
৮-৯ লুৎফর রহমান লেন, সুরিটোলা, ঢাকা- ১১০০।
WIFE SELECTION
মফিজুল ইসলাম
(অনার্স তৃতীয় বর্ষ) দাওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ,
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া, বাংলাদেশ।
সম্পাদনায়
শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
আরবি প্রভাষক :
আলহাজ্জ মোহাম্মদ ইউসুফ মেমোরিয়াল দারুল হাদীস মাদরাসা
৮-৯ লুৎফর রহমান লেন, সুরিটোলা, ঢাকা- ১১০০।
إن الحمد لله ، نحمده ونستعينه ونستغفره ، ونعوذ بالله من شرور أنفسنا ومن سيئات أعمالنا من يهده الله فلا مضل له ، ومن يضلل فلا هادي له . وأشهد ألا إله إلا الله وحده لا شريك له ، وأشهد أن محمداً عبده ورسوله . أما بعد : فإن خير الحديث كتاب الله ، وخير الهدي هدي محمد ، وشر الأمور محدثاتها ، وكل بدعة ضلالة
সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য, দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক ঐ নবীর উপর, যাঁর পরে আর কোন নবীর আগমন ঘটবে না এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবায়ে কেরামের উপর।
মহান আলস্নাহ বলেন,
﴿يَاۤأَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِّنْ ذَكَرٍ وَّأُنْثٰى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوْبًا وَّقَبَآئِلَ لِتَعَارَفُوْا﴾
‘‘হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে। পরে তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পারো’’ (সূরা হুজুরাত ৪৯ঃ ১৩)।
﴿يَاۤ أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ وَّخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيْرًا وَّنِسَآءً ﴾
‘‘হে মানুষ (সমাজ)! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো, যিনি তোমাদেরকে একটি মাত্র ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তা হতে তার জোড়া সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর সেই দু’জন হতে বহু নর ও নারী সৃষ্টি করেছেন’’ (সূরা নিসা ৪ঃ ১)।
﴿وَخَلَقْنَاكُمْ أَزْوَاجًا﴾
‘‘আর আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি জোড়ায় জোড়ায়’’ (সূরা নাবা ৭৮ঃ ৮)।
﴿وَاللهُ جَعَلَ لَكُمْ مِّنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا﴾
‘‘আর আলস্নাহ তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হতে জোড়া সৃষ্টি করেছেন’’
(সূরা নাহল ১৬ঃ ২)।
নারী পুরুষের সহ অবস্থানের জন্য শামিত্মদাতা মহান আলস্নাহ শরীয়তসম্মত বিবাহের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন,
﴿فَانْكِحُوْا مَا طَابَ لَكُمْ مِّنَ النِّسَآءِ مَثْنٰى وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوْا فَوَاحِدَةً﴾
‘‘তোমরা নারীদের মধ্য হতে নিজেদের পছন্দমতো দুইজন অথবা তিনজন কিংবা চারজন করে বিবাহ করো। কিন্তু যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, তোমরা তাদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে একজনকে (বিবাহ করো)’’ (সূরা নিসা ৪ঃ ৩)।
﴿وَهُوَ الَّذِيْ خَلَقَ مِنَ الْمَآءِ بَشَرًا فَجَعَلَهٗ نَسَبًا وَّصِهْرًا وَّكَانَ رَبُّكَ قَدِيْرًا﴾
‘‘তিনিই মানুষকে পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি মানবজাতির মধ্যে ব্যক্তিগত ও বৈবাহিক সর্ম্পক স্থাপন করেছেন। আর তোমার প্রতিপালক সর্বশক্তিমান’’ (সূরা ফুরকান ২৫ঃ ৫৪)।
﴿وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلًا مِّنْ قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ أَزْوَاجًا وَّذُرِّيَّةً﴾
‘‘আমি তোমার পূর্বে অনেক রাসূল পাঠিয়েছিলাম। আর তাদেরকে দিয়েছিলাম স্ত্রী ও সমত্মানাদি’’ (সূরা রা‘দ ১৩ঃ ৩৮)।
﴿فَانْكِحُوْهُنَّ بِإِذْنِ أَهْلِهِنَّ وَاٰتُوْهُنَّ أُجُوْرَهُنَّ بِالْمَعْرُوْفِ مُحْصَنَاتٍ غَيْرَ مُسَافِحَاتٍ وَّلَا مُتَّخِذَاتِ أَخْدَانٍ ﴾
‘‘তোমরা তাদের (মেয়েদের) অভিভাবকের অনুমতিক্রমে তাদেরকে বিবাহ করো, ন্যায়সংগতভাবে তাদেরকে মোহর প্রদান করো, যাতে তারা সচ্চরিত্রা হবে, ব্যাভিচারিণী হবে না ও গোপন বন্ধুত্বেও লিপ্ত হবে না। (সূরা নিসা ৪ঃ ২৫)।
﴿وَأَنْكِحُوا الْأَيَامٰى مِنْكُمْ وَالصَّالِحِيْنَ مِنْ عِبَادِكُمْ وَإِمَآئِكُمْ﴾
‘‘আর তোমরা তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন তাদের বিবাহ দাও এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরকেও বিবাহ দাও’’ (সূরা নূর ২৪ঃ ৩২)।
আলস্নাহর এ নির্দেশ পালনের মধ্যে রয়েছে দ্বীনের পূর্ণতা। যেমন মহানবী ﷺ বলেন ‘‘বান্দা যখন বিবাহ করে তখন সে তার অর্ধেক দ্বীন পূর্ণ করে নেয়। অতএব তাকে তার অবশিষ্ট অর্ধেক দ্বীনের ব্যাপারে আলস্নাহকে ভয় করা উচিত’’। [শুআবুল ঈমান, হা: ৫৪৮৬; সহীহুল জামে হা:৪৩০]
রাসূল ﷺ অন্যত্র বলেন,
يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ ! مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ؛ فَلْيَتَزَوَّجْ؛ , وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ؛ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ؛ فَإِنَّهٗ لَهٗ وِجَاءٌ
‘হে যুবক সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যে বিবাহ করার সামর্থ রাখে সে যেন বিবাহ করে এবং যে বিবাহ করার সামর্থ রাখে না সে যেন ‘‘সাওম’’ পালন করে। কেননা সেটা (সাওম) তার যৌন স্পৃহাকে দমনকারী’’। [বুখারী ‘কিতাবু নিকাহ’ ২য় অধ্যায়, হা: ৫০৬৫ ; মুসলিম ১৬/১, হা: ১৪০০ আহমাদ হা : ৪০৩৩]
কাজেই যাদের সামর্থ আছে তারা অবশ্যই পুণ্যময়ী নারী দেখে বিবাহ করবে। আর যাদের সামর্থ নেই আলস্নাহ তাদেরকে অভাব মুক্তকরার পূর্ব পর্যমত্ম তারা সংযমতার নীতি অবলম্বন করবে। এ মর্মে আলস্নাহ বলেন,
﴿وَلْيَسْتَعْفِفِ الَّذِيْنَ لَا يَجِدُوْنَ نِكَاحًا حَتّٰى يُغْنِيَهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖ﴾
‘‘যাদের বিবাহ করার সামর্থ নেই তারা যেন সংযমতা অবলম্বন করে, যতক্ষণ না আলস্নাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করেন’’ (সূরা নূর ২৪ঃ ৩৩)
মহান আলস্নাহর সবচেয়ে বড় উপহার হচ্ছে পুরুষের জন্য নারী এবং নারীর জন্য পুরুষ। সৃষ্টিকর্তা যত নিয়ামত মানুষকে দিয়েছেন তার মধ্যে সবচেয়ে বড় নিয়ামত হলো পুণ্যবতী স্ত্রী। নারী-পুরুষ উভয়কে আলস্নাহ সুন্দর অবকাঠামোতে সৃষ্টি করেছেন যাতে তারা একে অপরের কাছ থেকে উপকার লাভ করতে পারে। মহান আলস্নাহ বলেন,
﴿نَحْنُ خَلَقْنَاهُمْ وَشَدَدْنَاۤ أَسْرَهُمْ﴾
‘‘আমি তাদেরকে সৃষ্টি করেছি এবং তাদের গঠন মজবুত করেছি’’
(সূরা দাহর ৭৬ঃ ২৮)।
﴿فِيْۤ أَيِّ صُوْرَةٍ مَّا شَآءَ رَكَّبَكَ﴾
‘‘তিনি তোমাদেরকে তাঁর ইচ্ছামতো আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন’’
(সূরা ইনফিতার ৮২ঃ ৮)।
﴿لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ فِيْۤ أَحْسَنِ تَقْوِيْمٍ﴾
‘‘আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি অতি উত্তম আকার-আকৃতি দিয়ে’’
(সূরা তীন ৯৫ঃ ৪)।
মহান আলস্নাহ মানুষকে অর্থাৎ প্রত্যেক নর-নারীকে সুন্দর আকার-আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। আর একজনকে করেছেন অপরজনের পরিপূরক। মহান আলস্নাহ বলেন,
﴿هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنْتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ﴾
‘‘তারা তোমাদের পোশাকস্বরূপ এবং তোমরা তাদের পোশাকস্বরূপ’’
(সূরা বাকারা ২ঃ ১৮৭)।
পোশাক যেমন শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হবার নয়, ঠিক তেমনি স্বামী-স্ত্রীও একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হবার নয়। দুনিয়ার অন্যতম আকর্ষণীয় বস্তু হলো নারী। আলস্নাহ বলেন,
﴿زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَآءِ﴾
‘‘নারীর প্রতি প্রবিত্তির আসক্তি মানুষের জন্য সুশোভিত করে দেয়া হয়েছে’’
(সূরা আলে-ইমরান ৩ঃ ১৪)।
আবদুলস্নাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলেন, ‘‘দুনিয়া উপভোগের উপকরণ এবং দুনিয়ার উত্তম উপভোগের উপকরণ হলো পুণ্যবতী স্ত্রী’’। [কিতাবু নিকাহ ১৭তম অধ্যায়, মুসলিম হা.একা. হা:৩৫৩৫-৫৯/১৪৬৭, ই.ফা. হা:৩৫০৬, ই. সে ৩৫০৭]
দাম্পত্য জীবনে শামিত্ম ও সুখের বস্তু হলো একজন পুণ্যবতী স্ত্রী। মহান আলস্নাহ বলেনঃ
﴿وَمِنْ اٰيَاتِهٖۤ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِّنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوْاۤ إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَّوَدَّةً وَّرَحْمَةً إِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ﴾
‘‘তাঁর (আল্লাহর) নিদর্শনাবলির মধ্যে অন্যতম একটি নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের স্ত্রীদেরকে সৃষ্টি করেছেন; যাতে তোমরা তাদের নিকট থেকে শামিত্ম পাও এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক স্নেহ ও ভালবাসা সৃষ্টি করেছেন। চিমত্মাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে’’ (সূরা রূম ৩০ঃ ২১)।
﴿نِسَآؤُكُمْ حَرْثٌ لَّكُمْ فَأْتُوْا حَرْثَكُمْ أَنّٰى شِئْتُمْ﴾
‘‘তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের শস্যক্ষেত্র। সুতরাং তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা গমন করো’’ (সূরা বাকারা ২ঃ ২২৩ )। [বুখারী তা. পা. হা. ৪৫২৮, মুসলিম হা. এ. হা: ১১৭/১৪৩৫]
সর্বাপেঁক্ষা উত্তম গৃহ সেটি, যে গৃহে সতীসাধ্বী ও পুণ্যবতী রমণী বসবাস করে। প্রিয় নবী ﷺ বলেন, পুরম্নষের জন্য সুখ ও সৌভাগ্যের বিষয় হলো চারটি ঃ তন্মধ্যে অন্যতম একটি হলো সতীসাধ্বী নারী’’। [সিলসিলাহ সহীহাহ হা:২৮২]
عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍالْخُدْرِيِّ أَنَّهٗ سَمِعَ النَّبِيَّ يَقُوْلُ : " لَا تُصَاحِبْ إِلَّا مُؤْمِنًا وَلَا يَأْكُلْ طَعَامَكَ إِلَّا تَقِيًّا
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ-কে বলতে শুনেছি। নবী ﷺ বলেন, মুমিন মানুষ ছাড়া অন্য কাউকে সঙ্গী বানাবে না। আর তোমার খাবার যেন কোন পরহেযগার-মুত্তাকী ব্যতীত আর কেউ না খায়। [আবু দাউদ হাঃ৪৮৩২, আহমাদ হাঃ১০৯৪৪, তিরমিযি হাঃ২৩৯৫]
দাম্পত্য জীবনকে সুখময়, পারিবারিক জীবনকে শামিত্মময় ও পরকালীন জীবনকে সাফল্যময় করার লক্ষে যে নারীকে ‘‘স্ত্রী হিসেবে নির্বাচন’’ করা চির কল্যাণকর আর যে নারীকে ‘‘স্ত্রী হিসেবে নির্বাচন’’ করা অকল্যাণকর আলোচ্য গ্রন্থে আমরা সে দিকটি তুলে ধরার প্রয়াস পাব ইনশাআলস্নাহ। বইটি লিখতে যারা পরামর্শ ও অনুপ্রাণিত করেছেন ও যাদের লিখনীর সহযোগিতা গ্রহণ করা হয়েছে এবং যিনি মূল্যবান সময় কুরবানী করে সম্পাদনার কাজ করেছেন তাদের প্রত্যেকের জন্য মহান আলস্নাহর দরবারে ‘জাযায়ে খায়ের’ কামনা করছি। মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়, তাই সহৃদয়বান পাঠক মহলে কোন ভুল-ত্রম্নটি পরিলক্ষিত হলে এবং তা আমাদের অবহিত করলে শুধরে নেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি। মহান অলস্নাহর কাছে প্রার্থনা করছি, পাঠক-পাঠিকাকে এ লিখনী দ্বারা উপকৃত করুন এবং আমাদের এ লিখনীকে পরকালীন পাথেয় হিসেবে কবুল করুন। আমীন
সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য, দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক ঐ নবীর উপর, যাঁর পরে আর কোন নবীর আগমন ঘটবে না এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবায়ে কেরামের উপর।
মহান আলস্নাহ বলেন,
﴿يَاۤأَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِّنْ ذَكَرٍ وَّأُنْثٰى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوْبًا وَّقَبَآئِلَ لِتَعَارَفُوْا﴾
‘‘হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে। পরে তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পারো’’ (সূরা হুজুরাত ৪৯ঃ ১৩)।
﴿يَاۤ أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ وَّخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيْرًا وَّنِسَآءً ﴾
‘‘হে মানুষ (সমাজ)! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো, যিনি তোমাদেরকে একটি মাত্র ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তা হতে তার জোড়া সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর সেই দু’জন হতে বহু নর ও নারী সৃষ্টি করেছেন’’ (সূরা নিসা ৪ঃ ১)।
﴿وَخَلَقْنَاكُمْ أَزْوَاجًا﴾
‘‘আর আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি জোড়ায় জোড়ায়’’ (সূরা নাবা ৭৮ঃ ৮)।
﴿وَاللهُ جَعَلَ لَكُمْ مِّنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا﴾
‘‘আর আলস্নাহ তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হতে জোড়া সৃষ্টি করেছেন’’
(সূরা নাহল ১৬ঃ ২)।
নারী পুরুষের সহ অবস্থানের জন্য শামিত্মদাতা মহান আলস্নাহ শরীয়তসম্মত বিবাহের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন,
﴿فَانْكِحُوْا مَا طَابَ لَكُمْ مِّنَ النِّسَآءِ مَثْنٰى وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوْا فَوَاحِدَةً﴾
‘‘তোমরা নারীদের মধ্য হতে নিজেদের পছন্দমতো দুইজন অথবা তিনজন কিংবা চারজন করে বিবাহ করো। কিন্তু যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, তোমরা তাদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে একজনকে (বিবাহ করো)’’ (সূরা নিসা ৪ঃ ৩)।
﴿وَهُوَ الَّذِيْ خَلَقَ مِنَ الْمَآءِ بَشَرًا فَجَعَلَهٗ نَسَبًا وَّصِهْرًا وَّكَانَ رَبُّكَ قَدِيْرًا﴾
‘‘তিনিই মানুষকে পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি মানবজাতির মধ্যে ব্যক্তিগত ও বৈবাহিক সর্ম্পক স্থাপন করেছেন। আর তোমার প্রতিপালক সর্বশক্তিমান’’ (সূরা ফুরকান ২৫ঃ ৫৪)।
﴿وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلًا مِّنْ قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ أَزْوَاجًا وَّذُرِّيَّةً﴾
‘‘আমি তোমার পূর্বে অনেক রাসূল পাঠিয়েছিলাম। আর তাদেরকে দিয়েছিলাম স্ত্রী ও সমত্মানাদি’’ (সূরা রা‘দ ১৩ঃ ৩৮)।
﴿فَانْكِحُوْهُنَّ بِإِذْنِ أَهْلِهِنَّ وَاٰتُوْهُنَّ أُجُوْرَهُنَّ بِالْمَعْرُوْفِ مُحْصَنَاتٍ غَيْرَ مُسَافِحَاتٍ وَّلَا مُتَّخِذَاتِ أَخْدَانٍ ﴾
‘‘তোমরা তাদের (মেয়েদের) অভিভাবকের অনুমতিক্রমে তাদেরকে বিবাহ করো, ন্যায়সংগতভাবে তাদেরকে মোহর প্রদান করো, যাতে তারা সচ্চরিত্রা হবে, ব্যাভিচারিণী হবে না ও গোপন বন্ধুত্বেও লিপ্ত হবে না। (সূরা নিসা ৪ঃ ২৫)।
﴿وَأَنْكِحُوا الْأَيَامٰى مِنْكُمْ وَالصَّالِحِيْنَ مِنْ عِبَادِكُمْ وَإِمَآئِكُمْ﴾
‘‘আর তোমরা তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন তাদের বিবাহ দাও এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরকেও বিবাহ দাও’’ (সূরা নূর ২৪ঃ ৩২)।
আলস্নাহর এ নির্দেশ পালনের মধ্যে রয়েছে দ্বীনের পূর্ণতা। যেমন মহানবী ﷺ বলেন ‘‘বান্দা যখন বিবাহ করে তখন সে তার অর্ধেক দ্বীন পূর্ণ করে নেয়। অতএব তাকে তার অবশিষ্ট অর্ধেক দ্বীনের ব্যাপারে আলস্নাহকে ভয় করা উচিত’’। [শুআবুল ঈমান, হা: ৫৪৮৬; সহীহুল জামে হা:৪৩০]
রাসূল ﷺ অন্যত্র বলেন,
يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ ! مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ؛ فَلْيَتَزَوَّجْ؛ , وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ؛ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ؛ فَإِنَّهٗ لَهٗ وِجَاءٌ
‘হে যুবক সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যে বিবাহ করার সামর্থ রাখে সে যেন বিবাহ করে এবং যে বিবাহ করার সামর্থ রাখে না সে যেন ‘‘সাওম’’ পালন করে। কেননা সেটা (সাওম) তার যৌন স্পৃহাকে দমনকারী’’। [বুখারী ‘কিতাবু নিকাহ’ ২য় অধ্যায়, হা: ৫০৬৫ ; মুসলিম ১৬/১, হা: ১৪০০ আহমাদ হা : ৪০৩৩]
কাজেই যাদের সামর্থ আছে তারা অবশ্যই পুণ্যময়ী নারী দেখে বিবাহ করবে। আর যাদের সামর্থ নেই আলস্নাহ তাদেরকে অভাব মুক্তকরার পূর্ব পর্যমত্ম তারা সংযমতার নীতি অবলম্বন করবে। এ মর্মে আলস্নাহ বলেন,
﴿وَلْيَسْتَعْفِفِ الَّذِيْنَ لَا يَجِدُوْنَ نِكَاحًا حَتّٰى يُغْنِيَهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖ﴾
‘‘যাদের বিবাহ করার সামর্থ নেই তারা যেন সংযমতা অবলম্বন করে, যতক্ষণ না আলস্নাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করেন’’ (সূরা নূর ২৪ঃ ৩৩)
মহান আলস্নাহর সবচেয়ে বড় উপহার হচ্ছে পুরুষের জন্য নারী এবং নারীর জন্য পুরুষ। সৃষ্টিকর্তা যত নিয়ামত মানুষকে দিয়েছেন তার মধ্যে সবচেয়ে বড় নিয়ামত হলো পুণ্যবতী স্ত্রী। নারী-পুরুষ উভয়কে আলস্নাহ সুন্দর অবকাঠামোতে সৃষ্টি করেছেন যাতে তারা একে অপরের কাছ থেকে উপকার লাভ করতে পারে। মহান আলস্নাহ বলেন,
﴿نَحْنُ خَلَقْنَاهُمْ وَشَدَدْنَاۤ أَسْرَهُمْ﴾
‘‘আমি তাদেরকে সৃষ্টি করেছি এবং তাদের গঠন মজবুত করেছি’’
(সূরা দাহর ৭৬ঃ ২৮)।
﴿فِيْۤ أَيِّ صُوْرَةٍ مَّا شَآءَ رَكَّبَكَ﴾
‘‘তিনি তোমাদেরকে তাঁর ইচ্ছামতো আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন’’
(সূরা ইনফিতার ৮২ঃ ৮)।
﴿لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ فِيْۤ أَحْسَنِ تَقْوِيْمٍ﴾
‘‘আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি অতি উত্তম আকার-আকৃতি দিয়ে’’
(সূরা তীন ৯৫ঃ ৪)।
মহান আলস্নাহ মানুষকে অর্থাৎ প্রত্যেক নর-নারীকে সুন্দর আকার-আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। আর একজনকে করেছেন অপরজনের পরিপূরক। মহান আলস্নাহ বলেন,
﴿هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنْتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ﴾
‘‘তারা তোমাদের পোশাকস্বরূপ এবং তোমরা তাদের পোশাকস্বরূপ’’
(সূরা বাকারা ২ঃ ১৮৭)।
পোশাক যেমন শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হবার নয়, ঠিক তেমনি স্বামী-স্ত্রীও একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হবার নয়। দুনিয়ার অন্যতম আকর্ষণীয় বস্তু হলো নারী। আলস্নাহ বলেন,
﴿زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَآءِ﴾
‘‘নারীর প্রতি প্রবিত্তির আসক্তি মানুষের জন্য সুশোভিত করে দেয়া হয়েছে’’
(সূরা আলে-ইমরান ৩ঃ ১৪)।
আবদুলস্নাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলেন, ‘‘দুনিয়া উপভোগের উপকরণ এবং দুনিয়ার উত্তম উপভোগের উপকরণ হলো পুণ্যবতী স্ত্রী’’। [কিতাবু নিকাহ ১৭তম অধ্যায়, মুসলিম হা.একা. হা:৩৫৩৫-৫৯/১৪৬৭, ই.ফা. হা:৩৫০৬, ই. সে ৩৫০৭]
দাম্পত্য জীবনে শামিত্ম ও সুখের বস্তু হলো একজন পুণ্যবতী স্ত্রী। মহান আলস্নাহ বলেনঃ
﴿وَمِنْ اٰيَاتِهٖۤ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِّنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوْاۤ إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَّوَدَّةً وَّرَحْمَةً إِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ﴾
‘‘তাঁর (আল্লাহর) নিদর্শনাবলির মধ্যে অন্যতম একটি নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের স্ত্রীদেরকে সৃষ্টি করেছেন; যাতে তোমরা তাদের নিকট থেকে শামিত্ম পাও এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক স্নেহ ও ভালবাসা সৃষ্টি করেছেন। চিমত্মাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে’’ (সূরা রূম ৩০ঃ ২১)।
﴿نِسَآؤُكُمْ حَرْثٌ لَّكُمْ فَأْتُوْا حَرْثَكُمْ أَنّٰى شِئْتُمْ﴾
‘‘তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের শস্যক্ষেত্র। সুতরাং তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা গমন করো’’ (সূরা বাকারা ২ঃ ২২৩ )। [বুখারী তা. পা. হা. ৪৫২৮, মুসলিম হা. এ. হা: ১১৭/১৪৩৫]
সর্বাপেঁক্ষা উত্তম গৃহ সেটি, যে গৃহে সতীসাধ্বী ও পুণ্যবতী রমণী বসবাস করে। প্রিয় নবী ﷺ বলেন, পুরম্নষের জন্য সুখ ও সৌভাগ্যের বিষয় হলো চারটি ঃ তন্মধ্যে অন্যতম একটি হলো সতীসাধ্বী নারী’’। [সিলসিলাহ সহীহাহ হা:২৮২]
عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍالْخُدْرِيِّ أَنَّهٗ سَمِعَ النَّبِيَّ يَقُوْلُ : " لَا تُصَاحِبْ إِلَّا مُؤْمِنًا وَلَا يَأْكُلْ طَعَامَكَ إِلَّا تَقِيًّا
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ-কে বলতে শুনেছি। নবী ﷺ বলেন, মুমিন মানুষ ছাড়া অন্য কাউকে সঙ্গী বানাবে না। আর তোমার খাবার যেন কোন পরহেযগার-মুত্তাকী ব্যতীত আর কেউ না খায়। [আবু দাউদ হাঃ৪৮৩২, আহমাদ হাঃ১০৯৪৪, তিরমিযি হাঃ২৩৯৫]
দাম্পত্য জীবনকে সুখময়, পারিবারিক জীবনকে শামিত্মময় ও পরকালীন জীবনকে সাফল্যময় করার লক্ষে যে নারীকে ‘‘স্ত্রী হিসেবে নির্বাচন’’ করা চির কল্যাণকর আর যে নারীকে ‘‘স্ত্রী হিসেবে নির্বাচন’’ করা অকল্যাণকর আলোচ্য গ্রন্থে আমরা সে দিকটি তুলে ধরার প্রয়াস পাব ইনশাআলস্নাহ। বইটি লিখতে যারা পরামর্শ ও অনুপ্রাণিত করেছেন ও যাদের লিখনীর সহযোগিতা গ্রহণ করা হয়েছে এবং যিনি মূল্যবান সময় কুরবানী করে সম্পাদনার কাজ করেছেন তাদের প্রত্যেকের জন্য মহান আলস্নাহর দরবারে ‘জাযায়ে খায়ের’ কামনা করছি। মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়, তাই সহৃদয়বান পাঠক মহলে কোন ভুল-ত্রম্নটি পরিলক্ষিত হলে এবং তা আমাদের অবহিত করলে শুধরে নেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি। মহান অলস্নাহর কাছে প্রার্থনা করছি, পাঠক-পাঠিকাকে এ লিখনী দ্বারা উপকৃত করুন এবং আমাদের এ লিখনীকে পরকালীন পাথেয় হিসেবে কবুল করুন। আমীন
যেসকল নারীকে স্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করা আবশ্যক তাদের বৈশিষ্ট্য হলো-
১. পুণ্যবতী ও দ্বীনদার হওয়া :
স্মরণ রেখ হে যুবক! স্ত্রী তোমার সহধর্মিণী, অর্ধাঙ্গিনী, জীবন সঙ্গিনী, ঘরের রাণী, হৃদয়ের প্রশামিত্মদায়িনী, সমত্মানের জননী ও পরকালের কাজে সহায়তা-উৎসাহ দানকারিণী। কাজেই তাকে হতে হবে দ্বীনদার-পরহেজগার। অধিকাংশক্ষেত্রে সুন্দরী নারী, উচ্চতর ডিগ্রী ধারিণী, উচ্চ বংশীয় মর্যাদার অধিকারিণী, অর্থশীল কোন নারী আদৌ কোন মুত্তাকী ব্যক্তির স্ত্রী হতে পারে না। মহান আলস্নাহ বলেন,
﴿اَلزَّانِيْ لَا يَنْكِحُ إِلَّا زَانِيَةً أَوْ مُشْرِكَةً وَّالزَّانِيَةُ لَا يَنْكِحُهَاۤ إِلَّا زَانٍ أَوْ مُشْرِكٌ وَّحُرِّمَ ذٰلِكَ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ﴾
‘‘ব্যভিচারী কেবল ব্যভিচারিণী অথবা শিরককারিণী এবং ব্যভিচারিণী কেবল ব্যভিচারী অথবা শিরককারী পুরুষকে বিবাহ করে থাকে। কিন্তু মুমিন পুরুষদের জন্য তা হারাম’’ (সূরা নূর ২৪ঃ ৩)।
রাসূল ﷺ বলেন,
يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ ! مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ
‘‘হে যুবক সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যার বিবাহ করার সামর্থ আছে সে যেন বিবাহ করে’’। [বুখারী তা. পা. হা. একা. ১৬/১, হা :১৪০০]
কোন্ বৈশিষ্ট্যের নারীকে স্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করতে হবে সে ব্যাপারে রাসূল ﷺ বলেন,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ لِأَرْبَعٍ : لِمَالِهَا وَحَسَبِهَا وَدِيْنِهَا وَجَمَالِهَا فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّيْنِ تَرِبَتْ يَدَاكَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে মেয়েদেরকে বিবাহ করা হয়। সেগুলো হলো: তার সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার সৌন্দর্য ও তার দ্বীনদারীতা। সুতরাং তুমি দ্বীনদারীতাকেই প্রাধান্য দেবে; নতুবা ক্ষতিগ্রসত্ম হবে। [বুখারী, কিতাবু নিকাহ অধ্যায় ৬৭/১৬; হা ৫০৯০, মুসলিম ১৭/১৫ হা : ১৪৬৬ আহম্মদহ হা; ৯৫২৬; ই ফা ৪৭১৯]
উক্ত চারটি গুণের মধ্যে সর্বশেষ গুণটিই ইসলামের দৃষ্টিতে সর্বাগ্রে গণ্য ও সর্বাধিক গুরম্নত্বপূর্ণ। নবী ﷺ এর আলোচ্য নির্দেশের সারকথা হলো, দ্বীনদারী গুণসম্পন্ন কনে পাওয়া গেলে সর্বাগ্রে তাকেই স্ত্রীরূপে নির্বাচন করতে হবে। তাকে বাদ দিয়ে অন্য কোন গুণসম্পন্ন নারীকে বিবাহ করতে আগ্রহী হওয়া উচিত নয়। [সুবুলুস সালাম ৪র্থ খন্ড, পৃ:৪৩০]
দ্বীনদারীসহ বাকি তিনটি গুণ কারো স্ত্রীর মধ্যে পাওয়া গেলে তার জন্য তো সোনায় সোহাগা।
সা‘দ বিন আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) কতৃক বর্ণিত। আলস্নাহর রাসূল ﷺ বলেন, পুরুষের জন্য সুখ ও সৌভাগ্যের বিষয় হলো চারটি; সতীসাধ্বী নারী, প্রশসত্ম বাড়ি, সৎ প্রতিবেশী এবং সচল সওয়ারী (গাড়ি)। আর দুঃখ ও দুর্ভাগ্যের বিষয়ও চারটি; অসৎ প্রতিবেশী, অসতী নারী, অচল সওয়ারী ও সংকীর্ণ বাড়ি। [সিলসিলা সহীহা ১ম খন্ড, পৃ: ২২]
নবী ﷺ আরো বলেন,
اَلدُّنْيَا مَتَاعٌ وَخَيْرُ مَتَاعِ الدُّنْيَا الْمَرْأَةُ الصَّالِحَةُ
‘‘গোটা দুনিয়াটাই হচ্ছে উপভোগের সামগ্রী। আর দুনিয়ার উপভোগের সামগ্রীর মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে পুণ্যবতী স্ত্রী’’। [সহীহ মুসলিম হাঃ ১৪৬৭]
নবী ﷺ বলেন,
أَفْضَلُهٗ لِسانٌ ذَاكرٌ وَقَلْبٌ شَاكِرٌ وَزَوْجَةٌ مُؤْمِنَةٌ تُعِيْنُهٗ عَلٰى إِيْمَانِهٖ
‘‘সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ হলো যিকরকারী জিহবা, কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী হৃদয় এবং তার ঈমানের কাজে সহায়িকা স্ত্রী’’। [তিরমিযী হাঃ ৩০৯৪, মেশকাত হাঃ ২২৭৭]
পুণ্যবতী দ্বীনদার স্ত্রী যদি আপনি নির্বাচন করতে ভুল করেন, তাহলে আপনি পারিবারিক জীবনে দুঃখ ও হতাশার সাগরে ভেলার মতো ভেসে বেড়াবেন; যা থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজে পাওয়া দুস্কর হয়ে যাবে।
২. আকীদা বিশুদ্ধ ও কুসংস্কারমুক্ত হওয়া :
এদেশের মাটিতে এমন অনেক নারী-পুরুষ রয়েছে যাদের আকীদা বিশুদ্ধ নয়। যেমন তাদের ভ্রামত্ম আকীদা হলো- আলস্নাহ নিরাকার, আলস্নাহ সর্বত্র বিরাজমান, মানুষের কলবে আলস্নাহ আছেন, নবী ﷺ নূরের তৈরি, তিনি এখনও কবরে জীবিত এবং তারা ভন্ডপীরের কারামতিতে, খানকা, মাযার বা কবর থেকে ফায়দা লাভে বিশ্বাসী। অনেকে আবার শিরক ও নানা কুসংস্কারে বিশ্বাসী। যেমন- বাইরে বের হওয়ার সময় শিশুর কপালের এক পাশে কালো ফোঁটা দিলে শিশু বদনযর লাগা থেকে রক্ষা পায়, গলায় তাবিজ ঝুলালে বিপদাপদ থেকে মুক্তি পায়, নাপাক অবস্থায় কোন কাজই করা যায় না, ভাঙ্গা আয়না দেখলে আয়ু কমে যায়, রাতে অপরকে টাকা দিতে নেই, নখ কাটতে নেই ইত্যাদি।
বিশুদ্ধ আকীদার গুরুত্ব পেশ করে শায়খ আবদুল আযীয বিন আবদুলস্নাহ বিন বায (রহ.) বলেন, কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত যে, যার আকীদা বিশুদ্ধ হবে না তার সকল আমল বাতিল বলে গণ্য হবে।
তিনি আরো বলেন,
اَلْعَقِيْدَةُ الصَّحِيْحَةُ هِيَ اَصْلُ الدِّيْنِ الْاِسْلَامِ
‘বিশুদ্ধ আকীদা হলো দ্বীন ইসলামের ভিত্তি’। [শায়খ আবদুল আযীয বিন আবদুলস্নাহ বিন বায (রহ.) আল-আকীদাতুছ সহীহা ওয়ামা ইউযাদ্দুহা (রিয়াদ:দারম্নল ক্বাসেম ১৪১৫হি.),পৃ.৩ ভূমিকা দ্রঃ।]
কাজেই যে নারীর সঠিক দ্বীন নেই সে কীভাবে আলস্নাহভীরম্ন মানুষের জীবন সঙ্গিনী হতে পারে?
৩. শিরকী আকীদামুক্ত হওয়া :
সারা দেশে আজ ব্যাপক হারে শিরকের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়েছে। কবরপূজা, মূর্তিপূজা, মূর্তির প্রতিকৃতির পূজা, খানকাপূজা, সেখানে গিয়ে তাদের নামে মানত করা, সমত্মান চাওয়া, বিপদ থেকে উদ্ধার কামনা করা, পীর/গুরম্নর পায়ে সিজদা করা- এ সকল জঘন্য শিরকের কাজে নারী-পুরম্নষ ব্যাপকভাবে জড়িয়ে পড়েছে। এ সকল শিরকী কর্ম হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাপ।
আবু বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলেন, আমি কি তোমাদেরকে কবীরা গুনাহ সম্পর্কে অবহিত করব না? সাহাবীগণ বলেন,
يَا رَسُوْلَ اللهِ مَا الْكَبَائِرُ؟ قَالَ : الْإِشْرَاكُ بِاللهِ
হে আলস্নাহর রাসূল! বড় (পাপ) কী? তিনি বললেন, ‘‘আলস্নাহর সাথে (কাউকে) শরীক (অংশীদার স্থাপন) করা’’। [বুখারী হা:৫৯৭৬; মুসলিম হা:৮৭]
মহান আলস্নাহ বলেন,
﴿إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيْمٌ﴾
‘‘নিশ্চয় শিরক হলো সবচেয়ে বড় যুলুম’’ (সূরা লুকমান ৩১ঃ ১৩)।
﴿إِنَّهٗ مَنْ يُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ أَنْصَارٍ﴾
নিশ্চয় যে ব্যক্তি আলস্নাহর সাথে শরীক (অংশীদার) স্থাপন করবে, আলস্নাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন এবং তার স্থান হবে জাহানণাম। আর যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী থাকবে না’’ (সূরা মায়েদা ৫ঃ ৭২)।
রাসূল ﷺ বলেন,
مَنْ مَاتَ يُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئًا دَخَلَ النَّارَ
‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক (অংশীদার স্থাপন) করে মারা যাবে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে’। [মুসলিম হা:২৭৯, ঈমান অধ্যায়; অনুচ্ছেদ-৪২]
পৃথিবীর অসংখ্য নারী আজ শিরকের বেড়াজালে আবদ্ধ। আর শিরককারীই হলো সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ। [বুখারী হা: ৪২৭; মুসলিম হা:১২০৯]
শিরকী গুনাহে লিপ্ত এমন একজন নিকৃষ্ট নারী কীভাবে আপনার স্ত্রী হতে পারে?
তাই স্ত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে শিরকমুক্ত ও তাওহীদপন্থী রমণীকে প্রাধান্য দেয়া জরম্নরি।
৪. বিদআতমুক্ত হওয়া :
দ্বীনের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজ হলো বিদআত। বিদআতকারী ও বিদআতকারিণীর উপর এবং তাদেরকে আশ্রয় দানকারীর উপর সকলের পক্ষ থেকে লানত। যেমন হাদীসে এসেছে, রাসূল ﷺ বলেন,
مَنْ أَحْدَثَ فِيْهَا حَدَثًا قَالَ اِبْنُ أَنَسٍ : أَوْ اٰوٰى مُحْدِثًا فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِيْنَ لَا يَقْبَلُ اللهُ مِنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صَرْفًا وَلَا عَدْلًا
‘যে ব্যক্তি এ দ্বীনে কোন বিদআত করবে কিংবা কোন বিদআতিকে আশ্রয় দেবে, তার উপর আলস্নাহর অভিশাপ ও ফেরেশতা এবং সকল মানুষের (অভিশাপ)। কিয়ামতের দিন আলস্নাহ তা‘আলা তার ফরয অথবা নফল কোন ইবাদাত কবুল করবেন না’। [বুখারী, কুরআন ও সুন্নাহ শক্তভাবে ধরে থাকা অধ্যায় ৯৬/৬, হা:৭৩০৬, ১৮৬৭; মুসলিম ৮৫ অধ্যায় হা.একা.হা:৩২১৪-৪৬৩/১৩৬৬]
প্রিয় পাঠক! আপনি গভীরভাবে লক্ষ করম্নন বিদআতকারী বা কারিণীর উপর রয়েছে মহান আলস্নাহর, ফেরেশতাদের এবং সকল মানুষের অভিশাপ। তাই বিদআতকারিণী অভিশপ্ত নারী কি আপনার স্ত্রী হতে পারে?
উলেস্নখ্য যে, বিদআতকারিণীকে বিবাহ করা যাবে না একথা বলছি না। তবে একথা বলছি যে, সে হলো অভিশপ্ত। যার উপর আলস্নাহর অভিশাপ তার কাছ থেকে কীভাবে কল্যাণ পাওয়া যেতে পারে?
নবী ﷺ বলেন, ‘তোমাদেরকে দুর্বলদের কারণেই সাহায্য করা হয় এবং রম্নযী (খাদ্য) দেয়া হয়’। [নাসাঈ, হা/৩১৭৮, আহমাদ হা: ১৪৯৬]
দুই শ্রেণির দুর্বলদের কথা উলেস্নখ করে তিনি বলেন, ‘তারা হলো ইয়াতিম ও নারী’। [ইবনে মাজাহ্ হা:৩৬৭৮; আহমাদ হা:৯৩৭৪]
অত্র হাদীস থেকে বুঝা যাচ্ছে, (স্ত্রী) নারীদের কারণে আলস্নাহর পক্ষ থেকে সাহায্য ও রম্নযী পাওয়া যায়। কিন্তু যে নারীর উপর আলস্নাহর অভিশাপ তার মাধ্যমে কীভাবে রম্নযী ও সাহায্য আসতে পারে?
৫. সালাত ও সিয়াম পালনকারিণী হওয়া :
আলস্নাহ তা‘আলা সকল নর-নারীকে সালাত ও সিয়াম পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন সূরা বাকারার আয়াত নং ৪৩, ৮৩, ১১০, ১১৭, ১৮৩, ২৭৭।
অত্র সূরা ও আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা সালাত ও সিয়াম পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। যে নারী আলস্নাহর এ নির্দেশ পালনে সচেষ্ট, আশা করা যায় সে আপনার নির্দেশ পালন করবে। আলস্নাহর এ নির্দেশ পালনে নারীদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার। যেমন রাসূল ﷺ বলেন,
اَلْمَرْءَةُ إِذَا صَلَّتِ الْمَرْأَةُ خَمْسَهَا، وَصَامَتْ شَهْرَهَا، وَحَفِظَتْ فَرْجَهَا، وَأَطَاعَتْ زَوْجَهَا قِيلَ لَهَا : ادْخُلِي الْجَنَّةَ مِنْ أَيِّ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ شِئْتِ
‘যখন নারী তার পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করবে, রমাযান মাসের সিয়াম পালন করবে, তার লজ্জাস্থান (ব্যভিচার থেকে) হেফাযত করবে এবং স্বামীর আনুগত্য করবে, তাকে বলা হবে- তুমি জান্নাতে প্রবেশ করো জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা’। [আহমাদ হা:১৬৬১; সহীহুল জামে হা:৬৬০৩; সহীহ তারগীব হা:১৯৩২]
জান্নাতি নারীর বৈশিষ্ট্য হলো- সালাত আদায় করা, সিয়াম পালন করা, লজ্জাস্থানের হেফাযত করা ও স্বামীর আনুগত্যশীল হওয়া। এমন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ নারীকে আনন্দ ও প্রাচুর্যময় জীবনের জন্য স্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করা অতীব গুরম্নত্বপূর্ণ।
৬. পরহেযগার-মুত্তাকী হওয়া :
শস্য-শ্যামল সুন্দর-রঙ্গময় এই পৃথিবীতে শিক্ষিতা, সম্পদশালিনী ও সুন্দরী নারীর অভাব নেই। কিন্তু পরহেযগার-মুত্তাকী নারীর যথেষ্ট অভাব রয়েছে। আজ যুবকদের বিবাহের জন্য পরহেযগার-আলস্নাহভীরম্ন নারী খুঁজে পাওয়া দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। পরহেযগার-আলস্নাহভীরম্ন নারী-পুরম্নষ আলস্নাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ এর আনুগত্যশীল হয়। ফলে তারা আলস্নাহর কাছে সবচেয়ে বেশি সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে পরিগণিত হয়। আলস্নাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ خَبِيْرٌ﴾
‘‘তোমাদের মধ্যে আলস্নাহর নিকট সেই ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি সম্মানিত, যে ব্যক্তি অধিক আলস্নাহভীরম্ন’’ (সূরা হুজুরাত ৪৯: ১৩)।
নারীদের মধ্যে যারা পরহেযগার-আলস্নাহভীরম্ন তাদেরকেই স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করা উচিত; চাই সে সুন্দরী, অসুন্দরী বা গরীব হোক। আলস্নাহভীরু নারী আপনার সম্মান, ইজ্জত ও সম্পদের কোন ক্ষতি করবে না; কারণ সে প্রত্যেকটি কাজেই আলস্নাহকে ভয় করে। জেনে রাখা ভালো যে, মুত্তাকী ব্যক্তিদের জন্যই আলস্নাহর পক্ষ থেকে পৃথিবীতে কল্যাণ নেমে আসে। আলস্নাহ বলেন,
﴿وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرٰۤى اٰمَنُوْا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِّنَ السَّمَآءِ وَالْأَرْضِ﴾
‘‘গ্রামবাসী যদি ঈমান আনত এবং মুত্তাকী হত, তাহলে তাদের উপর আমি আকাশ ও পৃথিবীর কল্যাণসমূহের দ্বার উন্মুক্ত করে দিতাম’’ (সূরা আ‘রাফ ৭ঃ ৯৬)।
৭. ধৈর্যশীলা হওয়া :
দাম্পত্য জীবনে সুখের মাধ্যম হলো একজন ধৈর্যশীল স্ত্রী। দাম্পত্য জীবন বড়ই কণ্টকাকীর্ণ। এতে রয়েছে সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্না, বিপদাপদ, রাগ, সহনশীলতা ইত্যাদি। স্বামীর সংসারের সকল দুঃখ-কষ্ট, বেদনাদায়ক কথা-বার্তা, বিপদাপদ যে নারী ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করতে পারে, আর বলে-
﴿إِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَ﴾
‘‘নিশ্চয় আলস্নাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন’’ (সূরা বাকারা ২ঃ ১৫৩)।
ফলে দুঃখ পেলে ধৈর্য ধরব, সুখ পেলে সবার মাঝে বিলিয়ে দেব। ধৈর্যশীল নারীই পারেন একটি পরিবারকে সৌন্দর্যমন্ডিত করতে। স্বামী-স্ত্রী উভয়ই ধৈর্যশীল হলে দাম্পত্য জীবনে নেমে আসে অনাবিল শামিত্ম এবং পরকালে তাদের জন্য রয়েছে ধৈর্যশীলতার বিনিময়ে জান্নাত। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَجَزَاهُمْ بِمَا صَبَرُوْا جَنَّةً وَّحَرِيْرًا﴾
‘‘আলস্নাহ তাদের ধৈর্যের বিনিময়ে দেবেন জান্নাত ও রেশমী পোশাক’’
(সূরা দাহর ৭৬ঃ ১২)।
৮. আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ এর প্রতি আনুগত্যশীলা হওয়া :
আলস্নাহ বলেন,
﴿يَاۤأَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ أَطِيْعُوا اللهَ وَأَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ﴾
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আলস্নাহর আনুগত্য করো এবং রাসূলের আনুগত্য করো’’ (সূরা নিসা ৪ঃ ৫৯)।
যে নারী আলস্নাহর নির্দেশানুযায়ী সকল ক্ষেত্রে আলস্নাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে; তাকেই স্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করা চিরকল্যাণকর। কেননা আলস্নাহ তাদের সৎকর্মের বিনিময়ে তাদেরকে পবিত্র জীবন দান করবেন। আলস্নাহ বলেন,
﴿مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثٰى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهٗ حَيَاةً طَيِّبَةً وَّلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُمْ بِأَحْسَنِ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ﴾
‘‘মুমিন পুরম্নষ অথবা নারীর মধ্যে যে সৎকাজ করবে অবশ্যই আমি তাকে আনন্দময় জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কাজের বিনিময়ে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার প্রদান করব’’ (সূরা নাহল ১৬ঃ ৯৭)।
৯. লজ্জাশীলা হওয়া :
প্রিয় পাঠক! স্মরণ রাখবেন- সংসার জীবনে সুখী হওয়ার জন্য প্রয়োজন লজ্জাশীল স্ত্রীর। কারণ লজ্জাশীল স্ত্রীর মধ্যে রয়েছে ঈমান। অবশ্যই লজ্জাশীলতা ও ঈমান একই সূত্রে গাঁথা। একটি চলে গেলে অপরটি চলে যায়। মহানবী ﷺ বলেন, اَلْحَيَاءُ شُعْبَةٌ مِّنَ الْإِيْمَانِ ‘লজ্জা ঈমানের অঙ্গ’। [বুখারী হা: ২৪,৬১১৮, মুসলিম হা:৩৬]
তিনি আরো বলেন, লজ্জাশীলতা ঈমানের অমত্মর্ভুক্ত এবং ঈমান হবে জান্নাত। [আহমাদ হা:১০৫১৯; তিরমিযী হা:২০০৯]
ইমরান ইবনে হুসাইন (রাঃ) বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেন, اَلْحَيَاءُ لَايَاْ تِيْ اِلَّا بِخَيْرٍ ‘লজ্জা মঙ্গলই বয়ে আনে’। [বুখারী হা: ৬১১৭, মুসলিম হা: ৩৭]
লজ্জাশীলতা হলো নারীর ভূষণ। লজ্জা থাকলে নারী উলঙ্গ হয় না।
আরবি কবি বলেন, ‘‘লজ্জা থাকলে নারী উলঙ্গ হয় না।’’ আরবি কবি আরো বলেন, ‘‘লজ্জাশীল মানুষ অপরকে শ্রদ্ধা করে।’’
আপনার নির্বাচিত স্ত্রীর মধ্যে যদি লজ্জা থাকে তাহলে সে আপনাকে মান্য করবে, সম্মান ও শ্রদ্ধা করবে। আর নির্লজ্জ নারীরাই হয় অশস্নীলভাষী, প্রকাশ্যে পাপাচারিণী, নোংরা ফিল্ম দেখতে অভ্যস্ত, পাতলা বা টাইট-ফিট খোলামেলা পোশাক পরিহিতা, স্বামীর সাথে জোর গলায় বাক-বিতন্ডাকারিণী, স্বামীর আদেশ অমান্যকারিণী, সমাজে অশামিত্ম সৃষ্টিকারিণী ইত্যাদি। এমন নির্লজ্জ মহিলাকে কি আদৌ স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করা ঠিক?
১০. দ্বীনের কাজে সাহায্যকারিণী :
মহানবী ﷺ বলেন,
مَنْ رَزَقَهُ اللهُ امْرَأَةً صَالِحَةً فَقَدْ أَعَانَهٗ عَلٰى شَطْرِ دِيْنِهٖ فَلْيَتَّقِ اللهَ فِي الشَّطْرِ الْبَاقِيْ
‘আলস্নাহ যাকে পুণ্যবতী স্ত্রী দান করেছেন, তিনি তার অর্ধেক দ্বীনে সাহায্য করেছেন। সুতরাং বাকি অর্ধেকের ব্যাপারে তার আলস্নাহকে ভয় করা উচিত। [বায়হাকী, সহীহ তারগীর ১৯১৬]
দ্বীনের কাজে সহযোগিতার জন্য প্রয়োজন একজন পুণ্যবতী আদর্শ নারী। যে তার স্বামীকে আখিরাতের কাজে সাহায্য-সহযোগিতা, উৎসাহ-অনুপ্রেরণা যোগাতে পারে। স্ত্রী হলো স্বামীর জীবনসঙ্গী। আর সঙ্গী যদি হয় ফরয, সুন্নাত, নফল ও শরীয়তের যাবতীয় বিধান পালনকারিণী তাহলে এর একটি প্রভাব স্বামীর উপর পড়াই স্বাভাবিক। যেমন একজন বেনামাযী ব্যক্তি তার স্ত্রীর তাহাজ্জুদের সালাত ও দু’আর প্রভাবে অনুরূপ সালাত আদায়কারী হয়ে যায়। হাদীসে এসেছে,
رَحِمَ اللهُ امْرَأَةً قَامَتْ مِنَ اللَّيْلِ فَصَلَّتْ وَأَيْقَظَتْ زَوْجَهَا فَإِنْ أَبٰى نَضَحَتْ فِيْ وَجْهِهِ الْمَاءَ
‘নবী ﷺ বলেন, আলস্নাহ সেই মহিলাকে রহম করম্নন, যে রাতে উঠে সালাত পড়ে ও তার স্বামীকে জাগায়। সে জাগতে অস্বীকার করলে তার মুখে পানির ছিটা দেয়। [আবু দাউদ হা:১৩০৮,১৪৫০]
এমন বৈশিষ্ট্যের স্ত্রী কতইনা হিতাকাঙ্ক্ষী, ঐ স্ত্রীর চেয়ে- যে বেলা উঠার ২-৪ ঘণ্টা পর শয়তানের প্রস্রাব কানে নিয়ে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়! আখিরাতের কাজে সহযোগী নারীই পারে আপনার পরিবারকে জান্নাতী পরিবার হিসেবে গড়ে তুলতে। তাই স্ত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে দ্বীনের কাজে সাহায্যকারী স্ত্রীকেই প্রাধান্য দিন।
দ্বীনদার এবং আখিরাতপ্রিয় স্ত্রীর কাছ থেকে সুন্দর বাণী শোনা যায়। যেমন-
আবু দারদা (রাঃ) তার বিশাল খেজুরের বাগান জান্নাতের একটি খেজুর গাছের বিনময়ে বিক্রি করার কথা শুনে তার স্ত্রী বলেছিল, ‘‘আপনি বড় লাভজনক ব্যবসা করেছেন।’’ [হাকেম হাঃ২১৯৪]
আলস্নাহ বলেন,
﴿وَتَعَاوَنُوْا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوٰى وَلَا تَعَاوَنُوْا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ﴾
‘‘সৎকাজ ও তাকওয়ার (আল্লাহভীরুতার) ব্যাপারে তোমরা পরস্পরকে সহযোগীতা করো, পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে কাউকে সাহায্য করো না’’
(সূরা মায়িদাহ ৫ঃ ২)।
﴿وَالْمُؤْمِنُوْنَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَآءُ بَعْضٍ يَّأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ﴾
‘‘মুমিন পুরম্নষ ও মুমিন নারী পরস্পরের হিতাকাঙ্ক্ষী। তারা পরস্পরকে কল্যাণ কাজের নির্দেশ করে এবং অন্যায় কাজ হতে নিষেধ করে’’ (সূরা তাওবা ৯ঃ ৭১)।
১১. বিপদাপদে সান্ত্বনাদানকারিণী :
মানুষের জীবন দুঃখ-কষ্ট, আনন্দ-বেদনা, বিপদাপদ ইত্যাদিতে ভরপুর। বিপদের সময় যদি সান্ত্বনা পাওয়া যায় তাহলে বিপদ অনেকটা হালকা হয়ে যায়। তাই এমন স্ত্রী গ্রহণ করা আবশ্যক, যে বিপদাপদে হবে সান্ত্বনাদানকারিণী।
রাসূল ﷺ যখন হেরা গুহা থেকে ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় খাদীজা (রাঃ) এর নিকট ফিরে আসেন, তখন স্ত্রী খাদীজা তাঁকে সান্ত্বনা ও সাহস দিয়ে বলেন, আলস্নাহর কসম! তিনি আপনাকে কিছুতেই লাঞ্ছিত করবেন না। কেননা আপনি তো আত্মীয়তার সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেন, সত্য কথা বলেন, অভাবগ্রস্তদের অভাব মোচন করেন এবং বিপদগ্রস্তদের সাহায্য করেন। [বুখারী হা:৩,৩৩৯২,৪৯৫৩,৪৯৫৫,৪৯৫৬,৪৯৫৭,৬৯৮২; মুসলিম হা:১/৭৩ হা:১৬০২৫; আহমাদ হা:২৬০১৮]
সুতরাং ঐ ব্যক্তি হবে সৌভাগ্যবান, যে নির্বাচন করতে পারবে এমন গুণবতী স্ত্রী। জগতে এমন অনেক স্ত্রী রয়েছে যারা বিপদে সান্ত্বনার বাণী শোনানো তো দূরের কথা বরং তারা (স্ত্রীরা) বিপদে আরো বেশি আতঙ্ক-ত্রাশ সৃষ্টি করে। এমন স্ত্রী গ্রহণ করা থেকে সতর্ক থাকা জরম্নরি।
১২. সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর নাম স্মরণকারিণী :
মহান আলস্নাহ বলেন,
﴿يَاۤأَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اذْكُرُوا اللهَ ذِكْرًا كَثِيْرًا وَّسَبِّحُوْهُ بُكْرَةً وَّأَصِيْلًا﴾
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আলস্নাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো এবং সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো’’ (সূরা আহযাব ৩৩ঃ ৪১,৪২)।
যে মুমিন নর-নারী অধিক হারে আলস্নাহকে স্মরণ করতে পারে ও তাঁর ইবাদাত করতে পারে তারাই সফলকাম। মহান আলস্নাহ বলেন,
﴿وَاذْكُرُوا اللهَ كَثِيْرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ﴾
‘‘তোমরা অধিক হারে আলস্নাহকে স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার’’ (সূরা জুমু‘আ ৬২ঃ ১০)।
সফলকাম মানুষের বৈশিষ্ট্য হলো, আলস্নাহকে অধিক হারে স্মরণ করা এবং তাঁর হুকুম-আহকাম মান্য করা। তাই আলস্নাহ বলেন,
﴿ وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيْدُوْنَ وَجْهَهٗ وَلَا تَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ﴾
‘‘তুমি নিজেকে তাদের সংস্পর্শে আবদ্ধ রাখো, যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তাঁর সমুত্মষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আহবান করে থাকে এবং তুমি তাদের নিকট হতে স্বীয় দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ো না’’ (সূরা কাহফ ১৮ঃ ২৮)
যে নারী সর্বদা আলস্নাহকে স্মরণকারী; তাকে যদি আপনি জীবন সঙ্গিনী হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন, তাহলে আপনি ইহকালে ও পরকালে লাভবান হতে পারবেন। আলস্নাহ বলেন,
﴿وَالذَّاكِرِيْنَ اللهَ كَثِيْرًا وَّالذَّاكِرَاتِ أَعَدَّ اللهُ لَهُمْ مَّغْفِرَةً وَّأَجْرًا عَظِيْمًا﴾
‘‘আলস্নাহকে অধিক স্মরণকারী পুরম্নষ ও নারী; এদের জন্য আলস্নাহ ক্ষামা ও মহাপ্রতিদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন’’ (সূরা আহযাব ৩৩ঃ ৩৫)।
১৩. স্বামী ও তার ছেলে-মেয়ের জন্য দু‘আকারিণী :
স্ত্রী হিসেবে এমন নারীকে প্রাধান্য দিন, যে আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার জন্য ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন চির সুখের স্থান জান্নাত লাভের প্রার্থনা করতে পারে।
আবু দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলতেন,
دَعْوَةُ الْمَرْءِ الْمُسْلِمِ لِأَخِيْهِ بِظَهْرِ الْغَيْبِ مُسْتَجَابَةٌ عِنْدَ رَأْسِهٖ مَلَكٌ مُوَكَّلٌ كُلَّمَا دَعَا لِأَخِيْهِ بِخَيْرٍ قَالَ الْمَلَكُ الْمُوَكَّلُ بِهٖ : اٰمِيْنَ وَلَكَ بِمِثْلٍ
‘‘কোন মুসলিম তার ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার জন্য নেক দু‘আ করলে তা কবুল হয়। তার মাথার নিকট একজন ফেরেশতা নিয়োজিত থাকে, যখনই সে তার ভাইয়ের জন্য দু‘আ করে তখনই তার সাথে নিয়োজিত ফেরেশতা বলে, আমীন এবং তোমার জন্যও অনুরূপ’’। [মুসলিম হা:২৭৩২, ২৭৩৩; আবু দাউদ হা:১৫৩৪; ইবনু মাজাহ হা:২৮৯৫; আহমাদ হা:২১২০০]
অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, স্ত্রী/স্বামী যদি স্বামীর/স্ত্রীর জন্য অনুপস্থিতিতে তার কল্যাণের জন্য দু‘আ করে, তাহলে আলস্নাহ তা কবুল করবেন এবং স্ত্রীর/স্বামীর জন্য অনুরূপ কল্যাণ রয়েছে যে কল্যাণের সে দু‘আ করবে।
রাসূল ﷺ বলেন,
ثَلاثُ دَعَوَاتٍ مُسْتَجَابَاتٌ لَا شَكَّ فِيهِنَّ دَعْوَةُ الْمَظْلُومِ وَدَعْوَةُ الْمُسَافِرِ وَدَعْوَةُ الْوَالِدِ عَلٰى وَلَدِه
‘তিনটি দু‘আ এমন আছে যা কবুল হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই ১.মাযলুমের দু‘আ, ২.মুসাফিরের দু‘আ ও ৩. সমত্মানের জন্য পিতা-মাতার দু‘আ।’ [’তিরমিযি হা:৩৪৪৮;ইবনু মাজাহ হা:৩৮৬২; সিলসিলাহ ছহীহাহ ৫৯৬]
অতএব এমন স্ত্রী গ্রহণ করা কতই না উত্তম! যে তার স্বামী ও ছেলে-মেয়ের জন্য কল্যাণের দু‘আ করতে পারে।
১৪. গৃহকে শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্তকারিণী :
আদর্শ গৃহ গড়ার প্রথম সোপান হলো- গৃহে একজন আর্দশবান সতীসাধ্বী স্ত্রী নির্বাচন করা, যে গৃহকে শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখার জন বিভিন্ন আমল করার মাধ্যমে প্রচেষ্টা চালাবে; যেন পরিবারটি একটি শামিত্মপূর্ণ পরিবারে পরিণত হয়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘শয়তান হলো মানুষের প্রকাশ্য শত্রম্ন’’। [সূরা আ‘রাফ ৭:২২; ২:১৬৮,২০৮; ৬:১৪২; ৩৫:৬; ১৭:৫৩]
‘‘সে ডান দিক দিয়ে, বাম দিক দিয়ে, সামনে দিয়ে, পেছন দিয়ে (মানুষকে প্ররোচিত করার অপচেষ্টা করে যাচ্ছে)’’। [সূরা আ‘রাফ ৭:১৭]
এই শয়তান একটি পরিবারকে ধ্বংস করার জন্য সর্বাত্মকভাবে প্রচেষ্টা চালায়। যেমন রাসূল ﷺ বলেন, ‘শয়তান পনির উপর সিংহাসন স্থাপন করে তার চেলা-পেলাকে সমাজে পাঠিয়ে দেয় ... তাদের মধ্যে তার কাছে সর্বোত্তম সে, যে একটি পরিবার ভেঙ্গে দিতে সক্ষম’। [মুসলিম হা:২৮১৩; সিলসিলাহ সহীহাহ হা:৩২৬১]
তাই একটি পরিবারকে শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখা জরুরি।
কীভাবে একটি গৃহ শয়তানের প্রভাব হতে মুক্ত থাকবে সে ব্যাপারে রাসূল ﷺ বলেন,
لَا تَجْعَلُوْا بُيُوْتَكُمْ مَقَابِرَ، إِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْفِرُ مِنَ الْبَيْتِ الَّذِيْ تُقْرَأُ فِيْهِ سُوْرَةُ الْبَقَرَةِ
তোমাদের ঘরসমূহকে কবর বানিও না। অবশ্যই শয়তান সেই গৃহ হতে পলায়ন করে, যে গৃহে সূরা বাকারা পাঠ করা হয়’। [মুসলিম হা. এ. হা:১৭০৯-(২১২/৭৮০; ই,ফা. হা:১৬৯৪]
তিনি আরো বলেন, ‘তোমরা তোমাদের গৃহে সূরা বাকারা পাঠ করো। কারণ যে গৃহে সূরা বাকারা পাঠ করা হয়, সেই গৃহে শয়তান প্রবেশ করতে পারে না’। [সহীহুল জামে হা: ১১৭০]
নবী ﷺ বলেন, ‘‘ঘুমানোর সময় যে ‘আয়তুল কুরসী’ পড়ে ঘুমাবে সে সারা রাত শয়তানের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে’’।
তাই গৃহকে শয়তানের কুপ্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে এমন স্ত্রী নির্বাচন করা আবশ্যক, যে আপনার গৃহে সালাত আদায়, কুরআন তেলাওয়াত; বিশেষ করে সূরা বাকারা তেলাওয়াতের মাধ্যমে শয়তানের কুপ্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে প্রচেষ্টা করবে।
লক্ষ্য করুন! আপনি যদি কুরআনের শিক্ষাবর্জিত একজন পার্থিব শিক্ষিতা নারীকে স্ত্রী হিসেবে প্রাধান্য দেন, তাহলে সে কী আপনার গৃহ শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে সক্ষম হবে? বরং সে আরো গৃহে শয়তানের প্রসার ঘটাবে। পৃথিবীতে আজ হাজারও স্ত্রী আছে যারা ভোরে নিজেরা ঘুম থেকে জাগে না এবং ছেলে, মেয়ে বা স্বামীকেও ঘুম থেকে জাগায় না। বরং সূর্য ওঠার পর শয়তানের প্রস্রাব কানে নিয়ে, মলিন চেহারা, হতাশার ছাপ, খিটখিটে মেজাজ নিয়ে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়।
আবদুলস্নাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম ﷺ এর কাছে এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো, যে সকাল পর্যমত্ম ঘুমিয়ে কাটিয়েছে এবং সালাতের জন্য জাগ্রত হয়নি। তখন তিনি বললেন,
ذَاكَ رَجُلٌ بَالَ الشَّيْطَانُ فِيْ أُذُنَيْهِ
‘‘সে এমন ব্যক্তি, শয়তান যার কানে প্রস্রাব করে দিয়েছে’’। [বুখারী হা: ১১৪৪; মুসলিম হা: ১৮৫৩; মিশকাত হা: ১২২১]
একদা রাত্রি বেলায় রাসূল ﷺ ঘুম থেকে জেগে বললেন,
سُبْحَانَ اللهِ مَاذَا أُنْزِلَ اللَّيْلَةَ مِنَ الْفِتَنِ وَمَاذَا فُتِحَ مِنَ الْخَزَائِنِ أَيْقِظُوْا صَوَاحِبَاتِ الْحُجَرِ فَرُبَّ كَاسِيَةٍ فِي الدُّنْيَا عَارِيَةٍ فِي الْاٰخِرَةِ
‘সুবহানালস্নাহ! কত ফিতনা যে আজ রাতে নাযিল হয়েছে! কত ভান্ডার যে আজ খোলা হয়েছে! তোমরা বাসায় (ঘুমিয়ে) থাকা ব্যক্তিদেরকে জাগিয়ে দাও। বস্তুতঃ দুনিয়ার অনেক কাপড় পরিহিতা মহিলা আখিরাতে উলঙ্গ থাকবে’। [বুখারী হা: ১১৫]
নারী জাতির ভেবে দেখা উচিত, যারা আজ লেপ-কাঁথা গায়ে দিয়ে আরামের বিছানায় ঘুমিয়ে বিলাসিতায় সকাল কাটাচ্ছে, পরকালে তাদেরকে কোটি কোটি মানুষ, জিন ও ফেরেশতার সামনে উলঙ্গ থাকতে হবে না তো? অতএব আপনার স্ত্রী এমন হওয়া চাই, যে হবে কুরআন তেলাওয়াতকারিণী ও শরীয়তের অন্যান্য ইবাদাত পালনকারিণী এবং সকলপ্রকার বাদ্যযন্ত্র পরিহারকারিণী। কারণ যে গৃহে টিভি ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র বাজে, সেই গৃহে শয়তান অবস্থান করে। আর এই শয়তানই আপনার মাঝে ও আপনার স্ত্রীর মাঝে অশামিত্মর আগুন জ্বালাতে পারে, যে আগুনে আপনি পুড়ে শেষ হয়ে যাবেন। যার বাসত্মব প্রমাণ আজ এই রঙ্গিন পৃথিবীতে ভুরি ভুরি রয়েছে।
১৫. যিনি হবেন ছেলে-মেয়ের জন্য আদর্শ মা :
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّهٗ كَانَ يَقُوْلُ : قَالَ رَسُولُ اللهِ : مَا مِنْ مَوْلُوْدٍ إِلَّا يُوْلَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهٖ وَيُنَصِّرَانِهٖ وَيُمَجِّسَانِهٖ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলতেন, রাসূল ﷺ বলেছেন, ‘‘প্রত্যেক মানবসমত্মান ইসলামী স্বভাবের উপর জন্মগ্রহণ করে। অতঃপর তার পিতা-মাতা তাকে ইয়াহুদি, খ্রিস্টান অথবা অগ্নিপূজক করে গড়ে তুলে’’। [বুখারী মা.শা.হা:১২৯২,পৃ.৪৫৬; মুসলিম মা.শা.হা:২২-২৬৫৪ মিশকাত হা: ৯০]
অত্র হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, পিতা-মাতার প্রভাবেই সমত্মান প্রভাবিত হয়। এজন্যই ইসলাম প্রত্যেক পুরম্নষকে স্ত্রী নির্বাচনের সময় দ্বীনদার, পরহেযগার, উত্তম চরিত্রের অধিকারী এবং সতীসাধ্বী রমণীকে স্ত্রী হিসেবে নির্বাচনের নির্দেশ দিয়েছে। মহান আলস্নাহ বলেন,
﴿وَلَا تُنْكِحُوا الْمُشْرِكِيْنَ حَتّٰى يُؤْمِنُوْا وَلَعَبْدٌ مُّؤْمِنٌ خَيْرٌ مِّنْ مُّشْرِكٍ وَّلَوْ أَعْجَبَكُمْ﴾
‘‘মুশরিক নারীদেরকে তোমরা ঈমান না আনা পর্যমত্ম বিবাহ করো না। মুশরিক নারী তোমাদেরকে মুগ্ধ করলেও মুমিন কৃতদাসী তার চেয়ে উত্তম’’
(সূরা বাকারা ২ঃ ২২১)।
অত্র আয়াতে ঈমানদার একজন দাসীকে ঈমানহীন স্বাধীন নারীর তুলনায় উত্তম বলা হয়েছে। সুতরাং স্ত্রী নির্বাচন করার সময় কেবলমাত্র রূপ-সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে নয়, বরং ঈমানদার-ধার্মিক, আলস্নাহভীরম্ন ও চরিত্রবান স্ত্রী একামত্ম অপরিহার্যর্- যাতে অনাগত সমত্মান একজন আদর্শবান মাতার সাহচর্য পেয়ে আদর্শবান ব্যক্তি হিসেবে গড়ে ওঠতে পারে।
রাসূল ﷺ বলেন, (ভালো নারী হলো সেই) ‘‘যে নারী তার সমত্মানের প্রতি স্নেহশীল এবং স্বামীর মর্যাদার উত্তম রক্ষাকারিণী’’। [বুখারী হা: ৩৪৩৪,৫০৮২]
মনে রাখবেন, প্রকৃত শিক্ষিতা মা তিনি- যিনি তার সমত্মানকে দুনিয়ার কল্যাণকর বিদ্যা ও জাহান্নাম থেকে বাঁচা এবং জান্নাত লাভের বিদ্যা শিক্ষা দেন। মা হওয়ার জন্য কেবল জন্ম দেয়াই যথেষ্ট নয়, বরং সঠিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সমত্মান প্রতিপালন করাই মুখ্য। মায়ের কর্তব্য যে নারী পালন করে না, মা হওয়ার যোগ্যতা তার কোথায়? কারণ পশু-পাখিও বাচ্চা জন্ম দেয়। পশু-পাখি আর এমন মায়ের মাঝে পার্থক্য কোথায়? অধিকাংশ সমত্মান-সমত্মতি তাদের পিতা-মাতার অবহেলা ও উত্তম প্রশিক্ষণের ত্রম্নটির কারণে নষ্ট হয়। সুতরাং আদর্শ সমত্মান তৈরির জন্য চাই আদর্শ মা। সকল নারীই মা হতে পারে; কিন্তু আদর্শ মা খুব কম নরীই হতে পারে। কাজেই আপনি এমন আদর্শ স্ত্রী নির্বাচন করম্নন, যে আপনার ছেলে-মেয়েকে সাদাকাতুল জারিয়া হিসেবে গড়ে তুলবে। আদর্শহীন, দুর্নীতিবাজ অফিসার, প্রফেসর, মাস্টার, এম.পি-মন্ত্রী ও সূদী ব্যাংকের হিসাব রক্ষক হিসেবে নয়। উলেস্নখ্য যে, এক্ষেত্রে শুধু স্ত্রীই যে ভূমিকা পালন করবে তা নয়, বরং স্বামীও জোরালো ভূমিকা রাখবে।
১৬. যিনি আপনাকে মুগ্ধ করতে পারেন :
হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِىَّ - سُئِلَ أَىُّ النِّسَاءِ خَيْرٌ؟ قَالَ : اَلَّتِىْ تَسُرُّهٗ إِذَا نَظَرَ إِلَيْهَا وَتُطِيْعُهٗ إِذَا أَمَرَهَا وَلَا تُخَالِفُهٗ فِىْ نَفْسِهَا وَلَا مَالِهَا
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ-কে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন্ নারী উত্তম? তিনি বললেন- ‘‘ঐ নারী, যার প্রতি তার স্বামী দৃষ্টিপাত করলে সে তাকে খুশি করে, তার স্বামী কোন আদেশ করলে সে তা পালন করে এবং সে নিজের জীবন ও সম্পদের ব্যাপারে তার স্বামীর মতের বিরম্নদ্ধাচরণ করে না’। [সিলসিলাহ সহীহাহ হা: ১৮৩৮]
মুখ বাঁকা করে, মলিন চেহারা নিয়ে, নাক সিঁটকিয়ে যে নারী কথা বলে এমন নারীকে নয়; বরং যে আপনাকে তার আচরণ দিয়ে মুগ্ধ করতে পারে তাকেই স্ত্রী হিসেবে প্রাধান্য দেয়া উচিত।
১৭. যিনি শুধু আপনার জন্যই রূপচর্চা করবেন ও সুসজ্জিতা হবেন :
নারীর রূপ-লাবণ্যের প্রতি পুরম্নষ চির দিনই আকর্ষিত। এ আকর্ষণ আরো বেড়ে যায় যখন তারা সজ্জিতা হয়। এমন অনেক নারীই রয়েছে যারা বিবাহের অনুষ্ঠানে, আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে ও অন্যান্য অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার সময় সুসজ্জিতা হয়। আর এ ধরনের সাজ-গোজে রয়েছে যেনার মতো ভয়াবহ পাপ। পক্ষামত্মরে স্বামীকে সন্তুষ্ট করার জন্য খুব কম নারীই সুসজ্জিতা হয়। নারীর এমন অবৈধ রূপচর্চার ফলে ব্যয় হয় হাজার-হাজার টাকার প্রসাধনী, পরিবারে নেমে আসে অশামিত্ম এবং স্বামী-স্ত্রীর সুগভীর সম্পর্কের মাঝে পড়ে যায় ভাটা। কিন্তু স্ত্রী যদি শুধু স্বামীর জন্য সুসজ্জিতা হতো, তাহলে দাম্পত্য জীবনে নেমে আসত অনাবিল শামিত্ম। স্বামী-স্ত্রী উভয়ই রক্ষা পেত যিনার মতো ভয়ঙ্কর পাপ থেকে।
১৮. যিনি হবেন প্রেম বিনিময়কারিণী :
রাসূল ﷺ বলেন,
خَيْرُ نِسَائِكُمُ الْوَدُوْدُ الْوَلُوْدُ الْمَوَاتِيَةُ الْمُوَاسِيَةُ إِذَا اتَّقَيْنَ اللهَ
‘‘তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ স্ত্রী সে, যে প্রেমময়ী, অধিক সমত্মানদাত্রী, (স্বামীর) সহমত অবলম্বনকারী, স্বামীকে বিপদাপদে সান্ত্বনাদানকারী এবং আলস্নাহকে ভয়কারী’’। [বায়হাকী মা.শা. হা:১৩৮৬০,পৃ.৮৪,খন্ড-৭]
তিনি আরো বলেন,
نِسَائِكُمْ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ الْوَلُوْدَ الْوَدُوْدُ
‘তোমাদের ঐ স্ত্রীরাও জান্নাতী হবে, যে অধিক প্রণয়নী, সমত্মানদাত্রী’’ । [সিলসিলা সহীহাহ হাঃ ২৮৭]
অসংখ্য নারী আজ অবৈধ প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে ব্যসত্ম। কাজেই স্মরণ রাখা ভালো যে, যারাই অবৈধ প্রেম-ভালবাসা চর্চায় নিমগ্ন, তারা তার স্বামীর ভালোবাসার ব্যাপারে বড়ই বেপরোয়া। যে নারী কেবল তার স্বামীর সাথে প্রেম বিনিময় করে, দাম্পত্য জীবনের জন্য এমন নারী কতই না গুরম্নত্ববহ।
১৯. যিনি আপনার অবর্তমানে পরকীয় প্রেমে লিপ্ত হবেন না :
মোবাইলে পরকীয় প্রেমে লিপ্ত হওয়ার কারণে আজ শত শত পরিবার ভেঙ্গে খান-খান হয়ে যাচ্ছে। দাম্পত্য জীবন তুষের আগুনের ন্যায় দাউ-দাউ করে জ্বলছে। কাজেই আপনার অবর্তমানে পরকীয় প্রেমে লিপ্ত হবে না এমন স্ত্রী নির্বাচন করম্নন। কেননা আল্লাহ তা‘আলা এই পরকীয় প্রেমকে স্পষ্ট হারাম ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন,
﴿وَلَا تَقْرَبُوْا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ﴾
‘‘আর তোমরা প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য যাবতীয় অশ্লীলতার নিকটবর্তী হয়ো না’’।
(সূরা আন‘আম ৬ঃ ১৫২)
তিনি আরো বলেন,
﴿قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالْإِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ﴾
‘‘বলো, নিশ্চয় আমার প্রতিপালক প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য যাবতীয় অশ্লীলতা,পাপ কাজ ও অন্যায় বাড়াবাড়ি নিষিদ্ধ করেছেন’’। (সূরা আ‘রাফ ৭ঃ ৩৩)
২০. যিনি হবেন স্বামীর অনুগত :
মহান আলস্নাহ বলেন,
﴿اَلرِّجَالُ قَوَّامُوْنَ عَلَى النِّسَآءِ﴾
‘‘পুরম্নষ হলো নারীর কর্তা’’ (সূরা নিসা ৪ঃ ৩৪)।
অত্র আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে- স্বামীর অনুগত হবে স্ত্রী, যেমনিভাবে নেতার অনুগত হয় সাধারণ জনগণ। সতীসাধ্বী নারীর বৈশিষ্ট্য হলো, স্বামীর অনুগত হওয়া। যেমন মহান আলস্নাহ বলেন,
﴿فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِّلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللهُ﴾
‘‘সতীসাধ্বী স্ত্রীরা (আলস্নাহ ও স্বামীর প্রতি ) অনুগত থাকে এবং পুরম্নষের অনুপস্থিতিতে তারা তা (অর্থাৎ তাদের লজ্জাস্থান ও স্বামীর সম্পদ) সংরক্ষণ করে, যা আলস্নাহ সংরক্ষণ করতে আদেশ করেছেন’’ (সূরা নিসা ৪ঃ ৩৪)।
কিন্তু অনেক হতভাগা নারী আছে যারা অহংকারী এবং যারা স্বামীর বৈধ ব্যাপারেও অনুগত হয় না। অথচ আলস্নাহর নবী ﷺ বলেন,
‘নারী যখন স্বামীর (বৈধ) কথামতো চলে অর্থাৎ তার অনুগত হয়, সে (নারী) জান্নাতের যেকোন দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে’। [আহমাদ হা:১৬৬১; ছহীহুল জামে হা:৬৬০; ছহীহ আত-তারগীব হা:১৯৩২]
আদর্শ স্ত্রীর বৈশিষ্ট্য হলো, স্বামীর অনুগত হওয়া। জীবনে স্ত্রী অনেক পাওয়া যায়; কিন্তু স্বামীর অনুগত স্ত্রী পাওয়া আজ-কাল দুঃসাধ্য ব্যাপার। তবুও স্বামীর অনুগত হয় এমন স্ত্রী খোঁজা আবশ্যক। মনে রাখবেন, আপনার স্ত্রী শিক্ষা, প্রফেসর বা ব্যাংক কর্ম-কর্তা যে পেশার নারীই হোক না কেন, সে যদি আপনার অনুগত না হয়, তাহলে পরিবার থেকে শামিত্ম বিলীন হয়ে যাবে।
২১. যিনি হবেন স্বামীর চাহিদা পূরণকারিণী :
দাম্পত্য জীবনে সুখের জন্য ও পাপ থেকে বাঁচার জন্য স্বামীর চাহিদা পূরণকারী স্ত্রীর প্রয়োজন। যে স্বামীকে ঘরের বাইরে কর্মের মেহনতে জ্বলতে হয় আবার ঘরে স্ত্রীর কাছেও জ্বলতে হয়, তার আর সুখ কোথায়? অথচ আলস্নাহ বলেন,
﴿وَمِنْ اٰيَاتِهٖۤ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِّنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوْاۤ إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَّوَدَّةً وَّرَحْمَةً إِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ﴾
‘‘আর তাঁর নিদর্শনের মধ্যে একটি নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের জন্য সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন; যাতে তোমরা তাদের কাছে শামিত্ম পাও। আর তিনি তোমাদের মাঝে তৈরি করে দিয়েছেন অনুগ্রহ ও ভালোবাসা। নিশ্চয় এর মধ্যে চিন্তাশীল লোকদের জন্য রয়েছে নিদর্শনাবলি’’
(সূরা রূম ৩০ঃ ২১)।
পৃথিবীতে এমন অনেক স্ত্রী আছে যারা স্বামীর প্রচন্ড পিপাসায় এক গস্নাস পানি দিতেও অবহেলা প্রদর্শন করে, অন্যান্য চাহিদা পূরণ করা তো দূরের কথা। তাহলে কীভাবে সে প্রশামিত্মদানকারিণী হলো? অথচ হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : إذَا دَعَا الرَّجُلُ امْرَأَتَهٗ إلٰى فِرَاشِهٖ فَأَبَتْ أَنْ تَجِيْءَ فَبَاتَ غَضْبَانَ لَعَنَتْهَا الْمَلَائِكَةُ حَتّٰى تُصْبِحَ
‘‘আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, ‘যদি কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে নিজ বিছানায় ডাকে এবং সে না আসে অতঃপর সে (স্বামী) রাগান্বিত অবস্থায় রাত কাটায়, তাহলে ফেরেশতাগণ ঐ স্ত্রীকে সকাল পর্যমত্ম অভিশম্পাত করতে থাকেন’। [বুখারী হা: ৩২৩৭,৫১৯৩,৫১৯৪; মুসলিম হা: ১৪৩৬; আবু দাউদ হা: ২১৪১; মুসনাদ আহমাদ হা: ৭৪২২]
অপর হাদীসে এসেছে,
عَنْ طَلْقِ بْنِ عَلِىٍّ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِىَّ يَقُوْلُ : إِذَا الرَّجُلُ دَعَا زَوْجَتَهٗ لِحَاجَتِهٖ فَلْتُجِبْهُ وَإِنْ كَانَتْ عَلَى التَّنُّوْرِ
তলক ইবনে আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, ‘যখন কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তার প্রয়োজনে আহবান করে, তখন সে যেন (ততক্ষণাৎ) তার নিকট যায়। যদিও সে চুলার কাছে (রম্নটি ইত্যাদি) পাকানোর কাজে ব্যসত্ম থাকে’। [তিরমিযী হাঃ ১১৬০]
আধুনিক যুগের অনেক নারীর ব্যাপারে শোনা যায় যে, তারা অনেক সময় অকারণে স্বামীর সঙ্গ দেয়ার ক্ষেত্রে বেপরোয়া হয়। যার ফলে স্বামী লিপ্ত হয় পরকীয় প্রেমে, এর ফলে দাম্পত্য জীবনে ধ্বস নামে। আবার অনেক ধার্মিক স্ত্রী আছেন যারা রাতে সালাতের জন্য উঠতে পারবে না এবং দিনে নফল সিয়াম পালনে কষ্ট হবে বলে স্বামীর সঙ্গ দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। অথচ রাসূল ﷺ বলেন,
لَا يَحِلُّ لِامْرَأَةٍ أَنْ تَصُوْمَ وَزَوْجُهَا شَاهِدٌ، إِلَّا بِإِذْنِهٖ
‘স্বামীর উপস্থিতিতে তার অনুমতি ছাড়া কোন নারীর জন্য নফল সিয়াম রাখা বৈধ নয়’। [বুখারী হা: ৫১৯৫,২০৬৬,৫১৯২,৫৩৬০; মুসলিম হা: ১০২৬; আবু দাউদ হা: ১৬৮৭; মুসনাদ আহমাদ হা: ২৭৪০৫]
তাই স্বামীর চাহিদা পূরণের ব্যাপারে সচেতন এমন নারীকেই স্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করা আবশ্যক। যাতে দাম্পত্য জীবন অশামিত্ম থেকে মুক্ত থাকে।
২২. যিনি হবেন আমানতদার :
স্ত্রী হলো স্বামীর সংসারের রাণী। যার হাতে ন্যসত্ম থাকে সংসারের সকল দায়িত্ব। তাই এমন আমানতদার স্ত্রী নির্বাচন করা জরুরি, যিনি হবেন স্বামীর ধন-সম্পদ, ইজ্জত-সম্মান ও সমত্মানের আমানতের হেফাযতকারিণী। স্মরণ রাখা ভালো যে, আমানতের খিয়ানতকারীর জন্য রয়েছে পরকালে অপমানজনক শাসিত্ম।
২৩. যিনি হবেন স্বামীর ঘর পরিপাটিকারিণী :
স্বামীর ঘর-সংসার সাজিয়ে-গুছিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সৌন্দর্যময় রাখা আদর্শবান নারীর অন্যতম গুণ। আদর্শ পরিবার গড়ার জন্য এমন গুণের নারী বড় সহায়ক। আর বাড়ির আঙ্গিনা নোংরা করে রাখা হলো ইয়াহুদিদের বৈশিষ্ট্য। যেমন রাসূল ﷺ বলেন, ‘তোমরা তোমাদের গৃহের আঙ্গিনা (সম্মুখভাগকে) পরিচ্ছন্ন করে রাখো। কারণ নোংরা আঙ্গিনা হলো ইয়াহুদিদের আঙ্গিনা। [সহীহুল জামে হা:৩৯৪১]
২৪. যিনি স্বামীর অনুমতি ছাড়া বাইরে যাবেন না :
স্বামী বেঁচে থাকতে হাটে-বাজারে বা মার্কেটে যাওয়া কোন আদর্শ নারীর বৈশিষ্ট্য নয়। তবে যদি যেতেই হয়, তাহলে স্বামীর অনুমতি নিয়ে এবং শরীয়তসম্মত পন্থায় যেতে পারবে। অবৈধ কোথাও যাওয়ার ক্ষেত্রে স্বামীর কাছে অনুমতি চাওয়ার প্রশ্নই উঠে না। যারা ধর্ম-নৈতিকতাকে কবর দিয়ে, উচ্চশিক্ষিতা হয়ে, মোটা অংকের টাকার চাকুরি করে স্বামীর তোয়াক্কা না করে যেখানে সেখানে ঘুরা-ফেরা করে তারা কি কখনো আদর্শ নারী হতে পারে?
সুতরাং এমন বৈশিষ্ট্যের নারীকে স্ত্রী নির্বাচন করা থেকে বিরত থাকুন।
২৫. যিনি অনুমতি নিয়ে কর্ম সম্পাদন করেন :
পারস্পরিক সম্মতিসূচক কর্মে রয়েছে পরম আনন্দ। তাই আপনার স্ত্রী এমন হওয়া উচিত, যিনি আপনার পরামর্শ ও অনুমতি নিয়ে সকল কাজ সম্পাদন করবেন। এমনকি আপন মা-বাবা, ভাই-বোনকে কিছু দিতে হলেও আপনার অনুমতি নেবেন।
২৬. যার শিক্ষা-দীক্ষা আছে :
শামিত্মময় পরিবার গড়ার জন্য প্রয়োজন একজন সুশিক্ষিতা স্ত্রী। যার মধ্যে থাকবে ইহকালীন কল্যাণকর জ্ঞান ও পরকালীন জান্নাত লাভের জ্ঞান। শুধু ইহকালীন জ্ঞানে পারদর্শী এমন নারীকে স্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করার সুযোগ কোথায়? কেননা নবী ﷺ বলেন,
‘‘চার শ্রেণির মানুষ জাহান্নামী। তন্মধ্যে এক শ্রেণি হলো- সেই দুর্বল ব্যক্তি, যার (পাপ ও অন্যায়) থেকে বাঁচার জ্ঞান নেই’’। [মুসলিম হাঃ ৭৩৮৬]
প্রিয় স্ত্রী সন্ধানী বন্ধু! আপনি গভীরভাবে ভেবে দেখুন, আপনার নির্বাচিত স্ত্রী যদি দুনিয়ার সকল বিদ্যায় পারদর্শী হয় আর যদি শরীয়তে কোন্টা হালাল কোন্টা হারাম, কোন্ কাজ বৈধ আর কোন্ কাজ অবৈধ, কোন্ কাজে নেকী আর কোন্ কাজে পাপ, কোন্টা ন্যায় আর কোন্টা অন্যায় ইত্যাদি পার্থক্য করে বেঁচে থাকতে না পারে, তবে এমন ধর্মজ্ঞানহীন বৈশিষ্ট্যের শিক্ষিতা স্ত্রী নির্বাচন করে আপনি কী কল্যাণ লাভ করবেন?
মনে রাখবেন, দুনিয়ার অধিকাংশ নারী আজ পার্থিব শিক্ষায় শিক্ষিতা হচ্ছে। যার ফলে স্বামীর কী অধিকার রয়েছে তা তারা বুঝতে পারে না। ফলে সংসারে নেমে আসে অশামিত্ম। আবার পার্থিব শিক্ষায় শিক্ষিত নারী সমত্মানদেরকেও বঞ্চিত করে প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষা থেকে। ফলে সমত্মান-সমত্মতি সাদাকায়ে জারিয়ার পরিবর্তে গুনাহে জারিয়ার পাত্র হচ্ছে। প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষার অভাবে শরীয়তসম্মত আমল না থাকার কারণে ছেলে-মেয়ে যেমন জাহান্নামে যাবে, ঠিক তেমনি পিতা-মাতা তাদেরকে প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষা না দেয়ার কারণে, তাদেরকে গোমরাহ করার দরম্নন সমত্মানরা তাদের অভিভাবক অর্থাৎ পিতা-মাতাকে পায়ের তলায় পিষ্ট করবে- যাতে তারা অধমদের মধ্যে গণ্য হবে’’ (সূরা হা-মীম-সাজদাহ ৪১ঃ ২৯)।
যে পিতা-মাতা তাদের সমত্মানদেরকে প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষা দেয় না তারাই হলো অধম। কাজেই স্ত্রী নির্বাচন করার ক্ষেত্রে এমন নারীকে প্রাধান্য দিন, যিনি হবেন ইহকালীন ও পরকালীন উভয় বিদ্যায় পারদর্শী।
২৭. যিনি হবেন হিসাবী :
বেহিসাবী মানুষ কোনদিন ইহকালে ও পরকালে প্রকৃত কল্যাণ লাভ করতে পারে না। হিসাবী ব্যক্তিই হয় সম্মানিত ও কল্যাণপ্রাপ্ত। পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক বিষয়ে হিসাবী মেয়েকে স্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করা খুবই গুরম্নত্বপূর্ণ। কেননা অনেক বেহিসাবী স্ত্রী আছে যারা স্বামীর আয় বুঝে ব্যয় করে না। ফলে স্বামীকে সংসার চালাতে বিপাকে পড়তে হয়, সমাজ বুঝে চলতে পারে না বলে তাকে অপমানিত হতে হয়।
২৮. যিনি হবেন কৃতজ্ঞশীলা :
যাকে আপনি স্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করবেন, তাকে অবশ্যই আলস্নাহর কৃতজ্ঞশীলা হতে হবে। কারণ যে সৃষ্টিকর্তা আলস্নাহর দেয়া পৃথিবীতে থেকে, তাঁর দেয়া নিয়ামত ভোগ করে তাঁর শুকরিয়া আদায় করে না, সে আপনার দেয়া কোন কিছুতেই সন্তুষ্ট হবে না। জগতে অনেক স্ত্রী আছে, যারা স্বামীর খেয়ে-পরে অপরের কাছে গিয়ে তার দোষ-ত্রম্নটি বর্ণনা করে। এক্ষেত্রে স্মরণ রাখবেন ইসমাঈল (আঃ) এর কথা, যিনি আলস্নাহর প্রতি শুকরিয়া আদায়কারী স্ত্রীকে স্ত্রী হিসেবে বহাল রেখেছিলেন। আর পিতার পরামর্শক্রমে অকৃতজ্ঞ, দুঃখ-কষ্ট ও অভাব প্রকাশকারিণী স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলেন।
২৯. যিনি স্বামীর হক বুঝবেন :
শরীয়তসম্মত স্বামীর যে হক রয়েছে সে সম্পর্কে অবগত এবং তা মানতে প্রস্তুত এমন নারীকে স্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করম্নন, যাতে দাম্পত্য জীবনে ফাটল না ধরে।
৩০. যিনি বাবা-মা, ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদাচরণ করবেন :
জগত সংসারে অনেক স্ত্রী আছে যারা স্বামীর বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনকে মূল্যায়ন করে না, স্বামীকে কুপরামর্শ দিয়ে তার জন্মদাতা পিতা-মাতাকে ঘর-বাড়ি ছাড়তে কিংবা টাকা-পয়সা না দিতে বাধ্য করে। এমন নারীকে নয়; বরং আপনাকে মান্যকারিণী, আপনার পিতা-মাতা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদাচরণকারিণী হবে এমন নারীকেই স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।
১. পুণ্যবতী ও দ্বীনদার হওয়া :
স্মরণ রেখ হে যুবক! স্ত্রী তোমার সহধর্মিণী, অর্ধাঙ্গিনী, জীবন সঙ্গিনী, ঘরের রাণী, হৃদয়ের প্রশামিত্মদায়িনী, সমত্মানের জননী ও পরকালের কাজে সহায়তা-উৎসাহ দানকারিণী। কাজেই তাকে হতে হবে দ্বীনদার-পরহেজগার। অধিকাংশক্ষেত্রে সুন্দরী নারী, উচ্চতর ডিগ্রী ধারিণী, উচ্চ বংশীয় মর্যাদার অধিকারিণী, অর্থশীল কোন নারী আদৌ কোন মুত্তাকী ব্যক্তির স্ত্রী হতে পারে না। মহান আলস্নাহ বলেন,
﴿اَلزَّانِيْ لَا يَنْكِحُ إِلَّا زَانِيَةً أَوْ مُشْرِكَةً وَّالزَّانِيَةُ لَا يَنْكِحُهَاۤ إِلَّا زَانٍ أَوْ مُشْرِكٌ وَّحُرِّمَ ذٰلِكَ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ﴾
‘‘ব্যভিচারী কেবল ব্যভিচারিণী অথবা শিরককারিণী এবং ব্যভিচারিণী কেবল ব্যভিচারী অথবা শিরককারী পুরুষকে বিবাহ করে থাকে। কিন্তু মুমিন পুরুষদের জন্য তা হারাম’’ (সূরা নূর ২৪ঃ ৩)।
রাসূল ﷺ বলেন,
يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ ! مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ
‘‘হে যুবক সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যার বিবাহ করার সামর্থ আছে সে যেন বিবাহ করে’’। [বুখারী তা. পা. হা. একা. ১৬/১, হা :১৪০০]
কোন্ বৈশিষ্ট্যের নারীকে স্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করতে হবে সে ব্যাপারে রাসূল ﷺ বলেন,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ لِأَرْبَعٍ : لِمَالِهَا وَحَسَبِهَا وَدِيْنِهَا وَجَمَالِهَا فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّيْنِ تَرِبَتْ يَدَاكَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে মেয়েদেরকে বিবাহ করা হয়। সেগুলো হলো: তার সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার সৌন্দর্য ও তার দ্বীনদারীতা। সুতরাং তুমি দ্বীনদারীতাকেই প্রাধান্য দেবে; নতুবা ক্ষতিগ্রসত্ম হবে। [বুখারী, কিতাবু নিকাহ অধ্যায় ৬৭/১৬; হা ৫০৯০, মুসলিম ১৭/১৫ হা : ১৪৬৬ আহম্মদহ হা; ৯৫২৬; ই ফা ৪৭১৯]
উক্ত চারটি গুণের মধ্যে সর্বশেষ গুণটিই ইসলামের দৃষ্টিতে সর্বাগ্রে গণ্য ও সর্বাধিক গুরম্নত্বপূর্ণ। নবী ﷺ এর আলোচ্য নির্দেশের সারকথা হলো, দ্বীনদারী গুণসম্পন্ন কনে পাওয়া গেলে সর্বাগ্রে তাকেই স্ত্রীরূপে নির্বাচন করতে হবে। তাকে বাদ দিয়ে অন্য কোন গুণসম্পন্ন নারীকে বিবাহ করতে আগ্রহী হওয়া উচিত নয়। [সুবুলুস সালাম ৪র্থ খন্ড, পৃ:৪৩০]
দ্বীনদারীসহ বাকি তিনটি গুণ কারো স্ত্রীর মধ্যে পাওয়া গেলে তার জন্য তো সোনায় সোহাগা।
সা‘দ বিন আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) কতৃক বর্ণিত। আলস্নাহর রাসূল ﷺ বলেন, পুরুষের জন্য সুখ ও সৌভাগ্যের বিষয় হলো চারটি; সতীসাধ্বী নারী, প্রশসত্ম বাড়ি, সৎ প্রতিবেশী এবং সচল সওয়ারী (গাড়ি)। আর দুঃখ ও দুর্ভাগ্যের বিষয়ও চারটি; অসৎ প্রতিবেশী, অসতী নারী, অচল সওয়ারী ও সংকীর্ণ বাড়ি। [সিলসিলা সহীহা ১ম খন্ড, পৃ: ২২]
নবী ﷺ আরো বলেন,
اَلدُّنْيَا مَتَاعٌ وَخَيْرُ مَتَاعِ الدُّنْيَا الْمَرْأَةُ الصَّالِحَةُ
‘‘গোটা দুনিয়াটাই হচ্ছে উপভোগের সামগ্রী। আর দুনিয়ার উপভোগের সামগ্রীর মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে পুণ্যবতী স্ত্রী’’। [সহীহ মুসলিম হাঃ ১৪৬৭]
নবী ﷺ বলেন,
أَفْضَلُهٗ لِسانٌ ذَاكرٌ وَقَلْبٌ شَاكِرٌ وَزَوْجَةٌ مُؤْمِنَةٌ تُعِيْنُهٗ عَلٰى إِيْمَانِهٖ
‘‘সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ হলো যিকরকারী জিহবা, কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী হৃদয় এবং তার ঈমানের কাজে সহায়িকা স্ত্রী’’। [তিরমিযী হাঃ ৩০৯৪, মেশকাত হাঃ ২২৭৭]
পুণ্যবতী দ্বীনদার স্ত্রী যদি আপনি নির্বাচন করতে ভুল করেন, তাহলে আপনি পারিবারিক জীবনে দুঃখ ও হতাশার সাগরে ভেলার মতো ভেসে বেড়াবেন; যা থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজে পাওয়া দুস্কর হয়ে যাবে।
২. আকীদা বিশুদ্ধ ও কুসংস্কারমুক্ত হওয়া :
এদেশের মাটিতে এমন অনেক নারী-পুরুষ রয়েছে যাদের আকীদা বিশুদ্ধ নয়। যেমন তাদের ভ্রামত্ম আকীদা হলো- আলস্নাহ নিরাকার, আলস্নাহ সর্বত্র বিরাজমান, মানুষের কলবে আলস্নাহ আছেন, নবী ﷺ নূরের তৈরি, তিনি এখনও কবরে জীবিত এবং তারা ভন্ডপীরের কারামতিতে, খানকা, মাযার বা কবর থেকে ফায়দা লাভে বিশ্বাসী। অনেকে আবার শিরক ও নানা কুসংস্কারে বিশ্বাসী। যেমন- বাইরে বের হওয়ার সময় শিশুর কপালের এক পাশে কালো ফোঁটা দিলে শিশু বদনযর লাগা থেকে রক্ষা পায়, গলায় তাবিজ ঝুলালে বিপদাপদ থেকে মুক্তি পায়, নাপাক অবস্থায় কোন কাজই করা যায় না, ভাঙ্গা আয়না দেখলে আয়ু কমে যায়, রাতে অপরকে টাকা দিতে নেই, নখ কাটতে নেই ইত্যাদি।
বিশুদ্ধ আকীদার গুরুত্ব পেশ করে শায়খ আবদুল আযীয বিন আবদুলস্নাহ বিন বায (রহ.) বলেন, কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত যে, যার আকীদা বিশুদ্ধ হবে না তার সকল আমল বাতিল বলে গণ্য হবে।
তিনি আরো বলেন,
اَلْعَقِيْدَةُ الصَّحِيْحَةُ هِيَ اَصْلُ الدِّيْنِ الْاِسْلَامِ
‘বিশুদ্ধ আকীদা হলো দ্বীন ইসলামের ভিত্তি’। [শায়খ আবদুল আযীয বিন আবদুলস্নাহ বিন বায (রহ.) আল-আকীদাতুছ সহীহা ওয়ামা ইউযাদ্দুহা (রিয়াদ:দারম্নল ক্বাসেম ১৪১৫হি.),পৃ.৩ ভূমিকা দ্রঃ।]
কাজেই যে নারীর সঠিক দ্বীন নেই সে কীভাবে আলস্নাহভীরম্ন মানুষের জীবন সঙ্গিনী হতে পারে?
৩. শিরকী আকীদামুক্ত হওয়া :
সারা দেশে আজ ব্যাপক হারে শিরকের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়েছে। কবরপূজা, মূর্তিপূজা, মূর্তির প্রতিকৃতির পূজা, খানকাপূজা, সেখানে গিয়ে তাদের নামে মানত করা, সমত্মান চাওয়া, বিপদ থেকে উদ্ধার কামনা করা, পীর/গুরম্নর পায়ে সিজদা করা- এ সকল জঘন্য শিরকের কাজে নারী-পুরম্নষ ব্যাপকভাবে জড়িয়ে পড়েছে। এ সকল শিরকী কর্ম হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাপ।
আবু বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলেন, আমি কি তোমাদেরকে কবীরা গুনাহ সম্পর্কে অবহিত করব না? সাহাবীগণ বলেন,
يَا رَسُوْلَ اللهِ مَا الْكَبَائِرُ؟ قَالَ : الْإِشْرَاكُ بِاللهِ
হে আলস্নাহর রাসূল! বড় (পাপ) কী? তিনি বললেন, ‘‘আলস্নাহর সাথে (কাউকে) শরীক (অংশীদার স্থাপন) করা’’। [বুখারী হা:৫৯৭৬; মুসলিম হা:৮৭]
মহান আলস্নাহ বলেন,
﴿إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيْمٌ﴾
‘‘নিশ্চয় শিরক হলো সবচেয়ে বড় যুলুম’’ (সূরা লুকমান ৩১ঃ ১৩)।
﴿إِنَّهٗ مَنْ يُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ أَنْصَارٍ﴾
নিশ্চয় যে ব্যক্তি আলস্নাহর সাথে শরীক (অংশীদার) স্থাপন করবে, আলস্নাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন এবং তার স্থান হবে জাহানণাম। আর যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী থাকবে না’’ (সূরা মায়েদা ৫ঃ ৭২)।
রাসূল ﷺ বলেন,
مَنْ مَاتَ يُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئًا دَخَلَ النَّارَ
‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক (অংশীদার স্থাপন) করে মারা যাবে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে’। [মুসলিম হা:২৭৯, ঈমান অধ্যায়; অনুচ্ছেদ-৪২]
পৃথিবীর অসংখ্য নারী আজ শিরকের বেড়াজালে আবদ্ধ। আর শিরককারীই হলো সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ। [বুখারী হা: ৪২৭; মুসলিম হা:১২০৯]
শিরকী গুনাহে লিপ্ত এমন একজন নিকৃষ্ট নারী কীভাবে আপনার স্ত্রী হতে পারে?
তাই স্ত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে শিরকমুক্ত ও তাওহীদপন্থী রমণীকে প্রাধান্য দেয়া জরম্নরি।
৪. বিদআতমুক্ত হওয়া :
দ্বীনের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজ হলো বিদআত। বিদআতকারী ও বিদআতকারিণীর উপর এবং তাদেরকে আশ্রয় দানকারীর উপর সকলের পক্ষ থেকে লানত। যেমন হাদীসে এসেছে, রাসূল ﷺ বলেন,
مَنْ أَحْدَثَ فِيْهَا حَدَثًا قَالَ اِبْنُ أَنَسٍ : أَوْ اٰوٰى مُحْدِثًا فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِيْنَ لَا يَقْبَلُ اللهُ مِنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صَرْفًا وَلَا عَدْلًا
‘যে ব্যক্তি এ দ্বীনে কোন বিদআত করবে কিংবা কোন বিদআতিকে আশ্রয় দেবে, তার উপর আলস্নাহর অভিশাপ ও ফেরেশতা এবং সকল মানুষের (অভিশাপ)। কিয়ামতের দিন আলস্নাহ তা‘আলা তার ফরয অথবা নফল কোন ইবাদাত কবুল করবেন না’। [বুখারী, কুরআন ও সুন্নাহ শক্তভাবে ধরে থাকা অধ্যায় ৯৬/৬, হা:৭৩০৬, ১৮৬৭; মুসলিম ৮৫ অধ্যায় হা.একা.হা:৩২১৪-৪৬৩/১৩৬৬]
প্রিয় পাঠক! আপনি গভীরভাবে লক্ষ করম্নন বিদআতকারী বা কারিণীর উপর রয়েছে মহান আলস্নাহর, ফেরেশতাদের এবং সকল মানুষের অভিশাপ। তাই বিদআতকারিণী অভিশপ্ত নারী কি আপনার স্ত্রী হতে পারে?
উলেস্নখ্য যে, বিদআতকারিণীকে বিবাহ করা যাবে না একথা বলছি না। তবে একথা বলছি যে, সে হলো অভিশপ্ত। যার উপর আলস্নাহর অভিশাপ তার কাছ থেকে কীভাবে কল্যাণ পাওয়া যেতে পারে?
নবী ﷺ বলেন, ‘তোমাদেরকে দুর্বলদের কারণেই সাহায্য করা হয় এবং রম্নযী (খাদ্য) দেয়া হয়’। [নাসাঈ, হা/৩১৭৮, আহমাদ হা: ১৪৯৬]
দুই শ্রেণির দুর্বলদের কথা উলেস্নখ করে তিনি বলেন, ‘তারা হলো ইয়াতিম ও নারী’। [ইবনে মাজাহ্ হা:৩৬৭৮; আহমাদ হা:৯৩৭৪]
অত্র হাদীস থেকে বুঝা যাচ্ছে, (স্ত্রী) নারীদের কারণে আলস্নাহর পক্ষ থেকে সাহায্য ও রম্নযী পাওয়া যায়। কিন্তু যে নারীর উপর আলস্নাহর অভিশাপ তার মাধ্যমে কীভাবে রম্নযী ও সাহায্য আসতে পারে?
৫. সালাত ও সিয়াম পালনকারিণী হওয়া :
আলস্নাহ তা‘আলা সকল নর-নারীকে সালাত ও সিয়াম পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন সূরা বাকারার আয়াত নং ৪৩, ৮৩, ১১০, ১১৭, ১৮৩, ২৭৭।
অত্র সূরা ও আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা সালাত ও সিয়াম পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। যে নারী আলস্নাহর এ নির্দেশ পালনে সচেষ্ট, আশা করা যায় সে আপনার নির্দেশ পালন করবে। আলস্নাহর এ নির্দেশ পালনে নারীদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার। যেমন রাসূল ﷺ বলেন,
اَلْمَرْءَةُ إِذَا صَلَّتِ الْمَرْأَةُ خَمْسَهَا، وَصَامَتْ شَهْرَهَا، وَحَفِظَتْ فَرْجَهَا، وَأَطَاعَتْ زَوْجَهَا قِيلَ لَهَا : ادْخُلِي الْجَنَّةَ مِنْ أَيِّ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ شِئْتِ
‘যখন নারী তার পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করবে, রমাযান মাসের সিয়াম পালন করবে, তার লজ্জাস্থান (ব্যভিচার থেকে) হেফাযত করবে এবং স্বামীর আনুগত্য করবে, তাকে বলা হবে- তুমি জান্নাতে প্রবেশ করো জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা’। [আহমাদ হা:১৬৬১; সহীহুল জামে হা:৬৬০৩; সহীহ তারগীব হা:১৯৩২]
জান্নাতি নারীর বৈশিষ্ট্য হলো- সালাত আদায় করা, সিয়াম পালন করা, লজ্জাস্থানের হেফাযত করা ও স্বামীর আনুগত্যশীল হওয়া। এমন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ নারীকে আনন্দ ও প্রাচুর্যময় জীবনের জন্য স্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করা অতীব গুরম্নত্বপূর্ণ।
৬. পরহেযগার-মুত্তাকী হওয়া :
শস্য-শ্যামল সুন্দর-রঙ্গময় এই পৃথিবীতে শিক্ষিতা, সম্পদশালিনী ও সুন্দরী নারীর অভাব নেই। কিন্তু পরহেযগার-মুত্তাকী নারীর যথেষ্ট অভাব রয়েছে। আজ যুবকদের বিবাহের জন্য পরহেযগার-আলস্নাহভীরম্ন নারী খুঁজে পাওয়া দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। পরহেযগার-আলস্নাহভীরম্ন নারী-পুরম্নষ আলস্নাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ এর আনুগত্যশীল হয়। ফলে তারা আলস্নাহর কাছে সবচেয়ে বেশি সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে পরিগণিত হয়। আলস্নাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ خَبِيْرٌ﴾
‘‘তোমাদের মধ্যে আলস্নাহর নিকট সেই ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি সম্মানিত, যে ব্যক্তি অধিক আলস্নাহভীরম্ন’’ (সূরা হুজুরাত ৪৯: ১৩)।
নারীদের মধ্যে যারা পরহেযগার-আলস্নাহভীরম্ন তাদেরকেই স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করা উচিত; চাই সে সুন্দরী, অসুন্দরী বা গরীব হোক। আলস্নাহভীরু নারী আপনার সম্মান, ইজ্জত ও সম্পদের কোন ক্ষতি করবে না; কারণ সে প্রত্যেকটি কাজেই আলস্নাহকে ভয় করে। জেনে রাখা ভালো যে, মুত্তাকী ব্যক্তিদের জন্যই আলস্নাহর পক্ষ থেকে পৃথিবীতে কল্যাণ নেমে আসে। আলস্নাহ বলেন,
﴿وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرٰۤى اٰمَنُوْا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِّنَ السَّمَآءِ وَالْأَرْضِ﴾
‘‘গ্রামবাসী যদি ঈমান আনত এবং মুত্তাকী হত, তাহলে তাদের উপর আমি আকাশ ও পৃথিবীর কল্যাণসমূহের দ্বার উন্মুক্ত করে দিতাম’’ (সূরা আ‘রাফ ৭ঃ ৯৬)।
৭. ধৈর্যশীলা হওয়া :
দাম্পত্য জীবনে সুখের মাধ্যম হলো একজন ধৈর্যশীল স্ত্রী। দাম্পত্য জীবন বড়ই কণ্টকাকীর্ণ। এতে রয়েছে সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্না, বিপদাপদ, রাগ, সহনশীলতা ইত্যাদি। স্বামীর সংসারের সকল দুঃখ-কষ্ট, বেদনাদায়ক কথা-বার্তা, বিপদাপদ যে নারী ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করতে পারে, আর বলে-
﴿إِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَ﴾
‘‘নিশ্চয় আলস্নাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন’’ (সূরা বাকারা ২ঃ ১৫৩)।
ফলে দুঃখ পেলে ধৈর্য ধরব, সুখ পেলে সবার মাঝে বিলিয়ে দেব। ধৈর্যশীল নারীই পারেন একটি পরিবারকে সৌন্দর্যমন্ডিত করতে। স্বামী-স্ত্রী উভয়ই ধৈর্যশীল হলে দাম্পত্য জীবনে নেমে আসে অনাবিল শামিত্ম এবং পরকালে তাদের জন্য রয়েছে ধৈর্যশীলতার বিনিময়ে জান্নাত। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَجَزَاهُمْ بِمَا صَبَرُوْا جَنَّةً وَّحَرِيْرًا﴾
‘‘আলস্নাহ তাদের ধৈর্যের বিনিময়ে দেবেন জান্নাত ও রেশমী পোশাক’’
(সূরা দাহর ৭৬ঃ ১২)।
৮. আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ এর প্রতি আনুগত্যশীলা হওয়া :
আলস্নাহ বলেন,
﴿يَاۤأَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ أَطِيْعُوا اللهَ وَأَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ﴾
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আলস্নাহর আনুগত্য করো এবং রাসূলের আনুগত্য করো’’ (সূরা নিসা ৪ঃ ৫৯)।
যে নারী আলস্নাহর নির্দেশানুযায়ী সকল ক্ষেত্রে আলস্নাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে; তাকেই স্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করা চিরকল্যাণকর। কেননা আলস্নাহ তাদের সৎকর্মের বিনিময়ে তাদেরকে পবিত্র জীবন দান করবেন। আলস্নাহ বলেন,
﴿مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثٰى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهٗ حَيَاةً طَيِّبَةً وَّلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُمْ بِأَحْسَنِ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ﴾
‘‘মুমিন পুরম্নষ অথবা নারীর মধ্যে যে সৎকাজ করবে অবশ্যই আমি তাকে আনন্দময় জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কাজের বিনিময়ে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার প্রদান করব’’ (সূরা নাহল ১৬ঃ ৯৭)।
৯. লজ্জাশীলা হওয়া :
প্রিয় পাঠক! স্মরণ রাখবেন- সংসার জীবনে সুখী হওয়ার জন্য প্রয়োজন লজ্জাশীল স্ত্রীর। কারণ লজ্জাশীল স্ত্রীর মধ্যে রয়েছে ঈমান। অবশ্যই লজ্জাশীলতা ও ঈমান একই সূত্রে গাঁথা। একটি চলে গেলে অপরটি চলে যায়। মহানবী ﷺ বলেন, اَلْحَيَاءُ شُعْبَةٌ مِّنَ الْإِيْمَانِ ‘লজ্জা ঈমানের অঙ্গ’। [বুখারী হা: ২৪,৬১১৮, মুসলিম হা:৩৬]
তিনি আরো বলেন, লজ্জাশীলতা ঈমানের অমত্মর্ভুক্ত এবং ঈমান হবে জান্নাত। [আহমাদ হা:১০৫১৯; তিরমিযী হা:২০০৯]
ইমরান ইবনে হুসাইন (রাঃ) বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেন, اَلْحَيَاءُ لَايَاْ تِيْ اِلَّا بِخَيْرٍ ‘লজ্জা মঙ্গলই বয়ে আনে’। [বুখারী হা: ৬১১৭, মুসলিম হা: ৩৭]
লজ্জাশীলতা হলো নারীর ভূষণ। লজ্জা থাকলে নারী উলঙ্গ হয় না।
আরবি কবি বলেন, ‘‘লজ্জা থাকলে নারী উলঙ্গ হয় না।’’ আরবি কবি আরো বলেন, ‘‘লজ্জাশীল মানুষ অপরকে শ্রদ্ধা করে।’’
আপনার নির্বাচিত স্ত্রীর মধ্যে যদি লজ্জা থাকে তাহলে সে আপনাকে মান্য করবে, সম্মান ও শ্রদ্ধা করবে। আর নির্লজ্জ নারীরাই হয় অশস্নীলভাষী, প্রকাশ্যে পাপাচারিণী, নোংরা ফিল্ম দেখতে অভ্যস্ত, পাতলা বা টাইট-ফিট খোলামেলা পোশাক পরিহিতা, স্বামীর সাথে জোর গলায় বাক-বিতন্ডাকারিণী, স্বামীর আদেশ অমান্যকারিণী, সমাজে অশামিত্ম সৃষ্টিকারিণী ইত্যাদি। এমন নির্লজ্জ মহিলাকে কি আদৌ স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করা ঠিক?
১০. দ্বীনের কাজে সাহায্যকারিণী :
মহানবী ﷺ বলেন,
مَنْ رَزَقَهُ اللهُ امْرَأَةً صَالِحَةً فَقَدْ أَعَانَهٗ عَلٰى شَطْرِ دِيْنِهٖ فَلْيَتَّقِ اللهَ فِي الشَّطْرِ الْبَاقِيْ
‘আলস্নাহ যাকে পুণ্যবতী স্ত্রী দান করেছেন, তিনি তার অর্ধেক দ্বীনে সাহায্য করেছেন। সুতরাং বাকি অর্ধেকের ব্যাপারে তার আলস্নাহকে ভয় করা উচিত। [বায়হাকী, সহীহ তারগীর ১৯১৬]
দ্বীনের কাজে সহযোগিতার জন্য প্রয়োজন একজন পুণ্যবতী আদর্শ নারী। যে তার স্বামীকে আখিরাতের কাজে সাহায্য-সহযোগিতা, উৎসাহ-অনুপ্রেরণা যোগাতে পারে। স্ত্রী হলো স্বামীর জীবনসঙ্গী। আর সঙ্গী যদি হয় ফরয, সুন্নাত, নফল ও শরীয়তের যাবতীয় বিধান পালনকারিণী তাহলে এর একটি প্রভাব স্বামীর উপর পড়াই স্বাভাবিক। যেমন একজন বেনামাযী ব্যক্তি তার স্ত্রীর তাহাজ্জুদের সালাত ও দু’আর প্রভাবে অনুরূপ সালাত আদায়কারী হয়ে যায়। হাদীসে এসেছে,
رَحِمَ اللهُ امْرَأَةً قَامَتْ مِنَ اللَّيْلِ فَصَلَّتْ وَأَيْقَظَتْ زَوْجَهَا فَإِنْ أَبٰى نَضَحَتْ فِيْ وَجْهِهِ الْمَاءَ
‘নবী ﷺ বলেন, আলস্নাহ সেই মহিলাকে রহম করম্নন, যে রাতে উঠে সালাত পড়ে ও তার স্বামীকে জাগায়। সে জাগতে অস্বীকার করলে তার মুখে পানির ছিটা দেয়। [আবু দাউদ হা:১৩০৮,১৪৫০]
এমন বৈশিষ্ট্যের স্ত্রী কতইনা হিতাকাঙ্ক্ষী, ঐ স্ত্রীর চেয়ে- যে বেলা উঠার ২-৪ ঘণ্টা পর শয়তানের প্রস্রাব কানে নিয়ে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়! আখিরাতের কাজে সহযোগী নারীই পারে আপনার পরিবারকে জান্নাতী পরিবার হিসেবে গড়ে তুলতে। তাই স্ত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে দ্বীনের কাজে সাহায্যকারী স্ত্রীকেই প্রাধান্য দিন।
দ্বীনদার এবং আখিরাতপ্রিয় স্ত্রীর কাছ থেকে সুন্দর বাণী শোনা যায়। যেমন-
আবু দারদা (রাঃ) তার বিশাল খেজুরের বাগান জান্নাতের একটি খেজুর গাছের বিনময়ে বিক্রি করার কথা শুনে তার স্ত্রী বলেছিল, ‘‘আপনি বড় লাভজনক ব্যবসা করেছেন।’’ [হাকেম হাঃ২১৯৪]
আলস্নাহ বলেন,
﴿وَتَعَاوَنُوْا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوٰى وَلَا تَعَاوَنُوْا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ﴾
‘‘সৎকাজ ও তাকওয়ার (আল্লাহভীরুতার) ব্যাপারে তোমরা পরস্পরকে সহযোগীতা করো, পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে কাউকে সাহায্য করো না’’
(সূরা মায়িদাহ ৫ঃ ২)।
﴿وَالْمُؤْمِنُوْنَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَآءُ بَعْضٍ يَّأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ﴾
‘‘মুমিন পুরম্নষ ও মুমিন নারী পরস্পরের হিতাকাঙ্ক্ষী। তারা পরস্পরকে কল্যাণ কাজের নির্দেশ করে এবং অন্যায় কাজ হতে নিষেধ করে’’ (সূরা তাওবা ৯ঃ ৭১)।
১১. বিপদাপদে সান্ত্বনাদানকারিণী :
মানুষের জীবন দুঃখ-কষ্ট, আনন্দ-বেদনা, বিপদাপদ ইত্যাদিতে ভরপুর। বিপদের সময় যদি সান্ত্বনা পাওয়া যায় তাহলে বিপদ অনেকটা হালকা হয়ে যায়। তাই এমন স্ত্রী গ্রহণ করা আবশ্যক, যে বিপদাপদে হবে সান্ত্বনাদানকারিণী।
রাসূল ﷺ যখন হেরা গুহা থেকে ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় খাদীজা (রাঃ) এর নিকট ফিরে আসেন, তখন স্ত্রী খাদীজা তাঁকে সান্ত্বনা ও সাহস দিয়ে বলেন, আলস্নাহর কসম! তিনি আপনাকে কিছুতেই লাঞ্ছিত করবেন না। কেননা আপনি তো আত্মীয়তার সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেন, সত্য কথা বলেন, অভাবগ্রস্তদের অভাব মোচন করেন এবং বিপদগ্রস্তদের সাহায্য করেন। [বুখারী হা:৩,৩৩৯২,৪৯৫৩,৪৯৫৫,৪৯৫৬,৪৯৫৭,৬৯৮২; মুসলিম হা:১/৭৩ হা:১৬০২৫; আহমাদ হা:২৬০১৮]
সুতরাং ঐ ব্যক্তি হবে সৌভাগ্যবান, যে নির্বাচন করতে পারবে এমন গুণবতী স্ত্রী। জগতে এমন অনেক স্ত্রী রয়েছে যারা বিপদে সান্ত্বনার বাণী শোনানো তো দূরের কথা বরং তারা (স্ত্রীরা) বিপদে আরো বেশি আতঙ্ক-ত্রাশ সৃষ্টি করে। এমন স্ত্রী গ্রহণ করা থেকে সতর্ক থাকা জরম্নরি।
১২. সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর নাম স্মরণকারিণী :
মহান আলস্নাহ বলেন,
﴿يَاۤأَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اذْكُرُوا اللهَ ذِكْرًا كَثِيْرًا وَّسَبِّحُوْهُ بُكْرَةً وَّأَصِيْلًا﴾
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আলস্নাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো এবং সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো’’ (সূরা আহযাব ৩৩ঃ ৪১,৪২)।
যে মুমিন নর-নারী অধিক হারে আলস্নাহকে স্মরণ করতে পারে ও তাঁর ইবাদাত করতে পারে তারাই সফলকাম। মহান আলস্নাহ বলেন,
﴿وَاذْكُرُوا اللهَ كَثِيْرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ﴾
‘‘তোমরা অধিক হারে আলস্নাহকে স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার’’ (সূরা জুমু‘আ ৬২ঃ ১০)।
সফলকাম মানুষের বৈশিষ্ট্য হলো, আলস্নাহকে অধিক হারে স্মরণ করা এবং তাঁর হুকুম-আহকাম মান্য করা। তাই আলস্নাহ বলেন,
﴿ وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيْدُوْنَ وَجْهَهٗ وَلَا تَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ﴾
‘‘তুমি নিজেকে তাদের সংস্পর্শে আবদ্ধ রাখো, যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তাঁর সমুত্মষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আহবান করে থাকে এবং তুমি তাদের নিকট হতে স্বীয় দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ো না’’ (সূরা কাহফ ১৮ঃ ২৮)
যে নারী সর্বদা আলস্নাহকে স্মরণকারী; তাকে যদি আপনি জীবন সঙ্গিনী হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন, তাহলে আপনি ইহকালে ও পরকালে লাভবান হতে পারবেন। আলস্নাহ বলেন,
﴿وَالذَّاكِرِيْنَ اللهَ كَثِيْرًا وَّالذَّاكِرَاتِ أَعَدَّ اللهُ لَهُمْ مَّغْفِرَةً وَّأَجْرًا عَظِيْمًا﴾
‘‘আলস্নাহকে অধিক স্মরণকারী পুরম্নষ ও নারী; এদের জন্য আলস্নাহ ক্ষামা ও মহাপ্রতিদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন’’ (সূরা আহযাব ৩৩ঃ ৩৫)।
১৩. স্বামী ও তার ছেলে-মেয়ের জন্য দু‘আকারিণী :
স্ত্রী হিসেবে এমন নারীকে প্রাধান্য দিন, যে আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার জন্য ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন চির সুখের স্থান জান্নাত লাভের প্রার্থনা করতে পারে।
আবু দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলতেন,
دَعْوَةُ الْمَرْءِ الْمُسْلِمِ لِأَخِيْهِ بِظَهْرِ الْغَيْبِ مُسْتَجَابَةٌ عِنْدَ رَأْسِهٖ مَلَكٌ مُوَكَّلٌ كُلَّمَا دَعَا لِأَخِيْهِ بِخَيْرٍ قَالَ الْمَلَكُ الْمُوَكَّلُ بِهٖ : اٰمِيْنَ وَلَكَ بِمِثْلٍ
‘‘কোন মুসলিম তার ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার জন্য নেক দু‘আ করলে তা কবুল হয়। তার মাথার নিকট একজন ফেরেশতা নিয়োজিত থাকে, যখনই সে তার ভাইয়ের জন্য দু‘আ করে তখনই তার সাথে নিয়োজিত ফেরেশতা বলে, আমীন এবং তোমার জন্যও অনুরূপ’’। [মুসলিম হা:২৭৩২, ২৭৩৩; আবু দাউদ হা:১৫৩৪; ইবনু মাজাহ হা:২৮৯৫; আহমাদ হা:২১২০০]
অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, স্ত্রী/স্বামী যদি স্বামীর/স্ত্রীর জন্য অনুপস্থিতিতে তার কল্যাণের জন্য দু‘আ করে, তাহলে আলস্নাহ তা কবুল করবেন এবং স্ত্রীর/স্বামীর জন্য অনুরূপ কল্যাণ রয়েছে যে কল্যাণের সে দু‘আ করবে।
রাসূল ﷺ বলেন,
ثَلاثُ دَعَوَاتٍ مُسْتَجَابَاتٌ لَا شَكَّ فِيهِنَّ دَعْوَةُ الْمَظْلُومِ وَدَعْوَةُ الْمُسَافِرِ وَدَعْوَةُ الْوَالِدِ عَلٰى وَلَدِه
‘তিনটি দু‘আ এমন আছে যা কবুল হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই ১.মাযলুমের দু‘আ, ২.মুসাফিরের দু‘আ ও ৩. সমত্মানের জন্য পিতা-মাতার দু‘আ।’ [’তিরমিযি হা:৩৪৪৮;ইবনু মাজাহ হা:৩৮৬২; সিলসিলাহ ছহীহাহ ৫৯৬]
অতএব এমন স্ত্রী গ্রহণ করা কতই না উত্তম! যে তার স্বামী ও ছেলে-মেয়ের জন্য কল্যাণের দু‘আ করতে পারে।
১৪. গৃহকে শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্তকারিণী :
আদর্শ গৃহ গড়ার প্রথম সোপান হলো- গৃহে একজন আর্দশবান সতীসাধ্বী স্ত্রী নির্বাচন করা, যে গৃহকে শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখার জন বিভিন্ন আমল করার মাধ্যমে প্রচেষ্টা চালাবে; যেন পরিবারটি একটি শামিত্মপূর্ণ পরিবারে পরিণত হয়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘শয়তান হলো মানুষের প্রকাশ্য শত্রম্ন’’। [সূরা আ‘রাফ ৭:২২; ২:১৬৮,২০৮; ৬:১৪২; ৩৫:৬; ১৭:৫৩]
‘‘সে ডান দিক দিয়ে, বাম দিক দিয়ে, সামনে দিয়ে, পেছন দিয়ে (মানুষকে প্ররোচিত করার অপচেষ্টা করে যাচ্ছে)’’। [সূরা আ‘রাফ ৭:১৭]
এই শয়তান একটি পরিবারকে ধ্বংস করার জন্য সর্বাত্মকভাবে প্রচেষ্টা চালায়। যেমন রাসূল ﷺ বলেন, ‘শয়তান পনির উপর সিংহাসন স্থাপন করে তার চেলা-পেলাকে সমাজে পাঠিয়ে দেয় ... তাদের মধ্যে তার কাছে সর্বোত্তম সে, যে একটি পরিবার ভেঙ্গে দিতে সক্ষম’। [মুসলিম হা:২৮১৩; সিলসিলাহ সহীহাহ হা:৩২৬১]
তাই একটি পরিবারকে শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখা জরুরি।
কীভাবে একটি গৃহ শয়তানের প্রভাব হতে মুক্ত থাকবে সে ব্যাপারে রাসূল ﷺ বলেন,
لَا تَجْعَلُوْا بُيُوْتَكُمْ مَقَابِرَ، إِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْفِرُ مِنَ الْبَيْتِ الَّذِيْ تُقْرَأُ فِيْهِ سُوْرَةُ الْبَقَرَةِ
তোমাদের ঘরসমূহকে কবর বানিও না। অবশ্যই শয়তান সেই গৃহ হতে পলায়ন করে, যে গৃহে সূরা বাকারা পাঠ করা হয়’। [মুসলিম হা. এ. হা:১৭০৯-(২১২/৭৮০; ই,ফা. হা:১৬৯৪]
তিনি আরো বলেন, ‘তোমরা তোমাদের গৃহে সূরা বাকারা পাঠ করো। কারণ যে গৃহে সূরা বাকারা পাঠ করা হয়, সেই গৃহে শয়তান প্রবেশ করতে পারে না’। [সহীহুল জামে হা: ১১৭০]
নবী ﷺ বলেন, ‘‘ঘুমানোর সময় যে ‘আয়তুল কুরসী’ পড়ে ঘুমাবে সে সারা রাত শয়তানের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে’’।
তাই গৃহকে শয়তানের কুপ্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে এমন স্ত্রী নির্বাচন করা আবশ্যক, যে আপনার গৃহে সালাত আদায়, কুরআন তেলাওয়াত; বিশেষ করে সূরা বাকারা তেলাওয়াতের মাধ্যমে শয়তানের কুপ্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে প্রচেষ্টা করবে।
লক্ষ্য করুন! আপনি যদি কুরআনের শিক্ষাবর্জিত একজন পার্থিব শিক্ষিতা নারীকে স্ত্রী হিসেবে প্রাধান্য দেন, তাহলে সে কী আপনার গৃহ শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে সক্ষম হবে? বরং সে আরো গৃহে শয়তানের প্রসার ঘটাবে। পৃথিবীতে আজ হাজারও স্ত্রী আছে যারা ভোরে নিজেরা ঘুম থেকে জাগে না এবং ছেলে, মেয়ে বা স্বামীকেও ঘুম থেকে জাগায় না। বরং সূর্য ওঠার পর শয়তানের প্রস্রাব কানে নিয়ে, মলিন চেহারা, হতাশার ছাপ, খিটখিটে মেজাজ নিয়ে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়।
আবদুলস্নাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম ﷺ এর কাছে এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো, যে সকাল পর্যমত্ম ঘুমিয়ে কাটিয়েছে এবং সালাতের জন্য জাগ্রত হয়নি। তখন তিনি বললেন,
ذَاكَ رَجُلٌ بَالَ الشَّيْطَانُ فِيْ أُذُنَيْهِ
‘‘সে এমন ব্যক্তি, শয়তান যার কানে প্রস্রাব করে দিয়েছে’’। [বুখারী হা: ১১৪৪; মুসলিম হা: ১৮৫৩; মিশকাত হা: ১২২১]
একদা রাত্রি বেলায় রাসূল ﷺ ঘুম থেকে জেগে বললেন,
سُبْحَانَ اللهِ مَاذَا أُنْزِلَ اللَّيْلَةَ مِنَ الْفِتَنِ وَمَاذَا فُتِحَ مِنَ الْخَزَائِنِ أَيْقِظُوْا صَوَاحِبَاتِ الْحُجَرِ فَرُبَّ كَاسِيَةٍ فِي الدُّنْيَا عَارِيَةٍ فِي الْاٰخِرَةِ
‘সুবহানালস্নাহ! কত ফিতনা যে আজ রাতে নাযিল হয়েছে! কত ভান্ডার যে আজ খোলা হয়েছে! তোমরা বাসায় (ঘুমিয়ে) থাকা ব্যক্তিদেরকে জাগিয়ে দাও। বস্তুতঃ দুনিয়ার অনেক কাপড় পরিহিতা মহিলা আখিরাতে উলঙ্গ থাকবে’। [বুখারী হা: ১১৫]
নারী জাতির ভেবে দেখা উচিত, যারা আজ লেপ-কাঁথা গায়ে দিয়ে আরামের বিছানায় ঘুমিয়ে বিলাসিতায় সকাল কাটাচ্ছে, পরকালে তাদেরকে কোটি কোটি মানুষ, জিন ও ফেরেশতার সামনে উলঙ্গ থাকতে হবে না তো? অতএব আপনার স্ত্রী এমন হওয়া চাই, যে হবে কুরআন তেলাওয়াতকারিণী ও শরীয়তের অন্যান্য ইবাদাত পালনকারিণী এবং সকলপ্রকার বাদ্যযন্ত্র পরিহারকারিণী। কারণ যে গৃহে টিভি ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র বাজে, সেই গৃহে শয়তান অবস্থান করে। আর এই শয়তানই আপনার মাঝে ও আপনার স্ত্রীর মাঝে অশামিত্মর আগুন জ্বালাতে পারে, যে আগুনে আপনি পুড়ে শেষ হয়ে যাবেন। যার বাসত্মব প্রমাণ আজ এই রঙ্গিন পৃথিবীতে ভুরি ভুরি রয়েছে।
১৫. যিনি হবেন ছেলে-মেয়ের জন্য আদর্শ মা :
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّهٗ كَانَ يَقُوْلُ : قَالَ رَسُولُ اللهِ : مَا مِنْ مَوْلُوْدٍ إِلَّا يُوْلَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهٖ وَيُنَصِّرَانِهٖ وَيُمَجِّسَانِهٖ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলতেন, রাসূল ﷺ বলেছেন, ‘‘প্রত্যেক মানবসমত্মান ইসলামী স্বভাবের উপর জন্মগ্রহণ করে। অতঃপর তার পিতা-মাতা তাকে ইয়াহুদি, খ্রিস্টান অথবা অগ্নিপূজক করে গড়ে তুলে’’। [বুখারী মা.শা.হা:১২৯২,পৃ.৪৫৬; মুসলিম মা.শা.হা:২২-২৬৫৪ মিশকাত হা: ৯০]
অত্র হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, পিতা-মাতার প্রভাবেই সমত্মান প্রভাবিত হয়। এজন্যই ইসলাম প্রত্যেক পুরম্নষকে স্ত্রী নির্বাচনের সময় দ্বীনদার, পরহেযগার, উত্তম চরিত্রের অধিকারী এবং সতীসাধ্বী রমণীকে স্ত্রী হিসেবে নির্বাচনের নির্দেশ দিয়েছে। মহান আলস্নাহ বলেন,
﴿وَلَا تُنْكِحُوا الْمُشْرِكِيْنَ حَتّٰى يُؤْمِنُوْا وَلَعَبْدٌ مُّؤْمِنٌ خَيْرٌ مِّنْ مُّشْرِكٍ وَّلَوْ أَعْجَبَكُمْ﴾
‘‘মুশরিক নারীদেরকে তোমরা ঈমান না আনা পর্যমত্ম বিবাহ করো না। মুশরিক নারী তোমাদেরকে মুগ্ধ করলেও মুমিন কৃতদাসী তার চেয়ে উত্তম’’
(সূরা বাকারা ২ঃ ২২১)।
অত্র আয়াতে ঈমানদার একজন দাসীকে ঈমানহীন স্বাধীন নারীর তুলনায় উত্তম বলা হয়েছে। সুতরাং স্ত্রী নির্বাচন করার সময় কেবলমাত্র রূপ-সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে নয়, বরং ঈমানদার-ধার্মিক, আলস্নাহভীরম্ন ও চরিত্রবান স্ত্রী একামত্ম অপরিহার্যর্- যাতে অনাগত সমত্মান একজন আদর্শবান মাতার সাহচর্য পেয়ে আদর্শবান ব্যক্তি হিসেবে গড়ে ওঠতে পারে।
রাসূল ﷺ বলেন, (ভালো নারী হলো সেই) ‘‘যে নারী তার সমত্মানের প্রতি স্নেহশীল এবং স্বামীর মর্যাদার উত্তম রক্ষাকারিণী’’। [বুখারী হা: ৩৪৩৪,৫০৮২]
মনে রাখবেন, প্রকৃত শিক্ষিতা মা তিনি- যিনি তার সমত্মানকে দুনিয়ার কল্যাণকর বিদ্যা ও জাহান্নাম থেকে বাঁচা এবং জান্নাত লাভের বিদ্যা শিক্ষা দেন। মা হওয়ার জন্য কেবল জন্ম দেয়াই যথেষ্ট নয়, বরং সঠিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সমত্মান প্রতিপালন করাই মুখ্য। মায়ের কর্তব্য যে নারী পালন করে না, মা হওয়ার যোগ্যতা তার কোথায়? কারণ পশু-পাখিও বাচ্চা জন্ম দেয়। পশু-পাখি আর এমন মায়ের মাঝে পার্থক্য কোথায়? অধিকাংশ সমত্মান-সমত্মতি তাদের পিতা-মাতার অবহেলা ও উত্তম প্রশিক্ষণের ত্রম্নটির কারণে নষ্ট হয়। সুতরাং আদর্শ সমত্মান তৈরির জন্য চাই আদর্শ মা। সকল নারীই মা হতে পারে; কিন্তু আদর্শ মা খুব কম নরীই হতে পারে। কাজেই আপনি এমন আদর্শ স্ত্রী নির্বাচন করম্নন, যে আপনার ছেলে-মেয়েকে সাদাকাতুল জারিয়া হিসেবে গড়ে তুলবে। আদর্শহীন, দুর্নীতিবাজ অফিসার, প্রফেসর, মাস্টার, এম.পি-মন্ত্রী ও সূদী ব্যাংকের হিসাব রক্ষক হিসেবে নয়। উলেস্নখ্য যে, এক্ষেত্রে শুধু স্ত্রীই যে ভূমিকা পালন করবে তা নয়, বরং স্বামীও জোরালো ভূমিকা রাখবে।
১৬. যিনি আপনাকে মুগ্ধ করতে পারেন :
হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِىَّ - سُئِلَ أَىُّ النِّسَاءِ خَيْرٌ؟ قَالَ : اَلَّتِىْ تَسُرُّهٗ إِذَا نَظَرَ إِلَيْهَا وَتُطِيْعُهٗ إِذَا أَمَرَهَا وَلَا تُخَالِفُهٗ فِىْ نَفْسِهَا وَلَا مَالِهَا
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ-কে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন্ নারী উত্তম? তিনি বললেন- ‘‘ঐ নারী, যার প্রতি তার স্বামী দৃষ্টিপাত করলে সে তাকে খুশি করে, তার স্বামী কোন আদেশ করলে সে তা পালন করে এবং সে নিজের জীবন ও সম্পদের ব্যাপারে তার স্বামীর মতের বিরম্নদ্ধাচরণ করে না’। [সিলসিলাহ সহীহাহ হা: ১৮৩৮]
মুখ বাঁকা করে, মলিন চেহারা নিয়ে, নাক সিঁটকিয়ে যে নারী কথা বলে এমন নারীকে নয়; বরং যে আপনাকে তার আচরণ দিয়ে মুগ্ধ করতে পারে তাকেই স্ত্রী হিসেবে প্রাধান্য দেয়া উচিত।
১৭. যিনি শুধু আপনার জন্যই রূপচর্চা করবেন ও সুসজ্জিতা হবেন :
নারীর রূপ-লাবণ্যের প্রতি পুরম্নষ চির দিনই আকর্ষিত। এ আকর্ষণ আরো বেড়ে যায় যখন তারা সজ্জিতা হয়। এমন অনেক নারীই রয়েছে যারা বিবাহের অনুষ্ঠানে, আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে ও অন্যান্য অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার সময় সুসজ্জিতা হয়। আর এ ধরনের সাজ-গোজে রয়েছে যেনার মতো ভয়াবহ পাপ। পক্ষামত্মরে স্বামীকে সন্তুষ্ট করার জন্য খুব কম নারীই সুসজ্জিতা হয়। নারীর এমন অবৈধ রূপচর্চার ফলে ব্যয় হয় হাজার-হাজার টাকার প্রসাধনী, পরিবারে নেমে আসে অশামিত্ম এবং স্বামী-স্ত্রীর সুগভীর সম্পর্কের মাঝে পড়ে যায় ভাটা। কিন্তু স্ত্রী যদি শুধু স্বামীর জন্য সুসজ্জিতা হতো, তাহলে দাম্পত্য জীবনে নেমে আসত অনাবিল শামিত্ম। স্বামী-স্ত্রী উভয়ই রক্ষা পেত যিনার মতো ভয়ঙ্কর পাপ থেকে।
১৮. যিনি হবেন প্রেম বিনিময়কারিণী :
রাসূল ﷺ বলেন,
خَيْرُ نِسَائِكُمُ الْوَدُوْدُ الْوَلُوْدُ الْمَوَاتِيَةُ الْمُوَاسِيَةُ إِذَا اتَّقَيْنَ اللهَ
‘‘তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ স্ত্রী সে, যে প্রেমময়ী, অধিক সমত্মানদাত্রী, (স্বামীর) সহমত অবলম্বনকারী, স্বামীকে বিপদাপদে সান্ত্বনাদানকারী এবং আলস্নাহকে ভয়কারী’’। [বায়হাকী মা.শা. হা:১৩৮৬০,পৃ.৮৪,খন্ড-৭]
তিনি আরো বলেন,
نِسَائِكُمْ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ الْوَلُوْدَ الْوَدُوْدُ
‘তোমাদের ঐ স্ত্রীরাও জান্নাতী হবে, যে অধিক প্রণয়নী, সমত্মানদাত্রী’’ । [সিলসিলা সহীহাহ হাঃ ২৮৭]
অসংখ্য নারী আজ অবৈধ প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে ব্যসত্ম। কাজেই স্মরণ রাখা ভালো যে, যারাই অবৈধ প্রেম-ভালবাসা চর্চায় নিমগ্ন, তারা তার স্বামীর ভালোবাসার ব্যাপারে বড়ই বেপরোয়া। যে নারী কেবল তার স্বামীর সাথে প্রেম বিনিময় করে, দাম্পত্য জীবনের জন্য এমন নারী কতই না গুরম্নত্ববহ।
১৯. যিনি আপনার অবর্তমানে পরকীয় প্রেমে লিপ্ত হবেন না :
মোবাইলে পরকীয় প্রেমে লিপ্ত হওয়ার কারণে আজ শত শত পরিবার ভেঙ্গে খান-খান হয়ে যাচ্ছে। দাম্পত্য জীবন তুষের আগুনের ন্যায় দাউ-দাউ করে জ্বলছে। কাজেই আপনার অবর্তমানে পরকীয় প্রেমে লিপ্ত হবে না এমন স্ত্রী নির্বাচন করম্নন। কেননা আল্লাহ তা‘আলা এই পরকীয় প্রেমকে স্পষ্ট হারাম ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন,
﴿وَلَا تَقْرَبُوْا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ﴾
‘‘আর তোমরা প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য যাবতীয় অশ্লীলতার নিকটবর্তী হয়ো না’’।
(সূরা আন‘আম ৬ঃ ১৫২)
তিনি আরো বলেন,
﴿قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالْإِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ﴾
‘‘বলো, নিশ্চয় আমার প্রতিপালক প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য যাবতীয় অশ্লীলতা,পাপ কাজ ও অন্যায় বাড়াবাড়ি নিষিদ্ধ করেছেন’’। (সূরা আ‘রাফ ৭ঃ ৩৩)
২০. যিনি হবেন স্বামীর অনুগত :
মহান আলস্নাহ বলেন,
﴿اَلرِّجَالُ قَوَّامُوْنَ عَلَى النِّسَآءِ﴾
‘‘পুরম্নষ হলো নারীর কর্তা’’ (সূরা নিসা ৪ঃ ৩৪)।
অত্র আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে- স্বামীর অনুগত হবে স্ত্রী, যেমনিভাবে নেতার অনুগত হয় সাধারণ জনগণ। সতীসাধ্বী নারীর বৈশিষ্ট্য হলো, স্বামীর অনুগত হওয়া। যেমন মহান আলস্নাহ বলেন,
﴿فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِّلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللهُ﴾
‘‘সতীসাধ্বী স্ত্রীরা (আলস্নাহ ও স্বামীর প্রতি ) অনুগত থাকে এবং পুরম্নষের অনুপস্থিতিতে তারা তা (অর্থাৎ তাদের লজ্জাস্থান ও স্বামীর সম্পদ) সংরক্ষণ করে, যা আলস্নাহ সংরক্ষণ করতে আদেশ করেছেন’’ (সূরা নিসা ৪ঃ ৩৪)।
কিন্তু অনেক হতভাগা নারী আছে যারা অহংকারী এবং যারা স্বামীর বৈধ ব্যাপারেও অনুগত হয় না। অথচ আলস্নাহর নবী ﷺ বলেন,
‘নারী যখন স্বামীর (বৈধ) কথামতো চলে অর্থাৎ তার অনুগত হয়, সে (নারী) জান্নাতের যেকোন দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে’। [আহমাদ হা:১৬৬১; ছহীহুল জামে হা:৬৬০; ছহীহ আত-তারগীব হা:১৯৩২]
আদর্শ স্ত্রীর বৈশিষ্ট্য হলো, স্বামীর অনুগত হওয়া। জীবনে স্ত্রী অনেক পাওয়া যায়; কিন্তু স্বামীর অনুগত স্ত্রী পাওয়া আজ-কাল দুঃসাধ্য ব্যাপার। তবুও স্বামীর অনুগত হয় এমন স্ত্রী খোঁজা আবশ্যক। মনে রাখবেন, আপনার স্ত্রী শিক্ষা, প্রফেসর বা ব্যাংক কর্ম-কর্তা যে পেশার নারীই হোক না কেন, সে যদি আপনার অনুগত না হয়, তাহলে পরিবার থেকে শামিত্ম বিলীন হয়ে যাবে।
২১. যিনি হবেন স্বামীর চাহিদা পূরণকারিণী :
দাম্পত্য জীবনে সুখের জন্য ও পাপ থেকে বাঁচার জন্য স্বামীর চাহিদা পূরণকারী স্ত্রীর প্রয়োজন। যে স্বামীকে ঘরের বাইরে কর্মের মেহনতে জ্বলতে হয় আবার ঘরে স্ত্রীর কাছেও জ্বলতে হয়, তার আর সুখ কোথায়? অথচ আলস্নাহ বলেন,
﴿وَمِنْ اٰيَاتِهٖۤ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِّنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوْاۤ إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَّوَدَّةً وَّرَحْمَةً إِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ﴾
‘‘আর তাঁর নিদর্শনের মধ্যে একটি নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের জন্য সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন; যাতে তোমরা তাদের কাছে শামিত্ম পাও। আর তিনি তোমাদের মাঝে তৈরি করে দিয়েছেন অনুগ্রহ ও ভালোবাসা। নিশ্চয় এর মধ্যে চিন্তাশীল লোকদের জন্য রয়েছে নিদর্শনাবলি’’
(সূরা রূম ৩০ঃ ২১)।
পৃথিবীতে এমন অনেক স্ত্রী আছে যারা স্বামীর প্রচন্ড পিপাসায় এক গস্নাস পানি দিতেও অবহেলা প্রদর্শন করে, অন্যান্য চাহিদা পূরণ করা তো দূরের কথা। তাহলে কীভাবে সে প্রশামিত্মদানকারিণী হলো? অথচ হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : إذَا دَعَا الرَّجُلُ امْرَأَتَهٗ إلٰى فِرَاشِهٖ فَأَبَتْ أَنْ تَجِيْءَ فَبَاتَ غَضْبَانَ لَعَنَتْهَا الْمَلَائِكَةُ حَتّٰى تُصْبِحَ
‘‘আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, ‘যদি কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে নিজ বিছানায় ডাকে এবং সে না আসে অতঃপর সে (স্বামী) রাগান্বিত অবস্থায় রাত কাটায়, তাহলে ফেরেশতাগণ ঐ স্ত্রীকে সকাল পর্যমত্ম অভিশম্পাত করতে থাকেন’। [বুখারী হা: ৩২৩৭,৫১৯৩,৫১৯৪; মুসলিম হা: ১৪৩৬; আবু দাউদ হা: ২১৪১; মুসনাদ আহমাদ হা: ৭৪২২]
অপর হাদীসে এসেছে,
عَنْ طَلْقِ بْنِ عَلِىٍّ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِىَّ يَقُوْلُ : إِذَا الرَّجُلُ دَعَا زَوْجَتَهٗ لِحَاجَتِهٖ فَلْتُجِبْهُ وَإِنْ كَانَتْ عَلَى التَّنُّوْرِ
তলক ইবনে আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, ‘যখন কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তার প্রয়োজনে আহবান করে, তখন সে যেন (ততক্ষণাৎ) তার নিকট যায়। যদিও সে চুলার কাছে (রম্নটি ইত্যাদি) পাকানোর কাজে ব্যসত্ম থাকে’। [তিরমিযী হাঃ ১১৬০]
আধুনিক যুগের অনেক নারীর ব্যাপারে শোনা যায় যে, তারা অনেক সময় অকারণে স্বামীর সঙ্গ দেয়ার ক্ষেত্রে বেপরোয়া হয়। যার ফলে স্বামী লিপ্ত হয় পরকীয় প্রেমে, এর ফলে দাম্পত্য জীবনে ধ্বস নামে। আবার অনেক ধার্মিক স্ত্রী আছেন যারা রাতে সালাতের জন্য উঠতে পারবে না এবং দিনে নফল সিয়াম পালনে কষ্ট হবে বলে স্বামীর সঙ্গ দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। অথচ রাসূল ﷺ বলেন,
لَا يَحِلُّ لِامْرَأَةٍ أَنْ تَصُوْمَ وَزَوْجُهَا شَاهِدٌ، إِلَّا بِإِذْنِهٖ
‘স্বামীর উপস্থিতিতে তার অনুমতি ছাড়া কোন নারীর জন্য নফল সিয়াম রাখা বৈধ নয়’। [বুখারী হা: ৫১৯৫,২০৬৬,৫১৯২,৫৩৬০; মুসলিম হা: ১০২৬; আবু দাউদ হা: ১৬৮৭; মুসনাদ আহমাদ হা: ২৭৪০৫]
তাই স্বামীর চাহিদা পূরণের ব্যাপারে সচেতন এমন নারীকেই স্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করা আবশ্যক। যাতে দাম্পত্য জীবন অশামিত্ম থেকে মুক্ত থাকে।
২২. যিনি হবেন আমানতদার :
স্ত্রী হলো স্বামীর সংসারের রাণী। যার হাতে ন্যসত্ম থাকে সংসারের সকল দায়িত্ব। তাই এমন আমানতদার স্ত্রী নির্বাচন করা জরুরি, যিনি হবেন স্বামীর ধন-সম্পদ, ইজ্জত-সম্মান ও সমত্মানের আমানতের হেফাযতকারিণী। স্মরণ রাখা ভালো যে, আমানতের খিয়ানতকারীর জন্য রয়েছে পরকালে অপমানজনক শাসিত্ম।
২৩. যিনি হবেন স্বামীর ঘর পরিপাটিকারিণী :
স্বামীর ঘর-সংসার সাজিয়ে-গুছিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সৌন্দর্যময় রাখা আদর্শবান নারীর অন্যতম গুণ। আদর্শ পরিবার গড়ার জন্য এমন গুণের নারী বড় সহায়ক। আর বাড়ির আঙ্গিনা নোংরা করে রাখা হলো ইয়াহুদিদের বৈশিষ্ট্য। যেমন রাসূল ﷺ বলেন, ‘তোমরা তোমাদের গৃহের আঙ্গিনা (সম্মুখভাগকে) পরিচ্ছন্ন করে রাখো। কারণ নোংরা আঙ্গিনা হলো ইয়াহুদিদের আঙ্গিনা। [সহীহুল জামে হা:৩৯৪১]
২৪. যিনি স্বামীর অনুমতি ছাড়া বাইরে যাবেন না :
স্বামী বেঁচে থাকতে হাটে-বাজারে বা মার্কেটে যাওয়া কোন আদর্শ নারীর বৈশিষ্ট্য নয়। তবে যদি যেতেই হয়, তাহলে স্বামীর অনুমতি নিয়ে এবং শরীয়তসম্মত পন্থায় যেতে পারবে। অবৈধ কোথাও যাওয়ার ক্ষেত্রে স্বামীর কাছে অনুমতি চাওয়ার প্রশ্নই উঠে না। যারা ধর্ম-নৈতিকতাকে কবর দিয়ে, উচ্চশিক্ষিতা হয়ে, মোটা অংকের টাকার চাকুরি করে স্বামীর তোয়াক্কা না করে যেখানে সেখানে ঘুরা-ফেরা করে তারা কি কখনো আদর্শ নারী হতে পারে?
সুতরাং এমন বৈশিষ্ট্যের নারীকে স্ত্রী নির্বাচন করা থেকে বিরত থাকুন।
২৫. যিনি অনুমতি নিয়ে কর্ম সম্পাদন করেন :
পারস্পরিক সম্মতিসূচক কর্মে রয়েছে পরম আনন্দ। তাই আপনার স্ত্রী এমন হওয়া উচিত, যিনি আপনার পরামর্শ ও অনুমতি নিয়ে সকল কাজ সম্পাদন করবেন। এমনকি আপন মা-বাবা, ভাই-বোনকে কিছু দিতে হলেও আপনার অনুমতি নেবেন।
২৬. যার শিক্ষা-দীক্ষা আছে :
শামিত্মময় পরিবার গড়ার জন্য প্রয়োজন একজন সুশিক্ষিতা স্ত্রী। যার মধ্যে থাকবে ইহকালীন কল্যাণকর জ্ঞান ও পরকালীন জান্নাত লাভের জ্ঞান। শুধু ইহকালীন জ্ঞানে পারদর্শী এমন নারীকে স্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করার সুযোগ কোথায়? কেননা নবী ﷺ বলেন,
‘‘চার শ্রেণির মানুষ জাহান্নামী। তন্মধ্যে এক শ্রেণি হলো- সেই দুর্বল ব্যক্তি, যার (পাপ ও অন্যায়) থেকে বাঁচার জ্ঞান নেই’’। [মুসলিম হাঃ ৭৩৮৬]
প্রিয় স্ত্রী সন্ধানী বন্ধু! আপনি গভীরভাবে ভেবে দেখুন, আপনার নির্বাচিত স্ত্রী যদি দুনিয়ার সকল বিদ্যায় পারদর্শী হয় আর যদি শরীয়তে কোন্টা হালাল কোন্টা হারাম, কোন্ কাজ বৈধ আর কোন্ কাজ অবৈধ, কোন্ কাজে নেকী আর কোন্ কাজে পাপ, কোন্টা ন্যায় আর কোন্টা অন্যায় ইত্যাদি পার্থক্য করে বেঁচে থাকতে না পারে, তবে এমন ধর্মজ্ঞানহীন বৈশিষ্ট্যের শিক্ষিতা স্ত্রী নির্বাচন করে আপনি কী কল্যাণ লাভ করবেন?
মনে রাখবেন, দুনিয়ার অধিকাংশ নারী আজ পার্থিব শিক্ষায় শিক্ষিতা হচ্ছে। যার ফলে স্বামীর কী অধিকার রয়েছে তা তারা বুঝতে পারে না। ফলে সংসারে নেমে আসে অশামিত্ম। আবার পার্থিব শিক্ষায় শিক্ষিত নারী সমত্মানদেরকেও বঞ্চিত করে প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষা থেকে। ফলে সমত্মান-সমত্মতি সাদাকায়ে জারিয়ার পরিবর্তে গুনাহে জারিয়ার পাত্র হচ্ছে। প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষার অভাবে শরীয়তসম্মত আমল না থাকার কারণে ছেলে-মেয়ে যেমন জাহান্নামে যাবে, ঠিক তেমনি পিতা-মাতা তাদেরকে প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষা না দেয়ার কারণে, তাদেরকে গোমরাহ করার দরম্নন সমত্মানরা তাদের অভিভাবক অর্থাৎ পিতা-মাতাকে পায়ের তলায় পিষ্ট করবে- যাতে তারা অধমদের মধ্যে গণ্য হবে’’ (সূরা হা-মীম-সাজদাহ ৪১ঃ ২৯)।
যে পিতা-মাতা তাদের সমত্মানদেরকে প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষা দেয় না তারাই হলো অধম। কাজেই স্ত্রী নির্বাচন করার ক্ষেত্রে এমন নারীকে প্রাধান্য দিন, যিনি হবেন ইহকালীন ও পরকালীন উভয় বিদ্যায় পারদর্শী।
২৭. যিনি হবেন হিসাবী :
বেহিসাবী মানুষ কোনদিন ইহকালে ও পরকালে প্রকৃত কল্যাণ লাভ করতে পারে না। হিসাবী ব্যক্তিই হয় সম্মানিত ও কল্যাণপ্রাপ্ত। পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক বিষয়ে হিসাবী মেয়েকে স্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করা খুবই গুরম্নত্বপূর্ণ। কেননা অনেক বেহিসাবী স্ত্রী আছে যারা স্বামীর আয় বুঝে ব্যয় করে না। ফলে স্বামীকে সংসার চালাতে বিপাকে পড়তে হয়, সমাজ বুঝে চলতে পারে না বলে তাকে অপমানিত হতে হয়।
২৮. যিনি হবেন কৃতজ্ঞশীলা :
যাকে আপনি স্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করবেন, তাকে অবশ্যই আলস্নাহর কৃতজ্ঞশীলা হতে হবে। কারণ যে সৃষ্টিকর্তা আলস্নাহর দেয়া পৃথিবীতে থেকে, তাঁর দেয়া নিয়ামত ভোগ করে তাঁর শুকরিয়া আদায় করে না, সে আপনার দেয়া কোন কিছুতেই সন্তুষ্ট হবে না। জগতে অনেক স্ত্রী আছে, যারা স্বামীর খেয়ে-পরে অপরের কাছে গিয়ে তার দোষ-ত্রম্নটি বর্ণনা করে। এক্ষেত্রে স্মরণ রাখবেন ইসমাঈল (আঃ) এর কথা, যিনি আলস্নাহর প্রতি শুকরিয়া আদায়কারী স্ত্রীকে স্ত্রী হিসেবে বহাল রেখেছিলেন। আর পিতার পরামর্শক্রমে অকৃতজ্ঞ, দুঃখ-কষ্ট ও অভাব প্রকাশকারিণী স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলেন।
২৯. যিনি স্বামীর হক বুঝবেন :
শরীয়তসম্মত স্বামীর যে হক রয়েছে সে সম্পর্কে অবগত এবং তা মানতে প্রস্তুত এমন নারীকে স্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করম্নন, যাতে দাম্পত্য জীবনে ফাটল না ধরে।
৩০. যিনি বাবা-মা, ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদাচরণ করবেন :
জগত সংসারে অনেক স্ত্রী আছে যারা স্বামীর বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনকে মূল্যায়ন করে না, স্বামীকে কুপরামর্শ দিয়ে তার জন্মদাতা পিতা-মাতাকে ঘর-বাড়ি ছাড়তে কিংবা টাকা-পয়সা না দিতে বাধ্য করে। এমন নারীকে নয়; বরং আপনাকে মান্যকারিণী, আপনার পিতা-মাতা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদাচরণকারিণী হবে এমন নারীকেই স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।
১. কোন্ পরিবেশে মানুষ হয়েছে :
আপনি যাকে স্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করতে যাচ্ছেন সে কোন্ স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে এটা দেখার আগে দেখুন সে কোন্ পরিবেশে বড় হয়েছে। কারণ মানুষকে ভালো অথবা মন্দ গুণে প্রভাবিত করতে পরিবেশই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করে।
২. বাবা-মায়ের চরিত্র বিচার করা :
বাবা-মায়ের চরিত্রে সমত্মান অনেকাংশেই প্রভাবিত হয়। বাবা-মায়ের নোংরা কথা-বার্তা, অশস্নীল গান-বাজনা, বাদ্যযন্ত্র শোনা ও দেখার অভ্যাস থাকলে মেয়ের মাঝে এ নোংরা অভ্যাসগুলো ঢুকে যাওয়াই স্বাভাবিক। তাই মেয়ে দেখার আগে তার বাবা-মায়ের চরিত্র বিচার করা জরুরি। উল্লেখ্য যে, পিতা-মাতা খারাপ হলেও অনেক সময় মেয়ে ভাল গুণের অধিকারী হয়।
৩. বাবা-মায়ের মেয়ে লালন-পালন বিচার করা :
অনেক পিতা-মাতা আছেন যারা তাদের মেয়েকে নগ্ন-অর্ধনগ্ন পোশাক পরিয়ে, আতর-সেন্ট মাখিয়ে, ঠোঁট-মুখ সুসজ্জিত করে, বাজারে-মার্কেটে ঘুরায়, আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে যেতে দেয়, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, কোচিং, গৃহ শিক্ষকের কাছে পড়তে পাঠায়, বছর গেলে মাহরাম ছাড়া শিক্ষকদের সাথে শিক্ষাসফরে পাঠায়। যার ফলে তারা প্রতিনিয়ত ব্যভিচারিণী বলে বিবেচিত হচ্ছে। এমন বৈশিষ্ট্যের পিতা-মাতার লালিত মেয়েকে স্ত্রী হিসেবে কীভাবে গ্রহণ করা যায়?
৪. সমতা বিধান করা :
আপনি যেই মানের লোক সেই মানের স্ত্রী গ্রহণ করম্নন। তাহলে শামিত্ম পাবেন। কারণ সে যদি হয় আপনার চেয়ে নীচু মানের, তাহলে হয়তোবা আপনি তার মূর্খতায় কষ্ট পাবেন। আর যদি হয় উচ্চমানের তাহলে হয়তোবা তার গর্ব-অহংকার আপনাকে ব্যথিত করবে। আপনি নিচ তলায় বসবাস করে পাঁচ তলায় বসবাসকারী নারীর দিকে কীভাবে দৃষ্টিপাত করতে পারেন? হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ اُنْظُرُوْا إِلٰى مَنْ أَسْفَلَ مِنْكُمْ وَلَا تَنْظُرُوْا إِلٰى مَنْ هُوَ فَوْقَكُمْ فَهُوَ أَجْدَرُ اَلَّا تَزْدَرُوْا نِعْمَةَ اللهِ عَلَيْكُمْ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ivm~jyjvn ﷺ e‡j‡Qb, তোমরা (দুনিয়াদারীর ক্ষেত্রে) তোমাদের চেয়ে নিচের লোকদের দিকে তাকাও। কিন্তু কখনো তোমাদের উপরের লোকদের দিকে তাকিও না। তাহলে আশা করা যায়, তোমরা কখনো আলস্নাহর নিয়ামতের অস্বীকার করবে না। [সহীহ মুসলীম হা: ২৯৬৩; মুসনাদে আহমাদ হা: ১০২৪৬]
তবে দ্বীনদারীর ক্ষেত্রে এ নীতি ভিন্ন। যেমন উসমান বিন হাকীম (রহঃ) বলেন,
اَصْحِبْ مَنْ هُوَ فَوْقَكَ فِي الدِّيْنِ وَدُوْنَكَ فِي الدُّنْيَا
‘‘তুমি এমন ব্যক্তির সঙ্গী হও, দ্বীনের ব্যাপারে যে তোমার চেয়ে উপরে এবং দুনিয়ার ব্যাপারে যে তোমার চেয়ে নিচে। [আল-ইখওয়ান, ১২৫]
সমতা রক্ষার ক্ষেত্রে বংশগত, অর্থগত, পরিবেশগত এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা কাছাকাছি থাকা দরকার।
৫. চারিত্রিক মিল খোঁজা :
দাম্পত্য জীবনে সুখ-শামিত্ম লাভের পূর্ব শর্ত হলো, স্বামী-স্ত্রীর চরিত্রে মিল থাকা। তাই আপনার চরিত্রের সকল গুণের সমাবেশ আছে এমন গুণবতীকে খোঁজ করা আবশ্যক।
উল্লেখ্য যে, যদিও পুরোপুরি মিল পাবেন না; তবুও যতটুকু সম্ভব মিল খোঁজার চেষ্টা করুন।
আপনি যাকে স্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করতে যাচ্ছেন সে কোন্ স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে এটা দেখার আগে দেখুন সে কোন্ পরিবেশে বড় হয়েছে। কারণ মানুষকে ভালো অথবা মন্দ গুণে প্রভাবিত করতে পরিবেশই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করে।
২. বাবা-মায়ের চরিত্র বিচার করা :
বাবা-মায়ের চরিত্রে সমত্মান অনেকাংশেই প্রভাবিত হয়। বাবা-মায়ের নোংরা কথা-বার্তা, অশস্নীল গান-বাজনা, বাদ্যযন্ত্র শোনা ও দেখার অভ্যাস থাকলে মেয়ের মাঝে এ নোংরা অভ্যাসগুলো ঢুকে যাওয়াই স্বাভাবিক। তাই মেয়ে দেখার আগে তার বাবা-মায়ের চরিত্র বিচার করা জরুরি। উল্লেখ্য যে, পিতা-মাতা খারাপ হলেও অনেক সময় মেয়ে ভাল গুণের অধিকারী হয়।
৩. বাবা-মায়ের মেয়ে লালন-পালন বিচার করা :
অনেক পিতা-মাতা আছেন যারা তাদের মেয়েকে নগ্ন-অর্ধনগ্ন পোশাক পরিয়ে, আতর-সেন্ট মাখিয়ে, ঠোঁট-মুখ সুসজ্জিত করে, বাজারে-মার্কেটে ঘুরায়, আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে যেতে দেয়, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, কোচিং, গৃহ শিক্ষকের কাছে পড়তে পাঠায়, বছর গেলে মাহরাম ছাড়া শিক্ষকদের সাথে শিক্ষাসফরে পাঠায়। যার ফলে তারা প্রতিনিয়ত ব্যভিচারিণী বলে বিবেচিত হচ্ছে। এমন বৈশিষ্ট্যের পিতা-মাতার লালিত মেয়েকে স্ত্রী হিসেবে কীভাবে গ্রহণ করা যায়?
৪. সমতা বিধান করা :
আপনি যেই মানের লোক সেই মানের স্ত্রী গ্রহণ করম্নন। তাহলে শামিত্ম পাবেন। কারণ সে যদি হয় আপনার চেয়ে নীচু মানের, তাহলে হয়তোবা আপনি তার মূর্খতায় কষ্ট পাবেন। আর যদি হয় উচ্চমানের তাহলে হয়তোবা তার গর্ব-অহংকার আপনাকে ব্যথিত করবে। আপনি নিচ তলায় বসবাস করে পাঁচ তলায় বসবাসকারী নারীর দিকে কীভাবে দৃষ্টিপাত করতে পারেন? হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ اُنْظُرُوْا إِلٰى مَنْ أَسْفَلَ مِنْكُمْ وَلَا تَنْظُرُوْا إِلٰى مَنْ هُوَ فَوْقَكُمْ فَهُوَ أَجْدَرُ اَلَّا تَزْدَرُوْا نِعْمَةَ اللهِ عَلَيْكُمْ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ivm~jyjvn ﷺ e‡j‡Qb, তোমরা (দুনিয়াদারীর ক্ষেত্রে) তোমাদের চেয়ে নিচের লোকদের দিকে তাকাও। কিন্তু কখনো তোমাদের উপরের লোকদের দিকে তাকিও না। তাহলে আশা করা যায়, তোমরা কখনো আলস্নাহর নিয়ামতের অস্বীকার করবে না। [সহীহ মুসলীম হা: ২৯৬৩; মুসনাদে আহমাদ হা: ১০২৪৬]
তবে দ্বীনদারীর ক্ষেত্রে এ নীতি ভিন্ন। যেমন উসমান বিন হাকীম (রহঃ) বলেন,
اَصْحِبْ مَنْ هُوَ فَوْقَكَ فِي الدِّيْنِ وَدُوْنَكَ فِي الدُّنْيَا
‘‘তুমি এমন ব্যক্তির সঙ্গী হও, দ্বীনের ব্যাপারে যে তোমার চেয়ে উপরে এবং দুনিয়ার ব্যাপারে যে তোমার চেয়ে নিচে। [আল-ইখওয়ান, ১২৫]
সমতা রক্ষার ক্ষেত্রে বংশগত, অর্থগত, পরিবেশগত এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা কাছাকাছি থাকা দরকার।
৫. চারিত্রিক মিল খোঁজা :
দাম্পত্য জীবনে সুখ-শামিত্ম লাভের পূর্ব শর্ত হলো, স্বামী-স্ত্রীর চরিত্রে মিল থাকা। তাই আপনার চরিত্রের সকল গুণের সমাবেশ আছে এমন গুণবতীকে খোঁজ করা আবশ্যক।
উল্লেখ্য যে, যদিও পুরোপুরি মিল পাবেন না; তবুও যতটুকু সম্ভব মিল খোঁজার চেষ্টা করুন।
মহান আলস্নাহ বলেন,
﴿فَانْكِحُوْا مَا طَابَ لَكُمْ مِّنَ النِّسَآءِ﴾
‘‘নারীদের মধ্য হতে নিজেদের পছন্দমতো বিবাহ করো’’ (সূরা নিসা ৪ঃ ৩)
অত্র আয়াতে বিবাহের পূর্বে মেয়ে দেখে নেয়ার ব্যাপারে আলস্নাহ বিশেষ ইঙ্গিত প্রদান করেছেন। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ أَنَّهَا قَالَتْ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : " أُرِيْتُكِ فِي الْمَنَامِ جَاءَنِيْ بِكِ الْمَلَكُ فِيْ سَرَقَةٍ مِنْ حَرِيْرٍ فَيَقُوْلُ : هٰذِهِ امْرَأَتُكَ فَأَكْشِفُ عَنْ وَجْهِكِ فَإِذَا أَنْتِ هِيَ فَأَقُوْلُ : إِنْ يَّكُ هٰذَا مِنْ عِنْدِ اللهِ يُمْضِهٖ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুলস্নাহ ﷺ বলেছেন, আমি তোমাকে স্বপ্নের মধ্যে দেখেছি, একজন ফেরেশতা তোমাকে রেশমী চাদরে জড়িয়ে আমার কাছে নিয়ে এসে বলল, এ হচ্ছে আপনার স্ত্রী। এরপর আমি তোমার মুখমন্ডল থেকে চাদর খুলে তোমাকে দেখতে পেলাম। তখন আমি বললাম, যদি স্বপ্ন আলস্নাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই তা বাসত্মবায়িত হবে। [বুখারী ৬৭/৩৬ অধ্যায়ঃ ‘বিয়ে করার পূর্বে মেয়ে দেখে নেয়া’, হা: ৫১২৫, ৩৮৯৫, ই ফা. ৪৭৪৯]
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ : كُنْتُ عِنْدَ النَّبِيِّ ، فَأَتَاهُ رَجُلٌ فَأَخْبَرَهٗ أَنَّهٗ تَزَوَّجَ امْرَأَةً مِّنَ الْأَنْصَارِ فَقَالَ لَهٗ رَسُوْلُ اللهِ : أَنَظَرْتَ إِلَيْهَا قَالَ : لَا، قَالَ : فَاذْهَبْ فَانْظُرْ إِلَيْهَا فَإِنَّ فِيْ أَعْيُنِ الْأَنْصَارِ شَيْئًا
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এ সময় এক ব্যক্তি তাঁর নিকট এসে তাঁকে বলল যে, সে আনসার সম্প্রদায়ের এক মেয়েকে বিবাহ করার সিদ্ধামত্ম নিয়েছে। তখন রাসূল ﷺ বললেন, তুমি কি তাকে দেখেছ? সে বলল, না। অতঃপর তিনি বললেন, যাও তুমি তাকে (এক নজর) দেখে নাও। কারণ আনসারদের চোখে কিছু ত্রম্নটি থাকে। [মুসলিম হা: একা. হা:৩৩৭৬-৭৪/১৪২৪; ই.ফা. হা: ৩৩৫০]
সুতরাং মনের সংশয় দূর করার জন্য বিবাহের পূর্বে মেয়ে দেখে নেয়া জরুরি।
জাবির ইবনে আবদুলস্নাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন কোন মেয়েকে বিবাহের প্রসত্মাব দেবে তখন সে নিজের চোখে অবশ্যই তাকে দেখে নেয়ার চেষ্টা করবে। যা তাকে বিবাহ করতে আকর্ষিত করবে’। [আবু দাউদ হা: ২০৮২; আহমাদ হা: ১৪১৬৭, শায়খ আলবানী (রহঃ) হাদীসটিকে হাসান বলেছেন]
দাম্পত্য জীবন শামিত্মময়, স্থায়ী ও সুখী করার জন্য বিবাহের পূর্বে কনেকে দেখে নেয়া উচিত।
﴿فَانْكِحُوْا مَا طَابَ لَكُمْ مِّنَ النِّسَآءِ﴾
‘‘নারীদের মধ্য হতে নিজেদের পছন্দমতো বিবাহ করো’’ (সূরা নিসা ৪ঃ ৩)
অত্র আয়াতে বিবাহের পূর্বে মেয়ে দেখে নেয়ার ব্যাপারে আলস্নাহ বিশেষ ইঙ্গিত প্রদান করেছেন। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ أَنَّهَا قَالَتْ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : " أُرِيْتُكِ فِي الْمَنَامِ جَاءَنِيْ بِكِ الْمَلَكُ فِيْ سَرَقَةٍ مِنْ حَرِيْرٍ فَيَقُوْلُ : هٰذِهِ امْرَأَتُكَ فَأَكْشِفُ عَنْ وَجْهِكِ فَإِذَا أَنْتِ هِيَ فَأَقُوْلُ : إِنْ يَّكُ هٰذَا مِنْ عِنْدِ اللهِ يُمْضِهٖ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুলস্নাহ ﷺ বলেছেন, আমি তোমাকে স্বপ্নের মধ্যে দেখেছি, একজন ফেরেশতা তোমাকে রেশমী চাদরে জড়িয়ে আমার কাছে নিয়ে এসে বলল, এ হচ্ছে আপনার স্ত্রী। এরপর আমি তোমার মুখমন্ডল থেকে চাদর খুলে তোমাকে দেখতে পেলাম। তখন আমি বললাম, যদি স্বপ্ন আলস্নাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই তা বাসত্মবায়িত হবে। [বুখারী ৬৭/৩৬ অধ্যায়ঃ ‘বিয়ে করার পূর্বে মেয়ে দেখে নেয়া’, হা: ৫১২৫, ৩৮৯৫, ই ফা. ৪৭৪৯]
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ : كُنْتُ عِنْدَ النَّبِيِّ ، فَأَتَاهُ رَجُلٌ فَأَخْبَرَهٗ أَنَّهٗ تَزَوَّجَ امْرَأَةً مِّنَ الْأَنْصَارِ فَقَالَ لَهٗ رَسُوْلُ اللهِ : أَنَظَرْتَ إِلَيْهَا قَالَ : لَا، قَالَ : فَاذْهَبْ فَانْظُرْ إِلَيْهَا فَإِنَّ فِيْ أَعْيُنِ الْأَنْصَارِ شَيْئًا
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এ সময় এক ব্যক্তি তাঁর নিকট এসে তাঁকে বলল যে, সে আনসার সম্প্রদায়ের এক মেয়েকে বিবাহ করার সিদ্ধামত্ম নিয়েছে। তখন রাসূল ﷺ বললেন, তুমি কি তাকে দেখেছ? সে বলল, না। অতঃপর তিনি বললেন, যাও তুমি তাকে (এক নজর) দেখে নাও। কারণ আনসারদের চোখে কিছু ত্রম্নটি থাকে। [মুসলিম হা: একা. হা:৩৩৭৬-৭৪/১৪২৪; ই.ফা. হা: ৩৩৫০]
সুতরাং মনের সংশয় দূর করার জন্য বিবাহের পূর্বে মেয়ে দেখে নেয়া জরুরি।
জাবির ইবনে আবদুলস্নাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন কোন মেয়েকে বিবাহের প্রসত্মাব দেবে তখন সে নিজের চোখে অবশ্যই তাকে দেখে নেয়ার চেষ্টা করবে। যা তাকে বিবাহ করতে আকর্ষিত করবে’। [আবু দাউদ হা: ২০৮২; আহমাদ হা: ১৪১৬৭, শায়খ আলবানী (রহঃ) হাদীসটিকে হাসান বলেছেন]
দাম্পত্য জীবন শামিত্মময়, স্থায়ী ও সুখী করার জন্য বিবাহের পূর্বে কনেকে দেখে নেয়া উচিত।
বিবাহ করবে যে, সে-ই কনে দেখবে। এক্ষেত্রে বিশেষ লক্ষণীয় বিষয় হলো, ছেলের বাড়ির যেকোন মহিলা কনে দেখতে পারে। কিন্তু এদেশে বড় জাহেলিয়াত চালু আছে যে, কনে দেখতে ছেলের দুলাভাই, বন্ধু-বান্ধব, বাবা, চাচা, খালু ইত্যাদি শ্রেণির আত্মীয়রা যায়- যা আদৌ শরীয়তসম্মত নয়। তবে হ্যাঁ, তারা যেতে পারবে বটে; কিন্তু কনে দেখায় অংশ নিতে পারবে না। এক্ষেত্রে আপনার লজ্জাবোধ থাকা উচিত। কেননা স্ত্রী হবে আপনার, আর দেখবে সবাই- এটাতো বড় নির্লজ্জতা।
কনের কী দেখতে হবে :
দেখতে হবে পাত্রীর চেহারা, হাতদ্বয় কব্জি পর্যমত্ম এবং পায়ের পাতা। এছাড়া পাত্রীকে ঘুরিয়ে-ঘুরিয়ে তার সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দেখা আদৌ ঠিক নয়; বরং এটা অশস্নীলতা।
পাত্রীকে কী জিজ্ঞাসা করা হবে :
আকীদা, দ্বীনদারী ইত্যাদি গুরম্নত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশ্ন করতে পারেন। এক্ষেত্রে মেয়েকে দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রেখে অবামত্মর বিষয়ে প্রশ্ন করা ঠিক নয়।
যৌতুকের চুক্তি করা যাবে না :
দাম্পত্য জীবনে যারা সুখ কামনা করে, তাদের কর্তব্য হলো শরীয়াহ পদ্ধতিতে স্ত্রী নির্বাচন করা। তাহলে পারিবারিক জীবনে শামিত্ম আসবে। আর প্রবৃত্তির অনুসারী হয়ে স্ত্রীর পরিবারের কাছ থেকে যৌতুক নিলে পারিবারিক জীবনে অশামিত্ম নেমে আসবে। যার ভুরি-ভুরি বাসত্মব প্রমাণ এদেশের মাটিতে রয়েছে। কাজেই যৌতুক নেয়া থেকে বিরত থাকুন।
কনের কী দেখতে হবে :
দেখতে হবে পাত্রীর চেহারা, হাতদ্বয় কব্জি পর্যমত্ম এবং পায়ের পাতা। এছাড়া পাত্রীকে ঘুরিয়ে-ঘুরিয়ে তার সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দেখা আদৌ ঠিক নয়; বরং এটা অশস্নীলতা।
পাত্রীকে কী জিজ্ঞাসা করা হবে :
আকীদা, দ্বীনদারী ইত্যাদি গুরম্নত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশ্ন করতে পারেন। এক্ষেত্রে মেয়েকে দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রেখে অবামত্মর বিষয়ে প্রশ্ন করা ঠিক নয়।
যৌতুকের চুক্তি করা যাবে না :
দাম্পত্য জীবনে যারা সুখ কামনা করে, তাদের কর্তব্য হলো শরীয়াহ পদ্ধতিতে স্ত্রী নির্বাচন করা। তাহলে পারিবারিক জীবনে শামিত্ম আসবে। আর প্রবৃত্তির অনুসারী হয়ে স্ত্রীর পরিবারের কাছ থেকে যৌতুক নিলে পারিবারিক জীবনে অশামিত্ম নেমে আসবে। যার ভুরি-ভুরি বাসত্মব প্রমাণ এদেশের মাটিতে রয়েছে। কাজেই যৌতুক নেয়া থেকে বিরত থাকুন।
যেসকল নারীকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করার ব্যাপারে সতর্ক থাকা জরুরি। তারা হলো-
১. পর্দাহীন নারী :
মহান আলস্নাহ বলেন,
﴿وَقُلْ لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوْجَهُنَّ وَلَا يُبْدِيْنَ زِيْنَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا﴾
‘‘আর মুমিন নারীদেরকে বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে ও তাদের লজ্জাস্থানকে হেফাযত করে। আর তারা যেন সাধারণভাবে যা প্রকাশ পায় তা ব্যতীত তাদের আবরণ প্রদর্শন না করে’’ (সূরা নূর ২৪ঃ ৩১)।
﴿يَاۤأَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِّأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ الْمُؤْمِنِيْنَ يُدْنِيْنَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيْبِهِنَّ ذٰلِكَ أَدْنٰۤى أَنْ يُّعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا﴾
‘‘হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রীগণ, কন্যাগণ ও মুমিন নারীদেরকে বলে দাও, তারা যেন চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়, এতে তাদেরকে চেনা অধিক সহজ হবে। ফলে তাদের উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু (সূরা আহযাব ৩৩ঃ ৫৯)।
হাদীসে এসেছে,
عَنْ أُمِّ عَطِيَّةَ قَالَتْ أَمَرَنَا رَسُوْلُ اللهِ أَنْ نُخْرِجَهُنَّ فِيْ يَوْمِ الْفِطْرِ وَالنَّحْرِ قَالَ قَالَتْ أُمُّ عَطِيَّةَ فَقُلْنَا أَرَأَيْتَ إِحْدَاهُنَّ لَا يَكُوْنُ لَهَا جِلْبَابٌ قَالَ فَلْتُلْبِسْهَا أُخْتُهَا مِنْ جِلْبَابِهَا
উম্মে আতিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার সালাতে বের হওয়ার নির্দেশ দিলেন। উম্মে আতিয়া বলেন, আমরা বললাম, হে আলস্নাহর রাসুল ﷺ! যদি আমাদের মধ্যে কারো চাদর না থাকে? রাসুল ﷺ বললেন, তার বোন তাকে চাদর পরাবে। [বুখারী হা: ৩৫১; মুসলিম হা: ৮৯০; ইবনু মাজাহ হা: ১৩০৭ আহমাদ হা: ২০৮১২; মিশকাত হা: ১৪৩১]
অতএব যে নারী আলস্নাহর জমিনে থেকে আলস্নাহর চোখের সামনে তাঁরই নির্দেশের অবাধ্যচারী হয়ে বেপর্দায় ঘুরে বেড়ায়; সে তো আপনারও অবাধ্যচারী হবে, যার মধ্যে বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই। আর আপনার অধীনে থেকে যত দিন সে বেপর্দায় ঘুরে পাপ করবে, সেই পাপের ভাগ আপনাকেও নিতে হবে। তাছাড়া আপনার পরিবারটাকেও সে পর্দাহীন পরিবারে পরিণত করতে পারে। কাজেই এমন বৈশিষ্ট্যের নারীকে স্ত্রী বানানোর ক্ষেত্রে সাবধান থাকা জরুরি।
২. ঝগড়াটে :
জগত সংসারে এমন অনেক নারী রয়েছে যারা তাদের স্বামীর সাথে সামান্য বিষয় নিয়ে ঝগড়া-ফাসাদ করে। আর আলস্নাহর কাছে ঝগড়াটে মানুষই সবচেয়ে বেশি ঘৃণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
إنَّ أبْغَضَ الرِّجَالِ إلَى اللهِ الْألَدُّ الْخَصِمُ
‘‘আলস্নাহর নিকট অধিক ঘৃণিত ব্যক্তি সেই, যে অত্যধিক ঝগড়াটে ও অত্যমত্ম কলহ প্রিয়। [বুখারী মা.শা.২য় খন্ড,পৃ.৮৬৭, হা:২৩২৫; মুসলিম ৪র্থ খন্ড, পৃ.২০৫৪, হা:৫-২৬৬৮]
কাজেই ঝগড়াটে নারী থেকে দূরে থাকা চির কল্যাণকর। কারণ সে নিকৃষ্ট গুণের অধিকারিণী এবং সংসারে অশামিত্ম সৃষ্টিকারিণী।
৩. গীবতকারিণী :
আলস্নাহ তা‘আলা গীবত করার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে একে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সাথে তুলনা করেছেন। [সূরা হুজুরাত ৪৯ঃ১২] এতদ্বসত্ত্বেও এক শ্রেণির নারীর বৈশিষ্ট্যই হলো একজনের কাছে আরেকজনের দোষ-ত্রম্নটি বর্ণনা করা বা গীবত করা। কাজেই গীবতকারী নারী থেকে দূরে থাকা জরুরি।
৪. চোগলখোরিণী :
কবরে যেসকল পাপের কারণে শাসিত্ম হয়, তন্মধ্যে অন্যতম একটি পাপ হলো, চোগলখোরী করা। [বুখারী হা: ৬০৫৫; মুসলিম, মিশকাত হা: ৬০৭৫]
একজনের কথা অন্য জনের কাছে বলে উভয়ের মধ্যে ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি করে সম্পর্কের অবনতি ঘটানোই হলো চোগলখোরী। নারীদের মধ্য হতে এক শ্রেণির নারীর নিত্যনৈমত্তিক কর্মই হলো এ কাজের সাথে লেগে থাকা। কাজেই এদের থেকে সাবধান।
৫. ছবি ও মূর্তির প্রতি আকৃষ্ট নারী :
ছবি ও মূর্তি ইসলামে নিষিদ্ধ। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
لَا تَدْخُلُ الْمَلَائِكَةُ بَيْتًا فِيْهِ كَلْبٌ وَلَا صُوْرَةٌ
‘‘ঐ ঘরে (রহমত ও বরকতের) ফেরেশতা প্রবেশ করে না, যে ঘরে কুকুর ও জীব-জন্তুর ছবি থাকে’’। [বুখারী হা:৩২২৫,৩২২৬,৩৩২২,৪৩০২,৪০০২৫৯৪৯,৫৯৫৮; মুসলিম হা:২১০৬; তিরমিযি হা:২৮০৪; আবুদাউদ হা:৪১৫৩; ইবনু মাজাহ হা:৩৬৪৯; আহমাদ হা:১৫৯১০; মুয়াত্তা মালেক ১৮০২]
এতদ্বসত্ত্বেও এক শ্রেণির বোকা নারী তাদের ছেলে-মেয়ের বা নিজেদের ছবি, বাজার থেকে ক্রয়কৃত মূর্তির সাদৃশ্য প্লাস্টিকের পুতুল, খেলনা ইত্যাদি বাড়িতে ঝুলিয়ে রাখে। আবার কেউ কেউ কোমলমতি শিশুদেরকে ছবি ও মূর্তির আর্ট শেখায় বা আর্ট স্কুলে ভর্তি করে বিভিন্ন প্রাণির ছবি আঁকা শেখায়। অথচ রাসূল ﷺ বলেন, ‘কিয়ামতের দিন ছবি ও মূর্তি নির্মাতাদের কঠিন শাসিত্ম দেয়া হবে’। [বুখারী হা:৫৯৫০; মুসলিম হা:২১০৯]
এমন বৈশিষ্ট্যের নারী থেকে সাবধান থাকা আবশ্যক। কারণ তার উক্ত কর্মের কারণে গৃহ থেকে বরকত চলে যাবে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাপ শিরকের সাথে আপনার পরিবার জড়িয়ে পড়বে। ফলে ইহকালে ও পরকালে আপনি ও আপনার পরিবার ক্ষতিগ্রসত্ম হবে।
৬. হিংসুটে নারী :
হিংসা একটি ধ্বংসাত্মক মহাপাপ। যার মধ্যে বিন্দুমাত্র হিংসা-অহংকার আছে, সে জান্নাতে যেতে পারবে না। এ পৃথিবীতে হিংসামুক্ত মানুষ পাওয়া বড়ই দুঃসাধ্য ব্যাপার। নারী জাতির মধ্যে হিংসার ভাবটা অনেকাংশে বেশি আছে বলে মনে হয়। কাজেই যে নারীর মধ্যে হিংসার ভাব আছে বলে মনে করা হয়, তার থেকে দূরে থাকা কল্যাণকর।
৭. অভিশাপকারিণী :
কোন মুসলিমকে অভিশাপ দেয়া একটি কবীরা গুনাহ। অভিশাপ প্রদানকারী নারী জাহান্নামে যাবে বলে হাদীসে উল্লেখ রয়েছে। অথচ অনেক নারীর অভ্যাস হচ্ছে, সন্তানকে গালি-গালাজ করা এবং নানা ধরনের অভিশাপ দেয়া। কাজেই এমন নারীকে স্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করা থেকে দূরে থাকা জরুরি। মনে রাখবেন, সত্যবাদী নারী অভিশাপকারিণী হতে পারে না।
৮. ব্যভিচারিণী :
ব্যভিচার করা একটি মারাত্মক অন্যায়। এটি হচ্ছে মানবজাতিকে ধ্বংস করার জন্য শয়তানের মূল হাতিয়ার। শয়তান যখন কোন জাতির অধঃপতন ঘটাতে চায় তখন সে যেকোন মূল্যেই হোক তাদেরকে ব্যভিচারের দিকে ধাবিত করে। এ কারণেই ইসলাম এটিকে হদ্দের আওতাভুক্ত করে দিয়েছে। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿اَلزَّانِيَةُ وَالزَّانِيْ فَاجْلِدُوْا كُلَّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا مِائَةَ جَلْدَةٍ وَّلَا تَأْخُذْكُمْ بِهِمَا رَأْفَةٌ فِيْ دِيْنِ اللهِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ﴾
ব্যভিচারিণী নারী ও ব্যভিচারী পুরম্নষ তাদের প্রত্যেককেই একশত বেত্রাঘাত করবে। আলস্নাহর এ বিধান কার্যকর করণে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে অভিভূত না করে- যদি তোমরা আলস্নাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে থাক। (সূরা নূর ২৪ঃ ২)
তাছাড়া ব্যভিচার ও ব্যভিচারিণীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়াটা হচ্ছে কিয়ামতের একটি আলামত। [বুখারী হা: ৮০,৮১,৬৮০৮, মুসলিম হা: ১৬৭১] আর বর্তমান সমাজও সেদিকেই ধাবিত হচ্ছে। যার কারণে এখন শিক্ষিতা-অশিক্ষিতা, সুন্দরী-অসুন্দরী অনেক নারী পাওয়া যায়; কিন্তু ব্যভিচারমুক্ত নারী পাওয়া খুবই মুশকিল।
অতএব আমাদের উচিত ব্যভিচারী নারীকে বিবাহ করা থেকে বিরত থাকা এবং তাদের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করা।
৯. নগ্ন-অর্ধনগ্ন পোশাক পরিহিতা :
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেন,
وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيْلَاتٌ مَائِلَاتٌ رُءُوْسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ، لَا يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ وَلَا يَجِدْنَ رِيْحَهَا وَإِنَّ رِيْحَهَا لَيُوْجَدُ مِنْ مَسِيْرَةِ كَذَا وَكَذَ
‘‘এমন এক শ্রেণির নারী যারা (এমন নগ্ন-অর্ধনগ্ন) পোশাক পরবে যে, (বাস্তবে) তারা উলঙ্গ থাকবে, (পর পুরম্নষকে) নিজেদের প্রতি আকৃষ্ট করবে ও নিজেরাও (পর পুরম্নষের প্রতি) আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা হবে উটের হেলে যাওয়া কুঁজের মতো। এ ধরনের মহিলা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং তার সুগন্ধও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধ এত এত দূর থেকে পাওয়া যাবে’’। [মুসলিম হা: ২১২৮; আহমাদ হা: ৮৪৫১]
আজ অসংখ্য পিতা-মাতার প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে নগ্ন-অর্ধনগ্ন পোশাক পরে হাট-বাজারে, মার্কেটে, স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেগানা পুরম্নষদের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অথচ রাসূলুল্লাহ ﷺ এ শ্রেণির নারীকে জাহান্নামী বলে উলেস্নখ করেছেন। কাজেই এমন বৈশিষ্ট্যের নারী যতই শিক্ষিত হোক, সুন্দরী হোক, চাকুরিজীবী হোক, সম্পদশালী হোক এদেরকে স্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করার ব্যাপারে সতর্ক থাকা বুদ্ধিমানের কাজ।
১০. সালাত ত্যাগকারিণী :
কুরআন সুন্নাহর দলীলাদি থেকে প্রমাণিত যে, সালাত ত্যাগকারী নারী হোক কিংবা পুরুষ হোক তারা কাফিরদের সমতুল্য। সুতরাং সালাত ত্যাগকারী কোন নারী ঈমানদার পুরুষের স্ত্রী হতে পারে না। কেননা মহান আলস্নাহ বলেন,
﴿وَلَا تَنْكِحُوا الْمُشْرِكَاتِ حَتّٰى يُؤْمِنَّ وَلَأَمَةٌ مُّؤْمِنَةٌ خَيْرٌ مِّنْ مُّشْرِكَةٍ وَّلَوْ أَعْجَبَتْكُمْ﴾
‘‘আর তোমরা মুশরিক নারীদেরকে বিবাহ করো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনবে। অবশ্যই মুসলিম ক্রীতদাসী মুশরিক (সুন্দরী) নারী অপেক্ষা উত্তম। যদিও তাদেরকে তোমাদের ভালো লাগে’’ (সূরা বাকারা ২ঃ ২২১)।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
بَيْنَ الرَّجُلِ وَالْكُفْرِ وَالشِّرْكِ تَرْكُ الصَّلَاةِ
‘‘মুসলিম ও কাফির এবং মুশরিকের মধ্যে পার্থক্য হলো, সালাত পরিত্যাগ করা।’’ [মুসলিম ‘কিতাবুল ঈমান’ হা:১১৬]
কাজেই যে নারী সালাত আদায় করে না, তার মাঝে ও মুশরিক নারীর মাঝে পার্থক্য কোথায়? সালাত ত্যাগকারিণী নারী যতই সম্পদশালী ও সুন্দরী হোক না কেন, তাদেরকে বিবাহ করা বৈধ নয়, যতক্ষণ না তারা পুরোপুরিভাবে ইসলামে প্রবেশ করে। আফসোসের বিষয় হলো, আজ অসংখ্য মুসলিম পুরম্নষের স্ত্রী সালাত আদায় করে না। আশা করি আপনার স্ত্রী এমন হবে না।
১১. বিলাসিনী :
অতিরিক্ত বিলাসিতা কোন ভালো নারীর গুণ নয়। এটা হলো সর্বনিকৃষ্ট মানুষের গুণ। যেমন মহানবী ﷺ বলেন,
شِرَارُ أُمَّتِيْ قَوْمٌ وُلِدُوْا فِي النَّعِيْمِ وغُذُّوْا بِهٖ يَأْكُلُوْنَ مِنَ الطَّعَامِ أَلْوَانًا يَتَشَدَّقُوْنَ فِي الْكَلَامِ
‘‘আমার উম্মতের সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোক তারা, যারা নিয়ামতের মধ্যে জন্মগ্রহণ করে, নানা রঙের খাদ্য ভক্ষণ করে, নানা রঙের বস্ত্র পরিধান করে অথচ কথায় আলস্য ভাব ও কৌশল প্রকাশ করে। [মু‘জামুল কাবীর লিত- তাবরানী পৃ.১০৭; খন্ড ৮; হা:৭৫১৩]
অন্য বর্ণনায় আছে,
وَيَرْكَبُوْنَ مِنَ الدَّوَابِّ أَلْوَانًا
‘‘তারা নানা রঙের সওয়ারীতে (গাড়িতে) চড়ে’’। [সিলসিলা সহীহাহ হাঃ ১৮৯১]
সুতরাং অতিরিক্ত খাওয়া-পরা ও চলা-ফেরা এই নিকৃষ্ট গুণগুলো যেসকল নারীর মধ্যে আঁচ করা যাবে তাদের থেকে দূরে থাকা জরুরি। কারণ তারাই সৃষ্টির নিকৃষ্ট জীব। উলেস্নখ্য যে, জুতা জোড়া ভালো হওয়া, পোশাক ভালো হওয়া ইত্যাদি দোষের নয়। তবে অবশ্যই তা অহংকারমুক্ত হতে হবে।
১২. বাদ্যযন্ত্র ও গান-বাজনা শুনতে অভ্যসত্ম নারী :
আধুনিক প্রযুক্তির এ যুগে টিভি, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল ইত্যাদি যন্ত্রের ব্যবহার শহর থেকে শুরু করে গ্রামের প্রত্যমত্ম অঞ্চল পর্যমত্ম প্রত্যেক মানুষের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রায় প্রত্যেক মানুষই এ যন্ত্রগুলো ব্যবহার করছে অশস্নীল ছবি দেখা ও গান বাজনা শোনার কাজে। নারীরাও এ ধরনের নোংরা ও ধ্বংসাত্মক কর্ম থেকে দূরে নেই; বরং তারা আরো এ ধরনের কর্মে বেশি অগ্রগামী। অথচ হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ قَالَ : إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ حَرَّمَ الْخَمْرَ وَالْمَيْسِرَ، وَالْكُوْبَةَ
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, নিশ্চয় আলস্নাহ তা‘আলা মদ, জুয়া ও সকল ধরনের বাদ্যযন্ত্র হারাম করেছেন। [বায়হাকী মা.শা. হা: ২১৫১৯, মিশকাত হা: ৪৫০৩]
আবু আমের ও আবু মালিক আল-আশ‘আরী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলেন,
لَيَكُوْنَنَّ مِنْ أُمَّتِىْ أَقْوَامٌ يَسْتَحِلُّوْنَ الزِّنٰى وَالْحَرِيْرَ وَالْخَمْرَ وَالْمَعَازِفَ
অবশ্যই আমার উম্মতের মধ্যে এমন এক সম্প্রদায় হবে, যারা ব্যভিচার, (পুরুষের জন্য) রেশমি পোশাক, মদ পান এবং বাদ্যযন্ত্রকে হালাল মনে করবে (হারাম হওয়া সত্ত্বেও)। [বুখারী হা: ৫৫৯০, মিশকাত হা: ৫৩৪৩; তিরমিযি, দারেমী, সহীহুল জামে‘ হা: ৫৪৬৬]
বাদ্যযন্ত্রের প্রতি আগ্রহী ব্যক্তির জন্য অপমানকর শাসিত্মর কথা উলেস্নখ করে আলস্নাহ বলেন,
﴿وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّشْتَرِيْ لَهْوَ الْحَدِيْثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَّيَتَّخِذَهَا هُزُوًا أُولٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُّهِيْنٌ﴾
‘‘মানুষের মধ্যে এমন কিছু মানুষ আছে যারা অজ্ঞতাবশত অনর্থক কথা অর্থাৎ অশস্নীল গান-বাজনা ক্রয় করে এবং সেটা নিয়ে তামাশা করে। এদের জন্য রয়েছে অপমানজনক শাসিত্ম’’ (সূরা লুকমান ৩১ঃ ৬)।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ قَالَ : الْجَرَسُ مَزَامِيرُ الشَّيْطَانِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেন, ‘ঘণ্টা বা ঘুঙুর শয়তানের বাঁশি’। [মুসলিম হা:২১১৪; আবু দাউদ হা:২৫৫৬]
আব্দুলস্নাহ ইবনে আমর (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, ‘‘অবশ্যই আলস্নাহ আমার উম্মতের জন্য মদ, জুয়া, ঢোল-তবলা এবং বীণা জাতীয় বাদ্যযন্ত্রকে হারাম করেছেন...’’। [সিলসিলা সহীহা হা: ১৭০৮]
অত্র বিবরণ থেকে প্রমাণিত হয় যে, অশস্নীল গান-বাজনা, বাদ্যযন্ত্র, বিভিন্ন টিভি-সিরিয়াল বা চলচ্চিত্র দেখা হারাম এবং পাপের কাজ। কাজেই যে নারী বাদ্যযন্ত্রের প্রতি আগ্রহী ও টিভি দেখতে অভ্যস্ত সে কেমন করে আলস্নাহভীরম্ন মানুষের স্ত্রী হতে পারে? এ শ্রেণির নারী দেশের, সমাজের, জাতির ও স্বামীর জন্য বিপদজনক। এ ধরনের নারীকে স্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করলে আলস্নাহর পক্ষ থেকে নানা গযব নেমে আসতে পারে। যেমন-
গৃহ থেকে আল্লাহর রহমত দূর হবে :
আপনার গৃহে যদি আপনার স্ত্রী বা অন্য কেউ অশস্নীল গান-বাজনা, বাদ্যযন্ত্র বাজায়, তাহলে আপনার গৃহ থেকে রহমত ও বরকত চলে যাবে এবং শয়তান এসে বাসা বাধবে। যেমন- হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : لَا تَصْحَبُ الْمَلَائِكَةُ رُفْقَةً فِيْهَا كَلْبٌ وَلَا جَرَسٌ
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেন, ‘ফেরেশতা সেই কাফেলার সঙ্গী হন না; যে কাফেলায় কুকুর কিংবা ঘুঙুরের শব্দ থাকে’। [মুসলিম হা:২১১৩; তিরমিযি হা:১৭০৩; আবু দাউদ হা:২৫৫৫; আহমাদ ৭৫১২] যেখানে ঘুঙুরের শব্দে রহমতের ফেরেশতা থাকে না, সেখানে যদি আধুনিক জমিন কাঁপানো বাদ্যযন্ত্র বাজে, সেই গৃহে কীভাবে আলস্নাহর রহমত থাকতে পারে? জ্ঞাতব্য যে, আপনার স্ত্রীকে আপনি আপনার জন্য নূপুর পরাতে পারেন। তবে তা অবশ্যই ঘুঙুরমুক্ত হতে হবে।
পাপের অংশীদার হতে হবে :
আপনার নির্বাচিত স্ত্রী আপনার অধীনে থেকে অশস্নীল ছবি, নাটকের সিরিয়াল, বিভিন্ন নগ্ন-অর্ধনগ্ন নৃত্য, গান ইত্যাদি নিয়ে নিমগ্ন থেকে যে পাপ করবে; তার একটা অংশ আপনার আমলনামায়-ও যোগ হবে। কেননা মহান আলস্নাহ বলেন,
﴿وَمَنْ يَّشْفَعْ شَفَاعَةً سَيِّئَةً يَّكُنْ لَّهٗ كِفْلٌ مِّنْهَا﴾
‘‘যে মন্দ কাজের জন্য সুপারিশ করবে, তার জন্য তাতে অংশ আছে’’
(সূরা নিসা ৪ঃ ৮৫)।
উক্ত কর্মে আপনি শুধু সুপারিশই করছেন না, বরং আরো একধাপ এগিয়ে গিয়ে খেতে দিয়ে, পরতে দিয়ে, থাকতে দিয়ে এবং উক্ত যন্ত্রাদি ক্রয় করে দিয়ে সহযোগিতা করছেন। এক্ষেত্রে আপনি কত বড় পাপের সহযোগিতাকারী ভেবে দেখেছেন? সুতরাং উক্ত বৈশিষ্ট্যের নারীর কারণে আপনাকে পাপের ভাগিদার হতে হবে। কাজেই সাবধান!
মুনাফেকীর সৃষ্টি হবে :
গান-বাজনা, বাদ্যযন্ত্র মানুষের মনে মুনাফেকীর জন্ম দেয়। কাজেই যে নারী গান-বাজনা শুনতে অভ্যসত্ম, তার মধ্যে মুনাফেকীর চরিত্র বিরাজ করাই স্বাভাবিক। ফলে সে আপনার সাথেও মুনাফেকী আচরণ করবে- যা আপনার জন্য কষ্টকর হবে। যার বাসত্মব প্রমাণ আজ শত-শত পরিবারে বিদ্যমান।
পৃথিবীতে আল্লাহর গযব অবতীর্ণ হবে :
আপনার নির্বাচিত স্ত্রী যদি গান-বাজনায় মত্ত থাকে, তাহলে আলস্নাহর পক্ষ থেকে পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের গযব নেমে আসতে পারে। যেমন-
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
لَيَكُوْنَنَّ فِيْ هٰذِهِ الْأُمَّةِ خَسْفٌ وَمَسْخٌ وَقَذْفٌ فِيْ مُتَّخِذِي الْقِيَانِ وَشَارِبِي الْخَمْرِ وَلَابِسِي الْحَرِيْرِ
‘‘অবশ্যই এই উম্মতের মধ্যে ভূমিধ্বস, আসমান থেকে নিক্ষিপ্ত গযব ও দৈহিক আকার আকৃতির রূপামত্মরের শাসিত্মর প্রাদুর্ভাব দেখা দেবে। এসব তখনই ঘটবে যখন তারা মদ পান করবে, গায়িকা গ্রহণ করবে এবং বাদ্যযন্ত্র বাজাবে’’। [তিরমিযি হা: ২১৮৫; সিলসিলা সহীহাহ্ হা: ২২০৩]
আবু মালেক আশ‘আরী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, ‘‘অবশ্যই আমার উম্মতের কিছু লোক তাদের মাথার উপর বাদ্যযন্ত্র বাজাবে ও নর্তকী নাচাবে। আলস্নাহ তাদেরকে মাটিতে ধ্বসিয়ে দেবেন এবং বানর ও শুকরে পরিণত করবেন’’। [সাহিহুল জামে হা: ৫৪৫৪]
কাজেই যে নারীর মাঝে নর্তকী নিয়ে গান-বাজনা শোনা ও দেখার অভ্যাস আছে সে হলো নিজের উপর, পরিবারের উপর ও পৃথিবীর উপর গযব আনয়নকারিণী, শুকর-বানরের মতো নিকৃষ্ট প্রাণীর সাথে তুলনীয়। অতএব এমন বৈশিষ্ট্যের নারী থেকে সাবধান।
১. পর্দাহীন নারী :
মহান আলস্নাহ বলেন,
﴿وَقُلْ لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوْجَهُنَّ وَلَا يُبْدِيْنَ زِيْنَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا﴾
‘‘আর মুমিন নারীদেরকে বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে ও তাদের লজ্জাস্থানকে হেফাযত করে। আর তারা যেন সাধারণভাবে যা প্রকাশ পায় তা ব্যতীত তাদের আবরণ প্রদর্শন না করে’’ (সূরা নূর ২৪ঃ ৩১)।
﴿يَاۤأَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِّأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ الْمُؤْمِنِيْنَ يُدْنِيْنَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيْبِهِنَّ ذٰلِكَ أَدْنٰۤى أَنْ يُّعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا﴾
‘‘হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রীগণ, কন্যাগণ ও মুমিন নারীদেরকে বলে দাও, তারা যেন চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়, এতে তাদেরকে চেনা অধিক সহজ হবে। ফলে তাদের উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু (সূরা আহযাব ৩৩ঃ ৫৯)।
হাদীসে এসেছে,
عَنْ أُمِّ عَطِيَّةَ قَالَتْ أَمَرَنَا رَسُوْلُ اللهِ أَنْ نُخْرِجَهُنَّ فِيْ يَوْمِ الْفِطْرِ وَالنَّحْرِ قَالَ قَالَتْ أُمُّ عَطِيَّةَ فَقُلْنَا أَرَأَيْتَ إِحْدَاهُنَّ لَا يَكُوْنُ لَهَا جِلْبَابٌ قَالَ فَلْتُلْبِسْهَا أُخْتُهَا مِنْ جِلْبَابِهَا
উম্মে আতিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার সালাতে বের হওয়ার নির্দেশ দিলেন। উম্মে আতিয়া বলেন, আমরা বললাম, হে আলস্নাহর রাসুল ﷺ! যদি আমাদের মধ্যে কারো চাদর না থাকে? রাসুল ﷺ বললেন, তার বোন তাকে চাদর পরাবে। [বুখারী হা: ৩৫১; মুসলিম হা: ৮৯০; ইবনু মাজাহ হা: ১৩০৭ আহমাদ হা: ২০৮১২; মিশকাত হা: ১৪৩১]
অতএব যে নারী আলস্নাহর জমিনে থেকে আলস্নাহর চোখের সামনে তাঁরই নির্দেশের অবাধ্যচারী হয়ে বেপর্দায় ঘুরে বেড়ায়; সে তো আপনারও অবাধ্যচারী হবে, যার মধ্যে বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই। আর আপনার অধীনে থেকে যত দিন সে বেপর্দায় ঘুরে পাপ করবে, সেই পাপের ভাগ আপনাকেও নিতে হবে। তাছাড়া আপনার পরিবারটাকেও সে পর্দাহীন পরিবারে পরিণত করতে পারে। কাজেই এমন বৈশিষ্ট্যের নারীকে স্ত্রী বানানোর ক্ষেত্রে সাবধান থাকা জরুরি।
২. ঝগড়াটে :
জগত সংসারে এমন অনেক নারী রয়েছে যারা তাদের স্বামীর সাথে সামান্য বিষয় নিয়ে ঝগড়া-ফাসাদ করে। আর আলস্নাহর কাছে ঝগড়াটে মানুষই সবচেয়ে বেশি ঘৃণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
إنَّ أبْغَضَ الرِّجَالِ إلَى اللهِ الْألَدُّ الْخَصِمُ
‘‘আলস্নাহর নিকট অধিক ঘৃণিত ব্যক্তি সেই, যে অত্যধিক ঝগড়াটে ও অত্যমত্ম কলহ প্রিয়। [বুখারী মা.শা.২য় খন্ড,পৃ.৮৬৭, হা:২৩২৫; মুসলিম ৪র্থ খন্ড, পৃ.২০৫৪, হা:৫-২৬৬৮]
কাজেই ঝগড়াটে নারী থেকে দূরে থাকা চির কল্যাণকর। কারণ সে নিকৃষ্ট গুণের অধিকারিণী এবং সংসারে অশামিত্ম সৃষ্টিকারিণী।
৩. গীবতকারিণী :
আলস্নাহ তা‘আলা গীবত করার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে একে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সাথে তুলনা করেছেন। [সূরা হুজুরাত ৪৯ঃ১২] এতদ্বসত্ত্বেও এক শ্রেণির নারীর বৈশিষ্ট্যই হলো একজনের কাছে আরেকজনের দোষ-ত্রম্নটি বর্ণনা করা বা গীবত করা। কাজেই গীবতকারী নারী থেকে দূরে থাকা জরুরি।
৪. চোগলখোরিণী :
কবরে যেসকল পাপের কারণে শাসিত্ম হয়, তন্মধ্যে অন্যতম একটি পাপ হলো, চোগলখোরী করা। [বুখারী হা: ৬০৫৫; মুসলিম, মিশকাত হা: ৬০৭৫]
একজনের কথা অন্য জনের কাছে বলে উভয়ের মধ্যে ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি করে সম্পর্কের অবনতি ঘটানোই হলো চোগলখোরী। নারীদের মধ্য হতে এক শ্রেণির নারীর নিত্যনৈমত্তিক কর্মই হলো এ কাজের সাথে লেগে থাকা। কাজেই এদের থেকে সাবধান।
৫. ছবি ও মূর্তির প্রতি আকৃষ্ট নারী :
ছবি ও মূর্তি ইসলামে নিষিদ্ধ। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
لَا تَدْخُلُ الْمَلَائِكَةُ بَيْتًا فِيْهِ كَلْبٌ وَلَا صُوْرَةٌ
‘‘ঐ ঘরে (রহমত ও বরকতের) ফেরেশতা প্রবেশ করে না, যে ঘরে কুকুর ও জীব-জন্তুর ছবি থাকে’’। [বুখারী হা:৩২২৫,৩২২৬,৩৩২২,৪৩০২,৪০০২৫৯৪৯,৫৯৫৮; মুসলিম হা:২১০৬; তিরমিযি হা:২৮০৪; আবুদাউদ হা:৪১৫৩; ইবনু মাজাহ হা:৩৬৪৯; আহমাদ হা:১৫৯১০; মুয়াত্তা মালেক ১৮০২]
এতদ্বসত্ত্বেও এক শ্রেণির বোকা নারী তাদের ছেলে-মেয়ের বা নিজেদের ছবি, বাজার থেকে ক্রয়কৃত মূর্তির সাদৃশ্য প্লাস্টিকের পুতুল, খেলনা ইত্যাদি বাড়িতে ঝুলিয়ে রাখে। আবার কেউ কেউ কোমলমতি শিশুদেরকে ছবি ও মূর্তির আর্ট শেখায় বা আর্ট স্কুলে ভর্তি করে বিভিন্ন প্রাণির ছবি আঁকা শেখায়। অথচ রাসূল ﷺ বলেন, ‘কিয়ামতের দিন ছবি ও মূর্তি নির্মাতাদের কঠিন শাসিত্ম দেয়া হবে’। [বুখারী হা:৫৯৫০; মুসলিম হা:২১০৯]
এমন বৈশিষ্ট্যের নারী থেকে সাবধান থাকা আবশ্যক। কারণ তার উক্ত কর্মের কারণে গৃহ থেকে বরকত চলে যাবে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাপ শিরকের সাথে আপনার পরিবার জড়িয়ে পড়বে। ফলে ইহকালে ও পরকালে আপনি ও আপনার পরিবার ক্ষতিগ্রসত্ম হবে।
৬. হিংসুটে নারী :
হিংসা একটি ধ্বংসাত্মক মহাপাপ। যার মধ্যে বিন্দুমাত্র হিংসা-অহংকার আছে, সে জান্নাতে যেতে পারবে না। এ পৃথিবীতে হিংসামুক্ত মানুষ পাওয়া বড়ই দুঃসাধ্য ব্যাপার। নারী জাতির মধ্যে হিংসার ভাবটা অনেকাংশে বেশি আছে বলে মনে হয়। কাজেই যে নারীর মধ্যে হিংসার ভাব আছে বলে মনে করা হয়, তার থেকে দূরে থাকা কল্যাণকর।
৭. অভিশাপকারিণী :
কোন মুসলিমকে অভিশাপ দেয়া একটি কবীরা গুনাহ। অভিশাপ প্রদানকারী নারী জাহান্নামে যাবে বলে হাদীসে উল্লেখ রয়েছে। অথচ অনেক নারীর অভ্যাস হচ্ছে, সন্তানকে গালি-গালাজ করা এবং নানা ধরনের অভিশাপ দেয়া। কাজেই এমন নারীকে স্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করা থেকে দূরে থাকা জরুরি। মনে রাখবেন, সত্যবাদী নারী অভিশাপকারিণী হতে পারে না।
৮. ব্যভিচারিণী :
ব্যভিচার করা একটি মারাত্মক অন্যায়। এটি হচ্ছে মানবজাতিকে ধ্বংস করার জন্য শয়তানের মূল হাতিয়ার। শয়তান যখন কোন জাতির অধঃপতন ঘটাতে চায় তখন সে যেকোন মূল্যেই হোক তাদেরকে ব্যভিচারের দিকে ধাবিত করে। এ কারণেই ইসলাম এটিকে হদ্দের আওতাভুক্ত করে দিয়েছে। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿اَلزَّانِيَةُ وَالزَّانِيْ فَاجْلِدُوْا كُلَّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا مِائَةَ جَلْدَةٍ وَّلَا تَأْخُذْكُمْ بِهِمَا رَأْفَةٌ فِيْ دِيْنِ اللهِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ﴾
ব্যভিচারিণী নারী ও ব্যভিচারী পুরম্নষ তাদের প্রত্যেককেই একশত বেত্রাঘাত করবে। আলস্নাহর এ বিধান কার্যকর করণে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে অভিভূত না করে- যদি তোমরা আলস্নাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে থাক। (সূরা নূর ২৪ঃ ২)
তাছাড়া ব্যভিচার ও ব্যভিচারিণীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়াটা হচ্ছে কিয়ামতের একটি আলামত। [বুখারী হা: ৮০,৮১,৬৮০৮, মুসলিম হা: ১৬৭১] আর বর্তমান সমাজও সেদিকেই ধাবিত হচ্ছে। যার কারণে এখন শিক্ষিতা-অশিক্ষিতা, সুন্দরী-অসুন্দরী অনেক নারী পাওয়া যায়; কিন্তু ব্যভিচারমুক্ত নারী পাওয়া খুবই মুশকিল।
অতএব আমাদের উচিত ব্যভিচারী নারীকে বিবাহ করা থেকে বিরত থাকা এবং তাদের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করা।
৯. নগ্ন-অর্ধনগ্ন পোশাক পরিহিতা :
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেন,
وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيْلَاتٌ مَائِلَاتٌ رُءُوْسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ، لَا يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ وَلَا يَجِدْنَ رِيْحَهَا وَإِنَّ رِيْحَهَا لَيُوْجَدُ مِنْ مَسِيْرَةِ كَذَا وَكَذَ
‘‘এমন এক শ্রেণির নারী যারা (এমন নগ্ন-অর্ধনগ্ন) পোশাক পরবে যে, (বাস্তবে) তারা উলঙ্গ থাকবে, (পর পুরম্নষকে) নিজেদের প্রতি আকৃষ্ট করবে ও নিজেরাও (পর পুরম্নষের প্রতি) আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা হবে উটের হেলে যাওয়া কুঁজের মতো। এ ধরনের মহিলা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং তার সুগন্ধও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধ এত এত দূর থেকে পাওয়া যাবে’’। [মুসলিম হা: ২১২৮; আহমাদ হা: ৮৪৫১]
আজ অসংখ্য পিতা-মাতার প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে নগ্ন-অর্ধনগ্ন পোশাক পরে হাট-বাজারে, মার্কেটে, স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেগানা পুরম্নষদের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অথচ রাসূলুল্লাহ ﷺ এ শ্রেণির নারীকে জাহান্নামী বলে উলেস্নখ করেছেন। কাজেই এমন বৈশিষ্ট্যের নারী যতই শিক্ষিত হোক, সুন্দরী হোক, চাকুরিজীবী হোক, সম্পদশালী হোক এদেরকে স্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করার ব্যাপারে সতর্ক থাকা বুদ্ধিমানের কাজ।
১০. সালাত ত্যাগকারিণী :
কুরআন সুন্নাহর দলীলাদি থেকে প্রমাণিত যে, সালাত ত্যাগকারী নারী হোক কিংবা পুরুষ হোক তারা কাফিরদের সমতুল্য। সুতরাং সালাত ত্যাগকারী কোন নারী ঈমানদার পুরুষের স্ত্রী হতে পারে না। কেননা মহান আলস্নাহ বলেন,
﴿وَلَا تَنْكِحُوا الْمُشْرِكَاتِ حَتّٰى يُؤْمِنَّ وَلَأَمَةٌ مُّؤْمِنَةٌ خَيْرٌ مِّنْ مُّشْرِكَةٍ وَّلَوْ أَعْجَبَتْكُمْ﴾
‘‘আর তোমরা মুশরিক নারীদেরকে বিবাহ করো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনবে। অবশ্যই মুসলিম ক্রীতদাসী মুশরিক (সুন্দরী) নারী অপেক্ষা উত্তম। যদিও তাদেরকে তোমাদের ভালো লাগে’’ (সূরা বাকারা ২ঃ ২২১)।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
بَيْنَ الرَّجُلِ وَالْكُفْرِ وَالشِّرْكِ تَرْكُ الصَّلَاةِ
‘‘মুসলিম ও কাফির এবং মুশরিকের মধ্যে পার্থক্য হলো, সালাত পরিত্যাগ করা।’’ [মুসলিম ‘কিতাবুল ঈমান’ হা:১১৬]
কাজেই যে নারী সালাত আদায় করে না, তার মাঝে ও মুশরিক নারীর মাঝে পার্থক্য কোথায়? সালাত ত্যাগকারিণী নারী যতই সম্পদশালী ও সুন্দরী হোক না কেন, তাদেরকে বিবাহ করা বৈধ নয়, যতক্ষণ না তারা পুরোপুরিভাবে ইসলামে প্রবেশ করে। আফসোসের বিষয় হলো, আজ অসংখ্য মুসলিম পুরম্নষের স্ত্রী সালাত আদায় করে না। আশা করি আপনার স্ত্রী এমন হবে না।
১১. বিলাসিনী :
অতিরিক্ত বিলাসিতা কোন ভালো নারীর গুণ নয়। এটা হলো সর্বনিকৃষ্ট মানুষের গুণ। যেমন মহানবী ﷺ বলেন,
شِرَارُ أُمَّتِيْ قَوْمٌ وُلِدُوْا فِي النَّعِيْمِ وغُذُّوْا بِهٖ يَأْكُلُوْنَ مِنَ الطَّعَامِ أَلْوَانًا يَتَشَدَّقُوْنَ فِي الْكَلَامِ
‘‘আমার উম্মতের সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোক তারা, যারা নিয়ামতের মধ্যে জন্মগ্রহণ করে, নানা রঙের খাদ্য ভক্ষণ করে, নানা রঙের বস্ত্র পরিধান করে অথচ কথায় আলস্য ভাব ও কৌশল প্রকাশ করে। [মু‘জামুল কাবীর লিত- তাবরানী পৃ.১০৭; খন্ড ৮; হা:৭৫১৩]
অন্য বর্ণনায় আছে,
وَيَرْكَبُوْنَ مِنَ الدَّوَابِّ أَلْوَانًا
‘‘তারা নানা রঙের সওয়ারীতে (গাড়িতে) চড়ে’’। [সিলসিলা সহীহাহ হাঃ ১৮৯১]
সুতরাং অতিরিক্ত খাওয়া-পরা ও চলা-ফেরা এই নিকৃষ্ট গুণগুলো যেসকল নারীর মধ্যে আঁচ করা যাবে তাদের থেকে দূরে থাকা জরুরি। কারণ তারাই সৃষ্টির নিকৃষ্ট জীব। উলেস্নখ্য যে, জুতা জোড়া ভালো হওয়া, পোশাক ভালো হওয়া ইত্যাদি দোষের নয়। তবে অবশ্যই তা অহংকারমুক্ত হতে হবে।
১২. বাদ্যযন্ত্র ও গান-বাজনা শুনতে অভ্যসত্ম নারী :
আধুনিক প্রযুক্তির এ যুগে টিভি, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল ইত্যাদি যন্ত্রের ব্যবহার শহর থেকে শুরু করে গ্রামের প্রত্যমত্ম অঞ্চল পর্যমত্ম প্রত্যেক মানুষের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রায় প্রত্যেক মানুষই এ যন্ত্রগুলো ব্যবহার করছে অশস্নীল ছবি দেখা ও গান বাজনা শোনার কাজে। নারীরাও এ ধরনের নোংরা ও ধ্বংসাত্মক কর্ম থেকে দূরে নেই; বরং তারা আরো এ ধরনের কর্মে বেশি অগ্রগামী। অথচ হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ قَالَ : إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ حَرَّمَ الْخَمْرَ وَالْمَيْسِرَ، وَالْكُوْبَةَ
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, নিশ্চয় আলস্নাহ তা‘আলা মদ, জুয়া ও সকল ধরনের বাদ্যযন্ত্র হারাম করেছেন। [বায়হাকী মা.শা. হা: ২১৫১৯, মিশকাত হা: ৪৫০৩]
আবু আমের ও আবু মালিক আল-আশ‘আরী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলেন,
لَيَكُوْنَنَّ مِنْ أُمَّتِىْ أَقْوَامٌ يَسْتَحِلُّوْنَ الزِّنٰى وَالْحَرِيْرَ وَالْخَمْرَ وَالْمَعَازِفَ
অবশ্যই আমার উম্মতের মধ্যে এমন এক সম্প্রদায় হবে, যারা ব্যভিচার, (পুরুষের জন্য) রেশমি পোশাক, মদ পান এবং বাদ্যযন্ত্রকে হালাল মনে করবে (হারাম হওয়া সত্ত্বেও)। [বুখারী হা: ৫৫৯০, মিশকাত হা: ৫৩৪৩; তিরমিযি, দারেমী, সহীহুল জামে‘ হা: ৫৪৬৬]
বাদ্যযন্ত্রের প্রতি আগ্রহী ব্যক্তির জন্য অপমানকর শাসিত্মর কথা উলেস্নখ করে আলস্নাহ বলেন,
﴿وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّشْتَرِيْ لَهْوَ الْحَدِيْثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَّيَتَّخِذَهَا هُزُوًا أُولٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُّهِيْنٌ﴾
‘‘মানুষের মধ্যে এমন কিছু মানুষ আছে যারা অজ্ঞতাবশত অনর্থক কথা অর্থাৎ অশস্নীল গান-বাজনা ক্রয় করে এবং সেটা নিয়ে তামাশা করে। এদের জন্য রয়েছে অপমানজনক শাসিত্ম’’ (সূরা লুকমান ৩১ঃ ৬)।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ قَالَ : الْجَرَسُ مَزَامِيرُ الشَّيْطَانِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেন, ‘ঘণ্টা বা ঘুঙুর শয়তানের বাঁশি’। [মুসলিম হা:২১১৪; আবু দাউদ হা:২৫৫৬]
আব্দুলস্নাহ ইবনে আমর (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, ‘‘অবশ্যই আলস্নাহ আমার উম্মতের জন্য মদ, জুয়া, ঢোল-তবলা এবং বীণা জাতীয় বাদ্যযন্ত্রকে হারাম করেছেন...’’। [সিলসিলা সহীহা হা: ১৭০৮]
অত্র বিবরণ থেকে প্রমাণিত হয় যে, অশস্নীল গান-বাজনা, বাদ্যযন্ত্র, বিভিন্ন টিভি-সিরিয়াল বা চলচ্চিত্র দেখা হারাম এবং পাপের কাজ। কাজেই যে নারী বাদ্যযন্ত্রের প্রতি আগ্রহী ও টিভি দেখতে অভ্যস্ত সে কেমন করে আলস্নাহভীরম্ন মানুষের স্ত্রী হতে পারে? এ শ্রেণির নারী দেশের, সমাজের, জাতির ও স্বামীর জন্য বিপদজনক। এ ধরনের নারীকে স্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করলে আলস্নাহর পক্ষ থেকে নানা গযব নেমে আসতে পারে। যেমন-
গৃহ থেকে আল্লাহর রহমত দূর হবে :
আপনার গৃহে যদি আপনার স্ত্রী বা অন্য কেউ অশস্নীল গান-বাজনা, বাদ্যযন্ত্র বাজায়, তাহলে আপনার গৃহ থেকে রহমত ও বরকত চলে যাবে এবং শয়তান এসে বাসা বাধবে। যেমন- হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : لَا تَصْحَبُ الْمَلَائِكَةُ رُفْقَةً فِيْهَا كَلْبٌ وَلَا جَرَسٌ
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেন, ‘ফেরেশতা সেই কাফেলার সঙ্গী হন না; যে কাফেলায় কুকুর কিংবা ঘুঙুরের শব্দ থাকে’। [মুসলিম হা:২১১৩; তিরমিযি হা:১৭০৩; আবু দাউদ হা:২৫৫৫; আহমাদ ৭৫১২] যেখানে ঘুঙুরের শব্দে রহমতের ফেরেশতা থাকে না, সেখানে যদি আধুনিক জমিন কাঁপানো বাদ্যযন্ত্র বাজে, সেই গৃহে কীভাবে আলস্নাহর রহমত থাকতে পারে? জ্ঞাতব্য যে, আপনার স্ত্রীকে আপনি আপনার জন্য নূপুর পরাতে পারেন। তবে তা অবশ্যই ঘুঙুরমুক্ত হতে হবে।
পাপের অংশীদার হতে হবে :
আপনার নির্বাচিত স্ত্রী আপনার অধীনে থেকে অশস্নীল ছবি, নাটকের সিরিয়াল, বিভিন্ন নগ্ন-অর্ধনগ্ন নৃত্য, গান ইত্যাদি নিয়ে নিমগ্ন থেকে যে পাপ করবে; তার একটা অংশ আপনার আমলনামায়-ও যোগ হবে। কেননা মহান আলস্নাহ বলেন,
﴿وَمَنْ يَّشْفَعْ شَفَاعَةً سَيِّئَةً يَّكُنْ لَّهٗ كِفْلٌ مِّنْهَا﴾
‘‘যে মন্দ কাজের জন্য সুপারিশ করবে, তার জন্য তাতে অংশ আছে’’
(সূরা নিসা ৪ঃ ৮৫)।
উক্ত কর্মে আপনি শুধু সুপারিশই করছেন না, বরং আরো একধাপ এগিয়ে গিয়ে খেতে দিয়ে, পরতে দিয়ে, থাকতে দিয়ে এবং উক্ত যন্ত্রাদি ক্রয় করে দিয়ে সহযোগিতা করছেন। এক্ষেত্রে আপনি কত বড় পাপের সহযোগিতাকারী ভেবে দেখেছেন? সুতরাং উক্ত বৈশিষ্ট্যের নারীর কারণে আপনাকে পাপের ভাগিদার হতে হবে। কাজেই সাবধান!
মুনাফেকীর সৃষ্টি হবে :
গান-বাজনা, বাদ্যযন্ত্র মানুষের মনে মুনাফেকীর জন্ম দেয়। কাজেই যে নারী গান-বাজনা শুনতে অভ্যসত্ম, তার মধ্যে মুনাফেকীর চরিত্র বিরাজ করাই স্বাভাবিক। ফলে সে আপনার সাথেও মুনাফেকী আচরণ করবে- যা আপনার জন্য কষ্টকর হবে। যার বাসত্মব প্রমাণ আজ শত-শত পরিবারে বিদ্যমান।
পৃথিবীতে আল্লাহর গযব অবতীর্ণ হবে :
আপনার নির্বাচিত স্ত্রী যদি গান-বাজনায় মত্ত থাকে, তাহলে আলস্নাহর পক্ষ থেকে পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের গযব নেমে আসতে পারে। যেমন-
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
لَيَكُوْنَنَّ فِيْ هٰذِهِ الْأُمَّةِ خَسْفٌ وَمَسْخٌ وَقَذْفٌ فِيْ مُتَّخِذِي الْقِيَانِ وَشَارِبِي الْخَمْرِ وَلَابِسِي الْحَرِيْرِ
‘‘অবশ্যই এই উম্মতের মধ্যে ভূমিধ্বস, আসমান থেকে নিক্ষিপ্ত গযব ও দৈহিক আকার আকৃতির রূপামত্মরের শাসিত্মর প্রাদুর্ভাব দেখা দেবে। এসব তখনই ঘটবে যখন তারা মদ পান করবে, গায়িকা গ্রহণ করবে এবং বাদ্যযন্ত্র বাজাবে’’। [তিরমিযি হা: ২১৮৫; সিলসিলা সহীহাহ্ হা: ২২০৩]
আবু মালেক আশ‘আরী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, ‘‘অবশ্যই আমার উম্মতের কিছু লোক তাদের মাথার উপর বাদ্যযন্ত্র বাজাবে ও নর্তকী নাচাবে। আলস্নাহ তাদেরকে মাটিতে ধ্বসিয়ে দেবেন এবং বানর ও শুকরে পরিণত করবেন’’। [সাহিহুল জামে হা: ৫৪৫৪]
কাজেই যে নারীর মাঝে নর্তকী নিয়ে গান-বাজনা শোনা ও দেখার অভ্যাস আছে সে হলো নিজের উপর, পরিবারের উপর ও পৃথিবীর উপর গযব আনয়নকারিণী, শুকর-বানরের মতো নিকৃষ্ট প্রাণীর সাথে তুলনীয়। অতএব এমন বৈশিষ্ট্যের নারী থেকে সাবধান।
ভালো মানুষের সাথে ভালো মানুষের মিল হয়। খারাপ মানুষের সাথে খারাপ মানুষের মিল হয়। ধূমপায়ীর সাথে ধূমপায়ীর, চোরের সাথে চোরের, সালাত পরিত্যাগকারীর সাথে সালাত পরিত্যাগকারীর মিল লক্ষ্য করা যায়। পক্ষামত্মরে সালাত আদায়কারীর সাথে সালাত আদায়কারীর, সৎ চরিত্র ব্যক্তির সাথে সৎ চরিত্র ব্যক্তির বন্ধুত্ব লক্ষ্য করা যায়। এ জন্যই আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿اَلزَّانِيْ لَا يَنْكِحُ إِلَّا زَانِيَةً أَوْ مُشْرِكَةً وَّالزَّانِيَةُ لَا يَنْكِحُهَاۤ إِلَّا زَانٍ أَوْ مُشْرِكٌ وَّحُرِّمَ ذٰلِكَ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ﴾
‘‘ব্যভিচারী বিয়ে করে না ব্যভিচারিণী বা মুশরিকা নারী ছাড়া। আর ব্যভিচারিণী বিয়ে করে না ব্যভিচারী বা মুশরিক ছাড়া। কিমত্মু মুমিনদের জন্য এটা হারাম করা হয়েছে’’ (সূরা নূর ২৪: ৩)।
﴿اَلْخَبِيْثَاتُ لِلْخَبِيْثِيْنَ وَالْخَبِيْثُوْنَ لِلْخَبِيْثَاتِ وَالطَّيِّبَاتُ لِلطَّيِّبِيْنَ وَالطَّيِّبُوْنَ لِلطَّيِّبَاتِ﴾
‘‘চরিত্রহীন নারী চরিত্রহীন পুরম্নষের জন্য, আর চরিত্রহীন পুরম্নষ চরিত্রহীন নারীর জন্য। চরিত্রবান নারী চরিত্রবান পুরম্নষের জন্য, আর চরিত্রবান পুরম্নষ চরিত্রবান নারীর জন্য’’ (সূরা নূর ২৪: ২৬)।
অতএব বলা যায় যে, ভালো স্ত্রী পেতে চাইলে আপনার মধ্যে ভালো গুণের সমাবেশ ঘটাতে হবে।
﴿اَلزَّانِيْ لَا يَنْكِحُ إِلَّا زَانِيَةً أَوْ مُشْرِكَةً وَّالزَّانِيَةُ لَا يَنْكِحُهَاۤ إِلَّا زَانٍ أَوْ مُشْرِكٌ وَّحُرِّمَ ذٰلِكَ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ﴾
‘‘ব্যভিচারী বিয়ে করে না ব্যভিচারিণী বা মুশরিকা নারী ছাড়া। আর ব্যভিচারিণী বিয়ে করে না ব্যভিচারী বা মুশরিক ছাড়া। কিমত্মু মুমিনদের জন্য এটা হারাম করা হয়েছে’’ (সূরা নূর ২৪: ৩)।
﴿اَلْخَبِيْثَاتُ لِلْخَبِيْثِيْنَ وَالْخَبِيْثُوْنَ لِلْخَبِيْثَاتِ وَالطَّيِّبَاتُ لِلطَّيِّبِيْنَ وَالطَّيِّبُوْنَ لِلطَّيِّبَاتِ﴾
‘‘চরিত্রহীন নারী চরিত্রহীন পুরম্নষের জন্য, আর চরিত্রহীন পুরম্নষ চরিত্রহীন নারীর জন্য। চরিত্রবান নারী চরিত্রবান পুরম্নষের জন্য, আর চরিত্রবান পুরম্নষ চরিত্রবান নারীর জন্য’’ (সূরা নূর ২৪: ২৬)।
অতএব বলা যায় যে, ভালো স্ত্রী পেতে চাইলে আপনার মধ্যে ভালো গুণের সমাবেশ ঘটাতে হবে।
নারী যত বড়ই শিক্ষিত, চাকুরিজীবী বা সম্পদশালী হোক না কেন তার প্রশামিত্মময় জীবনের জন্য বিবাহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা স্বামী-স্ত্রী একে অপরের জন্য আলস্নাহর পক্ষ থেকে নিয়ামতস্বরূপ। পরস্পর রেলের দু’টি চাকার ন্যায়। যার একটি ছাড়া অপরটি নিয়ে তা চলতে পারে না। কিন্তু উপযুক্ত স্বামী নির্বাচন করতে না পারলে নারীর দাম্পত্য জীবনে নেমে আসে দুঃখ, জ্বালা-যন্ত্রণা, বঞ্চনা, শারীরিক নির্যাতন ইত্যাদি। এক্ষেত্রে রাসূল ﷺ এর এ বাণী স্মরণ রাখা ভালো হবে-
تَخَيِّرُوا لِنُطَفِكُمْ وَأَنْكِحُوا الْأَكْفَاءَ وَأَنْكِحُوا إِلَيْهِمْ
তোমরা তোমাদের বংশধরদের জন্য উত্তম পাত্র নির্বাচন করো। উপযুক্ত বিবাহ করো এবং উপযুক্ত বিবাহ দাও। [সিলসিলাহ ছহীহাহ হা:১০৬৭, দারে কুতনী পৃ.৪৫৮; ৪র্থ খন্ড হা:৩৭৮৮]
তাই একজন নারীকে এমন স্বামী নির্বাচন করতে হবে, যিনি হবেন দ্বীনদার, আমানতদার, জ্ঞানী, স্ত্রীর হক আদায়কারী ইত্যাদি গুণের অধিকারী।
হে মুসলিম রমণীগণ! শরীয়তসম্মত পন্থায় আপনার গৃহীত স্বামী এমন হওয়া উচিত, যে হবে নেশাদার দ্রব্য পান হতে মুক্ত, সুদমুক্ত উপার্জনকারী, সালাতসহ আলস্নাহর অন্যান্য বিধান পালনকারী। মনে রাখবেন! দ্বীনদার, চরিত্রবান ব্যতীত আভিজাত্য, নাম করা বংশ, যশ-খ্যাতি ও সম্পদ বিবেচনা করে স্বামী গ্রহণ করলে দাম্পত্য জীবনে সুখ-শামিত্মর পরিবর্তে দুঃখ-কষ্ট ও অশামিত্ম নেমে আসতে পারে।
تَخَيِّرُوا لِنُطَفِكُمْ وَأَنْكِحُوا الْأَكْفَاءَ وَأَنْكِحُوا إِلَيْهِمْ
তোমরা তোমাদের বংশধরদের জন্য উত্তম পাত্র নির্বাচন করো। উপযুক্ত বিবাহ করো এবং উপযুক্ত বিবাহ দাও। [সিলসিলাহ ছহীহাহ হা:১০৬৭, দারে কুতনী পৃ.৪৫৮; ৪র্থ খন্ড হা:৩৭৮৮]
তাই একজন নারীকে এমন স্বামী নির্বাচন করতে হবে, যিনি হবেন দ্বীনদার, আমানতদার, জ্ঞানী, স্ত্রীর হক আদায়কারী ইত্যাদি গুণের অধিকারী।
হে মুসলিম রমণীগণ! শরীয়তসম্মত পন্থায় আপনার গৃহীত স্বামী এমন হওয়া উচিত, যে হবে নেশাদার দ্রব্য পান হতে মুক্ত, সুদমুক্ত উপার্জনকারী, সালাতসহ আলস্নাহর অন্যান্য বিধান পালনকারী। মনে রাখবেন! দ্বীনদার, চরিত্রবান ব্যতীত আভিজাত্য, নাম করা বংশ, যশ-খ্যাতি ও সম্পদ বিবেচনা করে স্বামী গ্রহণ করলে দাম্পত্য জীবনে সুখ-শামিত্মর পরিবর্তে দুঃখ-কষ্ট ও অশামিত্ম নেমে আসতে পারে।
প্রেম করে স্ত্রী গ্রহণ করা আদৌ কোন ভালো মানুষের বৈশিষ্ট্য নয়। বর্তমান যুগে শত শত যুবক প্রেম করে স্ত্রী গ্রহণ করছে। মেয়েকে প্রেমের জালে বেঁধে ঘর ছাড়া করে অভিভাবকের অনুমতি ছাড়াই কোর্টে গিয়ে কিংবা কাজী অফিসে গিয়ে বন্ধু-বান্ধবীকে অথবা দূর আত্মীয়কে অভিভাবক সাজিয়ে বিবাহ সম্পন্ন করছে- যা আদৌ ঠিক নয়। এভাবে বিবাহ সম্পন্ন করার পর ছেলে এবং মেয়ে অর্থাৎ প্রেমিক এবং প্রেমিকা দাম্পত্য জীবন শুরু করলে তাদের উপর ততদিন পর্যন্ত ব্যভিচারের পাপ হতে থাকবে, যতদিন পর্যমত্ম তারা অভিভাবকের অনুমতি না নিয়ে পুনরায় বিবাহ সম্পন্ন করবে এবং দাম্পত্য জীবন শুরু করবে। কেননা মেয়ের পিতা বা অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিবাহ হয় না। যেমন-
আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ বলেছেন,
لَا نِكَاحَ إِلَّا بِوَلِيٍّ
‘অভিভাবক ছাড়া বিয়ে হয় না’। [তিরমিযি হু.আ. হা:১১০১, আহমাদ, ইবনু মাজাহ ১৮৮১, দায়েমী, মিশকাত হাঃ ৩১৩০]
রাসূল ﷺ বলেছেন,
أَيُّمَا امْرَأَةٍ نَكَحَتْ بِغَيْرِ إِذْنِ وَلِيِّهَا فَنِكَاحُهَا بَاطِلٌ فَنِكَاحُهَا بَاطِلٌ فَنِكَاحُهَا بَاطِلٌ فَإِنْ دَخَلَ بِهَا فَالْمَهْرُ لَهَا بِمَا أَصَابَ مِنْهَا فَإِنْ تَشَاجَرُوْا فَالسُّلْطَانُ وَلِيُّ مَنْ لَا وَلِيَّ لَهٗ
‘যদি কোন নারী তার অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করে, তবে তার বিয়ে বাতিল, বাতিল, বাতিল। এরূপ অবৈধ পন্থায় বিবাহিত নারীর সাথে স্বামী সহবাস করলে তাকে মোহর দিতে হবে। কারণ স্বামী মোহরের বিনিময়ে তার লজ্জাস্থানকে ব্যবহার করেছে। যদি অভিভাবকগণ বিবাদ করেন, তবে যার অভিভাবক নেই তার অভিভাবক দেশের শাসক’। [তিরমিযি হা:১১০২, আবু দাউদ, ইবনু মাজাহ, ইবনু হিববান, হাকেম, মিশকাত হাঃ ৩১৩১]
অত্র হাদীসদ্বয় থেকে প্রমাণিত হয় ঐ বিবাহ বাতিল হবে যাতে অভিভাবকের অনুমতি থাকে না।
জ্ঞাতব্য যে, মেয়ের মাতা বা অন্য কোন মহিলার অভিভাবকত্বে বিবাহ বৈধ হবে না। [আয-যিওয়াজ ইবনে উসাইমীন ১৬ পৃ.]
আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ বলেছেন,
لَا نِكَاحَ إِلَّا بِوَلِيٍّ
‘অভিভাবক ছাড়া বিয়ে হয় না’। [তিরমিযি হু.আ. হা:১১০১, আহমাদ, ইবনু মাজাহ ১৮৮১, দায়েমী, মিশকাত হাঃ ৩১৩০]
রাসূল ﷺ বলেছেন,
أَيُّمَا امْرَأَةٍ نَكَحَتْ بِغَيْرِ إِذْنِ وَلِيِّهَا فَنِكَاحُهَا بَاطِلٌ فَنِكَاحُهَا بَاطِلٌ فَنِكَاحُهَا بَاطِلٌ فَإِنْ دَخَلَ بِهَا فَالْمَهْرُ لَهَا بِمَا أَصَابَ مِنْهَا فَإِنْ تَشَاجَرُوْا فَالسُّلْطَانُ وَلِيُّ مَنْ لَا وَلِيَّ لَهٗ
‘যদি কোন নারী তার অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করে, তবে তার বিয়ে বাতিল, বাতিল, বাতিল। এরূপ অবৈধ পন্থায় বিবাহিত নারীর সাথে স্বামী সহবাস করলে তাকে মোহর দিতে হবে। কারণ স্বামী মোহরের বিনিময়ে তার লজ্জাস্থানকে ব্যবহার করেছে। যদি অভিভাবকগণ বিবাদ করেন, তবে যার অভিভাবক নেই তার অভিভাবক দেশের শাসক’। [তিরমিযি হা:১১০২, আবু দাউদ, ইবনু মাজাহ, ইবনু হিববান, হাকেম, মিশকাত হাঃ ৩১৩১]
অত্র হাদীসদ্বয় থেকে প্রমাণিত হয় ঐ বিবাহ বাতিল হবে যাতে অভিভাবকের অনুমতি থাকে না।
জ্ঞাতব্য যে, মেয়ের মাতা বা অন্য কোন মহিলার অভিভাবকত্বে বিবাহ বৈধ হবে না। [আয-যিওয়াজ ইবনে উসাইমীন ১৬ পৃ.]
শরীয়তসম্মতভাবে পাত্রী নির্বাচিত হয়েছে কি না কাজী বা ইমাম সাহেব তার খোঁজ নেবেন। অতঃপর সহীহ হাদীসসম্মত খুতবা পাঠ করবেন। খুতবায় উলেস্নখিত আয়াতগুলোর ব্যাখ্যা বুঝিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবেন। অতঃপর মেয়ের পিতা বা অভিভাবক বরের সামনে দু’জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে বলবেন, ‘‘আমার মেয়ে অমুককে এত টাকা দেনমোহরের বিনিময়ে তোমার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করতে ইচ্ছুক; তুমি তাকে স্ত্রী হিসেবে কবুল করো।’’ তখন ‘বর’ মেয়ের দু’জন সাক্ষীকে শুনিয়ে বলবে, ‘‘আমি কবুল করলাম।’’ এরূপ তিনবার বলা ভাল। এরপর সকলে বর ও কনের উদ্দেশ্যে একাকী এই দু‘আ করবে,
بَارَكَ اللهُ فِيْكَ وَبَارَكَ عَلَيْكَ وَجَمَعَ بَيْنَكُمَا فِيْ خَيْرٍ
‘আলস্নাহ আপনার প্রতি বরকত দান করুন, আপনাকে প্রাচুর্য দান করুন এবং আপনাদের উভয়কে মঙ্গলের মাঝে একত্রিত করুন। [তিরমিযি হা:১০৯১; ইবনু মাজাহ হা:২৯০৫]
উক্ত দু‘আ একাকীই করতে হবে; সকলে মিলে হাত তুলে নয়।
স্মরণ রেখো হে যুবক! এমন কিছু লোক যেন তোমার বিবাহের সাথে যায়, যারা তোমার জন্য উক্ত কল্যাণের দু‘আ করতে পারে। তারা নয়, যারা খাবারের দুর্নাম করে, যে নারীরা নগ্ন হয়ে চলে এবং যাদের উপর বোম মারলেও একটি দু‘আ বের হবে না।
তাদেরকে কেন তুমি সাথে নিচ্ছ? আর এ কথা প্রসিদ্ধ যে, বিবাহকে কেন্দ্র করে যত খরচ হয় সেই খরচ তোমার বহন করা উচতি। কাজেই কনের বাড়িতে এত এত লোক নেয়ার সুযোগ কোথায়?
হে যুবক! তোমার বিবাহকে কেন্দ্র করে যত মানুষ তোমার দাওয়াতে পাপ করবে তার একটি অংশের ভাগীদার তোমাকেও হতে হবে।বর্তমানে বিবাহকে কেন্দ্র করে যুবক-যুবতী, কিশোর-কিশোরী, দূর আত্মীয় নিকটাত্মীয় প্রায় সকল শ্রেণির মানুষই বিভিন্ন পাপের সাথে মারাত্মকভাবে জড়িয়ে পড়ছে। তোমার বিবাহকে কেন্দ্র করে যদি তোমার বাড়িতে গান-বাজনা, বাদ্যযন্ত্র ও নৃত্যের আয়োজন করা হয়, নগ্ন-অর্ধনগ্ন সজ্জিতা নারীর সমাগম লক্ষ্য করা যায়, তাহলে এ সকল কর্মকান্ডের পাপের ভাগীদার নিশ্চিতভাবে তোমাকেও হতে হবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
لَا تُقْتَلُ نَفْسٌ ظُلْمًا إِلَّا كَانَ عَلَى ابْنِ اٰدَمَ الْأَوَّلِ كِفْلٌ مِّنْ دَمِهَا لِأَنَّهٗ أَوَّلُ مَنْ سَنَّ الْقَتْلَ
‘‘অন্যায়ভাবে কোন মানুষকে হত্যা করা হলে তার খুনের (পাপের) একটি অংশ আদমের প্রথম পুত্রের আমল নামায়-ও যুক্ত হয়। কেননা সে-ই প্রথম হত্যাকান্ডের সূচনা করেছে’’। [বুখারী হাঃ ৩৩৩৫, মুসলিম হা:২৮/৭ হা:১৬৭৭, তিরমিযী, আহমাদ ৩৬৩০, ইবনু মাজাহ,ই.ফা.৩০৯৭ মিশকাত হা:২১১]
অন্যায়ভাবে হত্যাকান্ডের সূচনা করার কারণে যদি কাবিলের আমলনামায় পাপের একটা অংশ লেখা হয়, তাহলে তোমার বিবাহকে ঘিরে নারী পুরুষের অবাধ সমাগম, যেনার সুযোগ, গান-বাজনা, বাদ্য-যন্ত্র বাজানোর হিড়িক ইত্যাদি এসব অন্যায় কর্মে যত পাপ হবে তার একটা অংশ তোমার আমলনামায় কি যোগ হবে না? হবেই সুনিশ্চিত। তবে হ্যাঁ, তুমি যদি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে থাক তাহলে ভিন্ন কথা।
মনে রাখবে, বিবাহ তোমার; আর তুমি যদি এ সমসত্ম পাপের ব্যাপারে কঠোর হও, তাহলে কোন পাপাচারমূলক কর্মই সংগঠিত হবে না।
بَارَكَ اللهُ فِيْكَ وَبَارَكَ عَلَيْكَ وَجَمَعَ بَيْنَكُمَا فِيْ خَيْرٍ
‘আলস্নাহ আপনার প্রতি বরকত দান করুন, আপনাকে প্রাচুর্য দান করুন এবং আপনাদের উভয়কে মঙ্গলের মাঝে একত্রিত করুন। [তিরমিযি হা:১০৯১; ইবনু মাজাহ হা:২৯০৫]
উক্ত দু‘আ একাকীই করতে হবে; সকলে মিলে হাত তুলে নয়।
স্মরণ রেখো হে যুবক! এমন কিছু লোক যেন তোমার বিবাহের সাথে যায়, যারা তোমার জন্য উক্ত কল্যাণের দু‘আ করতে পারে। তারা নয়, যারা খাবারের দুর্নাম করে, যে নারীরা নগ্ন হয়ে চলে এবং যাদের উপর বোম মারলেও একটি দু‘আ বের হবে না।
তাদেরকে কেন তুমি সাথে নিচ্ছ? আর এ কথা প্রসিদ্ধ যে, বিবাহকে কেন্দ্র করে যত খরচ হয় সেই খরচ তোমার বহন করা উচতি। কাজেই কনের বাড়িতে এত এত লোক নেয়ার সুযোগ কোথায়?
হে যুবক! তোমার বিবাহকে কেন্দ্র করে যত মানুষ তোমার দাওয়াতে পাপ করবে তার একটি অংশের ভাগীদার তোমাকেও হতে হবে।বর্তমানে বিবাহকে কেন্দ্র করে যুবক-যুবতী, কিশোর-কিশোরী, দূর আত্মীয় নিকটাত্মীয় প্রায় সকল শ্রেণির মানুষই বিভিন্ন পাপের সাথে মারাত্মকভাবে জড়িয়ে পড়ছে। তোমার বিবাহকে কেন্দ্র করে যদি তোমার বাড়িতে গান-বাজনা, বাদ্যযন্ত্র ও নৃত্যের আয়োজন করা হয়, নগ্ন-অর্ধনগ্ন সজ্জিতা নারীর সমাগম লক্ষ্য করা যায়, তাহলে এ সকল কর্মকান্ডের পাপের ভাগীদার নিশ্চিতভাবে তোমাকেও হতে হবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
لَا تُقْتَلُ نَفْسٌ ظُلْمًا إِلَّا كَانَ عَلَى ابْنِ اٰدَمَ الْأَوَّلِ كِفْلٌ مِّنْ دَمِهَا لِأَنَّهٗ أَوَّلُ مَنْ سَنَّ الْقَتْلَ
‘‘অন্যায়ভাবে কোন মানুষকে হত্যা করা হলে তার খুনের (পাপের) একটি অংশ আদমের প্রথম পুত্রের আমল নামায়-ও যুক্ত হয়। কেননা সে-ই প্রথম হত্যাকান্ডের সূচনা করেছে’’। [বুখারী হাঃ ৩৩৩৫, মুসলিম হা:২৮/৭ হা:১৬৭৭, তিরমিযী, আহমাদ ৩৬৩০, ইবনু মাজাহ,ই.ফা.৩০৯৭ মিশকাত হা:২১১]
অন্যায়ভাবে হত্যাকান্ডের সূচনা করার কারণে যদি কাবিলের আমলনামায় পাপের একটা অংশ লেখা হয়, তাহলে তোমার বিবাহকে ঘিরে নারী পুরুষের অবাধ সমাগম, যেনার সুযোগ, গান-বাজনা, বাদ্য-যন্ত্র বাজানোর হিড়িক ইত্যাদি এসব অন্যায় কর্মে যত পাপ হবে তার একটা অংশ তোমার আমলনামায় কি যোগ হবে না? হবেই সুনিশ্চিত। তবে হ্যাঁ, তুমি যদি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে থাক তাহলে ভিন্ন কথা।
মনে রাখবে, বিবাহ তোমার; আর তুমি যদি এ সমসত্ম পাপের ব্যাপারে কঠোর হও, তাহলে কোন পাপাচারমূলক কর্মই সংগঠিত হবে না।
বরকতময় বিবাহের কথা উলেস্নখ করে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
خَيْرُ النِّكَاحِ أَيْسَرُهٗ
‘‘সবচেয়ে কল্যাণকর বা বরকতময় বিবাহ হলো, যে বিবাহের খরচ সবচেয়ে কম’’। [আবু দাউদ হাঃ ১৮৪২, সিলসিলা সহীহা হাঃ ১৮৪২]
মহানবী ﷺ বলেছেন,
مِنْ يُّمْنِ الْمَرْأَةِ أَنْ يَّتَيَسَّرَ خِطْبَتَهَا وَأَنْ يَّتَيَسَّرَ صِدَاقَهَا وَأَنْ يَّتَيَسَّرَ رَحِمَهَا
‘‘নারীর অন্যতম বরকত এই যে, তার পয়গাম সহজ হবে, তার মোহর স্বল্প হবে এবং তার গর্ভাশয় সমত্মানময় হবে’’। [সহীহুল জামে’ হাঃ ২২৩৫]
হে যুবক! আপনার বিবাহের গাড়ি সাজাতে পাঁচ হাজার টাকা, অপ্রয়োজনীয় সংখ্যক যাত্রী নিতে ৫০ হাজার টাকা, মোহর বাবদ ২ লক্ষ টাকা যে খরচ হলো, এখন আপনি বলুন- আপনার বিবাহের বরকত আছে কী? এত টাকা খরচ করে বিবাহ করলেন, আপনার দাম্পত্য জীবন তাসের ঘরে পরিণত হবে না তো? বিবাহে বরকত আনয়ন করতে হলে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কথা মেনে নিতে হবে। অর্থাৎ কম খরচে বিবাহ সম্পন্ন করতে হবে।
خَيْرُ النِّكَاحِ أَيْسَرُهٗ
‘‘সবচেয়ে কল্যাণকর বা বরকতময় বিবাহ হলো, যে বিবাহের খরচ সবচেয়ে কম’’। [আবু দাউদ হাঃ ১৮৪২, সিলসিলা সহীহা হাঃ ১৮৪২]
মহানবী ﷺ বলেছেন,
مِنْ يُّمْنِ الْمَرْأَةِ أَنْ يَّتَيَسَّرَ خِطْبَتَهَا وَأَنْ يَّتَيَسَّرَ صِدَاقَهَا وَأَنْ يَّتَيَسَّرَ رَحِمَهَا
‘‘নারীর অন্যতম বরকত এই যে, তার পয়গাম সহজ হবে, তার মোহর স্বল্প হবে এবং তার গর্ভাশয় সমত্মানময় হবে’’। [সহীহুল জামে’ হাঃ ২২৩৫]
হে যুবক! আপনার বিবাহের গাড়ি সাজাতে পাঁচ হাজার টাকা, অপ্রয়োজনীয় সংখ্যক যাত্রী নিতে ৫০ হাজার টাকা, মোহর বাবদ ২ লক্ষ টাকা যে খরচ হলো, এখন আপনি বলুন- আপনার বিবাহের বরকত আছে কী? এত টাকা খরচ করে বিবাহ করলেন, আপনার দাম্পত্য জীবন তাসের ঘরে পরিণত হবে না তো? বিবাহে বরকত আনয়ন করতে হলে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কথা মেনে নিতে হবে। অর্থাৎ কম খরচে বিবাহ সম্পন্ন করতে হবে।
মহান আলস্নাহ বলেন,
﴿حُرِّمَتْ عَلَيْكُمْ أُمَّهَاتُكُمْ وَبَنَاتُكُمْ وَأَخَوَاتُكُمْ وَعَمَّاتُكُمْ وَخَالَاتُكُمْ وَبَنَاتُ الْأَخِ وَبَنَاتُ الْأُخْتِ وَأُمَّهَاتُكُمُ اللَّاتِيْۤ أَرْضَعْنَكُمْ وَأَخَوَاتُكُمْ مِّنَ الرَّضَاعَةِ وَأُمَّهَاتُ نِسَآئِكُمْ وَرَبَآئِبُكُمُ اللَّاتِيْ فِيْ حُجُوْرِكُمْ مِّنْ نِّسَآئِكُمُ اللَّاتِيْ دَخَلْتُمْ بِهِنَّ فَإِنْ لَّمْ تَكُوْنُوْا دَخَلْتُمْ بِهِنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ وَحَلَآئِلُ أَبْنَآئِكُمُ الَّذِيْنَ مِنْ أَصْلَابِكُمْ وَأَنْ تَجْمَعُوْا بَيْنَ الْأُخْتَيْنِ إِلَّا مَا قَدْ سَلَفَ إِنَّ اللهَ كَانَ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا﴾
‘‘তোমাদের জন্য (বিবাহ) হারাম করা হয়েছে, তোমাদের মা এবং মেয়ে, বোন, ফুফু, খালা, ভাইঝি, ভাগিনী, দুধ মা, দুধ বোন, শ্বাশুড়ী, তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যার সাথে সহবাস করেছ তাদের সেসব কন্যা যারা তোমাদের অভিভাবকত্বে তোমাদের ঘরেই আছে, কিন্তু যদি তোমরা তাদের সাথে সহবাস না করে থাক তবে তাদের কন্যাদেরকে বিবাহ করাতে তোমাদের কোন গুনাহ নেই এবং (তোমাদের প্রতি হারাম করা হয়েছে) তোমাদের ঔরসজাত পুত্রের স্ত্রী এবং এক সঙ্গে দু’বোনকে (বিবাহ বন্ধনে) রাখা, পূর্বে যা হয়ে গেছে, তা তো হয়েই গেছে; নিশ্চয় আলস্নাহ পরম ক্ষমাশীল দয়ালু’’ (সূরা নিসা ৪ঃ২৩)।
মা বলতে আপন মা ও সৎ মা উভয়কেই বুঝায়। তাই উভয়ই হারাম। এছাড়া পিতার মা ও মায়ের মা অর্থাৎ দাদী ও নানীও এ হারামের অন্তর্ভুক্ত। নাতনী ও দৌহিত্রীও কন্যার অন্তর্ভুক্ত। সহোদর বোন, বৈপিত্রেয় বোন ও বৈমাত্রেয় বোন- তিনজনই সমানভাবে এ নির্দেশের আওতাধীন। বাপ ও মায়ের সহোদর বোন, বৈপিত্রেয় ও বৈমাত্রেয় যে পর্যায়েরই হোক না কেন তারা অবশ্যই পুত্রের জন্য হারাম। অনুরূপভাবে সহোদর ভাই ও বোন, বৈপিত্রেয় ও বৈমাত্রেয় যেকোন পর্যায়েরই হোক না কেন তাদের কন্যারা নিজের কন্যার মতোই হারাম। একটি ছেলে বা মেয়ে যে স্ত্রীলোকের দুধ পান করে তার জন্য ঐ স্ত্রীলোকটি মায়ের পর্যায়ভুক্ত। আর তার স্বামী বাপের পর্যায়ভুক্ত হয়ে যায়। সুতরাং প্রকৃত পিতা-মাতার সম্পর্কের কারণে যে সমস্ত আত্মীয়তা হারাম হয়ে যায়, দুধ মা ও দুধ বাপের সম্পর্কের কারণেও সেসব আত্মীয়তা তার জন্য হারাম হয়ে যায়। কোন ব্যক্তি যাকে পালকপুত্র হিসেবে গ্রহণ করেছে, তার বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী ঐ ব্যক্তির জন্য হারাম নয়। কেবল নিজের ঔরসজাত পুত্রের স্ত্রীই বাপের জন্য হারাম। এভাবে পুত্রের ন্যায় প্রপুত্র ও দৌহিত্রের স্ত্রীও দাদা ও নানার জন্য হারাম। দুই মহিলার মধ্যে খালা ও ভাগিনী অথবা ফুফু ও ভাইঝির সম্পর্ক হলে তাদেরকে এক সাথে বিয়ে করা হারাম। এ ব্যাপারে একটি মূলনীতি রয়েছে। সেটি হচ্ছে, এমন ধরনের দু’টি মেয়েকে একত্রে বিয়ে করা হারাম, যাদের একজন যদি পুরুষ হতো তাহলে তাদের মধ্যে বিয়ে হারাম হতো।
﴿حُرِّمَتْ عَلَيْكُمْ أُمَّهَاتُكُمْ وَبَنَاتُكُمْ وَأَخَوَاتُكُمْ وَعَمَّاتُكُمْ وَخَالَاتُكُمْ وَبَنَاتُ الْأَخِ وَبَنَاتُ الْأُخْتِ وَأُمَّهَاتُكُمُ اللَّاتِيْۤ أَرْضَعْنَكُمْ وَأَخَوَاتُكُمْ مِّنَ الرَّضَاعَةِ وَأُمَّهَاتُ نِسَآئِكُمْ وَرَبَآئِبُكُمُ اللَّاتِيْ فِيْ حُجُوْرِكُمْ مِّنْ نِّسَآئِكُمُ اللَّاتِيْ دَخَلْتُمْ بِهِنَّ فَإِنْ لَّمْ تَكُوْنُوْا دَخَلْتُمْ بِهِنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ وَحَلَآئِلُ أَبْنَآئِكُمُ الَّذِيْنَ مِنْ أَصْلَابِكُمْ وَأَنْ تَجْمَعُوْا بَيْنَ الْأُخْتَيْنِ إِلَّا مَا قَدْ سَلَفَ إِنَّ اللهَ كَانَ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا﴾
‘‘তোমাদের জন্য (বিবাহ) হারাম করা হয়েছে, তোমাদের মা এবং মেয়ে, বোন, ফুফু, খালা, ভাইঝি, ভাগিনী, দুধ মা, দুধ বোন, শ্বাশুড়ী, তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যার সাথে সহবাস করেছ তাদের সেসব কন্যা যারা তোমাদের অভিভাবকত্বে তোমাদের ঘরেই আছে, কিন্তু যদি তোমরা তাদের সাথে সহবাস না করে থাক তবে তাদের কন্যাদেরকে বিবাহ করাতে তোমাদের কোন গুনাহ নেই এবং (তোমাদের প্রতি হারাম করা হয়েছে) তোমাদের ঔরসজাত পুত্রের স্ত্রী এবং এক সঙ্গে দু’বোনকে (বিবাহ বন্ধনে) রাখা, পূর্বে যা হয়ে গেছে, তা তো হয়েই গেছে; নিশ্চয় আলস্নাহ পরম ক্ষমাশীল দয়ালু’’ (সূরা নিসা ৪ঃ২৩)।
মা বলতে আপন মা ও সৎ মা উভয়কেই বুঝায়। তাই উভয়ই হারাম। এছাড়া পিতার মা ও মায়ের মা অর্থাৎ দাদী ও নানীও এ হারামের অন্তর্ভুক্ত। নাতনী ও দৌহিত্রীও কন্যার অন্তর্ভুক্ত। সহোদর বোন, বৈপিত্রেয় বোন ও বৈমাত্রেয় বোন- তিনজনই সমানভাবে এ নির্দেশের আওতাধীন। বাপ ও মায়ের সহোদর বোন, বৈপিত্রেয় ও বৈমাত্রেয় যে পর্যায়েরই হোক না কেন তারা অবশ্যই পুত্রের জন্য হারাম। অনুরূপভাবে সহোদর ভাই ও বোন, বৈপিত্রেয় ও বৈমাত্রেয় যেকোন পর্যায়েরই হোক না কেন তাদের কন্যারা নিজের কন্যার মতোই হারাম। একটি ছেলে বা মেয়ে যে স্ত্রীলোকের দুধ পান করে তার জন্য ঐ স্ত্রীলোকটি মায়ের পর্যায়ভুক্ত। আর তার স্বামী বাপের পর্যায়ভুক্ত হয়ে যায়। সুতরাং প্রকৃত পিতা-মাতার সম্পর্কের কারণে যে সমস্ত আত্মীয়তা হারাম হয়ে যায়, দুধ মা ও দুধ বাপের সম্পর্কের কারণেও সেসব আত্মীয়তা তার জন্য হারাম হয়ে যায়। কোন ব্যক্তি যাকে পালকপুত্র হিসেবে গ্রহণ করেছে, তার বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী ঐ ব্যক্তির জন্য হারাম নয়। কেবল নিজের ঔরসজাত পুত্রের স্ত্রীই বাপের জন্য হারাম। এভাবে পুত্রের ন্যায় প্রপুত্র ও দৌহিত্রের স্ত্রীও দাদা ও নানার জন্য হারাম। দুই মহিলার মধ্যে খালা ও ভাগিনী অথবা ফুফু ও ভাইঝির সম্পর্ক হলে তাদেরকে এক সাথে বিয়ে করা হারাম। এ ব্যাপারে একটি মূলনীতি রয়েছে। সেটি হচ্ছে, এমন ধরনের দু’টি মেয়েকে একত্রে বিয়ে করা হারাম, যাদের একজন যদি পুরুষ হতো তাহলে তাদের মধ্যে বিয়ে হারাম হতো।
ইসলাম নারীকে দিয়েছে যথাযথ মর্যাদা। ইসলামে নারীর ভরণ-পোষণের যাবতীয় দায়িত্ব রয়েছে পুরুষের উপর। তাই একজন পুরুষকে স্ত্রী গ্রহণ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই তাকে সামর্থবান হতে হবে। আর যাদের সামর্থ নেই তাদের ব্যাপারে আলস্নাহ বলেন,
﴿وَلْيَسْتَعْفِفِ الَّذِيْنَ لَا يَجِدُوْنَ نِكَاحًا حَتّٰى يُغْنِيَهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖ﴾
‘‘যাদের বিয়ে করার সামর্থ নেই তারা যেন সংযমতা অবলম্বন করে, যতক্ষণ না আলস্নাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেন’’ (সূরা নূর ২৪ঃ ৩৩)।
যাদের বিবাহ করার সামর্থ নেই তাদের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
وَمَنْ لَّمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهٗ لَهٗ وِجَاءٌ
‘‘যে (বিয়ের) সামর্থ রাখে না; সে যেন সিয়াম পালন করে। কেননা সিয়ামই যৌন ক্ষমতাকে দমন করে’’। [বুখারী ‘বিবাহের অধ্যায়’ হা: ১৯০৫, ৫০৬৫]
হে সামর্থহীন যুবক! তোমার বিবাহের সামর্থ নেই এজন্য মন খারাপ করো না। জান্নাতের ঐ নারীকে স্ত্রী হিসেবে পাওয়ার জন্য সংযমশীলতার নীতি অবলম্বন করো। যারা এত সুন্দরী হবে যে, তাদের হাড় ও গোশতের উপর দিয়ে (পায়ের) নলার মজ্জা দেখা যাবে। তারা হবে নরম তুলতুলে, মমতাময়ী, প্রেমময়ী, প্রশামিত্মদানকারিণী। হে যুবক! এমন স্ত্রী পাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নাও, যে হবে বিশ্বসুন্দরীদের চেয়েও অত্যধিক সুন্দরী। যেমন রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
لِكُلِّ وَاحِدٍ مِّنْهُمْ زَوْجَتَانِ مِنَ الْحُوْرِ الْعَيْنِ يُرٰى مُخُّ سُوْقِهِنَّ مِنْ وَّرَاءِ الْعَظْمِ وَاللَّحْمِ مِنَ الْحُسْنِ
‘‘তাদের প্রত্যেকের জন্য বিশেষ হুরদের মধ্য থেকে দু’জন দু’জন করে স্ত্রী থাকবে। বেশি সুন্দরী হওয়ার কারণে তাদের হাড় ও গোশতের উপর দিয়ে নলার ভেতরের মজ্জা দেখা যাবে’’। [বুখারী হা: ৩৩২৭, কিতাবুল আম্বিয়া, মুসলিম হা: ২৮৩৪, মিশকাত হা: ৫৬১৯]
অন্যত্র রাসূলুল্লাহ ﷺ ঐ সকল স্ত্রীদের সৌন্দর্যের কথা উলেস্নখ করে বলেন,
وَلَوْ أَنَّ امْرَأَةً مِّنْ نِّسَاءِ أَهْلِ الْجَنَّةِ اطَّلَعَتْ إِلَى الْأَرْضِ لَأَضَاءَتْ مَا بَيْنَهُمَا
‘‘যদি জান্নাতী কোন নারী দুনিয়াবাসীর দিকে তাকাত, তাহলে দুনিয়াতে যা আছে সব আলোকিত হয়ে যেত’’। [বুখারী হা: ৬৫৬৮,৬১৯৯; কিতাবুল জিহাদ; হুরদের গুণাবলী, অনুচ্ছেদ, তিরমিযী হা: ১৬৫১]
হে যুবক! এমন বৈশিষ্ট্যের নারীদের জন্য প্রস্তুতি নাও, যাদের সাথে আলস্নাহ স্বয়ং নিজেই তোমাকে বিবাহ দেবেন। আলস্নাহ বলেন,
﴿كَذٰلِكَ وَزَوَّجْنَاهُمْ بِحُوْرٍ عِيْنٍ﴾
‘‘এ রকমই হবে, আর তাদের বিয়ে দিয়ে দেব ডাগর ডাগর সুন্দর উজ্জ্বল চোখওয়ালা হুরদের সাথে’’ (সূরা দুখান ৪৪ঃ ৫৪)।
﴿مُتَّكِئِيْنَ عَلٰى سُرُرٍ مَّصْفُوْفَةٍ وَّزَوَّجْنَاهُمْ بِحُوْرٍ عِيْنٍ﴾
‘‘তারা সারিবদ্ধভাবে সাজানো আসনে হেলান দিয়ে বসবে, আর আমি তাদের বিয়ে দিয়ে দেব সুন্দর বড় বড় উজ্জ্বল চক্ষুবিশিষ্ট হুরদের সাথে’’ (সূরা তূর ৫২ঃ ২০)।
হে যুবক! এমন স্ত্রী গ্রহণের প্রস্তুতি নাও, যে হবে ডিমের ভেতরের কুসুমের চেয়ে নরম ও তুলতুলে, স্বচ্ছ-শুভ্র। যেমন মহান আলস্নাহ বলেন,
﴿وَعِنْدَهُمْ قَاصِرَاتُ الطَّرْفِ عِيْنٌ ‐ كَأَنَّهُنَّ بَيْضٌ مَّكْنُوْنٌ﴾
‘‘তাদের সঙ্গে থাকবে সংযত নয়না, সতীসাধ্বী, ডাগর ডাগর সুন্দর চক্ষুবিশিষ্ট সুন্দরীরা, তারা যেন সযত্নে ঢেকে রাখা ডিম’’ (সূরা আস-সফফাত ৩৭ঃ ৪৮, ৪৯)।
হে যুবক! এমন স্ত্রী গ্রহণের প্রস্তুতি নাও, যে হবে স্ফীতবক্ষের অধিকারিণী। মহান আলস্নাহ বলেন,
﴿إِنَّ لِلْمُتَّقِيْنَ مَفَازًا ‐ حَدَآئِقَ وَأَعْنَابًا ‐ وَكَوَاعِبَ أَتْرَابًا﴾
‘‘মুত্তাকীদের জন্য রয়েছে অবশ্যই সাফল্য, বাগান ও আঙ্গুর এবং এমনসব স্ত্রী যারা হবে সমবয়স্ক স্ফীতবক্ষের অধিকারী’’ (সূরা নাবা ৭৮ঃ ৩১-৩৩)।
ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, كَوَاعِبَ হচ্ছে স্ফীতবক্ষ।
হে যুবক! এমন স্ত্রী গ্রহণের প্রস্তুতি নাও, যে কোন দিন অপবিত্র ও বৃদ্ধা হবে না। আলস্নাহ বলেন,
﴿وَلَهُمْ فِيْهَاۤ أَزْوَاجٌ مُّطَهَّرَةٌ﴾
‘‘সেখানে তাদের জন্য পবিত্র সঙ্গিনী রয়েছে’’ (সূরা বাকারা ২ঃ ২৫)।
অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন,
﴿إِنَّاۤ أَنْشَأْنَاهُنَّ إِنْشَآءً ‐ فَجَعَلْنَاهُنَّ أَبْكَارًا﴾
‘‘আমি তাদেরকে সৃষ্টি করেছি বিশেষরূপে। তাদেরকে করেছি চির কুমারী’’
(সূরা ওয়াকিয়াহ ৫৬ঃ ৩৫-৩৬)।
অর্থাৎ তারা কখনো কুমারীত্ব হারাবে না এবং বৃদ্ধাও হবে না।
হে যুবক! এমন স্ত্রী গ্রহণের প্রস্তুতি নাও, যে কখনো তোমাকে ছেড়ে যাবে না এবং সর্বদা তোমাকে সন্তুষ্ট করে রাখবে। মহান আলস্নাহ বলেন,
﴿وَلَهُمْ فِيْهَاۤ أَزْوَاجٌ مُّطَهَّرَةٌ وَّهُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ﴾
‘‘সেখানে থাকবে তাদের জন্য পবিত্র সঙ্গিনী, তারা সেখানে (তাদের সাথে) চিরস্থায়ী থাকবে’’ (সূরা বাকারা ২ঃ ২৫)।
চিরস্থায়ী এসব স্ত্রীগণ গানের সুরে বলবে, ‘আমরা সেই চিরস্থায়ী রমণী, যারা কখনই মারা যাব না; আমরা সেই নিরাপদ রমণী, যারা কখনো ভয় পাব না; আমরা সেই স্থায়ী বসবাসকারিণী, যারা কখনই চলে যাব না।’
তারা আরো বলবে, ‘‘আমরা চিরদিন থাকব, কখনও ধ্বংস হব না; আমরা সর্বদা সুখে-স্বাচ্ছন্দে বসবাস করব, কখনও দুঃখ-দুশ্চিমত্মায় পতিত হব না। অতএব চির ধন্য তিনি, যার জন্য আমরা এবং আমাদের জন্য যিনি।’’
﴿وَلْيَسْتَعْفِفِ الَّذِيْنَ لَا يَجِدُوْنَ نِكَاحًا حَتّٰى يُغْنِيَهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖ﴾
‘‘যাদের বিয়ে করার সামর্থ নেই তারা যেন সংযমতা অবলম্বন করে, যতক্ষণ না আলস্নাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেন’’ (সূরা নূর ২৪ঃ ৩৩)।
যাদের বিবাহ করার সামর্থ নেই তাদের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
وَمَنْ لَّمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهٗ لَهٗ وِجَاءٌ
‘‘যে (বিয়ের) সামর্থ রাখে না; সে যেন সিয়াম পালন করে। কেননা সিয়ামই যৌন ক্ষমতাকে দমন করে’’। [বুখারী ‘বিবাহের অধ্যায়’ হা: ১৯০৫, ৫০৬৫]
হে সামর্থহীন যুবক! তোমার বিবাহের সামর্থ নেই এজন্য মন খারাপ করো না। জান্নাতের ঐ নারীকে স্ত্রী হিসেবে পাওয়ার জন্য সংযমশীলতার নীতি অবলম্বন করো। যারা এত সুন্দরী হবে যে, তাদের হাড় ও গোশতের উপর দিয়ে (পায়ের) নলার মজ্জা দেখা যাবে। তারা হবে নরম তুলতুলে, মমতাময়ী, প্রেমময়ী, প্রশামিত্মদানকারিণী। হে যুবক! এমন স্ত্রী পাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নাও, যে হবে বিশ্বসুন্দরীদের চেয়েও অত্যধিক সুন্দরী। যেমন রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
لِكُلِّ وَاحِدٍ مِّنْهُمْ زَوْجَتَانِ مِنَ الْحُوْرِ الْعَيْنِ يُرٰى مُخُّ سُوْقِهِنَّ مِنْ وَّرَاءِ الْعَظْمِ وَاللَّحْمِ مِنَ الْحُسْنِ
‘‘তাদের প্রত্যেকের জন্য বিশেষ হুরদের মধ্য থেকে দু’জন দু’জন করে স্ত্রী থাকবে। বেশি সুন্দরী হওয়ার কারণে তাদের হাড় ও গোশতের উপর দিয়ে নলার ভেতরের মজ্জা দেখা যাবে’’। [বুখারী হা: ৩৩২৭, কিতাবুল আম্বিয়া, মুসলিম হা: ২৮৩৪, মিশকাত হা: ৫৬১৯]
অন্যত্র রাসূলুল্লাহ ﷺ ঐ সকল স্ত্রীদের সৌন্দর্যের কথা উলেস্নখ করে বলেন,
وَلَوْ أَنَّ امْرَأَةً مِّنْ نِّسَاءِ أَهْلِ الْجَنَّةِ اطَّلَعَتْ إِلَى الْأَرْضِ لَأَضَاءَتْ مَا بَيْنَهُمَا
‘‘যদি জান্নাতী কোন নারী দুনিয়াবাসীর দিকে তাকাত, তাহলে দুনিয়াতে যা আছে সব আলোকিত হয়ে যেত’’। [বুখারী হা: ৬৫৬৮,৬১৯৯; কিতাবুল জিহাদ; হুরদের গুণাবলী, অনুচ্ছেদ, তিরমিযী হা: ১৬৫১]
হে যুবক! এমন বৈশিষ্ট্যের নারীদের জন্য প্রস্তুতি নাও, যাদের সাথে আলস্নাহ স্বয়ং নিজেই তোমাকে বিবাহ দেবেন। আলস্নাহ বলেন,
﴿كَذٰلِكَ وَزَوَّجْنَاهُمْ بِحُوْرٍ عِيْنٍ﴾
‘‘এ রকমই হবে, আর তাদের বিয়ে দিয়ে দেব ডাগর ডাগর সুন্দর উজ্জ্বল চোখওয়ালা হুরদের সাথে’’ (সূরা দুখান ৪৪ঃ ৫৪)।
﴿مُتَّكِئِيْنَ عَلٰى سُرُرٍ مَّصْفُوْفَةٍ وَّزَوَّجْنَاهُمْ بِحُوْرٍ عِيْنٍ﴾
‘‘তারা সারিবদ্ধভাবে সাজানো আসনে হেলান দিয়ে বসবে, আর আমি তাদের বিয়ে দিয়ে দেব সুন্দর বড় বড় উজ্জ্বল চক্ষুবিশিষ্ট হুরদের সাথে’’ (সূরা তূর ৫২ঃ ২০)।
হে যুবক! এমন স্ত্রী গ্রহণের প্রস্তুতি নাও, যে হবে ডিমের ভেতরের কুসুমের চেয়ে নরম ও তুলতুলে, স্বচ্ছ-শুভ্র। যেমন মহান আলস্নাহ বলেন,
﴿وَعِنْدَهُمْ قَاصِرَاتُ الطَّرْفِ عِيْنٌ ‐ كَأَنَّهُنَّ بَيْضٌ مَّكْنُوْنٌ﴾
‘‘তাদের সঙ্গে থাকবে সংযত নয়না, সতীসাধ্বী, ডাগর ডাগর সুন্দর চক্ষুবিশিষ্ট সুন্দরীরা, তারা যেন সযত্নে ঢেকে রাখা ডিম’’ (সূরা আস-সফফাত ৩৭ঃ ৪৮, ৪৯)।
হে যুবক! এমন স্ত্রী গ্রহণের প্রস্তুতি নাও, যে হবে স্ফীতবক্ষের অধিকারিণী। মহান আলস্নাহ বলেন,
﴿إِنَّ لِلْمُتَّقِيْنَ مَفَازًا ‐ حَدَآئِقَ وَأَعْنَابًا ‐ وَكَوَاعِبَ أَتْرَابًا﴾
‘‘মুত্তাকীদের জন্য রয়েছে অবশ্যই সাফল্য, বাগান ও আঙ্গুর এবং এমনসব স্ত্রী যারা হবে সমবয়স্ক স্ফীতবক্ষের অধিকারী’’ (সূরা নাবা ৭৮ঃ ৩১-৩৩)।
ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, كَوَاعِبَ হচ্ছে স্ফীতবক্ষ।
হে যুবক! এমন স্ত্রী গ্রহণের প্রস্তুতি নাও, যে কোন দিন অপবিত্র ও বৃদ্ধা হবে না। আলস্নাহ বলেন,
﴿وَلَهُمْ فِيْهَاۤ أَزْوَاجٌ مُّطَهَّرَةٌ﴾
‘‘সেখানে তাদের জন্য পবিত্র সঙ্গিনী রয়েছে’’ (সূরা বাকারা ২ঃ ২৫)।
অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন,
﴿إِنَّاۤ أَنْشَأْنَاهُنَّ إِنْشَآءً ‐ فَجَعَلْنَاهُنَّ أَبْكَارًا﴾
‘‘আমি তাদেরকে সৃষ্টি করেছি বিশেষরূপে। তাদেরকে করেছি চির কুমারী’’
(সূরা ওয়াকিয়াহ ৫৬ঃ ৩৫-৩৬)।
অর্থাৎ তারা কখনো কুমারীত্ব হারাবে না এবং বৃদ্ধাও হবে না।
হে যুবক! এমন স্ত্রী গ্রহণের প্রস্তুতি নাও, যে কখনো তোমাকে ছেড়ে যাবে না এবং সর্বদা তোমাকে সন্তুষ্ট করে রাখবে। মহান আলস্নাহ বলেন,
﴿وَلَهُمْ فِيْهَاۤ أَزْوَاجٌ مُّطَهَّرَةٌ وَّهُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ﴾
‘‘সেখানে থাকবে তাদের জন্য পবিত্র সঙ্গিনী, তারা সেখানে (তাদের সাথে) চিরস্থায়ী থাকবে’’ (সূরা বাকারা ২ঃ ২৫)।
চিরস্থায়ী এসব স্ত্রীগণ গানের সুরে বলবে, ‘আমরা সেই চিরস্থায়ী রমণী, যারা কখনই মারা যাব না; আমরা সেই নিরাপদ রমণী, যারা কখনো ভয় পাব না; আমরা সেই স্থায়ী বসবাসকারিণী, যারা কখনই চলে যাব না।’
তারা আরো বলবে, ‘‘আমরা চিরদিন থাকব, কখনও ধ্বংস হব না; আমরা সর্বদা সুখে-স্বাচ্ছন্দে বসবাস করব, কখনও দুঃখ-দুশ্চিমত্মায় পতিত হব না। অতএব চির ধন্য তিনি, যার জন্য আমরা এবং আমাদের জন্য যিনি।’’
প্রশ্ন : ভালো বৈশিষ্ট্যের মেয়ে পাওয়ার জন্য বিশেষ কোন আমল আছে কি?উত্তর : ভালো বৈশিষ্ট্যের মেয়ে পাওয়ার জন্য বিশেষভাবে আলস্নাহর কাছে দু‘আ করুন এবং খুঁজে বের করার চেষ্টা করম্নন।
প্রশ্ন : ভালো বৈশিষ্ট্যের মেয়ে খুঁজে বের করব কী করে?উত্তর : বর্তমান যুগে সৎ, পরহেযগার ও মুত্তাকী মেয়ে খুঁজে পাওয়া বড়ই কঠিন ব্যাপার। তারপরও নিজে এবং শরীয়তসম্মত পন্থায় আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে ভালো বৈশিষ্ট্যের মেয়ে খুঁজতে হবে।
প্রশ্ন : যে নারী শিরক ও বিদআতের সাথে সংশিস্নষ্ট, তাকে বিবাহ করা যাবে কী?
উত্তর : মুশরিক নারীকে আলস্নাহ বিবাহ করতে নিষেধ করেছেন। কাজেই যে নারী মাযার পূজা করে, কবর পূজা করে, পীর-ফকির ও মাযারের কাছে কিছু চায় তাকে বিবাহ করা যাবে না। তবে সে যদি তওবা করে ফিরে আসে, তাহলে সেটা ভিন্ন কথা। আর বিদআতীকে আশ্রয়দানকারীর উপর আলস্নাহর, ফেরেশতাদের ও সকল মানুষের অভিশাপ। অতএব আপনি বিদআতী নারীকে আশ্রয় দিয়ে অভিশপ্ত হবেন কি না ভেবে দেখুন।
প্রশ্ন : সালাত পরিত্যাগকারী নারী/পুরুষকে বিবাহ করা যাবে কি?উত্তর : এ প্রশ্নের জবাবে শায়খ উসাইমিন (রহ.) এর ফাতাওয়া নকল করছি। তিনি বলেন, কোন পুরুষ/নারী যদি এমন লোককে বিবাহ করে, যে একাকী সালাত আদায় করে না এবং জামাআতের সাথেও সালাত আদায় করে না, তার বিবাহ বিশুদ্ধ নয়। কেননা সালাত পরিত্যাগকারী কাফির। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ شَقِيْقٍ الْعُقَيْلِيِّ قَالَ : كَانَ أَصْحَابُ رَسُوْلِ اللهِ - لَا يَرَوْنَ شَيْئًا مِنَ الْأَعْمَالِ تَرْكُهٗ كُفْرٌ غَيْرَ الصَّلَاةِ
আবদুলস্নাহ বিন শাকীক আল উকাইলী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ এর সাহাবীগণ সালাত ব্যতীত কোন আমল পরিত্যাগ করার কারণে কাউকে কাফির মনে করতেন না। [তিরমিযী হা: ২৬২২; মুসতাদরাক আল হাকিম হা: ১২]
সুতরাং কাফিরের জন্য কোন মুসলিম নারী/পুরুষ বৈধ নয়।
প্রশ্ন : বাদ্যযন্ত্রের প্রতি আগ্রহী ও নগ্ন-অর্ধনগ্ন নারীকে বিবাহ করা যাবে কি?উত্তর : এমন নারী যদি মুসলিম হয় তাহলে তাদের বিবাহ করা অবৈধ নয়। তবে সে আপনার স্ত্রী হওয়ার পর আপনি ব্যতীত অন্যের সামনে নগ্ন-অর্ধনগ্ন হয়ে ঘুরা-ফেরা করে, টিভিতে সিনেমা, নাটক ও অন্যান্য সিরিয়াল দেখে যত পাপ করবে তার ভাগীদার আপনাকেও হতে হবে। স্ত্রীর কারণে দাইয়ুছ এর পরিচয় ফুটে উঠলে আপনাকে জাহান্নামে যেতে হবে। কাজেই উক্ত বৈশিষ্ট্যের নারীকে বিবাহ করবেন কি না ভেবে দেখুন।
প্রশ্ন : বিধবা নারীকে বিবাহ করা ভালো না কুমারী নারী?উত্তর : রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ১১জন স্ত্রীর মধ্যে ১০জন ছিলেন বিধবা বা বিবাহিতা। অপরদিকে হাদীসে এসেছে, একদা জাবের (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ ﷺ জিজ্ঞেস করলেন, কুমারী নারী বিবাহ করেছ না বিধবা? উত্তরে তিনি বললেন, বিধবা। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তুমি কুমারী বিবাহ করলে না কেন? যার সঙ্গে তুমি খেলা করতে আর সেও তোমার সঙ্গে খেলা করত। [বুখারী হা: ৪৪৩, ৫০৭৯, মুসলিম ৩৫/৫৬, হা: ১৯২৮১]
অত্র হাদীসে কুমারী নারীর ভিন্ন বৈশিষ্ট্য উলেস্নখ করা হয়েছে। তাই শরীয়তে উভয় শ্রেণির নারীকেই বিবাহ করা গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই যার যেমন পছন্দ সে তেমন বিবাহ করবে।
প্রশ্ন : শুধুমাত্র পার্থিব শিক্ষায় শিক্ষিত নারীকে বিবাহ করলে কোন ক্ষতি আছে কি?
উত্তর : শুধুমাত্র পার্থিব শিক্ষায় শিক্ষিত নারীকে বিবাহ করলে আপনার বংশধারায় চরম ক্ষতি নেমে আসতে পারে। যেমন আপনার সমত্মানকে সে পার্থিব শিক্ষায় শিক্ষিত করার চেষ্টা করবে। ফলে আপনার বংশে কালক্রমে এমন মানুষ আর পাওয়া যাবে না, যে আপনার মৃত্যুর পর আপনার জন্য বা আপনার আত্মীয়-স্বজনের জন্য কল্যাণের দু‘আ করবে। কারণ তাদেরকে তো দু‘আ শেখানো হয়নি। আপনার স্ত্রী পার্থিব শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার কারণে দুনিয়া নিয়ে সদা ব্যসত্ম থাকবে এবং আলস্নাহর ইবাদাত থেকে দূরে থাকার কারণে আপনি সওয়াব লাভ করা থেকে বঞ্চিত হবেন। কারণ আপনার খেয়ে-পরে যদি সে আলস্নাহর ইবাদাত করত, তাহলে আপনিও তার সওয়াবের একটা অংশ পেতেন। তবে তার সওয়াব থেকে কোন কমতি করা হতো না।
প্রশ্ন : প্রাপ্তবয়স্ক নারীর অনুমতি ছাড়া বিবাহ বৈধ হবে কি?
উত্তর : আবু সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত, আবু হুরায়রা (রাঃ) তাদের কাছে বর্ণনা করেছেন যে, নবী ﷺ বলেছেন, ‘‘কোন বিধবা নারীকে তার সম্মতি ব্যতীত বিয়ে দেয়া যাবে না এবং কুমারী নারীকে তার অনুমতি ছাড়া বিয়ে দিতে পারবে না। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আলস্নাহর রাসূল! কেমন করে তার অনুমতি নেয়া হবে। তিনি বললেন, তার চুপ থাকাটাই হচ্ছে তার অনুমতি’’। [বুখারী হা: ৫১৩৬, ৬৯৭০, মুসলিম ১৬/৮ হা: ১৪১৯; আহমাদ হা: ৯৬১১, ই.ফা.হাঃ ৪৭৬০]
অত্র হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, কুমারী মেয়ের অনুমতি ছাড়া এবং বিধবা নারীর সম্মতি ছাড়া বিবাহ বৈধ হবে না।
প্রশ্ন : ভালো বৈশিষ্ট্যের মেয়ে খুঁজে বের করব কী করে?উত্তর : বর্তমান যুগে সৎ, পরহেযগার ও মুত্তাকী মেয়ে খুঁজে পাওয়া বড়ই কঠিন ব্যাপার। তারপরও নিজে এবং শরীয়তসম্মত পন্থায় আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে ভালো বৈশিষ্ট্যের মেয়ে খুঁজতে হবে।
প্রশ্ন : যে নারী শিরক ও বিদআতের সাথে সংশিস্নষ্ট, তাকে বিবাহ করা যাবে কী?
উত্তর : মুশরিক নারীকে আলস্নাহ বিবাহ করতে নিষেধ করেছেন। কাজেই যে নারী মাযার পূজা করে, কবর পূজা করে, পীর-ফকির ও মাযারের কাছে কিছু চায় তাকে বিবাহ করা যাবে না। তবে সে যদি তওবা করে ফিরে আসে, তাহলে সেটা ভিন্ন কথা। আর বিদআতীকে আশ্রয়দানকারীর উপর আলস্নাহর, ফেরেশতাদের ও সকল মানুষের অভিশাপ। অতএব আপনি বিদআতী নারীকে আশ্রয় দিয়ে অভিশপ্ত হবেন কি না ভেবে দেখুন।
প্রশ্ন : সালাত পরিত্যাগকারী নারী/পুরুষকে বিবাহ করা যাবে কি?উত্তর : এ প্রশ্নের জবাবে শায়খ উসাইমিন (রহ.) এর ফাতাওয়া নকল করছি। তিনি বলেন, কোন পুরুষ/নারী যদি এমন লোককে বিবাহ করে, যে একাকী সালাত আদায় করে না এবং জামাআতের সাথেও সালাত আদায় করে না, তার বিবাহ বিশুদ্ধ নয়। কেননা সালাত পরিত্যাগকারী কাফির। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ شَقِيْقٍ الْعُقَيْلِيِّ قَالَ : كَانَ أَصْحَابُ رَسُوْلِ اللهِ - لَا يَرَوْنَ شَيْئًا مِنَ الْأَعْمَالِ تَرْكُهٗ كُفْرٌ غَيْرَ الصَّلَاةِ
আবদুলস্নাহ বিন শাকীক আল উকাইলী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ এর সাহাবীগণ সালাত ব্যতীত কোন আমল পরিত্যাগ করার কারণে কাউকে কাফির মনে করতেন না। [তিরমিযী হা: ২৬২২; মুসতাদরাক আল হাকিম হা: ১২]
সুতরাং কাফিরের জন্য কোন মুসলিম নারী/পুরুষ বৈধ নয়।
প্রশ্ন : বাদ্যযন্ত্রের প্রতি আগ্রহী ও নগ্ন-অর্ধনগ্ন নারীকে বিবাহ করা যাবে কি?উত্তর : এমন নারী যদি মুসলিম হয় তাহলে তাদের বিবাহ করা অবৈধ নয়। তবে সে আপনার স্ত্রী হওয়ার পর আপনি ব্যতীত অন্যের সামনে নগ্ন-অর্ধনগ্ন হয়ে ঘুরা-ফেরা করে, টিভিতে সিনেমা, নাটক ও অন্যান্য সিরিয়াল দেখে যত পাপ করবে তার ভাগীদার আপনাকেও হতে হবে। স্ত্রীর কারণে দাইয়ুছ এর পরিচয় ফুটে উঠলে আপনাকে জাহান্নামে যেতে হবে। কাজেই উক্ত বৈশিষ্ট্যের নারীকে বিবাহ করবেন কি না ভেবে দেখুন।
প্রশ্ন : বিধবা নারীকে বিবাহ করা ভালো না কুমারী নারী?উত্তর : রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ১১জন স্ত্রীর মধ্যে ১০জন ছিলেন বিধবা বা বিবাহিতা। অপরদিকে হাদীসে এসেছে, একদা জাবের (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ ﷺ জিজ্ঞেস করলেন, কুমারী নারী বিবাহ করেছ না বিধবা? উত্তরে তিনি বললেন, বিধবা। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তুমি কুমারী বিবাহ করলে না কেন? যার সঙ্গে তুমি খেলা করতে আর সেও তোমার সঙ্গে খেলা করত। [বুখারী হা: ৪৪৩, ৫০৭৯, মুসলিম ৩৫/৫৬, হা: ১৯২৮১]
অত্র হাদীসে কুমারী নারীর ভিন্ন বৈশিষ্ট্য উলেস্নখ করা হয়েছে। তাই শরীয়তে উভয় শ্রেণির নারীকেই বিবাহ করা গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই যার যেমন পছন্দ সে তেমন বিবাহ করবে।
প্রশ্ন : শুধুমাত্র পার্থিব শিক্ষায় শিক্ষিত নারীকে বিবাহ করলে কোন ক্ষতি আছে কি?
উত্তর : শুধুমাত্র পার্থিব শিক্ষায় শিক্ষিত নারীকে বিবাহ করলে আপনার বংশধারায় চরম ক্ষতি নেমে আসতে পারে। যেমন আপনার সমত্মানকে সে পার্থিব শিক্ষায় শিক্ষিত করার চেষ্টা করবে। ফলে আপনার বংশে কালক্রমে এমন মানুষ আর পাওয়া যাবে না, যে আপনার মৃত্যুর পর আপনার জন্য বা আপনার আত্মীয়-স্বজনের জন্য কল্যাণের দু‘আ করবে। কারণ তাদেরকে তো দু‘আ শেখানো হয়নি। আপনার স্ত্রী পার্থিব শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার কারণে দুনিয়া নিয়ে সদা ব্যসত্ম থাকবে এবং আলস্নাহর ইবাদাত থেকে দূরে থাকার কারণে আপনি সওয়াব লাভ করা থেকে বঞ্চিত হবেন। কারণ আপনার খেয়ে-পরে যদি সে আলস্নাহর ইবাদাত করত, তাহলে আপনিও তার সওয়াবের একটা অংশ পেতেন। তবে তার সওয়াব থেকে কোন কমতি করা হতো না।
প্রশ্ন : প্রাপ্তবয়স্ক নারীর অনুমতি ছাড়া বিবাহ বৈধ হবে কি?
উত্তর : আবু সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত, আবু হুরায়রা (রাঃ) তাদের কাছে বর্ণনা করেছেন যে, নবী ﷺ বলেছেন, ‘‘কোন বিধবা নারীকে তার সম্মতি ব্যতীত বিয়ে দেয়া যাবে না এবং কুমারী নারীকে তার অনুমতি ছাড়া বিয়ে দিতে পারবে না। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আলস্নাহর রাসূল! কেমন করে তার অনুমতি নেয়া হবে। তিনি বললেন, তার চুপ থাকাটাই হচ্ছে তার অনুমতি’’। [বুখারী হা: ৫১৩৬, ৬৯৭০, মুসলিম ১৬/৮ হা: ১৪১৯; আহমাদ হা: ৯৬১১, ই.ফা.হাঃ ৪৭৬০]
অত্র হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, কুমারী মেয়ের অনুমতি ছাড়া এবং বিধবা নারীর সম্মতি ছাড়া বিবাহ বৈধ হবে না।
নারীরা বাঁকা হাড় থেকে সৃষ্টি। কাজেই বাঁকা অবস্থায় রেখেই কাজ করে নেয়ার চেষ্টা করতে হবে।
একজন স্ত্রী পুরুষের জন্য ফেতনাস্বরূপ। অতএব এমন নারী গ্রহণ করো না, যে সত্যিই ফেতনাস্বরূপ হয়।
মনে রেখো! জ্ঞানীরা বলেন, নারীর উপর কোন আস্থা নেই।
স্ত্রী নষ্ট হয় বাপের বাড়িতে। এক্ষেত্রে স্ত্রীর ব্যাপারে সর্তক থাকতে হবে।
যেসব মহিলা গৃহে গান-বাজনা, বাদ্যযন্ত্র ইত্যাদি নিয়ে মত্ত থেকে শয়তানের আড্ডাখানা বানাবে এমন নারী থেকে দূরে থাকতে হবে।
কারো পরিবার যেন আদর্শ পরিবার হয় এবং নরকের অগ্নি থেকে মুক্ত হয়, এজন্য আদর্শবান নারীকেই স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।
(উত্তম বৈশিষ্ট্যের নারীর কথা উলেস্নখ করে) নবী ﷺ বলেন, ‘‘তারা শিশু সমত্মানের প্রতি স্নেহশীল এবং স্বামীর মর্যাদার উত্তম রক্ষাকারিণী’’। [বুখারী হা: ৩৪৩৪, ৫০৮২]
একজন স্ত্রী পুরুষের জন্য ফেতনাস্বরূপ। অতএব এমন নারী গ্রহণ করো না, যে সত্যিই ফেতনাস্বরূপ হয়।
মনে রেখো! জ্ঞানীরা বলেন, নারীর উপর কোন আস্থা নেই।
স্ত্রী নষ্ট হয় বাপের বাড়িতে। এক্ষেত্রে স্ত্রীর ব্যাপারে সর্তক থাকতে হবে।
যেসব মহিলা গৃহে গান-বাজনা, বাদ্যযন্ত্র ইত্যাদি নিয়ে মত্ত থেকে শয়তানের আড্ডাখানা বানাবে এমন নারী থেকে দূরে থাকতে হবে।
কারো পরিবার যেন আদর্শ পরিবার হয় এবং নরকের অগ্নি থেকে মুক্ত হয়, এজন্য আদর্শবান নারীকেই স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।
(উত্তম বৈশিষ্ট্যের নারীর কথা উলেস্নখ করে) নবী ﷺ বলেন, ‘‘তারা শিশু সমত্মানের প্রতি স্নেহশীল এবং স্বামীর মর্যাদার উত্তম রক্ষাকারিণী’’। [বুখারী হা: ৩৪৩৪, ৫০৮২]
মহান আলস্নাহ বলেন,
﴿نِسَآؤُكُمْ حَرْثٌ لَّكُمْ﴾
‘‘তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের শস্যক্ষেত্রস্বরূপ’’ (সূরা বাকারা ২ঃ ২২৩)।
উত্তম শস্যক্ষেত্র থেকে যেমন উত্তম ফসল পাওয়া যায়, ঠিক তেমনি স্ত্রী যদি আদর্শবান হয় তাহলে তার মাধ্যমে একটি আদর্শ পরিবার ও আদর্শ সমত্মান আশা করা যায়। আদর্শবান স্ত্রী যে নির্বাচন করতে পারবে, তার পরিবার হবে দুনিয়ার জান্নাত। ভালো স্ত্রী হলো সোনার মুকুটের মতো, তাকে দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। তাই একজন দ্বীনদার ও মুত্তাকী মেয়েকেই স্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করুন- যে আপনাকে সর্বদা খুশি করে রাখবে, আপনার সমত্মানদেরকে সাদাকায়ে জারিয়া হিসেবে গড়ে তুলবে, সকল প্রকার পাপাচারমূলক কর্ম থেকে বাঁচার সুপরামর্শ দেবে, চির সুখের স্থান জান্নাত লাভের কাজে সাহায্য করবে এবং কখনো অবাধ্য হবে না। আলস্নাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤأَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا قُوْاۤ أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيْكُمْ نَارًا وَّقُوْدُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ﴾
‘‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর’’।
(সূরা তাহরীম ৬৬ঃ ৬)
’’ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
سُبْحَانَكَ اللّٰهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَلَّا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوْبُ إِلَيْكَ
লেখকের সংকলিত বইসমূহ :
১. স্ত্রী নির্বাচন।
২. ধন-সম্পদ বৃদ্ধির উপায়, দান-সাদাকার গুরুত্ব ও কৃপণতার ভয়াবহ পরিণতি।
সমাপ্ত
﴿نِسَآؤُكُمْ حَرْثٌ لَّكُمْ﴾
‘‘তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের শস্যক্ষেত্রস্বরূপ’’ (সূরা বাকারা ২ঃ ২২৩)।
উত্তম শস্যক্ষেত্র থেকে যেমন উত্তম ফসল পাওয়া যায়, ঠিক তেমনি স্ত্রী যদি আদর্শবান হয় তাহলে তার মাধ্যমে একটি আদর্শ পরিবার ও আদর্শ সমত্মান আশা করা যায়। আদর্শবান স্ত্রী যে নির্বাচন করতে পারবে, তার পরিবার হবে দুনিয়ার জান্নাত। ভালো স্ত্রী হলো সোনার মুকুটের মতো, তাকে দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। তাই একজন দ্বীনদার ও মুত্তাকী মেয়েকেই স্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করুন- যে আপনাকে সর্বদা খুশি করে রাখবে, আপনার সমত্মানদেরকে সাদাকায়ে জারিয়া হিসেবে গড়ে তুলবে, সকল প্রকার পাপাচারমূলক কর্ম থেকে বাঁচার সুপরামর্শ দেবে, চির সুখের স্থান জান্নাত লাভের কাজে সাহায্য করবে এবং কখনো অবাধ্য হবে না। আলস্নাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤأَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا قُوْاۤ أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيْكُمْ نَارًا وَّقُوْدُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ﴾
‘‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর’’।
(সূরা তাহরীম ৬৬ঃ ৬)
’’ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
سُبْحَانَكَ اللّٰهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَلَّا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوْبُ إِلَيْكَ
লেখকের সংকলিত বইসমূহ :
১. স্ত্রী নির্বাচন।
২. ধন-সম্পদ বৃদ্ধির উপায়, দান-সাদাকার গুরুত্ব ও কৃপণতার ভয়াবহ পরিণতি।
সমাপ্ত
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন